wb 10th Bengali

WBBSE 10th Class Bengali Solutions কোনি

WBBSE 10th Class Bengali Solutions কোনি

West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions কোনি

West Bengal Board 10th Bengali Solutions

লেখক পরিচিতি

ভূমিকা: মতি নন্দী বাংলা সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার জগতের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।
জন্ম ও বংশপরিচয়: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুলাই উত্তর কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে মতি নন্দীর জন্ম। তাঁর বাবার নাম চুনীলাল নন্দী এবং মায়ের নাম মলিনাবালা নন্দী।
বাল্যজীবন ও শিক্ষাজীবন: ছেলেবেলাতেই পিতাকে হারান মতি নন্দী। তাঁর পড়াশোনার সূচনা স্কটিশচার্চ স্কুল থেকে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্যালয় থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন।১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। পরে আবার ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মনীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ গ্র্যাজুয়েশন পাস করেন।
কর্মজীবন: ক্যানিংয়ের কাছে ছোটো একটি গ্রামের স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। সন্তোষকুমার ঘোষের তত্ত্বাবধানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় তাঁর নতুন কর্মজীবন নতুনভাবে শুরু করেন। বাংলা ক্রীড়াসাংবাদিকতার ধারা সম্পূর্ণ বদলে আধুনিক করে তুলেছেন মতি নন্দী। তাঁরই হাতে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মেলবন্ধন ঘটেছে।
সাহিত্যজীবন: ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ‘ছাদ’ প্রকাশিত হয়। তারপর পরিচয় পত্রিকায় তাঁর দ্বিতীয় গল্প ‘চোরা ঢেউ? প্রকাশ পায়। ১৯৫৮-তে পরিচয় পত্রিকার পূজাসংখ্যায় প্রকাশিত তাঁর ‘বেহুলার ভেলা’ গল্পটি বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর সাহিত্যকীর্তির তালিকা দীর্ঘ। এগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—
উপন্যাস: সাদা খাম, উভয়ত সম্পূর্ণ, গোলাপ বাগান, ছায়া, জীবন্ত, ছায়া সরণীতে রোহিণী, দূরদৃষ্টি; বিজলীবালার মুক্তি প্রভৃতি।
শিশু-কিশোর কাহিনি: কোনি, স্টপার, স্ট্রাইকার, জীবন অনন্ত, তুলসী, মিনু-চিনুর ট্রফি, ধানকুড়ির কিংকং, কলাবতী প্রভৃতি।
চলচ্চিত্রে মতি নন্দীর সাহিত্য: মতি নন্দীর কোনিও স্ট্রাইকারউপন্যাস দুটি চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সরোজ দে-র পরিচালনায় কোনি উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িত হয়। এই চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘ফাইট, কোনি ফাইট’ এক বিখ্যাত স্লোগানে পরিণত হয়, যা পরবর্তী সময়ে অনেক মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়।
পুরস্কার ও সম্মান: মতি নন্দী ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার পান, ১৯৯১-এ ‘সাদা খাম’ উপন্যাসের জন্য পান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। মতি নন্দী পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির শিশু ও কিশোর সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০০০ খ্রিস্টাব্দে পুরস্কার পান। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে অসাধারণ সাংবাদিকতার জন্য তাঁকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রয়াণ: ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি এই বিশিষ্ট ক্রীড়াসাংবাদিক ও সাহিত্যিকের জীবনাবসান হয়।

নামকরণ

সাহিত্যের যে-কোনো শাখার ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নামের মাধ্যমেই পাঠকের সাথে লেখকের যোগাযোগ ঘটে। সমগ্র রচনাটির মূল ভাবকে নামকরণের মাধ্যমেই পাঠকের কাছে তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন দিক থেকে একটি রচনার নামকরণ করা যেতে পারে। তা চরিত্রভিত্তিক অথবা ব্যঞ্জনাধর্মী কিংবা ঘটনাকেন্দ্রিক যে-কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই হতে পারে। আমাদের পাঠ্য উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নামই কোনি। সেদিক থেকে বিচার করে দেখলে উপন্যাসটির নাম চরিত্রভিত্তিক।
উপন্যাসের মূল চরিত্র কোনি হল প্রায় অশিক্ষিত, বস্তিবাসী একটি মেয়ে। সেখান থেকে শত অপমান, লাঞ্ছনা অতিক্রম করে এক দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই তার সাঁতারু হিসেবে সফল হওয়ার যাত্রা। তার এই যাত্রার পথপ্রদর্শক তার গুরু, সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ। কোনিকে ক্ষিতীশ প্রথম দেখেন গঙ্গার ঘাটে। আম কুড়োনোর জন্য কোনির মধ্যে যে লড়াকু ভঙ্গি আমরা দেখি সেখানেই ‘ফাইট, কোনি ফাইট’ স্লোগানটি সার্থক হয়ে ওঠে। উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোনির উপস্থিতি আমাদের মনে কোনি নামটিই ভাসিয়ে রাখে। উপন্যাসের অগ্রগতির সাথে সাথে আমরাও কোনি নামক মেয়েটির দীর্ঘ লড়াই ও সংগ্রামের সঙ্গী হয়ে উঠি। কীভাবে বস্তির হতদরিদ্র মেয়েটি ক্ষিতীশ সিংহের পর্যবেক্ষণে আসে, তাঁরই ছত্রছায়ায় কীভাবে অমানুষিক পরিশ্রমে এক দক্ষ সাঁতারু হয়ে ওঠে তার এক আশ্চর্য এবং বিস্ময়কর উপাখ্যান হল এই উপন্যাস। শত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন অমিয়াকে হারিয়ে অপমানের জবাব দেয়। তখনই কোনি আমাদের চোখে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে। কিন্তু তার লড়াই এবং অপমান সহ্য করার শেষ এখানেই নয়, বাংলা দলে স্থান পেয়ে মাদ্রাজ যাওয়ার পরও সংকীর্ণ দলাদলি এবং তার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের প্রতি অন্যায় ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় কোনিকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার দায়িত্ব এসে বর্তায় কোনির উপরেই। বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে তোলার মধ্য দিয়েই কোনি সমস্ত অন্যায়, অপমান ও অবহেলার জবাব দেয়। ক্ষিতীশ সিংহের স্বপ্ন সে পুরণ করে। মূল চরিত্র কোনির এই লড়াইয়ের কাহিনিই উপন্যাসটির প্রাণ। তাই নামকরণটি সম্পূর্ণ সার্থক ও যথাযথ হয়েছে বলা চলে।

অধ্যায়ভিত্তিক শব্দার্থ-টীকা ও প্রশ্নোত্তর

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. বারুণী কী? বারুণীর দিনে গঙ্গার ঘাটে যে দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে তা লেখো।
অথবা, “আজ বারুণী। গঙ্গায় আজ কাঁচা আমের ছড়াছড়ি।”— বারুণী কী ? গঙ্গাতীরের বর্ণনা পাঠ্যাংশে যেভাবে পড়েছ, গুছিয়ে লেখো।
উত্তর – বারুণীর পরিচয়: শতভিষা নক্ষত্রে কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথিতে পুণ্যস্নান ইত্যাদির দ্বারা পালনীয় বিশেষ প্রথা হল বারুণী। এই দিন মনস্কামনা পূরণের ইচ্ছায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে কাঁচা ফল দান করা হয়।
গঙ্গাতীরের বর্ণনা: গঙ্গাকে নিবেদিত কাঁচা আম: বারুণী প্রথায় সকলেই গঙ্গাকে কাঁচা আম নিবেদন করেছিলেন। ফলে, গঙ্গার ঘাটে প্রচুর কাঁচা আম ভেসে যাচ্ছিল। মহা উৎসাহের সঙ্গে একদল ছেলেমেয়ের সেই আম কুড়োচ্ছিল। স্নানযাত্রী ও বামুনদের কার্যকলাপ: ভাটার ফলে জল কিছুটা দূরে সরে যাওয়ায় কাদা-মাখা পায়ে স্নান সেরে ফেরা লোকেদের মুখে ছিল বিরক্তির ছাপ। স্নান সেরে ফেরার পথে অনেকে যাচ্ছিল ঘাটের মাথায় বসে থা গ বামুনদের কাছে। এই বামুনরা সকলের জামাকাপড় জমা রাখে, সরষের তেল বা নারকেল তেল দেয়, আর স্নান সেরে লোকেরা এলে দক্ষিণা নিয়ে কপালে চন্দনের ছাপ এঁকে দেয়। বহুবিধ দোকান ও মন্দির: এ ছাড়া গঙ্গার ধারে ছিল নানারকম জিনিসের দোকান, ছোটো ছোটো একাধিক মন্দির। বারুণীর দিন বলেই হয়তো গঙ্গার পাড়ে ভিখিরিদের আনাগোনা ছিল বেশি। বিষ্টুচরণের আদবকায়দা : এই গঙ্গারই ধারে সাড়ে তিন মন ওজনের বিশালাকার বিষ্টুচরণ ধর একটা ছেঁড়া মাদুরের উপর শুয়ে মালিশ করাচ্ছিলেন এবং বিরক্তি নিয়ে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সাদা লুঙ্গি, গেরুয়া পাঞ্জাবি এবং চোখে মোটা লেন্সের চশমা পরা পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছরের ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্টুচরণকে দেখে হাসছিলেন। মালিশ ওয়ালাকে ‘তানপুরা’, ‘তবলা’, ‘সারেগামা’ ইত্যাদি বিচিত্র ভঙ্গিতে মালিশ করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন বিষ্টুচরণ ধর। ক্ষিতীশ সিংহের ব্যঙ্গপ্রবণতা: এই দৃশ্যে মজা পেয়ে ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্টুচরণ ধরের শরীর নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন যে, তিনি নিজে নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। নানান অঙ্গভঙ্গি করে যখন ক্ষিতীশ সিংহ মজা করতে শুরু করেন তখন বিষ্টুচরণ ধরের রাগের বদলে কৌতূহল হয়। ক্রমশ তাঁদের দুজনের মধ্যে আলাপ জমে ওঠে।
২. “বিষ্ণু ধর রাগে কথা বলতে পারছে না, শুধু চোখ দিয়ে কামান দাগতে লাগল।”—বিষ্ণু ধরের এই রেগে যাওয়ার কারণ আলোচনা করো।
উত্তর – প্রাক্কথন: লেখক ‘কোনি’ উপন্যাসের সূচনাতেই বারুণীর দিনের গঙ্গার ঘাটের প্রসঙ্গ এনেছেন। বিষ্টুচরণ ধর সেইদিন ঘাটে এসেছিলেন মালিশওয়ালাকে দিয়ে তাঁর শরীর দলাই-মলাই করানোর জন্য। বিষ্টু ধরের মালিশের ভঙ্গিমা: সাড়ে তিন মন ওজনের বিষ্টু ধরের শরীর মালিশের ভঙ্গি ছিল যথেষ্ট কৌতুকের। কখনও ‘তানপুরো ছাড়’, ‘তবলা বাজা’, কখনওবা ‘সারেগামা কর’—নানা সাংকেতিক ভাষায় বিষ্টু ধর বিভিন্ন ধরনের মালিশের জন্য নির্দেশ দিতে থাকেন। মালিশওয়ালাও নির্দেশ অনুসারে কখনও তাঁর শরীরের চর্বিগুলো খামচে ধরে ছেড়ে দিতে থাকে, কখনও দশ আঙুল দিয়ে গলা থেকে কোমর পর্যন্ত চাঁটি মারতে থাকে, কখনও পিঠে জোড়াতালুর কোদাল চালায়। সমালোচকের ব্যঙ্গবাণ: বিষ্টু ধরের বিরক্তি বাড়িয়ে দেয় পনেরো হাত দূরে অবস্থান করা সাদা লুঙ্গি আর গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা একটি মাঝবয়সি লোক। তিনি বিষ্টুবাবুর দিকে তাকিয়ে, হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করেন—“ম্যাসেজ হচ্ছে না সংগীতচর্চা হচ্ছে?” এরপর উপযাচক হয়ে ব্লাডপ্রেশার, ব্লাডসুগার ইত্যাদি পরীক্ষার কথা বলেন। বিরক্ত হয়ে বিষ্টুবাবু তাঁকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু না গিয়ে সেই ভদ্রলোক আরও স্পষ্ট করে বলেন, “তবে আপনার হার্টটা বোধহয় বেশিদিন এই গন্ধমাদন টানতে পারবে না।” তারপরে আরও তির্যক ভঙ্গিতে বলেন যে, তিনি ভুলও বলতে পারেন। কারণ হাতি কিংবা হিপোর কখনও করোনারি অ্যাটাক হয়েছে বলে জানা যায়নি। এভাবে বিষ্টু ধরকে ঘুরিয়ে হাতি কিংবা হিপো বলায় তিনি অত্যন্ত রেগে যান। কিন্তু সেই রাগকে তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন না। শুধু দু-চোখ দিয়ে তিনি ক্রোধ প্রকাশ করেন।
৩. “বিষ্টু হতভম্ভ হয়ে লোকটির জগকরা দেখতে লাগল।”—বিষ্টুর এই হতভম্ব হয়ে যাওয়ার কারণ কী ছিল লেখো।
উত্তর – বিষ্টু ধরের হতভম্ব হয়ে যাওয়ার কারণ: বিষ্টুচরণের শরীরচর্চা নিয়ে ব্যঙ্গ: সাড়ে তিন মন ওজনের বিষ্টুচরণ ধর যখন গঙ্গার ধারে তাঁর শরীর দলাই-মলাই করাচ্ছিলেন, তখন বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি তাঁর শরীর এবং মালিশের বিচিত্র ভঙ্গি নিয়ে কৌতুক করেন। তিনি অত্যধিক ওজনের ফলে বিষ্টু ধরের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনার কথা বলেন। তাঁর ক্রোধকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে লোকটি বলেন যে, হাতি কিংবা হিপোর কখনও করোনারি অ্যাটাক হয়েছে বলে তিনি শোনেননি। এই ধরনের কৌতুক করতে করতেই তিনি বিষ্টু ধরকে জিজ্ঞাসা করেন যে, যদি তিনি বিষ্টু ধরের মাথায় চাঁটি মারেন তাহলে বিষ্টু ধর তাঁকে দৌড়ে ধরতে পারবে কি না। এ কথা বলেই আবার তিনি জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং করতে শুরু করেন। বিষ্টুচরণের প্রতিক্রিয়া: গোটা ঘটনায় বিষ্টু ধর হতভম্ব হয়ে যান। তার কারণ, একটি অপরিচিত লোক যে এত দুঃসাহস দেখাতে পারে, তা তাঁর ধারণার অতীত। প্রথমত, বিষ্টু ধরের কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তি আছে। দ্বিতীয়ত, বিষ্টু ধর হয়তো ভাবছিলেন যে সত্যিই যদি লোকটি তাঁকে চাঁটি মারে, তাহলে তিনি কী করবেন। এরকম অদ্ভুত ও আচমকা ঘটনায় তিনি হতভম্ব হয়ে যান।
8. “ওর চোখে এখন রাগের বদলে কৌতূহল।”- -কার কথা বলা হয়েছে? তাঁর রাগ এবং কৌতূহলের কারণ লেখো।
উত্তর – উদ্দিষ্টের পরিচয়: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের প্রশ্নোদৃত অংশে বিষ্টু ধরের কথা বলা হয়েছে।
রাগ ও কৌতূহলের কারণ: বিষ্টু ধরের প্রতি ব্যঙ্গবাণ: বারুণীর দিন গঙ্গার ঘাটে শরীর মালিশ করাচ্ছিলেন বিষ্টুচরণ ধর। বিচিত্র ভঙ্গিতে শরীর দলাই-মলাই করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন মালিশওয়ালাকে। তাঁকে একজন মানুষ অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করেছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত বিষ্টু ধরকে তিনি তীব্র ব্যঙ্গও করেন। শুধু তা-ই নয়, “আপনার হার্টটা বোধহয় আর বেশিদিন এই গন্ধমাদন টানতে পারবে না”—এ কথা বলে তিনি বিষ্টু ধরের মৃত্যুসম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করেন। তারপরে ব্যঙ্গকে আরও তীক্ষ্ণ করে লোকটি বলেন যে, “তবে হাতি কিংবা হিপোর কখনো করোনারি অ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি।” এইসব কথা শুনে বিষ্টু ধর প্রচণ্ড রেগে যান। বিষ্টু ধরের কৌতূহলী মন: লোকটির জগিং করা, কিংবা লোকটির মুখে আইসোমেট্রিক, ক্যালিসথেনিক, বারবেল ইত্যাদি নানারকম এক্সারসাইজের কথা শুনে বিষ্টু ধর লোকটির প্রতি কৌতূহল হয়ে ওঠেন। যেভাবে লোকটি জগিং করতে করতে গঙ্গার ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে শেষ ধাপ পর্যন্ত অতি সহজে নামাওঠা করতে থাকেন তা দেখে বিষ্টু ধরের মনে লোকটির প্রতি রাগের বদলে কৌতূহল তৈরি হয়। মনে মনে তিনি ওই ছিপছিপে শরীরটার সঙ্গে নিজের মোটাসোটা শরীরকে বদলাবদলি করতে থাকেন। লোকটির চালচলন বিষ্টুচরণকে কৌতূহলী করে তোলে।
৫. “গলার স্বরে বোঝা গেল এর জন্য সে গর্বিত।”—কে, কীসের জন্য গর্ব অনুভব করেছেন? তাঁর এই গর্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, “খাওয়ার আমার লোভ নেই। ডায়েটিং করি।”—কার খাওয়ার লোভ নেই? তাঁর ডায়েটিং-এর পরিচয় দাও। 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ও তার গর্বের বিষয়: মতি নন্দীর লেখা কোনি উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়ে বিষ্টু ধর তাঁর ডায়েটিং-এর জন্য গর্ব প্রকাশ করেছেন। → গর্বের বিষয়ের ব্যাখ্যা: কথামুখ: সাড়ে তিন মন ওজনের বিষ্টু ধর তাঁর নিজের মতো করে ডায়েটিং করতেন। সেই কারণে তিনি যথেষ্ট গর্বিতও ছিলেন। বিষ্টু ধর গঙ্গার ধারে বসে ক্ষিতীশকে নিজের ডায়েটিংয়ের কথা বিস্তৃতভাবে জানিয়েছেন। প্রতিদিনের আহারসামগ্রী: বিষ্টু ধর আগে রোজ আধ কিলো ক্ষীর খেতেন। এখন সেটা তিনশো গ্রাম হয়েছে। আগে জলখাবারে কুড়িটা লুচি খেতেন, এখন তা পনেরোটা হয়েছে। এখন নিয়ম করে মেপে তিনি আড়াইশো গ্রাম চালের ভাত খান। রাত্রে খান মাত্র বারোটা রুটি। ঘি খাওয়া তিনি প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। শুধু গরম ভাতের সঙ্গে তিনি চার চামচ ঘি খান। বিকেলে তাঁর খাবার তালিকায় রয়েছে দু-গ্লাস মিছরির শরবত আর কেবল চারটে কড়াপাকের সন্দেশ। প্রসঙ্গত বিষ্টু ধর জানিয়ে দেন যে, বাড়িতে রাধাগোবিন্দের মূর্তি থাকায় মাছমাংস তিনি ছুঁয়েও দেখেন না। প্রতিক্রিয়া: এত কিছুর পরেও বিষ্টু ধর গর্বিতভাবে বলেন যে, সংযম ও শারীরিক কষ্ট স্বীকারে তিনি যথেষ্টই সক্ষম। তাঁদের বংশে কখনও কারও হার্টের অসুখ হয়নি।
৬. “আপনি আমার থেকে চার হাজার গুণ বড়োলোক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না।”—বক্তা কাকে, কেন এ কথা বলেছিলেন?
অথবা, “আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না।”—বক্তা এরুপ উক্তির মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর – বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্টুচরণ ধরকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য কথাটি বলেছিলেন।
এ কথা বলার কারণ: বিষ্টু ধরের বিশালাকৃতি দেহ: ধনী ব্যবসায়ী বিষ্টুচরণ ধর ছিলেন সাড়ে তিন মন ওজনের দেহের মালিক। তাঁর বিশালাকৃতি দেহটি বিচিত্র ভঙ্গিতে মালিশ করাতে দেখে ক্ষিতীশ সিংহ তাঁকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করে হাতি বা হিপোর সঙ্গে তুলনা করেন। এ ছাড়াও বিষ্টুকে চাঁটি মেরে পালানোর কথাও তিনি বলেন। শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব; “খাওয়ায় আমার লোভ নেই” বলেও বিষ্টুচরণ তাঁর ডায়েটিং করার যে ফর্দ বলেন, তা শুনে বিদ্রুপের সুরে ক্ষিতীশ সিংহ বলেন “এত কেচ্ছাসাধন করেন!” বিষ্টুচরণ ধরের এই ওজন যে তাঁর হার্টের পক্ষে বিপজ্জনক তা মনে করিয়ে দেন ক্ষিতীশ। তিনি শরীরটাকে চাকর বানানোর কথা বলেন। ইচ্ছাশক্তির দ্বারা শরীর পরিচালনা: তিনি বিষ্টুবাবুকে আরও জানান মন বা ইচ্ছাশক্তি দ্বারা শরীরকে পরিচালনা করা প্রয়োজন। সুস্থসবলভাবে বেঁচে থাকতে গেলে নিয়মিত শরীরচর্চা, খাওয়াদাওয়ার যথাযথ পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। ক্ষিতীশ সিংহের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা: ক্ষিতীশ সিংহ তাঁর শরীর ও মনের শক্তি দিয়ে বিষ্টুচরণ ধরকে বুঝিয়ে দেন যে তিনি বিষ্টুচরণ ধরের তুলনায় বয়সে বড়ো হওয়া সত্ত্বেও শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে শক্তিশালী। ক্ষিতীশের হাতকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও একচুল নড়াতে পারেন না বিষ্টুচরণ। তখনই ক্ষিতীশ আলোচ্য কথাটি বলেন।
৭. “সেজন্য শুধু শরীর গড়লেই হয় না, মনকেও গড়তে হয়।”— কে, কখন মন্তব্যটি করেছেন? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – বক্তা ও প্রসঙ্গ: উৎস: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছদ থেকে আলোচ্য মন্তব্যটি গৃহীত হয়েছে। বক্তা: গঙ্গার ঘাটে বিষ্টু ধরের শরীর দলাই-মলাই দেখে মজা-পাওয়া ব্যক্তিটি এ কথা বলেছেন। প্রসঙ্গ:এই মানুষটি ক্রমশই তাঁর শারীরিক সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে বিষ্টু ধরকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে তোলেন। লোকটি বিষ্টু ধরকে সুঠাম শরীরের উপযোগিতা বোঝাতে চান। প্রচুর অর্থ থাকলেও ইচ্ছাশক্তি না থাকলে যে শরীরকে আয়ত্ত করা যায় না তিনি তাও বুঝিয়ে দেন। হাতেকলমে তা প্রমাণের জন্য তিনি বিষ্টু ধরকে পাঞ্জা লড়াইয়ের আহ্বান জানান। অনেক চেষ্টা করেও বিষ্টু ধর সেই লোকটির শুকনো শিকড়ের মতো হাতটাকে হারিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে লোকটি বিষ্টু ধরকে প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি বলেন।
ব্যাখ্যা: সাড়ে তিন মন ওজনের বিষ্টু ধরের তুলনায় তাঁর প্রতিপক্ষ লোকটি ছিলেন অত্যন্ত রোগা। কিন্তু তবুও বিষ্টু ধরকে তিনি অনায়াসে পরাজিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, গায়ের জোরই সব নয়, মনের জোর হল আসল শক্তি। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শরীরের দুর্বলতা ঠেকিয়ে রাখা যায়। মানুষের শরীর যতটা সক্ষম, ইচ্ছাশক্তি তাকে আরও বেশি ক্ষমতাবান করে তুলতে পারে। অর্থাৎ, মানুষের মন যে শরীরের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী, সে-কথাই লোকটি বলতে চেয়েছেন।
৮. “আপনার মন হুকুম করতে জানে না তাই শরীর পারল না।”— প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উক্তির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – উৎস: মতি নন্দী রচিত কোনিউপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদে আলোচ্য উক্তিটি পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গ: বড়োলোক ব্যবসায়ী বিষ্টুচরণ ধরের সাড়ে তিন মন ওজনের শরীর নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেছিলেন ক্ষিতীশ সিংহ। বিষ্টুচরণ অনেক টাকা খরচ করেও যে তাঁর শরীরটাকে মনের চাকর বানাতে পারবেন না তা বোঝাতেই, ক্ষিতীশ নিজের ডান হাতের কনুই শরীরে লাগিয়ে পিস্তলের মতো হাতটি সামনে বাড়িয়ে দেন। শত চেষ্টা করেও বিষ্টুচরণ ধর তাঁর হাতটা নামাতে ব্যর্থ হন। এই প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ সিংহ আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য: জোর বলতে শুধু শারীরিক বলকেই বোঝায় না। মনের জোর এবং ইচ্ছাশক্তিই আমাদের আসল বল, তা শরীরের অনেক দুর্বলতাকে ঢেকে দেয়। ইচ্ছাশক্তি শরীরকে দিয়ে নিজের মতো করে অনেক বেশি পরিশ্রম করিয়ে নিতে পারে। তাই শুধু শরীর গড়া নয়, মনকেও তৈরি করতে হয়। শরীর যদি মনের নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে মন শরীরকে হুকুম দিয়ে কাজ করাবে। কিন্তু খাদ্যরসিক, ভোগবিলাসী বিষ্টুচরণ শরীর, মন কোনোটির সম্পর্কেই সচেতন নন। তাই তিনি বিপুল শরীরের অধিকারী হয়েও তাঁর তুলনায় অনেক রোগা ক্ষিতীশ সিংহের হাতটা নামাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে নিশ্বাস ফেলতে থাকেন। তখন ক্ষিতীশ তাঁকে বোঝান যে শরীরকে মন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাতে পারলে বিষ্টু অতি সহজেই এই কাজটি পারতেন।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “আমাকে রাগালে কী হয়, এবার বুঝলি তো।”—কে, কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছে? কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটি করা হয়েছে? 
উত্তর – বক্তা ও উদ্দিষ্ট জন: কোনিউপন্যাসের প্রধান চরিত্র কোনি ভাদুকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।
আলোচ্য মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত: আম ধরার প্রতিযোগিতা: গঙ্গায় নিয়মিত সাঁতার কাটা ও হুটোপাটিতে অভ্যস্ত কোনি এবং তার দুই সঙ্গী গঙ্গায় ভেসে যাওয়া আম ধরার জন্য প্রতিযোগিতা করছিল। কোনির লক্ষ্যে বাধা: কোনি যখন লক্ষ্যের প্রায় কাছাকাছি, সেই সময়ে ভাদু তার চুল ধরে টানে এবং তার মাথা ধরে কাদায় মুখ ঘষে দেওয়ার চেষ্টা করে। কোনির পালটা জবাব: কোনি তার পালটা হিসেবে ভাদুর ডান হাতটা মুখের কাছে টেনে তার দুটো আঙুলে কামড়ে দেয়। শুধু তাই নয়, সে ভাদুর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার চোখ খুবলে নেওয়ার এবং গঙ্গার মাটিতে পুঁতে দেওয়ার হুমকি দেয়। চণ্ডু, কান্তিরা অনেক চেষ্টা করেও কোনিকে থামাতে পারে না। তখন— “কোনির ঠোঁটের কোণে ফেনা, সামনের দাঁত হিংস্রভাবে বেরিয়ে রয়েছে।” ভাদুর অত্মসমর্পণ: রক্তাক্ত ভাদু হিংস্র কোনির সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং তাকে আমটি ফেরত দিয়ে দেয়। কোনির মানসিক স্থিরতা: সেই আমে কামড় দিয়ে তার টক স্বাদে বিব্রত হয়ে কোনি আমটিকে আবার জলেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এতে তার মানসিক স্থিরতা ফিরে আসে। সে ভাদুর হাতের ক্ষতের খবর নেয় এবং তখনই কিছুটা নরম হয়ে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করে।
২. “গুরুকে শ্রদ্ধেয় হতে হবে শিষ্যের কাছে।”—বক্তা কে? মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
প্রেক্ষাপট: গোষ্ঠী-রাজনীতির শিকার: জুপিটার সুইমিং ক্লাবের সঙ্গে ক্ষিতীশ সিংহের প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরের সম্পর্ক। অথচ এই মানুষটিই ক্লাবের গোষ্ঠী-রাজনীতির শিকার হন। বিশ্বস্ত অনুগামী ভেলোর সঙ্গে ক্ষিতীশের কথা থেকে জানা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে ক্লাবের ছেলেদের দিয়ে অভিযোগপত্র লেখানো হয়েছে। ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে অভিযোগ: হরিচরণ মিত্র এবং তাঁর দলের অভিযোগ ছিল ক্ষিতীশ সিংহ ক্লাবের সাঁতারুদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে থাকেন। আসলে ক্ষিতীশ কড়া মেজাজের মানুষ। সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ছাত্র তথা শিষ্যের প্রবল কৃচ্ছ্রসাধনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি জানতেন যে, হরিচরণের ইচ্ছা ক্লাবের প্রধান প্রশিক্ষক হওয়ার। ক্ষিতীশের প্রতিক্রিয়া: কথা প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ হরিচরণকে বলেছিলেন যে চ্যাম্পিয়ন শুধু খাওয়াদাওয়া বা অনুশীলন দ্বারা তৈরি করা যায় না। একজন সাঁতারুর মন-মানসিকতা বুঝে তাকে শেখাতে হয়। একজন প্রশিক্ষককে মনস্তাত্ত্বিকের মতো সাধারণজ্ঞান প্রয়োগ করে শিষ্যের কাছে গুরু হয়ে উঠতে হবে। গুরুর কথা শিষ্য তখন বেদবাক্যের মতো গ্রহণ করবে। গুরু শিষ্যের কাছে হবেন শ্রদ্ধেয়। শিষ্যকে তিনি জয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করে তুলবেন। তবেই যথার্থ প্রশিক্ষক হয়ে ওঠা সম্ভব হবে। হরিচরণের পক্ষে তা সম্ভব নয় জানিয়েই আলোচ্য মন্তব্যটি করেন ক্ষিতীশ।
৩. “শরীরের নাম মহাশয় যা সহাবে তাই সয়।”—ক্ষিতীশ সিংহের এই উক্তিতে তার কীরূপ মানসিকতা ফুটে উঠেছে?
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ সিংহ এই প্রবাদবাক্যটি উল্লেখ করেছেন। সংযমী ও নিয়ন্ত্রক: এই বাক্যের মাধ্যমে মধ্যবয়সি মানুষটির শরীর ও মন সম্পর্কে অপূর্ব সংযম ও নিয়ন্ত্রণের ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মানুষটি প্রতিদিন শরীরচর্চা করতেন। নিজেই স্পষ্ট বলেছেন “খিদের মুখে যা পাই তাই অমৃতের মতো লাগে”। শরীর সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন মানুষটি বাড়িতেও তাঁর এই আদর্শ মেনে চলতেন। তাঁর সংসারে খাওয়ার আয়োজন ছিল সামান্যই। সিদ্ধ খাবারে আগ্রহী: ক্ষিতীশ মনে করতেন বাঙালিয়ানা রান্নায় স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না, তাই প্রায় সব কিছু কুকারে সিদ্ধ করেই তিনি খেতেন। তাঁর মতে খাদ্যপ্রাণ যথাসম্ভব অটুট থাকে সিদ্ধ খাবার খেলে। ক্ষিতীশ সিংহের স্ত্রী প্রথমদিকে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং রান্নায় মশলা ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গোঁয়ার ক্ষিতীশের তেজের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়। শরীরচর্চা ও সংযম পালনই মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে বলে ক্ষিতীশ মনে করতেন। বিশেষ গুণের প্রতি পক্ষপাতিত্ব: এককথায় ক্ষিতীশ সিংহের সাঁতার ও সাঁতারুদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ এবং কঠোর পরিশ্রম ও কৃচ্ছসাধনের প্রতি তাঁর পক্ষপাত আলোচ্য উক্তিতে ফুটে উঠেছে।
8. “গ্রে স্ট্রিটে ট্রামলাইন ঘেঁষে একফালি ঘরে দোকানটি।”— কার, কোন্ দোকানের কথা বলা হয়েছে? কাহিনিতে দোকানের বিষয় কী তথ্য পাওয়া যায় ? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ও তার দোকান: প্রশ্নোধৃত অংশে ক্ষিতীশ সিংহের স্ত্রী লীলাবতীর ‘প্রজাপতি’ নামক লেডিজ টেলারিং-এর দোকানটির কথা বলা হয়েছে।
দোকানটির বিবরণ: পূর্বনাম: কাহিনিতে উল্লেখিত দোকানটির আগে নাম ছিল ‘সিন্হা টেলারিং’। সেই সময় ক্ষিতীশ দোকান চালাতেন আর দুজন দর্জি জামাপ্যান্ট তৈরি করত। সঙ্গে দেয়াল আলমারিতে থাকত কিছু সিন্থেটিক কাপড়। দোকানের প্রতি অবহেলা: কিন্তু সাঁতারে আসক্ত ক্ষিতীশ দুঘণ্টাও দোকানে থাকতেন না, বরং তাঁকে প্রায় সবসময়ই পাওয়া যেত জুপিটার সুইমিং ক্লাবে। এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করা হয় যে আলমারির কাপড় অর্ধেকেরও বেশি অদৃশ্য হয়েছে, দোকানের চার মাসের ভাড়া বাকি পড়েছে আর লাভের বদলে হয়েছে শুধুই লোকসান। নতুন নাম: এই অবস্থায় লীলাবতী দোকানের দায়িত্ব নেন। নিজের গয়না বন্ধক দিয়ে দোকানটিকে ঢেলে সাজান, দোকানের নতুন নাম হয় ‘প্রজাপতি’। নতুন দোকানের সামগ্রী: পুরুষদের পোশাক তৈরি বন্ধ করে দিয়ে টেলারিং-এ ডিপ্লোমা পাওয়া দুজন মহিলাকে নিয়ে তিনি শুধু মেয়েদের এবং বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করতে থাকেন, তাঁর দোকান আবার প্রতিষ্ঠা পায়। দোকানে কাজের চাহিদা: দোকানে কাজের চাহিদাও প্রবলভাবে বেড়ে যায়। যে কাজ আগে তিন দিনে করে দেওয়া যেত এখন তা দশ দিনের আগে করা সম্ভব হয় না। কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় লীলাবতীকে দোকানের জন্য নতুন ঘর খুঁজতে হয়।
৫. “চার বছরের মধ্যেই ‘প্রজাপতি’ ডানা মেলে দিয়েছে।” ‘প্রজাপতি’ সম্পর্কে কী জেনেছ? ‘প্রজাপতি’কে ঘিরে ক্ষিতীশ সিংহের পরিবারের কোন্ ছবি ধরা পড়েছে? 
উত্তর – ‘প্রজাপতি’-র পরিচয়: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে প্রজাপতি দোকানটি সম্পর্কে জানা যায়। ক্ষিতীশ সিংহ এবং লীলাবতীর একটি টেলারিংয়ের দোকান ছিল। শুরুতে দোকানটির নাম ছিল ‘সিন্হা টেলারিং’। লীলাবতী এই দোকানটির দায়িত্ব নিয়ে তাকে ঢেলে সাজান। মেয়েদের ও বাচ্চাদের পোশাক তৈরির দোকান বানান এবং নাম দেন ‘প্ৰজাপতি’।
‘প্রজাপতি’কে ঘিরে ক্ষিতীশের পরিবারের ছবি: পূর্বকথা: জুপিটার ক্লাব এবং সাঁতার অন্তপ্রাণ ক্ষিতীশ সিংহ সংসারী মানুষ ছিলেন না। তিনি যখন দোকান চালাতেন দিনে দু-ঘণ্টাও সেখানে বসতেন না। দুজন দর্জি জামা-প্যান্ট বানাতেন। পরিস্থিতির অবনতি: এভাবে চলতে চলতে একদিন দেখা যায় দোকানের আলমারির কাপড় অর্ধেকেরও বেশি অদৃশ্য হয়েছে এবং দোকানের ভাড়া চার মাস বাকি। দোকানের শ্রীবৃদ্ধি: দোকানে যখন লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে লীলাবতী দোকানের হাল ধরেন। নিজের গহনা বন্ধক দিয়ে দুটি মহিলাকে নিয়ে শুধু মেয়ে ও শিশুদের পোশাক তৈরি শুরু করেন। ক্রমশ ব্যাবসার সমৃদ্ধি ঘটে। লীলাবতী তাঁর বন্ধক দেওয়া গহনাও অর্ধেক ফিরিয়ে আনেন। কাজের পরিমাণও বেড়ে যায়, ব্যাবসা ভালো চলার ফলে, একটা বড়ো দোকানের খোঁজও শুরু করেন লীলাবতী। লীলাবতী তাঁর বিচক্ষণতা, পরিশ্রম এবং সাংসারিক মানসিকতা দিয়ে দোকানটিকে পুনরায় সাজিয়ে তুলেছিলেন।
৬. “তখন মুহূর্তে বুঝে যায় আর কথা বাড়ালে তাকেই গোল্লায় যেতে হবে।”—কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে?
উত্তর – মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের এই উপলব্ধি হয়েছিল। ক্ষিতীশের খাওয়াদাওয়া নিয়ে যথেষ্ট বাতিক ছিল কিংবা বলা যেতে পারে, এ বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতেন। ক্ষিতীশের বাড়িতে রোজই কুকারে প্রায় সিদ্ধ রান্না হত, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন মশলাদার খাবারে স্বাস্থ্য বজায় থাকে না। এতে পেটের সমস্যা হয়। সে কারণে বাঙালিরা শরীরে শক্তি পায় না, আর কোনো খেলাতেই সর্বোচ্চ সাফল্য পায় না। অন্য দিকে সিদ্ধ রান্নায় প্রোটিন ভিটামিন বজায় থাকে। তাই শরীরও সুস্থ থাকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেন বলেই, ক্ষিতীশের খাওয়া থালায় স্ত্রী লীলাবতী খেতে গেলে তিনি বিষয়টি অস্বাস্থ্যকর এবং কুসংস্কারের প্রকাশ বলে মনে করতেন। স্ত্রী লীলাবতীকে ক্ষিতীশ যথেষ্ট মান্য করে চলতেন। সেজন্য লীলাবতী যে মুহূর্তে অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বিষয়টিকে তাঁর নিজস্ব ব্যাপার বলে জানাতেন, তখনই ক্ষিতীশ আর এ বিষয়ে কোনো কথা বলতেন না। কারণ তিনি জানতেন যে তাহলে পরবর্তী ঘটনাক্রম তাঁর বিরুদ্ধে চলে যাবে। তাই তিনি আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে থাকাই ঠিক বলে মনে করতেন।
৭. “সম্ভবত নামটা তার ভালো লেগেছে।”- -কোন্ নামটা কার ভালো লেগেছে? ভালোলাগার কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – নাম ও উদ্দিষ্টের পরিচয়: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্ষিতীশ সিংহের ভালো লেগেছে ‘কোনি’ নামটা।
নামটি ভালো লাগার কারণ: অতৃপ্তিবোধ: ক্ষিতীশ জুপিটার ক্লাবের সুইমিং ট্রেনার। কিন্তু সেখানে প্রতিভাবান সাঁতারু নেই। যারা আছে তাদের ওপরে ক্ষিতীশের আস্থা ছিল না। সেই কারণে ক্ষিতীশের মনে একটা অতৃপ্তি ছিল। দৃষ্টি আকর্ষণ: ক্ষিতীশ ভাবতেন কোনোদিন যদি একজন উপযুক্ত সাঁতারু পান, তবে তাকে তিনি তৈরি করে দেখিয়ে দেবেন একজন ট্রেনারের মূল্য কতখানি। বারুণীর দিন গঙ্গার ঘাটে ভেসে যাওয়া আম সাঁতরে ধরার লড়াইয়ে তিনি কোনি নামক মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিলেন। তার ক্ষিপ্রতা, জেদি মনোভাব এবং শারীরিক গঠন ক্ষিতীশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। মনের গভীরে স্থানগ্রহণ: সতীর্থদের চিৎকার থেকেই ক্ষিতীশ শুনেছিলেন কোনির নামটা। তারপর থেকেই তাঁর মনের গভীরতম স্থানে কোনি নামটা জায়গা করে নেয়। সবসময় তাঁর মনে চলে আসে গঙ্গার ঘাটের সেই দৃশ্য। তিনি যেন দেখতে পান ফণা তোলা কেউটের মতো হিলহিলে কাদায় লেপা সরু একটা দেহ, লম্বা লম্বা হাত এলোপাথারি ডাইনে-বাঁয়ে ঘোরাচ্ছে। তিনি কোনির মতোই একটা লুকানো প্রতিভাকে খুঁজছিলেন। সেই প্রতিভাকে আবিষ্কার করার সম্ভাবনায় ‘কোনি’ নামটি ক্ষিতীশের ভালো লেগে যায়।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “আমার বিরুদ্ধে চার্জগুলো স্পষ্ট করে চিঠিতে বলা নেই।” কে, কখন মন্তব্যটি করেন? তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি কী ছিল? 
উত্তর – বক্তা: প্রশ্নোধৃত মন্তব্যটি করেছেন কোনি উপন্যাসের সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ ওরফে ক্ষিদ্দা।
আলোচ্য মন্তব্যের প্রেক্ষিত: আলোচ্য জুপিটার সুইমিং ক্লাবের মিটিংয়ে সম্পাদক ধীরেন ঘোষ বলেন যে, সেদিনের সভায় বেশি সময় লাগার মতো কিছু নেই, কারণ একমাত্র আলোচ্য বিষয় সাঁতারুদের দেওয়া চিঠি। সেটি আসলে ছিল সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র। সেই চিঠিটি যেহেতু আগে থেকেই সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, ফলে নতুন করে বিশেষ কিছু বলার নেই। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এই সময়ে ক্ষিতীশ তীব্র আপত্তি জানান এবং আলোচ্য মন্তব্যটি করেন।
অভিযোগসমূহ: ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে সাঁতারুদের আনা অভিযোগের মূল বিষয়গুলি হল—সিনিয়র সাঁতারুকে অপমান: ক্ষিতীশ একজন সিনিয়র সাঁতারুকে জুনিয়ারদের সামনে অপমান করেছেন। সাঁতারুর বাবাকে অপমান: ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে দশ দিন অনুশীলনে আসতে না পারায় এক জন সাঁতারুর বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে অপমান করে এসেছেন ক্ষিতীশ। কৃতী সাঁতারুদের ক্লাব পরিবর্তন: ক্ষিতীশের জন্যই ক্লাবের কৃতী মহিলা সাঁতারুরা অন্য ক্লাবে চলে গিয়েছে। মহিলা সাঁতারুদের প্রতি চাপসৃষ্টি: ক্ষিতীশ পুরুষদের মতোই মহিলা সাঁতারুদেরও এক্সারসাইজ করাতে চেয়েছেন, সাজপোশাক নিয়ে বকাঝকা করেছেন, এমনকি জোর করে তাদের চুলও কেটে দিতে চেয়েছেন। শেষের কথা: অভিযোগের এই দীর্ঘ তালিকাই সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের বিরুদ্ধে পেশ করা হয়।
২. “টেবিলের মুখগুলি উজ্জ্বল হয়ে উঠল।”—টেবিলের মুখগুলি বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? মুখগুলির উজ্জ্বল হয়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের উল্লিখিত অংশে জুপিটার সুইমিং ক্লাবের মিটিংয়ে উপস্থিত ক্লাবের সম্পাদক ধীরেন ঘোষ এবং অন্যান্য সম্পাদকবৃন্দ যেমন—যজ্ঞেশ্বর ভট্টাচার্য, বদু চাটুজ্জে, হরিচরণ মিত্তির প্রমুখের কথা বলা হয়েছে।
মুখগুলি উজ্জ্বল হয়ে ওঠার কারণ: ক্ষিতীশের প্রতি অপমান প্রদর্শন: জুপিটার ক্লাবের তরফ থেকে সেদিন মিটিং ডাকার উদ্দেশ্যই ছিল সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ ওরফে ক্ষিদ্দাকে অপমান করা। অদক্ষ প্রশিক্ষকের তক্‌মা: সাঁতারুদের অভিযোগগুলি মিটিংয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়। তার সঙ্গে ক্ষিদ্দা যে সাঁতারু হিসেবে একেবারেই দক্ষ নন, তিনি যেকোনো প্রতিযোগিতাতেই অংশগ্রহণ করেননি এবং অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা হরিচরণ তাঁর থেকে অনেক বেশি দক্ষতার অধিকারী—এ কথাও বলা হয়। সাঁতারুদের দিয়ে সামনাসামনি অপমানের চেষ্টা: শেষপর্যন্ত ধীরেন ঘোষ প্রেসিডেন্ট বিনোদ ভড়কে বলেন যে, অভিযোগকারী সাঁতারুরা বাইরে অপেক্ষা করছে। প্রেসিডেন্ট চাইলে তারা নিজেরাই মিটিংয়ে এসে সব কথা বলতে পারে। ছাত্রদের দ্বারা সামনাসামনি এভাবে অপমানিত হতে চান না। বলেই ক্ষিতীশ সিংহ অভিযোগের যথার্থতা মেনে নেন আর তাতেই টেবিলের মুখগুলি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। প্রথমত, এর দ্বারা ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি মান্যতা পায়। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব থেকে ক্ষিতীশকে সরিয়ে হরিচরণকে নিয়ে আসার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়।
৩. “এঁরা সুইমারদের কোচ, নভিসদের নয়।”—এখানে ‘এঁরা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – ‘এঁরা’-র পরিচয়: জুপিটার সুইমিং ক্লাবের মিটিংয়ে ক্ষিতীশ কথাপ্রসঙ্গে বিশ্বসেরা ট্রেনারদের নাম জানান। ট্যালবট, কারলাইল, গ্যালাঘার, হেইনস, কাউন্সিলম্যান প্রমুখ প্রশিক্ষককে আলোচ্য অংশে ‘এঁরা’ বলা হয়েছে।
মন্তব্যটির বিশ্লেষণ: ক্ষিতীশের কাজের ধরন: জুপিটার সুইমিং ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষক ছিলেন ক্ষিতীশ সিংহ। ক্লাব এবং সাঁতারই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। ক্ষিতীশ সিংহ ক্লাবের পুরস্কারবিজয়ী সাঁতারুদেরও অনুশীলনে ফাঁকি বরদাস্ত করতেন না। এইসব কারণে সিনিয়র সাঁতারুরা ক্ষিতীশ সিংহের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ: সিনিয়র সাঁতারুর ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের লিখিত অভিযোগ আনে। ক্লাবের মিটিংয়ে শুরু থেকেই এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয় যে, সাঁতারু হিসেবে ক্ষিতীশের দক্ষতা একেবারেই নেই।ক্ষিতীশের মতামত: ক্ষিতীশও নিজের সীমাবদ্ধতা আংশিকভাবে মেনে নিয়ে জানান যে, সাঁতারু হিসেবে প্রতিযোগিতায় পদক পাওয়া তাঁর হয়নি। কিন্তু একাধিক বিখ্যাত সাঁতার প্রশিক্ষকদের নাম উল্লেখ করে ক্ষিতীশ বলেন যে, তাঁরা কেউই অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন নন। চ্যাম্পিয়ন না হয়েও তাঁরা দক্ষ সাঁতারুদের এমন প্রশিক্ষণ দেন, যাতে তারা বিশ্বসেরা হয়ে ওঠে। সদ্য শিখতে আসা সাঁতারুদের তাঁরা প্রশিক্ষণ দেন না। আসলে এক জন দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষক জলে নেমে সাঁতার শেখানোর কাজ করেন না, জলের উপরে থেকেই সাঁতারুদের দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেন—এটাই ছিল তাঁর মত।
৪. জুপিটারের যে সভায় ক্ষিতীশ সিংহ চিফ ট্রেনারের পদ ছেড়েছিলেন সেই সভার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর – প্রাক্কথন: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের তৃতীয় পরিচ্ছেদে জুপিটার ক্লাবের সভাটির বর্ণনা আছে। জুপিটারের সাঁতারুদের ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য এই সভা ডাকা হয়। অভিযোগগুলির অস্পষ্টতা: সভায় পৌঁছে ক্ষিতীশ সকলকে জানান, চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো স্পষ্ট নয়। হরিচরণ জানান ক্লাবের যে সাঁতারুরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মেডেল পেয়ে ক্লাবকে সম্মানিত করেছে, তাদের অনেককেই ক্ষিতীশ সিংহ অকারণে অপমান করায় তারা ক্লাব ছেড়েছে। দ্বিতীশের প্রতিবাদ: ক্ষিতীশ প্রতিবাদ করে বলেন, সাঁতারুরা কঠোর পরিশ্রমের পরিবর্তে আড্ডা দিয়ে বৃথা সময় নষ্ট করে। অভিযোগের তালিকা প্রদর্শন: হরিচরণ ক্ষিতীশের কথাগুলো না শুনেই অভিযোগের তালিকা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। বদু চাটুজ্জে বলেন, ক্ষিতীশের প্রতি সাঁতারুদের শ্রদ্ধা বা বিশ্বাস নেই। ক্ষিতীশ কোনো প্রতিযোগিতায় মেডেল পাননি, কিন্তু হরিচরণ ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, অলিম্পিকে গিয়েছিলেন।
ক্ষিতীশের মূল লক্ষ্য: ক্ষিতীশ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মেনে নিয়ে জানান যে সাঁতারুদের প্রতি কঠোর হয়েছেন শুধু এই আশায় যে জুপিটার ভারতসেরা হয়ে উঠুক। ক্লাবের সাঁতারুদের মধ্যে শৃঙ্খলা এবং মনোযোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কিন্তু হরিচরণ যখন বলেন যে, এই সাঁতারুদের দিয়েই ভালো ফল সম্ভব এবং তিনি তা পারেন তখন ক্ষিতীশ মুখ্য প্রশিক্ষকের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় কথা বলেন।ক্লাবের সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ: সকলেই চেয়েছিল ক্ষিতীশ তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে যান। তাই কেউই কোনো আপত্তি তোলেননি। ফলে ক্লাবের সঙ্গে ক্ষিতীশের চিরবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
৫. “ওরা হঠাৎ কাঠের মতো হয়ে গেল।”—ওরা কারা? ওদের এমন অবস্থার কারণ কী? 
উত্তর – ওদের পরিচয় : ‘ওরা’ হল জুপিটার ক্লাবের সাঁতারু শ্যামল, গোবিন্দ এবং আরও চার-পাঁচটি ছেলে।
এমন অবস্থার কারণ: শুরুর কথা: ক্ষিতীশ সিংহের বিরুদ্ধে ক্লাবের কর্মকর্তাদের মদতে শ্যামল, গোবিন্দ প্রমুখ সাঁতারুরা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনে। ক্ষিতীশকে মূলত তাঁর পদ থেকে সরানোর উদ্দেশ্যেই তারা লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার: ক্লাবের কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয় ক্ষিতীশ। ক্লাবের সাধারণ সভায় বিষয়টি আলোচনার জন্য আনা হয়। সেখানে তাঁর দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। কর্মাকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ট্রেনার হতে গেলে নামকরা সাঁতারু হওয়া প্রয়োজন। ক্ষিতীশ কখনও জলে নামেননি; কোনো প্রতিযোগিতাতেও অংশ চাননি ফলে, সাঁতারের ট্রেনার হওয়ার যোগ্যতা যে তাঁর নেই তা তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষিতীশ যে সাঁতারুদের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ আনেন, হরিচরণ জানিয়েছেন যে তাদের দিয়েই সাফল্য আনা সম্ভব। ক্ষিতীশের অভিযোগ অর্থহীন বলা হয়। নানাভাবে অপমান করে ক্ষিতীশকে জুপিটার ক্লাব ছাড়তে একপ্রকার বাধ্য করা হয়। অভিযোগকারী সাঁতারুদের প্রতিক্রিয়া: ক্লাবঘরের বাইরে আসতেই ক্ষিতীশ দেখেন তাঁর বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ এনেছে বলে সভায় জানানো হয়েছে, তারাই তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। ক্ষিতীশকে দেখে তাই তারা লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয়। ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে তারা যে অভিযোগগুলি এনেছে, তা একপ্রকার ষড়যন্ত্র তো বটেই। এই মিথ্যা ষড়যন্ত্রে তাদের নাম জড়ানোয় ও ক্ষিতীশের কড়া মেজাজের কথা মনে পড়ায় ভয়ে তারা কাঠ হয়ে যায়।
৬. “কতকগুলো স্বার্থপর লোভী মূর্খ আমায় দল পাকিয়ে তাড়িয়েছে বলে শত্রুর ঘরে গিয়ে উঠব?” বলেছে? উদ্ধৃত উক্তিটি থেকে বক্তার কোন্ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় ?
উত্তর – বক্তা ও প্রসঙ্গ: উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ‘জুপিটার সুইমিং ক্লাব’-এর সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ, ক্লাব এবং সাঁতারই যাঁর ধ্যানজ্ঞান। ক্লাবের অন্য সদস্য হরিচরণ মিত্র দীর্ঘদিন ধরে সাঁতারের প্রধান প্রশিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও হতে পারেননি। ক্ষিতীশ সিংহ ক্লাবের পুরস্কারবিজয়ী সাঁতারুদেরও অনুশীলনে কোনোরকম ফাঁকি বরদাস্ত করতেন না। সেকারণে এইসব সিনিয়র সাঁতারুরা ক্ষিতীশ সিংহের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তাদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই ক্লাবের সদস্যরা ক্ষিতীশকে সরাতে পেরেছিল। ক্ষিতীশ নিজের কাজের প্রতি সৎ ও নিষ্ঠাবান ছিলেন, কিন্তু কারও কোনোরকম ত্রুটিবিচ্যুতি তিনি বরদাস্ত করতেন না। তাই ক্লাবের অন্য সদস্যরাও তার প্রতি বিরূপ ছিল। ক্ষিতীশ নিজেই পদত্যাগ করে ক্লাব থেকে বেরিয়ে এলে ভেলো তাঁকে জুপিটারের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব অ্যাপোলোতে যোগদান করতে বলেছিল। তখনই ক্ষিতীশ সিংহ আলোচ্য কথাটি বলেছিলেন।
বক্তার মানসিকতা: উদ্ধৃত উক্তিটি থেকে বক্তার সৎ ও দৃঢ় মানসিকতার “পরিচয় পাওয়া যায়। ক্লাবের প্রতি মনোযোগের জন্য ক্ষিতীশ নিজের ব্যাবসা এমনকি সংসারকেও অবহেলা করেছেন। কিছু লোক দলবাজি করে তাঁকে তাড়ালেও ক্লাবের সঙ্গে তাঁর আত্মিক বন্ধন ছিন্ন হয়নি। তাই অ্যাপোলোতে যাওয়ার প্রস্তাবও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৭. “লক্ষ্যপূরণ করতে নাড়ির বাঁধন ছিঁড়ে বেরোতেই হবে।”—এই উপলব্ধির কারণ কোনি উপন্যাস অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর – শুরুর কথা: কোনি উপন্যাসে জুপিটার সুইমিং ক্লাবের মিটিংয়ে তীব্র অপমান করে ক্ষিতীশ সিংহকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। সাঁতার শেখানোই ছিল ক্ষিতীশের জীবনের সর্বস্ব। এই ঘটনার ফলে ক্ষিতীশ সম্পূর্ণ কর্মহীন হয়ে পড়েন। ক্ষিতীশের হতাশা এবং ভেলোর পরামর্শদান: দিঘির অন্ধকার জলের দিকে তাকিয়ে যখন তিনি হতাশার গভীরতাকে মাপার চেষ্টা করছেন, সেই সময়ই তাঁর কাছে আসে পূর্বপরিচিত যুবক ভেলো। সে ক্ষিতীশকে পরামর্শ দেয় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব অ্যাপোলোয় চলে যাওয়ার জন্য। ‘জুপিটারের শত্রু’ ক্লাবে যাওয়ার বিষয়ে ক্ষিতীশ প্রবল অনীহা দেখান। তখন ভেলো তাঁকে বোঝায় যে, অ্যাপোলোয় গেলে ক্ষিতীশ শেখানোর উপযুক্ত ছেলেমেয়ে পাবেন, জল পাবেন। তাঁর জীবন থেকে যে কাজ হারিয়ে গিয়েছে তা তিনি ফেরত পাবেন। অপমানের শোধ নেওয়ার জন্য শত্রুমিত্র বাছবিচার করে কোনো লাভ নেই—এ কথাও ভেলো বলে। দ্বন্দ্বের টানাপোড়েন: এসব কথায় ক্ষিতীশের মনের মধ্যে প্রবল দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। জুপিটারের সঙ্গে যেমন তাঁর নাড়ির সম্পর্ক ঠিক তেমনই সাঁতারু তৈরি করাও তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। সুতরাং লক্ষ্যপূরণ করতে গেলে সম্পর্ককে অস্বীকার করতেই হবে। এভাবেই ক্ষিতীশের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রবল টানাপোড়েন তৈরি হয়। |
৮. “একবার, শুধু একবার যদি তেমন কারুর দেখা পাই।”—বক্তা কে? তিনি কেন, কার দেখা পেতে চান?
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস থেকে গৃহীত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।
উদ্দিষ্টের সন্ধান ও তার কারণ: কথামুখ: ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ক্ষিতীশ জুপিটার সুইমিং ক্লাব থেকে বিতাড়িত হন। ট্রেনারের পদও চলে যায় তাঁর। কিন্তু জলই ছিল ক্ষিতীশের জীবন। এই জলের মধ্যেই তাঁর সাঁতারু তৈরি করার স্বপ্ন লুকিয়ে আছে। প্রতিভার সন্ধান: ক্ষিতীশ চেয়েছিলেন ভালো প্রতিভার সন্ধান পেলে প্রমাণ করে দেখিয়ে দেবেন কীভাবে চ্যাম্পিয়ন তৈরি করা যায়। প্রতিশোধের জাগরণ: কিন্তু জুপিটার থেকে বিতাড়িত হয়ে ক্ষিতীশের মনে তীব্র হতাশার সৃষ্টি হয়। জুপিটার থেকে তিনি এই অপমান প্রত্যাশা করেননি। তাই তাঁর মনে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ। প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছাও জেগে ওঠে তাঁর মধ্যে। জুপিটারের কর্মকর্তাদের তিনি দেখিয়ে দিতে চান তিনি চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে পারেন কি না। ক্ষিতীশের লক্ষ্যপূরণ: এই কাজে ক্ষিতীশের একান্ত প্রয়োজন একজন প্রতিভাবান সাঁতারুর। আর এমন একজন পেলে ক্ষিতীশ তাঁর লক্ষ্যপূরণের পথে সহজেই এগিয়ে যেতে পারবেন। তাঁর প্রতি হওয়া অপমান ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের যোগ্য জবাব দেবেন তিনি। এই কারণেই তিনি শিখতে আগ্রহী, এমন একজন সাঁতারুর খোঁজ পেতে চান, যাকে দিয়ে তাঁর এই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “এই দ্বিতীয়বার সে ওকে দেখলে”—কাকে, কার দ্বিতীয়বার দেখার কথা বলা হয়েছে? প্রথম ও দ্বিতীয় দেখা দুটি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ও দৃশ্যমান মানুষটির পরিচয়: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের চতুর্থ পরিচ্ছেদ থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে কোনিকে ক্ষিতীশ সিংহের দ্বিতীয়বার দেখতে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
দেখা দুটির বর্ণনা: প্রথম দেখা প্রথমবার ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে দেখেছিলেন বারুণীর দিন গঙ্গার ঘাটে। ভাটার টানে গঙ্গায় ভেসে যাওয়া আম পাওয়ার জন্য তিন জন সাঁতার কাটছিল। আমটা প্রথম জনের প্রায় হাতের মুঠোয় এসে গেলেও পেছন থেকে কেউ তার পাল্টা টেনে ধরার ফলে সে এগোতে পারে না। সেই সুযোগে পিছনের একজন আমটা ধরে ফেলে। তারপরেই কাদার মধ্যে তিন জনের মারামারি শুরু হয়ে যায়। প্রথম জন অর্থাৎ সরু কালো চেহারার মেয়েটাকে কাদার মধ্যে ফেলে তার পিঠের উপর চেপে বসে এক জন তার মুখটা কাদায় ঘষে দেওয়ার চেষ্টা করলেই সে পা ছুঁড়তে থাকে। এরপরই কালো মেয়েটি ওর উপর চড়ে বসা ছেলেটির আঙুলে কামড়ে দেয়। এবার মেয়েটি ছেলেটির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে। সেই কালো মেয়েটিই ছিল কোনি। গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে তাঁর সাঁতার আর লড়াই দেখেছিলেন ক্ষিতীশ।
দ্বিতীয় দেখা: দ্বিতীয়বার নেতাজি বালক সংঘের উদ্যোগে কুড়ি ঘণ্টা অবিরাম হাঁটা প্রতিযোগিতায় কোনিকে দেখেছিলেন ক্ষিতীশ সিংহ। বাইশ জন প্রতিযোগীর মধ্যে বিশিষ্ট চেহারার কোনিকে সহজেই চিনতে পারেন ক্ষিতীশ সিংহ। এই দ্বিতীয় দেখাতেই তিনি কোনিকে সাঁতার শেখার প্রস্তাব দেন এবং তার সঙ্গে আলাপ করে নেন।
২. “ক্ষিতীশ এইসব অপচয় দেখে বিরক্ত বোধ করে।”—কোন্ অপচয়ের কথা বলা হয়েছে? তা দেখে ক্ষিতীশের বিরক্ত বোধ করার কারণ কী ? য়ছে? 
উত্তর – অপচয়ের পরিচয়; সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের চিলড্রেন পার্কে অবিরাম হাঁটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ক্ষিতীশ একে ‘স্পোর্ট’ বলতে চান না। আর একবার তিনি গোলদিঘিতে ৯০ ঘণ্টা সাঁতার প্রতিযোগিতা দেখেছিলেন। তাঁর মতে সেটাও প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে না। কারণ সুশৃঙ্খল ট্রেনিং আর টেকনিক মারফত খেলা না হলে তার কোনো মূল্য নেই। এই ধরনের প্রতিযোগিতাকেই ক্ষিতীশ সময় ও শ্রমের অপচয় বলে মনে করেছেন।
বিরক্তবোধের কারণ: নিয়ন্ত্রণহীন প্রতিযোগিতা: ক্ষিতীশের কাছে অবিরাম হাঁটা প্রতিযোগিতা বা ৯০ ঘণ্টা সাঁতার প্রতিযোগিতা কোনো খেলা বলেই গণ্য হয় না। এই ধরনের প্রতিযোগিতায় কোনো শৃঙ্খলা বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কেবলই পাক খাওয়া: অবিরাম হাঁটায় বুদ্ধির দরকার হয় না, গতি লাগে না, পেশির শক্তির প্রয়োজন হয় না, পাল্লা দিতে হয় না অন্য একজন মানুষের সঙ্গে। ক্ষিতীশের মনে হয়েছে, এ যেন “বলদের মতো শুধু পাক খাওয়া।” নিয়মিত অনুশীলন: কিন্তু সাঁতারের একটা ব্যাকরণ আছে। তা মেনেই নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। না হলে তা হবে শুধুই শ্রম আর সময়ের অপচয়। এই কারণেই ক্ষিতীশ এই ধরনের প্রতিযোগিতা দেখে বিরক্ত বোধ করতেন।
৩. “কান্তি যে বলেছিল, লোকেরা এসে পিন দিয়ে টাকা আটকে দেয় জামায়, কই দিল না তো।”-কে কখন এ কথা বলেছে? বক্তার হতাশ হওয়ার কারণ কী? 
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কোনি এ কথা বলেছে। প্রসঙ্গ: নেতাজি বালক সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত কুড়ি ঘণ্টা অবিরাম হাঁটা প্রতিযোগিতা থেকে বেশিরভাগ প্রতিযোগী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিদায় নিলেও কোনি পুরো সময়টা হেঁটে প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ করে। সে তার বন্ধু কান্তির কাছে শুনেছিল এই ধরনের প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের উৎসাহিত করার জন্য লোকেরা তাদের জামার পিন দিয়ে টাকা আটকে দিয়ে যায়। কিন্তু এখানে সেরকম কিছু না হওয়ায় হতাশ কোনি তার বন্ধু ভাদু ও চণ্ডুকে এই কথা বলেছে।
কোনির হতাশ হওয়ার কারণ: পুরস্কার ও অর্থলাভের আশা: গরিব ঘরের মেয়ে কোনি কুড়ি ঘণ্টা হাঁটার মতো এরকম কষ্টকর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল মূলত পুরস্কার ও অর্থলাভের আশায়। টাকা দিয়ে উৎসাহদান: বন্ধু কান্তির কাছে কোনি শুনেছিল এই ধরনের প্রতিযোগিতায় দর্শকরা খুশি হয়ে প্রতিযোগীদের উৎসাহ দিতে তাদের জামায় টাকার নোট আটকে দেয়। অভাবের সংসারে কোনি যতটুকু পারে সাহায্য করতে চায়। আর তাই বৈশাখ মাসের কড়া রোদ্দুরেও সে দমে যায়নি, প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ করেছে। অপূর্ণ আশা: নিজের সমস্ত শক্তি নিঃশেষ করে দিয়েও কোনি টিকে থেকেছে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এত কষ্টের পরেও তার আশা `পূরণ না হওয়ায় সে হতাশ হয়ে এ কথা বলেছে।
8. “নেতৃত্ব দিতে হলে সামনে থাকতে হয়।”—কে, কাকে এ কথা বলেছে? এই কথা বলার পেছনে বক্তার কোন্ মানসিকতা কাজ করেছে?
উত্তর – বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: নেতাজি বালক সংঘের পৃষ্ঠপোষক বিষ্টুচরণ ধরকে প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন ক্ষিতীশ সিংহ।
বক্তার মানসিকতা: তির্যক রসিকতা: নেতাজি বালক সংঘ আয়োজিত কুড়ি ঘণ্টা ব্যাপী হাঁটা প্রতিযোগিতার শেষে সভাপতির ভাষণ দিতে উঠে বিষ্টুচরণ হাঁটা এবং ব্যায়ামের উপযোগিতার কথা বলেন। তারপর বলেন যে, সমস্ত জনসেবামূলক কাজে তিনি সংঘের তরুণ কর্মীদের পাশে আছেন। তখন মঞ্চের পেছন থেকে ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্টুচরণের প্রতি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। নেতা তিনিই, যিনি সবার আগে সব কাজে এগিয়ে আসবেন। বিষ্টুচরণ জননেতা হতে চান, ভোটে দাঁড়াতে চান— সেইজন্য তাঁর কর্তব্য স্মরণ করাতেই ক্ষিতীশ প্রশ্নোধৃত উক্তিটি করেছেন। তবে এই উক্তির আড়ালে এক তির্যক রসিকতাও আছে। যুক্তিহীন বক্তব্য: সাড়ে তিন মন ওজনের বিষ্টুচরণ যখন ২০ ঘণ্টা ‘হাঁটা’ প্রতিযোগিতায় পাশে থাকার কথা বলেন, তখন তা খুব একটা যুক্তিযুক্ত শোনায় না। তাঁর চেহারার সাথে যে তাঁর বক্তব্য মানানসই হচ্ছে না। তা বোঝাতেই ক্ষিতীশ আলোচ্য উক্তিটি করেন। নেতৃত্ব দিতে হলে সকলের সামনে থাকতে হবে, এ কথাই বিষ্টু ধরকে বুঝিয়ে দেন ক্ষিতীশ।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “চিৎকারটা হতাশায় ভেঙে পড়ল।”— কার চিৎকার? সেই চিৎকার হতাশায় ভেঙে পড়ার কারণ কী ? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: আলোচ্য অংশটি মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস থেকে গৃহীত। এখানে কোনির দাদা কমলের চিৎকারের কথা বলা হয়েছে।
চিত্কার হতাশায় পরিণত হওয়ার কারণ: সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনির অংশগ্রহণ: রবীন্দ্র সরোবরে এক মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে পঁচিশ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিল— বাইশটি ছেলে ও তিনটি মেয়ে। এই প্রতিযোগিতায় কোনিও অংশগ্রহণ করেছিল। কোনির সফলতার স্বপ্ন: কোনির দাদা কমল কোনিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত। সংসারের নিদারুণ অভাবে কমলের নিজের সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। রাজাবাজারের মোটর গ্যারেজে কাজ করেও অভাবের সংসারে কমলের ইচ্ছা, কোনি যেভাবেই হোক নামকরা সাঁতারু হয়ে উঠুক অথচ, সে সামর্থ্য তার নেই। রবীন্দ্র সরোবরে দর্শকের ভূমিকায় ছিল কমল। কোনির সাঁতারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে জলের পাড় বরাবর দৌড়াচ্ছিল, আর কোনির নাম ধরে চিৎকার করছিল। সে চাইছিল কোনি যেন প্রথম হয়। তাহলে তার ব্যর্থতার দুঃখ মুছে যাবে, আবার কোনির জন্য তার দেখা স্বপ্নও সফল হবে। তাই তার চিৎকারটা এত করুণ ছিল। কোনির ব্যর্থতা: কিন্তু কোনি পিছিয়ে পড়তেই কমলের চিৎকারটা যেন হতাশায় পালটে যায়। সম্ভবত সে বোঝে, প্রশিক্ষিত প্রতিযোগীদের ভিড়ে কোনির জেতা সম্ভব নয়।
২. “হঠাৎ কোনির দুচোখ জলে ভরে এল।”—কোনির দু-চোখ জলে ভরে এল কেন? এরপর কী হয়েছিল? 
উত্তর – কোনির দু-চোখ জলে ভরে আসার কারণ: তার প্রতি ব্যঙ্গ: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসে রবীন্দ্র সরোবরের এক মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনি সবার শেষে নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছায়। এজন্য “পরের বছরের কম্পিটিশনে প্রথম প্লেস পেত যদি আর একটু দেরিতে পৌঁছত।”— এরকম টিপ্পনীও তাকে হজম করতে হয়। বোনের জন্য এতক্ষণ ধরে চিৎকার করতে থাকা কমল এ কারণে অপমানিত বোধ করে। ক্ষিতীশের সাঁতার শেখানোর প্রস্তাব: এই সময়েই ক্ষিতীশ কোনিকে দ্বিতীয়বারের জন্য সাঁতার শেখার প্রস্তাব দেন। সাঁতার শিখলেই যে সাফল্য সম্ভব ক্ষিতীশ সেটা বুঝিয়ে দেন। এবার ক্ষিতীশের কথায় ভিতরের অপমানটাই কোনির চোখের জল হয়ে বেরিয়ে আসে।
পরবর্তী ঘটনা: ক্ষিতীশ জেনে নেন যে নীল শার্ট পরা লোকটি এতক্ষণ কোনির জন্য চিৎকার করছিল সে কোনির দাদা কমল। ক্ষিতীশ কমলের কাছে প্রস্তাব দেন যে, তিনি কোনিকে সাঁতার শেখাতে চান। কমল সাঁতারের প্রতি তার ভালোবাসার কথা ক্ষিতীশকে জানালেও অভাবের কারণে কোনিকে সাঁতার শেখানোর সামর্থ্য যে তার নেই সে–কথাও স্পষ্ট করে দেয়। সে মোটর গ্যারাজে কাজ করে। নিজের নামকরা সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন কমলকে বিসর্জন দিতে হয়েছে অভাবের জন্য। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালিয়ে কোনির সাঁতারের প্রশিক্ষণের জন্য খরচ করতে পারবে না বলে জানায় কমল। কোনির মধ্যে সাফল্যের সম্ভাবনা খুঁজে পেয়ে ক্ষিতীশ জানিয়ে দেন যে, কোনির সমস্ত দায়িত্বই তিনি গ্রহণ করবেন।
৩. “আমি আপনার বোনকে সাঁতার শেখাতে চাই।”—বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি উত্তরে কী জানিয়েছিলেন? 
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাস থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তির উত্তর: কথামুখ: রবীন্দ্র সরোবরে সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনি সবার শেষে নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছায়। তার জেদ ও হার না-মানার মনোভাব দেখে ক্ষিতীশ কোনির দাদা কমলের কাছে প্রস্তাব দেন যে, তিনি কোনিকে সাঁতার শেখাবেন। অভাবী সংসারের পরিচয়: কোনির দাদা প্রত্যুত্তরে নিজের পরিচয় দিয়ে জানায় যে, একসময় সে-ও অ্যাপোলোয় সাঁতার কেটেছে। তখন দূর থেকে সে ক্ষিতীশকে দেখেওছে। কিন্তু অভাবের কারণেই তাকে সাঁতার ছাড়তে হয়েছে। কোনিকে সাঁতার শেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করা যে তার পক্ষে সম্ভব নয় কমল সে-কথা ক্ষিতীশকে জানায়। অক্ষমতা প্রদর্শন: রাজাবাজারে একটা মোটর গারাজে কমল কাজ করে এবং ওভারটাইম করেও সে মাত্র দেড়শো টাকা পায়, যা দিয়ে তাদের সংসার চলে। এই অবস্থায় ক্ষিতীশ বিনা পারিশ্রমিকেই সাঁতার শেখাতে চাইলেও কমল নিজের অক্ষমতার কথা জানিয়ে যায়। আক্ষেপের সুর: কোনি ‘প্রথম হবে’ কথা দেওয়ায় কমল টাকা ধার করে কস্টিউম কিনে এনে দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতায় কোনি সর্বশেষ স্থান পেয়েছে—আক্ষেপের সঙ্গে এ কথাটাও সে জানিয়ে দেয়। শেষের কথা: তবে শেষপর্যন্ত কমল এটাও বলে যে, তার ইচ্ছা কোনি সাঁতার শিখুক। বড়ো হোক।
৪. “কমল হাঁপিয়ে পড়ল এই কটি কথা বলেই।”—কমল কী কথা বলেছিল? তার হাঁপিয়ে পড়ার কারণ কী?
উত্তর – কমলের বক্তব্য বিষয়: রবীন্দ্র সরোবরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনির সাঁতার দেখে ক্ষিতীশ নিজে থেকেই কোনির দাদাকে বলেন যে, কোনিকে তিনি সাঁতার শেখাবেন, এবং তার জন্য কোনো পয়সা দিতে হবে না। উত্তরে কোনির দাদা বলে যে, তারা খুবই গরিব। সাঁতার শিখতে হলে খাওয়াদাওয়ার খরচ আছে। তার বাবা প্যাকিং কারখানায় কাজ করতে গিয়ে টিবি রোগে মারা গেছেন। কমল নিজেও সাঁতার শিখত। সাঁতার কেটে এসে সে খিদেয় ছটফট করত, স্কুলে ঘুমিয়ে পড়ত। তারপর অভাবের কারণে সে সাঁতার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সাত ভাই-বোন আর মাকে নিয়ে তাদের বিরাট সংসার। গত বছর তার মেজো ভাই ট্রেনের ইলেকট্রিক তার গায়ে লেগে মারা গেছে, সেজো ভাই কাঁচরাপাড়ায় পিসির বাড়িতে থাকে। সে নিজে একটা মোটর গারাজে কাজ করে। ওভারটাইম করেও দেড়শো টাকার বেশি পায় না। তাতেই কোনোরকমে তাদের সংসার চলে।
হাঁপিয়ে পড়ার কারণ: অতিরিক্ত কাজ: কমল মোটর গারাজে অতিরিক্ত সময় কাজ করে। বাড়িতে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া হয় না। অভাবের সংসার বলে কোনোরকমে বেঁচে থাকার মতো খাবারটুকু জোগাড় করতেও তাকে হিমশিম খেতে হয়। টিবি রোগে আক্রান্ত: ক্ষিতীশের অনুমান, অপুষ্টিজনিত কারণে বাবার মতো কমলও বোধহয় টিবি রোগে আক্রান্ত। সেকারণে একটু কথা বলেই সে হাঁপিয়ে পড়ছে।
৫. “সে দায়িত্ব আমার”—উক্তিটি কে, কাকে বলেছিলেন? দায়িত্ব বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? এই উক্তির আলোকে বক্তাকে তোমার কেমন লেগেছে? 
উত্তর – বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের পঞ্চম পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ সিংহ কোনির দাদা কমল পালকে প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
দায়িত্বের পরিচয় : দায়িত্ব বলতে কোনির খাওয়া-পরা, তার মানসিকতা তৈরি করা, প্রতিদিন নিয়মিত অনুশীলন করানো প্রভৃতিকে বোঝানো হয়েছে। এ ছাড়া যদি কোনিকে বাড়িতে নিয়ে এসে রাখার প্রয়োজন হয় তখন শিষ্যরা এককালে যেমন গুরুগৃহে থাকত সেইরকমই কোনি এসে তাঁর বাড়িতে থাকবে বলে ক্ষিতীশ জানিয়েছিলেন।
বক্তার মূল্যায়ন: সাঁতারু তৈরি: সাঁতারু তৈরি করাই ছিল ক্ষিতীশ সিংহের জীবনের একমাত্র ব্রত। কোনি নামে মেয়েটিকে তিনি প্রথম গঙ্গার ঘাটে সাঁতার কাটতে দেখেছিলেন। রবীন্দ্র সরোবরের এক মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতাতেও তিনি কোনিকে লক্ষ করেছিলেন। এখানেই তিনি কোনির দাদা কমলের কাছে প্রস্তাব দেন যে, তিনি কোনিকে সাঁতার শেখাতে চান। পরোপকারী, দূরদি: কোনির দাদা ক্ষিতীশকে নিজেদের দারিদ্র্যের কথা অকপটে জানায়। এই কথা শুনে ক্ষিতীশ সিংহ তাঁর পরোপকারী, দরদি মানসিকতা নিয়ে কোনির সব দায়িত্ব গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সাঁতারঅন্তপ্রাণ: ক্ষিতীশ যথার্থ গুরুর মতো শিষ্যকে উপযুক্ত আহার ও বাসস্থান দেওয়ার পাশাপাশি তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার দায়িত্বও নিতে চেয়েছেন। এই দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর সাঁতার-অন্তপ্রাণ মানসিকতারও প্রকাশ ঘটেছে।
৬. “সিস্টেমটা খুব ভালো।”—কোন্ সিস্টেমের কথা বলা হয়েছে? সিস্টেমটা বক্তার ভালো লাগার কারণ কী?
উত্তর – সিস্টেমের পরিচয়: প্রাচীন কালে শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে থেকে লেখাপড়া শিখত। সেখানেই তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের উল্লিখিত অংশে সেই প্রথা বা সিস্টেমের কথাই বলা হয়েছে।
সিস্টেমটি ভালো লাগার কারণ: দায়িত্বগ্রহণ: রবীন্দ্র সরোবরে এক মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনির ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ভেলো বলে, “স্ট্রেংথই নেই, আদ্দেকের পর আর টানতে পারছিল না। ওকে এখন খুব খাওয়াতে হবে।” এ কথা শুনে ক্ষিতীশ বলেন, কোনির দায়িত্ব তিনিই নেবেন। ভেলোর সংশয় প্রকাশ: কিন্তু ক্ষিতীশের বাড়ির অবস্থাও তেমন ভালো নয়। কোনির দায়িত্ব নেওয়া মানে খাওয়া-পরার দায়িত্ব। ভেলো তাই সংশয় প্রকাশ করে বলে যে, ক্ষিতীশ সিংহ কীভাবে কোনির যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন। আর এমনটি হলে কোনিকে ক্ষিতীশের বাড়িতে এনে রাখতে হবে। ভেলোর কথা শুনে ক্ষিতীশ বলেন, “দরকার হলে রাখতে হবে। এককালে গুরুগৃহে থেকেই তো শিষ্যরা শিখতো।” গুরুগৃহের প্রতি ভালো লাগা: গুরুগৃহে থেকে শিষ্যদের শেখার ব্যাপারটা ক্ষিতীশের খুব ভালো লাগে। কারণ, ক্ষিতীশ মনে করেন, এই সিস্টেম অর্থাৎ রীতিটি শিক্ষার্থী এবং গুরু উভয়ের পক্ষেই মঙ্গলজনক। শিক্ষার্থীকে নিজের মতো করে গড়ে তোলার সুযোগ পাওয়া যায় বলেই ক্ষিতীশের ব্যবস্থাটি ভালো লেগেছিল।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “যেদিন তুমি ওইরকম স্ট্রোক দিতে শিখবে।”—কাকে দেখিয়ে এরূপ বলা হয়েছে? যার উদ্দেশে বলা হয়েছে সে কী বলেছিল? ‘ওইরকম স্ট্রোক’ বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ সিংহ জুপিটার ক্লাবের সাঁতারু সুহাসকে দেখিয়ে কোনির উদ্দেশে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
উদ্দিষ্টের প্রতিক্রিয়া: ক্ষিতীশ কোনিকে সুহাসের সাঁতার দেখিয়ে বলেন তাকেও সেভাবে সাঁতার কাটতে হবে। প্রথমে কোনি তা মনোযোগ দিয়ে শোনে না। পরে তাকে নাইলনের কস্টিউম কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন ক্ষিতীশ। তবে শর্ত থাকে, সুহাসের মতো তাকেও স্ট্রোক দিতে হবে। এই কথা শুনে কোনি তীক্ষ্ণ চোখে, সুহাসের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে বলেছিল যে সে দু-দিনেই শিখে নেবে।
‘ওইরকম স্ট্রোক’-এর পরিচয়: ক্ষিতীশ কোনিকে বলেছিলেন সুহাসকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে—কেমন করে সুহাসের হাতটা মাথার ঠিক .সামনে জলে প্রবেশ করছে, তারপর নীচে নামছে এবং প্রসারিত করে ঊরু পর্যন্ত যাচ্ছে। তিনি সুহাসকে দেখিয়ে কোনিকে বলেছেন যে, খুব দ্রুত হাত চালানো প্রয়োজন, তবে তা এলোপাথাড়ি জলে আঘাত করা নয়। কবজি শক্ত রেখে মসৃণভাবে জলের মধ্যে হাত প্রবেশ করাতে হবে। ক্ষিতীশ বলেন এজন্য রোজ অনুশীলন জরুরি। শুধু নিশ্বাস নেওয়ার জন্য মাথা ঘুরবে। বেশি মাথা নাড়ালে গতি কমে যাবে। সুহাসের কাঁধটা জল থেকে উঠে আছে কী ভঙ্গিতে সেটাও কোনিকে দেখান ক্ষিতীশ সিংহ। সুহাসের স্ট্রোক ছিল নিখুঁত। ক্ষিতীশ সিংহ ‘ওইরকম স্ট্রোক’ শব্দটি ব্যবহার করে কোনিকে বিষয়টা বোঝাতে চেয়েছেন।
২. “আমি কি নেমকহারাম হলাম।”—বক্তা কে? তাঁর এ কথা মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্ষিতীশ সিংহ হলেন প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা।
এ কথা মনে হওয়ার কারণ: ষড়যন্ত্রের শিকার: ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন জুপিটার ক্লাবের মুখ্য সাঁতার প্রশিক্ষক। কিন্তু ধীরেন ঘোষ, হরিচরণ মিত্রেরা ষড়যন্ত্র করে সেই পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করে। নামকরা সাঁতারু তৈরির প্রতিজ্ঞা: এরপর কোনিকে গঙ্গার ঘাট থেকে আবিষ্কার করেন ক্ষিতীশ। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন এই মেয়েটিকেই তিনি নামকরা সাঁতারু তৈরি করবেন। অপদস্থ হওয়া: নিজের তত্ত্বাবধানে সাঁতার শেখাবেন বলে কোনিকে জুপিটার ক্লাবে নিয়ে আসেন ক্ষিতীশ। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ক্ষিতীশকে অপদস্থ করার জন্যই কোনিকে জুপিটারে ভরতি নেওয়া হয় না। ক্ষিতীশ এতে রেগে যান ভেবেছিস আর বুঝি ক্লাব নেই। পৃথিবীতে শুধু জুপিটারই একমাত্র ক্লাব।”—বলে কোনিকে নিয়ে আসেন পাশের অ্যাপোলো ক্লাবে। মানসিক দ্বন্দ্ব: অ্যাপোলোর গেটে এসেই ক্ষিতীশের মনে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কারণ অ্যাপোলো ছিল জুপিটারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব। আসলে জুপিটার থেকে বিতাড়িত হয়েও ক্ষিতীশ ক্লাবের প্রতি তাঁর মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। তাই অ্যাপোলোতে পা রেখেই নিজেকে তাঁর ‘নেমকহারাম’ মনে হয়েছে।
৩. “একটা মেয়ে, পেয়েছি, তাকে শেখাবার সুযোগটুকু দিও তাহলেই হবে।”—বক্তার এমন কথা বলার কারণ কী? এ কথায় বক্তার কোন্ মানসিকতার পরিচয় পাও?
উত্তর – এমন কথা বলার কারণ: কোনিকে জুপিটারে ভরতি করতে গিয়ে ক্ষিতীশকে চূড়ান্তভাবে অপমানিত হতে হয়। বলা হয় যে, কোনিকে ট্রায়াল দিতে হবে। কিন্তু ট্রায়ালে পাস করেও কোনি ভরতি হতে পারে না, “জলে আর জায়গা নেই”—এই যুক্তিতে। শেষ-ধৈর্যটুকুও হারিয়ে ক্ষিতীশ পৌঁছে যান চিরশত্রু ক্লাব অ্যাপোলোর গেটে। তাদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট নকুল মুখুজ্জেকে জুপিটার থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়ার খবর জানিয়ে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।
বক্তার মানসিকতা : জাত প্রশিক্ষক: ক্ষিতীশের কাছে কোনিকে সাঁতার শেখানো এবং সফল সাঁতারু হিসেবে গড়ে তোলাই সবথেকে বেশি গুরুত্ব পায়। যে ক্ষিদ্দা জুপিটারের প্রশিক্ষকের পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরেও ভেবেছিলেন—“কতকগুলো স্বার্থপর লোভী মূর্খ আমায় দল পাকিয়ে তাড়িয়েছে বলে শত্রুর ঘরে গিয়ে উঠব?”—সেই, তিনিই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনিকে গড়ে তোলার জন্য অ্যাপোলোর দ্বারস্থ হন। এখানে ক্ষিদ্দার মধ্যে এক জাত প্রশিক্ষককে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণই সাধনা: যে চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু তৈরি করে তাদের সফলতাগুলিকে নিজের কৃতিত্ব বলে দাবি করে না, বরং প্রতিভা খুঁজে এনে তাকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে সেই-ই যথার্থ প্রশিক্ষক। আর এই প্রশিক্ষণ ক্ষিতীশের কাছে ছিল সাধনার মতো।
৪. “বুকের মধ্যে প্রচণ্ড মোচড় সে অনুভব করল। চিকচিক করে উঠল চোখ দুটো”—কার, কেন এমন হয়েছিল? 
উত্তর – উদ্দিষ্টের পরিচয়; মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ সিংহের এই অবস্থা হয়েছিল।
এমন অবস্থার কারণ: নোংরা ষড়যন্ত্রের শিকার: জুপিটার সুইমিং ক্লাবের সঙ্গে ক্ষিতীশ সিংহের ছিল নাড়ির সম্পর্ক। সাঁতারু তৈরি করাই ছিল তাঁর জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। এই মানুষটি শেষপর্যন্ত ক্লাবের কর্মকর্তাদের নোংরা ষড়যন্ত্রের শিকার হন। হরিচরণের মতো কিছু স্বার্থপর, সুবিধালোভী মানুষের চক্রান্তে তিনি ক্লাবের চিফ ট্রেনারের পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সাঁতার অন্তপ্রাণ : কিন্তু চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু তৈরি করা যার জীবনের সর্বস্ব তিনি থেমে থাকতে পারেন না। কোনি নামে মেয়েটির মধ্যে ক্ষিতীশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখে তাকে জুপিটার ক্লাবে ভরতি করতে চান। কিন্তু ক্লাবে ক্ষিতীশের অবদানকে মনে না, রেখে কোনিকে ট্রায়াল দিতে বলা হয়। তাতে পাস করার পরেও কোনিকে ভরতি নেওয়া হয় না। সম্পর্কের অবসান: অপমানিত ক্ষিতীশ বাধ্য হয়েই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপোলো ক্লাবের দিকে পা বাড়ান। জুপিটারের কমলদিঘি, বড়ো ঘড়ি ইত্যাদির সঙ্গে তাঁর যে প্রাণের সম্পর্ক ও স্মৃতি যুক্ত ছিল তা ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বুকের মধ্যে একটা প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করেন ক্ষিতীশ সিংহ। তাঁর চোখের কোনায় জল দেখা দেয়।
৫. “এটা হল যুদ্ধ–ন্যায় অন্যায় বলে যুদ্ধে কিছু নেই। শত্রু মিত্র বাছবিচার করে কোনো লাভ নেই।”—কে, কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেছে আলোচনা করো।
উত্তর – বক্তা: কোনি উপন্যাসে এই মন্তব্যটি করেছে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশের বিশ্বস্ত অনুচর ভেলো।
ঘটনার প্রেক্ষিত: কোনিকে সাঁতার শেখাতে গিয়ে জুপিটারের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষিতীশ জুপিটারের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব অ্যাপোলোতে যান। তিনি নিজে কোনোদিনও অ্যাপোলোর লোক হবেন না—অ্যাপোলোর ভাইসপ্রেসিডেন্ট নকুল মুখুজ্জেকে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন যে, কোনি যদি কোনো সাফল্য পায় তাহলে সেই সাফল্য হবে অ্যাপোলোর। কিন্তু এ কথা বলার পরেও ক্ষিতীশের মনের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে। সেদিন তাঁর সারারাত ঘুম আসে না এবং অ্যাপোলোয় গিয়ে তিনি ঠিক কাজ করেছেন কি না—এই বোধ তাঁকে বিচলিত করে। এই অবস্থায় পরদিন সকালেই ভেলো তাঁর বাড়িতে আসে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ক্ষিদ্দা জুপিটার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে এই ভেলোই তাঁকে বলেছিল অ্যাপোলোতে যোগ দেওয়ার জন্য। এখন অ্যাপোলোয় যোগদানের খবর শুনে ভেলো তাঁকে সমর্থন জানায়। কারণ তার মতে যুদ্ধে কোনো ন্যায়-অন্যায়ের জায়গা নেই, শত্রুমিত্রেরও কোনো বাছবিচার নেই। জুপিটারের অপমানের প্রতিশোধ নিতে গেলে পুরোনো স্মৃতিগুলোকে ভুলে যেতেই হবে। এভাবে ক্ষিতীশকে ভেলো আবেগ বর্জন করে আরও বাস্তববাদী হওয়ার পরামর্শ দেয়।
৬. “ক্ষিতীশের একটা হাত তোলা। চোয়াল শক্ত। পুরু লেন্সে ভেঙে চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসবে।”—কোন্ ঘটনায়, কেন ক্ষিতীশের এরূপ অবস্থা হয়েছিল লেখো। 
উত্তর – ঘটনার বর্ণনা: ‘কোনি’ উপন্যাসে কোনিকে জুপিটারে ভরতি করতে গিয়ে ক্ষিতীশকে অপমানিত হতে হয়। একরকম বাধ্য হয়ে তিনি এসেছিলেন অ্যাপোলোতে। সেখানকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট নকুল মুখুজ্জে তাঁকে সম্মান জানিয়ে গ্রহণ করেছেন, আবার কোনিকে সাঁতার শেখারও সুযোগ করে দিয়েছেন। এই ঘটনায় ক্ষিতীশ দুশ্চিন্তামুক্ত হলেও তাঁর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
এরূপ অবস্থার কারণ: জুপিটারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ: জুপিটারকে এরূপ অবস্থার কারণ: জুপিটারের সঙ্গে সম্পর্কছেদ: জুপিটারকে ক্ষিতীশ ভালোবাসেন। দীর্ঘদিন পর সেই ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কছেদ হওয়ার বেদনায় তিনি দুঃখিত হয়ে পড়েন। মানসিক যন্ত্রণা অনুভব: সারারাত ঘুম আসে না ক্ষিতীশের। ঘুরে-ফিরে একটাই প্রশ্ন তাঁর মনে আসে, “আমি কি ঠিক কাজ করলাম? অ্যাপোলোয় যাওয়া কি উচিত হল?” একটা কঠিন মানসিক যন্ত্রণা ক্ষিতীশকে অস্থির করে তোলে। ভেলোর মন্তব্য: এমন সময় ভেলো এসে ক্ষিতীশকে অ্যাপোলোয় যোগদানের জন্য প্রশংসা করে। ক্ষিতীশ কিন্তু মনের কষ্টের কারণে চুপ করেই থাকেন। এরপর ভেলো বলল, “জুপিটারকে এবার শায়েস্তা করা দরকার। বুঝলে ক্ষিদ্দা, তুমি শুধু ওই নাড়ির সম্পর্কটম্পর্ক লো একটু ভুলে যাও…”। এমনিতেই জুপিটার আর অ্যাপোলোর টানাপোড়েনে ক্ষিতীশের মনটা ক্ষতবিক্ষত ছিল। ভেলোর এই কথায় ক্ষিতীশের যাবতীয় কষ্ট এবং রাগ তার শরীরী প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “সকাল সাড়ে ছটা থেকে এই ব্যাপার চলেছে, এখন সাড়ে আটটা”—‘এই ব্যাপার টা কী বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের সপ্তম পরিচ্ছেদ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত হয়েছে। প্রাণপণ প্রচেষ্টা: ‘এই ব্যাপার’ বলতে কোনিকে সাঁতার শেখানোয় ক্ষিতীশ সিংহের প্রাণপণ প্রচেষ্টাকে বোঝানো হয়েছে। একজন অভিজ্ঞ সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি কোনির মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা লক্ষ করেছিলেন। অনুশীলনে কমলদিঘির জলে দু-সপ্তাহ হল ক্ষিতীশ কোনির অনুশীলন শুরু করেছেন। তার হাতের কনুই যথাযথ বাঁকানো হচ্ছে না, হাত তক্তার মতো লাফিয়ে উঠছে, বাম হাতটা এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাম দিকের কাঁধটাও এগিয়ে যাচ্ছে এবং ডান দিকের কাঁধটা পিছিয়ে যাচ্ছে, ফলে স্কোয়ার শোল্ডার পোজিশন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে—কোনির অনুশীলনের সময় এই ত্রুটিগুলি ডাঙায় দাঁড়িয়ে ক্ষিতীশ দেখেন। তারপর তিনি কোনিকে হাতের আঙুল জল টানবার সময় ফাঁকা করতে মানা করেন এবং বলেন, হাত মসৃণভাবে জলের মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। সকাল সাড়ে ছটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত একটানা এই প্রশিক্ষণ চলেছিল। শেষের কথা: কোনির সাঁতারের পদ্ধতির পরিবর্তন ও ত্রুটি মেরামতের মাধ্যমে তাকে চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু হিসেবে তৈরি করতে ক্ষিতীশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাই সময়ের হিসেব তিনি ভুলে যান।
২. “ক্ষিতীশ কথাটা বলেই মনে মনে ব্যথিত হল।”—ক্ষিতীশ কাকে, কী কথা বলেছিলেন? তাঁর ব্যথিত হবার কারণ কী?
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন ও তার প্রতি ক্ষিতীশের বক্তব্য: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের সপ্তম পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ কোনিকে বলেছিলেন যে, তিনি ওকে প্রতিদিন দুটো ডিম, দুটো কলা আর দুটো টোস্টের ব্যবস্থা করে দেবেন; কিন্তু তার বদলে কোনিকে আরও এক ঘণ্টা জলে থাকতে হবে।
ব্যথিত হবার কারণ: কোনির অক্লান্ত পরিশ্রম: ক্ষিতীশ কোনিকে অ্যাপোলো ক্লাবে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন। কঠিন ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে কোনিকে গড়ে তোলার জন্যই ক্ষিতীশের আপ্রাণ চেষ্টা কোনিও গুরুর নির্দেশ মেনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছিল। নানারকম ফরমাশ তাকে পালন করতে হচ্ছিল। জলের ধারে সিমেন্ট বাঁধানো সরু পাড়ে দাঁড়িয়ে ক্ষিতীশ সমানে নির্দেশ দিয়ে চলেছিলেন। কোনির অসহায়তার সুযোগ: কোনি শেষপর্যন্ত বিরক্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে জল থেকে উঠে আসে। ক্ষিতীশ বুঝতে পারেন কোনির খিদে পেয়েছে। তিনি ওকে ডিম, কলা আর টোস্টের লোভ দেখান। কোনি তাতে রাজি হয়ে যায়। ক্ষিতীশ বলেন, তাহলে তাকে আরও এক ঘণ্টা জলে থাকতে হবে। এই কথাটা বলেই ক্ষিতীশ মনে মনে ব্যথিত হন। কারণ তিনি জানেন, লোভ দেখিয়ে খিদেয় অবসন্ন কোনিকে আরও পরিশ্রম করানো আসলে অমানবিক। কোনির অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাকে অতিরিক্ত খাটিয়ে নেওয়া, তার শরীরের ওপর অত্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। এই উপলব্ধিই ক্ষিতীশকে কষ্ট দেয়। কিন্তু সাঁতারু গড়ে তোলার লক্ষ্যে অবিচল ক্ষিতীশ এই ভাবনাকে উপেক্ষা করে।
৩. “সাধ্যের বাইরে গিয়ে নিজেকে ঠেলে নিয়ে যেতে হবেই, নয়তো কিছুতেই সাধ্যটাকে বাড়ানো যাবে না।”—এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার যে মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – বক্তার মনোভাব: অসন্তোষ প্রকাশ: অ্যাপোলোতে কোনিকে উত্তর | সাঁতার শেখাতে গিয়ে শুরুর দিকে কোথাও যেন কোনি এবং ক্ষিদ্দার মধ্যে একটা বোঝাপড়ার অভাব দেখা যায়। সতেরো দিনেও স্ট্রোক শিখতে না পারার জন্য ক্ষিদ্দা কোনির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ক্ষিদ্দার এই খুঁতখুঁতে স্বভাব কোনিও মেতে নিতে পারে না। অনেকক্ষণ ট্রেনিংয়ের পর “আমার ভালো লাগছে না”—এই কথা বলে সে জল থেকে উঠে যায়। অমানবিকতা ও কঠোরতা: ক্ষিতীশ তাকে সাঁতারের পোশাকের লোভ দেখালেও কোনো কাজ হয় না। তখন তাকে খাবারের লোভ দেখানো হয় এবং তাতেই কোনি থমকে দাঁড়ায়। সে শর্ত দেয় যে, খাবার সে বাড়িতে নিয়ে যাবে। সুযোগ বুঝে ক্ষিতীশও পালটা শর্ত দেন, “তাহলে আরও এক ঘণ্টা জলে থাকতে হবে।” কিন্তু এই কথাটা বলার পরেই ক্ষুধার্ত কোনির এই অসহায়তার সুযোগ নেওয়াকে ক্ষিতীশের অমানবিকতা বলে মনে হয়।প্রশিক্ষক সত্তার প্রবলতা: একইসঙ্গে ক্ষিদ্দার ভিতরের প্রশিক্ষকের সত্তাটি প্রবল হয়ে ওঠে। ক্ষিদ্দার মনে হয় সাধ্যের বাইরে বেরোতে পারলেই সাধ্যকে অতিক্রম করা যাবে। এর জন্য হয়তো যন্ত্রণায় লুটিয়ে পড়তে হবে, শরীর টলবে, কিন্তু সেই যন্ত্রণাকে হারাতে না পারলে সাফল্য আসবে না। নিজের মনেই বলা এই মন্তব্য ক্ষিতীশকে বল ও নৈতিক সমর্থন জোগায়, যার জেরে সে সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠে কোনিকে আরও অনুশীলন করাতে থাকে।
৪. “যন্ত্রণার সঙ্গে পরিচয় না হলে, তাকে ব্যবহার করতে না শিখলে, লড়াই করে তাকে হারাতে না পারলে কোনোদিনই তুই উঠতে পারবি না।”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – উৎস: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের সপ্তম পরিচ্ছেদ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত হয়েছে। প্রসঙ্গ: ক্ষিতীশ কোনিকে সফল সাঁতার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাকে কঠোর অনুশীলনের মধ্যে রেখেছিলেন। ক্ষিতীশ জানেন, যতই ক্লান্তি আসুক, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই— কোনিকে সেই উপদেশ দিতে গিয়েই ক্ষিতীশ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: অবিরাম পরিশ্রম: ক্ষিতীশের কড়া নজরদারিতে অবিরাম পরিশ্রমে কোনির দেহমন অবসন্ন হয়ে পড়ে। তার ওপর খিদের তাড়নায় সে বারে বারে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। ক্ষিতীশও নাছোড়বান্দা। ডিম, কলা আর টোস্টের লোভ দেখিয়ে ক্ষিতীশ কোনিকে আরও এক ঘণ্টা জলে রাখতে চান। লক্ষ্যপূরণ: ক্ষিতীশ বুঝতে পারেন কোনির ওপর অমানুষিক অত্যাচার করা হচ্ছে। কিন্তু কোনিকে থামলে চলবে না। লক্ষ্যে তাকে পৌঁছোতেই হবে। তাতে জীবন থাক আর যাক। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া কখনও সাফল্য আসে না। তাই কোনিকে যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই করা শিখতে হবে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেই যন্ত্রণাকে হারাতে হবে। যার জীবনে যন্ত্রণা নেই, বাধা নেই, তার জীবনে সাফল্য বলে কিছু হয় না। কঠিন প্রতিজ্ঞা: কঠিন প্রতিজ্ঞায় মানুষ অসাধ্যকেও সাধন করতে পারে। কোনিকে তাই করতে হবে। এই উপদেশের সাহায্যেই ক্ষিতীশ কোনিকে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। তাকে লড়াকু হয়ে সফল হয়ে উঠতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
৫. “কম্পিটিশনে পড়লে মেয়েটা তো আমার পা ধোয়া জল খাবে।”—বক্তা কে? কী প্রসঙ্গে তার এই উক্তি? এই উক্তিতে বক্তার কীরূপ মনোভাব ফুটে উঠেছে? 
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের সপ্তম পরিচ্ছেদে বাংলার চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু অমিয়া তার সহ-সাঁতারু বেলাকে এই কথাগুলি বলেছে।
প্রসন: ক্ষিতীশ সিংহ কমলদিঘিতে কোনিকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন। সেইসময় অ্যাপোলো ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসে অমিয়া এবং বেলা। তারা একসময় ক্ষিতীশের ছাত্রী ছিল, কিন্তু ক্ষিতীশকে তারা ঘোর অপছন্দ করে। ক্ষিতীশের বর্তমান ছাত্রী সদ্য সাঁতার শিখতে আসা কোনির হাতের স্ট্রোক নিয়ে তারা কৌতুক করে। তখনই অহংকারী অমিয়া এই মন্তব্যটি করে।
বক্তার মনোভাব: ঔদ্ধত্য এবং অহংবোধ: দীর্ঘদিনের সাঁতারু অমিয়া বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন। অপরদিকে কোনি সদ্য সাঁতার শিখতে শুরু করেছে। তুলনা করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়, অমিয়া অনেক দক্ষ। একজন নবীন সাঁতারুর সাঁতার কাটার পদ্ধতি নিয়ে এমন মন্তব্য, তার ঔদ্ধত্য এবং অহংবোধেরই পরিচয় দেয়। অহংকার যে পতনের কারণ হতে পারে এটা হয়তো অমিয়ার জানা ছিল না। কাহিনির শেষে অমিয়ার সেই পতন দেখা যাবে। হরিচরণের মাধ্যমে তাদের কাছে খবর ছিল—“স্ফিদ্দা নাকি জুপিটারকে ডাউন দেবে ওই মেয়েটাকে দিয়ে।” অখেলোয়াড়ি মানসিকতা: কোনিকে বিপক্ষ ধরে নিয়ে অমিয়া তাকে তুচ্ছ ও হেয় করতে চেয়েছে। তার এই আচরণ একদমই খেলোয়ারসুলভ নয়। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অমিয়ার পূর্ব ও অহংকারের চরম প্রকাশ ঘটেছে।
৬. “আমার ভবিষ্যৎ”–কাকে নিয়ে বক্তার এরূপ মন্তব্য? এই উক্তিতে বক্তার কী রূপ মনোভাব ফুটে উঠেছে? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের সপ্তম পরিচ্ছেদে ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে নিয়ে বিষ্টুচরণ ধরের কাছে এরূপ মন্তব্য করেছেন।
বক্তার মনোভাব: প্রকৃত লক্ষ্য: দীর্ঘদিন ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন জুপিটার ক্লাবের সাঁতারের প্রশিক্ষক। পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে সাঁতারু তৈরি করাই ছিল তাঁর জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য। এই কাজে কঠোর ও নিয়মনিষ্ঠ ছিলেন। এর জন্য ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতিস্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু ক্লাবের কিছু স্বার্থপর, সুবিধাবাদী মানুষের চক্রান্তে তিনি জুপিটার ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষকের পদ ছাড়তে বাধ্য হন।স্বপ্নপূরণ: কোনির মধ্যে ক্ষিতীশ ভবিষ্যতে বড়ো সাঁতারু হওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ করে তাকে কেন্দ্র করেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। লড়াই করে বাঁচা এবং সংগ্রাম ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করার প্রবল বাসনা তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিরোধিতার জবাব: ক্লাবের যেসমস্ত মানুষ তাঁকে অপমান করেছেন, যাদের ষড়যন্ত্রে তাঁর স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে বসেছিল, তাদের সমস্ত ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, অপমান এবং চক্রান্তের জবাব ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র হাতিয়ার ছিল কোনি। সাঁতারই যার কাছে সর্বস্ব, সেই ক্ষিতীশ হেরে না গিয়ে কোনির মাধ্যমে নিজের জীবনের আশা পূরণ করতে চেয়েছেন, তাই বিষ্টু ধরকে উদ্দেশ্য করে তিনি উল্লিখিত মন্তব্য করেছেন।
৭. “ভালোবাসলে সবকিছু করিয়ে নেওয়া যায়, মানুষকে দিয়েও।”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – উৎস: প্রখ্যাত সাহিত্যিক মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত। প্রসঙ্গ : ক্ষিতীশের দুটি পোষা বিড়াল ছিল। বিষ্টু ধর ক্ষিতীশের বাড়ি এসে বিড়াল দুটিকে দেখে একটু ভয় পেয়েছিলেন। ক্ষিতীশ বিশু আর খুশি নামক বিড়াল দুটিকে ধমক দিতেই ওরা বারান্দা থেকে নেমে যায় । এই দৃশ্য দেখে বিষ্টু ধর বলেছিলেন, “দারুণ ট্রেনিং তো।” বিষ্টু ধরের এই কথা প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ আলোচ্য উক্তিটি করেন।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ : কথামুখ: বিড়ালের প্রতীকে ক্ষিতীশ এখানে মানুষের কথা বলতে চেয়েছেন। সহমর্মিতাবোধ: মানুষকে ভালোবাসতে পারলে পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড় হয়। গড়ে ওঠে সহমর্মিতা। ক্ষিতীশ কোনিকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসার কারণেই কোনি ক্ষিতীশের যাবতীয় নির্দেশ মেনে চলে, ক্ষিতীশের নির্দেশ গুরুবাক্য মনে করে পালন করার চেষ্টা করে। প্রীতির সম্পর্ক: মানুষে-মানুষে প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠলে কর্মের ক্ষেত্রটি মসৃণ হয়। আবার বিষ্টু ধরের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। বিষ্টু ধর ভোটে দাঁড়াতে চায়। বিনোদ ভড় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। এই নির্বাচনে দাঁড়াতে গেলে জনসংযোগ বাড়াতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই জনগণ বিষ্টু ধরের পক্ষে রায় দেবেন। ভালোবেসে মানুষের জন্য কাজ করলে তারাও খালিহাতে ফিরিয়ে দেবে না।
৮. “গণতন্ত্রে এই স্বাধীনতা আছে—লড়াইয়ের স্বাধীনতা।”—কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি ? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – উৎস: উদ্ধৃতাংশটি বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মতি নন্দীর কোনি | উপন্যাস থেকে গৃহীত। প্রসঙ্গ: বিদেশে বড়ো বড়ো খেলোয়াড়দের খাওয়াপরা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। সেখানে সরকারই তাদের গুরুত্ব বুঝে সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেয়। ভারতে বা বাংলায় তা হয় না, এখানে খেলোয়াড়কে লড়াই করে সব কিছু আদায় করে নিতে হয়। এই প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: বিদেশে সরকারই খেলোয়াড়দের দায়িত্ব গ্রহণ করে কিন্তু আমাদের দেশে নিজের চেষ্টায় অধিকার অর্জন করতে হয়। নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তিকে নিজেকেই নিজের লড়াই করতে হয়। গণতন্ত্রে লড়াই-এর স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সরকারি সাহায্যের দাবি আদায়ের জন্য ব্যক্তিকে লড়াই-এর মধ্য দিয়ে নিজেকে সফল করে তুলতে হয়। লড়াই করেই তাকে তার প্রাপ্য অধিকার বুঝে নিতে হবে। প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে হবে যে, সে প্রতিভাবান। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে তার চলবে না। ক্ষিতীশ আসলে মানুষের নিরলস শ্রম এবং লড়াইকে মর্যাদা দিতেই আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৯. “সাঁতারু অনেক বড়ো সেনাপতির থেকে।”—বক্তা কে? এই কথার মধ্য দিয়ে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? অথবা, “সাঁতারু অনেক বড়ো সেনাপতির থেকে।”—বক্তাকে অনুসরণ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – বক্তা: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মতি নন্দীর কোনিউপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ক্ষিতীশ আলোচ্য উক্তিটির বক্তা।
বক্তার বক্তব্য বিষয়: কথামুখ: ক্ষিতীশ বিষ্টু ধরকে একটা বক্তৃতা লিখে দিয়েছিলেন। সেই বক্তৃতায় খেলোয়াড়দের গৌরবে দেশ আলোকিত হয় এরকম কথা লেখা ছিল। বিষ্টু ধর একমনে সেই বক্তৃতা পড়ছিলেন। মাঝখানে তিনি দম নেওয়ার জন্য একটু থামলে ক্ষিতীশ আলোচ্য উক্তিটি করেন। গৌরব অর্জন: ক্ষিতীশ বলতে চেয়েছেন, দেশের ছেলেমেয়েদের কাছে একজন প্রকৃত নায়কই আদর্শ স্থাপন করে। সে সাঁতারুই হোক আর সেনাপতিই হোক—দেশের গৌরব নির্ভর করে তার কৃতিত্বের ওপর। সেনাপতির সম্মান: ক্ষিতীশের মতে সেনাপতি অপেক্ষা সাঁতারুই বড়ো। কেন-না, সেনাপতি দেশরক্ষার জন্য যুদ্ধ করে। যুদ্ধে মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এই প্রাণহানির জন্য সে নিজের দেশের মানুষের কাছে সম্মান পেলেও প্রতিপক্ষ দেশের মানুষের কাছে পায় ঘৃণা। সাঁতারুর সম্মান: সাঁতারুর সম্মান কোনো দেশকালের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। দেশে দেশে, কালে কালে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের হৃদয়ে একজন কৃতী সাঁতারুর জন্য শ্রদ্ধার আসন পাতা থাকে। একজন বড়ো সাঁতারু জীবনের ও প্রাণের প্রতীক, আর সেনাপতি মৃত্যু ও ধ্বংসের। যারা বড়ো সাঁতারু তাঁরা পৃথিবীকে প্রেরণা জোগান। একটা পদকের থেকে এই অবদান অনেক বেশি বলেই মনে করেন ক্ষিতীশ |
১০. “বাঙালিরা যা ভালবাসে মিটিংয়ে তাই তো বলব।”—বাঙালিরা কী কী ভালোবাসে বলে বক্তা মনে করে? কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে বক্তা এই কথা বলেছে? 
উত্তর – বক্তার মতে বাঙালিদের ভালোবাসার বিষয়সমূহ: কোনি উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র বিষ্টু ধর বলেছেন যে, খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাঙালি বেশি ভালোবাসে ফুটবল ও ক্রিকেট।
বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত : বিষ্টু ধর নেতা হতে চান, নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিনোদ ভড় ক্রীড়াজগতের সঙ্গে যুক্ত। তাই বিষ্টু ধরও বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খেলার জগতে নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নিতে চান। একারণে বিষ্টু ধর বিভিন্ন প্রচারসভায় খেলার জগৎকে তাঁর বক্তৃতার মূল বিষয়বস্তু করেন। এই বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সীমিত হওয়ায় তিনি ক্ষিতীশ সিংহের সাহায্য নেন। ক্ষিতীশেরও টাকার প্রয়োজন, তিনি কোনিকে নামকরা সাঁতারু হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সেই কারণে তিনি অর্থের বিনিময়ে বিষ্টু ধরের বক্তৃতার লেখক হতে রাজি হয়ে যান। কিন্তু সাঁতার পাগল মানুষ ক্ষিতীশ জীবনের নানান চড়াই-উতরাই দেশের মর্যাদা, দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথা বোঝাতে বারবার সাঁতারের প্রসঙ্গই টেনে আনেন। অপরদিকে, বিষ্টু ধর মনে করেন সাঁতারের থেকে ফুটবল অথবা ক্রিকেট নিয়ে বাঙালি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ— তাই তাঁর মতে বক্তৃতায় সাঁতারের পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেটের কথাও থাকা উচিত। ক্ষিতীশ সিংহকে সেটা বোঝাতেই তিনি এ কথা বলেছেন।
১১. “তাহলে একটু গুছিয়ে লিখে দিন”—কে, কাকে বলেছিলেন? লেখার মূল বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর – বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: মতি নন্দী রচিত কোনিউপন্যাসের সপ্তম পরিচ্ছেদে বিষ্টুচরণ ধর ক্ষিতীশ সিংহকে এই কথাটি বলেছেন।
লেখার মূল বক্তব্য প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ: বিষ্টুচরণ ধরের বক্তৃতাগুলি গুছিয়ে লিখে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল ক্ষিতীশ সিংহের ওপর। এইরকম একটা বক্তৃতায় তিনি লেখেন, ট্যালেন্ট ঈশ্বরের দান। ট্যালেন্ট থাকা সত্ত্বেও কেউ তা প্রকাশ না করলে সে অপরাধী। আমাদের দেশে এইরকম বহু প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ আছেন যারা শুধু নিজেদের খাওয়া-পরার প্রয়োজন মেটাতেই ব্যস্ত। গৌরবোজ্জ্বল খেলোয়াড় খেলোয়াড়দের গৌরবের আলোয় গোটা দেশ আলোকিত হয়। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া প্রভৃতি দেশের কথা উচ্চারণ করলে সর্বপ্রথম মাথায় আসে ডন ব্র্যাডম্যান, পেলে বা বিকিলার মতো মানুষদের কথা যাঁরা খেলার মাধ্যমে তাঁদের দেশকে সারা বিশ্বের দরবারে বিখ্যাত করেছেন। সেনাপতির সঙ্গে খেলোয়াড়ের তুলনা: ক্ষিতীশ সিংহের মতে, দেশের একজন সেনাপতির তুলনায় একজন খেলোয়াড় বড়ো এবং প্রকৃত বীর। কারণ একজন খেলোয়াড় বা সাঁতারু জীবনের ও প্রাণের প্রতীক। তাঁরা পৃথিবীর মানুষকে মৃত্যু বা ধ্বংস নয়, বাঁচার এবং সংগ্রামের প্রেরণা জোগায়। এটা শুধু সাঁতারু নয় সমস্ত খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। অবহেলিত খেলোয়াড়দের জন্য সুব্যবস্থা: আমাদের দেশে খেলোয়াড়রা বঞ্চিত এবং অবহেলিত হয়ে থাকে। তাই সরকার থেকেই তাঁদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। বিষ্টুচরণের বক্তৃতার মূল বক্তব্য হবে এটাই। এতদুর বলে ক্ষিতীশ দম নেওয়ার জন্য থামতেই বিষ্টু ধর বলেন, এত ভারী ভারী কথায় তাঁর গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি ক্ষিতীশকেই এইসব কথা গুছিয়ে লিখে দিতে বলেন।
১২. “ক্ষিতীশের রাগটা মুহূর্তে অবাক হয়ে যায়।”—ক্ষিতীশের এই মনোভাবের পরিবর্তনের কারণ আলোচনা করো।
উত্তর – ক্ষিতীশের মনোভাব পরিবর্তনের কারণ: জুপিটারকে উপযুক্ত জবাব: জুপিটার থেকে বিতাড়িত ক্ষিতীশ চেয়েছিলেন সাঁতারু হিসেবে কোনিকে গড়ে তুলে জুপিটারকে উপযুক্ত জবাব দিতে। কিন্তু প্রথমদিকে চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করা কোনির কাছে সাঁতার ততটাও গুরুত্ব পায়নি। কোনিকে প্রতিশ্রুতিদান: একদিন ক্ষিতীশের তিরস্কারে বিরক্ত হয়ে কোনি জল থেকেই উঠে পড়ে। সাঁতারের পরে খাবার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে তবেই সে আবার জলে নামতে রাজি হয়। তবে বিকেলের অনুশীলনে সে আবার অনুপস্থিত থাকে। নিঃশব্দ বোঝাপড়া: পরদিন সকালে কোনি যখন আধঘণ্টা দেরিতে অনুশীলনে আসে, স্বভাবতই ক্ষিতীশ রেগে যান। কিন্তু ক্ষিতীশ কিছু বলার আগেই কোনি দাবি জানায় যে, খাবারের বদলে তাকে যেন রোজ এক টাকা করে দেওয়া হয়। তার এই কথায় দারিদ্র্যের মোকাবিলা করার যে সুপ্ত ইচ্ছা ছিল, খিদের যন্ত্রণাকে ভুলে যাওয়ার জন্য যে প্রাণপণ চেষ্টা ছিল—তা রাগের বদলে ক্ষিতীশকে বিস্মিত করে বেশি। যদিও মৌখিকভাবে ক্ষিতীশ রাগেরই প্রকাশ ঘটান। সাঁতার শেখানোর জন্য এক টাকা করে দিতে হবে, এটা যে তাঁর পিতৃদায় নয় তা তিনি স্পষ্ট করে দেন। কিন্তু কোনিও ছিল বেপরোয়া—“অত খাটাবেন আর খেতে দেবেন না?” কোনির এ কথা শুনে ক্ষিতীশ হেসে ফেলেন। এর মধ্য দিয়ে দুজনের যেন এক নিঃশব্দ বোঝাপড়া হয়ে যায়।
১৩. “ক্লাবই সুইমার তৈরি করে, ওরা করে মোড়লি”—কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলা হয়েছে? এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: কোনি উপন্যাসে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ অ্যাপোলো ক্লাবের ভাইস-প্রেসিডেন্ট নকুল মুখুজ্জেকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: জুপিটার থেকে চলে এলে অ্যাপোলো ক্ষিতীশকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। সেইসময় নকুল মুখুজ্জে ক্ষিতীশকে বলেছিলেন“তোর জুপিটার থেকে বেরিয়ে আসা মানে আমাদের শত্রুর দুর্গের একটা খিলেন ভেঙে পড়া।” পরবর্তী সময়ে এই ক্ষিতীশই হয়ে ওঠেন অ্যাপোলোর অন্যতম ভরসার জায়গা। তাঁকেই নকুল মুখুজ্জে একজন পয়সাওয়ালা লোক জোগাড় করে দিতে বলেন, যাকে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট করা হবে। এইসময়ই তিনি ক্ষিতীশকে বলেছিলেন যে তাঁকে রাজ্য সংস্থার নির্বাচন কমিটি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং সে সবই হয়েছে জুপিটারের চক্রান্তে। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই ক্ষিতীশ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিলেন। নির্বাচন কমিটি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার জন্য নকুল মুখুজ্জেকে মন খারাপ করতে বারণ করেন ক্ষিতীশ। তাঁর মতে, খেলোয়াড় তৈরি করে ক্লাবই, নির্বাচন সংস্থার কাজ কেবল মোড়লি করা, অর্থাৎ প্রকৃত কাজ তারা করে না।
ক্ষিদ্দার মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে একজন দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষকের মনোভাব। তিনি মনে করেন যে, একজন সাঁতারুর জীবনে রাজ্যসংস্থার থেকে ক্লাব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাবই সাঁতারু তৈরি করে। সেই সাঁতারু যখন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্য পায়, তখন রাজ্যসংস্থা সেটাকে তার কৃতিত্ব বলেই দাবি করে। রাজ্যসংস্থার ভূমিকাটা আসলে মাতব্বরির। একজন প্রশিক্ষক হিসেবে সেটাকে মেনে নিতে ক্ষিদা একটুও রাজি ছিলেন না।
১৪. “কমলের স্বর অদ্ভূত করুণ একটা আবেদনের মতো শোনাল।”–কমল কী বলেছিল? তার স্বরকে ‘করুণ আবেদনের মতো’ বলার কারণ কী?
উত্তর – কমলের বক্তব্য: কমল দরিদ্র, অসুস্থ অথচ এই দারিদ্র্যের মধ্য থেকেও সে স্বপ্ন দেখে তার বোন কনকচাপা একদিন বিশ্বসেরা সাঁতারু হয়ে উঠবে। তার এই স্বপ্নকে সে বোনের মধ্যেও চারিয়ে দিতে চায়। কোনিকে উদ্বুদ্ধ করতে সে বলে ওঠে—“ইচ্ছে থাকলে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। ইন্ডিয়া রেকর্ড ভাঙতে হবে তোকে। তারপর এশিয়ান, তারপর অলিম্পিক। পারবি না?” তার শেষের কথাগুলো করুণ আবেদন হয়ে ওঠে।
‘করুণ আবেদনের মতো’ বলার কারণ:দিকহারা নাবিক: কমল যেন সংসার-সমুদ্রে দিকহারা নাবিক। তার বাবার মৃত্যু হয়েছে টিবি রোগে। কমল নিজেও শরীরের ভেতরে রোগ পুষে রেখেছে। মাসে মাত্র দেড়শো টাকা তার রোজগার। সংসারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। স্বপ্নভঙ্গের হাহাকার: একসময় কমলও স্বপ্ন দেখত বড়ো সাঁতারু হবার। অলিম্পিকে যাবার সাধ তারও ছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার ওপর। টাকার অভাবে সে সাঁতার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তাই তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে স্বপ্নভঙ্গের হাহাকার। অপূর্ণ স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার সম্ভবনা: কোনি যদি সত্যিই বড়ো সাঁতারু হতে পারে, তবে কমলের অপূর্ণ স্বপ্ন কিছুটা পূরণ হবে। কমল জানে, সুযোগ পেলে, দু-বেলা দু-মুঠো ঠিকমতো খেতে পেলে কোনি ঠিকই অনেক দূর এগোতে পারবে। কিন্তু সে বুঝে গেছে সংসারে তারও মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। তার মৃত্যু হলে সংসারটা জলে ভেসে যাবে, স্বপ্নভঙ্গ হবে কোনিরও। এই কারণেই কোনিকে বড়ো সাঁতারু হতে বলার সময় তার স্বর করুণ আবেদনের মতো শুনিয়েছে।
১৫. “হাঁড়িতে ভাত ফোটার শব্দটা শুধু সেই মুহূর্তে একমাত্র জীবন্ত ব্যাপার।”—লেখককে অনুসরণ করে সেই মুহূর্তটি বর্ণনা করো।
উত্তর – শুরুর কথা: কোনি উপন্যাসে অসুস্থ কমলের খোঁজ নিতে ক্ষিতীশ আসেন কোনিদের বাড়িতে। মানসিক উদ্বেগের প্রকাশ: কমল তার অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলে—“দেখার আর কিছু নেই। আমি ফিনিশ হয়ে গেছি।” কমলের বাবা মারা গেছেন টিবি রোগে। কমল নিজেও যেভাবে পরিশ্রম করে, অথচ ঠিকমতো খাবার জোটে না, তাতে তারও টিবি হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। স্বপ্নভঙ্গের বর্ণনা: ক্ষিতীশ অবশ্য কমলের মানসিক উদ্‌বেগকে অনেকটাই কমিয়ে দেন। তিনি জানান, কোনির যাবতীয় দায়িত্ব তাঁর ওপর। এতে একটু উৎসাহিত হয়ে কমল তার স্বপ্নভঙ্গের কথা শোনায় ক্ষিতীশকে। তার ইচ্ছা ছিল বড়ো সাঁতারু হবার, অলিম্পিকে যাবার। কিন্তু দারিদ্র্য তার সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনিকে নিয়েই এখন তার স্বপ্ন। সত্যিই কোনি যদি একজন বড়ো সাঁতারু হতে পারে, তাহলে তার যাবতীয় দুঃখ মুছে যাবে। করুণ আবেদন: কমলের শরীরের অবস্থা বেশ সন্দেহজনক। তার কথা বলার ভঙ্গির মধ্যেই সেটা প্রকাশ পায়। কথা বলার সময় তার স্বর যেন তাই করুণ আবেদনে পরিণত হয়েছে।নিস্তব্ধ পরিবেশ: কমলের অবস্থা লক্ষ করে বাড়ির সবাই চুপচাপ হয়ে যায়। ঘরের নিস্তব্ধ পরিবেশে একমাত্র আওয়াজ ওঠে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ির থেকে। সেটাই যেন সেই মুহূর্তের একমাত্র জীবন্ত বিষয় বলে মনে হয়েছে।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “বিষ্টু ধর চূর্ণ বিচূর্ণ। কথা বলার আর ক্ষমতা নেই। দুটি চোখ ছলছলিয়ে উঠেছে।”—কী কারণে বিষ্টু ধরের এমন অবস্থা হয়েছিল বর্ণনা করো।
উত্তর – শুরুর কথা: সামাজিক প্রতিপত্তি লাভের জন্য বিষ্টু ধর বিনোদ ভড়ের মতো ভোটে দাঁড়িয়ে জিততে চান। তার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতা লিখে দেন ক্ষিতীশ সিংহ। প্রেসিডেন্ট পদের প্রতি লোভ: ক্ষিতীশ বিষ্টু ধরকে অ্যাপোলোর প্রেসিডেন্ট পদের লোভ দেখিয়ে ক্লাবের জন্য কিছু টাকা আদায় করতে চায়। বিষ্টু ধর সেই প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান। সেলামির টাকা ফেরত: বিষ্টু ধর ও ক্ষিতীশের মধ্যে কথাবার্তা চলাকালীন ক্ষিতীশের স্ত্রী লীলাবতী এসে উপস্থিত হন। হাতিবাগানে বিষ্টু ধরের একটা ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য লীলাবতী বিষ্টু ধরকে পাঁচ হাজার টাকা সেলামি দেন। বিষ্টু ধর জানতেন না যে, লীলাবতী ক্ষিতীশের স্ত্রী। লীলাবতী চলে গেলে ক্ষিতীশের মুখে সে-কথা শুনে তিনি ভ্যাবাচাকা খেয়ে যান। ক্ষিতীশ সেলামির টাকা ফেরত চান।মানসিক দিক থেকে ভাঙন: ক্ষিতীশ বিনোদ ভড়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার ও তার দাদাকে অ্যাপোলো ক্লাবের প্রেসিডেন্ট করে দেওয়ার ভয় দেখালে বিষ্টু ধর ক্ষিতীশকে না যেতে অনুরোধ করেন। ক্ষিতীশ তখন সেলামির পাঁচ হাজার টাকা ফেরত চান এবং জানান তিনি আর বক্তৃতাও লিখে দিতে পারবেন না। এই কথা শুনে বিষ্টু ধর মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন। তাঁর আর কথা বলার ক্ষমতা থাকে না এবং দুটি চোখ ছলছল করে ওঠে।
২. “গাছে অনেক দূর উঠে গেছি। মই কেড়ে নিলে নামতে পারব না।”—এই উক্তিটি কার? তার এরুপ বলার কারণ কী? উপন্যাসে তার পারিবারিক ও শারীরিক কীরূপ বর্ণনা তুমি পেয়েছ? 
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদের আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন বিষ্টুচরণ ধর।
এরূপ বক্তব্যের কারণ: ভোটে জিতে সামাজিক প্রতিপত্তি লাভের জন্য বিষ্টুচরণ ধর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতেন। বক্তৃতা লিখে দিতেন ক্ষিতীশ সিংহ। বক্তৃতার মাধ্যমেই তিনি জনগণের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। তিনি এমএলএ বিনোদ ভড়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চেয়েছিলেন এই বক্তৃতাকে ভরসা করেই। তাই ক্ষিতীশ আর বক্তৃতা লিখে দেবেন না শুনে তিনি এই মন্তব্যটি করেন।
বিষ্টু ধরের বর্ণনা: আলোচ্য উপন্যাসে বিষ্টুচরণ ধরের যে বর্ণনা পাই, তা হল—
পারিবারিক পরিচয়: উপন্যাসে আইএ পাস, অত্যন্ত বনেদি বংশের সন্তান বিষ্টুচরণ ধরের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় ঘটেছে গঙ্গার ঘাটে। পাড়ায় তিনি বেষ্টাদা হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাতটি বাড়ি এবং বড়োবাজারে ঝাড়ন মশলার ব্যাবসা আছে। তাঁর বয়স চল্লিশ। তাঁরই সমবয়সি একটি অস্টিন গাড়ির তিনি মালিক।
শারীরিক পরিচয়: বিষ্ট ধরের ওজন সাড়ে তিন মন অর্থাৎ ১৪০ কেজি। ক্ষিতীশ সিংহ এই মানুষটিকে ব্যঙ্গ করে হিপো এবং গন্ধমাদনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিষ্টুচরণ তার রোজের খাওয়ার যে তালিকা দিয়েছেন, তা শুনেই বোঝা যায় যে তাঁর মতো খাদ্যরসিকের এই ওজন হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশাল আকারের কারণে নিজের শরীরটাকে একপাশ থেকে আর একপাশে ঘোরানোর জন্য তাঁকে মালিশওয়ালার সাহায্য নিতে হয়েছে।
৩. “বিষ্টু ধরের উত্তেজিত মুখ দেখে ক্ষিতীশ চটপট মতলব ভেঁজে নিয়ে বলল…”
“মাঝে মাঝে যাই বুদ্ধি পরামর্শ দিতে …”
“প্রেসিডেন্ট পেয়েছি … কত টাকা ডোনেশন চাও নকুলদা ?” -এই তিনটি উক্তির আলোকে ক্ষিতীশ সিংহ সম্পর্কে তোমার কী মনে হয়েছে লেখো। 
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদে আমরা ক্ষিতীশের বলা এই তিনটি উক্তি পেয়েছি।
সুযোগ সন্ধানী: বিষ্টুচরণ দর্জিপাড়া বয়েজ লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেওয়ার জন্য ক্ষিতীশ সিংহকে বক্তৃতা লিখে দিতে বলেন। তিনি জানান যে, ওই অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিনোদ ভড়। এসময় সুযোগ বুঝে তাকে অ্যাপোলো ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেন ক্ষিতীশ। কোনো একটি সভার বক্তৃতায় বিনোদ ভড়কে না হারিয়ে প্রতিদিন তাকে হারানোর পরামর্শ দেন ক্ষিতীশ। তিনি বুঝিয়ে দেন, জুপিটারের প্রেসিডেন্ট যেহেতু বিনোদ ভড় তাই তার বিপক্ষ ক্লাবে বিষ্টু ধরের প্রেসিডেন্ট হওয়া আবশ্যক। এইভাবেই সমস্ত ক্ষেত্রে বিনোদ ভড়ের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে বলেন বিষ্টুবাবুকে।
বুদ্ধিমান: দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ক্ষিতীশ তাঁর স্ত্রী লীলাবতীর বিষ্টুচরণকে দেওয়া সেলামির টাকাটা ফিরিয়ে নেন। বুদ্ধিমান ক্ষিতীশ সহজেই বুঝে গেছিলেন যে, বিষ্টুচরণ ধর শুধু বক্তৃতার জন্যই তাঁর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েননি, তিনি এখন ক্ষিতীশের বুদ্ধি-পরামর্শ অনুযায়ী চলছেনও। তাই বাড়িতে স্ত্রী লীলাবতীকে বেশ গর্বের সঙ্গেই ক্ষিতীশ বলেছেন, “মাঝে মাঝে যাই বুদ্ধি পরামর্শ দিতে।”
উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ: এরপরের প্রস্তাবটা ক্ষিতীশ দিয়েছেন অ্যাপোলো ক্লাবের কর্মকর্তা নকুল মুখুজ্জেকে। পাঁচশো টাকা ডোনেশন দেওয়া বটুবাবুর পরিবর্তে তিনি দু-হাজার টাকা দেবেন এমন প্রেসিডেন্ট ঠিক করে নকুল মুখুজ্জেকে প্রসন্ন করেছেন। ক্ষিতীশের মূল লক্ষ্য ছিল কোনির উপকার এবং তার অনুশীলন ও সাফল্যের সুযোগ তৈরি। এর জন্য ক্ষিতীশ যে উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. মার খেয়ে ইস্পাত হয়ে উঠতে হবে।”—কখন বক্তা এরকম ভেবেছেন উপন্যাস অবলম্বনে লেখো।
উত্তর – শুরুর কথা: কোনিকে সাঁতারু বানানোর স্বপ্নে বিভোর হলেও প্রশিক্ষণপর্বের প্রথম দিকে ক্ষিতীশের সঙ্গে কোনির অনেকটাই মানসিক দূরত্ব ছিল। এমনকি কোনির দাদা মারা গেলেও ক্ষিতীশের প্রশিক্ষণে কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। কোনির প্রতি কড়া নির্দেশ: অনুশীলনের সময় কোনি হাঁপিয়ে উঠলে ক্ষিতীশ পায়ের কাছে পড়ে থাকা ঢিল ছুঁড়ে মেরেছেন, বাঁশের লগা হাতে নিয়ে কমলদিঘির পাড় দিয়ে হেঁটেছেন— যাতে কোনি জল থেকে উঠতে না পারে। কোনির কাতর প্রার্থনাতেও কোনো কাজ হয়নি। বরং বাকি দুশো মিটার শেষ করার জন্য কড়া নির্দেশ এসেছে— “মাথা ভেঙে দেব। জল থেকে উঠবি তো মরে যাবি।”—অমানবিক হয়ে উঠেছে ক্ষিতীশের কণ্ঠস্বর। কোনির ক্লান্তি: কিন্তু এরই মধ্যে ক্ষিতীশ লক্ষ করেছেন, কোনি তার ক্লান্ত হাত দুটোকে জল থেকে টেনে তুলে আবার নামিয়ে রাখছে। শ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁ করে বাতাস নিচ্ছে এবং তার চোখ দুটো যেন ঘুমে আচ্ছন্ন। প্রত্যাশিত সাফল্য: এই কষ্টকে উপলব্ধি করেও প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ মনে মনে বলেন যে, কোনিকে যন্ত্রণা ঠেলে এগিয়ে যেতে হবে। খিদের তাড়না সে জানে। তাই যন্ত্রণার স্বরূপ তার অজানা নয়। এই যন্ত্রণাকে বুঝতে পারলে তবেই তাকে হারিয়ে দেওয়া সম্ভব। আর যন্ত্রণাকে হারাতে পারলে তবেই আসবে প্রত্যাশিত সাফল্য। এই প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ মনে মনে কোনিকে উদ্দেশ্য করে উচ্চারণ করেছিলেন—“মার খেয়ে ইস্পাত হয়ে উঠতে হবে।”
২. “…..মানুষের ক্ষমতার সীমা নেই রে, ওরা পাগলা বলছে, বলুক।” –বক্তা কে? তার উক্তি কতটা যুক্তিযুক্ত লেখো। 
উত্তর – বক্তা: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা হলেন কোনির সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।
যৌক্তিকতা বিচার: কোনিকে সফল সাঁতারু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাকে কঠোর অনুশীলন করান ক্ষিদ্দা। ছোটো কোনির শরীর সেই পরিশ্রমের ধকল নিতে পারে না, কিন্তু নাছোড় ক্ষিদ্দা তাকে জল ছেড়ে ওপরে উঠতে দেন না। বাঁশের লগা হাতে নিয়ে ক্ষিদ্দা পুলের পাড় ধরে হাঁটতে থাকেন, যাতে কোনি জল থেকে উঠতে না পারে। তিনি মনে মনে বলতে থাকেন যে, “মার খেয়ে ইস্পাত হয়ে উঠতে হবে, যন্ত্রণাকে হারিয়ে দিতে হবে।” খিদের তাড়না যেহেতু কোনি অনুভব করেছে, তাই যন্ত্রণাকেও সে বুঝতে পারবে বলে ক্ষিতীশ মনে করেন। একজন যথার্থ প্রশিক্ষকের মতোই তিনি মনে করেন যে, একমাত্র অনুশীলনের মাধ্যমেই শরীরের সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। চেষ্টা এবং শ্রমের দ্বারাই মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। নিজের ক্ষমতার সীমা নিজেকেই ভাঙতে হবে, মানুষ এভাবেই আরও বেশি লক্ষ্যের দিকে পৌঁছাবে। অমানুষিক পরিশ্রম করলে লোকে হয়তো পাগল বলবে, কিন্তু এই পরিশ্রমই মানুষকে এনে দেবে সাফল্য। নিজের ভিতরের জেদকে জাগিয়ে রাখতে পারলেই একজন মানুষের পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব। অবশ্য শরীরের অবস্থা ও খাদ্যাভাসকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু অনুশীলন এবং পরিশ্রমই যে সাফল্যের শেষ কথা তা তিনি বারবার জোর গলায় বলেছেন।
৩. “সোনার মেডেল-ফেডেল কিছু নয় রে, ওগুলো এক একটি চাকতি মাত্র।”—কে, কাকে এ কথা বলেছেন? এই উক্তির মধ্য দিয়ে বক্তা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর – বক্তা এবং উদ্দিষ্ট জন: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্ষিতীশ সিংহ এ কথা বলেছেন কোনিকে।
বক্তার বক্তব্য বিষয়: অনুপ্রেরণাদান: ক্ষিতীশের তত্ত্বাবধানে কমলদিঘিতে কোনি সাঁতার শেখে। গলায় ঝোলানো স্টপওয়াচ মুঠোয় ধরে ক্ষিতীশ আপন মনে বকে যান। কোনিকে তিনি কিছুতেই জল থেকে উঠতে দেবেন না। কষ্ট, যন্ত্রণা, খিদে—সব কিছুকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে বলেন তাকে। তাঁর মুখে একটাই কথা—“ফাইট কোনি ফাইট।” কোনিকে যন্ত্রণার মার খেয়ে ইস্পাত হয়ে উঠতে হবে। ক্ষিতীশের মতে, সোনার মেডেল তুচ্ছ, “ওগুলো এক একটা চাকতিমাত্র।” আসলে ওগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে একজন খেলোয়াড়ের শ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায় আর আন্তরিকতা। প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ: লক্ষ্য মেডেল নয়, লক্ষ্য হওয়া উচিত শক্তিকে উজাড় করে দিয়ে নিজেকে সবার ওপরে তুলে ধরা। মেডেলের মধ্যে মানুষ থাকে না, থাকে মানুষের নিরলস অনুশীলন আর পরিশ্রমের ধারাবাহিক ইতিহাস। তাই মেডেলের কাছে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, মেডেল যাতে ব্যক্তির কাছে এগিয়ে আসে সেই চেষ্টাই করতে হবে। কোনির ভিতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা বাইরে বের করে আনার জন্যই ক্ষিতীশ সিংহ এমন উক্তি করেছেন।
৪. “ঘুমের মধ্যেই কোনির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।”—কী কারণে ঘুমের মধ্যে কোনির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল লেখো।
উত্তর – কথামুখ: আলোচ্য অংশটি মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। ক্ষিতীশের আদর: একদিন ক্ষিতীশ তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে ঘরে এসে দেখলেন দিনভর পরিশ্রমে ক্লান্ত কোনি অকাতরে ঘুমোচ্ছে। বালিশ নেই। তার বদলে দুটো হাত জড়ো করে মাথার নীচে রাখা। ক্ষিতীশ বসলেন ওর পাশে। তারপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। হঠাৎ ক্ষিতীশ শুনলেন, কোনি ঘুমের মধ্যে আপনমনে কী যেন বলছে। তিনি একটু ঝুঁকে পড়লেন শোনার জন্য, একটা পাতলা হাসির রেখা দেখলেন কোনির মুখে। ঘুমের মধ্যেই সে বলছে, “আমায় কুমির দেখাবে বলেছিলে।” এ কথা শুনে ক্ষিতীশ ফিসফিস করে বললেন, “দেখাব, তোকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাব।” এরপর আরও অনেক জায়গা দেখানোর কথাও বললেন ক্ষিতীশ। তারপর বললেন, “তুই যাবি দিল্লি, মুম্বাই, মাদ্রাজ,…আরো দূরে টোকিও, লন্ডন, বার্লিন, মস্কো, নিউইয়র্ক।” অবদমিত আবেগের বহিঃপ্রকাশ: ঘুমের আবেশ তখনও কাটেনি কোনির। ঘুমের মধ্যে সে মনে করে যেন তার দাদার সঙ্গে কথা বলছে। ক্ষিতীশের কথাগুলোকে সে দাদার কথাই মনে করেছে। তাই ঘুরতে যাবার কথা শুনে ঘুমের মধ্যেই কোনির মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। জেগে থাকা অবস্থায় যা সে বলতে পারে না, অবদমিত সেই আবেগ যেন তার ঘুমের মধ্যে প্রকাশ পায়।
৫. “বড়োলোকরা গরিবদের ঘেন্না করে।”—কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে বক্তা এ কথা বলেছেন? এই ঘটনা থেকে ক্ষিতীশ সিংহ কী উপলব্ধি করেছিলেন?
উত্তর – বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে কোনি ক্ষিতীশ সিংহের সঙ্গে এক রবিবার চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিল। রবিবার সকালে তিন ঘণ্টা মতো চিড়িয়াখানায় ঘোরার পর খেতে বসে কোনি তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে। একটি নামি স্কুলের কিছু মেয়েও সেদিন শিক্ষিকাদের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় এসেছিল। কোনি জলের ড্রামের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষিকার কাছে জল চাইলে তিনি তাকে অপমান করে ফিরিয়ে দেন। অপ্রতিভ হয়ে ফিরে এসে কোনি ঘৃণার সঙ্গে জানায় “বড়োলোকরা গরিবদের ঘেন্না করে।”
পলবি কোনি জল চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হলেও ওই স্কুলেরই ছাত্রী হিয়া মিত্ৰ কোনি এবং ক্ষিতীশ সিংহের জন্য জল এনে দিয়েছিল। কিন্তু কোনি জলের গ্লাসটা ফেলে দিয়ে ক্ষিতীশ এবং হিয়া দুজনকেই অবাক করে দেয়। হিয়ার কাছে কোনির হয়ে ক্ষিতীশ সিংহ ক্ষমা চেয়ে নেন। কোনিকে এই আচরণের জন্য বকবেন মনে করেও তিনি তা করেননি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন হিয়া মিত্রই কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী। কোনির এই আক্রোশ, ক্রোধ ও উত্তেজনা যথাসময়ে কাজে লাগবে। তাই কোনির ভিতরে প্রতিযোগিতার এই আগুন জ্বালিয়ে রাখার জন্য ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে আরও তাতিয়ে দেন। অভিজ্ঞ এবং বিচক্ষণ ক্ষিতীশ সিংহের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে এর প্রভাব কোনির জেতার অদম্য ইচ্ছাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
৬. “দাদা আমায় বলেছিল টাকা থাকলেই সবাই খাতির করে।” এখানে ‘দাদা’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? কোন্ প্রসঙ্গে কথাটি উদ্ধৃত করা হয়েছে?
উত্তর – ‘দাদা’র পরিচয়: কোনি উপন্যাসের উল্লিখিত অংশে ‘দাদা’ বলতে কোনির দাদা কমলের কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গ: কোনির ঘুমের মধ্যে উচ্চারণ করা স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ক্ষিদ্দা কোনিকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিড়িয়াখানায়। ক্ষিদ্দার ঝোলার ভিতরে খাবার থাকলেও কাছে জল ছিল না। কিছু দূরে কোনি লক্ষ করেছিল স্কুলের পোশাক পরা মেয়েরা হইচই করছে। তাদের কাছে খাবারের ঝুড়ি যেমন ছিল, তেমনই ছিল ড্রামভরতি জলও। কোনি ক্ষিতীশের সম্মতি নিয়ে তাদের কাছে জল চাইলে এক শিক্ষিকার কাছ থেকে সে প্রত্যাখ্যাত হয়। অপ্রতিভ কোনি ফিরে আসে এবং ক্ষিদ্দার মন্তব্যের উত্তরে জানায় যে, বড়োলোকেরা গরিবদের ঘেন্না করে। কোনির মুখে এসব কথা শুনে ক্ষিদ্দা অবাক হয়ে যান। বুঝতে চান যে কোনির এইসব কথা ভাবার কারণ কী। তার উত্তরেই কোনি বলেছিল, তার দাদা তাকে বলে গিয়েছে যে, টাকা থাকলে সবাই খাতির করে। কোনির দাদা কমল নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই সত্যে পৌঁছেছিল এবং মারা যাওয়ার আগে কোনিকে সেই শিক্ষাই দিয়ে গিয়েছিল। কারণ কমল জানত, আগামী দিনে তার মতোই কোনিকেও বেঁচে থাকার জন্য দুরন্ত লড়াই করতে হবে।
৭. “কোনিকে দারুণ বকবে ভেবেছিল ক্ষিতীশ। কিন্তু সে কিছুই বলেনি।”—ক্ষিতীশ কেন কোনিকে বকবে ভেবেছিলেন? তারপর কেন তিনি তাকে আর বকলেন না? 
উত্তর – কোনিকে বকার সিদ্ধান্তের কারণ: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে কোনি হিয়ার শিক্ষিকার কাছ থেকে জল চেয়ে পায়নি। এই ঘটনায় সে অপমানিত বোধ করে। এরপর হিয়া তার সামনে জলভরা একটা গ্লাস এনে দেয়। কোনি সাথে সাথে ধাক্কা মেরে সেই গ্লাস ফেলে দেয়। হিয়ার প্রতি কোনির এমন অভদ্র আচরণের জন্য ক্ষিতীশ কোনিকে বকবেন ভেবেছিলেন।
কোনিকে না বকার কারণ: ক্ষিতীশ জানেন, হিয়া কোনির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। কোনিকে হিয়ার বন্ধুরা ও শিক্ষিকা, গরিব বলে তুচ্ছ জ্ঞান করে। তাদের আচরণ কোনিকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তার সেই ক্রোধ গিয়ে পড়ে হিয়ার উপরে। ক্ষিতীশ বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী। তাঁর মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞানও প্রবল। তিনি চান, হিয়ার ওপর তৈরি হওয়া রাগটা কোনি নিজের বুকের মধ্যে পুষে রাখুক। তাঁর উচিত হবে না কোনির হিংস্র আক্রোশটা ভোঁতা করে দেওয়া। ওই আক্রোশই কোনিকে উত্তেজিত করবে এবং আসল সময়ে অর্থাৎ জলে তার বিস্ফোরণ ঘটবে।
কোনির ভিতরে ক্ষিতীশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই আগুন জ্বালিয়ে রাখতে চান। এই ক্রোধ যে কোনিকে চাগিয়ে তুলবে হিয়া মিত্রের সঙ্গে সাঁতার-যুদ্ধে তা অভিজ্ঞ ক্ষিতীশ সিংহ বুঝতে পেরেছিলেন। এসব ভেবেই ক্ষিতীশ কোনিকে আর বকলেন না।
৮. “এটাই ওকে উত্তেজিত করে বোমার মতো ফাটিয়ে দেবে আসল সময়ে।”—এই ভাবনাটি কার ছিল? কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাবনা তা আলোচনা করো।
অথবা, “এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক। এটাই ওকে উত্তেজিত করে বোমার মতো ফাটিয়ে দেবে আসল সময়ে।”—প্রসঙ্গটি আলোচনা করো।
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে উল্লিখিত ভাবনাটি ক্ষিতীশের মধ্যে দেখা গিয়েছিল।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত: চিড়িয়াখানায় ক্ষিতীশের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল কোনি। ঘণ্টা তিনেক ঘুরে তার জল তেষ্টা পায়। কিছু দূরে থাকা স্কুলছাত্রীদের কাছে জল চাইতে গিয়ে তাদের শিক্ষিকার দ্বারা কোনি প্রত্যাখ্যাত হয়। কিন্তু এরপর সেই স্কুলছাত্রীদের মধ্য থেকে একটি মেয়ে প্লাস্টিকের দুটি গ্লাসে জল ভরে নিয়ে তাদের কাছে আসে এবং শিক্ষিকার আচরণের জন্য তাদের কাছে ক্ষমা চায়। মেয়েটি ছিল বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের হিয়া মিত্র। এই সময় কোনি হিয়ার হাতে ধরে থাকা গ্লাসে ধাক্কা মারে আর তার ফলে সেটি ছিটকে ঘাসের ওপরে পড়ে যায়। অপমানিত ও ক্রুদ্ধ কোনি সেখান থেকে চলে যায়। এই ঘটনায় হিয়া এবং ক্ষিতীশ দুজনেই হতভম্ব হয়ে যান। তারপর ক্ষিতীশ কোনির হয়ে হিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। এই ঘটনার জন্য ক্ষিতীশ ভেবেছিলেন কোনিকে খুব বকবেন। কিন্তু শেষ অবধি তিনি কিছুই বললেন না। কারণ ক্ষিতীশ বুঝতে পেরেছিলেন যে এই হিয়া মিত্রই কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী । তাই তিনি মনে মনে ঠিক করে নেন যে, কোনির হিয়ার প্রতি এই হিংস্র আক্রোশটা ভোঁতা করে দেওয়া কখনোই ঠিক কাজ হবে না। এই আক্রোশ কোনি বুকের মধ্যে পুষে রাখুক যা কিনা তাকে একদিন সাফল্যের পথে নিয়ে যাবে।
৯. “এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক।”—কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে? কী কারণে এই পুষে রাখা?
উত্তর – পুষে রাখার বিষয়: কোনি উপন্যাসে ক্ষিতীশের সঙ্গে কোনি গিয়েছিল চিড়িয়াখানায়। ক্ষিতীশের কাছে খাবার থাকলেও জল না থাকায় কিছুটা দূরে থাকা স্কুলের মেয়েদের কাছে কোনি জল আনতে যায়। কিন্তু শিক্ষিকা তাকে অপমান করে ফিরিয়ে দেয়। এই অবস্থায় সেই মেয়েদের মধ্যেই থাকা হিয়া জলভরা প্লাস্টিকের দুটো গ্লাস নিয়ে আসলে কোনি হাত দিয়ে হিয়ার গ্লাসে আঘাত করে। হাত থেকে তা ছিটকে পড়ে। “চাই না তোমাদের জল। আমার কলের জলই ভালো।”—কোনি এই বলে প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করে হিয়াকে। ক্ষিতীশ চেয়েছিল এই রাগটাই মনের মধ্যে পুষে রাখুক কোনি। • পুষে রাখার কারণ: ক্ষিতীশ হিয়ার প্রতি কোনির আচরণকে সমর্থন করতে পারেনি। কিন্তু কোনিকে দারুণ বকবে ভেবেও ক্ষিতীশ শেষপর্যন্ত কিছুই বলেনি। কারণ সে বুঝে গিয়েছিল যে হিয়াই কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী। রবীন্দ্র সরোবরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় হিয়ার সাঁতার ক্ষিতীশ দেখেছে। বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবে গিয়েও সে হিয়ার ট্রেনিং দেখে এসেছে। এখান থেকেই ক্ষিতীশের মনে হয়েছে যে হিয়ার প্রতি কোনির হিংস্র আক্রোশটাকে ভোঁতা করে দেওয়া ঠিক হবে না। এই আক্রোশ কোনি তার বুকের মধ্যে পুষে রাখুক যা তাকে হিয়ার | বিরুদ্ধে লড়াই করতে শক্তি জোগাবে এবং সাফল্যের পথে নিয়ে যাবে।

১০

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “তোমার এই গঙ্গা থেকে কুড়োনো মেয়েটা কেমন টাইম করছে?”—বক্তা কে? সে কীসের টাইম জানতে চেয়েছে? এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর – বক্তা: কোনিউপন্যাসে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা ‘জুপিটার সুইমিং ক্লাব’- এর সদস্য ধীরেন ঘোষ।
জ্ঞাতব্য বিষয়: ধীরেন ঘোষ কোনির সাঁতারের টাইম, অর্থাৎ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোতে তার কত সময় লাগছে তা ক্ষিতীশের কাছে জানতে চেয়েছে। এ কথা বলার কারণ : ধীরেন ঘোষের এই কথার মধ্যে একরকম বিদ্রুপের ছোঁয়া আছে। ক্ষিতীশ সিংহকে তারা ইচ্ছা করে ক্লাব থেকে তাড়িয়েছে। সাঁতার-অন্তপ্রাণ ক্ষিতীশের হাত থেকে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব কেড়ে নিতে পেরে তারা আনন্দিতও হয়েছে। অপরপক্ষে কোনি বস্তির ঘর থেকে উঠে আসা একটা মেয়ে, যার সমাজে কোনো সম্মানজনক অবস্থান নেই। | তাদের ক্লাবে যারা সাঁতার শিখতে আসে তাদের সকলেরই মোটামুটি একটা সামাজিক পরিচিতি আছে। কোনিকে প্রতিযোগিতা করতে হলে এদের সঙ্গেই করতে হবে। তাই ধীরেন ঘোষ নিজের চোখে দেখতে এসেছিল কোনি কতটা তৈরি হয়েছে অথবা আদৌ তৈরি হয়েছে কি না। কোনির আড়ালে আসলে ক্ষিতীশ সিংহের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা। কোনিকে ব্যঙ্গ করার মধ্য দিয়ে তারা ক্ষিতীশকেই অপমান করতে চায়। ‘গঙ্গা থেকে কুড়োনো মেয়েটা’ বলার মধ্য দিয়ে কোনির ‘নভিস’ অবস্থা ও পারিবারিক পরিস্থিতির প্রতিই বিদ্রুপ করা হয়েছে।
২. “তাহলে বিরাট এক অপূর্ণতা ক্ষিতীশের জীবনে যেন রয়ে যাবে।”—কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে এবং এজন্য তিনি কী করেছিলেন?
উত্তর – উৎস: আলোচ্য উক্তিটি মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাস থেকে গৃহীত হয়েছে। প্রসঙ্গ: ক্ষিতীশ অমানুষিক পরিশ্রম করিয়ে কোনিকে ক্রমাগত প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে গড়ে তুলছিলেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত তাকে কোনো প্রতিযোগিতায় নামাননি। তার কারণ তিনি চেয়েছিলেন বালিগঞ্জের হিয়া মিত্রের সময় জেনে নিতে। এরকম পরিস্থিতিতে একদিন ক্ষিতীশের সঙ্গে দেখা করতে আসে জুপিটারের দুই কর্তা ধীরেন ঘোষ আর বদু চাটুজ্জে৷ তারা কোনিকে নিয়ে ক্ষিতীশের কাছে নানা কটূক্তি করতে থাকে। তাদের কাছ থেকেই ক্ষিতীশ জানতে পারেন যে, সে বছরটাই অমিয়ার সাঁতারু হিসেবে শেষ বছর। তারপরেই বিয়ে করে সে কানাডায় চলে যাবে। এই কথা শুনে ক্ষিতীশ চমকে ওঠেন। একদিন কোনিকে অমিয়া তার পা ধোয়া জল খাওয়ার কথা বলেছিল। তাই কোনি অমিয়াকে হারাতে না পারলে বিরাট একটা অপূর্ণতা ক্ষিতীশ ও কোনি-দুজনেরই জীবনে থেকে যাবে বলে ক্ষিতীশ মনে করেন।
ক্ষিতীশের করণীয় বিষয়: অমিয়ার বিয়ের কথা জানতে পেরে ক্ষিতীশ মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন যে, কোনিকে তিনি প্রতিযোগিতায় নামাবেন। বদু চাটুজ্জেরা তাতে আপত্তি জানান। এমনকি এই পরামর্শের আড়ালে ব্যঙ্গ করে এ কথাও বলেন যে, অল্পবয়সে বাজেভাবে হেরে গেলে আখেরে কোনিরই ক্ষতি হবে। কিন্তু ক্ষিতীশ ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই অ্যাপোলোর ভাইসপ্রেসিডেন্ট নকুল মুখুজ্জেকে তিনি জানিয়ে দেন যে, জুপিটারের প্রতিযোগিতায় কোনির এন্ট্রি যেন অবশ্যই নেওয়া হয়।
৩. “তোর আসল লজ্জা জলে, আসল গর্বও জলে।”—কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি ? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – উৎস ও প্রসঙ্গ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাস থেকে আলোচ্য উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। সাঁতারের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কোনি চল্লিশ টাকার বিনিময়ে লীলাবতীর দর্জির দোকানে ঝাঁট দেয় ও ফাইফরমাশ খাটে। একদিন অমিয়া ওই দোকানে ব্লাউজ করাতে এসেছিল। কোনিকে সেখানে দেখে অমিয়া বলেছিল, “তুই এখানে ঝিয়ের কাজ করিস?” এই কথায় কোনি অত্যন্ত লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করে। ক্ষিতীশকে এ কথা জানালে ক্ষিতীশ তাকে সান্ত্বনা দিতে আলোচ্য উক্তিটি করেন।
দেখেছিল অমিয়া। কিন্তু ক্ষিতীশ তাকে বুঝিয়ে দেন যে সেটা তার প্রকৃত ● তাৎপর্য বিশ্লেষণ: সম্মান প্রদর্শন: কোনি সম্ভাবনাময় সাঁতারু। তার সম্পর্ক জলের সঙ্গে। যার যেখানে অবস্থান, তার লজ্জা এবং সম্মান সেখানেই। একজন ক্রিকেটার বা ফুটবলারের সম্মান, লজ্জা, গর্ব সব কিছু খেলার মাঠেই। দোকানে ঝিয়ের কাজ করে বলে কোনিকে ছোটো চোখে কর্মক্ষেত্র নয়। সেখানে তার সাফল্য, ব্যর্থতা, লজ্জা বা গর্বের কোনো স্থান নেই। কেননা, কোনি প্রতিভাবান সাঁতারু। অনুপ্রেরণাদান: কোনির সাফল্য বা ব্যর্থতা সাঁতারু হিসেবে জলেই সীমাবদ্ধ। সাঁতারে ব্যর্থ হলে তার লজ্জিত হওয়া উচিত, আবার সাফল্য লাভ করলে গর্ব বোধ করা উচিত। এই কারণেই ক্ষিতীশ কোনিকে বলতে চেয়েছেন অমিয়ার কথায় লজ্জিত না হয়ে সে যেন সাঁতারটা ভালো করে শেখে। জলের বাইরে কোনির লজ্জা বা গর্বের কোনো কিছু নেই।

১১

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর 

১. “ভাবলেসহীন ক্ষিতীশ এখন তিড়িং তিড়িং লাফাচ্ছে।” ক্ষিতীশ এতক্ষণ ভাবলেশহীন ছিলেন কেন? ‘তিড়িং তিড়িং’ লাফানোর মধ্যে তাঁর কোন্ মানসিকতার প্রকাশ লক্ষ করা যায়?
উত্তর – ক্ষিতীশের ভাবলেশহীন থাকার কারণ: জুপিটার ক্লাবের বার্ষিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনিকে নামার সুযোগ দেওয়া হয় না। ক্ষিতীশ তখন কমলদিঘির অ্যাপোলো ক্লাবের অংশে কোনিকে নামিয়ে অমিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা করানোর চ্যালেঞ্জ নেন। যথাসময়ে সাঁতার শুরু হয়। এ যেন কোনির পরীক্ষা, পরীক্ষা ক্ষিতীশেরও। পুরো চত্বর জুড়ে টানটান উত্তেজনা। এই মানসিক উত্তেজনাকে কমানোর জন্যই ক্ষিতীশ ভাবলেশহীন হয়ে থাকতে চান।
মানসিকতা: কথামুখ: প্রবল উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সাঁতার প্রতিযোগিতা চলে। কোনির প্রধান বিপক্ষ হল জুপিটারের অমিয়া। প্রথম তিরিশ মিটারের পর থেকে অমিয়া কোনির চেয়ে এগিয়ে থাকলেও একসময় কোনি সমান রেখায় অমিয়ার সঙ্গে সাঁতরাতে থাকে। আত্মহারা: হঠাৎ কমলদিঘি ঘিরে বিরাট একটা চিৎকার শোনা যায়। কারণ ৬৫ মিটার থেকে কোনি এগোতে থাকে এবং ক্রমশ অমিয়া ও অন্যদের পিছনে ফেলে দেয়। মসৃণ, স্বচ্ছন্দ কিন্তু হিংস্ৰভঙ্গিতে কোনি নিজেকে টেনে বার করে নিয়ে যায়। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে জয়ী হয় কোনি। অভিপ্রেত সাফল্যে ক্ষিতীশ আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। আনন্দের বহিঃপ্রকাশ: এতক্ষণ তিনি চূড়ান্ত উত্তেজনায় পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়েছিলেন। কোনির জয়ে আনন্দে তিনি স্থান-কাল-পাত্র ভুলে তিড়িং তিড়িং লাফাতে শুরু করেন।
২. “ওলিম্পিকের গুল মেরে কি আর সুইমার তৈরি করা যায় রে পাঁটা? বুদ্ধি চাই, খাটুনি চাই, নিষ্ঠা চাই…গবেট গটে সব।”বক্তা কে? কোন্ প্রসঙ্গে তিনি এরূপ বলেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 
উত্তর – বক্কা: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের একাদশ পরিচ্ছেদ থেকে গৃহীত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্ষিতীশ সিংহ।
প্রসঙ্গ: জুপিটার ক্লাবের সাঁতার প্রতিযোগিতার ন-জন প্রতিযোগীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন ছিল জুপিটারের অমিয়া এবং অ্যাপোলোর কোনি। এই দুই সাঁতারুকে ঘিরে দর্শকদের উৎসাহ, উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। প্রথমদিকে অমিয়া এগিয়ে থাকলেও কোনি তাকে ধাওয়া করে পিছনে ফেলে ‘ফিনিশিং বোর্ড’ ছোঁয়। এই দৃশ্য দেখে এতক্ষণ পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষিতীশ আনন্দে লাফাতে শুরু করেন। তখনই তিনি হরিচরণের উদ্দেশে চিৎকার করে এই কথাগুলি বলেন।
তাৎপর্য: যোগ্য জবাব: ক্লাবের সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির চক্রান্তে ক্ষিতীশ জুপিটার ছাড়তে বাধ্য হন। হরিচরণের মতো স্বার্থপর, সুবিধাবাদী মানুষগুলো ক্ষিতীশ সিংহকে যে অপমান করেছিল তার যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের দ্বারা কোনিকে তৈরি করেছিলেন। দক্ষতার প্রকাশ: অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করলেই দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষক হওয়া যায় না। শিক্ষার্থীর থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য টেকনিক, বুদ্ধি আর ধৈর্য থাকতে হয়, সময়কে হারাতে শিখতে হয়। কোনো মিথ্যার আশ্রয় নয়, কেবল বুদ্ধি, অনুশীলন ও নিষ্ঠা দ্বারা ক্ষিতীশ কোনিকে তৈরি করেছেন এবং নিজের অপমানের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।
৩. “কাম অন অমিয়া, কাম অন বেঙ্গল চ্যামপিয়ন।” “ফাইট কোনি, ফাইট” –এই দুই স্লোগান ব্যবহারের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – তাৎপর্য বিশ্লেষণ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের একাদশ পরিচ্ছেদে এক টানটান উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে এই স্লোগান দুটি ব্যবহৃত হয়েছে। জুপিটার সুইমিং ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতার শেষ দিনে অনুষ্ঠিত মেয়েদের ১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল প্রতিযোগিতার শুরুতে এয়ার রাইফেলের ক্যাপ না ফাটলেও অমিয়া ও কোনি বাদে সকলেই জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর আবার সকলে পজিশনে ফিরে বলে দ্বিতীয়বার ক্যাপ ফাটে ও সঙ্গে সঙ্গে জুপিটারের আট প্রতিযোগী এবং অন্যপাশে অ্যাপোলোর প্রান্তে কোনি একসঙ্গে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিযোগিতার ৩০ মিটার পর্যন্ত সমান রেখায় চলে অমিয়া এবং কোনি। এরপরই অমিয়া একটু একটু করে এগোতে থাকে এবং প্রথম ৫০ মিটার স্পর্শ করে। ৬০ মিটার পর্যন্ত অমিয়া এগিয়ে থাকলেও ৬৫ মিটার থেকেই কোনি তাকে টপকে এগিয়ে যায়। বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন দক্ষ সাঁতারু অমিয়ার জন্য জুপিটার ক্লাবের পক্ষ থেকে চিৎকার ওঠে “কাম অন অমিয়া, কাম অন বেঙ্গল চ্যামপিয়ন।” কিন্তু এই চিৎকার ম্লান হয়ে যায় “ফাইট কোনি, ফাইট” এই পালটা আওয়াজে। মসৃণ, স্বচ্ছন্দ কিন্তু হিংস্ৰভঙ্গিতে কোনি সমস্ত অপমানের জবাব দিয়ে অমিয়ার আগেই ‘ফিনিশিং বোর্ড’ ছোঁয়। প্রথম স্লোগানে প্রকাশিত অহংবোধকে ভেঙে দিয়ে দ্বিতীয় শ্লোগানে জমে থাকা যন্ত্রণা এবং লড়াকু জয়ই বড়ো হয়ে উঠেছে। সমগ্র উপন্যাসটিতে ‘ফাইট’ শব্দটি কোনির পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং লড়াইয়ের পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।
৪. “আজও ছিল আমার সঙ্গে।”—কার থাকার কথা বলা হয়েছে? সে কীভাবে বক্তার সঙ্গে ছিল ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: কোনি যখন সাঁতার কাটে তখন জলের নীচে তাকিয়ে তার মনে হয়, তার সঙ্গে সঙ্গে আর-একটা মুখও যেন এগিয়ে চলেছে। জুপিটার ক্লাব আয়োজিত প্রতিযোগিতাতেও কোনি এই মুখটা দেখতে পেয়েছে। মুখটা কোনির দাদা কমলের। কোনি যখন সাঁতার কাটে তখন যেন জলের নীচে তার দাদা কমলও তার সঙ্গে থাকে।
বক্তার সঙ্গে থাকা: ক্ষয়রোগে ভুগে কমলের অকালমৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কোনি কল্পনায় তার দাদাকে সবসময় দেখতে পায়। কোনি জানে, দাদারও স্বপ্ন ছিল বড়ো সাঁতারু হওয়ার। সে-ও স্বপ্ন দেখত অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার। কিন্তু চরম দারিদ্র্য তার স্বপ্ন ভেঙে দেয়। তাই কমল চেয়েছিল বড়ো সাঁতারু হয়ে কোনি যেন কমলের সেই দুঃখ আর আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেয়। দাদার ভালোবাসা কোনি কখনও ভুলতে পারে না। সবসময় কোনি যেন তার দাদার ছায়া দেখতে পায়। সে যখন সাঁতার কাটে তখন কমল যেন জলের তলায় তার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যায়, তাকে আরও দ্রুত সাঁতার কাটার উৎসাহ দেয়। আসলে কমলের ইচ্ছা পূরণ করতে কোনি বদ্ধপরিকর। তাই সে মনে করে, তাকে উৎসাহ দিতেই কমল জলের নীচে তার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলে।

১২

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “স্টেট চ্যামপিয়নশিপে কি হলো, সেটা তো তুমি নিজেই দেখেছ।”—কে, কখন কথাটি বলেছিল? প্রকৃত ঘটনাটি কী ছিল?
উত্তর – বক্তা এবং প্রসঙ্গ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে বাংলা দল নির্বাচনী সভায় জুপিটারের প্রতিনিধিদের চক্রান্তে কোনিকে বাংলা দলে না নেওয়ার প্রস্তাব প্রায় গৃহীত হতে চলেছিল, এইসময় বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাস সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। হিয়া মিত্রের প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু হিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীর হয়ে কথা বলবেন—এটা ভাবতেই পারেননি ধীরেন ঘোষ। তাই তিনি রেগে গিয়ে প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেন।
‘প্রকৃত ঘটনা’ ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকের প্রতিযোগিতা হয়েছিল মূলত : কোনি ও হিয়ার মধ্যে। এই প্রতিযোগিতার অন্যতম রেফারি, স্ট্রোক জাজ, ইনস্পেকটর অফ টার্নস, টাইম কিপার সবাই ছিলেন জুপিটার গোষ্ঠীর লোকজন। কোনি এবং হিয়া ৫০ মিটার একসঙ্গে শেষ করে ঘোরামাত্রই কোনিকে মিথ্যা অজুহাতে ‘ডিসকোয়ালিফাই’ করা হয়। ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে কোনি প্রথমে ‘ফিনিশিং বোর্ড’ ছোঁয়ার পরও ঘোষণা হয় যে, অমিয়া প্রথম হয়েছে। ২০০ মিটার ব্যক্তিগত মেডলিতেও ‘ফলটি টার্ন’ নেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে কোনিকে বাতিল করা হয়। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিনে ১০০ মিটারে ইলা কোনির লেনে ঢুকে পড়ে এবং মুখোমুখি সংঘর্ষ ও জড়াজড়িতে কোনির সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোনি তৃতীয় স্থান পায়। ব্যক্তিগত হিংসা ও দলাদলির জন্য কোনিকে প্রতিবার যে অন্যায়ভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছিল, তারই কথা এখানে উঠে এসেছে।
২. “কোনি মাদ্রাজ যাওয়ার মনোনয়ন অবশেষে পেল”—মাদ্রাজ যাওয়ার কারণ কী ছিল? এই মনোনয়ন পাওয়ায় প্রণবেন্দু বিশ্বাসের কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর – মাদ্রাজ যাওয়ার কারণ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের দ্বাদশ পরিচ্ছেদ থেকে গৃহীত হয়েছে আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি। মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার মেয়ে সাঁতারুদের দলে কোনি মনোনয়ন পেয়েছিল। তাই সে মাদ্রাজ গিয়েছিল।
প্রণবেন্দু বিশ্বাসের ভূমিকা: কথামুখ: কোনির মাদ্রাজ যাওয়া এবং বাংলা দলে স্থান পাওয়ার পিছনে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাসের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার মানসম্মান রক্ষা: প্রণবেন্দু বিশ্বাস কোনির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিয়া মিত্রের প্রশিক্ষক। তবুও নির্বাচনী সভায় জুপিটারের কর্মকর্তারা যখন কোনিকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করছিলেন তখন তিনিই স্পষ্টভাবে বলেন, “বেঙ্গলের স্বার্থেই কনকচাঁপা | পালকে টিমে রাখতে হবে।” তুচ্ছ দলাদলি, নীচ মানসিকতা ছেড়ে বাংলার মানসম্মানের কথা যে ভাবা উচিত তা তিনি-ই বাকিদের মনে করিয়ে দেন। ফ্রিস্টাইলে পাল্লা: শুধু ক্ষিতীশ সিংহকে জব্দ করাই যে জুপিটারের অভিপ্রায় তা ধরতে পেরে প্রণবেন্দু বিশ্বাস দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছিলেন, মহারাষ্ট্রের “রমা যোশির সঙ্গে ফ্রিস্টাইলে পাল্লা দেবার মতো কেউ নেই, একমাত্র কনকচাঁপা পাল ছাড়া।” উপসংহার: শেষপর্যন্ত অন্যদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন যে কোনি নির্বাচিত না হলে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের মেয়েদেরও তিনি বাংলা দল থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন। ক্লাবের সংকীর্ণ দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে প্রণবেন্দু বিশ্বাসের এই লড়াই-ই কোনিকে বাংলা দলে জায়গা করে দেয়।
৩. “প্রণবেন্দু ব্ল্যাকমেল করে অ্যাপোলোর সুইমার টিমে ঢোকাতে চায়।”—কে, কখন এই কথা বলেছিল? সত্যিই কী প্রণবেন্দু ব্ল্যাকমেল করে অ্যাপোলোর সুইমার টিমে – ঢোকাতে চেয়েছিল? 
উত্তর – বক্তা এবং প্রসঙ্গ: কোনি উপন্যাসে বাংলা দলের নির্বাচনিসভায় মন্তব্যটি করেছিলেন জুপিটারের সম্পাদক ধীরেন ঘোষ। কোনিকে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় বাংলা দলে ঢোকাতে গিয়ে তীব্র বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয় প্রণবেন্দু বিশ্বাসকে। তাই তিনি যখন বলেন যে, কোনিকে মনোনয়ন | না দিলে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের মেয়েদেরও তিনি দল থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন, তখনই ধীরেন ঘোষ রেগে গিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার সময় এই মন্তব্যটি করেন।
প্রকৃত সত্য: কোনি নিজে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সদস্য ছিল না। বরং প্রণবেন্দুর প্রিয় ছাত্রী হিয়ার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কোনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলার স্বার্থে কোনিকে দলে চেয়েছিলেন প্রণবেন্দু বিশ্বাস। স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেছিলেন—“রমা যোশির সোনা কুড়োনো বন্ধ করা ছাড়া আমার আর কোনো স্বার্থ নেই।” কোনি বা কনকচাঁপা পাল ছাড়া ফ্রিস্টাইলে রমা যোশির সঙ্গে পাল্লা দেবার মতো যে আর কেউ বাংলায় নেই তা প্রণবেন্দু অকপটেই বলেন। বাংলার স্বার্থে তুচ্ছ দলাদলি ভুলে যেতে হবে—এটাই প্রণবেন্দুর বক্তব্য। কিন্তু ধীরেন ঘোষ ও অন্যান্যরা তা না মানতে চাওয়ায় প্রণবেন্দু রেগে গিয়ে তাঁর ক্লাবের সদস্যদের নাম বাংলা দল থেকে প্রত্যাহারের হুমকি দেন। এ ঘটনাকে তাই ব্ল্যাকমেল নয়, বরং সত্যের পক্ষে লড়াই বলা যায়।

১৩

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “ঠিক সেই সময়ই কোনি ছুটে এসে ওকে চড় মারল।”—কোনি কাকে চড় মেরেছিল? চড় মারার কারণ কী? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের ত্রয়োদশ অধ্যায়ে আমরা দেখি, কোনি হিয়াকে চড় মেরেছিল।
কোনির চড় মারার কারণ: চুরির অপবাদ: মাদ্রাজের হোটেলের ঘরে বেলার ক্রিমের কৌটো খালি দেখে সবাই কোনিকেই সন্দেহ করে। অমিয়া আঙুল দিয়ে কোনির গাল ঘষে ক্রিমের গন্ধ পায়। কোনিকেই চোর সাব্যস্ত করা হয়। কোনি আর থাকতে না পেরে বলে, হিয়া তার মুখে ক্রিম মাখিয়ে দিয়েছে। হিয়ার নাম বলাতে বেলা ঠাস করে কোনিকে চড় মারে সে বলে হিয়ার মতো বড়োলোক কোনির মতো দশটা মেয়েকে ঝি রাখতে পারে। কিন্তু কোনি চড় খেয়েও একই কথা বলে যায়। বেলা তখন তাকে ব্যঙ্গ করে। অপমানের প্রতিশোধ: শেষ অবধি কোনি কান্নায় ভেঙে পড়ে। এইসময়েই হিয়া, ঘরে প্রবেশ করে এবং কোনির সব কথাই যে সত্য তা মেনে নেয়। কিন্তু কোনি রাগ সামলাতে পারে না। হিয়াকে কাছে পেয়েই কোনি ছুটে এসে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়। সে বলে ওঠে – “এটা তোমার পাওনা ছিল।” কোনি তার এই অপমানের জন্য হিয়াকেই দায়ী করে। তাই হিয়াকে দেখে তার ক্রোধ তীব্র হয়ে ওঠে। তার প্রতি অপমানের উপযুক্ত প্রতিশোধ নিতে সে হিয়াকে চড় মেরে বসে।
২. “তবে একবার কখনো যদি জলে পাই…” ‘—কে, কাকে এ কথা বলেছে? এই উক্তির মধ্যে বক্তার কোন্ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর – বক্তা এবং উদ্দিষ্ট জন: সাহিত্যিক মতি নন্দীর লেখা কোনি উপন্যাসে কোনি এ কথা বলেছে হিয়াকে উদ্দেশ্য করে।
মানসিকতার প্রকাশ: শুরুর কথা: মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে অমিয়া, হিয়া, বেলাদের সঙ্গে কোনিও যায়। কোনি অ্যাপোলোর সাঁতারু। ক্ষিতীশ সিংহ তার ট্রেনার। হীনম্মন্যতায় ভোগা: কোনিরা খুব গরিব। তার পোশাক-পরিচ্ছদেও তেমন চমক নেই। অন্য সাঁতারুরা কোনিকে হীনচোখে দেখতে থাকে। গরিব বলে তাকে পাত্তা দেয় না। কোনিও এতে একটু কুঁকড়ে থাকে, হীনম্মন্যতায় ভোগে। অপমানিত হওয়া: এরই মধ্যে তাকে ক্রিম চুরি করার অপবাদ দেওয়া হয়। অন্যের কারণে তাকে চোর বলায় সে অত্যন্ত আহত ও অপমানিত বোধ করে। হিয়াকে চড় মেরে সে তার প্রতিশোধও নেয়। তবে এটাও জানিয়ে দেয় যে, হিয়াকে সে হিংসাও করে না। লড়াকু মনোভাবের প্রকাশ: কোনি জানে তারা গরিব, তাই কোনোভাবেই সে সঙ্গে পারবে না। তার আসল প্রতিযোগিতা হবে জলে। সেখানে ধনী-দরিদ্রের কোনো পার্থক্য নেই। যোগ্যতমের জয় হবেই। তাই হিয়াকে জলে পেলে সে দেখিয়ে দেবে কে বড়ো, আর কে ছোটো। আলোচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে কোনির লড়াকু মনোভাবটিই প্রবলভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

১৪

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “হঠাৎ তার চোখে ভেসে উঠল ‘৭০’ সংখ্যাটা”—কোন্ ঘটনায় এমন হয়েছিল? কোনির কাছে এই সংখ্যাটার তাৎপর্য কী ছিল? 
উত্তর – ঘটনাটির বর্ণনা: কোনি একা চিপকের সুইমিং পুলে নিজের ইচ্ছেমতো অনুশীলন করে উঠে আসার সময় একটি মেয়ের মুখোমুখি হয়। পরিচয় হলে জানতে পারে তার নাম রমা যোশি। সেই সময়েই কোনির চোখে ‘৭০’ সংখ্যাটা ভেসে ওঠে।
সংখ্যাটির তাৎপর্য: রেকর্ড তৈরি: কোনির চোখে ‘৭০’ সংখ্যাটা এক গভীর তাৎপর্য নিয়েই ভেসে উঠেছিল। এই সংখ্যাটা আসলে ‘৭০’ সেকেন্ড। মহারাষ্ট্রের সাঁতারু রমা যোশি ৭০ সেকেন্ডে সাঁতার শেষ করে রেকর্ড তৈরি করেছিল। এই রমা যোশিই ছিল কোনির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। সতর্ক, হিসেবি এবং কঠোর করে তোলা: তাই ক্ষিতীশ সিংহ কোনির অনুশীলনের বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক, হিসেবি এবং কঠোর হয়ে উঠেছিলেন। তিনি কোনির প্রতিদিনের অনুশীলনের পাশাপাশি তার খাওয়া, বিশ্রাম, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সব কিছুতে নজর রাখা শুরু করেছিলেন। উৎসাহদান: ক্ষিতীশ কালিতে বড়ো বড়ো অক্ষরে ‘৭০’ সংখ্যাটা লিখে ক্লাবের বারান্দার দেয়ালে রেখে কোনিকে উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন। অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা: প্রতিদিন চোখের সামনে ওই সময়টি কোনিকে দেখিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, “এক মিনিট ১০ সেকেন্ডে কোনিকে এই বছরই সাঁতরাতে হবে।” অসম্ভবকে সম্ভব করতেই হবে। সময়ই যে কোনির একমাত্র শত্রু তা প্রতিমুহূর্তে ওই সংখ্যাটি সামনে রেখে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন। চিপকে আচমকা রমা যোশির সাথে পরিচয়ে যখন কোনির মনে প্রথম ভেসে উঠল ‘৭০’ সংখ্যাটা, তখনই বোঝা যায়, ক্ষিতীশ তাঁর উদ্দেশ্যে অনেকখানি সফল হয়েছেন।
২. “আপনারা ক্ষিতীশ সিঙ্গিকে জব্দ করার জন্য ওকে ভিক্টিমাইজ করলেন।”—বক্তা কে? ক্ষিতীশ সিংহকে জব্দ করার জন্য কাকে কীভাবে ভিক্টিমাইজড করা হয়েছিল? 
উত্তর – বক্তা: আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাব তথা হিয়া মিত্রের কোচ প্রণবেন্দু বিশ্বাস |
ক্ষিতীশ সিংহকে জব্দ করা এবং তার জন্য অবিচার: প্রণবেন্দু বিশ্বাসের ধারণা হয়েছিল ক্ষিতীশ সিংহকে জব্দ করার জন্য কোনিকে ভিক্টিমাইজ করা হয়েছে। জুপিটারের ধীরেন ঘোষদের সঙ্গে অনেক লড়াই করে প্রণবেন্দু বিশ্বাস কোনিকে বাংলা দলে ঢুকিয়েছিলেন। কিন্তু হরিচরণধীরেন ঘোষরা চক্রান্ত করে কোনিকে প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। যদিও প্রকাশ্যে হরিচরণরা সংগঠকদের ওপরেই দায় চাপায়। এদিকে হিয়া মিত্র ২০০ ও ৪০০ মিটারে না নামার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যখন হরিচরণ প্রণবেন্দুর বিরুদ্ধে বাংলার কথা না ভাবার অভিযোগ আনে। তখন প্রণবেন্দু গ্যালারিতে বসা কোনির দিকে আঙুল তুলে বলে হরিচরণরা যদি বাংলার কথা ভাবত তাহলে কোনি গ্যালারিতে বসে থাকত না। ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ঘৃণ্য চক্রান্ত করে কোনিকে দল থেকে বাদ দিতে সচেষ্ট হয়েছিল ধীরেন ঘোষরা, তা সফল না হওয়ায় প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ থেকেই কোনিকে বঞ্চিত করা হয়। ধীরেন ঘোষ কোনিকে সান্ত্বনা খারাপ করিসনি ন্যাশানাল তো বছর বছরই হয়, সামনের বছর আবার আসবি।” এই লোক-দেখানো সহানুভূতির আড়ালে যে ষড়যন্ত্র ছিল প্রণবেন্দু বিশ্বাস তা স্পষ্ট করে দেন।
৩. মাদ্রাজ জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ অনুষ্ঠান কীভাবে জমে উঠেছিল লেখো।
উত্তর – উপেক্ষিত কোনিতে ভরসা: মাদ্রাজ জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতার শেষ দিনে শেষ প্রতিযোগিতা ৪×১০০ মিটার রিলেতে। ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করতে না পারলে বাংলার চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব ছিল না। অমিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার শেষ ভরসা হয়ে ওঠে কোনি। প্রতিবাদী কোনি: কিন্তু উপেক্ষিত কোনি ক্রুদ্ধ কণ্ঠে ‘আমি নামব না’ বলে প্রতিবাদ জান ।। হিয়া কোনিকে ‘আনস্পোরটিং’ (আনস্পোর্টিং) বললে কোনির ভিতরের সংগ্রামী খেলোয়াড়ের সত্তা জেগে ওঠে। প্রতিযোগীদের চেষ্টা: বাংলার হয়ে শুরুটা করে হিয়া। পরবর্তী প্রতিযোগী পুষ্পিতাকে তিন মিটার এগিয়ে থাকার সুযোগ দিয়ে হিয়া নিজের রাউন্ড শেষ করে। বাংলার পরবর্তী প্রতিযোগী বেলা যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং বিপক্ষ প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে দেয়। কোনির ভূমিকা: বাংলার চতুর্থ প্রতিযোগী কোনি জলে নামার ঠিক আগেই বিধ্বস্ত ক্ষিতীশ সিংহ উপস্থিত হন। তাঁর গলায় আবার শোনা যায় “ফাইট, কোনি ফাইট।” মহারাষ্ট্রের রমা যোশির তিন সেকেন্ড পরে কোনি জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্যান্থারের ক্ষিপ্রতায় ধাওয়া করে কোনি রমা যোশির আগেই বোর্ড স্পর্শ করে। ভিকট্রি স্ট্যান্ডে কোনির গলায় ঝোলানো হয় সোনার মেডেল। এই মেডেল হয়ে ওঠে এতদিনের সব অপমানের জবাব।
৪. মাদ্রাজে দুটি ঘটনার আকস্মিকতা কোনিকে বিভ্রান্ত এবং ব্যথিত করেছিল। এই ঘটনা দুটি সম্পর্কে সংক্ষেপে নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর – কথামুখ: মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে গিয়ে দুটি ঘটনা কোনিকে হতবাক, ব্যথিত এবং বিভ্রান্ত করে।
প্রতিযোগিতায় সুযোগ না পাওয়া: কোনি অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাদ্রাজ গিয়েছিল বাংলা দলের সাঁতারু হিসেবে। কিন্তু প্রশিক্ষক হরিচরণ মিত্তির কোনিকে জানান, যে চারটে ইভেন্টে তার নাম পাঠানো হয়েছিল, তার কোনোটাতেই তার নাম ওঠেনি। এই কথাগুলো কোনির কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই ছিল। চুরির অপবাদ: একইভাবে কোনিকে দেওয়া হয় ক্রিম চুরির অপবাদ। হোটেলের বাইরে যাওয়ার সময় বেলা এই সন্দেহ প্রকাশ করে যায় যে তার ক্রিমের কৌটো থেকে ক্রিম কেউ মেখে নিয়েছে। কোনি ছাড়া ঘরে যখন আর কেউই ছিল না তখন হিয়া বেলার ক্রিম কিছুটা মেখে নেয় ও জোর করে কোনির মুখেও কিছুটা লাগিয়ে দেয়। ফিরে এসে আবার ক্রিম কম দেখে বেলা কোনিকেই অভিযুক্ত করে। কোনির গালে ক্রিমের গন্ধ পেয়ে চোর ধরার আবিষ্কারে উত্তেজিত হয়ে ওঠে সকলে। বিস্মিত কোনি প্রকৃত ঘটনা বললেও সে কথা বিশ্বাস না করে তার গালে চড় মারে বেলা। সত্য বিচার না করেই সবাই কোনিকে নিয়ে হাসাহাসি করে। এই দুটি ঘটনা কোনিকে বিভ্রান্ত, অপমানিত এবং ব্যথিত করে তুলেছিল।
৫. “অভিনন্দন আর আদরে সে ডুবে যাচ্ছে।”—এখানে কার কথা বলা হয়েছে? অভিনন্দন আর আদরের কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – উদ্দিষ্টের পরিচয়: উদ্ধৃত অংশটি মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস থেকে গৃহীত। আলোচ্য অংশে কোনির কথাই বলা হয়েছে।
অভিনন্দন আর আদরের কারণ চক্রান্তের শিকার মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনি বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছিল। সেইমতো বাংলার অন্য সাঁতারুদের সঙ্গে কোনিও যায় মাদ্রাজে। কিন্তু সেখানেও আগের মতোই সে চক্রান্তের শিকার হয়। কোনো প্রতিযোগিতাতেই তাকে নামানো হয় না। ৪×১০০ মিটার রিলেতে সুযোগ: শেষপর্যন্ত দায়ে পড়ে, প্রায় বাধ্য হয়েই তাকে ৪×১০০ মিটার রিলেতে নামানো হয়। এই প্রতিযোগিতায় জিততে না পারলে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না। চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু: আড়ষ্টতা নিয়েও কোনি শেষপর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় নামে। তারপর শুরু হয় প্রবল উত্তেজনাপূর্ণ সাঁতার। শেষে সকলকে অবাক করে দিয়ে কোনি চ্যাম্পিয়ন হয়। সে হারিয়ে দেয় প্রখ্যাত সাঁতারু রমা যোশিকে। দর্শকদের উত্তেজনা: কোনির এই সাফল্যে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে উপস্থিত দর্শকরা। সবাই এসে বাহবা দিতে থাকে কোনিকে। রমা যোশিও তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে যায়। অভিনন্দন জ্ঞাপন: কোনিকে ঘিরে একটা ভিড়ের বৃত্ত রচিত হয়। বাংলার মেয়েরাও তাকে অভিনন্দন জানাতে আসে। জুপিটারের ধীরেন ঘোষ পর্যন্ত আবেগে কোনিকে জড়িয়ে ধরেন। এভাবেই অভিনন্দন আর আদরে কোনি ডুবে যেতে থাকে।
৬. “ওইটেই তো আমি রে, যন্ত্রণাটাই তো আমি।”—কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি ? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – উৎস: আলোচ্য উক্তিটি মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাস থেকে গৃহীত হয়েছে। প্রসঙ্গ: মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ দিনের ৪×১০০ মিটারে রমা যোশির মতো প্রখ্যাত সাঁতারুকে হারিয়ে কোনি জয়লাভ করে। কোনিকে অভিনন্দন জানাতে আসা বহু মানুষের ভিড়ে সে ক্ষিতীশকে দেখতে পায়নি। শেষে ক্ষিতীশকে দেখতে পেয়ে সে রেগে গিয়ে তার বুকে দুমদুম করে ঘুসি মারতে থাকে আর বলে যে, সে যন্ত্রণায় মরে যাচ্ছিল। এই কথার প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: ব্যক্তিসুখ বিসর্জন: দীর্ঘদিনের কঠিন পরিশ্রমের ফল পেয়েছে কোনি। এই কোনিকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্যই ক্ষিতীশ সংসার ভুলেছেন, নিজের ব্যক্তিসুখ বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁকে বহু লাঞ্ছনা-অপমান সহ্য করতে হয়েছে। তবু তিনি কখনও ভেঙে পড়েননি। অপমানের তীব্র যন্ত্রণা: ক্ষিতীশ সবসময় বুকের মধ্যে অনুভব করেছেন জুপিটারের সতীর্থদের কাছ থেকে পাওয়া অপমানের তীব্র যন্ত্রণা। হয়তো এই যন্ত্রণাটা না থাকলে ক্ষিতীশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারতেন না, তৈরি করতে পারতেন না কোনিকে। ক্ষিতীশ নিজেই যেন একটা প্রতিজ্ঞার নাম। সংগ্রামী চেতনার বহিঃপ্রকাশ: লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ক্ষিতীশের প্রচেষ্টা আর ধৈর্য ছিল অবিচল। যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে ক্ষিতীশ হয়ে উঠেছেন ইস্পাতকঠিন। আলোচ্য উক্তিটি প্রকৃতপক্ষে ক্ষিতীশের সংগ্রামী চেতনারই উদ্ভাসিত রুপ।
৭. “পাগলাটে একটা লোকের বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে ফোঁপাচ্ছে—যে মেয়েটি এইমাত্র আশ্চর্য সাঁতার দিল, আর তার মাথায় টপটপ করে জল ঝরে পড়ছে।”—উপন্যাসের শেষের এই ছবিটি তোমার ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর – প্রাক্কথন: মতি নন্দী রচিত কোনি একটি অনুপ্রেরণামূলক উপন্যাস। “গুরুকে শ্রদ্ধেয় হতে হবে শিষ্যের কাছে” এবং “চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে শুধু শিষ্যকেই নয়, গুরুকেও কঠোর জীবনযাপন করতে হবে”—এই দুই ভাবনা যে মানুষটির মনে সদা জাগ্রত ছিল তিনি হলেন কোনির সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ। অপমান ও লাঞ্ছনার জবাব: সাঁতার-অন্তপ্রাণ ক্ষিতীশ সংসারের কথা বিন্দুমাত্র না ভেবে তিলে তিলে বস্তির দরিদ্র মেয়ে কোনিকে চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু হিসেবে গড়ে তোলেন। তাঁরই হাতে গড়া কোনি মাদ্রাজ জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় শত অপমান, শত লাঞ্ছনার জবাব দিয়ে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে। উপন্যাসের শেষ অংশে দেখা যায় সোনার মেডেল পরা মেয়েটি নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দিয়েছে তার গুরুর কাছে। গুরুও তার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করে সুদূর মাদ্রাজে উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুপ্রেরণার মন্ত্র: একটা ময়লা পাঞ্জাবি পরে দূর থেকেই “ফাইট, কোনি ফাইট” মন্ত্রে কোনিকে ক্ষিতীশ উজ্জীবিত করে চলেছিলেন। শীর্ণ শরীরের একটা পাগলাটে লোকের বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে কোনি তার সমস্ত যন্ত্রণা, আনন্দ, অভিমান, বঞ্চনা উজাড় করে নিজে মুক্ত হয়েছে। ক্ষিতীশও সমস্ত বঞ্চনা ও বিদ্রূপের উপযুক্ত জবাব দিয়ে তৃপ্তি লাভ করেছেন।
৮. “দেখা যাক সত্যিই ফুরিয়ে গেছে কিনা, অমিয়া ভাবল, কাল আমাকে দেখাতেই হবে।”—এই উক্তির মধ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে যাওয়ার হাহাকার কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর – অমিয়ার পিছিয়ে পড়া: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে অমিয়া ছিল বাংলা দলের মেয়েদের মধ্যে সেরা সাঁতারু। বেঙ্গল চ্যাম্পিয়নের রেকর্ড তার দখলেই ছিল। কিন্তু মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতার ২০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল এবং ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে অমিয়া পিছিয়ে পড়ে। প্রথমটিতে অমিয়া তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ৪০০ মিটার প্রতিযোগিতাতেও অমিয়া রমা যোশির কাছে হেরে যায়। হিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা: অমিয়া যখন বাংলাকে হতাশ করতে শুরু করে ঠিক সেইসময় হিয়া মিত্র সেই জায়গায় উঠে আসে। ২০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে হিয়া প্রথম বাংলাকে সোনা এনে দেয়। ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকেও হিয়া সোনা জেতে। এর ফলে বাংলার ভাগ্য নির্ভরশীল হয়ে পড়ে হিয়ার ওপর। অমিয়া উপলব্ধি করে যে “তার মাথা থেকে মুকুট তুলে নিয়েছে হিয়া।” এবার সব প্রশংসা, সব মনোযোগ হিয়ার প্রাপ্য। হিয়াই এবার সকলের মধ্যমণি হবে, “তার দিন ফুরিয়ে গেছে।” শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষার তাগিদ: শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার তাগিদ থেকেই অমিয়া ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল এবং ৪×১০০ রিলেতে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে যাওয়ার যে যন্ত্রণা তা অমিয়ার ভাবনায় এখানে ধরা পড়েছে।
৯. “জোচ্চুরি করে আমাকে বসিয়ে রেখে এখন ঠেকায় পড়ে এসেছ আমার কাছে”—কোনির এই অভিমানের কারণ কী? এর পরবর্তী ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর – কোনির অভিমানের কারণ: চক্রান্তের শিকার: মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় কোনি বাংলা দলে সুযোগ পেলেও আসল সময়ে তাকে চক্রান্ত করে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। অবহেলার পাত্রী: ট্রেনে যাত্রা থেকে শুরু করে হোটেল পর্যন্ত সবাই কোনিকে অবহেলার চোখে দেখেছে। বাংলার সম্মান বাঁচানোর জন্য দায়ে পড়ে ৪×১০০ মিটার রিলে প্রতিযোগিতায় কোনিকে নামতে বলা হল সে অভিমানে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
পরবর্তী ঘটনা: চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন: মাদ্রাজে প্রতিযোগিতার শেষ বিষয় ছিল ৪×১০০ মিটার রিলে। মহারাষ্ট্র তখন তিন পয়েন্টে এগিয়ে। বাংলাকে ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করতেই হবে। নাহলে চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন সফল হবে না। অমিয়া অসুস্থ থাকার জন্য বিকল্প সাঁতারু হিসেবে কোনির ডাক পড়ে। শেষ ভরসা: বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার শেষ ভরসা হয়ে ওঠে কোনি। কিন্তু বঞ্চনা আর অবহেলায় অভিমানী কোনি জলে নামতে চায় না। অপমানের জবাব: এই সময় হিয়া কোনিকে ‘আনস্পোর্টিং’ বলে অপমান করলে কোনির মাথায় জেদ চেপে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে, চোয়াল শক্ত করে কোনি নেমে পড়ে জলে। মহারাষ্ট্রের প্রখ্যাত সাঁতারু রমা যোশির ঝাঁপ দেওয়ার তিন সেকেন্ড পরে কোনি জলে ঝাঁপ দেয়। তবুও তীব্র মনোবল আর হৃদয়ে পুষে রাখা অভিমানকে সম্বল করে কোনি রমা যোশিকে পিছনে ফেলে দেয়। ক্ষিতীশের মরিয়া চিৎকার ‘ফাইট, কোনি ফাইট’ শেষপর্যন্ত সত্যে পরিণত হয়। কোনির গলায় ওঠে সোনার মেডেল, তা যেন সমস্ত অপমানের জবাব।

সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

১. কোনি রচনার নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে বিচার করো।
উত্তর – প্রাক্কথন: বাংলা সাহিত্যে কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামানুসারে গল্পউপন্যাস নামকরণের রীতি বিশেষভাবে প্রচলিত। মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসটিও সেই চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণের রীতিকেই অনুসরণ করা হয়েছে।
মূলকথা: কোনি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ের কাহিনি। কঠিন পরিশ্রম ও সমস্যার সাথে মোকাবিলা করে কীভাবে সে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে, সেই কাহিনিই এই উপন্যাসটি জুড়ে আছে।
সার্থকতা বিচার: পারিবারিক দারিদ্র্য বারবার কোনির স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। অসহায় মেয়েটিকে নামকরা সাঁতারু বানানোর প্রতিজ্ঞায় মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন ক্ষিতীশ সিংহ। “ফাইট কোনি, ফাইট”—এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে কোনির সঙ্গে তিনিও হয়ে উঠেছেন জীবনযুদ্ধের এক জন ‘ফাইটার’। শেষপর্যন্ত যাবতীয় অবহেলা, বঞ্চনা, ষড়যন্ত্র আর সীমাহীন দারিদ্র্যকে উপেক্ষা করে কোনি পৌঁছে গেছে সাফল্যের চূড়ায়। ক্ষিতীশও দেখেছেন দীর্ঘ আঁধার শেষে ভোরের লাল আলো ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর স্বপ্নের ভূমিতে। গঙ্গার ঘাট থেকে কুড়িয়ে আনা কোনি একদিন জাতীয় সাঁতারে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ান করেছে। আর তার আড়ালে থেকেছে তার খিদের যন্ত্রণা, চোয়াল চাপা লড়াই, অজস্র ষড়যন্ত্র ইত্যাদি। সমগ্র উপন্যাসে কোনির জীবনসংগ্রামের এই বাস্তব গল্পটি সুসংহত প্লট তৈরি করেছে। তাই উপন্যাসটির নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।
২. কোনি উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যোগা হৈধর্মিণী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও।
অথবা, লীলাবতী চরিত্রটি তোমার কেমন লেগেছে লেখো।
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহের স্ত্রী লীলাবতী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্র।
পরিশ্রমী ও কর্মপটু: লীলাবতীর পরিশ্রমেই তাঁদের সংসার চলত। ‘সিন্হা টেলারিং’ যখন লোকসানের মুখে সেইসময় লীলাবতী নিজের গয়না বন্ধক রেখে নতুন ধরনের কাজ শুরু করেন। এসময় তিনি দোকানের নাম পালটে ‘প্রজাপতি’ রেখে অসম্ভব পরিশ্রম ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে চার বছরের মধ্যেই ‘প্রজাপতি’র উন্নতি ঘটান।
তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও বাস্তববোধ: বাস্তববুদ্ধির পরিচয় দিয়ে তিনি পুরুষদের পোশাক তৈরি বন্ধ করে দুজন মহিলা কর্মচারীকে দোকানে রেখে শুধু মেয়ে ও শিশুদের পোশাক তৈরি শুরু করেন। তাঁর নেতৃত্বেই ব্যাবসা ক্রমশ বড়ো হয়ে ওঠে এবং আরও বড়ো স্থানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
যোগ্য সহধর্মিণী: গম্ভীর স্বভাবের হলেও লীলাবতী স্বামীর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীলা ছিলেন। স্বামীর সাঁতারপ্রীতির কথা জানতেন বলেই সাংসারিক সমস্ত কাজ নিজেই করতেন। স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই তিনি কোনির সাঁতার দেখতে হাজির হয়েছিলেন। সাফল্যের জন্য কোনিকে ফ্রক করে দেবেন বলেছেন। শুধু তাই নয় ইন্ডিয়া রেকর্ড করলে সিল্কের শাড়ি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ঘটনাগুলিতে গম্ভীর স্বভাবের আড়ালে কোথাও যেন মাতৃত্ব উঁকি দিয়ে গেছে লীলাবতীর মধ্যে।
শেষের কথা: স্বল্প পরিসরেও তাঁর কর্মপ্রাণা, সংসারী এবং পরোক্ষে স্বামী অনুরাগী চরিত্রটি উপন্যাসে ধরা পড়েছে।
৩. কোনি উপন্যাসে কোনির দাদা কমলের চরিত্রটি কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, লেখো।
উত্তর – কথামুখ: কোনি উপন্যাসে অপ্রধান চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল কমল। সে কোনির দাদা। কোনির জীবনে তার প্রভাব অনেকখানি। কমলের চরিত্রে যে দিকগুলি উপন্যাসে ফুটে ওঠে, তা হল—
স্বপ্নসন্ধানী: কমল নিতান্তই দরিদ্র পরিবারের যুবক। ছোটোবেলায় সে-ও স্বপ্ন দেখত বড়ো সাঁতারু হবে। তাই অনুশীলনও করত নিয়মিত। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর বাস্তব ও অভাবের তাড়নায় তার সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। জীবনযোদ্ধা: কমল বুঝেছে, জীবনটা একটা রণক্ষেত্র। নিজে সাঁতারু হতে পারেনি বলে তার মনে একটা তীব্র আক্ষেপ ছিল। দেড়শো টাকা বেতনে মোটর গারেজে কাজ করেও কোনিকে উৎসাহ দিয়ে সে তার ইচ্ছাকে পুরণ করতে চেয়েছে।
মানবিক ও সৎ: বোনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা কমলকে মানবিক রূপ দান করেছে। কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েও সে কখনও কাউকে কিছু বুঝতে দেয়নি। ভাই-বোনদের মুখে দু-বেলা দু-মুঠো অন্ন তুলে দিতে সে গারাজে ওভারটাইম করেছে।
অসহায়তা অভাব কমলের নিত্যসঙ্গী। অসুস্থতা তাকে আরও অসহায় করে তুলেছে। ইচ্ছে থাকলেও কোনির জন্য বেশি কিছু করা যে তার পক্ষে সম্ভব নয় তা কমল ক্ষিতীশকে জানিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও নিজের স্বপ্ন সে ছাড়তে পারেনি।—“ও সাঁতার শিখুক, বড়ো হোক, নাম করুক।” কোনির উত্থানের পিছনে কমলের সদিচ্ছা এবং প্রচেষ্টার গুরুত্ব কম নয়।
৪. কোনি উপন্যাসে লেখকের যে সমাজসচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর – শুরুর কথা: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসটিতে সাঁতার ও সাঁতারকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর সমাজের ছবি ফুটে উঠেছে। গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার: উপন্যাসটিতে দেখা যায় ক্লাবের গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার হন সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ। লড়াই ও সংগ্রাম: একইসাথে শুরু হয় ক্ষিতীশের অন্য এক লড়াই। শ্যামপুকুরের বস্তিতে থাকা হতদরিদ্র, প্রায় অশিক্ষিত, কালো, শীর্ণকায় কোনির মধ্যেই তিনি সমস্ত লড়াই ও সংগ্রামের অস্ত্র খুঁজে পান। অভাব ও প্রতিকূলতা: এই লড়াই শুধু ক্ষিতীশের স্বপ্নপূরণের নয়, এই লড়াই অভাব ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেও। ডিম-কলা খাওয়ার পরিবর্তে ক্ষিতীশ সিংহের থেকে পয়সা নিয়ে যখন কোনি সেটা দিয়ে তার পরিবারকে সাহায্য করতে চায় তখন তার মাধ্যমে অভাবের তীব্রতম রূপই প্রকাশিত হয়। অভাবের কারণেই কোনির দাদা কমলের মতো প্রতিভার মৃত্যু ঘটে যায়। অর্থনৈতিক বিভাজন: কোনির মুখ দিয়ে যখন লেখক বলেন “বড়োলোকরা গরিবদের ঘেন্না করে”, তখন সমাজের অর্থনৈতিক বিভাজনটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অবহেলিত কোনির ওপরেই যখন সমগ্র বাংলার সম্মান নির্ভর করে, তখন কোনি বলে “আমি গরীব, আমাকে দেখতে খারাপ, লেখাপড়া জানি না, কত কথা শুনলাম। …এখন ঠেকায় পড়ে এসেছ আমার কাছে।” শেষের কথা: সমগ্র সমাজের বিরুদ্ধে এ হল কোনির প্রতিবাদ। তার সাফল্য যেন সমস্ত অন্যায় বৈষম্যের উপযুক্ত জবাব হয়ে উঠেছে।
৫. লড়াকু এবং অনুপ্রেরণামূলক উপন্যাস হিসেবে কোনি তোমার মনকে কতটা স্পর্শ করেছে লেখো।
উত্তর – “ফাইট, কোনি ফাইট” স্লোগানটিই কোনি উপন্যাসের মূলমন্ত্র। একজন সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে ক্ষিতীশ সিংহের লড়াকু মানসিকতা, পরিশ্রমী সত্তা, একাগ্রতা এবং নিষ্ঠা তাঁর স্বপ্নকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। বস্তির মেয়ে হতদরিদ্র, প্রায় অশিক্ষিত কোনিকে তিনি যেভাবে তৈরি করেছেন এবং পদে পদে সমস্ত প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন তা রোমহর্ষক এবং অনুপ্রেরণামূলক। একজন মনস্তাত্ত্বিকের মতো তিনি তাঁর শিষ্যার কাছে ক্রমশ শ্রদ্ধেয় এবং অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। নিজের সংসার, ব্যাবসা সমস্ত কিছু ভুলে শিষ্যার মতোই কঠোর জীবনযাপন ও লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য কষ্ট স্বীকার করেছেন তিনি। ক্লাবের সংকীর্ণ দলাদলিতে ট্রেনারের পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। প্রাণের প্রিয় ক্লাব জুপিটারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে কিন্তু তাঁর লড়াই থামেনি। কোনিও পদে পদে নিজের দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছে। ক্লাবের রাজনীতি, চূড়ান্ত অপমান, অবহেলার বিপক্ষে শুধুই অনুশীলনে মন দিয়েছে। তার এই অনুশীলন, অমানুষিক পরিশ্রম তাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। তাই বাংলার সম্মান বাঁচানোর লড়াইয়ে শামিল হয়ে কোনি যে লড়াই আমাদের দেখায় তা আমাকে শিহরিত উত্তেজিত ও আনন্দিত করেছে।
৬. কোনি উপন্যাসের কোনি চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসটি কোনি নামের মেয়েটির জীবনযুদ্ধেরই কাহিনি। শ্যামপুকুর বস্তিতে মা ও সাত ভাই-বোনের সঙ্গে তার দিন কাটে। সে স্বভাবে ডানপিটে, চেহারায় তার পুরুষালি ভাব। ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা তার চুল। কালো হিলহিলে শরীরটি যেন কেউটের মতো।
লড়াকু মানসিকতা: গঙ্গাবক্ষে আম সংগ্রহ ২০ ঘণ্টা হাঁটা প্ৰতিযোগিতা, বাংলা চ্যাম্পিয়ন অমিয়াকে হারানো এবং সবশেষে মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা—উপন্যাসের সর্বত্র কোনির লড়াকু মনোভাব প্রমাণিত হয়েছে। মাদ্রাজে যখন হিয়া তাকে বলে “কোনি তুমি আনস্পোরটিং”, তখন এর উত্তর সে জলেই দেয়।
পরিশ্রমী ও কষ্টসহিষ্ণু: দারিদ্র্যের সাথেই কোনিদের বসবাস। সে বিশ্বাস করে “বড়লোকরা গরিবদের ঘেন্না করে।” চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধাকে হারিয়ে সে নিজেকে অনুশীলনে যুক্ত রাখে। লীলাবতীর ‘প্রজাপতি’ দোকানের যাবতীয় ফরমাশ খাটে।
অভিমানী: কোনির সমস্ত অভিমান ছিল ক্ষিতীশ সিংহকে ঘিরে। মাদ্রাজ যাওয়ার সময় এবং সেখানে গিয়ে ক্ষিতীশ ছাড়া অসহায় কোনির অভিমান প্রবলভাবে জেগে ওঠে। বাংলাকে না ভালোবাসার অপবাদ যখন তাকে দেওয়া হয় তখন তার শত অপমান, বঞ্চনা অভিমানে পরিণত হয়। তাই হিয়া বা অমিয়াকে হারিয়ে সে তার জবাব দিতে চেয়েছিল এবং বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে, সে সকলকেই জবাবও দিয়েছে।
উপসংহার: কোনির নিষ্ঠা, একাগ্রতা, লড়াকু পরিশ্রমী মানসিকতা এই চরিত্রটিকে অনবদ্য করে তুলেছে।
৭. কোনির উত্থানে ক্ষিতীশের ভূমিকা আলোচনা করো। 
উত্তর – প্রাক্কথন: গঙ্গার ঘাটে বারুণী তিথিতে দেবতার উদ্দেশে উৎসর্গ করা আম দখলের ঘটনা থেকেই ক্ষিতীশ কোনিকে আবিষ্কার করেছিলেন। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ: তারপর একদিন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কুড়ি ঘণ্টা হাঁটা প্রতিযোগিতার শেষে কোনিকে কাছে পেয়ে সাঁতার শেখানোর প্রস্তাব নিয়ে হাজির হলেন তিনি। কোনি সেই প্রস্তাব এককথায় বাতিল করে দিলেও ক্ষিতীশ হাল ছাড়েননি। তিনি মনে মনে ঠিক করে নেন যে, কোনিকে তিনি নামকরা সাঁতারু তৈরি করবেনই। দায়িত্বগ্রহণ: কোনির বাড়ি গিয়ে ওদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে ক্ষিতীশ জানতে পারেন ওরা খুব গরিব। তাই নিজেই তিনি কোনির সব দায়িত্ব নিলেন। জুপিটার ছেড়ে অ্যাপোলো ক্লাবে এলেন শুধু কোনির জন্যই। নিজের সংসার, পরিবারের কথা ভুলে কোনিকে নিয়েই চলল তাঁর প্রতিজ্ঞাপূরণের কাজ। কঠোর অনুশীলন: কোনিকে কঠোর অনুশীলনের মধ্যে রেখে চ্যাম্পিয়ন বানানোই ছিল ক্ষিতীশের একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষিতীশ নিজেই কোনির জন্য উপযুক্ত খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করলেন। ধীরে ধীরে কোনিও সাঁতারকে ধ্যানজ্ঞান মনে করতে শিখল। সফলতা অর্জন: একসময় যাবতীয় প্রতিকূলতা অতিক্রম করে কোনি মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে ৪×১০০ মিটার রিলেতে প্রথম হয়ে তার নিজের এবং ক্ষিতীশের স্বপ্ন পূরণ করে। শেষের কথা: সবমিলিয়ে বলা যায় ক্ষিতীশ না থাকলে কোনির উত্থান কখনোই সম্ভবপর হত না। আলোচ্য উপন্যাসে ক্ষিতীশ যদি জহুরি হয় তবে কোনি তাঁর রত্ন।
৮. ‘কোনি’ উপন্যাস অবলম্বনে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্র সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, ক্ষিতীশ সিংহ চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসটির কাহিনি যে মানুষটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে তিনি হলেন নিঃসন্তান, পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন বছরের মধ্যবর্তী সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।
অভিজ্ঞ, বিচক্ষণ ও রসিক: ক্ষিতীশ গঙ্গার ঘাটে সাড়ে তিন মন দেহের অধিকারী বিষ্টুচরণ ধরের সঙ্গে কথাবার্তায় তাঁর বিচক্ষণতার আর রসবোধের পরিচয় দিয়েছেন। গঙ্গার ঘাটে কোনিকে এক ঝলক দেখে বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ বুঝতে পেরেছিলেন কোনির মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রতিবাদী, লড়াকু ও আপসহীন: দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর জুপিটার ক্লাবের সঙ্গে থেকেও দলাদলি এবং স্বার্থপর কিছু মানুষের চক্রান্তে তাঁকে ক্লাবের ট্রেনারের পদ ছাড়তে হয়। কিন্তু তাঁর লড়াই থেমে থাকে না। তিনি কোনিকে সাঁতার শেখাতে শুরু করেন এবং পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক সকল প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে কোনিকে চ্যাম্পিয়নে পরিণত করেন।
নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী: সাঁতার-অন্তপ্রাণ মানুষটি সাঁতারের জন্য নিজের সংসারকে তুচ্ছ করেছেন। নিজের নিষ্ঠা, পরিশ্রম দিয়ে তিনি কোনিকে চ্যাম্পিয়ন করে গড়ে তুলেছেন।
দৃঢ়চেতা ও আদর্শবান: “গুরুকে শ্রদ্ধেয় হতে হবে শিষ্যের কাছে” এবং “মনস্তাত্ত্বিকের মতো শিষ্যের সঙ্গে মিশে কথা, কাজ, উদাহরণ দিয়ে মনের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা বাসনা জাগিয়ে তুলতে হবে”—এটাই ছিল তাঁর মূলমন্ত্র। কোনির মধ্যে দিয়ে এই স্বপ্নকেই রূপ দিয়েছিলেন ক্ষিতীশ সিংহ। তাঁর মধ্যে থাকা দার্শনিক সত্তাই যেন তাঁকে লক্ষ্যে পৌঁছতে ক্রমাগত উদ্বুদ্ধ করে তুলতে থাকে। এভাবেই ক্ষিতীশ হয়ে ওঠে উপন্যাসের মূল চরিত্র।
৯. প্রণবেন্দু বিশ্বাসের চরিত্রটি তোমার কেমন লেগেছে লেখো।
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের ট্রেনার প্রণবেন্দু বিশ্বাস একটি পার্শ্বচরিত্র হওয়া সত্ত্বেও নিজস্বতায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন।
দক্ষতা ও বিচক্ষণতা: প্রণবেন্দু বিশ্বাস একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষক। এই দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণে হিয়া মিত্র বাংলার অন্যতম সেরা সাঁতারুতে পরিণত হয়। ঠিক তেমনই বিচক্ষণতা দিয়ে কোনির মতো প্রতিভাকে চিনতেও ভুল করেননি।
সৎ ও নিরপেক্ষ: প্রণবেন্দুর সৎ ও নিরপেক্ষ মানসিকতার জন্যই কোনি মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় বাংলা দলে সুযোগ পায়। তিনিই প্রতিবাদী কণ্ঠে বলেন “বেঙ্গলের স্বার্থেই কনকচাঁপা পালকে টিমে রাখতে হবে।” ক্লাবের সংকীর্ণ দলাদলি ও হীন চক্রান্তের ঊর্ধ্বে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
দপ্তকণ্ঠী: হিয়ার ট্রেনার হওয়া সত্ত্বেও কোনির পক্ষ নিয়ে তিনি বলেছিলেন যে, “যে রকম রোখা জেদী সাঁতার ও দেখাল, তাতে স্প্রিন্ট ইভেন্টে ওর সমকক্ষ এখন বাংলায় কেউ নেই।” মাদ্রাজে বাংলার চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে প্রণবেন্দু দৃপ্তকণ্ঠে বলেন “ভাবাভাবির কিছু নেই, কনকচাঁপা পালকে নামান, অমিয়ার জায়গায়।”
স্বাজাত্যবোধ: বাংলার সম্মানের জন্যই যে কোনিকে প্রয়োজন তা দৃপ্তকণ্ঠে জানান প্রণবেন্দু। বাংলার প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকেই তিনি বলেন “রমা যোশির সোনা কুড়োনো বন্ধ করা ছাড়া আমার আর কোনো স্বার্থ নেই।” উপন্যাসে উল্লেখিত প্রণবেন্দু বিশ্বাস তাই সততা, প্রতিবাদ এবং বিচক্ষণতার মিশেলে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
১০. দারিদ্র্য আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে কোনির যে লড়াই তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – কথামুখ: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কনকচাঁপা পাল। কোনির লড়াই ছিল একইসঙ্গে সংসারে দারিদ্র্যের সঙ্গে অন্যদিকে জলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে।স্বাভাবিক জড়তা: অভাবের সংসারে দাদার মৃত্যুর পর কোনির বুক ঠেলে একটিই প্রশ্ন ওঠে “এবার আমরা কী খাব?” আর এই খিদের যন্ত্রণাই কোনিকে সর্বত্র তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কখনও তা নেহাতই বেঁচে থাকার খিদে কখনও-বা তা জেতার খিদে। গরিব ঘরে জন্ম হওয়ায় স্বাভাবিক একটা জড়তা অনেকের মধ্যেই থাকে। কোনিও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই অমিয়া বা হিয়ার মতো মেয়েদের কথাবার্তা আর কাজকর্মে সে সহজেই অপমানিত বোধ করে। শ্রেষ্ঠত্বের পদকপ্রাপ্তি: হিয়ার ‘আনস্পোর্টিং’ শব্দটা কোনিকে বিজয়িনীর মঞ্চে পৌঁছে দিয়েছে। কোনি জেদি, একরোখা, পরিশ্রমী আর কষ্টসহিয়ু। জীবনে ও জলে সর্বত্রই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত সে জেতে। শত বঞ্চনা, অজস্র অপমানের পরও সাফল্যের পদক ঝোলে কোনিরই গলায়। লড়াকু ও পরিশ্রমী মানসিকতা: সমস্ত প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে, কঠোর জীবনযাপন করে কোনির জীবনে এসেছে সাফল্য। ক্লাবের রাজনীতি, চূড়ান্ত অপমান, অবহেলার বিপক্ষে সে শুধুই অনুশীলন চালিয়ে গেছে। লড়াকু, পরিশ্রমী মানসিকতা তাকে বিজয়িনী করে তুলেছে।
১১. ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য যে কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন তার পরিচয় দাও।
অথবা, ক্ষিদ্দা কীভাবে কোনির জীবনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – নির্দেশক ও অনুপ্রেরণা: গঙ্গার ঘাট থেকে মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতার ভিকট্রি স্ট্যান্ড পর্যন্ত কোনির যে যাত্রা সেখানে ক্ষিদ্দাই কোনির প্রথম প্রধান নির্দেশক ও অনুপ্রেরণা। অনুশীলনের ব্যবস্থা: ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই অনুশীলনে সাঁতারের বিভিন্ন কৌশল ক্ষিতীশ কোনিকে শিখিয়েছিলেন। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত কোনির প্র্যাকটিস চলত। ছকে বাঁধা জীবন: ক্ষিতীশ কোনির জীবনযাত্রাকে একটা ছকে বেঁধে দিয়েছিলেন। কোনি কখন কী কী খাবে সেই ব্যাপারেও ক্ষিতীশ নিয়ম জারি করেছিলেন। কোনিকে প্রতিদিন দুটো ডিম, দুটো কলা এবং দুটো টোস্ট খাওয়ার কথা ক্ষিতীশ বলেন। এগুলি কোনিকে খেতে দেওয়ার বদলে আরও এক ঘণ্টা কোনির জলে থাকতে হবে বলে ক্ষিতীশ জানান। অমানুষিক পরিশ্রম: লোভ দেখিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া অন্যায় জেনেও যন্ত্রণা আর সময় দুটোকেই হারানোর জন্য ক্ষিতীশ এমনটা করেছিলেন। কোনি টিফিনের বদলে টাকা চাইলে ক্ষিতীশ আর কোনির মধ্যে বোঝাপড়া হয়। ক্ষিতীশ কোনিকে নানা উদাহরণ দিয়ে তাকে উজ্জীবিত করেন।সফলতা অর্জন: ক্ষিতীশই দেয়ালে ‘৭০’ লিখে টাঙিয়ে দিয়ে কোনির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে দিনের পর দিন কোনির এই কঠোর অনুশীলনই তাকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যায়।
১২. কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও।
উত্তর – শুরুর কথা: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি। উপন্যাসে তাদের দারিদ্র্যপীড়িত পারিবারিক জীবনের করুণ কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। অভাবী সংসার পিতার মৃত্যুর পর কোনির দাদা কমল তাদের সংসারের হাল ধরেছে। একটা গারেজে মাসে দেড়শো টাকা মাইনেতে কমল কাজ করে। এই সামান্য আয়েই মা আর ভাই-বোনদের মুখে সে খাবার তুলে দেয় বাসস্থান: থাকার জন্য উপযুক্ত ঘরও কোনিদের নেই। একটামাত্র তক্তাপোশ, তাতেও তোশক নেই। শুধু চিটচিটে ছোটো কয়েকটা বালিশ। দেয়ালের দড়িতে টাঙানো জামা-প্যান্ট। তাদের খোলার চালের ঘরে একটিমাত্র জানালা। তার নীচে থকথকে পাঁকে ভরা নর্দমা। দারিদ্র্যের চাপ: কমল নিজেও স্বপ্ন দেখত একদিন সে বড়ো সাঁতারু হবে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর দারিদ্র্যের চাপে তার সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সে জানে কোনির ভিতর লুকিয়ে আছে প্রতিভা। কিন্তু সাধ থাকলেও কমলের সাধ্য নেই। দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোগাড় করাই তারপক্ষে কঠিন। কঠিন রোগে আক্রান্ত কমলের লড়াইও মৃত্যুতে শেষ হয়ে গিয়েছে। রোজগারহীন সংসারে সাহায্যের ছাত: সম্পূর্ণ রোজগারহীন কোনিদের সংসারে এরপর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ক্ষিতীশ। ‘প্রজাপতি’ দোকানে কাজ করে কোনি পায় চল্লিশ টাকা। অপরদিকে ছাঁট কাপড় কেটে কোনির মায়ের সামান্য আয় হয়। এভাবেই দারিদ্র্যকে নিত্যসঙ্গী করে নিয়ে কোনিদের সংসার চলতে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *