wb 10th Bengali

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 10 পথের দাবী

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 10 পথের দাবী

West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 10 পথের দাবী

West Bengal Board 10th Bengali Solutions

লেখক পরিচিতি

ভূমিকা: “আমার শৈশব ও যৌবন ঘোর দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থের অভাবেই আমার শিক্ষালাভের সৌভাগ্য ঘটেনি। পিতার নিকট হতে অস্থির স্বভাব ও গভীর সাহিত্যানুরাগ ব্যতীত আমি উত্তরাধিকারসূত্রে আর কিছুই পাইনি। পিতৃদত্ত প্রথম গুণটি আমাকে ঘরছাড়া করেছিল— আমি অল্প বয়সেই সারা ভারত ঘুরে এলাম। আমার পিতার দ্বিতীয় গুণের ফলে জীবন ভরে শুধু স্বপ্ন দেখেই গেলাম।” কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। শরৎচন্দ্র ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায়, মায়ের নাম ভুবনমোহিনী দেবী।
শৈশব ও ছাত্রজীবন: শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাড়া। দেবানন্দপুর তাঁর জন্মস্থান হলেও আর্থিক টানাটানির কারণে সেখানে তাঁর বেশিদিন থাকা হয়ে ওঠেনি। ভাগলপুরে বসবাসকারী শরৎচন্দ্রের মামারা ছিলেন ধনী গৃহস্থ। বালক শরৎচন্দ্রকে চলে আসতে হয় মামার বাড়িতে। ভাগলপুর থেকে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র দেবানন্দপুরে আসেন এবং ভরতি হন হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে। কিন্তু কয়েক বছর পরে অভাবের কারণে শরৎচন্দ্রের বাবা মতিলাল সপরিবারে ভাগলপুরে চলে এলে হুগলি ব্রাঞ স্কুলে শরৎচন্দ্রের লেখাপড়ায় ছেদ ঘটে। ভাগলপুরে এসে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলে তাঁর ভরতির ব্যবস্থা করা হয় এবং সেখানে থেকে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। তারপর এফএ ক্লাসে ভরতি হলেও আর্থিক কারণে তাঁর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দেই তাঁর প্রথাগত পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে।
কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন: ভাগলপুরে বসবাস করার সময়েই তাঁর সাহিত্যচর্চার সূচনা হয়। সেখানে থাকতেই তিনি বেশ কিছু গল্প-উপন্যাস রচনা করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি ছাপা হয়নি। শুধু সাহিত্যচর্চা নয়, ভাগলপুরে থাকাকালীন তিনি গানবাজনা ও অভিনয়ের চর্চাও শুরু করেন। আদমপুর ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ভাগলপুরে তাঁর অস্থিরচিত্ততার প্রকাশও লক্ষ করা যায়। তিনি দু-একটি চাকরিতে যোগ দিলেও তাতে মন বসাতে পারেননি। একবার সন্ন্যাসী হয়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণও করেছিলেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্য অন্বেষণের জন্য তিনি রেঙ্গুনে চলে যান। যাওয়ার আগে ‘কুন্তলীন’ গল্প প্রতিযোগিতায় ‘মন্দির’ নামে একটি গল্প পাঠিয়ে দেন। কিন্তু লেখক হিসেবে তিনি নিজের নামের বদলে তাঁর এক মামা সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম দিয়েছিলেন। শরৎচন্দ্রের এই ‘মন্দির’ গল্পটিই সে বছর ‘কুন্ডলীন’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়। এটিই শরৎচন্দ্রের লেখা প্রথম মুদ্রিত রচনা। কর্মসূত্রে তিনি রেঙ্গুনে প্রায় দশ বছর ছিলেন। প্রবাসে থাকলেও সেই সময়েই তিনি বাংলা সাহিত্যের পাঠকমহলে কথাশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর লেখা বড়দিদি যখন ভারতী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তখন প্রথম সংখ্যাগুলিতে লেখকের নাম ছিল না। অনেকেই সেটাকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বলে ভুল করেছিলেন। একে একে ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘রামের সুমতি’, ‘পথনির্দেশ’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘পণ্ডিতমশাই’, প্রভৃতি প্রকাশের ফলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কথাশিল্পী হিসেবে অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি রেঙ্গুন থেকে পাকাপাকিভাবে দেশে ফিরে আসেন এবং লেখাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের একমাত্র জীবিকা। তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল—শ্রীকান্ত (চার পর্ব), চরিত্রহীন, গৃহদাহ, দত্তা, দেবদাস, পল্লীসমাজ, শেষ প্রশ্ন, বিপ্রদাস, দেনাপাওনা, পথের দাবী প্রভৃতি। স্বদেশ ও সাহিত্য, নারীর মূল্য প্রভৃতি তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। ‘অনিলা দেবী’, ‘নিরুপমা দেবী’ইত্যাদি ছদ্মনামেও শরৎচন্দ্র লেখালেখি করেছেন। ছোটোগল্প অপেক্ষা উপন্যাসের দিকেই শরৎচন্দ্রের ঝোঁক ছিল বেশি। সেজন্য তাঁর লেখা ছোটোগল্পের সংখ্যা বেশ কম। সংখ্যায় কম হলেও তাঁর ছোটোগল্পগুলিও বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে ‘মহেশ’, ‘অভাগীর স্বর্গ’ এবং ‘একাদশী বৈরাগী’ এই তিনটি গল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। তাঁর রাজনৈতিক উপন্যাস পথের দাবী সেকালের বিপ্লবীদের প্রবল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। বইটি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। শরৎচন্দ্র বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি কিছুদিন হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তৎকালীন রাজনীতির প্রতি বিরক্ত হয়ে তিনি সেই পদ ত্যাগ করেন।
পুরস্কার ও সম্মান: শরৎচন্দ্র ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী’ সুবর্ণপদক পান। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ডিলিট উপাধি। তবু এইসব পুরস্কার তাঁর কাছে কিছুই নয়। তাঁর আসল পুরস্কার হাজার হাজার পাঠক-পাঠিকার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা। আজও তারা তাঁকে হৃদয়ের সিংহাসনে বসিয়ে রেখেছে।
জীবনাবসান: ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি এই অমর কথাশিল্পীর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা পঙ্ক্তি—
“যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে
ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।
দেশের মৃত্তিকা থেকে নিল যারে হরি
দেশের হৃদয় তাকে রাখিয়াছে ধরি।”

পূর্বসূত্র

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পথের দাবী উপন্যাসের নির্বাচিত একটি অংশ এই নির্বাচিত পাঠ্যাংশে বর্ণিত হয়েছে।
এখানে পাঠ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তাই এর পূর্বসূত্র জানা প্রয়োজন। পথের দাবী উপন্যাসের শুরুতেই আমরা অপূর্ব এবং তার পরিবারের বর্ণনা পাই। অপূর্ব ছিল এক নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মণ। এমএসসি পাস করার পর অপূর্বর কলেজের প্রিন্সিপাল বোথা কোম্পানিতে তাকে একটা চাকরি জোগাড় করে দেন। আর এই বোথা কোম্পানির নতুন অফিস ছিল রেঙ্গুনে। মায়ের খুব একটা মত না থাকা সত্ত্বেও অপূর্ব রেঙ্গুন যাত্রা করে নিজের চাকরিজীবনের সূচনা করতে। রেঙ্গুনে এসে অপূর্বর নানারকম অভিজ্ঞতা হয়। কখনও ভালো অভিজ্ঞতা, কখনওবা খারাপ। চাকরি করতে গিয়ে অপূর্বর সঙ্গে এক মারাঠি ব্রাহ্মণের আলাপ হয় যার নাম রামদাস তলওয়ারকর। অপূর্বর তাকে ভালো লাগে। অপূর্ব রেঙ্গুনে যে বাড়িতে থাকত, সেই বাড়ির ওপরের তলায় এক সাহেব তার ক্রিশ্চান মেয়েকে নিয়ে থাকত। সাহেবটি অপূর্বর সঙ্গে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার করলেও, তার ক্রিশ্চান মেয়েটি ছিল অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র। এই নতুন শহরে অপূর্বর সঙ্গে একটি খারাপ ঘটনা ঘটে। অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চুরি হয়ে যায়। এই সময় ক্রিশ্চান মেয়েটি তাকে সাহায্য করে। তার জন্যই টাকাকড়ি ছাড়া অপূর্বর বাকি জিনিসপত্র চুরি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়। অপূর্ব এই চুরির ব্যাপারে আইনের সাহায্য নিতে চেয়েছিল, কিন্তু ক্রিশ্চান মেয়েটি রাজি ছিল না। রেঙ্গুনের পুলিশকর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর বাবার বন্ধু আর অপূর্বর একরকম আত্মীয়। অপূর্ব পুলিশ স্টেশন যাওয়ার সময় রাস্তাতেই নিমাইবাবুর সঙ্গে তার দেখা হয়। নিমাইবাবু সেই সময় জাহাজঘাটে যাচ্ছিলেন। তাদের কাছে খবর ছিল পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক, যিনি রাজবিদ্রোহী এবং যাঁকে ধরার জন্য পুলিশকর্তারা ব্যস্ত, তিনি নদীপথে জাহাজে রেঙ্গুন আসছেন। অপূর্বকেও তিনি তাঁর সঙ্গে নিয়ে যান। অপূর্ব সব্যসাচীর কথা শোনামাত্র খুবই উত্তেজিত হয় এবং যেতে রাজি হয়। সিঙ্গাপুরে তিন বছর জেল খেটে সব্যসাচী রেঙ্গুনে আসছেন। সব্যসাচী ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইন পাস করেছিলেন। সব্যসাচীকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথোপকথন চলে। জাহাজ জেটির গায়ে এসে যখন ভিড়ল, তারা সব্যসাচীকে খুঁজে পেলেন না। সবাই ভাবল সব্যসাচী হয়তো পালিয়েছেন। কিন্তু জগদীশবাবু সন্দেহের বশে কয়েকজনকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন। নিমাইবাবুও থানায় গেলেন আর অপূর্বকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলেন। অপূর্ব, নিমাইবাবুর সঙ্গে পুলিশ স্টেশনে গেল। অপূর্ব আর নিমাইবাবু পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার পরের ঘটনাই আমাদের

বিষয়সংক্ষেপ

শরৎচন্দ্রের লেখা পথের দাবী উপন্যাসের একটি অংশ এই পাঠ্যাংশে নেওয়া হয়েছে। এখানে মূলত দেখা যায় পুলিশ পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য ব্যস্ত। এইজন্যই বর্মার তেলের খনির যেসব মিস্ত্রিরা চাকরির উদ্দেশ্যে রেঙ্গুনে এসেছিল তাদের সবাইকে পুলিশ স্টেশনে তদন্ত করা হয়েছিল। একটু বেশি সন্দেহের জন্য একজনকে পুলিশ স্টেশনের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সে নিজের পরিচয় দেয় গিরীশ মহাপাত্র বলে। এই গিরীশ মহাপাত্রের আচরণ, সাজপোশাক দেখে এবং তার পকেট ও ট্যাঁক থেকে পাওয়া জিনিসপত্র দেখে তারা বোঝে সে ব্যক্তি কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না। তাই তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু এই গিরীশ মহাপাত্রই ছিল সব্যসাচী মল্লিক। এই সব্যসাচী মল্লিক নিজের দেশের জন্য লড়াই করছিলেন। পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য গিরীশ মহাপাত্র ছদ্মবেশটা তিনি ধারণ করেছিলেন।
অপূর্ব নামের চরিত্রটি যারা নিজের দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে চাইছে তাদের সে সমর্থন করে। তাই পুলিশের কর্তা তার আত্মীয় হলেও সে সব্যসাচীকেই নিজের বলে মনে করে। অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে পুলিশ স্টেশনে দেখেছিল আর দ্বিতীয়বার দেখেছিল রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করার সময় স্টেশনে। অপূর্ব চিনতে পেরেছিল ওই ব্যক্তিই সব্যসাচী মল্লিক। কিন্তু সে-কথা অপূর্ব পুলিশকে জানায়নি কারণ সে নিজের চোখের সামনে দেখেছে পরাধীন দেশে প্রতিদিন সাহেবদের হাতে দেশের মানুষের অপমান, লাঞ্ছনা। অপূর্ব নিজেও সাহেবদের হাতে বিনা দোষে মার খেয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে। তাই সে নিজেও চাইত এই পরাধীনতা থেকে ভারতবর্ষ মুক্ত হোক। আমরা দেখি ট্রেনে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হয়েও অপূর্বকে নানাভাবে বিরক্ত করা হয়েছে, শুধু সে ভারতীয় বলে। তাই সব্যসাচীর আন্দোলনকে অপূর্ব মনেপ্রাণে সমর্থন করত, সে-ও চাইত পরাধীন দেশ স্বাধীন হোক।

নামকরণ

নামকরণের মাধ্যমেই যে-কোনো সাহিত্যের অন্তর্নিহিত বিষয় বা ভাব তার পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে। সাহিত্যকর্মের নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তু, চরিত্র বা ভাব অনুযায়ী আবার কখনও বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে।
এখানে শরৎচন্দ্রের লেখা পথের দাবী উপন্যাসের একটি নির্বাচিত অংশ আমাদের পাঠ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে। পাঠ্যাংশে আমরা গিরীশ মহাপাত্র চরিত্রটি পাই, যে আসলে একজন বিপ্লবী এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। তার আসল নাম সব্যসাচী মল্লিক, যে বিভিন্ন ছদ্মবেশে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেরায়। দেশকে স্বাধীন করাই সব্যসাচীর জীবনের মূল লক্ষ্য। মূল উপন্যাসে সব্যসাচী মল্লিকের একটি সংগঠন ছিল যার নাম পথের দাবী। এই সংগঠনে সব্যসাচী ছাড়া আরও কয়েকজন ছিলেন যারা একত্র হয়ে দেশকে কীভাবে স্বাধীন করা যায় এবং এই স্বাধীনতালাভের জন্য কোন্ পথে আন্দোলন করা যায়, সেইসব বিষয়ে আলোচনা করতেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করা এবং স্বাধীনতার জন্য একজোট হয়ে আন্দোলন করা। এই সংগঠনের কার্যকলাপকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি এগিয়েছে। আর এই সংগঠনের মূল কাণ্ডারি ছিলেন সব্যসাচী মল্লিক। সংগঠনটির নাম অনুযায়ী মূল উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে, আর আমাদের পাঠ্যাংশটি মূল উপন্যাসেরই একটি নির্বাচিত অংশ। ·মূল উপন্যাসটিতেও স্বাধীনতার ও বিদেশি শাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবি প্রাধান্য পেয়েছে। তাই মূল উপন্যাসের নাম অনুযায়ী আমাদের পাঠ্যাংশের এই নির্বাচিত অংশটির নামও ‘পথের দাবী’ রাখা হয়েছে। সেদিক থেকে ‘পথের দাবী’ নামকরণটি সার্থক ও যথাযথ হয়েছে বলা যায়।

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো। 

১. ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত শরৎচন্দ্রের উপন্যাসটি হল-
(ক) পথের দাবী
(খ) শেষপ্রশ্ন
(গ) গৃহদাহ
(ঘ) চরিত্রহীন
২. হলঘরে মোটঘাট নিয়ে বসে আছে-
(ক) জন-পাঁচেক
(খ) জন-ছয়েক
(গ) জন-চারেক
(ঘ) জন-তিনেক
৩. তেলের খনির কারখানার মিস্ত্রিরা চাকরির উদ্দেশে গিয়েছিল-
(ক) রেঙ্গুন
(খ) কলকাতা
(গ) দিল্লি
(ঘ) কোনোটাই নয়
৪. পলিটিকাল সাসপেক্টের নাম ছিল-
(ক) অপূর্ব রায়
(খ) সব্যসাচী চক্রবর্তী
(গ) সব্যসাচী মল্লিক
(ঘ) নিমাইবাবু
৫. সব্যসাচী সন্দেহে আটক করা ব্যক্তির বয়স-
(ক) ত্রিশ-বত্রিশের অধিক নয়
(খ) ত্রিশ-বত্রিশের কম
(গ) চল্লিশের মধ্যে
(ঘ) চল্লিশের বেশি
৬. সব্যসাচী নিজের নাম কী বলেছিলেন?
(ক) সব্যসাচী মল্লিক
(খ) নিমাই মহাপাত্র
(গ) অপূর্ব রায়
(ঘ) গিরীশ মহাপাত্র
৭. গিরীশ মহাপাত্রের পায়ে যে ফুল মোজা ছিল, তার রং –
(ক) নীল
(খ) লাল
(গ) সবুজ
(ঘ) রামধনুর মতো
৮. ‘কেবল আশ্চর্য’—আশ্চর্যের বিষয়টি ছিল-
(ক) শরীরের গঠন
(খ) মাথার পাগড়ি
(গ) বাহারের দীনতা
(ঘ) দুটি চোখের দৃষ্টি
৯. গিরীশ মহাপাত্র তার ট্যাঁক থেকে বার করেছিল-
(ক) একটি টাকা ও গন্ডা-ছয়েক পয়সা
(খ) পাঁচ টাকার একটি নোট
(গ) গন্ডা ছয়েক পয়সা
(ঘ) একটা দেশলাই

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. তেলের খনির কারখানার মিস্ত্রিরা কেন রেঙ্গুন চলে এসেছিল?
উত্তর – বর্মা অয়েল কোম্পানিতে, তেলের খনির কারখানায় মিস্ত্রিরা কাজ করত। সেখানকার জলহাওয়া তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তাই চাকরির উদ্দেশ্যে তারা রেঙ্গুনে চলে এসেছিল।
২. কে পুলিশ স্টেশনে বসে থাকা বাঙালিদের তদন্ত করেছিলেন?
উত্তর – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে জগদীশবাবু পুলিশ স্টেশনে বসে থাকা বাঙালিদের টিনের তোরঙ্গ ও ছোটো-বড়ো পুঁটুলি খুলে তদন্ত করছিলেন।
৩. কাকে, কী সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছিল? 
উত্তর – ‘পথের দাবী’ রচনাংশে পুলিশ স্টেশনের একটি ঘরে একজনকে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছিল। সে তার নাম বলেছিল গিরীশ মহাপাত্র।
৪. পলিটিকাল সাসপেক্ট বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর – রাজনৈতিক দিক থেকে সন্দেহভাজন এবং ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক ব্যক্তিকেই পলিটিকাল সাসপেক্ট বলা হয়। আলোচ্য ‘পথের দাবী’ রচনাংশে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ইংরেজ সরকারের চোখে ছিল পলিটিকাল সাসপেক্ট।
৫. সব্যসাচীর চোখের দৃষ্টি দেখে কী মনে হয়েছিল?
উত্তর – সব্যসাচীর গভীর জলাশয়ের মতো দৃষ্টির সামনে কোনোরকম খেলা বা চালাকি চলবে না। এই দৃষ্টির গভীরে যে ক্ষীণ প্রাণশক্তি লুকোনো আছে, মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়।
৬. নিমাইবাবু কীসের প্রতি অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন?
উত্তর – ‘পথের দাবী’ রচনাংশে নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও পারিপাট্যের প্রতি অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
৭. গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও পারিপাট্য দেখে নিমাইবাবু কী বলেছিলেন?
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে নিমাইবাবু বলেছিলেন, বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে লোকটির স্বাস্থ্য গেলেও, তার শখ ষোলো আনাই বজায় আছে।
৮. পলিটিকাল সাসপেক্ট ব্যক্তিটি তার কী নাম বলেছিল?
উত্তর – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে নিমাইবাবু পলিটিকাল সাসপেক্ট ব্যক্তিটির নাম জিজ্ঞাসা করায়, সে তার নাম বলেছিল গিরীশ মহাপাত্র।
৯. গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক ও পকেট থেকে কী বার হয়েছিল? 
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক থেকে একটি টাকা আর গন্ডা ছয়েক পয়সা এবং পকেট থেকে একটা লোহার কম্পাস, একটা কাঠের ফুটরুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই ও গাঁজার একটা কলকে বার হয়েছিল।
১০. গিরীশ মহাপাত্রকে গাঁজা খাওয়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে, সে কী বলে?
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্রকে গাঁজা খাওয়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, সে নিজে খায় না। কারোর কাজে লাগতে পারে এই ভেবে সে কুড়িয়ে পাওয়া কলকেটা নিজের কাছে রেখেছে।
১১. “নিমাইবাবু হাসিয়া কহিলেন”—নিমাইবাবু হেসে কী বললেন? 
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্র কতটা সদাশয় ব্যক্তি যে অন্যের কাজে লাগবে বলে গাঁজার কলকেটা কুড়িয়ে পকেটে রেখেছেন—নিমাইবাবু হেসে এ কথাই বলতে চেয়েছিলেন।
১২. অপূর্ব পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে কী দেখল?
উত্তর – পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে অপূর্ব দেখল গিরীশ মহাপাত্র একটা ভাঙা টিনের তোরঙ্গ আর বিছানার বান্ডিল সঙ্গে নিয়ে রাস্তা ধরে চলে যাচ্ছে।
১৩. “তুমি গাঁজা খাও?” -কে, কাকে, কেন এই প্রশ্ন করেছিলেন?
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল। তাই নিমাইবাবু তাকে উক্ত প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
১৪. “বুড়ো মানুষের কথাটা শুনো।”—বুড়ো মানুষটি কী বলেছিলেন? 
উত্তর – ‘বুড়ো মানুষ’ অর্থাৎ নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রকে বলেছিলেন যে অস্বীকার করলেও তার মধ্যে গাঁজা খাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। কিন্তু নিজের জীর্ণ শরীরের কথা ভেবে তার গাঁজা খাওয়া উচিত নয়।
১৫. “সে যে বর্মায় এসেছে এ খবর সত্য।”—কার বর্মায় আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের বর্মায় আসার কথা বলা হয়েছে।
১৬. “বড়োবাবু হাসিতে লাগিলেন।”—বড়োবাবুর হাসির কারণ কী? 
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্র মাথায় লেবুর তেল মেখেছিল। তারই গন্ধে থানার সমস্ত লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়। জগদীশবাবু বড়োবাবুকে সে-কথা বললে বড়োবাবু হেসে ওঠেন।
১৭. “এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করার দরকার নেই, বড়োবাবু।”—বক্তার এমন উক্তির কারণ কী?
উত্তর – বক্তা জগদীশবাবু আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন কারণ গিরীশ মহাপাত্রের মাথার চুলে লাগানো লেবুর তেলের গন্ধে থানাসুদ্ধ লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়েছিল। তাঁর ধারণায় এমন লোক সব্যসাচী মল্লিক হতে পারেন না।
১৮. “তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন?”—কোন্ ‘বস্তুটি’ পকেটে ছিল?
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্রের পকেটে যে ‘বস্তুটি’ থাকার কথা বলা হয়েছে তা হল গাঁজার কলকে।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল”—পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে কে কী দেখল? 
উত্তর – যার কথা বলা হয়েছে: উদ্ধৃতাংশে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে। যা দেখেছিল: পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে অপূর্ব দেখল, হলঘরের মধ্যে জনা ছয়েক বাঙালি নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছে। তারা ছিল বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানায় কাজ করা মিস্ত্রি। সেখানের জলহাওয়া সহ্য না হওয়ায় রেঙ্গুনে চলে এসেছিল। অপূর্ব দেখল তাদের সঙ্গে থাকা টিনের তোরঙ্গ ও পুঁটলি খুলে তদন্ত করা হচ্ছে। পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে অন্য আরেকটি ঘরে একজনকে আটকে রাখা হয়েছে। আর উপস্থিত যাত্রীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের বিবরণ নিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে।
২. “লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল”— লোকটি কে? তাকে দেখে অপূর্বর কী মনে হয়েছিল? 
উত্তর – লোকটির পরিচয়: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের আলোচ্য অংশে লোকটি নিজেকে গিরীশ মহাপাত্র বলে পরিচয় দিয়েছিল।
তাকে দেখে অপূর্বের ধারণা: লোকটি কাশতে কাশতে নিমাইবাবুর সামনে হাজির হয়েছিল। কাশির পরিশ্রমে সে এমনভাবে হাঁপাচ্ছিল যে তাকে দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল তার আয়ু বোধহয় আর বেশিদিন নেই। কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো। এই দৃষ্টির গভীরে যে প্রাণশক্তি লুকোনো ছিল সেখানে মৃত্যুও যেন প্রবেশ করতে সাহস পায় না।
৩. “সাবধানে দূরে দাঁড়ানোই প্রয়োজন।”—কোথা থেকে, কেন সাৰ্ধানে দূরে দাঁড়ানো প্রয়োজন?
উত্তর – আলোচ্য অংশে গিরীশ মহাপাত্রের দৃষ্টি থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে। কৌতূহলী অপূর্ব সব্যসাচী সন্দেহে আটক করা গিরীশ মহাপাত্রকে লক্ষ করছিল। লোকটি একটুখানি কাশির পরিশ্রমেই হাঁপাচ্ছিল। অপূর্বর মনে হচ্ছিল একটা ক্ষয়রোগ দ্রুত তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে চলেছে। কিন্তু লোকটির চোখের দৃষ্টি ছিল অদ্ভুত। তার চোখ দুটি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো রহস্যময়। বিচক্ষণ অপূর্ব বুঝেছিল, গভীর জলাশয়ে খেলা যেমন বিপজ্জনক, তেমনই গিরীশ মহাপাত্রের রহস্যময় দৃষ্টি থেকে দূরে দাঁড়ানোই শ্রেয়।
8. “কেবল এই জন্যই যেন সে আজও বাঁচিয়া আছে।”—এখানে কার কথা বলা হয়েছে? কীজন্য সে আজও বেঁচে আছে? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
আজও বেঁচে থাকার কারণ: অত্যন্ত রুগ্ণ চেহারা হওয়া সত্ত্বেও গিরীশ মহাপাত্রের দুটি চোখের অদ্ভুত দৃষ্টি অপূর্বকে মুগ্ধ করেছিল। গভীর জলাশয়ের মতো সেই দুটি চোখের দৃষ্টিতে এক অজানা রহস্যময়তার ছাপ ছিল। তার অতল দৃষ্টির গভীরে যেন ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকুই লুকানো আছে। মৃত্যু সেখানে পৌঁছাতে পারে না। সেইজন্যই সে আজও বেঁচে আছে।
৫. অপূর্ব তাহার পরিচ্ছেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।”—কার কথা বলা হয়েছে? তার পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও।
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: উল্লিখিত অংশে গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।
পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা: গিরীশ মহাপাত্রের গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। তার বুক পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে ছিল সবুজ রঙের ফুল মোজা এবং বার্নিশ করা পাম্পশু। আর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি।
৬. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে”—কে কার সম্পর্কে এ কথা বলেছেন? তার সম্পর্কে বক্তার এরূপ উক্তির কারণ কী?
উত্তর – বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের শখ সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।
উক্তির কারণ: গিরীশ মহাপাত্রের মাথার সামনে দিকে বড়ো বড়ো চুল ছিল কিন্তু ঘাড় ও কানের চুল ছিলে একেবারে ছোটো করে ছাঁটা। তার গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার-পাঞ্জাবি। তার বুক পকেট থেকে বাঘআঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা এবং বার্নিশ করা পাম্পশু। গিরীশ মহাপাত্রের হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। রোগা, ক্ষীণদেহী মানুষটার এই পোশাকের বাহার দেখেই নিমাইবাবু আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
৭. “কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের, অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি” কার চোখের কথা বলা হয়েছে? সেই চোখের বর্ণনা দাও।
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: এখানে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের চোখের কথা বলা হয়েছে।
চোখের বর্ণনা : গিরীশ মহাপাত্রের রুগ্ণ এবং ক্ষয়ে যাওয়া চেহারার মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় ছিল তার চোখ দুটো। সে চোখের আয়তন, দীপ্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। গিরীশ মহাপাত্রের চোখ দুটো ছিল অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো। সেই চোখ দুটো থেকে দূরে দাঁড়ানোটাই শ্রেয়। আর এই চোখের অতলেই তার প্রাণশক্তিটুকু লুকানো ছিল, মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়।
৮. “কীরূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি”— বক্তা কে? কী কারণে তিনি এ কথা বলেছিলেন?
উত্তর – বক্তা: উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা নিমাইবাবু।
এ কথা বলার কারণ: গিরীশ মহাপাত্রের কাছে গাঁজার কলকে পেয়ে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সে গাঁজা খায় কি না, তার উত্তরে গিরীশ বলেছিল সে নিজে খায় না। গাঁজার কলকেটি সে পথে কুড়িয়ে পেয়েছে এবং যদি কখনও কারোর কাজে লাগে ভেবে সেটিকে কাছে রেখেছে। তার এই অদ্ভুত পরোপকারের ইচ্ছের জন্য নিমাইবাবু তাকে ‘সদাশয় ব্যক্তি’ বলেছিলেন।
৯. “যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচরের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।”—কে, কাকে খুঁজছিলেন? তাঁর কালচারের কথা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে কেন?
উত্তর – যিনি যাঁকে খুঁজছিলেন: বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে খুঁজছিলেন।
কালচারের কথা ভেবে দেখতে বলার কারণ: গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চেহারা ছিল খুবই হাস্যকর। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সংসারে তাঁর মেয়াদ আর বেশি দিন নেই। একজন ডাক্তারি পড়া উচ্চশিক্ষিত রাজবিদ্রোহী কখনও এ রকম ক্ষীণদেহী এবং রোগগ্রস্ত হতে পারেন না। তাঁর পোশাকের মধ্যেও থাকবে রুচির ছাপ। এই প্রসঙ্গেই গিরীশ মহাপাত্র ও সব্যসাচী মল্লিকের কালচারের পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১০. “কিন্তু এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকার নেই বড়োবাবু।”—কাকে ‘জানোয়ার’ বলা হয়েছে? তাকে জানোয়ার বলার কারণ কী?
উত্তর – যাঁকে বলা হয়েছে: এখানে সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রকে ‘জানোয়ার’ বলা হয়েছে।
‘জানোয়ার’ বলার কারণ: গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা ও চেহারাটা ছিল বেশ হাস্যকর। তার মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল, কিন্তুঘাড় ও কানের দিকে চুল নেই বললেই চলে। সামান্য চুলেও সে এত লেবুর তেল মেখেছিল যে তার গন্ধে থানাসুদ্ধ লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়েছিল। এই অবাঞ্ছিত লোকটি কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না ভেবেই বিব্রত জগদীশবাবু তাকে ‘জানোয়ার’ বলেছিলেন।
১১. ‘পথের দাবী’ রচনায় গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার যে বর্ণনা ত্রের চেহারার যে বর্ণনা আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর – ‘পথের দাবী’ রচনায় গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হল, তার ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। একটু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপিয়ে উঠেছে। তার শীর্ণ দেহ দেখে মনে হচ্ছে সে যেন কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত। তার মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকের চুল অত্যন্ত ছোটো করে ছাঁটা। মাথায় চেরা সিঁথি, অতিরিক্ত লেবুর তেলে চুলগুলি সিক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু তার চোখ দুটি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো। তার অতল দৃষ্টির গভীরে যেন ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকুই লুকানো আছে।
১২. “তুমি এখন যেতে পারো মহাপাত্র।”—বক্তা কে? মহাপাত্রকে যেতে বলা হয়েছে কেন?
উত্তর – বক্তা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশের আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু।
মহাপাত্রকে যেতে বলার কারণ: রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় আটক করা হয়েছিল। তার কাছে থাকা বাক্স-তোরঙ্গ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পরীক্ষা করে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামী সব্যসাচীর কালচারের সঙ্গে গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ও বেশভূষার কোনো মিল ছিল না। সেই কারণে নিমাইবাবু তাকে চলে যেতে বলেছিলেন।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল”—‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ কথাটির অর্থ কী? এরপরে পুলিশ স্টেশনে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা করো। 
উত্তর – ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ কথাটির অর্থ: ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ কথাটির অর্থ রাজনৈতিকভাবে সন্দেহভাজন। |
পরিস্থিতির বর্ণনা: পুলিশ স্টেশনে হাজির করা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ স্টেশনে পুলিশের বড়োকর্তার সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল। চেহারার বিবরণ: তাকে দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু যেন আর বেশিদিন নেই। তার ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গিয়েছিল। অল্প কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপাতে শুরু করেছিল। পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে সে নিজের নাম গিরীশ মহাপাত্র বলেছিল। সে তেলের খনিতে কাজ করত বলে জানায়। বর্মা থেকে সে রেঙ্গুনে এসেছিল। সাজসরঞ্জাম: তার ট্যাঁক থেকে একটা টাকা, লোহার কম্পাস, মাপ করার জন্য কাঠের ফুটরুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই আর-একটা গাঁজার কলকে বার করা হয়। নিমাইবাবুর প্রশ্ন: পুলিশের কর্তা নিমাইবাবু তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, সে গাঁজা খায় কি না। তার উত্তরে গিরীশ মহাপাত্র বলে, গাঁজার কলকেটা সে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে। কারোর যদি কাজে লাগে সে দিয়ে দেবে। পরিণতি: গিরীশ মহাপাত্রের কথাবার্তা শুনে, তার সাজপোশাক, আচার-ব্যবহার দেখে সকলেই নিশ্চিত হয় যে, এই গিরীশ মহাপাত্র কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, খানিকক্ষণ তার সঙ্গে তামাশা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
২. “কাকাবাবু এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” “বক্তা কে? তার সম্পর্কে এ কথা কেন বলা হয়েছে? 
উত্তর – বক্তা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা অপূর্ব।
এ কথা বলার কারণ: আটক করা ব্যক্তি: রেঙ্গুন পুলিশ স্টেশনে বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানার কয়েকজন মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে একটি লোককে রেখে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। চেহারার বিবরণ: তিরিশ-বত্রিশ বছর বয়সি লোকটি কাশতে কাশতে আসে। কিন্তু লোকটি ছিল ভীষণ রোগা। একটু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপিয়ে উঠছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, সংসারে তার মেয়াদ বোধহয় আর বেশি নেই। কোনো দুরারোগ্য অসুখ তার শরীরে যেন বাসা বেঁধেছে। বেশভূষা: এ ছাড়াও তার পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অদ্ভুত ধরনের। গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, তার বুক পকেট থেকে একটা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে বিলিতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সুক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, হাঁটুর ওপরে লাল ফিতা বাঁধা। অপূর্বর মানসিকতা: হয়তো সব্যসাচী বলে সন্দেহ হলেও অপূর্ব মন থেকে চাইছিল ওই লোকটি যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়ে। শেষের কথা: এই কারণেই অপুর্ব নিমাইবাবুকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।
৩. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ খোলোআনাই বজায় আছে।”-বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও।
অথবা, “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে।”— বাবুটি কে? তাঁর স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও।
উত্তর – বাবুটির পরিচয়। এখানে বাবুটি বলতে শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের অন্যতম চরিত্র গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে। ● স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয়: গিরীশ মহাপাত্রের বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি নয়। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে তাকে থানায় ধরে আনা হয়। রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া লোকটি কাশতে কাশতে ভিতরে প্রবেশ করে। কাশির দমক দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। মাথার সামনে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও ঘাড় ও কানের কাছে চু প্রায় ছিল না। আর চুল থেকে বেরোচ্ছিল লেবুর তেলের উগ্র গন্ধ। এর সঙ্গে মানানসই ছিল তার পোশাকও। গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। তার বুকপকেট থেকে বাঘ আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে সবুজ রঙের ফুলমোজা যেটা হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা। পায়ে ছিল বার্নিশ করা পাম্পশু, যার তলাটা আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো। আর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া একগাছি বেতের ছড়ি।

বহুৰিকল্পীম প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. “আমারও অনুমান কতকটা তাই।”- বক্তার অনুমান-
(ক) সব্যসাচী বর্মায় এসেছে
(খ) তেওয়ারি চুরি করেছে
(গ) গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী
(ঘ) সব্যসাচী রেঙ্গুনেই আছে
২. রামদাস পেশায় ছিল-
(ক) করণিক
(খ) পেশকার
(গ) সাংবাদিক
(ঘ) অ্যাকাউন্ট্যান্ট
৩. অপূর্বকেপ্রতিদিন যে ব্যক্তি তার হাতের তৈরি মিষ্টি খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন-
(ক) রামদাসের মা
(খ) রামদাস
(গ) রামদাসের স্ত্রী
(ঘ) নিমাইবাবু
৪. সব্যসাচী মল্লিক পেশায় ছিলেন-
(ক) শিক্ষক
(খ) ডাক্তার
(গ) পুলিশ
(ঘ) কেরানি
৫. সব্যসাচী ডাক্তারি পাস করেছিলেন—
(ক) জার্মানি থেকে
(খ) বিলাত থেকে
(গ) আমেরিকা থেকে
(ঘ) জাপান থেকে
৬. “টিফিনের সময় উভয়ে একত্র বসিয়া জলযোগ করিত।”— ‘উভয়ে’ বলতে বোঝানো হয়েছে-
(ক) অপূর্ব ও রামদাসকে
(খ) অপূর্ব ও আরদালিকে
(গ) অপূর্ব ও তেওয়ারিকে
(ঘ) অপূর্ব ও নিমাইবাবুকে

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. নিজের বাসায় ফিরে অপূর্বর মধ্যে কী ভাবান্তর দেখা গিয়েছিল?
উত্তর – নিজের বাসায় ফেরার পর অপূর্বর প্রতিদিনের নিয়ম মেনে যে কাজকর্ম তা বাধা পেল না ঠিকই, কিন্তু সে অদেখা, অদৃষ্ট, অপরিচিত রাজবিদ্রোহীর চিন্তায় মগ্ন রইল।
২. “আজ বাড়ি থেকে কোনো চিঠি পেয়েছেন নাকি?”—তলওয়ারকর এ প্রশ্ন করেছিলেন কেন?
উত্তর – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বকে অন্যমনস্ক থাকতে দেখেই তলওয়ারকর আলোচ্য প্রশ্ন করেছিল।
৩. তলওয়ারকর অপূর্বকে কী জিজ্ঞাসা করেছিল?
উত্তর – অপূর্বকে বাড়ি ফিরে অত্যন্ত অন্যমনস্ক দেখে তলওয়ারকর জিজ্ঞাসা করেছিল সে তার বাড়ি থেকে কোনো চিঠি পেয়েছে কি না এবং তার বাড়ির সবাই ভালো আছে কি না।
৪. রামদাস ও অপূর্ব কেন একসাথে জলযোগ করত?
উত্তর – অপূর্বর সঙ্গে তার মা বা কোনো আত্মীয়া না থাকায় রামদাসের স্ত্রীর অনুরোধ মেনে অপূর্ব রামদাসদের সঙ্গেই জলযোগ করত।
৫. “অপূর্ব রাজি হইয়াছিল”—অপূর্ব কোন্ বিষয়ে রাজি হয়েছিল? [নব নালন্দা হাই স্কুল]
উত্তর – যতদিন অপূর্বর মা বা কোনো আত্মীয় রেঙ্গুনে এসে উপযুক্ত ব্যবস্থা না করছে ততদিন তার হাতের তৈরি সামান্য খাবার গ্রহণ করতে হবে রানদাসের স্ত্রীর এই অনুরোধে অপূর্ব রাজি হয়েছিল।
৬. “অফিসের একজন ব্রাহ্মণ পিয়াদা এই সকল বহিয়া আনিত।”—কী বয়ে [হুগলি কলেজিয়েট স্কুলআনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – ‘পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাসের স্ত্রীর নিজের হাতে তৈরি করে দেওয়া খাবার অফিসের ব্রাহ্মণ পেয়াদা নিয়ে আসত।
৭. অপূর্ব কোন্ সময় তার বাড়িতে হওয়া চুরির ঘটনাটা রামদাসকে বলল?
উত্তর – অফিসের এক ব্রাহ্মণ পেয়াদা অপূর্বর জন্য একটি নিস্তব্ধ ঘরে খাবার জিনিস সাজিয়ে রাখলে, খেতে বসে অপূর্ব তার বাড়িতে চুরি হওয়া ঘটনাটি রামদাসকে বলল।
৮. অপূর্বর ঘরে চুরি হওয়ার পর ক্রিশ্চান মেয়েটি কী করেছিল?
উত্তর – অপূর্বর ঘরে চুরি হওয়ার পর ক্রিশ্চান মেয়েটি অবশিষ্ট জিনিসপত্র গুছিয়ে দিয়েছিল এবং কী চুরি গেছে আর কী যায়নি তার ফর্ন বানিয়েছিল।
৯. চুরির ব্যাপারে অপূর্ব ও ক্রিশ্চান মেয়েটি কী অনুমান করেছিল?
উত্তর – অপূর্বর ঘরে চুরি যাওয়ার ব্যাপারে অপূর্ব এবং ক্রিশ্চান মেয়েটি অনুমান করেছিল যে, তেওয়ারি এ কাজটি করেছে অথবা না করলেও এ ব্যাপারে সে সাহায্য করেছে।
১০. তেওয়ারি কোথায় গিয়েছিল এবং সে-সময় কী ঘটনা ঘটেছিল?
উত্তর – তেওয়ারি বর্মা নাচ দেখতে ফয়ারে গিয়েছিল আর সেই সময় অপূর্বর ঘরে চুরি হয়েছিল।
১১. পুলিশে চুরির ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে গিয়ে অপূর্ব কী দেখল?
উত্তর – অপূর্ব চুরির ব্যাপারে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে দেখল সেখানকার পুলিশরা পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ভেবে অন্য একজনকে ধরেছেন। যার অদ্ভুত সাজপোশাক নিয়েই পুলিশ স্টেশনে তামাশা চলছে।
১২. অপূর্ব কোন্ ঘটনার প্রতিবাদ করেছিল?
উত্তর – কোনোরকম দোষ না থাকা সত্ত্বেও কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল। সে এই অন্যায় ঘটনারই প্রতিবাদ করেছিল।
১৩. অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অপূর্বকে কারা কীভাবে হেনস্থা করেছিল?
উত্তর – অপূর্ব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে এক সাহেব স্টেশনমাস্টার অপূর্ব ভারতীয় বলে তার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে তাকে স্টেশন থেকে কুকুরের মতো দূর করে দেয়।
১৪. কোন্ ঘটনা পরাধীন ভারতবর্ষে প্রায় নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছিল?
উত্তর – পরাধীন ভারতবর্ষে দেশের লোকেদের বিদেশি সাহেবদের হাতে অপমানিত। ও অত্যাচারিত হওয়ার বিষয়টি নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছিল।
১৫. কী কারণে রামদাসের মুখ রাগে আরক্ত হয়ে উঠল?
উত্তর – অপূর্বর মুখে ফিরিঙ্গিদের তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দেওয়া এবং সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা শুনে রামদাসের মুখ রাগে আরক্ত হয়ে উঠল।
১৬. কী শুনে রামদাসের চোখ ছলছল করে উঠল?
উত্তর – সাহেবদের কাছে অপূর্বর লাঞ্ছিত হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুস্থানের লোকেরা কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি, বরং লাথির চোটে অপূর্বর হাড়-পাঁজরা ভাঙেনি শুনে খুশি হয়েছিল। এ কথায় রামদাসের চোখ ছলছল করে উঠল।
১৭. নিমাইবাবুর সঙ্গে অপূর্বর কী ধরনের সম্পর্ক ছিল?
উত্তর – নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর বাবার বন্ধু এবং এই সূত্রে তিনি ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়। অপূর্বর বাবাই তাঁকে চাকরিটা করে দিয়েছিলেন।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “….পুলিশের দলকে আজকের মতো নির্বোধ আহম্মক হতে বোধ করি কেউ কখনো দেখেনি।”—কে, কেন এ কথা বলেছিল? 
উত্তর – বক্তা: অপূর্ব রামদাসকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।
এ কথা বলার কারণ: পুলিশের দল পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্র বলে একজনকে আটক করেছিল। সেই ছিল আসল সব্যসাচী কিন্তু অদ্ভুত ছদ্মবেশে এবং আচরণে সে খুব সহজেই পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছিল এবং চলে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিল। গিরীশ মহাপাত্র সেজে সব্যসাচী পুলিশকে বোকা বানানোয় পুলিশের দলকে অপূর্বর নির্বোধ ও আহাম্মক মনে হয়েছিল।
২. “…চিন্তিতমুখে জিজ্ঞাসা করিল।”—কে কী কারণে চিন্তিত ছিল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: উল্লিখিত অংশে রামদাস তলওয়ারকরের চিন্তার কথা বলা হয়েছে।
চিন্তিত হওয়ার কারণ: অপূর্ব পুলিশ স্টেশন থেকে নিজের বাড়ি ফেরার পর তার মাথায় ঘুরছিল পুলিশ স্টেশনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা পুরো হাস্যকর ঘটনাটাই অপূর্ব দেখেছিল। বাড়ি ফিরে সেই অপরিচিত রাজবিদ্রোহীর কথাই সে ভাবছিল। সংসার থেকে খানিকক্ষণের জন্য যেন সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। অপূর্বকে এইরকম অন্যমনস্ক দেখে তলওয়ারকর ভেবেছিল অপূর্বর বাড়ির কেউ বোধহয় অসুস্থ, তাই তলওয়ারকর চিন্তিত হয়ে পড়েছিল।
৩. “কাল তাহার ঘরে চুরি হইয়া গেছে।”—অপূর্বর ঘরে চুরি হওয়ার ঘটনাটি বর্ণনা করো।
উত্তর – অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চুরি হয়ে যায়। টাকাকড়ি কিছুই বাঁচানো যায়নি। কিন্তু একই বাড়িতে থাকা ক্রিশ্চান মেয়েটির জন্য টাকাকড়ি ছাড়া বাকি যেসমস্ত জিনিসপত্র ছিল সেইসব বাঁচানো গেছিল। না হলে সমস্ত কিছুই চুরি যেতে পারত। সেই ক্রিশ্চান মেয়েটি চোর তাড়িয়ে নিজে হাতে ছড়ানো জিনিসপত্র গুছিয়ে দেয় এবং চুরি হওয়া ও রক্ষা পাওয়া জিনিসের একটা ফর্দও তৈরি করে দেয়।
৪. “বাস্তবিক, এমন তৎপর, এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে মনে হয় না।”-কোন মেয়েটি ? তার সম্পর্কে এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর – মেয়েটির পরিচয়: যে ক্রিশ্চান মেয়েটি চুরি হওয়ার সময়ে অপূর্বকে সাহায্য করেছিল তার কথা বলা হয়েছে।
এরূপ মন্তব্যের কারণ: অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চুরির সময় ওপর তলার ক্রিশ্চান মেয়েটি চোর তাড়িয়ে নিজের তালা দিয়ে ঘর বন্ধ করে রেখেছিল। অপূর্ব ফিরে এলে সে ঘরের তালা খুলে দিয়েছিল এবং ঘরের ছড়ানো জিনিসপত্র গুছিয়ে দিয়েছিল। কী আছে আর কী গেছে, তার নিখুঁত হিসেবও সে অপূর্বকে দিয়েছিল। বিদেশিনি মেয়েটির এই সহানুভূতি এবং কার্যকুশলতা অপূর্বকে মুগ্ধ করেছিল বলেই সে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।
৫. “তারপর সকালে গেলাম পুলিশে খবর দিতে।”—বক্তা কে? কোন্ খবরের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – বক্তা: প্রশ্নোধৃত অংশটির বক্তা অপূর্ব।
খবরের বিবরণ: রেঙ্গুনে অপূর্বর অনুপস্থিতির সময় তার বাড়িতে চুরি হয়ে যায়। বাড়ির ওপরতলায় থাকা ক্রিশ্চান মেয়েটির সহযোগিতায় অপূর্বর টাকা পয়সা ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্র অবশ্য রক্ষা পায়। সন্দেহ করা হয় ফয়ায় বর্মা নাচ দেখতে যাওয়া তেওয়ারিকে। চুরি না করলেও এবিষয়ে সে সাহায্য করেছে বলে অপূর্ব অনুমান করে। এই চুরির খবর দেওয়ার জন্যই অপূর্ব থানায় গিয়েছিল।
৬. “গভর্নমেন্টের কত টাকাই না এরা বুনো হাঁসের পিছনে ছুটোছুটি করে অপব্যয় করলে!”—এরা কারা? বুনো হাঁসের পিছনে ছোটার কথা বলা হয়েছে কেন বুঝিয়ে দাও। 
উত্তর – এদের পরিচয়: প্রশ্নে উল্লিখিত অংশে রেঙ্গুনে বিপ্লবীদের ধরার কাজে নিয়োজিত পুলিশের দলের কথা বলা হয়েছে।
বুনো হাঁসের পিছনে ছুটতে বলার কারণ: বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে ধরতে গিয়ে ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্রকে নিমাইবাবু এবং পুলিশের দল চিনতে পারেনি। গিরীশ মহাপাত্র তার অদ্ভুত পোশাক এবং আচরণে সবাইকে বিভ্রান্ত করলেও অপূর্ব অনুমান করে নিয়েছিল যে সেই সব্যসাচী। ‘বুনো হাঁস’ অর্থাৎ বিপ্লবীদের পিছনে যে অনুসন্ধানের নামে সরকারি টাকার আসলে অপব্যয়ই। হচ্ছে এ কথাই অপূর্ব বোঝাতে চেয়েছে।
৭. “যাঁকে তিনি দেশের টাকায়, দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন তিনি ঢের বেশি আমার আপনার”- কে, কেন এ কথা বলেছিল? 
উত্তর – বক্তা: উদ্ধৃতাংশটির বক্তা অপূর্ব।
এ কথা বলার কারণ: পুলিশের কর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়। অপূর্ব তাঁকে কাকা বলে ডাকত আর এটাও জানত যে তিনি তার শুভাকাঙ্ক্ষী। অপরদিকে অপূর্বর মনের অনেকখানি জুড়ে রয়েছেন বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক। তাকেই ধরার জন্য পুলিশের বড়ো কর্তা চেষ্টা করছিলেন। আসলে সব্যসাচীর দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের জন্য স্বার্থত্যাগ অপূর্বকে মুগ্ধ করেছিল। তাই এইরকম মহাপ্রাণ ব্যক্তিকে নিজের আত্মীয়ের থেকেও তার অনেক বেশি কাছের মনে হয়েছে।
৮. “অপূর্ব তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া অর্থ বুঝিল”—অপূর্ব কার মুখের দিকে চেয়ে কী অর্থ বুঝল?
উত্তর – অপূর্ব যার মুখের দিকে তাকিয়েছিল: আলোচ্য অংশে অপূর্ব রামদাসের মুখের দিকে তাকিয়েছিল।
অপূর্ব-র উপলব্ধি: বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু সব্যসাচীকে ধরবেন বলে সুদূর রেঙ্গুনে এসেছেন। বাঙালি হয়েও নিমাইবাবুরা ব্রিটিশের দাসত্ব করেছেন—এটাতেই অপূর্বর আপত্তি ছিল। অপূর্বর এই কথা শুনে রামদাস ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কারণ ইংরেজ পুলিশ সম্পর্কে অপূর্বর এরূপ মন্তব্য করা রামদাসের উচিত বলে মনে হয়নি। তাই সে একটু গম্ভীর হয়ে বসেছিল। অপূর্ব রামদাসের মুখ দেখে সেটাই বুঝেছিল।
৯. “তা ছাড়া আমার বড়ো লজ্জা এই যে এদের যিনি কর্তা তিনি আমার আত্মীয়, আমার পিতার বন্ধু।”—কে, বক্তার পিতার বন্ধু? তাঁকে নিয়ে বক্তার লজ্জার কারণ কী? 
উত্তর – বক্তার পিতার বন্ধু: বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু হলেন বক্তা অপূর্বর পিতার বন্ধু।
বক্তার লজ্জার কারণ: নিমাইবাবু বাঙালি। ইংরেজদের অধীনে তিনি চাকরি করেন। বাঙালি এবং একইসঙ্গে একজন ভারতবাসী হয়েও তিনি স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী সব্যসাচীকে গ্রেফতার করতে তৎপর হয়েছেন। নিমাইবাবুর এই কার্যকলাপ অপূর্ব মেনে নিতে পারেনি। নিজের দেশের মুক্তি সংগ্রামীকে গ্রেফতার করার তৎপরতা দেখে অপূর্ব বিশেষভাবে কষ্ট পেয়েছে। এই কারণেই সে নিমাইবাবুকে নিয়ে নিজের লজ্জা প্রকাশ করেছে।
১০. “তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না।” লাঞ্ছনার ঘটনাটি কে কাকে বলেছিল? কোন্ লাঞ্ছনার কথা এখানে বলা হয়েছে?  
উত্তর – বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : উদ্ধৃত লাঞ্ছনার ঘটনাটি অপূর্ব রামদাস তলওয়ারকরকে বলেছিল।
লাঞ্ছনার ঘটনাটি ব্যাখ্যা: শুধু দেশি লোক বলে অপূর্বকে বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল। সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেল কেবল ভারতীয় বলে স্টেশনমাস্টার তার নিজের দেশের রেলস্টেশন থেকেই তাকে অপমান করে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেয়। ইংরেজের কাছে নিজের দেশে এইভাবেই লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল অপূর্বকে।
১১. “মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাই।”— বক্তা কে? এ কথা বলার কারণ কী? 
উত্তর – বক্তা: আলোচ্য উক্তিটির বক্তা অপূর্ব।
এ কথা বলার কারণ: একদিন কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে মিলে অপূর্বকে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দেয় আর অপূর্ব তার প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার অপূর্বকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। এই চরম অপমান হিন্দুস্থানের লোকদের গায়ে লাগেনি। লাথির চোটে যে অপূর্বর হাড়পাঁজরা ভেঙে যায়নি সেটা শুনেই তারা খুশি হয়েছিল। কিন্তু অপূর্বর অপমান, দেশের অপমান, তাদের গায়েই লাগেনি বলে অপূর্ব এ কথা বলেছিল।
১২. “এই সুখবরে তারা বেশ খুশি হয়ে গেল।”—সুখবরটি কী? তাদের প্রতি বক্তার মনোভাব ব্যক্ত করো। 
উত্তর – সুখবর: অপূর্বকে বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মারা সত্ত্বেও যে তার হাড়-পাঁজরা ভেঙে যায়নি এটাই ছিল সুখবর।
বক্তার মনোভাব: অপূর্ব যখন ফিরিঙ্গি ছেলেদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, তখন সেখানে ভারতীয়রা উপস্থিত থাকলেও কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। উপরন্তু লাথির চোটে তার হাড়-পাঁজরা ভেঙে যায়নি—এটাই ছিল উপস্থিত ভারতীয়দের কাছে খুশির ব্যাপার। দেশাত্মবোধ এবং আত্মমর্যাদাহীন নির্বোধ এই ভারতীয়দের প্রতি অপূর্বর ঘৃণা ও রাগ প্রকাশ পেয়েছে উক্তিটির মধ্য দিয়ে।
১৩. “কৈ, এ ঘটনা তো আমাকে বলেন নি?”—কে, কাকে এ কথা বলেছে? কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: রামদাস তলওয়ারকর অপূর্বকে এ কথা বলেছে।
উদ্দিষ্ট ঘটনা: অপূর্বকে বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার শুধু ভারতীয় অপূর্বকে রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছিল। এই তীব্র অপমান থেকেই অপূর্বর সিদ্ধান্ত যে যারাই দেশের মানুষকে অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে চায় যত দুঃখই থাক তাদেরকে সে আপন করে নেবে। এখানে এই ঘটনার কথাই বলা হয়েছে।
১৪. “আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না… বক্তা কাকে এ কথা বলেছিলেন? কোন্ অবিচারের দণ্ডভোগ তাঁকে ব্যথিত করেছিল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: বক্তা অপূর্ব উদ্ধৃত কথাটি রামদাসকে বলেছিল।
অবিচারের দন্ডভোগ: বিনা অপরাধে অপূর্বকে কতগুলো ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল। অপূর্ব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেও কোনো ফল হয়নি। দেশি লোক হওয়ায় সাহেব স্টেশনমাস্টার তাঁর কোনো কথা না শুনেই তাঁকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেয়। বিনা কারণে শুধু ভারতীয় হওয়ার জন্য এই লাঞ্ছনা অপূর্বর মনের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণার জন্ম দেয়। এই অবিচারের দণ্ডভোগ অপূর্বকে কষ্ট দিয়েছিল।
১৫. “বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন।”—বক্তা কে? তাঁর বাবা কাকে কী চাকরি করে দিয়েছিলেন?
উত্তর – বক্তা: কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্তর্গত আমাদের পাঠ্যাংশ ‘পথের দাবী’র অন্যতম প্রধান চরিত্র অপূর্ব উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা।
বক্তার বাবার দেওয়া চাকরি: ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব জানিয়েছিল যে, পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু তার আত্মীয় এবং তার বাবার বন্ধু। সেইসূত্রে অপূর্বর বাবাই নিমাইবাবুকে পুলিশের চাকরি করে দিয়েছিলেন।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “মহা হুঁশিয়ার পুলিশের দলকে আজকের মতো নির্বোধ আহম্মক হতে বোধ করি কেউ কখনো দেখেনি।”—পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলা হয়েছে কেন? পুলিশ সম্পর্কে বক্তার এমন উক্তির পিছনে তার কোন্ মানসিকতা সক্রিয় লেখো।
উত্তর – পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলার কারণ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে গিরীশ মহাপাত্র নামে এক ব্যক্তিকে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ভেবে পুলিশ নানাভাবে জিজ্ঞাসা ও তল্লাশি চালায়। শেষপর্যন্ত তার চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাংলা দেশের অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবুও ব্যর্থ হন সব্যসাচীকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু অপূর্ব বুঝেছিল গিরীশ মহাপাত্রই ছদ্মবেশী সব্যসাচী। এই কারণেই সে পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলেছে।
বক্তার মানসিকতা: পুলিশের দল সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের পিছনে তার সুপ্ত দেশপ্রেম সক্রিয় ছিল। কেননা, সে মনেপ্রাণে চাইছিল সব্যসাচী যেন ধরা না পড়েন। তার এমনও বিশ্বাস ছিল যে, সব্যসাচী এত সাধারণ রাজবিদ্রোহী নন। তাঁর ছদ্মবেশ, এতই অকৃত্রিম ছিল যে, বোঝাই মুশকিল হত তিনি কোন্ দেশের মানুষ। দশ-বারোটা ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন। সুতরাং তাঁকে ধরা সহজ কাজ নয়। অপূর্ব নিজেই বিস্মিত হয়েছিল সব্যসাচীর পোশাক ও চেহারা দেখে। পুলিশকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলার মধ্য দিয়ে অপূর্ব একদিকে যেমন পুলিশের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছে, অন্যদিকে তেমনই পরোক্ষে সব্যসাচীর দক্ষতা আর কৌশলকে নীরবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
২. “পৃথিবীর যে-কোনো দেশে, যে-কোনো যুগে যে-কেউ জন্মভূমিকে তার স্বাধীন করবার চেষ্টা করেচে, তাকে আপনার নয় বলবার সাধ্য আর যার থাক, আমার নেই।”—এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যক্ত করো।
উত্তর – কথামুখ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্বই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্ব বাংলা দেশের ছেলে। স্বদেশি ভাবধারা: সে স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাস করত। তাই সব্যসাচীর মতো দেশভক্তরা তার কাছে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। শুধু দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে এঁরা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। জীবনমৃত্যু এঁদের কাছে পায়ের ভৃত্য। দেশের মুক্তিপথের অগ্রদূত এই বীর নায়কদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের ছিল দমনমূলক মনোভাব। যে-কোনো উপায়ে এঁদের গ্রেফতার করাই ছিল ব্রিটিশ পুলিশের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যেই পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রেঙ্গুনে এসেছেন। তাঁরই শিকার হলেন সব্যসাচী মল্লিক। অপূর্ব নিমাইবাবুকে কাকা বলে ডাকে। কিন্তু নিমাইবাবুর কার্যকলাপকে অপূর্ব সমর্থন করে না। স্বদেশপ্রেম: স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীকে গ্রেফতার করা মানেই দেশদ্রোহ করা। অপূর্ব চায় না যে, সব্যসাচী মল্লিক গ্রেফতার হোক। এই মনোভাব অপূর্বর দেশপ্রেমকেই তুলে ধরে। নিমাইবাবু তাঁর কর্তব্য পালন করতে এলেও অপূর্বর কাছে কর্তব্যের চেয়ে স্বদেশ বড়ো। পরের দাসত্ব করে আপন জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জনে বাধাদানকে অপূর্ব সমর্থন করতে পারে না। তাই যত বিপদই আসুক, অপূর্ব সব্যসাচীকে একান্ত নিজের জন বলে স্বীকার করতে পিছপা হয় না। শেষের কথা: আলোচ্য উক্তির মধ্য দিয়ে অপূর্বর এই স্বদেশপ্রেমই বড়ো হয়ে উঠেছে।
৩. বলেছিনি ঢের বেশি আমার আ তিনি ঢের বেশি আমার আপনার”— অপূর্ব কেন এ কথা বলেছিল?
উত্তর – প্রেক্ষাপট: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী উপন্যাসটি মূলত স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল। দেশপ্রাণ: পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য, ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য অনেকেই লড়াই করছিলেন, সব্যসাচী তাঁদেরই একজন। দেশের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে দেখা যায় সব্যসাচী গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাস: সব্যসাচী এমন ছদ্মবেশ ধারণ করতেন যাতে পুলিশ তাঁকে ধরতে না পারে। স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাসী অপূর্ব সব্যসাচীকে মনেপ্রাণে সমর্থন করত। অপূর্ব জানত যে দেশকে সব্যসাচী ভালোবাসেন, সেই দেশকে স্বাধীন করার জন্যই তিনি লড়াই করছেন। সব্যসাচীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা: পুলিশরা সব্যসাচীকে ধরার জন্য অনেক চেষ্টা করছিল। দেশের টাকায় দেশের লোক দিয়েই শিকারের মতো তারা সব্যসাচীকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। আবার পুলিশকর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়, অপূর্ব তাঁকে কাকা বলে ডাকত। অপূর্ব এই কারণে নিজেও যথেষ্ট লজ্জিত ছিল। তাই সে বলেছে, দেশকে তথা দেশবাসীকে এই লজ্জা, অপমান, লাঞ্ছনা থেকে যে মুক্তি দিতে চায় সেই সব্যসাচী অপূর্বর কাছে আত্মীয় পুলিশকর্তার থেকেও অনেক বেশি আপনার এবং নিকটজন।
৪. “আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না, রামদাস।” প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – প্রসঙ্গ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত। বাংলা দেশের ছেলে অপূর্ব রেঙ্গুনে থাকার সময় ফিরিঙ্গি ও অন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত ও অপমানিত হয়েছিল। লাঞ্ছনার কথা বলতে গিয়েই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঙালি সন্তান অপূর্ব চাকরির সূত্রে রেঙ্গুনে এসেছিল। কিন্তু রেল স্টেশনে একদিন বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে তাকে লাখি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। স্টেশনে থাকা কোনো ভারতীয়ই এই ঘটনার প্রতিবাদ করেনি; বরং অপূর্বর হাড়পাঁজরা খুব একটা ভাঙেনি জেনে তারা হুশি হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে স্টেশনমাস্টার তাকে ভারতীয় বলে কুকুরের মতো বের করে দিয়েছিল। বিনা দোষে এই অত্যাচার সহ্য করায় এক না বলা কষ্ট তার বুকের মধ্যে গুমরে ওঠে। তাই রামদাসের কাছে সে বলেছে, “তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না তলওয়ারকর।” অপূর্ব শিক্ষিত, সভ্য, বিচক্ষণ যুবক। শাসকের এই অকারণ অত্যাচারকে সে সমর্থন করতে পারে না। ইংরেজদের এই বর্বরের মতো আচরণ সমস্ত স্তরের দেশবাসীকেই সহ্য করতে হচ্ছে বুঝে অপূর্ব যন্ত্রণা অনুভব করেছে। আলোচ্য উক্তিটি তার সেই বেদনাকেই প্রকাশ করেছে।
৫. বাস্তবিক, এমন তৎপর, এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে মনে হয় না, হে তলওয়ারকর! তা-ছাড়া এত বড়ো বন্ধু!”—মেয়েটির সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – কথামুখ: শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরে দাবী’ গল্পাংশে অপূর্ব এই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্বর বাড়ির ওপরের তলায় যে ক্রিশ্চান মেয়েটি থাকত তার সম্বন্ধে এই কথাটি বলা হয়েছে। দায়িত্ববোধ: অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে একদিন চুরি হয়ে গিয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটির জন্যই টাকাকড়ি ছাড়া বাকি সমস্ত কিছু চুরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটি নিজে চোরকে তাড়িয়ে অপূর্বর ঘর তালাবন্ধ করে দেয়। অপূর্ব না-ফেরা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে। অপূর্ব ফেরার পর সে নিজে চাবি দিয়ে সেই ঘর খুলে যা কিছু ছড়ানো জিনিসপত্র ছিল সেগুলো সব নিজের হাতে গুছিয়ে দেয়। যা চুরি গেছে আর যা যা চুরি যায়নি তার একটা নিখুঁত হিসাব সে বানিয়েছিল। সেই হিসেব দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল, একজন পাস করা অ্যাকাউন্ট্যান্টের পক্ষেও এমনটা সম্ভব নয়। প্রকৃত বন্ধুভাবাপন্ন: অন্যের জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা এই মেয়েটিকে না দেখলে অপূর্ব বুঝতেও পারত না। সব কিছু দেখে অপূর্বর তাকে একজন প্রকৃত বন্ধু বলেই মনে হয়েছিল। বুদ্ধিমত্তা: মেয়েটির প্রখর বুদ্ধি আর সবদিকে অদ্ভুত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে অপূর্ব আশ্চর্য হয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।
৬. “আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম।”-কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন। এর মধ্যে বক্তার কোন মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর – উৎস ও প্রসঙ্গ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশ থেকে উদ্ধৃত এই উক্তিটি করেছিল অপূর্ব। ফিরিঙ্গিদের হাতে একদিন অপূর্ব নিজে কীভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিল সেই যন্ত্রণার কথা বর্মা অফিসের সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরের কাছে বলতে গিয়ে সে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।
বক্তার মানসিকতা: অপূর্বকে বিনা দোষেই ফিরিঙ্গি যুবকেরা লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে কেবল ‘দেশি লোক’ এই অজুহাতে কুকুরের মতো দূর করে দিয়েছিল। এ অপমান পরাধীন দেশে প্রতিদিনই ঘটছে। অপূর্ব এই ঘটনায় খুব কষ্ট পায়; তার খুব রাগও হয়। সেই সঙ্গে সে স্থির সিদ্ধান্তে আসে যে, দেশের মা ভাই বোনকে যারা সমস্ত অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায়, তারাই তার সত্যকার আপনার লোক। আর সেই মানুষগুলোকে কাছের মানুষ হিসেবে গ্রহণ করার সমস্ত দুঃখই সে মাথা পেতে নিতে চায়।
এ কথায় অপূর্বর দেশপ্রেমিক সত্তাটি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনই সাহস এবং সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটেছে। সে কেবল নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত নয়। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার এক প্রবল ইচ্ছে ধরা পড়েছে তার কথায়। পাশাপাশি এক অনিশ্চিত জীবনকে গ্রহণ করার কঠিন প্রতিজ্ঞাও অপূর্বর কথায় ফুটে উঠেছে।
৭. “আমাদের তিনি আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী, কিন্তু তাই বলে আমার দেশের চেয়ে তো তিনি আপনার নন।”—কে, কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে? এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাবটি ব্যক্ত করো। 
উত্তর – বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: অপূর্ব নিমাইবাবু সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।
বক্তার মনোভাব: নিমাইবাবুর সঙ্গে অপূর্ব পুলিশ স্টেশনে গেলে সেখানে তার সঙ্গে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের দেখা হয়। সেখানে পুলিশ গিরীশ মহাপাত্র এবং তার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র তদন্ত করতে গেলে এক হাস্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। তলওয়ারকরের সঙ্গে এই নিয়ে কথোপকথন প্রসঙ্গে অপূর্বর মনোভাবের কয়েকটি দিক ধরা পড়েছে—
দেশপ্রেমিক: অপূর্ব সাধারণ চাকুরিজীবী হলেও পরাধীন দেশকে বিদেশি শাসনমুক্ত দেখতে চায়। দেশের কল্যাণের জন্যই আন্তরিকভাবে সে চায়, সব্যসাচী মল্লিক যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়েন। নিমাইবাবু অপূর্বর বাবার বন্ধু, পরম আত্মীয়। কিন্তু তিনি সুদুর বাংলা দেশ থেকে বর্মায় এসেছেন যে সব্যসাচী মল্লিককে হাজতে পুরতে, তিনি আসলে দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা। তাই নিমাইবাবুর চেয়ে সব্যসাচী মল্লিকই অপূর্বর আত্মার আত্মীয়।
স্পষ্টবক্তা: রামদাস অফিসের সহকর্মীমাত্র হলেও তার কাছে অপূর্ব নিজের আত্মীয় সম্পর্কে যে ভাবনা মেলে ধরেছে—তাতে সহজেই অপূর্বকে স্পষ্টবক্তা বলা যায়।
আবেগপ্রবণ: এ কথাও ঠিক, অপূর্ব আবেগপ্রবণ। তাই রামদাস যখন নিমাইবাবুর কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তের জন্য অপূর্বর প্রতি দিক্‌নির্দেশ করেন, তখনই অপূর্ব জোর করে অনেকটা আবেগের বশে, প্রশ্নে উল্লিখিত কথাগুলো বলেছিল।

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. “একবার সে বিরক্ত হইয়া প্রতিবাদ করায়”—বিরক্তির কারণ—
(ক) ট্রেনে বসার জায়গা না পাওয়া
(খ) ট্রেনে জল না থাকা
(গ) রাতে ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়া
(ঘ) ট্রেনে ফিরিঙ্গি ছেলেদের অত্যাচার
২. “আমার অবর্তমানে সমস্ত ভারই তো তোমার।”—বক্তা হলেন-
(ক) অপূর্বর অফিসের বড়োবাবু
(খ) নিমাইবাবু
(গ) জগদীশবাবু
(ঘ) রামদাস
৩. অপূর্বর মন টিকছিল না-
(ক) বাংলাদেশে
(খ) রেঙ্গুনে
(গ) জাপানে
(ঘ) চিনে
৪. অপূর্বকে ভামো নগরে পাঠানো হয়েছিল, সেখানকার অফিসের-
(ক) শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য
(খ) কাজ দেখাশোনার জন্য
(গ) বন্ধ কাজকর্ম চালু করার জন্য
(ঘ) ম্যানেজার পদ গ্রহণের জন্য
৫. কোন্ সময় অপূর্ব ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করে?
(ক) গভীর রাতে
(খ) সকালবেলায়
(গ) দুপুরবেলায়
(ঘ) বিকেলবেলায়
৬. “আমি কালই বার হয়ে যেতে পারি।”—অপূর্ব যেতে পারে-
(ক) ভামো নগরে
(খ) এনাঞ্জাং-এ
(গ) ম্যান্ডালে
(ঘ) বর্মায়
৭. ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করার সময়, অপূর্ব কাকে দেখল?
(ক) রামদাসের স্ত্রীকে
(খ) তলওয়ারকরকে
(গ) গিরীশ মহাপাত্রকে
(ঘ) অপূর্বর স্কুলজীবনের এক বন্ধুকে
৮. “আমি বাবু ধর্মভীরু মানুষ।”— ধর্মভীরু মানুষটি হলেন-
(ক) তেওয়ারি
(খ) অপূর্ব
(গ) গিরীশ মহাপাত্র 
(ঘ) জগদীশবাবু
৯. “আশ্চয্যি নেহি হ্যায় বাবুসাহেব” – বাবুসাহেবটি হলেন-
(ক) অপূর্ব
(খ) সব্যসাচী মল্লিক
(গ) তলওয়ারকর
(ঘ) বড়োবাবু
১০. “সে হাত বাড়াইয়া বন্ধুর করমর্দন করিল।”—বন্ধুটি হল-
(ক) নিমাইবাবু
(খ) অপূর্ব
(গ) গিরীশ মহাপাত্র
(ঘ) জগদীশবাবু

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. বড়োসাহেব কী বলার জন্য টেলিগ্রাম নিয়ে অপূর্বর কাছে এসেছিল?
উত্তর – বড়োসাহেব অপূর্বকে বলেছিলেন ভামোর অফিসে বিশৃঙ্খল অবস্থা। ম্যান্ডালে, শোএবো, মিথিলা এবং প্রোম সব অফিসেই গোলযোগ হচ্ছে। তাই অপূর্ব যেন সব অফিসগুলো একবার নিজে গিয়ে দেখে আসে।
২. ভানো যাত্রায় ট্রেনে অপূর্বের কে কে সঙ্গী হয়েছিল?
অথবা, ভালো নগরের উদ্দেশে যাত্রায় অপূর্বের সঙ্গে কে কে ছিল?
উত্তর – ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রায় অপূর্বর সঙ্গে ছিল আরদালি এবং অফিসের একজন হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণ পেয়াদা।
৩. অপূর্ব ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার সময় কাকে দেখে কী জিজ্ঞাসা করল ।
উত্তর – ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার সময় অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে জিজ্ঞাসা করল যে, সে তাকে চিনতে পারছে কি না এবং সে কোথায় যাচ্ছে।
৪. গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে অপূর্বর দ্বিতীয় বার কোথায় দেখা হয়েছিল?
উত্তর – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে অপূর্বর দ্বিতীয় বার দেখা হয়েছিল রেলস্টেশনে।
৫. পুলিশ স্টেশনে দেখা গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে দ্বিতীয় বার যখন অপূর্বর দেখা হল, তখন গিরীশের পোশাকের কী পার্থক্য ঘটেছিল?
উত্তর – অপূর্ব যখন দ্বিতীয় বার গিরীশ মহাপাত্রকে দেখল তখন তার বাহারি জামা থেকে শুরু করে পাম্পশু সবই একরকম ছিল। শুধু বাঘ-আঁকা রুমালটা বুকপকেটের বদলে গলায় জড়ানো ছিল।
৬. দ্বিতীয় বার সাক্ষাতে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে কী বলেছিল?
উত্তর – দ্বিতীয় বার সাক্ষাতে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে বলেছিল যে, সে পুলিশের লোক নয়। সেদিন শুধু তামাশা দেখবার জন্য সে পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল।
৭. ট্রেনের মধ্যে কী কারণে অপূর্বর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছিল?
উত্তর – রাতে অপূর্ব শোয়ার পরে প্রায় বার-তিনেক পুলিশের লোকেরা তার নাম, ঠিকানা লিখে নেওয়ার জন্য তাকে জাগিয়ে বিরক্ত করায় অপূর্বর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছিল।
৮. ভামো যাত্রাপথে ট্রেনে অপূর্ব বিরক্ত হয়েছিল কেন? 
উত্তর – ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে ভামো যাত্রাপথে একাধিকবার পুলিশের লোক অপূর্বর ঘুম ভাঙিয়ে নাম ঠিকানা লিখে নিতে আসায় অপূর্ব বিরক্ত হয়েছিল।
৯. কী ব্যাপারে অপূর্ব বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করেছিল এবং তাকে কী বলা হয়েছিল।
উত্তর – ট্রেনে বারবার ঘুম ভাঙিয়ে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করায় অপূর্ব যখন বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করেছিল তখন তাকে কটুকণ্ঠে বলা হয়েছিল যে, যেহেতু সে ইউরোপিয়ান নয়, তাই এগুলো তাকে সহ্য করতেই হবে।
১০. “আমারও তো তাই বিশ্বাস।”-বক্তার কী বিশ্বাস?
উত্তর – ‘পথের দাবী’ রচনাংশে গিরীশ মহাপাত্র অপূর্বকে বলেছিল ললাটের লেখা কখনও খন্ডন করা যায় না। বক্তা অপূর্বও এই কথা বিশ্বাস করে বলে জানায়।
১১. ইহা যে কতবড়ো ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল।”—’মট কী?
উত্তর – অপূর্ব ভেবেছিল যে, প্রথম শ্রেণির যাত্রী বলে কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত [মাধ্যমিক ২০১৭] ঘটাবে না। কয়েকটি স্টেশন পরেই তার এই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “নানা কারণে রেঙ্গুনে তাহার আর একমুহূর্ত মন টিকিতেছিল না।” —এখানে কার কথা বলা হয়েছে? তার মন না টেকার কারণ কী? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: উদ্ধৃত অংশে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।
মন না টেকার কারণ: অপূর্ব বোথা কোম্পানির চাকরি নিয়ে রেঙ্গুনে এসেছিল। সেখানে নানা নির্যাতন অপূর্বকে সহ্য করতে হয়েছিল। একবার স্টেশনে বিনা দোষে ফিরিঙ্গি ছেলেরা তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। প্রতিবাদ জানাতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে কুকুরের মতো স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ভারতীয়রাও কোনো প্রতিবাদ করেনি। এইসব ঘটনার জন্যই রেঙ্গুনে অপূর্বর মন টিকছিল না।
২. “অতএব যাওয়াই স্থির হইল”—কোথায়, কী কারণে যাওয়াই স্থির হল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট স্থান: অপূর্বর অফিসের প্রয়োজনে তার ভামো যাওয়া স্থির হয়েছিল।
সেখানে যাওয়ার কারণ: অফিসের বড়োসাহেব অপূর্বকে বলেছিলেন যে, ভামোর অফিসে কোনো শৃঙ্খলা নেই। এ ছাড়া ম্যান্ডালে, শোএবো, মিক্‌থিলা অফিসেও গণ্ডগোল হয়েছে। তাই অপূর্ব যেন সব অফিসগুলো একবার গিয়ে দেখে আসে, কারণ বড়োসাহেবের অবর্তমানে তাকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে। নানা কারণে রেঙ্গুনে অপূর্বর মন টিকছিল না। তাই সে নিজেও চাইছিল রেঙ্গুনের বাইরে যেতে। বড়োসাহেবের নির্দেশে তাই অপূর্ব ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করল।
৩. “অপূর্ব হঠাৎ চকিত হইয়া বলিয়া উঠিল,”—কখন, কী দেখে অপূর্ব চমকে উঠেছিল?
উত্তর – অপূর্ব তার অফিসের বড়ো সাহেবের নির্দেশে ভামোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। স্টেশনে যখন ট্রেন ছাড়তে কিছুক্ষণ দেরি ছিল, সেই সময় সে গিরীশ মহাপাত্রকে দেখতে পায়। পুলিশ স্টেশনে দেখা বিচিত্র পোশাক-পরিচ্ছদ ও চালচলনের গিরীশ মহাপাত্রকে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে সেখানে দেখতে পায় অপূর্ব। তাই সে বিস্মিত ও চমকিত হয়।
৪. “আপাতত ভামো যাচ্ছি। তুমি কোথায়?”—কে, কাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছে? উত্তরে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী জানিয়েছিল? 
উত্তর – বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছে।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য: অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, সে কোথায় যাচ্ছে। উত্তরে গিরীশ জানিয়েছিল, এনাঞ্জাং থেকে তার দুজন বন্ধুর আসার কথা ছিল বলেই সে ওই সময়ে স্টেশনে উপস্থিত হয়েছে। এর পর সে জানায়, পুলিশ স্টেশনে তাকে অহেতুক হয়রান করা হয়েছে। সে ধর্মভীরু মানুষ বলে গাঁজা খায় না, জোচ্চুরিও করে না। সে আরও বলে যে, কপালের লেখা খেউ খণ্ডাতে পারে না।
৫. “তুমি তো ইউরোপিয়ান নও”—এ কথা কে, কী কারণে বলেছিল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: এ কথা সাব-ইনস্পেকটর অপূর্বকে বলেছিল।
এ কথা বলার কারণ: অপূর্ব ট্রেনে করে ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। প্রথম শ্রেণির টিকিট কেটে সে ভেবেছিল নিশ্চিন্তমনে যাত্রা করতে পারবে, কোনো কিছুতে ব্যাঘাত ঘটবে না। কিন্তু তা হয়নি। পুলিশের লোক এসে বার-তিনেক তার ঘুম ভাঙিয়েছিল, নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে গিয়েছিল। এইভাবে বারবার পুলিশের লোক এসে তাকে বিরক্ত করায়, সে যখন প্রতিবাদ করে তখন বর্মার সাব-ইনস্পেকটর কটুকণ্ঠে তাকে বলে, সে ইউরোপিয়ান নয়।
৬. ‘কোন এক অদৃষ্ট অপরিজ্ঞাত রাজবিদ্রোহীর চিন্তাতেই ধ্যানস্থ হইয়া রহিল।”—কে ধ্যানস্থ হয়েছিল? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এরূপ ধ্যানস্থ হওয়ার কারণ কী?
উত্তর – ধ্যানস্থ ব্যক্তি: উল্লিখিত অংশে অপূর্বর ধ্যানস্থ হয়ে থাকার কথা বলা হয়েছে।
ধ্যানস্থ হওয়ার কারণ: স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি অপূর্বর মনের গভীরে লুকানো ছিল অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি। পুলিশ স্টেশনে গিরীশ মহাপাত্রকে দেখার পরে স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামী সব্যসাচীর কাল্পনিক মূর্তি মনের ক্যানভাসে এঁকে নিয়ে সে তাঁর চিন্তাতেই মগ্ন হয়ে পড়ে। শুধু দেশের জন্য সংসারপরিজন, ব্যক্তিসুখ ত্যাগ করে এই মহান বিপ্লবী এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেই বিপ্লবীর চিন্তায় মগ্ন হয়েই অপূর্ব ধ্যানস্থ হয়ে পড়ে।
৭. “সেদিন কেবল তামাশা দেখতেই গিয়েছিলাম।”—কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? বক্তা কী তামাশা দেখেছিল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট দিন: অপূর্ব যেদিন তার ঘরে চুরির সংবাদ পুলিশকে জানাতে গিয়েছিল, সেই দিনের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
তামাশার বর্ণনা: সব্যসাচী সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে পুলিশ স্টেশনে আটক করা হয়েছিল। তার টিনের তোরঙ্গ এবং কাছে থাকা জিনিস করে পুলিশের বড়োকর্তা নিমাইবাবু তেমন কিছুই খুঁজে পাননি। বরং তার চেহারা এবং পোশাক নিয়ে থানার মধ্যে একটা হাসির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। নিমাইবাবুদের তল্লাশির ধরন এবং গিরীশ মহাপাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকেই অপূর্ব তামাশা বলেছে।
৮. “কিন্তু এই হাসিতে তলওয়ারকর যোগ দিল না।”—কোন্ হাসি? তাতে তলওয়ারকরের যোগ না দেওয়ার কারণ কী? 
উত্তর – হাসির কথা: রাজবিদ্রোহী সব্যসাচীর পিছনে নিমাইবাবু সদলবলে এদেশ-ওদেশ করে বেড়াচ্ছিলেন। এঁদের ব্যর্থ তৎপরতার জন্য অপূর্ব হেসেছিল।
তলওয়ারকরের যোগ না দেওয়ার কারণ: তলওয়ারকর বিচক্ষণ ব্যক্তি। অপূর্বর সুপ্ত দেশপ্রেম মাঝে মাঝেই প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু চারিদিকে ব্রিটিশ পুলিশ ওঁত পেতে ছিল। এখানে ভারতপ্রেম দেখানো মানেই রাজদ্রোহের অপরাধে অপরাধী হওয়া। আর তেমনটি হলে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত। এই কারণেই নিজেকে এবং অপূর্বকে নিরাপদে রাখতেই তলওয়ারকর হাসিতে যোগ দেয়নি।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রাকালে অপূর্বর কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বর্ণনা করো।
উত্তর – শুরুর কথা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্ব রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। নিয়মমাফিক কাজ: অপূর্ব প্রথম শ্রেণির যাত্রী ছিল। সন্ধ্যা হলে সে প্রতিদিন নিয়ম করে যা করে, সেই সবই করেছিল। ভ্রান্ত ধারণা: রাতের খাওয়ার পর অপূর্ব যখন শুতে যায় তখন সে ভেবেছিল প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় নিশ্চিন্ত মনে বাকি রাস্তাটা যেতে পারবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অপূর্বর বিরক্তি: সেই রাতে পুলিশের লোক এসে বার-তিনেক তার ঘুম ভাঙিয়ে নাম, ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। অবশেষে অপূর্ব বিরক্ত হয়। সাব-ইনস্পেকটরের সঙ্গে বচসা: অপূর্ব উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ করলে বর্মা সাব-ইনস্পেকটর কটুকণ্ঠে তাকে বলে যে, সে ইউরোপিয়ান নয়, তাই এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এই কথা শুনে অপূর্ব তাকে বলে যে, সে প্রথম শ্রেণির যাত্রী। তাই কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না। তার কথায় ওই সাব-ইনস্পেকটর হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিল, এইসব নিয়ম শুধু রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য। তাই পুলিশ যদি ইচ্ছে করে তাহলে তাকে ট্রেন থেকে নামিয়েও দিতে পারে, তার প্রতিবাদ করার কোনো অধিকার নেই। ইতিকথা: এভাবে এভাবে পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজদের হাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার আর-একটি ঘটনা অপূর্বর অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয়।
২. “কিন্তু ইহা যে কত বড়ো ভ্রম তা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল।”—‘সে’ কে? উদ্ধৃত অংশটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – ‘সে’: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশের উল্লিখিত অংশে ‘সে’ বলতে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গ: অফিসের গোলমাল থামানোর জন্য বড়ো সাহেব অপূর্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রেঙ্গুন থেকে ভামোর অফিসে যাওয়ার জন্য। এই ট্রেন যাত্রায় অপূর্বর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা তার ভাবনায় ছিল না। সেখানে সে যে বিরক্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তার উল্লেখ করতে গিয়েই সে মন্তব্যটি করেছে।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: অপূর্ব ছিল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির যাত্রী। তার কামরায় অন্য কোনো লোক ছিল না। সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হলে অপূর্ব ঈশ্বর উপাসনা শেষ করে। তারপর সে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে হাত-মুখ ধুয়ে সুস্থমনে শয্যাগ্রহণ করে। অপূর্ব আশা করেছিল যে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় সকাল পর্যন্ত কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে না। কিন্তু পুলিশের লোকরা রাত্রে বারতিনেক ঘুম ভাঙিয়ে তার নাম-ঠিকানা লিখে নেয়। এইভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোয় অপূর্ব প্রতিবাদ করে। তখন সাব-ইনস্পেকটরের কাছে শুনতে হয় আবার অপূর্ব যখন নিজেকে প্রথম শ্রেণির যাত্রী বলে এবং তাই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো যায় না বলে মন্তব্য করে তখন পুলিশ অফিসারটি তাকে বলেন যে ইচ্ছা করলে সে তাকে নামিয়েও দিতে পারে। ভারতীয়দের অপমানের আরও একটা দৃষ্টান্ত অপূর্বর অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয়।

সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

১. ‘পথের দাবী’ রচনাংশ অবলম্বনে অপূর্বর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – কথামুখ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর অনুভবই হয়ে উঠেছে কাহিনির মূল বিষয়। তার চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় তা হল-
দেশপ্রেম: অপূর্ব বাংলা দেশের ছেলে এবং সে স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাসী। নিমাইবাবুর মুখে সব্যসাচীর বর্ণনা শুনে অপূর্বর মনে এই মহান দেশপ্রেমিক সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও ভক্তি জেগে ওঠে। তবে রাগ হয় নিমাইবাবুর ওপর। কারণ বাঙালি হয়েও তিনি নিজের দেশের এত বড়ো একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করতে তৎপর। সব্যসাচী সন্দেহে আটক গিরীশ মহাপাত্রই যে আসলে সব্যসাচী তা অনুমান করতে অপূর্বর দেরি হয়নি। তাই সে নিমাইবাবুকে বলেছে–“এ লোকটিকে কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” পুলিশের কাছে এরকম উক্তি অপূর্বর চরিত্রের দৃঢ়তা এবং দেশপ্রেমকেই তুলে ধরে।
সাহসী ও প্রতিবাদী স্বভাব: শান্তশিষ্ট হলেও অপূর্ব প্রতিবাদী। সে রামদাসের কাছে পুলিশের সমালোচনা করেছে। এতে অপূর্ব রাজদ্রোহিতার অপরাধে শাস্তি পেতে পারে। বর্মা সাব-ইনস্পেকটরের আচরণের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে তাই সে এতটুকুও দ্বিধা করেনি।
ইতিকথা: সবদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায়, ‘Doing and Suffering’এর ভিত্তিতে অপূর্ব আলোচ্য কাহিনি অংশের মুখ্য চরিত্র।
২. ‘পথের দাবী’ রচনাংশ অবলম্বনে নিমাইবাবুর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – কথামুখ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের দাবী’ শীর্ষক গল্পাংশে সব্যসাচীকে আশ্রয় করে কাহিনি বিস্তার লাভ করলেও নিমাইবাবুর চরিত্রটি সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পেশাগত দায়বদ্ধতা: নিমাইবাবু পেশায় পুলিশ অফিসার। তিনি নিজে বাঙালি এবং একইসঙ্গে ভারতীয়। কিন্তু কর্তব্যের খাতিরে ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত সব্যসাচী মল্লিককে ধরতে তিনি সুদূর রেঙ্গুনে এসেছেন। কোনো মোহ বা আবেগই তাঁকে সেই কর্তব্য থেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি।
মানবিকতা: পুলিশের বড়োকর্তা হলেও নিমাইবাবু কঠোর বা নিষ্ঠুর নন। সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রকে নিয়ে তিনি যে রসিকতা করেছেন তা নিছক রঙ্গতামাশা নয়, এর মধ্য দিয়ে তাঁর চরিত্রের মানবিক গুণও ফুটে উঠেছে। গিরীশ মহাপাত্রের শরীরের প্রতি লক্ষ রেখে তিনি তাকে গাঁজা না খেতে অনুরোধ করেছেন—“কিন্তু ক’দিনই বা বাঁচবে, – এই তো তোমার দেহ,— আর খেয়ো না। বুড়োমানুষটার কথা শুনো।” অন্যদিকে নিমাইবাবুর ভদ্র, শান্ত, অল্পভাষী স্বভাব তাঁকে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছে। এই সমস্ত বিশেষত্বগুলিই কাহিনিতে নিমাইবাবুকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছে। ইতিকথা: অপূর্ব তার নিকটাত্মীয় এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা না করলেও নিজস্ব চরিত্র বৈশিষ্ট্যে নিমাইবাবু উজ্জ্বল।
৩. স্বল্প পরিসরে হলেও ‘পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাস তলওয়ারকর চরিত্রটি কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে লেখো।
উত্তর – কথামুখ : রামদাসের চরিত্রটি ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অতি অল্প পরিসর জুড়ে থাকলেও চরিত্রবৈশিষ্ট্যে সে উল্লেখযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
বিচক্ষণতা ও বন্ধুপ্রীতি: রামদাস তলওয়ারকর একজন শিক্ষিত মারাঠি যুবক। অপূর্বর অন্যমনস্কতা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সে ভেবেছিল বাড়ি থেকে কোনো দুঃসংবাদের চিঠি পেয়েছে সে। পরে অবশ্য তার ভুল ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে সব্যসাচীর প্রতি অগাধ ভক্তিই অপূর্বকে অন্যমনস্ক করে তুলেছে। তবে সেই ভক্তির প্রত্যক্ষ প্রকাশ বিপদ ডেকে আনতে পারে ভেবে সে অপূর্বকে সাবধান করে দিয়েছল।
সহমর্মিতা: গল্পে রামদাস ছিল অপূর্বর সহমর্মী। ফিরিঙ্গি ছেলেদের অত্যাচার, স্টেশনমাস্টারের অমানবিক আচরণের কথা যখন অপূর্ব বলছিল, তখন সমবেদনায় রামদাসের ফরসা মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। তারও দু-চোখ ছলছল করে উঠেছিল।
স্বদেশিকতা: গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে অপূর্ব যখন গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচীর পিছনে পুলিশের ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে তখন রামদাসকে শঙ্কিত হয়ে উঠতে দেখা যায়। লেখকের বর্ণনায় সেই ছবি ধরা পড়েছে এইভাবে—“এই মুহূর্তকালের মধ্যে রামদাসের প্রশস্ত উজ্জ্বল ললাটের উপরে যেন কোন এক অদৃশ্য মেঘের ছায়া আসিয়া পড়িয়াছে এবং সেই সুদূর দুর্নিরীক্ষ্য লোকেই তাহার সমস্ত মনশ্চক্ষু একেবারে উধাও হইয়া গিয়াছে।”
ইতিকথা: ‘পথের দাবী’ রচনাংশে খুব স্বল্প পরিসরেও মার্জিত, মানবিক চরিত্রের আলোয় রামদাস ভাস্বর হয়ে উঠেছে।
8. তোমাদের পাঠ্যাংশ ‘পথের দাবী’-তে গিরীশ মহাপাত্র যদি সত্যিই সব্যসাচী হন, তবে তাঁর সম্পর্কে তোমার মনোভাব ব্যক্ত করো।
উত্তর – প্রাক্কথন: ‘পথের দাবী’ রচনাংশে উল্লিখিত গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী কি না, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সমগ্র উপন্যাসের কাহিনি অনুসারে গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী। কিন্তু আলোচ্য আংশিক কাহিনিতে বোঝার কোনো উপায় নেই যে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিই সব্যসাচী। এমনকি, অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু বা জগদীশবাবুও তা বুঝতে পারেননি। গিরীশ মহাপাত্রকে ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিক হিসেবে আটক করা হলেও সে বুদ্ধিবলে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পেরেছিল। অবশ্য অপূর্ব তার দূরদৃষ্টির সাহায্যে বুঝেছিল গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী। ইংরেজের পুলিশ তাকে ধরতে না পারায় সে উল্লসিত হয়েছিল।
গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচী: গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা নিমাইবাবু-সহ সমগ্র পুলিশদলকে বিভ্রান্ত করেছে। সদা সতর্ক ইংরেজ পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার এমন কৌশল ছদ্মবেশ ধারণ তাঁর দক্ষতারই পরিচয় দেয়। সেই কারণেই তিনি মাথার চুল ছেঁটেছেন অদ্ভুতভাবে। কালচার বা আচার-ব্যবহার পালটাতে পারলে পুলিশ তাঁকে চিনতে পারবে না—এই ভেবে সব্যসাচী তাঁর সমগ্র কালচারটাই পালটে ফেলেছিলেন। তাঁর রোগা জীর্ণ শরীর তাঁকে সাহায্য করেছে। স্বদেশের মুক্তির জন্য দেশবিদেশে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে শরীরের দিকে নজর দেওয়ার কোনো অবকাশ তাঁর ছিল না। তবে অমর প্রাণশক্তিটুকুর জন্যই সব্যসাচীকে মৃত্যু অথবা ইংরেজের পুলিশ স্পর্শ করতে পারে না।
৫. পথেরদাবী’রচনাংশে অপূর্বর স্বদেশপ্রেমের যে পরিচয় লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা, “আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম।”—এই উক্তির আলোকে বক্তার দেশপ্রেমের পরিচয় দাও।
উত্তর – শুরুর কথা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব চরিত্রটির হৃদয়ে স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি অনুরাগ থেকেই বোঝা যায় তার স্বদেশপ্রেম কতখানি অকৃত্রিম।
স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি অনুরাগ: নিজের বাড়িতে চুরির সংবাদ জানাতে থানায় এসে অপূর্ব দেখেছিল সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের খানাতল্লাশির ঘটনা। ‘সব্যসাচী’ নামটি শুনেই অপূর্বর মন বিচলিত হয়েছিল। গিরীশ মহাপাত্রকে সব্যসাচী ভেবেই সে মনে মনে প্রার্থনা করেছে পুলিশ যেন ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার না করে। তাই তাকে বলতে শুনি—“কাকাবাবু, এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” আবার নিমাইবাবুর কার্যকলাপকেও সে সমর্থন করেনি। “আমার বড়ো লজ্জা এই যে, এদের যিনি কর্তা তিনি আমার আত্মীয়, আমার পিতার বন্ধু।”
দেশপ্রেম: অপূর্বর দেশপ্রেমের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় রামদাসের সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে। সব্যসাচী সম্পর্কে তার শ্রদ্ধা-ভক্তি চেপে রাখতে না পেরে সে বলেছে—“যাঁকে তিনি দেশের টাকায়, দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।”
আবেগপ্রবণ: কোনো কোনো সময় অপূর্ব খুব আবেগময় হয়ে পড়েছে। রাজরোষে পড়তে হবে জেনেও সে মনের ক্ষোভ ও বেদনাকে চেপে রাখতে পারেনি।
৬. বিদেশি সাহেবের কাছে অপূর্বর অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার যে দুটি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, তা লেখো।
উত্তর – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে দুটি ঘটনা দেখি যেখানে ইংরেজরা অপূর্বকে অপমান করেছে।
প্রথম ঘটনা: একবার অপূর্বকে বিনা দোষে দণ্ডভোগ করতে হয়েছে। স্টেশনে একবার কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে কোনো দোষ ছাড়াই লাথি মেরে তাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দেয়। অপূর্ব যখন সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যায় তখন সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে ভারতীয় বলে অপমান করে কুকুরের মতো দূর করে দেয়। নিজের দেশে এইভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার দুঃখ অপূর্ব কোনোদিন ভুলতে পারেনি।
দ্বিতীয় ঘটনা: আর-একবার রেলপথে অপূর্ব রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করছিল। অপূর্ব ছিল প্রথম শ্রেণির যাত্রী। সারাদিনের সমস্ত কাজকর্ম শেষ করে অপূর্ব ভেবেছিল প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় সে শান্তিতে ঘুমোবে। কিন্তু বারবার পুলিশের লোক এসে অপূর্বর ঘুম ভাঙিয়ে তার নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। একবার সে বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করলে সাব-ইনস্পেকটর তাকে কটুকণ্ঠে বলে যে, এসব তাকে সহ্য করতেই হবে কারণ সে ইউরোপিয়ান নয়। অপূর্ব যখন বলে সে প্রথম শ্রেণির যাত্রী, তার সঙ্গে এইরকম কিছু করা অনুচিত, তখন ইনস্পেকটর জবাব দেয়, এই সমস্ত নিয়ম রেলের কর্মচারীর জন্য, তার জন্য নয়। শুধু ভারতীয় বলেই তাকে এইভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *