wb 10th Bengali

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 11 সিন্ধুতীরে

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 11 সিন্ধুতীরে

West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 11 সিন্ধুতীরে

West Bengal Board 10th Bengali Solutions

কবি পরিচিতি

জন্ম-পরিচয়; আলাওলের জন্ম হয়েছিল আনুমানিক ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার ফতেহাবাদে। তাঁর বাবা ছিলেন জালালপুরের অধিপতি মজলিশ কুতুবের অমাত্যপ্রধান।
পরবর্তী জীবন ও কাব্যরচনা: জলদস্যুদের হাতে আলাওলের বাবা মারা গেলে আলাওল আরাকানে আসেন। সেখানে প্রথমে অশ্বারোহী সেনাদলে নিযুক্ত হলেও অমাত্যপ্রধান মাগন ঠাকুর তাঁর গুণমুগ্ধ হয়ে পড়েন। তাঁরই নির্দেশে আলাওল হিন্দি কবি মহম্মদ জায়সীর পদুমাবৎ কাব্যের অনুবাদ করেন। আলাওল রচিত অন্য গ্রন্থগুলি হল—সয়ফুলমুলক বদিউজ্জমাল, তোফা, সেকেন্দারনামা, সপ্তপয়কর। এ ছাড়াও দৌলত কাজীর অসমাপ্ত রচনা সতী ময়নার কাহিনিও তিনি শেষ করেন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মানবতাবাদী কবি হিসেবে আলাওলের স্বতন্ত্র জায়গা রয়েছে। আনুমানিক ১৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে আলাওল মারা যান।

উৎস

সৈয়দ আলাওল মালিক মহম্মদ জায়সীর পদুমাবৎ কাব্যের অনুবাদ করেছিলেন; যার নাম দেন পদ্মাবতী। সেই কাব্যগ্রন্থের ৩৫ তম খণ্ড ‘পদ্মাসমুদ্রখণ্ড’ থেকে এই কাব্যাংশটি নেওয়া হয়েছে। ‘সিন্ধুতীরে’ নামটি সাহিত্য সঞ্চয়ন (দশম শ্রেণি) গ্রন্থের সংকলকদের দেওয়া।

পূর্বকথা

পদ্মাবতীকে নিয়ে রত্নসেন সিংহল থেকে ফিরছিলেন। এই সময়ে সমুদ্র ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ ধরে রত্নসেনের কাছে দান ভিক্ষা করে। কিন্তু “ব্রাক্ষ্মণ ভিখারি তোর ধনে কোন্ কাজ”—এই বলে রত্নসেন সমুদ্রকে দান দিতে অস্বীকার করেন। এরপরে সমুদ্রের ক্রোধে রত্নসেন ভাগ্যবিপর্যয়ে পড়েন। তাঁর ডিঙা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সেই সময়ে একটি মান্দাসে রত্নসেন ও সখী-সহ পদ্মাবতী আশ্রয় নিলেও সেটিকে রক্ষা করা যায় না। মান্দাস দ্বিখণ্ডিত হয়ে পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে আলাদা হয়ে পড়েন। পদ্মাবতীর মান্দাস ভাসতে ভাসতে প্রবল ঢেউয়ে তটভূমিতে আছড়ে পড়ে। ভয়ে পদ্মাবতী ও সখীরা ততক্ষণে মূর্ছা গিয়েছেন।

সারসংক্ষেপ

মান্দাসে ভাসতে ভাসতে পদ্মাবতী যেখানে পৌঁছোলেন সেখানে ছিল এক দিব্যপুরী। অতি সুন্দর সেই জায়গা। সেখানে এক প্রাসাদে থাকে সমুদ্রকন্যা পদ্মা। পর্বতের কোলে অবস্থিত সুরম্য উদ্যানে ভোরবেলা পদ্মা তার সখীদের নিয়ে যাবার সময়ে সমুদ্রের ধারে মান্দাসটিকে লক্ষ করে। কৌতূহলী হয়ে সে চারদিকে চার সখীকে এবং মাঝখানে অতি রূপবতী এক কন্যাকে চেতনাহীন হয়ে থাকতে দ্যাখে। সেই রূপে বিস্মিত পদ্মার মনে হয় ইন্দ্রের অভিশাপে স্বর্গভ্রষ্ট বিদ্যাধরী যেন মাটিতে অচেতন হয়ে আছে। সেই অচেতন মেয়েটির চোখ বেরিয়ে আসছে, বসন এলোমেলো। পদ্মা অনুমান করেন প্রবল বাতাসে নৌকা ভেঙে যাওয়াতেই সমুদ্রের ঝড়ঝঞ্ঝার কষ্টে আচ্ছন্ন হয়েছেন ওই রূপবতী কন্যা। ছবির মূর্তির মতো সুন্দরী সেই মেয়েটি পড়ে আছেন, তার সামান্যই শ্বাস রয়েছে। দয়ালু পদ্মা মেয়েটির জীবন বাঁচাতে তৎপর হয়। সে সখীদের আদেশ দেয় বস্তু দিয়ে ঢেকে মেয়েটিকে উদ্যানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগুনের সেঁক দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেয়। শুরু হয় তন্ত্র-মন্ত্র-মহৌষধি প্রয়োগ। এইভাবে চার দণ্ড চলার পরে পদ্মাবতী ও তার চার সখী জ্ঞান ফিরে পায়।

নামকরণ

নামকরণ সাহিত্যে প্রবেশের চাবিকাঠি, তাই সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘সিন্ধুতীরে’ নামকরণটি কবির দেওয়া নয়। কাব্যকাহিনির বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে সংকলকগণ এরূপ নামকরণ করেছেন।
সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতী স্বামীর সঙ্গে চিতোরে ফেরার সময় সামুদ্রিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন। তাঁদের জলযানটি সমুদ্রে ডুবে যায়। একটি মান্দাসে রত্নসেন ও সখী-সহ পদ্মাবতী আশ্রয় নিলেও সেটি রক্ষা পায় না। প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝায় মান্দাস দ্বিখণ্ডিত হয়ে পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে আলাদা হয়ে পড়েন। দুর্যোগজনিত কষ্টে রাজকন্যা জ্ঞান হারিয়ে সমুদ্রতীরে পড়ে থাকেন। সাগরকন্যা পদ্মা ভোরবেলা সুরম্য উদ্যানে এসে এই দৃশ্য দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি সখীদের নির্দেশ দেন অচৈতন্য রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে। সখীরাও সেই নির্দেশমতো রাজকন্যা পদ্মাবতীকে উদ্যানের মাঝখানে নিয়ে এসে চার দণ্ড ধরে নানা সেবাযত্নের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এই হল সংক্ষিপ্ত কাব্যকাহিনি। এখানে লক্ষণীয় যে, যাবতীয় ঘটনা ঘটেছে সমুদ্রের তীরবর্তী স্থানে। কাব্যাংশটির শুরুতেও এই সমুদ্রতীরবর্তী ‘দিব্যস্থান’-টির শোভা-সৌন্দর্য বর্ণিত হয়েছে।
‘সিন্ধুতীরে’ শব্দটির অর্থ সমুদ্রতীরে। সেই স্থাননামের উল্লেখেই কাব্যাংশটির নামকরণ। এই অংশে সংঘটিত যাবতীয় ঘটনা এবং বর্ণিত যাবতীয় বিষয় সমুদ্রতীরকেন্দ্রিক। যে চরিত্রদের কেন্দ্র করে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে, তার থেকে যে জায়গায় কাহিনিটি সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ রূপে প্রকাশিত হয়েছে। এই দিক থেকে বিচার করলে নামকরণটি বিষয়কেন্দ্রিক এবং যথাযথ হয়েছে বলা যায়।

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. ‘সিন্ধুতীরে’ পদ্যাংশটি যে কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে-
(ক) পদ্মাবতী
(খ) তোফা
(গ) সেকেন্দারনামা
(ঘ) সতীময়না ও লোরচন্দ্রাণী
২. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটির লেখক-
(ক) সৈয়দ আলাওল
(খ) মালিক মহম্মদ জায়সী
(গ) সিকন্দর শাহ
(ঘ) মাগন ঠাকুর
৩. পদ্মাবতী কাব্যের মূল গ্রন্থটির রচয়িতা-
(ক) মালিক মহম্মদ জায়সী
(খ) মজলিশ কুতুব
(গ) সৈয়দ আলাওল
(ঘ) থদো-মিতার
৪. পদ্মাবতী কাব্যটি যে কাব্যের অনুবাদ, সেটি হল-
(ক) পদুমাবৎ
(খ) সয়ফুলমুলক বদিউজ্জমাল
(গ) সেকেন্দারনামা
(ঘ) লোরচন্দ্রাণী
৫. আলাওল বর্তমান ছিলেন—
(ক) সপ্তদশ শতকে
(খ) চতুর্দশ শতকে
(গ) পঞ্চদশ শতকে
(ঘ) অষ্টাদশ শতকে
৬. কবি সৈয়দ আলাওলের প্রথম রচনা-
(ক) তোফা
(খ) সয়ফুলমুলক বদিউজ্জমাল
(গ) সপ্তপয়কর
(ঘ) পদ্মাবতী
৭. পদ্মাবতীকাব্যটি রচিত হয়-
(ক) ১৬৪৫ থেকে ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে
(খ) ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে
৮. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
(ক) লোরচন্দ্রাণী
(খ) পদ্মাবতী
(গ) সতীময়না
(ঘ) তোফা
৯. নীচের যে রচনাটি সৈয়দ আলাওলের নয়-
(ক) তোহফা
(খ) নাগাষ্টক
(গ) সেকেন্দারনামা
(ঘ) সতীময়না ও লোরচন্দ্রাণী
১০. ‘সিন্ধুতীরে’ শীর্ষক কাব্যাংশটি পদ্মাবতী কাব্যের যে খণ্ড থেকে নেওয়া হয়েছে-
(ক) রত্নসেন বন্ধনখণ্ড
(খ) বাদশাহ -আক্রমণখণ্ড
(গ) পদ্মা-সমুদ্রখণ্ড
(ঘ) পদ্মাবতী রত্নসেন ভেঁটখণ্ড
১১. ‘পদ্মা-সমুদ্রখণ্ড’টি জায়সীর কাব্যে ছিল-
(ক) লক্ষ্মী-সমুদ্রখণ্ড নামে
(খ) লক্ষ্মী রত্নসেনখণ্ড নামে
(গ) রাজা-বাদশাহ সন্ধিখণ্ড নামে
(ঘ) রত্নসেন সাথীখণ্ড নামে

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি কার রচনা?
উত্তর – ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি সপ্তদশ শতাব্দীর কবি সৈয়দ আলাওলের রচনা।
২. কবি সৈয়দ আলাওল কোন্ রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন?
উত্তর – কবি সৈয়দ আলাওল আরাকান রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন।
৩. ‘‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত? 
উত্তর – কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
৪. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি পদ্মাবতী কাব্যের কোন্ খণ্ডের অংশ?
উত্তর – কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি পদ্মাবতী কাব্যের ‘পদ্মা-সমুদ্রখণ্ড’র অংশ।
৫. পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থটি কোন্ সময়ে রচিত?
উত্তর – কবি সৈয়দ আলাওলের লেখা পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থটি ১৬৪৫ থেকে ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত।
৬. পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অনুসরণে রচিত?
উত্তর – পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থটি হিন্দি কবি মালিক মহম্মদ জায়সী রচিত পদুমাবৎ কাব্যগ্রন্থের অনুসরণে রচিত।
৭. জায়সীর পদুমাবৎ কাব্য রচনাকালে দিল্লির সুলতান কে ছিলেন?
উত্তর – জাইস নগরে বসবাসকারী সিদ্দিকি বংশোদ্ভূত কবি মালিক মহম্মদ জায়সীর পদুমাবৎ কাব্য রচনাকালে দিল্লির সুলতান ছিলেন শেরশাহ।
৮. পদুমাবৎ কাব্যটি কোন সময়ের রচনা?
উত্তর – কবি মালিক মহম্মদ জায়সী রচিত পদুমাবৎ কাব্যটি ‘সন নব সৈ সেতালিস অহা’ অর্থাৎ ৯৪৭ হিজরি বা ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের রচনা।
৯. পদ্মাবতী কাব্যে চিতোর দুর্গের অধিপতি কে ছিলেন?
উত্তর – পদ্মাবতী কাব্যে চিতোর দুর্গের অধিপতি ছিলেন রাজা রত্নসেন।
১০. রাজা রত্নসেন কার মুখে পদ্মাবতীর রূপের কথা শুনেছিলেন?
উত্তর – চিতোরের রাজা রত্নসেন এক শুকপাখির মুখে পদ্মাবতীর রূপের কথা শুনেছিলেন।
১১. রাজা রত্নসেন কীভাবে পদ্মাবতীর কাছে পৌঁছোন?
উত্তর – শুকপাখির মুখে পদ্মাবতীর রূপের প্রশস্তি শুনে চিতোররাজ রত্নসেন ষোলোশো রাজকুমারকে সঙ্গে নিয়ে যোগীবেশে সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীর কাছে পৌঁছোন।

 ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “দিব্য পুরী সমুদ্র মাঝার।”—কোন্ পুরীকে ‘দিব্য পুরী’ বলা হয়েছে? তাকে ‘দিব্য’ বলার কারণ কী?
উত্তর – সমুদ্রের ঢেউ পদ্মাবতীর মান্দাসকে যেখানে পৌঁছে দেয়, সেখানে জলের মধ্যে এক সুন্দর নগরী ছিল। সেটিকেই ‘দিব্য পুরী’ বলা হয়েছে।
‘দিব্য পুরী’ বলার কারণ: সেই পুরী ‘দিব্য’, কারণ সেখানে মানুষের কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না। সমুদ্রকন্যা পদ্মার নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র সেই স্থানের ফলফুলে শোভিত প্রাকৃতিক শোভা ছিল অতুলনীয়। সেখানে বসবাস করা মানুষদের সকলেই ধর্ম মেনে চলত এবং সবসময় সদাচার করত। অর্থাৎ নৈতিক আদর্শের উচ্চতা সেই নগরীকে অলৌকিক মহিমা দিয়েছিল।
২. “অতি মনোহর দেশ।”—এই ‘মনোহর দেশে’র সৌন্দর্যের পরিচয় দাও।
অথবা, ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা অবলম্বনে দেশটির বর্ণনা দাও। 
অথবা, কোন্ স্থানকে কেন মনোহর দেশ বলা হয়েছে? 
উত্তর – মনোহর দেশ: পদ্মাবতীর মাঞ্জস সমুদ্রের ঢেউর দ্বারা জলের মধ্যে যে ‘দিব্য পুরী’-তে গিয়ে পৌঁছোয় তাকেই ‘মনোহর দেশ’ বলা হয়েছে। মনোহর বলার কারণ: কবির বর্ণনানুসারে এই দিব্য পুরী অতি মনোহর। কেন-না সেখানে কোনো দুঃখকষ্ট নেই; আছে শুধু সত্যধর্ম এবং সদাচার। সেখানে আছে একটি পর্বত এবং নানা ফুলে ভরা অপূর্ব এক উদ্যান সেখানকার গাছগুলিতে নানা ফল ও ফুলের সমারোহ। একদিকে প্রকৃতির শোভা, অন্যদিকে সুস্থ জীবনাদর্শ দেশটিকে মনোহর করে তুলেছিল।
৩. “সিন্ধুতীরে দেখি দিব্যস্থান।”—সিন্ধুতীরে এই দিব্যস্থানে কে থাকেন? স্থানটিকে দিব্যস্থান বলা হয়েছে কেন?
উত্তর – দিব্যস্থানের বাসিন্দা: সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সিন্ধুতীরের দিব্যস্থানে থাকেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা।
দিব্যস্থান বলার কারণ: ‘দিব্যস্থান’ কথাটির অর্থ হল সুন্দর, মনোহর স্থান। সমুদ্রঘেরা এই স্থানটি খুব মনোহর। সেখানে দুঃখকষ্ট নেই। সত্য এবং সদাচার স্থানটিকে স্বর্গীয় মহিমা দান করেছে। সেখানে রয়েছে একটি পর্বত এবং সুরম্য এক উদ্যান। গাছগুলোতে বিচিত্র ফুল ও ফলের সমারোহ। তাই সবদিক থেকে সুন্দর হওয়ার কারণেই স্থানটিকে দিব্যস্থান বলা হয়েছে।
8. “তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ”— মন্তব্যটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। কন্যাটি কে? কোথায় সে সর্বক্ষণ থাকে? 
উত্তর – প্রসঙ্গ: মান্দাস ভাসতে ভাসতে পদ্মাবতীকে যেখানে নিয়ে গিয়ে ফেলে, তা ছিল অত্যন্ত মনোহর এক দেশ। সেখানে বহুমূল্য রত্নে সাজানো এক প্রাসাদে পদ্মা থাকতেন। সেই প্রসঙ্গেই উক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
কন্যার পরিচয়: কন্যাটি হলেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা।
পদ্মার বাসস্থান: আলোচ্য মনোহর দেশে যে রত্নসজ্জিত প্রাসাদ ছিল, সেই প্রাসাদেই পদ্মা সর্বক্ষণ থাকতেন।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “সিন্ধুতীরে দেখি দিব্যস্থান।”—এই দিব্যস্থানের পরিচয় দাও। এখানে যে উদ্যানটির কথা আছে তা উল্লেখ করো। 
উত্তর – দিব্যস্থানের পরিচিতি: সৈয়দ আলাওল অনূদিত পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাংশে যেখানে সমুদ্রের মধ্যে মান্দাসে করে পদ্মাবতী গিয়ে পৌঁছোন, সেখানেই ছিল এক দিব্য পুরী। কবির কথায় তা ছিল ‘মনোহর দেশ’। সেখানের মানুষের জীবনে কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না। সমাজে নৈতিক আদর্শ ছিল অত্যন্ত উঁচুতে–“সত্য ধর্ম সদা সদাচার।” অর্থাৎ মানুষজন ছিল ধার্মিক এবং সৎ আচার-আচরণে অভ্যস্ত।
উদ্যানের পরিচয়: সমুদ্রতীরে অবস্থিত দিব্যস্থানটি সমুদ্রকন্যা পদ্মকে আকৃষ্ট করেছিল। এর উপরিভাগে ছিল প্রচুর ফলফুলে পরিপূর্ণ এক পর্বত। তার পাশে সুরম্য এক উদ্যান রচনা করেছিলেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা। সেখানে নানা মনোহর ফুল ফুটে থাকত। তাদের সুগন্ধে চারপাশ ভরে থাকত। বিভিন্ন উপকারী বৃক্ষে নানা ফল ধরে থাকত। তারই মধ্যে ছিল এক অতি মনোরম প্রাসাদ—’বিচিত্র টঙ্গি’। সেই প্রাসাদ স্বর্ণনির্মিত এবং নানান রত্নে সেটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। সেই রত্নখচিত প্রাসাদে আলো পড়লে নানান রঙের বর্ণালি বিচ্ছুরিত হত। তাই কবিতায় প্রাসাদের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে‘হেম রত্নে নানা রঙ্গি’। অর্থাৎ, সোনা এবং মণিমাণিক্যের ছটায় চারদিক আলো করে বহু বর্ণে শোভা পাচ্ছিল এই অপূর্ব পুরী। এভাবেই মনোরম উদ্যানটি সম্পূর্ণতা পেয়েছিল।

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. “মনেতে কৌতুক বাসি…”—পদ্মার মনে কৌতূহল জাগার কারণ-
(ক) তিনি সমুদ্রতীরে কলরব শুনেছেন
(খ) তিনি সমুদ্রতীরে সমুদ্রতীরে হঠাৎ এক পর্বত লক্ষ করেছেন
(গ) তিনি উদ্যানে বহু পাখির সমাগম লক্ষ করেছেন
(ঘ) তিনি সমুদ্রতীরে মাঞ্জস লক্ষ করেছেন
২. “তুরিত গমনে আসি…” — ত্বরিত গমনে এসেছেন-
(ক) রত্নসেন
(খ) পদ্মাবতী
(গ) হীরামন
(ঘ) পদ্মা
৩. “রূপে অতি রম্ভা জিনি”—রম্ভা হলেন-
(ক) অপ্সরা
(খ) দেবী
(গ) দাসী
(ঘ) সখী
৪. “মধ্যেতে যে কন্যাখানি রূপে অতি রম্ভা জিনি…”—মাঝখানের কন্যাটি হলেন-
(ক) চন্দ্রপ্রভা
(খ) বিজয়া
(গ) পদ্মাবতী
(ঘ) পদ্মা
৫. “নিপতিতা চেতন রহিত…” —পদ্মাবতী চেতনা হারিয়েছেন-
(ক) সমুদ্রের ঝড়ঝঞ্ঝায়
(খ) স্বামীর জন্য দুশ্চিন্তায়
(গ) রাক্ষসের পীড়নে
(ঘ) পিতার শোকে
৬.”…..বিস্মিত হইল বালা” —পদ্মা বিস্মিত হয়েছে-
(ক) কীভাবে সেই কন্যা তার রাজ্যে ওই স্থানে এল সে-কথা ভেবে
(খ) চার সখীর সঙ্গে পদ্মাবতীকে চিনতে পেরে
(গ) পদ্মাবতীর রূপের ছটা দেখে
(ঘ) পদ্মাবতীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে
৭. “ইন্দ্রশাপে বিদ্যাধরি…” –‘বিদ্যাধরি’ হলেন-
(ক) স্বর্গের গায়িকা অপ্সরা
(খ) ইন্দ্রের স্ত্রী
(গ) কুবেরের স্ত্রী
(ঘ) দেবী সরস্বতী
৮. “বেকত দেখিয়ে আঁখি তেন সবসন সাক্ষী/বেথানিত হৈছে কেশ বেশ।” —বেথানিত’ শব্দের অর্থ-
(ক) ব্যক্ত
(খ) বিস্থানিত বা অসম্বৃত
(গ) সিক্ত
(ঘ) ছিন্ন
৯, “বুঝি সমুদ্রের নাও ভাঙ্গিল প্রবল বাও/মোহিত পাইয়া সিন্ধু-ক্লেশ।” -এ কথা মনে হয়েছে –
(ক). রত্নসেনের
(খ) পদ্মাবতীর
(গ) বিধুন্নলার
(ঘ) পদ্মার
১০. “চিত্রের পোতলি সমা নিপতিত মনোরমা…”—এখানে ‘চিত্রের পোতলি সমা’ হলেন-
(ক) পদ্মাবতী
(খ) পদ্মা
(গ) নাগমতী
(ঘ) বিজয়া

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “সিন্ধুতীরে রহিছে মাঞ্জস”-কে এই মাঞ্জস দেখেছিলেন?
উত্তর – সমুদ্রকন্যা পদ্মা এই মাঙস দেখেছিলেন।
২. “মধ্যেতে যে কন্যাখানি রূপে অতি রম্ভা জিনি”–রপ্তানিন্দিত রুপটি কার |
উত্তর – সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশে রপ্তানিন্দিত রূপটি হল চিতোররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী পদ্মাবতীর।
৩. “বিস্মিত হইল বালা”— বিস্মিত হওয়ার কারণ কী?
উত্তর – সমুদ্রতীরে অচেতন কন্যার সৌন্দর্য দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা বিস্মিত হয়েছিলেন।
৪. “অনুমান করে নিজ চিতে…”—পদ্মা কী অনুমান করলেন?
অথবা, “দেখিয়া রূপের কলা/বিস্মিত হইল বালা/অনুমান করে নিজ চিতে”।—‘বালা’ কী অনুমান করেছিল?
উত্তর – সমুদ্রের তীরে অপূর্ব সুন্দরী পদ্মাবতীকে দেখে সমুদ্ররাজকন্যা পদ্মা অনুমান করলেন ইন্দ্রের অভিশাপে স্বর্গের অপ্সরা বিদ্যাধরি স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে অচেতন অবস্থায় সেখানে পড়ে রয়েছেন।
৫. “বেথানিত হৈছে বেশ বেশ”–‘বেথানিত’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর – কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ শীর্ষক কাব্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশে ‘বেথানিত’ শব্দের অর্থ অসম্বৃত বা বিস্ফানিত, আলুথালু।
৬. ..ভাঙ্গিল প্রবল বাও”— প্রবল বাতাস কী ভেঙে দিয়েছে?
উত্তর – আলোচ্য অংশে প্রবল বাতাস পদ্মাবতীর মান্দাস ভেঙে দিয়েছে।
৭. পদ্মাবতী কীভাবে মূর্ছিত হয়ে পড়েছেন?
উত্তর – সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশে চিতোররাজ রত্নসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী পদ্মাবতী সমুদ্রে প্রবল বাতাসে মান্দাস ভেঙে পড়ায় ভয়ে, কষ্টে মূর্ছিত হয়ে পড়েছেন।
৮. “কিঞ্চিৎ আছয় মাত্র শ্বাস” – কার কথা বলা হয়েছে? 
উত্তর – সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।
৯, “বিধি মোরে না কর নৈরাশ।”-বক্তা কোন্ বিষয়ে নিরাশ হতে চান না?
উত্তর – সমুদ্রকষ্টে মূর্ছিতা পদ্মাবতীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বক্তা সমুদ্রের রাজকন্যা পদ্মা নিরাশ হতে চান না।
১০. “বাহুরক কন্যার জীবন”—বক্তা কীভাবে কন্যার প্রাণরক্ষার চেষ্টা
উত্তর – আলোচ্য অংশে বক্তা সমুদ্রকন্যা পদ্মা তাঁর সখীদের নিয়ে আগুন জ্বেলে পদ্মাবতীর শরীরে সেঁক দিয়ে, মন্ত্রতন্ত্র মহৌষধ দিয়ে চার দণ্ড ধরে সেবাযত্ন করে তাঁর প্রাণরক্ষার চেষ্টা করেছেন।
১১. “কৃপা কর…”—পদ্মাবতীর প্রাণরক্ষায় পদ্মা কার কৃপা প্রার্থনা করেছেন?
উত্তর – কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে পদ্মাবতীর প্রাণরক্ষার জন্য পদ্মা নিরঞ্জনের কৃপা প্রার্থনা করেছেন।
১২, “সখী সবে আজ্ঞা দিল”—বক্তা তার সখীদের কী আজ্ঞা দিয়েছিলেন?
অথবা, “সখী সবে আজ্ঞা দিল…” – তাঁর সঙ্গীদের কী আজ্ঞা দিয়েছিলেন? 
উত্তর – কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মা তাঁর সখীদের পদ্মাবতীকে বস্ত্রে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ও শুশ্রুষার আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “মনেতে কৌতুক বাসি”— কার মনে, কেন কৌতুকের উদয় হয়েছিল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মার মনে কৌতুকের উদয় হয়েছিল।
কৌতুকের উদয় হওয়ার কারণ: সমুদ্রকন্যা পদ্মা পিতৃগৃহে রাত কাটিয়ে সকালে সখীদের সঙ্গে নিয়ে সুরম্য উদ্যানে এসেছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে সমুদ্রতীরে একটি ভেলা পড়ে রয়েছে। সেই ভেলার চারদিকে চার সখীসহ অপূর্ব সুন্দরী এক কন্যা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। নির্জন সমুদ্রতীরে এমন দৃশ্য দেখে পদ্মার মনে কৌতূহলের উদয় হয়েছিল।
২. “রূপে অতি রম্ভা জিনি/নিপতিতা চেতন রহিত।”—কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: উল্লিখিত অংশে সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।
ব্যাখ্যা: সকালবেলা সমুদ্রকন্যা পদ্মা তাঁর সখীদের নিয়ে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। এইসময়ে সমুদ্রের ধারে একটি ভেলা পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী হয়ে তিনি দ্রুত সেখানে আসেন। সেখানে পৌঁছে পদ্মা দেখেন, চারদিকে চার জন সখী পড়ে আছেন, আর মধ্যখানে এক অপরুপা কন্যা অচেতন হয়ে আছেন। তাঁর রূপের সৌন্দর্য এতটাই ছিল যে, তা স্বর্গের বিখ্যাত অপ্সরা রম্ভার সৌন্দর্যকেও পরাজিত করে।
৩. “বিস্মিত হইল বালা।”—বালা কে? তাঁর বিস্ময়ের কারণ কী? 
উত্তর – বালার পরিচয়। উল্লিখিত অংশে ‘বালা’ বলতে সমুদ্রকন্যা পদ্মার কথা বলা হয়েছে।
বিস্ময়ের কারণ: পদ্মা তাঁর সখীদের সঙ্গে নিয়ে সিন্ধুতীরে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। সেইসময় সমুদ্রের ধারে একটি ভেলা পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী পদ্মা সেখানে যান এবং দেখেন যে, চারদিকে চার সখী-সহ এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ওই মেয়েটির সৌন্দর্য স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করে; তা দেখেই পদ্মা বিস্মিত হয়েছিলেন।
৪. “অনুমান করে নিজ চিতে।”—কার, কোন্ অনুমানের কথা বলা হয়েছে আলোচনা করো।
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: উল্লিখিত অংশে সমুদ্রকন্যা পদ্মার অনুমানের কথা বলা হয়েছে।
অনুমানের বিষয়: সখীদের সঙ্গে সকালবেলা উদ্যানে যাবার সময় সমুদ্রকন্যা পদ্মা দেখেন সমুদ্রতীরে একটি মান্দাস পড়ে রয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি সখীদের মধ্যে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখতে পান। তার বিস্তারে বিস্মিতা পদ্মা নানারকম অনুমান করতে থাকেন। তখন তাঁর মনে হয় যে, এ কোনো সাধারণ মানবী নয়, স্বর্গের নর্তকী বিদ্যাধরী যেন স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছেন।
৫. “ইন্দ্রশাপে বিদ্যাধরি”— কে কাকে ‘বিদ্যাধরি’ বলে অনুমান করেন? কেন এই অনুমান?
উত্তর – ‘বিদ্যাধরি’ অনুমান: সমুদ্রকন্যা পদ্মা সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে তাঁকে ‘বিদ্যাধরি’ বলে অনুমান করেছেন।
অনুমানের কারণ: পিতৃপুরে রাত কাটিয়ে পদ্মা তাঁর সখীদের নিয়ে নিজের সুরম্য উদ্যানের দিকে আসছিলেন। সেই সময়ে সমুদ্রতীরে চার সখীর মধ্যে অচেতন অবস্থায় এক কন্যাকে তিনি দেখতে পান, যিনি আসলে সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতী। তাঁর রূপের সৌন্দর্য যেন স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকেও পরাজিত করে। এই সৌন্দর্যের কারণেই পদ্মার মনে হয়েছিল স্বর্গের গায়িকা বিদ্যাধরি যেন স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে পৃথিবীতে এসে পড়েছেন।
৬. “অচৈতন্য পড়িছে ভূমিতে।”— কে অচৈতন্য হয়ে ভূমিতে পড়েছিলেন। তাঁর অচৈতন্য হওয়ার কারণ কী?
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: সিংহল রাজকন্যা এবং চিতোরের রানা রত্নসেনের পত্নী পদ্মাবতী অচৈতন্য হয়ে সমুদ্রতীরে পড়েছিলেন।
অচৈতন্য হওয়ার কারণ: রানা রত্নসেনের সঙ্গে পদ্মাবতী সমুদ্রপথে চিতোরে ফিরে যাচ্ছিলেন। সমুদ্রের ক্রোধের কারণে তাঁদের জলযান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। কোনো রকমে একটি ভেলায় রত্নসেন এবং চার সখী-সহ পদ্মাবতী আশ্রয় নেন। কিন্তু সেই ভেলাও দু-খণ্ড হয়ে যায় এবং পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সামুদ্রিক ঝঞ্ঝার তাণ্ডবে এবং প্রাণহানির ভয়ে পদ্মাবতী জ্ঞান হারান।
৭. “বেথানিত হৈছে কেশ বেশ।”— কার, কেন এরকম অবস্থা হয়েছিল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে এরকম অবস্থা হয়েছিল পদ্মাবতীর।
বিপর্যস্ত অবস্থার কারণ: সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতী স্বামী রত্নসেনের সঙ্গে চিতোরে ফিরছিলেন। সমুদ্রপথে তাঁদের জলযান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। একটি কলার ভেলায় রত্নসেন, পদ্মাবতী ও চারজন সখী আশ্রয় নিলেও সেটি দু-খণ্ড হয়ে যায়। এর ফলে পদ্মাবতী সখী-সহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে রাজকন্যার চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে এবং সাজসজ্জা নষ্ট হয়।
৮. “মোহিত পাইয়া সিন্ধু-ক্লেশ।”—কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: উল্লিখিত অংশে সিংহল- রাজকন্যা পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।
বিশ্লেষণ: সখীদের সঙ্গে উদ্যানে যাওয়ার সময় পদ্মা অচেতন পদ্মাবতীকে দেখেন। অপরিচিতা সুন্দরী কন্যাকে দেখে তাঁর মনে নানারকম ভাবনা জাগে। বিধ্বস্ত সেই কন্যার চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, তার বেশভূষাই বিপর্যয়ের প্রমাণ দেয়। তার চুল এবং পোশাক এলোমেলো। সমুদ্রকন্যা পদ্মা ভেবে নেন যে, প্রবল বাতাস হয়তো নৌকা ভেঙে দিয়েছে। সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে প্রবল কষ্টেই হয়তো মেয়েটি অচৈতন্য হয়ে আছে।
৯. “চিত্রের পোতলি সমা/নিপতিত মনোরমা”— ‘মনোরমা’ কে? তিনি কোথায়, কেন নিপতিতা ছিলেন? 
উত্তর – ‘মনোরমা’-র পরিচয়: সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীকে ‘মনোরমা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
নিপতিতা হওয়ার স্থান ও কারণ: রানা রত্নসেনের সঙ্গে বিয়ের পর পদ্মাবতী সমুদ্রপথে চিতোরে আসছিলেন। কিন্তু প্রবল ঝড়ে তাঁদের জাহাজ ডুবে যায়। কলার মান্দাসে আশ্রয় নিলেও শেষরক্ষা হয়নি। পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এরপর বিধ্বস্ত রাজকন্যা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সমুদ্রের তীরে অচৈতন্য অবস্থায় চার জন সখীপরিবেষ্টিত হয়ে পড়ে থাকেন তিনি।
১০. “চিত্রের পোতলি সমা”—‘পোতলি’ শব্দের অর্থ কী? কাকে চিত্রের পোতলির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং কেন? 
উত্তর – ‘পোতলি’ শব্দের অর্থ: ‘পোতলি’ শব্দের অর্থ ‘পুতুল’।
চিত্রের পোতলির সঙ্গে তুলনার কারণ: সমুদ্রতীরে অচেতন পদ্মাবতীকে পুতুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তার অপরূপ সৌন্দর্য সমুদ্রকন্যা পদ্মাকে মুগ্ধ করেছিল। কখনও মনে হয়েছিল যে সেই সৌন্দর্য রম্ভাকেও পরাজিত করতে পারে। কখনও মনে হয়েছে ইন্দ্রের অভিশাপগ্রস্ত বিদ্যাধরি পৃথিবীতে এসে পড়েছেন। এই সৌন্দর্যের কারণেই তাঁকে ছবির পুতুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
১১. “বিধি মোরে না কর নৈরাশ” –কার প্রার্থনা? এমন প্রার্থনার কারণ কী? 
উত্তর – প্রার্থনাকারী: উল্লিখিত প্রার্থনাটি করেছেন সমুদ্রকন্যা পদ্মা। • প্রার্থনার কারণ: সমুদ্রের তীরে অচৈতন্য পদ্মাবতীকে মান্দাসের উপরে দেখে পদ্মা সেই অপরূপ নারীর জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে, ভয়াবহ কোনো সামুদ্রিক বিপর্যয়ের জন্যই ওই নারীর এই অবস্থা। ছবির প্রতিমার মতো সুন্দরী সেই নারীর শ্বাস সামান্য পড়ছে। পদ্মা সেই নারীর প্রতি স্নেহার্দ্র হয়ে পড়েন। প্রার্থনা করতে থাকেন, বিধাতা যেন তাঁকে নিরাশ না করেন অর্থাৎ সেই কন্যাকে বাঁচিয়ে রাখেন।
১২. “বাহুরক কন্যার জীবন”—এখানে বক্তা কোন কন্যার জীবনের কথা বলেছেন? উল্লিখিত কন্যাকে বক্তা কোথায়, কী অবস্থায় প্রথম দেখেছিলেন? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট কন্যা: সমুদ্রকন্যা পদ্মা এখানে সিংহলের রাজকন্যা এবং চিতোরের রাজবধূ পদ্মাবতীর জীবনের কথা বলেছেন।
উদ্দিষ্ট কন্যাকে প্রথম দেখা: পদ্মা পদ্মাবতীকে প্রথমে সমুদ্রতীরে চার সখী-সহ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখন পদ্মাবতী মরণাপন্ন, তাঁর পোশাক ও চুল এলোমেলো অবস্থায় ছিল। তাঁকে দেখে পদ্মার মনে হয়েছিল কোনো অপরূপ স্বর্গকন্যা শাপভ্রষ্টা হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। তখনও তাঁর শ্বাসবায়ু অল্প অল্প প্রবাহিত হচ্ছে দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা রাজকন্যাকে বাঁচানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন।
১৩. “বাহুরক কন্যার জীবন”—এ আকাঙ্ক্ষা কার? তিনি কীভাবে কন্যার জীবন রক্ষা করলেন?
উত্তর – যার আকাঙ্ক্ষা: সমুদ্রকন্যা পদ্মা এই আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন।
কন্যার জীবন রক্ষা: সমুদ্রকন্যা পদ্মা ঈশ্বরের কাছে অচেতন পদ্মাবতীর জীবন ফিরে আসার প্রার্থনা করেন এবং চিকিৎসায় উদ্যোগী হন। সখীদের আদেশ দিয়ে পদ্মাবতী এবং তাঁর চার সখীকে বসনাবৃত করে উদ্যানের মধ্যে নিয়ে যান। তারপরে আগুনের সেঁক দিয়ে, তন্ত্র-মন্ত্র মহৌষধের সাহায্যে চারদণ্ড সেবাযত্ন করে চার সখী-সহ পদ্মাবতীর চেতনা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল এবং তাঁদের জীবন রক্ষা হল।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা/অনুমান করে নিজ চিতে।”—কে, কাকে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন? সেই কন্যা সেখানে কীভাবে এসেছিল? তাঁকে দেখে কী মনে হয়েছিল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তিদ্বয় : সৈয়দ আলাওল অনূদিত পদ্মাবতীকাব্যের ‘পদ্মাসমুদ্রখণ্ড’ থেকে নেওয়া সিন্ধুতীরে’ কবিতায় সমুদ্রকন্যা পদ্মা অচেতন সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতীর রূপ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন।
কন্যার আগমন: ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ ধারণ করে রত্নসেনের কাছে দান ভিক্ষা করে প্রত্যাখ্যাত হয় সমুদ্র। তখন সমুদ্রের অভিশাপে রত্নসেনের নৌকা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে একটি মান্দাসে রত্নসেন ও সখীসহ পদ্মাবতী আশ্রয় নিলেও সেটিকে রক্ষা করা যায়নি। মান্দাস দু-টুকরো হয়ে পদ্মাবতী রত্নসেন থেকে আলাদা হয়ে পড়েন। প্রবল ঢেউ পদ্মাবতীদের মান্দাসটিকে তীরে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছোনোর আগেই ভয়ে সখী-সহ পদ্মাবতী চেতনা হারান। যেখানে তাঁরা পৌঁছোন তা ছিল এক মনোরম পুরী।
কন্যাকে দেখে প্রতিক্রিয়া: পদ্মাবতীকে দেখে পদ্মার মনে হয়েছিল যে, ইন্দ্রের অভিশাপে স্বর্গের নর্তকী বিদ্যাধরী যেন স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে মাটিতে অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছেন। পদ্মাবতীর ঠিকরে বেরিয়ে আসা চোখ এবং আলুথালু বেশ দেখে পদ্মা এ-ও অনুমান করেন যে, ওই কন্যার ওপর দিয়ে প্রবল ঝড় বয়ে গেছে। এলোমেলো চুল এবং বেশ-বাসের এই অবস্থা দেখে পদ্মার মনে হয় যে, হয়তো সমুদ্রযাত্রার পথে দুরন্ত ঝড়ে বাতাসে নৌকা ভেঙে তাঁরা এই বিপদে পড়েছিলেন। সমুদ্রের কষ্টেই তাঁর এই অজ্ঞান অবস্থা।
২. “অচৈতন্য পড়িছে ভূমিতে।”—কার কথা বলা হয়েছে? তাকে দেখে কার, কী মনে হয়েছিল? তিনি এই অবস্থায় কোন্ ভূমিকা নিয়েছিলেন? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: সৈয়দ আলাওল অনূদিত পদ্মাবতী কাব্যের ‘পদ্মাসমুদ্রখণ্ড’ থেকে সংকলিত ‘সিন্ধুতীরে’ নামক কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মনোভাব: পদ্মাবতীর বিস্ফারিত চোখ, এলোমেলো পোশাক এবং চুল দেখে সমুদ্রকন্যা পদ্মা অনুমান করেন যে, সমুদ্রের প্রবল বাতাসে নৌকা ভেঙেই বোধহয় মেয়েটির এই কষ্ট। শুধু তা-ই নয়, গভীর সহানুভূতি দিয়ে পদ্মা দেখেন যে মেয়েটির শ্বাস তখনও অল্প অল্প পড়ছে। স্নেহশীল পদ্মা বিধাতার কাছে মেয়েটির জীবন প্রার্থনা করেন। তিনি প্রত্যাশা করেন তাঁর পিতার পুণ্যের ফলে এবং তাঁর নিজের ভাগ্যের কারণে যেন মেয়েটির জীবন ফিরে আসে।
পদ্মার ভূমিকা: পদ্মাবতীর প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় পদ্মা শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেই থেমে থাকেননি, তাঁর চিকিৎসারও যথাসাধ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। সখীগণ-সহ পদ্মাবতীকে বস্তু দিয়ে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি তাঁর সখীদের নির্দেশ দেন। সেখানে তন্ত্রাচারের মাধ্যমে, বিধিমতো মন্ত্রপাঠ করে নানা মহাগুণসম্পন্ন ঔষধের দ্বারা তাঁদের চিকিৎসা করা হয়। আগুন জ্বালিয়ে পায়ে মাথায় সেঁক দেওয়া হয়। চার দণ্ড এরকম যত্নের সঙ্গে শুশ্রুষা হওয়ার পরে চার সখী-সহ পদ্মাবতী চেতনা ফিরে পান।
৬. “পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।”— পঞ্চকন্যা কে কে? তাদের অচৈতন্যের কারণ কী? কীভাবে তারা চেতনা ফিরে পেয়েছিল?
উত্তর – পঞ্চকন্যার পরিচয়: সৈয়দ আলাওল রচিত পদ্মাবতী কাব্যের অংশবিশেষ ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্য কাহিনিতে বর্ণিত পঞ্জকন্যার মধ্যমণি হলেন সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতী। আর তাঁর চার জন সখী হল চন্দ্রকলা, বিজয়া, রোহিণী ও বিধুন্নলা।
অচৈতন্য হওয়ার কারণ: স্বামী রত্নসেনের সঙ্গে রাজকন্যা পদ্মাবতী সমুদ্রপথে চিতোরে ফেরার সময় হঠাৎ তাঁদের জলযানটি সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে এবং ডুবে যায়। রত্নসেন এবং সখী-সহ রাজকন্যা কোনোরকমে একটি মান্দাসে আশ্রয় নেন। শেষপর্যন্ত মান্দাস দ্বিখণ্ডিত হয়ে চার সখী-সহ রাজকন্যা রত্নসেনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। খণ্ডিত ভেলায় ভাসতে ভাসতে তাঁরা সমুদ্রতীরের ভূমিতে পৌঁছোন। কিন্তু প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে অসম লড়াই, দৈহিক ক্লেশ ইত্যাদির প্রভাবে রাজকন্যা ও তাঁর সখীরা জ্ঞান হারান।
চেতনা ফিরে পাওয়া: পঞ্চকন্যার এই অবস্থায় দেবতা সমুদ্রকন্যা পদ্মা নিরঞ্জনকে স্মরণ করেন এবং তাঁর সখীদের চিকিৎসাকর্মে ব্রতী হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রাণপণ সেবাশুশ্রুষা করে পঞ্চকন্যার জীবনরক্ষাই ছিল তাঁর মনের ইচ্ছা। সেইমতো শুকনো কাপড় দিয়ে সখী-সহ রাজকন্যার শরীর আবৃত করা হয়। আগুন জ্বেলে সর্বাঙ্গ সেঁক দেওয়া হয় এবং তন্ত্রমন্ত্র সহকারে মহৌষধ প্রয়োগ করা হয়। একটানা চার দণ্ড সেবাশুশ্রুষার পর পঞ্চকন্যা চেতনা ফিরে পান। দয়ালু পদ্মার আন্তরিক সেবাযত্নে সখী-সহ পদ্মাবতীর জ্ঞান ফিরে আসে।

সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

১. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটিতে কবির রচনারীতির যে বিশেষত্ব দেখতে পাওয়া যায় লেখো।
উত্তর – রচনারীতির বিশেষত্ব: ‘সিন্ধুতীরে’-এর সংক্ষিপ্ত পরিসরেও অচৈতন্য অপরিচিতা রাজকুমারী পদ্মাবতীর প্রতি সমুদ্রকন্যা পদ্মার যে সহানুভূতি ও ভালোবাসা তা মানবিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন। ত্রিপদী ছন্দের প্রয়োগে বিশেষত্ব: ধীর লয়ের ত্রিপদী ছন্দে এই আবেগকে প্রকাশ করেছেন কবি। আবার শেষে ভণিতায় পাঁচালির রীতিও ব্যবহার করেছেন—
“শ্ৰীযুত মাগন গুণী               মোহন্ত আরতি শুনি
হীন আলাওল সুরচন।।”
শব্দ প্রয়োগের: আরবি-ফারসি ভাষায় সুপণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও আলাওলের কাব্যে আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগ কম। পরিবর্তে তৎসম শব্দের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা যায়—‘সদাচার’, ‘সুতা’, ‘পুষ্প,’ ‘মনোহর’, ‘স্বর্গভ্রষ্টা’, ‘কেশ’ইত্যাদি। কাব্যিক শব্দ প্রয়োগ: কাব্যিক শব্দের ব্যবহারেও আলাওল দক্ষতা দেখিয়েছেন। যেমন—‘মাঝারে’, ‘চিতে’, ‘তুরিত’ ইত্যাদি। আলাওল আখ্যানকাব্য রচনা করেছিলেন, ফলে তাঁর ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটি পড়লে গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করা যায়। সাবলীল লেখনী: পরপর প্রতিটি দৃশ্যকেই তিনি ছবির মতো সাজিয়ে তুলেছেন। সেই দৃশ্যগুলিকে অত্যন্ত সুমধুর ও সুপাঠ্য করে তুলেছে তাঁর দক্ষ সাবলীল লেখনী। ঘটনার পরম্পরাটিকেও তিনি সাজিয়েছেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে। নাটকীয়তা: যেভাবে ঘটনা তৈরি করা হয়েছে তা কাব্যাংশটিকে নাটকীয়তা দিয়েছে। শেষে কবি আলাওল লিখেছেন—“হীন আলাওল সুরচন।” অনস্বীকার্য যে, ‘সিন্ধুতীরে’ আলাওলের একটি সুরচনা।
২. ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় পদ্মার চরিত্রটি যেভাবে পাওয়া যায় আলোচনা করো।
অথবা, ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা অবলম্বনে সমুদ্রকন্যার আচারআচরণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – কথামুখ: সৈয়দ আলাওলের অনূদিত পদ্মাবতী কাব্যের ‘পদ্মাসমুদ্রখণ্ড’ থেকে সংকলিত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় পদ্মাই সবথেকে সক্রিয় চরিত্র। সে সমুদ্রকন্যা। কাহিনিতে তাঁর কিছু বিশেষত্ব লক্ষ করা যায়। সৌন্দর্যপ্রিয়: পদ্মার মধ্যে ছিল সৌন্দর্যপ্রিয়তা। তাই যে উদ্যান তিনি তৈরি করেছেন সেখানে নানা মনোহর ফুল সুগন্ধ বিস্তার করেছে, গাছে নানা ফল ধরেছে। তাঁর প্রাসাদটিও ছিল সোনায় মোড়া। তার ওপরে নানান রত্নের সজ্জা সেই প্রাসাদের সৌন্দর্যও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রাণচঞ্চল: পদ্মা ছিলেন প্রাণচঞ্চল। তাই রাত্রি শেষ হতেই দেখা যায় সকালবেলা সখীদের সঙ্গে হাসিখেলায় মেতে উঠে তিনি তাঁর প্রিয় উদ্যানের দিকে চলেছেন। সখীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল অত্যন্ত মধুর। মানবিক: পদ্মা চরিত্রটি বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁর মানবিকতায়। অপরিচিতা পদ্মাবতীকে সমুদ্রতীরের মান্দাসে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁর উৎকণ্ঠা, ঈশ্বরের কাছে তাঁর কাতর প্রার্থনা যেন আত্মীয়ের সঙ্গে আত্মীয়তার সেতু তৈরি করেছে। তাঁরই নির্দেশে পদ্মার সখীরা তন্ত্র-মন্ত্র-মহৌষধি সহযোগে আগুনের সেঁক দিয়ে পদ্মাবতীর চেতনা ফিরিয়েছে। মধ্যযুগের কবিতায় আলাওলের সৃষ্ট এই চরিত্রটিতে মানবিকতা এক অসামান্য বিশেষত্ব। এভাবেই সমুদ্রকন্যা পদ্মা হয়ে উঠেছেন অনন্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *