WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 13 অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 13 অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 13 অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
West Bengal Board 10th Bengali Solutions
কবি পরিচিতি
ভূমিকা: আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম সেরা কবি হলেন জয় গোস্বামী। তাঁর কবিতাগুলি ভাষা, শব্দ ও ছন্দের অপূর্ব কাজে অনন্য হয়ে উঠেছে।
জন্ম এবং শৈশব: ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর কলকাতায় জয় গোস্বামীর জন্ম। পাঁচ বছর বয়সে তাঁরা সপরিবারে রানাঘাটে চলে যান। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। জয় গোস্বামীর মা ছিলেন শিক্ষিকা।
সাহিত্যকীর্তি: জয় গোস্বামীর প্রথম কবিতা লেখা তেরো বছর বয়সে বাড়ির পুরোনো সিলিং পাখা নিয়ে। উনিশ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশ পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতাসংকলন ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ। এরপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে প্রত্নজীব (১৯৭৮), আলেয়াহ্রদ (১৯৮১), উন্মাদের পাঠক্রম (১৯৮৬), ভুতুমভগবান (১৯৮৮), ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা? (১৯৮৯), আজ যদি আমাকে জিগেস করো (১৯৯১), গোল্লা (১৯৯১), পাগলী, তোমার সঙ্গে (১৯৯৪), বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা (১৯৯৫), পাখি, হুস (১৯৯৫), ওঃ স্বপ্ন (১৯৯৬) ইত্যাদি কবিতার বই। ১৯৯০-তে ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা? কাব্যগ্রন্থের জন্য এবং ১৯৯৮-তে যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল কাব্যোপন্যাসের জন্য কবি দু-বার ‘আনন্দ পুরস্কার’ পেয়েছেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে জয় গোস্বামী তাঁর বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পান। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে পাগলী, তোমার সঙ্গে কাব্যগ্রন্থের জন্য পান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। এ ছাড়াও তিনি বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
লিখনশৈলী: বাস্তব জীবনের নানা ঘটনা, আর তার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় আমাদের জীবন। কবি জয় গোস্বামী এই বাস্তব জীবন থেকেই সংগ্রহ করে নেন তাঁর কবিতার উপকরণ। তাই কখনও লালগোলা-বনগাঁর ট্রেনে চালতোলা মাসিপিসি, কখনও বিয়ে না হওয়া সেলাই দিদিমণি তাঁর কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে। আবার প্রেম ও নিঃসঙ্গতা তাঁর কবিতায় বারে বারে ফিরে আসে। জয় গোস্বামীর কবিতা উচ্চকণ্ঠের প্রকাশ নয়। তীব্রতার সঙ্গে কোমলতা মিশিয়ে নিজস্ব কাব্যভাষা তৈরি করেছেন কবি। তাঁর কবিতায় ছন্দের বৈচিত্র্য আছে, প্রতীকের ব্যবহার আছে। তাই তিনি বলতে পারেন— “কলম একমাত্র সত্য। বায়ু অগ্নি জল/প্রবাহিত তার মধ্যে। জগৎ নিশ্চল” (কলম, লেখনক্রিয়া)।
সারসংক্ষেপ
গানের শক্তিতে শক্তিশালী কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই গানকে সঙ্গে নিয়েই যে-কোনো প্রতিবাদের মিছিলে তিনি হাজার মানুষের সঙ্গে হেঁটেছেন, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি খুঁজে পেয়েছেন। গানকে বর্মের মতো ব্যবহার করে তিনি বুলেটকেও আটকাতে পেরেছেন। অর্থাৎ গানের মধ্যেই কবি খুঁজে পেয়েছেন সেই আশ্চর্য শক্তি, যার মাধ্যমে যুদ্ধ থেমে যায়, সৃষ্টি হয় শান্তির বাতাবরণ। মাথার কাছে শকুন বা চিল উড়ে চললেও কবি তাঁর ভেতরে থাকা কোকিলের ওপরেই অর্থাৎ গানের ক্ষমতার উপরেই ভরসা রেখেছেন। বর্ম খুলে ফেললে যখন যুদ্ধ-যুদ্ধ মানসিকতা সরে যায়, তখন এই গানকেই তাঁর মনে হয় ঋষিবালকের মতো শান্ত, সমাহিত। গানদরিয়ায় ভেসেই কবি পৌঁছে যান লোকজীবনের ভেতরে। গান মানুষকে নিয়ে যায় নদীতে কিংবা গ্রামে। গানের হাত ধরেই কবি সর্বত্র মানুষের কাছে পৌঁছে যান। গানের বিপুল ক্ষমতাকে উপলব্ধি করে কবি যুদ্ধবাজদের বলেন গানের কাছে যাবতীয় অস্ত্র সমর্পন করতে।
নামকরণ
সাহিত্যে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই নামকরণ নানান দিক থেকে হতে পারে, কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, কখনও প্রতীকী বা চরিত্রধর্মী, কখনও বা তা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমাদের বিচার্য বিষয় জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক তা দেখা।
‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার শিরোনামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কেননা, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র’ এই স্বাভাবিক স্লোগানকে কবি বদলে দিয়ে এক বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছেন। কবিতার বিষয়বস্তু অবশ্যই যুদ্ধবিরোধী কিন্তু এই বিরোধিতার কৌশল আলাদা। কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন, “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে।” অস্ত্র ফেলার মধ্য দিয়ে আর পাঁচ জন শান্তিকামী মানুষের মতোই কবি শান্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। পায়ের কাছে অস্ত্র রাখার আহ্বান যুদ্ধবাজদের আত্মসমর্পণের দিকটিকেই বড়ো করে তোলে। গানকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে কবি সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গাইতে গাইতেই কবি হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। অর্থাৎ গানের শান্তি দিয়ে তিনি অনায়াসে যুদ্ধ আর ধ্বংসকে রুখে দিতে পারেন। সমাজে যখন লোভী চিলশকুন রূপ যুদ্ধবাজদের আনাগোনা, কবির সম্বল তখন শুধু একটা কোকিল যা আসলে মানুষের সৃজনশীল সত্তা। এই কোকিলই কবিকে হাজার উপায়ে গান বেঁধে দেবে। গানই ঋষিবালকের মতো পবিত্রতার প্রতীক হয়ে কবিকে তথা সমাজকে মনুষ্যত্বের পথ দেখাবে। তাই হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা বা অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়—যাবতীয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গানকে বর্ম করে কবি সত্যে ও শান্তিতে পৌঁছোতে চান। এই মূলভাবকে সামনে রেখে দেওয়া কবিতাটির নাম গভীর ব্যঞ্জনার ইঙ্গিত দেয়। তাই কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণরূপে সংগত এবং যথাযথ।
আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত, সেটি হল-
(ক) ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা?
(খ) প্রত্নজীব
(গ) ভুতুম ভগবান
(ঘ) পাতার পোশাক
২. পাতার পোশাক কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়-
(ক) ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ২০০০ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে
৩. পাতার পোশাক কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেন-
(ক) শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে
(খ) সব মৃত বন্ধুকে
(গ) অনুপ আর মঞ্জুকে
(ঘ) সাগরময় ঘোষকে
৪. পাতার পোশাক কাব্যগ্রন্থের-
(ক) দুটি অংশ
(খ) তিনটি অংশ
(গ) চারটি অংশ
(ঘ) পাঁচটি অংশ
৫. কোন্টি জয় গোস্বামীর লেখা কাব্যগ্রন্থ?-
(ক) বাবরের প্রার্থনা
(খ) অগ্নিবীণা
(গ) রূপসী বাংলা
(ঘ) পাতার পোশাক
৬. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি পাতার পোশাক কাব্যগ্রন্থের যে অংশে রয়েছে, সেটি হল-
(ক) পাতার পোশাক
(খ) সেতু, শ্রম, অভিজ্ঞতা
(গ) কবিকাহিনী
(ঘ) সেতু, অভিজ্ঞতা, শ্রম
৭. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় অস্ত্র রেখে দিতে বলা হয়েছে-
(ক) বনে-বাদাড়ে
(খ) কবির কাছে
(গ) গানের পাযে
(ঘ) দেশগাঁয়ে
৮. “আমি এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি,”—এখানে ‘আমি’ হল-
(ক) কবি
(খ) গান
(গ) দেশবাসী
(ঘ) সৈন্য
৯. “গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে”—গানকে ‘বর্ম’ বলা হয়েছে, কারণ-
(ক) কবি একটা-দুটো গান জানেন
(খ) গান গাইলে মন খারাপ হয় না
(গ) গান গাইলে অন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস জাগে
(ঘ) গান গাইলে কোনো চিন্তা থাকে না
১০. “আঁকড়ে ধরে সে-খড়কুটো”—উদ্ধৃতাংশে ‘খড়কুটো’ হল-
(ক) গান
(খ) অস্ত্র
(গ) বাড়িঘর
(ঘ) পোশাক-পরিচ্ছদ
১১. কবি গানের গায়ে কী মোছেন?-
(ক) অশ্রু
(খ) ঘাম
(গ) রক্ত
(ঘ) কান্না
১২. “রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে”—উদ্ধৃতাংশে গানের গায়ে রক্ত মোছার অর্থ-
(ক) কবি গান গেয়ে রক্তপাত ঘটাতে চান
(খ) অকারণ রক্তপাতে কবি গান বন্ধ করে দিতে চান
(গ) রক্তপাতের কথা ভেবে কবি সেই শোককে গানে পরিণত করতে চান
(ঘ) কবি মনে করেন গান রক্তপাত বন্ধ করতে পারে না
১৩. “মাথায় কত শকুন বা চিল”—মাথায় শকুন বা চিল ওড়ার অর্থ—
(ক) চারিদিকে পাখিদের ভিড়
(খ) সমাজটা যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে
(গ) তারা কোকিলকে আক্রমণ করতে চায়
(ঘ কবি শিকারি পাখিদের পোষ মানিয়েছেন
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো”—কোথায় অস্ত্র ফেলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – কবি জয় গোস্বামী ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গানের পায়ে অস্ত্র ফেলার অর্থাৎ আত্মসমর্পণ করার কথা বলেছেন।
২. ‘অস্ত্র রাখো’ বলার অর্থ কী?
উত্তর – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় ‘অস্ত্র রাখো’ কথাটি বলার মাধ্যমে কবি অস্ত্র সমর্পণের কথা বলেছেন।
৩. কবি অস্ত্রকে কোথায় সমর্পণ করতে বলেছেন?
উত্তর – কবি জয় গোস্বামী গানের পায়ের কাছে অস্ত্রকে সমর্পণ করতে বলেছেন।
৪. কবি পানকে কীভাবে ব্যবহার করেন?
উত্তর – কবি সমস্ত অশান্তি ও অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে গানকে বর্মের মতো শরীরে পরে থাকেন।
৫. হাজার হাতে পায়ে কবি কী করেন?
উত্তর – হাজার হাতে পায়ে অর্থাৎ হাজার হাজার মানুষের সাথে দলবদ্ধ হয়ে কবি এগিয়ে আসেন, উঠে দাঁড়ান, লড়েন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।
৬. গানের বর্ম পরিধান করে কবি কোন্ কাজ করতে সক্ষম?
অথবা, “গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে”—গানের বর্ম পরিধান করে কবি কোন্ কাজ করতে পারেন?
উত্তর – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন যে, গানের বর্ম পরে তিনি হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন।
৭. “আঁকড়ে ধরে সে-খড়কুটো”—কবি ‘খড়কুটো’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর – কবি ‘খড়কুটো’ বলতে তাঁর জানা একটা-দুটো গানের কথা বলেছেন।
৮. “মাথায় কত শকুন বা চিল”—শকুন এবং চিলেরা কীসের প্রতীক?
উত্তর – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় উল্লেখিত শকুন এবং চিলেরা যুদ্ধবাজদের হিংস্রতা এবং নৃশংসতার প্রতীক।
৯. “আমার শুধু একটা কোকিল”—কোকিল কীসের প্রতীক?
উত্তর – জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কোকিল মানুষের অন্তর্গত সৃজনশীলতার প্রতীক।
১০. গানের গায়ে কবি কী করেন?
উত্তর – গানের গায়ে করি রক্ত ও যাবতীয় হিংস্রতা মোছেন।
১১. “আমার শুধু একটা কোকিল”—কোকিলটি কী করে?
উত্তর – বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে চারপাশের নৃশংসতা ও হিংস্রতার মধ্যে কোকিলটি হাজার উপায়ে গান বাঁধে; শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
১২. “রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে”—কথাটির অর্থ কী?
উত্তর – জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি মনে করেন হিংসা, রক্তাক্ততা থেকে মুক্ত করতে পারে গান বা শিল্পসৃষ্টি।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “আমি এখন হাজার হাতে পায়ে/এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই” কে, কেন এগিয়ে আসেন ?
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় শান্তিকামী, যুদ্ধবিরোধী সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
এগিয়ে আসার কারণ: অস্ত্রের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। মানুষের মিলিত প্রতিরোধ যে-কোনো অস্ত্রকে আটকাতে পারে। যে মানুষেরা অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল তাদের কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, অস্ত্র আসলে মানবতার বিরোধী। অস্ত্র নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্কই এই পৃথিবীর শেষ সত্য। সেই অজস্র শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের শক্তিতেই তিনি শক্তিশালী হয়ে এগিয়ে আসেন।
২. “হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই”—হাত নাড়িয়ে কবি কীভাবে বুলেট তাড়ান?
উত্তর – যুদ্ধবাজ মানুষের নেশা মানুষকে হত্যা করা, মানবিকতাকে ধ্বংস করে ক্ষমতা দখল করা। কবি গানকে সম্বল করে সেই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। গান মানুষের শুভচেতনার বিকাশ ঘটায়, সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে, বিভেদ ভুলিয়ে একতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে। মিলিত শুভচেতনার কখনও পরাজয় হয় না। তাই কবি গানকে হাতিয়ার করে সহজেই হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ান।
৩. “গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে”—কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর – উৎস: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে, অস্ত্রের ভয় আর পেশিশক্তির হুংকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বর্ম হয়ে উঠতে পারে মানুষের শুভবোধ এবং শুভচেতনা। তাৎপর্য: যে-কোনো অশুভ প্রচেষ্টার প্রতিরোধের এই কাজে সংগীত একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। গানের মধ্য দিয়ে যেমন আনন্দ আর সুন্দরের বিকাশ ঘটে, মন শুদ্ধ হয়ে ওঠে, ঠিক সেরকমই গান হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের বাহনও। তাই বুলেট অর্থাৎ যুদ্ধকে বাধা দিতে কবি গানকেই বর্মের মতো ব্যবহার করেন।
৪. “আঁকড়ে ধরে সেখড়কুটো”—কবি কাকে ‘খড়কুটো’ বলেছেন? তাকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন কেন?
উত্তর – খড়কুটোর পরিচয়: অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গানকে কবি আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন। বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা হিংসা ও হানাহানির বিরুদ্ধে কবির সম্বল মাত্র একটি-দুটি গান। এই স্বল্পতা বোঝাতেই কবি ‘খড়কুটো’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
আঁকড়ে ধরতে চাওয়ার কারণ: ডুবন্ত মানুষ কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। যদি সেটা খড়কুটোও হয়, তবে তাকেই সে অবলম্বন ভেবে আঁকড়ে ধরে। কবিও মনে করেছেন, গানই হল হিংস্রতার এই পৃথিবীতে মানুষের চেতনা বদলানোর মাধ্যম। এই গান আদতে জীবনের গান। কবির কাছে মাত্র একটা-দুটো গান আছে, যাদের আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চান তিনি।
৫. “রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে”—এ কথার মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর – প্রসঙ্গ: গানের মধ্য দিয়ে অস্ত্রের আতঙ্ককে মুছে ফেলতে চেয়েছেন কবি।তাৎপর্য: যাবতীয় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং হিংসা যে রক্তপাতের সৃষ্টি করে, তৈরি করে সভ্যতার সংকট, তা থেকে কবি মুক্তি খুঁজেছেন শুধু গানকে অবলম্বন করেই। তাই কবি যখন ‘গানের গায়ে’ রক্ত মোছার কথা বলেন, তখন আসলে সংগীতকে অবলম্বন করে বাস্তব জীবনের সব হিংসা এবং রক্তাক্ততাকে মুছে দিতে চান তিনি।
৬. “মাথায় কত শকুন বা চিল”—উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – প্রসঙ্গ: যুদ্ধবাজ আগ্রাসী মানুষদের কথা বলতে গিয়েই কবি আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। তাৎপর্য: কবি দেখেছেন, স্বার্থপর মানুষেরা যুদ্ধযুদ্ধ খেলায় মেতে উঠেছে। মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে তারা নিজেদের ক্ষমতা ও স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করতে সবসময় উদ্যোগী। লোভী চিল-শকুনের মতো তারা সমাজের মাথার ওপরে ঘুরে বেড়ায়। এই শকুন বা চিলরূপী যুদ্ধবাজ শক্তিগুলির বিরুদ্ধেই কবি গানের অস্ত্র ধারণ করেছেন।
৭. “আমার শুধু একটা কোকিল”—বক্তা কে? এ কথার মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর – বকা: উল্লিখিত অংশটির বক্তা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার কবি জয় গোস্বামী স্বয়ং।
তাৎপর্য: কবি তাঁর মাথার উপরে চিল শকুনের উড়ে চলা দেখেছেন। তার মধ্যে ‘একটা কোকিল’, যা আসলে কবির সৃজনশীল সত্তা, তা ধ্বংসের মধ্যে সৃষ্টির গান গাইতে পারে। ‘সহস্র উপায়ে’ তার গান, প্রেম বা প্রতিবাদ বা যে ধারাতেই তৈরি হোক না কেন, তা আসলে সুন্দরেরই প্রতিষ্ঠা ঘটায়।
৮. “গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে”—কে গান বাঁধবে? সহস্র উপায়ে গান বাঁধার তাৎপর্য কী?
উত্তর – যে গান বাঁধবে: কবি বলেছেন, তাঁর শুধু একটা কোকিল আছে। এই কোকিলই গান বাঁধবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সহস্র উপায়ে গান বাঁধার তাৎপর্য: মধুর কণ্ঠের কোকিল সৌন্দর্যের প্রতীক। কোকিলের রূপক ব্যবহার করে কবি নিজের ভিতরের সৃজনশীল সত্তাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যে গানকে তিনি জীবনযুদ্ধের বর্ম করতে চেয়েছেন, নানান উপায়ে সেই গান বাঁধবে এই কোকিল। তা হতে পারে প্রেম অথবা প্রতিবাদ—যে-কোনো ধারাতেই। যাবতীয় অস্ত্রের হুংকারকে স্তব্ধ করে তা পৃথিবীতে শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “আমি এখন হাজার হাতে পায়ে/এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই”‘হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসার তাৎপর্য কী ? এখানে কবির যে মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে, তা আলোচনা করো।
উত্তর – ‘হাজার হাত পায়ে এগিয়ে আসার তাৎপর্য: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সংগীতের ক্ষমতার কথা বলেছেন। রাষ্ট্র হোক কিংবা কোনো সন্ত্রাস-সৃষ্টিকারী শক্তি মানুষের বিক্ষোভে, প্রতিবাদে গানই হয়ে উঠেছে তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। কবির কথায় গান শুধু আনন্দের উৎস নয়, লড়াই-সংগ্রামেও গান হয়ে উঠতে পারে ‘বর্ম’। এই ‘গানের বর্ম’ পরেই কবি বন্দুকের বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছেন। বুলেটকে প্রতিহত করেছেন। আর সেই সংগ্রামেও কবি দেখেছেন তিনি একা নন, অসংখ্য মানুষ একই পথের পথিক। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা পৃথিবীর বিভিন্ন গণ-আন্দোলনের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, যুগে যুগে মানুষের প্রতিবাদের অস্ত্র হয়েছে গান। সকলের মিলিত কণ্ঠে প্রতিবাদের গান হয়ে উঠেছে অস্ত্রের থেকেও শক্তিশালী। গানের এই শক্তি এবং শুভবুদ্ধি-সম্পন্ন মানুষদের একত্রিত করার ক্ষমতার কথাই কবি বলেছেন।
কবির মনোভাব: কবি জয় গোস্বামীর কাছে গান হল বেঁচে থাকার যে অন্তহীন লড়াই, তার অবলম্বন। ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি উদ্যত বন্দুকের সামনে গানকে বর্ম এবং প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। গানই হয়ে উঠেছে মানুষে-মানুষে বেঁধে বেঁধে থাকার অন্যতম ভিত্তি। শিল্প-সাহিত্যকে অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে এখানে এক প্রতিরোধ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন কবি।
২. “আমার শুধু একটা কোকিল/গান বাঁধবে সহস্ৰ উপায়ে”—শুধু একটা কোকিল’ আসলে কী? এই গান বাঁধার প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর – ‘শুধু একটা কোকিল’-এর স্বরূপ: জয় গোস্বামী তাঁর অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় পৃথিবী জুড়ে চলতে থাকা হিংসা ও হানাহানির প্রতিবাদ করেছেন। মাথার ওপরে ‘শকুন’ এবং ‘চিল’ অর্থাৎ যুদ্ধবাজ শক্তিকে দেখেও ভরসা রেখেছেন নিজের শুভবোধে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা, ধ্বংস এবং হত্যার উন্মাদনাকে রোধ করতে পারে। এই শুভবোধ এবং সৃজনশীল সত্তাকেই কবি শুধু একটা কোকিল’ বলে অভিহিত করেছেন।
গান বাঁধার প্রয়োজনীয়তা: ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কবি সৃষ্টিকেই প্রতিরোধের একমাত্র উপায় করে তুলতে চেয়েছেন। সৃজনশীল সত্তারই আনন্দময় প্রকাশ হল সংগীত। এই সংগীতই তার অপূর্ব আবেশের মাধ্যমে মানুষকে পৃথিবীর যাবতীয় জ্বালা, যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়, ভুলিয়ে দেয় সভ্যতার ওপরে নেমে আসা অস্ত্রের অভিশাপ। যেসব যুদ্ধপ্রিয় বন্দুকবাজরা পৃথিবীকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের আগ্রাসী হিংসার ওপরে শান্তির এক প্রলেপ দিয়ে যায় সংগীত। তাই, গানকে কবি ব্যবহার করেছেন অস্ত্রের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে। ‘গানের বর্ম’ পরে কবি সহজেই বুলেটকে প্রতিহত করতে পারেন। এই গানই তাঁকে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে যুক্ত করে। তাঁকে এগিয়ে যাওয়ার, উঠে দাঁড়ানোর শক্তি জোগায়। যাবতীয় রক্তাক্ততাকে ভুলে যেতে সাহায্য করে এই গান। এই কারণেই সহস্ৰ উপায়ে গান বাঁধা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. “বর্ম খুলে দ্যাখো…” –বর্ম খুলে আদুড় গায়ে দাঁড়িয়ে থাকে-
(ক) ঋষিবালক
(খ) শিশু
(গ) ভিখিরি
(ঘ) মুনি
২. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান”—উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে গান নিয়ে বেড়াবে—
(ক) রণভূমিতে
(খ) মৃত্যুদীর্ণ সমভূমিতে
(গ) উন্মুক্ত আকাশে
(ঘ) নদীতে, দেশগাঁয়ে
৩. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় স্তবকের সংখ্যা-
(ক) তিনটি
(খ) চারটি
(গ) দুটি
(ঘ) পাঁচটি
৪. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় পক্তির মোট সংখ্যা-
(ক) ১৫টি
(খ) ১৭টি
(গ) ১৮টি
(ঘ) ২০টি
৫. ” ……. নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই”।
(ক) হাত-পা
(খ) হাত
(গ) গান
(ঘ) মাথা
৬. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার তিনটি স্তবকে পঙ্ক্তি বিন্যাসটি হল—
(ক) ৩-৪-৫
(খ) ৫-৬-৭
(গ) ৪-৮-১২
(ঘ) ৪-৫-৮
৭. বর্ম খুলে যেভাবে গানকে দেখা যাবে ঋষিবালক হিসেবে-
(ক) খোলা মনে
(খ) খোলা চোখে
(গ) আদুড় গায়ে
(ঘ) হালকা ভাবে
৮. ঋষিবালকের মাথায় কী গোঁজা? —
(ক) বুনো ফুল
(খ) আমের পাতা
(গ) ধানের গোছা
(ঘ) ময়ূরপালক
৯. গানকে কবি কার মতো দাঁড়াতে দেখেছেন?
(ক) ঋষিবালক
(খ) ফুল
(গ) বীর
(ঘ) জ্ঞানী
১০. “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো………দুটি পায়ে”।
(ক) আমার
(খ) দেশের
(গ) মায়ের
(ঘ) গানের
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “অস্ত্র ফ্যালো অস্ত্র রাখো” – কোথায় অস্ত্র ফেলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গানের পায়ে অস্ত্র রাখার কথা বলা বলেছেন।
২. “বর্ম খুলে দ্যাখো…” –বর্ম খুললে কী দেখা যায়?
উত্তর – কবির কথা অনুযায়ী, বর্ম খুললে দেখা যায় গান ঋষিবালকের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
৩. “গান দাঁড়াল ঋষিবালক” –এ কথা বলার অর্থ কী?
উত্তর – গান শুধু প্রতিবাদের বাহন নয়, যুদ্ধের শেষে গানের মধ্যে স্নিগ্ধতা ও শান্তিও [রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুর ] খুঁজে পাওয়া যায়। আর তখন গান হয়ে যায় ‘ঋষিবালক’এর মতো স্নিগ্ধ ও শান্ত।
৪. “গান দাঁড়াল ঋষিবালক”—ঋষিবালকের মাথায় কী ছিল?
উত্তর – যে গানকে কবি জয় গোস্বামী ‘ঋষিবালক’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন, তার মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা ছিল।
৫. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান”—কোথায় বেড়াবে?
উত্তর – নদীতে এবং দেশ-গ্রামে গানের সঙ্গে শ্রোতার বেড়ানোর কথা কবি উল্লেখ [লক্ষ্মীনারায়ণ বিএইচএম হাই স্কুল; রামকৃয় মিশন বিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুর] করেছেন। এর মধ্য দিয়ে গান । তার সুরের আন্তর্জাতিক বিস্তারের কথা বলা হয়েছে।
৬. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান” কথাটির অর্থ কী?
উত্তর – গানের কথা ও সুরের হাত ধরেই শ্রোতা সারা বিশ্বের সাথে পরিচিত হন,— এ-কথাই বোঝানো হয়েছে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে।
৭. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে”—কীভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তুমি মনে করো?
উত্তর – পৃথিবীতে যুদ্ধের অবসান ঘটলে গান আর প্রতিবাদের বাহন নয়, মানুষের মানসিক বিস্তারের ও শুদ্ধতার বাহক হয়ে ওঠে, তখনই গানের হাত ধরে মানুষ দেশের সীমা অতিক্রম করে বিশ্বনাগরিক হয়ে ওঠে।
৮. ‘অস্ত্র’ ও ‘গান’ শব্দ দুটি কবিতায় কতবার করে আছে?
উত্তর – কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় ‘অস্ত্র’ শব্দটি ছ-বার এবং ‘গান’ শব্দটি সাতবার ব্যবহার করেছেন।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “অস্ত্র রাখো, অস্ত্র ফ্যালো পায়ে”—কার উদ্দেশ্যে কবির কেন এই আবেদন?
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় যুদ্ধবাজ মানুষদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
কবির আবেদনের কারণ: ক্ষমতার নেশায় মেতে ওঠা মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। অস্ত্র হিংস্রতার প্রতীক। মানুষের পৃথিবীতে অস্ত্র ধ্বংস ছাড়া আর কিছু কাজে আসে না। অস্ত্রই সভ্যতার শেষ কথা নয়। তার বদলে চাই গান যা সাম্যের ভালোবাসার আর সুন্দরের কথা বলে। তাই কবি অস্ত্র ফেলে গানকেই জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার করতে বলেছেন।
২. “গান দাঁড়াল ঋষিবালক” গানের সঙ্গে ঋষিবালকের উপমাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – উপমা ব্যবহার: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী গানের অসীম ক্ষমতা লক্ষ করেছেন। এই গান বুলেটকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু গানের কোনো নির্দিষ্ট বিষয় কিংবা ধরন নেই। নানান উপায়ে তা বাঁধা হয়। সেখানে গান কখনও হয়ে যায় ঋষিবালকের মতো স্নিগ্ধ, সতেজ, স্বতঃস্ফূর্ত এবং আন্তরিক। তা অপার শান্তি নিয়ে আসে। এই কারণেই কবি গানের সঙ্গে ঋষিবালকের উপমাটি ব্যবহার করেছেন।
৩. “মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক”—কার মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা? এখানে ময়ূরপালক গোঁজা চিত্রকল্পের তাৎপর্য কী?
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: কবির অনুভবে গানরূপী ঋষিবালকের মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা।
‘ময়ূরপালক’ চিত্রকল্পের তাৎপর্য: অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করে কবি এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। গানকে কবি ঋষিবালকের চিত্রকল্পে তুলে ধরে অন্য বার্তা দিয়েছেন। ঋষিবালক পবিত্রতার প্রতীক। তার মাথায় ময়ূরপালক গোঁজার মধ্য দিয়ে কৃষ্ণের রূপকল্প নিয়ে আসা হয়েছে, যা শাশ্বত মানবপ্রেমের ইঙ্গিত দেয়। হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা নয়, হিংসাকে জয় করতে হবে হৃদয়ের পবিত্রতা দিয়ে। উক্তিটির মধ্য দিয়ে সেই সত্যই প্রকাশিত।
8. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান” —এই কথার তাৎপর্য কী?
উত্তর – তাৎপর্য: গান এবং সুরের হাত ধরে গোটা বিশ্বের সাথে মানুষের পরিচয় ঘটে। গান বস্তুত হৃদয়ের এক আশ্চর্য বিস্তার ঘটায়। গানের মাধ্যমেই সম্ভব হয় প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ, মানুষের কাছাকাছি পৌঁছোনো। তাই কবি যখন বলেন—“তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে”—তখন .আসলে গানের এই শক্তি এবং সীমাহীন বিস্তারের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়।
৫. “অস্ত্র ফেলো, অস্ত্র রাখো” – কবি কোথায় অস্ত্র রাখতে বলেছেন? তাঁর এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর – অস্ত্র রাখার স্থান: কবি গানের দুটি পায়ে অস্ত্র রাখতে বলেছেন।
এ কথা বলার কারণ: জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যুদ্ধবাজ মানুষদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষমতার নেশায় মেতে ওঠা মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। অস্ত্র হিংস্রতার প্রতীক। মানুষের পৃথিবীতে অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ অস্ত্রই সভ্যতার শেষ কথা নয়। তার বদলে চাই গান যা সাম্যের আর সুন্দরের কথা বলে। তাই কবি অস্ত্র ফেলে গানকেই জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার করতে বলেছেন। এখানে কবির মানবতাবাদী মনোভাবটিই প্রকাশিত।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে”—কবির এই মন্তব্যে গানের যে স্বভাবধর্মের প্রকাশ ঘটেছে তা আলোচনা করো।
উত্তর – শুরুর কথা: গানের হাত ধরে জয় গোস্বামী যখন-তখন যেখানেসেখানে অতিসহজেই চলে যেতে পারেন। ধ্রুপদী সংগীতের প্রতি নিজের আকর্ষণের কথা বারেবারে স্বীকার করেছেন কবি (গোঁসাইবাগান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৮)। আনন্দের প্রকাশ: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গানকে শুধু আনন্দ বা সুন্দরের প্রকাশ বলেই ভাবেননি কবি। তাঁর মনে হয়েছে গান হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের ভাষা। শক্তি ও সাহস সংগ্রহ: অস্ত্রের সঙ্গে লড়াইয়ে, মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে এই গান থেকেই কবি সংগ্রহ করেছেন শক্তি এবং সাহস। প্রতিবাদের বিকল্প ভাষা: দেশে দেশে, যুগে যুগে বাস্তবিকই গান হয়েছে প্রতিবাদের বিকল্প ভাষা। গানের ইতিহাসে ‘প্রতিবাদের গান’ নামে একটি আলাদা ধারাই তৈরি হয়ে গেছে। পৃথিবী জুড়ে যে-কোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে, অথবা, প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে গান জুগিয়েছে অসীম শক্তি, জোট বাঁধার সাহস, মনের জোর। বৈচিত্র্যময়তা: গানের শক্তিকে আবিষ্কার করাই শুধু নয়, তার মধ্যে প্রবল বৈচিত্র্যও কবি খুঁজে পেয়েছেন। গান তাই কখনও কবির কাছে হয়েছে ঋষিবালক—যার ‘মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক’, গান তখন সহজ, নিবিড়, ধ্যানমগ্ন। পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিতি: আবার এই গানের হাত ধরেই আমরা পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিত হই। গানে তখন হয়তো বাজে প্রান্তিক লোকজীবনের মেঠো সুর। শেষের কথা: গানের এই বিস্তারের কথাই প্রশ্নোবৃত অংশে প্রকাশিত হয়েছে।
সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটিতে কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো।
উত্তর – শুরুর কথা: জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় অস্ত্রশক্তি এবং পেশিশক্তির বিরুদ্ধে মানুষের সুস্থ রুচি ও নান্দনিকতার প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। হাতিয়াররূপে গান: অস্ত্রকে প্রতিহত করতে গানকে হাতিয়ার করে তুলেছে মানুষ। গানকে অবলম্বন করে কবি সেই বিপুল শক্তির অধিকারী হয়েছেন যা তাঁকে বুলেট প্রতিহত করার ক্ষমতা দিয়েছে। ঐক্যের বন্ধন: গান তাঁকে এক আশ্চর্য ঐক্যবোধে বেঁধেছে। তাই তাঁর হাতে হাত মিলিয়েছে আরও হাজার মানুষ, পায়ে পা মিলিয়েছে হাজার পা। দৃঢ় ভঙ্গিতে কবি বলতে পেরেছেন—“অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে।” প্রতীকরূপে গান: পৃথিবীর ইতিহাসে অস্ত্র কখনও শেষকথা বলেনি। জয়ী হয়েছে মানুষের শুভবুদ্ধি, একতা ও সৃজনশীলতা। গান এই কবিতায় এসবেরই প্রতীক। গানই কবিকে মানুষের সঙ্গে মিলিয়েছে, রক্ত মুছিয়ে সুন্দরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। গানের নানা রূপ, নানা বিষয়, তার সুরের নানা বৈচিত্র্য। কখনও সে হয়ে ওঠে ঋষিবালকের মতো স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ, কখনও-বা তার ছোঁয়ায় লেগে থাকে কোকিলের মোহময় সুরেলা সৃষ্টি। অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান: যুদ্ধবাজ মানুষ অস্ত্র হাতে মনুষ্যত্বের বিপক্ষে গিয়ে যখন দাঁড়ায়, তখন গানের বর্ম পরে কবি অস্ত্রকে সহজেই প্রতিহত করেন।
২. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটিতে কবির রচনারীতির দক্ষতা আলোচনা করো।
উত্তর – শুরুর কথা: জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটিতে গানকে আশ্রয় করে কবি প্রতিবাদের নিজস্ব ধরন খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার গানের মধ্যে কবির নিজস্ব অনুভূতির আবেগময় প্রকাশ ঘটিয়ে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছেন। স্তবক বিন্যাস: তিনটি স্তবকের প্রথমটিতে গানকে আশ্রয় করে কবির প্রতিবাদ, দ্বিতীয়টিতে কণ্ঠস্বর কিছুটা নরম করে গানের সঙ্গে কবির সংযোগ এবং শেষ স্তবকটিতে নিজস্ব অনুভবে গানের বিস্তারকে বোঝার চেষ্টা। বিষয়ের পার্থক্য: বিষয়ের সূক্ষ্ম পার্থক্যে কণ্ঠস্বরের তীব্রতার তারতম্য ঘটিয়েছেন কবি। পঙ্কিসজ্জা: লক্ষ করার বিষয় যে, ১৮ পক্তির কবিতাটি তিনটি স্তবকে বিন্যস্ত হলেও পক্তিসজ্জা সমান নয়। প্রথম স্তবকে ৫টি পঙ্ক্তি, দ্বিতীয় স্তবকে ৬টি পঙ্ক্তি, তৃতীয় স্তবকে ৭টি পঙ্ক্তি স্থান পেয়েছে। মিল: কবিতায় অন্ত্যমিল থাকলেও তার রীতিও একরকম নয়। অন্ত্যমিল নেই এমন পঙ্ক্তিও শেষ স্তবকে আছে। শেষের কথা: গানের মধ্যে যেমন তৈরি হয় এক স্বচ্ছন্দ চলা, এই কবিতাও তেমনই সাবলীলভাবে এগিয়ে চলেছে। অত্যন্ত সহজভাষায় বিষয়ের বিস্তার ঘটিয়েছেন কবি—“পান তো জানি একটা দুটো/আঁকড়ে ধরে সে খড়কুটো/রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে”। সহজ ভাষায় এই কবিতায় গভীরভাবকে ছুঁয়ে গেছেন কবি।
৩. “গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে”–গানের বর্ম পরার প্রয়োজনীয়তা কী তা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি অবলম্বনে আলোচনা করো।
অথবা, গান কীভাবে অস্ত্রের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে তা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা অবলম্বনে লেখো।
অথবা, “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে”—–অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে কবি কীভাবে প্রতিষ্ঠা করছেন?
উত্তর – শুরুর কথা: ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সৃষ্টিকেই প্রতিরোধের একমাত্র উপায় করে তুলতে চেয়েছেন কবি জয় গোস্বামী। প্রতিবাদের হাতিয়ার: সংগীতের সুরেই মিলে যায় সহস্র কণ্ঠ। কখনও তা হৃদয়কে শুদ্ধ করার অবলম্বন, কখনও বা প্রতিবাদের হাতিয়ার। প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে গানই মানুষকে জোগায় অসীম মনোবল, জোট বাঁধার সাহস। অস্ত্রের বিরোধিতা: অস্ত্রের বিরুদ্ধে এই গানকে আঁকড়ে ধরেই কবি অনায়াসে হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। গানই সেই আশ্রয়, যা হিংসার অবসান ঘটাতে পারে। অজস্র হিংসার বিপরীতে একটা গানই হতে পারে কবির বা সৃজনশীল মানুষের নিজস্ব জবাব। গান কবির কাছে বর্ম, যা পরে বিরুদ্ধ শক্তির আক্রমণকে প্রতিহত করার শক্তি অর্জন করেন কবি। নান্দনিক প্রতিরোধ: রক্তাক্ততার পথ ধরে অশুভ অকল্যাণকারী শক্তিকে প্রতিরোধ নয়, পরিবর্তে কবি তৈরি করতে চেয়েছেন এক নান্দনিক প্রতিরোধ। আত্মশক্তির জাগরণ: হিংসা ও হানাহানির এই পৃথিবীতে গানের অসীম শক্তিই মানুষকে একত্রিত করে, আত্মশক্তিতে জাগিয়ে তোলে। এই শক্তিই কবিকে অনুপ্রাণিত করেছে গানের সামনে নতজানু হতে।ইতিকথা: তাই কবি গানের বর্ম পরেই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে চেয়েছেন।
৪. অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কীভাবে কবি জয় গোস্বামীকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর – শুরুর কথা: “যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা/যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা।”—এ হল আধুনিক সভ্য পৃথিবীর বিবেকের কণ্ঠস্বর। যুদ্ধ মানবতার শত্রু। যুদ্ধই মানুষের ঐক্যবদ্ধ জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে, হিংসার বিষে বিষাক্ত করে তোলে সমাজসভ্যতাকে। এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পথে হেঁটে কবি জয় গোস্বামী পৃথিবীকে হিংসামুক্ত করতে চেয়েছেন।
অস্ত্রের বিরোধিতা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী গানকে যুদ্ধ বিরোধিতার এক নতুন উপায়রুপে দাঁড় করিয়েছেন। সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ একসময় অস্ত্র দিয়েই অস্ত্রকে প্রতিরোধের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এই পথও রক্তাক্ত, হিংস্রতায় ভরা। অন্যদিকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে গান শান্তির বার্তা বয়ে আনে। জয় গোস্বামী তাই গানের বর্ম পরেই অস্ত্রবিরোধী হতে চান। | সৃজনশীলতার জাগরণ: সৃজনশীলতাকে অবলম্বন করে মানবতাকে সুরক্ষিত করতে পারে গান। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে শুভবুদ্ধি ও সৃজনশীলতা জাগলে এই যুদ্ধের রক্তে ভরা পৃথিবী আবার শান্ত ও সুন্দর হয়ে উঠবে। আমাদের রক্তভেজা সমাজে যদি গান এসে ঋষিবালক হয়ে দাঁড়ায়, তবে পৃথিবীর সব যুদ্ধবাজরা স্তব্ধ হয়ে যাবে। ইতিকথা: এভাবেই কবি গানকে হাতিয়ার করে উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন।