WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 14 বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান
WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 14 বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান
West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 14 বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান
West Bengal Board 10th Bengali Solutions
লেখক পরিচিতি
ভূমিকা: সাহিত্যিক রাজশেখর বসু ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামেই বেশি পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাস্যরসিক গল্পকার, পরিভাষা ও অভিধান রচয়িতা, রসায়নবিদ এবং অনুবাদক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন রাজশেখর বসু।
জন্ম ও শৈশব: ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ বর্ধমান জেলার শক্তিগড়ের কাছে বামুনপাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে রাজশেখর বসুর জন্ম হয়। পণ্ডিত চন্দ্রশেখর বসু এবং লক্ষ্মীমণি দেবীর দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলেবেলার অনেকটা সময়ই দ্বারভাঙ্গায় কাটে। মুঙ্গের, খড়গপুর এবং বাংলা দেশের বাইরে ঘুরে তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে।
শিক্ষাজীবন: ১৮৮৫ থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দ্বারভাঙ্গার রাজ স্কুলে পড়াশোনা করে এনট্রান্স পাস করেন। ১৮৯৫-১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাটনা কলেজে পড়েন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স-সহ বিএ পাস করেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে এমএ পরীক্ষা দেন এবং প্রথম স্থান অধিকার করেন।
কর্মজীবন: বিজ্ঞানচর্চার প্রতি ভালোবাসা থেকেই রাজশেখর বসু ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন । খুব অল্প মাইনেতে কাজ শুরু করলেও ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে নিজের দক্ষতায় তিনি কোম্পানির পরিচালক হয়ে ওঠেন। একদিকে গবেষণার কাজ, অন্যদিকে ব্যাবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয়
দেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ডিরেক্টর রূপে এই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সাহিত্যজীবন: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাজশেখর বসুর লেখালিখির শুরু। ১৯২২-এ পরশুরাম ছদ্মনামে ‘শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড’ নামে এক ব্যঙ্গ রচনা প্রকাশ হওয়ার পরই তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে— লঘুগুরু, বিচিন্তা, ভারতের খনিজ, কুটির শিল্প প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থ, কালিদাসের মেঘদূত, বাল্মীকি রামায়ণ, ব্যাসের মহাভারত, গীতা প্রভৃতির অনুবাদ এবং চলন্তিকা নামক অভিধান। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হল—গড্ডলিকা, কজ্জলী, হনুমানের স্বপ্ন, ধুস্তরী মায়া প্রভৃতি।
সাহিত্যরীতি: : গল্প বলার ঢংয়ে কাহিনিকে ফুটিয়ে তোলা, চরিত্রের নিপুণ বিবরণে তাকে জীবন্ত করে তোলা তাঁর পরিচিত সাহিত্যরীতি। উদ্ভট ঘটনা এবং কল্পনা শক্তির মিশেলে তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য হয়ে উঠেছে অনন্য। বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসের সাহায্যে ব্যঙ্গ-কৌতুক রচনায় তাঁর দক্ষতা লক্ষণীয়।
সম্মাননা: রাজশেখর বসু ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কার পান। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান সংস্কার সমিতি ও ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিভাষা সংস্কারের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৫৭-১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার রাজশেখর বসুকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করেন।
জীবনাবসান: ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশেখর বসু পরলোকগমন করেন।
বিষয়সংক্ষেপ
বাংলা ভাষায় যাঁরা বিজ্ঞান পড়েন, আলোচ্য প্রবন্ধে রাজশেখর বসু তাঁদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যাঁরা ইংরেজি জানেন না বা খুব অল্প জানেন, তাঁরা রয়েছেন প্রথম শ্রেণিতে। অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক মানুষেরা এই শ্রেণিতে পড়েন। দ্বিতীয় শ্রেি আছেন সেইসব মানুষেরা যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় সামান্য হলেও বিজ্ঞান পড়েছেন। প্রথম শ্রেণির পাঠকদের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিশেষ পরিচয় নেই, যদিও কয়েকটি সাধারণ পারিভাষিক শব্দ ও মোটাদাগের বৈজ্ঞানিক তথ্য তাঁদের জানা থাকতে পারে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি তথ্য সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল নন। তাঁরা যখন বাংলা ভাষায় লেখা কোনো বৈজ্ঞানিক রচনা পড়েন, তখন বৈজ্ঞানিক বিষয়টি শিখে নিলেই তাদের চলে, ভাষা সেখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণিতে যাঁরা আছেন, অর্থাৎ যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতেই বিজ্ঞান পড়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে বাংলায় লেখা কোনো বাক্য সহজ মনে হয় না, অর্থও পরিষ্কার হয় না। এর কারণ হল ইংরেজি ভাষার প্রতি পক্ষপাত। এই শ্রেণির পাঠকদের যেহেতু ভাষাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এবং সেই সমস্যা এড়িয়ে বিষয়টি জানতে হয়, তাই এই পাঠকদের বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান পড়তে হলে অন্য পাঠকদের তুলনায় বেশি প্রচেষ্টা করতে হয়।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় কয়েকটি বাধার কথা প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন। প্রথম বাধা হল পরিভাষার সমস্যা। বাংলায় পারিভাষিক শব্দের অভাব দূর করতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ উদ্যোগ নিয়েছিল। সেখানে পণ্ডিত লেখকরা নানা বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছেন। কিন্তু তাঁরা একসাথে কাজ না করায় নতুন রচিত পরিভাষায় সংগতি থাকেনি। এরপরে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ভাষাতত্ত্ববিদ, সংস্কৃতজ্ঞ ও কয়েকজন লেখককে নিয়ে পরিভাষা রচনার একটি প্রচেষ্টা চালায় এবং সেটি অনেক বেশি সফল হয়। লেখকের মতে বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো বাংলা শব্দ না পাওয়া গেলে ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে ব্যবহার করা যায়। যেমন, অক্সিজেন, প্যারাডাইক্লোরোবেনজিন ইত্যাদি। পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় অত্যন্ত কম। ফলে বাংলায় পপুলার সায়েন্স লেখা সহজ কাজ নয়। তবে প্রাবন্ধিক মনে করেন, এদেশে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বিজ্ঞান আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় রচনাপদ্ধতি অনেক লেখকই আয়ত্ত করতে পারেননি। অনেকক্ষেত্রে তাঁদের ভাষা আড়ষ্ট ও ইংরেজি শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ হয়ে দাঁড়ায়। ইংরেজি শব্দের অর্থের ব্যাপ্তির সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা প্রতিশব্দ ব্যবহার করতে গিয়ে তাঁরা অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করেন। ইংরেজিতে কোনো বাক্য ভেবে নিয়ে তা বাংলায় প্রকাশ করতে গিয়ে রচনার ভাষা উৎকট হয়ে পড়ে। “When sulphur burns in air the nitrogen does not take part in the reaction”-এই বাক্যের বাংলা অনুবাদ “যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে তখন নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না।” এইরকম না করে ‘নাইট্রোজেনের কোনো পরিবর্তন হয় না’ লিখলে বিষয়টি অনেক বেশি স্পষ্ট হয়।
আবার অনেকে মনে করেন যে পারিভাষিক শব্দ একেবারে বাদ দিয়ে দিলে বিষয়টি বেশি সহজ হয়। কিন্তু সবসময় তা ঘটে না। যেমন, ‘আলোকতরঙ্গ’-এর বদলে ‘আলোর নাচন’ বা ‘কাঁপন’ লিখলে তা বৈজ্ঞানিকভাবে যথাযথ হয় না। বাক্যের অর্থও স্পষ্ট হয় না। এ প্রসঙ্গেই প্রাবন্ধিক শব্দের ‘ত্রিবিধ’ (তিনপ্রকার) শক্তির কথা বলেছেন। তিনি অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা—এই তিনপ্রকার শক্তির মধ্যে বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে ‘অভিধা’র ব্যবহারই যথাযথ বলে মনে করেছেন।
প্রবন্ধের শেষে রাজশেখর বসু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচয়িতাদের আর-একটি দোষের কথা বলেছেন। অল্পবিদ্যার ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞান রচনার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভুল থেকে যায়। তাই সম্পাদকের উচিত কোনো বৈজ্ঞানিক রচনা প্রকাশের আগে অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে তা যাচাই করিয়ে নেওয়া৷
নামকরণ
যে-কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মাধ্যমেই পাঠক বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। লেখকের চিন্তাধারার আভাসও পাওয়া যায় নামকরণ থেকেই। যে-কোনো রচনারই নামকরণ বিভিন্ন দিক থেকে হতে পারে। কখনও তা হয় চরিত্রধর্মী, আবার কখনও বিষয়মুখী।ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণও অনেক সাহিত্যিকের প্রথম পছন্দ। প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে অনেকগুলি সমস্যার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই তিনি পাঠকদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। পাঠকদের মধ্যে ইংরেজি-না-জানা অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক লোক যেমন একদিকে আছেন, তেমনই অন্যদিকে আছেন ইংরেজি-জানা ও ইংরেজিতে বিজ্ঞান পড়া অল্প কিছু পাঠক। প্রথম শ্রেণিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বিজ্ঞান সেভাবে পড়েননি, তবে কোনো ভাষার প্রতি পক্ষপাত তাঁদের নেই। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠকদের ক্ষেত্রে ভাষার সমস্যা রয়েছে। তাই ইংরেজি প্রবন্ধ পড়ায় অভ্যস্ত সেইসব মানুষের কাছে বাংলায় রচিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের অর্থ স্পষ্ট হয় না।
পাঠকদের এই অবস্থান নির্দিষ্ট করার পর বাংলায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে যে যে সমস্যা আছে তার আলোচনা শুরু করেন তিনি। প্রথমেই আসে পারিভাষিক শব্দের অভাবের কথা। এই সমস্যার সমাধানে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগী হয়। তবুও বহু ইংরেজি শব্দকে এখনও আমাদের বাংলা বানানে লিখতে হয়। এ-দেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অত্যন্ত কম, সেই কারণে এখানে ইউরোপ বা আমেরিকার মতো পপুলার সায়েন্স রচনা করা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সবার প্রথমে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসারের প্রয়োজন। অনুবাদের ক্ষেত্রে আক্ষরিক অনুবাদ ও আড়ষ্টতা থেকে দূরে থাকা, সহজ ও স্পষ্ট বাংলায় লেখা, অলংকার, উৎপ্রেক্ষা, অতিশয়োক্তি বাদ দিয়ে শব্দের মূল অর্থকে সামনে রাখা—এগুলি বিজ্ঞানের প্রসারে প্রয়োজন। ছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে বৈজ্ঞানিক তথ্য যথাযথভাবে না জেনে যেন প্রবন্ধ রচনা করা না হয়। তাতে রচনার মধ্যে তথ্যের ভুল থাকার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
রাজশেখর বসুর এই প্রবন্ধের লক্ষ্যই হল বাংলায় বিজ্ঞান রচনাকে আরও সহজ এবং জনপ্রিয় করে তোলার জন্য যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করা। প্রবন্ধের বিভিন্ন উদাহরণ সহযোগে সেই সমস্যাগুলি তিনি আলোচনা করেছেন এবং তার সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। এই প্রবন্ধের নামকরণ থেকে স্পষ্টই তাঁর বক্তব্য বিষয়টি আন্দাজ করা যায় এবং এই কারণেই তাঁর দেওয়া নামটি সার্থক হয়েছে, বলা চলে।
আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধটির রচয়িতা-
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(গ) রাজশেখর বসু
(ঘ) মধুসূদন দত্ত
২. রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম-
(ক) বনফুল
(খ) শ্রীপান্থ
(গ) পরশুরাম
(ঘ) রূপদর্শী
৩. রাজশেখর বসু রচিত গ্রন্থ-
(ক) বিচিন্তা
(খ) কজ্জলী
(গ) গড্ডলিকা
(ঘ) সবগুলি
৪. ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধটি যে গ্রন্থের অন্তর্গত, সেটি হল-
(ক) বিচিন্তা
(খ) গীতাঞ্জলি
(গ) মেঘনাদবধ
(ঘ) দেবদাস
৫. এর মধ্যে যেটি রাজশেখর বসুর অবিস্মরণীয় কীর্তি, সেটি হল-
(ক) মেঘদূত কাব্য রচনা
(খ) ওথেলো নাটক রচনা
(গ) গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ রচনা
(ঘ) চলন্তিকা অভিধান রচনা
৬. যাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ লেখা হয়, তাদের মোটামুটি কতগুলি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়?-
(ক) দুটি
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) পাঁচটি
৭. যাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ বা প্রবন্ধ লেখা হয়, তাদের প্রথম শ্রেণিটি-
(ক) ইংরেজি ভাষায় দক্ষ
(খ) বাংলা ভাষায় দক্ষ
(গ) ইংরেজি জানে না বা অতি অল্প জানে
(ঘ) ইংরেজি জানে বা ইংরেজি ভাষায় অল্পাধিক বিজ্ঞান পড়েছে
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম কী?
উত্তর – রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম হল পরশুরাম।
২. রাজশেখর বসু রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – রাজশেখর বসু রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল গড্ডলিকা, হনুমানের স্বপ্ন।
৩. রাজশেখর বসু রচিত বাংলা অভিধানের নাম কী?
উত্তর – রাজশেখর বসু রচিত বাংলা অভিধানের নাম ‘চলন্তিকা’।
৪. তোমার পাঠ্য ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধটি কোন্ গ্রন্থ থেকে গৃহীত?
উত্তর – ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধটি রাজশেখর বসু রচিত বিচিন্তা গ্রন্থ থেকে গৃহীত।
৫. “তাদের মোটামুটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে”—’তাদের’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
উত্তর – আলোচ্য অংশে ‘তাদের’ বলতে বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের বোঝানো হয়েছে।
৬. “যাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ বা প্রবন্ধ লেখা হয় তাদের মোটামুটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে।”—শ্রেণি দুটি কী কী?
উত্তর – আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লিখিত দুই শ্রেণির মধ্যে প্রথম শ্রেণি হল যারা ইংরেজি জানে না বা অতি অল্প জানে এবং দ্বিতীয় শ্রেণি হল যারা ইংরেজি জানে।
৭. প্রথম শ্রেণির পাঠকদের সম্পর্কে প্রাবন্ধিক কী বলেছেন?
উত্তর – প্রথম শ্রেণির পাঠকদের সম্পর্কে প্রাবন্ধিক বলেছেন যে, গুটিকয়েক ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ ছাড়া তাদের বিজ্ঞানের সঙ্গে পূর্বপরিচয় নেই।
৮. “গুটিকতক ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ হয়তো তারা শিখেছে।” শব্দগুলি কী?
উত্তর – প্রবন্ধে উল্লিখিত ‘গুটিকতক’ ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ হল টাইফয়েড, আয়োডিন মোটর, ক্রোটন, জেব্রা।
৯. “অনেক রকম স্থূল তথ্যও তাদের জানা থাকতে পারে”—কীরকম স্থূল তথ্যের কথা প্রাবন্ধিক বলেছেন?
উত্তর – জল এবং কর্পূর উবে যায়, লাউ-কুমড়ো জাতীয় গাছে দু-রকম ফুল হয়— এরকম স্থূল তথ্যের কথা প্রাবন্ধিক আলোচ্য প্রবন্ধে বলেছেন।
১০. “এই শ্রেণির পাঠক ইংরেজি ভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত।”—‘এই শ্রেণির’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
উত্তর – আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে যাঁরা বিশেষ জানেন না, যাঁদের বিজ্ঞানের সঙ্গে পূর্বপরিচয় নেই, এই অংশে তাঁদেরই কথা বুঝিয়েছেন প্রাবন্ধিক।
১১. ছেলেবেলায় রাজশেখর বসু কার লেখা জ্যামিতি বই পড়তেন?
উত্তর – ছেলেবেলায় প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ব্রহ্লমোহন মল্লিকের লেখা বাংলা জ্যামিতি বই পড়তেন।
১২. “এর মানে বুঝতে বাধা হয়নি।” ‘এর মানে’ বলতে কী?
উত্তর – ছেলেবেলায় প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ব্রহ্লমোহন মল্লিকের লেখা বাংলা জ্যামিতি বই পড়তেন। ব্রহ্লমোহন মল্লিকের রচিত জ্যামিতি বইতে লেখা এক নির্দিষ্ট সীমাবিশিষ্ট সরলরেখার উপর এক সমবাহু ত্রিভুজ চিত্রাঙ্কনের কথা বুঝতে প্রাবন্ধিকের অসুবিধা হয়নি।
১৩. “তাদের কাছে উক্ত প্রতিজ্ঞাবাক্যটি সুশ্রাব্য ঠেকবে না।” ‘তাদের’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – যারা ইংরেজি ভাষায় জ্যামিতি বা জিয়োমেট্রি পড়েছে তাদের কাছে ব্রহ্মমোহন মল্লিকের বইয়ের ভাষা সহজ মনে হবে না।
১৪. “যে লোক আজন্ম ইজার পড়েছে’— ‘আজন্ম’, ‘ইজার’ এই শব্দ দুটির অর্থ লেখো।
উত্তর – ‘আজন্ম’ কথার অর্থ হল জন্মাবধি বা জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এবং ইজার’ কথার অর্থ হল পাজামা বা প্যান্টালুন।
১৫. বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর – রাজশেখর বসু রচিত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রবন্ধ বা রচনাকে বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বলা হয়েছে।
১৬. দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক যখন মাতৃভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ পড়ে তখন তার কোন্ চেষ্টা আবশ্যক?
উত্তর – দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক যখন মাতৃভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ পড়ে তখন তাকে ইংরেজির প্রতি অতিরিক্ত পক্ষপাত ত্যাগ করে ভালোবেসে মাতৃভাষার পদ্ধতি আয়ত্ত করার চেষ্টা করতে হয়।
১৭. বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটি বাধা কী যা প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন?
উত্তর – প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটি বড়ো বাধা হল বাংলায় পারিভাষিক শব্দের সংখ্যার ঘাটতি।
১৮, “তার ফলে সংকলিত পরিভাষার সাম্য হয়নি”— ‘তার ফলে’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর – বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিদ্যোৎসাহী লেখকেরা একত্রিত হয়ে কাজ না করার ফলে একই ইংরেজি শব্দের বিভিন্ন প্রতিশব্দ রচিত হয়েছে। এর ফলে নতুন রচিত পরিভাষার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়নি।
১৯. পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে কাদের উদ্যোগে ত্রুটি ছিল বলে প্রাবন্ধিক মন্তব্য করেছেন?
উত্তর – পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিদ্যোৎসাহী লেখকদের উদ্যোগে ত্রুটি ছিল বলে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু মন্তব্য করেছেন।
২০. “তার ফলে তাঁদের চেষ্টা অধিকতর সফল হয়েছে।”— ‘তার ফলে কথাটি প্রাবন্ধিক কেন ব্যবহার করেছেন?
উত্তর – ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতির হয়ে বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যাপক এবং লেখকরা মিলিতভাবে কাজ করেছিলেন বলে, তাঁদের পরিভাষা নির্মাণের চেষ্টা অনেক বেশি সফল হয়েছিল। একযোগে কাজ করার প্রসঙ্গেই প্রাবন্ধিক ‘তার ফলে’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “তাদের মোটামুটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে।”— কাদের কথা বলা হয়েছে? দুই শ্রেণির পরিচয় দাও।
উত্তর – উদ্দিষ্ট পাঠকশ্রেণি: ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধের আলোচ্য অংশে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের পাঠকদের কথা বলা হয়েছে। প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষার বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।
দুই শ্রেণির পাঠকদের পরিচয়: পাঠকদের যে দুটি শ্রেণির কথা প্রাবন্ধিক বলেছেন তাদের প্রথমটি হল যারা ইংরেজি জানে না বা অতি অল্প জানে। দ্বিতীয়টি হল যারা ইংরেজি জানে এবং ইংরেজি ভাষায় কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পড়েছে। প্রথম শ্রেণি: প্রথম শ্রেণির পাঠকদের বিজ্ঞানের সঙ্গে কোনো পূর্বপরিচয় নেই। কিছু সাধারণ ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ তাদের জানা থাকতে পারে কিংবা কিছু মোটাদাগের বৈজ্ঞানিক তথ্যও তাদের অভিজ্ঞতায় থাকতে পারে। কিন্তু কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যই তাদের জানা থাকে না। প্রথম শ্রেণির পাঠকের ক্ষেত্রে সুবিধা হল বিষয়টি বুঝতে পারলেই তারা বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষা করে নিতে পারে, ভাষা সেখানে বাধা হয় না। দ্বিতীয় শ্রেণি: কিন্তু সমস্যা হয় যাদের ইংরেজি শিক্ষা হয়েছে তাদের নিয়ে এই শ্রেণির পাঠকদের বাংলায় বিজ্ঞান শিখতে গেলে তাদের ইংরেজিতে বিজ্ঞান পড়ার ও বোঝার অভ্যাস ত্যাগ করতে হয়। ইংরেজির প্রতি যে আনুগত্য তাও ত্যাগ করতে হয়। এই কারণে তাদের পাঠ বা শিক্ষা কষ্টকর হয়ে ওঠে।
২. “যে লোক আজন্ম ইজার পরেছে তার পক্ষে হঠাৎ ধুতি পরা অভ্যাস করা একটু শক্ত।”—“বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধ অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর – উৎস ও প্রসঙ্গ: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার অন্যতম পাঠক মনে করেছেন ইংরেজি জানা এবং ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান পড়তে অভ্যস্ত মানুষদের। তাঁদের বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
তাৎপর্য: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার পাঠকদের প্রাবন্ধিক দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। সেই দুটি শ্রেণির মধ্যে প্রথম শ্রেণির পাঠকেরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষ নন এবং বিজ্ঞানের সঙ্গেও তাঁদের যোগাযোগ অতি সামান্য। কয়েকটি পারিভাষিক শব্দ অথবা বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ছাড়া তাঁদের আর কিছুই জানা নেই। এঁদের ক্ষেত্রে বাংলায় বিজ্ঞান শেখার বিষয়টি কোনো সমস্যার নয়। কিন্তু সমস্যাটা হল তাঁদের নিয়ে যাঁরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষ এবং তাতেই শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। বাংলায় কিছু শেখার সময় এঁদের ইংরেজিতে শেখা জ্ঞান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই ‘পূর্ব সংস্কার দমন করে’ তাঁদের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের পাঠ নিতে হয়, যা তাঁদের পক্ষে শ্রম ও সমস্যার বিষয়। এই কাজটা আজন্ম ইজার পরা লোকের হঠাৎ ধুতি পরতে বাধ্য হওয়ার মতো। অত্যন্ত মনোযোগ আর আগ্রহের সঙ্গে মাতৃভাষা শিক্ষা করলে তবেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
৩. “প্রীতির সহিত মাতৃভাষার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হয়।” কোন্ শ্রেণির পাঠক সম্পর্কে লেখকের এই মন্তব্য? তাঁর এই মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর – উদ্দিষ্ট শ্রেণির পাঠক: রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় বাংলা বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার সেই পাঠকদের কথা বলেছেন, যাঁরা ইংরেজি ভাষা জানেন।
প্রাবন্ধিকের উদ্দিষ্ট মন্তব্যের কারণ: প্রাবন্ধিকের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলা ভাষায় রচিত বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের পাঠক দুই শ্রেণির। প্রথম শ্রেণিতে আছে ইংরেজি না জানা বা অল্প জানা পাঠকরা। এঁদের বিজ্ঞানের সঙ্গে কোনো পূর্ব পরিচয় নেই। এই শ্রেণির পাঠকদের ক্ষেত্রে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সমস্যা তৈরি করলেও ভাষা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কারণ তাঁরা বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ। বিষয়টিকে কেবল যথাযথভাবে বুঝে নিলেই হয়। কিন্তু যেসব পাঠক ইংরেজি জানে এবং ইংরেজি ভাষায় কমবেশি বিজ্ঞান পড়েছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্যরকম। সে যখন কোনো বৈজ্ঞানিক রচনা পড়ে তখন তাকে পূর্ব সংস্কার অর্থাৎ ইংরাজির প্রতি পক্ষপাত বর্জন করতে হয়। আগে তাকে বাংলা ভাষাকে আন্তরিকভাবে আয়ত্ত করতে হয়। প্রাবন্ধিক উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে, ব্রহ্লমোহন মল্লিকের যে বাংলা জ্যামিতি ছেলেবেলায় তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি সেটিই যারা ইংরেজিতে জিওমেট্রি পড়েছে তাদের কাছে বোধগম্য হয় না। এই ভাষাগত সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে যাওয়াই সবথেকে কঠিন কাজ।
৪. ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক প্রবন্ধটিতে পরিভাষা রচনা প্রসঙ্গে লেখক যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তা আলোচনা করো।
অথবা, “পরিভাষা রচনা একজনের কাজ নয়…।” ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ নামক রচনায় পরিভাষা বিষয়ে প্রাবন্ধিকের যে মতামত উল্লিখিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে ‘পরিভাষা সমস্যা’ বিষয়ে লেখক যে আলোচনা করেছেন তা সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – কথামুখ: রাজশেখর বসু ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ নামক প্রবন্ধে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যেসব বাধার কথা বলেছেন তার মধ্যে অন্যতম হল পারিভাষিক শব্দের অভাব। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদকৃত পরিভাষা: একবার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী লেখক নানা বিষয়ে পরিভাষা রচনা করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা কাজটি একসাথে বসে করেননি, ফলে নতুন রচিত পরিভাষাগুলির মধ্যে সমতা ছিল না। একই বিষয়ের অনেকগুলি করে পরিভাষা তৈরি হয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কৃত পরিভাষা: ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মানুষদের একত্রিত করে পরিভাষা সংকলন তৈরি করতে পেরেছিল। এই সংকলনটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও যথাযথ। তবে সংকলনটি আরও বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন। ইংরেজি শব্দকেই বাংলা বানানে রূপদান: যতদিন উপযুক্ত বাংলা পরিভাষা তৈরি না হচ্ছে ততদিন ইংরেজি শব্দকেই বাংলা বানানে লিখে চালানো ভালো হবে বলে লেখক মনে করেছেন। নিজস্ব রচনাপদ্ধতি অনুসরণ: পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা সম্ভব নয়, আবার পরিভাষা তৈরির সময় বিজ্ঞান আলোচনার যে নিজস্ব রচনাপদ্ধতি রয়েছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। নতুন পরিভাষা তৈরি: কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির থেকে সাহায্য নিয়ে সকলে মিলে নতুন পরিভাষা গড়ে তোলা।
৫. পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশদে লেখো।
উত্তর – বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের অবদান: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে একটি বড়ো সমস্যা হল পারিভাষিক শব্দের ঘাটতি। যথাযথ পরিভাষা না থাকায় বাংলা ভাষায় লখা বিজ্ঞানের প্রবন্ধ সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন লেখক নানা বিষয়ের পরিভাষা রচনা করতে উদ্যোগী হন। পরিভাষা রচনা একজনের কাজ নয়, সকলে মিলে না করলে এই কাজে নানা ত্রুটি দেখা দেয়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগের এটিই ছিল অন্যতম ভুল। তার ফলে সংকলিত পরিভাষার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়নি। একই ইংরেজি শব্দের বিভিন্ন বাংলা প্রতিশব্দ রচিত হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান; এরপর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিভাষা সমিতি গঠন করেছিলেন, তাতে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক, ভাষাতত্ত্বজ্ঞ, সংস্কৃতের অধ্যাপক এবং কয়েকজন লেখক একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। এর ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের চেয়ে অনেক বেশি সফল হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলন খুব বড়ো নয়। আরও শব্দ বা পরিভাষার অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। তবে প্রয়োজনমতো বাংলা পরিভাষা পাওয়া না গেলেও বৈজ্ঞানিক রচনা লেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে লেখা ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়নিযুক্ত সমিতি অনেক ইংরেজি শব্দের ব্যবহারই বজায় রেখেছেন। যেমন, অক্সিজেন, প্যারাডাইক্লোরোবেনজিন, ফার্ন, আরথ্রোপোডা ইনসেক্টা ইত্যাদি।
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. কোন্ দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের জ্ঞান নগণ্য?
(ক) পাকিস্তান
(খ) ইরাক
(গ) পাশ্চাত্য
(ঘ) আরব
২. কোন্ দোষ মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না?
(ক) ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ
(খ) বাংলায় ইংরেজির প্রভাব
(গ) ইংরেজি ও বাংলার সমান্তরাল প্রয়োগের দোষ
(ঘ) দেশবাসীর ইংরেজি নির্ভরতা
৩. ‘Connotation’ শব্দের অর্থ—
(ক) অর্থব্যাপ্তি
(খ) অর্থসংকোচ
(গ) অর্থরূপান্তর
(ঘ) বিপরীত অর্থ
8. Sensitized Paper-এর অনুবাদ কী লিখলে ঠিক হয় বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন-
(ক) স্পর্শকাতর কাগজ
(খ) সুবেদী কাগজ
(গ) সুগ্রাহী কাগজ
(ঘ) ব্যথাপ্রবণ কাগজ
৫. ইংরেজিতে ভেবে তাকে হুবহু বাংলা অনুবাদে প্রকাশের চেষ্টা করলে লেখা হয়-
(ক) উৎকট
(খ) ভালো
(গ) নিম্নমান
(ঘ) অর্থযুক্ত
৬. “When sulpher burns in air the nitrogen does not take part in the reaction”-এর সংগত বাংলা অর্থ বলেছেন লেখক –
(ক) …নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না
(খ) নাইট্রোজেনের কোনো পরিবর্তন হয় না
(গ) গন্ধক হাওয়ায় পুড়ে যায়
(ঘ) নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে
৭. স্থানবিশেষে পারিভাষিক শব্দ বাদ দেওয়া চলে যেমন অমেরুদণ্ডীর বদলে লেখা যায়-
(ক) মেরুদণ্ডহীন
(খ) শিরদাঁড়াহীন
(গ) মেরুদণ্ড ভাঙা
(ঘ) নরম মেরুদণ্ড
৮. পরিভাষার উদ্দেশ্য-
(ক) ভাষার সংক্ষেপ
(খ) ভাষার অর্থ সুনির্দিষ্ট করা
(গ) ভাষার সংক্ষেপ ও অর্থ সুনির্দিষ্ট করা
কোনোটিই নয়
৯. আমাদের দেশে তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে, যখন এ দেশে-
(ক) বাংলায় প্রচুর পারিভাষিক শব্দ তৈরি হবে
(খ) বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার ঘটবে
(গ) মাতৃভাষার প্রতি মানুষের প্রীতির মনোভাব গড়ে উঠবে
(ঘ) লেখকেরা অনুবাদের আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “বৈজ্ঞানিক সন্দৰ্ভ বোঝা কঠিন।”—এ কথা কেন বলা হয়েছে?
উত্তর – প্রাবন্ধিকের মতে, এদেশের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান কম। প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় না থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে বৈজ্ঞানিক সন্দৰ্ভ বোঝা কঠিন।
২. কোন্ দেশে বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ লেখা সহজ এবং কেন?
উত্তর – ইউরোপ, আমেরিকার মতো পাশ্চাত্য দেশে বৈজ্ঞানিক সন্দৰ্ভ লেখা সহজ কারণ সেইসব দেশে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ঘটেছে। তাই সাধারণ মানুষ তা সহজেই বুঝতে পারে।
৩. “তাঁরা এ-বিষয়ে অবহিত না হলে তাঁদের লেখা জনপ্রিয় হবে না।” এরূপ বলার তাৎপর্য কী?
উত্তর – আমাদের দেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য, প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গেও তাদের যোগ নেই—এই কথাটা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচয়িতাদের বুঝতে হবে।
৪. “কালক্রমে এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তার হলে এই অসুবিধা হবে”—কোন্ অসুবিধার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামান্যমাত্র পরিচয় না থাকা সাধারণ মানুষের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ বোঝার অসুবিধার কথা বলা হয়েছে।
৫. “তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে।”—কখন সুসাধ্য হবে?
উত্তর – এদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার হলে জনসাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়ে বেশি জানবে, তাহলেই বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখা ও বোঝা সহজ হবে।
৬. “এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।” –‘এই দোষ’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর – ভাষার আড়ষ্টতা এবং ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ করার ত্রুটি দূর করতে না পারলে বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।
৭. “এজন্য অনেক সময় তাঁরা অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করেন।” -কেন তাঁরা এরুপ করেন?
উত্তর – ইংরেজি শব্দের মতো বাংলা শব্দেও অর্থব্যাপ্তি আনার চেষ্টায় লেখকরা অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করে ফেলেন।
৮. কীসের অনুবাদকে লেখক উৎকট বলেছেন এবং কী লিখলে ঠিক হয় [একে ঘোষ মেমোরিয়াল স্কুল] বলেছেন?
উত্তর – লেখকের মতে, Sensitized Paper-এর অনুবাদ ‘স্পর্শকাতর কাগজ’ লিখলে অর্থের দিক থেকে উৎকট হয়; বরং ‘সুগ্রাহী কাগজ’ লিখলে ঠিক হয়।
৯. Sensitized paper-এর ঠিক অনুবাদ কী?
উত্তর – Sensitized paper-এর সঠিক অনুবাদ হওয়া উচিত সুগ্রাহী কাগজ।
১০, “এতে রচনা উৎকট হয়।”—কী কারণে রচনা উৎকট হয় বলেছেন প্রাবন্ধিক?
উত্তর – বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা করার সময় তা ইংরেজিতে ভেবে নিয়ে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করার চেষ্টা করলে রচনা উৎকট হয়।
১১. ““এ রকম বর্ণনা বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ।”—কীরকম বর্ণনা প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক এই উক্তি করেছেন?
উত্তর – “The atomic engine has not even reached the blue print stage”-এর বাংলা “পরমাণু এঞ্জিন নীল চিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছায়নি”— এই জাতীয় লেখা প্রকৃতিবিরুদ্ধ।
১২. “এ রকম বর্ণনা বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ”।—কীরকম লিখলে ভালো হয় বলেছেন প্রাবন্ধিক?
উত্তর – প্রাবন্ধিকের মতে “The atomic engine has not even reached the blue print stage”-এর বাংলা “পরমাণু এঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি” লিখলে ভালো হয়।
১৩. কী প্রসঙ্গে লেখক ‘মাছিমারা নকল’ কথাটি বলেছেন?
উত্তর – “When sulpher burns in air the nirtrogen does not take part in the reaction”-এর বাংলা “যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে তখন নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না”—প্রাবন্ধিক এ-জাতীয় আক্ষরিক অনুবাদকে ‘মাছিমারা নকল’ বলেছেন।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য।”—লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর – কথামুখ: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান যারা পড়েন, তাঁদের স্বরূপ নির্ণয় করতে গিয়ে লেখক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। প্রথম শ্রেণি, যাঁরা ইংরেজি জানেন না বা খুব অল্প জানেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণি যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বইও পড়েছেন। তিনি বলেছেন, পাশ্চাত্যের মানুষের তুলনায় এদেশের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য। বোধগম্যতা: বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বোঝা সম্ভব নয়। ইউরোপ-আমেরিকায় পপুলার সায়েন্স লেখা খুব সহজ, কারণ সাধারণ মানুষ অনায়াসে তা বোঝে। কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক পরিস্থিতি এতটা সহজ নয়। এখানে বয়স্কদের জন্য যা লেখা হয়, তা-ও প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো গোড়া থেকে না লিখলে তাঁদের বোঝাবার মতো সহজ হয় না। জনপ্রিয়তা: বাংলা ভাষায় যাঁরা বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি করেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা পেতে গেলে এই বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে প্রাবন্ধিক এই কথাগুলো বলেছেন। ইতিকথা: মনে রাখা দরকার যে, বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার যথাযথ না হলে বিজ্ঞান বিষয়ক সাহিত্যের বিকাশ ঘটাও সম্ভব নয়।
২. বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ কী? বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ লেখার জন্য কীরূপ রচনাপদ্ধতি আবশ্যক বলেছেন লেখক?
উত্তর – বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ’-এর পরিচয়: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু রচিত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে আমরা ‘বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ’ শব্দ দুটি পেয়েছি। বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রবন্ধ বা গ্রন্থকে বলা হয় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ।
আবশ্যক রচনাপদ্ধতি: বৈজ্ঞানিক জ্ঞান: বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ রচনার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে দেশের পাঠকদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান কতদূর সে সম্পর্কে জানতে হতে হবে। আক্ষরিক অনুবাদ: আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই ইংরেজি ভাষা এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই প্রবন্ধ লেখার ভাষা যাতে ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ না হয়, সেই খেয়াল রাখতে হবে। আলাদা আলাদা শব্দ প্রয়োগ: বাংলায় বিভিন্ন অর্থের জন্য আলাদা আলাদা শব্দ প্রয়োগ করে লেখাকে জনসাধারণের কাছে সহজ করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে বাংলা শব্দের বদলে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা উচিত। বাংলা ভাষার প্রকৃতি বজায়: লেখার সময় লেখক যদি ইংরেজিতে ভেবে তা বাংলায় হুবহু অনুবাদের চেষ্টা করেন, তবে তা হবে বাংলা ভাষার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। তাই বাংলা ভাষার প্রকৃতি বজায় রেখে বাক্য তৈরি করতে হবে। লেখনী শৈলী: প্রাবন্ধিক বলেছেন, বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ রচনার ক্ষেত্রে লেখকদের লেখা হবে অলংকারবর্জিত, স্পষ্ট এবং সরল। তথ্যপরিবেশন: বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করার সময়ে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য পরিবেশন করতে হবে। লেখার ভাষা হবে ঝরঝরে, অর্থ হবে সহজ। লেখকের স্পষ্ট ধারণা: বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ রচনার সময় পাঠকদের মানসিকতা, জ্ঞান এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে লেখকের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
৩. “তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে।”—কোন্ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিকের এই মন্তব্য? কীভাবে বৈজ্ঞানিক রচনা সুসাধ্য হবে বলে তিনি মনে করেন?
উত্তর – প্রসঙ্গ: রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় কীভাবে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার অসুবিধা দুর হতে পারে তার আলোচনা প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছেন।
বৈজ্ঞানিক রচনা সুসাধ্য হওয়ার পদ্ধতি: কথামুখ: এদেশে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার নানারকম বাধা আছে। যেমন যথেষ্ট পরিমাণ পরিভাষা না থাকা। আরেকটি সমস্যার জায়গা হল যে পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অতি নগণ্য। পরিচিতি: প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় না থাকলে যে-কোনো বৈজ্ঞানিক রচনাই বোঝা কঠিন হয়ে ওঠে। ইউরোপ-আমেরিকায় পপুলার সায়েন্স লেখা সুসাধ্য, যেখানে সকলেই তা বোঝে। কিন্তু আমাদের দেশে তা লিখতে গেলে প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো গোড়া থেকেই লিখতে হবে। সচেতনতা: বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাকে জনপ্রিয় করতে গেলে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ না করে সঠিক এক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। প্রকৃতি: বাংলা ভাষার প্রকৃতিকে বুঝতে হবে, একই সঙ্গে পাঠকের প্রকৃতিকেও বুঝতে হবে।শেষের কথা: লেখক আশা করেছেন, কালক্রমে এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তার ঘটলে সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনাও সুসাধ্য হবে।
৪. “এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।”—কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে? এ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক যে নিদর্শনগুলি তুলে ধরেছেন তা লেখো।
উত্তর – দোষের পরিচয়: বিজ্ঞান আলোচনার সঠিক রচনাপদ্ধতি আয়ত্ত না করতে পারার জন্য রচনার ভাষা অনেকক্ষেত্রেই কঠিন এবং ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ হয়ে পড়ে। এই দোষের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
প্রাবন্ধিক প্রদত্ত নিদর্শনসমূহ: কথামুখ: বৈজ্ঞানিক সাহিত্যকে যথাযথ হতে হলে সঠিক রচনাপদ্ধতি আয়ত্ত করা অত্যন্ত জরুরি। শব্দপ্রয়োগ: অনেকেই মনে করেন যে ইংরেজিতে এক-একটি শব্দ যেরকম বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়, বাংলা প্রতিশব্দের ক্ষেত্রেও তা-ই হওয়া উচিত। এজন্য তাঁরা অনেকসময় অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করে থাকেন। লেখক এরকম কয়েকটি শব্দের উদাহরণও দিয়েছেন। যেমন—ইংরেজি sensitive শব্দটি নানা অর্থে চলে, যেমন – sensitive person, sensitive wound, sensitive plant, sensitive balance, sensitive photographic paper ইত্যাদি। অর্থভেদে শব্দপ্রয়োগ: কিন্তু প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে, বাংলায় অর্থভেদে বিভিন্ন শব্দই প্রয়োগ করা উচিত। যেমন—অভিমানী, ব্যথাপ্রবণ, উত্তেজী, সুবেদী, সুগ্রাহী ইত্যাদি। Sensitized paper-এর অনুবাদ স্পর্শকাতর কাগজ করলে তা অত্যন্ত উৎকট হবে, কিন্তু সেটাও কেউ কেউ লিখে থাকেন। অথচ এর বদলে সুগ্রাহী কাগজ লিখলে ঠিক হয়। উৎকট রচনা: অনেক লেখক তাঁদের বক্তব্য ইংরেজিতে ভাবেন এবং যথাযথ বাংলা অনুবাদে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। এতে রচনা আরও উৎকট হয়ে যায়। “The atomic engine has not even reached the blue print stage.”এর বাংলা যদি করা হয় “পরমাণু এঞ্জিন নীল চিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছায়নি”এই অনুবাদ বাংলা ভাষার প্রকৃতির সঙ্গে মিলবে না, অথচ “পরমাণু এঞ্জিনের নকশা এখনও পর্যন্ত প্রস্তুত হয়নি।”—এই অনুবাদে বাক্যের অর্থ অনেক সরল হয়ে যায়। বাংলা ভাষার নিজস্ব প্রকৃতি বজায়: “When sulphur burns in air the nitrogen does not take part in the reaction”“যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে তখন নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না।” এরকম ইংরেজি থেকে বাংলায় হুবহু নকল না করে “নাইট্রোজেনের কোনো পরিবর্তন হয় না” লিখলে বাক্যটিতে বাংলা ভাষার নিজস্ব প্রকৃতি বজায় থাকে এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্যও হয়।
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. শব্দের ‘ত্রিবিধ’ অর্থের প্রথমটি—
(ক) আভিধানিক অর্থ প্রকাশ করে
(খ) লক্ষণা অর্থ প্রকাশ করে
(গ) ব্যঞ্জনা প্রকাশ করে
(ঘ) শুধু বর্ণনা দেয়
২. ‘অরণ্য’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ-
(ক) নদী
(খ) বন
(গ) গাছ
(ঘ) পাহাড়
৩. ‘অরণ্যে রোদন’ ব্যঞ্জনাটির অর্থ-
(ক) খুব রাগ
(খ) নিষ্ফল খেদ
(গ) খুব কষ্ট
(ঘ) খুব ক্ষোভ
৪. বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ অলংকার কিছু কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে?
(ক) উপমা এবং রূপক
(খ) উৎপ্রেক্ষাণ
(গ) অতিশয়োক্তি
(ঘ) ব্যস্তুতি
৫. বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গে ভাষা অত্যন্ত-
(ক) কঠিন হওয়া উচিত
(খ) সরল ও স্পষ্ট হওয়া উচিত
(গ) দুর্বোধ্য হওয়া উচিত
(ঘ) জটিল হওয়া উচিত
৬. “হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড”—কথাটি বলেছিলেন-
(ক) অশ্বঘোষ
(খ) কালিদাস
(গ) ভবভূতি
(ঘ) ধোয়ী
৭. অল্পবিদ্যা যে ভয়ংকরী তার প্রমাণ একটি পত্রিকায় কীভাবে লেখক পেয়েছেন?
(ক) ওজোন গ্যাস স্বাস্থ্যকর
(খ) হাওয়ার ওজন আছে
(গ) আলোর গতিবেগ খুব কম
(ঘ) শব্দ আলোর আগে পৌঁছোয়
৮. শব্দের শক্তির ‘ত্রিবিধ’ রূপের প্রথমটি হল-
(ক) লক্ষণা
(খ) ব্যঞ্জনা
(গ) বর্ণনা
(ঘ) অভিধা
৯. পারিভাষিক শব্দের প্রথমবার প্রয়োগের সময় যা দেওয়া আবশ্যক তা হল-
(ক) উৎস
(খ) ব্যাখ্যা
(গ) অর্থ
(ঘ) মূল শব্দ
১০. “বাংলা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধাদিতে আর একটি দোষ” প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক কোন্ প্রবাদের উল্লেখ করেছেন?
(ক) অরণ্যে রোদন
(খ) অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী
(গ) হাতের পাঁচ
(ঘ) হ-য-ব-র-ল
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।”—কোন্ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় বলেছেন প্রাবন্ধিক?
উত্তর – প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে সমস্ত পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ হয়, এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।
২. স্থানবিশেষে পারিভাষিক শব্দ যে বাদ দেওয়া চলে তোমার পাঠ্য ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধ থেকে তার একটা উদাহরণ দাও।
উত্তর – ‘অমেরুদণ্ডী’ শব্দটির বদলে যেসব প্রাণীর শিরদাঁড়া নেই—এরকম লিখে স্থানবিশেষে পারিভাষিক শব্দ বাদ দেওয়া চলে।
৩. পরিভাষার উদ্দেশ্য কী বলেছেন লেখক?
অথবা, পরিভাষার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর – প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে, পরিভাষার উদ্দেশ্য ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করা এবং তার অর্থ সুনির্দিষ্ট করা।
৪. শব্দ সম্পর্কে আলংকারিকরা যে ত্রিবিধ বলেছেন তা কী কী?
অথবা, “আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছে”— কোন্ ‘ত্রিবিধ কথা’র প্রসঙ্গ লেখক স্মরণ করেছেন?
অথবা, “আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন”— শব্দের ‘ত্রিবিধ কথা’ কী?
উত্তর – রাজশেখর বসু রচিত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে শব্দ সম্পর্কে আলংকারিকরা অভিধা, লক্ষণা, ব্যঞ্জনা—এই তিনটি বৃত্তির উল্লেখ করেছেন।
৫. সাধারণদের জন্য লিখিত বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভে পারিভাষিক শব্দের কীরুপ ব্যবহারের পরামর্শ প্রাবন্ধিক দিয়েছেন?
উত্তর – প্রাবন্ধিকের মতে, সাধারণদের জন্য লিখিত বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভে অল্প পরিচিত পারিভাষিক শব্দ প্রথমবার ব্যবহার হলে তার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। পরে শুধু পারিভাষিক শব্দটির ব্যবহারই যথেষ্ট।
৬. অভিধা কী? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – শব্দের মুখ্য অর্থ প্রকাশিত হয় যে বৃত্তির দ্বারা, তার নাম অভিধা। যেমনপাঁকে জন্মে যা, তা ‘পঙ্কজ’ হলেও শব্দটির অভিধা ‘পদ্ম’ অর্থেই সীমাবদ্ধ।
৭. লক্ষণা কী? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – যখন কোনো শব্দের মুখ্য অর্থের থেকেও গৌণ অর্থ বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তখন তা হয় লক্ষণা। যেমন—“এই রিকশা, এদিকে উত্তর – এসো” এখানে রিকশা নয়, রিকশাওয়ালাই লক্ষণার্থে ফুটে উঠেছে।
৮. ব্যঞ্জনা কী? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – যে প্রবণতার কারণে শব্দ নতুন আসার ইঙ্গিত তৈরি করে, তাকে বলা হয় ব্যঞ্জনা। যেমন, ‘অরণ্যে রোদন’- যার আক্ষরিক অর্থ অন্য কিছু হলেও ব্য অনুযায়ী অর্থ হল নিষ্ফল খেদ।
৯. “একটি দোষ প্রায় নজরে পড়ে।”-কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সেখকরা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলিতে সর ভুল তথ্য দেন এখানে সেই ‘দোষ’-এর কথা বলা হচ্ছে।
১০. অলংকারের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য ও সাধারণ সাহিত্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
উত্তর – বৈজ্ঞানিক সাহিত্য অলংকারহীন, সহজ, স্পষ্ট হওয়া উচিত। সাধারণ সাহিত্যের ভাষা, উপমা, উৎপ্রেক্ষা প্রভৃতি অলংকারে পূর্ণ কাব্যিক হতে পারে।
১১. কোন্ উক্তিকে লেখক কাব্যের উপযুক্ত, ভূগোলের উপযুক্ত নয় বলেছেন?
উত্তর – “হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড”- কালিদাসের এই উদ্ভিতে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু বলেছেন কাব্যের উপযুক্ত, ভূগোলের উপযুক্ত নয়।
১২. “বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে যত কম থাকে তত ভালো।”—কী কম থাকার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – লক্ষণা বা ব্যঞ্জনা এবং উৎপ্রেক্ষা, অতিশয়োকি ইত্যাদি অলংকার বৈজ্ঞানিক রচনায় যথাসম্ভব কম থাকা ভালো।
১৩. “এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত।”—কোন্ কথা মনে রাখা উচিত?
উত্তর – বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের ভাষা অত্যন্ত সরল ও স্পষ্ট হওয়া আবশ্যক এই কথাটি সমস্ত বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচয়িতাদের মনে রাখা উচিত।
১৪. “এই রকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের পক্ষে অনিষ্টকর।”—কোন্ ভুলের কথা বলেছেন প্রাবন্ধিক?
উত্তর – অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর এ বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। কিন্তু ওজোন গ্যাস স্বাস্থ্যকর এই ধরনের ভুল লেখার কথা বলেছেন প্রাবন্ধিক।
১৫. ‘অল্পবিদ্যা ভংয়করী’ প্রবাদটিকে একটি বাক্যে প্রয়োগ করো।
উত্তর – হাতুড়ে ডাক্তাররা যেভাবে সামান্য জ্ঞান নিয়ে মানুষজনের চিকিৎসা করে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে, কথায় বলে না, ‘অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী’?
১৬. ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ কোন্ বিষয় সম্পর্কে এই অভিমত দেওয়া হয়েছে?
উত্তর – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করতে গিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া প্রসঙ্গে এই অভিমত দেওয়া হয়েছে।
১৭. “কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় দেখেছি”—কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রাবন্ধিক কী দেখেছেন?
উত্তর – প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু একটি পত্রিকায় লেখা দেখেছিলেন—“অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর বলে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তারা জীবনে বেঁচে থাকার পক্ষে অপরিহার্য অঙ্গ মাত্র। তবে ওজন গ্যাস স্বাস্থ্যকর।”
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “তাতে পাঠকের অসুবিধে হয়।” —কীসে পাঠকের অসুবিধা হয়? অসুবিধা দূর করার জন্য কী কী করা প্রয়োজন?
উত্তর – অসুবিধার বিষয়: রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় উল্লেখ করেছেন যে যদি বারবার কোনো বিষয়ের বর্ণনা দিতে হয় তবে অকারণে একই কথার পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং তাতেই পাঠকের অসুবিধা হয়।
অসুবিধা দূর করার উপায়: পরিভাষার ব্যবহার: পারিভাষিক শব্দ বাদ দিলে ভাষা সবসময়ে সুন্দর হয় না। পরিভাষার উদ্দেশ্য হল ভাষাকে সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট করা। পরিভাষা না থাকলে বিষয়ের বর্ণনা অতিরিক্ত বড়ো হবে। তখন পাঠকের পক্ষে বিষয়ের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে অসুবিধা হবে। পারিভাষিক শব্দের ব্যাখ্যা: অল্পশিক্ষিত বা বিজ্ঞান পড়েননি এরকম পাঠকের পক্ষে প্রথমেই পরিভাষাকে বুঝতে পারা অসুবিধাজনক হতে পারে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে অল্প পরিচিত পারিভাষিক শব্দগুলির প্রথম প্রয়োগের সময়ে তার ব্যাখ্যা দেওয়া আবশ্যক। পরে তাহলে শুধু বাংলা পারিভাষিক শব্দটি দিলেই চলবে। অলংকারহীন সরল ও স্পষ্ট ভাষা: দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার ভাষা যতদূর সম্ভব অলংকারহীন হওয়া উচিত। লেখার ভাষা হবে অত্যন্ত সরল ও স্পষ্ট। সঠিক তথ্য: এছাড় রচনাকারদের সঠিক তথ্য-সহ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করা উচিত। ভুল তথ্য সাধারণ পাঠকের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই লেখকদের এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
২. “আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন।” — এগুলি কী কী? উদাহরণ-সহ এই ত্রিবিধ শক্তি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – শব্দের ত্রিবিধ শক্তি: শব্দের ত্রিবিধ শক্তি বলতে–অভিধা, লক্ষণা এবং ব্যঞ্জনাকে বোঝানো হয়েছে।
ত্রিবিধ শক্তির ব্যাখ্যা: উল্লিখিত শব্দের ত্রিবিধ শক্তির ব্যাখ্যা উদাহরণের সাহায্যে দেখানো হল— অভিধা: প্রাবন্ধিক এবং আলংকারিকদের মতে, শব্দবৃত্তির প্রথমটি হল অভিধা। শব্দের মুখ্য অর্থ প্রকাশিত হয় যে বৃত্তির দ্বারা, তাকে বলা হয় অভিধা। এই বৃত্তিতে শব্দটি বাচক। শব্দের অর্থটি বাচ্য বা অভিধেয়। যেমন—’পঙ্কজ’ শব্দে পদ্ম অর্থটাই মুখ্য (পাঁকে জন্মে যা, তা ‘পঙ্কজ’ হলেও শব্দটির অভিধা ‘পদ্ম’ অর্থেই সীমাবদ্ধ)।
লক্ষণা: শব্দবৃত্তির দ্বিতীয় ভাগ হল লক্ষণা। কোনো শব্দের মুখ্য অর্থের থেকেও গৌণ অর্থ যখন প্রধান হয়ে ওঠে, তখন তা হয় লক্ষণা। যেমন—“এই রিকশা, এদিকে এসো” – এই বাক্যে রিকশা শব্দটির মধ্য দিয়ে রিকশাওয়ালাকেই বোঝানো হয়েছে। এখানে মুখ্য অর্থ ‘যান’-এর থেকে গৌণ অর্থ ‘মানুষ’ প্রধান হয়ে উঠেছে।
ব্যঞ্জনা: শব্দবৃত্তির তৃতীয় ভাগ হল ব্যঞ্জনা। অভিধা এবং লক্ষণা দ্বারা শব্দার্থ যখন ব্যাখ্যা করা যায় না, এবং শব্দ যখন নতুন অর্থের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে তখন তাকে বলা হয় ব্যঞ্জনা। যেমন— “সোনার হাতের সোনার কাঁকন কে কার অলংকার?”
এই বাক্যে সোনা— ধাতু (অভিধা)।
সোনার হাত এবং সোনার কাঁকন— রং (লক্ষণা)।
কে কার অলংকার — হাতের অলংকার হয়ে সোনা হাতকে অলংকৃত করেছে। স্বর্ণকারের কারুকার্য ঈশ্বরের সৃষ্ট হাতের অলংকার। আবার ফরসা হাতের সৌন্দর্য সোনার রঙে ঔজ্জ্বল্য এনেছে। সোনা শব্দের প্রয়োগ এখানে ব্যঞ্জনা এনেছে।
৩. “কিন্তু বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে যত কম থাকে ততই ভালো।”—কী কম থাকার কথা বলা হয়েছে? সেগুলি কম থাকার সুবিধা কী?
উত্তর – কম থাকার বিষয়: রাজশেখর বসুর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধটি থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। আলংকারিকরা শব্দের তিনরকম শক্তির কথা বলেছেন। এগুলি হল—অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা। বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে এইগুলি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করার কথা বলেছেন প্রাবন্ধিক।
কম থাকার সুবিধা: ‘অভিধা-লক্ষণা-ব্যঞ্জনা’-র ব্যবহার: যে শক্তির দ্বারা শব্দ স্পষ্টভাবে তার মূল অর্থটিকে তুলে ধরে, তার নাম অভিধা শক্তি। এই শক্তির দ্বারা যে অর্থ প্রকাশিত হয় তার নাম অভিধেয় অর্থ বা বাচ্যার্থ। যে শক্তির দ্বারা বাচ্যার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রকৃত অর্থের ধারণা জন্মায় তার নাম লক্ষণা। অভিধা বা লক্ষণা ছাড়া শব্দে যদি অতিরিক্ত একটি নতুন অর্থের প্রকাশ ঘটে, তবে তাকে বলে ব্যঞ্জনা। এই ব্যঞ্জনা হল শব্দের অন্য-এক অর্থ। যেমন—‘অর্ধচন্দ্ৰ’ বলতে অর্ধেক চাঁদকে না বুঝিয়ে গলাধাক্কা বোঝায়। এগুলির ব্যবহার সাহিত্যে চলতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক রচনায় অলংকার সম্পূর্ণ বর্জনীয়। বোধগম্যতা: কিছু উপমার হয়তো প্রয়োজন হতে পারে, রূপকের প্রয়োগও স্থানবিশেষে চলতে পারে, কিন্তু অলংকার একেবারেই বর্জন করা উচিত। কেননা, সাহিত্যে ভাবপ্রকাশের সুযোগ থাকলেও বিজ্ঞান হল জ্ঞানের কথা। জ্ঞানের কথাকে সহজ, সরল ও স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করতে হয়। না হলে সেটি বুঝতে অসুবিধা হয়।
৪. “এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত।” কে? লেখকের কী মনে রাখা উচিত ?
উত্তর – বক্তা: ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু স্বয়ং।
লেখকদের মনে রাখার বিষয়: প্রবন্ধের ভাষা: প্রাবন্ধিকের মত অনুসারে, যে-কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের ভাষা অত্যন্ত সরল ও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন—এ কথা সকল লেখকের মনে রাখা উচিত। আমাদের মতো দেশে মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অত্যন্ত সামান্য। তাই তাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা লিখতে গেলে প্রাথমিক বিজ্ঞানের একেবারে গোড়া থেকে সহজ ভাষায় লিখে যেতে হবে। যথাযথ রচনাপদ্ধতি অনুসরণ: এমন এক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যা ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ হবে না। ইংরেজিতে ভেবে নিয়ে বাংলায় অনুবাদ করার যে প্রচলিত অভ্যাস অনেকের মধ্যে আছে, তা বিষয়কে আরও কঠিন করে তোলে। পরিভাষার ব্যবহার: অনেকে মনে করেন, রচনাকে সহজ করার জন্য পারিভাষিক শব্দ বাদ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। পরিভাষা ছাড়া কখনো কখনো সঠিক ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। অলংকারহীন শব্দপ্রয়োগ: বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের ভাষাকে সরল করার জন্য ব্যঞ্জনা, উৎপ্রেক্ষা ইত্যাদি আলংকারিক শব্দের প্রয়োগ যতটা সম্ভব ত্যাগ করাই ভালো। সাহিত্য বা অন্য বিষয়ের ভাষার সঙ্গে বিজ্ঞানের ভাষার স্পষ্ট পার্থক্য আছে। উপসংহার: এইসব কথা মনে রেখেই বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাকর্মে লেখকদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন।
৫. “বাংলা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধাদিতে আর একটি দোষ প্রায় নজরে পড়ে।”—কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে? এই দোষ মুক্তির উপায় কী?
উত্তর – দোষের পরিচয়: রাজশেখর বসুর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনার উল্লিখিত অংশে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করতে গিয়ে অল্পবিদ্যার ফলে হওয়া ভুল ত্রুটির কথা বলেছেন।
দোষ মুক্তির উপায়: সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার ক্ষেত্রে পাঠকের মতোই লেখককেও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। সঠিক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ ও জ্ঞান: আবার সঠিক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ করা, ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ না করা ইত্যাদির প্রতি যেমন লক্ষ রাখা দরকার, ঠিক সেরকমই বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকারও প্রয়োজন। কিন্তু বহু লেখকই বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না নিয়েই লিখতে যান। বিভিন্ন সাময়িক পত্রে এরকম কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন একটি পত্রিকায় লেখা হয়েছিল—“অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর বলে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তারা জীবের বেঁচে থাকার পক্ষে অপরিহার্য অঙ্গ মাত্র। তবে ওজন গ্যাস স্বাস্থ্যকর।” এরকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের জন্য ক্ষতিকর। এই সমস্যামুক্তির জন্য পত্রিকার সম্পাদককেই দায়িত্বশীল হতে হবে।অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা রচনা যাচাই: অবিখ্যাত লেখকের বৈজ্ঞানিক রচনা প্রকাশের আগে অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে সেটি যাচাই করে নিতে হবে। তবেই এই দোষ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। শেষের কথা: লেখকের যথাযথ শিক্ষা এবং সম্পাদকের সচেতনতাই বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাকে সার্থক করে তুলতে পারে।
৬. “এই রকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের পক্ষে অনিষ্টকর।” কী ধরনের ভুল লেখার কথা বলা হয়েছে? তা সাধারণ পাঠকের কাছে অনিষ্টকর কেন?
উত্তর – ভুল লেখার উল্লেখ: প্রশ্নোধৃত অংশটি রাজশেখর বসুর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে উল্লিখিত হয়েছে। প্রাবন্ধিক একবার এক পত্রিকায় দেখেছিলেন—”অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর বলে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তারা জীবের বেঁচে থাকার পক্ষে অপরিহার্য অঙ্গ মাত্র। তবে ওজোন গ্যাস স্বাস্থ্যকর।” এই ধরনের ভুল লেখার কথাই এখানে বলা হয়েছে। আমাদের মতো দেশে যেখানে জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রায় নেই সেখানে এই জাতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য আরও ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিতে পারে। • অনিষ্টকর হওয়ার কারণ: ভুল বার্তা প্রেরণ: বিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞান বিষয়ক রচনায় বৈজ্ঞানিক সত্যকে হুবহু রক্ষা করতে হয়। তা না হলে সাধারণ পাঠকের কাছে ভুল বার্তা যায়। জীবনযাপনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব: এই জাতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য যে শুধু জ্ঞান বা শিক্ষার ক্ষেত্রে ভ্রান্তি সৃষ্টি করে, তা-ই নয়, ব্যক্তির জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও তা ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিতে পারে। তাতে সমূহ বিপদ। প্রাবন্ধিকের | অভিমত: তাই প্রাবন্ধিক বলতে চেয়েছেন, বৈজ্ঞানিক রচনা পত্রিকায় প্রকাশের আগে তা কোনো অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে যাচাই করিয়ে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সম্পাদককে অনেক সচেতন থাকতে হবে। তাহলে পাঠকের অনিষ্টের আর সম্ভাবনা থাকবে না।
সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
১. বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে কী কী অসুবিধার কথা প্রাবন্ধিক আলোচনা করেছেন?
অথবা, ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যেসব অসুবিধার কথা বলেছেন তা আলোকপাত করো।
অথবা, “বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় এখনও নানা-রকম বাধা আছে।”—বাধাগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করো।
উত্তর – কথাখ: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অসুবিধের কথা বলেছেন। যেমন— পারিভাষিক শব্দ: প্রথমেই যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে তা হল পারিভাষিক শব্দের অভাব। লেখক জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ সমস্যার সমাধান সম্পূর্ণরূপে সম্ভব হয়নি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান: দ্বিতীয় সমস্যা হল, পাশ্চাত্য জনসাধারণের তুলনায় প্রবেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান খুব কম। বিজ্ঞানের প্রাথমিক রাগুলির সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক লেখা বোঝা কঠিন। বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার ঘটলে এ সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।
বলোপদ্ধতি অনুসরণ: তৃতীয় সমস্যা, বিজ্ঞান রচনার জন্য যে রচনাপদ্ধতির দরকার, তা এখনও আমাদের লেখকরা রপ্ত করতে পারেননি। বহুক্ষেত্রেই লেখার ভাবায় আড়ষ্টতা থাকে এবং তা ইংরেজি ভাষার আক্ষরিক অনুবাদ হয়ে পড়ে। করে রচনাটি উৎকট হয়ে যায়। এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচবার জন্য, বাংলা ভাবার প্রকৃতি অনুযায়ী লেখার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে।
অল্পবিদ্যা: চতুর্থ সমস্যাটি হল, লেখকের অল্পবিদ্যার সমস্যা। লেখক বিজ্ঞান কম জানলে তাঁর রচনায় থাকা ভুল তথ্য বা অস্পষ্ট তথ্য সাধারণ পাঠকের
উপসংহার: তাই প্রাবন্ধিকের পরামর্শ হল, বৈজ্ঞানিক লেখা প্রকাশের আগে অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে তা অবশ্যই বাচাই করে নেওয়া উচিত।
২. বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার বাধা ও দোষ দূর করতে লেখক কী কী পরামর্শ দিয়েছেন ও বক্তব্য রেখেছেন?
অথবা, “বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় এখনও নানারকম বাধা আছে।”—এই বাধা দূর করতে লেখক কী কী পরামর্শ দিয়েছেন তা আলোচনা করো।
উত্তর – শুরুর কথা: ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার করতে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর সুচিন্তিত মতামত ও বাধা ও দোষ পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলা বানানে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার: প্রাবন্ধিকের মতে, বাংলায় বিজ্ঞান সংক্রান্ত পরিভাষা রচনা করতে সকলের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। উপযুক্ত বাংলা পারিভাষিক শব্দ রচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাংলা বানানে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করারই পরামর্শ দিয়েছেন।
গোড়া থেকে শুরু: আমাদের দেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য, তাই যাঁরা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখবেন তাঁদের তিনি প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো গোড়া থেকেই লিখতে বলেছেন।
ভাষা ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদের সমস্যাসমাধান: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু মনে করেন, ভাষার আড়ষ্টতা এবং ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদের ত্রুটি অবশ্যই দূর করা দরকার।
অর্থভেদে শব্দপ্রয়োগ: ইংরেজি শব্দের মধ্যে অর্থের প্রসারতা আছে। কিন্তু তা অনুসরণ না করে বাংলায় বিভিন্ন অর্থের জন্য বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগকেই তিনি যথাযথ বলেছেন। যেমন— Sensitized paper’-এর অনুবাদ ‘স্পর্শকাতর কাগজ’ না বলে ‘সুগ্রাহী কাগজ’ লেখাই প্রাবন্ধিকের মতে উপযুক্ত। তাঁর মতে, সাধারণের জন্য লিখিত বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভে কোনো পারিভাষিক শব্দের প্রথম প্রয়োগের সময় তার ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি। বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের ভাষা সরল, স্পষ্ট এবং অলংকারবর্জিত হওয়া উচিত।
যাচাই করিয়ে নেওয়া। এতে পাঠকের কাছে ভুল তথ্য যাওয়ার সম্ভাবনা উপসংহার: সবশেষে প্রাবন্ধিকের মতে, পত্রপত্রিকায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশের আগে সম্পাদকের উচিত কোনো অভিজ্ঞ লেখককে দিয়ে সন্দর্ভটি থাকে না।
৩. বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ বা প্রবন্ধ যাঁদের জন্য লেখা হয়, পাঠক হিসেবে তাঁদের অবস্থান চিহ্নিত করো।
উত্তর – প্রাক্কথন: ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু বিজ্ঞান-পাঠকদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম ভাগে আছেন যাঁরা ইংরেজি জানেন না বা খুব অল্প জানেন। অন্যদিকে যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় কিছু বিজ্ঞান বই পড়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয় ভাগের অন্তর্ভুক্ত।
প্রথম ভাগে অবস্থানকারী পাঠকবর্গ: প্রথম ভাগে যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে বিজ্ঞানের পূর্বপরিচয় ঘটেনি। আধুনিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে এঁরা ওয়াকিবহাল নন। ইংরেজি ভাষা না-জানায় এঁরা ইংরেজি ভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত। বাংলায় বিজ্ঞান শিখতে তাঁদের অসুবিধে হয় না। প্রাবন্ধিক ব্রহ্মমোহন মল্লিকের বাংলায় লেখা জ্যামিতি বই থেকে একটি বাক্য উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন—“এক নির্দিষ্ট সীমাবিশিষ্ট সরলরেখার উপর এক সমবাহু ত্রিভুজ অঙ্কিত করিতে হইবে।” একজন ইংরেজি না-জানা সাধারণ পাঠকের কাছে এর অর্থ বুঝতে অসুবিধা হয়নি, কারণ ভাষা এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তৈরি করেনি। বিজ্ঞান শেখার ক্ষেত্রে ভাষা বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
দ্বিতীয় ভাগে অবস্থানকারী পাঠকবর্গ: দ্বিতীয় ভাগে যাঁরা আছেন, তাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞানের কিছু বইও পড়েছেন। তাঁদের কাছে বাংলায় লেখা কোনো বাক্য বুঝতে অসুবিধা হয়। দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠকদের আসল সমস্যা ইংরেজি ভাষার প্রতি পক্ষপাত। এই পাঠকদের বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান পড়তে গেলে তুলনামূলক বেশি চেষ্টা করতে হয়।
8. ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিকের যে বক্তব্য ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
উত্তর – কথামুখ: সাহিত্যরচনার পাশাপাশি রাজশেখর বসু তাঁর বিজ্ঞানচর্চার অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করেছিলেন যে, আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার কিছু বাধা রয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা সন্দর্ভ যাদের জন্য লেখা হয়, তাদের দুটি শ্রেণি। দুটি শ্রেণির পরিচয়: প্রথম হল, যারা ইংরেজি জানে না, দ্বিতীয়, যারা ইংরেজি জানে। প্রথম শ্রেণি ইংরেজি ভাষার প্রভাবমুক্ত, ফলে বাংলা পরিভাষা শিখতে সক্ষম। দ্বিতীয় শ্রেণি ইংরেজি ভাষায় যতটা স্বচ্ছন্দ বাংলা ভাষায় ততটা না। তাই বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পড়ে বোঝার জন্য আগে তাঁদের বাংলা ভাষা আয়ত্ত করতে হবে। পরিভাষা সংকলনে উদ্যোগী হওয়া: প্রাবন্ধিকের সময়ে পরিভাষার সংকলনও যথাযথ ছিল না। পরিভাষা সংকলনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নিযুক্ত সমিতির সমস্ত উদ্যোগকে আরও কার্যকর করার প্রয়োজনের কথা প্রাবন্ধিক বলেছেন। ইংরেজি শব্দকে বাংলা হরফে ব্যবহার: বাংলা গ্রহণযোগ্য শব্দ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ইংরেজি শব্দকেই বাংলা হরফে ব্যবহার করাকে তিনি উপযুক্ত বলে মনে করেছেন। সহজসরল ও অলংকারহীন ভাষা প্রয়োগ: আমাদের দেশের মানুষদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য। তাই বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ রচনার সময় তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে রচনাটিকে ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ থেকে মুক্ত হয়ে সহজ, সরল, অলংকারহীন হতে হবে। বাংলা ভাষার প্রকৃতি অনুযায়ীই অনুবাদ করতে হবে। অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা রচনা যাচাই: পত্রপত্রিকায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখার সময় সম্পাদকের উচিত অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নেওয়া, নয়তো ভুল তথ্য পাঠকদের ক্ষতি করতে পারে।