wb 10th Bengali

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 2 অসুখী একজন

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 2 অসুখী একজন

West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 2 অসুখী একজন

West Bengal Board 10th Bengali Solutions

কবি পরিচিতি

জন্ম: চিলির বিখ্যাত কবি এবং দক্ষ রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা তাঁর ছদ্মনাম। তাঁর ‘পাবলো’ নামের সম্ভাব্য উৎস পল ভারলেইন, আর ‘নেরুদা’-র উৎস চেক লেখক জান নেরুদা। কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন: মাত্র দশ বছর বয়সেই নেরুদার কবিতা লেখার সূচনা। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর প্রথম বই Twilight প্রকাশ করার জন্য নিজের যাবতীয় জিনিস বিক্রি করে দেন। Twenty Love Poems and a Song of Despair কাব্যগ্রন্থটি তাঁকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে লেখালেখির জন্য পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নেরুদা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। চিলিতে দক্ষিণপন্থী সরকার এলে নেরুদাকে আত্মগোপন করতে হয়। এই সময়েই নেরুদা লেখেন—Canto General |
নেরুদা জীবনের নানা পর্বে একাধিক কূটনৈতিক পদে থেকে যোগ্যতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব সামলেছেন। একসময় চিলির কমিউনিস্ট পার্টির সেনেটর ছিলেন তিনি। কনজারভেটিভ চিলিয়ান রাষ্ট্রপতি গঞ্জালেস ভিদেলা চিলি থেকে কমিউনিজমকে উচ্ছেদ করার পর নেরুদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। নেরুদার বন্ধুরা এই সময় তাঁকে চিলির বন্দর ভালপারাইসোর একটি বাড়িতে কয়েক মাসের জন্য লুকিয়ে রাখেন। গ্রেফতারি এড়িয়ে নেরুদা মাইহু হ্রদের গিরিপথ ধরে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। এর কয়েক বছর পর নেরুদা সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দের এক ঘনিষ্ঠ সহকারীতে পরিণত হন।
প্রতিবাদী কবিতা রচনার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, এমনকি রাজনৈতিক ইস্তাহার।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নেরুদা পান আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে দেওয়া হয় সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল — Extravagaria, The Captain’s Verses, Still Another Day, The Yellow Heart, World’s End ইত্যাদি। কলম্বিয়ার বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ নেরুদাকে বিংশ শতাব্দীর ‘সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি’ আখ্যায় অভিহিত করেন।
জীবনাবসান: চিলিতে যখন অগস্তো পিনোচেটের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান চলছে, সেই সময়েই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে নেরুদা হাসপাতালে ভরতি হন। মাত্র তিন দিন পরেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর।

অনুবাদক পরিচিতি

প্রাথমিক পরিচিতি: অন্য ধারার কবি ও সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন, মৃত্যু হয় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জুলাই। পাঠ্য ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্যের বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত। এটি একটি অনুবাদ সাহিত্যের সংকলন। প্রকাশকাল ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ। নবারুণ ভট্টাচার্য রচিত অন্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে—
কাব্যগ্রন্থ: এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না, মুখে মেঘের রুমাল বাঁধা, পুরন্দর ভাটের কবিতা, পুলিশ করে মানুষ শিকার, রাতের সার্কাস।
উপন্যাস: হারবার্ট, যুদ্ধ পরিস্থিতি, কাঙাল মালসাট, অটো ও ভোগী, খেলনানগর, মসোলিয়াম।
গল্পগ্রন্থ: হালাল ঝান্ডা ও অন্যান্য, অন্ধবেড়াল ও অন্যান্য গল্প, ফ্যাতাড়ুর কুম্ভীপাক, ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক ও অন্যান্য, প্রেম ও পাগল, মহাযানের আয়না, পৃথিবীর শেষ কমিউনিস্ট।
গদ্যগ্রন্থ: অ্যাকোয়ারিয়াম, আনাড়ির নাড়িজ্ঞান।
বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে প্রসঙ্গে গ্রন্থের ভূমিকায় অনুবাদক কবি ২৬ ডিসেম্বর, ২০১২-য় লিখেছেন—“আমার প্রিয় কবিতা, গদ্য ও নাটকের কিছু অনুবাদ এখানে, এই এক মলাটে বন্দী হল বন্ধু রাজীব চৌধুরির উৎসাহে । আগে বা সম্প্রতিকালেও এর প্রায় সবকটি লেখাই অনুবাদ করেছি সুমন্ত্র ভট্টাচার্য নামে। এই বইতে লোকটির অন্তরালের লেখকটি অন্তত স্বনামে উপস্থিত। লেখাগুলো বাছাই করার মধ্যে আমার রাজনৈতিক অবস্থান আশা করি পাঠকদের চোখ এড়াবে না। আরও কিছু অনুবাদের কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।”

উৎস

পাবলো নেরুদার Extravagaria গ্রন্থের ‘La Desdichada’ কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্য ‘অসুখী একজন’ নামে অনুবাদ করেন। নবারুণ ভট্টাচার্যের অনূদিত বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।

সারসংক্ষেপ

কবিতার কথক নিজের ফিরে আসার অপেক্ষায় তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেলেন। দেশ ছেড়ে তিনি চলে গেলেন বহু দূরে। কথক যে আর কখনও দেশে ফিরে আসবেন না, তা তাঁর অপেক্ষারত প্রিয়তমা জানতেন না। রাস্তা দিয়ে কুকুর চলে গেল, গির্জার নান হেঁটে গেল—অর্থাৎ, সংসারের কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকল। কেটে গেল সপ্তাহ, বছর—অনেকটা সময়। বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেল কথকের পায়ের দাগ, সেখানে ঘাস জন্মাল। আর প্রতীক্ষারত মেয়েটির মাথার ওপর ভারী পাথরের মতো একটার পর একটা বছর নেমে এসে তাকে বিচ্ছেদের বেদনায় ভারাক্রান্ত করে তুলল। এরপর অনেক হত্যা আর ধ্বংসলীলা চলল। সমতলে ছড়িয়ে পড়ল যুদ্ধের আগুন। এই পরিস্থিতিতে দেবতার প্রতি ভক্তি আর বিশ্বাস টলে গেল, মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়ল দেবতার মূর্তি। কথকের ফেলে আসা বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, জলতরঙ্গ অর্থাৎ যা কিছু ছিল সব যুদ্ধের তাণ্ডবে চূর্ণ হয়ে গেল। সেখানে পড়ে রইল শুধু কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের  মুর্তির মাথা। কিন্তু এত ধ্বংসের মধ্যেও মেয়েটি থেকে যায় অপেক্ষায়। এ অপেক্ষা অন্তহীন। কারণ, প্রেম শাশ্বত, তার মৃত্যু নেই, ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও তা জেগে থাকে।

নামকরণ

নামকরণের মধ্য দিয়ে কোনো সাহিত্যের ভাববস্তু বা মর্মার্থের পরিচয় পাওয়া যায়। কবিতাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। এখানে পাঠ্য কবিতাটির ‘অসুখী একজন’ নামকরণ তার অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাকেই প্রকাশ করেছে। ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক তাঁর প্রিয়জনকে দরজায় অপেক্ষায় রেখে চলে যান দূরে। প্রিয় মানুষটির ফিরে আসার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং একসময় বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়। বিপ্লবী যে পথে তাঁর স্বভূমি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সেই পথে জন্মায় ঘাস। কবির স্মৃতি চিরকালের জন্য বিবর্ণ হয়ে যায়। তারপর আসে ভয়ানক যুদ্ধ। ধ্বংস হয়ে যায় সবকিছু।
শুধু মৃত্যু হয় না অপেক্ষারত মেয়েটির। এত বিপর্যয়ের পরও সে কবির প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। যুদ্ধ সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে, কিন্তু স্বজন ও স্বদেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে না। যুদ্ধের আগুনে বাড়িঘর পোড়ে, ছাই হয়ে যায় প্রাসাদ, উদ্যান, সবকিছু। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে থাকে ভালোবাসা। দীর্ঘ অপেক্ষা তার হৃদয়কে বেদনায় ভারী করে রেখেছে বলে মেয়েটি অসুখী। আর এইজন্যই কবিতার শিরোনাম ‘অসুখী একজন’ সার্থকতা লাভ করেছে।

আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি যে মূল কবিতার ভাষান্তর, তার কবি হলেন-
(ক) পাবলো পিকাসো
(খ) পাবলো নেরুদা
(গ) গিউসেপ্নে উনগারেত্তি
(ঘ) পেনত্তি সারিকোস্কি
২. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটি হল-
(ক) The Unhappy Woman
(খ) The Unhapy
(গ) The Unhappy One
(ঘ) The Unhappy Man
৩. ‘অসুখী একজন’ শীর্ষক অনুবাদ কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্যের যে কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে-
(ক) বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে
(খ) এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
(গ) মুখে মেঘের রুমাল বাঁধা
(ঘ) রাতের সার্কাস
৪. কবি পাবলো নেরুদার জন্মস্থান-
(ক) চিলি
(খ) ফ্রান্স
(গ) ইটালি
(ঘ) জার্মানি
৫. কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল—
(ক) ১৯০৪-১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ
(খ) ১৯০০-১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ
(গ) ১৯০৫-১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ
(ঘ) ১৯০৭-১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ
৬. পাবলো নেরুদার আসল নাম-
(ক) নেফতালি রেয়েস বাসোয়ালতো
(খ) নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো
(গ) নেফতালি রিকার্দো পাবলো রেয়েস নেরুদা
(ঘ) নেফতালি রিকার্দো পাবলো রেয়েস নেরুদা বাসোয়ালতো
৭. কবি পাবলো নেরুদা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন-
(ক) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে
৮. নীচের যে কাব্যগ্রন্থটি পাবলো নেরুদার রচিত-
(ক) Extravagaria
(খ) Extravaganza
(গ) Ozymandias
(ঘ) The Masque of Anarchy
৯. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কবি পাবলো নেরুদার যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত, সেটি হল—
(ক) Intimacies: Poems of Love
(খ) Extravagaria
(গ) The Captain’s Verses
(ঘ) On the Blue Shore of Silence: Poems of the Sea
১০. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”—কথক ছেড়ে দিয়েছেন—
(ক) তাঁর বাড়িকে
(খ) তাঁর ঘোড়াটিকে
(গ) একজন মেয়েকে
(ঘ) তাঁর মাকে

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কার লেখা?
উত্তর – ‘অসুখী’ একজন’ কবিতাটি চিলির প্রখ্যাত প্রতিবাদী কবি পাবলো নেরুদার লেখা। প্রেমের কবিতাতেও এক আশ্চর্য কণ্ঠস্বরের স্রষ্টা এই কবি।
২. তোমাদের পাঠ্য ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি বাংলা ভাষায় কে তরজমা করেছেন?
অথবা, ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কে বাংলায় তরজমা করেছেন? 
উত্তর – আমাদের পাঠ্য ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি বাংলা ভাষায় তরজমা করেছেন কবি নবারুণ ভট্টাচার্য।
৩. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটির নাম কী?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটির নাম The Unhappy One’ |
৪. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কোন্ অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর – পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে নামের অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
৫. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি পাবলো নেরুদার কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার Extravagaria কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা।
৬. Extravagaria কাব্যগ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থটি ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
৭. Extravagaria কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি কোন্ সময়পর্বে রচিত?
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি ১৯৫৭-১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ সময়পর্বে রচিত।
৮. Extravagaria কাব্যগ্রন্থে মোট কটি কবিতা রয়েছে?
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থে মোট ৬১টি কবিতা রয়েছে।
৯. কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল নির্দেশ করো।
উত্তর – চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল ১৯০৪-১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ।
১০. কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম কী?
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো।
১১. কবি পাবলো নেরুদা কত খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”—‘আমি’ কে? এই ছেড়ে দেওয়ার তাৎপর্য কী? 
উত্তর – ‘আমি’র পরিচয়: ‘আমি’ বলতে কবি নিজেকে বা কবিতার কথককে বুঝিয়েছেন।
ছেড়ে দেওয়ার তাৎপর্য: যুদ্ধক্ষেত্রের আহ্বান বিপ্লবী কবিকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। এই যুদ্ধক্ষেত্র হয়তো বিপ্লবের সশস্ত্র পথ। বৃহত্তর জীবনের এই আহ্বানের কাছে সাংসারিক বন্ধন নেহাৎই তুচ্ছ হয়ে যায়। সেই কারণেই প্রেমিকাকে অনন্ত অপেক্ষায়, দাঁড় করিয়ে রেখে কবিকে চলে যেতে হয় দুরে। এই বিচ্ছেদের কথাই আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে।
২. “আমি চলে গেলাম দূর দূরে।”—কে, কেন দূরে চলে গিয়েছিলেন? 
উত্তর – দূরে চলে যাওয়া ব্যক্তি: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন।
দূরে চলে যাওয়ার কারণ: মানুষ অনেক সময় কর্তব্যের খাতিরে, দেশ ও দশের মুক্তির জন্য বিপ্লবের পথে পা বাড়ায়। সেই পথ আসলে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ। সেখান থেকে ফিরে আসা সবসময় সহজ হয় না। এভাবেই স্বদেশকে মুক্তিদানের লক্ষ্যে কবিও তাঁর প্রিয়জনকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন।
৩. “একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান ” – নান’ শব্দটির অর্থ কী? মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর – ‘নান’ শব্দের অর্থ: ‘নান’ শব্দটির অর্থ সন্ন্যাসিনী।
তাৎপর্য: সংগ্রামী মানুষকে যুদ্ধজয়ের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যেতেই হয়। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করে থাকে তার প্রিয়তমা। বিপ্লবীর কাছে এই অপেক্ষা অর্থহীন। অপেক্ষারতা মেয়েটি তাই জানেও না যে বিপ্লবী মানুষটি আর কখনও ফিরে আসবে না। ফলে সময় বয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে কুকুর কিংবা গির্জার সন্ন্যাসিনীর হেঁটে যাওয়া বোঝায় যে জীবন তার স্বাভাবিক গতিতে বয়ে যায়। অপেক্ষা চলতেই থাকে।
৪ “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ”— আমার’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে? কবি এ কথার মধ্য দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন? 
উত্তর – ‘আমার’ পরিচয়: ‘আমার’ বলতে কবি পাবলো নেরুদার কথা বোঝানো হয়েছে।
কবির বক্তব্য: মুক্তির স্বপ্ন কখনো কখনো মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। কঠোর এবং রক্তাক্ত বিপ্লবের পথকেই সে তার আপন পথ বলে মনে করে। তার স্মৃতি, চেনা পৃথিবী, প্রিয় মানুষেরা—সব কিছুকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যায় চূড়ান্ত সংগ্রামের লক্ষ্যে। সাংসারিক পৃথিবীতে ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে যায় মানুষটির স্মৃতি। প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যে কবি সেই কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
৫. “ঘাস জন্মালো রাস্তায়”—কোন্ রাস্তার কথা বলা হয়েছে? উদ্ধৃতিটি কোন্ তাৎপর্য বহন করে? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট রাস্তা: যে পথ দিয়ে বিপ্লবী কবি ঘর ছেড়ে যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন, এখানে সেই পথের কথা বলা হয়েছে।
তাৎপর্য: কবিতার কথক তাঁর প্রিয়জনের সান্নিধ্য ত্যাগ করে পা বাড়িয়েছিলেন বিপ্লবের পথে। সেই পথে যারা যায় তাদের ফিরে আসার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। ধীরে ধীরে বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় তাঁর পায়ের দাগ। তারপরে, সেই রাস্তায় ঘাস জন্মায়। স্মৃতি এভাবে ঘাসের আড়ালে চিরকালের মতো হারিয়ে যায়।
৬. ‘নেমে এল তার মাথার ওপর।”—কী নেমে এল? এই নেমে আসার তাৎপর্য কী? 
উত্তর – যা নেমে আসে: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় অপেক্ষারত মেয়েটির মাথার ওপর একের পর এক কেটে যাওয়া বছরগুলো পাথরের মতো নেমে এল।
নেমে আসার তাৎপর্য: যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া কবির জন্য মেয়েটি দরজায় অপেক্ষা করতে থাকল দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। অথচ তিনি আর ফিরে এলেন না। প্রিয়জনকে হারিয়ে অতিক্রান্ত বছরগুলো অপেক্ষারত মেয়েটির কাছে ক্রমেই ভারী বলে অনুভূত হতে থাকল। মনে হল তা যেন পাথরের মতো তার মাথার ওপর নেমে এসেছে।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”—কে কাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন? কীভাবে তাকে রেখে যাওয়া হয়েছিল? এই ছেড়ে যাওয়ার বিশেষত্ব কী ছিল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তিরা: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমা মানুষটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।
যেভাবে রেখে যাওয়া হয়েছিল : কবি তাঁর প্রিয়তমাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে পাড়ি দিয়েছিলেন বহুদূরে।
কবির চলে যাওয়ার বিশেষত্ব: বিপ্লব কিংবা স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্যেই কবির এই চলে যাওয়া। এই চলে যাওয়ার পরে বহু সময় অতিবাহিত হয়, কবির স্মৃতিও ঝাপসা হতে হতে হারিয়ে যায়। ধ্বংসলীলা: অবশেষে ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ যুদ্ধ আসে। শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ধ্বংসলীলা চলে। সমস্ত সমতলভূমিতে আগুন ধরে যায়। যে দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন ছিল, তারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কবির স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ। প্রাচীন জলতরঙ্গ-সহ সব কিছুই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে যায় আগুনে। ধ্বংসস্তূপ: ধ্বংসের চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ইত্যাদি। প্রিয়তমার প্রতীক্ষা: কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও সেই মেয়েটি জেগে থাকল কবির অপেক্ষায়। মেয়েটি জানত না, যুদ্ধ কতটা সর্বনাশা। তাই সে ভাবতেও পারেনি, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কবি আর কোনোদিনই ফিরে আসবেন না। সে অপেক্ষায় থাকল। অন্যদিকে বৃহত্তর জীবনক্ষেত্র ছেড়ে কবিরও আর ফেরা হল না প্রিয়তমা মেয়েটির কাছে।
২. “অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়/আমি চলে গেলাম দূর…. দূরে।” –বক্তা চলে যাওয়ার পরে কী কী ঘটেছিল?
উত্তর – কবির চলে যাওয়া: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় অপেক্ষারত রেখে নিজের পথে এগিয়ে যান। সে পথ বিপ্লবের বা মুক্তিসংগ্রামের। প্রিয়তমা: মেয়েটি কিন্তু জানত না যে কর্তব্যের সুকঠিন পথ পেরিয়ে কবির পক্ষে আর ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। তার অপেক্ষার সময় এগিয়ে চলে। বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় চলে যাওয়া মানুষটির পায়ের দাগ, রাস্তায় ঘাস জন্মায়। যুদ্ধের বীভৎসতা: তারপর যুদ্ধ আসে রক্তের আগ্নেয়পাহাড়ের মতো। শিশুহত্যা ঘটে, মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়। যুদ্ধের তাণ্ডবে দেবতারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ধুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। ধ্বংসের এই উন্মত্ততায় বিপ্লবীর স্মৃতির স্মারকগুলোও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তাঁর সুন্দর বাড়ি, তার বারান্দা, প্রিয় গোলাপি গাছ, ‘ছড়ানো করতলের মতো পাতা চিমনি’, প্রাচীন জলতরঙ্গ—সবকিছুই চূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে যায় আগুনে।ধ্বংসস্তূপ: শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকে কিছু কাঠকয়লা। রক্তের কালো দাগের সঙ্গে দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা যেন পড়ে থাকে ধ্বংসস্তূপের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে। তবুও: এই ধ্বংস আর রক্তাক্ততার মধ্যে বিপ্লবীর প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষা একইরকমভাবে জেগে থাকে।
৩. “সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।”— কথা বলা হয়েছে? কোথা থেকে কেন এই না ফেরার কথা বলা হয়েছে? না ফেরার কথা জানা না থাকায় কোন্ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার প্রশ্নোধৃত অংশে কবি তাঁর প্রিয়তমার কথা বলেছেন।
কেন এই না-ফেরা: কবি এখানে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাঁর না ফেরার কথা জানিয়েছেন। পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছে যে মানুষ, স্বাধীনতা কিংবা শোষণমুক্তিই তার লক্ষ্য। এই লড়াইয়ের পথ কখনোই মসৃণ নয়। তাই বিরুদ্ধ শক্তির প্রবল বাধা এবং প্রত্যাঘাতে মৃত্যুকেই সেখানে স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করতে হয়। এই কারণেই কবি ফিরে না আসার কথা বলেছেন।
প্রতিক্রিয়া: মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময় সামাজিক কর্তব্যকে বুঝতে সক্ষম হয় না। আবেগের সঙ্গে বাস্তবের দূরত্ব তৈরি হয়। কবি বিপ্লবের যে সুকঠিন পথে যাত্রা করেছেন, তার স্বরূপ কবির প্রিয়তমার কাছে তাই স্পষ্ট হয় না। ফলে দরজায় প্রিয় মানুষটির জন্য তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সপ্তাহের পরে সপ্তাহ, বছরের পর বছর কেটে যায়। সময়ের গতিতে কবির পায়ের ছাপ একদিন বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, রাস্তা ঢেকে যায় ঘাসে, আরও অনেক বছর কেটে যায়। কিন্তু মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না।
8. “একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।”—কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? বিষয়টি উল্লেখের কারণ আলোচনা করো। 
উত্তর – প্রসঙ্গ: পাবলো নেরুদা-র ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমা মানুষটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বিপ্লবের পথে অথবা স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামে। পরিচিত সংসারজীবন থেকে এই চলে যাওয়া বহুদুরে। কিন্তু প্রিয়তমা মানুষটি জানত না যে, বিপ্লব বা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। তাই দরজায় দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সে অপেক্ষা ক্রমশ সীমাহীন হয়ে যায়। সপ্তাহ আর বছরের কেটে যাওয়া সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
বিষয় উল্লেখের কারণ: কবি চলে যান যুদ্ধক্ষেত্রে। অপেক্ষায় জেগে থাকেন তাঁর প্রিয়তমা নারীটি। বিচিত্র আয়োজন: কিন্তু সময় থেমে থাকে না। রাস্তায় চলে যায় কুকুর, হেঁটে যায় গির্জার নান। অর্থাৎ জীবন তার বিচিত্র আয়োজন নিয়ে এগিয়ে চলে স্বাভাবিক ছন্দে। বিবর্ণ স্মৃতি : এরই মধ্যে বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় কবির পায়ের চিহ্ন। স্মৃতি ক্রমশ বিবর্ণ হতে থাকে। রাস্তায় ঘাস জন্মায়। কবির পায়ের দাগ চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়। ভালোবাসার অপেক্ষা: ভালোবাসার মানুষের অপেক্ষা চলতেই থাকে। একটার পরে একটা বছর যেন পাথরের মতো মেয়েটির মাথার ওপরে নেমে আসতে থাকে। কিন্তু প্রতীক্ষার অবসান ঘটে না। অপেক্ষার সেই অসীম বিস্তারই যেন | উল্লিখিত মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে।

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. “তারপর যুদ্ধ এল”-
ক পাহাড়ের আগুনের মতো
(খ) রক্তের সমুদ্রের মতো
(গ) আগ্নেয়পাহাড়ের মতো
(ঘ) রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো 
২. “তারপর যুদ্ধ এল”—যুদ্ধে খুন হল-
(ক) শহরের মানুষ
(খ) শান্ত হলুদ দেবতারা
(গ) নিরীহ মানুষ
(ঘ) শিশু আর বাড়িরা 
৩. যুদ্ধকে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’ মনে করার কারণ-
(ক) কখন যুদ্ধ হয় কেউ তা জানে না
(খ) যুদ্ধ আগ্নেয় পাহাড়ের মতোই ভয়ংকর ও রক্তক্ষয়ী
(গ) কবির বাসস্থান এক আগ্নেয়পাহাড়ে ঘেরা অঞ্চলে
(ঘ) যুদ্ধ পাহাড়ের মতো নির্মম, বাস্তব
৪. “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো” যখন—
(ক) মেয়েটি একা হয়ে পড়ল
(খ) দেবতাদের মূর্তি ভেঙে পড়ল।
(গ) রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এল
(ঘ) গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ চূর্ণ হয়ে গেল বিধ্বংসী আগুনে
৫. “মৃত্যু হলো না”—যার মৃত্যু হল না—
(ক) কবির
(খ) কবিতার
(গ) মেয়েটির
(ঘ) শিশুটির
৬. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”— সেই মেয়েটি’ বলতে বোঝানো হয়েছে-
(ক) কবিতার কথকের জন্য অপেক্ষারতা মেয়েটিকে
(খ) গির্জার এক নানকে
(গ) যুদ্ধের সময় মারা না যাওয়া এক শিশুকন্যাকে
(ঘ)কথকের স্ত্রীকে
৭. “ধরে গেল আগুন”—কোথায়?
(ক) ঘন অরণ্যে
(খ) জলবসতিতে
(গ) ফসলের খেতে
(ঘ) সমস্ত সমতলে 
৮. “সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন”—যার ফলে—
(ক) দেবতা, বাড়ি, বারান্দা, গাছপালা সবই ধ্বংস হল
(খ) গাছগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেল
(গ) আগ্নেয়পাহাড়টি ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়ল
(ঘ) কবিতার কথককে অন্যত্র চলে যেতে হল
৯. হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবেছিল যারা-
(ক) মন্দিরের সেবাইত
(খ) ভক্তগণ
(গ) দৈত্যরা
(ঘ) শান্ত হলুদ দেবতারা
১০. শান্ত হলুদ দেবতারা’ বলতে বোঝানো হয়েছে –
(ক) পাথরের তৈরি দেবতাদের
(খ) জীবন্ত দেবতাদের
(গ) গির্জার সন্ন্যাসীদের
(ঘ) মৃত দেবতাদের

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “তারপর যুদ্ধ এল…”প্রশ্ন —যুদ্ধ কীভাবে এল? 
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এসেছিল।
২. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কারা খুন হয়েছিল?
উত্তর – বিখ্যাত চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল।
৩. “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।”—কীভাবে শিশু আর বাড়িরা খুন হল?
অথবা, “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।”—“শিশু আর বাড়িরা’ খুন হয়েছিল কেন? 
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ভয়াবহ যুদ্ধে শিশু আর গৃহস্থ মানুষেরা খুন হল।
৪. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”—কোন্ মেয়েটির মৃত্যু হল না? 
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কালান্তক যুদ্ধে বহু শিশু ও গৃহস্থের মৃত্যু হলেও কথকের অপেক্ষায় থাকা মেয়েটির মৃত্যু হল না।
৫. “সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন…”—কীভাবে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল?
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল।
৬. শান্ত হলুদ দেবতারা কত বছর ধ্যানে ডুবেছিল? 
উত্তর – শান্ত হলুদ দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবেছিল।
৭. “শান্ত হলুদ দেবতারা/যারা হাজার বছর ধরে… ” -কী করছিলেন ?
উত্তর – কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় শান্ত হলুদ দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন ছিলেন।
৮. “উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে”—কী উলটে পড়ল?
অথবা, যুদ্ধের ফলে শান্ত হলুদ দেবতাদের কী পরিণতি হয়েছিল? 
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন, স্বপ্নে বিভোর পাথুরে দেবতারা যুদ্ধের আঘাতে মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়লেন।
৯. “….তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।”—কারা কোন্ স্বপ্ন দেখতে পারল না?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধের বীভৎসতায় ভেঙে পড়া শান্ত হলুদ দেবতারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
১০. ‘সেই মিষ্টি বাড়ি’—বাড়িটিকে বক্তা মিষ্টি বলেছেন কেন? 
উত্তর – বাড়িটি কবির কাছে ‘মিষ্টি’, কারণ তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে কবির অনেক প্রিয় স্মৃতি ৷
১১. “সব চূর্ণ হয়ে গেল”—কীভাবে, কী চূর্ণ হয়ে গেল?
উত্তর – কবিতায় যুদ্ধের প্রচণ্ড তাণ্ডবে কথকের ফেলে আসা মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সব চূর্ণ হয়ে গেল।
১২. “যেখানে ছিল শহর”— যেখানে শহর ছিল সেখানে যুদ্ধের পরে কী অবস্থা হয়েছিল?
উত্তর – যেখানে শহর ছিল, যুদ্ধের পরে সেই শহরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে ছড়িয়ে ছিল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা, রক্তের কালো দাগ।
১৩. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়”—কোন্ পরিস্থিতিতে মেয়েটি কথকের জন্য অপেক্ষা করেছে?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় মৃত্যু, ধ্বংস আর অবিশ্বাসের মধ্যেও কথকের প্রেমিকা অর্থাৎ ‘সেই মেয়েটি’ তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছে।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”—কোন্ মেয়েটির? এই ‘মৃত্যু’ না হওয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তর – মেয়েটির পরিচয়: কবি বিপ্লব অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় যে মেয়েটি তাঁর জন্য দরজায় অপেক্ষা করেছিল এখানে তার কথা বলা হয়েছে।
তাৎপর্য: বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ মানুষ যুদ্ধের পথে পা রেখে সংসার, প্রিয়জন সবকিছুকেই পিছনে ফেলে যায়। কিন্তু এই কঠোর বাস্তবকে মেনে নিতে পারে না তার প্রিয়তমা মেয়েটি। প্রিয় মানুষটির জন্য তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। যুদ্ধে অজস্র ধ্বংস এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও মেয়েটির মৃত্যু ঘটে না। চিরজীবী ভালোবাসার প্রতীক রূপেই মেয়েটি বেঁচে থাকে।
২. “সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন।”—কী কারণে সমতলে আগুন ধরে গেল? আগুন ধরে যাওয়ার ফলে কী হয়েছিল? 
উত্তর – সমতলে আগুন ধরার কারণ: আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ আসার ফলে সমতলে আগুন ধরে গেল।
ফলাফল: যুদ্ধের আগুন ধ্বংস ডেকে আনল। তার তীব্রতায় ভেঙে পড়ল মন্দির। টুকরো টুকরো হয়ে গেল শান্ত হলুদ দেবতাদের পাথরের মূর্তি। পুড়ে গেল স্বপ্নের ঘরবাড়ি, সাধের বাগান, গোলাপি গাছ, চিমনি আর প্রাচীন জলতরঙ্গ। বলা যায়, সব কিছুই চুরমার হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে। যেখানে শহর ছিল সেখানে পড়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর ভাঙা পাথরের মূর্তির মাথা।
৩. “শান্ত হলুদ দেবতারা”—কোন্ কবিতার অংশ? দেবতাদের শান্ত ও হলুদ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর – উৎস: উদ্ধৃতিটি পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতার অংশ। ● দেবতাদের শান্ত ও হলুদ বলার কারণ: ‘শান্ত হলুদ’ কথাটি দেবতাদের উদ্দেশ্যে বিদ্রূপ অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। দেবতারা স্বভাবত শান্ত। তাদের প্রশান্ত মূর্তির সামনে মানুষ আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু এই ভরসা সত্ত্বেও দেবতারা যুদ্ধকে ঠেকাতে পারেন না। ‘হলুদ’ শব্দটির সাহায্যে দেবতাদের সেই বিবর্ণ উপস্থিতিকে বোঝানো হয়। বিশেষণটি সার্থক হয় যখন দেখা যায় যে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে দেবতারা নিজেদেরও রক্ষা করতে ব্যর্থ হন।
৪. “ডুবে ছিল ধ্যানে”—কারা ডুবেছিল? তারা ধ্যানে ডুবেছিল বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতার শান্ত হলুদ দেবতারা ধ্যানে ডুবেছিল।
ধ্যানে ডুবে থাকার তাৎপর্য: দেবতারা প্রশান্ত মূর্তিতে মানুষের দ্বারা পূজিত হন। কিন্তু ইতিহাসের সূচনাপর্ব থেকে এত ঈশ্বরসাধনার পরেও পৃথিবীতে যুদ্ধ, হিংসা, রক্তাক্ততার অবসান ঘটেনি। মন্দির বা দেবস্থানে ঈশ্বর পাথরের মূর্তি হয়েই থেকে গিয়েছেন। একেই কবি দেবতাদের ধ্যানমগ্ন অবস্থা বলে উল্লেখ করেছেন। এই ধ্যানমগ্নতা আসলে তাঁদের প্রাণহীনতার দিকেই ইঙ্গিত করে।
৫. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।”—’তারা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তারা স্বপ্ন দেখতে পারল না কেন? 
উত্তর – ‘তারা’র পরিচয়: প্রশ্নোধৃত অংশে ‘তারা’ বলতে শান্ত হলুদ দেবতাদের বোঝানো হয়েছে।
স্বপ্ন দেখতে না পারার কারণ: যুদ্ধ ‘হল রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’, যাতে শিশুমৃত্যু ঘটে, মানুষ নিরাশ্রয় হয়। সমতলে আগুন ধরে যায়। এই থায় যে দেবতারা হাজার বছর ধরে মন্দিরে ধ্যানমগ্ন ছিল তারাও টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে। তাদের স্বপ্ন দেখা প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিধানকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। এ আসলে ঈশ্বরের ভেঙে পড়া নয়, এ হল ঐশ্বরিকতার বা মানুষের ঈশ্বরবিশ্বাসের ভেঙে পড়া।
৬. “সেই মিষ্টি বাড়ি, সেই বারান্দা”—কোন্‌ মিষ্টি বাড়ি ও বারান্দার কথা কবি উল্লেখ করেছেন ? তার পরিণতি কী হয়েছিল? 
উত্তর – মিষ্টি বাড়ি ও বারান্দার পরিচয়: কবি তাঁর যে বাড়ি ছেড়ে যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন সেই বাড়ি ও তার বারান্দার কথা এখানে উল্লেখ করেছেন।
পরিণতি: যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় সমস্ত সমতলে আগুন ধরে যায়; সে আগুনে ধ্বংস হয় কবির ‘মিষ্টি’ বাড়িটি। ধ্বংস হয়ে যায় সেই বাড়ির বারান্দা আর ঝুলন্ত বিছানা, যেখানে কবি ঘুমিয়েছিলেন। বাড়িতে থাকা গোলাপি গাছ কিংবা চিমনি অথবা প্রাচীন জলতরঙ্গ—সবই চূর্ণ হয়ে যায়, পুড়ে যায় যুদ্ধের আগুনে।
৭. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”—কোন্ কবিতার অংশ ? কবিতা অনুসরণে মন্তব্যটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। 
উত্তর – উৎস: উদ্ধৃতিটি পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতার অংশ। → মন্তব্যটির অর্থ: বিপ্লবের পথ আসলে যুদ্ধের পথ। এ হল সমাজ পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ। তাই শোষক শক্তিও পালটা আঘাত করে। প্রবল লড়াইয়ে ভেঙে পড়ে কথকের সেই সুন্দর বাড়িটি। কবির সেই বাড়ির বারান্দা, যেখানে তিনি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমাতেন, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সবকিছুই যুদ্ধের তাণ্ডবে ভেঙে পড়ে, চূর্ণ হয়ে যায়।
৮. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”—কোন্ কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে? এই পরিণতির কারণ কী? 
উত্তর – যা যা চূর্ণ হয়ে গেল: ‘অসুখী একজন’ কবিতার উল্লেখিত অংশে, যে বাড়িতে কবি থাকতেন, বারান্দার যে ঝুলন্ত বিছানায় তিনি ঘুমাতেন, তাঁর প্রিয় গোলাপি গাছ—যার পাতা করতলের মতো ছড়ানো, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি চূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

পরিণতির কারণ: যুদ্ধের কারণে মৃত্যু এবং ধ্বংস সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে। তা থেকে কবির ফেলে আসা স্মৃতিগুলো নিজেদের রক্ষা করতে পারে না। কবির একান্ত নিজস্ব এবং স্মৃতির বাহক যা কিছু সবই তাই চূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে যায় আগুনে। অর্থাৎ যুদ্ধ সেই সর্বনাশা কারণ যা মানুষকে স্মৃতিশূন্য করে দেয়।
৯. “রক্তের একটা কালো দাগ।”—কোথায় এই কালো দাগ দেখা গিয়েছিল? বিষয়টি কোন্ তাৎপর্য বহন করে?
উত্তর – কালো দাগ-এর জায়গা: যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হওয়া শহরে রক্তের কালো দাগ দেখা গিয়েছিল।
তাৎপর্য: যে-কোনো যুদ্ধই আসলে ধ্বংসকে বয়ে আনে। যেখানে একদিন শহর ছিল, সেখানে ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন হয়ে পড়ে থাকে শুধু কাঠকয়লা। দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ইত্যাদি যেন ধ্বংসের চিহ্ন হয়ে থাকে। আর রক্তের কালো দাগ হত্যা, হিংসা, রক্তাক্ততার কাহিনিকেই স্পষ্ট করে তোলে। অত্যাচারী শাসকশক্তি নিজের ক্ষমতা রক্ষার তাগিদে এই রক্তপাত ঘটায়।
১০. ‘যেখানে ছিল শহর”—শহরের কী পরিণতি হয়েছিল এবং কেন?
উত্তর – শহরের পরিণতি: পাবলো নেরুদা ‘অসুখী একজন’ কবিতার শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।
পরিণতির কারণ: শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে যুদ্ধ অস্থিরতা আর ধ্বংসকে বহন করে আনে। ঠিক তেমনই এক যুদ্ধে একটা শহর পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। চারিদিকে শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। এভাবেই যুদ্ধের তাণ্ডবে আস্ত একটা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “তারপর যুদ্ধ এল”— তারপর’ কথাটির দ্বারা কবি কোন্ সময়ের কথা বলেছেন? যুদ্ধের কোন্ প্রভাব কবি প্রত্যক্ষ করেছিলেন? 
উত্তর – ‘তারপর’ কথাটির অর্থ: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি বিপ্লবের আহ্বানে ঘর ছেড়েছিলেন। কবির প্রিয়তমা অপেক্ষা করেছিলেন যে, একদিন কবি ফিরে আসবেন। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। বৃষ্টির জলে একসময় ধুয়ে যায় কবির পায়ের ছাপ। রাস্তা ঢেকে যায় ঘাসে। বছরের পর বছর এভাবে কেটে যাওয়ার পরে একসময় যুদ্ধ শুরু হয়। তারপর’ কথাটির দ্বারা এই যুদ্ধ শুরুর সময়টিকেই বোঝানো হয়েছে।
যুদ্ধের প্রভাব যখন যুদ্ধ শুরু হয় সে যুদ্ধ আসে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো। শিশুরাও সে হত্যালীলা থেকে রেহাই পায় না, মানুষের বসতি ধ্বংস হয়। আগুন লেগে যায় সমতলে। যেসব দেবতারা মন্দিরে ধ্যানমগ্ন ছিল হাজার বছর ধরে, তারা উলটে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। অর্থাৎ ধ্বংস আর বিশ্বাসের ফাটল ঘটে একইসঙ্গে। কবির ফেলে আসা প্রিয় বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিই যুদ্ধের তাণ্ডবে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। শহর রুপান্তরিত হয় ধ্বংসস্তূপে। কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা যেন ধ্বংসের প্রতীক হয়ে উঁকি দেয়। আর রক্তের কালো দাগ হল সেই হত্যালীলা ও ধ্বংসস্তূপের প্রমাণস্বরূপ। এভাবেই যুদ্ধ আসে সর্বগ্রাসী চরিত্র নিয়ে।
২. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”—কোন্ মেয়েটির ? কীসে তার মৃত্যু হল না? কীভাবে তা সম্ভব হল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট মেয়েটির পরিচয়: পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে মেয়েটিকে কবি বিপ্লব অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময়ে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়েছিলেন, সেই মেয়েটির কথা বলা হয়েছে।
মৃত্যুহীন: যুদ্ধেও তার মৃত্যু হল না।
প্রিয়তমার অপেক্ষা: কবি যখন যুদ্ধক্ষেত্রে যান তখন থেকেই কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শুরু। সে জানত না যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। ফলে তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সপ্তাহ আর বছর কেটে যায়। যুদ্ধের তাণ্ডব: বছরগুলো পাথরের মতো তার মাথার উপরে নেমে আসে। এরপরে যুদ্ধ আসে। ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ সেই যুদ্ধে মানুষের বাসভূমি আগুনে জ্বলে যায়। দেবতারা চূর্ণ হয়ে মন্দির থেকে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। স্মৃতিচিহ্ন: কবির ফেলে আসা প্রিয় বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিই আগুনে জ্বলে যায়। শহরের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে পড়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। অনন্ত অপেক্ষা: তার মধ্যেও যখন মেয়েটির অপেক্ষায় জেগে থাকার কথা বলা হয় তা আসলে প্রতীকী। কবি বোঝাতে চান যে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে থাকে ভালোবাসা। যুদ্ধ কোনোদিন জীবনকে পরাজিত করতে পারে না। এভাবেই মেয়েটি বেঁচে থাকে অনন্ত অপেক্ষার মধ্যে দিয়ে।
৩. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে”—অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – শুরুর কথা: পাবলো নেরুদার Extravagaria গ্রন্থ থেকে গৃহীত একটি কবিতা ‘অসুখী একজন’ নামে তরজমা করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য। সেই কবিতায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চিরজীবী ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধের তাণ্ডব: যুদ্ধ কবির কাছে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’। শিশুহত্যা, নিরাশ্রয়তা যুদ্ধের ভয়াবহ রূপকে স্পষ্ট করে দেয়। মারণ যুদ্ধের স্পর্শে ছারখার হয়ে যায় পৃথিবী।ধ্বংসস্তূপ : প্রলয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ধ্বংস হয়ে যায় সব কিছু। যুদ্ধের আগুনে নিঃশেষ হয়ে যায় চারপাশ। মন্দিরের ভিতরে প্রতিমার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের ঈশ্বরত্বও ধ্বংস হয়। যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় লুপ্ত হয়ে যায় কবির সমস্ত স্মৃতি। তাঁর ফেলে আসা সুন্দর বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিচিহ্ন, সবই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। মানবিক বিপর্যয় : যুদ্ধ শুধু আর্থিক ক্ষতি বা জীবনহানি নয়, যুদ্ধ ডেকে আনে মানবিক বিপর্যয়ও। মানুষের স্মৃতির সঞ্জয়কে সে শূন্য করে দেয়। যেসব জিনিসকে আশ্রয় করে অনুভূতির বিস্তার ঘটে সেগুলি যুদ্ধের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়। আবেগ: ঘরছাড়া একজন বিপ্লবীর মধ্যেও ফেলে আসা দিনের জন্য যে আবেগ কাজ করে, তা এই গোপন দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যায়।
৪. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”—সব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তা কীভাবে আগুনে জ্বলে যায় আলোচনা করো। 
উত্তর – ‘সব’-এর অর্থ: ‘অসুখী একজন’ কবিতা কবি তাঁর প্রিয় যে বাড়িটিতে থাকতেন সেটি চূর্ণ হয়ে গেল। সেই বারান্দা যার ঝুলন্ত বিছানায় তিনি ঘুমিয়ে থাকতেন সেটিও ধ্বংস হয়ে গেল। চূর্ণ হয়ে গেল প্রিয় গোলাপি গাছ, যার পাতা ছড়ানো করতলের মতো, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ। ‘সব’ শব্দটির দ্বারা এইসব কিছু চূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আগুনে যেভাবে জ্বলে যায়: বিপ্লবীর পথচলা সংগ্রামের দুর্গম পথে। তাই যুদ্ধ সেখানে অনিবার্য। যুদ্ধ আসে রক্তের আগ্নেয়পাহাড়ের মতো। অর্থাৎ ধ্বংস আর রক্তাক্ততাই যুদ্ধের একমাত্র ফল। কবির মতে সমস্ত সমতলভূমিতে ধরে যায় আগুন। সে আগুন অনেক কিছুকেই ধ্বংস করে। ধ্যানমগ্ন দেবতারা চূর্ণ হন। মানুষের আশ্রয় আর অবলম্বন হিসেবে সেটি আর গ্রাহ্য হয় না। অর্থাৎ আগুন লাগে মানুষের দীর্ঘদিনের চিরাচরিত বিশ্বাসেও। তার ফলেই যুদ্ধের আগুনে ছাই হয়ে যায় সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন। বিপ্লবীর যা কিছু প্রিয় এবং একান্তভাবেই নিজস্ব, সেসবই চূর্ণ হয়ে জ্বলে যায়। এই যুদ্ধ যেন এভাবেই ধ্বংসকে নিশ্চিত করে দিয়ে যায়। আগুনের সর্বগ্রাসী তাণ্ডবের চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা ইত্যাদি। এভাবেই সবকিছু আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।
৫. “যেখানে ছিল শহর/সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা।” ‘অসুখী একজন’কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখো। 
উত্তর – কথামুখ: যুদ্ধ মানেই ধ্বংস আর রক্তাক্ততা। পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাতেও শিশু আর বাড়িদের খুন হওয়ার ছবি যুদ্ধের ভয়াবহ চরিত্রকেই তুলে ধরে। যুদ্ধের তাণ্ডব: যুদ্ধ এসেছিল রক্তের আগ্নেয় পাহাড়ের মতো। সমস্ত সমতল জুড়ে আগুন ধরে গেল। আর তার আগ্রাসনে পুড়ে গেল সবকিছু। শিশুমৃত্যু ঘটল, মানুষের বাসস্থান ধ্বংস হল, ছারখার হয়েগেল সাজানো পৃথিবী। মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল শান্ত হলুদ দেবতার মূর্তি। তারাও আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। অর্থাৎ যুদ্ধের আগুনে যেন পুড়ে গেল মানুষের ঈশ্বরবিশ্বাসও। অথচ এরাই হাজার হাজার বছর ধরে শান্তির প্রতীক হয়ে মন্দিরে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। যুদ্ধের আগুনে পুড়ে গেল কবির ফেলে আসা সাধের বাড়িঘর, বারান্দায় টাঙানো ঝুলন্ত বিছানা, বাগান, চিমনি আর প্রাচীন জলতরঙ্গ। স্মৃতিচিহ্ন: যেখানে শহর ছিল সেখানে পড়ে থাকল শহরের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু কাঠকয়লা আর দোমড়ানো লোহা। ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকল পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। সাক্ষী হয়ে থাকা: জমাট রক্তের কালো দাগ হত্যালীলা এবং ধ্বংসস্তূপের সাক্ষী হয়ে থেকে গেল।
৬. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”—এই অপেক্ষার তাৎপর্য সমগ্র কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
অথবা, “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”—অপেক্ষমান এই নারীর মধ্যে দিয়ে কবি মানবীর ভালোবাসার যে রূপটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তা পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর – কথামুখ: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভালোবাসার বিস্তারের কথা বলেছেন। কবির চলে যাওয়া: মুক্তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে একজন বিপ্লবীকে তার সংসার, পরিজনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়। প্রিয়তমা: কবির একান্ত প্রিয় মানুষ এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারে না। চলে তার অপেক্ষা। সপ্তাহ শেষ হয়ে বছর চলে যায়, প্রতীক্ষার অবসান হয় না। যুদ্ধের তাণ্ডব: যুদ্ধ শুরু হয়। সাজানো শহর ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয়। মানুষ নিরাশ্রয় হয়, শিশুহত্যার মতো নারকীয় ঘটনা ঘটে। ভেঙে পড়ে মন্দিরের প্রতিমা। ধ্বংসস্তূপ: যে বিপ্লবী যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিল তার স্মৃতিচিহ্নগুলিও ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় সুন্দর বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা ইত্যাদি। শহর হয়ে ওঠে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির এক ধ্বংসস্তূপ। রক্তের কালো দাগ নিশ্চিত করে দেয় ধ্বংসের উন্মত্ত চেহারাকে। অন্তহীন অপেক্ষা: কিন্তু পাথরের উপরে ফুলের মতোই ধ্বংসস্তূপের উপরে জেগে থাকে ভালোবাসা। কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না। তবুও: কেন-না যুদ্ধ সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে, জীবনহানি ঘটাতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার অবসান ঘটাতে পারে না। কথকের
৭. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”—কোন্ মেয়েটি? তার অপেক্ষায় কার কীভাবে কেটেছে লেখো। 
উত্তর – মেয়েটির পরিচয়: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার পরে যে মেয়েটি তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল, এখানে সেই মেয়েটির কথাই বলা হয়েছে।
অপেক্ষায় কাটানো সময়: “পঙ্ক্তি ১২-৩২”-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ৬নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

১. ‘অসুখী একজন’ কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – কথামুখ: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির মূল বিষয় হয়ে উঠেছে যুদ্ধের পটভূমিকায় শাশ্বত ভালোবাসার কথা। কবির চলে যাওয়া: একজন বিপ্লবীর যথার্থ জায়গা যুদ্ধক্ষেত্র। কিন্তু যে প্রিয়জনকে ছেড়ে তিনি মুক্তিসন্ধানে যান তার পক্ষে বিচ্ছেদকে মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই চলতে থাকে অনন্ত প্রতীক্ষার দিন গোনা। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে যায়, চলে যায় বছরের পর বছর। বৃষ্টি ধুয়ে দেয় বিপ্লবীর পায়ের ছাপ। কিন্তু অপেক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকে তাঁর প্রিয়তমা নারীটি। ধ্বংসলীলা: যুদ্ধের প্রস্তুতি শেষ করে যখন যথার্থই যুদ্ধ শুরু হয়, ধ্বংসের তাণ্ডবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পৃথিবী। যুদ্ধের তাণ্ডবে হত্যা, রক্তাক্ততা আর আশ্রয়হীনতা তৈরি হয়। পৃথিবীজুড়ে যেন আগুন ধরে যায়। ধ্বংসস্তূপ: মন্দিরের প্রতিমা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় বিপ্লবীর ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিও। চেনা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। যেখানে আগে ছিল শহর, সেখানে ছড়িয়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর ‘মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা’। রক্তের কালো দাগ স্পষ্ট করে দেয় ধ্বংসলীলার তীব্রতাকে। তবুও: কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও জেগে থাকে ভালোবাসা। বিপ্লবীর জন্য অনন্ত অপেক্ষায় থাকে তাঁর প্রিয়তমা। কারণ ভালোবাসার মৃত্যু নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *