WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 2 সমাস
WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 2 সমাস
West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 2 সমাস
West Bengal Board 10th Bengali Solutions
আলোচনা অংশ
ব্যাসবাক্য
মনমাঝি—মন রূপ মাঝি | বীণাপাণি—বীণা পাণিতে যাঁর |
এখানে ‘মনমাঝি’ এবং ‘বীণাপাণি’ হল সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ। এই সমাসবদ্ধ পদগুলি কীভাবে সংযুক্ত হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করার জন্য যে বাক্য বা বাক্যাংশটি প্রয়োজন হয়, সেটিই হল ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য। যেমন, উপরোক্ত ক্ষেত্রে মন রূপ মাঝি এবং বীণা পাণিতে যাঁর হল যথাক্রমে মনমাঝি এবং বীণাপাণি পদ দুটির ব্যাসবাক্য। কারণ, ‘মন’ এবং ‘মাঝি’ পদ দুটি কোন্ যুক্তিতে সংযোজিত হচ্ছে এবং ‘মনমাঝি’ পদটি তৈরি করছে, তা বোঝা যায় ‘মন রূপ মাঝি’ বাক্যাংশটির দ্বারা। একই যুক্তিতে ব্যাসবাক্য হয় ‘বীণা পাণিতে যাঁর’ |
সমাসবদ্ধ পদ এবং ব্যাসবাক্যকে দু-ভাবে লেখা যায়। আগে সমাসবদ্ধ পদ, পরে ব্যাসবাক্য অথবা আগে ব্যাসবাক্য, পরে সমাসবদ্ধ পদ।
সমস্যমান পদ | ব্যাসবাক্য |
গাড়িঘোড়া | গাড়ি ও ঘোড়া |
বদমেজাজি | বদ মেজাজ যার |
অথবা,
ব্যাসবাক্য | সমাসবদ্ধ পদ |
গাড়ি ও ঘোড়া | গাড়িঘোড়া |
বদ মেজাজ যার | বদমেজাজি |
সমাসবদ্ধ পদ
দশ, আনন—দশটি আনন যার—দশানন
লেখা, পড়া—লেখা ও পড়া—লেখাপড়া
এখানে দশ এবং আনন এই পদ দুটি যুক্ত হয়ে দশানন পদটি তৈরি হয়েছে। আবার, লেখাপড়া পদটির মূলে আছে যে দুটি পদ, তা হল লেখা ও পড়া। এই মূলগত পদগুলিকে বলা হয় সমস্যমান পদ। অর্থাৎ, যে পদগুলোর মধ্যে সমাস হয় তাদের বলে সমস্যমান পদ।
সমস্যমান পদ | সমাসবদ্ধ পদ | সমস্যমান পদ | সমাসবদ্ধ পদ |
মহান, দেব | মহাদেব | রাজা, ঋষি | রাজর্ষি |
দিন, রাত | দিনরাত | হাতে, গরম | হাতেগরম |
পূর্বপদ ও উত্তরপদ
সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যেটি আগে আসে, তাকে পূর্বপদ বলা হয়। পূর্বপদের পরে ব্যাসবাক্যে যে সমস্যমান পদটি আসে, তাকে উত্তরপদ বলা হয় ।
সমস্যমান পদ | ব্যাসবাক্য | সমস্ত পদ | পূর্বপদ | উত্তরপদ |
ভিক্ষা, অন্ন | ভিক্ষা লব্ধ অন্ন | ভিক্ষান্ন | ভিক্ষা | অন্ন |
গঙ্গা, জল | গঙ্গার জল | গঙ্গাজল | গঙ্গা | জল |
মনে রাখতে হবে যে, ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ এবং উত্তরপদ ছাড়া আর যে পদগুলির অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাদের বলা হয় সাহায্যকারী পদ।
বহুব্রীহি সমাস
‘বহুব্রীহি’—সমাসের এই নামকরণটিই বহুব্রীহি সমাসের আদর্শ উদাহরণ। ‘বহু ব্রীহি (ধান) যার’—এই হল বহুব্রীহির ব্যাসবাক্য। ‘দশানন’ শব্দটির মধ্যে দুটি অর্থ আছে। একটি অর্থ শব্দটিকে ভাঙলেই পাওয়া যায়—দশ আনন অর্থাৎ দশটি মাথা। আবার ‘দশানন’ বললে শুধু ‘দশটি মাথা’ই বোঝায় না, বোঝায় রামায়ণের রাবণকেও। অর্থাৎ ‘দশানন’—এই সমাসবদ্ধ শব্দটিকে ভাঙলে আমরা ব্যাসবাক্য পাব—দশ আনন যাঁর। এটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ। কারণ, সমাসবদ্ধ পদটি সম্পূর্ণ নতুন এক অর্থকে প্রকাশ করছে, যা যে দুটি পদের মধ্যে সমাস হয়েছে তার থেকে আলাদা।
ব্যাকরণের ভাষায়, যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির কোনোটিরই অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে তাদের মাধ্যমে অন্য কোনো অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন—ঘৃতান্ন—ঘৃত অন্ন যার (অগ্নি) । এক্ষেত্রে ঘৃত যার অন্ন অর্থে বোঝাচ্ছে আগুন বা অগ্নিকে।
বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ:
[ক] সমানাধিকরণ বহুব্রীহি: বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলে। উভয় পদেই শূন্য বিভক্তি হয় বলে একে ‘সমানাধিকরণ’ বলা হয়। যেমন—
সুগন্ধ—সু গন্ধ যার | পক্ককেশ—পক্ব কেশ যার |
মধ্যবিত্ত—মধ্য বিত্ত যার | গৌরাঙ্গ—গৌর অঙ্গ যার |
মূঢ়মতি—মূঢ় মতি যার | হীনশক্তি—হীন শক্তি যার |
বিলোচন—বিশিষ্ট লোচন যার | দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যার |
বিশালাকার—বিশাল আকার যার |
একইভাবে কদাকার, সতীর্থ, শ্যামাঙ্গ, নীলাম্বর, সিদ্ধার্থ, সুধী, কুবের ইত্যাদি।
[খ] ব্যধিকরণ বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের বিভক্তিচিহ্ন আলাদা হয়, তাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি বলা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত পূর্বপদে শূন্য বিভক্তি এবং পরপদে ‘এ’ বা ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন—
মধুকণ্ঠ—মধু কণ্ঠে যার | হাসিমুখ — হাসি মুখে যার |
শূলপাণি–শূল পাণিতে যার | ইত্যাদি—ইতি আদিতে যার |
জ্ঞানগর্ভ—জ্ঞান গর্ভে যার | পদ্মনাভ—পদ্ম নাভিতে যার |
রত্নগর্ভা রত্ন গর্ভে যার | খড়্গহস্ত – খড়্গ হস্তে যার |
বীণাপাণি—বীণা পাণিতে যার |
একইভাবে কলকণ্ঠ, পাদপদ্ম, মিলনান্তক, শশাঙ্ক, তুলনামূলক ইত্যাদি।
[গ] নর্থক বহুব্রীহি না-বোধক বা নর্থক পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে বহুব্রীহি সমাস, তাকেই নর্থক বহুব্রীহি বলে। যেমন—
অনন্ত—নেই অন্ত যার | নির্বিকল্প—নেই বিকল্প যার |
অথই—নেই থই যার | বেইমান—বে (নেই) ইমান যার |
নিঃশঙ্ক—নিঃ (নেই) শঙ্কা যার | |
বিশ্রী—(বি) বিগত হয়েছে শ্রী যার |
একইভাবে বিশৃঙ্খল, বীতশোক, অপয়া, নির্জলা, অপ্রতিভ, অনর্থক, অনাদি ইত্যাদি।
[ঘ] মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি : বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত পদ লোপ পেলে, তাকে বলা হয় মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি।
এই সমাসে প্রায় ক্ষেত্রেই উপমানের সঙ্গে সমাস হয় (উপমান = যার সঙ্গে তুলনা করা হয়)। তাই একে উপমাত্মক বহুব্রীহিও বলা হয়। তা ছাড়া, ব্যাসবাক্যটি অনেক সময় ব্যাখ্যামূলক হয় বলে একে ব্যাখ্যাত্মক বহুব্রীহিও বলে। যেমন—
মৃগনয়না—মৃগের নয়নের ন্যায় চঞ্চল নয়ন যার |
বিড়ালাক্ষী—বিড়ালের অক্ষির বর্ণের ন্যায় অক্ষি যার |
একইভাবে মীনাক্ষী, ডাকাবুকো, চিরুণদাঁতি, ক্ষুরধার, বাঁদরমুখো, সোনামুখী, ভাইফোঁটা, একবুক, কপোতাক্ষ ইত্যাদি।
[ঙ] সহাৰ্থক বহুব্রীহি : এই প্রকার বহুব্রীহি সমাসে সমাসবদ্ধ পদটির আদিতে ‘সহিত’বাচক ‘স’ যুক্ত হয়। পূর্বপদটি সাধারণত বিশেষ্য হয়। অর্থাৎ, পূর্বপদের বিশেষ্যের সঙ্গে সহার্থক পরপদের বহুব্রীহি সমাস হলে তা সহার্থক বহুব্রীহি হয়ে থাকে। যেমন—
সশ্রদ্ধ —শ্রদ্ধার সঙ্গে বর্তমান | সবেগ—বেগের সঙ্গে বর্তমান |
সাবধান—অবধানের সঙ্গে বিদ্যমান | |
সক্রিয়—ক্রিয়ার সঙ্গে বর্তমান |
একইভাবে সপুত্র, সবান্ধব, সদয়, সাবলীল, সফল, সস্ত্রীক, সতর্ক, সাবধান, সার্থক, সলজ্জ ইত্যাদি।
[চ] ব্যতিহার বহুব্রীহি: পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় বোঝাতে একই বিশেষ্যের দুবার ব্যবহারের মাধ্যমে যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে বলে ব্যতিহার বহুব্রীহি। যেমন—
চুলোচুলি–চুলে চুলে আকর্ষণ করে যে যুদ্ধ |
গলাগলি—গলায় গলায় যে মিল |
হাতাহাতি—হাতে হাতে যে যুদ্ধ |
জানাজানি—পরস্পরকে জানা |
একইভাবে হাসাহাসি, কোলাকুলি, বাঁধাবাঁধি, রাতারাতি, আড়াআড়ি, তর্কাতর্কি, টানাটানি, লাঠালাঠি ইত্যাদি।
[ছ] সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি: যে বহুব্রীহি সমাসে সংখ্যার প্রসঙ্গ থাকলেও তা বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় তাকে সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি বলে। যেমন—
দশানন (রাবণ)—দশ আনন যার |
চতুর্ভুজ—চতুঃ (চার) ভুজ (হাত) যার |
একইভাবে ষড়ানন, দ্বীপ, একচোখো, চতুর্মুখ, ত্রিলোচন, সহস্ৰলোচন ইত্যাদি।
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. সমাসকে মূলত ক-টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়?
(ক) ৫টি
(খ) ৮টি
(গ) ৯টি
(ঘ) ৪টি
২. কর্মধারয় সমাস কয় প্রকার?
(ক) ৫
(খ) ৩
(গ) ৪
(ঘ) ৬
৩. যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ বা পদগুলি লোপ পায় তাকে বলে—
(ক) সাধারণ কর্মধারয়
(খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
(গ) রূপক কর্মধারয়
(ঘ) উপমান কর্মধারয়
৪. তৎপুরুষ সমাসকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
(ক) ৬
(খ) ৮
(গ) ১০
(ঘ) ১১
৫. সমাস শব্দের অর্থ হল-
(ক) সংক্ষেপ
(খ) বিস্তার
(গ) বিশ্লেষণ
(ঘ) ব্যাখ্যা
৬. তৎপুরুষ সমাসের প্রধান লক্ষণ হল-
(ক) দুটি পদের অর্থ লোপ
(খ) একটি পদের অর্থলোপ
(গ) পূর্ববর্তী পদের বিভক্তি লোপ
(ঘ) পরবর্তী পদের বিভক্তি লোপ
৭. যে সমাসে পূর্বপদ উপমেয় এবং পরপদ উপমান হয় তাকে বলে-
(ক) উপমান কর্মধারয়
(খ) উপমিত কর্মধারয়
(গ) রূপক কর্মধারয়
(ঘ) সাধারণ কর্মধারয়
৮. ‘সিংহাসন’—কোন্ কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ?
(ক) মধ্যপদলোপী
(খ) উপমিত
(গ) রুপক
(ঘ) উপমান
৯. রূপক কর্মধারয় বলতে পারি যখন-
(ক) বিশেষণে-বিশেষ্যে বা বিশেষ্যে-বিশেষ্যে বা বিশেষণে-বিশেষণে কর্মধারয় সমাস হয়।
(খ) কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদ উপমেয় এবং পরপদ উপমান হয়।
(গ) কর্মধারয় সমাসে উপমেয় এবং উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়।
(ঘ) কর্মধারয় সমাসে দুটি অসম জাতীয় বস্তু বা ব্যক্তির মধ্যে তুলনা বা উপমার মাধ্যমে সাদৃশ্য কল্পনা করা হয়।
১০. যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির প্রত্যেকটিরই অর্থপ্রাধান্য থাকে তাকে বলা হয়-
(ক) তৎপুরুষ সমাস
(খ) দ্বিগু সমাস
(গ) বহুব্রীহি সমাস
(ঘ) দ্বন্দ্ব সমাস
১১. ‘দশানন’ পদটি কোন সমাসের উদাহরণ?
(ক) দ্বিগু
(খ) বহুব্রীহি
(গ) দ্বন্দ্ব
(ঘ) তৎপুরুষ
১২. বহুব্রীহি সমাসকে কয় শ্রেণিতে ভাগ করা যায়?
(ক) ৭
(খ) ৫
(গ) ৬
(ঘ) ৮
১৩. ‘জ্ঞানহীন’ পদটি কোন সমাসের উদাহরণ?
(ক) ব্যতিহার বহুব্রীহি
(খ) দ্বিগু
(গ) কর্মধারয়
(ঘ) করণ তৎপুরুষ
১৪. এর মধ্যে কোন্টি দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ?
(ক) ছেলেধরা
(খ) গানবাজনা
(গ) অতিমানব
(ঘ) প্রতিধ্বনি
১৫. অনেকসময় বাক্যাংশ বা বাক্যকে আশ্রয় করে সমাসপ্রতিম একটি পদের অর্থ বোঝালে তাকে বলে-
(ক) অলোপ সমাস
(খ) নিত্য সমাস
(গ) বাক্যাশ্রয়ী সমাস
(ঘ) দ্বিগু সমাস
১৬. ‘নীলকণ্ঠ’ পদটি কোন্ সমাসের উদাহরণ?
(ক) বহুব্রীহি
(খ) দ্বন্দ্ব
(গ) দ্বিগু
(ঘ) তৎপুরুষ সমাস
১৭. যে কর্মধারয় সমাসে দুটি অসম জাতীয় বস্তু বা ব্যক্তির মধ্যে তুলনা বা উপমার মাধ্যমে সাদৃশ্য কল্পনা করা হয়, তাকে বলে—
(ক) রূপক কর্মধারয়
(খ) উপমিত কর্মধারয়
(গ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
(ঘ) উপমান কর্মধারয়
১৮. ‘গ্রামান্তর’ পদটি কোন সমাসের উদাহরণ?
(ক) নিত্য সমাস
(খ) বহুব্রীহি সমাস
(গ) দ্বন্দ্ব সমাস
(ঘ) কর্মধারয় সমাস
১৯. দ্বিগু সমাসকে আমরা কটি ভাগে ভাগ করতে পারি?
(ক) পাঁচ
(খ) চার
(গ) তিন
(ঘ) দুই
২০. দ্বিগু সমাসের পূর্বপদটি হল-
(ক) গুণবাচক
(খ) সংখ্যাবাচক
(গ) বস্তুবাচক
(ঘ) ব্যক্তিবাচক
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘সমাস’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি কী?
উত্তর – ‘সমাস’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করলে পাওয়া যাবে—সম্-অস্ + ঘঞ্
২. সমাস কাকে বলে?
উত্তর – পরস্পরের মধ্যে অর্থগত সম্পর্ক রয়েছে এমন দুই বা ততোধিক পদের একপদীকরণকেই ব্যাকরণে সমাস বলা হয়।
৩. ‘কর্মধারয়’ শব্দটির অর্থ কী? ব্যাকরণের কোন্ প্রসঙ্গে শব্দটির ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – কর্মকে যে ধারণ করে থাকে, তাকেই কর্মধারয় বলে।
যে সমাসের সমস্যমান পদগুলি বিশেষ্য ও বিশেষণ হয় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকেই কর্মধারয় সমাস বলে।
৪. ‘তৎপুরুষ’ শব্দটির সাধারণ অর্থ ও একটি বিশিষ্টতা লেখো।
উত্তর – ‘তৎপুরুষ’ শব্দটির সাধারণ অর্থ ‘তার পুরুষ’।
এই সমাসের ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদদুটির মধ্যে পরপদটি প্রধান হয় এবং পূর্বপদের কারকবোধক ও সম্বন্ধবোধক বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায়।
৫. ‘দ্বন্দ্ব’ শব্দটির সাধারণ অর্থ কী? একশেষ দ্বন্দ্ব কাকে বলে?
উত্তর – ‘দ্বন্দ্ব’ শব্দের অর্থ হল ‘যুক্ত’।
সমস্যমান পদগুলির কোনো একটির বহুবচনান্ত একটিমাত্র পদ অবশিষ্ট থাকলে তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব বলে। যেমন—আমরা।
৬. ‘বহুব্রীহি’ শব্দটির সাধারণ অর্থ কী? ব্যাকরণের কোন্ প্রসঙ্গে শব্দটি ব্যবহৃত হয় ?
উত্তর – ‘বহুব্রীহি’ শব্দটির সাধারণ অর্থ হল বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার।
ব্যাকরণে সমাসের আলোচনায় সমাসের প্রকার হিসেবে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
৭. ‘দ্বিগু’ সমাসের সঙ্গে ‘সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি’ সমাসের পার্থক্য কী?
উত্তর – দ্বিগু সমাস ও সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাসের পার্থক্য—
দ্বিগু সমাস | সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাস |
সমাসবদ্ধ পদটির দ্বারা নির্দিষ্ট সংখ্যক বস্তু বা বিষয়ের সমাহার বোঝায়। | নির্দিষ্ট সংখ্যক বস্তু বা বিষয়ের সমাহার যার মধ্যে ঘটেছে, সমাসবদ্ধ পদটি সেই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়। |
৮. অলোপ সমাস কী?
উত্তর – সমাসনিষ্পন্ন হওয়ার পরেও পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্ন লোপ না পেয়ে, সমস্যমান পদের মতো থেকে গেলে, তাকে অলোপ সমাস বলে। যেমন— মনের মানুষ—মনের মানুষ ( মনমানুষ নয়)।
৯. ‘বাক্যাশ্রয়ী’ সমাসের সঙ্গে অন্য সমাসের মূল পার্থক্য কী?
উত্তর – বাক্যাশ্রয়ী সমাসের ব্যাসবাক্যে সর্বদাই একটি বাক্যখণ্ড সমস্যমান পদ হয়ে থাকে এবং সেই বাক্যখণ্ডে নিহিত সমাস মূল সমাসের সঙ্গে যুক্ত হয়।
১০. অলোপ সমাস কত প্রকারের হয় এবং কী কী?
উত্তর – অলোপ সমাস মূলত চার প্রকার অলোপ দ্বন্দ্ব, অলোপ তৎপুরুষ, অলোপ উপপদ এবং অলোপ বহুব্রীহি। অলোপ তৎপুরুষ আবার কারকভেদে পাঁচ প্রকার অলোপ করণ, অলোপ নিমিত্ত, অলোপ অপাদান, অলোপ অধিকরণ ও অলোপ সম্বন্ধ।
১১. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
উত্তর – যে বহুব্রীহি সমাসে সংখ্যার প্রসঙ্গ থাকলেও তা বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে। যেমন—ত্রিলোচন।
১২. উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর – উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের মধ্যে পার্থক্য—
উপমান কর্মধারয় | উপমিত কর্মধারয় |
১। এটি উপমান ও সাধারণ ধর্মের মধ্যে সমাস। | ১। এটি উপমিত ও উপমেয়র মধ্যে সমাস। |
২। সাধারণ ধর্ম থাকে। | ২। সাধারণ ধর্ম থাকে না। |
৩। পূর্বপদ উপমান এবং পরপদ সাধারণ ধর্ম। | ত। পূর্বপদ উপমেয়, পরপদ উপমান। |
১৩. উপপদ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন—পঙ্কজ, অরিন্দম।
১৪. অলোপ সমাসের ‘অলোপ’ নামকরণের কারণ কী?
উত্তর – অলোপ সমাসে সমাসবদ্ধ পদটিতে সমাসনিষ্পন্ন হওয়ার পরেও পূর্বপদ বিভক্তিলুপ্ত না হয়ে সমস্যমান পদের মতো থেকে যায়। তাই একে অলোপ সমাস বলা হয়।
১৫. ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ শব্দটির ব্যাসবাক্য লিখে দেখাও।
উত্তর – ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ শব্দটির ব্যাসবাক্য—দৃঢ় হয়েছে প্রতিজ্ঞা যার।
১৬. কর্ম তৎপুরুষ ও নিমিত্ত তৎপুরুষের একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তর – কর্ম তৎপুরুষের উদাহরণ—সমাসবদ্ধ পদ: লোকঠকানো; ব্যাসবাক্য লোককে ঠকানো।
নিমিত্ত তৎপুরুষের উদাহরণ—সমাসবদ্ধ পদ: শিশুসাহিত্য; ব্যাসবাক্য: শিশুদের জন্য সাহিত্য।
১৭. ব্যতিহার বহুব্রীহি ও মধ্যপদলোপী বহুব্রীহির একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তর – ব্যতিহার বহুব্রীহির উদাহরণ—সমাসবদ্ধ পদ: লাঠালাঠি; ব্যাসবাক্য: লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ।
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহির উদাহরণ—সমাসবদ্ধ পদ: মীনাক্ষী ব্যাসবাক্য: মীনের অক্ষির ন্যায় অক্ষি যার।
১৮. ব্যাকরণের কোন্ প্রসঙ্গে ‘বাক্যাশ্রয়ী’ শব্দটির ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – ব্যাকরণে সমাসের আলোচনা প্রসঙ্গে ‘বাক্যাশ্রয়ী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কারণ, এখানে সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হয়।
১৯. ‘আকাশগাঙ’ ও ‘ওষ্ঠাগত’ এই শব্দদুটির ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করে দেখাও।
উত্তর – ‘আকাশগাঙ’ ও ‘ওষ্ঠাগত’ শব্দদুটির ব্যাসবাক্য-সহ সমাস—
সমাসবদ্ধ পদ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
আকাশগাঙ | আকাশ রূপ গাঙ | রূপক কর্মধারয় |
ওষ্ঠাগত | ওষ্ঠে আগত | অধিকরণ তৎপুরুষ |
২০. নবহুব্রীহি ও নতৎপুরুষ সমাসের পার্থক্য লেখো।
উত্তর – নঞবহুব্রীহি ও নতৎপুরুষ সমাসের পার্থক্য—
নবহুব্রীহি | নতৎপুরুষ |
এই সমাসে অ, অন্ বা নিঃ-এর অর্থ ‘নাই’। | এই সমাসে অ, অন্ বা নিঃ-এর অর্থ ‘না’, ‘নয়’। |
২১. সমস্যমান পদ এবং সমস্ত পদের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – সমস্যমান পদ এবং সমস্ত পদের পার্থক্য
সমস্যমান পদ | সমস্তপদ |
যে দুই বা ততোধিক পদকে সমাসের মাধ্যমে একটি পদে পরিণত করা হয়, সেই দুই বা ততোধিক পদকে সমস্যমান পদ বলা হয়। | সমস্যমান পদ দুটির একপদীকরণ করে সমাসনিষ্পন্ন যে পদটি পাওয়া যায়, তাকে সমস্তপদ বলে। |
২২. দ্বন্দ্ব সমাস এবং কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য লেখো।
উত্তর – দ্বন্দ্ব সমাস এবং কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য—
দ্বন্দ্ব সমাস | কর্মধারয় সমাস |
১। সমস্যমান পদগুলি একটি সংযোজক অব্যয় দিয়ে জোড়া থাকে। | ১। সমস্যমান পদগুলি কোনো সংযোজক অব্যয় দিয়ে জোড়া থাকে না। |
২। দুটি সমস্যমান পদের অর্থই প্রধান হয়। | ২। পরপদ বা উত্তরপদের অর্থপ্রাধান্য থাকে। |
২৩. ‘লাভ-লোকসান’ এবং ‘ব্যাবসাবাণিজ্য’ দুটিই দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর – ‘লাভ-লোকসান’ এবং ‘ব্যাবসাবাণিজ্য’— এই দুটিই দ্বন্দ্ব সমাস। কিন্তু ‘লাভ-লোকসান’-এর ক্ষেত্রে সমস্যমান পদ দুটি পরস্পর বিপরীতার্থক। অথচ ‘ব্যাবসাবাণিজ্য’-এর ক্ষেত্রে সমস্যমান পদ দুটি পরস্পর সমার্থক।
২৪. ‘ইন্দ্রজিৎ’ পদটির ব্যাসবাক্য নির্ণয় করে এখানে উপপদ কী আছে উল্লেখ করো।
উত্তর – ‘ইন্দ্রজিৎ’ পদটির ব্যাসবাক্য ও উপপদ—সমস্ত পদ: ইন্দ্ৰজিৎ; ব্যাসবাক্য: ইন্দ্রকে জয় করে যে; উপপদ: ইন্দ্ৰ।
২৫. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় এবং মধ্যপদলোপী বহুব্রীহির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর – মধ্যপদলোপী কর্মধারয় এবং মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি-র মধ্যে পার্থক্য—
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় | মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি |
পরপদ বা উত্তরপদের প্রাধান্য থাকে। | পূর্বপদ বা উত্তরপদ—কোনোটিকেই নয়, বোঝানো হয় সম্পূর্ণ অন্য কোনো ব্যক্তি বা বিষয়কে। |
২৬. নিত্য সমাসের মধ্যে কী কী শ্রেণিবিভাগ দেখা যায় ?
উত্তর – ব্যাসবাক্যের উপস্থিতিভেদে নিত্য সমাস দুই প্রকার। [১] সর্বদাই সমাসবদ্ধ, ব্যাসবাক্য হয় না এমন নিত্য সমাস (যেমন—দাঁড়কাক)। [২] অন্য পদের সাহায্যে গঠিত ব্যাসবাক্য-সহ নিত্য সমাস। এর আবার তিনটি গঠনভেদ আছে। [ক] ‘অন্য’ যোগে—মতান্তর (অন্য মত) [খ] ‘কেবল’/শুধু’ যোগে—দর্শনমাত্র, চিহ্নমাত্র, [গ] ‘তুল্য’ যোগে—মাতৃতুল্য।
২৭. কর্মধারয় সমাসের সঙ্গে অব্যয়ীভাব সমাসের গঠনে কী পার্থক্য আছে?
উত্তর – কর্মধারয় সমাসের সঙ্গে অব্যয়ীভাব সমাসের পার্থক্য—
কর্মধারয় সমাস | অব্যয়ীভাব সমাস |
এই সমাসে সমস্যমান পদগুলি বিশেষ্য ও বিশেষণ হয়। | এই সমাসে পূর্বপদটি অব্যয় হয় এবং পরপদটি বিশেষ্য হয়। |
২৮. সমানাধিকরণ বহুব্রীহির এরকম নামকরণের কারণ কী?
উত্তর – এই বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়। কিন্তু পূর্বপদ ও উত্তরপদ—উভয়পদেই শূন্য বিভক্তি হওয়ায় একে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলা হয় ।
২৯. ব্যাসবাক্যের ‘ব্যাস’ শব্দটির অর্থ লেখো এবং এর অন্য নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – ব্যাসবাক্যের ‘ব্যাস’ শব্দটির অর্থ হল ‘বিস্তার’ এবং এর অন্য নাম হল বিগ্রহবাক্য বা বিস্তারবাক্য।
৩০. তৃতীয় বা অন্য পদের অর্থ প্রধান হয় কোন্ সমাসে?
উত্তর – বহুব্রীহি সমাসে তৃতীয় বা অন্যপদের অর্থ প্রধান হয়।
৩১. একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্য-সহ একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের একটি উদাহরণ হল—আমরা > তুমি ও আমি।
৩২. ‘অলোপ বহুব্রীহি’ সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – অলোপ বহুব্রীহি সমাসের একটি উদাহরণ হল—গায়েহলুদ > গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
৩৩. বাক্যাশ্রয়ী সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – কোনো বাক্যকে বা বাক্যখণ্ডকে সুসংহতরূপে একটিমাত্র শব্দে পরিণত করে, তাকে বিশেষ্য বা বিশেষণের রূপ দিলে বা কোনো সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হলে তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। যেমন—রক্তদানশিবির—রক্তের দান (সম্বন্ধ তৎ), তার জন্য শিবির (নিমিত্ত তৎ)।
৩৪. নিত্য সমাসের বিশিষ্টতা কী?
অথবা, নিত্য সমাস কাকে বলে?
উত্তর – যে সমাসে সমস্যমান পদগুলি নিত্য বা সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে, কোনো ব্যাসবাক্য হয় না, অথবা ব্যাসবাক্য করতে গেলে নতুন কোনো পদের প্রয়োজন হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন—কাঁচকলা’ সমাসবদ্ধ পদটিকে ভাঙা যায় না, কাঁচকলা—কাঁচা যে কলা—হয় না। কারণ কাঁচকলা একটি বিশেষ ধরনের কলা। সুতরাং ‘কাঁচকলা’ একটি নিত্য সমাসের উদাহরণ।
৩৫. ব্যাসবাক্য আর কী নামে পরিচিত ?
উত্তর – ব্যাসবাক্য বিগ্রহবাক্য নামে পরিচিত।
৩৬. পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় এমন সমাসগুলির নাম লেখো।
উত্তর – তৎপুরুষ এবং কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।
৩৭. উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য পায় কোন্ সমাসে?
উত্তর – দ্বন্দ্ব সমাসে উভয় পদের অর্থপ্রাধান্য ঘটে।
৩৮. নতৎপুরুষ ও নবহুব্রীহি সমাসের একটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর – নবহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদের বাইরে তৃতীয় অর্থ প্রধান হয়। যেমন—অনাদি—নেই আদি। কিন্তু নতৎপুরুষ সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান হয়। যেমন— অরাজি নয় রাজি।
৩৯. ‘তেমাথা’ দ্বিগু সমাসের উদাহরণ কিন্তু ‘দশানন’ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ কেন?
উত্তর – ‘তেমাথা’ শব্দটির ব্যাসবাক্য ‘তিন মাথার সমাহার’ বোঝায়। কিন্তু ‘দশানন’-এর ব্যাসবাক্য হল ‘দশ আনন আছে যার’—যা বুঝিয়ে দেয় তৃতীয় অর্থকে। যেখানে ‘দশ’ বা ‘আনন’-এর থেকে ‘রাবণ’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি তাই বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ।
নীচে উদ্ধৃত বাক্যগুলিতে যেসব সমাসবদ্ধ পদ আছে তাদের ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখো।
১. ওই আমাদের পুণ্যফল।
উত্তর – পুণ্যফল: পুণ্যের ফল; সম্বন্ধ তৎপুরুষ
২. দান করয়ে জগজনে।
উত্তর – জগজনে: জগের (জগতের) জনে; সম্বন্ধ তৎপুরুষ।
৩. সন্ধ্যার সীমান্তজোড়া পাহাড় ডিঙিয়ে চলে গেছি।
উত্তর – সীমান্তজোড়া: সীমান্ত ব্যাপিয়া জোড়া; ব্যাপ্তি তৎপুরুষ।
৪. আমার পথপ্রদর্শক বলিল।
উত্তর – পথপ্রদর্শক: পথ প্রদর্শন করেন যিনি; উপপদ তৎপুরুষ।
৫. বক্তার স্বর অত্যন্ত ভয়কাতর।
উত্তর – ভয়কাতর: ভয় থেকে কাতর; অপাদান তৎপুরুষ।
৬. এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে।
উত্তর – অরিন্দম: অরিকে দমন করেন যিনি;উপপদ তৎপুরুষ।
৭. সে প্রকৃত মহাসমুদ্র নয়।
উত্তর – মহাসমুদ্র মহা যে সমুদ্র; সাধারণ কর্মধারয়।
৮. আমার চতুর্দিকে পর্বতমালা, তাহার পার্শ্বদেশে নিবিড় অরণ্য।
উত্তর – চতুর্দিকে: চারটি দিকের সমাহারে; সমাহার দ্বিগু
৯. সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে।
উত্তর – শ্রাবণ-অরণ্যের: শ্রাবণ মাসের অরণ্যের; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।
১০. তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প।
উত্তর – অসমাপ্ত: নয় সমাপ্ত; না-তৎপুরুষ বা নতৎপুরুষ।
চির-অসমাপ্ত: চিরকাল ব্যাপিয়া অসমাপ্ত; ব্যাপ্তি তৎপুরুষ।
১১. জীবনের কলরব নেই।
উত্তর – কলরব: কল মুখরিত রব; মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি।
১২. মাতৃহীন শিশুটি থেকে গেল কাকির কাছে।
উত্তর – মাতৃহীন: মাতৃ (মায়ের) দ্বারা হীন; করণ তৎপুরুষ।
১৩. সম্মুখের দিগন্তজোড়া মাঠখানা জ্বলিয়া পুড়িয়া ফুটিফাটা হইয়া আছে।
উত্তর – দিগন্তজোড়া: দিগন্ত ব্যাপিয়া জোড়া; ব্যাপ্তি তৎপুরুষ।
ফুটিফাটা: ফুটির মতো ফাটা; উপমান কর্মধারয়।
১৪. অনাবৃষ্টির আকাশ হইতে আগুন ঝরিয়া পড়িতেছে।
উত্তর – অনাবৃষ্টি: নেই বৃষ্টি; না-তৎপুরুষ বা নতৎপুরুষ।
১৫. তার মুখখানা রাগে ও রৌদ্রের ঝাঁঝে রক্তবর্ণ।
উত্তর – রক্তবর্ণ: রক্তের ন্যায় বর্ণ; উপমান কর্মধারয়।
১৬. নিষ্ঠুর অভিযোগে গফুরের বাক্রোধ হয়ে গেল।
উত্তর – বাক্রোধ: বাককে রোধ; কর্মতৎপুরুষ।
১৭. ঠাকুরের হাতে ফলমূল ও ভিজা চালের পুঁটুলি ছিল।
উত্তর – ফলমূল: ফল ও মুল; দ্বন্দ্ব।
১৮. মহারানির রাজত্বে কেউ কারোর গোলাম নয়।
উত্তর – মহারানি: মহান যে রানি; সাধারণ কর্মধারয়।
১৯. কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ।
উত্তর – অগ্রগামী: অগ্রে গমন করে যে; উপপদ তৎপুরুষ।
২০. ত্রিশ বছর ধরে এর সঙ্গে আমার চেনাশোনা।
উত্তর – চেনাশোনা: চেনা ও শোনা; দ্বন্দ্ব।
২১. নতুন লেখক খালাসিদের সম্বন্ধে এক দরদভরা লেখা লিখেছে।
উত্তর – দরদভরা: দরদ দিয়ে ভরা; করণ তৎপুরুষ।
২২. বড়ো ভাই বিদেশে লাখ টাকা কামায়।
উত্তর – বিদেশে: অন্য দেশে; অব্যয়ীভাব।
২৩. ত্রিসংসারে তার আর কেউ ছিল না।
উত্তর – ত্রিসংসার: ত্রি (তিন) সংসারের সমাহার; সমাহার দ্বিগু।
২৪. খাদ্য ছাড়াও জীবকুল তথা মানুষ বাঁচতে পারে।
উত্তর – জীবকুল: জীবের কুল; সম্বন্ধ তৎপুরুষ।
২৫. একটি উড়োজাহাজ কলকাতা থেকে বোম্বাই যেতে ৭০/৮০ টন অক্সিজেন খরচ করে।
উত্তর – উড়োজাহাজ: উড়ো যে জাহাজ; সাধারণ কর্মধারয়।
২৬. বায়ুর কার্বন-ডাইঅক্সাইড শুষে নিয়ে উদ্ভিদজগৎ অক্সিজেন জোগান দেয়।
উত্তর – উদ্ভিদজগৎ: উদ্ভিদদের জগৎ; সম্বন্ধ তৎপুরুষ।
২৭. সে আমার বড়ই প্রিয়পাত্র।
উত্তর – প্রিয়পাত্র: প্রিয় যে পাত্র; সাধারণ কর্মধারয়।
২৮. কী প্রকারে তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব।
উত্তর – বিপক্ষ: পক্ষের বিপরীত; অব্যয়ীভাব।
২৯. জনম তব কোন্ মহাকুলে?
উত্তর – মহাকুল: মহান যে কুল; সাধারণ কর্মধারয়।
৩০. তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।
উত্তর – মহারাজ: মহান যে রাজা; সাধারণ কর্মধারয়।
৩১. শ্যামবর্ণ দোহারা বালক।
উত্তর – শ্যামবর্ণ: শ্যাম বর্ণ যার; সাধারণ বহুব্রীহি।
৩২. জানালার নীচেই একটা ঘাটবাঁধানো পুকুর ছিল।
উত্তর – ঘাটবাঁধানো ঘাটকে বাঁধানো; কর্ম তৎপুরুষ।
৩৩. কাহারও বা ব্যস্ততার লেশমাত্র নাই।
উত্তর – লেশমাত্র: কেবল লেশ; নিত্য সমাস।
৩৪. মাঝরাতে শংকরের ঘুম ভেঙে গেল।
উত্তর – মাঝরাতে; রাতের মাঝ; সম্বন্ধ তৎপুরুষ ।
৩৫. মুখখানা বেশ পানপাতার মতো হরতনী ছাঁদের।
উত্তর – পানপাতা: পানের পাতা; সম্বন্ধ তৎপুরুষ ।