WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 9 প্রলয়োল্লাস
WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 9 প্রলয়োল্লাস
West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 9 প্রলয়োল্লাস
West Bengal Board 10th Bengali Solutions
কবি পরিচিতি
ভূমিকা: কবি নজরুল ছিলেন দুরন্ত যৌবনের দূত। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নজরুল সম্বন্ধে বলেছেন, “নজরুলের মধ্যে যৌবনদীপ্ত বাঙালির সেই আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ হল।” (অনিঃশেষ নজরুল কথাসাহিত্য, কাজী নজরুল সংবর্ধনা সংখ্যা)।
জন্ম: পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে কবির জন্ম। তাঁর ডাকনাম দুখুমিঞা। বাবা কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। ছেলেবেলাতেই তাঁর বাবা মারা যান। কর্মজীবন: চাকরের কাজ থেকে শুরু করে ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে যোগদান পর্যন্ত বিভিন্ন পেশার মধ্য দিয়ে তিনি জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। পরাধীন ভারতে ইংরেজ শাসন ও শোষণ, ধর্মীয় বিদ্বেষ, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও রাজনৈতিক উৎপীড়ন দেখে নজরুল প্রতিবাদে মুখর হন এবং কলম ধরেন।
সাহিত্যজীবন: নজরুলের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায়। কবিতাটির নাম মুক্তি’। প্রথমদিকে তাঁর গল্পই পাঠকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়। এই সময়ে লেখা নজরুলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গল্প হল—‘বাউন্ডুলের আত্মকাহিনি’, ‘হেনা’, ‘ব্যথার দান’ইত্যাদি। সেনাবাহিনী থেকে ফিরে আসার পর মোসলেম ভারত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে নজরুলের পত্রোপন্যাস বাঁধনহারা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে নজরুলের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ধূমকেতু পত্রিকা। স্বাধীনতার সপক্ষে কবির লড়াকু লেখা তখন দেশবাসীর মধ্যে প্রবল উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। ওই বছরেই তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে যায়। ধূমকেতুতে ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ লেখার জন্য কবিকে গ্রেফতার করা হয়। এক বছর পর কারামুক্ত হলে কবি কুমিল্লায় আসেন। লাঙল পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘সাম্যবাদী’। পরে গণবাণী পত্রিকাকে কেন্দ্র করে নিপীড়িত মানুষের প্রতি সহানুভূতির প্রকাশে কবির রাজনৈতিক চেতনা যেন নতুন রূপ লাভ করে। এ ছাড়াও কবির কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হল— দোলনচাঁপা (১৯২৩), বিষের বাঁশী (১৯২৪), ভাঙার গান (১৯২৪), ছায়ানট (১৯২৫), সর্বহারা (১৯২৬), ফণীমনসা (১৯২৭), প্রলয়শিখা (১৯৩০)। ঠুমরি, গজল, কীর্তন, ভাটিয়ালি ইত্যাদি নানা ধরনের গান রচনায়, এমনকি সুরসৃষ্টিতেও নজরুল তাঁর দক্ষতার পরিচয় দেন।
শেষজীবন: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কবি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বোধশক্তিহীন ও নির্বাক হয়ে পড়েন। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও কোনো চিকিৎসাতেই তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়নি। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কবিকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট ঢাকাতে কবির মৃত্যু হয়।
সারসংক্ষেপ
কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কবির জীবন উল্লাসের কবিতা। আলোচ্য কবিতায় কবি মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। কালবৈশাখীর ঝড়ে কবি নতুনের পতাকা উড়তে দেখেছেন। পরাধীন এবং সামাজিক শোষণ থেকে মুক্তির জন্য যে সংগ্রাম, তা আপাত সর্বনাশের ভয়াবহতা সৃষ্টি করে। কিন্তু তার আড়ালেই রয়েছে নতুন দিনের স্বপ্ন। মহাকালের ভয়ংকর মূর্তিতে এই প্রলয়ের আগমন ঘটে। কিন্তু মৃত্যু, রক্তাক্ততা এসব কিছুকে অতিক্রম করে শেষপর্যন্ত জীবনেরই অভিষেক হয়। প্রকৃতির ভয়ংকর ক্রোধের মতো প্রচণ্ড তাণ্ডবের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী শক্তির আগমন ঘটে। এর বীভৎসতাকে কবি ভয় না পেতে বলেছেন। বিশ্বজুড়েই কবি প্রলয়রূপে প্রাণের জাগরণ দেখেছেন। রাত্রির অন্ধকার কেটে গিয়ে নতুন সকাল ও নতুন সূর্যের উদয় তিনি প্রত্যাশা করেছেন। সাম্রাজ্যবাদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ঔপনিবেশিকতা ইত্যাদির কারাগারে মানুষের দেবতাকে বন্দি হতে দেখেছেন কবি। কিন্তু প্রচণ্ড প্রলয়ের মধ্য দিয়েই তার মুক্তি ঘটবে। তাই ধ্বংস দেখে ভয় না করার জন্য তিনি সকলকে বলেছেন, কেননা এই ধ্বংসের মধ্যেই রয়েছে সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি। নবীন বিপ্লবীপ্রাণের আবির্ভাব ঘটছে অসুন্দরকে দূর করার জন্য। চিরসুন্দরের এ এক ভাঙা-গড়ার খেলা। একে স্বাগত জানানোর জন্যই কবি জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
নামকরণ
নামকরণ হল যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রবেশের মূল চাবিকাঠি। নামকরণের মধ্য দিয়েই রচয়িতা তার রচনাটি সম্বন্ধে ধারণা দিয়ে থাকেন। আলোচ্য ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটিতে কবি নজরুল ইসলামের শুভচেতনার বাণীরূপ প্রকাশিত হয়েছে। সত্য, শিব ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে কবি এই কবিতায় ধ্বংসের দেবতা শিবকে আহ্বান করে এনেছেন। ‘প্রলয়োল্লাস’ নামকরণটির মধ্য দিয়েই শিবের ভাঙাগড়ার গভীর তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে।
শিব হলেন প্রলয়ের দেবতা। একদিকে তিনি যেমন সৃষ্টিকর্তা, অন্যদিকে তেমনই ধ্বংসকর্তা। আলোচ্য কবিতায় প্রলয়দেবের ধ্বংসাত্মক মূর্তিই প্রধান। তিনি আসছেন কালবৈশাখী ঝড়ের রূপ ধরে। সামাজিক অসংগতি, ধর্মান্ধতা, পরাধীনতা এবং সর্বব্যাপী অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটাবেন নটরাজ শিব। তাঁর আগমনে কবি আকাশে নতুনের পতাকা উড়তে দেখেছেন। প্রলয়নেশায় নৃত্যপাগল শিব বন্দি ভারতীয়দের মুক্তি দেবেন। মহাভয়ংকররূপে বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে তিনি আসছেন। জগৎজুড়ে তৈরি হয়েছে আতঙ্কের পরিবেশ। কিন্তু কবি বলতে চেয়েছেন সেই আতঙ্ক সাময়িক। কারণ মহাকাল শিব নিত্য ভাঙাগড়ার খেলায় মগ্ন। সামাজিক অন্ধকার দূর করে, তিনিই শুভচেতনার উদয় ঘটাবেন। নতুন সৃষ্টির জন্য ভাঙন তাঁর নেশা। তাই প্রলয়ের সময়ও তাঁর উল্লাস দেখা যায়। কবিও সেই কথাই বলেছেন—“প্রলয় বয়েও আসছে হেসে/ মধুর হেসে।” কবির অভিপ্রেত বক্তব্যকে সামনে রাখলে কবিতাটির নামকরণ সার্থক বলেই মনে হয়।
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. নজরুল রচিত প্রথম কবিতার নাম-
(ক) লিচু চোর
(খ) মুক্তি
(গ) ঝিঙে ফুল
(ঘ) প্রভাত
২. নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হয়-
(ক) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
৩. নীচের কোন্টি নজরুলের লেখা কাব্যগ্রন্থ নয়?
(ক) চক্রবাক
(খ) ফণীমনসা
(গ) বিষের বাঁশি
(ঘ) মানসী
৪. কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত পত্রিকার নাম-
(ক) ধূমকেতু
(খ) বিজলি
(গ) ভারতী
(ঘ) মোসলেম ভারত
৫. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!”—কবি কার জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?-
(ক) প্রকৃতির
(খ) মানুষের
(গ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিবের
(ঘ) দেশমাতার
৬. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে…” -কেমনভাবে কেতন ওড়ে?-
(ক) লেলিহান শিখার মতো
(খ) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে
(গ) কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো
(ঘ) হঠাৎ ধূমকেতুর দেখা দেওয়ার মতো
৭. “আসছে এবার… -কে আসছে?-
(ক) জাঠ-কালাপাহাড়
(খ) অত্যাচারী শাসক ইংরেজ
(গ) প্রলয়ংকর শিব
(ঘ) নতুন পতাকা
৮. “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল”—কে আগল ভাঙে?-
(ক) প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল শিব
(খ) জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী
(গ) দেশের সাধারণ মানুষ
(ঘ) বিশ্বমাতা
৯. ‘মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন-
(ক) ভীতিজনক স্থান
(খ) রাত্রির অন্ধকার
(গ) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ
(ঘ) পরাধীন ভারত
১০. মহাকালের চণ্ড-রূপে’ আসছেন-
(ক) সৃষ্টির দেবতা
(খ) কালবৈশাখীর ঝড়
(গ) মহাকালী
(ঘ) মহানিশা
১১. “”বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।”—ভয়ংকরের রূপটি কার?
(ক) দুর্গার
(খ) মহাকালের চণ্ডরুপে
(গ) ধূমকেতুর
(ঘ) দিগম্বরের
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর – ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
২. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর – অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর (কার্তিক, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত হয়।
৩. কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অগ্নিবীণা (প্রকাশঅক্টোবর, ১৯২২)।
৪. কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করেন।
৫. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা কে করেন?
উত্তর – অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা করেন ‘চিত্রকর-সম্রাট’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রচ্ছদটি আঁকেন চিত্রশিল্পী শ্রীবীরেশ্বর সেন।
৬. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর – অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে মাসিক উপাসনা পত্রিকায় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
৭. ‘প্রলয়োল্লাস’ অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?
উত্তর – বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা।
৮. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট ক-টি কবিতা রয়েছে?
উত্তর – অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বরধারিণী মা’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘কামালপাসা’, ‘আনোয়ার’, ‘রণভেরী’, ‘শাত্-ইল-আরব’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘কোরবাণী’, ‘মোহব্রম’।
৯. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!”—পঙ্ক্তিটিতে কাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে?
অথবা, “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!” – কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি দেশের স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ তরুণ বিপ্লবীদের জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে।
১০. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”—কার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’-এ ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে।
১১. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে…”—নূতনের কেতন ওড়ার সংবাদ কে বহন করে এনেছে?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘নূতনের কেতন’ ওড়ার সংবাদ কালবৈশাখীর ঝড় বহন করে এনেছে।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে”—‘নূতনের কেতন’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সত্য ও সুন্দরের পূজারি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাংলায় নেমে এসেছিল অবক্ষয়ের কালো ছায়া। পরাধীনতার যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বাঙালি সমাজ। কুসংস্কার, দাসত্ব, জড়তা এবং পরাধীনতার অবসানে কবি কালবৈশাখীরূপ নটরাজের আগমন কামনা করেছেন। ধ্বংসের মধ্য দিয়েই হবে সৃষ্টির নব-উত্থান। ‘নূতনের কেতন’ বলতে কবি তাই পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় পরাধীনতার অবসান এবং শুভদিনের আগমনকেই ইঙ্গিতবাহী করে তুলেছেন।
২. “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!”‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বার’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? সেখানকার আগল ভাঙার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর – সিন্ধুপারের সিংহদ্বার: সিন্ধুপারের সিংহদ্বার’ বলতে কবি আন্দামানের সেলুলার জেলের প্রধান ফটকের কথা বলেছেন।
আগল ভাঙার কারণ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। আর ইংরেজদের অত্যাচারও তীব্র হয়। ইংরেজরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিনাবিচারে আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি করে রাখত। এই জেল ছিল ভারতীয়দের কাছে অত্যাচারের প্রতীক। এই কারণে ধ্বংসরূপী মহাকালই প্রলয়নেশায় মত্ত হয়ে সেই বন্দিশালার আগল ভাঙবেন বলে কবির বিশ্বাস।
৩. “আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল”—কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা? কথাটি তার সম্পর্কে বলা হয়েছে কেন?
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: উল্লিখিত অংশে যে তরুণ সম্প্রদায় ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্যত তাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে।
‘প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল’ বলার কারণ: পরাধীনতার যন্ত্রণা, সামাজিক শোষণ-বঞ্চনা- -এসব থেকে মুক্তির জন্য মানুষের সংগ্রাম ক্রমশই তীব্রতর হতে থাকে। সেই সংগ্রাম ধ্বংসকে নিশ্চিত করে। নতুন দিনের স্বপ্নে | বিভোর তরুণ বিপ্লবী-প্রাণদের দেখলে মনে হয় তারা যেন ‘প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল’। কারণ, জীবনকে বাজি রেখে তারা বিপ্লবের পথে এগিয়ে চলে। সমুদ্রপারে সিংহদরজার আগল ভাঙাই তাদের লক্ষ্য।
৪. “বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!” কাদের কথা বলা হয়েছে? এই ভয়ংকরের আগমনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন:‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার আলোচ্য অংশে ভয়ংকরের বেশে নতুনের আগমনের কথা বলা হয়েছে। এই নতুন আসলে তরুণ বিদ্রোহী শক্তি।
ভয়ংকরের আগমনের তাৎপর্য: প্রলয় নেশায় মত্ত হয়ে নৃত্যরত পাগলের মতো বিদ্রোহী শক্তির আগমন ঘটছে। তাকে প্রতিহত করার শক্তি, তার সামনে দাঁড়াবার শক্তি কারও নেই। মহাকালের ভয়ংকর মূর্তিতে অর্থাৎ শিবের ধ্বংসমূর্তিতে যেন মুক্তিদূত অর্থাৎ বিপ্লবী শক্তির আগমন ঘটছে। কালবৈশাখীর ঝড়ে উড়ছে নতুনের পতাকা, ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি। ভয়ংকরের পথেই এভাবে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছেন কবি।
৫. ‘ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!”— ভয়ংকর কে? তাঁর হাসির কারণ কী?
উত্তর – ভয়ংকরের স্বরূপ: ‘ভয়ংকর’ বলতে ধ্বংসরূপী মহাকাল বা শিবকেই বোঝানো হয়েছে, যা আসলে তরুণ বিপ্লবী শক্তির প্রতীক।
হাসির কারণ: শিব একাধারে ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রতীক। ধ্বংসরূপী শিব সংহারক। ভয়ংকর তাঁর রুদ্ররূপ। বিকট অট্টহাসি হেসে তিনি জীর্ণ-পুরাতন এবং যাকিছু অসুন্দর, তা বিনাশ করেন। তাঁর আগমনে প্রলয় ঘটে, সৃষ্টি হয় নতুনের। একইভাবে তরুণ বিপ্লবী শক্তিও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ধ্বংসের উন্মাদনায় মেতে ওঠে। তাদের মুখে থাকে ভয়ংকরের হাসি যা কোনো কিছুকেই ভয় পায় না।
৬. “ঝাপটা মেরে গগন দুলায়।”—কে ঝাপটা মেরে গগন দুলায়? গগন দোলানোর নেপথ্যে তার কী উদ্দেশ্য নিহিত?
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : মহাকালরূপী শিব ঝাপটা মেরে গগন দুলিয়ে দেন।
উদ্দেশ্য: ধ্বংসের দেবতা শিব বড়ো ভয়ংকর। তাঁর আগমন পৃথিবীতে প্রলয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাঁর জটাভার দুলে উঠলে আকাশ বাতাস-সহ সমগ্র পৃথিবী কেঁপে ওঠে। যাবতীয় জীর্ণতা দূর হয় তাঁর আগমনে। তারপরই নতুন সৃষ্টির প্রকাশ ঘটে পৃথিবীতে। এই ঝাপটা আসলে পুরাতন অচলায়তনকে ভাঙার আঘাত। শক্তি ও সাহসের প্রচণ্ডতা নিয়ে তরুণ বিপ্লবী শক্তি পুরোনো ব্যবস্থাকে ভাঙার লক্ষ্যে এই আঘাত করে।
৭. “সর্বনাশী জ্বালামুখী ধুমকেতু তার চামর ঢুলায়।”-কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে লেখো।
উত্তর – প্রসঙ্গ : সংগ্রামের পথ কখনও ফুলে ঢাকা নয়। স্বাধীনতার জন্য মানুষের যে সংগ্রাম, তার পথ তৈরি হয় মৃত্যু আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে। যে কারণে কবি তাঁর কল্পনায় বিশ্বপিতার কোলে রক্তমাখা তরবারি দেখেছেন। সুন্দরের বা নতুনের কোনো শান্ত, সৌম্য মূর্তি এখানে বর্ণিত হয়নি। নতুনের প্রলয় রূপই বর্ণিত হয়েছে। সর্বনাশের রূপ ধরে সুন্দরের সেই আগমনকে বর্ণনা করতে গিয়েই কবি বলেছেন, ধূমকেতু যেন তার ‘চামর ঢুলায়’ অর্থাৎ পুচ্ছ নাচায়।
৮. “অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর।” -সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – প্রসঙ্গ: মহাকালের আগমনে প্রলয়-বিক্ষুব্ধ পৃথিবীর কথা উল্লেখ প্রসঙ্গে ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
ব্যাখ্যা: মহাকালরূপী শিব ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছেন। তাঁর প্রলয়তাণ্ডবে সমগ্র বিশ্ব কেঁপে ওঠে। বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। কালবৈশাখী ঝড়ের রূপ ধরে তিনি আসেন নবসৃষ্টির বার্তা নিয়ে। তাঁর আওয়াজে মুখরিত আকাশ-বাতাস। ঠিক সেভাবেই যৌবনের উদ্দীপনায় চারপাশকে চমকে দিয়ে বিপ্লবীশক্তির আগমন ঘটে।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়।”—‘নূতনের কেতন’ কী? ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর – ‘নূতনের কেতন’: ‘কেতন’ শব্দের অর্থ পতাকা। ‘নূতনের কেতন’ অর্থাৎ স্বাধীনতার ভিত্তিতে যে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, তার প্রতীক পতাকার কথা বলা হয়েছে।
তাৎপর্য : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অগ্নিগর্ভ সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি রচিত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীজুড়ে নানাভাবে মুক্তি আন্দোলনের যে ঘটনাগুলি ঘটছিল কবি সেগুলি সম্পর্কেও সজাগ ছিলেন। এসব থেকেই তাঁর মনে হয়েছিল যে, নতুন দিনের আগমন সুনিশ্চিত হতে চলেছে। তার আগমন ‘কালবোশেখির ঝড়’-এর মতো। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সর্বনাশের পথ ধরে এই পরিবর্তন আসবে—“বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।” সর্বনাশী ধূমকেতুর মতো তার আবির্ভাব ঘটবে। সশস্ত্র সেই আবির্ভাবে স্থিতাবস্থার আসন টলে যাবে। মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রখরতা কিংবা মেঘগর্জনের মতো প্রবলভাবে ঘটবে বিপ্লবীশক্তির আগমন। মহাসমুদ্র দুলে উঠবে সেই ভয়ংকরের আগমনে। আবার এই ভয়ংকরের আড়ালেই রয়েছে সুন্দরের প্রতিশ্রুতি। প্রলয়ের রূপ ধরে এ হল ‘চিরসুন্দর’-এর আগমন— ভাঙনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিই তাঁর লক্ষ্য। তাই ভয়ংকরকে ভয় না পেয়ে তার জয়ধ্বনি করতে বলেছেন কবি। কারণ ‘কালবোশেখির ঝড়’-এই ওড়ে ‘নূতনের কেতন’—“কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর।”
২. “বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।”—এখানে ‘ভয়ংকর’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের কীভাবে আগমন ঘটছে নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর – ‘ভয়ংকর’-এর পরিচয় : কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘ভয়ংকর’ বলতে মহাকালের মতো চণ্ড মূর্তিতে যে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন ঘটছে তাদের কথা বলা হয়েছে।
ভয়ংকরের আগমন: যে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন কবি প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা। ইংরেজের দুর্গে আঘাত হানাই তাদের লক্ষ্য। কালবৈশাখির ঝড়ের প্রচণ্ডতা নিয়ে তাদের আগমন ঘটে। তারা ‘নূতনের কেতন’ ওড়ায়। পুরোনো ব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে তারা এক মানুষের বাসযোগ্য সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে অত্যাচার অন্যায়ের অবসান ঘটবে। কিন্তু তার জন্য সকলের আগে প্রয়োজন পুরোনো ব্যবস্থার বদল। তাই ধ্বংসের উন্মত্ততা নিয়ে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন ঘটে। কবি তাদেরকে বলেছেন—“অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল।” শিব যেমন তাঁর রুদ্র মূর্তিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিল এই তরুণদলও চায় সত্য, ন্যায় এবং সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করতে। ‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে’ অর্থাৎ সমুদ্রপারে আন্দামানের সেলুলার জেলের দরজা ভাঙতে চায় তারা। কারণ এই কারাগার ইংরেজের অত্যাচার ও দমনের প্রতীক। এই মৃত্যুপুরীতে মহাকালের চণ্ড-মূর্তিতে এভাবেই ভয়ংকরের আগমন ঘটে।
বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. “….. রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়,”-
(ক) সপ্ত
(খ) দ্বাদশ
(গ) উষা
(ঘ) খর
২. ‘স্ত জটা’ যে বর্ণ-
(ক) লাল
(খ) নীলাভ
(গ) পিঙ্গল
(ঘ) হরিদ্রা
৩. “দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!”— ‘পিঙ্গল’ শব্দের অর্থ-
(ক) পীত (হলুদ) রঙের আভাযুক্ত গাঢ় নীল
(খ) সাদা
(গ) রক্তবর্ণ
(ঘ) নীল
৪. “সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে/কপোলতলে!”—‘কপোল’ শব্দের অর্থ-
(ক) চিবুক
(খ) কপাল
(গ) গণ্ডদেশ বা গাল
(ঘ) গলা
৫. “বিশ্বমায়ের আসন” –
(ক) দুলে উঠেছে
(খ) পাতা হয়েছে
(গ) ছিন্ন হয়েছে
(ঘ) মহাকাল ধারণ করে রেখেছেন
৬. “হাঁকে ওই—”—যিনি হাঁকছেন, তিনি-
(ক) ঝড়ের দেবতা
(খ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা
(গ) অগ্নির দেবতা
(ঘ) জলের দেবতা
৭. “মাভৈঃ মাভৈঃ!”—‘মাভৈঃ’ শব্দের অর্থ
(ক) ভয় কোরো না
(খ) ভয়ংকর
(গ) সাবধান
(ঘ) ভয় দূর হয়ে গেছে
৮. “জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে”—জগৎজুড়ে প্রলয় ঘনিয়ে এলে-
(ক) ঝড়-বৃষ্টি আসে
(খ) মুমূর্ষুদের প্রাণনাশ ঘটে
(গ) সকালে নতুন সূর্যের আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে
(ঘ) উল্কাবৃষ্টি হয়
৯. “এবার মহানিশার শেষে” —
(ক) প্রলয় আসবে
(খ) মহাকাল চণ্ডরূপে আবির্ভূত হবেন
(গ) নতুন সূর্য সমাজকে নতুনভাবে আলোকিত করে তুলবে
(ঘ) একটি নতুন রথ আকাশে দেখা দেবে
১০. ‘করুণ বেশে’ আসবে-
(ক সত্য
(খ) সুন্দর
(গ) সূর্য
(ঘ) চাঁদ
১১. “আলো তার ভরবে এবার ঘর।”—ঘর যার আলোয় ভরে উঠবে-
(ক) সূর্য
(খ) চন্দ্ৰ
(গ) উল্কা
(ঘ) ধূমকেতু
১২. জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ লুকানো রয়েছে-
(ক) প্রলয়ের মধ্যে
(খ) ধ্বংসের মধ্যে
(গ) সৃষ্টির মধ্যে
(ঘ) বিনাশের মধ্যে
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়” – ‘দ্বাদশ রবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর – ‘দ্বাদশ রবি’ বলতে সূর্যের বারোটি রূপ বা মূর্তির কথা বলা হয়েছে। হরিবংশ মতে, এই মূর্তিগুলি হল—সবিতা, আদিত্য, বিবস্বান, অর্যমা, পুষা, ত্বষ্টা, ভগ, ধাতা, বরুণ, মিত্র, পর্জন্য এবং বিন্নু।
২. “দিগন্তরের কাঁদন লুটায়…”—কোথায় দিগন্তরের কাঁদন লুটিয়ে পড়ে?
উত্তর – কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় যে রুদ্রদেবের কল্পনা করেছেন, তাঁর ভয়াল আগুনরাঙা জটাজালে দিগন্তরের কাঁদন লুটিয়ে পড়ে।
৩. “সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে/কপোলতলে!”—কার কপোলতলে সপ্ত মহাসিন্ধু দুলে ওঠে?
উত্তর – উদ্ধৃতাংশে ভাঙনের দেবতা শিবের একফোঁটা চোখের জলে তাঁরই গালে ‘সপ্ত মহাসিন্ধু’ দুলে ওঠার কথা বলা হয়েছে।
৪. “বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর”—উদ্ধৃতাংশের অর্থ পরিস্ফুট করো।
উত্তর – প্রলয়ংকর শিব সৃষ্টি ও রক্ষার কর্তা। বিশ্বমায়ের অস্তিত্বকে তিনি তাঁর বিপুল বাহুর সাহায্যে রক্ষা ও লালনপালন করে থাকেন।
৫. “হাঁকে ওই…’ -কার হাঁক শোনা যাচ্ছে?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার আলোচ্য অংশে ধ্বংসের দেবতা প্রলয়ংকর শিবের হাঁক শোনা যাচ্ছে।
৬. “জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে”—পত্তিটির অর্থ পরিস্ফুট করো।
উত্তর – ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় জগৎজুড়ে যে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে, তার ধ্বংসলীলার শেষে জরা ও জীর্ণতার অবসান ঘটিয়ে নতুন প্রাণ জেগে উঠবে।
৭. “এবার মহানিশার শেষে …”—কোন্ দৃশ্য দেখা যাবে?
উত্তর – ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি আশা করেছেন যে ধ্বংসের কালরাত্রির শেষে নতুন ভোরের সূর্য বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে হেসে উঠবে।
৮. “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর”—পঙ্ক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর – ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় মহাদেবের জটায় ধৃত শিশু-চাঁদের নরম স্নিগ্ধ আলোয় সকলের ঘর ভরে উঠবে বলে কবি আশা প্রকাশ করেছেন।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়,”–দ্বাদশ রবি’ কী? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – দ্বাদশ রবি: উল্লিখিত অংশে দ্বাদশ রবি বলতে সূর্যের বারোটি রূপ সবিতা, আদিত্য, বিবস্বান, অবমা, পুষা, ত্বষ্টা, ভগ, ধাতা, বরুণ, মিত্র, পর্জ্জন্য এবং বিন্নুকে বোঝানো হয়েছে।
ব্যাখ্যা: শিবের তৃতীয় নয়নে রুদ্র মূর্তিতে থাকে ‘দ্বাদশ রবির’ সম্মিলিত তেজ। সেরকমই মধ্যাহ্ন সূর্যের মতো আগুন যেন বিপ্লবের বার্তাবাহকের চোখে দেখা যায়। যা কিছু জীর্ণ অসুন্দর তাকে পুড়িয়ে নতুনের প্রতিষ্ঠা ঘটানোই তাদের লক্ষ্য। দুর্যোগের ঘনঘটায়, ভয়াবহতার উচ্ছ্বাসে প্রকৃতির ভয়ংকররূপে যেন নতুনের জয়ধ্বনি ঘোষিত হয়।
২. “বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর।”—বিশ্বমা কে? কার বাহুর ওপর, কেন তাঁর আসন?
উত্তর – বিশ্বমা: বিশ্বমা বলতে কবি এই বিশাল পৃথিবীকেই বুঝিয়েছেন।
অধিষ্ঠান: প্রলয়ংকর শিব বস্ত্রশিখার মশাল জ্বেলে অসুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পৃথিবীতে আনেন শান্তিসুখের বার্তা। তাঁর বিশাল বাহুর ওপরই বিশ্বমাতার স্থান। কেননা, মহাকালই হলেন এই মহাবিশ্বের রক্ষাকর্তা। তিনিই যাবতীয় বিপ্লব থেকে বিশ্বমা-কে রক্ষা করে চলেছেন। সেই কারণেই কবি মনে করেছেন মহাকালরূপী শিবের বিপুল বাহুর ওপর জগজ্জননীর অবস্থান।
৩. “মাভৈঃ মাভৈঃ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে।” ‘মাভৈঃ’ কথাটির অর্থ কী? প্রলয় ঘনিয়ে আসা সত্ত্বেও কবি ‘মাভৈঃ মাভৈঃ’ বলেছেন কেন?
উত্তর – অর্থ: ‘মাভৈঃ’ কথাটির অর্থ ভয় কোরো না।
‘মাভৈঃ’ বলার কারণ: ধ্বংসের মধ্যেই থাকে সৃষ্টির বীজ। জড়তাগ্রস্ত সমাজকে নাড়া দিলে তবেই তার মধ্যে লুকানো প্রাণ জেগে ওঠে। রুদ্ররূপী শিব ধ্বংসের ত্রিশূল হাতে আবির্ভূত হন। তাঁর আগমনে জগতে তৈরি হয় প্রলয়ের পরিবেশ। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে জীবকুল। কিন্তু এই ধ্বংসের মধ্যেই আছে সৃষ্টির আশ্বাস। এই কারণেই কবি ‘মাভৈঃ মাভৈঃ’ বলে উল্লাস প্রকাশ করেছেন।
8. “জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে!”—জরায়-মরা মুমূর্ষু’ কারা ? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – ‘জরায়-মরা মুমূর্ষু’-দের পরিচয়: ‘জরায় মরা মুমূর্ষু’ বলতে পুরোনো জীর্ণ সমাজে বসবাসকারীদের বোঝানো হয়েছে।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: রুদ্ররূপী মহাকাল শিবের কর্মপন্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কবি আলোচ্য প্রসঙ্গটির উল্লেখ করেছেন। মহাকাল শিব ধ্বংসরূপী কালবৈশাখীর রূপ ধরে আসেন। তাঁর তাণ্ডবে পৃথিবীর জরাজীর্ণ সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর ঘটে নতুনের আগমন। জড়তাগ্রস্ত মৃতপ্রায় জীবজগৎ নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। তাই কবি বলেছেন রুদ্ররূপী শিবের ধ্বংসমূর্তির পিছনেই রয়েছে সৃষ্টির মহামন্ত্র।
৫. “এবার মহানিশার শেষে/আসবে ঊষা অরুণ হেসে”’মহানিশা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা, “এবার মহানিশার শেষে/আসবে ঊষা অরুণ হেসে”‘মহানিশা’ কী? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কবি কীসের ইঙ্গিত দিয়েছেন?
উত্তর – ‘মহানিশা’: ‘মহানিশা’ বলতে কবি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে অন্ধকারময় অবস্থাকে বোঝাতে চেয়েছেন।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: পৃথিবীজুড়ে কবি নজরুল স্থিতাবস্থার ভাঙন লক্ষ করেছেন। পরাধীনতা এবং সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যে অন্ধকার নেমে এসেছে তার অবসান ঘটবে, সভ্যতার নতুন সূর্যোদয় ঘটবে, কবি এরকমটাই প্রত্যাশা করেছেন। মহাদেব ধ্বংসের দেবতা হলেও তাঁর কপালে থাকে চাঁদ। একইভাবে ধ্বংসের মধ্যে সুন্দরকে বারবার প্রত্যক্ষ করেছেন বলেই কবির প্রত্যাশা যে, সেই চাঁদের আলোয় ঘর ভরে যাবে।
৬. “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর—’ উল্লেখের কারণ লেখো।
উত্তর – প্রসঙ্গটি উল্লেখের কারণ: ‘দিগম্বর’ অর্থাৎ মহাদেব নটরাজ মূর্তিতে ধ্বংসের তাণ্ডব সৃষ্টি করেন। কিন্তু তা আসলে সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্যই। দিগম্বরের তৃতীয় নেত্রের উপরে থাকে চাঁদ, যা সবহারানো রূপের মধ্যে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতা ও সমাজ রূপান্তরের স্বপ্ন দেখা কবি এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন কারণ, বিপ্লবের পথে ধ্বংস অনিবার্য হলেও তা আসলে সুন্দরের অভিষেককেই নিশ্চিত করে। কবি কল্পনা করেছেন, ওই চাঁদের আলোই অন্ধকারে পথ দেখাবে।
৭. “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর”—দিগম্বর কে? ‘শিশু চাঁদের কর’-এর হাসার অর্থটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – দিগম্বরের পরিচয়: উল্লিখিত অংশে ‘দিগম্বর’ বলতে মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে।
তাৎপর্য: মহাদেবের কপালে তৃতীয় নেত্ররূপে অর্ধচন্দ্র শোভা পায়। এই অর্ধচন্দ্রই বসনহীন জটাশোভিত সর্বত্যাগী মহাদেবের শরীরে অসাধারণ সৌন্দর্য নিয়ে আসে। এই চাঁদ অসম্পূর্ণ তাই কবি তাকে বলেছেন শিশু চাঁদ। একইভাবে বিপ্লবের কারণে যে ধ্বংসের আগমন ঘটে, তার মধ্যে শিশু চাঁদের হাসির মতো থেকে যায় স্বাধীনতার স্বপ্ন। অন্যায় অত্যাচারের অবসানে সমাজে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা ঘটবে—এটাই শিশু চাঁদের হাসির মতো ক্রমশ আভাসিত হচ্ছে চারপাশে।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়। ”—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। কবিতায় এই প্রসঙ্গটি উল্লেখের কারণ কী?
উত্তর – মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রবল রূপকে তুলে ধরার জন্য প্রশ্নোদৃত উক্তিটির উপস্থাপনা করেছেন। মধ্যাহ্নকালীন সূর্যের দীপ্তি ভয়াল, তা অগ্নিজ্বালা সৃষ্টি করে। আবার আকাশে যখন মেঘ করে, মনে হয় যেন আগুনরঙা জটাজাল সৃষ্টি হয়েছে। সেই মেঘ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টি যেন দিগন্তেরই কান্না। বিন্দু বিন্দু করে পড়া চোখের জলের মতো সেই বৃষ্টি সপ্তমহাসমুদ্রকে আলোড়িত করে তোলে। কবি প্রলয়ের এই রূপকে শুধু প্রকৃতিতেই নয়, চারপাশের সমাজজীবনেও করেছেন।
প্রসাটি উল্লেখের কারণ: প্রলয়ের ধ্বংসের মধ্যেই বিশ্বমায়ের সৃষ্টির অভিষেক দেখেছেন কবি। যুগবাণী গ্রন্থের ‘নবযুগ’ নামক রচনায় নজরুল লিখেছেন—“আজ মহাবিশ্বে মহাজাগরণ, আজ মহামাতার মহা আনন্দের দিন, আজ মহামানবতার মহাযুগের মহা উদবোধন।” বিক্ষোভ আন্দোলনের তীব্রতায় ধ্বংসের যে উন্মাদনা কবির চোখে পড়ে তার সঙ্গে কবি মিল খুঁজে পান প্রকৃতির ভয়ংকর রূপের। সেই রূপে মানুষ শঙ্কিত ও দিশাহারা হয়ে উঠলেও তার মধ্যেই কবি নতুন দিন ও জীবনের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি খুঁজে পেয়েছেন। সংগ্রামের সেই ভয়ংকর রূপকে প্রকাশ করতে গিয়েই কৰি এই মন্তব্যটি করেছেন।
২. “জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে/জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে।”—‘জগৎ জুড়ে প্রলয়’ কথাটির অর্থ লেখো। এই প্রলয়ের সার্থকতা কী?
উত্তর – ‘জগৎ জুড়ে প্রলয়’-এর অর্থ: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে রচিত হলেও পৃথিবীজুড়ে যে গণমুক্তির সংগ্রামগুলিকে কবি নানাভাবে সংঘটিত হতে দেখেছেন, তাও তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। কাব্য রচনার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতাও কবিকে প্রভাবিত করেছে। রাশিয়ার বিপ্লব, তুরস্কে কামাল পাশার উত্থান, আয়ার্ল্যান্ডের বিপ্লব ইত্যাদি ঘটনা নজরুলের মনে প্রবলভাবে দাগ কেটেছিল। সংগ্রাম এবং শোষণমুক্তির নানা চেহারা বিক্ষিপ্ত আকারে নানাভাবে থাকলেও বিপ্লবের সেই উন্মাদনা কবিকে স্পর্শ করেছিল। ‘জগৎ জুড়ে প্রলয়’ বলতে এই বিশ্বব্যাপী সংগ্রাম-আন্দোলনের কথাই বোঝানো হয়েছে।
প্রলয়ের সার্থকতা: প্রলয় ধ্বংসের বার্তাবাহক হলেও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এই প্রলয়কে কবি স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ, তাঁর মতে এই প্রলয় প্রচলিত ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন দিনের প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করবে, যা আসলে স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা। যুগবাণী-র ‘নবযুগ’ রচনায় নজরুল লিখেছিলেন—“নরে আর নারায়ণে আজ আচার-ভেদ নাই। আজ নারায়ণ মানব। তাঁহার হাতে স্বাধীনতার বাঁশী।” প্রলয়ের মধ্যে এই নতুন ব্যবস্থাকেই দেখেছেন কবি। তাই ভয়ংকরকে ভয় না পেয়ে তার জয়ধ্বনি করার কথা বলেছেন তিনি।
বহুৰিকল্পীষ্ম প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর
ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. “ওই সে মহাকাল সারথি—”—‘মহাকাল সারথি’ কী করছেন?
(ক) অমোচন করছেন
(খ) রক্ত-তড়িৎ চাবুক হানছেন
(গ) তার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলিয়ে দিয়েছেন’
(ঘ) পাষাণস্তূপ ধ্বংস করছেন
২. ‘বজ্রগানে ঝড়-তুফানে যেন-
(ক) কার জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে
(খ) ঘোড়ার চিৎকার ভেসে আসছে
(গ) ধ্বংসের আসন্নতা বোঝা যাচ্ছে
(ঘ) উল্কার পতন ত্বরান্বিত হচ্ছে
৩. “দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যুপে …… |”
(ক) পাষাণ-স্তূপে
(খ) পাষাণ-তলে
(গ) পাষাণ-চূড়ায়
(ঘ) পাষাণ-বেদিতে
৪. “এই তো রে তার আসার সময়”—তার আসার সময়টি বোঝা যাচ্ছে-
(ক) উল্কার পতনে
(খ) কালবৈশাখী ঝড়ে
(গ) ঝড়বৃষ্টিতে
(ঘ) রথের ঘর্ঘর শব্দে
৫. “শোনা যায় ওই …….. |”
(ক) পদধ্বনি
(খ) বজ্রনিনাদ
(গ) রথঘর্ষর
(ঘ) প্রলয়নাচন
৬. “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?”—ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়া উচিত নয়, কেননা-
(ক) ধ্বংসের মধ্যেই নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা নিহিত থাকে
(খ) সৃষ্টি হলে তা ধ্বংস হওয়া স্বাভাবিক
(গ) প্রকৃতির ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই
(ঘ) ধ্বংস হলে সভ্যতা আবার নতুন করে গড়ে তোলা যায়।
৭. “আসছে নবীন”—নবীন আসছে –
(ক) ধ্বংস হয়ে যাওয়া সভ্যতার রূপটি দেখতে
(খ) প্রাণহীন অসুন্দরকে নাশ করতে ও নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে
(গ) সভ্যতাকে বিনাশ করতে
(ঘ) সকলের আরাধ্য হিসেবে পূজা গ্রহণ করতে
৮. “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে/মধুর হেসে।”—প্রলয় বয়ে আনলেও তাঁর মুখে হাসি, কারণ-
(ক) তিনি যেমন ধ্বংস করেন, তেমন তিনিই আবার গড়েন
(খ) মানুষের প্রার্থনা তিনি পূরণ করতে পেরেছেন
(গ) সকলে তাঁর জয়ধ্বনি করেছে
(ঘ) তিনি প্রলয়ের অর্থ সম্পর্কে অবহিত নন
৯. “ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর!”—’চিরসুন্দর’ হল-
(ক) শিব
(খ) শক্তি
(গ) কালবৈশাখী
(ঘ) বিশ্বমাতা
১০. “…কিসের তবে ডর?” –ডর নেই, কারণ-
(ক) ঝড় একসময় থেমে যাবে
(খ) যিনি ধ্বংস করছেন, তিনিই আবার সৃষ্টি করবেন
(গ) জীর্ণ পুরাতনের ধ্বংসই কাম্য
(ঘ) যাঁরা জয়ধ্বনি করেন, তাঁদের ভয় করার কোনো কারণ নেই
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “বজ্রগানে ঝড়-তুফানে…”— কীসের শব্দ নিনাদিত হয়?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ঝড়-তুফানের সাথে বজ্রপাতে মহাকালের রথের ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি নিনাদিত হয়।
২. “উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!”—উল্কা কোথায় কীভাবে এসে পড়ে?
উত্তর – মহাকালের রথের ঘোড়ার খুরের দাপটে আকাশ থেকে জ্বলন্ত পাথর বা উল্কা এসে পড়েছে অন্ধ কারাগারের বন্ধ ঘরগুলিতে, দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত যজ্ঞের হাড়িকাঠে এবং পাথরের স্তূপে।
৩. “এই তো রে তার আসার সময়”—কীভাবে তা বোঝা যাচ্ছে?
উত্তর – প্রলয়ংকর মেঘের ঘর্ঘর শব্দে কবির মনে হয়েছে যেন মহাকালের রথের শব্দ তাঁর কানে আসছে। ধ্বংসের দেবতার আসার সম্ভাবনা এভাবেই কবিতায় সূচিত হয়েছে।
৪. “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?”- ধ্বংস দেখে কেন ভয় করা উচিত নয় বলে কবি মনে করেন?
উত্তর – ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত থাকে নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা। তাই প্রলয় বা ধ্বংসকে কবি ‘সৃজন-বেদন’ বা নতুন সৃষ্টির যন্ত্রণারূপে দেখেছেন।
৫. “প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন”—কথাটির অর্থ কী? [হুগলি কলেজিয়েট স্কুল
উত্তর – বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় আলোচ্য অংশটির অর্থ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে যে নবীনের আগমন ঘটে তা আসলে নতুন সৃষ্টির জন্য যন্ত্রণা।
৬. “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে”—‘প্রলয়’ বহন করেও হাসির কারণ কী?
উত্তর – ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয় অর্থাৎ ধ্বংসের বার্তা নিয়ে মহাকাল এসেছেন হাসিমুখে, কারণ তিনি যেমন ধ্বংস করবেন, তেমনই নতুন সৃষ্টিও করবেন।
৭. “আসছে নবীন।”—নবীনের আসার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর – কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় জীবনহারা, প্রাণহীন, জড়, অসুন্দরকে ধ্বংস করতেই যে নবীনের শুভাগমন, তা ব্যক্ত করেছেন।
৮, “ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?”—‘ভাঙা-গড়া খেলা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর – ‘ভাঙা-গড়া খেলা’ বলতে মহাকালের রুদ্ররূপে জীর্ণ পুরাতন সৃষ্টিকে ধ্বংস করা ও শুভংকররূপে নতুন জগৎ সৃষ্টি করাকে বোঝনো হয়েছে।
৯. “ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর।”—কী ভেঙে আবার নতুন করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় জীর্ণ, পুরাতন গতানুগতিকতাকে ভেঙে, যাবতীয় প্রাণহীনতা, নিশ্চলতার অবসান ঘটিয়ে নতুন সম্ভাবনাময় জীবন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
১০. “বধূরা প্রদীপ তুলে ধর”—বধূরা কার উদ্দেশে প্রদীপ তুলে ধরবে কেন?
উত্তর – কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় বধূদের প্রদীপ তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ তুলে ধরে বধূরা কাল-ভয়ংকরের রুপে আসা সুন্দরকে বরণ করে নেবে।
১১. “ওই আসে সুন্দর।”—সুন্দর কীভাবে আসে?
উত্তর – কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় সুন্দর আসে কাল] ভয়ংকরের বেশ ধারণ করে।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. “ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!”—উদ্ধৃতিটির অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – উৎস: উদ্ধৃতাংশটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার অন্তর্গত। প্রসঙ্গ: মহাকালরূপী শিবের আগমন প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির উপস্থাপন করা হয়েছে।
অন্তর্নিহিত অর্থ: কবি কল্পনা করেছেন মহাকালের রথের ঘোড়া দুরন্তবেগে ছুটে চলেছে। তার খুরের আঘাতে আকাশের তারা থেকে উল্কা খসে পড়ছে। গম্বুজ আকৃতির আকাশটাকে কবি অট্টালিকার খিলানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেখানে রক্ত-তড়িৎ-চাবুক দিয়ে আঘাত করে মহাকালের রথের সারথি দুরন্ত গতিতে এগিয়ে আসছেন। এক অপূর্ব চিত্রকল্পের মাধ্যমে কবি এইভাবে মহাকালের আগমনকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
২. “এই তো রে তার আসার সময় ওই রথঘর্ঘর—” -কার আসার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – যার আসার কথা বলা হয়েছে: উল্লিখিত অংশে মহাকালের রথের সারথির প্রতীকে নবীন বিপ্লবীশক্তির কথা বলা হয়েছে।
মন্তব্যটির ব্যাখ্যা: যা কিছু জরাজীর্ণ, প্রগতিবিরোধী, স্বাধীনতার পরিপন্থী সেই সব কিছুর অবসান চেয়েছেন কবি। মানুষের দেবতাকে এখানে অন্ধকার কারাগারে বেঁধে রাখা হয়েছে। কিন্তু তার মুক্তির সময় এসে গেছে। মহাকালের রথের সারথি বিদ্যুৎরূপ চাবুক দিয়ে জীর্ণ পুরাতনকে আঘাত করে চলেছে। ঝড়-তুফানের মধ্য দিয়ে যেন তাঁর অশ্বের হেষাধ্বনিও জেগে ওঠে। বিপ্লবীশক্তির আগমন, প্রতিবাদ এবং প্রত্যাঘাতই যেন এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়।
৩. “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?”——ধ্বংসকে ভয় না পাওয়ার কারণটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – রুদ্র মূর্তিতে শিবের আগমন ঘটে। কিন্তু সে আগমন আসলে অসুন্দরের বিনাশ ঘটানোর জন্য। ঠিক একইভাবে ধ্বংসের বার্তা বয়ে প্রলয়ের নেশায় উন্মত্ত বিপ্লবী তরুণদের আবির্ভাব ঘটে। ধ্বংসের সেই প্রচণ্ডতায় মানুষ শিহরিত হয়। কিন্তু কবির মতে, এই প্রলয় আসলে সৃষ্টির যন্ত্রণা। সমাজে যা কিছু জীবনহারা এবং অসুন্দর তার অবসান ঘটাতেই এই বিপ্লবী শক্তির আগমন। তাই ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলে কবি মনে করেছেন।
৪. “আসছে নবীন—জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!” কথাটির মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
অথবা, “আসছে নবীন—জীবনহারা অসুন্দরে করতে ছেদন! -উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর – স্বাধীনতা ও সমাজ রূপান্তরের জন্য কবি নবীন বিপ্লবীশক্তির আগমন প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রলয়ের মধ্য দিয়ে ধ্বংসের রূপ ধরে তার আবির্ভাব ঘটছে। কিন্তু সেই ধ্বংসের মধ্যেই রয়েছে সৃষ্টির সম্ভাবনা। ভাঙার মধ্য দিয়েই গড়ার প্রতিশ্রুতি থাকে। ধ্বংস যদি না-ই হয়, তবে সৃষ্টি কোনোদিন সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে না। চিরসুন্দরের এভাবেই আবির্ভাব ঘটে। তাই নবীনের এরূপ ধ্বংস-উন্মাদনা আসলে জীবনবিমুখ অসুন্দরকে দূর করার জন্য।
৫. “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে/ মধুর হেসে।”—কার আগমনের কথা বলা হয়েছে? প্রলয় বয়েও তার হাসির কারণ কী?
উত্তর – যার আগমনের কথা বলা হয়েছে: আলোচ্য উদ্ধৃতিতে ধ্বংসরূপী শিবের আগমনের কথা বলা হয়েছে।
হাসির কারণ: শিব রক্ষক ও সংহারক। সংহারকরূপী শিব ভয়ংকর। তিনি তখন প্রলয়দেবতা। তাঁর জটাভার দুলে উঠলে সারা পৃথিবী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। যা-কিছু জরাজীর্ণ, অসুন্দর, তা সবই তিনি পাগলা ভোলার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ধ্বংস করেন। কিন্তু এই ধ্বংসের পিছনে লুকিয়ে থাকে নতুন সৃষ্টির আশ্বাস। এই কারণেই প্রলয় ধ্বংস বয়ে আনলেও আপন সৃষ্টির আনন্দে মহাকালের মধুর হাসি ধ্বনিত হয়।
৬. ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর।”—‘সে’ কে? ভেঙে আবার গড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – ‘সে’-র পরিচয়: উল্লিখিত অংশে ‘সে’ বলতে আপাতভাবে মহাদেবের কথা বলা হলেও তাঁর প্রতীকে দেশের তরুণ বিপ্লবীদের কথা বলা হয়েছে।
ভাঙা-গড়ার বিষয়: মহাদেব তাঁর রুদ্র মূর্তিতে অসুন্দরের বিনাশ ঘটিয়ে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করেন। একইভাবে দেশের তরুণ বিপ্লবীরাও ধ্বংসের প্রচণ্ডতা নিয়ে আবির্ভূত হয়। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারকে আঘাত করাই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই ধ্বংসের তাণ্ডবকে সহ্য করতে পারে না। অথচ তার আড়ালেই রয়েছে স্বাধীনতার স্বপ্ন, নতুনের প্রতিষ্ঠা। কবি তাই একে কালভয়ংকরের বেশে সুন্দরের আগমন বলে উল্লেখ করেছেন।
৭. “ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?” —কবির এই মন্তব্যটিতে কোন্ ইঙ্গিত পাওয়া যায় ?
উত্তর – অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই কখনও শান্তির পথে হতে পারে না। ভয়ংকর মূর্তিতেই সুন্দরের অভিষেক হয়। বাস্তবজীবনেও ধ্বংসের মধ্যেই থাকে সৃষ্টির বীজ। তাই ভাঙন দেখে ভয় না পেয়ে জয়ধ্বনি করা প্রয়োজন। কারণ, ভয়ানকের মধ্য দিয়ে অভয়ের প্রতিষ্ঠা ঘটে। সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। ভয়ংকরের বেশে সুন্দরের আগমনকে স্বাগত জানানোর কথাই এখানে কবি বলেছেন।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?—প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!” কোন্ ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে? প্রলয়কে ‘নূতন সৃজন-বেদন’ বলার তাৎপর্য কী?
উত্তর – ধ্বংসের পরিচয় : কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় রুদ্ররূপী শিবের সংহারমূর্তি কল্পিত হয়েছে। সেই সংহারমূর্তিতে শিব অসুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবেন। এখানে মহাকাল শিবের ধ্বংসলীলার কথাই বলা হয়েছে।
‘নূতন সৃজন-বেদন’ বলার তাৎপর্য : জীর্ণপাতা ঝরে গিয়েই গাছে গাছে নতুন পাতার জন্ম হয়। একইভাবে সামাজিক জীর্ণতা ধ্বংস নাহলে নতুন সৃষ্টি সম্ভব নয়। মূল্যবোধের অবক্ষয়: সমকালীন বাংলা দেশে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কালো ছায়া নেমে এসেছিল। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসন মানুষের প্রাণের মুক্তিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। অন্যদিকে কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ইত্যাদি বিষয়গুলি সমাজের অগ্রগতিকে রুদ্ধ করেছিল। মনুষ্যত্বের অপমান, শোষণ, বঞ্চনা প্রভৃতি হয়েছিল সাধারণ মানুষের ভাগ্যলিপি। ধর্মান্ধ সমাজের ধ্বংস: নজরুল আন্তরিকভাবে এই সমাজের ধ্বংস চেয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যেই প্রলয়রূপী শিবের আবির্ভাব কামনা করেছেন। সংহারক ও রক্ষক: শিব হলেন একাধারে সংহারক ও রক্ষক। তিনি ধ্বংসের মধ্য দিয়েই সৃষ্টি করেন। তাঁর আবির্ভাবে প্রলয় সংঘটিত হয়। প্রলয় নিয়ে আসে ধ্বংস আর ধ্বংসের সঙ্গেই আসে বিনাশের জন্য বেদনা। সৃজন-বেদন: কিন্তু প্রলয়ের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির আগমন সুনিশ্চিত হয়। আপাত ধ্বংসের পেছনে সৃষ্টির অবস্থান বলে কবি প্রলয়কে ‘সৃজন-বেদন’ বলেছেন।
২. “কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর!”’— ‘কালভয়ংকরের’ পরিচয় দাও। কীভাবে তিনি সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবেন বলে কবির ধারণা?
উত্তর – কাল-ভয়ংকরের পরিচয়: কাল-ভয়ংকর হলেন ‘প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল’ শিব। তিনি আসেন কালবৈশাখীর রূপ ধরে। তাঁর হাতে বজ্রশিখার মশাল। সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতুর মতো তাঁর আগমন। রক্তমাখা কৃপাণ হাতে অট্টহাসি হেসে তিনি যাবতীয় অশুভশক্তির অবসান ঘটান। জীবনহারা অসুন্দরকে তিনি ছেদন করেন বলে তাঁর আগমন ধ্বংসাত্মক। সমাজসভ্যতা যদি রথের প্রতীক হয়, তবে তিনি রথের সারথি। রক্ত-তড়িৎ চাবুক হেনে তিনি দুরন্ত ঘোড়ার গতিকে আরও বাড়িয়ে দেন। সেই ঘোড়ার খুরের দাপটে আকাশে উল্কার ছোটাছুটি বা স্থান পরিবর্তন ঘটে যায়। এভাবে মহাবিশ্বের সব কিছুর পরিবর্তন ঘটে |
সুন্দরের প্রতিষ্ঠা: সমাজের জীর্ণ-পুরাতনকে ধ্বংস করে মহাকাল শিব নতুনের বার্তা বয়ে আনেন। প্রলয়রূপী শিবের আগমনপ্রার্থনার মধ্য দিয়ে তাই কবি নতুন সূর্যোদয় প্রার্থনা করেছেন। মানুষের অন্ধবিশ্বাস, বিপথগামিতা, দাসত্ব এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় দূর করতে না পারলে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। শিব নিজেই সত্য ও সুন্দরের প্রতীক। তাঁর ধ্বংসমূর্তি যেমন প্রলয়কে আহ্বান করে, তেমনই তাঁর সৃষ্টিও সুন্দরেরই প্রতিষ্ঠা ঘটায়। তাই সমাজের জীর্ণ অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে তিনি সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবেন। এই কারণেই কবি মহাকালরূপী শিবের আগমনে সকলকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন।
৩. “ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?” —‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ভাঙা-গড়ার কোন্ রূপকে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন লেখো।
উত্তর – নবযৌবনের বন্দনা: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি নজরুল চিরবিদ্রোহী নবযৌবনের বন্দনা করেছেন। এই বিপ্লবীশক্তির আগমন ঘটে ভয়ংকরের বেশ ধরে। ‘মহাকালের চণ্ড-রূপে’ অর্থাৎ শিবের প্রলয়ংকর মূর্তিতে যেন তাদের আগমন। মৃতপ্রায় সমাজের অবসান: ‘জয় প্রলয়ঙ্কর’ ধ্বনি তুলে জরাগ্রস্ত মৃতপ্রায় সমাজের তারা অবসান ঘটায়। চারপাশ দিশাহারা হয়ে যায় শক্তির সেই প্রচণ্ডতায়। রক্তাক্ততা আর বিশৃঙ্খলতা ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে তাদের এই আবির্ভাবে যে ধ্বংসের উন্মাদনা থাকে তা মানুষকে শঙ্কিত করে তোলে। সৃষ্টির নবনির্মাণ: ধ্বংসের এই প্রচণ্ডতা আসলে সৃষ্টির নবনির্মাণের জন্য। প্রলয়ের দেবতা শিব ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকে নিশ্চিত করেন। সেভাবেই বিপ্লবীশক্তিও আপাত নৈরাজ্যের আড়ালে সুস্থ, সুন্দর এক সমাজগঠনের স্বপ্ন দেখে। কবির চোখে এই প্রলয় তাই জড়ত্বের অবসান ঘটানোর জন্যও। মানবতার প্রতিষ্ঠা: কালরাত্রির শেষেই রয়েছে ভোরের সূর্যোদয়। অন্ধকারাগারের হাড়িকাঠে যে দেবতা বাঁধা আছেন তাকে মুক্ত করে মানবতার প্রতিষ্ঠা ঘটানোই এই তরুণদের লক্ষ্য। এই প্রলয় তাই ‘নূতন সৃজন-বেদন’।নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত: জীবনহারা অসুন্দরকে ছিন্ন করার জন্য যার আগমন ঘটেছে। তাই ভাঙনের পেছনে থাকে সৃষ্টির স্বপ্ন। স্বাধীনতা, সাম্য আর সম্প্রীতির বীজমন্ত্রে থাকে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত।
সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
১. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”—কাদের উদ্দেশ্যে কবির এই আহ্বান? কবিতায় কেন এই আহ্বানটি পুনরাবৃত্ত হয়েছে লেখো।
অথবা, “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”—তোরা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? তারা কেন জয়ধ্বনি করবে?
অথবা, “প্রলয়োল্লাস” কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র আঁকা হয়েছে আবার অন্যদিকে নতুন আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে— কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর – যাদের উদ্দেশে এই আহ্বান: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম দেশবাসীর উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
আহ্বানের পুনরাবৃত্তির কারণ: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় মোট উনিশবার “তোরা সব জয়ধ্বনি কর” এই আহ্বানসূচক পঙ্ক্তিটি উচ্চারিত হয়েছে, যা বুঝিয়ে দেয় এই পঙ্ক্তিটিতেই কবি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। আসলে ‘প্রলয়োল্লাস’ হল ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির বন্দনা। স্বাধীনতাপ্রিয় যে তরুণের দল তাদের দুর্জয় সাহস আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পরাধীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে চায় কবি তাদেরই জয়ধ্বনি করতে বলেছেন। কবির কথায় তারা হল ‘অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল,’ কিন্তু তারাই সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে আঘাত করে নতুন চেতনা, বিপ্লবের বার্তাকে বয়ে আনে। অসুন্দরকে দূর করতে তারা আপাত ভয়ংকরের বেশ ধরে। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে নবপ্রাণের প্রতিষ্ঠা ঘটে, প্রাণহীনতার বিনাশ হয়। “…জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে/জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে!” প্রলয়ংকর শিবের মতো রুদ্রমূর্তিতে যে বিপ্লবীশক্তির অভ্যুদয় ঘটে তারাই ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির কারিগর। তাই তাদের অভ্যর্থনা জানাতে হবে সমাজকে সুন্দর করে তুলতে। এ কারণেই ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ পঙ্ক্তিটি পুনরাবৃত্ত হয়েছে কবিতায়। এ হল বিপ্লবী যুবশক্তির প্রতি কবির মুগ্ধ অভিবাদন।
২. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের মধ্যে কবি উল্লাস অনুভব করেছেন কীভাবে বুঝিয়ে লেখো।
অথবা, ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি প্রলয় ও আশাবাদের সুর কীভাবে ব্যক্ত করেছেন তা বর্ণনা করো।
উত্তর – প্রাক্কথন: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ আসলে কবির জীবন-উল্লাসের কবিতা। শোষণ-বঞ্চনা, পরাধীনতার নাগপাশকে ছিন্ন করে জীবনের যে জাগরণ ঘটে, স্বাধীনতা আর সাম্যের ভোরে যার প্রতিষ্ঠা হয় তাকেই কবি স্বাগত জানিয়েছেন। গ্রন্থাকারে যে বছর (১৯২২) ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি প্রকাশ পায় ওই একই বছরে ধূমকেতু পত্রিকার এক সংখ্যায় নজরুল লেখেন— “পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে। সকল কিছু নিয়ম-কানুন বাঁধন-শৃঙ্খলা মানা-নিষেধের বিরুদ্ধে।” সুন্দরের আবির্ভাব: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাতেও দেখা যায়— – “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল”। পঙ্ক্তিটি দেখেই বোঝা যায় কবি স্পষ্ট বিদ্রোহের কথাই বলছেন। ভয়ংকরের বেশে এ হল সুন্দরের আবির্ভাব। প্রবল তেজ, বিপর্যয় নিয়ে যে বিপ্লবীশক্তির আগমন ঘটে তা প্রাথমিকভাবে শঙ্কিত করতে পারে, কিন্তু বিশ্বমায়ের আসন সেই পাতে। চিরসুন্দরের প্রতিষ্ঠা: কবি দেখেছেন “অন্ধ কারার বন্ধ কূপে/দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে”—এই ‘দেবতা’ স্বাধীনতার প্রতীক। এখান থেকে মুক্ত হয়ে তার আগমনের সময় হয়ে গিয়েছে। রথচক্রের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তাই আলোচ্য কবিতায় কবি বলেছেন যে ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, প্রাণহীন অসুন্দরকে বিনাশ করতেই এই ধ্বংস। এরপরই চিরসুন্দরের প্রতিষ্ঠা ঘটবে। তাকেই স্বাগত জানানোর জন্য সকলকে আহ্বান করেছেন কবি।
৩. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটিতে কবির রচনারীতির যে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে, তা লেখো।
উত্তর – রচনাশৈলী; বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসেবে নজরুলের প্রতিষ্ঠা হলেও সেই বিদ্রোহের সুরকে কবিতায় সার্থক করে তুলেছিল নজরুলের অনবদ্য রচনাশৈলী। এক্ষেত্রে শব্দ ব্যবহারের বৈচিত্র্য তাঁর কবিতাকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল। শব্দ প্রয়োগ: পবিত্র সরকার নজরুল সম্পর্কে বলেছেন—“বাংলার প্রায় সমস্ত কবির তুলনায় নজরুলের অভিধান বিস্তৃততর।” কিন্তু আরবি-ফারসি শব্দের যে বিপুল ব্যবহার সাধারণত নজরুলের কবিতায় দেখা যায় তা ‘প্রলয়োল্লাস’-এ নেই। বরং তৎসম শব্দবাহুল্য এই কবিতায় ধ্বনিময়তা থাকা সত্ত্বেও গাম্ভীর্য নিয়ে এসেছে। যেমন—“দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়/ দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!” পত্তি বিন্যাস কবিতার চালে একইসঙ্গে উচ্ছ্বাস আর গাম্ভীর্য মিলে যাওয়া নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। কবিতার পঙ্ক্তিগুলি অসম। কিন্তু তারই অন্ত্যমিল সার্থকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ধ্রুবপদের মতো ফিরে এসেছে “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!” এই পঙ্ক্তিটি। এই জয়ধ্বনিই কবিতার মূলকথা। এই জয়ধ্বনি স্বাধীনতার, নবযুগের। ভাষা ও ছন্দের মিশেল: বিপ্লবীশক্তির যে জীবনোল্লাস কবিতার প্রাণ তাকে ভাষা এবং ছন্দের মধ্যে অনায়াসে মিশিয়ে দিয়েছেন কবি। তীব্র বেদনা, ক্রোধ, সেখান থেকে নতুন জাগরণের স্বপ্ন—কবিতার নির্মাণকে ছুঁয়ে আছে ভালো করেই।
৪. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা অবলম্বনে কাজী নজরুল ইসলামের সংগ্রামী চেতনার পরিচয় দাও।
উত্তর – কথামুখ: কবি নজরুল কলমকে তরবারিতে রূপান্তরিত করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশীদার হয়েছিলেন। ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কবির সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার অনবদ্য প্রকাশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়েই নজরুলের কবিপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। সামাজিক অবক্ষয়: তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন সমকালীন সমাজের সর্বব্যাপী অবক্ষয়ের রূপ। এই পচনশীল সমাজ ধ্বংস করে নতুন সমাজ গড়ার অদম্য ইচ্ছা বুকে নিয়ে কবি মহাকালরূপী শিবের আগমন কামনা করেছেন। নটরাজ শিবের আগমন: নজরুল জানেন, সর্বব্যাপী দুর্দশা আর অবক্ষয় থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে রক্ষক ও সংহারক নটরাজ শিবকেই প্রয়োজন। এই অলৌকিক শক্তিই সামাজিক পাঁকে ফোটাবে মানবিকতার পদ্ম। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা: মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হলেই সমাজে সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা হবে। তার জন্য জীর্ণতার অবসান চাই। ধ্বংসরূপী শিব তাঁর বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত হবেন। তিনি ভেঙে দেবেন জড়তাগ্রস্ত, বিপথগামী সমাজকে। শিবের সংহারক মূর্তি: সমগ্র কবিতায় প্রলয়রূপী শিবের সংহারক মূর্তিকেই কবি তুলে ধরেছেন। নজরুলের সংগ্রামী চেতনার পথেই নটরাজ শিবের আবাহন সূচিত হয়েছে। এই শিবই দিনবদলের সূচনা করবেন। দেশপ্রেমের স্বরূপ: শিবের প্রতীকে নজরুল তারুণ্যের শক্তিকে মর্যাদা দিয়েছেন। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠার জন্য কবির এই চেষ্টা তাঁর দেশপ্রেমের স্বরূপকেই স্পষ্ট করে তোলে।
৫. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় নজরুল সমাজ পরিবর্তনের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তার বর্ণনা দাও।
অথবা, ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার পটভূমি আলোচনা প্রসঙ্গে নজরুলের কবিমানসের পরিচয় দাও।
উত্তর – কথামুখ: ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে ইংরেজ সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে কঠোর দমননীতির আশ্রয় নিয়েছিল। এর সঙ্গে কবি পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, বিপ্লবীরা দেশের স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়: আবার, ধর্মের নামে ভণ্ডামি চলছে চারিদিকে। মেকি দেশনেতারা স্বার্থের খেলায় মেতে উঠেছে। কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়কে আরও সর্বব্যাপী করেছে। সমাজ পরিবর্তন: এই অবস্থায় নজরুল উপলব্ধি করেছিলেন যে আগে সমাজকে পালটাতে হবে। জড়তাগ্রস্ত মৃতপ্রায় মানুষকে জীবনের আলোয় ফিরিয়ে আনতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন প্রলয়রূপী শিবের মতো কোনো অলৌকিক শক্তিকে। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা: সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে জাতিকে গ্রাস করবে অসুন্দর। কবি কামনা করলেন নটরাজ শিবের আবির্ভাবকে। এই নটরাজ শিবই হলেন নববিধানের বাণীবাহক। তিনিই জীর্ণ সমাজকে ধ্বংস করে সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করবেন। আর আশাবাদী হলেন এই ভেবে— “এবার মহানিশার শেষে/আসবে ঊষা অরুণ হেসে।” জয়ধ্বনি: নবসৃষ্টির কামনায় জয়ধ্বনি দিলেন সেই প্রলয়ংকরের। ধ্বংস দেখে ভয় নয়, বরং সৃষ্টিসুখের উল্লাসে টগবগিয়ে উঠল কবিমন। সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় কাল-ভয়ংকরের ভীষণমূর্তি তখন আর ভীতিজনক মনে হল না। বরং তাঁকে বরণ করার প্রত্যাশায় কবি দেশবাসীকে আহ্বান জানালেন।