WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 3 প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়—হরমোন)
WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 3 প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়—হরমোন)
West Bengal Board 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (3 প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়—হরমোন)
West Bengal Board 10th Biology Solutions
TOPIC 3 উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়—হরমোন
বিষয়সংক্ষেপ
- প্রাণীদেহে নানা কাজের সমন্বয় ঘটায় প্রাণী হরমোন। কোনো হরমোনের ক্ষরণমাত্রা অপর একটি হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একে হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটলে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রারও বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটলে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রারও যথাক্রমে হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়।
- মানবদেহে প্রধান অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি তথা অংশগুলি হল—হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি, থাইরয়েড, অগ্ন্যাশয়, অ্যাড্রেনাল, শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়।
- পিটুইটারি গ্রন্থিকে বলে প্রভুগ্রন্থি বা মাস্টার গ্ল্যান্ড। এই গ্রন্থির ক্ষরণ অন্য গ্রন্থি তথা দেহের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে বলে এর এইরকম নাম। পিটুইটারি গ্রন্থির দুটি খণ্ডক। অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত ACTH হরমোন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ক্ষরণ, TSH হরমোন থাইরয়েডে ক্ষরণ, GH হরমোন দেহের বৃদ্ধি ও GTH হরমোন জননগ্রন্থির ক্ষরণ ও দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে ADH বা ভ্যাসোপ্রেসিন এবং অক্সিটোসিন হরমোন ক্ষরিত হয় যা দেহে জলের ভারসাম্য রক্ষা করে।
- হাইপোথ্যালামাস থেকে নির্গত CRH, ACTH-এর ক্ষরণ, GHRH হরমোনটি GH-এর ক্ষরণ, TRH হরমোনটি TSH-এর ক্ষরণ ও GnRH হরমোন GTH-এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি প্রভুগ্রন্থি বা পিটুইটারির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এর অপর নাম ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু।
-
থাইরয়েড গ্রন্থির থেকে ক্ষরিত T3 ও T4 বা থাইরক্সিন হরমোন দেহের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরক্সিন হরমোনের অপর নাম ক্যালোরিজেনিক হরমোন।
- অগ্ন্যাশয় হল একটি মিশ্রগ্রন্থি। এর থেকে অগ্ন্যাশয় রস নামক পাকরস ছাড়াও ক্ষরিত হয়। এর আইলেট্স অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স নামক কোশগুচ্ছ থেকে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন ক্ষরিত হয়। ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে ও গ্লুকাগন রক্ত শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি বৃক্কের ওপরে অবস্থিত, তাই এর অপর নাম সুপ্রারেনাল গ্রন্থি। এই গ্রন্থির মেডালা থেকে নির্গত অ্যাড্রেনালিন হরমোনকে ‘আপদকালীন হরমোন’ বলে।
-
জননগ্রন্থি হল পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাশয় ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়—উভয়েই মিশ্রগ্রন্থি। শুক্রাশয় থেকে পুরুষ যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন হরমোন এবং ডিম্বাশয় স্ত্রী যৌন হরমোন থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরিত হয়।
-
হরমোনের কম ক্ষরণে নানা রোগ হয়। যেমন—GH/STH-এর অভাবে বামনত্ব, ইনসুলিনের অভাবে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস, ADH-এর অভাবে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং থাইরক্সিনের অভাবে সাধারণ গলগণ্ড রোগ হয়।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্য: প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- উৎস: প্রাণী হরমোন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা নালীবিহীন গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গের অন্তঃক্ষরা কোশসমষ্টি (যেমন—খাদ্যনালীর প্রাচীরগাত্র, শুক্রাশয়) থেকেও হরমোন ক্ষরিত হয়।
- রাসায়নিক প্রকৃতি: হরমোন সাধারণত প্রোটিন, পেপটাইড, গ্লাইকোপ্রোটিন বা স্টেরয়েডধর্মী।
- পরিবহণ: উৎপত্তিস্থল থেকে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় ও লক্ষ্য অঙ্গ বা কার্যকারী অঙ্গে পৌঁছোয়।
- কাজ ও পরিণতি: প্রত্যেক হরমোন সাধারণত একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের ওপর ক্রিয়া করে এবং ওই অঙ্গের সার্বিক বৃদ্ধি, বিকাশ ও কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। একে হরমোনটির লক্ষ্য অঙ্গ বলে। যেমন—পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন TSH থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে তার বৃদ্ধি, বিকাশ ও কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত হরমোন খুব অল্প সময়ের জন্য সক্রিয় হয়। কার্যকারিতার পর হরমোন বিনষ্ট হয় বা অন্য যৌগে পরিণত হয়, যেগুলি মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
- বাহক: প্রাণীদেহে হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রাসায়নিক বার্তাকে দূতের মতো লক্ষ্য অঙ্গে বহন করে নিয়ে যায়। তাই হরমোনকে রাসায়নিক বার্তাবাহক (chemical messenger) বলা হয় ।
- নিয়ন্ত্রণ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো একটি হরমোনের ক্ষরণ অপর আর একটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। এক্ষেত্রে নিঃসৃত হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাসে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে।
প্রশ্ন – 2. ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝ? একটি শব্দচিত্রসহ উদাহরণের সাহায্যে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ: যখন কোনো একটি হরমোনের ক্ষরণ অপর কোনো একটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন সেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। এক্ষেত্রে নিঃসৃত হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাসে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে।
ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণের ব্যাখ্যা: সাধারণত কোনো হরমোনের ক্ষরণমাত্রা অপর একটি হরমোনের ক্ষরণমাত্রার ওপর নির্ভর করে। একে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানো হল। মানুষের রক্তে T3 ও T4 এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পেলে, এগুলি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসকে ঋণাত্মক সংকেত (negative signal) পাঠায়। তার ফলে হাইপোথ্যালামাসের TSH-RH বা TRH হরমোনের সংশ্লেষ ও ক্ষরণ ব্যাহত হয়। এর ফলে অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থির থাইরোট্রফ নামক কোশগুলি থেকে TSH নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস পায়। একে ঋণাত্মক ফিডব্যাক (negative feedback) বলে। রক্তে TSH-এর মাত্রা হ্রাস পেলে, তা থাইরয়েড গ্রন্থির ফলিক্লের কোশগুলিতে উদ্দীপনার মাত্রা হ্রাস করে অধিক মাত্রায় T3 ও T4 সংশ্লেষে বাধা দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে T3 ও T4 সংশ্লেষ ও ক্ষরণের মাত্রা হ্রাস পেলে রক্তে T3 ও T4 এর মাত্রাও হ্রাস পায়।
রক্তে T3 ও T4 এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে ধনাত্মক সংকেত (positive signal) প্রেরিত হয়। তার ফলে হাইপোথ্যালামাসে TRH-এর সংশ্লেষ ও ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। TRH রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থির থাইরোট্রফ নামক কোশগুলিকে উদ্দীপ্ত করে। এর ফলে TSH-এর ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। একে ধনাত্মক ফিডব্যাক (positive feedback) বলে। ফলস্বরূপ রক্তেও TSH-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রক্তে TSH-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে থাইরয়েড গ্রন্থির ফলিকলের কোশসমূহ উদ্দীপ্ত হয়। তার ফলে T3 ও T4 সংশ্লেষ ও নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। এভাবে রক্তে T3 ও T4 এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রশ্ন – 3. মানবদেহে নানা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অবস্থান ও তাদের ক্ষরণ পদার্থ উল্লেখ করো।
উত্তর – মানবদেহে বিভিন্নপ্রকার অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অবস্থান ও ক্ষরিত হরমোন
| অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি | অবস্থান | ক্ষরিত হরমোন |
| 1. হাইপোথ্যালামাস | মানব মস্তিষ্কে থ্যালমাস অঞ্চলের নীচে অবস্থিত | CRH, GHRH, TRH, GnRH, PRH, MRH, ADH |
| 2. পিটুইটারি বা হাইপোফাইসিস |
মস্তিষ্কের তৃতীয় প্রকোষ্ঠটির নীচে স্ফেনয়েড
অস্থিনির্মিত সেলাটারসিক নামক প্রকোষ্ঠ
|
অগ্র পিটুইটারি—GH বা STH, TSH, ACTH, GTH (FSH, LH, ICSH, প্রোল্যাকটিন/LTH)
পশ্চাৎ পিটুইটারি—ADH বা ভ্যাসোপ্রেসিন, অক্সিটোসিন
|
| 3. থাইরয়েড গ্রন্থি | গলায় স্বরযন্ত্রের নীচে শ্বাসনালীর সামনে অবস্থিত | থাইরক্সিন বা T4, ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (T3) |
| 4. অ্যাড্রেনালিনগ্রন্থি বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি | বৃক্কের ওপরে একটি করে মোট দুইটি | অ্যাড্রেনাল মেডালা—অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিন |
| 5. অগ্ন্যাশয় | উদরগহবরে পাকস্থলীর সঙ্গে অনুপ্রস্থভাবে বিন্যস্ত | আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্-এর আলফা (α) কোশ থেকে গ্লুকাগন ও বিটা (β) কোশ থেকে ইনসুলিন |
| 6. শুক্রাশয় গ্রন্থি | পুরুষদের উদরের নীচে শুক্রথলিতে দুটি গ্রন্থি বিন্যস্ত | টেস্টোস্টেরন বা অ্যান্ড্রোজেন |
| 7. ডিম্বাশয় গ্রন্থি | মহিলাদের উদরগহবরে জরায়ুর উভয় পাশে মোট দুইটি গ্রন্থি বিন্যস্ত | ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন |
প্রশ্ন – 4. হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোনের নাম ও তাদের কাজ লেখো।
উত্তর – হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোন: হাইপোথ্যালামাস থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয়। এরা প্রধানত পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি হরমোনের নাম হল – GHRH বা গ্রোথ হরমোন রেগুলেটিং হরমোন, GnRH বা গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন, PRH বা প্রোল্যাকটিন রিলিজিং হরমোন, TRH বা থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন এবং CRH বা কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন।
হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোনের কাজ: হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির কাজ নিম্নরূপ।
- GHRH বা গ্রোথ হরমোন রিলিজিং হরমোন: অগ্র পিটুইটারি থেকে গ্রোথ হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- GnRH বা গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন: অগ্র পিটুইটারি থেকে গোনাডোট্রপিক হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- PRH বা প্রোল্যাকটিন রিলিজিং হরমোন: অগ্র পিটুইটারি থেকে প্রোল্যাকটিনের ক্ষরণ ত্বরান্বিত করে।
- TRH বা থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন: অগ্র পিটুইটারি থেকে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- CRH বা কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন: অগ্র পিটুইটারি থেকে ACTH- এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- MRH বা মেলানোসাইট রিলিজিং হরমোন: অগ্র পিটুইটারি থেকে MSH- এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন (ADH) ও অক্সিটোসিন; এই হরমোন দুটি হাইপোথ্যালামাসে সংশ্লেষিত হয়ে পশ্চাৎ পিটুইটারিতে বাহিত হয়। সেখান থেকে নিঃসৃত হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 5. GH বা STH-এর কাজ কী? বামনত্ব রোগের কারণ ও লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর – GH বা STH-এর কাজ: মানবদেহে সোমাটোট্রপিক হরমোনের কাজগুলি এখানে আলোচনা করা হল।
- সোমাটোট্রপিক হরমোন মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি দেহের বিভিন্ন অস্থি ও তরুণাস্থি গঠনের মাধ্যমে দেহের সার্বিক বৃদ্ধি ঘটায়।
- এ ছাড়া এই হরমোন পেশিকলা, যকৃৎ ও বৃক্কের বৃদ্ধির সহায়ক।
- প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও স্নেহপদার্থ বিপাকে এই হরমোনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে।
- শৈশব ও যৌবনের প্রারম্ভে এই হরমোন অতিমাত্রায় ক্ষরিত হলে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম রোগ হয়।
- প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে এই হরমোন অতিমাত্রায় ক্ষরিত হলে অ্যাক্রোমেগালি রোগ হয়। এই রোগে রোগীর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটে না। মুখমণ্ডল, আঙুল প্রভৃতি অংশের বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে মুখমণ্ডল আকারে বড়ো হয়।
- শৈশব ও বাল্যকালে এই হরমোন অল্প পরিমাণে ক্ষরিত হলে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একে ডোয়াফিজম বা বামনত্ব বলে।

বামনত্ব রোগের কারণ ও লক্ষণ
বামনত্ব রোগের কারণ: অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তথা শৈশবে ও বাল্যকালে প্রয়োজনের তুলনায় কম STH বা GH-এর ক্ষরণে বামনত্ব বা ডোয়াফিজম রোগ দেখা যায়।
বামনত্ব রোগের লক্ষণ: বামনত্ব রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলি হল, এই রোগে—
- দেহের স্বাভাবিক সামগ্ৰকি বৃদ্ধি প্রধানত অস্থি ও পেশির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- পরিণত অবস্থায় দেহের উচ্চতা 3ft বা 85cm-এর কাছাকাছি পৌঁছোয়।
- দেহের বিভিন্ন আন্তরযন্ত্রের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়।
- শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।
- গৌণ বা আনুষঙ্গিক যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ বিলম্বিত হয়।
প্রশ্ন – 6. পিটুইটারি নিঃসৃত GTHগুলির নাম ও প্রত্যেকের প্রধান কাজ লেখো।
উত্তর – GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোনগুলির নাম: অগ্র পিটুইটারি নিঃসৃত GTHগুলি হল—FSH বা ফলিক্ল স্টিমুলেটিং হরমোন, LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন (স্ত্রীদের ক্ষেত্রে) ও ICSH বা ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন (পুরুষদের ক্ষেত্রে)। এ ছাড়া LTH বা লিউটোট্রফিক হরমোন বা থ্রোল্যাকটিন হরমোনকেও GTH-এর অন্তর্গত বলে ধরা যেতে পারে। তবে এটি একটি পৃথক হরমোন যা ল্যাক্টোট্রপিন নামে পরিচিত।
GTHবা গোনাডোট্রপিক হরমোনগুলির কাজ
- FSH বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের কাজ: এই হরমোন- [i] স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ে ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে ও ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। [ii] পুরুষদেহে শুক্রাণু উৎপাদন বা স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
- LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন; এই হরমোন-[i] স্ত্রীদেহে ডিম্বাণু নিঃসরণে ও পরিণত ডিম্বথলি থেকে পীতগ্রন্থি সৃষ্টিতে সাহায্য করে। [ii] মহিলাদের পীতগ্রন্থি থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে।
- ICSH বা ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন: পুরুষদেহে ICSH শুক্রাশয়ের ইনটারস্টিশিয়াল কোশ বা লেডিগ বর্ণিত আন্তরকোশ থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে।
- LTH বা লিউটোট্রফিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন: এই হরমোন- [i] মাতৃদেহে স্তনদুগ্ধ উৎপাদন ও ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে। [ii] নারীদের গর্ভাবস্থায় পীতগ্রন্থিকে নষ্ট হতে দেয় না এবং এর ক্ষরণ তথা প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ অব্যাহত রাখে।
প্রশ্ন – 7. TSH-এর কাজ উল্লেখ করো। থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণজনিত রোগের লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর – TSH-এর কাজ: TSH-এর কাজগুলি হল –
- থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকারিতার জন্য এই হরমোন একান্ত প্রয়োজন। এই হরমোন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন হরমোনের (T3 ও থাইরক্সিন বা T4) ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- এই হরমোনের অধিক ক্ষরণে থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বৃদ্ধি পায়।
- এই হরমোনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরণ হ্রাস পায়।
থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণজনিত রোগের লক্ষণ: থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে —
- থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে,
- অক্ষিগোলক বিস্ফারিত হয়, অক্ষিগোলক অক্ষিকোটর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই রোগটির নামকরণ বহিঃচক্ষু গলগণ্ড করা হয়,
- বিপাকীয় হার বেড়ে যায়,
- হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনহার বেড়ে যায়,
- BMR বা বেসাল মেটাবলিক রেট এবং দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়,
- অনিদ্রা রোগ দেখা দেয়, মেজাজ রুক্ষ ও খিটখিটে হয়ে যায়,
- আবেগ প্রবণতা বেড়ে যায়।
প্রশ্ন – 8. ACTH এবং GTH-এর নিঃসরণ-স্থান ও কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – ACTH বা অ্যাড্রেনোকটিকোট্রপিক হরমোন
নিঃসরণ-স্থান: পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগের কর্টিকোট্রফ কোশ থেকে ACTH নিঃসৃত হয়।
কাজ: ACTH-এর কাজগুলি হল—
- ACTH হরমোন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
- ACTH অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স থেকে বিভিন্ন হরমোনের, যেমন—গ্লুকোকটিকয়েড, মিনারালোকটিকয়েড ও সেক্স স্টেরয়েড হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ACTH অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স থেকে নিঃসৃত গ্লুকোকটিকয়েডের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট বিপাককে প্রভাবিত করে।

GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোন
নিঃসরণ-স্থান: GTH পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হয়। অগ্র পিটুইটারির গোনাডোট্রফ কোশ থেকে প্রধানত দুটি হরমোন — FSH (ফলিক্ক্ল স্টিমুলেটিং হরমোন) ও LH (লিউটিনাইজিং হরমোন) ক্ষরিত হয় এবং অগ্র পিটুইটারির ল্যাক্টোট্রফ কোশ থেকে LTH (লিউটোট্রপিক হরমোন) ক্ষরিত হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বর্তমানে LTH-কে গোনাডোট্রপিক হরমোন হিসেবে গণ্য করা হয় না।
কাজ: সাধারণত কয়েকটি হরমোনকে একত্রে GTH বলা হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষদেহে এই হরমোনগুলির বিভিন্নপ্রকার কাজ করে থাকলেও সাধারণভাবে এদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বর্তমান। যথা— (1) পুরুষের দেহে শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যৌবনকালে পুরুষাঙ্গ ও অন্যান্য যৌন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকাশে এবং গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে। (2) স্ত্রীদেহে স্তনগ্রন্থি ও ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, যৌবনে স্ত্রীসুলভ লক্ষণ প্রকাশে ও যৌন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশে সাহায্য করে। যৌবনপ্রাপ্ত স্ত্রীদেহে মাসিক রজঃচক্রের স্বাভাবিকতা নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 9. থাইরক্সিনের উৎস কী? থাইরক্সিন হরমোনের কাজ উল্লেখ করো বা ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির কাজ লেখো।
উত্তর – থাইরক্সিনের উৎস: থাইরয়েড গ্রন্থির ফলিক্ল কোশে থাইরক্সিন হরমোন সংশ্লেষিত হয়।
থাইরক্সিন হরমোনের কাজ: থাইরক্সিন হরমোনের কাজগুলি এখানে আলোচনা করা হল –
- দেহের বৃদ্ধি, মানসিক পরিপূর্ণতা, যৌবনের লক্ষণসমূহের বহিঃপ্রকাশ, বিপাক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি হল থাইরক্সিনের প্রধান কাজ।
- এই হরমোন দেহের কলাকোশে অক্সিজেনের ব্যবহার বাড়িয়ে তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে। এই কারণে থাইরক্সিনকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলা হয়।
- থাইরক্সিন মৌল বিপাক হার (BMR) বৃদ্ধি করে।
- এই হরমোন অস্ত্র থেকে গ্লুকোজ শোষণ করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়।
- লোহিতকণিকার পূর্ণতাপ্রাপ্তিতে থাইরক্সিনের বিশেষ ভূমিকা আছে।
- হৃৎস্পন্দনের হার, রক্তচাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের ওপর থাইরক্সিনের প্রভাব আছে।
- ব্যাঙাচির পূর্ণাঙ্গ ব্যাং-এ রূপান্তরে (metamorphosis) থাইরক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- স্তনগ্রন্থির দুগ্ধক্ষরণে এই হরমোন সাহায্য করে।
- অনেকের মতে মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশেও এর ভূমিকা আছে।

প্রশ্ন – 10. ইনসুলিন-এর কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – ইনসুলিন-এর কাজ: ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলি এখানে আলোচিত হল—
- ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রক্ত থেকে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ইনসুলিন কলাকোশের ভেদ্যতা বাড়িয়ে কোশকে গ্লুকোজ গ্রহণে সহায়তা করে।
- গ্লাইকোজেনেসিসের মাধ্যমে যকৃৎ ও পেশিতে গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনরূপে সঞ্চয় করা প্রয়োজন অনুসারে গ্লুকোজের জারণ প্রভাবিত করা ইনসুলিনের অন্যতম কাজ।
- গ্লাইকোজেন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদনে (গ্লাইকোজেনোলাইসিস) ইনসুলিন বাধা দেয়।
- প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন (গ্লুকোনিওজেনেসিস) ব্যাহত করে।
- কোশে গ্লুকোজকে জারিত করে পাইরুভিক অ্যাসিডে পরিণত করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন – 11. গ্লুকাগন হরমোনের উৎস ও কাজ সম্পর্কে লেখো। ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।
উত্তর – গ্লুকাগনের উৎস: মানবদেহে অগ্ন্যাশয়ের অন্তর্গত আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের আলফা কোশ (α-cell) থেকে গ্লুকাগন নামক হরমোন সংশ্লেষিত ও নিঃসৃত হয়।
গ্লুকাগনের কাজ: মানবদেহে গ্লুকাগন প্রধান যে কাজগুলি সম্পন্ন করে, সেগুলি এখানে আলোচনা করা হল –
- রক্তে শর্করার (গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পেলে যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে। এই গ্লুকোজ রক্তে মুক্ত হয় ও তার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, এই হরমোন পেশির গ্লাইকোজেনকে ভাঙতে সাহায্য করে না।
- রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পেলে গ্লুকাগন বিভিন্ন নন্-কার্বোহাইড্রেট, যেমন—প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে গ্লুকোজের সংশ্লেষ বৃদ্ধি করে।
- কলাকোশে গ্লুকোজের জারণ মাত্রা হ্রাস করে ও ফ্যাটের ভাঙন বাড়িয়ে দেয়।
ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের পার্থক্য
| বিষয় | ইনসুলিন | গ্লুকাগন |
| 1. উৎস | অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের β-কোশ। | অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের α-কোশ। |
| 2. কাজ | রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়লে গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে পরিণত করে, গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। | এটি ইনসুলিনের বিপরীত ক্রিয়া করে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস পেলে, গ্লাইকোজেন, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদির জারণ দ্বারা গ্লুকোজ প্রস্তুত করে রক্তে এর পরিমাণ বাড়ায়। |
প্রশ্ন – 12. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম লেখো। অ্যাড্রেনালিন হরমোনের কাজ উল্লেখ করো।
অথবা, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ক্ষরিত হরমোনের কাজ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনসমূহ: অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিটির কর্টেক্স অঞ্চল থেকে তিন ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলি হল—
(1) গ্লুকোকটিকয়েড, 2) মিনারালোকটিকয়েড, (3) সেক্স স্টেরয়েড। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডালা অংশ থেকে আরও দুটি হরমোন ক্ষরিত হয়, যথা— (1) অ্যাড্রেনালিন ও (2) নর-অ্যাড্রেনালিন।
অ্যাড্রেনালিন হরমোনের কাজ: অ্যাড্রেনালিন হরমোনের কাজগুলি এখানে আলোচনা করা হল— (1) অ্যাড্রেনালিন হৃৎস্পন্দন হার, হার্দ-উৎপাদ ও রক্তচাপ বাড়ায়। (2) রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ এবং BMR বৃদ্ধি করে (3) শ্বসনের হার নিয়ন্ত্রণে অ্যাড্রেনালিনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। ফুসফুসের ব্রংকিওলের প্রসারণের মাধ্যমে অ্যাড্রেনালিন এই কাজ করে। (4) অ্যাড্রেনালিন তারারন্ধ্র প্রসারিত হতে সাহায্য করে। এই কারণে চক্ষু পরীক্ষার সময় ডাক্তাররা অনেক সময় এই হরমোন ব্যবহার করেন। (5) অ্যাড্রেনালিনের প্রভাবে অতিরিক্ত ঘাম নিঃসৃত হয় ও ত্বকের লোম খাড়া হয়। (6) উত্তেজনা, ক্রোধ, ভয় প্রভৃতি অবস্থায় এই হরমোন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে দেহকে ওই অবস্থার মোকাবিলায় উপযোগী করে। এই কারণে অ্যাড্রেনালিনকে আপৎকালীন বা জরুরিকালীন হরমোন বলা হয়।
প্রশ্ন – 13. জরুরিকালীন অবস্থায় অ্যাড্রেনালিন দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – অ্যাড্রেনালিনের প্রভাব: জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর অ্যাড্রেনালিন হরমোনের প্রভাব নীচে আলোচনা করা হল।
- অ্যাড্রেনালিন হরমোন হৃৎপিণ্ডের ওপর ক্রিয়া করে, ফলে হৃৎস্পন্দন ও হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধি পায়। ফলে পেশিকোশে গ্লুকোজ ও অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। এই কারণে হৃৎপিণ্ডে জোরে শব্দ (thumping heart) পাওয়া যায়।
- মস্তিষ্কের শ্বাসকেন্দ্র অ্যাড্রিনালিনের প্রভাবে উত্তেজিত হয়, ফলে দ্রুত ও গভীর শ্বাসক্রিয়া ঘটে। এর মাধ্যমে ফুসফুসে দ্রুত O2 প্রেরণ এবং কলাকোশ থেকে দ্রুত CO2 অপসারিত হয়। এই কারণে জোরে জোরে শ্বাসগ্রহণ বা হাঁপানি দেখা যায়।
- অ্যাড্রেনালিন ত্বক ও পৌষ্টিকনালী সংলগ্ন রক্তবাহের সংকোচন ঘটায়। ফলে এই দুটি অংশে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমে ও পেশিতে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, ব্যক্তি বিবর্ণ হয় ও গলা শুকিয়ে যায়।
- অ্যাড্রেনালিনের প্রভাবে পেশি উত্তেজিত ও দ্রুত ক্রিয়াশীল হয়। ফলে পেশি দৃঢ় হয় ও কাঁপুনি (shivering) দেখা যায়।
প্রশ্ন – 14. ইস্ট্রোজেন-এর উৎস ও কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – ইস্ট্রোজেন-এর উৎস: ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিক্ল ইস্ট্রোজেন হরমোন সংশ্লেষ ও নিঃসরণ করে।
ইস্ট্রোজেন-এর কাজ: স্ত্রীদেহে ইস্ট্রোজেন নিম্নলিখিত ভূমিকাগুলি পালন করে।
- ডিম্বাশয়ের গঠন ও ডিম্বাণু নিঃসরণ: ইস্ট্রোজেন ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিকল-এর পরিণতিতে ও ডিম্বাণু নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
- গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ : এই হরমোন বিভিন্ন গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন—স্তন গঠন, বাহুমূল (axilla), শ্রোণিদেশ (pubis) প্রভৃতি স্থানে যৌন কেশোগম ও যৌন কেশের স্ত্রী-সুলভ বিন্যাস নিয়ন্ত্রণ করে ইস্ট্রোজেন। এ ছাড়া, স্ত্রী-সুলভ সরু কণ্ঠস্বর, মসৃণ ও স্বল্পলোমবিশিষ্ট ত্বক প্রভৃতি অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলিও ইস্ট্রোজেন নিয়ন্ত্রণ করে।
- আনুষঙ্গিক যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ: নারীদেহে আনুষঙ্গিক যৌনাঙ্গ অর্থাৎ জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান নালী, যোনি প্রভৃতির বৃদ্ধি ও পূর্ণতাপ্রাপ্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং শ্রোণিচক্র প্রসারিত করে।
- মাসিক রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ: এই হরমোন মাসিক রজঃচক্রের আবর্তন নিয়মিত করে।
- অস্থি গঠন: ইস্ট্রোজেন মহিলাদের হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই রজঃনিবৃত্তির (menopause) পর ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ কমে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে ( osteoporosis)।
- বিপাক ক্রিয়া: এই হরমোন নারীদেহে প্রোটিন ও চর্বি সংশ্লেষ বাড়ায় এবং কাঁধ, নিতম্ব, ঊরু ইত্যাদি অঙ্গে চর্বির স্ত্রী-সুলভ সঞ্চয় ঘটায়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বা লাবণ্য বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন – 15. প্রোজেস্টেরন-এর উৎস ও কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – প্রোজেস্টেরনের উৎস: ডিম্বাশয়ের পীতগ্রন্থি বা করপাস লিউটিয়াম থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন সংশ্লেষ ও নিঃসরণ হয়।
প্রোজেস্টেরনের কাজ: স্ত্রীদেহে প্রোজেস্টেরনের প্রধান কাজগুলি নীচে আলোচিত হল।
- জরায়ুর বৃদ্ধিতে: গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধিতে প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন যৌথভাবে সাহায্য করে।
- ডিম্বাণু রোপণ ও গর্ভসঞ্জার: নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুগাত্রে রোপণে ও গর্ভসঞ্চারে প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
- অমরা গঠন: জরায়ুগাত্রে ডিম্বাণুর রোপণের পর প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে অমরা গঠিত হয় ও তার বৃদ্ধি ঘটে।
- গর্ভাবস্থায়: স্ত্রীদেহে গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে, ভ্রূণের বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে প্রোজেস্টেরন প্রধান ভূমিকা পালন করে।
- স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি: প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন মিলিতভাবে গর্ভাবস্থায় স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। প্রোজেস্টেরন স্তনগ্রন্থিতে নালিকা সৃষ্টি ও বিকাশে সাহায্য করে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে দুগ্ধ নিঃসরণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ডিম্বাশয়ের ওপর প্রভাব: এই হরমোন গর্ভাবস্থায় অমরা বা প্ল্যাসেন্টা থেকে বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে FSH বা LH নিঃসরণ কমায়, ফলে গর্ভাবস্থায় ডিম্বাণু উৎপাদন এবং রজঃচক্র বন্ধ থাকে।
প্রশ্ন – 16. টেস্টোস্টেরন-এর উৎস এবং কাজ উল্লেখ করো। 2+3
উত্তর – টেস্টোস্টেরন-এর উৎস: টেস্টোস্টেরন প্রধানত পুরুষদেহে বয়ঃসন্ধিকাল ও পরবর্তী সময়ে শুক্রাশয়ে অবস্থিত লেডিগের আন্তরকোশ থেকে ক্ষরিত হয়। এ ছাড়া অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল থেকেও এই হরমোনটি নিঃসৃত হয়।
টেস্টোস্টেরন-এর কাজ: পুরুষদেহে টেস্টোস্টেরনের কাজগুলি নিম্নরূপ।
- শুক্রাণু উৎপাদন: এটি বয়ঃসন্ধিকালে ও তার পরবর্তী সময়ে শুক্রাশয়ের সেমিনিফেরাস নালিকাতে (শুক্রোৎপাদী নালিকা) শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
- আনুষঙ্গিক যৌন গ্রন্থি ও অঙ্গের বিকাশ: এই হরমোন পুরুষদেহে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক যৌন গ্রন্থি ও অঙ্গের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে।
- গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য: পুরুষদের বিভিন্ন গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য, যেমন— গোঁফ-দাড়ি গজানো, বাহুমূল (axilla), শ্রোণি (pubis) প্রভৃতি অঞ্চলে কেশোদ্গম এবং যৌন কেশের পুরুষ-সুলভ বিন্যাস নিয়ন্ত্রণ করে। ভারী পুরুষালি কণ্ঠস্বর সৃষ্টিতেও এই হরমোনের ভূমিকা আছে।
- পেশি ও অস্থির বৃদ্ধি: টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকাল ও তার পরে পুরুষদেহে অস্থি, পেশি ও অন্যান্য কলাকোশে প্রোটিন সংশ্লেষ ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া এই হরমোনের প্রভাবে পুরুষদের দেহে অস্থি এবং অস্থিপেশি সুগঠিত হয়।
- বিপাক ক্রিয়া: টেস্টোস্টেরন পুরুষদেহে মৌল বিপাক হার বাড়ায়।
প্রশ্ন – 17. প্রাণী হরমোনের নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্ষরণ গুরুত্বপূর্ণ কেন? নীচের রোগ দুটির কারণ ও উপসর্গ বিশদে ব্যাখ্যা করো—বামনত্ব ও গলগণ্ড।
উত্তর – প্রাণী হরমোনের নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্ষরণের গুরুত্ব: প্রতিটি প্রাণী হরমোন একএকটি নির্দিষ্ট ঘনত্বে সর্বাধিক কার্যকরী হয়। প্রাণীদেহে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি বা কম হলে নানা রোগ দেখা দেয়। যেমন— শৈশবকালে GH -এর কম ক্ষরণে বামনত্ব ও অধিক ক্ষরণে অতিকায়ত্ব রোগ দেখা দেয়।
বামনত্ব ও গলগণ্ডের কারণ ও উপসর্গ: বামনত্ব ও গলগণ্ড রোগ দুটির কারণ ও উপসর্গ নীচে আলোচিত হল।
- বামনত্ব: বামনত্ব রোগের কারণ ও উপসর্গগুলি হল –[i] কারণ : শৈশবে STH বা GH-এর কম ক্ষরণে এই রোগ হয়। [ii] উপসর্গ: [a] দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিশেষত হাড় ও পেশির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। [b] পরিণত দশায় দেহের উচ্চতা 3 ফুট মতো হয়। [c] যৌন বিকাশের সময়কাল বা বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হয়। [d] দেহের আন্তরযন্ত্রের বিকাশ হ্রাস পায়। [e] BMR ও মানসিক সক্রিয়তা স্বাভাবিক থাকে।
- গলগণ্ড বা গয়টার: গলগণ্ড রোগের কারণ ও উপসর্গগুলি হল—[i] কারণ : থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটলে, সেই অবস্থাকে গলগণ্ড বলে। থাইরক্সিন হরমোনের কম ক্ষরণ ও অধিক ক্ষরণ, উভয় অবস্থাতেই গলগণ্ড হয়। থাইরক্সিনের কম ক্ষরণে সাধারণ গলগণ্ড ও অধিক ক্ষরণে বহিঃচক্ষু গলগণ্ড বা এক্সথ্যালমিক গয়টার হয়। [ii] উপসর্গ : সাধারণ গলগণ্ডের ক্ষেত্রে— [a] থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে গ্রীবা অঞ্চল স্ফীত হয়। [b] শ্বাসকার্যের অসুবিধা ও খাদ্য গলাধঃকরণে সমস্যা দেখা যায়।
বহিঃচক্ষু গলগণ্ডের ক্ষেত্রে—[i] রোগীর থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে ও গলা স্ফীত হয়ে যায়। [ii] অক্ষিগোলক অক্ষিকোটর ছেড়ে বেরিয়ে এসে ‘বিস্ফারিত নেত্র’ অবস্থা সৃষ্টি করে। [iii] মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়, দেহের ওজন হ্রাস পায়।
প্রশ্ন – 18. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও ডায়াবেটিস মেলিটাসের পার্থক্য কী? উভয় রোগের দুটি করে উপসর্গ লেখো।
উত্তর – ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও ডায়াবেটিস মেলিটাসের পার্থক্য
| বিষয় | ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস | ডায়াবেটিস মেলিটাস |
| 1. হরমোনগত কারণ | ADH হরমোনের নিষ্ক্রিয়তা বা স্বল্প ক্ষরণের ফলে এই রোগ হয়। | ইনসুলিন হরমোনের নিষ্ক্রিয়তা বা স্বল্প ক্ষরণের দরুন এই রোগ হয়। |
| 2. প্রধান উপসর্গ | মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যায় ও ঘনত্ব হ্রাস পায়। দেহ থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে জলাভাব সৃষ্টি হয় ও জল তেষ্টা বেড়ে যায়। |
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। কোশ গ্লুকোজ ব্যবহার করতে না পারায় প্রোটিন ও ফ্যাটের বিপাক ঘটে।
ফলসরূপ দেহের ওজন হ্রাস পায়।
|
উপসর্গ
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস: এই রোগে — (1) মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও ঘনত্ব হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে 24 ঘণ্টায় 28-30L পর্যন্ত মূত্র নির্গত হতে পারে। উল্লেখ্য এই বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট হরমোনটির নামকরণ করা হয়েছে অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন। (20 দেহ থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যাওয়ায় জলাভাব সৃষ্টি হয় ও অতিরিক্ত জলতেষ্টা পায়। বারবার জলপানের ইচ্ছাকে পলিডিপসিয়া বলে।
ডায়াবেটিস মেলিটাস: এই রোগে – (1) রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক (রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ—প্রতি 100ml রক্তে 80-120 mg) তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পায়। একে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। (2) কোশ গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না ফলে কোশের প্রোটিন ও ফ্যাটের বিপাক ঘটে ও দেহের ওজন হ্রাস পায়। (30 প্রতি 100 ml রক্তে 180 mg অপেক্ষা বেশি গ্লুকোজ থাকলে মূত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজ নির্গত হয়। একে গ্লাইকোসুরিয়া বলে। (4) আক্রান্ত রোগীদের ঘনঘন মূত্রত্যাগ, তৃয়া, ক্ষুধা, মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, অবসাদ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. এন্ডোক্রিনোলজি বলতে কী বোঝ? এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র কাকে বলে?
উত্তর – এন্ডোক্রিনোলজি: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, নিঃসৃত হরমোন এবং তাদের কার্যপদ্ধতি জীববিদ্যার যে শাখায় আলোচিত হয় তাকে এন্ডোক্রিনোলজি বলে।
এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র : অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও তা থেকে নিঃসৃত হরমোন নিয়ে গঠিত যে তন্ত্র জীবদেহের রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে, তাকে এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র বলে।
প্রশ্ন – 2. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য লেখো।
অথবা, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কীভাবে তুমি চিনবে?
উত্তর – (1) মানুষ ও অন্যান্য উন্নত প্রাণীদেহে অবস্থিত অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নালীবিহীন অর্থাৎ ক্ষরণ পদার্থ নির্গমনের জন্য কোনো নালী থাকে না।

(2) অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন ধরনের জৈবরাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যেগুলিকে সাধারণভাবে হরমোন বলে।
(3) অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি রক্তজালক-সমৃদ্ধ হয়। কারণ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন, সংলগ্ন রক্তজালকের রক্তে মুক্ত হয় ও রক্তের রক্তরসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে কার্যকরী অঙ্গে পৌঁছোয়।
প্রশ্ন – 3. হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি বলে কেন?
উত্তর – হরমোন উৎপাদক গ্রন্থির নিজস্ব কোনো নালী থাকে না। এরা ক্ষরিত পদার্থকে (হরমোনকে) সরাসরি গ্রন্থির ভিতরের কলারসে বা রক্তপ্রবাহে মুক্ত করে। তাই হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি বলে।
প্রশ্ন – 4. মানুষের শরীরে অবস্থিত অনাল গ্রন্থিগুলির নাম লেখো।
উত্তর » মানুষের প্রধান অনাল গ্রন্থিগুলি হল – (1) পিটুইটারি, (2) পিনিয়াল বডি, (3) থাইরয়েড, (4) প্যারাথাইরয়েড, (5) থাইমাস, (6) অগ্ন্যাশয়, (7) অ্যাড্রেনাল, (8) শুক্রাশয় এবং (9) ডিম্বাশয়।
প্রশ্ন – 5. হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বয়ক বা রাসায়নিক দূত বলে কেন?
উত্তর – (1) হরমোন রক্ত বা লসিকা দ্বারা উৎপত্তিস্থল থেকে কার্যস্থলে পৌঁছোয় ও কাজ করে থাকে। অনেকসময় একই কাজের বিপরীত দিক দুটি হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে (যেমন—ইনসুলিন ও গ্লুকাগন যথাক্রমে রক্তে শর্করা হ্রাস করে ও বৃদ্ধি করে)। এইভাবে দেহের নানা কাজ করা ও তাদের সমন্বয় করার কারণে হরমোনকে সমন্বায়ক বলে। (2) হরমোন মূলত প্রোটিন, স্টেরয়েড, গ্লাইকোপ্রোটিন, অর্থাৎ জৈব রাসায়নিক প্রকৃতির। এই কারণে সামগ্রিকভাবে হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বায়ক বা সমন্বয়সাধক বলা হয়।
প্রশ্ন – 6. প্রাণী হরমোনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – প্রাণী হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) এগুলি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা কোশসমষ্টি থেকে ক্ষরিত হয়। (2) এগুলি সাধারণত প্রোটিন, পেপটাইড, গ্লাইকোপ্রোটিন বা স্টেরয়েডধর্মী। (3) এই হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় ও লক্ষ্য অঙ্গ বা কার্যকরী অঙ্গে পৌঁছোয়। (4) প্রাণীদেহে হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রাসায়নিক বার্তা লক্ষ্য অঙ্গে নিয়ে যায়, তাই একে রাসায়নিক বার্তাবাহক বলে।
প্রশ্ন – 7. প্রশ্ন ট্রপিক হরমোন কাকে বলে?
উত্তর – যেসব হরমোন কোনো একটি অনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়ে অপর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা দেহের অপর কোনো কোশের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ট্রপিক হরমোন বলে। যেমন— ACTH হরমোন অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অংশকে উদ্দীপিত করে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 8. স্থানীয় হরমোন বা লোকাল হরমোন কাকে বলে?
উত্তর – যেসব হরমোন কেবল উৎপত্তিস্থল বা তার কাছাকাছি অঞ্চলের কোশ বা কলাগুচ্ছের ওপর কাজ করে তাদের স্থানীয় হরমোন বলে। যেমন—সিক্রেটিন, গ্যাস্ট্রিন হরমোনগুলি পাকস্থলীতে উৎপন্ন হয়ে সেখানেই কাজ করে।
প্রশ্ন – 9.হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থিকে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয় কেন?
উত্তর – হাইপোথ্যালামাসে উৎপন্ন নিউরোহরমোনগুলি অগ্র পিটুইটারিতে এসে তার অন্তঃক্ষরা কোশের ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখ্য যে পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয়। প্রভুগ্রন্থির ওপরে হাইপোথ্যালামাস ক্রিয়াশীল হয় বলে একে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বলা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন – 10. হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোনের নাম ও কাজ লেখো, যারা অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
উত্তর – কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন ও থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন হল হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোন যা অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (CRH) অগ্র পিটুইটারি থেকে ACTH হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (TRH) অগ্র পিটুইটারি থেকে TSH হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 11. হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোনের নাম উল্লেখ করো যারা পশ্চাৎ পিটুইটারিতে জমা হয় ও নিঃসৃত হয়। হরমোন দুটির কাজ লেখো।
উত্তর – হরমোনের নাম: ADH ও অক্সিটোসিন হরমোন দুটি হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষরিত হয় এবং পশ্চাৎ পিটুইটারিতে জমা হয় ও নিঃসৃত হয়।
হরমোনের কাজ: (1) ADH হরমোনটি নেফ্রনের দূরবর্তী সংবর্ত নালিকায় জলের পুনঃবিশোষণে সাহায্য করে। (2) অক্সিটোসিন হরমোনটি জরায়ুর অনৈচ্ছিক পেশির সংকোচন ঘটিয়ে প্রসবে সাহায্য করে।
প্রশ্ন – 12. নিউরোহরমোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – নিউরোহরমোন: মানব মস্তিষ্কে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস অংশের নিউরোসিক্রেটরি কোশ (নিউরোন) থেকে সংশ্লেষিত ও ক্ষরিত উপাদানকে নিউরোহরমোন বলে।
উদাহরণ : ADH, GHRH ইত্যাদি।
প্রশ্ন – 13. পিটুইটারিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয় কেন?
উত্তর – পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলি একদিকে যেমন দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে অন্যদিকে অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ ও কার্যকারিতাকেও সমানভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বা মাস্টার গ্ল্যান্ড বলে। পিটুইটারি নিঃসৃত ACTH, TSH, GTH যথাক্রমে অ্যাড্রেনাল, থাইরয়েড এবং গোনাডের (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) ক্ষরণ ও কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 14. পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম লেখো।
উত্তর – পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম হল – (1) অ্যাড্রেনোকটিকোট্রপিক হরমোন বা ACTH। (2) সোমাটোট্রপিক হরমোন বা STH। (3) থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বা TSH | (4) প্রোল্যাকটিন। (5) গোনাডোট্রপিক হরমোন বা GTH। গোনাডোট্রপিক হরমোন আবার তিন প্রকার— (a) ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন বা ICSH। (b) ফলিক্ক্ল স্টিমুলেটিং হরমোন বা FSHT (c) লিউটিনাইজিং হরমোন বা LH |
প্রশ্ন – 15. অগ্র ও পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কাৰ্যস্থল লেখো।
উত্তর – অগ্র পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন: (1) ACTH—অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে। (2) TSH— থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে। (3) GTH – জননগ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে। (4) LTH-স্তনগ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে। (5) GH—অস্থি, তরুণাস্থি ও পেশির ওপর ক্রিয়া করে।
পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন: (1) ADH—বৃক্কের ওপর ক্রিয়া করে। (2) অক্সিটোসিন—জরায়ুর ওপর ক্রিয়া করে।

প্রশ্ন – 16. মানবদেহে জননগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরণে GTH-এর দুটি ভূমিকা লেখো।
উত্তর – মানবদেহে জননগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরণে GTH-এর ভূমিকাগুলি হল— (1) FSH বা ফলিক্ক্ল স্টিমুলেটিং হরমোন মহিলাদের ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। (2) লিউটিনাইজিং হরমোন বা LH মহিলাদের পীতগ্রন্থি থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন এবং পুরুষদের শুক্রাশয় থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে।
প্রশ্ন – 17. ADH-এর সম্পূর্ণ নাম, উৎস এবং কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – সম্পূর্ণ নাম: ADH-এর সম্পূর্ণ নাম অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন।
উৎস : পশ্চাৎ পিটুইটারি।
কাজ : বৃক্কের নেফ্রনের বৃক্কীয় নালিকার দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা অংশে জলের পুনঃশোষণ বাড়িয়ে মূত্রে জলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
প্রশ্ন – 18. একটি অ্যামিনোধর্মী ও আয়োডিনযুক্ত হরমোনের নাম এবং এর কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – হরমোনের নাম : একটি অ্যামিনোধর্মী ও আয়োডিনযুক্ত হরমোন হল থাইরক্সিন।
হরমোনের কাজ : থাইরক্সিন হরমোন BMR ও অন্যান্য বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 19. থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান ও এর থেকে নিঃসৃত একটি হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – অবস্থান : থাইরয়েড গ্রন্থি গলদেশে ল্যারিংক্সের নীচে ট্র্যাকিয়ার দু-পাশে একটি করে মোট দুটি খণ্ডরূপে অবস্থান করে। এই খণ্ডক দুটি ইস্থমাস নামক যোজক দ্বারা যুক্ত থাকে।
নিঃসৃত হরমোন: এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি হরমোনের নাম হল থাইরক্সিন।

প্রশ্ন – 20. কোন্ হরমোনকে কী কারণে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে ?
উত্তর – থাইরয়েড গ্রন্থিতে অবস্থিত ফলিক্লের কোশসমূহ থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন বা টেট্রাআয়োডোথাইরোনিন (T4) ও ট্রাই- আয়োডোথাইরোনিন (T3) নামক হরমোনগুলিকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে। কারণ কলাকোশে এই হরমোন দুটি BMR এবং কার্বোহাইড্রেটের জারণ ও শক্তির দ্রুত মুক্তি ঘটায়।
প্রশ্ন – 21. মানবদেহে রক্ত সংবহনতন্ত্র ও মৌল বিপাকীয় হার-এর ওপর থাইরক্সিন হরমোন কী প্রভাব ফেলে?
উত্তর – (1) থাইরক্সিনের অভাবে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন হার বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও এটি RBC-কে পরিণত হতে সাহায্য করে। (2) এর প্রভাবে দেহের বিপাক হার, বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রিত হয়, যার ফলে BMR স্বাভাবিক থাকে।
প্রশ্ন – 22. অগ্ন্যাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলা হয় কেন?
উত্তর – অগ্ন্যাশয় অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় প্রকার কোশসমষ্টি নিয়ে গঠিত বলে একে মিশ্র গ্রন্থি বলে। অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ থেকে বিভিন্ন হরমোন (যেমন—ইনসুলিন, গ্লুকাগন প্রভৃতি) এবং অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ থেকে বিভিন্ন উৎসেচক (যেমন—ট্রিপসিন, অ্যামাইলেজ, মলটেজ, লাইপেজ ইত্যাদি) নিঃসৃত হয়।
প্রশ্ন – 23. ফ্যাট বিপাকে ইনসুলিনের ভূমিকা কী ?
উত্তর – ইনসুলিন মেদকলায় গ্লুকোজ থেকে ফ্যাট প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। আবার, ইনসুলিন লাইপেজ ইৎসেচককে অবদমিত করে ফ্যাটের জারণে বাধা দেয়, ফলে লিপিডের আর্দ্রবিশ্লেষণ হ্রাস পায় ও ফ্যাটের সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন – 24. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন কী কী? এদেরউৎস লেখো।
উত্তর – রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন হল ইনসুলিন ও গ্লুকাগন।
ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের উৎস: (1) অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর বিটা কোশ ইনসুলিন হরমোনের উৎস। (2) অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর আলফা কোশ হল গ্লুকাগন হরমোনের উৎস।

প্রশ্ন – 25. ইনসুলিন কোথা থেকে ক্ষরিত হয়? এর একটি কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – ক্ষরণ স্থান: ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর বিটা (β) কোশ থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ: কলাকোশে গ্লুকোজ বিশোষণের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখা ইনসুলিনের প্রধান কাজ।
প্রশ্ন – 26. অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন কোন্টি? কেন এরকম নাম তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন: ইনসুলিন হরমোনকে অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন বলে।
ব্যাখ্যা: ইনসুলিন ফ্যাটের জারণে বাধা সৃষ্টি করে দেহে কিটোন বডি (অ্যাসিটোন, অ্যাসিটিক অ্যাসিড) তৈরি হ্রাস করে কিটোসিস রোগ সৃষ্টি প্রতিরোধ, করে। এই কারণে ইনসুলিনকে অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন বলে।
প্রশ্ন – 27. ইনসুলিন ও গ্লুকাগন পরস্পর বিপরীত কাজ করে’—যুক্তি দাও।
অথবা, গ্লুকাগনকে ইনসুলিনের বিপরীত হরমোন বলে কেন?
অথবা, ‘গ্লুকাগন ও ইনসুলিন পরস্পরের পরিপূরক’—কেন বলা হয়?
অথবা, হরমোনের অ্যান্টাগনিস্টিক প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – একই কাজের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দিক দুটি হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে তাকে অ্যান্টাগনিস্টিক প্রভাব বলে। গ্লুকাগন ও ইনসুলিন পরস্পর বিপরীত কাজ করে থাকে। যেমন—রক্তে শর্করা মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ইনসুলিন তার ব্যবহার বাড়িয়ে কোশে গ্লুকোজ মাত্রা হ্রাস করে। পক্ষান্তরে, রক্তে শর্করা মাত্রা হ্রাস পেলে, গ্লুকাগন হরমোন গ্লাইকোজেন ভেঙ্গে গ্লুকোজ মুক্তিতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন – 28. কোন্ হরমোনকে কী কারণে ‘হাইপারগ্লাইসেমিক হরমোন’ বলা হয় ?
উত্তর – গ্লুকাগন নামক একপ্রকার পলিপেপটাইড হরমোনকে হাইপার-গ্লাইসেমিক হরমোন বলা হয়। কারণ, এই হরমোনটি প্রধানত যকৃৎ কোশে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে গ্লুকোজে ভেঙে দেয় তথা গ্লাইকোজেনোলাইসিস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, তার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন – 29. হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া কাকে বলে ?
উত্তর – হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক (৪০-120mg শর্করা প্রতি 100ml রক্ত)-এর চেয়ে অনেক কমে গেলে সেই অবস্থাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। এক্ষেত্রে 100ml রক্তে শর্করার মাত্রা 70mg-এর কম হয়।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া : স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি 100 ml রক্তে শর্করার পরিমাণ 80mg-120mg। কোনো কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে গেলে সেই অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। এক্ষেত্রে প্রতি 100 ml রক্তে শর্করার মাত্রা 200 mg-এর বেশি হলে তবে সেই অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।
প্রশ্ন – 30. অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের দুটি বিপরীত ক্রিয়া উল্লেখ করো। অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের দুটি একই প্রকার কার্য উল্লেখ করো।
উত্তর – বিপরীত ক্রিয়া: (1) অ্যাড্রেনালিন হরমোন হ্রৎপিণ্ড থেকে রক্তনির্গমন মাত্রা বা হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধি করে, পক্ষান্তরে নর-অ্যাড্রেনালিন হরমোনটি হার্দ-উৎপাদ হ্রাস করে। (2) অ্যাড্রেনালিন হরমোন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ হ্রাস করে। পক্ষান্তরে, নর-অ্যাড্রেনালিন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
একই প্রকার কার্য : (1) উভয় হরমোনই সিস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। (2) হৃৎপিণ্ড সংকোচনের বল উভয় হরমোনই বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন – 31. নর-অ্যাড্রেনালিন-এর কাজ লেখো।
উত্তর – নর-অ্যাড্রেনালিন-এর কাজগুলি হল – (1) হৃৎস্পন্দন হার সামান্য বৃদ্ধি করা, (2) রক্তচাপ বাড়ানো, (3) রক্তে শর্করা ও মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের নিঃসরণ বৃদ্ধি করা এবং (4) দেহের রক্তবাহের পেশির সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করা।
প্রশ্ন – 32. অ্যাড্রেনালিন হরমোনকে ‘আপদকালীন বা জরুরিকালীন হরমোন’ (emergency hormone) বলে কেন?
উত্তর – বিশ্রামকালে বা স্বাভাবিক অবস্থায় এই হরমোন কম ক্ষরিত হয়। তবে উত্তেজনা, আবেগ, ভয়, রাগ, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হলে, অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অ্যাড্রেনালিন হরমোনটি বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ও বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জরুরিকালীন বা সংকটকালীন অবস্থার দ্রুত মোকাবিলা করে। এইজন্য অ্যাড্রেনালিন হরমোনকে জরুরিকালীন হরমোন বলে। জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে অ্যাড্রেনালিন দ্রুত ক্রিয়াশীল। তবে এর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী। জরুরিকালীন পরিস্থিতি দূর হলে, হরমোনটির ক্ষরণ কমে যায়।
প্রশ্ন – 33. X—-CRH—-Y—-ACTH—-Z; এখানে X, Y, Z অংশগুলি চিহ্নিত করো (CRH = কর্টিকোট্রফিন রিলিজিং হরমোন)।
উত্তর – CRH = কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন, ACTH = অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন, এখানে X-এর অর্থ হাইপোথ্যালামাস, Y-এর অর্থ পিটুইটারি গ্রন্থি এবং Z-এর অর্থ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি।
প্রশ্ন – 34. ডিম্বাশয় বা ওভারিকে মিশ্র গ্রন্থি বলে কেন?
উত্তর – ডিম্বাশয় বা ওভারিকে মিশ্রগ্রন্থি বলে কারণ এই গ্রন্থি থেকে অ্যাসিড ফসফাটেজ নামক উৎসেচক (বহিঃক্ষরা ক্রিয়া) এবং ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন (অন্তঃক্ষরা ক্রিয়া) নিঃসৃত হয়। তাই একে মিশ্র গ্রন্থি বলে।
প্রশ্ন – 35. ইস্ট্রোজেন কোন্ কোন্ স্থান থেকে নিঃসৃত হয় ?
উত্তর – ডিম্বাশয়ের পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিক্ল, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল ও অমরা (placenta) থেকে ইস্ট্রোজেন নামক স্ত্রী-হরমোনটি নিঃসৃত হয়।
প্রশ্ন – 36. অ্যান্ড্রোজেন কী?
উত্তর – স্টেরয়েড-জাতীয় যে হরমোন পুরুষদেহে বৃদ্ধি ও জননগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে তাদের অ্যান্ড্রোজেন বলে। যেমন—শুক্রাশয় নির্গত টেস্টোস্টেরন, অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স ক্ষরিত অ্যান্ড্রোজেন।
প্রশ্ন – 37. টেস্টোস্টেরনকে অ্যান্ড্রোজেন বলা হয় কেন?
উত্তর – টেস্টোস্টেরন নামক যৌন স্টেরয়েড হরমোন পুরুষদেহে বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন গৌণ যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া (স্পার্মাটোজেনেসিস) ত্বরান্বিত করে ও পুরুষদের স্বাভাবিক যৌন আচরণ (male libido) নিয়ন্ত্রণ করে, তাই একে অ্যান্ড্রোজেন (গ্রিক শব্দ andro যার অর্থ masculine অর্থাৎ পুরুষোচিত) হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রশ্ন – 38. বামনত্ব রোগের কারণ ও উপসর্গগুলি লেখো।
উত্তর – কারণ: অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সোমাটোট্রপিক হরমোন (STH) বা গ্রোথ হরমোন (GH)-এর কম ক্ষরণের ফলে বামনত্ব বা ডোয়াফিজম রোগ হয়।
উপসর্গ: (1) দেহের হাড় ও পেশির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। (2) পরিণত অবস্থায় দেহের উচ্চতা মাত্র 3 foot মতো হয়। (3) দেহের যৌনবিকাশ ব্যাহত হয়।
প্রশ্ন – 39. সাধারণ গলগণ্ডের কারণগুলি লেখো।
উত্তর – সাধারণ গলগণ্ডের কারণগুলি হল – (1) থাইরক্সিন হরমোনের কম ক্ষরণের ফলে মানবদেহে এই রোগ হয়। থাইরক্সিনের মৌলিক উপাদান হল আয়োডিন। মানবদেহে আয়োডিনের অভাবে এই গলগণ্ড হয়। আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির কোশগুলি প্রয়োজন মতো থাইরক্সিন সংশ্লেষ করতে পারে না। থাইরক্সিন সংশ্লেষের নিষ্ফল প্রচেষ্টায় কোশগুলি আকার-আয়তনে বৃদ্ধি পায়। তার ফলেই এই গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। (2) জিনগত ত্রুটির ফলে T3 ও T4 ক্ষরণ কম হলে সাধারণ গলগণ্ড হতে পারে।
প্রশ্ন – 40. সাধারণ গলগণ্ডের উপসর্গগুলি লেখো।
উত্তর – সাধারণ গলগণ্ডের উপসর্গ বা লক্ষণগুলি হল— (1) থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে ফলে গ্রীবা অঞ্চল স্ফীত হয়ে যায়। (2) খাদ্য গলাধঃকরণে অসুবিধা হয়। (3) থাইরয়েড গ্রন্থি বড়ো হয়ে যাওয়ায় এই গ্রন্থির চাপে শ্বাসকার্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
প্রশ্ন – 41. বহিঃচক্ষু গলগণ্ড রোগের কারণগুলি লেখো।
উত্তর – বহিঃচক্ষু গলগণ্ডের প্রধান কারণ হল থাইরক্সিনের অধিক ক্ষরণ। এক্ষেত্রে TSH-এর নিয়ন্ত্রণাধীনে থাইরয়েড গ্রন্থির কোশগুলি আকার-আয়তনে বৃদ্ধি-প্রাপ্ত হয়। ফলে কোশগুলি থেকে থাইরক্সিন সংশ্লেষ ও ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. প্রাণীদেহে রাসায়নিক সমন্বয় এবং সাড়াপ্রদান যার মাধ্যমে হয়, সেটি হল—
(a) উৎসেচক
(b) লসিকা
(c) রক্ত
(d) হরমোন
উত্তর – (d) হরমোন
2. জীবদেহে বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে-
(a) সংবহনতন্ত্র
(b) সনালতন্ত্র
(c) বহিঃক্ষরা তন্ত্র
(d) অন্তঃক্ষরা তন্ত্র
উত্তর – (d) অন্তঃক্ষরা তন্ত্র
3. নিম্নলিখিত গ্রন্থিগুলির ভিতর কোন্টি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ?
(a) লালাগ্রন্থি
(b) যকৃৎ
(c) অশ্রুগ্রন্থি
(d) থাইরয়েড
উত্তর – (d) থাইরয়েড
4. দেহে অনেক গ্রন্থি থাকে যেগুলিতে নালীপথ থাকে। অর্থাৎ, যারা অনাল গ্রন্থি নয়। এইরকম একটি গ্রন্থি হল—
(a) লালাগ্রন্থি
(b) পিটুইটারি গ্রন্থি
(c) থাইরয়েড গ্রন্থি
(d) অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি
উত্তর – (a) লালাগ্রন্থি
5. যে গ্রন্থির ক্ষরণ সরাসরি রক্তে মেশে, তাকে বলে—
(a) অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি
(b) বহিঃক্ষরা গ্রন্থি
(c) মিশ্র গ্রন্থি
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি
6. সনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়—
(a) ভিটামিন
(b) ফেরোমোন
(c) হরমোন
(d) উৎসেচক
উত্তর – (d) উৎসেচক
7. নীচের কোন্ গ্রন্থিটি একটি মিশ্রগ্রন্থি?
(a) লালাগ্রন্থি
(b) যকৃৎ
(c) অগ্ন্যাশয়
(d) থাইরয়েড
উত্তর – (c) অগ্ন্যাশয়
৪. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় না–
(a) ইনসুলিন
(b) থাইরক্সিন
(c) পেপসিন
(d) অ্যাড্রেনালিন
উত্তর – (c) পেপসিন
9. যে হরমোন একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে অন্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা কোশকে হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে, তাকে বলে—
(a) আদর্শ হরমোন
(b) লোকাল হরমোন
(c) প্যারাক্রিন হরমোন
(d) ট্রপিক হরমোন
উত্তর – (d) ট্রপিক হরমোন
10. নীচের যে হরমোনটি লোকাল হরমোন নয়, সেটি হল—
(a) গ্যাস্ট্রিন
(b) হিস্টামিন
(c) ব্র্যাডিকাইনিন
(d) TSH
উত্তর – (d) TSH
11. একটি লোকাল হরমোন হল –
(a) থাইরক্সিন
(b) অ্যাড্রেনালিন
(c) টেস্টোস্টেরন
(d) ইনসুলিন
উত্তর – (c) টেস্টোস্টেরন
12. একটি ট্রফিক হরমোন হল –
(a) TSH
(b) টেস্টোস্টেরন
(c) ইস্ট্রোজেন
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) TSH
13. ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বলা হয় যে গ্রন্থিটিকে সেটি হল—
(a) থাইরয়েড
(b) পিটুইটারি
(c) হাইপোথ্যালামাস
(d) লঘুমস্তিষ্ক
উত্তর – (c) হাইপোথ্যালামাস
14. একটি নিউরোহরমোন হল –
(a) TSH
(b) GnRH
(c) T4
(d) GH
উত্তর – (b) GnRH
15. হাইপোথ্যালামাস কোন্ পিটুইটারি হরমোন সংরক্ষিত রাখে?
(a) TSH
(b) STH
(c) ADH
(d) থাইরক্সিন
উত্তর – (c) ADH
16. হাইপোথ্যালামাসে সংশ্লেষিত একটি হরমোন হল —
(a) A ADH
(b) TSH
(c) ACTH
(d) FSH
উত্তর – (a) A ADH
17. এপিফাইসিস হল—
(a) পিটুইটারি
(b) থাইরয়েড
(c) পিনিয়াল
(d) অ্যাড্রেনাল
উত্তর – (c) পিনিয়াল
18. তোমার মতে নীচের গ্রন্থিগুলির মধ্যে কোন্টি আকারে ছোটো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি?
(a) থাইমাস
(b) পিটুইটারি
(c) থাইরয়েড
(d) প্যারাথাইরয়েড
উত্তর – (b) পিটুইটারি
19. ‘মাস্টার গ্ল্যান্ড’ বা ‘প্রভুগ্রন্থি’ বলা হয় যে গ্রন্থিটিকে সেটি হল—
(a) মস্তিষ্ক
(b) পিটুইটারি
(c) অগ্ন্যাশয়
(d) থাইরয়েড
উত্তর – (b) পিটুইটারি
20. যে গ্রন্থিকে ‘Band Master of endocrine orchestra’ বলা হয়, সেটি হল —
(a) হাইপোথ্যালামাস
(b) থ্যালামাস
(c) অগ্ন্যাশয়
(d) পিটুইটারি
উত্তর – (d) পিটুইটারি
21. ট্রপিক/ ট্রফিক হরমোনের ক্ষরণস্থল হল—
(a) অগ্ন্যাশয়
(b) অগ্র পিটুইটারি
(c) থাইরয়েড
(d) শুক্রাশয়
উত্তর – (b) অগ্র পিটুইটারি
22. হাইপোফাইসিস বলতে তুমি কোন্ গ্রন্থিকে বুঝবে?
(a) পিটুইটারি
(b) অ্যাড্রেনাল
(c) থাইরয়ে
(d) ইপোথ্যালামাস
উত্তর – (a) পিটুইটারি
23. STH নির্গত হয় যে গ্রন্থি থেকে সেটি হল—
(a) থাইরয়েড
(b) প্যারাথাইরয়েড
(c) অগ্র পিটুইটারি
(d) পশ্চাৎ পিটুইটারি
উত্তর – (c) অগ্র পিটুইটারি
24. পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে কোন্ বার্তাবাহক নির্গত হয়?
(a) থাইরক্সিন
(b) ইনসুলিন
(c) অ্যাড্রেনালিন
(d) STH
উত্তর – (d) STH
25. পিটুইটারির মধ্যভাগ থেকে ক্ষরিত হরমোনটি হল —
(a) ADH
(b) MSH
(c) TSH
(d) GTH
উত্তর – (b) MSH
26. গোনাড বা জননাঙ্গের ওপর কাজ করে –
(a) ACTH
(b) TSH
(c) FSH
(d) LTH
উত্তর – (c) FSH
27. কোন্টি একই প্রকারের হরমোন নয়?
(a) FSH
(b) ICSH
(c) LH
(d) TSH
উত্তর – (c) LH
28. নীচের কোন্টি পশ্চাদ্ পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত হয়?
(a) TSH
(b) FSH
(c) ADH
(d) STH
উত্তর – (c) ADH
29. মূত্রের ঘনত্ব হ্রাস বা বৃদ্ধি করে দেহে জলসাম্য বজায় রাখে কোন্ জৈবরাসায়নিক?
(a) LH
(b) ACTH
(c) TSH
(d) ADH
উত্তর – (d) ADH
30. ACTH-এর রাসায়নিক প্রকৃতি হল –
(a) পলিপেপটাইডধর্মী
(b) পেপটাইডধর্মী
(c) অ্যামিনোধর্মী
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) পলিপেপটাইডধর্মী
31. ACTH নিঃসৃত হয় —
(a) অ্যাড্রেনাল থেকে
(b) থাইরয়েড থেকে
(c) অগ্ন্যাশয় থেকে
(d) পিটুইটারি থেকে
উত্তর – (d) পিটুইটারি থেকে
32. নীচের কোন্টি GTH-এর অন্তর্গত নয়?
(a) FSH
(b) LH
(c) GH
(d) LTH
উত্তর – (c) GH
33. কোন্টি গোনাডোট্রফিক হরমোন নয়?
(a) FSH
(b) LH
(c) ACTH
(d) ICSH
উত্তর – (c) ACTH
34. থাইরক্সিন হরমোনের ক্ষরণ অন্য যে অনাল গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা হল—
(a) অ্যাড্রিনাল
(b) থাইরয়েড
(c) অগ্ন্যাশয়
(d) পিটুইটারি
উত্তর – (d) পিটুইটারি
35. যে গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরিত হয়, সেটি হল –
(a) পিটুইটারি
(b) থাইরয়েড
(c) বৃক্ক
(d) অগ্ন্যাশয়
উত্তর – (b) থাইরয়েড
36. যে হরমোনটির গঠনে আয়োডিন প্রয়োজন সেটি হল –
(a) ইনসুলিন
(b) অ্যাড্রেনালিন
(c) থাইরক্সিন
(d) ইস্ট্রোজেন
উত্তর – (c) থাইরক্সিন
37. দেহের BMR বাড়ায় যে হরমোনটি, সেটি হল –
(a) ইনসুলিন
(b) অক্সিন
(c) থাইরক্সিন
(d) ADH
উত্তর – (c) থাইরক্সিন
38. ব্যাঙাচির পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে রূপান্তরে সাহায্য করে—
(a) থাইরক্সিন
(b) ACTH
(c) ইস্ট্রোজেন
(d) STH
উত্তর – (a) থাইরক্সিন
39. যে হরমোন সাপজাতীয় সরীসৃপ প্রাণীদের বহিঃকঙ্কাল বা খোলস নির্মোচনে সাহায্য করে সেটি হল—
(a) ইনসুলিন
(b) এপিনেফ্রিন
(c) রিল্যাক্সিন
(d) থাইরক্সিন
উত্তর – (d) থাইরক্সিন
40. গলগণ্ড রোগটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বার্তাবাহকটি হল—
(a) ইনসুলিন
(b) STH
(c) রিল্যাক্সিন
(d) থাইরক্সিন
উত্তর – (d) থাইরক্সিন
41. ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলা হয়—
(a) ইনসুলিনকে
(b) ইস্ট্রোজেনকে
(c) থাইরক্সিনকে
(d) ACTH-কে
উত্তর – (c) থাইরক্সিনকে
42. খাদ্যে আয়োডিনের অভাবে কোন্ হরমোন উৎপাদন ব্যাহত হয়?
(a) অ্যাড্রেনালিন
(b) থাইরক্সিন
(c) ইনসুলিন
(d) TSH
উত্তর – (b) থাইরক্সিন
43. ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয় আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর—
(a) বিটা কোশ থেকে
(b) আলফা কোশ থেকে
(c) ডেল্টা কোশ থেকে
(d) এফ কোশ থেকে
উত্তর – (a) বিটা কোশ থেকে
44. গ্লুকাগন আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর যে কোশ থেকে নিঃসৃত হয়, সেটি হল—
(a) বিটা
(b) আলফা
(c) ডেল্টা
(d) গামা
উত্তর – (b) আলফা
45. রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে যে হরমোনটি কার্যকরী, সেটি হল—
(a) ইনসুলিন
(b) TSH
(c) কর্টিকোট্রপিন
(d) অ্যাড্রেনালিন
উত্তর – (a) ইনসুলিন
46. গ্লুকোজের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে যে হরমোন, সেটি হল –
(a) গ্লুকাগন
(b) ইনসুলিন
(c) থাইরক্সিন
(d) সবকটি
উত্তর – (d) সবকটি
47. অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন বলা হয় –
(a) থাইরক্সিনকে
(b) গ্লুকাগনকে
(c) ইস্ট্রোজেনকে
(d) ইনসুলিনকে
উত্তর – (d) ইনসুলিনকে
48. একটি কিটোজেনিক হরমোন হল—
(a) গ্লুকাগন
(b) ইনসুলিন
(c) ইস্ট্রোজেন
(d) প্রোজেস্টেরন
উত্তর – (a) গ্লুকাগন
49. নিওগ্লুকোজেনেসিসে বাধা দেয় —
(a) গ্লুকাগন
(b) থাইরক্সিন
(c) ভ্যাসোপ্রেসিন
(b) ইনসুলিন
উত্তর – (b) ইনসুলিন
50. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিটি তোমার দেহের কোন্ জায়গায় থাকে?
(a) বৃক্কের ওপর
(b) মাথায়
(c) অগ্ন্যাশয়ে
(d) যকৃতে
উত্তর – (a) বৃক্কের ওপর
51. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির অপর নাম —
(a) থাইরয়েড
(b) যকৃৎ
(c) বৃক্ক
(d) সুপ্রারেনাল গ্রন্থি
উত্তর – (d) সুপ্রারেনাল গ্রন্থি
52. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় –
(a) অ্যাড্রেনালিন
(b) থাইরক্সিন
(c) ACTH
(d) প্যারাথরমোন
উত্তর – (a) অ্যাড্রেনালিন
53. ‘আপৎকালীন হরমোন’ হল—
অথবা, আপদে-বিপদে দেহকে রক্ষা করতে সাহায্য করে যে উপাদানটি—
(a) অ্যাড্রেনালিন
(b) নর-অ্যাড্রেনালিন
(c) TSH
(d) অক্সিন
উত্তর – (a) অ্যাড্রেনালিন
54. উত্তেজনা প্রশমনে কোন্ হরমোনটি প্রয়োজন?
(a) ইনসুলিন
(b) থাইরক্সিন
(c) ভ্যাসোপ্রেসিন
(d) নর-অ্যাড্রেনালিন
উত্তর – (d) নর-অ্যাড্রেনালিন
55. অ্যাড্রেনালিনের অপর নাম-
(a) এপিনেফ্রিন
(b) নর-এপ্রিনেফ্রিন
(c) অক্সিটোসিন
(d) ভ্যাসোপ্রেসিন
উত্তর – (b) নর-এপ্রিনেফ্রিন
56. ভয় পেলে মানুষের কোন্ হরমোনের ক্ষরণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ?
(a) GH
(b) GTH
(c) থাইরক্সিন
(d) অ্যাড্রেনালিন
উত্তর – (d) অ্যাড্রেনালিন
57. সিস্টোলিক, ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ উভয়ই বৃদ্ধি করে যে হরমোন সেটি হল –
(a) অ্যাড্রেনালিন
(b) নর-অ্যাড্রেনালিন
(c) ডোপামিন
(d) ইনসুলিন
উত্তর – (b) নর-অ্যাড্রেনালিন
58. তারারন্ধ্রকে বিস্ফারিত করে কোন্ হরমোন?
(a) অ্যাড্রেনালিন
(b) ইনসুলিন
(c) নর-অ্যাড্রেনালিন
(d) গ্লুকাগন
উত্তর – (a) অ্যাড্রেনালিন
59. নর-অ্যাড্রেনালিন হরমোনটি ক্ষরিত হয়—
(a) পিটুইটারি থেকে
(b) থাইরয়েড থেকে
(c) অ্যাড্রেনাল থেকে
(d) শুক্রাশয় থেকে
উত্তর – (c) অ্যাড্রেনাল থেকে
60. নর-অ্যাড্রেনালিন হরমোনটির অপর নাম—
(a) অ্যাড্রেনালিন
(b) নর-এপিনেফ্রিন
(c) থাইরক্সিন
(d) এপিনেফ্রিন
উত্তর – (b) নর-এপিনেফ্রিন
61. নীচের হরমোনগুলির মধ্যে যে হরমোনটি ডিম্বাশয় থেকে নিঃসৃত হয় না, সেটি হল –
(a) ইস্ট্রোজেন
(b) প্রোজেস্টেরন
(c) রিল্যাক্সিন
(d) টেস্টোস্টেরন
উত্তর – (d) টেস্টোস্টেরন
62. প্রদত্ত কোন্ হরমোনটি ডিম্বথলির ওপর কাজ করে?
(a) ICSH
(b) FSH
(c) TSH
(d) ACTH
উত্তর – (b) FSH
63. জরায়ুর প্রাচীর সংকোচনে সাহায্য করে—
(a) প্রোজেস্টেরন
(b) ইস্ট্রোজেন
(c) প্রোল্যাকটিন
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) প্রোজেস্টেরন
64. মহিলাদের ক্ষেত্রে ফলিক্ল স্টিমুলেটিং হরমোন ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিক্ল থেকে যে হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপনা জোগায় সেটি হল—
(a) অ্যাড্রেনাল
(b) থাইরয়েড
(c) অগ্ন্যাশয়
(d) পিটুইটারি
উত্তর – (c) অগ্ন্যাশয়
65. লেডিগের আন্তরকোশ থেকে নিঃসৃত হরমোনটি হল—
(a) ইস্ট্রোজেন
(b) প্রোজেস্টেরন
(c) টেস্টোস্টেরন
(d) LH
উত্তর – (c) টেস্টোস্টেরন
66. একটি স্টেরয়েড প্রকৃতির হরমোন হল—
(a) ইনসুলিন
(b) রিল্যাক্সিন
(c) প্রোজেস্টেরন
(d) ভিলিকাইনিন
উত্তর – (c) প্রোজেস্টেরন
67. টেস্টোস্টেরন হরমোনটির রাসায়নিক প্রকৃতি হল—
(a) পেপটাইডধর্মী
(b) স্টেরয়েডধর্মী
(c) অ্যামিনোধর্মী
(d) প্রোটিনধর্মী
উত্তর – (b) স্টেরয়েডধর্মী
68. নীচের বাক্যগুলি পড়ো এবং যে বাক্যটি সঠিক নয় সেটিকে চিহ্নিত করো।
(a) FSH, LH ও প্রোল্যাকটিন হল বিভিন্ন ধরনের GTH
(b) অ্যাড্রেনালিন হার্দ উৎপাদ কমায়
(c) ইনসুলিন কোশপর্দার মাধ্যমে কোরে ভিতরে গ্লুকোজের শোষণে সাহায্য করে
(d) প্রোজেস্টেরন স্ত্রীদেহে প্লাসেন্টা গঠনে সাহায্য করে
উত্তর – (b) অ্যাড্রেনালিন হার্দ উৎপাদ কমায়
69. শৈশবে থাইরক্সিনের কম ক্ষরণে যে রোগটি হয় সেটি হল—
(a) মিক্সিডিমা
(b) গলগণ্ড
(c) ক্রেটিনিজম
(d) অ্যাক্রোমেগালি
উত্তর – (c) ক্রেটিনিজম
70. কুশিং বর্ণিত রোগ দেখা দেয় —
(a) ACTH-এর অধিক ক্ষরণে
(b) STH-এর অধিক ক্ষরণে
(c) TSH-এর অধিক ক্ষরণে
(d) GTH-এর অধিক ক্ষরণে
উত্তর – (a) ACTH-এর অধিক ক্ষরণে
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. প্রথম আবিষ্কৃত হরমোনটির নাম কী ?
উত্তর – সিক্রেটিন।
2. মানবদেহের ক্ষুদ্রতম অনাল গ্রন্থিটির নাম কী ?
উত্তর – পিনিয়াল গ্রন্থি।

3. মিশ্র গ্রন্থি কাকে বলে?
উত্তর – যে গ্রন্থি অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় অংশের সমন্বয়ে গঠিত, তাকে মিশ্র গ্রন্থি বলে।
4. CRH কোথা থেকে নিঃসৃত হয়?
উত্তর – হাইপোথ্যালামাস।
5. হাইপোথ্যালামাসের দুটি হরমোনের নাম বলো যারা পশ্চাৎ পিটুইটারিতে সঞ্চিত হয়।
উত্তর – ADH ও অক্সিটোসিন।
6. TRH-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন।
7. পিটুইটারির অগ্র খণ্ডককে কী বলে?
উত্তর – অ্যাডেনোহাইপোফাইসিস।
৪. পিটুইটারির পশ্চাৎ খণ্ডককে কী বলে?
উত্তর – নিউরোহাইপোফাইসিস।
9. পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণ মস্তিষ্কের কোন্ অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়?
উত্তর – হাইপোথ্যালামাস।
10. এমন একটি গ্রন্থির নাম লেখো যা মানুষের মাথার খুলির মধ্যে অবস্থান করে?
উত্তর – পিটুইটারি গ্রন্থি।
11. ACTH-এর পুরো নাম কী?
উত্তর – অ্যাড্রেনোকটিকোট্রপিক হরমোন।
12. STH-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – সোমাটোট্রপিক হরমোন।
13. GTH-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – গোনাডোট্রপিক হরমোন।
14. GH-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – গ্রোথ হরমোন।
15. LTH-এর পুরো নাম কী?
উত্তর – লিউটিওট্রপিক হরমোন।
16. একটি হরমোনের নাম লেখো যা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে।
উত্তর – অ্যাড্রেনোকটিকোট্রপিক হরমোন (ACTH)।
17. গোনাডোট্রপিক হরমোন কোথা থেকে ক্ষরিত হয়?
উত্তর – পিটুইটারি গ্রন্থি
18. FSH-এর সম্পূর্ণ নাম কী ?
উত্তর – ফলিক্ল স্টিমুলেটিং হরমোন।
19. ICSH-এর পুরো নাম কী?
উত্তর – ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন।
20. GTH-এর অন্তর্গত দুটি হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – FSH (ফলিক্ল স্টিমুলেটিং হরমোন) ও LH (লিউটিনাইজিং হরমোন)।
21. FSH-এর কাজ কী?
উত্তর – মানব ডিম্বাশয়ের ডিম্বথলির বৃদ্ধি ও তাকে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণে উদ্দীপিত করা হল FSH-এর কাজ।
22. LTH-এর কাজ কী?
উত্তর – মাতৃদেহে স্তনদুগ্ধ উৎপাদন ও ক্ষরণ হল LTH-এর কাজ।
23. LH-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – লিউটিনাইজিং হরমোন।
24. LH-এর কাজ কী?
উত্তর – ডিম্বাণু নিঃসরণ ও পীতগ্রন্থি সৃষ্টিতে সাহায্য করা হল LH-এর কাজ।
25. ICSH-এর কাজ কী?
উত্তর – পুরুষদের শুক্রাশয়কে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণে উদ্দীপিত করা হল ICSH-এর কাজ।
26. পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত দুগ্ধক্ষরণ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনটির নাম কী ?
উত্তর – প্রোল্যাকটিন।
27. TSH-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন।
28. রেচনে সহায়ক পিটুইটারি হরমোন কোন্টি?
উত্তর – ADH বা ভ্যাসোপ্রেসিন।
29. কোন্ হরমোন রক্তবাহে চাপ বৃদ্ধি করে?
উত্তর – ADHবা ভ্যাসোপ্রেসিন।
30. ADH হরমোনের অপর নাম কী?
উত্তর – ভ্যাসোপ্রেসিন।
31. BMR নিয়ন্ত্রণে কোন্ হরমোন কাজ করে ?
উত্তর – থাইরক্সিন হরমোন।
32. ব্যাঙাচিকে পূর্ণাঙ্গ ব্যাং-এ রূপান্তরিত হতে কোন্ হরমোন সাহায্য করে?
উত্তর – থাইরক্সিন।

33. থাইরক্সিনের অপর নাম কী?
উত্তর – T4 বা টেট্রা-আয়োডোথাইরোনিন।
34. শরীরে আয়োডিনের অভাবে যে গ্রন্থিটির স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয় তার নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – থাইরয়েড গ্রন্থি।
35. মানবদেহে সবচেয়ে বড়ো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কোনটি?
উত্তর – থাইরয়েড গ্রন্থি।
36. মানবদেহের কোন্ গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন নিঃসৃত হয়?
উত্তর – থাইরয়েড গ্রন্থি।
37. কোন্ হরমোনকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে?
উত্তর – থাইরক্সিন হরমোনকে।
38. লোহিত রক্তকণিকার ক্রম পরিণতিতে সাহায্য করে কোন্ হরমোন?
উত্তর – এরিথ্রোপোয়েটিন, অ্যান্ড্রোজেন ও থাইরয়েড হরমোন।
39. কোন্ হরমোনের প্রভাবে রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ হ্রাস পায়?
উত্তর – ইনসুলিন।
40. কোন্ বিজ্ঞানী ইনসুলিন আবিষ্কার করেন?
উত্তর – বিজ্ঞানী ব্যানটিং ও বেস্ট।
41. ইনসুলিন কোথা থেকে নিঃসৃত হয়?
উত্তর – অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির আইলেট্স্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স নামক অন্তঃক্ষরা কোশগুচ্ছের বিটা (β)-কোশ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়।
42. আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স কোথায় অবস্থিত?
উত্তর – অগ্ন্যাশয়ে।
43. অ্যান্টিডায়াবেটোজেনিক হরমোনটির নাম কী?
উত্তর – ইনসুলিন।
44. ইনসুলিনের বিপরীত হরমোন কোন্টি?
উত্তর – গ্লুকাগন।
45. গ্লুকাগন কোথা থেকে নিঃসৃত হয় ?
উত্তর – অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর অন্তঃক্ষরা কোশগুচ্ছের আলফা (α) -কোশ থেকে গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত হয়।
46. গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন তৈরি হওয়ার পদ্ধতিকে কী বলে?
উত্তর – গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন তৈরি হওয়ার পদ্ধতিকে গ্লাইকোজেনেসিস বলে।
47. কোন হরমোন গ্লাইকোজেনেসিসে সাহায্য করে?
উত্তর – ইনসুলিন হরমোন গ্লাইকোজেনেসিসে সাহায্য করে।
48. গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতিকে কী বলে?
উত্তর – গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতিকে গ্লাইকোজেনোলাইসিস বলে।
49. গ্লাইকোজেনোলাইসিসে সাহায্য করে কোন্ হরমোন?
উত্তর – গ্লুকোজ
→ গ্লুকাগন।
50. সুপ্রারেনাল গ্রন্থি কোন্টি?
উত্তর – অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি।
51. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে সুপ্রারেনাল গ্রন্থি কেন বলে?
উত্তর – অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি বৃক্কের ওপরে অবস্থিত বলে একে সুপ্রারেনাল গ্রন্থি বলে।

52. কোন্ হরমোনকে আপৎকালীন বা জরুরিকালীন হরমোন বলে ?
উত্তর – অ্যাড্রেনালিন।
53. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কতগুলি অংশ এবং কী কী?
উত্তর – অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির দুটি অংশ বাইরের অংশের নাম অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স এবং ভিতরের অংশের নাম অ্যাড্রেনাল মেডালা।

54. এমন একটি হরমোনের নাম লেখো যা নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবেও কাজ করে।
উত্তর – নর-অ্যাড্রেনালিন।
55. ভয় পেলে বুক ধড় ফড় করা ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে কোন্ হরমোনের সম্বন্ধ আছে?
উত্তর – অ্যাড্রেনালিন হরমোন।
56. অনেক লোকের সামনে প্রথম প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার সময় বক্তার মুখ শুকিয়ে যায় ও হৃৎস্পন্দন হার বেড়ে যায়, কোন কারণে এই পরিবর্তন হয়?
উত্তর – মানসিক চাপের সময় অ্যাড্রেনালিন হরমোনের বেশি ক্ষরণের জন্য বক্তার মুখ শুকিয়ে যায় ও হৃৎস্পন্দন হার বেড়ে যায়।
57. ভয় পেলে বুক ধড়ফড় করা ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে কোন্ হরমোনের সম্বন্ধ আছে?
উত্তর – অ্যাড্রেনালিন হরমোন।
58. কোন্ হরমোনের অপর নাম অ্যান্ড্রোজেন?
উত্তর – টেস্টোস্টেরন।
59. শুক্রাশয় থেকে কোন্ হরমোন নিঃসৃত হয় ?
উত্তর – টেস্টোস্টেরন হরমোন।
60. অগ্ন্যাশয় ছাড়া অপর একটি মিশ্র গ্রন্থির নাম লেখো।
উত্তর – শুক্রাশয়।
61. শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্যকারী হরমোনটির নাম লেখো।
উত্তর – টেস্টোস্টেরন।
62. কোন্ কোশ থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়?
উত্তর – শুক্রাশয়ের লেডিগের আন্তরকোশ থেকে।
63. ডিম্বাশয় থেকে কোন্ কোন্ হরমোন নিঃসৃত হয়?
উত্তর – ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ও রিল্যাক্সিন হরমোন নিঃসৃত হয়।
64. প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধিতে কোন্ হরমোন সাহায্য করে?
উত্তর – টেস্টোস্টেরন হরমোন।
65. পরিণত স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের পীতগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনের নাম কী?
উত্তর – প্রোজেস্টেরন।
66. জরায়ুতে প্লাসেন্টা বা অমরা (যা দ্বারা ভ্রূণে খাদ্য ও অক্সিজেন যায়) গঠনে কোন্ হরমোন সাহায্য করে?
উত্তর – প্রোজেস্টরন।
67. তোমার মামার ইনসুলিনের অভাব হয়েছে বলে ডাক্তারবাবু নির্ণয় করেছেন; কোন্ রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে বলে তুমি মনে কর?
উত্তর – ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ রোগ।
68. হাইপারগ্লাইসেমিয়া কী?
উত্তর – ইনসুলিনের অভাবে রক্তে শর্করা মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে 200 mg/dl-এর বেশি হলে সেই অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।
69. রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়াকে কী বলে?
উত্তর – হাইপোগ্লাইসেমিয়া।
70. রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে কী বলে?
উত্তর – হাইপারগ্লাইসেমিয়া।
71. মূত্রের সাথে গ্লুকোজ নির্গত হলে তাকে কী বলে?
উত্তর – গ্লাইকোসুরিয়া।
72. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কোন্ হরমোনের কম ক্ষরণে ঘটে?
উত্তর – ADH বা ভ্যাসোপ্রেসিন।
73. কোন রোগে পলিডিপসিয়া দেখা যায় ?
উত্তর – ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বা বহুমূত্র রোগে পলিডিপসিয়া দেখা যায়।
74. কোন হরমোনের প্রভাবে ‘Moon face’ দেখা যায় ?
উত্তর – কর্টিসল হরমোনের বেশি ক্ষরণে (অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স ক্ষরিত হরমোন) ‘Moon face’ দেখা যায়।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. হরমোন প্রাণীদেহে …….. সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে।
উত্তর – রাসায়নিক
2. প্রাণীদেহে রাসায়নিক বার্তাবাহক হল ………. ।
উত্তর – হরমোন
3. হরমোন যে গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় তাদের ……… গ্রন্থি বলে।
উত্তর – অন্তঃক্ষরা
4. হরমোনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়……… পদ্ধতির দ্বারা।
উত্তর – ফিডব্যাক
5. পিটুইটারি গ্রন্থির সুপ্রিম কমান্ডার (প্রভুগ্রন্থির প্রভু) হল ……… ।
উত্তর – হাইপোথ্যালামাস
6. হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোনগুলিকে বলা হয় ……….. ।
উত্তর – নিউরোহরমোন
7. পিটুইটারি গ্রন্থির ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ………. ।
উত্তর – হাইপোথ্যালামাস
8. দৈহিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন হল ………. ।
উত্তর – গ্রোথ হরমোন
9. কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন ……… হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
উত্তর – অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক
10. পুরুষদেহে LH নামক বার্তাবাহকের অপর নাম হল …….. ।
উত্তর – ICSH
11. দৈহিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন হল ……… ।
উত্তর – গ্রোথ হরমোন
12. অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন ………. পিটুইটারিতে সঞ্চিত হয়।
উত্তর – পশ্চাৎ
13. ………. রক্তনালীর সংকোচনে সাহায্য করে।
উত্তর – ভ্যাসোপ্রেসিন
14. থাইরয়েড গ্রন্থির ………… খণ্ডক বর্তমান।
উত্তর – দুটি
15. থাইরয়েড গ্রন্থির দুটি খণ্ডকের মধ্যবর্তী সংযোজককে ………. বলে।
উত্তর – ইস্থমাস
16. থাইরক্সিন ……….. ধর্মী হরমোন।
উত্তর – প্রোটিন
17. আয়োডিনের অভাবে …………. হরমোনের সংশ্লেষে ব্যাহত হয়।
উত্তর – থাইরক্সিন
18. BMR নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনটি হল ………… ।
উত্তর – থাইরক্সিন
19. থাইরক্সিনের মূল অধাতু উপাদানটি হল ………… ।
উত্তর – আয়োডিন
20. ……….. হরমোন অন্ত্রে গ্লুকোজের শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
উত্তর – ইনসুলিন
21. রক্তে PP শর্করার মাত্রা বজায় রাখে ………… ধর্মী ইনসুলিন হরমোন।
উত্তর – প্রোটিন
22. ইনসুলিন ফ্যাটের জারণে বাধা তৈরি করে ……….. প্রস্তুতি বন্ধ রাখে।
উত্তর – গ্লুকোজ
23. সুপ্রারেনাল গ্রন্থি হল ………. গ্রন্থির অপর নাম।
উত্তর – অ্যাড্রেনাল
24. ………. হরমোন হৃদ্গতি ও হার্দ উৎপাদ বাড়িয়ে দেয়।
উত্তর – অ্যাড্রেনালিন
25. ‘Fight or flight’ প্রতিক্রিয়ার জন্য ………. হরমোনটি দায়ী।
উত্তর – অ্যাড্রেনালিন
26. ………… হরমোনের প্রভাবে বিপদকালে ত্বকের লোম খাড়া হয়ে যায়।
উত্তর – অ্যাড্রেনালিন
27. পরিণত ডিম্বথলি থেকে ক্ষরিত হরমোনটি হল ……….. ।
উত্তর – ইস্ট্রোজেন
28. GH-এর অধিক ক্ষরণে প্রাপ্তবয়স্কদের ……….. রোগ হয়।
উত্তর – অ্যাক্রোমেগালি
29. শৈশবে GH-এর অধিক ক্ষরণে ……….. রোগ হয়।
উত্তর – জাইগ্যানটিজম
30. শৈশবে ………. এর কম ক্ষরণে বামনত্ব রোগ হয়।
উত্তর – GH
31. আয়োডিন বিপাক ব্যাহত হলে মানুষের ………… রোগ হয়।
উত্তর – সরল গলগণ্ড
