WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 1 উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান)
WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 1 উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান)
West Bengal Board 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 1 উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান)
West Bengal Board 10th Biology Solutions
TOPIC 1 উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান
বিষয়সংক্ষেপ
- জীবের বসবাসের পরিবেশের সবসময় পরিবর্তন ঘটে। সুবিধাজনক বা অসুবিধাজনক এই পরিবর্তনকে চিনে নিয়ে সেই অনুযায়ী সাড়াপ্রদানকে বলে সংবেদনশীলতা। পরিবেশের এই পরিবর্তনগুলিকে বলে উদ্দীপক। যেমন—সূর্যালোক একটি বাহ্যিক উদ্দীপক, কোশে জলাভাব হল একটি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
- উদ্ভিদের সাড়াপ্রদানের যে ঘটনা আমরা দেখতে পাই তা হল লজ্জাবতীর Mimosa pudica (মাইমোসা পুডিকা) স্পর্শে নুয়ে পড়া, আর বনচাড়াল উদ্ভিদের Desmodium gyrans (ডেসমোডিয়াম গাইরাস) পার্শ্বীয় পত্রকের অনবরত উল্লম্ব চলন। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু এই দুটি উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান ক্রেসকোগ্রাফ নামক যন্ত্র দ্বারা পরিমাপ করেন।
- উদ্ভিদে তিনপ্রকার চলন দেখা যায়—ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন।
- উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদ স্থান পরিবর্তন করলে, তাকে বলে ট্যাকটিক চলন। যেমন—আলোর দিকে ভলভক্সের চলন।
- বাইরের উদ্দীপকের গতিপথ অনুযায়ী উদ্ভিদের দেহাংশের (কাণ্ড, শাখা বা মূলাগ্র) চলনকে বলে ট্রপিক চলন। যেমন—ফোটোট্রপিক (আলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত), হাইড্রোট্রপিক (জলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত) এবং জিওট্রপিক (অভিকর্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত) চলন।
- উদ্দীপকের তীব্রতা অনুযায়ী উদ্ভিদ দেহাংশের চলনকে ন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন—আলোর তীব্রতা বৃদ্ধিতে সূর্যমুখী ফুল ফোটে (ফোটোন্যাস্টিক), তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে টিউলিপ ফুল ফোটে (থার্মোন্যাস্টিক), লজ্জাবতীর পাতায় হাত দিলে তা মুড়ে যায় (সিসমোন্যাস্টিক) এবং পতঙ্গভুক উদ্ভিদের (সূর্যশিশির, কলসপত্রী) পতঙ্গ শিকার (কেমোন্যাস্টিক)।
- প্রধান তিনপ্রকার উদ্ভিদ চলনের মধ্যে নানা মিল ও অমিল লক্ষ করা যায়।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. উদ্ভিদ কীভাবে পরিবেশ পরিবর্তন শনাক্ত করে? উদাহরণের মাধ্যমে উদ্ভিদের সাড়াপ্রদানের বিষয়টি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর – উদ্ভিদের পরিবেশ-পরিবর্তন শনাক্তকরণ : সকল জীবই উদ্দীপনার প্রভাবে কম-বেশি সংবেদনশীলতা দেখায়। আগে মনে করা হত যে, পরিবেশের কোনো পরিবর্তনই উদ্ভিদ শনাক্ত করে না। কিন্তু বাস্তবে উদ্ভিদও প্রাণীর মতোই পরিবেশের পরিবর্তন শনাক্ত করে ও তাতে সাড়াপ্রদান করে। যদিও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের প্রভাবে সাড়াপ্রদানের ঘটনা প্রাণীদের তুলনায় অনেক কম দেখা যায়। অধিকাংশ উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থাকে বলে তথা গমনে অক্ষম হওয়ায়, তারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন বা চলনের মাধমে সাড়াপ্রদান করে।
উদ্ভিদের সাড়াপ্রদানের উদাহরণ: উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান সাধারণতঅত্যন্ত ধীর ঘটনা এবং তা মূলত উদ্ভিদ-অঙ্গের বৃদ্ধিজনিত বা রসস্ফীতিজনিত হয়ে থাকে। উদ্ভিদজগতে দ্রুত সাড়াপ্রদানের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। উদ্ভিদের দ্রুত সাড়াপ্রদান বা সংবেদনশীলতার দুটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল—(1) লজ্জাবতী বা

Mimosa pudica (মাইমোসা পুডিকা) গাছের পক্ষল যৌগিক পত্রগুলি স্পর্শ করলে তার পত্রকগুলি গুটিয়ে যায় ও নুয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে স্পর্শ বা ছোঁয়ার ফলে পত্রকের উপাধানের কোশগুলির রসস্ফীতি পরিবর্তিত হয় বা রসস্ফীতি চাপ হ্রাস পাওয়ার জন্য পত্রকগুলি পত্রকঅক্ষ বা র্যাকিস বরাবর নুয়ে যায়। এক্ষেত্রে স্পর্শ হল উদ্দীপক; এবং পত্রকের নুয়ে যাওয়া হল সাড়াপ্রদান। (2) বনচাঁড়াল বা Desmodium gyrans (ডেসমোডিয়াম গাইরাস) নামক গাছের ত্রিফলকযুক্ত পাতার বৃত্তের পাশের ছোটো পত্রক দুটি ক্রমাগত ওঠানামা করতে থাকে। এই চলনটি শুধুমাত্র দিনের বেলায় অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে।
প্রশ্ন – 2. উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণের ক্ষেত্রে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান কী ? বৃদ্ধিজ ও প্রকরণ চলন কাকে বলে?
উত্তর – জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান: উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি লজ্জাবতী ও বনচাঁড়াল উদ্ভিদ দুটি নিয়ে তাদের সাড়াপ্রদান সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। তিনি নিজের আবিষ্কৃত ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদ দুটির চলন নির্ণয় করে উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণ করেন। ক্রেসকোগ্রাফ একটি অত্যন্ত সুবেদী যন্ত্র যা উদ্ভিদের সামান্যতম সাড়াপ্রদানও পরিমাপ করতে পারে। এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রাপ্ত গ্রাফ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানী বসু আবিষ্কার করেন যে— (1) প্রাণীর মতোই, উদ্ভিদদেহেও ছন্দোবদ্ধ ক্রিয়া সম্পন্ন হয় যা উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা তথা চলন নিয়ন্ত্রণ করে, (2) বাহ্যিক বিভিন্ন উদ্দীপনা, যেমন—স্পর্শ, তাপ, ঠান্ডা, বিষ প্রভৃতি কোশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায় যা উদ্ভিদের সাড়াপ্রদানে সাহায্য করে।
বৃদ্ধিজ চলন ও প্রকরণ চলন: উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের অসমান বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্ভিদ-অঙ্গের যে চলন সম্পন্ন হয়, তাকে বৃদ্ধিজ চলন বলে। যেমন—ক্রমাগত একই দিকে বৃদ্ধির কারণে উদ্ভিদের আকর্ষের অবলম্বনের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়া। কোশের রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য উদ্ভিদের পরিণত অংশে যে চলন দেখা যায়, তাকে প্রকরণ চলন বলে। যেমন, বনচাঁড়ালে পার্শ্বীয় পত্রকের চলন।
প্রশ্ন – 3. উদ্ভিদের চলন কাকে বলে? উদ্ভিদের বিভিন্নপ্রকার উদ্দীপক নিয়ন্ত্রিত চলন একটি ছকের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর – উদ্ভিদের চলন: যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ বিভিন্ন উদ্দীপকের প্রভাবে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক স্থানে স্থির থেকে তার দেহের কোনো অংশ সঞ্চালন করে, তাকে উদ্ভিদের চলন বলে।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে চলন হল সাড়াপ্রদানের একটি মাধ্যম। প্রায় সমস্ত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে চলন দেখা যায়। তবে কিছু নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সমগ্র উদ্ভিদেহের বা দেহাংশের সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন ঘটে বা গমন ঘটে।
উদ্ভিদের উদ্দীপক নিয়ন্ত্রিত চলনের প্রকারভেদ: উদ্দীপক নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ চলন প্রধানত তিনপ্রকার, যথা—ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন। এই তিনপ্রকার চলনের মধ্যে ট্যাকটিক চলন হল সামগ্রিক চলন এবং ট্রপিক ও ন্যাস্টিক চলন হল বক্রচলন।
উদ্দীপক নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ চলনের প্রকারভেদগুলি নীচে ছকের সাহায্যে দেখানো হল—

প্রশ্ন – 4. ট্যাকটিক চলনের বৈশিষ্ট্য লেখো। ফোটোট্যাকটিক চলন বলতে কী বোঝ উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর – ট্যাকটিক চলনের বৈশিষ্ট্য: ট্যাকটিক চলনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(1) এইপ্রকার চলনে উদ্ভিদের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন ঘটে, অর্থাৎ গমন সম্পন্ন হয়। (2) ট্যাকটিক চলন কোনো বহিস্থ উদ্দীপক ও তার উৎসের অভিমুখ বা গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। (3) সাধারণত অনুন্নত জলজ উদ্ভিদে ও উদ্ভিদের জননকোশে এই চলন ঘটে। (4) সিলিয়া বা ফ্ল্যাজেলা ট্যাকটিক চলনে সহায়তা করে।
ফোটোট্যাকটিক চলন: বাহ্যিক আলোক উদ্দীপক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যখন কোনো উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ-অংশ সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তখন সেই চলনকে ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। বিভিন্ন নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে এইপ্রকার চলন দেখা যায়। উদাহরণ—Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) ও Volvox (ভলভক্স) আলোর স্বল্প তীব্রতায় আলোক-উৎসের দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু উন্নতা বৃদ্ধির কারণে তীব্র আলো থেকে দূরে সরে যায়।

প্রশ্ন – 5. উদ্ভিদের যে-কোনো দু-ধরনের ট্রপিক চলন উদাহরণসহ আলোচনা করো।
অথবা, উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন পরীক্ষাসহ আলোচনা করো।
উত্তর – উদ্ভিদের ট্রপিক চলন: উদ্ভিদের ট্রপিক চলন মূলত তিন প্রকার। যথা—(1) ফোটোট্রপিক চলন, (2) জিওট্রপিক চলন ও (3) হাইড্রোট্রপিক চলন। বিভিন্ন ধরনের ট্রপিক চলন উদাহরণ সহযোগে আলোচনা করা হল।
1. ফোটোট্রপিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন আলোর উৎসের গতিপথ বা অভিমুখ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে ফোটোট্রপিক বা আলোক-বৃত্তীয় চলন বলে। উদ্ভিদের কাণ্ড, শাখাপ্রশাখা আলোর উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই কাণ্ডকে আলোক-অনুকূলবর্তী বলে। অন্যদিকে, মূল আলোর উৎসের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই মূলকে আলোক-প্রতিকূলবর্তী বলে। আবার, পাতা আলোর উৎসের সাথে তির্যকভাবে বালম্বভাবে বৃদ্ধি পায় বলে পাতাকে আলোক-তির্যকবর্তী বলা হয়।
উদাহরণ: একটি জলপূর্ণ কাচের বোতলে কর্কের সাহায্যে একটি চারাগাছ লাগানো হল। এবার বোতলসহ চারাগাছটি যদি অন্ধকার ঘরে একটি জানালার পাশে রেখে জানালার একটি পাল্লা খুলে রাখা হয় তবে কয়েকদিন পর দেখা যাবে চারাগাছের ডালপালা জানালার দিকে অর্থাৎ, আলোক-উৎসের দিকে বেঁকে গেছে। একইসঙ্গে লক্ষ করা যাবে যে, চারাগাছের মূল নীচের দিকে অর্থাৎ আলোক-উৎসের বিপরীতে বৃদ্ধি পায়। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিটপ অংশ আলোক-অনুকূলবর্তী ও মূল আলোক-প্রতিকূলবর্তী।

2. জিওট্রপিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন অভিকর্ষের গতিপথ বা অভিমুখ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে জিওট্রপিক বা অভিকর্ষবৃত্তীয় চলন বলে। উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষের দিকে এবং বিটপ অভিকর্ষের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই মূলকে অভিকর্ষ-অনুকূলবর্তী ও বিটপকে অভিকর্ষ-প্রতিকূলবর্তী বলে।
উদাহরণ: একটি ভিজে ব্লটিং পেপারে একটি অঙ্কুরিত বীজকে পিনের সাহায্যে আটকে ব্লটিং পেপারটিকে একটি দড়ির সাহায্যে অন্ধকার ঘরে খাড়াভাবে ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হল। এর কয়েকদিন পরে দেখা যাবে অঙ্কুরিত বীজের ভ্ৰূণমূল নীচের দিকে ও ভ্রুণমুকুল ওপরের দিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভ্ৰূণমূল অভিকর্ষের অনুকূলবর্তী এবং ভ্ৰূণমুকুল অভিকর্ষের প্রতিকূলবর্তী।

3 হাইড্রোট্রপিক চলন: উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রচলন যখন জলের উৎসের গতিপথ বা অভিমুখ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে হাইড্রোট্রপিক চলন বা জলবৃত্তীয় চলন বলে। উদ্ভিদের মূলের চলন জলের উৎসের দিকে হয়। তাই মূলকে জল-অনকূলবর্তী এবং বিটপ জলের উৎসের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই বিটপকে জল-প্রতিকূলবর্তী বলে।
উদাহরণ: একটি চালুনিতে কাঠের ভিজে গুঁড়োর ওপর কতকগুলি সতেজ ছোলার বীজ রেখে ঝুলিয়ে দিলে কয়েকদিন পর বীজগুলি অঙ্কুরিত হয়ে অভিকর্ষবৃত্তির কারণে ভ্রূণমূলগুলিকে চালুনির বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যাবে। এভাবে আরও কয়েকদিন রেখে দিলে দেখা যাবে, ভ্ৰূণমূলগুলি আবার চালুনির ভিতর ঢুকে যায়। এর থেকে প্রমাণিত হয়, ভ্ৰূণমূলগুলি প্রথমে চালুনির বাইরে অভিকর্ষের টানে নীচের দিকে ঝুলতে থাকে এবং পরে সেগুলি জলের উৎসের দিকে বেঁকে আবার চালুনির ভিতর প্রবেশ করে। অর্থাৎ প্রমাণিত হয় যে, মূলের মধ্যে অনুকূল জলবৃত্তীয় চলন দেখা যায়।

[শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এখানে তিনপ্রকার ট্রপিক চলনই উদাহরণ সহযোগে আলোচনা করা হল। পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তরে শুধুমাত্র দুইপ্রকার ট্রপিক চলন সম্পর্কে লিখতে হবে।]
প্রশ্ন – 6. আলো ও অভিকর্ষ বল উদ্ভিদের চলনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে?
উত্তর – আলো ও অভিকর্ষ বল দ্বারা উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রণ: উদ্ভিদ-চলন নিয়ন্ত্রণকারী দুটি অন্যতম উদ্দীপক হল আলো ও অভিকর্ষ বল। নীচে এই দুটি উদ্দীপকের ভূমিকা উল্লেখ করা হল।
আলোর দ্বারা উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রণ: উদ্ভিদ-অঙ্গের ট্রপিক চলন আলোক-উৎসের দিক-নির্ভর হয়। এই ধরনের চলনকে আলোকবর্তী চলন বা ফোটোট্রপিজম বলে। উদ্ভিদের কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখা আলোর উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই উদ্ভিদের কাণ্ডকে আলোক-অনুকূলবর্তী বলে। অপরদিকে, উদ্ভিদের মূল আলোক-উৎসের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়, তাই মূলকে আলোক-প্রতিকূলবর্তী বলে। উদ্ভিদের পাতা আলোক-উৎসের সাথে লম্বভাবে বৃদ্ধি পায়, তাই এদের আলোক-তির্যকবর্তী বলা হয়। অক্সিন নামক উদ্ভিদ-হরমোন এই ধরনের চলন নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস), Volvox (ভলভক্স) প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের ক্ষেত্রে আলোক-উৎসের অভিমুখে সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন ঘটে, যা ফোটোট্যাকটিক চলন নামে পরিচিত। আবার, আলোর তীব্রতার দ্বারাও উদ্ভিদ চলন নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এইপ্রকার চলনকে ফোটোন্যাস্টিক চলন বলে। পদ্ম, সূর্যমুখী প্রভৃতি ফুলের তীব্র আলোতে ফোটা ও সূর্যাস্তের সাথে সাথে বুজে যাওয়া এই ধরনের ফোটোন্যাস্টিক চলনের উদাহরণ।
অভিকর্ষ বল দ্বারা উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রণ: অভিকর্ষ বলের প্রভাবে উদ্ভিদ-অঙ্গের চলনকে অভিকর্ষবৃত্তীয় চলন বা জিওট্রপিজম বলে। উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষের দিকে এবং বিটপ অভিকর্ষের বিপরীত দিকে ধাবিত হয়। এই কারণে মূলকে অভিকর্ষ-অনুকূলবর্তী ও কাণ্ডকে অভিকর্ষ-প্রতিকূলবর্তী বলা হয়। এ ছাড়া, উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূল পৃথিবীর ভরকেন্দ্র বা অভিকর্ষের উৎসের সাথে লম্বভাবে বৃদ্ধি পায়, তাই এদের অভিকর্ষ-তির্যকবর্তী বলা হয়। এইপ্রকার চলনেও অক্সিনের ভূমিকা অপরিসীম।
প্রশ্ন – 7. ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – ট্রপিক চলনের বৈশিষ্ট্য: ট্রপিক চলনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(1) এইপ্রকার চলন উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রতা সৃষ্টির মাধ্যমে ঘটে। (2) বিভিন্ন প্রকার বহিস্থ উদ্দীপক, যেমন—আলো, জল, অভিকর্ষ প্রভৃতির গতিপথ বা উৎস দ্বারা এই চলন নিয়ন্ত্রিত হয়। (3) ট্রপিক চলন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গ, যেমন—মূল, কাণ্ড, শাখাপ্রশাখা প্রভৃতিতে ঘটে থাকে। (4) ট্রপিক চলনে হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদ-অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে, তাই একে বৃদ্ধিজনিত আবিষ্ট বক্ৰচলন বলে।
ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য: ন্যাস্টিক চলনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল –(1) এইপ্রকার চলন বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে রসস্ফীতি জনিত তারতম্যের দ্বারা উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রতা সৃষ্টির মাধ্যমে ঘটে। (2) আলো, উয়তা, স্পর্শ বা আঘাত, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি উদ্দীপকের প্রভাবে এইপ্রকার চলন ঘটে। (3) ন্যাস্টিক চলন উদ্দীপকের তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রশ্ন – 8. উদ্ভিদের বিভিন্নপ্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর – ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ: ন্যাস্টিক চলন বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন—(1) ফোটোন্যাস্টিক, (2) থার্মোন্যাস্টিক, (3) সিসমোন্যাস্টিক, (4) কেমোন্যাস্টিক ও (5) নিক্টিন্যাস্টিক চলন। প্রধান পাঁচপ্রকার ন্যাস্টিক চলন সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।
1. ফোটোন্যাস্টিক চলন: আলোকের তীব্রতার হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদ-অঙ্গের যে বক্রচলন হয়, তাকে ফোটোন্যাস্টি বা ফোটোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন—সূর্যমুখী ফুল দিনের বেলায় আলোর তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে দিক পরিবর্তন করে। আবার, বেল ফুল সূর্যালোকে বুজে যায় এবং রাতে ফোটে।
2.থার্মোন্যাস্টিক চলন: তাপমাত্রার তীব্রতার ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদ, অঙ্গের যে বক্রচলন হয়, তাকে থার্মোন্যাস্টি বা থার্মোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন—টিউলিপ ফুল স্বাভাবিক উন্নতায় ফোটে, কিন্তু উয়তা হ্রাস পেলে ফুলের পাপড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
3 সিসমোন্যাস্টিক চলন: স্পর্শ, কম্পন, ঘর্ষণ, আঘাত প্রভৃতির মতো বিভিন্ন উদ্দীপকের তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলনকে সিসমোন্যাস্টি বা সিসমোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন—লজ্জাবতীর পাতার পত্রকগুলি আলতোভাবে স্পর্শ করলে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং স্পর্শ জোরালো হলে সমগ্র পাতা নুয়ে পড়ে। আবার, স্পর্শ সরিয়ে নিলে লজ্জাবতীর পত্রক খুলে যায়।

4. কেমোন্যাস্টিক চলন: রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদ-অঙ্গের যে বক্রচলন সম্পন্ন হয়, তাকে কেমোন্যাস্টি বা কেমোন্যাস্টিক চলনবলে। যেমন—ইথার, ক্লোরোফর্ম প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে উদ্ভিদের কচি আকর্ষ বেঁকে যায়। সূর্যশিশিরের পত্রফলকের ওপর পতঙ্গ বসলে কর্ষিকাগুলি বেঁকে গিয়ে পতঙ্গকে ঘিরে ফেলে।
5 নিক্টিন্যাস্টিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন আলোক ও উয়তা উভয়ের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে, তখন তাকে নিক্টিন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন—আমরুল, বাবলা, শিরিষ প্রভৃতি গাছের পাতার পত্রকগুলি দিনের বেলা আলো ও তাপের প্রভাবে খুলে যায় ও বিকেল থেকে সন্ধ্যার অন্ধকারে ও নিম্ন তাপমাত্রায় বন্ধ হয়ে যায়। [নিক্টিন্যাস্টিক চলন সিলেবাস বহির্ভূত। শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে এখানে উল্লেখ করা হল।]
প্রশ্ন – 9. ট্যাকটিক, ট্রপিক ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে তুলনা করো।
উত্তর – ট্যাকটিক, ট্রপিক ও ন্যাস্টিক চলনের তুলনা
| বিষয় | ট্যাকটিক চলন | ট্রপিক চলন | ন্যাস্টিক চলন |
| 1. প্রধান বৈশিষ্ট্য | বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সামগ্রিক উদ্ভিদদেহের স্থান পরিবর্তন। | বাহ্যিক উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন। | বাহ্যিক উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন। |
| 2. উদ্দীপকের প্রভাব | উদ্দীপকের উৎসের গতিপথ ও তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। | কেবলমাত্র উদ্দীপকের উৎসের গতিপথ দ্বারা প্রভাবিত হয়। | কেবলমাত্র উদ্দীপকের উৎসের তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। |
| 3. উদ্ভিদের চলন অঙ্গ | সমগ্র উদ্ভিদদেহ বা দেহাংশ। | অপরিণত বর্ধনশীল অঙ্গ। | পরিণত উদ্ভিদ দেহাংশ। |
| 4. অঙ্গের বৃদ্ধি | অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে না। | অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে। | অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে না। |
| 5. অক্সিন হরমোনের প্রভাব | অক্সিন হরমোনের কোনো প্রভাব নেই। | অক্সিন হরমোনের বিশেষ প্রভাব আছে। | অক্সিন হরমোনের কোনো প্রভাব নেই। |
| উদাহরণ |
ম্যালিক অ্যাসিডের প্রভাবে উদ্দীপিত হয়ে মস ও ফার্নের শুক্রাণুর চলন
(কেমোট্যাকটিক চলন)।
|
আলোক উৎসের দিকে কাণ্ডের চলন (ফোটোট্রপিজম)।
|
সূর্যালোকের অধিক তীব্রতায় সূর্যমুখী ফুলের ফোটা কিংবা কম তীব্রতায় বুজে যাওয়া
(ফোটোন্যাস্টিক চলন)।
|
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. উদ্দীপক ও উদ্দীপনা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – যেসব বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা বা শর্ত বা পদার্থ জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, তাদের উদ্দীপক বলে। যেমন – আলো, তাপ হরমোন ইত্যাদি।
উদ্দীপকের উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট একপ্রকার প্রতিক্রিয়া যা জীব অনুভব করতে পারে, তাকে উদ্দীপনা বলে।
প্রশ্ন – 2. উদ্দীপক ও উদ্দীপনার সম্পর্ক কী? উদ্দীপক কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর – উদ্দীপক ও উদ্দীপনার সম্পর্ক : উদ্দীপকের উপস্থিতিতেই জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পরিবেশের সমস্ত জীবই কম-বেশি উদ্দীপকের উদ্দীপনায় সাড়া দেয়। অর্থাৎ, উদ্দীপক কারণ হলে উদ্দীপনা তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া।
উদ্দীপকের প্রকারভেদ : উৎস অনুযায়ী উদ্দীপক দুই প্রকার-বাহ্যিক উদ্দীপক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
প্রশ্ন – 3. বাহ্যিক উদ্দীপক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক কাকে বলে?
উত্তর – যে উদ্দীপক জীবদেহের বাইরে বা বাহ্যিক পরিবেশে উৎপন্ন হয়ে জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, তাকে বাহ্যিক উদ্দীপক বলে । আলো, উয়তার তারতম্য, স্পর্শ প্রভৃতি বাহ্যিক উদ্দীপক।
জীবদেহের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে সৃষ্ট উদ্দীপক যা জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, তাকে অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক বলে। যেমন—
হরমোন, রসস্ফীতির তারতম্য প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।

প্রশ্ন – 4. সংবেদনশীলতা বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – সংবেদনশীলতা : পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তনগুলি শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী সাড়াপ্রদানের ধর্ম বা ক্ষমতাকেই সংবেদনশীলতা (sensitivity) বলে।
উদাহরণ: লজ্জাবতীর পাতাকে স্পর্শ করলে পত্রকগুলি নুয়ে পড়ে। । এটি উদ্ভিদের সংবেদশীলতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রশ্ন – 5. একটি উদাহরণের মাধ্যমে উদ্ভিদের সাড়াপ্রদানের ঘটনাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – উদ্ভিদের সংবেদনশীলতার বা সাড়াপ্রদানের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল লজ্জাবতী উদ্ভিদ। লজ্জাবতী উদ্ভিদের পাতাকে স্পর্শ করলে, তার পত্রকগুলি নুয়ে পড়ে। এটি স্পর্শ উদ্দীপনায় সাড়াপ্রদানের ঘটনা।
প্রশ্ন – 6. উদ্ভিদ কীভাবে সাড়াপ্রদান করে?
উত্তর – উদ্ভিদ বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে সৃষ্ট উদ্দীপনায় সাড়াপ্রদান করে। সাধারণত এই সাড়াপ্রদান অত্যন্ত ধীর এবং তা মূলত বৃদ্ধিঘটিত বা রসস্ফীতিজনিত হয়ে থাকে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দ্রুত সাড়াপ্রদানের ঘটনা প্রায় বিরল (ব্যতিক্রম—লজ্জাবতী, বনচাঁড়াল)। অধিকাংশ উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন বা চলনের মাধ্যমে সাড়াপ্রদান করে।
প্রশ্ন – 7. ক্রেসকোগ্রাফ কী ও কী কাজে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – ক্রেসকোগ্রাফ (crescograph) হল বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কৃত একপ্রকার অত্যন্ত সুবেদী যন্ত্র, যার সাহায্যে উদ্ভিদের সামান্য সাড়াপ্রদানের ঘটনাও পরিমাপ করা যায়।

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু এই ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে লজ্জাবতী এবং বনচাঁড়াল নামক উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান-সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
প্রশ্ন – 8. চলন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – যে প্রক্রিয়ায় জীব এক জায়গায় স্থির থেকে উদ্দীপকের প্রভাবে সাড়া দিয়ে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেহের কোনো অংশ সঞ্চালন করে, তাকে চলন বলে।
প্রশ্ন – 9. চলনের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর – চলনের উদ্দেশ্যগুলি হল –(1) উদ্ভিদের মূলের অগ্রভাগে জলের অন্বেষণের জন্য চলন দেখা যায়। (2) সূর্যালোক, বাতাস ইত্যাদির সন্ধানে উদ্ভিদের কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখার চলন ঘটে। (3) মাটি থেকে জল ছাড়াও খনিজ লবণের সন্ধানে মূলের বিভিন্ন দিকে চলন দেখা যায়।
প্রশ্ন – 10. উদ্ভিদ চলন কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তর – উদ্ভিদ চলন তিনপ্রকার যথা—(1) ট্যাকটিক চলন, (2) ট্রপিক চলন, (3) ন্যাস্টিক চলন।
জেনে রাখো
উদ্ভিদ চলন প্রক্রিয়াকে প্রাথমিকভাবে দুইভাগে ভাগ করা যায় — (1) সামগ্রিক চলন বা গমন এবং (2) বক্রচলন। এই দুইপ্রকার চলনই স্বতঃস্ফূর্ত এবং আবিষ্ট বা বাহ্যিক উদ্দীপনা-নির্ভর হতে পারে।। সামগ্রিক চলন আবার দুইপ্রকার—স্বতঃস্ফূর্ত (প্রোটোপ্লাজমীয় চলন) এবং আবিষ্ট (ট্যাকটিক চলন)। বজ্রচলনও আবার দুইপ্রকার—স্বতঃস্ফূর্ত (বৃদ্ধিজ চলন, প্রকরণ চলন) ও আবিষ্ট (ট্রপিক চলন, ট্যাকটিক চলন)।
প্রশ্ন – 11. উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – স্বতঃস্ফূর্ত বা বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ বা উদ্ভিদদেহের কোনো অংশের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন করাকে সামগ্রিক চলন বা গমন বলে। যেমন—Volvox (ভলভক্স), Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) প্রভৃতি শৈবালের চলন।
প্রশ্ন – 12. “উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন একপ্রকার গমন”—উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – উদ্ভিদের সামগ্রিক চলনে স্থান পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন—ফোটোট্যাকটিক চলনে শৈবাল স্বল্প আলোর দিকে গমন করে। অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা স্থান পরিবর্তনকেই গমন বলে। তাই উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন হল একপ্রকারের গমন।
প্রশ্ন – 13. বক্রচলন কাকে বলে?
উত্তর – মাটিতে আবদ্ধ অবস্থায় একস্থানে স্থির থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার অঙ্গ সঞ্চালনকে বক্ৰচলন বলে। যেমন—ট্রপিক চলন, ন্যাস্টিক চলন, প্রকরণ চলন ইত্যাদি।
প্রশ্ন – 14. বৃদ্ধিজ চলন কাকে বলে?
উত্তর – উদ্ভিদের বর্ধিষু অংশের অসমান বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের যে চলন হয় তাকে বৃদ্ধিজ চলন বলে। যেমন—রোহিনী জাতীয় উদ্ভিদে দেখা যায়।
প্রশ্ন – 15. প্রকরণ চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – প্রকরণ চলন: কোশের রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য উদ্ভিদ-অঙ্গের যে স্বতঃস্ফূর্ত বক্রচলন দেখা যায়, তাকে প্রকরণ চলন বলে।
উদাহরণ : বনটাড়ালের যৌগপত্রের পার্শ্বীয় পত্রক দুটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পর্যায়ক্রমে ওপরে ও নীচে ওঠানামা করে। এটি একপ্রকার রসস্ফীতিজনিত প্রকরণ চলন।
প্রশ্ন – 16. স্বতঃস্ফূর্ত চলন কাকে বলে? আবিষ্ট চলন কাকে বলে?
উত্তর – স্বতঃস্ফূর্ত চলন: অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে সংঘটিত সামগ্রিক বা বক্রচলনকে স্বতঃস্ফূর্ত চলন বলে। যেমন—প্রকরণ চলন।
আবিষ্ট চলন: বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সংঘটিত সামগ্রিক ‘বা বক্ৰচলনকে আবিষ্ট চলন বলে। যেমন—ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন।
প্রশ্ন – 17. ট্যাকটিক চলন কাকে বলে? ফোটোট্যাকটিক চলন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ট্যাকটিক চলন: বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদদেহের বা দেহাংশের স্থান পরিবর্তনকে ট্যাকটিক চলন বলে। যেমন—ভলভক্স-এর আলোর দিকে যাওয়া।
ফোটোট্যাকটিক চলন: আলোক উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ দেহের স্থান পরিবর্তনকে ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। যেমন—শৈবালের উ জুস্পোর ও জননকোশে আলোর প্রভাবে সামগ্রিক চলন বা ফোটোট্যাকটিক হয় চলন দেখা যায়। যেমন— Volvox (ভলভক্স), Ulothrix (ইউলোথ্রিক্স), Cladophora (ক্ল্যাডোফোরা), Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) প্রভৃতি।
প্রশ্ন – 18. পজিটিভ ফোটোট্যাকটিক ও নেগেটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন কাকে বলে?
উত্তর – যখন ট্যাকটিক চলন আলোক উদ্দীপকের গতিপথের অভিমুখে অনু সংঘটিত হয় তখন তাকে পজিটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। যেমন— Volvox (ভলভক্স) ও অন্যান্য শৈবাল স্বল্প আলোর দিকে গমন করে, যাকে পজিটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন বলে।
যখন ট্যাকটিক চলন আলোক উদ্দীপকের গতিপথের বিপরীত অভিমুখে সংঘটিত হয় তখন তাকে নেগেটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। যেমন—Volvox (ভলভক্স) ও অন্যান্য শৈবালগুলিই এক্ষেত্রে তীব্র আলোতে আলোর বিপরীতে গমন করে। একে বলে নেগেটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন।
প্রশ্ন – 19. কেমোট্যাকটিক চলন উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – রাসায়নিক পদার্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তনকে বলে কেমোট্যাকটিক চলন। যেমন – Pteris (টেরিস), Dryopteris (ড্রায়োপটেরিস) জাতীয় ফার্নের শুক্রাণু, স্ত্রীধানী নির্গত ম্যালিক অ্যাসিডের আকর্ষণে স্ত্রীধানীর দিকে গমন করে (পজিটিভ থার্মোট্যাকটিক)।
প্রশ্ন – 20. দিক্নির্ণীত চলন বা ট্রপিক চলন কাকে বলে?
উত্তর –উদ্ভিদ অঙ্গের বজ্রচলন যখন বহিস্থ উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিক্নির্ণীত বজ্রচলন বলে। যেমন-কাল্ডের আলোক উৎসের দিকে চলন।
প্রশ্ন – 21. ফোটোট্রপিক চলন কাকে বলে?
উত্তর –উদ্ভিদ অঙ্গের বক্র চলন যখন আলোক উৎসের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে ফোটোট্রপিক চলন বা আলোকবৃত্তীয় চলন বলে। যেমন—আলোক উৎসের দিকে উদ্ভিদের কাণ্ডের বৃদ্ধি, অর্থাৎ কাণ্ড আলোক অনুকূলবর্তী।

প্রশ্ন – 22. হাইড্রোট্রপিক চলন কাকে বলে?
উত্তর – উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন জলের উৎসের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত টক হয়, তখন তাকে হাইড্রোট্রপিক চলন বা জলবৃত্তীয় চলন বলে। যেমন— উদ্ভিদের মূল সর্বদা জলের উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ মূল জল অনুকূলবর্তী।
প্রশ্ন – 23. জিওট্রপিক চলন কাকে বলে?
উত্তর – উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রচলন যখন অভিকর্ষ বল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে জিওট্রপিক চলন বা অভিকর্ষবৃত্তীয় চলন বলে। যেমন—উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষজ টানে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয় অর্থাৎ মূল অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী।
প্রশ্ন – 24. একটি টবের লম্বা একক বিটপযুক্ত উদ্ভিদকে ভূমির সমান্তরাল অবস্থায় সাত দিন রাখা হল। সাত দিন পর বিটপ অংশ বেঁকে ভূমির সঙ্গে লম্বভাবে সোজা হয়ে উঠেছে দেখা যাবে। এর কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর – উদ্ভিদের বিটপে আলোক অনুকূলবর্তী চলন ও অভিকর্ষ প্রতিকূলবর্তী চলনের কারণে বিটপ অংশ বেঁকে ভূমির ওপরে লম্বভাবে সোজা হয়ে উঠে যাবে।
প্রশ্ন – 25. ব্যাপ্তি বা ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে?
উত্তর – উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্র চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে না হয়ে উদ্দীপকের তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে ব্যাপ্তি বা ন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন—সূর্যালোকের তীব্রতায় সূর্যমুখী ফুলের প্রস্ফুটন।
প্রশ্ন – 26. ফোটোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে?
উত্তর – উদ্ভিদ অঙ্গের বজ্রচলন যখন আলোক উদ্দীপকের তীব্রতার হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে হয়, তাকে ফোটোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন- দিনের বেলায় তীব্র আলোয় পদ্ম ফুলের প্রস্ফুটন ও সন্ধ্যায় কম আলোর মুদে যাওয়া।

প্রশ্ন – 27. সিসমোন্যাস্টিক চলন উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর – উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রচলন যখন স্পর্শ, কম্পন, ঘর্ষণ বা আঘাত প্রভৃতি উদ্দীপকের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে, তখন তাকে স্পর্শ ব্যাপ্তি চলন বা সিসমোন্যাস্টিক চলন বলে। স্পর্শের কারণে লজ্জাবতীর পাতার পত্রকগুলি মুদে যাওয়া এইপ্রকার চলনের উদাহরণ।
প্রশ্ন – 28. কেমোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – কেমোন্যাস্টিক চলন : বাহ্যিক পরিবেশের কোনো রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদ-অঙ্গের যে বক্তচলন হয়, তাকে কেমোন্যাস্টিক চলন বলে। বিভিন্ন পতঙ্গভুক উদ্ভিদের মধ্যে এই ধরনের চলন দেখা যায়।
উদাহরণ: ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ-এর পাতায় পতঙ্গ বসলে পতঙ্গের প্রোটিনের প্রভাবে উদ্ভিদের পাতার পত্রফলক দুটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্ন – 29. নিক্টিন্যাস্টি বা আলোক তাপব্যাপ্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – নিক্টিন্যাস্টি: আলোক এবং তাপ উভয়ের তীব্রতার তারতম্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের বক্র চলনকে নিক্টিন্যাস্টি বা আলোক তাপব্যাপ্তি বলে।
উদাহরণ : আমরুল, বাবলা, সুসনি, তেঁতুল, শিরীষ প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা দিনের বেশি আলোক ও তাপে খুলে যায়, কিন্তু সন্ধ্যেবেলার মৃদু আলো ও তাপে মুদে যায়।
প্রশ্ন – 30. থার্মোন্যাস্টিক চলন বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – থার্মোন্যাস্টিক চলন : উন্নতা উদ্দীপকের তীব্রতার তারতম্যের প্রভাবে উদ্ভিদ-অঙ্গের যে বক্রচলন হয়, তাকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বা তাপব্যাপ্তি চলন বলে।
উদাহরণ: স্বাভাবিক উয়তায় টিউলিপ ফুল ফোটে কিন্তু উয়তা কমে গেলে মুদে যায়।

প্রশ্ন – 31. ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর – ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য হল—

প্রশ্ন – 32. ট্রপিক চলন ও ট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর – ট্রপিক চলন ও ট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য হল—

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন শনাক্ত করে, সেই অনুযায়ী জীবের সাড়া প্রদানের ক্ষমতাই হল-
(a) উপযোজন
(b) উদ্দীপক
(c) সংবেদনশীলতা
(d) আত্তীকরণ
উত্তর – (c) সংবেদনশীলতা
2. পরিবেশের যেসব পরিবর্তন শনাক্ত হয় এবং সাড়াপ্রদানে সাহায্য করে তাদের বলে –
(a) শক্তি
(b) বল
(c) উদ্দীপক
(d) অভিযোজন
উত্তর – (c) উদ্দীপক
3. উদ্দীপক হল এক ধরনের-
(a) সংবেদন
(b) প্রত্যক্ষণ
(c) সাড়া
(d) শক্তি
উত্তর – (d) শক্তি
4. সংবেদনশীলতা দেখা যায়-
(a) কেবল প্রাণীতে
(b) কেবল উদ্ভিদে
(c) প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয়েই
(d) এদের কোনোটিতেই নয়
উত্তর – (c) প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয়েই
5. একটি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার উদাহরণ হল –
(a) কোশের রসস্ফীতিজনিত চাপের পরিবর্তন
(b) আলোর তীব্রতার পরিবর্তন
(c) অভিকর্ষ
(d) স্পর্শ
উত্তর – (a) কোশের রসস্ফীতিজনিত চাপের পরিবর্তন
6. একটি জানালা দিয়ে ঘরে রোদ এসে ইনডোর প্ল্যান্ট-এ পড়েছে। ফলে গাছে ফুল ফুটেছে। এক্ষেত্রে উদ্ভিদটির ফুল ফোটাকে বলা যায়—
(a) উদ্দীপক
(b) সাড়াপ্রদান
(c) পরিবেশগত পরিবর্তন
(d) উদ্দীপনা
উত্তর – (b) সাড়াপ্রদান
7. উদ্ভিদের সাড়া পরিমাপক যন্ত্রটি হল –
(a) ক্রেসকোগ্রাফ
(b) আর্কমিটার
(c) সিসমোগ্রাফ
(d) হাইগ্রোমিটার
উত্তর – (a) ক্রেসকোগ্রাফ
৪. জগদীশ চন্দ্র বসু ব্যবহৃত উদ্ভিদের চলন পরিমাপক যন্ত্রটির নাম—
(a) সিসমোগ্রাফ
(b) থার্মোগ্রাফ
(c) ক্রেসকোগ্রাফ
(d) সেন্টিগ্রাফ
উত্তর – (c) ক্রেসকোগ্রাফ
9. বনচাঁড়ালের পার্শ্বপত্রে দেখা যায় —
(a) জিওট্রপিক চলন
(b) ফোটোন্যাস্টিক চলন
(c) প্রকরণ চলন
(d) সিসমোন্যাস্টিক চলন
উত্তর – (c) প্রকরণ চলন
10. ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ নামে পরিচিত—
(a) লজ্জাবতী
(b) মটর
(c) কুমারিকা
(d) বনচাঁড়াল
উত্তর – (d) বনচাঁড়াল
11. বহিস্থ উদ্দীপক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমনকে বলে—
(a) প্রকরণ চলন
(b) ন্যাস্টিক চলন
(c) ট্রপিক চলন
(d) ট্যাকটিক চলন
উত্তর – (d) ট্যাকটিক চলন
12. নীচের কোন্ উদ্ভিদে তুমি গমন লক্ষ করবে?
(a) প্যারামেসিয়াম
(b) ইউগ্লিনা
(c) ক্ল্যামাইডোমোনাস
(d) স্পঞ্জ
উত্তর – (c) ক্ল্যামাইডোমোনাস
13. ফোটোট্যাকটিক চলনের উদাহরণ হল—
(a) ভলভক্স
(b) মসের শুক্রাণু
(c) পাতাশ্যাওলা
(d) সূর্যমুখী
উত্তর – (a) ভলভক্স
14. সূর্যোদয়ের পর ক্ল্যামাইডোমোনাস উদ্ভিদের জলের তলদেশ থেকে ওপরে উঠে আসা যে প্রকারের চলন তা হল –
(a) ফোটোট্রপিক
(b) ফোটোন্যাস্টিক
(c) থার্মোন্যাস্টিক
(d) ফোটোট্যাকটিক
উত্তর – (d) ফোটোট্যাকটিক
15. ম্যালিক অ্যাসিডের প্রভাবে ফার্নগাছের শুক্রাণু ডিম্বাণুর দিকে ধাবিত হয়। এটি একপ্রকারের-
(a) ট্যাকটিক চলন
(b) কেমোট্রপিক চলন
(c) কেমোন্যাস্টিক চলন
(d) কেমোট্যাকটিক চলন
উত্তর – (d) কেমোট্যাকটিক চলন
16. ট্রপিক চলন সম্পর্কিত নীচের কোন বক্তব্যটি সঠিক তা নির্বাচন করো।
(a) এটি উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
(b) উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ-অঙ্গের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয়
(c) ভলভঙ্গ নামক শ্যাওলায় এই চলন দেখা যায়
(d) এটি উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আবিষ্ট বক্র চলন
উত্তর – (d) এটি উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আবিষ্ট বক্র চলন
17. উদ্ভিদের কাণ্ড আলোকের দিকে যায়, এটি কী ধরনের চলন?
(a) ফোটোন্যাস্টিক
(b) ফোটোট্রপিক চলন
(c) স্বতঃস্ফূর্ত চলন
(d) ফোটোট্যাকটিক চলন
উত্তর – (d) ফোটোট্যাকটিক চলন
18. সূর্যালোকের দ্বারা প্রভাবিত ট্রপিক চলনকে বলে-
(a) হাইড্রোট্রপিক চলন
(b) কেমোট্রপিক চলন
(c) জিওট্রপিক চলন
(d) ফোটোট্রপিক চলন
উত্তর – (d) ফোটোট্রপিক চলন
19. কোন প্রকার চলনকে হেলিওট্রপিক চলন বলে?
(a) ফোটোট্রপিক
(b) জিওট্রপিক
(c) কেমোট্রপিক
(d) থিগমোট্রপিক
উত্তর – (a) ফোটোট্রপিক
20. অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ-অঙ্গের চলনকে বলা হয়—
(a) হাইড্রোট্রপিক চলন
(b) জিওট্রপিক চলন
(c) ফোটোট্রপিক চলন
(d) কেমোট্রপিক চলন
উত্তর – (b) জিওট্রপিক চলন
21. উদ্ভিদ কাণ্ডের আলোর দিকে বৃদ্ধি হল একপ্রকার-
(a) ফোটোট্রপিক চলন
(b) হাইড্রোট্রপিক চলন
(c) জিওট্রপিক চলন
(d) কেমোট্রপিক চলন
উত্তর – (a) ফোটোট্রপিক চলন
22. উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চলনকে বলা হয়—
(a) ট্রপিক চলন
(b) ট্যাকটিক চলন
(c) ন্যাস্টিক চলন
(d) কেমোট্যাক্সিস
উত্তর – (c) ন্যাস্টিক চলন
23. আলোক তীব্রতায় সংঘটিত উদ্ভিদের আবিষ্ট বক্রচলনটি হল-
(a) ফোটোট্যাকটিক
(b) ফোটোট্রপিক
(c) সিসমোন্যাস্টিক
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) সিসমোন্যাস্টিক
24. পদ্ম, সূর্যমুখীর প্রস্ফুটনে যে প্রকার চলন দেখা যায়, তা হল-
(a) কেমোন্যাস্টিক
(b) ফোটোন্যাস্টিক
(c) সিসমোন্যাস্টিক
(d) থার্মোন্যাস্টিক
উত্তর – (b) ফোটোন্যাস্টিক
25. সূর্যশিশির নামক পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পাতার কর্ষিকাগুলি পতঙ্গদেহের সংস্পর্শে আসামাত্র বেঁকে গিয়ে পতাকে চেপে ধরে। এটি হল—
(a) সিসমোন্যাস্টি
(b) থার্মোন্যাস্টি
(c) ফোটোন্যাস্টি
(d) কেমোন্যাস্টি
উত্তর – (d) কেমোন্যাস্টি
26. লজ্জাবতী-কে স্পর্শ করলে পাতার পত্রকগুলি তৎক্ষণাৎ মুড়ে যায়, একে বলে—
(a) নিক্টিন্যাস্টিক চলন
(b) হাইপোন্যাস্টিক চলন
(c) সিসমোন্যাস্টিক চলন
(d) কেমোন্যাস্টিক চলন
উত্তর – (c) সিসমোন্যাস্টিক চলন
27. উদ্ভিদে রসস্ফীতিজনিত চলন যে ক্ষেত্রে দেখা যায়—
(a) ট্যাকটিক
(b) ন্যাস্টিক
(c) ট্রপিক
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) ন্যাস্টিক
28. জুঁই ফুলের পাপড়ি রাতের বেলায় প্রস্ফুটিত হয়—এটি কোন প্রকার চলন?
(a) ফোটোন্যাস্টিক চলন
(b) কেমোন্যাস্টিক চলন
(c) থার্মোন্যাস্টিক চলন
(d) সিসমোন্যাস্টিক চলন
উত্তর – (a) ফোটোন্যাস্টিক চলন
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. পরিবেশের বা বাহ্যিক উত্তেজনায় জীবের সাড়া দেওয়ার ধর্মকে কী বলে ?
উত্তর – উত্তেজিতা।
2. পরিবেশের যে অবস্থাগত পার্থক্য জীবদেহে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, তাকে কী বলে?
উত্তর – উদ্দীপক।
3. উদ্দীপক কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর – উদ্দীপক দুই প্রকার—বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ।
4. একটি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের নাম লেখো।
উত্তর – উদ্ভিদকোশে জলের ঘাটতি।
5. বাহ্যিক উদ্দীপকের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – আলো।
6. প্রাণীর দুটি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের নাম লেখো।
উত্তর – খিদে ও তৃয়া।
7. দুটি উদ্ভিদের নাম লেখো যাদের ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতার প্রকাশ ভালোভাবে ঘটে।
উত্তর – বনচাঁড়াল ও লজ্জাবতী।
৪. বাহ্যিক উদ্দীপকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ-অঙ্গের বজ্রচলনকে কী বলে?
উত্তর – আবিষ্ট বক্ৰচলন।
9. মাটিতে আবদ্ধ অবস্থায় উদ্ভিদের অঙ্গ সঞ্চালনকে কী বলে?
উত্তর – বক্রচলন।
10. প্রকরণ চলন কোন্ উদ্ভিদে দেখা যায়?
উত্তর – বনচাঁড়াল উদ্ভিদের উপপত্রকে প্রকরণ চলন দেখা যায়।
11. ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ উদ্ভিদে কী ধরনের চলন দেখা যায় ?
অথবা, ডেসমোডিয়াম গাইরাস উদ্ভিদের উপপত্রকে কোন্ চলন দেখা যায়?
উত্তর – প্রকরণ চলন।
12. বনচাঁড়ালের পার্শ্বীয় উপপত্রকের বোঁটার গোড়ার কোন্ কোশের রসস্ফীতি তারতম্যে উপপত্রকের চলন ঘটে থাকে?
উত্তর – পালভিনি বা পালভিনাস (একবচন) কোশের রসস্ফীতির তারতম্যে।
13. কোন্ বিজ্ঞানী প্রথম প্রমাণ করেন যে, বিনা আঘাতেও উদ্ভিদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ?
উত্তর – বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু।
14. বাহ্যিক স্পর্শ, ঠান্ডা, পটাশিয়াম সায়ানাইড-জাতীয় বিষের প্রভাবে উদ্ভিদের সাড়াদান প্রথম কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর – বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু।
15. রেজোন্যান্ট রেকর্ডার কী?
উত্তর – বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু নির্মিত যে যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদদেহের প্রতিবর্ত পথের সন্ধান করা যায়, তাকে রেজোন্যান্ট রেকর্ডার বলে।
16. প্রোটোপ্লাজমের আবর্তনজনিত গতি বা সারকুলেশন প্রথম কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর – প্রোটোপ্লাজমের আবর্তনজনিত গতি বা সারকুলেশন প্রথম দেখা যায় Tradescantia (ট্রাডেসক্যানশিয়া) নামক উদ্ভিদের পাতায়।
17. উদ্ভিদের ক্ষেত্রে উদ্দীপক নিয়ন্ত্রিত চলন প্রধানত কয় প্রকারের হয় ও কী কী?
উত্তর – উদ্ভিদের ক্ষেত্রে উদ্দীপক নিয়ন্ত্রিত চলন প্রধানত তিন প্রকারের হয়। এগুলি হল ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন।
18. সপুষ্পক উদ্ভিদের ডিম্বাশয়ের অভিমুখে পরাগনালিকার চলন কী প্রকার চলন?
উত্তর – কেমোট্যাকটিক চলন।
19. সামগ্রিক চলন বা গমনে সক্ষম দুটি উদ্ভিদের নাম লেখো।
অথবা, ট্যাকটিক চলন দেখা যায় দুটি উদ্ভিদের নাম লেখো।
উত্তর – Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) ও Volvox (ভলভক্স)।
20. ফার্ন উদ্ভিদের শুক্রাণু ম্যালিক অ্যাসিডের প্রভাবে ডিম্বাণুর দিকে অগ্রসর হয়। এটি কোন্ প্রকার সাড়া প্রদান বলে তুমি মনে করো?
উত্তর – কেমোট্যাকটিক চলন।
21. জলস্রোতের অভিমুখে উদ্ভিদের সামগ্রিক চলনকে কী বলে?
উত্তর – রিওট্যাকটিক চলন।
22. গাছের কাণ্ডের আলোর দিকে অগ্রসর হওয়া কোন প্রকার চলনের উদাহরণ?
উত্তর – গাছের কাণ্ডের আলোর দিকে অগ্রসর হওয়া ফোটোট্রপিক চলনের একটি উদাহরণ।
23. উদ্ভিদের পাতায় কোন প্রকার চলন দেখা যায় ?
উত্তর – তির্যক আলোকবর্তী চলন।
24. অভিকর্ষ-প্রতিকূলবর্তী বা নেগেটিভ জিওট্রপিক চলন কোন্ গাছের মূলে দেখা যায় ?
উত্তর – লবণাম্বু গাছের শ্বাসমূলে।
25. উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূল ও পার্শ্বীয় শাখা অভিকর্ষের গতিপথের সমকোণে বর্ধিত হয়, এটি কী ধরনের চলন?
উত্তর – তির্যক অভিকর্ষবর্তী চলন।
26. উদ্ভিদের দেহের কোন্ অংশে নেগেটিভ জিওট্রপিক চলন দেখা যায় ?
উত্তর – কাণ্ড।
27. ‘মূল মাটির মধ্যে জলের উৎসের অভিমুখে বাড়তে থাকে’—এটি কী ধরনের চলন ?
উত্তর – জল অনুকূলবর্তী চলন।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. সকল জীবই কোনো না কোনো উদ্দীপনায় ……… দেয়।
উত্তর – সাড়া
2. লজ্জাবতী ………. উদ্দীপনায় সাড়া দেয়।
উত্তর – স্পর্শ
3. বনচাঁড়াল উদ্ভিদে ……… চলন দেখা যায়।
উত্তর – প্রকরণ
4. নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে সামগ্রিক চলন বা ……… দেখা যায়।
উত্তর – গমন
5. বাহ্যিক উদ্দীপক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রচলনকে …….. বলে।
উত্তর – ট্রপিক চলন
6. আলোক উৎসের বিপরীত দিকে উদ্ভিদের প্রধানমূলের ……… আলোকবৃত্তি চলন দেখা যায়।
উত্তর – প্রতিকূল
7. অক্সিন হরমোন দ্বারা ………… চলন নিয়ন্ত্রিত হয়।
উত্তর – ট্রপিক
৪. ট্রপিক চলন বাহ্যিক উদ্দীপকের ………… অনুসারে ঘটে।
উত্তর – গতিপথ
9. …………. চলনের ফলে উদ্ভিদ-অঙ্গের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে।
উত্তর – ট্রপিক
10. সুন্দরী গাছের শ্বাসমূলের চলন হল ………. ।
উত্তর – নেগেটিভ জিওট্রপিক চলন
