wb 10th science

WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 3 বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ (TOPIC 1 বংশগতি)

WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 3 বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ (TOPIC 1 বংশগতি)

West Bengal Board 10th Class Science Solutions Biology Chapter 3 বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ (TOPIC 1 বংশগতি)

West Bengal Board 10th Biology Solutions

TOPIC 1 বংশগতি

SUB-TOPIC 1.1 বংশগতি ও প্রকরণ, বংশগতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দের ব্যাখ্যা

বিষয়সংক্ষেপ

  • জননের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যের সঞ্চরণকে বলে বংশগতি। সর্বপ্রথম বংশগতির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। এজন্য তাঁকে বংশগতিবিদ্যা বা জেনেটিক্স-এর জনক বলা হয়।
  • ক্রোমোজোমের DNA-তে অসংখ্য জিন রৈখিক সজ্জাক্রমে অবস্থান করে। ক্রোমোজোমের বা DNA এর অন্তর্গত জিনের স্থায়ী পরিবর্তনকে বলে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি।
  • যৌন জনন ও পরিব্যক্তির কারণে জীবপ্রজাতির সদস্যদের আকার, আকৃতির ও স্বভাবের যে পার্থক্য দেখা যায় তাকে ভ্যারিয়েশন বা প্রকরণ বলে। যেমন—মানুষের মুক্ত কানের লতি ও যুক্ত কানের লতি, রোলার জিভ ও স্বাভাবিক বা নন্-রোলার জিভ।
  • বংশগতির ব্যাখ্যায় মেন্ডেলের কাজ বোঝার জন্য কতকগুলি শব্দ সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। যেমন—একটি জিনের দুটি রূপ থাকে যাদের অ্যালিল বলা হয়। অ্যালিল ক্রোমোজোমের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে। সেই স্থানটিকে বলে লোকাস। একটি অ্যালিল একটি বৈশিষ্ট্য বা প্রলক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন – T অ্যালিলটি লম্বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। একই রকম অ্যালিল থাকলে (TT বা tt) জীবটিকে হোমোজাইগাস জীব বলে। আবার ভিন্ন অ্যালিল থাকলে (Tt) জীবটিকে হেটেরোজাইগাস বলে। জীবের অ্যালিলগত বৈশিষ্ট্যকে বলে তার জিনোটাইপ (যেমন—TT বা tt)। আবার, জীবের বাইরের বা প্রকাশিত চরিত্র অথবা বৈশিষ্ট্যকে বলে ফিনোটাইপ (যেমন—লম্বা বা বেঁটে)।

বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

1. প্রকরণ কাকে বলে?
মানবদেহে বংশানুক্রমিকভাবে সঞ্চারিত প্রকরণ, দুটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – প্রকরণ: যৌন জনন ও পরিব্যক্তির ফলে, কোনো জীবপ্রজাতিতে যে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে প্রকরণ বা ভেদ বা ভ্যারিয়েশন বলা হয়।
মানুষের ক্ষেত্রে প্রকরণের উদাহরণ: মানুষের ক্ষেত্রে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য বা প্রকরণ দেখা যায়। তার উদাহরণ নিম্নরূপ—
  1. মুক্ত ও সংযুক্ত কানের লতি: মানুষের কানের লতির নীচের ভাগ মুখমণ্ডলে সংযুক্ত অথবা মুক্ত প্রকৃতির হয়। দেখা গেছে যে, একজোড়া প্রকট জিন মুক্ত কানের লতি সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে একজোড়া মিউটেশনযুক্ত জিন সংযুক্ত কানের লতি সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, প্রকরণ বা ভ্যারিয়েশনের কারণেই মানুষের কানের লতিতে এই বাহ্যিক বৈচিত্র্য দেখা যায়।
  2. রোলার ও স্বাভাবিক জিভ: 65-81% মানুষ তার জিভকে পার্শ্বীয়ভাবে গোটাতে বা রোল করতে পারে। পক্ষান্তরে বাকি ব্যক্তিরা জিভ গোটাতে অক্ষম হয়। জিভ গোটানোটি (রোলার জিভ) একটি প্রকট বৈশিষ্ট্য, যা দুটি প্রকট জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অপরপক্ষে জিভ গোটাতে অক্ষম হওয়া (স্বাভাবিক জিভ) হল প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য, যা নিয়ন্ত্রণ করে একজোড়া মিউটেশন-যুক্ত প্রচ্ছন্ন জিন। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও বৈচিত্র্যের কারণ হল প্রকরণ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

1. বংশগতি কাকে বলে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার চারিত্রিক গুণাবলি বংশপরম্পরায়  সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে। বংশগতির মাধ্যমে কোনো জীব তার মতোই জীব সৃষ্টি করে। যেমন—আম গাছ থেকে আম গাছ, ছাগল থেকে ছাগল, মানুষ থেকে মানুষ জন্মায়।
2. হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড সেট কাকে বলে?
উত্তর – হ্যাপ্লয়েড সেট: জননকোশের জেনেটিক বস্তুতে ওই জীবের সমস্ত অ্যালিল একক মাত্রায় থাকলে তাকে হ্যাপ্লয়েড সেট বলে। হ্যাপ্লয়েড সেটে অটোজোমাল অ্যালিল এবং X বা Y ক্রোমোজোমের অ্যালিল একক মাত্রায় থাকে।
ডিপ্লেয়েড সেট: দেহকোশের জেনেটিক বস্তুতে দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের দ্বিগুণ মাত্রায় সমস্ত অ্যালিল থাকে। একে ডিপ্লয়েড সেট বলে। ডিপ্লয়েড সেটে অটোজোমাল অ্যালিল দ্বিগুণ মাত্রায় থাকে, সঙ্গে দ্বিগুণ মাত্রায় X ক্রোমোজোমীয় অ্যালিল অথবা X ও Y ক্রোমোজোমীয় অ্যালিল উভয়েই একক মাত্রায় থাকে।
3. জিনোম কাকে বলে?
উত্তর – ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমসম্পন্ন (2n) জীবের প্রতিটি হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমোজোম সেটে বিন্যস্ত জিনগুলিকে একত্রে জিনোম বলে। অর্থাৎ, জননকোশের বা গ্যামেটের হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমের সমস্ত জিনকে একত্রে জিনোম বলে। এগুলি গ্যামেটের মাধ্যমে জনিতৃ জীব থেকে অপত্যের দেহে সঞ্চারিত হয়।
4. পরিব্যক্তি বা মিউটেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – পরিব্যক্তি বা মিউটেশন: ক্রোমোজোম বা জিনের সংখ্যা ও গঠনের পরিবর্তনের ফলে জীবের চরিত্রের পরিবর্তনকে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন বলে।
উদাহরণ: থ্যালাসেমিয়া, বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি রোগ পরিব্যক্তির ফলে সৃষ্টি হয়।
5. মানুষের কয়েকটি প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – মানুষের কয়েকটি প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য হল—
6. কোনো জীবের বৈশিষ্ট্য বা প্রলক্ষণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – কোনো জীবের বাহ্যিক বিশেষত্ব বা গুণকে বলে বৈশিষ্ট্য বা প্রলক্ষণ। প্রতিটি বৈশিষ্ট্য একটি অ্যালিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—মটর গাছের লম্বা হওয়াটি একটি বৈশিষ্ট্য। একইভাবে মটরের বীজপত্রের সবুজ বর্ণ, ফুলের বেগুনি বর্ণ প্রভৃতি হল পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য।
7. কোনো জীবের চরিত্র বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – কোনো জীবের চরিত্র বলতে বোঝায় জিন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে। যেমন—মটর গাছের উচ্চতা হল একটি চরিত্র। এই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বৈশিষ্ট্য হল লম্বা ও বেঁটে। একইভাবে বীজপত্রের রং চরিত্রটির অন্তর্গত দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য হল হলদে ও সবুজ।
8. অ্যালিল বা অ্যালিলোম কী ?
উত্তর – সমসংস্থ ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থিত কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী একটি জিনের ভিন্ন ভিন্ন রূপকে অ্যালিল বা অ্যালিলোম বলা হয়। এককথায়, অ্যালিল হল একই জিনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। যেমন—লম্বা ও খর্বাকার; সাদা ও কালো ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য নির্ধারক জিন জোড়ার একটি জিন অপরটির অ্যালিল।
9. মনোহাইব্রিড ক্রস বা একসংকর জনন কাকে বলে?
উত্তর – কোনো প্রজাতির একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে, তাকে মনোহাইব্রিড ক্রস বা একসংকর জনন বলে। যেমন—মটর গাছের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ বেঁটে এই দুই বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ঘটা সংকরায়ণ হল একসংকর জননের উদাহরণ।
10. ডাইহাইব্রিড ক্রস বা দ্বিসংকর জনন কাকে বলে?
উত্তর – কোনো প্রজাতির দুই জোড়া বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে, তাকে ডাইহাইব্রিড ব্রুস বা দ্বিসংকর জনন বলে। যেমন—হলদে বীজপত্র এবং গোলাকার বীজসম্পন্ন মটর গাছের সঙ্গে সবুজ বীজপত্র এবং কুঞ্চিত বীজসম্পন্ন মটর গাছের সংকরায়ণ হল দ্বিসংকর জননের উদাহরণ।
11. হোমোজাইগাস জীব কাকে বলে?
উত্তর – কোনো জীবের দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমে একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের জন্য দায়ী অ্যালিল দুটি একইরকম হলে, ওই নির্দিষ্ট চরিত্রের সাপেক্ষে সেই জীবকে হোমোজাইগাস জীব বা সমসংকর জীব বলে। যেমন—বিশুদ্ধ লম্বা (TT) বা বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী অ্যালিল দুটি একই প্রকৃতির। তাই বিশুদ্ধ লম্বা বা বিশুদ্ধ বেঁটে বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীব হল হোমোজাইগাস।
12. হেটেরোজাইগাস জীব কাকে বলে? [SRKM High School]
উত্তর – কোনো জীবের দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমে অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের অ্যালিল দুটি ভিন্ন প্রকৃতির হলে, ওই নির্দিষ্ট চরিত্রের সাপেক্ষে সেই জীবকে হেটেরোজাইগাস জীব বা বিষমসংকর জীব বলে। যেমন—সংকর লম্বা (Tt) মটর উদ্ভিদ হেটেরোজাইগাস প্রকৃতির। কারণ, এক্ষেত্রে একই লোকাসে দুটি ভিন্ন অ্যালিল থাকে।
13. সংকরায়ণ কাকে বলে?
উত্তর – কোনো চরিত্রের সাপেক্ষে বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত একই প্রজাতির দুটি জীবের মধ্যে যৌন জননকে সংকরায়ণ বলে। যেমন—বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ বেঁটে মটর গাছের মিলনে সংকর লম্বা মটর গাছ সৃষ্টি করার পদ্ধতি।
14. বিশুদ্ধ জীব বলতে কী বোঝ?
উত্তর – কোনো জীব যদি বংশানুক্রমে কোনো বৈশিষ্ট্য হুবহু একইরকমভাবে বজায় রাখে, তখন সেই বৈশিষ্ট্যের জন্য জীবটিকে বিশুদ্ধ বা খাঁটি জীব বলা হয়। যেমন—একসংকর জনন পরীক্ষায় জনিতৃ জনুর লম্বা (TT) ও বেঁটে (tt) মটর গাছ বিশুদ্ধ উদ্ভিদ।
15. সংকর জীব বলতে কী বোঝ?
উত্তর – দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের যৌন জনন বা পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটিকে সংকর জীব বলা হয়। যেমন—বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলযুক্ত (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (vv) মটর গাছের সংকরায়ণের ফলে সৃষ্ট বেগুনি ফুলযুক্ত মটর গাছ হল সংকর উদ্ভিদ।
16. জনিতৃ জনু বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – সংকরায়ণ পরীক্ষায় শুরুতে যে দুটি জীব নিয়ে প্রজনন করানো হয়, তাদের জনিতৃ জনু বা P জনু (P=parental) বলা হয়। যেমন—একটি একসংকর জনন পরীক্ষায় জনিতৃ জনু হল বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট মটর গাছ (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলবিশিষ্ট মটর গাছ (vv)।
17 প্রথম অপত্য জনু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংকরায়ণ পরীক্ষায় জনিতৃ জনু থেকে উৎপন্ন নতুন জীবগুলিকে প্রথম অপত্য জনু বা F1 জনু (F1 =first filial) বলা হয়। যেমন—বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলবিশিষ্ট (vv) জনিতৃ জনু থেকে উৎপন্ন সংকর বেগুনি ফুলবিশিষ্ট (Vv) সমস্ত মটর গাছই হল প্রথম অপত্য জনু।
18. দ্বিতীয় অপত্য জনু কাকে বলে?
উত্তর – সংকরায়ণ পরীক্ষায় প্রথম অপত্য জনুর প্রজনন (স্বপরাগযোগ বাইতর পরাগযোগ বা নিষেক)-এর ফলে সৃষ্ট নতুন জীবগুলিকে দ্বিতীয় অপত্য জনু বা F2 জনু (F2 = second filial) বলে। উদাহরণ—বিশুদ্ধ বেগুনি (VV) ফুলযুক্ত এবং বিশুদ্ধ সাদা (vv) ফুলযুক্ত জনিতৃ জনুর সংকরায়ণের ফলে প্রাপ্ত F1 জনুর সংকর বেগুনি ফুলযুক্ত (Vv) মটর গাছগুলির স্বপরাগযোগ ঘটানো হয়। এর ফলে উৎপন্ন বেগুনি এবং সাদা ফুলযুক্ত গাছগুলিই হল F2 জনু।
19. প্ৰকট বৈশিষ্ট্য বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – প্রকট বৈশিষ্ট্য : একই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জীবের মিলন ঘটালে প্রথম অপত্য বংশে (F1 জনুতে) যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে।
উদাহরণ : বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের পরনিষেক ঘটালে F1 জনুতে সৃষ্ট সকল গাছ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট হয়, অর্থাৎ বেগুনি ফুল হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি হল প্রকট বৈশিষ্ট্য।
20. প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য : একই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জীবের মিলন ঘটালে প্রথম অপত্য বংশে (F1 জনুতে) যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত না হয়ে সুপ্ত থাকে ও পরে দ্বিতীয় অপত্য বংশে (F2 জনুতে) প্রকাশ পায়, তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে।
উদাহরণ : বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের ফুলের ইতর পরাগযোগ ঘটালে প্রথম অপত্য জনু বা F1 জনুতে সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় অপত্য জনু বা F2 জনুতে যদিও তা আবার প্রকাশ পায়। এই সাদা ফুল বৈশিষ্ট্যটি হল প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।
21. ফিনোটাইপ কী? উদাহরণ দাও।
উত্তর – ফিনোটাইপ: কোনো জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাহ্যিক প্রকাশকে ফিনোটাইপ বলে।
উদাহরণ : মটর গাছের দৈর্ঘ্য চরিত্রটির বাহ্যিক প্রকাশ বা ফিনোটাইপ হল লম্বা ও বেঁটে।
22. জিনোটাইপ কী? উদাহরণ দাও।
উত্তর – জিনোটাইপ : কোনো জীবের একটি চরিত্রের জিনগত গঠনকে অ্যালিল সমন্বয় দ্বারা প্রকাশ করলে, তাকে জিনোটাইপ বলে।
উদাহরণ : মটর গাছের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লম্বা গাছের জিনগত গঠন বা জিনোটাইপ হল TT এবং বিশুদ্ধ খর্ব গাছের জিনোটাইপ হল tt।
23. জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর – জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল—
বিষয় জিনোটাইপ ফিনেটিহিপ
1. প্ৰকৃতি জীবের জিনগত অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য। জীবের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য।
2. নির্ণয়ের পদ্ধতি সংকরায়ণ পরীক্ষা দ্বারা নির্ণয় করা যায়। খালি চোখে দেখে নির্ণয় করা যায়।
3. পারস্পরিক সম্পর্ক জিনোটাইপ এক হলে ফিনোটাইপও একই হতে বাধ্য। ফিনোটাইপ এক হলে জিনোটাইপ এক নাও হতে পারে।
4. বিশুদ্ধ ও সংকর বৈশিষ্ট্যের পৃথক্করণ জিনোটাইপ দেখে উভয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভেদ করা যায়। ফিনোটাইপ দেখে উভয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভেদ করা যায় না।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত হয়, তাকে বলে—
(a) অভিব্যক্তি
(b)বংশগতি
(c) অভিযোজন
(d) জিনোম
উত্তর – (b)বংশগতি
2. ‘জেনেটিকস্’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন –
(a) জোহানসেন
(b) খোরানা
(c) বেটসন
(d) ডারউইন
উত্তর – (c) বেটসন
3. মেন্ডেল যে দেশের মানুষ ছিলেন—
(a) অস্ট্রেলিয়া
(b) ইংল্যান্ড
(c) সুইডেন
(d) অস্ট্রিয়া
উত্তর – (d) অস্ট্রিয়া
4. সুপ্রজননবিদ্যা বা বংশগতির জনক হলেন—
(a) মরগান
(b) বেটসন,
(c) জোহানসেন
(d) মেন্ডেল
উত্তর – (d) মেন্ডেল
5. জীবদেহের প্রধান জেনেটিক পদার্থ হল –
(a) DNA
(b) RNA
(c) উভয়ই
(d) DNA অথবা RNA
উত্তর – (a) DNA
6. বংশগতির একক হল –
(a) ক্রোমোজোম
(b) জিন
(c) DNA
(d) RNA
উত্তর – (b) জিন
7. মেন্ডেল বর্ণিত চরিত্রের জন্য দায়ী ‘ফ্যাক্টর’-কে জিন নামে অভিহিত করেন—
(a) মেন্ডেল
(b) জোহানসেন
(c) বেটসন
(d)মরগান
উত্তর – (b) জোহানসেন
8. এক-একটি প্রজাতির জীবসমষ্টির যত জিন আছে, তাদের সমষ্টিকে বলে—
(a) জিনপুল
(b) জিনোম
(c) অ্যালিল
(d) জাইগোট
উত্তর – (a) জিনপুল
9. জিনের গঠনগত স্থায়ী পরিবর্তনকে বলে—
(a) অ্যালিল
(b) অভিব্যক্তি
(c) অভিযোজন
(d) পরিব্যক্তি
উত্তর – (d) পরিব্যক্তি
10. পরিব্যক্তির ধারণা প্রথম দেন—
(a) মেন্ডেল
(b) ডারউইন
(c) মরগ্যান
(d) দ্য ভিস
উত্তর – (d) দ্য ভিস
11. জিনগত পরিবর্তনে জীবের বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য সৃষ্টির ঘটনাকে বলে—
(a) অভিযোজন
(b) প্রকরণ
(c) বংশগতি
(d) জিন
উত্তর – (b) প্রকরণ
12. মেন্ডেলীয় বংশগতির উদাহরণ হল –
(a) রোলার ও স্বাভাবিক জিভ
(b) মুক্ত ও সংযুক্ত কানের লতি
(c) বাদামি ও নীল মণি
(d) সবকটি
উত্তর – (d) সবকটি
13. মানুষের অটোজোমবাহিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বৈশিষ্ট্য হল—
(a) সংযুক্ত কানের লতি
(b) মুক্ত কানের লতি
(c) হিমোফিলিয়া
(d) বর্ণান্ধতা
উত্তর – (a) সংযুক্ত কানের লতি
14. মানুষের রোলার জিভ যে প্রকার বৈশিষ্ট্য, তা হল —
(a) প্রকট
(b) প্রচ্ছন্ন
(c) অসম্পূর্ণ প্রকট
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) প্রকট
15. একই জিনের বিভিন্ন রূপগুলি হল—
(a) অ্যালিল
(b) লোকাস
(c) জিনপুল
(d) জিনোটাইপ
উত্তর – (a) অ্যালিল
16. ক্রোমোজোমের যে স্থানে জিন অবস্থান করে, তাকে বলে—
(a) লোকাস
(b) ফ্যাক্টর
(c) অ্যালিল
(d) সবগুলি
উত্তর – (a) লোকাস
17. AA × aa হল—
(a) মনোহাইব্রিড ক্রস
(b) ডাইহাইব্রিড ক্রস
(c) টেস্ট ক্রস
(d) ব্যাক ক্রস
উত্তর – (a) মনোহাইব্রিড ক্রস
18. জীবের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্যকে বলে—
(a) জিনোটাইপ
(b) অ্যালিল
(c) জিন
(d) ফিনোটাইপ
উত্তর – (d) ফিনোটাইপ
19. জীবের অ্যালিল তথা জিনগত বৈশিষ্ট্যকে বলে—
(a) অ্যালিলোমক
(b) জিন
(c) জিনোটাইপ
(d) ফিনোটাইপ
উত্তর – (c) জিনোটাইপ

দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও

1. যে পদ্ধতিতে জনিতুর বৈশিষ্ট্য অপত্যে সঞ্চারিত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর – বংশগতি।
2. জেনেটিকস কাকে বলে?
উত্তর – জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জিন ও বংশগতি-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে জেনেটিক্স বা বংশগতিবিদ্যা বা সুপ্রজননবিদ্যা বলে।
3. মেন্ডেল কী কারণে বিখ্যাত?
উত্তর – মেন্ডেল হলেন জেনেটিকস-এর জনক। তিনি ‘পৃথকীভবন সূত্র’ এবং ‘স্বাধীন বিন্যাস সূত্র’ আবিষ্কার করেন।
4. মেন্ডেলকে সুপ্রজননবিদ্যার জনক বলা হয় কেন?
উত্তর – গ্রেগর জোহান মেন্ডেলই সর্বপ্রথম জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বংশগত অনুসরণের প্রাথমিক সূত্র প্রণয়ন করেন। এই কারণে তাঁকে সুপ্রজননবিদ্যার জনক বলা হয়।
5. মেন্ডেলবাদ বা মেন্ডেলিজম কী?
উত্তর – মেন্ডেল আবিষ্কৃত বংশগতি-সংক্রান্ত মৌলিক সূত্র সমন্বিত তত্ত্বকে মেন্ডেলবাদ বা মেন্ডেলিজম বলে।
6. জিন কী?
উত্তর – জিন হল DNA-এর বিশেষ অংশ যা বংশগতির ধারক ও বাহক।
7. জিন কোথায় অবস্থিত?
উত্তর – জিন ক্রোমোজোমে অবস্থিত।
8. ‘জিন’ কথাটি সর্বপ্রথম কে, কত সালে ব্যবহার করেন?
উত্তর – ‘জিন’ কথাটি সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী জোহানসেন, 1909 সালে ব্যবহার করেন।
9. জীবদেহের প্রধান জেনেটিক পদার্থ কী?
উত্তর – DNA বা ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
10. মানুষের দুটি প্রকরণের উদাহরণ দাও।
অথবা, মানুষের মধ্যে বংশানুক্রমে সঞ্চারিত একটি প্রকরণের উদাহরণ দাও।
উত্তর – মুক্ত ও যুক্ত কানের লতি, রোলার ও স্বাভাবিক বা নন্-রোলার জিভ।
11. গিনিপিগের একটি চরিত্র ও তাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – গিনিপিগের একটি চরিত্র হল লোমের বর্ণ ও তাদের বৈশিষ্ট্য হল কালো ও সাদা।
12. কোনো হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের একটি লোকাসে অবস্থিত জিনের রূপভেদগুলিকে কী বলে?
উত্তর – অ্যালিল।
13. লোকাস কাকে বলে?
উত্তর – ক্রোমোজোমের যে নির্দিষ্ট স্থানে জিন অবস্থিত, তাকে লোকাস বলে।
14. দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সংকরায়ণ পদ্ধতিকে কী বলা হয়?
উত্তর – একসংকর জনন।
15. বংশগতিতে ‘Tt’ থেকে তুমি কী বোঝ ?
উত্তর – বংশগতিতে ‘Tt’ দ্বারা একটি সংকর জীবের জিনোটাইপকে বোঝায়, যেখানে ‘T’ একটি প্রকট অ্যালিল এবং ‘t’ একটি প্রচ্ছন্ন অ্যালিলকে নির্দেশ করে।
16. সংকরায়ণের সময়ে নির্বাচিত বিশুদ্ধ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব দুটিকে কী বলে?
উত্তর – জনিতৃ জনু।
17. মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় প্রথম অপত্য জনু (F1 জনু)-তে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর – প্রকট বৈশিষ্ট্য।
18. মটর গাছের ফুলের রঙের প্রকট বৈশিষ্ট্য কোনটি?
উত্তর – বেগুনি রং।
19. মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় F1 জনুতে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় না, তাকে কী বলে?
উত্তর – প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।
20. সংকরায়ণ পরীক্ষায় অপত্য জনুর বাহ্যিক লক্ষণের অনুপাতকে কী বলে?
উত্তর – ফিনোটাইপিক অনুপাত।
21. সংকরায়ণ পরীক্ষায় অপত্য জনুর জিনগত লক্ষণের অনুপাতকে কী বলে ?
উত্তর – জিনোটাইপিক অনুপাত।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. বংশগতির গঠনগত ও কার্যগত একক হল …………।
উত্তর – জিন
2. ক্রোমোজোম বা জিনের সংখ্যা অথবা গঠনের স্থায়ী পরিবর্তনকে ………. বলে।
উত্তর – পরিব্যক্তি / মিউটেশন
3. পরিব্যক্তি বা মিউটেশনের ফলে ……….. সৃষ্টি হয়।
উত্তর – প্রকরণ
4. একজোড়া ………. জিন মুক্ত কানের লতি সৃষ্টি করে।
উত্তর – প্রকট
5. জিভ রোল করার ক্ষমতাসম্পন্ন জিনটি ……… প্রকৃতির।
উত্তর – অটোজোমীয় প্রকট
6. একই জিনের বিভিন্ন রূপকে ………. বলে।
উত্তর – অ্যালিল
7. মেন্ডেল বর্ণিত ……….. পরবর্তীকালে জিন হিসেবে শনাক্ত হয়।
উত্তর – ফ্যাক্টর
8. একটি চরিত্রের সাপেক্ষে জীবের সংকরায়ণকে ……….. বলে।
উত্তর – একসংকরায়ণ
9. হেটেরোজাইগাস জীবে ………. বৈশিষ্ট্যটি সর্বদা অপ্রকাশিত থাকে।
উত্তর – প্রচ্ছন্ন
10. পৃথক অ্যালিলযুক্ত গ্যামেটের মিলনে উৎপন্ন জাইগোটকে ………… বলে।
উত্তর – হেটেরোজাইগোট
11. পিতামাতার যে বৈশিষ্ট্যটি অপত্যে প্রকাশিত হয়, তাকে ………. বৈশিষ্ট্য বলে।
উত্তর – প্রকট
12. পিতামাতার যে বৈশিষ্ট্যটি অপত্যে অপ্রকাশিত থাকে, তাকে ……….. বৈশিষ্ট্য বলে।
উত্তর – প্রচ্ছন্ন
13. প্রকট ও প্রচ্ছন্ন উভয় অ্যালিলযুক্ত জীবকে ………. জীব বলে।
উত্তর – সংকর
14. Bb বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবটিকে বলে ………… জীব।
উত্তর – সংকর
15. ………. অবস্থায় জীবদেহে প্রকট বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
উত্তর – হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস

SUB-TOPIC 1.2 মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ, মেন্ডেলের সাফল্যের কারণ, মেন্ডেলের নির্বাচিত মটর গাছের বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য, মেন্ডেলের পরীক্ষা, সূত্র এবং সূত্রের বিচ্যুতি

বিষয়সংক্ষেপ

  • মেন্ডেল দুটি বিপরীত প্রলক্ষণবিশিষ্ট মটর গাছের মধ্যে (যেমন—লম্বা ও বেঁটে) ইতর পরাগযোগ ঘটান ও অপত্য মটর গাছের বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশ লক্ষ করেন।
  • মেন্ডেল সাতজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নিয়ে সংকরায়ণের পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন করেন। এগুলি হল—গাছের দৈর্ঘ্য (লম্বা-বেঁটে), কাণ্ডে ফুল-ফলের অবস্থান (কাক্ষিক-শীর্ষস্থ), ফলের আকৃতি (স্ফীত-খাঁজযুক্ত), ফলের রং (সবুজ-হলদে), ফুলের রং (বেগুনি-সাদা), বীজের আকৃতি (গোল-কুঞ্চিত), বীজত্বকের রং (হলদে-সবুজ)।
  • মেন্ডেল বৈজ্ঞানিক উপায়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছিলেন। তিনি একইসঙ্গে কেবল এক বা দুই জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য নিয়ে এক একটি সংকরায়ণ পরীক্ষা করেন। এজন্য তাঁর সাফল্য লাভ সহজ হয়েছিল।
  • একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেন্ডেল যে সংকরায়ণের পরীক্ষা করেন তাকে এক সংকরায়ণ বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে। এই পরীক্ষা থেকে তিনি পৃথকীভবন সূত্র প্রণয়ন করেন, যা মেন্ডেলের প্রথম সূত্র নামে পরিচিত। এই সূত্র অনুযায়ী কোনো জীবের একজোড়া ভিন্ন বৈশিষ্ট্য তার পরবর্তী জনুতে মিশে না গিয়ে আলাদাভাবে অবস্থান করে এবং জনন কোশ গঠনকালে তারা আবার পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায়।
  • মেন্ডেলের লম্বা-বেঁটে মটর গাছের ক্ষেত্র ছাড়াও গিনিপিগের সাদা-কালো গাত্রবর্ণের জন্য একসংকর জনন পরীক্ষায় একই ফল লক্ষ করা যায়।
  • মটর গাছের দুই জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য নিয়ে মেন্ডেল যে সংকরায়ণ পরীক্ষানিরীক্ষা করেন তাকে দ্বিসংকরায়ণ বা ডাইহাইব্রিড ক্রস বলে। হলদে-গোল বীজ ও সবুজ-কুঞ্চিত বীজযুক্ত মটর গাছের মধ্যে ক্রসের বিশ্লেষণ করে তিনি যে সূত্র প্রণয়ন করেন তা স্বাধীন বিন্যাসের সূত্র বা মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্র নামে খ্যাত।
  • মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী, কোনো জীবের গ্যামেট উৎপাদনের সময় একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য অন্য জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য অ্যালিলের থেকে স্বাধীনভাবে বংশানুসৃত হয়।
  • গিনিপিগের ক্ষেত্রে কালো-খর্ব লোম ও সাদা-দীর্ঘ লোমযুক্ত গিনিপিগ দুটির মধ্যে ক্রসটি একটি দ্বিসংকর জননের উদাহরণ। কালো-মসৃণ লোম × সাদা কর্কশ লোমযুক্ত গিনিপিগের মধ্যে ক্রসটিও একইরকম আরেকটি ব্রুস।
  • মেন্ডেলের একসংকর জননের জিনোটাইপিক অনুপাত 1:2:1 ও ফিনোটাইপিক অনুপাত 3 : 1 । পক্ষান্তরে মেন্ডেলের দ্বিসংকর জননের ক্ষেত্রে জিনোটাইপিক অনুপাত হল 1: 2: 2: 4:1: 2:1: 2:1 এবং ফিনোটাইপিক অনুপাত 9: 3:3 : 1 |
  • মেন্ডেলের সূত্র সর্বজনীন নয়। অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে এই সূত্রের বিচ্যুতি দেখা যায়। সন্ধ্যামালতীর ক্ষেত্রে লাল ও সাদা ফুলের উদ্ভিদদের ক্রসে F1 জনুতে গোলাপি ফুল সৃষ্টি হয়। অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে জিনোটাইপিক ও ফিনোটাইপিক অনুপাত উভয়েই 1:2:1 হয়।

বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

1. মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করো।
উত্তর – মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ: বংশগতি-সংক্রান্ত সংকরায়ণ পরীক্ষায় মেন্ডেল মটর গাছ (Pisum sativum) নিয়ে কাজ করেন। তিনি মটর গাছের সাত জোড়া চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বেছে নেন যেগুলি খালি চোখে স্পষ্টভাবে পার্থক্যযোগ্য। সংকরায়ণের সময়ে তিনি পরপর কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি ঘটান। এই সকল ধাপগুলি হল—
  1. মেন্ডেল ইতর পরাগযোগের সময়ে বেগুনি ফুলযুক্ত একটি মটর গাছের সব বেগুনি ফুলের পুংকেশর (পরাগরেণু পরিণত হওয়ার আগেই) কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। ফলে সেই ফুলগুলিতে স্বপরাগযোগ সম্ভব হয় না।
  2. এরপর বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত, অর্থাৎ সাদা ফুলযুক্ত একটি মটর গাছের ফুল থেকে পরাগরেণু তুলির সাহায্যে তুলে এনে বেগুনি ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করেন।
  3. আবার, একইভাবে তিনি একটি মটর গাছের সব সাদা ফুলের পুংকেশর বাদ দেন ও বেগুনি ফুলের পরাগরেণু নিয়ে পুংকেশরহীন সাদা ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করেন। এইপ্রকার পারস্পরিক ইতর পরাগযোগকে রেসিপ্রোকাল ক্রস বলা হয়।
  4. এই রেসিপ্রোকাল ক্রসের ফলে উৎপন্ন মটরগুলি চাষ করে তিনি F1 জনুতে সব বেগুনি ফুলযুক্ত মটর গাছ পান।
  5. মেন্ডেল F1 জনুতে প্রাপ্ত অপত্য সংকর উদ্ভিদগুলির মধ্যে স্বপরাগযোগ হতে দেন। এইভাবে, তিনি পরবর্তী জনুর অপত্য উদ্ভিদ লাভ করেন।
  6. উৎপন্ন সমস্ত মটর গাছের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তিনি লিপিবদ্ধ করেন ও সংখ্যাতত্ত্বের সম্ভাবনা সূত্র দ্বারা তাঁর পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করেন।
  7. একইভাবে তিনি ভিন্ন ভিন্ন বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে মটর গাছের ওপর সংকরায়ণ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
2. মেন্ডেলের মটর গাছ নির্বাচনের কারণগুলি লেখো।
অথবা, সংকরায়ণের পরীক্ষার জন্য মেন্ডেল কর্তৃক মটর গাছ নির্বাচনের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – সংকরায়ণ পরীক্ষায় মেন্ডেল কর্তৃক মটর গাছ নির্বাচনের কারণ
  1. সংক্ষিপ্ত জীবনচক্র: মটর গাছ একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। তাই স্বল্প সময়ে একাধিক জনু ধরে বংশগতির পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো সম্ভব।
  2. চাষযোগ্যতা: মটর গাছ স্বল্প জয়গাতেই কম খরচে চাষ করা যেতে পারে।
  3. উভলিঙ্গ ও স্বপরাগী উদ্ভিদ: মটর গাছের ফুলগুলি উভলিঙ্গ হওয়ায় এবং পাপড়ি দ্বারা স্ত্রী ও পুংস্তবক ঢাকা থাকায় প্রাকৃতিকভাবে এতে স্বপরাগযোগ ঘটে। তাই সহজেই বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ পাওয়া সম্ভব হয়।
  4. ইতর পরাগযোগে সক্ষম: মটর গাছের ফুলগুলি উভলিঙ্গ হওয়ায় এবং আকারে বড়ো হওয়ায় প্রয়োজনে সহজেই কৃত্রিমভাবে ইতর পরাগযোগ সম্পন্ন করা যায়।
  5. সংকর উদ্ভিদের প্রকৃতি: ইতর পরাগযোগে উৎপন্ন সংকর অপত্য উদ্ভিদগুলি প্রজননক্ষম হয়। সে কারণে সহজেই একাধিক জনু ধরে অপত্য সৃষ্টি এবং অপত্য জনুগুলিতে বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়।
  6. একাধিক ভেদ বা প্রকরণ : মটর গাছে অনেকগুলি সুস্পষ্ট বিপরীতধর্মী ভেদ বা প্রকরণের সমাবেশের কারণে বিভিন্ন প্রকারভেদ দেখা যায়।
  7. উৎপাদনশীলতা: গাছ প্রতি মটর বীজ উৎপাদন সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। হওয়ায় পরীক্ষার ফল বিচারে ভুলের সম্ভাবনা কমে। মটর গাছ বংশ পরম্পরায় নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে খাঁটি অপত্য উদ্ভিদ উৎপাদন করতে পারে।
3. মেন্ডেলের বংশগতিসংক্রান্ত পরীক্ষায় সাফল্যলাভের কারণ লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, “বংশগতির বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে তুলতে মেন্ডেলের মটর গাছ সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলি যুগান্তকারী”—এই পরীক্ষাগুলিতে তাঁর সাফল্যলাভের তিনটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর – সংকরায়ণ পরীক্ষায় মেন্ডেলের লাফল্য লাভের কারণ
  1. মটর গাছ নির্বাচন: মেন্ডেল তাঁর বংশগতি পরীক্ষার জন্য মটর গাছ নির্বাচন করেন। মটর গাছ সহজে চাষ করা যায়। এটি স্বপ্রজননক্ষম ও অনেকগুলি বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় মেন্ডেলের সংকরায়ণ পরীক্ষা করতে সুবিধা হয়েছিল।
  2. বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্বাচন: মেন্ডেল তাঁর সংকরায়ণ পরীক্ষার জন্য যে সকল বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়েছিলেন, সেগুলি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। ফলে তিনি সৃষ্ট অপত্যগুলির সহজেই শনাক্তকরণ ও শ্রেণিভুক্তকরণ করতে পেরেছিলেন এবং সঠিক অনুপাত নির্ধারণ করতে পেরেছিলেন।
  3. দক্ষতা: মেন্ডেল সংকরায়ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মটর গাছের মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটিয়ে ছিলেন।
  4. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ: মেন্ডেল একসঙ্গে এক বা দু-জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সংকরায়ণ পরীক্ষা করেন। এর ফলে তথ্যসংগ্রহ ও বিশ্লেষণে সুবিধা হয়েছিল। এছাড়া ওই একজোড়া বা দু-জোড়া বৈশিষ্ট্য নিয়ে উদ্ভিদগুলির মধ্যে রেসিপ্রোকাল ব্রুস সম্পন্ন করেন ও তাদের পর্যবেক্ষণ করেন।
  5. গাণিতিক বিশ্লেষণ: মেন্ডেল সমস্ত পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন এবং সংখ্যাতত্ত্বের সাহায্যে নির্ভুলভাবে তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
4. মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য কী কী?
অংশ প্রশ্ন, মেন্ডেল মটর গাছের ফুলের যে যে চরিত্রগুলি নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন তাদের প্রত্যেকটির বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য: মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছের যে সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করেছিলেন তা নীচে সারণির আকারে দেখানো হল।

5. মেডেলের একসংকর জনন পরীক্ষাটি চেকার বোর্ডের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো ও এই পরীক্ষা থেকে তুমি কী সিদ্ধান্ত নিতে পারো?

অথবা, মেডেলের একসংকর জনন পরীক্ষাটি চেকার বোর্ডের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো এবং এই পরীক্ষা থেকে মেডেল যে সূত্র প্রণয়ন করেন তা লেখো।
উত্তর – মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষা: এক জোড়া বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত দুটি একই প্রজাতির জীবের মধ্যে সংকারায়ণ ঘটানো হলে তাকে একসংকর জনন বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে। মটর গাছের ওপর মেডেলকৃত একসংকর জননের পরীক্ষাটি নীচে বর্ণনা করা হল।
মেন্ডেল নির্বাচিত মটরগাছের বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য: বিশুখ লম্বা মটর গাছ (প্রকট) এবং বিশুদ্ধ খর্ব বা বেঁটে মটর গাছ (প্রচ্ছন্ন)।
পরীক্ষা পদ্ধতি: (1) একটি বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছ ও একটি বিশুদ্ধ খর্ব মটরগাছের মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটানো হয়। এদের ‘জনিতৃ জনু’ বা ‘P জনু’ বলা হয়। (2) নিষেকের পর যে বীজ তৈরি হয় তা থেকে শুধুমাত্র লম্বা ফিনোটাইপের মটর গাছ তৈরি হয়। নতুন এই উদ্ভিদগুলি সংকর (Tt) প্রকৃতির হয়। এই জনুকে F1 জনু বা প্রথম অপত্য জনু বলে। (3) F1 জনুর লম্বা যে-কোনো দুটি মটরগাছের মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটালে যে নতুন উদ্ভিদ তৈরি হয়, মেন্ডেল তাদের দ্বিতীয় অপত্য জনু বা `F2 জনু’ বলে অভিহিত করেন।
পর্যবেক্ষণ: দ্বিতীয় অপত্য জনুর 3 ভাগ উদ্ভিদ (75%) লম্বা এবং 1 ভাগ উদ্ভিদ বেঁটে (25%) প্রকৃতির হয়।
ব্যাখ্যা: F1 জনুর সবগুলি উদ্ভিদের ফিনোটাইপ লম্বা হলেও তাদের জিনোটাইপ সংকর প্রকৃতির হয় (Tt)। অর্থাৎ, দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফ্যাক্টর তাতে একত্রিত হয়। F1 জনুতে গ্যামেট গঠনের সময় T ও t ফ্যাক্টর দুটি আলাদা হয়ে যায়। F1 উদ্ভিদের স্বপরাগযোগ ফলে এক ভাগ বিশুদ্ধ লম্বা (TT), দুই ভাগ সংকর লম্বা (Tt) এবং এক ভাগ বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) মটর উদ্ভিদ তৈরি হয়। অর্থাৎ, F2 জনুতে উৎপন্ন মটর গাছগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত (লম্বা : খৰ্ব/বেঁটে) = 3:1। F2 জনুতে উৎপন্ন মটর গাছগুলির জিনোটাইপিক অনুপাত (TT : Tt : tt) = 1:2:1 |
F2 জনুতে প্রাপ্ত মটর গাছের বৈশিষ্ট্য
সিদ্ধান্ত: একসংকর জননের পরীক্ষা দ্বারা মেন্ডেল প্রমাণ করেন যে, জনিতৃ মটর উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য F1 জনুতে সঞ্চারিত হলেও তারা মিশে যায় না। F1 জনুতে গ্যামেট তৈরির সময় তারা পৃথক হয়ে যায়। এরভিত্তিতে মেন্ডেল এক সংকর জনন পরীক্ষা থেকে পৃথকীভবন সূত্রটি প্রণয়ন করেন। এটি মেন্ডেলের প্রথম সূত্র নামেও পরিচিত। সূত্রটি নিম্নরূপ।
পৃথকীভবন সূত্র: কোনো জীবের নির্দিষ্ট একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি জনিতৃ থেকে অপত্যে সঞ্চারিত হলেও তারা পরস্পর মিশে যায় না, বরং অপত্যের গ্যামেট তৈরির সময়ে তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়।
6. মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষায় প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য এবং ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা: মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় প্রথম অপত্য জনুতে (F1) সমস্ত গাছ লম্বা (সংকর লম্বা—Tt) হয়। মেন্ডেল, মটর গাছে প্রকাশিত লম্বা বৈশিষ্ট্যের নাম দেন প্রকট বৈশিষ্ট্য। পক্ষান্তরে, মটর গাছে প্রথম অপত্য জনুতে অপ্রকাশিত বেঁটে বৈশিষ্টের নাম দেন প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।
ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ ব্যাখ্যা: মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষায় দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F2) দুধরনের গাছ দেখতে পান। এদের ক্ষেত্রে লম্বা ও বেঁটে মটর গাছের অনুপাত = 3 : 1। আবার, এই লম্বা মটর গাছগুলির জিনোটাইপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এদের এক ভাগ বিশুদ্ধ লম্বা এবং দু-ভাগ সংকর লম্বা মটর গাছ। সেক্ষেত্রে ফিনোটাইপিক, অর্থাৎ মটর গাছের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্যের অনুপাত = 3:1 [অর্থাৎ 3 ভাগ লম্বা (TTও Tt) এবং 1 ভাগ বেঁটে (tt)] এবং জিনোটাইপিক, অর্থাৎ জিনঘটিত বৈশিষ্ট্যের অনুপাত = 1: 2:1 [অর্থাৎ, একভাগ বিশুদ্ধ লম্বা (TT), দু-ভাগ সংকর লম্বা (Tt) এবং একভাগ বিশুদ্ধ বেঁটে (tt)]।
7. বিশুদ্ধ বেগুনি ফুল (প্রকট) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল (প্রচ্ছন্ন) ধারণকারী দুটি মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে F2 জনুতে বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদের অনুপাত কী হবে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ব্যাখ্যা: ধরা যাক, বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলযুক্ত (প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গাছের জিনোটাইপ = VV এবং বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন) গাছের জিনোটাইপ = vv |
এদের মধ্যে ইতর পরাগযোগের মাধ্যমে সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে (F1) যে গাছ জন্মাবে তার সবকটিই বেগুনি ফুল উৎপাদন করবে। কারণ, বেগুনি ফুল প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এবার এই F1 জনুতে উৎপন্ন গাছের মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটালে F2 জনুতে ফিনোটাইপ হিসেবে তিন ভাগ বেগুনি ফুলযুক্ত গাছ এবং এক ভাগ সাদা ফুলযুক্ত গাছ জন্মাবে। উপরোক্ত তিন ভাগ বেগুনি ফুলগাছের ভিতর জিনোটাইপ হিসেবে এক ভাগ বিশুদ্ধ বেগুনি এবং দু-ভাগ সংকর বেগুনি ফুল ধারণকারী উদ্ভিদ জন্মাবে। সুতরাং, এই পরীক্ষায় দেখা যায়, F2 জনুতে এক ভাগ (25%) বিশুদ্ধ বেগুনি দু-ভাগ (50%) সংকর বেগুনি এবং এক ভাগ (25%) বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদ জন্মাবে। ক্রস ও চেকার বোর্ডের সাহায্যে উক্ত পরীক্ষাটি নীচে দেখানো হল।
সুতরাং, বিশুদ্ধ বেগুনি, সংকর বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের অনুপাত = 1:2:1(জিনোটাইপিক)। এবং বেগুনি ও সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের অনুপাত = 3 : 1 (ফিনোটাইপিক)। অর্থাৎ, বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল ধারণকারী উদ্ভিদের অনুপাত = 1:1|

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

1. নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণ উল্লেখ করো।
(1) বীজের আকৃতি, (2) ফুলের অবস্থান, (3) বীজপত্রের বর্ণ, (4) কাণ্ডের দৈর্ঘ্য।
অনুরূপ প্রশ্ন, মটর গাছের ক্ষেত্রে পৃথকীভবন সূত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তোমাকে বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করতে বলা হল। এরকম বিপরীতগুণসহ দুটি বৈশিষ্ট্যের নাম লেখো।
উত্তর – মটর গাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণ—
2. রেসিপ্রোকাল ক্রস কাকে বলে ?
উত্তর – মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষায় দুটি মটর গাছের ইতর পরাগযোগের সময় একটি মটর গাছের ফুলের (ধরা যাক, সাদা) পুংকেশর অপসারণ করে অন্য মটর গাছের ফুলের (বেগুনি) পুংকেশর তাতে স্থাপন করেন। একইভাবে দ্বিতীয় মটর গাছটির (বেগুনি ফুল) পুংকেশর অপসারণ করে প্রথম মটর গাছটির (সাদা ফুল) পুংকেশর তাতে স্থাপন করেন। এই পারস্পরিক ইতর পরাগযোগকে রেসিপ্রোকাল ক্রস বলে।
3. সংকরায়ণের পরীক্ষায় কীভাবে প্রকট গুণ প্রকাশিত হয় তা উদাহরণের সাহায্যে লেখো।
উত্তর – মেন্ডেলের এক সংকর জননের পরীক্ষা থেকে দ্যাখানো হল কীভাবে প্রকট গুণ প্রকাশিত হয়।
সংকরায়ণে F1 জনুর উদ্ভিদে T ও t উভয় অ্যালিল উপস্থিত থাকলেও, T,t-র ওপর প্রকট হওয়ায় F1 জনুর সকল উদ্ভিদ লম্বা হয় অর্থাৎ, F1 জনুতে শুধু প্রকট গুণ প্রকাশিত হয়। এটি মেন্ডেলের প্রকটতার সূত্রকে সমর্থন করে।
4. মেন্ডেল তাঁর একসংকর জনন পরীক্ষায় F1 জনুতে সকল উদ্ভিদ লম্বা হওয়ার ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?
উত্তর – একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের মিলনের ফলে প্রথম অপত্য জনুতে (Fজনুতে) প্রকট বৈশিষ্ট্যটি প্রাধান্য লাভ করে এবং কেবল সেই বৈশিষ্ট্যটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, মটর গাছের লম্বা হওয়ার বৈশিষ্ট্যটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অর্থাৎ, এটি প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। অপরদিকে, বেঁটে বৈশিষ্ট্যটির কোনো প্রকার বহিঃপ্রকাশ এখানে নেই। সুতরাং, বেঁটে গাছ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এই সিদ্ধান্তটিকেই প্রকটতার সূত্র (law of dominance) বলে।
5. “বেঁটে মটর গাছগুলি সবসময় খাঁটি”—উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর – মটর গাছের বেঁটে বৈশিষ্ট্যের অ্যালিলটি একটি প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য (t)। তাই ওই অ্যালিলটি একজোড়ারূপে অর্থাৎ হোমোজাইগাস (tt) অবস্থায় থাকলে তবেই বেঁটে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ হতে পারে। অর্থাৎ, বেঁটে মটর গাছ সর্বদাই খাঁটি।
6. একটি দীর্ঘ ও একটি খর্ব মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ দ্বারা মেন্ডেল কী সূত্রে উপনীত হন?
উত্তর – একটি দীর্ঘ ও একটি খর্ব মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ প্রকৃতপক্ষে একসংকর জনন পরীক্ষা, যার দ্বারা মেন্ডেল পৃথকীভবন সূত্র-তে উপনীত হন। এই সূত্রানুসারে পিতামাতার জনন-মাতৃকোশে অবস্থিত বিপরীতধর্মী গুণাবলি প্রথম অপত্য জনুতে (F1) সঞ্চারিত হলেও তাদের মধ্যে কোনো মিশ্রণ ঘটে না। এরপর অপত্য জনু যখন গ্যামেট উৎপাদন করে তখন এই বিপরীতধর্মী গুণাবলি পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে যায়। এটিই মেন্ডেলের প্রথম সূত্র।
7. মেন্ডেলের বংশগতির প্রথম সূত্রটি কী?
অথবা, মেন্ডেলের পৃথকীভবনের সূত্রটি বিবৃত করো।
উত্তর – কোনো জীবের নির্দিষ্ট একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি জনিতৃ থেকে অপত্যে সঞ্চারিত হলেও তারা পরস্পর মিশে যায় না বরং অপত্যের গ্যামেট তৈরির সময়ে তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়। এটিই মেন্ডেলের বংশগতির প্রথম সূত্র বা পৃথকীভবন সূত্র হিসেবে পরিচিত।
8. বিশুদ্ধ সবুজ (GG) বর্ণের ফলযুক্ত মটর গাছের সঙ্গে বিশুদ্ধ হলদে (gg) ফলযুক্ত মটর গাছের সংকরায়ণ করা হল। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলি নির্ণয় করো (G প্রকট, g প্রচ্ছন্ন)। (1) হোমোজাইগাস প্রচ্ছন্ন উদ্ভিদ, (2) F1 জনুর ফিনোটাইপ, (3) F1 জনুর উৎপাদিত গ্যামেট, (4) হেটেরোজাইগাস জীব। 
উত্তর –
  1. হোমোজাইগাস প্রচ্ছন্ন উদ্ভিদ—বিশুদ্ধ হলদে ফলযুক্ত উদ্ভিদ (gg)। F2 জনুর 25% অপত্য এইরূপ হবে।
  2. F1 জনুর ফিনোটাইপ—সবুজ বর্ণের ফল (F1 জনুর অপত্য হবে হেটেরোজাইগাস এবং জিনোটাইপ হবে Gg)।
  3. F1 জনুর গ্যামেট—হেটেরোজাইগাস অপত্যগুলি থেকে G এবং g প্রকৃতির গ্যামেট উৎপন্ন হবে।
  4. হেটেরোজাইগাস জীব—প্রকট (G) ও প্রচ্ছন্ন (g) উভয় জিন থাকায় জিনোটাইপ হবে Gg এবং ফিনোটাইপ হবে সবুজ বর্ণের ফল।
9. বংশগতির পরীক্ষায় জনিতৃ জনুতে কালো লোম ও সাদা লোমযুক্ত গিনিপিগের মধ্যে মিলনে F1 জনুতে কী প্রকার গিনিপিগ উৎপন্ন হবে?
উত্তর – বংশগতির পরীক্ষায় জনিতৃ জনুতে কালো লোম ও সাদা লোমযুক্ত গিনিপিগ নিয়ে পরীক্ষা করলে F1 জনুতে সকল অপত্যই কালো লোমযুক্ত হয়। লোমের কালো রঙের নিয়ন্ত্রক জিনটি লোমের সাদা রং নিয়ন্ত্রক জিনকে F1 জনুতে প্রভাবিত করে ও সুপ্ত রাখে, তাকে প্রকাশিত হতে দেয় না।
10. মেন্ডেলের একসংকর জননে 3 : 1 অনুপাত বলতে কী বোঝো?
উত্তর – মেন্ডেল তাঁর একসংকর জনন পরীক্ষায় একটি বিশুদ্ধ লম্বা ও একটি বিশুদ্ধ বেঁটে মটরগাছের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটান। F2 জনুতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে সকল অপত্যের তিন ভাগ লম্বা বৈশিষ্ট্যযুক্ত ও এক ভাগ বেঁটে বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, অপত্যগুলির মধ্যে এই দুই ফিনোটাইপের অনুপাত হয়, লম্বা : বেঁটে = 3:1। সুতরাং 3:1 বলতে একসংকর জনন পরীক্ষায় F2 জনুতে প্রাপ্ত অপত্যের ফিনোটাইপিক অনুপাত বোঝানো হয়।
11. পৃথকীভবন সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি চিহ্নিত করো।
উত্তর – পৃথকীভবন সূত্রের সীমাবদ্ধতাটি হল— (1) একটি বৈশিষ্ট্য যখন একাধিক জিন জোড়া নিয়ন্ত্রণ করে তখন পৃথকীভবন ঘটলেও একসংকর জননের সূত্রের অনুপাত অনুযায়ী তা নাও হতে পারে। (2) অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে পৃথকীভবন ঘটলেও জিনের চরিত্র মেন্ডেলের চরিত্র থেকে আলাদা হওয়ায় একসংকর জননের অনুপাতে অপত্য পাওয়া যায় না।
12. চেকার বোর্ড বলতে কী বোঝ ? এর অপর নাম কী ?
উত্তর – চেকার বোর্ড: যে-কোনো ধরনের ক্রস লিখে প্রকাশ করার সবচেয়ে প্রচলিত, সুবিধাজনক, বিজ্ঞানসম্মত ও নিয়মনিষ্ঠ পদ্ধতিকে চেকার বোর্ড বলা হয় ।
অপর নাম: বিজ্ঞানী রেজিনাল্ড ক্রামডাল পানেট এই পদ্ধতিটি প্রবর্তন করেন বলে একে পানেট স্কোয়ার বা পানেট বর্গও বলা হয়। এক্ষেত্রে, একটি বক্সের মাধ্যমে সমস্ত ধরনের গ্যামেটের সকলপ্রকার সমন্বয় প্রকাশ করা যায়।
13. ব্যাক ক্রস (back cross) কী ?
উত্তর – প্রথম অপত্য জনুর (F1 জনু) সংকর জীবের সঙ্গে যে-কোনো জনিতৃ জীবের (P জনু) সংকরায়ণ ঘটানোর পরীক্ষাকে ব্যাক ক্রস বলে। যেমন—সংকর লম্বা মটর উদ্ভিদের সঙ্গে বিশুদ্ধ লম্বা বা বিশুদ্ধ বেঁটে মটর উদ্ভিদের সংকরায়ণ (Tt × TT বা Tt × tt) ।
14. টেস্ট ব্রুস (test cross) কী ? এর প্রয়োজনীয়তা কী? 
উত্তর – টেস্ট ব্রুস: প্রথম অপত্য জনুর (F1 জনু) সংকর জীবের সঙ্গে বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন জিনোটাইপযুক্ত জনিতৃ জীবের (Pজনু) সংকরায়ণ ঘটানোর পরীক্ষাকে টেস্ট ক্রস বলে। যেমন—মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষায় F1 -এ প্রাপ্ত সংকর লম্বা মটর উদ্ভিদের সঙ্গে বিশুদ্ধ বেঁটে মটর উদ্ভিদের সংকরায়ণ (Tt × tt)।
প্রয়োজনীয়তা: কোনো বিশেষ অপত্য জীবের জিনোটাইপ নির্ণয় করার উদ্দেশ্যে এই টেস্ট ক্রস করা হয়ে থাকে।
15. ‘টেস্ট ক্রস একপ্রকার ব্যাক ক্রস’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – প্রথম অপত্য জনুর জীবের সঙ্গে যে-কোনো একটি জনিতৃ জীবের ক্রস করানো হলে, তাকে ব্যাক ক্রস বলে। যেমন—মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংকর লম্বা গাছের সাথে বিশুদ্ধ লম্বা অথবা বিশুদ্ধ বেঁটে গাছের সংকরায়ণ (Tt × TT বা Tt × tt)। ব্যাক ক্রসে যখন প্রচ্ছন্ন জীব ব্যবহৃত হয় কেবল তখন সেই ক্রসকে বলে টেস্ট ক্রস। এক্ষেত্রে সংকর লম্বা গাছের সাথে বিশুদ্ধ বেঁটে গাছের সংকরায়ণ (Tt × tt) ঘটে। তাই বলা যায় যে, টেস্ট ক্রস প্রকৃতপক্ষে হল একপ্রকার ব্যাক ক্রস।
16. দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় F1 জনুতে উৎপন্ন সংকর উদ্ভিদ YyRr থেকে সকল সম্ভাব্য গ্যামেটগুলি কী কী হতে পারে?
উত্তর – YyRr জিনোটাইপবিশিষ্ট একটি গোল-হলদে বীজের মটর গাছ থেকে F1 জনুতে মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ফলে YR, yR, Yr, yr — এই চার প্রকারের গ্যামেট উৎপন্ন হতে পারে।
17. মটর গাছের বীজের বর্ণ ও বীজের আকার—এই বৈশিষ্ট্য দুটি নিয়ে মেন্ডেল দ্বিসংকর ‘জননের পরীক্ষা করেছিলেন। এই পরীক্ষায় F2 জনুতে যে কটি হলদে ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়, তাদের জিনোটাইপগুলি লেখো।
উত্তর – হলদে ও গোলাকার বীজের জিনোটাইপগুলি হল—YYRR, YYRr, YyRR, YyRr |
18. মটর গাছের ওপর কাণ্ডের দৈর্ঘ্য ও বীজের আকার এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে সম্পাদিত দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় F2 জনুতে নয়টি দীর্ঘ ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়। এদের কী কী জিনোটাইপ থাকতে পারে?
উত্তর – মটর গাছের কাণ্ডের দৈর্ঘ্য লম্বা (T) প্রকট ও বেঁটে (t) প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে বীজের গোল আকৃতি (R) প্রকট ও কুতি আকৃতি (r) প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য। তাই F2 জনুতে উৎপন্ন নয়টি দীর্ঘ ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছের জিনোটাইপ হতে পারে—TTRR, TTRr, TtRR, TRr |
19. F1 জনুতে উৎপন্ন একটি গোল-হলদে মটর বীজযুক্ত গাছের জিনোটাইপ কী কী হতে পারে?
উত্তর – ধরা যাক, গোল প্রকট বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল R, কুঞ্চিত প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল r। মটর বীজটির হলদে (প্রকট) বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল Y, মটর বীজটির সবুজ (প্রচ্ছন্ন) বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল y। সুতরাং, F1 জনুতে উৎপন্ন গোল, হলদে মটর বীজযুক্ত গাছটির জিনোটাইপ হতে পারে YYRR, YyRR, YYRr ও YyRr |
20. দ্বিসংকর পরীক্ষার F2 জনুতে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণাবলির বিভিন্ন সমন্বয়ের ঘটনাকে মেন্ডেল কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?
উত্তর – দ্বিসংকর পরীক্ষার F2 জনুতে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের (যেমন—বীজের আকার ও বীজপত্রের রং) প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণাবলি সম্ভাব্য সকল সমন্বয়ে বিন্যস্ত হয়। সেখানে কেবলমাত্র প্রকটতার সূত্র মেনে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জিনগুলি কোনোক্ষেত্রেই অপর জিন দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। মেন্ডেল একে স্বাধীন বিন্যাস সূত্র (law of independent assortment) -রূপে ব্যাখ্যা করেন।
21. মেন্ডেলের বংশগতির দ্বিতীয় সূত্রটি কী?
অথবা, মেন্ডেলের স্বাধীন বিন্যাস সূত্রটি বিবৃত করো।
অথবা, মেন্ডেলের স্বাধীন সঞ্চারণ সূত্রটি বিবৃত করো।
উত্তর – দুই বা তার বেশি বিপরীতধর্মী যুগ্ম বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি জনিতৃ থেকে অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হলেও তারা মিশ্রিত হয় না বরং অপত্যের জননকোশ তৈরির সময়ে এরা পরস্পর থেকে পৃথক হয় এবং সম্ভাব্য সকলপ্রকার সমন্বয়ে স্বাধীনভাবে জননকোশে সঞ্চারিত হয়। এটিই মেন্ডেলের বংশগতির দ্বিতীয় সূত্র বা স্বাধীন বিন্যাস সূত্র বা স্বাধীন সঞ্চারণ সূত্র।
22. স্বাধীন বিন্যাসের সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি চিহ্নিত করো।
উত্তর – স্বাধীন বিন্যাসের সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি হল – (1) একই ক্রোমোজোমের জিনগুলির অনেকসময় একই সঙ্গে গ্যামেট তথা অপত্যে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। একে লিংকেজ বলে। এক্ষেত্রে দুটি জিনের অ্যালিল জোড়া মেন্ডেলীয় অনুপাতে অর্থাৎ, স্বাধীনভাবে সঞ্চারিত হতে পারে। না। (2) গ্যামেট গঠনের সময় সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে একই গ্যামেটে চলে যেতে পারে। একে নন্-ডিসজাংশন বলে। এক্ষেত্রে স্বাধীন সঞ্চারণ দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
23. মেন্ডেলের বংশগতি পরীক্ষায় প্রাপ্ত 1:2:1 এবং 9:3:3:1। এই দুটি অনুপাত দ্বারা কী বোঝানো হয়?
উত্তর – মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার F2 জনুতে প্রাপ্ত অপত্যের জিনোটাইপিক অনুপাত হল 1:2:1, বিশুদ্ধ প্রকট ও বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট দুই জনিতৃ মটরগাছে মধ্যে সংকরায়ণে প্রাপ্ত F1 জনুর সংকর মটর গাছগুলির স্বপরাগযোগে F2 জনু সৃষ্টি করা হয়। এই F2 জনুতে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ প্রকট, সংকর প্রকট এবং বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত গাছগুলির অনুপাত হবে 1:2:1। একইভাবে মেন্ডেলের দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় প্রাপ্ত অপত্যগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে 9:3:3:11
24. গিনিপিগের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় F2 জনুতে কত প্রকার ও কী কী ফিনোটাইপ পাওয়া যায় ?
উত্তর – বিশুদ্ধ কালো ও খর্ব লোমযুক্ত এবং বিশুদ্ধ সাদা ও দীর্ঘ লোমযুক্ত গিনিপিগের দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় F2 জনুতে চারটি ফিনোটাইপ পাওয়া যায়। এগুলি হল—কালো ও খর্ব লোমযুক্ত, কালো ও দীর্ঘ লোমযুক্ত, সাদা ও খর্ব লোমযুক্ত এবং সাদা ও দীর্ঘ লোমযুক্ত।
25. YyRr এবং yyrr-এর মধ্যে সংকরায়ণের ফলে উৎপন্ন অপত্যের ফিনোটাইপিক অনুপাত কী হবে?
উত্তর – YyRr এবং yyrr এর সংকরায়ণটি নীচে দেখানো হল।
সংকরায়ণে উৎপন্ন জনুর চার প্রকার অপত্যের ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে- হলদে-গোল : হলদে-কুণ্ঠিত : সবুজ-গোল : সবুজ-কুতি = 1:1:1:1।
26. সাদা ও বেগুনি মটর ফুল নিয়ে একসংকর ক্রস করতে গিয়ে মেন্ডেল F2 জনুতে 120টি সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছ পেলেন।
(1) এই ক্ষেত্রে F2 জনুতে তাঁর কতগুলি বেগুনি ফুলযুক্ত মটর গাছ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল? (2) এর মধ্যে কতগুলি হেটেরোজাইগাস বেগুনি ফুলযুক্ত গাছ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল?
উত্তর – (1) আমরা জানি যে বেগুনি মটর ফুল (VV) বৈশিষ্ট্যটি সাদা মটর ফুল (vv) বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রকট। মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে আমরা জানি যে বেগুনি ও সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের F2 জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত 3:1।
প্রশ্নানুযায়ী, সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছ সংখ্যা x হলে, x = 120। সুতরাং, বেগুনি ফুলযুক্ত মাটর গাছ সংখ্যা হবে 3x = 3 × 120 = 360 টি।
(2) আমরা জানি, একসংকর জননের জিনোটাইপিক অনুপাত VV : Vv : vv = 1 : 2 : 1। সুতরাং, হেটেরোজাইগাস বেগুনি ফুলযুক্ত (Vv) মটর গাছের সংখ্যা হবে 2x = 240 |
27. প্রাণীর এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ প্রকটতার একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – প্রাণীর ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ প্রকটতার উদাহরণটি হল—একটি বিশুদ্ধ কালো (হোমোজাইগাস) আন্দুলেশিয়ান মুরগির সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা (হোমোজাইগাস) মোরগের সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনুর (F1 জনুর) মুরগিগুলি সব ধূসর-নীল রঙের হয়।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছে কত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করেছিলেন?
(a) তিন জোড়া
(b) দুই জোড়া
(c) সাত জোড়া
(d) আট জোড়া
উত্তর – (c) সাত জোড়া
2. মটর ফুলে স্বপরাগযোগ ঘটা সম্ভব, কারণ ফুলটি—
(a) পুংলিঙ্গ
(b) স্ত্রীলিঙ্গ
(c) একলিঙ্গ
(d) উভলিঙ্গ
উত্তর – (d) উভলিঙ্গ
3. মেন্ডেলের নির্বাচিত মটর গাছের সাত জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি জোড়া হল—
(a) লম্বা কাণ্ড ও বেগুনি ফুল
(b) সবুজ ফল ও হলদে ফল
(c) কুণ্ঠিত বীজ ও শীর্ষমুকুল
(d) হলদে বীজ ও সাদা ফুল
উত্তর – (b) সবুজ ফল ও হলদে ফল
4. মটর গাছের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যটি হল-
(a) কুণ্ঠিত বীজ
(b) বেগুনি রং-এর ফুল
(c) হলদে রং-এর বীজ
(d) কাক্ষিক ফুল
উত্তর – (a) কুণ্ঠিত বীজ
5. নীচের কোন্‌টি প্রকট গুণ তা শনাক্ত করো—
(a) কাণ্ডের দৈর্ঘ্য—বেঁটে
(b) বীজের আকার—কুণ্ঠিত
(c) বীজপত্রের বর্ণ—হলদে
(d) ফুলের বর্ণ—সাদা
উত্তর – (c) বীজপত্রের বর্ণ—হলদে
6. নীচের কোন্‌টি মটর গাছের প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য ?
(a) ফুলের অবস্থান—কাক্ষিক
(b) শুঁটির রং—সবুজ
(c) পরিপক্ক ফলের আকৃতি—খাঁজযুক্ত
(d) বীজপত্রের রং—হলদে
উত্তর – (c) পরিপক্ক ফলের আকৃতি—খাঁজযুক্ত
7. মেন্ডেলের নির্বাচিত মটর গাছের একটি প্রচ্ছন্ন গুণ হল—
(a) ফুলের কাক্ষিক অবস্থানে
(b) গোল আকৃতির বীজ
(c) সবুজ বীজপত্র
(d) রঙিন ফুল
উত্তর – (c) সবুজ বীজপত্র
8. নীচের কোন্‌টি মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার একটি ব্যাক ক্রস?
(a) Vv × Vv
(b) Vv × VV
(c) VV × VV
(d) vv × VV
উত্তর – (b) Vv × VV
9. মেন্ডেলের আবিষ্কৃত সূত্র যে নামে পরিচিত—
(a) মেন্ডেলবাদ
(b) একসংকর জনন
(c) জেনেটিক্স
(d) দ্বিসংকর জনন
উত্তর – (a) মেন্ডেলবাদ
10. প্রজনন পরীক্ষা ব্যবহার করে কোন্ বিজ্ঞানী বংশগতির সূত্র আবিষ্কার করেন?
(a) জ্যাঁ ব্যাপ্তিস্ত দ্য ল্যামার্ক
(b) গ্রেগর জোহান মেন্ডেল
(c) চার্লস ডারউইন
(d) স্ট্যানলি মিলার
উত্তর – (b) গ্রেগর জোহান মেন্ডেল
11. মেন্ডেলের মটর গাছ সংক্রান্ত একসংকর ও দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় জনিতৃ জনু ও প্রথম অপত্য জনুতে যথাক্রমে ………. ও ……….করেছিলেন।
(a) স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগ
(b) ইতর পরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগ
(c) ইতর পরাগযোগ ও স্বপরাগযোগ
(d) স্বপরাগযোগ ও স্বপরাগযোগ
উত্তর – (c) ইতর পরাগযোগ ও স্বপরাগযোগ
12. প্রদত্ত কোন্ ব্রুসটিতে F1 জনুতে লম্বা : বেঁটে = 1 : 1 হবে?
(a) TT × tt
(b) TT × Tt
(c) Tt × Tt
(d) Tt × tt
উত্তর – (d) Tt × tt
13. লম্বা মটর উদ্ভিদের জিনোটাইপ কয় প্রকার হতে পারে?
(a) এক
(b) দুই
(c) তিন
(d) চার
উত্তর – (b) দুই
14. বিশুদ্ধ বেঁটে মটর গাছের জিনোটাইপ হল –
(a) TT
(b) Tt
(c) tt
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) tt
15. Tt জিনোটাইপকে কীভাবে প্রকাশ করা যায়?
(a) বিশুদ্ধ লম্বা
(b) সংকর লম্বা
(c) বিশুদ্ধ বেঁটে
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) সংকর লম্বা
16. খর্ব মটর গাছ সবসময়ই হয়—
(a) হোমোজাইগাস
(b) হেটেরোজাইগাস
(c) সংকর দীর্ঘ
(a) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) হোমোজাইগাস
17. সংকর গোল বীজযুক্ত মটর গাছ থেকে প্রাপ্ত গ্যামেটের সংখ্যা হবে—
(a) একপ্রকার
(b) দু-প্রকার
(c) তিনপ্রকার
(d) চারপ্রকার
উত্তর – (b) দু-প্রকার
18. একসংকর জননে প্রথম F1 জনুতে যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়, তা হল –
(a) প্রচ্ছন্ন
(b) প্রকট
(c) প্রকরণ
(d) বংশগতি
উত্তর – (b) প্রকট
19. একটি খাঁটি সাদা (প্রচ্ছন্ন) ফুলযুক্ত মটর গাছের সঙ্গে একটি খাঁটি বেগুনি (প্রকট) ফুলযুক্ত মটর গাছের সংকরায়ণ ঘটানো হল। এক্ষেত্রে প্রথম অপত্য বংশে প্রাপ্ত ফুলের বৈশিষ্ট্য হবে —
(a) 100% সাদা
(b) সমস্তই বেগুনি
(c) 50% সাদা এবং 50% বেগুনি
(d) 75% বেগুনি এবং 25% সাদা
উত্তর – (b) সমস্তই বেগুনি
20. দুটি সংকর লম্বা মটর উদ্ভিদের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে Fজনুতে শতকরা কত ভাগ লম্বা এবং খর্ব মটর উদ্ভিদ উৎপন্ন হবে?
(a) 50% এবং 25%
(b) 25% এবং 25%
(c) 75% এবং 25%
(d) 50% এবং 50%
উত্তর – (c) 75% এবং 25%
21. Tt × Tt ক্রুসের ক্ষেত্রে 500 টি উদ্ভিদের মধ্যে কয়টি সংকর অপত্য হবে?
(a) 100
(b) 250
(c) 350
(d) 500
উত্তর – (b) 250
22. মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষায় কয় প্রকারের জিনোটাইপ F2 -তে পাওয়া যায়?
(a) 1
(b) 2
(c) 3
(d) 4
উত্তর – (c) 3
23. একসংকরায়ণ পরীক্ষার F2 জনুতে উৎপন্ন বিশুদ্ধ জিনোটাইপগুলির অনুপাত হল-
(a) 1:1
(b) 1:2
(c) 3:1
(d) 4:1
উত্তর – (a) 1:1
24. মেন্ডেলের একসংকর জননের F2 জনুর ফিনোটাইপিক অনুপাত হল-
(a) 1:2:1
(b) 3:1
(c) 9:3:3:1
(d) 1:1
উত্তর – (b) 3:1
25. নীচের কোন্‌টি মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার F2 জনুর জিনোটাইপিক অনুপাত ?
(a) 1:2:1
(b) 3:1
(c) 9:3:3:1
(d) 2:1:2
উত্তর – (a) 1:2:1
26. মেন্ডেলের পৃথকীভবন সূত্রটি যে পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত, তা হল-
(a) একসংকর জনন
(b) দ্বিসংকর জনন
(c) সংকরায়ণ
(d) প্রকরণ
উত্তর – (a) একসংকর জনন
27. মেন্ডেলের প্রথম সূত্রটি হল –
(a) পৃথকরণের সূত্র
(b) প্রকটতা সূত্র
(c) মুক্ত সঞ্চারণ সূত্র
(d) প্রচ্ছন্নতার সূত্র
উত্তর – (a) পৃথকরণের সূত্র
28. একটি বিশুদ্ধ কালো (BB) ও বিশুদ্ধ সাদা বর্ণের (bb) গিনিপিগের একসংকরায়ণ পরীক্ষার F2 জনুতে উৎপন্ন বিশুদ্ধ সাদা ও সংকর কালো গিনিপিগের সংখ্যাগত অনুপাত হবে—
(a) 1:1
(b) 1:2
(c) 1:3
(d) 2:1
উত্তর – (b) 1:2
29. একটি বিশুদ্ধ কালো (BB) ও বিশুদ্ধ সাদা বর্ণের (bb) গিনিপিগের একসংকরায়ণ পরীক্ষার F2 জনুতে উৎপন্ন বিশুদ্ধ কালো ও বিশুদ্ধ সাদা বর্ণের গিনিপিগের সংখ্যাগত অনুপাত হবে –
(a) 1:1
(b) 1:2
(c) 2:1
(d) 3:1
উত্তর – (a) 1:1
30. দুটি সংকর কালো গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনুতে কতগুলি সংকর কালো গিনিপিগ উৎপন্ন হবে?
(a) 25%
(b) 100%
(c) 75%
(d) 50%
উত্তর – (d) 50%
31. একটি সংকর কালো গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ কালো গিনিপিগের সংকরায়ণে কালো গিনিপিগ জন্মাবে—
(a) 100%
(b) 75%
(c) 50%
(d) 25%
উত্তর – (a) 100%
32. Bb x bb-এর সংকরায়ণে উৎপন্ন হেটেরোজাইগাস ও হোমোজাইগাস গিনিপিগের অনুপাত হল –
(a) 3:1
(b) 2:1
(c) 1:1
(d) 1:2
উত্তর – (c) 1:1
33. যখন কোনো F1 সংকরকে প্রকট জনিতৃ জনুর সঙ্গে ক্রস করানো হয়, তখন ক্রসটিকে বলা হয় –
(a) ডাইহাইব্রিড
(b) ব্যাক ক্রস
(c) টেস্ট ক্রস
(d) মনোহাইব্রিড
উত্তর – (b) ব্যাক ক্রস

দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও

1. মটর গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম লেখো।
উত্তর – Pisum sativum (পাইসাম স্যাটিভাম)।
2. গিনিপিগের বংশগতিতে একটি প্রকট বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর – লোমের কালো রং-এর বৈশিষ্ট্য।
3. একসংকর জননে F2 জনুতে জিনোটাইপের অনুপাত কত?
অথবা, মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় প্রাপ্ত দ্বিতীয় অপত্য জনুর জিনোটাইপিক অনুপাতটি লেখো। 
উত্তর – একসংকর জননে F2 জনুতে অর্থাৎ, দ্বিতীয় অপত্য জনুতে জিনোটাইপের অনুপাত হল বিশুদ্ধ প্রকট : সংকর প্রকট : বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন = 1:2:1
4. বংশগতিতে 1 : 2:1 -কে কী অনুপাত বলে?
উত্তর – একসংকর জননের F2 জনুর জিনোটাইপিক অনুপাত ।
5. একসংকর জননে F2 জনুতে ফিনোটাইপের অনুপাত কত?
উত্তর – একসংকর জননে F2 জনুতে ফিনোটাইপের অনুপাত হল প্রকট : প্রচ্ছন্ন = 3:1
6. বংশগতিতে 3 : 1-কে কী অনুপাত বলে?
উত্তর – একসংকর জননের F2 জনুর ফিনোটাইপিক অনুপাত।
7. মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষা থেকে পাওয়া সূত্রটি কী?
উত্তর – পৃথকীভবন সূত্র।
৪. মটর গাছের ক্ষেত্রে পৃথকীভবন সূত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তোমাকে বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করতে বলা হল। এরকম বিপরীত গুণসহ দুটি বৈশিষ্ট্যের নাম লেখো।
উত্তর – পৃথকীভবন সূত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিপরীত গুণসহ দুটি বৈশিষ্ট্যের নাম হল- (1) কাণ্ডের দৈর্ঘ্য লম্বা ও বেঁটে এবং (2) বীজের আকার—গোল ও কুণ্ঠিত।
9. মেন্ডেলের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় F2 জনুতে প্রাপ্ত ফিনোটাইপিক অনুপাতটি লেখো।
উত্তর – মেন্ডেলের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় F2 জনুতে প্রাপ্ত ফিনোটাইপিক অনুপাত হল 9:3:3:1।
10. চেকার বোর্ড আবিষ্কার করেন কোন বিজ্ঞানী?
উত্তর – ব্রিটিশ বংশগতিবিদ রেজিনাল্ড ক্রামডাল পানেট।
11. মেন্ডেলের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষা থেকে পাওয়া সূত্রটি কী?
উত্তর – স্বাধীন বিন্যাস সূত্র বা মুক্ত সঞ্চালন সূত্র।
12. ttRr-এর ফিনোটাইপ কী হবে? 
উত্তর – t অ্যালিলটি (প্রচ্ছন্ন) মটর গাছের বেঁটে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ করে। R (প্রকট) এবং r (প্রচ্ছন্ন) অ্যালিল দুটি মটর বীজের যথাক্রমে গোল ও কুণ্ঠিত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ করে। সুতরাং, ttRr জিনোটাইপ-বিশিষ্ট মটর উদ্ভিদের ফিনোটাইপ হবে বেঁটে এবং গোল বীজ।
13. BbRr-এর ফিনোটাইপ কী হবে? 
উত্তর – BbRr-এর ফিনোটাইপ হবে কালো-কশি লোম।
14. গিনিপিগের ক্ষেত্রে bbRR এবং bbRr জিনোটাইপ দুটির ফিনোটাইপ কি একই?
উত্তর – হ্যাঁ, একই। কারণ, RRবা Rr উভয়ক্ষেত্রেই ফিনোটাইপ R অ্যালিলটি অনুযায়ী হবে।
15. কোনো একসংকর জনন পরীক্ষায় ফিনোটাইপিক অনুপাত 3:1-এর স্থানে 1: 2:1 পাওয়া গেলে তা কোন্ ঘটনাকে নির্দেশ করে?
উত্তর – একসংকর জনন পরীক্ষায় ফিনোটাইপিক অনুপাত 3 : 1-এর স্থানে 1: 2: 1 পাওয়া গেলে তা অসম্পূর্ণ প্রকটতাকে নির্দেশ করে।
16. একই ক্রোমোজোমে অবস্থিত অসংখ্য জিনের একসঙ্গে উত্তরাধিকার প্রাপ্তিকে কী বলে?
উত্তর – লিংকেজ।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. মেন্ডেল জিনকে ………. নামে অভিহিত করেন।
উত্তর – ফ্যাক্টর
2. মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছের ………. টি চরিত্র নির্বাচন করেছিলেন।
উত্তর – 7
3. মেন্ডেল পরীক্ষার জন্য মটর উদ্ভিদের ফুলের ………… টি বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করেছিলেন।
উত্তর – 4
4. বীজপত্রের বর্ণ সবুজ একটি ……… বৈশিষ্ট্য।
উত্তর – প্রচ্ছন্ন
5. মেন্ডেল F1 জনু উৎপাদনের জন্য বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ খর্ব মটর গাছের মধ্যে …….. পরাগযোগ ঘটিয়েছিলেন।
উত্তর – ইতর
6. মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় জনিতৃ জনুকে ………. সংকেত দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
উত্তর – P
7. মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষায় প্রাপ্ত লম্বা ও বেঁটে গাছের অনুপাত হল ………।
উত্তর – 3:1
৪. মটর গাছের ভিন্ন ভিন্ন ………… একই ফিনোটাইপ দেখাতে পারে।
উত্তর – জিনোটাইপ
9. মেন্ডেল তাঁর একসংকর জন্য পরীক্ষায় F2 জনুতে ……….. প্রকারের ফিনোটাইপ পেয়েছিলেন।
উত্তর – 2
10. মেন্ডেলের একসংকর পরীক্ষায় F2 জনুতে TT:Tt:tt অনুপাত হল ………।
উত্তর – 1:2:1
11. একটি সংকর কালো ও বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগের ক্রসে F1 জনুতে উৎপন্ন বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগের সংখ্যা হবে ………।
উত্তর – 50%
12. মেন্ডেলের দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় ……….. প্রকার জিনোটাইপ F2 জনুতে পাওয়া যায়।
উত্তর – 9
13. গিনিপিগের সাদা ও মসৃণ লোম হল ………. বৈশিষ্ট্য।
উত্তর – প্রচ্ছন্ন
14. মেন্ডেলের বংশগতির দ্বিতীয় সূত্রটি ………. সূত্র নামে পরিচিত।
উত্তর – স্বাধীন বিন্যাস
15. RrYy জিনোটাইপ যুক্ত উদ্ভিদ থেকে ………. ধরনের গ্যামেট উৎপন্ন হবে।
উত্তর – 4
16. মেন্ডেলের বংশগতি সংক্রান্ত সূত্রের একটি বিচ্যুতি হল ………।
উত্তর – অসম্পূর্ণ প্রকটতা
17. সন্ধ্যামালতীর লাল ও সাদা ফুলযুক্ত গাছের একসংকর জনন পরীক্ষায় F2 জনুতে প্রাপ্ত ফিনোটাইপিক অনুপাত হল ………।
উত্তর – 1:2:1
18. প্রাণীর ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ প্রকটতার একটি উদাহরণ হল ………. মুরগি।
উত্তর – আন্দুলেশিয়ান

SUB-TOPIC 1.3 মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ

বিষয়সংক্ষেপ

  • পুরুষদের দেহকোশে 44 টি অটোজোম ছাড়াও একটি করে X ও Y নামক সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম থাকে (44A + XY)। তাই মিয়োসিস দ্বারা শুক্রাণু সৃষ্টির সময় দুইরকম গ্যামেট তৈরি হয়। Y যুক্ত (22A + Y) অথবা X যুক্ত (22A + X)।
  • মহিলাদের দেহকোশে 44 টি অটোজোম ছাড়াও দুটি X ক্রোমোজোম থাকে (44A + XX) তাই মিয়োসিস দ্বারা ডিম্বাণু সৃষ্টি হলে তা একই প্রকারের হয়ে থাকে (22A + X)।
  • দুই ধরনের ক্রোমোজোম বিন্যাসযুক্ত শুক্রাণু তৈরি করে বলে পুরুষদের হেটেরোগ্যামেটিক সেক্স এবং একপ্রকার ক্রোমোজোম বিন্যাসযুক্ত ডিম্বাণু তৈরি করে বলে মহিলাদের হোমোগ্যামেটিক সেক্স বলা হয়।
  • ‘Y’ ক্রোমোজোমযুক্ত শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষেক দ্বারা ভ্রূণ তৈরি করলে তা পুত্রসন্তানরূপে বিকশিত হয় (XY)। পক্ষান্তরে X ক্রোমোজোমযুক্ত শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হলে সেই ভ্রূণ কন্যাসন্তানরূপে বিকশিত হয় (XX)। অর্থাৎ, লিঙ্গ নির্ধারণে বাবার ভূমিকাই প্রধান।
  • বহু ক্ষেত্রে আমাদের দেশে কন্যাসন্তান হওয়ার জন্য মায়েদের দায়ী করা হয়। মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ পদ্ধতি সেই ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করে।

বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

1. মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ কীভাবে হয় তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর – মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ: মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ দুটি স্তরে নিয়ন্ত্রিত হয়, যথা—প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ ও গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণ। প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ নির্ভর করে যৌন ক্রোমোজোমের প্রকৃতির ওপর। পক্ষান্তরে, যৌন হরমোনের দ্বারা গৌণ লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।
  1. প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ: মানুষের দেহকোশে 23 জোড়া হোমোলোগাস ক্রোমোজোম বা 46টি ক্রোমোজোম থাকে। এর মধ্যে 2টি ক্রোমোজোম লিঙ্গ নির্ধারণ করে বলে তাদের যৌন ক্রোমোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলা হয়। অন্যান্য ক্রোমোজোমগুলি বিভিন্ন দেহজ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে বলে তাদের অটোজোম বলে। স্ত্রীদেহে যৌন ক্রোমোজোম দুটি অঙ্গসংস্থানগতভাবে একই প্রকারের হয়, এদেরকে X ক্রোমোজোম বলা হয়। কিন্তু পুরুষদের যৌন ক্রোমোজোম দুটি ভিন্ন প্রকৃতির হয়। এদের একটিকে X ক্রোমোজোম, অপরটিকে Y ক্রোমোজোম বলা হয়। স্ত্রীদেহের ক্রোমোজোম বিন্যাস –44A + XX এবং পুরুষদেহের ক্রোমোজোম বিন্যাস—44A + XY। পুরুষের দেহে শুক্রাশয় থেকে উৎপন্ন শুক্রাণুগুলি দুই প্রকারের—22A + Y (অ্যান্ড্রোস্পার্ম) এবং 22A + X (গাইনোস্পার্ম)। কিন্তু স্ত্রীদেহের ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন ডিম্বাণু একপ্রকারের—22A + X। এই কারণে পুরুষকে হেটেরোগ্যামেটিক এবং স্ত্রীকে হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয় । ডিম্বাণু যদি অ্যান্ড্রোস্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে সেই ভ্রূণ পুরুষরূপে (44A + XY) বিকাশ লাভ করে। অপরপক্ষে কোনো ডিম্বাণু যদি গাইনোস্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে সেই ভ্রূণ স্ত্রী-রূপে (44A + XX) বিকাশ লাভ করে।
  2. গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণ; প্রাথমিকভাবে লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়ার পরে বিভিন্ন প্রকার পুরুষ ও স্ত্রী যৌন হরমোনের প্রভাবে যথাক্রমে পুরুষ ও স্ত্রী গৌণ যৌন লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

1. XX ও XY পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণের পদ্ধতিকে XX ও XY পদ্ধতি বলে। কোনো ভ্রুণে দুটি X ক্রোমোজোম থাকলে (XX) সেটি কন্যারূপে এবং একটি X ও একটি Y ক্রোমোজোম থাকলে (XY) সেটি পুত্ররূপে বিকশিত হয়। এক্ষেত্রে দেহের অটোজোমগুলির কোনো ভূমিকা থাকে না।
2. 22A + Y শুক্রাণুকে অ্যান্ড্রোস্পার্ম ও 22A + X শুক্রাণুকে গাইনোস্পার্ম বলে কেন?
উত্তর – 22A + Y শুক্রাণুটি ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হলে ভ্রূণটি পুরুষরূপে বিকশিত হয় (andro = পুরুষ)। পক্ষান্তরে 22A + X শুক্রাণুটি ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হলে ভ্রুণটি মহিলারূপে বিকশিত হয় (gyno = মহিলা)। সেইজন্য 22A + Y কে অ্যান্ড্রোস্পার্ম ও 22A + X গাইনোস্পার্ম বলে।
3. X ক্রোমোজোম বহনকারী একটি শুক্রাণু যদি একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে তাহলে নিষেকের ফলে উৎপন্ন ভ্ৰূণাণুটি কোন্ লিঙ্গের হবে?
উত্তর – X ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে উৎপন্নঘৃণাণুটি স্ত্রীলিঙ্গের হবে। এক্ষেত্রে ভ্রুণাণুতে উপস্থিত যৌন ক্রোমোজোম দুটি হবে XX।
4. মানব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে পিতার ভূমিকা কীরূপ?
উত্তর – পিতার শুক্রাণুতে X অথবা Y যে-কোনো একটি ক্রোমোজোম থাকে। পিতার X ক্রোমোজোমযুক্ত শুক্রাণু নিষেকে অংশ নিলে সন্তান স্ত্রীলিঙ্গযুক্ত হয়। অপরদিকে পিতার Y ক্রোমোজোমযুক্ত শুক্রাণু নিষেকে অংশ নিলে সন্তান পুংলিঙ্গযুক্ত হয়। এক্ষেত্রে মাতার ডিম্বাণু সর্বদাই X ক্রোমোজোমযুক্ত বলে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে তাঁর ক্রোমোজোমগত ভূমিকা নিষ্ক্রিয় হয়।
5. অনেক পরিবারে কন্যা সন্তান জন্মের জন্য মাতাকে দায়ী করা হয়। এই ধারণাটি যথার্থ নয় তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও।
অথবা, মানব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পিতা ও মাতার ভূমিকা কীরূপ?
উত্তর – মানব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাতার ক্রোমোজোমগত ভূমিকা পরোক্ষ হয়ে থাকে। কারণ মাতা কেবলমাত্র একপ্রকার গ্যামেট (X ক্রোমোজোমযুক্ত) উৎপাদন করতে পারেন। পিতার কোশে দু-প্রকার যৌন ক্রোমোজোম উপস্থিত এবং তিনি দুই প্রকার গ্যামেট (X অথবা Y ক্রোমোজোমযুক্ত) উৎপাদনে সক্ষম। অর্থাৎ, X অথবা Y ক্রোমোজোম দানের মাধ্যমে লিঙ্গ নির্ধারণে পিতার ক্রোমোজোমগত ভূমিকাই প্রধান।
[ক্রমের জন্য এই Subtopic-এরই রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর অংশের 1 নং প্রশ্নের উত্তরটি দ্রষ্টব্য।]
6. লিঙ্গ সংযোজিত জিন কাকে বলে?
উত্তর – জীবের যৌন ক্রোমোজোমে অবস্থিত দেহজ বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী জিন বা গ্যামেটের মাধ্যমে এক জনু থেকে পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয়, তাদের লিঙ্গ সংযোজিত জিন বলে। এগুলি দুই প্রকারের হয়। X ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলিকে বলে X-সংযোজিত জিন এবং Y ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনসমূহকে বলেY-সংযোজিত বা হোলানড্রিক জিন।
7. মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে ‘Y’ ক্রোমোজোমের ভূমিকা কী?
উত্তর – কোনো ভ্রূণে সেক্স ক্রোমোজোম-রূপে Y ক্রোমোজোম থাকলে (44A + XY) সেটি পুরুষরূপে বিকশিত হয়। Y ক্রোমোজোম না থাকলে, অর্থাৎ দুটি X ক্রোমোজোম থাকলে ভ্রুণটি (44A + XX) কন্যারূপে বিকশিত হয়। অর্থাৎ, শুক্রাণুতে সেক্স ক্রোমোজোম-রূপে Y ক্রোমোজোম থাকলে তার দ্বারা নিষিক্ত ডিম্বাণু পুরুষরূপে বিকশিত হয়। সুতরাং, মানুষের ক্ষেত্রে Y ক্রোমোজোম (তথা শুক্রাণু/পুরুষ) লিঙ্গ নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা নেয়।
8. TDF জিন কী?
উত্তর – পুরুষের দেহে Y ক্রোমোজোমে অবস্থিত টেস্টিস ডিটারমাইনিং ফ্যাক্টর (TDF) নামক জিন ভ্রূণকে পুত্রসন্তান রূপে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারণে এই জিন গুরুত্বপূর্ণ। এর অপর নাম SRY (সেক্স ডিটারমাইনিং রিজিয়ন Y) জিন।
9. মহিলাদের কেন হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়?
উত্তর – মহিলাদের জিনোটাইপ XX বলে কেবলমাত্র একপ্রকার গ্যামেট বা ডিম্বাণু (X ক্রোমোজোম বহনকারী) উৎপন্ন হতে পারে। এই কারণে মহিলাদের হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়।
10. পুরুষদের কেন হেটেরোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়?
উত্তর – পুরুষের জিনোটাইপ XY বলে তাদের দেহে দুই প্রকার গ্যামেট বা শুক্রাণু তৈরি হয়। যেমন- X ও Y ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু। এই কারণে পুরুষদের হেটেরোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়।
11. অটোজোম ও অ্যালোজোমের পার্থক্য লেখো।
অথবা, দেহ ক্রোমোজোম ও সেক্সক্রোমোজোমের পার্থক্য লেখো।
অথবা, নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানুষের অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোমের পার্থক্য লেখো।
(1) প্রকৃতি, (2) সংখ্যা।
উত্তর – অটোজোম ও অ্যালোজোমের পার্থক্যগুলি হল—
বিষয় অটোজোম বা দেহ ক্রোমোজোম অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম
1. কার্যগত দেহের সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণভাবে লিঙ্গ নির্ধারণে অংশ নেয়।
2. সংখ্যা 22 জোড়া। একজোড়া।
3. ক্রোমোজোমের প্রকৃতি সবগুলির হোমোলোগাস ক্রোমোজোম জোড়া থাকে। এরা মহিলাদের ক্ষেত্রে হোমোলোগাস (XX)। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে তা হোমোলোগাস নয় (XY)।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. একজন পুরুষ ও মহিলার বিবাহে পুত্রসন্তান বা কন্যাসন্তান হওয়ার সম্ভাবনা –
(a) 2:1
(b) 1:2
(c) 1:1
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) 1:1
2. ক্রোমোজোমের সংখ্যা বা তার গুণগত বৈশিষ্ট্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লিঙ্গ নির্ধারণ হল –
(a) প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ
(b) গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণ
(c) a ও b উভয়ই
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ
3. মানুষের দেহকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা –
(a) 44টি
(b) 23টি
(c) 22টি
(d) 46টি
উত্তর – (d) 46টি
4. মানুষের দেহকোশে অটোজোম সংখ্যা –
(a) 44টি
(b) 1টি
(c) 2টি
(d) 46টি
উত্তর – (a) 44টি
5. মানুষের জনন মাতৃকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা –
(a) 46টি
(b) 23টি
(c) 44টি
(d) 22টি
উত্তর – (b) 23টি
6. মানুষের জননকোশে অটোজোম সংখ্যা –
(a) 44টি
(b) 22টি
(c) 23টি
(d) 46টি
উত্তর – (b) 22টি
7. মানুষের দেহকোশে সেক্স ক্রোমোজোম সংখ্যা –
(a) 2টি
(b) 4টি
(c) 44টি
(d) 46টি
উত্তর – (a) 2টি
৪. মানুষের ক্ষেত্রে নীচের জিনোটাইপগুলির মধ্যে কোন্‌টি একজন স্বাভাবিক পুরুষের জন্য প্রযোজ্য?
(a) 44A + XX
(b) 44A + XY
(c) 44A + XXY
(d) 44A + XYY
উত্তর – (b) 44A + XY
9.মানুষের প্রতি দেহকোশে যৌন ক্রোমোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোমের সংখ্যা —
(a) 1টি
(b) 2টি
(c) 22টি
(d) 22 জোড়া
উত্তর – (b) 2টি
10. পুরুষের যৌন ক্রোমোজোমগুলি হল-
(a) AX
(b) BY
(c) XY
(d) XX
উত্তর – (c) XY
11. মহিলাদের যৌন ক্রোমোজোমগুলি হল –
(a) AX
(b) BY
(c) XY
(d) XX
উত্তর – (d) XX
12. মানব শুক্রাণুতে অবস্থিত সেক্স ক্রোমোজোম হল –
(a) X অথবা Y
(b) শুধুমাত্র X
(c) শুধুমাত্র Y
(d) XY
উত্তর – (a) X অথবা Y
13. লিঙ্গ নির্ধারণ প্রধানত নির্ভর করে –
(a) X ক্রোমোজোমের ওপর
(b) Y ক্রোমোজোমের ওপর
(c) অটোজোমের ওপর
(d) X ও Y ক্রোমোজোমের ওপর
উত্তর – (b) Y ক্রোমোজোমের ওপর
14. নিম্নলিখিত কোন্‌টি মানুষের শুক্রাণুকে সূচিত করে না?
(a) 22A + X
(b) 22A + Y
(c) n
(d) 44A + XY
উত্তর – (d) 44A + XY
15. অ্যান্ড্রোস্পার্ম-কে নির্দেশ করে কোনটি?
(a) 22A + X
(b) 22A + Z
(c) 22A + Y
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) 22A + Y
16. পিতা তার পুত্রকে কোন্ গ্যামেটটি প্রদান করে?
(a) 22A + X
(b) 44A + X
(c) 22A + XX
(d) 22A + Y
উত্তর – (d) 22A + Y
17. পিতার কাছ থেকে পাওয়া কোনো গ্যামেটটি কন্যাসন্তান জন্মানোর জন্য দায়ী?
(a) 22A + Y
(b) 44A + X
(c) 44A + Y
(d) 22A + X
উত্তর – (d) 22A + X
18. মানুষের স্ত্রী গ্যামেটে ক্রোমোজোম বিন্যাস –
(a) 22A + XX
(b) 22A + X
(c) 22A + Y
(d) 44A + X
উত্তর – (b) 22A + X
19. একটি ডিম্বাণুতে সেক্স ক্রোমোজোমের সংখ্যা —
(a) 1টি
(b) 44টি
(c) 2টি
(d) 46টি
উত্তর – (a) 1টি
20. হোলানড্রিক জিনের বহিঃপ্রকাশ মানুষের কোন অঙ্গে দেখা যায়?
(a) লোমযুক্ত পিনা
(b) চোখ
(c) ত্বক
(d) সবকটিতে
উত্তর – (a) লোমযুক্ত পিনা
21. লিঙ্গ নির্ধারণে কার ভূমিকা প্রত্যক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
(a) পিতার ভূমিকা
(b) মাতার ভূমিকা
(c) পিতা ও মাতার ভূমিকা
(d) মাতার ভূমিকা 75%, পিতার ভূমিকা 25%
উত্তর – (a) পিতার ভূমিকা
22. তিনটি কন্যা আছে এমন ব্যক্তির চতুর্থ সন্তান কন্যা হওয়ার সম্ভাবনা কত ?
(a) 25%
(b) 50%
(c) 75%
(d) 100%
উত্তর – (b) 50%

দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও

1. লিঙ্গ নির্ধারণ পদ্ধতি কাকে বলে?
উত্তর – যে প্রক্রিয়ার দ্বারা ভ্রূণের যৌনতা নির্ধারিত হয়, তাকে লিঙ্গ নির্ধারণ পদ্ধতি বলে।
2. মানুষের দেহকোশে কী কী প্রকারের যৌন ক্রোমোজোম দেখা যায় ?
উত্তর – মানুষের দেহকোশে X ও Y নামক দু-প্রকার যৌন ক্রোমোজোম দেখা যায়।
3. একটি শুক্রাণু 22A + Y হলে, নিষেকের পরে ভ্রূণের লিঙ্গ কী হবে?
উত্তর – একটি শুক্রাণু 22A + Y হলে, নিষেকের পরে ভ্রূণ পুরুষ লিঙ্গের হবে।
4. কন্যাসন্তান সৃষ্টির জন্য পিতার শুক্রাণুতে কোন্ প্রকৃতির সেক্স ক্রোমোজোম থাকা উচিত?
উত্তর – X ক্রোমোজোম।
5. হোলানড্রিক জিন কাকে বলে?
উত্তর – যে সকল জিন কেবল Y ক্রোমোজোমে অবস্থিত, তাদের হোলানড্রিক জিন বলে।
6. Y ক্রোমোজোম বাহিত একটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – Y ক্রোমোজোম বাহিত একটি বৈশিষ্ট্য হল পুরুষের কানের লতিতে চুল বা অরিকুলার হাইপারট্রাইকোসিস।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. সেক্স ক্রোমোজোমের অপর নাম হল ……….।
উত্তর – অ্যালোজোম
2. Y ক্রোমোজোমকে ………. বলে।
উত্তর – অ্যান্ডোজোম
3. পুরুষদেহে বর্তমান ……….. অ্যালোজোম স্ত্রীদেহে অনুপস্থিত।
উত্তর – Y
4. স্ত্রীলোকের লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমটি হল ……….।
উত্তর – X
5. গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণে হরমোন সাহায্য করে, আর প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ করে ……….।
উত্তর – সেক্স ক্রোমোজোম
6. SRY অবস্থান করে মানুষের ………… ক্রোমোজোমে।
উত্তর – Y

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *