WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 4 অভিব্যক্তি ও অভিযোজন (TOPIC 1 অভিব্যক্তি)
মিলার ও উরে-র পরীক্ষায় উৎপন্ন উপজাত পদার্থ—গ্লাইসিন, অ্যালানিন অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, আলফা অ্যামিনো বিউটাইরিক অ্যাসিড প্রভৃতি অ্যামিনো অ্যাসিড।
(d) পৃথিবীর উৎপত্তি →জীবনের উৎপত্তি→ মুক্ত অক্সিজেনের উৎপত্তি → বহুকোশী জীবের উৎপত্তি
SUB-TOPIC 1.2 জৈব অভিব্যক্তির মতবাদ
বিষয়সংক্ষেপ
- বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও দার্শনিক জৈব অভিব্যক্তি কীভাবে ঘটে তার নানা ব্যাখ্যা দেন। এর মধ্যে ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদ উল্লেখযোগ্য।
- ল্যামার্ক 1809 সালে ‘ফিলোজফি জুলজিক’ (Philosophie Zoogloique) নামক বইয়ে জীবের সৃষ্টি-সংক্রান্ত মতবাদ প্রকাশ করেন।
- ল্যামার্কবাদের মূল প্রতিপাদ্যগুলি হল— [i] অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রভাবে জীবের আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। [ii] জীবদেহে কোনো অঙ্গের চাহিদা থাকলে তা সৃষ্টি হয়। [iii] কোনো অঙ্গ ব্যবহার করলে তা সুগঠিত হয় আর অব্যবহারে তা ক্রমশ ক্ষয় পেয়ে বিলুপ্ত হয়। [iv] এইভাবে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ হয়। [v] এই অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী জনুতে সঞ্জরিত হয়ে ক্রমশ নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে।
- বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যান কয়েক জনু ধরে সাদা ইঁদুরের ল্যাজ কেটে দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরবর্তী জনুর ইঁদুরের পুনরায় ল্যাজ সৃষ্টি হয়। এটি ল্যামার্কের অর্জিত বৈশিষ্ট্য বংশানুসরণ সূত্রকে খণ্ডন করে।
- চার্লস রবার্ট ডারউইন এইচ এম এস বিগল নামক জাহাজে নানা দেশ ও দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ করেন ও অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন। তাঁর রচিত ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিন্স অফ ন্যাচারাল সিলেকশন’ (On the Origin of Species by Means of Natural Selection) নামক বই 1859 সালে প্রকাশিত হয়।
-
ডারউইন-এর তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্যগুলি হল—
[i] অত্যধিক মাত্রায় বংশবৃদ্ধি, অর্থাৎ জীবেরা প্রজনন দ্বারা অসংখ্য অপত্য সৃষ্টি করে।
[ii] সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান, পৃথিবীতে খাদ্য ও বাসভূমি সীমিত থাকে।
[iii] এর ফলে জীবদের মধ্যে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম দেখা যায়। এই সংগ্রাম অন্তঃপ্রজাতি, আন্তঃপ্রজাতি বা পরিবেশগত হতে পারে।
[iv] জীবদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের ভেদ বা প্রকরণ দেখা যায়।
[v] অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবগুলির প্রাকৃতিক নির্বাচন হয়, অর্থাৎ তারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ বলে অভিহিত করেন।
[vi] এই অনুকূল ভেদযুক্ত, প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত জীবগুলি কালক্রমে নতুন জীবপ্রজাতি সৃষ্টি করে।
- ডারউইন তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন—ভেদ সৃষ্টির কারণ তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এ ছাড়া জীবদেহে উপস্থিত নিষ্ক্রিয় অঙ্গের সম্বন্ধে ধারণা দিতে পারেননি।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. ল্যামার্কের বিবর্তন তত্ত্বের মূল বক্তব্যগুলির উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – বিবর্তন সম্পর্কিত ল্যামার্কের মতবাদ: ল্যামার্ক 1809 সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফিলজফি জুলজিক’ (Philosophie Zoologique)-এ বিবর্তনের বিজ্ঞানভিত্তিক মতবাদ প্রকাশ করেন। তাঁর মতবাদকে ল্যামার্কবাদ বা ল্যামাকিজম বলে। ল্যামার্কের বিবর্তন তত্ত্বের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল—
- অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ শক্তি: জীবনের অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রভাবে জীবের সমগ্র দেহ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকার বৃদ্ধি পায়।
- চাহিদা থেকে নতুন অঙ্গের সৃষ্টি: পরিবেশের পরিবর্তন সকল জীবকে প্রভাবিত করে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন চাহিদার সৃষ্টি হয়। এই চাহিদার ফলে নতুন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সৃষ্টি হয়।
- ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র: ল্যামার্কের মতে, জীবদেহের কোনো অঙ্গ ক্রমাগত ব্যবহৃত হতে থাকলে অঙ্গটি শক্তিশালী, সবল ও সুগঠিত হয়, পক্ষান্তরে জীবদেহের কোনো অঙ্গ দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলে সেটি ক্রমশ দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হয় ও অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়।
ব্যবহারের সপক্ষে উদাহরণ: বহুকাল আগে জিরাফের গলা ছোটো ছিল। কিন্তু কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা খাদ্যরূপে গ্রহণের চেষ্টায় গলাটি ক্রমশ লম্বা হয়েগেছে। এটি ব্যবহারের সপক্ষে প্রমাণ দেয়।
অব্যবহারের সপক্ষে উদাহরণ: মানুষের পূর্বপুরুষের ল্যাজ ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে আজ নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কক্সিসে পরিণত হয়েছে। অতীতে উটপাখির ডানা সক্রিয় থাকলেও বংশপরম্পরায় অব্যবহারের ফলে তা নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে। এগুলি অব্যবহারের সপক্ষে যুক্তি দেয়।
- অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ: ল্যামার্ক এই সূত্রে বলেন—আপন প্রচেষ্টায় জীবদ্দশায় যেসব বৈশিষ্ট্য জীব অর্জন করে, সেইসব বৈশিষ্ট্য পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে, অর্থাৎ এক জনু থেকে অপর জনুতে সঞ্চারিত হয়। এককথায়, জীবের অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে। যেমন—বহুকাল আগে জিরাফের গলা ছোটো ছিল। কিন্তু কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা আহরণের চেষ্টায় তা ক্রমশ লম্বা হয়েছে। এই লম্বা গলার বৈশিষ্ট্যটি বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে আজকের লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের আবির্ভাব হয়েছে।
- নতুন প্রজাতির উদ্ভব: অর্জিত গুণাবলি বংশপরম্পরায় বাহিত হওয়ার ফলে অনেকগুলি প্রজন্ম বাদে প্রজাতির মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং অবশেষে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। ল্যামার্কের মতে এটাই হল বিবর্তনের মূল পদ্ধতি।
2. ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ বলতে কী বোঝ? লুপ্তপ্রায় অঙ্গ কীভাবে উৎপন্ন হয়, তা উদাহরণ সহযোগে লেখো।
উত্তর – যোগ্যতমের উদ্বর্তন: ‘যোগ্যতম’ হল ‘বহুর মধ্যে যে যোগ্য’, আর ‘উদ্বর্তন’ হল ‘জীবনসংগ্রামে বা প্রাকৃতিক নির্বাচনে টিকে থাকা’। প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশে অবিরাম সংগ্রামের মাধ্যমে অভিযোজিত হয়ে অনুকূল প্রকরণ সৃষ্টির মাধ্যমে কিছু জীব নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। আবার কিছু জীব প্রতিকূল প্রকরণের জন্য পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ, জীবনসংগ্রামে জয়ী যোগ্যতম জীবই বেঁচে থাকে। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন ধারণার ব্যাখ্যায় হারবার্ট স্পেনসার প্রথম ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ কথাটির ব্যবহার করেন।
যোগ্যতমের উদ্বর্তনের উদাহরণ: অনুকূল প্রকরণ সৃষ্টির জন্য লম্বা গলাযুক্ত জিরাফ আজও টিকে রয়েছে। অন্যদিকে প্রতিকূল প্রকরণের জন্য খর্ব গলাযুক্ত জিরাফ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
লুপ্তপ্রায় অঙ্গের উৎপত্তি: পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জীবদেহের সুগঠিত এবং একদা সক্রিয় থাকা কোনো কোনো অঙ্গের কর্মক্ষমতা লোপ পেয়ে দুর্বল ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিষ্ক্রিয় বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গের উৎপত্তি ঘটায়।
প্রাণীর লুপ্তপ্রায় অঙ্গের উদহারণ: মানুষের বহিঃকর্ণ নাড়ানোর পেশি, চোখের উপপল্লব, অ্যাপেনডিক্স ইত্যাদি, তিমির শ্রোণিচক্রের অস্থি, উটপাখির ডানা ইত্যাদি।
উদ্ভিদের লুপ্তপ্রায় অঙ্গের উদহারণ: ভূনিম্নস্থ কাণ্ডের শল্কপত্র, বেনেবউ ও স্বর্ণলতার দেহে অবস্থিত আঁশের মতো পাতা, শতমূলী গাছের গর্ভকেশর, নারকেল গাছের তিনটি গর্ভকেশরের মধ্যে দুটি বন্ধ্যা গর্ভকেশর, কালকাসুন্দার বন্ধ্যা পুংকেশর বা স্ট্যামিনোড ইত্যাদি।
3. অর্জিত গুণাবলির বংশানুসরণ উদাহরণসহ বোঝাও। ল্যামার্কের মতবাদের প্রধান ত্রুটিগুলি কী?
উত্তর – অর্জিত গুণাবলির বংশানুসরণ: যে কয়েকটি প্রধান প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে ল্যামার্কবাদ গঠিত সেগুলির একটি হল ‘অর্জিত গুণাবলির বংশানুসরণ’। পরিবেশের প্রভাবে অভিযোজনের মাধ্যমে জীব যেসব বৈশিষ্ট্য অর্জন করে সেইসব বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়। অর্জিত লক্ষণের বংশপরম্পরায় সঞ্চারণকেই বলা হয় অর্জিত গুণাবলির বংশানুসরণ।
উদাহরণ: বহুকাল আগে জিরাফের গলা ছোটো ছিল। কিন্তু কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা আহরণের চেষ্টার ফলে গলাটি ক্রমশ লম্বা হতে থাকে। এই লম্বা গলার বৈশিষ্ট্যটি বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে আজকের লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের আবির্ভাব হয়েছে।
ল্যামার্কের মতবাদের প্রধান ত্রুটি:
- ল্যামার্কের মতবাদের প্রথম প্রতিপাদ্যটি সার্বজনীন নয়। কারণ অনেকক্ষেত্রেই অভিব্যক্তির ধারায় অঙ্গের ক্ষুদ্র হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, বড়ো হয় না।
- দ্বিতীয় প্রতিপাদ্যটিও সত্য নয়, কারণ, পরিবেশের কিছুটা প্রভাব থাকলেও জীবের অন্তর্নিহিত চাহিদার দ্বারা কোনো নতুন অঙ্গ সৃষ্টি হতে পারে না। যেমন—একটি স্থলজ জীব খুব ভালোভাবে চাইলেও জলে বসবাসকারী জীবের অঙ্গ তাতে সৃষ্টি হয় না।
- ল্যামার্কের তৃতীয় প্রতিপাদ্যের কিছুটা সত্যতা রয়েছে, যদিও আমরা জানি যে, কোনো জীবের হৃৎপিণ্ড সবসময় সচল থাকলেও তা বড়ো ও সুগঠিত হয় না।
- ল্যামার্কের তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য বা ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ সর্বৈবভাবে সত্য নয়। অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ তখনই ঘটে যখন তা জননকোশের দ্বারা সঞ্চারিত হয়। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যানের পরীক্ষা উল্লেখ্য।
বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যান তাঁর জার্মপ্লাজমবাদে বলেন, জীবদ্দশায় অর্জিত গুণাবলি বংশপরম্পায় সঞ্চারিত হয় না। বংশগত বৈশিষ্ট্য কেবল জননকোশের মাধ্যমেই সঞ্চারিত হয়। তিনি পুরুষ ও স্ত্রী ইঁদুরের ল্যাজ পরপর 5 জনু ধরে 68 টি সাদা ইঁদুরের ক্ষেত্রে কেটে এবং তাদের মধ্যে জনন ঘটিয়ে প্রমাণ করেন, কোনো ক্ষেত্রেই ল্যাজহীন ইঁদুর জন্মায় না। ড্রসোফিলা মাছিকে অন্ধকার ঘরে রেখে 60 জনু ধরে তাদের ভিতর জনন ঘটানো হলেও দেখা যায়, কোনো ক্ষেত্রেই দৃষ্টিশক্তিহীন মাছি জন্মায় না। এইসব প্রমাণ থেকে ল্যামার্কের ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ সূত্রটি বাতিল বলে বিবেচিত হয়। এটি ল্যামার্কের মতবাদের প্রধান দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত।
4. বিবর্তনের সপক্ষে ডারউইনের মতবাদ সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উত্তর – বিবর্তন সম্পর্কিত ডারউইনের মতবাদ: ডারউইন 1859 খ্রিস্টাব্দে ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিন্স অফ ন্যাচারাল সিলেকশন’ (On the Origin of Species by means of Natural Selection) গ্রন্থে জৈব অভিব্যক্তি বা বিবর্তনের ব্যাখ্যা করে যে মতবাদ প্রকাশ করেন, তাকেই ডারউইনবাদ বা ডারউইনিজম বা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ বলা হয়। ডারউইনের মতবাদের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল—
- অত্যধিক মাত্রায় বংশবৃদ্ধি: ডারউইনের মতে জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য হল অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করা। ডারউইন লক্ষ করেন জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে ঘটে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—একটি স্ত্রী স্যামন মাছ একটি প্রজনন ঋতুতে প্রায় তিন কোটি ডিম পাড়ে। একটি ঝিনুক এক বছরে প্রায় 6 মিলিয়ন ডিম্বাণু উৎপাদন করে।
- সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান: জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যের উৎপাদন ও পৃথিবীর আয়তন বৃদ্ধি পায় না। জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও তার বসবাসের স্থান এবং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের সংকট দেখা দেবে।
- অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম: একদিকে অত্যধিক জন্মের বা বংশবৃদ্ধির হার, অন্যদিকে খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত হওয়ায় প্রতি মুহূর্তে জীবকে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। একে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম বলা হয়। এই সংগ্রাম মূলত তিন প্রকার –[i] অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম: খাদ্য, বাসস্থান প্রভৃতির জন্য একই প্রজাতির জীবগোষ্ঠীর মধ্যে সংগ্রাম হয় কারণ তারা একই প্রকৃতির খাদ্য ও বাসস্থান ব্যবহার করে।
[ii] আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম: খাদ্য, বাসস্থান প্রভৃতির জন্য বিভিন্ন প্রজাতির জীবগোষ্ঠীর মধ্যেও সংগ্রাম হয়ে থাকে।
[iii] পরিবেশগত আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম সংগ্রাম: প্রতিটি জীবকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরিবেশগত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। অত্যধিক বা কম আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিটি জীবকে সংগ্রাম করতে হয়।
- প্রকরণ বা ভ্যারিয়েশন ও তার বংশানুসরণ: ডারউইনের মতে, পৃথিবীতে যে-কোনো দুটি জীব কখনোই অবিকল একই রকমের হতে পারে না, কিছু না-কিছু পার্থক্য অবশ্যই থাকবে। এই পার্থক্যকেই ভ্যারিয়েশন বা প্রকরণ বা ভেদ বলে। অনুকূল প্রকরণ (favourable variation) জীবনসংগ্রামে জীবকে সাহায্য করে। অপরদিকে প্রতিকূল প্রকরণ জীবের বিলুপ্তির কারণ হয়।
- প্রাকৃতিক নির্বাচন ও যোগ্যতমের উদ্বর্তন: ডারউইনের মতে, জীবনসংগ্রামের ফলে উদ্ভূত প্রকরণগুলির মধ্যে কিছু অনুকূল ও কিছু প্রকরণ প্রতিকূল হয়। অনুকূল প্রকরণগুলি জীবকে অভিযোজনে সহায়তা করে কিন্তু প্রতিকূল প্রকরণগুলি অভিযোজনে সহায়তা করতে পারে না। ফলে প্রতিকূল প্রকরণযুক্ত জীব ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয় এবং অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীব পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য নির্বাচিত হয়। একে যোগ্যতমের উদ্বর্তন বলে। প্রকৃতি উপযুক্ত প্রকরণযুক্ত জীবকে টিকে থাকার জন্য নির্বাচন করে। একে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার সর্বপ্রথম ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ (survival of the fittest) কথাটি প্রস্তাব করেন। ডারউইন পরবর্তীকালে তাঁর তত্ত্বের মধ্যে কথাটি অত্যন্ত সংযতভাবে ব্যবহার করেন।
- নতুন প্রজাতির উৎপত্তি: একটি বিশেষ জীবগোষ্ঠীর মধ্যে অনুকূল প্রকরণগুলি পুঞ্জীভূত হওয়ায় বেশ কিছু প্রজন্ম পরে পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের মধ্যে অনেক বেশি বৈসাদৃশ্য দেখা দেয়। এর ফলে কালক্রমে একটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে।
[পরীক্ষায় সবকটি প্রতিপাদ্য বিষয় একসাথে নাও আসতে পারে।]
5. জিরাফের লম্বা গ্রীবা সম্পর্কে ল্যামার্ক ও ডারউইনের মতবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, একটি উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে ডারউইন প্রস্তাবিত প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো। (অংশ প্রশ্ন)
অথবা, জিরাফের গলা লম্বা সম্পর্কে মতবাদ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – জিরাফের লম্বা গ্রীবা সম্পর্কে ল্যামার্কের মত:
- ল্যামার্কের মতে, বহুকাল আগে জিরাফের গলা ছোটো ছিল।
- কিন্তু কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা আহরণের চেষ্টার ফলে গলাটি ক্রমশ লম্বা হয়ে গেছে। অর্থাৎ গলার অধিক ব্যবহারের এ ঘটনা ঘটে।
- এক প্রজন্মের জিরাফের অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। আবার এই প্রজন্মের অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।
- এইভাবে এই লম্বা গলার বৈশিষ্ট্যটি বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে আজকের লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের আবির্ভাব ঘটেছে।
জিরাফের লম্বা স্ত্রীরা সম্পর্কে ডারউইনের মত:
- চার্লস ডারউইনের মতে, জিরাফের পূর্বপুরুষের গলা ছিল বিভিন্ন আকৃতির, কারও লম্বা, কারও মাঝারি এবং কারও আবার ছোটো।
- খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সংগ্রাম লক্ষ করা যায়। লম্বা গ্রীবাযুক্ত জিরাফরা অধিক খাদ্যগ্রহণ করতে সক্ষম হওয়ায় অধিক প্রজননের সুযোগ পায় ফলে অনেক বেশি সংখ্যক অপত্য সৃষ্টি করে। অর্থাৎ তাদের প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটে। অন্যদিকে ছোটো গ্রীবাযুক্ত জিরাফরা খেতে না পেয়ে মারা যাওয়ায় বংশবিস্তারে সক্ষম হয় না।
- ফলে ক্রমশ লম্বা গ্রীবাযুক্ত জিরাফের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ যোগ্যতমের উদবর্তন ঘটে। একই সঙ্গে ছোটো গ্রীবার জিরাফরা সংখ্যায় কমতে থাকে।
- এই যোগ্যতম লম্বা গ্রীবাযুক্ত জিরাফগুলি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে।
6. প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে কী বোঝ? ডারউইন-এর তত্ত্বের ত্রুটিগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – প্রাকৃতিক নির্বাচন: প্রকৃতির দ্বারা জীবজগতের মধ্যে উপযুক্ত জীবের নির্বাচনকেই প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে। জীবনসংগ্রামে জয়ী যোগ্যতম জীবে উদ্বর্তিত হবার মাধ্যমেই এটি ঘটে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে জীবনসংগ্রামে জয়ী হতে হলে জীবকে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়। জীবের এই অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিবেশের সাপেক্ষে অনুকূল ও প্রতিকূল দুই-ই হতে পারে। অনুকূল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবগুলির পৃথিবীতে টিকে থাকে ও প্রকৃতিতে তাদেরই নির্বাচন ঘটে। প্রতিটি জীবের বৈশিষ্ট্যগত এই পার্থক্যকেই ডারউইন প্রকরণ বলেন। এই প্রসঙ্গে ডারউইন বলেন যে, অনুকূল প্রকরণ-সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হয়ে জীবনসংগ্রামে বেঁচে থাকে। পক্ষান্তরে, প্রতিকূল প্রকরণ-সমন্বিত জীবেরা অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়।
ডারউইনতত্ত্বের ত্রুটি:
- নতুন প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে ডারউইন প্রকরণের কথা বলেছেন কিন্তু প্রকরণের উৎপত্তি সম্পর্কে কোনো বৈজ্ঞানিক ধারণা দিতে পারেননি। তাঁর মতে, প্রকৃতি থেকে জীবের বিকাশকালে প্রকরণ সঞ্চারিত হয়। প্রকরণ সৃষ্টিতে জিনগত বৈচিত্র্য সঞ্চারণ সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল না।
- ডারউইন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকরণের ওপর গুরুত্ব দেন। অথচ নতুন প্রজাতির উৎপত্তির ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র প্রকরণের বিশেষ ভূমিকা নেই। ডারউইন মিউটেশনের ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি। মিউটেশনকে তিনি নিছকই ‘প্রকৃতির খেলা’ বলে উপেক্ষা করেছেন।
- প্রাকৃতিক নির্বাচনের থেকে প্রকরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রকরণ সৃষ্টির কারণগুলিই প্রধানত অভিব্যক্তির জন্য দায়ী, কিন্তু ডারউইন এ সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেননি। তিনি যোগ্যতমের উদ্বর্তন নিয়ে ভেবেছিলেন কিন্তু যোগ্যতমের আবির্ভাব নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
- ডারউইনের ধারণা অনুযায়ী কোনো জীবের বা জীবের কোনো অঙ্গের অতিবৃদ্ধি বিবর্তনের সহায়ক। কিন্তু বাস্তবে কোনো কোনো জীবে এরূপ অতিবৃদ্ধিযুক্ত অঙ্গ জীবের বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- ডারউইন দেহজ প্রকরণ এবং জননগত প্রকরণের সম্পর্কে কোনো ধারণা দেননি।
- অনেক সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বা অন্য কোনো কারণে অনুপযুক্ত জীবের সাথে সাথে যোগ্যতমেরাও মারা যায়, সুতরাং জীবের মৃত্যু বা বিলুপ্তিতে অনেক সময় প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যকরী হয় না।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. ল্যামার্ক কী জন্য বিখ্যাত?
উত্তর – অভিব্যক্তির প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন ল্যামার্ক। জৈব অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত ‘ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র’ এবং ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ মতবাদের জন্য ল্যামার্ক বিখ্যাত।
2. নিও-ল্যামার্কিজম কাকে বলে ?
উত্তর – ল্যামার্কের ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ মতবাদটির পরিবেশ-জীব আন্তঃক্রিয়ার আলোতে আধুনিক ব্যাখ্যাকে নয়া ল্যামার্কবাদ বা নিও-ল্যামাকিজম বলে। বিজ্ঞানী ওয়াডিংটন, প্যাকার্ড, স্পেনসার প্রমুখ বিজ্ঞানীরা হলেন নয়া-ল্যামার্কবাদী।
3. ব্যবহার ও অব্যবহারের তত্ত্ব বলতে কী বোঝ?
অথবা, বিবর্তন সম্পর্কিত ‘অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার’ সূত্রটি উল্লেখ করো।
উত্তর – ল্যামার্কের মতে, জীবদেহের কোনো অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ক্রমাগত ব্যবহৃত হতে থাকলে অঙ্গটি শক্তিশালী, সুগঠিত ও সবল হয়। পক্ষান্তরে, জীবদেহের কোনো অঙ্গ দীর্ঘদিন অব্যবহারের ফলে দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হয়ে অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন—ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে জিরাফের গ্রীবা ও অগ্রপদ লম্বা হয়েছে। অন্যদিকে, সাপের পূর্বপুরুষের ছোটো পা অব্যবহারের ফলে ক্ষয় পেয়ে অবলুপ্ত হয়েছে।
4.‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – পরিবেশের প্রভাবে অভিযোজনগতভাবে জীব যেসব বৈশিষ্ট্য ক্রমাগত সজ্ঞান প্রচেষ্টা ও অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহারের দ্বারা অর্জন করে। সেইসব বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয়। ল্যামার্কের এই মতবাদকে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ বলা হয়।
5. ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিপাদ্যের প্রধান দুটি বিষয় বর্ণনা করো।
উত্তর – ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিপাদ্যের প্রধান দুটি বিষয় হল-
- ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র: জীবদেহের কোনো একটি অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ও ক্রমাগত ব্যবহৃত হতে থাকলে সেটি ক্রমশ সুগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অপরদিকে কোনো অঙ্গের ব্যবহার না হলে সেটি দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হতে থাকে এবং অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন—জিরাফের আদি পূর্বপুরুষদের গলা বেঁটে ছিল। ক্রমাগত উঁচু গাছের পাতা সংগ্রহের চেষ্টায় তা লম্বা হয়েছে। অপরদিকে মানুষের পূর্বপুরুষের দেহের সক্রিয় ল্যাজ ক্রমাগত অব্যবহারে নিষ্ক্রিয় কক্সিসে পরিণত হয়েছে।
- অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ: জীব তার নিজের প্রচেষ্টায় জীবদ্দশায় কোনো অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার দ্বারা যে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তা পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। যেমন—বেঁটে গলাযুক্ত জিরাফের আদি পূর্বপুরুষরা উঁচু গাছের পাতা খাবার চেষ্টায় ক্রমশ লম্বা গলাযুক্ত হয়েছে এবং এই বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের ফলে বর্তমানের লম্বা গলাযুক্ত জিরাফ সৃষ্টি হয়েছে।
6. ল্যামার্কের ব্যবহার অব্যবহার সূত্রকে কোন্ বিজ্ঞানী কীভাবে ভ্রান্ত প্রমাণ করেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, ল্যামার্কের মতবাদের বিপক্ষে উদাহরণ দাও।
উত্তর – জার্মান বিজ্ঞানী অগস্ট ওয়াইসম্যান ইঁদুরের 5 জনুতে 68 টি ইঁদুরের ল্যাজ কেটে দেখান যে তা সত্ত্বেও পরবর্তী জনুতে ল্যাজযুক্ত ইঁদুরের জন্ম হয়। অর্থাৎ ল্যামার্কের ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্র যে ভ্রান্ত, তা তিনি পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করেন।
7. জার্মপ্লাজমবাদ কী?
উত্তর – বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যানের মতে, জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি দেহকোশের মাধ্যমে পরবর্তী বংশে সংজ্ঞারিত হয় না, বরং এই বৈশিষ্ট্যগুলি জননকোশের মাধ্যমে পুরুষানুক্রমে সঞ্চারিত হয়। এটিই জার্মপ্লাজমবাদ নামে পরিচিত।
৪. চার্লস ডারউইন কী জন্য বিখ্যাত?
উত্তর – চার্লস ডারউইন 1859 খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিন্স অফ ন্যাচারাল সিলেকশন’ (On the Origin of Species by Means of Natural Selection)-এ বিবর্তন সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ মতবাদ আলোচনা করেন। এই মতবাদের জন্যই চার্লস ডারউইন বিখ্যাত।
9. ‘জীবনসংগ্রাম’ বা ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – ডারউইন-এর মতে, জ্যামিতিক হারে সংখ্যাবৃদ্ধি এবং সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানের কারণে জীবেদের প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হয়। জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখার এই নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট লড়াইকে জীবনসংগ্রাম বলা হয়।
10. বিজ্ঞানী ডারউইনের মতে জীবনসংগ্রাম কয় প্রকার ও কী কী ?
উত্তর – বিজ্ঞানী ডারউইন প্রজাতির
জীবনসংগ্রামকে তিনভাগে ভাগ করেছেন— (1) অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম (নিজ প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে প্রতিযোগিতা), (2) আন্তঃপ্রজাতি
(ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে প্রতিযোগিতা) এবং (3) প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম।
11 অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কী ?
উত্তর – একই প্রজাতির জীবেদের খাদ্য, বাসস্থান ও প্রজননের প্রকৃতি এক হওয়ায়, একই প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে উপযুক্ত আহার, বাসস্থান এবং প্রজননের জন্য যে সংগ্রাম চলে, তাকে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে। যেমন—খাদ্যের জন্য একাধিক কুকুরের মধ্যে লড়াই, মানুষের মধ্যে যুদ্ধ প্রভৃতি।
12. আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কী ?
উত্তর – দুই বা ততোধিক প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে উপযুক্ত আহার ও বাসস্থানের জন্য অর্থাৎ নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য যে সংগ্রাম চলে তাকে আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে। যেমন—বিড়াল-ইঁদুর, সাপ-বেজি, মানুষ-পরজীবীর লড়াই।
13. “বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথচ হরিণ প্রচুর আছে। এমন একটি জঙ্গলে অন্য অভয়ারণ্য থেকে এসে কয়েকটি বাঘ ছাড়া হল।”― বেঁচে থাকতে গিয়ে ওই বাঘেদের যে যে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে তা ভেবে লেখো।
উত্তর – অভয়ারণ্য থেকে নিয়ে আসা বাঘেদের প্রধানত আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম ও পরিবেশগত সংগ্রাম-এ লিপ্ত হতে হবে।
- আন্তঃপ্রজাতি সংগ্ৰাম: হরিণ শিকারে জন্য বাঘগুলিতে আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে।
- পরিবেশগত সংগ্রাম: প্রথমত, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে বাঘেদের অসুবিধা হবে। দ্বিতীয়ত, হরিণ বেশি থাকায় জঙ্গলে ঝোপ-ঝাড়ের পরিমাণ কম থাকবে ফলে বাঘেদের আত্মগোপনের জায়গার অভাব হবে।
14. অনুকূল ও প্রতিকূল প্রকরণ কাকে বলে?
উত্তর – ডারউইনের তত্ত্ব অনুসারে, জীবের যেসব বৈশিষ্ট্য তাকে জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে সাহায্য করে, তাদের অনুকূল প্রকরণ বলে। অপরপক্ষে, জীবের যেসব বৈশিষ্ট্য জীবকে কোনোভাবেই জীবনসংগ্রামে টিকে থাকায় সাহায্য করে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাদের প্রতিকূল প্রকরণ বলে।
15. ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ডারউইনের মতে প্রতিটি জীবকে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। তাদের নির্দিষ্ট প্রকরণ বা ভ্যারিয়েশন থাকে। এদের মধ্যে অনুকূল প্রকরণগুলি জীবটিকে পরিবেশে অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, প্রকৃতি যেন সেই জীবগুলিকে নির্বাচিত করে। যেমন—লম্বা গলা-প্রকরণযুক্ত জিরাফগুলি বেশি খাদ্য পেতে সক্ষম বলে তারা প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হয়। পক্ষান্তরে প্রতিকূল প্রকরণযুক্ত জীবগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে প্রকৃতিতে অনুকূল প্রকরণ জীবগুলি প্রতিষ্ঠা পায়, অর্থাৎ তাদের প্রাকৃতিক নির্বাচন হয় (ডারউইন)। উল্লেখ্য, বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার একে ‘যোগ্যতমের উদ্দ্বর্তন’ বলে ব্যাখ্যা করেন।
16. ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের ঘটনা ও সিদ্ধান্তগুলি একটি সারণি আকারে লেখো।
উত্তর – ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের ঘটনা ও সিদ্ধান্তগুলি নীচে সারণি আকারে দেখানো হল—
17. ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার ‘যোগ্যতমের উদবর্তন’ (survival of the fittest) কথাটি প্রথম প্রবর্তন করেন। মূলত ডারউইন তত্ত্বের প্রাকৃতিক নির্বাচন এই ধারণাটি তিনি প্রণয়ন করেন। জীবন সংগ্রামে অনুকূল প্রকরণগুলি প্রজনন দ্বারা ক্রমশ ছড়িয়ে যায়। পক্ষান্তরে প্রতিকূল প্রকরণগুলি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়। অর্থাৎ যোগ্যতম জীব প্রকৃতিতে টিকে থাকে।
আধুনিক বিজ্ঞানীরা এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন না। কারণ জীবের নির্বাচনের জন্য উদ্বর্তন বা বেঁচে থাকা (survial) একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নয়। নির্বাচন নানাভাবে হয়ে থাকে।
18. যোগ্যতমের উদ্বর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন কীভাবে ঘটে ?
উত্তর – বিজ্ঞানী ডারউইন জীবের অভিব্যক্তির ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক নির্বাচন-এর ধারণা প্রণয়ন করেন। জীবদেহে নানা বৈচিত্র্য বা প্রকরণ দেখা যায়। তাঁর মতে, অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামের সময় অনুকুল প্রকরণ যেসব জীবে দেখা যায়, তারাই কেবল পৃথিবীতে বেঁচে থাকে এবং নতুন জীব সৃষ্টিতে সাহায্য করে। প্রকৃতিই যেন তাদের নির্বাচন করে বা বেছে নেয় এবং তার ফলে তারা টিকে থাকে। এই নির্বাচনকে ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন।
এই ঘটনাকে বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার যোগ্যতমের উদ্বর্তন অর্থাৎ যোগ্যতম জীবের আবির্ভাব তথা নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন।
19. নিও-ডারউইনিজম বা নয়া ডারউইনবাদ কাকে বলে?
উত্তর – পরিব্যক্তি তত্ত্ব ও মেন্ডেলীয় জেনেটিক্স দ্বারা ডারউইনের মতবাদটির আধুনিক ব্যাখ্যাকে বলা হয় নয়া ডারউইনবাদ বা নিও-ডারউইনিজম। মরগ্যান, দ্য ভ্রিস, ডবজ্যানস্কি, হ্যালডেন প্রভৃতি বিজ্ঞানীরা এই মতবাদ সমর্থন করেন।
20. মিউটেশন কাকে বলে ? মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
উত্তর – মিউটেশন: ক্রোমোজোমে উপস্থিত কোনো জিনের গঠনের আকস্মিক ও স্থায়ী পরিবর্তনকে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি বলে।
প্রবক্তা: মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন হুগো দ্য ভিস।
21. ডারউইনবাদ, ল্যামার্কবাদের থেকে কোন বিষয়ে অভিব্যক্তির উন্নত ব্যাখ্যা দেয়?
উত্তর – যে যে বিষয়ে ডারউইনবাদ, ল্যামার্কবাদের থেকে অভিব্যক্তির উন্নত ব্যাখ্যা দেয়, সেগুলি হল— (1)ডারউইনের তত্ত্ব প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত নানা উদাহরণ দ্বারা সমষ্টিত হয়েছিল। ল্যামার্কের মতবাদ অনেকাংশেই তাত্ত্বিক, তাই ওয়াইসম্যান ও অন্যান্যদের পরীক্ষা দ্বারা ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ অংশ ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। (2) ডারউইন প্রকরণ সৃষ্টি ও তার বংশানুসরণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর তত্ত্ব প্রকাশের সময়কালেই মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষা শুরু করেন। পরে তা আবিষ্কৃত হয় এবং আমরা জানতে পারি যে জিনই প্রকরণ সৃষ্টি ও পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয়। অর্থাৎ তাঁর তত্ত্বের ব্যাখ্যা না হওয়া অংশগুলি পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিক আলোকে বর্ণিত হয়।
22. পার্থক্য লেখো: ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদ।
উত্তর – ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদ-এর পার্থক্যগুলি হল—
বিষয় |
ল্যামার্কবাদ |
ডারউইনবাদ |
1. মূল বক্তব্য |
অর্জিত চরিত্রের বংশানুসরণ ঘটে, ফলে নতুন জীবের উৎপত্তি হয়। |
প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে নতুন জীবের উৎপত্তি ঘটে। |
2. নতুন বৈশিষ্ট্যের উৎপত্তি |
পরিবেশ পরিবর্তনে নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়, ফলে নতুন বৈশিষ্ট্য আগত হয়। |
প্রকরণ সৃষ্টি দ্বারা নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা দেয়। |
3. নতুন জীব সৃষ্টির কারণ |
ব্যবহার ও অব্যবহারের ফলে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে। |
অনুকূল প্রকরণের প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটে ও নতুন জীব সৃষ্টি হয় । |
4. তত্ত্বের বর্তমান গ্রহণযোগ্যতা |
বর্তমানে তত্ত্বটি পরিত্যক্ত হয়েছে। কেবল অর্জিত চরিত্রের বংশানুসরণ অংশটি কিছু অংশে সত্য। |
অভিব্যক্তির আধুনিক ব্যাখ্যায় এর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। |
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. ‘ফিলোজফি জুলজিক’ নামক গ্রন্থের লেখক হলেন—
(a) হ্যালডেন
(b) ওয়াইসম্যান
(c) ল্যামার্ক
(d) দ্য ভ্রিস
উত্তর – (c) ল্যামার্ক
2. ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’-এর প্রণেতা কে?
(a) ল্যামার্ক
(b) ডারউইন
(c) হুগো দ্য ভ্রিস
(d) রাসেল ওয়ালেস
উত্তর – (a) ল্যামার্ক
3. ল্যামার্কের তত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দগুচ্ছটি সঠিকভাবে নিরুপণ করো।
(a) অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম
(b) প্রকরণের উৎপত্তি
(c) অর্জিত গুণের বংশানুসরণ
(d) প্রাকৃতিক নির্বাচন
উত্তর – (c) অর্জিত গুণের বংশানুসরণ
4. ব্যবহার ও অব্যবহার ধারণা প্রবর্তন করেন—
(a) ল্যামার্ক
(b) হুগো দ্য ভ্রিস
(c) ডারউইন
(d) ওপারিন
উত্তর – (a) ল্যামার্ক
5. ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে ল্যামার্কের তত্ত্বের ভুল প্রমাণ করেন—
(a) মেন্ডেল
(b) জেনোফেন
(c) হুগো দ্য ভিস
(d) ওয়াইসম্যান
উত্তর – (d) ওয়াইসম্যান
6. জার্মপ্লাজম তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন—
(a) গোল্ডস্মিথ
(b) স্পেনসার
(c) দ্য ভ্রিস
(d) ওয়াইসম্যান
উত্তর – (d) ওয়াইসম্যান
7. ‘অস্তিত্বের জন্য জীবনসংগ্রাম’ মতবাদের প্রবক্তা হলেন—
(a) বিজ্ঞানী ডারউইন
(b) বিজ্ঞানী ল্যামার্ক
(c) বিজ্ঞানী দ্য ভ্রিস
(d) বিজ্ঞানী ক্রুজার
উত্তর – (a) বিজ্ঞানী ডারউইন
৪. নীচের কোন্টি একই খাদ্যের জন্য অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম?
(a) শকুন ও হায়েনার মধ্যে সংগ্রাম
(b) ইগল ও চিলের মধ্যে সংগ্রাম
(c) পুকুরের রুইমাছদের মধ্যে সংগ্রাম
(d) বক ও মাছরাঙার মধ্যে সংগ্রাম
উত্তর – (c) পুকুরের রুইমাছদের মধ্যে সংগ্রাম
9. নীচের কোনটি আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রামকে নির্দেশ করে তা শনাক্ত করো।
(a) মশার লার্ভা খাওয়ার জন্য গাপ্পি মাছদের মধ্যে সংগ্রাম
(b) ইঁদুর ধরে খাওয়ার জন্য সাপ ও প্যাঁচার মধ্যে সংগ্রাম
(c) একই জায়গায় ঘাস খাওয়ার জন্য একদল হরিণীদের মধ্যে সংগ্রাম
(d) হরিণ শিকারের জন্য একটি জঙ্গলের বাঘদের মধ্যে সংগ্রাম
উত্তর – (b) ইঁদুর ধরে খাওয়ার জন্য সাপ ও প্যাঁচার মধ্যে সংগ্রাম
10. প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় —
(a) অত্যধিক বিশিষ্টতা
(b) বিচ্ছিন্ন প্রকরণ
(c) যোগ্যতমের উদ্বর্তন
(d) লুপ্তপ্রায় অঙ্গ
উত্তর – (c) যোগ্যতমের উদ্বর্তন
11. ডারউইন তত্ত্বের মূল বক্তব্য হল—
(a) পৃথক্ভবন
(b) স্বাধীন বণ্টন
(c) প্রাকৃতিক নির্বাচন
(d) অর্জিত গুণের বংশানুসরণ
উত্তর – (c) প্রাকৃতিক নির্বাচন
12. যোগ্যতমের উদ্বর্তনের জন্য দায়ী হল —
(a) অনুকূল প্রকরণ
(b) ত্রুটিমুক্ত প্রকরণ
(c) পূর্বপুরুষের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য
(d) প্রাকৃতিক নির্বাচন
উত্তর – (d) প্রাকৃতিক নির্বাচন
13. ডারউইনের মতবাদের সপক্ষে নিম্নলিখিত কোন্ বক্তব্যটি সঠিক নয়?
(a) নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রকরণগুলি পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়
(b) অনুকূল প্রকরণ যুক্ত জীবেরা প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হয়
(c) মিউটেশন বা পরিব্যক্তির ফলে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে
(d) জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি
উত্তর – (c) মিউটেশন বা পরিব্যক্তির ফলে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে
14. এর মধ্যে কোন্টি প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের বিষয় নয়?
(a) প্রাকৃতিক নির্বাচন
(b) যোগ্যতমের উদ্বর্তন
(c) অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্র
(d) অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম
উত্তর – (c) অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্র
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. ল্যামার্ক তাঁর মতবাদ যে পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেন তার নাম কী ?
উত্তর – ‘ফিলোজফি জুলজিক’।
2. নিওল্যামার্কিজম প্রবর্তনকারী একজন বিজ্ঞানীর নাম লেখো।
উত্তর – অগস্ট হারবার্ট স্পেনসার।
3. ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ মতবাদটি কার ?
উত্তর – ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ মতবাদটি ল্যামার্ক-এর।
4. ‘ব্যবহার ও অব্যবহার’ মতবাদটি কার ?
উত্তর – ‘ব্যবহার ও অব্যবহার’ মতবাদটি বিজ্ঞানী ল্যামাক-এর।
5. ল্যামার্কের মতে জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার কারণ কী ?
উত্তর – জীবের প্রচেষ্টা ও অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ।
6. ল্যামার্কবাদের একজন সমালোচকের নাম লেখো।
উত্তর – বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যান।
7. ওয়াইসম্যান 1892 খ্রিস্টাব্দে কোন্ তত্ত্ব প্রকাশ করেন?
উত্তর – জার্মপ্লাজম তত্ত্ব ৷
৪. যে দ্বীপে ডারউইন ফিঞ ও অন্যান্য পাখি পর্যবেক্ষণ করেন তার নাম কী?
উত্তর – গ্যালাপাগোস।
9. জীবজগতে মাত্রাতিরিক্ত জন্মহারের পাশাপাশি সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানে যে অবস্থার সৃষ্টি করে ডারউইন তাকে কী অ্যাখ্যা দিয়েছেন?
উত্তর – অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম।
10. ডারউইন রচিত পুস্তকের নাম কী?
অনুরূপ প্রশ্ন, কোন্ গ্রন্থে ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ তত্ত্ব প্রকাশ করেন।
উত্তর – ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন’।
11. ডারউইনবাদ অনুযায়ী প্রকরণ সৃষ্টির কারণ কী ?
উত্তর – ডারউইন প্রকরণ সৃষ্টির কারণ যুক্তিসংগতভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি, পরিবেশগত কারণে জীবের বিকাশকালে প্রকরণ সৃষ্টি হয় বলে তিনি মনে করেন।
12. ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ কার মতবাদ?
উত্তর – ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ চার্লস ডারউইন-এর মতবাদ।
13. যোগ্যতমের উদ্বর্তনের মাপকাঠি কী?
উত্তর – অনুকূল প্রকরণ ও প্রাকৃতিক নির্বাচন।
14. যোগ্যতমের উদ্বর্তন মতবাদটির প্রথম প্রস্তাবনা করেন কোন্ বিজ্ঞানী?
উত্তর – হারবার্ট স্পেনসার।
15. ডারউইনবাদের একটি ত্রুটি লেখো।
উত্তর – ডারউইনবাদ প্রকরণ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেনি, তা ছাড়া মিউটেশনকে ‘প্রকৃতির খেলা’ বলে ডারউইন এড়িয়ে গেছিলেন।
16. অভিব্যক্তির অন্যতম একটি কারণ লেখো।
উত্তর – মিউটেশন বা পরিব্যক্তি।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. জৈব অভিব্যক্তির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ দেন বিজ্ঞানী ……….ও ডারউইন।
উত্তর – ল্যামার্ক
2. ল্যামার্ক 1809 খ্রিস্টাব্দে …….. বইটি প্রকাশ করেন।
উত্তর – ফিলজফি জুলজিক
3. ……… -এর মতে দীর্ঘকাল ধরে জিরাফের লম্বাতর গাছের পাতা খাওয়ার চেষ্টার বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়। ফলে বর্তমানকালে জিরাফের গলা লম্বা হয়।
উত্তর – ল্যামার্ক
4. বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে যে, অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে …….. দ্বারা।
উত্তর – জননকোশ
5. 1831 খ্রিস্টাব্দে ডারউইন ……… নামক জাহাজে করে সমুদ্রযাত্রায় বের হন।
উত্তর – HMS বিগল
6. ডারউইন ……… পাখির ঠোঁটের গঠনবৈচিত্র্য গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে লক্ষ করেছিলেন।
উত্তর – ফিঞ
7. আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস ও ………. মিলিতভাবে অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত একটি আলেখ্য তৈরি করেন।
উত্তর – চার্লস ডারউইন
৪. খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীবের মধ্যে যে সংগ্রাম দেখা যায় তাকে ……… সংগ্রাম বলে।
উত্তর – আন্তঃপ্রজাতি
9. খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য একই প্রজাতিভুক্ত জীবের মধ্যে যে সংগ্রাম দেখা যায় তাকে ……… সংগ্রাম বলে।
উত্তর – অন্তঃপ্রজাতি
10. ডারউইনের মতে দুটি জীবের মধ্যে যে পার্থক্য তা ……… নামে পরিচিত।
উত্তর – প্রকরণ
11. ডারউইন ছোটো ছোটো অস্থায়ী ……… -এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
উত্তর – প্রকরণ
12. …….. -এর মতে লম্বা গলার জিরাফগুলি প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয় ও জিরাফের লম্বা গলা বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে।
উত্তর – ডারউইন
13. ডারউইন …….. -কে ‘প্রকৃতির খেলা’ (freak of nature) বলে উপেক্ষা করেছিলেন।
উত্তর – মিউটেশন
SUB-TOPIC 1.3 অভিব্যক্তির মতবাদের সপক্ষে প্রমাণ
বিষয়সংক্ষেপ
- অভিব্যক্তি যে ঘটে, তার সপক্ষে নানা প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল জীবাশ্ম। বিভিন্ন সময়কালে একই জীবের নানা জীবাশ্ম থেকে আমরা সেই জীবটির ক্রমিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারি।
- ঘোড়ার ক্রমিক জীবাশ্মগুলি হল ইওহিপ্পাস বা হাইর্যাকোথেরিয়াম (ঊষাকালের ঘোড়া) → মেসোহিপ্পাস (অন্তবর্তী ঘোড়া) → মেরিচিপ্পাস (রোমন্থক ঘোড়া) → প্লিওহিপ্পাস → ইকুয়াস বা আধুনিক ঘোড়া। দীর্ঘ সময়কালে ঘোড়ার উচ্চতা ও আকারের ক্রমবৃদ্ধি, তৃতীয় আঙুলের বৃদ্ধি ও ক্ষুরে পরিবর্তন প্রভৃতি লক্ষণীয়।
- যেসব অঙ্গের উৎপত্তি এক, কিন্তু কাজ ভিন্ন তাদের সমসংস্স্থ অঙ্গ বা হোমোলোগাস অঙ্গ বলে। যেমন—তিমির ফ্লিপার, মানুষের হাত, বাদুড়ের ডানা। এগুলি অপসারী অভিব্যক্তি, অর্থাৎ ভিন্ন পরিবেশে ছড়িয়ে গিয়ে অভিযোজিত হওয়াকে সূচিত করে।
- যেসব অঙ্গের উৎপত্তি আলাদা, কিন্তু কাজ এক, তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বা অ্যানালোগাস অঙ্গ বলে। যেমন—পাখির ডানা ও পতঙ্গের ডানা। এরা অভিসারী অভিব্যক্তি, অর্থাৎ একই পরিবেশে থাকার জন্য অভিযোজনকে সূচিত করে।
- কিছু অঙ্গ পূর্বপুরুষে সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে ক্ষয়প্রাপ্ত অঙ্গে পরিণত হয়েছে। এদের লুপ্তপ্রায় বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে। যেমন— মানুষের অ্যাপেনডিক্স, কক্সিস ইত্যাদি।
- মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের গঠন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, অভিব্যক্তির পথে বিভিন্ন শ্রেণিতে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ সংখ্যা বেড়ে তা ক্রমশ জটিল হয়েছে। এটিও অভিব্যক্তি নির্দেশ করে।
- বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রূণ পর্যালোচনা করলে তাদের সবার ভ্রূণে গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ ও যুগ্ম ফুলকাথলি এবং মায়োটম পেশি লক্ষ করা যায়, অর্থাৎ প্রাণীগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. ‘জীবাশ্ম’ বা ‘ফসিল’ কাকে বলে? ঘোড়ার বিবর্তনঘটিত প্রমাণের ক্ষেত্রে জীবাশ্মের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর – জীবাশ্ম : পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রাচীন পাললিক শিলাস্তরে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষিত অধুনালুপ্ত উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীদেহের সামগ্রিক বা আংশিক প্রস্তরীভূত রূপ বা ছাপকে জীবাশ্ম বা ফসিল বলে। যেমন— Archaeopteryx (আরকিওটেরিক্স) এর জীবাশ্ম।
ঘোড়ার বিবর্তনঘটিত প্রমাণের ক্ষেত্রে জীবাশ্মের গুরুত্ব: জীবাশ্ম অভিব্যক্তি বা বিবর্তনের সপক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। বিশেষত ঘোড়ার জীবাশ্মের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এক্ষেত্রে প্রতিটি যুগের ঘোড়ার জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এই কারণে ঘোড়ার উৎপত্তি ও ক্রমবিবর্তন সম্পূর্ণরূপে জানা সম্ভব হয়েছে। এই জীবাশ্মগুলি থেকে জানা যায় যে আজ থেকে প্রায় 55 মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে প্রথম ঘোড়ার আবির্ভাব হয়। এর নাম ছিল Eohippus (ইওহিপ্পাস)। একে ‘ঊষাকালের ঘোড়া’ বলা হয়। এরা আকারে ছোটো ছিল এবং এদের পা ক্ষুদ্র ও আঙুলযুক্ত ছিল। তৎকালীন বনজ পরিবেশে অভিযোজনের জন্য তাদের আকৃতি এরূপ ছিল। এরপর, ধীরে ধীরে তৃণভূমি সৃষ্টি হয় ও ঘোড়ার বাসস্থান পরিবর্তিত হয়। এর সাথে সাথে ঘোড়ার বিবর্তন হতে থাকে। তারা ক্রমশ আকারে বড়ো ও সবল পা-যুক্ত হয়ে ওঠে। ঘোড়ার বিবর্তনের ক্রম হল—
ইওহিপ্পাস → মেসোহিপ্পাস → মেরিচিগ্লাস → প্লিওহিপ্পাস → ইকুয়াস
জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণ করে ঘোড়ার বিবর্তনঘটিত যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় তা এখানে আলোচনা করা হল— (1) দেহ আকৃতির ক্রমিক বৃদ্ধির মাধ্যমে মাত্র 11 ইরি (28cm) Eohippus (ইওহিপ্পাস) থেকে প্রায় 60 ইঞ্জির(150 cm) Equus (ইকুয়াস)-এর উৎপত্তি হয়েছে। (2) দৌড়ের জন্য অগ্রপদ এবং পশ্চাপদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়েছে। (3) উভয় পদেরই আঙুলের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ও একটি আঙুলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বৃদ্ধি পেয়ে তা ক্ষুরে পরিণত হয়েছে। (4) গ্রীবার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়েছে। (5) মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অংশের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ও প্রাণীটি বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে। দাঁতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হল—নিম্নচূড় (low crowned) পেষকদন্ত (molar teeth) উচ্চচূড়ে (high crowned) রূপান্তরিত হয়ে ঘাস খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠেছে।
এইভাবে জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘোড়ার বিবর্তন সম্পর্কিত প্রমাণ পাওয়া যায়। এর থেকে আরও জানা যায়, কীভাবে আদিকালের ঘোড়া থেকে আধুনিক ঘোড়ার উৎপত্তি হল এবং কীভাবে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে তাদের বিবর্তন ঘটল।
2. ঘোড়ার বিবর্তন সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, অভিব্যক্তির সপক্ষে জীবাশ্মঘটিত প্রমাণরূপে ঘোড়ার উদাহরণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ঘোড়ার বিবর্তন: ঘোড়ার বিবর্তন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়—ঘোড়া তার প্রথম পূর্বপুরুষ Eohippus (ইওহিপ্পাস) থেকে পরপর আরও তিনটি দশা অতিক্রম করে আধুনিক কালের ঘোড়া অর্থাৎ Equus (ইকুয়াস) এ উপনীত হয়েছে। প্রতিটি যুগের ঘোড়ার জীবাশ্ম পাওয়া গেছে বলে এদের বিবর্তনের সম্পূর্ণ ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে। নীচে বিবর্তনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রাপ্ত ঘোড়ার জীবাশ্মের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল।

দশা |
বৈশিষ্ট্য |
Eohippus (ইওহিপ্পাস) |
ঘোড়ার আদি পূর্বপুরুষ। প্রায় 55 মিলিয়ন বছর আগে (ইওসিন ইপকে) এই ঘোড়া পৃথিবীতে বসবাস করত। এদের উচ্চতা ছিল প্রায় 11-12 ইঞ্চি (28cm)। এদের সামনের পায়ে 4টি ও পেছনের পায়ে 3টি করে আঙুল ছিল। এদের শরীরের তুলনায় মাথা ও হাত-পা ছোটো ছিল। এদের ঊষাকালের ঘোড়া বলা হয়। |
Mesohippus (মেসোহিপ্পাস) |
Eohippus (ইওহিপ্পাস)-এর পরে এসেছিল Mesohippus (মেসোহিপ্পাস), প্রায় 40 মিলিয়ন বছর আগে (অলিগোসিন ইপকে)। এদের উচ্চতা ছিল প্রায় 24 ইঞ্চি (60cm)। এইসময় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়, তাই দৌড়োনোর সুবিধার জন্য এদের অগ্রপদের একটি আঙুল হ্রাস পায়। অর্থাৎ এদের সামনের এবং পেছনের পায়ে 3টি করে আঙুল ছিল। এই আঙুলগুলি মাটি স্পর্শ করতে পারত। এদের অন্তর্বর্তী ঘোড়া বলা হয়। |
Merychipuus (মেরিচিপ্পাস) |
Mesohippus (মেসোহিপ্পাস) এর পরে প্রায় 25 মিলিয়ন বছর আগে(মায়োসিন ইপকে) ঘোড়ার যে পূর্বপুরুষটি এসেছিল তার নাম Merychipuus (মেরিচিপ্পাস)। এদের উচ্চতা ছিল প্রায় 40 ইঞ্জি (100cm)। এদের সামনের এবং পেছনের পায়ে 3টি করে আঙুল থাকলেও, শুধু মাঝের আঙুলই মাটি স্পর্শ করত না। এদের পায়ের তৃতীয় আঙুলটি লম্বা ও চওড়ায় বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষুরের সৃষ্টি হয়। এদের গ্রীবা অংশও বৃদ্ধি পায়। এদের রোমন্থক ঘোড়া বলা হয়। |
Pliohippus (প্লিওহিপ্পাস) |
Merychipuus (মেরিচিপ্পাস) -এর পরে প্রায় 10 মিলিয়ন বছর পূর্বে (প্লিওসিন ইপকে) এসেছিল Pliohippus (প্লিওহিপ্পাস)। এদের উচ্চতা ছিল প্রায় 50 ইঞ্জি (108cm)। এদের উভয় পায়ে 3টি করে আঙুল থাকলেও সবকটি আঙুল মাটি স্পর্শ করতে পারত না। মাঝের আঙুলটি বৃদ্ধি পায় এবং বাকি আঙুলগুলি ক্ষুদ্র হয়ে এদের তৃতীয় অঙুলের দু-পাশে বিন্যস্ত থাকত। এরা প্রথম এক আঙুলযুক্ত ঘোড়া। এরা আকারে ছোটো হলেও প্রায় বর্তমান ঘোড়ার মতো দেখতে ছিল। |
Equus (ইকুয়াস) |
Pliohippus (প্লিওহিপ্পাস) পর্যায়ের পরে আজ থেকে 10 লক্ষ বছর পূর্বে (প্লিস্টোসিন ইপকে) আবির্ভূত হয়েছে Equus (ইকুয়াস)। এদের আধুনিক ঘোড়া বলা হয়। এদের উচ্চতা প্রায় 60 ইঞ্চি (150cm)। এদের পাশের আঙুলগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছোটো হয়েছে। এদের পায়ে ক্ষুর দ্বারা আবৃত একটি মাত্র শক্ত আঙুল দেখা যায়। এদের গ্রীবার দৈর্ঘ্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। |
3. প্রাণী ও উদ্ভিদের সমসংস্থ অঙ্গ কীভাবে জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে তা বুঝিয়ে দাও।
অংশ প্রশ্ন, মানুষের হাত, ঘোড়ার অগ্রপদ, পাখির ডানা, তিমির ফ্লিপারকে সমসংস্থ অঙ্গ কেন বলে?
উত্তর – জৈব অভিব্যক্তির সমসংস্থ অঙ্গঘটিত প্রমাণ: যেসব অঙ্গ উৎপত্তিগত ও গঠনগত দিক থেকে এক হলেও কার্যগত দিক থেকে ভিন্ন তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে।
- প্রাণীর ক্ষেত্রে সমসংস্থ অঙ্গ: বাদুড়, তিমি, ঘোড়া বা বিড়াল, মানুষ প্রভৃতি প্রাণীর অগ্রপদের কাজ বিভিন্ন প্রকার। কিন্তু এদের প্রত্যেকের অগ্রপদ গঠনগতভাবে মোটামুটিভাবে একই ধরনের। বিভিন্ন পরিবেশে থাকার দরুন এদের অগ্রপদের পরিবর্তন ঘটেছে। পাখির বা বাদুড়ের অগ্রপদ (ডানা) ওড়ার জন্য, তিমির অগ্রপদ (ফ্লিপার) সাঁতার কাটার জন্য, ঘোড়া বা বিড়ালের অগ্রপদ দৌড়োনোর ও হাঁটার জন্য, মানুষের অগ্রপদ (হাত) সৃজনশীল কাজের জন্য বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এদের গঠন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রত্যেক অগ্রপদেই হিউমেরাস, রেডিয়াস ও আলনা, কারপাল, মেটাকারপাল, ফ্যালানজেস ইত্যাদি অস্থি আছে। এ ছাড়া অগ্রপদের নির্দিষ্ট পেশি, স্নায়ুবিন্যাসও প্রত্যেকের ক্ষেত্রে একইরকম হয়ে থাকে। এর থেকে প্রমাণিত হয়, সব মেরুদণ্ডী প্রাণী একই প্রকার উদ্বংশীয় জীব থেকে সৃষ্ট হয়েছে। নীচে বিভিন্ন প্রাণীর সমসংস্থ অঙ্গগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ সারণির আকারে দেওয়া হল।
- উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সমসংস্য অঙ্গ: উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সমসংস্থ অঙ্গগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ সারণির আকারে দেওয়া হল।
উপরোক্ত উদাহরণগুলি থেকে বোঝা যায় বিভিন্ন জীবগুলি উৎপত্তিগতভাবে এক হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার কারণে তাদের কাজ ও বহিরাকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, একই উদ্বংশীয় জীব থেকে উদ্ভূত জীবগোষ্ঠী বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজনের কারণে কার্যগত ও বাহ্যিক গঠনগত দিক থেকে বিভিন্ন হয়। অর্থাৎ, সমসংস্থ অঙ্গ সাধারণভাবে অপসারী বিবর্তনকে চিহ্নিত করে।
4. সমবৃত্তীয় অঙ্গ কীভাবে জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদাহরণের সাহায্যে লেখো।
উত্তর – জৈব অভিব্যক্তির সমবৃত্তীয় অঙ্গঘটিত প্রমাণ: যেসব অঙ্গ উৎপত্তি ও গঠনগত দিক থেকে ভিন্ন হলেও কার্যগত দিক থেকে এক, তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলা হয়।
- প্রাণীর সমবৃত্তীয় অঙ্গ: পতঙ্গ ও পাখির ডানা ওড়ার জন্য ব্যবহৃত হলেও এদের উৎপত্তি ও গঠনগত দিক থেকে কোনো সাদৃশ্য নেই। পতঙ্গের ডানা কিউটিকল বা বহিঃকঙ্কালের প্রসারিত অংশ, অন্যদিকে পাখির ডানা পালক আবৃত অগ্রপদ বিশেষ। প্রাণীর অপর একটি সমবৃত্তীয় অঙ্গ হল মৌমাছি ও কাঁকড়াবিছের হুল। কার্যগতভাবে এরা উভয়ক্ষেত্রেই আত্মরক্ষায় সাহায্য করে, তবে এদের গঠন পৃথক। মৌমাছির হুল পরিবর্তিত ওভিপোজিটার ও কাঁকড়াবিছের হুল হল অন্তিম উদর খণ্ডকের রূপান্তর।
- উদ্ভিদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ: মটর গাছের পাতার আকর্ষ ও ঝুমকোলতার কাণ্ডের আকর্ষ একইরকম কাজ করলেও এরা উৎপত্তি ও গঠনগতভাবে ভিন্ন। মটর গাছের আকর্ষ রূপান্তরিত পাতা ও ঝুমকোলতার আকর্ষ হল রূপান্তরিত শাখা। অর্থাৎ একই পরিবেশে বসবাস ও একই ক্রিয়াকলাপের
জন্য এরূপ সমবৃত্তীয় অঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে বেল ও ফণীমনসার আত্মরক্ষায় সাহায্য করলেও প্রথমটি পরিবর্তিত শাখা ও দ্বিতীয়টি পাতার রূপান্তর বিশেষ। সারণির আকারে বিভিন্ন উদ্ভিদের সমবৃত্তীয় অঙ্গগুলি দেওয়া হল।
উপরোক্ত উদাহরণগুলি থেকে বোঝা যায় যে নানারকম জীব একই পরিবেশে একইরকমভাবে অভিযোজিত হয় ও তার ফলে তাদের মধ্যে আপাত কার্যগত মিল সৃষ্টি হয়। সমবৃত্তীয় অঙ্গ অভিসারী বিবর্তনকে প্রমাণ করে।
5. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কাকে বলে? বিবর্তনের সপক্ষে নিষ্ক্রিয় বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গঘটিত প্রমাণ আলোচনা করো।
উত্তর – নিষ্ক্রিয় অঙ্গ: যে সমস্ত অঙ্গ কোনো জীবের পূর্বপুরুষের দেহে এবং তাদের নিকট সম্পর্কিত অন্য জীবের দেহে সক্রিয় এবং কর্মক্ষম অবস্থায় থাকলেও, সংশ্লিষ্ট জীবটির দেহে ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় ও ক্ষয়প্রাপ্ত অঙ্গে পরিণত হয়েছে, তাদের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বলে।
বিবর্তনের সপক্ষে নিষ্ক্রিয় অঙ্গঘটিত প্রমাণ:
- ঘোড়া, গিনিপিগ প্রভৃতি তৃণভোজী প্রাণীর পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত সিকাম একটি সক্রিয় অঙ্গ যা মানুষের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রাকার নিষ্ক্রিয় ভারমিফর্ম অ্যাপেনডিক্সে পরিণত হয়েছে। সিকামের কাজ হল তৃণভোজী প্রাণীদের সেলুলোজ-জাতীয় খাদ্যের পরিপাকে সাহায্য করা। মানুষের খাদ্যে সেলুলোজের পরিমাণ কম থাকায় অব্যবহারজনিত কারণে এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
- বানরের দেহের সক্রিয় ল্যাজ মানুষের ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের শেষপ্রান্তে ক্ষুদ্র ও নিষ্ক্রিয় কক্সিস রূপে অবস্থান করে।
- মানুষের চোখের উপপল্লব বা তৃতীয় পল্লব, বহিঃকর্ণের পেশি, উদরের খণ্ডিত পেশি, তৃতীয় পেষক দন্ত প্রভৃতি হল আরও কয়েকটি লুপ্তপ্রায় অঙ্গের উদাহরণ।
- পাখিদের মধ্যেও লুপ্তপ্রায় অঙ্গের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন—উটপাখি, এমু, কিউই প্রভৃতি পাখির ডানা নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
- আদা, হলুদ প্রভৃতির উদ্ভিদের ভূনিম্নস্থ কাণ্ডের শল্কপত্র, কালকাসুন্দা উদ্ভিদের বন্ধ্যা পুংকেশর বা স্ট্যামিনোড হল উদ্ভিদের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ। নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উপস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে নিষ্ক্রিয় অঙ্গযুক্ত জীব, ওই একই প্রকৃতির সক্রিয় অঙ্গযুক্ত উদ্বংশীয় জীব থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিবর্তনবাদকেই সমর্থন করে।
6. বিবর্তন বা জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে হৃৎপিণ্ড-ঘটিত প্রমাণ ও বিবর্তনগত গুরুত্ব চিত্রসহ আলোচনা করো।
অথবা, বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর হৃদপ্রকোষ্ঠের সংখ্যা, অধিক O2 অধিক CO2 যুক্ত রক্তের মিশ্রণ সম্বন্ধে তুলনামূলক আলোচনা করো। এর অভিব্যক্তির গুরুত্ব আলোচনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, হৃৎপিণ্ডের তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান কীভাবে অভিব্যক্তি মতবাদের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে?
উত্তর – জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে হৃৎপিণ্ড-ঘটিত প্রমাণ: মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রভৃতি বিভিন্ন মেরুদণ্ডী শ্রেণির প্রাণীগুলির ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের গঠনগত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। যথা—
- মাছের হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রকোষ্ঠ দেখা যায়, একটি অলিন্দ ও একটি নিলয়। এইজন্য মাছের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে কেবলমাত্র কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত (বা অধিক কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত) প্রবাহিত হয়।
- উভচর শ্রেণির প্রাণীর হৃৎপিণ্ডে তিনটি প্রকোষ্ঠ থাকে। এগুলি হল দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয়। ব্যাঙের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র নিলয়ে অধিক অক্সিজেন-যুক্ত ও কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্তের সামান্য মিশ্রণ ঘটে। অর্থাৎ, এটি তুলনামূলকভাবে উন্নত হৃৎপিণ্ড।
- সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণীর হৃৎপিণ্ডে আরও উন্নতি দেখা যায় (ব্যতিক্রম কুমির)। এদের হৃৎপিণ্ডে অসম্পূর্ণ চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে, এগুলি হল দুটি অলিন্দ ও অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত দুটি নিলয়। নিলয়ে অসম্পূর্ণ আন্তঃনিলয় প্রাচীর থাকে বলে সরীসৃপের হৃৎপিণ্ডে অধিক অক্সিজেন-যুক্ত এবং কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্তের মিশ্রণ অপেক্ষাকৃত কম হয়।
- পাখি ও স্তন্যপায়ীদের হৃৎপিণ্ড সম্পূর্ণরূপে চারটি প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হয়। ফলে এদের হৃৎপিণ্ডে অধিক অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত ও কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত একেবারেই মিশতে পারে না। অর্থাৎ, এদের হৃৎপিণ্ড সবচেয়ে উন্নত।
বিবর্তনগত গুরুত্ব : জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে হৃৎপিণ্ডঘটিত প্রমাণের বিবর্তনগত গুরত্ব নীচে আলোচনা করা হল।
- উপরোক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীগুলির হৃৎপিণ্ডের মৌলিক গঠন এক, যদিও তা ক্রমশ জটিল হয়েছে। অর্থাৎ, একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের পথে ক্রমশ জটিল জীবগুলির উৎপত্তি ঘটেছে।
- মাছ, উভচর, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলি অভিব্যক্তির পথে মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি বিশেষ।
- হৃৎপিণ্ডের গঠনগত ও কার্যগত বিকাশ অনুযায়ী পৃথিবীতে এদের আগমন ক্রম বোঝা যায়। অর্থাৎ, এদের আগমনের ক্রম হল—
মাছ → উভচর → সরীসৃপ → পাখি ও স্তন্যপায়ী
- হৃৎপিণ্ডের এই ক্রম পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্রমবিকাশের যে ধারা বোঝা যায়, তা হল—
জলজ জীবন → উভচর জীবন → পূর্ণস্থলচর জীবন
7. জৈব বিবর্তনের সপক্ষে ভ্ৰূণতত্ত্বগত প্রমাণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – জৈব বিবর্তনের সপক্ষে ভ্ৰূণতত্ত্বগত প্রমাণ: মৎস, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী এবং স্তন্যপায়ী প্রভৃতি শ্রেণির প্রাণীর ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং ক্রমিক পর্যায় পর্যবেক্ষণ করলে প্রথম দিকে তাদের মধ্যে বহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়, যার থেকে প্রমাণিত হয় যে এরা একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। যেমন—
- এগুলির প্রত্যেকটির জাইগোট একটি মাত্র কোশ দিয়ে গঠিত।
- জাইগোট মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে বহুকোশী ব্লাস্টুলা গঠন করে।
- পরবর্তী পর্যায়ে ব্লাস্টুলা থেকে গ্যাস্টুলার আবির্ভাব ঘটে।
- এদের প্রত্যেকের দেহ তিনটি স্তরবিশিষ্ট।
মৎস্য, উভচর, পক্ষী ও স্তন্যপায়ী শ্রেণির ভ্রূণের বিকাশ বিশ্লেষণ করলে মূলত, দুটি বিষয়ের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এই সাদৃশ্যগুলি হল—
- গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ ও অন্তঃস্থ যুগ্ম ফুলকাথলি: প্রতিটি শ্রেণির ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ে গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ দেখা যায়। মাথার নীচে পার্শ্বীয়ভাবে এই খাঁজ উপস্থিত থাকে। প্রকৃতপক্ষে, ভ্রূণে গলবিলের ভিতরের দিকে অন্তস্ত্বক স্ফীত হয়ে যুগ্ম ফুলকাথলি গঠন করে, যার ফলে বাইরের দিকে বহিস্থ ফুলকা খাঁজ তৈরি হয়। এদের একত্রে গলবিলীয় যন্ত্র বলা হয়। এর থেকে পরবর্তীকালে মাছের দেহে ফুলকা তৈরি হয়। স্থলজ প্রাণীর দেহে ফুলকার প্রয়োজন থাকে না, তাই এদের দেহে ওই অংশ পরিবর্তিত হয়ে প্যারাথাইরয়েড, থাইমাস ও থাইরয়েড গ্রন্থি গঠিত হয়।
- ল্যাজ-সদৃশ গঠন ও মায়োটম পেশি: প্রত্যেক মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রূণে প্রাথমিক অবস্থায় ল্যাজ-সদৃশ গঠন ও তাতে মায়োটম পেশির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এর বিন্যাসে যে সাদৃশ্য দেখা যায় তা এই প্রাণীগুলির মধ্যে অভিব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রমাণ করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. বিবর্তনের অধ্যয়নে জীবাশ্মের দুটি তাৎপর্য লেখো।
অথবা, জীবাশ্ম কীভাবে বিবর্তনের সপক্ষে সাক্ষ্য দেয় তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর – প্রাণীর ক্রমবিকাশের বেশ কিছু প্রমাণ জীবাশ্ম থেকে পাওয়া যায়। জীবাশ্ম থেকে প্রধানত যে সকল তথ্য জনা যায় সেগুলি হল—
(1) জীবাশ্ম পরীক্ষা করে পৃথিবীতে ওই জীবের বসবাসের সময়কাল, দৈহিক গঠন, অতীতের পরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। (2) বর্তমান জীবের প্রাচীন প্রকৃতি কী ছিল সেই সম্বন্ধে জানা যায়। যেমন—হাতি বা ঘোড়ার জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় যে তাদের আদি পুরুষের প্রকৃতি কীরূপ ছিল এবং কীভাবে তার পরিবর্তন ঘটেছে। (3) ভূ-পৃষ্ঠের গভীরে প্রাপ্ত সরলতর জীবের জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় যে সুদূর অতীতে সরল জীব থেকেই ক্রমশ জটিল জীবের আবির্ভাব ঘটেছে।
2. ঘোড়ার বিবর্তনের শব্দচিত্রটি উপস্থাপন করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, ঘোড়ার বিবর্তনের ইতিহাসে চারটি প্রধান জীবাশ্ম পূর্বপুরুষের নাম সময়ের পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে লেখো।
উত্তর – ঘোড়ার বিবর্তনের শব্দচিত্রটি নিম্নরূপ।
ইওহিপ্পাস → মেসোহিপ্পাস → মেরিচিপ্পাস → প্লিওহিপ্পাস → ইকুয়াস
(ইওসিন) (অলিগোসিন) (মায়োসিন) (প্লিওসিন) (আধুনিক)
3. ঘোড়ার বিবর্তনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো যা পরিবর্তিত হয়েছে।
উত্তর – ঘোড়ার বিবর্তনে যে সকল পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল— (1) উচ্চতার ধারাবাহিক বৃদ্ধি। (2) উভয় পদের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস (4টি থেকে 1টি) ও ক্ষুরের উৎপত্তি। (3) পুরপেষক ও পেষক দাঁতের দন্তচূড় (crown)-এর আয়তন বৃদ্ধি। (4) মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অংশের আকার বৃদ্ধি।
4. সমসংস্থ বা হোমোলোগাস অঙ্গ কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – সমসংস্থ অঙ্গ: যে সমস্ত অঙ্গ উৎপত্তি বা অন্তর্গঠনগতভাবে এক হলেও বহিরাকৃতি ও কার্যগতভাবে পৃথক, তাদের সমসংস্থ বা হোমোলোগাস অঙ্গ বলে।
উদাহরণ: পাখির ডানা ও মানুষের হাত। এই দুটি অঙ্গ উৎপত্তি ও গঠনগতদিক থেকে এক হলেও কার্যগত দিক থেকে ভিন্ন।
5. সমবৃত্তীয় বা অ্যানালোগাস অঙ্গ কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – সমবৃত্তীয় অঙ্গ: যে সমস্ত অঙ্গ উৎপত্তি বা অন্তর্গঠনগতভাবে ভিন্ন প্রকারের হলেও বহিরাকৃতি ও কার্যকারিতার দিক থেকে একই প্রকারের, তাদের সমবৃত্তীয় বা অ্যানালোগাস অঙ্গ বলে।
উদাহরণ: বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম ও পতঙ্গের ডানা। এই দুটি প্রাণীর ডানার কাজ একই ধরনের হলেও এদের উৎপত্তি ও অন্তর্গঠন সম্পূর্ণ পৃথক।
6. বেল ও ক্যাকটাসের কাঁটা কীসের রূপান্তর ?
উত্তর – বেলগাছের কাঁটা হল শাখার রূপান্তর এবং ক্যাকটাসের কাঁটা হল পাতার রূপান্তর। এই দুটি অঙ্গের উৎপত্তি ভিন্ন হলেও কার্যগত দিক থেকে এরা এক। তাই এদের পরস্পরের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলা যায়।
7. অভিসারী বিবর্তন বা অভিসারী অভিব্যক্তি কাকে বলে?
উত্তর – বিভিন্ন বাসস্থান থেকে জীবনসংগ্রামজনিত কারণে নানা জীব একটি সাধারণ বাসস্থানে কেন্দ্রীভূত হয়ে, ওই বাসস্থানে অভিযোজিত হলে তাকে অভিসারী বিবর্তন বা অভিসারী অভিব্যক্তি বলে। এক্ষেত্রে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার তাগিদে উৎপত্তি ও গঠনগতভাবে ভিন্ন জীবও একইপ্রকার কার্য সম্পাদন করে। যেমন— মটরগাছের আকর্ষ (রূপান্তরিত পত্রক) এবং কুমড়ো গাছের আকর্ষ (রূপান্তরিত শাখা) দুটি ভিন্ন অঙ্গের রূপান্তর হলেও একই পরিবেশে অভিযোজনের কারণে উভয়েই কোনো অবলম্বনকে জড়িয়ে ধরে গাছকে ওপরে উঠতে সাহায্য করে।
৪. সমান্তরাল বিবর্তন বা সমান্তরাল অভিব্যক্তি কাকে বলে?
উত্তর – একই উদ্বংশীয় জীব থেকে উৎপন্ন দুটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত প্রাণীগোষ্ঠী একই পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার কারণে সদৃশ বৈশিষ্ট্য অর্জন করলে এই ধরনের অভিব্যক্তিজনিত অভিযোজনকে সমান্তরাল অভিযোজন এবং ওই প্রকার অভিব্যক্তিতে সমান্তরাল বিবর্তন বা সমান্তরাল অভিব্যক্তি বলে। উদাহরণ—অ্যান্টিলোপ ও হরিণদের দ্রুত দৌড়োনোর জন্য দ্বিখণ্ডিত ক্ষুরের উদ্ভব।
9. অপসারী বিবর্তন বা অপসারী অভিব্যক্তি কাকে বলে?
উত্তর – জীবনসংগ্রামজনিত কারণে একটি সাধারণ বাসস্থানের জীব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন বাসস্থনে অভিযোজিত হয়, তাকে অপসারী বিবর্তন বা অপসারী অভিব্যক্তি বলে। উদাহরণ—ঘোড়ার অগ্রপদ, মানুষের হাত, তিমির ফ্লিপার উৎপত্তি ও অন্তর্গঠনগত দিক থেকে এক হলেও বহিরাকৃতি ও কার্যগত দিক থেকে আলাদা।
10. সমসংস্থ বা হোমোলোগাস অঙ্গ অভিব্যক্তির প্রমাণরূপে কীভাবে কাজ করে?
উত্তর – হোমোলোগাস অঙ্গ থেকে বোঝা যায় যে জীবগুলির উৎপত্তি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশগত পার্থক্যর কারণে তাদের কাজও পরিবর্তিত হয়েছে। এই অভিযোজনগুলিই নানা নতুন জীবপ্রজাতি সৃষ্টি করেছে অর্থাৎ, অভিব্যক্তি ঘটেছে।
11. ‘সমবৃত্তীয় অঙ্গ অভিসারী বিবর্তনের ফল’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – জীবনসংগ্রামের কারণে বিভিন্ন বাসস্থান থেকে নানা ধরনের জীব একটি স্থানে কেন্দ্রীভূত হয় এবং জীবগুলির মধ্যে সমপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একে অভিসারী বিবর্তন বলে। অর্থাৎ, একই পরিবেশে থাকার জন্য তাদের ভিন্ন দেহাংশ একই কাজের জন্য অভিযোজিত হয় বা নানা জীবে সমবৃত্তীয় অঙ্গের সৃষ্টি হয়।
12. সমসংস্থ অঙ্গ অপসারী বিবর্তনকে সমর্থন করে কেন?
উত্তর – জীবন সংগ্রামের কারণে একই উদ্বংশীয় জীব অনেক সময় নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। নানা স্থানে পরিবেশ ভিন্ন রকম হয় বলে তাদের অভিযোজনও ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়। তাই ওই জীবগুলির বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে উৎপত্তিগত ও অন্তর্গঠনগত মিল থাকলেও কাজ পরিবেশ অনুযায়ী বহির্গঠন ভিন্ন হয়। এই ধরনের অঙ্গগুলিই হল সমসংস্থ অঙ্গ। তাই সমসংস্থ অঙ্গ অপসারী বিবর্তনকে সমর্থন করে।
13. যে দুটি অন্তর্গঠনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ‘তিমির ফ্লিপার’ ও ‘পাখির ডানা’—কে সমসংস্থ অঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয় তা উল্লেখ করো।
উত্তর – তিমির ফ্লিপার ও পাখির ডানা (এ ছাড়াও মানুষের অগ্রপদ, বাদুড়ের ডানা) উভয়ই মেরুদণ্ডী প্রাণীর অগ্রপদ, অর্থাৎ সমসংস্থ অঙ্গ। কারণ— (1) মেরুদণ্ডীয় অগ্রপদের প্রধান হাড়, হিউমেরাস, রেডিয়াস-আলনা, কারপাল, মেটাকারপাল, ফ্যালানজেস এতে বর্তমান। (2) এদের অগ্রপদ পেক্টোরাল গার্ডল বা শ্রোণিচক্রের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে। (3) এই অঙ্গটির পেশি, যেমন—বাইসেপ্স, ট্রাইসেপ্স প্রভৃতি উভয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়। (4) অগ্রপদের স্নায়ু ও রক্তবাহগুলিও উভয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
এগুলির গঠন ও উৎপত্তি এক হলেও বিভিন্ন পরিবেশে বসবাসের জন্য ছড়িয়ে পড়ায় (তিমি—জল, পাখি—বায়ু) তাদের কার্যগত পরিবর্তন (অর্থাৎ সাঁতার ও উড্ডয়ন) ঘটেছে। এই জন্য তারা সমসংস্থ অঙ্গ।
14. কোন্ বৈশিষ্ট্য দেখে উভচরের অগ্রপদ ও পাখির ডানাকে সমসংস্থ অঙ্গ বলে চেনা যায় ?
উত্তর – উভচরের অগ্রপদ ও পাখির ডানা—উভয়ের গঠনে হিউমেরাস, রেডিও-আলনা, ফ্যালানজেস, কারপাল ও মেটাকারপাল হাড় এবং পেশি ও স্নায়ুবিন্যাসের সাদৃশ্য দেখা যায়, কিন্তু এদের বাহ্যিক গঠন ও কাজ আলাদা। তাই এদেরকে পরস্পরের সমসংস্থ অঙ্গ বলে।
15. ঘোড়ার অগ্রপদ ও মানুষের হাত সমসংস্থ অঙ্গ–ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ঘোড়ার অগ্রপদ ও মানুষের হাতে একইরকম হাড়—হিউমেরাস, রেডিয়াস ও আলনা দেখা যায়। এ ছাড়া একইরকম গঠনকারী পেশি ও স্নায়ু থাকে, অর্থাৎ উভয়ের গঠন বা উৎপত্তি এক। তবে ঘোড়ার অগ্রপদ ছোটার কাজে আর মানুষের হাত ওজন তোলা বা সূক্ষ্ম কাজকর্মে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ তারা কাজের দিক দিয়ে ভিন্ন। এজন্য ঘোড়ার অগ্রপদ ও মানুষের হাত হল সমসংস্থ অঙ্গ।
16. লুপ্তপ্রায় অঙ্গ কী?
উত্তর – জীবদেহে যে সমস্ত অঙ্গ তাদের পূর্বপুরুষদের দেহে এবং সম্পর্কিত অন্য জীবের দেহে সক্রিয় থাকলেও সংশ্লিষ্ট জীবটির দেহে কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে সেইসব অঙ্গকে লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে। যেমন—মানুষের কক্সিস।
17. মানবদেহের মেরুদণ্ডে ও খাদ্যনালীতে অবস্থিত একটি করে নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম লেখো।
উত্তর – মানবদেহের মেরুদণ্ডে অবস্থিত একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হল কক্সিস ও খাদ্যনালীতে অবস্থিত একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হল ভার্মিফর্ম অ্যাপেনডিক্স।
18. অভিব্যক্তির প্রমাণরূপে নিষ্ক্রিয় অঙ্গের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – নিষ্ক্রিয় অঙ্গগুলি পূর্বে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহৃত হলেও পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে সেগুলির ক্রমশ কাজ হ্রাস পেয়েছে। অভিব্যক্তির ধারণা থেকে বলা যায় যে, লুপ্তপ্রায় অঙ্গগুলির উৎপত্তি ঘটেছে এমন একটি উদ্বংশীয় জীব থেকে যাদের দেহে উক্ত অঙ্গগুলি সক্রিয় ছিল। অর্থাৎ, নতুন জীব তৈরি হলেও এই অঙ্গগুলি উদ্বংশীয় জীব থেকে তাদের উৎপত্তি সূচিত করে।
19. উভচর ও স্তন্যপায়ী হূৎপিণ্ডের গঠনগত পরিবর্তন বিবর্তনকে কীভাবে সমর্থন করে?
উত্তর – উভচর প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডে দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয় থাকায় বেশি অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ও কম অক্সিজেনযুক্ত রক্তের সামান্য মিশ্রণ ঘটে। কিন্তু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডে বেশি অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ও কম অক্সিজেনযুক্ত রক্ত কোনোভাবে মেশে না, কারণ এদের দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় থাকে। তবে উভয় গোষ্ঠীর প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের মৌলিক গঠনগত সাদৃশ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে প্রাণীর গঠন সরল থেকে ধীরে ধীরে জটিল হয়েছে, যা বিবর্তনকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমর্থন করে।
20. বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীর হৃৎপিণ্ডের তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান থেকে অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত যে দুটি পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তা বিবৃত করো।
উত্তর – (1) অভিব্যক্তির পথে অঙ্গের (তথা জীবের) গঠনগত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জটিলতা বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায় যে মেরুদণ্ডী প্রাণীগুলির আগমনের সঠিক ক্রম হল – মাছ → উভচর → সরীসৃপ → পাখি ও স্তন্যপায়ী। (2) মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জানা যায়। এটি হল – জলজ জীবন → উভচর → পূর্ণ স্থলচর জীবন।
21. তুলনামূলক ভ্রূণতত্ত্বে হেকেল-এর অবদান ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – জার্মান বিজ্ঞানী আর্নস্ট হেকেল ভ্রুণতত্ত্ব দ্বারা অভিব্যক্তি ব্যাখ্যার মাধ্যমে ডারউইনের অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত বক্তব্যকে আরও সম্প্রসারিত করেন। তিনি আটটি প্রাণীর 3টি ভ্রূণ পর্যায়ের (মোট 24টি) চিত্র প্রকাশ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে জীবজনি জাতিজনির পুনরাবৃত্তি করে। অর্থাৎ, কোনো প্রাণীর ভ্রূণপর্যায়গুলি প্রকৃতপক্ষে ওই প্রাণীটির অভিব্যক্তির ক্রমপর্যায়গুলিকে সূচিত করে। পরবর্তীকালে দেখা যায় যে, এই চিত্রগুলি অতিরঞ্জিত ছিল ও বর্তমানে তত্ত্বটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
22. ভন বেয়ারের তুলনামূলক ভ্ৰূণতত্ত্বে অবদান কী?
উত্তর – 1828 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ভন বেয়ার ভ্রূণতত্ত্বের নীতি প্রণয়ন করেন। এটি অনুযায়ী – (1) কোনো ভ্রূণের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ পাওয়ার আগে যে শ্রেণি বা বিভাগের সাথে ভ্রুণটি সম্পর্কযুক্ত, সেই শ্রেণি বা বিভাগের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশ ঘটে। সকল সাধারণ বৈশিষ্ট্যের প্রকাশের পরই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশ শুরু হয়। (2) বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন প্রজাতিতে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের আগমন ঘটে। ফলে পরিস্ফুরণের পর ভ্রুণগুলি পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে যায়।
23. চার্লস ডারউইনের তুলনামূলক ভ্ৰূণতত্ত্বে কী অবদান ছিল?
উত্তর – ভন বেয়ারের ভ্রূণতত্ত্বের নীতির ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ভ্রুণতত্ত্বকে অভিব্যক্তির ব্যাখ্যায় প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি বলেন যে বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রুণগত মিল তাদের একই পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি সূচিত করে। তিনি আরও বলেন যে, ভ্রূণে যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে প্রাণীটিকে পরিবেশে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে।
24. গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – মুখছিদ্রের ঠিক পরে অবস্থিত খাদ্যনালীর অংশকে গলবিল বলে। কর্ডাটা পর্বের সমস্ত প্রাণীতে জীবনচক্রের কোনো না কোনো দশায় গলবিলে এই কয়েকটি খাঁজ গঠিত হয়। এই খাঁজগুলি থেকে পরবর্তীকালে মাছদের ক্ষেত্রে ফুলকা গঠিত হয়। অন্যান্য মেরুদণ্ডীদের ক্ষেত্রে এর থেকে অন্যান্য গঠন তৈরি হয়। এই অংশকে গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ বলে।
25. বায়োজেনেটিক সূত্রটি লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, বায়োজেনেটিক সূত্রের প্রবক্তা কে? সূত্রটির মূল প্রতিপাদ্য লেখো।
উত্তর – ‘ব্যক্তিজনি জীবজনির পুনরাবৃত্তি করে’ (Ontogeny Recapitulates Phylogeny)—এটিই বায়োজেনেটিক সূত্র। অর্থাৎ প্রতিটি জীবের ভ্রূণ পর্যায়গুলি (জীবগুলি) ওই জীবটির অভিব্যক্তি পর্যায়গুলির (জাতিগুলি) মতো হয়। বর্তমানে প্রমাণিত যে আর্নস্ট হেকেল প্রণীত সূত্রটি সঠিক নয় এবং তা প্রমাণের জন্য তিনি যে চিত্রগুলি উপস্থাপিত করেছিলেন তা অতিরঞ্জিত ছিল।
26. মাছ, মানুষ, ব্যাং-এর ভ্রূণের দুটি সাদৃশ্য লেখো।
অথবা, মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রূণগত সাদৃশ্যগুলি লেখো।
উত্তর – মাছ, মানুষ, ব্যাং-এর ভ্রূণের দুটি সাদৃশ্য হল—
- গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ: সমস্ত প্রাণীগুলির ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ে গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ দেখা যায়। এটি অন্তঃস্থ যুগ্ম ফুলকাথলির সঙ্গে একত্রে গলবিলীয় ফুলকাযন্ত্র বা ফ্যারেনজিয়াল অ্যাপারেটাসরূপে বিন্যস্ত থাকে।
- ল্যাজসদৃশ গঠন ও মায়োটম পেশি: সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীগুলির ভ্রূণদশায় ল্যাজসদৃশ গঠন ও তাতে মায়োটম পেশি বিন্যস্ত থাকে। জীবন্ত জীবাশ্ম
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. জীবাশ্ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবার পদ্ধতিকে বলে—
(a) প্রত্নজীববিদ্যা
(b) প্যালিওভূগোল
(c) হারপেটোলজি
(d) এমব্রায়োলজি
উত্তর – (a) প্রত্নজীববিদ্যা
2. জীবন্ত জীবাশ্মের একটি উদাহরণ হল –
(a) কেঁচো
(b) রুইমাছ
(c) লিমিউলাস
(d) গিরগিটি
উত্তর – (c) লিমিউলাস
3. একটি জীবন্ত জীবাশ্ম উদ্ভিদ হল—
(a) ট্রি ফার্ন
(b) রাইনিয়া
(c) নিটাম
(d) গিংকগো বাইলোবা
উত্তর – (d) গিংকগো বাইলোবা
4. যেটি জীবন্ত জীবাশ্ম নয়, সেটি হল-
(a) পেরিপেটাস
(b) আর্কিওপ্টেরিক্স
(c) লিমিউলাস
(d) স্ফেনোডন
উত্তর – (b) আর্কিওপ্টেরিক্স
5. মিসিং লিংকের একটি উদাহরণ হল—
(a) ইকুয়াস
(b) আরকিওপ্টেরিক্স
(c) ইওহিপ্পাস
(d) উটপাখি
উত্তর – (b) আরকিওপ্টেরিক্স
6. সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ীর মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী প্রাণীটি হল—
(a) আর্কিওপ্টেরিক্স
(b) প্ল্যাটিপাস
(c) পেরিপেটাস
(d) অক্টোপাস
উত্তর – (b) প্ল্যাটিপাস
7. ‘আর্কিওপ্টেরিক্স’ নামক জীবাশ্মীভূত প্রাণীটি নীচের যে প্রাণীগোষ্ঠী জোড়ার হারানো সূত্র হিসেবে বিবেচিত হয় সেটি হল—
(a) সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী
(b) পক্ষী ও স্তন্যপায়ী
(c) উভচর ও সরীসৃপ
(d) সরীসৃপ ও পক্ষী
উত্তর – (d) সরীসৃপ ও পক্ষী
৪. ঘোড়ার জীবাশ্ম আবিষ্কার ও বিবর্তন প্রথম বর্ণনা করেন—
(a) ডারউইন
(b) ল্যামার্ক
(c) ওয়াল্স
(d) চালর্স মার্কা
উত্তর – (d) চালর্স মার্কা
9. ঘোড়ার উৎপত্তি হয় —
(a) 40 মিলিয়ন বছর পূর্বে
(b) 65 মিলিয়ন বছর পূর্বে
(c) 100 মিলিয়ন বছর পূর্বে
(d) 55 মিলিয়ন বছর পূর্বে
উত্তর – (d) 55 মিলিয়ন বছর পূর্বে
10. ঘোড়ার আদিপুরুষ বা প্রাচীনতম জীবাশ্মের নাম হল—
(a) প্লিওহিপ্পাস
(b) মেসোহিপ্পাস
(c) মেরিচিপ্পাস
(d) ইওহিপ্পাস
উত্তর – (d) ইওহিপ্পাস
11. ঘোড়ার আদিপুরুষ ইওহিপ্পাস বিরাজ করত—
(a) ইওসিন যুগে
(b) মিওসিন যুগে
(c) প্লিওসিন যুগে
(d) অলিগোসিন যুগে
উত্তর – (a) ইওসিন যুগে
12. ইওহিপ্পাস-এর উচ্চতা ছিল—
(a) 11 ইঞ্চি
(b) 51 ইঞ্চি
(c) 71 ইঞ্চি
(d) 81 ইঞি
উত্তর – (a) 11 ইঞ্চি
13. ঊষাকালের ঘোড়া’ বলা হয় –
(a) ইওহিপ্পাস-কে
(b) মেরিচিপ্পাস-কে
(c) মেসোহিপ্পাস-কে
(d) প্লিওহিপ্পাস-কে
উত্তর – (a) ইওহিপ্পাস-কে
14. অন্তর্বর্তী (intermediate) ঘোড়া হল—
(a) প্লিওহিপ্পাস
(b) মেসোহিপ্পাস
(c) মেরিচিগ্লাস
(d) ইকুয়াস
উত্তর – (b) মেসোহিপ্পাস
15. অলিগোসিন যুগে ঘোড়ার যে পূর্বপুরুষ বিরাজ করত, তারা হল—
(a) ইওহিপ্পাস
(b) মেসোহিপ্পাস
(c) প্লিওহিপ্পাস
(d) মেরিচিপ্পাস
উত্তর – (b) মেসোহিপ্পাস
16. মায়োসিন যুগের যে ঘোড়ার অগ্র ও পশ্চাপদে তিনটি করে আঙুল ছিল, সেটি হল—
(a) মেরিচিপ্পাস
(b) মেসোহিপ্পাস
(c) ইওহিপ্পাস
(d) প্লিওহিপ্পাস
উত্তর – (a) মেরিচিপ্পাস
17. মেরিচিপ্পাস নামক ঘোড়ার আদিপুরুষের উচ্চতা ছিল—
(a) 100 cm
(b) 60 cm
(c) 28 cm
(d) 160 cm
উত্তর – (a) 100 cm
18. রোমন্থক ঘোড়া বলা হয় —
(a) ইওহিপ্পাস-কে
(b) প্লিওহিপ্পাস-কে
(c) মেসোহিপ্পাস-কে
(d) মেরিচিপ্পাস-কে
উত্তর – (d) মেরিচিপ্পাস-কে
19. প্রথম এক আঙুলযুক্ত ঘোড়া হল—
(a) মেসোহিপ্পাস
(b) মেরিচিপ্পাস
(c) প্লিওহিপ্পাস
(d) ইকুয়াস
উত্তর – (c) প্লিওহিপ্পাস
20. আধুনিক ঘোড়ার আবির্ভাব ঘটে আজ থেকে প্রায়—
(a) 5 লক্ষ বছর আগে
(b) 10 লক্ষ বছর আগে
(c) 15 লক্ষ বছর আগে
(d) 20 লক্ষ বছর আগে
উত্তর – (b) 10 লক্ষ বছর আগে
21. আধুনিক ঘোড়ার নাম হল—
(a) প্লিওহিপ্পাস
(b) ইকুয়াস
(c) মেরিচিপ্পাস
(d) মেসোহিপ্পাস
উত্তর – (b) ইকুয়াস
22. অলিগোসিন ঘোড়ার পূর্বপুরুষ কে?
(a) ইওহিপ্পাস
(b) মেসোহিপ্পাস
(c) মেরিহিপ্পাস
(d) প্লিওহিপ্পাস
উত্তর – (a) ইওহিপ্পাস
23. ঘোড়ার বিবর্তনে যে আঙুলটি ক্রমশ দীর্ঘ ও সুগঠিত হয় সেটি হল—
(a) প্রথম আঙুল
(b) দ্বিতীয় আঙুল
(c) তৃতীয় আঙুল
(d) চতুর্থ আঙুল
উত্তর – (c) তৃতীয় আঙুল
24. নীচের কোনটি সঠিক সজ্জাক্রম?
(a) ইওহিপ্পাস→মেরিচিপ্পাস →ইকুয়াস→প্লিওহিপ্পাস→মেসোহিপ্পাস
(b) ইকুয়াস→প্লিওহিপ্পাস→মেরিচিপ্পাস→মেসেহিপ্পাস→ইওহিপ্পাস
(c) মেরিচিপ্পাস→মেসোহিপ্পাস →ইওহিপ্পাস→ইকুয়াস→প্লিওহিপ্পাস
(d) ইওহিপ্পাস→ মেসোহিপ্পাস→মেরিচিপ্পাস→প্লিওহিপ্পাস—ইকুয়াস
উত্তর – (d) ইওহিপ্পাস→ মেসোহিপ্পাস→মেরিচিপ্পাস→প্লিওহিপ্পাস—ইকুয়াস
25. নীচের কোন্ পরিবর্তনটি ঘোড়ার বিবর্তনে ঘটেনি?
(a) পায়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি
(b) পায়ের সবকটা আঙুলের দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে বৃদ্ধি
(c) পায়ের শুধু আঙুলের দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে বৃদ্ধি
(d) সমগ্র দেহের আকার বৃদ্ধি
উত্তর – (b) পায়ের সবকটা আঙুলের দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে বৃদ্ধি
26. মটর গাছ ও ঝুমকোলতার আকর্ষ হল—
(a) সমসংস্থ অঙ্গ
(b) নিষ্ক্রিয় অঙ্গ
(c) সমবৃত্তীয় অঙ্গ
(d) বৃদ্ধিজ অঙ্গ
উত্তর – (c) সমবৃত্তীয় অঙ্গ
27. মৌমাছি ও কাঁকড়াবিছার হুল হল—
(a) সমসংস্থ অঙ্গ
(b) সমবৃত্তীয় অঙ্গ
(c) a ও b উভয়েই
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) সমবৃত্তীয় অঙ্গ
28. ওভিপোজিটরের পরিবর্তিত রূপ হল –
(a) রেশম মথের গ্রন্থি
(b) মৌমাছির হুল
(c) কাঁকড়াবিছের চোয়াল
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) মৌমাছির হুল
29. নীচের কোন্টি সমবৃত্তীয় অঙ্গের বৈশিষ্ট্য?.
(a) কার্যগতভাবে ভিন্ন
(b) উৎপত্তিগত ভাবে ও গঠনগতভাবে এক
(c) কাজ এক কিন্তু উৎপত্তি ভিন্ন
(d) অপসারী বিবর্তন নির্দেশ করে
উত্তর – (c) কাজ এক কিন্তু উৎপত্তি ভিন্ন
30. নীচের কোন্টি সমসংস্থ অঙ্গের বৈশিষ্ট্য?
(a) উৎপত্তিগতভাবে ভিন্ন
(b) গঠনগত দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা
(c) কাজ আলাদা কিন্তু উৎপত্তিগতভাবে এক
(d) অভিসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে
উত্তর – (c) কাজ আলাদা কিন্তু উৎপত্তিগতভাবে এক
31. নীচের কোন্ বিকল্পটি সমসংস্থ অঙ্গ নয়?
(a) ফণীমনসার পর্ণকাণ্ড, আলুর স্ফীতকন্দ ও আদার গ্রন্থিকাণ্ড
(b) পাখির ডানা, মানুষের হাত ও তিমির ফ্লিপার
(c) ব্যাঙের অগ্রপদ, ঘোড়ার অগ্রপদ ও পায়রার ডানা
(d) পাখির ডানা, বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম ও পতঙ্গের ডানা
উত্তর – (d) পাখির ডানা, বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম ও পতঙ্গের ডানা
32. যেসব অঙ্গের উৎপত্তি এক কিন্তু কাজ আলাদা তারা হল—
(a) সমবৃত্তীয় অঙ্গ
(b) সমসংস্থ অঙ্গ
(c) সক্রিয় অঙ্গ
(d) লুপ্তপ্রায় অঙ্গ
উত্তর – (b) সমসংস্থ অঙ্গ
33. মানুষের কোন্টি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ নয়?
(a) সিকাম
(b) উদরের পেশি
(c) কান
(d) কক্সিস
উত্তর – (c) কান
34. উদ্ভিদের একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হল—
(a) বীজপত্র
(b) ফুল
(c) মুকুল
(d) কান
উত্তর – (d) কান
35. কালকাসুন্দা ফুলের একটি লুপ্তপ্রায় অঙ্গ হল —
(a) পাপড়ি
(b) বৃতি
(c) গর্ভকেশর
(d) পুংকেশর
উত্তর – (d) পুংকেশর
36. কোন্টি মানুষের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ?
(a) অ্যাপেনডিক্স
(b) ফুসফুস
(c) বৃক্ক
(d) যকৃৎ
উত্তর – (a) অ্যাপেনডিক্স
37. উদ্ভিদের একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হল—
(a) পুংকেশর
(b) পত্র
(c) স্ট্যামিনোড
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) স্ট্যামিনোড
38. নিম্নলিখিত পাখিগুলির মধ্যে কার পাখা (ডানা) নিষ্ক্রিয়?
(a) পায়রা
(b) চড়ুই
(c) হর্নবিল
(d) কিউই
উত্তর – (d) কিউই
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. আদি শিলায় প্রস্তরীভূত জীবদেহকে কী বলে?
উত্তর – জীবাশ্ম।
2. যে জীবাশ্মকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, তাদেরকে কী বলে?
উত্তর – মাইক্রোফসিল।
3. প্যালিওন্টলজি কাকে বলে?
উত্তর – জীববিদ্যার যে শাখায় জীবাশ্ম নমুনা নিরীক্ষণ করে জীবের অতীত ও অভিব্যক্তি সম্বন্ধে ধারণা করা হয়, তাকে প্রত্নজীববিদ্যা বা প্যালিওন্টলজি বলে।
4. একটি অমেরুদণ্ডী জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ দাও।
উত্তর – রাজকাঁকড়া বা Limulus (লিমিউলাস)।
5. একটি জীবন্ত জীবাশ্ম উদ্ভিদের নাম লেখো।
উত্তর – Ginkgo biloba (গিংক্গো বাইলোবা)।
6. মেরুদণ্ডী জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ দাও।
উত্তর – Sphenodon (স্ফেনোডন), হংসচঞ্চু বা প্ল্যাটিপাস।
7. আর্কিওপটেরিক্স কী?
উত্তর – Archaeopteryx (আর্কিওপ্টেরিক্স) হল সরীসৃপ ও পক্ষীর হৃতযোজক বা মিসিং লিংক।
৪. ডিম পাড়ে এমন একটি স্তন্যপায়ীর নাম লেখো।
অথবা, ডিম পাড়ে এমন একটি জীবন্ত জীবাশ্মের নাম লেখো।
উত্তর – প্ল্যাটিপাস।
9. ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদের মধ্যে সংযোগ-রক্ষাকারী জীবটির নাম কী?
উত্তর – Gnetum (নিটাম)।
10. আধুনিক ঘোড়ার বিজ্ঞানসম্মত নাম কী ?
উত্তর – Equus ferus caballus (ইকুয়াস ফেরাস ক্যাবেল্লাস)।
11. ঘোড়ার কোন্ আঙুল ক্ষুরে রূপান্তরিত হয়েছে?
উত্তর – তৃতীয় আঙুল ।
12. ঘোড়ার বিবর্তনের ধারায় প্রাপ্ত প্রাচীনতম আদিপুরুষের জীবাশ্মটির নাম লেখো।
উত্তর – Eiohippus (ইওহিপ্পাস)।
13. ইওহিপ্পাসের উচ্চতা কত ছিল?
উত্তর – 28 cm |
14. ইওহিপ্পাস-এর সামনের পায়ে ও পেছনের পায়ে কতগুলি আঙুল ছিল?
উত্তর – ইওহিপ্পাস-এর সামনের পায়ে 4টি ও পেছনের পায়ে 3টি আঙুল ছিল।
15. মেরিচিপ্পাস কোন্ যুগের ঘোড়া ?
উত্তর – মায়োসিন যুগের।
16. অলিগোসিন যুগের ঘোড়ার নাম কী ?
উত্তর – Mesohippus (মেসোহিপ্পাস)।
17. মেসোহিপ্পাসের উচ্চতা কত ছিল ?
উত্তর – 24 ইঞ্চি।
18. তিমির ফ্লিপার, ঘোড়ার অগ্রপদ, মানুষের অগ্রপদ কী-জাতীয় অঙ্গের উদাহরণ?
উত্তর – সমসংস্থ অঙ্গ।
19. ঝুমকোলতার আবর্ত ও বেলের শাখাকণ্টক কী ধরনের অঙ্গের উদাহরণ?
উত্তর – সমসংস্থ অঙ্গ।
20. পাখির ডানার সঙ্গে উৎপত্তিগতভাবে ঘোড়ার কোন্ অঙ্গের মিল দেখা যায়?
উত্তর – পাখির ডানার সঙ্গে উৎপত্তিগতভাবে ঘোড়ার অগ্রপদের মিল দেখা যায়।
21. পতঙ্গের ডানা ও পাখির ডানা কী-জাতীয় অঙ্গের উদাহরণ?
উত্তর – সমবৃত্তীয় অঙ্গ।
22. দুটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম লেখো। [Arambagh Girls’ High School]
উত্তর – মানুষের ভারমিফর্ম অ্যাপেনডিক্স ও আদার শল্কপত্র।
23. আলুর স্ফীতকন্দ ও আদার গ্রন্থিকাণ্ড কীপ্রকার অঙ্গ?
উত্তর – সমসংস্থ অঙ্গ।
24. পুরুষের স্তনগ্রন্থি কী প্রকারের অঙ্গ ?
উত্তর – নিষ্ক্রিয় অঙ্গ।
25. পাখির ডানার একটি সমসংস্থ অঙ্গের নাম লেখো।
উত্তর – তিমির ফ্লিপার।
26. উদ্ভিদের দুটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গের নাম লেখো।
উত্তর – (1) ভূনিম্নস্থ কাণ্ডের শল্কপত্র (আদা, হলুদ), (2) কালকাসুন্দার বন্ধ্যা পুংকেশর (স্ট্যামিনোড)।
27. মানুষের কোন্ দাঁতটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ ?
উত্তর – সর্বশেষ মোলার৷
28. কোন্ সরীসৃপের হৃৎপিণ্ড চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত?
উত্তর – কুমির।
29. ভেনাস হৃৎপিণ্ড কাদের মধ্যে দেখা যায়?
উত্তর – ভেনাস হৃৎপিণ্ড মাছেদের মধ্যে দেখা যায়।
30. পাখির হৃৎপিণ্ডে প্রকোষ্ঠের সংখ্যা কয়টি?
উত্তর – 4 টি।
31. বিবর্তনের ফলে কার্যহীন অঙ্গকে কী বলে?
উত্তর – নিষ্ক্রিয় অঙ্গ।
32. উটপাখির লুপ্তপ্রায় অঙ্গটির নাম কী ?
উত্তর – ডানা।
33. কে কত খ্রিস্টাব্দে বায়োজেনেটিক সূত্রটি প্রণয়ন করেন?
উত্তর – ভ্ৰূণতত্ত্ববিদ আর্নস্ট হেকেল 1874 খ্রিস্টাব্দে বায়োজেনেটিক সূত্রটি প্রণয়ন করেন।
34. বায়োজেনেটিক সূত্রটি আর কী নামে পরিচিত?
উত্তর – বায়োজেনেটিক সূত্রটি রিক্যাপিচুলেশন থিওরি বা পুনরাবৃত্তিবাদ নামে পরিচিত।
35. গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর – মাছ থেকে স্তন্যপায়ী অবধি সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীতে ভ্রুণ গঠনকালে দেখা যায়।
36. স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে ভ্ৰূণ অবস্থায় গঠিত ফুলকাথলি ও ফুলকা খাঁজের পরিণতি কী?
উত্তর – স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে ভ্রুণ অবস্থায় গঠিত ফুলকাথলি ও ফুলকা খাঁজ পূর্ণাঙ্গ দশায় থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, থাইমাস প্রভৃতি গ্রন্থিরূপে অবস্থান করে।
37. ভ্রূণের গঠনে এমন দুটি অঙ্গ বা অংশের নাম লেখো যা সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীতে দেখা যায়।
উত্তর – গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ ও ল্যাজ সদৃশ অংশে মায়োটম পেশির বিন্যাস।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. সুদীর্ঘকাল যাবৎ ভূগর্ভে সংরক্ষিত অধুনালুপ্ত জীবদেহের প্রস্তরীভূত অবস্থা বা ছাপকে …….. বলে।
উত্তর – জীবাশ্ম
2. একটি প্রাণীজ জীবন্ত-জীবাশ্ম হল ………..।
উত্তর – লিমুলাস
3. যেসব জীবাশ্মকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয় তাদেরকে …….. বলে।
উত্তর – মাইক্রোফসিল
4. পৃথিবীতে আদি ঘোড়ার আবির্ভাব হয় ……… মিলিয়ন বছর আগে।
উত্তর – 55
5. ঘোড়ার বিবর্তনে আদিমতম পূর্বপুরুষ হল ………..।
উত্তর – ইওহিপ্পাস
6. ঘোড়ার বিবর্তনে বিভিন্ন পূর্বপুরুষদের মধ্যে ………. ঘোড়াটি ছিল প্রথম ক্ষরযুক্ত ঘোড়া।
উত্তর – মেরিচিপ্পাস
7. মেরিচিপ্পাস-এর অগ্রপদে আঙুল ছিল ……… -টি।
উত্তর – 3
৪. আধুনিক ঘোড়ার নাম হল ………..।
উত্তর – ইকুয়াস
9. ফণীমনসার পর্ণকাণ্ড ও আলুর স্ফীতকন্দ ……….. অঙ্গের উদাহরণ।
উত্তর – সমসংস্থ
10. …….. বিবর্তনের ফলে সমসংস্থ অঙ্গের উদ্ভব ঘটে।
উত্তর – অপসারী
11. সমবৃত্তীয় অঙ্গ …….. অভিব্যক্তিকে প্রমাণ করে।
উত্তর – অভিসারী
12. ফণীমনসার পর্ণকাণ্ড ও আকাশমণি গাছের পর্ণবৃন্ত ………. অঙ্গের উদাহরণ।
উত্তর – সমসংস্থ
13. কক্সিস হল মানুষের একটি ……….. অঙ্গ।
উত্তর – লুপ্তপ্রায়
14. মাছের হৃৎপিণ্ডে কেবল কম অক্সিজেনযুক্ত রক্ত প্রবাহিত হয় বলে একে ……… হৃৎপিণ্ড বলা হয়।
উত্তর – ভেনাস
15. পাখি ও স্তন্যপায়ীর হৃৎপিণ্ড ……….. টি প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট।
উত্তর – চার
16. হেকেলের মতে জীবজনি ………. -র পুনরাবৃত্তি ঘটায়।
উত্তর – জাতিজনি
17. জীববিদ্যায় যে শাখার ভ্রুণবিকাশের তুলনামূলক অধ্যয়ন করা হয় তাকে ……..বলে।
উত্তর – তুলনামূলক ভ্ৰূণতত্ত্ব