WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 5 পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ (TOPIC 4 জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ)
West Bengal Board 10th Class Science Solutions Biology Chapter 5 পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ (TOPIC 4 জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ)
West Bengal Board 10th Biology Solutions
TOPIC 4 জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ
SUB-TOPIC 4.1 জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব, জীববৈচিত্র্যের হটস্পট, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ও সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা
বিষয়সংক্ষেপ
- স্থল, জল বা বায়ুতে উপস্থিত জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত ও বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে বলে জীববৈচিত্র্য। পৃথিবীতে অতিবৈচিত্র্যশালী একটি দেশ হল ভারত।
- জীববৈচিত্র্য নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উৎপাদনে, ওষুধ তৈরিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিভিন্নতা জরুরি। এ ছাড়াও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় নানা প্রকারের জীব অত্যন্ত দরকারি। বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করা, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও জীববৈচিত্র্য সাহায্য করে।
- জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক গুরুত্বও উল্লেখযোগ্য। গৃহসামগ্রী ও আসবাব প্রস্তুতি, কাগজ তৈরি, আটা, রজন, মোম, সিল্ক, উল ও মুক্তোর জোগান দেয় জীববৈচিত্র্য।
- চিত্রকলা, ভাস্কর্য, গীতবাদ্য প্রভৃতি বিষয়েও জীববৈচিত্র্য মানুষকে নানা নান্দনিক সৃষ্টিকার্যে উদ্বুদ্ধ করেছে।
- জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য্যপূর্ণ স্থানগুলিকে বলে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট। ভারতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট রয়েছে। এগুলি হল পূর্ব হিমালয়, ইন্দো-বার্মা, পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা এবং সুন্দাল্যান্ড। প্রতিটি অঞ্চলে বিশেষ প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখা যায়।
- জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে নানা কারণে। জমি ব্যবহারের পরিবর্তন অর্থাৎ, শিল্প, গৃহ ও কৃষিতে জমির অতিরিক্ত ব্যবহার, শিকার, বিশ্ব উন্নায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন, দূষণ, জীববৈচিত্র্যের অতিব্যবহার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বহিরাগত প্রজাতির প্রবেশে স্থানীয় প্রজাতির বিলোপ হল এর অন্যতম কারণ।
- সুন্দরবনের নানা পরিবেশগত সমস্যা বর্তমানে নানাভাবে আমাদের জানান দিয়ে যাচ্ছে। লবণাম্বু উদ্ভিদগুলির বিনাশ, বন্যায় বা সমুদ্র উচ্ছ্বাসে (যেমন—আয়লা) চাষের জমি লবণাক্ত হয়ে যাওয়া, মিষ্টি জলের অভাব, বাসস্থানের বিনাশ, জলদূষণ, খাদ্য-খাদকের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং সর্বোপরি সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধিতে দ্বীপ নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ার ফলে এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. জীববৈচিত্র্য কাকে বলে লেখো। এর গুরুত্বগুলি উল্লেখ করো।
অংশ প্রশ্ন, জীববৈচিত্র্যের তিনটি তাৎপর্য লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, জীববৈচিত্র্যকে সম্পদরূপে গণ্য করা হয় কেন?
উত্তর – জীববৈচিত্র্য: স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে।
জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব
- বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা: বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক জীব বাস্তুতান্ত্রিকভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি জীবের বিনাশ অন্য কোনো জীবের বিপন্নতার কারণ হতে পারে, তাই প্রজাতি বৈচিত্র্য যত বাড়বে সেই বাস্তুতন্ত্র তত বেশি স্থিতিশীল হবে।
- পরিবেশগত মূল্য: পরিবেশদূষণ রোধ করতে এবং তার মাধ্যমে জীবমণ্ডল সার্বিক সংরক্ষণ ও তার কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য আবশ্যক।
- জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: পরিবেশদূষণ রোধে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং জীবমণ্ডলের সার্বিক সংরক্ষণ ও তার কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য আবশ্যক। যেমন—ক্রান্তীয় বন CO2 শোষণ করে বিশ্ব উয়ায়ন হ্রাস করে। বনভূমি জলশোষণ ও বাষ্পমোচন দ্বারা বৃষ্টিপাত তথা জলচক্র বজায় রাখে। অনেক উদ্ভিদ দূষক গ্যাস শোষণ করে পরিবেশ পরিশুদ্ধ করে।
- অর্থনৈতিক মূল্য: মানুষ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধপত্র, প্রভৃতির জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। মানুষ বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে বিভিন্নপ্রকার খাদ্যসামগ্রী ছাড়াও ড্রাগ ও ওষুধ, কাঠ, কাগজ, তন্তু, রবার, আঠা, রজন, ট্যানিন ইত্যাদি পেয়ে থাকে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রাণীপ্রজাতি থেকে আমাদের দৈনন্দিন সামগ্রী, যেমন—মোম, সিল্ক, উল, মুক্তো, চামড়া, পালক, মধু, মাছ, মাংস ও দুগ্ধসামগ্রী পেয়ে থাকি।
- নান্দনিক মূল্য: বিভিন্ন প্রজাতির জীব প্রকৃতিকে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর করে তোলে।
- নৈতিক মূল্য: প্রত্যেক জীবের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। 1982 সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কিত ঘোষণাপত্রে এই চিন্তাধারা স্বীকৃতি পেয়েছে।
2. জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদগুলি লেখো।
ভারতের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-এর নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – জীববৈচিত্র্যের প্রকার: জীববৈচিত্র্যকে প্রধান তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
- জিনগত বৈচিত্র্য: বিভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়। একে জিনগত বৈচিত্র্য বলে।
- প্ৰজাতিগত বৈচিত্র্য: প্ৰজাতিগত বৈচিত্র্য হল কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি ও তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্য।
- বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য: একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।
ভারতের জীববৈচিত্র্য হটস্পট : ভারতের চারটি জীববৈচিত্র্য হটস্পট সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।
- পূর্ব হিমালয়: ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি, যেমন—সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, অসম, অরুণাচল প্রদেশ এর অন্তর্গত। প্রাচীন সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রাচুর্য্যের জন্য এই স্থানকে প্রজাতিভবনের উৎপত্তিস্থল বলে।
- ইন্দো-বার্মা: ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি, যেমন—মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও দক্ষিণ অসম এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
- পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, অর্থাৎ গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও কেরল রাজ্য এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
- সুন্দাল্যান্ড: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সুন্দাল্যান্ড হট স্পটটির অন্তর্ভুক্ত।
3. জীববৈচিত্র্য কী কী কারণে হ্রাস পায় তা সঠিক উদাহরণের সাহায্যে নির্ধারণ করো।
উত্তর – জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ
- জমি ব্যবহারের ধরন পরিবর্তন: জমি ব্যবহারের ধরন পরিবর্তনের ফলে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ও তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থলগুলিও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া পৃথিবীতে জনসংখ্যার অত্যধিক চাহিদা পূরণ করার জন্য নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে।
- শিকার ও চোরাশিকার: খাদ্যের প্রয়োজনে, নিছক শিকারের আনন্দ উপভোগ করার জন্য অথবা চামড়া, শিং, চর্বি প্রভৃতি বিক্রি করে উপার্জনের লোভে বিভিন্ন বন্যজীবকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এর ফলে সেই প্রজাতিগুলি ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যেমন—সুগন্ধি দ্রব্য প্রস্তুতের জন্য ভারতীয় কস্তুরীমৃগ নির্বিচারে হত্যার ফলস্বরূপ এখন এদের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে প্রজাতিটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
- বিশ্ব উয়ায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন: ইচ্ছেমতো বৃক্ষছেদন এবং অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বিশ্ব উন্নায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। বহু প্রাণী ওই পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে না। ফলে তারা অবলুপ্ত হচ্ছে। যেমন—বিশ্ব উয়ায়নের ফলে আন্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়ার দরুন সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
- দূষণ: সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে জলদূষণ, বায়ুদূষণ ও মৃত্তিকা দূষণের মাত্রাও প্রভূত পরিমাণে বাড়ছে। দূষণের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। প্রকৃতিতে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশককেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
- অতিব্যবহার: বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি তাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে বিভিন্ন বৃক্ষলতা ও গুল্ম আহরণ করে। এর ফলে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনাঞ্চল থেকে ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদগুলি সংখ্যায় অতি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রাণীগুলিও অতিব্যবহারে আজ বিনাশের সম্মুখীন। যেমন—ভেষজ গুণসম্পন্ন সর্পগন্ধা গাছের অতিব্যবহারের ফলে প্রজাতিটি বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়: বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের ফলে বহু প্রজাতি চিরকালের মতো অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন্যা, ভূমিক্ষয়, ভূমিকম্প, সুনামি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি বিভিন্ন স্থানের বহু জীববৈচিত্র্যকে বিলুপ্ত করেছে। যেমন–2004 সালের 26 ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ঘটা সুনামির ফলে আন্দামানের প্রবাল প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ; যে-কোনো বাস্তুতন্ত্রের নিজস্ব গঠনবৈচিত্র্য থাকে। বাইরে থেকে হঠাৎ কোনো প্রজাতি এলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের গঠন বিনষ্ট হয়। যেমন—‘হাইব্রিড মাগুর’ প্রজাতিটির আবির্ভাবে দেশি মাগুর প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
4. সুন্দরবনের সমস্যাগুলি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করো।
অংশ প্রশ্ন, সুন্দরবনে একটি গবেষণা করতে গিয়ে তুমি নিম্নলিখিত তিনটি সমস্যা শনাক্ত করলে- (1) খাদ্য-খাদক সংখ্যার ভারসাম্য ব্যাঘাত, (2) নগরায়ণের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস, (3) উন্নতা বৃদ্ধির ওপর এদের প্রভাব কী কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করো।
অংশ প্রশ্ন, সুন্দরবনে দুটি পরিবেশ গত সমস্যা হল— খাদ্য-খাদক সংখ্যার ভারসাম্য ব্যাঘাত ও সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি। এর সম্ভাব্য ফলাফলগুলি ব্যাখ্যা করো।
অংশ প্রশ্ন, বিশ্ব উয়ায়নের ফলে সমুদ্রের জলতলের উন্নতা অধিক বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর – সুন্দরবন অঞ্চলের সমস্যা : বর্তমানে সুন্দরবন অঞ্চলে বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলের সমস্যাগুলি সম্পর্কে নীচে বর্ণনা করা হল।
- নগরায়ণের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদের ধ্বংস: নগরায়ণের জন্য এবং গৃহনির্মাণ, চাষ-আবাদ জ্বালানি কাঠের চাহিদা পূরণের জন্য সুন্দরবনের তীরবর্তী অঞ্চলে লবণাম্বু উদ্ভিদকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
- কৃষি সংকট: লবণাম্বু উদ্ভিদের ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত ভূমিক্ষয়ের কারণে পলি জমে নদী এবং খাঁড়িগুলির গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল চাষের জমিকে প্লাবিত করে চাষ-আবাদেরও ক্ষতি করছে। এ ছাড়া ভূমিক্ষয়ের ফলে চাষের জমির উর্বরতাও কমিয়ে দিচ্ছে।
- মিষ্টি জলের সংকট: সমুদ্র তীরবর্তী এই অঞ্চলে মিষ্টি জল বা স্বাদুজলের অভাব অত্যন্ত প্রকট। নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ার ফলে, লবণাক্ত জল, পুকুর-ডোবার জলের সঙ্গে মিশে মিষ্টি জলের সংকট সৃষ্টি করছে।
- বাসস্থান ধ্বংস: অরণ্য ধ্বংসের ফলে বহু বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে যা প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ছাড়া জোয়ারভাটা, বন্যার কারণে সুন্দরবনে ভূমিক্ষয় হয়।
- দূষণ : হলদিয়া এবং কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কলকারখানাগুলি থেকে নির্গত শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থগুলি নদী দ্বারা বাহিত হয়ে এই অঞ্চলে জলদূষণ ঘটায়। নদীর জলে এই সকল দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মাছ, মাছের ডিম, চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রভৃতি ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে। মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। জাহাজ নির্গত তেল ও অন্যান্য বর্জ্য জলে মুক্ত হয়ে দূষণ ছড়ায়।
- খাদ্য-খাদকের ভারসাম্যে ব্যাঘাত: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে পরিবেশ সমস্যা সুন্দরবনকে গ্রাস করছে। বহু প্রাণী অবলুপ্ত হওয়ার ফলে বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলে খাদ্য-খাদকের সংখ্যার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। মাছ, কাঁকড়া প্রভৃতি অতিরিক্ত সংগ্রহে বাঘেদের স্বাভাবিক খাদ্য হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তারা সহজেই মানুষকে আক্রমণ করছে।
- দ্বীপভূমির নিমজ্জন: বিশ্ব উন্নায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সমুদ্রের জলের উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু দ্বীপ জলে নিমজ্জিত হচ্ছে। যেমন—ভাঙ্গদুয়ানি দ্বীপটির 16.44% জলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘোরামারা, লোহাচারা, বেডফোর্ড প্রভৃতি দ্বীপগুলি জলে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। বিশ্ব উষ্মায়নের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
1. জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি কাকে বলে?
উত্তর – পৃথিবীর স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃ- প্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা জৈববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলা হয়।
2. জীববৈচিত্র্যকে কতগুলি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং সেগুলি কী কী ?
উত্তর – জীববৈচিত্র্যকে তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সেগুলি হল— (1) জিনগত বৈচিত্র্য, (2) প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং (3) বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।
3. জিনগত বৈচিত্র্য কী ?
উত্তর – বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জিন ও ক্রোমোজোমের বৈচিত্র্য এবং কোনো একটি প্রজাতির জিনের ভেদ অথবা ভেরিয়েশনই হল জিনগত বৈচিত্র্য। একই প্রজাতির প্রত্যেক জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়ে থাকে।
4. প্ৰজাতি বৈচিত্র্য কী?
উত্তর – কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। এই পৃথিবীর প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব জিনগত গঠন বর্তমান। এই কারণে একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি কিছুটা আলাদা হয়।
5. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কী?
উত্তর – একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।
6. মানব সভ্যতার বিকাশে নিম্নলিখিত দুটি ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা উল্লেখ করো।
(1) খাদ্য উৎপাদন, (2) ওষুধ প্রস্তুতি।
উত্তর – (1) খাদ্য উৎপাদন: মানুষসহ সকল জীব তার খাদ্যের জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন খাদ্য-উপাদান, যেমন—ভিটামিন, খনিজ লবণ ও শক্তি-সমৃদ্ধ খাদ্যের সৃষ্টির মাধ্যমে পুষ্টিতে মানবসমাজকে সাহায্য করে জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া খরা, বন্যা রোগ প্রতিরোধী শস্য জীববৈচিত্র্যের ফলেই সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। মাছ ও জলজ প্রাণী, পোলট্রি পাখি, মাংস ও দুধ উৎপাদক প্রাণীবৈচিত্র্য সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
(2) ওষুধ প্রস্তুতি: চিকিৎসায় ব্যবহৃত বহু ওষুধ হল জীবজাত। সিনকোনা গাছের ছাল থেকে তৈরি কুইনাইন ম্যালেরিয়ার ওষুধরূপে, সর্পগন্ধা গাছের মূলের ছাল থেকে প্রাপ্ত রেসারপিন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ তৈরিতে, ধুতুরা ফলের বীজ থেকে প্রাপ্ত ডাটুরিন হাঁপানির ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তুলসী, কালমেঘ, নিম প্রভৃতি ভেষজ উদ্ভিদগুলিও বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। Penicilium notatum (পেনিসিলিয়াম নোটেটাম)-সহ অন্যান্য উপকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন প্রাণীজ উপাদানও ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
7. ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় ?
উত্তর – ভারতের উত্তর-পূর্ব হিমালয় অঞ্চল, ইন্দো-বার্মা অঞ্চল, পশ্চিমঘাট বনাঞ্চল, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, গুজরাট ও তামিলনাড়ুর সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।
৪. অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগাডাইভারসিটি কান্ট্রি কাকে বলে?
উত্তর – পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ, 17টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই দেশগুলিকে অতি বৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগা-ডাইভারসিটি কান্ট্রি বলা হয়। মেগাবায়োডাইভারসিটি সম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে ব্রাজিল প্রথম স্থান অধিকার করে। ভারতবর্ষও একটি অন্যতম মেগাডাইভারসিটি কাটি।
9. প্ৰজাতি কাকে বলে?
উত্তর – জিনতত্ত্বগতভাবে স্বতন্ত্র একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবগোষ্ঠী, যারা নিজেদের মধ্যে প্রজননশীল এবং প্রজননগতভাবে অন্য জীবগোষ্ঠী থেকে পৃথক, তাদের প্রজাতি বলে।
10. এনডেমিক প্রজাতি কাকে বলে?
উত্তর – যে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করে, তাকে ওই অঞ্চলের এনডেমিক প্রজাতি বলে। যেমন—ভারতীয় সিংহ (গির), মুগা রেশম মথ (অসম)।
11. কোন্ বিজ্ঞানী কত খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ কথাটি ব্যবহার করেন?
উত্তর – জীববিজ্ঞানী নরম্যান মায়ার্স, 1988 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম, ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ কথাটি ব্যবহার করেন।
12. ‘কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল’ সংস্থা একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কোন্ দুটি শর্ত তুলে ধরেছে?
অথবা, কোনো অঞ্চলকে কখন হটস্পট বলে গণ্য করা হয় ?
অনুরূপ প্রশ্ন, দুটি অঞ্চলের মধ্যে একটিকে জীববৈচিত্র্য হটস্পট বলে ঘোষণা করতে চাইলে কী কী শর্ত তুমি বিবেচনা করবে?
উত্তর – পরিবেশ-সংক্রান্ত সংস্থা ‘কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল’, একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে দুটি শর্ত তুলে ধরেছে, সেগুলি হল- (1) নির্দিষ্ট হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1500টি সংবহনকলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকতে হবে। (2) হটস্পট অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের অন্তত 70% প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকতে হবে।
13. পূর্ব হিমালয়কে ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ বলার কারণ কী?
অথবা, পূর্ব হিমালয় হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর – পূর্ব হিমালয় বহু এনডেমিক প্রজাতির উৎপত্তিস্থল। এখানে প্রায় 5800 প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে 2000টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে 45টি স্তন্যপায়ী, 50 টি পাখি, 17টি সরীসৃপ এবং 36টি উদ্ভিদ প্রজাতিসহ মোট 163টি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে। এখানে কলসপত্রী (উদ্ভিদ), একশৃঙ্গ গন্ডার, সোনালি লেঙুর (প্রাণী) ইত্যাদি জীব বেশি দেখা যায়।
14. ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ ও শ্রীলঙ্কা—এই অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর – ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ বা পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে ভারতের যে রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত তা হল—গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং কেরল।
15. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা-কে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলার কারণ কী?
অথবা, পশ্চিমঘাট-শ্রীলঙ্কা হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর – পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে প্রায় 5000 প্রজাতির সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ জন্মায়, যাদের মধ্যে 1700টি প্রজাতি এনডেমিক। এ ছাড়া, প্রাণীদের মধ্যে 140টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে 20টি প্রজাতি এনডেমিক। পাখির ক্ষেত্রে 450টি প্রজাতির মধ্যে 35টি প্রজাতি এনডেমিক। সরীসৃপের ক্ষেত্রে 260টি প্রজাতির মধ্যে 175টি প্রজাতি এবং উভচরের ক্ষেত্রে 135টি প্রজাতির মধ্যে 130টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে Magnolia nilagirica (ম্যাগনোলিয়া নিলাগিরিকা), Ixora elongata (ইক্সোরা ইলংগাটা) প্রভৃতি উদ্ভিদ এবং মালাবার লার্জ-স্পটেড সিভেট ও লায়ন-টেল্ড ম্যাকাক ইত্যাদি প্রাণীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
16. ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত ?
উত্তর – ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের যে সকল রাজ্য অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হল—মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ ও দক্ষিণ অসম।
17. সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের অবস্থান ও এর জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির নাম লেখো।
উত্তর – সুন্দাল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত।
সুন্দাল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হল—সুন্দরী গাছ (উদ্ভিদ) অথবা ওরাংওটাং (প্রাণী)।
18. পৃথিবীর উন্নায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হচ্ছে তার চারটি উদাহরণ দাও।
অথবা, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে’— ব্যাখ্যা করো।
অথবা, ‘দূষণ জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ’ –ব্যাখ্যা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, ‘বিশ্ব উয়ায়ন জীববৈচিত্র্যে কী প্রভাব ফেলবে তা উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর – পৃথিবীর উন্নায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির 4 টি উদাহরণ হল – (1) অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সংলগ্ন প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হ্রাস। (2) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 1°C-2°C বৃদ্ধির ফলে উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় আজ মেরু ভল্লুক খাদ্যের অভাবে সংকটাপন্ন, তেমনই সিন্ধুঘোটক, মেরু শেয়াল, পেঙ্গুইন প্রভৃতিও বিপদগ্রস্ত। (3) বিশ্ব উয়ায়নের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষতি করছে। (4) বিশ্ব উন্নায়নের ফলে বিভিন্ন মাছের প্রজাতি, ওয়ালরাস, পরিযায়ী পাখি, শামুক-ঝিনুকের প্রজাতি, উভচরেরা আজ বিপদের সম্মুখীন।
19. জলজ ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে এমন একটি করে বহিরাগত প্রজাতির উদাহরণ দাও।
উত্তর – জলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্রের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত উদ্ভিদ প্রজাতি—কচুরিপানা।
স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত প্রাণী প্রজাতি—আমেরিকান আরশোলা।
20. “চোরাশিকার ভারতের প্রাণীবৈচিত্র্যের বিপন্নতার একটি প্রধান কারণ”—যে যে কারণে এই চোরাশিকার ঘটে তার চারটি কারণ নির্ধারণ করো।
উত্তর – চোরাশিকারের চারটি কারণ হল— (1) কিছু কিছু পশুর দেহ উপাদান যেমন—বাঘের চামড়া, হরিণ বা বুনো মোষের শিং ইত্যাদি গৃহসজ্জার নান্দনিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (2) পশুর দেহজ উপাদান আয়ুর্বেদিক ওষুধের অনুপাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন—বাঘের হাড়, গন্ডারের খড়্গ। (3) বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, যেমন–বুনো মোষ, হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে চড়া দামে বিক্রয় হয়। (4) চোরাশিকারের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বেআইনি অর্থ সহজে রোজগার করা হয়।
21. মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় তা নীচের উদাহরণ দুটি থেকে বোঝা যায়।
- অরণ্য বিনাশ: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সুমাত্রা প্রভৃতি দেশে পাম তেল উৎপাদনের বৃদ্ধির জন্য পাম গাছ চাষের উদ্দেশ্যে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে ওরাংওটাং, সুমাত্রার হাতি, গন্ডার প্রভৃতির জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
- অতিব্যবহার: খাদ্য, চামড়া ইত্যাদি আহরণের জন্য মানুষ জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। অতীতে রাশিয়ার স্টেলারস সি-কাউ, প্যাসেঞ্জার পায়রা অত্যধিক শিকারের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন প্রজাতি মানুষের অতিরিক্ত আহরণের কারণে বিলুপ্তপ্রায়।
22. “বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়”—দুটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – বিদেশ থেকে নতুন প্রজাতির জীবের অনুপ্রবেশ ঘটলে বা আমদানি করা হলে, দেশীয় দুর্বল প্রজাতিগুলি বহিরাগত প্রজাতিগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না ও অবলুপ্ত হয়। যেমন – জাহাজে আগত আমেরিকান আরশোলা (Periplaneta americana) দ্রুত ভারতীয় আরশোলা (Blatta orientalis) প্রজাতিকে বিনষ্ট করেছে। ও সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে কচুরিপানা গাছটিকে ব্রাজিল থেকে আনা হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই গাছটি তার হ্রস্বধাবক বা অফসেট দ্বারা বংশবিস্তার করে খালবিল নদীনালায় ভরে গেছে, ফলে অন্যান্য দেশীয় জলজ প্রজাতিগুলির বিলুপ্তি ঘটেছে।
23. জীববৈচিত্র্য চুক্তি (biodiversity treaty) কী ?
উত্তর – 1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে যে বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বা কনজারভেশন অফ বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (CBD)-এর জন্য 150টি দেশ ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি দলিলে স্বাক্ষর করে, যা বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামে পরিচিত।
24. আন্তর্জাতিক বায়োডাইভারসিটি চুক্তি বা CBD-এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী কী ?
উত্তর – বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামক দলিলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলি হল— (1) জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করা, (2) জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত করা এবং (3) জিনগত সম্পদের পক্ষপাতহীন ব্যবহারের সুযোগের ব্যবস্থা করা।
25. সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব উল্লেখ করো।
উত্তর – সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব হল— (1) এই অরণ্য সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলকে ভূমিক্ষয় থেকে রক্ষা করে। (2) ঝড়ের প্রাবল্য থেকে নিকটবর্তী অঞ্চলকে রক্ষা করে। মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে, যেমন—গৃহ নির্মাণের সামগ্রী, জ্বালানি, মধু ও ফল জোগান দেয়।
26. সুন্দরবনের কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম লেখো।
উত্তর – সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হল—সুন্দরী, ক্যাওড়া (Sonneratia sp.) প্রভৃতি এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, মেছোবিড়াল প্রভৃতি।
27. ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই বা “লিট্ল গ্রিন ডাটা বুক’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবছর পরিবেশ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি বই প্রকাশ করে। একে ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই (little green data book) বলে। এই বইয়ে পৃথিবীর বন ও জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য, কৃষি প্রভৃতি প্রায় 50 টির অধিক বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়।
28. জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করো।
উত্তর – (1) কোনো অঞ্চলের বিপন্ন প্রাণীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের প্রজনন, খাদ্য ও বাসস্থান সুনিশ্চিত করা। (2) স্থানীয় উদ্ভিদ বিনষ্ট না করা, বনোন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ করা। (3) স্থানীয় জনগণ ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে বন পরিচালন করা ও বনজ উপাদানের পরিমিত ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।
29. সুন্দরবনের যে দ্বীপগুলি জলে নিমজ্জিত তাদের নাম লেখো।
উত্তর – সুন্দরবনের নিমজ্জিত দ্বীপগুলি হল—ঘোরামারা, নিউ মুর দ্বীপ, সুপারিভাঙা, লোহাচারা, বেডফোর্ড প্রভৃতি।
30. হটস্পট কী? উদাহরণ দাও।
উত্তর – হটস্পট: পৃথিবীর যে বৃহত্তর অঞ্চলগুলিতে যথেষ্ট মাত্রায় জীববৈচিত্র্য উপস্থিত থাকলেও সেগুলি মানুষের দ্বারা বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কাগ্রস্ত, তাদের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট বা জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলা হয়।
উদাহরণ: পূর্ব হিমালয় ও সুন্দাল্যান্ড, পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা।
31. সুন্দরবন সমস্যা সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
উত্তর – (1) সমস্ত বনাঞ্চল সরকারী ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। (2) ম্যানগ্রোভ গাছের বৃক্ষরোপণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। (3) বাঘ ও অন্যান্য বন্য প্রজাতি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
32. সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণ কী?
উত্তর – সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণগুলি হল— (1) মানববসতি নির্মাণ ও জ্বালানির প্রয়োজনে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়ে থাকে। (2) প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনাশ করে। (3) দূষণ, বিশ্ব উয়ায়নজনিত জলতল বৃদ্ধির ফলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনষ্ট হচ্ছে। (4) চিংড়ি চাষের জন্য নতুন জলাভূমি প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে বহু ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ কাটা হয়ে থাকে।
33. সুন্দরবন উন্নয়নে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তুমি মনে করো?
অনুরূপ প্রশ্ন, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ রক্ষা করার দুটি পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।
উত্তর – সুন্দরবন উন্নয়নে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, সেগুলি হল – (1) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বনসৃজন ও আদি বাস্তুতন্ত্র বজায় রেখে বনজ উপাদানের পরিমিত ও সুসংহত ব্যবহার ও তার পুনর্নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করা। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়দেশের বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা মিলিত হয়ে যৌথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। (2) স্থানীয় জনগণকে ওই বনাঞ্চল ও তার বন্যাপ্রাণের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতন করা প্রয়োজন। বন্যপ্রাণ বিনাশের চরম পরিণতি সম্বন্ধে তাদের জ্ঞাত হতে হবে। (3) সুন্দরবন অঞ্চলের নদীদূষণ ও মাটি দূষণ যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে। (4) সুন্দরবনে পরিবেশ বিনাশ না করে কেবলমাত্র ইকোটুরিজমের ব্যবস্থা করতে হবে।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. ‘বায়োডাইভারসিটি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন—
(a) জিম্মারম্যান
(b) ডব্লিউ জি রোসেন
(c) চার্লস ডারউইন
(d) ল্যামার্ক
উত্তর – (b) ডব্লিউ জি রোসেন
2. বর্তমান পৃথিবীতে মোট জীবপ্রজাতির সংখ্যা (2011, নেচার পত্রিকা) –
(a) 1 মিলিয়ন
(b) 8.7 মিলিয়ন
(c) 5.7 মিলিয়ন
(d) 13.5 মিলিয়ন
উত্তর – (b) 8.7 মিলিয়ন
3. জীববৈচিত্র্যের কারণ হল –
(a) বিবর্তন
(b) অভিযোজন
(c) মিউটেশন
(d) সবকটি
উত্তর – (d) সবকটি
4. প্রজাতির বিভিন্নতা সৃষ্টি হয় –
(a) জিনগত জীববৈচিত্র্যের জন্য
(b) বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য
(c) প্রাণী বৈচিত্র্যের জন্য
(d) উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের জন্য
উত্তর – (a) জিনগত জীববৈচিত্র্যের জন্য
5. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কথাটির সমার্থক হল—
(a) জিনগত বৈচিত্র্য
(b) প্ৰজাতিগত বৈচিত্র্য
(c) আবাসস্থলের বৈচিত্র্য
(d) প্রাণী বৈচিত্র্য
উত্তর – (c) আবাসস্থলের বৈচিত্র্য
6. স্থানীয় বৈচিত্র্য হল—
(a) ডেল্টা বৈচিত্র্য
(b) আলফা বৈচিত্র্য
(c) গামা বৈচিত্র্য
(d) বিটা বৈচিত্র্য
উত্তর – (b) আলফা বৈচিত্র্য
7. পৃথিবীতে অতিবৈচিত্র্যশালী দেশের সংখ্যা হল—
(a) 10টি
(b) 13টি
(c) 15টি
(d) 17টি
উত্তর – (d) 17টি
৪. জীববৈচিত্র্যপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হল –
(a) ভারত, মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া
(b) কানাডা, জাপান, নরওয়ে
(c) উত্তর কোরিয়া, ইরান, লিবিয়া
(d) বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা
উত্তর – (a) ভারত, মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া
9. নীচের যেখানে সর্বাধিক জীববৈচিত্র্য দেখা যায়—
(a) বাদাবন
(b) কোরাল রীফ
(c) উয়মণ্ডলীয় বর্ষার অরণ্য
(d) তৈগা
উত্তর – (c) উয়মণ্ডলীয় বর্ষার অরণ্য
10. ভারতে প্রাপ্ত উদ্ভিদ প্রজাতি, সমগ্র পৃথিবীর উদ্ভিদ প্রজাতির—
(a) 10%
(b) 11%
(c) 12%
(d) 13%
উত্তর – (b) 11%
11. মালদায় যেসব আম পাওয়া যায়, সেগুলির স্বাদ, রং, তন্তুর পরিমাণ ও শর্করার পরিমাণ বিভিন্ন। এই বৈচিত্র্য যার পরিমাপ তা হল—
(a) সংকরায়ণ
(b) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য
(c) প্রণোদিত পরিব্যক্তি
(d) জিনগত বৈচিত্র্য
উত্তর – (d) জিনগত বৈচিত্র্য
12. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদটি হল —
(a) সর্পগন্ধা
(b) সিনকোনা
(c) পেয়ারা
(d) কালমেঘ
উত্তর – (a) সর্পগন্ধা
13. ক্যাশমিয়ার উল প্রস্তুত হয় যে প্রাণীর থেকে, তা হল—
(a) ভেড়া
(b) ছাগল
(c) খরগোশ
(d) বিড়াল
উত্তর – (b) ছাগল
14. যে প্রজাতি সংখ্যায় স্বল্প হলেও অন্য প্রজাতি তথা বাস্তুতন্ত্রকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, তাকে বলে—
(a) কিস্টোন প্রজাতি
(b) বিপন্ন প্রজাতি
(c) লুপ্তপ্রায় প্রজাতি
(d) বিরল প্রজাতি
উত্তর – (a) কিস্টোন প্রজাতি
15. জীববৈচিত্র্য দিবস উদ্যাপন করা হয় –
(a) 5 জুন
(b) 22 মাৰ্চ
(c) 29 নভেম্বর
(d) 22 মে
উত্তর – (d) 22 মে
16. হটস্পট ধারণাটির প্রবর্তক হলেন—
(a) ডেভিড
(b) সিম্পসন
(c) মেয়ার
(d) নরম্যান মায়ার্স।
উত্তর – (d) নরম্যান মায়ার্স।
17. সারা বিশ্বে জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের মোট সংখ্যা হল—
(a) 14টি
(b) 24টি
(c) 34টি
(d) 44টি
উত্তর – (c) 34টি
18. সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত 34টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের মধ্যে ভারতে রয়েছে—
(a) 2টি
(b) 4টি
(c) 8টি
(d) 16টি
উত্তর – (b) 4টি
19. আমাদের দেশের একটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবে পরিগণিত হয়েছে—
(a) নীলগিরি পর্বত
(b) আরাবল্লী পর্বত
(c) পশ্চিমঘাট
(d) পূর্বঘাট
উত্তর – (c) পশ্চিমঘাট
20. কোন্টি হটস্পট নয়?
(a) ইন্দো-বার্মা
(b) পশ্চিমঘাট
(c) সুন্দরবন
(d) পূর্ব হিমালয়
উত্তর – (c) সুন্দরবন
21. সিকিম, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের অন্তর্ভুক্ত হটস্পট অঞ্চলটি হল—
(a) ইন্দো-বার্মা
(b) পূর্ব হিমালয়
(c) পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা
(d) সুন্দাল্যান্ড
উত্তর – (b) পূর্ব হিমালয়
22. পূর্ব-হিমালয় জীববৈচিত্র্য হটস্পটের একটি বিপন্ন প্রজাতি হল-
(a) লায়ন-টেল্ড ম্যাকাক
(b) ওরাং ওটাং
(c) রেড পান্ডা
(d) নীলগিরি থর
উত্তর – (c) রেড পান্ডা
23. হটস্পট অঞ্চলে যতগুলি সংবহনকলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকবে, তা হল –
(a) 1500
(b) 1600
(c) 1700
(d) 1800
উত্তর – (a) 1500
24. ভারতের যে অংশ ইন্দো-বার্মা হটস্পটের অন্তর্গত তা হল—
(a) আন্দামান ও নিকোবর
(b) মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশ
(c) তামিলনাড়ু ও নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল
(d) সিকিম ও দার্জিলিং
উত্তর – (b) মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশ
25. সুন্দাল্যান্ড হল—
(a) জাতীয় উদ্যান
(b) হটস্পট
(c) অভয়ারণ্য
(d) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
উত্তর – (b) হটস্পট
26. সুন্দাল্যান্ড জীববৈচিত্র্য হটস্পটের অবস্থান হল—
(a) উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে
(b) আন্দামান-নিকোবর, সুমাত্রা এবং জাভা প্রভৃতি দ্বীপ অঞ্চলে
(c) ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর ঘন অরণ্যে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চলে
(d) সিকিম, দার্জিলিং এবং তরাই অঞ্চলে
উত্তর – (b) আন্দামান-নিকোবর, সুমাত্রা এবং জাভা প্রভৃতি দ্বীপ অঞ্চলে
27. সুন্দাল্যান্ডে মোট যত সংখ্যক সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ আছে, তা হল—
(a) 25,000
(b) 30,000
(c) 35,000
(d) 40,000
উত্তর – (a) 25,000
28. ভারতে যত শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি এনডেমিক, তা হল—
(a) প্রায় 11%
(b) প্রায় 22%
(c) প্রায় 33%
(d) প্রায় 44%
উত্তর – (c) প্রায় 33%
29. নিম্নলিখিত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে সবথেকে বেশি বিপন্ন হল—
(a) মাছ
(b) সরীসৃপ
(c) পাখি
(d) স্তন্যপায়ী
উত্তর – (d) স্তন্যপায়ী
30. পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত উদ্ভিদ হল—
(a) ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ
(b) শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ
(c) সপুষ্পক উদ্ভিদ
(d) মস-জাতীয় উদ্ভিদ
উত্তর – (c) সপুষ্পক উদ্ভিদ
31. ভারতের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হল —
(a) ভারতীয় বাঘ, কস্তুরীমৃগ
(b) ভারতীয় গাধা, শূকর
(c) গৃহপালিত বিড়াল, বেজি
(d) গৃহপালিত গোরু, ঘোড়া
উত্তর – (a) ভারতীয় বাঘ, কস্তুরীমৃগ
32. ভারতের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হল –
(a) সুন্দরী, কলসপত্রী, চন্দন
(a) আম, জাম, কাঁঠাল
(a) ধান, গম, বাজরা
(a) শিমুল, অর্জুন, তেঁতুল
উত্তর – (a) সুন্দরী, কলসপত্রী, চন্দন
33. ভারতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন একটি প্রজাতির পাখি হল –
(a) ধনেশ
(b) কাকাতুয়া
(c) টিয়া
(d)গোলাপি মাথাওয়ালা হাঁস
উত্তর – (d)গোলাপি মাথাওয়ালা হাঁস
34. বিশ্ব উষ্মায়নের কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা গত শতকে বেড়েছে প্রায় —
(a) 0.4°C
(b) 0.5°C
(c) 0.6°C
(d) 0.7°C
উত্তর – (c) 0.6°C
35. জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ কোনটি?
(a) বনভূমি বিনাশ
(b) সংরক্ষণ ব্যবস্থা
(c) শব্দদূষণ
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) বনভূমি বিনাশ
36. নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে প্রজাতি বিলুপ্তির প্রধান কারণ হল—
(a) অরণ্য ধ্বংস
(b) ভূমিক্ষয়
(c) ভূমিকম্প
(d) সুপার সাইক্লোন
উত্তর – (a) অরণ্য ধ্বংস
37. ভারতে কচুরিপানার অনুপ্রবেশ যে দেশ থেকে হয়েছে, তা হল—
(a) অস্ট্রেলিয়া
(b) দক্ষিণ আমেরিকা
(c) জাপান
(d) নেপাল
উত্তর – (b) দক্ষিণ আমেরিকা
38. এদেশে বাস্তুতান্ত্রিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে যে বিদেশি উদ্ভিদ তা হল—
(a) পার্থেনিয়াম ও কচুরিপানা
(b) পাথরকুচি ও বেগোনিয়া
(c) জাম ও কলা
(d) লজ্জাবতী ও আকন্দ
উত্তর – (a) পার্থেনিয়াম ও কচুরিপানা
39. ভারতে পার্থেনিয়াম-এর আগমন ঘটে—
(a) বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানির সময়ে
(b) অস্ট্রেলিয়া থেকে ধান আমদানির সময়ে
(c) আমেরিকা থেকে গম আমদানির সময়ে
(d) ইংল্যান্ড থেকে বালি আমদানির সময়ে
উত্তর – (c) আমেরিকা থেকে গম আমদানির সময়ে
40. সর্পগন্ধা গাছের বিপন্নতার কারণ হল –
(a) বিশ্ব উয়ায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন
(b) বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ
(c) অতিব্যবহার
(d) দূষণ
উত্তর – (c) অতিব্যবহার
41. বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্যের সমূহ ক্ষতিসাধন করে যে গাছ, সেটি হল-
(a) শিমুল
(b) আম
(c) অর্জুন
(d) ইউক্যালিপ্টাস
উত্তর – (d) ইউক্যালিপ্টাস
42. ম্যানগ্রোভ-জাতীয় বনভূমি দেখা যায়—
(a) শুষ্ক মরু অঞ্চলে
(b)পাহাড়ি অঞ্চলে
(c) মালভূমি অঞ্চলে
(d) লবণাক্ত জলাভূমিতে
উত্তর – (d) লবণাক্ত জলাভূমিতে
43. পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি অবস্থিত—
(a) জলপাইগুড়িতে
(b) মেদিনীপুরে
(c) সুন্দরবনে
(d) পুরুলিয়াতে
উত্তর – (c) সুন্দরবনে
44. সুন্দরবনের কিস্টোন প্রজাতি হল—
(a) ম্যানগ্রোভ
(b) বেঙ্গল টাইগার
(c) বন্য শূকর
(d) মাছ
উত্তর – (b) বেঙ্গল টাইগার
45. সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা হ্রাসের কারণ হল —
(a) বসতি অঞ্চলের বিনাশ
(b) চোরাশিকার
(c) বন পরিচালনে ব্যর্থতা
(d) সবগুলি
উত্তর – (d) সবগুলি
46. নীচের কোন্টি/কোন্গুলি নিমজ্জিত ব-দ্বীপ?
(a) ঘোরামারা
(b) লোহাচারা
(c) বেডফোর্ড
(d) সবগুলি
উত্তর – (d) সবগুলি
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে কী বলে?
উত্তর – জীববৈচিত্র্য।
2. পৃথিবীর কোথায় সবথেকে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায়?
উত্তর – ক্রান্তীয় বর্ষা অরণ্য অঞ্চলগুলিতে পৃথিবীর সবথেকে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায়।
3. সুস্থ ও কার্যকর বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি কী?
উত্তর – জীববৈচিত্র্য।
4. একই প্রজাতির মধ্যে জিনের বিভিন্ন প্রকরণ ও সমন্বয়কে কী বলে?
উত্তর – জিনগত বৈচিত্র্য।
5. কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির জীবের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে কী বলে?
উত্তর – প্ৰজাতিগত বৈচিত্র্য।
6. বাস্তুরীতি ও জীবসম্প্রদায়গত বৈচিত্র্যকে কী বলে?
উত্তর – বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।
7. ভারতীয় জীববৈচিত্র্য মন্ত্রকের চতুর্থ রিপোর্ট (2009) অনুযায়ী ভারতে প্রাপ্ত বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা কত?
উত্তর – 46000-এর বেশি।
৪. পৃথিবীর সমগ্র জীবপ্রজাতির কত শতাংশ অতিবৈচিত্র্যশালী দেশে অবস্থিত?
উত্তর – 70%I
9. ভারতে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা কত?
উত্তর – ভারতে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা 91,212-এর অধিক।
10. ভারতের মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ কত?
উত্তর – ভারতের মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ 6,92,027 km2
11. ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র 2011 সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে কত শতাংশ বনাঞ্চল রয়েছে?
উত্তর – 21.05 শতাংশ।
12. ফ্লোরা কী?
উত্তর – কোনো একটি অঞ্চলের উদ্ভিদ প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত প্রজাতি পরিচয়কে ফ্লোরা বলে।
13. বিশ্ব পরিবেশ দিবস কবে পালিত হয় ?
উত্তর – 5 জুন।
14. পৃথিবী সংরক্ষণ দিবস কবে পালিত হয়?
উত্তর – 3 ডিসেম্বর।
15. রিও বসুন্ধরা সম্মেলন কবে ও কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর – 1992 সালে ব্রাজিলের রিও ডি-জেনিরো-তে বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
16. ভারতের কোন্ জীববৈচিত্র্যের হটস্পটে ‘লিফডিয়ার’ দেখা যায় ?
উত্তর – পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে ‘লিফডিয়ার’ (Muntiacus putaoenesis) দেখা যায়।
17. বর্তমানে বিলুপ্ত ডোডো পাখি কোথায় পাওয়া যেত?
উত্তর – বর্তমানে বিলুপ্ত ডোডো পাখি মরিশাসে পাওয়া যেত।
18. CBD-এর পুরো নাম কী ?
উত্তর – কনভেনশন অন বায়োডাইভারসিটি।
19. জীববৈচিত্র্যের হটস্পট কাকে বলে?
উত্তর – জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য্যযুক্ত সর্বাধিক বিপদগ্রস্ত বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চলকে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট বলে।
20. ভারতের দুটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের নাম লেখো।
উত্তর – (1) পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা এবং (2) পূর্ব হিমালয়।
21. ভারতে মোট কতগুলি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে?
উত্তর – 4টি।
22. সারা বিশ্বে কতগুলি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে?
উত্তর – 34টি।
23. ইন্দো-বার্মা হটস্পটের একটি উদ্ভিদের নাম কী ?
উত্তর – Vanda coerulea নামক অর্কিড।
24. পূর্ব হিমালয় হটস্পটের একটি উদ্ভিদের নাম লেখো।
উত্তর – কলসপত্রী উদ্ভিদ (Nepanthes khasiana) |
25. পূর্ব হিমালয় হটস্পটের একটি স্তন্যপায়ীর নাম লেখো।
উত্তর – রেড পান্ডা (Aliurus fulgens)।
26. ইন্দো-বার্মা হটস্পটের একটি প্রাণীর নাম কী?
উত্তর – সায়ামিস কুমির (Crocodylus siamensis)
27. সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের একটি উদ্ভিদের নাম লেখো।
উত্তর – সুন্দরী (Heritiera sp.) ।
28. সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের একটি স্তন্যপায়ীর নাম লেখো।
উত্তর – ওরাংওটাং (Pongo sp.)
29. ভারতের কোথায় বৃষ্টি অরণ্য বা রেইন ফরেস্ট দেখা যায়?
উত্তর – পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
30. মেরু ভালুকের বিপন্নতার অন্যতম কারণটি উল্লেখ করো।
উত্তর – বিশ্ব উয়ায়ন।
31. কর্মসূচি-21 বা অ্যাজেন্ডা-21 কী?
উত্তর – রিও বসুন্ধরা সম্মেলনে (1992) একুশ শতকে পরিবেশ সংক্রান্ত অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যে বিশেষ কর্মসূচি গৃহীত হয়, তাকে কর্মসূচি-21 বা অ্যাজেন্ডা-21 বলে।
32. কিস্টোন প্রজাতি কী?
উত্তর – যেসব প্রজাতির জীবসংখ্যা কম থাকলেও কোনো বাস্তুতন্ত্রের কার্যপ্রণালী বৃহৎভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে তাকে কিস্টোন প্রজাতি বলে, যেমন— রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হল কিস্টোন প্রজাতি।
33. পশ্চিমবঙ্গের যে-কোনো একটি কিস্টোন প্রজাতির নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – সুন্দরবনের বাঘ।
34. আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস হিসেবে কোন্ দিনটি পালিত হয় ?
উত্তর – 22 মে।
35. একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম লেখো।
উত্তর – গর্জন (Rhizophora apiculate)।
36. পশ্চিমবঙ্গের কোন্ অরণ্যকে UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-রূপে ঘোষণা করেছে?
উত্তর – সুন্দরবন।
37. সুন্দরবন কোন প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর – রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
38. সুন্দরবনের পরিবেশ সংক্রান্ত সাম্প্রতিকতম উদ্বেগের কারণটির নাম লেখো।
উত্তর – লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস এবং মিষ্টি জলের সংকট।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. ভূপৃষ্ঠের মাত্র 2 শতাংশ ভারতে উপস্থিত, কিন্তু পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের …….. শতাংশ ভারতে বিদ্যমান।
উত্তর – 7.7
2. জীবজাত ওষুধের একটি উৎস হল …….. গাছ।
উত্তর – সিনকোনা
3. ম্যালেরিয়ার ওষুধরূপে ব্যবহৃত হয় ……….।
উত্তর – কুইনাইন
4. একটি উপকারী ছত্রাক হল ……….।
উত্তর – পেনিসিলিয়াম
5. সর্পগন্ধা গাছের মূলের থেকে ………. পাওয়া যায় যা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – রেসারপিন
6. …………. একটি ভেষজ উদ্ভিদ।
উত্তর – কালমেঘ
7. বাস্তুতন্ত্রে উদ্ভিদের প্রধান ভূমিকা হল ……….. হিসেবে।
উত্তর – উৎপাদক
৪. কাগজ প্রস্তুতির মণ্ড প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিদের ……….. তন্তু।
উত্তর – সেলুলোজ
9. কাগজ তৈরিতে ………. গাছ ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – বাঁশ
10. বাবলা, শিরিষ প্রভৃতি গাছ থেকে নিঃসৃত ………… আঠা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – গঁদ
11. পাইন গাছের রজন ……….. তৈরিতে কাজে লাগে।
উত্তর – তাৰ্পিন তেল
12. ……….. হল একপ্রকার রজন, যা রান্নায় ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – হিং
13. প্রসাধনী শিল্পে ……… ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – মৌ মোম
14. অ্যাঙ্গোরা উল পাওয়া যায় ………. থেকে।
উত্তর – খরগোশ
15. জীববৈচিত্র্যের সর্বাধিক প্রাচুর্যযুক্ত অঞ্চলকে ……….. বলা হয়।
উত্তর – হটস্পট
16. জীববৈচিত্র্য হটস্পট শব্দটি সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন বিজ্ঞানী ……….।
উত্তর – নরম্যান মায়ার্স
17. দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত একটি হটস্পট অঞ্চল হল ……….।
উত্তর – পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা
18. প্রজাতিভবনের উৎপত্তিস্থল বলা হয় ………. হটস্পট অঞ্চলকে।
উত্তর – পূর্ব হিমালয়
19. পূর্ব হিমালয় হটস্পট অঞ্চলে প্রায় ………. টি এনডেমিক সপুষ্পক উদ্ভিদ বর্তমান।
উত্তর – 2000
20. পূর্ব হিমালয় হটস্পট অঞ্চলে ………. টি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে।
উত্তর – 163
21. ইন্দো-বার্মা হটস্পট অঞ্চলে মোট উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা হল ………. টি।
উত্তর – 13,500
22. ইন্দো-বার্মা হটস্পট অঞ্চলে প্রাপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতি হল ……….।
উত্তর – 430
23. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা হটস্পট অঞ্চলে প্রায় ……… টি এনডেমিক পাখি প্রজাতি বর্তমান।
উত্তর – 35
24. সমুদ্র ও অরণ্যের মেলবন্ধনে অদ্ভূত জীববৈচিত্র্যের পরিবেশ রচনা করেছে ………. হটস্পট।
উত্তর – সুন্দাল্যান্ড
25. …………. হল একটি কিস্টোন প্রজাতি।
উত্তর – রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
26. সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাওয়ায় ……….. অরণ্য বিনষ্ট হচ্ছে।
উত্তর – ম্যানগ্রোভ
27. ওজোনস্তরের অবক্ষয়ের ফলে ………… রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে।
উত্তর – অতিবেগুনি
28. কচুরিপানার আদি বাসস্থান হল ……….।
উত্তর – আমাজন অববাহিকা (দক্ষিণ আমেরিকা)
SUB-TOPIC 4.2 জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ
বিষয়সংক্ষেপ
- সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপনের জন্য জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ জরুরি। এটি দুইপ্রকার-ইন-সিটু সংরক্ষণ এবং এক্স-সিটু সংরক্ষণ।
- কোনো জীবকে স্থানীয়ভাবে তার বাসস্থানে সংরক্ষণই হল ইন-সিটু সংরক্ষণ। জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল এর উদাহরণ।
- কোনো বিপন্ন জীবকে তার স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে সরিয়ে কৃত্রিম উপায়ে প্রতিরক্ষাদান ও সংরক্ষণ পদ্ধতিকে বলে এক্স-সিট সংরক্ষণ। যেমন—চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রভৃতি।
- ক্রায়োসংরক্ষণ (cryopreservation) হল একটি বিশেষ এক্স-সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে –196°C তাপমাত্রায় প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু, উদ্ভিদের বীজ ও পরাগরেণু ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. সংরক্ষণ কাকে বলে? জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – সংরক্ষণ: যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, তার নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাকে সংরক্ষণ বলে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য মূলত দুই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়, যথা— (1) ইন-সিটু সংরক্ষণ এবং (2) এক্স-সিটু সংরক্ষণ।

- ইন-সিঁটু বা স্বস্থানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি: এইজাতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে জীবগোষ্ঠীকে তাদের সমস্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করা হয়। জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত অরণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ইত্যাদি স্বস্থানিক সংরক্ষণের বিবিধ পথ বা ক্ষেত্র। [i] জাতীয় উদ্যান: এটি হল সরকার অধিগৃহীত ও নিয়ন্ত্রাধীন একটি অঞ্চল। এখানে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদসমূহকে চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 2013 সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতে 102টি জাতীয় উদ্যান সরকারিভাবে স্বীকৃত। জলপাইগুড়ির গোরুমারা এবং অসমের কাজিরাঙাতে এই ধরনের জাতীয় উদ্যান রয়েছে। [ii] অভয়ারণ্য: এই বনাঞ্চল, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের আইন স্বীকৃত। এটি জাতীয় উদ্যানের তুলনায় ক্ষুদ্র। এখানে কাঠকাটা, চাষ-আবাদ করা এবং বনজ সম্পদ আহরণ করা অনুমতি সাপেক্ষ, তবে নিষিদ্ধ নয়। 2013 সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতে 515টি অভয়ারণ্য রয়েছে। গুজরাটের গির অরণ্য হল একটি অভয়ারণ্যের উদাহরণ। [iii] সংরক্ষিত অরণ্য বা বনাঞ্চল: এইপ্রকার বনভূমি রাজ্য সরকারের আয়ত্তাধীন। এখানে গাছ কাটা, শিকার করা, গৃহপালিত পশুচারণ বিশেষ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিষিদ্ধ। কর্ণাটকের হানামাসাগর একটি সংরক্ষিত অরণ্য। [iv] বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ : এটি একটি বিশেষ অঞ্চল। এখানে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জমি অঞ্চলভিত্তিক ও নির্দিষ্ট ক্রিয়া কর্মভিত্তিক কতকগুলি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করা হয়। এখানে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন উভয় কার্যই সম্পাদন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এবং তামিলনাড়ুর নীলগিরি হল খুবই সুপরিচিত বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
- এক্স-সিটু বা অস্থানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি: এইজাতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে জীবগোষ্ঠীকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়। চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্রায়োসংরক্ষণ বা ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রভৃতির মাধ্যমে এক্স-সিটু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। [i] চিড়িয়াখানা: চিড়িয়াখানাতে বিভিন্ন ধরনের স্থলজ ও জলজ প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়। [ii] বোটানিক্যাল গার্ডেন: বোটানিক্যাল গার্ডেনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করা হয়। [iii] ক্রায়োপ্রিজারভেশন বা ক্রায়োসংরক্ষণ : পরাগরেণু, বীজ, উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ প্রায় – 196°C তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করা যায়। অনেক সময় কঠিন CO2 -তে –80°C তাপমাত্রায় উদ্ভিদ প্রোপাগিউল সংরক্ষণ করা হয়। এইপ্রকার সংরক্ষণ ক্রায়োসংরক্ষণ নামে পরিচিত।
2. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কাকে বলে? জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লেখো।
অথবা, খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও তন্তু উৎপাদনে জৈব-বৈচিত্র্যের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: যে বিশেষ পদ্ধতির দ্বারা জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যবস্থার সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা হয় এবং জীববৈচিত্র্যকে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব, অপব্যবহার এবং ধ্বংস থেকে রক্ষা করা হয়, তাকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা: নানা কারণে জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। নীচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হল।
- খাদ্যের ভাণ্ডার : জীববৈচিত্র্য হল পৃথিবীর সমস্ত জীবের খাদ্যের ভাণ্ডার। তাই পৃথিবীর খাদ্য ভাণ্ডারকে অটুট রাখতে ও খাদ্য সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য।
- শক্তি প্রদানকারী উৎস: সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের সাহায্যে পরিবেশ থেকে সংগৃহীত CO2 ও জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শর্করা-জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। এক কথায় উদ্ভিদ আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে খাদ্য তৈরি করে। ওই শক্তি উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্তরের প্রাণীদেহে প্রবাহিত হয় ও জীবনীশক্তি বজায় রাখে। তাই শক্তি প্রদানকারী হিসেবে জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা জীবজগতের কাছে অপরিহার্য।
- জিনবৈচিত্র্যের ভাণ্ডার: জীববৈচিত্র্য জিনবৈচিত্র্যের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। জিনবৈচিত্র্য অটুট রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
- ওষুধের উৎস: বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে আধুনিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। জানা গেছে প্রায় 70,000 প্রজাতির উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- শিল্পের কাঁচামালের ভাণ্ডার: বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল জীববৈচিত্র্য থেকে পাওয়া যায়। সেই কারণে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজন।
- বাস্তুসংস্থানগত ভূমিকা: যে-কোনো বাস্তুতন্ত্রে জীবগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। এদের মধ্যে উৎপাদক, খাদক, বিয়োজক ও পরিবর্তক থাকে। কোনো একটি সম্প্রদায়ের অবলুপ্তি খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায়। তাই বাস্তুতান্ত্রিক সাম্যতা রক্ষার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য বা গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য হল — (1) সংখ্যায় কম এমন প্রাণীদের ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব বজায় রাখা, (2) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুদৃঢ় করা এবং মানবকল্যাণে জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানভিত্তিক সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।
2. ইন-সিট্ সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – কোনো জীবকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করাকে ইন-সিটু সংরক্ষণ বা স্বস্থানিক সংরক্ষণ বলে। যেমন—সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে বাঘ সংরক্ষণ।
3. ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর – ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা হল —(1) প্রাকৃতিক পরিবেশে কম খরচে সংরক্ষণ করা যায়। (2) জীবের মুক্ত প্রজনন সম্ভব হয় বলে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।
ইন-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা হল — (1) বৃহৎ আয়তন স্থানের প্রয়োজন হয়। (2) অসুস্থ জীবের চিকিৎসা সম্ভব হয় না।
4. ইন-সিটু ও এক্স-সিঁটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা পথগুলি লেখো।
উত্তর – ইন-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পথগুলি হল—জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পথগুলি হল—চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বীজ বা সীড ব্যাংক, জিন ব্যাংক ইত্যাদি।
5. জাতীয় উদ্যান কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – জাতীয় উদ্যান: কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ও আয়তনে অভয়ারণ্য অপেক্ষা বড়ো যেসব নির্দিষ্ট বনাঞ্চলে প্রাণী হত্যা, মাছ ধরা, গাছ কাটা, এমনকি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ সেগুলিকে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক বলে।
উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের গোরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান।
6. জাতীয় উদ্যানের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – জাতীয় উদ্যানের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) জাতীয় উদ্যান হল সরকার অধিগৃহীত এবং নিয়ন্ত্রাণাধীন এক অঞ্চল যেখানে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। (2) এইজাতীয় উদ্যানে কোনো ধরনের শিকার করা, চাষবাস করা বা গৃহপালিত পশুচারণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। (3) এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজ সম্পদকে জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়।
7. জাতীয় উদ্যান স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর – জাতীয় উদ্যান স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল- (1) সংকটাপন্ন প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের এবং প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করা। (2) নির্দিষ্ট অঞ্চলটির প্রাকৃতিক পরিবেশ, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ সম্পদসমূহের জাতীয় স্তরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৪. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জাতীয় অরণ্যের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – (1) জাতীয় অরণ্যগুলিতে সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হওয়া যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। ভারতীয় সিংহ, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, একশৃঙ্গ গন্ডার প্রভৃতি প্রাণীগুলির সংখ্যা এর ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে। (2) জাতীয় অরণ্যগুলি একমুখী মানবউন্নয়নের বদলে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। (3) স্থানীয় আদিবাসী, তাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষা করতেও জাতীয় অরণ্য সাহায্য করে থাকে।
9. জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ও গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলির নাম লেখো।
উত্তর – জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলি হল—একশৃঙ্গ গন্ডার, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, হাতি, বাঘ, শূকর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ইত্যাদি।
গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত প্রাণীগুলি হল—বাইসন, গন্ডার, হাতি, গাউর, শ্লথ বিয়ার, সম্বর, বন্য শূকর, পিগমি হগ ইত্যাদি।
10. অভয়ারণ্য বা স্যাংচুয়ারি কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – অভয়ারণ্য রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এমন একটি বনাঞ্চল যেখানে আইনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার করা এবং জনসাধারণের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ, তাকে অভয়ারণ্য বলে। কিন্তু গবেষণার স্বার্থে অনুমতি সাপেক্ষে অভয়ারণ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করা যায়।
উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের চাপড়ামারি ও ঝাড়খণ্ডের পালামৌ অভয়ারণ্য।
11. অভয়ারণ্যের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – অভয়ারণ্যের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল— (1) অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণী শিকার রাজ্য সরকার কর্তৃক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। (2) এই ধরনের বনাঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবে মুখ্য বন আধিকারিক বা কর্তব্যরত সরকারি কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
12. অভয়ারণ্য স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর – অভয়ারণ্য স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল— (1) চোরাশিকারির হাত থেকে প্রাণী বৈচিত্র্যকে রক্ষা করা। (2) স্বাভাবিক পরিবেশে সংকটাপন্ন জীবপ্রজাতির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
13. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অভয়ারণ্যের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – (1) অভয়ারণ্যগুলি স্থানীয় বা এনডেমিক প্রজাতিগুলি রক্ষা করতে সাহায্য করে। (2) স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখা, জীবের প্রজননে স্থান প্রদান করে জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে অভয়ারণ্য সাহায্য করে। (3) অভয়ারণ্য ইকোপর্যটন দ্বারা মানুষকে আনন্দ প্রদান করে থাকে। প্রকৃতি ও জীব সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানলাভেও এগুলি সাহায্য করে।
14. সংরক্ষিত অরণ্য বা সংরক্ষিত বনাঞ্চল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – সংরক্ষিত অরণ্য: ভারতীয় বন আইন, 1927 অনুযায়ী রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব অরণ্যে সাধারণের প্রবেশের অধিকার থাকে না, কিন্তু অনুমতি নিয়ে গবেষকরা প্রবেশ করতে পারে সেইসব বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য বলে।
উদাহরণ: কেরলের শোলায়ার (Sholayar) সংরক্ষিত অরণ্য, কর্ণাটকের হানামাসাগর (Hanumasagara) সংরক্ষিত অরণ্য।
15. সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট-এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট-এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) এই ধরনের অরণ্য রাজ্য সরকারের আয়ত্তাধীন। (2) এইপ্রকার বনাঞ্চলে গাছকাটা, শিকার করা এবং গৃহপালিত পশুচারণ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিষিদ্ধ থাকে।
16. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ: যে বিশেষ বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জমি অঞ্চলভিত্তিক ও নির্দিষ্ট ক্রিয়াকর্মভিত্তিক কতকগুলি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করা হয়, তাকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে।
উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ও তামিলনাড়ুর নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
17. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অংশগুলি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের বৈশিষ্ট্য বলো।
অনুরূপ প্রশ্ন, কোর অঞ্চল কাকে বলে? বাফার জোন কী?
ট্রানজিশন অঞ্চল বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সুবিধার জন্য বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়। এগুলি হল— (1) কোর অঞ্চল: বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে অবস্থিত সংরক্ষিত অংশকে কোর অঞ্চল বলে। এই অঞ্চলে জীবের প্রজনন সাধিত হয় ও এই অঞ্চলের ইকোসিস্টেম অন্য অঞ্চলগুলিতে স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়। এই অঞ্চলে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। (2) বাফার অঞ্চল: কোর অঞ্চলকে ঘিরে অবস্থিত অঞ্চল যেখানে মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত। এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন, গবেষণা প্রভৃতি কাজ করা হয়। (3) ট্রানজিশন অঞ্চল বা ‘এরিয়া অফ কো-অপারেশন’: স্থানীয় বাসিন্দা ও সংরক্ষণ কর্মীরা এই অঞ্চলে থাকেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের চেষ্টা করেন। এই অঞ্চলের বনজ উপাদান পরিমিতভাবে ব্যবহার করা যায়।

18. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর – বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল— (1) বায়োস্ফিয়ারে থাকা জীবসমূহকে প্রজাতিগত ও জিনগত বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। (2) মানুষ ও প্রকৃতির আন্তঃসম্পর্কের উন্নতিসাধনের ব্যবস্থা করা।
19. পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি ন্যাশনাল পার্ক ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের উদাহরণ দাও।
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি ন্যাশনাল পার্ক হল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
20. এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণ: কোনো জীবকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যা তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্ভব নয়, তখন সেই জীবকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। এই ধরনের সংরক্ষণকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলে।
উদাহরণ: বোটানিক্যাল গার্ডেন-এ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা।
21 এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা কী কী?
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধাগুলি হল— (1) কোনো প্রজাতি বিপন্ন হলে তার সুচিকিৎসা, সংরক্ষণ ও প্রজনন এক্স-সিটু সংরক্ষণ দ্বারা সম্ভব হয়। (2) কোনো প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায় হলে সম্পূর্ণ বিলুপ্তির আগে তার জনন উপাদান (জননকোশ বা রেণু) ক্রায়োসংরক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত করে ভবিষ্যতে জীব তৈরি সম্ভব হয়।
22. এক্স-সিঁটু সংরক্ষণের অসুবিধা কী কী ?
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধাগুলি হল— (1) এক্স-সিটু সংরক্ষণে সীমিত সংখ্যক জীবের প্রজনন সম্ভব হয় বলে জিনগত বৈচিত্র্য হ্রাস পায়। (2) এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
23. এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র বা পথ হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগৃহীত স্থলজ ও জলজ প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়। (2) এখানে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনমতো প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজও করা হয়।
24. এক্স-সিঁটু সংরক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – (1) পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, হাতি, সাপ ইত্যাদি প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়। (2) অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে, ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্কে শ্লথ, ভালুক, বন্যকুকুর, পুমা, জাগুয়ার প্রভৃতি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
25. এক্স-সিঁটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) বিভিন্ন ধরনের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে সংরক্ষণ করা হয়। (2) বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়।
26. এক্স-সিঁটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে দুটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদাহরণ দাও।
উত্তর – (1) আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন, শিবপুর, হাওড়া—এখানে 330m পরিধিযুক্ত বিখ্যাত বটগাছ সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া অর্কিড, পান এখানে সংরক্ষিত করা হয়। (2) জওহরলাল নেহেরু ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ত্রিবান্দ্রম, কেরল—এখানে ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হয়।
27. এক্স-সিটু সংরক্ষণের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ হল— (1) চিড়িয়াখানা (আলিপুর চিড়িয়াখানা) ও (2) বোটানিক্যাল গার্ডেন (আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন)।
28. আরবোরেটাম কী? জার্মপ্লাজম ব্যাংক কাকে বলে?
উত্তর – আরবোরেটাম: আরবোরেটাম হল এক্স-সিটু সংরক্ষণের বিশেষ পদ্ধতি। এখানে বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাগত কারণে দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
জার্মপ্লাজম ব্যাংক: মূলত সজীব বীজ ও উদ্ভিদ দেহাংশ সংরক্ষণ স্থানকে জার্মপ্লাজম ব্যাংক বলে। এখানে ক্রায়োপ্রিজারভেশন দ্বারা এই সংরক্ষণ করা হয়। যেমন—বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, শিবপুর।
29. ক্রায়োসংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ক্রায়োসংরক্ষণ হল একটি এক্স-সিটু সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে কোশ, কলা বা অন্য কোনো সজীব দেহাংশ তরল নাইট্রোজেনে প্রায় – 196°C তাপমাত্রায় রেখে দীর্ঘদিন জীবিত রাখা হয়।
30. ক্রায়োপ্রিজারভেশন করার ক্ষেত্রে প্রধান দুটি সমস্যা উল্লেখ করো।
উত্তর – ক্রায়োপ্রিজারভেশনের সমস্যাগুলি হল— (1) দ্রুত তাপমাত্রা হ্রাসে কোশে বরফ জমে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একে ‘ক্রায়োইনজুরি’ বলে। (2) ধীরে ধীরে তাপমাত্রা হ্রাস করলে কোশীয় অভিস্রবণ পদ্ধতি বিনষ্ট হয়।
31. ক্রায়োসংরক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো এবং একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – ক্রায়োসংরক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) এইজাতীয় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়। (2) সাধারণত –196°C তাপমাত্রায় বিভিন্ন ধরনের পরাগরেণু, গ্যামেট, কলাকোশ, বীজ ইত্যাদি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, শিবপুর (হাওড়া)।
32. ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট কী? উদাহরণ দাও।
উত্তর – ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট: যে উপাদানগুলির ব্যবহারে সজীব কলার হিমায়নে তার গঠনগত উপাদান বিনষ্ট হয় না, তাদের ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট বলে। এদের অপর নাম ক্রায়োপ্রোটেক্টিভ এজেন্ট বা CPA।
উদাহরণ: গ্লিসারল, সুক্রোজ।
33. জিন ব্যাংক কাকে বলে?
উত্তর – জীবের দেহের জিনগত উপাদানের ক্রায়োসংরক্ষণ স্থানকে জিন ব্যাংক বলে। উদ্ভিদের বীজ, প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু এখানে সংরক্ষণ করা হয়। সীড ব্যাংক, কলা ব্যাংক, ক্রায়োব্যাংক প্রভৃতি হল জিন ব্যাংকের উদাহরণ। যেমন—ন্যাশনাল ব্যুরো অফ প্ল্যান্ট জেনেটিক্স, নতুন দিল্লি, এখানে জিন ব্যাংক রয়েছে।
34. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ক্রায়োসংরক্ষণের গুরুত্ব কী?
উত্তর – ক্রায়োসংরক্ষণের গুরুত্ব হল— (1) দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্তপ্রায় জীবের জিন দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাগারে সংরক্ষণ করা যায়। এর ফলে জীবটির অবলুপ্তি রোধ করা যায়। (2) ভবিষ্যতে প্রয়োজনমতো কোনো জীবসৃষ্টিতে পদ্ধতিটি সাহায্য করে থাকে।
35. ইন-সিট ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্য লেখো।
উত্তর – ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্যগুলি হল—
| বিষয় |
ইন-সিটু সংরক্ষণ |
এক্স-সিটু সংরক্ষণ |
| 1. সংরক্ষণ স্থান |
জীবের স্বাভাবিক বাসস্থানেই তার সংরক্ষণ করা হয়। |
জীবের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে সরিয়ে কৃত্রিম স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। |
| 2. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা |
বিপন্ন প্রজাতিকে শিকারি প্রজাতি থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। |
বিপন্ন প্রজাতিকে সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। |
| উদাহরণ |
জাতীয় পার্ক, অভয়ারণ্য। |
চিড়িয়াখানা, ক্রায়োসংরক্ষণ । |
36. জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে তুলনা করো।
উত্তর – নীচে জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তুলনা করা হল—
| বিষয় |
জাতীয় উদ্যান |
অভয়ারণ্য |
সংরক্ষিত বনাঞ্চল |
| 1. সংরক্ষণ স্থান |
কেন্দ্রীয় সরকার অধিগৃহীত ও নিয়ন্ত্রণাধীন যে অঞ্চলে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদের চিরস্থায়ী সংরক্ষণ করা হয়। |
রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অঞ্চলে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করে। স্বাধীনভাবে খাদ্যগ্রহণ করে। এখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ও বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার নিষিদ্ধ। |
রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অংশে সাধারণ মানুষের প্রবেশ তথা কাঠ-কাটা, শিকার করা নিষিদ্ধ। |
| 2. বৈশিষ্ট্য |
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজ সম্পদের জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়। |
সরকারি অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, কেবলমাত্র প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়। |
কেবলমাত্র গবেষণার কাজেই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়। |
| উদাহরণ |
পশ্চিমবঙ্গের জলদাপাড়া |
পশ্চিমবঙ্গের চাপড়ামারি |
পশ্চিমবঙ্গের বক্সা |
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. কোনো প্রজাতিকে জাতীয় পার্কে বা অভয়ারণ্যে সংরক্ষণ করা হলে, তাকে বলা হয়—
(a) বিশেষ সংরক্ষণ
(b) ইন-সিটু সংরক্ষণ
(c) এক্স-সিটু সংরক্ষণ
(d) কিস্টোন প্রজাতি সংরক্ষণ
উত্তর – (b) ইন-সিটু সংরক্ষণ
2. প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ হল –
(a) জাতীয় উদ্যান
(b) চিড়িয়াখানা
(c) আরবোরেটাম
(d) বীজ-ব্যাংক
উত্তর – (a) জাতীয় উদ্যান
3. মূল প্রাকৃতিক বাসস্থানে অর্থাৎ নিজস্ব পরিবেশে কোনো প্রজাতিকে সংরক্ষণ করলে, তাকে বলা হয় –
(a) ক্রায়োপ্রিজারভেশন
(b) এক্স-সিটু কনজারভেশন
(c) ইন-সিটু কনজারভেশন
(d) বায়োকনজারভেশন
উত্তর – (c) ইন-সিটু কনজারভেশন
4. আমাদের দেশের জাতীয় উদ্যানের ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে—
(a) কেন্দ্রীয় সরকার
(b) রাজ্য সরকার
(c) স্থানীয় সংস্থা
(d) রাষ্ট্রপুঞ্জ
উত্তর – (a) কেন্দ্রীয় সরকার
5. পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান ভারতের যে রাজ্যে অবস্থিত, সেটি হল—
(a) উত্তরপ্রদেশ
(b) কেরল
(c) পশ্চিমবঙ্গ
(d) অসম
উত্তর – (b) কেরল
6. গোরুমারা জাতীয় উদ্যান যে রাজ্যে অবস্থিত, তার নাম-
(a) মধ্যপ্রদেশ
(b) উত্তরপ্রদেশ
(c) কেরল
(d) পশ্চিমবঙ্গ
উত্তর – (d) পশ্চিমবঙ্গ
7. ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান হল –
(a) বন্দিপুর জাতীয় উদ্যান
(b) করবেট জাতীয় উদ্যান
(c) কান্হা জাতীয় উদ্যান
(d) পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান
উত্তর – (b) করবেট জাতীয় উদ্যান
৪. গোরুমারা সংরক্ষিত অরণ্য (1895) যে বছর অভয়ারণ্যরূপে ঘোষিত হয়, তা হল —
(a) 1960
(b) 1949
(c) 1954
(d) 1989
উত্তর – (b) 1949
9. গোরুমারা অভয়ারণ্য (1949) যে বছর জাতীয় উদ্যানরূপে ঘোষিত হয়, তা হল –
(a) 1999
(b) 1992
(c) 1994
(d) কোনোটিই নয়।
উত্তর – (c) 1994
10. চাপড়ামারি সংরক্ষিত অরণ্য (1895) যে বছর অভয়ারণ্যরূপে ঘোষিত হয়, তা হল –
(a) 1995
(b) 1998
(c) 2014
(d) কোনোটিই নয়।
উত্তর – (b) 1998
11. নীচের কোন্ সজ্জাটি গোরুমারা, করবেট, কুলিক, নন্দাদেবী—এই চারটি অরণ্যের সঠিক ক্রম নির্দেশ করে তা নির্বাচন করো—
(a) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান
(b) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, অভয়ারণ্য
(c) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
(d) অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য
উত্তর – (c) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
12. নীচের কোন্ জোড়টি সঠিক নয়?
(a) গির—গুজরাট
(b) কান্হা—উত্তরপ্রদেশ
(c) করবেট-উত্তরাখণ্ড
(d) কাজিরাঙা — অসম
উত্তর – (b) কান্হা—উত্তরপ্রদেশ
13. হ্যালিডে আইল্যান্ড বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কোথায় অবস্থিত?
(a) পশ্চিমবঙ্গে
(b) কেরালায়
(c) গোয়ায়
(d) মহারাষ্ট্রে
উত্তর – (a) পশ্চিমবঙ্গে
14. ময়ূর ঝরনা হাতি রিজার্ভ পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায় অবিস্থত—
(a) বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর
(b) জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার
(c) পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর
15. পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায় বেথুয়াডহরি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি অবস্থিত তা হল—
(a) উত্তর চব্বিশ পরগনা
(b) নদিয়া
(c) বীরভূম
(d) জলপাইগুড়ি
উত্তর – (b) নদিয়া
16. নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার সংরক্ষিত অঞ্চলটি অবস্থিত—
(a) কর্ণাটকের বনাঞ্চলে
(b) সিকিমের বনাঞ্চলে
(c) ওড়িশার বনাঞ্চলে
(d) দার্জিলিং-এর বনাঞ্চলে
উত্তর – (a) কর্ণাটকের বনাঞ্চলে
17. সংরক্ষণের একটি আধুনিক ব্যবস্থা হল –
(a) জাতীয় উদ্যান
(b) সংরক্ষিত অরণ্য
(c) অভয়ারণ্য
(d) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
উত্তর – (d) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
18. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভে যে অংশগুলি দেখা যায়—
(a) কোর অঞ্চল
(b) বাফার অঞ্চল
(c) ট্রানসিট অঞ্চল
(d) সবগুলি সঠিক
উত্তর – (d) সবগুলি সঠিক
19. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে যে অঞ্চলটি থাকে, তাকে বলা হয়—
(a) রিজার্ভ অঞ্চল
(b) কোর অঞ্চল
(c) বাফার অঞ্চল
(d) ট্রানজিশন অঞ্চল
উত্তর – (b) কোর অঞ্চল
20. সিমলিপাল, সুন্দরবন, মানস হল –
(a) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
(b) অভয়ারণ্য
(c) জাতীয় উদ্যান
(d) কোল্ড স্পট
উত্তর – (a) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
21. UNESCO-এর MAB প্রোগ্রামে যে ধারণাটি সংরক্ষিত হয়—
(a) সংরক্ষিত অরণ্য
(b) অভয়ারণ্য
(c) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
(d) জাতীয় উদ্যান
উত্তর – (c) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
22. নীচের যেটি ইন-সিটু কনজারভেশনের অন্তর্গত নয়, সেটি হল-
(a) চিড়িয়াখানা
(b) জাতীয় উদ্যান
(c) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
(d) অভয়ারণ্য
উত্তর – (a) চিড়িয়াখানা
23. জীববৈচিত্র্যকে তাদের মূল প্রাকৃতিক বাসস্থানে বা পরিবেশের বাইরে বজায় রাখার পদ্ধতিকে বলে—
(a) জৈব সংরক্ষণ
(b) এক্স-সিটু সংরক্ষণ
(c) ইন-সিটু সংরক্ষণ
(d) ক্রায়োপ্রিজারভেশন
উত্তর – (b) এক্স-সিটু সংরক্ষণ
24. এক্স-সিটু সংরক্ষণ হল—
(a) জিন ব্যাংক
(b) বোটানিক্যাল গার্ডেন
(c) চিড়িয়াখানা
(d) সবগুলি
উত্তর – (d) সবগুলি
25. এক্স-সিটু সংরক্ষণের একটি উদাহরণ হল –
(a) সুন্দরবনের ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প
(b) করবেট জাতীয় উদ্যান
(c) নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
(d) ক্রায়োসংরক্ষণ
উত্তর – (d) ক্রায়োসংরক্ষণ
26. কোন্টি বাস্তৃতান্ত্রিক সংরক্ষণ নয়?
(a) ক্রায়োথ্রিজারভেশন
(b) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
(c) অভয়ারণ্য
(d) ন্যাশনাল পার্ক।
উত্তর – (a) ক্রায়োথ্রিজারভেশন
27. ক্রায়োসংরক্ষণে যে উপাদানটি ব্যবহৃত হয় –
(a) তরল অক্সিজেন
(b) তরল হাইড্রোজেন
(c) শুষ্ক বরফ
(d) তরল নাইট্রোজেন
উত্তর – (d) তরল নাইট্রোজেন
28. শুক্রাণু, ডিম্বাণু, বীজ বা উদ্ভিদ অংশ – 196°C উয়তায় তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিটিকে বলা হয়—
(a) বায়োকনজারভেশন
(b) ক্রায়োপ্রিজারভেশন
(c) এক্স-সিট কনজারভেশন
(d) ইনসিটু কনজারভেশন
উত্তর – (b) ক্রায়োপ্রিজারভেশন
29. জিনব্যাংক কোনটির উদাহরণ?
(a) এক্স-সিটু সংরক্ষণ
(b) ইনসিটু সংরক্ষণ
(c) হটস্পট
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) এক্স-সিটু সংরক্ষণ
30. যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের পরাগরেণু ও বীজ সংরক্ষণ করা যায় তার নাম—
(a) বীজ ব্যাংক
(b) জিন ব্যাংক
(c) ইন-সিঁটু সংরক্ষণ
(d) ক্রায়োসংরক্ষণ
উত্তর – (d) ক্রায়োসংরক্ষণ
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিকে কতভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর – জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— (1) ইন-সিটু সংরক্ষণ এবং (2) এক্স-সিটু সংরক্ষণ।
2. জীবগোষ্ঠীকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ করার পদ্ধতির নাম কী?
উত্তর – ইন-সিটু সংরক্ষণ।
3. পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান (1982) কোন্ রাজ্যে অবস্থিত ?
উত্তর – কেরল।
4. বনমন্ত্রক 2013-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে কয়টি জাতীয় উদ্যান সরকারিভাবে স্বীকৃত?
উত্তর – 102টি।
5. ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যানের নাম লেখো।
উত্তর – জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক।
6. পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত অভয়ারণ্যের নাম কী?
উত্তর – বিভূতিভূষণ ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি।
7. পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত অভয়ারণ্যের নাম লেখো।
উত্তর – বল্লভপুর ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি।
৪. পশ্চিমবঙ্গের একটি পক্ষী অভয়ারণ্যের নাম লেখো।
উত্তর – চিন্তামণি কর পক্ষী অভয়ারণ্য (নরেন্দ্রপুর)।
9. পশ্চিমবঙ্গের একটি অভয়ারণ্যের নাম লেখো।
উত্তর – সজনেখালি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি।
10. গির অরণ্যের অবস্থান লেখো।
উত্তর – গুজরাট।
11. ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার কোথাকার রিজার্ভ ফরেস্ট?
উত্তর – উত্তরাখণ্ড।
12. পশ্চিমবঙ্গের একটি সংরক্ষিত অরণ্যের নাম লেখো।
উত্তর – চাপড়ামারি।
13: এটি কীসের চিত্র? a, b ও c অংশের নাম ও কাজ লেখো।
উত্তর – এটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অংশসমূহের চিত্র।
a = ট্রানজিশন অঞ্চল। এই অঞ্চলে বনসম্পদ পরিমিতভাবে ব্যবহার করা যায়।
b = বাফার অঞ্চল। এই অঞ্চলে মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত, তবে পর্যটন, গবেষণা ইত্যাদি কাজে ব্যবহারযোগ্য।
c = কোর অঞ্চল। কেন্দ্রীয় এই অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ, বন্যপ্রাণী এই অঞ্চলে থাকে ও প্রজনন করে থাকে।
14. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে যে অঞ্চল থাকে তাকে কী বলে?
উত্তর – কোর অঞ্চল।
15. ভারতের প্রথম বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ কোনটি?
উত্তর – নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (তামিলনাড়ুর নীলগিরি অঞ্চলটি 1986 সালে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে ঘোষিত হয়)।
16. কোন্ ইন সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থায় অণুজীব, বন্যপ্রাণী ও বন্য উদ্ভিদসহ মানুষের বৈচিত্র্য, কৃষ্টি ও জীবনযাত্রা সংরক্ষণ হয়?
উত্তর – বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ সংরক্ষণ ব্যবস্থায়।
17. জীবগোষ্ঠীকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে সংরক্ষণ করাকে কী বলে?
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণ।
18. চিড়িয়াখানায় বাঘের সংরক্ষণ কী ধরনের সংরক্ষণ ?
উত্তর – এক্স-সিটু সংরক্ষণ।
19. পশ্চিমবঙ্গের একটি চিড়িয়াখানার নাম লেখো।
উত্তর – জুলজিক্যাল গার্ডেন, আলিপুর।
20. পশ্চিমবঙ্গের একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন-এর নাম লেখো।
উত্তর – আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন।
21. সাধারণত কত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ক্রায়োপ্রিজারভেশন করা হয়?
উত্তর – সাধারণত – 196°C তাপমাত্রায় ক্রায়োপ্রিজারভেশন করা হয়।
22, কোন্ প্রাণীতে ক্রায়োপ্রোটেকটান্ট পাওয়া যায়?
উত্তর – সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের পতঙ্গ, মাছ ও উভচরে ক্রায়োপ্রোটেকটান্ট বা অ্যান্টিফ্রিজিং প্রোটিন কম্পাউন্ড পাওয়া যায়।
23, ক্লায়োপ্রোটেকটান্ট কীভাবে কোশে বরফ স্ফটিক তৈরি প্রতিরোধ করে?
উত্তর – ক্রায়োপ্রোটেকটান্ট কোশের জল অণুগুলির সঙ্গে কোশীয় উপাদানের হাইড্রোজেন বন্ধন সৃষ্টি হতে দেয় না ও স্ফটিক সৃষ্টি প্রতিরোধ করে।
24. ক্রায়োসংরক্ষণের মাধ্যমে কী কী সংরক্ষিত হয়?
উত্তর – গ্যামেট, ভ্ৰূণ, বীজ, পরাগরেণু ও কণা।
25. ক্রায়োইনজুরি কী?
উত্তর – অনেকসময় ক্রায়োপ্রিজারভেশন করার সময় দ্রুত জল থেকে বরফ জমার সময় কোশীয় গঠন বিনষ্ট হয়। একে ক্রায়োইনজুরি বলে।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. কোনো জীবকে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বাসস্থানে সংরক্ষণ করা হলে তাকে ……… সংরক্ষণ বলা হয়।
উত্তর – ইন-সিটু
2. ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয় ……… সালে।
উত্তর – 1936
3. পশ্চিমবঙ্গের একটি জাতীয় উদ্যানের নাম হল ……….. ।
উত্তর – জলদাপাড়া
4. জাতীয় উদ্যান একটি ……….. সংরক্ষণের উদাহরণ।
উত্তর – ইন-সিটু
5. ভারতের সর্ববৃহৎ জাতীয় উদ্যান হল ……….. জাতীয় উদ্যান।
উত্তর – জিম করবেট
6. ভরতপুর বার্ড স্যাংচুয়ারি ………… অবস্থিত।
উত্তর – রাজস্থানে
7. কর্ণাটকের বন্দিপুর হল একটি ……….. ।
উত্তর – জাতীয় উদ্যান
8. করবেট জাতীয় উদ্যানটি ……….. রাজ্যে অবস্থিত।
উত্তর – উত্তরাখণ্ড
9. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল একপ্রকার ……….. সংরক্ষণ।
উত্তর – ইন-সিট্
10. ………… হল পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
উত্তর – সুন্দরবন
11. বায়োডাইভারসিটি হটস্পট শব্দটি সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন বিজ্ঞানী ……….. ।
উত্তর – নরম্যান মায়ার্স
12. MAB-এর পুরো কথাটি হল ……….. ।
উত্তর – ম্যান অ্যান্ড বায়োস্ফিয়ার প্রোগ্রাম
13. চিড়িয়াখানা একপ্রকার ………. সংরক্ষণ কেন্দ্র।
উত্তর – এক্স-সিটু
14. আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন পশ্চিমবঙ্গের ………. -তে অবস্থিত।
উত্তর – হাওড়া
15. লয়েড বোটানিক্যাল গার্ডেন পশ্চিমবঙ্গের ……….. জেলায় অবস্থিত।
উত্তর – দার্জিলিং
16. কোনো জীবজাত উপাদানকে ধীরে ধীরে বরফ স্ফটিক তৈরি না করে হিমায়িত করার পদ্ধতিকে …….. বলা হয়।
উত্তর – ভিট্রিফিকেশন
17. উদ্ভিদ বা প্রাণীর জার্মপ্লাজম স্বল্প তাপমাত্রায় দীর্ঘদিন সংরক্ষণকে বলে ……….. ।
উত্তর – ক্রায়োপ্রিজারভেশন
18. নমুনা বীজকে −196°C তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে রেখে এক্স-সিটু সংরক্ষণকে ………..বলে।
উত্তর – ক্রায়োসংরক্ষণ
SUB-TOPIC 4.3 জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে JFM ও PBR-এর ভূমিকা, ভারতের কিছু বিপন্ন প্রজাতি এবং তাদের সংরক্ষণ
বিষয়সংক্ষেপ
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নানা সংস্থা বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েছে। এদের মধ্যে JFM সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
- JFM-এর পুরো কথাটি হল জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট। এটি ভারত সরকার পরিচালিত একটি সংস্থা। 1997 সালে পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুর জেলার আরাবারি অরণ্যে শালের জঙ্গল পুনরুদ্ধারে এটি সাফল্য লাভ করে। স্থানীয় মানুষ এই বন পরিচালনে অংশ নেয়।
- PBR-এর পুরো নাম পিপল্স বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার। জীববৈচিত্র্য আইন, 2002 অনুসারে তৈরি করা একটি নথি হল PBR | স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের এটি তথ্যভাণ্ডার বিশেষ যাতে কোনো স্থানের জীববৈচিত্র্য, তাদের বাসস্থান, জীবসম্পদের ব্যবহার, জীবসম্পদ-সংক্রান্ত স্থানীয় পরম্পরাগত বিশ্বাস-সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি মজুত থাকে।
- ভারতে কতকগুলি প্রাণী, যেমন—বাঘ, গন্ডার, সিংহ, কুমির ও রেড পান্ডা সংরক্ষণে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ-এ বাঘ সংরক্ষণ, ★ মানস ন্যাশনাল পার্কে গন্ডার, গির অরণ্যে এশীয় সিংহ, ভিতরকণিকা অভয়ারণ্যে কুমির ও বার্সি অভয়ারণ্যে রেড পান্ডা সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. JFM সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অংশ প্রশ্ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট-এর ভূমিকা কী কী?
উত্তর – জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট (JFM): ভারত সরকার স্বীকৃত সরকারি ও স্থানীয় মানুষের যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় বনজ সম্পদের সুপরিচালন ব্যবস্থা হল জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট বা JFM। বন সুরক্ষা কমিটি (Forest Protection Committee বা FPC) নামক গ্রামীণ কমিটি ও বন দপ্তর একসাথে এটি পরিচালনা করে থাকে।
JFM-এর ঐতিহাসিক পটভূমি: JFM ধারণাটির প্রথম সূত্রপাত পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আরাবারি অরণ্যে (1971)। এই প্রকল্পটির সূচনা করা হয়েছিল জনগণের দাবী মেনে ধ্বংসের হাত থেকে অরণ্যকে বাঁচাতে। বনদপ্তরের নীতি অনুযায়ী 1971 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণবঙ্গে শালগাছের জঙ্গল পুনরুদ্ধারের জন্য মেদিনীপুর শহর থেকে 30 km দূরে আরাবারি অরণ্যে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (DFO) শ্রী অজিত কুমার ব্যানার্জির নেতৃত্বে শালগাছ চাষের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি স্থানীয় 11টি গ্রামের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে 1972 খ্রিস্টাব্দে বন সুরক্ষা কমিটি (Forest Protection Committee বা FPC) গড়ে তোলেন। এই কমিটিকে সদ্য রোপিত শালগাছের চারাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিনিময়ে স্থানীয় মানুষদের গ্রামীণ নিযুক্তি স্কিমে চাকরির ব্যবস্থা ও কাঠের পরিবর্তে অন্য বনজ সম্পদ আহরণের অধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে ওই অঞ্চলে বিশাল শালবন সৃষ্টি হয়। তাই এই উদ্যোগ সফল বলে প্রমাণিত হয়।

JFM ব্যবস্থাপনা: আরাবারির ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারত সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রক সমস্ত রাজ্য সরকারকে, স্থানীয় জনসাধারণ এবং স্বেচ্ছা সংগঠনগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বন উন্নয়নের চালননীতি প্রণয়ন করে। সেই অনুযায়ী 22টি রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্ট রাজ্য বনদপ্তরকে JFM ব্যবস্থাপনা করবার নির্দেশ দেয়। বর্তমানে ভারতে 10-25 মিলিয়ন হেক্টর বন পরিচালনে JFM সহায়তা করে। JFM-এর অধীনে অনেকগুলি কমিটি গঠিত হয় যেগুলি বনসংরক্ষণে ভূমিস্তরে কাজ করে থাকে। এই কমিটিগুলি হল ফরেস্ট প্রোটেকশন কমিটি (FPC), ইকো-ডেভেলপমেন্ট কমিটি (EDC), ভিলেজ ফরেস্ট কমিটি (VPC) প্রভৃতি।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে JFM-এর ভূমিকা বা গুরুত্ব: (1) বিভিন্ন রাজ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে রাজ্য বনদপ্তরকে সক্রিয় সহযোগিতা করে JFM কমিটি। (2) বনে চোরাশিকারের ঘটনা তাৎক্ষণিক বনদপ্তরকে জানানোর কাজ করে JFM কমিটি। (3) দাবানল, বেআইনি পশুচারণ, বনভূমি বিনাশের প্রচেষ্টা, বেআইনি খননকার্য রোধে প্রাথমিকভাবে বনদপ্তরকে তা জানানো ও সংশ্লিষ্ট কাজে বনদপ্তরের সঙ্গে JFM কমিটি কাজ করে থাকে।
2. PBR সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার (PBR): ভারত সরকার প্রণীত বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট বা জীববৈচিত্র্য আইন, 2002 অনুযায়ী প্রত্যেক পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটি বা শহরের কর্পোরেশনকে একটি বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BMC) স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর অন্যতম প্রধান কাজ হল একটি নথি তৈরি করে তাতে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য মজুত করা। জীববৈচিত্র্যের এই নথিটিকেই পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার বা PBR বলে।
PBR-এর তথ্যভাণ্ডারের প্রকৃতি: পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ (West Bengal Biodiversity Board বা WBBB), উপরোক্ত আইন অনুযায়ী একটি উল্লেখযোগ্য PBR তৈরি করবার নির্দেশ দিয়েছেন। এই তথ্যভাণ্ডার শুধুমাত্র স্থানীয় প্রজাতির একটি সামান্য তালিকা নয়, জীববৈচিত্র্যের সম্পূর্ণ আধাররূপে গ্রহণ করা যায়। PBR-এ যে সমস্ত বিষয়ে তথ্য মজুত করা থাকে। তা হল — (1) সমস্ত স্থানীয় প্রজাতি সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য। (2) প্রজাতির বাসস্থান। (3) প্রজাতির থেকে প্রাপ্ত জৈবিক উৎপাদন (বা সম্পদ) সম্বন্ধে ধারণা, তাদের বাজারমূল্য, সংগ্রহের সময়, সংগ্রহের নিয়ম ও তাদের পরিবহণ পদ্ধতি। (4) প্রজাতিজাত উৎপাদনের প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি। (5) প্রজাতিজাত সম্পদের স্থানীয় ব্যবহার এবং পরিচালন পদ্ধতি। (6) স্থানীয় ভৌগোলিক তথ্য। (7) বিপন্ন প্রজাতি নির্ণয় ও স্থানীয় মানুষদের তরফ থেকে প্রজাতি সংরক্ষণের ধারণা ও উদ্যোগ। (৪) স্থানীয় প্রজাতিগুলি সম্বন্ধে ঐতিহ্যবাহী, পরম্পরাগত ও বিশ্বাস-সংক্রান্ত তথ্য।
PBR-এর ব্যবস্থাপনা: পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদের তত্ত্বাবধানে 14টি জেলায় পঞ্চায়েত ও মিউনিসিপ্যালিটি অঞ্চলে PBR তৈরি করা হয়েছে। PBR তৈরি করবার কাজে স্থানীয় স্কুল, কলেজ, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান (NGOs)-গুলি যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে PBR-এর ভূমিকা বা গুরুত্ব : (1) PBR স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়। তার ওপর নির্ভর করে বিপন্ন জীবগুলির সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। (2) স্থানীয় মানুষকে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের ব্যাপারে সজাগ করে সংরক্ষণে অংশীদার করতে সাহায্য করে PBR। (3) জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক কারণে সুস্থায়ী (sustainable) ব্যবহার।
3. বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো।
বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ
(1) বাসযোগ্য স্থানের বিনাশ : মানব জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং আগ্রাসনের কারণে বনাঞ্চল ক্রমাগত ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। এর ফলে বাঘের স্বাভাবিক বাসস্থান হ্রাস পাচ্ছে। (2) চোরাশিকার: বাঘের চামড়া শৌখিন বস্তুরূপে ব্যবহৃত হয়। এর আন্তর্জাতিক মূল্যমান প্রায় 12,500 ডলার। বাঘের হাড়, চোখ, দাঁত প্রভৃতির ব্যাপক চাহিদার জন্য নির্বিচারে বাঘ হত্যা করা হয়। (3) প্রজননে বাধা: প্রজনন সঙ্গীর অভাবে বাঘের প্রজনন হার হ্রাস পেয়েছে এবং বাঘের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।
বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা : 1969 সালে দিল্লিতে IUCN-এর সাধারণ বৈঠকের পরে 1970 সালে ভারতবর্ষে বাঘ হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। 1972 সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন চালু হয়। 1973 সালে 1 এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশমন্ত্রক, IUCN এবং WWF-এর সহযোগিতায় ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল টাইগার কনজারেভশন অথোরিটি বা NTCA-এর প্রজেক্ট টাইগার চালু করে। এর মাধ্যমে ভারতবর্ষে বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টার সূত্রপাত হয়। 1973 সালে প্রাথমিকভাবে ৭টি অভয়ারণ্যের মাধ্যমে বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টার সূচনা হয়। বর্তমানে এই সংস্থার অধীনে ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংখ্যা 42টি। জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (উত্তরাখণ্ড) হল একটি বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র।
4. গভারের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো। গন্ডার সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – গন্ডারের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ
(1) বন ধ্বংস: জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তাদের বসতি গড়ে তুলতে ক্রমাগত বনাঞ্চলের গাছ কেটে ফেলায় গন্ডারের বাসস্থান বহুলাংশে নষ্ট হয়েছে। (2) চোরাশিকার: গন্ডারের শিং গৃহসজ্জার উপকরণ, ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি চোরাবাজারে মহামূল্যবান। অবাধ চোরাশিকারের ফলে গন্ডারের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। (3) বংশবৃদ্ধি হার: গন্ডারের গর্ভধারণকাল দীর্ঘ (479 দিন) এবং একবছরে একটি বাচ্চা প্রসব করার কারণে এদের বংশবৃদ্ধির হার অনেক কম হয়।
গন্ডার সংরক্ষণ প্রচেষ্টা : ভারতে 85% গন্ডার অসমে পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থা WWF (World Wide Fund for Nature)-এর সহযোগিতায় অসমের বনদপ্তর একটি প্রকল্প গ্রহণ করে, যার নাম ইন্ডিয়ান রাইনো ভিশন 2020 বা IRV 2020। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, 2020 সালের মধ্যে অসমে তথা ভারতবর্ষে গন্ডারের সংখ্যা 3000-এ নিয়ে যাওয়া। এই প্রকল্পের সাফল্যের কারণে
গন্ডার 2013 সালে এই সংখ্যা অসমে 2544-এ এসে দাঁড়িয়েছে। 2013-এর সুমারি অনুযায়ী শুধু কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কেই গন্ডারের সংখ্যা 1855 থেকে 2329 দাঁড়িয়েছে।
5. সিংহের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো। সিংহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – সিংহের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ
(1) বাসস্থানের বিনাশ: মানব জনসংখ্যার চাপে বনভূমির গাছ কেটে বাসভূমি গড়ে তোলায় সিংহের স্বাভাবিক বাসস্থান নষ্ট হয়েছে। গির অরণ্যের মধ্যে দিয়ে প্রধান সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে দুর্ঘটনায় বহুসংখ্যক সিংহ মারা যায়। (2) চোরাশিকার: সিংহের হাড় ভেষজ ওষুধরূপে ব্যবহৃত হওয়ায় এবং নখ ও চামড়ার লোভে অসাধু ব্যবসায়ী, চোরাশিকারিরা সিংহ হত্যা করে অর্থ উপার্জন করে।
সিংহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা : জুনাগড়ের রাজা 1910 খ্রিস্টাব্দে প্রথম সিংহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা করেন। তিনি সিংহ হত্যা নিষিদ্ধ করেন। এই নিষেধ স্বাধীনতার পরেও থাকে। 1960 এবং 1970 সালে গির অরণ্যকে যথাক্রমে অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যানরূপে ঘোষিত করা হয়। এখানে গুজরাট সরকারের তত্ত্বাবধানে গির লায়ন প্রজেক্ট চালু হয়। 1974 সাল থেকে এই পপুলেশন ক্রমশ বাড়তে থাকে। বর্তমানে গির অরণ্যে এশিয়ান সিংহের সংখ্যা 523 (2015, সিংহ গণনা অনুযায়ী)। 2015 সালে ভারত সরকারের পরিবেশমন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে প্রজেক্ট লায়ন (project lion) গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া এশিয়াটিক লায়ন রি-ইনট্রোডাকশন প্রজেক্ট-এর মাধ্যমে এশিয়ার সিংহকে বাঁচানোর জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
6. কুমিরের সংখ্যা হ্রাসের কারণগুলি লেখো। কুমির সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – কুমিরের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ
(1) চোরাশিকার; কুমিরের চামড়া সংগ্রহের জন্য কুমির নিধন করা হয়।
(2) খাদ্য: কুমিরের ডিম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের সংখ্যা হ্রাস পায়।
(3) জেলেদের দ্বারা ক্ষতি: জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে জালে কুমির উঠলে অনেকসময়ে তাকে মেরে ফেলে।
কুমির সংরক্ষণ প্রচেষ্টা : কুমির সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে 1974 সালে ‘কুমির সংরক্ষণ গবেষণা প্রকল্প চালু হয়েছে। 1975 সালে ভারত সরকার কুমির প্রজনন ও পরিচালন প্রকল্প বা প্রজেক্ট ক্রোকোডাইল নামক কুমির সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করে। 16টি কুমির পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং 11টি কুমির স্যাংচুয়ারিতে ভারতবর্ষব্যাপী প্রকল্পটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রকল্পটিতে সহায়তা করবার জন্য কুশলী পরিচালকের প্রয়োজন অনুভব করে 1980 সালে হায়দ্রাবাদে কুমির প্রজনন ও পরিচালন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। ওড়িশার ভিতরকণিকা অভয়ারণ্য হল উল্লেখযোগ্য কুমির সংরক্ষণ প্রকল্প কেন্দ্র।
7. রেড পান্ডার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো।
রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – রেড পান্ডার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ
(1) বাসস্থানের বিনাশ: বনজ কাঠ সংগ্রহ ও কৃষিকাজের জমির সম্প্রসারণে রেড পান্ডার বাসযোগ্য বনভূমি হ্রাস পেয়েছে। এদের খাদ্য মূলত বাঁশ গাছের পাতা। এই গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় প্রাণীটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। (2) কুকুরের আক্রমণ: এ ছাড়া কুকুর প্রায়শই এই প্রাণীটিকে আক্রমণ করে মেরে ফেরে। (3) চোরাশিকার: রেড পান্ডার লোমশ চামড়া ও ঝালরের মতো সুন্দর ল্যাজ, থেকে টুপি ও পরিধান তৈরি হওয়ায় চোরাশিকারিরা প্রাণীটিকে শিকার করে।
রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রচেষ্টা : বর্তমানে রেড পান্ডা একটি বিপন্ন প্রাণী। এই প্রাণীটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। 2005 সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (WWF) নামক সংস্থা এবং সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্প চালু করা হয়। সিকিমের বার্সি রোডোডেনড্রন অভয়ারণ্য ও কাঞ্চনজঙ্ঘা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ-এ রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্পকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এই সংরক্ষণ প্রকল্প অনুযায়ী এই দুই অঞ্চলে বাঁশ ও অন্যান্য উদ্ভিদকে জ্বালানির কাজে ব্যরহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় 200 জন মানুষকে কৃষিজ বর্জ্য ও কাদা থেকে তৈরি বিশেষ জৈব গুল (জ্বালানি) তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অরুণাচল প্রদেশে ‘কমিউনিটি কনজার্ভড এরিয়া’ বা CCA নামক রেড পান্ডার কতকগুলি বসতি অঞ্চলে স্থানীয় মানুষকেও সংরক্ষণে অংশীদার করা হয়। CCA অঞ্চলে রেড পান্ডার দর্শনের থেকে তাদের অতিরিক্ত রোজগারের ব্যবস্থাও করা হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. JFM প্রথম কোথায় ও কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর – 1971 খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর) আরাবারি অরণ্যে JFM উদ্যোগের প্রথম প্রচেষ্টা দেখা যায়। স্থানীয় মানুষদের গোচারণ ও গাছ কেটে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার শ্রী অজিত কুমার ব্যানার্জি, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে বন সুরক্ষা কমিটি গঠন করেন এবং নতুনভাবে শালগাছ রোপণ ও পরিচালনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে প্রায় 12.6 মিলিয়ন মূল্যের শালবৃক্ষ সৃষ্টি সম্ভব হয় (1988)। এই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারত সরকারের পরিবেশমন্ত্রক স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বন উন্নয়নের পরিচালন নীতি প্রণয়ন করেন।
2. কোন্ আইন বলে PBR তৈরি করা হয় ?
উত্তর – ভারতে বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি আইন, 2002-এ প্রতিটি স্থানীয় পঞ্চায়েত বা মিউনিসিপ্যালিটিতে বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BMC), গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই আইন অনুযায়ী স্থানীয় লোকেদের সহায়তায় প্রতিটি অঞ্চলে পিপলস্ বায়োডাইভার্সিটি রেজিস্টার বা PBR তৈরি করা হয়।
3. ‘PBR শুধু একটি প্রামাণ্য নথি নয়, এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – PBR-এ স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের মাত্রা, ব্যবহার প্রভৃতি সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত হয়। কিন্তু এটি শুধু তথ্যপূর্ণ নথি নয়, এর মূল উদ্দেশ্য হল স্থানীয়ভাবে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশদে জেনে সেই অনুযায়ী তার যথাযথ পরিচালন। অর্থাৎ, জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবহার, সংরক্ষণ প্রভৃতি সক্রিয়তামূলক কাজ PBR-এর উদ্দেশ্য, তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
4. পিপলস্ বায়োডাইভার্সিটি রেজিস্টার (PBR)-এ জীববৈচিত্র্য-সংক্রান্ত যে প্রধান বিষয়গুলি লিপিবদ্ধ করা হয় তা লেখো।
উত্তর – PBR-এ যে সমস্ত বিষয়ে তথ্য মজুত করা থাকে তা হল—
(1) সমস্ত স্থানীয় প্রজাতি সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য। (2) প্রজাতির বাসস্থান। (3) প্রজাতির থেকে প্রাপ্ত জৈবিক উৎপাদন (বা সম্পদ) সম্বন্ধে ধারণা, তাদের বাজারমূল্য, সংগ্রহের সময়, সংগ্রহের নিয়ম ও তাদের পরিবহণ পদ্ধতি। (4) প্রজাতিজাত উৎপাদনের প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি। (5) প্রজাতিজাত সম্পদের স্থানীয় ব্যবহার এবং পরিচালন পদ্ধতি। (6) স্থানীয় ভৌগোলিক তথ্য। (7) বিপন্ন প্রজাতি নির্ণয় ও স্থানীয় মানুষদের তরফ থেকে প্রজাতি সংরক্ষণের ধারণা ও উদ্যোগ। (৪) স্থানীয় প্রজাতিগুলি সম্বন্ধে ঐতিহ্যবাহী, পরম্পরাগত ও বিশ্বাস-সংক্রান্ত তথ্য।
5. বিপন্ন (endangered) প্রজাতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – যেসব প্রাণীর অচিরেই লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের বিপন্ন হওয়ার কারণ যদি সমান মাত্রায় বজায় থাকে এবং তাদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা কম থাকে তবে সেই ধরনের প্রাণীদের বিপন্ন প্রজাতি বলে। IUCN রেডলিস্টে এটি সংকটগ্রস্ত ক্যাটাগোরির অন্তর্গত একটি উপবিভাগ। এইজাতীয় প্রাণীদের সংরক্ষণ ভীষণভাবে আবশ্যক। যেমন—ভারতীয় বাঘ, গন্ডার ও সিংহ।
6. অবলুপ্ত (extinct) জীব বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সংরক্ষণাগারেও আর দেখা যায় না, তাদের অবলুপ্ত জীব বলে। যেমন—ডাইনোসর, ডোডো পাখি, প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, ক্যারোলিনা প্যারাকিট ইত্যাদি।
7. ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র কী কী?
উত্তর – ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের নামগুলি হল—পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, উত্তরাখণ্ডের করবেট টাইগার রিজার্ভ ও মধ্যপ্রদেশের কানহা।
8. সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণের জন্য কোন্ বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর – (1) ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচানো। (2) স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ জরুরি কারণ বাঘের স্বাভাবিক খাদ্যের জোগান অত্যন্ত জরুরি। (3) স্বাদুজলের জলাশয় সংরক্ষণ যাতে বাঘকে লবণাক্ত সামুদ্রিক জল পান করতে না হয়। (4) চোরাশিকারির অনুপ্রবেশ ও বাঘ-হত্যা বন্ধ করা।
9. ‘প্রজেক্ট টাইগার’ কী?
উত্তর – ‘প্রজেক্ট টাইগার’ হল ভারতীয় সরকার দ্বারা 1973 সালে প্রণীত একটি বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথোরিটি (NTCA) দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বর্তমানেও তা রূপায়িত হয়ে চলেছে। এটি জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে প্রথম পরিচালিত হয়।
10. প্রজেক্ট টাইগারের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর – (1) বাঘের বাসস্থান কমার কারণগুলি দূর করা। (2) বাঘের পপুলেশন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা প্রজেক্ট টাইগার একটি সফল উদ্যোগ। 1970 নাগাদ ভারতীয় বাঘের সংখ্যা ছিল 1200 যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 2226 হয়েছে (2014 সেনসাস)।
11. ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দুটি সংরক্ষণ-সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।
উত্তর – গন্ডার সংরক্ষণে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল— (1) গন্ডারের জন্য বাসস্থান সুনিশ্চিত করা ও তাদের খাদ্য ও পানীয়ের যথেষ্ট জোগানের ব্যবস্থা করা। (2) গন্ডারের প্রজননের ব্যবস্থা করা, সম্ভব হলে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ এর মাধ্যমে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করা। (3) জনগণের মধ্যে গন্ডার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
12. একশৃঙ্গ গন্ডার কোন ভারতীয় জাতীয় পার্কে দেখা যায় ?
উত্তর – একশৃঙ্গ গন্ডার দেখা যায় — (1) কাজিরাঙা জাতীয় পার্ক, অসম (সর্ববৃহৎ, 1855 গন্ডার) (2) জলদাপাড়া জাতীয় পার্ক, পশ্চিমবঙ্গ (3) গোরুমারা জাতীয় পার্ক, পশ্চিমবঙ্গ (4) মানস জাতীয় পার্ক, অসম (5) দুধওয়া জাতীয় পার্ক, উত্তরপ্রদেশ।
13. একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য ইনসিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি লেখো এবং পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এরকম একটি সংরক্ষণ স্থানের নাম লেখো।
উত্তর – একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতি হল কুমির। কুমিরের ইন-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি হল— (1) কুমিরের প্রজননের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি ও তার পরিচালন। (2) ক্যাপটিভ ব্রিডিং দ্বারা অভয়ারণ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরি ও প্রজননে সাহায্য করা। (3) চোরাশিকার ও কুমিরের ডিম সংগ্রহ প্রতিরোধ করা।
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি সংরক্ষণ স্থান হল— ভগবতপুর কুমির প্রকল্প, সুন্দরবন।
14. গঙ্গা নদীতে ঘড়িয়ালের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ লেখো।
উত্তর – ঘড়িয়ালের সংখ্যা কমার কারণগুলি হল— (1) ঘড়িয়ালের খাদ্য হল মাছ, গঙ্গা নদীতে দূষণের কারণে মাছের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ফলে প্রাণীটি খাদ্যের অভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে। (2) মাছধরার জালে ধরা পড়লে তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। (3) চাষে অতিরিক্ত জল ব্যবহার, বাঁধ নির্মাণ প্রমুখ কারণে এদের বাসস্থান কমে আসছে।
15. গির অরণ্যে সিংহ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।
অথবা, সিংহ সংরক্ষণের জন্য ভারতবর্ষের গির জাতীয় উদ্যানে যে যে ইন-সিটু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করো।
উত্তর – (1) গির অরণ্যে বন্য উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা। এর ফলে সিংহের বাসস্থান ও খাদ্যের জোগান বজায় থাকে। (2) চোরাশিকার বন্ধ করা। (3) কৃষিজমি রক্ষার্থে যে বৈদ্যুতিক বেড়া ব্যবহার করা হয়, তা বন্ধ করা। উন্মুক্ত কুয়োতে পড়ে যাতে সিংহের আর মৃত্যু না হয়, তার ব্যবস্থা করা। (4) প্রজনন কেন্দ্রে প্রজনন প্রকল্প পরিচালনা করা।
16. রেড পান্ডা কোন্ কোন্ ভারতীয় জাতীয় পার্কে দেখা যায় ?
উত্তর – রেড পান্ডা দেখা যায় — (1) সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ) (2) নকরেক জাতীয় পার্ক, মেঘালয় (3) নেওরাভ্যালি জাতীয় পার্ক, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ)। (4) কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় পার্ক (সিকিম)। (5) নামদাফা জাতীয় পার্ক (অরুণাচল প্রদেশ)।
17. ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ কাকে বলে?
উত্তর – নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চিড়িয়াখানা বা অন্য কোনো সংরক্ষণ সুবিধা সমন্বিত স্থানে প্রাণী প্রজনন দ্বারা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পদ্ধতিকে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ বলে। কুমির, গন্ডার, রেড পান্ডা প্রভৃতি বিপন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’-এর সাহায্য নেওয়া হয়।
18. রেড ডাটা বুক কাকে বলে?
উত্তর – IUCN নামক বিশ্বসংস্থা পৃথিবীর বিপদগ্রস্ত জীবগুলির সংরক্ষণের স্বার্থে ওই জীবগুলির একটি তালিকা বা লিস্ট প্রকাশ করে। একে রেড লিস্ট বা রেড ডাটা বুক বলে। সমস্ত জীবকে এই লিস্টে মোট 9টি শ্রেণিতে বিভক্ত করে শ্রেণি ভাগ করা হয়। যেমন—অবলুপ্ত (extinct), বিপন্ন (endangered), সংকটাপন্ন (vulnerable) প্রভৃতি।
19. ‘গ্রিন ডাটা বুক’ কী?
উত্তর – এটি একটি ছোটো পরিবেশসংক্রান্ত তথ্য সমৃদ্ধ পকেটবুক যাতে 200টিরও বেশি দেশের কৃষি, বনজসম্পদ, জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া যায়। এটি প্রতিবছর বিশ্ব ব্যাংক প্রকাশ করে থাকে।
20. ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি কী কী?
উত্তর – ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি হল— (1) দ্য ওয়াইল্ড লাইফ (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, 1972; (2) দ্য ফরেস্ট (কনজারভেশন) অ্যাক্ট, 1980; (3) দ্য এনভায়রনমেন্ট (প্রোটেকশন)অ্যাক্ট, 1986; (4) বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট, 2002।
21. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে তাদের যে-কোনো দুটির নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি সংস্থা হল – (1) WWF বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার এবং (2) IUCN বা ইনটারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. JFM প্রকল্প প্রথম চালু হয় –
(a) পশ্চিমবঙ্গে
(b) হরিয়ানাতে
(c) মধ্যপ্রদেশে
(d) অসমে
উত্তর – (a) পশ্চিমবঙ্গে
2. JFM ধারণাটির প্রথম সূত্রপাত হয় পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায়, তা হল—
(a) পশ্চিম মেদিনীপুর
(b) হাওড়া
(c) কলকাতা
(d) নদিয়া
উত্তর – (a) পশ্চিম মেদিনীপুর
3. JFM প্রকল্পটি প্রথম শুরু হয়েছিল—
(a) সুন্দরবন অরণ্যে
(b) আরাবারি অরণ্যে
(c) গোরুমারা অরণ্যে
(d) জলদাপাড়া অরণ্যে
উত্তর – (b) আরাবারি অরণ্যে
4. JFM-এর সূত্রপাত হয় যে সালে, তা হল –
(a) 1976
(b) 1985
(c) 1963
(d) 1971
উত্তর – (d) 1971
5. PBR-এর পুরো কথাটি হল—
(a) পাবলিক বায়োলজিক্যাল রেজিস্টার
(b) পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেকোমেনডেশনস্
(c) পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার
(d) পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেকর্ড
উত্তর – (c) পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার
6. যে সালে ব্যাঘ্র প্রকল্প ভারতে শুরু হয় –
(a) 1970
(b) 1971
(c) 1969
(d) 1973
উত্তর – (d) 1973
7. অসমের কাজিরাঙা অরণ্য যে প্রাণীর সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত, তা হল—
(a) হরিণ
(b) হাতি
(c) একশৃঙ্গ গন্ডার
(d) সিংহ
উত্তর – (c) একশৃঙ্গ গন্ডার
৪. গন্ডার নিম্নলিখিত কোন্ ভারতীয় রাজ্যে দেখা যায় ?
(a) ত্রিপুরা
(b) অসম
(c) উত্তরাখণ্ড
(d) অরুণাচল প্রদেশ
উত্তর – (b) অসম
9. গন্ডার পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের—
(a) সুন্দরবনে
(b) জলদাপাড়ায়
(c) বেথুয়াডহরিতে
(d) পুরুলিয়ার জঙ্গলে
উত্তর – (b) জলদাপাড়ায়
10. শিকারিরা গন্ডারকে হত্যা করে, মূলত তার—
(a) মাংসের জন্য
(b) দাঁতের জন্য
(c) নখের জন্য
(d) খড়গের জন্য
উত্তর – (d) খড়গের জন্য
11. ভারতবর্ষে সিংহ সংরক্ষিত হয় —
(a) গির অরণ্যে
(b) জিম করবেট জাতীয় অরণ্যে
(c) পশ্চিমঘাটের অরণ্যে
(d) জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে
উত্তর – (a) গির অরণ্যে
12. IUCN ঘোষিত অতি সংকটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতি হল –
(a) বাঘ
(b) ঘড়িয়াল
(c) গন্ডার
(d) হরিণ
উত্তর – (b) ঘড়িয়াল
13. টিকরপাড়া কী জন্য বিখ্যাত?
(a) লিও প্রোজেক্ট
(b) ক্রোকোডাইল প্রোজেক্ট
(c) রেড পান্ডা প্রোজেক্ট
(d) টাইগার প্রোজেক্ট
উত্তর – (b) ক্রোকোডাইল প্রোজেক্ট
14. পশ্চিমবঙ্গের যে সংরক্ষিত অঞ্চলে রেড পান্ডা পাওয়া যায়—
(a) ময়ূর ঝরণা হাতি রিজার্ভ
(b) সজনেখালি অভয়ারণ্য
(c) সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক
(d) কোনোটিই নয়।
উত্তর – (c) সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক
15. সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক যে, জেলায় অবস্থিত –
(a) কোচবিহার
(b) দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
(c) দার্জিলিং
(d) মালদা
উত্তর – (c) দার্জিলিং
16. রেড ডেটা বুক তৈরি করে যে সংস্থা, তার নাম —
(a) WWF
(b) IUCN
(c) IMF
(d) FAO
উত্তর – (b) IUCN
17. IUCN-এর হেডকোয়ার্টার যে দেশে অবস্থিত –
(a) গ্ল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড
(b) প্যারিস, ফ্রান্স
(c) ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
(d) নিউইয়র্ক,
উত্তর – (a) গ্ল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড
18. লাল তথ্য পুস্তিকা অর্থাৎ রেড ডেটা বুক-এর তথ্যগুলি —
(a) লোহিত সাগরের ভৌত পরিবেশ-সংক্রান্ত
(b) সরকারি কাজের ফাইল-সংক্রান্ত
(c) বিপন্ন প্রাণী-সংক্রান্ত
(d) বিপ্লবী কাজকর্ম-সংক্রান্ত
উত্তর – (c) বিপন্ন প্রাণী-সংক্রান্ত
19. রেড ডেটা বুক তৈরি উদ্দেশ্য হল—
(a)বিপন্ন জীব শনাক্তকরণ ও তাদের সংরক্ষণ
(b) বিপন্ন / জীব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
(c) জীববৈচিত্র্য হ্রাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা
(d) সবকটি
উত্তর – (d) সবকটি
20. রেড ডাটা বুক প্রকাশ করে যে সংস্থা তা হল –
(a) IUCN
(b) WWF
(c) CITES
(d) IBWL
উত্তর – (a) IUCN
21. WWF-এর পুরো কথাটি হল—
(a) ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার
(b) ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফোরাম
(c) ওয়ার্ল্ড ওয়েটেড ফরেস্ট
(d) ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফ্রিকশন
উত্তর – (a) ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার
22. ভারতীয় পার্লামেন্টে জীববৈচিত্র্য আইন (Biological Diversity Act) পাশ হয় –
(a) 1992 সালে
(b) 1996 সালে
(c) 2000 সালে
(d) 2002 সালে
উত্তর – (d) 2002 সালে
23. বন্যপ্রাণ নিরাপত্তা আইন (Wild life Protection Act)-এর সূচনা হয় –
(a) 1962 সালে
(b) 1972 সালে
(c) 1982 সালে
(d) 1992 সালে
উত্তর – (b) 1972 সালে
24. বন্যপ্রাণ নিরাপত্তা আইন (Wild life Protection Act) – 1972, প্রথম সংশোধন করা হয় যে সালে, সেটি হল –
(a) 1981
(b) 1991
(c) 2001
(d) 2009
উত্তর – (b) 1991
25. ভারতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় পড়ে না—
(a) বন্য কুকুর, বন্য গাধা, বাইসন
(b) ইঁদুর, কাক, বাদুড়
(c) বাঘ, সিংহ, হায়েনা
(d) হরিণ, হাতি, গন্ডার
উত্তর – (b) ইঁদুর, কাক, বাদুড়
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. JFM-এর পুরো কথাটি কী?
উত্তর – জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট।
2. JFM-এর অধীনস্থ কয়েকটি কমিটির নাম লেখো।
উত্তর – ফরেস্ট প্রোটেকশন কমিটি (FPC), ইকোডেভেলপমেন্ট কমিটি (EDC), ভিলেজ ফরেস্ট কমিটি (VFC) ইত্যাদি।
3. JFM-এর পরিচালনকারী প্রথম ব্যক্তি কে ছিলেন?
উত্তর – JFM পরিচালনকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন ডক্টর অজিত কুমার ব্যানার্জি, ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (DFO), মেদিনীপুর অঞ্চল।
4. স্থানীয় মানুষ ও সরকারের কোন্ পরিচালন ব্যবস্থা জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাফল্য পেয়েছে?
উত্তর – JFM |
5. PBR-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার ।
6. PBR কোন্ আইন বলে পরিচালিত হয় ?
উত্তর – PBR, বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট বা জৈবিক বৈচিত্র্য আইন, 2002-এর দ্বারা পরিচালিত হয়।
7. কোন্ কমিটি PBR তৈরি করে ?
উত্তর – বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি বা BMC।
8. BMC-কে PBR তৈরিতে সাহায্য করে কোন সংস্থা?
উত্তর – স্টেট বায়োডাইভারসিটি বোর্ড (SBB) এবং ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি অথোরিটি (NBA), BMC-কে PBR তৈরির জন্য পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে থাকে।
9. ভারতীয় বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।
উত্তর – Panthera tigris tigris (প্যানথেরা টাইগ্রিস টাইগ্রিস)।
10. ভারতীয় বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।
উত্তর – প্রজেক্ট টাইগার।
11. সুন্দরবন কোন্ প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর – রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
12. ভারতের বাঘ সংরক্ষক অরণ্যের নাম লেখো।
উত্তর – সুন্দরবন।
13. ওড়িশার সাতকোশিয়া কোন্ বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর – ভারতীয় বাঘ।
14. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা হটস্পটে সংরক্ষিত একটি বিপন্ন প্রাণীর নাম লেখো।
উত্তর – ভারতীয় বাঘ।
15. ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা NTCA-এর সম্পূর্ণ নাম কী ?
উত্তর – ন্যাশনাল টাইগার কনজোরভেশন অথোরিটি ।
16. ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
উত্তর – Rhinoceros unicornis (রাইনোসেরস ইউনিকর্নিস)।
17. ভারতে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।
উত্তর – ‘ইন্ডিয়ান রাইনোভিশন 2020’।
18. একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণের একটি স্থানের নাম কী?
উত্তর – কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক (অসম)।
19. পশ্চিমবঙ্গের কোথায় গন্ডার সংরক্ষণ করা হয় ?
উত্তর – গোরুমারা ন্যাশনাল পার্ক।
20. এশিয়ান বা এশীয় সিংহের বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।
উত্তর – Panthera leo perisica (প্যানথেরা লিও পারসিকা)।
21. এশীয় সিংহ সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।
উত্তর – গির লায়ন প্রজেক্ট।
22. গির অরণ্যের অবস্থা লেখো।
উত্তর – গুজরাট।
23. এশীয় সিংহ সংরক্ষণের একটি স্থানের নাম লেখো।
উত্তর – গির ন্যাশনাল পার্ক (গুজরাট)।
24. ঘড়িয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।
উত্তর – Gavialis gangeticus (গ্যাভিয়ালিস গ্যানজেটিকাস)।
25. লবণাক্ত জলের কুমিরের বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।
উত্তর – Crocodilus porosus (ক্রোকোডাইলাস পোরোসাস)।
26. একটি কুমির প্রকল্পের উদাহরণ দাও।
উত্তর – ভগবতপুর কুমির প্রকল্প, পশ্চিমবঙ্গ।
27. ওড়িশার কোন্ অঞ্চলে কুমির প্রকল্প রয়েছে?
উত্তর – ভিতরকণিকা অভয়ারণ্য ।
28. বাউলা প্রজেক্ট কী?
উত্তর – উড়িয়া ভাষায় বাউলা হল কুমির। কুমির সংরক্ষণে ভিতরকণিকার ডাঙ্গমল অঞ্চলের কুমির প্রকল্পকে বাউলা প্রজেক্ট বলে।
29. রেড পান্ডার বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।
উত্তর – Ailurus fulgens (অ্যায়লিউরাস ফালজেন্স)।
30. রেড পান্ডার প্রধান খাদ্য কী ?
উত্তর – রেড পান্ডার প্রধান খাদ্য হল বাঁশগাছের কচি পাতা।
31. রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।
উত্তর – রেড পান্ডা কনজারভেশন প্রকল্প (2005)।
32. কিস্টোন প্রজাতি কী ?
উত্তর – যেসব প্রজাতির জীবসংখ্যা কম থাকলেও কোনো বাস্তুতন্ত্রের কার্যপ্রণালী বৃহৎভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে কিস্টোন প্রজাতি বলে, যেমন—রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হল কিস্টোন প্রজাতি।
33. ভারতে একটি ক্যাপটিভ ব্রিডিং স্থানের নাম লেখো।
উত্তর – ওড়িশার নন্দনকানন।
34. দার্জিলিং-এর নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক-এ কোন্ বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষিত হয় ?
উত্তর – রেড পান্ডা।
35. পূর্ব হিমালয় হটস্পটে সংরক্ষিত একটি বিপন্ন প্রাণীর নাম লেখো।
উত্তর – রেড পান্ডা।
36. ভারতের কোন্ রাজ্যে রেড পান্ডা দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর – সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অরুণাচল প্রদেশ।
37. প্রজেক্ট রেড পান্ডার অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গের একটি চিড়িয়াখানার নাম লেখো।
উত্তর – পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল দার্জিলিং।
38. সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত একটি বিপন্ন প্রাণীর নাম লেখো।
উত্তর – রেড পান্ডা।
39. ভারতের বিপন্ন প্রাণীর নাম লেখো।
উত্তর – ভারতীয় হাতি, বেঙ্গল টাইগার, রেড পান্ডা, এশীয় সিংহ।
40. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কাজে অগ্রণী কয়েকটি বিশ্বসংস্থার নাম লেখো।
উত্তর – IUCN, WWF, CITES, TRAFFIC এবং CI
41. IUCN-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – ইনটারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার।
42. SBB-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – স্টেট বায়োডাইভারসিটি বোর্ড।
43. WWF-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (পূর্ব নাম ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড)।
44. VFC-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – ভিলেজ ফরেস্ট কমিটি।
45. NBA-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি অথোরিটি।
46. IRV 2020-এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তর – ইন্ডিয়ান রাইনোভিশন 2020।
47. IUCN-এর প্রধান কাজ কী ?
উত্তর – IUCN-এর প্রধান কাজ হল জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করা।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. ভারত সরকার প্রতিষ্ঠিত …….. নামক ব্যবস্থা 1971 সালে জঙ্গল পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়।
উত্তর – জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট
2. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম JFM গঠিত হয় মেদিনীপুর জেলার ……… অরণ্যে।
উত্তর – আরাবারি
3. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম JFM গঠিত হয় ………. খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর – 1971
4. FPC হল ……… -এর অধীনে গঠিত একটি কমিটি।
উত্তর – JFM
5. আবারারি অরণ্যে ……… জঙ্গল পুনরুদ্ধারে JFM চালু করা হয়।
উত্তর – শাল
6. স্থানীয় জীবসম্পদ সম্বন্ধে জ্ঞান, তাদের প্রাপ্তিসাধ্যতা ও ব্যবহার সম্বন্ধে ……… থেকে জানা যায়।
উত্তর – পিপ্প্লস বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার
7. ………. হল একটি কিস্টোন প্রজাতি।
উত্তর – রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
৪. ভারতে সর্বাধিক গন্ডার ………. রাজ্যে পাওয়া যায়।
উত্তর – অসম
9. IRV 2020 হল ………. সংরক্ষণে ভারতীয় প্রকল্প।
উত্তর – গন্ডার
10. কাজিরাঙাতে সংরক্ষিত প্রাণীটি হল ………….।
উত্তর – একশৃঙ্গ গন্ডার
11. ভারতে সিংহ পাওয়া যায় গুজরাটের ………. অরণ্যে।
উত্তর – গির
12. কুয়োয় পড়ে ও পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় ভারতবর্ষে ………. বহু সংখ্যায় মারা যায়।
উত্তর – সিংহ
13. ওড়িশার ………… অভয়ারণ্য হল উল্লেখযোগ্য কুমির সংরক্ষণ কেন্দ্র।
উত্তর – ভিতরকণিকা
14. রেড পান্ডা ………. রাজ্যের রাজ্য পশু।
উত্তর – সিকিম
15. পশ্চিমবঙ্গে ………. নামক চিড়িয়াখানায় রেড পান্ডা সংরক্ষিত হয়।
উত্তর – কাঞ্চনজঙ্ঘা
16. রেড পান্ডার অপর নাম ………….।
উত্তর – ফায়ার ফক্স/ লেসার পান্ডা
17. রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্প বর্তমান ………. -এ
উত্তর – পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক
18. MAB-এর পুরো নাম ………….।
উত্তর – ম্যান অ্যান্ড বায়োস্ফিয়ার প্রোগ্রাম
19. UNESCO-এর পুরো নাম ………….।
উত্তর – ইউনাইটেড নেশন্স এডুকেশনাল সাইন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অরগানাইজেশন
20. বর্তমানে সারা ভারতে ব্যাঘ্র প্রকল্পের মোট সংখ্যা প্রায় …………. টি।
উত্তর – 21