WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter ৪.3 তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter ৪.3 তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
West Bengal Board 10th Class Science Solutions Physics Chapter ৪.3 তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
West Bengal Board 10th Physics Solutions
TOPIC – A তড়িদ্বিশ্লেষ্য ও তড়িদ্বিশ্লেষণ
বিষয়সংক্ষেপ
তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ: যেসব যৌগিক পদার্থ গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে ও তড়িৎ পরিবহণকালে রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে, তাদের তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন— HCl, NaOH, NaCl ইত্যাদি।
- বৈশিষ্ট্য: (i) তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থগুলি সাধারণত আয়নীয় প্রকৃতির যৌগ। (ii) গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় এরা আয়নে বিয়োজিত হয় এবং এই আয়নগুলিই তড়িৎ পরিবহণের জন্য দায়ী। (iii) তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজন মাত্রা বৃদ্ধি য়, ফলে তড়িৎ পরিবাহিতাও বৃদ্ধি পায়।
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ: যেসব যৌগিক পদার্থ গলিত বা কোনো দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না, তাদের তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন—চিনি, গ্লুকোজ ইত্যাদি।
তড়িদবিশ্লেষ্যের শ্রেণিবিভাগ: তড়িৎ পরিবাহিতার ক্ষমতা অনুযায়ী তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থগুলিকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়—তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য ও মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য।
- তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য: গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যেসব তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণের মাত্রা খুব বেশি তাদের তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়। যেমন— তীব্র অ্যাসিড (HCl, H2SO4, HNO3 ইত্যাদি), তীব্র ক্ষার (NaOH, KOH ইত্যাদি) ও ধাতব লবণ (NaCl, KCl, KI, MgCl2, ZnSO4 ইত্যাদি)।
- মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য: গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যেসব তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণের মাত্রা খুব কম তাদের মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়। যেমন—মৃদু অ্যাসিড (CH3COOH, H2CO3, H3BO3 ইত্যাদি), মৃদু ক্ষার (NH4OH)।
তড়িৎ-বিয়োজন বা আয়োনাইজেশন: তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থকে দ্রবীভূত করলে বা বিগলিত করলে এরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উৎপন্ন করে। দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের এরূপ বিয়োজনকে বলা হয় তড়িৎ-বিয়োজন বা আয়োনাইজেশন।
তীব্র তড়িবিশ্লেষ্যের বিয়োজনকে বোঝানোর জন্য সাধারণত একমুখী তিরচিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
HCI → H+ + Cl– [সম্পূর্ণ বিয়োজন]
মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্যের বিয়োজন বোঝানোর জন্য সর্বদা উভমুখী তিরচিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

- বিয়োজন মাত্রা: গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় কোনো তড়িবিশ্লেষ্যের মোট পরিমাণের যত অংশ আয়নিত হয় তাকে ওই তড়িবিশ্লেষ্যের বিয়োজন মাত্রা বলে।
তড়িবিশ্লেষণ; যে প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত বা গলিত তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করে পদার্থটির রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাকে তড়িবিশ্লেষণ বলে।
- ভোল্টামিটার: তড়িবিশ্লেষণ সম্পন্ন করতে দ্রবীভূত বা গলিত তড়িবিশ্লেষ্যকে একটি পাত্রে (সাধারণত কাচের পাত্র) নেওয়া হয়। এই তড়িদবিশ্লেষ্য রাখার পাত্র, তড়িদ্বিশ্লেষ্য ও তড়িদ্দ্বার মিলিয়ে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাকে ভোল্টামিটার বলে।
- তড়িচ্ছ্বার: ভোল্টামিটার যন্ত্রে তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতব তার বা দণ্ড (যেমন—প্ল্যাটিনাম, নিকেল, আয়রন, কপার ইত্যাদি) অথবা অধাতব (যেমন—গ্রাফাইট) পাত বা দণ্ড আংশিক ডুবিয়ে রাখা হয়। এই পাত বা দণ্ড দ্বারা দ্রবণে তড়িৎ চালনা করা হয়। এই পাত বা দণ্ড দুটিকে তড়িদ্বার বলে।
(i) ক্যাথোড: তড়িবিশ্লেষণের সময় ব্যাটারির নেগেটিভ মেরুর সঙ্গে যুক্ত পাত বা দণ্ডকে ক্যাথোড বলে।(ii) অ্যানোড: তড়িবিশ্লেষণের সময় ব্যাটারির পজিটিভ মেরুর সঙ্গে যুক্ত পাত বা দণ্ডকে অ্যানোড বলে।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
TOPIC – A তড়িদ্বিশ্লেষ্য ও তড়িদ্বিশ্লেষণ
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
1. তড়িৎ পরিবাহী কাদের বলে? এরা কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর – যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয় তাদের তড়িৎ পরিবাহী বলে। যেমন—বিভিন্ন ধাতু, গলিত বা দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ প্রভৃতি। কার্বন অধাতু হলেও এর দুটি রূপভেদ গ্রাফাইট ও গ্যাসকার্বন তড়িতের সুপরিবাহী।
তড়িৎ পরিবাহী প্রধানত দু-প্রকার—ইলেকট্রনীয় পরিবাহী ও তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ। ইলেকট্রনীয় পরিবাহীর ক্ষেত্রে তড়িৎ পরিবহণ করে মুক্ত ইলেকট্রন। অপরপক্ষে, তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের ক্ষেত্রে তড়িৎ পরিবহণ করে আয়ন। নীচে তড়িৎ পরিবাহী পদার্থের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হল—

2. তড়িদবিশ্লেষ্য বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
উত্তর – যেসব যৌগিক পদার্থ গলিত অবস্থায় বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে এবং তড়িৎ পরিবহণের ফলে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থে পরিণত হয়, তাদের তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে।
বিভিন্ন তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বিভিন্ন হয়।
HCl, CH3COOH প্রভৃতি অ্যাসিড, NaOH, KOH প্রভৃতি ক্ষার এবং NaCl, AlCl3 প্রভৃতি লবণ হল তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ।
3. ‘সব তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থই তড়িৎ পরিবাহী কিন্তু সব তড়িৎ পরিবাহী তড়িদবিশ্লেষ্য নয়’ –ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – যেসব যৌগিক পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে এবং তড়িৎ পরিবহণের ফলে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন করে, সেইসব পদার্থকে তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ জলে দ্রবীভূত অবস্থায় বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিয়োজিত হয় ও আয়নগুলিই তড়িৎ পরিবহণ করে। বিভিন্ন অ্যাসিড (যেমন—HCl), ক্ষার (যেমন – NaOH) ও লবণ (যেমন- NaCl) তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের উদাহরণ। অন্যদিকে, যেসব পদার্থ তড়িৎ পরিবহণ করলেও তড়িৎ পরিবহণকালে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে রূপান্তরিত হয় না তাদের তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ বলা যায় না। যেমন— লোহা, তামা ইত্যাদি ধাতব পরিবাহী ও গ্রাফাইট অধাতব পরিবাহীর উদাহরণ। এদের ক্ষেত্রে মুক্ত ইলেকট্রন দ্বারা তড়িৎ পরিবাহিত হয়। তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে পদার্থগুলি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সুতরাং, বলা যায় সব তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থই তড়িৎ পরিবাহী কিন্তু সব তড়িৎ পরিবাহী তড়িদ্বিশ্লেষ্য নয়।
4. তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – যেসব যৌগিক পদার্থ গলিত বা কোনো দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না, তাদের তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়ন উৎপন্ন করে না, তাই এরা তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না।
বিশুদ্ধ জল, বেঞ্জিন, অ্যালকোহল, চিনি, গ্লুকোজ, ইউরিয়া ইত্যাদি যৌগগুলি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ।
5. তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
(1) তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থগুলি সাধারণত তড়িৎযোজী বা আয়নীয় প্রকৃতির যৌগ। (2) এরা গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিয়োজিত হয় এবং এই আয়নগুলিই তড়িৎ পরিবহণের জন্য দায়ী। (3) গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদবিশ্লেষ্যের য়োজনে উৎপন্ন আয়নগুলির চলাচলের ফলেই তড়িৎ পরিবহণ সম্ভব হয় এবং তড়িৎ পরিবহণের ফলে এরা রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে। (4) তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবাহিতা—তড়িবিশ্লেষ্যের প্রকৃতি, দ্রবণে তড়িবিশ্লেষ্যের গাঢ়ত্ব ও উন্নতার ওপর নির্ভর করে।
6. তড়িদার কাকে বলে? ক্যাথোড ও অ্যানোড কী?
উত্তর – গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতব (যেমন—কপার, সিলভার ইত্যাদি) বা অধাতব (যেমন—গ্রাফাইট, গ্যাসকার্বন ইত্যাদি) পাত বা দণ্ড-এর একপ্রান্ত আংশিকভাবে ডুবিয়ে রেখে ওই পাত বা দণ্ডদুটির অপর প্রান্ত ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত করলে তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িতের প্রবাহ ঘটে। উক্ত পাত বা দণ্ডদুটিকে তড়িদ্বার বলে।
যে তড়িদ্দ্বারকে ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাকে ক্যাথোড এবং যে তড়িদ্বারকে ব্যাটারির ধনাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাকে অ্যানোড বলে।
7. তড়িচ্ছ্বারে ইলেকট্রন গ্রহণ ও বর্জনের দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যাথোড এবং অ্যানোডের সংজ্ঞা দাও। কোন্ তড়িচ্ছ্বারে বিজারণ ও কোন তড়িদারে জারণ ঘটে?
উত্তর – যে তড়িদ্দ্বারে ক্যাটায়নগুলি ইলেকট্রন গ্রহণ করে প্রশম পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয় তাকে ক্যাথোড বলা হয়। অপরদিকে, যে তড়িদ্বারে অ্যানায়নগুলি ইলেকট্রন ত্যাগ করে প্রশম পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয় তাকে অ্যানোড বলা হয়।
তড়িদবিশ্লেষণের সময় ক্যাথোডে বিজারণ ও অ্যানোডে জারণ ঘটে।
8. ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ-
ক্যাথোড | অ্যানোড |
1. এই তড়িদ্দ্বারটি ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত। | 1. এই তড়িচ্ছ্বারটি ব্যাটারির ধনাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত। |
2. ক্যাথোডে ক্যাটায়নের তড়িৎমুক্তি ঘটে। | 2. অ্যানোডে অ্যানায়নের তড়িৎমুক্তি ঘটে। |
3. ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে অর্থাৎ বিজারিত হয়। | 3. অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে গিয়ে ইলেকট্রন বর্জন করে অর্থাৎ জারিত হয়। |
9. পারদ ও অঙ্গায়িত জলের মধ্যে কোনটি তড়িদবিশ্লেষ্য ও কেন?
জলে দ্রাব্য একটি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর – পারদ তরল অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করলেও এটি একটি মৌলিক পদার্থ এবং তড়িৎপ্রবাহের ফলে পারদের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয় না। তাই পারদ তড়িদবিশ্লেষ্য নয়। কিন্তু, অম্লায়িত জলের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে জল রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয় এবং ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস ও অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। তাই অম্লায়িত জল তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ।
জলে দ্রাব্য একটি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ হল চিনি (C12H22O11)
10. কোনো একটি পদার্থ তড়িদবিশ্লেষ্য না তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য তা পরীক্ষার সাহায্যে কীভাবে প্রমাণ করবে? এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে পদার্থটির তড়িৎ পরিবাহিতা সম্পর্কে কী ধারণা পাওয়া যাবে?
উত্তর – পরীক্ষণীয় পদার্থটিকে প্রথমে বিগলিত বা জলে দ্রবীভূত করে একটি বিকারে নিয়ে এর মধ্যে দুটি তড়িদ্দ্বারকে (গ্রাফাইট রড বা প্ল্যাটিনাম ধাতুর পাত) আংশিকভাবে ডুবিয়ে রাখা হয়। এবার তড়িদ্দার দুটিকে একটি কম শক্তির ইলেকট্রিক বাল্ব, একটি ব্যাটারি ও একটি চাবির সঙ্গে শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত করা হয়। বিকারের তরল যদি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য হয় তবে চাবি টিপে তড়িৎ বর্তনী সম্পূর্ণ করলেও বাল্বটি জ্বলবে না। কিন্তু তরলটি তড়িদবিশ্লেষ্য হলে চাবি টিপে বর্তনী সম্পূর্ণ করা মাত্রই বর্তনী দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়ে বাল্বটি জ্বলে উঠবে।
বাল্বের আলোর উজ্জ্বলতা থেকে পরীক্ষণীয় পদার্থটির তড়িৎ পরিবহণের ক্ষমতা বা মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পদার্থটি তড়িতের সুপরিবাহী হলে বাল্বটি উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে, কিন্তু তড়িৎ পরিবাহিতার মাত্রা কম হলে বাল্বটি মিটমিট করে জ্বলবে।

11. তরল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম নয়, কিন্তু গলিত সোডিয়াম ক্লোরাইড তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – হাইড্রোজেন ক্লোরাইড একটি সমযোজী যৌগ। তাই তরল অবস্থায় HCI অণুগুলি আয়নিত হয় না, অণু-রূপে বিরাজ করে। স্বভাবতই তরল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড একটি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ এবং এটি তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না।
অপরদিকে সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি তড়িৎযোজী যৌগ এবং গলিত সোডিয়াম ক্লোরাইডে অণুর কোনো অস্তিত্ব নেই। এক্ষেত্রে সোডিয়াম ক্লোরাইড সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে Na+ ও Cl– আয়নরূপে বিরাজ করে। আয়নের উপস্থিতির জন্যই এটি একটি তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ ও তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম।
12. কঠিন NaCl তড়িৎ পরিবহণ করে না কিন্তু গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে কেন?
উত্তর – Na+ ও Cl– আয়নের মধ্যে তীব্র কুলম্বীয় আকর্ষণের জন্য আয়নগুলির গতিশীলতা নেই বললেই চলে। তাই কঠিন NaCl তড়িৎ পরিবহণ করে না। অপরপক্ষে গলিত অবস্থায় Na+ ও Cl– আয়নের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বল হ্রাস পাওয়ায় এদের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, যার দরুন সহজে তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে। আবার, দ্রবীভূত অবস্থায় NaCl-এর বিয়োজনে উৎপন্ন Na+ ও Cl– আয়ন পৃথকভাবে দ্রাবকায়িত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়, যার ফলে এদের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। তাই গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় NaCl তড়িৎ পরিবহণ করে।
13. চিনির জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না, কিন্তু সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ পারে। কেন?
উত্তর – সমযোজী যৌগ চিনি জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয় না। দ্রবণে আয়নের অনুপস্থিতির জন্য চিনির জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না। অপরপক্ষে, সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) অর্থাৎ সাধারণ লবণ একটি তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ। ফলে এটি জলীয় দ্রবণে প্রায় সম্পূর্ণ আয়নিত হয়ে Na+ এবং Cl– আয়ন উৎপন্ন করে।
NaCl → Na+ + Cl–
দ্রবণে উপস্থিত এই আয়নগুলির চলাচলের জন্যই সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করে।
14 (i) অনার্দ্র HCl তড়িৎ পরিবহণ করে না কিন্তু HCl-এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করে কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, HCl সমযোজী যৌগ হলেও এর জলীয় দ্রবণ তড়িবিশ্লেষ্য-রূপে আচরণ করে। ব্যাখ্যা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, HCl সমযোজী যৌগ হলেও এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবাহী হয় কেন?
(ii) CCl4যৌগটি তড়িবিশ্লেষ্য নয় কেন?
উত্তর – (i) HCl একটি সমযোজী গ্যাসীয় পদার্থ। স্বভাবতই অনার্স HCl তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না। তবে জলীয় দ্রবণে HCl অণুর সমযোজী বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায় এবং এটি H+ (বা, H3O+) ও Cl– আয়নে বিয়োজিত হয়।

আয়নের উপস্থিতির জন্যই HCl- এর জলীয় দ্রবণ তড়িবিশ্লেষ্যরূপে আচরণ করে এবং তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে।
(ii) CCl4 যৌগটি সমযোজী। এর ফলে এটি জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে বিয়োজিত হতে পারে না। তাই CCl4 যৌগটি তড়িবিশ্লেষ্য নয়।
15. ক্লোরোফর্ম, বেঞ্জিন ইত্যাদি যৌগিক তরল পদার্থ তড়িৎ পরিবহণ করে না কেন? একটি জৈব যৌগের নাম লেখো যা জলীয় দ্রবণে তড়িৎ পরিবহণ করে।
উত্তর – তরলে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উপস্থিত থাকলে তবেই ওই তরল তড়িৎ পরিবহণ করে। তরল অবস্থায় থাকলেও ক্লোরোফর্ম বা বেঞ্জিন সমযোজী যৌগ হওয়ায় ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে বিয়োজিত হয় না। তাই, ক্লোরোফর্ম ও বেঞ্জিন তড়িৎ পরিবহণ করে না।
অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3CO2H) হল এমন একটি জৈব যৌগ যা জলীয় দ্রবণে তড়িৎ পরিবহণ করে।
16. তড়িদবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে তড়িবিশ্লেষ্যের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি আয়নে বিয়োজিত হয়। এই অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে উপযুক্ত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ও অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে গিয়ে প্রয়োজনমতো ইলেকট্রন ত্যাগ করে প্রশম পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয়। এভাবে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয় যাদের ধর্ম তড়িদবিশ্লেষ্যের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সুতরাং, তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন, অ্যাসিড-মিশ্রিত জলের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস ও অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যাদের ধর্ম জলের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ পৃথক।
17. তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর – তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে—
- তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের প্রকৃতি: তীব্র তড়িবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে অণুগুলি সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়। এর ফলে গলিত অবস্থায় বা জলীয় দ্রবণে আয়নের সংখ্যা বেশি হয় ও তার ফলে তড়িৎ পরিবহণের ক্ষমতাও বেশি হয়। মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ আংশিকভাবে বিয়োজিত হয়ে অল্প সংখ্যক আয়ন মুক্ত করে, তাই এক্ষেত্রে তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম হয়।
- তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের গাঢ়ত্ব: দ্রবণে তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের গাঢ়ত্ব যত বেশি হয় দ্রবণে উৎপন্ন আয়ন সংখ্যাও তত বৃদ্ধি পায়, ফলে তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
- উয়তা: উন্নতা বৃদ্ধির ফলে আয়নগুলির গতিবেগ তথা গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, এর ফলে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন দ্রুত ক্যাথোডে এবং অ্যানোডে পৌঁছোতে পারে। ফলে তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
18. গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের উন্নতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় কেন?
তড়িৎপ্রবাহের ফলে ধাতুর কীরূপ পরিবর্তন হয় ? ধাতুর উন্নতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎ পরিবাহিতার কীরূপ পরিবর্তন ঘটে?
উত্তর – উন্নতা বৃদ্ধি করলে গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির গতিবেগ বৃদ্ধি পায় এবং নির্দিষ্ট তড়িদ্দ্বারের দিকে এদের গমন দ্রুত হয়। আয়নগুলির গতিবেগ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তড়িদ্বিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবাহিতাও বৃদ্ধি পায়।
তড়িৎপ্রবাহের ফলে ধাতু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং কখনো কখনো ভাস্বর হয়ে আলো বিকিরণ করে। তবে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দিলে ধাতু বা ধাতব পরিবাহী আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অর্থাৎ তড়িৎপ্রবাহের ফলে । যাতুর ভৌত পরিবর্তন ঘটে।
ধাতুর উন্নতা যত বৃদ্ধি করা হয় ধাতুর রোধ তত বৃদ্ধি পায়, ফলে তড়িৎ পরিবাহিতা হ্রাস পায়।
19. গলিত বা দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণ সম্পন্ন হয় কীভাবে তা লেখো। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনের কোনো ভূমিকা আছে কি ?
উত্তর – গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উৎপন্ন করে। এই ঘটনাকে তড়িৎ-বিয়োজন বা আয়োনাইজেশন বলে। তড়িবিশ্লেষ্যের বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলিই তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণ করে। দুটি উপযুক্ত তড়িদ্দ্বার ও ব্যাটারির সাহায্যে উক্ত তড়িদবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ চালনা করলে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির বিপরীত অভিমুখে সরণ ঘটে। ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডের অভিমুখে ও অ্যানায়নগুলি অ্যানোডের অভিমুখে ধাবিত হয়। নির্দিষ্ট তড়িদ্বারের দিকে এরূপ গমনের মাধ্যমে আয়নগুলি তড়িৎ পরিবহণ সম্পন্ন করে।
গলিত বা দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণে ইলেকট্রনের কোনো ভূমিকা নেই। অর্থাৎ, এই ধরনের তড়িৎ পরিবহণে তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন চলাচল করে না।

20. গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদবিশ্লেষ্যের মধ্যে অসংখ্য ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন থাকলেও দ্রবণটির তড়িৎ-নিরপেক্ষতা কীভাবে বজায় থাকে?
উত্তর – গলিত অবস্থায় বা দ্রবণে, তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ থেকে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের সংখ্যা সমান হতে পারে বা নাও হতে পারে। আবার একটি ক্যাটায়ন ও একটি অ্যানায়নের আধান বা চার্জ, সমান বা আলাদা হতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, ক্যাটায়নগুলির মোট ধনাত্মক আধান, অ্যানায়নগুলির মোট ঋণাত্মক আধানের সমান হবেই। এই হিসেবে, গলিত বা দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্যে অসংখ্য ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন থাকলেও তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ সামগ্রিকভাবে নিস্তড়িৎ থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, তড়িৎ পরিবহণকালে যে-কোনো মুহূর্তে গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদবিশ্লেষ্যের তড়িৎ-নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।
21. তড়িৎ-বিয়োজন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – বিগলিত কিংবা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উৎপন্ন করে। দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের এরূপ বিয়োজনকে তড়িৎ-বিয়োজন বা আয়োনাইজেশন বলে।
সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) যৌগটি বিগলিত কিংবা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় বিয়োজিত হয়ে Na+ ও Cl– আয়ন মুক্ত করে।

22. বিয়োজন মাত্রা বলতে কী বোঝ? বিয়োজন মাত্রার সঙ্গে তড়িবিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কীভাবে সম্পর্কিত?
উত্তর – কোনো কোনো তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বেশি আবার কারও ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা খুবই কম। এর কারণ গলিত অবস্থায় বা দ্রবণে সব তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজন সর্বদা সম্পূর্ণ হয় না। কোনো ক্ষেত্রে গলিত বা দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্যের সবটাই বিয়োজিত (আয়নিত) হয়, আবার কোনো ক্ষেত্রে তড়িদবিশ্লেষ্য আংশিকভাবে বিয়োজিত হয়। গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদবিশ্লেষ্যের মোট পরিমাণের যত অংশ আয়নিত হয় তাকে ওই তড়িদ্বিশ্লেষ্যের বিয়োজন মাত্রা বলে।
বিয়োজন মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তড়িবিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
23. তড়িৎ পরিবাহিতার ক্ষমতা অনুযায়ী তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থগুলিকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? প্রতিক্ষেত্রে সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।
অনুরূপ প্রশ্ন, তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
অনুরূপ প্রশ্ন, মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – তড়িৎ পরিবাহিতার ক্ষমতা অনুযায়ী তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থগুলিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়—তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ ও মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ।
তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ: গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যেসব তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণের মাত্রা খুব বেশি হয়, তাদের তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য বলে। গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয় এবং প্রচুর সংখ্যক আয়ন উৎপন্ন করে।
উদাহরণ: HCl, H2SO4 প্রভৃতি তীব্র অ্যাসিড; NaOH, KOH প্রভৃতি তীব্র ক্ষার; NaCl, KCl, CaCl2 প্রভৃতি ধাতব লবণ।
মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ: গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যেসব তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণের মাত্রা খুব কম হয়, তাদের মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য বলে। গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থগুলির অসম্পূর্ণ বিয়োজন ঘটে এবং কম সংখ্যক আয়ন উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: H2CO3, HCOOH, CH3COOH ইত্যাদি মৃদু অ্যাসিড; NH4OH, Mg(OH)2 ইত্যাদি মৃদু ক্ষার।
24. তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজনকে কীভাবে প্রকাশ করা হয় এবং কেন?
উত্তর – তীব্র তড়িবিশ্লেষ্যের বিয়োজনকে বোঝানোর জন্য সাধারণ একমুখী তির চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন—
HCI → H+ + Cl– [সম্পূর্ণ বিয়োজন]
মৃদু তড়িবিশ্লেষ্যের বিয়োজনকে বোঝানোর জন্য সর্বদা উভমুখী তির চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন—

25. তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের পার্থক্য উল্লেখ করো।
উত্তর – তীব্র ও মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ—

26. তড়িদবিশ্লেষণ কাকে বলে? গলিত মোমের তড়িদবিশ্লেষণ সম্ভব কি?
উত্তর – গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করে পদার্থটির রাসায়নিক বিয়োজন ঘটিয়ে ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থ উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াকে তড়িবিশ্লেষণ বলে।
গলিত মোম তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ না হওয়ায় গলিত মোমের তড়িদ্বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।
27. তড়িবিশ্লেষণের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – তড়িদবিশ্লেষণের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- তড়িবিশ্লেষণের ফলে তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থটির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়।
- তড়িবিশ্লেষণের সময় ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের বিপরীতমুখী গতির দরুন তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, তড়িবিশ্লেষণের সময় কেবলমাত্র তড়িৎ নয়, আয়নও পরিবাহিত হয়।
- ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি যথাক্রমে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে গিয়ে তড়িৎমুক্ত হয়। এই কারণে তড়িবিশ্লেষণের ফলে উৎপন্ন পদার্থগুলি শুধুমাত্র তড়িদ্বারেই পাওয়া যায়।
- গলিত বা দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয় এবং অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে গিয়ে ইলেকট্রন বর্জন করে জারিত হয়। অর্থাৎ, তড়িবিশ্লেষণ হল একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া।
- তড়িদবিশ্লেষণের সময় তড়িদ্দ্বারে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়া, তড়িৎপ্রবাহ চালনা করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়। তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হলে তড়িদ্দ্বারে সংঘটিত বিক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
28. তড়িবিশ্লেষণের সময় সমপ্রবাহী তড়িতের (DC) পরিবর্তে পরিবর্তী প্রবাহ (AC) ব্যবহার করা যাবে কি?
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িদবিশ্লেষণে AC ব্যবহার করা যাবে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পরিবর্তী প্রবাহ (AC) ব্যবহার করা যায় না, কারণ পরিবর্তী প্রবাহের ক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ পরিবর্তিত হয়। ফলে তড়িদ্দ্বারদুটির মেরুধর্মিতাও (অর্থাৎ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িদ্দ্বার-রূপে আচরণ) পরিবর্তিত হতে থাকে এবং নির্দিষ্ট তড়িদ্দ্বারের অভিমুখে আয়নগুলির গমন বিঘ্নিত হয়।
29. মৌলিক পদার্থের তড়িদবিশ্লেষণ হতে পারে কি? ব্যাখ্যা করো। কোন্ অধাতুকে তড়িচ্ছ্বার-রূপে ব্যবহার করা যায়?
উত্তর – গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত কোনো তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের দ্বারা তড়িৎ পরিবহণের ফলে পদার্থটি রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট অন্য পদার্থে পরিণত হলে তড়িদবিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়। সুতরাং, তড়িদবিশ্লেষণের জন্য বিপরীতধর্মী আয়নের উপস্থিতি আবশ্যক। মৌলিক পদার্থগুলি বিপরীতধর্মী আয়নে বিয়োজিত হয় না। তাই মৌলিক পদার্থের তড়িদবিশ্লেষণ সম্ভব নয়।
গ্রাফাইট অধাতু হলেও এটি তড়িতের সুপরিবাহী হওয়ায় একে তড়িদার-রূপে ব্যবহার করা যায়।
30. তড়িদবিশ্লেষণ প্রকৃতপক্ষে একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া-ব্যাখ্যা করো।
অথবা, তড়িবিশ্লেষণের সময় অ্যানোডে জারণ এবং ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে—ব্যাখ্যা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িবিশ্লেষণ বিক্রিয়ায় জারণ-বিজারণ ঘটে—উদাহরণ দিয়ে বোঝাও।
উত্তর – জারণ-বিজারণের ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে কোনো পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন বর্জন করলে পরমাণু বা আয়নটি জারিত হয়। আবার, কোনো পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন গ্রহণ করলে সেটি বিজারিত হয়।
গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে তড়িবিশ্লেষ্যের বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিস্তড়িৎ হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে ক্যাটায়নের বিজারণ ঘটে। অপরদিকে, অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে গিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে নিস্তড়িৎ হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে অ্যানায়নের জারণ ঘটে। সুতরাং বলা যায়, তড়িবিশ্লেষণে সংঘটিত বিক্রিয়া হল প্রকৃতপক্ষে জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে এবং অ্যানোডে জারণ ঘটে।
উদাহরণ: গলিত NaCl -এর তড়িবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ক্যাথোডে Na+ আয়ন ইলেকট্রন গ্রহণ করে Na -পরমাণুতে বিজারিত হয় এবং অ্যানোডে Cl– আয়ন ইলেকট্রন বর্জন করে Cl -পরমাণুতে জারিত হয়।
ক্যাথোড বিক্রিয়া: Na+ + e → Na (বিজারণ)
অ্যানোড বিক্রিয়া: Cl– → Cl + e (জারণ), Cl + Cl → Cl2 ↑
31. বিশুদ্ধ জলে অল্প তড়িবিশ্লেষ্য যোগ করলে জলের তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় কেন? জলে চিনি মেশানো হলে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পাবে কি?
উত্তর – বিশুদ্ধ জল অত্যন্ত মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ। সাধারণভাবে বিশুদ্ধ জলের নগণ্য সংখ্যক অণু বিয়োজিত হয়ে অত্যন্ত অল্প সংখ্যক H+ ও OH– আয়ন উৎপন্ন করে। তাই বিশুদ্ধ জলের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা খুবই কম। কিন্তু বিশুদ্ধ জলে সামান্য অ্যাসিড বা ক্ষার-এর মতো তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ যোগ করলে জলের বেশিরভাগ অণুই আয়নিত হয়ে বহুসংখ্যক H+ ও OH– আয়ন উৎপন্ন করে। এই অবস্থায় দ্রবণে আয়নের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। দ্রবণে আয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় এবং ওর তড়িবিশ্লেষণ করা সম্ভবপর হয়।
চিনি তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ না হওয়ায় জলে চিনি মেশালে তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পাবে না।
32. জলের তড়িদবিশ্লেষণে উৎপন্ন গ্যাসগুলিকে কীভাবে শনাক্ত করবে?
উত্তর – জলের তড়িবিশ্লেষণে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসগুলিকে প্রদত্তরূপে শনাক্ত করা যায়— (1) ক্যাথোডে সঞ্চিত গ্যাসের মধ্যে একটি জ্বলন্ত শলাকা প্রবেশ করালে দেখা যায় গ্যাসটি নীলাভ শিখায় জ্বলছে। অতএব, ক্যাথোডে সঞ্জিত গ্যাসটি হাইড্রোজেন। (2) অ্যানোডে সজ্জিত গ্যাসের মধ্যে একটি শিখাহীন জ্বলন্ত শলাকা প্রবেশ করালে দেখা যায়, কাঠিটি দপ্ করে জ্বলে ওঠে কিন্তু গ্যাসটি নিজে জ্বলে না। এর থেকে বোঝা যায়, অ্যানোডে সঞ্জিত গ্যাসটি অক্সিজেন।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থ তড়িৎ পরিবহণ করে—
(a) কঠিন অবস্থায়
(b) গলিত অবস্থায়
(c) জলীয় দ্রবণে
(d) b ও c
উত্তর – (d) b ও c
2. গলিত অবস্থায় অথবা জলীয় দ্রবণে তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে তার —
(a) ভৌত পরিবর্তন হয়
(b) রাসায়নিক পরিবর্তন হয়
(c) ভৌত ও রাসায়নিক উভয় পরিবর্তন হয়
(d) কোনো পরিবর্তন
উত্তর – (c) ভৌত ও রাসায়নিক উভয় পরিবর্তন হয়
3. একটি তীব্র তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের উদাহরণ হল-
(a) H2CO3
(b) HNO3
(c) NH4OH
(d) HCOOH
উত্তর – (b) HNO3
4. মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য অজৈব লবণের উদাহরণ হল-
(a) KNO3
(b) ZnCl2
(c) CaCl2
(d) Ca3 (PO4)2
উত্তর – (d) Ca3 (PO4)2
5. নীচের কোন্টি জলীয় দ্রবণে একটি মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য?
(a) CH3COOH
(b) NaOH
(c) H2SO4
(d) NaCl
উত্তর – (a) CH3COOH
6. নীচের কোনটি তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে?
(a) গলিত NaCl
(b) তরল HCl
(c) কঠিন NaCl
(d) গ্লুকোজের জলীয় দ্রবণ
উত্তর – (a) গলিত NaCl
7. মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের জলীয় দ্রবণে পাওয়া যাবে—
(a) কেবল অণু
(b) কেবল আয়ন
(c) আয়ন ও অণু উভয়ই
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) আয়ন ও অণু উভয়ই
৪. তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণে পাওয়া যাবে —
(a) কেবল অণু
(b) কেবল আয়ন
(c) আয়ন ও অণু উভয়ই
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) কেবল অণু
9. নীচের যৌগগুলির মধ্যে তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য হল—
(a) অ্যাসিটিক অ্যাসিড
(b) কার্বনিক অ্যাসিড
(c) ক্লোরোফর্ম
(d) ফর্মিক অ্যাসিড
উত্তর – (c) ক্লোরোফর্ম
10. উয়তা বৃদ্ধি করলে ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের মাত্রা —
(a) বৃদ্ধি পায়
(b) হ্রাস পায়
(c) অপরিবর্তিত থাকে
(d) হ্রাস পায় অথবা বৃদ্ধি পায়
উত্তর – (b) হ্রাস পায়
11. তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের জলীয় দ্রবণকে উত্তপ্ত করা হলে আয়নগুলির গতিবেগ—
(a) হ্রাস পায়
(b) বৃদ্ধি পায়
(c) হ্ৰাস পায় অথবা বৃদ্ধি পায়
(d) অপরিবর্তিত থাকে
উত্তর – (b) বৃদ্ধি পায়
12. উন্নতা বৃদ্ধিতে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহিতা —
(a) বৃদ্ধি পায়
(b) হ্রাস পায়
(c) বৃদ্ধি পায় অথবা হ্রাস পায়
(d) অপরিবর্তিত থাকে
উত্তর – (a) বৃদ্ধি পায়
13. ধাতব পরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহিতা তড়িদদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের থেকে—
(a) কম
(b) বেশি
(c) কম অথবা বেশি
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) বেশি
14. কঠিন অবস্থায় কোন্টি তড়িৎ পরিবহণ করে না?
(a) NaCl
(b) PbBr2
(c) বরফ
(d) সবকটিই
উত্তর – (d) সবকটিই
15. কোন্ যৌগটির জলীয় দ্রবণে তার অণু এবং আয়ন দুই-ই থাকে?
(a) NaCl
(b) CH3COOH
(c) CH3CH2OH
© CHCl3
উত্তর – (b) CH3COOH
16. নীচের কোন্টি তড়িবিশ্লেষ্য নয়?
(a) NaCl
(b) H2SO4
(c) KOH
(d) গ্লুকোজ
উত্তর – (d) গ্লুকোজ
17. নীচের পদার্থগুলির মধ্যে কোন্টি তড়িবিশ্লেষ্য?
(a) পারদ
(b) চিনির জলীয় দ্রবণ
(c) লবণ জল
(d) ব্রোমিন
উত্তর – (c) লবণ জল
18. কোন্ ক্ষারকটি মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য?
(a) Ca(OH)2
(b) NH4OH
(c) NaOH
(d) KOH
উত্তর – (b) NH4OH
19. জলের তড়িদবিশ্লেষণের ফলে উৎপন্ন হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের ভরের অনুপাত —
(a) 1 : 8
(b) 2 : 1
(c) 2 : 3
(d) 3 : 1
উত্তর – (a) 1 : 8
20. লঘু এবং গাঢ় HCl দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণে অ্যানোডে মুক্ত আধানগুলি হল যথাক্রমে—
(a) OH– এবং Cl–
(b) Cl– এবং OH–
(c) উভয়ক্ষেত্রেই Cl–
(d) উভয়ক্ষেত্রেই OH–
উত্তর – (a) OH– এবং Cl–
21. কোনো তড়িদ্বারে একটি আয়নের আধানমুক্ত হওয়ার তুলনামূলক প্রবণতা নির্ভর করে—
(a) তড়িৎ-রাসায়নিক সারিতে সংশ্লিষ্ট মৌলটির অবস্থানের ওপর
(b) দ্রবণে আয়নটির গাঢ়ত্বের ওপর
(c) তড়িদ্দ্বারটি কী পদার্থ দিয়ে তৈরি তার ওপর
(d) সবকটির ওপর
উত্তর – (d) সবকটির ওপর
22. নীচের কোন্ ক্যাটায়নটি জলীয় দ্রবণে মুক্ত অবস্থায় থাকে না?
(a) H+
(b) Na+
(c) K+
(d) Cu2+
উত্তর – (a) H+
23. কোন্টির জলীয় দ্রবণের তড়িবিশ্লেষণে ক্যাথোডে ধাতুটি মুক্ত হয়?
(a) NaCl
(b) KCl
(c) CuSO4
(d) AlCl3
উত্তর – (c) CuSO4
24. গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদবিশ্লেষ্যের মধ্যে তড়িৎ পরিবহণের জন্য দায়ী —
(a) প্রোটনের সরণ
(b) ইলেকট্রনের সরণ
(c) আয়নের সরণ
(d) অণুর সরণ
উত্তর – (c) আয়নের সরণ
25. নীচের কোন্টির তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা সর্বাধিক?
(a) বিশুদ্ধ জলের
(b) চিনির জলীয় দ্রবণের
(c) অ্যাসিটিক অ্যাসিডের জলীয় দ্রবণ
(d) অণুর সরণ
উত্তর – (c) অ্যাসিটিক অ্যাসিডের জলীয় দ্রবণ
26. জলের তড়িবিশ্লেষণে ক্যাথোডে 11.2 L গ্যাস উৎপন্ন হল। একই চাপ ও উয়তায় অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসের আয়তন—
(a) 5.6 L
(b) 11.2 L
(c) 22.4 L
(d) 44.8 L
উত্তর – (a) 5.6 L
27. নীচের কোন্ অধাতুটি তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে?
(a) ফসফরাস
(b) বোরন
(c) গ্রাফাইট
(d) সালফার
উত্তর – (c) গ্রাফাইট
28. তড়িবিশ্লেষণের সময় যে তড়িদ্দ্বারটি ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে বলে—
(a) ক্যাথোড
(b) অ্যানোড
(c) সক্রিয় তড়িদ্বার
(d) নিষ্ক্রিয় তড়িদার
উত্তর – (a) ক্যাথোড
29. গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় মৃদু তড়িবিশ্লেষ্যের অণুগুলির —
(a) সম্পূর্ণ বিয়োজন ঘটে
(b) অসম্পূর্ণ বিয়োজন ঘটে
(c) কোনো বিয়োজন ঘটে না
(d) সংযোজন ঘটে
উত্তর – (b) অসম্পূর্ণ বিয়োজন ঘটে
30. গলিত বা দ্রবীভূত তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণের ক্ষেত্রে কোন্টির কোনো ভূমিকা নেই?
(a) ক্যাটায়ন
(b) অ্যানায়ন
(c) ইলেকট্রন
(d) a ও b
উত্তর – (c) ইলেকট্রন
একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও
1. একটি জৈব পদার্থের নাম লেখো যার জলীয় দ্রবণ তড়িতের পরিবাহী।
উত্তর – অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH) হল এমন একটি জৈব পদার্থ যার জলীয় দ্রবণ তড়িতের পরিবাহী।
2. একটি তরল পদার্থের নাম লেখো যা তড়িৎ পরিবহণ করে অথচ তড়িবিশ্লেষ্য নয়।
উত্তর – পারদ হল এমন একটি তরল পদার্থ যা তড়িৎ পরিবহণ করে অথচ তড়িদবিশ্লেষ্য নয়।
3. একটি তরল মৌলিক পদার্থের উদাহরণ দাও, যা তড়িৎ পরিবহণ করে না।
উত্তর – ব্রোমিন (Br) হল এমন একটি তরল মৌলিক পদার্থ যা তড়িৎ পরিবহণ করে না।
4. তড়িৎ পরিবহণ করলেও আয়নিত হয় না এমন একটি অধাতব পদার্থের উদাহরণ দাও।
উত্তর – তড়িৎ পরিবহণ করলেও আয়নিত হয় না এমন একটি অধাতব পদার্থ হল গ্রাফাইট।
5. তড়িৎ পরিবহণ করে অথচ তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য এমন একটি পদার্থের নাম করো।
উত্তর – তড়িৎ পরিবহণ করে অথচ তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য এমন একটি পদার্থ হল গ্রাফাইট।
6. একটি অধাতুর উদাহরণ দাও যা তড়িৎ পরিবহণ করে।
উত্তর – কার্বনের বহুরূপ গ্রাফাইট হল একটি অধাতু যা তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে।
7. ইলেকট্রনীয় পরিবাহীর উদাহরণ দাও।
উত্তর – যে-কোনো ধাতুই ইলেকট্রনীয় পরিবাহীর উদাহরণ। যেমন—তামা (Cu), নিকেল (Ni) ইত্যাদি।
8. সামান্য খাদ্যলবণ-মিশ্রিত চিনির সরবত কি তড়িৎ পরিবহণ করবে?
উত্তর – চিনির দ্রবণ তড়িতের অপরিবাহী হলেও, খাদ্যলবণের দ্রবণ তড়িতের পরিবাহী। তাই এই মিশ্র দ্রবণটি তড়িৎ পরিবহণ করবে।
9. NaCl ও HCl -এর মধ্যে কোন্টি বিশুদ্ধ অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্য নয় ?
উত্তর – NaCl ও HCl -এর মধ্যে HCl বিশুদ্ধ অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্য নয়।
10. একটি অজৈব তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর – সিলিকা (SiO2) একটি অজৈব তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ।
11. তড়িবিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থগুলিকে চিহ্নিত করো:
বিশুদ্ধ জল, কস্টিক সোডার দ্রবণ, গ্রাফাইট
উত্তর – তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ: কস্টিক সোডার দ্রবণ।
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ : বিশুদ্ধ জল, গ্রাফাইট।
12. তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য কিন্তু জলে দ্রাব্য এমন তরল যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর – ইথাইল অ্যালকোহল (C2H5OH) জলে দ্রাব্য একটি তরল যৌগ যা তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য।
13. তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য ও মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থগুলিকে চিহ্নিত করো:
গলিত NaOH, KCl -এর জলীয় দ্রবণ, H2CO3, CH3COOH, HCN, ZnSO4 দ্রবণ, Al(OH)3
উত্তর – তীব্র তড়িবিশ্লেষ্য: গলিত NaOH, KCl -এর জলীয় দ্রবণ, ZnSO4 দ্রবণ।
মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য: H2CO3, CH3COOH, HCN, Al(OH)3 |
14. একটি মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য লবণের উদাহরণ দাও।
উত্তর – সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3) হল মৃদু তড়িবিশ্লেষ্য লবণের উদাহরণ।
15. একটি যৌগের উদাহরণ দাও যার জলীয় দ্রবণ মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য।
উত্তর – অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH) -এর জলীয় দ্রবণ মৃদু তড়িদবিশ্লেষ্য।
16. মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের বিশ্লেষণের মাত্রা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়?
উত্তর – মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণকে লঘু করলে (অর্থাৎ দ্রবণের গাঢ়ত্ব কমালে) ওদের বিয়োজন বা বিশ্লেষণের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়।
17. ভোল্টামিটার কাকে বলে?
উত্তর – তড়িদবিশ্লেষ্য রাখার পাত্র, তড়িদবিশ্লেষ্য ও তড়িদ্দ্বার মিলিয়ে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটিকে ভোল্টামিটার বলে।
18. তড়িদবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কী প্রকার তড়িৎপ্রবাহ ব্যবহার করা হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িবিশ্লেষণে কোন্ প্রকারের তড়িৎপ্রবাহ ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – তড়িদবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সমপ্রবাহী তড়িৎ (DC) ব্যবহার করা হয়।
19. তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থের জলীয় দ্রবণে পরিবর্তী প্রবাহ চালনা করা হলে তড়িবিশ্লেষণ হবে কি?
উত্তর – তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের জলীয় দ্রবণে পরিবর্তী প্রবাহ (AC) চালনা করা হলে তড়িদবিশ্লেষণ হবে না।
20. তড়িদবিশ্লেষণের সময় তড়িদবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ কীরূপ হয়?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণের সময় ব্যাটারি থেকে তড়িৎপ্রবাহ অ্যানোডের মাধ্যমে তড়িবিশ্লেষ্যে প্রবেশ করে এবং ক্যাথোডের মাধ্যমে আবার ব্যাটারিতে ফিরে আসে।
21. তড়িবিশ্লেষণের সময় কোন্ ইলেকট্রোডকে ক্যাথোড বলা হয় ?
উত্তর – তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত তড়িদ্বার বা ইলেকট্রোডটিকে ক্যাথোড বলে।
22. তড়িবিশ্লেষণের সময় কোন শক্তি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য দায়ী?
উত্তর – তড়ি বিশ্লেষণের সময় তড়িৎশক্তি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য দায়ী।
23. তড়িবিশ্লেষণের সময় ক্যাটায়নগুলি যে তড়িদ্বার অভিমুখে যাত্রা করে তাকে কী বলে?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণের সময় ক্যাটায়নগুলি যে তড়িদ্বার অভিমুখে যাত্রা করে তাকে ক্যাথোড বলে।
24. তড়িবিশ্লেষণের সময় অ্যানায়নগুলি যে তড়িদ্বার অভিমুখে যাত্রা করে তাকে কী বলে?
অনুরূপ প্রশ্ন, ‘অ্যানোড’ কী?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণের সময় অ্যানায়নগুলি যে তড়িদ্বার অভিমুখে যাত্রা করে তাকে অ্যানোড বলে।
25. ক্যাটায়নগুলি কোন্ তড়িদ্বার থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে?
উত্তর – ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোড থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে।
26. কোনো তড়িদবিশ্লেষ্যের জলীয় দ্রবণের তড়িদবিশ্লেষণের সময় দ্রবণে তড়িতের বাহক কারা?
উত্তর – কোনো তড়িবিশ্লেষ্যের জলীয় দ্রবণের তড়িবিশ্লেষণের সময় সংশ্লিষ্ট ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি দ্রবণে তড়িতের বাহক হয়।
27. তড়িবিশ্লেষণের সময় অ্যানোডে কী ধরনের বিক্রিয়া ঘটে?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণের সময় অ্যানোডে জারণ বিক্রিয়া ঘটে।
28. তড়িবিশ্লেষণের সময় ক্যাথোডে কী ধরনের বিক্রিয়া ঘটে?
উত্তর – তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় ক্যাথোডে বিজারণ বিক্রিয়া ঘটে।
29. তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজনের ফলে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের সংখ্যা কি সর্বদা সমান হয়?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের সংখ্যা সমান হতে পারে (যেমন— NaCl -এর ক্ষেত্রে) বা নাও হতে পারে (যেমন— Na2SO4 -এর ক্ষেত্রে)।
30. গাঢ় NaCl-এর জলীয় দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণে অ্যানোডে কোন্ পদার্থ উৎপন্ন হয়?
উত্তর – গাঢ় NaCl -এর জলীয় দ্রবণের তড়িদবিশ্লেষণে অ্যানোডে ক্লোরিন (Cl2) উৎপন্ন হয়।
31. Na+ + e → Na (ধাতু); বিক্রিয়াটি কোন্ তড়িদ্দ্বারে ঘটে?
উত্তর – Na+ + e → Na (ধাতু); বিজারণ বিক্রিয়াটি ক্যাথোড তড়িদ্দ্বারে ঘটে।
32. OH– ও Na+ আয়নের মধ্যে কোন্টি অ্যানোডে মুক্ত হবে?
উত্তর – OH– ও Na+ আয়নের মধ্যে OH– আয়নটি অ্যানোড তড়িদ্বারে মুক্ত হবে।
33. বিশুদ্ধ জল তড়িৎ পরিবহণ করে না কেন?
উত্তর – বিশুদ্ধ জলে H+ বা OH-–আয়নের পরিমাণ নগণ্য হওয়ায় এটি তড়িৎ পরিবহণ করে না।
34. প্ল্যাটিনাম ইলেকট্রোড ব্যবহার করে অম্লায়িত জলের তড়িদবিশ্লেষণে ক্যাথোড বিক্রিয়াটি লেখো।
উত্তর – ক্যাথোড বিক্রিয়া: H+ + e → H; H+H → H2
35. অম্লায়িত জলের তড়িদবিশ্লেষণে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসগুলির আয়তনের অনুপাত কত?
উত্তর – অম্লায়িত জলের তড়িদবিশ্লেষণে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসগুলির আয়তনের অনুপাত 2 : 1।
36. জলের তড়িবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসগুলিকে একসঙ্গে কী বলে?
উত্তর – জলের তড়িবিশ্লেষণের সময় ক্যাথোডে উৎপন্ন হাইড্রোজেন (H2) গ্যাস ও অ্যানোডে উৎপন্ন অক্সিজেন (O2) গ্যাসকে একসঙ্গে ‘ইলেকট্রোলাইটিক গ্যাস’ বলে।
37. জলের তড়িবিশ্লেষণে ক্যাথোড হিসেবে কোন্ ধাতু ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – জলের তড়িদ্বিশ্লেষণে ক্যাথোড হিসেবে প্ল্যাটিনাম (Pt) ধাতু ব্যবহার করা হয়।
38. বিশুদ্ধ জলে অল্প পরিমাণ সালফিউরিক অ্যাসিড যোগ করলে উৎপন্ন দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহিতা বিশুদ্ধ জলের থেকে বেশি হয় কেন?
উত্তর – বিশুদ্ধ জলে অল্প পরিমাণ সালফিউরিক অ্যাসিড যোগ করলে জলের বেশিরভাগ অণু বিয়োজিত হয়ে প্রচুর সংখ্যক H+ এবং OH– আয়ন উৎপন্ন করে, ফলে জলে আয়নের সংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় জলের তড়িৎ পরিবাহিতা বিশুদ্ধ জলের থেকে বেশি হয়।
39. জলের তড়িবিশ্লেষণের ফলে ক্যাথোডে উৎপন্ন গ্যাসের মধ্যে একটি জ্বলন্ত শিখাযুক্ত পাটকাঠি প্রবেশ করালে কী দেখা যাবে?
উত্তর – পাটকাঠিটি নিভে যাবে এবং গ্যাসটি নীল শিখায় জ্বলে উঠবে।
40. Cu -তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে CuSO4 দ্রবণের তড়িবিশ্লেষণ করলে অ্যানোডে কী পরিবর্তন দেখা যাবে?
উত্তর – Cu -তড়িদ্বারের সাহায্যে CuSO4 দ্রবণের তড়িবিশ্লেষণ করলে অ্যানোড থেকে Cu -পরমাণুগুলি Cu2+ আয়ন-রূপে দ্রবণে চলে আসবে এবং এর ফলে অ্যানোড ক্ষয়প্রাপ্ত হবে।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. NaCl ………. অবস্থায় তড়িতের কুপরিবাহী।
উত্তর – কঠিন
2. তড়িদবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি সাধারণত …….. যৌগ হয়।
উত্তর – আয়নীয়
3. সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত ……… হয়।
উত্তর – তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য
4. ………. একটি অধাতব পদার্থ যাকে তড়িদ্বার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উত্তর – গ্রাফাইট
5. তড়িৎকোশের যে তড়িদ্দ্বারটি ব্যাটারির পজিটিভ মেরুর সাথে যুক্ত থাকে তাকে ………. বলে।
উত্তর – অ্যানোড
6. তড়িৎকোশের যে তড়িদ্বারটি ব্যাটারির নেগেটিভ মেরুর সাথে যুক্ত থাকে তাকে বলে ………।
উত্তর – ক্যাথোড
7. তড়িৎপ্রবাহের ফলে বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্টের ভাস্বর হয়ে আলো বিকিরণ করা একটি ……… পরিবর্তন।
উত্তর – ভৌত
৪. জলীয় দ্রবণে তড়িদ্বিশ্লেষ্য-রূপে আচরণ করে এমন একটি সমযোজী পদার্থ হল ………।
উত্তর – HCl
9. ……… দ্রাবকে HCl গ্যাস তড়িৎ পরিবহণ করে না।
উত্তর – অধ্ৰুবীয় (জৈব)
10. ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণ করে ………।
উত্তর – মুক্ত ইলেকট্রন
11. ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের সময় ……… স্থানান্তর হয় না।
উত্তর – পরমাণুর
12. তড়িবিশ্লেষ্য দ্রবণের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের সময় ……… -গুলির স্থানান্তর ঘটে।
উত্তর – আয়ন
13. দ্রবীভূত বা গলিত তড়িবিশ্লেষ্যের ……… অণুগুলি তড়িতের বাহক নয়।
উত্তর – অবিয়োজিত
14. উয়তা বৃদ্ধির সাথে তড়িবিশ্লেষ্য দ্রবণের রোধ …….. পায় ও পরিবাহিতা …….. পায়।
উত্তর – হ্রাস, বৃদ্ধি
15. তড়িবিশ্লেষণের সময় তড়িবিশ্লেষ্য দ্রবণের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ ……… থেকে ……… -এর দিকে ঘটে।
উত্তর – ক্যাথোড, অ্যানোড
16. তড়িৎ পরিবহণকালে যে-কোনো মুহূর্তে তড়িবিশ্লেষ্যের ……… বজায় থাকে।
উত্তর – তড়িৎ-নিরপেক্ষতা
17. তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ জলীয় দ্রবণে ……… আয়নে বিয়োজিত হয়।
উত্তর – সম্পূর্ণরূপে
18. HCOOH হল ………. তড়িবিশ্লেষ্য।
উত্তর – মৃদু
19. মৃদু তড়িবিশ্লেষ্যের বিয়োজন বোঝানোর জন্য সর্বদা ………. তির চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – উভমুখী
20. মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের জলীয় দ্রবণে খুব কম সংখ্যক অণুই ………. অবস্থায় থাকে।
উত্তর – আয়নিত
21. গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে …….. বলে।
উত্তর – তড়িৎ-বিয়োজন
22. তড়িবিশ্লেষণ একটি ………. প্রক্রিয়া।
উত্তর – জারণ-বিজারণ
23. তড়িবিশ্লেষণের সময় ক্যাথোডে ……… বিক্রিয়া ঘটে।
উত্তর – বিজারণ
24. আয়নগুলি তড়িদ্বারে গিয়ে ………. মুক্ত হয়।
উত্তর – আধান
25. ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন ……… করে …….. হয়।
উত্তর – গ্রহণ, বিজারিত
26. অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে গিয়ে ইলেকট্রন ……… করে …….. হয়।
উত্তর – বর্জন, জারিত
27. ……… প্রবাহের তড়িৎ ব্যবহার করে তড়িদবিশ্লেষণ ঘটানো যায় না।
উত্তর – পরিবর্তী
28. গলিত NaCl -এর তড়িবিশ্লেষণে অ্যানোডে ……… উৎপন্ন হয়।
উত্তর – ক্লোরিন
29. Na+ জমা হয় ………।
উত্তর – ক্যাথোডে
30. ক্যাথোডে H+ এর আধানমুক্তির প্রবণতা Na+ অপেক্ষা ………।
উত্তর – বেশি
TOPIC – B তড়িদ বিশ্লেষণের প্রয়োগ
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
1. তড়িদবিশ্লেষণের ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – (1) তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক ধাতু, যেমন – Na, K, Ca, Mg, Al প্রভৃতি ধাতুর নিষ্কাশন প্রক্রিয়া তড়িবিশ্লেষণের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়। (2) কিছু কিছু ধাতু, যেমন— Cu, Ag, Al প্রভৃতির পরিশোধন প্রক্রিয়ায় তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। (3) হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, ক্লোরিন, সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড প্রভৃতির শিল্পোৎপাদনে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। (4) তড়িৎ-লেপন প্রক্রিয়াটি তড়িদ্বিশ্লেষণের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়।
2. ধাতু নিষ্কাশন কী? ধাতু নিষ্কাশনে তড়িবিশ্লেষণের প্রয়োগ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – কোনো ধাতুর আকরিক থেকে সংশ্লিষ্ট ধাতুটিকে পৃথক করার পদ্ধতিকে ধাতু নিষ্কাশন বলে। আকরিক মধ্যস্থ বিভিন্ন অশুদ্ধিগুলি দূর করে বিশুদ্ধ ধাতু পাওয়ার জন্য ধাতু নিষ্কাশন করা হয়।
Na, K, Ca, Al প্রভৃতি তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক সক্রিয় ধাতুগুলিকে তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয়। Na, K ও Ca ধাতুর ক্লোরাইড লবণকে এবং Al -এর অক্সাইড যৌগকে গলিত অবস্থায় নেওয়া হয়। এরপর উপযুক্ত তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে উক্ত যৌগগুলির তড়িদ্বিশ্লেষণ করা হলে সংশ্লিষ্ট ধাতুগুলি ক্যাথোডে জমা হয়।
3. তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে অ্যালুমিনা থেকে কীভাবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা হয় সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Al ধাতু নিষ্কাশনে নীচের তথ্যগুলি লেখো – (1) তড়িদবিশ্লেষ্য, (2) ক্যাথোড ও অ্যানোডের প্রকৃতি, (3) ক্যাথোড ও অ্যানোড বিক্রিয়া
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িবিশ্লেষণের সাহায্যে অ্যালুমিনিয়ামের নিষ্কাশনের জন্য যে গলিত মিশ্রণের তড়িদবিশ্লেষণ করা হয় তাতে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা ছাড়া আর কী কী থাকে? এই তড়িদবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে কী কী ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – তড়িদ্বিশ্লেষ্য: বিশুদ্ধ অ্যালুমিনাকে (Al2O3) গলিত ক্রায়োলাইট (Na3AlF6) ও ফ্লুওস্পার (CaF2) এর সঙ্গে মিশিয়ে তড়িদবিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তড়িদবিশ্লেষণ পাত্র ও তড়িদ্দ্বার: (1) আয়রনের তৈরি ট্যাংক তড়িবিশ্লেষণের পাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (2) ট্যাংকের ভেতরের দেয়ালে পুরু গ্যাসকার্বনের আস্তরণ থাকে যা ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। (3) ট্যাংকের ওপরের দিক থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাফাইটের দণ্ড তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্যে আংশিকভাবে নিমজ্জিত থাকে। এগুলি অ্যানোড রূপে ব্যবহৃত হয়।
পদ্ধতি: (1) প্রথমে অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক বক্সাইট (Al2O3 · 2H2O) থেকে অশুদ্ধিগুলি দূর করে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা (Al2O3) প্রস্তুত করা হয়। (2) তড়িবিশ্লেষণের ট্যাংকটিতে ভর হিসেবে 60% ক্রায়োলাইট (Na3AlF6), 20% অ্যালুমিনা (Al2O3) এবং 20% ফ্লুওস্পার (CaF2) -এর মিশ্রণ নেওয়া হয়। (3) বিশুদ্ধ Al2O3 -এর গলনাঙ্ক প্রায় 2000°C। কিন্তু ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার মেশানোর ফলে তড়িদবিশ্লেষ্য মিশ্রণটির গলনাঙ্ক হ্রাস পেয়ে 900°C হয়। অর্থাৎ 900°C-এ মিশ্রণটি গলিত অবস্থায় থাকে। (4) এই উন্নতায় গলিত তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করা হলে ক্যাথোডে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু গলিত অবস্থায় জমা হয় এবং অ্যানোডে অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।

4. তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশনের সময় বিশুদ্ধ অ্যালুমিনার সাথে ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার যোগ করা হয় কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যালুমিনার তড়িবিশ্লেষণে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশনের সময় ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার মেশানো হয় কেন?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Al ধাতু নিষ্কাশনের সময় বিশুদ্ধ অ্যালুমিনার সাথে ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার যোগ করা হয়। কারণ—
(1) বিশুদ্ধ Al2O3 এর গলনাঙ্ক প্রায় 2000°C। এই উচ্চ উয়তায় গলিত অ্যালুমিনার তড়িবিশ্লেষণে উৎপন্ন Al -এর বেশিরভাগই বাষ্পীভূত হয়ে নষ্ট হয় এবং এতে প্রচুর তড়িৎশক্তির ব্যয় হয়। অ্যালুমিনার সাথে ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার যোগ করায় মিশ্রণটির গলনাঙ্ক হয় প্রায় 900°C। এক্ষেত্রে মিশ্রণটি কম উন্নতায় বিগলিত হয় বলে তড়িৎশক্তির খরচ কম হয়।
(2) ফ্লুওস্পার গলিত মিশ্রণের সান্দ্রতা (viscosity) কমিয়ে দেয়। ফলে গলিত তড়িবিশ্লেষ্যের মধ্যে আয়নের চলাচল সহজ হয় অর্থাৎ মিশ্রণটির তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
5. CuSO4 -এর আম্লিক দ্রবণের তড়িদবিশ্লেষণে ক্যাথোডে Cu মুক্ত হয়। কিন্তু Al লবণের আগ্নিক দ্রবণের তড়িদবিশ্লেষণে ক্যাথোডে Al মুক্ত হয় না কেন?
উত্তর – CuSO4 -এর জলীয় দ্রবণে Cu2+ ও H+ আয়ন ক্যাটায়ন-রূপে উপস্থিত থাকে।

দ্রবণটির মধ্য দিয়ে তড়িৎ চালনা করলে H+ অপেক্ষা Cu2+ আয়নের ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা বেশি হয়। এরফলে Cu2+ আয়ন ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cu -পরমাণুরূপে মুক্ত হয়।
ক্যাথোড বিক্রিয়া: Cu2+ + 2e → Cu
অপরপক্ষে, অ্যালুমিনিয়াম লবণের আম্লিক দ্রবণে Al3+ ও H+ আয়ন ক্যাটায়ন-রূপে উপস্থিত থাকে। যেমন,

এই দ্রবণে তড়িৎ চালনা করলে Al3+ অপেক্ষা H+ আয়নের ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা বেশি হওয়ায় এক্ষেত্রে Al3+ -এর পরিবর্তে H+ আয়ন ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে প্রশম পরমাণুতে পরিণত হয়। 2টি করে H -পরমাণু যুক্ত হয়ে H2 অণু উৎপন্ন করে। তাই এক্ষেত্রে ক্যাথোডে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু মুক্ত হয় না।
ক্যাথোড বিক্রিয়া: H+ + e → H ; H + H → H2 ↑
6. ধাতুর তড়িৎ-পরিশোধন বলতে কী বোঝ? তড়িৎ-পরিশোধনের মূল নীতিটি লেখো।
উত্তর – তড়িৎ-পরিশোধন: সাধারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত ধাতুতে বিভিন্ন ধরনের অশুদ্ধি থাকে। তড়িবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে সেই অশুদ্ধিগুলি দূর করে বিশুদ্ধ ধাতু প্রস্তুত করার পদ্ধতিকে তড়িৎ-বিশোধন বা তড়িৎ-পরিশোধন বলা হয়।
তড়িৎ-পরিশোধনের মূল নীতি: তড়িৎ-পরিশোধন পদ্ধতিতে অবিশুদ্ধ ধাতুর মোটা পাত বা দণ্ডকে অ্যানোড-রূপে, ওই ধাতুরই বিশুদ্ধ পাত বা দণ্ডকে ক্যাথোড-রূপে এবং ধাতুটির কোনো লবণের জলীয় দ্রবণ তড়িদ্বিশ্লেষ্য-রূপে ব্যবহার করে তড়িদবিশ্লেষণ সম্পন্ন করা হয়। তড়িদ্বিশ্লেষণের ফলে অ্যানোড থেকে ধাতব পরমাণুগুলি আয়ন-রূপে দ্রবণে আসে। এই আয়নগুলি ক্যাথোডে এসে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতব পরমাণুতে পরিণত হয় এবং বিশুদ্ধ ধাতু-রূপে ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়।
7. তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার ধাতুর বিশোধন পদ্ধতি সংক্ষেপে বিবৃত করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, অবিশুদ্ধ তামা থেকে বিশুদ্ধ তামা পেতে তড়িদবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অ্যানোড ও ক্যাথোড হিসেবে কী ব্যবহার করবে? এক্ষেত্রে অ্যানোড ও ক্যাথোড তড়িচ্ছ্বারের বিক্রিয়াগুলি লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, কপারের তড়িৎ-বিশোধনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উল্লেখ করো — (i) ব্যবহৃত তড়িদ্বার ও তড়িদ্বিশ্লেষ্য, (ii) তড়িচ্ছ্বারে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়া।
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার ধাতুর বিশোধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়গুলি নিম্নরূপ—
তড়িদ্বিশ্লেষ্য: লঘু H2SO4 মিশ্রিত CuSO4 দ্রবণ।
তড়িদ্দ্বার: (1) ক্যাথোড: বিশুদ্ধ কপারের পাতলা পাত বা দণ্ড, (2) অ্যানোড: অবিশুদ্ধ কপারের মোটা পাত বা দণ্ড।
পদ্ধতি: লেডের আস্তরণযুক্ত তড়িবিশ্লেষণ পাত্রে লঘু H2SO4 -মিশ্রিত CuSO4 দ্রবণ নিয়ে তড়িৎ চালনা করলে অ্যানোড থেকে Cu -পরমাণুগুলি ইলেকট্রন বর্জন করে Cu2+ আয়ন-রূপে দ্রবণে আসে। উৎপন্ন Cu2+ আয়নগুলি ক্যাথোডে (বিশুদ্ধ Cu -পাত) এসে ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cu -পরমাণুতে পরিণত হয় এবং বিশুদ্ধ ধাতু-রূপে ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়। এর ফলে অ্যানোড ক্রমশ ক্ষয় পেতে থাকে এবং ক্যাথোড পুরু হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় ক্যাথোডে সঞ্চিত কপার ধাতু প্রায় 99.9% বিশুদ্ধ হয়।

8. অ্যানোড মাড কী? এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – কপারের তড়িৎ-পরিশোধনের সময় অবিশুদ্ধ কপারের সঙ্গে মিশে থাকা কিছু মূল্যবান ধাতু (Au, Ag, Pt) অ্যানোডের নীচে কাদার আকারে জমা হয়। একে অ্যানোড মাড বা অ্যানোড কাদা বলে। অ্যানোডের নীচে রাখা একটি মসলিন কাপড়ের থলিতে অ্যানোড মাডকে সংগ্রহ করা হয় [চিত্র]।

অ্যানোড মাড থেকে গোল্ড, সিলভার, প্ল্যাটিনাম প্রভৃতি মূল্যবান ধাতুগুলি পাওয়া যায়।
9. তড়িৎ-লেপন কী? লোহাকে মরচে পড়া থেকে রক্ষা করতে এর ওপর কোন্ কোন্ ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে অধিকতর সক্রিয় কোনো ধাতু বা ধাতু সংকরের (লোহা, তামা, পিতল প্রভৃতি) তৈরি বস্তুর ওপর তুলনামূলক কম সক্রিয় ধাতুর (সিলভার, গোল্ড, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি) প্রলেপ দেওয়ার পদ্ধতিকে তড়িৎ-লেপন বলে।
লোহাকে মরচে পড়া থেকে রক্ষা করতে এর ওপর জিংক, নিকেল বা ক্রোমিয়াম ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়।
10. তড়িৎ-লেপনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো।
উত্তর –
- বেশি সক্রিয় কোনো ধাতু বা ধাতু-সংকরের তৈরি বস্তুকে জলীয় বাষ্প, অক্সিজেন ইত্যাদির আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য তড়িৎ-লেপনের দ্বারা তার ওপর কম সক্রিয় কোনো ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। যেমন—মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য লোহার বস্তুর ওপর নিকেল, টিন বা ক্রোমিয়াম প্রভৃতি ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। ফলে বস্তুগুলি আকর্ষণীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- ধাতু বা ধাতু-সংকরের তৈরি বিভিন্ন বস্তুর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার জন্যও তড়িৎ-লেপন করা হয়। যেমন—রুপোর তৈরি গয়নার ওপর সোনার প্রলেপ দিয়ে গয়নার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়।
- অনেকক্ষেত্রে ধাতু বা ধাতু-নির্মিত বস্তুর পৃষ্ঠতলকে অধিক দৃঢ় ও ঘর্ষণজনিত ক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্যও তড়িৎ-লেপন করা হয়। যেমন—অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কোনো বস্তুকে দৃঢ় ও ক্ষয়রোধী করার জন্য তড়িৎ-লেপন পদ্ধতিতে বস্তুটির অ্যানোডাইজিং করা হয়।
11. তড়িৎ-লেপনের সময় কোন কোন বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?
উত্তর – তড়িৎ-লেপনের সময় কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন। যেমন—
- তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণে ধাতব আয়নের পরিমাণ যেন বেশি থাকে।
- উক্ত দ্রবণের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বেশি হওয়া দরকার, যদি পরিবহণ ক্ষমতা কম হয় তবে উচ্চ পরিবহণ ক্ষমতাবিশিষ্ট ধাতব লবণ যোগ করতে হয়।
- ধাতব লবণের (তড়িবিশ্লেষ্য) দ্রবণটি যেন স্থায়ী হয় ও বাতাসের সংস্পর্শে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া না করে।
- দ্রবণে অ্যানোডের দ্রবীভূত হওয়ার হার এমন হওয়া উচিত, যাতে দ্রবণে ধাতব আয়নের গাঢ়ত্ব সর্বদা স্থির থাকে।
- তড়িৎ লেগনের সময় সমপ্রবাহী তড়িৎ চালনা করা উচিত। কারণ-তড়িৎ-লেখনের সময় পরিবর্তী প্রবাহ চালনা করা হলে ক্যাথোড এবং অ্যানোড ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। এর ফলে আয়নগুলি কোনো নির্দিষ্ট তড়িদ্বার অভিমুখে সচল থাকতে পারে না।
- তড়িৎ-লেপনের সময় কম মাত্রার তড়িৎপ্রবাহ বেশিক্ষণ ধরে চালনা করা হয়, কারণ এর ফলে তড়িদবিশ্লেষ্য দ্রবণ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে না। তড়িৎপ্রবাহ বেশিক্ষণ ধরে চালনা করলে বস্তুতে সুষম প্রলেপ পড়ে।
- যে ধাতুর ওপর প্রলেপ দেওয়া হবে তার পৃষ্ঠতল মসৃণ ও পরিষ্কার হওয়া দরকার।
12. (i) তড়িৎ-লেপনের নীতি ও প্রক্রিয়াটি উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িৎ-লেপন প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে লেখো।
(ii) সিলভার-নির্মিত বস্তুর ওপর সোনার প্রলেপ দিতে হলে অ্যানোড, ক্যাথোড ও তড়িদবিশ্লেষ্য হিসেবে কী কী ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – (i) তড়িৎ-লেপনের নীতি ও প্রক্রিয়াটি হল- (1) যে বস্তুর ওপর তড়িৎ-লেপন করা হবে, তাকে পরপর লঘু ক্ষার, অ্যাসিড দ্রবণ ও পাতিত জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়। (2) ভোল্টামিটারে ওই বস্তুটিকে ক্যাথোড এবং যে ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হবে সেই ধাতুর একটি বিশুদ্ধ পাত বা দণ্ডকে অ্যানোড-রূপে ব্যবহার করা হয়। (3) যে ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হবে সেই ধাতুর একটি দ্রাব্য লবণের দ্রবণ তড়িদবিশ্লেষ্য-রূপে ব্যবহার করা হয়। (4) দ্রবণের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে অ্যানোডে ব্যবহৃত পাত বা দণ্ডটির ক্ষয় হতে থাকে এবং ক্যাথোড রূপে ব্যবহৃত বস্তুটির ওপর ধাতব প্রলেপ পড়তে থাকে। (5) সবশেষে বস্তুটিকে ভোল্টামিটার থেকে বের করে জল দিয়ে ধুয়ে শুষ্ক করে নেওয়া হয়।

(ii) সিলভার-নির্মিত বস্তুর ওপর সোনার প্রলেপ দিতে অ্যানোড-রূপে বিশুদ্ধ সোনার পাত, ক্যাথোড-রূপে সিলভার-নির্মিত বস্তু ও তড়িদবিশ্লেষ্য-রূপে পটাশিয়াম অরোসায়ানাইড
(K[Au(CN)2]) দ্রবণ ব্যবহৃত হয়।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. তড়িবিশ্লেষণের ব্যাবহারিক প্রয়োগ হল —
(a) তড়িৎ-লেপন
(b) তড়িৎ-বিশোধন
(c) ধাতু নিষ্কাশন
(d) এগুলির সবকটিই
উত্তর – (d) এগুলির সবকটিই
2. কোন্ ধাতুটিকে তার গলিত অক্সাইডের তড়িবিশ্লেষণের মাধ্যমে নিষ্কাশন করা হয়?
(a) আয়রন
(b) অ্যালুমিনিয়াম
(c) কপার
(d) সিলভার
উত্তর – (b) অ্যালুমিনিয়াম
3. নীচের কোন্টি নিকেল দ্বারা তড়িৎ-লেপনের সময় তড়িবিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়?
(a) NiBr2 দ্রবণ
(b) বোরিক অ্যাসিড-মিশ্রিত NiSO4 এর দ্রবণ
(c) গলিত নিকেল অক্সাইড (NiO)
(d) NiI দ্রবণ
উত্তর – (b) বোরিক অ্যাসিড-মিশ্রিত NiSO4 এর দ্রবণ
4. তড়িৎ-লেপনের উদ্দেশ্য হল—
(a) ধাতব বস্তুকে আবহাওয়াজনিত ক্ষয় থেকে রক্ষা করা
(b) ধাতব বস্তুর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা
(c) ধাতব বস্তুর ওজন বৃদ্ধি করা
(d) a ও b উভয়ই
উত্তর – (d) a ও b উভয়ই
5. কোনো বস্তুর উপর রুপোর প্রলেপ দিতে হলে বিশুদ্ধ রুপোর পাত ব্যবহৃত হয় —
(a) ক্যাথোড-রূপে
(b) অ্যানোড-রূপে
(c) ক্যাথোড বা অ্যানোড-রূপে
(d) তড়িবিশ্লেষ্য-রূপে
উত্তর – (b) অ্যানোড-রূপে
6. তড়িৎ-লেপনের সময় ব্যবহৃত তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহিতা—
(a) বেশি হওয়া উচিত
(b) কম হওয়া উচিত
(c) মধ্যম মানের হওয়া উচিত
(d) বেশি বা কম যে-কোনো কিছুই হতে পারে।
উত্তর – (a) বেশি হওয়া উচিত
7. তড়িৎ-লেপনের সময়—
(a) ক্যাথোড ক্ষয়প্রাপ্ত হয়
(b) অ্যানোড ক্ষয়প্রাপ্ত হয়
(c) ক্যাথোড বা অ্যানোডের ক্ষয় হয় না
(d) ক্যাথোড ও অ্যানোড উভয়ই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়
উত্তর – (b) অ্যানোড ক্ষয়প্রাপ্ত হয়
৪. নীচের কোন্টি তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Cu ধাতুর পরিশোধনের সময় তড়িবিশ্লেষ্য-রূপে নেওয়া হয়?
(a) বিশুদ্ধ গলিত CuSO4
(b) বিশুদ্ধ CuSO4 -এর জলীয় দ্রবণ
(c) H2SO4 -মিশ্রিত CuSO4 -এর জলীয় দ্রবণ
(a) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) H2SO4 -মিশ্রিত CuSO4 -এর জলীয় দ্রবণ
9. লোহার দ্রব্যে কপারের তড়িৎ-লেপন করতে ক্যাথোড রূপে ব্যবহৃত হয়—
(a) লোহার দ্রব্য
(b) কপার পাত
(a) কার্বন দ্রব্য
(d) নিকেল দ্রব্য
উত্তর – (a) লোহার দ্রব্য
10. কোনো বস্তুর ওপর সোনার প্রলেপ (গোল্ড প্লেটিং) দিতে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়—
(a) বিশুদ্ধ সোনার পাত
(b) যে বস্তুর উপর তড়িৎ-লেপন করতে হবে সেই বস্তু
(c) প্ল্যাটিনাম পাত
(d) তামার পাত
উত্তর – (b) যে বস্তুর উপর তড়িৎ-লেপন করতে হবে সেই বস্তু
11. কপারের তড়িৎ-বিশোধনে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়—
(a) কপার
(b) গ্রাফাইট
(c) প্ল্যাটিনাম
(d) স্টিল
উত্তর – (a) কপার
12. তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে গলিত অ্যালুমিনা থেকে Al ধাতু নিষ্কাশনের সময় অ্যানোড-রূপে ব্যবহার করা হয়—
(a) অ্যালুমিনিয়াম দণ্ড
(b) লোহার দণ্ড
(c) গ্রাফাইট দণ্ড
(d) কপার দণ্ড
উত্তর – (c) গ্রাফাইট দণ্ড
13. কোনো বস্তুর ওপর রুপোর প্রলেপ (সিলভার প্লেটিং) দিতে হলে তড়িবিশ্লেষ্য-রূপে নেওয়া হয় —
(a) পটাশিয়াম আর্জেন্টোসায়ানাইড
(b) পটাশিয়াম সায়ানাইড
(c) পটাশিয়াম ক্লোরাইড
(d) পটাশিয়াম অরোসায়ানাইড
উত্তর – (a) পটাশিয়াম আর্জেন্টোসায়ানাইড
14. রুপোর চামচে সোনার প্রলেপ দেওয়ার জন্য অ্যানোড-রূপে ব্যবহৃত হয়—
(a) Pt
(b) Ag
(c) Au
(d) গ্রাফাইট
উত্তর – (c) Au
15. তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Al নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত তড়িদদ্বিশ্লেষ্যটি হল—
(a) AlF3
(b) AlCl3
(c) Al2(SO4)3
(d) Al2O3 + Na3AlF6 + CaF2
উত্তর – (d) Al2O3 + Na3AlF6 + CaF2
16. কপারের তড়িৎ-বিশোধনের সময় অ্যানোডে সংঘটিত বিক্রিয়াটি হল—
(a) Cu → Cu2+ + 2e
(b) H+ + e → H
(c) Cu2+ + 2e → Cu
(d) OH– → OH + e
উত্তর – (a) Cu → Cu2+ + 2e
17. অ্যানোড মাডে নীচের কোন্ ধাতুটি পাওয়া যায়?
(a) Au
(b) Mg
(c) Al
(d) Na
উত্তর – (a) Au
18. নীচের কোন্ ধাতু তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় না?
(a) Na
(b) Zn
(c) Al
(d) K
উত্তর – (b) Zn
19. প্রদত্ত কোন্ ধাতুটির ওপর অ্যানোডাইজিং করা হয়?
(a) লোহা
(b) অ্যালুমিনিয়াম
(c) কপার
(d) জিংক
উত্তর – (b) অ্যালুমিনিয়াম
20. লোহার ওপর নিকেলের প্রলেপ দেওয়ার জন্য অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয় –
(a) লোহা
(b) নিকেল সালফেট
(c) নিকেল
(d) NiSO4 + H2SO4
উত্তর – (c) নিকেল
একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও
1. তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয় এমন একটি ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয় এমন একটি ধাতুর নাম অ্যালুমিনিয়াম।
2. অ্যালুমিনা থেকে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনের জন্য ক্যাথোড ও অ্যানোডহিসেবে কী কী ব্যবহার করা হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যালুমিনার তড়িবিশ্লেষণে তড়িদ্দ্বার-রূপে কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – অ্যালুমিনা থেকে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনের জন্য গ্রাফাইট অ্যানোড ও গ্যাসকার্বন-নির্মিত ক্যাথোড ব্যবহার করা হয়।
3. অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনে ব্যবহৃত ক্রায়োলাইট, ফ্লুওস্পার ও অ্যালুমিনার মিশ্রণের গলনাঙ্ক কত?
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনে ব্যবহৃত ক্রায়োলাইট, ফ্লুওস্পার ও অ্যালুমিনার মিশ্রণের গলনাঙ্ক প্রায় 900°C।
4. অ্যালুমিনা থেকে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনের সময় ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী পাওয়া যায় ?
উত্তর – অ্যালুমিনা থেকে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনের সময় ক্যাথোডে অ্যালুমিনিয়াম (Al) ধাতু এবং অ্যানোডে অক্সিজেন (O2) গ্যাস পাওয়া যায়।
5. অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কত সংখ্যক ইলেকট্রনের আদানপ্রদান হয়?
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে 6 টি ইলেকট্রনের আদানপ্রদান হয় (ক্যাথোড: 2Al3+ + 6e → 2Al; অ্যানোড: 3O2– → 3O + 6e)|
6. অ্যালুমিনিয়াম ছাড়া অন্য কোন্ ধাতুকে তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায়?
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম ছাড়া তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় এমন আরেকটি ধাতু হল সোডিয়াম।
7. তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার ধাতুর পরিশোধনে অবিশুদ্ধ কপার দণ্ড কোন্ ইলেকট্রোড-রূপে ব্যবহার করা হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার বিশোধনে অ্যানোড-রূপে কী ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার বিশোধনে অবিশুদ্ধ কপার ধাতুর মোটা দণ্ড অ্যানোড-রূপে ব্যবহৃত হয়।
৪. তড়িৎ-পরিশোধন পদ্ধতিতে কত শতাংশ বিশুদ্ধ কপার ধাতু পাওয়া যায়?
উত্তর – তড়িৎ-পরিশোধন পদ্ধতিতে 99.9% পর্যন্ত বিশুদ্ধ কপার (Cu) ধাতু পাওয়া যায়।
9. অ্যানোড মাড-এ উপস্থিত একটি মৌলের নাম লেখো।
উত্তর – অ্যানোড মাড-এ উপস্থিত একটি মৌল হল সোনা (Au)।
10. কোনো ধাতুর ওপর সোনার প্রলেপ (গোল্ড প্লেটিং) দেওয়ার সময় অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?
উত্তর – কোনো ধাতুর ওপর গোল্ড প্লেটিং-এর সময় অ্যানোডে সংঘটিত • বিক্রিয়াটি হল— Au → Aut+ + e
11. রুপোর উপর সোনার প্রলেপ দিতে হলে তড়িবিশ্লেষ্য-রূপে কী ব্যবহার করা হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, পিতলের ওপর সোনার তড়িৎ-লেপন করতে তড়িবিশ্লেষ্য হিসেবে কী ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষ্য হিসেবে পটাশিয়াম অরোসায়ানাইড (K[Au(CN)2]) -এর জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
12. কোনো ধাতব পদার্থে সিলভার বা রুপোর প্রলেপ দিতে হলে তড়িবিশ্লেষ্য হিসেবে কী ব্যবহার করবে?
উত্তর – কোনো ধাতব পদার্থে সিলভার বা রুপোর প্রলেপ দিতে তড়িদ্বিশ্লেষ্য-রূপে পটাশিয়াম আর্জেন্টোসায়ানাইড (K[Ag(CN)2]) -এর জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
13. তামার চামচের ওপর রুপোর তড়িৎ-লেখন করতে ক্যাথোড হিসেবে কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – তামার চামচের ওপর রুপোর তড়িৎ-লেপন করতে ক্যাথোড হিসেবে তামার চামচ ব্যবহার করা হয়।
14. কপারের তড়িৎ-লেপনে কোন্ তড়িদ্বিশ্লেষ্য ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – কপারের তড়িৎ-লেপনে সামান্য সালফিউরিক অ্যাসিড মিশ্রিত কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণকে তড়িদবিশ্লেষ্য রূপে ব্যবহার করা হয়।
15. তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে একটি লোহার চামচের উপর নিকেলের প্রলেপ দিতে হলে তড়িদবিশ্লেষ্য রূপে কী ব্যবহার করবে?
উত্তর – তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে একটি লোহার চামচের উপর নিকেলের প্রলেপ দিতে হলে তড়িদবিশ্লেষ্য রূপে সামান্য বোরিক অ্যাসিড-মিশ্রিত নিকেল সালফেটের (NiSO4) দ্রবণ ব্যবহার করতে হবে।
16. লোহার ওপর ক্রোমিয়ামের প্রলেপ দিতে হলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ হিসেবে কী ব্যবহার করবে?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ হিসেবে ক্রোমিক অ্যাসিড (H2CrO4) মিশ্রিত ক্রোমিক সালফেট [Cr2(SO4)3] -এর দ্রবণ ব্যবহৃত হয়।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুগুলিকে তাদের যৌগ থেকে ……… পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয়।
উত্তর – তড়িদবিশ্লেষণ
2. তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশনের সময় ……… তড়িদ্দ্বারে ধাতু জমা হয়।
উত্তর – ক্যাথোড
3. অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনে তড়িবিশ্লেষ্যের গলনাঙ্ক কমাতে অ্যালুমিনার সঙ্গে মেশানো হয় ………. ও ……….।
উত্তর – ক্রায়োলাইট, ফ্লুওস্পার
4. অ্যালুমিনা থেকে Al ধাতু নিষ্কাশনে ব্যবহৃত তড়িবিশ্লেষ্য ………. উন্নতায় বিগলিত হয়।
উত্তর – 900°C
5. তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশনে ক্যাথোড ও অ্যানোড রূপে ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে ………. ও ……….।
উত্তর – গ্যাসকার্বন, গ্রাফাইট
6. তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ……….. ধাতু পরিশোধন করা যায়।
উত্তর – Cu
7. কপারের তড়িৎ-পরিশোধনে অ্যানোডের ভর ক্রমশ ……… পায়।
উত্তর – হ্রাস
8. তড়িৎ-লেপন প্রক্রিয়ায় ………. সক্রিয় ধাতুর ওপর ……… সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়।
উত্তর – বেশি, কম
9. ধাতুর ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে ………… করা হয়।
উত্তর – তড়িৎ-লেপন
10. তড়িৎ-লেপনের সময় যে ধাতব বস্তুটির ওপর প্রলেপ দেওয়া হবে সেই ধাতব বস্তুটিকে ………. -রূপে ব্যবহার করা হয়।
উত্তর – ক্যাথোড
11. তড়িৎ-লেপনের সময় যে ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হবে সেই ধাতুর পাতকে ……… -রূপে ব্যবহার করা হয়।
উত্তর – অ্যানোড
12. তড়িৎ-লেপনের সময় ……… সমপ্রবাহ ………. সময় ধরে চালনা করা উচিত।
উত্তর – অল্পমাত্রার, বেশি
13. তড়িৎ-লেপনের সময় তড়িবিশ্লেষ্য দ্রবণের গাঢ়ত্ব ………. থাকে।
উত্তর – অপরিবর্তিত
14. সিলভার প্লেটিং-এর সময় অ্যানোডে ব্যবহৃত হয় বিশুদ্ধ ……… -এর দণ্ড।
উত্তর – সিলভার