wb 10th science

WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter 8.2 আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন

WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter 8.2 আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন

West Bengal Board 10th Class Science Solutions Physics Chapter 8.2 আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন

West Bengal Board 10th Physics Solutions

TOPIC – A যোজ্যতার ইলেকট্রনীয় তত্ত্ব, আয়নীয় বন্ধন ও আয়নীয় যৌগসমূহের ধর্ম

বিষয়সংক্ষেপ

রাসায়নিক বন্ধন: একই বা পৃথক মৌলের দুই বা তার বেশি সংখ্যক পরমাণু, কোনো অণু (মৌলিক বা যৌগিক) বা আয়নীয় জোটে যে আকর্ষণী বলের দ্বারা একটি স্বাধীন সত্তাবিশিষ্ট একক-রূপে জোটবদ্ধ হয়ে অবস্থান করে, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
  • রাসায়নিক বন্ধন মূলত তিনপ্রকার, যথা—(i) আয়নীয় বন্ধন, (ii) সমযোজী বন্ধন ও (iii) অসমযোজী বন্ধন। এ ছাড়াও আরও বেশ কয়েক প্রকার রাসায়নিক বন্ধনের কথা জানা যায়, যাদের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন ও ধাতব বন্ধন উল্লেখযোগ্য।
দ্বৈত সূত্র: হিলিয়ামের নিকটবর্তী মৌলগুলি (বিশেষত H, Li, Be) রাসায়নিকভাবে সুস্থিতি লাভের জন্য ওদের সর্ববহিস্থ কক্ষে 2 টি ইলেকট্রন অর্জনের প্রবণতা দেখায়। এই সূত্রটিকে দ্বৈত সূত্র (rule of duplet) বলে।
অষ্টক সূত্র: মৌলের পরমাণুর (H, Li, Be ইত্যাদি ছাড়া) যোজ্যতা-কক্ষ বা সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা ৪ হলে পরমাণুটি রাসয়নিকভাবে সুস্থিত হয় এবং বলা হয় যে পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে ইলেকট্রন অষ্টক পূর্ণ হয়েছে। এটিই অষ্টক সূত্র (octet rule) নামে পরিচিত।
  • অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রম: অষ্টক সূত্র লঙ্ঘিত হয়েছে এরুপ কয়েকটি যৌগ হল— BeCl2 (কেন্দ্রীয় পরমাণু Be-এর সর্ববহিস্থ কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 4), AlCl3 (কেন্দ্রীয় পরমাণু Al-এর সর্ববহিস্থ কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 6), PCl5 (কেন্দ্রীয় পরমাণু P-এর সর্ববহিস্থ কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 10)।
  • তড়িৎযোজ্যতা বা আয়নীয় যোজ্যতা: তড়িৎ ধনাত্মক ধাতব মৌলের পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে ক্যাটায়নে ও তড়িৎ ঋণাত্মক বা অধাতব মৌলের পরমাণু সেই বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত য়। বিপরীত তড়িগ্রস্ত আয়ন দুটির স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণের মাধ্যমে মিলিত হয়ে যৌগ গঠন করার ক্ষমতাকে তড়িৎযোজ্যতা বা আয়নীয় যোজ্যতা বলে।
  • তড়িৎযোজী বন্ধন ও তড়িৎযোজী যৌগ: তড়িৎযোজ্যতার ফলে দুটি পরমাণুর মধ্যে যে বন্ধনের সৃষ্টি হয় তাকে তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধন বলে। যেসব যৌগ তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয় তাদের তড়িৎযোজী বা আয়নীয় যৌগ বলে।
  • যোজন কক্ষ: বন্ধন গঠনকালে মৌলের পরমাণুর বহিস্তম কক্ষের ইলেকট্রনগুলি অংশগ্রহণ করায় ওই কক্ষকে যোজন কক্ষ বলে।
  • আয়নীয় যৌগের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য: (i) আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি হয়। (ii) আয়নীয় যৌগগুলি সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন—জল) দ্রাব্য কিন্তু অধুবীয় দ্রাবকে (যেমন—কেরোসিন, পেট্রোল) অদ্রাব্য। (iii) দ্রবণে আয়নীয় যৌগগুলির বিক্রিয়া দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়। (iv) আয়নীয় যৌগগুলি সমাবয়বতা ধর্ম প্রদর্শন করে না। (v) আয়নীয় যৌগগুলি কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না কিন্তু গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে।
  • আয়নীয় যৌগে অসংখ্য ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন পরস্পর স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বলের প্রভাবে যুক্ত হয়ে কেলাস গঠন করে। তাই আয়নীয় যৌগের কেলাসে স্বতন্ত্র অণুর অস্তিত্ব নেই। এ কারণে আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে আণবিক ভরের পরিবর্তে ‘সংকেত’ ভর কথাটি ব্যবহৃত হয়।
  • ইলেকট্রন ডট চিত্রের সাহায্যে আয়নীয় যৌগ গঠনের উদাহরণ:
    (i) সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) যৌগ গঠন :
    (ii) ক্যালশিয়াম অক্সাইড (CaO) যৌগ গঠন:
    (iii) ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) যৌগ গঠন:
    (iv) লিথিয়াম হাইড্রাইড (LiH) যৌগ গঠন:
    (i), (ii), ও (iii)-এর ক্ষেত্রে অষ্টক সূত্র মেনে তড়িৎযোজী যৌগ গঠিত হয়েছে এবং (iv)-এর ক্ষেত্রে দ্বৈত সূত্র মেনে তড়িৎযোজী যৌগ গঠিত হয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

TOPIC – A যোজ্যতার ইলেকট্রনীয় তত্ত্ব, আয়নীয় বন্ধন ও আয়নীয় যৌগসমূহের ধর্ম

সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

1. নিষ্ক্রিয় গ্যাসের আবিষ্কার থেকে কীভাবে রাসায়নিক বন্ধনের ধারণা তৈরি হয়?
উত্তর – 1894 সালে বিজ্ঞানী লর্ড র‍্যালে আর্গন গ্যাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। 1868 সালে হিলিয়াম গ্যাসের অস্তিত্ব প্রথম জানা যায় এবং 1895 সালে বিজ্ঞানী উইলিয়াম র‍্যামজে খনিজ পদার্থ ক্লেভাইটকে উত্তপ্ত করে হিলিয়াম গ্যাস সংগ্রহ করেন। এরপরে 1898 সালে তিনি তরল বায়ুর আংশিক পাতন দ্বারা বিভিন্ন উপাদানগুলির পৃথক্করণের সময় ক্রিপটন, নিয়ন ও জেনন আবিষ্কার করেন। এই নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির আবিষ্কারের পর থেকে তাদের রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তার কারণ অনুসন্ধান করা শুরু হয় এবং পরমাণুর ইলেকট্রন-বিন্যাসের সঙ্গে এদের রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তার সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চলতে থাকে। নোব্‌ল্ গ্যাসগুলি রাসায়নিকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় হওয়ায় বলা যায় যে এদের পরমাণুর ইলেকট্রন-বিন্যাস (যোজ্যতা-কক্ষে ৪ টি ইলেকট্রন, ব্যতিক্রম: যোজ্যতা-কক্ষে 2টি ইলেকট্রনযুক্ত He) খুব সুস্থিত। সুতরাং, নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করার জন্যই এক বা বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলি রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়।
প্রশ্ন
2. দ্বৈত-সূত্র কী?
উত্তর – যেসব মৌলের (H, Li ও Be) পারমাণবিক সংখ্যা হিলিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যার কাছাকাছি, সেইসব মৌল রাসায়নিক সুস্থিতির জন্য তাদের পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রন গ্রহণ বা যোজ্যতা-কক্ষ থেকে ইলেকট্রন বর্জন বা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে যোজ্যতা কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা 2 করার প্রবণতা দেখায় – একেই দ্বৈত-সূত্র বলে।
3. অষ্টক সূত্র কাকে বলে?
উত্তর – রাসায়নিকভাবে সুস্থিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন মৌল (H, Li ও Be ছাড়া) চাদের যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রন গ্রহণ বা যোজ্যতা-কক্ষ থেকে ইলেকট্রন বর্জন অথবা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে যোজ্যতা কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা ৪ করার প্রবণতা দেখায়—একেই অষ্টক সূত্র বলে।
4. Na-পরমাণু ও Na+ আয়নের মধ্যে কোন্‌টি বেশি সুস্থিত এবং কেন?
উত্তর – অষ্টক সূত্র অনুসারে, পরমাণু বা আয়নের বহিস্তম কক্ষে ৪টি ইলেকট্রন থাকলে সেটি বেশি সুস্থিত হয়। Na-পরমাণুর ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 8, 1। Na – পরমাণুর বহিস্তম কক্ষ থেকে 1 টি ইলেকট্রন বর্জনের মাধ্যমে যখন Na+ আয়ন গঠিত হয় তখন তার ইলেকট্রন-বিন্যাস হয়: 2, 8| Na+ আয়নের বহিস্তম কক্ষে ৪ টি ইলেকট্রন থাকায় অর্থাৎ, এর অষ্টক পূর্তি ঘটায় Na ও Na+ -এর মধ্যে Na+ বেশি সুস্থিত হয়।
5. রাসায়নিক বন্ধন কাকে বলে?
উত্তর – যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রন গ্রহণ অথবা যোজ্যতা কক্ষ থেকে ইলেকট্রন বর্জন অথবা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পরমাণুগুলি তাদের সর্ববহিস্থ কক্ষে নিকটতম নিষ্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। এর ফলে ওই পরমাণুগুলির মধ্যে যে আকর্ষণ বলের সৃষ্টি হয় তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
6. কোসেল আয়নীয় বন্ধন গঠন কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?
উত্তর – বিজ্ঞানী কোসেল (1916) আয়নীয় যৌগে পরমাণুগুলির মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন গঠন সম্পর্কিত যে ধারণা দেন তা হল— (1) দুটি ভিন্ন মৌলের রাসায়নিক মিলনের সময় একটি তড়িৎ ধনাত্মক মৌলের পরমাণু ওর সর্ববহিস্থ কক্ষ থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন বর্জন করে ও অন্য তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌলের পরমাণু ওই বর্জিত ইলেকট্রন ওর নিজের সর্ববহিস্থ কক্ষে গ্রহণ করে। (2) এইভাবে দুটি পরমাণুই ওর নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাস অর্জন করে অর্থাৎ উভয় পরমাণুর বহিস্তম কক্ষে ইলেকট্রন-সংখ্যা ৪ হয় (কোনো কোনো ক্ষেত্রে 2)।
7.তড়িৎযোজ্যতা কাকে বলে?
অথবা, আয়নীয় যোজ্যতা কাকে বলে?
উত্তর – তড়িৎ-ধনাত্মক মৌলের বা ধাতব মৌলের পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে ক্যাটায়নে ও তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌলের বা অধাতব মৌলের পরমাণু ওই বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত হয়। এই বিপরীত তড়িগ্রস্ত আয়ন দুটির স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণের মাধ্যমে মিলিত হয়ে যৌগ গঠন করার ক্ষমতাকে তড়িৎযোজ্যতা বা আয়নীয় যৌজ্যতা বলে।
8. আয়নীয় বন্ধন কাকে বলে? 
অথবা, তড়িৎযোজী বন্ধন কাকে বলে?
উত্তর – দুটি প্রশম পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন আদান-প্রদানের ফলে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন কুলম্বীয় আকর্ষণের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে যে বন্ধন তৈরি করে তাকে তড়িৎযোজী বন্ধন বা আয়নীয় বন্ধন বলে।
9. আয়নীয় বা তড়িৎযোজী বন্ধনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – আয়নীয় বন্ধনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) তড়িৎ-ধনাত্মক বা ধাতব ও তড়িৎ-ঋণাত্মক বা অধাতব মৌলের পরমাণুর মধ্যে এই ধরনের বন্ধন গঠিত হয়। (2) আয়নীয় বন্ধনকে প্রকৃত বন্ধন বলা যায় না। (3) আয়নীয় বন্ধনের নির্দিষ্ট কোনো অভিমুখ নেই। (4) স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বলকে অতিক্রম করে আয়নগুলি চলাচল করতে পারে বলে আয়নীয় বন্ধন অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রকৃতির হয়। (5) ধ্রুবীয় বা পোলার দ্রাবকে আয়নীয় বন্ধন সহজেই ভেঙে যায় এবং ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি কেলাস থেকে মুক্ত হয়ে পড়ে।
10. আয়নীয় যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – আয়নীয় যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি নিম্নরূপ —
  1. মৌলের পরমাণুর যোজ্যতা-কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা: ক্যাটায়ন গঠনকারী মৌলটির পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 1, 2 অথবা 3 এবং অ্যানায়ন গঠনকারী মৌলটির পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 5, 6 অথবা 7 হওয়া দরকার।
  2. তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য: বন্ধন গঠনকারী মৌল দুটির পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকা দরকার। ক্যাটায়ন গঠনকারী মৌলের তড়িৎ-ঋণাত্মকতা কম এবং অ্যানায়ন গঠনকারী মৌলের তড়িৎ-ঋণাত্মকতা বেশি হতে হবে।
  3. বন্ধন গঠনকারী মৌলের পরমাণুগুলির আকার: ক্যাটায়ন গঠনকারী মৌলের পরমাণুর আকার বড়ো এবং অ্যানায়ন গঠনকারী মৌলের পরমাণুর আকার ছোটো হতে হবে।
  4. আয়নের আধান: ক্যাটায়ন কম ধনাত্মক আধানযুক্ত ও অ্যানায়ন কম ঋণাত্মক আধানযুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
  5. আয়নন বিভব ও ইলেকট্রন আসক্তি: ক্যাটায়ন গঠনকারী মৌলের আয়নন বিভবের মান কম এবং অ্যানায়ন গঠনকারী মৌলের ইলেকট্রন আসক্তির মান বেশি হওয়া দরকার।
11. তড়িৎযোজ্যতার পরিমাপ কীভাবে করা হয় উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – আয়নীয় যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌলের একটি পরমাণু যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন বা গ্রহণ করে, সেই সংখ্যা দ্বারা ওই মৌলের পরমাণুটির তড়িৎযোজ্যতা নির্দেশিত হয়। যেমন – NaCl যৌগ গঠন করার সময় Na -পরমাণু একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ আয়নে এবং Cl -পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl আয়নে পরিণত হয়। অতএব, NaCl যৌগে সোডিয়ামের তড়িৎযোজ্যতা 1 এবং ক্লোরিনের তড়িৎযোজ্যতা 1।
12. “তড়িৎযোজী বন্ধনকে প্রকৃত বন্ধন বলা যায় না”—বিবৃতিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – তড়িৎযোজী বন্ধন গঠনের ক্ষেত্রে তড়িৎ ধনাত্মক মৌলের (বা ধাতুর) পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগের মাধ্যমে ক্যাটায়নে ও তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলের (বা অধাতুর) পরমাণু সেই বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত হয়। এই ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ বলের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। এই আকর্ষণ বলের নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকে না। তাই তড়িৎযোজী বন্ধনকে প্রকৃত বন্ধন বলা যায় না।
13. আয়নীয় যৌগের ধর্মগুলি লেখো। 
অনুরূপ প্রশ্ন, আয়নীয় যৌগ বা তড়িৎযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর – তড়িৎযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
  1. ভৌত অবস্থা: আয়নীয় যৌগগুলি সাধারণত শক্ত, কঠিন ও লোসাকার পদার্থ।
  2. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক: আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত উচ্চমানের হয়। এরা অনুদ্বায়ী প্রকৃতির।
  3. দ্রাব্যতা: আয়নীয় যৌগগুলি সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন—জল) দ্রাব্য কিন্তু অধুবীয় দ্রাবকে (যেমন—কেরোসিন, পেট্রোল প্রভৃতি) অদ্রাব্য।
  4. তড়িৎ পরিবাহিতা: কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ না করলেও আয়নীয় যৌগগুলি গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে এবং রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষিত হয়।
  5. বিক্রিয়ার গতিবেগ: দ্রবণে আয়নীয় যৌগগুলির বিক্রিয়া দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়।
  6. সমাবয়বতা: আয়নীয় যৌগগুলি সমাবয়বতা ধর্ম প্রদর্শন করে না।
14. আয়নীয় যৌগের ভৌত অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, আয়নীয় যৌগের কাঠিন্য বেশি হয় কেন?
উত্তর – আয়নীয় বা তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত শক্ত, কঠিন ও কেলাসাকার হয়। আয়নীয় যৌগে কোনো স্বতন্ত্র অণুর অস্তিত্ব থাকে না। এক্ষেত্রে বিপরীত তড়িগ্রস্ত ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি শক্তিশালী, স্থির-তাড়িতিক কুলম্বীয় আকর্ষণের দ্বারা আবদ্ধ থাকে এবং আয়নগুলি বিশেষ রীতিতে সজ্জিত হওয়ার ফলে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকারবিশিষ্ট শক্ত ও কঠিন কেলাস গঠিত হয়।
15. তড়িৎযোজী যৌগগুলিকে আয়নীয় কঠিন বলে কেন?
উত্তর – তড়িৎযোজী যৌগগুলির ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন অণুর অস্তিত্ব নেই। এরা বহুসংখ্যক ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) ও অ্যানায়ন (ঋণাত্মক আয়ন) দিয়ে তৈরি। এই আয়নগুলি ত্রিমাত্রিক স্থানে সুষমভাবে সজ্জিত হয়ে আয়নীয় যৌগের কেলাস গঠন করে। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি শক্তিশালী স্থির-তাড়িতিক কুলম্বীয় আকর্ষণে পরস্পর দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকায় তড়িৎযোজী যৌগগুলি শক্ত, কঠিন ও কেলাসাকার হয়। যেহেতু তড়িৎযোজী যৌগগুলি আয়ন দ্বারা গঠিত এবং সাধারণ চাপ ও উন্নতায় কঠিন অবস্থায় থাকে, তাই এই যৌগগুলিকে আয়নীয় কঠিন (ionic solid) বলে।
16. আয়নীয় যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি হয় কেন?
উত্তর – আয়নীয় যৌগের কেলাসে অসংখ্য ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উপস্থিত থাকে। এই বিপরীত তড়িধর্মী আয়নসমূহের মধ্যে তীব্র স্থির-তাড়িতিক কুলম্বীয় আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে বলে আয়নীয় যৌগের কেলাস ঘনসংঘবদ্ধ হয়। ফলে আয়নীয় যৌগের কেলাস থেকে আয়নগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। এই কারণে আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি হয়।
17. আয়নীয় যৌগের কেলাসের দুই প্রান্তে বিভবপ্রভেদ প্রয়োগ করলেও আয়নদের যথেষ্ট আপেক্ষিক সরণ ঘটে না কেন?
উত্তর – আয়নীয় যৌগের কেলাসে বিপরীত তড়িধর্মী ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির মধ্যে তীব্র স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে, ফলে আয়নগুলি কেলাস জালকে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। তাই কেলাসের দুই প্রান্তে বিভবপ্রভেদ প্রয়োগ করলেও আয়নদের যথেষ্ট আপেক্ষিক সরণ ঘটে না।
18. আয়নীয় যৌগ কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না কিন্তু গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে কেন?
উত্তর – কঠিন অবস্থায় আয়নীয় যৌগগুলি তড়িৎ পরিবহণ করে না, কারণ কঠিন অবস্থায় আয়নীয় যৌগের কেলাসে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নসমূহ তীব্র স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ বল দ্বারা দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নীয় যৌগের মধ্যে যে অতিরিক্ত শক্তি (তাপ) থাকে তার দ্বারা ওরা উপাদান আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়। এর ফলে আয়নীয় যৌগগুলি গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় এই উপাদান আয়নগুলির মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে।
19. একটি যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক উচ্চ। কঠিন অবস্থায় যৌগটি তড়িতের অপরিবাহী কিন্তু গলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবাহী। যৌগটিতে কীরূপ বন্ধন আছে? যৌগ গঠনকারী কণাগুলির প্রকৃতি কী ?
উত্তর – যৌগটিতে তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধন আছে।
যৌগ গঠনকারী কণাগুলি হল ধনাত্মক আধানযুক্ত ক্যাটায়ন ও ঋণাত্মক আধানযুক্ত অ্যানায়ন।
20. আয়নীয় যৌগগুলি অধ্রুবীয় দ্রাবকে অদ্রাব্য হলেও ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – আয়নীয় যৌগগুলি অধ্রুবীয় দ্রাবকে (কেরোসিন, পেট্রোল) অদ্রাব্য হলেও ধ্রুবীয় দ্রাবকে (জল) দ্রবীভূত হয়। আয়নীয় যৌগগুলি ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়ে উপাদান আয়নে বিয়োজিত হয় কারণ ধ্রুবীয় দ্রাবকের অণুগুলি বিপরীতধর্মী আয়নগুলিকে পরস্পরের থেকে পৃথক থাকতে সাহায্য করে যা অধ্রুবীয় দ্রাবকের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
21. আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে বিক্রিয়ার হার দ্রুত হয় কেন?
উত্তর – গলিত অবস্থায় বা দ্রবণে তড়িৎযোজী যৌগগুলি আয়নরূপে অবস্থান করে। আবার, আয়নীয় যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়া হল প্রকৃতপক্ষে ওই যৌগের উপাদান আয়নসমূহের বিক্রিয়া। বিপরীত তড়িদ্ধর্মী আয়নগুলি অধিক দ্রুততার সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে বলে আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে বিক্রিয়ার হার দ্রুত হয়।
22. সংকেত ভর (formula mass) কাকে বলে? সংকেত ভর কোন্ প্রকার যৌগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িযোজী যৌগের ক্ষেত্রে আণবিক ভর ব্যবহার না করে সংকেত ভর ব্যবহার করা উচিত কেন?
উত্তর – আয়নীয় যৌগকে যে সংকেতের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়, সেই সংকেতে উপস্থিত পরমাণুগুলির পারমাণবিক ভরের সমষ্টি হল ওই যৌগের সংকেত ভর।
আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন অণুর অস্তিত্ব নেই বলে এদের ক্ষেত্রে আণবিক ভরের পরিবর্তে সংকেত ভর শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
23. অষ্টক সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – অষ্টক সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— (1) কিছু অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষে ৪ টির কম বা বেশি ইলেকট্রন থাকা সত্ত্বেও অণুগুলি যথেষ্ট স্থিতিশীল। এই ঘটনা অষ্টক সূত্রানুসারে ব্যাখ্যা করা যায় না। (2) নোল্ গ্যাসগুলির নিষ্ক্রিয়তার ভিত্তিতে অষ্টক সূত্র প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কিছু নোবল গ্যাস অক্সিজেন বা ফ্লুরিনের সাথে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে।
24. আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে অষ্টক ধারণার বহুল ব্যবহার বাঞ্ছনীয় নয় কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, একটি উদাহরণ দিয়ে দেখাও যে, আয়নীয় যৌগের আয়নগুলির অষ্টক পূর্তি ছাড়াও আয়নীয় যৌগ গঠিত। হতে পারে।
উত্তর – সমস্ত আয়নীয় যৌগের উপাদান আয়নগুলির যোজ্যতা কক্ষে ৪টি ইলেকট্রনের উপস্থিতি তথা অষ্টক পূর্তির দ্বারা যৌগগুলির স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করা যায় না। ক্ষার ধাতু Li দ্বারা গঠিত LiH যৌগে Li+ আয়নের যোজ্যতা কক্ষে 2 টি ও H আয়নের যোজ্যতা কক্ষে 2 টি ইলেকট্রন আছে। এক্ষেত্রে অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রম ঘটে। তাই আয়নীয় যৌগের স্থায়িত্ব ব্যাখ্যায় অষ্টকের ধারণার বহুল ব্যবহার বাঞ্ছনীয় নয়।
25. NaCl যৌগটি কীভাবে গঠিত হয় ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – একটি Na -পরমাণু (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 8, 1 ) যখন একটি Cl -পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 8, 7 ) সঙ্গে রাসায়নিকভাবে মিলিত হয়ে যৌগ গঠন করে, তখন Na -পরমাণুটি তার সর্ববহিস্থ কক্ষের 1 টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ ক্যাটায়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল নিয়ন (Ne) -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8) লাভ করে। অন্যদিকে, Cl -পরমাণু Na দ্বারা বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl আয়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল আর্গন (Ar) -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8, 8) লাভ করে। এরপর বিপরীত তড়িধর্মী Na+ ও Cl আয়নগুলি স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত হয়ে আয়নীয় যৌগ NaCl গঠন করে।
26. সোডিয়াম ক্লোরাইডের বন্ধন Na-CI হিসেবে প্রকাশ করা যায় না কেন?
উত্তর – Na -পরমাণু তার সর্ববহিস্থ কক্ষের 1 টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ আয়নে ও Cl -পরমাণু ওই বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে Clআয়নে পরিণত হয়। উৎপন্ন Na+ ও Cl আয়নগুলি স্থির-তড়িৎ আকর্ষণের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে NaCl যৌগ গঠন করে। এক্ষেত্রে Na+ ও Cl -এর মধ্যে কোনো ইলেকট্রন-জোড় সৃষ্টি হয় না এবং এই আকর্ষণ বলের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোনো প্রকৃত বন্ধন গঠিত হয় না। তাই সোডিয়াম ক্লোরাইডের বন্ধন Na—Cl হিসেবে প্রকাশ করা যায় না।
27. সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) -এর কেলাসাকার গঠনাকৃতি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর – কঠিন NaCl-এর কেলাসে অণুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই। বহুসংখ্যক Na+ ও Cl আয়ন স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বল দ্বারা জোটবদ্ধ থাকে।  NaCl -এর কেলাস জালকে প্রতিটি Na+ আয়ন 6 টি Cl আয়ন দ্বারা ও প্রতিটি Cl আয়ন 6 টি Na+ আয়ন দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উভয় আয়ন সমসংখ্যায় উপস্থিত থাকে [চিত্র]।
28. সোডিয়াম ক্লোরাইডের ক্ষেত্রে আণবিক ওজনের বদলে সাংকেতিক ওজন কথাটি ব্যবহার করা সংগত কেন?
অথবা, NaCl যৌগের ক্ষেত্রে আণবিক ওজনের তুলনায় সংকেত ওজন বলাই যথাযথ—বিবৃতিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) আয়নীয় যৌগ হওয়ায় এর কেলাসে পৃথক অণুর কোনো অস্তিত্ব নেই। অসংখ্য Na+ ও Cl আয়ন স্থির-তড়িৎ আকর্ষণের দ্বারা পরস্পর আকর্ষিত হয়ে কঠিন সোডিয়াম ক্লোরাইডের কেলাস গঠন করে। বিচ্ছিন্ন অণুর অস্তিত্ব না থাকায় এক্ষেত্রে আণবিক ওজন কথাটি অর্থহীন। তাই সোডিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত (NaCl) -এ উপস্থিত Na এবং Cl -পরমাণুগুলির পারমাণবিক ওজনের মষ্টিকে যৌগটির সাংকেতিক ওজন বা সংকেত ওজন বলাই যথাযথ।
29. সোডিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত NaCl না লিখে (NaCl)n লেখা উচিত কেন?
উত্তর – কঠিন NaCl -এর কেলাসে অণুর আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। বহুসংখ্যক Na+ ও Cl আয়ন স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ দ্বারা জোটবদ্ধ অবস্থায় থাকে। NaCl -এর কেলাস-জালকে প্রতিটি Na+ আয়ন 6 টি Cl আয়ন ও প্রতিটি Cl আয়ন 6 টি Na+ আয়ন দ্বারা বেষ্টিত। তাই সোডিয়াম ক্লোরাইডের একটি কেলাসকে (NaCl)n বা (Na+Cl)n রূপে প্রকাশ করা যেতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে সোডিয়াম ক্লোরাইডের গঠন বিক্রিয়াটি হল:
nNa+(g) + nCl(g) → (Na+Cl)n(s) বা (NaCl)n(s)
এক্ষেত্রে n -এর মান নির্ভর করে কেলাসের আকৃতির ওপর।
30. NaCl কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না কেন?
উত্তর – NaCl কঠিন কেলাসাকার আয়নীয় যৌগ, কেলাসের মধ্যে থাকা উপাদান আয়নগুলি তীব্র তড়িৎ আকর্ষণ বল দ্বারা দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকায় এরা স্থান পরিবর্তন করতে পারে না। ফলে কঠিন অবস্থায় NaCl তড়িৎ পরিবহণ করে না। গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় কেলাস গঠন ভেঙে গিয়ে আয়নগুলি মুক্ত হয় ও দ্রবণের মধ্যে গতিশীল অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে। তাই গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় NaCl তড়িৎ পরিবহণে অংশগ্রহণ করে।
31. CaO যৌগের গঠন প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – CaO যৌগটি গঠনের সময় Ca-পরমাণুটি (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 8, 8, 2 ) তার সর্ববহিস্থ কক্ষের 2টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Ca2+ ক্যাটায়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ar -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8, 8) লাভ করে। অন্যদিকে, O -পরমাণু (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 6) Ca দ্বারা বর্জিত ইলেকট্রন দুটি গ্রহণ করে O2– অ্যানায়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ne -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8) লাভ করে। এরপর বিপরীত তড়িধর্মী Ca2+ ও O2– আয়নগুলি স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত হয়ে আয়নীয় যৌগ CaO গঠন করে।
32. MgCl2 যৌগে কীরূপ বন্ধন আছে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – MgCl2 যৌগটি গঠনের সময় Mg -পরমাণুটি (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 8, 2 ) তার সর্ববহিস্থ কক্ষের 2 টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Mg2+ ক্যাটায়নে পরিণত হয় এবং নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ne -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8) লাভ করে। অন্যদিকে, 2টি Cl-পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 8, 7 ) প্রতিটি Mg দ্বারা বর্জিত দুটি ইলেকট্রনের একটি করে গ্রহণ করে Cl অ্যানায়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ar -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8, 8) লাভ করে। এরপর বিপরীত তড়িধর্মী Mg2+ ও 2টি Cl স্থির- তাড়িতিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত হয়ে আয়নীয় যৌগ MgCl2 গঠন করে।
33. NaF যৌগ কীভাবে গঠিত হয় ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – NaF যৌগটির গঠনকালে Na -পরমাণুটি (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 8, 1 ) তার সর্ববহিস্থ কক্ষের একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ ক্যাটায়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ne -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস (2, 8) লাভ করে। অন্যদিকে, F-পরমাণু (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 7) Na -পরমাণু দ্বারা বর্জিত একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে F অ্যানায়নে পরিণত হয়। ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ne -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করে। এরপর বিপরীত তড়িধর্মী Na+ ও F স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত হয়ে আয়নীয় যৌগ NaF গঠন করে।
34. একটি মৌল X, অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সাইড যৌগ, X2O উৎপন্ন করে। গলিত অক্সাইডটি তড়িতের পরিবাহী হলে—(i) X-এর যোজ্যতা কক্ষে কয়টি ইলেকট্রন আছে? (ii) এটি ক্লোরিনের সাথে যৌগ গঠন করলে সেই যৌগের সংকেত ও প্রকৃতি কী হবে?
উত্তর – গলিত অক্সাইডটি তড়িৎ পরিবহণ করে অর্থাৎ যৌগটি আয়নীয় প্রকৃতির। অক্সিজেন তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌল (বা অধাতু) হওয়ায় X নিশ্চয়ই তড়িৎ-ধনাত্মক মৌল (অর্থাৎ ধাতু) হবে।
(i) X2O যৌগে X -এর যোজ্যতা 1। অতএব, X -এর যোজ্যতা কক্ষে 1 টি ইলেকট্রন আছে।
(ii) ক্লোরিন একটি অধাতব মৌল এবং X একটি ধাতব মৌল। অতএব, X ও Cl যুক্ত হয়ে আয়নীয় প্রকৃতির যৌগ উৎপন্ন করবে এবং উৎপন্ন যৌগের সংকেত হবে XCl |

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. আয়নীয় যৌগ সাধারণ উন্নতায় যে ভৌত অবস্থায় থাকে সেটি হল-
(a) প্লাজমা
(b) তরল
(c) গ্যাসীয়
(d) কেলাসাকার কঠিন
উত্তর – (d) কেলাসাকার কঠিন
2. আয়নীয় যৌগের দ্রাব্যতা বেশি হবে—
(a) জলে
(b) অ্যালকোহলে
(c) বেঞ্জিনে
(d) ইথারে
উত্তর – (a) জলে
3. জলীয় দ্রবণে আয়নীয় যৌগের কেলাস ভেঙে গিয়ে—
(a) অণু মুক্ত হয়
(b) পরমাণু মুক্ত হয়
(c) কেবল ক্যাটায়ন মুক্ত হয়
(d) ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উভয়ই মুক্ত হয়
উত্তর – (d) ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উভয়ই মুক্ত হয়
4. কোন্‌টির গলনাঙ্ক সবচেয়ে বেশি?
(a) চিনি
(b) ন্যাপথালিন
(c) মোম
(d) NaCl
উত্তর – (d) NaCl
5. কোন্‌টি আয়নীয় হলেও জলে অদ্রাব্য?।
(a) CuSO4
(b) CH3COOH
(c) NaNO3
(d) CaCO3
উত্তর – (d) CaCO3
6. একটি পোলার দ্রাবকের উদাহরণ হল—
(a) বেঞ্জিন
(b) ইথার
(c) ক্লোরোফর্ম
(d) জল
উত্তর – (d) জল
7. ক্ষারধাতু ও হ্যালোজেন মৌলের মধ্যে যে প্রকারের বন্ধন সৃষ্টি হতে পারে সেটি হল —
(a) আয়নীয়
(b) সমযোজী
(c) অসমযোজী
(d) পোলার সমযোজী
উত্তর – (a) আয়নীয়
8. আয়নীয় বন্ধনের ধারণা দেন বিজ্ঞানী—
(a) ডালটন
(b) লুইস
(c) কোসেল
(d) অ্যাভোগাড্রো
উত্তর – (c) কোসেল
9. নীচের কোন্ যৌগটি গঠনের ক্ষেত্রে অষ্টক নীতি মান্য হয় না?
(a) NaCl
(b) LiH
(c) KCl
(dd) CaO
উত্তর – (b) LiH
10. ফেরাস যৌগে Fe-এর তড়িৎযোজ্যতা হল –
(a) 3
(b) 1
(c) 2
(d) 4
উত্তর – (c) 2
11. কোনো মৌলের সর্ববহিস্থ কক্ষে ইলেকট্রনের সংখ্যা 1 হলে নিম্নোক্ত কোন্ বক্তব্যটি সঠিক? মৌলটি—
(a) ক্যাটায়ন গঠনে সক্ষম
(b) অ্যানায়ন গঠনে সক্ষম
(c) ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উভয় প্রকার আয়ন গঠনেই সক্ষম
(d) কোনো প্রকার আয়ন গঠন করবে না
উত্তর – (a) ক্যাটায়ন গঠনে সক্ষম
12. কোনো মৌলের সর্ববহিস্থ কক্ষে ইলেকট্রনের সংখ্যা 6 হলে মৌলটি—
(a) ক্যাটায়ন গঠনে সক্ষম
(b) অ্যানায়ন গঠনে সক্ষম
(c) ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উভয় গঠনেই সক্ষম
(d) কোনো প্রকার আয়ন গঠন করবে না
উত্তর – (b) অ্যানায়ন গঠনে সক্ষম
13. O, O ও O2– -এর মধ্যে সবচেয়ে স্থায়ী কোনটি?
(a) O
(b) O
(c) O2–
(d) সবগুলির স্থায়িত্ব সমান
উত্তর – (c) O2–
14. Li+ -এর ইলেকট্রন-বিন্যাস কোন্ নিষ্ক্রিয় মৌলের মতো?
(a) He
(b) Ne
(c) Ar
(d) Kr
উত্তর – (a) He
15. যোজ্যতার ইলেকট্রনীয় তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন—
(a) লুইস ও কোসেল
(b) বর্ন ও হেবার
(c) প্রাউস্ট
(d) অ্যাভোগাড্রো
উত্তর – (a) লুইস ও কোসেল
16. দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এরূপ একটি তড়িৎযোজী যৌগ হল—
(a) খাদ্যলবণ
(b) জল
(c) চিনি
(d) কেরোসিন
উত্তর – (a) খাদ্যলবণ
17. A, B ও C তিনটি মৌলের পরমাণু-ক্রমাঙ্ক যথাক্রমে (Z–2), Z ও (Z + 1)। এদের মধ্যে B একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস হলে, A ও C দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে—
(a) CA2
(b) CA
(c) C2A3
(d) C2A
উত্তর – (d) C2A
18. কোন্ প্রকার বন্ধনের সুনির্দিষ্ট অভিমুখ থাকে না?
(a) সমযোজী
(b) অসমযোজী
(c) তড়িৎযোজী
(d) সবগুলির
উত্তর – (c) তড়িৎযোজী
19. কোন্‌টি তড়িৎযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য নয়?
(a) পদার্থগুলি সাধারণত কঠিন
(b) পদার্থগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক উচ্চ
(c) পদার্থগুলি জলে দ্রাব্য
(d) পদার্থগুলির ঘনত্ব নিম্নমানের
উত্তর – (d) পদার্থগুলির ঘনত্ব নিম্নমানের
20. কোন্‌টি আয়নীয় যৌগ?
(a) C2H2
(b) CaO
(c) HCl
(a) H2O
উত্তর – (b) CaO
21. প্রদত্ত যৌগগুলির মধ্যে কোন্‌টি তড়িৎ পরিবহণ করে না?
(a) গলিত NaOH
(b) গলিত KOH
(c) কঠিন NaCl
(d) গলিত NaCl
উত্তর – (c) কঠিন NaCl
22. নীচের কোন্‌টি আয়নীয় যৌগ?
(a) HCl
(b) CH4
(c) MgCl2
(d) NH3
উত্তর – (c) MgCl2
23. আয়নীয় যৌগ তড়িৎ পরিবহণ করে—
(a) কঠিন অবস্থায়
(b) গ্যাসীয় অবস্থায়
(c) কেবল গলিত অবস্থায়
(d) গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায়
উত্তর – (d) গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায়
24. CaO যৌগ গঠনের সময় Ca -পরমাণু কয়টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে?
(a) 1টি
(b) 2টি
(c) 3টি
(d) একটিও নয়
উত্তর – (b) 2টি
25. MgCl2 গঠনের সময় 1টি Cl-পরমাণু কয়টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে?
(a) 1টি
(b) 2টি
(c) 3টি
(d) একটিও নয়
উত্তর – (a) 1টি
26. সোডিয়াম ক্লোরাইড কেলাসে প্রতিটি Na+ আয়ন কয়টি Cl আয়ন দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে?
(a) 3 টি
(b) 4টি
(c) 5 টি
(d) 6 টি
উত্তর – (d) 6 টি
27. X ও Y মৌল দুটির পরমাণু-ক্রমাঙ্ক যথাক্রমে 11 ও 17 হলে তাদের দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হবে— 
(a) XY
(b) X2Y
(c) XY2
(d) X2Y3
উত্তর – (a) XY
28. LiH অণুতে Li ও H উভয় পরমাণু যে নোল্ গ্যাসের ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করে, সেটি হল —
(a) Ar
(b) He
(c) Ne
(d) Kr
উত্তর – (b) He
29. দুটি মৌল A ও B-এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা যথাক্রমে 1.2 ও 3.5 হলে এদের মধ্যে গঠিত বন্ধনের প্রকৃতি কীরূপ হবে? 
(a) সমযোজী
(b) অসমযোজী
(c) ধাতব বন্ধন
(d) তড়িৎযোজী
উত্তর – (d) তড়িৎযোজী
30. কোন্ অণুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই?
(a) CO2
(b) CH4
(c) NaCl
(d) SO2
উত্তর – (c) NaCl
31. নীচের কোন্ যৌগটির কঠিন অবস্থা আয়ন দ্বারা গঠিত?
(a) সোডিয়াম ক্লোরাইড
(b) হাইড্রোজেন ক্লোরাইড
(c) ন্যাপথালিন
(d) গ্লুকোজ
উত্তর – (a) সোডিয়াম ক্লোরাইড

একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. নোব্‌ল্ গ্যাস মৌলগুলির অস্তিত্ব আবিষ্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দুজন বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – বিজ্ঞানী লর্ড র‍্যালে ও উইলিয়াম র‍্যামজে।
2. 1898 সালে বিজ্ঞানী উইলিয়াম র‍্যামজে কোন্ কোন্ নিষ্ক্রিয় গ্যাস আবিষ্কার করেন এবং কীভাবে আবিষ্কার করেন?
উত্তর – 1898 সালে বিজ্ঞানী উইলিয়াম র‍্যামজে তরল বায়ুর আংশিক পাতন দ্বারা বিভিন্ন উপাদানগুলির পৃথক্করণের সময় ক্রিপটন, নিয়ন ও জেনন আবিষ্কার করেন।
3. নোব্‌ল্ গ্যাসগুলি রাসায়নিকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় কেন?
উত্তর – নোব্‌ল্ গ্যাসের পরমাণুগুলির ইলেকট্রন-বিন্যাস খুব সুস্থিত (সর্ববহিস্থ কক্ষে ৪ টি ইলেকট্রন ও He -এর ক্ষেত্রে সর্ববহিস্থ কক্ষে 2 টি ইলেকট্রন) হওয়ায় এরা রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়।
4. বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলির রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের কারণ কী?
উত্তর – নোব্‌ল্ গ্যাস পরমাণুর মতো সুস্থায়ী ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করার জন্যই বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
5. এমন একটি আয়নীয় যৌগের উদাহরণ দাও যার ক্ষেত্রে অষ্টক সূত্র প্রযোজ্য নয়।
উত্তর – লিথিয়াম হাইড্রাইড (LiH) এর ক্ষেত্রে অষ্টক সূত্র প্রযোজ্য নয়।
6. অষ্টক ব্যতিক্রমী একটি সুস্থিত ক্যাটায়নের উদাহরণ দাও।
উত্তর – অষ্টক ব্যতিক্রমী একটি সুস্থিত ক্যাটায়ন হল Li+
7. রাসায়নিক বন্ধন কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তর – রাসায়নিক বন্ধন বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন – (1) আয়নীয় বন্ধন, (2) সমযোজী বন্ধন, (3) অসমযোজী বন্ধন, (4) হাইড্রোজেন বন্ধন, (5) ধাতব বন্ধন ইত্যাদি। এই অধ্যায়ে আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
8. যোজন কক্ষ বা যোজ্যতা-কক্ষ কাকে বলে?
উত্তর – মৌলের পরমাণুগুলির বহিস্তম কক্ষের ইলেকট্রনগুলি রাসায়নিক বন্ধনে অংশগ্রহণ করে বলে মৌলের বহিস্তম কক্ষকে যোজন কক্ষ বা যোজ্যতা কক্ষ বলে।
9. যোজক ইলেকট্রন কাকে বলে?
উত্তর – কোনো মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষের যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন রাসায়নিক বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণ করে তাদের যোজক ইলেকট্রন বা যোজ্যতা ইলেকট্রন বলে।
10. ক্ষারধাতু ও হ্যালোজেন মৌলগুলির যোজক ইলেকট্রনের সংখ্যা লেখো।
উত্তর – ক্ষার ধাতুগুলির যোজক ইলেকট্রনের সংখ্যা 1 এবং হ্যালোজেন মৌলগুলির যোজক ইলেকট্রনের সংখ্যা 7 ।
11. একটি পরমাণু থেকে অপর পরমাণুতে ইলেকট্রন স্থানান্তরের মাধ্যমে যে যোজ্যতার প্রকাশ ঘটে, তাকে কী বলা হয়?
উত্তর – তড়িৎযোজ্যতা (electrovalency) বলা হয়।
12. সাধারণ উন্নতায় কেলাসাকার কঠিনরূপে অবস্থান করে এমন কয়েকটি যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর – সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), পোড়াচুন (CaO), কস্টিক সোডা (NaOH), কলিচুন [Ca(OH)2] ইত্যাদি।
13. কোন্ ধরনের যৌগে অণুর অস্তিত্ব নেই?
উত্তর – আয়নীয় যৌগে অণুর অস্তিত্ব নেই।
14. উপযুক্ত তড়িদ্বার ব্যবহার করে আয়নীয় যৌগের জলীয় দ্রবণে তড়িৎ চালনা করলে কী ঘটবে?
উত্তর – তড়িবিশ্লেষণ ঘটবে, ফলে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হবে।
15. ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড ও ন্যাপথালিনের মধ্যে কোন্‌টি গলিত অবস্থায় তড়িতের পরিবাহী?
উত্তর – ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড গলিত অবস্থায় তড়িতের পরিবাহী।
16. একটি তড়িৎযোজী যৌগের উদাহরণ দাও যাতে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের তড়িৎযোজ্যতা 3।
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড (AIN) যৌগে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের তড়িৎযোজ্যতা 3 ।
17. আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে আণবিক ভর-এর পরিবর্তে কোন্ শব্দটি ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – ‘সংকেত ভর’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
18. সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) -এর সংকেত ভর কত?
উত্তর – সোডিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত ভর = 23 + 35.5 = 58.5 |
19. কেলাস-জালক (crystal lattice) কাকে বলে?
উত্তর – কেলাসের মধ্যস্থ কণাগুলি (অণু, পরমাণু বা আয়ন) ত্রিমাত্রিকভাবে নির্দিষ্টভাবে সজ্জিত হয়ে যে জালকের মতো গঠন সৃষ্টি করে, তাকে কেলাস-জালক বলে।
20. Ca -পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে কটি ইলেকট্রন আছে?
উত্তর – Ca -পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে 2 টি ইলেকট্রন আছে।
21. CaO-তে কী ধরনের রাসায়নিক বন্ধন বর্তমান? 
উত্তর – CaO তে তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধন বর্তমান।
22. MgCl2 যৌগে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিনের ইলেকট্রন-বিন্যাস কোন্ কোন্ নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো?
উত্তর – MgCl2 যৌগে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিনের ইলেকট্রন-বিন্যাস যথাক্রমে নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন ও আর্গন-এর মতো।
23. এমন একটি আয়নীয় যৌগের নাম লেখো যা জলে দ্রবীভূত হয়ে অপর একটি আয়নীয় যৌগ উৎপন্ন করে।
উত্তর – ক্যালশিয়াম অক্সাইড (CaO) জলে দ্রবীভূত হয়ে আয়নীয় যৌগ ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড [Ca(OH)2] উৎপন্ন করে।
24. CaCl2 -তে কী জাতীয় বন্ধন আছে?
উত্তর – CaCl2 -তে তড়িত্যাজী বা আয়নীয় বন্ধন আছে।
25. মূলক দ্বারা উৎপন্ন একটি আয়নীয় যৌগের নাম লেখো।
উত্তর – ক্যালশিয়াম সালফেট (CaSO4)
26. হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত একটি আয়নীয় যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর – লিথিয়াম হাইড্রাইড (LiH)
27. H- আয়নের ইলেকট্রন-বিন্যাস কোন্ পরমাণুর মতো?
উত্তর – নিষ্ক্রিয় মৌল হিলিয়াম (He) পরমাণুর মতো।
28. O2 – আয়ন ও Ne-পরমাণুর মধ্যে সাদৃশ্য কোথায়?
উত্তর – উভয়েরই ইলেকট্রন সংখ্যা 10 হওয়ায় এদের ইলেকট্রন-বিন্যাসও অনুরূপ অর্থাৎ এরা আইসোইলেকট্রনিক।
29. পর্যায় সারণির 2 এবং 17 শ্রেণিভুক্ত দুটি মৌলের (যথাক্রমে X ও Y) সংযোগে উৎপন্ন যৌগের সংকেত কী হবে?
উত্তর – যৌগটির সংকেত হবে XY2
30. একটি মৌলের পরমাণু-ক্রমাঙ্ক 12। এর সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় সমযোজী না তড়িৎযোজী যৌগ উৎপন্ন হবে?
উত্তর – এক্ষেত্রে তড়িৎযোজী যৌগ উৎপন্ন হবে।
31. একটি মৌলের পরমাণু-ক্রমাঙ্ক 9 । এর সাথে বিক্রিয়ায় সোডিয়াম কী ধরনের যৌগ গঠন করবে?
উত্তর – এক্ষেত্রে সোডিয়াম তড়িৎযোজী যৌগ গঠন করবে।
32. একটি ধাতব মৌল M একটি আয়নীয় অক্সাইড MO গঠন করে। M-পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে কয়টি ইলেকট্রন আছে?
উত্তর – M-পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে 2 টি ইলেকট্রন আছে।
33. A (2, 8, 2) এবং B (2, 8, 7) -পরমাণু দুটির মধ্যে কী ধরনের বন্ধন দেখা যাবে?
উত্তর – A এবং B -পরমাণু দুটির মধ্যে তড়িৎযোজী বন্ধন দেখা যাবে।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. 1894 সালে বিজ্ঞানী ……… আর্গন গ্যাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন।
উত্তর – লর্ড র‍্যালে
2. 1868 সালে নিষ্ক্রিয় গ্যাস ……… -এর অস্তিত্ব প্রথম জানা যায়।
উত্তর – হিলিয়াম
3. He ছাড়া বাকি নিষ্ক্রিয় মৌলের বাইরের কক্ষে ………. টি ইলেকট্রন থাকে।
উত্তর – 8
4. কোনো পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে ……… -এ পরিণত হয় এবং সুস্থিতি লাভ করে।
উত্তর – আয়ন
5. নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়নের ইলেকট্রন-বিন্যাসবিশিষ্ট ক্যাটায়ন গঠন করে এমন মৌলের উদাহরণ হল ………।
উত্তর – সোডিয়াম
6. আয়নীয় যৌগগুলি সাধারণত ……… এবং এদের কেলাস বিশেষ ……… আকারবিশিষ্ট।
উত্তর – কঠিন, জ্যামিতিক
7. আয়নীয় যৌগের কেলাস অসংখ্য ………. ও ……….. দ্বারা গঠিত।
উত্তর – ক্যাটায়ন, অ্যানায়ন
8. আয়নীয় যৌগ ………. অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না।
উত্তর – কঠিন
9. আয়নীয় যৌগ ………. বা ………. অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে।
উত্তর – গলিত, দ্রবীভূত
10. ………. যৌগগুলি সাধারণত তড়িদ্‌বিশ্লেষ্য পদার্থ।
উত্তর – আয়নীয়
11. আয়নীয় যৌগগুলি ……… বা ………. দ্রাবকে দ্রাব্য।
উত্তর – পোলার, ধ্রুবীয়
12. আয়নীয় যৌগ জৈব দ্রাবকে ………।
উত্তর – অদ্রাব্য
13. তড়িৎযোজী যৌগ বিশ্লিষ্ট হয়ে …….. উৎপন্ন করে।
উত্তর – আয়ন
14. কিউপ্ৰিক যৌগে Cu-এর তড়িৎযোজ্যতা ………।
উত্তর – 2
15. ………. যৌগে বন্ধন বলতে স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বলকেই বোঝায়।
উত্তর – আয়নীয়
16. দুটি মৌলের মধ্যে আয়নীয় বন্ধন সৃষ্টি হতে হলে তাদের তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য ……… হতে হবে।
উত্তর – বেশি
17. আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয় ……… ও ………. মৌলের মধ্যে।
উত্তর – ধাতব, অধাতব
18. আয়নীয় যৌগের ক্যাটায়ন গঠনকারী মৌলের আয়নন শক্তি ……… হওয়া প্রয়োজন।
উত্তর – কম
19. আয়নীয় যৌগের অ্যানায়ন গঠনকারী মৌলের তড়িৎ-ঋণাত্মকতার মান ……… হওয়া প্রয়োজন।
উত্তর – বেশি
20. আয়নীয় বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ ………।
উত্তর – নেই
21. আয়নীয় যৌগ গঠিত হওয়া সম্ভবপর হয় যখন একটি সুস্থিত ত্রিমাত্রিক ……… উৎপন্ন হতে পারে।
উত্তর – কেলাস
22. NaCl -এর গলনাঙ্ক ………. ও স্ফুটনাঙ্ক ………।
উত্তর – 800°C, 1410°C
23. NaCl কেলাসে প্রতিটি CI আয়নকে ……… টি Na+ আয়ন ঘিরে রাখে।
উত্তর – 6
24. CaO যৌগে ক্যালশিয়াম আয়নের আধান হল ………।
উত্তর – +2
25. Na এবং F পরস্পর যুক্ত হয়ে ……… জাতীয় যৌগ।
উত্তর – তড়িৎযোজী বা আয়নীয়

TOPIC – B সমযোজী বন্ধন ও সমযোজী যৌগসমূহের ধর্ম

সংক্ষিপ্ত/ দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

1. লুইস-এর ধারণা অনুসারে সমযোজী বন্ধন কীভাবে গঠিত হয় একটি উদাহরণ দিয়ে লেখো। 
উত্তর – জি এন লুইস (1916) দ্বারা প্রস্তাবিত সমযোজী বন্ধনের মডেলটি সংক্ষেপে হল— (1) একই মৌলের অথবা পৃথক পৃথক মৌলের দুটি পরমাণু তাদের সবচেয়ে বাইরের কক্ষের অযুগ্ম ইলেকট্রনগুলিকে ব্যবহার করে ইলেকট্রন-জোড় গঠন করে। (2) উভয় পরমাণুই ওই ইলেকট্রন-জোড় বা জোড়গুলিকে সমানভাবে ব্যবহার করে তাদের যোজ্যতা-কক্ষ ৪টি বা 2 টি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ করে। (3) এই ইলেকট্রন-জোড় দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস দ্বারা একইসঙ্গে ব্যবহৃত হয় ও এর ফলে সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: 2 টি F-পরমাণুর [ইলেকট্রন-বিন্যাস: K(2) L (7)] প্রতিটির যোজ্যতা-কক্ষ থেকে 1 টি করে ইলেকট্রন এসে 1 টি ইলেকট্রন-জোড় গঠিত হয়। এই ইলেকট্রন-জোড় উভয় F-পরমাণু সমানভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থিত Ne-পরমাণুর ইলেকট্রন-বিন্যাস [K(2)L(8)] লাভ করে। এর ফলে ফ্লুরিন বা F2 অণু গঠিত হয়।
2. সমযোজ্যতা কাকে বলে?
উত্তর – নিকটতম নিষ্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভের জন্য একই বা ভিন্ন মৌলের দুটি পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড়কে নিজেদের মধ্যে সমভাবে ব্যবহার করে রাসায়নিকভাবে মিলিত হওয়ার যে ধর্ম দেখায় তাকে সমযোজ্যতা বলে।
3. সমযোজী বন্ধন এবং সমযোজী যৌগ কাকে বলে?
অনুরূপ প্রশ্ন, সমযোজী বন্ধনের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর – সমযোজী বন্ধন: একই বা ভিন্ন মৌলের দুটি পরমাণুর মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড় (বন্ধন সৃষ্টিকারী প্রতিটি পরমাণু থেকে আগত সমসংখ্যক ইলেকট্রন দিয়ে গঠিত) সমভাবে ব্যবহৃত হয়ে যে রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়, তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।
সমযোজী যৌগ: সমযোজী বন্ধন সমন্বিত যৌগকে সমযোজী যৌগ বলা হয়। যেমন—জল (H2O), হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl), মিথেন (CH4), ইথেন (C2H4) ইত্যাদি।
4. সমযোজী যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – সমযোজী যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি নিম্নরূপ —
  1. পরমাণুর যোজ্যতা-কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা; সমযোজী বন্ধন গঠনকারী পরমাণু দুটির যোজ্যতা কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা 4, 5, 6 বা 7 হওয়া দরকার। (ব্যতিক্রম—হাইড্রোজেন)
  2. বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুর আয়নন শক্তি: যেসব পরমাণুগুলি সমযোজী বন্ধন গঠনের মাধ্যমে অণু গঠন করে তারা সাধারণত উচ্চ আয়নন শক্তি সম্পন্ন হয়।
  3. পরমাণুগুলির তড়িৎ-ঋঋণাত্মকতা: সমযোজী বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতা সমান বা প্রায় সমান হতে হবে।
  4. পরমাণুগুলির ইলেকট্রন আসক্তি: বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুদুটির ইলেকট্রন আসক্তি প্রায় সমান হওয়া দরকার।
5. সমযোজী অণু কী এবং কয় প্রকার ?
উত্তর – যে সকল মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণু সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয় তাদের সমযোজী অণু বলা হয়। সমযোজী অণু দুই প্রকারের হয়, যথা—
  1. সমযোজী মৌলের অণু: একই মৌলের পরমাণুগুলি সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সমযোজী মৌলের অণু গঠন করে। যেমন— H2, O2, N2, F2 প্রভৃতি সমযোজী মৌলের অণু।
  2. সমযোজী যৌগের অণু: ভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলি সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সমযোজী যৌগের অণু গঠন করে। যেমন— NH3, HCl, CO2, CH4 প্রভৃতি সমযোজী যৌগের অণু।
6. সমযোজী অণুতে মৌলের সমযোজ্যতার পরিমাপ করা হয় কীভাবে?
উত্তর – সমযোজী মৌল বা যৌগের অণু গঠনের সময় কোনো মৌলের একটি পরমাণু যতগুলি ইলেকট্রন-জোড় গঠন করে, সেই সংখ্যাকে সংশ্লিষ্ট মৌলটির সমযোজ্যতা বলে। অর্থাৎ উক্ত সংখ্যাটির দ্বারা সংশ্লিষ্ট মৌলটির | সমযোজ্যতা নির্ধারিত হয়। যেমন—মিথেন (CH4) এC-পরমাণু 4 টি H -পরমাণুর সাথে 4 টি ইলেকট্রন-জোড় গঠন করায় মিথেন অণুতে C -পরমাণুর সমযোজ্যতা 4।
7. সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, সমযোজী যৌগের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ —
  1. ভৌত অবস্থা: সাধারণ উয়তা ও চাপে সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত গ্যাসীয় বা তরল হয়। আণবিক গুরত্ব বেশি হলে এদের কঠিন অবস্থাতেও পাওয়া যায়।
  2. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক: সমযোজী যৌগগুলির অণুর পৃথক অস্তিত্ব আছে এবং তাদের পারস্পরিক আকর্ষণ বল দুর্বল প্রকৃতির হয়। তাই আয়নীয় গের তুলনায় এদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। ব্যতিক্রম— SiO2, হীরক, SiC ইত্যাদি।
  3. দ্রাব্যতা: সমযোজী যৌগ সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে অদ্রাব্য কিন্তু অধুবীয় দ্রাবকে দ্রাব্য। ব্যতিক্রম—HCI সমযোজী হলেও ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত হয়।
  4. তড়িৎ পরিবাহিতা: গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় সমযোজী যৌগের অণুগুলি আয়নে বিয়োজিত হয় না বলে সমযোজী যৌগগুলি তড়িৎ পরিবহণ করে না। ব্যতিক্রম— HCl এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করে।
  5. বিক্রিয়ার গতিবেগ: সমযোজী যৌগের বিক্রিয়া ধীরগতিতে ঘটে।
  6. সমাবয়বতা: সমযোজী যৌগে প্রায়ই সমাবয়বতা ধর্ম দেখা যায়।
8. একটি তরল ও একটি কঠিন সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর – একটি তরল সমযোজী যৌগ হল জল (H2O) এবং একটি কঠিন সমযোজী যৌগ হল গ্লুকোজ (C6H12O6)
9. সমযোজী বন্ধনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – সমযোজী বন্ধনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. সমযোজী বন্ধনে শগ্রহণকারী পরমাণুগুলির তড়িৎ-ঋণাত্মকতা সমান বা প্রায় সমান হয়।
  2. সমযোজী বন্ধন গঠনকালে দুটি পরমাণুর মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড় গঠিত হয়। ইলেকট্রন-জোড়গুলি উভয় পরমাণু কর্তৃক সমভাবে ব্যবহৃত হয়।
  3. সমযোজী বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ আছে।
  4. সমযোজী বন্ধনে উপস্থিত ইলেকট্রন-জোড় সহজে পৃথক হয় না, তাই বন্ধন অপেক্ষাকৃত দৃঢ়।
  5. সমযোজী বন্ধন ধ্রুবীয় বা অধুবীয় উভয় প্রকার হতে পারে।
10. বিভিন্ন প্রকার সমযোজী বন্ধনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।
উত্তর – সমযোজী বন্ধন তিন প্রকার। যথা—সমযোজী এক বন্ধন, সমযোজী দ্বি-বন্ধন ও সমযোজী ত্রি-বন্ধন।
সমযোজী এক-বন্ধন: দুটি পরমাণুর মধ্যে একটি ইলেকট্রন-জোড় সমানভাবে ব্যবহৃত হয়ে যে বন্ধন সৃষ্টি হয়, তাকে সমযোজী এক বন্ধন (single bond) বলে। এটিকে ‘—’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন— H2 অণু (H-H), Cl2 অণু (Cl–Cl), HCl অণু (H-Cl) প্রভৃতির ক্ষেত্রে সমযোজী এক-বন্ধন উপস্থিত।
সমযোজী দ্বি-বন্ধন: দুটি পরমাণুর মধ্যে দুটি ইলেকট্রন-জোড় সমানভাবে ব্যবহৃত হয়ে যে বন্ধন সৃষ্টি হয়, তাকে সমযোজী দ্বি-বন্ধন (double bond) হলে। এটিকে ‘=’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন–O2(O=O) অণুতে সমযোজী দ্বি-বন্ধন উপস্থিত।
সমযোজী ত্রি-বন্ধন: দুটি পরমাণুর মধ্যে তিনটি ইলেকট্রন-জোড় সমানভাবে ব্যবহৃত হয়ে যে বন্ধন সৃষ্টি হয়, তাকে সমযোজী ত্রি-বন্ধন (triple bond) বলে। এটিকে ‘=’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন- N2 (N=N) অণুতে সমযোজী ত্রি-বন্ধন উপস্থিত।
11. বন্ধন ইলেকট্রন-জোড় ও নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় বলতে কী বোঝ?
উত্তর – বন্ধন ইলেকট্রন-জোড়: সমযোজী বন্ধন গঠনের সময় দুটি পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষ থেকে সমসংখ্যক ইলেকট্রন এসে এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড় গঠন করে এবং উভয় পরমাণুই ওই ইলেকট্রন-জোড় বা জোড়গুলিকে সমভাবে ব্যবহার করে। এই ইলেকট্রন-জোড়গুলিকে বন্ধন ইলেকট্রন-জোড় বলে।
নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড়: সমযোজী বন্ধন গঠিত হওয়ার সময় অনেকক্ষেত্রে বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরমাণু দুটির যোজ্যতা-
কক্ষে এমন ইলেকট্রন-জোড় থেকে যায় যারা বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণ করে না। এরুপ ইলেকট্রন-জোড়গুলিকে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় বলে।
উদাহরণ: N2 অণুতে তিনটি বন্ধন ইলেকট্রন-জোড় আছে এবং প্রতিটি N -পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে 1 টি করে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় আছে।
12. আয়নীয় বা তড়িৎযোজী যৌগ এবং সমযোজী যৌগের মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, সমযোজী ও তড়িৎযোজী যৌগের দুটি পার্থক্য লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িৎযোজী ও সমযোজী যৌগের দুটি ধর্মের তুলনা করো।
উত্তর – আয়নীয় বা তড়িৎযোজী যৌগ এবং সমযোজী যৌগের মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ—
13. আয়নীয় বন্ধন ও সমযোজী বন্ধনের পার্থক্য লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধনের দুটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর – আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধনের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ —
14. ন্যাপথালিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের নীচের দুটি ধর্মের তুলনা করো: গলনাঙ্ক ও জলে দ্রাব্যতা।
অনুরূপ প্রশ্ন, দুটি ভৌত ধর্মের সাহায্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ন্যাপথালিনের মধ্যে পার্থক্য করো।
উত্তর – ন্যাপথালিন ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের ধর্মের পার্থক্যগুলি হল—
15. সমযোজী যৌগ গ্লুকোজ কঠিন হলেও মিথেন গ্যাসীয় কেন?
উত্তর – সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত একক অনুরূপে থাকে এবং এই অণুগুলির মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ বল খুব দুর্বল। আণবিক গুরুত্ব বৃদ্ধির সাথে এই আকর্ষণ বলের মান বৃদ্ধি পায়। গ্লুকোজের আণবিক গুরুত্ব মিথেনের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় এর অণুগুলির পারস্পরিক আকর্ষণ বল মিথেনের অণুগুলির মধ্যেকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলের তুলনায় অনেক বেশি হয়। এর ফলে গ্লুকোজের অণুগুলি পরস্পরের সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে, কিন্তু মিথেনের ক্ষেত্রে অণুগুলি বিচ্ছিন্নভাবে একক অণুরূপে অবস্থান করে। তাই গ্লুকোজ সাধারণ উয়তায় কঠিন হলেও মিথেন গ্যাসীয় হয়।
16. NaCl অপেক্ষা ইথাইল অ্যালকোহলের আণবিক গুরুত্ব বেশি হওয়া সত্ত্বেও NaCl কঠিন, ইথাইল অ্যালকোহ তরল দশায় বর্তমান থাকে কেন?
উত্তর – NaCl তড়িৎযোজী যৌগ হওয়ায় Na+ ও Cl আয়নগুলি শক্তিশালী স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণে পরস্পর দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। এর ফলে NaCl শক্ত, কঠিন ও কেলাসাকার হয়। অপরপক্ষে, ইথানল বা ইথাইল অ্যালকোহল সমযোজী যৌগ হওয়ায় এর অণুর মধ্যে কোনো আয়ন থাকে না এবং কোনোরকম স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বল ক্রিয়াশীল হয় না। ইথানল  অণুগুলির মধ্যে খুব দুর্বল আন্তরাণবিক আকর্ষণ বল ক্রিয়াশীল হয় এবং অণুগুলি দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকতে পারে না। তাই ইথাইল অ্যালকোহল তরল দশায় বর্তমান থাকে।
17. ন্যাপথালিন জলে দ্রবীভূত হয় না কিন্তু ইথানলে দ্রবীভূত হয় কেন?
উত্তর –সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়, কিন্তু ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় না। জল একটি ধ্রুবীয় দ্রাবক কিন্তু ইথানল অদ্রবীয় দ্রাবক। তাই সমযোজী পদার্থ ন্যাপথালিন জলে দ্রবীভূত না হলেও ইথানলে দ্রবীভূত হয়।
18. সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবাহী হলেও চিনি বা গ্লুকোজের জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবাহী হয় না কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, চিনির জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না, কিন্তু সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ পারে। কেন?
উত্তর – সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) আয়নীয় যৌগ এবং জলীয় দ্রবণে NaCl -এর কেলাসের বিয়োজনের ফলে Na+ ও Cl আয়নগুলি মুক্ত  হয়। এই আয়নগুলি তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে বলে সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবাহী। সমযোজী যৌগ চিনি বা গ্লুকোজের অণুগুলি জলীয় দ্রবণে আয়নে বিয়োজিত হয় না। তাই চিনি বা গ্লুকোজের জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না।
19. সমযোজী পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মান সাধারণত কম হয় কেন?
উত্তর – সমযোজী পদার্থের অণুগুলির মধ্যেকার পারস্পরিক আকর্ষণ বল (আন্তরাণবিক আকর্ষণ বল) অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় একটি অণুকে অপর অণু থেকে পৃথক করতে খুব বেশি শক্তির প্রয়োজন হয় না। তাই কতকগুলি বিরাট আকারবিশিষ্ট সমযোজী কঠিন পদার্থ (SiO2, হীরক, SiC ইত্যাদি) ছাড়া অন্যান্য সমযোজী পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক আয়নীয় যৌগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হয়।
20. সমযোজী যৌগের রাসায়নিক বিক্রিয়া ধীরগতিতে সম্পন্ন হয় কেন?
উত্তর – সমযোজী যৌগের অণুতে উপস্থিত শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন ভাঙার জন্য যথেষ্ট শক্তি, সময় ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুঘটকের প্রয়োজন হয়। আবার নতুন সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি হতেও যথেষ্ট সময় লাগে। তাই সমযোজী যৌগগুলির রাসায়নিক বিক্রিয়া ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়। যেমন—সন্ধান প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজের ইথানলে পরিণত হতে 3 দিন সময় লাগে।
21. সমযোজী যৌগের তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – গলিত অবস্থায় বা সমযোজী যৌগের জলীয় দ্রবণে আয়ন বা মুক্ত ইলেকট্রন না থাকায় এরা সাধারণত তড়িৎ পরিবহণ করে না। তবে, কিছু পোলার সমযোজী যৌগ যেমন—HCl জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয়ে ক্যাটায়ন (H+) ও অ্যানায়ন (Cl) উৎপন্ন করতে পারে, ফলে তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে।
22. অক্সিজেন-ঘটিত দুটি যৌগের উদাহরণ দাও যার একটি তড়িৎযোজী ও অপরটি সমযোজী।
উত্তর – অক্সিজেন-ঘটিত একটি তড়িৎযোজী যৌগ হল ক্যালশিয়াম অক্সাইড (CaO) ও একটি সমযোজী যৌগ হল জল (H2O)।
23. লুইস-ডট ডায়াগ্রাম কী ?
উত্তর – ইলেকট্রনকে বিন্দু (dot) দিয়ে চিহ্নিত করে সমযোজী বন্ধনের উপস্থিতি বোঝানোর জন্য দুটি পরমাণুর মাঝে একজোড়া বা একের অধিক জোড়া বিন্দু ব্যবহার করে সমযোজী যৌগের গঠন প্রকাশের পদ্ধতিকে লুইস-ডট ডায়াগ্রাম (Lewis dot diagram) বলে।
24. সমযোজী যৌগের রৈখিক সংকেত কাকে বলে?
উত্তর – সমযোজী যৌগের উপাদান পরমাণুগুলির মধ্যে উপস্থিত এক বা একাধিক বন্ধনকে এক বা একাধিক সরলরেখা দিয়ে চিহ্নিত করে সমযোজী যৌগগুলিকে যে সংকেত দ্বারা প্রকাশ করা হয় তাকে সমযোজী যৌগের গঠন-সংকেত বা রৈখিক সংকেত বলে।
25. হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCI) অণু কীভাবে গঠিত হয়, লুইস-ডট ডায়াগ্রামের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।
অথবা, একটি সমযোজী যৌগিক অণু গঠনের উদাহরণ দাও।
উত্তর – একটি হাইড্রোজেন ও একটি ক্লোরিন পরমাণু, সমযোজী বন্ধন দ্বারা রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে HCl অণুর সৃষ্টি করে। Hপরমাণুর যোজ্যতা-কক্ষে অর্থাৎ K কক্ষে 1 টি ইলেকট্রন এবং Cl -পরমাণুর যোজ্যতা- কক্ষে অর্থাৎ M-কক্ষে 7 টি ইলেকট্রন থাকে। রাসায়নিক বন্ধন গঠনের সময়, H-পরমাণুর 1 টি ইলেকট্রন ও Cl-পরমাণুর M-কক্ষের 1 টি ইলেকট্রন মিলিত হয়ে 1 টি ইলেকট্রন-জোড় গঠন করে। উভয় পরমাণুর দ্বারাই ওই ইলেকট্রন-জোড় সমভাবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে H -পরমাণু, He -পরমাণুর মতো ও Cl-পরমাণু, Ar-পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করে। এভাবে 1 টি H পরমাণু ও 1টি CI-পরমাণু সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে HCl অণু গঠন করে।
26. H2O অণুর লুইস-ডট গঠন ব্যাখ্যা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, H2O অণুর ইলেকট্রন ডট গঠন লেখো।
উত্তর – H2O অণু গঠনের সময় 1 টি O-পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 6) যোজ্যতা কক্ষের 2 টি ইলেকট্রন পৃথকভাবে দুটি H -পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 1) প্রতিটির 1 টি করে ইলেকট্রনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে 2টি পৃথক ইলেকট্রন-জোড় গঠন করে। 2 টি ইলেকট্রন-জোড়কে পরমাণু ও দুটি H -পরমাণু সমভাবে ব্যবহার করে নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ন্যায় স্থায়ী ইলেকট্রন-বিন্যাস প্রাপ্ত হয়। এক্ষেত্রে, O পরমাণুর বহিস্তম কক্ষে উপস্থিত দু-জোড়া ইলেকট্রন-জোড় নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড়রূপে অবস্থান করে ও বন্ধন গঠনে অংশ নেয় না।
27. সমযোজী যৌগ কি কখনও তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো। 
উত্তর – হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) একটি সমযোজী যৌগ। সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত আয়ন উৎপন্ন করতে পারে না ও তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না। কিন্তু HCI জলে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রক্সোনিয়াম (H3O+) ও ক্লোরাইড (Cl) আয়ন উৎপন্ন করে।
HCl + H2O → H3O+ + Cl
এই উৎপন্ন আয়নগুলি তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে। তাই HCl সমযোজী যৌগ হলেও এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করে।
28. ক্লোরিন কী কী ধরনের রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে সোডিয়াম ও হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যথাক্রমে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গঠন। করে? উভয়ক্ষেত্রে ইলেকট্রন ডট গঠন এঁকে দেখাও। 
উত্তর – ক্লোরিন, সোডিয়ামের সাথে তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধন গঠনের মাধ্যমে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং হাইড্রোজেনের সাথে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গঠন করে।
29. লুইস-ডট ডায়াগ্রামের সাহায্যে NH3 অণুর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – NH3 অণু গঠনের সময় N-পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 5 ) রহিস্তম কক্ষের 3 টি ইলেকট্রন, 3 টি H-পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 1) 3 টি ইলেকট্রনের সঙ্গে পৃথকভাবে 3 টি ইলেকট্রন-জোড় গঠন করে। প্রতিটি ইলেকট্রন-জোড়কে H ও N পরমাণু সমভাবে ব্যবহার করে। ফলে, N -পরমাণুটি Ne-পরমাণুর মতো এবং H -পরমাণুগুলি He -পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করে। এক্ষেত্রে N-পরমাণুর বহিস্তম কক্ষের একজোড়া ইলেকট্রন নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড়রূপে অবস্থান করে।
30. মিথেন অণুর লুইস-ডট গঠন দেখাও।
উত্তর – মিথেন অণু গঠনের সময় 1 টি C-পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস: 2, 4 ) বহিস্তম কক্ষের 4 টি ইলেকট্রন 4 টি H পরমাণুর (ইলেকট্রন-বিন্যাস:  1) প্রতিটির 1 টি ইলেকট্রনের সাথে পৃথকভাবে ইলেকট্রন-জোড় গঠন করে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ইলেকট্রন-জোড়কে সমভাবে ব্যবহার করে C-পরমাণু, Ne -পরমাণুর মতো এবং H পরমাণু, He -পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভ করে। ফলে 4 টি C-H সমযোজী বন্ধন গঠিত হয় ও CH4 অণুর সৃষ্টি হয়।
31. Cl2 অণু গঠিত হয় কিন্তু Ne2 বা He2 অণু গঠিত হয় না কেন?
উত্তর – Cl -পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে 7টি ইলেকট্রন থাকে। দুটি Cl -পরমাণু তাদের যোজ্যতা কক্ষের বিজোড় ইলেকট্রন দুটির সাহায্যে 1টি ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে তাদের অষ্টক পূর্তি ঘটায় ও সুস্থিতি লাভ করে। ফলে Cl2 অণু গঠিত হয়। নিষ্ক্রিয় মৌল Ne ও He -পরমাণুর ক্ষেত্রে যথাক্রমে অষ্টক পূর্ণ ও দ্বৈত পূর্ণ থাকায় এগুলি খুবই সুস্থিত। ফলে 2 টি Ne বা 2 টি He -পরমাণু পরস্পরের মধ্যে বন্ধন গঠনের প্রবণতা দেখায় না। তাই Ne2 বা He2 অণু গঠিত হয় না।
32. A একটি ধাতু, B ও C উচ্চ তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌল। AB ও BC যৌগদুটির মধ্যে কোন্‌টির তড়িৎযোজী ও কোন্‌টির সমযোজী হওয়ার সম্ভাবনা আছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – A মৌলটি ধাতু হওয়ায় ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্যাটায়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা দেখাবে। B উচ্চ তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌল হওয়ায় ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা দেখাবে। অর্থাৎ A ও B মৌল দুটি রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যৌগ গঠন করলে A মৌলের পরমাণু দ্বারা ইলেকট্রন বর্জিত হবে (ক্যাটায়ন গঠন) এবং ওই বর্জিত ইলেকট্রন B মৌলের পরমাণু দ্বারা গৃহীত হবে (অ্যানায়ন গঠন)। উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ বল দ্বারা আবদ্ধ হয়ে AB যৌগ গঠন করবে। তাই AB যৌগটির তড়িৎযোজী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। B ও C উভয়ই উচ্চ তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌল অর্থাৎ এদের মধ্যে তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য খুবই কম। তাই এদের মধ্যে ইলেকট্রন গ্রহণ-বর্জন সম্ভব নয়। ফলে উক্ত B ও C মৌল দুটি রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যৌগ গঠনে অংশগ্রহণ করলে গঠিত যৌগটি সমযোজী যৌগ হবে অর্থাৎ BC যৌগটির সমযোজী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক সাধারণত আয়নীয় যৌগের তুলনায় –
(a) কম হয়
(b) বেশি হয়
(c) সমান হয়
(d) বেশি বা কম হতে পারে
উত্তর – (a) কম হয়
2. কোন্‌টি জলে অদ্রাব্য?
(a) MgCl2
(b) Na2SO4
(c) CHCl3
(d) HCl
উত্তর – (c) CHCl3
3. যেসব যৌগের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র অণুর অস্তিত্ব আছে তাদের মধ্যে উপস্থিত রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি হবে—
(a) আয়নীয়
(b) তড়িৎযোজী
(c) সমযোজী
(d) ধাতব
উত্তর – (c) সমযোজী
4. দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজকর্মের জন্য বহুল ব্যবহৃত সমযোজী যৌগটি হল —
(a) ফটকিরি
(b) কাপড় কাচা সোডা
(c) জল
(d) কাপড় কাচা সাবান
উত্তর – (c) জল
5. নীচের কোন্ – মৌলটি সমযোজী ও আয়নীয় উভয় প্রকার বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণ করে না?
(a) N
(b) O
(c) Na
(d) P
উত্তর – (c) Na
6. সমযোজী বন্ধনের ধারণা দেন বিজ্ঞানী—
(a) লুইস
(b) আরহেনিয়াস
(c) কেলভিন
(d) অ্যাভোগাড্রো
উত্তর – (a) লুইস
7. নীচের কোন্ অণুটির প্রথাগত লুইস গঠন পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়? 
(a) N2
(b) NH3
(c) CH4
(d) O2
উত্তর – (d) O2
৪. কোন্ যৌগটিতে সমযোজী দ্বি-বন্ধন আছে?
(a) H2O
(b) NH3
(c) CO2
(d) CH4
উত্তর – (c) CO2
9. কোন্ অণুটিতে সমযোজী ত্রি-বন্ধন আছে?
(a) H2
(b) O2
(c) N2
(d) F2
উত্তর – (c) N2
10. দুটি পরমাণুর মধ্যে সর্বাধিক কয়টি সমযোজী বন্ধন গঠিত হতে পারে?
(a) 1টি
(b) 2টি
(c) 3টি
(d) 4টি
উত্তর – (c) 3টি
11. গ্যাসীয় অবস্থায় HCl যৌগে দেখা যায় —
(a) সমযোজী
(b) তড়িৎযোজী
(c) অসমযোজী বন্ধন
(d) তড়িৎযোজী ও সমযোজী বন্ধন
উত্তর – (a) সমযোজী
12. নীচের কোন্ যৌগের মধ্যে তড়িৎযোজী, সমযোজী ও অসমযোজী তিনপ্রকার বন্ধন আছে?
(a) KCl
(b) H2O
(c) NH4Cl
(d) NaCN
উত্তর – (c) NH4Cl
13. নীচের কোন্ যৌগটিতে সমযোজী ও আয়নীয় উভয়প্রকার বন্ধন উপস্থিত?
(a) NH3
(b) CCl4
(c) HCl
(d) CaCO3
উত্তর – (d) CaCO3
14. প্রদত্ত কোন্ মৌলটি হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমযোজী যৌগ গঠন করে?
(a) Ca
(b) Na
(c) C
(d) Li
উত্তর – (c) C
15. অ্যাসিটিলিন অণুর গঠনে দেখা যায়—
(a) তিনটি এক-বন্ধন
(b) দুটি এক-বন্ধন ও একটি দ্বি-বন্ধন
(c) একটি ত্রি-বন্ধন ও দুটি এক বন্ধন
(d) দুটি দ্বি-বন্ধন
উত্তর – (c) একটি ত্রি-বন্ধন ও দুটি এক বন্ধন
16. সমযোজী ত্রি-বন্ধন অনুপস্থিত এমন অণু হল—
(a) C2H2
(b) N2
(c) HCN
(d) C2H4
উত্তর – (d) C2H4
17. ঘরের উন্নতায় কোন্ সমযোজী যৌগটি তরল অবস্থায় পাওয়া যায়?
(a) ন্যাপথালিন
(b) ব্রোমিন
(c) ক্লোরিন
(d) ইউরিয়া
উত্তর – (b) ব্রোমিন
18. নিম্নের কোন্‌টি সমযোজী যৌগ?
(a) CaO
(b) MgO
(c) NaCl
(d) CH4
উত্তর – (d) CH4
19. নীচের কোন্‌টি সমযোজী যৌগ নয়? 
(a) H2O
(b) NH3
(c) MgCl2
(d) CH4
উত্তর – (c) MgCl2
20. কোন্ যৌগটির মধ্যে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় বর্তমান? 
(a) CH4
(b) NH3
(c) C2H2
(d) C2H4
উত্তর – (b) NH3
21. একটি সমযোজী ত্রি-বন্ধনযুক্ত যৌগ হল— 
(a) H2O
(b) CO2
(c) C2H2
(d) CH4
উত্তর – (c) C2H2
22. সমযোজী দ্বি-বন্ধনযুক্ত যৌগ কোন্‌টি?
(a) OF2
(b) N2
(c) C2H4
(d) C2H2
উত্তর – (c) C2H4
23. কোন্‌টি দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না? 
(a) NaCl
(b) NaF
(c) CCl4
(d) KCl
উত্তর – (c) CCl4
24. প্রকৃত বন্ধনটি হল—
(a) তড়িৎযোজী বন্ধন
(b) সমযোজী বন্ধন
(c) নিউক্লিয় বন্ধন
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) সমযোজী বন্ধন
25. সমযোজী ত্রি-বন্ধনে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা হল — 
(a) 2টি
(b) 4টি
(c) 6টি
(d) 8টি
উত্তর – (c) 6টি
26. নাইট্রোজেন অণুতে সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা — 
(a) 1
(b) 2
(c) 3
(d) 4
উত্তর – (c) 3
27. নীচের কোন্‌টিতে সমযোজী বন্ধন বর্তমান?
(a) হাইড্রোজেন ক্লোরাইড
(b) সোডিয়াম ক্লোরাইড
(c) লিথিয়াম হাইড্রক্সাইড
(d) ক্যালশিয়াম অক্সাইড
উত্তর – (a) হাইড্রোজেন ক্লোরাইড
28. জলে অদ্রাব্য সমযোজী যৌগ কোন্‌টি?
(a) চিনি
(b) ইউরিয়া
(c) বেঞ্জিন
(d) ইথানল
উত্তর – (c) বেঞ্জিন
29. নীচের কোন্ মৌলটি সমযোজী ও আয়নীয় উভয় প্রকার বন্ধনে অংশগ্রহণ করে? 
(a) Ca
(b) Na
(c) Cl
(d) P
উত্তর – (c) Cl
30. সমযোজী উদ্বায়ী কঠিন পদার্থের উদাহরণ হল—
(a) গ্লুকোজ
(b) খাদ্যলবণ
(c) চিনি
(d) ন্যাপথালিন
উত্তর – (d) ন্যাপথালিন
31. CH4 -এর মধ্যে উপস্থিত সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা — 
(a) 1
(b) 2
(c) 3
(d) 4
উত্তর – (d) 4
32. জৈব যৌগ মাত্রই—
(a) সমযোজী যৌগ
(b) তড়িৎযোজী যৌগ
(c) সমযোজী কিংবা তড়িৎযোজী হতে পারে
(d) সমযোজী কিংবা তড়িৎযোজী কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) সমযোজী যৌগ
33. HCI অণুতে কয়টি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় আছে? 
(a) 0
(b) 1
(c) 2
(d) 3
উত্তর – (d) 3

একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. প্রায় সমান তড়িৎ-ঋণাত্মকতাসম্পন্ন পরমাণুর মধ্যে বিপরীতধর্মী আয়ন গঠনের মাধ্যমে যৌগ গঠন সম্ভব নয় কেন?
উত্তর – এদের মধ্যে ইলেকট্রন আদান-প্রদানের সম্ভাবনা খুব কম বলে বিপরীতধর্মী আয়ন গঠনের মাধ্যমে যৌগ গঠন সম্ভব নয়।
2. দুটি অধাতুর মধ্যে বিক্রিয়ায় কোন্ ধরনের বন্ধনের সৃষ্টি হয়?
উত্তর – দুটি অধাতুর মধ্যে বিক্রিয়ায় সমযোজী বন্ধনের সৃষ্টি হয়।
3. সমযোজী বন্ধন কয় প্রকার?
উত্তর – সমযোজী বন্ধন তিনপ্রকার—এক বন্ধন, দ্বি-বন্ধন ও ত্রি-বন্ধন।
4. লুইস-ডট ডায়াগ্রামে মৌলের পরমাণুর কোন্ ইলেকট্রনগুলিকে দেখানো হয়?
উত্তর – শুধুমাত্র যোজ্যতা কক্ষের ইলেকট্রনগুলিকেই দেখানো হয়।
5. সমযোজী ত্রি-বন্ধনযুক্ত মৌলিক ও যৌগিক অণুর উদাহরণ দাও।
উত্তর –সমযোজী ত্রি-বন্ধনযুক্ত মৌলিক অণু নাইট্রোজেন (N≡N) ও যৌগিক অণু অ্যাসিটিলিন (H—C≡C—H)।
6. দুটি সমযোজী দ্বি-বন্ধনযুক্ত একটি যৌগিক অণুর নাম লেখো।
উত্তর – কার্বন ডাইঅক্সাইড (O=C=O) অণু।
7. একটি গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বন যৌগের উদাহরণ দাও যার অণুতে কেবলমাত্র সমযোজী এক বন্ধন আছে।
উত্তর – মিথেন (CH4) একটি গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বন যৌগ যার অণুতে কেবলমাত্র সমযোজী এক-বন্ধন আছে।
8. সমাবয়বতা ধর্ম কোন্ প্রকার যৌগে দেখা যায় ?
উত্তর – সমাবয়বতা ধর্ম সমযোজী যৌগে দেখা যায়।
9. একটি সমযোজী কঠিন পদার্থের উদাহরণ দাও যা তড়িতের পরিবাহী।
উত্তর – গ্রাফাইট হল এরূপ একটি সমযোজী কঠিন পদার্থ।
10. একটি সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও যার জলীয় দ্রবণ তড়িতের সুপরিবাহী।
উত্তর – হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl)।
11. সমযোজী এক বন্ধনযুক্ত একটি যৌগের উদাহরণ দাও যেটি সাধারণ উন্নতায় তরল।
উত্তর – জল হল এমন একটি সমযোজী পদার্থ যা সাধারণ উন্নতায় তরল এবং যার অণুতে কেবলমাত্র সমযোজী এক বন্ধন বর্তমান।
12. একটি কঠিন অনুদ্বায়ী সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর – চিনি বা কেন সুগার (C12H22O11)।
13. দুটি সমযোজী যৌগের নাম লেখো যাদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক খুব বেশি।
উত্তর – বোরন কার্বাইড (B4C) এবং সিলিকা (SiO2)।
14. সমযোজী যৌগ সাধারণত কোন প্রকার দ্রাবকে দ্রাব্য?
উত্তর – সমযোজী যৌগ সাধারণত নন্-পোলার বা অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রাব্য।
15. জল ও বেঞ্জিনের মধ্যে কোন্‌টিতে কেরোসিন দ্রবীভূত হবে?
উত্তর – সমযোজী পদার্থ হওয়ায় কেরোসিন বেঞ্জিনে দ্রবীভূত হবে।
16. জল ও ইথানলের মধ্যে কোন্‌টি বেশি উদ্বায়ী?
উত্তর – জল ও ইথানলের মধ্যে ইথানল বেশি উদ্বায়ী।
17. সমযোজী বন্ধনযুক্ত একটি কঠিনের উদাহরণ দাও যার কাঠিন্য আয়নীয় যৌগের তুলনায় বেশি।
উত্তর – সমযোজী কঠিন পদার্থ হীরকের কাঠিন্য যে-কোনো আয়নীয় যৌগের তুলনায় বেশি।
18. সমযোজী ও তড়িৎযোজী যৌগের মধ্যে কোন্‌গুলি সাধারণত তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ? 
উত্তর – তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ।
19. H2O ও CaH, যৌগ দুটির মধ্যে কোন্‌টি আয়ন গঠনে সক্ষম?
উত্তর – CaH2 আয়ন গঠনে সক্ষম।
20. হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের অণুতে কোন ধরনের রাসায়নিক বন্ধন বর্তমান?
উত্তর – হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের অণুতে সমযোজী বন্ধন বর্তমান।
21. একটি তড়িৎ ধনাত্মক মৌলের উদাহরণ দাও যা সমযোজী ও তড়িৎযোজী উভয়প্রকার যৌগ গঠনে অংশগ্রহণ করে।
উত্তর – এরুপ মৌলটি হল হাইড্রোজেন (H)।
22. একটি তড়িৎ-ঋণাত্মক মৌলের উদাহরণ দাও যা সমযোজী ও তড়িৎযোজী উভয়প্রকার যৌগ গঠনে অংশগ্রহণ করে।
উত্তর – এরুপ মৌলটি হল ক্লোরিন (Cl)।
23. কঠিন ন্যাপথালিন ও কঠিন খাদ্যলবণকে তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের সাহায্যে পার্থক্য করা যাবে কি?
উত্তর – কঠিন ন্যাপথালিন ও কঠিন খাদ্যলবণ, উভয়ই তড়িতের কুপরিবাহী, তাই তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের সাহায্যে এদের পার্থক্য করা যাবে না।
24. HF যৌগে কী জাতীয় বন্ধন আছে?
উত্তর – HF যৌগে সমযোজী বন্ধন আছে।
25. একটি অণুর উদাহরণ দাও যার কোনো পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে একটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় আছে।
উত্তর – অ্যামোনিয়া (NH3) অণুতে নাইট্রোজেন পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় বর্তমান।
26. কার্বন হাইড্রোজেনের সঙ্গে কোন রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মিথেন উৎপন্ন করে?
উত্তর – সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মিথেন উৎপন্ন করে।
27. N2 অণুর মধ্যে কটি ইলেকট্রন-জোড় আছে?
উত্তর – N2 অণুর মধ্যে 3 টি বন্ধন ইলেকট্রন-জোড় এবং 2টি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় বর্তমান।
28. কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণুতে সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা কয়টি?
উত্তর – কার্বন ডাইঅক্সাইডের অণুতে সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা 4 টি।
29. ইথিলিন অণুতে কতগুলি সমযোজী বন্ধন আছে?
উত্তর – ইথিলিন অণুতে 6 টি সমযোজী বন্ধন আছে।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. বিজ্ঞানী ……… 1916 সালে সমযোজী বন্ধনের মডেল উপস্থাপন করেন।
উত্তর – লুইস
2. ………  সৃষ্টির মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়।
উত্তর – ইলেকট্রন-জোড়
3. নাইট্রোজেন অণুতে উপস্থিত সমযোজী বন্ধন-সংখ্যা ………. টি।
উত্তর – 3
4. কঠিন কেলাসাকার সমযোজী যৌগের উদাহরণ ………..।
উত্তর – চিনি
5. ইথানল জলে ………..।
উত্তর – দ্রাব্য
6. গ্লুকোজের জলীয় দ্রবণ তড়িতের ………..।
উত্তর – অপরিবাহী
7. দ্রাবকরূপে ব্যবহৃত হয় এমন একটি সমযোজী তরল পদার্থের উদাহরণ হল ………..।
উত্তর – জল
8. চিনির জলীয় দ্রবণ ………. হয় না।
উত্তর – আয়নিত
9. কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে এমন সমযোজী বন্ধনযুক্ত পদার্থ হল ………..।
উত্তর – গ্রাফাইট
10. লুইস-ডট ডায়াগ্রামে কেবল ………… ইলেকট্রনগুলিকে দেখানো হয়।
উত্তর – যোজক
11. HCl-এর সমযোজী বন্ধনের প্রকৃতি হল ………..।
উত্তর – ধ্রুবীয়
12. H2O অণুর O-পরমাণুতে উপস্থিত নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড়ের সংখ্যা ………. টি।
উত্তর – 2
13. NH3 অণুর N-এ ………… টি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন-জোড় উপস্থিত।
উত্তর – 1
14: একই প্রকারের 4 টি বন্ধন আছে এমন সমযোজী পদার্থের উদাহরণ হল ………..।
উত্তর – মিথেন
15. CO2 অণুতে বন্ধন সৃষ্টিকারী মোট ইলেকট্রন-জোড়ের সংখ্যা হল ………. টি।
উত্তর – 4
16. C2H4 অণুতে ………. টি সমযোজী এক বন্ধন আছে।
উত্তর – 4
17. CH4, C2H4 ও C2H2 -এর মধ্যে ত্রি-বন্ধন উপস্থিত ……… অণুতে।
উত্তর – C2H2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *