WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter 8.5 ধাতুবিদ্যা
WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter 8.5 ধাতুবিদ্যা
West Bengal Board 10th Class Science Solutions Physics Chapter 1 পরিবেশের জন্য ভাবনা
West Bengal Board 10th Physics Solutions
TOPIC – A আকরিক, খনিজ ও ধাতু-সংকর
বিষয়সংক্ষেপ
লোহা বা আয়রনের প্রকারভেদ ও ব্যবহার: কার্বনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে আয়রনকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—(i) কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহা (C: 2-4.5%), (ii) রট্ আয়রন বা পেটা লোহা (C: 0.1-0.15%), (iii) স্টিল বা ইস্পাত (C: 0.15-1.5% ) ।
- কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহার ব্যবহার: লোহার নল, ম্যানহোলের ঢাকনা, কড়াই ইত্যাদি তৈরিতে।
- রট্ আয়রন বা পেটা লোহার ব্যবহার: তড়িৎচুম্বকের মজ্জা, শেকল, পেরেক, রড ইত্যাদি তৈরিতে।
- স্টিল বা ইস্পাতের ব্যবহার: রেলের বগি, ইঞ্জিন, জাহাজ, বন্দুক, জলের পাম্প ইত্যাদি তৈরিতে।
কপার বা তামার ব্যবহার: (i) টেলিফোনের তার ও ওয়্যারিং-এর তার হিসেবে। (ii) তড়িৎকোশে তড়িদ্বাররূপে ও তড়িৎ-লেপনের কাজে। (iii) মোটর, ট্রান্সফর্মার, ডায়নামো প্রভৃতি বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরিতে। (iv) বয়লার, ক্যালোরিমিটার তৈরিতে।
জিংক বা দস্তার ব্যবহার: (i) পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন প্রস্তুতিতে, (ii) জিংক হোয়াইট নামক সাদা রং প্রস্তুতিতে। (iii) নির্জল কোশ তৈরিতে।(iv) লোহায় মরচে পড়া রোধ করতে গ্যালভানাইজেশনের কাজে।
অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার: (i) বিমান ও মোটরগাড়ির কাঠামো তৈরিতে, (ii) বৈদ্যুতিক তার প্রস্তুতিতে। (iii) রান্নার বাসনপত্র তৈরিতে। (iv) থার্মিট পদ্ধতিতে ভাঙা রেললাইন জোড়া লাগাতে। (v) প্যাকিং ফয়েল প্রস্তুত করতে।
ধাতু-সংকর: দুই বা ততোধিক ধাতুর সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণে উৎপন্ন কঠিন দ্রবণকে ধাতু-সংকর বলে। তবে, ধাতু-সংকরে অধাতুও থাকতে পারে। যেমন ইস্পাতে কার্বন থাকে [আয়রনের প্রকারভেদ-এ ইস্পাত-এর উল্লেখ থাকলেও এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ধাতু-সংকর]।
আকরিক ও খনিজ: ভূগর্ভে বা ভূত্বকে প্রাপ্ত প্রকৃতিজাত অজৈব পদার্থসমূহ যাদের মধ্যে এক বা একাধিক ধাতু প্রধানত যৌগরূপে (কখনো- কখনো মুক্ত অবস্থায়) অন্যান্য অশুদ্ধির সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তাদের সংশ্লিষ্ট ধাতুর খনিজ বলে। যেমন—রেড হিমাটাইট (Fe2O3), আয়রন পাইরাইট্স্ (FeS2) প্রভৃতি হল আয়রনের খনিজ। আবার, যে সমস্ত খনিজ থেকে সহজে ও লাভজনক উপায়ে উচ্চমানের ধাতু নিষ্কাশন করা যায় তাকে আকরিক বলে। যেমন—রেড হিমাটাইট আয়রনের আকরিক হলেও আয়ন পাইরাইট্স্ নয়।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
TOPIC – A আকরিক, খনিজ ও ধাতু-সংকর
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
1. ঢালাই লোহা, পেটা লোহা এবং ইস্পাতের ব্যবহার লেখো।
উত্তর – লোহার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারগুলি হল—
কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহার ব্যবহার: (1) পেটা লোহা প্রস্তুতিতে ঢালাই লোহা ব্যবহৃত হয়। (2) লোহার নল, ম্যানহোলের ঢাকনা, ইস্ত্রি, রেলিং, কড়াই, আলোকস্তম্ভ প্রভৃতি তৈরিতে ঢালাই লোহা ব্যবহৃত হয়।
রট্ আয়রন বা পেটা লোহার ব্যবহার: (1) তড়িৎচুম্বকের মজ্জা তৈরিতে পেটা লোহা ব্যবহৃত হয়। (2) তার, শেকল, পেরেক, রড, নাট বল্টু প্রভৃতি তৈরিতে পেটা লোহা ব্যবহৃত হয়। (3) জাহাজের নোঙর, ক্রেন প্রভৃতি তৈরিতে পেটা লোহা ব্যবহৃত হয়।
ইস্পাত বা স্টিলের ব্যবহার: (1) মোটরগাড়ি, রেলের বগি, ইঞ্জিন, চাকা, রেললাইন, গাড়ির স্প্রিং, জাহাজ ইত্যাদি তৈরিতে, (2) ছুরি, কাঁচি, ব্লেড অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি প্রস্তুতিতে, (3) হাতা, খুন্তি, থালা, বাটি, গ্লাস ইত্যাদি প্রস্তুতিতে, (4) কৃষিকাজের জন্য লাঙল ও ট্র্যাক্টরের ফলা, জলের পাম্প তৈরিতে স্টিল ব্যবহৃত হয়।
2. কার্বনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে আয়রন বা লোহাকে কী কী শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ? এর মধ্যে কোন্টি বিশুদ্ধতম ?
উত্তর – কার্বনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে আয়রনকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহা (C: 2-4.5%), রট আয়রন বা পেটা লোহা (C: 0.10.15% ) ও স্টিল বা ইস্পাত ( C : 0.15-1.5% ) ।
এই তিন প্রকার আয়রনের মধ্যে রট্ আয়রন বিশুদ্ধতম।
3. তামার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, কপারের একটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িৎ-পরিবাহী তার ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে তামা ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর – (1) মুদ্রা, মূর্তি, ছাঁচ প্রভৃতি প্রস্তুতিতে তামা ব্যবহৃত হয়। (2) তাপের সুপরিবাহী হওয়ার জন্য রান্নার বাসনপত্র, ক্যালোরিমিটার, বয়লার প্রভৃতি তৈরিতে তামা ব্যবহৃত হয়। (3) তামা নিম্ন রোধসম্পন্ন অর্থাৎ তড়িতের সুপরিবাহী এবং নমনীয় প্রকৃতির ধাতু হওয়ায় টেলিফোনের তার ও তড়িৎ পরিবাহী তার (ওয়্যারিং-এর তার) হিসেবে, মোটর, ডায়ানামো, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে, তড়িৎকোশের তড়িদ্বার রূপে এবং তড়িৎ-লেপনের কাজে তামা ব্যবহৃত হয়।
4. তামা তাপের সুপরিবাহী—এই ধর্মটির ব্যাবহারিক প্রয়োগ লেখো।
উত্তর – (1) রান্নার বাসনপত্র তৈরিতে তামা ব্যবহৃত হয়। এর ফলে সহজে খাদ্যবস্তুতে তাপ সরবরাহ হয় ও রান্না দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। (2) ক্যালোরিমিটার প্রস্তুতিতে তামা ব্যবহৃত হয়। ফলে পরীক্ষাধীন বস্তুর দ্বারা গৃহীত বা বর্জিত তাপ সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায়। (3) কলকারখানায় বয়লার তৈরিতে তামা ব্যবহৃত হয়। তামা তাপের সুপরিবাহী হওয়ায় বয়লারের জল দ্রুত গরম হয়।
5. জিংকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারগুলি লেখো।
উত্তর – (1) পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন প্রস্তুতির জন্য ও বিজারকরূপে, (2) নির্জল কোশ বা ব্যাটারি তৈরিতে, (3) জিংক হোয়াইট নামক সাদা রং প্রস্তুতিতে, (4) ধাতব সোনা ও রুপো নিষ্কাশনে এবং ছাপার ব্লক তৈরিতে, (5) লোহার তৈরি জিনিসের ওপর জিংকের প্রলেপ দিয়ে মরচে পড়া প্রতিরোধ করতে জিংক ব্যবহৃত হয়।
6. সংকর ধাতু কী? একটি পরিচিত সংকর ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – দুই বা ততোধিক ধাতু কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধাতু ও অধাতুর সংমিশ্রণে উপাদানগুলি থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যযুক্ত ও ধাতুর মতো আচরণকারী যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন হয়, তাকে ধাতু-সংকর বা সংকর ধাতু (alloy) বলে ।
পিতল একটি পরিচিত সংকর ধাতু যার উপাদান হল কপার (60-80%) এবং জিংক (20-40%)।
7. অ্যালুমিনিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যালুমিনিয়ামের একটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যালুমিনিয়াম একটি হালকা ও ক্ষয়রোধী ধাতু—এই ধর্মগুলির ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যালুমিনিয়ামের দুটি ধর্ম নীচে উল্লেখ করা হল।
ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে কোথায় এদের প্রয়োগ করা হয় উল্লেখ করো—(i) Al তড়িতের সুপরিবাহী (ii) Al-কে খুব পাতলা পাতে পরিণত করা যায়।
উত্তর – (1) তড়িৎ-এর সুপরিবাহী হওয়ায় বৈদ্যুতিক তার ও যন্ত্রাংশ তৈরিতে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়। (2) হালকা ও ক্ষয়রোধী ধাতু বলে বিমান ও মোটরগাড়ির কাঠামো, হালকা যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র, সিঁড়ি বা ল্যাডার, বালতি, বাড়ি-ঘরের আচ্ছাদন, বাক্স, জানালা-দরজার ফ্রেম প্রভৃতি প্রস্তুতিতে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়। (3) অ্যালুমিনিয়াম তাপের সুপরিবাহী। তাই রান্নার বাসনপত্র তৈরির কাজে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়। (4) পাতলা পাতে পরিণত করা যায় বলে সিগারেট, চকোলেট, ওষুধ, মিষ্টি প্রভৃতির মোড়ক, রাংতা এবং প্যাকিং ফয়েল তৈরিতে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়। (5) থার্মিট পদ্ধতিতে ভাঙা লোহা বা রেললাইনের ভাঙা অংশ জোড়া দিতে অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ বা পাউডার ব্যবহৃত হয়। (6) লিনসিড তেলের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম পাউডার মিশিয়ে রুপোলি পেন্টরূপে ব্যবহার করা হয়। (7) অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম পাউডার মিশিয়ে বিস্ফোরক ‘অ্যামোন্যাল’ প্রস্তুত করা হয়।
8. ধাতু-সংকর ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, বিশুদ্ধ ধাতুর তুলনায় সংকর ধাতু ব্যবহারের দুটি সুবিধা লেখো।
উত্তর – ধাতু-সংকর ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল— (1) উপাদান ধাতুগুলি অপেক্ষা সংকর ধাতুর কাঠিন্য বেশি হয়। যেমন—তামা নরম ধাতু হলেও তার সংকর ধাতু পিতল (Cu + Zn), কাঁসা (Cu + Sn) ইত্যাদির কাঠিন্য তামার তুলনায় অনেক বেশি। (2) সংকর ধাতু তৈরির মাধ্যমে ধাতুর জারণ প্রতিরোধ করা যায় এবং ফলস্বরূপ ধাতুকে জলবায়ুর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করা যায়। যেমন— জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেনের প্রভাবে লোহায় মরচে ধরে, কিন্তু লোহার সংকর ধাতু স্টেনলেস স্টিলে (Fe + Ni + Cr + C) মরচে ধরে না। (3) সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক তার উপাদান ধাতুগুলির গলনাঙ্কের তুলনায় কম হয়। যেমন—টিন ও লেডের সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক উপাদান ধাতুগুলির তুলনায় কম হওয়ায় এটি ফিউজ তার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। (4) কোনো ধাতুর তাপ ও তড়িৎ পরিবাহিতা প্রয়োজনমতো বাড়ানো বা কমানোর জন্য ওই ধাতুর কোনো সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয়। যেমন—Fe, Cr_ও_ Ni-এর সংকর ধাতু নাইক্রোমের রোধাঙ্ক উচ্চমানের হওয়ায় অর্থাৎ তড়িৎ পরিবাহিতা উপাদান ধাতুগুলির তুলনায় কম হওয়ায় এটিকে বৈদ্যুতিক হিটারে ব্যবহার করা হয়। (5) সংকর ধাতুতে পরিণত হওয়ার ফলে উপাদান ধাতুগুলির রাসায়নিক সক্রিয়তা কমে যায়। যেমন—তামার পাত্রে খাদ্যদ্রব্য রাখলে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু কাঁসার (Cu + Sn) পাত্রে এরূপ ঘটে না।
ধাতুর নমনীয়তা, সম্প্রসারণশীলতা, ঘাত-সহনশীলতা, ঘনত্ব প্রভৃতি ভৌতধর্ম নিয়ন্ত্রণের জন্যও ধাতুকে, সংকর ধাতুতে পরিণত করা হয়।
9. সংকর ধাতু প্রস্তুত করা হয় কীভাবে? সংকর ধাতুর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – প্রস্তুতি: প্রথমে মুখ্য উপাদান ধাতুটিকে গলিয়ে তরলে পরিণত করা হয়। এরপর ওই গলিত তরল ধাতুর মধ্যে অন্যান্য উপাদান ধাতু বা অধাতুগুলিকে দ্রবীভূত করে ঘরের উন্নতায় ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে দিলে ধাতু-সংকর বা সংকর ধাতু উৎপন্ন হয়।
সংকর ধাতুর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য: (1) সংকর ধাতু সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব হতে পারে। (2) সংকর ধাতুর ধর্ম তার উপাদান ধাতুগুলির ধর্ম থেকে ভিন্ন হয়। (3) সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক তার উপাদান ধাতুগুলির গলনাঙ্কের থেকে কম হয়। (4) সংকর ধাতুর কাঠিন্য ওর উপাদান ধাতুগুলির কাঠিন্যের তুলনায় বেশি হয়। (5) বেশিরভাগ সংকর ধাতু কঠিন হয়ে থাকে, তবে সংকর ধাতু তরলও হতে পারে। (6) সংকর ধাতুর মধ্যে অধাতুও থাকতে পারে।
10. আয়রনের কয়েকটি সংকর ধাতুর নাম, সংযুতি ও ব্যবহার উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, কলঙ্কহীন ইস্পাতের উপাদান কী কী? এর একটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর – আয়রনের কয়েকটি সংকর ধাতুর সংযুতি ও ব্যবহার—

11. (i) পারদ-সংকর বা অ্যামালগাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
(ii) পারদ-সংকরের কয়েকটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর – (i) যে ধাতু-সংকরের একটি উপাদান পারদ তাকে অ্যামালগাম বা পারদ-সংকর বলে।
উদাহরণ: সোডিয়াম অ্যামালগাম (Na-Hg), ম্যাগনেশিয়াম অ্যামালগাম (Mg-Hg) ইত্যাদি।
(ii) (1) টিন অ্যামালগাম বা টিনের পারদ-সংকর (Sn-Hg) আয়না তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। (2) সোডিয়াম অ্যামালগাম বা Na-এর পারদ-সংকর (Na-Hg) এবং জিংকের পারদ-সংকর বা জিংক অ্যামালগাম (Zn-Hg) জৈব রসায়নে বিজারক-রূপে ব্যবহৃত হয়। (3) রুপোর পারদ-সংকর অর্থাৎ সিলভার অ্যামালগাম (Ag-Hg) দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
12. খনিজ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – ভূগর্ভে বা ভূপৃষ্ঠে প্রাপ্ত প্রকৃতিজাত অজৈব পদার্থসমূহ যাদের মধ্যে ধাতুগুলি মুক্ত অবস্থায় বা যৌগরূপে অন্যান্য অশুদ্ধির সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তাদের খনিজ বলে।
উদাহরণ: (1) রেড হিমাটাইট (Fe2O3), ম্যাগনেটাইট (Fe3O4), আয়রন পাইরাইট্স্ (FeS2) প্রভৃতি হল আয়রন ধাতুর খনিজ। (2) বক্সাইট (Al2O3 · 2H2O) ও চায়না-ক্লে (Al2O3 · 2SiO2 · 2H2O), ক্রায়োলাইট (AlF3 · 3NaF) প্রভৃতি হল অ্যালুমিনিয়ামের খনিজ।
13. আকরিক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
অনুরূপ প্রশ্ন, আকরিকের সংজ্ঞা দাও। জিংকের একটি আকরিকের উদাহরণ দাও।
উত্তর – যে খনিজ পদার্থ থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ উপায়ে ও সুলভে উচ্চমানের ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, সেই খনিজকে সংশ্লিষ্ট ধাতুটির আকরিক বলা হয়।
উদাহরণ: রেড হিমাটাইট (Fe2O3) থেকে সুলভে ও সরল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উচ্চমানের লোহা নিষ্কাশন করা যায় বলে একে লোহার আকরিক বলা হয়। একইভাবে ম্যালাকাইট [CuCO3 · Cu(OH)2] হল কপারের আকরিক এবং জিংকাইট (ZnO) হল জিংক-এর আকরিক।
14. সব আকরিকই খনিজ পদার্থ, কিন্তু সব খনিজ পদার্থকে আকরিক বলা যায় না—ব্যাখ্যা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, আয়রন পাইরাইট্স খনিজ হলেও আকরিক নয়—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – প্রকৃতির মধ্যে বিভিন্ন ধাতব যৌগকে পাথরের মতো কঠিন অবস্থায় কখনো ভূগর্ভে বা কখনো ভূপৃষ্ঠে পাওয়া যায়। এই প্রাকৃতিক পদার্থগুলিই হল খনিজ। আবার, যেসব খনিজ পদার্থ থেকে সহজ উপায়ে এবং সুলভে উচ্চমানের ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, তাদের আকরিক বলে। যেমন, বক্সাইট (Al2O3 • 2H2O) ও চায়না-ক্লে (Al2O3 · 2SiO2 + 2H2O) উভয়ই Al –এর খনিজ হলেও বক্সাইট থেকে সহজে ও কম খরচে উচ্চমানের Al নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় বলে বক্সাইট হল Al-এর আকরিক। অন্যদিকে, প্রচুর পরিমাণে Al উপস্থিত থাকলেও চায়না-ক্লে থেকে সহজে ও কম খরচে Al নিষ্কাশন সম্ভব নয়। তাই চায়না-ক্লে, Al-এর আকরিক নয়। একই কারণে আয়রন পাইরাইট্স্ আয়রনের খনিজ হলেও আকরিক নয়। সুতরাং বলা যায়, সব আকরিকই খনিজ পদার্থ, কিন্তু সব খনিজ পদার্থ আকরিক নয়।
15. জিংক ব্রেন্ডকে জিংকের খনিজ ও আকরিক দুই-ই বলা যায় কেন?
উত্তর – জিংক ব্লেন্ড (ZnS) হল প্রকৃতিজাত কঠিন ধাতব যৌগ যা ভূপৃষ্ঠে বা খনিতে পাওয়া যায়। তাই একে জিংকের খনিজ বলা যায়। আবার, জিংক ব্লেন্ড থেকে সহজে ও লাভজনক উপায়ে উচ্চমানের জিংক ধাতু নিষ্কাশন করা যায়। তাই একে জিংকের আকরিক হিসেবে গণ্য করা হয়। সুতরাং, জিংক ব্লেন্ড একাধারে জিংকের খনিজ আবার আকরকিও।
16. আয়রনের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, নীচের তালিকা থেকে আয়রনের আকরিক বেছে নাও। বক্সাইট, রেড হিমাটাইট, ক্রায়োলাইট, কার্নালাইট, ক্যালামাইন, চ্যালকোপাইরাইট্স্
উত্তর – আয়রনের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম ও সংকেত হল— রেড হিমাটাইট (Fe2O3), ম্যাগনেটাইট (Fe3O4), স্প্যাথিক আয়রন বা সিডারাইট (FeCO3)।
17. কপারের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – কপারের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম ও সংকেত হল—কপার পাইরাইট্স্ (Cu2S • Fe2S3 বা CuFeS2), কপার গ্লান্স (Cu2S), ম্যালাকাইট [CuCO3 · Cu(OH)2], কিউপ্রাইট (Cu2O)।
18. জিংকের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – জিংকের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম ও সংকেত হল—জিংক ব্লেন্ড (ZnS), ক্যালামাইন (ZnCO3), জিংকাইট (ZnO)।
19. অ্যালুমিনিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – অ্যালুমিনিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ আকরিকগুলির নাম ও সংকেত হল—বক্সাইট (Al2O3 · 2H2O), গিবসাইট (Al2O3 · 3H2O), ক্রায়োলাইট (AlF3 · 3NaF)।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. তড়িৎচুম্বকের মজ্জা (core) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়—
(a) কাস্ট আয়রন
(b) স্টিল
(c) রট আয়রন
(d) ম্যাগনেটাইট
উত্তর – (c) রট আয়রন
2. ডুরালুমিন ধাতু-সংকরে অনুপস্থিত –
(a) কপার
(b) ম্যাগনেশিয়াম
(c) ম্যাঙ্গানিজ
(d) নিকেল
উত্তর – (d) নিকেল
3. প্যাকিং ফয়েল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় —
(a) Cu
(b) Zn
(c) Sn
(d) Al
উত্তর – (d) Al
4. তড়িৎকোশ ও নির্জল ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় —
(a) Al
(b) Sn
(c) Zn
(d) Cu
উত্তর – (c) Zn
5. গিবসাইট (Gibbsite) কোন্ ধাতুর আকরিক?
(a) Al
(b) Cu
(c) Zn
(d) Fe
উত্তর – (a) Al
6. কোন্ খনিজটি আকরিক নয়?
(a) রেড হিমাটাইট
(b) জিংক ব্লেন্ড
(c) বক্সাইট
(d) আয়রন পাইরাইট্স্
উত্তর – (d) আয়রন পাইরাইট্স্
7. ইস্পাতে কার্বন থাকে —
(a) 0.01-0.2%
(b) 0.15 1.5%
(c) 2-4.5%
(d) 5-5.6%
উত্তর – (b) 0.15 1.5%
8. পিতলের মধ্যে কোন্টির শতকরা পরিমাণ বেশি?
(a) Cu
(b) Zn
(c) Al
(d) Fe
উত্তর – (a) Cu
9. দুটি ধাতুসম্পন্ন আকরিক হল —
(a) কপার পাইরাইট্স্
(b) আয়রন পাইরাইট্স্
(c) জিংক ব্লেন্ড
(d) বক্সাইট
উত্তর – (a) কপার পাইরাইট্স্
10. ক্যালামাইন কোন্ ধাতুর আকরিক?
(a) আয়রন
(b) কপার
(c) জিংক
(d) অ্যালুমিনিয়াম
উত্তর – (c) জিংক
11. জার্মান সিলভারের উপাদান —
(a) Cu, Zn, Sn
(b) Al, Cu, Mg, Mn
(c) Fe, Cr, Ni, C
(d) Cu, Zn, Ni
উত্তর – (d) Cu, Zn, Ni
12. কোন্ ধাতু-সংকরটিতে উপাদানরূপে নিকেল থাকে না?
(a) স্টেনলেস স্টিল
(b) ম্যাঙ্গানিজ স্টিল
(c) জার্মান সিলভার
(d) ইনভার
উত্তর – (b) ম্যাঙ্গানিজ স্টিল
13. প্রদত্ত কোন্টি অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর আকরিক?
(a) রেড হিমাটাইট
(b) ম্যালাকাইট
(c) চ্যালকোপাইরাইট্স্
(d) বক্সাইট
উত্তর – (d) বক্সাইট
14. ডুরালুমিনের প্রধান উপাদান —
(a) Al
(b) Mg
(c) Cu
(d) Sn
উত্তর – (a) Al
15. জিংকের অক্সাইড আকরিকের নাম—
(a) ক্যালামাইন
(b) জিংক ব্লেন্ড
(c) জিংকাইট
(d) উইলিমাইট
উত্তর – (c) জিংকাইট
16. চ্যালকোপাইরাইট্স্ কোন্ ধাতুর আকরিক?
(a) Zn
(b) Fe
(c) Mg
(d) Cu
উত্তর – (d) Cu
17. প্রদত্ত কোন্টি সালফাইড আকরিক?
(a) বক্সাইট
(b) জিংকাইট
(c) হিমাটাইট
(d) জিংক ব্লেন্ড
উত্তর – (d) জিংক ব্লেন্ড
18. পিতল সংকর ধাতুতে আছে —
(a) Cu, Sn
(b) Zn, Cu
(c) Cu, Pb
(d) Cu, Al
উত্তর – (b) Zn, Cu
19. প্রদত্ত কোন্টি Cu-এর আকরিক নয়?
(a) হিমাটাইট
(b) চ্যালকোসাইট
(c) অ্যাজুরাইট
(d) ম্যালাকাইট
উত্তর – (a) হিমাটাইট
20. কপারের আকরিক হল —
(a) বক্সাইট
(b) ক্রায়োলাইট
(c) কপার গ্লান্স
(d) ম্যাগনেটাইট
উত্তর – (c) কপার গ্লান্স
21. কোন্ ধাতু জোড়টি ব্রোঞ্জ ও কাঁসা উভয় সংকর ধাতুতেই বিদ্যমান?
(a) লোহা, নিকেল
(b) কপার, টিন
(c) জিংক, কপার
(d) লোহা, টিন
উত্তর – (b) কপার, টিন
22. অ্যামালগামের ক্ষেত্রে সর্বদাই একটি উপাদান হবে—
(a) Fe
(b) Ag
(c) Au
(d) Hg
উত্তর – (d) Hg
23. অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক নয়—
(a) গিবসাইট
(b) ক্রায়োলাইট
(c) ম্যালাকাইট
(d) ফেস্পার
উত্তর – (c) ম্যালাকাইট
24. কোন্টির প্রস্তুতিতে জিংক ব্যবহৃত হয়?
(a) বাসনপত্র
(b) ঘড়ির স্প্রিং
(c) যানবাহনের কাঠামো
(d) ছাপার ব্লক
উত্তর – (d) ছাপার ব্লক
25. জার্মান সিলভারে কোন্টি নেই?
(a) Ag
(c) Cu
(c) Zn
(d) Ni
উত্তর – (a) Ag
26. মিটার স্কেল প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয় –
(a) ইস্পাত
(b) কাঁসা
(c) ইনভার
(d) ডুরালুমিন
উত্তর – (c) ইনভার
27. কার্বনের পরিমাণ সবথেকে বেশি থাকে—
(a) স্টিলে
(b) রট আয়রনে
(c) কাস্ট আয়রনে
(d) ক্রোমস্টিলে
উত্তর – (c) কাস্ট আয়রনে
28. বিমানের কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত সংকর ধাতুটি হল—
(a) জার্মান সিলভার
(b) ব্রোঞ্জ
(c) ইনভার
(d) ডুরালুমিন
উত্তর – (d) ডুরালুমিন
29. হিমাটাইট কোন্ ধাতুর আকরিক?
(a) তামা
(b) অ্যালুমিনিয়াম
(c) লোহা
(d) জিংক
উত্তর – (c) লোহা
30. চায়না ক্লে-তে এদের মধ্যে কোন্ ধাতু উপস্থিত ?
(a) Cu
(b) Al
(c) Fe
(d) Zn
উত্তর – (b) Al
31. কোন্টির মধ্যে Al বর্তমান?
(a) ব্রোঞ্জ
(b) কাঁসা
(c) জার্মান সিলভার
(d) ডুরালুমিন
উত্তর – (d) ডুরালুমিন
32. পেটা লোহাতে কার্বনের শতকরা পরিমাণ—
(a) 0.1-0.15%
(b) 0.16-0.6%
(c) 2-2.25%
(d) 3-3.5%
উত্তর – (a) 0.1-0.15%
33. ম্যাগনেলিয়ামের প্রধান উপাদান ধাতুটি হল —
(a) Mn
(b) Al
(c) Mg
(d) C
উত্তর – (b) Al
34. নীচের কোন্ ধাতু-সংকরে জিংক বর্তমান?
(a) কাঁসা
(b) পিতল
(c) ব্রোঞ্জ
(d) ডুরালুমিন
উত্তর – (b) পিতল
35. নীচের কোন্টি অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক বক্সাইটের সংকেত?
(a) Al2O3
(b) Al2O3 · H2O
(c) Al2O3 · 2H2O
(d) AlF3 · 3NaF
উত্তর – (c) Al2O3 · 2H2O
একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও
1. পেটা লোহা, ইস্পাত ও ঢালাই লোহা-কে এদের মধ্যে উপস্থিত কার্বনের পরিমাণ অনুযায়ী সাজাও।
উত্তর – পেটা লোহা < ইস্পাত < ঢালাই লোহা।
2. রট্ আয়রনে কার্বনের পরিমাণ কত?
উত্তর – রট্ আয়রনে কার্বনের পরিমাণ 0.1-0.15%।
3. ইস্ত্রি তৈরিতে কোন্ আয়রন ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – ইস্ত্রি তৈরিতে কাস্ট আয়রন ব্যবহৃত হয়।
4. ধাতব সোনা ও রুপো নিষ্কাশনে কোন্ ধাতু ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – ধাতব সোনা ও রুপো নিষ্কাশনে জিংক ধাতু ব্যবহার করা হয়।
5. অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে কোন্ ধাতুর পাউডার মিশিয়ে ‘অ্যামোন্যাল’ নামক বিস্ফোরক তৈরি করা হয়?
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম পাউডার।
6. তড়িৎকোশের তড়িদ্বার রূপে কপার ব্যবহৃত হয় কেন?
উত্তর – উচ্চ তড়িৎ পরিবাহিতার জন্য।
7. ক্যালোরিমিটার প্রস্তুতিতে কোন্ ধাতু ব্যবহৃত হয় ও কেন?
উত্তর – তাপের সুপরিবাহী হওয়ায় ক্যালোরিমিটার প্রস্তুতিতে কপার ধাতু ব্যবহৃত হয়।
৪. ছাপার ব্লক তৈরিতে কোন্ ধাতু ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – ছাপার ব্লক তৈরিতে জিংক ধাতু ব্যবহৃত হয়।
9. একটি ধাতু-সংকরের উদাহরণ দাও যার মধ্যে অধাতু বর্তমান।
উত্তর – ইস্পাত বা স্টিলে আয়রনের সঙ্গে কার্বন (অধাতু) মিশ্রিত থাকে।
10. আয়রনের দুটি সংকর ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – স্টেনলেস স্টিল এবং ইনভার।
11. স্টেনলেস স্টিলের প্রধান উপাদান কী কী?
উত্তর – স্টেনলেস স্টিলের প্রধান উপাদানগুলি হল আয়রন (73%), ক্রোমিয়াম (18%), নিকেল (৪%) এবং সামান্য পরিমাণ কার্বন।
12. পিতল, ব্রোঞ্জ ও কাঁসার প্রধান উপাদানটি কী?
উত্তর – পিতল, ব্রোঞ্জ ও কাঁসার প্রধান উপাদানটি হল কপার।
13. ব্রোঞ্জ, পিতল ও কাঁসা— সংকর ধাতু তিনটির মধ্যে কোন্টিতে উপাদান হিসেবে জিংক থাকে না?
উত্তর – ব্রোঞ্জ, পিতল ও কাঁসার মধ্যে কাঁসা-তে জিংক থাকে না।
14. ব্রোঞ্জের ধাতব উপাদানগুলি কী কী?
উত্তর – কপার (80%), টিন (18%) ও জিংক (2%)।
15. কোন্ ধাতু জোড়টি ব্রোঞ্জ ও বেল-মেটাল উভয় ধাতু-সংকরেই উপস্থিত?
উত্তর – কপার ও টিন।
16. কোন্ ধাতুটি ব্রাস ও বেল-মেটাল উভয় ধাতু-সংকরেই উপস্থিত থাকে?
উত্তর – ব্রাস ও বেল-মেটাল উভয় ধাতু-সংকরেই কপার উপস্থিত থাকে।
17. কোন্ ধাতুটি পিতল ও ব্রোঞ্জ উভয় সংকর ধাতুতেই থাকে?
উত্তর – কপার ধাতুটি পিতল ও ব্রোঞ্জ উভয় সংকর ধাতুতেই থাকে।
18. কাঁসার মধ্যে থাকা সন্ধিগত মৌল নয়, এমন মৌলটির নাম লেখো।
উত্তর – কাঁসার উপাদান মৌল টিন (Sn) সন্ধিগত মৌল নয়।
19. পিতলের কোন উপাদানটির শতকরা পরিমাণ বেশি থাকে?
উত্তর – কপার (60-80% ) ।
20. কপার ও ম্যাগনেশিয়ামের মধ্যে কোন্টি পিতলে বর্তমান?
উত্তর – কপার ও ম্যাগনেশিয়ামের মধ্যে পিতলে কপার বর্তমান।
21. জার্মান সিলভারের উপাদানগুলি লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, জার্মান সিলভারে কোন্ মৌল সবথেকে বেশি থাকে?
উত্তর – Cu : 50%, Zn : 20%, Ni : 30% |
22. জিংকের দুটি সংকর ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – পিতল ও জার্মান সিলভার।
23. অ্যালুমিনিয়ামের দুটি সংকর ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – ম্যাগনেলিয়াম এবং ডুরালুমিন।
24. ডুরালুমিনের প্রধান উপাদান ধাতুটির নাম লেখো।
উত্তর – ডুরালুমিনের প্রধান উপাদান ধাতুটি হল অ্যালুমিনিয়াম (95%)।
25. এরোপ্লেনের কাঠামো তৈরিতে কোন্ ধাতু-সংকর ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – ডুরালুমিন ধাতু-সংকরটি ব্যবহৃত হয়।
26. চারটি ধাতুর মিশ্রণে গঠিত দুটি সংকর ধাতুর উদাহরণ দাও।
উত্তর – ডুরালুমিন (Al + Cu + Mn + Mg) ও অ্যালনিকো (Fe + Ni + Al + Co)।
27. স্থায়ী চুম্বক তৈরি করতে কোন্ সংকর ধাতু ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – অ্যালনিকো (Fe + Ni + Al + Co) ব্যবহৃত হয়।
28. প্রেশার কুকার তৈরিতে যে ধাতু-সংকর ব্যবহৃত হয় তার নাম লেখো।
উত্তর – প্রেশার কুকার তৈরিতে ডুরালুমিন ধাতু-সংকরটি ব্যবহৃত হয়।
29. প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় এমন একটি ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – সোনা বা গোল্ড (Au)-কে প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
30, আয়রনের একটি আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – আয়রনের একটি আকরিক হল রেড হিমাটাইট (Fe2O3 )।
31. কপারের একটি আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – কপার পাইরাইট্স্ (Cu2S · Fe2S3 বা CuFeS2 )।
32. আয়রন পাইরাইট্স্ ও রেড হিমাটাইটের মধ্যে কোন্টি লোহার আকরিক?
উত্তর – লোহার আকরিক হল রেড হিমাটাইট।
33. লোহার খনিজ কিন্তু আকরিক নয় এমন একটি পদার্থের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – আয়রন পাইরাইট্স (FeS2 )।
34. জিংকের একটি আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – জিংকের একটি আকরিক হল জিংক ব্লেন্ড (ZnS)।
35. ক্যালামাইন কোন্ ধাতুর আকরিক?
উত্তর – ক্যালামাইন (ZnCO3) জিংক ধাতুর আকরিক।
36. জিংক হোয়াইটের রাসায়নিক সংকেত কী?
উত্তর – জিংক হোয়াইটের রাসায়নিক সংকেত হল ZnO।
37. অ্যালুমিনিয়ামের একটি আকরিকের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তর – Al-এর একটি আকরিক হল বক্সাইট (Al2O3 · 2H2O)।
38. Al-এর আকরিক নয় এমন একটি খনিজ পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর – চায়না-ক্লে (Al2O3 · 2SiO2 · 2H2O)।
39. গিবসাইট আকরিকের সংকেত লেখো।
উত্তর – গিবসাইট আকরিকের সংকেত হল Al2O3 · 3H2O |
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. খাবার প্যাকিং করতে ……… ধাতুর ফয়েল ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম
2. ……… পাউডারকে লিনসিড তেলের সঙ্গে মিশিয়ে রুপোলি পেন্টরূপে ব্যবহার করা হয়।
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম
3. জার্মান সিলভার ………, জিংক ও নিকেলের ধাতু-সংকর।
উত্তর – কপার
4. জার্মান সিলভারে সিলভার থাকে ………. শতাংশ।
উত্তর – শূন্য
5. 80% Cu ও 20% Sn-যুক্ত সংকর ধাতু হল ……….।
উত্তর – কাঁসা
6. ডুরালুমিন সংকর ধাতুর প্রধান উপাদান ……….।
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম
7. এরোপ্লেনের কাঠামো প্রস্তুতিতে ………. ধাতু-সংকর ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – ডুরালুমিন
8. কোনো সংকর ধাতুর একটি উপাদান পারদ হলে তাকে ………. বলে।
উত্তর – অ্যামালগাম
9. ………. ও ……… ধাতুর অ্যামালগাম জৈব যৌগের বিজারণে ব্যবহৃত হয়।
উত্তর – সোডিয়াম, জিংক
10. ………. হল অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক।
উত্তর – গিবসাইট/বক্সাইট
11. . সব আকরিক খনিজ কিন্তু সব খনিজ ………. নয়।
উত্তর – আকরিক
12. আয়রনের কার্বনেট আকরিকটির নাম ……….।
উত্তর – স্প্যাথিক আয়রন
13. কপারের অক্সাইড আকরিকটির নাম ……….।
উত্তর – কিউপ্রাইট
14. Cu-এর সালফাইড আকরিকের নাম হল ……….।
উত্তর – কপার গ্লান্স (Cu2S)
15. বক্সাইটের সংকেত হল ……….।
উত্তর – Al2O3 · 2H2O
TOPIC – B ধাতু নিস্কাশনের নীতি ও জারণ-বিজারণ
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
1. জারণ-বিজারণের ইলেকট্রনীয় সংজ্ঞা দাও।
উত্তর – জারণ: যে প্রক্রিয়ায় কোনো পরমাণু বা আয়ন থেকে এক অথবা একাধিক ইলেকট্রন বর্জিত হয়, তাকে জারণ বলে।
উদাহরণ: Na → Na+ + e , Fe2+→ Fe3+ + e , S2– → S + 2e
বিজারণ: যে প্রক্রিয়ায় কোনো পরমাণু বা আয়ন এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তাকে বিজারণ বলে।

2. কোনটি জারণ বিক্রিয়া ও কোনটি বিজারণ বিক্রিয়া শনাক্ত করো। Ca → Ca2+ + 2e ; O + 2e → O2–
উত্তর – Ca → Ca2+ + 2e পরিবর্তনটির ক্ষেত্রে Ca -পরমাণু 2 টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Ca2+ আয়নে পরিণত হয়। ইলেকট্রন ত্যাগ-এর অর্থ হল জারণ, সুতরাং প্রদত্ত পরিবর্তনটি জারণ প্রক্রিয়া নির্দেশ করে।
অপরদিকে O + 2e → O2– পরিবর্তনটির ক্ষেত্রে O পরমাণু 2 টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে O2– আয়নে পরিণত হয়। ইলেকট্রন গ্রহণ-এর অর্থ হল বিজারণ। সুতরাং, প্রদত্ত পরিবর্তনটি বিজারণ প্রক্রিয়া নির্দেশ করে।
3. একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার উদাহরণ দিয়ে জারক ও বিজারক কাকে বলে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় যে পদার্থ ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে জারক পদার্থ বলা হয়। অপরপক্ষে, এধরনের বিক্রিয়ায় যে পদার্থ ইলেকট্রন বর্জন করে তাকে বিজারক পদার্থ বলা হয়। সুতরাং বলা যায়, জারক পদার্থ ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয় কিন্তু অন্যকে জারিত করে এবং বিজারক পদার্থ ইলেকট্রন বর্জন করে নিজে জারিত হয় কিন্তু অন্যকে বিজারিত করে। উদাহরণ হিসেবে প্রদত্ত বিক্রিয়াটি বিবেচনা করা যাক—

এক্ষেত্রে Fe3+ আয়ন 3 টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Fe পরমাণুতে বিজারিত হয়। সুতরাং, Fe3+ হল জারক পদার্থ, আবার, Al পরমাণু 3 টি ইলেকট্রন বর্জন করে Al3+ আয়নে জারিত হয়। সুতরাং AI -পরমাণু এই বিক্রিয়ায় বিজারক পদার্থ।
4. ইলেকট্রনীয় তত্ত্বের সাহায্যে দেখাও যে, জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় জারণ ও বিজারণ একই সাথে ঘটে।
অনুরূপ প্রশ্ন, জারণ-বিজারণের ইলেকট্রনীয় তত্ত্ব অনুসারে দেখাও যে নীচের বিক্রিয়ায় জারণ ও বিজারণ একইসঙ্গে ঘটে— 2Fe3+ + Sn2+ → 2Fe2+ + Sn4+
উত্তর – রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন বর্জন করে জারিত হলে বিক্রিয়া-মাধ্যমে থাকা অপর কোনো পরমাণু বা আয়ন ওই বর্জিত ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়। অর্থাৎ, জারণ ও বিজারণ একই সাথে ঘটে। উদাহরণ হিসেবে নিম্নে প্রদত্ত বিক্রিয়াটি বিবেচনা করা যাক—

এক্ষেত্রে প্রতিটি Fe3+ আয়ন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Fe2+ -এ পরিণত হয়। সুতরাং, এটি বিজারণ বিক্রিয়া।
Fe3+ + e → Fe2+
অপরদিকে Sn2+ আয়ন 2 টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Sn4+ আয়নে পরিণত হয়। সুতরাং, এটি জারণ বিক্রিয়া।
Sn2+ → Sn4+ + 2e
সুতরাং, দেখা গেল এক্ষেত্রে জারণ ও বিজারণ একইসঙ্গে ঘটছে। এই বিক্রিয়ায় Fe3+ হল জারক এবং Sn2+ হল বিজারক পদার্থ।
5. Zn + H2SO4 → ZnSO4 + H2 – এটি একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া। ব্যাখ্যা করো। বিক্রিয়াটিতে জারক ও বিজারক পদার্থ চিহ্নিত করো।
উত্তর – প্রদত্ত বিক্রিয়ায় Zn-পরমণু 2 টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Zn2+ আয়নে পরিণত হয় অর্থাৎ জারিত হয়। অপরদিকে H+ আয়ন (H2SO4 -এর বিয়োজনে উৎপন্ন) 1 টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিস্তড়িৎ H -পরমাণুতে পরিণত হয় অর্থাৎ বিজারিত হয়।
Zn → Zn2+ + 2e (জারণ)
H+ + e → H (বিজারণ); H + H → H2 ↑
ইলেকট্রন গ্রহণ-বর্জনের নিরিখে H+ আয়ন তথা H2SO4 হল জারক পদার্থ এবং ধাতব Zn হল বিজারক পদার্থ।

6. ধাতব অক্সাইড থেকে অক্সিজেন অপসারণ একটি বিজারণ বিক্রিয়া। উদাহরণসহ উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।
উত্তর – ধাতব অক্সাইডে ধাতুটি ক্যাটায়ন-রূপে এবং অক্সিজেন অক্সাইড আয়ন (O2-) রূপে উপস্থিত থাকে। ধাতু নিষ্কাশনের সময় ধাতব অক্সাইড থেকে অক্সিজেন অপসারণ করে ধাতুটিকে নিষ্কাশিত করা হয়। এই বিক্রিয়ায় ধাতব ক্যাটায়নটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে মুক্ত ধাতব পরমাণুতে পরিণত হয়। যেহেতু ইলেকট্রন গ্রহণ হল বিজারণ সুতরাং, ধাতব অক্সাইড থেকে অক্সিজেনের অপসারণ একটি বিজারণ বিক্রিয়া।
উদাহরণ: জিংক অক্সাইড (ZnO)-এর সঙ্গে কোকচূর্ণ (কার্বন) মিশিয়ে প্রায় 1400°C উয়তায় উত্তপ্ত করলে ZnO কোক দ্বারা বিজারিত হয়ে ধাতব জিংক-এ পরিণত হয়।
ZnO + C → Zn + CO
বিজারণ বিক্রিয়া: Zn2+ + 2e → Zn
জারণ বিক্রিয়া: O2- → O + 2e
7. আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন কার্যত ধাতব যৌগের বিজারণ—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ধাতব আকরিকগুলির বেশিরভাগই হল ধাতব অক্সাইড, সালফাইড, ক্লোরাইড কিংবা কার্বনেট যৌগ। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই যৌগগুলি থেকে ধাতু নিষ্কাশনের সময় যে মূল রাসায়নিক পরিবর্তনটি ঘটে তা হল— Mn+ (ধাতব আয়ন) + ne → M (ধাতুর পরমাণু
অর্থাৎ আকরিকে উপস্থিত ধাতব আয়ন ইলেকট্রন গ্রহণ তথা বিজারণের মাধ্যমে ধাতুর পরমাণুতে পরিণত হয়। তাই বলা যায় আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন প্রকৃতপক্ষে একটি বিজারণ প্রক্রিয়া।
উদাহরণ: জিংকাইট (ZnO) থেকে কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে জিংক নিষ্কাশন করা হয়।
এক্ষেত্রে ZnO -তে উপস্থিত Zn2+ আয়ন 2 টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Zn -পরমাণুতে বিজারিত হয়।
8. (i) ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণি বা তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণি কাকে বলে ?
(ii) ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর – (i) ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণি : জল, O2 ও লঘু অ্যাসিডের সঙ্গেবিক্রিয়া ঘটানোর প্রবণতার ভিত্তিতে ধাতুগুলিকে ক্রমহ্রাসমান সক্রিয়তা অনুসারে সাজালে একটি সারি পাওয়া যায়। এই সারিটিকেই ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণি বা তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণি বলা হয়।
(ii) বৈশিষ্ট্য: সক্রিয়তা শ্রেণির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল— (1) এই শ্রেণিতে যে ধাতু যত ওপরে থাকে তার ইলেকট্রন বর্জন করে ক্যাটায়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা (তড়িৎ-ধনাত্মকতা) অর্থাৎ নিজে জারিত হয়ে অপরকে বিজারিত করার প্রবণতা তত বেশি হয়। এ কারণে শ্রেণির ওপরের দিকে অবস্থিত K, Na, Al, Mg প্রভৃতি ধাতুগুলির রাসায়নিক সক্রিয়তা খুব বেশি হয় এবং প্রকৃতিতে এদেরকে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। অপরপক্ষে, সক্রিয়তা শ্রেণির একেবারে নীচের দিকে অবস্থিত ধাতুগুলির (Ag, Au, Hg) সক্রিয়তা খুবই কম এবং অনেকক্ষেত্রেই এদের প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। (2) সক্রিয়তা সারিতে হাইড্রোজেনের ওপরে অবস্থিত ধাতুগুলি জল বা লঘু অ্যাসিড থেকে হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। কিন্তু হাইড্রোজেনের নীচে থাকা ধাতুগুলি জল বা লঘু অ্যাসিড থেকে ইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে না। (3) সক্রিয়তা সারিতে উচ্চতর স্থানে অবস্থিত কোনো ধাতু অপেক্ষাকৃত নীচে অবস্থিত কোনো ধাতুর যৌগ (বা লবণ) থেকে ধাতুটিকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে।

9. ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিতে বিভিন্ন অবস্থানে থাকা ধাতুগুলি জল ও লঘু অ্যাসিডের সঙ্গে কী শর্তে বিক্রিয়া করে উল্লেখ করো।
উত্তর – ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিতে অবস্থিত ধাতুগুলির জল ও লঘু অ্যাসিডের বিক্রিয়ার শর্ত—

10. ধাতুর সক্রিয়তা সারির ওপরের দিকে অবস্থিত কোনো ধাতুকে কীভাবে নিষ্কাশন করা হয় উদাহরণসহ লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, কোন্ ধরনের ধাতুগুলিকে তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয় এবং কেন?
উত্তর – ধাতুর সক্রিয়তা সারিতে ওপরের দিকে অবস্থিত K, Ca, Na, Mg ইত্যাদি ধাতুগুলির (তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক) রাসায়নিক সক্রিয়তা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় অক্সিজেনের প্রতি এদের তীব্র আসক্তি থাকে। এ কারণে এদের অক্সাইডগুলি খুব স্থায়ী হয়। ফলে এদের অক্সাইডগুলিকে কার্বন বা কোনো সাধারণ বিজারক দ্বারা বিজারিত করে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় না। এক্ষেত্রে উপযুক্ত তড়িদ্দ্বারসহ ধাতুগুলির গলিত হাইড্রক্সাইড বা ক্লোরাইড লবণের তড়িবিশ্লেষণ করে ধাতুগুলিকে নিষ্কাশন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আয়রন ক্যাথোড ও গ্রাফাইট অ্যানোড ব্যবহার করে গলিত সোডিয়াম ক্লোরাইডের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করে সোডিয়াম ধাতুর নিষ্কাশন করা হয়। এক্ষেত্রে ক্যাথোডে সোডিয়াম ধাতু সঞ্চিত হয়।
গলিত NaCl -এর বিয়োজন: NaCl (গলিত) → Na+ + Cl–
ক্যাথোড বিক্রিয়া: Na+ + e → Na (বিজারণ)
অ্যানোড বিক্রিয়া: Cl– → Cl + e (জারণ), Cl + Cl → Cl2
11. ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণির মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ধাতুগুলিকে কোন্ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যাবে তা যুক্তিসহ লেখো।
উত্তর – সক্রিয়তা শ্রেণিতে মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ধাতুগুলিকে (Zn, Fe, Pb, Cu প্রভৃতি) প্রধানত সালফাইড, কার্বনেট বা অক্সাইড আকরিকরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এই ধাতুগুলি অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয়। এদের আকরিককে নিয়ন্ত্রিত বায়ুপ্রবাহে জারিত করে প্রথমে অক্সাইডে পরিণত করা হয় । প্রাপ্ত ধাতব অক্সাইডগুলি অপেক্ষাকৃত কম স্থায়ী হওয়ায় উচ্চ উন্নতায় এদের বিজারিত করে (কার্বন বিজারণ বা স্বতঃবিজারণ বা থার্মিট পদ্ধতি) সংশ্লিষ্ট ধাতুটিকে নিষ্কাশন করা হয়। উল্লিখিত ধাতুগুলির মধ্যে জিংককে কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে, লেড ও কপারকে স্বতঃবিজারণ পদ্ধতিতে এবং আয়রনকে থার্মিট পদ্ধতি ও কার্বন বিজারণ উভয় পদ্ধতিতেই নিষ্কাশন করা যায়।
12. সক্রিয়তা সারিতে নীচের দিকে অবস্থিত ধাতুগুলিকে নিষ্কাশন করা হয় কীভাবে? এদেরকে প্রকৃতিতে অনেকসময় মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় কেন?
উত্তর – সক্রিয়তা সারিতে নীচের দিকে অবস্থিত ধাতুগুলির (Hg, Ag, Au) অক্সাইডকে উত্তপ্ত করেই সংশ্লিষ্ট ধাতুটি নিষ্কাশন করা হয়। তাপ প্রয়োগে অক্সাইডগুলি বিয়োজিত হয়ে ধাতু ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে।
সক্রিয়তা সারিতে নীচের দিকে অবস্থিত ধাতুগুলির রাসায়নিক সক্রিয়তা খুব কম হয়। এরা O2, জলীয় বাষ্প, CO2 ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয় না। তাই এদের মুক্ত অবস্থায় প্রকৃতির মধ্যে পাওয়া যায়।
13. কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে লোহার পেরেক ডুবিয়ে রাখলে তার ওপর লালচে বাদামি বর্ণের আস্তরণ পড়ে কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, একটি উদাহরণের সাহায্যে দেখাও যে, সক্রিয়তা সারির ওপরের দিকের কোনো ধাতু সারির নীচে অবস্থিত অপর কোনো ধাতুর যৌগ থেকে ওই ধাতুকে প্রতিস্থাপিত করে।
অনুরূপ প্রশ্ন, কপার সালফেটের দ্রবণকে রাখার জন্য লোহার পাত্র ব্যবহার করা যাবে না কেন?
উত্তর – ধাতুর সক্রিয়তা সারিতে উচ্চতর স্থানে অবস্থিত কোনো ধাতু অপেক্ষাকৃত নীচে থাকা কোনো ধাতুর যৌগ বা লবণের জলীয় দ্রবণ থেকে সংশ্লিষ্ট ধাতুটিকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। সক্রিয়তা সারিতে আয়রন, কপারের ওপরে অবস্থিত, তাই কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণ থেকে এটিকপারকে প্রতিস্থাপিত করে অধঃক্ষিপ্ত করে।
Fe + CuSO4 → FeSO4 + Cu↓
(লালচে-বাদামি)
বিক্রিয়াটি লোহার (পেরেক/ছুরি/কোনো লোহার পাত্র) পৃষ্ঠতলে ঘটে বলে লোহার ওপরেই প্রতিস্থাপিত কপার জমা হয় ও লালচে-বাদামি বর্ণের আস্তরণ সৃষ্টি হয়।

14. কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে লোহার পেরেক ডুবিয়ে রাখলে তার ওপর লালচে-বাদামি বর্ণের আস্তরণ পড়ে কিন্তু FeSO4 দ্রবণে তামার ছুরি ডোবালে কোনো আস্তরণ পড়ে না—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – CuSO4 এর জলীয় দ্রবণে লোহার পেরেক ডুবিয়ে রাখলে পেরেকটির ওপর লালচে-বাদামি বর্ণের আস্তরণ পড়ে। ব্যাখ্যার জন্য 15 নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।
অপরপক্ষে, ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিতে কপার, আয়রনের অনেক নীচে অবস্থিত। তাই এটি FeSO4 দ্রবণ থেকে আয়রনকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে না। স্বভাবতই, FeSO4 দ্রবণে তামার ছুরি ডুবিয়ে রাখলে ছুরির ওপর কোনো আস্তরণ পড়ে না।
15. CuSO4 এর জলীয় দ্রবণে জিংকের একটি টুকরো যোগ করলে কী হয়? ইলেকট্রনীয় তত্ত্বের সাহায্যে দেখাও যে, এটি একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া।
উত্তর – CuSO4 এর জলীয় দ্রবণে জিংকের টুকরো যোগ করলে জিংকের টুকরোর ওপর লালচে বাদামি ছোপ দেখা যাবে। এর কারণ হল ধাতুর সক্রিয়তা সারিতে জিংক, কপারের ওপরে অবস্থিত। তাই কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে জিংকের টুকরো ফেললে জিংক, কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণ থেকে ধাতব কপারকে প্রতিস্থাপিত করে অধঃক্ষিপ্ত করে। অধঃক্ষিপ্ত কপার, জিংকের টুকরোর পৃষ্ঠতলে জমা হয়।
Zn + CuSO4 → ZnSO4 + Cu↓ (লালচে-বাদামি)
এক্ষেত্রে Zn -পরমাণু দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Zn2+ আয়নে পরিণত হয় অর্থাৎ জারিত হয়। অপরদিকে, Cu2+ আয়ন দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতব কপারে পরিণত হয় অর্থাৎ বিজারিত হয়।
Zn → Zn2+ + 2e (জারণ); Cu2+ + 2e → Cu (বিজারণ)
অতএব, এটি একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়ায় Cu2+ আয়ন হল জারক পদার্থ এবং Zn -পরমাণু হল বিজারক পদার্থ।
16. (1) গাঢ় কস্টিক সোডা দ্রবণের সাথে Al -এর বিক্রিয়ায় কী ঘটে?
(ii) লোহিততপ্ত লোহার ওপর দিয়ে স্টিম চালনা করলে কী ঘটে সমীকরণসহ লেখো।
উত্তর – (i) গাঢ় কস্টিক সোডা দ্রবণের সাথে Al -এর বিক্রিয়ায় সোডিয়াম অ্যালুমিনেট উৎপন্ন হয় ও হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়।

(ii) লোহিততপ্ত লোহার ওপর দিয়ে স্টিম চালনা করলে ফেরোসোফেরিক অক্সাইড ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।

17. থার্মিট পদ্ধতিতে কীভাবে ধাতু নিষ্কাশন করা হয় উপযুক্ত সমীকরণসহ লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, থার্মিট পদ্ধতির নীতি বিক্রিয়াসহ লেখো।
উত্তর – উচ্চ উন্নতায় অক্সিজেনের প্রতি অ্যালুমিনিয়ামের তীব্র আসক্তি থাকে। অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ে কম তড়িৎ-ধনাত্মক অর্থাৎ কম বিজারণ ক্ষমতাবিশিষ্ট ধাতুর (যেমন— আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদির) অক্সাইডকে অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ সহযোগে উচ্চ উন্নতায় উত্তপ্ত করলে ওই অক্সাইডগুলি অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা বিজারিত হয়ে ধাতুতে পরিণত হয়। ধাতু নিষ্কাশনের এই পদ্ধতিকে গোল্ডস্মিডের থার্মিট পদ্ধতি বলে। অ্যালুমিনিয়ামের সাথে ধাতব অক্সাইডের বিক্রিয়ায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় এবং বিক্রিয়াকালীন উন্নতা প্রায় 2000°C হয়। এই উচ্চ উয়তায় নিষ্কাশিত ধাতু গলিত অবস্থায় থাকে।

18. (i) ‘থার্মিট মিশ্রণ’ কী?
(ii) থার্মিট প্রক্রিয়ায় বিজারক হিসেবে কী ব্যবহৃত হয়?
(iii) প্রজ্জ্বলক মিশ্রণ কী?
উত্তর – ভর হিসেবে 3 ভাগ ফেরিক অক্সাইড (Fe2O3) ও 1 ভাগ অ্যালুমিনিয়াম (Al) চূর্ণের মিশ্রণকে থার্মিট মিশ্রণ বা থার্মিট মিক্সচার বলে।
(ii) থার্মিট প্রক্রিয়ায় বিজারক হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ (Al চূর্ণ) ব্যবহার করা হয়।
(iii) থার্মিট প্রক্রিয়ায় সিলিকা-নির্মিত তাপসহ মুচির মধ্যে থার্মিট মিশ্রণ নেওয়া হয়। এই মিশ্রণের ওপর Mg -চূর্ণ এবং পটাশিয়াম ক্লোরেট (KClO3) বা বেরিয়াম পারক্সাইড (BaO2) -এর অপর একটি মিশ্রণ রেখে Mg -ফিতার সাহায্যে আগুন ধরানো হয়। Mg -চূর্ণ ও KClO3 /BaO2 -এর এই মিশ্রণটিকে প্রজ্জ্বলক মিশ্ৰণ বলা হয়।
19. থার্মিট ওয়েলডিং কী? সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়ার সমীকরণ দাও।
অনুরূপ প্রশ্ন, থামিট পদ্ধতিতে কীভাবে আয়রন নিষ্কাশন করা হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, থার্মিট পদ্ধতিতে লোহা নিষ্কাশনের রাসায়নিক সমীকরণটি লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, থার্মিট মিশ্রণকে উচ্চ উন্নতায় উত্তপ্ত করলে কী ঘটে সমীকরণসহ লেখো।
উত্তর – ভর হিসেবে 3 ভাগ রেড হিমাটাইট (Fe2O3)-কে 1 ভাগ অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণের সাথে মিশিয়ে (থার্মিট মিশ্রণ) সিলিকা-নির্মিত তাপসহ মুচির মধ্যে নিয়ে ওর ওপর Mg গুঁড়ো ও BaO2 -এর মিশ্রণ রেখে Mg -ফিতার সাহায্যে আগুন ধরানো হয়। এর ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় ও উচ্চ উয়তার সৃষ্টি হয়। উচ্চ উন্নতায় Fe2O3, অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা বিজারিত হয় ও গলিত আয়রন উৎপন্ন হয়। গলিত আয়রন মুচির নীচের ছিদ্রের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে।
বিক্রিয়া:


উৎপন্ন গলিত আয়রনকে বড়ো বড়ো ধাতুর পাত, রেললাইন, ট্রামলাইন বা জাহাজের ভাঙা অংশ জোড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিকে থার্মিট ওয়েলডিং (thermite welding) বলে।

20. থার্মিট পদ্ধতির কয়েকটি ব্যবহারিক প্রয়োগ তথা উপযোগিতা উল্লেখ করো।
উত্তর – থার্মিট পদ্ধতির কয়েকটি উপযোগিতা হল— (1) থার্মিট পদ্ধতির সাহায্যে আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি ধাতুর নিষ্কাশন করা যায়। এই পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশনের জন্য বৃহৎ পরিকাঠামোর প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ ধাতুকে তার অক্সাইড থেকে নিষ্কাশিত করে প্রয়োজন অনুসারে সরাসরি কাজে লাগানো যায়। (2) থার্মিট পদ্ধতিতে রেললাইন, ট্রামলাইন, বড়ো বড়ো লোহার মেশিন বা জাহাজের ভাঙা অংশ জোড়া লাগানো হয়। এক্ষেত্রে রেললাইন, ট্রামলাইন প্রভৃতির ভাঙা অংশকে মেরামতের জন্য কারখানা বা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, ওই স্থানে রেখেই মেরামত করা যায়। (3) থামিট পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণ অনার্দ্র Al2O3 উপজাত পদার্থ হিসেবে উৎপন্ন হয়। চুল্লির অভ্যন্তরে আস্তরণের জন্য, অগ্নিসহ ইট তৈরি করতে ও ধাতু পালিশ করার জন্য এমারি চূর্ণ (emery powder) -রূপে এই Al2O3 ব্যবহৃত হয়।
21. ধাতু নিষ্কাশনের কার্বন-বিজারণ পদ্ধতির নীতিটি লেখো। এই পদ্ধতির সাহায্যে কীভাবে Zn নিষ্কাশন করা হয় ?
অনুরূপ প্রশ্ন, জিংক অক্সাইড থেকে কীভাবে জিংক ধাতু পাওয়া যায়? বিক্রিয়াটি সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।
উত্তর – কার্বন-বিজারণ পদ্ধতির নীতি; ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণির মাঝামাঝি অবস্থিত Zn, Fe, Pb প্রভৃতি ধাতুগুলির অক্সাইডকে (আকরিকটি অক্সাইড না হলে তাকে প্রথমে অক্সাইডে পরিণত করে নেওয়া হয়) বিশেষ চুল্লিতে উচ্চ উন্নতায় কোকচূর্ণ (কার্বন) দ্বারা বিজারিত করে ধাতুগুলির নিষ্কাশন করা হয়। কোক বা কার্বনের অসম্পূর্ণ দহনে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড (CO) গ্যাসও বিজারকের ভূমিকা পালন করে।
কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে জিংক নিষ্কাশন: কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে জিংক নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে জিংকের আকরিক জিংক ব্লেন্ড (ZnS) বা ক্যালামাইন (ZnCO3) -কে প্রথমে জিংক অক্সাইড (ZnO) -এ পরিণত করা হয়।

প্রাপ্ত জিংক অক্সাইডের সঙ্গে অতিরিক্ত কোকচূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে 1300-1400°C উন্নতায় বিশেষ চুল্লিতে উত্তপ্ত করা হয়। এর ফলে জিংক অক্সাইড ধাতব জিংকে বিজারিত হয় এবং কার্বন মনোক্সাইড (CO) গ্যাস উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে কোকচূর্ণ বিজারক হিসেবে কাজ করে।
কোকের অসম্পূর্ণ দহনে উৎপন্ন CO গ্যাসও বিজারক-রূপে আচরণ করে এবং ZnO -কে ধাতব জিংকে বিজারিত করে।
ZnO + CO → Zn + CO2 ↑
22. কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে আয়রন নিষ্কাশন করা যায় কি ? যুক্তি দাও।
অনুরূপ প্রশ্ন, আকরিক থেকে আয়রন নিষ্কাশনে কার্বনের ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর – থার্মিট পদ্ধতির পাশাপাশি কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতেও আয়রনের অক্সাইড আকরিক (রেড হিমাটাইট, Fe2O3) থেকে আয়রন নিষ্কাশন করা যায়। Fe2O3 ও কোকচূর্ণের মিশ্রণকে বিশেষ চুল্লিতে উচ্চ উয়তায় উত্তপ্ত করলে কোকচূর্ণ অর্থাৎ কার্বন জারিত হয়ে কার্বন মনোক্সাইডে এবং Fe2O3 বিজারিত হয়ে ধাতব আয়রনে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে কোক (কার্বন) বিজারক হিসেবে কাজ করে।
এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইডও বিজারকরূপে Fe2O3 -কে বিজারিত করে ধাতব আয়রনে পরিণত করে।
23. কার্বন-বিজারণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করো।
উত্তর – কার্বন-বিজারণ পদ্ধতির সুবিধা: (1) এই পদ্ধতিতে বিজারক-রূপে ব্যবহৃত কোক সহজলভ্য ও সস্তা। (2) স্বল্প পরিমাণ কোক ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ ধাতব অক্সাইডকে বিজারিত করা যায়। (3) এক্ষেত্রে কোকের পাশাপাশি বিক্রিয়ায় উৎপন্ন CO গ্যাসও বিজারক হিসেবে ক্রিয়া করে।
কার্বন-বিজারণ পদ্ধতির অসুবিধা: (1) তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলিকে(যেমন—Na, K, Al, K, Mg ইত্যাদিকে) এই পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় না। (2) কোনো কোনো ধাতু যেমন— Ca, Al ইত্যাদি উচ্চ উন্নতায় কোক (কার্বন)-এর সাথে বিক্রিয়া করে কার্বাইড যৌগ গঠন করে।
24. কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করাযায় না কেন?
উত্তর – যেসব ধাতুর অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা কার্বনের তুলনায় কম, কেবলমাত্র সেইসব ধাতুগুলিকেই কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায়। Al -এর অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা কার্বনের তুলনায় বেশি এবং অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড যৌগ (Al2O3) বেশ স্থায়ী। তাই কার্বন-বিজারণ দ্বারা Al ধাতু নিষ্কাশন করা যায় না।
একই কারণে ধাতুর সক্রিয়তা সারির ওপরের দিকে অবস্থিত K, Na, Ca, Mg প্রভৃতি ধাতুগুলিকেও কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় না।
25. তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশনের মূল নীতিটি লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন প্রকৃতপক্ষে ধাতব আয়নেরই তড়িৎ-বিজারণ—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিতে ওপরের দিকে অবস্থিত অধিক সক্রিয় ধাতুগুলির (K, Ca, Na, Mg ইত্যাদি) অক্সাইডকে কার্বন দ্বারা বিজারিত করে ধাতু নিষ্কাশন সম্ভব নয়। উপযুক্ত তড়িদ্দ্বারসহ এদের গলিত ক্লোরাইড বা হাইড্রক্সাইড যৌগের তড়িদ্বিশ্লেষণ করে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়। তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে গলিত ধাতব ক্লোরাইড বা ধাতব হাইড্রক্সাইডের বিয়োজনে উৎপন্ন ধাতব ক্যাটায়নটি ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয় ও মুক্ত ধাতুতে পরিণত হয়। সংঘটিত বিক্রিয়াগুলি নিম্নরূপ-

সুতরাং, তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন প্রকৃতপক্ষে ধাতব আয়নেরই তড়িৎ-বিজারণ।
26. কার্বন-বিজারণ, তড়িৎ-বিজারণ ও থার্মিট পদ্ধতির তুলনা করো।
উত্তর – কার্বন-বিজারণ, তড়িৎ-বিজারণ এবং থার্মিট পদ্ধতির তুলনাটি নীচে আলোচিত হল—

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. Zn নিষ্কাশনের সময় ZnO -কে বিজারিত করা হয় —
(a) H2 দ্বারা
(b) কার্বন চূর্ণ দ্বারা
(c) H2S দ্বারা
(d) তড়িদবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে
উত্তর – (b) কার্বন চূর্ণ দ্বারা
2. থার্মিট প্রক্রিয়ায় থার্মিট মিশ্রণ ছাড়া উপস্থিত থাকে —
(a) Fe, Cr
(b) ZnO, Mg
(c) BaO2, Mn
(d) BaO2, Mg
উত্তর – (d) BaO2, Mg
3. থার্মিট মিশ্রণটি হল—
(a) Fe2O3 + Al
(b) Fe2O3 + Cu
(c) FeO + Al
(d) FeO + Cu
উত্তর – (a) Fe2O3 + Al
4. থার্মিট মিশ্রণে ভর হিসেবে Fe2O3 ও Al-চূর্ণের অনুপাত —
(a) 1:2
(b) 2:1
(c) 1:3
(d) 3:1
উত্তর – (d) 3:1
5. ফুটন্ত জলের সাথে বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন করলেও ঠান্ডা জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন করে না-
(a) Ca
(b) K
(c) Al
(d) Na
উত্তর – (c) Al
6. সক্রিয়তা সারিতে Pb-এর নীচে কিন্তু Hg-এর ওপরে অবস্থিত –
(a) Sn
(b) Ag
(c) Cu
(d) Au
উত্তর – (c) Cu
7. সক্রিয়তা সারির মধ্যম সক্রিয় ধাতুগুলিকে নিষ্কাশনের পদ্ধতি হল—
(a) কার্বন-বিজারণ
(b) H2 দ্বারা বিজারণ
(c) স্বতঃবিজারণ
(d) তড়িৎ-বিজারণ
উত্তর – (a) কার্বন-বিজারণ, (c) স্বতঃবিজারণ
8. প্রদত্ত কোন্ বিক্রিয়াটি সংঘটিত হওয়া সম্ভব?
(a) Zn + FeSO4 →
(b) MgSO4 + Fe →
(c) CuSO4 + Ag →
(d) ZnSO4 + pb →
উত্তর – (a) Zn + FeSO4 →
9. থামিট পদ্ধতিতে কোন্ ধাতুটিকে নিষ্কাশন করা যায় না?
(a) Fe
(b) Cr
(c) Mn
(d) Na
উত্তর – (d) Na
10. লোহার পেরেক-কে কোন্ দ্রবণে ডুবিয়ে রাখলে রঙের পরিবর্তন দেখা যাবে?
(a) ZnSO4
(b) Al2(SO4)3
(c) FeSO4
(d) CuSO4
উত্তর – (d) CuSO4
11. সক্রিয়তা সারিতে ওপরের দিকে থাকা ধাতুগুলির নিষ্কাশনের পদ্ধতি—
(a) কার্বন-বিজারণ
(b) H2 দ্বারা বিজারণ
(c) স্বতঃবিজারণ
(d) তড়িৎ-বিজারণ
উত্তর – (d) তড়িৎ-বিজারণ
12. প্রদত্ত কোন্ ধাতুটি সাধারণ উন্নতায় ফুটন্ত জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না, কিন্তু স্টিমের সঙ্গে বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন করে?
(a) Mg
(b) Zn
(c) Fe
(d) Al
উত্তর – (c) Fe
13. কোন্ ধাতু দুটি অ্যাসিড ও ক্ষার উভয়ের সঙ্গে বিক্রিয়ায় H2 গ্যাস উৎপন্ন করে?
(a) Cu, Zn
(b) Na, Cu
(c) Pb, Zn
(d) Al, Zn
উত্তর – (d) Al, Zn
14. কোন্ ধাতুটিকে তীব্র ক্ষারের সঙ্গে ফোটালে হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়?
(a) Fe
(b) Al
(c) Cu
(d) Mg
উত্তর – (b) Al
15. সক্রিয়তা সারিতে ওপরের দিকে অবস্থিত ধাতুগুলি—
(a) তীব্র বিজারক
(b) মৃদু বিজারক
(c) তীব্র জারক
(d) মৃদু জারক
উত্তর – (a) তীব্র বিজারক
16. রেড হিমাটাইট থেকে কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে লোহা নিষ্কাশনে বিজারক পদার্থরূপে ব্যবহৃত হয় —
(a) Al
(b) CO
(c) CO2
(d) CO32-
উত্তর – (b) CO
17. ফেরাস সালফেট দ্রবণকে রাখা যাবে না—
(a) তামার পাত্রে
(b) অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে
(c) রুপোর পাত্রে
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে
18. CuSO4 -এর জলীয় দ্রবণ থেকে Cu-কে প্রতিস্থাপিত করতে পারে—
(a) Ag
(b) Au
(c) Hg
(d) Zn
উত্তর – (d) Zn
19. তড়িৎ-বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয় —
(a) Fe
(b) Ag
(c) Cu
(d) Al
উত্তর – (d) Al
20. কোন্ ধাতুটি থার্মিট পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয়?
(a) Na
(b) Al
(c) Zn
(d) Fe
উত্তর – (d) Fe
21. জলের সাথে বিক্রিয়া করে না—
(a) Na
(b) Mg
(c) Al
(d) Cu
উত্তর – (d) Cu
22, থার্মিট পদ্ধতিতে কোন্টি বিজারক দ্রব্য হিসেবে কাজ করে?
(a) Al
(b) Mg
(c) Zn
(d) Cu
উত্তর – (a) Al
23. Zn + CuSO4 → ZnSO4 + Cu, এই বিক্রিয়ায় Cu2+—
(a) জারিত অথবা বিজারিত হয়
(b) বিজারিত হয়
(c) জারিত হয়
(d) জারিত বা বিজারিত হয় না
উত্তর – (b) বিজারিত হয়
24. সবচেয়ে সক্রিয় ধাতুটি হল—
(a) Fe
(b) Ag
(c) K
(d) Cu
উত্তর – (c) K
25. কোন্ ধাতুটি জলের সঙ্গে সাধারণ তাপমাত্রায় বিক্রিয়া করে?
(a) Na
(b) Cu
(c) Fe
(d) Zn
উত্তর – (a) Na
26. প্রদত্ত কোন্ ধাতুকে তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত করা যায় না?
(a) Na
(b) Zn
(c) Al
(d) Ca
উত্তর – (b) Zn
27. প্রদত্ত যে ধাতুটিকে কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায়, তা হল—
(a) Al
(b) Mg
(c) Zn
(d) Mn
উত্তর – (c) Zn
28. ধাতুর দ্বারা ধাতু নিষ্কাশনের একটি পদ্ধতি হল—
(a) স্বতঃবিজারণ
(b) তড়িৎ-বিজারণ
(c) থার্মিট পদ্ধতি
(d) সবগুলিই
উত্তর – (c) থার্মিট পদ্ধতি
29. আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াটি হল—
(a) জারণ
(b) বিজারণ
(c) জারণ-বিজারণ
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) বিজারণ
30. থামিট পদ্ধতিতে জারক পদার্থ —
(a) Al
(b) Mg ফিতা
(c) Fe2O3
(d) KClO3
উত্তর – (c) Fe2O3
একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও
1. পরমাণু থেকে ইলেকট্রন বর্জনে জারণের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – Na → Na+ + e
2. ক্যাটায়ন থেকে ইলেকট্রন বর্জনে জারণের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – Fe2+ → Fe3+ + e
3. অ্যানায়ন থেকে ইলেকট্রন বর্জনে জারণের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – S2- → S + 2e
4. পরমাণু দ্বারা ইলেকট্রন গ্রহণে বিজারণের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – Cl + e → Cl–
5. ক্যাটায়ন দ্বারা ইলেকট্রন গ্রহণে বিজারণের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – Na+ + e → Na
6. কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত হয় এমন একটি ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – এমন একটি ধাতু হল জিংক।
7. Cu2+ + Zn → Zn2+ + Cu, বিক্রিয়ায় জারক ও বিজারক কোন্গুলি?
উত্তর – প্রদত্ত বিক্রিয়ায় Zn বিজারক ও Cu2+ জারক।
8. কোনো যৌগ থেকে অক্সিজেন অপসারণকে কী বলা হয়?
উত্তর – কোনো যৌগ থেকে অক্সিজেন অপসারণকে বিজারণ বলা হয়।
9. ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিতে কপারের ঠিক ওপরে অবস্থিত মৌলটি কী?
উত্তর – হাইড্রোজেন
10. সক্রিয়তা বৃদ্ধির ক্রমানুসারে সাজাও: Pb, Ca, Cu, Zn, Mg
উত্তর – সক্রিয়তার ক্রম: Cu< Pb < Zn < Mg < Ca |
11. Na, Al, Fe ও Pb ধাতুগুলিকে বিজারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্রমানুসারে সাজাও।
উত্তর – বিজারণ ক্ষমতার ক্রম: Pb < Fe < Al < Na ।
12. Al ও Sn-এর মধ্যে কোন্টি সক্রিয়তা শ্রেণিতে অপেক্ষাকৃত ওপরে অবস্থিত?
উত্তর – Al সক্রিয়তা শ্রেণিতে Sn -এর ওপরে অবস্থিত।
13. তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে হাইড্রোজেনের নীচে অবস্থিত এমন দুটি ধাতুর উদাহরণ দাও।
উত্তর – কপার (Cu) ও সোনা (Au)
14. স্টিমের সাথে বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন করে এমন ধাতুর উদাহরণ দাও।
উত্তর – স্টিমের সাথে বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন করে আয়রন (Fe)।
15. Fe, Cu, Zn ও Al-এর মধ্যে কোন্টি লঘু H2SO4 -এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় H2 তৈরি করে না?
উত্তর – Cu সক্রিয়তা সারিতে H -এর নীচে অবস্থান করায় লঘু H2SO4 -এর সাথে বিক্রিয়ায় H2 তৈরি করতে পারে না।
16. গোল্ডস্মিডের থার্মিট পদ্ধতির নীতি কী?
উত্তর – অপেক্ষাকৃত বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুর দ্বারা কম তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুর অক্সাইডের বিজারণ—এটিই হল গোল্ডস্মিডের থার্মিট পদ্ধতির নীতি।
17. থার্মিট পদ্ধতিতে কোন্ পদার্থ জারক পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – Fe, Cr, Mn প্রভৃতি ধাতুর অক্সাইড থার্মিট পদ্ধতিতে জারক পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
18. থার্মিট পদ্ধতি ব্যবহার করে Fe ছাড়া আর কোন্ কোন্ ধাতুকে নিষ্কাশন করা যায়?
উত্তর – থার্মিট পদ্ধতিতে আয়রন ছাড়া ক্রোমিয়াম (Cr), মলিবডেনাম (Mo), টাইটেনিয়াম (Ti), ম্যাঙ্গানিজ (Mn) প্রভৃতি ধাতুকে তাদের অক্সাইড থেকে নিষ্কাশন করা যায়।
19. থার্মিট পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশনে অ্যালুমিনিয়ামের কোন্ ধর্মকে কাজে লাগানো হয়?
উত্তর – উচ্চ উয়তায় অ্যালুমিনিয়ামের তীব্র বিজারণ ধর্ম তথা অক্সিজেনের প্রতি Al-এর তীব্র আসক্তিকে থামিট পদ্ধতিতে কাজে লাগানো হয়।
20. থার্মিট পদ্ধতিতে আগুন লাগাতে কোন্ ধাতু ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – ম্যাগনেশিয়াম (Mg) ধাতু ব্যবহার করা হয়।
21. থার্মিট পদ্ধতিতে বিক্রিয়াকালীন উন্নতা কত হয়?
উত্তর – থার্মিট পদ্ধতিতে বিক্রিয়াকালীন উয়তা হয় প্রায় 2000°C।
22. থার্মিট পদ্ধতির একটি ব্যবহার লেখো।
উত্তর – রেললাইন, ট্রামলাইন, জাহাজ বা বড়ো যন্ত্রের ভাঙা অংশ জোড়া দিতে থার্মিট পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
23. কার্বন-বিজারণ দ্বারা নিষ্কাশন করা যায় না এমন দুটি ধাতুর উদাহরণ দাও।
উত্তর – Na ও Al-কে কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় না।
24. কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে ধাতুর সঙ্গে উৎপন্ন গ্যাসটির নাম কী?
উত্তর – ধাতুর সঙ্গে উৎপন্ন গ্যাসটি হল কার্বন মনোক্সাইড (CO)।
25. Mn+ + ne → M – এটি জারণ না বিজারণ?
উত্তর – এক্ষেত্রে ক্যাটায়ন দ্বারা ইলেকট্রন গৃহীত হচ্ছে, সুতরাং এটি বিজারণ।
26. K, Ca, Na প্রভৃতি ধাতু নিষ্কাশনের জন্য ধাতু নিষ্কাশনের কোন পদ্ধতির প্রয়োগ হয়?
উত্তর – K, Ca, Na প্রভৃতি ধাতু নিষ্কাশনের জন্য তড়িবিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
27. তড়িৎ-বিজারণে ধাতুর পরমাণু কোন্ তড়িদ্দ্বারে সঞ্চিত হয়?
উত্তর – ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়।
28. তড়িৎ-বিজারণে বিজারণ ক্রিয়া কোথায় সংঘটিত হয়?
উত্তর – তড়িৎ-বিজারণে বিজারণ ক্রিয়া ক্যাথোডে সংঘটিত হয়।
29. তড়িৎ-বিজারণ দ্বারা নিষ্কাশিত হয় এমন দুটি ধাতুর নাম লেখো।
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম (Al) ও ক্যালশিয়াম (Ca)।
30. গলিত NaCl দ্রবণের তড়িৎ-বিজারণে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে কী উৎপন্ন হয়?
উত্তর – ক্যাথোডে Na ধাতু ও অ্যানোডে Cl2 গ্যাস উৎপন্ন হয়।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. কোনো পরমাণু বা আয়ন বা মুলক দ্বারা ইলেকট্রন বর্জনের ঘটনা হল …….. প্রক্রিয়া।
উত্তর – জারণ
2. কোনো পরমাণু বা আয়ন বা মূলক দ্বারা ইলেকট্রন গ্রহণ হল ………. প্রক্রিয়া।
উত্তর – বিজারণ
3. জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় যে পদার্থটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি হল ………।
উত্তর – জারক
4. জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় বিজারক পদার্থ ইলেকট্রন …….. করে নিজে ……… হয়।
উত্তর – বর্জন, জারিত
5. 2O2- → O2 + 4e বিক্রিয়াটি ……… বিক্রিয়ার উদাহরণ।
উত্তর – জারণ
6. Cl + e → Cl– বিক্রিয়াটি ……… বিক্রিয়ার উদাহরণ।
উত্তর – বিজারণ
7. ধাতব অক্সাইড থেকে অক্সিজেন অপসারণের ফলে ধাতব অক্সাইডটি ……… হয়।
উত্তর – বিজারিত
৪. আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন সর্বদাই একটি ………. বিক্রিয়া।
উত্তর – বিজারণ
9. ধাতুর সক্রিয়তা সারির ওপর থেকে নীচের দিকে গেলে ধাতুগুলির বিজারণ ক্ষমতা ক্রমশ ……… পায়।
উত্তর – হ্রাস
10. সক্রিয়তা সারির ওপরের দিকের ধাতুগুলির অক্সিজেনের প্রতি আসক্তি অত্যন্ত ………।
উত্তর – বেশি
11. Fe, Cu, Zn ও Al -এর মধ্যে সক্রিয়তা সারিতে সবচেয়ে ওপরে অবস্থিত ………।
উত্তর – Al
12. তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণিতে ওপরের দিকে থাকা ধাতুগুলির তড়িৎ-ধনাত্মকতা ………।
উত্তর – বেশি
13. ধাতুর সক্রিয়তা সারিতে সবচেয়ে নীচে ………. ধাতুটি অবস্থিত।
উত্তর – গোল্ড
14. জলীয় দ্রবণে ………. সক্রিয় ধাতু ……… সক্রিয় ধাতুর লবণ থেকে ধাতুটিকে অধঃক্ষিপ্ত বা প্রতিস্থাপিত করে।
উত্তর – বেশি, কম
15. Au, Ag, Pt ধাতুগুলি প্রকৃতিতে ……… অবস্থায় পাওয়া যায়।
উত্তর – মুক্ত
16. থার্মিট পদ্ধতিতে ………. বিজারক হিসেবে কাজ করে।
উত্তর – Al-চূর্ণ
17. উচ্চ উন্নতায় রেড হিমাটাইটকে অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা ………. করে আয়রন উৎপন্ন করা হয়।
উত্তর – বিজারিত
18. কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে বিজারক হিসেবে সাধারণত ………. ব্যবহার করা হয়।
উত্তর – কোক
19. কার্বন দ্বারা বিজারিত করে আকরিক থেকে নিষ্কাশন করা হয় এমন ধাতুর উদাহরণ হল ………।
উত্তর – জিংক
20. জিংক, আয়রন প্রভৃতির মতো অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতুগুলিকে ………. পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয়।
উত্তর – কার্বন-বিজারণ
TOPIC – C ধাতুর ক্ষয়
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
1. ধাতুর ক্ষয় বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধাতু বা ধাতুনির্মিত বস্তুকে খোলা বায়ুতে দীর্ঘদিন রেখে দিলে বায়ুর অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রভৃতির প্রভাবে এবং অন্যান্য ভৌত ও রাসায়নিক কারণে এগুলি আক্রান্ত হয়। ফলস্বরূপ এরা ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য পদার্থে পরিণত হয় যার দরুন এদের গায়ে বর্ণহীন বা রঙিন আস্তরণের সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে এই ঘটনাকে ধাতুর ক্ষয় বলা হয়।
2. বিশুদ্ধ ধাতু অপেক্ষা অবিশুদ্ধ ধাতু সহজেই জলবায়ু দ্বারা আক্রান্ত হয় কেন?
উত্তর – অবিশুদ্ধ ধাতুকে দীর্ঘদিন আর্দ্র বাতাসে ফেলে রাখলে ধাতু এবং ধাতুতে উপস্থিত অশুদ্ধি তড়িদ্দ্বাররূপে ও জল বা জলীয়বাষ্প তড়িবিশ্লেষ্যরূপে কাজ করে অসংখ্য ছোটো ছোটো তড়িৎ-রাসায়নিক কোশ উৎপন্ন করে। ফলে অবিশুদ্ধ ধাতু সহজেই বায়ুর অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রভৃতি দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিশুদ্ধ ধাতুতে এরূপ তড়িৎ-রাসায়নিক কোশ সৃষ্টি না হওয়ায় তা জলবায়ু দ্বারা আক্রান্ত হয় না।
3. মরচে পড়ার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, মরচে পড়ায় কীভাবে আর্থিক ক্ষতি হয়?
উত্তর – (1) মরচে পড়ার ফলে আয়রন-নির্মিত বস্তুগুলির ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যায়। (2) গৃহস্থালির সরঞ্জাম থেকে শুরু করে পরিবহণ শিল্পে, কৃষিক্ষেত্রে ও সামরিক প্রয়োজনে লোহা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মরচে পড়ার ফলে লোহার জিনিস ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হই। (3) ঘরবাড়ি, সেতু, জাহাজ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত লোহার কাঠামোয় মরচে পড়লে সেগুলির দৃঢ়তা নষ্ট হয় ও ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে এগুলির গঠন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ব্যবহারের পক্ষে বিপজ্জনক হয়।
4. লোহায় মরচে পড়া (rusting) কাকে বলে?
অথবা, মরচে কী?
উত্তর – লোহা বা লৌহজাত দ্রব্যকে আর্দ্র বায়ুতে কিছুদিন খোলা অবস্থায় রেখে দিলে ওর ওপর লালচে-বাদামি রঙের আস্তরণ পড়ে। এই আস্তরণই হল মরচে এবং এই ঘটনাকে লোহায় মরচে পড়া বলে। মরচের সুনির্দিষ্ট কোনো রাসায়নিক সংযুতি নেই। এর প্রধান উপাদান হল সোদক ফেরিক অক্সাইড (Fe2O3 · xH2O ; x -এর মান পরিবর্তনশীল, তবে মোটামুটিভাবে x = 3 ) ।
5. মরচে পড়ার প্রয়োজনীয় শর্তগুলি কী কী?
উত্তর – মরচে পড়ার প্রয়োজনীয় শর্তগুলি হল— (1) বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতি, (2) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি, (3) অশুদ্ধ লোহা (বিশুদ্ধ লোহায় মরচে পড়ে না)। যেহেতু আর্দ্র বায়ুতে অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্প উভয়ই উপস্থিত থাকে, তাই লোহার জিনিসকে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে রাখলে ধীরে ধীরে তার ওপর মরচে পড়ে।
6. লোহায় কীভাবে মরচে পড়ে তা লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, মরচে পড়া একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া—ব্যাখ্যা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, লোহায় মরচে পড়ার তড়িৎ-রাসায়নিক ব্যাখ্যা কী?
অনুরূপ প্রশ্ন, লোহায় মরচে পড়ার ক্ষেত্রে ক্যাথোড ও অ্যানোডে সংঘটিত বিক্রিয়াগুলি লেখো।
উত্তর – মরচে পড়া একটি তড়িৎ-রাসায়নিক ঘটনা। লোহায় অশুদ্ধির (যেমন—কার্বন) উপস্থিতি, ওর অসমসত্ত্ব রাসায়নিক সংযুতি, পৃষ্ঠতলের অসম আকৃতি ইত্যাদি কারণে লৌহ-নির্মিত দ্রব্যের একটি অংশে Fe -পরমাণুর জারণ অন্য অংশের চেয়ে সহজে ঘটে। যে অংশে Fe -এর জারণ অপেক্ষাকৃত সহজে ঘটে সেটি হল অ্যানোড অঞ্চল এবং অপর অংশটি হল ক্যাথোড অঞ্চল। এই অ্যানোড, ক্যাথোড ও বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প (তড়িবিশ্লেষ্যরূপে ক্রিয়া করে) একসঙ্গে মিলে লৌহ-নির্মিত দ্রব্যটিতে অসংখ্য তড়িৎ-রাসায়নিক কোশের সৃষ্টি করে। অ্যানোড অঞ্চলে Fe -পরমাণুগুলি ইলেকট্রন বর্জন করে Fe2+ আয়নে জারিত হয়। এই বর্জিত ইলেকট্রনগুলি লোহার মধ্য দিয়ে বাহিত হয়ে ক্যাথোড অঞ্চলে পৌঁছায়। ক্যাথোড অঞ্চলে লোহার সংস্পর্শে থাকা জলে (জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনে উৎপন্ন) দ্রবীভূত অক্সিজেন এই ইলেকট্রনগুলি দ্বারা বিজারিত হয়ে জল (H2O) উৎপন্ন করে। এই বিজারণ বিক্রিয়াটি H+ আয়নের উপস্থিতিতে ঘটে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় H+ আয়ন পাওয়া যায় জলের অণুর বিয়োজন দ্বারা অথবা জলে দ্রবীভূত CO2 ও H2O -এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বনিক অ্যাসিডের (H2CO3) বিয়োজন
দ্বারা। ক্যাথোড অঞ্চলে H+ আয়ন প্রথমে ইলেকট্রন গ্রহণ করে H -পরমাণুতে (বা H2 অণুতে) বিজারিত হয়, যা জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের বিজারণ ঘটিয়ে জল উৎপন্ন করে।

অ্যানোড অঞ্চলে উৎপন্ন Fe2+ আয়ন বায়ুর O2 এর উপস্থিতিতে সোদক ফেরিক অক্সাইড বা মরচে (Fe2O3 · xH2O) গঠন করে। এক্ষেত্রে Fe2+ আয়ন Fe3+ আয়নে (ফেরিক অক্সাইডে Fe -পরমাণু Fe3+ রূপে থাকে) জারিত হয়।

7. লোহায় মরচে পড়াকে ‘মৃদু দহন প্রক্রিয়া’ বলে কেন?
উত্তর – লোহা বা লোহার তৈরি কোনো জিনিসকে আর্দ্র বায়ুতে খোলা অবস্থায় ফেলে রাখলে বায়ুর অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে লোহা জারিত হয়। এই জারণের ফলে লোহার ওপর লালচে-বাদামি রঙের মরচের আস্তরণ পড়ে। মরচে পড়ার সময় সামান্য তাপের উদ্ভব ঘটলেও আলো উৎপন্ন হয় না। তাই লোহায় মরচে পড়াকে ‘মৃদু দহন প্রক্রিয়া’ বলা হয়।
৪. (i) ক্লোরাইড, সালফেট প্রভৃতি আয়নের উপস্থিতি লোহায় মরচে পড়াকে কীভাবে ত্বরান্বিত করে?
(ii) সমুদ্রগামী জাহাজের তলদেশে, তেলবাহী লোহার পাইপে কিংবা মাটির নীচে জল সরবরাহকারী লোহার পাইপে দ্রুত মরচে পড়ে কেন?
উত্তর – (i) ক্লোরাইড (Cl–), সালফেট (SO42-) প্রভৃতি আয়নের উপস্থিতিতে মরচে গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী তড়িদবিশ্লেষ্য অর্থাৎ জলের তড়িৎ-পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে মরচে গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়াগুলি দ্রুত সম্পন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে ক্লোরাইড, সালফেট প্রভৃতি আয়নের উপস্থিতিতে, লোহার পৃষ্ঠতলে উৎপন্ন প্রতিটি তড়িৎ-রাসায়নিক কোশের অ্যানোড থেকে ক্যাথোডে ইলেকট্রনের স্থানান্তর দ্রুত হয়। ফলস্বরূপ মরচে গঠন ত্বরান্বিত হয়।
(ii) সমুদ্রের জলে Cl– আয়ন (NaCl ও অন্যান্য ক্লোরাইড লবণের বিয়োজনে উৎপন্ন) প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত থাকে। আবার আর্দ্র মাটিতে Cl–, SO42- -ইত্যাদি আয়ন (বিভিন্ন খনিজ লবণের বিয়োজনে উৎপন্ন) উপস্থিত থাকে। এই আয়নগুলির উপস্থিতি লোহায় মরচে পড়াকে ত্বরান্বিত করে। তাই সমুদ্রগামী জাহাজের তলদেশে, সমুদ্রের তলায় তেলবাহী লোহার পাইপে কিংবা মাটির নীচে জল সরবরাহকারী লোহার পাইপে দ্রুত মরচে পড়ে।
9. কয়েকটি প্রভাবকের উল্লেখ করো যারা মরচে পড়ার হার ত্বরান্বিত করতে পারে।
অনুরূপ প্রশ্ন, লোহায় মরিচা পড়া ত্বরান্বিত করে এমন উপাদানটির নাম লেখো।
উত্তর – (1) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে লোহার ওপর মরচে পড়ার হার বৃদ্ধি পায়। (2) উম্নতা বৃদ্ধি পেলে মরচে পড়ার হার ত্বরান্বিত হয়। (3) যেসব অঞ্চলে অম্লবৃষ্টি হয় সেখানকার খোলা বায়ুতে থাকা লোহার জিনিসে দ্রুত হারে মরচে পড়ে। (4) জলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ (যেমন—NaCl) দ্রবীভূত থাকলে ওই জলের সংস্পর্শে থাকা লোহার জিনিসে দ্রুত মরচে পড়ে।
10. মরচে নিবারণের উপায়গুলি লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, লোহায় মরচে পড়া প্রতিরোধের দুটি উপায় উল্লেখ করো।
উত্তর – (1) লোহা বা লৌহ-নির্মিত দ্রব্যের ওপর আলকাতরা, রং বা বার্নিশের প্রলেপ দিয়ে মরচে পড়া রোধ করা যায়। (2) মরচে নিবারণের জন্য লৌহ-নির্মিত দ্রব্যের ওপর তড়িৎলেপন পদ্ধতিতে জিংক, নিকেল বা ক্রোমিয়ামের প্রলেপ দেওয়া হয়। (3) লোহিততপ্ত লোহা বা লৌহ-নির্মিত দ্রব্যের ওপর দিয়ে স্টিম চালনা করলে লোহার পৃষ্ঠতলে ফেরোসোফেরিক অক্সাইড (Fe3O4) -এর আস্তরণ সৃষ্টি হয় যা লোহাকে জল ও বায়ুর সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করে। (4) মাটির নীচে থাকা জল বা তেলবাহী লোহার পাইপের সঙ্গে অন্তরিত পরিবাহী তারের মাধ্যমে ম্যাগনেশিয়াম ব্লক যুক্ত করে পাইপে মরচে পড়া প্রতিরোধ করা হয়। (5) লোহার সঙ্গে পরিমাণমতো ক্রোমিয়াম, নিকেল, কার্বন মিশিয়ে লোহাকে ইস্পাত বা স্টিলে (ধাতু-সংকর) পরিণত করে মরচে পড়া নিবারণ করা যায়।
11. (i) গ্যালভানাইজেশন কাকে বলে?
(ii) গ্যালভানাইজেশন করা হয় কেন?
উত্তর – (i) লোহা বা আয়রন-নির্মিত দ্রব্যের ওপর জিংক ধাতুর প্রলেপ দেওয়াকে গ্যালভানাইজেশন বা জিংক-লেপন বলে। আয়রন-নির্মিত দ্রব্যের ওপর গলিত জিংকের প্রলেপ দিয়ে কিংবা তড়িৎলেপন পদ্ধতিতে জিংকের প্রলেপ দিয়ে গ্যালভানাইজেশন করা হয়।
(ii) লোহা বা আয়রন-নির্মিত দ্রব্যকে আবহাওয়ার প্রভাবজনিত ক্ষয় থেকে রক্ষা করা অর্থাৎ লোহার ওপর মরচে পড়া প্রতিরোধ করার জন্য গ্যালভানাইজেশন করা হয়। ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিতে Zn -এর অবস্থান Fe -এর ওপরে। সুতরাং আয়রন অপেক্ষা জিংক অধিক তড়িৎ-ধনাত্মক অর্থাৎ, জিংকের জারিত হওয়ার প্রবণতা আয়রন অপেক্ষা বেশি। তাই জিংক ও আয়রন একত্রে থাকলে বায়ুর অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের ক্রিয়ায় আয়রনের আগেই জিংক জারিত হয়। এর ফলে জিংক কিছুটা ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও লোহা অবিকৃত থাকে। অর্থাৎ জিংকের উপস্থিতিতে আয়রন জারণ তথা মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।
12. জিংক, লোহার তুলনায় বেশি তড়িৎ ধনাত্মক, তাই লোহার তুলনায় জিংকের দ্রুত আবহাওয়াজনিত ক্ষয় হওয়া উচিত। কিন্তু এরূপ ঘটে না, বরং লোহার জিনিসকে মরচে পড়া থেকে রক্ষা করতে তার ওপর জিংকের প্রলেপ দেওয়া হয়—এই ঘটনাটিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?
উত্তর – জিংকের প্রলেপ দেওয়া লোহার জিনিসকে খোলা বাতাসের সংস্পর্শে রেখে দিলে বায়ুর O2, CO2 ও জলীয় বাষ্পের প্রভাবে জিংকের ওপর বেসিক জিংক কার্বনেট [ZnCO3 · 3Zn(OH)2] -এর অদ্রাব্য সাদা আস্তরণ পড়ে। এই অদ্রাব্য আস্তরণ জিংকের প্রলেপের অবিকৃত অংশকে বায়ুর সংস্পর্শে আর আসতে দেয় না। এর ফলে জিংকের প্রলেপের অবিকৃত অংশ তথা প্রলেপের নীচে থাকা লোহা আবহাওয়াজনিত কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। তাই লোহার জিনিসকে মরচে পড়া থেকে রক্ষা করতে তার ওপর জিংকের প্রলেপ দেওয়া হয়।
13. মরচে পড়া থেকে রক্ষা করতে লোহার ওপর জিংক-লেপন নাকি টিন-লেপন—কোন্টি বেশি উপযোগী?
উত্তর – জিংক-প্রলিপ্ত লোহায় কোথাও চিড় ধরলে বা জিংকের প্রলেপ উঠে গেলেও লোহা অবিকৃত থাকে, বরং জিংক ক্ষয় পেতে থাকে। কারণ জিংক, লোহার চেয়ে অধিক তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু (ধাতুর সক্রিয়তা সারি অনুযায়ী) হওয়ায় লোহার আগে জিংক, আর্দ্র বায়ুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে। অন্যদিকে, টিন-প্রলিপ্ত লোহায় কোথাও চিড় ধরলে বা কোনো স্থানে প্রলেপ উঠে গেলে টিন অবিকৃত থাকে কিন্তু লোহা দ্রুত মরচে ধরে ক্ষয়ে যায়। এর কারণ টিনের চেয়ে লোহা বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতু। তাই আর্দ্র বায়ুর সঙ্গে লোহার বিক্রিয়া করার প্রবণতা টিনের তুলনায় বেশি। স্বভাবতই লোহাকে মরচে পড়া থেকে রক্ষা করতে টিন-লেপনের চেয়ে জিংক-লেপন বেশি উপযোগী।
14. সমুদ্রগামী জাহাজের তলদেশ ও ভূগর্ভস্থ লোহার পাইপকে মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা হয় কীভাবে?
অনুরূপ প্রশ্ন, সমুদ্রগামী জাহাজের ইস্পাত-নির্মিত কাঠামোর সঙ্গে প্রায়ই ম্যাগনেশিয়ামের ব্লক যুক্ত করা হয় কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, ক্যাথোডীয় সংরক্ষণ ও উৎসর্গীকৃত অ্যানোড বলতে কী বোঝ ?
অনুরূপ প্রশ্ন, মরচে নিবারণে ক্যাথোডীয় রক্ষণ পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে?
উত্তর – সমুদ্রগামী জাহাজের তলদেশ ও ভূগর্ভস্থ লোহার পাইপকে মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এর সাথে অন্তরিত পরিবাহী তারের মাধ্যমে উচ্চ তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু ম্যাগনেশিয়ামের (Mg) ব্লক সংযুক্ত করা হয়।

এক্ষেত্রে লোহা ক্যাথোড, Mg -এর ব্লক অ্যানোড এবং সমুদ্রের জল বা আর্দ্র মাটি তড়িদবিশ্লেষ্যরূপে ক্রিয়া করে। ধাতুর সক্রিয়তা সারিতে Mg -এর অবস্থান Fe -এর ওপরে হওয়ায় অর্থাৎ Mg -এর তড়িৎ-ধনাত্মকতা Fe অপেক্ষা বেশি হওয়ায় Mg, Fe এর আগে জারিত হয়। ফলস্বরূপ, লোহায় মরচে পড়ে না। এইভাবে অ্যানোডের (Mg) বিনিময়ে ক্যাথোডের (Fe) সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে ক্যাথোডীয় সংরক্ষণ (cathodic protection) বলে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত অ্যানোডকে উৎসর্গীকৃত অ্যানোড (sacrificed anode) বলা হয়।
15. অ্যালুমিনিয়াম ধাতু তার ক্ষয় থেকে কীভাবে রক্ষা পায় ?
অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যালুমিনিয়ামকে ‘আত্মরক্ষায় সক্ষম’ ধাতু বলা হয় কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, আর্দ্র বায়ুতে ফেলে রাখলে অ্যালুমিনিয়াম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না কেন?.
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর তৈরি জিনিসকে আর্দ্র বায়ুতে ফেলে রাখলে ওর ওপর অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3) -এর একটি সূক্ষ্ম সাদা আস্তরণ সৃষ্টি হয়। ফলে এর ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যায়। অক্সাইডের এই আস্তরণ জলে অদ্রাব্য হওয়ায় বায়ুর O2 ও জলীয় বাষ্প এই আস্তরণ ভেদ করে ধাতুর সংস্পর্শে আসতে পারে না। ফলস্বরূপ এই আস্তরণ ধাতুটিকে পরবর্তী আবহাওয়াজনিত জারণ ক্রিয়া থেকে রক্ষা করে ধাতুটির ক্ষয় রোধ করে। তাই অ্যালুমিনিয়ামকে ‘আত্মরক্ষায় সক্ষম’ (self protecting) ধাতু বলা হয় ।
16. আর্দ্র বায়ুতে তামা ও তামার অধিকাংশ সংকর ধাতুর ওপর ধীরে ধীরে সবুজ ছোপ ধরে কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, পিতলের দ্রব্য পুরোনো হলে সবুজ হয়ে যায় কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, কপার নির্মিত বস্তুকে অনেকদিন খোলা বাতাসে রেখে দিলে তার ওপর সবুজ বর্ণের আস্তরণ পড়তে দেখা যায় কেন?
উত্তর – আর্দ্র বায়ুতে খোলা অবস্থায় তামা বা তামার কোনো সংকর ধাতুকে (যেমন—পিতল) দীর্ঘদিন ফেলে রাখলে বায়ুর O2, CO2 ও জলীয় বাষ্পের সঙ্গে তামার বিক্রিয়ায় এদের ওপর সবুজ বর্ণের বেসিক কপার কার্বনেট [CuCO3 · Cu(OH)2] -এর আস্তরণ গঠিত হয়।
2Cu + H2O + CO2 + O2 → CuCO3 · Cu(OH)2
এ ছাড়াও শিল্পাঞ্চলের বায়ুতে সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) -এর উপস্থিতির জন্য এসব অঞ্চলে তামা বায়ুর অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প ও SO2 -এর মিলিত প্রভাবে ধীরে ধীরে জারিত হয়। এর ফলে তামার ওপর সবুজ বর্ণের বেসিক কপার সালফেট [CuSO4 · 3Cu(OH)2] এর আস্তরণ পড়ে।
8Cu + 6H2O + 2SO2 + 5O2 → 2[CuSO4 · 3Cu(OH)2]
এইসব রাসায়নিক পরিবর্তনের জন্যই আর্দ্র বায়ুতে রাখা তামা ও তামার অধিকাংশ সংকর ধাতুর ওপর ধীরে ধীরে সবুজ বর্ণের ছোপ পড়তে দেখা যায়।
17. সোনার গহনায় অনেক সময় সবুজ ছোপ পড়ে কেন?
উত্তর – বিশুদ্ধ সোনা নরম হয়। সোনার কাঠিন্য বা দৃঢ়তা বৃদ্ধি করার জন্য বিশুদ্ধ সোনার সাথে খাদ হিসেবে তামা মেশানো হয়। এধরনের সোনার গয়না দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে তামা বায়ুর বিভিন্ন উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে সবুজ বর্ণের বেসিক কপার সালফেট [CuSO4 · 3Cu(OH)2] বা বেসিক কপার কার্বনেট [CuCO3 · Cu(OH)2] গঠন করে। তাই তামার খাদযুক্ত সোনার গয়নায় অনেক সময় সবুজ ছোপ ধরতে দেখা যায়।

18. তামার তৈরি পুজোর বাসনপত্র পরিষ্কার করতে লেবু বা তেঁতুল ব্যবহার করার সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে?
উত্তর – বায়ুর CO2 , O2 ও জলীয় বাষ্পের প্রভাবে তামার তৈরি বাসনপত্রের ওপর সবুজ বর্ণের বেসিক কপার কার্বনেটের [CuCO3 · Cu(OH)2] আস্তরণ পড়ে। লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড ও তেঁতুলে টারটারিক অ্যাসিড থাকে। এই অ্যাসিডগুলি বেসিক কপার কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে জলে দ্রাব্য কপার সাইট্রেট ও কপার টারটারেট লবণ উৎপন্ন করে। ফলে জল দিয়ে ধুলে তামার বাসনপত্র দাগ মুক্ত হয়ে পুনরায় চকচকে হয়।
19. অ্যাসিডিক খাদ্য বা ফল অ্যালুমিনিয়াম, কপার বা জিংকের পাত্রে রাখা বা প্রসেসিং করা উচিত নয় কেন?
উত্তর – অম্ল স্বাদযুক্ত খাদ্য বা টক-জাতীয় ফলে বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড (যেমন—অ্যাসিটিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড ইত্যাদি) বর্তমান। এই জৈব অ্যাসিডগুলি অ্যালুমিনিয়াম ও জিংকের সাথে ধীরে ধীরে বিক্রিয়া করে জলে দ্রাব্য ধাতব লবণ বা যৌগ উৎপন্ন করে। আবার কপার বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে এইসব জৈব অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে জলে দ্রাব্য যৌগ উৎপন্ন করে। এই যৌগগুলি বিষাক্ত, খাদ্যের সাথে এগুলি আমাদের দেহে প্রবেশ করলে শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাই অম্ল স্বাদযুক্ত খাদ্য বা টক-জাতীয় ফল অ্যালুমিনিয়াম, জিংক বা কপারের পাত্রে রাখা বা প্রসেসিং করা উচিত নয়।
20. (i) Al -পাতে মোড়া আচার বা চাটনি খাওয়া উচিত নয় কেন?
(ii) খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে জিংক-প্রলিপ্ত পাত্রের পরিবর্তে টিন-প্রলিপ্ত পাত্র ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর – (i) আচার কিংবা চাটনি-জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে সংরক্ষক (preservative) হিসেবে ভিনিগার মেশানো হয় । ভিনিগার হল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH) নামক একটি জৈব অ্যাসিডের জলীয় দ্রবণ। অ্যাসিটিক অ্যাসিড অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলে দ্রাব্য অ্যালুমিনিয়াম-ঘটিত লবণ উৎপন্ন করে, যা মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকারক। এর ফলে অ্যালুমিনিয়ামের পাতে মোড়া আচার বা চাটনি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাই অ্যালুমিনিয়াম পাতে মোড়া চাটনি বা আচার খাওয়া উচিত নয়৷
(ii) খাদ্যদ্রব্যে যদি সামান্য পরিমাণেও কোনো জৈব অ্যাসিড (যেমন—অ্যাসিটিক অ্যাসিড) উপস্থিত থাকে তাহলে জিংক এই অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় জলে দ্রাব্য জিংক-ঘটিত লবণ উৎপন্ন করে যা মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকারক। খাবারের সঙ্গে এই লবণ শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়া ঘটে। অন্যদিকে, টিনের এরূপ কোনো বিষক্রিয়া নেই। তাই খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে জিংক-প্রলিপ্ত পাত্রের পরিবর্তে টিন-প্রলিপ্ত পাত্র ব্যবহার করা হয়।
21. দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত তামার বাসনকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে তবেই ব্যবহার করা উচিত—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত তামার বাসনের ওপর বায়ুর অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় বেসিক কপার কার্বনেটের সবুজ আস্তরণ পড়ে। বেসিক কপার কার্বনেট মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকারক, খাবারের সঙ্গে এটি দেহে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকার ফলে এর ওপর ধুলো-ময়লা জমে থাকে ও বিভিন্ন রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। তাই এ ধরনের তামার বাসন ভালোভাবে পরিষ্কার করে তবেই ব্যবহার করা উচিত।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. মরচের রাসায়নিক সংকেত হল—
(a) FeO · xH2O
(b) Fe3O4
(c) Fe2O3
(d) Fe2O3 · xH2O
উত্তর – (d) Fe2O3 · xH2O
2. কোন্ আয়নের উপস্থিতিতে লোহায় মরচে পড়া দ্রুততর হয়?
(a) H+
(b) OH–
(c) Cl–
(d) Mg2+
উত্তর – (c) Cl–
3. সমুদ্রগামী জাহাজের আয়রন-নির্মিত অংশকে মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়—
(a) কপার ব্লক
(b) অ্যালুমিনিয়াম ব্লক
(c) জিংক ব্লক
(d) ম্যাগনেশিয়াম ব্লক
উত্তর – (d) ম্যাগনেশিয়াম ব্লক
4. মরচে গঠিত হলে আয়রন (Fe) কোন্ আয়নে পরিণত হয়?
(a) Fe+
(b) Fe2+
(c) Fe3+
(d) Fe2–
উত্তর – (c) Fe3+
5. মরচে গঠনকালে কোন্ আয়নের উপস্থিতিতে জলে দ্রবীভূত O2 অণুর বিজারণ সংঘটিত হয়?
(a) Fe2+
(b) Fe3+
(c) H+
(d) OH–
উত্তর – (c) H+
6. গ্যালভানাইজ্ড আয়রন হল প্রকৃতপক্ষে —
(a) Zn -প্রলিপ্ত আয়রন
(b) Sn -প্রলিপ্ত আয়রন
(c) Ni -প্রলিপ্ত আয়রন
(d) Cr -প্রলিপ্ত আয়রন
উত্তর – (a) Zn -প্রলিপ্ত আয়রন
7. কোন্ ধাতুটি পরিবেশের প্রভাবে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়?
(a) Zn
(b) Fe
(c) Cu
(d) Au
উত্তর – (d) Au
৪. কোন্ ধাতু নিজের অক্সাইড গঠন দ্বারা জলবায়ুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়?
(a) Cu
(b) Al
(c) Fe
(d) Zn
উত্তর – (b) Al
9. মরচে গঠন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় H+ আয়নের উৎস—
(a) জলের অণুর বিয়োজন
(b) কার্বনিক অ্যাসিডের আয়নাইজেশন
(c) অ্যাসিটিক অ্যাসিডের আয়নাইজেশন
(d) a ও b উভয়ই
উত্তর – (d) a ও b উভয়ই
10. লোহাতে মরচে পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান—
(a) N2, O2
(b) N2, H2
(c) O2, H2O
(d) CO2, H2O
উত্তর – (c) O2, H2O
11. ক্ষারকীয় জিংক কার্বনেটের বর্ণ—
(a) কালো
(b) সাদা
(c) সবুজ
(d) নীল
উত্তর – (b) সাদা
12. মরচে পড়ার কারণ—
(a) লোহায় . কার্বনের মতো অশুদ্ধির উপস্থিতি
(b) লোহার অসমসত্ত্ব রাসায়নিক সংযুতি
(c) লোহার মুক্ত পৃষ্ঠতলের অসম আকৃতি
(d) সবকটিই
উত্তর – (d) সবকটিই
13. খোলা হাওয়ায় রাখলে তামা ও তামার অধিকাংশ সংকর ধাতুর পৃষ্ঠতলে যে সবুজ আস্তরণের সৃষ্টি হয় তা হল—
(a) বেসিক কপার নাইট্রেট
(b) অ্যাসিডিক কপার হাইড্রক্সাইড
(c) বেসিক কপার কার্বনেট
(d) অ্যাসিডিক কপার সালফেট
উত্তর – (c) বেসিক কপার কার্বনেট
14. আর্দ্র বায়ুর উপস্থিতিতে Al ধাতুর ওপর সৃষ্ট সাদা আস্তরণটি হল—
(a) AlCl3
(b) Al(OH)3
(c) Al2O3
(d) AIN
উত্তর – (c) Al2O3
15. আম্লিক জৈব পদার্থের সঙ্গে Al বা Zn-এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় —
(a) দ্রাব্য ধাতব লবণ
(b) অদ্রাব্য ধাতব লবণ
(c) যুত যৌগ
(d) ধাতব হাইড্রক্সাইড
উত্তর – (a) দ্রাব্য ধাতব লবণ
16. গ্যালভানাইজেশনের কাজে কোন্ ধাতুটি ব্যবহৃত হয়?
(a) Fe
(b) Ca
(c) Zn
(d) Mg
উত্তর – (c) Zn
17. মরচে পড়া একটি—
(a) জারণ প্রক্রিয়া
(b) বিজারণ প্রক্রিয়া
(c) জারণ-বিজারণ
(d) প্রশমন বিক্রিয়া
উত্তর – (c) জারণ-বিজারণ
18. CI– -এর উপস্থিতিতে লোহায় দ্রুত মরচে পড়ার কারণ—
(a) জলের অণুর বিয়োজন বৃদ্ধি পায়
(b) জলের অণুর বিয়োজন হ্রাস পায়
(c) ক্লোরিন গ্যাস লোহার সাথে বিক্রিয়া করে
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) জলের অণুর বিয়োজন বৃদ্ধি পায়
একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে
1. মরচে পড়ার জন্য বায়ুতে অক্সিজেন ছাড়া আর কোন্ উপাদানটির উপস্থিতি আবশ্যিক?
উত্তর – জলীয় বাষ্প।
2. লোহার ওপর মরচে পড়া কী ধরনের প্রক্রিয়া?
উত্তর – লোহার ওপর মরচে পড়া একটি তড়িৎ-রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
3. কোন্ ধরনের লোহাতে মরচে পড়ে না?
উত্তর – বিশুদ্ধ লোহাতে মরচে পড়ে না।
4. বিশুদ্ধ লোহায় মরচে পড়ে না কেন?
উত্তর – লোহার ওপর মরচে গঠনের সময় অসংখ্য তড়িৎ-রাসায়নিক কোশের সৃষ্টি হয়। অশুদ্ধির অনুপস্থিতিতে এই কোশগুলি সৃষ্টি হতে পারে না বলে বিশুদ্ধ লোহায় মরচে পড়ে না।
5. কী ধরনের অশুদ্ধি উপস্থিত থাকলে লোহায় দ্রুত মরচে পড়ে?
উত্তর – লোহার তুলনায় কম তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু ও কার্বন অশুদ্ধিরূপে উপস্থিত থাকলে লোহায় দ্রুত মরচে পড়ে।
6. লোহার ক্ষয়ের তড়িৎ-রাসায়নিক ক্রিয়ায় Fe জারিত হয়ে কী উৎপন্ন করে?
উত্তর – Fe3+ আয়ন উৎপন্ন করে।
7. লোহার ক্ষয়ের তড়িৎ-রাসায়নিক ক্রিয়ায় O2 ও H+ এর বিজারণে কী কী উৎপন্ন হয়?
উত্তর – O2 ও H+ -এর বিজারণে যথাক্রমে H2O ও H2 উৎপন্ন হয়।
৪. জলে কোন্ আয়নের উপস্থিতিতে মরচে পড়া ত্বরান্বিত হয় ?
উত্তর – জলে ক্লোরাইড আয়নের উপস্থিতিতে মরচে পড়া ত্বরান্বিত হয়।
9. CO2 গ্যাসের উপস্থিতিতে মরচে পড়া ত্বরান্বিত হয় কেন?
উত্তর – CO2 জলে দ্রবীভূত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড (H2CO3) উৎপন্ন করে যা জলের অণুর বিয়োজন বৃদ্ধি করে। এর ফলে মরচে পড়া ত্বরান্বিত হয়।
10. ক্লোরাইড আয়নের উপস্থিতি লোহায় মরচে পড়াকে ত্বরান্বিত করে। এর একটি ব্যাবহারিক অসুবিধা উল্লেখ করো।
উত্তর – সমুদ্রের তলায় তেলবাহী লোহার পাইপলাইন থাকলে সমুদ্রের জলে উপস্থিত Cl– আয়নের জন্য তাতে দ্রুত মরচে পড়ে।
11. এমন একটি পদ্ধতির নাম করো যার দ্বারা লোহাকে মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
উত্তর – গ্যালভানাইজেশন পদ্ধতি
12. কোন্ ধাতু গ্যালভানাইজেশনে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – গ্যালভানাইজেশনে জিংক ধাতু ব্যবহৃত হয়।
13. ‘গ্যালভানাইজড্ আয়রন’ কী?
উত্তর – জিংক ধাতুর দ্বারা প্রলিপ্ত আয়রনকে ‘গ্যালভানাইজড্ আয়রন’ বা G.I. (Galvanised Iron) বলে।
14. গ্যালভানাইজেশনের উপকারিতা লেখো।
উত্তর – গ্যালভানাইজেশন দ্বারা লোহার ওপর মরচে পড়া রোধ করা যায়।
15. জিংক ছাড়া আর কোন্ ধাতুর প্রলেপ দিয়ে লোহাকে মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়?
উত্তর – নিকেলের প্রলেপ দিয়ে।
16. ক্যাথোডীয় সংরক্ষণে কোন্ ধাতু ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – লোহার ক্যাথোডীয় সংরক্ষণে ম্যাগনেশিয়াম ব্যবহার করা হয়।
17. জাহাজের মরচে নিবারণের জন্য আত্মঘাতী ইলেকট্রোড হিসেবে কী ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – ম্যাগনেশিয়াম ব্লক ব্যবহৃত হয়।
18. নিষ্ক্রিয় লোহা কী?
উত্তর – গাঢ় নাইট্রিক অ্যাসিডের সংস্পর্শে লোহার ওপর আয়রন অক্সাইড যৌগের আস্তরণ পড়ায় লোহা রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। একে নিষ্ক্রিয় লোহা বলে।
19. কোন্ ধাতুকে ‘self protecting metal’ বলা হয়?
উত্তর – অ্যালুমিনিয়ামকে ‘self protecting metal’ বলা হয়।
20. কোন্ যৌগের জন্য কপারের পাত্রে সবুজ আস্তরণ পড়ে?
উত্তর – বেসিক কপার কার্বনেট [CuCO3 · Cu(OH)2] ও বেসিক কপার সালফেট [CuSO4 · 3Cu(OH)2] ।
21. প্যাটিনা কী?
উত্তর – ধাতব কপারের সঙ্গে O2, CO2 ও জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় কপারের ওপর সবুজ বর্ণের বেসিক কপার কার্বনেট [CuCO3 · Cu(OH)2] -এর আস্তরণ সৃষ্টি হয়। একে প্যাটিনা বলে।
22. বায়ুতে SO2 এর উপস্থিতিতে তামার ওপর কীসের আস্তরণ সৃষ্টি হয়?
উত্তর – বায়ুতে SO2 এর উপস্থিতিতে তামার ওপর ক্ষারকীয় কপার সালফেটের [CuSO4 · 3Cu(OH)2] আস্তরণ সৃষ্টি হয়।
23. আচার, চাটনি ইত্যাদিতে উপস্থিত জৈব অ্যাসিডের সঙ্গে কপারের বিক্রিয়া ঘটার জন্য কোন গ্যাসীয় মৌলের উপস্থিতি আবশ্যিক?
উত্তর – অক্সিজেনের উপস্থিতি আবশ্যিক।
24. ক্ষারকীয় জিংক কার্বনেটের সংকেত কী?
উত্তর – ZnCO3 · 3Zn(OH)2 |
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. জলবায়ুর প্রভাবে ধাতব বস্তুর ………. হ্রাস পায়।
উত্তর – উজ্জ্বলতা
2. লোহায় মরচে পড়ার জন্য ……….. ও ………… -এর উপস্থিতি আবশ্যিক।
উত্তর – অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প
3. ………. লোহায় মরচে পড়ে না।
উত্তর – বিশুদ্ধ
4. মরচে গঠনকালে জলে দ্রবীভূত O2 বিজারিত হয়ে ………. উৎপন্ন করে।
উত্তর – H2O
5. Cl– ছাড়াও জলের মধ্যে ……… অ্যানায়নের উপস্থিতি লোহায় মরচে পড়াকে ত্বরান্বিত করে।
উত্তর – SO42-
6. বায়ুর মধ্যে ……….. -এর উপস্থিতি মরচে পড়াকে ত্বরান্বিত করে।
উত্তর – CO2
7. উন্নতা বৃদ্ধিতে মরচে পড়ার হার ……… পায়।
উত্তর – বৃদ্ধি
8. লোহাকে ……… তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুর সংস্পর্শে রাখলে সহজে মরচে পড়ে না।
উত্তর – অধিক
9. লোহিততপ্ত লোহার ওপর দিয়ে স্টিম চালনা করলে লোহার পৃষ্ঠতলে ……… -এর আস্তরণ সৃষ্টি হয়, যা মরচে গঠনে বাধা দেয়।
উত্তর – ফেরোসোফেরিক অক্সাইড
10. আয়রনের ওপর ………. ধাতুর প্রলেপ দেওয়াকে গ্যালভানাইজেশন বলে।
উত্তর – জিংক
11. মরচে পড়া নিবারণ করতে গাড়ির লোহার তৈরি অংশের ওপর ……… ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়।
উত্তর – ক্রোমিয়াম
12. তেলবাহী লোহার পাইপের সঙ্গে যুক্ত Mg -ব্লক ………. -রূপে ক্রিয়া করে।
উত্তর – অ্যানোড
13. আর্দ্র বায়ুতে Al ধাতুর ওপর সৃষ্ট সূক্ষ্ম আস্তরণ হল ……….।
উত্তর – Al2O3
14. কপার পাত্র খোলা বাতাসে রাখলে ……… বর্ণের ছোপ পড়ে।
উত্তর – সবুজ
15. ……… -এর উপস্থিতিতে জৈব অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় Cu জলে ……… লবণ গঠন করে।
উত্তর – O2, দ্রাব্য
16. আর্দ্র বায়ুতে ক্ষারকীয় ………. গঠনের ফলে জিংক বিবর্ণ হয়।
উত্তর – জিংক কার্বনেট
