wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 2 বায়ুমণ্ডল TOPIC – A & B

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 2 বায়ুমণ্ডল TOPIC – A & B

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 2 বায়ুমণ্ডল TOPIC – A & B

West Bengal Board 10th Geography Solutions

TOPIC – A বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. বায়ুমণ্ডল : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10000 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, সেই গ্যাসীয় আবরণকে বলা হয় বায়ুমণ্ডল।
  2. ট্রপোস্ফিয়ার : বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরের যে অংশটিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে, সেই স্তরটি ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল নামে পরিচিত।
  3. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার: ট্রপোপজের ঊর্ধ্বে (ভূপৃষ্ঠ থেকে) প্রায় 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ুস্তর আছে, সেই স্তর হল স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।
  4. ওজোনস্তর : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে 20 থেকে 40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুবই বেশি। ওজোনসমৃদ্ধ এই বলয়টিকে তাই ওজোনস্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার নামে অভিহিত করা হয়।
  5. মেসোস্ফিয়ার : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপর (ভূপৃষ্ঠ থেকে) প্রায় ৪০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ুস্তর আছে, সেই স্তর মেসোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
  6. আয়নোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার: বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা মেসোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে। আয়নোস্ফিয়ারের ওপরের অংশটিকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়। এখানকার গ্যাসীয় কণাগুলি তড়িৎ আধানযুক্ত বা আয়নাইজড বলে এই স্তরের নাম আয়নোস্ফিয়ার।
  7. এক্সোস্ফিয়ার : আয়নোস্ফিয়ার পরবর্তী স্তরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার। এর বিস্তার 600-1500 কিমি।
  8. ম্যাগনেটোস্ফিয়ার: এক্সোস্ফিয়ারের পরবর্তী স্তর ম্যাগনেটো-স্ফিয়ার নামে পরিচিত।
  9. এরোসল: বায়ুতে ভাসমান বিভিন্ন প্রকার ধূলিকণা, কয়লার কণা, লবণকণা, জৈব পদার্থের কণা প্রভৃতিকে এককথায় এরোসল বলে।
  10. ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্ট: পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে অবস্থিত আয়নিত কণার (charged particles) একটি প্লাজমা স্তর হল ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্ট, যা ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে সৃষ্টি হয়েছে।
  11. সমতাপ অঞ্চল : থার্মোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে তাপমাত্রার পরিমাণ প্রায় সমান থাকে বা স্থির থাকে। অর্থাৎ এই স্তরে তাপমাত্রার বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তাই এই অঞ্চলকে সমতাপ অঞ্চল বলে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. বায়ুমণ্ডল কী কী উপাদানে গঠিত আলোচনা করো।
বায়ুমণ্ডলের উপাদান
উত্তর – বায়ুমণ্ডল নানা ধরনের উপাদানে গঠিত। এই উপাদানগুলি হল—
  1. গ্যাসীয় উপাদান : বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন (শতকরা 78.08 ভাগ) এবং অক্সিজেন (শতকরা 20.94 ভাগ) প্রধান। এই দুটি গ্যাস ছাড়া বায়ুমণ্ডলে খুব অল্পমাত্রায় আর্গন (শতকরা 0.93 ভাগ), কার্বন ডাইঅক্সাইড (শতকরা 0.03 ভাগ), হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্রিপটন, মিথেন, নিয়ন, ওজোন, জেনন প্রভৃতি গ্যাস আছে। এদের মধ্যে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও আর্গন বায়ুমণ্ডলের শতকরা প্রায় 99.95 ভাগ স্থান দখল করে আছে।
  2. জলীয় বাষ্প : জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে বলা হয় জলীয় বাষ্প। এই উপাদানটি সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়, গাছপালা প্রভৃতি থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে মেশে। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যদিও খুব সামান্য থাকে তবুও ঋতুভেদে বা অঞ্চলভেদে এই পরিমাণের কিছুটা তারতম্য হয়। যেমন—নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ুতে সারাবছর জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে এবং মেরু অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডায় বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অত্যন্ত কম। আবার যে-কোনো স্থানে বর্ষাকালে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে।
  3. ধূলিকণা : বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে যথেষ্ট পরিমাণে ধূলিকণা থাকে এবং অন্যান্য গ্যাসীয় অণুর মতো ধূলিকণাও বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শুষ্ক মরু অঞ্চল বা সমুদ্রতীরের ধুলোবালি, লবণকণা, কলকারখানার পোড়া কয়লার ছাই প্রভৃতি সূক্ষ্ম ধূলিকণারূপে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
2. বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব বর্ণনা করো।
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের প্রায় প্রতিটি উপাদানই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, যেমন—
  1. নাইট্রোজেন (78.08%) : (1) মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে: শুঁটি- জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী কতকগুলি ব্যাকটেরিয়া (যেমন—রাইজোবিয়াম) বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরাশক্তি বাড়িয়ে দেয়। (2) সার উৎপাদনে: বর্তমানে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। (3) নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণে: বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীরে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে।
  2. অক্সিজেন (20.94%): (1) শ্বাসকার্যে: অক্সিজেন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্বই অসম্ভব। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া শ্বাসকার্য সম্ভব নয় বলে বেঁচে থাকার জন্য সকল প্রাণীই অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। (2) শিলার আবহবিকারে: অক্সিজেন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন (জারণ) ঘটায়। (3) দহন ক্রিয়ায় : কেবল অক্সিজেনের উপস্থিতিতেই দহনক্রিয়া সম্ভব। (4) লোহার ক্ষয়সাধনে: জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে অক্সিজেন মরিচা সৃষ্টির মাধ্যমে লোহার ক্ষয় সাধন করে।
  3. কার্বন ডাইঅক্সাইড (0.03%) : (1) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায়: কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না (উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাহায্যে খাদ্য প্রস্তুত করে)। আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। (2) তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে: বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই গ্যাসটির বিশেষ ভূমিকা আছে। (3) রাসায়নিক আবহবিকারে: কার্বন ডাইঅক্সাইড শিলার রাসায়নিক আবহবিকারে (কার্বনেশন) সাহায্য করে। (4) আবহবিকার দ্বারা বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টিতে: কার্বন ডাইঅক্সাইড চুনাপাথর ও ডলোমাইট শিলায় রাসায়নিক আবহবিকার ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ (স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট প্রভৃতি) গঠন করে। (5) খনিজ পদার্থ গঠনে: অঙ্গারময় খনিজ এবং চুন-জাতীয় খনিজ গঠনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
  4. ওজোন : ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে 24-40 কিমির মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে, তার জন্যেই সূর্য থেকে ছুটে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে পারে না। ফলে পৃথিবী ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
  5. জলীয় বাষ্প : (1) মেঘ সৃষ্টিতে: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয়। (2) জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায়: জলের অপর নাম জীবন। জলীয় বাষ্প তথা জল না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের কোনো অস্তিত্ব থাকত না। (3) শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি সৃষ্টিতে: জলীয় বাষ্পের জন্যই পৃথিবীতে শিশির, কুয়াশা, তুহিন ও তুষার সৃষ্টি হয়।
  6. ধূলিকণা : (1) মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টিতে: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই জলীয় বাষ্প জলবিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টি হয়। (2) উত্তাপের বণ্টনে: বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাসমূহ সূর্যরশ্মি দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বণ্টনের প্রভাব বিস্তার করে। (3) সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণে: ধূলিকণার দ্বারা সূর্যের আলো বিচ্ছুরিত হয়ে দিনের বেলা পৃথিবীকে আলোকিত করে রাখে। (4) ঊষা ও গোধূলি সৃষ্টিতে: বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য উষা ও গোধূলির সৃষ্টি হয়। (5) আকাশের বর্ণ নির্ধারণে: বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণা থাকায় আকাশ নীল দেখায় ৷
3. বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো।
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস
উত্তর – তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি স্তরে ভাগ করা যায়, যেমন—
বায়ুমণ্ডলের এই স্তরগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
  1. ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুদ্ৰমণ্ডল

    অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত স্তরটির নাম ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল। ইংরেজি ‘ট্রপোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ট্রপো’ (যার অর্থ ‘পরিবর্তন’ বা ‘অশান্ত’) এবং “স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত।

    বিস্তার: নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে 16-18 কিমি ও মেরু অঞ্চলে ৪-9 কিমি (গড় উচ্চতা 12 কিমি) উচ্চতা এই স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত।

    বৈশিষ্ট্য: [i] উয়তা : এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় বায়ুর উয়তা 6.4°সে হারে কমতে থাকে। এই কারণে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব বা শেষ সীমায় বায়ুর উয়তা কমে হয় প্রায় –55 °সে থেকে –66°সে। [ii] ভর: বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের তিন-চতুর্থাংশ পাওয়া যায়। [iii] আবহাওয়ার গোলযোগ: বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা থাকে। মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ প্রধানত এই স্তরেই দেখা যায়। ঘূর্ণবাত, টর্নেডো, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি ঘটনা ট্রপোস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে। তাই ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয়। [iv] ট্রপোপজ: ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ। এখানে উয়তা কমেও না বা বাড়ে না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে।
  2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল
    অবস্থান: ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল। ইংরেজি ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক ‘স্ট্র্যাটো’ (যার অর্থ ‘শান্ত’ অথবা ‘স্থির’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত।
    বিস্তার: ট্রপোস্ফিয়ারের ওপর 12 থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
    বৈশিষ্ট্য: [i] ওজোনোস্ফিয়ার: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের 24-40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুব বেশি থাকে। এই কারণে এই অংশের নাম ওজোনোস্ফিয়ার। এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে জীবজগতকে ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। [ii] মুক্তা মেঘ: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে মেঘ ও বায়ুপ্রবাহ বিশেষ থাকে না। তবে মেরু অঞ্চলে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বরফের কেলাস দিয়ে গঠিত মুক্তা মেঘ নামে একপ্রকার মেঘ দেখা যায়। [iii] বিমান চলাচল: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণজনিত বাধাও খুব কম। এজন্য এই স্তর দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে। [iv] উন্নতা: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উয়তা 50 কিমি উচ্চতায় বেড়ে হয় প্রায় 0°সে। প্রধানত ওজোনের অণুগুলি দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হওয়ার কারণে এই স্তরে উন্নতা বাড়ে। [v] স্ট্র্যাটোপজ: স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্র্যাটোপজ।
  3. মেসোস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল
    অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটির নাম মেসোস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল। ইংরেজি ‘মেসোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘মেসো’ (যার অর্থ ‘মধ্যম’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’ বা ‘মণ্ডল’) থেকে উদ্ভূত।
    বিস্তার: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপর 50-80 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
    বৈশিষ্ট্য: [i] উন্নতা: এই স্তর থেকে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উন্নতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং ৪০ কিমি উচ্চতায় উয়তা কমে হয় প্রায় –93 °সে। [ii] উল্কাপিন্ডের বিনাশ: মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে আগত উল্কা এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। [iii] মেসোপজ: মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলা হয় মেসোপজ।
  4. আয়নোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার
    অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা মেসোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে। আয়নোস্ফিয়ারের ওপরের অংশটিকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়। এখানকার গ্যাসীয় কণাগুলি তড়িৎ-আধানযুক্ত বা আয়নাইজড বলে এই স্তরের নাম আয়নোস্ফিয়ার। আর ইংরেজি ‘থার্মোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘থার্মো’ (যার অর্থ ‘তাপ’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’ বা ‘মণ্ডল’) থেকে উদ্ভূত।
    বিস্তার: মেসোস্ফিয়ারের ওপর 80-600 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
    বৈশিষ্ট্য: [i] তড়িৎগ্রস্ত কণার উপস্থিতি: অসংখ্য ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত কণা বা আয়ন থাকায় এই স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে। [ii] কেনেলি-হেভিসাইড স্তর: আয়নোস্ফিয়ারের মধ্যে 90 থেকে 160 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম কেনেলি-হেভিসাইড স্তর। এই স্তর স্বল্প দৈর্ঘ্যের বেতার- তরঙ্গগুলিকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রেডিয়ো যোগাযোগ সম্ভব করেছে। [iii] মেরুজ্যোতি: এই স্তরেই সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা ও কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামে মেরুজ্যোতির সৃষ্টি হয়। [iv] উন্নতা: এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উস্নতা অতি দ্রুত হারে বাড়তে থাকে এবং ঊর্ধ্বসীমায় তাপমাত্রা হয় প্রায় 1200°সে।
  5. এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল
    অবস্থান: বায়ুমণ্ডলের পঞ্চম স্তরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার।
    বিস্তার: আয়নোস্ফিয়ারের ওপর 600-1500 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
    বৈশিষ্ট্য: [i] বায়বীয় কণার নির্গমণ: এক্সোস্ফিয়ার স্তর থেকে বায়বীয় কণাগুলি ক্রমাগত মহাশূন্যে নির্গত হয়। [ii] গঠন: এক্সোস্ফিয়ার অত্যন্ত কম ঘনত্বের হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত। [iii] উচ্চতা ও উয়তার সম্পর্ক: এই স্তরেও উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উয়তা বাড়ে, তবে থার্মোস্ফিয়ারের মতো অত দ্রুত নয়। [iv] উন্নতা: এই স্তরের উন্নতা প্রায় 1200 °সে থেকে 1600°সে।
  6. ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চৌম্বকমণ্ডল
    অবস্থান: এক্সোস্ফিয়ারের পরবর্তী স্তর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
    বিস্তার: এক্সোস্ফিয়ারের ওপর 1500 কিমি থেকে -10000 কিমি বা তারও বেশি অর্থাৎ ঊর্ধ্বসীমা অনির্দিষ্ট।

    বৈশিষ্ট্য: [i] স্থায়ী চুম্বকীয় ক্ষেত্র: সৌর বাত্যা (solar wind) থেকে নির্গত ইলেকট্রন ও প্রোটনের প্রভাবে এই স্তরে একটি স্থায়ী চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই স্তরের নাম ম্যাগনেটোস্ফিয়ার। [ii] ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলির সংঘবদ্ধ অবস্থান: এই স্তরে তড়িৎচুম্বকীয় শক্তির প্রভাবে ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলি সংবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। [iii] ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয়: এই স্তরেই সৃষ্টি হয়েছে ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয়। [iv] মহাশূন্যে বিলীন হওয়া: এই স্তরটি ধীরে ধীরে বায়ুশূন্য হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়।

4. পরিবেশের ওপর ওজোনস্তরের প্রভাব আলোচনা করো।
পরিবেশের ওপর ওজোনস্তরের প্রভাবসমূহ
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে 20 থেকে 40 কিমি উচ্চতায় ওজোন (O3) গ্যাসের একটি ঘনস্তর বলয়রূপে পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, এই স্তরকে ওজোনস্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয়। পরিবেশের ওপর এই ওজোনস্তরটির প্রভাব সীমাহীন, যেমন—
  1. অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা: সূর্য থেকে ধেয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রাভায়োলেট—বি এবং সি) পৃথিবীর জীবজগতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওজোনস্তর এই দুই অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ তথা প্রতিহত করে। তাই এই দুই রশ্মি ওজোনস্তর অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে পারে না। এভাবে ওজোনস্তর পর্দা বা ছাতার মতো জীবজগৎ তথা পরিবেশকে অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। এজন্য ওজোনস্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা ন্যাচারাল সানস্ক্রিন বলে।
  2. প্রাণীকূলের ওপর প্রভাব: ওজোনস্তর যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা না থাকে তাহলে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে জীবজন্তুর রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং জলজ প্রাণী, যথা চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও প্ল্যাংকটনের বিশেষ ক্ষতি হবে। ফলে জলের বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হবে।
  3. উদ্ভিদজগতের ওপর প্রভাব: ওজোনস্তর যদি অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিহত না করত তাহলে উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সালোকসংশ্লেষ বাধাপ্রাপ্ত হত, ফলে উদ্ভিদ শুকিয়ে যেত।
  4. মানুষের ওপর প্রভাব: ওজোনস্তর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে নেয় বলেই দুরারোগ্য ত্বকের ক্যানসার থেকে মানুষ রক্ষা পায় এবং দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট থাকে। এ ছাড়া অসময়ে চোখে ছানি পড়া, প্রজননক্ষমতার হ্রাস প্রভৃতি সমস্যা থেকেও এটি মানুষকে রক্ষা করে।
  5. অন্যান্য প্রভাব: ওজোনস্তরে অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হয় বলে বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে তাপমাত্রা কম থাকে এবং তার ফলে ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
5. ওজোনস্তরের বিনাশের কারণ ব্যাখ্যা করো।
ওজোনস্তরের বিনাশের কারণ
উত্তর – ওজোনস্তরের বিনাশ বা ধ্বংসের কারণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়
  1. প্রাকৃতিক কারণ: ওজোনস্তর বিনাশের প্রাকৃতিক কারণগুলি হল—
    1. অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া: সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ওজোন অণু ভেঙে অক্সিজেন অণু ও পরমাণু সৃষ্টি হয়। এইভাবে ওজোনস্তর ক্রমশ পাতলা হলে, তাকে ওজোন হ্রাস বলে।
    2. সূর্যরশ্মির পরিমাণ বৃদ্ধি: প্রতি 10/11 বছর অন্তর সূর্যরশ্মির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ওই সময় বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন নাইট্রাস অক্সাইডে পরিণত হয়, যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওজোনস্তরকে ক্ষয় করে।
    3. অন্যান্য: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বস্তরে মেরু অঞ্চল থেকে উপমেরু অঞ্চলের দিকে বায়ুর সঞ্চলন প্রভৃতি কারণেও ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  2. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ মানুষের বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়াকলাপের ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, হ্যালন, সালফেট, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাস সৃষ্টি হয় এবং এগুলি ওজোনস্তরের বিনাশ ঘটায়, যেমন-
    1. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যৌগের প্রভাব: এই গ্যাসই ওজোন ধ্বংসের মূল উৎস। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CFC গ্যাসের যৌগ ভেঙে সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু তৈরি হয় এবং ওগুলিই ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন গ্যাসকে ধ্বংস করে। ফলে ওজোনস্তরের ক্ষতি হয়।
    2. হ্যালন যৌগের প্রভাব: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি হ্যালন-1211 এবং হ্যালন-1301-কে ভেঙে ফেলে ব্রোমিন পরমাণুকে মুক্ত করে। এজন্য ওজোনস্তর ধ্বংস হয়।
    3. সালফেট যৌগের প্রভাব: কারখানার চিমনি থেকে যেসব কালো ধোঁয়া বের হয় তার মধ্যে প্রচুর সালফার ডাইঅক্সাইড আছে। এরা সূর্যরশ্মির প্রভাবে সালফেট যৌগ তৈরি করে ও ওজোন স্তরের ক্ষয় ঘটায়।
    4. বিমান চলাচলের জন্য: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলাচলকারী জেট বিমান থেকে নির্গত নাইট্রোজেন মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড ওজোনস্তরকে ক্ষয় করে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি কী?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের উপাদান: Topic-A-র দীর্ঘ উত্তরধর্মী 1নং প্রশ্নের উত্তরটি সংক্ষেপে লেখো।
2. বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাসের গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাসের গুরুত্ব:বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদান নাইট্রোজেন (78.08%)। তাই এর গুরুত্বও যথেষ্ট। এই গুরুত্বগুলি হল—
  1. প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহগঠন: প্রাণীজগৎ সরাসরি এই গ্যাস ব্যবহার না করলেও কতকগুলি শুঁটি-জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া (যেমন— রাইজোবিয়াম) বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। এই জাতীয় উদ্ভিদগুলিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে প্রাণীরা নিজের দেহের নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটায়।
  2. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি : শুঁটি-জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়ার বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন সংগ্রহের মাধ্যমে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। মানুষ শস্যাবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে শুঁটি-জাতীয় উদ্ভিদের চাষ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
  3. সার উৎপাদনে ব্যবহার: বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
3. বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন গ্যাসের গুরুত্ব নির্ণয় করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন গ্যাসের গুরুত্ব: বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ (20.94%) খুব বেশি না হলেও জীবজগতের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুরুত্বগুলি হল—
  1. জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায়: অক্সিজেন ছাড়া শ্বাসকার্য সম্ভব নয় বলে জীবনধারণের জন্য সকল প্রাণীই অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। তাই অক্সিজেন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্ব অসম্ভব।
  2. বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষায়: বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।
  3. আবহবিকারে: অক্সিজেন বিভিন্ন শিলাগঠনকারী খনিজের সঙ্গে সহজে মিলিত হয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলার আবহবিকারে বা বিচূর্ণীভবনে সাহায্য করে। এইরূপ রাসায়নিক আবহবিকারের (জারণ) ফলেই লোহায় মরিচা ধরে।
  4. দহনক্রিয়ায় অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়া দহনক্রিয়া সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, অক্সিজেন ছাড়া সমগ্র বিশ্বই প্রায় অচল।
4. বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের গুরুত্ব: বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ খুবই সামান্য (0.03%) হলেও এর গুরুত্ব সীমাহীন। এই গুরুত্বগুলি হল—
  1. খাদ্য উৎপাদনে:কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। তাই, এই গ্যাস না থাকলে পৃথিবীর উদ্ভিদজগৎ এবং প্রাণীজগৎ উভয়ই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
  2. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে: বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই গ্যাসটির বিশেষ ভূমিকা আছে। কারণ, কার্বন ডাইঅক্সাইড তাপ শোষণ করে।
  3. আবহবিকারে : ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের শিলার আবহবিকারেও কার্বন ডাইঅক্সাইড (কার্বনেশনের মাধ্যমে)-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
  4. খনিজ পদার্থ গঠনে: অঙ্গারময় খনিজ এবং চুন-জাতীয় খনিজ গঠনেও কার্বন ডাইঅক্সাইড সাহায্য করে।
  5. পরিবেশদূষণে: বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের পরিমাণ সামান্য বেড়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে।
5. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুরুত্বগুলি হল—
  1. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণে: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টিপাত হয়। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে গেলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যায়।
  2. জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় : জলের আর-এক নাম জীবন। তাই, জলীয় বাষ্প না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভব হত না।
  3. জলবায়ু নির্ধারণে: শিশির, কুয়াশা, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষার প্রভৃতি জলীয় বাষ্পের বিভিন্ন অবস্থা কোনো স্থানের জলবায়ু নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন— বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র, আবার স্বল্প বৃষ্টিপাত বা জলীয় বাষ্পের স্বল্পতা শুষ্ক মরু জলবায়ুর সৃষ্টি করে।
  4. উয়তা নিয়ন্ত্রণে: জলীয় বাষ্প তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  5. আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে:ঊর্ধ্বাকাশে জলীয় বাষ্প তথা জলকণা থেকে নির্গত লীনতাপে আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়।
6. বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব নির্ণয় করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব: বায়ুমণ্ডলের একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান ধূলিকণা। এর গুরুত্বগুলি হল—
  1. মেঘ ও কুয়াশার সৃষ্টিতে: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই জলীয় বাষ্প জলবিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
  2. সৌরতাপ বণ্টনে: বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাসমূহ সূর্যরশ্মি দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বণ্টনে প্রভাব বিস্তার করে।
  3. আকাশের বর্ণ নির্ধারণে: ধূলিকণার জন্যই আকাশে এত বৰ্ণবৈচিত্র্যের মেলা, এত সৌন্দর্য। বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় ধূলিকণার দ্বারা সূর্যরশ্মির প্রতিসরণ ও বিচ্ছুরণ ঘটে। এভাবেই সৃষ্টি হয় নানা বর্ণের তরঙ্গ। এগুলির মধ্যে নীলাভ আলোর প্রাধান্য বেশি, তাই আকাশ এত নীল।
7. বায়ুর সাধারণ ধর্মগুলি কী?
উত্তর – বায়ুর সাধারণ ধর্ম: বায়ুর কতকগুলি সাধারণ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে—
  1. বায়ুর উম্নতা কমে গেলে বায়ু ঘন এবং ভারী হয়।
  2. উন্নতা যত বাড়ে বায়ু ততই আয়তনে প্রসারিত ও হালকা হয়।
  3. উম্ন বায়ু হালকা বলে ওপরে উঠে যায় আর শীতল বায়ু ভারী বলে নীচে নেমে আসে।
  4. উয় বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেশি।
  5. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে বায়ুর চাপ কমে।
  6. শুষ্ক বায়ুর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু হালকা
  7. ভূপৃষ্ঠের কাছে বায়ুর ঘনত্ব বেশি আর ওপরের বায়ুতে ঘনত্ব কমে যায়
  8. বায়ু সর্বদাই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে যায় এবং তার ফলে বায়ুপ্রবাহ সৃষ্ট হয়।
8. বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হত না—এর কারণ কী ?
উত্তর – বায়ুমণ্ডল ও পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি: বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হত না। এর কারণগুলি হল—
  1. বায়ুমণ্ডল না থাকলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দিনের বেলায় প্রায় 70 °সে এবং রাতের বেলা –145°সে হত। এইরকম তাপমাত্রায় কোনো প্রাণ সৃষ্টি সম্ভব হত না।
  2. বায়ুর অক্সিজেন মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের শ্বাসকার্যে জরুরি এবং বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড উদ্ভিদদেহে খুবই প্রয়োজন। তাই বায়ুমণ্ডল আছে বলেই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে।
  3. বায়ুর জলীয় বাষ্প ঊর্ধ্বাকাশে ঘনীভূত হয়ে মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বৃষ্টিপাত না হলে জলে প্রাণের আবির্ভাব সম্ভব হত না।
  4. বায়ুস্তরের ওজোন গ্যাস সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে জীবকুলকে রক্ষা করে।
9. বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে বলে মনে হয় ?
উত্তর – ওজোনস্তর পৃথিবীর ছাতা : বায়ুর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনস্তর থাকে বলেই সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মিকে সে বাধা দেয় বা শোষণ করে নেয়। এজন্য এই ক্ষতিকর রশ্মি ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত এসে পৌঁছোতে পারে না। অর্থাৎ ওজোনস্তর পৃথিবীকে ছাতার মতো সুরক্ষা দিয়ে চলেছে। যার ফলে সমগ্র উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।
ওজোনস্তরে ছিদ্র এবং জীবমণ্ডলের ক্ষতি: ওজোনস্তরে ছিদ্র হলে ওই ছিদ্রের মধ্য দিয়ে অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে, যার প্রভাবে পৃথিবীর প্রাণী এবং উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি হবে। প্রাণীদের চামড়ায় ক্যানসার, চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়া, প্রজননক্ষমতা কমে যাওয়া, ত্বকের অন্যান্য রোগ সৃষ্টি, উদ্ভিদের পাতা পুড়ে যাওয়া, জলের মাছ মরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে এবং বায়ুমণ্ডলের উয়তা বৃদ্ধি পাবে।
10. ওজোনস্তর ধ্বংসের ফলাফল লেখো।
উত্তর –  ওজোনস্তর ধ্বংসের ফলাফল: বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে CFC, হ্যালন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফেট কণা প্রভৃতির বৃদ্ধির জন্য ওজোনস্তর ক্রমেই ধ্বংস হচ্ছে। এর ক্ষতিকর ফলাফলগুলি হল—
  1. বিশ্ব উষ্মায়ন: ওজোনস্তর ধ্বংসের জন্যই ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে পড়ে এবং তাই পৃথিবীর উয়তা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ ওজোনস্তরের বিনাশ।
  2. বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি: অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের চামড়ায় ক্যানসার সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষের প্রজননক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং মানুষের চোখের কর্নিয়ায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
  3. বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট: ওজোনস্তর ধ্বংসে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, উদ্ভিদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে এবং অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীদের মৃত্যু ঘটছে।
11. জেট বিমানগুলি বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে এবং কেন?
উত্তর – জেট বিমানগুলির চলাচল ও তার কারণ: জেট বিমানগুলি বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে। এর কারণগুলি হল—
  1. শান্ত অবস্থা: বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া জলীয় বাষ্প নেই বললেই চলে। তাই এই স্তরে কোনো ঝড়, বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের মতো ঘটনাগুলি ঘটে না।
  2. বায়ুপ্রবাহের অনুপস্থিতি: এই স্তরে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণজনিত (friction) বাধা খুবই কম। এর ফলে মূল্যবান জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হয়।
  3. জেট বায়ুপ্রবাহ: ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ার দিয়ে চলাচলকারী জেট বায়ু-প্রবাহের জন্যও বিমানগুলির চলাচল করতে সুবিধা হয়। এসব কারণের জন্যই জেট বিমান স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে।
12. ওজোনস্তরের সংকোচন কীভাবে হচ্ছে?
উত্তর – ওজোনন্তর সংকোচনের পদ্ধতি: ওজোনস্তর সংকোচনের জন্য প্রধানত মানুষের কার্যাবলি দায়ী। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, হ্যালন প্রভৃতি গ্যাস ক্রমাগত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছে ওজোনস্তরের ক্ষতি করে চলেছে। এগুলি থেকে নির্গত ক্লোরিন ও ব্রোমিনের অণুগুলি বহু বছর ধরে হাজার হাজার ওজোনের অণু ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। ওজোন ধ্বংসকারী এই গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের ওজোনের স্তরকে ক্ষয় করার জন্য ওজনস্তর ক্রমাগত পাতলা হয়ে যাচ্ছে।
দৃষ্টান্ত: ইতিমধ্যেই দক্ষিণ গোলার্ধে, বিশেষত অ্যান্টার্কটিকার ওপর ওজোনস্তরে কয়েক জায়গায় বড়ো বড়ো ছিদ্র দেখা দিয়েছে এবং ওইসব ছিদ্রের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণে অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে চলে আসছে।
13. ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায় কেন?
উত্তর – ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উন্নতা হ্রাস পাওয়ার কারণ: ট্রপোস্ফিয়ারে অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুর উয়তা হ্রাস পায়। একে বলে তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস হার। তাপমাত্রা হ্রাসের এই হার হল প্রতি 1000 মিটারে প্রায় 6.4 °সে। ট্রপোস্ফিয়ারে এইভাবে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উয়তা হ্রাস পাওয়ার কারণ হল—
  1. ওপরে বিকিরণ কম: সূর্যতাপে বায়ুমণ্ডল সরাসরি বিশেষ উন্ন হয় না। সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উয় হয় এবং পরে ওই উয় ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল উম্ন হয়। এজন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে উন্নতা কমে যায়।
  2. বায়ুর ঘনত্ব কম: ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে ওঠা যায় বায়ুর ঘনত্ব তত কমে যায় বলে বায়ুর তাপধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। এর ফলে ক্রমশ ওপরে উয়তাও হ্রাস পেতে থাকে।
  3. বিকীর্ণ তাপ কম পৌঁছোনো: ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপের খুব কম অংশই ওপরে পৌঁছোনো।
  4. তাপশোষণ কম: ওপরের বায়ুতে ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প কম থাকে বলে ওই বায়ুর তাপশোষণ ও সংরক্ষণ ক্ষমতাও কম।
  5. বায়ুস্তর পাতলা: বায়ুস্তর ক্রমশ ওপরের দিকে পাতলা হয়ে যায়। তাই ঊর্ধ্বের বায়ু তাড়াতাড়ি প্রসারিত হয় এবং তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. বায়ুমণ্ডল বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10000 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, সেই গ্যাসীয় আবরণকে বলা হয় বায়ুমণ্ডল। উপাদান: বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন, প্রভৃতি গ্যাস, জলীয় বাষ্প এবং এরোসল বা বিভিন্ন ধরনের কণার একটি কার্বন ডাইঅক্সাইড, অক্সিজেন, হিলিয়াম, নিয়ন, জেনন, ক্রিপটন, ওজোন যান্ত্ৰিক মিশ্রণ।
2. বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা বা বিস্তৃতি কত দূর?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের বিস্তৃতি: বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় 10000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে অত উঁচু পর্যন্ত বিস্তৃত থাকলেও বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের শতকরা প্রায় 97 ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে 29 কিমির মধ্যে থাকে। কারণ এই অংশে মাধ্যাকর্ষণের টান বেশি এবং ঊর্ধ্বাকাশের বায়ুমণ্ডলের চাপ এসে পড়ে। ফলে এই অংশে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায়।
3. ট্রপোপজ কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরের নাম ট্রপোস্ফিয়ার। এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমায় (নিরক্ষরেখার ওপর প্রায় 16-18 কিমি উচ্চতায় এবং মেরু অঞ্চলের ওপর প্রায় ৪-9 কিমি উচ্চতায়) যেখানে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা কমেও না বা বাড়েও না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে (হিমাঙ্কের নীচে –55°সে), তাকে ট্রপোপজ বলা হয়। বিস্তৃতি: ট্রপোস্ফিয়ারের ওপর টুপোপজের বিস্তৃতি প্রায় আড়াই-তিন কিলোমিটার। বৈশিষ্ট্য: (1) উন্নতা: এই স্তরের উন্নতা নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় –৪০° সে, আর মধ্য অক্ষাংশের উষ্ণতা –58°সে হয়ে থাকে। (2) জেট বায়ু: প্রবল গতিবেগসম্পন্ন জেট বায়ু এই স্তরের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয়।
4. ওজোনস্তর কাকে বলে? 
উত্তর – সংজ্ঞা : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে 20 থেকে 40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুবই বেশি। ওজোনসমৃদ্ধ এই বলয়টিকে তাই ওজোনস্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার নামে অভিহিত করা হয়। বৈশিষ্ট্য: (1) অতিবেগুনি রশ্মির শোষণ: সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি এই ওজোনস্তরে শোষিত হয়। (2) উন্নতা: এই স্তরের উস্নতা খুব বেশি।
5. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব: (1) অধঃক্ষেপণে: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প আছে বলেই মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, তুষার প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। (2) উয়তা নিয়ন্ত্রণে: জলীয় বাষ্প তাপশোষণ করে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা নিয়ন্ত্রণ করে। (3) আবহাওয়ার পরিবর্তনে: ঊর্ধ্বাকাশে জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনে উৎপন্ন লীনতাপে আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়। (4) জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায়: জলীয় বাষ্প তথা জল ছাড়া পৃথিবীতে জীবনের কোনো অস্তিত্বই থাকত না।
6. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অপর নাম ওজোনোস্ফিয়ার কেন?
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অপর নাম ওজোনোস্ফিয়ার হওয়ার কারণ: ট্রপোস্ফিয়ারের ওপর গড়ে 12 কিমি থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত স্তরটির নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। এই স্তরের মূল বৈশিষ্ট্য হল উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উম্নতা বৃদ্ধি। এর কারণ হল, এই স্তরে 20 কিমি থেকে 40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুব বেশি এবং এই ওজোন গ্যাসই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এই স্তরকে উম্ন করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সিংহভাগজুড়ে ওজোনসমৃদ্ধ এই বলয়টি থাকার জন্যই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর একারণেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারকে ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজোনমণ্ডল নামেও অভিহিত করা হয়।
7. বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা : বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, যেমন— (1) ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা: সূর্য থেকে আগত অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরে শোষিত হওয়ায় ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছোতে পারে না। এর ফলে জীবজগৎ ও প্রাণীজগৎ ওই ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পায়। (2) অক্সিজেন উৎপাদন: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ওজোন গ্যাসের অণুগুলি ভেঙে গিয়ে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা মানুষ-সহ প্রাণীকূল শ্বাসকার্যে ব্যবহার করে।
৪. হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল কী?
উত্তর – সংজ্ঞা : ইংরেজি শব্দ হোমোস্ফিয়ারের বাংলা প্রতিশব্দ সমমণ্ডল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় 90 কিমি পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে বিভিন্ন উপাদান প্রায় সম-অনুপাতে থাকে, সেই স্তরকে সমমণ্ডল বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) বায়ুমণ্ডলের প্রায় 99% গ্যাসীয় উপাদান এই স্তরে থাকে। (2) এই স্তরে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, আর্গন, হিলিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই ধরনের থাকে।
9. হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : ইংরেজি শব্দ হেটেরোস্ফিয়ারের বাংলা প্রতিশব্দ বিষমমণ্ডল। হোমোস্ফিয়ারের পর থেকে বায়ুমণ্ডলের পরবর্তী অংশে (90 কিমি থেকে প্রায় 10000 কিমি পর্যন্ত) গ্যাসীয় উপাদানসমূহের অনুপাত সমান থাকে না। তাই এই অংশকে হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল বলা হয়। উপবিভাগ: উপাদানগুলির অনুপাত অনুসারে এই স্তরটিকে চারটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়— (1) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (প্রায় 90-200 কিমি), (2) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (প্রায় 200-1100 কিমি), (3) হিলিয়াম স্তর (প্রায় 1100-3500 কিমি) এবং (4) হাইড্রোজেন স্তর (প্রায় 3500-10000 কিমি)।
10. ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল কী?
উত্তর – ধারণা : বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরের যে অংশটিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে, সেই স্তরটি ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল নামে পরিচিত। বিস্তৃতি: এই স্তরের বিস্তৃতি নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় 16-18 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৪-9 কিমি। বৈশিষ্ট্য: (1) উন্নতা: সাধারণভাবে দেখা যায়, এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে 6.4°সে হারে উন্নতা কমে। (2) বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ: বায়ুমণ্ডলের এই অংশে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে থাকে এবং বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বজ্রপাত প্রভৃতি এই স্তরেই সৃষ্টি হয়। এজন্য এই স্তরের আর-এক নাম ক্ষুব্ধমণ্ডল।
11. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : ট্রপোপজের ঊর্ধ্বে (ভূপৃষ্ঠ থেকে) প্রায় 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ুস্তর আছে, সেই স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। বৈশিষ্ট্য: (1) উচ্চতা: এই স্তরের মধ্য দিয়ে যতই ওপরে ওঠা যায় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং প্রায় 50 কিমি উচ্চতায় বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি প্রায় 0°সে হয়। (2) ওজোন স্তরের অস্তিত্ব: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হল বায়ুমণ্ডলের এই অংশে ওজোনস্তরের অস্তিত্ব। (3) স্ট্র্যাটোপজ: এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্র্যাটোপজ।
12. মেসোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপর (ভূপৃষ্ঠ থেকে) প্রায় ৪০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ুস্তর আছে, সেই স্তর মেসোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য: (1) তাপমাত্রা: এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর তাপমাত্রা কমতে থাকে। (2) মেসোপজ: মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে মেসোপজ বলে। এখানে বায়ুর তাপমাত্রা কমে হয় প্রায় – 93°সে। (3) উল্কাপিণ্ড ভস্ম: মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে, সেগুলি বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে এই মেসোস্ফিয়ারের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
13. আয়নোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : থার্মোস্ফিয়ারের নীচের অংশকে আয়নোস্ফিয়ার বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: (1) তড়িৎগ্রস্ত কণার উপস্থিতি: অসংখ্য ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত কণা বা আয়ন থাকায় এই স্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলে। (2) মেরুজ্যোতি: মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা এই বায়ুস্তরেই দেখা যায়৷
14. আয়নোস্ফিয়ারের গুরুত্ব কী?
উত্তর – আয়নোস্ফিয়ারের গুরুত্ব: আয়নোস্ফিয়ারের গুরুত্বগুলি হল—
(1) ক্ষতিকারক স্বল্প দৈর্ঘ্যের তরঙ্গের শোষণ: সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বিচ্ছুরিত ক্ষতিকারক স্বল্প দৈর্ঘ্যের তরঙ্গগুলি আয়নোস্ফিয়ারে শোষিত হয়। (2) বেতারসংযোগ রক্ষা: এই স্তরের জন্যই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে বেতারসংযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়। (3) মেরুপ্রভা সৃষ্টি: আয়নোস্ফিয়ারে চৌম্বক বিক্ষেপজনিত কারণে সৃষ্ট অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রন কণা দ্বারা প্রতিফলিত তরঙ্গ সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা এবং কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামের মেরুজ্যোতির সৃষ্টি করে।
15. এক্সোস্ফিয়ার সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ধারণা: আয়নোস্ফিয়ার পরবর্তী স্তরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার। এর বিস্তার 600-1500 কিমি। বৈশিষ্ট্য : (1) এখানে বায়ুমণ্ডল খুব হালকা। (2) এখানেও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তবে আয়নোস্ফিয়ার স্তরের মতো অত দ্রুত নয়। (3) ভূপৃষ্ঠ থেকে 650 কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা বেড়ে হয় প্রায় 1200°সে। (4) এক্সোস্ফিয়ারে পারমাণবিক অক্সিজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়, যদিও এদের ঘনত্ব খুবই কম।
16. বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহ কী?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহ: বায়ুমণ্ডলে তিন ধরনের উপাদান আছে—
(1) গ্যাসীয় উপাদান, (2) জলীয় বাষ্প এবং (3) ধূলিকণা।
বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন (শতকরা 78.08 ভাগ) এবং অক্সিজেন (শতকরা 20.94 ভাগ) প্রধান। এই দুটি গ্যাসীয় উপাদান ছাড়া বায়ুমণ্ডলে খুব অল্প মাত্রায় আর্গন (শতকরা 0.93 ভাগ), কার্বন ডাইঅক্সাইড (শতকরা 0.033 ভাগ), হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্রিপটন, মিথেন, নিয়ন, ওজোন, জেনন প্রভৃতি গ্যাসীয় উপাদান আছে। এ ছাড়া জলীয় বাষ্প, সামান্য ধূলিকণা, লবণের কণা, উল্কাভস্ম, ধাতবকণা প্রভৃতি বায়ুমণ্ডলে ভাসমান অবস্থায় থাকে।
17. নিম্ন বায়ুমণ্ডল বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 90 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানের অনুপাত প্রায় একই থাকে। এই উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুস্তর নিম্ন বায়ুমণ্ডল নামে পরিচিত। বৈশিষ্ট্য: (1) বায়ুর ঘনত্ব: এখানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান বেশি বলে বায়ুর ঘনত্ব সবথেকে বেশি। (2) বায়ুমণ্ডলের ভর: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের প্রায় 97 ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 29 কিমি উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে।
18. ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত?
উত্তর – ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা : বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর ট্রপোস্ফিয়ার। এই স্তরটির উচ্চতা কিন্তু সব জায়গায় সমান নয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এর উচ্চতা 16-18 কিমি, কিন্তু মেরু অঞ্চলে এর উচ্চতা 8-9 কিমি। সুতরাং ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমা নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে ঢালু।
19. উয়তা হ্রাসের স্বাভাবিক হার কাকে বলে ?
উত্তর – সংজ্ঞা: সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উয় হয় এবং তারপর ওই ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপে বায়ুমণ্ডল উম্ন হয়। এজন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের অংশ অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতা বাড়ার সাথে উয়তা হ্রাসের এই হার প্রতি কিমিতে 6.4°সে উন্নতা কমতে থাকে। একে স্বাভাবিক উয়তা হ্রাসের হার বলে।
20. এরোসল কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: বায়ুতে ভাসমান বিভিন্ন প্রকার ধূলিকণা, কয়লার কণা, লবণকণা, জৈব পদার্থের কণা প্রভৃতিকে এককথায় এরোসল বলে। গঠন : সাধারণত আগ্নেয়গিরির উৎক্ষিপ্ত ছাই, উল্কার ধ্বংসাবশেষ, কলকারখানার পোড়া ছাই ও ধোঁয়া, গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, মরুভূমির ধুলোবালি, সমুদ্রোপকূলের লবণ, ফুলের রেণু প্রভৃতি সূক্ষ্ম কণা হিসেবে বায়ুতে মিশে এই এরোসল সৃষ্টি করে।
21. ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্ট বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে অবস্থিত আয়নিত কণার (charged particles) একটি প্লাজমা স্তর হল ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্ট, যা ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে সৃষ্টি হয়েছে। বৈশিষ্ট্য: (1) এই স্তর ভূপৃষ্ঠের থেকে 1000-60000 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। (2) 1958 সালে আমেরিকার বিশিষ্ট পদার্থবিদ ভ্যান অ্যালেন এই স্তরটি আবিষ্কার করেন বলে এই স্তরকে ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্ট বলা হয়।
22. সমতাপ অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: থার্মোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে তাপমাত্রার পরিমাণ প্রায় সমান থাকে বা স্থির থাকে। অর্থাৎ এই স্তরে তাপমাত্রার বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তাই এই অঞ্চলকে সমতাপ অঞ্চল বলে। এ ছাড়া, ট্রপোপজ, স্ট্র্যাটোপজ, মেসোপজ স্তরগুলিতেও সমান তাপমাত্রা বিরাজ করে।
23. হাইড্রোজেন স্তর বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : ভূপৃষ্ঠের ওপরে বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বস্তরে 3500 কিমি থেকে 10000 কিমি পর্যন্ত অঞ্চলটি প্রধানত হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে গঠিত। তাই এই স্তরকে হাইড্রোজেন স্তর বলে। বৈশিষ্ট্য: এই স্তর থেকে যত ওপরে ওঠা যায় ততই এই স্তর পাতলা হতে থাকে এবং চাপ ক্রমশ কমতে থাকে।
24. পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের বিনাশ ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
উত্তর – ওজোনস্তরের বিনাশ ঠেকানোর উপায় : রেফ্রিজারেটর, বডি স্প্রে, এয়ারকন্ডিশনার, প্রসাধনী দ্রব্য, কীটনাশক স্প্রেতে প্রচুর ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ব্যবহার করা হয়। এগুলিই ওজোন ধ্বংসের মূল উৎস। এগুলির ব্যবহার বন্ধ করে দিলে ওজোনস্তর অনেকটা সুরক্ষিত থাকতে পারে।
25. ওজোনস্তর ধ্বংসকারী গ্যাসগুলির নাম লেখো।
উত্তর – ওজোনভর ধ্বংসকারী গ্যাস: ওজোনস্তর ধ্বংসকারী গ্যাসগুলি হল- ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC), হ্যালন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4), মিথাইল ব্রোমাইড (CH3Br), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), মিথেন (CH4) প্রভৃতি।
26. মৌক্তিক বা শুক্তি মেঘ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপর ঊর্ধ্ব স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে 15-25 কিমি উচ্চতায় শীতকালে মাঝে মাঝে সামান্য মেঘের সঞ্চার ঘটে, এই মেঘকে মৌক্তিক মেঘ বা শুক্তি মেঘ (noctilucent cloud) বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) এই মেঘে বৃষ্টিপাত প্রায় ঘটেই না। (2) পৃথিবীর অন্যান্য অংশের ঊর্ধ্ব স্ট্যাটোস্ফিয়ারেও মাঝে মাঝে এই মেঘ দেখা যায়।
27. আয়নোস্ফিয়ার নামকরণ কেন হয়েছে?
উত্তর – ধারণা: ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে, মেসোপজের ওপর প্রায় ৪০ কিমি থেকে 600 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত সমস্ত গ্যাসীয় অণু-পরমাণু প্রখর সৌর বিকিরণের সঙ্গে ছুটে আসা সূর্যদেহের বিভিন্ন বস্তুকণা এবং অতিবেগুণী রশ্মির সঙ্গে সংঘাতে আয়নে (ion) পরিণত হয়। অর্থাৎ ওগুলি সবই তড়িৎপূর্ণ বা আয়োনাইজড হয়ে যায়। তাই এই স্তরের নাম আয়নোস্ফিয়ার। বৈশিষ্ট্য: ওইসব আয়নিত কণার সঙ্গে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংঘাত থেকেই এই স্তরে মেরুপ্রভার সৃষ্টি হয়।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ হল—
(a) 20.94 শতাংশ
(b) 20.27 শতাংশ
(c) 20.86 শতাংশ
(d) 20.98 শতাংশ
উত্তর – (a) 20.94 শতাংশ
2. বায়ুমণ্ডলের যে গ্যাসটির পরিমাণ সর্বাধিক, তা হল—
(a) অক্সিজেন
(b) নাইট্রোজেন
(c) কার্বন ডাইঅক্সাইড
(d) আর্গন
উত্তর – (b) নাইট্রোজেন
3. বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাস ……… স্তরে ঘনীভূত অবস্থায় থাকে—
(a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(b) মেসোস্ফিয়ার
(c) ট্রপোস্ফিয়ার
(d) আয়নোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
4. ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমাকে বলে—
(a) টুপোপজ
(b) স্ট্র্যাটোপজ
(c) মেসোপজ
(d) আয়নোপজ
উত্তর – (a) টুপোপজ
5. ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুমণ্ডল প্রায় কত কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত?—
(a) 1000 কিমি
(b) 5000 কিমি
(c) 10000 কিমি
(d) 100000 কিমি
উত্তর – (c) 10000 কিমি
6. মেসোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উম্নতা—
(a) বাড়ে
(b) কমে
(c) একই থাকে
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) কমে
7. ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় কত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরটিকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয়? —
(a) 60 কিলোমিটার
(b) 90 কিলোমিটার
(c) 120 কিলোমিটার
(d) 110 কিলোমিটার
উত্তর – (b) 90 কিলোমিটার
৪. বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কোন্ উপাদানের জন্য আকাশ নীল দেখায়?-
(a) ওজোন
(b) অক্সিজেন
(c) নাইট্রোজেন
(d) ধূলিকণা
উত্তর – (d) ধূলিকণা
9. বৈপরীত্য উত্তাপ লক্ষ করা যায় বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে, সেটি হল—
(a) আয়নোস্ফিয়ার
(b) ট্রপোস্ফিয়ার
(c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) ট্রপোস্ফিয়ার
10. সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে-
(a) ওজোন
(b) আর্গন
(c) জেনন
(d) ক্রিপ্টন
উত্তর – (a) ওজোন
11. স্বাভাবিক উয়তা হ্রাসের হার পরিলক্ষিত হয় —
(a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
(b) থার্মোস্ফিয়ারে
(c) ট্রপোস্ফিয়ারে
(d) মেসোস্ফিয়ারে
উত্তর – (c) ট্রপোস্ফিয়ারে
12. বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের শতকরা পরিমাণ হল –
(a) 20.19 শতাংশ
(b) 79.09 শতাংশ
(c) 78.08 শতাংশ
(d) 20.50 শতাংশ
উত্তর – (c) 78.08 শতাংশ
13. একটি গ্রিনহাউস গ্যাসের উদাহরণ হল –
(a) অক্সিজেন
(b) নাইট্রোজেন
(c) কার্বন ডাইঅক্সাইড
(d) হাইড্রোজেন
উত্তর – (c) কার্বন ডাইঅক্সাইড
14. বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর—
(a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(b) মেসোস্ফিয়ার
(c) ট্রপোস্ফিয়ার
(d) থার্মোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) মেসোস্ফিয়ার
15. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে দৈনিক আবহাওয়া পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে তার নাম —
(a) ট্রপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(c) এক্সোস্ফিয়ার
(d) আয়নোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) ট্রপোস্ফিয়ার
16. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে মহাকাশ থেকে আগত উল্কাপিণ্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তার নাম —
(a) ট্রপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(c) মেসোস্ফিয়ার
(d) আয়নোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) মেসোস্ফিয়ার
17. অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হয় –
(a) মেসোস্ফিয়ারে
(b) ট্রপোস্ফিয়ারে
(c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
(d) আয়নোস্ফিয়ারে
উত্তর – (c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
18. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে অরোরা বা মেরুজ্যোতি দেখা যায় —
(a) আয়নোস্ফিয়ারে
(b) ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে
(c) এক্সোস্ফিয়ারে
(d) মেসোস্ফিয়ারে
উত্তর – (a) আয়নোস্ফিয়ারে
19. বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে ওপরে যে স্তর রয়েছে, তা হল —
(a) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
(b) আয়নোস্ফিয়ার
(c) এক্সোস্ফিয়ার
(d) টপোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
20. ওজোন গহ্বর তৈরি হয়েছে—
(a) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
(b) উপক্রান্তীয় অঞ্চলে
(c) কুমেরু অঞ্চলে
(d) ক্রান্তীয় অঞ্চলে
উত্তর – (c) কুমেরু অঞ্চলে

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে ……… বলে।
উত্তর – ট্রপোপজ
2. বায়ুমণ্ডলের ……… স্তরে ‘মাদার অফ পার্ল ক্লাউড’ দেখা যায়।
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
3. জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ……… -কে আশ্রয় করে মেঘ ও কুয়াশার সৃষ্টি করে।
উত্তর – ধূলিকণা
4. বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটির নাম ……….।
উত্তর – ট্রপোস্ফিয়ার
5. মহাকাশ থেকে আগত উল্কা ………. স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
উত্তর – মেসোস্ফিয়ার
6. মেঘ, ঝড়-বৃষ্টি, বিদ্যুৎ-বজ্রপাত ……… সৃষ্টি হয়।
উত্তর – ট্রপোস্ফিয়ারে
7. বায়ুমণ্ডলের ……….. স্তরের বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকে।
উত্তর – আয়নোস্ফিয়ার
৪. মেসোস্ফিয়ারের অবস্থান ……… স্তরের ওপর।
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
9. ……….. স্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বলে।
উত্তর – ওজোন
10. রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে ……… গ্যাস নির্গত হয়।
উত্তর – CFC
11. ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়লে উয়তা ……… পায়।
উত্তর – হ্রাস
12. হেটেরোস্ফিয়ারের আর এক নাম ……….।
উত্তর – বিষমমণ্ডল
13. রসভি তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলের ………. স্তরে সৃষ্টি হয়।
উত্তর – ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ার
14. জেট প্লেন যাতায়াত করে ………. স্তর দিয়ে।
উত্তর – স্ট্যাটোস্ফিয়ার
15. বায়ুর গ্যাসীয় উপাদানগুলির মধ্যে প্রধান হল ……… ও ……….।
উত্তর – নাইট্রোজেন, অক্সিজেন
16. বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য বায়ুমণ্ডলে ……….. থাকা একান্ত প্রয়োজনীয়।
উত্তর – জলীয় বাষ্প
17. অশান্তমণ্ডল বলা হয় ……….. স্তরকে।
উত্তর – ট্রপোস্ফিয়ার
18. হিলিয়াম স্তরটি রয়েছে ………. কিমি পর্যন্ত।
উত্তর – 1100-3500
19. বায়ুমণ্ডলের ………. ভর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 29 কিমি উচ্চতার মধ্যে পাওয়া যায়।
উত্তর – 97%
20. পৃথিবীর চৌম্বক বর্ম বলা হয় ……….।
উত্তর – ম্যাগনেটোস্ফিয়ারকে
21. ……… আর-এক নাম ক্ষুষ্কমণ্ডল।
উত্তর – ট্রপোস্ফিয়ারের
22. পৃথিবীর ……… শক্তির প্রভাবে বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর গায়ে লেগে আছে।
উত্তর – মাধ্যাকর্ষণ
23. দক্ষিণ গোলার্ধে মেরুজ্যোতিকে বলে ……….।
উত্তর – কুমেরুপ্রভা

TOPIC – B বায়ুমণ্ডলের তাপ, উন্নতা ও বিশ্ব উয়ায়ন

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. ইনসোলেশন : আলো ও উত্তাপের মাধ্যমে সূর্য থেকে যে শক্তি নির্গত হয়, তার প্রায় 200 কোটি ভাগের একভাগ তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গরূপে সেকেন্ডে প্রায় 297600 কিমি বেগে পৃথিবীতে আসে। পৃথিবীতে আগত ওই সৌরশক্তিকে ইনসোলেশন বা সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বা আগত সৌর বিকিরণ।
  2. অ্যালবেডো: পৃথিবীতে আগত সৌর বিকিরণ (যা সূর্য থেকে নির্গত মোট শক্তির 200 কোটি ভাগের এক ভাগ)-কে যদি 100 শতাংশ ধরা হয়, তবে তার প্রায় 34 (ভিন্ন মতে 35) শতাংশ পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়, যাকে বলে পৃথিবীর অ্যালবেডো। অ্যালবেডো সর্বাধিক মেঘ থেকে (25%) এবং সর্বনিম্ন স্থলভাগ থেকে (2%) হয়।
  3. কার্যকরী সৌর বিকিরণ : আগত সৌর বিকিরণের মধ্যে পৃথিবীর অ্যালবেডো (প্রায় 35%) বাদ দিলে বাকি যে 65 শতাংশ থাকে, তার প্রায় 14 শতাংশ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি শোষণ করে নেয়। আর অবশিষ্ট 51 শতাংশ সৌর বিকিরণ ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছোয় এবং ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। সুতরাং, আগত সৌর বিকিরণের শতকরা 65 (14+51) ভাগের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় এবং ওই আগত সৌর বিকিরণই হল কার্যকরী সৌর বিকিরণ।
  4. পৃথিবীর তাপের সমতা: দিনের বেলায় যে পরিমাণ সৌর বিকিরণ ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে পৃথিবীতে আসে, রাত্রিবেলা সেটাই বৃহৎ তরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এইভাবেই পৃথিবীতে তাপের সমতা বজায় থাকে।
  5. বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি: বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল— (1) বিকিরণ, (2) পরিবহণ, (3) পরিচলন, (4) সূর্যরশ্মির প্রত্যক্ষ শোষণ, (5) অ্যাডভেকশন, (6) বায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ প্রভৃতি।
  6. তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র : যে যন্ত্রের সাহায্যে তাপমাত্রা মাপা হয় তাকে থার্মোমিটার বলে। দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাপার জন্য সিক্স-এর গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার ব্যবহৃত হয়।
  7. তাপমাত্রা তারতম্যের বিভিন্ন কারণ: ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণগুলি হল- (1) অক্ষাংশ, (2) ভূমির উচ্চতা, (3) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন, (4) বায়ুপ্রবাহ, (5) সমুদ্রস্রোত, (6) ভূমির ঢাল, (7) মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপণ, (8) স্বাভাবিক উদ্ভিদ, (9) মৃত্তিকা, (10) নগরায়ণ ও শিল্পায়ন প্রভৃতি।
  8. বিভিন্ন তাপমণ্ডল : তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠকে– (1) উম্মমণ্ডল, (2) উত্তর নাতিশীতোয়মণ্ডল, (3) দক্ষিণ নাতিশীতোয়মণ্ডল, (4) উত্তর হিমমণ্ডল এবং (5) দক্ষিণ হিমমণ্ডল—এই পাঁচটি তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়।
  9. সমোয়রেখা: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের একই তাপমাত্রাযুক্ত স্থানগুলিকে মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, সেই কাল্পনিক রেখার নাম সমোয়রেখা। পৃথিবীর তাপের অনুভূমিক বণ্টন এই সমোয়রেখার বৈশিষ্ট্য দেখে সহজে বোঝা যায়।
  10. বিশ্ব উন্নায়ন: বিগত কয়েক দশকে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপি উন্নতাও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। পৃথিবীর অস্বাভাবিক উন্নতা বৃদ্ধির ঘটনাকে পরিবেশবিদরা বিশ্ব উন্নায়ন (Global Warming) নামে অভিহিত করেছেন। বিশ্ব উয়ায়ন সৃষ্টিকারী গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি হল— (1) কার্বন ডাইঅক্সাইড, (2) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, (3) মিথেন, (4) ওজোন, (5) জলীয় বাষ্প, (6) নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি।

দীর্ঘ উত্তৱধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উন্নতার তারতম্যের কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।
অথবা, বায়ুমণ্ডলের উন্নতা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ?
বায়ুমণ্ডলে উন্নতার তারতম্যের কারণ
উত্তর – ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উন্নতায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। বায়ুর উয়তার এই তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হল—
  1. অক্ষাংশ: অক্ষাংশ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ঘটে, ফলে উন্নতারও পার্থক্য হয়। নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে। লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের

    পরিমাণ কম হয়। এর কারণগুলি হল— (1) তির্যক রশ্মিকে বায়ুমণ্ডলেরমধ্য দিয়ে তুলনামূলকভাবে অধিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় এবং (2) তির্যক রশ্মি ভূপৃষ্ঠে বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং,নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে তাপমাত্রাও ক্রমশ কমতে থাকে। উদাহরণ: 34°05´ উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত শ্রীনগরের তুলনায় নিরক্ষরেখার নিকটবর্তী তিরুবনন্তপুরম (8°31’ উ: অক্ষাংশ) অনেক বেশি উয়। আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অক্ষাংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলেই অক্ষাংশের ভিত্তিতে ভূপৃষ্ঠে তিনটি প্রধান তাপমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে।
  2. উচ্চতা : সাধারণভাবে দেখা যায় প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় প্রায় 6.4°সে হারে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাই একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতল স্থানের তুলনায় উঁচু স্থানের তাপমাত্রা কম হয়। উদাহরণ: উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা (0°20′ উত্তর, উচ্চতা 1190 মি) এবং ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো (0°11′ দক্ষিণ, উচ্চতা 2850 মি) মোটামুটি একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উচ্চতার পার্থক্যের জন্য কাম্পালার (গড় বার্ষিক তাপমাত্রা 19°সে) তুলনায় কুইটোর তাপমাত্রা (গড়ে 8.5 °সে) অনেক কম।
  3. স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দিনের বেলা তাড়াতাড়ি গরম হয় এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়। একইভাবে গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ যতটা উম্ন হয় পার্শ্ববর্তী জলভাগ ততটা হয় না বা শীতকালে স্থলভাগ যতটা শীতল হয় সংলগ্ন জলভাগ ততটা শীতল হয় না। এজন্য সমুদ্র থেকে দূরে মহাদেশের অভ্যন্তরে জলবায়ু চরম বা মহাদেশীয় প্রকৃতির হয়। কিন্তু সমুদ্রসংলগ্ন স্থানে সামুদ্রিক প্রভাবের জন্য উয়তা কখনোই খুব বেশি বা কম হয় না। জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়। উদাহরণ: সমুদ্র থেকে দূরে দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত বলে দিল্লির জলবায়ু চরম বা মহাদেশীয় প্রকৃতির। আবার, সামুদ্রিক প্রভাবের জন্য মুম্বাইয়ের জলবায়ু সমভাবাপন্ন।
  4. ভূমির ঢাল : ভূমির যে ঢালের ওপর সূর্যালোক বেশি খাড়াভাবে পড়ে সেই ঢালে উয়তা অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। এর বিপরীত ঢালে সূর্যালোক তির্যকভাবে পড়ে ও উয়তা তুলনামূলকভাবে কম হয়। উদাহরণ: উত্তর গোলার্ধে হিমালয়, আল্পস প্রভৃতি পর্বতশ্রেণির উত্তর ঢালের তুলনায় দক্ষিণ ঢালের তাপমাত্রা বেশি। আবার দক্ষিণ গোলার্ধের পর্বতশ্রেণিসমূহের উত্তর ঢাল দক্ষিণ ঢালের তুলনায় বেশি উয়।
  5. বায়ুপ্রবাহ : বায়ুপ্রবাহ তাপ বহন করে। তাই কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে উম্ন বায়ু প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা বাড়ে এবং শীতল বায়ুপ্রবাহে তাপমাত্রা কমে। উদাহরণ: শীতকালে সুমেরুর ঠান্ডা বাতাস উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অভ্যন্তরে বহুদূর পর্যন্ত চলে আসে। এজন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যভাগে শীতকালে তীব্র শীত পড়ে এবং তুষারপাত হয়। আবার উয় চিনুক বায়ুর প্রভাবে ওই দেশটিরই প্রেইরি অঞ্চলে শীতকালে বরফ গলে যায়।
  6. মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপণ : আকাশে ঘন মেঘের আবরণ একদিকে যেমন দিনের বেলা সৌরশক্তিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে বাধা দেয়, অপরদিকে রাত্রি বেলা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপকেও মহাশূন্যে পৌঁছোতে দেয় না। ফলে মেঘের আবরণ থাকলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে, আর রাত্রিবেলা উত্তাপ বাড়ে ৷ এই কারণে মেঘশূন্য রাত্রির তুলনায় মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অনেক গরম হয়। বৃষ্টিপাত, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার অধঃক্ষেপণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এজন্য বৃষ্টিহীন রাজস্থান মরু অঞ্চলের তুলনায় বৃষ্টিপাত অধ্যুষিত চেরাপুঞ্জির তাপমাত্রা অনেক কম। আবার, বৃষ্টিপাতের তুলনায় শিলাবৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টির তুলনায় তুষারপাতে তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
2. চিত্র-সহ বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি
উত্তর – বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতিগুলি হল—
  1. বিকিরণ পদ্ধতি: যে পদ্ধতিতে কোনো মাধ্যম ছাড়াই বা মাধ্যম থাকলেও তাকে উত্তপ্ত না করে তাপ এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে চলে যায়, সেই পদ্ধতিকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে। সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ উম্ন হয় এবং ওই উয় ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে। বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তর ওই বিকীর্ণ তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয়।
  2. পরিবহণ পদ্ধতি: যে পদ্ধতিতে কোনো পদার্থের উয়তর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ সঞ্চালিত হয় কিন্তু পদার্থের অণুগুলি স্থান পরিবর্তন করে না, সেই পদ্ধতিকে পরিবহণ পদ্ধতি বলে। যেমন— সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় এবং ওই উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়। আবার ওই উত্তপ্ত বায়ুর উত্তাপ শীতল বায়ুতে সঙ্কলিত হয় এবং এইভাবে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়।
  3. পরিচলন পদ্ধতি: ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত হওয়ার ফলে প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। তখন চারদিক থেকে ঠান্ডা ভারী বাতাস ওই ফাঁকা স্থানে ছুটে আসে এবং ওই বাতাসও ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায়। এরকম উল্লম্বভাবে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে উত্তাপ ছড়িয়ে যায় এবং বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার এই পদ্ধতির নাম পরিচলন পদ্ধতি।
  4. অ্যাডভেকশন : এক জায়গার উত্তাপ বায়ুর মাধ্যমে যখন ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে অনুভূমিকভাবে অন্য জায়গায় চলে যায়, তার নাম অ্যাডভেকশন (অর্থাৎ এটি পরিচলন পদ্ধতির ঠিক বিপরীত। পরিচলন পদ্ধতিতে উত্তাপ উল্লম্বভাবে যায় কিন্তু অ্যাডভেকশন পদ্ধতিতে অনুভূমিকভাবে যায়)। উদাহরণ—নিম্ন অক্ষাংশের বেশি উন্নতা বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে উচ্চ অক্ষাংশের বায়ুমণ্ডলে স্থানান্তরিত হয়।
  5. সূর্যরশ্মির প্রত্যক্ষ শোষণ : সূর্যরশ্মি যখন বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে আসে তখন তার কিছু অংশ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান, যেমন— কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি সরাসরি শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে সামান্য উত্তপ্ত করে।
3. পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের তাপবলয়গুলির পরিচয় দাও।
পৃথিবীর তাপবলয়
উত্তর – তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠকে মোট পাঁচটি তাপবলয় বা তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়। এগুলি হল-
  1. উয়মন্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল

    অবস্থান: নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 23%° অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উয়ুমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল বলে। 27°সে বা 80°ফা সমোয়রেখাকে অনেকসময় উল্লমণ্ডলের সীমারেখা ধরা হয়। সেক্ষেত্রে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 30° অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ উন্নমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়।

    কারণ: [i] সূর্যরশ্মির পতন: এখানকার প্রতিটি স্থানে বছরে অন্তত দু-দিন মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং বছরের অন্যান্য দিনও সূর্যরশ্মি এখানে বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। [ii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: সারাবছর এখানে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি খুব কম হয়। তাই সারাবছর এখানকার বায়ুর তাপমাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। এজন্য এই অঞ্চলটির নাম উদ্বুমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল।
    বৈশিষ্ট্য: [i] পর্যাপ্ত সূর্যরশ্মি: উহুমণ্ডলে সারাবছর যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যরশ্মি পাওয়া যায়। [ii] গড় তাপমাত্রা: এখানকার গড় তাপমাত্রা সারাবছর বেশি (প্রায় 27°সে) থাকে। এ ছাড়া, শীত ও গ্রীষ্মের উন্নতার পার্থক্যও কম হয়। [ii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের পার্থক্য: এখানে সারাবছর দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যে খুব বেশি তারতম্য হয় না। [iv] ঋতুপরিবর্তন: এই অঞ্চলের মধ্যভাগে ঋতুপরিবর্তন হয় না বললেই চলে।
  2. – 3. উত্তর নার্তিশীতোয়মণ্ডল এবং দক্ষিণ নাতিশীতোয়মণ্ডল
    অবস্থান: কর্কটক্লান্তিরেখা এবং মকরক্রান্তিরেখা থেকে যথাক্রমে সুমেরুবৃত্ত এবং কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম নাতিশীতোয়মণ্ডল। এর মধ্যে কর্কটক্লান্তিরেখা (23½° উ.) থেকে সুমেরুবৃত্ত (66½° উ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম উত্তর নাতিশীতোয়ুমণ্ডল এবং মকরক্রান্তিরেখা (23½° দ.) থেকে কুমেরুবৃত্ত (66½°দ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম দক্ষিণ নাতিশীতোয়মণ্ডল। সমোয়রেখার হিসাবে 27° সে থেকে 0°সে সমোয়রেখার মাঝখানের স্থানসমূহ নাতিশীতোয়মণ্ডলের অন্তর্গত।
    কারণ: [i] সূর্যরশ্মির পতন: সূর্যরশ্মি এখানে খুব বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। উয়মণ্ডলের তুলনায় সূর্যরশ্মি কম পাওয়া গেলেও হিমমণ্ডলের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। [ii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি মাঝামাঝি ধরনের হয়। এজন্য এই অঞ্চলে উন্নতাও খুব বেশি বা কম হয় না, মধ্যম প্রকৃতির হয়। ফলে এখানে বছরের অধিকাংশ সময় নাতিশীতোয় অবস্থা বিরাজ করে।
    বৈশিষ্ট্য: [i] গড় উন্নতা: সারাবছর এখানকার গড় উয়তা 0° সে থেকে 27° সে-এর মধ্যে থাকে। [ii] ঋতুর তীব্রতা: এখানে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল কোনোটিই তীব্র নয়।
    উপবিভাগ: উন্নতার তারতম্য অনুসারে এই নাতিশীতোয়মণ্ডলকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়-[i] উয় নাতিশীতোয়মণ্ডল: নাতিশীতোয়-মণ্ডলের যে অংশটি উয়মণ্ডলসংলগ্ন অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার দিকে থাকে (30° থেকে 45° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ) সেখানে উন্নতা অপেক্ষাকৃত বেশি বলে ওই অংশটিকে উয় নাতিশীতোয়মণ্ডল বলে। [ii] শীতল নাতিশীতোয়মণ্ডল: নাতিশীতোয়-মণ্ডলের যে অংশটি হিমমণ্ডলসংলগ্ন (45°-66½° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ), অর্থাৎ মেরুবৃত্তের দিকে থাকে, সেখানে উয়তা অপেক্ষাকৃত কম বলে ওই অংশটিকে শীতল নাতিশীতোয়মণ্ডল
    4. – 5. উত্তর হিমমণ্ডল এবং দক্ষিণ হিমমণ্ডল
অবস্থান: উভয় গোলার্ধে দুই মেরুবৃত্ত থেকে মেরুবিন্দু পর্যন্ত অঞ্চলকে বলে হিমমণ্ডল। এর মধ্যে সুমেরুবৃত্ত (66½° উ.) থেকে সুমেরুবিন্দু (90° উ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের নাম উত্তর হিমমণ্ডল এবং কুমেরুবৃত্ত (66½° দ.) থেকে কুমেরুবিন্দু (90°দ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের নাম দক্ষিণ হিমমণ্ডল।
কারণ: উভয় মেরুর চারদিকে সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে এবং বছরের বেশ কিছুটা সময় সূর্যরশ্মি একেবারেই পাওয়া যায় না। এজন্য এই অঞ্চলের উন্নতা খুবই কম এবং বছরের অধিকাংশ সময় ভূমি হিমময় বা বরফাবৃত থাকে। তাই এই অঞ্চলের নাম হিমমণ্ডল। হিমমণ্ডলের সীমারেখা 0°সে সমোয়রেখা থেকে দুই মেরুবিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত।
বৈশিষ্ট্য: [i] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের তারতম্য: হিমমণ্ডলে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের তারতম্য অত্যন্ত বেশি। দুই মেরুবিন্দুতে একটানা ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত হয়। [ii] বায়ুমণ্ডলের উত্তপ্ততা: সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ায় একটানা ছয় মাস দিন থাকার সময়ও বায়ুমণ্ডল বিশেষ একটা উত্তপ্ত হয় না।[ii] বার্ষিক গড় তাপমাত্রা: এখানকার বেশিরভাগ জায়গায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 0°সে-এর কম থাকে এবং বছরের অধিকাংশ সময় তুষারপাত হয়। [iv] মেরুজ্যোতির প্রভাব: একটানা রাত্রিকালীন সময়ে অরোরা (aurora) বা মেরুজ্যোতির প্রভাবে এই অঞ্চল মৃদু আলোকিত হয়।
4. বিশ্ব উয়ায়নের কারণগুলি লেখো।
বিশ্ব উন্নায়নের কারণ
উত্তর – কোনোরূপ প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াই প্রধানত মানুষের নানাপ্রকার অবিবেচনাপ্রসূত কাজের ফলে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উন্নতা বৃদ্ধিকে বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদগণ বিশ্ব উন্নায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে অভিহিত করেছেন। এই বিশ্ব উস্নায়নের কারণগুলি হল—
  1. অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার : তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড মিশছে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
  2. মিথেন গ্যাসের নির্গমন: মিথেন একটি অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস। বিভিন্ন জলাজমি, ধানখেতের জমে থাকা জল থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। এ ছাড়া, পচনশীল জৈব আবর্জনা, গবাদিপশুর মল থেকেও প্রচুর মিথেন গ্যাস বাতাসে মেশে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সহায়ক।
  3. অরণ্যচ্ছেদন : পৃথিবীজুড়ে নানা কারণে অরণ্য ধ্বংস হয়ে চলেছে। এতে বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কার্বন ডাইঅক্সাইড তাপমাত্রা বৃদ্ধির সহায়ক।
  4. নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন : কৃষিজমিতে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহারের মাধ্যমে বা অরণ্যে দাবানলের সৃষ্টি হলে বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) মেশে, যা বিশ্ব উন্নায়নের সহায়ক।
  5. CFC গ্যাসের নির্গমন: রেফ্রিজারেটার, এয়ারকন্ডিশনার, বডি স্প্রে প্রভৃতি ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে CFC গ্যাস নির্গত হয়। এ ছাড়া ইলেকট্রনিকস শিল্প, রং শিল্প, বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুত করতেও ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) ব্যবহৃত হয়, যা বিশ্ব উন্নায়নের অন্যতম কারণ।
এ ছাড়া, 6. বিপুল পরিমাণে জ্বালানি কাঠের দহন, 7. পচা ও জৈব আবৰ্জনা বৃদ্ধি, ৪. জনবিস্ফোরণ প্রভৃতিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্ব উস্নায়নের সহায়ক হয়েছে।
5. বিশ্ব উন্নায়নের কয়েকটি প্রভাব লেখো।
অথবা, বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাবগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাব
উত্তর – মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ, যেমন—অত্যধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, কৃষিকাজে বিপুল পরিমাণে নাইট্রোজেন-জাতীয় সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ণ প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে চলেছে এবং তার ফলস্বরূপ নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উয়তা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক উন্নতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উন্নতা বৃদ্ধিকেই বলে বিশ্ব উয়ায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এর উল্লেখযোগ্য প্রভাবগুলি হল—
  1. জলবায়ু পরিবর্তন: পৃথিবীর উন্নতা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার জন্য শীতের তুলনায় গ্রীষ্মের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি ঋতুর আগমন অনিয়মিত ও বিলম্বিত হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খরার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
  2. হিমবাহের মাত্রাতিরিক্ত গলন: ভূমণ্ডলের উয়তা বেড়ে যাওয়ার জন্য অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের অসংখ্য হিমবাহ ও বিশালাকৃতি বরফের চাদর (Ice Sheet) সহ পৃথিবীর বিভিন্ন পার্বত্য হিমবাহ গলে যাওয়ার জন্য ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে অর্থাৎ এদের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে। যেমন—হিমালয়ের গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী প্রভৃতি হিমবাহ।
  3. নদনদীতে জলের পরিমাণ হ্রাস: পার্বত্য হিমবাহগুলি ক্রমশ সংকুচিত হওয়ার ফলে হিমবাহসৃষ্ট নদনদীতে জলের পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে। এর ফলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নদনদী ধীরে ধীরে ক্ষীণকায় হতে থাকবে এবং তার ফলে ভারত, চিন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জলাভাবজনিত নানা ধরনের সমস্যা ভয়ংকর রূপ নেবে।
  4. সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি : মেরু অঞ্চল এবং পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 0.9°সে বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বেড়ে গেছে। এজন্য সমুদ্র উপকূলের নীচু অংশগুলি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে।
  5. অধঃক্ষেপণের প্রকৃতি পরিবর্তন : বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাষ্পীভবনের হার ও বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির তীব্রতা বেড়েছে। অধঃক্ষেপণের বণ্টনে যথেষ্ট অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়েছে, অর্থাৎ শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে বন্যা এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলিতে খরা দেখা দিচ্ছে।
6.  সিক্সের গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার যন্ত্রটির পরিচয় দাও।
সিক্সের গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার
উত্তর – দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উন্নতা পরিমাপ করার জন্য যে তাপমান যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়, তার নাম সিক্সের গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার (Six’s Maximum and Minimum Thermometer)। জেমস সিক্স (James Six) এই তাপমান যন্ত্রটি তৈরি করেন। এই যন্ত্রটির সাহায্যে যেমন দিনের (24 ঘণ্টার) সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উন্নতা নথিভুক্ত করা যায়, তেমন নথিভুক্ত উন্নতার সাহায্যে দৈনিক গড় উন্নতা, মাসিক গড় উন্নতা এবং বার্ষিক গড় উন্নতা নিরূপণ করাও সম্ভব হয়।
থার্মোমিটারের পরিচয়: (1) এই থার্মোমিটারটি দেখতে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর U-এর মতো, যেটি একটি ফ্রেমের মধ্যে খাড়াভাবে আটকে রাখা থাকে। (2) ওই U-আকৃতির থার্মোমিটারটি হল প্রকৃতপক্ষে দুটি বাহু এবং সমব্যাসের সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত কাচের নল বা টিউব। (3) ওই দুই বাহুর ওপর দুটি বাল্ব বা কুণ্ড (চিত্রে A এবং B) লাগানো থাকে। (4) এই কাচের নল বা টিউবটির দুই বাহুর একটি নির্দিষ্ট অংশ (চিত্রে C এবং D) পর্যন্ত পারদপূর্ণ এবং বাকি অংশ (বামদিকের বাহুর C থেকে A এবং ডানদিকের বাহুর D থেকে P পর্যন্ত) অ্যালকোহলপূর্ণ থাকে। (5) দুই বাহুর পারদপ্রান্তের ঠিক ওপরে দুটি হালকা ইস্পাতের সূচক (I1 এবং I2) থাকে, যা উন্নতার মান নির্দেশ করে। (6) পারদের তুলনায় সূচক দুটি হালকা বলে পারদের ওপর সহজেই ভেসে থাকে। (7) সূচক দুটির সঙ্গে স্প্রিং লাগানো থাকে। তাই নলের মধ্যে যখন পারদের উচ্চতা বাড়ে সূচক দুটি ওপরে উঠে যায়, কিন্তু পারদের উচ্চতা কমলেও সূচক দুটি নীচে নামে না। এর কারণ, স্প্রিং লাগানো থাকে বলে সহজেই নলের গায়ে আটকে যায়। (8) U-আকৃতির ওই কাচের নলের দুই বাহুর দু-দিকে সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেল আঁকা থাকে। এর মধ্যে বামদিকের নলের অর্থাৎ লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের দু-দিকের তাপমান স্কেল ওপর থেকে নীচের দিকে বাড়ে এবং ডানদিকের নলে বা গরিষ্ঠ থার্মোমিটারের তাপমান স্কেল নীচে থেকে ওপরের দিকে বাড়ে।
সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন উন্নতা নথিভুক্ত করার
পদ্ধতি : U-আকৃতির কাচের নল বা টিউবটির ডানদিকের বাহুর অর্থাৎ গরিষ্ঠ থার্মোমিটারের সূচকটির (I2) নিম্নপ্রান্তের অবস্থান দেখে সর্বোচ্চ উন্নতা ও বামদিকের বাহুর অর্থাৎ লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের সূচকটির (I1) নিম্নপ্রান্তের অবস্থান দেখে সর্বনিম্ন উয়তা নথিভুক্ত করা হয়। সাধারণত প্রতি 24 ঘণ্টা অন্তর নির্দিষ্ট সময়ে বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উয়তা নথিভুক্ত করা হয়। প্রতিদিন এভাবে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উয়তা নথিভুক্ত করার পর, পরের দিনের সঠিক উন্নতা পাবার জন্য চুম্বকের সাহায্যে সূচক দুটিকে (I1 এবং I2 ) দুই বাহুর পারদপ্রান্তে লাগিয়ে দিতে হয়।
7. ভূমির উচ্চতা কীভাবে বায়ুর তাপ নিয়ন্ত্রণ করে?
অথবা, উচ্চস্থান শীতল হয় কেন?
অথবা, নিম্নের সমভূমি অপেক্ষা ওপরের পার্বত্য অঞ্চল শীতলতম কেন?
বায়ুর তাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমির উচ্চতার প্রভাব
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের সর্ব নিম্নস্তরে অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ারের মধ্যে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায়। বায়ুর তাপমাত্রার এই হ্রাসকে বলা হয়। তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস হার (normal lapse rate of temperature)। তাপমাত্রা হ্রাসের এই হার হল প্রতি 1000 মিটারে প্রায় 6.4°সে। এজন্য একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতল স্থানের তুলনায় উঁচু স্থানের তাপমাত্রা কম হয়। উদাহরণ—উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা (উচ্চতা 1190 মি) এবং ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো (উচ্চতা 2850 মি) প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উচ্চতা বেশি হওয়ায় কাম্পালার চেয়ে কুইটোর গড় তাপমাত্রা 8.5°সে কম। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণগুলি হল—
  1. ওপরে বিকিরণ কম: সূর্যতাপে বায়ুমণ্ডল সরাসরি বিশেষ উন্ন হয় না। সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উয় হয় এবং পরে ওই উয় ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল উয় হয়। এজন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে তাপমাত্রা কমে যায়।
  2. বায়ুর ঘনত্ব কম: ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ঊর্ধ্বে ওঠা যায় তত বায়ুমণ্ডলীয় ভর কমে। বায়ুস্তর পাতলা হয়ে যাওয়ার জন্য বায়ুর তাপ ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে তাপমাত্রা কম হয়।
  3. বিকীর্ণ তাপ কম পৌঁছোয়: ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপের খুব কম অংশই ওপরে পৌঁছোয়।
  4. তাপশোষণ কম: ওপরের বায়ুতে ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প কম থাকে বলে ওই বায়ুর তাপ শোষণ ও সংরক্ষণ ক্ষমতাও কম।
  5. পাতলা বায়ুস্তর: বায়ুস্তর ক্রমশ ওপরের দিকে পাতলা হয়ে যায়। তাই ঊর্ধ্বের বায়ু তাড়াতাড়ি প্রসারিত হয় এবং তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। এর ফলে উচ্চস্থান শীতল হয় এবং সুউচ্চ পর্বতশিখর তুষারাবৃত থাকে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. উষু মরু অঞ্চলে দিনের বেলায় প্রচণ্ড উত্তাপ ও রাতের বেলা খুবই কম উত্তাপ থাকে কেন?
উত্তর – উগ্ন মরু অঞ্চলে দিনের বেলায় প্রচণ্ড উত্তাপ ও রাতের বেলা খুবই কম উত্তাপ থাকার কারণ : সাধারণভাবে বলা যায়, আকাশে মেঘের আবরণ না থাকলে দিনের বেলা সূর্যরশ্মি বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং রাতের বেলা আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত এই তাপ দীর্ঘতরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়। অর্থাৎ দিনের বেলা যেমন উত্তাপ বাড়ে তেমনই রাতের বেলা উত্তাপ কমে। যেমন—উয় মরু অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল দিনের বেলা প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয় কিন্তু রাতের বেলা সেখানে উত্তাপ খুব কম থাকে। এর কারণগুলি হল— (1) আকাশে মেঘ না থাকার জন্য দিনের বেলা সূর্যরশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। ফলে মরুভূমির বালি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে যে তাপ বিকিরণ করে। আর তাতে বায়ুমণ্ডল প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে যায়। (2) সূর্যাস্তের পর মরুভূমির বালি দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয় এবং আকাশে মেঘ না থাকার জন্য ওই বিকীর্ণ তাপ সরাসরি মহাশূন্যে চলে যায়। ফলে রাতে উত্তাপ খুবই কম থাকে এবং ঠান্ডাভাব অনুভূত হয়।
2. মেঘাচ্ছন্ন রাত্রির তুলনায় মেঘমুক্ত রাত্রি শীতল হয় কেন?
উত্তর – মেঘাচ্ছন্ন রাত্রির তুলনায় মেঘমুক্ত রাত্রি শীতল হওয়ার কারণ : (1) দিনের বেলা আকাশে মেঘের আবরণ সূর্যরশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে বাধা দেয় এবং রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপকে মহাশূন্যে অর্থাৎ পৃথিবীর আবহমণ্ডলের বাইরে পৌঁছোতে দেয় না। ফলে, আকাশে মেঘের আবরণ থাকলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে এবং রাতে উত্তাপ বাড়ে। (2) কিন্তু রাতে আকাশ যদি মেঘমুক্ত হয় তাহলে দিনের বেলা আগত তাপের পুরোটা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হয়ে মহাশূন্যে অর্থাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে চলে যেতে পারে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুক্তরও শীতল হয়। এই কারণে মেঘাচ্ছন্ন রাত্রির তুলনায় মেঘমুক্ত রাত্রি শীতল হয়।
3. সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল?
উত্তর – সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের নির্ভরশীল বিষয়: সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল কতকগুলি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন—
  1. সূর্যরশ্মির পতনকোণ: পৃথিবীর নিম্ন অক্ষাংশে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে সেখানে তাপীয় ফল বেশি, কিন্তু উচ্চ অক্ষাংশগুলিতে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে বলে সেখানে তাপীয় ফল কম।
  2. পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্ব: পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্বের যে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে, তার ফলে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের হ্রাসবৃদ্ধি হয়।
  3. সূর্যালোকের স্থিতিকাল: পৃথিবীর যে সমস্ত জায়গায় বেশিক্ষণ ধরে সূর্যালোক পড়ে সেখানকার তাপীয় ফল বেশি, আর যেখানে সূর্যালোক পাওয়া যায় না বা কম পাওয়া যায় সেখানে তাপীয় ফল কম।
এ ছাড়া, 4. বায়ুমণ্ডলের স্বচ্ছতা, 5. সৌরধ্রুবক, 6. সৌরকলঙ্ক প্রভৃতি বিষয়গুলি সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে।
4. কোনো স্থানের উন্নতা নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলি কী কী?
উত্তর – কোনো স্থানের উন্নতা নির্ণয়ের পদ্ধতি: বায়ুর উন্নতা পরিমাপক যন্ত্র হল থার্মোমিটার। সাধারণ সিক্সের লঘিষ্ঠ ও গরিষ্ঠ থার্মোমিটারের সাহায্যে কোনো স্থানের দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উন্নতা, দৈনিক, মাসিক ও বার্ষিক গড় উন্নতা, উয়তার প্রসর ইত্যাদি নির্ণয় করা হয় এবং এগুলি নির্ণয়ের পদ্ধতি হল—
5. নিরক্ষরেখায় অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও সাউথ কিলিমাঞ্ঝারোতে বরফ জমে কেন? ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটোকে ‘চিরবসন্তের দেশ’ বলে কেন?
উত্তর – পূর্ব আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বত শৃঙ্গটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 5895 মিটার বা 5.89 কিমি উচ্চতায় এবং কুইটো শহরটি প্রায় 2850 মিটার বা, 2.85 কিমি ওপরে অবস্থিত।
আমরা জানি, প্রতি 1000 মিটার বা 1 কিমি উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে প্রায় 6.4° সেলসিয়াস হারে তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে গড় বার্ষিক তাপমাত্রা 27 °সে।
সুতরাং, [1] কিলিমাঞ্জারো পর্বতে 27°সে – (6.4 × 5.89) = -10.44°সে বা হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রা থাকে ৷ সেইজন্য কিলিমাঞ্জারো পর্বতশৃঙ্গ সবসময় বরফে ঢাকা থাকে। আবার, [2] কুইটো শহরে 27° সে – (6.4 × 2.85) = ৪.৪ °সে তাপমাত্রা থাকে, অর্থাৎ সারাবছর ধরে এখানে মৃদু শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে বলে একে চিরবসন্তের দেশ বলা হয় ৷
6. একই অক্ষরেখা বরাবর অবস্থান করা সত্ত্বেও শীতকালে বাল্টিক সাগরের জল বরফে পরিণত হয় কিন্তু ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পার্শ্ববর্তী সাগরের জল জমে যায় না কেন?
উত্তর – ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জেরসংলগ্ন সাগরের জল এবং বাল্টিক সাগর উভয়ে যে অক্ষাংশে অবস্থিত তাতে সেখানে শীতকালে বরফ জমে যাওয়ার কথা। কিন্তু ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে সর্বদা উম্ন উপসাগরীয় স্রোত প্রবাহিত হয় বলে, এই স্রোত ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পার্শ্ববর্তী অংশকে অনেকাংশে উয় রাখে। তাই শীতকালে উত্তর সাগরের জল বরফে পরিণত হয় না। অন্যদিকে, বাল্টিক সাগর স্থলভাগ দ্বারা আবদ্ধ হওয়ার জন্য সেখানে কোনো উন্ন সমুদ্রস্রোত প্রবেশ করতে পারে না। তাই শীতকাল ওই অঞ্চলে তীব্র থাকে এবং সাগরের জল জমে যায়।
7. জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ তাড়াতাড়ি গরম হয় কেন?
উত্তর – জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ তাড়াতাড়ি গরম হওয়ার কারণ : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ তাড়াতাড়ি গরম হয়, এর কারণগুলি হল—
  1. পরিচলন পদ্ধতির প্রভাব: জলের উত্তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে জলের গভীরে চলে যায় কিন্তু স্থলভাগের উত্তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে চলাচল করে না, ওপরেই সঞ্চিত থাকে।
  2. বিচ্ছুরণের পার্থক্য: জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ থেকে সূর্যরশ্মি কম বিচ্ছুরিত হয়, ফলে স্থলভাগ তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়।
  3. প্রয়োজনীয় উত্তাপের পার্থক্য: নির্দিষ্ট ঘন একক আয়তনের জলকে 1°সে উত্তপ্ত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয়, একই বর্গ একক স্থলভাগকে 1°সে উত্তপ্ত করতে ওই তাপের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ প্রয়োজন। অর্থাৎ, স্থলভাগের তুলনায় জলভাগের তাপ গ্রহণক্ষমতা বেশি হয়।
  4. স্বচ্ছতার পার্থক্য: স্থলভাগ অস্বচ্ছ কিন্তু জল স্বচ্ছ, ফলে সূর্যরশ্মি জলের নীচে প্রায় 200 মিটার পর্যন্ত চলে যায়। তাই জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত হয়।
8. বিশ্ব উয়ায়ন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: সৌরশক্তি ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে এবং তার ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। এরপর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত ও বিকিরিত সূর্যরশ্মি দীর্ঘ তরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এইভাবে পৃথিবীতে তাপের একটা সমতা তৈরি হয়। কিন্তু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ওজোন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্রিনহাইস গ্যাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌররশ্মি দীর্ঘ তরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফেরার সময় এই গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির দ্বারা শোষিত হওয়ায় নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উন্নতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক উন্নতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উয়ায়ন বা Global Warming নামে অভিহিত করেছেন।
9. বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস এফেক্ট কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস এফেক্ট সৃষ্টির পদ্ধতি: শীতপ্রধান দেশগুলিতে উয়মণ্ডলের ফসল চাষের জন্য খোলা বাগানের মধ্যে স্বচ্ছ কাচের যে ঘর তৈরি করা হয়, তার নাম গ্রিনহাউস। ক্ষুদ্র তরঙ্গের মাধ্যমে আসা সূর্যরশ্মি গ্রিনহাউসের কাচের দেয়াল দিয়ে সহজে ভেতরে প্রবেশ করলেও দীর্ঘ তরঙ্গরূপে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মি কাচ ভেদ করে বেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে গ্রিনহাউসের মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা বজায় থাকে। একই রকমভাবে তাপমাত্রা ধরে রাখে বলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে একটি বিশাল গ্রিনহাউসরূপে কল্পনা করা যায়। সেক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্যাসগুলি (গ্রিনহাউসের কাচের দেয়ালের মতো) উয়তা ধরে রাখতে পারে বলে ভূপৃষ্ঠের তাপীয় বিকিরণকে বাধা দেয় এবং এইভাবে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা বৃদ্ধি ঘটিয়ে গ্রিনহাউস এফেক্ট সৃষ্টি করে। এজন্য এই গ্যাসগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। আর তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয় বাষ্প, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসের জোগান তথা ঘনত্ব যত বাড়ে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধিও তত দ্রুত হয় অর্থাৎ গ্রিনহাউস এফেক্টও তীব্র হয়।
10. এল নিনো বলতে কী বোঝ ? পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব কতখানি?
উত্তর – এল নিনো: স্পেনীয় শব্দ ‘এল নিনো’র ইংরেজি অর্থ ‘Christ Child’ এবং বাংলায় ‘শিশু খ্রিস্ট’। অনেকে আবার একে ‘Little boy’’ বা ‘ছোট্ট ছেলে’ বলেন। সাধারণভাবে বলা যায়, ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্তে পেরু, ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে, বিশেষত ক্রিসমাসের সময় শীতল পেরু স্রোতের পরিবর্তে যে উয় স্রোত প্রবাহিত হয়, তাকে এল নিনো বলে। এল নিনোর ফলে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা বেড়ে যায়।
পৃথিবীব্যাপী এল নিনোর প্রভাব
  1. বন্যার সৃষ্টি: এল নিনোর প্রভাবে পেরু ও ইকুয়েডরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। যার ফলে সেখানে বন্যার সৃষ্টি হয়।
  2. মরুভূমির আবহাওয়া বদল: চিলির আটাকামা মরুভূমিতে এল নিনোর প্রভাবে শুষ্ক আবহাওয়ার বদলে সেখানে আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে।
  3. দাবানলের সৃষ্টি: আমাজন নদী অববাহিকা, মধ্য আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে বলে দাবানলের সৃষ্টি হয়।
  4. খরার প্রাদুর্ভাব: এল নিনোর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সম্পর্ক রয়েছে বলে আবহবিদগণ মনে করেন। তাই যে বছরগুলিতে এল নিনো হয় সেই বছরগুলিতে ভারতে খরা দেখা দেয়।
  5. প্রবাল কীটের উপর প্রভাব: এল নিনোর প্রভাবে মধ্য ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে অধিকাংশ প্রবাল কীটের মৃত্যু হয়।
11. লা নিনা বলতে কী বোঝ ? এর প্রভাব লেখো।
উত্তর – লা নিনা: স্পেনীয় শব্দ ‘লা নিনা’র ইংরেজি অর্থ ‘The little girl’, বাংলায় ‘ছোট্টো মেয়ে’, যা El Nino (The little boy)-র ঠিক বিপরীত। প্রকৃতপক্ষে, ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বভাগে উন্নতা হ্রাসের মাধ্যমে এল নিনো পর্ব শেষ হলে মহাসাগরটির উভয় পার্শ্বেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। এইসময় কোনো কোনো বছর পূর্ব প্রান্তে গভীর উচ্চচাপ ও শান্ত আবহাওয়া এবং পশ্চিম প্রান্তে গভীর নিম্নচাপ ও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এরকম এল নিনোর ঠিক বিপরীত বা শীতল পর্যায়টিকে বলা হয় লা নিনা।
লা নিনার প্রভাব
  1. প্রবল বৃষ্টিপাত: লা নিনার প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমভাগ-সহ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়।
  2. খরার প্রাদুর্ভাব: দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে লা নিনার প্রভাবে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  3. শুষ্ক আবহাওয়া: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমভাগে লা নিনার প্রভাবে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে।
  4. শীতের তীব্রতা: লা নিনার প্রভাবে কানাডায় শীতের তীব্রতা বাড়ে এবং প্রচুর তুষারপাত হয়।
  5. ঘূর্ণবাতের সংখ্যা: লা নিনার প্রভাবে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সংখ্যা বাড়ে।
12. কী কারণে বায়ুমণ্ডল উম্ন হয়?
উত্তর – বায়ুমণ্ডল উয় হওয়ার কারণ : বায়ুমণ্ডলের তাপের প্রধান উৎস সূর্য। সূর্যের তাপ ও ভিন্ন আরও কারণে বায়ুমণ্ডল উম্ন হয়। এই কারণগুলি হল—
  1. ইনসোলেশন: ইনসোলেশনের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের জলভাগ ও স্থলভাগ উত্তপ্ত হয় এবং উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে বায়বীয় কণাগুলিও উত্তপ্ত হয়।
  2. ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ: ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরণের প্রভাবে নির্গত উত্তাপও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে।
  3. ওজোনোস্ফিয়ারের উপস্থিতি: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশের ওজোনোস্ফিয়ারে ওজোন কর্তৃক সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির শোষণের ফলেও বায়ুমণ্ডল উয় হয়।
  4. তেজস্ক্রিয় পদার্থ: ভূপৃষ্ঠ থেকে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ বিকিরণের ফলে বায়ুমণ্ডল উম্ন হয়।
এ ছাড়া, (5) আগ্নেয়গিরি, (6) প্রস্রবণ প্রভৃতির মাধ্যমে নির্গত ভূগর্ভের তাপ, (7) শিলার রাসায়নিক আবহবিকার, (৪) প্রাণীদেহ থেকে নির্গত তাপ প্রভৃতি
13. পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুর উয়তার কী কী বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় ?
উত্তর – পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুর উন্নতার বৈশিষ্ট্য: পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুর উন্নতার কতকগুলি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. অঞ্চলভেদে উন্নতার পার্থক্য: নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর উন্নতা সবচেয়ে বেশি এবং মেরু অঞ্চলে উন্নতা সবচেয়ে কম।
  2. অঞ্চলভেদে উন্নতার প্রসর: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর উয়তা প্রায় সমান থাকে, কিন্তু মেরু অঞ্চলে শীতকাল ও গ্রীষ্মকালের মধ্যে উন্নতার পার্থক্য খুব বেশি।
  3. পৃথিবীর বার্ষিক গতির প্রভাব: পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ গোলার্ধে এবং জুলাই মাসে উত্তর গোলার্ধে উয়তা বেশি হয়।
  4. উচ্চতার তারতম্য: উচ্চতার তারতম্যের জন্য বায়ুর উন্নতার তারতম্য ঘটে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে প্রতি 1 কিমি উচ্চতায় প্রায় 6.4°সে হারে উন্নতা কমে যায়।
  5. উঘ্ন ও শীতল স্রোত প্রবাহের প্রভাব: উয় সমুদ্রস্রোতসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ুর উন্নতা বেশি এবং শীতল সমুদ্রস্রোতসংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুর উন্নতা কম হয়।
  6. উয় ও শীতল বায়ুপ্রবাহের প্রভাব: কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে উম্ন বায়ু প্রবাহিত হলে স্থানটির উন্নতা বৃদ্ধি পায় এবং শীতল বায়ু প্রবাহিত হলে উয়তা হ্রাস পায়।
14. বায়ুর উন্নতা পরিমাপ করা হয় কীভাবে?
উত্তর – বায়ুর উন্নতা পরিমাপের পদ্ধতি: বায়ুর উন্নতা পরিমাপ করা হয় থার্মোমিটার বা তাপমান যন্ত্রের সাহায্যে। এই তাপমান যন্ত্রে ফারেনহাইট স্কেল এবং সেলসিয়াস স্কেল—উভয় পদ্ধতিতেই উন্নতা পরিমাপ করা যায়। ফারেনহাইট থার্মোমিটারের হিমাঙ্ক 32°ফা এবং স্ফুটনাঙ্ক 212°ফা। সেলসিয়াস থার্মোমিটারের হিমাঙ্ক 0°সে এবং স্ফুটনাঙ্ক 100°সে। দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উন্নতা পরিমাপ করার জন্য গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। কোনো দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন উন্নতা থেকে ওই দিনের গড় উন্নতা নির্ধারণ করা যায়। একইভাবে, 30/31 দিনের গড় উন্নতা থেকে মাসের গড় উন্নতা এবং 12 মাসের গড় উন্নতা থেকে বছরের গড় উন্নতা নির্ধারণ করা যায়।
15. সমোয়রেখা কাকে বলে ও এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – সংজ্ঞা: ভূপৃষ্ঠের একই তাপমাত্রাবিশিষ্ট স্থানগুলিকে মানচিত্রে যে রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমোয়রেখা বলে। সমোয়রেখা অঙ্কনের সময় প্রতিটি স্থানের তাপমাত্রাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উয়তায় পরিবর্তিত করা হয়। এজন্য উঁচুতে অবস্থিত স্থানগুলির উন্নতার সঙ্গে প্রতি হাজার মিটার উচ্চতায় 6.4°সে হারে উন্নতা যোগ করা হয়।
সমোস্লরেখার বৈশিষ্ট্য: (1) একই অক্ষাংশ বরাবর সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল প্রায় একইরকম হয় বলে সমোয়রেখাগুলি সাধারণত অক্ষরেখার সমান্তরালে বিস্তৃত হয়। (2) নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে বলে সমোয়রেখার মানও ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। (3) সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রসারিত সমোয়রেখাগুলি সাধারণত একে অপরের সমান্তরালে এবং স্থলভাগের ওপর খানিকটা এঁকেবেঁকে বিস্তৃত হয়। (4) উন্নতম ও শীতলতম মাসের তাপমাত্রা বোঝাতে মানচিত্রে সাধারণত জুলাই ও জানুয়ারি মাসের সমোয়রেখা আঁকা হয়।
16. বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – স্বাভাবিক ধারণা : বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ারে ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তাপমাত্রা হ্রাস পায় (প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় প্রায় 6.4 °সে হারে)। তাপমাত্রার এই হ্রাসকে তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাসের হার (normal lapse rate of temperature) বলা হয় ।
বিপরীত ধারণা : কিন্তু কোনো কোনো সময় উচ্চতা বাড়লেও উন্নতা না কমে বরং বেড়ে যায়।
কারণ : সাধারণত পার্বত্য উপত্যকার শান্ত মেঘমুক্ত রাতে পর্বতের ওপর শক্তির প্রভাবে পর্বতের ঢাল বরাবর নীচের উপত্যকায় নেমে আসে। (এই অংশের বায়ু দ্রুত তাপ বিকিরণ করে খুব ঠান্ডা ও ভারী হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ বায়ুকে বলা হয় ক্যাটাবেটিক বায়ু)। অন্যদিকে, সারাদিন ধরে উগ্ন হওয়া পর্বত পাদদেশের বায়ু হালকা হয়ে উপত্যকার ঢাল বেয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। (এই বায়ুকে বলা হয় অ্যানাবেটিক বায়ু)। ফলে, উপত্যকার নীচু অংশের উত্তাপ পর্বতের ওপর অংশের তুলনায় অনেক কম হয়। একে বলা হয় বৈপরীত্য উত্তাপ।
প্রভাব: এজন্য ইউরোপের অনেক জায়গায় লোকবসতি ও কৃষিকাজ উপত্যকার নীচের দিকে না হয়ে পর্বতের ওপরের ঢালে হতে দেখা যায়।
17. তাপমণ্ডল বা তাপবলয় বলতে কী বোঝ? ভূপৃষ্ঠে কী কী তাপমণ্ডল আছে?
উত্তর – তাপমণ্ডল বা তাপবলয়: নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে সূর্যরশ্মির পতনকোণ ও সূর্যরশ্মির স্থায়িত্বকালের পার্থক্যের জন্য তাপমাত্রার তারতম্য হয়। উচ্চ অক্ষাংশে কম তাপমাত্রা এবং নিম্ন অক্ষাংশে বেশি তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। এইভাবে অক্ষাংশভেদে তাপমাত্রার তারতম্য হয় বলে অক্ষাংশ বরাবর গোলাকার পৃথিবীকে কয়েকটি সমতাপযুক্ত অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যেগুলি বলয়ের আকারে পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। সেই সমতাপযুক্ত অঞ্চলগুলিকেই বলে তাপমণ্ডল বা তাপবলয়।
তাপমণ্ডলের শ্রেণিবিভাগ : ভূপৃষ্ঠে মোট পাঁচটি তাপমণ্ডল আছে, এগুলি হল— (1) উয়মণ্ডল (0°-23½° উ. ও দ.), (2) উত্তর নাতিশীতোয়মণ্ডল (23½°-66½° উ.), (3) দক্ষিণ নাতিশীতোয়মণ্ডল (23½°-66½°দ.), (4) উত্তর হিমমণ্ডল (66½°-90° উ.) এবং (5) দক্ষিণ হিমমণ্ডল (66½°-90°.) ।
Topic-B-র দীর্ঘ উত্তরধর্মী 4 নং প্রশ্নের উত্তরের চিত্রটি দ্যাখো।
18. উয়ুমণ্ডল সৃষ্টির কারণ নির্দেশ করো।
উত্তর –উয়মণ্ডল সৃষ্টির কারণ : নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 23½° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থান অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল উয়ুমণ্ডল নামে পরিচিত। এই উয়মণ্ডল সৃষ্টির কারণগুলি হল—
  1. সূর্যরশ্মির পতনকোণের পার্থক্য: এখানকার প্রতিটি স্থানে বছরে অন্তত দু-দিন মধ্যাহ্নে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং বছরের অন্যান্য দিনেও সূর্যরশ্মি এখানে বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। প্রকৃতপক্ষে এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মির পতনকোণ 43°-90° থাকায় তাপীয় ফলের পরিমাণ ভূপৃষ্ঠের অন্য যে-কোনো অঞ্চলের তুলনায় বেশি। সূর্যরশ্মি যত লম্বভাবে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় ততই সেই রশ্মি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করে এবং এর ফলে বায়ুর বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ওই রশ্মির প্রতিফলন, বিচ্ছুরণ ও শোষণ কম হয়। এজন্য সূর্যতাপে এই অঞ্চল বেশি উম্ন হয়।
  2. দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: এই অঞ্চলে সারাবছর দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি খুব কম হয়। তাই সারাবছর এই অঞ্চলে বায়ুর উন্নতা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি থাকে এবং এজন্যই এই অঞ্চলটির নাম উয়ুমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল। সারাবছর এখানকার গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় 27° সে। এজন্য 27° সমোয়রেখাকে অনেকসময় উয়মণ্ডলের সীমারেখা ধরা হয়। সেক্ষেত্রে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 30° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহও উম্নমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত হবে।
19. শীতকালে মুম্বাইয়ের রাত্রির তুলনায় দিল্লির রাত্রি অধিকতর শীতল হয় কেন?
উত্তর – শীতকালে মুম্বাইয়ের রাত্রির তুলনায় দিল্লির রাত্রি অধিকতর শীতল হওয়ার কারণ : শীতকালে মুম্বাইয়ের রাত্রির তুলনায় দিল্লির রাত্রি অধিকতর শীতল হয়। এর কারণগুলি হল—
  1. স্থলভাগ ও জলভাগের উত্তাপের পার্থক্য: স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ দেরিতে গরম হয় এবং দেরিতে ঠান্ডা হয়, অর্থাৎ স্থলভাগ দ্রুত গরম হয় এবং দ্রুত ঠান্ডা হয়। এজন্য সমুদ্রসংলগ্ন স্থানের আবহাওয়া সমভাবাপন্ন হয় এবং সমুদ্র থেকে দূরে আবহাওয়ার চরমভাব লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম এবং শীতকালে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হয়। মুম্বাই আরব সাগরের তীরে অবস্থিত কিন্তু দিল্লির অবস্থান সাগর থেকে বহুদূরে। এজন্য মুম্বাইয়ের তুলনায় দিল্লির শীতকাল অনেক তীব্র।
  2. অক্ষাংশভেদে সূর্যকিরণের পার্থক্য: মুম্বাইয়ের অক্ষাংশ 19°05’ উত্তর এবং দিল্লির অক্ষাংশ 28°42′ উত্তর। অর্থাৎ অক্ষাংশ অনুসারে মুম্বাইয়ের তুলনায় দিল্লি কিছুটা উত্তরে অবস্থিত। সূর্যের আপাতগতি অনুসারে যেহেতু এই সময় সূর্য নিরক্ষরেখার দক্ষিণে লম্বভাবে কিরণ দেয় তাই উত্তর গোলার্ধের যে স্থান নিরক্ষরেখা থেকে যত দূরে থাকে সেখানে সূর্যতাপও তত কম পাওয়া যায়। মুম্বাইয়ের তুলনায় দিল্লি কিছুটা উত্তরে অবস্থিত হওয়ায় শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই দিল্লিতে সূর্যতাপ কিছুটা কম পাওয়া যায়। তাই দিল্লির রাত্রি মুম্বাইয়ের রাত্রির তুলনায় অধিকতর শীতল হয়।
20. পৃথিবীতে তাপের অনুভূমিক বণ্টন সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – পৃথিবীতে তাপের অনুভূমিক বণ্টন : বছরের বিভিন্ন সময়ে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যের পতনকোণের পার্থক্য, অক্ষাংশের তারতম্য ইত্যাদি কারণের ওপর পৃথিবীর তাপের অনুভূমিক বণ্টন নির্ভর করে। জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে উন্নতার চরমভাব লক্ষ করা যায়। সে কারণে পৃথিবীর নানা জায়গায় এই দুটি মাসের সমোয়রেখা বিশ্লেষণ করে উয়তার অনুভূমিক বণ্টন সম্পর্কে জানতে পারা যায়। যেমন— (1) নিম্ন অক্ষাংশে গড় বার্ষিক উন্নতা সবচেয়ে বেশি এবং মেরুর দিকে সবচেয়ে কম হয়। (2) উত্তর গোলার্ধে জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। দক্ষিণ গোলার্ধে একই সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে। (3) দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় জুলাই মাসে কুমেরু মহাদেশে। এই সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। (4) উত্তর গোলার্ধে জুলাই মাসে সর্বাধিক তাপমাত্রা হয় উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে। (5) উত্তর গোলার্ধে জানুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন উয়তা পরিলক্ষিত হয় উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে, গ্রিনল্যান্ডে এবং রাশিয়ার পূর্বভাগে সাইবেরিয়ায়।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ইনসোলেশন কী?
উত্তর – ধারণা: ইংরেজিতে incoming solar radiation-কে সংক্ষেপে ইনসোলেশন (insolation) বলে। সূর্য থেকে বিকিরিত শক্তির প্রায় 200 কোটি ভাগের এক ভাগ ক্ষুদ্র আলোকতরঙ্গরূপে পৃথিবীতে এসে পৌঁছোয়। এই ক্ষুদ্র আলোকতরঙ্গকে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বা আগত সৌর বিকিরণ বা ইনসোলেশন বলে।
2. সমোয়রেখা কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের যেসকল স্থানের উয়তা এক রকম থাকে, সেই স্থানগুলিকে আবহ-মানচিত্রে যে রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, সেই রেখাকে সমোয়রেখা বলে। সমোয়রেখা আঁকার সময় যে স্থানের উচ্চতা বেশি তার তাপমাত্রাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রায় পরিবর্তিত করে তার ভিত্তিতে সমোয়রেখা আঁকা হয়।
3. কোনো স্থানের বায়ুর উন্নতার তারতম্যের যে-কোনো ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর – বায়ুর উন্নতার তারতম্য হওয়ার কারণ : বায়ুর উন্নতার তারতম্য হয় বিভিন্ন কারণে। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি কারণ হল – (1) অক্ষাংশ, (2) ভূমির উচ্চতা, (3) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন, (4) বায়ুপ্রবাহ, (5) সমুদ্রস্রোত এবং (6) ভূমির ঢাল।
4. বায়ুমণ্ডল কী কী পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয় ?
উত্তর – বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি: বায়ুমণ্ডল প্রধানত পরিবহণ, পরিচলন, বিকিরণ—এই তিনটি পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। এ ছাড়াও অ্যাডভেকশন, প্রত্যক্ষ ও প্রতিফলিত সৌর বিকিরণ শোষণ, ভূগর্ভস্থ তাপ, লীনতাপ সংযোজন, আগ্নেয়গিরি নির্গত তাপ প্রভৃতি কারণেও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়।
5. দৈনিক গড় উন্নতা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : কোনো স্থানে দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন উন্নতার যোগফলকে 2 দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায়, সেই ভাগফলই হল ওই স্থানের দৈনিক গড় উন্নতা, অর্থাৎ এটি হল দিনের সর্বোচ্চ উয়তা ও সর্বনিম্ন উন্নতার মধ্যমান। উদাহরণ: কোনো দিনের সর্বোচ্চ উন্নতা 30 °সে এবং সর্বনিম্ন উয়তা 16°সে, তবে সেখানকার গড় উয়তা হবে 30+16/2=46/2=23°সে।
6. উন্নতার প্রসর বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : কোনো স্থানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উয়তার পার্থক্যকে উয়তার প্রসর বলে। দৈনিক উয়তার প্রসর: কোনো দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উন্নতার পার্থক্যকে দৈনিক উয়তার প্রসর বলে। মাসিক উন্নতার প্রসর : একইভাবে মাসিক গড় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উন্নতার পার্থক্যকে মাসিক উন্নতার প্রসর বলে। বার্ষিক উন্নতার প্রসর : কোনো বছরের গড় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উয়তার মান দুটির পার্থক্যকে বার্ষিক উন্নতার প্রসর বলে।
7. উয়তা পরিমাপের এককগুলি কী?
উত্তর – উন্নতা পরিমাপের একক: উন্নতা পরিমাপের প্রধান এককগুলি হল— (1) ডিগ্রি সেলসিয়াস (°সে) এবং (2) ডিগ্রি ফারেনহাইট (°ফা)।
8. উয়তার নিয়ন্ত্রক বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বত্র সমান নয়। অনেকগুলি বিষয়ের ওপর পৃথিবীর নানা স্থানের তাপমাত্রা নির্ভরশীল। এইসব বিষয়গুলিকে একত্রে উয়তার নিয়ন্ত্রক বলে। উন্নতার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক: অক্ষাংশ, ভূমির উচ্চতা, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশের উন্নতার নিয়ন্ত্রক।
9. অ্যালবেডো কী? 
উত্তর – সংজ্ঞা : সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত মোট সৌর বিকিরণের শতকরা 34 ভাগ (ভিন্ন মতে 35 ভাগ) বৃহৎ তরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফিরে যায় এবং এর দ্বারা ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে পারে না। একে পৃথিবীর অ্যালবেডো বলে।
10. কার্যকরী সৌর বিকিরণ কী? 
উত্তর – সংজ্ঞা : পৃথিবীতে আগত সৌর বিকিরণের প্রায় 34 শতাংশ (ভিন্ন মতে 35 শতাংশ) ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। বাকি 66 শতাংেশর (ভিন্ন মতে 65 শতাংশ) মধ্যে 15 শতাংশ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান, যেমন জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি প্রত্যক্ষভাবে শোষণ করে নেয় এবং 51 শতাংশ ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছোয় ও ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। সুতরাং, পৃথিবীতে আগত সৌর বিকিরণের শতকরা মাত্র (15+51) 66 ভাগের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়। তাই এই 66 শতাংশই হল কার্যকরী সৌর বিকিরণ।
11. সৌর ধ্রুবক বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বর্হিপ্রান্ত প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ও নির্দিষ্ট সময়ে সূর্য থেকে যে পরিমাণ বিকিরিত শক্তি গ্রহণ করে, তাকে সৌর ধ্রুবক বলে। বৈশিষ্ট্য: সৌর ধ্রুবকের পরিমাপ ল্যাঙলেতে প্রকাশ করা হয়। 1 ল্যাঙলে = প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে 1 ক্যালোরি। কিন্তু প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে প্রতি মিনিটে 1.94 ল্যাঙলে থেকে 2.04 ল্যাঙলে পর্যন্ত বিকিরণ মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সুতরাং সঠিক অর্থে ‘সৌর ধ্রুবক’ কোনো ধ্রুবক নয়।
12. সৌরকলঙ্ক কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: সূর্য একটি জ্বলন্ত গ্যাসীয়পিণ্ড। পৃথিবী থেকে মাঝে মাঝে এই সূর্যপৃষ্ঠে কিছু কালো দাগ দেখা যায়। সেই কালো দাগগুলিকেই বলে সৌরকলঙ্ক। সৌরকলঙ্ক দেখা যাওয়ার কারণ : সূর্যের অভ্যন্তরের উন্নতা প্রায় 1.5 কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পৃষ্ঠদেশের উয়তা প্রায় 6000° সেলসিয়াস। এজন্য ওই প্রচণ্ড উত্তপ্ত অভ্যন্তর থেকে অনবরত উত্তপ্ত গ্যাসের স্রোত বাইরের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে যেসব জায়গায় সূর্যের চুম্বকীয় ক্ষেত্র খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে, সেখানে ওই বহির্মুখী উত্তপ্ত গ্যাসের স্রোত বাধা পায়। ফলে সেখানে উত্তাপ কিছুটা কমে যায় এবং ওই কম উত্তাপের জায়গাগুলিই পৃথিবী থেকে কালো দেখায়। যাদের সৌরকলঙ্ক নামে অভিহিত করা হয়।
13. অ্যালবেডোর 34% সৌরকিরণ কার মাধ্যমে, কত পরিমাণে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়?
উত্তর – পৃথিবীর অ্যালবেডোর বিভাজন: পৃথিবীর 34 শতাংশ অ্যালবেডোর মধ্যে 25 শতাংশ মেঘপুঞ্জ থেকে, 7 শতাংশ বায়ুমণ্ডল থেকে এবং 2 শতাংশ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়।
14. পৃথিবীর উত্তাপের সমতা কীভাবে বজায় থাকে?
উত্তর – পৃথিবীর উত্তাপের সমতা বজায় থাকার পদ্ধতি: সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত সৌররশ্মির বা সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের 34% ( ভিন্ন মতে 35% ) পৃথিবীকে উত্তপ্ত না করেই মহাশূন্যে ফিরে যায়। বাকি 66% (ভিন্ন মতে 65%) রশ্মি বা কার্যকারী সৌরবিকিরণ পৃথিবীকে ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে উত্তপ্ত করলেও রাতের বেলা পুনরায় দীর্ঘ তরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধি হয় না ও পৃথিবীতে উত্তাপের সমতা বজায় থাকে।
15. এল নিনো কী ?
উত্তর – সংজ্ঞা : দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে পেরু ও ইকুয়েডরের উপকূলে কোনো কোনো বছর ক্রিসমাসের সময় শীতল পেরু স্রোতের পরিবর্তে যে দুর্বল প্রকৃতির উয় সমুদ্রস্রোতের আবির্ভাব ঘটে, সেই ঘটনাকে ‘এল নিনো’ বলে।
বৈশিষ্ট্য: এল নিনোর প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক গোলযোগ দেখা যায়।
16. পৃথিবীর উয়মণ্ডল কোনটি?
উত্তর – পৃথিবীর উন্নমণ্ডল: পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে 23½° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যের অংশটি উয়ুমণ্ডলের অন্তর্গত। বৈশিষ্ট্য: এখানকার প্রত্যেকটি স্থানে বছরে অন্তত দু-দিন মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং বছরের অন্যান্য দিনেও সূর্যরশ্মি এখানে বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। তাই এই অঞ্চলে সারাবছর বায়ুর উন্নতা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি থাকে। এখানকার গড় উয়তা 27°সে।
17. নাতিশীতোয়মণ্ডল কোনটি?
উত্তর – নাতিশীতোয়মণ্ডল : পৃথিবীর 23½°উ. ও দ. থেকে 66½° উ. ও দ. পর্যন্ত অংশকে নাতিশীতোয়মণ্ডল বলে। এখানকার গড় তাপমাত্রা ০°সে-27°সে-এর মধ্যে। বৈশিষ্ট্য : এই অংশকে উত্তর গোলার্ধে উত্তর নাতিশীতোয়মণ্ডল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ নাতিশীতোয়মণ্ডল বলা হয়। আবার এই অংশকে উন্ন নাতিশীতোয়মণ্ডলও শীতল নাতিশীতোয়মণ্ডল—এই দুই ভাগেও ভাগ করা হয়।
18. পৃথিবীর কোন্ অংশটি হিমমণ্ডল ?
● পৃথিবীর হিমমণ্ডল : উভয় গোলার্ধে 66½° উ. ও দ. থেকে 90° উ. ও দ. পর্যন্ত অংশ হিমমণ্ডলের অন্তর্গত। বৈশিষ্ট্য: এই অংশের গড় উন্নতা 0°সে-এর কম থাকে। এখানে ঋতুপরিবর্তন তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
19. তাপ বিষুবরেখা কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : কোনো নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিটি দ্রাঘিমারেখায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ উন্নতাকে মানচিত্রে বসিয়ে যোগ করলে যে রেখা সৃষ্টি হয়, সেই রেখাকে তাপ বিষুবরেখা বলে। বৈশিষ্ট্য : যেহেতু নিরক্ষরেখা বরাবর উন্নতা সর্বাধিক হয়, তাই তাপ বিষুবরেখাও প্রায় নিরক্ষরেখা বরাবর প্রসারিত হয়। তবে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সময় এই রেখাটিও সামান্য উত্তর বা দক্ষিণে সরে যায়।
20. সিক্সের লঘিষ্ঠ ও গরিষ্ঠ থার্মোমিটার বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : সিক্সের লঘিষ্ঠ এবং গরিষ্ঠ থার্মোমিটারের সাহায্যে দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং দিনের, মাসের, বছরের গড় তাপমাত্রা ও তাপমাত্রার প্রসার নির্ণয় করা যায়। আবিষ্কার : বৈজ্ঞানিক জেমস সিক্স এই থার্মোমিটারটি তৈরি করেন।
21. গ্রিনহাউস প্রভাব কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন প্রকার গ্রিনহাউস গ্যাসের উপস্থিতির জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে। গ্রিনহাউস গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব: বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন প্রভৃতি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত দীর্ঘ তরঙ্গের পার্থিব রশ্মিগুলিকে শোষণ করে এবং তারই প্রভাবে নিম্ন বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
22. কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখো।
উত্তর – গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম: কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাস হল – (1) কার্বন ডাইঅক্সাইড, (2) মিথেন, (3) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, (4) কার্বন মনোক্সাইড, (5) নাইট্রাস অক্সাইড, (6) জলীয় বাষ্প প্রভৃতি। এর মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রিনহাউস গ্যাস।
23. বিকিরণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণী: যে পদ্ধতিতে কোনো মাধ্যম ছাড়াই বা মাধ্যম থাকলেও তাকে উত্তপ্ত না করে তাপ এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে চলে যায়, সেই পদদ্ধতিকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে আসা সূর্যতাপে উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ দীর্ঘ তরঙ্গরূপে তাপ বিকিরণ করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। (2) মেঘহীন পরিষ্কার আকাশে তাপ বিকিরণ দ্রুত হয়।
24. পরিবহণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: যে পদ্ধতিতে কোনো পদার্থের উয়তর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ সঞ্চালিত হয় কিন্তু পদার্থের অণুগুলি স্থান পরিবর্তন করে না, সেই পদ্ধতিকে পরিবহণ পদ্ধতি বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) এই প্রক্রিয়ায় উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে ক্রমান্বয়ে ওপরের বায়ুস্তরে তাপ সঞ্চালিত হয়। (2) পরিবহণ প্রক্রিয়া মূলত দিনের বেলায় ঘটে থাকে।
25. পরিচলন পদ্ধতি বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণী: ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন উম্ন বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং চারপাশের শীতল ভারী বায়ু ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে এসে উম্ন ও হালকা হয়ে পুনরায় ওপরে উঠে যায়। এইভাবে বায়ুর উল্লম্ব সঞ্চালন তথা চক্রাকার আবর্তনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে পরিচলন পদ্ধতি বলে। বৈশিষ্ট্য: পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় এই প্রক্রিয়া নিরক্ষীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
26. অ্যাডভেকশন কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে অনুভূমিকভাবে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে উন্ন অঞ্চল থেকে শীতল অঞ্চলের দিকে তাপ সঞ্চালিত হয়। এই পদ্ধতিকে অ্যাডভেকশন বলে। একইভাবে শীতল অঞ্চলের বায়ু উস্ন অঞ্চলে এলে সেই অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে যায়। বৈশিষ্ট্য: এই পদ্ধতির মাধ্যমে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে তাপ পরিবাহিত হয়ে থাকে।
27. কলকাতা থেকে লন্ডনের উন্নতা কম হয় কেন?
উত্তর – কলকাতা থেকে লন্ডনের উন্নতা কম হওয়ার কারণ: কলকাতার অক্ষাংশগত অবস্থান 22°34′ উত্তর এবং লন্ডনের অক্ষাংশগত অবস্থান 51°30´ উত্তর। লন্ডন কলকাতা শহরের তুলনায় উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ায় লন্ডনে কলকাতার তুলনায় তির্যকভাবে সূর্যরশ্মি পতিত হয়। সেই কারণে লন্ডনের উন্নতা কলকাতার উম্নতার তুলনায় কম হয়।
28. তাপমাত্রার প্রসরের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – তাপমাত্রা প্রসরের বৈশিষ্ট্য: তাপমাত্রার প্রসরের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (1) নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর তাপমাত্রার প্রসর সবচেয়ে কম। (2) উচ্চ অক্ষাংশে তাপমাত্রার প্রসর সবচেয়ে বেশি। (3) একই অক্ষাংশে জলভাগের ওপর তাপমাত্রার প্রসর কম কিন্তু স্থলভাগের ওপর তাপমাত্রার প্রসর বেশি হয়।
29. গ্রীষ্মকালে সমুদ্রসংলগ্ন মুম্বাইয়ের তুলনায় দিল্লির উন্নতা বেশি কেন হয়?
উত্তর – গ্রীষ্মকালে মুম্বাইয়ের তুলনায় দিল্লির গ্রীষ্মকাল উগ্ন হওয়ার কারণ: জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত গরম ও দ্রুত ঠান্ডা হয়, অর্থাৎ জলভাগ দেরিতে গরম ও দেরিতে ঠান্ডা হয়। এজন্য সমুদ্রোপকূলবর্তী স্থানের জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয় এবং সমুদ্র থেকে যতই দেশের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করা যায় জলবায়ুর চরমভাব তত বাড়তে থাকে। মুম্বাই সমুদ্রের ধারে অবস্থিত এবং দিল্লি সমুদ্র থেকে বহুদূরে ভারতের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত। এই কারণে গ্রীষ্মকালে সমুদ্রসংলগ্ন মুম্বাইয়ের তুলনায় দেশের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত দিল্লিতে উন্নতার চরমভাব বেশি লক্ষ করা যায়, অর্থাৎ উন্নতা বেশি হয়।
30. ‘উয়তার স্বাভাবিক হ্রাস হার’ বা ‘উয়তা হ্রাসের স্বাভাবিক হার’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – উন্নতার স্বাভাবিক হ্রাসের হার: সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উয় হয় এবং তারপর ওই উম্ন ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকির্ণ হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উম্ন করে। এজন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে উয়তা হ্রাস পায়। অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উয়তার এই হ্রাসকে উন্নতার স্বাভাবিক হ্রাস হার (normal lapse rate of temperature) বলা হয়। উন্নতার স্বাভাবিক হ্রাসের হার প্রতি 1000 মিটার বা 1 কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় 6.4°সে। উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উন্নতা থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উয়তার স্বাভাবিক হ্রাস হার কেবল বায়ুমণ্ডলের হ্রাস পায় বলেই উচ্চস্থান শীতল হয় এবং সুউচ্চ পর্বতশিখর তুষারাবৃত ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে পরিলক্ষিত হয়।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা হল—
(a) 10°সে
(b) 15°সে
(c) 20°সে
(d) 5°সে
উত্তর – (b) 15°সে
2. পৃথিবীর অ্যালবেডোর পরিমাণ প্রায় —
(a) 32%
(b) 33%
(c) 34%
(d) 38%
উত্তর – (c) 34%
3. যে পরিমাণ সৌরশক্তি বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠ সরাসরি মহাশূন্যে ফিরিয়ে দেয়, তা হল-
(a) 30%
(b) 32%
(c) 64%
(d) 34%
উত্তর – (d) 34%
4. নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর দিকে যে সমোয়রেখাকে উয়ুমণ্ডলের সীমারেখা ধরা হয়, তা হল –
(a) 27° সে
(b) 30° সে
(c) 32°সে
(d) 35°সে
উত্তর – (a) 27° সে
5. পৃথিবী আগত সূর্যরশ্মির প্রত্যক্ষভাবে শোষণ করে-
(a) 19 ভাগ
(b) 47 ভাগ
(c) 23 ভাগ
(d) 5 ভাগ
উত্তর – (a) 19 ভাগ
6. পৃথিবীর সৌর ধ্রুবকের পরিমাণ প্রতি মিনিটে—
(a) 19.5 ক্যালোরি/বর্গসেমি
(b) 1.94 ক্যালোরি/বর্গসেমি
(c) 2.5 ক্যালোরি/বর্গসেমি
(d) 20.5 ক্যালোরি/বর্গসেমি
উত্তর – (b) 1.94 ক্যালোরি/বর্গসেমি
7. সমগ্র সৌরশক্তির মধ্যে কার্যকরী সৌরশক্তি হল –
(a) 60%
(b) 66%
(c) 56%
(d) 76%
উত্তর – (b) 66%
৪. গ্রিনহাউস এফেক্ট কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন-
(a) জে. ফোরিয়ার
(b) ডেভিস
(c) কোপেন
(d) ফারমেন
উত্তর – (a) জে. ফোরিয়ার
9. সারাদিনে সবচেয়ে কম উন্নতা থাকে—
(a) দুপুরে
(b) বিকালে
(c) সন্ধ্যাবেলা
(d) ভোরবেলা
উত্তর – (d) ভোরবেলা
10. সূর্যের আলো লম্বভাবে পড়লে তাপমাত্রা –
(a) বেড়ে যায়
(b) কমে যায়
(c) একই থাকে
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) বেড়ে যায়
11. ভূপৃষ্ঠের সমান উয়তাবিশিষ্ট স্থানগুলিকে যুক্ত করে যে রেখা, তাকে বলে—
(a) সমোন্নতিরেখা
(b) সমোয়রেখা
(c) সমপ্রেষরেখা
(d) সমআর্দ্ররেখা
উত্তর – (b) সমোয়রেখা
12. সমোয়রেখাগুলির বক্রতা বেশি—
(a) উত্তর গোলার্ধে
(b) দক্ষিণ গোলার্ধে
(c) পূর্ব গোলার্ধে
(d) পশ্চিম গোলার্ধে
উত্তর – (a) উত্তর গোলার্ধে
13. ভূপৃষ্ঠ সূর্য থেকে সর্বাধিক তাপ শোষণ করে-
(a) সকালে
(b) দুপুরে
(c) বিকেলে
(d) সন্ধ্যায়
উত্তর – (b) দুপুরে
14. বার্ষিক উয়তার সর্বনিম্ন প্রসর পরিলক্ষিত হয় যে জলবায়ু অঞ্চলে–
(a) নিরক্ষীয়
(b) মৌসুমি
(c) উম্ন মরু
(d) ভূমধ্যসাগরীয়
উত্তর – (a) নিরক্ষীয়
15. বৈপরীত্য উত্তাপের জন্য ভোরবেলায় উপত্যকাগুলি—
(a) ধোঁয়ায় ঢেকে যায়
(b) কুয়াশায় ঢেকে যায়
(c) বরফে ঢেকে যায়
(d) মেঘে ঢেকে যায়
উত্তর – (d) মেঘে ঢেকে যায়
16. দিল্লির তুলনায় দার্জিলিঙের তাপমাত্রা—
(a) যথেষ্ট বেশি
(b) বেশ কম
(c) একই থাকে
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) বেশ কম
17. সূর্যরশ্মি পৃথিবীতে আসে—
(a) বৃহৎ তরঙ্গরূপে
(b) ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে
(c) মাঝারি তরঙ্গরূপে
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে
18. সমোয়রেখাগুলি বিস্তৃত থাকে—
(a) উত্তর-দক্ষিণে
(b) পূর্ব-পশ্চিমে
(c) দক্ষিণ-পশ্চিমে
(d) উত্তর-পূর্বে
উত্তর – (b) পূর্ব-পশ্চিমে
19. প্রতি 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর উয়তা হ্রাসের হার –
(a) 4.6°সে
(b) 10°সে
(c) 6.4°সে
(d) 3.9°সে
উত্তর – (c) 6.4°সে
20. প্রদত্ত কোন্‌টি বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি নয়? –
(a) পরিবহণ
(b) অধঃক্ষেপণ
(c) বিকিরণ
(d) পরিচলন
উত্তর – (b) অধঃক্ষেপণ
21. বৈপরীত্য উন্নতা সৃষ্টি হয় —
(a) সমভূমিতে
(b) মরুভূমি অঞ্চলে
(c) পার্বত্য অঞ্চলে
(d) উপকূলীয় অঞ্চলে
উত্তর – (c) পার্বত্য অঞ্চলে
22. সূর্যের মোট শক্তির 200 কোটি ভাগের কত ভাগ পৃথিবীতে এসে পৌঁছোয় ?
(a) 1 ভাগ
(b) 2 ভাগ
(c) 3 ভাগ
(d) 4 ভাগ
উত্তর – (a) 1 ভাগ
23. সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে আসা রশ্মির যে অংশ পুনরায় মহাশূন্যে ফেরত যায়, তাকে কী বলে? —
(a) অ্যালবেডো
(b) ইনসোলেশন
(c) বিকিরণ
(d) পরিচলন
উত্তর – (a) অ্যালবেডো
24. বায়ুমণ্ডল সর্বাধিক উয় হয় যে পদ্ধতিতে সেটি হল —
(a) পরিচলন
(b) পরিবহণ
(c) বিকিরণ
(d) অ্যাডভেকশন
উত্তর – (c) বিকিরণ
25. গ্রিনল্যান্ডের অ্যালবেডোর পরিমাণ —
(a) 35%
(b) 50%
(c) 60%
(d) 75%
উত্তর – (d) 75%
26. অ্যালবেডোর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয় —
(a) বালির ওপর
(b) তুষারক্ষেত্রে
(c) বনভূমিতে
(d) জলভাগের ওপর
উত্তর – (b) তুষারক্ষেত্রে
27. হিমালয় পর্বতের কোন্ ঢালে গড় উন্নতা বেশি? —
(a) উত্তরঢালে
(b) দক্ষিণঢালে
(c) পূর্বঢালে
(d) পশ্চিমঢালে
উত্তর – (b) দক্ষিণঢালে
28. ডিগ্রি ফারেনহাইট স্কেলে হিমাঙ্ক ধরা হয় –
(a) 32° ফারেনহাইট
(b) 35° ফারেনহাইট
(c) 27° ফারেনহাইট
(d) 23° ফারেনহাইট
উত্তর – (a) 32° ফারেনহাইট
29. বায়ুর উয়তা কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়? —
(a) ব্যারোমিটার
(b) অ্যানিমোমিটার
(c) থার্মোমিটার
(d) ক্যালোরিমিটার
উত্তর – (c) থার্মোমিটার
30. বৈপরীত্য উত্তাপের নেমে আসা বায়ু হল —
(a) ক্যাটাবেটিক বায়ু
(b) অ্যানাবেটিক বায়ু
(c) আয়ন বায়ু
(d) মেরু বায়ু
উত্তর – (a) ক্যাটাবেটিক বায়ু
31. এল নিনোর আগমন ঘটে—
(a) বঙ্গোপসাগরে
(b) ভারত মহাসাগরে
(c) প্রশান্ত মহাসাগরে
(d) আটলান্টিক মহাসাগরে
উত্তর – (c) প্রশান্ত মহাসাগরে
32. ‘কিয়োটো প্রোটোকল’ চুক্তিটির দ্বারা কোন্ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল? —
(a) বিশ্ব উয়ায়ন
(b) অ্যাসিড বৃষ্টি
(c) বৃক্ষরোপণ
(d) পারমাণবিক শক্তি
উত্তর – (a) বিশ্ব উয়ায়ন
33. মোট সৌর বিকিরণের যতটা অংশ ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে —
(a) 34%
(b) 63%
(c) 66%
(d) 70%
উত্তর – (c) 66%
34. পচা জৈব আবর্জনা থেকে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসটি হল—
(a) কার্বন ডাইঅক্সাইড
(b) মিথেন
(c) ওজোন
(d) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন
উত্তর – (b) মিথেন

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. সূর্যরশ্মির যতটা অংশ ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলকে উয় করে, তাকে ………. বলে।
উত্তর – কার্যকরী সৌরশক্তি
2. ……… অক্ষরেখায় সূর্যরশ্মি সারাবছর লম্বভাবে পড়ে।
উত্তর –
3. বায়ুর উন্নতার তারতম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ……….।
উত্তর – অক্ষাংশ
4. 30° অক্ষাংশের তুলনায় 40° অক্ষাংশের উন্নতা ……….।
উত্তর – কম
5. জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ থেকে সূর্যরশ্মি ……… বিচ্ছুরিত হয়।
উত্তর – কম
6. উয়তার যে হ্রাসবৃদ্ধি আমরা ত্বকের মাধ্যমে অনুভব করতে পারি, তাকে বলে ……… উয়তা।
উত্তর – ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য
7. ঊর্ধ্বাকাশে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হলে ……….. ত্যাগ করে।
উত্তর – লীনতাপ
৪. সমোয়রেখাগুলি প্রায় ……….. রেখার সমান্তরাল হয়।
উত্তর – অক্ষ
9. পৃথিবীতে সৌর বিকিরণের ………. % হল কার্যকরী সৌর বিকিরণ।
উত্তর – 66
10. ভূপৃষ্ঠে ………. টি তাপমণ্ডল আছে।
উত্তর – 5

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *