WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 3 বারিমণ্ডল
West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 3 বারিমণ্ডল
West Bengal Board 10th Geography Solutions
TOPIC – A সমুদ্রস্রোত
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- বারিমণ্ডল : পৃথিবীর সমগ্র জলরাশিকে একত্রে বারিমণ্ডল বলে। পৃথিবীর সাগর-মহাসাগর, হ্রদ, নদী, খালবিল, পুকুর অর্থাৎ সমস্ত জলাশয় বারিমণ্ডলের অন্তর্গত।
- সমুদ্রস্রোত : সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিক বরাবর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রজলের এই প্রবাহকেই বলে সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents)।
- অন্তঃস্রোত : মেরুপ্রদেশের শীতল এবং ভারী সমুদ্রজল সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে উয়মণ্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়, একে অন্তঃস্রোত বলে।
- বহিঃস্রোত : উম্নমণ্ডল থেকে প্রবাহিত স্রোত উয় এবং হালকা হওয়ায় সমুদ্রের উপরিপৃষ্ঠ দিয়ে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যায়, এই স্রোতের নাম বহিঃস্রোত বা পৃষ্ঠস্রোত।
- সমুদ্রতরঙ্গ : সমুদ্রে যখন ঢেউ ওঠে তখন জলরাশি কোনো দিকে প্রবাহিত না হয়ে এক জায়গাতেই ওঠানামা করে, এই ওঠানামাকে সমুদ্রতরঙ্গ (Waves) বলে। অন্যভাবে বলা যায়, সমুদ্রের জলকণাগুলি বৃত্তাকার কক্ষপথে উল্লম্বভাবে ঘুরতে থাকলে জলের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়। সমুদ্রজলের এই আলোড়নকেই বলে সমুদ্রতরঙ্গ।
- সমুদ্রস্রোতের শ্রেণিবিভাগ : সমুদ্রজলের উন্নতা অনুসারে সমুদ্রস্রোতকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়— (1) উয় স্রোত এবং (2) শীতল স্রোত।
- সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ : সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণগুলি হল – (1) বায়ুপ্রবাহ, (2) পৃথিবীর আবর্তন, (3) সমুদ্রজলের উন্নতার তারতম্য, (4) সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্য, (5) সমুদ্রজলের ঘনত্বের পার্থক্য, (6) বরফের গলন, (7) উপকূলের আকৃতি, (8) ঋতুপরিবর্তন প্রভৃতি।
- সমুদ্রস্রোতের প্রভাব : প্রাকৃতিক এবং অর্থনৈতিক—উভয় ক্ষেত্রেই সমুদ্রস্রোতের গভীর প্রভাব লক্ষ করা যায়, যেমন – (1) মগ্নচড়া সৃষ্টি, (2) উপকূলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, (3) জলবায়ুর পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমুদ্রস্রোত প্রভাব বিস্তার করে।
- হিমপ্রাচীর : সমুদ্রে পাশাপাশি প্রবাহিত দুটি বিপরীতধর্মী সমুদ্রস্রোতের মধ্যে যে বিভাজন রেখা দেখা যায়, তাকে হিমপ্রাচীর বলে। যেমন—উত্তরমুখী উয় উপসাগরীয় স্রোত ও দক্ষিণমুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মধ্যে সৃষ্ট হিমপ্রাচীর।
- হিমশৈল : সমুদ্রে ভাসমান নিমজ্জিত বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে । হিমশৈলের মোট আয়তনের 1/10 ভাগ অংশ জলের ওপরে থাকে।
- মগ্নচড়া : উয় ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের সাথে বয়ে আসা হিমশৈলগুলি উয় স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায়। এর ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা নুড়ি, বালি, পলি, কাঁকর জমা হয়ে যে নিমগ্ন ভূভাগ গড়ে ওঠে, তাকে মগ্নচড়া বলে।
- শৈবাল সাগর : সাধারণত মহাসাগরের মধ্যভাগের স্রোতহীন, শৈবাল বা আগাছাভরা শান্ত অংশই হল শৈবাল সাগর বা সারগাসো সি (Sargasso Sea)। উদাহরণ—আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি ব্যাখ্যা করো।
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ
উত্তর – সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণগুলি হল—
- বায়ুপ্রবাহ: নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলি সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রের ওপরের জলরাশিকে নিজের প্রবাহের দিকে চালিত করে। এইভাবে নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলি সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: যেসব স্থানে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানে পূর্ব-পশ্চিম দিকে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। আবার যেসব স্থানে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানে সমুদ্রস্রোত পশ্চিম-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
- সমুদ্রজলে উন্নতার তারতম্য: নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশি উন্নতার জন্য সমুদ্রজল বেশি উস্ন হয় এবং বাষ্পায়ন বেশি হয়। এই উন্ন জল হালকা বলে সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোতরূপে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে বয়ে যায়। জলের এই শূন্যতা পূরণের জন্য তখন মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে অন্তঃস্রোতরূপে বয়ে যায়। এভাবে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
- সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্য: সমুদ্রজলের লবণতার পরিমাণ কোথাও বেশি, কোথাও কম। কম লবণাক্ত জল হালকা বলে সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোতরূপে বেশি লবণাক্ত ভারী জলের দিকে বয়ে যায়। জলের এই শূন্যতা পূরণের জন্য তখন বেশি লবণাক্ত ভারী জল সমুদ্রের নিম্নাংশ দিয়ে অন্তঃস্রোতরূপে ওই কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে বয়ে যায়। এইভাবে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
- পৃথিবীর আবর্তন গতি: পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়। তবে এই স্রোত সোজাপথে প্রবাহিত না হয়ে ফেরেলের সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়। এভাবে নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: উপসাগরীয় স্রোত আবর্তন গতির প্রভাবে ডানদিকে বেঁকে উত্তর আটলান্টিক স্রোতের সৃষ্টি করে।
- উপকূলের আকৃতি: প্রবহমান সমুদ্রস্রোত মহাদেশের যে উপকূল প্রান্তে বাধা পায় সেখানকার গঠন বা আকৃতি অনুসারে তার গতিপথ পরিবর্তিত হয় বা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়। এভাবেও নতুন নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ : আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলের কেপ ডি সাও রোকের উপকূলে বাধা পেয়ে ব্রাজিল স্রোত নামে একটি নতুন স্রোতের সৃষ্টি করে।
- বরফের গলন: দুই মেরুসংলগ্ন সমুদ্রে বরফ যেখানে গলে যায় সেখানে জলরাশির পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পায় এবং সমুদ্রজলের লবণতা হ্রাস পায়। উভয় কারণেই ওই জলরাশি কম লবণাক্ত ও স্বল্প জলরাশি সমন্বিত অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে।
- সমুদ্রজলের ঘনত্ব: সমুদ্রজলের ঘনত্ব প্রধানত উয়তা, লবণতা ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ওপর নির্ভরশীল। সমুদ্রজলের ঘনত্ব বেশি হলে ওই জল অন্তঃপ্রবাহরূপে কম ঘনত্বযুক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়। আর কম ঘনত্বযুক্ত জল পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে বেশি ঘনত্বযুক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়।
- ঋতুভেদ: ঋতু অনুসারে সমুদ্রস্রোতের দিপরিবর্তন হয়।
উদাহরণ: ভারত মহাসাগরে প্রবাহিত মৌসুমি স্রোত গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণাবর্তে বা ডানদিকে বয়ে যায়। শীতকালে এই স্রোতটিই আবার উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঠিক বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামাবর্তে বয়ে যায়।
এগুলি ছাড়াও 9. সামুদ্রিক শৈলশিরার উপস্থিতি, 10. বাষ্পীভবন, 11. বায়ুচাপের তারতম্য প্রভৃতিও সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করে।
2. পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাব
উত্তর – পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি হল—
- মগ্নচড়া সৃষ্টি: শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উন্ন স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি সমুদ্রবক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জমতে জমতে উঁচু হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে গ্র্যান্ড ব্যাংক, জর্জেস ব্যাংক প্রভৃতি এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের কাছে ডগার্স ব্যাংক, রকফল ব্যাংক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য মগ্নচড়া।
- উপকূলের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণ: সমুদ্রস্রোত উপকূলের জলবায়ুর ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে— (1) উন্নতা: সমুদ্রস্রোত যে উপকূলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেখানকার উয়তাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণ: শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে বায়ুর উন্নতা কমে এবং উয় কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপানের পশ্চিম উপকূলে বায়ুর উন্নতা বাড়ে।
(2) বৃষ্টিপাত: উয় স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে বলে ওই বায়ুর মাধ্যমে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক বলে বৃষ্টিপাত ঘটায় না।
উদাহরণ: আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে নামিবিয়া উপকূলে এই কারণে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
(3) কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝা: যেসব অঞ্চলে উষ্ম ও শীতল স্রোতের মিলন ঘটে সেখানে উয়তার পার্থক্যের জন্য ঘনকুয়াশার সৃষ্টি হয় এবং প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা হয়। ফলে সেখানে জাহাজ বা বিমান চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ : নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল।
- জলবায়ুর পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর সমুদ্রস্রোতের সর্বাধিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। এল নিনো আবির্ভূত হলে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু-চিলি-ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরমুখী শীতল হামবোল্ড স্রোতের পরিবর্তে উত্তর দিক থেকে উয় স্রোত প্রবাহিত হয়। এর ফলে যেমন পেরু ইকুয়েডরে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়, তেমন ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমপ্রান্তে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয়। ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতেও তখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। আবার, এল নিনো অন্তর্হিত হলে যখন লা নিনার আবির্ভাব ঘটে তখন ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের দেশগুলিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হলেও পূর্বের দেশগুলিতে অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনার আবির্ভাব ঘটলে সারা পৃথিবীর জলবায়ুতেই নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এ ছাড়া বর্তমানে উয় সমুদ্রস্রোতের ওপর সৃষ্ট প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যেমন—সাইক্লোন, হ্যারিকেন, টাইফুন, উইলি উইলি প্রভৃতির সংখ্যা ও তীব্রতা অনেক বেড়েছে।
অন্যান্য প্রভাব: উল্লিখিত প্রভাবগুলি ছাড়াও উয় সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে 4. বরফমুক্ত বন্দর, 5. জাহাজ চলাচলে সুবিধা, 6. দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
3. বিভিন্ন মহাসাগরে প্রবাহিত প্রধান প্রধান সমুদ্রস্রোতের নাম লেখো ও মানচিত্র অঙ্কন করে দেখাও।
উত্তর – বিভিন্ন মহাসাগরে প্রবাহিত প্রধান সমুদ্রস্রোতসমূহ
বিভিন্ন মহাসাগরে প্রবাহিত প্রধান প্রধান স্রোতগুলির নাম মানচিত্র-সহ আলোচিত হল—
আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোতসমূহ
আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলি হল—
প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোতসমূহ
প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোতগুলি হল—
ভারত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোতসমুহ
ভারত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোতগুলি হল—
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. উয় স্রোত ও শীতল স্রোত কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – উগ্ন স্রোত: মহাসাগরগুলির ক্রান্তীয় অংশের বা উয়ুমণ্ডলের উম্ন ও হালকা জল পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে বলা হয় উম্ন স্রোত। সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে উম্ন স্রোতের আর-এক নাম হল পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোত (Surface Current)।
উদাহরণ: উপসাগরীয় স্রোত।
শীতল স্রোত: উয়মণ্ডলের জল যখন শীতল অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়, তখন সেই স্থানের শূন্যতা পূরণের জন্য মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রের নিম্নাংশ দিয়ে অন্তঃপ্রবাহরূপে উয়মণ্ডলের দিকে বয়ে যায়, তখন তাকে বলা হয় শীতল স্রোত। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে শীতল স্রোতের আর-এক নাম অন্তঃস্রোত।
উদাহরণ: ল্যাব্রাডর স্রোত।
2. জায়র বা চক্রগতি বা কুণ্ডলী কী?
উত্তর – ধারণা: লাতিন শব্দ ‘gyre’-এর অর্থ গোল বা গোলাকার পথ। তাই জায়র বলতে জলরাশির চক্রগতিকেই বোঝায়। প্রতিটি মহাসাগরেই সমুদ্রস্রোতগুলির গতিপথ অনুসরণ করলে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। বৈশিষ্ট্যটি হল জায়র (gyre) বা চক্রগতি অর্থাৎ সমুদ্রের জলরাশির চক্রাকার গতি।
উৎপত্তি: পৃথিবীব্যাপী নিয়ত বায়ুপ্রবাহের চলাচল ও পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে উৎপন্ন কোরিওলিস শক্তির ফলে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের চারপাশে সমুদ্রের বিপুল পরিমাণ জলরাশি ঘুরতে থাকে। আর এভাবেই সমুদ্রে জায়র বা চক্রগতি বা কুণ্ডলীর সৃষ্টি হয়।
3. হিমশৈল বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: ওলন্দাজ শব্দ ‘ijsberg’-এর আক্ষরিক অর্থ হল বরফের পর্বত। হিমমণ্ডলে সৃষ্ট মহাদেশীয় হিমবাহের প্রান্তভাগ বা সমুদ্র উপকূলীয় অংশ মূল হিমবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্রে বিশাল বা ক্ষুদ্রাকৃতি বরফের চাঁই হিসেবে ভাসমান থাকে, যা হিমশৈল নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য: (1) এই ধরনের বরফের চাঁই অনেকসময় বিশাল বরফের স্তূপ রূপে সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে অগ্রসর হয়। (2) সমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলের মোট আয়তনের মাত্র 1/10 ভাগ অংশ জলের ওপরে থাকে।
উদাহরণ: বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক এরূপ একটি হিমশৈলের আঘাতে সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল।
4. নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে কেন?
উত্তর – নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ: কানাডার পূর্ব উপকূলের অদূরে নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপ অবস্থিত। এই দ্বীপটির কাছে আটলান্টিকের অগভীর অংশে অনেকগুলি মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল গ্র্যান্ড ব্যাংক। এই মগ্নচড়া সৃষ্টির কারণ হল— (1) নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপটির পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত দুটি বিপরীতধর্মী স্রোত অর্থাৎ দক্ষিণমুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত এবং উত্তরমুখী উন্ন উপসাগরীয় স্রোতের মিলনের ফলেই এখানে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে। (2) সুমেরু মহাসাগরের ভাসমান হিমশৈলসমূহ শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। এগুলি নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে উয় উপসাগরীয় স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। এর ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা কাদা, বালি, পাথর প্রভৃতি সমুদ্রবক্ষে জমা হতে থাকে। বহুযুগ ধরে এইভাবে কাদা, বালি, পাথর জমা হওয়ার ফলে এখানকার সমুদ্রবক্ষে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে।
5. গ্র্যান্ড ব্যাংক মৎস্য চাষের জন্য অনুকূল কেন?
উত্তর – গ্র্যান্ড ব্যাংক মৎস্য চাষের জন্য অনুকূল হওয়ার কারণ: কানাডার পূর্ব উপকূলের অদূরে নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে আটলান্টিক মহাসাগরের অগভীর অংশে সৃষ্টি হয়েছে গ্র্যান্ড ব্যাংক মগ্নচড়া, যা মৎস্য চাষের জন্য বিখ্যাত। এই মগ্নচড়া মৎস্য চাষের জন্য অনুকূল হওয়ার কারণগুলি হল—
- বিশালতা ও গভীরতা: গ্র্যান্ড ব্যাংক মগ্নচড়াটির আয়তন প্রায় 96000 বর্গকিমি এবং এখানে জলের গভীরতা 90 মিটারের কম, যা মৎস্য চাষের জন্য অনুকূল।
- অনুকূল তাপমাত্রা: নাতিশীতোয়মণ্ডলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে সারাবছর মাছের বসবাসের উপযোগী অনুকূল তাপমাত্রা থাকে।
- প্ল্যাংকটনের প্রাচুর্য: উম্ন উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাংকটনও প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। খাদ্যের প্রাচুর্যের জন্য গ্র্যান্ড ব্যাংককে কেন্দ্র করে নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ (যেমন—কড, হেরিং, ম্যাকারেল, হ্যাডক, হ্যালিবাট প্রভৃতি) ভিড় করে। এর ফলে সমগ্র এলাকাটি মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
6. জাপানের উপকূলের কাছে মৎস্যক্ষেত্র দেখা যায় কেন?
উত্তর – জাপানের উপকূলের কাছে মৎস্যক্ষেত্র দেখা যাওয়ার কারণ: জাপানের উপকূলের কাছে মৎস্যক্ষেত্র দেখা যাওয়ার কারণগুলি হল—
- উয় ও শীতল স্রোতের মিলন: উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে জাপান অবস্থিত এবং এই দেশটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে উয় কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত এবং শীতল ওয়াশিয়ো বা কিউরাইল স্রোত। সুমেরু মহাসাগর থেকে আগত শীতল কিউরাইল স্রোতের সঙ্গে বড়ো বড়ো হিমশৈলও থাকে, যেগুলি জাপানের উপকূলের কাছাকাছি উয় কুরোশিয়ো স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। যার ফলে এখানে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়, যা মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠার জন্য আদর্শ।
- বিস্তৃত অগভীর মহীসোপান: হিমশৈলবাহিত বিভিন্ন পদার্থ, যেমন—শৈবাল, কাদা, বালি, পাথর ইত্যাদি এখানকার মহীসোপানে সঞ্চিত হতে থাকে। এইভাবে দীর্ঘকাল ধরে জমা হয়ে জাপানের উপকূলের অদূরে অনেক অগভীর মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে, যা মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠার জন্য আদর্শ।
- প্ল্যাংকটনের প্রাচুর্য: অগভীর মগ্নচড়ার জন্য এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাংকটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এজন্য জাপানের উপকূলের কাছে বিভিন্ন ধরনের মাছের ব্যাপক সমাবেশ ঘটে এবং সমগ্র এলাকাটি মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
7. ভারত মহাসাগরের গ্রীষ্মকালীন স্রোতের বর্ণনা দাও।
উত্তর – ভারত মহাসাগরের গ্রীষ্মকালীন স্রোত: ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উগ্ন স্রোত হল দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত। এই স্রোতটি নিরক্ষরেখার দক্ষিণ অংশ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে যেতে যেতে মাদাগাস্কার দ্বীপের কাছে এসে তিনটি শাখায় ভাগ হয়। এর মধ্যে যে শাখাটি উত্তর দিকে বেঁকে যায় সেটিই মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতি অনুসারে প্রবাহিত হয়। তাই এই স্রোতটির নাম মৌসুমি স্রোত। এই স্রোতটি গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণাবর্তে বা ডানদিকে বয়ে যায়। আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে (সোমালিয়ার পাশ দিয়ে) যাওয়ার সময় স্রোতটি সোমালি স্রোত নামে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। তারপর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত হিসেবে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে সুমাত্রা দ্বীপ পর্যন্ত চলে যায়। এইভাবে ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশে গ্রীষ্মকালে কেবল দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত প্রবাহিত হয়।
৪. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল সারাবছর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে কেন?
উত্তর – নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল সারাবছর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার কারণ: সাধারণত যেসব অঞ্চলে উয় ও শীতল স্রোতের মিলন হয় সেখানে উয় স্রোতের ওপর সৃষ্ট জলীয় বাষ্প শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে জমে যায়। ফলে ওই অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।নিউফাউন্ডল্যান্ডের পাশ দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে উয় উপসাগরীয় স্রোত এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত বয়ে যায়। এই দুই ভিন্নধর্মী স্রোতের মিলনে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল সারাবছর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে।
9. সমুদ্রস্রোতের নামকরণ কীভাবে হয়?
উত্তর – সমুদ্রস্রোতের নামকরণ হওয়ার পদ্ধতি: সমুদ্রস্রোতের নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমুদ্রস্রোতের নামকরণ দু-ভাবে হয়—
- প্রবাহের দিক অনুসারে: বায়ুর ক্ষেত্রে যেদিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় সেদিক অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। কিন্তু সমুদ্রস্রোতের ক্ষেত্রে সেই ধারণাটি সম্পূর্ণ বিপরীত। উদাহরণ: যে বাতাস দক্ষিণ দিক থেকে আসে, তাকে বলে দক্ষিণা বাতাস কিন্তু যে সমুদ্রস্রোত দক্ষিণ দিকে বয়ে যায়, তাকে বলে দক্ষিণা স্রোত।
- স্থলভাগের নাম অনুসারে: সমুদ্রস্রোত যে স্থলভাগের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় বা যে সাগর বা মহাসাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। উদাহরণ: ক্যারিবিয়ান উপসাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত স্রোতকে ক্যারিবিয়ান স্রোত বলা হয়। আবার, ব্রাজিলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত স্রোত ব্রাজিল স্রোত নামে পরিচিত।
10. শৈবাল সাগর কাকে বলে? উদাহরণ-সহ বোঝাও।
উত্তর – শৈবাল সাগর: সাধারণত মহাসাগরের মধ্যভাগের স্রোতহীন, শৈবাল বা আগাছাভরা শান্ত অংশকে শৈবাল সাগর বা সারগাসো সি (Sargasso sea) বলে।
উদাহরণ
- আটলান্টিক মহাসাগর: পশ্চিমে উপসাগরীয় স্রোত, উত্তরে উত্তর আটলান্টিক স্রোত, পূর্বে ক্যানারি স্রোত এবং দক্ষিণে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অংশে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশাল আয়তাকার এলাকাজুড়ে একটি জলাবর্ত বা ঘূর্ণস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এই জলাবর্তের মধ্যাংশ স্রোতবিহীন, অর্থাৎ মাঝখানে জলের কোনো প্রবাহ থাকে না। ফলে ওই স্রোতবিহীন অঞ্চলে নানারকম আগাছা, শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এজন্য ওই অংশের নাম শৈবাল সাগর।
- প্রশান্ত মহাসাগর: প্রশান্ত মহাসাগরের অভ্যন্তরভাগে ও কর্কটক্রান্তিরেখার উভয় পার্শ্বে এইরকম শৈবাল সাগর দেখা যায়।
11. লন্ডন অপেক্ষা নিউইয়র্ক নিম্ন অক্ষাংশে অবস্থিত, অথচ নিউইয়র্কে শীত বেশি—এর কারণ কী?
উত্তর – লন্ডন অপেক্ষা নিউইয়র্কে শীত বেশি হওয়ার কারণ: লন্ডনের অক্ষাংশ প্রায় 51°30´ উত্তর এবং নিউইয়র্কের অক্ষাংশ প্রায় 40°43′ উত্তর। স্বাভাবিকভাবেই লন্ডনের তুলনায় নিউইয়র্কের উয়তা বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু নিউইয়র্কে শীতের তীব্রতা লন্ডনের থেকে বেশি। এর কারণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব। নিউইয়র্কের পাশ দিয়ে সুমেরু মহাসাগর থেকে আগত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় বলে এই স্রোত নিউইয়র্কের পাশাপাশি অঞ্চলকে শীতল করে তোলে। অন্যদিকে, লন্ডনের পাশ দিয়ে উঘ্ন উত্তর আটলান্টিক স্রোত প্রবাহিত হয় বলে লন্ডনের তাপমাত্রা নিউইয়র্ক অপেক্ষা বেশি হয়।
12. সমুদ্রস্রোত কীভাবে উপকূলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে ?
উত্তর – সমুদ্রস্রোত দ্বারা উপকূলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: সমুদ্রস্রোত দ্বারা কয়েকটি উপায়ে উপকূলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয়, যথা—
- উন্নতা নিয়ন্ত্রণ: [i] উয় সমুদ্রস্রোত শীতল অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। উদাহরণ: উয় উপসাগরীয় স্রোত উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলকে উয় রাখে।
[ii] শীতল সমুদ্রস্রোত উয় অঞ্চলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। উদাহরণ: শীতল পেরু স্রোত পেরুর তাপমাত্রাকে খুব বাড়তে দেয় না।
- বৃষ্টি, বন্যা, খরা: উয় সমুদ্রস্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু বেশি জলীয় বাষ্প শোষণ করে বলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যদিকে, শীতল স্রোতযুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়। এল নিনো এবং লা নিনার প্রভাবে সন্নিহিত অংশে খরা ও বন্যা দেখা যায়।
- কুয়াশা: শীতল এবং উয় স্রোত যেখানে মিলিত হয় সেখানে কুয়াশা, ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয়। উদাহরণ: নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল।
- তুষারপাত: শীতল সমুদ্রস্রোত শীতকালে বহু জায়গায় তুষারপাত ঘটায়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. বারিমণ্ডল বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: পৃথিবীর সমগ্র জলরাশিকে একত্রে বারিমণ্ডল বলে। উদাহরণ : ছোটো-বড়ো পুকুর, খাল, বিল, জলাশয়, হ্রদ, নদী, সাগর, মহাসাগর, ইত্যাদি সবই বারিমণ্ডলের অন্তর্গত। এমনকি গ্রিনল্যান্ড ও মেরুপ্রদেশে সঞ্চিত বরফের স্তূপে যে স্বাদু জল আবদ্ধ রয়েছে, তাও বারিমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত। ভূগর্ভে সঞ্চিত ভৌমজলও বারিমণ্ডলের অংশ। এককথায় বলা যায় ভূপৃষ্ঠে, ভূগর্ভে ও বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জল, ভৌমজল অথবা জলীয় বাষ্প সবই বারিমণ্ডলের অন্তর্গত।
2. পৃথিবীতে কয়টি ও কী কী মহাসাগর আছে?
উত্তর – পৃথিবীতে অবস্থিত মহাসাগর: পৃথিবীতে পাঁচটি মহাসাগর আছে, যথা— (1) প্রশান্ত মহাসাগর, (2) আটলান্টিক মহাসাগর, (3) ভারত মহাসাগর, (4) সুমেরু মহাসাগর এবং (5) কুমেরু মহাসাগর।
3. উপসাগরীয় স্রোত বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তর শাখা (উয়) এবং উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের (উয়) মিলিত ধারা আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত স্রোতটিকেই উপসাগরীয় স্রোত বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: (1) নীল রঙের এই উয় স্রোতটির উয়তা প্রায় 27°সে। (2) এই স্রোতটির বিস্তার 65 কিমি, গভীরতা 915 মি এবং গতিবেগ ঘণ্টায় গড়ে ৪ কিমি।
4. সমুদ্রস্রোতের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, সমুদ্রস্রোত কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিক বরাবর একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রজলের এই প্রবাহকেই বলে সমুদ্রস্রোত।
প্রকারভেদ: সমুদ্রস্রোত দু-প্রকার— (1) উম্নস্রোত এবং (2) শীতলস্রোত। উদাহরণ: ল্যাব্রাডর স্রোত (শীতল স্রোত), উপসাগরীয় স্রোত (উম্ন স্রোত) প্রভৃতি।
5. হিমপ্রাচীর কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে পাশাপাশি প্রবাহিত উত্তরমুখী উয় উপসাগরীয় স্রোতের ঘন নীল জল এবং দক্ষিণমুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের সবুজ জলের মাঝে এক বিভাজনরেখা বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়। এই বিভাজনরেখাকে হিমপ্রাচীর বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: (1) হিমপ্রাচীর অঞ্চলে মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়, ফলে মৎস্যচারণক্ষেত্র গড়ে ওঠে। (2) হিমপ্রাচীর অঞ্চলে উয় স্রোত ও শীতল স্রোতের মিলনে ঝড়ঝঞ্ঝা ও ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
6. মগ্নচড়া বলতে কী বোঝ ?
অথবা, টীকা লেখো: মগ্নচড়া
উত্তর – সংজ্ঞা: উয় ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের সাথে বয়ে আসা হিমশৈলগুলি উয় স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায়। এর ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা নুড়ি, বালি, পলি, কাঁকর জমা হয়ে যে নিমগ্ন ভূভাগ গঠন করে, তাকে মগ্নচড়া বলে। উদাহরণ: গ্র্যান্ড ব্যাংক (বিশ্বের বৃহত্তম মগ্নচড়া), জর্জেস ব্যাংক, ডগার্স ব্যাংক ইত্যাদি।
7. মগ্নচড়ার গুরুত্ব কী ?
উত্তর – মগ্নচড়ার গুরুত্ব: মগ্নচড়ার গুরুত্বগুলি হল— (1) প্ল্যাংকটন সৃষ্টি:এই মগ্নচড়া অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরতা কম বলে সূর্যালোক সহজেই সমুদ্রতলদেশে পৌঁছে যায়, যা উদ্ভিদ ও প্রাণী প্ল্যাংকটন সৃষ্টির পক্ষে আদর্শ। (2) বাণিজ্যিক মৎস্যশিকার ও মৎস্যক্ষেত্র সৃষ্টি:এইসব মগ্নচড়া অঞ্চলে প্ল্যাংকটন ও মৎস্যের সমাবেশ ঘটে এবং অঞ্চলগুলি তাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্যশিকার তথা মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
8. মগ্নচড়া কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর – মগ্নচড়া সৃষ্টির পদ্ধতি: উয় ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উয় স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায়। ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি সমুদ্রবক্ষে জমা হয়। এইভাবে দীর্ঘকাল ধরে পাথর, নুড়ি, বালি জমে উঁচু হয়ে নিমগ্ন ভূভাগ বা মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে। উদাহরণ: নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের অদূরে গ্র্যান্ড ব্যাংক, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের নিকটে সমুদ্রবক্ষে ডগার্স ব্যাংক প্রভৃতি বিখ্যাত মগ্নচড়ার উদাহরণ।
9. ল্যাব্রাডর স্রোতের পরিচয় দাও।
উত্তর – পরিচিতি: আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরাংশের একটি শীতল স্রোতের নাম ল্যাব্রাডর স্রোত। প্রবাহ: সুমেরু মহাসাগর থেকে মেরু বায়ুর প্রভাবে এই শীতল স্রোতটি গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল ধরে (অর্থাৎ কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডের মধ্যভাগ দিয়ে) দক্ষিণ দিকে এগিয়ে আসে এবং গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণে এসে ল্যাব্রাডর উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল দিয়ে আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়।
10. ব্রাজিল স্রোত কাকে বলে?
উত্তর – পরিচিতি: আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় মধ্যভাগে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমমুখী দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি হয়। পশ্চিম দিকে যেতে যেতে এই উম্ন দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলের সাও রোক (সেন্ট রক) অন্তরীপের কাছে ধাক্কা খেয়ে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। এগুলির মধ্যে দক্ষিণের শাখাটির নাম ব্রাজিল স্রোত। প্রবাহ: উয় ব্রাজিল স্রোতটি ব্রাজিলের উপকূল বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
11. পেরু স্রোত বা হামবোল্ড স্রোত কী?
উত্তর – পরিচিতি: প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে কুমেরু মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত উৎপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এই স্রোতটি শেষে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে চিলি পেরিয়ে পেরুর উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরই নাম পেরু স্রোত বা হামবোল্ড স্রোত। প্রবাহ: এই সমুদ্রস্রোতটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বভাগে প্রবাহিত হয়।
12. জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত কাকে বলে?
উত্তর – পরিচিতি: প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় মধ্যভাগে আয়ন বায়ুর প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টি হয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উয় উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতটি উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় ও এশিয়ার পূর্ব উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তর দিকে বয়ে যায়। এখানে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে প্রবাহিত পশ্চিমগামী দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের কিছু অংশ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। এরপর এই মিলিত স্রোতটি আরও উত্তরে প্রবাহিত হয়ে জাপানের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর-পূর্ব দিকে বয়ে যায় এবং তখন এর নাম হয় জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত। প্রবাহ:এই স্রোতটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাহিত একটি উম্ন স্রোত।
13. বেঙ্গুয়েলা স্রোত কী?
উত্তর – পরিচিতি: কুমেরু মহাসাগর থেকে উৎপন্ন শীতল কুমেরু স্রোত আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এই স্রোতটি দুটি শাখায় ভাগ হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে। এর মধ্যে প্রধান শাখাটি প্রথমে দক্ষিণ আটলান্টিক স্রোত নামে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় এবং তারপর আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তর দিকে বেঁকে যায়। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ধরে প্রবাহিত এই শীতল স্রোতটির নাম বেঙ্গুয়েলা স্রোত। প্রবাহ: এই স্রোতটি আরও উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে উয় দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
14. মৌসুমি স্রোত কী?
উত্তর – পরিচিতি: ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবাহিত সমুদ্রস্রোত মৌসুমি স্রোত নামে পরিচিত। শ্রেণিবিভাগ: গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে দুই বিপরীতমুখী মৌসুমি স্রোতের উৎপত্তি হয় – (1) গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই অংশে সমুদ্রস্রোত দক্ষিণাবর্তে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ধরে একটি সমুদ্রস্রোত প্রথমে আরব সাগর ও পরে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে শেষে সুমাত্রা দ্বীপ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। (2) শীতকালে এই স্রোতটি উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঠিক বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামাবর্তে প্রবাহিত হয়। যেহেতু ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশের সমুদ্রস্রোত এইভাবে মৌসুমি বায়ুর দিক পরিবর্তন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই এই স্রোতকে মৌসুমি স্রোত বলা হয়।
15. অন্তঃস্রোত ও বহিঃস্রোত বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – অন্তঃস্রোত: মেরু- প্রদেশের শীতল এবং ভারী সমুদ্রজল সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে উম্নমণ্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়, একে অন্তঃস্রোত বলে।
বহিঃস্রোত: উয়মণ্ডল থেকে প্রবাহিত স্রোত উম্ন এবং হালকা হওয়ায় সমুদ্রের উপরিপৃষ্ঠ দিয়ে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যায়। এই স্রোতের নাম পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোত।
16. জাপানের পূর্ব উপকূলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর – জাপানের পূর্ব উপকূলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টির কারণ: মহাসাগরের অভ্যন্তরে যে স্থানে উয় ও শীতল স্রোতের মিলন হয়, সেখানে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয়। কারণ, উয় স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উম্ন বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্প শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে জমে যায়। ফলে ওই অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়। জাপানের পূর্ব উপকূল দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে উম্ন কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে শীতল ওয়াশিয়ো বা কিউরাইল স্রোত বয়ে যায়। এই দুই ভিন্নধর্মী স্রোতের মিলনের ফলে জাপানের পূর্ব উপকূলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয়।
17. জাপান উপকূলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় কেন?
উত্তর – জাপান উপকূলে প্রচুর মাছ পাওয়ার কারণ: জাপানের পূর্ব উপকূলে শীতল ওয়াশিয়ো স্রোত ও উয় কুরোশিয়ো স্রোতের মিলন হয়। শীতল ওয়াশিয়ো স্রোতের বয়ে আনা হিমশৈল এখানে গলে গিয়ে মগ্নচড়া সৃষ্টি করে। এই মগ্নচড়া সন্নিহিত অংশে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাংকটন জন্মায়, যা মাছের প্রধান খাদ্য। একারণে জাপান উপকূলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
18. নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে প্রায়শই ঘন কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর – নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝা সৃষ্টির কারণ: নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপটি কানাডার পূর্ব উপকূলের কাছেই অবস্থিত। এই দ্বীপটির কাছ দিয়েই উয় উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত পাশাপাশি বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে উষ্ম উপসাগরীয় স্রোতের ওপর সৃষ্ট প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে এসে সহজেই ঘনীভূত হয় এবং সংলগ্ন অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া এই দুই উম্ন ও শীতল সমুদ্রস্রোতের ওপর সৃষ্ট দুই বিপরীতধর্মী বায়ু পরস্পর বিপরীতমুখী হওয়ায় এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং তার ফলে এখনে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে, যার পরিণামে নিউফাউন্ডল্যান্ড-সহ সংলগ্ন অঞ্চলে প্রায়শই ঝড়ঝঞ্ঝা হয়।
19. আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উম্ন স্রোতের নাম করো।
উত্তর – আটলান্টিক মহাসাগরের উন্ন স্রোত: আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উন্ন স্রোত হল— (1) উপসাগরীয় স্রোত এবং (2) ব্রাজিল স্রোত।
20. শৈবাল সাগর প্রশান্ত মহাসাগরের কোথায় দেখা যায়?
উত্তর – প্রশান্ত মহাসাগরে শৈবাল সাগরের অবস্থান: উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় মধ্যভাগে (নিরক্ষরেখার উত্তরে) কর্কটক্রান্তিরেখার উভয় পাশজুড়ে এই শৈবাল সাগরটি গড়ে উঠেছে।
21. প্রশান্ত মহাসাগরের শৈবাল সাগর কোন্ কোন্ স্রোত দ্বারা আবদ্ধ?
উত্তর – প্রশান্ত মহাসাগরের শৈবাল সাগর বেষ্টনকারী সমুদ্রস্রোত : উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় মধ্যভাগে অবস্থিত শৈবাল সাগর উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত দ্বারা আবদ্ধ।
বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. হিমপ্রাচীর দেখা যায়—
(a) আটলান্টিক মহাসাগরে
(b) কুমেরু মহাসাগরে
(c) ভারত মহাসাগরে
(d) বঙ্গোপসাগরে
উত্তর – (a) আটলান্টিক মহাসাগরে
2. ব্রাজিল স্রোত সৃষ্টি হয়েছে-
(a) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত
(b) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত
(c) উপসাগরীয় স্রোত
(d) নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত থেকে
উত্তর – (b) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত
3. উল্লেখিত স্রোতগুলির মধ্যে উয় স্রোত হল—
(a) কামচাটকা স্রোত
(b) পেরু স্রোত
(c) ব্রাজিল স্রোত
(d) পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত
উত্তর – (c) ব্রাজিল স্রোত
4. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে—
(a) সাময়িক বায়ু
(b) নিয়ত বায়ু
(c) স্থানীয় বায়ু
(d) আকস্মিক বায়ু
উত্তর – (b) নিয়ত বায়ু
5. দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত স্রোতের নাম হল –
(a) ফকল্যান্ড স্রোত
(b) হামবোল্ড স্রোত
(c) নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত
(d) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত
উত্তর – (b) হামবোল্ড স্রোত
6. মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত উয় স্রোতের নাম হল –
(a) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত
(b) উত্তর আটলান্টিক স্রোত
(c) উপসাগরীয় স্রোত
(d) মৌসুমি স্রোত
উত্তর – (c) উপসাগরীয় স্রোত
7. পেরু সমুদ্রস্রোত দেখা যায় —
(a) ভারত মহাসাগরে
(b) আটলান্টিক মহাসাগরে
(c) প্রশান্ত মহাসাগরে
(d) সুমেরু মহাসাগরে
উত্তর – (c) প্রশান্ত মহাসাগরে
৪. গ্র্যান্ড ব্যাংক হল একটি—
(a) উম্ন স্রোত
(b) শীতল স্রোত
(c) মগ্নচড়া
(d) দ্বীপ
উত্তর – (c) মগ্নচড়া
9. শৈবাল সাগর দেখা যায়—
(a) আটলান্টিক মহাসাগরে
(b) ভারত মহাসাগরে
(c) কুমেরু মহাসাগরে
(d) সুমেরু মহাসাগরে
উত্তর – (a) আটলান্টিক মহাসাগরে
10. মাদাগাস্কার দ্বীপের পশ্চিম উপকূল দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত স্রোতটি হল—
(a) সোমালি স্রোত
(b) মাদাগাস্কার স্রোত
(c) মোজাম্বিক স্রোত
(d) আগুলহাস স্রোত
উত্তর – (c) মোজাম্বিক স্রোত
11. ডগার্স ব্যাংক নামক মগ্নচড়াটির সৃষ্টি হয়েছে—
(a) আটলান্টিক মহাসাগরে
(b) ভারত মহাসাগরে
(c) উত্তর সাগরে
(d) জাপান সাগরে
উত্তর – (c) উত্তর সাগরে
12. আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হওয়ার জন্য যে স্রোতের বিশেষ ভূমিকা আছে, তা হল –
(a) ল্যাব্রাডর স্রোত
(b) ক্যানারি স্রোত
(c) বেঙ্গুয়েলা স্রোত
(d) পেরু স্রোত
উত্তর – (b) ক্যানারি স্রোত
13. শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত এবং উম্ন উপসাগরীয় স্রোত মিলিত হয়ে ঘন কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি করে যে উপকূল অঞ্চলে, তা হল—
(a) নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল
(b) গিনি উপকূল
(c) ফ্লোরিডা উপকূল
(d) পেরু উপকূল
উত্তর – (a) নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল
14. মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক স্রোতের মিলিত শাখার নাম—
(a) আগুলহাস স্রোত
(b) হামবোল্ড স্রোত
(c) গিনি স্রোত ক
(d) কামচাটকা স্রোত
উত্তর – (a) আগুলহাস স্রোত
15. গ্র্যান্ড ব্যাংক স্থানটি বিখ্যাত —
(a) মৎস্য চাষের জন্য
(b) চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য
(c) তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য
(d) কার্পাস চাষের জন্য
উত্তর – (a) মৎস্য চাষের জন্য
16. বেরিং স্রোত প্রবাহিত হয় —
(a) ভারত মহাসাগরে
(b) প্রশান্ত মহাসাগরে
(c) সুমেরু মহাসাগরে
(d) আটলান্টিক মহাসাগরে
উত্তর – (b) প্রশান্ত মহাসাগরে
17. একটি উম্ন সমুদ্রস্রোতের উদাহরণ—
(a) ল্যাব্রাডর স্রোত
(b) বেরিং স্রোত
(c) হামবোল্ড স্রোত
(d) উপসাগরীয় স্রোত
উত্তর – (d) উপসাগরীয় স্রোত
18. সমুদ্রে ভাসমান বরফের স্তূপকে বলে—
(a) হিমপ্রাচীর
(b) হিমরেখা
(c) হিমশৈল
(d) হিমভূমি
উত্তর – (c) হিমশৈল
19. উম্ন সমুদ্রস্রোত এবং শীতল সমুদ্রস্রোত যে স্থানে মিলিত হয়, তাকে বলে—
(a) হিমপ্রাচীর
(b) হিমশৈল
(c) হিমানী সম্প্রপাত
(d) হিমগুল্ম
উত্তর – (a) হিমপ্রাচীর
20. জাপান উপকূল উয় থাকে—
(a) বেরিং স্রোতের জন্য
(b) উপসাগরীয় স্রোতের জন্য
(c) কুরোশিয়ো স্রোতের জন্য
(d) মৌসুমি স্রোতের জন্য
উত্তর – (c) কুরোশিয়ো স্রোতের জন্য
21. মৌসুমি বায়ু যে মহাসাগরের স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করে, তা হল—
(a) প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতকে
(b) ভারত মহাসাগরের স্রোতকে
(c) আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোতকে
(d) সুমেরু মহাসাগরের স্রোতকে
উত্তর – (b) ভারত মহাসাগরের স্রোতকে
22. এল নিনোর প্রভাব দেখা যায়—
(a) আটলান্টিক মহাসাগরে
(b) প্রশান্ত মহাসাগরে
(c) ভারত মহাসাগরে
(d) সুমেরু মহাসাগরে
উত্তর – (b) প্রশান্ত মহাসাগরে
23. ঋতুপরিবর্তনের ফলে যে সমুদ্রস্রোত তার প্রবাহের দিপরিবর্তন করে, তা হল —
(a) ক্যানারি স্রোত
(b) মৌসুমি স্রোত
(c) কুরোশিয়ো স্রোত
(d) বেঙ্গুয়েলা স্রোত
উত্তর – (b) মৌসুমি স্রোত
24. উপসাগরীয় স্রোতের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায়—
(a) 5 কিমি
(b) 8 কিমি
(c) 15 কিমি
(d) 20 কিমি
উত্তর – (b) 8 কিমি
25. উপসাগরীয় স্রোতের রং হল—
(a) গাঢ় সবুজ
(b) গাঢ় লাল
(c) গাঢ় নীল
(d) হালকা বেগুনি
উত্তর – (c) গাঢ় নীল
26. উয় পেরু স্রোতের অপর নাম-
(a) হামবোল্ড স্রোত
(b) এল নিনো স্রোত
(c) লা নিনা স্রোত
(d) ওয়াশিয়ো স্রোত
উত্তর – (b) এল নিনো স্রোত
27. যে বায়ু দ্বারা উত্তর ভারত মহাসাগরে সমুদ্রস্রোত নিয়ন্ত্রিত হয়, তা হল –
(a) আয়ন বায়ু
(b) নিয়ত বায়ু
(c) স্থানীয় বায়ু
(d) মৌসুমি বায়ু
উত্তর – (d) মৌসুমি বায়ু
28. ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয় কোন্ মহাসাগরে? –
(a) আটলান্টিক
(b) ভারত
(c) প্রশান্ত
(d) কুমেরু
উত্তর – (c) প্রশান্ত
29. পৃথিবীর মোট আয়তনের জলভাগ দ্বারা আবৃত অংশ প্রায়—
(a) 61%
(b) 81%
(c) 71%
(d) 91%
উত্তর – (c) 71%
30. ল্যাব্রাডর স্রোত একপ্রকার —
(a) উয় স্রোত
(b) শীতল স্রোত
(c) নাতিশীতোয় স্রোত
(d) কোনোটিই নয়।
উত্তর – (b) শীতল স্রোত
31. পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া হল—
(a) গ্র্যান্ড ব্যাংক
(b) রকফল ব্যাংক
(c) রোসলিন্ড ব্যাংক
(d) স্পার্টলি ব্যাংক
উত্তর – (a) গ্র্যান্ড ব্যাংক
32. বেঙ্গুয়েলা স্রোত দেখা যায় —
(a) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে
(b) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
(c) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে
(d) দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে
উত্তর – (c) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. উন্ন ………… স্রোতের প্রভাবে শীতকালে জাপান উপকূল উয় থাকে।
উত্তর – কুরোশিয়ো
2. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর হল ……….. মহাসাগর।
উত্তর – প্রশান্ত
3. উয় উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে ………. সৃষ্টি হয়।
উত্তর – হিমপ্রাচীর
4. উত্তরের সুমেরু মহাসাগর থেকে জাপানের উপকূলের দিকে প্রবাহিত শীতল স্রোতের নাম হল ………. স্রোত।
উত্তর – কামচাটকা
5. দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত শীতল স্রোতের নাম হল ……….. স্রোত।
উত্তর – ফকল্যান্ড
6. সমুদ্রজলের উল্লম্ব সঞ্চলনকে বলে ……….।
উত্তর – সমুদ্রতরঙ্গ
7. হিমশৈলগুলি সমুদ্রের যেখানে গলে যায়, সেখানে ………. সৃষ্টি হয়।
উত্তর – মগ্নচড়া
8. পৃথিবীতে জল বেশি রয়েছে বলে একে ……….. বলে।
উত্তর – নীলগ্রহ
9. ভারী লবণাক্ত জল ………… হিসেবে প্রবাহিত হয়।
উত্তর – অন্তঃস্রোত
10. সমুদ্রস্রোত ঘণ্টায় গড়ে ……….. কিমি বেগে প্রবাহিত হয়।
উত্তর – 5-10
11. শীতল সমুদ্রস্রোতে ভেসে আসা ………… জাহাজ চলাচলে বাধা ও বিপদের সৃষ্টি হয়।
উত্তর – হিমশৈল
12. ……….. মহাসাগরে এল নিনো দেখা যায়।
উত্তর – প্রশান্ত
13. ব্রাজিল স্রোত ……….. মহাসাগরে দেখা যায়।
উত্তর – আটলান্টিক
14. …………. স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ডে তুষারপাত হয়।
উত্তর – ল্যাব্রাডর
TOPIC – B জোয়ারভাটা
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- জোয়ারভাটা: সাগর-মহাসাগরের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় স্ফীত হয় বা ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় অবনমিত হয় বা নেমে যায়। জলরাশির এই স্ফীতি বা ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং অবনমন বা নামাকে ভাটা বলে।
- জোয়ার সৃষ্টির কারণ : প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার হয়— (1) পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করে চলেছে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে একটি বিকর্ষণ শক্তি বা কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয় এবং তার জন্য ভূপৃষ্ঠের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হয়। এইভাবে সমুদ্রে জোয়ার সৃষ্টি হয়। (2) চাঁদ ও সূর্য উভয়ই পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। তাই উভয়ের আকর্ষণেই পৃথিবীতে জোয়ার হয়। তবে সূর্যের তুলনায় চাঁদ কাছে আছে বলে পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি। এজন্য প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর জলরাশি ফুলে ওঠে অর্থাৎ জোয়ার হয়।
- ভাটা সৃষ্টির কারণ : প্রধাণত দুটি কারণে জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয়, যথা— (1) পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল এবং (2) পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল।
- জোয়ারভাটার সময়ের ব্যবধান : কোনো নির্দিষ্ট স্থানে দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় 24 ঘণ্টা 48 মিনিট 45 সেকেন্ড এবং মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় (24 ঘণ্টা 48 মিনিট 45 সেকেন্ড ÷ 2) 12 ঘণ্টা 24 মিনিট 22.5 সেকেন্ড। আর এই হিসাব অনুসারে মুখ্য জোয়ারের স্থানে ভাটা সৃষ্টি হয় লাগে (12 ঘণ্টা 24 মিনিট 22.5 সেকেন্ড ÷ 2) 6 ঘণ্টা 12 মিনিট 11 সেকেন্ড (প্রায়) পর।
- মুখ্য জোয়ার : পৃথিবীর আবর্তনের সময় ভূপৃষ্ঠের যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে আসে, সেই জায়গার জলরাশি চাঁদের আকর্ষণে সবচেয়ে বেশি ফুলে ওঠে। তখন সেখানে যে জোয়ার হয়, তাকে মুখ্য জোয়ার বলে।
- গৌণ জোয়ার : পৃথিবীর যে স্থানে মুখ্য জোয়ার হয় ঠিক তার বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে এবং চাঁদের দিকে স্থলভাগের বেশি সরণের জন্য যে জলস্ফীতি বা জোয়ার হয়, তাকে গৌণ জোয়ার বলে।
- ভরা কোটাল ও মরা কোটািল : অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে বলে এই দুই তিথিতে প্রবল জোয়ার হয়, একে ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার বলে। আর শুক্ল ও কৃয় পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর অবস্থানের সাপেক্ষে চাঁদ ও সূর্য পরস্পর সমকোণে অবস্থান করে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে বলে এই তিথিতে জোয়ারের প্রাবল্য কম হয়। একে বলে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার।
- সিজিগি : পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মধ্যবিন্দু যখন একই সরলরেখায় অবস্থান করে, তখন সেই অবস্থানকে বলে সিজিগি। এই অবস্থানকে দুটি বিভাগে ভাগ করা হয় – (1) সংযোগ অবস্থান: অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই দিকে অবস্থান করে বলে এই অবস্থানকে সংযোগ অবস্থান বলা হয়। (2) প্রতিযোগ অবস্থান: পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী চাঁদ ও সূর্যের ঠিক মাঝখানে অবস্থান করে বলে এই অবস্থানকে প্রতিযোগ অবস্থান বলা হয়। অমাবস্যা তিথিতে অর্থাৎ সংযোগ অবস্থানে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই দিক থেকে ভূপৃষ্ঠের জলরাশিকে আকর্ষণ করে বলে পূর্ণিমা তিথির তুলনায় অমাবস্যা তিথিতে জোয়ারের প্রাবল্য বেশি হয়।
- অ্যাপোজি ও পেরিজি: পৃথিবীকে পরিক্রমণের সময় পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে বেশি (4 লক্ষ 7 হাজার কিমি) হয়, তখন চাঁদের সেই দূরতম অবস্থানকে বলে অ্যাপোজি। আর এই দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম (3 লক্ষ 56 হাজার কিমি) হয়, তখন চাঁদের সেই নিকটতম অবস্থানকে বলে পেরিজি।
- বান ও বানডাকা: জোয়ারের সময় স্ফীত সমুদ্রের জল মোহানা দিয়ে বড়ো বড়ো ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাসের আকারে নদীখাতে প্রবেশ করে। ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাস-সহ নদীর এই বিপরীতমুখী প্রবাহকে বলে বান। বর্ষাকালে নদীতে যখন বেশি জল থাকে, তখন ভরা কোটালের বা ভরা জোয়ারের জল খুব বেশি উঁচু হয়ে প্রবলবেগে সশব্দে নদীতে প্রবেশ করে, একে বলে বানডাকা।
- জোয়ারভাটার প্রভাব জোয়ারভাটার অনুকূল প্রভাবগুলি হল – (1) নাব্যতা বৃদ্ধি, (2) নদীতে নৌচলাচলে সুবিধা, (3) আবর্জনাহীন গতিগত, (4) বিদ্যুৎ উৎপাদন, (5) মৎস্যশিকারে সুবিধা, (6) বরফমুক্ত বন্দর। জোয়ারভাটার প্রতিকূল প্রভাবগুলি হল — (1) জলের লবণতা বৃদ্ধি, (2) সম্পত্তি ও মানুষের ক্ষতি, (3) নৌচলাচলে ব্যাঘাত, (4) অগভীর নদীখাত সৃষ্টি।
- চাচ্চুযাস : ভূপৃষ্ঠে এক অমাবস্যা থেকে পরের অমাবস্যা পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান পৃথিবীর হিসেবে 27 দিন 12 ঘণ্টা 44 মিনিট। এই সময়টিকেই চান্দ্রমাস বলে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, জোয়ারভাটা কীভাবে সংঘটিত হয়, তা চিত্র-সহ আলোচনা করো।
জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ
উত্তর – সাগর-মহাসাগরের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় স্ফীত বা ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় অবনমিত হয় বা নেমে যায়। জলরাশির এই ফুলে ওঠা বা স্ফীতিকে জোয়ার এবং অবনমন বা নেমে যাওয়াকে ভাটা বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রধানত দুটি কারণে জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয়, যথা—
- পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল: নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুসারে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করে। সুতরাং গ্রহ, উপগ্রহ, সূর্য প্রভৃতি প্রতিটি জ্যোতিষ্কই পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই হিসেবে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একে অপরকে আকর্ষণ করে। তবে সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। যদিও চাঁদের তুলনায় সূর্যের ভর প্রায় 260 লক্ষ গুণ বেশি কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদ যত দূরে আছে, সূর্য রয়েছে তার থেকে প্রায় 389 গুণ বেশি দূরে (চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় 3 লক্ষ 84 হাজার কিমি কিন্তু সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় 15 কোটি কিমি)। এজন্য জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে চাঁদের আকর্ষণ সূর্যের আকর্ষণের প্রায় 2.2 গুণ বেশি। তাই প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর জলরাশি ফুলে ওঠে অর্থাৎ জোয়ার হয়। সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ার হলেও তা অতটা বেশি বা প্রবল আকার ধারণ করে না। তবে পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে জোয়ারের তীব্রতা বেশি হয়।
-
পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল: পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ভূপৃষ্ঠে একটি বিকর্ষণ শক্তি বা কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা লাভ করে। এই বল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করে। এজন্য চাঁদের আকর্ষণে যেখানে জোয়ার হয় তার ঠিক বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে চাঁদের মহাকর্ষ শক্তির তুলনায় পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব বেশি কার্যকরী হওয়ায় জোয়ারের সৃষ্টি হয়।
উপর্যুক্ত দুটি কারণে পৃথিবীর যে দুটি স্থানে জলস্ফীতি ঘটে বা জোয়ারের সৃষ্টি হয় ঠিক তার সমকোণে অবস্থিত দুটি স্থান থেকে জল জোয়ারের দিকে সরে যায়। ফলে ওই স্থান দুটির জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি হয়।
2. তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল এবং মরা কোটাল কীভাবে হয় বর্ণনা করো।
অথবা, পৃথিবীতে ভরা জোয়ার ও মরা জোয়ার সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো।
তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার
উত্তর – অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে সৃষ্ট প্রবল জোয়ারকে তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার বলে।
সৃষ্টির পদ্ধতি: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে প্রবল জোয়ার হয়। কারণ ওই দুই তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে। চাঁদ ও সূর্যের কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে বলে উভয়ের মিলিত আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে। তাই একে তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার বলা হয়। এই ধরনের ঘটনা প্রতি 14 দিনে একবার হয়। তবে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর অবস্থানের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
- অমাবস্যা তিথিতে ভরা কোটাল: অমাবস্যা তিথিতে সূর্য ও চাঁদ, পৃথিবীর একই দিকে অবস্থান করে, এই অবস্থানকে সংযোগ অবস্থান বলে। ওই তিথিতে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণী শক্তি পৃথিবীর একই দিকে ক্রিয়া করে। ফলে অমাবস্যা তিথিতে জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে, জলের এই ফুলে ওঠাকে বলা হয় অমাবস্যা তিথিতে ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল। অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একদিকে অবস্থান করায় পূর্ণিমা অপেক্ষা অমাবস্যা তিথিতে জোয়ারের তীব্রতা অনেক বেশি হয়।
- পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কোটাল: পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এক সরলরেখায় অবস্থান করে, এই অবস্থানকে প্রতিযোগ অবস্থান বলে। এর ফলে চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর একদিকে প্রবল জলস্ফীতি ঘটে বা জোয়ার হয় এবং ঠিক তার বিপরীত দিকে সূর্যের আকর্ষণেও প্রবল জোয়ার হয়। একে পূর্ণিমা তিথিতে ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল বলে। পূর্ণিমা তিথিতে জোয়ারের তীব্রতা অমাবস্যার জোয়ারের তীব্রতার থেকে অনেক কম হয়।
মরা কোটাল বা মরা জোয়ার
শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে স্বল্পোচ্চ জলস্ফীতির যে জোয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে।
সৃষ্টির পদ্ধতি : শুক্ল ও কৃয় পক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য, পৃথিবীর অবস্থানের সাপেক্ষে সমকোণে অবস্থান করে। এজন্য চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে। এর ফলে পৃথিবীর যে স্থানে চাঁদের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার হয় তার ঠিক সমকোণে সূর্যের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার হয়। ফলে কোনো স্থানেই জলতল বেশি স্ফীত হয় না। এইভাবেই মরা কোটাল বা মরা জোয়ার সৃষ্টি হয়।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয়?
অথবা, চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণের প্রভাবে কীভাবে জোয়ারভাটা হয়?
উত্তর – জোয়ারভাটা সৃষ্টির পদ্ধতি: সাগর-মহাসাগরের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় নেমে যায়। জলরাশির এই স্ফীতিকে বলা হয় জোয়ার এবং অবনমনকে বলা হয় ভাটা। প্রধানত পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল এবং পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল—এই দুই কারণের প্রভাবে জোয়ারভাটা সংঘটিত হয়। তবে সূর্যের তুলনায় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে থাকায় জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে চাঁদের আকর্ষণই মুখ্য।
আবর্তনরত পৃথিবীর যে জায়গা যখন চাঁদের সামনে আসে তখন সেই জায়গার জল চাঁদের আকর্ষণে খুব বেশি ফুলে ওঠে, অর্থাৎ সেখানে তখন হয় জোয়ার (মুখ্য জোয়ার)। ঠিক এই সময় চাঁদের আকর্ষণস্থলের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানের জলরাশি পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে কিছুটা স্ফীত হয়। সুতরাং, সেখানেও তখন জোয়ার (গৌণ জোয়ার) সৃষ্টি হয়। [অবশ্য অনেকে বলেন যে, এই জোয়ার প্রকৃতপক্ষে ভূপৃষ্ঠে চাঁদের আকর্ষণস্থলের বিপরীত প্রান্তে জলভাগ ও স্থলভাগের সরণের পার্থক্যের জন্য হয়।] আর যে দুটি স্থানে জোয়ার হয় ঠিক তাদের সমকোণে অবস্থিত স্থান দুটির জলরাশি সরে যায় বলে সেখানে তখন ভাটা হয়।
2. জোয়ারভাটার প্রভাব বা ফলাফল লেখো।
অথবা, মানবজীবনে জোয়ারভাটার গুরুত্ব বা প্রভাব কী কী?
অথবা, জোয়ারভাটার সুবিধা ও অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – জোয়ারভাটার প্রভাব বা ফলাফল: জোয়ারভাটার উল্লেখযোগ্য প্রভাব বা ফলাফলগুলি হল—
- জোয়ারভাটার সুপ্রভাব বা সুবিধা: জোয়ারভাটার সুপ্রভাবগুলি হল—
- নাব্যতা বৃদ্ধি: জোয়ারের ফলে নদীর পলি অপসারিত হয়। ফলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পায়।
- নৌচলাচলে সুবিধা: জোয়ারের সময় বড়ো বড়ো জাহাজ নদীতে আসতে পারে, আবার ভাটার টানে সাগরে ফিরে যেতে পারে।
- আবর্জনাহীন গতিপথ: ভাটার টানে নদীর পলি ও আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে, ফলে নদীখাত গভীর থাকে।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন: অনেক জায়গায় জোয়ারভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
- মৎস্যশিকারে সুবিধা: জোয়ারের সময় অনেক সামুদ্রিক মাছ নদীতে চলে আসে ফলে মৎস্যজীবীদের সুবিধা হয়।
- বরফমুক্ত বন্দর: জোয়ারের নোনা জলে বন্দর ও নদী অনেক সময় বরফমুক্ত থাকে।
- জোয়ারভাটার কুপ্রভাব বা অসুবিধা: জোয়ারভাটার কুপ্রভাবগুলি হল—
- জলের লবণতা বৃদ্ধি: জোয়ারের মাধ্যমে নদীর মিষ্টি জল লোনা হয়ে যায়।
- সম্পত্তি ও মানুষের ক্ষতি: প্রবল জোয়ারে জলস্ফীতিতে উপকূলের কৃষিজমি ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়।
- নৌচলাচলে ব্যাঘাত: নদীতে জোয়ারের সময় বিভিন্ন জলপরিবহণ যানের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
- অগভীর নদীখাতসৃষ্টি: জোয়ারের সময় পলি পড়ে নদীগর্ভ অগভীরও হয়ে যায়।
3. কোনো স্থানে প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ারভাটা হয় না কেন?
অথবা, যে-কোনো স্থানে মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান 12 ঘণ্টা 26 মিনিট হয় কেন?
অথবা, কোনো একটি স্থানে দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কেন 24 ঘণ্টা 52 মিনিট হয়?
অথবা, দুটি মুখ্য জোয়ারের সময়ের ব্যবধান কত? ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর – কোনো স্থানে প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ারভাটা না হওয়ার কারণ : পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘুরে আসতে চাঁদের সময় লাগে প্রায় 27 দিন। পৃথিবী যখন 24 ঘণ্টায় একবার নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে আবর্তন করে তখন চাঁদ নিজের অক্ষের 1/27 অংশ বা 360° ÷ 27 = 13° (প্রায়) পথ এগিয়ে যায়। এই 13° পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর আরও (13° × 4 মিনিট = 52 মি.) 52 মিনিট সময় লাগে। সুতরাং পৃথিবীর যে-কোনো স্থান 24 ঘণ্টা 52 মিনিট পর পর একবার করে চাঁদের সামনে আসে। তাই দুটি মুখ্য জোয়ার বা দুটি গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান 24 ঘণ্টা 52 মিনিট। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট স্থানে একদিন যে সময়ে মুখ্য জোয়ার হয় সেইদিন তার 12 ঘণ্টা 26 মিনিট পরে সেখানে গৌণ জোয়ার হয়। আর, যে দুই স্থানে জোয়ার হয় তাদের সমকোণে অবস্থিত স্থান দুটিতে ভাটা হয়। ফলে কোনো জায়গায় জোয়ারের প্রায় 6 ঘণ্টা 13 মিনিট পরে সেখানে ভাটা হয়।
4.তেজ বা ভরা কোটালকে কেন সর্বোচ্চ জোয়ার বলা হয় ?
উত্তর – তেজ বা ভরা কোটালকে সর্বোচ্চ জোয়ার বলার কারণ: অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে তেজ বা ভরা কোটাল হয়। অমাবস্যার দিনে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চাঁদ থাকে। পূর্ণিমার দিনে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী থাকে। এর ফলে, অন্য যে-কোনো দিনের তুলনায় ওই দু-দিন চাঁদ ও সূর্যের সম্মিলিত আকর্ষণে জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে। ওই দু-দিন জলস্ফীতি সর্বাধিক হয়। তাই তেজ বা ভরা কোটালকে সর্বোচ্চ জোয়ার বলা হয়।
5. বান বা বানডাকা বলতে কী বোঝ? কী কী অবস্থায় নদীতে বান খুব প্রবল হয় ?
অথবা, টীকা লেখো: বানডাকা
অথবা, বানডাকা কী?
উত্তর – ধারণা: জোয়ারের সময় স্ফীত সমুদ্রের জল মোহানা দিয়ে নদী বড়ো বড়ো ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাসের আকারে নদীখাতে প্রবেশ করে। ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাস-সহ নদীর এই বিপরীতমুখী প্রবাহকে বলে বান। বর্ষাকালে নদীতে যখন বেশি জল থাকে, তখন ভরা কোটালের বা ভরা জোয়ারের জল খুব বেশি উঁচু হয়ে প্রবলবেগে সশব্দে নদীতে প্রবেশ করে, একে বলে বানডাকা।
বানডাকার অনুকূল অবস্থা : কতকগুলি বিশেষ অবস্থায় নদীতে বান খুব প্রবল হয়, যেমন— (1) তেজ কোটালের সময়, (2) নদীর মোহানায় চড়া থাকলে, (3) জোয়ারের জল প্রবেশ করার সময় নদীর স্রোতে বা অন্যভাবে বাধা পেলে, (4) নদীর মুখ ফানেল আকৃতির হলে এবং (5) নদী জলপূর্ণ থাকলে নদীতে বান ডাকে।
6. ‘মুখ্য জোয়ার’ ও ‘গৌণ জোয়ার’ কীভাবে ঘটে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – মুখ্য জোয়ার সৃষ্টির পদ্ধতি : পৃথিবী আবর্তন করতে করতে পৃথিবীর যে জায়গা চাঁদের সামনে আসে সেই জায়গার জল চাঁদের আকর্ষণে খুব বেশি ফুলে ওঠে অর্থাৎ সেখানে তখন হয় জোয়ার। এইভাবে ভূপৃষ্ঠের কোনো জায়গায় চাঁদের সরাসরি আকর্ষণের ফলে যে জোয়ার হয়, তাকে মুখ্য জোয়ার বলা হয়। ভূপৃষ্ঠে জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ হিসেবে পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল এবং পৃথিবীর আবর্তনগতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই পৃথিবীতে জোয়ারভাটা হয়।
গৌণ জোয়ার সৃষ্টির পদ্ধতি : মুখ্য জোয়ারের সময় চাঁদের আকর্ষণস্থলের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল অনেক বেশি প্রবল থাকে। ফলে ওই স্থানের জলরাশিও ফুলে ওঠে অর্থাৎ জোয়ারের সৃষ্টি হয়, একে বলা হয় গৌণ জোয়ার। গৌণ জোয়ার মূলত পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের কারণে সৃষ্টি হয়। অবশ্য অনেকে বলেন যে, গৌণ জোয়ার প্রকৃতপক্ষে ভূপৃষ্ঠে চাঁদের আকর্ষণস্থলের বিপরীত প্রান্তে জলভাগ ও স্থলভাগের সরণের পার্থক্যের জন্য হয়।
7. পূর্ণিমা অপেক্ষা অমাবস্যার জোয়ার প্রবল হয় কেন?
অথবা, প্রতিযোগ অপেক্ষা সংযোগ অবস্থানে জোয়ারের প্রাবল্য বেশি হয় কেন?
উত্তর – পূর্ণিমা অপেক্ষা অমাবস্যার জোয়ার প্রবল হওয়ার কারণ: পূর্ণিমা তিথিতে প্রতিযোগ অবস্থানে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় থাকে এবং চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী থাকে। এই অবস্থানে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে আসে সেখানে মুখ্য চান্দ্র জোয়ার ও সূর্যের গৌণ জোয়ার হয়। এর প্রতিপাদ স্থানে মুখ্য সৌর জোয়ার ও চাঁদের গৌণ জোয়ার সংঘটিত। একে পূর্ণিমা তিথির ভরা জোয়ার বলে।
অন্যদিকে, অমাবস্যা তিথিতে সংযোগ অবস্থানে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই দিকে ও একই সরলরেখায় অবস্থান করে। তাই চাঁদ ও সূর্যের মিলিত টানে একইসঙ্গে মুখ্য চান্দ্র জোয়ার ও মুখ্য সৌর জোয়ার হয়। ফলে এইসময় ভূপৃষ্ঠে সমুদ্রের জলরাশি বেশি মাত্রায় স্ফীত হয়। এজন্য পূর্ণিমার তুলনায় অমাবস্যার জোয়ার প্রবল হয়।
8. ভরা জোয়ারের তুলনায় মরা জোয়ারে জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয় কেন?
উত্তর – ভরা জোয়ারের তুলনায় মরা জোয়ারের জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হওয়ার কারণ: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ ও সূর্যের সম্মিলিত আকর্ষণে ভরা জোয়ার হয় বলে সমুদ্রের জলস্ফীতি প্রবল হয়। কিন্তু শুক্ল ও কৃয় পক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। অর্থাৎ, চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে বলে সমুদ্রের জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয়, যাকে মরা জোয়ার নামে অভিহিত করা হয়। এজন্যই দুই পক্ষের দুটি অষ্টমী তিথিতে সংঘটিত মরা জোয়ারের জলস্ফীতি ভরা জোয়ারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হয়।
9. গঙ্গা নদীতে বান ডাকে কেন?
উত্তর – গঙ্গা নদীতে বানডাকার কারণ: জোয়ারের সময় সমুদ্রের জলস্ফীত হয়ে মোহানা দিয়ে প্রবলবেগে ফুলেফেঁপে প্রায় 5-7 মিটার উঁচু হয়ে সশব্দে নদীতে প্রবেশ করে। সেই ধ্বনি বা আওয়াজকে বলা হয় বানডাকা। বর্ষাকালে গঙ্গা নদীতে প্রায়ই বানডাকার ঘটনা ঘটে। গঙ্গা নদীতে বানডাকার কারণগুলি হল— (1) গঙ্গা নদীর মোহানা ফানেল আকৃতির (অর্থাৎ, নদী মোহানা বেশ প্রশস্ত কিন্তু নদীখাত অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ), (2) নদীর মোহানায় অনেক চরা আছে, (3) বর্ষাকালে নদীতে প্রচুর জল থাকে এবং (4) বঙ্গোপসাগর থেকে জোয়ারের জল গঙ্গা নদীতে প্রবেশ করার সময় তা নদীর স্রোতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
10. জোয়ারভাটা নদীর নাব্যতাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
উত্তর – নদীর নাব্যতার ওপর জোয়ারভাটার প্রভাব: নদীর নাব্যতার ওপর জোয়ারভাটার প্রভাবগুলি হল—
- সঞ্চিত পলি অপসারণ: জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল নদীর মধ্যে প্রবেশ করলে নদীখাতে সঞ্চিত পলি অপসারণ করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে।
- জলের পরিমাণ বৃদ্ধি: জোয়ারের ফলে নদীতে জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে বড়ো বড়ো জাহাজ মালপত্র নিয়ে নদীবন্দরে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভাটার সময় জাহাজগুলি নদীবন্দর থেকে সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে।
- আবর্জনামুক্ত নদীখাত: ভাটার টানে নদীর পলি ও আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে পড়লে নদীখাত গভীর হয়। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে জোয়ারের জলের মাধ্যমে আসা পলি জমে নদীগর্ভ অগভীরও হয়ে যায়।
11. অ্যাপোজি ও পেরিজি কী?
উত্তর – অ্যাপোজি: চাঁদ এক উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এইভাবে প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সর্বাধিক (4 লক্ষ 7 হাজার কিমি) হয়, তাকে চাঁদের অ্যাপোজি বা অপসূর অবস্থান (অপভূ) বলে (এই সময় চাঁদকে একটু ছোটো ও কম উজ্জ্বল দেখায়)। এই সময় যে জোয়ার হয়, তাকে অ্যাপোজি বা অপভূ জোয়ার বলে। বৈশিষ্ট্য: [i] এইসময় বেশি দূরত্বের জন্য পৃথিবীর ওপর চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাব হ্রাস পায়। এর ফলে জোয়ারের তীব্রতাও কমে যায়। [ii] স্বাভাবিক সময়ের জোয়ারের তুলনায় অ্যাপোজি জোয়ারের তীব্রতা 15 থেকে 20 শতাংশ কম হয়। [iii] অ্যাপোজি জোয়ারের সময় মরা কোটাল হলে তখন জোয়ারের জলতলের উচ্চতা সর্বাপেক্ষা কম হয় ।
পেরিজি: উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের সময় চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে (3 লক্ষ 56 হাজার কিমি) থাকে, চাঁদের সেই অবস্থানকে পেরিজি বা অনুসূর অবস্থান বলে (কাছে থাকার জন্য এই সময় চাঁদকে প্রায় 14 শতাংশ বড়ো এবং প্রায় 25 গুণ উজ্জ্বল দেখায়)। এই সময়ে সৃষ্ট জোয়ারকে পেরিজি বা অনুভূ জোয়ার বলে। বৈশিষ্ট্য: [i] এইসময় কম দূরত্বের জন্য পৃথিবীর ওপর চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে জলভাগে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়। [ii] স্বাভাবিক সময়ের জোয়ারের তুলনায় পেরিজি জোয়ারের তীব্রতা 15 থেকে 20 শতাংশ বেড়ে যায়। [iii] পেরিজি জোয়ারের সময় ভরা কোটাল হলে জোয়ারের জলতলের উচ্চতা সর্বাপেক্ষা বেশি হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. জোয়ারভাটা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: সাগর-মহাসাগরের জল নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় স্ফীত হয় বা ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় অবনমিত হয় বা নেমে যায়। জলরাশির এই স্ফীতি বা ফুলে ওঠাকে বলা হয় জোয়ার এবং অবনমন বা নেমে যাওয়াকে বলা হয় ভাটা। সৃষ্টির কারণ: প্রধানত পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল এবং পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে সাগর-মহাসাগরের জলরাশিতে এই জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয়।
2. ষাঁড়াষাঁড়ির বান কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: বর্ষাকালে ভরা কোটালের দিন ভাগীরথী-হুগলি নদীর গতিপথের বিপরীত দিক থেকে ভীষণ গর্জন করে যে প্রবল বান ভাসে, তাকে ষাঁড়াষাঁড়ির বান বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) এই বান কখনো কখনো 6-8 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। (2) এই বান যখন আসে তখন নদীর স্বাভাবিক স্রোতের বিপরীতে বা উজানের দিকে ছুটে আসা জোয়ারের জলস্রোতের সঙ্গে স্ফীত ভাগীরথী-হুগলির স্বাভাবিক জলস্রোতের সংঘর্ষ হওয়ার জন্য দ্বন্দ্বরত দুটি গর্জনের মতো ভীষণ আওয়াজ সৃষ্টি হয়। তাই একে ষাঁড়াষাঁড়ির বান বলা হয়।
3. সিজিগি (Syzygy) সম্বন্ধে যা জান লেখো।
উত্তর – ধারণা: পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মধ্যবিন্দু যখন একটি সরলরেখায় অবস্থান করে তখন সেই অবস্থান সিজিগি নামে পরিচিত। প্রকারভেদ : এই অবস্থানকে দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়— (1) সংযোগ অবস্থান এবং (2) প্রতিযোগ অবস্থান।
4. প্রতিযোগ ও সংযোগ অবস্থান বলতে কী বোঝ?
উত্তর – প্রতিযোগ অবস্থান: পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ও চাঁদের ঠিক মাঝখানে পৃথিবী অবস্থান করে। এই দিন সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে বলে এই অবস্থানকে প্রতিযোগ অবস্থান বলা হয়।
সংযোগ অবস্থান: অমাবস্যা তিথিতে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীর একই দিকে অবস্থান করে। এই দিন সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করায় এই অবস্থানকে সংযোগ অবস্থান বলা হয়।
5. চান্দ্র জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: পৃথিবীর আবর্তনের সময় পৃথিবীপৃষ্ঠের যে অংশ চাঁদের সামনে আসে সেই অংশে চাঁদের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি কার্যকারী হয়। তাই সেই অংশে পৃথিবীর জলরাশি সবচেয়ে বেশি ফুলে উঠে জোয়ারের সৃষ্টি করে, এই জোয়ারকে চান্দ্র জোয়ার বলে।
6. সৌর জোয়ার বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রের জল ফুটে উঠে জোয়ারের সৃষ্টি হয়। এই জোয়ারকে সৌর জোয়ার বলে। সৃষ্টির কারণ: সূর্যের আকর্ষণেই সৌর জোয়ার হয়। কিন্তু পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব বেশি হওয়ার জন্য পৃথিবীর ওপর সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের তুলনায় কম। তাই সৌর জোয়ারে প্রাবল্যও কম।
7. ভরা কোটাল বলতে কী বোঝ?
অথবা, ভরা জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে। এই অবস্থানকে সিজিগি অবস্থান বলে। এই অবস্থানে যে জোয়ার হয়, তাকে ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার বলে। প্রকৃতি:ভরা কোটালে জোয়ারের তীব্রতা খুব বেশি হয়।
8. মরা কোটাল কাকে বলে চিত্র-সহ লেখো।
উত্তর – ধারণা: কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে সৃষ্ট স্বল্পোচ্চ জলস্ফীতির জোয়ারকেই মরা কোটাল বলে। সৃষ্টির কারণ: কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য ও চাঁদ পরস্পর সমকোণে অবস্থান করে। অর্থাৎ দুই পক্ষের অষ্টমী তিথিতেই চাঁদ ও সূর্য সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। এজন্য চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে। এর ফলে চাঁদের আকর্ষণে সৃষ্ট মুখ্য জোয়ার এবং সূর্যের আকর্ষণ ও পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে সৃষ্ট গৌণ জোয়ার উভয়েরই তীব্রতা কম হয়।
9. জোয়ারভাটার টান বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: পৃথিবী নিজ মেরুদণ্ডের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে, তাই জোয়ারের টান পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে হয় এবং ভাটার টান পশ্চিম থেকে পূর্বে হয়, একেই জোয়ারভাটার টান বলে। সৃষ্টির কারণ: পৃথিবীর আবর্তনের জন্যই জোয়ারভাটার টান তৈরি হয়।
10. মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার কী ?
উত্তর – মুখ্য জোয়ার : পৃথিবীর আবর্তনের সময় ভূপৃষ্ঠের যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে আসে, সেই জায়গার জলরাশি চাঁদের আকর্ষণে সবচেয়ে বেশি ফুলে ওঠে। তখন সেখানে যে জোয়ার হয়, তাকে বলে মুখ্য জোয়ার।
গৌণ জোয়ার : পৃথিবীর যে স্থানে মুখ্য জোয়ার হয় ঠিক তার বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে এবং চাঁদের দিকে স্থলভাগের বেশি সরণের জন্য সমুদ্রের জলরাশিতে যে স্বল্পস্ফীতি বা জোয়ার হয়, তাকে গৌণ জোয়ার বলে।
11. বেলোর্মি কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা: পৃথিবী পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে। এজন্য ভূপৃষ্ঠে জোয়ারের জল আবর্তনের বিপরীত দিকে অর্থাৎ পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে স্রোতের মতো এগিয়ে যায়। জোয়ারের জলের এই স্রোত বা ঢেউয়ের মতো এগিয়ে যাওয়াই বেলোমি নামে পরিচিত। সৃষ্টির কারণ: সাধারণত এটি নির্ভর করে— (1) বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিবেগ, (2) সমুদ্রে জলের গভীরতা, (3) সমুদ্র তলদেশের প্রকৃতি এবং (4) স্থলভাগের অবস্থান প্রভৃতি বিষয়ের ওপর।
বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. জোয়ারভাটা দেখা যায় এমন একটি নদী হল—
(a) তিস্তা
(b) শতদ্রু
(c) যমুনা
(d) হুগলি
উত্তর – (d) হুগলি
2. সর্বাধিক শক্তিশালী জোয়ার সংঘটিত হয় —
(a) পূর্ণিমাতে
(b) অমাবস্যায়
(c) অষ্টমীতে
(d) সপ্তমীতে
উত্তর – (b) অমাবস্যায়
3. পৃথিবীর যে অংশ ঠিক চাঁদের সামনে আসে, সেখানে হয়—
(a) ভরা জোয়ার
(b) মরা জোয়ার
(c) মুখ্য জোয়ার
(d) তেজ কোটাল
উত্তর – (c) মুখ্য জোয়ার
4. 24 ঘণ্টায় পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে জোয়ার হয়—
(a) 1 বার
(b) 2 বার
(c) 3 বার
(d) 4 বার
উত্তর – (b) 2 বার
5. পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম তখন যে জোয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে বলে-
(a) ভরা কোটাল
(b) মরা কোটাল
(c) পেরিজি জোয়ার
(d) অ্যাপোজি জোয়ার
উত্তর – (c) পেরিজি জোয়ার
6. মরা কোটাল দেখা যায় যখন চন্দ্র ও সূর্য অবস্থান করে—
(a) পরস্পর সমকোণে
(b) সমান্তরালে
(c) 45° কোণে
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) পরস্পর সমকোণে
7. মরা কোটালের সময়ে চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে প্রদত্ত কোণে অবস্থান করে—
(a) 180°
(b) 360°
(c) 90°
(d) 120°
উত্তর – (c) 90°
৪. দুটি মুখ্য জোয়ার বা দুটি গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হল—
(a) 6 ঘণ্টা 13 মিনিট
(b) 12 ঘণ্টা 26 মিনিট
(c) 24 ঘণ্টা 52 মিনিট
(d) 24 ঘণ্টা 55 মিনিট
উত্তর – (c) 24 ঘণ্টা 52 মিনিট
9. একটি মুখ্য ও একটি গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় প্রায় —
(a) 24 ঘণ্টা 52 মিনিট
(b) 12 ঘণ্টা 26 মিনিট
(c) 6 ঘণ্টা 13 মিনিট
(d) 4 ঘণ্টা 25 মিনিট
উত্তর – (b) 12 ঘণ্টা 26 মিনিট
10. চাঁদ একবার পৃথিবীকে পরিক্রমণ করে—
(a) প্রায় 27 দিনে
(b) প্রায় 29 দিনে
(c) প্রায় 30 দিনে
(d) প্রায় 28 দিনে
উত্তর – (a) প্রায় 27 দিনে
11. পৃথিবী যখন চন্দ্র ও সূর্যের মাঝে থাকে, তখন তাকে বলে—
(a) সংযোগ
(b) পেরিজি
(c) প্রতিযোগ
(d) অ্যাপোজি
উত্তর – (c) প্রতিযোগ
12. অমাবস্যায় দিনে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে আসে সেখানে হয়—
(a) ভরা কোটাল
(b) মরা কোটাল
(c) ভাটা
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) ভরা কোটাল
13. পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ মান সূর্যের তুলনায়—
(a) 1.1 গুণ বেশি
(b) 2.2 গুণ বেশি
(c) 3.3 গুণ কম
(d) 5.5 গুণ বেশি
উত্তর – (b) 2.2 গুণ বেশি
14. পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যে জোয়ার হয়, তা হল—
(a) মুখ্য জোয়ার
(b) গৌণ জোয়ার
(c) ভরা জোয়ার
(d) মরা জোয়ার
উত্তর – (b) গৌণ জোয়ার
15. যেখানে মুখ্য জোয়ার হয় তার প্রতিপাদ স্থানে দেখা যায় —
(a) গৌণ জোয়ার
(b) প্রগৌণ জোয়ার
(c) ভরা জোয়ার
(d) ভাটা
উত্তর – (a) গৌণ জোয়ার
16. চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবীর একই সরলরেখায় অবস্থানকে বলে—
(a) অ্যাপোজি
(b) পেরিজি
(c) সিজিগি
(d) অনুসূর
উত্তর – (c) সিজিগি
17. চাঁদের তুলনায় সূর্য প্রায়—
(a) 270 লক্ষ গুণ ভারী
(b) 200 লক্ষ গুণ ভারী
(c) 25 লক্ষ গুণ ভারী
(d) 10 লক্ষ গুণ ভারী
উত্তর – (a) 270 লক্ষ গুণ ভারী
18. পেরিজি অবস্থানে পৃথিবী এবং চাঁদের দূরত্ব থাকে—
(a) 3 লক্ষ 84 হাজার কিমি
(b) 3 লক্ষ 56 হাজার কিমি
(c) 4 লক্ষ 7 হাজার কিমি
(d) 3 লক্ষ 76 হাজার কিমি
উত্তর – (b) 3 লক্ষ 56 হাজার কিমি
19. সংযোগ জোয়ার হয়—
(a) অমাবস্যা তিথিতে
(b) পূর্ণিমা তিথিতে
(c) অষ্টমী তিথিতে
(d) সপ্তমী তিথিতে
উত্তর – (a) অমাবস্যা তিথিতে
20. প্রতিযোগ অবস্থানের সময় থাকে—
(a) পূর্ণিমা তিথি
(b) অমাবস্যা তিথি
(c) সপ্তমী তিথি
(d) অষ্টমী তিথি
উত্তর – (a) পূর্ণিমা তিথি
21. জোয়ার ও ভাটার প্রত্যেকের স্থায়িত্বকাল প্রায়—
(a) দুঘণ্টা
(b) ছয় ঘণ্টা
(c) চার ঘণ্টা
(d) আট ঘণ্টা
উত্তর – (b) ছয় ঘণ্টা
22. চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ন দূরত্বের অবস্থান—
(a) পেরিজি
(b) অ্যাপোজি
(c) সিজিগি
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) পেরিজি
23. পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব সর্বাধিক হলে তাকে বলে—
(a) সিজিগি
(b) পেরিজি
(c) অ্যাপোজি
(d) অপসূর
উত্তর – (c) অ্যাপোজি
24. বান ডাকে কোন্ নদীতে? —
(a) হুগলি নদীতে
(b) টেমস নদীতে
(c) আমাজন নদীতে
(d) উপর্যুক্ত সব নদীতে
উত্তর – (d) উপর্যুক্ত সব নদীতে
25. কোনো স্থানে জোয়ারভাটার মধ্যে ন্যূনতম ব্যবধান—
(a) 24 ঘণ্টা 52 মিনিট
(b) 12 ঘণ্টা 26 মিনিট
(c) 6 ঘণ্টা 13 মিনিট
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) 6 ঘণ্টা 13 মিনিট
26. প্রদত্ত কোন্ নদীতে জোয়ার দেখা যায় না? —
(a) যমুনা নদীতে
(b) গোদাবরী নদীতে
(c) নর্মদা নদীতে
(d) গঙ্গা নদীতে
উত্তর – (a) যমুনা নদীতে
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. নদনদীর জল যেদিকে প্রবাহিত হয় সেই দিকে ………. টান শুরু ।
উত্তর – ভাটার
2. পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের জন্য ……….. হয়।
উত্তর – গৌণ জোয়ার
3. কোনো স্থানে ভরা জোয়ার প্রতি ……… দিনে একবার হয়।
উত্তর – 14
4. ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল প্রবলবেগে মোহানা দিয়ে নদীতে প্রবেশ করে, একে …….. বলা হয়।
উত্তর – বান
5. পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব অপেক্ষা সূর্যের দূরত্ব ……… গুণ বেশি।
উত্তর – 389
6. পৃথিবীর ………. বলের প্রভাবে গৌণ জোয়ার সৃষ্টি হয়।
উত্তর – কেন্দ্রাতিগ
7. মুখ্য জোয়ার হয় ……… আকর্ষণে।
উত্তর – চাঁদের
৪. পৃথিবীর ওপর চন্দ্রের আকর্ষণ সূর্য অপেক্ষা ……… গুণ বেশি।
উত্তর – 2.2
9. তামিল ‘কাডাল’ (কোটাল) শব্দের অর্থ ………..।
উত্তর – সমুদ্র
10. শুক্ল ও কৃয় পক্ষের ……….. তিথিতে মরা জোয়ার হয়।
উত্তর – অষ্টমী
11. অমাবস্যা তিথির সিজিগি অবস্থানকে ……….. অবস্থান বলে।
উত্তর – সংযোগ
12. চাঁদের প্রত্যক্ষ প্রভাবে হওয়া জোয়ার হল ………. জোয়ার।
উত্তর – মুখ্য
13. প্রত্যহ ……….. জোয়ার ও ………. ভাটা হয়।
উত্তর – দু-বার, দু-বার
14. একমাত্র ………… জোয়ারের সময় নদীতে বান ডাকে।
উত্তর – ভরা
15. চাঁদের আকর্ষণে সৃষ্ট জোয়ারকে ……….. জোয়ার বলে।
উত্তর – চান্দ্ৰ
16. চাঁদ একদিনে তার কক্ষপথে প্রায় ……….. পথ অতিক্রম করে।
উত্তর – 13°
17. জোয়ারভাটা অতি প্রবল হয় ……….. তিথিতে।
উত্তর – অমাবস্যা
18. জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুযায়ী চন্দ্র, পৃথিবী ও সূর্যের সরলরৈখিক অবস্থানকে ……….. বলে।
উত্তর – সিজিগি