wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 4 বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 4 বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 4 বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

West Bengal Board 10th Geography Solutions

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. বর্জ্যের ধারণা: ‘বর্জ্য’ কথাটির অর্থ ‘যা বর্জনযোগ্য। যে-কোনো কঠিন, তরল কিংবা গ্যাসীয় পদার্থ, যেগুলি আমাদের কাজে লাগে না, অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেগুলিকেই বলে বর্জ্য পদার্থ।
  2. বর্জ্যের প্রকারভেদ বর্জ্য পদার্থ তিনপ্রকার, যথা— (1) কঠিন বর্জ্য (যেমন—ভাঙা কাচ, ধাতব টুকরো, ভাঙা প্লাস্টিক ইত্যাদি), (2) তরল বর্জ্য (যেমন—পোড়া তেল, প্রাণীর মলমূত্র, সাবান ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল প্রভৃতি) এবং (3) গ্যাসীয় বর্জ্য (যেমন—সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড প্রভৃতি)। বিষক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে বর্জ্য পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়— (1) বিষাক্ত বর্জ্য (যেমন—পারদ, বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক পদার্থ প্রভৃতি) এবং (2) বিষহীন বর্জ্য (যেমন—ছেঁড়া কাপড়, ফলের খোসা, ছেঁড়া কাগজ প্রভৃতি।
  3. বর্জ্য পদার্থের উৎস: প্রধানত সাতটি ক্ষেত্র থেকে বর্জ্য পদার্থের সৃষ্টি হয়। এগুলি হল— (1) গৃহস্থালির বর্জ্য: শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, পলিথিন ব্যাগ ইত্যাদি, (2) শিল্প বর্জ্য: চামড়া কারখানার ক্রোমিয়াম যৌগ, (3) কৃষিজ বর্জ্য : সার ও কীটনাশক ধোয়া জল, গাছের গোড়া প্রভৃতি, (4) পৌরসভার বর্জ্য: ভাঙা শিশি-বোতল, টুকরো প্লাস্টিক প্রভৃতি, (5) জৈব বর্জ্য: মাছের উচ্ছিষ্ট, মাংস উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত পশুর দেহাবশেষ প্রভৃতি, (6) চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য: পরিত্যক্ত সুচ, সিরিঞ্জ, গজ, ব্যান্ডেজ প্রভৃতি এবং (7) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য: পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ছাই, ভারী জল প্রভৃতি।
  4. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে।
  5. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি: কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি হল – (1) বর্জ্য পৃথকীকরণ, (2) ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিল এবং (3) কম্পোস্টিং। এ ছাড়া নিকাশি পদ্ধতির মাধ্যমে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা এবং স্ক্রাবারের মাধ্যমে গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হয়।
  6. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা: শিক্ষার্থীরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কতকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যেমন— (1) বর্জ্য সম্পর্কে নিজে যেমন সচেতন হবে তেমনই অন্যদেরও সচেতন করবে, (2) বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ কমানোর ব্যবস্থা করবে, (3) বাড়ি, বিদ্যালয়, রাস্তা প্রভৃতি স্থান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখবে, (4) বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হবে প্রভৃতি।
  7. ভাগীরথী-হুগলি নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব: ভাগীরথী-হুগলি নদীর দুই তীরের অসংখ্য কলকারখানা ও পৌর এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ ভাগীরথী-হুগলি নদীতে চলে আসে। এর ফলে— (1) নদীর জল মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে, (2) নদীর নাব্যতা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে, (3) বেশি করে জলবাহিত রোগের সংক্রমণ ঘটছে। তবে বর্তমানে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, নমামি গঙ্গে প্রভৃতি কর্মসূচি রূপায়ণের মাধ্যমে ভাগীরথী-হুগলি নদী-সহ সমগ্র গঙ্গানদীকেই দূষণমুক্ত করার প্রচেষ্টা চলেছে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. বাড়ির বা গৃহস্থালির বর্জ্যের ধারণা দাও।
উত্তর – বাড়ির বা গৃহস্থালির বর্জ্যের ধারণা : বাড়িতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় যে-কোনো কঠিন, তরল কিংবা গ্যাসীয় পদার্থ, যেগুলি আমাদের কোনো কাজে লাগে না, অর্থাৎ ফেলে দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলিকেই বাড়ির বা গৃহস্থালির বর্জ্য পদার্থ বলে।
শ্রেণিবিভাগ : বাড়ির এই সকল বর্জ্যকে তিনভাগে ভাগ করা যায়—
  1. কঠিন বর্জ্য: বাড়িতে অনেক ধরনের কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এগুলির মধ্যে কিছুটা জৈব ভঙ্গুর এবং কিছুটা জৈব অভঙ্গুর।
    1. জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য: রান্নাঘরে সবজির খোসা, খাবারের অবশিষ্ট অংশ, বাসি ফুল, ছেঁড়া কাপড়, পুরোনো ক্যালেন্ডার, খবরের কাগজ, ব্যবহৃত চা পাতা ইত্যাদি জীব বিশ্লেষ্য বা জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য।
    2. জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য : সাবানের গুঁড়ো, বাতিল টেলিভিশন, নষ্ট মোবাইল, ক্যামেরা, ভাঙা কাপ-প্লেট, কাচের দ্রব্য, প্লাস্টিকের ব্যাগ ইত্যাদি হল জীব অবিশ্লেষ্য বা জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য।
  2. তরল বর্জ্য: স্নানঘরে ব্যবহৃত জল, রান্নাঘরে থালা-বাসন ধোয়া জল, জামাকাপড় কাচা জল এবং অন্যান্য তরল দ্রব্য হল বাড়ির তরল বর্জ্য।
  3. গ্যাসীয় বর্জ্য: রান্নাঘরের ধোঁয়া, উনুনের ধোঁয়া, ধূপের ধোঁয়া, সুগন্ধি স্প্রে প্রভৃতি থেকে গ্যাসীয় বর্জ্য সৃষ্টি হয়।
2. পরিবেশকে সুস্থিত রাখতে কীভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবে?
অথবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – পরিবেশকে সুস্থিত রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: বর্জ্য পদার্থগুলিকে শুধু অপসারণ বা স্থানান্তরণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ না করে প্রয়োজনমতো ওগুলির পরিমাণ হ্রাস, পুনর্ব্যবহার এবং পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। আর এটাই হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি হল তিনটি R (3R) যথা Reduce বা পরিমাণ হ্রাস, Reuse বা পুনর্ব্যবহার এবং Recycle বা পুনর্নবীকরণ।
  1. পরিমাণ হ্রাস (Reduce): বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্যই হল কম আবর্জনা উৎপাদন করা। এই লক্ষ্যে জিনিসপত্রের অপচয় বন্ধ করে, জীবনযাত্রার পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কম বর্জ্য সৃষ্টি করতে হবে।
  2. পুনর্ব্যবহার (Reuse): নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে পরিত্যক্ত দ্রব্য পুনরায় ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন—বাতিল জলের বোতল থেকে ঘর সাজানোর নানা দ্রব্য প্রস্তুত করা যায় বা পুরোনো জলের বোতলের সাহায্যে বাগানে জল দেওয়া প্রভৃতি কাজ করা যায়।
  3. পুনর্নবীকরণ (Recycle): এই পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী বস্তুতে পরিণত করা হয়। যেমন—জৈব আবর্জনাকে জৈব সারে পরিণত করে বাড়ির বাগানে ব্যবহার করা যায় বা পুরোনো খবরের কাগজ থেকে কাগজের মণ্ড তৈরি হয় বা ঠোঙা তৈরি করা যায়। এ ছাড়া উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হতে পারে।
3. বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস কীভাবে করা যায় ?
উত্তর – বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাসের পদ্ধতি: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ হ্রাস করা। এজন্য কতকগুলি উপায় অবলম্বন করা প্রয়োজন, যেমন— (1) জিনিসপত্রের উৎপাদন ও ব্যবহার তথা ভোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। (2) জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে চাহিদাকে সীমিত রাখা। (3) জিনিসপত্রের অপচয় বন্ধ করা। (4) কলকারখানায় প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে বর্জ্য পদার্থের নির্গমন হ্রাস করা। (5) ব্যবহৃত জিনিস সরাসরি ফেলে না দিয়ে সেগুলি অন্য কাজে ব্যবহার করা। (6) একই দ্রব্য যাতে বারে বারে বা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়, তাই মজবুত ও টেকসই দ্রব্য উৎপাদন ও ব্যবহার করা। (7) জৈব ভঙ্গুর তথা পরিবেশবান্ধব জিনিপত্রের ব্যবহার বাড়ানো। (8) প্রয়োজনের অতিরিক্ত দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করা। (9) গৃহস্থালি, বিদ্যালয়, কলকারখানা, অফিস-আদালত-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাতে বেশি বর্জ্য পদার্থ তৈরি না হয়, সেদিকে নজর রাখা ও সকলকে সচেতন করা। (10) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি।
4. বিদ্যালয়ে আমরা কী কী ধরনের বর্জ্যের সম্মুখীন হই?
উত্তর – বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য: বিদ্যালয়ে আমরা নানা ধরনের বর্জ্যের সম্মুখীন হই, যেমন—
  1. কঠিন বর্জ্য: বিদ্যালয়ে কঠিন বর্জ্যের মধ্যে জৈব ভঙ্গুর এবং কিছু পরিমাণ জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের সৃষ্টি হয়। যেমন—
    1. জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য : মূলত খাবারের বাতিল অংশ হল বিদ্যালয়ের জৈব ভঙ্গুর বা জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্য। এ ছাড়া কাগজের টুকরো, ভাঙা চক, চকের গুঁড়ো প্রভৃতি হল অন্যান্য জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য।
    2. জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য: পেনের রিফিল, পেন, প্লাস্টিক, জলের বোতল এ সবই হল বিদ্যালয়ের জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য।
  2. তরল বর্জ্য: বিদ্যালয়ের শৌচাগারে ব্যবহৃত জল এবং হাত-মুখ ধোয়া জল তরল বর্জ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
5. বর্জ্যের উৎস সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – বর্জ্যের উৎস: আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বিভিন্ন স্থান থেকে বর্জ্য পদার্থের উৎপত্তি হয়। তার মধ্যে প্রধানত 7 প্রকার মাধ্যম থেকে বেশি পরিমাণে বর্জ্য সৃষ্টি হতে পারে, যথা—
  1. গৃহস্থালির বর্জ্য: গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে সৃষ্ট গৃহস্থালির বর্জ্যগুলি হল ফল ও সবজির খোসা, প্লাস্টিক, কাচ প্রভৃতি।
  2. শিল্পজাত বর্জ্য: শিল্প কারখানা থেকে সৃষ্ট শিল্পজাত বর্জ্যগুলি হল চামড়া, কারখানার ক্রোমিয়াম যৌগ প্রভৃতি।
  3. কৃষিজ বর্জ্য: কৃষিকাজের মাধ্যমে সৃষ্ট কৃষিজ বর্জ্যগুলি হল নারকেলের ছোবড়া, ফসলের অবশিষ্টাংশ প্রভৃতি।
  4. পৌর বর্জ্য: পৌরসভার কার্যকলাপের দ্বারা সৃষ্ট পৌর বর্জ্যগুলি হল ডাবের খোলা, ধাতব টুকরো, প্লাস্টিক বোতল প্রভৃতি।
  5. জৈব বর্জ্য: ফুল, ফল, গাছের ডাল, পাতা, পোলট্রি ফার্ম ও খাটালের আবর্জনা, মৃত পশুপাখির দেহ প্রভৃতি হল জৈব বর্জ্য।
  6. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য: চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত ব্যান্ডেজ, তুলো প্রভৃতি হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য।
  7. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য: পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ছাই হল তেজস্ক্রিয় বর্জ্য।
    যদিও অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যকে পৌর বর্জ্য এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্যকে শিল্পজাত বর্জ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
6. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য পদার্থ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য পদার্থ : হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে যে বর্জ্য উৎপাদিত হয়, সেইসব বর্জ্যকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য বলে। এইসব বর্জ্যগুলি ঠিকমতো বা নিয়মানুযায়ী অপসারিত না হলে এর থেকে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রকারভেদ : চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় — (1) সংক্রামক বর্জ্য ও (2) অসংক্রামক বর্জ্য।
  1. সংক্রামক বর্জ্য: মোট চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের প্রায় 10-12 শতাংশ বর্জ্য হল সংক্রামক বর্জ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—[i] ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, ছুরি, কাঁচি, ব্লেড, ক্যাথিটার প্রভৃতি, [ii] প্যাথোলজিক্যাল বা অপারেশন সংক্রান্ত আবর্জনা, [iii] তুলো, গজ, বিভিন্ন ধরনের কাপড়, ব্যান্ডেজ, মানব অঙ্গের বিচ্ছিন্ন অংশ, [iv] চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ প্রভৃতি।
  2. অসংক্রামক বর্জ্য: চিকিৎসা সংক্রান্ত আবর্জনার প্রায় 90 শতাংশই এই জাতীয় বর্জ্য। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –[i] প্লাস্টিক, খাবারের প্লাস্টিক থালা, ওষুধের মোড়ক, [ii] রোগীদের না খাওয়া খাবার, [iii] অফিসের আবর্জনা, কাগজ, শুকনো ফুল, ফল ইত্যাদি।
7. পরিবেশের কঠিন বর্জ্যের ধারণা দাও।
উত্তর – পরিবেশের কঠিন বর্জ্য : দৈনন্দিন কাজকর্মের ফলে উৎপন্ন আপাতভাবে অপ্রয়োজনীয় ও ব্যবহারের অযোগ্য কঠিন পদার্থসমূহকে বলা হয় কঠিন বর্জ্য।
বিভিন্ন ধরনের কঠিন বর্জ্য: আমাদের বাড়ি, অফিস, কলকারখানা, স্কুল প্রভৃতি জায়গা থেকেই কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
  1. গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্য: রান্নাঘরে সবজির খোসা, খাবারের বাতিল অংশ, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বাতিল হওয়া লেপ-কাঁথার অংশ, বাসি ফুল, ছেঁড়া কাপড়, পুরোনো ক্যালেন্ডার, ভাঙা কাপ-প্লেট, কাচের টুকরো, পুরোনো জুতো, খবরের কাগজ, ব্যবহৃত চা পাতা প্রভৃতি গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের অন্তর্গত।
  2. কলকারখানার কঠিন বর্জ্য: কারখানার বাতিল যন্ত্রপাতি, ধাতুর টুকরো, ব্যবহার করা প্লাস্টিক, শ্রমিকের খাবারের বাতিল অংশ, টায়ার, টিউব, ফ্লাই অ্যাশ ইত্যাদি কলকারখানার কঠিন বর্জ্যের মধ্যে পড়ে।
  3. কৃষিক্ষেত্রের কঠিন বর্জ্য: ধানের খোসা, আখের ছিবড়ে, খড়, কাঠের গুঁড়ো, পাটকাঠি, প্রাণীজ বর্জ্য, গোবর ইত্যাদি হল কৃষিক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত কঠিন বর্জ্য।
  4. চিকিৎসা সংক্রান্ত কঠিন বর্জ্য: সুচ, সিরিঞ্জ, কাঁচি, ছুরি, কাপড়, ব্যান্ডেজ, গজ, তুলো ইত্যাদি চিকিৎসা সংক্রান্ত কঠিন বর্জ্যের অন্তর্গত।
  5. নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য: ইট, কাঠ, বালি, সিমেন্ট, লোহার টুকরো, প্লাস্টিক, সেরামিক টালি ইত্যাদি হল নির্মাণ শিল্পের কঠিন বর্জ্য।
৪. পরিবেশের তরল বর্জ্যের উৎসের ধারণা দাও।
উত্তর – পরিবেশের তরল বর্জ্যের উৎসের ধারণী : দৈনন্দিন কাজকর্মের ফলে উৎপন্ন আপাতভাবে অপ্রয়োজনীয় ও ব্যবহারের অযোগ্য তরল পদার্থসমূহকে বলা হয় তরল বর্জ্য।
তরল বর্জ্যের উৎস: তরল বর্জ্যের উৎস বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন—
  1. গৃহস্থালির তরল বর্জ্য: রান্নাঘরে থালা-বাসন ধোয়া জল, ঘর মোছার জর নোংরা জল, শৌচাগারের জল, স্নানে ব্যবহার করা জল এবং জামাকাপড় কাচার পর অবশিষ্ট জল তরল বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত হয়।
  2. কারখানার তরল বর্জ্য: কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা গরম জল, বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত জল, তৈলাক্ত জল ইত্যাদি হল কারখানার তরল বর্জ্যের উদাহরণ।
  3. কৃষিক্ষেত্রের তরল বর্জ্য: কৃষিতে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে এসে নদীতে পড়ে। এগুলি হল কৃষিক্ষেত্রের তরল বর্জ্য।
9. পরিবেশে গ্যাসীয় বর্জ্যের ধারণা দাও।
উত্তর – পরিবেশে গ্যাসীয় বর্জ্যের ধারণা: সাধারণত কলকারখানা, যানবাহন, বিভিন্ন গবেষণাগার ইত্যাদি থেকে নির্গত বিভিন্ন গ্যাস, যা পরিবেশের ক্ষতি করে, সেইসব গ্যাসীয় পদার্থসমূহকে গ্যাসীয় বর্জ্য বলে।
বিভিন্ন প্রকার গ্যাসীয় বর্জ্য : গ্যাসীয় বর্জ্য বর্তমানে পরিবেশের তথা জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এইসব গ্যাসীয় বর্জ্যের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড, সালফারের বিভিন্ন অক্সাইড, কার্বন
মনোক্সাইড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলি ছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে উৎপন্ন গ্যাসীয় বর্জ্যে বিভিন্ন ধাতব ও অধাতব পদার্থের সূক্ষ্মকণাও (কার্বন কণা, লেড ইত্যাদি) মিশ্রিত থাকে।
গ্যাসীয় বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব: এইসব গ্যাসীয় বর্জ্যগুলির প্রভাবে যেমন পৃথিবীর ক্রমশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গ্রিনহাউস এফেক্ট নামে পরিচিত, তেমন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবশরীরে ক্যানসার-সহ নানা ধরনের রোগব্যধির সৃষ্টি হয় ৷
10. পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত বর্জ্যগুলির ধারণা দাও।
উত্তর – পরিবেশের বিষাক্ত বর্জ্যসমূহ: পরিবেশের বিষাক্ত বর্জ্য মানুষের পক্ষে খুব হানিকর। এগুলি মানুষ এবং প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। এগুলি তিন ধরনের হয়—
  1. রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য ঘর ও মেঝে পরিষ্কার করার তরল পদার্থ, ইঁদুর ও পিঁপড়ে মারার বিষ এবং বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক এই ধরনের বিষাক্ত বর্জ্যের উদাহরণ।
  2. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য: এইসব বর্জ্য থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রধান উৎস হল পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র ও পারমাণবিক জ্বালানি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। এ ছাড়া অন্যান্য উৎসগুলি হল শিল্পজাত বর্জ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য। এই বর্জ্যগুলির প্রভাবে ক্যানসার হতে পারে। এমনকি জীবদেহের কোশের জিনগত পরিবর্তনও ঘটতে পারে।
  3. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য: ক্যাথিটার, ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, কাঁচি, মানব অঙ্গের বিচ্ছিন্ন অংশ, গজ, তুলো এবং চিকিৎসার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এ ধরনের বর্জ্যের উদাহরণ।
11. পৌরসভার বর্জ্য সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর – পৌরসভার বর্জ্য সম্পর্কে ধারণা : পৃথিবীর প্রতিটি শহরেই বর্জ্য উৎপাদিত হয়। ছোটো ছোটো শহরগুলির তুলনায় বড়ো বড়ো শহরগুলি বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পরিবেশে নির্গমন করে।
পরিমাণ: এর মধ্যে কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই প্রভৃতি ভারতের বড়ো শহরগুলি দৈনিক প্রায় 3000-5000 মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন করে।
উদাহরণ : এই সকল বর্জ্যের মধ্যে গাছের পাতা, খড়, শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, আধপোড়া কয়লা, ভাঙা মাটির ও কাচের পাত্র, ছেঁড়া কাগজ, ডাবের খোলা, পাথর, চামড়া, ধাতু, প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্র, হাড়-জাতীয় পদার্থ, ছাই, থার্মোকলের দ্রব্য, বাল্ব, নানা রকমের ইলেকট্রনিক দ্রব্য প্রভৃতি বর্জ্য হিসেবে জমা হয়। এ ছাড়া গৃহস্থালির তরল বর্জ্য, নর্দমার স্লাজ ইত্যাদিও পৌর বর্জ্যের অন্তর্গত।
12. জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য : জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য হল এমন এক ধরনের বর্জ্য, যা মূলত অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি) ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী প্রাণী দ্বারা বিশ্লেষিত হয় এবং অতি সহজেই সরল উপাদানরূপে প্রকৃতিতে মিশে যায়।
উদাহরণ: শাকসবজির খোসা, পাতা, শুকনো ফুল, বাড়ির বাগানের লতা-পাতা, ডাল, ডাবের খোলা, পুরোনো কাগজ, বইখাতা প্রভৃতি হল জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যের উদাহরণ।
সরল যৌগে রূপান্তর : এইসব বর্জ্যকে অর্থাৎ জটিল জৈব পদার্থকে সরল যৌগে পরিণত করার জন্য হাজার হাজার প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অমেরুদণ্ডী প্রাণী রয়েছে। জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যগুলি প্রধানত উদ্ভিদ ও প্রাণীজাত উপাদান হয়।
13. জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য কী? পরিবেশে এদের প্রভাব কেমন?
উত্তর – জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য: যেসব বর্জ্য জীব দ্বারা বা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষিত হয় না, ফলে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায়, সেগুলি জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য নামে পরিচিত।
প্রকারভেদ: এগুলি দুই ধরনের হয়—
  1. বিষাক্ত বর্জ্য: অব্যবহার্য রং, রাসায়নিক পদার্থ, বালা্র, টিউব, সি এফ এল বাল্ব, কীটনাশক প্রভৃতি এই ধরনের বর্জ্য।
  2. পুনর্নবীকরণযোগ্য বর্জ্য: প্লাস্টিক, শ্যাম্পুর পাতা, নানা ধরনের বোতল, বিদ্যুতের তার, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা প্রভৃতি ধাতব সামগ্রী এ জাতীয় বর্জ্য।
পরিবেশে জৈব ও অভঙ্গুর বর্জ্যের প্রভাব: জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য অবিশ্লেষ্য বলে বহু দিন প্রকৃতিতে একই অবস্থায় থেকে যায়। তাই এগুলি পরিবেশে বিপদের কারণ। তবে বর্তমানে এই ধরনের বেশ কিছু বর্জ্য পদার্থকে আলাদা করে নিয়ে সেগুলি দিয়ে বিভিন্ন পুনর্নবীকরণ বা পুনরাবর্তনশীল পদ্ধতিতে ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে তেমন সম্পদ পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে।
14. জীবের স্বাস্থ্যের ওপর বর্জ্য কী প্রভাব ফেলে?
উত্তর – জীবের স্বাস্থ্যের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব: হাসপাতাল, নার্সিংহোম-সহ বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা প্রভৃতি থেকে নির্গত বর্জ্য নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে— (1) কৃমি, (2) ফুসফুসের রোগ, (3) টিটেনাস, (4) হেপাটাইটিস-বি, (5) পেপটিক আলসার, (6) নানা ধরনের চামড়ার রোগ, (7) নানা ধরনের পেটের রোগ, (8) জন্ডিস, (9) চোখের অসুখ, (10) টাইফয়েড ও আরও অন্যান্য সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে। উপযুক্ত সময়ে বর্জ্য সরিয়ে না নিলে ইঁদুর, ছুঁচো ও অন্যান্য জীবাণু বাহকদের সংখ্যা বেড়ে যায় ও রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়। এ ছাড়া এইসব বর্জ্য স্তূপাকারে রাস্তার ধারে জমে থাকলে তা দৃশ্যদূষণও ঘটায়।
15. ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ পদ্ধতিতে কী কী সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে?
উত্তর – ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা : ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ পদ্ধতিতে সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও রয়েছে।
সুবিধা
  1. রোগজীবাণুর সংক্রমণ না হওয়া : মাটির মধ্যে ঢাকা দেওয়া থাকে বলে বর্জ্য থেকে কোনো রোগজীবাণু বায়ুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
  2. দুর্গন্ধহীন পরিবেশ: বর্জ্য ঢাকা দেওয়া থাকে বলে বায়ুদূষণ হয় না, তাই পরিবেশ দুর্গন্ধহীন থাকে।
  3. ল্যান্ডফিল গ্যাস : ঢাকা দেওয়া জৈব বর্জ্য পদার্থের পচন ঘটলে মিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি নানা ধরনের গ্যাস উৎপন্ন হয়। ওই গ্যাস আলাদা করে সংগ্রহ করা যায়। একে ল্যান্ডফিল গ্যাস বলে। এতে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকে, যা জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধা
  1. ভূগর্ভস্থ জলস্তরের দূষণ: অনেকসময় চাপা দেওয়া বর্জ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে মাটির নীচে চলে যায়। ফলে নীচের স্তরের মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলস্তর দূষিত হয়। এই বর্জ্য ধোয়া জলকে লিচেট বলে।
  2. বায়ুদূষণ : ল্যান্ডফিলের ফলে উৎপন্ন গ্যাস সংগ্রহ করতে না পারলে সেই গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়।
  3. ভূমির প্রয়োজন: ল্যান্ডফিলের জন্য বিশাল ভূমির প্রয়োজন হয়।
16. উন্মুক্তভাবে বর্জ্য জমা বা ওপেন ডাম্পিং বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – উন্মুক্তভাবে বর্জ্য জমা বা ওপেন ডাম্পিং : মূল শহর থেকে দূরে কোনো ফাঁকা নীচু জায়গায় নগরের দৈনিক বর্জ্য পদার্থ জমা করা হয়। এইভাবে উন্মুক্ত স্থানে জমা করা জঞ্জাল বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনকে ওপেন ডাম্পিং বলে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার জন্য কোনো পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না এবং খরচও তেমন নেই। অনেকসময় ওইসব বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ক্ষতিকর দিক: কিন্তু এই পদ্ধতির অনেকগুলি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন— (1) বৃষ্টির জল ওই বর্জ্য ধোয়া জল হিসেবে পরিবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে দূষিত করে। (2) উন্মুক্তভাবে পড়ে থাকে বলে অসম্ভব দুর্গন্ধ ছড়ায়। (3) মশা, মাছি, ইঁদুর, বর্জ্যভুক পাখির আগমন ঘটে, যা থেকে নানাবিধ রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। (4) ওই বর্জ্য পোড়ালে বায়ুদূষণ ঘটে।
17. বর্জ্য পদার্থকে কীভাবে ভস্মীভূত করা হয় ?
উত্তর – বর্জ্য পদার্থকে ভস্মীভূত করার পদ্ধতি: কঠিন বর্জ্যকে উচ্চ তাপে ও চাপে ভস্মীভূত করা হয়। সাধারণত শিল্পাঞ্চলগুলিতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। দাহ্য বস্তু পুড়ে গেলে তা থেকে পোড়া ছাই, ধাতু, কাচ ইত্যাদি নিষ্কাশন করা হয়। যেখানে অন্যান্য পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ নেই, সেখানেই ভস্মীভূতকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ হয়। এ ছাড়া রাসায়নিক কারখানায় বর্জ্য হিসেবে আলকাতরা, আঠালো পেট্রোলিয়াম-জাতীয় বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়। ওইসব বর্জ্য পুড়িয়ে যে তাপ সৃষ্টি হয় তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তবে বর্জ্য পদার্থকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেললে বায়ুদূষণ ঘটে। বাতাসে প্রচুর ফ্লাই অ্যাশ, কার্বন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড এবং নানা জৈব অ্যাসিড উৎপন্ন হয় যা পুকুর, নদী, নালা, খাল, বিল, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর সব ধরনের জলভাগকেই দূষিত করার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি সাধন করে।
18. বর্জ্য কীভাবে জলদূষণ ঘটাচ্ছে?
উত্তর – বর্জ্য থেকে জলদূষণ: বর্জ্য পদার্থ জলদূষণও ঘটায়। পৃথিবীর প্রায় 70 নিক্ষেপ করে। পুকুর, নদী, নালা, খাল, বিল, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর—সব শতাংশ স্থান জলাবৃত থাকলেও মানুষ এই জলভাগেও প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য ধরনের জলভাগেই বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে সর্বত্রই জলদূষণ ঘটছে। জলের দূষণের ফলে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের শরীরেও নানাপ্রকার জলঘটিত রোগব্যাধি ঘটছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি উন্নত দেশও সমুদ্রে বর্জ্য নিক্ষেপ করছে যা জলজ বাস্তুতন্ত্রকে বিঘ্নিত করছে। জলজ প্রাণীদের অপমৃত্যু ঘটছে, তাদের প্রজনন বাধা পাচ্ছে ও জলজ বাস্তুতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে পড়ছে।
19. ‘ওশান ডাম্পিং’-এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি কী কী?
উত্তর – ‘ওশান ডাম্পিং’-এর ক্ষতিকর প্রভাব : সমুদ্রে বর্জ্য নিক্ষেপ করাকে ওশান ডাম্পিং বলে। ‘ওশান ডাম্পিং’-এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি হল—
  1.  সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত: সমুদ্রের জলে তেল বা তেলজাত পদার্থ নিক্ষেপ করলে প্রাণী প্লাংকটন-সহ সামুদ্রিক জীবের শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। জলের ওপর তেলের স্তর পড়লে সূর্যালোক সমুদ্রের জলের ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। এজন্য ফাইটোপ্লাংকটন-সহ সামুদ্রিক উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
  2. মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি: সমুদ্রের জলে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করলে সেইসব বর্জ্য আবর্জনা সামুদ্রিক মাছ খেয়ে বিষাক্ত হয়ে যায়। এরপর সেই মাছ মানুষ খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
  3. অক্সিজেন হ্রাস: আবর্জনা সমুদ্রে ফেললে সমুদ্রজলের অক্সিজেন ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। যার ফলে সমুদ্রে বসবাসকারী সিল, ডলফিন, সার্ক প্রভৃতি প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
  4. সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু: প্লাস্টিক বোতল বা ব্যাগ সমুদ্রের জলে ফেললে সামুদ্রিক প্রাণীরা ভুল করে তা খেয়ে মৃত্যুর কবলে পড়ে।
20. মৃত্তিকার ওপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর – মৃত্তিকার ওপর বর্জ্যের প্রভাব : বর্জ্য পদার্থ মাটিদূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকানেয়—
  1. মাটির স্বাভাবিক চরিত্র নষ্ট: ডিটারজেন্ট পাউডার, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মাটির সাথে মিশে তার স্বাভাবিক চরিত্রকে নষ্ট করে দেয়। মাটির উপকারী প্রাণী, জীবাণু, উদ্ভিদকে ধ্বংস করে।
  2. মাটিদূষণ: কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত দুষিত বর্জ্য (যেমন— সিসা, মলিবডেনাম প্রভৃতি) মাটিতে ভয়ানক দূষণ ঘটায়।
  3. মাটির চরিত্র বদল: জৈব অবিশ্লেষ্য পদার্থ যেমন পলিথিন, প্লাস্টিক প্রভৃতি মাটিতে জমা হয়ে মাটির চরিত্র বদলে দেয়।
  4. মাটিকে বিষাক্তকরণ: পরমাণু বিস্ফোরণ ও পরমাণু শক্তিকেন্দ্রের বর্জ্য মাটিকে বিষাক্ত ও বন্ধ্যা করে দেয়। মাটির তেজস্ক্রিয় দূষণ মাটিকে কয়েক হাজার বছর ধরে বিষাক্ত করে রাখে।
  5. অ্যাসিড বৃষ্টি সংগঠন: কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে, যা মাটিকে দূষিত করে।
21. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 3R কথাটির অর্থ কী?
উত্তর – বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 3R-কথাটির অর্থ: সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক 2 নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখোঁ।
22. ভরাটকরণ কী?
অথবা, ল্যান্ডফিল বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিল : কোনো উন্মুক্ত নীচু জায়গা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা ভরাট করার পদ্ধতিকে ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ বলে। সংগ্রহ করা বর্জ্য পদার্থকে নষ্ট করতে ভরাটকরণ বা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (sanitary landfill) খুব গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
প্রক্রিয়া: (1) এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনার জৈব অংশকে আলাদা করে একটি স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয়। ওই জৈব স্তরের উচ্চতা 2 মিটারের মতো হয়। (2) এর ওপর 20-25 সেমি মাটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এইভাবে এক স্তর কঠিন জৈব বর্জ্য এবং এক স্তর মাটি দিয়ে ক্রমান্বয়ে অনেকগুলি স্তর তৈরি করা হয়। (3) তবে সবার ওপরে থাকে একটি পুরু মাটির স্তর, যাতে ইঁদুর জাতীয় কোনো প্রাণী এতে সরাসরি গর্ত করতে না পারে।
পচন : মাটির নীচে থাকা বর্জ্যগুলি জৈব ভঙ্গুর বলে এদের পচন হয় এবং তার ফলে এগুলির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব ধর্মের পরিবর্তন ঘটে।
ল্যান্ডফিল গ্যাস সৃষ্টি: এই প্রক্রিয়া চলার সময় মিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাসগুলিকে ল্যান্ডফিল গ্যাস বলে।
জমি ভরাটকরণ: 4-6 মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হয় এবং তখন অবশিষ্ট হিসেবে যা পড়ে থাকে, সেগুলি দিয়ে নীচু জমি ভরাট করা হয়।
পূর্ব কলকাতার ধাপায় এই পদ্ধতিতে নীচু জমি ভরাট করে উর্বর কৃষিজমিতৈরি হয়েছে।
সুবিধা: এই পদ্ধতিটির সুবিধা হল বর্জ্য পদার্থগুলি মাটি দিয়ে ঢাকা থাকে বলে বর্জ্যজাত দূষণে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।
অসুবিধা : অসুবিধা হল একই জায়গায় বর্জ্যগুলি জমে থাকার ফলে বৃষ্টি হলেতা থেকে নোংরা দূষিত জল চুইয়ে চুইয়ে আশেপাশের জলাশয়েও ভূগর্ভস্থ জলস্তরে মিশে পানীয় জলের দূষণ ঘটাতে পারে। বর্জ্য ধোয়া ওই দুষিত জলকে লিচেট বলে।
23. বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থ পোড়ানোর আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থ পোড়ানোর আধুনিক পদ্ধতি: বর্জ্যকে উন্মুক্ত পরিবেশে পোড়ানো খুব ক্ষতিকর। তাই আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে, বিপজ্জনক বর্জ্যকে ভস্মীভূত করা হয়। যদিও এই পদ্ধতি খুব ব্যয়বহুল তবুও এটি পরিবেশ হিতকর প্রযুক্তি। সাধারণত এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য-সহ কিছু বিপজ্জনক বর্জ্য পোড়ানো হয়। আবর্জনা পোড়ানোর সময় যে উচ্চতাপ উৎপন্ন হয়, তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাজে লাগিয়ে অনেকসময় ব্যয়ভার কিছুটা কমানো হয়।
এই পদ্ধতিতে উচ্চচাপে এবং উচ্চতাপেও সব বর্জ্য পদার্থকে সম্পূর্ণ পোড়ানো যায় না। কিছুটা অবশিষ্ট থেকেই যায়, বিশেষত কয়েক প্রকার ধাতু, কাচ প্রভৃতি। ওইসব বর্জ্য পরে সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহার করা হয় বা ভরাটকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
24. ম্যানিওর পিট বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ম্যানিওর পিট: ভারতের গ্রামাঞ্চলে বর্জ্য সংগ্রহ বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তেমন আধুনিক ব্যবস্থা নেই। তাই যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপ করার ফলে পরিবেশদূষণ ঘটে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ম্যানিওর পিট (manure pit) নামক নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।
প্রক্রিয়া : এই পদ্ধতিতে বাড়িসংলগ্ন জমিতে একটি গর্ত খনন করা হয়। এরপর প্রতিদিন সেই গর্তের মধ্যে জৈব জঞ্জাল, গোবর প্রভৃতি ফেলে তাকে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে গর্তটি ভরাট হয়ে গেলে তাকে স্থায়ীভাবে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হয়। এরপর পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সেই গর্তের বর্জ্য সারে পরিণত হয়। এই বর্জ্য সার কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
25. কম্পোস্টিং বা জৈব সার উৎপাদন পদ্ধতিটি কীভাবে কার্যকরী করা হয়?
উত্তর – ধারণা : কম্পোস্টিং হল ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু দ্বারা জৈব বর্জ্য থেকে জৈব সার বা হিউমাস উৎপাদনের একটি পদ্ধতি। এই জৈব সারকে কম্পোস্ট বা মিশ্র সার বলে। এভাবে উৎপন্ন জৈব সারে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফেট প্রভৃতি পুষ্টিকর উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে থাকে।
পদ্ধতিসমূহ: ভারতে প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে এই কম্পোস্টিং হয়। এগুলি হল—
  1. ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং: প্রথমে মাটিতে পরিখা বা ট্রেঞ্ঝের মতো একটি অগভীর লম্বা গর্ত করা হয় এবং তার মধ্যে নানা ধরনের জৈব বর্জ্য ফেলে তার ওপরে পয়ঃপ্রণালী ও গবাদিপশুর মলমূত্রের একটি স্তর তৈরি করা হয়। এর ওপর মাটি চাপা দিয়ে 15-20 দিন রেখে দিলে নীচের জৈব পদার্থ অবাত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। একেই ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং বলে।
  2. যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সৰাত কম্পোস্টিং: প্রথমে বর্জ্য পদার্থ থেকে ধাতুখণ্ড, কাচ প্রভৃতি আলাদা করা হয় এবং তারপর অবশিষ্ট জৈব বর্জ্য পদার্থকে যন্ত্রের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়। এরপর ওগুলির সঙ্গে মলমূত্র মেশানো হয় এবং শেষে ঘূর্ণায়মান যন্ত্রে রেখে সবাত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজন ঘটানো হয়। এইভাবে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বর্জ্য বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। এটি যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সবাত কম্পোস্টিং নামে পরিচিত।
26. ভাগীরথী-হুগলি কীভাবে দূষিত হচ্ছে?
উত্তর – ভাগীরথী-হুগলি নদীর জলদূষণের কারণ : প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবনরেখা। এই নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষিক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদীতে এসে পড়ার ফলে নদী আজ দূষিত। বিশেষ করে মোহানা থেকে 600 কিমি উত্তর পর্যন্ত অর্থাৎ ভাগীরথী-হুগলি নদীর পুরোটাতেই বর্জ্যের পরিমাণ সর্বাধিক। বিভিন্নভাবে এই ভাগীরথী-হুগলি নদীর জল দূষিত হচ্ছে। যেমন— (1) ভাগীরথী-হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত কলকারখানার কঠিন বর্জ্য, তরল নোংরা পদার্থ, বিষাক্ত বর্জ্য ইত্যাদি সরাসরি গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়। (2) ভাগীরথী-হুগলি নদীর পার্শ্ববর্তী কৃষিক্ষেত্রের কীটনাশক, জৈব বর্জ্য, ভূমিক্ষয়ের মাটি প্রভৃতি জলবাহিত হয়ে নদীতে মেশে। (3) মানুষ প্রতিদিন শুকনো ফুল, প্লাস্টিক, মৃত পশু এবং মূর্তি বিসর্জন দিয়ে ভাগীরথী-হুগলিকে দূষিত করে। (4) ভাগীরথী-হুগলির পার্শ্ববর্তী শহরের যাবতীয় নোংরা বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। (5) নদীতে যন্ত্রচালিত জলযান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় পোড়া মোবিল, ডিজেল,পেট্রোল প্রভৃতি নদীর জলে মিশে জলদূষণ ঘটাচ্ছে।
27. ভাগীরথী-হুগলি নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব লেখো।
উত্তর – ভাগীরথী-হুগলি নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব: গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী-হুগলি। গঙ্গা-সহ ভাগীরথী-হুগলি নদীর দুই তীরের অসংখ্য কলকারখানা এবং বসতি ও পৌর এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণে ময়লা জল, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি প্রতিদিন নদীতে এসে মিশছে। এ ছাড়াও নদীতে মানুষ ও জীবজন্তুর মৃতদেহ নিক্ষেপ, প্রতিমা নিরঞ্জন, পশুস্নান, ফুল-বেলপাতা-সহ নানা ধরনের আবর্জনা নিক্ষেপ, কৃষিজমি থেকে সার ও কীটনাশক ধোয়া জল ভাগীরথী-হুগলি নদীতে মিশছে। এর ফলে এই নদীতে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। যেমন—
  1. নদীর জলের দূষণ: নানা প্রকার বর্জ্য পদার্থ মেশার ফলে নদীর জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে জল সাংঘাতিকভাবে দূষিত হচ্ছে।
  2. নদীর নাব্যতা হ্রাস: নদীগর্ভে বর্জ্য পদার্থগুলি জমা হওয়ার ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পেয়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
  3. জলবাহিত রোগের সংক্রমণ:ভাগীরথী-হুগলির জল পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে তার মাধ্যমে নানা প্রকার জলবাহিত রোগের সংক্রমণ ঘটছে।
  4. জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি:বর্জ্যের মাধ্যমে নানা প্রকার বিষাক্ত পদার্থ নদীর জলে মিশে যাওয়ার ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ও জীবজগৎ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
  5. কৃষিকাজে ক্ষতি: নদীর দূষিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করার ফলে উৎপাদিত ফসলের গুণগত মানের অবনতি ঘটছে।
  6. নদী ভাঙন এবং বন্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি: বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে নদীরগভীরতা হ্রাস পাওয়ায় দুই তীরে ভাঙন এবং বিভিন্ন স্থানে বন্যারআশঙ্কা অনেক বেড়েছে।
28. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের কর্মসূচিগুলি কী কী?
উত্তর – গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের কর্মসূচিসমূহ: গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কর্মসূচিটি গৃহীত হয় 1985 সালে এবং রূপায়ণের কাজ শুরু হয় 1986 সালে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় 1995 সালে। এই প্ল্যানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল-
  1. গঙ্গায় পরিশোধিত জল ফেলা: প্রথম পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির 25টি শহরের পয়ঃপ্রণালীর জল পরিশোধন করে গঙ্গায় ফেলার ব্যবস্থা করা হয়।
  2. নজরদারির ব্যবস্থা: দূষিত জল যাতে সরাসরি গঙ্গায় না পড়ে, তার জন্য গভীর নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
  3. সারাবছর জলপ্রবাহ: গঙ্গানদীর জলপ্রবাহ যাতে সারাবছর বজায় থাকে তার ব্যবস্থা করা হয়।
  4. ইটভাটা গড়ে না ওঠা: গঙ্গানদীর তীরে কোনো ইটভাটা-জাতীয় কারখানা যাতে গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখা হয়।
  5. বর্জ্য নদীতে না ফেলা:গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত কারখানাগুলি যাতে নোংরা জল ও বর্জ্য নদীতে না ফেলে তার জন্য সজাগ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়।
29. ভাগীরথী-হুগলি নদীকে কেন আমরা দূষণমুক্ত করব?
উত্তর – ভাগীরথী-হুগলি নদীকে দূষণমুক্ত করার কারণ : ভাগীরথী-হুগলি নদীর জলকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে বিভিন্ন উদ্দেশ্য সফল হবে, যেমন—
  1. নদীর গভীরতা বৃদ্ধিতে: নদীর মধ্যে আবর্জনা পড়ে নদীগর্ভের যে গভীরতা হারিয়ে গেছে, পরিবেশকে দূষণমুক্ত করলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
  2. বাস্তুতন্ত্র রক্ষায়: ভাগীরথী-হুগলি নদীর জল দূষিত হওয়ার কারণে নানা ধরনের জলজ প্রাণীরা হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইলিশমাছ, শুশুক এবং অন্য প্রাণীদের আনাগোনা কমে গেছে। এতে বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে পুনরায় নদীতে জলজ প্রাণীদের ফিরিয়ে আনা যাবে এবং নদীর বাস্তুতন্ত্রও সুরক্ষিত থাকবে।
  3. পানযোগ্য করতে: পানীয় জলের উৎস হিসেবে ভাগীরথী-হুগলি নদীর জল আশেপাশের শহরগুলিতে ব্যবহৃত হয়। জলকে দূষণমুক্ত করতে পারলে অধিবাসীরা নিরাপদে জল পান করতে পারবেন।
  4. মাটিদূষণ নিয়ন্ত্রণে: নদীর দূষণ বন্ধ করতে পারলে নদী তীরবর্তী অঞ্চলকে মাটিদূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। ফলে কৃষির উন্নতি ঘটবে।
  5. কৃষি ও জলসেচে: গঙ্গার জলদূষণ রোধ করা গেলে পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিতে জলসেচ, বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদির সুবিধা হবে, যা কৃষি উন্নতির সহায়ক হতে পারে।
30. ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণ বাড়লে পরিবেশগত কী কী সমস্যা দেখা দেবে?
উত্তর – ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণের ফলে সৃষ্ট সমস্যা : ভাগীরথী-হুগলি নদীতে দূষণ বাড়লে যে যে সমস্যাগুলি দেখা যাবে সেগুলি হল—
  1. ব্যয় বৃদ্ধি:নদীর জলকে শোধন করে পানযোগ্য করতে আরও ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
  2. দূষণ বৃদ্ধি:নদীর বিষাক্ত জল সেচের কাজে ব্যবহার করা হলে জমি এবং কৃষিজ ফসলের দূষণ মাত্রা বেড়ে যাবে।
  3. প্রাণী মৃত্যু: নদীর জল যত দূষিত হবে মাছের দূষণও তত বাড়বে। নদীতে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণীরাও দ্রুত বিলুপ্ত হবে।
  4. বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি:বর্জ্য বা আবর্জনা যতই নদীর মধ্যে সঞ্চিত হবে ততই নদীর গভীরতা কমবে ও বন্যার প্রকোপ বাড়বে।
  5. নদীর ভাঙন বৃদ্ধি:বর্জ্য দূষণে নদীর ভাঙন বাড়বে। এর ফলে হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমির বিলুপ্তি ঘটবে। ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে।
  6. পরিবহণ ব্যবস্থায় বিঘ্ন:নদীতে ভাসমান নানা বর্জ্য নদীপথে পরিবহণ ব্যবস্থাতেও নানা ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করবে।
31. বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থগুলি কী কী ?
উত্তর – বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থ : মানুষ এবং জীবজগতের পক্ষে ক্ষতিকর বর্জ্যকে বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থ বলে।
শর্ত: সাধারণত সেইসব বর্জ্যকে বিপজ্জনক বর্জ্য বলা হবে যখন তার প্রজ্জ্বলিত হওয়ার ক্ষমতা থাকবে, সহজে বিক্রিয়া করতে পারবে, তেজস্ক্রিয়তা থাকবে, বিষাক্ত হবে এবং ক্ষয়কারী ক্ষমতা থাকবে।
উৎস : সাধারণত তৈলশোধনাগার, পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্ৰ, ধাতু নিষ্কাশন প্রক্রিয়া এবং রাসায়নিক দ্রব্য তৈরির কারখানা থেকে এ ধরনের বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়।
প্রকারভেদ: বিপজ্জনক রাসায়নিক বর্জ্যকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়-
  1. ভারী ধাতু: সিসা, জিঙ্ক, আর্সেনিক প্রভৃতি।
  2. পেট্রোলিয়াম শিল্পজাত দ্রব্য: গ্রিজ, গ্যাসোলিন, তেল প্রভৃতি।
  3. কৃত্রিম জৈব যৌগ: DDT, ডাইঅক্সিন প্রভৃতি।
  4. অ্যাসিড: কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে উৎপন্ন কার্বনিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড থেকে উৎপন্ন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রভৃতি।
  5. জৈবিক: ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ টক্সিন প্রভৃতি।
  6. তেজস্ক্রিয় দ্রব্যাদি: রেডিয়াম-140, কার্বন-14 ইত্যাদি হল বিপজ্জনক বর্জ্য।
32. পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করো।
অথবা, পরিবেশের উপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব : পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাবগুলি হল নিম্নরূপ —
  1. দৃশ্যদূষণ: যেখানে সেখানে বর্জ্য জমে থাকলে সেখানকার পরিবেশ দূষিত হয়। পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং ময়লা ও আবর্জনা দৃশ্যদূষণ ঘটায়।
  2. বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাব: কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্য জল মাটি ও বায়ুকে দূষিত করে। ওইসব পদার্থ পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে দেয়। বিভিন্ন শারীরিক রোগের সৃষ্টি করে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের নানারকম ক্ষতি সাধন করে।
  3. জমির উর্বরতা হ্রাস: কৃষি, গৃহস্থালি ও শিল্পকেন্দ্রের আবর্জনা কৃষিজমিতে পড়লে ওই জমির উর্বরতা হ্রাস-সহ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে যায়।
  4. জলের ওপর প্রভাব: বর্জ্য পদার্থ নদী, জলাশয় ও সাগরে পড়লে ওই জল দূষিত হয়ে যায় এবং জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ওপর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। মাছেদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং জলজ উদ্ভিদ ওপ্রাণীদের মৃত্যু হয়।
  5. বায়ুতে প্রভাব: বায়ুতে দূষিত বর্জ্য মিশলে বায়ুর দূষণ ঘটে, এমনকি বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়।
  6. জীববৈচিত্র্য ধ্বংস: বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাবে জলাভূমি ও বনভূমির জীববৈচিত্র্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
  7. মানুষের ওপর প্রভাব: কঠিন বর্জ্য থেকে টাইফয়েড, জন্ডিস, আন্ত্রিক, চামড়ার রোগ, ফুসফুসের রোগ ও অন্যান্য রোগের সংক্রমণ হয়।
33. বর্জ্য পদার্থ থেকে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে?
উত্তর – বর্জ্য পদার্থ থেকে সৃষ্ট সমস্যা : বর্জ্য পদার্থ থেকে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন—
  1. চিকিৎসার বর্জ্য থেকে সমস্যা: টিটেনাস, কৃমি, আমাশা, হেপাটাইটিস, এডস, চামড়ার রোগ, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
  2. কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য থেকে সমস্যা: কৃষিক্ষেত্রের আবর্জনা কৃষিক্ষেত্রের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে দিতে পারে। জমিতে প্লাস্টিক পড়ে থাকলে জমি কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কৃষিক্ষেত্র থেকে কৃমি, আমাশয়, ফুসফুসের রোগ, পেটের রোগ ও নানা ধরনের রোগব্যাধি ঘটতে পারে।
  3. কলকারখানার বর্জ্য থেকে সমস্যা: কলকারখানার তরল বর্জ্য নিকটবর্তী নদী, পুকুর ও খালে পড়লে ওই জল সম্পূর্ণরূপে দূষিত হয়। কলকারখানার বর্জ্য থেকে নিকটবর্তী অঞ্চলের মাটি দূষিত হয়।
  4. নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য থেকে সমস্যা: নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত সিমেন্ট ও বালি বায়ুদূষণ ঘটায়, মাটির উৎপাদন ক্ষমতা একেবারে কমিয়ে দেয়। এই কার্যে নিযুক্ত শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ ও পেটের রোগ বেড়ে যায়।
  5. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে সমস্যা: এই বর্জ্য পৃথিবীর সর্বাধিক ক্ষতিকর বর্জ্য। এই বর্জ্যের প্রভাবে বায়ুদূষণ ঘটে, ভৌমজল পানের অযোগ্য হয়ে যায়, মাটি দূষিত হয় এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের জিনগত পরিবর্তন হয়।
34. বর্জ্য পদার্থকে কীভাবে সম্পদে পরিণত করা যায় ?
উত্তর – বর্জ্য পদার্থের সম্পদে পরিবর্তন: মানুষের উন্নত চিন্তাভাবনা ও নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা যায়, যেমন—
  1. পুনর্ব্যবহার: বাড়ির পুরোনো কাগজ, ছেঁড়া কাপড়, বাতিল পদার্থ দিয়ে নতুন নতুন ঘর সাজানোর দ্রব্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা যায়।
  2. পুনর্নবীকরণ: ভাঙা কাচ, পুরোনো কাগজ, টায়ার, প্লাস্টিক প্রভৃতি দ্রব্য থেকে যথাক্রমে নতুন কাচ, নতুন কাগজ, পিচবোর্ড, কাগজের মণ্ড, নতুন টায়ার, প্লাস্টিক সামগ্রী প্রভৃতি তৈরি করা যায়।
  3. সার উৎপাদন: জৈব ভঙ্গুর পৌর আবর্জনা থেকে কম্পোস্টিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে দু-চার মাসের মধ্যে জৈব সার উৎপাদন করা যায়, যা কৃষিক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে।
  4. নীচু জমি ভরাট করা: নীচু জমি ভরাট করতে বর্জ্যের প্রয়োজন হয়। এতে খরচও কমে আবার বর্জ্যও সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়।
  5. রাস্তা তৈরি: বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই এবং জৈব অভঙ্গুর পদার্থ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এতে বর্জ্যের পরিমাণ যেমন কমছে, তেমনই বর্জ্যের ব্যবহার বাড়ছে।
  6. জ্বালানি: পয়ঃপ্রণালীর মলমূত্র, গোবর, পৌর আবর্জনা, শুকনো পাতা প্রভৃতি থেকে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গ্যাস উৎপাদন সম্ভব, যা জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
35. বর্জ্য জলকে কীভাবে শোধন করা যায় ?
উত্তর – বর্জ্য জলকে শোধন করার উপায় : বাড়ির নোংরা জল ও কারখানার বর্জ্য জলকে কতকগুলি পদ্ধতির মাধ্যমে শোধন করা যেতে পারে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
  1. প্রাথমিক শোধন: প্রথমে বর্জ্য জলে ভাসমান আবর্জনাকে ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর ওই বর্জ্য জলকে একটি বড়ো কক্ষে প্রবেশ করিয়ে সেখানে নুড়ি পাথর, বালি প্রভৃতিকে অধঃক্ষিপ্ত করানো হয়।
  2. দ্বিতীয় পর্যায় বা মাধ্যমিক বা জৈব শোধন: প্রথম কক্ষের শোধিত জলকে দ্বিতীয় কক্ষে পাঠানো হয়। এই পর্যায়ে জলের জৈবিকঅক্সিজেনের চাহিদা BOD (Biological Oxygen Demand) কমানো হয়। এই সময় জলের ওপরের স্তরে প্রচুর গাদ উৎপাদন হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় জলের ওপর থেকে গাদকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
  3. তৃতীয় বা অন্তিম পর্যায়: জৈব শোধনের পর জলকে বৃহৎ কোনো জলাধারে প্রবেশ করানো হয়। এই জলাধারে জল বেশ কয়েক সপ্তাহ থাকে, কারণ এই সময় জলে দ্রবীভূত নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও বিষাক্ত যৌগগুলি দূরীভূত হয়ে জল শোধিত হয়ে যায়।
36. কী কী পদ্ধতিতে কঠিন বর্জ্য পদার্থের অপসারণ করা হয়?
উত্তর – কঠিন বর্জ্য পদার্থ অপসারণের পদ্ধতি: বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে কঠিন বর্জ্য পদার্থের অপসারণ করা হয়, যেমন—
  1. খোলাস্থানে স্তূপীকরণ: শহর, নগরের কঠিন বর্জ্যগুলিকে শহরের বাইরে কোনো স্থানে স্তূপাকারে জমানো হয়। এটি প্রাচীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এতে পরিবেশ খুব দূষিত হয়।
  2. স্যানিটারি ল্যান্ডফিল: এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাটির নীচে পর্যায়ক্রমে জৈব বর্জ্য পদার্থ ও মাটির পরপর কয়েকটি স্তরে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত সজ্জিত করা হয়। মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকা ওই জৈব পদার্থ কালক্রমে বিয়োজিত হয়ে তা থেকে মিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি ল্যান্ডফিল গ্যাস উৎপন্ন হয়।
  3. কম্পোস্টিং: মাটিতে পরিখা বা ট্রেঞ্চের মতো লম্বা গর্ত করে তার মধ্যে নানা ধরনের জৈব বর্জ্য, পয়ঃপ্রণালী ও গবাদিপশুর মলমূত্র প্রভৃতি মিশিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই বর্জ্য পদার্থ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সারে পরিণত হয়। এ ছাড়া যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও জৈব বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়।
  4. পুড়িয়ে ফেলা: কোনো কোনো সময় সংগ্রহ করা বর্জ্যকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে যদিও প্লাস্টিক, পলিথিন প্রভৃতি দ্রব্য পোড়ালে ভয়ংকর বায়ুদূষণের সম্ভাবনা থাকে।
  5. ম্যানিওর পিট: বাড়ির আবর্জনা একটি গর্তের মধ্যে জমা করা হয়। গর্তটি আবর্জনাপূর্ণ হলে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পাঁচ-ছয় মাস পরে ওই আবর্জনা জৈব সারে পরিণত হয়।
37. কঠিন বর্জ্য পদার্থের পুনর্নবীকরণের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – কঠিন বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ: কঠিন বর্জ্যকে ঠিকমতো পুনর্নবীকরণ করতে পারলে বর্জ্যের পরিমাণ যেমন কমানো যায়, তেমনই পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখাও সম্ভব হয়, যেমন—
  1. ফ্লাই অ্যাশ: ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ও ইট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বাঁধ নির্মাণে, নীচু জমি ভরাট করতে ও রাস্তা নির্মাণেও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
  2. আখের ছিবড়ে বা বাগাসে: চিনিকলগুলিতে বর্জ্যরূপে প্রচুর পরিমাণ আখের ছিবড়ে উৎপন্ন হয়। ওই আখের ছিবড়ে থেকে কাগজের মণ্ড বানানো যায় যা দিয়ে কাগজ তৈরি হয়।
  3. কাচ: ভাঙা কাচ অন্যান্য বর্জ্য থেকে আলাদা করা যায়। ওইসব টুকরো কাচ থেকে অন্য ধরনের কাচের সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়।
  4. কাগজ: বাড়ির পুরোনো কাগজ, খবরের কাগজ প্রভৃতি থেকে অবাঞ্ছিত দ্রব্য সরিয়ে ফেলে আলাদা কাগজের মণ্ড প্রস্তুত করা যায়, যা দিয়ে কাগজের বোর্ড, কাগজের ব্যাগ ও অন্যান্য অসংখ্য দ্রব্য সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়।
  5. প্লাস্টিক: প্লাস্টিকদূষণ বর্তমানে একটি বড়ো পরিবেশগত সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে বর্জ্য প্লাস্টিক থেকে নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করা হচ্ছে।
  6. ধাতু: ধাতব বর্জ্য বলতে ভাঙা লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা ও অন্যান্য ধাতুখণ্ডকে বোঝায়। চৌম্বক পদ্ধতিতে ফেরাস ধাতুকে একত্র করে এবং নন-ফেরাস ধাতুকে পৃথক করে গলিয়ে পুনর্ব্যবহার করা হয়।
38. বর্জ্য পদার্থ থেকে কীভাবে শক্তি উৎপাদন করা যায় ?
উত্তর – বর্জ্য পদার্থ থেকে শক্তি উৎপাদন : পৃথিবীর নানা দেশে বর্জ্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে যেমন শক্তির সংরক্ষণ হয়, তেমনই বর্জ্যের কারণে পরিবেশের দূষণ কম হয়—
  1. জৈব পদার্থের দহনে উৎপন্ন শক্তি : [i] ধানের ছিবড়ে, গমের মণ্ড, আখের ছিবড়ে, জঙ্গলের কাঠকুটো এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য জ্বালিয়ে তাপ উৎপাদন করা যায়। ওই তাপ থেকে উন্নত চুল্লির সাহায্যে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। [ii] কঠিন বর্জ্য পদার্থকে সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে ভস্মীভূত করে তাপ শক্তি সংগ্রহ করা হয়।
  2. পাইরোলিসিস প্রক্রিয়ায় জ্বালানি উৎপাদন: অক্সিজেনবিহীন দহনকে পাইরোলিসিস প্রক্রিয়া বলে। এই পদ্ধতিতে কঠিন বর্জ্য পদার্থের অক্সিজেনবিহীন দহনের ফলে তাপীয় বিয়োজন ঘটে। এতে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ, জলে অদ্রাব্য তেল, মিথানল এবং অন্যান্য পদার্থ উৎপন্ন হয় এবং বর্জ্যের কঠিন অবশেষ পড়ে থাকে। এইসব কঠিন অবশেষকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  3. জৈব বর্জ্য থেকে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন: [i] গ্যাসিফায়ার যন্ত্রের মাধ্যমে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন: গ্যাসিফায়ার যন্ত্রের মাধ্যমে পৌর বর্জ্য, কৃষিজ বর্জ্য, গাছের ডাল-পাতা পোড়ানো হয়। ওইসব পদার্থ পোড়ানোর সময় যে গ্যাস উৎপন্ন হয় তা থেকে দাহ্য গ্যাস পাওয়া যায়। [ii] জৈব-রাসায়নিক পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্য থেকে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন: ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে জৈব-রাসায়নিক পদ্ধতিতে কঠিন জৈব বর্জ্য পদার্থ থেকে দাহ্য গ্যাস উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে জৈব বর্জ্য পদার্থের পচন ঘটিয়ে মিথেন গ্যাস উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে ল্যান্ডফিল এবং বায়োগ্যাস প্রকল্পের মাধ্যমেও দাহ্য গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে।
39. ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – স্বচ্ছ ভারত অভিযান: ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ বা ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ হল ভারত সরকার প্রবর্তিত একটি জাতীয় উদ্যোগ যার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দেশের প্রায় 4041টি শহর। এই পরিকল্পনায় শহরের রাস্তাঘাট, কলকারখানা ইত্যাদি পরিষ্কার করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সূচনা : 2 অক্টোবর, 2014 সালে সরকারিভাবে সর্বপ্রথম এই উদ্যোগ শুরু করেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এটি ভারতের সর্ববৃহৎ স্বচ্ছ অভিযান প্রকল্প যাতে প্রায় 30 লক্ষ সরকারি কর্মচারী এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে।
উদ্দেশ্য: 2 অক্টোবর, 2019 সালের মধ্যে অর্থাৎ গান্ধিজির 150তম জন্মদিনে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ভারতের রূপরেখা তৈরি করা এই অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য। এই অভিযানে গৃহীত পদক্ষেপগুলি হল— (1) উন্মুক্ত জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ বর্জন করা। (2) অস্বাস্থ্যকর শৌচাগারকে স্বাস্থ্যকর শৌচাগারে রূপান্তরিত করা। (3) পুরসভার দ্বারা কঠিন বর্জ্য পদার্থের 100% সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করা। (4) স্বাস্থ্যকর ও আবর্জনামুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং (5) পরিকল্পিতভাবে আবর্জনা নিষ্কাশন করতে শহরের স্থানীয় সংস্থাকে সাহায্য করা।
ব্যয় বরাদ্দ: এই অভিযানটি সফল করার জন্য 2019 সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে দেশের গ্রামীণ এলাকায় 12 কোটি শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এই প্রকল্পকে বাস্তবায়নের জন্য 1.94 লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
40. গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কী কী?
উত্তর – গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায় : প্রধানত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কলকারখানার গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এজন্য যে যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয় তার নাম স্ক্রাবার। এই স্ক্রাবার যন্ত্রে সাধারণত দু-ভাবে গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ বা নিষ্কাশন করা হয়, যথা—
  1. আর্দ্র স্ক্রাবিং এক্ষেত্রে কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, ধূলিকণা প্রভৃতি বায়ুদূষককে কোনো জলীয় দ্রবণের মধ্যে চালনা করে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করা হয়।
  2. শুষ্ক স্ক্রাবিং এই পদ্ধতিতে জলীয় দ্রবণ ছাড়াই বস্তুকণা ও দূষিত বাতাস স্ক্রাবারের মাধ্যমে পরিষুত করে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করা হয়। সাধারণত শুষ্ক স্ক্রাবিং পদ্ধতিতে অম্লধর্মী গ্যাস অপসারণ করা হয়।
41. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।
উত্তর – বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা: বিভিন্ন কারণে বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা খুবই প্রয়োজনীয়। যেমন—
  1. পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা: জল, বায়ু, মাটি প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে দূষণমুক্ত রেখে পরিবেশকে নির্মল ও স্বচ্ছ করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয়।
  2. বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা: বনভূমি, তৃণভূমি, জলাভূমি-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি।
  3. জীববৈচিত্র্যকে বাঁচানো: বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা না করলে পৃথিবীর জীবজগৎ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
  4. রোগব্যাধি প্রতিরোধ: বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
  5. বিদ্যুৎ শক্তি ও সার উৎপাদন: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যবান বিদ্যুৎ শক্তি ও জৈব সার উৎপাদন করা যায়।
  6. প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অধীনে পুনর্ব্যবহার ও পুনরাবর্তনের মাধ্যমে লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করা যায়।
42. বর্জ্য পৃথকীকরণ কীভাবে করা হয়।
উত্তর – বর্জ্য পৃথকীকরণ পদ্ধতি: বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল বর্জ্য পৃথকীকরণ।
এজন্য কঠিন বর্জ্য পদার্থসমূহকে (পরিবেশ তথা প্রকৃতির সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে) দুই ভাগে ভাগ করা হয়—জৈব ভঙ্গুর বা বায়োডিগ্রেডেবল এবং জৈব অভঙ্গুর বা নন-বায়োডিগ্রেডেবল।
  1. জৈব ভঙ্গুর পদার্থ: এর মধ্যে যেসব বর্জ্য পদার্থ অণুজীব বা আণুবিক্ষণিক বিয়োজক দ্বারা সরল উপাদানে বিশ্লেষিত হয়, তাদের জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থ বলে। যেমন—শাকসবজির অবশিষ্ট, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ প্রভৃতি।
  2. জৈব অভঙ্গুর পদার্থ: যেসব বর্জ্য পদার্থ বিয়োজক দ্বারা সরল উপাদানে বিয়োজিত হয় না বা জৈবিক পদ্ধতিতে ভাঙা যায় না, যুগ যুগ ধরে অবিকৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে, তাদের জৈব অভঙ্গুর পদার্থ বলে। যেমন—প্লাস্টিক, কাচ, পলিথিন প্রভৃতি।
এইভাবে বর্জ্য পদার্থের প্রকৃতি অনুসারে প্রথমেই সেগুলিকে আলাদা আলাদা করে নিয়ে জমা করা হলে পরবর্তী পর্যায়ে সেগুলির শোধন, পুনর্ব্যবহার বা পুনরাবর্তন করা সহজ হয়। এজন্য অনেক উন্নত দেশেই প্রতিদিনের গৃহস্থালির বর্জ্যগুলিকে জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর পদার্থ হিসেবে আলাদা আলাদা করে জমা করা হয়।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. কলকারখানার বর্জ্য বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : কলকারখানা থেকে নির্গত ধাতব বর্জ্য, গ্রিজ, তেল, নোংরা জল, বিষাক্ত গ্যাস, ছাই, ধোঁয়া প্রভৃতি হল কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ। এগুলি সরাসরি প্রকৃতিতে ফিরে এলে পরিবেশের খুব ক্ষতি হয়।
2. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : চিকিৎসাক্ষেত্র থেকে নির্গত বর্জ্য হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য। ওষুধের ফয়েল, ইনজেকশনের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, বাতিল ওষুধ, তুলো, রক্তমাখা গজ, পরিত্যক্ত টেস্টটিউব কাচ, কাটা প্লাস্টার ইত্যাদি হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য। এর মধ্যে ক্যাথিটার, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ হল বিষাক্ত বর্জ্য।
3. জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য কী ?
উত্তর – সংজ্ঞা : জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য বলতে সেইসব বর্জ্যকে বোঝায়, যেগুলি মাটি বা জলের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হতে পারে। উদাহরণ : সবজি, পাতা, ফল, ফুল, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ ইত্যাদি বর্জ্য, জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যের উদাহরণ।
4. জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য কী?
উত্তর – সংজ্ঞা : যেসব বর্জ্য পদার্থ অণুজীব ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হতে পারে না, ফলে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে একইরকমভাবে থেকে যায়, তাকে জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য বলে। উদাহরণ: প্লাস্টিক, কাচ, পলিথিন, ডিডিটি হল এই ধরনের বর্জ্য। এই বর্জ্যগুলি পরিবেশের সমূহ ক্ষতি করে।
5. বিষাক্ত বর্জ্য কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: যেসব বর্জ্য পরিবেশ তথা জীবজগতের ওপর খারাপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তাদের বিষাক্ত বর্জ্য বলে। বিষাক্ত বর্জ্যও হল একপ্রকার জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য। উদাহরণ: ডিডিটি, প্লাস্টিক, কীটনাশক প্রভৃতি হল বিষাক্ত বর্জ্য।
6. অবিষাক্ত বর্জ্য কী?
অথবা, বিষহীন বর্জ্য কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: যেসব বর্জ্য পরিবেশ তথা জীবজগতের বিশেষ ক্ষতি করে না, তাদের অবিষাক্ত বর্জ্য বলে। এসব বর্জ্য মূলত জীব বিশ্লেষ্য পদার্থ।
উদাহরণ : খাবারের অবশিষ্ট অংশ বা বাড়িতে উৎপাদিত জৈব বর্জ্য, কৃষিতে সৃষ্ট জৈব বর্জ্য প্রভৃতি এই ধরনের বর্জ্য।
7. বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: যখন কোনো বর্জ্য পদার্থকে প্রায় একই অবস্থায় রেখে নতুন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলে। যেমন—খবরের কাগজ থেকে কাগজের ঠোঙা প্রস্তুত হল পুনর্ব্যবহার। একইভাবে বাড়ির ছেঁড়া পুনর্ব্যবহার। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার হল বর্জ্য কাপড়, বাতিল পদার্থকে পুনরায় অন্য কাজে ব্যবহার করা হল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই বর্তমানে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
8. লিচেট কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: বৃষ্টির জল ল্যান্ডফিলের বর্জ্য পদার্থ ধুয়ে জলাশয়ে বা ভৌমজলে মেশে। এইসব বর্জ্য ধোয়া ময়লা ও দুষিত জলকে লিচেট (leachate) বলে।
প্রভাব: লিচেট ভৌমজলকে দূষিত করে, ফলে নদী, পুকুরের জলও দূষিত হয়।
9. পুনঃচক্রীকরণ কী ?
অথবা, বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংজ্ঞা : বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থকে প্রক্রিয়াকরণ করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী বস্তুতে পরিণত করার পদ্ধতিকে বলা হয় পুনঃচক্রীকরণ বা পুনর্নবীকরণ বা পুনরাবর্তন। উদাহরণ: ভাঙা কাচ, ছেঁড়া কাপড়, টায়ার, প্লাস্টিক দ্রব্যকে একেবারে বাতিল না করে সেগুলি থেকে আবার নতুন দ্রব্য বানানো যায়। যেমন—খবরের কাগজ থেকে পিচ বোর্ড প্রস্তুত বা ভাঙা কাচ থেকে নতুন কাচের দ্রব্য তৈরি প্রভৃতি পনুর্নবীকরণের উদাহরণ।
10. বাগাসে বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : আখ থেকে রস বার করে নেওয়ার পর অবশিষ্ট হিসেবে যা পড়ে থাকে, তাকেই বাগাসে বা আখের ছিবড়ে বলে। চিনিকলগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণ আখের ছিবড়ে উৎপন্ন হয়। প্রভাব: এই বর্জ্য দিয়ে কাগজের মণ্ড (paper pulp) বানানো যায়, যা থেকে কাগজ তৈরি হয় এবং চিনিকলের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
11. পরিবেশ মিত্র বর্জ্য কী?
উত্তর – সংজ্ঞা : যেসব বর্জ্য পদার্থ জৈব ভঙ্গুর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার সাথে সাথে পরিবেশেরও ক্ষতিসাধন করে না, সেইসব বর্জ্য পদার্থকে পরিবেশ মিত্র বর্জ্য বলে। উদাহরণ : গাছের পাতা, সবজির অবশিষ্টাংশ, ফলের খোসা, গৃহপালিত প্রাণীর বিষ্ঠা প্রভৃতি পরিবেশ মিত্র বর্জ্যের উদাহরণ।
12. পরিবেশের ওপর কঠিন বর্জ্যের দুটি কুপ্রভাব লেখো।
উত্তর – পরিবেশের ওপর কঠিন বর্জ্যের কুপ্রভাব: পরিবেশের ওপর কঠিন বর্জ্যের দুটি কুপ্রভাব হল— (1) কঠিন বর্জ্য বহুদিন ধরে মাটির ওপর পড়ে থাকলে সেখানকার জল ও মাটিকে দূষিত করতে পারে। এতে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যু হতে পারে। (2) কঠিন বর্জ্য ড্রেন বা পয়ঃপ্রণালী দিয়ে প্রবাহিত তরল বর্জ্যকে বাধা প্রদান করে। এর ফলে রাস্তার পাশের ড্রেন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং সন্নিহিত এলাকা জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
13. ওপেন ডাম্পিং বা উন্মুক্ত বর্জ্য জমা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : সাধারণভাবে শহরের কাছে, নীচু খোলা জমিতে বর্জ্য পদার্থকে উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখাকে ওপেন ডাম্পিং বা উন্মুক্ত বর্জ্য জমা বলে। এই পদ্ধতির খরচ খুব কম এবং রক্ষণাবেক্ষণেও তেমন খরচ হয় না। কলকাতার সংলগ্ন ধাপার মাঠে এমন ওপেন ডাম্পিঙের ব্যবস্থা রয়েছে।
14. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝ ?
অথবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর – সংজ্ঞা: যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য বস্তুর সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়, সেই পদ্ধতিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে। প্রকৃতপক্ষে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোনো একক কাজ নয়, অনেকগুলি কাজের সমষ্টি। এই ব্যবস্থাপনার প্রধান দিকগুলি হল— (1) বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস, (2) বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং (3) বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ।
15. পৌরসভার বর্জ্য বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – সংজ্ঞা: শহরের বা পৌর এলাকার বাড়ি, অফিস, বিদ্যালয়, বাজার, রেস্টুরেন্ট, হোটেল প্রভৃতি স্থানে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থকে পৌরসভার বর্জ্য বলে। উদাহরণ। এর মধ্যে থাকে শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, ছেঁড়া কাগজ, শিশি-বোতল, ছেঁড়া কাপড়, ডাবের খোলা, পলিথিন ব্যাগ, ভাঙা প্লাস্টিক, ধাতব টুকরো প্রভৃতি।
15. বর্জ্য পদার্থ কী?
অথবা, বর্জ্য কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা: ‘বর্জ্য’ কথাটির অর্থ ‘যা বর্জনযোগ্য”। যে-কোনো কঠিন, তরল কিংবা গ্যাসীয় পদার্থ, যেগুলি আমাদের কাজে লাগে না, অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যবহারের অযোগ্য, তাই ফেলে দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলিকেই বলে বর্জ্য পদার্থ। প্রকারভেদ: এগুলি সাধারণত তিনপ্রকার— (1) কঠিন বর্জ্য (যেমন— ভাঙা কাচ, ভাঙা প্লাস্টিক, ধাতব টুকরো ইত্যাদি), (2) তরল বর্জ্য (পোড়া তেল, প্রাণীর মলমূত্র, ডিটারজেন্ট ও সাবান মিশ্রিত জল ইত্যাদি) এবং 3 গ্যাসীয় বর্জ্য (সালফার ডাইঅক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন প্রভৃতি)।
16. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুটি প্রয়োজনীয়তা লেখো।
উত্তর – বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা : বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুটি প্রয়োজনীয়তা হল— (1) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলে জল, মাটি, বায়ুদূষণ অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। (2) বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
17. ওশান ডাম্পিং বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : সমুদ্রে সরাসরি আবর্জনা নিক্ষেপ করাকে ওশান ডাম্পিং বলে। সমুদ্রতীর থেকে জলের দিকে প্রায় 300 কিমি দূরে 10000 ফুট গভীরতায় প্রতিবছর প্রায় দু-কোটি টন কঠিন বর্জ্য মহাসমুদ্রে নিক্ষেপ করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া, ফ্রান্স, জাপান, চিন প্রভৃতি দেশও মহাসমুদ্রের গভীরে বর্জ্য নিক্ষেপ করে।
18. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : যেসব বর্জ্য পদার্থ থেকে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয়, সেইসব বর্জ্য পদার্থকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলে। এগুলি সর্বাধিক ক্ষতিকর বর্জ্যের অন্যতম। উদাহরণ: পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে সৃষ্ট ছাই এবং ব্যবহৃত ভারী জল তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একইভাবে ইউরেনিয়াম খনি, নিউক্লিয়ার রিয়াক্টার, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র প্রভৃতি থেকেও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সৃষ্টি হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলে বিপুল পরিমাণে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নির্গত হয়ে দ্রুত পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
19. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে কী ধরনের রোগব্যাধি হয় ?
উত্তর – তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে সৃষ্ট রোগব্যাধি : তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে নানা ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। এর মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গের ক্যানসার, গর্ভস্থ ভ্রূণের জিনগত বিভিন্ন রোগ, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তেজস্ক্রিয় পদার্থ বহুদিন প্রকৃতিতে থেকে যায় বলে এগুলি অতীব ক্ষতিকর।
19. কঠিন পৌর বর্জ্য বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : পৌরসভা, পৌরনিগম বা নগর অঞ্চলে প্রতিদিনের ব্যবহারের পর বাতিল করা বিভিন্ন কঠিন বস্তুই হল কঠিন পৌর বর্জ্য (Municipal Solid Waste বা MSW)। খাবারের অবশিষ্টাংশ, সবজির খোসা, পুরোনো কাগজ, ডাবের খোলা, প্লাস্টিকের বোতল, পলিব্যাগ, ভাঙা বালতি, শিশি-বোতল, কাঠ, ইট, ভাঙা কাচ, গাছের পাতা প্রভৃতি কঠিন পৌর বর্জ্যের অন্তর্গত।
20. স্ক্রাবার কী?
উত্তর – ধারণা : কলকারখানার দূষিত বায়ুকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাকে স্ক্রাবার বলে। এই যন্ত্রটি কলকারখানার নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্য থেকে বিষাক্ত পদার্থকে শোষণ করে। স্ক্রাবারে রাখা কলিচুন এবং জলের মধ্যে দিয়ে দূষিত বায়ু চালনা করলে বস্তুকণাগুলি শোধিত হয়। স্ক্রাবার দু-রকমের হয়, যথা—আর্দ্র এবং শুষ্ক স্ক্রাবার।
21. তরল বর্জ্য বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – সংজ্ঞা : যেসব তরল পদার্থের কোনো ব্যবহার নেই অথবা পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় বলে ফেলে দেওয়া প্রয়োজন, সেইসব তরল পদার্থকে তরল বর্জ্য বলে। যেমন—বর্জ্য জল, গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত তেল, শিল্পকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত নোংরা জল প্রভৃতি। এই জাতীয় বর্জ্য বিষাক্ত ও বিষহীন উভয় প্রকৃতির হতে পারে।
22. কঠিন বর্জ্য থেকে কী কী ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে?
উত্তর – কঠিন বর্জ্য থেকে সৃষ্ট রোগ : কঠিন বর্জ্য থেকে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়ায়। প্রধানত কৃমি জাতীয় রোগ, আমাশা, নানাপ্রকার চামড়ার রোগ, শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ কঠিন বর্জ্য থেকে হতে পারে। যারা বর্জ্য অপসারণ করে তাদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
23. প্লাস্টিক কী ধরনের বর্জ্য ? এর মূল সমস্যা কী?
উত্তর – প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রকৃতি: প্লাস্টিক হল অবিশ্লেষ্য বর্জ্য বা জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য।
প্লাস্টিকের সমস্যা: প্লাস্টিক সর্বত্র পাওয়া যায় কিন্তু এর বিয়োজন হয় না বা প্রকৃতিতে সহজে মিশে যায় না। সহজে পচন ঘটে না বলে বহুদিন পরিবেশে টিকে থাকে এবং জল, মাটিকে দূষিত করে। প্লাস্টিক পোড়ালে ভয়ংকর বায়ুদূষণ হয়।
24. কঠিন বর্জ্য পোড়ানো উচিত নয় কেন?
উত্তর – কঠিন বর্জ্য পোড়ানো অনুচিত: কঠিন বর্জ্য পোড়ালে বায়ুদূষণের সমস্যা মারাত্মক বেড়ে যায়। এই বর্জ্য থেকে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন ফ্লুরাইড, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস বায়ুকে দূষিত করে। তাই কঠিন বর্জ্য অবৈজ্ঞানিকভাবে পোড়ানো ঠিক নয়।
25. ‘সবুজ রসায়ন’ (Green Chemistry) কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: বাড়িতে বা কলকারখানায় সৃষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে পরিবেশমিত্র পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা হয়, তার নাম সবুজ রসায়ন। অ্যানাসটাস বিশিষ্ট বিজ্ঞানী পল 1990 সালে সর্বপ্রথম ‘সবুজ রসায়ন’ ধারণাটির প্রবর্তন করেন। যে প্রকৌশল প্রয়োগ করে কোনো রাসায়নিক পদার্থ সংশ্লেষ, প্রণালীকরণ ও ব্যবহার করলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি সাধিত হয় না, সেই প্রকৌশলকে সবুজ রসায়ন বলে। এই পদ্ধতিতে উৎপাদনের সময় বর্জ্য পদার্থ খুব অল্প পরিমাণে সৃষ্টি হয় অথবা একেবারেই সৃষ্টি হয় না এবং উৎপাদিত দ্রব্যটির মাধ্যমেও পরিবেশের কোনো ক্ষতি সাধিত হয় না।
26. উন্মুক্তভাবে বর্জ্য জমা করলে কী অসুবিধা হয়?
উত্তর – উন্মুক্তভাবে বর্জ্য জমা করার অসুবিধাসমূহ: উন্মুক্তভাবে বর্জ্য জমা করলে যে যে অসুবিধা হয়, সেগুলি হল— (1) উন্মুক্তভাবে বর্জ্য জমা করলে সেই বর্জ্যের ওপর মশা, মাছি, ইঁদুর, নানা কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধে। এর দ্বারা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। (2) উন্মুক্ত বর্জ্য পদার্থ পরিবেশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। (3) এসব বর্জ্য মুক্ত পরিবেশে পোড়ালে বায়ু দূষিত হয়। (4) উন্মুক্ত বর্জ্য ধোয়া বৃষ্টির জল মৃত্তিকা ও ভৌমজল দূষিত করে।
27. বর্জ্য জলকে কীভাবে জীবাণুমুক্ত করা যায়?
উত্তর – বর্জ্য জলকে জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতি: জীবাণুনাশক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থাৎ অতিবেগুনি রশ্মির ব্যবহার, জল ফুটিয়ে খাওয়া, ওজোন গ্যাসের ব্যবহার, জলে ক্লোরিনের ব্যবহার ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করে বর্জ্য জলকে জীবাণুমুক্ত করা যায়।
28. নির্মাণ শিল্পের বর্জ্যগুলি কী কী?
উত্তর – নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য: নির্মাণ শিল্পে কংক্রিটের টুকরো, ভাঙা ইট, কাঠ, পাথর, বালি, সিমেন্ট, প্লাস্টিক প্রভৃতি বর্জ্য দ্রব্য উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া লোহার টুকরো, সেরামিক টালি, ফিটিংস দ্রব্য ইত্যাদিও নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য। বর্তমানে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ অধিক বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অধিক পরিমাণে নির্মাণকাজ।
29. নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য থেকে কী সমস্যা হয়?
উত্তর – নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য থেকে সৃষ্ট সমস্যা : (1) নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য, যেমন— কংক্রিটের টুকরো, ভাঙা ইট, বালি, সিমেন্ট, চুন, স্টোনচিপ্‌স প্রভৃতি থেকে শ্রমিকদের ফুসফুসের ও পেটের রোগ হতে পারে। (2) এ ছাড়া নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য যেখানে পড়ে সেখানকার মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে। এই কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়।
30. কারখানার বর্জ্য থেকে কী সমস্যা তৈরি হয়?
উত্তর – কারখানার বর্জ্য থেকে সৃষ্ট সমস্যা : (1) কলকারখানা থেকে যেসব নোংরা আবর্জনা নদীতে বা খালে পড়ে তাতে নদীর জল দূষিত হয়ে যায়, মাছ ও জলজ প্রাণীদের ক্ষতি হয়। (2) জলজ বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। (3) কারখানার নিকটবর্তী মাটি অনুর্বর হয়ে কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটে। (4) কলকারখানার গ্যাসীয় বর্জ্য থেকে বায়ুদূষণ ঘটে।
31. বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে কীভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়?
উত্তর – বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে বর্জ্য সংগ্রহ করার পদ্ধতি: বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে জৈব ভঙ্গুর এবং জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থ পৃথক করে জমা করা হয়। পৌরসভার সাফাইকর্মীরা প্রত্যেক বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান থেকে সেই পৃথক করে জমা করা বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে গাড়িতে জমা করেন।
32. ফ্লাই অ্যাশের গুরুত্ব বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?
উত্তর – ফ্লাই অ্যাশের গুরুত্ব বর্তমানে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ: তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত কয়লার ছাইকে ফ্লাই অ্যাশ বলে। প্রকৃতপক্ষে ফ্লাই অ্যাশ নামক এখন সম্পদে পরিণত হয়েছে। কারণ— (1) এই অ্যাশ বর্তমানে ইট শিল্পে ও সিমেন্ট শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। (2) এ ছাড়া বড়ো বড়ো রাস্তা নির্মাণ এবং নীচু জলাভূমি ভরাট করতেও ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার বেড়েছে।
33. পুরোনো কাগজকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয় কেন?
উত্তর – পুরোনো কাগজকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করার কারণ : বর্জ্য পুরোনো কাগজকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ বর্জ্য কাগজে ধুলোবালি, প্লাস্টিক, রং ইত্যাদি লেগে থাকে। বর্জ্য কাগজ থেকে সেগুলি পৃথক করে কাগজের মণ্ড তৈরি করা হয়। ওই মণ্ড থেকে কাগজের বোর্ড, কাগজের ব্যাগ, ফলস সিলিং ও অন্যান্য দ্রব্য প্রস্তুত করা যায়। সুতরাং, বর্জ্য পুরোনো কাগজকে পুনরাবর্তন করে নানা ধরনের মূল্যবান সামগ্রী উৎপাদিত হয় বলে পুরানো কাগজকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
34. ৰজা প্লাস্টিককে কীভাবে কাজে লাগানো যায় ?
উত্তর – বর্জ্য গ্লাস্টিকের ব্যবহার: বর্জ্য প্লাস্টিক জৈব অবিশ্লেষ্য বা অভঙ্গুর পদার্থ। তাই বহুদিন পরেও তা মাটির সাথে মিশে যায় না। এজন্য বর্জ্য প্লাস্টিক একটি পরিবেশগত সমস্যা। একমাত্র বর্জ্য প্লাস্টিককে গলিয়ে নতুন প্লাস্টিক তৈরি করে এর পুনর্ব্যবহার করাই হল একমাত্র সমাধান।
35. তুমি বাড়িতে কীভাবে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করবে?
উত্তর – বাড়ির বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ : আমি বাড়ির জৈব বিশ্লেষ্য এবং জৈব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থগুলিকে আলাদা আলাদা প্যাকেটে ভরে রাখব। এরপর পৌরসভার সাফাইকর্মী এলে ওই আলাদা আলাদা করে রাখা প্যাকেটগুলিকে তার গাড়িতে দিয়ে দেব। এর সাথে বাড়িতে যাতে খুব কম বর্জ্য উৎপন্ন হয় সেদিকেও লক্ষ রাখার সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণ করার চেষ্টা করব।
36. কঠিন বর্জ্য কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা : কিছু কিছু বর্জ্য পদার্থ আছে, যেগুলি পরিবেশে সহজে বিশ্লেষিত হয় না বা একেবারেই বিয়োজিত হয় না, অবিকৃত অবস্থায় বহুকাল থাকে, তাদের কঠিন বর্জ্য বলে ৷ শ্রেণিবিভাগ: জৈব ভঙ্গুরতার দৃষ্টিকোণ থেকে কঠিন বর্জ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—জৈব ভঙ্গুর কঠিন বর্জ্য (সবজির খোসা, ছেঁড়া কাপড়, বাসি ফুল ইত্যাদি) এবং জৈব অভঙ্গুর কঠিন বর্জ্য (প্লাস্টিক,ভাঙা কাপ প্লেট, শিশি বোতল ইত্যাদি)।
37. জলশোধন প্রক্রিয়ায় কীভাবে জলকে জীবাণুমুক্ত করা যায় ?
উত্তর – জলশোধন প্রক্রিয়ার দ্বারা জঙ্গকে জীবানুমুক্ত করার পদ্ধতি: জলশোধন প্রক্রিয়ায় জলের জৈবিক অক্সিজেনের চাহিদা বা BOD (Biological Oxygen Demand) কমাতে পারলে জলকে জীবাণুমুক্ত করা যায়। দূষিত জলে নানারকম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, জীবাণু প্রভৃতি জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। সেই কারণে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন হ্রাস করতে পারলেই জলকে অনেকাংশে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব।
38. নিরাপদ কীটনাশক বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : কৃষিকার্যে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তার বেশিরভাগই পরিবেশের ক্ষতি করে। কিন্তু কয়েক ধরনের কীটনাশক রয়েছে যা পরিবেশবান্ধব। এইসব পরিবেশবান্ধব কীটনাশককে নিরাপদ কীটনাশক বলে। উদাহরণ : নিমতেল একধরনের নিরাপদ কীটনাশক। এটি জৈব তেল এবং পরিবেশরক্ষক। জৈব তেল ব্যবহার করলে মাটি, বায়ু, জল এবং কৃষিজ ফসলের দূষণ ঘটে না।
39. ‘আবর্জনাই নগদ অর্থ’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – আবর্জনাকে নগদ অর্থ বলার কারণ : আবর্জনা বা বর্জ্য পদার্থকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে তা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং তা থেকে অর্থও উপার্জন করা যেতে পারে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে, নিত্যনতুন পদ্ধতিতে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা যায়। যেমন— ফ্লাই অ্যাশকে কাজে লাগিয়ে ইট তৈরি, রাস্তা নির্মাণ বা নীচু জমি ভরাট করা হচ্ছে এবং অন্যান্য বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে সার, বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনের মতো বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। অর্থাৎ আবর্জনাকে কেবল আবর্জনা হিসেবে পরিত্যাগ না করে তাকে সুষ্ঠুভাবে পুনর্ব্যবহার বা পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করা হচ্ছে। তাই বর্তমানে আবর্জনা নগদ অর্থে পরিণত হয়েছে।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ থেকে নির্গত দূষিত জলের প্রভাবে ভৌমজলের দূষণকে বলে—
(a) চিলেট
(b) কম্পোস্টিং
(c) লিচেট
(d) ইউট্রোফিকেশন
উত্তর – (c) লিচেট
2. ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হয় –
(a) বাসন তৈরিতে
(b) ইট তৈরিতে
(c) কাগজ তৈরিতে
(d) সার তৈরিতে
উত্তর – (b) ইট তৈরিতে
3. তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের উৎস হল-
(a) সিসা
(b) পারদ
(c) ইউরেনিয়াম
(d) প্লাস্টিক
উত্তর – (c) ইউরেনিয়াম
4. দ্রুত প্রকৃতিতে মিশে যায়—
(a) গ্যাসীয় বর্জ্য
(b) কঠিন বর্জ্য
(c) তরল বর্জ্য
(d) বিষহীন বর্জ্য
উত্তর – (a) গ্যাসীয় বর্জ্য
5. গ্রামীণ শক্তির চাহিদা অনেকটা মেটায়—
(a) এলপিজি
(b) কার্বন ডাইঅক্সাইড
(c) গোবর গ্যাস
(d) ইলেকট্রিক উনুন
উত্তর – (c) গোবর গ্যাস
6. ফ্লাই অ্যাশ পাওয়া যায় —
(a) কাগজ কল থেকে
(b) পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে
(c) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে
(d) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে
উত্তর – (c) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে
7. সংগৃহীত পৌর বর্জ্য শহর থেকে দূরে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পদ্ধতি –
(a) ল্যান্ডফিল
(b) কম্পোস্টিং
(c) নিষ্কাশন
(d) স্ক্রাবার
উত্তর – (a) ল্যান্ডফিল
৪. সর্বাধিক বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হয় –
(a) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে
(b) জৈব বর্জ্য থেকে
(c) ফ্লাই অ্যাশ থেকে
(d) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে
উত্তর – (a) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে
9. একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য হল—
(a) সবজির খোসা
(b) ইনজেকশন সিরিঞ্জ
(c) খাবারের প্যাকেট
(d) সাবান ধোয়া জল
উত্তর – (b) ইনজেকশন সিরিঞ্জ
10. প্রদত্ত বর্জ্য পদার্থটি জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য—
(a) প্লাস্টিক বর্জ্য
(b) কৃত্রিম রবার বর্জ্য
(c) অ্যালুমিনিয়াম পাত
(d) সবকটিই প্রযোজ্য
উত্তর – (d) সবকটিই প্রযোজ্য
11. বর্জ্য সিসা দূষণে যে রোগ সৃষ্টি হয় —
(a) মিনামাটা
(b) ডিসলেক্সিয়া
(c) ইটাই ইটাই
(d) ফ্লুরোসিস
উত্তর – (b) ডিসলেক্সিয়া
12. গ্যাসীয় বর্জ্য থেকে যে ধরনের রোগের সংক্রমণ হতে পারে, তার মধ্যে প্রধান হল –
(a) ফুসফুসের রোগ
(b) এইডস
(c) অ্যানিমিয়া
(d) ক্যানসার
উত্তর – (a) ফুসফুসের রোগ
13. বায়ুদূষণ হয় –
(a) গাড়ি ও কারখানা থেকে
(b) কারখানা নির্গত জল থেকে
(c) ঘরের বর্জ্য থেকে
(d) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে
উত্তর – (a) গাড়ি ও কারখানা থেকে
14. ভারতের গ্রামাঞ্চলে কঠিন বর্জ্য যে পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটি হল —
(a) কম্পোস্টিং করা
(b) পুড়িয়ে ফেলা
(c) উন্মুক্তভাবে সঞ্চয় করা
(d) ম্যানিওর পিট তৈরি করা
উত্তর – (d) ম্যানিওর পিট তৈরি করা
15. প্রদত্ত বর্জ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হল—
(a) প্লাস্টিক
(b) কাঠ
(c) ধাতু
(d) কৃষিজাত বর্জ্য
উত্তর – (a) প্লাস্টিক
16. ইট ছাড়া ফ্লাই অ্যাশ আর যে কাজে ব্যবহার করা হয়, সেটি হল —
(a) চিনামাটির বাসন তৈরিতে
(b) কারখানার চিমনি প্রস্তুতিতে
(c) রাস্তা তৈরিতে
(d) রান্নাঘরের বেসিন তৈরিতে
উত্তর – (c) রাস্তা তৈরিতে
17. জৈব বর্জ্য থেকে যে গ্যাস পাওয়া যায়, তার নাম —
(a) ল্যান্ডফিল
(b) এলপিজি
(c) বায়োগ্যাস
(d) দুর্গন্ধনাশক গ্যাস
উত্তর – (c) বায়োগ্যাস
18. ল্যান্ডফিল পদ্ধতিতে জৈব পদার্থের পচন হতে সময় লাগে —
(a) 10-15 দিন
(b) 4-6 মাস
(c) 6-8 মাস
(d) 1 বছর
উত্তর – (b) 4-6 মাস
19. প্রদত্ত কোন্‌টি কঠিন বর্জ্যের অন্তর্গত নয়?—
(a) কৃষিক্ষেতের বর্জ্য
(b) শিল্পজাত বর্জ্য
(c) জঞ্জাল
(d) পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য
উত্তর – (d) পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য
20. ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরিতে প্রধান ভূমিকা নেয়—
(a) সাপ
(b) কেঁচো
(c) ব্যাকটেরিয়া
(d) ইঁদুর
উত্তর – (b) কেঁচো
21. একটি কৃষিজাত বর্জ্য হল—
(a) গাছের কাণ্ড
(b) খড়
(c) কাচের বোতল
(d) প্লাস্টিক পাত
উত্তর – (b) খড়
22. একটি পৌর আবর্জনার উদাহরণ হল—
(a) অ্যালুমিনিয়াম টুকরো
(b) গোবর
(c) কঙ্কাল
(d) তুষ
উত্তর – (a) অ্যালুমিনিয়াম টুকরো
23. স্ক্রাবার যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়—
(a) বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে
(b) জলদূষণ নিয়ন্ত্রণে
(c) তেজস্ক্রিয় দূষণ নিয়ন্ত্রণে
(d) মৃত্তিকা দূষণ নিয়ন্ত্রণে
উত্তর – (a) বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে
24. একটি বিষাক্ত বর্জ্য হল—
(a) সিসা
(b) সবজির খোসা
(c) পুরোনো কাগজ
(d) পচা আলু
উত্তর – (a) সিসা
25. একটি বিষহীন বর্জ্য পদার্থ হল—
(a) বাজারের বর্জ্য পদার্থ
(b) শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ
(c) হাসপাতালের বর্জ্য পদার্থ
(d) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ
উত্তর – (a) বাজারের বর্জ্য পদার্থ
26. ‘নমামি গঙ্গে’ পরিকল্পনা হল—
(a) বঙ্গভূমি নদী পরিকল্পনা
(b) গঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা
(c) গঙ্গানদী জলবিভাজিকা পরিকল্পনা
(d) গঙ্গার গভীরতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা
উত্তর – (b) গঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা
27. একটি পরিবেশমিত্র বর্জ্যের নাম—
(a) পাটের চট
(b) সিসা
(c) রবার
(d) প্লাস্টিক
উত্তর – (a) পাটের চট
28. একটি অবিষাক্ত বর্জ্য হল—
(a) পুরোনো ফুল
(b) কীটনাশক
(c) পারদ
(d) প্লাস্টিক
উত্তর – (a) পুরোনো ফুল
29. একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য হল-
(a) সবজির খোসা
(b) ইনজেকশন সিরিঞ্জ
(c) খাবারের প্যাকেট
(d) সাবান ধোয়া জল
উত্তর – (b) ইনজেকশন সিরিঞ্জ
30. পুনর্নবীকরণযোগ্য একটি বর্জ্য হল—
(a) প্লাস্টিকের বোতল
(b) স্প্রে ক্যান
(c) রাবিশ
(d) হাসপাতালের বর্জ্য
উত্তর – (a) প্লাস্টিকের বোতল
31. জীববিশ্লেষ্য বর্জ্যগুলিকে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিশ্লেষণ করার পদ্ধতিকে বলে—
(a) ভরাটকরণ
(b) স্ক্রাবার
(c) কম্পোস্টিং
(d) নিষ্কাশন
উত্তর – (c) কম্পোস্টিং
32. পেস্টিসাইড হল—
(a) গৃহস্থালির বর্জ্য
(b) জৈব বর্জ্য
(c) কৃষি বর্জ্য
(d) চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য
উত্তর – (c) কৃষি বর্জ্য
33. প্রদত্ত যে উৎস থেকে বর্জ্য আসে না—
(a) গৃহস্থালি
(b) শিল্পকেন্দ্র
(c) হাসপাতাল
(d) সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্ৰ
উত্তর – (d) সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্ৰ
34. জীবাণু দ্বারা বর্জ্যের বিয়োজন হল—
(a) ল্যান্ডফিল
(b) কম্পোস্টিং
(c) ওভারফিলিং
(d) কম্পাউন্ডিং
উত্তর – (b) কম্পোস্টিং
35. মানব শরীরে দূষিত জল থেকে সৃষ্টি হয়—
(a) আমাশয়
(b) হাঁপানি
(c) ফুসফুসের ক্যানসার
(d) দৃষ্টিহীনতা
উত্তর – (a) আমাশয়

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. ……….. আবর্জনা থেকে দাহ্য গ্যাস তৈরি করা হয়।
উত্তর – জৈব
2. পারদ ঘটিত জলদূষণে ……… রোগের সৃষ্টি হয়।
উত্তর – মিনামাটা
3. একটি ধারালো চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য হল ……….।
উত্তর – ছুরি
4. 3R কথার পুরো অর্থ হল Reduce, Recycle and ……….।
উত্তর – Reuse
5. ক্যাথিটার এক ধরনের ………. বর্জ্য।
উত্তর – চিকিৎসা সংক্রান্ত
6. ………. দহনের ফলে ফ্লাই অ্যাশ সৃষ্টি হয়।
উত্তর – কয়লা
7. একটি জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য হল ……….।
উত্তর – সবজির খোসা
৪. একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য হল ……….।
উত্তর – শিশি
9. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ………. বর্জ্য উৎপন্ন হয়।
উত্তর – 1750 লক্ষ টন
10. গবাদিপশুর চামড়া ও হাড় হল ………. বর্জ্য।
উত্তর – জৈব
11. আর্সেনিক দূষণে ………. রোগ সৃষ্টি হয়।
উত্তর – ব্ল্যাকফুট ডিজিজ
12. যে সকল বর্জ্য বিয়োজিত হয়ে জল, মাটি ও বাতাসের সঙ্গে মিশে যায় তাকে ……… বলে।
উত্তর – জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য
13. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয় বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস করে, ………. করে, পুনর্নবীকরণ করে।
উত্তর – পুনর্ব্যবহার
14. কাগজ থেকে পুনরায় কাগজ উৎপাদন ……… প্রক্রিয়ার অন্তর্গত।
উত্তর – পুনর্নবীকরণ
15. ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ধোয়া জলকে ……….. বলে।
উত্তর – লিচেট
16. একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের উদাহরণ হল ……….। 
উত্তর – পরিত্যক্ত সিরিঞ্জ
17. যে বর্জ্য পচনশীল হয়, তাকে বলা হয় ………. বর্জ্য।
উত্তর – জৈব ভঙ্গুর
18. কম্পোস্টিং পদ্ধতিতে ঘূর্ণায়মান যন্ত্রে ……….. ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে জৈব বর্জ্যকে পচানো হয়।
উত্তর – অ্যারোবিক
19. বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে ……….. প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
উত্তর – স্ক্রাবার
20. বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয় জুন মাসের ……….. তারিখে।
উত্তর – 5
21. বর্জ্য শুধু আবর্জনা নয়, বর্জ্য ……….. বটে।
উত্তর – সম্পদও
22. ফ্লাই অ্যাশ একরকমের ……….. বর্জ্য।
উত্তর – কঠিন

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *