wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – A & B

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – A & B

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – A & B

West Bengal Board 10th Geography Solutions

TOPIC – A ভারতের অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. অবস্থান : ভারত এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দেশ। নিরক্ষরেখার উত্তরে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে এবং মূলমধ্যরেখার পূর্বে অর্থাৎ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত অর্থাৎ ভারত উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত। ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষিণে 8°04′ উত্তর অক্ষাংশ (কন্যাকুমারী অন্তরীপ) থেকে উত্তরে 37°06′ উত্তর অক্ষাংশ (জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তরসীমা) পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্রেট নিকোবর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে পিগম্যালিয়ন পয়েন্ট বা ইন্দিরা পয়েন্ট ভারতের দক্ষিণতম স্থলবিন্দু 6°45′ উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত। দ্রাঘিমা অনুসারে ভারত পশ্চিমে 68°07´ পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পূর্বে 97°25´ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত।
  2. আয়তন ও বিস্তার : ভারতের মোট আয়তন বা ক্ষেত্রফল 32 লক্ষ 87 হাজার 263 বর্গকিমি। ভারতের উত্তর-দক্ষিণে সর্বাধিক বিস্তার প্রায় 3214 কিমি এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় 2933 কিমি।
  3. স্থলসীমা: ভারতের স্থলসীমার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 1500 কিমি।
  4. উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য: ভারতের পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্বে অবস্থিত উপকূলরেখার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 7517 কিমি।
  5. সীমানা: ভারতের উত্তর সীমানায় আছে চিন, নেপাল ও ভুটান, পশ্চিম সীমানায় পাকিস্তান ও আরব সাগর, উত্তর-পশ্চিমের সংকীর্ণ সীমানায় আফগানিস্তান, পূর্ব সীমানায় বাংলাদেশ, মায়ানমার ও বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ সীমানায় ভারত মহাসাগর এবং সাগরবেষ্টিত শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।
  6. প্রান্তবিন্দু : ভারতের পশ্চিমতম প্রান্ত হল গুজরাতের কচ্ছ জেলার গুহার মোতি গ্রাম, উত্তরতম প্রান্ডটি হল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পূর্ব কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির ইন্দিরা কল, পূর্বতম প্রান্তটি হল অরুণাচল প্রদেশের আনজাউ জেলার কিবিথু এবং দক্ষিণতম প্রান্তটি হল নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইন্দিরা পয়েন্ট।
  7. স্বাধীন করদ রাজ্যের অন্তর্ভুক্তি: 1947 সালের 15 আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর 1950 সালের মধ্যে অর্থাৎ পরবর্তী তিন বছরে অনেকগুলি দেশীয় স্বাধীন করদ রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  8. চার শ্রেণির রাজ্যগঠন: 1950 সালের 26 জানুয়ারি ভারতের সংবিধান চালু হওয়ার সময় দেশে চার ধরনের রাজ্য গঠিত হয়। এগুলি হল— (1) গভর্নর শাসিত রাজ্য বা পার্ট এ রাজ্য: আসাম (বর্তমানে অসম), ওড়িশা (বর্তমানে ওডিশা), উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, বোম্বাই, মাদ্রাজ ও পাঞ্জাব (মোট নয়টি রাজ্য)। (2) রাজপ্রমুখ-শাসিত রাজ্য বা পার্ট বি রাজ্য: হায়দ্রাবাদ, সৌরাষ্ট্র, মহীশুর প্রভৃতি নিয়ে মোট আটটি রাজ্য। (3) চিফ কমিশনার শাসিত রাজ্য বা পার্ট সি রাজ্য: আজমের, দিল্লি, বিলাসপুর, বিন্ধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি নিয়ে মোট 10টি রাজ্য এবং (4) লেফটেনান্ট গভর্নর-শাসিত অঞ্চল বা পার্ট ডি অঞ্চল: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
  9. 1956 সালের রাজ্য পুনর্গঠন: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে 1956 সালের 1 নভেম্বর ভারত সরকার প্রধানত ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলিকে পুনর্গঠন করেন। ওই সময় অন্ধ্রপ্রদেশ (প্রধান ভাষা তেলুগু), পশ্চিমবঙ্গ (বাংলা), অসম (অসমিয়া), কেরল (মালয়ালম্) প্রভৃতি এবং ত্রিপুরা, দিল্লি, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি নিয়ে মোট 6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
  10. সর্বশেষ রাজ্যপুনর্গঠন : 1956 সালে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠিত হওয়ার পরেও বিভিন্ন সময়ে কোনো কোনো রাজ্যকে নতুন করে পুনর্গঠন করা হয়। যেমন- 1957 থেকে 1972 সালের মধ্যে অসম রাজ্য থেকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল (অরুণাচল প্রদেশ), নাগাল্যান্ড, মেঘালয় ও মিজোরাম এবং 1960 সালে বোম্বাই রাজ্যকে ভাগ করে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত গঠন করা হয়। এরকম বিভিন্ন সময়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলতে চলতে সবশেষে 2014 সালের 2 জুন অন্ধ্রপ্রদেশকে ভাগ করে ভারতের নবীনতম রাজ্য হিসেবে তেলেঙ্গানা আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে ভারতের মোট অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে 28টি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ৪টি।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. 1947 থেকে 1950 সাল পর্যন্ত ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, 1947 থেকে 1950 সাল পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক কাঠামো আলোচনা করো।
1947 থেকে 1950 সাল পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক কাঠামো
উত্তর – 1947 সালের 15 আগস্ট অবিভক্ত ভারতবর্ষকে দুটি ভাগে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হয়। বিভাজিত স্বাধীন ভারতের অংশে থাকে এটি গভর্নর-শাসিত প্রদেশ, 4টি চিফ কমিশনার শাসিত প্রদেশ এবং 600-র বেশি স্বাধীন দেশীয় রাজ্য। এরপর 1948-49 সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের প্রচেষ্টায় স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, কতকগুলি গভর্নর-শাসিত প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং অন্যগুলি রাজপ্রমুখ-শাসিত রাজ্যে রূপান্তরিত হয়। 1950 সালের 26 জানুয়ারি ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ভারতের নিজস্ব সংবিধান চালু হয়। এই সময় ভারতের রাজ্যগুলিকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়—
‘ক’ শ্রেণির রাজ্য
[Part-A, গভর্নর-শাসিত রাজ্য]
‘খ’ শ্রেণির রাজ্য
[Part-B, রাজপ্রমুখ-শাসিত রাজ্য ]
‘গ’ শ্রেণির রাজ্য
[Part-C, চিফ কমিশনার-শাসিত রাজ্য ]
‘ঘ’ শ্রেণির অঞ্চল
[Part-D, লেফটেন্যান্ট-শাসিত অঞ্চল ]
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বোম্বে, মাদ্রাজ ও পাঞ্জাব [মোট ৭টি ]
হায়দ্রাবাদ, মধ্যভারত, মহীশূর, পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন (পেপসু বা PEPSU), জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, সৌরাষ্ট্র ও ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন [মোট ৪টি]
আজমের, ভোপাল, বিলাসপুর, হিমাচল প্রদেশ, কচ্ছ, কুৰ্গ, দিল্লি, মণিপুর, ত্রিপুরা ও বিন্ধ্য প্রদেশ [মোট 10টি] আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতকে পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ বলা হয় কেন?
উত্তর – ভারতকে পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ বলার কারণ : ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ। এই দেশের তিনদিকে সমুদ্র ও একদিকে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা অবস্থিত। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ভারতের মাঝ বরাবর কর্কটক্রান্তিরেখা (23½°উ.) প্রসারিত হয়েছে। সুউচ্চ পর্বত, সুবিস্তৃত মালভূমি ও সমভূমি ভারর্তে দেখা যায়। বালি ঢাকা মরুভূমি, বৈচিত্র্যপূর্ণ মৃত্তিকা, বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু, নানারকম স্বাভাবিক উদ্ভিদ যেমন এই দেশে দেখা যায়, তেমনি অনেকরকম খনিজ সম্পদও ভারতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভারতে বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ বসবাস করে। জীববৈচিত্র্যেও ভারত পৃথিবীতে অগ্রগণ্য। সুতরাং, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মতো ভারতে প্রাকৃতিক সম্পদের বৈচিত্র্য, অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বিভিন্নতা এবং বিবিধ মানবিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদের সমাবেশ ঘটেছে। তাই ভারতকে পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ বলা হয়।
2. অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা অনুসারে ভারতের অবস্থান নির্ণয় করো।
উত্তর – অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের অবস্থান : (1) অক্ষাংশ অনুসারে ভারত উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। (2) ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষিণে 8°04′ উত্তর অক্ষাংশ (কন্যাকুমারী অন্তরীপ) থেকে উত্তরে 37°06′ উত্তর অক্ষাংশ (জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তরসীমা) পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্রেট নিকোবর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে পিগম্যালিয়ন পয়েন্ট বা ইন্দিরা পয়েন্ট ভারতের দক্ষিণতম স্থলবিন্দু 6°45′ উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত।
দ্রাঘিমা অনুসারে ভারতের অবস্থান: (1) দ্রাঘিমা অনুসারে ভারত পূর্ব  গোলার্ধে অবস্থিত। (2) ভারতীয় ভূখণ্ড পূর্বে 97°25′ পূর্ব দ্রাঘিমা (অরুণাচল প্রদেশের পূর্বসীমা) থেকে পশ্চিমে 68°07′ পূর্ব দ্রাঘিমা (গুজরাতের পশ্চিমসীমা) পর্যন্ত বিস্তৃত।
3. ভারতের সীমানা উল্লেখ করো।
উত্তর – ভারতের সীমানা : (1) ভারতের উত্তর সীমানায় আছে সুবিশাল হিমালয় | পর্বতমালা এবং চিন, নেপাল ও ভুটান রাষ্ট্র। (2) উত্তর-পশ্চিম সীমানায় আছে আফগানিস্তান। (3) পশ্চিম সীমানায় আছে পাকিস্তান ও আরব সাগর। (4) পূর্ব সীমানায় ছে মায়ানমার, বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগর। (5) দক্ষিণের উপদ্বীপ অংশের তিনদিক বেষ্টন করে রয়েছে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সুনীল জলরাশি। ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে সাগরবেষ্টিত শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।
4. সমুদ্র থেকে দূরত্ব অনুসারে ভারতের অবস্থান নির্ণয় করো।
উত্তর – সমুদ্র থেকে দূরত্ব অনুসারে ভারতের অবস্থান : এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের উত্তরে ভারত অবস্থিত। ভারতের দক্ষিণের উপদ্বীপ অংশের পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর থাকায় ভারতকে বলে উপদ্বীপ। ভারতের তিনদিকে সমুদ্র থাকায় দেশের কোনো অংশই সমুদ্র থেকে 1700 কিমি-র বেশি দূরে অবস্থিত নয়। ভারতের স্থলসীমার মোট দৈর্ঘ্য 15200 কিমি আর উপকূলরেখার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 7517 কিমি।
5. ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ: ভারতের উত্তরে চিন, নেপাল ও ভুটান, পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তর-পশ্চিমের সংকীর্ণ সীমায় আফগানিস্তান এবং পূর্বদিকে মায়ানমার ও বাংলাদেশ অবস্থিত। দক্ষিণে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা পক প্রণালী ও মান্নার উপসাগর দ্বারা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন। মালাবার উপকূলের কাছে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের সামান্য দক্ষিণে অবস্থিত মালদ্বীপ (মাল দ্বীপপুঞ্জ) ভারতের ক্ষুদ্রতম প্রতিবেশী দেশ।
6. ভারতের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব: ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত একটি দেশ। এই ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। যেমন—
  1. উপদ্বীপীয় অবস্থানের সুবিধা: ভারতের উপদ্বীপীয় অবস্থান যেমন জলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা দেয়, তেমনই বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
  2. উত্তরের পার্বত্যভূমির সুবিধা: উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে। আবার গিরিপথগুলির সাহায্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুযোগও বৃদ্ধি পায়।
  3. নৌবিদ্যা ও মৎস্যশিকারে উন্নতি: ভারতের দক্ষিণের উপদ্বীপ অংশের তিনদিকে সমুদ্র থাকায় নৌবিদ্যা ও মৎস্যশিকারে ভারত সমৃদ্ধ হয়েছে।
  4. শিল্পের বিকাশ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল পর্যটন শিল্প-সহ বিভিন্ন ফলজাত শিল্প ও কাষ্ঠ শিল্পের বিকাশকে প্রভাবিত করেছে।
  5. জলবায়ুর বৈচিত্র্য: অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের দক্ষিণভাগে নিরক্ষীয় জলবায়ু, মধ্যভাগে ক্রান্তীয় জলবায়ু এবং উত্তরভাগে উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ু বিরাজ করে। এর ফলে ভারতে উম্নমণ্ডল এবং নাতিশীতোয়মণ্ডল—উভয় তাপমণ্ডলেই কৃষিজ ফসল ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
7. ভারতের বিস্তার, ক্ষেত্রফল ও জনসংখ্যা সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – বিস্তার : ভারতের সর্বাধিক বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে প্রায় 3214 কিমি এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় 2933 কিমি।
ক্ষেত্রফল: ভারতের মোট ক্ষেত্রফল প্রায় 32 লক্ষ 87 হাজার 263 বর্গকিমি (এর মধ্যে প্রায় 43 হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চিন ও পাকিস্তান কর্তৃক অধিকৃত)। ক্ষেত্রফল অনুসারে ভারতের স্থান পৃথিবীতে সপ্তম—রাশিয়া, কানাডা, চিন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়ার পরে।
জনসংখ্যা: জনসংখ্যা অনুযায়ী, ভারতের স্থান পৃথিবীতে দ্বিতীয়—চিনের পরে। 2011 সালের জনগণনা অনুসারে ভারতের জনসংখ্যা 121 কোটি 1 লক্ষ 93 হাজার 422।
৪. ভারতের রাজ্যগুলির পুনর্গঠনকালে কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ?
অথবা, ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তি কী কী ছিল?
উত্তর – ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ: বিভিন্ন সময়ে ভারতে রাজ্যগুলির পুনর্গঠনকালে প্রধানত তিনটি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে – (1)ভাষা (2) সংস্কৃতি এবং (3) প্রশাসনিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি। 1956 সালে প্রধানত ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলির পুনর্গঠন করা হলেও পরবর্তী সময়ে রাজ্য পুনর্গঠনকালে ভাষা, সংস্কৃতি এবং প্রশাসনিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
9. ভারতের চারটি নবগঠিত রাজ্যের নাম, গঠনকাল ও তাদের রাজধানীর নাম লেখো ?
উত্তর – ভারতের চারটি নবগঠিত রাজ্য, তাদের গঠনকাল এবং রাজধানী:
রাজ্য গঠনকাল রাজধানী
ছত্তিশগড় 1 নভেম্বর 2000 রায়পুর
উত্তরাখণ্ড ৪ নভেম্বর 2000 দেরাদুন
ঝাড়খণ্ড 15 নভেম্বর 2000 রাঁচি
তেলেঙ্গানা 2 জুন 2014 হায়দ্রাবাদ
10. ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় অবস্থানের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় অবস্থানের গুরুত্ব : ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় অবস্থানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এগুলি হল—
  1. জলপথে ব্যাবসাবাণিজ্যের বিকাশ: ভারতের উপদ্বীপীয় অংশের তিনদিকে সমুদ্র থাকায় জলপথে ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবিধা পাওয়া যায়।
  2. নৌবিদ্যা ও মৎস্যশিকারে উন্নতি: ভারতের উপদ্বীপীয় অংশের সমুদ্রের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় নৌবিদ্যায় ও মৎস্যশিকারে ভারত যথেষ্ট উন্নত।
  3. বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা: সমুদ্রবেষ্টিত এই তিনদিক থেকে বহিঃশত্রুর আক্রমণের আশঙ্কাও কম।
  4. স্থলপথে সংযোগ: ভারতের উত্তরাংশ এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। ফলে ভারত এশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। স্থলপথেও প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সহজে যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
11. ভারতীয় উপমহাদেশ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ভারতীয় উপমহাদেশ
ধারণা: ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ— এই 7টি দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্র এত বেশি যে, এই টি দেশকে একসঙ্গে বলে ভারতীয় উপমহাদেশ।
গুরুত্ব: এই দেশগুলির মধ্যে ভারতের আয়তন ও জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং অবস্থান অনুযায়ী এশিয়ার এই দেশগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান প্রায় কেন্দ্রীয় বা মধ্যবর্তী। স্বভাবতই গোটা অঞ্চলটির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হয়েছে ভারত। এই কারণে অঞ্চলটির ‘ভারতীয় উপমহাদেশ’ নামকরণ আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে।
12. ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনে ভাষার ভূমিকা কী?
উত্তর – ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনে ভাষার ভূমিকা : ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনে ভাষারওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভারতে নানা ভাষাভাষীর মানুষ বাস করে। সংবিধানে 22টি ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও দেশের নানা প্রান্তে আরও অন্তত 160টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। কোনো বিস্তৃত অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় কথা বলে, তার ওপর ভিত্তি করে সাধারণত সেই অঞ্চলটিকে অঙ্গরাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। 1956 সালে মূলত প্রধান ভাষাগুলির ভিত্তিতে রাজ্যের পুনর্গঠন করা হয়, যেমন—উত্তরপ্রদেশ (হিন্দি), পাঞ্জাব (পাঞ্জাবি), কেরল (মালয়ালম্), পশ্চিমবঙ্গ (বাংলা) ইত্যাদি 14টি অঙ্গরাজ্য এবং দিল্লি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ইত্যাদি চটি কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
13. বর্তমানে ভারতকে কী কী প্রধান প্রশাসনিক বিভাগে ভাগ করা যায় ? এগুলির নাম কী?
উত্তর – ভারতের প্রশাসনিক বিভাগ: বর্তমানে ভারতকে মোট দুই ধরনের প্রশাসনিক বিভাগে ভাগ করা যায় – রাজ্য এবং 2 কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এগুলির মধ্যে রাজ্য আছে 28টি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ৪টি।
বিভাগগুলির নাম: রাজ্য: [i] অন্ধ্রপ্রদেশ, [ii] অরুণাচল প্রদেশ, [iii] অসম, [iv] উত্তরপ্রদেশ, [v] ওডিশা, [vi] কর্ণাটক, [vii] কেরল, [vili] গুজরাত, [ix] গোয়া, [x] তামিলনাড়ু, [xi] ত্রিপুরা, [xii] নাগাল্যান্ড, [xiii] পশ্চিমবঙ্গ, [xiv] পাঞ্জাব, [xv] বিহার, [xvi] মহারাষ্ট্র, [xvii] মণিপুর, [xviii] মধ্যপ্রদেশ, [xix] মিজোরাম, [xx] মেঘালয়, [xxi] রাজস্থান, [xxii] সিকিম, [xxii] হরিয়ানা, [xxiv] হিমাচল প্রদেশ, [xxv] ছত্তিশগড়, [xxvi] উত্তরাখণ্ড, [xxvii] ঝাড়খণ্ড এবং [xxviii] তেলেঙ্গানা।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: [i] আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, [ii] চন্ডীগড়, [ii] দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ, [iv] পুদুচেরি, [v] লাক্ষাদ্বীপ, [vi] দিল্লি, [vii] লাডাক এবং [viii] জম্মু-কাশ্মীর।
14. ভারতের প্রমাণ সময় ও দ্রাঘিমার সম্পর্ক আলোচনা করো।
অথবা, দ্রাঘিমার বিস্তার ভারতের স্থানীয় সময় ও প্রমাণ সময়ের ওপর কীরূপ প্রভাব বিস্তার করে ?
উত্তর – ভারতের প্রমাণ সময় ও দ্রাঘিমার মধ্যে সম্পর্ক: ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম সীমার মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য প্রায় 97°25′ পূর্ব – 68°07′ পূর্ব = 29°18’। হিসাব করে দেখা যায় যে, অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমায় স্থানীয় সময় যখন দুপুর 12টা, তখন ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত গুজরাতের পশ্চিম সীমায় স্থানীয় সময় সকাল প্রায় 10টা 3 মিনিট। অর্থাৎ সময়ের পার্থক্য হয় প্রায় 117 মিনিট। তাই সময় গণনার সুবিধার জন্য এই দু-প্রান্তের দ্রাঘিমাকে যোগ করে সেই যোগফলকে 2 দিয়ে ভাগ করে মধ্যবর্তী স্থানের দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়েছে। অর্থাৎ (97°25′ + 68°07′) পূর্ব = (165°32′ ÷ 2) = 82°46′ পূর্ব। এর সরলীকরণ করে 82°30′ পূর্ব দ্রাঘিমাকেই ভারতের প্রমাণ দ্রাঘিমা (এলাহাবাদের স্থানীয় সময়) হিসেবে গণ্য করা হয়, যা এলাহাবাদের ওপর দিয়ে প্রসারিত হয়েছে।
এজন্য 82°30′ পূর্ব দ্রাঘিমা অনুসারে ভারতীয় প্রমাণ সময় নির্ণয় করা হয়েছে এবং সেই সময় অনুসারেই সারা দেশের কাজকর্ম সংঘটিত হয়।
15. অরুণাচল প্রদেশ ও মেঘালয় রাজ্য দুটির এরূপ নামকরণের কারণ কী ?
উত্তর – অরুণাচল প্রদেশ : ভারতের একেবারে পূর্বপ্রান্তে নেফা (NEFA) বা North-East Frontier Agency নামে আগে যে এলাকাটি ছিল, এখন তারই নাম অরুণাচল প্রদেশ।
নামকরণ: দেশের একেবারে পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত বলে পর্বতময় এই রাজ্যটি থেকেই দেশের মধ্যে প্রথম অরুণ বা সূর্যের দেখা মেলে। এজন্যই রাজ্যটির নাম হয়েছে অরুণাচল।
মেঘালয়: অসমের খাসি-জয়ন্তিয়া পার্বত্য জেলা এবং গারো পার্বত্য জেলা নিয়ে 1970 সালের 2 এপ্রিল যে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি গঠন করা হয়, প্রখ্যাত ভূগোলবিদ ড. এস পি চ্যাটার্জি তার নামকরণ করেন মেঘালয় (1972 সালের 21 জানুয়ারি মেঘালয় পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে)।
নামকরণ: বছরের অধিকাংশ সময় এখানকার আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে বলে, এলাকাটির নাম মেঘালয় (মেঘের দেশ) রাখা হয়।
16. SAARC কী?
উত্তর – গঠন : 1985 সালের ৪ ডিসেম্বর ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ–দক্ষিণ এশিয়ার এই সাতটি দেশ নিয়ে SAARC (South Asian Association for Regional Cooperation) গঠিত হয়। পরবর্তীকালে (2007 সালে) আফগানিস্তান সার্কের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বর্তমানে এর সদস্য দেশের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪।
উদ্দেশ্য: প্রদত্ত দেশগুলির মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, খেলাধূলা ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত সহযোগিতার আদানপ্রদানের জন্য সংস্থাটি গঠিত হয়।
সদর দপ্তর : সার্কের সদর দপ্তর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু-তে অবস্থিত।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. বর্তমানে ভারতে কয়টি রাজ্য ও কয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে?
উত্তর – ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংখ্যা : সর্বশেষ গঠিত পূর্ণাঙ্গ রাজ্য তেলেঙ্গানা এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাডাক, দাদরা-নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ-সহ বর্তমানে ভারতের মোট অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা 28টি এবং জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লি-সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংখ্যা ৪টি।
2. ভারতের মূল ভূখণ্ডের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের অক্ষাংশ কত?
উত্তর – ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের অক্ষাংশ: ভারতের মূল ভূখণ্ডের উত্তর প্রান্তের অক্ষাংশ 37°06′ উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তের অক্ষাংশ 8°04′ উত্তর।
3. ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দ্রাঘিমা কত?
উত্তর – ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দ্রাঘিমা: ভারতের পূর্ব প্রান্তের দ্রাঘিমা 97°25′ পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তের দ্রাঘিমা 68°07′ পূর্ব।
4. কোন্ দুটি পূর্বতন রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নবগঠিত উত্তরাখণ্ড ও ছত্তিশগড় রাজ্য দুটির সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর – উত্তরাখণ্ড ও ছত্তিশগড় রাজ্যের সৃষ্টি: পূর্বতন উত্তরপ্রদেশ রাজ্য থেকে উত্তরাখণ্ড ও পূর্বতন মধ্যপ্রদেশ রাজ্য থেকে ছত্তিশগড় রাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।
5. ভারতের উত্তর-দক্ষিণে ও পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তার কত?
উত্তর – ভারতের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তার : ভারতের উত্তর-দক্ষিণে বিস্তার 3214 কিমি এবং পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তার 2933 কিমি।
6. ভারতের স্থলসীমার ও উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর – ভারতের স্থলসীমা ও উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য: ভারতের স্থলসীমার দৈর্ঘ্য প্রায় 15200 কিমি। ভারতের মূল ভূখণ্ড, লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূল নিয়ে ভারতের উপকূলরেখার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 7517 কিমি।
7. আয়তন অনুসারে ভারতের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম কী?
উত্তর – ভারতের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল: আয়তন অনুসারে ভারতের বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং ক্ষুদ্রতম কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ।
8. ভারতের চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: ভারতের চারটি কেন্দ্ৰ-শাসিত অঞ্চল— (1) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, (2) জম্মু-কাশ্মীর, (3) চণ্ডীগড় এবং (4) পুদুচেরি।
9. ভারতের সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ও সর্বাপেক্ষা ছোটো প্রতিবেশী দেশ দুটির নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী দেশ : ভারতের সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী দেশ চিন। ভারতের সর্বাপেক্ষা ছোটো প্রতিবেশী দেশ: ভারতের সর্বাপেক্ষা ছোটো প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপ।
10. ম্যাকমোহন লাইন ও র‍্যাডক্লিফ লাইন কী?
উত্তর – ম্যাকমোহন লাইন: ভুটানের পূর্ব অংশ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ভারত-চিন সীমারেখা ম্যাকমোহন লাইন নামে পরিচিত।
র‍্যাডক্লিফ লাইন: ভারতের উত্তর-পশ্চিমে ভারত-পাকিস্তান সীমারেখা র‍্যাডক্লিফ লাইন নামে পরিচিত।
11. ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত দুটি প্রতিবেশী দেশের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত প্রতিবেশী দেশ : ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত দুটি প্রতিবেশী দেশের নাম — (1) পাকিস্তান এবং (2) আফগানিস্তান।
12. ভারতের কোন্ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কোন্ কোন্ দুটি রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পরিগণিত হয়?
উত্তর – ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পরিগণিত হয়।
13. ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল ? 
উত্তর – ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ: ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের সময় যেসব বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয় সেগুলি হল— (1) ভাষা, (2) সাংস্কৃতিক সাযুজ্য, (3) প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, (4) অর্থনৈতিক উন্নয়ন, (5) প্রাকৃতিক পরিবেশের সাদৃশ্য, (6) আঞ্চলিক নিরাপত্তা, (7) অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি।
14. ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্যের ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তিরেখা প্রসারিত হয়েছে?
উত্তর – কর্কটক্রান্তিরেখার বিস্তার : ভারতের মোট ৪ টি রাজ্য, যথা— গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও মিজোরামের ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তিরেখা প্রসারিত হয়েছে।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তৱধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. আয়তনের বিচারে পৃথিবীতে ভারতের স্থান—
(a) প্রথম
(b) পঞ্চম
(c) সপ্তম
(d) অষ্টম
উত্তর – (c) সপ্তম
2. ভারতের স্থলভাগের দক্ষিণতম প্রান্ত হল –
(a) কন্যাকুমারী
(b) কুমারিকা অন্তরীপ
(c) ইন্দিরা পয়েন্ট
(d) ইন্দিরা কল
উত্তর – (c) ইন্দিরা পয়েন্ট
3. ভারতের প্রামাণ্য দ্রাঘিমারেখা হল —
(a) 0°
(b) 90°
(c) 82°30′ পূর্ব
(d) 82°30′ পশ্চিম
উত্তর – (c) 82°30′ পূর্ব
4. জনসংখ্যা অনুসারে পৃথিবীতে ভারতের স্থান-
(a) প্রথম
(b) দ্বিতীয়
(c) তৃতীয়
(d) চতুর্থ
উত্তর – (b) দ্বিতীয়
5. আয়তন অনুসারে ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য হল—
(a) মধ্যপ্রদেশ
(b) রাজস্থান
(c) মহারাষ্ট্র
(d) জম্মু ও কাশ্মীর
উত্তর – (b) রাজস্থান
6. ভারতের সর্ববৃহৎ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল—
(a) জম্মু ও কাশ্মীর
(b) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
(c) দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ
(d) লাক্ষাদ্বীপ
উত্তর – (a) জম্মু ও কাশ্মীর
7. ভারতের নবীনতম রাজ্যটি গঠিত হয়-
(a) 1999 সালে
(b) 2000 সালে
(c) 2001 সালে
(d) 2014 সালে
উত্তর – (d) 2014 সালে
৪. ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের মূল ভিত্তি ছিল—
(a) ভাষা
(b) ভূপ্রকৃতিগত সাদৃশ্য
(c) খাদ্যের সাদৃশ্য
(d) অর্থনৈতিক কাজের সাদৃশ্য
উত্তর – (a) ভাষা
9. ভারতের নবীনতম রাজ্যটি হল-
(a) উত্তরাখণ্ড
(b) তেলেঙ্গানা
(c) ছত্তিশগড়
(d) গোয়া
উত্তর – (b) তেলেঙ্গানা
10. ম্যাকমোহন লাইনটি দেখা যায়—
(a) জম্মু ও কাশ্মীরে
(b) রাজস্থানে
(c) সিকিমে
(d) অরুণাচল প্রদেশে
উত্তর – (d) অরুণাচল প্রদেশে
11. স্বাধীনতার সময় ভারত ছিল একটি—
(a) ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন
(b) সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র
(c) ধর্মনিরপেক্ষ
(d) ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র
উত্তর – (a) ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন
12. ভারত যে গোলার্ধের দেশ তা হল —
(a) উত্তর ও পশ্চিম গোলার্ধ
(b) উত্তর ও পূর্ব গোলার্ধ
(c) দক্ষিণ ও পূর্ব গোলার্ধ
(d) দক্ষিণ ও পশ্চিম গোলার্ধ
উত্তর – (b) উত্তর ও পূর্ব গোলার্ধ
13. বর্তমান ভারতের মোট অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা –
(a) 27টি
(b) 28টি
(c) 29টি
(d) 30টি
উত্তর – (b) 28টি
14. ভারতের ক্ষেত্রফল প্রায় —
(a) 3287263 বর্গকিমি
(b) 3278263 বর্গকিমি
(c) 3287236 বর্গকিমি
(d) 3287226 বর্গকিমি
উত্তর – (a) 3287263 বর্গকিমি
15. ভারতের উত্তর-দক্ষিণে বিস্তার প্রায় —
(a) 2314 কিমি
(b) 3214 কিমি
(c) 3224 কিমি
(d) 2324 কিমি
উত্তর – (b) 3214 কিমি
16. ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা নির্দেশ করে—
(a) ম্যাকমোহন লাইন
(b) র‍্যাডক্লিফ পাইন
(c) ডুরান্ড লাইন
(d) ওপরের কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) র‍্যাডক্লিফ পাইন
17. ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন পরিষদের সুপারিশ প্রথম কার্যকরী হয় –
(a) 1947 সাল
(b) 1950 সালে
(c) 1953 সালে
(d) 1956 সালে
উত্তর – (d) 1956 সালে
18. ভারতের নবীনতম রাজ্যের রাজধানী হল-
(a) দেরাদুন
(b) হায়দ্রাবাদ
(c) জয়পুর
(d) চণ্ডীগড়
উত্তর – (b) হায়দ্রাবাদ
19. তিন বিঘা করিডোর আছে—
(a) পশ্চিমবঙ্গে
(b) অসমে
(c) বিহারে
(d) ত্রিপুরায়
উত্তর – (a) পশ্চিমবঙ্গে
20. ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তের অক্ষাংশ-
(a) 9°4′ উত্তর
(b) 37°6′ উত্তর
(c) 6:45° উত্তর
(d) 20° উত্তর
উত্তর – (a) 9°4′ উত্তর
21. সার্কের সদর দপ্তর অবস্থিত—
(a) ঢাকায়
(b) থিম্পুতে
(c) কাঠমান্ডুতে
(d) পেশোয়ারে
উত্তর – (c) কাঠমান্ডুতে
22. ত্রিপুরাকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয় –
(a) 1970 সালে
(b) 1971 সালে
(c) 1972 সালে
(d) 1973 সালে
উত্তর – (b) 1971 সালে
23. ভারতের পশ্চিমতম দ্রাঘিমা –
(a) 68°07′ পূর্ব
(b) 68°07′ পশ্চিম
(c) 97°25 পূর্ব
(d) 97°25′ পশ্চিম
উত্তর – (a) 68°07′ পূর্ব
24. ভারতের উত্তরতম স্থান –
(a) ইন্দিরা পয়েন্ট
(b) থাপ্পু
(c) ইন্দিরা কল
(d) কিবিত্ব
উত্তর – (c) ইন্দিরা কল
25. নিম্নলিখিত রাজ্য ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্যের সৃষ্টি হয় –
(a) মধ্যপ্রদেশ
(b) অন্ধ্রপ্রদেশ
(c) বিহার
(d) উত্তরপ্রদেশ
উত্তর – (b) অন্ধ্রপ্রদেশ
26. চন্দননগর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়-
(a) 1947 সালে
(b) 1948 সালে
(c) 1949 সালে
(d) 1954 সালে
উত্তর – (d) 1954 সালে
27. পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলাটি গঠিত হয় –
(a) 1956 সালে
(b) 1951 সালে
(c) 1954 সালে
(d) 1960 সালে
উত্তর – (a) 1956 সালে
28. ভারতের ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্যের নাম হল—
(a) সিকিম
(b) ত্রিপুরা
(c) গোয়া
(d) মিজোরাম
উত্তর – (c) গোয়া
29. ঝাড়খণ্ডের রাজধানী হল –
(a) হায়দ্রাবাদ
(b) রাঁচি
(c) রায়পুর
(d) দেরাদুন
উত্তর – (b) রাঁচি

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয় …………. সালে।
উত্তর – 1953
2. বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জের নাম ………….।
উত্তর – আন্দামান ও নিকোবর
3. ………… প্রণালী দ্বারা ভারত ও শ্রীলঙ্কা বিচ্ছিন্ন।
উত্তর – পক
4. ……….. দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময়কে ভারতের প্রমাণ সময় হিসেবে ধরা হয়।
উত্তর – 82°30′ পূর্ব
5. ………… -কে ‘ভারতের প্রবেশদ্বার’ বলা হয়।
উত্তর – মুম্বাই
6. ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম অংশ ………….।
উত্তর – কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ
7. ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ………….।
উত্তর – লাক্ষাদ্বীপ
৪. ভারতের পূর্বতম স্থান ………….।
উত্তর – কিবিথু
9. ইন্দিরা পয়েন্টের অন্য নাম ………….।
উত্তর – পিগম্যালিয়ন পয়েন্ট
10. অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী ………….।
উত্তর – হায়দ্রাবাদ
11. কেরল রাজ্যটি স্বীকৃতি পায় …………. সালে।
উত্তর – 1956
12. দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে …………. সালে।
উত্তর – 1956
13. তেলেঙ্গানার প্রধান ভাষা …………. এবং ………….।
উত্তর – তেলুগু এবং উর্দু

TOPIC – B ভারতের ভূপ্রকৃতি

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগসমূহ: ভূপ্রকৃতির বৈচিত্র্যানুসারে ভারতকে পাঁচটি প্রধান ভূপ্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল— (1) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, (2) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, (3) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল, (4) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল এবং (5) দ্বীপপুঞ্জ।
  2. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল: এই অঞ্চলটি প্রধানত – (1) হিমালয় পর্বতশ্রেণি, (2) কাশ্মীরের লাডাক পর্বতশ্রেণি, (3) কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি এবং (4) উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমি বা পূর্বাচল নিয়ে গঠিত।
  3. হিমালয় পর্বতশ্রেণি : হিমালয় পর্বতশ্রেণি পশ্চিমে কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত (8126 মি) থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের উত্তরে নামচা বারওয়া (7755 মি) পর্যন্ত ধনুকের মতো বেঁকে প্রসারিত। হিমালয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় 2500 কিমি এবং প্রস্থ 150-400 কিমি।
  4. লাডাক পর্বতশ্রেণি: কাশ্মীরে প্রধান হিমালয়ের উত্তরে লাডাক পর্বতশ্রেণি এবং তার উত্তর-পূর্বে লাডাক মালভূমি অবস্থিত।
  5. কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি : কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে ও লাডাক পর্বতশ্রেণির উত্তরে আছে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি। ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ গডউইন অস্টিন বা K2 এবং দীর্ঘতম হিমবাহ সিয়াচেন এই কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিতেই অবস্থিত।
  6. উত্তর-পূর্বের পার্বত্যভূমি বা পূর্বাচল : ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে অরুণাচলের কিছু অংশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরার পর্বতশ্রেণি নিয়ে উত্তর-পূর্বের পার্বত্যভূমি বা পূর্বাচল গঠিত।
  7. উত্তর ভারতের সমভূমি: উত্তরে হিমালয় পার্বত্যভূমি এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ সমতল ক্ষেত্রের নাম উত্তর ভারতের সমভূমি।
  8. উত্তর ভারতের সমভূমির উপবিভাগসমূহ: ভূমিরূপের স্থানীয় বৈচিত্র্যানুসারে উত্তরের সমভূমিকে চারটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়— (1) রাজস্থান সমভূমি বা মরুস্থলী, (2) পাঞ্জাব সমভূমি, (3) গাঙ্গেয় সমভূমি এবং (4) ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
  9. উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল: উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ সমতলভূমির ঠিক দক্ষিণেই আছে সুবিশাল উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল।
  10. উপদ্বীপীয় মালভূমির উপবিভাগসমূহ: ভূমিরূপের স্থানীয় পার্থক্য অনুসারে উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলটিকে তিনটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়— (1) মধ্য ভারতের উচ্চভূমি: আরাবল্লি ও বিন্ধ্য পর্বত, মালব মালভূমি, বুন্দেলখণ্ড মালভূমি প্রভৃতি এখানে অবস্থিত। (2) পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি: ছোটোনাগপুর মালভূমি, বাঘেলখণ্ড মালভূমি, ছত্তিশগড় প্রভৃতি নিয়ে এই উপবিভাগটি গঠিত। অসমের দক্ষিণে অবস্থিত মেঘালয় মালভূমি এই উচ্চভূমিরই একটি বিচ্ছিন্ন অংশ। (3) দাক্ষিণাত্য মালভূমি : উত্তরে বিন্ধ্য পর্বত, পশ্চিমে পশ্চিমঘাট এবং পূর্বে পূর্বঘাট পবর্তশ্রেণির মধ্যবর্তী বন্ধুর ভূভাগটির নাম দাক্ষিণাত্য মালভূমি।
  11. দক্ষিণাত্য মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্খ এবং ডেকান ট্র্যাপ : পশ্চিমঘাট পর্বতের আনামুদি বা আনাইমুদি (2695 মি) দাক্ষিণাত্য মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। মালভূমির লাভাগঠিত উত্তর-পশ্চিমাংশের নাম ডেকান ট্র্যাপ।
  12. উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল: উপদ্বীপীয় মালভূমির দু-দিক থেকে বেষ্টন করে থাকা উপকূলীয় সমভূমিকে দুটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়— (1) পূর্ব উপকূলের সমভূমি বা বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলভূমি এবং (2) পশ্চিম উপকূলের সমভূমি বা আরব সাগরীয় উপকূলভূমি।
  13. ভারতের দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চল : অবস্থান অনুসারে ভারতের দ্বীপগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়— (1) বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এখানে অবস্থিত। (2) আরব সাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এখানে আছে আমিনদিভি, লাক্ষা ও মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগগুলি উল্লেখ করো এবং চিত্রের মাধ্যমে দেখাও (বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন)।
ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ
উত্তর – ভূপ্রকৃতি অনুসারে ভারতকে পাঁচটি প্রধান বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা— 1. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, 2. উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, 3. উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল, 4. উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল এবং 5. দ্বীপ অঞ্চল।
2. ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।
অথবা, উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।
ডারতের পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি
উত্তর – ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতের পার্বত্য অঞ্চলটিকে দুটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়— 1. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং 2. উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমি বা পূর্বাচল।
1. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল: পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমালয়। পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গ থেকে শুরু করে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত নামচা বারওয়া পর্বতশৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় 2500 কিমি।
স্থানীয় বৈচিত্র্য অনুসারে দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয়ের তিনটি উপবিভাগ হল— 1. পশ্চিম হিমালয়, 2. মধ্য হিমালয় এবং 3. পূর্ব হিমালয়।
  1. পশ্চিম হিমালয়
    অবস্থান: পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গ থেকে পূর্বে ভারত-নেপাল সীমান্তের কালী নদী পর্যন্ত পশ্চিম হিমালয়ের বিস্তার।
    পশ্চিম হিমালয়ের দক্ষিণ থেকে উত্তরে চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি দেখা যায়—[i] শিবালিক বা বহিঃহিমালয়: [a] পশ্চিম হিমালয়ের সর্বদক্ষিণে শিবালিক বা বহিঃহিমালয় অবস্থিত। [b] শিবালিক হিমালয়ের গড় উচ্চতা 600-1500 মিটার। [ii] হিমাচল বা মধ্য হিমালয়: [a] শিবালিকের উত্তরে রয়েছে পিরপঞ্জাল, ধওলাধর, নাগটিব্বা ও মুসৌরি পর্বতশ্রেণি। এগুলি সম্মিলিতভাবে হিমাচল বা মধ্য হিমালয় নামে পরিচিত। [b] হিমাচল হিমালয়ের গড় উচ্চতা 1500-4500 মিটার। [c] শিবালিক এবং হিমাচল হিমালয়ের মধ্যবর্তী অংশে দুন, মারি, কাংড়া প্রভৃতি উপত্যকা দেখা যায়। [iii] হিমাদ্রি বা প্রধান হিমালয়: [a] হিমাচল হিমালয়ের উত্তরে আছে হিমাদ্রি বা প্রধান হিমালয়। হিমালয়ের এই অংশের গড় উচ্চতা 6000 মিটার। [b] প্রধান হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গগুলি হল— নাঙ্গা পর্বত (8126 মি), কামেট (7756 মি), নন্দাদেবী (7816 মি), কেদারনাথ (6940 মি), চৌখাম্বা-বদ্রীনাথ (7138 মি) প্রভৃতি। [c] পিরপঞ্জাল ও প্রধান হিমালয়ের মধ্যে আছে বিখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকা (‘ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন’ নামে পরিচিত)। [iv] অন্যান্য পর্বতশ্রেণি: [a] প্রধান হিমালয়ের উত্তরে আছে জাস্কর-দেওসাই পর্বত, লাডাক রেঞ্জ ও কারাকোরাম প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি। [b] এই অংশের গড় উচ্চতাও 6000 মিটার। [c] কারাকোরাম পর্বতের গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মি) ভারতের উচ্চতম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। এ ছাড়াও, কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিতে আছে গাসেরৱুম-I বা হিডেন পিক (8068 মি), ব্রড পিক (8047 মি), গাসেরম-II (8035 মি) প্রভৃতি সুউচ্চ শৃঙ্গ। ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ সিয়াচেন (76 কিমি)-সহ বিয়াফো, বলটারো প্রভৃতি হিমবাহ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিতে দেখা যায়। এই অংশে ডাল, উলার,নাগিন, প্রভৃতি হ্রদ দেখা যায়। জোজিলা, বানিহাল, রোটাং পাস প্রভৃতি এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথ।
  2. মধ্য হিমালয়
    অবস্থান: মধ্য হিমালয় সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন রাষ্ট্র নেপালের অন্তর্গত। (এই অংশটি নেপালের অন্তর্গত হওয়ায় ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হল না।)
  3. পূর্ব হিমালয়
    অবস্থান: নেপালের পূর্বসীমা থেকে অরুণাচল প্রদেশের পূর্বসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয় পার্বত্যভূমির নাম পূর্ব হিমালয়। পূর্ব হিমালয় অঞ্চলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়—
    [i] অরুণাচল হিমালয়: [a] অরুণাচল হিমালয় ভুটানের পূর্বসীমা থেকে অরুণাচল প্রদেশের পূর্বসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।[b]পশ্চিম হিমালয়ের মতো পূর্ব হিমালয়ের এই অংশে হিমাদ্রি, হিমাচল, শিবালিক এই তিনটি শ্রেণি স্পষ্ট দেখা যায়। [c] অরুণাচল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত নামচা বারওয়া এই অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
    [ii] ভুটান হিমালয়: ভুটান হিমালয় স্বাধীন রাষ্ট্র ভুটানের মধ্যে বিস্তৃত। এখানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কুলা কাংড়ি।
    [iii] সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়: [a] সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়ের অন্তর্গত নেপাল-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সিঙ্গালিলা রেঞ্জ উল্লেখযোগ্য। পর্বত। উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ সান্দাকফু (3636 মি), ফালুট (3596 মি) প্রভৃতি। [b] এই অংশে ভারতের দ্বিতীয় ও বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মি) অবস্থিত।
2. উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমি বা পূর্বাচল: (1) উত্তর-পূর্ব ভারতে,বিশেষত অরুণাচল প্রদেশ, অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবংত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে 1800-4000 মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট পাটকই, নাগা, মিকির, বরাইল, লুসাই প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত হয়েছে। এই অঞ্চলটি পূর্বাচল নামে পরিচিত। (2) অরুণাচল প্রদেশের মিশমি  পর্বতশ্রেণির দাফাবুম পূর্বাচলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
3. প্রস্থ বরাবর হিমালয়ের শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা করো।
অথবা, প্রস্থ বরাবর হিমালয়ের ভূপ্রকৃতি বর্ণনা করো।
অথবা, হিমালয়ের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত পর্বতশ্রেণিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
প্রস্থ বরাবর হিমালয়ের শ্রেণিবিভাগ
উত্তর – পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ে প্রস্থ বরাবর উত্তর-দক্ষিণে চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি রয়েছে। এগুলি হল— 1. টেথিস হিমালয় বা ট্রান্স হিমালয়, 2. হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়, 3. হিমাচল বা মধ্য হিমালয় বা অবহিমালয় এবং 4. শিবালিক বা বহিঃহিমালয়।
  1. টেথিস বা ট্রান্স হিমালয় : (1) হিমালয়ের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত টেথিস হিমালয় পর্বতশ্রেণিটি ধীরে ধীরে তিব্বত মালভূমিতে গিয়ে মিশেছে। (2) আজ থেকে প্রায় 7 কোটি বছর আগে প্রথম বারের প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় টেথিস হিমালয়ের সৃষ্টি হয়। (3) এই পর্বতশ্রেণিটির দৈর্ঘ্য প্রায় 1000 কিমি, প্রায় 40 কিমি চওড়া ও এর গড় উচ্চতা প্রায় 3000-4300 মিটার। (4) জাস্কর-দেওসাই পর্বত এই হিমালয়ের প্রধান অংশ। জাস্কর-এর উচ্চতম শৃঙ্গ হল লিওপারগেল (7420 মি)। (5) ভারতীয় অংশে টেথিস হিমালয় প্রায় ক্ষয়ে গিয়ে বিশালাকৃতির একটি মালভূমিতে পরিণত হয়েছে। (6) এই পর্বতশ্রেণির অধিকাংশই তিব্বতে অবস্থিত এবং ভারতে জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
  2. হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়: (1) প্রায় 7 কোটি বছর আগে ‘টেথিস হিমালয়’ সৃষ্টির সময় হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়ের উত্থান ঘটেছিল। (2) হিমালয় পর্বতের এই অংশটি বছরের অধিকাংশ সময়ই বরফে ঢাকা থাকায় একে হিমাদ্রি বা হিমগিরি বলা হয় । (3) টেথিস হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত এই পর্বতশ্রেণিটি গড়ে 6000 মিটার উঁচু ও প্রায় 50 কিমি প্রশস্ত । (4) হিমালয়ের বিখ্যাত শৃঙ্গগুলি এখানেই অবস্থিত, যেমন— এভারেস্ট (পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, উচ্চতা –8848 মি), কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মি), ধবলগিরি (8172 মি), নাঙ্গা পর্বত (8126 মি), অন্নপূর্ণা (8078 মি), নন্দাদেবী (7816 মি) প্রভৃতি। (5) এই পর্বতশ্রেণি অতি প্রাচীন রূপান্তরিত ও পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত।
  3. হিমাচল বা মধ্য হিমালয়: (1) প্রায় 2 কোটি বছর আগে পরবর্তী প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় হিমাদ্রির দক্ষিণে হিমাচল পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়। (2) দক্ষিণে শিবালিক পর্বতশ্রেণি ও উত্তরে হিমাদ্রি হিমালয়ের মধ্যে হিমাচল হিমালয় প্রসারিত হয়েছে। এই পর্বতশ্রেণি 1500-4500 মিটার উঁচু ও 60-80 কিমি প্রশস্ত। (3) পিরপঞ্জাল, ধওলাধর, নাগটিব্বা প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি এখানে দেখা যায়। (4) এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলি হল কেদারনাথ (7188 মি), চৌখাম্বা বদ্রীনাথ (7138 মি), ত্রিশূল (7120 মি) প্রভৃতি। (5) এই অংশে অনেক উপত্যকা দেখা যায়, যেমন— কুলু, কাংড়া প্রভৃতি। (6) হিমাচলের নদী উপত্যকাগুলি খুব গভীর ও গিরিখাত বিশিষ্ট।
  4. শিবালিক বা বহিঃহিমালয়: (1) প্রায় 30 লক্ষ বছর আগে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের শেষ প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় হিমালয়ের দক্ষিণতম পর্বতশ্রেণি শিবালিকের সৃষ্টি হয়। (2) শিবালিক পর্বতশ্রেণি গড়ে 600-1500 মিটার উঁচু এবং 10-50 কিমি চওড়া। (3) জম্মু, ডাফলা, মিরি, আবোর প্রভৃতি পাহাড় এখানে অবস্থিত। (4) এই পর্বতশ্রেণি কোটা, পাটলি, কোঠরি, চুম্বি, কিয়ারদা, চৌখাম্বা, উধমপুর, কোটলি প্রভৃতি বিভিন্ন উপত্যকা (বা দুন) দ্বারা মধ্য হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন।
4. পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
উত্তর – অবস্থান: জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তের নাঙ্গা পর্বত থেকে নেপালের পশ্চিম সীমায় অবস্থিত কালী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে বলা হয় পশ্চিম হিমালয়। ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ তিনটি হল— (1) কাশ্মীর হিমালয়, (2) হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয় এবং (3) কুমায়ুন হিমালয়।
  1. কাশ্মীর হিমালয়: [i] এই অংশটি জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত। [ii] কাশ্মীর হিমালয়ের দক্ষিণে পরপর জম্মু ও পুঞ্জ পাহাড় এবং পিরপঞ্জাল পর্বত অবস্থিত। এগুলি প্রধানত বেলেপাথর ও শেল দিয়ে গঠিত। [iii] এই পিরপঞ্জালের উত্তরে অনেক উপত্যকা ও দুন দেখা যায়। যেমন—কাশ্মীর উপত্যকা, উধমপুর দুন প্রভৃতি। [iv] পিরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণি কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেবল বানিহাল ও পিরপঞ্জাল গিরিপথ দুটি দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় প্রবেশ করা যায়। [v] হিমবাহ সৃষ্ট ডাল, উলার, আনচার, নাগিন প্রভৃতি হ্রদ এই উপত্যকায় দেখা যায়। [vi] কাশ্মীর উপত্যকার পূর্ব থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়েছে হিমগিরি ও জাস্কর পর্বতশ্রেণি। [vii] কাশ্মীরের সিন্ধু উপত্যকার উত্তরভাগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মি) অবস্থিত। এই পর্বতের অন্যান্য শৃঙ্গ হল গ্যাসেরব্রুম-I বা হিডেন পিক, ব্রড পিক, গ্যাসেরৱুম-II প্রভৃতি। এই পর্বতে অবস্থিত সিয়াচেন (76 কিমি) হল ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম হিমবাহ। [viii] হিমাদ্রি হিমালয়ের উত্তরে এবং কারাকোরামের দক্ষিণে লাডাক পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। এর উত্তর- পূর্বে ভারতের সর্বোচ্চ লাডাক মালভূমি অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা প্রায় 4300 মি। [ix] জোজি লা ও বানিহাল হল কাশ্মীর হিমালয়ের প্রধান গিরিপথ।
  2. হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয়: [i] হিমালয়ের যে অংশ হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত তাকে হিমাচল হিমালয় বলা হয়। [ii] এই অঞ্চলের উত্তরে 5000-6000 মিটার উঁচু হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। [iii] হিমাদ্রির দক্ষিণে মধ্য হিমালয়ের চারটি পর্বতশ্রেণি- ধওলাধর, পিরপঞ্জাল, নাগটিব্বা ও মুসৌরি অবস্থিত। এদের মধ্যে পিরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণির শৃঙ্গগুলি প্রায়ই তুষারাবৃত থাকে। এই পর্বতশ্রেণিগুলির গড় উচ্চতা 1500-4500 মিটারের মধ্যে। [iv] সবচেয়ে দক্ষিণে আছে শিবালিক পর্বতশ্রেণি। এর গড় উচ্চতা 600-1500 মি। [v] এই অংশেও অনেক পার্বত্য উপত্যকা দেখা যায়, যেমন—লাহুল, স্পিতি, কুলু, কাংড়া প্রভৃতি।
  3. কুমায়ুন হিমালয়: [i] উত্তরাখণ্ড রাজ্যে হিমালয়ের যে অংশটি বিস্তৃত, তার নাম কুমায়ুন হিমালয়। [ii] মধ্য হিমালয় পর্বতশ্রেণির উত্তরে কতকগুলি বিখ্যাত তুষারাবৃত শৃঙ্গ আছে, যেমন—নন্দাদেবী (7816 মি), গঙ্গোত্রী (6614 মি), কেদারনাথ (7188 মি), কামেট (7756 মি), ত্রিশূল (7120 মি) প্রভৃতি। [ii] এই অঞ্চলের দক্ষিণ ভাগে শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যে কতকগুলি বিখ্যাত উপত্যকা বা দুন আছে, যেমন—দেরাদুন, চৌখাম্বা, কোটা, পাটালি, কোঠরি, কোটলি প্রভৃতি। [iv] এই অংশে বিস্তৃত নাগটিব্বা ও মুসৌরি পর্বতের পূর্বাংশে অনেকগুলি হ্রদ দেখা যায়। যেমন—নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল প্রভৃতি। [v] এখানে গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে যথাক্রমে গঙ্গা ও যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
5. পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
অবস্থান: নেপালের পূর্বসীমায় সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে অরুণাচল প্রদেশের পূর্বসীমা পর্যন্ত হিমালয়ের যে অংশ বিস্তৃত, তাকে পূর্ব হিমালয় অঞ্চল বলা হয়।
ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ: স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে পূর্ব হিমালয় অঞ্চলকে তিনটি ক্ষুদ্রতর অঞ্চলে ভাগ করা যায়, এগুলি (1) সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়, (2) ভুটান হিমালয় এবং (3) অরুণাচল হিমালয়।
  1. সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়: [i] সিকিমের পশ্চিমদিকে দার্জিলিং-নেপাল সীমান্তে সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে পূর্বদিকে ডানকিয়া পর্বতশ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের অংশকে সিকিম-দার্জিলিং হিমালয় বলা হয়। [ii] সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণির পশ্চিমসীমায় সিকিম-নেপাল সীমান্তে ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম এবং পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা অবস্থিত। [iii] ডংকিয়া পর্বতশ্রেণিতে আছে বিখ্যাত নাথু লা ও জেলেপ লা গিরিপথ যার সাহায্যে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। ‘মিরিক’ দার্জিলিং হিমালয়ে ও ‘ছাঙ্গু’ সিকিম অবস্থিত দুটি বিখ্যাত পার্বত্য হ্রদ। [iv] দার্জিলিঙের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ—সান্দাকফু (3636 মি), ফালুট (3596 মি) ও সবরগ্রাম (3,543 মি) সিঙ্গালিলায় অবস্থিত। এর মধ্যে সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
  2. ভুটান হিমালয়: [i] হিমালয়ের যে অংশ ভুটানের অন্তর্গত তাকে বলা হয় ভুটান হিমালয় (স্থানীয় নাম মাসাং কিডু)। [ii] এই অংশেও অনেকগুলি সুউচ্চ শৃঙ্গ আছে–কুলা কাংড়ি (7554 মি), চোমোলহরি (7314 মি) প্রভৃতি।
  3. অরুণাচল হিমালয়: [i] হিমালয়ের যে অংশটি অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত, তাকে অরুণাচল হিমালয় বলা হয়। [ii] পূর্ব হিমালয়ের মধ্যে একমাত্র অরুণাচল প্রদেশেই হিমালয়ের তিনটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি- শিবালিক, হিমাচল এবং হিমাদ্রিকে লক্ষ করা যায়। [iii] অরুণাচল প্রদেশের উত্তর-পূর্বে (তিব্বতে) সুউচ্চ নামচা বারওয়া (7756 মি) পর্বতশৃঙ্গ অবস্থিত। [iv] এই শৃঙ্গের পূর্বদিকে আছে ‘সাংপো গিরিখাত’ (Tsangpo gorge)। [v] অরুণাচল হিমালয় থেকে তুলুংলা, বুম লা প্রভৃতি গিরিপথের সাহায্যে তিব্বতে যাওয়া যায় এবং নিংসাং লা গিরিপথের মাধ্যমে ভুটান হিমালয়ে যাওয়া যায়।
6. উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাচলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাচল
অবস্থান: ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে পূর্ব হিমালয়ের অনুচ্চ পর্বতশ্রেণি এবং উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হিমালয়ের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন শাখা- পর্বতশ্রেণি ও পাহাড় নিয়ে গঠিত অঞ্চলকে উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাচল বলা হয়। অরুণাচল প্রদেশের দক্ষিণাংশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং অসমের কাছাড় জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্বত্য অঞ্চল পশ্চিমে মেঘালয় মালভূমির সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: (1) অরুণাচল প্রদেশের পাটকই ও মিশমি পাহাড় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। মিশমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দাফাকুম (4578 মি) পূর্বাচল তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলেরও সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ। (2) পাটকই পাহাড় আরও দক্ষিণে নাগাল্যান্ডের মধ্যে প্রসারিত বরাইল পাহাড়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। বরাইল পাহাড় আরও পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে কোহিমা পাহাড় এবং নাগা পাহাড়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কোহিমা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল জাপাভো (2995 মি) এবং নাগা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্খ সারামতি (3926 মি)। বরাইল পাহাড়ের একটি অংশ অসমের কাছাড় হয়ে মেঘালয় মালভূমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মেঘালয় মালভূমির উল্লেখযোগ্য অংশ হল—গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়। (3) নাগাল্যান্ডের দক্ষিণ দিকে পাহাড়গুলির উচ্চতা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। মণিপুরে এই ধরনের অনুচ্চ পাহাড় শ্রেণির মাঝে একটি সুন্দর উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। এর নাম ইম্ফল উপত্যকা। এর মাঝখানে রয়েছে লোকটাক হ্রদ। (4) মণিপুরের অনুচ্চ পাহাড়গুলি অবশেষে মিজোরামে লুসাই বা মিজো পাহাড়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। লুসাই পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ফাংপুই (2157 মি)। (5) ত্রিপুরায় লুসাই পাহাড়ের সঙ্গে সমান্তরালভাবে অবস্থিত ছয়টি প্রায় সমান্তরাল পাহাড়শ্রেণি (স্থানীয় নাম ‘টাং’) দেখা যায়। এগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ হল জাম্পুইটাং। জাম্পুইটাং-এর বেতলিংসিব (960 মি) ত্রিপুরার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অংশ আরাকান ইয়োমা পর্বতশ্রেণির অংশ হিসেবে আরও দক্ষিণে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল হয়ে মায়ানমারে প্রবেশ করেছে।
7. চিত্র-সহ হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির কারণ আলোচনা করো।
উত্তর – হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির কারণ
হিমালয় পর্বতমালার উৎপত্তি বা সৃষ্টির কারণ দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—
1. মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন তত্ত্ব অনুসারে এবং 2. পাত-গাঠনিক বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব অনুসারে।
  1. মহীখাত তত্ত্ব: (1) এখন যেখানে হিমালয়ের অবস্থান, প্রায় 6.5 থেকে 7 কোটি বছর আগে সেখানে একটি অগভীর সাগর বা মহীখাত (geosyncline) ছিল, যার নাম টেথিস সাগর বা টেথিস জিওসিনক্লাইন। (2) টেথিস সাগরের উত্তরে আঙ্গারাল্যান্ড এবং দক্ষিণে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে দুটি প্রাচীন ভূভাগ ছিল। (3) এই ভূভাগ দুটিতে প্রবাহিত অসংখ্য নদনদী-বাহিত পলি দ্বারা টেথিস সাগর ক্রমশ ভরাট হয়ে যায়। (4) টার্শিয়ারি যুগে ভূ-আন্দোলনের ফলে ওই ভূভাগ দুটি পরস্পরের কাছাকাছি আসতে থাকলে টেথিস সাগরে সঞ্চিত প্রস্তরীভূত পাললিক শিলাত্তরে প্রচণ্ড পার্শ্বচাপ পড়ে। এর ফলে ওই শিলাস্তরে ভাঁজের সৃষ্টি হয় ও তা ধীরে ধীরে ওপরে উঠে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ের সৃষ্টি করে।
  2. পাত-গাঠনিক তত্ত্ব: (1) পর্বত গঠন সম্পর্কিত সর্বাধুনিক এই তত্ত্ব অনুসারে ভূত্বক কতকগুলি চলমান পাত বা প্লেটের সমন্বয়ে (7টি প্রধান ও 20টি অপ্রধান) গঠিত। এগুলির মধ্যে ভারতীয় পাত এবং ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলেই হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছে। (2) পরস্পরের দিকে অগ্রসরমান অধিক গতিশীল ভারতীয় পাতের সঙ্গে ধীরগামী ইউরেশীয় পাতের প্রবল সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ফলে অপেক্ষাকৃত ভারী ভারতীয় পাতটি ভূগর্ভে ইউরেশীয় পাতের তলদেশে প্রবেশ করে। এর ফলে উভয় পাতের মধ্যবর্তী টেথিস মহীখাতে সঞ্চিত স্তরীভূত পলিরাশিতে প্রবল চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে হিমালয় পর্বতের উত্থান ঘটে। অন্যদিকে, ইউরেশীয় পাতের সম্মুখভাগ তিব্বত মালভূমি হিসেবে উঁচু হয়ে অবস্থান করে। (3) ভারতীয় পাতটি এখনও প্রতি বছর প্রায় 5.4 সেমি হারে উত্তর দিকে এগিয়ে চলেছে। তাই হিমালয় অঞ্চলে পাতজনিত সংঘর্ষ প্রক্রিয়াও এখনও কার্যকরী আছে। এর ফলে বর্তমানেও হিমালয়ের উত্থান ঘটে চলেছে।
8. গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর – গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান
পশ্চিমে যমুনা নদী, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গঙ্গার মোহানা, উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে মধ্য ও পূর্বভারতের উচ্চভূমির মধ্যবর্তী বিশাল সমতল অঞ্চলটির নাম গাঙ্গেয় সমভূমি। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিস্তৃত এই সমভূমির মোট আয়তন প্রায় 3 লক্ষ 75 হাজার বর্গকিমি।
গাঙ্গেয় সমভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
এই সমভূমি অঞ্চলটিকে নানা ভৌগোলিক ও স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অনুসারে তিনটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা যায়—
  1. উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল: (1) অঞ্চলটি পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে এলাহাবাদ পর্যন্ত প্রসারিত। (2) পশ্চিমে অঞ্চলটির গড় উচ্চতা 220 মি এবং পূর্বে 100 মি। (3) অঞ্চলটি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ঢালু। উত্তরাংশে সংকীর্ণ ভাবর ও তরাইভূমি দেখা যায়। (4) এই অঞ্চলের প্রাচীন পলি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা ভাঙ্গার নামে ও নবীন পলি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা খাদার নামে পরিচিত।
  2. মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল: (1) অঞ্চলটি এলাহাবাদ থেকে পূর্বদিকে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সীমা পর্যন্ত প্রসারিত। এই অঞ্চলটির পূর্বাংশ বিহার রাজ্যে এবং পশ্চিমাংশ উত্তরপ্রদেশের মধ্যে অবস্থিত। (2) পূর্বদিকে এর উচ্চতা ক্রমহ্রাসমান (প্রায় 35 মি)। (3) প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকতি হ্রদ প্রভৃতি এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। (4) অঞ্চলটির দক্ষিণ-পূর্ব সীমায় আছে রাজমহল পাহাড়। (5) শিবালিকের পাদদেশে প্রস্তরময়, নুড়ি ও বালিপূর্ণ ভূমিভাগ ভাবর নামে পরিচিত। (6) ভাবরের দক্ষিণে জঙ্গলময়, জলাকীর্ণ, অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে তরাই বলা হয় ।
  3. নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল: (1) ভারতে এই অংশটি ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সীমা থেকে বঙ্গোপসাগরে হুগলি নদীর মোহানা পর্যন্ত বিস্তৃত। (2) এই অংশটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—[i] উত্তরবঙ্গের সমভূমি (হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উৎপন্ন গঙ্গা-পদ্মার উপনদীগুলি দ্বারা গঠিত), [ii] রাঢ় সমভূমি (ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন গঙ্গার উপনদীগুলি দ্বারা গঠিত) এবং [iii] বদ্বীপ সমভূমি (গঙ্গা-পদ্মা এবং এদের উপনদী ও শাখানদীগুলি দ্বারা গঠিত)। এর তিনটি অংশ হল—[a] মৃতপ্রায় বদ্বীপ, [b] পরিণত বদ্বীপ ও [c] সক্রিয় বদ্বীপ ।
9. ভারতের পাঞ্জাব সমভূমি ও ব্রহ্মপুত্র সমভূমি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – পাঞ্জাব সমভূমি
অবস্থান: উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের পশ্চিমাংশের নাম পাঞ্জাব সমভূমি। অঞ্চলটি যমুনা নদীর পশ্চিম দিক থেকে প্রসারিত হয়ে পাকিস্তানের পূর্বদিকের বেশ কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। দিল্লি, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: (1) সিন্ধুর পাঁচটি উপনদী, যথা—শতদ্রু, বিপাশা, বিতস্তা, ইরাবতী ও চন্দ্রভাগা পলি সঞ্চয় করে এই সমভূমিটি তৈরি করেছে। এজন্য এই সমভূমি পাঞ্জাব (পঞ্ঝ = পাঁচ এবং আব = জলধারা) সমভূমি নামে পরিচিত। ও এখানকার নদীতীরবর্তী নতুন পলিগঠিত স্থানসমূহকে বেট, দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে দোয়াব, প্লাবনভূমিকে ধায়া, উত্তবের শিবালিক
পর্বতের পাদদেশীয় ক্ষয়প্রাপ্ত অংশকে খোশ এবং শিবালিক পর্বতের পাদদেশের নুড়ি, পাথর ও শিলাচূর্ণ গঠিত ভূমিকে ভাবর বলা হয়। (3) সমভূমিটির গড় উচ্চতা 200-240 মিটার। (4) সমভূমিটি দক্ষিণ-পশ্চিমে সিন্ধু উপত্যকার দিকে ঢালু। (5) এই অংশে পাঁচটি দোয়াব দেখা যায়— [a] বিপাশা ও শতদ্রু নদের মধ্যে বিস্ত-জলন্ধর দোয়াব, [b] ইরাবতী ও বিপাশা নদীর মধ্যে বারি দোয়াব, [c] চন্দ্রভাগা ও ইরাবতী নদীর মধ্যে রেচনাদোয়াব, [d] বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা নদীর মধ্যে চাজ দোয়াব এবং [e] বিতস্তা ও সিন্ধু নদের মধ্যে সিন্ধু সাগর দোয়াব।
ব্রহ্মপুত্র সমভূমি
অবস্থান: অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের দু-পাশে যে সংকীর্ণ সমতল ক্ষেত্রটি আছে, তার নাম ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
বিস্তার: 1000 কিমি দীর্ঘ ও 80-100 কিমি প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা পূর্বে সদিয়া থেকে পশ্চিমে ধুবরি পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় 56 হাজার বর্গকিমি। অসমের সমতলভূমি এর অন্তর্গত।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: (1) উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে পর্বতঘেরা এই সমভূমিটি দীর্ঘ ও সংকীর্ণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঢালু। (2) পূর্ব দিকে সমভূমির উচ্চতা প্রায় 130 মিটার এবং পশ্চিমে প্রায় 30 মিটার। (3) ব্রহ্মপুত্র এবং তার বিভিন্ন উপনদীর পলি জমে এই সমভূমি তৈরি হয়েছে। পলি সমৃদ্ধ বলে এখানকার মাটি খুব উর্বর। (4) এই সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ব্রক্ষ্মপুত্র নদ তার গতিপথে বহু বালুচর বা দ্বীপ গঠন করেছে। এরকমই একটি বালুচরের নাম মাজুলি। এর আয়তন আগে 1250 বর্গকিমি ছিল, কিন্তু ক্ষয়ের ফলে এখন তা 352 বর্গকিমিতে পৌঁছেছে। এটি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।
10. ভারতের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বর্ণনা করো।
উত্তর – ডারতের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি
অবস্থান: ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি ও মেঘালয় মালভূমিকে একত্রে ‘ভারতের প্রাচীন মালভূমি’ নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ ভারতের প্রাচীন মালভূমির দুটি অংশ— 1. মূল ভূভাগ এবং 2. বিচ্ছিন্ন ভূভাগ।
  1. মূল ভূভাগ

    অবস্থান: উত্তরে বিন্ধ্য, সাতপুরা-মহাদেব-মহাকাল, পশ্চিমে পশ্চিমঘাট, পূর্বে পূর্বঘাট এবং দক্ষিণে নীলগিরি ও আনাইমালাই পর্বতশ্রেণিসমূহের মধ্যে প্রাচীন মালভূমির মূল ভূভাগ অবস্থিত।

    বৈশিষ্ট্য: (1) এই মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে আছে লাভাজাত শিলা দ্বারা আবৃত মহারাষ্ট্র মালভূমি। এই মালভূমি ডেকান ট্র্যাপ নামেও পরিচিত। (2) দক্ষিণাংশে কর্ণাটক রাজ্যের গ্র্যানাইট ও নিস পাথরে গঠিত মালভূমিকে বলে কর্ণাটক মালভূমি। কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমঘাট পর্বতসংলগ্ন উঁচু পাহাড়িভূমিকে বলা হয় মালনাদ এবং পূর্বাংশের উন্মুক্ত সমতল এলাকটিকে বলা হয় ময়দান। (3) উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তর-পূর্বাংশের নাম ছোটোনাগপুর মালভূমি। এখানকার সর্বোচ্চ অংশ হল পাট অঞ্চল (গড় উচ্চতা প্রায় 1100 মি)। এই মালভূমিতে পরেশনাথ, দলমা, রাজমহল প্রভৃতি পাহাড় দেখা যায়। এই অঞ্চলটি খনিজ সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। (4) উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত বা মধ্য ভারতের উচ্চভূমি অংশে মালব মালভূমি, বুন্দেলখণ্ড মালভূমি, রেওয়া মালভূমি প্রভৃতি অবস্থিত। (5) উপদ্বীপীয় মালভূমির পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য এলাকা হল ছত্তিশগড় অঞ্চল, দণ্ডকারণ্য এলাকা, তামিলনাড়ু উচ্চভূমি প্রভৃতি।
  2. বিচ্ছিন্ন ভূভাগ
    অবস্থান:উপদ্বীপীয় মালভূমির একটি বিচ্ছিন্ন অংশের নাম হল মেঘালয় মালভূমি। উত্তরের ব্রহ্মপুত্র সমভূমি এবং দক্ষিণের বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকার মাঝে মেঘালয় মালভূমি অবস্থিত।
    বৈশিষ্ট্য: (1) মেঘালয় মালভূমি হল দাক্ষিণাত্য মালভূমির একটি বিচ্ছিন্ন অংশ। (2) মেঘালয় মালভূমির ওপর কয়েকটি পাহাড় আছে। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পূর্বাংশের মিকির পাহাড়, পশ্চিমাংশের গারো পাহাড় এবং মধ্যভাগের খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়। (3) মধ্যভাগে অবস্থিত শিলং-চেরাপুঞ্জি এলাকা এই মালভূমির সর্বোচ্চ অংশ, যার গড় উচ্চতা প্রায় 1500 মিটার। (4) এখানকার সর্বাপেক্ষা উচুঁ শৃঙ্গের নামশিলং (1961 মি)। (5) মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণে বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা। এই উপত্যকা থেকে মালভূমিটি খুব খাড়াভাবে ওপরে উঠে গেছে। এজন্য মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ দিকে খুব খাড়া ঢাল দেখা যায় ৷
11. পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি বলতে কী বোঝ? এই উচ্চভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
উত্তর – পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর মালভূমি, ছত্তিশগড় রাজ্যের বাঘেলখণ্ড মালভূমি ও সমতলক্ষেত্র-সহ মহানদী অববাহিকা, ওডিশার দণ্ডকারণ্য অঞ্চল প্রভৃতিকে একসঙ্গে বলা হয় পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
  1. ছোটোনাগপুর মালভূমি: ছোটোনাগপুর মালভূমির সর্বাপেক্ষা উঁচু অংশ পশ্চিমের পাট অঞ্চল (গড় উচ্চতা 1000 মিটারের বেশি)। বিখ্যাত রাঁচি মালভূমি পাট অঞ্চলের পূর্ব দিকে অবস্থিত। রাঁচি মালভূমির উত্তর দিক দিয়ে দামোদর নদ প্রবাহিত হয়েছে। এই নদের উত্তরে আছে হাজারিবাগ মালভূমি। ছোটোনাগপুরের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ পরেশনাথ (1366 মি) এখানেই অবস্থিত। ছোটোনাগপুর মালভূমির উত্তর-পূর্ব দিকে আছে ব্যাসল্ট শিলা গঠিত রাজমহল পাহাড়। এখানকার দলমা ও পোরহাট পাহাড়ও ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত।
  2. বাঘেলখণ্ড মালভূমি: প্রাচীন পাললিক ও গ্র্যানাইট শিলা দ্বারা গঠিত শোন নদীর দক্ষিণে অবস্থিত পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশটির নাম হল বাঘেলখণ্ড। বহু যুগ ধরে ক্ষয় হওয়ার ফলে এখানকার উচ্চতা বেশ কমে গেছে (গড়ে 700 মি উঁচু)। এই অংশে অনেক সমপ্ৰায়ভূমি (peneplain) দেখা যায়।
  3. মহানদী অববাহিকা: বাঘেলখণ্ড মালভূমির দক্ষিণে আছে মহানদী অববাহিকা। এর মধ্যভাগের নাম ছত্তিশগড় সমতলক্ষেত্র।
  4. দণ্ডকারণ্য: এই সমতলক্ষেত্রের দক্ষিণে বন্ধুর ও ব্যবচ্ছিন্ন দণ্ডকারণ্য পাহাড়িয়া অঞ্চল অবস্থিত। এই মালভূমির সর্বোচ্চ অংশ হল কোরাপুট।
  5. গড়জাত অঞ্চল: রাঁচি মালভূমির দক্ষিণে ওডিশার গড়জাত (400-1000 মি) অঞ্চল অবস্থিত। এখানে কতকগুলি পাহাড় আছে, যেমন—বোনাই, কেওনঝড়, সিমলিপাল প্রভৃতি।
12. মধ্য ভারতের উচ্চভূমির অবস্থান ও ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।
উত্তর – অবস্থান
পশ্চিমে আরাবল্লি, দক্ষিণে নর্মদা নদী ও দাক্ষিণাত্যের মালভূমি, পূর্বে পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি এবং উত্তরে উত্তর ভারতের সমভূমির মধ্যবর্তী স্থানে যে উচ্চভূমি অঞ্চলটি অবস্থিত, তাকে বলা হয় মধ্যভারতের উচ্চভূমি। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের উচ্চভূমি নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত।
ভূপ্রকৃতি
  1. আরাবল্লি পর্বত: এই উচ্চভূমির পশ্চিমাংশে আরাবল্লি পর্বত অবস্থিত। আরাবল্লি ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত। বহুযুগ ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ফলে এর উচ্চতা অনেক কমে গেছে। গুরুশিখর (1722 মি) ও মাউন্ট আবু (1158 মি) আরাবল্লি পর্বতের দুটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ।
  2. রাজস্থান মালভূমি ও পাথার: আরাবল্লি পর্বতের পূর্বে অবস্থিত রাজস্থান মালভূমি প্রধানত একটি সমপ্রায়ভূমি। এর দক্ষিণে রয়েছে মধ্যভারতের পাথার অঞ্চল।
  3. বিন্ধ্য পর্বত: এই উচ্চভূমির প্রধান পর্বতমালার নাম বিন্ধ্য পর্বত (1050 কিমি দীর্ঘ)। পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বিন্ধ্য পর্বতের গড় উচ্চতা 550 মিটার এবং এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মানপুর (881 মি)। বিন্ধ্য পর্বত থেকে চম্বল ও মাহী নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
  4. নর্মদা উপত্যকা: বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে নর্মদা নদী কোথাও উন্মুক্ত উপত্যকা, আবার কোথাও গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
  5. মালব ও বুন্দেলখণ্ড মালভূমি: বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে অবস্থিত মালব মালভূমি এবং এর উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত বুন্দেলখণ্ড মালভূমি। এই অঞ্চলে মাহী, নর্মদা ও অন্যান্য ছোটো ছোটো নদী দ্বারা ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে মেসা (mesa) ভূভাগের সৃষ্টি করেছে।
  6. রেওয়া মালভূমি: বিন্ধ্য পর্বতের পূর্বাংশের নাম রেওয়া মালভূমি। এটি ঢেউখেলানো ও লাভা দ্বারা গঠিত।
13. দাক্ষিণাত্য মালভূমির অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – দাক্ষিণাত্য মালভূমির অবস্থান
উপদ্বীপীয় মালভূমির মূল ভূখণ্ডটির নাম দাক্ষিণাত্য মালভূমি। উত্তরে বিন্ধ্য পর্বত, দক্ষিণে কন্যাকুমারী, পূর্বে পূর্বঘাট পর্বতমালা বা মলয়াদ্রি এবং পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বা সহ্যাদ্রির মধ্যবর্তী অংশে দাক্ষিণাত্য মালভূমি বিস্তৃত। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মালভূমি এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
1. এই অঞ্চলটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূভাগ বা শিল্ড (shield) মালভূমির অংশ। 2. অঞ্চলটি প্রাচীন গ্র্যানাইট, নিস প্রভৃতি আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত। 3. কোটি কোটি বছর ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ফলে দাক্ষিণাত্য মালভূমির অনেক অংশ সমপ্রায়ভূমি এবং তারমধ্যে কোথাও কোথাও ব্যবচ্ছিন্ন মেসা (mesa) ও বিউট (butte) ভূমিরূপে পরিণত হয়েছে। 4. সমগ্র মালভূমি পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু এবং উত্তরাংশের তুলনায় দক্ষিণাংশ ক্রমশ উঁচু। 5. মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে লাভা গঠিত ডেকান ট্র্যাপ (Deccan Trap) অঞ্চল দেখা যায়। ট্র্যাপ’ (trap) শব্দটির অর্থ ‘সিঁড়ি’। মহারাষ্ট্র মালভূমি নামে পরিচিত এই লাভা মালভূমির শীর্ষদেশ চ্যাপটা এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে সিঁড়ির মত ধাপে ধাপে নেমে গেছে। 6. ডেকান ট্র্যাপের দক্ষিণে কর্ণাটক মালভূমি রয়েছে। এই মালভূমির পূর্বাংশ বেশ সমতল এবং উন্মুক্ত। এর নাম ময়দান। কিন্তু কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমাংশ খুবই উঁচুনীচু এবং ঢেউখেলানো, বন্ধুর। এর নাম মালনাদ। 7. ত্রিভুজাকৃতি দাক্ষিণাত্য মালভূমির তিনদিক পর্বতবেষ্টিত। এগুলির মধ্যে উত্তরে আছে সাতপুরা-মহাদেব-মহাকাল-অজন্তা পর্বতশ্রেণি, পশ্চিমে আছে পশ্চিমঘাট বা সহ্যাট্রি পর্বতমালা এবং পূর্বে আছে পূর্বঘাট বা মলয়াদ্রি পর্বতমালা। ৪. পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণ প্রান্তের নাম আনাইমালাই পর্বত। এই পর্বতের আনামুদি বা আনাইমুদি (2695 মি) দাক্ষিণাত্য মালভূমির উচ্চতম শৃঙ্গ।
14. দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণিগুলি সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – দাক্ষিণাত্য মালভূমির উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণি
  1. সাতপুরা-মহাদেব-মহাকাল পর্বতশ্রেণি: (1) সাতপুরা-মহাদেব-মহাকাল পর্বতশ্রেণি নর্মদা নদী উপত্যকার দক্ষিণসীমা বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছে। সাতপুরার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধূপগড় (1350 মি)। (2) মহাদেব পর্বতে চুনাপাথরের গুহা দেখা যায়। (3) মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকণ্টক (1057 মি)। (4) সাতপুরা একটি হোর্স্ট (স্তূপ) জাতীয় পর্বত ও এর দু-পাশের নর্মদা ও তাপ্তী নদীর উপত্যকা দুটি গ্রাবেন-জাতীয় গ্রস্ত উপত্যকা।
  2. অজন্তা পর্বতশ্রেণি : সাতপুরার দক্ষিণে লাভা গঠিত অজন্তা পর্বতশ্রেণি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত। এই পর্বতশ্রেণিটি ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
  3. পশ্চিমঘাট বা সহ্যাছি পর্বতশ্রেণি: (1) দাক্ষিণাত্য মালভূমির পশ্চিম সীমায় পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রায় প্রাচীরের মত বিস্তৃত পশ্চিমঘাটের দৈর্ঘ্য প্রায় 1600 কিমি এবং গড় উচ্চতা প্রায় 1200 মি। (2) এই পর্বতের পশ্চিমের ঢাল খুব খাড়া হলেও পূর্ব দিকে তা ধাপে ধাপে নেমে মালভূমিতে মিশেছে। (3) পশ্চিমঘাটপর্বতের আনাইমুদি (2695 মি) দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এর অন্যান্য শৃঙ্গ হল ভাভুলমালা (2339 মি) কলসুবাই, মহাবালেশ্বর প্রভৃতি। (4) এই পর্বতশ্রেণির দুটি প্রধান গিরিপথ বা গ্যাপ (gap) হল— নাসিকের কাছে অবস্থিত থলঘাট এবং পুণের কাছে অবস্থিত ভোরঘাটগিরিপথ। (5) পশ্চিমঘাট পর্বতের দক্ষিণাংশ গ্র্যানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত হওয়ায় এখানকার পাহাড়ের চূড়াগুলি গোলাকার।
  4. নীলগিরি-আনাইমালাই-কার্ডামম-পালনি পর্বতশ্রেণি: (1) পশ্চিমঘাট পর্বত দক্ষিণে নীলগিরিতে মিলিত হয়েছে। মালভূমির আকৃতিবিশিষ্ট নীলগিরি পর্বতের গড় উচ্চতা 1500-2000 মি। এর দুটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ ডোডাবেট্টা (2637 মি) এবং মাকুর্তি (2554 মি)। (2) নীলগিরির দক্ষিণে পালঘাট গিরিপথ অবস্থিত। (3) এই গিরিপথের দক্ষিণে ঘন অরণ্যে ঢাকা আনাইমালাই, কার্ডামম ও পালনি পর্বতশ্রেণি দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে, পালঘাট গিরিপথ বা ফাঁকের পর পশ্চিমঘাট পুনরায় উত্থিত হয়ে এই আনাইমালাই পর্বত গঠন করেছে। আর এরই দুটি প্রশাখা পূর্ব দিকে পালনি এবং আরো দক্ষিণে কার্ডামম পর্বত নামে পরিচিত। এজন্যই আনাইমালাই পর্বতের আনাইমুদিকে পশ্চিমঘাটের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলা হয়।
  5. পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণি: (1) দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্ব সীমায় পূর্ব উপকূলের সমান্তরালে উত্তর-দক্ষিণে পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত। (2) পূর্বঘাট কতকগুলি বিচ্ছিন্ন পর্বতের সমষ্টি। (3) এটি ক্ষয়জাত পর্বত এবং সেজন্য উচ্চতাও অনেক কম (গড়ে 400-600 মি)। (4) নান্নামালাই, ভেলিকোন্ডা, পালকোন্ডা, শেভরয়, পচাইমালাই, জাভাদি প্রভৃতি কয়েকটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের সমন্বয়ে এই পর্বতমালা গঠিত। (5) গোদাবরী ও মহানদীর মাঝখানে অবস্থিত পূর্বঘাটের উত্তরাংশ বেশ উঁচু। এর স্থানীয় নাম মহেন্দ্রগিরি। (6) পূর্বঘাটের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ হল জিন্দাগাদা (1690 মি), আর্মাকোন্ডা (1680 মি), মহেন্দ্রগিরি (1501 মি) প্রভৃতি। এর মধ্যে জিন্দাগাদা পূর্বঘাটের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
15.ভারতের উপকূল সমভূমিকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়? যে- কোনো একটি বিভাগের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 
উত্তর – ভারতের উপকূল সমভূমির বিভাগ
অবস্থানের পার্থক্য অনুসারে ভারতের উপকূল সমভূমিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়— 1. পূর্ব উপকূলের সমভূমি এবং 2. পশ্চিম উপকূলের সমভূমি।
পূর্ব উপকূলের সমভূমির ভূপ্রকৃতি
  1. অবস্থান ও বিস্তার: উত্তরে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত পূর্ব উপকূলের সমভূমি বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় 1500 কিমি এবং বিস্তার গড়ে 100 কিমি।
  2. বৈশিষ্ট্য: (1) এই সমভূমিটি প্রশস্ত। মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া ও কাবেরীর বদ্বীপসমূহ এই সমভূমির প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্থান গঠন করেছে। (2) পূর্ব উপকূলের সমভূমিতে বালিয়াড়ি, লেগুন বা উপহ্রদ ও জলাভূমি দেখা যায়। বালিয়াড়িগুলি সাধারণভাবে 1-4 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং 60-65 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। (3) পূর্ব উপকূলের সমভূমিতে দীর্ঘ পুরোদেশীয় বাঁধ ও স্পিট দেখা যায়। এর পিছনে থাকে উপহ্রদ। এগুলি সমুদ্রের সঙ্গে সংকীর্ণ যোজক দ্বারা যুক্ত থাকে। যেমন—ওডিশা উপকূলের চিলকা, অন্ধ্র উপকূলের কোলেরু এবং পুলিকট হ্রদ। (4) পূর্ব উপকূলে কয়েকটি উচ্চভূমি বা টিলাও দেখা যায়।
16. পশ্চিম উপকূলের সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর – পশ্চিম উপকূলের সমভূমি
  1. অবস্থান ও পরিচয়: (1) পশ্চিম উপকূল সমভূমি উত্তরে কচ্ছের রান অঞ্চল থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। (2) এর পূর্ব সীমায় আছে পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি এবং পশ্চিম সীমায় আরব সাগর। (3) পূর্ব উপকূলের সমভূমির তুলনায় এই সমভূমিটি বেশ সংকীর্ণ। (4) উত্তরে কচ্ছের রান অঞ্চল থেকে দক্ষিণে সমভূমিটি ক্রমশ সংকীর্ণ হয়েছে। (5) এখানে নদী গঠিত বদ্বীপ নেই বললেই চলে।
  2. উপ-অঞ্চল ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: পশ্চিম উপকূলের সমভূমি অঞ্চলকে চারটি অংশে ভাগ করা যায়—
    1. গুজরাত উপকূলের সমভূমি : [i] পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশের নাম গুজরাত উপকূলের সমভূমি। [ii] অঞ্চলটি উত্তরে গুজরাত রাজ্যের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। [iii] কচ্ছ উপদ্বীপে আছে এক বিস্তীর্ণ অগভীর লবণাক্ত জলাভূমি বা রান। এর উত্তরভাগের নাম বৃহৎ রান এবং দক্ষিণভাগের নাম ক্ষুদ্র রান। [iv] কাথিয়াবাড় উপদ্বীপটি যথেষ্ট প্রশস্ত ও মাঝখানটি উঁচু। ওই অংশে গিরনার ও গির নামে দুটি রেঞ্জ আছে। গিরনার পাহাড়ের গোরক্ষনাথ কাথিয়াবাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
    2. কোঙ্কন উপকূলের সমভূমি: [i] মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা অর্থাৎ সুরাতের কিছুটা দক্ষিণ থেকে গোয়া পর্যন্ত কোঙ্কন উপকূল সমভূমি বিস্তৃত। [ii] সমভূমিটি খুবই সংকীর্ণ এবং ভগ্ন। অধিকাংশ জায়গায় এই সমভূমি পাথর দ্বারা গঠিত। [iii] স্থানে স্থানে কাদাভরতি জলাভূমি, বালুকাময় তটভূমি, সামুদ্রিক চড়া এবং লাভা গঠিত পাহাড় প্রভৃতি কোঙ্কন উপকূলের সমভূমিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলেছে।
    3. কর্ণাটক উপকূলের সমভূমি: [i] উত্তরে গোয়া থেকে দক্ষিণে কর্ণাটকের দক্ষিণ সীমা পর্যন্ত কর্ণাটক বা কারওয়ার উপকূলেরসমভূমি নামে পরিচিত। [ii] এর দৈর্ঘ্য প্রায় 225 কিমি। [iii] এই উপকূলও বেশ সংকীর্ণ, তবে ম্যাঙ্গালোরের পর থেকে অংশটি কিছুটা চওড়া। [iv] উপকূলের স্থানে স্থানে বালুকাময় তটভূমি আছে। কোনো কোনো স্থানে আবার পশ্চিমঘাট পর্বতমালা সমুদ্রের তীর পর্যন্ত নেমে এসেছে। [v] ম্যাঙ্গালোরের কাছে নেত্রবতী নদীর মোহানায় এই উপকূলের একমাত্র বদ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়। [vi] সমভূমির পূর্ব প্রান্তে আছে সরাবতী নদীর বিখ্যাত গেরসোপ্পা জলপ্রপাত। [vii] স্থানে স্থানে ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি, কাদাগঠিত নিম্নসমভূমি, ছোটো ছোটো উপহ্রদ, সংকীর্ণ নদী উপত্যকা এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পাদদেশবর্তী ল্যাটেরাইট গঠিত নিম্ন মালভূমি হল কর্ণাটক উপকূলের উল্লেখযোগ্য ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।
    4. মালাবার উপকূলের সমভূমি : [i] কেরালা রাজ্যের উপকূলের নাম মালাবার উপকূল। [ii] কোঙ্কন ও কর্ণাটক উপকূলের তুলনায় এই
      উপকূল বেশ চওড়া, গড়ে 25 কিমি। [iii] এখানকার উপকূলভূমিতে অনেক বালিয়াড়ি, জলাভূমি, হ্রদ ও উপহ্রদ বা লেগুন আছে। উপকূলের নিস্তরঙ্গ লবনাক্ত জলাভূমি ব্যাকওয়াটার্স নামে পরিচিত। স্থানীয় অধিবাসীরা উপহ্রদগুলিকে কয়াল এবং বালিয়াড়িগুলিকে থেরিস বলে। কয়ালগুলির মধ্যে কোচিনের কাছে অবস্থিত ভেমবানাদ কয়াল (বৃহত্তম) ও কোল্লামের কাছে অবস্থিত অষ্টমুদি কয়াল খুব বিখ্যাত।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি।

1. ভারতের প্রধান প্রাকৃতিক বিভাগগুলি কী কী?
উত্তর – ভারতের প্রধান প্রাকৃতিক বিভাগসমূহ:
ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী: ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতকে তিনটি প্রধান প্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—[i] পার্বত্য অঞ্চল, [ii] মালভূমি অঞ্চল এবং [ii] সমভূমি অঞ্চল।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী: ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতকে পাঁচটি প্রধান প্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—
[i] উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, [ii] উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, [iii] উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল, [iv] উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল এবং [v] দ্বীপ অঞ্চল।
2. ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবজীবনের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবজীবনের মধ্যে সম্পর্ক : ভারতের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ মানবজীবনের ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।
  1. জলবায়ুর ওপর প্রভাব:
    1. ঠান্ডা থেকে রক্ষা: এই দেশের উত্তরে হিমালয় পর্বত অবস্থিত হওয়ায় উত্তরের শীতল সাইবেরীয় বাতাস ভারতে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে উত্তর ভারত প্রবল ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায়।
    2. বৃষ্টিপাত: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সারা ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
  2. বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা: উপদ্বীপীয় অংশের তিনদিকে বেষ্টন করে থাকা সাগরের সুনীল জলরাশি এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের সুউচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণির অবস্থান বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করে।
  3. গিরিপথের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি: সুবিস্তৃত হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির বিভিন্ন গিরিপথের অবস্থান বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
  4. কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি: উয়-আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ুর জন্য এই দেশ কৃষিসমৃদ্ধ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তীয় ফসল যেমন—ধান, পাট, চা, কফি, মশলা প্রভৃতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তীয় ফসল যেমন—ধান, পাট, চা, কফি, মশলা প্রভৃতি এদেশের উর্বর মৃত্তিকায় উৎপন্ন হয়।
  5. শিল্পক্ষেত্রে উন্নতি: প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য যেমন—প্রচুর বৃষ্টি, নদীগুলির নিত্যবহ জলধারা, খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য, বনজ সম্পদের ভাণ্ডার এদেশে শিল্পের উন্নতির সহায়ক হয়েছে।
  6. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন : উর্বর সমতলভূমি যেমন কৃষির উন্নতি ঘটিয়েছে তেমনি নিবিড় ও সহজ যোগাযোগ (সড়ক, রেল) ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও সাহায্য করেছে।
এসব থেকে বলা যায় যে, ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জনজীবনে সদর্থক প্রভাব ফেলেছে।
3. হিমালয়ের সর্বদক্ষিণের পর্বতশ্রেণিটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর – পরিচয়: হিমালয়ের সর্বদক্ষিণের পর্বতশ্রেণিটির নাম হল শিবালিক বা বহিঃহিমালয়।
উৎপত্তি: প্রায় 30 লক্ষ বছর আগে হিমালয়ে তৃতীয়বার প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় টেথিস, হিমাদ্রি ও হিমাচল—তিনটি পর্বতশ্রেণি আরও উঁচু হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় হিম যুগ। বড়ো বড়ো হিমবাহ হিমালয়কে ভীষণভাবে ক্ষয় করতে শুরু করে। এর ফলে ক্ষয়িত পাথর, কাঁকর, নুড়ি ইত্যাদি স্তূপাকারে পর্বতের পাদদেশে জমা হতে থাকে। এরপর প্রায় 10 লক্ষ বছর আগে চতুর্থবার প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় এগুলিই (শিলাচূর্ণ) ওপরে উঠে শিবালিক পর্বতশ্রেণি সৃষ্টি করে।
বৈশিষ্ট্য: (1) এই পর্বতশ্রেণিটি গড়ে 600-1500 মিটার উঁচু এবং 10-50 কিমি চওড়া। (2) শিবালিকের দক্ষিণ ঢাল খাড়া এবং উত্তর ঢাল মৃদু।
উদাহরণ : পশ্চিম হিমালয়ের জম্মু পাহাড়, মুসৌরি পাহাড় প্রভৃতি শিবালিক পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত।
4. লাডাক পর্বতশ্রেণি ও লাডাক মালভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর – লাভাক পর্বতশ্রেণি: কাশ্মীরে হিমাদ্রি বা হিমগিরি বা প্রধান হিমালয়ের উত্তরে এবং কারাকোরামের দক্ষিণে প্রায় 350 কিমি দীর্ঘ যে পর্বতশ্রেণিটি আছে, তার নাম লাডাক পর্বতশ্রেণি।
বৈশিষ্ট্য: (1) লাডাক মালভূমির দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিমে এই পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত। (2) এই পর্বতশ্রেণিতে অনেকগুলি 6000 মিটারেরও বেশি উঁচু ক্ষয়িষু পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়। (3) হিমালয় পর্বতশ্রেণি সৃষ্টির সময় টেথিস সাগরে সঞ্চিত পলি থেকে লাডাক পর্বতশ্রেণিটিও সৃষ্টি হয়েছিল। (4) হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে এই পর্বতশ্রেণি বর্তমানে ভীষণভাবে ক্ষয়িত ও ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
লাভাক মালভূমি: লাডাক পর্বতশ্রেণির উত্তর-পূর্বে লাডাক মালভূমি অবস্থিত।
বৈশিষ্ট্য: (1) এর গড় উচ্চতা 4300 মিটারেরও বেশি। (2) এটি ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি।
5. কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর – পরিচয়: কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে লাড়াক পর্বতশ্রেণির উত্তরে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। টেথিস সাগরে সঞ্চিত পলি থেকে হিমালয় ও লাডাক পর্বতশ্রেণি সৃষ্টির সময় এই কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিরও উত্থান ঘটেছিল।
বৈশিষ্ট্য: (1) এই পর্বতশ্রেণিটি প্রায় 400 কিমি দীর্ঘ। (2) এখানে কতকগুলি সুউচ্চ শৃঙ্গ আছে, যেমন—গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মি, ভারতের সর্বোচ্চ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ), গ্যাসেররুম বা হিডেন পিক,ব্রড পিক, গ্যাসেরব্লুম-II প্রভৃতি। (3) এখানে অনেকগুলি হিমবাহ আছে, যেমন— সিয়াচেন, হিসপার, বলটারো, রিমো প্রভৃতি। এগুলির মধ্যে সিয়াচেন ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ (76 কিমি)। (4) কারাকোরামের কোনো কোনো অংশে সারাবছর বরফ জমে থাকে বলে এই পর্বতকে ‘বসুধার ধবলশীর্ষ’ বলা হয়।
6. উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমির গুরুত্ব কী ?
উত্তর – উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমির গুরুত্ব : পাটকই, নাগা, লুসাই, বরাইল, মিশমি প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমি গঠিত। এই অংশের বিশেষ গুরুত্ব আছে—
  1. বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ: এখানকার পার্বত্য অঞ্চল বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ।
  2. প্রতিরক্ষায় সাহায্যকারী: উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্বতগুলি প্রাচীরের মতো বিস্তৃত থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব সীমায় বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে প্রতিরক্ষার কাজে সহায়তা করে।
  3. জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে উপযোগী: এখানকার পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি খরস্রোতা, তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ উপযোগী।
  4. কৃষিজ সম্পদে সমৃদ্ধ: পাহাড়ের ঢালে চা, রবার প্রভৃতি বাগিচা ফসল চাষ করা হয়। এ ছাড়া উপত্যকা অঞ্চলগুলিতে ধান, সবজি প্রভৃতি চাষ করা হয়।
  5. পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়ক: প্রাকৃতিক শোভার কারণে এই অঞ্চলটি পর্যটকদের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এখানকার দক্ষিণ-পূর্বে মণিপুর রাজ্যে অবস্থিত লোকটাক হ্রদ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। তাই এখানে পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করেছে।
7. পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের পার্থক্য লেখো।
উত্তর – পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের পার্থক্যসমূহ: পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের মধ্যে কতকগুলি পার্থক্য বিদ্যমান। এই সমস্ত পার্থক্যগুলি হল—
বিষয় পূর্ব হিমালয় পশ্চিম হিমালয়
উচ্চতা ও বিস্তার পূর্ব হিমালয়ের উচ্চতা ও বিস্তার পশ্চিম হিমালয়ের তুলনায় কম। পশ্চিম হিমালয় অনেক বেশি উঁচু ও বিস্তৃত।
গিরিশৃঙ্গ ও হিমবাহ পূর্ব হিমালয়ে সুউচ্চ গিরিশৃঙ্গ এবং হিমবাহের সংখ্যা খুব কম। পশ্চিম হিমালয়ের শৃঙ্গগুলি খুব উঁচু এবং পূর্ব হিমালয়ের তুলনায় হিমবাহের সংখ্যা বেশি।
সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি একমাত্র অরুণাচল প্রদেশ ছাড়া বাকি অংশে হিমালয়ের সমান্তরাল পর্বতশ্রেণিগুলি স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায় না। হিমালয়ের চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি এখানে স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
৪. তরাই অঞ্চল কীভাবে গড়ে উঠেছে?
উত্তর – অর্থ : ‘তরাই’ একটি ফরাসি কথা, যার অর্থ ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে ভূমি।
পরিচিতি: উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে হিমালয়ের ঢালু পাদদেশভূমি তরাই অঞ্চল নামে পরিচিত।
গড়ে ওঠার কারণ: হিমালয়ের পাদদেশে নুড়ি ও বালিপূর্ণ যে ভাবর অঞ্চল আছে, তার ঠিক দক্ষিণে তরাই অঞ্চল অবস্থিত। এখানকার ভূমিতেও যথেষ্ট পরিমাণে নুড়ি ও বালি মিশে থাকে। উত্তরের ভাবর অঞ্চলে যেসব নদী নুড়ি-কাঁকর স্তূপের মধ্যে হারিয়ে যায় সেগুলি তরাই অঞ্চলে ফল্গুধারার মতো আত্মপ্রকাশ করে। এজন্য এখানে বহু জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে এবং নদীগুলিতেও বন্যার প্রকোপ দেখা যায়। এ ছাড়া সমগ্র তরাই অঞ্চলেই প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। ফলস্বরূপ এখানে গভীর বনভূমিরও সৃষ্টি হয়েছে। তাই সমগ্র অঞ্চলটির পরিবেশ ভিজে স্যাঁতসেঁতে, যা যথার্থ তরাই নামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
9. উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে?
উত্তর – উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমির উৎপত্তি : উত্তরে হিমালয় পার্বত্যভূমি এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী স্থানে উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি অবস্থিত। ভূতাত্ত্বিকদের মতে এই সমভূমির উৎপত্তি লাভের অনুমিত পর্যায়গুলি হল— (1) অনেক আগে এখানে এক সুবিস্তৃত দ্রোণি (trough) ছিল। (2) হিমালয় পর্বতের উত্থানের সময় দক্ষিণের গন্ডোয়ানাল্যান্ড বা দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তরাংশ প্রবল চাপে অর্ধচন্দ্রাকারে বসে গিয়ে বা অবনমিত হয়ে ওই দ্রোণি বা পরিখার সৃষ্টি হয়। (3) পরবর্তীকালে উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চল থেকে আসা নদীগুলি বহু যুগ ধরে পলি বয়ে এনে ওই অবনমিত অংশে জমা করে। এইভাবে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে কালক্রমে এই বিশাল সমভূমির উৎপত্তি হয়েছে।
10. গাঙ্গেয় সমভূমির বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – গাঙ্গেয় সমভূমির বৈশিষ্ট্য : গাঙ্গেয় সমভূমির সৃষ্টি গঙ্গা নদীর দ্বারা। গঙ্গা এবং তার অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী পলি সঞ্চয় করে ভারতের বৃহত্তম এই সমভূমিটি তৈরি করেছে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. আয়তন: এই সমভূমিটি প্রায় 357000 বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত।
  2. গভীরতা: গাঙ্গেয় সমভূমির গভীরতা 150-6000 মিটার পর্যন্ত। এর মধ্যে উত্তরে গভীরতা বেশি এবং দক্ষিণে গভীরতা কম।
  3. মাটির বৈশিষ্ট্য: গাঙ্গেয় সমভূমিতে কোথাও প্রাচীন পলিমাটি এবং কোথাও নবীন পলিমাটি রয়েছে। প্রাচীন পলিগঠিত অঞ্চলকে ভাঙ্গার বলে, আর নবীন পলিগঠিত অঞ্চল খাদার নামে পরিচিত। উত্তরপ্রদেশে গঙ্গা সমভূমির উত্তর প্রান্তে অর্থাৎ শিবালিকের পাদদেশ অঞ্চলে নুড়ি, বালি ও পলিগঠিত ভূমিকে বলে ভাবর। ঠিক এরই দক্ষিণে আছে ভিজে স্যাঁতসেঁতে বনে ঢাকা তরাই অঞ্চল।
  4. ভূমিরূপ: গাঙ্গেয় সমভূমির ভূপ্রকৃতি সমতল প্রকৃতির। তবে মাঝে মাঝে উচুঁ ঢিবি, প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ইত্যাদি দেখা যায় ৷
  5. বদ্বীপ: সমভূমির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে গঙ্গা নদীর মোহানায় পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ (গঙ্গা বদ্বীপ) সৃষ্টি হয়েছে।
  6. ঢাল: সমগ্র অঞ্চলটি প্রথমে পশ্চিম থেকে পূর্বে এবং তারপর দক্ষিণ-পূর্বে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে গেছে।
11. ভারতীয় জনজীবনে উত্তর ভারতের সমভূমির প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতীয় জনজীবনে উত্তর ভারতের সমভূমির প্রভাব: ভারতীয় জনজীবনে উত্তর ভারতের সমভূমির প্রভাব অপরিসীম।
  1. কৃষি উৎপাদনে প্রভাব: পশ্চিমাংশের মরুস্থলী ছাড়া সমভূমির বাকি অংশ অত্যন্ত উর্বর এবং কৃষিসমৃদ্ধ। এখানে ধান, পাট, আখ, গম, তুলো, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি শস্য প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
  2. শিল্পস্থাপনে প্রভাব: যোগাযোগের সুবিধা, স্থানীয় কৃষিজ কাঁচামালের প্রাচুর্য, সুলভ শ্রমিক প্রভৃতি অনুকূল অবস্থার জন্য এখানে অনেক শিল্পও গড়ে উঠেছে। যেমন—চিনি শিল্প, পাট শিল্প, কার্পাসবয়ন শিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, রাসায়নিক শিল্প, চর্ম শিল্প প্রভৃতি।
  3. নগরায়ণে প্রভাব: সমতল ভূমিরূপ, অনুকূল জলবায়ু, জীবিকা সংস্থানের সুবিধা, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার উপস্থিতি প্রভৃতি কারণে এই অংশ বহু জনবহুল নগর গড়ে উঠেছে। এই সমভূমি অঞ্চলের প্রধান নগরগুলি হল—চণ্ডীগড়, অমৃতসর, দিল্লি, আগ্রা, লখনউ, এলাহাবাদ, বারাণসী, কলকাতা, পাটনা প্রভৃতি।
  4. অন্যান্য কাজকর্মে প্রভাব: ভূমি সমতল বলে পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত। পশ্চিমের মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের লবণাক্ত হ্রদগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপন্ন হয়।
12. মেঘালয় মালভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, মেঘালয় মালভূমির বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – মেঘালয় মালভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: (1) অসম রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত এই মালভূমিটি বহু কোটি বছর আগে প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই দুই মালভূমির মাঝখানের অবনমিত অংশে পরবর্তীকালে গঙ্গা বদ্বীপের সৃষ্টি হয়। (2) মেঘালয় মালভূমির উল্লেখযোগ্য পাহাড়গুলি হল পূর্বাংশের মিকির পাহাড়, পশ্চিমাংশের গারো পাহাড় এবং মধ্যাংশের খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়। (3) মধ্যভাগে অবস্থিত শিলং-চেরাপুঞ্জি এলাকা এই মালভূমির সবচেয়ে উঁচু অংশ। এর গড় উচ্চতা প্রায় 1500 মিটার। এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম শিলং পাহাড় (1966 মি)। (4) এই মালভূমিতে অনেক চুনাপাথরের গুহা দেখা যায়। (5) মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণে রয়েছে বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা। এই উপত্যকা থেকে মালভূমিটি খুব খাড়াভাবে ওপরে উঠে গেছে। এজন্য মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ দিকের ঢাল খুব খাড়া। (6) তবে উত্তর ও পশ্চিম দিকে মেঘালয় মালভূমি ব্রহ্মপুত্র সমভূমি থেকে ওপরে উঠেছে।
13. কৰ্ণাটক মালভূমি সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – পরিচিতি: দাক্ষিণাত্য মালভূমির দক্ষিণাংশের যে এলাকাটি কর্ণাটক রাজ্যের অন্তর্গত, তাকে বলা হয় কর্ণাটক মালভূমি। এই অঞ্চলটি প্রধানত গ্র্যানাইট ও নিস পাথরে গঠিত এবং এখানকার গড় উচ্চতা 600-900 মিটার। কর্ণাটক মালভূমির দুটি অংশ—
  1. মালনাদ অঞ্চল
    অর্থ: কন্নড় ভাষায় ‘মালনাদ’ কথাটির অর্থ পাহাড়ি দেশ।

    পরিচিতি: পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্ব দিকে অবস্থিত এবং উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বিস্তৃত উঁচু নীচু বা ঢেউ খেলানো বন্ধুর পাহাড়ি অঞ্চল মালনাদ নামে পরিচিত।

    বৈশিষ্ট্য: [a] মালনাদ অঞ্চলটি কর্ণাটক মালভূমির অপেক্ষাকৃত উঁচু অংশ। [b] এটি একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। [c] এখানকার পাহাড়গুলির চূড়া গোলাকার। [d] এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির মধ্যে বাবাবুদান উল্লেখযোগ্য। [e] এখানকার মাটি সাধারণত লাল রঙের। [f] মালনাদ গ্র্যানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত।
  2. ময়দান অঞ্চল
    অর্থ: ‘ময়দান’ শব্দের অর্থ নাতিউচ্চ ভূমিভাগ।
    পরিচিতি: মালনাদের পূর্বে কিছুটা উন্মুক্ত ও মৃদু তরঙ্গায়িত সমপ্রায় ভূমি আছে। এই অংশটিই ময়দান নামে পরিচিত।
    বৈশিষ্ট্য: [a] এখানকার ভূমিরূপ সমপ্রায়ভূমির মতো। [b] গড় উচ্চতা 600 মিটারের কম। [c] এখানকার মাটির রং লাল।
14. ডেকান ট্র্যাপ বলতে কী বোঝ ?
অথবা, দাক্ষিণাত্যের লাভা মালভূমি সম্পর্কে যা জানো সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – পরিচিতি: দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশ ডেকান ট্র্যাপ বা লাভা মালভূমি নামে পরিচিত। এই অঞ্চলটি লাভা শিলা বা ব্যাসল্ট দ্বারা গঠিত। ‘ডেকান’-এর অর্থ দাক্ষিণাত্য এবং ‘ট্র্যাপ’ বলতে বোঝায় ধাপ বা সিঁড়ি। সমগ্র মালভূমিটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নেমে গেছে।
উৎপত্তি : প্রায় 6 থেকে 13 কোটি বছর আগে ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল পদার্থ বা ম্যাগমা কোনো বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে হাজার হাজার সুড়ঙ্গ বা ফাটলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে এসে (বিদার অগ্ন্যুগম) লাভাপ্রবাহরূপে এই অঞ্চলটিকে ঢেকে ফেলে। যা পরবর্তী সময়ে শীতল হয়ে লাভা শিলা বা ব্যাসল্ট শিলা গঠন করেছে।
বৈশিষ্ট্য: (1) তরল লাভা জমাট বেঁধে তৈরি হয়েছে বলে এই অঞ্চলটি সাধারণভাবে সমতল এবং পর্বতের চূড়া বা পাহাড়ের শীর্ষভাগগুলি চ্যাপটা প্রকৃতির। (2) দীর্ঘদিন ধরে নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে ডেকান ট্র্যাপের বিভিন্ন অংশ ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। (3) এখানকার কালো ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কালো মাটি বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে। (4) এর পার্শ্বদেশে সিঁড়ির মতো ধাপ দেখা যায়।
15. ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় মালভূমির গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় মালভূমির গুরুত্ব : ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় মালভূমির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ—
  1. খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য: খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় মালভূমির বিভিন্ন অংশে প্রচুর পরিমাণে আকরিক লোহা, কয়লা, চুনাপাথর, তামা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি খনিজ দ্রব্য উত্তোলন করা হয়। এখানকার ছোটোনাগপুর অঞ্চল এইসব খনিজ সম্পদে এতটাই সমৃদ্ধ যে ছোটোনাগপুরকে ‘ভারতের খনিজ ভাণ্ডার’ বলা হয়।
  2. কৃষির প্রসার: মালভূমির নদী উপত্যকাগুলিতে প্রচুর পরিমাণে তুলো (রেগুর মৃত্তিকা অঞ্চল), ধান (কৃয়া, গোদাবরী, কাবেরী অববাহিকা ও খান্দেশ সমভূমি), বাদাম (কর্ণাটকের ময়দান), পিঁয়াজ, আখ (মহারাষ্ট্র সমভূমি), কমলালেবু (নাগপুর সমতলভূমি), আঙুর (কর্ণাটকের ময়দান) প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
  3. শিল্পের প্রসার: কৃষিজ ও খনিজ কাঁচামাল সংগ্রহের সুবিধা থাকায় এখানে অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে।
  4. সেচ ও জলবিদ্যুতের প্রসার: মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলি সেচকার্য এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী।
  5. অরণ্য সম্পদের প্রাচুর্য: এই মালভূমির বিভিন্ন অংশ অরণ্য সম্পদে সমৃদ্ধ।
  6. পর্যটন শিল্পের বিকাশ: মনোরম প্রাকৃতিক শোভার জন্য এখানে অনেক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যেমন—আরাবল্লির মাউন্ট আবু, ছোটোনাগপুরের নেতারহাট, মহাদেব পাহাড়ের পাঁচমারি, তামিলনাড়ুর উদাগামণ্ডলম (উটি), কেরলের মুন্নার প্রভৃতি।
16. ভারতের মরুস্থলীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর – অবস্থান: রাজস্থান সমভূমির একেবারে পশ্চিমে বালি, বালিয়াড়ি, পাথর প্রভৃতি দ্বারা গঠিত বৃষ্টিহীন অংশকে বলা হয় মরুস্থলী।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: (1) পরিপূর্ণভাবে বালুময় এই অঞ্চলটি পূর্বে গড়ে 350 মি ও পশ্চিমে 150 মি উঁচু। (2) বহু সিফও বারখান বালিয়াড়ি এখানে দেখা যায়। (3) এখানে অবস্থিত ছোটো লবণাক্ত হ্রদ ধান্দ বা প্লায়া (যেমন— দিদওয়ানা, কুচমান, সারগল) নামে পরিচিত এবং বড়ো লবণাক্ত হ্রদগুলি বোলসন (যেমন—সম্বর) নামে পরিচিত। (4) এই অঞ্চলে অনেক চলমান বালিয়াড়ি বা থ্রিয়ান দেখা যায়। (5) জয়সলমেরের কাছের সমভূমিতে কিছু ছোটো ছোটো পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। (6) সুবিস্তৃত বালুকাময় ভূমির মাঝে মাঝে মরূদ্যান আছে, যেখানে খেজুর বা পাম-জাতীয় গাছের চাষ হয়।
জলবায়ু: (1) মরুস্থলীর জলবায়ু চরম প্রকৃতির। (2) এখানে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 12 সেমির কম। (3) এখানকার গড় বার্ষিক উন্নতা প্রায় 40 °সে। (4) রাতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপবিকিরণ করে শীতল হয়ে যাওয়ায় এখানে দৈনিক ও বার্ষিক উয়তার প্রসর সব থেকে বেশি।
17. থর মরুভূমি সৃষ্টির কারণগুলি লেখো। 
উত্তর – থর মরুভূমি সৃষ্টির কারণসমূহ: থর বা রাজস্থানের মরুভূমি ভারতের একমাত্র উয় মরুভূমি। এটি সৃষ্টির কতকগুলি কারণ রয়েছে—
  1. আরাবল্লি পর্বতের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবস্থান: থর মরুভূমির পূর্ব দিকে অবস্থিত আরাবল্লি পর্বত মৌসুমি বায়ুর গতিপথের সমান্তরালে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে বিস্তৃত বলে, আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা বাধাহীন ভাবে রাজস্থানের ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে এখানে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না।
  2. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের স্বল্পতা: পূর্ব ভারতে বৃষ্টি দেওয়ার পর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার অবশিষ্টাংশ যখন এই অঞ্চলে প্রবেশ করে, তখন তাতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কমে যায়। ফলে ওই বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।
  3. উয় ও শুষ্ক আয়ন বায়ুর প্রভাব: গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উন্ন ও শুষ্ক আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় বলে তখন এখানে বৃষ্টিপাত তেমন হয় না। দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অল্প হওয়া বা না হওয়ার জন্যই এখানে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
18. জনজীবনে মরুভূমির প্রভাব কতখানি?
উত্তর – জনজীবনে মরুভূমির প্রভাব
  1. প্রায় বসতিহীন: মরু অঞ্চলের জলবায়ু উন্ন, শুষ্ক এবং চরমভাবাপন্ন বলে এই অঞ্চল প্রায় বসতিহীন।
  2. শিল্পের কাঁচামালের প্রাপ্যতা: এখানকার বিভিন্ন স্থানে খনিজ তেল উত্তোলন করা হয়। অন্যদিকে নানা জায়গা থেকে নুন, জিপসাম প্রভৃতি পাওয়া যায় বলে শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
  3. সম্ভাবনাময় কৃষিক্ষেত্র: রাজস্থানের বাগার অঞ্চলে রাজস্থান খাল বা ইন্দিরা গান্ধি খালের সাহায্যে জলসেচ করা হচ্ছে, এতে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
  4. পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎসস্থল: মরু অঞ্চলে প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায়। তাই একে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে এবং তার ফলে এখানে কৃষি এবং শিল্পের উন্নতির সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।
19. কচ্ছের রান কী ? এর ভৌগোলিক অবস্থান উল্লেখ করো।
উত্তর – কচ্ছের রান: গুজরাতের কচ্ছ উপদ্বীপকে পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে যে বিস্তীর্ণ লবণাক্ত ও কর্দমাক্ত জলাভূমি বেষ্টন করে আছে, তাকে বলা হয় কচ্ছের রান (‘রান’ শব্দের অর্থ—কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত নিম্নভূমি)। এর মধ্যে উত্তরের জলাভূমি বড়ো রান ও পূর্বের জলাভূমি ছোটো রান নামে পরিচিত। সমুদ্রের জোয়ারে বা বর্ষাকালে এই রান অঞ্চল প্লাবিত হয়। বর্ষার পর জল বাষ্পীভূত হলে রানে প্রচুর লবণ জমে থাকে।
ভৌগোলিক অবস্থান : গুজরাতের কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উত্তরে আছে কচ্ছ উপদ্বীপ এবং এই কচ্ছ উপদ্বীপেরই উত্তর ও পূর্বাংশে রান অঞ্চল অবস্থিত। বড়ো রানের পশ্চিম প্রান্ত আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত এবং ছোটো রান পশ্চিমদিকে কচ্ছ উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত।
20. কচ্ছের রান ভারতের কোন্ রাজ্যে অবস্থিত এবং তার ভূমিরূপ কেমন?
উত্তর – অবস্থান : কচ্ছের রান ভারতের গুজরাত রাজ্যে অবস্থিত।
কচ্ছের রানের ভূমিরূপ: (1) নোনা জলাভূমি: গুজরাতের কচ্ছ উপদ্বীপের সমগ্র উত্তর ও পূর্বাংশ জুড়ে কাদায় ভরা যে এক বিস্তীর্ণ নোনা জলাভূমি আছে, তাকেই বলে রান অঞ্চল। এর মধ্যে উত্তরের বড়ো জলাভূমিকে বলে বড়ো রান এবং পূর্বের ছোটো জলাভূমিকে বলে ছোটো রান। (2) টিলা: রান-এর মধ্যে মাঝে মাঝে দু-একটি টিলাও দেখা যায়। যেমন— ওসম, বরদা প্রভৃতি। (3) আল্লারাখা বাঁধ : এক সময় এই রান অঞ্চল কচ্ছ উপসাগরের অংশ ছিল। তখন সিন্ধুর একটি শাখা নদী এবং অনেক ছোটো ছোটো নদী এসে এই রান অঞ্চলে মিশেছিল। 1819 সালে এক বড়ো ভূমিকম্পের কারণে একটি দীর্ঘ উচ্চভূমির সৃষ্টি হওয়ায় নদীগুলির প্রবাহ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় 3 থেকে 6 মিটার উঁচু এবং ৪০ কিমি দীর্ঘ ওই উচ্চভূমিটি ‘আল্লারাখা বাঁধ’ নামে পরিচিত। এর ফলে পলি ভরাট হয়ে রান অঞ্চলে জলাভূমি তৈরি হয়েছে। (4) শুষ্ক, উদ্ভিদহীন লবণঢাকা ভূমি: সমুদ্রের জোয়ারে বা বর্ষাকালে রান অঞ্চল এখনও প্লাবিত হয়। বর্ষার পরে নোনা জল বাষ্পীভূত হলে রান অঞ্চলটি সম্পূর্ণ শুষ্ক, উদ্ভিদহীন ও সাদা লবণে ঢাকা বালুকাময় প্রান্তরে (সমভূমি অঞ্চলে) পরিণত হয়।
21. ভারতের উপকূলীয় সমভূমির গুরুত্ব কী?
উত্তর – ভারতের উপকূলীয় সমভূমির গুরুত্ব : ভারতের সুদীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমি সংকীর্ণ হলেও তার গুরুত্ব অপরিসীম—
  1. কৃষি উৎপাদনে সহায়তা: উপকূলের উর্বর সমভূমিতে প্রচুর পরিমাণে ধান, আখ, নারকেল, বিভিন্ন প্রকার মশলা প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
  2. বাণিজ্যিক গুরুত্ব: ভারতের উপকূলীয় সমভূমির বিভিন্ন বন্দর শহরের (মুম্বাই, চেন্নাই, মার্মাগাও, কোচি প্রভৃতি) মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ ব্যাবসাবাণিজ্য সম্পন্ন হয়।
  3. অর্থনৈতিক গুরুত্ব: [i] পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশে সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদন করা হয়।[ii] পশ্চিম উপকূলে খনিজ তেল উত্তোলন করা হয়। পূর্ব উপকূলের মহীসোপান অঞ্চলেও খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আহরিত হয়। [iii] মালাবার উপকূলীয় সমভূমি থেকে ইলমেনাইট, মোনাজাইট প্রভৃতি মূল্যবান খনিজ দ্রব্য আহরণ করা হয়।
  4. অন্যান্য গুরুত্ব: [i] অনুকূল পরিবেশের জন্য সমগ্র উপকূল অঞ্চলে ঘন লোকবসতি দেখা যায়। [ii] এই উপকূলীয় ভূমিতে মুম্বাই ও চেন্নাই-সহ অনেক শহর ও নগর গড়ে উঠেছে। [iii] সমতলভূমিতে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব উন্নত যা নগরায়ণে সাহায্য করেছে।
22. ভারতের পশ্চিম উপকূলের সমভূমির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – ভারতের পশ্চিম উপকূলের সমভূমির শ্রেণিবিভাগ : পশ্চিম উপকূলের সমভূমি চার ভাগে বিভক্ত—
  1. গুজরাত উপকূলীয় সমভূমি: এই অঞ্চলটি গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তরসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  2. কোঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি: মহারাষ্ট্রের উত্তর প্রান্ত থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই উপকূল ভগ্ন ও সংকীর্ণ।
  3. কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি: উত্তরে গোয়া থেকে দক্ষিণে কর্ণাটকের দক্ষিণ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত এই উপকূল অঞ্চল ভগ্ন ও সংকীর্ণ।
  4. মালাবার উপকূলীয় সমভূমি: সর্ব দক্ষিণে কেরল রাজ্যের উপকূলের নাম মালাবার উপকূল । এই উপকূলটি বেশ প্রশস্ত। এই অংশে কয়াল বা ব্যাকওয়াটারস লক্ষ করা যায়।
23. ভারতের পূর্ব উপকূলের সমভূমিকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর – ভারতের পূর্ব উপকূলের সমভূমির শ্রেণিবিভাগ: পূর্ব উপকূলের সমভূমিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়—
  1. উত্তর সরকার উপকূল: উত্তরে সুবর্ণরেখা নদী থেকে দক্ষিণে কৃয়া নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত উত্তর সরকার উপকূল সমভূমি বিস্তৃত।
  2. করমণ্ডল উপকূল: উত্তরে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপের দক্ষিণাংশ থেকে শুরু করে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত করমণ্ডল উপকূল সমভূমি বিস্তৃত।
রাজ্য অনুসারে পূর্ব উপকূলের সমভূমিকে আবার তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়— (1) ওডিশা বা উৎকল উপকূল সমভূমি, (2) অন্ধ্ৰ উপকূল সমভূমি এবং (3) তামিলনাড়ু উপকূল সমভূমি।
24. ভারতের দ্বীপ অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ভারতের দ্বীপ অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্ব : ভারতের দ্বীপ অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্ব যথেষ্ট—
  1. কাষ্ঠ শিল্পের বিকাশে সহায়ক: দ্বীপ অঞ্চলে ঘন বনভূমি থাকায় এখানে কাষ্ঠ শিল্পের উন্নতি হয়েছে।
  2. কুটির শিল্পের প্রসার: প্রধানত স্থানীয় কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে এখানে শঙ্খ শিল্প, দেশলাই শিল্প, প্লাইউড কারখানা প্রভৃতি কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
  3. মৎস্যশিকারের অনুকূল: ভারতের দ্বীপ অঞ্চল মৎস্যশিকারের আদর্শ জায়গা। তাই অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা মৎস্য সংগ্রহ ও মৎস্যের ব্যাবসা।
  4. পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন: ভারতীয় দ্বীপভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্য দেশবিদেশের বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে। তাই দ্বীপগুলিতে পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটেছে।
25. ভারতের দ্বীপভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – ভারতের দ্বীপভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব
  1. কৃষিকাজে সহায়ক: এখানে প্রচুর নারকেল বাগিচা রয়েছে। এ ছাড়া এখানে চাষবাসও যথেষ্ট পরিমাণে হয়।
  2. পর্যটন শিল্পের প্রসার: প্রতিটি দ্বীপই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ হয়েছে। তাই পর্যটন শিল্প এখানকার প্রধান শিল্প।
  3. সামুদ্রিক দ্রব্য সংগ্রহ কেন্দ্র: সামুদ্রিক নানা দ্রব্যের সংগ্রহের প্রধান কেন্দ্র হল এই দ্বীপগুলি।
  4. মৎস্যশিকার কেন্দ্র: এগুলি মাছ শিকারের প্রধান কেন্দ্র।
  5. বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ: বঙ্গোপসাগরের দ্বীপগুলির বনজ সম্পদ খুবই মূল্যবান।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. হিমালয়ের উৎপত্তি কবে হয়েছে?
উত্তর – হিমালয়ের উৎপত্তি: ভূতাত্ত্বিক কালপঞ্জি হিসেবে টার্শিয়ারি যুগে অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ছয় থেকে সাত কোটি বছর আগে হিমালয়ের উত্থান শুরু হয় এবং সেই উত্থান পর্ব এখনও ঘটে চলেছে।
2. হিমালয় পর্বতমালাকে কী কী অঞ্চলে ভাগ করা যায়?
উত্তর – হিমালয় পর্বতশ্রেণির বিভাগসমূহ: দৈর্ঘ্য বরাবর শ্রেণিবিভাগ: দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয় পর্বতমালাকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এগুলি হল— (1) পশ্চিম হিমালয়, (2) মধ্য হিমালয় এবং (3) পূর্ব হিমালয়। প্রস্থ বরাবর শ্রেণিবিভাগ: প্রস্থ বরাবর হিমালয় পর্বতমালাকে চারভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল— (1) ট্রান্স বা টেথিস হিমালয়, (2) হিমাদ্রি হিমালয়, (3) হিমাচল হিমালয় এবং (4) শিবালিক হিমালয়।
3. শিবালিক পর্বত কোথায় অবস্থিত?
উত্তর – শিবালিক পর্বতের অবস্থান: হিমালয়ের যে চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি আছে, তার মধ্যে সবার দক্ষিণের অনুচ্চ পর্বতশ্রেণিটিকে বলা হয় শিবালিক পর্বত। এটি কাশ্মীরের পশ্চিম প্রান্ত থেকে প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবে (তিস্তা নদীর দুদিকের ৪০-90 কিমি স্থান ছাড়া) পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। হিমালয়ের চারটি পর্বতশ্রেণির মধ্যে শিবালিকের উচ্চতা সবচেয়ে কম। শিবালিকের দক্ষিণে উত্তর ভারতের সমভূমি রয়েছে।
4. ট্রান্স হিমালয় কী?
উত্তর – পরিচয়: হিমাদ্রি হিমালয়ের উত্তরসীমা থেকে তিব্বতের মালভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের সবচেয়ে উত্তরের অংশকে ট্রান্স হিমালয় বা টেথিস হিমালয় বলে। উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণি: এখানেই রয়েছে জাস্কর, লাডাক রেঞ্জ, কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি এবং কৈলাস।
5. পূর্বাচলের কয়েকটি পর্বতের নাম লেখো।
উত্তর – পূর্বাচলের পর্বতসমূহ: পূর্বাচলের কয়েকটি পর্বত হল—অরুণাচল প্রদেশের পাটকই ও মিশমি পাহাড়, নাগাল্যান্ডের নাগা ও তুয়েনসাং পাহাড়, মণিপুরের মণিপুর পাহাড়, মিজোরামের মিজো পাহাড় প্রভৃতি।
6. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি হ্রদ ও তিনটি গিরিপথের নাম লেখো।
উত্তর – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের হ্রদসমূহ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি হ্রদ হল— (1) কুমায়ুন অঞ্চলের নৈনিতাল, কাশ্মীর উপত্যকার (2) উলার ও (3) ডাল হ্রদ।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি গিরিপথসমূহ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলেরতিনটি গিরিপথ হল— (1) জম্মু ও কাশ্মীরের বানিহাল, (2) হিমাচল প্রদেশেরবরালাচা লা এবং (3) সিকিমের নাথু লা।
7. ব্যাকওয়াটারস কী ?
উত্তর – পরিচয় : কেরল রাজ্যের মালাবার উপকূলে বহু উপহ্রদ বা লেগুন আছে। এগুলি সাগরের সঙ্গে আংশিক যুক্ত, তবে সমুদ্রতরঙ্গে এগুলি প্রভাবিত হয় না। এদের ব্যাকওয়াটারস বলা হয়। এগুলির স্থানীয় নাম কয়াল।
উদাহরণ: ভেমবানাদ, অষ্টমুদি, পোনমুদি প্রভৃতি।
৪. কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন’ বা ‘ভূস্বর্গ’ বলে কেন?
উত্তর – কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন’ বা ‘ভূস্বর্গ’ বলার কারণ: পিরপঞ্জাল, জাস্কর ও হিমগিরি পর্বতশ্রেণি বেষ্টিত কাশ্মীর উপত্যকার প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য মনোরম ও নয়নাভিরাম। তুষারাবৃত সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, খরস্রোতা নদী, হ্রদ, গিরিপথ, হিমবাহের উপস্থিতি, মনোরম জলবায়ু প্রভৃতি পর্যটকদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। এসবের কারণে এই উপত্যকাকে প্রাচ্যের নন্দনকানন বা ভূস্বর্গ বলে।
9. কাশ্মীর হিমালয়ের পর্বতগুলির নাম লেখো।
উত্তর – কাশ্মীর হিমালয়ের পর্বতসমূহ: কাশ্মীর হিমালয়ের দক্ষিণ থেকে উত্তরে পরপর পাঁচটি পর্বতশ্রেণি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছে। এগুলি হল—(1) শিবালিক (2) পিরপঞ্জাল (3) জাস্কর (4) লাডাক এবং (5) কারাকোরাম।
10. দুন বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : পশ্চিম হিমালয়ে বিশেষত গাড়োয়াল হিমালয় অঞ্চলে মধ্য হিমালয়পর্বতশ্রেণি এবং শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অংশে যেসব দীর্ঘ কিন্তু অল্পবিস্তৃত প্রায়সমতল উপত্যকা আছে, সেগুলিকে দুন বলা হয়। যেমন—দেরাদুন (উত্তরাখণ্ড)।
11. তরাই বলতে কী বোঝ?
উত্তর – অর্থ: ‘তরাই’ একটি ফরাসি শব্দ, যার অর্থ ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে ভূমি। পরিচিতি: গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র সমভূমির উত্তর প্রান্তে হিমালয়ের পাদদেশে অনেক নুড়ি ও পাথরের স্তূপ এবং জলাভূমি দেখতে পাওয়া যায়। ওখানে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় বলে গভীর বনভূমিও সৃষ্টি হয়েছে। এই জন্য বেশিরভাগ সময় ভূমিভাগ ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে থাকে। তাই ওই অঞ্চলটিকে তরাই নামে অভিহিত করা হয়।
12. তাল কী?
উত্তর – পরিচয়: কুমায়ুন হিমালয়ে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে একসময় অসংখ্য অবনত ভূমি বা নীচু জায়গা তৈরি হয়। পরবর্তীকালে ওইসব অংশে জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। ওই হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় তাল বলে।
উদাহরণ : সাততাল, ভীমতাল, নৈনিতাল প্রভৃতি কুমায়ুন হিমালয় অঞ্চলের অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য হ্রদ বা তাল।
13. আকসাই চিন কী?
উত্তর – পরিচয়: জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তর-পূর্ব ভাগের নাম আকসাই চিন অঞ্চল। সুউচ্চ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই আকসাই চিন অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি। বৈশিষ্ট্য: (1) এখানকার গড় উচ্চতা 4500 মিটার হলেও কোনো কোনো জায়গায় উচ্চতা 6000 মিটার বা তারও বেশি। (2) এর প্রশাসনিক কাজকর্ম চিন সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। (3) এই অঞ্চলের উত্তরে আছে বিখ্যাত সোডা সমভূমি।
14. সোডা সমভূমি কাকে বলে?
উত্তর – পরিচয়: কাশ্মীরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের নাম সোডা সমভূমি। এলাকাটি কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির পূর্বে এবং আকসাই চিন অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত। এই সোডা সমভূমি প্রকৃতপক্ষে একটি উচ্চভূমি, তবে এর উপরিভাগ প্রায় সমতল।
15. খাদার ও ভাঙ্গার কাকে বলে?
উত্তর – খাদার : উত্তর ভারতে গঙ্গা এবং তার বিভিন্ন উপনদীবাহিত পলি নদী উপত্যকার দুই ধারে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে যেসব এলাকা নতুন পলিগঠিত সেগুলিকে বলে খাদার। নতুন পলিগঠিত বলে খাদারের উর্বরতা বেশি।
ভাঙ্গার: নদী উপত্যকা থেকে দূরবর্তী যেসব অঞ্চল প্রাচীন পলি দ্বারা গঠিত তাদের বলে ভাঙ্গার। পুরোনো পলিগঠিত বলে ভাঙ্গরের উর্বরতা কম হয়।
16. ভাবর অঞ্চল বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ভাবর: গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলের উত্তর প্রান্তের নাম ভাবর। এলাকাটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানকার মাটি বালি ও নুড়িপূর্ণ এবং সচ্ছিদ্র। হিমালয়ের খরস্রোতা নদীগুলি নুড়ি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি বয়ে এনে এই ভূমি গঠন করেছে। এখানকার ভূমি সচ্ছিদ্র বলে হিমালয় থেকে আসা ছোটো ছোটো নদী এই অঞ্চলে এসে ভূগর্ভে প্রবেশ করে হারিয়ে যায়।
17. কারেওয়া কী?
উত্তর – অবস্থান : কাশ্মীর উপত্যকা অঞ্চলের চারপাশে যে ধাপযুক্ত ভূমি আছে, তাকে স্থানীয় ভাষায় কারেওয়া নামে ডাকা হয়। সৃষ্টির কারণ : এই ধাপযুক্ত ভূমি নদী এবং হিমবাহের ক্ষয়জাত পদার্থ সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। কারেওয়ার মধ্য দিয়ে ঝিলাম (বিতস্তা) নদী প্রবাহিত হয়। কৃষিতে প্রভাব : কারেওয়া মাটিতে খুব ভালো জাফরান চাষ হয়।
18. বেট কী?
উত্তর – ধারণা: সিন্ধুর পাঁচটি উপনদী (শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা) অধ্যুষিত পাঞ্জাব সমভূমির যেসব এলাকা নতুন পলিগঠিত, বিশেষত নদীতীরবর্তী স্থানসমূহকে বা নীচু প্লাবনভূমিকে স্থানীয় ভাষায় বেট বলে।
19. দোয়াব অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর – অর্থ : দো = দুই এবং আব = জল। পরিচিতি: উত্তর ভারতে, বিশেষত পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে দুই নদীর মধ্যবর্তী সমভূমিকে দোয়াব বলে। আর একসঙ্গে পরপর অনেকগুলি দোয়াব থাকলে তাকে দোয়াব অঞ্চল নামে অভিহিত করা হয়। উদাহরণ : সিন্ধু ও বিতস্তা নদীর মধ্যবর্তী সিদ্ধ সাগর দোয়াব, ইরাবতী ও বিপাশা নদীর মধ্যবর্তী বারি দোয়াব প্রভৃতি।
20. দক্ষিণ ভারতের যে-কোনো দুটি গিরিপথের নাম লেখো।
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের গিরিপথ : দক্ষিণ ভারতের দুটি গিরিপথের নাম হল- (1) নাসিকের কাছে থলঘাট গিরিপথ এবং (2) পুণের কাছে ভোরঘাটগিরিপথ।
21. পূর্বঘাট পর্বতের অবস্থান এবং এই পর্বতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একটি নদীর নাম করো।
উত্তর – পূর্বঘাট পর্বতের অবস্থান: পূর্বঘাট পর্বত দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্বসীমায় বা পূর্ব উপকূল সমভূমির পশ্চিম সীমায় অবস্থিত। এটি পূর্ব উপকূলের সমান্তরালভাবে উত্তর-পূর্বে মহানদীর উপত্যকা থেকে দক্ষিণে তামিলনাড়ুর প্রায় দক্ষিণপ্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।
পূর্বঘাট পর্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী হল—গোদাবরী নদী।
22. পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দুটি গিরিপথের নাম লেখো।
উত্তর – পশ্চিমঘাট পর্বতের গিরিপথ: পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দুটি গিরিপথের নাম— (1) নাসিকের কাছে থলঘাট গিরিপথ এবং (2) পুণের কাছে ভোরঘাটগিরিপথ।
23. ভারতীয় উপদ্বীপের কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতীয় উপদ্বীপের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ: ভারতীয় উপদ্বীপের কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রের নাম হল— আরাবল্লির মাউন্ট আবু, ছোটোনাগপুরের নেতারহাট, মহাদেব পাহাড়ের পাঁচমারি, তামিলনাড়ুর উদাগামণ্ডলম (উটি) প্রভৃতি।
24. ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি ও দীর্ঘতম হিমবাহের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি : ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি হল লাডাক। ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ: ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ হল সিয়াচেন (76 কিমি)।
25. ভারতের উচ্চতম পর্বত ও জলপ্রপাতের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের উচ্চতম পর্বত: ভারতের উচ্চতম পর্বত হল কারাকোরাম। এর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মি)।
ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত : ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত হল সরাবতী নদীর গেরসোপ্পা (275 মি) বা যোগ [ভিন্নমতে কর্ণাটকের সিমোগা (শিবামোগ্লা) জেলায় ভারাহি নদীর ওপর কুকিল (উচ্চতা 455 মি)]।
26. ভারতের প্রাচীন ও নবীন ভঙ্গিল পর্বতের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত: রাজস্থানের আরাবল্লি।
ভারতের নবীন ভঙ্গিল পর্বত: হিমালয়।
27. ভারতের একটি আগ্নেয় পর্বতের নাম লেখো এবং এর অবস্থান উল্লেখ করো।
উত্তর – আগ্নেয় পর্বতের নাম : ভারতের একটি আগ্নেয় পর্বতের নাম নারকোণ্ডাম।
অবস্থান : নারকোণ্ডাম আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত।
28. ভারতের একটি লাভাগঠিত মালভূমি ও একটি প্রবালগঠিত দ্বীপপুঞ্জের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের লাভাগঠিত মালভূমি : মহারাষ্ট্রের ডেকান ট্র্যাপ।
ভারতের প্রবালগঠিত দ্বীপপুঞ্জ : লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত-
(a) আরাবল্লি
(b) বিন্ধ্য
(c) নীলগিরি
(d) হিমালয়
উত্তর – (a) আরাবল্লি
2. পূর্ব হিমালয়ের একটি গিরিপথ-
(a) জোজি লা
(b) নাথু লা
(c) ইউল লা
(d) রুম লা
উত্তর – (b) নাথু লা
3. বসুধার ধবলশীর্ষ নামে পরিচিত-
(a) কারাকোরাম
(b) মাউন্ট এভারেস্ট
(c) পামির মালভূমি
(d) কাঞ্চনজঙ্ঘা
উত্তর – (a) কারাকোরাম
4. দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ—
(a) ডোডাবেট্টা
(b) অমরকণ্টক
(c) আনাইমুদি
(d) নীলগিরি
উত্তর – (c) আনাইমুদি
5. ভূস্বর্গ নামে পরিচিত—
(a) ইম্ফল উপত্যকা
(b) কাশ্মীর উপত্যকা
(c) দুন উপত্যকা
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) কাশ্মীর উপত্যকা
6. সিয়াচেন হিমবাহ যে পর্বতশ্রেণিতে অবস্থিত তা হল—
(a) কারাকোরাম
(b) পিরপঞ্জাল
(c) জাস্কর
(d) কাশ্মীর
উত্তর – (a) কারাকোরাম
7. গঙ্গা সমভূমির নতুন পলিমাটিযুক্ত অঞ্চলকে উত্তরপ্রদেশে বলে-
(a) ভাবর
(b) তরাই
(c) বেট
(d) খাদার
উত্তর – (d) খাদার
৪. পশ্চিমঘাট পর্বতের একটি গিরিপথ হল—
(a) ভোরঘাট
(b) নিতি
(c) মালনাদ
(d) জোজিলা
উত্তর – (a) ভোরঘাট
9. পূর্বাচলের অন্তর্গত হল –
(a) হিমাদ্রি
(b) পাটকই
(c) পিরপঞ্জাল
(d) হিমাচল
উত্তর – (b) পাটকই
10. মিষ্টি জলের হ্রদ –
(a) চিলকা
(b) ডাল
(c) সম্বর
(d) ভেমবানাদ
উত্তর – (b) ডাল
11. ইম্ফল উপত্যকা অবস্থিত –
(a) অসমে
(b) মণিপুরে
(c) মেঘালয়ে
(d) মিজোরামে
উত্তর – (b) মণিপুরে
12. রাজস্থানের প্লায়া হ্রদগুলিকে বলে—
(a) রান
(b) ওয়াদি
(c) ধান্দ
(d) বাজাদা
উত্তর – (c) ধান্দ
13. ছোটোনাগপুরের সর্বোচ্চ পাহাড়-
(a) রাজমহল
(b) পরেশনাথ
(c) বিহারীনাথ
(d) অযোধ্যা
উত্তর – (b) পরেশনাথ
14. কুলা কাংড়ি হিমালয়ের যে অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তা হল –
(a) দার্জিলিং
(b) ভুটান
(c) পূর্বাচল
(d) অরুণাচল
উত্তর – (b) ভুটান
15. ভারতের সাতপুরা যে ধরনের পর্বতের উদাহরণ –
(a) ক্ষয়জাত
(b) আগ্নেয়
(c) স্তূপ
(d) ভঙ্গিল
উত্তর – (c) স্তূপ
16. পশ্চিম উপকূলের উপহ্রদগুলিকে বলে-
(a) তাল
(b) ধান্দ
(c) কয়াল
(d) পুকুর
উত্তর – (c) কয়াল
17. পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম গিরিপথ হল—
(a) কারাকোরাম
(b) লাচুলাংলা
(c) তাংলাংলা
(d) নাথু লা
উত্তর – (a) কারাকোরাম
18. রাজস্থানের প্রস্তরময় মরুভূমির নাম-
(a) হামাদা
(b) বাগার
(c) রোহি
(d) ধান্দ
উত্তর – (a) হামাদা
19. আন্দামানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ—
(a) স্যাডল পিক
(b) হ্যারিয়েট
(c) থুলিয়ের
(d) নিকোবর
উত্তর – (a) স্যাডল পিক
20. হিমালয়ের একটি উষু প্রস্রবণ মণিকরণ অবস্থিত—
(a) উত্তরাখণ্ডে
(b) সিকিমে
(c) হিমাচল প্রদেশে
(d) কাশ্মীরে
উত্তর – (c) হিমাচল প্রদেশে
21. কাশ্মীর উপত্যকা অবস্থিত যে দুটি পর্বতের মাঝে, তা হল —
(a) ধওলাধর-পিরপঞ্জাল
(b) জাস্কর কারাকোরাম
(c) গাড়োয়াল-কুমায়ুন
(d) জাস্কর-পিরপঞ্জাল
উত্তর – (d) জাস্কর-পিরপঞ্জাল
22. কাশ্মীর উপত্যকায় অবস্থিত দুটি বিখ্যাত হ্রদ হল—
(a) মিরিক-ছাঙ্গু
(b) নৈনিতাল -সাততাল
(c) ডাল-উলার
(d) সম্বর -রান
উত্তর – (c) ডাল-উলার
23. ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ –
(a) মাউন্ট এভারেস্ট
(b) কাঞ্চনজঙ্ঘা
(c) গডউইন অস্টিন
(d) লিওপারগেল
উত্তর – (c) গডউইন অস্টিন
24. অরুণাচল হিমালয়ের সর্বোচ্চ অংশ—
(a) সান্দাকফু
(b) নামচা বারওয়া
(c) নাঙ্গা পর্বত
(d) কারাকোরাম
উত্তর – (b) নামচা বারওয়া
25. লাডাক ও জাস্কর পর্বতের মাঝের উপত্যকায় প্রবাহিত নদীর নাম-
(a) গঙ্গা
(b) শতদ্রু
(c) বিপাশা
(d) সিন্ধু
উত্তর – (d) সিন্ধু
26. ভারতের বৃহত্তম লবণাক্ত জলের উপহ্রদ—
(a) চিলকা
(b) ভেমবানাদ
(c) কোলেরু
(d) পুলিকট
উত্তর – (a) চিলকা
27. কয়াল বা লেগুন দেখা যায় —
(a) করমণ্ডল উপকূলে
(b) উত্তর সরকার উপকূলে
(c) মালাবার উপকূলে
(d) কোঙ্কন উপকূলে
উত্তর – (c) মালাবার উপকূলে
28. মেঘালয়ের গারো পাহাড় এক ধরনের—
(a) ক্ষয়জাত পর্বত
(b) ভঙ্গিল পর্বত
(c) স্তূপ পর্বত
(d) আগ্নেয় পর্বত
উত্তর – (a) ক্ষয়জাত পর্বত
29. মহারাষ্ট্র মালভূমি যে শিলা দ্বারা গঠিত সেটি হল —
(a) ব্যাসল্ট
(b) মারবেল
(c) গ্র্যানাইট
(d) বেলেপাথর
উত্তর – (a) ব্যাসল্ট
30. ভারতের একমাত্র অন্তর্বাহিনী নদী লুনি যে রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, তা হল –
(a) গুজরাত
(b) মহারাষ্ট্র
(c) হরিয়ানা
(d) রাজস্থান
উত্তর – (d) রাজস্থান

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. বর্তমানে হিমালয় যেখানে অবস্থিত আগে সেখানে ……… সাগর ছিল।
উত্তর – টেথিস
2. ………. যুগে হিমালয়ের উৎপত্তি হয়।
উত্তর – টার্শিয়ারি
3. সিঙ্গালিলা পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ……… ।
উত্তর – সান্দাকফু
4. হিমালয় পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ……… ।
উত্তর – মাউন্ট এভারেস্ট
5. পশ্চিমবঙ্গ-নেপাল সীমান্তে ……….. পর্বত অবস্থিত।
উত্তর – সিঙ্গালিলা
6. ভারতের একমাত্র উয় মরুভূমি ………… রাজ্যে অবস্থিত।
উত্তর – রাজস্থান
7. ভারতের মরুভূমির পশ্চিম অংশের নাম ……… ।
উত্তর – মরুস্থলী
৪. ব্রহ্মপুত্র নদের ………. দ্বীপ ভারতের বৃহত্তম নদীচর।
উত্তর – মাজুলি
9. মধ্যভারতের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণি ……… ।
উত্তর – বিন্ধ্য
10. কাশ্মীর উপত্যকার ধাপযুক্ত ভূমিকে ……… বলে।
উত্তর – কারেওয়া
11. ত্রিপুরার সর্বোচ্চ পাহাড়ের নাম ……… ।
উত্তর – জাম্পুইটাং
12. হিমালয়ের সর্ব দক্ষিণের পর্বতশ্রেণিটির নাম ……… ।
উত্তর – শিবালিক
13. হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ……….. পর্বত অবস্থিত।
উত্তর – নাঙ্গা
14. পূর্ব হিমালয়ের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ……….. শৃঙ্গ অবস্থিত।
উত্তর – নামচাবারওয়া
15. পাঞ্জাবের নতুন পলিগঠিত অঞ্চলকে বলা হয় ……… ।
উত্তর – বেট
16. দুটি নদীর মধ্যবর্তী অংশ হল ……… ।
উত্তর – দোয়াব
17. মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম ……… ।
উত্তর – অমরকণ্টক
18. থলঘাট ……… পর্বতশ্রেণির একটি বিখ্যাত গিরিপথ।
উত্তর – পশ্চিমঘাট
19. করমণ্ডল উপকূলে অবস্থিত একটি উপহ্রদের নাম ……… ।
উত্তর – পুলিকট
20. পূর্ব হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ……… ।
উত্তর – কাঞ্চনজঙ্ঘা
21. গুজরাতের লবণাক্ত হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় ………. বলে।
উত্তর – রান
22. নীলগিরি পর্বতের উচ্চতম শৃঙ্গ হল ……… ।
উত্তর – ডোডাবেট্টা
23. নর্মদা ও তাপ্তী নদীর মাঝে ……… ও ……… পর্বত রয়েছে।
উত্তর – সাতপুরা, মহাদেব
24. পিরপঞ্জাল ও হিমাদ্রি হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত ……….. উপত্যকা।
উত্তর – কাশ্মীর
25. মালাবার উপকূলের হ্রদগুলি স্থানীয় ভাষায় ………. নামে পরিচিত।
উত্তর – কয়াল
26. আরাবল্লি পর্বতের সর্বোচ্চ অংশ ……… ।
উত্তর – গুরুশিখর
27. ‘কচ্ছ’ শব্দের অর্থ ……… দেশ।
উত্তর – জলময়
28. ছোটোনাগপুর মালভূমির সর্বোচ্চ পাহাড় ……… ।
উত্তর – পরেশনাথ
29. পশ্চিমঘাট একটি ……… পর্বত।
উত্তর – ক্ষয়জাত
30. ………. গ্রন্থি থেকে হিমালয় পর্বতমালা বিস্তৃত হয়েছে।
উত্তর – পামির
31. কাশ্মীর উপত্যকার কারেওয়া মাটি ……….. চাষের জন্য বিখ্যাত।
উত্তর – জাফরান

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *