WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – C & D
WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – C & D
West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – C & D
West Bengal Board 10th Geography Solutions
TOPIC – C ভারতের জলসম্পদ
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- ভারতের জলসম্পদ : ভারতের জলসম্পদ বলতে নদনদী ও খাল-হ্রদ-জলাশয়ের জল, ভৌমজল, বৃষ্টির জল ইত্যাদিকে বোঝায়। অবশ্য এর মধ্যে নদনদীর ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
- ভারতের নদনদী: উৎস, প্রবাহের অঞ্চল এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় – (1) উত্তর ভারতের নদনদী এবং (2) দক্ষিণ ভারতের নদনদী।
- উত্তর ভারতের নদনদী : উত্তর ভারতের নদনদীর মধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র প্রধান।
- গঙ্গা নদী : গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা নদী উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
- গঙ্গার প্রধান শাখা : গঙ্গার প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
- গঙ্গা-আদর্শ নদী : উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত গঙ্গা নদীর গতিপথে উচ্চগতি বা পাবর্ত্যপ্রবাহ, মধ্যগতি বা সমভূমিপ্রবাহ এবং নিম্নগতি বা বদ্বীপপ্রবাহ সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। তাই গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে।
- গঙ্গার উপনদীসমূহ: গঙ্গার উপনদীসমূহের মধ্যে ডানতীরের যমুনা ও শোন এবং বামতীরের রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
- সিন্ধু নদ : উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদ হল সিন্ধু। এই নদ তিব্বতের (চিন) সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তারপর চিনের ওপর দিয়ে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে প্রথমে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য এবং পরে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে।
- সিন্ধুর উপনদীসমূহ: সিন্ধুর পাঁচটি উপনদী হল শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তা।
- ব্রক্ষ্মপুত্র নদ : উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ হল ব্রহ্মপুত্র। এই নদ তিব্বতের (চিন) রাক্ষসতাল-মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তারপর সুদীর্ঘ পথ চিন দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রথমে উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও অসম রাজ্য এবং শেষে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
- ব্রহ্মপুত্রের উপনদীসমূহ: সুবনসিরি, ভরলি, মানস, সংকোশ, ধানসিরি, কোপিলি, লোহিত প্রভৃতি ব্রহ্মপুত্রের উল্লেখযোগ্য উপনদী।
- দক্ষিণ ভারতের নদনদী: দক্ষিণ ভারতের নদনদীর মধ্যে পশ্চিমবাহিনী নর্মদা ও তাপ্তী এবং পূর্ববাহিনী মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্মা ও কাবেরী প্রধান। এর মধ্যে পশ্চিমবাহিনী নদীগুলি পড়েছে আরব সাগরে এবং পূর্ববাহিনী নদীগুলি বঙ্গোপসাগরে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে পতিত নদীগুলির মোহানায় গঠিত হয়েছে বড়ো বড়ো বদ্বীপ।
- ভারতের হ্রদ : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সুপেয় জলের হ্রদ আছে, যেমন–উলার, ডাল, নৈনিতাল, ভীমতাল, রূপকুণ্ড প্রভৃতি। আর রাজস্থানে আছে কিছু লবণাক্ত জলের হ্রদ, যেমন—সম্বর, পুষ্কর, দিদওয়ানা, পচপদ্রা প্রভৃতি। শুষ্ক লাডাক মালভূমির প্যাংগং ও সোমোরিরি এবং দেশের উপকূল অঞ্চলের কোলেরু, পুলিকট প্রভৃতিও লবণাক্ত জলের হ্রদ। ওড়িশা উপকূলের চিলকা ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ। এ ছাড়া মানুষের সৃষ্ট কিছু হ্রদ আছে, যেমন—মাইথন, পাত্ে গোবিন্দ সাগর, মহারানা প্রতাপ সাগর প্রভৃতি।
- ভারতের খাল : ভারতে অনেক নিত্যবহ (সারাবছর জল থাকে) খাল আছে, যেমন—সারদা খাল, উচ্চ গঙ্গা ও নিম্ন গঙ্গা খাল, ভাকরা খাল, দুর্গাপুর খাল প্রভৃতি। আর কৃষ্ণা, গোদাবরী প্রভৃতি নদীর বদ্বীপে আছে প্লাবন খাল (শুধু বন্যার সময় বা বর্ষাকালে জল থাকে)।
- ভারতে জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি : ভারতে প্রধানত কৃপ, নলকূপ ও খাল—এই তিনটি পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়। (1) কূপ ও নলকূপ পদ্ধতি: ভূগর্ভের জল সেচকার্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হল কূপ এবং নলকূপ। উত্তর ভারতের সমভূমিতে কূপ ও নলকূপের ব্যবহার বেশি। (2) খাল পদ্ধতি: ভারতে জলসেচের জন্য প্রধানত দুইপ্রকার খাল আছে যথা—প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল।
- ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফল: পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ জলের অন্যতম উৎস ভৌমজল বা ভূগর্ভের জল। কিন্তু বর্তমানে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ভৌমজল উত্তোলন ও ব্যবহারের ফলে তার অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যেমন— (1) ভৌমজলস্তর হ্রাস, (2) ভূপৃষ্ঠীয় জলের পরিমাণ হ্রাস, (3) ভূমিধস, (4) মাটির লবণতা বৃদ্ধি, (5) আর্সেনিকদূষণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি প্রভৃতি।
- বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা: যে পরিকল্পনার মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সমগ্র নদী উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, মাছ চাষ, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি বহুবিধ উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় এবং নদী উপত্যকা অঞ্চলে সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়, তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলে। উদাহরণ—দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা, ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা, মহানদী পরিকল্পনা প্রভৃতি।
- দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার বাঁধ ও সেচবাঁধ : দামোদর উপত্যকার সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য দামোদর নদের ওপর পাঞ্চেৎ ও তেনুঘাট, দামোদরের উপনদী বরাকরের ওপর মাইথন ও তিলাইয়া বাঁধ এবং কোনারের ওপর কোনার বাঁধ নির্মিত হয়েছে। দুর্গাপুরে দামোদরের ওপর একটি সেচবাঁধও নির্মাণ করা হয়েছে।
- দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার অধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সেচখাল : তিলাইয়া, মাইথন ও পাঞ্চেৎ-এ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বোকারো, চন্দ্রপুরা, মেজিয়া, রঘুনাথপুর, মাইথন, কোডার্মা, ওয়ারিয়া ও দুর্গাপুরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অধীনে প্রায় 2495 কিমি সেচখাল কাটা হয়েছে।
- জল সংরক্ষণের পদ্ধতি: পৃথিবীতে সুপেয় জলের ভাণ্ডার একেবারেই সীমিত। এই জলভাণ্ডার সংরক্ষণের প্রধান দুটি পদ্ধতি হল— (1) বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং (2) জলবিভাজিকা উন্নয়ন।
- বৃষ্টির জল সংরক্ষণে তামিলনাড়ুর ভূমিকা : তামিলনাড়ু এবং তার সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকায় বছরে দু-বার বর্ষাকাল হলেও সুপেয় জলের ভাণ্ডার তথা সরবরাহ আশানুরূপ নয়। এজন্য তামিলনাড়ুতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
- গঙ্গা : দৈর্ঘ্য: গঙ্গা নদীর মোট দৈর্ঘ্য 2525 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।মোহানা: গঙ্গা নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী: গঙ্গার বামতীরের উপনদীগুলি হল—ঘর্ঘরা, রামগঙ্গা, গণ্ডক, কোশী এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—যমুনা, শোন প্রভৃতি।শাখানদী: গঙ্গার শাখানদী হল— পদ্মা ও ভাগীরথী-হুগলি। ভাগীরথী-হুগলির কয়েকটি শাখানদী হল ভৈরব, জলঙ্গী, বিদ্যাধরী।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— হৃষীকেশ, হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, ভাগলপুর, কলকাতা।
- সিন্ধু : দৈর্ঘ্য: সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য 2880 কিমি কিন্তু ভারতে মোট দৈৰ্ঘ্য 1114 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের কাছে সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে এই নদের উৎপত্তি হয়েছে।মোহানা: সিন্ধু নদ আরব সাগরে এসে মিশেছে।গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ভারতে কেবল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাডাকের মধ্য দিয়ে সিন্ধু নদ প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী: সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলি হল—বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, শতদ্রু, ইরাবতী, বিপাশা এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—শিয়ক, গিলগিট, শিগার প্রভৃতি।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— স্কার্দু, বুঞ্জি, চিলাস প্রভৃতি।
- ব্রহ্মপুত্র: দৈর্ঘ্য: ব্রহ্মপুত্র নদের মোট দৈর্ঘ্য 2900 কিমি কিন্তু ভারতে মোট দৈর্ঘ্য 916 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে এই নদের উৎপত্তি হয়েছে।মোহানা: ব্রহ্মপুত্র নদ বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ভারতে কেবল অরুণাচল প্রদেশ ও অসম রাজ্যের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী : ব্রহ্মপুত্রের বামতীরের উপনদীগুলি হল—বুড়ি ডিহিং, কোপিলি, ধানসিরি (দক্ষিণ) এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—সুবনসিরি, সংকোশ, মানস, তিস্তা প্রভৃতি।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— ডিব্ৰুগড়, তেজপুর, গুয়াহাটি, গোয়ালপাড়া, ধুবরি।
- মহানদী: দৈর্ঘ্য: মহানদীর মোট দৈর্ঘ্য 851 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: ছত্তিশগড়ের সিহাওয়ার উচ্চভূমি থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।মোহানা: ছত্তিশগড় রাজ্যের হিসাওয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মহানদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ছত্তিশগড় ও ওডিশা রাজ্যের মধ্য দিয়ে মহানদী প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী: শিওনাথ, হাসদো, ইব, ব্রাহ্মণী, বৈতরণী প্রভৃতি হল মহানদীর উপনদী।শাখানদী: মহানদীর শাখানদীগুলি হল—কুশভদ্র, ভাগবী প্রভৃতি।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: মহানদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— সম্বলপুর, টিকারপাড়া, কটক।
- গোদাবরী : দৈর্ঘ্য: গোদাবরী নদীর মোট দৈর্ঘ্য 1465 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্রিম্বকেশ্বর শৃঙ্গ (নাসিক) থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।মোহানা: গোদাবরী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় ও অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী: ইন্দ্রাবতী, প্রাণহিতা, মঞ্জিরা প্রভৃতি হল গোদাবরীর উপনদী।শাখানদী: গৌতমী, বশিষ্ট, বৈনতেয় প্রভৃতি গোদাবরীর শাখানদী।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: গোদাবরী নদীর তীরে নাসিক, নানদেদ, ভদ্রাচলম, রাজামুদ্রি, আদিলাবাদ, করিমনগর, নরসাপুরম প্রভৃতি শহর অবস্থিত।
- কৃষ্ণা : দৈর্ঘ্য: কৃষ্ণা নদীর মোট দৈর্ঘ্য 1400 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।মোহানা: কৃষ্ণা নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী: ভীমা, কয়না, মালপ্রভা, তুঙ্গভদ্রা, ঘাটপ্রভা, মুসি প্রভৃতি হল কৃয়ার উপনদী।শাখানদী: নাগবতী, ভামসাধারা প্রভৃতি হল কৃষ্ণার শাখানদী।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: সানগ্লি, বিজয়ওয়াড়া হল কৃয়া নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
- কাবেরী : দৈর্ঘ্য: কাবেরী নদীর মোট দৈর্ঘ্য 800 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রত্নগিরি পাহাড় থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মোহানা: কাবেরী নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী: হেমবতী, অর্কবতী, ভবানী, অমরাবতী প্রভৃতি হল কাবেরীর উপনদী।শাখানদী: কোলেরুন কাবেরীর উল্লেখযোগ্য শাখানদী।
নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: শ্রীরঙ্গম, তিরুচিরাপল্লি, ইরোড হল কাবেরী নদীর তীরে অবস্থিত শহর। - নর্মদা : দৈর্ঘ্য: নর্মদা নদীর মোট দৈৰ্ঘ্য 1312 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: মৈকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
মোহানা: নর্মদা নদী খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে।গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে নর্মদা নদী প্রবাহিত হয়েছে।উপনদী: বর্ণা, ওরসাং প্রভৃতি হল নর্মদার উপনদী।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: ওমকারেশ্বর, হোসাঙ্গাবাদ, ভারুচ প্রভৃতি এই নদীর তীরে অবস্থিত শহর। - তাপ্তী : দৈর্ঘ্য : তাপ্তী নদীর মোট দৈর্ঘ্য 724 কিমি।
উৎপত্তিস্থল: সাতপুরা পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমি থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।মোহানা: তাপ্তী নদী খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে।
গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র ও গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী: গিরনা, পূর্ণা, ভাগুর, পান্জারা প্রভৃতি হল তাপ্তীর উপনদী।নদীতীরবর্তী প্রধান শহর : বুরহানপুর, ভুসাওয়াল, সুরাত প্রভৃতি এই নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
- গঙ্গা: গঙ্গা নদীর মোট দৈর্ঘ্য 2525 কিমি। গঙ্গা ভারতের প্রধান নদী। এই নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
- উচ্চগতি: প্রবাহপথ: উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ উচ্চগতি নামে পরিচিত। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের অন্তর্গত গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। উৎসের কাছে এই নদীর নাম ভাগীরথী। রুদ্রপ্রয়াগের কাছে মন্দাকিনী ও দেবপ্রয়াগের কাছে এর অন্যতম প্রধান উপনদী অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়ে ভাগীরথী গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে।
- মধ্যগতি: প্রবাহপথ: হরিদ্বারের কাছে পার্বত্যপ্রবাহ অতিক্রম করে গঙ্গা সমভূমিতে প্রবেশ করেছে এবং এখান থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রবাহপথ গঙ্গার মধ্যগতি নামে পরিচিত। উপনদী: গঙ্গার সুদীর্ঘ গতিপথে ডানদিক থেকে যমুনা ও শোন এবং বামদিক থেকে গোমতী, ঘর্ঘরা, রামগঙ্গা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি উপনদী এসে পড়েছে। গঙ্গার এইসব উপনদীর মধ্যে যমুনা সর্বপ্রধান । যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে যমুনা নদী এলাহাবাদের কাছে গঙ্গা নদীতে পড়েছে। চম্বল, বেতোয়া, কেন, সারদা প্রভৃতি যমুনার ডানতীরের উল্লেখযোগ্য উপনদী। হরিদ্বারের পর থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রবাহপথ গঙ্গার মধ্যগতি নামে পরিচিত।
- নিম্নগতি: প্রবাহপথ: রাজমহল পাহাড়ের পর থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ নিম্নগতি নামে পরিচিত। রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে মুরশিদাবাদ জেলার ধূলিয়ানের কাছে দুটি ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। শাখানদী: প্রধান প্রবাহটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। গঙ্গার প্রধান শাখানদীটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। উপনদী: ভাগীরথী-হুগলি নদীর গতিপথে অজয়, দামোদর, কংসাবতী, রূপনারায়ণ, রসুলপুর প্রভৃতি নদী ডানতীরের উপনদী হিসেবে এবং জলঙ্গি, মাথাভাঙ্গা, চুপি প্রভৃতি নদী বামতীরের উপনদী হিসেবে এসে মিশেছে। বদ্বীপ: মোহানার কাছে এসে গঙ্গা নদী পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।
- সিন্ধু: প্রবাহপথ: উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদী সিন্ধু (দৈর্ঘ্য 2880 কিমি, ভারতে 1114 কিমি)। তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের কাছে সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধু নদ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মোহানা: এই প্রবাহ নাঙ্গা পর্বতের কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আরব সাগরে (করাচির দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে) পড়েছে। উপনদী : সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে পাঁচটি প্রধান, এগুলি হল—শতদ্রূ, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা। এই নদীগুলি জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিন্ধুর ডানতীরের প্রধান উপনদীগুলি হল কাশ্মীরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শিয়ক, গিলগিট, শিগার প্রভৃতি। সমভূমিপ্রবাহ: সিন্ধু নদ লাডাক পর্বতশ্রেণি অতিক্রম করার পর একটি সুগভীর গিরিখাতের সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। বদ্বীপ: মোহানার কাছে সিন্ধুর একটি ছোটো বদ্বীপ দেখা যায়।
- ব্রক্ষ্মপুত্র: প্রবাহপথ: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র (দৈর্ঘ্য 2900 কিমি, ভারতে 916 কিমি)। তিব্বতের রাক্ষসতাল মানস সরোবরের প্রায় 90 কিমি দক্ষিণ-পূর্বে চেমায়ুং-দুং নামক হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি। সেখান থেকে প্রথমে সাংপো নামে তিব্বত মালভূমির ওপর দিয়ে পূর্ব দিক বরাবর প্রায় 1500 কিমির বেশি প্রবাহিত হওয়ার পর নামচা বারওয়া শৃঙ্গের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে ডিহং নামে অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর অসমের সদিয়ার কাছে ডিবং ও লোহিত নদী ডিহংয়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ডিহং, ডিবং এবং লোহিত—এই তিনটি নদীর মিলিত প্রবাহ ব্রহ্মপুত্র নামে পশ্চিমমুখী হয়ে অসমের ওপর দিয়ে ধুবরি পর্যন্ত বয়ে গিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মোহানা: যমুনা নদী গোয়ালন্দের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে শেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বালুচর বা নদীদ্বীপ: অসম উপত্যকায় ব্রক্ষ্মপুত্র বিনুনির মতো এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে বলে নদীখাতে অনেক বালুচর বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। জোরহাটের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে গঠিত মাজুলি দ্বীপটি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।
উপনদী: ব্রক্ষ্মপুত্রের ডানতীরের উপনদীগুলির মধ্যে সুবনসিরি, কামেং বা জিয়া ভরেলি, মানস, সংকোশ, তিস্তা এবং বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে ধানসিরি, কোপিলি, বুড়ি ডিহিং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
- মহানদী: (851 কিমি)গতিপথ: ছত্তিশগড় রাজ্যের সিহাওয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে ছত্তিশগড় ও ওডিশার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। মহানদীর মোহানায় একটি বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। উপনদী/শাখানদী: বামতীরের উপনদী হল শিওনাথ, ইব, মান্দ, হাসদো এবং ওং, জংক হল ডানতীরের উপনদী। শাখানদীগুলি হল কুশভদ্রা, ভাগবী প্রভৃতি।
- গোদাবরী: (1465 কিমি) গতিপথ : মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার ত্রিম্বকেশ্বর উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই নদী দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম বলে এর নাম দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা। এই নদীর মোহানায় একটি বদ্বীপ আছে।উপনদী/শাখানদী: মঞ্জিরা, ইন্দ্রাবতী, পূর্ণা প্রভৃতি হল গোদাবরীর উপনদী এবং গৌতমী, বশিষ্ঠ, বৈনতেয় প্রভৃতি হল গোদাবরী নদীর শাখানদী।
- কৃয়া : (1400 কিমি) গতিপথ: মহারাষ্ট্রের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে কুয়া নদী মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কৃষ্ণা নদীর মোহানাতে একটি বদ্বীপ আছে। উপনদী/শাখানদী : ভীমা, তুঙ্গভদ্রা, ঘাটপ্রভা, মুসি প্রভৃতি হল কৃয়ার উপনদী এবং নাগবতী, ভামসাধারা প্রভৃতি হল কৃষ্ণার শাখানদী।
- কাবেরী: (800 কিমি) গতিপথ: কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রত্নগিরি পাহাড় থেকে উৎপন্ন কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। শিবসমুদ্রম কাবেরী নদীর একটি বিখ্যাত জলপ্রপাত। এই নদীটির মোহানাতেও একটি বদ্বীপ দেখা যায়।উপনদী/শাখানদী : হেমবতী, অর্কবতী প্রভৃতি কাবেরীর বামতীরের উপনদী এবং ভবানী, অমরাবতী প্রভৃতি ডানতীরের উপনদী। কোলেরুন হল কাবেরীর শাখানদী।
- নর্মদা: (1312 কিমি) গতিপথ: মধ্যপ্রদেশে মৈকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে। জব্বলপুরের কাছে নর্মদার ওপর নয়নাভিরাম ধুঁয়াধার জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। উপনদী: বরণা, কোলার, হিরণ প্রভৃতি হল নর্মদার উপনদী।
- তাপি বা তাপ্তী: (724 কিমি) গতিপথ: মধ্যপ্রদেশে মহাদেব পাহাড়ের মুলতাই উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন তাপ্তী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত হয়ে সুরাতের কাছে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। উপনদী: পূর্ণা, গিরনা, পান্জারা প্রভৃতি হল তাপ্তীর উপনদী।
- স্বাদু জলের হ্রদ: ভারতের স্বাদু বা সুপেয় জলের হ্রদগুলির অধিকাংশই হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। এখানে উন্নতা সারাবছর কম থাকায় হ্রদগুলি থেকে বাষ্পীভবনের হার খুব কম। এ ছাড়া, কিছু কিছু হ্রদ বরফগলা জলেও পুষ্ট। এসব কারণে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে উলার, ডাল, নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল, পুনাতাল, রূপকুণ্ড, গুরুদোংমার প্রভৃতি মিষ্টি জলের হ্রদগুলির সৃষ্টি হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উলার ভারতের বৃহত্তম স্বাদু জলের হ্রদ। সিকিম রাজ্যের সো লামো ভারতের উচ্চতম হ্রদ। মণিপুর রাজ্যের লোকটাক ভারতের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাদু জলের হ্রদ।
- লবণাক্ত জলের হ্রদ: ভারতের লবণাক্ত জলের হ্রদগুলি রাজস্থান রাজ্যে বেশি দেখা যায়। সম্বর, দিদওয়ানা, পুষ্কর, দেগনা, পচপদ্রা, কাচমান প্রভৃতি রাজস্থান রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ লবণাক্ত জলের হ্রদ। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের প্যাংগং, সোমোরিরি, অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের কোলেরু এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের পুলিকট ভারতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লবণাক্ত জলের হ্রদ। ওডিশা রাজ্যের চিলিকা বা চিলকা প্রকৃতপক্ষে একটি উপহ্রদ। এটি ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ। কেরল রাজ্যের ভেমবানাদ ও অষ্টমুদি দুটি বিখ্যাত উপহ্রদ বা কয়াল।
- সেচখাল: প্রধানত কৃষিতে সেচের জন্য নদী, কৃত্রিম জলাধার প্রভৃতি থেকে যে খাল খনন করা হয়, তাকে সেচখাল বলে। ভারতে দু-ধরনের সেচখাল দেখা যায়, যথা—
- প্লাবন খাল: যেসব খাল বর্ষা বা বন্যার অতিরিক্ত জল বহন করে সেই খালগুলিকে বলে প্লাবন খাল। প্লাবন খালের মাধ্যমে কেবল বর্ষাকালেই জলসেচ করা যায়, যেমন—কৃয়া বদ্বীপ খাল, গোদাবরী বদ্বীপ খাল, কাবেরী বদ্বীপ খাল প্রভৃতি।
- নিত্যবহ খাল: যেসব নদীতে সারাবছর জল থাকে, সেইসব নদী থেকে খনন করা খালগুলিকে বলে নিত্যবহ খাল। সারাবছর জল না থাকলে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে জলাধার (Dam) তৈরি করা হয় ও ওই জলাধার থেকে যেসব খাল খনন করে কৃষিক্ষেত্রে সারাবছর জলসেচ করা হয়, সেইসব খালকে নিত্যবহ খাল বলে। সুবিধা: সারাবছর জলপূর্ণ থাকার জন্য নিত্যবহ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সারাবছরই জলসেচ করা যায়। অর্জুল: তুষারগলা জলে পুষ্ট উত্তর ভারতের নদীগুলি নিত্যবহ বলে উত্তর ভারতেই নিত্যবহ খাল বেশি দেখা যায়, যেমন—উত্তরপ্রদেশের উচ্চ-গঙ্গা খাল, পাঞ্জাবের পশ্চিম যমুনা খাল ও উচ্চ-বারি দোয়াব খাল, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর খাল, ইডেন খাল, হিজলি খাল, ওডিশা উপকূল খাল এবং দামোদর-ময়ূরাক্ষী-কংসাবতী পরিকল্পনার সেচখালসমূহ। এইরূপ খালের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় উত্তরপ্রদেশে।
- প্লাবন খাল: যেসব খাল বর্ষা বা বন্যার অতিরিক্ত জল বহন করে সেই খালগুলিকে বলে প্লাবন খাল। প্লাবন খালের মাধ্যমে কেবল বর্ষাকালেই জলসেচ করা যায়, যেমন—কৃয়া বদ্বীপ খাল, গোদাবরী বদ্বীপ খাল, কাবেরী বদ্বীপ খাল প্রভৃতি।
- কূপ ও নলকূপ: ভারতের যেসব অঞ্চলের মাটি পলিগঠিত এবং ভূগর্ভের জল বা ভৌমজল খুব বেশি গভীরতায় থাকে না, সেইসব স্থানে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। কূপ ও নলকূপের গভীরতা জলস্তরের উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণ কূপ: ভূমিতে প্রায় 20-25 মিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে কূপ তৈরি করা হয়। কূপের চারপাশ সাধারণত বাঁধিয়ে নেওয়া হয় এবং তার মধ্যে 10-15 মিটার নীচে জল থাকে ৷ কপিকল বা গোরু, উট প্রভৃতি পশুর সাহায্যে কূপ থেকে জল তোলা হয়। অনেকসময় এজন্য অনেকগুলি বালতি লাগানো পারস্যের চাকাও ব্যবহৃত হয়। কোনো পশুর সাহায্যে চাকাটি ঘুরিয়ে জল তোলা হয়। নলকূপ : দু-ধরনের নলকূপ দেখা যায়— [i] সাধারণ নলকূপ: সাধারণ নলকূপ অগভীর হয় এবং হাত দিয়ে পাম্প করে জল তোলা হয়। [ii] বৈদ্যুতিক নলকূপ: গভীর নলকূপ থেকে বৈদ্যুতিক পাম্প বা ডিজেল চালিত পাম্পের সাহায্যে জল তোলা হয়। এতে স্বল্প সময়ে প্রচুর জল তোলা যায়। অঞ্চল: উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ, পূর্ব ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমে কূপ ও নলকূপের প্রচলন বেশি। কূপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচ হয় উত্তরপ্রদেশে। বর্তমানে পশ্চিম ভারতের রজস্থান ও গুজরাত রাজ্যে কূপ ও নলকূপের দ্বারা সেচের ব্যবহার বেড়েছে। এ ছাড়াও তামিলনাড়ুর দক্ষিণাংশ ও কেরলে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে সেচকাজ করা হয়।
- জলাশয় বা পুকুর: দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে মাটির নীচে অধিকাংশ জায়গায় অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকায় বৃষ্টির জল ভূগর্ভে বিশেষ সঞ্চিত হয় না। এখানকার ভূপৃষ্ঠ তরঙ্গায়িত বলে বর্ষার জল সহজেই নিম্নভূমিতে ধরে রাখা যায়। এ ছাড়া, ভারতের যেসব অঞ্চলে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয় না, সেখানে জলাশয় নির্মাণ করে জল জমিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন—তেলেঙ্গানা, কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ। অঞ্চল: দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে এই পদ্ধতির প্রচলন বেশি। মধ্যপ্রদেশে, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে এই পদ্ধতিতে সামান্য জলসেচ করা হয়। জলাশয় বা পুকুরের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় তামিলনাড়ু রাজ্যে।
- বরফগলা জলে পুষ্ট নদনদী: উত্তর ভারতে বড়ো বড়ো নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট বলে এগুলিতে সারাবছর জল থাকে। এর ফলে উত্তর ভারতের নদীগুলি থেকে নিত্যবহ খাল খনন করার সুবিধা রয়েছে, যেখান থেকে সারাবছর কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করা সম্ভব।
- বিস্তীর্ণ সমভূমি: উত্তর ভারতের সুবিস্তৃত সমভূমি অঞ্চলে ও পূর্ব উপকূলে বিস্তীর্ণ সমভূমি থাকায় সহজে খাল কেটে জলসেচ করা যায়।
- স্বল্প গভীর ভৌমজলত্তর: পলিগঠিত অঞ্চলগুলিতে পলিস্তরের সামান্য নীচে জলস্তর থাকায় সহজেই কূপ, নলকূপ খনন করে ভূগর্ভস্থ জল সেচের কাজে ব্যবহার করা যায়।
- বৃষ্টির জলের প্রাচুর্য: বর্ষাকালে দেশের খালবিল, নদীনালা, হ্রদ, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয় জলপূর্ণ হয়ে যায় বলে বছরের অন্যান্য সময় সেগুলি থেকে সেচের জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
- বাঁধ তৈরির অনুকূল ভূপ্রকৃতি: উপদ্বীপীয় মালভূমির শক্ত ও কেলাসিত শিলা দ্বারা গঠিত ভূপ্রকৃতি ওই অঞ্চলের নদীসমূহের গতিপথে বাঁধ এবং কৃত্রিম জলাধার তৈরির পক্ষে বিশেষভাবে অনুকূল, যেগুলি থেকে খাল খনন করে জলসেচ করা যায়।
- ঢাল উন্নয়ন: নদী অববাহিকার উঁচু খাড়া অংশে ভূমিক্ষয় এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃক্ষরোপণ, তৃণভূমির আচ্ছাদন তৈরি, ধস নিয়ন্ত্রক দেয়াল নির্মাণ, প্রয়োজনে পাহাড়ি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা যেতে পারে। এর সাথে ঝুমচাষের মতো ক্ষতিকর প্রথায় চাষ বন্ধ করা দরকার।
- সমোন্নতিরেখা বরাবর বনভূমি তৈরি: উচ্চ ভূমি বা পার্বত্য অঞ্চলে সমোন্নতিরেখা বরাবর বনভূমি তৈরি করলে মাটিক্ষয় কম হয় এবং ভৌমজলের পরিমাণ বাড়ে।
- নদীখাতে ছোটো বাঁধ তৈরি: অববাহিকার ছোটো নদীগুলির প্রবাহ- পথে বাঁধ দিলে স্থানীয়ভাবে জল সংরক্ষণ ও মাটিক্ষয় রোধ করা যায়।
- বন্যা নিয়ন্ত্রণ: বন্যাপ্রবণ নদী অববাহিকায় প্রচুর সংখ্যক জলাভূমি, পুকুর, খাল ইত্যাদি খনন করতে হবে এবং নদীখাতের পলি কেটে তুলে ফেলতে হবে। এতে নদীর জলধারণ ক্ষমতা এবং জলপ্রবাহ উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।
- শুষ্ক অঞ্চলের পদ্ধতি: স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য বেশি সংখ্যক পুকুর-সহ বিভিন্ন জলাধার খনন করে তাতে বর্ষার জল সঞ্চয় করে রাখতে হবে। এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের আগে ভূমি কর্ষণ করে বা খুঁড়ে রাখলে মৃত্তিকার জলাধারণ ক্ষমতা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাবে।
- আর্দ্র অঞ্চলের পদ্ধতি: আর্দ্র অঞ্চলে নদীখাতগুলিকে গভীর ও পরিষ্কার রাখলে জল দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে এবং তার ফলে সেখানে সহজেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভূমিক্ষয় রোধ করা যেতে পারে।
- অনিশ্চিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত: ভারতে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় না। শতকরা প্রায় 67 – 72 ভাগ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালের 4 মাসের মধ্যে হয়, যা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে থাকে। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন অনিশ্চিত এবং অনিয়মিত। একমাত্র জলসেচের মাধ্যমেই কৃষির এই অনিশ্চিত অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন: ভারতে বৃষ্টিপাত সব জায়গায় সমান হারে হয় না। উত্তর-পশ্চিম ভারতের অধিকাংশ জায়গায় বছরে সেন্টিমিটারেরও কম বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের এই আঞ্চলিক বণ্টনগত বৈষম্যের দরুন রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাতের উত্তর ও পশ্চিমাংশ, দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগ প্রভৃতি এলাকায় কৃষিকাজের জন্য জলসেচের বিশেষ প্রয়োজন।
- শুষ্ক শীতকাল: উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশ এবং করমণ্ডল উপকূলের দক্ষিণাংশ—এই দুটি অঞ্চল ছাড়া ভারতের অন্যত্র শীতকালে বিশেষ বৃষ্টিপাত হয় না। সুতরাং, শীতকালে ভারতে গম, ডাল, তৈলবীজ, বোরো ধান প্রভৃতি রবিশস্য চাষের জন্য জলসেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতার তারতম্য: লোহিত মৃত্তিকা এবং ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম। তাই, ওইসব মাটিতে কৃষিকাজ করার জন্য জলসেচ প্রয়োজন।
- উচ্চফলনশীল বীজের চাষ: খাদ্যের বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে উচ্চফলনশীল বীজের চাষ করা হয়। কিন্তু উচ্চফলনশীল শস্য চাষের জন্য অধিক পরিমাণে জল প্রয়োজন। একমাত্র জলসেচের মাধ্যমেই তা সরবরাহ করা সম্ভব।
- সারাবছরব্যাপী চাষ: কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য একই জমিতে প্রতিবছর তিন-চার বার চাষ করা হয়। একমাত্র জলসেচের ব্যবস্থা থাকলে তবেই জমিতে সারাবছর চাষ করা সম্ভব হয়।
- অসংখ্য নদনদীর জল: ভারত নদীমাতৃক দেশ, অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন অংশের ওপর দিয়ে অসংখ্য নদনদী প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে এখানকার অধিকাংশ জায়গায় নদনদী থেকে খাল খনন করে কৃষিজমিতে জলসেচ করা যায়।
- সারাবছর বরফগলা জলের জোগান: সুবিস্তৃত উত্তর ভারতের নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট বলে নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে এবং তাই প্রায় সমগ্র উত্তর ভারতেই সারাবছর খাল দ্বারা জলসেচ করা যায়।
- খাল খননের উপযোগী ভূমিরূপ: ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সমভূমি থাকায় সহজে খাল খনন করে জলসেচ করা যায়।
- ভূমির ঢালজনিত সুবিধা: দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূমির ঢাল সুষম বলে খাল দিয়ে সহজেই জল প্রবাহিত হতে পারে (যেমন— সমভূমি অঞ্চলে)।
- জলাধার তৈরির সুবিধা: দক্ষিণ ভারতে বরফগলা জলে পুষ্ট নদী না থাকলেও ওখানকার ভূমিরূপ ঢেউ-খেলানো বলে সহজেই বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করা যায় এবং তারপর জলাধার থেকে খাল খনন করে জলসেচ করা হয়।
- ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা হ্রাস: দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই এখন ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে ভূপৃষ্ঠস্থ জল অর্থাৎ নদনদী, জলাধারের জল খালের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করা ছাড়া আমাদের কৃষির উন্নতিবিধান বা জলসম্পদ সংরক্ষণের আর কোনো বিকল্প নেই।
- উদ্ভিদের অক্সিজেনের অভাব: জলাবদ্ধ মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় উদ্ভিদ শিকড়ের সাহায্যে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
- উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার রোগ সৃষ্টি: জলাবদ্ধ মাটিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটিরিয়া, জীবাণু ইত্যাদি সক্রিয় হওয়ার ফলে গাছের শিকড় পচে যায়। এ ছাড়া উদ্ভিদদেহে নানারকম ছত্রাকঘটিত রোগের সংক্রমণ ঘটে।
- বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি: মাটিতে দীর্ঘ সময় জল জমে থাকলে নানারকম বিষাক্ত পদার্থ, যেমন—হাইড্রোজেন সালফাইড, উদ্বায়ী ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি উৎপন্ন হয়, যা উদ্ভিদের পক্ষে ক্ষতিকর।
- জমির উর্বরতা হ্রাস: জলসেচের সুবিধা থাকলে জমিতে সারাবছর চাষ করা হয়। অনেকসময় একই ফসল বারবার চাষ করা হয়। এর ফলে মাটির ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং জমির স্বাভাবিক উর্বরতা কমতে থাকে।
- মাটির লবণতা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত জলসেচের ফলে মাটির নীচের স্তর থেকে লবণ সেচের জলে দ্রবীভূত হয়ে মাটির ওপরের স্তরে এসে সঞ্চিত হয়। এভাবে মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়ে।
- ভৌমজলতলের পতন: অতিরিক্ত জল তোলার ফলে মাটির নীচে ভৌমজলতলের পতন ঘটে। ফলে গ্রীষ্মকালে প্রয়োজনমতো জল পাওয়া যায় না।
- বন্যা নিয়ন্ত্রণ: বন্যার হাত থেকে কোনো অঞ্চলকে বাঁচানো বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- জলসেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন: জলাধারে সঞ্চিত জলকে ব্যবহার করে সারাবছর খালের সাহায্যে জলসেচ করা যায়।
- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: জলাধারের জলকে ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
- পানীয় জল সরবরাহ: জলাধারের জলকে পরিসুত করে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণ: নদীতে বাঁধ দিলে জলের গতিবেগ কমে যায় বলে ভূমিক্ষয় কম হয়।
- সেতু স্থাপন: নদীর আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয় বলে ওই বাঁধগুলি সেতুর কাজ করে।
- মাছ চাষ: জলাশয়গুলিতে সারাবছর স্থায়ীভাবে জল থাকায় এখানে মাছ চাষ করা যায়।
- পর্যটন কেন্দ্র গঠন: ওইসব জলাধারের কাছকাছি অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে ওঠে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
- অসংখ্য নদনদীর উপস্থিতি: ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য ভারতের ওপর দিয়ে ছোটো, বড়ো, মাঝারি প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য নদনদী প্রবাহিত হয়েছে।
- প্রচুর পরিমাণে জলবহন: ভারতের নদীগুলি বছরে গড়ে 186900 কোটি ঘনমিটার জল বহন করে (প্রধান নদীগুলি 85%, মাঝারি নদীগুলি 7%, ছোটো নদীগুলি 4% এবং অন্যান্য জলধারা 4% জল বহন করে)।
- জনপদ স্থাপন ও জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব বিস্তার: নদনদীগুলি সুদূর অতীত থেকে ভারতবাসীর জীবনধারার ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। হরপ্পা ও মহেন-জো-দারোর মতো প্রাচীন সভ্যতা-সহ এলাহাবাদ, বারাণসীর মতো প্রাচীন ধর্মস্থান এবং আধুনিক ভারতের অধিকাংশ শহর, নগর, জনপদ গড়ে উঠেছে কোনো-না-কোনো নদীর তীরে।
- কৃষিকাজের সুযোগ: কৃষিপ্রধান ভারতের অধিকাংশ চাষাবাদ নদী উপত্যকাগুলিতেই করা হয়।
- নদীকেন্দ্রিক শিল্প স্থাপন: গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলি, যেমন— কার্পাস বয়ন, চিনি, পাট প্রভৃতি পরোক্ষভাবে নদীর ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া, দেশের জলসেচ ব্যবস্থা, সামগ্রিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ সুলভ জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থা, পানীয় জলের জোগান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও নদনদীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকৃতপক্ষে, ভারতের নদনদী থেকে এতরকম সুবিধা পাওয়া ছাড়াও নদনদীগুলি যেন মায়ের মতো সন্তান স্নেহে ভারতীয়দের লালনপালন করে চলেছে, ভারতীয়দের জীবনধারাকে পরিপুষ্ট করে চলেছে। এজন্যই ভারতকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়।
- কৃষিকাজ: একদিকে ভারতের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলে নদী সঞ্চিত উর্বর পলিমাটিতে বিপুল পরিমাণে কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হয়, অন্যদিকে, নদনদীর জল সেচকার্যে ব্যবহৃত হয়।
- নৌপরিবহণ: দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহণে এইসব নদনদীর ভূমিকা অপরিসীম। সস্তায় বাণিজ্য করার অন্যতম উপায় জলপথে পরিবহণ।
- মাছ সংগ্রহ: দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটায় নদনদী থেকে সংগৃহীত মাছ। সুতরাং, স্বাদুজলের মাছ সংগ্রহে নদনদীর গুরুত্ব অসীম।
- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: পার্বত্য নদীগুলিকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। আবার বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার মাধ্যমেও নদনদী থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে, যা পরিবেশবান্ধব শক্তিও বটে।
- শিল্প বিকাশ: দেশের বিভিন্ন অংশের নদনদীর জল শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং শিল্পজাত দ্রব্য পরিবহণ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নদীগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পানীয় জল হিসেবে: নদীর জল পরিশোধন করে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে নগরায়ণ বাড়ছে।
- প্রধান নদনদী: গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, নর্মদা, তাপ্তী, মহানদী, গোদাবরী, সবরমতী, কৃয়া, মাহী, ব্রাহ্মণী, সুবর্ণরেখা, পেননার ও কাবেরী—নদীর অববাহিকার আয়তন 20000 বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। অববাহিকার আয়তন খুব বড়ো বলে নদনদীগুলিকে প্রধান নদনদী বলা হয়।
- মাঝারি নদনদী: ভারতে 46টি নদী আছে, যেগুলির প্রত্যেকটির অববাহিকার আয়তন 2000 থেকে 20000 বর্গকিলোমিটারের মধ্যে। অববাহিকার আয়তন মাঝারি বলে নদনদীগুলিকে মাঝারি নদনদী বলা যায়। দক্ষিণ ভারতের শরাবতী, ভাইগাই, পেরিয়ার, পালার, বৈতরণী প্রভৃতি এই ধরনের নদনদী।
- ছোটো নদনদী: ভারতের প্রায় 55টি নদীর প্রত্যেকটির অববাহিকার আয়তন 2000 বর্গকিলোমিটারেরও কম। অববাহিকার আয়তন কম বলে এদের ছোটো নদনদী বলা যায় । লুনি, বানস, রাচোল, দমন গঙ্গা প্রভৃতি এই ধরনের নদনদী।
- নিত্যবহতা: সুউচ্চ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হওয়ায় নদীগুলি বৃষ্টির জল ও বরফগলা জলে পুষ্ট, তাই নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে অর্থাৎ নদীগুলি নিত্যবহ।
- গতিপথের স্পষ্টতা: নদীগুলির উচ্চগতি, মধ্যগতি ও নিম্নগতি অধিকাংশই সুস্পষ্ট।
- নদীর গতিপথের প্রকৃতি: নদীগুলির অধিকাংশই নবীন এবং সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রায়ই গতিপথ পরিবর্তন করে। এজন্য নদীগুলির গতিপথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।
- নদীর প্রবাহপথে নির্মিত খাত: নদীগুলি অনেকটা পথ পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর খাত খুব গভীর হয় (সংকীর্ণ ‘V’ বা ‘I’ আকৃতির)।
- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া সমভূমিতে নদীর স্রোত কম বলে নদীগুলির সামান্য অংশই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল।
- নদীর দৈর্ঘ্য: নদীগুলি দৈর্ঘ্যে খুব বড়ো।
- পলি সঞ্চয়: পার্বত্য অঞ্চলে নদীগুলি খরস্রোতা। এজন্য ভূমিক্ষয় বেশি হয় এবং ক্ষয়িত পদার্থগুলি সমভূমিতে সঞ্চয় করে।
- ভূমির ঢাল কম:ব্রক্ষ্মপুত্র নদ অসমের যে অংশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেখানে ভূমির ঢাল খুবই কম। এজন্য ব্রহ্মপুত্র নদের গতি অত্যন্ত ধীর। তার ফলে ঊর্ধ্বপ্রবাহ থেকে যখন বিপুল পরিমাণ জলরাশি ব্রহ্মপুত্রের মধ্যপ্রবাহে অর্থাৎ অসমে চলে আসে তখন তা দ্রুত নদীখাত দিয়ে নিম্নপ্রবাহে বয়ে যেতে না পেরে দু-কূল ছাপিয়ে অসমে বন্যার সৃষ্টি করে।
- অগভীর নদীখাত: অসমে ব্রহ্মপুত্রের গতি অতি ধীর বলে নদীর বহন ক্ষমতাও খুব কম। ব্রহ্মপুত্র এবং তার উপনদীগুলি তাদের ঊর্ধ্বপ্রবাহ অঞ্চল থেকে যে পরিমাণ পলি বহন করে আনে তার বেশিরভাগই এখানকার নদীখাতে জমা হয়। এইভাবে বহুবছর ধরে পলি সঞ্চিত হওয়ার ফলে অসমে ব্রহ্মপুত্র নদীখাতের গভীরতা বর্তমানে যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে ব্রক্ষ্মপুত্রে জলের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেই সীমিত ধারণ ক্ষমতার জন্য তা দু-কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
- প্রচুর বৃষ্টিপাত: গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে সাংপো নদ ঊর্ধ্বপ্রবাহে যখন তিব্বত থেকে প্রচুর পরিমাণে বরফগলা জল বহন করে আনে, সেই সময় অসমেও প্রবল বর্ষণ হয়। অগভীর ব্রহ্মপুত্রের খাতে যখন ওই বরফগলা জল ও বৃষ্টির জল এসে পড়ে, তখন তা বহন করার ক্ষমতা ব্রহ্মপুত্রের আর থাকে না। ফলে দু-কূল ছাপিয়ে অসমের বিস্তীর্ণ এলাকাকে প্লাবিত করে।
- সাংপো: তিব্বতের রাক্ষসতাল-মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে উৎপত্তির পর পূর্ব দিকে নামচা বারওয়া পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের নাম সাংপো।
- ডিহ: সাংপোর পর থেকে অরুণাচল প্রদেশের ওপর দিয়ে অসমের সদিয়া পর্যন্ত দক্ষিণমুখী প্রবাহপথের নাম ডিহং।
- ব্রক্ষ্মপুত্র: ডিবং ও লোহিত নদী ডিহংয়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সদিয়া থেকে (অসমের) ধুবড়ি পর্যন্ত এই তিনটি নদীর মিলিত পশ্চিমমুখী প্রবাহের নাম ব্রহ্মপুত্র।
- যমুনা: ধুবড়ির পর বাংলাদেশের আরিচা পর্যন্ত (ওখানেই ব্রহ্মপুত্র নদ পদ্মায় মিশেছে) এই নদীর দক্ষিণমুখী প্রবাহপথের নাম যমুনা। ওখান থেকে পদ্মা-যমুনার (ব্রহ্মপুত্র) মিলিত জলধারা পদ্মা নামে আরও কিছুটা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
- নদীগুলি স্বল্প দৈর্ঘ্যের: অধিকাংশ নদী স্বল্প দৈর্ঘ্যের বলে নদীর জলে পলি কম থাকে। যার জন্য নদী মোহানায় বদ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় না।
- খরস্রোতা: নর্মদা ও তাপ্তী অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ নদী। কিন্তু এই নদী দুটির মোহানাতেও বদ্বীপ নেই। কারণ, নর্মদা ও তাপ্তী নদী গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মোহানার কাছেও নদী দুটি বেশ খরস্রোতা। ফলে নদীর মোহানায় পলি সঞ্চিত হয়ে বদ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় না।
- ক্ষয়কার্য কম: এই নদী দুটি কঠিন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা গঠিত অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ক্ষয়কার্য কম হয়। ফলে নদীবাহিত বোঝার পরিমাণও যথেষ্ট কম। যার জন্য বদ্বীপ গঠিত হয় না।
- পলির পরিমাণ কম: নর্মদা ও তাপ্তী নদীর উপনদীর সংখ্যা কম হওয়ার জন্যও নদীবাহিত পলির পরিমাণ কম। তাই নদী মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হতে পারে না।
- মোহানায় সমুদ্রের ঢাল বেশি: কাম্বে উপসাগরের যে অংশে নদী দুটি এসে মিশেছে সেখানে সমুদ্রের তলার ঢাল খুব বেশি, ফলে মোহানায় পলি সঞ্চিত না হয়ে তা দূর সমুদ্রে চলে যায়। যার জন্য নর্মদা ও তাপ্তী নদীর মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হয়নি।
- পানীয় জলের উৎস: হ্রদের জল পানীয় জলের প্রধান উৎস।
- বন্যা নিয়ন্ত্রণ: হ্রদ এবং জলাশয় স্থানীয়ভাবে অতিরিক্ত জল ধরে রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে।
- কৃষিতে সহায়তা: এইসব জলাধারের জল শুষ্ক অঞ্চলে কৃষিতে সহায়তা করে।
- ভৌমজলের ভাণ্ডার: জলাশয়ে জল ধরে রাখলে ভৌমজলের ভাণ্ডার ভরে ওঠে।
- জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য: জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে হ্রদ ও জলাশয়ের ভূমিকা রয়েছে।
- মৎস্য আহরণ: হ্রদে প্রচুর পরিমাণে মাছ জন্মায়। হ্রদ ও জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে।
- জলপথ হিসেবে ব্যবহার: : হ্রদ ও বড়ো বড়ো জলাশয়গুলি স্থানীয়ভাবে জলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- পর্যটন কেন্দ্র: পর্যটন কেন্দ্ররূপেও হ্রদ ও জলাশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ভৌমজলতলের পতন: ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য ভৌমজলের ভাণ্ডার দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কুয়োগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্প ও মধ্যম গভীরতার নলকূপ থেকে জল ওঠা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
- আর্সেনিকের পরিমাণ বৃদ্ধি: আর্সেনিকপ্রবণ অঞ্চলে ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ভৌমজলে অতি ক্ষতিকারক আর্সেনিকের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। জলে অতিরিক্ত নাইট্রেট, ফ্লুরাইড-জাতীয় যৌগের পরিমাণও বেড়ে যায়।
- লবণতা বৃদ্ধি: ভৌমজল বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হলে জলের লবণতা বেড়ে যায়। ওই জল জমির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেয়।
- ভূমির অবনমন: বেশি পরিমাণে ভৌমজল ব্যবহার করলে ভূমির অবনমন ঘটতে পারে।
- নিত্যবহ নদী: উত্তর ভারতের নদীগুলি হিমালয়ের বরফগলা জলে সৃষ্ট ও পুষ্ট। তাই এগুলি চিরপ্রবাহী। এইসব নদী থেকে কাটা খালগুলিতেও সারাবছর জলপ্রবাহ বজায় থাকে বলে কৃষিতে জলসেচ করা যায়।
- সমতল ভূমিভাগ: উত্তর ভারতের ভূপ্রকৃতি সমতল। তাই খাল খনন করা সুবিধাজনক।
- নরম মাটি: উত্তর ভারতের সমভূমি নরম পালিমাটি দিয়ে গঠিত। এইরকম মাটিতে খাল খনন করা সুবিধাজনক।
- বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা: উত্তর ভারতের বহু নদীতেই বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। তাই এই পরিকল্পনার অধীনে অনেক খাল কাটা হয়েছে।
- অনেক অঞ্চলজুড়ে জলসেচ: সেচখালের মাধ্যমে একসাথে অনেকটা জমি জলসেচের আওতায় আনা সম্ভব।
- বন্যা নিয়ন্ত্রণ: বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল খালের মাধ্যমে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যায়, তাই এর সাহায্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।
- জমির উর্বরতা বৃদ্ধি: সেচখালের মাধ্যমে নদীর জল প্রচুর পলি বহন করে কৃষিজমিতে সঞ্চয় করে। এতে কৃষিজমিতে উর্বরতা বাড়ে।
- ভৌমজলের সংকট থেকে মুক্তি: কূপ বা নলকূপের জল বেশি পরিমাণ ব্যবহার করলে ভৌমজলের সংকট বাড়ে, কিন্তু সেচখালে ভূপৃষ্ঠীয় জল থাকে বলে ভৌমজলের সংকট না বাড়িয়ে বরং ভৌমজলের রিচার্জ করে।
- অপ্রবেশ্য শিলাস্তর: এখানে মাটির নীচে অধিকাংশ অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকায় বৃষ্টির জল ভূগর্ভে বিশেষ সঞ্চিত হয় না।
- ঢেউ-খেলানো ভূমি: এখানকার ভূপৃষ্ঠ ঢেউ-খেলানো বা তরঙ্গায়িত বলে বর্ষার উদ্বৃত্ত জল সহজেই নিম্ন অঞ্চলে ধরে রাখা যায়।
- খাল খননে অসুবিধা: বেশিরভাগ স্থানে কঠিন শিলাস্তর এবং বন্ধুর ভূমিরূপের জন্য খাল খনন করা কঠিন ও ব্যয়সাধ্য।
- নদীর জল পাওয়ার অসুবিধা: এখানকার নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট, অর্থাৎ চিরপ্রবাহী নয়। তাই সারাবছর সেচের জন্য নদীর জল পাওয়া যায় না। এইসব কারণের জন্য দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের দ্বারা জলসেচের গুরুত্ব ও ব্যবহার খুব বেশি।
- নদী বা খালের জলের অসুবিধা দূর: যেখানে নদী বা খালের মাধ্যমে জল পাওয়ার সুবিধা নেই, সেখানে সেচের কাজে কূপ ও নলকূপ ব্যবহৃত হয়।
- স্পল্প ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ: কূপ ও নলকূপ খনন কম ব্যয়বহুল ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তাই সাধারণ কৃষকও এই পদ্ধতিতে জলসেচ করতে পারে।
- যে-কোনো স্থানে নলকূপ খনন: ইচ্ছেমতো এবং প্রয়োজনমতো কৃষিজমির কাছেই কূপ ও নলকূপ খোঁড়া যায়।
- প্রয়োজনমতো জল তোলা: কূপ ও নলকূপ প্রয়োজনমতো জল তোলা যায়।
- যে-কোনো সময়ে সেচের সুবিধা: সুবিধামতো সময়ে ও নিয়ন্ত্রিত হারে সেচ দেওয়া যায়।
- স্বল্প পরিমাণ জমিতে জলসেচ: কূপ এবং নলকূপের সাহায্যে একসঙ্গে খুব বেশি পরিমাণ জমিতে জলসেচ করা যায় না।
- ভৌমজলস্তর হ্রাস: গ্রীষ্মকালে বা শুখা মরশুমে ভৌমজলের স্তর নেমে গেলে কূপ এবং নলকূপ অকেজো হয়ে যায়।
- দূষকের মাত্রা বৃদ্ধি: কূপ থেকে বেশি পরিমাণে ভৌমজল উত্তোলনের ফলে জলে আর্সেনিক, ফ্লুরাইড প্রভৃতি দূষকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- পানীয় জলের সংকট: কূপ থেকে অধিক পরিমাণে জল তোলা হলে আশেপাশের এলাকায় পানীয় জলের সংকট সৃষ্টি হয়।
- মৃত্তিকার লবণতা বৃদ্ধি: কূপ ও নলকূপের জলস্তর নেমে যাওয়ায় মৃত্তিকার লবণতা বৃদ্ধি পায়।
- সারাবছর কৃষিকাজ: খাল যদি নিত্যবহ হয় তবে সারাবছর ধরে জলসেচ করা যায়, অর্থাৎ সারাবছর কৃষিকাজ সম্ভব।
- কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: খাল তৈরিতে প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও পরবর্তীকালে ওই খালের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক কম।
- পলি সঞ্চয়: নদীর পলি খালের জলের সঙ্গে আসে বলে কৃষিজমিতেও পলি সঞ্চয় ঘটে, তাই কৃষিজমি উর্বর হয়ে ওঠে।
- সীমাবদ্ধ স্থান: কেবল সমভূমি অঞ্চলেই জলসেচ করা সম্ভব।
- লবণাক্ততা: এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত জলসেচ করা হয় বলে মাটি অনেকসময় লবণাক্ত হয়ে যায়।
- বন্যার সৃষ্ট: বর্ষাকালে খালের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত জলপ্রবাহ অনেকসময় বন্যার সৃষ্টি করে।
- পানীয় জলের জোগান বজায় রাখা: বর্তমানে পানযোগ্য স্বাদুজলের বিপুল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই জলের জোগান বজায় রাখা খুব জরুরি।
- কৃষিকাজে জলের চাহিদা পূরণ: কৃষিকাজে জলের চাহিদা পূরণের জন্য জল সংরক্ষণ অত্যন্ত দরকারি।
- শিল্প ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে জলের জোগান বজায় রাখা: শিল্প ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে পর্যাপ্ত জলের জোগান বজায় রাখার জন্য জল সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন।
- ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহকে আটকে রেখে: খোলা জায়গা বা মাঠের ওপর দিয়ে নালিপথে প্রবাহিত বৃষ্টির জলাধারকে কোনো জলাধারের সঙ্গে সংযুক্ত করে সেখানে ওই জল সংরক্ষণ করা যায়। ওই জলাধারের জল কৃষিতে, শিল্পে, গৃহস্থালির কাজে, পানীয় জলের আধার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জলের জোগান কিছুটা বাড়ে। একই সাথে ভৌমজলের স্তরও সমৃদ্ধ হয়।
- বাড়ির ছাদে বৃষ্টির জল ধরে রেখে: বৃষ্টির জল বাড়ির ছাদে পড়লে পাইপের মাধ্যমে তাকে সংগ্রহ করে মাটির নীচের জলাধারে বা পাতকুয়াতে জমা করা যায়। অনেকগুলি জলাধার নির্মাণ করলে ওই জলাধারের জল যেমন সারাবছরই ব্যবহার করা যেতে পারে। তেমনই এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডারকে রিচার্জ করা যায়।
- পানীয় জলের উৎস: বৃষ্টির জল পরিশ্রুত করে পানীয় জল হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
- ভৌমজলের সঞ্চয়: বৃষ্টির জল চুইয়ে চুইয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এতে ভৌমজলের সঞ্চয় বাড়ে।
- কৃষি, শিল্প, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার: সংরক্ষণ করা বৃষ্টির জল কৃষিতে, শিল্পে, গৃহস্থালির নানা কাজে সারাবছর ব্যবহার করা যায়।
- স্বল্প ভূগর্ভস্থ জলের সমস্যার সমাধান: যেসব অঞ্চলে জল কম পাওয়া যায় সেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমে জলের সমস্যার সমাধান হয়।
- জল সংরক্ষণের সুবিধাযুক্ত নতুন বাড়ি নির্মাণ: প্রতিটি নতুন বাড়ি তৈরির সময় এমন ব্যবস্থা নিতে হয় যাতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের সুবিধা থাকে।
- পুরোনো বাড়িতে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ: প্রতিটি পুরোনো বাড়ির ছাদ, বিভিন্ন জলাশয়, মন্দিরসংলগ্ন জলাশয় এবং ছোটো-বড়ো পুকুরগুলিতে যাতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হয়।
- জল সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের সাহায্যে প্রচার ছাড়াও নানা হোর্ডিং, ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে এবং এমনকি বাড়ি বাড়ি ঘুরেও প্রচার চালানো হচ্ছে।
- সরকারের সহায়তা প্রদান: বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদান করে। এইসব ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে বর্তমানে রাজধানী চেন্নাই-সহ রাজ্যের বড়ো বড়ো শহরগুলির অধিকাংশ সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও শিল্পকাজে ব্যবহৃত বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে।
এসবের ফলে তামিলনাড়ু বর্তমানে সারা দেশের মধ্যে বৃষ্টির জল সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা: পাঞ্জাবে বিপাশা ও শতদ্রু নদীকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে ভাকরা নাঙ্গাল পরিকল্পনা। এটি ভারতের বৃহত্তম নদী উপত্যকা পরিকল্পনা।
- হিরাকুদ পরিকল্পনা: ওডিশা রাজ্যের মহানদীর ওপর জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে রূপায়িত হয়েছে হিরাকুদ পরিকল্পনা।
- ময়ূরাক্ষী প্রকল্প: ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সীমানায়, ঝাড়খণ্ডের ম্যাসাঞ্জোরে ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর নদীবাঁধ এবং পশ্চিমবঙ্গের সিউড়ির তিলপাড়ায় সেচবাঁধ তৈরি হয়েছে। এখানকার সেচবাঁধগুলির সাহায্যে বীরভূম, মুরশিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় জলসেচ করা হয়।
- কোশী পরিকল্পনা: বিহারের কোশী নদীর ওপর কোশী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে।
- গণ্ডক পরিকল্পনা: উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের যৌথ উদ্যোগে গণ্ডক নদীর ওপর গণ্ডক পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে।
- নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা: তেলেঙ্গানায় কৃয়া নদীকে কেন্দ্র করে রূপায়িত নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা।
- নিম্ন উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ: এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নিম্ন উপত্যকা অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা।
- খনিজ দ্রব্য উত্তোলন ও ধাতব শিল্পের উন্নতিসাধন: খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দামোদর উপত্যকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে নানাবিধ খনিজ দ্রব্যের উত্তোলন বৃদ্ধি এবং ধাতব শিল্পের উন্নতি সাধন করা।
- কৃষির উন্নতিসাধন: জলাধারের জল জলসেচের কাজে ব্যবহার করে কৃষিব্যবস্থার উন্নতিসাধন ও পতিত জমি পুনরুদ্ধার করা।
- পরিবেশদূষণ রোধ ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ: দামোদর উপত্যকা অঞ্চলের পরিবেশদূষণ রোধ ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা।
- পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ ঘটানো: পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ ঘটানো প্রভৃতি এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো
TOPIC – D ভারতের জলবায়ু
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- ভারতের জলবায়ুর বৈচিত্র্য: (1) ঋতুচক্র: ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈচিত্র্য হল ঋতুচক্র। শীতকাল, গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল ও শরৎকাল—এই চারটি ঋতু ভারতের জলবায়ুতে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। (2) নিরক্ষীয়, উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ু: অক্ষাংশগত বিস্তৃতি বেশি বলে ভারতের দক্ষিণাংশে যখন উয়-আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ু বিরাজ করে তখন মধ্যাংশে ক্রান্তীয় এবং উত্তরাংশে উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। (3) আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতু: ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র এবং শীতকাল শুষ্ক। (4) চরমভাবাপন্ন ও সমভাবাপন্ন জলবায়ু: দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু সমভাবাপন্ন হলেও উত্তর ভারতের জলবায়ু কিছুটা চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির।
- ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহ: ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি হল— (1) অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি, (2) হিমালয় পর্বতের অবস্থান, (3) ভূপ্রকৃতি, (4) সমুদ্রসান্নিধ্য, (5) মৌসুমি বায়ু, (6) জেট বায়ু, (7) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, (৪) এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব প্রভৃতি।
- ভারতের ঋতুবৈচিত্র্য : ভারতের জলবায়ু চারটি ঋতুতে বিভক্ত— গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল, শরৎকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল এবং শীতকাল। (1) গ্রীষ্মকাল: মার্চ থেকে মে মাস ভারতে গ্রীষ্মকাল। দেশের কোনো কোনো অংশে এইসময় স্থানীয়ভাবে ঝোড়ো বাতাস ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ কিছু বৃষ্টিপাত হয়। (2) বর্ষাকাল: জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই চার মাস ভারতে বর্ষাকাল। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এইসময় সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়। রাজস্থানের মরু অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে 60-200 সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। (3) শরৎকাল: অক্টোবর ও নভেম্বর এই দুই মাস ভারতে শরৎকাল। এইসময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত থেকে বিদায় নেয়। উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনে বাতাসে হিমেলভাব আসে। আর এইসময় দক্ষিণের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি হয়। (4) শীতকাল: ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি—এই তিন মাস ভারতে শীতকাল। এসময় শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু সমগ্র দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়। ফলে উয়তা যথেষ্ট হ্রাস পায়। বেশিরভাগ স্থানে এসময় বৃষ্টিপাত না হলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতে এবং করমণ্ডল উপকূলে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
- ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাব : (1) মৃত্তিকার ওপর প্রভাব: ভারতে যে অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, সেখানে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা এবং মরুপ্রধান শুষ্ক অঞ্চলে সিরোজেম মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে। (2) অরণ্যের ওপর প্রভাব: অধিকাংশ অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে পাতাঝরা অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। (3) কৃষিকাজের ওপর প্রভাব: দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খরিফ শস্য চাষের সাফল্য বহুলাংশে বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। (4) বন্যা ও খরা সৃষ্টি: মৌসুমি বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত ও অনিয়মিত বলে কখনও অতিবৃষ্টিতে দেশের কোনো অংশে হয় বন্যা, আবার কখনও বৃষ্টিপাতের অভাবে কোনো অঞ্চলে হয় খরা।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
- শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি); (1) এই সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে থাকায় সূর্যরশ্মি দক্ষিণ গোলার্ধে লম্বভাবে এবং উত্তর গোলার্ধে তির্যকভাবে পড়ে। (2) শীতকালে মধ্য এশিয়ার শীতল স্থলভাগ বা উচ্চচাপ এলাকা থেকে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। (3) উত্তর ভারতে এসময় তাপমাত্রা হয় গড়ে 10°-15°সে। দক্ষিণ ভারতে এই উত্তাপ ক্রমশ বেড়ে তামিলনাড়ুতে গড়ে 25°সে হয়। (4) উত্তর-পশ্চিম ভারত (পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে) ও তামিলনাড়ুর উপকূল (প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে) ছাড়া শীতকালে ভারতের অন্যত্র বিশেষ বৃষ্টিপাত হয় না।
- গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে) : (1) মার্চের শেষভাগ থেকেই দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দিতে থাকায় উন্নতা হ্রাস পেতে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধে সূর্যরশ্মির লম্ব পতনের প্রভাবে ভারতে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। (2) মে মাসে সূর্য উত্তরে ক্রমশ কর্কটক্রান্তিরেখার কাছে সরে আসে, ফলে উত্তর গোলার্ধে উন্নতা আরও বেড়ে যায়। মে মাসে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতের গড় তাপমাত্রা 38°–40 °সে হয়। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে হয় প্রায় 48°সে। (3) উত্তর- পশ্চিম ভারতে প্রচণ্ড উয়তার জন্য দিনেরবেলা গরম বাতাস লু প্রবাহিত হয়। (4) গ্রীষ্মকালে দেশের বিভিন্ন অংশে কতকগুলি স্থানীয় নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হওয়ার কারণে অপরাহ্ন বা বিকালের দিকে ঝোড়ো বাতাস ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। এই ঝড়কে পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আঁধি, অসমে বরদৈছিলা, কেরলে আম্রবৃষ্টি এবং কর্ণাটকে চেরি ব্লসম বলে। (5) এই ধরনের ঝড়-বৃষ্টি হলে তখন তাপমাত্রা 7°-৪°সে পর্যন্ত হ্রাস পায়।
- বর্ষাকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর): গ্রীষ্মকালে ভারতীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে, বিশেষত উত্তর- পশ্চিম ভারতে যে গভীর নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়, তার আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগর থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করে, যথা— (1) আরব সাগরীয় শাখা এবং (2) বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।
- আরব সাগরীয় শাখা: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর এই শাখাটি আরব সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার
পশ্চিমঢালে সরাসরি বাধা পায় ও পশ্চিম উপকূলে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। [ii] পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগে জলীয় বাষ্পের অভাবে বৃষ্টিপাত কম হয় বলে এই অঞ্চলটিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
- বঙ্গোপসাগরীয় শাখা: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর এই শাখাটি বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। এই বায়ুপ্রবাহ পূর্ব হিমালয় ও পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রথম বাধা পায় বলে ওই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। [ii] মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত মৌসিনরামে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়— বার্ষিক প্রায় 1187 সেমি। [iii] পূর্ব হিমালয়ে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর এই বায়ু ক্রমশ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- আরব সাগরীয় শাখা: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর এই শাখাটি আরব সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার
- শরৎকাল বা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) : (1) বার্ষিক আপাত গতি অনুসারে এসময় সূর্য বিষুবরেখা পেরিয়ে মকরক্রান্তিরেখার দিকে সরতে থাকে। ফলে এসময় উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগের ওপর উচ্চচাপ এবং ভারত মহাসাগরের জলভাগের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। (2) এই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুও ভারত থেকে প্রত্যাগমন করে। (3) এই প্রত্যাবর্তনকারী বায়ুর প্রভাবে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়-সহ বৃষ্টিপাত হয়, একে বলে সাইক্লোন (পশ্চিমবঙ্গে ‘আশ্বিনের ঝড়’)।
- অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠের তাপমণ্ডল অনুসারে ভারতের বেশিরভাগ স্থান উয়মণ্ডলে অবস্থিত। এজন্য ভারতের জলবায়ু প্রধানত উয় ও আর্দ্র প্রকৃতির। আবার, অক্ষাংশগত বিস্তৃতি বিচার করলে দেখা যায়, ভারত নিরক্ষরেখার উত্তরে ৪°4′ উত্তর থেকে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং কর্কটক্রান্তিরেখা (23°30´ উত্তর অক্ষরেখা) ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। তাই অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের দক্ষিণাংশ ক্রান্তীয় ও উত্তরাংশ উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় অঞ্চলের অন্তর্গত, অর্থাৎ দক্ষিণাংশের তুলনায় উত্তরাংশের উন্নতা কম।
- হিমালয় পর্বতের অবস্থান : উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে বাধা দেয় বলে বর্ষাকালে উত্তর ভারতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতকালে মধ্য এশিয়ার কনকনে ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহকে এই হিমালয় পবর্তমালা প্রতিহত করে বলে উত্তর ভারত তীব্র ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়।
- ভূপ্রকৃতি : উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে অধিক উচ্চতার জন্য গ্রীষ্মকাল মনোরম, কিন্তু উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের সমভূমি অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল খুবই কষ্টদায়ক।
- সমুদ্র সান্নিধ্য : তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। কিন্তু সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বলে উত্তর ভারতের অভ্যন্তরভাগে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উন্নতার পার্থক্য খুব বেশি, অর্থাৎ জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।
- মৌসুমি বায়ু : আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু—প্রধানত এই দুটি মৌসুমি বায়ু ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই ভারতে বর্ষাকালের আগমন ঘটে, সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ অংশের তাপমাত্রা হ্রাস পায়, শীতল ও শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে। এ ছাড়া, এই দুই মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করেই ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে।
- ঋতুপরিবর্তন : ভারতের জলবায়ু প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঋতুপরিবর্তন। শীতকাল, গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল এবং শরৎকাল—এই চারটি ঋতু ভারতের জলবায়ুতে চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
- বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহ : ভারতে শীতকালে যেদিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
- আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুষ্ক। শুধু তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে অল্প বৃষ্টিপাত হয়।
- শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণির পশ্চিমঢালে, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
- অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি প্রকৃতির জন্য প্রতিবছর দেশের সর্বত্র সমানভাবে বৃষ্টিপাত হয় না।
- উত্তর ভারতের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন : উত্তর ভারতের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির কিন্তু দক্ষিণ ভারতের তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত থাকায় আর্দ্র সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে ওই অঞ্চলের জলবায়ু সাধারণভাবে সমভাবাপন্ন হয়।
- বিস্তৃত অক্ষাংশ জুড়ে অবস্থান : ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষিণে প্রায় ৪° উত্তর থেকে উত্তরে প্রায় 37° উত্তর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দেশের দক্ষিণাংশে উয়-আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ু, মধ্যাংশে ক্রান্তীয় এবং উত্তরাংশে উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
- পর্বতের অবস্থান : (1) উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা সুউচ্চ প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থাকায় আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সমগ্র উত্তর ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। অন্যদিকে, শীতকালে দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে শীতের তীব্রতা সামান্য বেশি থাকে। যদি হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তরে অবস্থান না করত তবে মধ্য এশিয়ার শীতল বায়ুপুঞ্জের প্রভাবে সমগ্র উত্তর ভারতে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ ঘটত। (2) দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্ব ও পশ্চিম সীমায় যথাক্রমে পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি প্রায় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত থাকায় আর্দ্র বায়ু এইসব পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে যতটা পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটায়, দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগে ততটা হয় না, সেই অঞ্চলে কিছুটা শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে। (3) আরাবল্লি পর্বতের অবস্থান দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে প্রতিহত করতে না পারায় থর মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট কম।
- ভূমির উচ্চতা : প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও আগ্রার থেকে দার্জিলিঙের জলবায়ু অনেক আলাদা। এর কারণ দার্জিলিংঙের উচ্চতা অনেক বেশি (প্রতি কিমি উচ্চতা বৃদ্ধিতে 6.5 °সে হারে উন্নতা কমে)। একই কারণে পশ্চিমঘাট পর্বত বা হিমালয়ের উচ্চ অংশের জলবায়ুও দেশের অনান্য অংশের তুলনায় আলাদা হয়।
- দক্ষিণ ভারতের উপদ্বীপীয় গঠন : ভূগাঠনিক দিক দিয়ে দক্ষিণ ভারত ত্রিভুজাকৃতি হওয়ায় পূর্বে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে আরব সাগরের সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু উত্তর ভারতের তুলনায় অনেকটাই সমভাবাপন্ন।
- সমুদ্র থেকে দূরত্ব : সামুদ্রিক প্রভাবে জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়। কিন্তু সমুদ্র থেকে বেশি দূরত্বের জন্য উত্তর ভারতের দিল্লি বা আগ্রা বা কানপুরে শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল অনেক বেশি তীব্র অর্থাৎ, ওইসব স্থানের জলবায়ু হয়েছে চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয়েছে।
- তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা : হিমালয় পর্বত সাইবেরিয়া থেকে আগত অতি শীতল ও শুষ্ক মহাদেশীয় মেরু বায়ুপুঞ্জকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধাপ্রদান করে। এই কারণে একই অক্ষাংশে অবস্থিত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে শীতকাল যথেষ্ট মৃদু শীতল। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, উত্তর-পূর্ব ভারতে হিমালয় ও পূর্বাচলের পাহাড়-পর্বতগুলির মধ্যে যে সামান্য ফাঁক রয়েছে সেই ফাঁক দিয়ে অতি শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের উয়তার হ্রাস ঘটায়।
- শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত : হিমালয় পর্বত দক্ষিণের সমুদ্র থেকে আগত আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে প্রাচীরের মতো বাধাপ্রদান করে। এর ফলে উত্তর ভারতে ব্যাপক শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
- পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ব্যাপকতা হ্রাস: হিমালয় পর্বতের জন্য শীতকালীন পশ্চিমি ঝঞ্ঝার বেশিরভাগ প্রভাব উত্তর-পশ্চিম ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকে।
- জেট বায়ুকে দুটি শাখায় বিভক্ত: হিমালয় পর্বত পশ্চিমা জেট বায়ুকে দুটি শাখায় বিভক্ত করে। জেট বায়ুর দক্ষিণমুখী শাখাটি ভারতে প্রবেশ করে মৌসুমি বায়ুকে ভারতে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
- মনোরম জলবায়ু সৃষ্টি: উচ্চতার জন্য হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু শীতল প্রকৃতির। হিমালয়ের উঁচু স্থানগুলিতে শীতকালে তুষারপাত হলেও গ্রীষ্মকালে হিমালয়ের নীচু স্থানগুলির উন্নতা আরামপ্রদ থাকে ও জলবায়ু বেশ মনোরম হয়।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : (1) গ্রীষ্মকালে ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে এই জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু উত্তর- পশ্চিম ভারতের উত্তপ্ত স্থলভাগ বা নিম্নচাপ এলাকার দিকে ছুটে যায়। (2) তাই এই বায়ুর প্রভাবে ভারতে বর্ষাকালের আবির্ভাব হয়। (3) ভারতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা প্রায় 67-75 ভাগ মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে। (4) বর্ষাকালে এই বায়ুর প্রভাবে অসম, অরুণাচল প্রদেশ-সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল তথা পশ্চিম উপকূল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়।
- উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : (1) শীতকালে মধ্য এশিয়ার শীতল স্থলভাগ বা উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে এই বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণের উয় ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ এলাকার দিকে প্রবাহিত হয়। (2) বরফাবৃত স্থলভাগের ওপর থেকে ছুটে আসে বলে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শীতল ও শুষ্ক হয়। (3) এই বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই তাপমাত্রা যথেষ্ট কমে যায়। জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি পার্বত্য এলাকায় তাপমাত্রা হয় – 10° থেকে -40°সে। (4) খুব শীতল বলে এই বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা প্রায় থাকে না বললেই চলে। এর ফলে তাপমাত্রা যথেষ্ট হ্রাস পেলেও বৃষ্টিপাত হয় না। (5) তবে ওই শুষ্ক বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছু পরিমাণে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে। ফলে ওই বায়ু যখন করমণ্ডল উপকূলে পৌঁছোয় তখন সেখানে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-প্রত্যাগমনে অনিয়ম: যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে এবং তার প্রত্যাগমনেও বিলম্ব হয়, তাহলে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। কিন্তু কোনো বছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনে বিলম্ব ঘটে, আবার কোনো বছর তা দ্রুত ফিরে যায়। উভয় ক্ষেত্রেই বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে মাটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যে-কোনো ধরনের ফসল উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে, যা খরার সৃষ্টি করে।
- মৌসুমি বায়ু অনুসারে ঋতু বিভাগ: দুটি মৌসুমি বায়ুর আগমন- প্রত্যাগমন অনুসারেই ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়— (1) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল বা গ্রীষ্মকাল, (2) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা বর্ষাকাল, (3) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল বা শরৎকাল এবং (4) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা শীতকাল।
- জলবায়ুতে: ভারতের অধিকাংশ স্থান ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হলেও আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় বলে উয়তা খুব বেশি বাড়ে না। তাই ভারতের জলবায়ু উয় ও আর্দ্র প্রকৃতির।
- কৃষিকাজে: ভারতের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট জনসংখ্যার 70 শতাংশেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এই কৃষির সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নিয়ন্ত্রিত বৃষ্টিপাতের ওপর।
- কৃষিভিত্তিক শিল্পে: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পরিমিত বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ভারতের কৃষিকাজের ওপর প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি, দেশে কার্পাস বয়ন, পাট, চিনি, চা প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার কৃষিভিত্তিক শিল্পের গঠন ও উন্নতির পথও সহজ করেছে।
- বন্যা ও খরা সৃষ্টি: এই বায়ুর খামখেয়ালি আচরণ ভারতের অর্থনীতিকে মাঝে মাঝে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়। প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুসৃষ্ট বৃষ্টিপাত ঋতুভিত্তিক হলেও এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য অনিশ্চয়তা। কখনও সঠিক সময়ে আবার কখনও অসময়ে এই বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন হয়, কখনও একটানা প্রবল বর্ষণে দেখা দেয় বন্যা, আবার কখনও বেশ কিছুদিন অনাবৃষ্টির ফলে সৃষ্টি হয় খরা।
- ব্যয়বহুল সেচব্যবস্থা প্রবর্তন: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত প্রকৃতির জন্য বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত। ফলে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশকে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেচব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হয়েছে।
- শস্য ও জীবনহানি: বৃষ্টিপাতের অভাবে খরা এবং অতিবর্ষণে বন্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হওয়ায় ভারতে প্রায়শই শস্যহানি ও জীবনহানি হয়। এজন্য মাঝে মধ্যেই সরকারকে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি আমদানি করতে হয়। এর ফলে সরকারি কোশাগার তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই বিরূপ প্রভাব পড়ে।
- ফসল উৎপাদন : ভারতের অধিকাংশ অধিবাসী কৃষিজীবী। দেশের অধিকাংশ কৃষিকাজ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন—ধান, আখ, তুলো, চা, পাট প্রভৃতির উৎপাদন।
- কৃষিভিত্তিক শিল্প : মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রকার কৃষিভিত্তিক শিল্পেরও উন্নতি হয়েছে। যেমন—কার্পাস বয়ন শিল্প,পাট শিল্প, চিনি শিল্প প্রভৃতি।
- জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাতের ওপর জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভালো হলে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন যেমন বাড়ে, তেমনই বৃষ্টিপাত কম হলে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন হ্রাস পায়।
- সেচ ব্যবস্থার উন্নতি: কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ করার সাফল্যও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাত বেশি হলে প্লাবন খালগুলি থেকে দীর্ঘদিন জলসেচ করা সম্ভব। আবার, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নিত্যবহ খালগুলি থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী জলসেচকরা সম্ভব হয়।
- অরণ্য সৃষ্টি: মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্যই পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল ও পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক দিক থেকে মূল্যবান চিরসবুজ অরণ্য এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের পাতাঝরা অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে।
- ল্যাটেরাইট ও লোহিত মাটির সৃষ্টি: মেঘালয়, ছোটোনাগপুর মালভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢাল প্রভৃতি অঞ্চলে অত্যধিক মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য ক্ষারকীয় উপাদানগুলি মাটির নীচের স্তরে চলে যায় এবং ওপরের স্তরে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পড়ে থাকে। এর ফলে ওইসব অঞ্চলে ল্যাটেরাইট ও লোহিত মাটির সৃষ্টি হয়েছে।
- মরু বা সিরোজেম মাটির সৃষ্টি: অন্যদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল, গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড়ের উত্তরাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম (বার্ষিক 20-40 সেমি)। ফলে ওইসব অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়ার অভাবে খনিজ পদার্থগুলি মাটির ওপরের স্তরে সজ্জিত হয়ে মরু মাটি বা সিরোজোম মাটি সৃষ্টি করে, যার মধ্যে বালির প্রাধান্য থাকে বেশি।
- পলিমাটির সৃষ্টি: সিন্ধু-গঙ্গা-বয়পুত্র উপত্যকার বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে প্রতি বছর নতুন পলি সঞ্চিত হয় বলে উর্বর পলি মাটি গঠিত হয়।
- মৃত্তিকায় ফাটল সৃষ্টি: উত্তর-পশ্চিম ভারতের খরা প্রবণ অঞ্চলগুলিতে খরার সময় আর্দ্রতার প্রভাবে মাটিতে বড়ো বড়ো ফাটল সৃষ্টি হয়।
- মৃত্তিকার ক্ষয়: বেশি বৃষ্টিপাতের সময় মৃত্তিকার ক্ষয় বেশি হয়।
- চিরসবুজ বনভূমির সৃষ্টি: ভারতের যেসব অংশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যেমন পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে, আন্দামান-নিকোবরে গভীর চিরসবুজ বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
- পর্ণমোচী অরণ্য সৃষ্টি: মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ অংশে মাঝারি বৃষ্টি হয় এবং তা ঋতুকালীন বলে ওই সব অঞ্চলে পাতাঝরা গাছের পর্ণমোচী অরণ্য তৈরি হয়েছে।
- কঁটিা ও গুল্ম-জাতীয় উদ্ভিদ সৃষ্টি: গুজরাত, রাজস্থানের স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল ও দক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগের শুষ্ক অঞ্চলে কাঁটা-জাতীয় ঝোপ ও গুল্ম-জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
- খরিফ ফসল চাষ: বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার ওপর নির্ভর করেই ধান, পাট, আখ, তুলো, ভুট্টা প্রভৃতি খরিফ ফসলের চাষ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য পূর্ব ভারতে ধান এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য মধ্য ও উত্তর পশ্চিম ভারতে গম, ডাল ও মিলেট-জাতীয় শস্য বেশি চাষ হয়।
- রবি ফসলের চাষ : মৌসুমি বৃষ্টির জল জলাধারগুলিতে সঞ্চিত করে সেচকার্যের মাধ্যমে উত্তর ভারতে ব্যাপকভাবে রবি ফসলের চাষ করা হয়।
- উৎপাদন হ্রাস: মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্য ভারতে খরা ও বন্যা নিত্যসঙ্গী। খরার বছরগুলিতে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট হ্রাস পায়। বন্যার সময়ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়।
- উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি : তবে বন্যার মাধ্যমে উর্বর পলিমাটি সঞ্চিত হয় বলে পরবর্তী সময়ে সেখানে প্রচুর ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
ঋতুর নাম | মাসের নাম |
শীতকাল বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল | ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি |
গ্রীষ্মকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল | মার্চ থেকে মে |
বর্ষাকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল | জুন থেকে সেপ্টেম্বর |
শরৎকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল | অক্টোবর থেকে নভেম্বর |
- উন্নতার বৈচিত্র্য: ভারতের সর্বত্র উন্নতা এক রকম নয়। দেশের উপকূলভাগে মাঝারি ও সমভাবাপন্ন উন্নতা বিরাজ করলেও মধ্য ও উত্তর ভারতে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উন্নতার পার্থক্য খুবই বেশি অর্থাৎ চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে। আবার, গ্রীষ্মকালে যেমন রাজস্থানের থর মরুভূমিতে উয়তা বেড়ে 50°সে হয়ে যায়, তেমন লাডাকে শীতকালে তাপমাত্রা কমে গিয়ে –45°সে পর্যন্ত হয়। স্থানভেদে উয়তার বিরাট পার্থক্য বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য।
- উয়তার প্রসরে বৈচিত্র্য: যেখানে দক্ষিণ ভারতে বার্ষিক উন্নতার প্রসর 4°-6° সে, সেখানে উত্তর ভারতে উয়তার প্রসর প্রায় 20°-25°সে।
- বৃষ্টিপাতের বৈচিত্র্য: মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ ঢালে যেমন অতিবর্ষণে পৃথিবীর সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চল তৈরি হয়েছে, তেমন ভারতের উত্তর- পশ্চিমে রাজস্থানের পশ্চিমভাগে বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
- বায়ুপ্রবাহে বৈচিত্র্য: ভারতে সাধারণভাবে শীতকালে উত্তর-পূর্ব এবং বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হলেও ভারতের বিভিন্ন অংশে অনেক স্থানীয় এবং আকস্মিক বায়ুও প্রবাহিত হয়। যেমন— গ্রীষ্মে লু, আঁধি, আম্রবৃষ্টি, কালবৈশাখী, শরতে আশ্বিনের ঝড়, শীতে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ভারতের জলবায়ুকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।
- ঋতুবৈচিত্র্য: শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ — এই চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে ভারতের জলবায়ুকে বৈচিত্র্যময় করেছে।
- আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল: গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হওয়ার ফলে ভারতের জলবায়ুতে বিপরীতধর্মী দুটি প্রধান ঋতুর সৃষ্টি হয়—একটি আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং অপরটি শুষ্ক শীতকাল।
- ঋতুপরিবর্তন: আবার, এই দুটি মৌসুমি বায়ুর চক্রাকারে পরিবর্তনই ভারতের জলবায়ুতে ঋতুচক্র সৃষ্টি করে, যেমন—[i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল বা গ্রীষ্মকাল, [ii] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা বর্ষাকাল, [ii] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল বা শরৎকাল এবং [iv] উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা শীতকাল।
- বৃষ্টিপাত: ভারতের বার্ষিক 67-75 শতাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবের ফলেই সংঘটিত হয়। এইভাবে ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি জলবায়ুর অধিক প্রভাব থাকায় ভারতকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলে।
- ঋতুপরিবর্তন: ভারতে মৌসুমি জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য ঋতুপরিবর্তন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ—এই চারটি ঋতু ভারতের জলবায়ুতে চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
- বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ু: ভারতের জলবায়ুতে ঋতুপরিবর্তন হয় দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে—একটি শীতকালীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু এবং অন্যটি গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
- বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ: ভারতে শীতকালে যেদিক থেকে বায়ুপ্রবাহিত হয় গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
- চারমাসব্যাপী বর্ষাকাল: ভারতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই চার মাস আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল এবং এই চারমাসই ভারতে বর্ষাকাল।
- শুষ্ক শীতকাল: উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শুষ্ক ও শীতল বলে এই বায়ুর আগমনকালীন তিন মাসে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ভারতে তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং সমগ্র দেশে শীতকাল বিরাজ করে। উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশ এবং করমণ্ডল উপকূল ছাড়া তখন দেশের প্রায় সর্বত্র আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
- বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন: মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চিত প্রকৃতির জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টন অসম।
- কৃষিতে: ভারতীয় অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এই কৃষিনির্ভর অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল বৃষ্টিপাত। ভারত যেহেতু মৌসুমি জলবায়ুর দেশ তাই ভারতীয় কৃষিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। যথা সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ভারতীয় কৃষি যেমন লাভবান হয়, তেমনই আবার এই বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা ভারতীয় কৃষিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ভারতীয় অর্থনীতির ওপর। এখানে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর নির্ভর করে শস্যবর্ষ স্থির করা হয়।
- শিল্পে: কৃষিভিত্তিক শিল্পের ওপর মৌসুমি বায়ুর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। পাট শিল্প, চা শিল্প, বস্ত্র বয়ন শিল্প, চিনি শিল্প প্রভৃতি শিল্পগুলি কৃষির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে বলে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন শিল্পেও প্রভাব ফেলে। অতিবৃষ্টি বা খরা কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করে। তাই শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন কম হয়, এতে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- অর্থনৈতিক উন্নয়নে: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অধিক বৃষ্টিপাত হলে বন্যা দেখা যায়। আবার কোনো বছর বৃষ্টিপাত কম হলে খরা সৃষ্টি হয়। বন্যা বা খরা ফসল উৎপাদনে ও জীবনযাপনে অসুবিধা তৈরি করে যা আর্থিক উন্নতিতে বাধা দেয়। আবার যে বছর মৌসুমি বায়ুর আগমন যথাযথ হয় সে বছর দেশে কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন এবং আর্থিক বিকাশ ঘটে।
- শীতকালে: তিব্বত মালভূমির উত্তর ও দক্ষিণ দিয়ে প্রবাহিত উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু শীতকালে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে যত দক্ষিণে সরে আসে, ভারতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু তত শক্তিশালী ও সক্রিয় হয় এবং তার ফলে শীতের তীব্রতাও বাড়ে।
- বর্ষাকালে: ভারতের দক্ষিণভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ভারতমুখী গমন ত্বরান্বিত হলেও এই সময় এই পুবালি জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বেশি উত্তরে সরে গেলে ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে বৃষ্টিহীন অবস্থা ও খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
- নিম্নচাপের আকর্ষণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন: গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে, বিশেষত মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতের ওপর যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, তার আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে ছুটে আসে।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুতে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি: যেহেতু ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়, তাই এই বায়ুতে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে। ওই আর্দ্র বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- অসম বণ্টন: ভারতের সর্বত্র বৃষ্টিপাত সমান নয়। পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল ও পশ্চিম উপকূলভূমি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রবল (বার্ষিক 200 সেমির বেশি) বৃষ্টিপাত হলেও রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব প্রভৃতি রাজ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম (বার্ষিক 100 সেমি বা তারও কম)।
- ঋতুভিত্তিক বণ্টন: ভারতে সারাবছরই সমানভাবে বৃষ্টিপাত হয় না। বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় 75% বর্ষাকালে, 12%গ্রীষ্মকালে, প্রায় 9% শরৎকালে এবং 4% শীতকালে হয়ে থাকে।
- অনিশ্চয়তা : মৌসুমি বৃষ্টিপাত সারাবছর সমানভাবে হয় না এবং প্রতিবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণও সমান থাকে না। কখনও অতিবৃষ্টিতে বন্যা আবার কখনও কম বৃষ্টিতে খরা ভারতের বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য।
- সাময়িক বিরতি : ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে একটানা বৃষ্টিপাত হলেও বায়ুচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন ঘটলে বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি ঘটে।
- নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত: শীতকালে মাঝে মাঝে সুদূর ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত সিরিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ পেরিয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছোয় এবং অদূরবর্তী আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে নতুন করে শক্তিশালী হয় ও উত্তর- পশ্চিম ভারতে (পাঞ্জাব, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীরে) বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য এলাকায় তুষারপাত ঘটায়।
- পশ্চিমি ঝঞ্ঝা: পশ্চিম দিক থেকে আসা এই ঘূর্ণবাতগুলি শীতের শান্ত আবহাওয়াকে নষ্ট করে দেয় বলে একে পশ্চিমি ঝামেলা বা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বা ওয়েস্টার্ন ডিস্টার্বেল বলে । এর প্রভাবে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টির পরিমাণও ক্রমশ কমে যায়।

- ভূমিভাগের আচ্ছাদন: মরু অঞ্চলের ভূমিভাগ বালি দ্বারা আবৃত বা পাথুরে। বালি বা পাথর যেমন দ্রুত গরম হয়, তেমনই তাপ ধরে রাখতে পারে না বলে ঠান্ডাও হয় তাড়াতাড়ি। এজন্য মরু অঞ্চলে দিনেরবেলা বিশেষত গ্রীষ্মকালে অত্যধিক গরম বোধ হয়।
- মেঘমুক্ত আকাশ: মরু অঞ্চলের আকাশ বছরের অধিকাংশ সময় মেঘমুক্ত থাকে। মেঘমুক্ত আকাশে তাপ বিকিরণ খুব বেশি হয় বলে বালি দ্বারা আবৃত বা পাথুরে ভূমি দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে যায়।
- বাতাসে জলীয় বাষ্পের অভাব: জলীয় বাষ্প তাপ ধরে রাখে, কিন্তু মরু অঞ্চলে বাতাসে জলীয় বাষ্প খুবই কম পরিমাণে থাকে। তাই বায়ু তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: প্রথমবার, জুন-সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে তামিলনাড়ু উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়।
- প্রত্যবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: দ্বিতীয়বার, প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালে তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়। কারণ, প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু যখন বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ফিরে যায় তখন প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প শোষণ করে ও করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। যেমন— তামিলনাড়ুর থাপ্তাভুর ও সংলগ্ন জেলায় জুন-সেপ্টেম্বর মাসে 60 সেমি বৃষ্টিপাত হলেও অক্টোবর- নভেম্বরে প্রায় 140 সেমি বৃষ্টি হয়।
- অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, পূর্ব হিমালয়, মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেমি-র বেশি।
- অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশের পার্বত্য অংশ, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশ অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100-200 সেমি।
- মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পূর্ব রাজস্থান, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 60-100 সেমি।
- স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার পশ্চিমাংশ, মধ্য রাজস্থান স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20-60 সেমি।
- অতি স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল : রাজস্থানের মরু অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাডাক মালভূমি অতি স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: অতিস্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20 সেমি-র কম।
- পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল (প্রতিবাত ঢাল) ও পশ্চিম উপকূল: আরব সাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর যে শাখা ভারতে প্রবেশ করে তা পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে প্রথম সরাসরি বাধা পায়। ফলে পশ্চিমঘাটের পশ্চিমঢাল ও পশ্চিম উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
- পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত: সমগ্র অঞ্চলটি পূর্বাচল ও পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা পূর্বাচল ও পূর্ব হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় (অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত)।
- রাজস্থানের পশ্চিমাংশ ও গুজরাতের উত্তর-পশ্চিমাংশ: এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণগুলি হল—
- পর্বতের অভাব: আরব সাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর একটি শাখা গুজরাতের কাথিয়াবাড় হয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিকে ছুটে গেলেও তাকে প্রতিহত করার মতো কোনো পর্বতশ্রেণি ওখানে নেই। তাই, এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না।
- আরাবল্লি পর্বতের অবস্থান: আরাবল্লি পর্বত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে বিস্তৃত বলে আর্দ্র দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ওই পর্বতের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরও উত্তরে চলে যায়। এর ফলে রাজস্থানের পশ্চিমাংশ ও গুজরাতের উত্তর-পশ্চিমাংশ প্রায় বৃষ্টিহীন অবস্থাতেই থাকে।
- লাডাক মালভূমি: এটি একটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমি। তাই জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি অতিক্রম করে লাডাক মালভূমিতে প্রবেশ করতে পারে না বলেই ওই অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হয়।
- পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যখন ওই পর্বতের অনুবাত ঢালে পৌঁছোয় তখন ওই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ হ্রাস পায় বলে বৃষ্টিপাত হয় না।
- খামখেয়ালি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চিত আচরণ: [i] কখনও একটানা কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হলে বন্যা হয়। [ii] দীর্ঘক্ষণ ধরে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হলেও বন্যা হয়। [iii] যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে এবং তার প্রত্যাগমনেও বিলম্ব হয়, তাহলে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়।
- অগভীর নদীখাত: নদীগর্ভে পলি জমে নদীর ধারণ ও বহন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে মাঝারি মাপের বৃষ্টিপাতেও নদীতে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- জলাধার থেকে জল ছাড়া: জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে বন্যা হতে পারে।
- ঘূর্ণিঝড়: প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যা হয়।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চিত আচরণ: ভারতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় 67-75 শতাংশ বর্ষাকালের (জুন-সেপ্টেম্বর) মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু [i] কোনো বছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনে বিলম্ব ঘটে, আবার কোনো বছর তা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফিরে যায়। উভয় ক্ষেত্রেই বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে মাটিতে জলাভাব দেখা যায় ও মাটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। এভাবে খরা বা খরাজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ও ফসল উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। তা ছাড়া, [ii] অনিয়মিত বৃষ্টিপাত: বর্ষাকালে সবসময় বৃষ্টিপাতও নিয়মিত হয় না, মাঝে মাঝে বিরতি ঘটে। এই বিরতির স্থায়িত্ব খুব বেশি হলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
- দ্রুতহারে অরণ্য বিনাশ: [i] অনাচ্ছাদিত মাটি: মাটির ওপর গাছপালার আচ্ছাদন না থাকলে রোদের তেজে মাটির জলকণা বাষ্পীভূত হয়। এর ফলে মাটির আর্দ্রতা কমে, ভৌমজলস্তরও নেমে যায়। এইভাবে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবার, [ii] বায়ুতে জলীয় বাষ্পের অভাব: গাছপালা না থাকলে সবুজ পাতার মাধ্যমে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্প আসে না। ফলে বায়ুর আর্দ্রতা কমে যায়। তখন শুষ্ক বায়ু মাটি থেকে জলকণা শোষণ করে বলে ভূমিতে খরার সৃষ্টি হয়।
- বায়ুতে জলীয় বাষ্প প্রদান: যেহেতু অরণ্যভূমির গাছপালা থেকে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প নির্গত হয়, তাই অরণ্যভূমির জলবায়ু আর্দ্র হয়, যা বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
- উন্নতা নিয়ন্ত্রণ: গভীর অরণ্যভূমি আচ্ছাদনের কাজ করে বলে মাটিতে রোদ বা সূর্যালোকের প্রখরতা অনুভূত হয় না। এ ছাড়া, অরণ্যের আচ্ছাদন থাকায় মাটিতে থাকা জলও সূর্যালোকে বাষ্পীভূত হতে পারে না। অপরদিকে, উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে অরণ্যভূমি বিশেষ না থাকায় ওইসব অঞ্চলের উন্নতা যথেষ্ট বেশি থাকে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তৱধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো