wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – C & D

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – C & D

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – C & D

West Bengal Board 10th Geography Solutions

TOPIC – C ভারতের জলসম্পদ

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. ভারতের জলসম্পদ : ভারতের জলসম্পদ বলতে নদনদী ও খাল-হ্রদ-জলাশয়ের জল, ভৌমজল, বৃষ্টির জল ইত্যাদিকে বোঝায়। অবশ্য এর মধ্যে নদনদীর ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
  2. ভারতের নদনদী: উৎস, প্রবাহের অঞ্চল এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় – (1) উত্তর ভারতের নদনদী এবং (2) দক্ষিণ ভারতের নদনদী।
  3. উত্তর ভারতের নদনদী : উত্তর ভারতের নদনদীর মধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র প্রধান।
  4. গঙ্গা নদী : গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা নদী উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
  5. গঙ্গার প্রধান শাখা : গঙ্গার প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
  6. গঙ্গা-আদর্শ নদী : উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত গঙ্গা নদীর গতিপথে উচ্চগতি বা পাবর্ত্যপ্রবাহ, মধ্যগতি বা সমভূমিপ্রবাহ এবং নিম্নগতি বা বদ্বীপপ্রবাহ সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। তাই গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে।
  7. গঙ্গার উপনদীসমূহ: গঙ্গার উপনদীসমূহের মধ্যে ডানতীরের যমুনা ও শোন এবং বামতীরের রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
  8. সিন্ধু নদ : উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদ হল সিন্ধু। এই নদ তিব্বতের (চিন) সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তারপর চিনের ওপর দিয়ে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে প্রথমে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য এবং পরে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে।
  9. সিন্ধুর উপনদীসমূহ: সিন্ধুর পাঁচটি উপনদী হল শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তা।
  10. ব্রক্ষ্মপুত্র নদ : উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ হল ব্রহ্মপুত্র। এই নদ তিব্বতের (চিন) রাক্ষসতাল-মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তারপর সুদীর্ঘ পথ চিন দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রথমে উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও অসম রাজ্য এবং শেষে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
  11. ব্রহ্মপুত্রের উপনদীসমূহ: সুবনসিরি, ভরলি, মানস, সংকোশ, ধানসিরি, কোপিলি, লোহিত প্রভৃতি ব্রহ্মপুত্রের উল্লেখযোগ্য উপনদী।
  12. দক্ষিণ ভারতের নদনদী: দক্ষিণ ভারতের নদনদীর মধ্যে পশ্চিমবাহিনী নর্মদা ও তাপ্তী এবং পূর্ববাহিনী মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্মা ও কাবেরী প্রধান। এর মধ্যে পশ্চিমবাহিনী নদীগুলি পড়েছে আরব সাগরে এবং পূর্ববাহিনী নদীগুলি বঙ্গোপসাগরে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে পতিত নদীগুলির মোহানায় গঠিত হয়েছে বড়ো বড়ো বদ্বীপ।
  13. ভারতের হ্রদ : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সুপেয় জলের হ্রদ আছে, যেমন–উলার, ডাল, নৈনিতাল, ভীমতাল, রূপকুণ্ড প্রভৃতি। আর রাজস্থানে আছে কিছু লবণাক্ত জলের হ্রদ, যেমন—সম্বর, পুষ্কর, দিদওয়ানা, পচপদ্রা প্রভৃতি। শুষ্ক লাডাক মালভূমির প্যাংগং ও সোমোরিরি এবং দেশের উপকূল অঞ্চলের কোলেরু, পুলিকট প্রভৃতিও লবণাক্ত জলের হ্রদ। ওড়িশা উপকূলের চিলকা ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ। এ ছাড়া মানুষের সৃষ্ট কিছু হ্রদ আছে, যেমন—মাইথন, পাত্ে গোবিন্দ সাগর, মহারানা প্রতাপ সাগর প্রভৃতি।
  14. ভারতের খাল : ভারতে অনেক নিত্যবহ (সারাবছর জল থাকে) খাল আছে, যেমন—সারদা খাল, উচ্চ গঙ্গা ও নিম্ন গঙ্গা খাল, ভাকরা খাল, দুর্গাপুর খাল প্রভৃতি। আর কৃষ্ণা, গোদাবরী প্রভৃতি নদীর বদ্বীপে আছে প্লাবন খাল (শুধু বন্যার সময় বা বর্ষাকালে জল থাকে)।
  15. ভারতে জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি : ভারতে প্রধানত কৃপ, নলকূপ ও খাল—এই তিনটি পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়। (1) কূপ ও নলকূপ পদ্ধতি: ভূগর্ভের জল সেচকার্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হল কূপ এবং নলকূপ। উত্তর ভারতের সমভূমিতে কূপ ও নলকূপের ব্যবহার বেশি। (2) খাল পদ্ধতি: ভারতে জলসেচের জন্য প্রধানত দুইপ্রকার খাল আছে যথা—প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল।
  16. ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফল: পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ জলের অন্যতম উৎস ভৌমজল বা ভূগর্ভের জল। কিন্তু বর্তমানে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ভৌমজল উত্তোলন ও ব্যবহারের ফলে তার অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যেমন— (1) ভৌমজলস্তর হ্রাস, (2) ভূপৃষ্ঠীয় জলের পরিমাণ হ্রাস, (3) ভূমিধস, (4) মাটির লবণতা বৃদ্ধি, (5) আর্সেনিকদূষণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি প্রভৃতি।
  17. বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা: যে পরিকল্পনার মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সমগ্র নদী উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, মাছ চাষ, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি বহুবিধ উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় এবং নদী উপত্যকা অঞ্চলে সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়, তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলে। উদাহরণ—দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা, ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা, মহানদী পরিকল্পনা প্রভৃতি।
  18. দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার বাঁধ ও সেচবাঁধ : দামোদর উপত্যকার সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য দামোদর নদের ওপর পাঞ্চেৎ ও তেনুঘাট, দামোদরের উপনদী বরাকরের ওপর মাইথন ও তিলাইয়া বাঁধ এবং কোনারের ওপর কোনার বাঁধ নির্মিত হয়েছে। দুর্গাপুরে দামোদরের ওপর একটি সেচবাঁধও নির্মাণ করা হয়েছে।
  19. দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার অধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সেচখাল : তিলাইয়া, মাইথন ও পাঞ্চেৎ-এ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বোকারো, চন্দ্রপুরা, মেজিয়া, রঘুনাথপুর, মাইথন, কোডার্মা, ওয়ারিয়া ও দুর্গাপুরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অধীনে প্রায় 2495 কিমি সেচখাল কাটা হয়েছে।
  20. জল সংরক্ষণের পদ্ধতি: পৃথিবীতে সুপেয় জলের ভাণ্ডার একেবারেই সীমিত। এই জলভাণ্ডার সংরক্ষণের প্রধান দুটি পদ্ধতি হল— (1) বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং (2) জলবিভাজিকা উন্নয়ন।
  21. বৃষ্টির জল সংরক্ষণে তামিলনাড়ুর ভূমিকা : তামিলনাড়ু এবং তার সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকায় বছরে দু-বার বর্ষাকাল হলেও সুপেয় জলের ভাণ্ডার তথা সরবরাহ আশানুরূপ নয়। এজন্য তামিলনাড়ুতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতের প্রধান নদনদীগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের প্রধান নদনদীসমূহ
ভারতের নদনদীগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
উত্তর ভারতের নদনদী
  1. গঙ্গা : দৈর্ঘ্য: গঙ্গা নদীর মোট দৈর্ঘ্য 2525 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
    মোহানা: গঙ্গা নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী: গঙ্গার বামতীরের উপনদীগুলি হল—ঘর্ঘরা, রামগঙ্গা, গণ্ডক, কোশী এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—যমুনা, শোন প্রভৃতি।
    শাখানদী: গঙ্গার শাখানদী হল— পদ্মা ও ভাগীরথী-হুগলি। ভাগীরথী-হুগলির কয়েকটি শাখানদী হল ভৈরব, জলঙ্গী, বিদ্যাধরী।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— হৃষীকেশ, হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, ভাগলপুর, কলকাতা।
  2. সিন্ধু : দৈর্ঘ্য: সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য 2880 কিমি কিন্তু ভারতে মোট দৈৰ্ঘ্য 1114 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের কাছে সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে এই নদের উৎপত্তি হয়েছে।
    মোহানা: সিন্ধু নদ আরব সাগরে এসে মিশেছে।
    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ভারতে কেবল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাডাকের মধ্য দিয়ে সিন্ধু নদ প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী: সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলি হল—বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, শতদ্রু, ইরাবতী, বিপাশা এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—শিয়ক, গিলগিট, শিগার প্রভৃতি।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— স্কার্দু, বুঞ্জি, চিলাস প্রভৃতি।
  3. ব্রহ্মপুত্র: দৈর্ঘ্য: ব্রহ্মপুত্র নদের মোট দৈর্ঘ্য 2900 কিমি কিন্তু ভারতে মোট দৈর্ঘ্য 916 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে এই নদের উৎপত্তি হয়েছে।
    মোহানা: ব্রহ্মপুত্র নদ বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ভারতে কেবল অরুণাচল প্রদেশ ও অসম রাজ্যের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী : ব্রহ্মপুত্রের বামতীরের উপনদীগুলি হল—বুড়ি ডিহিং, কোপিলি, ধানসিরি (দক্ষিণ) এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল—সুবনসিরি, সংকোশ, মানস, তিস্তা প্রভৃতি।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— ডিব্ৰুগড়, তেজপুর, গুয়াহাটি, গোয়ালপাড়া, ধুবরি।
দক্ষিণ ভারতের নদনদী
  1. মহানদী: দৈর্ঘ্য: মহানদীর মোট দৈর্ঘ্য 851 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: ছত্তিশগড়ের সিহাওয়ার উচ্চভূমি থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
    মোহানা: ছত্তিশগড় রাজ্যের হিসাওয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মহানদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: ছত্তিশগড় ও ওডিশা রাজ্যের মধ্য দিয়ে মহানদী প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী: শিওনাথ, হাসদো, ইব, ব্রাহ্মণী, বৈতরণী প্রভৃতি হল মহানদীর উপনদী।
    শাখানদী: মহানদীর শাখানদীগুলি হল—কুশভদ্র, ভাগবী প্রভৃতি।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: মহানদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলি হল— সম্বলপুর, টিকারপাড়া, কটক।
  2. গোদাবরী : দৈর্ঘ্য: গোদাবরী নদীর মোট দৈর্ঘ্য 1465 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্রিম্বকেশ্বর শৃঙ্গ (নাসিক) থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
    মোহানা: গোদাবরী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় ও অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী: ইন্দ্রাবতী, প্রাণহিতা, মঞ্জিরা প্রভৃতি হল গোদাবরীর উপনদী।
    শাখানদী: গৌতমী, বশিষ্ট, বৈনতেয় প্রভৃতি গোদাবরীর শাখানদী।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: গোদাবরী নদীর তীরে নাসিক, নানদেদ, ভদ্রাচলম, রাজামুদ্রি, আদিলাবাদ, করিমনগর, নরসাপুরম প্রভৃতি শহর অবস্থিত।
  3. কৃষ্ণা : দৈর্ঘ্য: কৃষ্ণা নদীর মোট দৈর্ঘ্য 1400 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
    মোহানা: কৃষ্ণা নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।
    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী: ভীমা, কয়না, মালপ্রভা, তুঙ্গভদ্রা, ঘাটপ্রভা, মুসি প্রভৃতি হল কৃয়ার উপনদী।
    শাখানদী: নাগবতী, ভামসাধারা প্রভৃতি হল কৃষ্ণার শাখানদী।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: সানগ্লি, বিজয়ওয়াড়া হল কৃয়া নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
  4. কাবেরী : দৈর্ঘ্য: কাবেরী নদীর মোট দৈর্ঘ্য 800 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রত্নগিরি পাহাড় থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।

    মোহানা: কাবেরী নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে।

    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী: হেমবতী, অর্কবতী, ভবানী, অমরাবতী প্রভৃতি হল কাবেরীর উপনদী।

    শাখানদী: কোলেরুন কাবেরীর উল্লেখযোগ্য শাখানদী।

    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: শ্রীরঙ্গম, তিরুচিরাপল্লি, ইরোড হল কাবেরী নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
  5. নর্মদা : দৈর্ঘ্য: নর্মদা নদীর মোট দৈৰ্ঘ্য 1312 কিমি।

    উৎপত্তিস্থল: মৈকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।

    মোহানা: নর্মদা নদী খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে।
    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে নর্মদা নদী প্রবাহিত হয়েছে।
    উপনদী: বর্ণা, ওরসাং প্রভৃতি হল নর্মদার উপনদী।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর: ওমকারেশ্বর, হোসাঙ্গাবাদ, ভারুচ প্রভৃতি এই নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
  6. তাপ্তী : দৈর্ঘ্য : তাপ্তী নদীর মোট দৈর্ঘ্য 724 কিমি।
    উৎপত্তিস্থল: সাতপুরা পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমি থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
    মোহানা: তাপ্তী নদী খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে।

    গতিপথে অবস্থিত রাজ্য: মহারাষ্ট্র ও গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে।

    উপনদী: গিরনা, পূর্ণা, ভাগুর, পান্জারা প্রভৃতি হল তাপ্তীর উপনদী।
    নদীতীরবর্তী প্রধান শহর : বুরহানপুর, ভুসাওয়াল, সুরাত প্রভৃতি এই নদীর তীরে অবস্থিত শহর।
2. উত্তর ভারতের তিনটি নদনদীর গতিপথের বর্ণনা দাও।
উত্তর – উত্তর ভারতের প্রধান নদনদী
উত্তর ভারতের নদনদীর মধ্যে প্রধান তিনটি নদী হল গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র।
  1. গঙ্গা: গঙ্গা নদীর মোট দৈর্ঘ্য 2525 কিমি। গঙ্গা ভারতের প্রধান নদী। এই নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
    1. উচ্চগতি: প্রবাহপথ: উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ উচ্চগতি নামে পরিচিত। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের অন্তর্গত গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। উৎসের কাছে এই নদীর নাম ভাগীরথী। রুদ্রপ্রয়াগের কাছে মন্দাকিনী ও দেবপ্রয়াগের কাছে এর অন্যতম প্রধান উপনদী অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়ে ভাগীরথী গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে।
    2. মধ্যগতি: প্রবাহপথ: হরিদ্বারের কাছে পার্বত্যপ্রবাহ অতিক্রম করে গঙ্গা সমভূমিতে প্রবেশ করেছে এবং এখান থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রবাহপথ গঙ্গার মধ্যগতি নামে পরিচিত। উপনদী: গঙ্গার সুদীর্ঘ গতিপথে ডানদিক থেকে যমুনা ও শোন এবং বামদিক থেকে গোমতী, ঘর্ঘরা, রামগঙ্গা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি উপনদী এসে পড়েছে। গঙ্গার এইসব উপনদীর মধ্যে যমুনা সর্বপ্রধান । যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে যমুনা নদী এলাহাবাদের কাছে গঙ্গা নদীতে পড়েছে। চম্বল, বেতোয়া, কেন, সারদা প্রভৃতি যমুনার ডানতীরের উল্লেখযোগ্য উপনদী। হরিদ্বারের পর থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রবাহপথ গঙ্গার মধ্যগতি নামে পরিচিত।
    3. নিম্নগতি: প্রবাহপথ: রাজমহল পাহাড়ের পর থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ নিম্নগতি নামে পরিচিত। রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে মুরশিদাবাদ জেলার ধূলিয়ানের কাছে দুটি ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। শাখানদী: প্রধান প্রবাহটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। গঙ্গার প্রধান শাখানদীটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। উপনদী: ভাগীরথী-হুগলি নদীর গতিপথে অজয়, দামোদর, কংসাবতী, রূপনারায়ণ, রসুলপুর প্রভৃতি নদী ডানতীরের উপনদী হিসেবে এবং জলঙ্গি, মাথাভাঙ্গা, চুপি প্রভৃতি নদী বামতীরের উপনদী হিসেবে এসে মিশেছে। বদ্বীপ: মোহানার কাছে এসে গঙ্গা নদী পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।
  2. সিন্ধু: প্রবাহপথ: উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদী সিন্ধু (দৈর্ঘ্য 2880 কিমি, ভারতে 1114 কিমি)। তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের কাছে সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধু নদ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মোহানা: এই প্রবাহ নাঙ্গা পর্বতের কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আরব সাগরে (করাচির দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে) পড়েছে। উপনদী : সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে পাঁচটি প্রধান, এগুলি হল—শতদ্রূ, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা। এই নদীগুলি জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিন্ধুর ডানতীরের প্রধান উপনদীগুলি হল কাশ্মীরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শিয়ক, গিলগিট, শিগার প্রভৃতি। সমভূমিপ্রবাহ: সিন্ধু নদ লাডাক পর্বতশ্রেণি অতিক্রম করার পর একটি সুগভীর গিরিখাতের সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। বদ্বীপ: মোহানার কাছে সিন্ধুর একটি ছোটো বদ্বীপ দেখা যায়।
  3. ব্রক্ষ্মপুত্র: প্রবাহপথ: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র (দৈর্ঘ্য 2900 কিমি, ভারতে 916 কিমি)। তিব্বতের রাক্ষসতাল মানস সরোবরের প্রায় 90 কিমি দক্ষিণ-পূর্বে চেমায়ুং-দুং নামক হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি। সেখান থেকে প্রথমে সাংপো নামে তিব্বত মালভূমির ওপর দিয়ে পূর্ব দিক বরাবর প্রায় 1500 কিমির বেশি প্রবাহিত হওয়ার পর নামচা বারওয়া শৃঙ্গের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে ডিহং নামে অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর অসমের সদিয়ার কাছে ডিবং ও লোহিত নদী ডিহংয়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ডিহং, ডিবং এবং লোহিত—এই তিনটি নদীর মিলিত প্রবাহ ব্রহ্মপুত্র নামে পশ্চিমমুখী হয়ে অসমের ওপর দিয়ে ধুবরি পর্যন্ত বয়ে গিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মোহানা: যমুনা নদী গোয়ালন্দের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে শেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বালুচর বা নদীদ্বীপ: অসম উপত্যকায় ব্রক্ষ্মপুত্র বিনুনির মতো এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে বলে নদীখাতে অনেক বালুচর বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। জোরহাটের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে গঠিত মাজুলি দ্বীপটি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।
    উপনদী: ব্রক্ষ্মপুত্রের ডানতীরের উপনদীগুলির মধ্যে সুবনসিরি, কামেং বা জিয়া ভরেলি, মানস, সংকোশ, তিস্তা এবং বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে ধানসিরি, কোপিলি, বুড়ি ডিহিং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
3. দক্ষিণ ভারতের প্রধান নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, দক্ষিণ ভারতের পূর্ববাহিনী ও পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের প্রধান নদনদী
প্রবাহের দিক অনুসারে দক্ষিণ ভারতের নদনদীকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
পূর্ববাহিনী নদী
  1. মহানদী: (851 কিমি)গতিপথ: ছত্তিশগড় রাজ্যের সিহাওয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে ছত্তিশগড় ও ওডিশার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। মহানদীর মোহানায় একটি বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। উপনদী/শাখানদী: বামতীরের উপনদী হল শিওনাথ, ইব, মান্দ, হাসদো এবং ওং, জংক হল ডানতীরের উপনদী। শাখানদীগুলি হল কুশভদ্রা, ভাগবী প্রভৃতি।
  2. গোদাবরী: (1465 কিমি) গতিপথ : মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার ত্রিম্বকেশ্বর উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই নদী দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম বলে এর নাম দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা। এই নদীর মোহানায় একটি বদ্বীপ আছে।উপনদী/শাখানদী: মঞ্জিরা, ইন্দ্রাবতী, পূর্ণা প্রভৃতি হল গোদাবরীর উপনদী এবং গৌতমী, বশিষ্ঠ, বৈনতেয় প্রভৃতি হল গোদাবরী নদীর শাখানদী।
  3. কৃয়া : (1400 কিমি) গতিপথ: মহারাষ্ট্রের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে কুয়া নদী মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কৃষ্ণা নদীর মোহানাতে একটি বদ্বীপ আছে। উপনদী/শাখানদী : ভীমা, তুঙ্গভদ্রা, ঘাটপ্রভা, মুসি প্রভৃতি হল কৃয়ার উপনদী এবং নাগবতী, ভামসাধারা প্রভৃতি হল কৃষ্ণার শাখানদী।
  4. কাবেরী: (800 কিমি) গতিপথ: কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রত্নগিরি পাহাড় থেকে উৎপন্ন কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। শিবসমুদ্রম কাবেরী নদীর একটি বিখ্যাত জলপ্রপাত। এই নদীটির মোহানাতেও একটি বদ্বীপ দেখা যায়।উপনদী/শাখানদী : হেমবতী, অর্কবতী প্রভৃতি কাবেরীর বামতীরের উপনদী এবং ভবানী, অমরাবতী প্রভৃতি ডানতীরের উপনদী। কোলেরুন হল কাবেরীর শাখানদী।
পশ্চিমৰাহিনী নদী
  1. নর্মদা: (1312 কিমি) গতিপথ: মধ্যপ্রদেশে মৈকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে। জব্বলপুরের কাছে নর্মদার ওপর নয়নাভিরাম ধুঁয়াধার জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। উপনদী: বরণা, কোলার, হিরণ প্রভৃতি হল নর্মদার উপনদী।
  2. তাপি বা তাপ্তী: (724 কিমি) গতিপথ: মধ্যপ্রদেশে মহাদেব পাহাড়ের মুলতাই উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন তাপ্তী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত হয়ে সুরাতের কাছে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। উপনদী: পূর্ণা, গিরনা, পান্জারা প্রভৃতি হল তাপ্তীর উপনদী।
4. ভারতের প্রধান হ্রদগুলির বিবরণ দাও।
উত্তর – ভারতের প্রধান প্রধান হ্রদ
জলের আস্বাদ অনুসারে ভারতের হ্রদগুলি দু-প্রকারের, যেমন—
  1. স্বাদু জলের হ্রদ: ভারতের স্বাদু বা সুপেয় জলের হ্রদগুলির অধিকাংশই হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। এখানে উন্নতা সারাবছর কম থাকায় হ্রদগুলি থেকে বাষ্পীভবনের হার খুব কম। এ ছাড়া, কিছু কিছু হ্রদ বরফগলা জলেও পুষ্ট। এসব কারণে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে উলার, ডাল, নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল, পুনাতাল, রূপকুণ্ড, গুরুদোংমার প্রভৃতি মিষ্টি জলের হ্রদগুলির সৃষ্টি হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উলার ভারতের বৃহত্তম স্বাদু জলের হ্রদ। সিকিম রাজ্যের সো লামো ভারতের উচ্চতম হ্রদ। মণিপুর রাজ্যের লোকটাক ভারতের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাদু জলের হ্রদ।
  2. লবণাক্ত জলের হ্রদ: ভারতের লবণাক্ত জলের হ্রদগুলি রাজস্থান রাজ্যে বেশি দেখা যায়। সম্বর, দিদওয়ানা, পুষ্কর, দেগনা, পচপদ্রা, কাচমান প্রভৃতি রাজস্থান রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ লবণাক্ত জলের হ্রদ। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের প্যাংগং, সোমোরিরি, অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের কোলেরু এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের পুলিকট ভারতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লবণাক্ত জলের হ্রদ। ওডিশা রাজ্যের চিলিকা বা চিলকা প্রকৃতপক্ষে একটি উপহ্রদ। এটি ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ। কেরল রাজ্যের ভেমবানাদ ও অষ্টমুদি দুটি বিখ্যাত উপহ্রদ বা কয়াল।
5. ভারতে ব্যবহৃত জলসেচ পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও।
অথবা, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কীভাবে জলসেচ করা হয় বর্ণনা করো।
উত্তর – ভারতে ব্যবহৃত জলসেচ পদ্ধতিসমূহ
ভৌগোলিক পরিবেশের পার্থক্যের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশের সেচসেবিত জমিতে সেচের প্রধান তিনটি মাধ্যম বা পদ্ধতি হল – 1. সেচখাল, 2. কূপ ও নলকূপ এবং 3. জলাশয়।
  1. সেচখাল: প্রধানত কৃষিতে সেচের জন্য নদী, কৃত্রিম জলাধার প্রভৃতি থেকে যে খাল খনন করা হয়, তাকে সেচখাল বলে। ভারতে দু-ধরনের সেচখাল দেখা যায়, যথা—
    1. প্লাবন খাল: যেসব খাল বর্ষা বা বন্যার অতিরিক্ত জল বহন করে সেই খালগুলিকে বলে প্লাবন খাল। প্লাবন খালের মাধ্যমে কেবল বর্ষাকালেই জলসেচ করা যায়, যেমন—কৃয়া বদ্বীপ খাল, গোদাবরী বদ্বীপ খাল, কাবেরী বদ্বীপ খাল প্রভৃতি।
    2. নিত্যবহ খাল: যেসব নদীতে সারাবছর জল থাকে, সেইসব নদী থেকে খনন করা খালগুলিকে বলে নিত্যবহ খাল। সারাবছর জল না থাকলে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে জলাধার (Dam) তৈরি করা হয় ও ওই জলাধার থেকে যেসব খাল খনন করে কৃষিক্ষেত্রে সারাবছর জলসেচ করা হয়, সেইসব খালকে নিত্যবহ খাল বলে। সুবিধা: সারাবছর জলপূর্ণ থাকার জন্য নিত্যবহ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সারাবছরই জলসেচ করা যায়। অর্জুল: তুষারগলা জলে পুষ্ট উত্তর ভারতের নদীগুলি নিত্যবহ বলে উত্তর ভারতেই নিত্যবহ খাল বেশি দেখা যায়, যেমন—উত্তরপ্রদেশের উচ্চ-গঙ্গা খাল, পাঞ্জাবের পশ্চিম যমুনা খাল ও উচ্চ-বারি দোয়াব খাল, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর খাল, ইডেন খাল, হিজলি খাল, ওডিশা উপকূল খাল এবং দামোদর-ময়ূরাক্ষী-কংসাবতী পরিকল্পনার সেচখালসমূহ। এইরূপ খালের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় উত্তরপ্রদেশে।
  2. কূপ ও নলকূপ: ভারতের যেসব অঞ্চলের মাটি পলিগঠিত এবং ভূগর্ভের জল বা ভৌমজল খুব বেশি গভীরতায় থাকে না, সেইসব স্থানে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। কূপ ও নলকূপের গভীরতা জলস্তরের উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণ কূপ: ভূমিতে প্রায় 20-25 মিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে কূপ তৈরি করা হয়। কূপের চারপাশ সাধারণত বাঁধিয়ে নেওয়া হয় এবং তার মধ্যে 10-15 মিটার নীচে জল থাকে ৷ কপিকল বা গোরু, উট প্রভৃতি পশুর সাহায্যে কূপ থেকে জল তোলা হয়। অনেকসময় এজন্য অনেকগুলি বালতি লাগানো পারস্যের চাকাও ব্যবহৃত হয়। কোনো পশুর সাহায্যে চাকাটি ঘুরিয়ে জল তোলা হয়। নলকূপ : দু-ধরনের নলকূপ দেখা যায়— [i] সাধারণ নলকূপ: সাধারণ নলকূপ অগভীর হয় এবং হাত দিয়ে পাম্প করে জল তোলা হয়। [ii] বৈদ্যুতিক নলকূপ: গভীর নলকূপ থেকে বৈদ্যুতিক পাম্প বা ডিজেল চালিত পাম্পের সাহায্যে জল তোলা হয়। এতে স্বল্প সময়ে প্রচুর জল তোলা যায়। অঞ্চল: উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ, পূর্ব ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমে কূপ ও নলকূপের প্রচলন বেশি। কূপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচ হয় উত্তরপ্রদেশে। বর্তমানে পশ্চিম ভারতের রজস্থান ও গুজরাত রাজ্যে কূপ ও নলকূপের দ্বারা সেচের ব্যবহার বেড়েছে। এ ছাড়াও তামিলনাড়ুর দক্ষিণাংশ ও কেরলে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে সেচকাজ করা হয়।
  3. জলাশয় বা পুকুর: দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে মাটির নীচে অধিকাংশ জায়গায় অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকায় বৃষ্টির জল ভূগর্ভে বিশেষ সঞ্চিত হয় না। এখানকার ভূপৃষ্ঠ তরঙ্গায়িত বলে বর্ষার জল সহজেই নিম্নভূমিতে ধরে রাখা যায়। এ ছাড়া, ভারতের যেসব অঞ্চলে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয় না, সেখানে জলাশয় নির্মাণ করে জল জমিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন—তেলেঙ্গানা, কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ। অঞ্চল: দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে এই পদ্ধতির প্রচলন বেশি। মধ্যপ্রদেশে, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে এই পদ্ধতিতে সামান্য জলসেচ করা হয়। জলাশয় বা পুকুরের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় তামিলনাড়ু রাজ্যে।
6. ভারতে জলসেচের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থাগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে জলসেচের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থা
ভারতে জলসেচের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থাগুলি হল—
  1. বরফগলা জলে পুষ্ট নদনদী: উত্তর ভারতে বড়ো বড়ো নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট বলে এগুলিতে সারাবছর জল থাকে। এর ফলে উত্তর ভারতের নদীগুলি থেকে নিত্যবহ খাল খনন করার সুবিধা রয়েছে, যেখান থেকে সারাবছর কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করা সম্ভব।
  2. বিস্তীর্ণ সমভূমি: উত্তর ভারতের সুবিস্তৃত সমভূমি অঞ্চলে ও পূর্ব উপকূলে বিস্তীর্ণ সমভূমি থাকায় সহজে খাল কেটে জলসেচ করা যায়।
  3. স্বল্প গভীর ভৌমজলত্তর: পলিগঠিত অঞ্চলগুলিতে পলিস্তরের সামান্য নীচে জলস্তর থাকায় সহজেই কূপ, নলকূপ খনন করে ভূগর্ভস্থ জল সেচের কাজে ব্যবহার করা যায়।
  4. বৃষ্টির জলের প্রাচুর্য: বর্ষাকালে দেশের খালবিল, নদীনালা, হ্রদ, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয় জলপূর্ণ হয়ে যায় বলে বছরের অন্যান্য সময় সেগুলি থেকে সেচের জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
  5. বাঁধ তৈরির অনুকূল ভূপ্রকৃতি: উপদ্বীপীয় মালভূমির শক্ত ও কেলাসিত শিলা দ্বারা গঠিত ভূপ্রকৃতি ওই অঞ্চলের নদীসমূহের গতিপথে বাঁধ এবং কৃত্রিম জলাধার তৈরির পক্ষে বিশেষভাবে অনুকূল, যেগুলি থেকে খাল খনন করে জলসেচ করা যায়।
7. জলবিভাজিকা উন্নয়ন বলতে কী বোঝ? এর গুরুত্ব এবং এর উন্নয়ন পদ্ধতি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – জলবিভাজিকা উন্নয়ন
জলবিভাজিকা উন্নয়ন বলতে বোঝায় জলবিভাজিকা দ্বারা পৃথককৃত নদীর ধারণ অববাহিকার সামগ্রিক ও বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নের মাধ্যমে ওই নদীর সমগ্র অববাহিকারই জলসম্পদ, বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশ ও মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার স্থায়ী উন্নয়ন। এজন্য অববাহিকায় 1. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, 2. মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ, 3. বৃক্ষরোপণ, 4. ভৌমজল ভাণ্ডার বৃদ্ধি করা, 5. প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
জলবিভাজিকা উন্নয়নের গুরুত্ব
জলবিভাজিকা উন্নয়নের গুরুত্ব হল, এর মাধ্যমে— 1. অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রিত হয়। 2. বর্ষাকালে অববাহিকায় জল জমতে পারে না এবং তার ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হয় না। 3. শুষ্ক ঋতুতে বা শুষ্ক অঞ্চলে জল পাওয়া যায় এবং 4. ভৌমজল ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
জলবিভাজিকা উন্নয়ন পদ্ধতি
জলবিভাজিকা উন্নয়ন পদ্ধতিগুলি হল—
  1. ঢাল উন্নয়ন: নদী অববাহিকার উঁচু খাড়া অংশে ভূমিক্ষয় এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃক্ষরোপণ, তৃণভূমির আচ্ছাদন তৈরি, ধস নিয়ন্ত্রক দেয়াল নির্মাণ, প্রয়োজনে পাহাড়ি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা যেতে পারে। এর সাথে ঝুমচাষের মতো ক্ষতিকর প্রথায় চাষ বন্ধ করা দরকার।
  2. সমোন্নতিরেখা বরাবর বনভূমি তৈরি: উচ্চ ভূমি বা পার্বত্য অঞ্চলে সমোন্নতিরেখা বরাবর বনভূমি তৈরি করলে মাটিক্ষয় কম হয় এবং ভৌমজলের পরিমাণ বাড়ে।
  3. নদীখাতে ছোটো বাঁধ তৈরি: অববাহিকার ছোটো নদীগুলির প্রবাহ- পথে বাঁধ দিলে স্থানীয়ভাবে জল সংরক্ষণ ও মাটিক্ষয় রোধ করা যায়।
  4. বন্যা নিয়ন্ত্রণ: বন্যাপ্রবণ নদী অববাহিকায় প্রচুর সংখ্যক জলাভূমি, পুকুর, খাল ইত্যাদি খনন করতে হবে এবং নদীখাতের পলি কেটে তুলে ফেলতে হবে। এতে নদীর জলধারণ ক্ষমতা এবং জলপ্রবাহ উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।
  5. শুষ্ক অঞ্চলের পদ্ধতি: স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য বেশি সংখ্যক পুকুর-সহ বিভিন্ন জলাধার খনন করে তাতে বর্ষার জল সঞ্চয় করে রাখতে হবে। এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের আগে ভূমি কর্ষণ করে বা খুঁড়ে রাখলে মৃত্তিকার জলাধারণ ক্ষমতা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাবে।
  6. আর্দ্র অঞ্চলের পদ্ধতি: আর্দ্র অঞ্চলে নদীখাতগুলিকে গভীর ও পরিষ্কার রাখলে জল দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে এবং তার ফলে সেখানে সহজেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভূমিক্ষয় রোধ করা যেতে পারে।
8. ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, ভারতে জলসেচের গুরুত্ব কী? 
উত্তর – ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব
ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্বগুলি হল—
  1. অনিশ্চিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত: ভারতে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় না। শতকরা প্রায় 67 – 72 ভাগ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালের 4 মাসের মধ্যে হয়, যা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে থাকে। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন অনিশ্চিত এবং অনিয়মিত। একমাত্র জলসেচের মাধ্যমেই কৃষির এই অনিশ্চিত অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
  2. বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন: ভারতে বৃষ্টিপাত সব জায়গায় সমান হারে হয় না। উত্তর-পশ্চিম ভারতের অধিকাংশ জায়গায় বছরে সেন্টিমিটারেরও কম বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের এই আঞ্চলিক বণ্টনগত বৈষম্যের দরুন রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাতের উত্তর ও পশ্চিমাংশ, দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগ প্রভৃতি এলাকায় কৃষিকাজের জন্য জলসেচের বিশেষ প্রয়োজন।
  3. শুষ্ক শীতকাল: উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশ এবং করমণ্ডল উপকূলের দক্ষিণাংশ—এই দুটি অঞ্চল ছাড়া ভারতের অন্যত্র শীতকালে বিশেষ বৃষ্টিপাত হয় না। সুতরাং, শীতকালে ভারতে গম, ডাল, তৈলবীজ, বোরো ধান প্রভৃতি রবিশস্য চাষের জন্য জলসেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  4. মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতার তারতম্য: লোহিত মৃত্তিকা এবং ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম। তাই, ওইসব মাটিতে কৃষিকাজ করার জন্য জলসেচ প্রয়োজন।
  5. উচ্চফলনশীল বীজের চাষ: খাদ্যের বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে উচ্চফলনশীল বীজের চাষ করা হয়। কিন্তু উচ্চফলনশীল শস্য চাষের জন্য অধিক পরিমাণে জল প্রয়োজন। একমাত্র জলসেচের মাধ্যমেই তা সরবরাহ করা সম্ভব।
  6. সারাবছরব্যাপী চাষ: কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য একই জমিতে প্রতিবছর তিন-চার বার চাষ করা হয়। একমাত্র জলসেচের ব্যবস্থা থাকলে তবেই জমিতে সারাবছর চাষ করা সম্ভব হয়।
9. ভারতীয় কৃষিতে খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা কতখানি?
উত্তর – ভারতীয় কৃষিতে খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা
প্রধানত নদনদী বা জলাধারের জল কৃষিজমিতে ব্যবহারের জন্য যে খাল খনন করা হয়, তাকেই বলে সেচখাল। এই খাল দুই প্রকার— প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল। ভারতীয় কৃষিতে এই খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা অপরিসীম, এর কারণগুলি হল—
  1. অসংখ্য নদনদীর জল: ভারত নদীমাতৃক দেশ, অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন অংশের ওপর দিয়ে অসংখ্য নদনদী প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে এখানকার অধিকাংশ জায়গায় নদনদী থেকে খাল খনন করে কৃষিজমিতে জলসেচ করা যায়।
  2. সারাবছর বরফগলা জলের জোগান: সুবিস্তৃত উত্তর ভারতের নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট বলে নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে এবং তাই প্রায় সমগ্র উত্তর ভারতেই সারাবছর খাল দ্বারা জলসেচ করা যায়।
  3. খাল খননের উপযোগী ভূমিরূপ: ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সমভূমি থাকায় সহজে খাল খনন করে জলসেচ করা যায়।
  4. ভূমির ঢালজনিত সুবিধা: দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূমির ঢাল সুষম বলে খাল দিয়ে সহজেই জল প্রবাহিত হতে পারে (যেমন— সমভূমি অঞ্চলে)।
  5. জলাধার তৈরির সুবিধা: দক্ষিণ ভারতে বরফগলা জলে পুষ্ট নদী না থাকলেও ওখানকার ভূমিরূপ ঢেউ-খেলানো বলে সহজেই বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করা যায় এবং তারপর জলাধার থেকে খাল খনন করে জলসেচ করা হয়।
  6. ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা হ্রাস: দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই এখন ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে ভূপৃষ্ঠস্থ জল অর্থাৎ নদনদী, জলাধারের জল খালের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করা ছাড়া আমাদের কৃষির উন্নতিবিধান বা জলসম্পদ সংরক্ষণের আর কোনো বিকল্প নেই।
সবশেষে বলা যায়, খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা এতটা বেশি বলেই বর্তমান ভারতের মোট সেচসেবিত কৃষিজমির সর্বাধিক অংশে (প্রায় 24 শতাংশ) খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।
10. অতিরিক্ত জলসেচের ফলে কী কী বিপদ হতে পারে?
উত্তর – অতিরিক্ত জলসেচের ফলে সম্ভাব্য বিপদ
অতিরিক্ত জলসেচের ফলে সম্ভাব্য বিপদগুলি হল—
  1. উদ্ভিদের অক্সিজেনের অভাব: জলাবদ্ধ মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় উদ্ভিদ শিকড়ের সাহায্যে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
  2. উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার রোগ সৃষ্টি: জলাবদ্ধ মাটিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটিরিয়া, জীবাণু ইত্যাদি সক্রিয় হওয়ার ফলে গাছের শিকড় পচে যায়। এ ছাড়া উদ্ভিদদেহে নানারকম ছত্রাকঘটিত রোগের সংক্রমণ ঘটে।
  3. বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি: মাটিতে দীর্ঘ সময় জল জমে থাকলে নানারকম বিষাক্ত পদার্থ, যেমন—হাইড্রোজেন সালফাইড, উদ্বায়ী ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি উৎপন্ন হয়, যা উদ্ভিদের পক্ষে ক্ষতিকর।
  4. জমির উর্বরতা হ্রাস: জলসেচের সুবিধা থাকলে জমিতে সারাবছর চাষ করা হয়। অনেকসময় একই ফসল বারবার চাষ করা হয়। এর ফলে মাটির ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং জমির স্বাভাবিক উর্বরতা কমতে থাকে।
  5. মাটির লবণতা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত জলসেচের ফলে মাটির নীচের স্তর থেকে লবণ সেচের জলে দ্রবীভূত হয়ে মাটির ওপরের স্তরে এসে সঞ্চিত হয়। এভাবে মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়ে।
  6. ভৌমজলতলের পতন: অতিরিক্ত জল তোলার ফলে মাটির নীচে ভৌমজলতলের পতন ঘটে। ফলে গ্রীষ্মকালে প্রয়োজনমতো জল পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া অতিরিক্ত জলসেচের ফলে 7. বাস্তুতন্ত্রের নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে, ৪. জলবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং 9. আর্সেনিক দূষণের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
11. বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা বলতে কী বোঝ? বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা থেকে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
উত্তর – বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা
যে পরিকল্পনার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে বা ঊর্ধ্বপ্রবাহে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সমগ্র নদী উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, মাছ চাষ, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি বহুবিধ উদ্দেশ্য সাধিত হয় এবং নদী উপত্যকা অঞ্চলের সার্বিক কল্যাণ রূপায়িত হয়, তাকে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা বলে। যেমন—ভারতে দামোদর, শতদ্রু, মহানদী, কৃষ্ণা, গোদাবরী প্রভৃতি নদীর ওপর বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে।
বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার সুবিধা
বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা থেকে নানা রকমের সুবিধা পাওয়া যায়—
  1. বন্যা নিয়ন্ত্রণ: বন্যার হাত থেকে কোনো অঞ্চলকে বাঁচানো বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  2. জলসেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন: জলাধারে সঞ্চিত জলকে ব্যবহার করে সারাবছর খালের সাহায্যে জলসেচ করা যায়।
  3. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: জলাধারের জলকে ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
  4. পানীয় জল সরবরাহ: জলাধারের জলকে পরিসুত করে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  5. ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণ: নদীতে বাঁধ দিলে জলের গতিবেগ কমে যায় বলে ভূমিক্ষয় কম হয়।
  6. সেতু স্থাপন: নদীর আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয় বলে ওই বাঁধগুলি সেতুর কাজ করে।
  7. মাছ চাষ: জলাশয়গুলিতে সারাবছর স্থায়ীভাবে জল থাকায় এখানে মাছ চাষ করা যায়।
  8. পর্যটন কেন্দ্র গঠন: ওইসব জলাধারের কাছকাছি অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে ওঠে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতকে ‘নদীমাতৃক দেশ’ বলা হয় কেন?
উত্তর – ভারতকে নদীমাতৃক দেশ বলার কারণ
  1. অসংখ্য নদনদীর উপস্থিতি: ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য ভারতের ওপর দিয়ে ছোটো, বড়ো, মাঝারি প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য নদনদী প্রবাহিত হয়েছে।
  2. প্রচুর পরিমাণে জলবহন: ভারতের নদীগুলি বছরে গড়ে 186900 কোটি ঘনমিটার জল বহন করে (প্রধান নদীগুলি 85%, মাঝারি নদীগুলি 7%, ছোটো নদীগুলি 4% এবং অন্যান্য জলধারা 4% জল বহন করে)।
  3. জনপদ স্থাপন ও জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব বিস্তার: নদনদীগুলি সুদূর অতীত থেকে ভারতবাসীর জীবনধারার ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। হরপ্পা ও মহেন-জো-দারোর মতো প্রাচীন সভ্যতা-সহ এলাহাবাদ, বারাণসীর মতো প্রাচীন ধর্মস্থান এবং আধুনিক ভারতের অধিকাংশ শহর, নগর, জনপদ গড়ে উঠেছে কোনো-না-কোনো নদীর তীরে।
  4. কৃষিকাজের সুযোগ: কৃষিপ্রধান ভারতের অধিকাংশ চাষাবাদ নদী উপত্যকাগুলিতেই করা হয়।
  5. নদীকেন্দ্রিক শিল্প স্থাপন: গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলি, যেমন— কার্পাস বয়ন, চিনি, পাট প্রভৃতি পরোক্ষভাবে নদীর ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া, দেশের জলসেচ ব্যবস্থা, সামগ্রিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ সুলভ জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থা, পানীয় জলের জোগান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও নদনদীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
    প্রকৃতপক্ষে, ভারতের নদনদী থেকে এতরকম সুবিধা পাওয়া ছাড়াও নদনদীগুলি যেন মায়ের মতো সন্তান স্নেহে ভারতীয়দের লালনপালন করে চলেছে, ভারতীয়দের জীবনধারাকে পরিপুষ্ট করে চলেছে। এজন্যই ভারতকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়।
2. ভারতীয় জনজীবনে নদনদীর গুরুত্ব বা প্রভাব লেখো।
উত্তর – ভারতীয় জনজীবনে নদনদীর গুরুত্ব : ভারতীয় জনজীবনে নদনদীর ভূমিকা অসীম, যথা—
  1. কৃষিকাজ: একদিকে ভারতের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলে নদী সঞ্চিত উর্বর পলিমাটিতে বিপুল পরিমাণে কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হয়, অন্যদিকে, নদনদীর জল সেচকার্যে ব্যবহৃত হয়।
  2. নৌপরিবহণ: দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহণে এইসব নদনদীর ভূমিকা অপরিসীম। সস্তায় বাণিজ্য করার অন্যতম উপায় জলপথে পরিবহণ।
  3. মাছ সংগ্রহ: দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটায় নদনদী থেকে সংগৃহীত মাছ। সুতরাং, স্বাদুজলের মাছ সংগ্রহে নদনদীর গুরুত্ব অসীম।
  4. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: পার্বত্য নদীগুলিকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। আবার বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার মাধ্যমেও নদনদী থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে, যা পরিবেশবান্ধব শক্তিও বটে।
  5. শিল্প বিকাশ: দেশের বিভিন্ন অংশের নদনদীর জল শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং শিল্পজাত দ্রব্য পরিবহণ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নদীগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  6. পানীয় জল হিসেবে: নদীর জল পরিশোধন করে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে নগরায়ণ বাড়ছে।
এ ছাড়া নদী তীরবর্তী স্থান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে, জল সংরক্ষণাগার হিসেবে ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
3. অববাহিকার আয়তন অনুসারে ভারতের নদনদীর শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – অববাহিকার আয়তন অনুসারে ভারতের নদনদীর শ্রেণিবিভাগ : অববাহিকার আয়তন অনুসারে ভারতের নদনদীকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
  1. প্রধান নদনদী: গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, নর্মদা, তাপ্তী, মহানদী, গোদাবরী, সবরমতী, কৃয়া, মাহী, ব্রাহ্মণী, সুবর্ণরেখা, পেননার ও কাবেরী—নদীর অববাহিকার আয়তন 20000 বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। অববাহিকার আয়তন খুব বড়ো বলে নদনদীগুলিকে প্রধান নদনদী বলা হয়।
  2. মাঝারি নদনদী: ভারতে 46টি নদী আছে, যেগুলির প্রত্যেকটির অববাহিকার আয়তন 2000 থেকে 20000 বর্গকিলোমিটারের মধ্যে। অববাহিকার আয়তন মাঝারি বলে নদনদীগুলিকে মাঝারি নদনদী বলা যায়। দক্ষিণ ভারতের শরাবতী, ভাইগাই, পেরিয়ার, পালার, বৈতরণী প্রভৃতি এই ধরনের নদনদী।
  3. ছোটো নদনদী: ভারতের প্রায় 55টি নদীর প্রত্যেকটির অববাহিকার আয়তন 2000 বর্গকিলোমিটারেরও কম। অববাহিকার আয়তন কম বলে এদের ছোটো নদনদী বলা যায় । লুনি, বানস, রাচোল, দমন গঙ্গা প্রভৃতি এই ধরনের নদনদী।
4. উত্তর ভারতের নদীগুলির বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – উত্তর ভারতের নদীগুলির বৈশিষ্ট্য
  1. নিত্যবহতা: সুউচ্চ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হওয়ায় নদীগুলি বৃষ্টির জল ও বরফগলা জলে পুষ্ট, তাই নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে অর্থাৎ নদীগুলি নিত্যবহ।
  2. গতিপথের স্পষ্টতা: নদীগুলির উচ্চগতি, মধ্যগতি ও নিম্নগতি অধিকাংশই সুস্পষ্ট।
  3. নদীর গতিপথের প্রকৃতি: নদীগুলির অধিকাংশই নবীন এবং সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রায়ই গতিপথ পরিবর্তন করে। এজন্য নদীগুলির গতিপথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।
  4. নদীর প্রবাহপথে নির্মিত খাত: নদীগুলি অনেকটা পথ পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর খাত খুব গভীর হয় (সংকীর্ণ ‘V’ বা ‘I’ আকৃতির)।
  5. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া সমভূমিতে নদীর স্রোত কম বলে নদীগুলির সামান্য অংশই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল।
  6. নদীর দৈর্ঘ্য: নদীগুলি দৈর্ঘ্যে খুব বড়ো।
  7. পলি সঞ্চয়: পার্বত্য অঞ্চলে নদীগুলি খরস্রোতা। এজন্য ভূমিক্ষয় বেশি হয় এবং ক্ষয়িত পদার্থগুলি সমভূমিতে সঞ্চয় করে।
5. আদর্শ নদী কাকে বলে? গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে কেন? 
উত্তর – আদর্শ নদী : যে নদীর গতিপথে ক্ষয়কার্য-প্রধান পার্বত্যপ্রবাহ বা উচ্চগতি, বহনকার্য-প্রধান সমভূমিপ্রবাহ বা মধ্যগতি এবং সঞ্চয়কার্য-প্রধান বদ্বীপপ্রবাহ বা নিম্নগতি সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়, সেই নদীকে আদর্শ নদী বলে।
গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলার কারণ :গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। এই উৎসস্থল থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গা নদীর পার্বত্যপ্রবাহ বা উচ্চগতি, হরিদ্বার থেকে রাজমহল পর্যন্ত সমভূমিপ্রবাহ বা মধ্যগতি এবং রাজমহল থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল অর্থাৎ মোহানা পর্যন্ত বদ্বীপপ্রবাহ বা নিম্নগতি লক্ষ করা যায়। যেহেতু গঙ্গা নদীর গতিপথে তিনটি গতিই সুস্পষ্ট, তাই গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে।
6. ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ কেন?
অথবা, অসমে প্রতিবছর বন্যা হয় কেন? 
উত্তর – ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ হওয়ার কারণ:অসমের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র। প্রায় প্রতিবছরই বর্ষাকালে এই ব্রক্ষ্মপুত্র নদে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়, ফলে অসমের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার কবলে পড়ে, কারণ—
  1. ভূমির ঢাল কম:ব্রক্ষ্মপুত্র নদ অসমের যে অংশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেখানে ভূমির ঢাল খুবই কম। এজন্য ব্রহ্মপুত্র নদের গতি অত্যন্ত ধীর। তার ফলে ঊর্ধ্বপ্রবাহ থেকে যখন বিপুল পরিমাণ জলরাশি ব্রহ্মপুত্রের মধ্যপ্রবাহে অর্থাৎ অসমে চলে আসে তখন তা দ্রুত নদীখাত দিয়ে নিম্নপ্রবাহে বয়ে যেতে না পেরে দু-কূল ছাপিয়ে অসমে বন্যার সৃষ্টি করে।
  2. অগভীর নদীখাত: অসমে ব্রহ্মপুত্রের গতি অতি ধীর বলে নদীর বহন ক্ষমতাও খুব কম। ব্রহ্মপুত্র এবং তার উপনদীগুলি তাদের ঊর্ধ্বপ্রবাহ অঞ্চল থেকে যে পরিমাণ পলি বহন করে আনে তার বেশিরভাগই এখানকার নদীখাতে জমা হয়। এইভাবে বহুবছর ধরে পলি সঞ্চিত হওয়ার ফলে অসমে ব্রহ্মপুত্র নদীখাতের গভীরতা বর্তমানে যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে ব্রক্ষ্মপুত্রে জলের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেই সীমিত ধারণ ক্ষমতার জন্য তা দু-কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
  3. প্রচুর বৃষ্টিপাত: গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে সাংপো নদ ঊর্ধ্বপ্রবাহে যখন তিব্বত থেকে প্রচুর পরিমাণে বরফগলা জল বহন করে আনে, সেই সময় অসমেও প্রবল বর্ষণ হয়। অগভীর ব্রহ্মপুত্রের খাতে যখন ওই বরফগলা জল ও বৃষ্টির জল এসে পড়ে, তখন তা বহন করার ক্ষমতা ব্রহ্মপুত্রের আর থাকে না। ফলে দু-কূল ছাপিয়ে অসমের বিস্তীর্ণ এলাকাকে প্লাবিত করে।
7. ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে নদীটির বিভিন্ন নাম কী কী?
উত্তর – গতিপথে ব্রহ্মপুত্রের ভিন্ন ভিন্ন নাম
  1. সাংপো: তিব্বতের রাক্ষসতাল-মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে উৎপত্তির পর পূর্ব দিকে নামচা বারওয়া পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের নাম সাংপো।
  2. ডিহ: সাংপোর পর থেকে অরুণাচল প্রদেশের ওপর দিয়ে অসমের সদিয়া পর্যন্ত দক্ষিণমুখী প্রবাহপথের নাম ডিহং।
  3. ব্রক্ষ্মপুত্র: ডিবং ও লোহিত নদী ডিহংয়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সদিয়া থেকে (অসমের) ধুবড়ি পর্যন্ত এই তিনটি নদীর মিলিত পশ্চিমমুখী প্রবাহের নাম ব্রহ্মপুত্র।
  4. যমুনা: ধুবড়ির পর বাংলাদেশের আরিচা পর্যন্ত (ওখানেই ব্রহ্মপুত্র নদ পদ্মায় মিশেছে) এই নদীর দক্ষিণমুখী প্রবাহপথের নাম যমুনা। ওখান থেকে পদ্মা-যমুনার (ব্রহ্মপুত্র) মিলিত জলধারা পদ্মা নামে আরও কিছুটা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
8. দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমবাহিনী নদী-মোহানায় বদ্বীপ নেই কেন?
অথবা, আরব সাগরে পতিত নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ নেই কেন?
অথবা, নর্মদা ও তাপ্তী নদীর মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হয়নি কেন?
অথবা, ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমবাহিনী নদী-মোহানায় বদ্বীপ না থাকার কারণ: দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ পূর্ববাহিনী বা বঙ্গোপসাগরে পতিত নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ থাকলেও পশ্চিমবাহিনী বা আরব সাগরে পতিত নদীগুলির মোহানায় প্রায় উল্লেখযোগ্য কোনো বদ্বীপ নেই, কারণ—
  1. নদীগুলি স্বল্প দৈর্ঘ্যের: অধিকাংশ নদী স্বল্প দৈর্ঘ্যের বলে নদীর জলে পলি কম থাকে। যার জন্য নদী মোহানায় বদ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় না।
  2. খরস্রোতা: নর্মদা ও তাপ্তী অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ নদী। কিন্তু এই নদী দুটির মোহানাতেও বদ্বীপ নেই। কারণ, নর্মদা ও তাপ্তী নদী গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মোহানার কাছেও নদী দুটি বেশ খরস্রোতা। ফলে নদীর মোহানায় পলি সঞ্চিত হয়ে বদ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় না।
  3. ক্ষয়কার্য কম: এই নদী দুটি কঠিন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা গঠিত অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ক্ষয়কার্য কম হয়। ফলে নদীবাহিত বোঝার পরিমাণও যথেষ্ট কম। যার জন্য বদ্বীপ গঠিত হয় না।
  4. পলির পরিমাণ কম: নর্মদা ও তাপ্তী নদীর উপনদীর সংখ্যা কম হওয়ার জন্যও নদীবাহিত পলির পরিমাণ কম। তাই নদী মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হতে পারে না।
  5. মোহানায় সমুদ্রের ঢাল বেশি: কাম্বে উপসাগরের যে অংশে নদী দুটি এসে মিশেছে সেখানে সমুদ্রের তলার ঢাল খুব বেশি, ফলে মোহানায় পলি সঞ্চিত না হয়ে তা দূর সমুদ্রে চলে যায়। যার জন্য নর্মদা ও তাপ্তী নদীর মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হয়নি।
9. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী হলেও নর্মদা ও তাপি বা তাপ্তী নদী পশ্চিমবাহিনী কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী হলেও নর্মদা ও তাপি বা তাপ্তী নদী পশ্চিমবাহিনী হওয়ার কারণ : ভূমির ঢাল অনুসারে নদী প্রবাহিত হয়। যেহেতু দাক্ষিণাত্য মালভূমি পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু তাই মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি পূর্ববাহিনী। কিন্তু পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত সাতপুরা পর্বতের দুই পাশে (উত্তরে ও দক্ষিণে) চ্যুতির ফলে দুটি গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। ওই গ্রস্ত উপত্যকার ঢাল পশ্চিম দিকে। তাই নর্মদা ও তাপ্তী নদী ওই দুই চ্যুতির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য দাক্ষিণাত্য মালভূমির সাধারণ ঢালের বিপরীতমুখী হয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।
10. ভারতে গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদীর নাম লেখো। এই নদীর গতিপথ বর্ণনা করো।
উত্তর – গ্রন্থ উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী: ভারতের নর্মদা নদী উত্তরে বিন্ধ্য পর্বত ও দক্ষিণে সাতপুরা পর্বতের মধ্যবর্তী একটি গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এই নদীর গতিপথ : মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিশগড় রাজ্যের সীমানায় অবিস্থত মৈকাল পর্বতের 1057 মিটার উঁচু অমরকণ্টক শৃঙ্গ (ছত্তিশগড়) থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত রাজ্যের মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রায় 1312 কিমি পথ অতিক্রম করে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নর্মদার গতিপথ প্রায় সোজা-সরল এবং উপনদীর সংখ্যাও কম। কোলার ও হিরণ নর্মদার দুটি প্রধান উপনদী। নর্মদা নদীর প্রথম 300 কিমি গতিপথে কপিলধারা ও ধুঁয়াধার নামে দুটি বিখ্যাত জলপ্রপাত দেখা যায়। গুজরাতের ভারুচ জেলায় এসে নর্মদা নদী সমতল অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এরপর খাম্বাত উপসাগরে মেশার আগে প্রায় 20 কিমি চওড়া একটি প্রশস্ত খাঁড়ি নর্মদা নদীতে গঠিত হয়েছে।
11. জলসম্পদের উৎস হিসেবে হ্রদ ও জলাশয়ের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – জলসম্পদের উৎস হিসেবে হ্রদ ও জলাশয়ের ভূমিকা: ভারতে ভূপ্রাকৃতিক গঠনের বৈচিত্র্য এবং জলনির্গম ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হ্রদ এবং জলাশয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে—
  1. পানীয় জলের উৎস: হ্রদের জল পানীয় জলের প্রধান উৎস।
  2. বন্যা নিয়ন্ত্রণ: হ্রদ এবং জলাশয় স্থানীয়ভাবে অতিরিক্ত জল ধরে রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে।
  3. কৃষিতে সহায়তা: এইসব জলাধারের জল শুষ্ক অঞ্চলে কৃষিতে সহায়তা করে।
  4. ভৌমজলের ভাণ্ডার: জলাশয়ে জল ধরে রাখলে ভৌমজলের ভাণ্ডার ভরে ওঠে।
  5. জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য: জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে হ্রদ ও জলাশয়ের ভূমিকা রয়েছে।
  6. মৎস্য আহরণ: হ্রদে প্রচুর পরিমাণে মাছ জন্মায়। হ্রদ ও জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে।
  7. জলপথ হিসেবে ব্যবহার: : হ্রদ ও বড়ো বড়ো জলাশয়গুলি স্থানীয়ভাবে জলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  8. পর্যটন কেন্দ্র: পর্যটন কেন্দ্ররূপেও হ্রদ ও জলাশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
12. ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির নাম করো।
উত্তর – ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির নাম: ভারতের রাষ্ট্রীয় বাঢ় আয়োগ (Rashtriya Barh Ayog)-এর মতে, ভারতের সর্বাধিক বন্যাপ্রবণ রাজ্যগুলি হল— (1) উত্তরপ্রদেশ, (2) বিহার, (3) পাঞ্জাব, (4) রাজস্থান, (5) অসম, (6) পশ্চিমবঙ্গ, (7) হরিয়ানা, (৪) ওডিশা, (9) গুজরাত ও (10) অন্ধ্রপ্রদেশ। ভারতের মোট বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের 90 শতাংশের বেশি এই দশটি রাজ্যের অন্তর্গত। উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা, যমুনা, ঘর্ঘরা, গণ্ডক অববাহিকা, বিহারের কোশী ও শোন অববাহিকা, পাঞ্জাবের পশ্চিমাংশ, হরিয়ানার দক্ষিণ-পূর্বাংশ, রাজস্থানের পূর্বাংশ, গুজরাতের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ দিক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওডিশার উপকূল অঞ্চল মূলত বন্যাপ্রবণ।
13. ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহার হলে পরিবেশে তার কী প্রভাব পড়ে?
উত্তর – ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশের ওপর প্রভাব: ভারতের যেসব স্থানে এখনও খালের মাধ্যমে বা ভূপৃষ্ঠীয় জলের ব্যবহার সম্ভব হয়ে ওঠেনি, সেখানে কূপ, নলকূপের মাধ্যমে ভৌমজল তুলে জলসেচ করা হয়। এতে পরিবেশে নানা প্রভাব পড়ে, যেমন—
  1. ভৌমজলতলের পতন: ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য ভৌমজলের ভাণ্ডার দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কুয়োগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্প ও মধ্যম গভীরতার নলকূপ থেকে জল ওঠা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
  2. আর্সেনিকের পরিমাণ বৃদ্ধি: আর্সেনিকপ্রবণ অঞ্চলে ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ভৌমজলে অতি ক্ষতিকারক আর্সেনিকের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। জলে অতিরিক্ত নাইট্রেট, ফ্লুরাইড-জাতীয় যৌগের পরিমাণও বেড়ে যায়।
  3. লবণতা বৃদ্ধি: ভৌমজল বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হলে জলের লবণতা বেড়ে যায়। ওই জল জমির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেয়।
  4. ভূমির অবনমন: বেশি পরিমাণে ভৌমজল ব্যবহার করলে ভূমির অবনমন ঘটতে পারে।
14. ভারতের নদনদীগুলির জল দূষিত হওয়ার কারণ কী? গঙ্গার দূষণ রোধের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
উত্তর – ভারতের নদনদীর জল দূষিত হওয়ার কারণ : (1) কলকারখানা, শহর-নগরের বিপুল আবর্জনারাশি প্রতিনিয়তই নদীতে এসে পড়ে। (2) কোথাও কোথাও নদীতে মৃত প্রাণীর দেহ ফেলা হয়। (3) কৃষিক্ষেত্রের বিষাক্ত কীটনাশক, রাসায়নিক সার প্রভৃতি ধুয়ে এসে নদীর জলে মেশে। (4) গৃহপালিত পশুদের নদীর জলে স্নান করানোর ফলে নদীর জল দূষিত হচ্ছে। (5) সর্বোপরি, পরিবেশদূষণ তথা জলদূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব নদনদীর জলকে নিরন্তর দূষিত করে চলেছে।
গঙ্গার দূষণ রোধে গৃহীত ব্যবস্থা: গঙ্গার জলদূষণ প্রতিকারের জন্য 1985 সালে সরকারি উদ্যোগে সেন্ট্রাল গঙ্গা অথরিটি নামে একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচিটি রূপায়ণের কাজ শুরু হয় 1986 সালে। এ ছাড়াও বর্তমানে নমামি গঙ্গে নামেও একটি কর্মসূচি রূপায়ণের কাজ চলছে। এইসব কর্মসূচির সম্পূর্ণ রূপায়ণ সম্ভব হলে গঙ্গার দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হবে বলে আশা করা যায়।
15. উত্তর ভারতের সমভূমিতে সেচখাল প্রথা বেশি দেখা যায় কেন?
উত্তর – উত্তর ভারতের সমভূমিতে সেচখাল প্রথা বেশি দেখা যাওয়ার কারণ: দক্ষিণ ভারত থেকে উত্তর ভারতে বেশি সেচখাল দেখা যায়, কারণ—
  1. নিত্যবহ নদী: উত্তর ভারতের নদীগুলি হিমালয়ের বরফগলা জলে সৃষ্ট ও পুষ্ট। তাই এগুলি চিরপ্রবাহী। এইসব নদী থেকে কাটা খালগুলিতেও সারাবছর জলপ্রবাহ বজায় থাকে বলে কৃষিতে জলসেচ করা যায়।
  2. সমতল ভূমিভাগ: উত্তর ভারতের ভূপ্রকৃতি সমতল। তাই খাল খনন করা সুবিধাজনক।
  3. নরম মাটি: উত্তর ভারতের সমভূমি নরম পালিমাটি দিয়ে গঠিত। এইরকম মাটিতে খাল খনন করা সুবিধাজনক।
  4. বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা: উত্তর ভারতের বহু নদীতেই বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। তাই এই পরিকল্পনার অধীনে অনেক খাল কাটা হয়েছে।
16. ভারতের কৃষিতে সেচখালের উপযোগিতা কতখানি?
উত্তর – ভারতের কৃষিতে সেচখালের উপযোগিতা : ভারতের কৃষিতে সেচখালের উপযোগিতা অনেক বেশি, যেমন—
  1. অনেক অঞ্চলজুড়ে জলসেচ: সেচখালের মাধ্যমে একসাথে অনেকটা জমি জলসেচের আওতায় আনা সম্ভব।
  2. বন্যা নিয়ন্ত্রণ: বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল খালের মাধ্যমে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যায়, তাই এর সাহায্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।
  3. জমির উর্বরতা বৃদ্ধি: সেচখালের মাধ্যমে নদীর জল প্রচুর পলি বহন করে কৃষিজমিতে সঞ্চয় করে। এতে কৃষিজমিতে উর্বরতা বাড়ে।
  4. ভৌমজলের সংকট থেকে মুক্তি: কূপ বা নলকূপের জল বেশি পরিমাণ ব্যবহার করলে ভৌমজলের সংকট বাড়ে, কিন্তু সেচখালে ভূপৃষ্ঠীয় জল থাকে বলে ভৌমজলের সংকট না বাড়িয়ে বরং ভৌমজলের রিচার্জ করে।
17. দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ বেশি হয় কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ বেশি হওয়ার কারণ : দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে প্রচুর সংখ্যায় জলাশয় আছে, যেগুলি ব্যাপকভাবে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়। এর কারণগুলি হল—
  1. অপ্রবেশ্য শিলাস্তর: এখানে মাটির নীচে অধিকাংশ অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকায় বৃষ্টির জল ভূগর্ভে বিশেষ সঞ্চিত হয় না।
  2. ঢেউ-খেলানো ভূমি: এখানকার ভূপৃষ্ঠ ঢেউ-খেলানো বা তরঙ্গায়িত বলে বর্ষার উদ্বৃত্ত জল সহজেই নিম্ন অঞ্চলে ধরে রাখা যায়।
  3. খাল খননে অসুবিধা: বেশিরভাগ স্থানে কঠিন শিলাস্তর এবং বন্ধুর ভূমিরূপের জন্য খাল খনন করা কঠিন ও ব্যয়সাধ্য।
  4. নদীর জল পাওয়ার অসুবিধা: এখানকার নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট, অর্থাৎ চিরপ্রবাহী নয়। তাই সারাবছর সেচের জন্য নদীর জল পাওয়া যায় না। এইসব কারণের জন্য দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের দ্বারা জলসেচের গুরুত্ব ও ব্যবহার খুব বেশি।
18. দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে নিত্যবহ খালের সংখ্যা অনেক বেশি কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে নিত্যবহ খালের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারণ : যেসব নদীতে সারাবছর জল থাকে সেইসব নদী থেকে খনন করা খালগুলিকে বলে নিত্যবহ খাল। দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট বলে এগুলি গ্রীষ্মকালে প্রায় শুকিয়ে যায়। এজন্য এইসব নদী থেকে নিত্যবহ খাল খনন করা খুবই অসুবিধাজনক। এর ফলে দক্ষিণ ভারতে নিত্যবহ খালের সংখ্যাও খুব কম। কিন্তু উত্তর ভারতের নদীগুলি তুষারগলা জলে পুষ্ট বলে নদীগুলিতে সারাবছরই জল থাকে, অর্থাৎ এগুলি নিত্যবহ। তাই উত্তর ভারতেই নিত্যবহ খালের সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন—উত্তর ভারতের পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে অনেক নিত্যবহ খাল আছে।
19. কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর – কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা
  1. নদী বা খালের জলের অসুবিধা দূর: যেখানে নদী বা খালের মাধ্যমে জল পাওয়ার সুবিধা নেই, সেখানে সেচের কাজে কূপ ও নলকূপ ব্যবহৃত হয়।
  2. স্পল্প ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ: কূপ ও নলকূপ খনন কম ব্যয়বহুল ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তাই সাধারণ কৃষকও এই পদ্ধতিতে জলসেচ করতে পারে।
  3. যে-কোনো স্থানে নলকূপ খনন: ইচ্ছেমতো এবং প্রয়োজনমতো কৃষিজমির কাছেই কূপ ও নলকূপ খোঁড়া যায়।
  4. প্রয়োজনমতো জল তোলা: কূপ ও নলকূপ প্রয়োজনমতো জল তোলা যায়।
  5. যে-কোনো সময়ে সেচের সুবিধা: সুবিধামতো সময়ে ও নিয়ন্ত্রিত হারে সেচ দেওয়া যায়।
কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জলসেচের অসুবিধা
  1. স্বল্প পরিমাণ জমিতে জলসেচ: কূপ এবং নলকূপের সাহায্যে একসঙ্গে খুব বেশি পরিমাণ জমিতে জলসেচ করা যায় না।
  2. ভৌমজলস্তর হ্রাস: গ্রীষ্মকালে বা শুখা মরশুমে ভৌমজলের স্তর নেমে গেলে কূপ এবং নলকূপ অকেজো হয়ে যায়।
  3. দূষকের মাত্রা বৃদ্ধি: কূপ থেকে বেশি পরিমাণে ভৌমজল উত্তোলনের ফলে জলে আর্সেনিক, ফ্লুরাইড প্রভৃতি দূষকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
  4. পানীয় জলের সংকট: কূপ থেকে অধিক পরিমাণে জল তোলা হলে আশেপাশের এলাকায় পানীয় জলের সংকট সৃষ্টি হয়।
  5. মৃত্তিকার লবণতা বৃদ্ধি: কূপ ও নলকূপের জলস্তর নেমে যাওয়ায় মৃত্তিকার লবণতা বৃদ্ধি পায়।
20. খালের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি কী কী ?
উত্তর – খালের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা
  1. সারাবছর কৃষিকাজ: খাল যদি নিত্যবহ হয় তবে সারাবছর ধরে জলসেচ করা যায়, অর্থাৎ সারাবছর কৃষিকাজ সম্ভব।
  2. কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: খাল তৈরিতে প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও পরবর্তীকালে ওই খালের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক কম।
  3. পলি সঞ্চয়: নদীর পলি খালের জলের সঙ্গে আসে বলে কৃষিজমিতেও পলি সঞ্চয় ঘটে, তাই কৃষিজমি উর্বর হয়ে ওঠে।
খালের মাধ্যমে জলসেচের অসুবিধা
  1. সীমাবদ্ধ স্থান: কেবল সমভূমি অঞ্চলেই জলসেচ করা সম্ভব।
  2. লবণাক্ততা: এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত জলসেচ করা হয় বলে মাটি অনেকসময় লবণাক্ত হয়ে যায়।
  3. বন্যার সৃষ্ট: বর্ষাকালে খালের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত জলপ্রবাহ অনেকসময় বন্যার সৃষ্টি করে।
21. জল সংরক্ষণ কী? জল সংরক্ষণের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – জলসংরক্ষণ: পৃথিবীতে স্বাদু জলের পরিমাণ সীমিত। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের চারপাশে বিভিন্নভাবে বিপুল পরিমাণে জলের অপচয় হয় বা জল দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এজন্য, যে বৈজ্ঞানিক উপায়ে একদিকে জলের অপচয় রোধ করা যায় এবং অন্যদিকে জলের প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক ধর্ম বা উপযোগিতা বজায় রাখা যায়। এর ফলস্বরূপ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনমতো জলের চাহিদা মেটানো যায়, তাকেই বলে জল সংরক্ষণ।
জল সংরক্ষণের গুরুত্ব
  1. পানীয় জলের জোগান বজায় রাখা: বর্তমানে পানযোগ্য স্বাদুজলের বিপুল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই জলের জোগান বজায় রাখা খুব জরুরি।
  2. কৃষিকাজে জলের চাহিদা পূরণ: কৃষিকাজে জলের চাহিদা পূরণের জন্য জল সংরক্ষণ অত্যন্ত দরকারি।
  3. শিল্প ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে জলের জোগান বজায় রাখা: শিল্প ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে পর্যাপ্ত জলের জোগান বজায় রাখার জন্য জল সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন।
এ ছাড়া, ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত স্বাদু জলের জোগান নিশ্চিত করার জন্যও জল সংরক্ষণ করা দরকার।
22. বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি লেখো।
উত্তর – বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতি: বৃষ্টিপাত হলে তার বেশিরভাগ অংশই মাটির ওপর দিয়ে গড়িয়ে নদীর, মাধ্যমে সমুদ্রে চলে যায়। বৃষ্টির এই জলকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তবে মানুষের প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা অনেকটাই মেটে। দুটি পদ্ধতিতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা যায়—
  1. ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহকে আটকে রেখে: খোলা জায়গা বা মাঠের ওপর দিয়ে নালিপথে প্রবাহিত বৃষ্টির জলাধারকে কোনো জলাধারের সঙ্গে সংযুক্ত করে সেখানে ওই জল সংরক্ষণ করা যায়। ওই জলাধারের জল কৃষিতে, শিল্পে, গৃহস্থালির কাজে, পানীয় জলের আধার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জলের জোগান কিছুটা বাড়ে। একই সাথে ভৌমজলের স্তরও সমৃদ্ধ হয়।
  2. বাড়ির ছাদে বৃষ্টির জল ধরে রেখে: বৃষ্টির জল বাড়ির ছাদে পড়লে পাইপের মাধ্যমে তাকে সংগ্রহ করে মাটির নীচের জলাধারে বা পাতকুয়াতে জমা করা যায়। অনেকগুলি জলাধার নির্মাণ করলে ওই জলাধারের জল যেমন সারাবছরই ব্যবহার করা যেতে পারে। তেমনই এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডারকে রিচার্জ করা যায়।
23. বৃষ্টির জল সংরক্ষণের সুবিধা কী?
উত্তর – বৃষ্টির জল সংরক্ষণের সুবিধা : বৃষ্টির জল সংরক্ষণের অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে—
  1. পানীয় জলের উৎস: বৃষ্টির জল পরিশ্রুত করে পানীয় জল হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
  2. ভৌমজলের সঞ্চয়: বৃষ্টির জল চুইয়ে চুইয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এতে ভৌমজলের সঞ্চয় বাড়ে।
  3. কৃষি, শিল্প, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার: সংরক্ষণ করা বৃষ্টির জল কৃষিতে, শিল্পে, গৃহস্থালির নানা কাজে সারাবছর ব্যবহার করা যায়।
  4. স্বল্প ভূগর্ভস্থ জলের সমস্যার সমাধান: যেসব অঞ্চলে জল কম পাওয়া যায় সেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমে জলের সমস্যার সমাধান হয়।
24. বৃষ্টির জল সংরক্ষণে তামিলনাড়ুর ভূমিকা কতখানি?
উত্তর – বৃষ্টির জল সংরক্ষণে তামিলনাড়ুর ভূমিকা: বৃষ্টির জল সংরক্ষণে তামিলনাড়ু রাজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তামিলনাড়ু এমন একটি রাজ্য যেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ একটি জরুরি এবং বাধ্যতামূলক বিষয়। 2001 সালে তামিলনাড়ু সরকার কর্তৃক একটি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্প বা Rain water Harvesting Model গৃহীত হয়। যা সমগ্র তামিলনাড়ু জুড়ে ভৌমজল সঞ্চয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। এই প্রকল্পের অধীনে—
  1. জল সংরক্ষণের সুবিধাযুক্ত নতুন বাড়ি নির্মাণ: প্রতিটি নতুন বাড়ি তৈরির সময় এমন ব্যবস্থা নিতে হয় যাতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের সুবিধা থাকে।
  2. পুরোনো বাড়িতে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ: প্রতিটি পুরোনো বাড়ির ছাদ, বিভিন্ন জলাশয়, মন্দিরসংলগ্ন জলাশয় এবং ছোটো-বড়ো পুকুরগুলিতে যাতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হয়।
  3. জল সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের সাহায্যে প্রচার ছাড়াও নানা হোর্ডিং, ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে এবং এমনকি বাড়ি বাড়ি ঘুরেও প্রচার চালানো হচ্ছে।
  4. সরকারের সহায়তা প্রদান: বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদান করে। এইসব ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে বর্তমানে রাজধানী চেন্নাই-সহ রাজ্যের বড়ো বড়ো শহরগুলির অধিকাংশ সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও শিল্পকাজে ব্যবহৃত বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে।
    এসবের ফলে তামিলনাড়ু বর্তমানে সারা দেশের মধ্যে বৃষ্টির জল সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
25. কয়েকটি বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার নাম করো।
উত্তর – কয়েকটি বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা: ভারতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বহুমুখী নদী উন্নয়ন পরিকল্পনা হল—
  1. ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা: পাঞ্জাবে বিপাশা ও শতদ্রু নদীকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে ভাকরা নাঙ্গাল পরিকল্পনা। এটি ভারতের বৃহত্তম নদী উপত্যকা পরিকল্পনা।
  2. হিরাকুদ পরিকল্পনা: ওডিশা রাজ্যের মহানদীর ওপর জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে রূপায়িত হয়েছে হিরাকুদ পরিকল্পনা।
  3. ময়ূরাক্ষী প্রকল্প: ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সীমানায়, ঝাড়খণ্ডের ম্যাসাঞ্জোরে ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর নদীবাঁধ এবং পশ্চিমবঙ্গের সিউড়ির তিলপাড়ায় সেচবাঁধ তৈরি হয়েছে। এখানকার সেচবাঁধগুলির সাহায্যে বীরভূম, মুরশিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় জলসেচ করা হয়।
  4. কোশী পরিকল্পনা: বিহারের কোশী নদীর ওপর কোশী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে।
  5. গণ্ডক পরিকল্পনা: উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের যৌথ উদ্যোগে গণ্ডক নদীর ওপর গণ্ডক পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে।
  6. নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা: তেলেঙ্গানায় কৃয়া নদীকে কেন্দ্র করে রূপায়িত নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা।
26. দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি লেখো।
উত্তর – দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য : দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার বহুমুখী উদ্দেশ্যগুলি হল—
  1. নিম্ন উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ: এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নিম্ন উপত্যকা অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা।
  2. খনিজ দ্রব্য উত্তোলন ও ধাতব শিল্পের উন্নতিসাধন: খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দামোদর উপত্যকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে নানাবিধ খনিজ দ্রব্যের উত্তোলন বৃদ্ধি এবং ধাতব শিল্পের উন্নতি সাধন করা।
  3. কৃষির উন্নতিসাধন: জলাধারের জল জলসেচের কাজে ব্যবহার করে কৃষিব্যবস্থার উন্নতিসাধন ও পতিত জমি পুনরুদ্ধার করা।
  4. পরিবেশদূষণ রোধ ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ: দামোদর উপত্যকা অঞ্চলের পরিবেশদূষণ রোধ ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা।
  5. পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ ঘটানো: পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ ঘটানো প্রভৃতি এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি।

1. উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের তিনটি করে নদীর নাম করো।
উত্তর – উত্তর ভারতের নদী: উত্তর ভারতের তিনটি নদী হল গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও সিন্ধু।
দক্ষিণ ভারতের নদী: দক্ষিণ ভারতের তিনটি নদী হল গোদাবরী, কৃয়া ও কাবেরী।
2. ভারতের নদনদীর দুটি প্রধান উৎস অঞ্চল কী কী?
উত্তর – ভারতের নদনদীর প্রধান উৎস: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি থেকেই ভারতের অধিকাংশ নদনদীর উৎপত্তি হয়েছে। এদের মধ্যে উত্তর ভারতের বেশিরভাগ নদী হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে এবং দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
3. উত্তর ভারতের নদনদীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – উত্তর ভারতের নদনদীর বৈশিষ্ট্য : উত্তর ভারতের নদনদীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) উত্তর তের নদীগুলি অধিকাংশই উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে সৃষ্টি হয়েছে। (2) নদীগুলি চিরপ্রবাহী। (3) নদী অববাহিকাগুলি বৃহৎ আয়তনের। (4) নদীগুলি দীর্ঘ এবং নিম্নপ্রবাহে বন্যাপ্রবণ।
4. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি চিরপ্রবাহী কেন?
উত্তর – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি চিরপ্রবাহী হওয়ার কারণ : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি প্রধানত বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় সারাবছরই নদীগুলিতে জল থাকে। তাই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি চিরপ্রবাহী হয়।
5.গঙ্গার দুটি উপনদী ও দুটি শাখানদীর নাম করো।
অথবা, গঙ্গার যে-কোনো দুটি উপনদীর নাম করো।
উত্তর – গঙ্গার উপনদী: গঙ্গার দুটি উপনদী হল যমুনা ও রামগঙ্গা।
গঙ্গার শাখানদী: গঙ্গার দুটি শাখানদী হল ভাগীরথী-হুগলি এবং পদ্মা।
6. গঙ্গার বাম ও ডান তীরের উপনদীগুলির নাম লেখো।
উত্তর – গঙ্গার বামতীরের উপনদী: গঙ্গার বামতীরের উপনদীগুলি হল রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, কোশি প্রভৃতি।
গঙ্গার ডানতীরের উপনদী: গঙ্গার ডানতীরের উপনদীগুলি হল যমুনা, শোন প্রভৃতি।
7. গঙ্গার চারটি উপনদীর নাম লেখো।
উত্তর – গঙ্গার উপনদী: গঙ্গার চারটি উপনদী হল গোমতী, ঘর্ঘরা, যমুনা এবং শোন।
8. গঙ্গার দুটি প্রধান শীর্ষনদীর নাম করো। এরা কোথায় মিলিত হয়ে গঙ্গা নদীর সৃষ্টি করেছে?
উত্তর – গঙ্গার প্রধান শীর্ষনদী : গঙ্গার দুটি প্রধান শীর্ষনদীর নাম হল ভাগীরথী এবং অলকানন্দা।
ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলনস্থল : উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেবপ্রয়াগে এই দুটি নদী মিলিত হয়ে গঙ্গা নদীর সৃষ্টি করেছে।
9. গঙ্গার প্রধান উপনদীর নাম কী? এর উৎপত্তি কোথায়?
উত্তর – গঙ্গার প্রধান উপনদী : গঙ্গার প্রধান উপনদী হল যমুনা।
যমুনার উৎপত্তিস্থল : যমুনা নদীটি কুমায়ুন হিমালয়ের যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
10. গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থলের নাম কী ?
উত্তর – গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল : উচ্চ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় 4023 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল।
11. সিন্ধুর পাঁচটি উপনদীর নাম কী?
উত্তর – সিন্ধুর উপনদী : সিন্ধুর পাঁচটি উপনদী হল—শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তা।
12. সিন্ধুর উৎপত্তিস্থল কোথায়?
উত্তর – সিন্ধুর উৎপত্তিস্থল : তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে কৈলাস পর্বতের সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে সিন্ধু উৎপন্ন হয়েছে।
13. ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি কোথায়? এর দুটি উপনদীর নাম করো।
উত্তর – ব্রক্ষ্মপুত্র নদের উৎপত্তি : তিব্বতের রাক্ষসতাল মানস সরোবরের প্রায় 90 কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে চেমায়ুং দুং নামে একটি হিমবাহ থেকে ব্রক্ষ্মপুত্রের উৎপত্তি।
ব্রহ্মপুত্রের উপনদী: ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি উপনদী হল সুবনসিরি এবং লোহিত।
14. ব্রহ্মপুত্রের বাম ও ডান তীরের উপনদীগুলির নাম লেখো।
উত্তর – ব্রক্ষ্মপুত্রের বাম ও ডান তীরের উপনদী : ব্রহ্মপুত্রের বামতীরের উপনদী হল লোহিত, ধানসিরি, কপিলী প্রভৃতি এবং ডানতীরের উপনদী হল সুবনসিরি, মানস, তিস্তা প্রভৃতি।
15. ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপের নাম ও অবস্থান উল্লেখ করো।
উত্তর – ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ ও তার অবস্থান : ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপের নাম হল ব্রত্মপুত্র নদের মাজুলি। এই নদীদ্বীপটি অসম রাজ্যের মাজুলি জেলায় অবস্থিত।
16. দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির যে-কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির বৈশিষ্ট্য: দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট। এজন্য শুষ্ক ঋতুতে নদীগুলিতে বিশেষ জল থাকে না। (2) নদীগুলি দৈর্ঘ্যে ছোটো।
17. দক্ষিণ ভারতের কোন্ কোন্ নদীর মোহানায় বদ্বীপ আছে?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের বদ্বীপ গঠনকারী নদী: দক্ষিণ ভারতের গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা এবং কাবেরী নদীর মোহানায় বদ্বীপ আছে।
18. গোদাবরী ও নর্মদা নদীর উৎসস্থল ও মোহানা কোথায় ?
উত্তর – গোদাবরী নদীর উৎসস্থল ও মোহানা : গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার অন্তর্গত পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি রাজামুন্দ্রীর কাছে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
নর্মদা নদীর উৎসস্থল ও মোহানা: নর্মদা নদী মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত মৈকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নর্মদা নদীটি ভারুচের কাছে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে।
19. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী হওয়ার কারণ: মহানদী, গোদাবরী, কুম্না, কাবেরী, ভাইগাই, পেন্নার প্রভৃতি দাক্ষিণাত্য মালভূমির উল্লেখযোগ্য নদী। এইসব নদী দাক্ষিণাত্য মালভূমির বিভিন্ন অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং শেষে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নদীগুলি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে, কারণ দাক্ষিণাত্য মালভূমি পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু।
20. দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি নৌচলাচলে উপযুক্ত নয় কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি নৌচলাচলে উপযুক্ত না হওয়ার কারণ : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি নৌচলাচলে উপযুক্ত নয়, কারণ— (1) এখানকার নদীগুলি অধিকাংশই বৃষ্টির জলে পুষ্ট। তাই বর্ষাকাল ছাড়া এই নদীগুলিতে জল প্রায় থাকেই না, অর্থাৎ এই নদীগুলি অনিত্যবহ। (2) দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির গতিপথের বেশিরভাগটাই মালভূমি অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীগুলি খরস্রোতা। তাই নদীগুলি নৌপরিবহণে উপযুক্ত নয়।
21. দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি চিরপ্রবাহী নয় কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি চিরপ্রবাহী না হওয়ার কারণ : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি নাতিউচ্চ মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তাই কোনো নদীই হিমবাহ গলা জল থেকে সৃষ্টি হয়নি। নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট। সেইজন্য কেবল বর্ষাকালেই দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে জলপ্রবাহ বজায় থাকে অর্থাৎ নদীগুলি চিরপ্রবাহী হয় না ৷
22. দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা হওয়ার কারণ : দক্ষিণ ভারতের ভূমিরূপ মালভূমিপ্রধান। সেজন্য সেখানকার ভূমি যথেষ্ট ঢালু, বন্ধুর, উচুনীচু, ঢেউ-খেলানো এবং বহুস্থানেই চ্যুতিযুক্ত। এই ধরনের ভূমিরূপের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলেই দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে সবসময়ই স্রোত বেশি থাকে, অর্থাৎ নদীগুলি খরস্রোতা।
23. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকটি হ্রদের নাম লেখো।
উত্তর – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের হ্রদ : হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে অনেকগুলি হ্রদ রয়েছে, এর মধ্যে— (1) কয়েকটি মিষ্টি বা স্বাদুজলের হ্রদ হল ডাল, উলার, নৈনিতাল, ভীমতাল প্রভৃতি এবং (2) কয়েকটি লবণাক্ত জলের হ্রদ হল সোমোরিরি, প্যাংগং প্রভৃতি।
24. গোদাবরীর কয়েকটি উপনদী ও শাখানদীর নাম করো।
উত্তর – গোদাবরীর উপনদী: গোদাবরীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপনদী হল-মঞ্ঝিরা, প্রাণহিতা, ইন্দ্রাবতী প্রভৃতি।
গোদাবরীর শাখানদী: গোদাবরীর শাখানদীগুলির মধ্যে গৌতমী ও বশিষ্ঠ প্রধান।
25. নর্মদা এবং তাপ্তী নদী একে অপরের সমান্তরালে প্রবাহিত হয় কেন?
উত্তর – নর্মদা ও তাপ্তী নদী একে অপরের সমান্তরালে প্রবাহিত হওয়ার কারণ : নর্মদা এবং তাপ্তী নদী দুটি আসলে দুটি গ্রস্ত উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই গ্রস্ত উপত্যকা দুটি একে অপরের সমান্তরালে অবস্থান করছে বলে নর্মদা এবং তাপ্তী নদীও একে অপরের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়েছে।
26. পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢাল থেকে নির্গত কয়েকটি নদীর নাম লেখো।
উত্তর – পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমচাল থেকে নির্গত নদী: পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢাল থেকে কয়েকটি ক্ষুদ্র নদী উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে। এগুলির মধ্যে শরাবতী, উলহাস, নেত্রবতী, সাবিত্রী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
27. ভারতের একটি পূর্ববাহিনী এবং একটি পশ্চিমবাহিনী নদীর নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের পূর্ববাহিনী ও পশ্চিমবাহিনী নদী: ভারতের একটি পূর্ববাহিনী নদী হল মহানদী এবং একটি পশ্চিমবাহিনী নদী হল নর্মদা।
28. ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী কেন?
উত্তর – ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী হওয়ার কারণ: উত্তর ভারতের সমভূমি এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমি সাধারণভাবে পূর্বে ঢালু বলে উত্তর ভারতের প্রধান নদী গঙ্গা-সহ দাক্ষিণাত্যের অধিকাংশ নদী পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কিন্তু গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে নর্মদা ও তাপ্তী নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে মিশেছে।
29. অন্তর্বাহিনী নদী কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : যেসব নদী উচ্চভূমি বা পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে দেশের অভ্যন্তরে কোনো হ্রদ বা আবদ্ধ জলাভূমিতে মেশে, অথবা মরুভূমিতে গিয়ে শুকিয়ে যায়, সেই নদীগুলিকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে। উদাহরণ : রাজস্থানের লুনি নদী আজমেরের কাছে পুষ্কর উপত্যকা থেকে উৎপন্ন হয়ে কচ্ছের রান অঞ্চলে গিয়ে মিশেছে।
30. অন্তঃসলিলা বা ফল্গু নদী কাকে বলে ?
উত্তর – সংজ্ঞা : নদী সাধারণত ভূপৃষ্ঠ বরাবর প্রবাহিত হয়। কিন্তু চুনাপাথরগঠিত অঞ্চলে কোনো কোনো সময় চুনাপাথরের সচ্ছিদ্রতা বা প্রবেশ্যতা বেশি (চুনাপাথর জলে দ্রবীভূত হয়) বলে নদী ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই ধরনের নদীকে বলে অন্তঃসলিলা বা ফল্গু নদী। বৈশিষ্ট্য : চুনাপাথরগঠিত অঞ্চল পার হয়ে নদীটি পুনরায় ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করে। অন্ধ্রপ্রদেশের বোরাগুহালুতে গোস্থানী নদী এইভাবে প্রবাহিত হয়েছে।
31. লুনি নদীর প্রবাহপথ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – লুনি নদীর প্রবাহপথ : উত্তর ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য অন্তর্বাহিনী নদী লুনি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় 530 কিমি। লুনি রাজস্থান মরু অঞ্চলের একটি নদী। আজমেরের কাছে পুষ্কর উপত্যকা থেকে উৎপন্ন হয়ে লুনি কচ্ছের রান অঞ্চলে পড়েছে। এই নদীটির জল লোনা বলে এর নাম লুনি।
32. ভারতের এমন দুটি নদীর নাম করো যাদের গতিপথে জলপ্রপাত রয়েছে।
উত্তর – গতিপথে জলপ্রপাত সৃষ্টিকারী নদী: ভারতের এমন দুটি নদী যার গতিপথে জলপ্রপাত আছে, তা হল কাবেরী নদী (শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত) এবং সরাবতী নদী (গেরসোপ্পা জলপ্রপাত)।
33. ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম কী? এটি কোন নদীর গতিপথে অবস্থিত?
উত্তর – ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত: ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম গেরসোপ্পা (উচ্চতা 253 মি)।
অবস্থান : পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল থেকে উৎপন্ন সরাবতী নদীর গতিপথে এই জলপ্রপাতটির সৃষ্টি হয়েছে। [ভিন্নমতে, কর্ণাটকের কুকিল জলপ্রপাত (উচ্চতা 455 মি)-কে ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত মনে করা হয়।]
34. পূর্ববর্তী নদী কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : যে নদী তার অববাহিকার নতুন করে উত্থানের ফলে সৃষ্ট ভূগাঠনিক প্রবণতা তথা ঢাল অনুসরণ না করে নিজের উপত্যকাকে গভীরভাবে কেটে আগেকার গতিপথ বজায় রাখতে সমর্থ হয়, সেই নদীকে পূর্ববর্তী নদী বলে। উদাহরণ—হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি পূর্ববর্তী নদী।
35. ভারতে কী কী জলসেচ পদ্ধতি আছে?
উত্তর – ভারতে বিভিন্ন প্রকার জলসেচ পদ্ধতি : ভারতের বিভিন্ন অংশে ভূগর্ভের জলস্তর, ভূপ্রকৃতি, মাটি, উম্নতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়। যথা— (1) কূপ ও নলকূপ, (2) জলাশয় এবং (3) সেচখাল।
36. ভারতের কয়েকটি খালের নাম করো।
উত্তর – ভারতের খাল : ভারতের কয়েকটি খালের নাম হল—উচ্চ গঙ্গা খাল, নিম্ন গঙ্গা খাল, সারদা খাল, ইন্দিরা গান্ধি খাল, মেদিনীপুর খাল, দুর্গাপুর খাল প্রভৃতি।
37. প্লাবন খাল কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: যেসব নদী খালে বর্ষা বা বন্যার অতিরিক্ত জল বহন করে, সেই খালগুলিকে প্লাবন খাল বলে। বর্ষাকাল ছাড়া প্লাবন খালগুলিতে অন্য সময় তেমন জল থাকে না। উদাহরণ : কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ খাল।
38. নিত্যবহ খাল কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : যেসব নদীতে সারাবছর জল থাকে, সেইসব নদী থেকে খনন করা খালগুলিকে নিত্যবহ খাল বলে। এই নদীগুলি সারাবছর জলপূর্ণ থাকে বলে নিত্যবহ খালের মাধ্যমে সারাবছরই কৃষিজমিতে জলসেচ করা হয়। উদাহরণ: পাঞ্জাবের পশ্চিম যমুনা খাল।
39. ভারতে জলসেচের উৎসগুলি কী কী?
উত্তর – ভারতে জলসেচের উৎস : ভারতে জলসেচের মূল উৎসগুলি হল প্রবহমান জলধারা বা নদী, সঞ্চিত জল বা জলাশয়, জলাধার ইত্যাদি এবং ভৌমজল। প্রবহমান জলাধারার ওপর নির্ভর করে খালের মাধ্যমে এবং সঞ্চিত জলের ওপর নির্ভর করে পাম্প মেসিন, ডোঙা প্রভৃতির সাহায্যে জলসেচ করা হয়। অন্যদিকে, ভৌমজল থেকে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।
40. দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অংশে কোন্ ধরনের জলসেচ ব্যবস্থা বেশি প্রচলিত?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অংশে প্রচলিত জলসেচ ব্যবস্থা : দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে সেচকার্যে কূপ ও নলকূপ পদ্ধতির প্রচলন কম। কারণ মাটির নীচে অধিকাংশ স্থানে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকায় বৃষ্টির জল ভূগর্ভে বিশেষ সঞ্চিত হয় না। তবে এখানকার ভূপৃষ্ঠ ঢেউ-খেলানো বা তরঙ্গায়িত বলে বর্ষার উদবৃত্ত জল সহজেই নিম্নভূমিতে ধরে রাখা যায়। এজন্য দাক্ষিণাত্য মালভূমির বহু জায়গাতেই বড়ো বড়ো পাথর বাঁধানো পুষ্করিণী বা জলাশয় তৈরি করা হয়েছে, যেগুলি থেকে ডোঙা, পাম্প মেশিন প্রভৃতির সাহায্যে জল তুলে ব্যাপকভাবে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়।
41. সমভূমি অঞ্চলে কী ধরনের জলসেচ ব্যবস্থা চালু রয়েছে?
উত্তর – সমভূমি অঞ্চলের জলসেচ ব্যবস্থা: ভারতের সমভূমি অঞ্চলগুলির মাটিতে ভৌমজলের পরিমাণ খুব বেশি। সেকারণে কূপ এবং নলকূপ খনন করে তার মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণে জলসেচ করা হয়। এ ছাড়া সমভূমি অঞ্চলের ওপর দিয়ে অনেক নদনদীও প্রবাহিত হয়েছে। এইসব নদনদী থেকে খাল খনন করে সেগুলির মাধ্যমেও সমভূমি অঞ্চলে জলসেচ করা হয়।
42. ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয় ?
উত্তর – কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা অঞ্চল : উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, বিহার, অসম, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে এবং গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যের কোনো কোনো স্থানে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়।
43. পশ্চিমবঙ্গের দুটি সেচবাঁধের নাম লেখো।
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গের সেচবাঁধ : পশ্চিমবঙ্গের দুটি সেচবাঁধ হল – (1) দুর্গাপুরে দামোদর নদের ওপর দুর্গাপুর ব্যারেজ এবং (2) সিউড়িতে ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর তিলপাড়া ব্যারেজ।
44. সেচখাল পদ্ধতিতে জলসেচের একটি সুবিধা ও একটি অসুবিধো লেখো।
উত্তর – খালের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা : খাল যদি নিত্যবহ হয় তবে সারাবছর ধরে জলসেচ করা যায়, অর্থাৎ সারাবছর কৃষিকাজ সম্ভব।
খালের মাধ্যমে জলসেচের অসুবিধা: সেচখাল পদ্ধতিতে অতিরিক্ত জলসেচ করা হয় বলে মাটি অনেকসময় লবণাক্ত হয়ে যায়।
45 বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা কাকে বলে? ভারতের দুটি বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার নাম লেখো।
অথবা, বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংজ্ঞা: যে পরিকল্পনার মাধ্যমে পার্বত্য বা পাহাড়ি অঞ্চলে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, মাছ চাষ, পানীয় জল সরবরাহ, ভূমিক্ষয় নিবারণ প্রভৃতি বহুবিধ উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় এবং নদী উপত্যকা অঞ্চলের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়, তাকে বহুমখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা বলে।
ভারতের বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা: ভারতের দুটি বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা হল— (1) দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা এবং (2) ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা।
46. বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর – বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য: বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি হল – (1) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, (2) জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার, (3) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, (4) জলপথে পরিবহণ, (5) মৎস্য চাষ, (6) পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাদি।
47. ডিভিসি-এর দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।
উত্তর – ডিভিসি-এর উদ্দেশ্য : ডিভিসি-এর দুটি উদ্দেশ্য হল—দামোদর উপত্যকায় (1) বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং (2) জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন।
48. দামোদর উপত্যকা প্রকল্প কী?
উত্তর – ধারণা : দামোদর উপত্যকা প্রকল্প পূর্ব ভারতের বৃহত্তম এবং সমগ্র দেশের অন্যতম বৃহৎ বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা। 1948 সালে আমেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রের ‘টেনেসি ভ্যালি অথরিটি’-র অনুকরণে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গঠিত হয়। দামোদরের বিধ্বংসী বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে সমগ্র দামোদর উপত্যকায় জলসেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, মৎস্য চাষ, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনার কর্মসূচি অনুযায়ী মাইথন, পাঞেৎ, তিলাইয়া, কোনার প্রভৃতি স্থানে বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বহু খাল ও শাখা খাল খনন ও কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে।
49. নদী সংযুক্তি প্রকল্প বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – সংজ্ঞা: দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের খরাপ্রবণ অঞ্চলে জলসেচের সুবিধা সৃষ্টি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি উত্তর ভারতের নদী এবং কৃয়া, কাবেরী, গোদাবরী প্রভৃতি দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিকে খালের মাধ্যমে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা হল নদী সংযুক্তি প্রকল্প। এটি একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল পরিকল্পনা।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে জলবিভাজিকা হল—
(a) হিমালয় পর্বত
(b) বিন্ধ্য পর্বত
(c) পশ্চিমঘাট পর্বত
(d) পূর্বঘাট পর্বত
উত্তর – (b) বিন্ধ্য পর্বত
2. অলকনন্দা নদী কোথায় গঙ্গার সঙ্গে মিশেছে?—
(a) এলাহাবাদে
(b) দেবপ্রয়াগে
(c) পাটনায়
(d) কলকাতায়
উত্তর – (b) দেবপ্রয়াগে
3. গঙ্গার প্রধান উপনদী হল—
(a) অলকনন্দা
(b) ভাগীরথী
(c) যমুনা
(d) সবরমতী
উত্তর – (c) যমুনা
4. গঙ্গা নদীর উৎস হল—
(a) যমুনোত্রী হিমবাহ
(b) জেমু হিমবাহ
(c) সিয়াচেন হিমবাহ
(d) গঙ্গোত্রী হিমবাহ
উত্তর – (d) গঙ্গোত্রী হিমবাহ
5. সিন্ধু নদের উৎপত্তিস্থল হল—
(a) সেঙ্গেখাবাব
(b) মানস সরোবর
(c) চেমায়ুং দুং
(d) সিন্ধুশ্রী
উত্তর – (a) সেঙ্গেখাবাব
6. ব্রক্ষ্মপুত্র কোথায় সাংপো নামে পরিচিত?—
(a) তিব্বতে
(b) ভারতে
(c) নেপালে
(d) ভুটানে
উত্তর – (a) তিব্বতে
7. রাজস্থানের প্রধান নদী হল –
(a) লুনি
(b) সবরমতী
(c) মাহী
(d) সরস্বতী
উত্তর – (a) লুনি
৪. লুনি নদী পড়েছে—
(a) কচ্ছ উপসাগরে
(b) কচ্ছের রানে
(c) খাম্বাত উপসাগরে
(d) বঙ্গোপসাগরে
উত্তর – (b) কচ্ছের রানে
9. যে নদীর গতিপথে হুডু জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে, তা হল—
(a) সুবর্ণরেখা
(b) দামোদর
(c) মহানদী
(d) তাপ্তী
উত্তর – (a) সুবর্ণরেখা
10. শিবসমুদ্রম জলপ্রপাতটি অবস্থিত—
(a) কৃষ্ণা নদীতে
(b) কাবেরী নদীতে
(c) গোদাবরী নদীতে
(d) মহানদীতে
উত্তর – (b) কাবেরী নদীতে
11. প্রদত্ত কোন্‌টি মিষ্টি জলের হ্রদ? —
(a) পুষ্কর
(b) উলার
(c) সম্বর
(d) চিলকা
উত্তর – (b) উলার
12. প্রদত্ত কোন্‌টি হিমালয়ের হ্রদ?—
(a) চিলকা
(b) রূপকুণ্ড
(c) লোকটাক
(d) কোলেরু
উত্তর – (b) রূপকুণ্ড
13. ত্রিম্বকেশ্বর উচ্চভূমি থেকে কোন্ নদী উৎপন্ন হয়েছে? —
(a) গোদাবরী
(b) কৃয়া
(c) কাবেরী
(d) ভাইগাই
উত্তর – (a) গোদাবরী
14. কোন্ নদী আরাবল্লি পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়েছে? —
(a) মাহী
(b) সবরমতী
(c) লুনি
(d) কৃয়া
উত্তর – (b) সবরমতী
15. নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনাটি যে নদীর ওপর অবস্থিত সেটি হল—
(a) মহানদী
(b) গোদাবরী
(c) কৃয়া
(d) কাবেরী
উত্তর – (c) কৃয়া
16. যে নদীর গতিপথে গেরসোপ্পা জলপ্রপাত রয়েছে, তা হল—
(a) শরাবতী
(b) সবরমতী
(c) নেত্রবতী
(d) নর্মদা
উত্তর – (a) শরাবতী
17. ডিহং, ডিবং ও লোহিতের মিলিত প্রবাহের নাম হল –
(a) ব্রহ্মপুত্র
(b) যমুনা
(c) সাংপো
(d) ধানসিরি
উত্তর – (a) ব্রহ্মপুত্র
18. ভারতের দীর্ঘতম উপনদী—
(a) শোন
(b) হুগলি
(c) চন্দ্রভাগা
(d) যমুনা
উত্তর – (d) যমুনা
19. ভারতে সবচেয়ে বড়ো নদী অববাহিকা হল—
(a) গঙ্গা
(b) ব্রক্ষ্মপুত্র
(c) সিন্ধু
(d) গোদাবরী
উত্তর – (a) গঙ্গা
20. সিন্ধুর একটি উপনদী হল –
(a) চম্বল
(b) তিস্তা
(c) যমুনা
(d) চন্দ্রভাগা
উত্তর – (d) চন্দ্রভাগা
21. অলকনন্দা নদীর উৎস কোথায়?—
(a) গঙ্গোত্রী হিমবাহ
(b) যমুনোত্রী হিমবাহ
(c) সতোপন্থ হিমবাহ
(d) মন্দাকিনী হিমবাহ
উত্তর – (c) সতোপন্থ হিমবাহ
22. যমুনার একটি প্রধান উপনদী হল —
(a) চম্বল
(b) গোমতী
(c) বিপাশা
(d) শোন
উত্তর – (a) চম্বল
23. গোয়ালপাড়া শহরটি যে নদীর ধারে অবস্থিত, তা হল—
(a) গঙ্গা
(b) ব্রহ্মপুত্র
(c) সিন্ধু
(d) মহানদী
উত্তর – (b) ব্রহ্মপুত্র
24. জলসেচের সর্বাধিক সুবিধা রয়েছে—
(a) পাঞ্জাবে
(b) পশ্চিমবঙ্গে
(c) উত্তরপ্রদেশে
(d) রাজস্থানে
উত্তর – (a) পাঞ্জাবে
25. ভারতের সম্বর হ্রদ একটি—
(a) উপকূলীয় হ্রদ
(b) প্লায়া হ্রদ
(c) সুপেয় জলের হ্রদ
(d) কেটল হ্রদ
উত্তর – (b) প্লায়া হ্রদ
26. ভারতে সর্বাধিক জলসেচ করা হয় যে পদ্ধতিতে, সেটি হল—
(a) কূপ ও নলকূপ
(b) জলাশয়
(c) খাল
(d) ফোয়ারা
উত্তর – (c) খাল
27. তিলাইয়া বাঁধটি যে প্রকল্পের অন্তর্গত তা হল—
(a) কোশী পরিকল্পনা
(b) গণ্ডক পরিকল্পনা
(c) দামোদর পরিকল্পনা
(d) তুঙ্গভদ্রা পরিকল্পনা
উত্তর – (c) দামোদর পরিকল্পনা
28. পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সেচসেবিত জমি আছে—
(a) ভারতে
(b) চিনে
(c) রাশিয়ায়
(d) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে
উত্তর – (b) চিনে
29. বেশি জলসেচ করলে মাটির—
(a) উর্বরতা বাড়ে
(b) উর্বরতা কমে
(c) লবণতা বাড়ে
(d) জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে
উত্তর – (c) লবণতা বাড়ে
30. ময়ূরাক্ষী পরিকল্পনার একটি হল ম্যাসাঞ্জোর সেচবাঁধ এবং অন্যটি হল —
(a) ভাকরা সেচবাঁধ
(b) নাঙ্গাল সেচবাঁধ
(c) কংসাবতী সেচবাঁধ
(d) তিলপাড়ার সেচবাঁধ
উত্তর – (d) তিলপাড়ার সেচবাঁধ
31. ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনাটি হল—
(a) ভাকরানাঙ্গাল পরিকল্পনা
(b) দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা
(c) তিস্তা পরিকল্পনা
(d) নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা
উত্তর – (b) দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা
32. ভারতের বৃহত্তম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা হল—
(a) ভাকরানাঙ্গাল
(b) দামোদর
(c) রিহান্দ
(d) হিরাকুঁদ
উত্তর – (a) ভাকরানাঙ্গাল
33. জলসংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল—
(a) জলবিভাজিকা উন্নয়ন
(b) জল ব্যবহার না করা
(c) জলের পুনর্ব্যবহার
(d) জলাভূমিতে চাষ করা
উত্তর – (a) জলবিভাজিকা উন্নয়ন
34. ভারতের কোন্ রাজ্যে বৃষ্টির জল ধরে রাখা বাধ্যতামূলক? —
(a) পশ্চিমবঙ্গে
(b) তামিলনাড়ুতে
(c) কেরলে
(d) অন্ধ্রপ্রদেশে
উত্তর – (b) তামিলনাড়ুতে
35. সর্দার সরোবর প্রকল্প যে নদীর ওপর অবস্থিত তা হল –
(a) নর্মদা
(b) কৃয়া
(c) গোদাবরী
(d) কাবেরী
উত্তর – (a) নর্মদা
36. ভারতের একটি জ্বালামুখ হ্রদ হল —
(a) মহারাষ্ট্রের লোনার
(b) রাজস্থানের সম্বর
(c) তামিলনাড়ুর পুলিকট
(d) কাশ্মীরের ডাল হ্রদ
উত্তর – (a) মহারাষ্ট্রের লোনার
37. ভারতের উচ্চতম লবণাক্ত জলের হ্রদের নাম —
(a) পুলিকট
(b) ডাল
(c) উলার
(d) প্যাংগং
উত্তর – (d) প্যাংগং
38. গোদাবরীকে ‘দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা’ বলে কারণ এটি দক্ষিণ ভারতের—
(a) দীর্ঘতম নদী
(b) গুরুত্বপূর্ণ নদী
(c) পবিত্র নদী
(d) বৃহৎ অববাহিকার নদী
উত্তর – (a) দীর্ঘতম নদী
39. লখনউ শহরটি যে নদীর তীরে অবস্থিত সেটি হল —
(a) সবরমতী
(b) গোমতী
(c) কোশী
(d) ঘর্ঘরা
উত্তর – (b) গোমতী
40. পুষ্কর হ্রদ অবস্থিত—
(a) উত্তরপ্রদেশে
(b) রাজস্থানে
(c) মধ্যপ্রদেশে
(d) মহারাষ্ট্রে
উত্তর – (b) রাজস্থানে
41. ব্রহ্মপুত্র নদী ডিহং নামে ভারতের যেখানে প্রবেশ করেছে, তা হল –
(a) অসমে
(b) মেঘালয়ে
(c) অরুণাচল প্রদেশে
(d) নাগাল্যান্ডে
উত্তর – (c) অরুণাচল প্রদেশে
42. ভারতের বৃহত্তম লবণাক্ত জলের উপহ্রদ হল—
(a) কোলের
(b) উলার
(c) চিলকা
(d) ভেমবানাদ
উত্তর – (c) চিলকা
43. ভারতের দীর্ঘতম সেচখাল হল –
(a) পূর্ব যমুনা খাল
(b) পশ্চিম যমুনা খাল
(c) সারদা খাল
(d) ইন্দিরা গান্ধি খাল
উত্তর – (d) ইন্দিরা গান্ধি খাল

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. কাশ্মীর উপত্যকার মধ্য দিয়ে ………… নদী প্রবাহিত হয়েছে।
উত্তর – বিতস্তা
2. উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদী হল …………।
উত্তর – সিন্ধু
3. উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদী হল …………।
উত্তর – ব্রহ্মপুত্র
4. ………… -এর তীরে হরপ্পা ও মহেন-জো-দারো সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
উত্তর – সিন্ধু
5. সবরমতী নদী ………..পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
উত্তর – আরাবল্লি
6. নর্মদা হল সবচেয়ে দীর্ঘ ………. নদী।
উত্তর – পশ্চিমবাহিনী
7. কাবেরীর একটি উল্লেখযোগ্য উপনদীর নাম হল …………।
উত্তর – ভবানী
৪. পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী হল …………।
উত্তর – শতদ্রূ
9. অরুণাচল প্রদেশে ব্রহ্মপুত্র নদের নাম …………।
উত্তর – ডিহং
10. তাপি বা তাপ্তীর একটি উপনদীর নাম হল …………।
উত্তর – পূর্ণা
11. সাতপুরা পর্বতের মুলতাই-এর কাছ থেকে ………… নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
উত্তর – তাপ্তী
12. উত্তর ভারতের একটি নদী উপত্যকা পরিকল্পনার নাম হল …………।
উত্তর – ভাকরা-নাঙ্গাল
13. জলাশয় পদ্ধতিতে জলসেচ ………… ভারতে বেশি প্রচলিত।
উত্তর – দক্ষিণ
14. যে খালের মাধ্যমে কেবল নদীর প্লাবনের জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়, সেই খালকে ……….. খাল বলে।
উত্তর – প্লাবন
15. নর্মদা নদীর উৎসস্থল হল ………… শৃঙ্গ।
উত্তর – অমরকণ্টক

TOPIC – D ভারতের জলবায়ু

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. ভারতের জলবায়ুর বৈচিত্র্য: (1) ঋতুচক্র: ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈচিত্র্য হল ঋতুচক্র। শীতকাল, গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল ও শরৎকাল—এই চারটি ঋতু ভারতের জলবায়ুতে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। (2) নিরক্ষীয়, উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ু: অক্ষাংশগত বিস্তৃতি বেশি বলে ভারতের দক্ষিণাংশে যখন উয়-আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ু বিরাজ করে তখন মধ্যাংশে ক্রান্তীয় এবং উত্তরাংশে উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। (3) আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতু: ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র এবং শীতকাল শুষ্ক। (4) চরমভাবাপন্ন ও সমভাবাপন্ন জলবায়ু: দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু সমভাবাপন্ন হলেও উত্তর ভারতের জলবায়ু কিছুটা চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির।
  2. ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহ: ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি হল— (1) অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি, (2) হিমালয় পর্বতের অবস্থান, (3) ভূপ্রকৃতি, (4) সমুদ্রসান্নিধ্য, (5) মৌসুমি বায়ু, (6) জেট বায়ু, (7) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, (৪) এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব প্রভৃতি।
  3. ভারতের ঋতুবৈচিত্র্য : ভারতের জলবায়ু চারটি ঋতুতে বিভক্ত— গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল, শরৎকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল এবং শীতকাল। (1) গ্রীষ্মকাল: মার্চ থেকে মে মাস ভারতে গ্রীষ্মকাল। দেশের কোনো কোনো অংশে এইসময় স্থানীয়ভাবে ঝোড়ো বাতাস ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ কিছু বৃষ্টিপাত হয়। (2) বর্ষাকাল: জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই চার মাস ভারতে বর্ষাকাল। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এইসময় সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়। রাজস্থানের মরু অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে 60-200 সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। (3) শরৎকাল: অক্টোবর ও নভেম্বর এই দুই মাস ভারতে শরৎকাল। এইসময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত থেকে বিদায় নেয়। উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনে বাতাসে হিমেলভাব আসে। আর এইসময় দক্ষিণের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি হয়। (4) শীতকাল: ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি—এই তিন মাস ভারতে শীতকাল। এসময় শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু সমগ্র দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়। ফলে উয়তা যথেষ্ট হ্রাস পায়। বেশিরভাগ স্থানে এসময় বৃষ্টিপাত না হলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতে এবং করমণ্ডল উপকূলে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
  4. ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাব : (1) মৃত্তিকার ওপর প্রভাব: ভারতে যে অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, সেখানে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা এবং মরুপ্রধান শুষ্ক অঞ্চলে সিরোজেম মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে। (2) অরণ্যের ওপর প্রভাব: অধিকাংশ অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে পাতাঝরা অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। (3) কৃষিকাজের ওপর প্রভাব: দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খরিফ শস্য চাষের সাফল্য বহুলাংশে বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। (4) বন্যা ও খরা সৃষ্টি: মৌসুমি বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত ও অনিয়মিত বলে কখনও অতিবৃষ্টিতে দেশের কোনো অংশে হয় বন্যা, আবার কখনও বৃষ্টিপাতের অভাবে কোনো অঞ্চলে হয় খরা।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতের জলবায়ুর ঋতুকালীন বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, ভারতের জলবায়ুর ঋতুবৈচিত্র্য আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের জলবায়ুর ঋতুকালীন বৈশিষ্ট্য
মৌসুমি বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমন, সারাবছরব্যাপী বৃষ্টিপাত, উন্নতা ও বায়ুর চাপের পার্থক্য প্রভৃতি অনুসারে ভারতের জলবায়ুকে চারটি কাল বা ঋতুতে ভাগ করা যায়—
  1. শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি); (1) এই সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে থাকায় সূর্যরশ্মি দক্ষিণ গোলার্ধে লম্বভাবে এবং উত্তর গোলার্ধে তির্যকভাবে পড়ে। (2) শীতকালে মধ্য এশিয়ার শীতল স্থলভাগ বা উচ্চচাপ এলাকা থেকে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। (3) উত্তর ভারতে এসময় তাপমাত্রা হয় গড়ে 10°-15°সে। দক্ষিণ ভারতে এই উত্তাপ ক্রমশ বেড়ে তামিলনাড়ুতে গড়ে 25°সে হয়। (4) উত্তর-পশ্চিম ভারত (পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে) ও তামিলনাড়ুর উপকূল (প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে) ছাড়া শীতকালে ভারতের অন্যত্র বিশেষ বৃষ্টিপাত হয় না।
  2. গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে) : (1) মার্চের শেষভাগ থেকেই দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দিতে থাকায় উন্নতা হ্রাস পেতে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধে সূর্যরশ্মির লম্ব পতনের প্রভাবে ভারতে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। (2) মে মাসে সূর্য উত্তরে ক্রমশ কর্কটক্রান্তিরেখার কাছে সরে আসে, ফলে উত্তর গোলার্ধে উন্নতা আরও বেড়ে যায়। মে মাসে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতের গড় তাপমাত্রা 38°–40 °সে হয়। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে হয় প্রায় 48°সে। (3) উত্তর- পশ্চিম ভারতে প্রচণ্ড উয়তার জন্য দিনেরবেলা গরম বাতাস লু প্রবাহিত হয়। (4) গ্রীষ্মকালে দেশের বিভিন্ন অংশে কতকগুলি স্থানীয় নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হওয়ার কারণে অপরাহ্ন বা বিকালের দিকে ঝোড়ো বাতাস ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। এই ঝড়কে পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আঁধি, অসমে বরদৈছিলা, কেরলে আম্রবৃষ্টি এবং কর্ণাটকে চেরি ব্লসম বলে। (5) এই ধরনের ঝড়-বৃষ্টি হলে তখন তাপমাত্রা 7°-৪°সে পর্যন্ত হ্রাস পায়।
  3. বর্ষাকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর): গ্রীষ্মকালে ভারতীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে, বিশেষত উত্তর- পশ্চিম ভারতে যে গভীর নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়, তার আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগর থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করে, যথা— (1) আরব সাগরীয় শাখা এবং (2) বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।
    1. আরব সাগরীয় শাখা: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর এই শাখাটি আরব সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার
      পশ্চিমঢালে সরাসরি বাধা পায় ও পশ্চিম উপকূলে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। [ii] পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগে জলীয় বাষ্পের অভাবে বৃষ্টিপাত কম হয় বলে এই অঞ্চলটিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
    2. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর এই শাখাটি বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। এই বায়ুপ্রবাহ পূর্ব হিমালয় ও পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রথম বাধা পায় বলে ওই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। [ii] মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত মৌসিনরামে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়— বার্ষিক প্রায় 1187 সেমি। [iii] পূর্ব হিমালয়ে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর এই বায়ু ক্রমশ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।
  4. শরৎকাল বা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) : (1) বার্ষিক আপাত গতি অনুসারে এসময় সূর্য বিষুবরেখা পেরিয়ে মকরক্রান্তিরেখার দিকে সরতে থাকে। ফলে এসময় উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগের ওপর উচ্চচাপ এবং ভারত মহাসাগরের জলভাগের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। (2) এই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুও ভারত থেকে প্রত্যাগমন করে। (3) এই প্রত্যাবর্তনকারী বায়ুর প্রভাবে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়-সহ বৃষ্টিপাত হয়, একে বলে সাইক্লোন (পশ্চিমবঙ্গে ‘আশ্বিনের ঝড়’)।
2. ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা, ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহ
যেসব উপাদান ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলি হল—
  1. অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠের তাপমণ্ডল অনুসারে ভারতের বেশিরভাগ স্থান উয়মণ্ডলে অবস্থিত। এজন্য ভারতের জলবায়ু প্রধানত উয় ও আর্দ্র প্রকৃতির। আবার, অক্ষাংশগত বিস্তৃতি বিচার করলে দেখা যায়, ভারত নিরক্ষরেখার উত্তরে ৪°4′ উত্তর থেকে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং কর্কটক্রান্তিরেখা (23°30´ উত্তর অক্ষরেখা) ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। তাই অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের দক্ষিণাংশ ক্রান্তীয় ও উত্তরাংশ উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় অঞ্চলের অন্তর্গত, অর্থাৎ দক্ষিণাংশের তুলনায় উত্তরাংশের উন্নতা কম।
  2. হিমালয় পর্বতের অবস্থান : উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে বাধা দেয় বলে বর্ষাকালে উত্তর ভারতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতকালে মধ্য এশিয়ার কনকনে ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহকে এই হিমালয় পবর্তমালা প্রতিহত করে বলে উত্তর ভারত তীব্র ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়।
  3. ভূপ্রকৃতি : উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে অধিক উচ্চতার জন্য গ্রীষ্মকাল মনোরম, কিন্তু উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের সমভূমি অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল খুবই কষ্টদায়ক।
  4. সমুদ্র সান্নিধ্য : তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। কিন্তু সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বলে উত্তর ভারতের অভ্যন্তরভাগে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উন্নতার পার্থক্য খুব বেশি, অর্থাৎ জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।
  5. মৌসুমি বায়ু : আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু—প্রধানত এই দুটি মৌসুমি বায়ু ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই ভারতে বর্ষাকালের আগমন ঘটে, সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ অংশের তাপমাত্রা হ্রাস পায়, শীতল ও শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে। এ ছাড়া, এই দুই মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করেই ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে।
3. ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
উত্তর – ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য
ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. ঋতুপরিবর্তন : ভারতের জলবায়ু প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঋতুপরিবর্তন। শীতকাল, গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল এবং শরৎকাল—এই চারটি ঋতু ভারতের জলবায়ুতে চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
  2. বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহ : ভারতে শীতকালে যেদিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
  3. আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুষ্ক। শুধু তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে অল্প বৃষ্টিপাত হয়।
  4. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণির পশ্চিমঢালে, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
  5. অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি প্রকৃতির জন্য প্রতিবছর দেশের সর্বত্র সমানভাবে বৃষ্টিপাত হয় না।
  6. উত্তর ভারতের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন : উত্তর ভারতের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির কিন্তু দক্ষিণ ভারতের তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত থাকায় আর্দ্র সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে ওই অঞ্চলের জলবায়ু সাধারণভাবে সমভাবাপন্ন হয়।
4. ভারতে জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণ কী?
উত্তর – ভারতে জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণ
ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানের জলবায়ুর মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এই বৈচিত্র্যের কারণগুলি হল—
  1. বিস্তৃত অক্ষাংশ জুড়ে অবস্থান : ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষিণে প্রায় ৪° উত্তর থেকে উত্তরে প্রায় 37° উত্তর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দেশের দক্ষিণাংশে উয়-আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ু, মধ্যাংশে ক্রান্তীয় এবং উত্তরাংশে উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
  2. পর্বতের অবস্থান : (1) উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা সুউচ্চ প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থাকায় আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সমগ্র উত্তর ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। অন্যদিকে, শীতকালে দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে শীতের তীব্রতা সামান্য বেশি থাকে। যদি হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তরে অবস্থান না করত তবে মধ্য এশিয়ার শীতল বায়ুপুঞ্জের প্রভাবে সমগ্র উত্তর ভারতে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ ঘটত। (2) দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্ব ও পশ্চিম সীমায় যথাক্রমে পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি প্রায় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত থাকায় আর্দ্র বায়ু এইসব পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে যতটা পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটায়, দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগে ততটা হয় না, সেই অঞ্চলে কিছুটা শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে। (3) আরাবল্লি পর্বতের অবস্থান দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে প্রতিহত করতে না পারায় থর মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট কম।
  3. ভূমির উচ্চতা : প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও আগ্রার থেকে দার্জিলিঙের জলবায়ু অনেক আলাদা। এর কারণ দার্জিলিংঙের উচ্চতা অনেক বেশি (প্রতি কিমি উচ্চতা বৃদ্ধিতে 6.5 °সে হারে উন্নতা কমে)। একই কারণে পশ্চিমঘাট পর্বত বা হিমালয়ের উচ্চ অংশের জলবায়ুও দেশের অনান্য অংশের তুলনায় আলাদা হয়।
  4. দক্ষিণ ভারতের উপদ্বীপীয় গঠন : ভূগাঠনিক দিক দিয়ে দক্ষিণ ভারত ত্রিভুজাকৃতি হওয়ায় পূর্বে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে আরব সাগরের সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু উত্তর ভারতের তুলনায় অনেকটাই সমভাবাপন্ন।
  5. সমুদ্র থেকে দূরত্ব : সামুদ্রিক প্রভাবে জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়। কিন্তু সমুদ্র থেকে বেশি দূরত্বের জন্য উত্তর ভারতের দিল্লি বা আগ্রা বা কানপুরে শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল অনেক বেশি তীব্র অর্থাৎ, ওইসব স্থানের জলবায়ু হয়েছে চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয়েছে।
5. ভারতের জলবায়ুর ওপর হিমালয়ের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের জলবায়ুর ওপর হিমালয়ের প্রভাব
ভারতের উত্তর দিকে বিশালাকার প্রাচীরের মতো দণ্ডায়মান হিমালয় পর্বত এই দেশের জলবায়ুকে নানাভাবে প্রভাবিত করে, যেমন—
  1. তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা : হিমালয় পর্বত সাইবেরিয়া থেকে আগত অতি শীতল ও শুষ্ক মহাদেশীয় মেরু বায়ুপুঞ্জকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধাপ্রদান করে। এই কারণে একই অক্ষাংশে অবস্থিত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে শীতকাল যথেষ্ট মৃদু শীতল। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, উত্তর-পূর্ব ভারতে হিমালয় ও পূর্বাচলের পাহাড়-পর্বতগুলির মধ্যে যে সামান্য ফাঁক রয়েছে সেই ফাঁক দিয়ে অতি শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রবেশ করে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের উয়তার হ্রাস ঘটায়।
  2. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত : হিমালয় পর্বত দক্ষিণের সমুদ্র থেকে আগত আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে প্রাচীরের মতো বাধাপ্রদান করে। এর ফলে উত্তর ভারতে ব্যাপক শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
  3. পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ব্যাপকতা হ্রাস: হিমালয় পর্বতের জন্য শীতকালীন পশ্চিমি ঝঞ্ঝার বেশিরভাগ প্রভাব উত্তর-পশ্চিম ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকে।
  4. জেট বায়ুকে দুটি শাখায় বিভক্ত: হিমালয় পর্বত পশ্চিমা জেট বায়ুকে দুটি শাখায় বিভক্ত করে। জেট বায়ুর দক্ষিণমুখী শাখাটি ভারতে প্রবেশ করে মৌসুমি বায়ুকে ভারতে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
  5. মনোরম জলবায়ু সৃষ্টি: উচ্চতার জন্য হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু শীতল প্রকৃতির। হিমালয়ের উঁচু স্থানগুলিতে শীতকালে তুষারপাত হলেও গ্রীষ্মকালে হিমালয়ের নীচু স্থানগুলির উন্নতা আরামপ্রদ থাকে ও জলবায়ু বেশ মনোরম হয়।
6. ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের জলবায়ূতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
মৌসুমি শব্দটির অর্থ ‘ঋতু’। তাই ঋতু অনুসারে প্রবাহিত বায়ুকে বলে মৌসুমি বায়ু। ভারতের জলবায়ু প্রায় সম্পূর্ণরূপেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবাধীন। ভারতে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় বর্ষাকালে এবং শুষ্ক ও শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় শীতকালে।
  1. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : (1) গ্রীষ্মকালে ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে এই জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু উত্তর- পশ্চিম ভারতের উত্তপ্ত স্থলভাগ বা নিম্নচাপ এলাকার দিকে ছুটে যায়। (2) তাই এই বায়ুর প্রভাবে ভারতে বর্ষাকালের আবির্ভাব হয়। (3) ভারতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা প্রায় 67-75 ভাগ মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে। (4) বর্ষাকালে এই বায়ুর প্রভাবে অসম, অরুণাচল প্রদেশ-সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল তথা পশ্চিম উপকূল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়।
  2. উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : (1) শীতকালে মধ্য এশিয়ার শীতল স্থলভাগ বা উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে এই বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণের উয় ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ এলাকার দিকে প্রবাহিত হয়। (2) বরফাবৃত স্থলভাগের ওপর থেকে ছুটে আসে বলে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শীতল ও শুষ্ক হয়। (3) এই বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই তাপমাত্রা যথেষ্ট কমে যায়। জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি পার্বত্য এলাকায় তাপমাত্রা হয় – 10° থেকে -40°সে। (4) খুব শীতল বলে এই বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা প্রায় থাকে না বললেই চলে। এর ফলে তাপমাত্রা যথেষ্ট হ্রাস পেলেও বৃষ্টিপাত হয় না। (5) তবে ওই শুষ্ক বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছু পরিমাণে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে। ফলে ওই বায়ু যখন করমণ্ডল উপকূলে পৌঁছোয় তখন সেখানে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
  3. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-প্রত্যাগমনে অনিয়ম: যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে এবং তার প্রত্যাগমনেও বিলম্ব হয়, তাহলে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। কিন্তু কোনো বছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনে বিলম্ব ঘটে, আবার কোনো বছর তা দ্রুত ফিরে যায়। উভয় ক্ষেত্রেই বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে মাটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যে-কোনো ধরনের ফসল উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে, যা খরার সৃষ্টি করে।
  4. মৌসুমি বায়ু অনুসারে ঋতু বিভাগ: দুটি মৌসুমি বায়ুর আগমন- প্রত্যাগমন অনুসারেই ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়— (1) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল বা গ্রীষ্মকাল, (2) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা বর্ষাকাল, (3) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল বা শরৎকাল এবং (4) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা শীতকাল।
7. ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবগুলি হল—
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনুকূল প্রভাৰ
  1. জলবায়ুতে: ভারতের অধিকাংশ স্থান ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হলেও আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় বলে উয়তা খুব বেশি বাড়ে না। তাই ভারতের জলবায়ু উয় ও আর্দ্র প্রকৃতির।
  2. কৃষিকাজে: ভারতের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট জনসংখ্যার 70 শতাংশেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এই কৃষির সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নিয়ন্ত্রিত বৃষ্টিপাতের ওপর।
  3. কৃষিভিত্তিক শিল্পে: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পরিমিত বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ভারতের কৃষিকাজের ওপর প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি, দেশে কার্পাস বয়ন, পাট, চিনি, চা প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার কৃষিভিত্তিক শিল্পের গঠন ও উন্নতির পথও সহজ করেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রতিকূল প্রভাব
  1. বন্যা ও খরা সৃষ্টি: এই বায়ুর খামখেয়ালি আচরণ ভারতের অর্থনীতিকে মাঝে মাঝে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়। প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুসৃষ্ট বৃষ্টিপাত ঋতুভিত্তিক হলেও এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য অনিশ্চয়তা। কখনও সঠিক সময়ে আবার কখনও অসময়ে এই বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন হয়, কখনও একটানা প্রবল বর্ষণে দেখা দেয় বন্যা, আবার কখনও বেশ কিছুদিন অনাবৃষ্টির ফলে সৃষ্টি হয় খরা।
  2. ব্যয়বহুল সেচব্যবস্থা প্রবর্তন: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত প্রকৃতির জন্য বৃষ্টিপাত অনিশ্চিত। ফলে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশকে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেচব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হয়েছে।
  3. শস্য ও জীবনহানি: বৃষ্টিপাতের অভাবে খরা এবং অতিবর্ষণে বন্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হওয়ায় ভারতে প্রায়শই শস্যহানি ও জীবনহানি হয়। এজন্য মাঝে মধ্যেই সরকারকে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি আমদানি করতে হয়। এর ফলে সরকারি কোশাগার তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই বিরূপ প্রভাব পড়ে।
8. ভারতের জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
ভারতের জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর গুরুত্ব অপরিসীম—
  1. ফসল উৎপাদন : ভারতের অধিকাংশ অধিবাসী কৃষিজীবী। দেশের অধিকাংশ কৃষিকাজ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন—ধান, আখ, তুলো, চা, পাট প্রভৃতির উৎপাদন।
  2. কৃষিভিত্তিক শিল্প : মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রকার কৃষিভিত্তিক শিল্পেরও উন্নতি হয়েছে। যেমন—কার্পাস বয়ন শিল্প,পাট শিল্প, চিনি শিল্প প্রভৃতি।
  3. জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাতের ওপর জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভালো হলে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন যেমন বাড়ে, তেমনই বৃষ্টিপাত কম হলে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন হ্রাস পায়।
  4. সেচ ব্যবস্থার উন্নতি: কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ করার সাফল্যও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাত বেশি হলে প্লাবন খালগুলি থেকে দীর্ঘদিন জলসেচ করা সম্ভব। আবার, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নিত্যবহ খালগুলি থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী জলসেচকরা সম্ভব হয়।
  5. অরণ্য সৃষ্টি: মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্যই পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল ও পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক দিক থেকে মূল্যবান চিরসবুজ অরণ্য এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের পাতাঝরা অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে।
9. মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।
উত্তর – মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
ভারতে মৃত্তিকার উৎপত্তি, আর্দ্রতা ও শুষ্কতা, ক্ষয়, ভূমিধস ইত্যাদি বহুলাংশে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন—
  1. ল্যাটেরাইট ও লোহিত মাটির সৃষ্টি: মেঘালয়, ছোটোনাগপুর মালভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢাল প্রভৃতি অঞ্চলে অত্যধিক মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য ক্ষারকীয় উপাদানগুলি মাটির নীচের স্তরে চলে যায় এবং ওপরের স্তরে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পড়ে থাকে। এর ফলে ওইসব অঞ্চলে ল্যাটেরাইট ও লোহিত মাটির সৃষ্টি হয়েছে।
  2. মরু বা সিরোজেম মাটির সৃষ্টি: অন্যদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল, গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড়ের উত্তরাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম (বার্ষিক 20-40 সেমি)। ফলে ওইসব অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়ার অভাবে খনিজ পদার্থগুলি মাটির ওপরের স্তরে সজ্জিত হয়ে মরু মাটি বা সিরোজোম মাটি সৃষ্টি করে, যার মধ্যে বালির প্রাধান্য থাকে বেশি।
  3. পলিমাটির সৃষ্টি: সিন্ধু-গঙ্গা-বয়পুত্র উপত্যকার বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে প্রতি বছর নতুন পলি সঞ্চিত হয় বলে উর্বর পলি মাটি গঠিত হয়।
  4. মৃত্তিকায় ফাটল সৃষ্টি: উত্তর-পশ্চিম ভারতের খরা প্রবণ অঞ্চলগুলিতে খরার সময় আর্দ্রতার প্রভাবে মাটিতে বড়ো বড়ো ফাটল সৃষ্টি হয়।
  5. মৃত্তিকার ক্ষয়: বেশি বৃষ্টিপাতের সময় মৃত্তিকার ক্ষয় বেশি হয়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমির বায়ুর প্রভাব
ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতি ও বণ্টন সম্পূর্ণভাবে মৌসুমি বৃষ্টিপাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—
  1. চিরসবুজ বনভূমির সৃষ্টি: ভারতের যেসব অংশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যেমন পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে, আন্দামান-নিকোবরে গভীর চিরসবুজ বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
  2. পর্ণমোচী অরণ্য সৃষ্টি: মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ অংশে মাঝারি বৃষ্টি হয় এবং তা ঋতুকালীন বলে ওই সব অঞ্চলে পাতাঝরা গাছের পর্ণমোচী অরণ্য তৈরি হয়েছে।
  3. কঁটিা ও গুল্ম-জাতীয় উদ্ভিদ সৃষ্টি: গুজরাত, রাজস্থানের স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল ও দক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগের শুষ্ক অঞ্চলে কাঁটা-জাতীয় ঝোপ ও গুল্ম-জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
ভারতের কৃষিকাজ প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। যেমন—
  1. খরিফ ফসল চাষ: বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার ওপর নির্ভর করেই ধান, পাট, আখ, তুলো, ভুট্টা প্রভৃতি খরিফ ফসলের চাষ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য পূর্ব ভারতে ধান এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য মধ্য ও উত্তর পশ্চিম ভারতে গম, ডাল ও মিলেট-জাতীয় শস্য বেশি চাষ হয়।
  2. রবি ফসলের চাষ : মৌসুমি বৃষ্টির জল জলাধারগুলিতে সঞ্চিত করে সেচকার্যের মাধ্যমে উত্তর ভারতে ব্যাপকভাবে রবি ফসলের চাষ করা হয়।
  3. উৎপাদন হ্রাস: মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্য ভারতে খরা ও বন্যা নিত্যসঙ্গী। খরার বছরগুলিতে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট হ্রাস পায়। বন্যার সময়ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়।
  4. উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি : তবে বন্যার মাধ্যমে উর্বর পলিমাটি সঞ্চিত হয় বলে পরবর্তী সময়ে সেখানে প্রচুর ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতের জলবায়ুকে কী কী ঋতুতে ভাগ করা যায় ?
উত্তর – ভারতের জলবায়ুর বিভিন্ন ঋতু: মৌসুমি বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমন, সারাবছরের বৃষ্টিপাত, উয়তা, বায়ুর চাপ প্রভৃতির পার্থক্য লক্ষ করে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করেছে। এগুলি হল—
ঋতুর নাম মাসের নাম
শীতকাল বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি
গ্রীষ্মকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল মার্চ থেকে মে
বর্ষাকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল জুন থেকে সেপ্টেম্বর
শরৎকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল অক্টোবর থেকে নভেম্বর
2. ভারতকে বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর দেশ বলে কেন?
উত্তর – ভারতকে বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর দেশ বলার কারণ: ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ হলেও আয়তনে সুবিশাল বলে দেশের বিভিন্ন অংশে জলবায়ুর বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, যেমন—
  1. উন্নতার বৈচিত্র্য: ভারতের সর্বত্র উন্নতা এক রকম নয়। দেশের উপকূলভাগে মাঝারি ও সমভাবাপন্ন উন্নতা বিরাজ করলেও মধ্য ও উত্তর ভারতে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উন্নতার পার্থক্য খুবই বেশি অর্থাৎ চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে। আবার, গ্রীষ্মকালে যেমন রাজস্থানের থর মরুভূমিতে উয়তা বেড়ে 50°সে হয়ে যায়, তেমন লাডাকে শীতকালে তাপমাত্রা কমে গিয়ে –45°সে পর্যন্ত হয়। স্থানভেদে উয়তার বিরাট পার্থক্য বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য।
  2. উয়তার প্রসরে বৈচিত্র্য: যেখানে দক্ষিণ ভারতে বার্ষিক উন্নতার প্রসর 4°-6° সে, সেখানে উত্তর ভারতে উয়তার প্রসর প্রায় 20°-25°সে।
  3. বৃষ্টিপাতের বৈচিত্র্য: মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ ঢালে যেমন অতিবর্ষণে পৃথিবীর সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চল তৈরি হয়েছে, তেমন ভারতের উত্তর- পশ্চিমে রাজস্থানের পশ্চিমভাগে বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
  4. বায়ুপ্রবাহে বৈচিত্র্য: ভারতে সাধারণভাবে শীতকালে উত্তর-পূর্ব এবং বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হলেও ভারতের বিভিন্ন অংশে অনেক স্থানীয় এবং আকস্মিক বায়ুও প্রবাহিত হয়। যেমন— গ্রীষ্মে লু, আঁধি, আম্রবৃষ্টি, কালবৈশাখী, শরতে আশ্বিনের ঝড়, শীতে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ভারতের জলবায়ুকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।
  5. ঋতুবৈচিত্র্য: শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ — এই চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে ভারতের জলবায়ুকে বৈচিত্র্যময় করেছে।
3. ভারতের জলবায়ুকে মৌসুমি জলবায়ু বলে কেন?
অথবা, ভারতকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয় কেন?
উত্তর – ভারতের জলবায়ুকে মৌসুমি জলবায়ু বলার কারণ: মৌসুমি শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ মৌসিম থেকে, যার অর্থ ঋতু। তাই ঋতু অনুসারে প্রবাহিত বায়ুকে বলে মৌসুমি বায়ু। ভারতকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়, কারণ—
  1. আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল: গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হওয়ার ফলে ভারতের জলবায়ুতে বিপরীতধর্মী দুটি প্রধান ঋতুর সৃষ্টি হয়—একটি আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং অপরটি শুষ্ক শীতকাল।
  2. ঋতুপরিবর্তন: আবার, এই দুটি মৌসুমি বায়ুর চক্রাকারে পরিবর্তনই ভারতের জলবায়ুতে ঋতুচক্র সৃষ্টি করে, যেমন—[i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল বা গ্রীষ্মকাল, [ii] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা বর্ষাকাল, [ii] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল বা শরৎকাল এবং [iv] উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা শীতকাল।
  3. বৃষ্টিপাত: ভারতের বার্ষিক 67-75 শতাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবের ফলেই সংঘটিত হয়। এইভাবে ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি জলবায়ুর অধিক প্রভাব থাকায় ভারতকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলে।
4. ভারতে মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – ভারতে মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। এই মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. ঋতুপরিবর্তন: ভারতে মৌসুমি জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য ঋতুপরিবর্তন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ—এই চারটি ঋতু ভারতের জলবায়ুতে চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
  2. বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ু: ভারতের জলবায়ুতে ঋতুপরিবর্তন হয় দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে—একটি শীতকালীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু এবং অন্যটি গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
  3. বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ: ভারতে শীতকালে যেদিক থেকে বায়ুপ্রবাহিত হয় গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
  4. চারমাসব্যাপী বর্ষাকাল: ভারতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই চার মাস আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল এবং এই চারমাসই ভারতে বর্ষাকাল।
  5. শুষ্ক শীতকাল: উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শুষ্ক ও শীতল বলে এই বায়ুর আগমনকালীন তিন মাসে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ভারতে তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং সমগ্র দেশে শীতকাল বিরাজ করে। উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশ এবং করমণ্ডল উপকূল ছাড়া তখন দেশের প্রায় সর্বত্র আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
  6. বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন: মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চিত প্রকৃতির জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টন অসম।
5. ভারতের অর্থনীতির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।
উত্তর – ভারতীয় অর্থনীতির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: ভারতের অর্থনীতির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাবগুলি হল—
  1. কৃষিতে: ভারতীয় অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এই কৃষিনির্ভর অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল বৃষ্টিপাত। ভারত যেহেতু মৌসুমি জলবায়ুর দেশ তাই ভারতীয় কৃষিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। যথা সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ভারতীয় কৃষি যেমন লাভবান হয়, তেমনই আবার এই বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা ভারতীয় কৃষিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ভারতীয় অর্থনীতির ওপর। এখানে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর নির্ভর করে শস্যবর্ষ স্থির করা হয়।
  2. শিল্পে: কৃষিভিত্তিক শিল্পের ওপর মৌসুমি বায়ুর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। পাট শিল্প, চা শিল্প, বস্ত্র বয়ন শিল্প, চিনি শিল্প প্রভৃতি শিল্পগুলি কৃষির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে বলে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন শিল্পেও প্রভাব ফেলে। অতিবৃষ্টি বা খরা কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করে। তাই শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন কম হয়, এতে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  3. অর্থনৈতিক উন্নয়নে: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অধিক বৃষ্টিপাত হলে বন্যা দেখা যায়। আবার কোনো বছর বৃষ্টিপাত কম হলে খরা সৃষ্টি হয়। বন্যা বা খরা ফসল উৎপাদনে ও জীবনযাপনে অসুবিধা তৈরি করে যা আর্থিক উন্নতিতে বাধা দেয়। আবার যে বছর মৌসুমি বায়ুর আগমন যথাযথ হয় সে বছর দেশে কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন এবং আর্থিক বিকাশ ঘটে।
6. মৌসুমি বায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – মৌসুমি বায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব: ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে 10-12 কিমি উচ্চতা দিয়ে এঁকেবেঁকে সর্পিল পথে প্রবাহিত অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন একপ্রকার অতিশীতল বায়ুপ্রবাহের নাম জেট বায়ু। ভারতের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ওপর দুই ধরনের জেট বায়ুর প্রভাব লক্ষ করা যায়, যথা- (1) পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু এবং (2) পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু।
  1. শীতকালে: তিব্বত মালভূমির উত্তর ও দক্ষিণ দিয়ে প্রবাহিত উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু শীতকালে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে যত দক্ষিণে সরে আসে, ভারতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু তত শক্তিশালী ও সক্রিয় হয় এবং তার ফলে শীতের তীব্রতাও বাড়ে।
  2. বর্ষাকালে: ভারতের দক্ষিণভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ভারতমুখী গমন ত্বরান্বিত হলেও এই সময় এই পুবালি জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বেশি উত্তরে সরে গেলে ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে বৃষ্টিহীন অবস্থা ও খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
7. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে কেন বৃষ্টিপাত ঘটায়?
উত্তর – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাত: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটার কারণগুলি হল—
  1. নিম্নচাপের আকর্ষণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন: গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে, বিশেষত মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতের ওপর যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, তার আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে ছুটে আসে।
  2. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুতে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি: যেহেতু ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়, তাই এই বায়ুতে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে। ওই আর্দ্র বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়।
8. ভারতের বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর – ভারতের বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যসমূহ: ভারতের বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. অসম বণ্টন: ভারতের সর্বত্র বৃষ্টিপাত সমান নয়। পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল ও পশ্চিম উপকূলভূমি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রবল (বার্ষিক 200 সেমির বেশি) বৃষ্টিপাত হলেও রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব প্রভৃতি রাজ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম (বার্ষিক 100 সেমি বা তারও কম)।
  2. ঋতুভিত্তিক বণ্টন: ভারতে সারাবছরই সমানভাবে বৃষ্টিপাত হয় না। বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় 75% বর্ষাকালে, 12%গ্রীষ্মকালে, প্রায় 9% শরৎকালে এবং 4% শীতকালে হয়ে থাকে।
  3. অনিশ্চয়তা : মৌসুমি বৃষ্টিপাত সারাবছর সমানভাবে হয় না এবং প্রতিবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণও সমান থাকে না। কখনও অতিবৃষ্টিতে বন্যা আবার কখনও কম বৃষ্টিতে খরা ভারতের বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য।
  4. সাময়িক বিরতি : ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে একটানা বৃষ্টিপাত হলেও বায়ুচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন ঘটলে বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি ঘটে।
9. ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণ লেখো।
উত্তর – পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণ: ভারতের আরব সাগরীয় উপকূলভূমির পূর্ব সীমায় উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রাচীরের মতো বিস্তৃত আছে পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি। আরব সাগরের ওপর দিয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এই পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণির পশ্চিমঢালে এসে সরাসরি আঘাত করে বলে পশ্চিমঢালে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি হয়। পশ্চিমঢালে বৃষ্টি ঘটার পর ওই বায়ু যখন পর্বত অতিক্রম করে পূর্বঢালে বা অনুবাত ঢালে পৌঁছোয় তখন বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কমে যায় এবং বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর ওপর থেকে নীচে নামে। ফলে তা ক্রমশ উন্ন হতে থাকে অর্থাৎ সেই বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এজন্য পশ্চিমঘাটের পূর্ব দিকে বৃষ্টি কম হয় এবং এলাকাটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
10. শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর – শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণ: শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় বলে প্রায় সমগ্র দেশেই একটা শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে অর্থাৎ বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না। কিন্তু মাঝে মাঝে উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। এর কারণগুলি হল—
  1. নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত: শীতকালে মাঝে মাঝে সুদূর ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত সিরিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ পেরিয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছোয় এবং অদূরবর্তী আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে নতুন করে শক্তিশালী হয় ও উত্তর- পশ্চিম ভারতে (পাঞ্জাব, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীরে) বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য এলাকায় তুষারপাত ঘটায়।
  2. পশ্চিমি ঝঞ্ঝা: পশ্চিম দিক থেকে আসা এই ঘূর্ণবাতগুলি শীতের শান্ত আবহাওয়াকে নষ্ট করে দেয় বলে একে পশ্চিমি ঝামেলা বা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বা ওয়েস্টার্ন ডিস্টার্বেল বলে । এর প্রভাবে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টির পরিমাণও ক্রমশ কমে যায়।
11. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – সংজ্ঞা: পর্বতের যে ঢালে আর্দ্র বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয় সেই ঢালে অর্থাৎ প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। কিন্তু পর্বত অতিক্রম করে ওই বায়ু যখন বিপরীত ঢালে বা অনুবাত ঢালে পৌঁছোয়, তখন সেই বায়ুর মধ্যেকার জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। এ ছাড়া, পর্বত অতিক্রম করে ওই বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচে নামে বলে তার উন্নতা ও জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা উভয়ই বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অনুবাত ঢালে বৃষ্টিপাত বেশ কম হয়। এই অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত বা প্রায় বৃষ্টিহীন এলাকাকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
উত্তর – উদাহরণ : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা পশ্চিম- ঘাটের পশ্চিমঢালে এসে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু পশ্চিম- ঘাটের পূর্বঢালে অবস্থিত অঞ্চলসমূহে অর্থাৎ দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগে বৃষ্টিপাত খুব কম হওয়ায় ওই অঞ্চল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল নামে পরিচিত।
একইভাবে, মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণঢালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা প্রতিহত হয় বলে চেরাপুঞ্জি এবং এর নিকটবর্তী মৌসিনরামেপ্রচুর বৃষ্টিপাত (1187 সেমি) হয়। কিন্তু ওই পাহাড়ের বিপরীত ঢালে বা উত্তরঢালে অবস্থিত শিলংয়ে বৃষ্টিপাত (217 সেমি) খুবই কম হয়, অর্থাৎ এটি একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
12. থর মরুভূমি সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর – থর মরুভূমি সৃষ্টির কারণ: বৃষ্টিপাতের অভাবজনিত কারণে উত্তর-পশ্চিম ভারতে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের অধিকাংশ স্থানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হলেও রাজস্থানের পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। এর কারণ হল— (1) আরব সাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর একটি শাখা গুজরাতের কাথিয়াবাড় উপকূল হয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিকে ছুটে গেলেও ওখানে ওই বায়ুকে প্রতিহত করার মতো পূর্ব- পশ্চিমে বা আড়াআড়িভাবে বিস্তৃত কোনো পর্বতশ্রেণি নেই। (2) এই অঞ্চলের একমাত্র পর্বত আরাবল্লি মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ পথের সমান্তরালে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে বিস্তৃত হওয়ায় আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা বাধাহীন ভাবে রাজস্থানের ওপর দিয়ে চলে যায়, ওখানে কোনো বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না। উপরন্তু, (3) এই অঞ্চলে তীব্র উয়তার প্রভাবে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় বৃষ্টিপাত হতে পারে না। এইসব কারণে থর মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
13. মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি কেন?
উত্তর – মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মে উন্নতার পার্থক্য বেশি হওয়ার কারণ: মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উন্নতার পার্থক্য 30° সে – 40° সে পর্যন্ত হয়ে থাকে। মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উয়তার পার্থক্য বেশি হওয়ার কারণগুলি হল—
  1. ভূমিভাগের আচ্ছাদন: মরু অঞ্চলের ভূমিভাগ বালি দ্বারা আবৃত বা পাথুরে। বালি বা পাথর যেমন দ্রুত গরম হয়, তেমনই তাপ ধরে রাখতে পারে না বলে ঠান্ডাও হয় তাড়াতাড়ি। এজন্য মরু অঞ্চলে দিনেরবেলা বিশেষত গ্রীষ্মকালে অত্যধিক গরম বোধ হয়।
  2. মেঘমুক্ত আকাশ: মরু অঞ্চলের আকাশ বছরের অধিকাংশ সময় মেঘমুক্ত থাকে। মেঘমুক্ত আকাশে তাপ বিকিরণ খুব বেশি হয় বলে বালি দ্বারা আবৃত বা পাথুরে ভূমি দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে যায়।
  3. বাতাসে জলীয় বাষ্পের অভাব: জলীয় বাষ্প তাপ ধরে রাখে, কিন্তু মরু অঞ্চলে বাতাসে জলীয় বাষ্প খুবই কম পরিমাণে থাকে। তাই বায়ু তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়।
এর ফলে একদিকে যেমন গ্রীষ্মকালে সুদীর্ঘ দিনের স্থায়িত্বকাল ও প্রখর সূর্যরশ্মিতে মরুভূমি ভীষণ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ও উন্নতা খুব বেড়ে যায়। অন্যদিকে তেমন শীতকালে স্বল্প দৈর্ঘ্যের দিন ও মৃদু সূর্যরশ্মিতে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভূত হয়।
14. করমণ্ডল উপকূল তথা তামিলনাড়ুতে বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর – করমণ্ডল উপকূলে তথা তামিলনাড়ুতে বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণ: করমণ্ডল উপকূল তথা তামিলনাড়ুর বিস্তীর্ণ অংশে বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত হয়, কারণ—
  1. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: প্রথমবার, জুন-সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে তামিলনাড়ু উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়।
  2. প্রত্যবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাব: দ্বিতীয়বার, প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালে তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়। কারণ, প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু যখন বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ফিরে যায় তখন প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প শোষণ করে ও করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। যেমন— তামিলনাড়ুর থাপ্তাভুর ও সংলগ্ন জেলায় জুন-সেপ্টেম্বর মাসে 60 সেমি বৃষ্টিপাত হলেও অক্টোবর- নভেম্বরে প্রায় 140 সেমি বৃষ্টি হয়।
15. ভারতে শীতকাল শুষ্ক হওয়ার কারণ কী?
উত্তর – ভারতে শীতকাল শুষ্ক হওয়ার কারণ: শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু। এই বায়ু অত্যন্ত শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়। কারণ— (1) স্খলবায়ু: এই বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করতে পারে না। (2) জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কম: এ ছাড়া খুব শীতল হয় বলে এই বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। এর ফলে শীতকালে সমগ্র দেশের তাপমাত্রা যথেষ্ট হ্রাস পেলেও এসময় বৃষ্টিপাত হয় না, শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে।
[অবশ্য এই সময়ে প্রত্যাবর্তনকারী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তামিলনাড়ু উপকূলে এবং পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।]
16. ভারতে বৃষ্টিপাত অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও।
উত্তর – ভারতের বৃষ্টিপাত অঞ্চলসমূহ: বৃষ্টিপাত অঞ্চল বলতে এমন একটি অঞ্চলকে বোঝায় যার সর্বত্র বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মোটামুটি একই রকম। বৃষ্টিপাতের তারতম্য অনুসারে ভারতকে পাঁচটি বৃষ্টিপাত অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যথা—
  1. অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, পূর্ব হিমালয়, মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেমি-র বেশি।
  2. অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশের পার্বত্য অংশ, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশ অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100-200 সেমি।
  3. মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পূর্ব রাজস্থান, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 60-100 সেমি।
  4. স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার পশ্চিমাংশ, মধ্য রাজস্থান স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20-60 সেমি।
  5. অতি স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল : রাজস্থানের মরু অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাডাক মালভূমি অতি স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ: অতিস্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20 সেমি-র কম।
17. ভারতের কোথায় কোথায় অধিক বৃষ্টিপাত হয় এবং কেন?
উত্তর – ভারতের অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল : ভারতে প্রধানত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের জন্য বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাত দেশের সর্বত্র সমানভাবে বণ্টিত নয়। বৃষ্টিপাতের বার্ষিক বণ্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের দুটি অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যথা— (1) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল ও পশ্চিম উপকূল এবং (2) পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত।
  1. পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল (প্রতিবাত ঢাল) ও পশ্চিম উপকূল: আরব সাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর যে শাখা ভারতে প্রবেশ করে তা পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে প্রথম সরাসরি বাধা পায়। ফলে পশ্চিমঘাটের পশ্চিমঢাল ও পশ্চিম উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
  2. পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত: সমগ্র অঞ্চলটি পূর্বাচল ও পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা পূর্বাচল ও পূর্ব হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় (অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত)।
18. ভারতের কোথায় কোথায় কম বৃষ্টিপাত হয় এবং কেন?
উত্তর – ভারতের কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল : ভারতে প্রধানত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে বৃষ্টিপাত হলেও দেশের সর্বত্র সমানভাবে বৃষ্টিপাত হয় না। ভারতের তিনটি অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হয়—
  1. রাজস্থানের পশ্চিমাংশ ও গুজরাতের উত্তর-পশ্চিমাংশ: এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণগুলি হল—
    1. পর্বতের অভাব: আরব সাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর একটি শাখা গুজরাতের কাথিয়াবাড় হয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিকে ছুটে গেলেও তাকে প্রতিহত করার মতো কোনো পর্বতশ্রেণি ওখানে নেই। তাই, এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না।
    2. আরাবল্লি পর্বতের অবস্থান: আরাবল্লি পর্বত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে বিস্তৃত বলে আর্দ্র দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ওই পর্বতের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরও উত্তরে চলে যায়। এর ফলে রাজস্থানের পশ্চিমাংশ ও গুজরাতের উত্তর-পশ্চিমাংশ প্রায় বৃষ্টিহীন অবস্থাতেই থাকে।
  2. লাডাক মালভূমি: এটি একটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমি। তাই জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি অতিক্রম করে লাডাক মালভূমিতে প্রবেশ করতে পারে না বলেই ওই অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হয়।
  3. পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যখন ওই পর্বতের অনুবাত ঢালে পৌঁছোয় তখন ওই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ হ্রাস পায় বলে বৃষ্টিপাত হয় না।
19. ভারতে প্রায়ই খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় কেন?
অথবা, ভারতে খরা ও বন্যা সৃষ্টিতে মৌসুমি বায়ুর ভূমিকা লেখো।
উত্তর – ভারতে প্রায়ই খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাবের কারণ: ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। ভারতের প্রধানত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর জন্য বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এই বৃষ্টিপাত অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। এর কারণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রকৃতি অনিশ্চিত ও অনিয়মিত। প্রকৃতপক্ষে মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি প্রকৃতির জন্যই ভারতে কখনও খরা ও কখনও বন্যা সৃষ্টি হয়, যেমন—
খরার কারণ: [i] বর্ষাকালে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হলে, [ii] স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দেরিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করলে, [iii] স্বাভাবিক সময়ের আগে মৌসুমি বায়ু ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন করলে, [iv] বর্ষাকালে একটানা বেশ কিছুদিন বৃষ্টিহীন অবস্থার সৃষ্টি হলে এবং [v] এল নিনোর উপস্থিতির কারণেও ভারতে খরা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।
বন্যার কারণ: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অতিসক্রিয়তা তথা অতিবর্ষণের কারণে, [ii] প্রত্যাবর্তনের স্বাভাবিক সময়ের পরেও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে থেকে গেলে, [iii] নির্ধারিত সময়ের আগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করলে, [iv] বহুদিন ধরে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাত হলে, [v] বর্ষাকালে জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার কারণে এবং [vi] নদীখাত পলি জমে ভরাট হয়ে মজে গেলে নদী প্রবাহ রুদ্ধ হয়ে বন্যা দেখা দিতে পারে।
20. ভারতে বন্যার কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে বন্যার কারণসমূহ: ভারতে বন্যা হয় বিভিন্ন কারণে, যেমন—
  1. খামখেয়ালি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চিত আচরণ: [i] কখনও একটানা কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হলে বন্যা হয়। [ii] দীর্ঘক্ষণ ধরে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হলেও বন্যা হয়। [iii] যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে এবং তার প্রত্যাগমনেও বিলম্ব হয়, তাহলে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়।
  2. অগভীর নদীখাত: নদীগর্ভে পলি জমে নদীর ধারণ ও বহন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে মাঝারি মাপের বৃষ্টিপাতেও নদীতে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  3. জলাধার থেকে জল ছাড়া: জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে বন্যা হতে পারে।
  4. ঘূর্ণিঝড়: প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যা হয়।
21. ভারতে খরার কারণ কী?
উত্তর – ভারতে খরার কারণ: প্রধানত দুটি কারণে ভারতে খরার আবির্ভাব ঘটে—
(1) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চিত আচরণ এবং (2) দ্রুত অরণ্য বিনাশ।
  1. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চিত আচরণ: ভারতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় 67-75 শতাংশ বর্ষাকালের (জুন-সেপ্টেম্বর) মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু [i] কোনো বছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনে বিলম্ব ঘটে, আবার কোনো বছর তা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফিরে যায়। উভয় ক্ষেত্রেই বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে মাটিতে জলাভাব দেখা যায় ও মাটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। এভাবে খরা বা খরাজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ও ফসল উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। তা ছাড়া, [ii] অনিয়মিত বৃষ্টিপাত: বর্ষাকালে সবসময় বৃষ্টিপাতও নিয়মিত হয় না, মাঝে মাঝে বিরতি ঘটে। এই বিরতির স্থায়িত্ব খুব বেশি হলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  2. দ্রুতহারে অরণ্য বিনাশ: [i] অনাচ্ছাদিত মাটি: মাটির ওপর গাছপালার আচ্ছাদন না থাকলে রোদের তেজে মাটির জলকণা বাষ্পীভূত হয়। এর ফলে মাটির আর্দ্রতা কমে, ভৌমজলস্তরও নেমে যায়। এইভাবে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবার, [ii] বায়ুতে জলীয় বাষ্পের অভাব: গাছপালা না থাকলে সবুজ পাতার মাধ্যমে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্প আসে না। ফলে বায়ুর আর্দ্রতা কমে যায়। তখন শুষ্ক বায়ু মাটি থেকে জলকণা শোষণ করে বলে ভূমিতে খরার সৃষ্টি হয়।
22. ভারতে বন্যা ও খরার নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা যেতে পারে?
উত্তর – ভারতে বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণের উপায়: ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত প্রকৃতির জন্য প্রায়শই ভারতে বন্যা ও খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । তাই বর্তমানে বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায়: ভারতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন—[i] নদীর পাড়ে মজবুত বাঁধ নির্মাণ, [ii] বৃষ্টিপাত ও নদীতে জলপ্রবাহের পরিমাণ সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, [iii] নদীখাতের সঠিক গভীরতা বজায় রাখা, [iv] উঁচু জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ, [v] বন্যার আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার সুব্যবস্থা গড়ে তোলা, [vi] নদীর উচ্চপ্রবাহে জলাধার নির্মাণ, [vii] পলি জমে যাতে নদীখাত ভরাট না হয়, তার জন্য উপযুক্ত মৃত্তিকা সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রভৃতি উপায় অলম্বন করলে ভারতে বন্যা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
খরা নিয়ন্ত্রণের উপায়: খরা নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি হল—[i] বৃষ্টিপাতের জল এবং ভূপৃষ্ঠস্থ ও ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় রোধ করে সেগুলির বিজ্ঞানসম্মত ও সুষ্ঠু ব্যবহার, [ii] বৃষ্টিপাতের জল ধরে রেখে তার মাধ্যমে চাষ করা (rainwater harvesting), [iii] খরা সহি ফসলের চাষে বেশি গুরুত্ব প্রদান, [iv] জলসেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, [v] জলের অপচয় রোধ করার জন্য শুষ্ক অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পাইপের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার বিকাশসাধন প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খরা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
23. ভারতের জলবায়ুতে অরণ্যের অবদান উল্লেখ করো।
উত্তর – ভারতের জলবায়ুতে অরণ্যের অবদান: ভারতের জলবায়ুতে অরণ্যের যথেষ্ট অবদান লক্ষ করা যায়, যেমন-
  1. বায়ুতে জলীয় বাষ্প প্রদান: যেহেতু অরণ্যভূমির গাছপালা থেকে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প নির্গত হয়, তাই অরণ্যভূমির জলবায়ু আর্দ্র হয়, যা বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
  2. উন্নতা নিয়ন্ত্রণ: গভীর অরণ্যভূমি আচ্ছাদনের কাজ করে বলে মাটিতে রোদ বা সূর্যালোকের প্রখরতা অনুভূত হয় না। এ ছাড়া, অরণ্যের আচ্ছাদন থাকায় মাটিতে থাকা জলও সূর্যালোকে বাষ্পীভূত হতে পারে না। অপরদিকে, উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে অরণ্যভূমি বিশেষ না থাকায় ওইসব অঞ্চলের উন্নতা যথেষ্ট বেশি থাকে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. শীতকালে ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় ?
উত্তর – ভারতের শীতকালীন বৃষ্টিপাত অঞ্চল: শীতকালে ভারতের মাত্র দুটি, অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। এই দুটি অঞ্চল হল— (1) উত্তর-পশ্চিম ভারত (হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, জম্মু ও কাশ্মীর) এবং (2) ভারতের পূর্ব উপকূলের দক্ষিণাংশ বা করমণ্ডল উপকূল বা তামিলনাড়ু উপকূল।
2. ভারতের কোন্ কোন্ অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেমির বেশি?
উত্তর – ভারতের বার্ষিক 200 সেমির বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল: ভারতে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল বা পশ্চিম উপকূল ভূমি, পূর্ব হিমালয়, মিজোরাম, উত্তরবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেন্টিমিটারের বেশি।
3. দুটি ভিন্ন ঋতুতে হয় এমন দুটি ঝড়ের নাম লেখো।
উত্তর – ভিন্ন ঋতুতে সংঘটিত ঝড়: দুটি ভিন্ন ঋতুর ঝড় হল— (1) দুটি ভিন্ন ঋতুর ঝড় হল—গ্রীষ্মকালে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ যে ঝড়-বৃষ্টি হয় পশ্চিমবঙ্গে, তাকে কালবৈশাখী বলা হয় এবং (2) আশ্বিন মাসে অর্থাৎ শরৎকালে ভারতের পূর্ব উপকূল অঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে সেটি আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
4. ‘আশ্বিনের ঝড়’ কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: শরৎকালে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যখন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত থেকে প্রত্যাগমন করে, তখন বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন ভারত মহাসাগরের ওপর শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, যা উত্তরমুখী হয়ে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলের রাজ্যগুলির ওপর প্রবল ঝড়-বৃষ্টি-সহ আছড়ে পড়ে। একে বলে সাইক্লোন। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত আশ্বিন মাসে এই সাইক্লোন তথা ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব ঘটে, তাই এখানে এটি আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
5. জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: জলবায়ুর দুই প্রধান উপাদান—উয়তা ও বৃষ্টিপাত দ্বারা জলবায়ু অঞ্চল নির্ণয় করা হয়। তাই জলবায়ু অঞ্চল বলতে এমন একটি অঞ্চলকে বোঝায়, যেখানে সর্বত্র উন্নতা ও বৃষ্টিপাতের মধ্যে একটা সমতা বা সমভাব বজায় থাকে। বৈশিষ্ট্য: (1) জলবায়ু অঞ্চল খুব বড়ো হয়। (2) জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে উন্নতা ও বৃষ্টিপাত ছাড়াও আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদানগুলির মধ্যেও একটা সমতা থাকে।
6. মৌসুমি বায়ু কাকে বলে ?
উত্তর – ধারণা: পৃথিবীতে যত ধরনের সাময়িক বায়ু প্রবাহিত হয় তাদের মধ্যে মৌসুমি বায়ু সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে। মৌসুমি কথাটির উৎপত্তি আরবি শব্দ মৌসিম থেকে, যার অর্থ ঋতু। সুতরাং, ঋতু অনুসারে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকেই বলে মৌসুমি বায়ু। শ্রেণিবিভাগ: ভারতে দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়— (1) গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং (2) শীতকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।
7. ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয় ?
উত্তর – ভারতের কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলসমূহ: ভারতের কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলগুলি হল— (1) রাজস্থান ও গুজরাতের মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল, (2) জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক মালভূমি এবং (3) দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগ।
8.মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির কারণ কী?
অথবা, মৌসিনরাম পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল স্থান হওয়ার কারণ কী?
উত্তর – মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির কারণ: অবস্থান: মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ দিকেবাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা। এই উপত্যকা থেকে মালভূমি খুব খাড়াভাবে ওপরে উঠে গেছে। এজন্য মালভূমিটির দক্ষিণ দিকের ঢাল খুব খাড়া। অতিবৃষ্টির কারণ: একারণেই আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি সুরমা উপত্যকা-সহ বাংলাদেশের সমভূমি অতিক্রম করে পূর্ব হিমালয় ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিহত হওয়ার আগেই মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ দিকের খাড়া ঢালে এসে বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই খাড়া ঢালে অবস্থিত মৌসিনরামে (চেরাপুঞ্জির কাছে) পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়।
9. পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের নাম কী ?
উত্তর – পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চল: মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণভাগে চেরাপুঞ্জির নিকটে অবস্থিত মৌসিনরাম হল পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চল। এখানে বার্ষিক প্রায় 1187 সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
10. খরা কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি হলে বা অনেকদিন ধরে বৃষ্টি না হলে যে অস্বাভাবিক শুষ্ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাকে খরা বলে। বৃষ্টিপাত যদি স্বাভাবিক হারের চেয়ে 25% কম হয়, তাকে স্বল্প খরা, 50% কম হলে মাঝারি খরা এবং 75% কম হলে, তাকে তীব্র খরা বলে। প্রভাব: খরার ফলে তীব্র জলাভাব দেখা দেয়। এর ফলে কৃষি, সেচ ও পানীয় জলের প্রাপ্যতার ওপর ভীষণভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
11. ভারতের সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চল দুটি কোথায় কোথায় অবস্থিত?
উত্তর – ভারতের সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চল : (1) মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢাল ভারতের সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চল। এখানে অবস্থিত মৌসিনরাম (চেরাপুঞ্জির কাছে) ভারতের সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত স্থান। (2) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে আরব সাগরীয় উপকূল অঞ্চল ও পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চল ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত।
ভারতের সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চল : রাজস্থানের মরু অঞ্চল বা মরুস্থলী। এ ছাড়া, জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক মালভূমিও সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত।
12. শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের এমন দুটি স্থানের নাম লেখো।
উত্তর – শীতকালে তুষারপাত সংঘটিত ভারতের স্থান: শীতকালে তুষারপাত হয়
ভারতের এমন দুটি স্থানের নাম হল – (1) জম্মু ও কাশ্মীর এবং (2) হিমাচল প্রদেশ।
13. কালবৈশাখী ঝড় কী? কালবৈশাখীর আর-এক নাম নরওয়েস্টার কেন?
উত্তর – ধারণা: গ্রীষ্মকালের অপরাহ্নে পূর্ব ভারতের বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ এবং এর সংলগ্ন এলাকাসমূহে উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে আগত নিম্নচাপের প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টি ও কোনো কোনো সময় শিলাবৃষ্টিও হয়। একে বলে কালবৈশাখী।
কালবৈশাখীর আর-এক নাম নরওয়েস্টার হওয়ার কারণ: সাধারণত বৈশাখ মাসে এই ঝড়ের আগমন হয় বলে এর নাম কালবৈশাখী। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তর-পশ্চিম (North-West) দিকে থেকে এই ঝড় ছুটে আসে বলে একে ইংরেজিতে বলে (নরওয়েস্টার) Nor’ Wester।
14. আম্ৰবৃষ্টি কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: দক্ষিণ ভারত গ্রীষ্মকালে বিশেষত মার্চ—মে মাসে যে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টি ঘটে, তাকে আম্রবৃষ্টি বলে। নামকরণ: স্বল্প বৃষ্টিপাত হলেও আমের ফলনে সাহায্য করে বলে একে আম্রবৃষ্টি বলে। দক্ষিণ ভারতের আমচাষিদের কাছে আম্রবৃষ্টি আশীর্বাদস্বরূপ।
15. মৌসুমি বিস্ফোরণের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর –সংজ্ঞা: গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে, বিশেষত মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতে (রাজস্থানের মরুভূমি ও সংলগ্ন অঞ্চলে) এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপের আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে আর্দ্র বায়ু আরব সাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখায় বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ- পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। গ্রীষ্মের অসহ্য গরমের মধ্যে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আকস্মিকভাবেই ভারতে প্রবেশ করে। আকাশ মেঘে ঢাকা পড়ে। শুরু হয় বজ্রবিদ্যুৎ মোক্ষণ-সহ প্রবল বৃষ্টিপাত। এইভাবে ভারতে বর্ষাকালের সূচনা হয় বলে একে মৌসুমি বিস্ফোরণ (burst of monsoon) বলে।
16. মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: ভারতের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা প্রায় 75 ভাগই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকালীন সময়ে ঘটে। কিন্তু, এই বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর অনিশ্চয়তা। কখনও এটি নির্ধারিত সময়ের পরে আসে, কখনও নির্ধারিত সময়ের আগেই ফিরে যায়। কখনও থাকে অত্যন্ত সক্রিয়—একটানা কয়েকদিন প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, আবার কখনও একেবারেই দুর্বল। একেই মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলে।প্রভাব: মৌসুমি বায়ুর এই অনিশ্চিয়তার জন্য কখনও অতিবৃষ্টির ফলে হয় বন্যা, আবার কখনও অনাবৃষ্টির জন্য হয় খরা।
17. পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে যে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের আগমন ঘটে, তাকে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে। উৎপত্তি: শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট এই নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে ইরাক, ইরান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ অতিক্রম করে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছায়। এই বায়ু জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে (মাঝে মাঝে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গেও) প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য এলাকায় তুষারপাত ঘটায়। অপর নাম: পশ্চিম দিক থেকে আসা এই ঘূর্ণবাত শীতের শান্ত আবহাওয়াকে নষ্ট করে দেয় বলে একে পশ্চিমি ঝামেলা নামেও অভিহিত করা হয়।
18. মরুস্থলী নামকরণের কারণ কী?
উত্তর – ‘মরু’ শব্দের অর্থ মৃত এবং ‘স্থলী’ শব্দের অর্থ দেশ অর্থাৎ মৃতের দেশ বা নিষ্প্রাণ অঞ্চল। ভারতের পশ্চিমপ্রান্তে পশ্চিম রাজস্থানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম। সেইজন্য এখানকার পরিবেশ রুক্ষ, শুষ্ক মরুময়—জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। আর এ কারণেই ঊষর নিষ্প্রাণ এই মরু অঞ্চলকে বলা হয় মরুস্থলী বা মৃতের দেশ।
19. জেট বায়ু কী ?
উত্তর – সংজ্ঞা: ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে 10-12 কিমি উচ্চতা দিয়ে এঁকেবেঁকে সর্পিল পথে প্রবাহিত অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন একপ্রকার অতি শীতল বায়ুপ্রবাহের নাম জেট বায়ু।গতিবেগ: এর গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন 90 কিমি থেকে সর্বোচ্চ প্রায় 500 কিমি।শ্রেণিবিভাগ: অবস্থান অনুসারে জেট বায়ুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় — (1) মেরুদেশীয় জেট বায়ু, (2) উপক্রান্তীয় জেট বায়ু এবং (3) ক্রান্তীয় জেট বায়ু।
20.লু বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। সেই সময় ওই রাজ্যগুলির ওপর দিয়ে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে পশ্চিম দিক থেকে যে উয় ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, স্থানীয় ভাষায় তাকে লু বলে। বৈশিষ্ট্য: (1)অত্যন্ত উয় (40° – 50° সে) এই বায়ুর গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় 30-35 কিমি। (2) দুপুর ও অপরাহ্নের দিকে এই বায়ুপ্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
21. ভারতের কোথায় কোথায় লু বায়ু প্রবাহিত হয় ?
উত্তর – ভারতের লু বায়ু প্রবাহিত অঞ্চল: পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং উত্তর গুজরাতে লু বায়ু প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং উত্তর গুজরাতে লু বায়ু প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায়ও মাঝে মাঝে লু বায়ু প্রবাহিত হয়।
22. আঁধি কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চল-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন অংশে যে প্রবল ধূলিঝড় হয়, তাকে আঁধি বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) এই ঝড়ের প্রভাবে প্রবল ধুলো বাতাসে ওড়ে। (2) এই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় 50-60 কিমি।
23. মালাবার উপকূলে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার কারণ কী?
উত্তর – মালাবার উপকূলে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার কারণ: জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা মালাবার উপকূলে এসে পৌঁছোনোর পর পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায় ও প্রবল বৃষ্টির আকারে প্রতিবাত ঢালে অর্থাৎ মালাবার উপকূলে নেমে আসে। এই উপকূলে বছরে 300-500 সেমি বৃষ্টিপাত হয়।
24 .করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাতের কারণ কী?
উত্তর – করমণ্ডল উপকূলে শীতকালীন বৃষ্টিপাতের কারণ: প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালে তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়। কারণ, প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু যখন বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ফিরে যায় তখন প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প শোষণ করে ও করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। যেমন— তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর ও সংলগ্ন জেলায় জুন- সেপ্টেম্বর মাসে 60 সেমি বৃষ্টিপাত হলেও অক্টোবর-নভেম্বরে প্রায় 140 সেমি বৃষ্টি হয়।
25. মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ছেদ বা break of monsoon কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: ভারতে বর্ষাকালের স্থায়িত্ব জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই চার মাস। এই সময় প্রায় সমগ্র দেশজুড়েই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়। কিন্তু এরই মধ্যে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি ঘটে। একেই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ছেদ বা break of monsoon বলে। কারণ: বায়ুচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন, মৌসুমি অক্ষরেখার অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে দেশের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিহীন অবস্থা বিরাজ করে।
26. ভারতের জলবায়ুতে লা নিনার প্রভাব লেখো।
উত্তর – লা নিনার ধারণা: অর্থের দিক থেকে লা নিনা (ছোট্ট মেয়ে) হল এল নিনো (শিশু খ্রিস্ট বা ছোট্ট ছেলে)-র ঠিক বিপরীত। লক্ষ করে দেখা গেছে, কোনো কোনো বছর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্ত থেকে খরা সৃষ্টিকারী এল নিনো অন্তর্হিত হলে পশ্চিমপ্রান্তে গভীর নিম্নচাপ-সহ ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এল নিনোর ঠিক বিপরীত এই পর্যায়টিকে লা নিনা নামে অভিহিত করা হয়।
প্রভাব: (1) লা নিনার ওইসব বছরগুলিতে ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় ও বেশি ঘূর্ণবাতের আবির্ভাব ঘটে, (2) বন্যা ও ভূমিধস বাড়ে এবং (3) বেশি আর্দ্রতার জন্য শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
27. আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে মরুভূমি রয়েছে কেন?
উত্তর – আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে মরুভূমি সৃষ্টির কারণ: (1) আরাবল্লি পর্বতের বৈশিষ্ট্যমূলক অবস্থান: আরাবল্লি পর্বত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে বিস্তৃত। এরূপ অবস্থানের জন্য আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা বাধাহীনভাবে রাজস্থানের ওপর দিয়ে আরও উত্তরে চলে যায়। (2) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর গতিপথ থেকে দূরে অবস্থান: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা বিহারের তরাই অঞ্চল ধরে পশ্চিম হিমালয়ের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত অগ্রসর হলেও তা রাজস্থানে পৌঁছোনোর কোনো সুযোগ নেই। এজন্য রাজস্থানের পশ্চিম ভাগে বা আরবল্লি পর্বতের পশ্চিমে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে, গড়ে বার্ষিক মাত্র 25 সেমিরও কম। দীর্ঘকাল ধরে এই প্রায় বৃষ্টিহীন অবস্থাই রাজস্থানে আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমভাগের বিস্তীর্ণ এলাকাকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে।
28. পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে শৈলোৎক্ষেপ-জাতীয় বৃষ্টিপাত ঘটার কারণ কী? 
উত্তর – পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে শৈলোৎক্ষেপ-জাতীয় বৃষ্টিপাত ঘটার কারণ: পশ্চিম উপকূলের পূর্বসীমায় উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রাচীরের মতো বিস্তৃত আছে সুউচ্চ পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি। এজন্য আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা পশ্চিম উপকূলের ওপর দিয়ে এসে দক্ষিণ ভারতের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশের মুখে এই পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে প্রথম বাধা পায়। এরপর পশ্চিমঘাট অতিক্রমের চেষ্টায় ওই আর্দ্র বায়ু যতই ওপরে ওঠে ততই শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিমঢালে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।
29. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আর্দ্র কেন?
উত্তর – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আর্দ্র হওয়ার কারণ: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর তথা ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। তাই দক্ষিণ-পশ্চিম | মৌসুমি বায়ু আর্দ্র প্রকৃতির হয়।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তৱধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—
(a) ঋতুপরিবর্তন
(b) অত্যধিক উন্নতা
(c) অত্যধিক বৃষ্টিপাত
(d) অত্যধিক শৈত্য
উত্তর – (a) ঋতুপরিবর্তন
2. ভারতের একটি স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ হল—
(a) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু
(b) লু
(c) আশ্বিনের ঝড়
(d) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা
উত্তর – (b) লু
3. শীতকালে উত্তর ভারতে সংঘটিত পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে বৃষ্টিপাত এক প্রকার-
(a) পরিচলন
(b) শৈলোৎক্ষেপ
(c) ঘূর্ণবৃষ্টি
(d) স্থানীয় বৃষ্টিপাতের উদাহরণ
উত্তর – (c) ঘূর্ণবৃষ্টি
4. আশ্বিনের ঝড় হয়—
(a) শরৎকালে
(b) বর্ষাকালে
(c) শীতকালে
(d) গ্রীষ্মকালে
উত্তর – (a) শরৎকালে
5. মৌসুমি কথার অর্থ হল –
(a) ঋতু
(b) বৃষ্টি
(c) বায়ু
(d) তুষারপাত
উত্তর – (a) ঋতু
6. ভারতের বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই হল-
(a) পরিচলন প্রকৃতির
(b) শৈলোৎক্ষেপ প্রকৃতির
(c) ঘূর্ণবাত প্রকৃতির
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) শৈলোৎক্ষেপ প্রকৃতির
7. মৌসুমি বিস্ফোরণের ফলে যে ঋতুর সূচনা হয়, তা হল —
(a) গ্রীষ্মকাল
(b) বর্ষাকাল
(c) শীতকাল
(d) শরৎকাল
উত্তর – (b) বর্ষাকাল
৪. দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু সামগ্রিকভাবে—
(a) উম্ন ও শুষ্ক প্রকৃতির
(b) আর্দ্র এবং শীতল প্রকৃতির
(c) সমভাবাপন্ন প্রকৃতির
(d) নাতিশীতোয় প্রকৃতির
উত্তর – (c) সমভাবাপন্ন প্রকৃতির
9. আম্রবৃষ্টি সংঘটিত হয় —
(a) শীতকালে
(b) বর্ষাকালে
(c) গ্রীষ্মকালে
(d) শরৎকালে
উত্তর – (c) গ্রীষ্মকালে
10. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হল –
(a) ছোটোনাগপুর মালভূমি
(b) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম দিক
(c) শিলং মালভূমি
(d) তামিলনাড়ুর দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল
উত্তর – (c) শিলং মালভূমি
11. ভারতের চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর একটি শহর হল —
(a) কটক
(b) কলকাতা
(c) মুম্বাই
(d) অমৃতসর
উত্তর – (d) অমৃতসর
12. ভারতের জলবায়ুকে সর্বাধিক প্রভাবিত করে—
(a) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু
(b) দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু
(c) উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু
(d) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু
উত্তর – (d) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু
13. ভারতে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়-
(a) রাজস্থানের থর মরুভূমিতে
(b) গুজরাতের সমভূমিতে
(c) লাডাকে
(d) মধ্যপ্রদেশে
উত্তর – (a) রাজস্থানের থর মরুভূমিতে
14. গ্রীষ্মের অপরাহ্নে পশ্চিমবঙ্গে যে ঝড়-বৃষ্টি হয় তার নাম—
(a) আশ্বিনের ঝড়
(b) লু
(c) আম্ৰবৃষ্টি
(d) কালবৈশাখী
উত্তর – (d) কালবৈশাখী
15. মরু জলবায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ভারতের—
(a) উত্তরাংশে
(b) মধ্যভাগে
(c) পশ্চিমাংশে
(d) পূর্বাংশে
উত্তর – (c) পশ্চিমাংশে
16. অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গে যে নামে পরিচিত—
(a) কালবৈশাখী
(b) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা
(c) লু
(d) আশ্বিনের ঝড়
উত্তর – (d) আশ্বিনের ঝড়
17. দক্ষিণ ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হল—
(a) লাডাক মালভূমি
(b) শিলং মালভূমি
(c) মালনাদ
(d) সিমলা
উত্তর – (c) মালনাদ
18. ভারতে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি—
(a) উত্তর-পশ্চিম ভারতে
(b) দক্ষিণ ভারতে
(c) উত্তর-পূর্ব ভারতে
(d) পশ্চিম ভারতে
উত্তর – (c) উত্তর-পূর্ব ভারতে
19. ভারতের জলবায়ুর ওপর যে পর্বতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি—
(a) আরাবল্লি
(b) হিমালয়
(c) পশ্চিমঘাট
(d) কারাকোরাম
উত্তর – (b) হিমালয়
20. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের মূল ভূখণ্ডে যে মাসে প্রবেশ করে-
(a) মে
(b) জুন
(c) জুলাই
(d) আগস্ট
উত্তর – (b) জুন
21. ভারতে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব পড়ে—
(a) শীতঋতুতে
(b) গ্রীষ্মঋতুতে
(c) শরৎঋতুতে
(d) বর্ষাঋতুতে
উত্তর – (a) শীতঋতুতে
22. মৌসুমি বায়ুর স্থায়িত্ব সবচেয়ে কম—
(a) উত্তর-পূর্ব ভারতে
(b) উত্তর-পশ্চিম ভারতে
(c) পশ্চিম ভারতে
(d) দক্ষিণ ভারতে
উত্তর – (b) উত্তর-পশ্চিম ভারতে
23. শরৎকালে পূর্ব ভারতে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তার উৎপত্তিস্থল হল –
(a) আরব সাগর
(b) খাম্বাত উপসাগর
(c) বঙ্গোপসাগর
(d) ভারত মহাসাগর
উত্তর – (c) বঙ্গোপসাগর
24. পশ্চিমি ঝঞ্ঝা সৃষ্টি হয় —
(a) আরব সাগরে
(b) লোহিত সাগরে
(c) ভূমধ্যসাগরে
(d) বঙ্গোপসাগরে
উত্তর – (c) ভূমধ্যসাগরে
25. পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলা হল—
(a) দার্জিলিং
(b) নদিয়া
(c) পুরুলিয়া
(d) বাঁকুড়া
উত্তর – (c) পুরুলিয়া
26. ভারত থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন ঘটে—
(a) গ্রীষ্মকালে
(b) শরৎকালে
(c) শীতকালে
(d) বসন্তকালে
উত্তর – (b) শরৎকালে
27. ভারতের সবচেয়ে শুষ্ক স্থান-
(a) জয়সলমের
(b) বিকানের
(c) যোধপুর
(d) জয়পুর
উত্তর – (a) জয়সলমের
28. পশ্চিমি ঝঞ্ঝা থেকে যে সুবিধা হয়, তা হল—
(a) রবি শস্য উৎপাদন
(b) বাগিচা ফসল উৎপাদন
(c) খরিফ ফসল উৎপাদন
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) রবি শস্য উৎপাদন
29. অক্ষাংশগত দিক থেকে ভারতের উত্তরাংশের অবস্থান—
(a) হিমমণ্ডলে
(b) উয় নাতিশীতোয়মণ্ডলে
(c) উয়ুমণ্ডলে
(d) শীতল নাতিশীতোয়মণ্ডলে
উত্তর – (b) উয় নাতিশীতোয়মণ্ডলে
30. এল নিনোর আবির্ভাবে ভারতে সৃষ্টি হয়-
(a) বন্যা
(b) খরা
(c) উয় বায়ুপ্রবাহ
(d) শীতল বায়ুপ্রবাহ
উত্তর – (b) খরা
31. 2014 সালে ভারতে খরার জন্য দায়ী ছিল—
(a) এল নিনো
(b) লা নিনা
(c) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) এল নিনো
32. ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের অন্যতম কারণ—
(a) পশ্চিমা জেট বায়ু
(b) পুবালি জেট বায়ু
(c) এল নিনো
(d) সমুদ্রস্রোত
উত্তর – (b) পুবালি জেট বায়ু
33. কালবৈশাখীর মতো গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ভারতে যে ঝড়-বৃষ্টি হয় তার নাম—
(a) নরওয়েস্টার
(b) বরদৈছিলা
(c) আম্রবৃষ্টি
(d) চেরি ব্লসম
উত্তর – (c) আম্রবৃষ্টি
34. উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রীষ্মকালে যে ধূলিঝড় দেখা যায় তা হল—
(a) কালবৈশাখী
(b) আঁধি
(c) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা
(d) লু
উত্তর – (b) আঁধি
35. সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে যে শহরে তা হল—
(a) দিল্লি
(b) মুম্বাই
(c) চণ্ডীগড়
(d) কানপুর
উত্তর – (b) মুম্বাই
36. গ্রীষ্মকালীন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টির অসমে নাম—
(a) কালবৈশাখী
(b) আম্রবৃষ্টি
(c) বরদৈছিলা
(d) চেরি ব্লসম
উত্তর – (c) বরদৈছিলা

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. ভারতকে ………… জলবায়ুর দেশ বলা হয়।
উত্তর – মৌসুমি
2. ভারতের জলবায়ু ……….. বায়ুর দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত।
উত্তর – মৌসুমি
3. দক্ষিণ ভারতে গ্রীষ্মকালে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ যে ঝড়-বৃষ্টি হয়, তাকে ……… বলে।
উত্তর – আম্রবৃষ্টি
4. মৌসুমি কথাটি আরবি শব্দ ………… থেকে নেওয়া হয়েছে।
উত্তর – মৌসিম
5. …………. মৌসুমি বায়ু শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
উত্তর – উত্তর-পূর্ব
6. ………… ভারতের একটি শীতল মরুভূমি।
উত্তর – লাডাক
7. ভারতে প্রবাহিত ………… বায়ু একটি সাময়িক বায়ু।
উত্তর – মৌসুমি
৪. শিলং মালভূমি ভারতের অন্যতম ……… অঞ্চল।
উত্তর – বৃষ্টিচ্ছায়
9. কর্ণাটকের আম্রবৃষ্টি ………. নামে পরিচিত।
উত্তর – চেরি ব্লসম
10. ভারতে শীতকালে ………. মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।
উত্তর – উত্তর-পূর্ব
11. অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতে ………. ঋতু বিরাজ করে।
উত্তর – শরৎ
12. উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কালবৈশাখী আসে বলে একে ……….. বলে।
উত্তর – নরওয়েস্টার
13. ভারতের একটি বন্যাপ্রবণ অঞ্চল …………।
উত্তর – অসম উপত্যকা
14. ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু ………… বায়ুকে ভারতে আসতে বাধ্য করে।
উত্তর – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি
15. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ……….. পর্বতের সমান্তরালে প্রবাহিত হয় বলে বৃষ্টিপাত কম হয়।
উত্তর – আরাবল্লি
16. রাজস্থানের ধূলিঝড় ………. নামে পরিচিত।
উত্তর – আঁধি
17. ………… বায়ু হল স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর বৃহৎ সংস্করণ।
উত্তর – মৌসুমি
18. ভারতের শীতলতম অঞ্চলটি হল …………।
উত্তর – লাডাক
19. উত্তরপ্রদেশ, বিহারে গ্রীষ্মের দুপুরে প্রবাহিত অতি উম্ন বায়ুর নাম …………।
উত্তর – লু
20. …………. উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।
উত্তর – করমণ্ডল
21. ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ………… শতাংশ বর্ষাকালে হয়।
উত্তর – 75
22. ভারতের দক্ষিণ ভাগ অপেক্ষা উত্তর ভাগের উন্নতা …………।
উত্তর – কম
23. প্রশান্ত মহাসাগরে ………… সৃষ্টি হলে ভারতে খরা দেখা দেয়।
উত্তর – এল নিনো
24. ………… কালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত থেকে প্রত্যাগমন করে।
উত্তর – শরৎ
25. নিরক্ষরেখার কাছাকাছি বলে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সারাবছরই ………… জলবায়ু বিরাজ করে।
উত্তর – নিরক্ষীয়
26. কর্কটক্রান্তিরেখা ভারতের প্রায় ………… দিয়ে প্রসারিত হয়েছে।
উত্তর – মাঝখান

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *