wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – E & F

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – E & F

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 5 ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ TOPIC – E & F

West Bengal Board 10th Geography Solutions

TOPIC – E  ভারতের মৃত্তিকা

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ: ভারতে প্রধানত ছয়প্রকার মৃত্তিকা দেখা যায়। এগুলি হল –(1) পলি মৃত্তিকা: গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদনদীর বিস্তীর্ণ উপত্যকা জুড়ে পলি, বালি, কাদা মেশানো এই মাটি আছে। (2) কৃয় মৃত্তিকা: এর আর এক নাম রেগুর। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে এই মাটি দেখা যায়। (3) লোহিত মৃত্তিকা: তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে এই লাল মাটি আছে। (4) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা: এই লাল কাঁকুরে মাটি পশ্চিমঘাট, নীলগিরি, কার্ডামম, পূর্বঘাট প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চল, ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের মালভূমি এবং মেঘালয়ে দেখা যায়। (5) মরু মৃত্তিকা: রাজস্থানের মরুপ্রধান অঞ্চলের মাটি। এর আর এক নাম সিরোজেম। (6) পার্বত্য মৃত্তিকা: পশ্চিম হিমালয় ও পূর্ব হিমালয়, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট, কার্ডামম প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়।
  2. মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণ : বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপের জন্য যদি মাটি অস্বাভাবিক হারে অপসারিত হয়, তখন এই ক্ষয়কে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণগুলি হল – (1) প্রবহমান জলধারা, (2) বায়ুপ্রবাহ, (3) বৃষ্টিপাতের তীব্রতা, অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি, (4) ভূমির ঢাল বা ভূপ্রকৃতি, (5) বায়ুপ্রবাহ, (6) ভূমিধস প্রভৃতি।
  3. মৃত্তিকা ক্ষয়ের মনুষ্যসৃষ্ট কারণ : মৃত্তিকা ক্ষয়ের মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি হল— (1) বৃক্ষচ্ছেদন, (2) জনসংখ্যার চাপ, (3) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ, (4) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় খনন, (5) প্রথাগত কৃষিপদ্ধতি প্রভৃতি।
  4. মৃত্তিকা ক্ষয় অঞ্চল : উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল, রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চল, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমভাগ, মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাংশ প্রভৃতি অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের সমস্যা খুব বেশি।
  5. মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল : মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে পরিবেশে নানান ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, যেমন— (1) উর্বর মৃত্তিকার উপরিস্তরের অপসারণ ঘটে, (2) ভৌমজল স্তরের উচ্চতা ও মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পায়, (3) মরুভূমির প্রসার ঘটে, (4) বন্যা ও খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, (5) খাল ও নদীতে পলি সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, (6) ভূমিধস বাড়ে, (7) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উন্নতিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
  6. মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ : মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের পদ্ধতিগুলি হল— (1) বৃক্ষরোপণ, (2) ধাপচাষ, (3) সমোন্নতিরেখা চাষ, (4) ফালিচাষ বা স্ট্রিপ ক্রপিং, (5) গালিচাষ, (6) ঝুমচাষ রোধ প্রভৃতি।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য
উত্তর – ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকাগুলির মধ্যে- 1. পলি মৃত্তিকা বা পলিমাটি, 2. কৃয় মৃত্তিকা বা কালোমাটি, 3. লোহিত মৃত্তিকা বা লালমাটি, 4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, 5. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা এবং 6. পার্বত্য মৃত্তিকা উল্লেখযোগ্য।
  1. পলিমাটি বা পলি মৃত্তিকা: এই মাটিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়—
    1. নদী উপত্যকার পলিমাটি
      ভৌগোলিক বণ্টন: সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদনদীর বিস্তীর্ণউপত্যকা ও বদ্বীপ অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়।
      প্রধান বৈশিষ্ট্য: [a] প্লাবনের ফলে নদীবাহিত বালি, পলি ও কাদা নদী উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে পলিমাটির সৃষ্টি হয়। [b] পলির উপস্থিতির কারণে এই মাটি খুবই উর্বর হয়, যদিও পলিমাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। [c] পলিমাটি পটাশ ও চুন-জাতীয় পদার্থে সমৃদ্ধ। [d] নতুন পলিমাটিকে খাদার এবং পুরোনো পলিমাটিকে ভাঙ্গার বলা হয়। এ ছাড়া, পর্বতের পাদদেশের বালি ও নুড়ি মিশ্রিত পলিমাটিকে ভাবর বলে। [e] এই মাটি ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ, তুলো, ইক্ষু, পাট ও সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপযোগী।
    2. উপকূলের পলিমাটি
      ভৌগোলিক বণ্টন: প্রধানত ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে এই মাটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন-সহ ভারতের বিভিন্ন বদ্বীপ ও নীচু উপকূল অঞ্চলেও এই মাটি দেখা যায়।
      প্রধান বৈশিষ্ট্য: [a] প্রধানত সামুদ্রিক পলি সঞ্চিত হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। [b] বালি ও লবণের প্রভাবে উর্বরাশক্তি মাঝারি ধরনের হয়। [c] এই মাটিতে নারকেল ও সুপারি গাছ ভালো জন্মায়। [d] নীচু ও বদ্বীপ অঞ্চলের লবণাক্ত পলিমাটিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়।
    3. পিট ও জৈব মৃত্তিকা
      ভৌগোলিক বণ্টন: কেরলের আলাপ্পুঝা জেলা এবং উত্তরপ্রদেশের তরাই অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়।
      প্রধান বৈশিষ্ট্য: [a] এই মৃত্তিকায় পলিমাটির সঙ্গে প্রচুর তৃণ জাতীয় জৈব পদার্থের অধঃক্ষেপ ঘটে। [b] মালভূমি অধ্যুষিত বনাঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
  2. কালোমাটি বা কৃয় মৃত্তিকা

    ভৌগোলিক বণ্টন: দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশের ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চল, বিশেষত মহারাষ্ট্র মালভূমি, গুজরাতের ভারুচ, ভাদোদরা ও সুরাত, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং উত্তর কর্ণাটক প্রভৃতি স্থানে এই মাটি দেখা যায়।

    প্রধান বৈশিষ্ট্য: (1) লাভা থেকে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে। (2) এই মাটির রং কালো হওয়ায় এর আর এক নাম রেগুর। (3) কৃষ্ণ মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা খুব বেশি। (4) এই মৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে কৃয়-কার্পাস মৃত্তিকাও বলা হয়। (5) প্রকৃতিতে উর্বর এই মৃত্তিকায় তুলো ছাড়াও খাদ্যশস্য, তেলবীজ, টকযুক্ত ফল, সবজি ইত্যাদির চাষ খুব ভালো হয়।
  3. লালমাটি বা লোহিত মৃত্তিকা
    ভৌগোলিক বণ্টন: দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র রাজ্যের মালভূমি অঞ্চল, ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমি, উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল ও মেঘালয় মালভূমি প্রভৃতি অঞ্চলে লালমাটি দেখা যায়।
    প্রধান বৈশিষ্ট্য: (1) প্রাচীন গ্র্যানাইট, নিস প্রভৃতি আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়। (2) এই মাটিতে লৌহকণার ভাগ বেশি থাকে বলে এর রং লাল হয়। (3) এই প্রকার মাটির জল ধরে রাখার ক্ষমতা কম। (4) লোহিত মৃত্তিকা পটাশ ও ফসফেট খনিজে সমৃদ্ধ। (5) এই মাটিতে রাগি, ধান, তামাক, চিনাবাদাম, আলু ও সবজির চাষ ভালো হয়।
  4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
    ভৌগোলিক বণ্টন: পশ্চিমঘাট, নীলগিরি, কার্ডামম প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চল, ওডিশার পাহাড়ি অঞ্চল, মেঘালয় মালভূমি এবং ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়।
    প্রধান বৈশিষ্ট্য: (1) অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার সোদক দিয়ে গঠিত হওয়ায় এই মৃত্তিকার রং লাল হয়। (2) এই মাটি ইটের মতো শক্ত ও কাঁকরপূর্ণ হয়। (3) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন, ফসফোরিক অম্ল, পটাশ, চুন ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। (4) সাধারণভাবে অনুর্বর এই মাটিতে জলসেচ করা গেলে ধান, রাগি, ইক্ষু প্রভৃতি ফসলের চাষ করা সম্ভব।
  5. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা
    ভৌগোলিক বণ্টন: রাজস্থানের মরু অঞ্চল এবং গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উত্তরাংশে এই মাটি দেখা যায়।
    প্রধান বৈশিষ্ট্য: (1) জৈব পদার্থহীন ও দ্রবীভূত লবণে পূর্ণ এই মাটিতে বালির পরিমাণ খুব বেশি। (2) এই প্রকার মাটি ফসফেটসমৃদ্ধ, কিন্তু নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়। (3) জলসেচের সাহায্যে এই মাটিতে জোয়ার, বাজরা, গম, তুলো প্রভৃতি ফসল চাষ করা যায়।
  6. পার্বত্য মৃত্তিকা
    ভৌগোলিক বণ্টন: পশ্চিম ও পূর্ব হিমালয়, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা, কার্ডামম পাহাড় প্রভৃতি স্থানে পার্বত্য মৃত্তিকা দেখা যায়।
    প্রধান বৈশিষ্ট্য: (1) ভূমির ঢাল বেশি বলে পার্বত্য অঞ্চলে মৃত্তিকার স্তর অগভীর হয়। (2) পার্বত্য মৃত্তিকায় পটাশ, ফসফরাস ও চুনের ঘাটতি থাকলেও জৈব পদার্থে এই মৃত্তিকা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। (3) পর্বতের উঁচু অংশে অম্লধর্মী পডসল এবং সামান্য নীচু অংশে বাদামি চেস্টনাট মৃত্তিকা পাওয়া যায়। (4) পার্বত্য মৃত্তিকা রবার, চা, কফি, মশলা, ফল প্রভৃতি উৎপাদনে অত্যন্ত উপযোগী।
2. মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণসমূহ
বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয় হয়। যেমন—
  1. ভূপ্রকৃতি : সমভূমির তুলনায় পার্বত্য বা মালভূমি অঞ্চলে ভূমিক্ষয় বেশি হয়। ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে মাটির স্তর কম গভীর হয় এবং শিথিল উপরিভাগ বৃষ্টিপাতের জলপ্রবাহের সাথে দ্রুত অপসারিত হয়।
  2. ঝড় : ঝড়ের ফলে গাছ মাটি থেকে উপড়ে পড়লে মাটির বাঁধন আলগা হয়ে যায়। এর ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়।
  3. বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তার স্থায়িত্ব খুব বেশি হলেও মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়। আবার, বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব ও পরিমাণ কম হলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
  4. বায়ুপ্রবাহ: উদ্ভিদহীন মরু অঞ্চলে ও তার আশেপাশের উন্মুক্ত স্থানে প্রবল বায়ুপ্রবাহের জন্য মৃত্তিকার উপরিস্তর অপসারিত হয়। এর ফলে বিশাল এলাকা জুড়ে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।
  5. প্রবহমান জলধারা : পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষণিক বৃষ্টিপাতের প্রভাবে সৃষ্ট জলপ্রবাহের দ্বারা বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। স্তর ক্ষয়, নালী ক্ষয়, প্রণালী ক্ষয় হল জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়ের বিভিন্ন রূপ।
  6. ভূমিধস : অধিক বৃষ্টিপাত কিংবা ভূ-আলোড়নে পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস ঘটলে নিমেষের মধ্যে বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা স্থানান্তরিত হয় অর্থাৎ মৃত্তিকার ক্ষয় হয়। অবশ্য ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কার্য, বৃক্ষচ্ছেদন প্রভৃতি মনুষ্যসৃষ্ট ক্রিয়াকলাপের জন্যও পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস তথা মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।
3. মৃত্তিকা ক্ষয়ের কয়েকটি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ লেখো।
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয়ের মনুষ্যসৃষ্ট কারণসমূহ
মৃত্তিকা ক্ষয় প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই হয়ে থাকে। এর মধ্যে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি হল—
  1. জনসংখ্যার চাপ: যেখানে মানুষের বসবাস বেশি সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি, জল সরবরাহ, জলনিকাশি ব্যবস্থা, কৃষিকাজ প্রভৃতি বেশিমাত্রায় করার জন্য মৃত্তিকার ব্যাপক ক্ষয় হয়। সুতরাং জনসংখ্যার চাপ যত বাড়বে, মৃত্তিকা ক্ষয় ততই বাড়বে।
  2. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: পাহাড়ি অঞ্চলে বা ঢালু ভূমিভাগে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পশুচারণ করলে গবাদিপশু তৃণ বা ছোটো ছোটো গাছ উপড়ে খেয়ে ফেলে। এতে ভূমির আবরণ আলগা হয়ে যায়। এ ছাড়া, পশুর পায়ের খুরের আঘাতে উপরিস্তরের নরম মাটি ক্ষয়ে যায়। বৃষ্টি হলে ওইসব মাটি ধুয়ে অন্যত্র অপসারিত হয়।
  3. অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনন : খনিজ কাঁচামালের জোগান অব্যাহত রাখতে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনন কার্য করা হয়। ফলে ওইসব স্থানের ভূমি উন্মুক্ত ও শিথিল হয়ে মৃত্তিকার ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। আবার অনেক সময় খনিজদ্রব্য সংগ্রহ করার পর ওই খনিটি ঠিকমতো ভরাট করা না হলেও ভূমিক্ষয় বাড়ে।
  4. বৃক্ষচ্ছেদন: গাছ শিকড় দিয়ে মাটিকে ধরে রাখে, পাতা দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার আঘাত থেকে মাটিকে সুরক্ষিত রাখে এবং ছায়া দিয়ে অতিরিক্ত উয়তা থেকে রক্ষা করে। ফলে মাটি ফেটে সহজে ক্ষয় হয় না। এ ছাড়াও, বায়ুর গতিবেগকে কমিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করে। এজন্য নির্বিচারে গাছ কাটলে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
  5. অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ : প্রথাগতভাবে যখন আগের উদ্ভিদ ও আগাছা নির্মূল করে চাষের জমি তৈরি করা হয়, তখন সেই জমি রোদ- বৃষ্টি-বাতাসের কাছে উন্মুক্ত হয়ে মৃত্তিকার ক্ষয়ে সাহায্য করে। এ ছাড়া, ঝুম চাষ বা স্থানান্তর কৃষিপদ্ধতির জন্যও বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। আবার জমির প্রকৃতি বা মাটির উপাদান বিচার না করে ট্র্যাক্টর, হারভেস্টর ইত্যাদির অত্যধিক ব্যবহার মাটিকে সহজে আলগা করে দেয় যা মৃত্তিকা ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
  6. ভূমিধস: পার্বত্য অঞ্চলে বৃক্ষচ্ছেদন, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, জলাধার নির্মাণ, পর্বতের গায়ে অবৈজ্ঞানিকভাবে কৃষিকাজ করলে পার্বত্যঢালের ভূমিভাগে ধস নামে। এই ভূমিধস মৃত্তিকা ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, ভূমিকম্প, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মাণকার্য এই ভূমিধসকে আরও ত্বরান্বিত করে। এর ফলে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নুড়ি, পাথর, মাটি, বালি প্রভৃতি নীচের দিকে নেমে আসে।
4. ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল
মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে বিভিন্ন পরিবেশগত পরিবর্তন দেখা যায়—
  1. ভৌমজলের উচ্চতা ও মাটির আর্দ্রতা হ্রাস : ক্ষয়ের মাধ্যমে মৃত্তিকার ওপরের নরম স্তর অপসারিত হয়। ফলে নীচের মৃত্তিকার অপেক্ষাকৃত কঠিন স্তরের ওপর দিয়ে জলধারা প্রবাহিত হয়। যেহেতু কঠিন স্তরের মধ্যে দিয়ে জল সহজে চুঁইয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না, তাই ভৌমজলের জোগান কমে তার উচ্চতা হ্রাস পায় এবং মাটির আর্দ্রতাও কমে যায়।
  2. উর্বর মৃত্তিকার উপরিস্তরের অপসারণ : মৃত্তিকার ওপরের অংশে থাকে জৈব ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ সর্বাপেক্ষা উর্বর স্তর। বিশেষত জলপ্রবাহ দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে সবার আগে এই উর্বর স্তরটির অপসারণ ঘটে। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায়।
  3. খাল ও নদীতে পলিসঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি : ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পেলে শিথিল মাটির কণা বাড়তি জল, নদীস্রোত, বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে নদী, খাল, বিল, জলাশয়, পুকুরে জমা হয়। ফলে পলি সঞ্চিত হয়ে নদী বা জলাশয়ের গভীরতা হ্রাস পায়, যা বন্যা সৃষ্টি করে।
  4. মরু অঞ্চলের প্রসারণ : বায়ুপ্রবাহ মরুভূমির ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি ও বালিকে এক জায়গা থেকে উড়িয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। এজন্য একদিকে যেমন মৃত্তিকা ক্ষয় বাড়ে, মাটির উর্বরতা কমে যায়, তেমনই একইসঙ্গে যেখানে গিয়ে ওই বালি সঞ্চিত হয়, সেখানে মরুভূমির সম্প্রসারণ ঘটে। এভাবেই রাজস্থানের মরুভূমির আয়তন বাড়ছে।
  5. বন্যা ও খরার প্রকোপ বৃদ্ধি : নদীগর্ভে ক্ষয়ীভূত মাটি সঞ্চিত হলে নদীর নাব্যতা বা গভীরতা কমে যায়। বর্ষাকালে নদীতে জল বাড়লে নদীর জলধারণক্ষমতা কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়।
    অন্যদিকে, যেহেতু সবার আগে মাটির ওপরের স্তরের ক্ষয় হয়, তাই তার আর্দ্রতাও কমতে থাকে। ফলে মৃত্তিকা ধীরে ধীরে শুষ্ক হয়ে খরার প্রবণতা বৃদ্ধি করে।
5. মৃত্তিকা ক্ষয় কীভাবে প্রতিরোধ করে তাকে সংরক্ষণ করা যাবে?
অথবা, ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের উপায় ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়
মাটির ক্ষয় রোধ করা এবং উর্বরতা শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য মাটি সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। মৃত্তিকা সংরক্ষণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল—
  1. বৃক্ষরোপণ : উদ্ভিদের শিকড় একদিকে যেমন মাটিকে ধরে রাখে, তেমনি উদ্ভিদ মাটির ওপর বৃষ্টিকে সরাসরি পড়তে দেয় না। বৃষ্টির জল গাছের ওপর পড়ে তারপর মাটিতে যায়। এতে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়। তাই ফাঁকা জায়গায় স্থানীয় জলবায়ু অনুযায়ী মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে গাছপালা লাগানো উচিত।
  2. সমোন্নতিরেখা বরাবর চাষ : পার্বত্য অঞ্চলে উঁচু, নীচু এলাকায় সমান উচ্চতাযুক্ত বিন্দুগুলিকে যোগ করে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে সমোন্নতিরেখা বলে। এই সমোন্নতিরেখা বরাবর শস্যক্ষেত্র তৈরি করে কৃষিকাজ করলে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়কমে।
  3. ধাপচাষ: পাহাড়ি বা ঢালু জমিতে ঢাল অনুযায়ী সিঁড়ি বা ধাপ গঠন করলে ঢালের কৌণিক মান হ্রাস পায়। ধাপ তৈরি করে কৃষিকাজ করলে সেখানে জলের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই ধাপচাষ পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  4. নালীক্ষয় রোধ : যেখানে ভূমিভাগ নরম মাটি দিয়ে গঠিত, সেখানে খুব বৃষ্টি হলে নালী ক্ষয় হয়। এই ধরনের ক্ষয় রোধ করার জন্য নালী ক্ষয় অঞ্চলে খাতের মধ্যে চারাগাছ দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এমন গাছ বা ঘাস রোপণ করা হয়। এর ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় কমে।
  5. ঝুমচাষ রোধ: ঝুমচাষের ক্ষেত্রে কয়েক বছর অন্তর কৃষিজমি পরিবর্তন করা হয়। অর্থাৎ, বৃক্ষচ্ছেদন করে একটি জমিতে কয়েক বছর চাষ করার পর জমির উর্বরতা কমে গেলে কৃষকরা অন্য জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন। একে স্থানান্তর কৃষিও বলে। এই কৃষিকাজ পরিবেশে ভূমির অবনমনে সর্বাধিক ভূমিকা নেয়। তাই ঝুমচাষ বন্ধ করলে মৃত্তিকা ক্ষয় অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ‘‘খাদার’ ও ‘ভাঙ্গার’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে, বিশেষত গঙ্গা সমভূমিতে দু-ধরনের পলিমাটি দেখা যায়—[1] খাদার ও [2] ভাঙ্গার।
খাদার: সংজ্ঞা: নদীর উভয় তীরের নতুন প্লাবনভূমিতে অর্থাৎ নদীর কাছাকাছি অঞ্চলে যে নতুন পলি দেখা যায়, তাকে খাদার বলে।
বৈশিষ্ট্য: [i] বন্যার ফলে প্রতি বছর নতুন পলি সঞ্চিত হয় বলে খাদার খুব উর্বর। [ii] এতে পলির ভাগ বেশি থাকে। [iii] এর রং ধূসর হয়। [iv] এই মৃত্তিকার গ্রথন সূক্ষ্ম হয়। [v] খাদার মৃত্তিকা আর্দ্রতা ধারণে সক্ষম এবং এই মাটি ভেজা অবস্থায় চটচটে হয়।
ভাঙ্গার: সংজ্ঞা: নদী থেকে কিছু দূরে উচ্চ অংশে পুরোনো প্লাবনভূমিতে যে মাটি দেখা যায়, তাকে ভাঙ্গার বলে।
বৈশিষ্ট্য: [i] এই মাটিতে চুন-জাতীয় পদার্থ বেশি থাকে। [ii] এর জলধারণক্ষমতা কম হয়। [iii] এর রং গাঢ় হয়। [iv] এই মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকায় এর উর্বরতা তুলনামূলকভাবে কম হয়। [v] এই মাটির প্রথন স্থূল হয়।
2. ল্যাটেরাইট মাটি সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – ল্যাটেরহিট মাটি
নামকরণ: লাতিন শব্দ ‘later’ থেকে ইংরেজিতে ‘laterite’ শব্দটির উৎপত্তি। লাতিন ভাষায় ‘later’ শব্দের অর্থ ইট।
অবস্থান: উয় ও বৃষ্টিবহুল দাক্ষিণাত্যের নীলগিরি, পশ্চিমঘাট ও কার্ডামম পার্বত্যভূমি, ওডিশার পাহাড়ি এলাকা, ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমি প্রভৃতি অঞ্চলে ইটভাঙা সুরকির মতো এক ধরনের শক্ত বাদামি লাল কাঁকুরে মাটি দেখা যায়। এই ধরনের মৃত্তিকাকে বলে ল্যাটেরাইট মাটি। এই মাটির স্থানীয় নাম মোরাম।
সৃষ্টি: প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের কারণে ধৌত প্রক্রিয়ায় লবণ-সহ অন্যান্য দ্রবণশীল পদার্থ মাটির নীচের স্তরে চলে যায় এবং লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড মাটির উপরিস্তরে পড়ে থাকে। এইভাবে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় ।
বৈশিষ্ট্য: [i] কাঁকরপূর্ণ বলে এই মাটির জলধারণক্ষমতা বিশেষ নেই। এজন্য এই মাটি বিশেষ উর্বরও নয়। তাই এই মাটিতে চাষাবাদও কম হয়। [ii]. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার ওপরের অংশ কঠিন, কিন্তু তার মধ্য দিয়ে অনায়াসে জল প্রবেশ করতে পারে। [iii] এই মৃত্তিকা অম্লধর্মী বা পেডালফার-জাতীয়।
3. ভারতের কোথায় কোথায় ঝুমচাষ করা হয় এবং কীভাবে করা হয় ?
উত্তর – ভারতের ঝুমচাষ অধ্যুষিত অঞ্চল: ঝুমচাষ এক ধরনের স্থান- পরিবর্তনশীল কৃষিপদ্ধতি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে, বিশেষত অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর প্রভৃতি রাজ্যে পাহাড়ি উপজাতির লোকেরা এই পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে।
ভারতে ঝুমচাষ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে প্রথমে বনভূমির কোনো একটি অংশ নির্দিষ্ট করে তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর যখন ওই ছাই মাটির সঙ্গে মিশে যায়, তখন তাতে গর্ত করে বিভিন্ন ফসলের বীজ পুঁতে দেওয়া হয়। এইভাবে তিন থেকে চার বছর চাষ করার পর মৃত্তিকার উর্বরাশক্তি হ্রাস পাওয়ায় ওই জমিটি পরিত্যাগ করে আগে থেকে পুড়িয়ে রাখা অন্য কোনো জমিতে নতুন করে চাষাবাদ শুরু হয়। ঝুম চাষে প্রত্যেক বছরই কোনো-না-কোনো জমি পুড়িয়ে ফেলার ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের যেমন জীব-পরিমণ্ডল বিপর্যস্ত হয়, তেমন মৃত্তিকা ক্ষয়ও দ্রুত হয়।
4. কৃয় মৃত্তিকা ভারতের কোন অংশে দেখা যায় ? এর বৈশিষ্ট্য কী কী?
অথবা, কৃয় মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। 
অথবা, ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালোমাটি সম্পর্কে যা জানো সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল : (1) দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে মহারাষ্ট্র মালভূমি বা ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কৃয় মৃত্তিকা দেখা যায়। (2) এ ছাড়া, গুজরাতের ভারুচ, ভাদোদরা ও সুরাত, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশ, তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটকের উত্তরাংশেও কৃয় মৃত্তিকা লক্ষ করা যায়।
কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য : (1) লাভা জমাট বেঁধে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে। (2) এই মাটিতে টাইটেনিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে বলে এর রং কালো হয়। এই মাটির আর-এক নাম রেগুর। (3) এর মধ্যে কাদা ও পলির ভাগ বেশি থাকে এবং বালি কম থাকে, এজন্য এই মাটির দানাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়। (4) নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকলেও এই মাটিতে ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, চুন, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট আছে বলে এই মাটি অত্যন্ত উর্বর। (5) এই মাটির জলধারণক্ষমতা খুব বেশি। (6) এই মাটিতে তুলো চাষ খুব ভালো হয় বলে একে ‘কৃষ্ণ কাপাস মৃত্তিকা’-ও বলা হয়। (7) এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আখ (বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলে), চিনাবাদাম (উত্তর কর্ণাটক), জোয়ার, কমলালেবু (নাগপুর), পিঁয়াজ (নাসিক) প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
5. কৃষির ওপর রেগুর মৃত্তিকার প্রভাব কীরূপ?
উত্তর – কৃষির ওপর রেগুর মৃত্তিকার প্রভাব: কৃয় মৃত্তিকার অপর নাম রেগুর। তেলুগু শব্দ রেগাড়া থেকে এই রেগুর নামের উৎপত্তি। এটি দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৃত্তিকা। এই মৃত্তিকায় ফসফরাস, নাইট্রোজেন এবং জৈব পদার্থ কম থাকলেও লোহা, চুন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। এ ছাড়া, মন্টমরিলোনাইট জাতীয় কাদার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই মাটির জলধারণক্ষমতাও বেশি। এজন্য এই মৃত্তিকা খুবই উর্বর। ফলে রেগুর মাটিতে চাষ-আবাদ খুব ভালো হয়। তুলো চাষ খুব ভালো হয় বলে রেগুরকে ‘কৃয় কার্পাস মৃত্তিকা’-ও বলা হয়। তবে শুধু তুলো নয়, এই মৃত্তিকায় আখ, চিনাবাদাম, তিসি, তামাক, পিঁয়াজ, কমলালেবু প্রভৃতি ফসলও প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে, দাক্ষিণাত্যের রেগুর মৃত্তিকা অঞ্চল ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃষিসমৃদ্ধ এলাকা।
6. ভারতের তিনটি প্রধান মৃত্তিকা অঞ্চলের নাম ও অবস্থান লেখো।
উত্তর – ভারতের প্রধান মৃত্তিকা অঞ্চল: উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতার বিচারে ভারতের তিনটি প্রধান মৃত্তিকা অঞ্চল হল—
  1. পলি মৃত্তিকা অঞ্চল: সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রয়পুত্র নদী বিধৌত উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি, মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া ও কাবেরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
  2. কৃन মৃত্তিকা অঞ্চল: মহারাষ্ট্র মালভূমি, গুজরাতের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, তেলেঙ্গানা মালভূমি, মধ্যপ্রদেশের দক্ষিণাংশ, কর্ণাটকের উত্তরাংশ প্রভৃতি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
  3. লোহিত মৃত্তিকা অঞ্চল: তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
7. ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি উল্লেখ করে তার প্রতিকার সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ: ঝড়, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, নদীক্ষয়, সমুদ্রতরঙ্গ, ধস প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণ এবং মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও অবিবেচনাপ্রসূত কার্যাবলি, যেমন—অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ, যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন, অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ ইত্যাদির ফলে ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয় ঘটে থাকে।
প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা: মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া প্রয়োজন, যথা— (1) যথেষ্ট পরিমাণে বৃক্ষরোপণ, (2) স্থান পরিবর্তনশীল কৃষিকাজ বা ঝুমচাষ রোধ, (3) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ, (4) পাহাড়ি অঞ্চলে সমোন্নতি রেখা বরাবর চাষ, ধাপচাষ ও ফালিচাষ, (5) নালিক্ষয় অঞ্চলে গালিচাষ, (6) বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজ প্রভৃতি উদ্যোগগুলি ঠিকমতো পালন করা গেলে মৃত্তিকার উপযুক্ত সংরক্ষণ সম্ভব হবে।
8. ভারতের বিভিন্ন অংশে নদী উপত্যকার পলিমাটি কী কী নামে পরিচিত?
উত্তর – ভারতের বিভিন্ন অংশে নদী উপত্যকার পলিমাটির নামকরণ: ভারতের বিভিন্ন অংশে নদী উপত্যকার পলিমাটি বিভিন্ন নামে পরিচিত—
পলিমাটির নাম ভৌগোলিক অবস্থান
খাদার ও ভাঙ্গার উচ্চ গঙ্গা সমভূমির নবীন পলিমাটির নাম খাদার বা খাদির এবং প্রাচীন পলিমাটির নাম ভাঙ্গার বা বাঙ্গার
বেট পাঞ্জাব বা শতদ্রু সমভূমি
ভুর বা ঘুটিং উচ্চ গঙ্গা সমভূমির বালিমেশানো প্রাচীন পলি
রে বা উষর বা কালার উত্তর রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলের লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী পলিমাটি
ধাঙ্কার উচ্চ গঙ্গা সমভূমির জলাভূমির পলিমাটি
কঙ্কর বা কুঙ্কুর ভাঙ্গার অঞ্চলের কাঁকর মিশ্রিত পলিমাটি
তরাই শিবালিক পর্বতের পাদদেশের জলাভূমিপূর্ণ সমতল অঞ্চলের পলিমাটি
ভাবর শিবালিক পর্বতের পাদদেশের নুড়ি ও বালি মিশ্রিত পলিমাটি
কারেওয়া কাশ্মীর উপত্যকার হিমবাহ বাহিত বালিমাটি
লোয়েস রাজস্থানের লুনি অববাহিকার বায়ুসণ্ডিত বালি মেশানো পলিমাটি
9. ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয় প্রভাবিত অঞ্চলগুলির বিবরণ দাও।
উত্তর – ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয় প্রভাবিত অঞ্চল: ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, পশুচারণ, স্থানান্তর কৃষিপদ্ধতি-সহ মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি কারণে মৃত্তিকা ক্ষয় ঘটে চলেছে। যেমন— (1) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চলে জলপ্রবাহের দ্বারা ক্ষয়ের পরিমাণ বেশি। (2) রাজস্থান ও গুজরাত রাজ্যে বায়ুপ্রবাহ দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ বেশি। (3) হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে অত্যধিক পশুচারণের ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। (4) রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতির রাজ্যে প্রথাগত কৃষি এবং অতিরিক্ত বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় সমস্যা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। (5) উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, দার্জিলিং, সিকিম-সহ সামগ্রিকভাবে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসের কারণেও বিপুল পরিমাণ মৃত্তিকা ক্ষয় ঘটে। (6) উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে ও ওডিশা রাজ্যে স্থানান্তর কৃষিপদ্ধতি মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।
10. প্রবহমান জলধারা কীভাবে ভূমিক্ষয় করে?
উত্তর – প্রবাহমান জলধারার মাধ্যমে ভূমিক্ষয়: প্রবহমান জলধারা ভূমিক্ষয়ের মূল কারণ। প্রবহমান জলধারা নানাভাবে মাটিকে ক্ষয় করে—
  1. স্তর ক্ষয় : একটানা ভারী বৃষ্টি চলার সময় বৃষ্টির জলের সঙ্গে স্তরে স্তরে মাটির অপসারণকে মৃত্তিকার স্তর ক্ষয় বলে।
  2. নালী ক্ষয় : ঢালযুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টির জলধারা মাটিতে সরু, লম্বা, অগভীর গর্ত বা নালী সৃষ্টি করে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে আলগা মৃত্তিকা ধুয়ে নিয়ে যায়। এই জাতীয় মৃত্তিকা ক্ষয়কে নালী ক্ষয় বলে।
  3. খাত ক্ষয় : নালী ক্ষয় দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে নালীগুলি চওড়া ও গভীর হয় অর্থাৎ নালীগুলির আকার বৃদ্ধি পেয়ে আরও বেশি মৃত্তিকা ধুয়ে নিয়ে যায়। এইপ্রকার মৃত্তিকা ক্ষয়কে খাত ক্ষয় বা গালি ক্ষয় বলে।
  4. র‍্যাভাইন ক্ষয় : যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাতের পার্শ্বদেশ বা পাড় খুব খাড়া, তাদের রাডাইন বলে। মেদিনীপুরের গড়বেতার কাছে গনগনি অঞ্চলে এরকম র‍্যাভাইনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় দেখা যায়।
11. খাদার ও ভাঙ্গারের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো।
অথবা, খাদার ও ভাঙ্গার মৃত্তিকার মধ্যে দুটি পার্থক্য নির্দেশ করো।
উত্তর – খাদার ও ভাঙ্গারের মধ্যে পার্থক্যসমূহ: খাদার ও ভাঙ্গারের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল—
খাদার ভাঙ্গার
ধারণা উচ্চ গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলের নদী উপত্যকার নতুন পলিমাটিকে বলে খাদার। উচ্চ গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলের নদী উপত্যকার প্রাচীন পলিমাটিকে বলে ভাঙ্গার।
অবস্থান নদীর উভয় তীরের নতুন প্লাবনভূমিতে অর্থাৎ, নদীর কাছাকাছি অঞ্চলে খাদার মাটি দেখা যায়। নদী থেকে কিছুটা দূরে পুরোনো প্লাবনভূমিতে ভাঙ্গার মাটি দেখা যায়।
রং এটি হালকা বা ধূসর রঙের মাটি। এটি গাঢ় রঙের মাটি।
উর্বরতা প্রতি বছর নতুন করে পলি জমা হয় বলে এর উর্বরতা বেশি। নতুন করে পলি সংযোজিত হয় না বলে এই মাটির উর্বরতা কম।
জলধারণ-ক্ষমতা এর জলধারণক্ষমতা বেশি। এর জলধারণক্ষমতা কম।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. মাটি কাকে বলে?
উত্তর – অর্থ: মাটি বা ‘Soil’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Solum’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হল Floor বা মেঝে।সংজ্ঞা: সূক্ষ্ম শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন খনিজ ও জৈব পদার্থের সংমিশ্রণের ফলে ভূত্বকের সবচেয়ে ওপরে এক আবরণের সৃষ্টি হয়, যেখানে গাছপালা স্বাভাবিকভাবে জন্মাতে পারে, তাকে সাধারণভাবে মৃত্তিকা বলে। মৃত্তিকার মধ্যে থাকা শিলাচূর্ণে খনিজ উপাদানের পরিমাণ, গ্রথন, সচ্ছিদ্রতা এবং জৈব পদার্থের পরিমাণের ওপর মৃত্তিকার উর্বরতা নির্ভর করে। উদাহরণ: পলি মৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা প্রভৃতি।
2. ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকাক্ষয় সমস্যার সমাধানের পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ভূমিক্ষয় সমস্যার সমাধানের পদ্ধতিসমূহ: যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করলে ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকাক্ষয় সমস্যার সমাধান করা যায়, সেগুলি হল— (1) বেশি করে গাছ লাগানো বা বৃক্ষরোপণ, (2) বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ, (3) ঝুমচাষ বা স্থান পরিবর্তনশীল কৃষিকাজ রোধ, (4) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ, (5) পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চলে ভূমির ঢাল অনুসারে সমোন্নতি রেখা চাষ, ধাপচাষ ও স্ট্রিপ ক্রপিং বা ফালিচাষ, (6) যেসব এলাকায় নালিক্ষয় বেশি সেখানে গালিচাষ, (7) জায়গা উন্মুক্ত না রেখে সেখানে কৃষিকাজ বা যে-কোনো ধরনের বৃক্ষরোপণ, (8) শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে চাষ ইত্যাদি।
3. ভারতের প্রধান প্রধান মাটির নাম করো।
উত্তর – ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকাসমূহ: ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শিলার প্রকৃতি, উদ্ভিদ ও জলবায়ুর পার্থক্যের জন্য এখানে প্রধানত ছয় ধরনের মাটি দেখা যায়। এগুলি হল— (1) পলিমাটি, (2) কৃয় মৃত্তিকা বা কালোমাটি, (3) লোহিত মৃত্তিকা বা লালমাটি, (4) ল্যাটেরাইট মাটি, (5) মরু মাটি এবং (6) পার্বত্য মাটি।
4. ভারতীয় কৃষিতে কোন্ কোন্ মৃত্তিকা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর – ভারতীয় কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ মৃত্তিকাসমূহ: আঞ্চলিক বিস্তৃতি এবং ফসল উৎপাদনের বিচারে ভারতের কৃষিতে তিন প্রকার মৃত্তিকা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি হল – (1) পলিমাটি, (2) কৃয় মৃত্তিকা বা কালোমাটি এবং (3) লোহিত মৃত্তিকা বা লালমাটি।
5. বুনন অনুসারে পলিমাটির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – বুনন অনুসারে পলিমাটির শ্রেণিবিভাগ: পলি, বালি ও কাদার অনুপাত বা মৃত্তিকার গ্রথন অনুসারে পলিমাটি তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন— (1) বেলেমাটি (বালির ভাগ বেশি থাকে); (2) দোআঁশ মাটি (বালি, পলি ও কাদার অনুপাত প্রায় সমান থাকে); (3) এঁটেল মাটি (কাদার ভাগ বেশি থাকে)।
6. পলিমাটিতে কী কী ফসল উৎপন্ন হয় ?
উত্তর – পলিমাটিতে উৎপন্ন ফসলসমূহ: উর্বর পলিমাটিতে ধান, গম, পাট, তুলো, আখ প্রভৃতি ফসল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
7. ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায় ?
উত্তর – ভারতে কৃয়মৃত্তিকা অঞ্চলের অবস্থান: মহারাষ্ট্র মালভূমি, গুজরাতের ভারুচ, ভাদোদরা, সুরাত, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশ ও কর্ণাটকের উত্তরাংশে কৃষ মৃত্তিকা দেখা যায়।
8. পড়সল মৃত্তিকা কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলের জৈব পদার্থ বা হিউমাস সমৃদ্ধ ‘অম্লধর্মী’ মাটিকে পডসল মৃত্তিকা বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) এই মৃত্তিকাতে প্রচুর পরিমাণে জৈবপদার্থ থাকে। (2) এই মৃত্তিকা অনুর্বর। অবস্থান: পশ্চিম হিমালয়ের হিমাচল ও জম্মু অঞ্চলের সরলবর্গীয় বনাঞ্চলে এবং নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে পড়সল মৃত্তিকা দেখা যায়।
9. লবণাক্ত মৃত্তিকা ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে দেখা যায় ?
উত্তর – ভারতে লবণাক্ত মৃত্তিকা অঞ্চলের অবস্থান: ভারতের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের যেসব অংশে জোয়ারভাটার প্রভাব আছে, যেমন— পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন-সহ বিভিন্ন নদীর বদ্বীপ ও নিম্ন উপকূল অঞ্চলে লবণাক্ত মাটি দেখা যায়। এ ছাড়া, রাজস্থানের মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের কোনো কোনো অংশে কৈশিক প্রক্রিয়ায় মাটিতে লবণ সঞ্চিত হয়েও লবণাক্ত মাটির সৃষ্টি হয়েছে।
10. ভারতের কোন অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায় ?
উত্তর – অবস্থান: দাক্ষিণাত্যের পশ্চিমঘাট, নীলগিরি ও কার্ডামম পার্বত্য অঞ্চলে, ওডিশার পাহাড়ি এলাকায়, মেঘালয় মালভূমিতে এবং ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায়।
11. ভুর ও রেগুর কী?
উত্তর – ভুর: উচ্চ গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে বিশেষত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের উচ্চ দোয়াব অঞ্চলে বালি মিশ্রিত প্রাচীন পলিকে ভুর বলে।
রেগুর: দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম ভাগে ব্যাসল্ট শিলাসৃষ্ট যে অত্যন্ত উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা আছে, তারই স্থানীয় নাম রেগুর। তেলুগু শব্দ ‘রেগাডা’ থেকে এই নামের উৎপত্তি।
12. খাদার (khadar) কী ?
উত্তর – খাদার: উত্তর ভারতের উচ্চ গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে নদীর উভয় তীরের প্লাবনভূমিতে যে নতুন পলিগঠিত উর্বর মৃত্তিকা দেখা যায়, তাকে খাদার (khadar) বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) প্রতিবছর নদীর দুইপাড়ে নতুন পলি সঞ্চিত হওয়ায় খাদার উর্বর হয়। (2) এর জলধারণ ক্ষমতা বেশি। (3) এই মাটিতে পলির ভাগ বেশি হয়।
13. ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ কী?
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণ : (1) ঝড়, (2) বৃষ্টিপাত, (3) নদী-নালার  মাধ্যমে ক্ষয় প্রভৃতি। মৃত্তিকা ক্ষয়ের মনুষ্যসৃষ্ট কারণ : (1) নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন, (2) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ, (3) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ প্রভৃতি।
14. পডসল মাটি ভারতের কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর – পডসল মৃত্তিকা অঞ্চলের অবস্থান: পশ্চিম হিমালয়ের উচ্চ অংশে, বিশেষত ওখানকার সরলবর্গীয় বনভূমি অঞ্চলে এবং খুব সামান্য পরিমাণে পশ্চিমঘাট ও নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে পডসল মাটি দেখা যায়।
15. ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চলে কৃষ্ণ মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে কেন?
উত্তর – ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চলে কৃয় মৃত্তিকা সৃষ্টির কারণ: দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে লাভা গঠিত মালভূমিকে ডেকান ট্র্যাপ বলে। এই মালভূমিতে প্রধানত কৃয় মৃত্তিকা পাওয়া যায়। বহু কোটি বছর আগে বিদার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এখানকার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে কালো রঙের ব্যাসল্ট সৃষ্টি হয়। ওই ব্যাসল্ট শিলা থেকেই আবহবিকারের মাধ্যমে যে মাটির সৃষ্টি হয়েছে, তার রংও কালো। প্রকৃতপক্ষে এই মাটিতে টাইটেনিয়াম অক্সাইড থাকে বলে এর রং কালো হয়। এইভাবে ডেকানট্র্যাপ অঞ্চলে কৃয় মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে।
16. মৃত্তিকা ক্ষয় বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংজ্ঞা: প্রবহমান জলধারা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি এবং মানুষের অবিবেচনামূলক কার্যকলাপের ফলে মাটির উপরিস্তর আলগা ও শিথিল হয়ে অপসারিত হলে তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। মৃত্তিকা ক্ষয় হলে মাটির উর্বরতাও নষ্ট হয়।
17. ভারতের কোথায় কোথায় মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাধান্য বেশি?
উত্তর – ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাধান্যযুক্ত অঞ্চল: উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অসম, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্য, ছোটোনাগপুর মালভূমি, পূর্ব ও পশ্চিমঘাট পার্বত্যভূমি, রাজস্থানের মরুভূমি, পাঞ্জাব, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাধান্য বেশি।
18. রেগুর মাটির রং কালো কেন?
উত্তর – রেগুর মাটির রং কালো হওয়ার কারণ: লাভাগঠিত কালো ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে রেগুর মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় । এই মাটিতে টাইটেনিয়াম অক্সাইড থাকে বলে এর রং কালো হয়।
19. কৃয় মৃত্তিকার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য: কৃয় মৃত্তিকার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) কৃষ্ণ মৃত্তিকায় সূক্ষ্ম কণার পলি ও কাদার পরিমাণ বেশি থাকায় অর্থাৎ গ্ৰথন সূক্ষ্ম হওয়ায় এই মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা বেশি। (2) কৃষ্ণ মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম পরিমাণে থাকলেও ক্যালশিয়াম, চুন, অ্যালুমিনিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট প্রভৃতি খনিজ পদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে এবং এজন্য এই মৃত্তিকা খুবই উর্বর।
20. কৃষ্ণ মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা বেশি কেন?
উত্তর – ক্রয় মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণ: মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা বহুলাংশে মৃত্তিকার গ্রথনের ওপর নির্ভরশীল। মৃত্তিকার প্রথন সূক্ষ্ম হলে অর্থাৎ মৃত্তিকার কণাগুলি সূক্ষ্ম ও ঘনসন্নিবিষ্ট হলে ওই মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা বাড়ে। আর গ্রথন স্থূল হলে অর্থাৎ মৃত্তিকা বড়ো বড়ো বালুকণা দ্বারা গঠিত হলে জল ধরে রাখতে পারে না, অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়। কৃষ্ণ মৃত্তিকায় সূক্ষ্ম পলি ও কাদা (মন্টমরিলোনাইট কাদা) কণার পরিমাণ বেশি থাকায় এই মৃত্তিকার গ্রথনও সূক্ষ্ম ও ঘন হয়। তাই এর জলধারণক্ষমতাও বেশি।
21. সিরোজেম কী ?
উত্তর – পরিচয়: মরু অঞ্চলে জৈব পদার্থহীন বা স্বল্প জৈব পদার্থযুক্ত, বালিপূর্ণ ও লবণের আধিক্যযুক্ত যে মাটি দেখা যায়, তার নাম সিরোজেম। এর অপর নাম মরুমাটি। অবস্থান: রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এবং গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উত্তরাংশে এই মাটি দেখা যায়। বৈশিষ্ট্য: (1) এর জলধারণক্ষমতা কম। (2) কৈশিক প্রক্রিয়ায় মাটির উপরিস্তরে Ca, Mg, Na প্রভৃতি লবণকণা সঞ্চিত হয়।
22. সমোন্নতিরেখা চাষ কীভাবে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে ?
উত্তর – সমোন্নতিরেখা চাষ: পার্বত্য উপত্যকার ঢালু জমিতে একই উচ্চতা বা সমোন্নতিরেখা বরাবর ঢালের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে যে চাষ করা হয়, তাকে সমোন্নতিরেখা চাষ বলে। এই ধরনের চাষে সমোন্নতিরেখা বরাবর দীর্ঘ ও উচু বাঁধ দেওয়া হয়। এর ফলে ঢালের দিকে জলের ভূপৃষ্ঠীয় প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাই মাটির ওপরের স্তর অভিকর্ষজ টানে নীচের দিকে গড়িয়ে যেতে পারে না। সুতরাং সমোন্নতিরেখা চাষ করলে জলের সঙ্গে বাহিত মাটি ধাপের বাঁধ বা আল দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ওখানেই থেকে যায়, অর্থাৎ মৃত্তিকা ক্ষয় হতেপারে না।
23. মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের দুটি পদ্ধতি উল্লেখ করো।
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের দুটি পদ্ধতি : মৃত্তিকাক্ষয় প্রতিরোধের দুটি পদ্ধতি হল— (1) বৃক্ষরোপণ : মৃত্তিকা সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল ভূমিকে বৃক্ষ দ্বারা আবৃত রাখা এবং এজন্য বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। (2) ধাপচাষ: ঢালু জমিতে দ্রুত জলপ্রবাহের জন্য মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়। কিন্তুসেই ঢালে ধাপ কেটে চাষাবাদ করলে ভূপৃষ্ঠীয় প্রবাহ হ্রাস পায় এবং তার ফলেমৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা যায়।
24. পলিমাটি অত্যন্ত উর্বর হয় কেন?
উত্তর – পলিমাটি উর্বর হওয়ার কারণ: পলিমাটিতে ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া এই মাটির মধ্যে পলি, কাদা, বালির পরিমাণ প্রায় সমান সমান থাকায় জলধারণক্ষমতাও বেশি। তাই এই মাটি উর্বর হয়।
25. ল্যাটেরাইট মাটির নামকরণ কীভাবে হল?
উত্তর – নামকরণ: লাতিন শব্দ ‘ল্যাটার’ শব্দের অর্থ ‘‘ইট’, এই মাটির রং ইটের মতো বলে এই মাটিকে ল্যাটেরাইট মাটি বলে।
26. শারীবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা কাকে বলে? 
উত্তর – সংজ্ঞা: যে মৃত্তিকায় যথেষ্ট পরিমাণে জল থাকলেও মৃত্তিকায় লবণতা বেশি থাকার জন্য উদ্ভিদ সেই জল গ্রহণ করতে পারে না, তাকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা বলে। যেমন—সুন্দরবনের লবণাক্ত মৃত্তিকা। প্রকৃতপক্ষে উপকূলে যেখানে প্রতিদিন জোয়ারভাটা হয়, সেখানে মৃত্তিকায় লবণের ভাগ বেশি থাকায় উদ্ভিদের শেকড়ের কোষরসের ঘনত্ব, মৃত্তিকা দ্রবণের ঘনত্ব অপেক্ষা কম হয়। ফলে বেশি ঘনত্বের দ্রবণ উদ্ভিদ অভিস্রবণের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে না। এই ধরনের মৃত্তিকায় প্রধানত শ্বাসমূল ও ঠেসমূল যুক্ত ম্যানগ্রোভউদ্ভিদ, যেমন—সুন্দরী, গরান, গেওয়া প্রভৃতি গাছ জন্মায় ।
27. ঝুমচাষ কীভাবে মাটি ক্ষয় করে?
উত্তর – ঝুমচাষের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়: ঝুমচাষ করার সময় পার্বত্য অঞ্চলের নির্দিষ্ট স্থানটিতে জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। এতে মাটির স্তর তথা ঢালু ভূমি উন্মুক্ত হওয়ার জন্য বৃষ্টির জল ওই মাটিকে দ্রুত ক্ষয় করে অপসারিত করে।
28. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার রং লাল কেন?
উত্তর – ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার রং লাল হওয়ার কারণ: বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে মৃত্তিকার বিভিন্ন খনিজ উপাদান, যেমন—পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি ধুয়ে মাটির নীচে চলে যায়। কেবল লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড ও হাইড্রক্সাইড অবশিষ্টরূপে মৃত্তিকার উপরিস্তরে পড়ে থাকে। মাটির উপরিস্তরে লোহার উপস্থিতির জন্যই এই মৃত্তিকার রং লাল হয়।
29. রেগুরমাটি বা কালোমাটি খুব উর্বর কেন?
অথবা, ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা উর্বর কেন?
উত্তর – রেগুরমাটি উর্বর হওয়ার কারণ: ভারতের রেগুরমাটি বা কৃন্ন মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং জৈব পদার্থ কম থাকলেও ক্যালশিয়াম, চুন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি খনিজ পদার্থ থাকে। এ ছাড়া, এই মাটিতে মন্টমোরিলোনাইট জাতীয় কাদার ভাগ বেশি থাকে বলে জলধারণক্ষমতাও খুব বেশি হয়। তাই এই মাটি খুব উর্বর।
30. পশুচারণ কীভাবে মৃত্তিকা ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে?
উত্তর – পশুচারণের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়: তৃণভূমিতে পশুচারণের সময় গবাদিপশু, ভেড়া, ছাগল প্রভৃতি প্রাণী ব্যাপকভাবে ঘাস বা তৃণ খায়। এ ছাড়া, ছোটো ছোটো গাছকেও উপড়ে ফেলে। এতে মাটির বাঁধন শিথিল হয়ে যায়। এর সঙ্গে পশুর পায়ের খুরের আঘাতে মাটির ওপরের স্তরে ক্ষয় হয়। ওই শিথিল মাটির ওপর বৃষ্টির জল পড়লে বৃষ্টির জল ওই মাটিকে বয়ে নিয়ে গিয়ে মৃত্তিকা ক্ষয়কে তরান্বিত করে।
31. কৃয় মৃত্তিকায় কী কী ফসল উৎপন্ন হয়?
উত্তর – কৃষ্ণ মৃত্তিকায় উৎপন্ন ফসল: কৃষ্ণ মৃত্তিকা খুবই উর্বর। এই মাটিতে নানাধরনের ফসল উৎপাদিত হয়, যেমন— (1) কার্পাস বা তুলো, (2) চিনাবাদাম, (3) গম, (4) পেঁয়াজ, (5) তৈলবীজ, (6) তামাক (7) আঙুর, (8) কমলালেবু প্রভৃতি।
32. লোহিত বা লালমাটিতে কী কী ফসল চাষ হয় ?
উত্তর – লোহিত মৃত্তিকায় উৎপন্ন ফসল: লোহিত মাটি খুব উর্বর নয়। এই মাটিতে— 1. ভুট্টা, 2. সয়াবিন, 3. চিনাবাদাম, 4. কফি, 5. মিলেট, 6. আঙুর প্রভৃতি ফসলের চাষ হয়।
33. উপকূলীয় মাটির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – উপকূলীয় মাটির বৈশিষ্ট্য: উপকূলীয় মাটির দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) উপকূলের মাটি সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে গঠিত হয় বলে এই মাটির লবণতা বেশি। (2) উপকূলের মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে।
34. পার্বত্য মাটিতে কী কী ফসল ভালো জন্মায়?
উত্তর – পার্বত্য মাটিতে উৎপন্ন ফসল: পার্বত্য মাটিতে নানা ধরনের বাগিচা ফসল ভালো জন্মায়, যেমন—চা, কফি, মশলা, গম, বার্লি প্রভৃতি চাষ হয়। এ ছাড়া, নানা ধরনের ফলের বাগিচা, যেমন—কমলালেবু, আপেল, চেরি ও অন্যান্য ফলেরও চাষ হয়।
35. মরু মাটিতে কী কী ফসল ভালো জন্মায় ?
উত্তর – মাটিতে উৎপন্ন ফসল: মরু মাটিতে চাষাবাদ খুব কম হয়। তবে সেচ সেবিত অঞ্চলে তুলো, গম, বার্লি, ডাল, মিলেট ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়।
36. ভূপ্রকৃতি কীভাবে মৃত্তিকাক্ষয়ে প্রভাব বিস্তার করে?
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয়ের ওপর ভূপ্রকৃতির প্রভাব: পার্বত্য অংশে বা মালভূমিতে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে মাটির স্তর পুরু হয় না, ফলে বৃষ্টিপাত বা অন্য কারণে ওই মাটি দ্রুত অপসারিত হয়। তাই পার্বত্য অঞ্চলে সমভূমির তুলনায় মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়।
37. দ্বাপচাষ কীভাবে মাটি ক্ষয় প্রতিরোধ করে?
উত্তর – ধাপচাষের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ: পাহাড়ি বা ঢালু জমিতে ধাপ গঠন করে কৃষিকাজ করলে সেখানে প্রবহমান জলের গতি হ্রাস পায়। এধরনের ধাপচাষের দ্বারা মাটি ক্ষয় অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
38. জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে মাটি ক্ষয়ে প্রভাব বিস্তার করে ?
উত্তর – মৃত্তিকা ক্ষয়ের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব: যেখানে মানুষের বসবাস বেশি সেখানে মাটির ক্ষয়ও বেশি হয়। মানুষ বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি, জলনিকাশি ব্যবস্থার প্রয়োগ এবং কৃষিকাজ বেশি করায় সেখানে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
39. প্রথাগত কৃষি কীভাবে মাটি ক্ষয় করে ?
উত্তর – প্রথাগত কৃষির মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয় : প্রথাগত কৃষি পদ্ধতিতে ফলন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জমির প্রকৃতি বা মাটির উপাদান বিচার না করে অত্যধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ করে চাষ করা হয় বলে মাটি ক্ষয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। এ ছাড়া ট্যাক্টর, হারভেস্টর ইত্যাদি অত্যধিক ব্যবহার করার জন্য মাটি সহজে আলগা হয়, যা মাটির ক্ষয়কে বাড়িয়ে তোলে।
40. সমোন্নতি রেখা বরাবর চাষ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: পার্বত্য অঞ্চলে সমান উচ্চতাযুক্ত বিন্দুগুলিকে যোগ করে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে সমোন্নতি রেখা বলে। ওই রেখা বরাবর জমি সমতল করে। শস্যক্ষেত্র তৈরি করা হয় এবং জলপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে ভূমিক্ষয় হ্রাস পায়।
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে নদী উপত্যকার পুরোনো পলিমাটিকে বলে—
(a) ভাঙ্গার
(b) খাদার
(c) পেডোক্যাল
(d) ভুর
উত্তর – (a) ভাঙ্গার
2. ভারতে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল জুড়ে আছে—
(a) লালমাটি
(b) পলিমাটি
(c) কালোমাটি
(d) মরুমাটি
উত্তর – (b) পলিমাটি
3. ভুর মাটি দেখতে পাওয়া যায়—
(a) মরুভূমিতে
(b) মালভূমিতে
(c) গঙ্গা সমভূমিতে
(d) দাক্ষিণাত্যে
উত্তর – (c) গঙ্গা সমভূমিতে
4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায় প্রদত্ত অঞ্চলে—
(a) গাঙ্গেয় সমভূমি
(b) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল
(c) সুন্দরবন
(d) মরু অঞ্চল
উত্তর – (b) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল
5.পড়সল মাটি দেখা যায়—
(a) সরলবর্গীয় অরণ্যাঞ্চলে
(b) মালভূমিতে
(c) সমভূমিতে
(d) মরু অঞ্চলে
উত্তর – (a) সরলবর্গীয় অরণ্যাঞ্চলে
6. গ্র্যানাইট ও নিস শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টি হয়—
(a) ল্যাটেরাইট
(b) রেগুর
(c) লালমাটি
(d) পলিমাটি
উত্তর – (c) লালমাটি
7. বিভিন্ন নদী মোহানা অঞ্চলে যে মাটি দেখা যায়, তা হল—
(a) পলিমাটি
(b) হিউমাস মাটি
(c) লবণাক্ত পলিমাটি
(d) লালমাটি
উত্তর – (c) লবণাক্ত পলিমাটি
৪. মেঘালয় মালভূমিতে বেশি রয়েছে—
(a) ল্যাটেরাইট মাটি
(b) পলিমাটি
(c) মরুমাটি
(d) কালোমাটি
উত্তর – (a) ল্যাটেরাইট মাটি
9. পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য গাছের ডালপালা ও পাতা পচে হিউমাসযুক্ত যে মাটি গঠিত হয়, তা হল—
(a) কালো
(b) ল্যাটেরাইট
(c) পডসল
(d) বগ মাটি
উত্তর – (c) পডসল
10. ভারতের মাটি ক্ষয়ের একটি মনুষ্যকৃত কারণ হল –
(a) আবহবিকার
(b) জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়
(c) ত্রুটিপূর্ণ বা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ
(d) বায়ুপ্রবাহ
উত্তর – (c) ত্রুটিপূর্ণ বা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ
11. গঙ্গা সমভূমির নবীন পলিমাটিযুক্ত অঞ্চলকে উত্তরপ্রদেশে বলা হয় –
(a) ভাবর
(b) তরাই
(c) বেট
(d) খাদার
উত্তর – (d) খাদার
12. কালোমাটির জলধারণক্ষমতা—
(a) খুব বেশি
(b) খুব কম
(c) মাঝারি
(d) অল্প
উত্তর – (a) খুব বেশি
13. খোয়াই বা খাতক্ষয় কীভাবে ঘটে? —
(a) জলপ্রবাহ দ্বারা
(b) বায়ুপ্রবাহ দ্বারা
(c) সমুদ্রতরঙ্গ দ্বারা
(d) কৃষিকার্যের দ্বারা
উত্তর – (a) জলপ্রবাহ দ্বারা
14. কৃষ্ণ মৃত্তিকার অন্য নাম—
(a) পডসল মাটি
(b) ল্যাটেরাইট মাটি
(c) রেগুর মাটি
(d) দোআঁশ মাটি
উত্তর – (c) রেগুর মাটি
15. যে মাটিতে কাদা, পলি, বালির পরিমাণ প্রায় সমান, তা হল –
(a) দোআঁশ মাটি
(b) কালোমাটি
(c) পডসল মাটি
(d) ল্যাটেরাইট মাটি
উত্তর – (a) দোআঁশ মাটি
16. হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলের পলি, বালি, নুড়ি, কাকরপূর্ণ মাটির নাম হল —
(a) ভাঙ্গার
(b) খাদার
(c) তরাই
(d) ভাবর
উত্তর – (d) ভাবর
17. খোয়াই ক্ষয় বা গালিক্ষয় দেখা যায় —
(a) পলি
(b) রেগুর
(c) ল্যাটেরাইট
(d) মরুমৃত্তিকা অঞ্চলে
উত্তর – (c) ল্যাটেরাইট
18. ল্যাটেরাইট মাটির জলধারণক্ষমতা কম, কারণ এই মাটি—
(a) বালুকাপূর্ণ
(b) কাঁকরপূর্ণ
(c) কাদাযুক্ত
(d) বাতাসপূর্ণ
উত্তর – (b) কাঁকরপূর্ণ
19. পার্বত্য অঞ্চলের মাটি—
(a) পডসল
(b) সিরোজেম
(c) পিট
(d) লালমাটি
উত্তর – (a) পডসল
20. রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চলে যে প্রকার মাটি দেখা যায়, সেটি হল —
(a) পলিমাটি
(b) লালমাটি
(c) মরুমাটি
(d) ল্যাটেরাইট মাটি
উত্তর – (c) মরুমাটি
21. পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ হল —
(a) শীতল জলবায়ু
(b) বায়ুপ্রবাহ
(c) ভূমিধস
(d) অগ্ন্যুৎপাত
উত্তর – (c) ভূমিধস
22. পশ্চিমবঙ্গে ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায়—
(a) দার্জিলিং-এ
(b) নদিয়ায়
(c) পুরুলিয়ায়
(d) হাওড়ায়
উত্তর – (c) পুরুলিয়ায়
23. ল্যাটেরাইট মাটিতে যে খনিজ বেশি থাকে তা হল –
(a) লোহা
(b) ম্যাঙ্গানিজ
(c) তামা
(d) অভ্র
উত্তর – (a) লোহা
24. ভূমির ঢালের আড়াআড়িভাবে ফালি তৈরি করে চাষ করার পদ্ধতিকে বলে—
(a) গালিচাষ
(b) ফালিচাষ
(c) বৃক্ষরোপণ
(d) ধাপচাষ
উত্তর – (b) ফালিচাষ
25. পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল—
(a) বৃক্ষনিধন
(b) ধাপচাষ
(c) রাস্তা নির্মাণ
(d) নদীতে বাঁধ দেওয়া
উত্তর – (b) ধাপচাষ
26. বৃষ্টির জলের সঙ্গে মাটি স্তরে স্তরে অপসারিত হওয়াকে বলে—
(a) নালী ক্ষয়
(b) খাত ক্ষয়
(c) খোয়াই ক্ষয়
(d) স্তর বা চাদর ক্ষয়
উত্তর – (d) স্তর বা চাদর ক্ষয়
27. যে প্রকার কৃষি পদ্ধতি মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি করে, তা হল—
(a) স্থানান্তর চাষ
(b) ধাপচাষ
(c) সমোন্নতি রেখা বরাবর কৃষি
(d) ফালিচাষ
উত্তর – (a) স্থানান্তর চাষ
28. ভারতে মৃত্তিকা সংরক্ষণে গৃহীত একটি পদ্ধতি হল—
(a) জলসেচ
(b) ঝুমচাষ
(c) ফালিচাষ
(d) পশুচারণ
উত্তর – (c) ফালিচাষ
29. কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায়—
(a) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলে
(b) বদ্বীপ অঞ্চলে
(c) সমভূমি অঞ্চলে
(d) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে
উত্তর – (a) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলে
30. মরু অঞ্চলের শুষ্ক ও শুষ্কপ্রায় মৃত্তিকাকে বলে—
(a) চারনোজেম
(b) পডসল
(c) সিরোজেম
(d) ল্যাটেরাইট
উত্তর – (c) সিরোজেম
31. সবচেয়ে বেশি উর্বর মাটি হল—
(a) সিরোজেম মৃত্তিকা
(b) কৃষ্ণ মৃত্তিকা
(c) লোহিত মৃত্তিকা
(d) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
উত্তর – (b) কৃষ্ণ মৃত্তিকা

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. উত্তর ভারতের সমভূমিতে ………. মাটি দেখা যায় ৷
উত্তর – পলি
2. মরু অঞ্চলের মাটিতে ………. পদার্থ থাকে না বললেই চলে।
উত্তর – জৈব
3. ………. তুলো চাষের জন্য বিখ্যাত।
উত্তর – কালোমাটি
4. উত্তর ভারতে নতুন পলি মাটিকে ………. বলে।
উত্তর – খাদার
5. ………… বরাবর চাষ অধিক ঢালযুক্ত পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকা সংরক্ষণে সাহায্য করে।
উত্তর – সমোন্নতি রেখা
6. মরু অঞ্চলের মাটিতে …………. জাতীয় শস্য চাষ করা হয়।
উত্তর – মিলেট
7. উত্তরপ্রদেশে প্রাচীন পলিমাটিকে বলে …………।
উত্তর – ভাঙ্গার
৪. ভাঙ্গার মাটির মধ্যে চুন-জাতীয় পদার্থ বেশি থাকলে, তাকে ……… বলে।
উত্তর – ঘুটিং
9. পলিমাটিতে জৈব পদার্থ এবং নাইট্রোজেন খুব ………. থাকে।
উত্তর – কম
10. কালোমাটি তৈরি হয় ………….. শিলার আবহবিকারে।
উত্তর – ব্যাসল্ট
11. পডসল প্রকৃতিগতভাবে ………. মাটি।
উত্তর – আম্লিক
12. লালমাটির রং লাল কারণ এই মাটিতে ……….. আছে।
উত্তর – লোহা
13. ল্যাটেরাইট মাটির প্রধান উপাদান লোহা এবং ………..।
উত্তর – অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড
14. পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলায় ………. মাটি দেখা যায়।
উত্তর – লালমাটি
15. মরুমাটি ……….. বলে তার জলধারণক্ষমতা খুব কম।
উত্তর – সচ্ছিদ্র
16. মৃত্তিকা ক্ষয় বলতে শুধু মাটির অপসারণ নয়, মাটির ………. নষ্ট হওয়ার পদ্ধতিকেও বোঝায়।
উত্তর – উর্বরতা
17. প্রণালীক্ষয়ের অন্য নাম ………..।
উত্তর – খোয়াই ক্ষয়
18. ভূমিক্ষয়ের একটি কারণ ………..।
উত্তর – বৃক্ষচ্ছেদন
19. ঝুমচাষ ……….. ভারতে বেশি দেখা যায়।
উত্তর – উত্তর-পূর্ব
20. দাক্ষিণাত্য মালভূমির লাভাগঠিত অংশে ……….. মাটি দেখা যায়।
উত্তর – কালোমাটি
21. সুন্দরবন অঞ্চলের মাটি ………..।
উত্তর – লবণাক্ত
22. মরু অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান কারণ ………..।
উত্তর – বায়ুপ্রবাহ
23. ……….. অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি বলে মৃত্তিকা স্তর অগভীর।
উত্তর – পার্বত্য
24. পর্বতের ঢালে ………. চাষের মাধ্যমে মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা যায়।
উত্তর – ধাপ

TOPIC – F ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ: ভারতে প্রধানত পাঁচ প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়। এগুলি হল— (1) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বা চিরসবুজ উদ্ভিদ: পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি স্থানে এই বনভূমি দেখা যায়। (2) ক্রান্তীয় পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ: ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে এই বনভূমি আছে। (3) ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ: রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমভাগ, গুজরাতের উত্তরাংশ প্রভৃতি এলাকায় এই ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। (4) পার্বত্য উদ্ভিদ: পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের পাদদেশভূমি থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে যথাক্রমে চিরসবুজ, পর্ণমোচী, সরলবর্গীয় প্রভৃতি গাছের বনভূমি আছে। আর এসবের ওপরে আছে আল্লীয় উদ্ভিদ এবং সবার ওপরে আছে চিরতুষার ভূমি। (5) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ : গঙ্গানদীর বদ্বীপের দক্ষিণাংশের সুন্দরবন অঞ্চল, গোদাবরী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ এলাকা এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূলভাগে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়।
  2. অরণ্য সংরক্ষণ : যথেচ্ছভাবে ও নির্বিচারে গাছ কাটলে অরণ্য ধ্বংস হয়। অরণ্য সংরক্ষণ বলতে বোঝায় এমনভাবে বিচারবিবেচনা করে ও সংযতভাবে অরণ্য ব্যবহার করা, যাতে অরণ্যের সম্ভাব্য বিকাশ হয়।
  3. অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ: অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি হল— (1) অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ, (2) অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন রোধ, (3) কাঠের জ্বালানির পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার, (4) দাবানল প্রতিরোধ, (5) রোগ-পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ, (6)  পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ, (7) বনসৃজন ও পুনর্বনসৃজন, (৪) অরণ্য ব্যবস্থাপনার কর্মসূচি গ্রহণ, (9) অরণ্য সংরক্ষণে মানুষের অংশগ্রহণ প্রভৃতি।
  4. সামাজিক বনসৃজন : প্রধানত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষদের জন্য যখন নির্ধারিত অরণ্যসীমার বাইরে ও অব্যবহৃত জমি বা পতিত জমিতে অরণ্য সৃষ্টি করা হয়, তখন তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে।
  5. কৃষি বনসৃজন : চাষ-আবাদের সঙ্গে সঙ্গে কৃষক যখন তার কৃষিজমিতে অথবা পতিত জমিতে গাছপালা লাগিয়ে অরণ্য গড়ে তোলে, তখন তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ
ভারতের জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতির তারতম্যের কারণে স্বাভাবিক উদ্ভিদে বিবিধ বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এই বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা—
  1. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য
    আঞ্চলিক বণ্টন: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম প্রভৃতি অঞ্চলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য দেখা যায়।
    বৈশিষ্ট্য: [i] বাতাসে সারাবছর আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে গাছের পাতা একসাথে ঝরে যায় না। তাই গাছগুলি চিরসবুজ হয়। [ii] গাছগুলি খুব কাছাকাছি জন্মায়। [iii] অরণ্যের ভূমি সারাবছর স্যাঁতসেঁতে থাকে। [iv] গাছগুলি ঘন সন্নিবিষ্টভাবে থাকে বলে সূর্যের আলো অনেকসময় মাটি পর্যন্ত পৌঁছায় না। [v] গাছগুলি খুব লম্বা এবং ডালপালাযুক্ত হয়। [vi] গাছের গুঁড়ি খুব শক্ত এবং পাতাগুলি বড়ো হয়।
    প্রধান উদ্ভিদ : শিশু, গর্জন, তুন, পুন, গোলাপকাঠ, বিশপকাঠ, রবার, পাম প্রভৃতি।
    ব্যবহার: এই অরণ্যের কাঠ শিল্পে খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না। তবে বাড়ি নির্মাণ, রেলের কামরা ও স্লিপার নির্মাণ এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
  2. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য

    আঞ্চলিক বণ্টন: ভারতের সবচেয়ে বেশি স্থান জুড়ে রয়েছে এই জাতীয় অরণ্য। মোট অরণ্যের 27 শতাংশ হল আর্দ্র পর্ণমোচী এবং 29 শতাংশ শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য। অসম সমভূমি, পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চল, ছোটোনাগপুর মালভূমি, ওডিশা, বিহার, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢাল, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে এই বনভূমি রয়েছে।

    বৈশিষ্ট্য: [i] শীতকালে গাছের পাতা সব একসাথে ঝরে পড়ে। তাই এই অরণ্যের নাম পর্ণমোচী অরণ্য [ii] কোনো কোনো অঞ্চলে একই প্রজাতির গাছ একসাথে অবস্থান করে। [iii] উদ্ভিদগুলির ঘনত্ব কম। [iv] গাছের কাঠ খুব শক্ত এবং মূল্যবান। [v] গাছগুলি বহু ডালপালাযুক্ত। [vi] বৃক্ষগুলিতে বর্ষবলয় পরিষ্কার করে বোঝা যায়। [vii] এই অরণ্যে কাঠ সংগ্রহ করা সবচেয়ে সুবিধাজনক।

    প্রধান উদ্ভিদ: শাল, সেগুন, মহুয়া, শিরীষ, আম, জাম, কাঁঠাল, বট, পলাশ প্রভৃতি।
    ব্যবহার: এই বনভূমির কাঠের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বাড়িঘরের জানলা, দরজা, নৌকা, জাহাজ, সেতু প্রভৃতি তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে এর ব্যবহার খুব বেশি।
  3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ

    আঞ্চলিক বণ্টন: রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমভাগ, কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ প্রভৃতি অঞ্চলে মরু এবং মরুপ্রায় উদ্ভিদ জন্মায়।

    বৈশিষ্ট্য: [i] মরু উদ্ভিদ কখনোই ঘন বা নিবিড় হয় না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। [ii] গাছে সঞ্চিত জল যাতে জলীয় বাষ্প আকারে গাছগুলি থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য গাছের পাতাগুলি কাঁটায় পরিণত হয়। এবং কাণ্ডের ওপর একটি মোম-জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে। [iii] গাছের শিকড় খুব লম্বা হয়। [iv] উদ্ভিদের পাতা সরু এবং ছুঁচোলো হয়। [v] গাছগুলি আকারে ছোটো হয়। [vi] উদ্ভিদ দেহে জল ধরে রাখার জন্য কোনো কোনো গাছের কাণ্ড ও পাতায় শাঁস থাকে।

    প্রধান উদ্ভিদ : ক্যাকটাস, ফণীমনসা, বাবলা, খেজুর প্রভৃতি।
    ব্যবহার: এখানকার বেশিরভাগ গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  4. পার্বত্য উদ্ভিদ
    আঞ্চলিক বণ্টন: পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতে ও নীলগিরি, পালনি প্রভৃতি পাহাড়ে পার্বত্য উদ্ভিদ দেখা যায়।

    বৈশিষ্ট্য: উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায় বলে পার্বত্য অঞ্চলে ক্রমশ ওপরের দিকে উদ্ভিদের প্রকৃতি পালটে যায়। যেমন—পূর্ব হিমালয়ে

    1000 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে 500 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আছে চিরসবুজ উদ্ভিদ। এর ওপর পূর্ব হিমালয়ে 2500 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে 2000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চিরসবুজ ও পাতাঝরা উদ্ভিদের মিশ্র বনভূমি দেখা যায়। এর ওপর পূর্ব হিমালয়ে 2500-4000 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে 2000-3000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সরলবর্গীয় উদ্ভিদ এবং তার ওপর উভয় অংশেই আছে আল্লীয় উদ্ভিদ ও সবশেষে উদ্ভিহীন চিরতুষার ভূমি। দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য উদ্ভিদের মধ্যে 1000-1500 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চিরসবুজ এবং তারপর আর্দ্র নাতিশীতোষু উদ্ভিদ দেখা যায়।

    প্রধান উদ্ভিদ: শিশু, চাপলাস, গর্জন প্রভৃতি চিরসবুজ উদ্ভিদ; ওক, সিডার, পপলার, ম্যাপল প্রভৃতি পাতাঝরা উদ্ভিদ; পাইন, ফার, প্রুস, লরেল প্রভৃতি সরলবর্গীয় উদ্ভিদ এবং জুনিপার, রডোডেনড্রন, লার্চ প্রভৃতি আল্লীয় উদ্ভিদ।
    ব্যবহার: শক্ত কাঠ থেকে আসবাবপত্র, কাঠের বাড়ি, পরিবহনের সাজসরঞ্জাম প্রভৃতি তৈরি হয়। কাগজের মণ্ড, দেশলাই প্রভৃতি তৈরিতে নরম কাঠ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া, নানাধরনের ভেষজ উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন গাছের শিকড়, পাতা, আঠা প্রভৃতি সংগ্রহ করা হয়। হিমালয়ের উদ্ভিদসমূহের আর এক নাম সবুজ সোনা (Green gold)।
  5. ম্যানগ্রোভ অরণ্য

    আঞ্চলিক বণ্টন: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে গঙ্গানদীর বদ্বীপ, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরীর বদ্বীপ অঞ্চলে এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বহু অংশে ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে।

    বৈশিষ্ট্য: [i] গাছগুলির উচ্চতা কম। [ii] এদের পাতা পুরু। [iii] এরা শ্বাসমূলের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। [iv] গাছগুলিতে ঠেসমূল থাকে। [v] এদের পাতাগুলি মোম-জাতীয় পদার্থ দিয়ে ঢাকা থাকে। [vi] গাছগুলির শ্বাসমূল থাকে ও জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম ঘটে।

    প্রধান উদ্ভিদ : সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল, হোগলা প্রভৃতি।
    ব্যবহার: সুন্দরী গাছের কাঠ থেকে ভালো নৌকা হয়। গোলপাতা, হোগলা প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা ঘর ছাইতে কাজে লাগে। সুন্দরবনের অরণ্য থেকে প্রচুর মধু, মোম এবং জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হয়।
2. ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন জলবায়ুর দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয় তা আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টনে জলবায়ুর প্রভাব
ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন উয়তা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যকিরণ, আর্দ্রতা ইত্যাদি জলবায়ুর উপাদানগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভারতের বিভিন্ন অংশে এই জলবায়ুর উপাদানগুলির তারতম্যের ফলে পাঁচ প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়। যথা— 1. ক্রান্তীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ, 2. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ, 3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ, 4. পার্বত্য উদ্ভিদ এবং 5. ম্যানগ্রোভ। নীচে ভারতের জলবায়ুর সঙ্গে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টনের সম্পর্ক আলোচনা করা হল।
  1. ক্রান্তীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ

    অবস্থান: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, পূর্বাচল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের যেসব অংশে বার্ষিক 250 সেমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে ক্রান্তীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ দেখা যায়।

    সৃষ্টির কারণ: [i] এইসব অঞ্চলে সারাবছর ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বার্ষিক উন্নতার গড় থাকে প্রায় 27° সে। এরুপ উয় ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যন্ত দীর্ঘ (30-35 মি) চিরসবুজ গাছ জন্মায়। ঘন অরণ্যে সূর্যালোক পাওয়ার আশায় গাছগুলি ওপরের দিকে ক্রমশ বেড়ে ওঠে। [ii] এই গাছগুলি থেকে সারাবছর ধরে অল্প অল্প করে পাতা ঝরে পড়ে। তাই গাছগুলি কখনোই সম্পূর্ণরূপে পত্রশূন্য হয়ে পড়ে না ও অরণ্য চিরসবুজ দেখায়।

    উদাহরণ: শিশু, গর্জন, তুন, পুন, লোহাকাঠ, গোলাপকাঠ প্রভৃতি গাছ এখানে দেখা যায়।
  2. পর্ণমোচী উদ্ভিদ
    অবস্থান: ভারতে বার্ষিক 100-150 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে (যেমন—ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চল, অসম, গঙ্গা সমভূমি প্রভৃতি এলাকা) পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ জন্মায়।
    সৃষ্টির কারণ: এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণরূপে ঋতুভিত্তিক। শীতকালে বৃষ্টিপাতের অভাবে গাছে সঞ্চিত জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় পাতা দিয়ে যাতে বেরোতে না পারে সেই কারণে অধিকাংশ গাছই পত্রশূন্য হয়ে পড়ে। তাই, এগুলিকে পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ বলে।
    উদাহরণ: শাল, সেগুন, শিমূল, মহুয়া, কুসুম, জারুল, শিরীষ প্রভৃতি গাছএবং সাবাই ঘাস, হাতি ঘাস, শব, চাপড়া ঘাস প্রভৃতি তৃণ এখানে জন্মায়।
  3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ

    অবস্থান: ভারতে বার্ষিক 50 সেমির থেকে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে (যেমন—রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমভাগ, গুজরাতের উত্তরাংশ প্রভৃতি) ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ দেখা যায়।

    সৃষ্টির কারণ: [i] বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য এখানে উদ্ভিদের পরিমাণ কম। এখানে বেশিরভাগই কাঁটাযুক্ত জেরোফাইট শ্রেণির উদ্ভিদ জন্মায়। [ii] গাছের কাণ্ড পুরু ছালে ঢাকা থাকে। [iii] দেহ থেকে জল যাতে বেরোতে না পারে সেই জন্য পাতায় মোমের মতো আবরণ থাকে এবং [iv] গাছের শিকড় সুদীর্ঘ হয় ও পাতা কাঁটাযুক্ত হয়।

    উদাহরণ: ফনীমনসা, বাবলা, খেজুর বিভিন্ন প্রকার কাঁটাগাছ, ঘাস প্রভৃতি উদ্ভিদ এখানে দেখা যায়।
  4. পার্বত্য উদ্ভিদ: পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায় বলে নানা ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। যেমন— [i] পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলে উয় ও আর্দ্র আবহাওয়ায় চিরসবুজ উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন—শিশু, চাপলাস প্রভৃতি বৃক্ষ; এর ওপর [ii] চিরসবুজ ও পাতাঝরা বৃক্ষের মিশ্র অরণ্য; তার ওপর [iii] তুষারপাত অধ্যুষিত এলাকাসমূহে পাইন, ফার প্রভৃতি নরম কাঠের বৃক্ষের সরলবর্গীয় অরণ্য এবং তারও ওপরে [iv] অতিশীতল জলবায়ুতে রডোডেনড্রন, জুনিপার, লার্চ, ভুজ প্রভৃতি আপ্লীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
  5. ম্যানগ্রোভ: গঙ্গা বদ্বীপের দক্ষিণাংশে সুন্দরবন অঞ্চলে, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ এলাকায় এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে উয়-আর্দ্র আবহাওয়া, নিয়মিত জোয়ারভাটা, জলময় পরিবেশ ও লবণাক্ত মৃত্তিকার জন্য শ্বাসমূল ও ঠেসমূলযুক্ত বিশেষ এক ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। এদের জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম হয় এবং সারাবছর গাছে সবুজ পাতা থাকে। এদের বলে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ।
    উদাহরণ: সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেতাল, গোলপাতা প্রভৃতি উদ্ভিদ এখানে জন্মায়।
3. অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – অরণ্য ধ্বংসের কারণ
অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – 1. প্রাকৃতিক কারণ এবং 2. মানুষের ক্রিয়াকলাপ।
  1. প্রাকৃতিক কারণ : যেসব প্রাকৃতিক কারণে অরণ্যভূমি ধ্বংস হয়, সেগুলি হল—
    1. দাবানল: গাছের শুকনো ডালে ঘষা লেগে বা বজ্রপাতের মাধ্যমে অরণ্যে বিধ্বংসী আগুন লাগে, যাকে দাবানল বলে। ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের অনেক অরণ্য এইভাবে ধ্বংস হয়েছে।
    2. ঝড়ঝঞ্ঝা: টর্নেডো বা সাইক্লোনের মতো বিধ্বংসী ঝড়ের প্রকোপে অরণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
    3. ভূমিধস: ভূমিধস অরণ্য বিনাশের অন্যতম কারণ। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বহু অরণ্য ভূমিধসের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে।
    4. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলেও বহু অরণ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । আন্দামানের উত্তরে ব্যারেন দ্বীপে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে অরণ্যের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
    5. কীটপতঙ্গের আক্রমণ: কীটপতঙ্গ ও পঙ্গপালের আক্রমণে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বহু অরণ্য যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  2. মানুষের ক্রিয়াকলাপ
    1. নির্বিচারে গাছ কাটা: কাঠের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে নির্বিচারে গাছ কাটা হয় এবং এর ফলে অরণ্য ধ্বংস হয়।
    2. বনভূমিকে কৃষিভূমিতে রূপান্তর: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও অন্যান্য ফসলের চাহিদা মেটাতে ক্রমাগত অরণ্যভূমি ধ্বংস করে তাকে কৃষিভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। ফলে অরণ্যের পরিমাণ ক্রমশই কমে আসছে।
    3. জনবসতির বিস্তার: দ্রুতবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় বাসস্থান ও রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য প্রতি বছর ব্যাপকহারে অরণ্য বিনষ্ট করা হয়।
    4. স্থানান্তর কৃষি: উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে পার্বত্য অঞ্চলে স্থানান্তর কৃষির (যেমন, ঝুমচাষ) মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অরণ্য ধ্বংস হয়।
    5. জ্বালানির চাহিদা: গৃহস্থালির জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য অরণ্য ধ্বংস করা হয়।
    6. পশুচারণ ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ: গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যের বহু জায়গায় অরণ্যভূমি পরিষ্কার করে নতুন নতুন পশুচারণ ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং বহু সংরক্ষিত অরণ্যেও পশুচারণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এসবের ফলেও অরণ্যের বিনাশ ঘটে চলেছে।
4. ভারতে অরণ্যকে কী কী ভাবে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – ভারতের অরণ্যের ব্যবহার
অরণ্য একটি জাতীয় সম্পদ, তাই অরণ্যকে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়—
প্রত্যক্ষ ব্যবহার
  1. জ্বালানি কাঠ: ভারতের সংগৃহীত কাঠের অধিকাংশই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে, ঠান্ডা জলবায়ু অঞ্চলে ফার্নেসে কাঠ পুড়িয়ে ঘরবাড়ি গরম রাখার কাজে জ্বালানি কাঠের প্রত্যক্ষ ব্যবহার রয়েছে।
  2. চেরাই কাঠের ব্যবহার: অরণ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের শক্ত কাঠ পাওয়া যায়। সেই কাঠ চেরাই করে আসবাবপত্র, বাড়ি, নৌকা, জাহাজ, রেলের কামরা, বাস, ট্রাক প্রভৃতি তৈরি করা হয় এবং খেলাধুলো ও অন্যান্য বিভিন্ন কাজেও চেরাই কাঠ ব্যবহার করা হয়।
  3. বনজ সম্পদের ব্যবহার : ভারতে প্রাপ্ত সরলবর্গীয় গাছ থেকে রজন ও তারপিন তেল পাওয়া যায়। এ ছাড়া, অরণ্য থেকে নানা ধরনের গাছের মূল্যবান আঠা, মশলা, শিকড়, ছাল, পাতা, ফল প্রভৃতি সংগৃহীত হয়। ভারতের প্রায় 35 লক্ষ মানুষ অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল এবং সরকারি আয়ের প্রায় 2 শতাংশ অরণ্য থেকে আসে।
পরোক্ষ ব্যবহার
অরণ্য ভূমিক্ষয় রোধ, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বায়ুতে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড-এর ভারসাম্য রক্ষা ও মরুভূমির প্রসার রোধ করতে সাহায্য করে। দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠন, পর্যটন শিল্পের প্রসার প্রভৃতি নানা কাজে অরণ্যকে পরোক্ষভাবে ব্যবহার করা হয়।
5. ভারতে বনভূমি সংরক্ষণ প্রয়োজনীয় কেন?
অথবা, ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন?
উত্তর – ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ স্থানে বনভূমি থাকা প্রয়োজন। ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল—
  1. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা: বর্তমানে পরিবেশদূষণের মাত্রা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বনভূমি সংরক্ষণ ও নতুন বনভূমি সৃষ্টি করলে পরিবেশদূষণের মাত্রা হ্রাস পাবে ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
  2. জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ: বনভূমি বায়ুর আর্দ্রতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে যা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বর্তমানে বায়ুতে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াতে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলে বনভূমি সংরক্ষণ করা ভীষণ প্রয়োজন।
  3. খরা ও ভূমিক্ষয় রোধ: বনভূমির অভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে যা পরোক্ষভাবে খরার সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া, বনভূমি না থাকায় মৃত্তিকার আস্তরণ ক্রমশ আলগা হয়ে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণে খরা ও মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করতে বনভূমি সংরক্ষণ প্রয়োজন।
  4. মরুভূমির প্রসার রোধ: বনভূমির উপস্থিতি মরুভূমির প্রসার রোধ করতে সাহায্য করে।
  5. অরণ্যজাত সম্পদের জোগান: বনভূমি থেকে আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস, যেমন–কাঠ ও অন্যান্য উপজাত দ্রব্য (যেমন—মধু, ধূপ, ভেষজ উদ্ভিদ প্রভৃতি) পেয়ে থাকি। এইসব সম্পদের জোগান বজায় রাখার জন্য বনভূমি সংরক্ষণ করা উচিত।
6. ভারতে কীভাবে অরণ্য সংরক্ষণ করা যায় ?
অথবা, অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি
বর্তমানে ভারতের ক্ষেত্রমানের বিচারে বনাবৃত ভূমির পরিমাণ প্রায় 24.39 শতাংশ (সূত্র: India State of Forest Report ’17) । অথচ সমগ্র দেশের মোট আয়তনের 33 শতাংশ বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই নানা পদ্ধতিতে অরণ্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। যেমন—
  1. অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ: অপ্রয়োজনীয় বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করতে হবে। বনভূমি ও যে-কোনো স্থান থেকে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে গাছ কাটা নিষিদ্ধ করতে হবে।
  2. অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন হ্রাস: গাছ কাটার খুব প্রয়োজন হলে কেবল পরিণত বৃক্ষই যেন ছেদন করা হয়। অপরিণত এবং চারাগাছের রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে এবং তাদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
  3. জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি : গ্রাম এবং শহরে জ্বালানি হিসেবে কাঠের পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস, জৈবগ্যাস, সৌর শক্তি ইত্যাদি বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। এতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার কমবে এবং অরণ্যের সংরক্ষণ হবে।
  4. দাবানল প্রতিরোধ : বনভূমিতে দাবানল যাতে না লাগে তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে এবং দাবানল লাগলে যাতে দ্রুত তা নিবারণ করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
  5. পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ: অরণ্যকে রক্ষা করার জন্য পশুচারণ ত্রে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। অরণ্যভূমিতে পশুর দল চারাগাছ খেয়ে ফেলে এবং গাছকে নষ্ট করে দেয়। তাই পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
  6. বনসৃজন ও পুনর্বনসৃজন: যেসব স্থান উদ্ভিদহীন সেখানে নতুন করে বনসৃজন করা যেতে পারে এবং বনভূমিতে যেখানে পশুচারণের ফলে বা মানুষের নিজের প্রয়োজনে অরণ্যচ্ছেদনের ফলে গাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে সেখানে পুনর্বনসৃজন ঘটিয়ে অরণ্য পুনরুদ্ধার করতে হবে।
  7. তারণ্য ব্যবস্থাপনার কর্মসূষ্টি গ্রহণ : রাস্তা নির্মাণ, খাল খনন প্রকৃ উন্নয়নমূলক কাজের সময় কেবল পরিণত ও নির্বাচিত বৃক্ষই কাটতে হবে। এজন্য অরণ্য ব্যবস্থাপনার যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
  8. মানুষের অংশগ্রহণ: বর্তমানে উদ্ভিদের স্বল্পতার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষই দায়ী। তাই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বনসংরক্ষণ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে হবে। সেজন্য যৌথ বন পরিচালনা (Joint Forest Management) ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. স্বাভাবিক উদ্ভিদের সঙ্গে জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার সম্পর্ক আলোচনা করো।
উত্তর – স্বাভাবিক উদ্ভিদের সঙ্গে জলবায়ু অর্থাৎ উয়তা ও বৃষ্টিপাত এবং ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার সম্পর্ক খুবই নিবিড়। যেমন—
স্বাভাবিক উদ্ভিদের সঙ্গে জলবায়ুর সম্পর্ক: 1. সারাবছরব্যাপী অধিক উন্ন আর্দ্র ও বৃষ্টিসমন্বিত নিরক্ষীয় অঞ্চলে চিরহরিৎ উদ্ভিদের বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে। 2. গ্রীষ্মে উন্ন-আর্দ্র এবং শীতে শুষ্ক-শীতল ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে পর্ণমোচী উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায়। 3. শুষ্ক মরু অঞ্চলে কাঁটা-জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়। আবার, 4. অল্পবৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে সৃষ্টি হয় তৃণভূমি।
স্বাভাবিক উদ্ভিদের সঙ্গে ভূপ্রকৃতির সম্পর্ক: ভূপ্রকৃতির ক্ষেত্রে দেখা যায়— 1. পার্বতের পাদদেশ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে বলে যথাক্রমে চিরসবুজ, পাতাঝরা, সরলবর্গীয় ও আল্পীয় উদ্ভিদ জন্মায়। এ ছাড়া, 2. জলাভূমিতে জন্মায় জলজ উদ্ভিদ।
স্বাভাবিক উদ্ভিদের সঙ্গে মৃত্তিকার সম্পর্ক: আবার, মৃত্তিকার সাথেও স্বাভাবিক উদ্ভিদের সম্পর্ক লক্ষ করা যায়— 1. লবণাক্ত মৃত্তিকায় ও উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ-জাতীয় উদ্ভিদ, 2. পডসল মৃত্তিকায় সরলবর্গীয় উদ্ভিদ, 3. চারনোজেম মৃত্তিকায় তৃণভূমি এবং 4. লোহিত ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ জন্মায়।
2. ভারতের বনভূমিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
অথবা, ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলয়ের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের বনভূমির শ্রেণিবিভাগ: উচ্চতা, তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বা বনভূমিকে প্রধানত সাতটি শ্রেণি বা বলয়ে বা অঞ্চলে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল—
  1. ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য: এই অরণ্যের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলি হল শিশু, গর্জন, তুন প্রভৃতি।
  2. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য: শাল, সেগুন, মহুয়া প্রভৃতি হল এই অরণ্যের উল্লেখযোগ্য বৃক্ষ।
  3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ; এই ধরনের উদ্ভিদের মধ্যে ফণীমণসা, বাবলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
  4. পার্বত্য উদ্ভিদ; পাইন, ফার, জুনিপার, রডোডেনড্রন, হুস প্রভৃতি এখানকার উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ।
  5. উপকূলীয় বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য: এই ধরনের উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
3. ভারতের উপকূলীয় বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – ভারতের ম্যানগ্রোভ অরণ্য
অবস্থান: গঙ্গার বদ্বীপে অবস্থিত সুন্দরবন হল পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি অঞ্চল। এ ছাড়া, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চল, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও গুজরাতের কচ্ছ উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলেও অল্প পরিমাণে এইপ্রকার বনভূমি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: [i] জোয়ারের সময় প্লাবিত বনভূমির তলদেশের লবণাক্ত মাটিতে শ্বাসকার্য চালাতে অসুবিধা হয় বলে গাছগুলির শিকড় জোয়ারের জলসীমার ওপরে উঠে আসে, এগুলিকে বলে শ্বাসমূল। [ii] জোয়ারভাটা এবং ঢেউয়ের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য গাছগুলির গোড়ার দিকে অনেক ঠেসমূল থাকে। [iii] এইসব অঞ্চলে অনবরত জোয়ারভাটা হয় বলে মাটি সবসময় ভিজে থাকে। মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে জল পাওয়া যায় বলে গাছে সারাবছর পাতা থাকে। [iv] স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বেঁচে থাকতে হয় বলে গাছের কাণ্ডগুলি সুদৃঢ় হয়। [v] জোয়ারভাটা খেলে বলে গাছগুলিতে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম দেখা যায়।
উদ্ভিদ: ম্যানগ্রোভ অরণ্যে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল, কেয়া, গোলপাতা প্রভৃতি গাছ বেশি দেখা যায়।
উপযোগিতা: [i] ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গাছগুলির কাঠ খুব মূল্যবান। গোরুর গাড়ির চাকা, নৌকো, লাঙল, ঘরবাড়ির খুঁটি প্রভৃতি তৈরির জন্য এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। [ii] এই অরণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে মধু, গোলপাতা প্রভৃতি সংগ্রহ করা হয়।
4. ভারতের সরলবর্গীয় অরণ্য সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের সরলবর্গীয় অরণ্য
অবস্থান: সাধারণত তুষারপাত অধ্যুষিত অঞ্চলে সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য সৃষ্টি হয়। ভারতের মধ্যে একমাত্র পূর্ব হিমালয়ে 2500-4000 মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ে 2000-3200 মিটার উচ্চতায় বেশি তুষারপাতের কারণে এই বনভূমি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: এই অরণ্যের উদ্ভিদগুলি [i] মাঝারি উচ্চতার, [ii] শঙ্কু আকৃতির, [iii] ছুঁচোলো পত্রযুক্ত এবং [iv] নরম কাঠের হয়।
উদ্ভিদ: এই অরণ্যে পাইন, ফার, রুপালি ফার, স্পুস, লরেল, দেবদারু প্রভৃতি সরলবর্গীয় গাছ জন্মায়।
উপযোগিতা: নাতিশীতোয় অঞ্চলের দেশগুলিতে কাগজ শিল্প ও কাঠ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এই অরণ্যের কাঠ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হলেও দুর্গমতার জন্য ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সরলবর্গীয় অরণ্য খুব কমই ব্যবহৃত হয়।
5. বৃক্ষরোপণে ভারতের সাধারণ মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে কেন?
উত্তর – বৃক্ষরোপণে ভারতের সাধারণ মানুষকে উৎসাহ দেওয়ার কারণ: ভারতের সাধারণ মানুষকে বর্তমানে বৃক্ষরোপণে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কারণ— (1) বনভূমি বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। (2) বনভূমির অভাবে বন্যা, অনাবৃষ্টি, মৃত্তিকা ক্ষয় প্রভৃতি নানা ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এইসব সমস্যা সমাধানে বনভূমির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। (3) বনভূমির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে অগণিত মানুষের জীবিকার সংস্থান হয়। (4) কাষ্ঠ ও কাগজ শিল্পের কাঁচামালের জোগান-সহ নানা প্রকার মূল্যবান বনজ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য সাধারণ মানুষকে বনভূমির ওপর নির্ভর করতে হয়। (5) ভারতে বনভূমির পরিমাণ কম। দেশের মোট ভৌগোলিক ক্ষেত্রমানের শতকরা 24.39 ভাগ স্থানে বনভূমি আছে। অথচ, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ স্থানে বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে আমাদের দেশটি সম্পূর্ণভাবে মরুভূমিতে পরিণত হবে।
6. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে কী কী স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায় ?
উত্তর – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্য হয় বলে পর্বতের পাদদেশ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে স্বাভাবিক উদ্ভিদের অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, যথা—
চিরসবুজ অরণ্য: আঞ্চলিক বণ্টন: পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলে অর্থাৎ 1000-2000 মি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল। প্রধান প্রধান উদ্ভিদ:শিশু, চাপলাস, গর্জন প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ। সৃষ্টির কারণ: উন্নতা ও বৃষ্টিপাতের আধিক্য (উয়তা 30°-35° সে, বার্ষিক বৃষ্টিপাত 200 সেমির অধিক) এই অরণ্যের বিকাশে সহায়ক।
মিশ্র বনভূমি: আঞ্চলিক বণ্টন: পূর্ব হিমালয়ের 1000-2500 মি এবং পশ্চিম হিমালয়ের 500-2000 মি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল। প্রধান প্রধান উদ্ভিদ:পপলার, ওক, ম্যাপল, বার্চ, লরেল প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ। সৃষ্টির কারণ: উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্নতা হ্রাসের কারণে নাতিশীতোয় পর্ণমোচী এবং নাতিশীতোয় চিরসবুজ—উভয়প্রকার বৃক্ষের একত্র সমাবেশ দেখা যায়।
সরলবর্গীয় বনভূমি : আঞ্চলিক বণ্টন: পূর্ব হিমালয়ের 2500-4000 মি এবং পশ্চিম হিমালয়ের 2000–3000 মি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল। প্রধান প্রধান উদ্ভিদ: পাইন, ফার, স্পুস, লরেল প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ। সৃষ্টির কারণ: প্রবল তুষারপাতের হাত থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে এখানে বিশেষ ধরনের অভিযোজনগত (শঙ্কু আকৃতির বৃক্ষ) বৈশিষ্ট্য সমন্বিত উদ্ভিদ জন্মায়।
আল্পীয় উদ্ভিদ: আঞ্চলিক বণ্টন: পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের সরলবর্গীয় বনভূমি অঞ্চলের আরও ওপরে প্রায় 4500 মি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল | প্রধান প্রধান উদ্ভিদ: জুনিপার, রডোডেনড্রন, লার্চ, ভুর্জ-সহ নানারকমের তৃণ ও গুল্ম এখানে জন্মায়। সৃষ্টির কারণ: বছরের কিছুটা সময় মাটি বরফাবৃত থাকার পর বসন্তকালে বরফ গলে গেলে মৃদু শীতল আবহাওয়ায় এই ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়।
7. বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায় কেন?
উত্তর – বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃষ্টির কারণ: বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে শ্বাসমূল ও ঠেসমূলবিশিষ্ট উদ্ভিদের যে অরণ্য দেখা যায়, তাকে বলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এখানে এই ধরনের অরণ্য গড়ে ওঠার কারণগুলি হল — (1) লবণাক্ত মাটি নরম ও আঠালো হওয়ায় মাটির ভিতরে ঠিকমতো বায়ু চলাচল করতে পারে না। এ ছাড়া, জোয়ারের জলে বনভূমি প্লাবিত হয় বলে গাছের শিকড়গুলির বায়ু থেকে অক্সিজেন সংগ্রহের জন্য বা শ্বাসকার্য চালানোর জন্য শ্বাসমূল থাকে। (2) বদ্বীপ এলাকায় অনবরত জোয়ারভাটা হয় ও সমুদ্রের ঢেউ এসে আঘাত করে এবং প্রচণ্ড জোরে বাতাস প্রবাহিত হয়। তাই, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গাছগুলির গোড়ায় ঠেসমূল থাকে। (3) জলময় পরিবেশে এই অরণ্য গড়ে ওঠে বলে গাছের ফল বা বীজগুলি জলে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় বা ভেসে অন্য কোথাও চলে না যায় তাই ফলগুলি মাটিতে পড়ামাত্র বা পড়ার আগেই তা থেকে অঙ্কুর বের হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম। এই অরণ্যে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল, কেওড়া, পিটুলি প্রভৃতি গাছ জন্মায়।
8. সামাজিক বনসৃজন কাকে বলে?
উত্তর – সামাজিক বনসৃজন : প্রধানত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষদের আর্থিক সাহায্যের লক্ষ্যে যখন নির্ধারিত অরণ্যসীমার বাইরে, অব্যবহৃত জমি বা পতিত জমিতে বিশেষ বিশেষ বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে অরণ্য সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে।
সামাজিক বনসৃজনের জন্য উপযুক্ত ভূমি: (1) খাল ও নদীর পাড়ের জমি, (2) রেলপথ ও সড়কপথের দু-পাশের ফাঁকা জমি, (3) পুকুর বা দিঘির পাড়, (4) খনি এলাকার অব্যবহৃত জমি, (5) বিদ্যালয়, অফিস, ধর্মস্থান প্রভৃতির উন্মুক্ত জায়গা, (6) পতিত জমি প্রভৃতি।
উদ্দেশ্য: (1) অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষদের সহায়তা করা, (2) দেশে বিভিন্ন ধরনের কাঠের উৎপাদন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে অব্যবহৃত, পতিত ও পরিত্যক্ত জমিকে লাভজনক কাজে ব্যবহার করা, (3) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা, (4) ভূমিক্ষয় রোধ করা, (5) ফলমূলের উৎপাদন বাড়ানো ইত্যাদি।
9. উঘ্ন মরু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – উর মরু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য: উয় মরু অঞ্চলে ‘জেরোফাইট’ শ্রেণির উদ্ভিদ জন্মায়। উয় ও শুষ্ক পরিবেশে জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য এই উদ্ভিদদেহে কতকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যেমন- (1) মাটির গভীর থেকে জল সংগ্রহ করার জন্য এই উদ্ভিদের শিকড় খুব দীর্ঘ হয়। (2) গাছে পাতা থাকে না (ক্যাকটাস) বা থাকলেও খুব কম এবং আকৃতিতে হয় ছোটো ছোটো (বাবলা)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাতাগুলি কাঁটায় পরিণত হয়। (3) জল ধরে রাখার জন্য কাণ্ড ও পাতা শাঁসযুক্ত হয় (ব্যারেল ক্যাকটাস)। (4) কাণ্ড মোম-জাতীয় পুরু ত্বকে ঢাকা থাকে। (5) গাছের গায়ে প্রচুর লোম ও কাঁটা থাকে। (6) উদ্ভিদগুলি বেশ দূরে দূরে জন্মায় অর্থাৎ ছড়ানো হয়। (7) পরাগ মিলন সুনিশ্চিত করার জন্য উদ্ভিদগুলির ফুল উজ্জ্বল রঙের এবং তীব্র গন্ধযুক্ত হয়।
উদাহরণ: ভারতের রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়।
10 হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন অংশের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রকৃতির কেন?
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্যের কারণ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকৃতির স্বাভাবিক উদ্ভিদ সৃষ্টির কারণগুলি হল-
  1. ভূমির উচ্চতার প্রভাব : উন্নতা ও বৃষ্টিপাত তথা জলবায়ুর পরিবর্তন হলে স্বাভাবিক উদ্ভিদেরও পরিবর্তন হয়। হিমালয় পর্বতের ক্ষেত্রেও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায় এবং বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটে। এজন্য হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে যে ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মায়, ক্রমশ ওপরের দিকে তার পরিবর্তন হয়।
  2. বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার তারতম্য: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা সরাসরি এসে পূর্ব হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে পশ্চিম হিমালয়ের তুলনায় পূর্ব হিমালয়ে বৃষ্টিপাত অনেক বেশি এবং সেখানকার বাতাসে আর্দ্রতাও বেশি থাকে। এর ফলে একই উচ্চতায় পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের মধ্যে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতিগত অনেক পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
  3. অক্ষাংশগত অবস্থানের পার্থক্য: পূর্ব হিমালয়ের তুলনায় পশ্চিম হিমালয় উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত বলে পশ্চিম হিমালয়ে ঠান্ডা বেশি। এজন্যও পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের মধ্যে স্বাভাবিক উদ্ভিদের তারতম্য দেখা যায়।
11. চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে? ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে এই জাতীয় অরণ্য দেখতে পাওয়া যায় ?
উত্তর – চিরহরিৎ অরণ্য: যেসব গাছে সারাবছর সবুজ পাতা থাকে, তাদের বলে চিরহরিৎ গাছ। যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 250 সেন্টিমিটারেরও বেশি, সেইসব অঞ্চলে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ অরণ্য সৃষ্টি হয়। এর কারণ বেশি বৃষ্টির জন্য ওইসব অঞ্চলে মাটি সবসময় ভিজে থাকে, ফলে উদ্ভিদের কখনও জলের অভাব হয় না। এই জাতীয় অরণ্যে কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে উদ্ভিদের সব পাতা একসঙ্গে ঝরে না গিয়ে সারাবছর ধরে ধীরে ধীরে ঝরতে থাকে বলে উদ্ভিদকে চিরসবুজ দেখায়।
ভারতে অবস্থান : পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, অসমের পার্বত্য অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে চিরহরিৎ অরণ্য দেখা যায়।
12. ভারতে কাষ্ঠ শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটেনি কেন?
উত্তর – ভারতে কাষ্ঠ শিল্পের বিকাশ না হওয়ার কারণ: ভারতে কাষ্ঠ শিল্পের তেমন বিকাশ হয়নি। কারণ—
  1. স্বল্প বনভূমির পরিমাণ: ভারতে বনভূমির পরিমাণ খুবই কম—দেশের মোট আয়তনের মাত্র 24.39 শতাংশ। এই স্বল্প আয়তনের বনভূমি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কাঠ আহরণ সম্ভব নয়।
  2. অরণ্যের দুর্গম অবস্থা: মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব ভারতের যেসব অঞ্চলে কিছুটা ঘন অরণ্য আছে, সেগুলি বেশিরভাগই দুর্গম এলাকায় অবস্থিত।
  3. নানা প্রজাতির উদ্ভিদ: ভারতের অরণ্যে নানা ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি একসঙ্গে অবস্থান করে। তাই নির্দিষ্ট প্রজাতির গাছ শনাক্ত করে তা সংগ্রহ করা বেশ অসুবিধাজনক।
  4. শক্তকাঠ: ভারতে সরলবর্গীয় অরণ্যের পরিমাণ কম। বেশিরভাগই শক্ত কাঠের বনভূমি। শক্ত কাঠ কাটা অসুবিধাজনক।
  5. আর্দ্র জলবায়ু: ভারতের জলবায়ু উয় এবং আর্দ্র। এইরকম জলবায়ুতে কাঠ সংগ্রহ অসুবিধাজনক।
  6. অনুন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: ভারতে কাষ্ঠ শিল্পে অগ্রসর অঞ্চলগুলির পরিবহণ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত নয়। এর ফলে দুর্গম এলাকাগুলি থেকে কাঠ পরিবহণ করা অসুবিধাজনক।
13. ভারতে বন সংরক্ষণের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?
উত্তর – ভারতে বনসংরক্ষণের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ: বনভূমির সীমাহীন উপকারিতার কথা চিন্তা করে বর্তমানে ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের জন্য কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন—
  1. বৃক্ষরোপণ : প্রতি বছর বর্ষাকালে বনমহোৎসবের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
  2. বনভূমি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন: যথেচ্ছভাবে বনবিনাশ রোধের জন্য 1980 সাল থেকে বনভূমি সংরক্ষণ আইন চালু হয়েছে।
  3. কীটনাশকের ব্যবহার : কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে বনভূমিকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
  4. অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষচ্ছেদন রোধ: অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
  5. অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন হ্রাস : অপরিণত গাছ কাটা অরণ্য ধ্বংসের অন্যতম কারণ। তাই ছোটো বা অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
14. পর্ণমোচী বৃক্ষের এইরূপ নামকরণ করা হয়েছে কেন?
উত্তর – পর্ণমোচী বৃক্ষের নামকরণের কারণ: পর্ণমোচী বৃক্ষ, যেমন—শাল, সেগুন প্রভৃতি সাধারণত মধ্যম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জন্মায়। এই অঞ্চলগুলিতে সাধারণত একটি শুষ্ক ঋতু থাকে। শুষ্ক ঋতুতে পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় জল যাতে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে না যায়, সেইজন্য এইসব উদ্ভিদ শুষ্ক ঋতুতে পত্রমোচন করে। একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে এই ধরনের উদ্ভিদ বেশিরভাগ পাতা ঝরিয়ে দেয় বা পর্ণ মোচন করে বলে, এদের পর্ণমোচী উদ্ভিদ বলে।
15. ভারতে বনবিভাগকে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ?
উত্তর – ভারতে বনবিভাগের সমস্যা: ভারতে প্রয়োজনের তুলনায় অরণ্যের পরিমাণ খুব কম। কিন্তু এই স্বল্প পরিমাণ অরণ্য নিয়েই ভারতের বনবিভাগকে বিশেষ কতকগুলি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন—
  1. অবৈধ ও বেআইনি বৃক্ষচ্ছেদন, বনজ সম্পদ আহরণ ও বন্যজন্তু শিকার: ভারতে প্রতি বছর বেআইনিভাবে বিপুল সংখ্যায় বৃক্ষ কেটে নেওয়া হয় ও নানা ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ করা হয়। এ ছাড়াও চোরা শিকারের ফলে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
  2. অসংরক্ষিত বনাঞ্চলে কৃষিভূমির সম্প্রসারণ : বর্তমানে দেশে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিভূমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে গাছ কেটে বহু অসংরক্ষিত বনভূমিকে কৃষিভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। এর ফলে বনভূমির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
  3. দাবানল, কীটপতঙ্গের আক্রমণ : দাবানল, কীটপতঙ্গ বা রোগ-পোকার আক্রমণ, ভূমি ধস প্রভৃতি কারণে প্রতি বছর অনেকটা পরিমাণ অরণ্য বিনষ্ট হয়। কিন্তু ভারতের বনবিভাগ এগুলি প্রতিরোধে এখনও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে উঠতে পারেনি।
  4. অরণ্যের স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতা: দেশে বাণিজ্যিক অরণ্যের অভাব, অধিকাংশ বৃক্ষের স্বল্প বৃদ্ধিহার, পার্বত্য অঞ্চলে বনভূমির দুর্গমতা প্রভৃতি কারণে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভারতে কাঠ-সহ নানা ধরনের বনজ দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংজ্ঞা: কোনো স্থানের নির্দিষ্ট বৃষ্টিপাত, উন্নতা ও মৃত্তিকার প্রভাবে কোনোরূপ পরিচর্যা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে যে উদ্ভিদ জন্মায় ও বড়ো হয়, তাকেই বলে স্বাভাবিক উদ্ভিদ। এই স্বাভাবিক উদ্ভিদই বনভূমি বা অরণ্য তৈরি করে।
2. ভারতের কোথায় কোথায় চিরসবুজ বৃক্ষের বনভূমি আছে?
উত্তর – ভারতের চিরসবুজ অরণ্য অঞ্চল: ভারতের যেসব অঞ্চলে বছরে গড়ে 250 সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয়, সেইসব স্থানে চিরসবুজ অরণ্য দেখা যায়। যেমন—পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চল, অসমের পার্বত্য অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢাল, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চল।
3. ভারতের কোথায় কোথায় আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য আছে?
উত্তর – ভারতের আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য অঞ্চল: অসমের সমভূমি অঞ্চল, ঝাড়খণ্ড মালভূমি ও গঙ্গা সমভূমির পূর্বাংশ, পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চল, মধ্যভারত এবং ওডিশার মালভূমি ও উপকূল অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢালের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বাদে সমগ্র দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলে আর্দ্র পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য আছে। এই অরণ্যের অপর নাম মৌসুমি অরণ্য।
4. কয়েকটি চিরসবুজ বৃক্ষের নাম ও ব্যবহার লেখো।
উত্তর – চিরসবুজ বৃক্ষ: শিশু, গর্জন, তুন, পুন, রবার প্রভৃতি।
ব্যবহার: এই বৃক্ষগুলির কাঠ খুব শক্ত ও ভারী। তাই রেলপথের স্লিপার, বাড়ির আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ প্রভৃতি কাজে এই কাঠ ব্যবহার করা হয়।
5. ভারতের একটি অঞ্চলের নাম করো যেখানে চিরসবুজ উদ্ভিদ বলয় অবস্থান করে। এই অঞ্চলের জলবায়ু কী ধরনের হয়?
উত্তর – চিরসবুজ উদ্ভিদ অঞ্চলের অবস্থান : ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢালে চিরসবুজ উদ্ভিদ বলয় দেখা যায়।
জলবায়ু : এই অঞ্চলের জলবায়ু উম্ন ও আর্দ্র মৌসুমি প্রকৃতির হয়।
6. নাতিশীতোয় পর্ণমোচী অরণ্য ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর – ভারতের নাতিশীতোয় পর্ণমোচী অরণ্যের অবস্থান: পূর্ব হিমালয়ের 1000-2500 মিটার উচ্চতায় ও পশ্চিম হিমালয়ের 500-2000 মিটার উচ্চতায় পার্বত্য ঢালে নাতিশীতোয় পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায়। এই অরণ্যের প্রধান উদ্ভিদগুলি হল ওক, ম্যাপল, সিডার, ওয়ালনাট প্রভৃতি।
7. কয়েকটি পর্ণমোচী বৃক্ষের নাম ও ব্যবহার লেখো।
উত্তর – পর্ণমোচী বৃক্ষ : শাল, সেগুন, শিমুল, জারুল, মহুয়া, শিরীষ, আম, জাম, বট, নিম প্রভৃতি ভারতের উল্লেখযোগ্য পর্ণমোচী বৃক্ষ।
ব্যবহার : (1) এই অরণ্যের কাঠ থেকে আসবাবপত্র, জানালা, দরজা, যানবাহনের সাজসরঞ্জাম প্রভৃতি তৈরি হয়। (2) জ্বালানি কাঠ হিসেবেও গ্রামাঞ্চলে এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। (3) লাক্ষা থেকে গালা তৈরির জন্য পলাশ, মহুয়া প্রভৃতি গাছে লাক্ষাকীট পালন করা হয়।
8. ভারতে সরলবর্গীয় অরণ্য কোথায় দেখতে পাওয়া যায় ?
উত্তর – ভারতে সরলবর্গীয় অরণ্যের অবস্থান : পূর্ব হিমালয়ে 2500-4000 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ে 2000-3200 মিটার উচ্চতায় সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়।
9. ভারতের মরু অঞ্চলে কী ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় ?
উত্তর – ভারতের মরু অঞ্চলের উদ্ভিদসমূহ: ভারতের মরু অঞ্চলে ক্যাকটাস, ফণীমনসা, বাবলা, খেজুর, বিভিন্ন প্রকার কাঁটাগাছ প্রভৃতি জন্মায়। এদের জেরোফাইটিক উদ্ভিদ বলা হয়। এ ছাড়া, বালির ওপর দু-একটি করে ঘাসও জন্মায়।
10. আল্লীয় উদ্ভিদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – ধারণা: পূর্ব হিমালয়ের 4000 মিটার এবং পশ্চিম হিমালয়ের 3200 মিটার উচ্চতার ওপর অর্থাৎ সরলবর্গীয় অরণ্যের আরও ওপরে জুনিপার, রডোডেনড্রন, লার্চ, ভর্জ প্রভৃতি গাছ ছাড়াও নানারকমের তৃণ এবং গুল্ম জন্মায়। এইসব উদ্ভিদকে একসঙ্গে আল্লীয় উদ্ভিদ বলে।
বৈশিষ্ট্য: (1) এখানকার উদ্ভিদগুলি খুব ছোটো ছোটো। (2) ইউরোপের আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায় বলে এদের আত্মীয় উদ্ভিদ বলা হয়।
11. ম্যানগ্রোভ অরণ্য বলতে কী বোঝ ?
অথবা, বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে কী জাতীয় অরণ্য দেখা যায় ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – ধারণা: সমুদ্রোপকূলসংলগ্ন বদ্বীপের লোনা মাটিতে এক বিশেষ ধরনের জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গম-সমন্বিত এবং শ্বাসমূল ও ঠেসমূলবিশিষ্ট চিরসবুজ উদ্ভিদের অরণ্য দেখা যায়, যা ম্যানগ্রোভ অরণ্য নামে পরিচিত। যেমন—সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল প্রভৃতি ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদ্ভিদ।
উদাহরণ: গঙ্গা বদ্বীপের দক্ষিণভাগে অবস্থিত সুন্দরবন ও মহানদী বদ্বীপের ভিতরকণিকা ভারতের দুটি বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ অরণ্য অঞ্চল।
12. শোলা বনভূমি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: মধ্য এবং দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে 1500 মিটারের বেশি উচ্চতায় আর্দ্র নাতিশীতোয় উদ্ভিদ জন্মায়। এই বনাঞ্চলকে স্থানীয়ভাবে শোলা বনভূমি বলে। এই বনভূমিতে সিঙ্কোনা, এলম, বার্চ, লরেল প্রভৃতি গাছ জন্মায়।
13. ভারতের কোথায় কোথায় অরণ্য গবেষণাগার রয়েছে?
উত্তর – ভারতের অরণ্য গবেষণাগার: ভারতের প্রধান অরণ্য গবেষণাগারটি রয়েছে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে। এ ছাড়া, রাজস্থানের যোধপুর, মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর, কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু, তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোরে অরণ্য গবেষণাগার রয়েছে। আর হিমালয় পার্বত্য বনভূমি গবেষণা কেন্দ্র আছে হিমাচল প্রদেশের সিমলায়।
14. সামাজিক বনসৃজনের দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।
উত্তর – সামাজিক বনসৃজনের উদ্দেশ্য: সামাজিক বনসৃজনের দুটি উদ্দেশ্য হল— (1) দেশে বিভিন্ন ধরনের কাঠের উৎপাদন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে অব্যবহৃত, পতিত ও পরিত্যক্ত জমি পুনরুদ্ধার করে বনভূমি সৃষ্টির মাধ্যমে তা লাভজনক কাজে ব্যবহার করা, (2) মিশ্র অরণ্য সৃষ্টির মাধ্যমে জ্বালানির জোগান বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষ ও বিভিন্ন জীবজন্তুর খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি করা এবং পরোক্ষভাবে পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষা করা।
15. কৃষি বনসৃজন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: কৃষিজ ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষক যখন কাঠ, জৈব সার, ফলমূল, প্রভৃতি পাওয়ার জন্য কৃষিজমির মাঝে মাঝে জমির সীমানা বরাবর অথবা অনাবাদী বা পতিত জমিতে প্রয়োজনীয় গাছ লাগিয়ে বনভূমি গড়ে তোলে, তখন তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।
16. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে চিরহরিৎ বনভূমি গড়ে উঠেছে কেন?
উত্তর – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমচালে চিরহরিৎ বনভূমি গড়ে ওঠার কারণ: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল—এই দুটি অঞ্চলেই বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 250 সেমির বেশি। অঞ্চল দুটিতে বার্ষিক উন্নতা গড়ে 25°সে-27° সে এবং বছরের বেশিরভাগ সময়ে জলবায়ু উয় এবং আর্দ্র থাকে। এজন্যই ওই দুটি অঞ্চলে চিরসবুজ অরণ্য গড়ে উঠেছে।
17. পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালে কাঁটাঝোপ ও গুল্মজাতীয় অরণ্য গড়ে উঠেছে কেন?
উত্তর – পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বচালে কাঁটাঝোপ ও গুল্ম-জাতীয় অরণ্য গড়ে ওঠার কারণ: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও পূর্বঢালটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20-50 সেমি। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে উদ্ভিদগুলি কাঁটাযুক্ত এবং গুল্ম প্রজাতির হয়।
18. ম্যানগ্রোভ অরণ্যে শ্বাসমূল দেখা যায় কেন?
উত্তর – ম্যানগ্রোভ অরণ্যে শ্বাসমূল সৃষ্টির কারণ: ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৃক্ষগুলি নদী মোহানার সূক্ষ্ম কাদাযুক্ত পলিমাটিতে জন্মায়। এই মাটিতে সচ্ছিদ্রতার পরিমাণ খুব কম। এ ছাড়া, এই মাটি বেশিরভাগ সময় সমুদ্রের লবণাক্ত জলে প্লাবিত থাকে। তাই বায়ু থেকে অক্সিজেন শোষণের জন্য উদ্ভিদের মূলগুলি মাটির ওপরে শ্বাসমূল হিসেবে উঠে আসে।
19. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভিদের বৈচিত্র্য বেশি কেন?
উত্তর – হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভিদের বৈচিত্র্য বেশি হওয়ার কারণ: হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমিতে উন্নতা এবং উচ্চতা উভয়েরই প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। যেহেতু উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্নতা এবং বৃষ্টিপাত কমে যায়, তাই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভিদের চারিত্রিক পরিবর্তন দেখা যায়।
20. আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর – আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রয়োজনীয়তা: আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশে নানা কারণে স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রয়োজনীয়। যথা— (1) বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতা বজায় রাখা, (2) ভূমিক্ষয় নিবারণ, (3) জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, (4) মরুভূমির প্রসার রোধ করা ছাড়াও, (5) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে, (6) কাঠ, মোম, মধুর মতো অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহে ও (7) জীবজগতের ভারসাম্য বজায় রাখতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি।
21. বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে কী জাতীয় অরণ্য দেখা যায় ?
উত্তর – বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে সৃষ্ট অরণ্য: বদ্বীপের লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ-জাতীয় অরণ্য দেখা যায়। এই অরণ্যে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল, ক্যাওড়া, পিটুলি প্রভৃতি গাছ জন্মায়।
22. ঝুমচাষ কীভাবে বনভূমি ধ্বংস করে ?
উত্তর – ঝুমচাষের ফলে বনভূমি হ্রাস: পাহাড়ি অঞ্চলে বনভূমি পুড়িয়ে জমি উদ্ধার করে সেই জমিতে চাষ করার পদ্ধতিকে ঝুমচাষ বলে। কয়েক বছর চাষাবাদ করার পর ওই মৃত্তিকার উর্বরতা কমে গেলে বনের মধ্যেই অন্য এক স্থানের জঙ্গল পুড়িয়ে সেখানে আবার চাষাবাদ শুরু হয়। এইভাবে যত বেশি ঝুমচাষ করা হবে ততই বৃক্ষচ্ছেদনের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বনভূমির পরিমাণও হ্রাস পাবে।
23. ভারতের শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – ভারতের শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যের বৈশিষ্ট্য: শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যের দুটি বৈশিষ্ট্য হল- (1) ঘাস, গুল্ম এবং ছড়ানো ছিটানো কিছু পাতাঝরা গাছ, যেমন—পলাশ, কুল, শিরীষ প্রভৃতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য অর্থাৎ এই অরণ্য হালকা প্রকৃতির হয়। শীতকালে বৃক্ষ জাতীয় গাছগুলির পাতা ঝরে যায় এবং অধিকাংশ তৃণ-জাতীয় উদ্ভিদ শুকিয়ে যায় বলে অরণ্য হালকা ও ফাঁকা হয়ে যায়। (2) অরণ্যের গাছগুলির উচ্চতা কম, সাধারণত 10 মিটারের বেশি উঁচু হয় না এবং সেগুলি এলোমেলোভাবে বাড়ে।
24. জলবায়ু কীভাবে ভারতের ক্রান্তীয় চিরসবুজ উদ্ভিদকে প্রভাবিত করে?
উত্তর – ভারতের ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাব: (1) ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত 200 সেমির বেশি, গড় উন্নতা 27 °সে এবং বছরে ৪-9 মাস বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ খুব বেশি থাকে, সেখানে চিরসবুজ উদ্ভিদের গভীর অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে। (2) বেশি বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার জন্য মাটি সবসময় ভিজে থাকে বলে গাছের কখনও জলের অভাব হয় না। তাই গাছের পাতাগুলিও সব একসঙ্গে ঝরে পড়ে না অর্থাৎ গাছে সবসময় সবুজ পাতা থাকে এবং তাই এই বনভূমি চিরসবুজ প্রকৃতির। (3) এ ছাড়া, উয় ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য এই অরণ্যের গাছগুলি দ্রুত বাড়ে, গাছের পাতাগুলি বড়ো হয় এবং চারপাশে শাখাপ্রশাখা এমনভাবে প্রসারিত হয় যে সেগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে চাঁদোয়ার আকার ধারণ করে, যার মধ্যে দিয়ে ভূমিতে সূর্যের আলো এসে পৌঁছাতে পারে না। ফলে অরণ্যের অভ্যন্তরে একটা অন্ধকারময় পরিবেশ বিরাজ করে।
25. ভারতের কোথায় কোথায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায় ?
উত্তর – ভারতের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবস্থান: ভারতের পূর্ব উপকূলে গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কুষ্মা ও কাবেরী নদীর বদ্বীপসংলগ্ন এলাকা লীয় বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়। এর মধ্যে গঙ্গা বদ্বীপের দক্ষিণাংশে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন হল ভারতের বৃহত্তম ও ওডিশার মহানদী বদ্বীপের ভিতরকণিকা হল দ্বিতীয় বৃহত্তম উপকূলীয় বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য অঞ্চল।
26. সামাজিক বনসৃজন কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা: প্রধানত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষদের প্রয়োজনীয় কাঠ, ফলমূল, পশুখাদ্য ও অন্যান্য বনজ দ্রব্যের চাহিদা পূরণ করতে যখন নির্ধারিত অরণ্যসীমার বাইরে, অব্যবহৃত জমি বা পতিত জমিতে (যেমন—খাল ও নদী পাড়ের জমি, বিদ্যালয়, অফিস, ধর্মস্থান প্রভৃতির উন্মুক্ত জায়গা, রেল ও সড়কপথের দু-পাশের ফাঁকা জমি প্রভৃতি স্থানে) অরণ্য সৃষ্টি করা হয়, তখন তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে।
27. অরণ্য সংরক্ষণ কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা: অরণ্য সংরক্ষণ বলতে বোঝায়, যথেচ্ছভাবে ও নির্বিচারে গাছ না কেটে এমনভাবে বিচারবিবেচনা করে ও সংযতভাবে অরণ্য ব্যবহার করা যাতে অরণ্যের সম্ভাব্য বিকাশ পরিপূর্ণ হয় এবং তার ফলে যেমন বর্তমানে অরণ্য সম্পদের উৎপাদন অব্যাহত থাকবে, তেমন ভবিষ্যতেও প্রয়োজনমতো অরণ্যজাত দ্রব্যগুলি পাওয়া যাবে।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. একটি চিরহরিৎ বৃক্ষের উদাহরণ হল—
(a) শাল
(b) সেগুন
(c) কেন্দু
(d) আয়রন উড
উত্তর – (d) আয়রন উড
2. ছোটোনাগপুর মালভূমিতে জন্মায় যে উদ্ভিদ তা হল—
(a) পর্ণমোচী
(b) চিরসবুজ
(c) সরলবর্গীয়
(d) জেরোফাইট
উত্তর – (a) পর্ণমোচী
3. বনভূমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি যে রাজ্যে—
(a) পশ্চিমবঙ্গ
(b) মধ্যপ্রদেশ
(c) সিকিম
(d) অসম
উত্তর – (b) মধ্যপ্রদেশ
4. ভারত সরকারের অরণ্য গবেষণার প্রধান কেন্দ্রটি রয়েছে—
(a) দেরাদুনে
(b) যোধপুরে
(c) পরেশনাথে
(d) নাগপুরে
উত্তর – (a) দেরাদুনে
5. ভারতে যে ধরনের উদ্ভিদ সবচেয়ে বেশি রয়েছে, তা হল—
(a) চিরসবুজ উদ্ভিদ
(b) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ
(c) পাতাঝরা উদ্ভিদ
(d) সরলবর্গীয় উদ্ভিদ
উত্তর – (c) পাতাঝরা উদ্ভিদ
6. এলিফ্যান্ট গ্রাস দেখা যায় –
(a) নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্যে
(b) ভূমধ্যসাগরীয় অরণ্যে
(c) শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যে
(d) সরলবর্গীয় অরণ্যে
উত্তর – (c) শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্যে
7. পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে জন্মায় —
(a) গুল্ম ও তৃণ-জাতীয় উদ্ভিদ
(b) সরলবর্গীয় উদ্ভিদ
(c) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ
(d) চিরসবুজ উদ্ভিদ
উত্তর – (a) গুল্ম ও তৃণ-জাতীয় উদ্ভিদ
৪. পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে রয়েছে –
(a) জলদাপাড়া
(b) কানহা
(c) কাজিরাঙ্গা
(d) সুন্দরবন
উত্তর – (d) সুন্দরবন
9. ভারতের মরু অঞ্চলে দেখা যায় —
(a) শিশু
(b) ক্যাকটাস
(c) আবলুস
(d) মেহগিনি
উত্তর – (b) ক্যাকটাস
10. ম্যানগ্রোভ বনভূমি বিকাশ লাভ করে—
(a) কালোমাটিতে
(b) লবণাক্ত মাটিতে
(c) ল্যাটেরাইট মাটিতে
(d) পলিমাটিতে
উত্তর – (b) লবণাক্ত মাটিতে
11. যে অঞ্চলে চিরহরিৎ গাছ দেখা যায়, সেখানে সারাবছর মাটি—
(a) শুষ্ক থাকে
(b) আর্দ্র থাকে
(c) বালিপূর্ণ থাকে
(d) লবণাক্ত থাকে
উত্তর – (b) আর্দ্র থাকে
12. ভারতে লম্বা ও ছুঁচোলো প্রকৃতির গাছ দেখা যায় —
(a) সুন্দরবনে
(b) রাজস্থানের মরু অঞ্চলে
(c) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে
(d) দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলে
উত্তর – (c) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে
13. স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি—
(a) ভূপ্রকৃতি
(b) মাটি
(c) জলবায়ু
(d) মানুষ
উত্তর – (c) জলবায়ু
14. ভারতের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি গড়ে উঠেছে—
(a) গাঙ্গেয় বদ্বীপে
(b) মহানদীর বদ্বীপে
(c) গোদাবরীর বদ্বীপে
(d) কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপে
উত্তর – (a) গাঙ্গেয় বদ্বীপে
15. হিমালয়ের পাদদেশে যে উদ্ভিদের প্রাধান্য সর্বাধিক—
(a) পর্ণমোচী
(b) চিরহরিৎ
(c) কাঁটাঝোপ
(d) সরলবর্গীয়
উত্তর – (b) চিরহরিৎ
16. ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য হল—
(a) সুন্দরবন
(b) ডুয়ার্স
(c) ভিতরকণিকা
(d) সিমলা
উত্তর – (c) ভিতরকণিকা
17. ভারতীয় সাভানা বলা হয়—
(a) শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদকে
(b) আর্দ্র পর্ণমোচী উদ্ভিদকে
(c) ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদকে
(d) চিরসবুজ উদ্ভিদকে
উত্তর – (a) শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদকে
18. জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম দেখা যায় —
(a) সরলবর্গীয় উদ্ভিদে
(b) মরু উদ্ভিদে
(c) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদে
(d) পর্ণমোচী উদ্ভিদে
উত্তর – (c) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদে
19. পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ উদ্ভিদ হল—
(a) চিরহরিৎ প্রকৃতির
(b) সরলবর্গীয় প্রকৃতির
(c) আর্দ্র পর্ণমোচী প্রকৃতির
(d) ম্যানগ্রোভ প্রকৃতির
উত্তর – (c) আর্দ্র পর্ণমোচী প্রকৃতির
20. সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প শুরু হয়েছে –
(a) 1976 সালে
(b) 1970 সালে
(c) 1990 সালে
(d) 2011 সালে
উত্তর – (a) 1976 সালে
21. পান্থপাদপ গাছ বেশি দেখা যায় —
(a) থর মরুভূমিতে
(b) হিমালয় পর্বতে
(c) সুন্দরবনে
(d) মধ্যপ্রদেশে
উত্তর – (a) থর মরুভূমিতে
22. চন্দন গাছ জন্মায়—
(a) চিরহরিৎ অরণ্যে
(b) সরলবর্গীয় অরণ্যে
(c) পর্ণমোচী অরণ্যে
(d) ম্যানগ্রোভ অরণ্যে
উত্তর – (c) পর্ণমোচী অরণ্যে
23. ভারতে বদ্বীপীয় লবণাক্ত মৃত্তিকায় জন্মায়—
(a) কাঁটাঝোপ
(b) পর্ণমোচী উদ্ভিদ
(c) সরলবর্গীয় উদ্ভিদ
(d) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ
উত্তর – (d) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ
24, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে দেখা যায়—
(a) চিরহরিৎ উদ্ভিদ
(b) পর্ণমোচী উদ্ভিদ
(c) মরু উদ্ভিদ
(d) লবণাম্বু উদ্ভিদ
উত্তর – (a) চিরহরিৎ উদ্ভিদ
25. ভারতে সরলবর্গীয় বনভূমি যে অঞ্চলে দেখা যায় —
(a) গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে
(b) উপকূল অঞ্চলে
(c) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে
(d) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলে
উত্তর – (c) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে
26. পশ্চিমবঙ্গে শীতকালে বৃষ্টিপাত কম হয় বলে বেশিরভাগ জায়গায় লক্ষ করা যায়—
(a) চিরহরিৎ উদ্ভিদ
(b) পর্ণমোচী উদ্ভিদ
(c) ক্যাকটাস
(d) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ
উত্তর – (b) পর্ণমোচী উদ্ভিদ

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. ……….. থেকে গালা উৎপন্ন হয়।
উত্তর – লাক্ষা
2. ……….. গাছে রেশমকীট পালন করা হয়।
উত্তর – তুঁত
3. গাছে গাছে ঘষা লেগে সৃষ্ট আগুনকে ………. বলে।
উত্তর – দাবানল
4. পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে ………. অরণ্য আছে।
উত্তর – চিরসবুজ
5. ……….. গাছের নাম অনুসারে সুন্দরবন নামকরণ হয়েছে।
উত্তর – সুন্দরী
6. ভারতের …………. অরণ্যের গাছগুলিতে ঠেসমূলের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
উত্তর – ম্যানগ্রোভ
7. মরু উদ্ভিদকে ………. বলে।
উত্তর – জেরোফাইট
8. ………… মৃত্তিকায় সরলবর্গীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
উত্তর – পড়সল
9. সাবাই ঘাস ……….. বনভূমিতে জন্মায়।
উত্তর – শুষ্ক পর্ণমোচী
10. পশ্চিমবঙ্গের ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে ……….. নামে ডাকা হয়।
উত্তর – সুন্দরবন
11. ভারতের সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে ………..।
উত্তর – সুন্দরবনে
12. ভারতের পর্ণমোচী অরণ্য ……….. অরণ্য নামে পরিচিত।
উত্তর – মৌসুমি
13. পাইন, ফার হল একধরনের ……….. উদ্ভিদ।
উত্তর – সরলবর্গীয়
14. কাজিরাঙা বনভূমি ……….. রাজ্যে অবস্থিত।
উত্তর – অসম
15. অরণ্য একধরনের ……….. সম্পদ।
উত্তর – পুনর্ভব
16. বুনো খেজুর হল ……….. উদ্ভিদ।
উত্তর – মরু
17. পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সে ……….. বনভূমি বেশি।
উত্তর – চিরহরিৎ
18. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষগুলি ……….. মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
উত্তর – প্রায় 60
19. ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ………… অঙ্কুরোদ্গম দেখা যায়।
উত্তর – জরায়ুজ
20. হিমালয় পর্বতের 4000 মিটারের ওপরে ……….. উদ্ভিদ আছে।
উত্তর – আল্লীয়
21. ভূমির মোট আয়তনের ………… শতাংশে বনভূমি থাকা উচিত।
উত্তর – 33
22. সাধারণ মানুষ যখন সম্মিলিতভাবে বনভূমি সৃষ্টি ও রক্ষা করে তখন তাকে ………. বনসৃজন বলে।
উত্তর – সামাজিক
23. কৃষিকাজের সাথে সাথে গাছপালা লাগিয়ে অরণ্য গড়ে তোলাকে ………… বনসৃজন বলে।
উত্তর – কৃষি
24. ভারতের একমাত্র ভাসমান অরণ্যভূমি মণিপুরের ………..।
উত্তর – কেইবুল লামজাও
25. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের অধিকাংশ গাছের পাতা ……….. কালে ঝরে যায়।
উত্তর – শীত
26. রাজস্থান মরু অঞ্চলে জেরোফাইট শ্রেণির উদ্ভিদের ……….. সুদীর্ঘ হয়।
উত্তর – শিকড়

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *