WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 6 ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ TOPIC – C & D
WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 6 ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ TOPIC – C & D
West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 6 ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ TOPIC – C & D
West Bengal Board 10th Geography Solutions
TOPIC – C ভারতের জনসংখ্যা
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- আদমশুমারি : জনগণনা এবং জনগণনা সংক্রান্ত তথ্যসংগ্রহের কাজকে আদমশুমারি বলে।
- জনবিস্ফোরণ : সাধারণত যে-কোনো অঞ্চলে বা দেশে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যাও বাড়তে থাকে। কিন্তু জনসংখ্যার সেই বৃদ্ধি যখন অস্বাভাবিক দ্রুতহারে হয় এবং তার ফলে মোট জনসংখ্যা হঠাৎই খুব বেড়ে যায়, জনসংখ্যার সেই হঠাৎ বৃদ্ধিকে জনবিস্ফোরণ বলা হয়।
- জনসংখ্যার বৃদ্ধি : জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলতে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার বৃদ্ধি অর্থাৎ ধনাত্মক পরিবর্তনকে বোঝায়।
- ধারণযোগ্য উন্নয়ন : ইংরেজি Sustainable Development শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন। পরিবেশবিদ ইভা বালফোর (Eva Balfour) প্রথম এই Sustainable Development শব্দটি ব্যবহার করেন। যে উন্নয়ন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষের সার্বিক উন্নতি সুনিশ্চিত করে, সেটিই হল ধারণযোগ্য উন্নয়ন। ব্রুটল্যান্ড কমিশনের মতে—“যে উন্নয়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদের ভাণ্ডারকে অক্ষত রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটায়, তাকেই বলে ধারণযোগ্য উন্নয়ন।”
- নগরায়ণ : কোনো বসতি এলাকা যখন গ্রাম্য অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে শহর বা নগরে পরিণত হয়, পরিবর্তনের সেই প্রক্রিয়াকে বলে নগরায়ণ। অর্থাৎ কোনো একটি স্থানে শহর বা নগর সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে নগরায়ণ বলে।
- শহর : ভারতের জনগণনা বিভাগ অনুযায়ী—যে বসতির (1) মোট জনসংখ্যা 5000 জন বা তার বেশি, (2) জনবসতির ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ন্যূনতম 400 জন, (3) মোট কর্মীর 75 শতাংশ বা তার বেশি অকৃষিকাজে (non-agricultural activities) নিযুক্ত এবং (4) সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাজকর্মের জন্য বসতিটি কোনো মিউনিসিপ্যালিটি অথবা কর্পোরেশন অথবা নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি (প্রজ্ঞাপিত অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) অথবা ক্যানটনমেন্ট (সেনানিবাস এলাকা) -এর অন্তর্গত হলে, সেই বসতিকে শহর বলা হয়।
- নগর : ভারতে যেসব শহরের লোকসংখ্যা এক লক্ষ বা তার বেশি, সেই শহরগুলিকে প্রথম শ্রেণির শহর বা নগর বলে।
- স্থির জনসংখ্যা : যখন কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যা হ্রাস বা বৃদ্ধি না পেয়ে স্থির অবস্থায় থাকে, তখন সেই পর্যায়কে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিশ্চল অবস্থা বা স্থির জনসংখ্যা বলে।
- মহানগর : Metropolis বা মেট্রোপলিস কথাটির অর্থ ‘মূলনগরী’ বা ‘Mother city’ এবং এর বাংলা প্রতিশব্দ মহানগর। ভারতে যেসব শহর তথা নগরের লোকসংখ্যা 10 লক্ষ বা তার বেশি, সেই শহর বা নগরগুলিকে বলে মহানগর।
- মেগাসিটি: যখন কোনো বড়ো মাপের নগর বা মহানগরের লোকসংখ্যা 50 লক্ষের বেশি হয়, তখন সেই নগর বা মহানগরকে মেগাসিটি বলে।
- জনঘনত্ব : ভূপৃষ্ঠের কোনো অঞ্চলের মানুষের বণ্টনগত তারতম্যের সূচক হল জনঘনত্ব। কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যাকে ওই অঞ্চলের মোট আয়তন দিয়ে ভাগ করলে যে অনুপাত পাওয়া যায়, তাকে জনঘনত্ব (density of population) বলে ।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. ভারতে অসম জনবণ্টনের কারণ আলোচনা করো।
অথবা, ভারতের জনবসতির ঘনত্ব সর্বত্র সমান নয় কেন?
অথবা, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জনবণ্টনের তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে অসম জনবণ্টনের কারণ
ভারতে জনসংখ্যার অসম বণ্টন লক্ষ করা যায়, অর্থাৎ জনসংখ্যা কোথাও বেশি, কোথাও কম। ভারতের বিভিন্ন অংশে এই অসম জনবণ্টনের অনেকগুলি কারণ আছে, যেমন—
- প্রাকৃতিক কারণ
- ভূপ্রকৃতি: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি বন্ধুর ও তরঙ্গায়িত বলে কৃষিকাজের অনুপযুক্ত। ওইসব অঞ্চল তাই জনবিরল। অপরদিকে, উত্তর ভারতের সমভূমি এবং উপকূলীয় সমভূমি কৃষি, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিল্পে উন্নত। তাই ওইসব অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি।
- জলবায়ু: উত্তর ও পূর্ব ভারতের সমভূমি অঞ্চলে অনুকূল জলবায়ুর জন্য জনঘনত্ব বেশি। অপরদিকে, রাজস্থানের মরু অঞ্চলে বা গুজরাতের কচ্ছ অঞ্চলে শুষ্ক এবং হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে শীতল জলবায়ুর জন্য জনঘনত্ব কম।
- নদনদী: উত্তর ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রক্ষ্মপুত্র এবং দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি নদী উপত্যকায় জনঘনত্ব বেশি। কারণ এইসব নদী থেকে জলসেচ, জলনিকাশ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহণ, পানীয় জল সরবরাহ, মৎস্য চাষ প্রভৃতি নানারকমের সুবিধা পাওয়া যায়।
- মৃত্তিকা: ভারতের যেসব স্থানের মৃত্তিকা উর্বর ও চাষযোগ্য সেখানে জনবসতির ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি। যেমন–দাক্ষিণাত্যের লাভাগঠিত অঞ্চলে উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকার জন্য এবং সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি নদী উপত্যকা এবং বদ্বীপ অঞ্চলে উর্বর পলিমাটির জন্য কৃষির ব্যাপক উন্নতি ঘটায় জনঘনত্ব বেশি।
- অরণ্য: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে এবং পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে গভীর অরণ্য থাকায় লোকবসতি কম।
- খনিজ সম্পদ: মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও দাক্ষিণাত্য এবং ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে খনিজ সম্পদ উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ঘন জনবসতি দেখা যায়।
- অপ্রাকৃতিক কারণ
- পরিবহণ ব্যবস্থা: উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা জনবসতিকে প্রভাবিত করে। যেমন—উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ প্রভৃতির মাধ্যমে যাতায়াতের সুবিধা আছে, তাই এখানে জনবসতিও ঘন। আবার, মধ্যপ্রদেশ বা ওডিশার অনেক জায়গা উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার অভাবে অত্যন্ত জনবিরল।
- শিল্প ও শিল্পাঞ্চল: শিল্পকেন্দ্র বা শিল্পাঞ্চলে বহু মানুষের জীবিকার সংস্থান হয়। তাই কলকাতা শিল্পাঞ্চল বা আসানসোল শিল্পাঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি।
- অন্যান্য কারণ: বিশেষ কতকগুলি অবস্থানগত অনুকূল পরিবেশের কারণে স্থানীয়ভাবে অধিক জনঘনত্ব দেখা যায়। যেমন— 1. পর্যটন কেন্দ্র (শ্রীনগর, দার্জিলিং); 2. যোগাযোগের কেন্দ্র (নাগপুর); 3. স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ভেলোর); 4. সীমান্তবর্তী শহর (শিলিগুড়ি); 5. ঐতিহাসিক স্থান (লখনউ, আগ্রা); 6. শিক্ষাকেন্দ্র (কোটা); 7. ধর্মস্থান (আজমের); 8. সামরিক শহর (গোয়ালিয়র) প্রভৃতি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও 9. রাজনৈতিক অস্থিরতা (দেশভাগজনিত কারণে শরণার্থীদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা প্রভৃতি) এবং 10. অস্থায়ী পরিব্রাজন (যেমন—যোশীমঠের জনঘনত্ব বছরে ছয় মাসের জন্য বেড়ে যায়) প্রভৃতি কারণেও কোনো কোনো অঞ্চলের জনঘনত্ব স্থায়ী বা সাময়িকভাবে বেড়ে যায় বা কমে যায়।
এইভাবে প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান কখনও এককভাবে, কখনও সম্মিলিতভাবে ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
2. জনঘনত্বের তারতম্য অনুযায়ী ভারতের রাজ্যগুলির বণ্টন আলোচনা করো।
অথবা, জনঘনত্ব অনুযায়ী রাজ্যগুলির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – জনঘনত্বের তারতম্য অনুযায়ী ভারতের রাজ্যগুলির বণ্টন
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল-সহ ভারতের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন কারণে জনঘনত্বের তারতম্য লক্ষ করা যায়। জনঘনত্বের ভিত্তিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলগুলিকে 5টি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
- অত্যধিক জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল : জনঘনত্ব: প্রতি বর্গকিমিতে ৪০০ জনের বেশি। অন্তর্গত রাজ্যসমূহ: বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, উত্তরপ্রদেশ। অন্তর্গত কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলসমূহ: দিল্লি, চণ্ডীগড়, পুদুচেরি (পণ্ডিচেরি), লাক্ষাদ্বীপ এবং দমন ও দিউ (পূর্বতন)। কারণ: শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার, প্রশাসনিক ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি।
- অধিক জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল : জনঘনত্ব: প্রতি বর্গকিমিতে 401-800 জন। অন্তর্গত রাজ্যসমূহ: পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড। অন্তর্গত কেন্দ্র- শাসিত অঞ্চলসমূহ: দাদরা ও নগর হাভেলি (পূর্বতন)। কারণ: কৃষিপ্রধান এই রাজ্যগুলিতে শিল্প, বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি।

- মধ্যম জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল : জনঘনত্ব: প্রতি বর্গকিমিতে 201-400 জন। অন্তর্গত রাজ্যসমূহ: ওডিশা, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ (অবিভক্ত), কর্ণাটক, ত্রিপুরা, অসম, গোয়া, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। কারণ: কৃষি ও শিল্পে উন্নতি, খনিজ সম্পদের উত্তোলন।
- স্বপ্ন জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল : জনঘনত্ব: প্রতি বর্গকিমিতে 101-200 জন। অন্তর্গত রাজ্যসমূহ: হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, ছত্তিশগড় এবং জম্মু ও কাশ্মীর। কারণ: বন্ধুর ও পর্বতময় দুর্গম ভূপ্রকৃতি, অনুর্বর মৃত্তিকা, প্রতিকূল ও শীতল জলবায়ু, কৃষিজমির অভাব।
- অতি স্বল্প জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল : জনঘনত্ব: প্রতি বর্গকিমিতে 100 জনের কম। অন্তর্গত রাজ্যসমূহ: সিকিম, মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশ। অন্তর্গত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। কারণ: জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতির বিরূপতার জন্য জীবনধারণের সমস্যা।
3. ভারতের জনবণ্টন অঞ্চলগুলির বিবরণ দাও।
উত্তর – ভারতের জনবণ্টন অঞ্চলসমূহ
প্রধানত ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, নদনদীর প্রবাহপথ, উর্বর মৃত্তিকা ও অনুকূল জলবায়ু ভারতের জনবণ্টনকে প্রভাবিত করে থাকে। জনবণ্টনের ভিত্তিতে ভারতকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়, এগুলি হল—
- উত্তর ভারতের নদীবিধৌত সমভূমি অঞ্চল : সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকা ভারতের সর্বাপেক্ষা জনবহুল অঞ্চল। সমতল ভূপ্রকৃতি, উর্বর পলিমাটি, নিত্যবহ নদী, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পরিমিত উয়তা এই অঞ্চলে কৃষি, শিল্প, নগরায়ণ ঘটাতে এবং ঘন জনবসতি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হয়। ভারতের প্রধান জনবহুল রাজ্যগুলিও এই অঞ্চলে অবস্থিত। যেমন—উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি।
- পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি: উর্বর মৃত্তিকা সমন্বিত এই সমভূমি অঞ্চলে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত বিকাশ ঘটেছে। তাই পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল ভারতের দ্বিতীয় প্রধান জনবহুল অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমের চেয়ে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির জনঘনত্ব অনেক বেশি। এই দুই উপকূল অঞ্চলে মুম্বাই, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, কোচি-সহ বহু বন্দর ও নগর গড়ে উঠেছে।
- দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল: প্রধানত খনিজ সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটির কোনো কোনো অংশ কৃষিতেও উন্নত (বিশেষত লাভা মালভূমি) হওয়ায় যথেষ্ট জনবহুল। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে তাই মধ্যম ধরনের জনঘনত্ব দেখা যায়।
- পার্বত্য, মরু ও অরণ্যময় অঞ্চল : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, পূর্বাচল, মেঘালয় মালভূমি, রাজস্থানের মরুভূমি, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও ওডিশার অরণ্যময় অঞ্চলের জনঘনত্ব যথেষ্ট কম। বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, অনুর্বর মৃত্তিকা, বৃষ্টির আধিক্য বা স্বল্পতা, উদ্ভিদ বিরলতা কিংবা অরণ্যময়তার ফলে এই অঞ্চলগুলি খুবই জনবিরল। জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
4. ভারতে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি লেখো।
উত্তর – ডারতে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনেকগুলি কারণ আছে, যেমন—
- উচ্চ জন্মহার : উন্নত বা উন্নতিশীল অনেক দেশের তুলনায় ভারতে জন্মহার বেশি। শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব, দারিদ্র্য, কুসংস্কার, ধর্মের প্রভাব, অল্প বয়সে বিবাহ প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে ভারতে জন্মহার বেশি।
- মৃত্যুহার কমে যাওয়া: ভারতে জন্মহার দীর্ঘদিন থেকেই বেশি। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ও আধুনিক চিকিৎসা পরিসেবার কল্যাণে মৃত্যুহার যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা, মহামারি ও অনাহারজনিত মৃত্যুর সংখ্যাও যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এইভাবে মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
- অর্থনৈতিক কারণ : (1) কষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা: ভারতের অর্ধাংশেরও বেশি কর্মী কৃষিকাজে নিযুক্ত আছে। কৃষিকাজে শ্রমিকের চাহিদা থাকায় জনসংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। (2) দারিদ্র্য : ভারতের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র এবং দরিদ্রতা নিবারণের উপায় হল সন্তানসংখ্যা বৃদ্ধি করা—এরূপ ভাবনাও জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
- সামাজিক কারণ : বিভিন্ন কারণে ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা এবং যৌথপরিবার প্রথা জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করেছে।
- বিপুল সংখ্যায় শরণার্থী আগমন: দেশবিভাগের পরবর্তী দশক- গুলিতে প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থী ভারতে চলে আসায় এখানকার সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জনসংখ্যা দ্রুতহারে বেড়েছে।
- জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি : বিগত কয়েক দশকে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্পব্যবস্থার বিকাশ প্রভৃতি ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কিছুটা সাহায্য করেছে। এর ফলে অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধি তথা জীবনহানি হ্রাস পেয়েছে। এর সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস অনেক ক্ষেত্রে জীবন ও ধনসম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
5. ভারতে নগর গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি আলোচনা করো।
অথবা, জীবনধারণের উপযোগী অনুকূল পরিবেশে বিভিন্ন সময়ে জনসমাবেশের ফলে কীভাবে নগর-শহর গড়ে ওঠে?
উত্তর – ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণসমূহ
জীবনধারণের উপযোগী নানা ধরনের অনুকূল পরিবেশে বিভিন্ন সময়ে জনসমাবেশের ফলে নগর গড়ে ওঠে। ভারতে নগর গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি হল—
- প্রশাসনিক কেন্দ্র : কোনো স্থান প্রশাসনিক কেন্দ্র হলে সেখানে বিভিন্ন স্বোমূলক ও শিল্প-বাণিজ্য-শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বড়ো বড়ো সড়ক, পাকা বাড়ি প্রভৃতি নির্মিত হয়। এইভাবে স্থানটি ধীরে ধীরে নগরে পরিণত হয়। উদাহরণ: চণ্ডীগড়, ভোপাল, গান্ধিনগর প্রভৃতি ভারতের নগরগুলি প্রশাসনিক কারণেই বিকাশ লাভ করেছে।
- খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল : বিভিন্ন শিল্পে খনিজ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই বহু খনিজ দ্রব্য উত্তোলনকেন্দ্র-সহ খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চল ধীরে ধীরে নগরে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ: আসানসোল, ধানবাদ প্রভৃতি।
- শিল্পকেন্দ্র: যেসব স্থানে শিল্প গড়ে উঠেছে, সেইসব স্থানে জীবিকানির্বাহের সুযোগ থাকায় জনসমাগম ঘটেছে। এর ফলে স্থানগুলি ক্রমেই নগর হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে। উদাহরণ: জামশেদপুর, দুর্গাপুর প্রভৃতি।
- বাণিজ্য কেন্দ্র : যেসব স্থানে পণ্যসামগ্রীর সমাবেশ হয় এবং ওই পণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে, সেইসব স্থানে নগর গড়ে উঠেছে। উদাহরণ: হরিয়ানার হিসার, উত্তরপ্রদেশের হাপুর প্রভৃতি।
- যোগাযোগ কেন্দ্র : ভারতের যেসব স্থান যোগাযোগের কেন্দ্র অর্থাৎ বিভিন্ন দিক থেকে রেলপথ, সড়কপথ, জলপথ এসে মিলিত হয়েছে, সেইসব স্থানে নগর গড়ে উঠেছে। উদাহরণ: শিলিগুড়ি, খড়গপুর প্রভৃতি।
- তীর্থস্থান : বড়ো বড়ো তীর্থস্থানে প্রচুর জনসমাগম ঘটে এবং এগুলি কালক্রমে নগরে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ: হরিদ্বার, বারাণসী, গয়া, মথুরা, বৃন্দাবন প্রভৃতি।
সবশেষে বলা যায়, নগর গড়ে ওঠার সময় উল্লিখিত কারণগুলির মধ্যে কোনো একটি প্রাধান্য বিস্তার করলেও পরবর্তী সময়ে অনেকগুলি কারণ সম্মিলিতভাবে ওই নগরের উন্নতিতে সাহায্য করে।
6. ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি লেখো।
উত্তর – ভারতে নগরায়ণের সমস্যাসমূহ
ভারতে দ্রুত বেড়ে চলা নগরায়ণের জন্য নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অন্তরায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলি হল—
- অপরিকল্পিত নগরায়ণ : চণ্ডীগড়ের মতো হাতেগোনা দু-একটি শহর বাদ দিয়ে ভারতের অধিকাংশ শহরই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তাই শহরগুলির যত্রতত্র বাসস্থান, সড়কপথ, অফিস, আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র, ধর্মস্থান প্রভৃতি লক্ষ করা যায়। এর ফলে বেশিরভাগ শহরেরই পরিবেশ ঘিঞ্জি প্রকৃতির, যা শহরগুলির সামগ্রিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে।

- মানুষের শহরমুখী প্রবণতা: শহর এবং গ্রামের উন্নয়নের পার্থক্যের জন্য ভারতে গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা খুব বেশি। গ্রামের তুলনায় শহর-নগরে উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা, কর্মসংস্থান ও উন্নত পরিসেবার সুযোগ থাকার কারণে গ্রামের বহু মানুষই এখন শহরমুখী। কিন্তু এইসব মানুষদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং অদক্ষ বলে শহরগুলিতে বেকারত্ব, বাসস্থানের সমস্যা, বস্তির উদ্ভব, নানাবিধ রোগের প্রকোপ প্রভৃতি সমস্যা খুবই বেশি।
- পরিকাঠামোর অভাব: উন্নতমানের বাসস্থান, প্রশস্ত রাস্তা, উন্নতমানের শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ, নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ, জলনিকাশি ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে শহর-নগরের পরিকাঠামো। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ শহরেরই দুর্বল পরিকাঠামোর ওপর ক্রমাগত জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে বাসস্থান, পরিবহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জলনিকাশির অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন—
- বাসস্থানের সমস্যা: ভারতের অধিকাংশ শহরে বাসস্থানের সমস্যা প্রকট। বাসস্থানের অভাবে বহু মানুষ রেললাইনের পাশে, রাস্তার ধারে, খালপাড়ে, অত্যন্ত দূষিত বিপদসংকুল পরিবেশে বসবাস করে। প্রায় প্রতিটি শহরেই অগণিত মানুষ বস্তিতে, ঝুপড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। মুম্বাই, কলকাতা প্রভৃতি শহরে বাসস্থানের সমস্যা খুবই বেশি।
- পরিবহণের সমস্যা: শহর-নগরে রাস্তায় যানবাহন বেশি। অথচ অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য রাস্তাগুলি সংকীর্ণ। এর সাথে রাস্তা ও ফুটপাথ বেদখল হওয়ার কারণে যানবাহনের গতি অত্যন্ত মন্থর বা যানজট একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
- স্বাস্থ্যের সমস্যা: শহর ও নগরে শিল্পকারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায়। আবর্জনা, জলাভূমি, নর্দমা থেকে নানা পতঙ্গবাহিত রোগ, বস্তিতে জলবাহিত রোগ, পুষ্টি সমস্যা শহরের মানুষকে ভোগায়। সেকারণে ভারতের নগরগুলি পৃথিবীর অন্যতম দূষিত নগরে পরিণত হয়েছে।
- শিক্ষার সমস্যা: শহরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত। কিন্তু দরিদ্র বস্তিবাসীর পক্ষে শিক্ষার সব সুযোগসুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্যতা লক্ষ
- বিদ্যুৎ সমস্যা: অপরিকল্পিত নগরায়ণে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি করে। এতে শিক্ষা, বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।
- জলনিকাশির সমস্যা: বেশিরভাগ শহরে জলনিকাশি ব্যবস্থা অনুন্নত। এ ছাড়া, জলনিকাশি ড্রেনগুলিতে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করার জন্য ওই দুর্বল নিকাশি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার মুখে। একটু বেশি বৃষ্টি হলে শহর জলপ্লাবিত হয়। ড্রেনে জমে থাকা নোংরা জল থেকে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।
7. পশ্চিমবঙ্গে জনবসতির ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি কেন?
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গে জনবসতির ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি হওয়ার কারণ
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য। 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই রাজ্যে প্রতি বর্গকিলোমিটারে 1029 জন লোক বসবাস করে, এর কারণগুলি হল—
- সমতল ভূপ্রকৃতি: পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিম্ন গঙ্গা সমভূমির অন্তর্গত বলে কৃষিকাজ, পরিবহণ ব্যবস্থা এবং শিল্পে যথেষ্ট উন্নত।
- অনুকূল জলবায়ু : রাজ্যটি ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত বলে উয়তা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই মধ্যম প্রকৃতির। এইরূপ জলবায়ু কৃষিকাজ ও অধিবাসীদের জীবনধারণের পক্ষে অনুকূল।
- উর্বর মৃত্তিকা: পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ এলাকা গঙ্গা নদীর পলি দ্বারা গঠিত বলে এখানকার মৃত্তিকা খুব উর্বর প্রকৃতির। এই মৃত্তিকায় কৃষিকাজ খুব ভালো হয়।
- উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : এই রাজ্যের অধিকাংশ এলাকার ভূমি সমতল বলে এখানে সড়কপথ ও রেলপথে পরিবহণ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটেছে।
- বন্দরের অবস্থান: কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের কল্যাণে বাণিজ্যিক তথা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ সমৃদ্ধি ঘটেছে।
- খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ : পশ্চিমবঙ্গ খনিজ সম্পদে (রানিগঞ্জের কয়লা, বাঁকুড়ার চিনামাটি, ঝালদার চুনাপাথর, তামা, সিসা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি) মোটামুটিভাবে একটি সমৃদ্ধ রাজ্য।
- শক্তিসম্পদের প্রাচুর্য : পশ্চিমবঙ্গ শক্তিসম্পদে বেশ সমৃদ্ধ। এখানে বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (দুর্গাপুর, ব্যান্ডেল, কোলাঘাট প্রভৃতি) এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র (জলঢাকা, অযোধ্যা পাহাড় প্রভৃতি) আছে। বর্তমানে সুন্দরবনে সৌরশক্তির মাধ্যমে স্বল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
- শিল্পস্থাপনের সুবিধা : সমতল ভূপ্রকৃতি, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা, খনিজ ও শক্তি সম্পদের প্রাচুর্য এখানে শিল্প স্থাপনে বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছে।
- নিয়মিত অনুপ্রবেশ: পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ছাড়াও বিগত কয়েক দশকে প্রতিবেশী রাজ্য ও দেশগুলি থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই রাজ্যে স্থায়ীভাবে চলে আসায় এখানকার জনবসতির ঘনত্ব খুব বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. হিমাচল প্রদেশ কেন বিরল জনবসতিযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত?
উত্তর – হিমাচল প্রদেশ বিরল জনবসতিযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ার কারণ: ভারতের অন্যতম বিরল জনবসতি অঞ্চলের অন্তর্গত একটি রাজ্য হল হিমাচল প্রদেশ। 2011 সালের জনগণনা অনুসারে সমগ্র রাজ্যটির লোকসংখ্যা মাত্র 68 লক্ষ 56 হাজার 509 জন এবং লোকসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র 123 জন। রাজ্যটিতে এরূপ বিরল জনবসতির কারণগুলি হল—
- বন্ধুর ও পর্বতময় ভূপ্রকৃতি: এখানকার অধিকাংশ এলাকা বন্ধুর ও পর্বতময়, কৃষিযোগ্য ভূমি খুবই কম। ফলে কৃষিকাজে বা কৃষিভিত্তিক জীবিকানির্বাহে বিশেষ অসুবিধা হয়।
- অনুর্বর মৃত্তিকা: ঢালু ভূমিরূপের জন্য বেশিরভাগ জায়গায় মৃত্তিকা অগভীর এবং অনুর্বর। ফলে এই মৃত্তিকায় ফসল ভালো হয় না।
- শীতল জলবায়ু: এখানকার জলবায়ু বিশেষত শীতকালীন আবহাওয়া জীবনধারণের ক্ষেত্রে খুবই অনুপযুক্ত।
- শিল্পের কাঁচামাল ও শক্তিসম্পদের অভাব: খনিজ কাঁচামাল ও শক্তিসম্পদের অভাবে এখানে শিল্পের বিকাশ সম্ভব হয়নি।
- অনুন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: অনুন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য রাজ্যটি বিরল জনবসতি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
2. ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি: ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রাক্-স্বাধীনতা যুগে যথেষ্ট কম ছিল, কিন্তু স্বাধীনোত্তর যুগে জনসংখ্যা অতি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়। ভারতের মোট জনসংখ্যা 1901-1951 সালের মধ্যে 23.84 কোটি থেকে বেড়ে হয় 36.11 কোটি। অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধে জনসংখ্যা বাড়ে মাত্র 12.27 কোটি। এই সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও ছিল খুব কম, দশক পিছু সর্বনিম্ন – 0.31 শতাংশ (1911-1921) থেকে সর্বোচ্চ 14.22 শতাংশ (1931-1941)। এরপর ভারতের মোট জনসংখ্যা 1951-2001 সালের মধ্যে 36.11 কোটি থেকে বেড়ে 102.87 কোটিতে পৌঁছোয়। অর্থাৎ, পরের অর্ধে জনসংখ্যা বাড়ার পরিমাণ ছিল অবিশ্বাস্যরকম বেশি, প্রায় 66.76 কোটি। এই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও ছিল খুবই বেশি। দশক পিছু সর্বনিম্ন 21.54 শতাংশ (1991-2001) থেকে সর্বোচ্চ 24.56 শতাংশ (1971-1981)। 2001-2011 সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা 18.15 কোটি বেড়েছে। এর ফলে ভারতের মোট জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে 121.02 কোটি। এই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল 17.64 শতাংশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, 2001 থেকে 2011 সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা যতটা বেড়েছে, তা পাকিস্তানের (বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বাধিক জনবহুল দেশ) মোট জনসংখ্যার চেয়ে সামান্য কম (18.48 কোটি)। এ থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়, ভারতের জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে।

3. ভারতে অতি ঘনবসতির কারণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – ভারতে অতি ঘনবসতির কারণসমূহ: ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ (চিন প্রথম)। 2011 সালের জনগণনা অনুসারে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় 121 কোটি 2 লক্ষ (জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 382 জন)। ভারতে অতি ঘনবসতির কারণগুলি হল—
- সমতল ভূপ্রকৃতি: উত্তর ভারতের সুবিশাল সমভূমি এবং উপকূলীয় সমভূমি কৃষি, পরিবহণ ব্যবস্থা এবং শিল্পে উন্নত। তাই ওইসব অঞ্চলে অধিক ঘনবসতি দেখা যায়।
- অনুকূল জলবায়ু: ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত বলে উয়তা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই মধ্যম প্রকৃতির। এই ধরনের জলবায়ু কৃষি উৎপাদন ও শিল্পস্থাপনের পক্ষে আদর্শ। তাই এই অঞ্চলগুলিতে জনবসতির আধিক্য দেখা যায়।
- উর্বর মৃত্তিকা: ভারতের সমভূমি অঞ্চলগুলি পলিগঠিত বলে মৃত্তিকা খুবই উর্বর প্রকৃতির। তাই কৃষিসমৃদ্ধ এই অঞ্চলগুলিতে খুব ঘন জনবসতি দেখা যায়।
- জলের প্রাচুর্য: ভারত নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদনদী একেবারে জালের মতো ভারতের বিভিন্ন অংশের ওপর দিয়ে বিস্তার লাভ করেছে। ওইসব নদী থেকে জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্যচাষ, জলপথ পরিবহণ প্রভৃতি নানাবিধ সুবিধা পাওয়া যায়। তাই নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ঘন জনবসতি লক্ষ করা যায়।
- অর্থনৈতিক কারণ: খনিজ সম্পদে পূর্ণ অঞ্চলগুলিতে এবং শিল্পকেন্দ্র বা শিল্পাঞ্চলে জীবিকার্জনের সুযোগসুবিধা থাকায় ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে।
4. 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনবণ্টনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর – 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনবণ্টনের প্রধান বৈশিষ্ট্য: 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনবণ্টনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ (জনসংখ্যা প্রায় 19 কোটি 96 লক্ষ)। (2) সবচেয়ে জনবিরল রাজ্য সিকিম (জনসংখ্যা প্রায় 6 লক্ষ ৪ হাজার)। (3) জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির জনসংখ্যা প্রায় 1 কোটি 68 লক্ষ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরির জনসংখ্যা প্রায় 12 লক্ষ 44 হাজার। (4) পশ্চিমবঙ্গ ভারতের চতুর্থ জনবহুল রাজ্য (জনসংখ্যা প্রায় 9 কোটি 13 লক্ষ)। (5) ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় 30 শতাংশ বাস করে গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে, যা ভারতের মোট ভৌগোলিক আয়তনের মাত্র এক-নবমাংশ। (6) ভারতের রাজস্থানের মরু অঞ্চল ও হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল সর্বাপেক্ষা জনবিরল। (7) ভারতে মোট জনসংখ্যার প্রায় 31.2 শতাংশ শহরে এবং বাকি 68.8 শতাংশ গ্রামে (2011) বাস করে।
5. 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য: 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) প্রতি বর্গকিমিতে ভারতের গড় জনঘনত্ব 382 জন। (2) রাজ্যগুলির মধ্যে বিহারের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি–1102 জন প্রতি বর্গকিমিতে। (3) রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম জনঘনত্ব দেখা যায় অরুণাচল প্রদেশে—17 জন প্রতি বর্গকিমিতে। (4) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্ব দেখা যায় দিল্লিতে (জাতীয় রাজধানী অঞ্চল)—প্রতি বর্গকিমিতে 11297 জন। অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে চণ্ডীগড়ের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 9252 জন এবং সবচেয়ে কম জনঘনত্ব দেখা যায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে—প্রতি বর্গকিমিতে 46 জন।
6. অরুণাচল প্রদেশের জনঘনত্ব কম কেন?
উত্তর – অরুণাচল প্রদেশের জনঘনত্ব কম হওয়ার কারণ: ভারতের সব রাজ্য এবং কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে অরুণাচল প্রদেশের জনবসতির ঘনত্ব সবথেকে কম। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে 17 জন লোক বসবাস করে। এই রাজ্যটির জনঘনত্ব এরূপ কম হওয়ার পিছনে বেশ কিছু প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক কারণ রয়েছে, যেমন—
- বন্ধুর ও পর্বতময় ভূপ্রকৃতি: এখানকার বেশিরভাগ ভূমিই বন্ধুর এবং পর্বতময়। ফলে যে-কোনো ধরনের অর্থনৈতিক কাজকর্ম গড়ে তুলতে অসুবিধা হয়।
- অনুর্বর মৃত্তিকা: পর্বতময় ঢালু ভূপ্রকৃতির জন্য বেশিরভাগ জায়গায় মৃত্তিকা অগভীর এবং অনুর্বর। ফলে কৃষিকাজ ভালো হয় না।
- প্রতিকূল জলবায়ু: এখানকার জলবায়ু শীতল এবং আর্দ্র প্রকৃতির। এই আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে জলবায়ু জীবনধারণের জন্য অনুপযুক্ত।
7. জনঘনত্ব কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: ভূপৃষ্ঠের কোনো অঞ্চলের মানুষের বণ্টনগত তারতম্যের সূচক হল জনঘনত্ব। কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যাকে ওই অঞ্চলের মোট জমির আয়তন দিয়ে ভাগ করলে যে অনুপাত পাওয়া যায়, তাকে জনঘনত্ব (density of population) বলে ।

বৈশিষ্ট্য: (1) জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে প্রকাশ করা হয়। (2) এর সাহায্যে জমির ওপর জনসংখ্যার চাপ বোঝা গেলেও অধিবাসীদের জীবনযাত্রার গুণগতমান বোঝা যায় না।
উদাহরণ : 2011 সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল 121.02 কোটি। ভারতের আয়তন 31.77 লক্ষ বর্গকিমি (পাকিস্তান ও চিন অধিকৃত ভূখণ্ড বাদে)। সুতরাং, ভারতের জনঘনত্ব = 121.02কোটি/ 32.87 লক্ষ = 382 জন/বর্গকিমি।
8. ‘হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল জনবিরল’—ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল জনবিরল হওয়ার ভৌগোলিক কারণ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিরল এবং অতিবিরল জনবসতি অঞ্চলের অন্তর্গত। এখানকার গড় জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 100 জনেরও কম। এই অঞ্চলটি জনবিরল হওয়ার কারণগুলি হল—
- উঁচুনীচু পর্বতময় ভূপ্রকৃতি: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বেশিরভাগ স্থানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময় ও বন্ধুর। মানুষের পক্ষে এখানে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজকর্ম গড়ে তোলা অসুবিধাজনক।
- অনুর্বর মৃত্তিকা: এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মৃত্তিকা অনুর্বর এবং অগভীর। তাই উন্নতমানের কৃষিকাজের পক্ষে উপযুক্ত নয়।
- শীতল জলবায়ু : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের শীতকালীন জলবায়ু জীবনধারণের পক্ষে সুবিধাজনক নয়।
9. গাঙ্গেয় সমভূমি অত্যন্ত জনবহুল কেন?
উত্তর – গাঙ্গেয় সমভূমি অত্যন্ত জনবহুল হওয়ার কারণ: গাঙ্গেয় সমভূমি ভারতের সবথেকে জনবহুল অঞ্চল। এখানকার গড় জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 980 জনের বেশি। যেসব কারণগুলির জন্য অঞ্চলটি অত্যন্ত জনবহুল সেগুলি হল—
- সমতল ভূপ্রকৃতি: গাঙ্গেয় সমভূমিটিতে ভূমির বন্ধুরতা একেবারেই নেই। এখানকার সমতল ভূপ্রকৃতি কৃষিকাজ, পরিবহণ ও শিল্পস্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে।
- অনুকূল জলবায়ু: এই অঞ্চলটির উন্নতা ও বৃষ্টিপাত মধ্যম প্রকৃতির। এইরূপ জলবায়ু কৃষিকাজ ও অধিবাসীদের জীবনধারণের পক্ষে অনুকূল।
- উর্বর মৃত্তিকা: এখানকার মৃত্তিকা খুব উর্বর। এই মৃত্তিকায় ধান, গম, পাট, আখ, তৈলবীজ-সহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন খুব বেশি হয়।
10. ‘সামাজিক অবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিরতা জনঘনত্বকে প্রভাবিত করে’ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – সামাজিক অবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিরতা জনঘনত্বকে প্রভাবিত করে: কোনো অঞ্চলের জনঘনত্ব যেসব বিষয়গুলি দ্বারা প্রভাবিত হয় সেগুলির মধ্যে সামাজিক অবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিরতা অন্যতম।
- সামাজিক অবস্থা: সামাজিক অবস্থা দ্বারা জনঘনত্ব প্রভাবিত হয়। সামাজিক অবস্থার প্রভাবগুলি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক এই দুই দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। ধর্মীয় কারণে বহিরাগতদের আগমনের জন্য জনঘনত্ব বেড়ে যায়। আবার সাংস্কৃতিক কারণে, যেমন— শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কারিগরি বিদ্যার উন্নতির সাথে নতুন সম্পদ সৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। তার ফলে জনঘনত্বও বৃদ্ধি পায়।
- রাজনৈতিক স্থিরতা: 1947 সালে ভারত ভাগের পর পূর্ববঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, ভারতবর্ষে তখন তুলনামূলকভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা কম ছিল। তাই পূর্ববঙ্গ থেকে বহু মানুষ সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় প্রবেশ করে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার জনঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যে অঞ্চল থেকে মানুষের আগমন ঘটে সেখানে জনঘনত্ব হ্রাস পায়। যেসব অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিরতা লক্ষ করা যায়, সেখানে মানুষ বসবাসের জন্য চলে আসে। ফলে জনঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
11. স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতে মৃত্যুহার দ্রুত হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো।
উত্তর – স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতে মৃত্যহার দ্রুত হ্রাস পাওয়ার কারণ: স্বাধীনতার আগে ভারতে মৃত্যুহার ছিল প্রতি হাজারে 30 জনের কাছাকাছি বা তার বেশি। 2011 সালে তা কমে হয় 7 জন। ভারতে মৃত্যুহার দ্রুত হ্রাস পাওয়ার পিছনে কিছু কারণ বর্তমান, যেমন—
- উন্নত চিকিৎসার সুবিধা: চিকিৎসার সুবিধা এবং আর্থিক সংগতির ওপর মৃত্যুহার অনেকাংশে নির্ভর করে। স্বাধীনতার পর ভারতে চিকিৎসাব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। মাথাপিছু চিকিৎসকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই চিকিৎসা পরিসেবার মানও পূর্বাপেক্ষা অনেক উন্নত হয়েছে।
- জনস্বাস্থ্যের উন্নতি: জনস্বাস্থ্যের উন্নতি, যেমন—পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত, পয়ঃপ্রণালীর উন্নতি ইত্যাদি কারণে স্বাধীনোত্তর ভারতে মৃত্যুহার দ্রুত হ্রাস পায়।
- উন্নত জীবনযাত্রার মান: মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবনযাত্রার মানের অনেক উন্নতি ঘটেছে। ফলে ভারতীয়দের পক্ষে বেশি করে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
12. ভারতে জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্যের কারণ হিসেবে নদনদীর প্রভাব লেখো।
উত্তর – ভারতে জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্যের কারণ হিসেবে নদনদীর প্রভাব: মানুষের প্রাথমিক প্রয়োজন হল জল । পৃথিবীর জনবসতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ বসতি পানীয় জলকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। কৃষিকাজে জলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। প্রয়োজনমতো এবং সময়মতো জল পাওয়া খুব দরকার। এই কারণে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়। ভারতের জনঘনত্বের বণ্টন লক্ষ করলে দেখা যায় উত্তর ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র এবং দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি নদী উপত্যকায় জনঘনত্ব বেশি। যেসব কারণে ভারতে নদী উপত্যকা অঞ্চলে জনঘনত্ব বেশি দেখা যায়, সেগুলি হল—
- জলসেচ: নদী থেকে কৃষির জন্য জলসেচের সুবিধা পাওয়া যায়।
- পরিবহণ: নদী পরিবহণে সাহায্য করে।
- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: নদী থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
- পানীয় জল: নদী থেকে পানীয় জল পাওয়া যায়।
- মৎস্য চাষ: নদীকে কেন্দ্র করে মৎস্য চাষ করা হয়।
- জলনিকাশী: নদী জলনিকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম।
- কৃষিকাজ: নদীর দুই তীরবর্তী পলিগঠিত অঞ্চল কৃষিকাজের অন্যতম সহায়ক।
13. ভারতে অধিক জন্মহারের কারণ কী?
উত্তর – ভারতে অধিক জন্মহারের কারণ: ভারতে জন্মহার অধিক, অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত। 2011 সালের জনগণনা অনুসারে ভারতে জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে 21 জন। ভারতে অধিক জন্মহারের কারণ হল—
- স্বল্প শিক্ষার হার: এই দেশে এখনও 26% মানুষ শিক্ষার আলো পায়নি। যার ফলে জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে আশানুরূপ বা পরিকল্পনা মতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
- বাল্যবিবাহ: ছেলে বা মেয়েদের অল্প বয়সে বিবাহ হলে তাদের সন্তান ধারণক্ষমতার সময়সীমা অনেক বেশি হয়। ভারতে 18 বছর পূর্ণ হওয়ার অনেক আগেই বহু মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়।
- ধর্মীয় কারণ: ধর্মীয় কারণ একদিকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে নানাপ্রকার বিধিনিষেধ আরোপ করে, অন্যদিকে জন্মহার বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেয়।
- মেয়েদের সামাজিক মর্যাদা: ভারতের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের সামাজিক মর্যাদা কম। তাই মেয়েরাও অনেকসময় পরিবারের চাপে জন্ম নিয়ন্ত্রণে উৎসাহিত হয় না।
উল্লিখিত কারণগুলির জন্য ভারতে অধিক জন্মহার দেখা যায়।
14. ভারতকে কি জনাকীর্ণ দেশ বলা যায় ?
উত্তর – জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয় (চিন প্রথম)। 2011 সালের জনগণনা অনুসারে ভারতের জনসংখ্যা 121 কোটিরও বেশি। ভারতে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার 17.5 শতাংশ লোক, অর্থাৎ প্রতি 6 জন বিশ্ববাসীর মধ্যে 1 জন ভারতীয়। অথচ বিশ্বের মোট স্থলভাগের মাত্র 2.42 শতাংশ ভূমি ভারতের। এ থেকে বোঝা যায়, ভারতের জনসংখ্যা খুবই বেশি বা আমাদের দেশে জমির ওপর জনসংখ্যার চাপ অত্যধিক। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, যদিও চিনের জনসংখ্যা (2011 সালে) প্রায় 134 কোটি, অর্থাৎ ভারতের তুলনায় 13 কোটি বেশি কিন্তু আয়তনে চিন ভারতের প্রায় তিনগুণ। ভারতে যে কেবল মোট জনসংখ্যা বেশি তা নয়, ভারতের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও খুব বেশি (1.764%), যেখানে চিনের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মাত্র 0.54 শতাংশ। শুধু 2001 থেকে 2011–এই দশ বছরেই ভারতের জনসংখ্যা বেড়েছে 18 কোটিরও বেশি অর্থাৎ প্রতিবছর 1 কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এ থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ভারতে জমির ওপর জনসংখ্যার চাপ খুবই বেশি এবং ভারত প্রকৃতই জনাকীর্ণ দেশ।
15. ভারতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রধান সমস্যাগুলি কী কী ?
উত্তর – ভারতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রধান সমস্যা: ভারতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রধান সমস্যাগুলি হল—
- খাদ্যদ্রব্যের অধিক মূল্য: ভারতে যেভাবে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটছে সেভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে না। তাই ভারতে খাদ্যদ্রব্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য এদেশের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- বসবাসের সমস্যা: অধিক জনসংখ্যা এদেশে তীব্র আবাসন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য শহর-নগরে বসবাসের ব্যবস্থা করা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।
- বেকারত্ব: অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা যত বাড়ছে, দেশে ততই বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশে কর্মহীনতা একটি বিরাট সমস্যা।
- চিকিৎসার সমস্যা: জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভারতে সকলের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।
16. জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে ধারণযোগ্য উন্নয়নের সম্পর্ক কতখানি?
উত্তর – জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে ধারণাযোগ্য উন্নয়নের সম্পর্ক: ধারণযোগ্য উন্নয়ন হল সেই ধরনের উন্নয়ন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদের ভাণ্ডারকে অক্ষুণ্ন রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটায়। আর এই ধারণযোগ্য উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন দেশের সম্পদের জোগানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জনসংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত হারে বৃদ্ধি পেলে সম্পদের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হয়। তখন খনিজ, বনজ, জলজ, কৃষিজ, শিল্পজ প্রভৃতি সম্পদগুলির পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং পরিবেশদূষণ তথা পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদের ভাণ্ডার অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয় না, অর্থাৎ ধারণযোগ্য উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
1901 সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল প্রায় 24 কোটি। এর 100 বছর পরে 2001 সালে ওই জনসংখ্যা বেড়ে হয় প্রায় 103 কোটি অর্থাৎ 100 বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় 330%। 2011 সালের সর্বশেষ জনগণনা অনুসারে ভারতের জনসংখ্যা আরও বেড়ে হয়েছে প্রায় 121.02 কোটি। সুতরাং, এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে খাদ্য এবং অন্যান্য সম্পদের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে এবং পরিবেশের ওপর অভাবনীয় চাপ পড়বে। সেই চাহিদা মেটাতে দেশের অধিকাংশ সম্পদই নিঃশেষিত হবে। ফলে তখন এক চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। সেই অবস্থা যাতে না হয় তাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদের জোগান অক্ষুন্ন রাখা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অর্থাৎ ধারণযোগ্য উন্নয়ন বজায় রাখতে ভারতের জনসংখ্যাকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. আদমশুমারি কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: জনগণনা এবং জনগণনা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহের কাজকে আদমশুমারি বলে। যেমন—ভারতে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়। 1872 সালে ভারতে প্রথম জনগণনা করা হলেও 1881 সাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়। এই হিসাব অনুযায়ী ভারতে সর্বশেষ জনগণনা হয়েছে 2011 সালে। এরপরে আবার জনগণনা হবে 2021 সালে।
2. মোট জনসংখ্যার বিচারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – মোট জনসংখ্যার বিচারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্য: মোট জনসংখ্যা (2011)-র বিচারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্য হল— (1) উত্তরপ্রদেশ (19 কোটি 96 লক্ষ), (2) মহারাষ্ট্র (11 কোটি 24 লক্ষ), (3) বিহার (10 কোটি 38 লক্ষ) এবং (4) পশ্চিমবঙ্গ (9 কোটি 13 লক্ষ)।
3. জনঘনত্ব অনুসারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – জনঘনত্ব অনুসারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্য: জনঘনত্ব অনুসারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্য হল— (1) বিহার (প্রতি বর্গকিমিতে 1102 জন), (2) পশ্চিমবঙ্গ (প্রতি বর্গকিমিতে 1029 জন), (3) কেরল (প্রতি বর্গকিমিতে 859 জন) এবং (4) উত্তরপ্রদেশ (প্রতি বর্গকিমিতে 828 জন)।
4. ভারতের নিবিড় বসতিপূর্ণ রাজ্যগুলির নাম করো।
উত্তর – ভারতের নিবিড় বসতিপূর্ণ রাজ্য: ভারতে যেসব রাজ্যে জনবসতির ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪০০ জনের বেশি সেই রাজ্যগুলিকে নিবিড় বসতিপূর্ণ রাজ্য বলা হয়। ভারতে (1) বিহার (1102 জন), (2) পশ্চিমবঙ্গ (1029 জন), (3) কেরল (859 জন) এবং (4) উত্তরপ্রদেশ (828 জন) হল নিবিড় বসতিপূর্ণ রাজ্য।
5. জনবিস্ফোরণ কী?
উত্তর – ধারণা: সাধারণত যে-কোনো অঞ্চলে বা দেশে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যাও বাড়তে থাকে। কিন্তু জনসংখ্যার সেই বৃদ্ধি যখন অস্বাভাবিক দ্রুতহারে হয় এবং তার ফলে মোট জনসংখ্যা হঠাৎই খুব বেড়ে যায়, জনসংখ্যার সেই হঠাৎ বৃদ্ধিকে জনবিস্ফোরণ বলা হয়। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 2 শতাংশের বেশি হলে জনবিস্ফোরণ ঘটে। সংকট: ভারতে 1951 থেকে 1981 সালের মধ্যে বার্ষিক জনসংখ্যা 2.16 শতাংশ থেকে 2.47 শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটায়। জনবিস্ফোরণ হলে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবিকার সংস্থান প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়।
6. ভারতে জনবিস্ফোরণের কারণ কী?
উত্তর – ভারতে জনবিস্ফোরণের কারণ: ভারতে জনবিস্ফোরণের কারণগুলি হল— (1) ভারতীয় সমাজে দারিদ্র্যতা, শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, বাল্যবিবাহের কারণে অতিরিক্ত জন্মহার; (2) চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে স্বল্প বা ক্রমহ্রাসমান মৃত্যুহার; (3) প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীদের আগমন; (4) খাদ্য ও শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি (এর ফলে যেমন রোগ-ব্যাধি হ্রাস পেয়েছে, তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে)। এইসব কারণে বিগত কয়েকটি দশকে ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটেছে, যা পরোক্ষভাবে ভারতে জনবিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
7. সাম্প্রতিক আদমশুমারি অনুসারে ভারতের কোন্ রাজ্যের জনঘনত্বসবচেয়ে কম এবং কেন কম?
উত্তর – সাম্প্রতিক আদমশুমারি অনুসারে ভারতের সর্বনিম্ন জনঘনত্বযুক্ত রাজ্য: ভারতের সব রাজ্যগুলির মধ্যে (জাতীয় রাজধানী অঞ্চল ও কেন্দ্র- শাসিত অঞ্চল বাদে) মধ্যে অরুণাচল প্রদেশের জনঘনত্ব সবচেয়ে কম। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে মাত্র 17 জন লোক বসবাস করে।
কম জনঘনত্বের কারণ : দুর্গম ভূপ্রকৃতি, প্রতিকূল জলবায়ু, গভীর অরণ্য, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি কারণে এই রাজ্যে জনঘনত্ব সবচেয়ে কম।
8. কত বছর অন্তর ভারতে জনগণনা হয় এবং 2011-এর আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্ব কত?
উত্তর – ভারতে জনগণনার সময়কালগত ব্যবধান : ভারতে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়।
ভারতের জনঘনত্ব: 2011-এর আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 382 জন।
9. জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – ধারণা: জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলতে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার বৃদ্ধি অর্থাৎ ধনাত্মক পরিবর্তনকে বোঝায়। যেমন— 2001 সালে ভারতের জনসংখ্যা থেকে 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয়েছে।
10. ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: ইংরেজি ‘Sustainable Development’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন। পরিবেশবিদ ইভা বালফোর (Eva Balfour) প্রথম এই Sustainable Development শব্দটি ব্যবহার করেন। যে উন্নয়ন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষের সার্বিক উন্নতি সুনিশ্চিত করে, সেটিই হল ধারণযোগ্য উন্নয়ন। ব্লুটল্যান্ড কমিশনের মতে—“যে উন্নয়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, সম্পদের ভাণ্ডারকে অক্ষত রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটায়, তাকেই বলে ধারণযোগ্য উন্নয়ন।” তবে এই ধরনের উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন দেশের সম্পদের জোগানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জনসংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত হারে বৃদ্ধি পেলে দেশে খনিজ, বনজ, জলজ, কৃষিজ, শিল্পজ প্রভৃতি সম্পদগুলি ব্যাপকভাবে বিনষ্ট হবে এবং পরিবেশদূষণ তথা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। ফলে ধারণযোগ্য উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
11. প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে কীভাবে শহর গড়ে ওঠে।
উত্তর – প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে শহর গড়ে ওঠার পদ্ধতি: কোনো জায়গায় প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য সরকারি অফিস, ডাকঘর, থানা, আদালত, ব্যাংক প্রভৃতি গড়ে ওঠে এবং তার ফলে সেখানে মানুষের সমাগম হয়। ধীরে ধীরে সেই স্থানটি শহর ও পরে নগরে পরিণত হয়। উদাহরণ: দিল্লি, কলকাতা এমনভাবেই গড়ে ওঠা প্রশাসনিক শহর।
12. যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে কীভাবে শহর গড়ে ওঠে?
উত্তর – যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে শহর গড়ে ওঠার পদ্ধতি: যেখানেসড়ক, রেল বা অন্যান্য পরিবহণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো, সেখানে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শহর গড়ে ওঠে। উদাহরণ: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের যে-কোনো রাজ্যে, এমনকি নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশেও যাওয়া যায় বলে শিলিগুড়ি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে উঠেছে।
13. শিল্পকেন্দ্রকে ঘিরে কীভাবে শহর গড়ে ওঠে?
উত্তর – শিল্পকেন্দ্রকে ঘিরে শহর গড়ে ওঠার পদ্ধতি: শিল্পের প্রসার ঘটলে জীবিকার জন্য সেখানে বহু মানুষের সমাগম হয়। ধীরে ধীরে ওই শিল্পকেন্দ্রের সংলগ্ন অঞ্চল শহরে পরিণত হয়। উদাহরণ: জামশেদপুর, দুর্গাপুর, আমেদাবাদ।
14. নগরায়ণ কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : কোনো বসতি এলাকা যখন গ্রাম্য অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে শহর বা নগরে পরিণত হয়, পরিবর্তনের সেই প্রক্রিয়াকে বলে নগরায়ণ। অর্থাৎ কোনো একটি স্থানে শহর বা নগর সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে নগরায়ণ বলে। বৈশিষ্ট্য: নগরায়ণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল— (1) নগরায়ণ জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায় এবং (2) অকৃষিকাজে যুক্ত অধিবাসীদের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে।
15. ভারতের নগরায়ণের দুটি সমস্যা উল্লেখ করো।
উত্তর – ভারতের নগরায়ণের সমস্যা: ভারতের নগরায়ণের দুটি সমস্যা হল— (1) স্বাস্থ্যের সমস্যা: শহরে শিল্পকারখানা, যানবাহন থেকে প্রচুর ধোঁয়া ও ধুলো নির্গত হওয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়। (2) পরিবহণের সমস্যা: শহরগুলিতে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, রাস্তা ও ফুটপাত বেদখল এসবের কারণে পরিবহণ খুব ধীর গতিতে চলে। যার ফলে যানজট নগরায়ণের অন্যতম সমস্যা হয়ে উঠেছে।
16. শহর বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : ভারতের জনগণনা বিভাগ শহরের যে সংজ্ঞা নির্ণয় করেছেন, সেটি হল— (1) যে বসতির মোট জনসংখ্যা 5000 জন বা তার বেশি, (2) জনবসতির ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ন্যূনতম 400 জন, (3) মোট কর্মীর 75 শতাংশ বা তার বেশি অকৃষিকাজে (non-agricultural activities) নিযুক্ত এবং (4) সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাজকর্মের জন্য বসতিটি কোনো মিউনিসিপ্যালিটি অথবা কর্পোরেশন অথবা নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি (প্রজ্ঞাপিত অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) অথবা ক্যানটনমেন্ট (সেনানিবাস এলাকা)-এর অন্তর্গত সেই বসতিকে শহর বলা হয়।
17. জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিশ্চল অবস্থা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: যখন কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যা হ্রাস বা বৃদ্ধি না পেয়ে স্থির অবস্থায় থাকে, তখন সেই পর্যায়কে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিশ্চল অবস্থা বা স্থির জনসংখ্যা বলে। এই অবস্থা তখনই ঘটে যখন মোট জন্মহার + অভিবাসন = মোট মৃত্যুহার + পরিব্রাজন, অর্থাৎ উভয়ই সমান হয়, ফলে জনসংখ্যা বাড়েও না বা কমেও না। উদাহরণ: নিশ্চল জনসংখ্যার বৃদ্ধির অবস্থায় রয়েছে এমন দুটি দেশ হল সুইডেন ও সুইটজারল্যান্ড।
18. নগর (City) বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংজ্ঞা: ভারতে যেসব শহরের লোকসংখ্যা এক লক্ষ বা তার বেশি সেই শহরগুলিকে প্রথম শ্রেণির শহর বা নগর বলে। উদাহরণ: শিলিগুড়ি, কটক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য নগর।
19. মহানগর (Metropolis) এবং মেগাসিটি (Mega City) কাকে বলে?
উত্তর – মহানগর : Metropolis বা মেট্রোপলিস কথাটির অর্থ ‘মূলনগরী’ বা ‘Mother City’ এবং এর বাংলা প্রতিশব্দ মহানগর। ভারতে যেসব শহর তথা নগরের লোকসংখ্যা 10 লক্ষ বা তার বেশি, সেসব শহর তথা নগরকে মহানগর বলে। উদাহরণ: আসানসোল, বিশাখাপত্তনম, পাটনা প্রভৃতি।
মেগাসিটি: যখন কোনো বড়ো মাপের নগর বা মহানগরের লোকসংখ্যা 50 লক্ষ বা তার বেশি হয়, তখন সেই নগর বা মহানগরকে মেগাসিটি বলে। অর্থাৎ মেগাসিটি হল সুবিস্তৃত এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা খুব বড়ো মাপের নগর।
উদাহরণ : বৃহত্তর মুম্বাই, বৃহত্তর কলকাতা প্রভৃতি।
বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. 2011 সালের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে—
(a) 1102 জন
(b) 382 জন
(c) 1029 জন
(d) 348 জন
উত্তর – (b) 382 জন
2. পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে—
(a) 1010 জন
(b) 1025 জন
(c) 1029 জন
(d) 1050 জন
উত্তর – (c) 1029 জন
3. জনবসতির ঘনত্ব অনুসারে কেরলের স্থান রাজ্যগুলির মধ্যে —
(a) প্রথম
(b) দ্বিতীয়
(c) তৃতীয়
(d) চতুর্থ
উত্তর – (c) তৃতীয়
4. আয়তনে রাজস্থান ভারতের বৃহত্তম রাজ্য হলেও মোট জনসংখ্যার বিচারে এটির স্থান—
(a) ষষ্ঠ
(b) সপ্তম
(c) অষ্টম
(d) নবম
উত্তর – (c) অষ্টম
5. ভারতে সর্বশেষ জনগণনা করা হয়েছে –
(a) 2005 সালে
(b) 2010 সালে
(c) 2011 সালে
(d) 2014 সালে
উত্তর – (c) 2011 সালে
6. ভারতে পরবর্তী জনগণনা করা হবে-
(a) 2010 সালে
(b) 2011 সালে
(c) 2021 সালে
(d) 2024 সালে
উত্তর – (c) 2021 সালে
7. জনসংখ্যার বিচারে ভারতের সর্ববৃহৎ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল—
(a) দিল্লি
(b) আন্দামান ও নিকোবর
(c) দাদরা ও নগর হাভেলি
(d) পুদুচেরি
উত্তর – (a) দিল্লি
৪. জনসংখ্যার ভৌগোলিক বণ্টনের সূচক হল –
(a) জন্মহার
(b) জনঘনত্ব
(c) মৃত্যুহার
(d) মোট জনসংখ্যা
উত্তর – (b) জনঘনত্ব
9. ভারতে বাস করে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় —
(a) 16%
(b) 17.5%
(c) 18%
(d) 20.5%
উত্তর – (b) 17.5%
10. ভারতের মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ জনসংখ্যা হল –
(a) 62.37 কোটি
(b) 60 কোটি
(c) 65 কোটি
(d) 70.25 কোটি
উত্তর – (a) 62.37 কোটি
11. সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ হল ভারতের —
(a) 1ম জনঘনত্ববিশিষ্ট রাজ্য
(b) 2য় জনঘনত্ববিশিষ্ট রাজ্য
(c) 3য় জনঘনত্ববিশিষ্ট রাজ্য
(d) 4র্থ জনঘনত্ববিশিষ্ট রাজ্য
উত্তর – (b) 2য় জনঘনত্ববিশিষ্ট রাজ্য
12. ভারতের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মহিলা জনসংখ্যা হল—
(a) 62.37 কোটি
(b) 60 কোটি
(c) 58.65 কোটি
(d) 55.55 কোটি
উত্তর – (c) 58.65 কোটি
13. ভারতে প্রতি হাজার পুরুষ জনসংখ্যায় মহিলার সংখ্যা –
(a) 984 জন
(b) 960 জন
(c) 950 জন
(d) 940 জন
উত্তর – (d) 940 জন
14. যে রাজ্যে প্রতি হাজার পুরুষে মহিলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—
(a) পশ্চিমবঙ্গ
(b) হরিয়ানা
(c) কেরল
(d) উত্তরপ্রদেশ
উত্তর – (c) কেরল
15. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে যেখানে প্রতি হাজার পুরুষে নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—
(a) দমন ও দিউতে
(b) দিল্লিতে
(c) লাক্ষাদ্বীপে
(d) পদুচেরিতে
উত্তর – (d) পদুচেরিতে
16. ভারতে অপ্রাপ্তবয়স্ক (0-14 বছর) জনসংখ্যা-
(a) 35.58 কোটি
(b) 40.22 কোটি
(c) 40.15 কোটি
(d) 41.25 কোটি
উত্তর – (a) 35.58 কোটি
17. ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা (15-64 বছর) —
(a) 6.20 কোটি
(b) 36.04 কোটি
(c) 78.78 কোটি
(d) 55.88 কোটি
উত্তর – (c) 78.78 কোটি
18. মহানগর (Metropolis)-এর লোকসংখ্যা হল—
(a) 1 লক্ষের বেশি
(b) 10 হাজার
(c) 5 হাজার
(d) 10 লক্ষের বেশি
উত্তর – (d) 10 লক্ষের বেশি
19. সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসারে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় —
(a) 121 কোটি
(b) 112 কোটি
(c) 211 কোটি
(d) 102 কোটি
উত্তর – (a) 121 কোটি
20. গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত শহর হল —
(a) লখনউ
(b) এলাহাবাদ
(c) কানপুর
(d) আগ্রা
উত্তর – (a) লখনউ
21. ভারতের মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ গৌণ ক্ষেত্রে নিযুক্ত —
(a) 34%
(b) 43%
(c) 24%
(d) 10%
উত্তর – (c) 24%
22. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে সাক্ষর জনসংখ্যার হার সর্বাপেক্ষা বেশি দেখা যায় —
(a) দাদরা ও নগর হাভেলিতে
(b) লাক্ষাদ্বীপে
(c) আন্দামান ও নিকোবরে
(d) দমন ও দিউতে
উত্তর – (b) লাক্ষাদ্বীপে
23. ভারতে প্রথম জনগণনা করা হয় –
(a) 1871 সালে
(b) 1872 সালে
(c) 1881 সালে
(d) 1891 সালে
উত্তর – (b) 1872 সালে
24. 2011 সালের জনগণনা অনুসারে ভারতে অবস্থিত মিলিয়ন সিটির সংখ্যা —
(a) 27
(b) 53
(c) 35
(d) 68
উত্তর – (b) 53
25. 2011 সালের জনসংখ্যার গণনা ভারতের—
(a) 10 তম জনগণনা
(b) 12 তম জনগণনা
(c) 14 তম জনগণনা
(d) 15 তম জনগণনা
উত্তর – (d) 15 তম জনগণনা
26. ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক ছিল—
(a) 1921-31 সালে
(b) 1941-51 সালে
(c) 1931-41 সালে
(d) 1911-21 সালে
উত্তর – (d) 1911-21 সালে
27. 2011 সালের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্যটি হল—
(a) কেরল
(b) বিহার
(c) পশ্চিমবঙ্গ
(d) উত্তরপ্রদেশ
উত্তর – (b) বিহার
28. ভারতের সর্বেক্ষণ বিভাগ বা ‘সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ স্থাপিত হয় –
(a) 1567 সালে
(b) 1767 সালে
(c) 1667 সালে
(d) 1867 সালে
উত্তর – (d) 1867 সালে
29. 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের মহানগরের সংখ্যা হল—
(a) 55টি
(b) 53টি
(c) 51টি
(d) 49টি
উত্তর – (a) 55টি
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. অরুণাচল প্রদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে মাত্র ………. জন লোক বসবাস করে।
উত্তর – 17
2. মোট জনসংখ্যা অনুসারে বর্তমান বিশ্বে ভারতের স্থান ……….।
উত্তর – দ্বিতীয়
3. ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি কারণ হল উচ্চ ……….।
উত্তর – জন্মহার
4. ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য ……….।
উত্তর – মহারাষ্ট্র
5. ভারতের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে জনঘনত্ব সবচেয়ে কম ………. প্রদেশে।
উত্তর – অরুণাচল
6. আদমশুমারি কথার অর্থ ……….।
উত্তর – জনগণনা
7. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ……….।
উত্তর – মেঘালয়ে
৪. ভারতের মোট জনসংখ্যার ………. শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা।
উত্তর – 29.04
9. ভারতের গড় সাক্ষরতার হার ……… শতাংশ।
উত্তর – 74.04
10. পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার ……….।
উত্তর – 77.08%
11. আগ্রা হল একটি ………. শহরের উদাহরণ।
উত্তর – ঐতিহাসিক
12. ………. -কে ভারতের ‘কমলালেবুর শহর’ বলে।
উত্তর – নাগপুর
13. ভারতীয়দের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ………. বছর।
উত্তর – 68.4
14. বর্তমান ভারতে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ………. জন।
উত্তর – 44
15. ……….. সাল নাগাদ ভারত পৃথিবীর সর্বাধিক জনবহুল দেশে পরিণত হবে।
উত্তর – 2050
16. বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা হল ……… উন্নয়ন।
উত্তর – ধারণযোগ্য
17. বুদ্ধগয়া, পুরী প্রভৃতি শহরগুলি ………. কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর – ধর্মীয়
18. 2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে মোট মহানগরের সংখ্যা ……….।
উত্তর – 53টি
19. ………. -কে গোলাপি শহর বলে।
উত্তর – জয়পুর
20. 2011 সালের জনগণনা অনুসারে ভারতে নারী-পুরুষের অনুপাত ……….।
উত্তর – 940
21. 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে ভারতে সাক্ষরতার হার ………. শতাংশ।
উত্তর – 74.04
22. ………… ভারতের সর্বাধিক জনবহুল শহর।
উত্তর – মুম্বাই
TOPIC – D ভারতের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- পরিবহণ : বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে যখন পণ্য এবং যাত্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাকে পরিবহণ বলে।
- যোগাযোগ : সংবাদ, তথ্য বা ভাবের আদানপ্রদানকে এককথায় যোগাযোগ বলে। যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তথ্যের আদানপ্রদান হয়। যেমন—টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইনটারনেট এসব যোগাযোগের মাধ্যম।
- সোনালি চতুর্ভুজ : ভারতের চারটি প্রধান শহর যথা কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই এবং চেন্নাইয়ের মধ্যে সংযুক্তকারী ছয় লেনবিশিষ্ট জাতীয় সড়কপথ সোনালি চতুর্ভুজ নামে পরিচিত।
- জলপথ : খাল, নদী, সমুদ্র, হ্রদের ওপর দিয়ে যে নির্দিষ্ট পথে জলযান চলাচল করে, সেই পথকে জলপথ বলে।
- স্থলপথ : স্থলভাগের ওপর দিয়ে নির্মিত পরিবহণ পথকে স্থলপথ বলে।
- আকাশপথ : বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যে পথে আকাশযান যাতায়াত করে, সেই পথকে আকাশপথ বলে।
- বন্দর সংযোজক পরিকল্পনা: যে পরিকল্পনার মাধ্যমে চার লেনবিশিষ্ট সড়কপথ ভারতের বিভিন্ন বন্দরগুলিকে সংযুক্ত করে, সেই পরিকল্পনাকে বন্দর সংযোজক পরিকল্পনা বলে।
- পুনঃরপ্তানি বন্দর: যে বন্দরের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য আমদানি, আমদানিকৃত পণ্য সঞ্চয় অথবা পুনরায় রপ্তানি করা হয়, সেই বন্দরকে পুনঃরপ্তানি বন্দর বলে।
- সহযোগী বা পরিপূরক বন্দর : যখন প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের নাব্যতা হ্রাস-সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন তা সমাধানের জন্য সেই বন্দরের সহায়ক হিসেবে আর একটি বন্দর গড়ে তোলা হয়, যার মাধ্যমে মূল বন্দরটির আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অনেকটা কাজই সম্পন্ন হয়, সেই বন্দরকে ওই গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটির সহযোগী বা পরিপূরক বন্দর বলে।
- ইনটারনেট: Interconnected Networks শব্দ দুটিকে সংক্ষেপে Internet বলে। সমগ্র বিশ্বের সমস্ত কম্পিউটারকে মডেমের মাধ্যমে টেলিফোন লাইনের সাহায্যে একসঙ্গে যুক্ত করে যে পারস্পরিক সংযোগ ব্যবস্থা বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয়, সেই সংযোগ ব্যবস্থাকে বলে ইনটারনেট।
- হীরক চতুৰ্ভুজ : কলকাতা-দিল্লি-মুম্বাই-চেন্নাই—
ভারতের এই চারটি মেগাসিটির মধ্যে অতি উচ্চগতিসম্পন্ন (প্রতি ঘণ্টায় 320 কিমির বেশি) ট্রেন চালানোর যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেই প্রকল্পকে হীরক চতুর্ভুজ বলা হয়। - পোতাশ্রয় : পোত বা জাহাজের আশ্রয়স্থলকে পোতাশ্রয় বলে। প্রকৃতপক্ষে, বন্দরের মধ্যে যেখান থেকে বা আশ্রয় নিয়ে জাহাজ নিরাপদে মালপত্র বোঝাই ও খালাস করে, সেই জায়গাটিকে বলে বন্দরের পোতাশ্রয়।
- পশ্চাদভূমি : একটি বন্দরের মাধ্যমে যে অঞ্চলের উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানি যে করা হয় এবং ওই বন্দরের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য অঞ্চলে বণ্টন করা হয়, সেই অঞ্চলকে ওই বন্দরের পশ্চাদভূমি বলে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. পরিবহণের গুরুত্ব কতখানি?
অথবা, ভারতে পরিবহণ ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর – পরিবহণের গুরুত্বসমূহ
মানবদেহে শিরা-উপশিরা-ধমনির যে গুরুত্ব, ভারতের মতো বিকাশশীল দেশে পরিবহণের গুরুত্ব তার থেকে কিছু কম নয়। পরিবহণের গুরুত্বগুলি হল—
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
- পণ্য আদানপ্রদান: একদেশের পণ্য অন্যদেশে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহণের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন— ভারতের চা, পাট উন্নত পরিবহণের মাধ্যমে বিশ্বের বাজারে পৌঁছে দেওয়া যায়, আবার বিদেশ থেকেও নানা পণ্য আমদানি করা যায়।
- শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ : শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির কারণেই সম্ভব হয়েছে। উন্নত পরিবহণের কারণেই কাঁচামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে শিল্পস্থাপন করা গেছে।
- বিপর্যয় মোকাবিলা : বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সেখানে দ্রুত উদ্ধারকার্যের জন্য পরিবহণের ভূমিকা খুব বেশি।
- কৃষির উন্নতি: পরিবহণের মাধ্যমে গ্রামের কৃষিজমি থেকে শহরের বাজারে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় বা কৃষিতে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় সার, রাসায়নিক বীজ শহর থেকে গ্রামে পাঠানো যায়।
- প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ: বনজ, প্রাণীজ, খনিজ দ্রব্য সংগ্রহ করার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি বাঞ্ছনীয়। আমাজন অববাহিকায় অথবা কানাডার উত্তরে পরিবহণ ব্যবস্থা খুব ভালো না হওয়ার জন্য ওই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংগ্রহ পিছিয়ে রয়েছে।
- পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা : সুপরিবহণ থাকার জন্যই বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর দামের মধ্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। এমনকি দ্রুত পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমেই বিভিন্ন দ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো হয় বলে সারাদেশে পণ্যসামগ্রীর মূল্য একই থাকে।
সামাজিক গুরুত্ব
- শহর ও নগরের সৃষ্টি: পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। এতে মূল শহর থেকে দূরে ছোটো বড়ো শহর ও নগরের সৃষ্টি হয়।
- শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নতি: পরিবহণের মাধ্যমেই মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে। এতে পারস্পরিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি ঘটে।
রাজনৈতিক গুরুত্ব
- প্রতিরক্ষা : দুর্গম অঞ্চলে সেনা, তাদের রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোতে পরিবহণের ভূমিকা অতুলনীয়। অর্থাৎ, দেশরক্ষার কাজে বা প্রতিরক্ষার কাজে পরিবহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- জাতীয় ঐক্য স্থাপন : পরিবহণ সারাদেশের নানা সংস্কৃতি, ভাষাভাষি, ধর্মের লোকেদের একসূত্রে বেঁধে রাখে। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণের মাধ্যমে, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াতের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্ম ও ভাষাভাষি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
2. ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথের গুরুত্ব লেখো।
অথবা, ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহণ ব্যবস্থায় রেলপথের অবদান কতখানি?
উত্তর – ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথের গুরুত্ব
রেলপথ ভারতের শ্রেষ্ঠ পরিবহণ মাধ্যম। ভারতের মতো দেশে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে—
- যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ: অগণিত যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণে রেলের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অতি দ্রুত এবং খুব কম খরচে এই প্রকার পরিবহণ করা সম্ভব। রেলই সর্বাধিক মাত্রায় দেশের অভ্যন্তরে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করে।
- কৃষির উন্নতি: ভারতে কৃষির উন্নতির জন্য রেলপথের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রেলপথে কৃষির প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, বীজ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি খুব কম খরচে দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়। আবার রেলপথের মাধ্যমেই উৎপাদিত ফসল খাদ্য ঘাটতি অঞ্চলে দ্রুত পাঠানো যায়।
- শিল্পের উন্নতি : ভারতে শিল্পের উন্নতিতে রেলের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। রেলপথে শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি যেমন কারখানাগুলিতে যায়, তেমনই রেলপথের মাধ্যমেই উৎপাদিত পণ্য সারাদেশের বিভিন্ন বাজারগুলিতে পাঠানো হয়। তাই রেলপথ ব্যবহারের সুবিধা থাকলে শিল্পের দ্রুত উন্নতি ঘটে।
- তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন। কয়লাখনি থেকে কয়লা রেলপথের মাধ্যমেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে সরবরাহ হয়। সুতরাং, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে রেলপথের ভূমিকা যথেষ্ট।
- বহির্বাণিঙ্গে উন্নতি: রেলপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদবৃত্ত পণ্য বন্দরগুলিতে পাঠানো হয়। রেলপথ ছাড়া এটা সম্ভব হত না। ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশগুলির কয়েকটিতে ভারতীয় রেল সরাসরি পণ্য রপ্তানি করে। এভাবেই রেল বহির্বাণিজ্যে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে।
3. যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ? আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ধারণা দাও।
উত্তর – যোগাযোগ ব্যবস্থা
লেখা, বলা অথবা অন্য কোনো মাধ্যমের সাহায্যে সংবাদ বা তথ্য এবং ভাবের আদানপ্রদানকে এককথায় যোগাযোগ বলে। যোগাযোগ হল একটি প্রণালী বা সিস্টেম। এর তিনটি অংশ রয়েছে- 1. কাজ বা কাজের শুরুতে একাধিক জোগান বা ইনপুট, 2. কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্ভরযোগ্য মাধ্যম বা থ্রপুট এবং 3. কাজের শেষে ফলপ্রাপ্তি বা আউটপুট।
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্তর্গত মাধ্যমগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
- ডাকব্যবস্থা: এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি। চিনে খ্রিস্টপূর্ব 900 সালে এই ব্যবস্থা প্রথম চালু হয়। ভারতে 1766 সালে ডাক ব্যবস্থার শুরু হয়। বর্তমানে স্পিড পোস্ট, স্যাটেলাইট পোস্ট, এক্সপ্রেস পোস্ট, বিজনেস ও মিডিয়া পোস্ট প্রভৃতি ডাকব্যবস্থা চালু হয়েছে।
- টেলিফোন : তারের সাহায্যে সংযুক্ত এই ব্যবস্থায় পৃথিবীর দুই প্রান্তের মানুষ কথপোকথনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। 1875 সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এই যন্ত্র আবিষ্কার করলেও ভারতের প্রথম টেলিফোন পরিসেবা কলকাতায় চালু হয় 1881-82 সালে।
- মোবাইল ফোন : উপগ্রহ ব্যবস্থার মাধ্যমে মোবাইল ফোন বা সেল ফোনের সাহায্যে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায়। মোবাইল ফোন থেকে SMS, MMS করা যায়। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মোবাইল ফোনের সাহায্যে যোগাযোগ করে।
- ইনটারনেট: পৃথিবীর সকল কম্পিউটারকে সংযুক্ত করার ব্যবস্থাকে ইনটারনেট বা আন্তর্জাল বলে। এই ব্যবস্থায় পৃথিবীর যে-কোনো বার্তা, চিঠিপত্র, তথ্য, সংবাদ খুব তাড়াতাড়ি পাঠানো যায় বা সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে ইনটারনেটকে ‘সব তথ্যের আধার’ বলে।
- ই-মেল: ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কম্পিউটার থেকে পাঠানো বার্তাকে ই-মেল বলে। ইনটারনেটের মাধ্যমে খুব কম খরচে যে-কোনো বার্তা খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবীর যে-কোনো জায়গায় পাঠানো যায়।
- অন্যান্য: টেলেক্স, টেলিফ্যাক্স, ভিডিয়ো কনফারেন্সিং, বেতার, সংবাদপত্র এবং আরও অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্যে মানুষ মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। মূলত মহাকাশে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি।
1. সড়কপথে পরিবহণের সুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর – সড়কপথে পরিবহণের সুবিধা : সড়কপথে পরিবহণের সুবিধাগুলি হল—
- দ্রুত পরিবহণ: সড়কপথে যে-কোনো হালকা পণ্য অতিদ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়।
- যে-কোনো সময় পরিবহণ: সড়কপথে যে-কোনো সময় পরিবহণ করা যায়। রেল বা বিমান পথের মতো কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সড়কপথ পরিবহণ ব্যবস্থা চলে না।
- প্রতিরক্ষা : দুর্গম স্থানে অথবা প্রতিরক্ষার কাজে সেনাবাহিনীর জন্য রসদ,অস্ত্রশস্ত্র, ওষুধ প্রভৃতি সড়কপথে পাঠানো সুবিধাজনক।
- সহজে পরিবহণ : সড়কপথের মাধ্যমে উৎপাদক অঞ্চল থেকে বাজারে সহজে দ্রব্য পরিবহণ করা যায়।
2. ভারতে সড়কপথে পরিবহণের অসুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর – ভারতে সড়কপথে পরিবহণের অসুবিধা : ভারতে সড়কপথে পরিবহণের অনেক সুবিধা থাকলেও নানা অসুবিধাও দেখা যায়, সেগুলি হল—
- নির্মাণ ব্যয় বেশি: সড়কপথ নির্মাণ যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং সময়ও বেশি লাগে। তাই দেশের অর্থনীতি উন্নত না হলে সড়ক ব্যবস্থা ভালো হয় না।
- রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেশি : বৃষ্টি, বন্যা, তুষারপাত প্রভৃতি রাস্তাকে নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া, মাত্রাতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচল রাস্তার ক্ষতি করে। সে কারণে সবসময় সড়কপথকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।
- সেতুর অভাবে পরিবহণের সমস্যা: নদীবহুল অঞ্চলে যথেষ্ট সংখ্যক সেতু না থাকলে সড়ক পরিবহণে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
- পরিবহণ ব্যয় বেশি : রেল এবং জলপথ পরিবহণের তুলনায় সড়কপথের পরিবহণ ব্যয় অনেক বেশি। সেজন্য মালপত্র পরিবহণে এখনও রেল এবং জলপথ এগিয়ে।
- যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কম: সড়কপথে দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করা বেশ কষ্টসাধ্য। যাত্রীদের শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যের ন্যূনতম ব্যবস্থা করাও সড়ক পরিবহণে অসুবিধাজনক।
3. ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সড়কপথের গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সড়কপথের গুরুত্ব: ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সড়কপথের গুরুত্ব খুব বেশি সেগুলি হল—
- গ্রামীণ উন্নতি: ভারতের শতকরা 69 জন মানুষ গ্রামে বাস করে। কৃষিজ ফসল বিক্রয় এবং শহর থেকে সার, কীটনাশক, কৃষিযন্ত্রপাতি প্রভৃতি কৃষিক্ষেত্রে আনা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক কারণে সড়কপথের গুরুত্ব খুব বেশি।
- কাঁচামাল সংগ্রহ : গ্রাম থেকে কৃষিজ কাঁচামাল শিল্পকেন্দ্রে নিয়ে আসা বা খনি থেকে কয়লা এবং খনিজ পদার্থ শিল্পকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা সড়কপথের মাধ্যমেই ভালো হয়। যেমন—রানিগঞ্জ, আসানসোল থেকে জাতীয় সড়কপথে কয়লা হুগলি শিল্পাঞ্চলে এসে পৌঁছায়।
- আঞ্চলিক উন্নয়ন : উত্তর ভারত, উত্তর-পূর্ব ভারত বা দাক্ষিণাত্যের পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে রেল পরিবহণ উন্নত নয় সেখানে সড়কপথ পরিবহণের মাধ্যমেই আঞ্চলিক উন্নয়ন সম্ভব। তাই ওইসব অঞ্চলে সড়কপথের গুরুত্ব খুব বেশি।
- নির্মাণ ব্যয় কম: রেলপথের তুলনায় সড়কপথের নির্মাণ ব্যয় কম। তাই ভারতের মতো দেশে সড়কপথের বিকাশ হলে অর্থনীতির ওপর কম চাপ পড়ে।
4. সোনালি চতুর্ভুজ ও উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম করিডোর কী ?
উত্তর – সোনালি চতুর্ভুজ : ভারতের চারদিকে অবস্থিত চারটি মহানগর, যথা— কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই ও চেন্নাইকে যে অত্যন্ত উন্নত মানের ও প্রশস্ত জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে, তাকে সোনালি চতুর্ভুজ বলে। এটি ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক প্রকল্প এবং পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘতম সড়ক প্রকল্প। জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (NHDP) অধীনে 5846 কিমি দীর্ঘ এই জাতীয় সড়কটি 4-6 লেনবিশিষ্ট। এর মধ্যে (1) দিল্লি-কলকাতা সড়কটি 1453 কিমি, (2) চেন্নাই-মুম্বাই সড়কটি 1290 কিমি, (3) কলকাতা-চেন্নাই জাতীয় সড়কপথটি 1684 কিমি এবং (4) মুম্বাই-দিল্লি সড়কটি 1419 কিমি দীর্ঘ [Source: NHAI]। মালয়েশিয়ার একটি সড়ক নির্মাণকারী সংস্থা উন্নত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করেছে।
উত্তর-দক্ষিণ করিডোর: ভারতের উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরকে যে উন্নত ও প্রশস্ত জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে দক্ষিণে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, এই সড়কপথকে বলে উত্তর-দক্ষিণ করিডোর। এটি 4000 কিমি দীর্ঘ।
পূর্ব-পশ্চিম করিডোর: পূর্বে অসমের শিলচর থেকে পশ্চিমে গুজরাতের পোরবন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত অতি উন্নত ও প্রশস্ত জাতীয় সড়কপথটিকে বলে পূর্ব- পশ্চিম করিডোর। এর মোট দৈর্ঘ্য 3142 কিমি। সুতরাং, উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব- পশ্চিম করিডরের মোট দৈর্ঘ্য 7142 কিমি। এটি বর্তমান ভারতের চলমান জাতীয় সড়কপথ প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো প্রকল্প।

5. জাতীয় সড়কের গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – জাতীয় সড়কের গুরুত্ব : বর্তমানে ভারতের জাতীয় সড়কের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 1,15,435 কিমি। ভারতে এই জাতীয় সড়কপথের গুরুত্ব সীমাহীন—
- সংযোগ রক্ষা : জাতীয় সড়কগুলি বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে।
- সর্বাধিক পণ্য পরিবহণ: জাতীয় সড়কগুলির মোট দৈর্ঘ্য ভারতের মোট সড়কপথের মাত্র 2.7 শতাংশ হলেও ভারতের সড়কপথে পরিবহণের প্রায় 40 শতাংশ জাতীয় সড়কগুলি বহন করে। জাতীয় সড়কে প্রতি বছর গড়ে 10 শতাংশ হারে গাড়ি চলাচল বাড়ছে।
- পণ্যের সুষম বণ্টন: এই জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমেই দেশের এক প্রান্তের উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য প্রান্তে বা দেশের কোণে কোণে পৌঁছে দেওয়া যায়।
- খনিজ দ্রব্য প্রেরণ: জাতীয় সড়কপথের জন্যই ভারতের মাত্র কয়েকটি অঞ্চল থেকে আহরিত খনিজ দ্রব্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা শিল্পকেন্দ্রগুলিতে সহজেই পাঠানো যায়।
- আমদানি-রপ্তানি: বিভিন্ন বন্দরের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে জাতীয় সড়কপথগুলি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে পণ্য এবং যানবাহন চলাচলে জাতীয় সড়কের গুরুত্ব খুব বেশি।
6. আন্তর্জাতিক সড়কপথ কী ? এর গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – আন্তর্জাতিক সড়কপথ : যেসব সড়কপথ অনেকগুলি দেশের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে, সেইসব সড়কপথকে আন্তর্জাতিক সড়কপথ (International Roadways) বলে। উদাহরণ : ভারতের আন্তর্জাতিক সড়কপথের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— AH 42 (চিনের ল্যানঝু থেকে ভারতের বারহি), AH 48 (ভুটানের ফুন্টশোলিং থেকে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত) প্রভৃতি। এগুলি এশিয়ান হাইওয়ে বা গ্রেট এশিয়ান হাইওয়ে নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক সড়কপথের গুরুত্ব :
- বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন: আন্তর্জাতিক সড়কপথগুলি যতগুলি দেশের মধ্য দিয়ে যায়, সেইসব দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
- সাংস্কৃতিক ভাবনার আদানপ্রদান: এইসব সড়কপথের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক ভাবনার আদানপ্রদান ঘটে।
- পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক সড়কপথের মাধ্যমে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ বাড়ে।
- শিল্পোন্নয়ন: আন্তর্জাতিক সড়কপথ ধরেই সব দেশগুলির মধ্যে শিল্পোন্নতি ঘটতে পারে।
7. ভারতীয় রেলপথের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – ভারতীয় রেলপথের শ্রেণিবিভাগ: দুটি লাইনের মধ্যে দূরত্ব সব রেলপথে সমান নয়। এই দূরত্বের পার্থক্য অনুযায়ী ভারতের রেলপথকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—
- ব্রড গেজ (Broad Gauge): এক্ষেত্রে দুটি লাইনের মধ্যে দূরত্ব হয় 1.68 মিটার। ভারতে ব্রড গেজ দিয়েই সর্বাধিক পরিবহণ করা হয়। এখন দেশের প্রায় 61680 কিমি দীর্ঘ রেলপথ ব্রড গেজের অন্তর্গত।
- মিটার গেজ (Metre Gauge): এক্ষেত্রে দুটি লাইনের মধ্যে ব্যবধান হয় 1 মিটার। ভারতে বর্তমানে প্রায় 3479 কিমি রেলপথ মিটার গেজের অন্তর্ভুক্ত এবং এর পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
- ন্যারো গেজ (Narrow Gauge): এই পথে দুটি রেললাইনের মধ্যে দূরত্ব থাকে প্রায় 0.76 মিটার ও 0.61 মিটার। ভারতে বর্তমানে ন্যারো গেজ রেলপথ রয়েছে প্রায় 2209 কিমি।
৪. ভারতীয় রেলপথকে কী কী আঞ্চলিক ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
উত্তর – ভারতীয় রেলপথের আঞ্চলিক বিভাগ: পরিচালনার সুবিধার জন্য ভারতীয় রেলপথকে 17টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে 9টি রেলপথব্যবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় রেলের এই আঞ্চলিক বিভাগ ও সদর দফতরগুলি হল— 1. পূর্ব রেলপথ (কলকাতা), 2. দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ (কলকাতা), 3. উত্তর-পূর্ব রেলপথ (গোরক্ষপুর), 4. উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলপথ (মালিগাঁও), 5. পশ্চিম রেলপথ (চার্চগেট, মুম্বাই), 6. উত্তর রেলপথ (নতুন দিল্লি), 7. দক্ষিণ রেলপথ (চেন্নাই), ৪. মধ্য রেলপথ (ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনা, মুম্বাই), 9. দক্ষিণ-মধ্য রেলপথ (সেকেন্দ্রাবাদ), 10. পূর্ব-মধ্য রেলপথ (হাজিপুর), 11. পূর্ব উপকূলীয় রেলপথ (ভুবনেশ্বর), 12. উত্তর-মধ্য রেলপথ (এলাহাবাদ), 13. উত্তর-পশ্চিম রেলপথ (জয়পুর), 14. দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেলপথ (বিলাসপুর), 15. দক্ষিণ-পশ্চিম রেলপথ (হুবলি), 16. পশ্চিম-মধ্য রেলপথ (জবলপুর), 17. কোঙ্কণ রেলপথ (নবি মুম্বাই)।
9. ভারতীয় রেলপথের সমস্যাগুলি কী কী ?
উত্তর – ভারতীয় রেলপথের সমস্যা : ভারতীয় রেল দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ সাহায্য করলেও, এর কতকগুলি সমস্যা রয়েছে—
- সময়সাপেক্ষ পরিবহণ: ভারতীয় রেলপথের বেশিরভাগটাই নির্মিত হয়েছে বহু বছর আগে, তাই তা যথেষ্ট দুর্বল। এই ধরনের রেলপথে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণে অহেতুক সময় লাগে এবং এতে পরিবহণ ব্যয়ও বেড়ে যায়।
- উন্নত প্রযুক্তির অভাব: ভারতীয় রেল এখনও সেভাবে আধুনিক হয়ে ওঠেনি। উন্নত সিগনালিং ব্যবস্থা, মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানোর প্রযুক্তি ইত্যাদির অভাব রয়েছে।
- 3 ওয়াগনের অভাব: পণ্য পরিবহণে প্রয়োজনমতো সবসময় ওয়াগন পাওয়া যায় না। এতে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহণের জন্য রেলপথ ছেড়ে সড়কপথকে বেছে নিচ্ছেন।
- যাত্রী সুরক্ষার অভাব: রেল দুর্ঘটনা, ট্রেনে ছিনতাই, ডাকাতি জীবনহানি ইত্যাদি ঘটনা প্রমাণ করে যে ভারতীয় রেলে যাত্রী সুরক্ষারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
- রেলকর্মীর সংখ্যা কম: ভারতীয় রেল বর্তমানে প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন—একই ড্রাইভার ও প্রযুক্তিবিদদের বেশি সময় ধরে পরিশ্রম করানোয় তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে এবং মনোবলেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
10. ভারতের জলপথের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – ভারতের জলপথের শ্রেণিবিভাগ: ভারতের জলপথকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—
- অভ্যন্তরীণ জলপথ: ভারতে প্রধানত নদনদী, খালপথ এবং হ্রদ ও উপহ্রদ নিয়ে অভ্যন্তরীণ জলপথ গড়ে উঠেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় 14500 কিমি। এর মধ্যে প্রায় 5200 কিমি নদীপথ এবং 4000 কিমি খালপথে নৌচলাচল করে। তবে ছোটো বড়ো নৌকো সব জলপথেই চলাচল করে। অভ্যন্তরীণ জলপথগুলি হল—
- নদীপথ: ভারতের অভ্যন্তরীণ জলপথে নদনদীর ভূমিকা খুব বেশি। [a] গঙ্গা: মোহানা থেকে উত্তরপ্রদেশের কানপুর পর্যন্ত গঙ্গা নদী নৌপরিবহণযোগ্য। তবে মোহানা থেকে পাটনা পর্যন্ত স্টিমার চালানো যায়। [b] ব্রহ্মপুত্র: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। [c] অন্যান্য: মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া, কাবেরী নদীগুলির সমভূমি প্রবাহ জলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোয়ার জুয়ারি নদী ও মান্ডভি নদী দুটি নাব্য। এই দুটি নদীও জলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- খালপথ: হরিদ্বার ও কানপুরের মধ্যে গঙ্গা নদীর খাল, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর মধ্যে বাকিংহাম খাল, ওডিশা ও কেরলের উপকূলীয় খাল, সুন্দরবনের ইস্টার্ন ও সার্কুলার খাল বিখ্যাত।
- হ্রদ ও উপহ্রদ: ভারতের বড়ো বড়ো হ্রদ ও উপহ্রদগুলি জলপথরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন—কেরলের বিভিন্ন উপহ্রদ বা কয়াল, ওডিশার চিলকা, অন্ধ্রপ্রদেশের কোলেরু, তামিলনাড়ুর পুলিকট প্রভৃতি হ্রদ।
- সামুদ্রিক জলপথ: উপকূলীয় ও সামুদ্রিক জলপথ এই জলপথের মধ্যে পড়ে। মূলত উপকূলীয় সুরক্ষা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য এই জলপথের গুরুত্ব খুব বেশি।
11. ভারতে জলপথের গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – ভারতে জলপথের গুরুত্ব : ভারতের রেলপথ এবং সড়কপথের মতো জলপথের গুরুত্বও খুব বেশি—
- কম খরচ: জলপথ নির্মাণে কোনো খরচ হয় না। লঞ্চঘাট বা বন্দর নির্মাণের জন্য এবং জলপথ চালানোর খরচ ছাড়া জলপথ সংরক্ষণেও তেমন কোনো খরচ নেই। তাই এই পরিবহণ ব্যবস্থা সবচেয়ে সুলভ।
- অধিক পরিমাণে মালপত্র এবং যাত্রী পরিবহণ: রেল ও সড়কপথের থেকে জলপথে অনেক বেশি পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণ করা যায়। তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ মাধ্যম।
- প্রতিরক্ষার কাজ : ভারতের উপকূলভাগের দৈর্ঘ্য 7516 কিমি। এই সুদীর্ঘ উপকূলভাগকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য একমাত্র সহায় জলপথ। অর্থাৎ উপকূলীয় জলপথ দেশকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
- কর্মসুযোগ সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নতি: যাত্রী পরিবহণ, মালপত্র পরিবহণ, সম্পদ পরিবহণ, দেশি-বিদেশি পণ্য পরিবহণ থেকে মানুষের কর্মসুযোগ সৃষ্টি হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
- ত্রাণ সরবরাহ: সুন্দরবনের মতো জায়গায় বা কেরলের ব্যাকওয়াটারযুক্ত অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে (যেমন—আয়লা) জলপথেই ত্রাণসামগ্রী বিলি করা, মানুষকে উদ্ধার করার মতো কাজ করা হয়। সেদিক থেকে বলা যায় ত্রাণ সরবরাহে জলপথের ভূমিকা খুব বেশি।
12. ভারতের জাতীয় জলপথ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের জাতীয় জলপথ: ভারতে অনেকগুলি জাতীয় জলপথ রয়েছে, যেমন—
- 1 নং জাতীয় জলপথ: গঙ্গা নদীর প্রবাহপথকে 1 নং জাতীয় জলপথের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এটি উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ থেকে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া পর্যন্ত প্রসারিত। এর দৈর্ঘ্য 1620 কিমি ও ভারতের দীর্ঘতম জলপথরূপে খ্যাত।
- নং জাতীয় জলপথ: এটি ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সদিয়া থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের ধুবরি পর্যন্ত প্রসারিত। এই জলপথের দৈর্ঘ্য 891 কিমি।
- 3 নং জাতীয় জলপথ: এটি কেরলের কোট্টাপুরম থেকে কোল্লাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এই জলপথটি 168 কিমি বিস্তৃত।
- 4 নং জাতীয় জলপথ: কাকিনাড়া থেকে পুদুচেরি পর্যন্ত প্রায় 1095 কিমি দীর্ঘ 4 নং জাতীয় জলপথ।
- 5 নং জাতীয় জলপথ: ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ব্রাক্মণী নদী, পূর্ব উপকূলীয় খানা, মাতাই নদী ও মহানদী মিলে 623 কিমি দীর্ঘ 5 নং জাতীয় জলপথ।
- 6 নং জাতীয় জলপথ: অসমের বরাক নদীর লখিমপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত 121 কিমি দীর্ঘ 6 নং জাতীয় জলপথ।

13. ভারতের সামুদ্রিক জলপথের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – ভারতের সামুদ্রিক জলপথের শ্রেণিবিভাগ: ভারতে সামুদ্রিক জলপথকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
- উপকূলীয় জলপথ: ভারতের উপকূলভাগের দৈর্ঘ্য প্রায় 7516 কিমি। বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের উপকূলরেখা বরাবর এই সুদীর্ঘ জলপথে নৌকা, স্টিমার ও জাহাজ চলাচল করে। এই উপকূলীয় জলপথে মূলত পণ্য বাহিত হয়। মুম্বাই থেকে গোয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী জাহাজ ও স্টিমার চলাচল করে। উপকূলীয় জলপথ ধরেই গুজরাত থেকে নুন আসে পশ্চিমবঙ্গে এবং ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার কয়লা যায় দক্ষিণ ভারতে।
- সমুদ্রপথ বা আন্তর্জাতিক জলপথ: ভারতের তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত বলে বহু প্রাচীনকাল থেকেই আফ্রিকা, ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়ার সাথে ভারতের সমুদ্রপথে বাণিজ্য চলত। বর্তমানে ভারতের 13টি প্রধান বন্দর এবং প্রায় 200টি মাঝারি এবং ছোটো বন্দরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জলপথে ব্যাবসাবাণিজ্য চলে। এই 13টি প্রধান বন্দরের মাধ্যমে জলপথে ভারতের বহির্বাণিজ্যের 90 শতাংশ সংঘটিত হয়। বছরে প্রায় 16000 মালবাহী জাহাজ এই বন্দরগুলিতে যাতায়াত করে। ভারতে 2017 সালে 13টি প্রধান বন্দর আন্তর্জাতিক জলপথে প্রায় 64.84 কোটি টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করেছিল।
14. ভারতের জলপথের সুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর – ভারতের জলপথের সুবিধা: জলপথের অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে, যেমন-
- সুলভ পরিবহণ: জলপথ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ব্যয় হয় না বলে জলপথ পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সস্তা পরিবহণ মাধ্যম। সেইজন্য পৃথিবীর সর্বত্র জলপথ পরিবহণ জনপ্রিয়।
- অবাধ চলাফেরার সুযোগ: সমুদ্র উপকূলবর্তী কিছু অঞ্চল ছাড়া উন্মুক্ত সমুদ্রে জাহাজগুলি অবাধে চলাচল করতে পারে।
- বৈদেশিক বাণিজ্যের সুবিধা: সমুদ্রতীরবর্তী যে-কোনো দেশের সাথে ভারতের জলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা রয়েছে। তাই এই জলপথ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সর্বাপেক্ষা সুবিধা প্রদান করে।
- ভারী পণ্য পরিবহণের সুবিধা: ইউনিট প্রতি পরিবহণ খরচ কম হয় বলে বিভিন্ন ভারী ও বৃহদায়তন পণ্য, যেমন—আকরিক লোহা, কয়লা, লোহা ও ইস্পাত, সিমেন্ট প্রভৃতি পণ্য জলপথে পরিবহণ করা সুবিধাজনক।
15. ভারতের জলপথের অসুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর – ভারতের জলপথের অসুবিধা: ভারতে জলপথে পরিবহণে অনেক অসুবিধা আছে, যেমন—
- ধীরগামিতা: জলপথে পরিবহণ খুব ধীর গতিতে হয়। তাই জরুরি ভিত্তিতে কোনো পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণ অসুবিধাজনক।
- প্রতিকূল আবহাওয়া: ঘূর্ণিঝড় ও প্রবল বৃষ্টিপাত জলপথ পরিবহণে সমস্যা তৈরি করে। জলোচ্ছ্বাসে জাহাজ ডুবে গেলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
- নাব্যতার সমস্যা: গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীপথে প্রচুর পরিমাণে পলি জমে। এতে নদীর নাব্যতা কমে যায় ও জাহাজ বা বড়ো নৌযান চলাচলে অসুবিধা হয়।
- নিরাপত্তার সমস্যা: সামুদ্রিক জলপথে প্রায়ই জাহাজগুলিকে এককভাবে চলতে হয়। এতে জলদস্যুর আক্রমণের ভয় থাকে।
16. ভারতে বিমানপথের গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – ভারতে বিমানপথের গুরুত্ব : বিমানপথের গুরুত্ব সীমাহীন, যেমন—
- যাত্রী পরিবহণ: ভারতে যাত্রীদের দ্রুততম পরিবহণের মাধ্যম এই বিমানপথ। এর সাহায্যে যাত্রীরা অতিদ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে যান।
- পণ্য পরিবহণ: হালকা এবং দামি পণ্য বিমানপথের মাধ্যমে দ্রুত পরিবাহিত হয়। তবে ভারী এবং কম দামি দ্রব্য আকাশপথে পরিবাহিত হয় না।
- বৈদেশিক বাণিজ্য: দামি এবং হালকা দ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য রপ্তানি বা আমদানি করতে বিমানপথের জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া, বিদেশে যেতে গেলে অবশ্যই বিমানপথের সুবিধা নিতে হয়।
- ত্রাণ পরিবহণ: দুর্গম অঞ্চলে ত্রাণ পাঠানো, স্থান জরিপ, দ্রুত উদ্ধার বা দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বিমানপথের গুরুত্ব অপরিসীম।
- প্রতিরক্ষা: ভারতের সুদীর্ঘ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দিনরাত নজরদারি, সীমান্তে সেনা পাঠানো, রসদ পাঠানো বা যুদ্ধ করার জন্যও বিমানপথের প্রয়োজন খুব বেশি।
17. বিমানপথের অসুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর – বিমানপথের অসুবিধা : বিমানপথের অসুবিধাগুলি হল—
- ব্যয়বহুল: বিমানপথে পরিবহণের খরচ খুব বেশি। তাই সবাই এই পরিবহণ ব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারে না।
- ভারী পণ্য পরিবহণে অসুবিধা: বিমানপথে খুব ভারী পণ্য পরিবহণ করা যায় না।
- ঝুঁকিবহুল: যান্ত্রিক ত্রুটি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কুয়াশা, মেঘ, ঘুর্ণিঝড়ে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই পরিবহণ বেশ ঝুঁকিবহুল।
- আবহাওয়ার প্রতিকূলতা : মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত, কুয়াশা, ধোঁয়াশা, আগ্নেয়গিরির ছাই ইত্যাদি বিমান যাত্রাকে বিলম্বিত করে।
18. ভারতে রজ্জুপথের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ভারতে রজ্জুপথের গুরুত্ব : ভারতে রজ্জুপথের গুরুত্বগুলি হল—
- যোগাযোগ রক্ষা: দুর্গম এবং পার্বত্য অঞ্চলে রজ্জুপথের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়।
- খনিজ দ্রব্য প্রেরণ: কয়লাখনি অঞ্চলে খনি থেকে কয়লা তুলে অন্যত্র প্রেরণ করা যায়।
- পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ: সড়ক এবং রেলযোগাযোগহীন অঞ্চলে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণে রজ্জুপথ খুবই কার্যকরী।
- বিনোদন ভ্রমণ: অনেক পার্বত্য পর্যটন কেন্দ্রে বিনোদন ভ্রমণেও রজ্জুপথের ব্যবহার দেখা যায়।
- ত্রাণ প্রেরণ: রজ্জুপথের সাহায্যে অনেকসময় পাহাড়ে বা দুর্গম অঞ্চলে বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ পাঠানো হয়।
- খাদ্য, ঔষধ প্রেরণ: ভারতে রজ্জুপথের সাহায্যে দুর্গম অঞ্চলগুলিতে খাদ্যদ্রব্য, পণ্য, ওষুধপত্র ইত্যাদি পাঠানো হয়।

19. পাইপলাইন বা নলপথ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – ধারণা: গ্যাস এবং তরল পদার্থ পরিবহণের জন্য প্রধানত পাইপলাইন ব্যবহার করা হয়। একবার স্থাপন করা হয়ে গেলে পাইপলাইনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সাধারণত খুব কম। শহরাঞ্চলে জল পরিবহণ এবং গ্যাস পরিবহণে এর জুড়ি মেলা ভার। ভারতে প্রথম পাইপলাইন চালু হয় 1956 সালে। এর জন্য ডিগবয় থেকে তিনসুকিয়া পর্যন্ত 28 কিমি দীর্ঘ নলপথ তৈরি করা হয়। বর্তমানে ভারতের সক্রিয় পাইপলাইনগুলি হল—
- নাহারকাটিয়া নুনমাটি-বারাউনি নলপথ: অশোধিত খনিজ তেল অসমের নাহারকাটিয়া থেকে বিহারের বারাউনি পর্যন্ত পাঠানোর জন্য 1167 কিমি দীর্ঘ নলপথ চালু রয়েছে। বর্তমানে এটি কানপুর ও হলদিয়া পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।
- বম্বে হাই-মুম্বাই-আংকেলেশ্বর-কয়ালি নলপথ: এই পথে খনিজ তেল বম্বে হাই থেকে মুম্বাইয়ে এবং আংকেলেশ্বর থেকে কয়ালি শোধনাগারে পাঠানো হয়।
- সালায়া কয়ালি মথুরা নলপথ: গুজরাতের সালায়া থেকে উত্তরপ্রদেশের মথুরা পর্যন্ত 1256 কিমি দীর্ঘ এই পাইপলাইনের মাধ্যমেও খনিজ তেল পরিবাহিত হয়।
- হাজিরা-বিজয়পুর-জগদীশপুর গ্যাস নলপথ: 1750 কিমি দীর্ঘ এই পথে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থা GAIL গ্যাস পাঠায়।
- জামনগর-লোনি এলপিজি নলপথ: 1269 কিমি দীর্ঘ এই পাইপলাইনে GAIL তরল পেট্রোলিয়ামজাত গ্যাস সরবরাহ করে।
- কান্ডালা-ভাতিন্ডা নলপথ: 1443 কিমি দীর্ঘ এই পাইপলাইনে IOC কান্ডালা বন্দর থেকে ভাতিন্ডা তৈল শোধনাগারে আমদানিকৃত খনিজ তেল সরবরাহ করে।
20. পাতালরেলের গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – পাতালরেলের গুরুত্ব: ভূগর্ভ দিয়ে যে রেল চলাচল করে, সেই রেল ব্যবস্থাকে পাতালরেল বলে। বর্তমান মহানাগরিক জীবনে পাতাল রেলের গুরুত্ব অপরিসীম, যথা—
- যানজট মুক্ত: পাতালরেল একটি নিজস্ব রেলপথ। এই রেলপথের সাথে অন্য কোনো রেল, সড়কপথের সংযোগ নেই। তাই এটি একেবারে যানজটমুক্ত।
- দূষণহীন: বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় পাতালরেলে দূষণ কম। তাই দূষিত শহরের মধ্যে পাতালরেল দূষণহীন যান।
- জমি অধিগ্রহণ অপ্রয়োজনীয়: পাতালরেল মাটির নীচে দিয়ে বেশিরভাগ জায়গায় চলে বলে খুব বেশি জমি অধিগ্রহণের ব্যাপার নেই।
- সময় অনুযায়ী চলাচল: সড়ক পরিবহণ যখন কোনো সময় মেনে চলে না সেখানে পাতালরেল অত্যন্ত নিখুঁত সময় অনুযায়ী চলাচল করে। এতে নাগরিক জীবনে কাজের পরিবেশ ফিরে আসে।

- আরামদায়ক যাত্রা: বেশিরভাগ পাতালরেল স্টেশন ও কোচগুলি বাতানুকূল। তাই যাত্রীদের যাতায়াত অনেক আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব হয়।
21. ভারতের কয়েকটি পাতালরেলের পরিচয় দাও।
উত্তর – ভারতের পাতালরেন্স : ভারতের কয়েকটি পাতালরেল হল—
- কলকাতা মেট্রোরেল: 1984 সালে কলকাতাতেই ভারতের মধ্যে প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। বর্তমানে নোয়াপাড়া থেকে গড়িয়ার কাছে কবি সুভাষ পর্যন্ত 27 কিমি পথে এই মেট্রোরেল চলাচল করে। এই রেলপথে 24টি স্টেশন রয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় 7 লক্ষেরও বেশি যাত্রী যাতায়াত করে।
- দিল্লি মেট্রোরেল: 2002 সালে 24 ডিসেম্বর থেকে এই পথ চালু হয়। এই রেলে 236টি স্টেশন রয়েছে। এই রেলের দৈর্ঘ্য 327 কিমি। 2018 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিন দিল্লি মেট্রো প্রায় 27 লক্ষ যাত্রী বহন করেছিল।
- বেঙ্গালুরু মেট্রোরেল: স্থানীয়ভাবে এই রেলকে নাম্মা (Namma) মেট্রো বলে। 2011 সালের 20 অক্টোবর এই রেল চালু হয়। প্রথম পর্যায়ে বেঙ্গালুরু মেট্রোরেল 42.3 কিমি দীর্ঘ পথে প্রতিদিন প্রায় 4 লক্ষ (2018) যাত্রী পরিবহণ করে।
এ ছাড়া, জয়পুর, গুরগাঁও, চেন্নাই, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ ও কোচি শহরেও মেট্রো পরিসেবা চালু হয়েছে।
22. আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: সংবাদ বা তথ্য ও ভাবের আদানপ্রদানকে এককথায় যোগাযোগ বলে। চিঠিপত্র, টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ইনটারনেট প্রভৃতির সাহায্যে যে আদানপ্রদান হয়, সেগুলিকে বলে যোগাযোগের মাধ্যম। এই ধরনের একটি সম্পূর্ণ ও সংগঠিত আদানপ্রদান ব্যবস্থাকে বলে যোগাযোগ ব্যবস্থা। আগেকার দিনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথে লিখিত বার্তা আদানপ্রদান করা হত। কিন্তু বর্তমানে ব্যস্ত জীবনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে এবং উন্নত পরিসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম চালু হয়েছে।
বিভিন্ন রকম আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা: বিভিন্ন রকম আধুনিক যোগাযোগ ব্যবসথাগুলি হল—ইনটারনেট, ই-মেল, সেলফোন ইত্যাদি।
- ইনটারনেট: সমগ্র বিশ্বজুড়ে একাধিক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ ব্যবস্থাই হল ইনটারনেট ব্যবস্থা। বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এই ইনটারনেট ব্যবস্থার সাহায্যে পরস্পর যুক্ত থেকে নিমেষের মধ্যে তথ্য, খবরাখবর এবং মতামত বিনিময় করে চলেছে। ইনটারনেট দ্রুত, সহজে এবং স্বল্প ব্যয়ে যোগাযোগ সাধনের এটি অন্যতম মাধ্যম। বর্তমানে ইনটারনেটে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার প্রভৃতি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
- ই-মেল: ই-মেলের মাধ্যমে অতি অল্প খরচে দ্রুত পৃথিবীর যে-কোনো স্থানে সংবাদ পাঠানো যায়।
- সেলফোন: শুধু দুজন মানুষের মধ্যে কথা বলার সুবিধাই নয়, মোবাইল বা সেলুলার ফোনের সাহায্যে SMS, MMS, মোবাইল ব্যাংকিং প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের পরিসেবা একে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত করেছে।
23. যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনের গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনের গুরুত্ব: আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, কারণ—
- সহজে বহনযোগ্য: এই তারহীন ফোন মানুষ সর্বত্র বহন করতে পারে। তাই এর গুরুত্ব খুব বেশি।
- যোগাযোগে সুবিধা: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে-কোনো সময় এবং প্রায় যে-কোনো স্থান থেকে কথা বলা বা যোগাযোগ করা যায়।
- মোবাইল ব্যাংকিং ও তথ্যের আদানপ্রদান: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং, রেলের টিকিট কাটা, ছবি এবং তথ্যের আদানপ্রদান করা হয়।
- ইনটারনেট সংযোগ: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইনটারনেট সংযোগ রাখা যায়। এতে যে-কোনো মুহূর্তে যে-কোনো তথ্যকে হস্তগত করা সম্ভব।
- অবস্থান নির্ণয়: মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পৃথিবীপৃষ্ঠে নিজের অবস্থান দেখে নেওয়া যায়। একে GPS বলে।
- সহজ ব্যক্তিগত যোগাযোগ: বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিচিতদের সাথে গল্প, আলাপ-আলোচনা, ইত্যাদি করার জন্য মোবাইলে SMS, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। এতে এর ব্যবহারযোগ্যতা আরও বেড়েছে।
24. ইনটারনেট কী ? এর ব্যাবহারিক গুরুত্ব কতখানি?
উত্তর – সংজ্ঞা : সমগ্র পৃথিবীর কম্পিউটার, ল্যাপটপ, পামটপ, মোবাইল ফোন যে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে, তাকে ইনটারনেট বা আন্তর্জাল বলে।
ইনটারনেটের ব্যাবহারিক গুরুত্ব : ইনটারনেটের মাধ্যমে—
- তথ্যের দ্রুত আদানপ্রদান: পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্ত থেকে অতি দ্রুত তথ্যের আদানপ্রদান করা যায়।
- বহুরকম ব্যবহার : এর মাধ্যমে নেট ব্যাংকিং, ইমেল, চ্যাটিং, তথ্য সংগ্রহ, প্রেরণ, তথ্য অনুসন্ধান প্রভৃতি কাজ করা যায়।
- দূরশিক্ষা: দূরশিক্ষা, টেলিমেডিসিন ইনটারনেটের মাধ্যমে সম্ভব।
- বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক: এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষই ইনটারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল প্লাস, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।
এতসব সুবিধার জন্য বর্তমানে ইনটারনেটের গুরুত্ব সীমাহীন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. পরিবহণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে যখন পণ্য এবং যাত্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাকে পরিবহণ বলে।
বৈশিষ্ট্য: (1) পরিবহণ হল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। (2) পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি হলে দেশের অধিক উন্নতি হয়।
2. যোগাযোগ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: সংবাদ, তথ্য বা ভাবের আদানপ্রদানকে এককথায় যোগাযোগ বলে। বৈশিষ্ট্য : যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তথ্যের আদানপ্রদান সম্ভব হয়।
উদাহরণ : টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইনটারনেট এসব যোগাযোগের মাধ্যম।
3. জলপথ কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: খাল, নদী, সমুদ্র, হ্রদের ওপর দিয়ে যে নির্দিষ্ট পথে জলযান চলাচল করে, সেই পথকে জলপথ বলে। বৈশিষ্ট্য: জলপথ হল পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা পরিবহণ মাধ্যম।
4. আকাশপথ কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যে পথে আকাশযান যাতায়াত করে সেই পথকে আকাশপথ বলে। বৈশিষ্ট্য : বিমানপথ বা আকাশপথ নির্মাণে তেমন কোনো খরচ নেই। তবে এই পথে পরিবহণ ব্যয় খুব বেশি।
5. স্খলপথ কী?
উত্তর – সংজ্ঞা : স্থলভাগের ওপর দিয়ে নির্মিত পরিবহণ পথকে স্থলপথ বলে। বিভাগ : স্থলপথ দু-ধরনের হতে পারে সড়কপথ ও রেলপথ।
6.জাতীয় সড়ক কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নির্মিত যেসব সড়কপথগুলি বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে বা দেশের এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তকে যুক্ত করে, সেই সব সড়কপথকে জাতীয় সড়ক বলে। জাতীয় সড়কগুলি যেমন দৈর্ঘ্যে বেশি হয়, তেমনই এগুলি 2 থেকে 6 লেনবিশিষ্ট হয়ে থাকে।
7. রাজ্য সড়কপথ কী?
উত্তর – ধারণা : রাজ্যের মধ্যে বিস্তৃত যেসব সড়কপথ রাজ্য সরকার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং জাতীয় সড়কপথের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেইসব সড়কপথকে রাজ্য সড়কপথ বলে। বৈশিষ্ট্য: এগুলি রাজ্যের রাজধানী, জেলা সদর এবং অন্যান্য বড়ো শহরকে যুক্ত করে। @ রাজ্য সড়কপথের দৈর্ঘ্যে মহারাষ্ট্র ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে।
8. সোনালি চতুর্ভুজ কী?
উত্তর – ধারণা : ভারতের চার প্রান্তের চারটি প্রধান শহর যথা কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই এবং চেন্নাইয়ের মধ্যে সংযুক্তকারী ছয় লেনবিশিষ্ট জাতীয় সড়কপথ সোনালি চতুর্ভুজ নামে পরিচিত। বৈশিষ্ট্য: (1) সোনালি চতুর্ভুজের মোট দৈর্ঘ্য 5846 কিমি। (2) এই চতুর্ভুজের চারটি বাহু হল—[i] কলকাতা-দিল্লি (1453 কিমি), [ii] দিল্লি-মুম্বাই (1419 কিমি), [iii] মুম্বাই-চেন্নাই (1290 কিমি) এবং [iv] চেন্নাই-কলকাতা (1684 কিমি)। (3) এটি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নির্মিত।
9. শিপিং লেন কী ?
উত্তর – সংজ্ঞা: নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য জাহাজ সমুদ্রের যে পথকে অনুসরণ করে, সেই নির্দিষ্ট পথকেই শিপিং লেন বলে।
10. শিপিং লাইন কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: যেসব নির্দিষ্ট কোম্পানি বা সংস্থার জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, ওইসব সংস্থা বা কোম্পানিকে শিপিং লাইন বলে।
11. সড়কপথে পরিবহণের দুটি সুবিধা লেখো।
উত্তর – সড়কপথে পরিবহণের সুবিধা : সড়কপথে পরিবহণের দুটি সুবিধা হল— (1) সর্বত্রগামী: সড়কপথ দেশের সর্বত্র গড়ে তোলা সম্ভব। তাই দুর্গম অঞ্চলেও সড়কপথ গড়ে ওঠে। (2) দ্রুত পরিবহণ: সড়কপথে পরিবহণে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে।
12. সড়কপথে পরিবহণের দুটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর – সড়কপথে পরিবহণের অসুবিধা: সড়কপথে পরিবহণের দুটি অসুবিধা হল— (1) ব্যয়সাপেক্ষ: সড়কপথের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় যথেষ্ট বেশি। (2) যানজট: যানজট সড়কপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণে বাধা সৃষ্টি করে।
13. রেলপরিবহণ ব্যবস্থার দুটি সুবিধা লেখো।
উত্তর – রেলপরিবহণ ব্যবস্থার সুবিধা : রেলপরিবহণ ব্যবস্থার দুটি সুবিধা হল— (1) দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো: রেলপথের মাধ্যমে ভারী এবং প্রচুর পণ্য দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়। (2) কম খরচে পরিবহণ: রেলপথের মাধ্যমে একসাথে অনেক পণ্য কম খরচে পরিবহণ করা সম্ভব।
14. রেলপরিবহণ ব্যবস্থার দুটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর – রেলপরিবহণ ব্যবস্থার অসুবিধা: রেলপরিবহণ ব্যবস্থার দুটি অসুবিধা হল — (1) সর্বত্র চালু করার অসুবিধা: রেলপরিবহণ ব্যবস্থা সর্বত্র চালু করা সম্ভব নয়। নদীবহুল অঞ্চল অথবা উচ্চ পার্বত্য অংশে রেলপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন। (2) পথ পরিবর্তনের অসুবিধা: একটি নির্দিষ্ট পথেই রেল চলাচল করে বলে প্রয়োজনে পথ পরিবর্তন করতে পারে না।
15. আকাশপথে পরিবহণের দুটি সুবিধা লেখো।
উত্তর – আকাশপথে পরিবহণের সুবিধা: আকাশপথে পরিবহণের দুটি সুবিধা হল— (1) অতি দ্রুত পরিবহণ: এটি অতি দ্রুত পণ্য বা যাত্রী পরিবহণ করতে পারে। (2) উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে পরিবহণ: জরুরি অবস্থায় উদ্ধার কাজ এবং ত্রাণকার্যে আকাশপথ পরিবহণ প্রধান ভরসা।
16. আকাশপথে পরিবহণের দুটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর – আকাশপথে পরিবহণের অসুবিধা : আকাশপথে পরিবহণের দুটি অসুবিধা হল— (1) ব্যয়বহুল: আকাশপথ পরিবহণ খুব ব্যয়বহুল। তাই সবার পক্ষে এর পরিসেবা নেওয়া সম্ভব নয়। (2) স্বল্প দূরত্বে পরিবহণযোগ্য নয়: আকাশপথে স্বল্প দূরত্বে পরিবহণ করা যায় না।
17. ভারতের অন্তর্দেশীয় বিমানপথের ধারণা দাও।
উত্তর – অন্তর্দেশীয় বিমানপথ : যে বিমানপথের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়, সেই বিমানপথকে অন্তর্দেশীয় বিমানপথ বলে। যেমন—কলকাতার সঙ্গে দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই প্রভৃতি শহর অন্তর্দেশীয় বিমানপথে যুক্ত। সাধারণত অন্তর্দেশীয় বিমানপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করে এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এয়ারওয়েজ, স্পাইসজেট, ইন্ডিগো, গো এয়ার, ব্ল ডার্ট এভিয়েশন প্রভৃতি সংস্থা। এ ছাড়া, সরকারি ‘পবন হংস’ সংস্থাটি বিভিন্ন জায়গায় হেলিকপ্টার পরিসেবা দেয়।
18. ভারতে আকাশপথে পরিবহণের ধারণা দাও।
উত্তর – আকাশপথ পরিবহণ: ভারতে বিমান চলাচল শুরু হয় 1911 সালে। আকাশপথ বা বিমানপথ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এবং দ্রুতগতির আরামদায়ক পরিবহণ ব্যবস্থা। ভারতে দুই ধরনের বিমানপথ রয়েছে— (1) অন্তর্দেশীয় বা জাতীয় বিমানপথ, (2) আন্তর্জাতিক বিমানপথ। বর্তমানে ভারতে ছোটো-বড়ো প্রায় 486টি বিমানবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে 34টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় বিমানপথকে নিয়ন্ত্রণ করে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া। 2016-17 সালে ভারতে প্রায় 26.50 কোটি যাত্রী বিমানপথ ব্যবহার করে।
19. ভারতের আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – আন্তর্জাতিক বিমানপথ পরিবহণ: ভারতের সাথে বর্তমানে শতাধিক দেশের বিমানপথ ব্যবহারের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। যেমন—ভারতের সঙ্গে সৌদি আরব, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, ব্রাজিল, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, মিশর, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশের আন্তর্জাতিক বিমানপথে যোগাযোগ রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ধরনের বিমান সংস্থা ভারতে যাত্রী পরিবহণ করে। বিমান বাংলাদেশ, ড্রুক এয়ার, জাপান এয়ারলাইনস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, এয়ার ফ্রান্স প্রভৃতি সংস্থার বিমান ভারতে যাত্রী নিয়ে আসে এবং এদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে যায়।
20. বন্দর সংযোজক পরিকল্পনা কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: যে পরিকল্পনার মাধ্যমে চার লেনবিশিষ্ট সড়কপথ ভারতের বিভিন্ন বন্দরগুলিকে সংযুক্ত করে, সেই পরিকল্পনাকে বন্দর সংযোজক পরিকল্পনা বলে।
21. স্থল পরিবহণ ব্যবস্থা কত রকমের হতে পারে?
উত্তর – স্থল পরিবহণ ব্যবস্থার শ্রেণিবিভাগ : স্থল পরিবহণ ব্যবস্থাকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—সড়কপথ ও রেলপথ। রেলপথ আবার দু- রকমের হয়, যথা— (1) ভূপৃষ্ঠস্থ রেলপথ এবং (2) ভূগর্ভস্থ রেলপথ।
22. জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা কত রকমের হয়?
উত্তর – জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থার শ্রেণিবিভাগ: জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা দু- রকমের হতে পারে, যথা— (1) অভ্যন্তরীণ জলপথ এবং (2) আন্তর্জাতিক জলপথ। অভ্যন্তরীণ জলপথ আবার দু-রকমের হয় — (1) নদীপথ এবং (2) খালপথ।
23. ভারতের কয়েকটি খালপথের পরিচয় দাও।
উত্তর – ভারতের খালপথ: ভারতে যতগুলি খালপথ রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল— 1. অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর বাকিংহাম খাল (প্রধান)। এটি অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা বদ্বীপের কোম্মানুর খালপথের সাথে যুক্ত, 2. অন্ধ্রপ্রদেশের কাডাপ্পা কুর্মুল খাল, 3. পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর খাল, 4. দামোদর উপত্যকার দুর্গাপুর-ত্রিবেণী খাল, 5. বিহারের শোন খাল, 6. হরিদ্বার ও কানপুরের মধ্যে গঙ্গা নদীর খাল এবং 7. সুন্দরবনের ইস্টার্ন ও সার্কুলার খাল। এ ছাড়া, 8. মালাবার উপকূলে অনেকগুলি কয়াল এবং স্বাভাবিক খাল রয়েছে। যেমন—আলাপ্পুঝা থেকে কোচি পর্যন্ত ভেমবানাদ কয়ালের মধ্যে দিয়ে স্টিমার যাতায়াত করে।
24. নলপথের গুরুত্ব কী ?
উত্তর – নলপথের গুরুত্ব : পাইপলাইন বা নলপথের মাধ্যমে তরল এবং গ্যাসীয় পদার্থের পরিবহণ করা হয়। যেমন—প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, জল নলপথে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবাহিত হয়। খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহণে নলপথের ভূমিকা খুব বেশি।
25. রজ্জুপথ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বা খনি অঞ্চলে গভীর উপত্যকা পারাপার করার জন্য বৈদ্যুতিক তার বা দড়ির মাধ্যমে নির্মিত পরিবহণ ব্যবস্থাকে রজ্জুপথ বলে। বৈশিষ্ট্য: 1. রজ্জুপথগুলি স্বল্প দূরত্বের হয়। 2. ভ্রমণার্থী, খাবার, জল বা খনিজ দ্রব্য রজ্জুপথে পরিবহণ করা হয়।
26. ভারতের কয়েকটি রজ্জুপথের নাম করো।
উত্তর – ভারতের রজ্জুপথ : ভারতে প্রায় 100টির বেশি রজ্জুপথ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল— (1) পৃথিবীর অন্যতম দ্রুতগতির রজ্জুপথটি রয়েছে ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া কয়লাখনি অঞ্চলে। এটি প্রায় 30 কিমি দীর্ঘ। (2) 1968 সালে দার্জিলিঙে একই সঙ্গে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণের জন্য ৪ কিমি দীর্ঘ রজ্জুপথ নির্মাণ করা হয়েছে। (3) মেঘালয় মালভূমির চেরাপুঞ্জি এবং শিলং অঞ্চলে রজ্জুপথ রয়েছে। (4) সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে 1.2 কিমি দীর্ঘ একটি রজ্জুপথ চালু হয়েছে।
27. মোবাইল ফোন কোন্ কাজে লাগে?
উত্তর – মোবাইল ফোনের ব্যবহার: মোবাইল ফোনের উল্লেখযোগ্য দুটি ব্যবহার হল- (1) সহজে যোগাযোগ: পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তের মানুষের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে। (2) বহু রকম ব্যবহার: বর্তমানে মোবাইল ফোন ছবি তোলা, গান শোনা, SMS, MMS এবং ইনটারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায় এমন প্রায় সব ধরনের কাজে বহুল ব্যবহৃত হয়।
28. পুনঃরপ্তানি বন্দর কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: যে বন্দরের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য আমদানি, আমদানিকৃত পণ্য সঞ্চয় অথবা পুনরায় রপ্তানি করা হয়, সেই বন্দরকে পুনঃরপ্তানি বন্দর বলে। উদাহরণ: লন্ডন বন্দর। ভারত, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশ থেকে লন্ডন বন্দরের মাধ্যমে চা আমদানি করে আবার ওই বন্দরের মাধ্যমেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওই চা রপ্তানি করা হয়। ভারতে কেরলের কোল্লাম একটি পুনঃরপ্তানি বন্দর।
29. ইনটারনেটের কাজ কী?
উত্তর – ইনটারনেটের কাজ: সমগ্র বিশ্বজুড়ে অগণিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যে ব্যবস্থার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত সেই ব্যবস্থাকে ইনটারনেট বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) দ্রুত, সহজে এবং স্বল্প ব্যয়ে যোগাযোগ সাধনের এটি অন্যতম মাধ্যম। (2) ইনটারনেটের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ তথ্যের অনুসন্ধান, ই-মেল, নেট ব্যাংকিং প্রভৃতি কাজ করা হয়। (3) বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি ইনটারনেটের মাধ্যমেই ক্রিয়াশীল থাকে।
30. পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে প্রভেদ কী?
উত্তর – পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভেদ : পরিবহণ বলতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্যের লেনদেন ও যাত্রীর যাতায়াতকে বোঝায় কিন্তু যোগাযোগ হল তথ্য ও ভাবের আদানপ্রদান।
31. শিল্পের ওপর সড়ক পরিবহণের প্রভাব কতখানি?
উত্তর – শিল্পের ওপর সড়ক পরিবহণের প্রভাব: যেসব শিল্পে কাঁচামাল বা উৎপাদিত পণ্য খুব বেশি দূরে আনা-নেওয়া বা আমদানি-রপ্তানি করতে হয় না, সেইসব শিল্পে সড়ক পরিবহণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। মূলত আঞ্চলিক পরিবহণের ক্ষেত্রে সড়কপথ ব্যয় সংকোচনকারী এবং লাভজনক পরিবহণ মাধ্যম।
32. শিল্পের ওপর জলপথ পরিবহণের ভূমিকা কতখানি?
উত্তর – শিল্পের ওপর জলপথ পরিবহণের ভূমিকা: জলপথ পরিবহণ সবচেয়ে সস্তা ও লাভজনক। সেইজন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জলপথের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। জলপথ পরিবহণ সস্তা এবং সুলভ বলেই বন্দরের নিকটবর্তী অঞ্চলেই বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটে। যে দেশে যত বেশি বন্দর সেই দেশ শিল্পে তত উন্নত।
33. ভারতের পরিবহণের মাধ্যমগুলি কী কী?
উত্তর – ভারতের পরিবহণের মাধ্যম : ভারতের পরিবহণ ব্যবস্থাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়, এগুলি হল— (1) স্থলপথ, (2) জলপথ, (3) বিমানপথ, (4) পাইপলাইন ও (5) রজ্জুপথ। স্থলপথকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— (1) সড়কপথ ও (2) রেলপথ। তেমনই জলপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— (1) অভ্যন্তরীণ জলপথ, (2) উপকূলীয় জলপথ ও (3) আন্তর্জাতিক জলপথ। বিমানপথকে দু-ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা— (1) অভ্যন্তরীণ বিমানপথ ও (2) আন্তর্জাতিক বিমানপথ।
34. গ্রামীণ পথ কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রসারিত বা বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে সংযোগকারী পথকে গ্রামীণ পথ বলে। বৈশিষ্ট্য : (1) এই পথগুলি বেশিরভাগ সময়ে কাঁচা বা মোরাম দেওয়া থাকে। (2) এই পথগুলি অপ্রশস্ত এবং আঁকাবাঁকা হয়। (3) গ্রামীণ পথগুলি প্রধান সড়কপথের সাথে মেশে।
35. জলপথকে উন্নয়নের জীবনরেখা’ বলে কেন?
উত্তর – জলপথকে উন্নয়নের জীবনরেখা বলার কারণ : আধুনিক যুগে বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যম হিসেবে জলপথের গুরুত্ব এত বেশি যে একে উন্নয়নের জীবনরেখা বলে। (1) বহির্বাণিজ্যের বেশিরভাগই জলপথে পরিবাহিত হয়। (2) জলপথে পরিবহণ ব্যয় সবচেয়ে কম। (3) সমুদ্রবেষ্টিত দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে জলপথে বাণিজ্যের ওপর।
36. সীমান্ত সড়কপথ কী?
উত্তর – ধারণা: স্বাধীনতা লাভের পর প্রতিরক্ষার জন্য সীমান্ত সড়ক উন্নয়ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে দেশের সীমান্ত অঞ্চল বরাবর যেসব সড়কপথ নির্মাণ করা হয়, সেই সড়কপথগুলি সীমান্ত সড়কপথ নামে পরিচিত। বর্তমানে সারা দেশে এই রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 32885 কিমি। উদাহরণ: এরকমই একটি সীমান্ত সড়কপথ হিমাচলের মানালি থেকে লাডাকের লেহ শহর পর্যন্ত প্রসারিত। এটি পৃথিবীর উচ্চতম পথ।
37. লাইনার কী?
উত্তর – ধারণা : জলপথে বাণিজ্যের যে জাহাজগুলি একটি নির্দিষ্ট পথে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণ করে, সেই নির্দিষ্ট পথকে লাইনার বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) এগুলি দ্রুতগামী এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। (2) এর পরিবহণ ব্যয় অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।
38. ট্রাম্প কী?
উত্তর – ধারণা: সমুদ্রপথে চলাচলকারী এক বিশেষ ধরনের পণ্যবাহী জাহাজকে ট্রাম্প বলে। বৈশিষ্ট্য: (1) এই জাহাজগুলি ধীরগামী। (2) এগুলির কোনো নির্দিষ্ট যাত্রাপথ নেই বা নির্দিষ্ট সময় ধরেও চলে না। (3) যেখানে যেমন পণ্য পায় তেমনই ওইসব পণ্য বহন করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়। উদাহরণ : কয়লা বা কাঠ শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল এই সব জাহাজগুলি বহন করে।
39. সওদাগরি জাহাজ কী?
উত্তর – ধারণা : সমুদ্রপথের বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী যেসব জাহাজ নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দেশে পরিবহণ করে, সেইসব জাহাজকে সত্তদাগরি জাহাজ বলে ৷ উদাহরণ : খনিজ তেল, লোহা ও ইস্পাত, মূল্যবান কাঠ ইত্যাদি এই জাহাজ পরিবহণ করে।
40. বায়ুদূত কী?
উত্তর – ধারণা: দেশের অভ্যন্তরে স্থানীয়ভাবে ছোটো ছোটো বিমানবন্দরগুলির মধ্যে ছোটো ছোটো বিমানগুলি চলাচল করে। অল্প সংখ্যক আসনবিশিষ্ট স্বল্প দূরত্ব অতিক্রমকারী বিমান পরিসেবা বায়ুদূত নামে পরিচিত। 1997 সালের 1 এপ্রিল এই বিমান পরিসেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
41. পবন হংস কী ?
উত্তর – ধারণা : রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এবং কখনো কখনো রাজ্য সরকারের উদ্যোগে যে হেলিকপ্টার পরিসেবা প্রদান করা হয়, তার নাম পবন হংস। গুরুত্ব : খনিজ তেলের ক্ষেত্রে অন্বেষণ ও উদ্ধারকার্যে এবং অল্প দূরত্বের পাহাড়ি পথে তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতের জন্য এই হেলিকপ্টার পরিসেবা চালু আছে।
42. টেলিঘনত্ব কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: কোনো দেশে বা অঞ্চলে বসবাসকারী প্রতি 100 জন লোকপিছু যতগুলি ফিক্সড টেলিফোন রয়েছে, তার অনুপাতকে টেলিঘনত্ব বলে। বৈশিষ্ট্য : (1) আধুনিক বা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম সূচক বোঝানো হয় টেলিঘনত্বের মাধ্যমে। (2) টেলিঘনত্ব ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে প্রথম চালু হয়।
43. কলকাতা চক্ররেল কী?
উত্তর – ধারণা : কলকাতা শহরের যাত্রী পরিবহণ পরিসেবার সুব্যবস্থার উদ্দেশ্যে কলকাতা শহরকে প্রায় বেষ্টন করে পূর্বরেলের অধীনে যে রেলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, সেই রেলপথ পরিবহণ ব্যবস্থাকে কলকাতা চক্ররেল বলে। উদাহরণ : এই পথের শুরু ও শেষ বিমানবন্দর স্টেশনে। এই চক্ররেল পথে দমদম, মাঝেরহাট, বাগবাজার, বড়োবাজার, বালিগঞ্জ, ইডেন গার্ডেনস, বিবাদিবাগ প্রভৃতি মোট 20টি স্টেশন আছে। কলকাতা চক্ররেলের দৈর্ঘ্য প্রায় 35 কিমি এবং এর সূচনা হয় 1984 সালে।
44. কৃষি উন্নয়নে রেলপথের ভূমিকা কতখানি?
উত্তর – কৃষি উন্নয়নে রেলপথের ভূমিকা: রেলপথের মাধ্যমে কৃষিপণ্য বাজার এলাকায় পৌঁছোনোর সুযোগ পায়। উৎপাদিত কৃষিপণ্য রেলপথের মাধ্যমে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করা যায়। তেমনই কৃষিতে প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, বীজ, কৃষিযন্ত্রপাতি রেল পরিবহণ করে এনে কৃষক এবং কৃষিকাজে সহায়তা করে।
45. ভারী পণ্য পরিবহণের জন্য কোন্ পথ সর্বাপেক্ষা কম ব্যয়সাপেক্ষ ও কেন?
উত্তর – ভারী পণ্য পরিবহণের জন্য কম ব্যয়সাপেক্ষ পথ ও তার কারণ : ভারী পণ্য পরিবহণের জন্য সর্বাপেক্ষা কম ব্যয়সাপেক্ষ পথ হল জলপথ। এর কারণগুলি হল— (1) জলপথ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ব্যয় হয় না, (2) একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন আকার ও আয়তনের পণ্য পরিবহণ করা যায় এবং (3) খালপথ ও নদীপথ ছাড়া বাকি জলপথ অবাধ—অর্থাৎ জলপথে যে-কোনো দিকে যে-কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করা যায়। আলাদা করে শুল্ক দিতে হয় না।
46. আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুটি মাধ্যম কী কী?
উত্তর – আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম : আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুটি মাধ্যম হল— (1) ইনটারনেট এবং (2) সেলফোন বা মোবাইল ফোন।
47. সহযোগী বা পরিপূরক বন্দর কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: যখন প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের নাব্যতা হ্রাস-সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন তা সমাধানের জন্য সেই বন্দরের সহায়ক হিসেবে যে আর-একটি বন্দর গড়ে তোলা হয়, যার মাধ্যমে মূল বন্দরটির আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অনেকটা কাজই সম্পন্ন হয়, সেই বন্দরকে ওই গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটির সহযোগী বা পরিপুরক বন্দর বলে। উদাহরণ: কলকাতা বন্দরের সহযোগী বা পরিপূরক বন্দর হল হলদিয়া।
48. ইনটারনেট কী?
উত্তর – সংজ্ঞা : Interconnected Networks শব্দ দুটিকে সংক্ষেপে Internet বলে। সমগ্র বিশ্বের সমস্ত কম্পিউটারকে মডেমের মাধ্যমে টেলিফোন লাইনের সাহায্যে একসঙ্গে যুক্ত করে যে পারস্পরিক সংযোগ ব্যবস্থা বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয়, তাকেই বলে ইনটারনেট। বৈশিষ্ট্য : ইনটারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের যে-কোনো স্থানে সংবাদ, তথ্য, ছবি, চিঠিপত্র প্রভৃতি দ্রুত পাঠানো যায়।
49. ভারতে ইনটারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ভারতে ইনটারনেটের ব্যবহার : ভারতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার খুব বেশি হলেও ইনটারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা একটু কম। 2017 সালের 31 ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত ভারতে ইনটারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ছিল প্রায় 46.21 কোটি। উন্নত ইনটারনেট পরিসেবা প্রদানের জন্য সৌরবিদ্যুৎ চালিত WiFi ব্যবস্থা ও উন্নত ফাইবার কেবল ব্যবহার করা হচ্ছে।
50. হীরক চতুর্ভুজ (Diamond Quadrilateral) প্রকল্প কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: কলকাতা-দিল্লি-মুম্বাই-চেন্নাই— ভারতের এই চারটি মেগাসিটির মধ্যে অতি উচ্চগতিসম্পন্ন (প্রতি ঘণ্টায় 320 কিমির বেশি) ট্রেন চালানোর যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেই প্রকল্পকে হীরক চতুর্ভুজ বলা হয়। সোনালি চতুর্ভুজের মতো এই প্রকল্পটি রূপায়িত হলেও ভারতের চার প্রান্তের চারটি প্রধান শহরের মধ্যে রেলপথে পরিবহণ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হবে।
51. ই-মেল (e-mail) কী ?
উত্তর – ধারণা : ই-মেল বা e-mail-এর পুরোকথাটি হল electronic mail | সাধারণভাবে বলা যায়, ইনটারনেটের মাধ্যমে অতি অল্পসময়ে বা মুহূর্তের মধ্যে এবং খুব কম খরচে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠানো খবরাখবর তথ্য পত্রকে বলে ই-মেল।
52. পশ্চাদভূমি কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: একটি বন্দরের মাধ্যমে যে অঞ্চলের উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানি করা হয় এবং ওই বন্দরের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য যে অঞ্চলের মধ্যে বণ্টন করা হয়, সেই অঞ্চলকে ওই বন্দরের পশ্চাদভূমি বলে। উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গ-সহ প্রায় সমগ্র পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত কলকাতা বন্দরের পশ্চাদভূমি।
53. পোতাশ্রয় কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: পোত বা জাহাজের আশ্রয়স্থলকে বলে পোতাশ্রয়। প্রকৃতপক্ষে, বন্দরের মধ্যে যেখান থেকে জাহাজ নিরাপদে মালপত্র বোঝাই ও খালাস করে, সেই জায়গাটিকে বলে বন্দরের পোতাশ্রয়। পোতাশ্রয় না থাকলে বন্দর গড়ে ওঠে না। পোতাশ্রয় দুধরনের হয়, যথা— (1) স্বাভাবিক পোতাশ্রয় এবং (2) কৃত্রিম পোতাশ্রয়।
54. আউটসোর্সিং কী?
উত্তর – ধারণা : আউটসোর্সিং কথাটির অর্থ হল অর্থের বিনিময়ে বাইরের থেকে কাজ করিয়ে নেওয়া। এই কাজে সাহয্য করে যে প্রতিষ্ঠানগুলি, তাদের এজেন্সি বা কনসালটেন্সি বলে। এরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং সস্তা ও দক্ষ শ্রমিকনির্ভর হয়। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে আউটসোর্সিংয়ের ব্যবহার সর্বাধিক। তথ্যপ্রযুক্তির চাহিদা উন্নত বিশ্বে অধিক, কিন্তু সেখানে শ্রম যেমন সস্তা নয়, তেমনই দক্ষ শ্রমিকেরও বেশ অভাব রয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এগুলি সহজলভ্য। তাই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ভারতে আউটসোর্সিংয়ের বাজার খুব ভালো।
বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. পাকা সড়কপথের দৈর্ঘ্যে সারা পৃথিবীতে ভারতের স্থান—
(a) দ্বিতীয়
(b) তৃতীয়
(c) চতুর্থ
(d) পঞ্চম
উত্তর – (a) দ্বিতীয়
2. কলকাতা মেট্রো রেলপথ চালু হয় –
(a) 1984 সালে
(b) 1985 সালে
(c) 1986 সালে
(d) 1987 সালে
উত্তর – (a) 1984 সালে
3. স্বল্প দূরত্বের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পরিবহণের মাধ্যম—
(a) সড়কপথ
(b) রেলপথ
(c) বিমানপথ
(d) জলপথ
উত্তর – (a) সড়কপথ
4. পৃথিবীর দীর্ঘতম রেলপথ হল—
(a) কলকাতা-দিল্লি রেলপথ
(b) ট্রান্স-সাইবেরীয় রেলপথ
(c) ট্রান্স-ককেশীয় রেলপ
(d) ট্রান্স-কাস্পিয়ান রেলপথ
উত্তর – (b) ট্রান্স-সাইবেরীয় রেলপথ
5. রেলপথ পরিবহণে পৃথিবীতে ভারতের স্থান—
(a) প্রথম
(b) দ্বিতীয়
(c) তৃতীয়
(d) চতুর্থ
উত্তর – (d) চতুর্থ
6. ভারতের দীর্ঘতম রেলপথ—
(a) উত্তর রেলপথ
(b) দক্ষিণ রেলপথ
(c) পূর্ব রেলপথ
(d) পশ্চিম রেলপথ
উত্তর – (a) উত্তর রেলপথ
7. রেলপথের বিস্তারে ভারতের স্থান এশিয়ায়—
(a) প্রথম
(b) দ্বিতীয়
(c) তৃতীয়
(d) চতুর্থ
উত্তর – (b) দ্বিতীয়
৪. ভারতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংখ্যা —
(a) 10টি
(b) 12টি
(c) 20টি
(d) 34টি
উত্তর – (d) 34টি
9. সড়কপথে পণ্য পরিবহণে সবচেয়ে সুবিধা হল—
(a) স্বল্প পরিবহণ ব্যয়
(b) পরিবহণ
(c) প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহণ
(d) নিরাপদে পরিবহণ
উত্তর – (c) প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহণ
10. উত্তরে শ্রীনগর থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারীকে যুক্ত করার জন্য দ্রুতগামী সড়ক যোগাযোগ পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয়েছে-
(a) পূর্ব-পশ্চিম করিডর
(b) সোনালি চতুর্ভুজ
(c) উত্তর-দক্ষিণ করিডর
(d) উত্তর-মধ্য করিডর
উত্তর – (c) উত্তর-দক্ষিণ করিডর
11. SMS এর পুরোকথা হল—
(a) Social Message Service
(b) Short Message Service
(c) Shortly Money Savings
(d) Simple message Supply
উত্তর – (b) Short Message Service
12. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য যে ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা সস্তা —
(a) বিমানপথ
(b) সড়কপথ
(c) জলপথ
(d) রেলপথ
উত্তর – (c) জলপথ
13. দামি এবং পচনশীল দ্রব্য পরিবহণে যে ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থার সাহায্য নেওয়া হয় —
(a) বিমানপথ
(b) সড়কপথ
(c) জলপথ
(d) রেলপথ
উত্তর – (a) বিমানপথ
14. কত সালে ভারতে প্রথম রেলপথ চালু হয়? –
(a) 1853 সালে
(b) 1850 সালে
(c) 1901 সালে
(d) 1910 সালে
উত্তর – (a) 1853 সালে
15. মিটার গেজে দুটি রেললাইনের মধ্যে দূরত্ব হল —
(a) 1.68 মিটার
(b) 1 মিটার
(c) 0.76 মিটার
(d) 0.61 মিটার
উত্তর – (b) 1 মিটার
16. ব্রডগেজ রেলপথে দুটি রেললাইনের মধ্যে দূরত্ব হল –
(a) 1.68 মিটার
(b) 1 মিটার
(c) 0.76 মিটার
(d) 0.61 মিটার
উত্তর – (a) 1.68 মিটার
17. কত সালে ভারতে প্রথম বিমান পরিসেবা চালু হয়? –
(a) 1991 সালে
(b) 1911 সালে
(c) 1921 সালে
(d) 1901 সালে
উত্তর – (b) 1911 সালে
18. কোন্ ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা ভূপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করি?—
(a) রিমোট সেন্সিং
(b) জিপিএস
(c) ইনটারনেট
(d) টেলিফোন
উত্তর – (b) জিপিএস
19. টেলিগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা হল—
(a) রিমোট সেন্সিং
(b) ই-মেল
(c) টেলিগ্রাম
(d) ইনটারনেট
উত্তর – (c) টেলিগ্রাম
20. উত্তর-পূর্ব রেলপথের সদর দপ্তর –
(a) হাজিপুর
(b) কলকাতা
(c) বিলাসপুর
(d) গোরক্ষপুর
উত্তর – (d) গোরক্ষপুর
21. দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের সদর দপ্তর হল –
(a) কলকাতা
(b) হাওড়া
(c) পাটনা
(d) মালদা
উত্তর – (a) কলকাতা
22. ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়কটি হল –
(a) 1 নং জাতীয় সড়ক
(b) 2 নং জাতীয় সড়ক
(c) 6 নং জাতীয় সড়ক
(d) 7 নং জাতীয় সড়ক
উত্তর – (d) 7 নং জাতীয় সড়ক
23. গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডটি কলকাতা থেকে বিস্তৃত—
(a) বারাণসী পর্যন্ত
(b) দিল্লি পর্যন্ত
(c) চেন্নাই পর্যন্ত
(d) মুম্বাই পর্যন্ত
উত্তর – (b) দিল্লি পর্যন্ত
24. ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্দরটি হল—
(a) কলকাতা
(b) কান্ডালা
(c) মুম্বাই
(d) কোচি
উত্তর – (b) কান্ডালা
25. ভারতের গভীরতম বন্দর—
(a) মুম্বাই
(b) কলকাতা
(c) কান্ডালা
(d) বিশাখাপত্তনম
উত্তর – (d) বিশাখাপত্তনম
26. ভারতের যে বন্দরটি সবচেয়ে বেশি আকরিক লোহা রপ্তানি করে, সেটি হল—
(a) পারাদীপ
(b) কলকাতা
(c) মার্মাগাও
(d) নভসেবা
উত্তর – (c) মার্মাগাও
27. ভারতের প্রথম পাতালরেল চালু হয় –
(a) দিল্লিতে
(b) মুম্বাইয়ে
(c) চেন্নাইয়ে
(d) কলকাতায়
উত্তর – (d) কলকাতায়
28. ভারতের প্রথম পাইপলাইন সংযোগ চালু হয় –
(a) 1900 সালে
(b) 1906 সালে
(c) 1947 সালে
(d) 1956 সালে
উত্তর – (d) 1956 সালে
29. উত্তর-মধ্য রেলপথের সদর দপ্তর —
(a) গোরক্ষপুর
(b) হাজিপুর
(c) এলাহাবাদ
(d) কলকাতা
উত্তর – (c) এলাহাবাদ
30. কলকাতা মেট্রো রেলপথের সদর দফতর যেখানে অবস্থিত –
(a) মুম্বাই
(b) দিল্লি
(c) বেঙ্গালুরু
(d) কলকাতা
উত্তর – (d) কলকাতা
31. টেলি পরিসেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলি পর্যালোচনা করে—
(a) BSNL
(b) VSNL
(c) TRAI
(d) WBTA
উত্তর – (c) TRAI
32. যোগাযোগ ব্যবস্থায় ‘ভাইরাস’ নামটি যার সাথে যুক্ত –
(a) কম্পিউটার
(b) টেলিফোন
(c) ফ্যাক্স
(d) স্যাটেলাইট
উত্তর – (a) কম্পিউটার
33. কৃত্রিম পোতাশ্রয়ের একটি উদাহরণ হল—
(a) মুম্বাই
(b) কোচি
(c) চেন্নাই
(d) বিশাখাপত্তনম
উত্তর – (c) চেন্নাই
34. পূর্ব-পশ্চিম করিডরের মোট দৈর্ঘ্য—
(a) 4000 কিমি
(b) 3600 কিমি
(c) 3300 কিমি
(d) 3000 কিমি
উত্তর – (c) 3300 কিমি
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. সেন্ট্রাল রেলের সদর দফতর ……….. অবস্থিত।
উত্তর – মুম্বাইয়ে
2. পশ্চিমবঙ্গে রেলপথ চালু হয় ………. সালে।
উত্তর – 1854
3. এশিয়ান হাইওয়ে একটি ………. সড়কপথ।
উত্তর – আন্তর্জাতিক
4. সবচেয়ে সস্তা এবং দ্রুতগামী পরিবহণব্যবস্থা হল ………..।
উত্তর – রেলপথ
5. শিয়ালদহ-বনগাঁ রেলপথটি ………..রেলপথের অন্তর্ভুক্ত।
উত্তর – পূর্ব
6. ভারতের অধিকাংশ চা ……….. বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হয়।
উত্তর – কলকাতা
7. উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলপথের সদর দফতর ……….. অবস্থিত।
উত্তর – মালিগাঁওয়ে
৪. ভারতের প্রথম রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল ………… কিমি।
উত্তর – 33.6
9. ………… বন্দরকে ভারতের হাইটেক বন্দর বলে।
উত্তর – জওহরলাল নেহরু
10. ভারতে প্রথম মেট্রোরেল চালু হয় ……….. রাজ্যে।
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গ
11. ভারতে রাজ্য সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য ……… কিমি।
উত্তর – 154522
12. সোনালি চতুর্ভুজের লেন সংখ্যা ……….. টি।
উত্তর – 6
13. ………. পরিবহণে রাস্তা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় নেই।
উত্তর – জলপথ
14. বিশাখাপত্তনমের পোতাশ্রয়টি ………..।
উত্তর – স্বাভাবিক
15. মুম্বাই বন্দরকে ভারতের ……….. বলে।
উত্তর – প্রবেশদ্বার
16. বন্দরে জাহাজের আবাসস্থলকে বলে ………..।
উত্তর – পোতাশ্রয়
17. সোনালি চতুর্ভুজের দীর্ঘতম বাহুটির দৈর্ঘ্য ……….. কিমি।
উত্তর – 1684
18. 1853 সালে ……….. ও থানের মধ্যে প্রথম রেল যোগাযোগ শুরু হয়।
উত্তর – মুম্বাই
19. ……….. পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে সড়কপথ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
উত্তর – হালকা (বা পচনশীল)
20. একটি ইলেকট্রনিক ডাকব্যবস্থা হল ………..।
উত্তর – ই-মেল
