wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 6 ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ TOPIC – A & B

WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 6 ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ TOPIC – A & B

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 6 ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ TOPIC – A & B

West Bengal Board 10th Geography Solutions

TOPIC – A ভারতের কৃষি

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. কৃষিকাজ : মানবসভ্যতা বিস্তারের প্রথম পদক্ষেপ ও প্রাথমিক অর্থনৈতিক কাজ হল কৃষিকাজ। কৃষিকাজের ইংরেজি প্রতিশব্দ agriculture শব্দটি দুটি লাতিন শব্দ ‘ager’ অর্থাৎ ভূমি বা ক্ষেত্র এবং ‘culture’ অর্থাৎ কর্ষণ বা পরিচর্যা থেকে এসেছে। সুতরাং, কৃষিকাজের আক্ষরিক অর্থ হল ভূমি বা মৃত্তিকা কর্ষণ বা ভূমির পরিচর্যা।
  2. অর্থকরী ফসল : প্রধানত বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের জন্য কৃষকরা যেসব ফসল চাষ বা উৎপাদন করে, সেইসব ফসলকে অর্থকরী ফসল বলে।
  3. শস্যাবর্তন কৃষি: নির্দিষ্ট কোনো কৃষিক্ষেত্রে বা জমিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন শস্যের পর্যায়ক্রমিক চাষ করার পদ্ধতি শস্যাবর্তন কৃষি নামে পরিচিত।
  4. বাগিচা ফসল: প্রধানত রপ্তানির উদ্দেশ্যে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে যখন বৃহদায়তন বাগান বা খামারের মধ্যে প্রচুর মুলধন বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে একটি নির্দিষ্ট ফসল লাগিয়ে তা থেকে বহুবছর ফসল সংগ্রহ করা হয়, ফসল উৎপাদনের সেই পদ্ধতিকে বাগিচা কৃষি এবং উৎপাদিত ফসলটিকে বাগিচা ফসল বলে।
  5. তন্তু শস্য : যেসব শস্য থেকে আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায়, সেইসব শস্যকে তন্তু শস্য বলে।
  6. পানীয় ফসল : যেসব ফসলকে আমরা পানীয় হিসেবে গ্রহণ করি, সেইসব ফসলকে পানীয় ফসল বলে।
  7. খরিফ শস্য : ভারতে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সাথে সাথে বা বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যেসব ফসল বোনা বা চাষ করা হয়, সেইসব ফসলকে খরিফ শস্য বলে।
  8. রবি শস্য: শীতকালে বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকালে ভারতে যেসব শস্য চাষ করা হয়, সেইসব শস্য রবি শস্য নামে পরিচিত।
  9. জায়িদ শস্য : ভারতে রবি ও খরিফ শস্য ঋতুর মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ বসন্তকালে যেসব শস্যের চাষ হয়, সেইসব শস্য জায়িদ শস্য নামে পরিচিত।
  10. জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি : যে কৃষিব্যবস্থায় কৃষিজ ফসল কেবল কৃষকদের নিজস্ব চাহিদা বা স্থানীয় চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়, সেই কৃষি জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি নামে পরিচিত।
  11. কৃষিতে সবুজবিপ্লব: স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী সময়ে ভারতে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে ছয়ের দশকের শেষের দিক থেকে কৃষিকাজে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব্যের প্রয়োগ, ট্র্যাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতি আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও জলসেচের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এইসব ব্যবস্থা অবলম্বন করায় 1968 সাল থেকে 1978 সালের মধ্যে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমভাগে গম উৎপাদনে যে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে, সেই অভূতপূর্ব উন্নতিই সবুজবিপ্লব নামে পরিচিত।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতীয় কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ
ভারতীয় কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি : ভারতীয় কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বেশিরভাগ ফসল উৎপাদন করে। তাই এই কৃষিকাজ জীবিকাসত্তাভিত্তিক। উৎপাদিত শস্যের বেশিরভাগটাই কৃষকদের নিজেদের প্রয়োজনে লাগে। তাই উৎপাদিত ফসল বিক্রয় বা রপ্তানির জন্য বিশেষ উদ্বৃত্ত থাকে না।
  2. জনসংখ্যার চাপ : ভারতের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকে, অর্থাৎ এখানে কৃষির ওপর জনসংখ্যার চাপ অত্যন্ত বেশি। তাই ভারতীয় কৃষি হল শ্রমনিবিড় কৃষি।
  3. কৃষিতে পশুশক্তির প্রাধান্য: চাষাবাদের কাজে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির (ট্র্যাক্টর, হারভেস্টর প্রভৃতি) পরিবর্তে অধিকাংশ স্থানেই লাঙল দিয়ে জমি কর্ষণ বা খোঁড়া থেকে শুরু করে উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে বহন করে আনা—প্রায় সব কাজেই পশুশক্তি ব্যবহৃত হয়।
  4. মৌসুমি বৃষ্টির ওপর নির্ভরতা: ভারতের অর্ধেক কৃষিজমিতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে বছরে একবার কৃষিকাজ করা হয়। এজন্য খরা, বন্যা বা অতিবৃষ্টিতে কৃষিকাজ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  5. জলসেচের ব্যবহার : ভারতের প্রায় অর্ধেক কৃষিজমি সেচসেবিত এবং ওইসব জমিতে বছরে দুটি বা তিনটি ফসল উৎপাদিত হয়।
  6. ক্ষুদ্রাকৃতি কৃষিজোত: এদেশে অধিকাংশ কৃষিজমির আয়তন খুব ছোটো। মূলত একান্নবর্তী পরিবারগুলিতে উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকানা হস্তান্তরের জন্য কৃষিজোতগুলির আয়তন ক্রমাগত ছোটো হয়। এই ধরনের ক্ষুদ্রাকৃতি কৃষিজোতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যায় না। এর ফলে জমিতে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণও কম হয়। অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
2. ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বিবরণ দাও।
অথবা, ধান উৎপাদনের উপযোগী ভৌগোলিক অবস্থা বর্ণনা করো।
উত্তর – ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
ভারতের প্রধান কৃষিজ ফসল হল ধান। ধান উৎপাদনের জন্য অনুকূল
ভৌগোলিক পরিবেশগুলি হল—
  1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
    1. জলবায়ু : ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর উন্ন-আর্দ্র পরিবেশে ধানের চাষ হয়। [i] উন্নতা: ধান চাষের জন্য গড়ে 20°সে-30°সে উন্নতা প্রয়োজন। [ii] বৃষ্টিপাত: ধান চাষের জন্য বার্ষিক 100-200 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত বাঞ্ছনীয়। ধানের চারা বড়ো হওয়ার সময় প্রতি মাসে 12.5 সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হলে ধানের ফলন ভালো হয়। পাশাপাশি ধান পাকা ও কাটার সময় শুষ্ক ও রোদ ঝলমলে আবহাওয়া প্রয়োজন।
    2. মৃত্তিকা: [i] দোআঁশ মাটি ও পলিমাটি: উর্বর দোআঁশ মাটি এবং নদী উপত্যকার পলিমাটি ধান চাষের পক্ষে আদর্শ। [ii] অপ্রবেশ্য কাদামাটি: পলিমাটির নীচে অপ্রবেশ্য কাদামাটির স্তর থাকলে জমিতে জল জমে থাকে, যা ধান চাষের পক্ষে সহায়ক হয়।
    3. ভূমির প্রকৃতি: জমিতে জল জমে থাকলে ধান সবচেয়ে ভালো জন্মায়। তাই নদী উপত্যকা ও বদ্বীপ সমভূমি ধান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।
    4. ভূমির উচ্চতা: সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠে বা সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে সামান্য উঁচুতেই ধানের চাষ হয়। তবে, কেরলের আলাপ্পুঝা জেলাতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার চেয়ে নীচু অঞ্চলেও ধানের চাষ হয়। আবার, দেরাদুন (435 মি), কাশ্মীর উপত্যকা (1850 মি) এবং মুসৌরি (2006 মি)-তেও ধানের চাষ করা হয়।
  2. অর্থনৈতিক পরিবেশ
    1. শ্রমিক: জমি কর্ষণ করা, আগাছা পরিষ্কার করা, চারা লাগানো, শস্য ঝাড়াই করা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
    2. অন্যান্য : উচ্চফলনশীল বীজ, সার (জৈব ও রাসায়নিক), কীটনাশক, জলসেচ, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া গেলে ধানের উৎপাদন বাড়ে। এসবের জন্য প্রচুর মূলধনেরও প্রয়োজন হয়। সর্বোপরি চাহিদা বা বাজারও ধান চাষকে প্রভাবিত করে।
এ ছাড়া, বর্তমানে ধান ভারতের অনেক স্থানে বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। তাই উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা ধান চাষকে আরও লাভজনক চাষে পরিণত করতে পারে।
3. ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। ভারতের ধানের বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলসমূহ
ভারতের প্রায় সব অঞ্চল বা রাজ্যেই ধান চাষ করা হয়। তবে দেশের মোট ধান উৎপাদনের অর্ধাংশেরও বেশি পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, ওডিশা ও ছত্তিশগড় রাজ্য থেকে। ভারতীয় কৃষিমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে 4.32 কোটি হেক্টর জমিতে 11.01 কোটি টন (2016-17) ধান উৎপন্ন হয়। ধান উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয় (চিনের পরেই)। ভারতে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনের পরিমাণ 2550 কেজি (2016-17)। ভারতে ধান উৎপাদক প্রধান তিনটি রাজ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—
  1. পশ্চিমবঙ্গ: উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মুরশিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ও উত্তর 24 পরগনা, হুগলি, নদিয়া প্রভৃতি জেলায় ধান উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] পশ্চিমবঙ্গ ধান উৎপাদনে ভারতে শীর্ষস্থানাধিকারী রাজ্য। [ii] এখানে 51.5 লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। [iii] মোট ধান উৎপাদন হয় প্রায় 1.51 কোটি টন (2017)। [iv] হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন হয় 2933 কেজি।
  2. উত্তরপ্রদেশ : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে বারাণসী, গোরক্ষপুর, ফৈজাবাদ, পিলিভিত, লখিমপুর খেরি প্রভৃতি জেলায় ধান উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] উত্তরপ্রদেশ ধান উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী রাজ্য। [ii] এখানে 56.5 লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। [iii] মোট ধান উৎপাদন হয় প্রায় 1.18 কোটি টন (2017) | [iv] হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন হয় 2295 কেজি।
  3. পাঞ্জাব : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে পাতিয়ালা, জলন্ধর জেলায় ধান উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] ধান উৎপাদনে ভারতে তৃতীয় স্থানাধিকারী হল পাঞ্জাব। [ii] এখানে 27.6 লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। [iii] মোট ধান উৎপাদন হয় প্রায় 1.10 কোটি টন (2017) ধান। [iv] পাঞ্জাবে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনের পরিমাণ ভারতে সর্বোচ্চ, প্রায় 3998 কেজি।
  4. অন্যান রাজ্যের উৎপাদক জেলা : (1) অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরী, কৃষ্ণা, গুন্টুর, নালগোণ্ডা ; (2) ওডিশার সম্বলপুর, কটক; (3) তামিলনাড়ুর ভেল্লোর, কাড্ডালোর, ভিল্লুপুরম, থাঞ্জাভুর; (4) ছত্তিশগড়ের রায়পুর, দুর্গ, বাস্তার; (5) বিহারের গয়া, দ্বারভাঙ্গা; (6) কর্ণাটকের শিমোগা, মান্ডিয়া; (7) হরিয়ানার জিন্দ, হিসার প্রভৃতি জেলায় যথেষ্ট পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়।

Source – Directorate of Economics and Statistics, Department of Agriculture and Cooperation.

ভারতের ধানের বাণিজ্য
2017 সালের তথ্য অনুসারে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ। ভারত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাল রপ্তানি করা হয়, যেমন—ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরাক, ইয়েমেন, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, বাংলাদেশ, কুয়েত প্রভৃতি দেশে বাসমতী চাল রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে, বাসমতী ছাড়া অন্যান্য ধরনের চাল বেনিন, সেনেগাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়।
4. গম চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
অথবা, গম উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
উত্তর – গম চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
গম উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল। গম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশগুলি হল—
  1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
    1. জলবায়ু: গম চাষের জন্য শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন। [i] উন্নতা : গম চাষের সময় গড় উন্নতা 15°সে-20°সে এবং গম পাকার সময় গড়ে 25° সে উন্নতা থাকলে ভালো হয়। [ii] বৃষ্টিপাত : গড়ে 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত গম চাষের উপযোগী। তবে গম পাকার সময় বৃষ্টিপাত না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর 50 সেমির কম বৃষ্টিপাত হলে জলসেচের প্রয়োজন অন্যদিকে বৃষ্টিপাত 100 সেমির বেশি হলে গম চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। [iii] আর্দ্রতা : চাষের শুরুতে অর্থাৎ অঙ্কুরোদগমের সময় আর্দ্র শীতল আবহাওয়া, গাছ বাড়ার সময় কিছুটা শুষ্ক আবহাওয়া, গমের পুষ্টির সময় আর্দ্র আবহাওয়া এবং ফসল পাকা ও কাটার সময় কিছুটা উম্ন ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন। [iv] তুষার: তুষারপাতে গমের উৎপাদন হ্রাস পায়। তাই চাষের সময় কমপক্ষে 110টি তুষারমুক্ত দিন প্রয়োজন।
    2. ত্তিকা : মৃদু অম্লধর্মী ভারী দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ও এঁটেল দোআঁশ মাটি এবং হালকা কাদামাটিতে গমের চাষ ভালো হয়।
    3. ভূমির অবস্থা: গম গাছের গোড়ায় জল জমে থাকা ক্ষতিকর। তাই ভালো জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত সমতল জমি বা সামান্য ঢালু জমি গম চাষের জন্য প্রয়োজন।
  2.  অর্থনৈতিক পরিবেশ
    1. জলসেচ: ভারতে যেসব অঞ্চলে বছরে গড়ে 50 সেমি-এর কম বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে গম চাষ করতে হলে যথেষ্ট জলসেচ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
    2. শ্রমিক: ভারতে জমি তৈরি, বীজবপন, গম কাটা ও ঝাড়াই ইত্যাদি কাজে এখনও শ্রমিকের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
    3. মূলধন: বিস্তীর্ণ জমিতে গম চাষ করতে হলে উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা, উচ্চফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদির জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।
    4. চাহিদা ও বাজার : নাতিশীতোয় ও শীতপ্রধান দেশের প্রধান খাদ্যশস্য গম হওয়ায় এর আন্তর্জাতিক বাজার ধানের চেয়ে বেশি।
5. ভারতের কোথায় কোথায় গম উৎপাদিত হয়? ভারতের গমের বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ভারতের গম উৎপাদক অঞ্চলসমূহ
শীতকালে উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি ও উপদ্বীপীয় মালভূমির অনুচ্চ অংশে গম চাষ করা হয়। ভারতের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক গম উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্য থেকে পাওয়া যায়। ভারতীয় কৃষিমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রায় 3.06 কোটি হেক্টর জমিতে 9.84 কোটি টন গম (2016-17) উৎপন্ন হয়। গম উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয় (চিনের পরেই)। ভারতে গমের গড় উৎপাদনশীলতা হেক্টরপ্রতি প্রায় 3216 কেজি (2016-17)। ভারতে গম উৎপাদক প্রধান তিনটি রাজ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—
  1. উত্তরপ্রদেশ : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে সাহারানপুর, মুজফ্ফরনগর, মিরাট, এটাওয়া, মোরাদাবাদ প্রভৃতি জেলায় গম উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] উত্তরপ্রদেশ ভারতের শীর্ষস্থানাধিকারী গম উৎপাদক রাজ্য। [ii] এখানে 96.6 লক্ষ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। [iii] মোট গম উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় 3.06 কোটি টন (2017) । [iv] হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদন হয় 3113 কেজি।
  2. মধ্যপ্রদেশ : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে সাগর, বিদিশা, গোয়ালিয়র, ছতরপুর প্রভৃতি জেলায় গম উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] গম উৎপাদনে ভারতে এই রাজ্যের স্থান দ্বিতীয়। [ii] এখানে 60.3 লক্ষ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। [iii] 1.79 কোটি টন (2017) গম উৎপাদিত হয়েছে। [iv] হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদন হয় প্রায় 2976 কেজি।
  3. পাঞ্জাব: উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে ফিরোজপুর, লুধিয়ানা, পাতিয়ালা, বাথিন্ডা, গুরুদাসপুর প্রভৃতি জেলায় গম উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] পাঞ্জাব ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক রাজ্য। [ii] এখানে 35.0 লক্ষ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। [iii] মোট গম উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় 1.64 কোটি টন (2017)। [iv] হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ভারতে সর্বোচ্চ, প্রায় 4704 কেজি।
  4. অন্যান্য রাজ্যের উৎপাদক জেলা: (1) হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র, কর্ণাল, সোনেপত; (2) রাজস্থানের গঙ্গানগর, ভরতপুর, কোটা; (3) বিহারের  পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, চম্পারণ; (4) গুজরাটের মহেষাণা, খেড়া, রাজকোট; (5) মহারাষ্ট্রের ধূলে, জলগাঁও, অমরাবতী; (6) পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম প্রভৃতি জেলায় কিছু পরিমাণে গম উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: হরিয়ানায় প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় 4514 কেজি গম উৎপাদিত হয়।

Source – Directorate of Economics and Statistics, Department of Agriculture and Cooperation.

ভারতের গমের বাণিজ্য
ভারত থেকে গম রপ্তানি করা হয়। 2017-18 সালে ভারত থেকে 669.01 কোটি টাকা মূল্যের প্রায় 3.24 লক্ষ টন গম রপ্তানি করা হয়েছে। ভারত থেকে নেপাল, আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, যুক্তরাজ্য, জর্ডন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে গম রপ্তানি করা হয়।
6. উৎপাদক অঞ্চল-সহ ভারতে মিলেট চাষের অনুকূল অবস্থা লেখো। ভারতের মিলেট শস্যের বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – উৎপাদক অঞ্চল-সহ ভারতে মিলেট চাষের অনুকূল অবস্থা
জোয়ার, বাজরা ও রাগিকে একত্রে মিলেট বলে । এগুলি ক্রান্তীয় শুষ্ক অঞ্চলের ফসল। ভারতে মিলেট চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ এবং উৎপাদক অঞ্চল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—
জোয়ার চাষের অনুকূল অবস্থা
  1. জলবায়ু : (1) উন্নতা: জোয়ার চাষের জন্য গড়ে 26°সে-33 °সে উন্নতার প্রয়োজন। 16°সে-এর কম উন্নতা ও অধিক আর্দ্রতা জোয়ার চাষে ক্ষতি করে। (2) বৃষ্টিপাত: এই চাষের জন্য বছবে 30-100 সেমি বৃষ্টিপাত দরকার।
  2. মাটি : পলিমাটি ও লোহিত মাটিতে জোয়ার চাষ করা হলেও কালোমাটি এই ফসল চাষের জন্য আদর্শ।
  3. ভূপ্রকৃতি : সমভূমিতেই জোয়ার চাষ ভালো হয়। পাহাড়ের মৃদু ঢালেও জোয়ার চাষ করা যায়।
উৎপাদক অঞ্চল
জোয়ার উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল – 1. মহারাষ্ট্র—প্রথম। জলগাঁও, বুলধানা, আকোলা, অমরাবতী প্রভৃতি জেলা। 2. কর্ণাটক—–—দ্বিতীয়। বিজয়পুরা, ধারওয়ার, রায়চুর, বেল্লারি প্রভৃতি জেলা। 3. মধ্যপ্রদেশ (তৃতীয়)। এ ছাড়া, রাজস্থান, তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশে জোয়ার চাষ হয়। ভারতে 2016-17 সালে 45.7 লক্ষ টন জোয়ার উৎপাদিত হয়।
ৰাজরা চাষের অনুকূল অবস্থা
  1. 1. জলবায়ু : (1) উন্নতা: গড়ে 25°সে-30 °সে উন্নতায় বাজরা চাষ হয়। ফসল পাকার সময় উন্নতা বেশি হওয়া দরকার। (2) বৃষ্টিপাত: বাজরা চাষের জন্য বছরে 40-50 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
  2. মাটি: বালিমাটিতে বাজরার চাষ খুব ভালো হয়। তবে কালোমাটি ও লোহিত মাটিতেও এই চাষ হয়।
  3. ভূপ্রকৃতি : সমতলভূমি ও মালভূমিতে বাজরা চাষ হয়।
উৎপাদক অঞ্চল
বাজরা উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল – 1. রাজস্থান—প্রথম। যোধপুর, বিকানের, চুরু, বারমের প্রভৃতি জেলা। 2. উত্তরপ্রদেশ—দ্বিতীয় । হামিরপুর, প্রতাপগড়, আউরাইয়া প্রভৃতি জেলা। এ ছাড়া, হরিয়ানা, গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের শুষ্ক অঞ্চলে বাজরা চাষ করা হয়। 2016-17 সালে 98 লক্ষ টন বাজরা উৎপাদিত হয়।
রাগি চাষের অনুকূল অবস্থা
  1. জলবায়ু : (1) উন্নতা: গড়ে 20°সে-30 °সে উন্নতায় রাগি চাষ হয়। (2) বৃষ্টিপাত: রাগি চাষের জন্য বছরে 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
  2. মাটি: হালকা কালোমাটি, লালমাটি ও বালিময় পলল মাটিতে রাগি চাষ  হয় ৷
  3. ভূপ্রকৃতি : তরঙ্গায়িত মালভূমি অঞ্চলে রাগি চাষ ভালো হয় ৷
উৎপাদক অঞ্চল
রাগি উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল— 1. কর্ণাটক—প্রথম। এখানকার হাসান, চিত্রদুর্গ, টুমকুর, মহীশূরে প্রচুর রাগি চাষ হয়। 2. তামিলনাড়ু—দ্বিতীয় নীলগিরি, কাড্ডালোর, তিরুবন্নামালাই, সালেম প্রধান রাগি উৎপাদক অঞ্চল। 3. অন্যান্য—উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ে, মহারাষ্ট্রে, অন্ধ্রপ্রদেশে, বিহারে রাগি চাষ হয়।

Source – Directorate of Economics and Statistics, Department of Agriculture and Coorporation.

ভারতের মিলেট শস্যের বাণিজ্য
ভারত থেকে মিলেট বিদেশে রপ্তানি করা হয়। FAO (2016)-এর তথ্য অনুসারে ভারত থেকে প্রায় 76340 টন মিলেট বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।
7. ইক্ষু চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সম্বন্ধে আলোচনা করো।
অথবা, আখ উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ইক্ষু বা আখ উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
আখ উৎপাদনের জন্য যে যে অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের প্রয়োজন, সেগুলি হল—
  1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
    1. জলবায়ু: আখ ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল। খরিফ শস্য হিসেবে আখ চাষ করা হয়। [i] উন্নতা: আখ চাষের জন্য 20°সে-27 °সে তাপমাত্রা প্রয়োজন। এর থেকে বেশি উন্নতা আখ গাছের ক্ষতি করে। [ii] বৃষ্টিপাত: বছরে 75-150 সেমি বৃষ্টিপাত আখ চাষের আদর্শ। তবে এর থেকে কম বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে জলসেচের মাধ্যমে আখ চাষ করা হয়। [iii] সামুদ্রিক আবহাওয়া: সামুদ্রিক লবণাক্ত আবহাওয়ায় আখ গাছ বেড়ে ওঠে এবং আখের রসে মিষ্টত্ব বাড়ে। তাই পশ্চিম ভারতে বেশি ভালো আখ উৎপাদন হয়। [iv] কুয়াশা: কুয়াশা, ধোঁয়াশা, তুষারপাত আখ চাষে খুব ক্ষতি করে।
    2. মাটি : চুনযুক্ত দোআঁশ এবং কালোমাটি আখ চাষে বিশেষ উপযোগী।
    3. ভূমির প্রকৃতি: আখ চাষের জমিতে জল দাঁড়ালে তা চাষে ক্ষতি করে। একারণে সামান্য ঢালযুক্ত সমভূমি আখ চাষের পক্ষে আদর্শ। তাই ভালো জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত ঈষৎ ঢালু জমি আখ চাষে ব্যবহৃত হয় ।
  2. অর্থনৈতিক পরিবেশ
    1. শ্রমিক : আখের চারা রোপণ, চাষ, ফসল কাটা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর নিপুণ এবং সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন। সেজন্য জনবহুল অঞ্চলে আখ চাষ করা হয়।
    2. পরিবহণের সুবিধা : পরিবহণ ব্যবস্থা ভালো না হলে আখ চাষ করা উচিত নয়। কারণ আখ কাটার 24 ঘণ্টার মধ্যে তা থেকে রস বের করে না নিলে আখের রসের পরিমাণ ও মিষ্টত্ব কমে যায়। একারণে চিনিকলগুলি আখ চাষের জমির নিকটবর্তী স্থানে গড়ে ওঠে।
    3. মূলধন : আখ জমির উর্বরতা দ্রুত নষ্ট করে দেয়। তাই প্রচুর সার প্রয়োগ করতে হয়। এ ছাড়া, কীটনাশক প্রয়োগ, জলসেচ করা, সুলভ শ্রমিক নিয়োগ এসবের জন্য প্রচুর অর্থের দরকার হয়।
    4. চাহিদা ও বাজার: আখকে গুদামজাত করা যায় না। তাই চাহিদার ওপর নির্ভর করে চিনিকল এবং আখের বাজার গড়ে ওঠে। ভারতে বিপুল জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে আখ চাষের জমির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে।
8.ভারতের প্রধান প্রধান ইক্ষু বা আখ উৎপাদক অঞ্চলের নাম করো। ভারতের আখের বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ভারতের প্রধান প্রধান ইক্ষু বা আখ উৎপাদক অঞ্চলসমূহ
ভারতের প্রধান প্রধান ইক্ষু বা আখ উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল—
  1. উত্তরপ্রদেশ : ভারতে ইক্ষু উৎপাদনে উত্তরপ্রদেশের স্থান প্রথম। উত্তরপ্রদেশে মোট ইক্ষু চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ 21.6 লক্ষ হেক্টর। উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যের মুজফ্ফরনগর, মিরাট, মোরাদাবাদ, সাহারানপুর, দেওরিয়া, গাজিয়াবাদ, বেরিলি, সীতাপুর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ইক্ষু উৎপাদক জেলা।
  2. মহারাষ্ট্র: ইক্ষু উৎপাদনে এই রাজ্যের স্থান ভারতে দ্বিতীয়। মহারাষ্ট্র রাজ্যের 6.30 লক্ষ হেক্টর জমিতে ইক্ষু চাষ করা হয়। উত্তরপ্রদেশের তুলনায় মহারাষ্ট্রে উৎপাদিত ইক্ষু গুণমানের দিক থেকে উন্নত। কালোমাটি, সামুদ্রিক আবহাওয়ার জন্য এখানে উন্নতমানের ইক্ষু পাওয়া যায়। উৎপাদক জেলা: এখানকার আহমেদনগর, কোলাপুর, পুনে, নাসিক, সানগ্লি, সাতারা, ওসমানাবাদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চল ।
  3. কর্ণটিক: এই রাজ্যের প্রায় 3.50 লক্ষ হেক্টর জমিতে ইক্ষু চাষ করা হয়। ইক্ষু উৎপাদনে এই রাজ্যের স্থান বর্তমানে ভারতে তৃতীয়। উৎপাদক জেলা: এখানকার মহীশূর, বিজয়পুরা, শিমোগা, চিত্ৰদূর্গ প্রভৃতি জেলাগুলিতে ইক্ষু চাষ করা হয়।
  4. অন্যান্য রাজ্য: এ ছাড়া, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, গুজরাত, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব রাজ্যে ইক্ষু চাষ করা হয়। উৎপাদন: 2016-17 সালে ভারতে ইক্ষুর মোট উৎপাদন ছিল 30.67 কোটি টন। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ 14.48, মহারাষ্ট্র 5.06, এবং কর্ণাটক 2.35 কোটি টন ইক্ষু উৎপাদন করে।
ভারতের ইক্ষু বা আখের বাণিজ্য
2016-17 সালে ভারত থেকে 8974 কোটি টাকা মূল্যের প্রায় 29.3 লক্ষ টন চিনি ও ঝোলাগুড় বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে আখ থেকে উৎপাদিত চিনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
9. তুলো চাষের জন্য কী ধরনের ভৌগোলিক অবস্থার প্রয়োজন?
অথবা, ভারতে কার্পাস চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ আলোচনা করো। 
উত্তর – তুলো বা কার্পাস চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
তুলো ভারতের প্রধান তন্তু ফসল। তুলো চাষের জন্য যে যে ভৌগোলিক অবস্থা বিশেষভাবে প্রয়োজন, সেগুলি হল—
  1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
    1. জলবায়ু: তুলো ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল। এখানকার মাঝারি ধরনের উন্নতা ও বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে তুলো চাষ করা হয়। [i] উন্নতা: তুলো চাষের জন্য গড়ে 20°সে-26°সে উন্নতা প্রয়োজন। [ii] বৃষ্টিপাত : বার্ষিক 60-100 সেমি বৃষ্টিপাতে তুলো চাষ ভালো হয়। অবশ্য উত্তর-পশ্চিম ভারত ও দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে জলসেচের সাহায্যে 60 সেমির কম বৃষ্টিপাতযুক্ত এলাকাতেও তুলো চাষ করা হচ্ছে।[iii] সামুদ্রিক বাতাস: সামুদ্রিক লোনা বাতাসে তুলো চাষ ভালো হয়।
    2. মৃত্তিকা:চুন মেশানো উর্বর দোআঁশ মাটি তুলো চাষের পক্ষে আদর্শ। এ ছাড়া, চারনোজেম মাটি এবং লাভা থেকে গঠিত দাক্ষিণাত্যের কালো রেণুর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে তুলো উৎপাদিত হয়।
    3. ভূমির প্রকৃতি তুলো গাছের গোড়াতে যাতে জল জমতে না পারে সেজন্য উত্তম জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত সমতল জমি বা সামান্য ঢালু জমি এই চাষের পক্ষে আদর্শ।
  2. অর্থনৈতিক পরিবেশ
    1. শ্রমিক: গাছ লাগানো, গাছের পরিচর্যা করা, গুটি তোলা, গুটি থেকে আঁশ ছাড়ানো প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের দরকার হয়।
    2. সার: তুলো চাষে জমির উর্বরতা খুব দ্রুত কমে যায়। তাই জমিতে পরিমিত জৈব ও রাসায়নিক সার দিতে হয়।
    3. কীটনাশক : তুলো গাছে প্রায়ই পোকা লাগে। যেমন—বল উইভিল নামে এক ধরনের পোকা তুলো চাষের খুব ক্ষতি করে। এজন্য তুলো চাষে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
    4. অন্যান্য: সার, কীটনাশক, উচ্চফলনশীল বীজ, আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি, জলসেচ প্রভৃতির সাহায্যে তুলো চাষ করার জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া, বাজারে তুলোর চাহিদা, তুলো পরিবহণের ভালো ব্যবস্থা প্রভৃতিও তুলোর উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
10. ভারতের তুলো উৎপাদক অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও। ভারতের তুলোর বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ভারতের তুলো উৎপাদক অঞ্চলসমূহ
ভারতে তুলোর চাষ প্রধানত দাক্ষিণাত্য মালভূমির কৃয় মৃত্তিকা অঞ্চলে দেখা যায়। এই অঞ্চলে উৎপন্ন হয় ভারতের অর্ধেকেরও বেশি তুলো। ভারতে প্রায় 1.09 কোটি হেক্টর জমিতে 3.31 কোটি বেল (2016-17) তুলো উৎপন্ন হয়। তুলো উৎপাদনে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দেশ। ভারতে হেক্টরপ্রতি তুলো উৎপাদনের পরিমাণ 519 কেজি (2016-17)। ভারতের তুলো উৎপাদক প্রথম তিনটি রাজ্য হল-
  1. মহারাষ্ট্র : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে আকোলা, অমরাবতী, ওয়ার্ধা, ইয়াভামল, নাগপুর, পারভানি জেলায় তুলো উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] মহারাষ্ট্র ভারতের শ্রেষ্ঠ তুলো উৎপাদক রাজ্য। [ii] এখানে প্রায় 38.0 লক্ষ হেক্টর জমিতে তুলো চাষ হয়। [iii] 1.06 কোটি বেল (2016-17) তুলো উৎপাদিত হয়েছে এখানে। [iv] হেক্টরপ্রতি উৎপাদন 475 কেজি।
  2. গুজরাত : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে আমেদাবাদ, ভারুচ, ভাদোদরা, সুরেন্দ্রনগর, সুরাত জেলায় তুলো উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] গুজরাত তুলো উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী রাজ্য। [ii] थায় 24.1 লক্ষ হেক্টর (2016-17) জমিতে তুলো চাষ হয়। [iii] 82.2 লক্ষ বেল (2016-17) তুলো উৎপাদিত হয়েছে। [iv] এখানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন 581 কেজি।
  3. তেলেঙ্গানা: উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে আদিলাবাদ, ওয়ারাঙ্গাল, খাম্মাম, মেডাক জেলায় তুলো উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] তেলেঙ্গানা তুলো উৎপাদনে ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। [ii] এখানে 14.1 লক্ষ হেক্টর জমিতে তুলো চাষ হয়। [iii] 2016-17 সালে 29.3 লক্ষ বেল তুলো উৎপাদিত হয়েছে। [iv] হেক্টরপ্রতি উৎপাদন প্রায় 354 কেজি।
  4. অন্যান্য রাজ্যের উৎপাদক জেলা : (1) মধ্যপ্রদেশের পূর্ব ও পশ্চিম নিমার, উজ্জয়িন; (2) হরিয়ানার হিসার, সিরসা, জিন্দ; (3) রাজস্থানের চিত্তোরগড়, ভিলওয়াড়া; (4) পাঞ্জাবের অমৃতসর, ফিরোজপুর, ফরিদকোট, বাথিন্ডা; (5) কর্ণাটকের রায়চুর, বিজয়পুরা; (6) তামিলনাড়ুর মাদুরাই, কোয়েম্বাটোর, তিরুনেলভেলি প্রভৃতি জেলায় কিছু পরিমাণে তুলো উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: 2016-17 সালের তথ্য অনুযায়ী তুলোর হেক্টরপ্রতি উৎপাদনে পাঞ্জাব ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে (756 কেজি/হেক্টর)।

Source – Directorate of Economics and Statistics, Department of Agriculture and Cooperation.

ভারতের তুলোর বাণিজ্য
ভারতে প্রধানত মাঝারি ও ছোটো আঁশের তুলো উৎপাদিত হয়। ফলে ভারতকে বিদেশ থেকে লম্বা আঁশের উৎকৃষ্ট শ্রেণির তুলো আমদানি করতে হয়। অস্ট্রেলিয়া, মিশর, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, তাঞ্জানিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে ভারত উন্নতমানের তুলো আমদানি করে। ভারত থেকে চিন, শ্রীলঙ্কা, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, জার্মানি, ইজিপ্ট, হংকং, তাইওয়ান, বাংলাদেশ, প্রভৃতি দেশে তুলো রপ্তানি করা হয়।
11. চা চাষের উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ কী কী? 
উত্তর – চা চাষের উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ
ভারতের প্রধান পানীয় ফসল চা। চায়ের উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান (2017) অধিকার করে। চা চাষের জন্য উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশগুলি হল –
  1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
    1. জলবায়ু: অল্প উয়, অধিক আর্দ্র মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের উচ্চভূমি বা পর্বতের ঢালে চায়ের চাষ হয়। [i] উন্নতা : চা চাষের জন্য গড়ে 16°সে -30°সে উয়তা প্রয়োজন। চা গাছ সামান্য বেশি উন্নতা বা অনেকটা ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে পারলেও শীতকালে তুষারপাত এবং গ্রীষ্মকালে শিলাবৃষ্টিতে চা চাষের খুব ক্ষতি হয়। [ii] বৃষ্টিপাত : চা চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়, বছরে প্রায় 150-250 সেমি। [iii] অন্যান্য : বৃষ্টিহীন গুমোট আবহাওয়া, ঘন কুয়াশা, শিশির বা তুহিন এবং তীব্র রোদ চা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।
    2. মৃত্তিকা:লৌহসমৃদ্ধ উর্বর দোআঁশ মাটি এবং পার্বত্য তৃণভূমির জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে (চারনোজেম মৃত্তিকা) চা চাষ ভালো হয়।
    3. ঢালু জমি: চা গাছের গোড়ায় জল জমলে গাছের ক্ষতি হয়। এজন্য মালভূমি বা পাহাড়ের ঢালে চা চাষ করা হয়।
    4. উচ্চতা: তুষারপাতের সম্ভাবনা মুক্ত খুব উঁচু পার্বত্য ঢালে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট চা উৎপন্ন হয়। ভারতে তরাই অঞ্চলে 90 মিটার উচ্চতা থেকে শুরু করে দার্জিলিঙে 1980 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চা বাগিচা রয়েছে।
  2. অর্থনৈতিক পরিবেশ
    1. শ্রমিক: চা গাছ থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে পাতা তোলা এবং বাগিচার পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর নিপুণ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। চা পাতা তোলার কাজে সাধারণত নারী ও শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
    2. অন্যান্য: চা বাগিচা ফসল। আধুনিক যন্ত্রপাতি, সার, কীটনাশক প্রভৃতি ব্যবহারের সুযোগসুবিধা, যথেষ্ট মূলধন, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাহিদা প্রভৃতির ওপর চা চাষ নির্ভরশীল।
12. ভারতের চা উৎপাদক অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও এবং ভারতের চায়ের বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – ভারতের চা উৎপাদক অঞ্চলসমূহ
ভারতে চায়ের চাষ প্রধানত উত্তর-পূর্ব ভারত, দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে হয়ে থাকে। ভারতের মোট চা উৎপাদনের ৪০ শতাংশেরও বেশি উৎপাদিত হয় অসম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। 2017-18 সালের হিসাব অনুসারে ভারতের মোট চায়ের উৎপাদন 132.51 কোটি কেজি। চা উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয় (চিনের পরেই)। বিশ্বের মোট চা উৎপাদনের 21.7% (2017) ভারতে উৎপাদিত হয়। চা উৎপাদনে ভারতের প্রথম তিনটি রাজ্য হল-
  1. অসম: উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে লখিমপুর, ডিব্ৰুগড়, নগাঁও, শিবসাগর, কাছাড়, কাৰ্বি আংলং, জোড়হাট, শোনিতপুর, হাইলাকান্দি প্রভৃতি জেলায় চা উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] অসম ভারতের শীর্ষস্থানাধিকারী চা উৎপাদক রাজ্য। [ii] এখানে 3.07 লক্ষ হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়। [iii] অসমে 67.63 কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে (2017-18) |
  2. পশ্চিমবঙ্গ : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর প্রভৃতি জেলায় চা উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] ভারতের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদক রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। [ii] এখানে 1.40 লক্ষ হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়। [iii] পশ্চিমবঙ্গে 38.79 কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে (2017-18)।
  3. তামিলনাড়ু : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে কন্যাকুমারী, তিরুনেলভেলি, থেনি, কোয়েম্বাটোর, নীলগিরি প্রভৃতি জেলায় চা উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] তামিলনাড়ু চা উৎপাদনে ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। [ii] এখানে 69.62 হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়। [iii] তামিলনাড়ুতে 16.44 কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে (2017-18) |
  4. অন্যান্য রাজ্যের উৎপাদক জেলা : (1) কেরলের কোল্লাম, পালাক্কাড়ু, তিরুবনন্তপুরম, ওয়াইনাড়, ত্রিসুর, ইদুক্কি ; (2) কর্ণাটকের চিকমাগালুর, হাসান, কোদাগু; (3) হিমাচল প্রদেশের কাংড়া; (4) উত্তরাখণ্ডের, আলমোড়া; (5) মেঘালয় এবং (6) ত্রিপুরার কিছু অঞ্চলেও চা উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] কেরলে প্রায় 35.01 হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়ে থাকে। [ii] কেরলে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ 6.39 কোটি কেজি (2017-18)।

Source – Tea Board of India.

ভারতের চায়ের বাণিজ্য
ভারত চা রপ্তানিতে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করে। 2018 সালের হিসাব অনুসারে ভারত বিদেশে 24.91 কোটি কেজি চা রপ্তানি করেছে। রাশিয়া, কাজাখস্তান, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান, ইজিপ্ট, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে চা রপ্তানি করা হয়।
13. কফি চাষের উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – কফি চাষের উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ
পানীয় ফসল হিসেবে ভারতে চায়ের পরেই কফির স্থান। কফি উৎপাদনের জন্য যে যে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রয়োজন, সেগুলি হল—
  1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
    1. জলবায়ু: ক্রান্তীয় অঞ্চলের উন্ন-আর্দ্র পরিবেশ, বিশেষত নিরক্ষীয় আবহাওয়ায় কফি চাষ ভালো হয়। [i] উন্নতা: কফি চাষের জন্য বেশি উন্নতার প্রয়োজন। সাধারণত 20°সে-25°সে উন্নতায় কফি চাষ করা হয়। [ii] বৃষ্টিপাত : 150-250 সেন্টিমিটার বা তারও বেশি বৃষ্টিপাত হলে কফি চাষ ভালো হয়। [iii] ছায়া : কফি চারাগাছগুলিকে প্রখর সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচানোর জন্য বাগিচার মধ্যে ছায়াপ্রদায়ী গাছ হিসেবে কলা, ভুট্টা প্রভৃতি বড়ো পাতার গাছ রোপণ করা হয়।
    2. মৃত্তিকা: লাভাসৃষ্ট উর্বর মাটি এবং লাল দোআঁশ মাটি কফি চাষের উপযোগী।
    3. ভূমির প্রকৃতি: ঢালু উচ্চভূমি, বিশেষত পর্বতের পাদদেশে কফি গাছ ভালো হয়। দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণ কর্ণাটক, পার্বত্য অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর কেরলের পার্বত্য অঞ্চল ও তামিলনাড়ুর উত্তরাংশে প্রচুর কফি উৎপন্ন হয়।
  2. অর্থনৈতিক পরিবেশ
    1. শ্রমিক: গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা, কফি ফল তোলা, ভাজা, কফি ফল গুঁড়ো করা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
    2. অন্যান্য: কফি বাগিচা ফসল। তাই উন্নত পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এর সঙ্গে বাগিচার মধ্যেই কফি গাছ লাগানো থেকে শুরু করে কফি প্রস্তুত করা এবং তাকে বাক্সজাত করে বিদেশে রপ্তানির উপযোগী করে তোলার মতো সব ধরনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। এ ছাড়া, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা (কফি বাগিচা থেকে বন্দর পর্যন্ত) এবং প্রচুর মূলধনেরও প্রয়োজন হয়।
14. ভারতের কফি উৎপাদক রাজ্যগুলির পরিচয় দাও।
অথবা, ভারতের কোন কোন অঞ্চলে কফি উৎপাদিত হয়?
উত্তর – ভারতের কফি উৎপাদক রাজ্যসমূহ
ভারতে কফি প্রধানত তিনটি দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যে, যথা—কর্ণাটক, কেরল ও তামিলনাড়ুতে চাষ করা হয়। কর্ণাটক রাজ্য একাই ভারতের মোট কফি উৎপাদনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ উৎপাদন করে। ভারতে 2017-18 সালে কফি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল 3.16 লক্ষ মেট্রিক টন। কফি উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে সপ্তম (2016-17)।
ভারতের কফি উৎপাদক অঞ্চলসমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল—
  1. কর্ণাটক: উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে কোদাগু, চিকামাগালুর, হাসান, মহীশূর, শিমোগা প্রভৃতি জেলায় কফি উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] কর্ণাটক ভারতের শীর্ষস্থানাধিকারী কফি উৎপাদক রাজ্য। [ii] 2017-18 সালে উৎপাদিত কফির পরিমাণ 2.22 লক্ষ মেট্রিক টন।
  2. কেরল : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে ওয়াইনাডু, পালাক্কাড়, ইদুক্কি, কোল্লাম জেলায় কফি উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] ভারতের দ্বিতীয় স্থানাধিকারী কফি উৎপাদক রাজ্য হল কেরল। [ii] 2017-18 সালে উৎপাদিত কফির পরিমাণ 65735 মেট্রিক টন।
  3. তামিলনাড়ু : উৎপাদক জেলা: এই রাজ্যে নীলগিরি, সালেম, কোয়েম্বাটোর, মাদুরাই, তিরুনেলভেলি প্রভৃতি জেলায় কফি উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] তামিলনাড়ু ভারতের তৃতীয় স্থানাধিকারী কফি উৎপাদক রাজ্য। [ii] 2017-18 সালে উৎপাদিত কফির পরিমাণ 17440 মেট্রিক টন।
  4. অন্যান্য রাজ্যের উৎপাদক জেলা : অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম জেলার আরাকু উপত্যকা; 2 ওডিশার কোরাপুট, রায়াগাড়া, কালাহাণ্ডি, কন্ধমাল জেলা; 3 মেঘালয়ের রিভোই, পূর্ব খাসি পাহাড়, পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলা; 4 অসমের কাছাড় জেলায় কিছু পরিমাণ কফি উৎপাদিত হয়। উল্লেখযোগ্য তথ্য: 2017-18 সালে অন্ধ্রপ্রদেশের কফি উৎপাদন ছিল 9600 মেট্রিক টন।

Source – Coffee Board of India.

15. ভারতের কৃষির প্রধান সমস্যাগুলি কী কী? সেগুলি সমাধানে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
অথবা, ভারতের কৃষির সমস্যা ও সমাধানগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – ভারতের কৃষির সমস্যা
ভারতের কৃষির অনেকগুলি সমস্যা আছে। এই সমস্যাগুলি হল—
  1. মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর অধিক নির্ভরশীলতা : ভারতের কৃষি মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। কারণ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করেই ভারতে বেশিরভাগ ফসল উৎপন্ন হয়। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতে মৌসুমি বৃষ্টি ঠিক সময়মতো হয় না। তাই কৃষিজ উৎপাদনও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
  2. হেক্টরপ্রতি ফসল উৎপাদন কম: ভারতে কৃষিতে হেক্টরপ্রতি শস্যের উৎপাদন কম। সীমিত জলসেচ, উচ্চফলনশীল বীজের অভাব, কৃষি যন্ত্রপাতির সীমিত ব্যবহার, আধুনিক কৃষিপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণার অভাব প্রভৃতি এর কারণ।
  3. মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ কম: ভারতে মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র 0.3 হেক্টর কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ প্রায় 11 হেক্টর। ছোটো ছোটো কৃষিজমিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির প্রয়োগ অসুবিধাজনক। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
  4. ভূমিক্ষয় : অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশুচারণ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটার জন্য প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ উর্বর মাটি কৃষিজমি থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অপসারিত হচ্ছে। এতে কৃষিজমির উর্বরতা কমছে, যার জন্য কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
ডারতের কৃষির সমস্যার সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা
ভারতের কৃষির সমস্যার সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল—
  1. হেক্টরপ্রতি ফসল উৎপাদন বাড়ানো : কৃষিতে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সেচব্যবস্থার সম্প্রসারণ, উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য ও বেসরকারি স্তরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
  2. সমবায় প্রথায় চাষ : যেহেতু কৃষকদের মাথাপিছু জমির পরিমাণ কম, তাই ওইসব খণ্ড খণ্ড কৃষিজমিকে একত্রিত করে সমবায় প্রথায় কৃষিকাজ করলে ফসলের উৎপাদন বাড়বে।
  3. কৃষিশিক্ষা ও কৃষিঋণের ব্যবস্থা: ভারতের অধিকাংশ কৃষক অত্যন্ত দরিদ্র এবং তারা বেশিরভাগই অবৈজ্ঞানিক প্রথায় ফসল উৎপাদন করে। তাই কৃষিঋণের ব্যবস্থা, কৃষি বিষয়ক শিক্ষাপ্রদান ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদির মাধ্যমে এইসব সমস্যার সমাধান করা যায়।
16. পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষিসমৃদ্ধির কারণগুলি কী কী? 
উত্তর – পাঞ্জাব হরিয়ানায় কৃষিসমৃদ্ধির কারণসমূহ
উত্তর-পশ্চিম ভারতে অবস্থিত পাঞ্জাব-হরিয়ানা দেশের অন্যতম কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল। এটি ভারতের শ্রেষ্ঠ গমবলয়। এ ছাড়াও এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান, তুলো, আখ প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলের এক-একটি কৃষিজমিতে শীতকালে গম এবং গ্রীষ্মকালে ধান বা তুলো বা আখ নিয়ে বছরে মোট যে পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়, বিশ্বের খুব কম অঞ্চলেই তা দেখা যায়। পাঞ্জাব- হরিয়ানায় এইরূপ কৃষিসমৃদ্ধির প্রধান কারণগুলি হল—
  1. জলবায়ু : রাজ্য দুটি উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত, যা গম চাষের পক্ষে আদর্শ। এ ছাড়া পশ্চিমি ঝঞ্ঝার জন্য শীতকালে এই অঞ্চলে যে বৃষ্টিপাত হয়, তা এখানে গম-সহ অন্যান্য রবি ফসল চাষে বিশেষ উপযোগী।
  2. মৃত্তিকা: পাঞ্জাব-হরিয়ানার বেশিরভাগ এলাকা উর্বর পলিগঠিত সমতল ভূমি, যেখানে গম, ধান, আখ, তুলো প্রভৃতি সহজেই চাষ করা যায় এবং এদের উৎপাদনও হয় প্রচুর।
  3. উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা : এই অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হলেও জলসেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এখানে ভৌমজলস্তর ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থান করায় কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে সহজেই ওই জল উত্তোলন করে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও ভাকরা-নাঙ্গাল বহুমুখী নদী পরিকল্পনার অধীনে অসংখ্য নিত্যবহ খাল খনন করে এখানকার কৃষিজমিসমূহে জলসেচের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে এখানে বছরে তিন-চার বার চাষ করা যায়।
  4. উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার : ড. বোরলগের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে প্রথম উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার শুরু হয়। ধান, গম, তুলো ও অন্যান্য শস্যের ক্ষেত্রে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার এই অঞ্চলকে কৃষি উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে।
  5. যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চাষ : পাঞ্জাব-হরিয়ানায় ট্র্যাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতির মাধ্যমে চাষ করা হয়। বৃহৎ জমিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষবাস কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তৱধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগ: ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলগুলিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—
  1. খাদ্য ফসল: দানাশস্য-জাতীয় ফসল, যা সরাসরি বা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, সেইসব ফসলকে খাদ্য ফসল বলে। উদাহরণ: ধান, গম, যব, ভুট্টা, ডাল ইত্যাদি। ভারতে এই জাতীয় ফসল বেশি চাষ করা হয়।
  2. তন্তু ফসল: যেসব ফসল থেকে আঁশ বার করা হয় এবং তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়, সেইসব ফসলকে তন্তু ফসল বলে। উদাহরণ: পাট, কার্পাস, শন ইত্যাদি। পাট থেকে আঁশ বার করে দড়ি ও মোটা সুতো তৈরি করা হয়। কার্পাসের আঁশ থেকে সুতো তৈরি হয়।
  3. ৰাগিচা ফসল: প্রধানত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বাগিচা বা বাগানের মধ্যে যেসব ফসলের চাষ করা হয়, সেইসব ফসলকে বাগিচা ফসল বলে। উদাহরণ: চা, কফি, রবার, আম, আনারস, আপেল, কমলালেবু, আঙ্গুর, জাফরান ইত্যাদি।
  4. অন্যান্য ফসল: পানীয় ফসল হিসেবে চা ও কফি, তৈলবীজ হিসেবে বাদাম, নারকেল, তিল, তিসি, সরষে, সূর্যমুখী, বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে আখ, তামাক, ওষুধ (সিঙ্কোনা), বিভিন্ন প্রকার ফুল ইত্যাদি চাষ হয়। এই সমস্ত ফসলকে একত্রে অর্থকরী ফসলও বলে।
2. ঋতু অনুযায়ী ভারতের কৃষিজ ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – ঋতু অনুযায়ী ভারতের কৃষিজ ফসলের শ্রেণিবিভাগ : ঋতু অনুযায়ী ভারতে উৎপাদিত কৃষিজ ফসলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, তা হল—
  1. খরিফ শস্য: রোপনের সময়: বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ জুন মাসে এইসব ফসল রোপণ করা হয় এবং শরতের শেষে অর্থাৎ নভেম্বর মাসে ফসল কাটা হয়। উদাহরণ: আমন ধান, পাট, কার্পাস, আখ, জোয়ার, বাজরা, রাগি, ভুট্টা, চিনাবাদাম প্রভৃতি।
  2. রবি শস্য: রোপনের সময়: শীতের শুরুতে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে এইসব ফসল রোপণ করা হয় এবং গ্রীষ্মের শুরুতে অর্থাৎ মার্চ মাসে ফসল কাটা হয়। উদাহরণ: গম, যব, ওট, সরষে, ডাল প্রভৃতি।
  3. জায়িদ শস্য: রোপনের সময়: এইসব ফসল গ্রীষ্মের শুরুতে অর্থাৎ মার্চ মাসে চাষ করা হয় এবং বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ জুন মাসে সংগ্রহ করা হয়। উদাহরণ: কুমড়ো, শশা, পটল, পুঁইশাক, নটেশাক, তরমুজ, ফুটি, কাঁকুড় প্রভৃতি।
3. ধানের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – ধানের শ্রেণিবিভাগ : সময় বা ঋতু অনুসারে ধান তিনপ্রকার হয়, যেমন—
  1. আউশ ধান: যে ধান গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয় এবং বর্ষাকালে সংগ্রহ করা হয়, সেই ধানকে আউশ ধান বলে। সময়কাল: এই ধান বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাসে চাষ করা হয় ও শ্রাবণ-ভাদ্র (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসে কাটা হয়। ‘আউশ’ শব্দটির অর্থ ‘আশু’ বা ‘শীঘ্র’। এই ধান খুব তাড়াতাড়ি পাকে।
  2. আমন ধান: যে ধান বর্ষাকালে চাষ করা হয় এবং শীতকালে সংগ্রহ করা হয়, সেই ধানকে আমন ধান বলে। সময়কাল: এই ধান আষাঢ় (জুন-জুলাই) মাসে চাষ করা হয় ও অগ্রহায়ণ-পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাসে কাটা হয়। অগ্রহায়ণ মাসে পাকে বলে আমন ধানকে ‘অঘ্রাণী’ বা ‘আঘ্রাণী’- ও বলে।
  3. বোরো ধান: যে ধান শীতকালে চাষ করা হয় ও গ্রীষ্মকালে সংগ্রহ করা হয়, সেই ধানকে বোরো ধান বলা হয়। সময়কাল: এই ধান সাধারণত কার্তিক-অগ্রহায়ণ (নভেম্বর-ডিসেম্বর) মাসে চাষ করা হয় ও চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল-মে) মাসে কাটা হয়।
4. ভারতে ধান চাষের সমস্যা এবং এই সমস্যাগুলির সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে ধান চাষের সমস্যা : ভারতে ধান চাষের সমস্যাগুলি হল
  1. ধানের স্বল্পমূল্য: ধানের স্বল্পমূল্য কৃষকদের ধান চাষে নিরুৎসাহিত করে।
  2. হেক্টরপ্রতি স্বল্প উৎপাদন: ভারতে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনের পরিমাণ কম। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র 2550 কেজি (2016-17 ) ।
  3. সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব: ভারতে ফসল সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ভারতে ধান চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা : ভারতে ধান চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল—
  1. সরকারি ব্যবস্থা: মহাজন বা বণিকদের এড়িয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য সরকারি সংস্থা গঠিত হয়েছে।
  2. উচ্চফলনশীল বীজ, সারের ব্যবহার বৃদ্ধি: উচ্চফলনশীল বীজ, কীটনাশক ও সারের ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  3. সংরক্ষণাগার তৈরি: সরকারিভাবে বেশি সংখ্যায় ফসল সংরক্ষণাগার বা গোডাউন তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে।
5. গমের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – গমের শ্রেণিবিভাগ : চাষের সময় অনুসারে গমকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যেমন—
  1. শীতকালীন গম: যে গম শীতকালে চাষ করা হয় এবং গ্রীষ্মের প্রারম্ভে কাটা হয়, সেই গমকে শীতকালীন গম বলে।
  2. বসন্তকালীন গম: যে গম বসন্তকালে চাষ করা হয় এবং গ্রীষ্মকালের শেষে কাটা হয়, সেই গমকে বসন্তকালীন গম বলে।
ভারতে সাধারণত শীতকালীন গমের চাষ করা হয়। তবে উত্তর ভারতের কোনো কোনো স্থানে যেমন—উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বসন্তকালীন গমও চাষ করা হয়।
6. উত্তর ভারতে বেশি গম চাষ হয় কেন?
উত্তর – উত্তর ভারতে বেশি গম চাষ হওয়ার কারণ: উত্তর ভারতে বেশি গম চাষের কারণগুলি হল—
  1. আদর্শ উয়তা: উত্তর ভারতের পাঞ্জাব সমভূমি, উচ্চ গঙ্গা সমভূমি ও মধ্য গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে শীতকালীন উয়তা 14°-20°সে থাকে, যা গম চাষের পক্ষে আদর্শ।
  2. পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত: উত্তর ভারতের গম চাষের এলাকাগুলিতে শীতকালে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়, তা গম চাষের পক্ষে উপকারী। এ ছাড়া, এখানে জলসেচ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটায় চাষের প্রয়োজনীয় জল সেচের মাধ্যমেও মেটানো যায়।
  3. উপযুক্ত মাটি: উর্বর ভারী দোআঁশ ও কাদামাটি দিয়ে গঠিত পলল মৃত্তিকা উত্তর ভারতে গম চাষের পক্ষে অনুকূল।
7. শীতকালে ভারতে গম চাষ হয় কেন?
অথবা, গম নাতিশীতোয় জলবায়ুর ফসল হলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতে কেন এত গমের উৎপাদন হয়?
উত্তর – শীতকালে ভারতে গম চাষের কারণ: গম ভারতের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য ফসল। গম নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে শীতকালে প্রচুর পরিমাণে গম উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতে সর্বাধিক গম উৎপন্ন হয়। এর কারণগুলি হল-
  1. জলবায়ু : কেবল নাতিশীতোর জলবায়ুতেই নয়, উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলেও শীতকালে ব্যাপকভাবে গম উৎপন্ন হয়। উত্তর ও মধ্য ভারত অক্ষাংশগতভাবে উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয়মণ্ডলে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার শীতকালীন জলবায়ু গম চাষের পক্ষে বিশেষ অনুকূল।
  2. উন্নতা : গম চাষের জন্যে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা হল 14°-20°সে। উত্তর ভারতে শীতকালে ওই ধরনের তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়।
  3. বৃষ্টিপাত ও জলসেচ : সাধারণত বার্ষিক 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত গম চাষের পক্ষে আদর্শ। উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। তা ছাড়া এই বৃষ্টিপাত গম চাষে জন্য পর্যাপ্ত না হলেও ভারতের বেশিরভাগ জায়গায় সেচ ব্যবস্থার যথেষ্ট প্রসার ঘটায় শীতকালে গম চাষে প্রয়োজনীয় জল পেতে অসুবিধা হয় না।
8. ভারতে গম চাষের সমস্যা ও এই সমস্যার সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে গম চাষের সমস্যা: ভারতে গম চাষের সমস্যাগুলি হল-
  1. হেক্টরপ্রতি স্বল্প উৎপাদন: ভারতে হেক্টরপ্রতি স্বল্প উৎপাদন হয়। হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদন গড়ে মাত্র 3216 কেজি (2016-17)।
  2. গমের স্বল্পমূল্য: গমের স্বল্পমূল্য কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করে।
  3. সরকারি ব্যবস্থার অভাব: উপযুক্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রত্যেক বছরই প্রচুর পরিমাণ গম নষ্ট হয়।
ভারতে গম চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা: ভারতে গম চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল—
  1. উচ্চফলনশীল বীজ ও সারের ব্যবহার: উচ্চফলনশীল বীজ, কীটনাশক ও সার ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  2. সরকারি উদ্যোগ: মহাজন বা বণিকদের এড়িয়ে Food Corporation of India-র মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে গম কেনা হচ্ছে।
  3. সংরক্ষণাগার তৈরি: সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশি সংখ্যায় সংরক্ষণাগার তৈরি করা হচ্ছে।
9. তুলোর শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – তুলোর শ্রেণিবিভাগ: আঁশের দৈর্ঘ্য অনুসারে তুলো চারপ্রকার, যেমন—
  1. অতিরিক্ত দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো: বৈশিষ্ট্য: [a] এই জাতীয় তুলোর আঁশ 35 মিমি ও তার বেশি দীর্ঘ হয়। [b] সর্বোৎকৃষ্ট এই তুলো দিয়ে রিং-এ লাগানোর উন্নতমানের সুতো এবং পলিয়েস্টার তন্তুর সঙ্গে মিশিয়ে উচ্চগুণমানের কাপড় প্রস্তুত করা হয়।
  2. দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো: বৈশিষ্ট্য: [a] এই জাতীয় তুলোর আঁশ 30-35 মিমি দৈর্ঘ্যের সামান্য কম লম্বা হয়। [b] এই জাতীয় তুলোর আঁশগুলি মসৃণ, রেশমের মতো উজ্জ্বল এবং পশমের মতো সূক্ষ্ম। [iii] এই তুলো ‘সাগরদ্বীপীয় তুলো’ নামেও পরিচিত।
  3. মাঝারি আঁশযুক্ত তুলো: বৈশিষ্ট্য: এই জাতীয় তুলোর আঁশ 25-30 মিমি দৈর্ঘ্যের সামান্য কম লম্বা হয়।
  4. ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত তুলো: বৈশিষ্ট্য: [a] এই জাতীয় তুলোর আঁশের দৈর্ঘ্য 25 মিমির কম হয়। [b] ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত তুলো গুণগত মানে খুবই নিকৃষ্ট, আঁশ মোটা ও খসখসে হয়।
10. ভারতে তুলো চাষের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে ভুলো চাষের সমস্যা: ভারতে তুলো চাষের সমস্যাগুলি হল—
  1. দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর অভাব: ভারতে প্রধানত মাঝারি ও ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত তুলো জন্মায়, যা উন্নতমানের সুতিবস্ত্র উৎপাদনের অনুপযুক্ত।
  2. হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কম: হেক্টরপ্রতি উৎপাদন অনেক কম। ভারতে তুলো উৎপাদনের পরিমাণ হেক্টরপ্রতি মাত্র 519 (2017) কেজি। বল উইভিল পোকার উপদ্রব হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কম হওয়ার একটি প্রধান কারণ।
  3. মূলধনের অভাব: তুলো চাষে নিযুক্ত শ্রমিকদের মজুরি প্রদান, সার, কীটনাশক ও তুলোর বীজ কেনা, বিদ্যুৎবাবদ খরচ ইত্যাদির জন্য প্রচুর মূলধনের দরকার হয়। ভারতে সহজ শর্তে মূলধন পাওয়ার যথেষ্ট অসুবিধা লক্ষ করা যায়।
ভারতে তুলো চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা : ভারতে তুলো চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল—
  1. দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি: বিদেশ থেকে উন্নত ধরনের বীজ এনে এবং দেশের গবেষণাগারগুলিতে উন্নত ধরনের বীজ তৈরি করে দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর চাষ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
  2. যন্ত্রপাতি ও সারের ব্যবহার বৃদ্ধি: উন্নত যন্ত্রপাতি, সার, কীটনাশক ও জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো হচ্ছে।
  3. সরকারি ঋণ প্রদান: তুলো চাষে নিযুক্ত কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিকে নির্দেশ প্রদান করেছে।
11. ভারতের প্রধান বাগিচা ফসল কী কী ও কোথায় উৎপন্ন হয়?
উত্তর – ভারতের প্রধান বাগিচা ফসল: ভারতের প্রধান বাগিচা ফসলগুলি হল— (1) চা ও (2) কফি
  1. চা: উৎপাদক অঞ্চল: পূর্ব ভারতের অসম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারতের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ চা এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও কেরলে শতকরা প্রায় 18 ভাগ চা উৎপাদিত হয়। অসমের ডিব্ৰুগড়, তিনসুকিয়া, শোণিতপুর, জোড়হাট ও কাছাড় জেলা অর্থাৎ সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ঢালু সমভূমি এবং তরাই অঞ্চলে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অঞ্চল, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার ডুয়ার্স তরাই অঞ্চল এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায় যথেষ্ট পরিমাণে চা উৎপন্ন হয়।
  2. কফি: উৎপাদক অঞ্চল: দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক ( 70%), কেরল (21%) ও তামিলনাড়ু (6%) রাজ্য কফি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে। কর্ণাটকের চিকামাগালুর, কোদাগু, হাসান, শিমোগা এবং মহীশূর জেলা; কেরলের পালাক্কাড়, ওয়াইনাড়, ইদুক্কি, কোল্লাম প্রভৃতি জেলা এবং তামিলনাড়ুর নীলগিরি, সালেম ও কোয়েম্বাটোর জেলায় কফি উৎপন্ন হয়।
12. চায়ের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – চায়ের শ্রেণিবিভাগ: চা পাতাকে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য এর প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি অনুসারে চাকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যেমন—
  1. কালো চা: চায়ের পাতাগুলি গাছ থেকে তুলে প্রথমে রোদে শুকিয়ে নিয়ে পরে আবার যন্ত্রের সাহায্যে শুকিয়ে কালো করে নেওয়া হয়। এভাবে প্রস্তুত চাকে কালো চা বলে।
  2. সবুজ চা: চা গাছের কচি পাতা ও কুঁড়ি রোদে শুকিয়ে যে চা প্রস্তুত করা হয়, সেই চাকে সবুজ চা বলে। ভারতে সবুজ চায়ের প্রচলন কম।
  3. সাদা চা: চা গাছের নবীন কুঁড়িগুলিকে শুকিয়ে নেওয়ার আগে গরম বাষ্প অথবা আগুন জ্বালিয়ে গরম করে যে হালকা গন্ধের চা প্রস্তুত করা হয়, সেই চাকে সাদা চা বলে।
  4. ওলং চা: এই ধরনের চা গাছের পাতা প্রথমে প্রখর সূর্যকিরণে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর মেশিনে গরম হাওয়া দিয়ে আরও শুকিয়ে বাঁকিয়ে ও মুচড়িয়ে এই ওলং চা প্রস্তুত করা হয়।
  5. ইস্টক চা: চা গাছের নিকৃষ্ট পাতা, চা পাতার ডাঁটি, গুঁড়ো চা, ভাতের মাড়, মশলা, মাখন ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে চাপ দিয়ে ছোটো ছোটো আয়তাকার খণ্ডে পরিণত করে যে চা প্রস্তুত করা হয়, সেই চাকে ইস্টক চা বলে।
13. অসম চা চাষে উন্নত কেন?
উত্তর – অসম চা চাষে উন্নত হওয়ার কারণ: ভারতে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদিত হয় অসম রাজ্যে। চা চাষে অসমের উন্নতির কারণগুলি হল—
  1. অনুকূল জলবায়ু : চা মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের কৃষিজ ফসল। এই রাজ্যে বছরে প্রায় 200 সেমি বৃষ্টিপাত হয় এবং 20°সে-30°সে তাপমাত্রা বিরাজ করে, যা চা উৎপাদনে যথেষ্ট সহায়ক। এ ছাড়া, এই অঞ্চলে প্রায় প্রতি মাসেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
  2. ঢালু ভূমিভাগ: এই রাজ্যের অধিকাংশ স্থানের ভূমিভাগ উঁচুনীচু ও ঢালু। এই ধরনের ঢালু জমি চা চাষের উপযোগী।
  3. উপযুক্ত মৃত্তিকা: অসমের বেশিরভাগ জায়গায় আছে অম্লধর্মী পলি মাটি। এই মাটি চা চাষের পক্ষে আদর্শ।
  4. অন্যান্য কারণ: বিনিয়োগকারীরা অসমের চা বাগিচাগুলিতে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া, গুয়াহাটি চা নিলাম কেন্দ্র, নিকটবর্তী কলকাতা বন্দরের সুবিধা, উন্নত পরিকাঠামো প্রভৃতি অসমে চা চাষের উন্নতি ঘটিয়েছে।
14. ভারতে চা চাষের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে কী জান আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে চা চাষের সমস্যা : ভারতে চা চাষের সমস্যাগুলি হল—
  1. জমির অভাব: অধিকাংশ চা বাগিচাই দীর্ঘদিনের, যেমন—উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো কোনো বাগিচার বয়স 100 বছরেরও বেশি। এ ছাড়া, বাগিচাগুলি সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির অভাব রয়েছে।
  2. আর্থিক অসুবিধা: বাগিচার মালিকরা আর্থিক অসুবিধার কারণে বহু বাগিচা বন্ধ করে দিয়েছেন।
  3. উৎপাদন ব্যয় বেশি: চা উৎপাদনের ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য চা উৎপাদনকারী দেশের থেকে বেশি।
  4. তীব্র প্রতিযোগীতা: তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় চায়ের বিক্রি আগের চেয়ে কমেছে।
ভারতে চা চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা: ভারতে চা চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল—
  1. বাগিচা তৈরি: নতুন করে অব্যবহৃত জমিতে ছোটো ছোটো চা বাগিচা গড়ে তোলা হচ্ছে।
  2. ৰাগিচা চালুর প্রচেষ্টা: সমবায় পদ্ধতিতে শ্রমিকদের দ্বারা অথবা সরকারি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ওইসব বাগিচা চালুর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
  3. সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি: চায়ের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য শ্রমিকদের উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি, সৌরশক্তির ব্যবহার ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে।
  4. আন্তর্জাতিক বাজারে চা রপ্তানি বৃদ্ধি: ভারতীয় চায়ের গুণমান আরও বৃদ্ধি করে এবং মূল্য হ্রাস করে আন্তর্জাতিক বাজারে চা রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে।
15. কফির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – কফির শ্রেণিবিভাগ: কফি তিন ধরনের হয়, যেমন—
  1. আরবীয় কফি: বৈশিষ্ট্য: [a] সর্বোৎকৃষ্ট এই কফির আদি বাসভূমি হল আরব উপদ্বীপের ইয়েমেন। [b] আরবীয় কফি গাছ 9-12 মিটার লম্বা হয় এবং [c] এর পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য 7 বছর সময় লাগে।
  2. রোবাস্টা কফি: বৈশিষ্ট্য: [a] অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্টমানের এই কফির আদি চাষভূমি হল পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা। [b]প্রায় 10 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয় এই কফি গাছ। [c] এই কফি গাছের ফলগুলি পাকতে 10-11 মাস সময় লাগে।
  3. লাইব্রেরীয় কফি: বৈশিষ্ট্য: [a] পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়ায় এই জাতীয় কফির চাষ হয়। তাই এই কফিকে লাইবেরীয় কফি বলে। [b] এই কফি গাছগুলি 20 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। [c] এক বিশেষ প্রজাতির লাইবেরীয় কফি হল ব্যারাকো।
16. দক্ষিণ ভারতে কফি উৎপাদন বেশি হয় কেন?
উত্তর – দক্ষিণ ভারতে কফি উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণ : দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণ কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং তামিলনাড়ু ও কেরলের পার্বত্য অঞ্চলে কফি উৎপাদনের পরিমাণ খুব বেশি হওয়ার কারণগুলি হল—
  1. আদর্শ জলবায়ু: এই অঞ্চলের আবহাওয়া সারাবছরই উষ্ম ও আর্দ্র থাকে। উন্নতা গড়ে 20°সে-30 °সে ও বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত 150-250 সেমি পর্যন্ত হয়, যা কফি চাষের পক্ষে আদর্শ।
  2. উপযুক্ত মাটি: এই অঞ্চলে কফি চাষের পক্ষে উপযুক্ত লাভাজাত উর্বর দোআঁশ মাটি পাওয়া যায়।
  3. ঢাল: এই অঞ্চলে পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি থাকায় পাহাড়ের ঢালের প্রায় 800-1600 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত কফির বাগিচাগুলি গড়ে উঠেছে। পাহাড়ের ঢালে বৃষ্টির জল জমতে পারে না বলে কফির চাষ খুব ভালো হয়।
  4. চাহিদা: এ ছাড়া, দক্ষিণ ভারতে পানীয় ফসল হিসেবে চা চাষের বিস্তার তেমনভাবে ঘটেনি বলে কফি চাষ খুব বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
17. ভারতে বাণিজ্যিক কৃষির তুলনায় জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষির প্রাধান্য বেশি কেন?
উত্তর – ভারতে বাণিজ্যিক কৃষির তুলনায় জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষির প্রাধান্য বেশি হওয়ার কারণ: বাণিজ্যিক কৃষি হল প্রধানত রপ্তানির জন্য ফসল উৎপাদন আর জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষিব্যবস্থা হল শুধু নিজেদের বা স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য কৃষিকাজ করা। ভারতে এই জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষিপদ্ধতি বেশি প্রচলিত। এর কারণগুলি হল—
  1. বিপুল জনসংখ্যার চাপ: জমির ওপর জনসংখ্যার বিপুল চাপ থাকায় কৃষির সম্প্রসারণের জন্যে প্রয়োজনীয় জমি অথবা নতুন কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার জমি পাওয়া যায় না।
  2. ক্ষুদ্রায়তনের জমি: কৃষি জমিগুলি ছোটো বা ক্ষুদ্র আয়তনের হওয়ায় বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা যায় না।
  3. জমির মালিকানা: জমিগুলি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। সমবায় প্রথায় চাষ প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে।
18. ভারতীয় কৃষিতে সবুজবিপ্লব বলতে কী বোঝ ?
অথবা, সবুজবিপ্লব কী? 
উত্তর – ধারণা: স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী সময়ে ভারতে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে ছয়ের দশকের শেষের দিক থেকে কৃষিকাজে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব্যের প্রয়োগ, ট্র্যাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতি আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও জলসেচের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এইসব ব্যবস্থা অবলম্বন করায় 1968 সাল থেকে 1978 সালের মধ্যে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমভাগে গম উৎপাদনে যে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে, সেই অভূতপূর্ব উন্নতিকে সবুজবিপ্লব আখ্যা দেওয়া হয়। যেমন–1960-61 সালে সমগ্র ভারতে যেখানে গমের উৎপাদন হয়েছিল 1 কোটি 10 লক্ষ টন, 1980-81 সালে তা তিনগুণেরও বেশি বেড়ে হয় 3 কোটি 63 লক্ষ টন।
19. ভারতীয় কৃষিতে সবুজবিপ্লবের সুফল ও কুফল লেখো।
উত্তর – ভারতীয় কৃষিতে সবুজবিপ্লবের সুফল
  1. খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি : সবুজবিপ্লবের ফলে খাদ্যশস্যের ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  2. অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি: এই বিপ্লবের ফলে কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে।
  3. পোকামাকড়ের উপদ্রব হ্রাস: কৃষিক্ষেত্রে উন্নত মানের কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পোকামাকড়ের উপদ্রব হ্রাস পায়।
  4. জাতীয় আয় বৃদ্ধি : সবুজবিপ্লবের ফলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
  5. শস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর: বিদেশ থেকে খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ হয় এবং দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর হয়ে ওঠে।
ভারতীয় কৃষিতে সবুজবিপ্লবের কুফল
  1. মাটির গুণমান নষ্ট: ক্রমাগত বর্ধিত হারে রাসায়নিক সার প্রয়োগে মাটির গুণমান কমে যায়।
  2. পাখি ও পোকামাকড়ের বিলুপ্তি: কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক-সহ নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে উদ্ভিদ-বন্ধু অনেক পাখি ও পোকামাকড় বিলুপ্ত হয়।
  3. দূষিত ভূগর্ভস্থ জল: কৃষিতে সবুজবিপ্লবের ফলে জমিতে ব্যবহৃত সার বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে পুকুর, নদীতে পড়ে। অনেকসময় মাটির নীচেও প্রবেশ করে যায়, ফলে ভূগর্ভস্থ জল দূষিত হয়।
  4. বীজবৈচিত্র্যে প্রভাব: নতুন ধরনের সংকর বীজের ব্যবহারে হারিয়ে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ-জিন, যার প্রভাব পড়েছে বীজবৈচিত্র্যে।
20. ভারতে কৃষিজ ফসলের স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণ কী?
উত্তর – ভারতে কৃষিজ ফসলের স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণ: স্বল্প উৎপাদনশীলতা ভারতীয় কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর কারণগুলি হল—
  1. ছোটো আয়তনের কৃষিজোত: ভারতের অধিকাংশ কৃষিজোত আয়তনে ছোটো। সেজন্য আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতির ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। তাই ভারতে ফসলের উৎপাদন স্বল্প।
  2. উচ্চফলনশীল বীজের সীমিত ব্যবহার : ভারতীয় কৃষিতে এখনও উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার যথেষ্ট কম। এই কারণে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের হারও কম।
  3. কীটনাশক ও সারের স্বল্প ব্যবহার: ভারতীয় কৃষিতে কীটনাশক ও সারের ব্যবহার অত্যন্ত কম। এর ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বেশ কম।
  4. জলসেচের অসুবিধা: ভারতে সব কৃষিজমি এখনও জলসেচের আওতায় আসেনি। এই অসুবিধার জন্য প্রধানত বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে ভারতে কৃষিকাজ হয়ে থাকে। এই কৃষিজ ফসলের উৎপাদনও কম।
  5. জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি: ভারতীয় কৃষকরা প্রধানত নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে চাষ-আবাদ করে। এতে উৎপাদন স্বল্প হয় বলে উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ খুব কম হয় বা উদ্বৃত্ত আদৌ থাকে না। তাই এ ধরনের কৃষি থেকে কৃষকরা বিশেষ লাভবান হয় না।
21. ভারতের কৃষির গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ভারতের কৃষির গুরুত্ব: ভারতের কৃষির গুরুত্বগুলি হল—
  1. কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র: কৃষি ভারতের কর্মসংস্থানের প্রধানতম ক্ষেত্র। কর্মসংস্থানের সুযোগের দিক থেকে এককভাবে কৃষিক্ষেত্রের অবদান সবচেয়ে বেশি (মোট কর্মীসংখ্যার 52%)।
  2. খাদ্যের জোগান: ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্যের জোগান দেয় ভারতীয় কৃষি।
  3. জাতীয় আয়ের উৎস: কৃষি ভারতের জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান প্রায় 6.4%।
  4. শিল্পে কাঁচামালের জোগান: চা, কফি, কার্পাস বয়ন, পাটবয়ন, চিনি, ভোজ্য তেল, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল কৃষি থেকেই পাওয়া যায়। কৃষিজ কাঁচামাল জোগানের ওপর এই শিল্পগুলির উন্নতি ও ক্রমবিকাশ নির্ভর করে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. কৃষিকাজ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: মানবসভ্যতা বিস্তারের প্রথম পদক্ষেপ ও প্রাথমিক অর্থনৈতিক কাজ হল কৃষিকাজ। কৃষিকাজের ইংরেজি প্রতিশব্দ agriculture শব্দটি দুটি লাতিন শব্দ ‘ager’ অর্থাৎ ভূমি বা ক্ষেত্র এবং ‘culture’ অর্থাৎ কর্ষণ বা পরিচর্যা থেকে এসেছে। সুতরাং কৃষিকাজের আক্ষরিক অর্থ হল ভূমি বা মৃত্তিকা কর্ষণ বা ভূমির পরিচর্যা। তবে আধুনিক যুগে কৃষিকাজ বলতে শুধু চাষ-আবাদকেই বোঝায় না, ভূমিকর্ষণের মাধ্যমে জমি থেকে ফসল উৎপাদন, পশুপালন, মৎস্যচাষ, বৃক্ষরোপণ প্রভৃতিও কৃষির অন্তর্ভুক্ত।
2. জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: যে কৃষিব্যবস্থায় কৃষিজ ফসল কেবল কৃষকদের নিজস্ব চাহিদা বা স্থানীয় চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়, সেই কৃষি জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি নামে পরিচিত। উদাহরণ : আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই প্রকার কৃষি দেখা যায়৷
3. ধাপচাষের গুরুত্ব কী?
উত্তর – ধাপচাষের গুরুত্ব: পাহাড়ের ঢালে প্রবহমান জলধারার ঘর্ষণে মৃত্তিকার যে দ্রুত ক্ষয় হয়, তা রোধ করার জন্য যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তার মধ্যে ধাপচাষ অন্যতম। এজন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিঢালের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে সিঁড়ির মতো পরপর ধাপ গঠন করে সেখানে ধান, গম, সয়াবিন প্রভৃতি শস্য চাষ করা হয়, যাকে ধাপচাষ নামে অভিহিত করা হয়। এর ফলে সেখানে যেমন ভূমিঢালের কৌণিক মান হ্রাস পায় তেমন প্রবহমান জলের গতিও প্রশমিত হয়, অর্থাৎ জল সরাসরি ঢালের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে গড়িয়ে যেতে পারে না বলে মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাস পায়। সুতরাং, পাহাড়ি অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধে তথা সংরক্ষণে ধাপচাষের গুরুত্ব অপরিসীম।
4. অর্থকরী ফসল কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা : প্রধানত বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের জন্য কৃষকরা যেসব ফসল চাষ বা উৎপাদন করে, সেইসব ফসলকে অর্থকরী ফসল বলে। উদাহরণ : ভারতে আখ, পাট, তুলো প্রভৃতি অর্থকরী ফসল।
5. খরিফ শস্য কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা: ভারতে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সাথে সাথে বা বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যে ফসল বোনা হয়, সেইসব ফসলকে খরিফ শস্য বলে। সময়কাল: জুন মাসের মাঝামাঝি এই ফসল বপন করা হয় এবং অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি কাটা হয়। উদাহরণ : আমন ধান, কার্পাস, আখ প্রভৃতি খরিফ শস্যের উদাহরণ।
6. রবি শস্য বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : শীতকালে বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকালে ভারতে যেসব শস্য চাষ করা হয়, সেইসব শস্য রবি শস্য নামে পরিচিত। সময়কাল : এইসব শস্য শীতের শুরুতে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে রোপণ বা বপন করা হয় এবং শীতের শেষে বসন্তকালে বা গ্রীষ্মের প্রারম্ভে (মার্চ-এপ্রিলে) কাটা বা তোলা হয়। উদাহরণ : গম, যব, সরষে প্রভৃতি রবি শস্যের উদাহরণ।
7. জায়িদ শস্য কী?
উত্তর – ধারণা : ভারতে রবি ও খরিফ শস্য-ঋতুর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব শস্যের চাষ হয়, সেইসব শস্য জায়িদ শস্য নামে পরিচিত। সময়কাল: এইসব শস্য বসন্তকালে অর্থাৎ ফাল্গুন (মার্চ) মাসে বোনা হয় এবং বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ আষাঢ় (জুন) মাসে কাটা বা তোলা হয়। উদাহরণ : কুমড়ো, তরমুজ, আউস ধান, বাদাম, শশা, পটল প্রভৃতি এই জাতীয় শস্য।
8. ধানের কয়েকটি উচ্চফলনশীল বীজের নাম লেখো। ধানের উচ্চফলনশীল বীজের বিশেষত্ব কী?
উত্তর – ধানের উচ্চফলনশীল বীজ : উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে ভারতে কতকগুলি উচ্চফলনশীল ধানের বীজের চাষ করা হচ্ছে। যেমন—আইআর-৪ (IR-8), আইআর-20 (IR-20), টিএন-1 (TN-1), তাইচুং-65, জয়া, রত্না, বিজয়া, পঙ্কজ, বাহাদুর, রণজিৎ, বিপ্লব প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য উচ্চফলনশীল ধানের বীজ।
ধানের উচ্চফলনশীল বীজের বিশেষত্ব : উচ্চফলনশীল বীজ থেকে কম সময়ে বেশি পরিমাণে ফসল উৎপাদিত হয় এবং এগুলি চাষের জন্য সাধারণত অধিক পরিমাণে জল, বিভিন্ন ধরনের সার ও কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।
9. ভারতে ধান উৎপাদনে অগ্রণী রাজ্যগুলির নাম লেখো।
উত্তর – ভারতে ধান উৎপাদনে অগ্রণী রাজ্যসমূহ: ভারতে ধান উৎপাদনে অগ্রণী রাজ্যগুলি হল—পশ্চিমবঙ্গ (প্রথম), উত্তরপ্রদেশ (দ্বিতীয়), পাঞ্জাব (তৃতীয়), ওডিশা, ছত্তিশগড়, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, তেলেঙ্গানা, হরিয়ানা প্রভৃতি।
10. আমন ধান ও বোরো ধান কী?
উত্তর – আমন ধান : বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যে ধান চাষ করা হয়, সেই ধানকে আমন ধান বলে।
বোরো ধান : শীতকালে জলসেচের ওপর নির্ভর করে যে ধান চাষ করা হয়, সেই ধানকে বোরো ধান বলে।
11. ভারতের প্রধান গম উৎপাদক রাজ্যগুলির নাম লেখো।
উত্তর – ভারতে গম উৎপাদক রাজ্যসমূহ : ভারতের প্রধান গম উৎপাদক রাজ্যগুলি হল—উত্তরপ্রদেশ (প্রথম), মধ্যপ্রদেশ (দ্বিতীয়), পাঞ্জাব (তৃতীয়), হরিয়ানা, রাজস্থান, বিহার, গুজরাত, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি।
12. কয়েকটি উচ্চফলনশীল গম বীজের নাম লেখো।
উত্তর – উচ্চফলনশীল গম বীজ : কয়েকটি উচ্চফলনশীল গম বীজের নাম হল—
(1) সোনালিকা, (2) কল্যাণসোনা, (3) সোনা 227, (4) সফেদ লারমা, (5) ছোটি লারমা ইত্যাদি।
13. শীতকালীন ও বসন্তকালীন গম কী ?
উত্তর – শীতকালীন গম: ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে শীতকালে মৃদু শীতল আবহাওয়ায় যে ধরনের গম চাষ করা হয়, সেইসব গমকে শীতকালীন গম বলে।
বসন্তকালীন গম: শীতকালে যেসব অঞ্চলের ভূমি বরফাবৃত থাকে, সেখানে শীতের শেষে বসন্তকালে বরফগলা জলে ভেজা ভূমিতে যে গম চাষ করা হয়, সেই গমকে বসন্তকালীন গম বলে।
ভারতে বেশিরভাগ শীতকালীন গম উৎপন্ন হয়। কেবল হিমালয়ের কিছু শীতপ্রধান প্রত্যন্ত উপত্যকায় অল্প পরিমাণে বসন্তকালীন গমের চাষ হয়।
14. সংকরায়ণ ঘটিয়ে উৎপন্ন ধান ও গমের দুটি করে উচ্চফলনশীল প্রজাতির বীজের নাম করো।
উত্তর – সংকরায়ণ ঘটিয়ে উৎপন্ন ধান বীজ : সংকরায়ণ ঘটিয়ে উৎপন্ন দুটি উচ্চফলনশীল ধান বীজ হল— IR-8 ও জয়া।
সংকরায়ণ ঘটিয়ে উৎপন্ন গম বীজ: সংকরায়ণ ঘটিয়ে উৎপন্ন দুটি
উচ্চফলনশীল গম বীজ হল—সোনালিকা ও কল্যাণসোনা।
15. ভারত সরকারের অধীনস্থ প্রধান ধান ও গম গবেষণা কেন্দ্রগুলি কোথায় কোথায় অবস্থিত?
উত্তর – ভারত সরকারের অধীনস্থ প্রধান ধান ও গম গবেষণা কেন্দ্র : ভারত সরকারের অধীনে প্রধান ধান গবেষণা কেন্দ্রটি কটকে এবং প্রধান গম গবেষণা কেন্দ্রটি দিল্লির কাছে পুসায় অবস্থিত।
16 মিলেট-জাতীয় শস্য বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: সাধারণত পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতের উয় ও শুষ্ক অঞ্চলের অনুর্বর মাটিতে কিছুটা নিম্নমানের একপ্রকার ক্ষুদ্রাকার দানা-জাতীয় শস্য উৎপাদিত হয়, যেমন—জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃতি। এই শস্যগুলিকেই এককথায় মিলেট-জাতীয় শস্য বলে। যেসব জমি ধানচাষের পক্ষে নিকৃষ্ট এবং সেচের সুবিধাও নেই, সেখানে এইসব শস্য চাষ করা হয়, অর্থাৎ এগুলি খুবই কষ্টসহিষু ফসল।
17. তন্তু শস্য কী?
উত্তর – ধারণা : যেসব শস্য থেকে আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায়, সেইসব শস্যকে তুন্তু শস্য বলে। প্রকারভেদ : তন্তু শস্য তিনপ্রকার— (1) বীজতন্তু: গাছের বীজ থেকে এই তন্তু পাওয়া যায়। যেমন—কার্পাস। (2) বল্কলতন্তু: গাছের ছাল থেকে এই তন্তু সংগ্রহ করা হয়। যেমন—পাট। (3) পত্রতন্তু: গাছের পাতা থেকে এই তন্তু সংগ্রহ করা হয়। যেমন—শন।
18. কয়েকটি উচ্চফলনশীল তুলো বীজের নাম লেখো।
উত্তর – উচ্চফলনশীল তুলো বীজ: কয়েকটি উচ্চফলনশীল তুলো বীজের নাম হল— (1) সুজাতা, (2) ভারতী, (3) সুরভি, (4) MCU-5 ইত্যাদি।
19. কার্পাস বা তুলোর শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – কার্পাস বা তুলোর শ্রেণিবিভাগ : আঁশের দৈর্ঘ্য অনুসারে কার্পাসকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়— (1) অতিরিক্ত দীর্ঘ আঁশযুক্ত কার্পাস (35 মিমি ও তার বেশি দীর্ঘ); (2) দীর্ঘ আঁশযুক্ত কার্পাস (30-35 মিমি দীর্ঘ); (3) মাঝারি আঁশযুক্ত কার্পাস (25-30 মিমি দীর্ঘ); (4) ছোটো আঁশযুক্ত কার্পাস (25 মিমির কম দীর্ঘ)। ভারতে মাঝারি আঁশযুক্ত কার্পাসের উৎপাদন বেশি।
20. বল উইভিল কী?
উত্তর – ধারণা : বল উইভিল হল এক ধরনের পোকা, যা কার্পাস চাষে খুব ক্ষতি করে। এই পোকার আক্রমণে কার্পাস চাষে মড়ক লাগে। এজন্য কার্পাস চাষে খুব বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
21. পানীয় ফসল কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: যেসব ফসলকে আমরা পানীয় হিসেবে গ্রহণ করি, সেইসব ফসলকে পানীয় ফসল বলে। উদাহরণ: ভারতে চা ও কফি হল দুটি প্রধান পানীয় ফসল।
22. বাগিচা কৃষি ও বাগিচা ফসল কাকে বলে?
উত্তর – বাগিচা কৃষি ও বাগিচা ফসল: প্রধানত রপ্তানির উদ্দেশ্যে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে যখন বৃহদায়তন বাগান বা খামারের মধ্যে প্রচুর মুলধন বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে একটি নির্দিষ্ট ফসল লাগিয়ে তা থেকে বহুবছর ফসল সংগ্রহ করা হয়, ফসল উৎপাদনের সেই পদ্ধতিকে বাগিচা কৃষি এবং উৎপাদিত ফসলটিকে বাগিচা ফসল বলে। বাগিচা কৃষিতে উৎপাদিত ফসল সাধারণত বাগিচার মধ্যে বা কাছাকাছি প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকে। উদাহরণ: ভারতে চা, কফি, রবার প্রভৃতি চাষ বাগিচা কৃষির অন্তর্ভুক্ত।
23. ভারতের প্রধান তিনটি চা উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের চা উৎপাদক রাজ্য: ভারতের প্রধান তিনটি চা উৎপাদক রাজ্য হল—অসম (প্রথম), পশ্চিমবঙ্গ (দ্বিতীয়) এবং তামিলনাড়ু (তৃতীয়)।
24. পাহাড়ি ঢালু জমিতে চা চাষ ভালো হয় কেন?
উত্তর – পাহাড়ি ঢালু জমিতে চা চাষ ভালো হওয়ার কারণ : চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে চা গাছের শিকড় পচে যায়। তাই ঢালযুক্ত পাহাড়ি অঞ্চলের জমিতে যেখানে বৃষ্টির জল দাঁড়ায় না, সেখানে চায়ের চাষ ভালো হয়। তাই পাহাড়ি ঢালু জমিতে চা চাষের পক্ষে উপযুক্ত।
25. চায়ের ব্যবহার লেখো।
উত্তর – চায়ের ব্যবহার : চায়ের প্রধান ব্যবহারগুলি হল— (1) মৃদু উত্তেজক পানীয় হিসেবে; (2) কাঠের ফার্নিচার ও মেঝে পরিষ্কার করার কাজে; (3) চা পাতা থেকে প্রাপ্ত ট্যানিন বয়নশিল্পে ডাই করার কাজে ও কাঁচা চামড়া ট্যান করার কাজে; (4) চা বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল ভোজ্য তেল হিসেবে এবং নানা ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদনে কাজে লাগে।
26. ভারত কোন্ কোন্ দেশে চা রপ্তানি করে?
উত্তর – ভারতের চা রপ্তানি : ভারত যেসব দেশে চা রপ্তানি করে তাদের মধ্যে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, রাশিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, ইজিপ্ট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
27. ভারত কোন্ কোন্ দেশে কফি রপ্তানি করে ?
উত্তর – ভারতের কফি রপ্তানি : ভারত – (1) ইটালি, (2) রাশিয়া, (3) জার্মানি, (4) তুরস্ক, (5) বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশে কফি রপ্তানি করে।
28. ভারতের দুটি প্রধান কফি উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের প্রধান কফি উৎপাদক রাজ্য: ভারতের দুটি প্রধান কফি উৎপাদক রাজ্য হল— (1) কর্ণাটক এবং (2) কেরল।
29. শস্যাবর্তন কৃষি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: নির্দিষ্ট কোনো কৃষিক্ষেত্রে বা জমিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন শস্যের পর্যায়ক্রমিক চাষ করার পদ্ধতি শস্যাবর্তন কৃষি নামে পরিচিত। উদ্দেশ্য: এই প্রকার কৃষির লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হল — (1) জমির উর্বরতার মান সঠিকভাবে বজায় রাখা, (2) রোগ-পোকার আক্রমণ থেকে শস্যকে যতটা সম্ভব বাঁচানো, (3) ফসল বা শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং (4) শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা। উদাহরণ: কোনো জমিতে গমের চাষ করা হলে ওই জমিতে পরের বছর আলু, তৃতীয় বছরে যব, চতুর্থ বছরে ডাল এবং পঞ্চম বছরে পুনরায় গম চাষ করলে শস্যাবর্তন সম্পূর্ণ হয়।
30. সবুজবিপ্লব কী?
উত্তর – ধারণা: 1960-এর দশকে ভারতে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কতকগুলি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির অধীনে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমভাগে কৃষিকাজে উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি জলসেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, ভূমিসংস্কার, কৃষিজোতের একত্রীকরণ প্রভৃতি সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর ফলে 1960-এর দশকের শেষভাগ থেকে ওইসব এলাকায় কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। অল্প সময়ের মধ্যে কৃষিজ ফসলের এই বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধিকে সবুজবিপ্লব বলে।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. রবি শস্য চাষ করা হয়—
(a) গ্রীষ্মকালে
(b) বর্ষাকালে
(c) শীতকালে
(d) শরৎকালে
উত্তর – (c) শীতকালে
2. ভারতে ইক্ষু গবেষণাগারটি অবস্থিত—
(a)কটকে
(b) লখনউতে
(c) পুসাতে
(d) জোড়হাটে
উত্তর – (b) লখনউতে
3. বোরো ধান কাটা হয়—
(a) শীতকালে
(b) বর্ষাকালে
(c) গ্রীষ্মকালে
(d) বসন্তকালে
উত্তর – (c) গ্রীষ্মকালে
4. সুজাতা একটি উচ্চফলনশীল—
(a) ধান বীজ
(b) গম বীজ
(c) তুলো বীজ
(d) ইক্ষু বীজ
উত্তর – (c) তুলো বীজ
5. কফি উৎপাদনে ভারতের কোন্ রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে? —
(a) তামিলনাড়ু
(b) কেরল
(c) কর্ণাটক
(d) মহারাষ্ট্র
উত্তর – (c) কর্ণাটক
6. একটি খরিফ শস্যের উদাহরণ হল—
(a) গম
(b) তুলো
(c) সরষে
(d) বার্লি
উত্তর – (b) তুলো
7. .একটি রবি শস্যের উদাহরণ হল—
(a) ধান
(b) গম
(c) পাট
(d) তুলো
উত্তর – (b) গম
৪. গম চাষের জন্য কমপক্ষে কতগুলি তুষারমুক্ত দিন প্রয়োজন?-
(a) 50 দিন
(b) 60 দিন
(c) 100 দিন
(d) 110 দিন
উত্তর – (d) 110 দিন
9. ধান চাষের জন্য যে পরিমাণ বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়, তা হল—
(a) 50-100 সেমি
(b) 100-200 সেমি
(c) 300-400 সেমি
(d) 400-500 সেমি
উত্তর – (b) 100-200 সেমি
10. ভারতে সর্বাধিক চা উৎপাদনকারী রাজ্যটি হল—
(a) পশ্চিমবঙ্গ
(b) অসম
(c) কেরল
(d) তামিলনাড়ু
উত্তর – (b) অসম
11. ICAR দ্বারা কোন্ রাজ্যগুলিকে ‘গম অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়—
(a) হরিয়ানা-উত্তরপ্রদেশ
(b) উত্তরপ্রদেশ-বিহার
(c) পাঞ্জাব-হরিয়ানা
(d) বিহার-পশ্চিমবঙ্গ
উত্তর – (c) পাঞ্জাব-হরিয়ানা
12. হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদন হয় সর্বাধিক যে রাজ্যে—
(a) পশ্চিমবঙ্গ
(b) অসম
(c) কেরল
(d) কর্ণাটক
উত্তর – (d) কর্ণাটক
13. কর্ণাটকের পাহাড়ি অঞ্চল যে ফসল চাষের জন্য বিখ্যাত, তা হল—
(a) কফি
(b) গম
(c) চা
(d) ধান
উত্তর – (a) কফি
14. বাগিচা ফসল হল-
(a) ধান
(b) পাট
(c) চা
(d) আখ
উত্তর – (c) চা
15. ভারতে ধান উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল—
(a) অন্ধ্রপ্রদেশ
(b) পশ্চিমবঙ্গ
(c) উত্তরপ্রদেশ
(d) পাঞ্জাব
উত্তর – (b) পশ্চিমবঙ্গ
16. ভারতে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল —
(a) পশ্চিমবঙ্গ
(b) উত্তরপ্রদেশ
(c) পাঞ্জাব
(d) অন্ধ্ৰপ্ৰদেশ
উত্তর – (c) পাঞ্জাব
17. বাজরা উৎপাদনে কোন্ রাজ্যের স্থান ভারতে প্রথম?—
(a) রাজস্থান
(b) উত্তরপ্রদেশ
(c) গুজরাত
(d) হরিয়ানা
উত্তর – (a) রাজস্থান
18. কর্ণাটকে সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদিত হয় –
(a) মহীশূরে
(b) চিকমাগালুরে
(c) কোদাগুতে
(d) হাসানে
উত্তর – (c) কোদাগুতে
19. যে মাটিতে তুলো চাষ ভালো হয়, তা হল—
(a) ল্যাটেরাইট মাটি
(b) লালমাটি
(c) কালোমাটি
(d) বেলেমাটি
উত্তর – (c) কালোমাটি
20. গম হল একটি—
(a) রবি শস্য
(b) খরিফ শস্য
(c) জায়িদ শস্য
(d) পানীয় ফসল
উত্তর – (a) রবি শস্য
21. কোন্ কৃষিব্যবস্থায় উৎপাদিত ফসলের সম্পূর্ণটাই কৃষকের নিজের এবং পারিবারিক ভোগের জন্য ব্যবহার করা হয়?—
(a) জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি
(b) বাণিজ্যিক কৃষি
(c) উদ্যান কৃষি
(d) মিশ্র কৃষি
উত্তর – (a) জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি
22. ভারতে জোয়ার উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল—
(a) মহারাষ্ট্র
(b) উত্তরপ্রদেশ
(c) বিহার
(d) পশ্চিমবঙ্গ
উত্তর – (a) মহারাষ্ট্র
23. কল্যাণসোনা ভারতের কোন্ উচ্চফলনশীল বীজের প্রজাতি?—
(a) ধান
(b) গম
(c) চা
(d) কার্পাস
উত্তর – (b) গম
24. ভারতে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত উচ্চফলনশীল ধান বীজ হল —
(a) সোনালিকা
(b) কল্যাণসোনা
(c) আইআর-৪
(d) সফেদ লারমা
উত্তর – (c) আইআর-৪
25. ভারতের জাতীয় বীজ নিগম গঠিত হয়—
(a) 1963 সালে
(b) 1965 সালে
(c) 1977 সালে
(d) 1980 সালে
উত্তর – (a) 1963 সালে
26. আমন ধানের বীজ বপন করা হয়—
(a) এপ্রিল-মে মাসে
(b) আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে
(c) জুন-জুলাই মাসে
(d) নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে
উত্তর – (c) জুন-জুলাই মাসে
27. চায়ের গবেষণাগার আছে—
(a) কর্ণাটকের চিকমাগালুরে
(b) পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিঙে
(c) অসমের জোড়হাটে
(d) উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে
উত্তর – (c) অসমের জোড়হাটে
28. আখ উৎপাদনে ভারতে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল—
(a) উত্তরপ্রদেশ
(b) মহারাষ্ট্র
(c) কর্ণাটক
(d) পাঞ্জাব
উত্তর – (a) উত্তরপ্রদেশ
29. স্থানান্তর কৃষিকে উত্তর-পূর্ব ভারতে কী বলে? —
(a) তামরাই
(b) লাদাং
(c) ঝুম
(d) রোকা
উত্তর – (c) ঝুম
30. সবুজবিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন—
(a) ড. নরম্যান বোরলগ
(b) ড. সাহা
(c) ড. হাসান
(d) ড. মুখোপাধ্যায়
উত্তর – (a) ড. নরম্যান বোরলগ

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য হল …………।
উত্তর – ধান
2. ভারতের প্রধান গম গবেষণা কেন্দ্রটি দিল্লির কাছে ……….. –য় অবস্থিত।
উত্তর – পুসা
3. চা চাষের জন্য ……….. জমি প্রয়োজন হয়।
উত্তর – ঢালু
4. ………… রাজ্যটি তুলো উৎপাদনে ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে।
উত্তর – মহারাষ্ট্র
5. দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে ………. চাষ খুব ভালো হয়।
উত্তর – তুলো
6. অন্ধ্রপ্রদেশের ……….. নদী উপত্যকা ও বদ্বীপ অঞ্চলে প্রচুর ধান উৎপাদিত হয়।
উত্তর – গোদাবরী
7. ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময় ……….. শস্য চাষ করা হয়।
উত্তর – খরিফ
৪. ভারতের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রবি শস্য হল …………।
উত্তর – গম
9. রাগি উৎপাদনে ভারতে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল …………।
উত্তর – কর্ণাটক
10. গম উৎপাদনে ভারতের ………… রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে।
উত্তর – উত্তরপ্রদেশ
11. ………… -কে ভারতের ‘কমলালেবুর শহর’ বলে।
উত্তর – নাগপুর
12. ………… একটি জায়িদ ফসলের উদাহরণ।
উত্তর – পটল
13. ভারত থেকে কফি আমদানি করে এমন একটি দেশ হল …………।
উত্তর – ইটালি
14. চা উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল …………।
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গ
15. ভারতে কার্পাস গবেষণাগারটি অবস্থিত ………… শহরে।
উত্তর – নাগপুর
16. ভারতে কফি উৎপাদনে ………… রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে।
উত্তর – কর্ণাটক
17. চা একটি ………… ফসল।
উত্তর – বাগিচা
18. ………… অঞ্চলের চা সুগন্ধে পৃথিবীবিখ্যাত।
উত্তর – দার্জিলিং
19. কফি হল একটি ………… জলবায়ুর ফসল।
উত্তর – উন্ন-আর্দ্র
20. ………… ফসলকে মৌসুমি ফসল বলা হয়।
উত্তর – খরিফ
21. জোয়ার উৎপাদনে ভারতে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল …………।
উত্তর – মহারাষ্ট্র
22. সবুজবিপ্লবকে অনেকে ভারতের ………… বিপ্লব বলে।
উত্তর – গম
23. ………… একটি পানীয় ফসলের উদাহরণ।
উত্তর – চা
24. ………… ভারতে কফি উৎপাদন বেশি হয়।
উত্তর – দক্ষিণ
25. কফি একটি ………… ফসল।
উত্তর – বাগিচা
26. পাঞ্জাব-হরিয়ানার ………… মাটি কৃষি উন্নতির সহায়ক।
উত্তর – পলি
27. ভারতে ……….. বীজের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
উত্তর – উচ্চফলনশীল
28. ভারতে আখ উৎপাদনে ………. রাজ্যটি প্রথম স্থান অধিকার করে।
উত্তর – উত্তরপ্রদেশ
29. ভারতে বেলেমাটিতে যে মিলেট শস্য চাষ করা হয়, সেটি হল …………।
উত্তর – বাজরা
30. খরিফ ও রবি ফসলের মাঝের সময় ………… ফসল উৎপাদিত হয়।
উত্তর – জায়িদ
31. ………… আখ চাষের পক্ষে ক্ষতিকারক।
উত্তর – তুহিন
32. ভারতের প্রধান ধান গবেষণাগারটি ………… -এ অবস্থিত।
উত্তর – কটক
33. উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে প্রচলিত স্থানান্তর কৃষি ………… নামে পরিচিত।
উত্তর – ঝুমচাষ

TOPIC – B ভারতের শিল্প

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. শিল্প : শিল্প হল কাঁচামাল তথা সম্পদ রূপান্তরের প্রক্রিয়া। বনজ, খনিজ এবং কৃষিজ সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে। কলকারখানায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে পরিণত করা হয়, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় শিল্প।
  2. অনুসারী শিল্প : যখন কোনো শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে পরস্পর নির্ভরশীল অনেক শিল্প গড়ে তোলা হয়, তখন প্রথমটিকে কেন্দ্রীয় শিল্প এবং বাকি শিল্পগুলিকে অনুসারী শিল্প বলে।
  3. অবিশুদ্ধ কাঁচামাল: যেসব কাঁচামালকে শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলে তাদের ওজন কমে যায়, সেইসব কাঁচামালকে অবিশুদ্ধ বা অশুদ্ধ কাঁচামাল বলে।
  4. বিশুদ্ধ কাঁচামাল : যেসব কাঁচামালকে শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলেও তাদের ওজন কমে না, সেইসব কাঁচামালকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে।
  5. আধুনিক শিল্পদানব : পেট্রোরসায়নিক শিল্প কারখানায় অসংখ্য জিনিস উৎপন্ন হতে পারে এবং ওইসব উৎপন্ন সামগ্রীর ওপর ভিত্তি করে অগণিত অনুসারী শিল্প বা শিল্পগুচ্ছ গড়ে উঠে বৃহদায়তন শিল্পদানবের আকার নিতে পারে। এজন্যই পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয়।
  6. শিকড় আলগা শিল্প কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল কার্পাস বা তুলো। এটি একটি বিশুদ্ধ কাঁচামাল অর্থাৎ সমপরিমাণ (1 টন) তুলো থেকে সমপরিমাণ (1 টন) সুতো বা বস্ত্র উৎপাদিত হয়। ফলে এই শিল্প কাঁচামাল উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা এদের মধ্যবর্তী যে-কোনো স্থানেই গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ, কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠার প্রবণতা লক্ষ করা যায় না। তাই কার্পাস বয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে।
  7. তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প : যে শিল্পে কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ বা দূরস্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার তথ্যের অন্বেষণ, পুনরুদ্ধার, পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ বা মজুত প্রভৃতি কাজ ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে করা হয়, তখন সেই শিল্পকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে।
  8. ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প : যে শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ধাতু বিশেষত লোহা ও ইস্পাত দিয়ে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়, সেই শিল্পকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে।
  9. দ্রব্যসূচক: দ্রব্যসূচক হল শিল্পে ব্যবহৃত মোট কাঁচামালের ওজন এবং মোট উৎপাদিত দ্রব্যের ওজনের অনুপাত। জার্মান অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড ওয়েবারের মতে, কেনো শিল্প কাঁচামালের উৎসস্থানে গড়ে উঠবে, না বাজারে স্থাপিত হবে, তা নির্ভর করে দ্রব্যসূচক বা পণ্যসূচকের ওপর।
  10. শিল্পাঞ্চল : অনুকূল প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে যখন কোনো স্থানে বিভিন্ন ধরনের শিল্পের সমাবেশ হয়, তখন সেই স্থান শিল্পাঞ্চল নামে পরিচিত হয়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. শিল্পস্থাপনের কারণসমূহ আলোচনা করো।
অথবা, কোনো জায়গায় শিল্প গড়ে তোলার আগে কোন্ কোন্ বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া উচিত?
উত্তর – শিল্পস্থাপনের কারণসমূহ
পৃথিবীর সর্বত্র শিল্প গড়ে তোলা যায় না। শিল্পস্থাপনের কারণগুলি হল—
  1. প্রাকৃতিক কারণ : (1) কাঁচামাল: কাঁচামালের ওপর নির্ভর করেই শিল্পজাত পণ্য তৈরি হয়। অধিকাংশ শিল্পের ক্ষেত্রে কাঁচামালের প্রাপ্তির ওপর শিল্পস্থাপন নির্ভর করে। কাঁচামাল দু-ধরনের হতে পারে, যথা—

    [i] অবিশুদ্ধ কাঁচামাল: শিল্পজাত দ্রব্যে রূপান্তরিত হলে যেসব কাঁচামালের ওজন কমে যায়, সেইসব কাঁচামালকে অবিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। যেমন—আখ থেকে চিনি বা লোহার আকরিক থেকে ইস্পাত তৈরির পর তার ওজন কমে। তাই পরিবহণ ব্যয় কমানোর জন্য অবিশুদ্ধ কাঁচামালনির্ভর শিল্পকেন্দ্রগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে গড়ে ওঠে।

    [ii] বিশুদ্ধ কাঁচামাল: শিল্পজাত দ্রব্যে রূপান্তরিত হলেও যেসব কাঁচামালের ওজন কমে না, সেইসব কাঁচামালকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। যেমন— তুলো, পাট। এক টন তুলো বা পাট থেকে 1 টন বস্ত্র বা পাটজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়। কাঁচামাল ও শিল্পজাত দ্রব্যের ওজন একই থাকে বলে পরিবহণ ব্যয়ও একই হয়। এজন্য বিশুদ্ধ কাঁচামাল ব্যবহারকারী শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎস থেকে দূরবর্তী স্থানেও গড়ে ওঠে।

    (2) জল: শিল্প তো বটেই, শিল্প শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্যও চাই স্বচ্ছ জল। এজন্য নদী, হ্রদ প্রভৃতির কাছে শিল্প স্থাপিত হয়। যেমন— দামোদর নদের ধারে দুর্গাপুর লোহা-ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে।

    (3) বিদ্যুৎ: কলকারখানা চালানোর জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ তথা শক্তি সম্পদ এবং এক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ এবং জলবিদ্যুতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এজন্য ইউরোপ ও আমেরিকার শিল্প কারখানাগুলি কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ভারতের বহু শিল্পকারখানা কয়লাখনি ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।

    (4) জলবায়ু: জলবায়ু শিল্পস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুষ্ক জলবায়ু যেমন ময়দা ও সূক্ষ্ম ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের পক্ষে আদর্শ, ঠিক তেমনই আর্দ্র জলবায়ু বস্ত্রশিল্প, পাটশিল্প প্রভৃতির শিল্পের পক্ষে অনুকূল।
  2.  অপ্রাকৃতিক কারণ : (1) পরিবহণ: শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও শক্তিসম্পদ সংগ্রহ, শ্রমিকদের যাতায়াত, উৎপন্ন শিল্পজাত দ্রব্য বাজারে পাঠানোর জন্য যে উন্নত ও আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়োজন, তা যেখানে সহজলভ্য ও সুলভ সেখানে শিল্প গড়ে ওঠে। (2) শ্রমিক: শিল্পস্থাপনের জন্য দক্ষ ও সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। শিল্পস্থাপনে শ্রমিকের এই প্রভাব এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রয়োজনমতো তুলো উৎপাদিত না হলেও প্রধানত সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের সহজলভ্যতার জন্যেই বাংলাদেশে কার্পাস বয়ন শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। (3) বাজার: শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার অর্থাৎ চাহিদা অনুসারে শিল্প গড়ে ওঠে। যেখানে যে পণ্যের চাহিদা বেশি, সেখানে সেই শিল্পটির বিকাশ ঘটে। যেমন—পশ্চিমবঙ্গে তুলো উৎপাদিত না হলেও এখানে সুতিবস্ত্রের বিপুল চাহিদা বা বাজার থাকায় হুগলি শিল্পাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। (4) মূলধন: শিল্প গড়ে তুলতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন৷ শিল্পের প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা, কারখানা স্থাপন, কাঁচামাল ক্রয়, শ্রমিকের মজুরি, শক্তিসম্পদের জোগান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক মূলধনের প্রয়োজন হয়। প্রাথমিক অবস্থা পারসি ও গুজরাটি ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগের কারণেই গুজরাত ও মহারাষ্ট্রে বয়ন শিল্প-সহ বিভিন্ন প্রকার শিল্পের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়।
2. কুলটি-বার্নপুর লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি লেখো।
উত্তর – কুলটি-বার্নপুর লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণসমূহ
অবস্থান: পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দামোদর ও বরাকর নদের ধারে পূর্ব রেলপথের দ্বারা সংযুক্ত কুলটি-বার্নপুর লৌহ-ইস্পাত কারখানা (ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি বা IISCO)। এই কারখানার একটি অংশ কুলটিতে এবং অপর একটি অংশ নিকটবর্তী বার্নপুরে অবস্থিত।
স্থাপনকাল: ব্যক্তিগত উদ্যোগে কুলটির কারখানাটি 1870 সালে এবং বানপুরের কারখানাটি 1918 সালে স্থাপিত হয়। 1972 সাল থেকে এই দুটি কারখানা ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে।
কুলটি-বার্নপুর লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি হল-
  1. কাঁচামালের সুবিধা: রানিগঞ্জ (পশ্চিমবঙ্গ) ও ঝরিয়া (ঝাড়খণ্ড) থেকে কয়লা, গুয়া, নোয়ামুক্তি (ঝাড়খণ্ড), বোলানি, গোরুমহিষানি, বাদামপাহাড় (ওড়িশা) থেকে আকরিক লোহা; গাংপুর ও বীরমিত্রপুর (ওডিশা)-এর চুনাপাথর এবং গাংপুর (ওডিশা)-এ ডলোমাইট ও ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা এই অঞ্চলে লৌহ-ইস্পাত শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : দামোদর এবং বরাকর নদের জল এই শিল্পে প্রয়োজনীয় জলের চাহিদাপুরণ করে।
  3. ভাপসহনক্ষম ইট: রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলের তাপসহনক্ষম ইট এই লোহা ও ইস্পাত কারখানার চাহিদা মেটায়।
  4. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান: দুর্গাপুর, ওয়ারিয়া, দিশেরগড় ও মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই শিল্পকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির জোগান দেয়।
  5. সুলভ শ্রমিক : বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সুলভ এবং দক্ষ শ্রমিক শ্রমশক্তির চাহিদা পূরণ করে।
3. দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি লেখো।
উত্তর – দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণসমূহ
অবস্থান: দুর্গাপুরে দামোদর নদের তীরে রানিগঞ্জ কয়লাখনির পূর্ব সীমায় পূর্ব রেলপথের পাশে দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট (DSP)টি অবস্থিত।
স্থাপনকাল: ব্রিটিশ কোম্পানি ‘ইস্কন’-এর সহযোগিতায় স্থাপিত রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানাটি স্থাপনের কাজ 1956 সালে শুরু হলেও 1962 সাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি হল-
  1. কাঁচামালের সুবিধা: রানিগঞ্জ (পশ্চিমবঙ্গ) ও ঝরিয়া (ঝাড়খণ্ড) থেকে কয়লা, গোরুমহিযানি ও বাদামপাহাড় (ওডিশা); গুয়া ও নোয়ামুণ্ডি (ঝাড়খণ্ড) থেকে আকরিক লোহা, বীরমিত্রপুর ও গাংপুর (ওডিশা) থেকে চুনাপাথর এবং গাংপুর (ওডিশা) থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা এই শিল্প গড়ে তোলার সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : শিল্পের প্রয়োজনীয় জল দামোদর নদ থেকে পাওয়া যায়।
  3. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান : দুর্গাপুর ও ওয়ারিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটায়।
  4. সুলভ শ্রমিক : বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সুলভ এবং দক্ষ শ্রমিক শ্রমশক্তির চাহিদা মেটায়।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : NH-19 (NH-2) এবং পূর্ব রেলপথের মাধ্যমে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় কাঁচামাল আনা ও পণ্যদ্রব্য রপ্তানিতে সুবিধা হয়।
4. ভারতে সরকারি উদ্যোগে গঠিত একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানার অবস্থানগত সুবিধা আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে সরকারি উদ্যোগে গঠিত একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানা
ভারতে সরকারি উদ্যোগে গঠিত একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল—
ভিলাই স্টিল প্লান্ট।
অবস্থান : ভিলাই স্টিল প্লান্ট ভারতের বৃহত্তম লোহা ও ইস্পাত কারখানা যেটি ছত্তিশগড়ের দুর্গ জেলার ভিলাইতে অবস্থিত।
স্থাপনকাল: পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় এবং ভারত সরকারের উদ্যোগে 1956 সালে এই কারখানাটি স্থাপিত হয় এবং 1959 সালে এখানে উৎপাদন শুরু হয়।
ভিলাইয়ে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার অবস্থানগত সুবিধাগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সুবিধা: কোরবা (ছত্তিশগড়); ঝরিয়া (ঝাড়খণ্ড) থেকে কয়লা, দাল্লি-রাজহারা (ছত্তিশগড়) থেকে আকরিক লোহা, নন্দিনী ও বিলাসপুর (ছত্তিশগড়) থেকে চুনাপাথর, হিরি ও বড়োদুয়ার (ছত্তিশগড়) থেকে ডলোমাইট এবং বালাঘাট (মধ্যপ্রদেশ); ভাণ্ডারা (মহারাষ্ট্র) থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : নিকটবর্তী তেণ্ডুলা জলাধার শিল্পকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জলের চাহিদাপূরণ করে।
  3. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান : কোরবা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কারখানার নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই শিল্পকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটায়।
  4. সুলভ শ্রমিক: স্থানীয় সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক, শ্রমশক্তির চাহিদা মেটায়। কারণ এই অঞ্চল কৃষিতে অনুন্নত বলে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে অনেকেই শিল্পশ্রমিকের কাজ করে।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের মাধ্যমে কলকাতা, মুম্বাই এবং AH-46 (NH-53)-এর মাধ্যমে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় সুবিধা হয়।
5. ভারতে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানার অবস্থানগত সুবিধা আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানা
ভারতে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানাটি হল—
জামশেদপুরের টাটা স্টিল লিমিটেড বা TSL।
অবস্থান : ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের ওপর সুবর্ণরেখা এবং খরকাই নদীর মিলনস্থলে জামশেদপুরে টাটা স্টিল লিমিটেড-এর কারখানাটি গড়ে উঠেছে। ভারতে বেসরকারি ক্ষেত্রে গঠিত লোহা ও ইস্পাত কারখানাগুলির মধ্যে এই কারখানাটি বৃহত্তম।
স্থাপনকাল: জামশেদজি টাটা পরিকল্পিত এই কারখানাটি 1907 সালে জামশেদপুর শহরে স্থাপিত হয়েছিল।
জামশেদপুরে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার অবস্থানগত সুবিধাগুলি হল-
  1. কাঁচামালের সুবিধা: ঝরিয়া (ঝাড়খণ্ড), রানিগঞ্জ (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে কয়লা, নোয়ামুণ্ডি, গুয়া (ঝাড়খণ্ড); গোরুমহিষানি, বাদামপাহাড়, বোনাই (ওডিশা) থেকে আকরিক লোহা, বীরমিত্রপুর, গাংপুর (ওডিশা) থেকে চুনাপাথর, সুন্দরগড়, বীরমিত্রপুর (ওডিশা) থেকে ডলোমাইট, গাংপুর (ওডিশা) থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : শিল্পকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জল সুবর্ণরেখা ও এর উপনদী খরকাই থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
  3. বিদ্যুৎশক্তি : টাটা স্টিল লিমিটেডের নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই শিল্পকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির চাহিদাপূরণ করে।
  4. সুলভ শ্রমিক: ঝাড়খণ্ড ও ওডিশার সুলভ এবং দক্ষ শ্রমিক শ্রমশক্তির চাহিদা মেটায়। কারণ এই অঞ্চল কৃষিতে উন্নত নয় বলে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে অনেকেই শিল্প শ্রমিকের কাজ করে।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং NH-2, 23, 31, 33 প্রভৃতি জাতীয় সড়কের সঙ্গে এই শিল্পকেন্দ্রের সংযুক্তির ফলে কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহণে যথেষ্ট সুবিধা হয়।
6. বোকারো লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণ কী কী?
অথবা, বোকারো স্টিল প্লান্ট গড়ে ওঠার কারণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – বোকারো লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণসমূহ
অবস্থান: পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় ভারত সরকারের উদ্যোগে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলাতে বোকারো স্টিল প্লান্ট নির্মিত হয়েছে।
স্থাপনকাল : 1968 সালে এই কারখানাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং 1972 সালে এখানে উৎপাদন শুরু হয়।
বোকারোতে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সুবিধা: বোকারো ও ঝরিয়া (ঝাড়খণ্ড) থেকে কয়লা, চিরিয়া, গুয়া, মেঘাহাতুবুর (ঝাড়খণ্ড), কিরিবুর (ওডিশা) থেকে আকরিক লোহা, ভবনাথপুর, ডালটনগঞ্জ (ঝাড়খণ্ড) ও বীরমিত্রপুর (ওডিশা) থেকে চুনাপাথর, বিলাসপুর (ছত্তিশগড়) থেকে ডলোমাইট এবং গাংপুর (ওডিশা) থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : দামোদরের ওপর নির্মিত তেনুঘাট জলাধার থেকে এই শিল্পকেন্দ্রের জল পাওয়া যায়।
  3. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান : বোকারো ও পাত্ৰাতু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই শিল্পকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির জোগান দেয়।
  4. সুলভ শ্রমিক: ঝাড়খণ্ডের সুলভ এবং দক্ষ শ্রমিক এই কেন্দ্রে শ্রমশক্তির চাহিদা মেটায়। কারণ এই অঞ্চল কৃষিতে উন্নত নয় বলে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে অনেকেই শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজ করে।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং NH-2, 23, 31, 33 প্রভৃতি একাধিক জাতীয় সড়কের সঙ্গে এই শিল্পকেন্দ্রের সংযুক্তি কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহণে যথেষ্ট সাহায্য করে।
7. রৌরকেলা লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – রৌরকেলা লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণসমূহ
অবস্থান: ভারত সরকারের উদ্যোগে এবং জার্মানির মানেসমান, ক্রুপ, ডেমাগ প্রভৃতি কোম্পানির সহায়তায় ওডিশার সুন্দরগড় জেলার রৌরকেলায় ব্রাক্মণী নদীর ঊর্ধ্বপ্রবাহে শঙ্খ নদীর কাছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের পাশে রৌরকেলা লোহা ও ইস্পাত কারখানাটি গড়ে উঠেছে।
স্থাপনকাল: এই কারখানাটি 1956 সালে স্থাপিত হয় এবং 1959 সাল থেকে এখানে উৎপাদন শুরু হয়।
রৌরকেলা লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সুবিধা : ঝরিয়া, বোকারো (ঝাড়খণ্ড), রানিগঞ্জ (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে কয়লা, কিরিবুরু, বোলানি, বারসুয়া (ওডিশা); গুয়া ও মেঘাহাতুবুরু (ঝাড়খণ্ড) থেকে আকরিক লোহা, গাংপুর, বীরমিত্রপুর (ওডিশা); পূর্ণপাণি (ছত্তিশগড়) থেকে চুনাপাথর সম্বলপুর (ওডিশা), বড়োদুয়ার (ছত্তিশগড়) থেকে ডলোমাইট এবং গাংপুর, কালাহাণ্ডি (ওডিশা) থেকে ম্যাঙ্গানিজ এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : ব্রাহ্মণী ও শঙ্খ নদী এবং দক্ষিণ কোয়েল ও মন্দিরা জলাধারের জল শিল্পকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা মেটায়।
  3. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান: হিরাকুদ প্রকল্পের জলবিদ্যুতের মাধ্যমে এই শিল্পকেন্দ্রের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হয়।
  4. সুলভ শ্রমিক: স্থানীয় সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক শিল্পকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির চাহিদা মেটায়। কারণ এই অঞ্চল কৃষিতে অনুন্নত হওয়ায় জীবিকার মাধ্যম হিসেবে অনেকেই শিল্প শ্রমিকের কাজ বেছে নেয়।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ ও পূর্ব-উপকূল রেলপথ এবং NH-143 জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে কলকাতা, মুম্বাই ও অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ এই শিল্পকেন্দ্রটি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
8. বিশাখাপত্তনম লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ আলোচনা করো।
উত্তর – বিশাখাপত্তনম লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ
অবস্থান: ভারতের পূর্ব উপকূলে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে রাষ্ট্রায়ত্ত এই লোহা ও ইস্পাত কারখানাটি অবস্থিত। এটি বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্ট নামে পরিচিত এবং ভারতের একমাত্র উপকূলীয় অবস্থানের লোহা ও ইস্পাত কারখানা।
স্থাপনকাল: এই কারখানাটির নির্মাণের কাজ 1982 সালে শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হয় 1990 সালে। এটি হল দাক্ষিণাত্যের প্রথম বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা।
বিশাখাপত্তনমে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সুবিধা : সিঙ্গারেনি (তেলেঙ্গানা); তালচের (ওডিশা থেকে কয়লা; কাডাপ্পা, নেল্লোর, কুর্ণল (অন্ধ্রপ্রদেশ); বায়লাডিলা (ছত্তিশগড়) থেকে আকরিক লোহা, জগ্গয়য়াপেত (অন্ধ্রপ্রদেশ), বদনাপুর ও কাটনি (মধ্যপ্রদেশ) থেকে চুনাপাথর, মাধারাম (তেলেঙ্গানা); বীরমিত্রপুর (ওডিশা); বিলাসপুর (ছত্তিশগড়) থেকে ডলোমাইট এবং চিপুরুপল্লি, কোঠাভালাসা (অন্ধ্রপ্রদেশ) ম্যাঙ্গানিজ এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার ইয়েলেরু নদীর ওপর নির্মিত জলাধার থেকে এই শিল্পকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জলের সরবরাহ করা হয়।
  3. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান: রামাগুণ্ডাম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শিল্পকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদাপূরণ করা হয়।
  4. সুলভ শ্রমিক: স্থানীয় সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির চাহিদাপূরণ করে।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : ইস্ট কোস্ট রেলপথ ও বিভিন্ন সড়কপথের মাধ্যমে কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই ও অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সহজ পরিবহণ ব্যবস্থা শিল্পকেন্দ্রটি গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
9. ভদ্রাবতী ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার বা বিশ্বেশ্বরায়া লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের অবস্থানগত সুবিধা আলোচনা করো।
উত্তর – ভদ্রাবতী ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার বা বিশ্বেশ্বরায়া লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের অবস্থানগত সুবিধা
অবস্থান: কর্ণাটক রাজ্যের উত্তরাংশে ভদ্রা নদীর তীরে ভদ্রাবতীতে এই কারখানাটি অবস্থিত। এখানে বিশেষ ধরনের ইস্পাত উৎপাদন করা হয়।
স্থাপনকাল : 1918 সালে বেসরকারি উদ্যোগে এই কারখানাটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং এখানে উৎপাদনকার্য শুরু হয় 1923 সালে। 1962 সালে ভারত সরকার ও কর্ণাটক সরকার যৌথভাবে এই কারখানাটি অধিগ্রহণ করে এবং এরপর এই কেন্দ্রটির নাম হয় বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল লিমিটেড (VISL)।
ভদ্রাবতী ইস্পাত কেন্দ্র বা বিশ্বেস্বরায়া লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠার অবস্থানগত সবিধাগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা: কেন্মানগুণ্ডি, বাবাবুদান পাহাড় (কর্ণাটক) থেকে আকরিক লোহা, বাগলকোট (কর্ণাটক) থেকে ডলোমাইট, ভাণ্ডিগুড্ডা (কর্ণাটক) থেকে চুনাপাথর এবং শিবামোগ্গা ও চিত্রদুর্গ জেলা (কর্ণাটক) থেকে ম্যাঙ্গানিজ এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : ভদ্রা নদী এই শিল্পকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা মেটায়।
  3. নিকটবর্তী বিদ্যুৎ কেন্দ্র : যোগ জলপ্রপাতের ওপর নির্মিত মহাত্মা গান্ধি ও শরাবতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎশক্তি এই শিল্পকেন্দ্রটির বিদ্যুতের চাহিদাপূরণ করে।
  4. সুলভ শ্রমিক: কর্ণাটকের দক্ষ ও সুলভ শ্রমিক এই শিল্পকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির চাহিদাপূরণ করে।
  5. বন্দরের নৈকট্য : এই শিল্পকেন্দ্রের নিকটবর্তী ম্যাঙ্গালুরু (210 কিমি) ও মার্মাগাও (400 কিমি) বন্দরের মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য রপ্তানি করা হয়।
10. পশ্চিমবঙ্গে লোহা ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি কী?
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গে লোহা ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণসমূহ
পশ্চিমবঙ্গে দুটি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা আছে—একটি দুর্গাপুরে দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট এবং অপরটি কুলটি-বার্নপুরে ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি। এ ছাড়াও দুর্গাপুরে একটি সংকর ইস্পাত কারখানা আছে যার নাম অ্যালয় স্টিল প্লান্ট। পশ্চিমবঙ্গে এই দুটি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা এবং একটি সংকর ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা : রানিগঞ্জ, অণ্ডাল, মেজিয়া, দিশেরগড় (পশ্চিমবঙ্গ); ঝরিয়া (ঝাড়খণ্ড) থেকে কয়লা, গুয়া ও নোয়ামুণ্ডি (ঝাড়খণ্ড); গোরুমহিষানি, বাদামপাহাড় ও বোলানি (ওডিশা) থেকে আকরিক লোহা, বীরমিত্রপুর (ওডিশা) থেকে চুনাপাথর, গাংপুর (ওডিশা) থেকে ডলোমাইট এবং গাংপুর (ওডিশা) থেকে ম্যাঙ্গানিজ এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
  2. জলের সহজলভ্যতা : শিল্পকেন্দ্রগুলির প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জল দামোদর নদ ও তার উপনদী বরাকর থেকে পাওয়া যায়।
  3. বিদ্যুৎ পাওয়ার সুবিধা: দুর্গাপুর, মেজিয়া ও দিশেরগড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা আছে।
  4. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : পূর্ব রেলপথ, NH-19 (গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড) এবং দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত নৌবহনযোগ্য খালের মাধ্যমে এই শিল্পকেন্দ্রগুলি হুগলি শিল্পাঞ্চলের বিশাল বাজার ও কলকাতা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাঁচামাল আমদানি এবং ফলে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও রপ্তানি করা বিশেষ সুবিধাজনক।
  5. সুলভ শ্রমিকের প্রাচুর্য : ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার পশ্চিমাংশ ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে পর্যাপ্ত সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।
11. পূর্ব ও মধ্য ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ কী?
অথবা, পূর্ব ও মধ্য ভারতে লোহা-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – পূর্ব ও মধ্য ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ
ভারতের অধিকাংশ লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে পূর্ব ও মধ্য ভারতে। এগুলি হল পূর্ব ভারতের দুর্গাপুর, কুলটি-বার্নপুর, জামশেদপুর, রৌরকেলা, বোকারো ও মধ্য ভারতের ভিলাই। এ ছাড়াও এই অঞ্চলে আরও কয়েকটি লোহা ও ইস্পাত কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এই অঞ্চলে লোহা ও ইস্পাত কারখানার কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা: পূর্ব ও মধ্য ভারতের লোহা ও ইস্পাত কারখানাগুলির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলি হল— পূর্ব ভারতের রানিগঞ্জ (পশ্চিমবঙ্গ); ঝরিয়া, বোকারো, গিরিডি, করণপুরা (ঝাড়খণ্ড); তালচের (ওডিশা) এবং মধ্য ভারতের কোরবা, সোনহাট (ছত্তিশগড়), সিংগ্রাউলি, উমারিয়া (মধ্যপ্রদেশ) -এর কয়লা, পূর্ব ভারতের গুয়া, নোয়ামুণ্ডি, চিরিয়া, মনোহরপুর (ঝাড়খণ্ড); গোরুমহিষানি, বাদামপাহাড়, সুলাইপাট, কিরিবুরু, বোনাই, বোলানি (ওডিশা) এবং মধ্য ভারতের বায়লাডিলা, দাল্লি-রাজহারা (ছত্তিশগড়)-এর আকরিক লোহা, পূর্ব ভারতের বীরমিত্রপুর (ওডিশা); ভবনাথপুর ও ডালটনগঞ্জ (ঝাড়খণ্ড); পূর্ণপাণি (ছত্তিশগড়) এবং মধ্য ভারতের সাতনা, কুটেশ্বর, কাটনি (মধ্যপ্রদেশ)-এর চুনাপাথর, পূর্ব ভারতের সম্বলপুর, গাংপুর ও সুন্দরগড় (ওডিশা); হিররি (ছত্তিশগড়) এবং মধ্য ভারতের কাটনি (মধ্যপ্রদেশ) থেকে ডলোমাইট এবং গাংপুর ও বোনাই (ওডিশা)-এর ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
  2. জলের সহজলভ্যতা : এই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জল দামোদর, বরাকর, সুবর্ণরেখা, খরকাই, শঙ্খ, ব্রাত্মণী, দক্ষিণ কোয়েল প্রভৃতি নদনদী থেকে সহজেই পাওয়া যায়। এ ছাড়া, তেণ্ডুলা জলাধার, মন্দিরা জলাধার থেকেও জল পাওয়া যায়।
  3. পর্যাপ্ত বিদ্যুৎশক্তি : পূর্ব ও মধ্য ভারতে প্রচুর কয়লানির্ভর বৃহদায়তন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যেমন—পূর্ব ভারতের দুর্গাপুর, মেজিয়া, দিশেরগড়, বক্রেশ্বর (পশ্চিমবঙ্গ), পাত্রাতু, বোকারো (ঝাড়খণ্ড), তালচের (ওডিশা) প্রভৃতি এবং মধ্য ভারতের কোরবা (ছত্তিশগড়), বিন্ধ্যাচল (মধ্যপ্রদেশ) প্রভৃতি। এ ছাড়া হিরাকুদ ও সিলেরুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলবিদ্যুৎ প্রাপ্তির সুবিধা পূর্ব ও মধ্য ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের সহায়ক।
  4. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: ভারতীয় রেলপথের বিভিন্ন শাখা (পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ) এবং NH-2, 6, 23, 31, 33 প্রভৃতি জাতীয় সড়ক এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রসারিত হওয়ায় দেশের যে-কোনো অঞ্চলের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ ও পণ্যদ্রব্যের আদানপ্রদান করা যায়।
  5. বন্দরের নৈকট্য : কলকাতা, হলদিয়া, বিশাখাপত্তনম ও পারাদীপের মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের সান্নিধ্য এই অঞ্চলে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতিতে বিশেষ সহায়তা করেছে।
12. ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের সমস্যাসমূহ আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের সমস্যাসমূহ
ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্প যথেষ্ট সমৃদ্ধ হলেও এই শিল্পের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে. যেমন—
  1. উন্নতমানের কোকিং কয়লার অভাব: ভারতে উন্নতমানের আকরিক লোহা থাকলেও লোহা ও ইস্পাত শিল্পের অপর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অর্থাৎ, উন্নতমানের কোকিং কয়লার অভাব আছে।
  2. মূলধনের অভাব: নতুন লোহা ও ইস্পাত কারখানা নির্মাণ এবং পুরোনো কারখানাগুলির আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়, যার অভাব ভারতে রয়েছে।
  3. জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা: নতুন কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।
  4. প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাব: পুরোনো যন্ত্রপাতি মেরামতি এবং আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
  5. আধুনিক প্রযুক্তির অভাব : অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অভাবে ভারতে ইস্পাত উৎপাদনের খরচ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি এবং ইস্পাতের গুণগত মানও উন্নত নয়।
13. পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর – পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণসমূহ
পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয়। পেট্রোরসায়ন শিল্পে প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যগুলি হল কৃত্রিম রবার, কৃত্রিম তন্তু, প্লাস্টিক, পলিথিন, রং, জীবনদায়ী ঔষধ, কীটনাশক, সার, প্রসাধনী দ্রব্য প্রভৃতি। এই শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি হল—
  1. তেলশোধনাগারের অবস্থান: পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য এই শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে খনিজ তেল শোধনাগারের কাছে এই শিল্প গড়ে ওঠে। এখানে মূল শিল্প হিসেবে ন্যাপথা উৎপাদন কেন্দ্র এবং অনুসারী শিল্প হিসেবে ন্যাপথার ওপর ভিত্তি করে যেসব দ্রব্য উৎপন্ন হয় সেগুলির কারখানা গড়ে ওঠে।
  2. বিদ্যুতের সহজলভ্যতা : কারখানাগুলি পরিচালনা করার জন্য সুলভ বিদ্যুৎ সরবরাহ এই শিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক।
  3. মূলধনের জোগান: এই শিল্পস্থাপনের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। সেই জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার ও ধনী শিল্পগোষ্ঠী প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে।
  4. উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান: উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের সহজলভ্যতা এই শিল্পস্থাপনের জন্য সহায়ক।
  5. চাহিদা: অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোরসায়ন শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা এই শিল্পের বিকাশকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। এসকল কারণেই পশ্চিম ভারতের ট্রম্বে, ভাদোদরা, কয়ালি ও পূর্ব ভারতের হলদিয়াতে এই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
14. ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর – ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্প
পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয়। এই শিল্পে উৎপাদিত প্রতিটি সামগ্রী বা উপকরণ দৈনন্দিন কাজে লাগে। পেট্রোরসায়ন শিল্পের ওপর নির্ভর করে অনেক ধরনের শিল্প গড়ে ওঠে। এই শিল্পগুলিকে বলা হয় ডাউন স্ট্রিম শিল্প।
বিকাশ
1966 সালে ইউনিয়ন কার্বাইড (ইন্ডিয়া) লিমিটেড ট্রম্বেতে পেট্রোরসায়ন কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভারতে এই শিল্পের প্রকৃত সূচনা ঘটায়। 1977 সালে গুজরাত রাজ্যের হাজিরা (সুরাত)-তে এবং 2002 সালে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়াতে পেট্রোরসায়ন কারখানা গড়ে ওঠে।
প্রয়োজনীয় কাঁচামাল : খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য, যেমন—ন্যাপথা, মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন, হেক্সেন, পেনটেন, বেনজল, বিউটাডিন, ইথানল, প্রোপিলিন ইত্যাদি হল পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল।
উৎপন্ন দ্রব্য : (1) রাসায়নিক দ্রব্য—বেঞ্জিন, ইথিলিন, প্রোপিলিন, কার্বন ব্ল্যাক ইত্যাদি; (2) নানা ধরনের সলভেন্ট ; (3) কৃত্রিম তন্তু, যেমন—অ্যাক্রিলিক তন্তু, নাইলন ফিলামেন্ট ইয়ার্ন, পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট ইয়ার্ন প্রভৃতি ; (4) পলিমারস, যেমন—পলিইথিলিন, পলিপ্রোপিলিন, পলিভিনাইল ক্লোরাইড প্রভৃতি; (5) প্লাস্টিক ; (6) ফাইবার ইন্টারমিডিয়েটস, যেমন—অ্যাক্সিলোনাইট্রাইল, মোনো ইথিলিন গ্লাইকল প্রভৃতি; (7) কৃত্রিম রবার।
ভারতের উল্লেখযোগ্য পেট্রোরসায়ন কোম্পানি ও কেন্দ্রসমূহ
  1. ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যালস কর্পোরেশন লিমিটেড: অধীনস্থ কারখানা: ভাদোদরার জওহরনগর, গান্ধার বা দহেজ (গুজরাত); নাগোথানে (মহারাষ্ট্র); সিলভাসা (দাদরা ও নগর হাভেলি); এলাহাবাদ (উত্তরপ্রদেশ); বাউলপুর (ওডিশা) উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] 1969 সালে ভারত সরকার ও জার্মানির Fried Krupp Gmbh-এর সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়। [ii] 2002 সালে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ সংস্থাটি অধিগ্রহণ করেছে। [iii] বেঞ্জিন, ইথিলিন, প্রোপিলিন, কার্বন ব্ল্যাক, প্লাসটিক ও কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করা হয়।
  2. সাদার্ন পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন লিমিটেড: অধীনস্থ কারখানা: তুতিকোরিন (তামিলনাড়ু) উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] 1969 সালে গঠিত হয় এবং 1975 সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু হয়। [ii] জৈব সার, রাসায়নিক সার উৎপাদন করা হয়।
  3. বঙ্গাইগাঁও রিফাইনারিজ পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড : অধীনস্থ কারখানা: বঙ্গাইগাঁও (অসম) উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] 1974 সালে স্থাপিত। [ii] জাইলিন, পিএসএফ তন্তু উৎপাদন করা হয়।
  4. রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড : অধীনস্থ কারখানা: জামনগর, হাজিরা, দহেজ (গুজরাত) উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] পলিয়েস্টার তন্তু, পলিয়েস্টার ইনটারমিডিয়েটস এবং রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। [ii] জাইলিন ও পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদন করা হয়।
  5. ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড: অধীনস্থ কারখানা: ম্যাঙ্গালোর (কর্ণাটক) উল্লেখযোগ্য তথ্য: রাষ্ট্রায়ত্ত HPCL এবং আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত।
  6. হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড: অধীনস্থ কারখানা: হলদিয়া (পশ্চিমবঙ্গ) উল্লেখযোগ্য তথ্য: [i] পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগম, টাটা গোষ্ঠী, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন এবং চ্যাটার্জি পেট্রোকেম কোম্পানি লিমিটেডের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত। [ii] এখানে নিম্ন ও উচ্চ ঘনত্বের পলিইথিলিন,এইচডিপিই, এলএলডিপিই প্রভৃতি দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।
  7. মিৎসুবিশি কেমিক্যালস কর্পোরেশন : অধীনস্থ কারখানা: হলদিয়া (পশ্চিমবঙ্গ) উল্লেখযোগ্য তথ্য: পলিয়েস্টার তন্তু, পিইটি ফিল্ম উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল টেরেফথ্যালিক অ্যাসিড উৎপাদনের কারখানা রয়েছে।
  8. বোম্বে ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড : অধীনস্থ কারখানা: পটলগঙ্গা (মহারাষ্ট্র) উল্লেখযোগ্য তথ্য: পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদনের জন্য ডাইমিথাইল টেরেফথ্যালেট উৎপাদনের কারখানা রয়েছে।
  9. মানালি পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড: অধীনস্থ কারখানা: মানালি (তামিলনাড়ু) উল্লেখযোগ্য তথ্য: কস্টিক সোডা ও অ্যালকালি প্রস্তুতের কারখানা রয়েছে।
15. ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের আঞ্চলিক বণ্টন বর্ণনা করো।
উত্তর – ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের আঞ্চলিক বণ্টন
ভারতের চারটি অঞ্চলে খনিজ তেল শোধনাগারকে কেন্দ্র করে পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছের কেন্দ্রীভবন ঘটেছে, এগুলি হল—
  1. পশ্চিমাঞ্চল : ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের নাগোথানে (মহারাষ্ট্র); ভাদোদরা, কয়ালি, সুরাতের কাছে হাজিরা, দহেজ, জামনগর (গুজরাত) অঞ্চলে পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য তথ্য: গুজরাতের কাম্বে, আঙ্কেলেশ্বর প্রভৃতি অঞ্চল ও বম্বে হাই থেকে প্রাপ্ত অশোধিত খনিজ তেল ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানিকৃত অশোধিত তেল এখানকার শোধনাগারগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এই শোধনাগারগুলিই এখানকার পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলিতে কাঁচামাল সরবরাহ করে।
  2. পূর্বাঞ্চল: ভারতের পূর্বাঞ্চলের বঙ্গাইগাঁও (অসম); হলদিয়া (পশ্চিমবঙ্গ) অঞ্চলে পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য তথ্য: বঙ্গাইগাঁও, নুনমাটি, ডিগবয় ও নুমালিগড় শোধনাগার থেকে প্রাপ্ত ন্যাপথার সাহায্যে অসমের বঙ্গাইগাঁওতে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়াতে হলদিয়া তেলশোধনাগার থেকে প্রাপ্ত ন্যাপথা এবং আমদানিকৃত ন্যাপথার সাহায্যে যৌথ উদ্যোগে (সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা) পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
  3. দক্ষিণাঞ্চল : ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের তুতিকোরিন ও মানালি (তামিলনাড়ু); ম্যাঙ্গালোর (কর্ণাটক) অঞ্চলে এই শিল্প গড়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য তথ্য: মানালিতে 1986 সালে পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠে। এই শিল্পকেন্দ্রটি প্রপিলিন-গ্লাইকল ও পলিওল উৎপাদনে ও রপ্তানিতে ভারতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। ম্যাঙ্গালোর পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রটি 1988 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  4. উত্তরাঞ্চল: ভারতের উত্তরাঞ্চলের পায়াল, পানিপথ (হরিয়ানা); আউরাইয়া (উত্তরপ্রদেশ) অঞ্চলে এই শিল্প গড়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য তথ্য: এই শিল্পকেন্দ্র ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড (IOCL)- এর সহায়তায় প্রায় 5000 একর জমির ওপর স্থাপিত হয়েছে।
16. হলদিয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠার অবস্থানগত সুবিধাগুলি কী?
উত্তর – হলদিয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠার অবস্থানগত সুবিধা
পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ভারতের অন্যতম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রটি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় হুগলি-হলদি নদীর সংগমস্থলে হলদিয়ায় গড়ে উঠেছে। যেসব অনুকূল অবস্থার জন্য হলদিয়ায় এই পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে, সেগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল—
  1. নিকটবর্তী তেল শোধনাগারের অবস্থান : নিকটবর্তী হলদিয়া তেল শোধনাগার থেকে সহজেই কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা এখানে শিল্প গড়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক হয়েছে।
  2. বন্দরের নৈকট্য : হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির সুযোগ এই শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
  3. মূলধন বিনিয়োগ : পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের ওপর নির্ভর করে অনেক অনুসারী শিল্পের বিকাশ ঘটে বলে এখানে শিল্পে মূলধন বিনিয়োগের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সহজেই পাওয়া যায়।
  4. সুলভ শ্রমিক : পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ঘন জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় সুলভ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
  5. উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা : প্রকল্প স্থাপন ও পরিচালনায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ এই শিল্পটি গড়ে তোলার বিশেষ সহায়ক হয়েছে।
  6. অন্যান্য সুবিধা : সহজলভ্য জমি, উন্নত বাজার, প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়ার সুবিধা, বিপুল চাহিদা প্রভৃতি হলদিয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
17. পশ্চিম ভারতে অধিক সংখ্যায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে উঠেছে কেন?
উত্তর – পশ্চিম ভারতে অধিক সংখ্যায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণ
পশ্চিম ভারতে বিশেষত গুজরাত ও মহারাষ্ট্রে পেট্রোরসায়ন শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। গুজরাতের ভাদোদরা, গান্ধার (দহেজ), জামনগর (ভারতের বৃহত্তম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র), মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, নাগোথেন, পটলগঙ্গা প্রভৃতি স্থানে বড়ো বড়ো পেট্রোরসায়ন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে এই শিল্পটির উন্নতির কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা : মহারাষ্ট্রের মুম্বাই দরিয়া ও গুজরাতের কাম্বে-আমেদাবাদ অঞ্চল থেকে উত্তোলিত খনিজ তেল ট্রম্বে, কয়ালি, জামনগর প্রভৃতি শোধনাগারে শোধন করার পর যেসব প্রাথমিক ও মধ্যবর্তী দ্রব্য উৎপাদিত হয়, সেগুলি এখানকার পেট্রোরসায়ন শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  2. বন্দরের সান্নিধ্য: মুম্বাই, কান্ডালা, জওহরলাল নেহরু বন্দরের মতো বড়ো বড়ো ও অত্যাধুনিক বন্দর এই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি এবং উৎপাদিত পণ্য ও সহজেই বিদেশে রপ্তানি করার সুবিধা পাওয়া যায়।
  3. বিপুল চাহিদা: শিল্পোন্নত মুম্বাই, আমেদাবাদ, ভাদোদরায় অসংখ্য অনুসারী শিল্প গড়ে ওঠায় উৎপাদিত দ্রব্যের বিপুল চাহিদা বা বাজার এই অঞ্চলেই সৃষ্টি হয়েছে।
  4. পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ: পশ্চিমাঞ্চলে টাটা, কয়না, উকাই প্রভৃতি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ট্রম্বে, গান্ধিনগর প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তারাপুর, কাকরাপাড়, কোটা প্রভৃতি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পেতে অসুবিধা হয় না।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: মুম্বাই, আমেদাবাদ, ভাদোদরা প্রভৃতি স্থান উন্নত রেলপথ, সড়কপথ ও আকাশপথে দেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য সহজেই যে কোনো জায়গায় প্রেরণ করা যায়।
18. ভারতে মোটরগাড়ি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির অবস্থান উল্লেখ করো।
উত্তর – ভরিতে মোটরগাড়ি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির অবস্থান
ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোটরগাড়ি নির্মাণ সংস্থা ও তাদের উৎপাদন কেন্দ্রগুলির অবস্থান উল্লেখ করা হল—
  1. টাটা মোটরস লিমিটেড: গুজরাতের সানন্দ, ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর, উত্তরাখণ্ডের পন্থনগর, মহারাষ্ট্রের পুণে, কর্ণাটকের ধারওয়াড়, উত্তরপ্রদেশের লখনউ হল টাটা মোটরস লিমিটেডের উৎপাদন কেন্দ্র।
  2. মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ইন্ডিয়া লিমিটেড: মহারাষ্ট্রের নাসিক ও কান্দিভলী (মুম্বাইয়ের কাছে); উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু, তেলেঙ্গানার জাহিরাবাদ হল মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্ৰা ইন্ডিয়া লিমিটেডের উৎপাদন কেন্দ্র।
  3. মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড: হরিয়ানার গুরগাঁও ও মানেশ্বর হল মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেডের উৎপাদন কেন্দ্র।
  4. ফোর্ড ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড: তামিলনাড়ুর মারাইমালাই নগর (চেন্নাইয়ের কাছে) হল ফোর্ড ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের উৎপাদন কেন্দ্র।
  5. বাজাজ অটো লিমিটেড: মহারাষ্ট্রের চাকান (পুণের কাছে) ও ওয়ালুজ (ঔরঙ্গাবাদের কাছে); উত্তরাখণ্ডের পন্থনগর হল বাজাজ অটো লিমিটেডের উৎপাদন কেন্দ্র।
  6. অশোক লেল্যান্ড: তামিলনাড়ুর এক্সোর, হোসুর, উত্তরাখণ্ডের পন্থনগর, রাজস্থানের আলোয়ার হল অশোক লেল্যান্ডের উৎপাদন কেন্দ্র।
  7. হিন্দুস্তান মোটরস লিমিটেড: মধ্যপ্রদেশের পিথমপুর, তামিলনাড়ুর তিরুভাল্লুর হল হিন্দুস্তান মোটরস লিমিটেডের উৎপাদন কেন্দ্র।
  8. টিভিএস মোটরস কোম্পানি লিমিটেড: তামিলনাড়ুর হোসুর; কর্ণাটকের মহীশূর হল টিভিএস মোটরস কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন কেন্দ্র।
19. ভারতে মোটরগাড়ি শিল্পের সমস্যা ও বিকাশের সম্ভাবনা আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে মোটরগাড়ি শিল্পের সমস্যা
ভারতে মোটরগাড়ি শিল্পের সমস্যাগুলি হল—
  1. অধিক উৎপাদন ব্যয় : ভারতে মোটরগাড়ি নির্মাণে অনুন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি হয়।
  2. জ্বালানি তেলের খরচ বৃদ্ধি : ভারতীয় রাস্তার অনুন্নত মান, গাড়ির নিম্নমানের ইঞ্জিন প্রভৃতি কারণে গাড়ির তেল খরচ বৃদ্ধি পায়, যা মোটরগাড়ি শিল্প বিকাশের অন্যতম সমস্যা।
  3. সরকারি নীতির পরিবর্তন: সরকারের শিল্প তথা অর্থনৈতিক নীতির ঘনঘন পরিবর্তন মোটরগাড়ি কোম্পানিগুলির প্রসার পরিকল্পনা রূপায়ণের পক্ষে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  4. শ্রমিক-মালিক অসন্তোষ: শ্রমিক-মালিক অসন্তোষের কারণে এবং ধর্মঘটের কারণে অনেক সময় উৎপাদন ব্যাহত হয়।
  5. পেট্রোল-ডিজেলের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি: ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেট্রোল-ড্রিজেলের অত্যধিক মূল্যের জন্য মোটরগাড়ির চাহিদা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে, যা এই শিল্পের উন্নতিতে বিশেষ বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ডারতের মোটরগাড়ি শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনা
বর্তমানে মোটরগাড়ির শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনাগুলি হল—
  1. মুক্ত অর্থনীতি ও লাইসেন্স প্রথার বিলোপ সাধন : 1991 সাল থেকে মুক্ত অর্থনীতির পথে ভারত সরকারের পদক্ষেপ, শিল্পক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রথার বিলোপ, 100% বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ ভারতীয় মোটরগাড়ি শিল্পের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে।
  2. অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান: ভারত সরকারের Automotive Mission Plan (AMP) অনুযায়ী 225000 ডলারের বেশি বিনিয়োগের ওপর ট্যাক্স ছাড়, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমতি প্রভৃতি এই শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে নির্দেশ করছে।
  3. উৎপাদন ব্যয় হ্রাস: বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগের ফলে এবং উন্নত প্রযুক্তি আসার ফলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। ফলে গাড়ির ক্রয়মূল্য অনেক কমেছে এবং উৎপাদনগত বৈচিত্র্য এসেছে।
  4. ভারতের জনসংখ্যার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি: পূর্বের তুলনায় ভারতের জনসাধারণের আয় (মূলত শহরাঞ্চলে) ও তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মনে করা হচ্ছে মানুষের গাড়ি কেনার মানসিকতা বৃদ্ধি পাবে।
  5. যন্ত্রাংশ নির্মাণশিল্পের উন্নতি: মোটরগাড়ি শিল্পের সহায়ক শিল্প হিসেবে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নির্মাণশিল্পের (ইঞ্জিন, সাসপেনসান, ক্লাচ প্রভৃতি) উন্নতি মোটরগাড়ি শিল্পের বিকাশের পক্ষে সহায়ক হয়েছে।
20. ভারতের কোথায় কোথায় রেলইঞ্জিন ও রেল কোচ নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠেছে?
উত্তর – ভারতের রেলইঞ্জিন নির্মাণ শিল্পের অবস্থান
রেলইঞ্জিন এবং যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পে ভারত একটি উন্নত দেশ। ভারতে অঞ্চলভিত্তিক রেলইঞ্জিন এবং তার আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ কারখানাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল—
  1. পূর্বাঞ্চল: (1) চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস [CLW] (চিত্তরঞ্জন— পশ্চিমবঙ্গ): ডিজেল ও বৈদ্যুতিক রেলইঞ্জিন নির্মাণ; (2)  ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ ফ্যাক্টরি (মাধেপুরা, বিহার), বৈদ্যুতিক রেলইঞ্জিন নির্মাণ (নির্মীয়মান)।
  2. উত্তরাঞ্চল: (1) ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস [DLW] (বারাণসী— উত্তরপ্রদেশ) : ডিজেল রেলইঞ্জিন নির্মাণ; (2) ডিজেল লোকো মডার্নাইজেশন ওয়ার্কস (পাতিয়ালা—পাঞ্জাব) : ডিজেল লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের আধুনিকীকরণ ও (3) রেল কোচ ফ্যাক্টরি (কাপুরথালা— পাঞ্জাব) : রেল কোচ, DMU এবং EMU নির্মাণ। (4) মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরি (রায়বেরিলি—উত্তরপ্রদেশ), রেল কোচ নির্মাণ।
  3. মধ্যাঞ্চল : (1) ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড [BHEL] (ভোপাল—মধ্যপ্রদেশ) : উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক রেলইঞ্জিন ও ব্যাটারিচালিত রেলইঞ্জিন নির্মাণ; (2) রেল স্প্রিং কারখানা (গোয়ালিয়র—মধ্যপ্রদেশ) : নানা ধরনের স্প্রিং নির্মাণ।
  4. দক্ষিণাঞ্চল: (1) রেল হুইল ফ্যাক্টরি (বেঙ্গালুরু—কর্ণাটক): ওয়াগনের চাকা, অ্যাক্সেল, DMU এবং EMU নির্মাণ; (2) ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (চেন্নাই—তামিলনাড়ু) : EMU, DMU, MEMUও METRO-র ইঞ্জিন এবং কোচ নির্মাণ; (3) গোল্ডেন রক রেলওয়ে ওয়ার্কশপ (তিরুচিরাপল্লি—তামিলনাড়ু): রেলওয়ে রিপেয়ার ওয়ার্কশপ।
ভারতে রেল কোচ নির্মাণশিল্পের অবস্থান
ভারতে রেল কোচ নির্মাণশিল্পের অবস্থান হল – 1. চেন্নাইয়ের কাছে পেরাম্বুর (ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি), 2. ম্যাঙ্গালোর (ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড), 3. পাঞ্জাবের কপুরথালা (রেল কোচ ফ্যাক্টরি) এবং 4. উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি (মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরি)।
21. হুগলি শিল্পাঞ্চলে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – হুগলি শিল্পাঞ্চলে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ
হুগলি নদীর উভয় তীরে নানা ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল—
  1. ইংরেজ সরকারের উদ্যোগ : ইংরেজ শাসনাধীন ভারতে 1911 সাল পর্যন্ত কলকাতাই ছিল ভারতের রাজধানী। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য রক্ষা ও বিস্তারের জন্য যান্ত্রিক উপকরণ সরবরাহের প্রয়োজন ছিল এবং সেজন্য কলকাতা ও তার আশেপাশে শিল্পকেন্দ্র স্থাপনে তারা বিশেষ আগ্রহী ছিল। ফলে এখানে পাশ্চাত্য কারিগরি সভ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটে এবং তারই ফলশ্রুতিতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠে।
  2. মূলধন : বাণিজ্য ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কলকাতার আত্মপ্রকাশ ঘটায় এই অঞ্চলে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন পেতে অসুবিধা হয়নি।
  3. সুলভ শ্রমিক: : হুগলি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক সহজেই পাওয়া যায়।
  4. কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা : ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে সাধারণত লোহা ও ইস্পাত এবং কয়লা বেশি ব্যবহৃত হয়। কুলটি বার্নপুর এবং দুর্গাপুর লোহা ও ইস্পাত কারখানা (পশ্চিমবঙ্গ); জামশেদপুর লোহা ও ইস্পাত কারখানা (ঝাড়খণ্ড)-এর লোহা ও ইস্পাত এবং রানিগঞ্জ, সালানপুর (পশ্চিমবঙ্গ)-এর কয়লা পাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
  5. জলের সহজলভ্যতা : এই শিল্পাঞ্চলের মাঝখান দিয়ে হুগলি নদী প্রবাহিত হওয়ায় শিল্পের প্রয়োজনীয় জলও নদী থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
22. হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠেনি কেন?
উত্তর – হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে না ওঠার কারণ
হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে না ওঠার কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামালের অভাব : ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও খনিজভিত্তিক কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে এর যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
  2. জল এবং বিদ্যুতের অভাব: এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল এবং বিদ্যুৎ পাওয়ার অসুবিধা রয়েছে।
  3. দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শ্রমিকের অভাব: বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চলে স্বল্প জনবসতির জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় শ্রমিক পাওয়া যায় না। এ ছাড়া, যেসব শ্রমিক পাওয়া যায় তাদের মধ্যে অধিকাংশই উন্নত কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন না হওয়ায় এই অঞ্চলে দক্ষ শ্রমিকের অভাব লক্ষ করা যায়।
  4. অনুন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: প্রাকৃতিক দুর্গমতার কারণে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে পরিবহণ ব্যবস্থা অনুন্নত। এ ছাড়া, ভূমিধসের (landslide) কারণে অনেক অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায়ই বিচ্ছিন্ন থাকে।
  5. স্বল্প চাহিদা : স্বল্প জনবসতির কারণে শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদাও সীমিত। এই সমস্ত কারণের জন্য হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠেনি।
23. ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণসমূহ
ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্প যথেষ্ট উন্নত। দেশের বিভিন্ন অংশে অনেক কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অবস্থান অনুসারে ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলিকে মোট চারটি অঞ্চলে ভাগ করা যায় – [1] পশ্চিমাঞ্চল, [2] দক্ষিণাঞ্চল, [3] উত্তরাঞ্চল এবং [4] পূর্বাঞ্চল। এই অঞ্চলগুলিতে অবস্থিত বিভিন্ন কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি গড়ে ওঠার কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা : পশ্চিম ভারতের কৃয় মৃত্তিকা অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তুলো উৎপন্ন হয়, যা কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। এ ছাড়া, দক্ষিণ এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতেও উন্নতমানের দীর্ঘ ও অতিদীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর চাষের প্রচলন হওয়ায় কার্পাস বয়ন শিল্পের কাঁচামাল সহজেই সংগ্রহ করা যায়।
  2. আর্দ্র জলবায়ু: উপদ্বীপীয় ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে, বিশেষত দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে তুলো চাষের অনুকূল আর্দ্র জলবায়ু রয়েছে। এ ছাড়া, আর্দ্র জলবায়ু সুতো কাটার পক্ষেও বিশেষ উপযোগী। তবে বর্তমানে এটি কার্পাস বয়ন শিল্পের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নয় কারণ কারখানাগুলিতে কৃত্রিমভাবেও আর্দ্রতা সৃষ্টি করা যায়।
  3. সুলভ বিদ্যুৎশক্তি পাওয়ার সুবিধা : স্বাধীনতার পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সুবিধা ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করেছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, যেমন—পশ্চিম ভারতের (উকাই, কয়না), দক্ষিণ ভারতের (মেত্তুর, শিবসমুদ্রম, নাগার্জুনসাগর), উত্তর ভারতের (ভাকরা, রিহান্দ, বাধিন্ডা), পূর্ব ভারতের (হিরাকুঁদ, তালচের, ব্যান্ডেল) বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সহজেই বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
  4. বন্দরের সান্নিধ্য: মুম্বাই, কান্ডালা (পশ্চিম ভারত), বিশাখাপত্তনম, কোচি, চেন্নাই, নিউ ম্যাঙ্গালোর (দক্ষিণ ভারত), কলকাতা, হলদিয়া (পূর্ব ভারত) প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য সহজেই রপ্তানি করার সুবিধা ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করেছে।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : ভারতের রেলপথ ব্যবস্থা এবং জাতীয় ও রাজ্য সড়ক ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে উৎপাদক অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সহজেই উৎপাদন কেন্দ্রে আনা যায় এবং উৎপাদিত পণ্য সহজেই বাজারে পাঠানো যায়। তাই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠতে দেখা যায়।
24. ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি কী?
অথবা, মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের একদেশীভবনের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের একদেশীভবনের কারণ কী?
অথবা, পশ্চিম ভারতে কাপার্স বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ আলোচনা করো।
উত্তর – ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বা পশ্চিম ভারতের কৃথ্ব মৃত্তিকা অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বা পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে, বিশেষত মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, পুণে, নাগপুর, সোলাপুর, আকোলা ও জলগাঁও এবং গুজরাতের আমেদাবাদ, সুরাত, ভারুচ, ভাদোদরা, রাজকোট প্রভৃতি স্থানে অসংখ্য কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে এই কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল—
  1. শ্ৰেষ্ঠ তুলো উৎপাদক অঞ্চল : মহারাষ্ট্র-গুজরাতের (ঔরঙ্গাবাদ, জলগাঁও, বুলধানা) কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল হল দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তুলো উৎপাদক অঞ্চল। ফলে এখানে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচা তুলো সুলভে পাওয়া যায়।
  2. আর্দ্র জলবায়ু : আরব সাগরসংলগ্ন মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের জলবায়ু আর্দ্র, যা সুতো কাটার পক্ষে বিশেষ উপযোগী।
  3. সুলভ বিদ্যুৎশক্তি: উকাই ও কাদানা (গুজরাত); ভিবপুরী, খোপোলি ও কয়না (মহারাষ্ট্র) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ট্রম্বে, নাসিক (মহারাষ্ট্র) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সুলভে বিদ্যুৎশক্তি এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক হয়েছে।
  4. বন্দরের সান্নিধ্য : ভারতের তিনটি প্রধান বন্দর—মুম্বাই, কান্ডালা, জওহরলাল নেহরু বন্দর এবং অন্যান্য অপ্রধান বন্দর – সুরাত, পোরবন্দর প্রভৃতি এই অঞ্চলে অবস্থিত। এর ফলে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উন্নতমানের তুলো আমদানি এবং কার্পাস বস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হয়।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : পশ্চিম, মধ্য ও কোঙ্কণ রেলপথ এবং 47, 48, 64, 160 নং জাতীয় রাজপথ এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রসারিত হওয়ায় এখানকার পরিবহণ ব্যবস্থাও উন্নত।
25. ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির কারণ কী?
উত্তর – ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির কারণসমূহ
যে শিল্পে ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিকস মাধ্যমে তথ্যের অন্বেষণ, পুনরুদ্ধার, পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ বা মজুত, আদানপ্রদান প্রভৃতি কাজ ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে করা হয়, সেই শিল্পকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে। 1970-এর দশকের শুরু থেকে 1980 দশকের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ধীর উন্নতি শুরু হয়। কিন্তু 1990 দশকের পর থেকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ভারতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিকাশ লাভ করে। ভারতে এই শিল্পের উন্নতি কারণগুলি হল—
  1. দক্ষ ও মেধাবী কর্মী : বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি শিক্ষায় ভারতীয়রা সবসময়ই এগিয়ে থাকে। দেশে বিখ্যাত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি প্রযুক্তি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এইসব কেন্দ্র থেকে আসা দক্ষ এবং মেধাবী কর্মীরা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে নিযুক্ত হচ্ছেন।
  2. বিশ্ব বাজার : ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশগুলির বিভিন্ন কাজ ভারত থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। এ ছাড়া দেশে ব্যাংকিং, রেল, টেলিকম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের পরিধি বেড়েছে। সুতরাং, বিশ্ব বাজারে তথ্যপ্রযুক্তির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
  3. জমির সমস্যা কম: অন্যান্য শিল্পের মতো তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিশাল জমির প্রয়োজন নেই। একই বাড়িতে অনেকগুলি কোম্পানি তাদের কাজ করতে পারে।
  4. পরিকাঠামো: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প শহরকেন্দ্রিক। বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, মুম্বাই, কলকাতা প্রভৃতি ভারতের বড়ো বড়ো শহরগুলিতে এই শিল্প গড়ে উঠেছে। ভালো রাস্তাঘাট, পর্যাপ্ত জল, বিদ্যুৎ, ইনটারনেট, ওয়াইফাই এবং আরও আধুনিক সুবিধা থাকায় শহরগুলিতে এই শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে।
  5. সরকারি উদ্যোগ: রাজ্য সরকারগুলি এই শিল্পের উন্নয়নে সবরকম সহায়তা করে। এজন্য বিভিন্ন রাজ্যে নানা রকম তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া স্পেশাল ইকোনমিক জোন (SEZ) গঠন, নানা ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকি এই শিল্পের উন্নতিতে সহায়তা করেছে।
  6. মূলধন বিনিয়োগ : টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রো, আইবিএম প্রভৃতি বহুজাতিক কোম্পানিগুলি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিপুল পরিমাণে মূলধন বিনিয়োগ করছে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. ভারতীয় অর্থনীতিতে লোহা ও ইস্পাত শিল্প কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর – ভারতীয় অর্থনীতিতে লোহা ও ইস্পাত শিল্প গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ: ভারতীয় অর্থনীতিতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণগুলি হল—
  1. বিভিন্ন নির্মাণকার্য: ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার এবং বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির দেশে বাসস্থান নির্মাণ, পরিবহণের জন্য রেলপথ ও সেতু নির্মাণ, যানবাহন নির্মাণ, শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী নির্মাণের জন্য অন্যতম মূল উপাদানই হল লোহা ও ইস্পাত। লোহা ও ইস্পাতের এই বিপুল চাহিদাই হল লোহা ও ইস্পাত শিল্পের ভিত্তিস্তম্ভ।
  2. কর্মসংস্থানের সুযোগ: এটি বৃহৎ শিল্প হওয়ায় লোহা ও ইস্পাত শিল্পের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  3. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন: লোহা ও ইস্পাত শিল্পে উৎপন্ন সামগ্রী রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এইসব কারণে ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের গুরুত্ব সীমাহীন।
2. ভারতের কোথায় কোথায় লোহা ও ইস্পাত কারখানা আছে?
উত্তর – ভারতে লোহা ও ইস্পাত কারখানার অবস্থান : ভারতের প্রধান লোহা ইস্পাত সংস্থাগুলি হল স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (SAIL), রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড (RINL), টাটা স্টিল লিমিটেড (TSL) ও জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড (JSPL)। এই সংস্থাগুলির অধীনস্থ গুরুত্বপূর্ণ কারখানাগুলির অবস্থান উল্লেখ করা হল—
  1. স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (SAIL): এই সংস্থার অধীনে ভিলাই স্টিল প্লান্ট (ছত্তিশগড়); দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট, ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির বার্নপুর-কুলটি প্লান্ট (পশ্চিমবঙ্গ); রৌরকেলা স্টিল প্লান্ট (ওডিশা); বোকারো স্টিল প্লান্ট (ঝাড়খণ্ড); ভদ্রাবতী প্লান্ট বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল লিমিটেডের (কর্ণাটক); দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্লান্ট (পশ্চিমবঙ্গ); সালেম স্টিল প্লান্ট (তামিলনাড়ু) এই কারখানাগুলি আছে।
  2. রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড (RINL): এই সংস্থার অধীনে বিশাখাপত্তনম স্টিল ‘প্লান্ট (অন্ধ্রপ্রদেশ) কারখানা আছে।
  3. টাটা স্টিল লিমিটেড (TSL): এই সংস্থার অধীনে জামশেদপুর প্লান্ট (ঝাড়খণ্ড) কারখানা আছে।
  4. জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড (JSPL): এই সংস্থার অধীনে বিজয়নগর স্টিল প্লান্ট (কর্ণাটক) কারখানা আছে।
3. লোহা ও ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য কী ধরনের সুবিধার প্রয়োজন?
উত্তর – লোহা ও ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা : লোহা ও ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য যে যে সুবিধাগুলি থাকা প্রয়োজন, তা হল—
  1. খনি অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান: লোহা ও ইস্পাত শিল্পের জন্য কাঁচামাল হিসেবে আকরিক লোহা, কয়লা, চুনাপাথর, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি খনিজ দ্রব্যের প্রয়োজন হয়। সেজন্য খনি অঞ্চলের কাছাকাছি কারখানাগুলি স্থাপন করা হয়।
  2. নদী বা হ্রদের কাছাকাছি অবস্থান: এই শিল্পে প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। সেজন্য খনি অঞ্চলের কাছাকাছি কোনো নদী বা হ্রদের কাছাকাছি স্থান এই শিল্পস্থাপনের পক্ষে আদর্শ।
  3. বিদ্যুতের সুবিধা: পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সুবিধাযুক্ত স্থান এই শিল্পস্থাপনের সহায়ক হয়।
  4. দক্ষ শ্রমিক: ইস্পাত উৎপাদনে প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই সুলভে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় এমন স্থানই শিল্পটি স্থাপনের পক্ষে আদর্শ।
  5. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা: কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির জন্য উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাযুক্ত স্থান এই শিল্পস্থাপনের জন্য প্রয়োজন।
4. দুর্গাপুরকে ‘ভারতের রুর’ বলা হয় কেন? 
উত্তর – দুর্গাপুরকে ভারতের রুর বলার কারণ: জার্মানির বিখ্যাত রাইন নদীর ডানতীরের একটি উপনদীর নাম রুর। রুর উপত্যকায় উন্নতমানের কয়লা পাওয়া যায়। এই কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে রুর উপত্যকা ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে বড়ো বড়ো লোহা ও ইস্পাত, ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন প্রভৃতি কারখানা গড়ে উঠেছে। এই সমগ্র অঞ্চলটি রুর শিল্পাঞ্চল নামে খ্যাত। ভারতেও একইরকমভাবে দামোদর উপত্যকার নিকটবর্তী রানিগঞ্জ, অণ্ডাল, দিশেরগড় প্রভৃতি কয়লা খনিকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুরে লোহা ও ইস্পাত, ভারী যন্ত্রপাতি নির্মাণ, রাসায়নিক সার প্রভৃতির কারখানা নির্মিত হয়েছে। এজন্য দুর্গাপুরকে ভারতের রুর বলা হয়।
5. ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি কী কী?
উত্তর – ভারী ইঞ্জিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠার কারণসমূহ : ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি হল—
  1. কাঁচামাল: ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে সাধারণত ইস্পাত বেশি ব্যবহার করা হয়। এজন্য লোহা ও ইস্পাত কারখানার কাছাকাছি এলাকায় এই শিল্প গড়ে উঠতে পারে।
  2. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হলে লোহা ও ইস্পাত কারখানা থেকে দূরবর্তী এলাকাতেও এই শিল্প গড়ে উঠতে দেখা যায়। এ ছাড়াও
  3. বিদ্যুৎশক্তির সহজলভ্যতা,
  4. উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার প্রাপ্তিযোগ্যতা,
  5. উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করার সুযোগসুবিধা প্রভৃতি বিষয়ের সুবিধা থাকলে সেখানে এই শিল্প গড়ে ওঠে।
6. পেট্রোরসায়ন শিল্প সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর – ধারণা : যে শিল্পে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন রাসায়নিক ও যৌগিক (chemical and compounds) পদার্থ উৎপাদন করা হয়, সেই শিল্প পেট্রোরসায়ন শিল্প নামে পরিচিত। কাঁচামাল: এই শিল্পের প্রধান কাঁচামালগুলি হল—ন্যাপথা, প্রোপেন, বিউটেন, ইথেন, মিথেন, হেক্সেন, পেনটেন, বেনজল, বিউটাডিন, ইথানল, প্রোপিলিন প্রভৃতি। উৎপাদিত দ্রব্য: এই শিল্পের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যগুলি হল—কৃত্রিম তন্তু (পলিয়েস্টার, নাইলন প্রভৃতি), প্লাস্টিক, রং, কৃত্রিম রবার, কীটনাশক, আঠা, ওষুধ, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি। বৈশিষ্ট্য: পেট্রোরসায়ন কারখানায় যে অগণিত সামগ্রী উৎপন্ন হয়, সেইসব সামগ্রীর ওপর ভিত্তি করে বহু অনুসারী শিল্প (Subsidiary Industries বা Downstream Industries) গড়ে ওঠে। এজন্যই বর্তমানে পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয় ।
7. শিল্পস্থাপনে পরিবহণের ভূমিকা কতখানি?
উত্তর – শিল্পস্থাপনে পরিবহণের ভূমিকা : উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা ছাড়া শিল্প গড়ে তোলা অসাধ্য ব্যাপার। শিল্পকেন্দ্রে কাঁচামাল, কারখানার যন্ত্রপাতি এবং শক্তিসম্পদ আনা, শ্রমিকদের যাতায়াত, শিল্পজাত দ্রব্য বাজারে পাঠানো ইত্যাদির জন্য সুলভ এবং উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যেখানে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং শিল্পজাত দ্রব্য পরিবহণ করার খরচ সবচেয়ে কম, সেখানেই শিল্পস্থাপন করা সবচেয়ে লাভজনক। অনেকসময় দূরবর্তী দুটি স্থান থেকে কাঁচামাল মধ্যবর্তী কোনো জায়গায় এনে সেখানে শিল্প গড়ে তোলা হয়। এতে পরিবহণ ব্যয় কম হয়।
8.পশ্চিম ভারতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – পশ্চিম ভারতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অধিক উন্নতির কারণসমূহ: পশ্চিম ভারতে, বিশেষত গুজরাত ও মহারাষ্ট্রে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। গুজরাতের ভাদোদরা, গান্ধার (দহেজ), জামনগর (ভারতের বৃহত্তম পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পকেন্দ্র), মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, নাগোথানে, পটলগঙ্গা প্রভৃতি স্থানে বড়ো বড়ো পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্প গড়ে উঠেছে। পশ্চিম ভারতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পটির অধিক উন্নতির কারণ হল—
  1. কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা: আরব সাগরের মুম্বাই দরিয়া ও গুজরাতের কাম্বে আমেদাবাদ অঞ্চল থেকে উত্তোলিত খনিজ তেল ট্রম্বে, কয়ালি, জামনগর প্রভৃতি শোধনাগারে শোধন করার পর যেসব প্রাথমিক ও মধ্যবর্তী দ্রব্য উৎপাদিত হয়, সেগুলি এখানকার পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  2. বন্দরের সান্নিধ্য : মুম্বাই, কান্ডালা, জওহরলাল নেহরু বন্দরের মতো বড়ো বড়ো ও অত্যাধুনিক বন্দর এই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি এবং উৎপাদিত পণ্য সহজেই বিদেশে রপ্তানি করার সুবিধা পাওয়া যায়।
  3. বিপুল চাহিদা: শিল্পোন্নত মুম্বাই, আমেদাবাদ, ভাদোদরায় অসংখ্য অনুসারী শিল্প গড়ে ওঠায় উৎপদিত দ্রব্যের বিপুল চাহিদা বা বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া 4. গুজরাত, মহারাষ্ট্রে উৎপাদিত পর্যাপ্ত পরিমাণে জলবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, 5. পশ্চিমাঞ্চলে রেলপথ, সড়কপথ ও আকাশপথে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা, 6. পর্যাপ্ত জলসরবরাহ, 7. প্রয়োজনীয় মূলধন, ® দক্ষ কারিগর, পেশাদার পরিচালক পাওয়ার সুবিধা—এই অঞ্চলে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের উন্নতিতে সহায়তা করেছে।
9. কাঁচামালভিত্তিক শিল্পের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর – কাঁচামালভিত্তিক শিল্পের শ্রেণিবিভাগ : কাঁচামালের উৎস অনুসারে শিল্পকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়—
  1. কৃষিভিত্তিক শিল্প: কৃষিজ ফসলের উপর নির্ভর করে যে শিল্প গড়ে ওঠে, সেই শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প বলে। উদাহরণ: পাট ও তুলো থেকে যথাক্রমে পাটশিল্প ও বস্ত্রবয়ন শিল্প গড়ে ওঠে। এ ছাড়া, আখ থেকে গড়ে ওঠা চিনি শিল্পও কৃষিভিত্তিক শিল্পের উদাহরণ।
  2. প্রাণীজভিত্তিক শিল্প: বিভিন্ন প্রকার প্রাণীজ দ্রব্যের ওপর নির্ভর করে যে শিল্প গড়ে ওঠে, সেই শিল্পকে প্রাণীজভিত্তিক শিল্প বলে। উদাহরণ: মাংস সংরক্ষণ শিল্প, দুগ্ধ শিল্প, চামড়া শিল্প প্রভৃতি এই জাতীয় শিল্প।
  3. বনজভিত্তিক শিল্প: বনজ সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে যে শিল্প গড়ে ওঠে, সেই শিল্পকে বনজভিত্তিক শিল্প বলে। উদাহরণ: কাগজ শিল্প, আসবাবপত্র নির্মাণ শিল্প, রেশম শিল্প ইত্যাদি।
  4. খনিজভিত্তিক শিল্প: নানা ধরনের খনিজ পদার্থকে যে শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেইসব শিল্পকে খনিজভিত্তিক শিল্প বলে। উদাহরণ: লোহা ও ইস্পাত শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, তামা নিষ্কাশন শিল্প, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প প্রভৃতি।
10. বিশুদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে কেন?
উত্তর – বিশৃদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলার কারণ: প্রকৃতি অনুসারে শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়— বিশুদ্ধ কাঁচামাল (তুলো, পাট প্রভৃতি) এবং অবিশুদ্ধ কাঁচামাল (আখ, আকরিক লোহা প্রভৃতি)। এর মধ্যে যখন নির্দিষ্ট ওজনের কাঁচামাল থেকে একই ওজনের পণ্য উৎপাদিত হয়, তখন তাকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। এখানে কাঁচামাল এবং উৎপাদিত পণ্যের ওজনের অনুপাত 1:1।
ব্যাখ্যা: এক টন তুলো থেকে এক টন সুতো এবং এক টন সুতো থেকে এক টন বস্ত্র উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ তুলো, সুতো এবং বস্ত্র—তিনটির ওজনই এক থাকে।
একই পরিবহণ ব্যয়: যেহেতু এখানে কাঁচামালের ওজন এবং উৎপাদিত পণ্যের ওজন একই থাকে, তাই কারখানায় কাঁচামাল আনা বা কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বাজারে পাঠানোর পরিবহণ ব্যয়ও একই হয়। তাই বিশুদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা অন্য যে-কোনো সুবিধাজনক স্থানে গড়ে উঠতে পারে। আর এজন্যই এগুলিকে শিকড় আলগা শিল্প বলে।
11. ভারতে শিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাঁচামালের প্রভাব উদাহরণ-সহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ভারতে শিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাঁচামালের প্রভাব: বস্তুসূচকের (বস্তুসূচক = কাঁচামালের ওজন/উৎপাদিত পণ্যের ওজন) মানের উপর ভিত্তি করে শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালকে দুইভাগে ভাগ করা হয়, যথা- (1) বিশুদ্ধ কাঁচামাল এবং (2) অবিশুদ্ধ কাঁচামাল। শিল্পের অবস্থানে এই দুই ধরনের কাঁচামালের প্রভাব খুব বেশি, যেমন—
  1. বিশুদ্ধ কাঁচামালের প্রভাব: যখন নির্দিষ্ট ওজনের কাঁচামাল থেকে প্রায় একই ওজনের পণ্য উৎপাদিত হয়, অর্থাৎ বস্তুসূচকের মান 1 বা 1-এর কাছাকাছি থাকে, তাকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে, যেমন কার্পাস বা তুলো, পাট ইত্যাদি। এইসব বিশুদ্ধ কাঁচামালনির্ভর শিল্পগুলির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কাঁচামালের ওজন ও উৎপাদিত পণ্যের ওজন প্রায় একই হয় বলে শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা অন্য যে-কোনো সুবিধাজনক স্থানে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য এগুলিকে শিকড় আলগা বা অস্থানু শিল্প বলে। উদাহরণ: মহারাষ্ট্র-গুজরাটে উৎপাদিত কার্পাসের উপর ভিত্তি করে শুধু ওই দুই রাজ্যেই নয়, বহু দূরের হুগলি শিল্পাঞ্চল-সহ পূর্ব ও উত্তর ভারতের বহু স্থানেই কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে উঠেছে।
  2. অবিশুদ্ধ কাঁচামালের প্রভাব: যে কাঁচামালের ওজন উৎপাদিত পণ্যের ওজনের চেয়ে বেশি হয়, অর্থাৎ বস্তুসূচকের মান 1-এর বেশি হয়, তাকে অবিশুদ্ধ বা ওজনহ্রাসশীল কাঁচামাল বলে, যেমন—আখ, আকরিক লোহা ইত্যাদি। আখ থেকে চিনি উৎপাদন করলে তার ওজন কমে যায়। এজন্য পরিবহণ ব্যয় কমাতে অবিশুদ্ধ কাঁচামাল ব্যবহারকারী শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে গড়ে ওঠে। উদাহরণ : আখ উৎপাদনকারী মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে ভারতের অধিকাংশ চিনি কল গড়ে উঠেছে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

1. শিল্পের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, শ্রমশিল্প কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : শিল্প হল কাঁচামাল তথা সম্পদ রূপান্তরের প্রক্রিয়া। বনজ, খনিজ এবং কৃষিজ সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে কারখানায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে পরিণত করা হয়, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় শিল্প। উদাহরণ: কৃষিজ সম্পদ কার্পাস থেকে বস্ত্রশিল্প এবং খনিজ সম্পদ আকরিক লোহা থেকে লোহা ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠে।
2. মৌলিক শিল্প বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : যেসব শিল্পের ওপর অন্যান্য শিল্পের বিকাশ নির্ভর করে বা যেসব শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্য অন্যান্য শিল্পের কাঁচামালরূপে ব্যবহৃত হয়, সেগুলিকে মৌলিক শিল্প (basic industry) বলে। উদাহরণ : লোহা ও ইস্পাত শিল্পে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
3. অনুসারী শিল্প কাকে বলে?
অথবা, অনুসারী শিল্প কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: যখন কোনো শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে পরস্পর নির্ভরশীল অনেক শিল্প গড়ে তোলা হয়, তখন প্রথমটিকে কেন্দ্রীয় শিল্প এবং বাকি শিল্পগুলিকে অনুসারী শিল্প বলে। উদাহরণ : হলদিয়ার পেট্রোরসায়ন শিল্প হল কেন্দ্রীয় শিল্প, আর এই শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে যেসব শিল্প গড়ে উঠছে তাদের অনুসারী শিল্প বলে।
4. অবিশুদ্ধ কাঁচামাল কী?
উত্তর – ধারণা: যেসব কাঁচামালকে শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলে তাদের ওজন কমে যায়, সেইসব কাঁচামালকে অশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। উদাহরণ: আকরিক লোহা, আকরিক তামা, আখ প্রভৃতি হল অবিশুদ্ধ কাঁচামাল। যেমন— এক টন কাঁচা লোহা প্রস্তুত করতে 1.7 টন আকরিক লোহা, 1.30 টন কয়লা, 0.50 টন চুনাপাথর ও ডলোমাইট ও অন্যান্য দ্রব্য মিলিয়ে মোট 5 টন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ এগুলি অবিশুদ্ধ কাঁচামাল।
5. বিশুদ্ধ কাঁচামাল কী?
উত্তর – ধারণা : যেসব কাঁচামালকে শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলেও তাদের ওজন কমে না, সেইসব কাঁচামালকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। উদাহরণ: পাট, তুলো, রেয়ন প্রভৃতি বিশুদ্ধ কাঁচামাল। যেমন—এক মেট্রিক টন তুলো থেকে এক মেট্রিক টন সুতো এবং ওই একই পরিমাণ সুতো থেকে 1 মেট্রিক টন ওজনের বস্ত্র উৎপাদন করা যায়। সুতরাং, তুলো বিশুদ্ধ কাঁচামাল।
6. ভারতের একটি কৃষিভিত্তিক এবং একটি বনজভিত্তিক শিল্পের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের কৃষিভিত্তিক শিল্প : ভারতের একটি কৃষিভিত্তিক শিল্প হল— কার্পাস বয়ন শিল্প।
ভারতের বনজভিত্তিক শিল্প: ভারতের একটি বনজভিত্তিক শিল্প হল— কাগজ শিল্প।
7. লোহা ও ইস্পাত শিল্পে কী কী কাঁচামাল লাগে?
উত্তর – লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল : লোহা ও ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামালগুলি হল— আকরিক লোহা, স্ট্র্যাপ লোহা, স্পঞ্জ লোহা, কয়লা, অক্সিজেন এবং চুনাপাথর। এ ছাড়া ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, নিকেল, টাংস্টেন, ভ্যানাডিয়াম প্রভৃতিও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পটিতে প্রচুর পরিমাণে জলেরও প্রয়োজন হয়।
8. ভারতের দুটি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানার নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা : ভারতের দুটি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল— (1) ছত্তিশগড়ের ভিলাই স্টিল প্লান্ট এবং (2) ঝাড়খণ্ডের বোকারো স্টিল প্লান্ট।
9. লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন হয় কেন?
উত্তর – লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন হওয়ার কারণ: উন্নতমানের ইস্পাত বা ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনের জন্য লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ব্যাপকভাবে ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করা হয়। বিশুদ্ধ লোহা ও ম্যাঙ্গানিজের মিশ্রণে প্রস্তুত ইস্পাত অত্যন্ত দৃঢ় এবং ক্ষয়রোধী ও মরিচা প্রতিরোধী। ফলে এই ইস্পাত উত্তাপ ও আঘাত সহ্য করতে পারে এবং এতে মরিচা ধরে না। তাই লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ম্যাঙ্গানিজের প্রয়োজন হয়।
10. ভারতের দুটি রেলইঞ্জিন ও একটি মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্রের নাম করো।
উত্তর – ভারতের রেলইঞ্জিন নির্মাণ কেন্দ্র : ভারতের দুটি রেলইঞ্জিন নির্মাণ কেন্দ্র হল – (1) পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন এবং (2) উত্তরপ্রদেশের বারাণসী।
ভারতের মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র : ভারতের একটি মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র হল—হরিয়ানার গুরগাঁও।
11. পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যগুলি কী কী?
উত্তর – পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্য: পেট্রোরসায়ন শিল্পে কৃত্রিম তন্তু (পলিয়েস্টার/নাইলন প্রভৃতি), প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার, আঠা, রং, কীটনাশক, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
12. পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের একটি করে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – পূর্ব ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র : পূর্ব ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল—পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া (হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড)।
পশ্চিম ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র: পশ্চিম ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল—গুজরাতের ভাদোদরা (ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যালস কর্পোরেশন লিমিটেড)।
13. হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কী ?
উত্তর – ধারণা : যেসব ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে অন্যান্য শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ছোটো ছোটো যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স ভোগ্যপণ্য প্রস্তুত করা হয়, সেইসব শিল্পকে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। উদাহরণ: ক্যামেরা, রেডিয়ো, টেলিভিশন, টাইপরাইটার, ঘড়ি, বৈদ্যুতিক পাখা প্রভৃতি এই শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্য।
14. উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের একটি করে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – উত্তর ভারতের পেট্রোরসায়নিক শিল্পকেন্দ্র: উত্তর ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল–হরিয়ানার পানিপথ (পানিপথ পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্ট)।
দক্ষিণ ভারতের পেট্রোরসায়নিক শিল্পকেন্দ্র: দক্ষিণ ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল—কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর (ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড)।
15. উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের একটি করে মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – উত্তর ভারতের মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র: উত্তর ভারতের একটি মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র হল— হরিয়ানার গুরগাঁও (মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড)।
দক্ষিণ ভারতের মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র: দক্ষিণ ভারতের একটি মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র হল– তামিলনাড়ুর চেন্নাই (ফোর্ড ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড)।
16. পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ভারতের কোন্ কোন্ স্থানে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে?
উত্তর – পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ভারতে গঠিত লোহা ও ইস্পাত কারখানা: পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, ওডিশার রৌরকেলা, ছত্তিশগড়ের ভিলাই, ঝাড়খণ্ডের বোকারো, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম, কর্ণাটকের বিজয়নগর এবং তামিলনাড়ুর সালেমে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে।
17. ভারতের চারটি প্রধান লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্র : ভারতের চারটি প্রধান লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রের নাম— (1) ছত্তিশগড়ের ভিলাই, (2) ঝাড়খণ্ডের বোকারো, (3) পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর এবং (4) ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর।
18. লোহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনের জন্য কী কী খনিজের প্রয়োজন?
উত্তর – লোহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ: লোহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনের জন্য যেসব খনিজের প্রয়োজন হয়, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—(1) আকরিক লোহা, (2) কয়লা, (3) চুনাপাথর, (4) ডলোমাইট, (5) ম্যাঙ্গানিজ, (6) নিকেল, (7) টাংস্টেন, (৪) ক্রোমিয়াম প্রভৃতি।
19. পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর – ধারণা : পেট্রোলিয়াম বা অশোধিত খনিজ তেল শোধন করার সময় প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য, যেমন—ন্যাপথা, প্রোপেন, বুটেন, ইথেন, মিথেন, বেনজল, বিউটাডিন, ইথানল, প্রোপিলিন প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে যখন বিভিন্ন ধরনের শিল্প একসঙ্গে গড়ে ওঠে, তখন সেই শিল্পগুলিকে একত্রে বলে পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ। এই শিল্পগুলি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।
20. পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয় কেন?
উত্তর – পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলার কারণ : পেট্রোরাসায়নিক শিল্প থেকে উৎপন্ন হওয়া দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে অগণিত অনুসারী শিল্প বা শিল্পগুচ্ছ গড়ে উঠতে পারে। সেই সমস্ত অনুসারী শিল্প একসাথে বৃহদায়তন দানবের মতো বৃহৎ শিল্পদানবে পরিণত হয় বলে পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয়।
21. TSL-এর সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর – ধারণা : TSL-এর পুরোকথাটি হল Tata Steel Limited। আগে এই সংস্থাটি TISCO নামে পরিচিত ছিল। জামশেদজি টাটার উদ্যোগে ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলায় সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর মিলনস্থলে 1907 সালে এই কারখানাটি স্থাপিত হয়। এটি ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত কারখানা।
22. কার্পাস বয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে কেন?
উত্তর – কার্পাস বয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলার কারণ : কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল কার্পাস বা তুলো। এটি একটি বিশুদ্ধ কাঁচামাল অর্থাৎ সমপরিমাণ (1 টন) তুলো থেকে সমপরিমাণ (1 টন) সুতো বা বস্ত্র উৎপাদিত হয়। ফলে এই শিল্প কাঁচামাল উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা এদের মধ্যবর্তী যে-কোনো স্থানেই গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ, কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠার প্রবণতা লক্ষ করা যায় না। তাই কার্পাস বয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে।
23. তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলতে কী বোঝ ? 
অথবা, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর – ধারণা : যখন কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ বা দূরসঞ্ঝার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার তথ্যের অন্বেষণ, পুনরুদ্ধার, পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ বা মজুত প্রভৃতি কাজ ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে করা হয়, তখন সেইসব শিল্পকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে। বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো ও উৎপাদন ব্যবস্থা এই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য প্রয়োজন হয়, যেমন—কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়ার, ইলেকট্রনিকস বা বৈদ্যুতিন সেমিকন্ডাক্টর, ইনটারনেট, ই-কমার্স, দূরসঞ্ঝার সাজসরঞ্জাম, কম্পিউটার পরিসেবা ইত্যাদি।
24. ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের সম্ভাবনা কীরূপ?
উত্তর – ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের সম্ভাবনা: ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল, কারণ— (1) অভ্যন্তরীণ চাহিদা: ভারত একটি জনবহুল দেশ বলে এখানে বস্ত্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রচুর। (2) কাঁচামালের জোগান: ভারতে যথেষ্ট পরিমাণে তুলো উৎপাদিত হয়, অর্থাৎ কার্পাস বয়ন শিল্পের কাঁচামালের অভাব এখানে নেই। (3) বিশাল বাজার: ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি এখনও পর্যন্ত বস্ত্রবয়ন শিল্পে খুব বেশি উন্নতি লাভ করতে পারেনি। এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ভারতীয় বস্ত্রের বিশাল বাজার রয়েছে।
25. লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে সব শিল্পের মেরুদণ্ড বলে কেন?
উত্তর – লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে সব শিল্পের মেরুদণ্ড বলার কারণ : লোহা ও ইস্পাত শিল্পের ওপর অন্যান্য শিল্পের বিকাশ নির্ভর করে। লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্য দিয়ে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পই গড়ে ওঠে না, প্রায় সব ধরনের কারখানার কাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে লোহা ও ইস্পাত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতি হলে অন্যান্য শিল্পেরও উন্নতি হয়। তাই এই শিল্পকে সব শিল্পের মেরুদণ্ড বলে।
26. ভারতের একটি কয়লাকেন্দ্রিক এবং একটি বন্দরভিত্তিক লোহা ও ইস্পাত কারখানার নাম করো।
উত্তর – ভারতের কয়লাকেন্দ্রিক লোহা ও ইস্পাত কারখানা: ভারতের একটি কয়লাকেন্দ্রিক লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল—ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির বার্নপুর-কুলটি স্টিল প্লান্ট।
ভারতের বন্দরকেন্দ্রিক লোহা ও ইস্পাত কারখানা: ভারতের একটি বন্দরভিত্তিক লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল—রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেডের বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্ট।
27. ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : যে শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ধাতু বিশেষত লোহা ও ইস্পাত দিয়ে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়, সেই শিল্পকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। উদাহরণ : যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প, মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প প্রভৃতি। ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প দুইপ্রকার, যথা— (1) ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ও (2) হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প।
28. সংকর ইস্পাত শিল্প সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর – ধারণা : যে ইস্পাত শিল্পে এক বা একাধিক লৌহ-সংকর ধাতু ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ধরনের ধাতব ও বৈদ্যুতিক গুণাবলিসম্পন্ন ইস্পাত উৎপাদন করা হয়, সেই শিল্পকে সংকর ইস্পাত শিল্প (Alloy Steel Industry) বলে। শিল্পকেন্দ্র: ভারতে মোট 3টি বৃহদায়তন সংকর ইস্পাত কারখানা আছে। এগুলি হল— (1) কর্ণাটকের ভদ্রাবতীতে বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল প্লান্ট, (2) দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্লান্ট ও (3) তামিলনাড়ুর সালেম স্টিল প্লান্ট।
29. ভারতের একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের সরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র : ভারতের একটি সরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম হল—SAIL-এর অধীনস্থ ছত্তিশগড়ের ভিলাই স্টিল প্লান্ট।
ভারতের বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র : ভারতের একটি বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম হল—টাটা স্টিল লিমিটেড অধীনস্থ ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর স্টিল প্লান্ট।
30. পশ্চিমবঙ্গের দুটি কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গের কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র : পশ্চিমবঙ্গের দুটি কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম হল— (1) শ্রীরামপুর ও (2) শ্যামনগর।
31. ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর – ধারণা : যে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বৃহদায়তন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বড়ো ও ভারী যন্ত্রপাতি, ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কৃষি ও খনিতে ব্যবহৃত বড়ো যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়, সেইসব শিল্পকে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস।
32. ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলির বেশিরভাগ বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে কেন?
উত্তর – ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলির বেশিরভাগ বন্দরের কাছে গড়ে ওঠার কারণ: পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য ন্যাপথাসহ অন্যান্য কয়েকটি কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে খনিজ তেল শোধনাগারের কাছাকাছি পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠে। তবে ভারত পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল উত্তোলনে স্বয়ম্ভর নয়। প্রতিবছর দেশের মোট চাহিদার প্রায় 83% পেট্রোলিয়াম বিভিন্ন দেশ থেকে জলপথে বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। যেহেতু দেশের অভ্যন্তরে খনিজ তেল শোধনাগার গড়ে উঠলে আমদানিকৃত খনিজ তেল বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পাঠানোর জন্য অতিরিক্ত পরিবহণ ব্যয় হবে, তাই দেশের বেশিরভাগ খনিজ তেল শোধনাগার ও পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে।
33. তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কয়েকটি সমস্যা উল্লেখ করো।
উত্তর – তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সমস্যা: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কয়েকটি সমস্যা হল— (1) চাহিদার হ্রাসবৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক স্তরে চাহিদার হ্রাসবৃদ্ধি এই শিল্পে সমস্যার সৃষ্টি করে। (2) অসম বিকাশ: ভারতের সর্বত্র এই শিল্পের বিকাশ সঠিকভাবে হয়নি। (3) কঠিন প্রতিযোগিতা: বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিশেষত চিন, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
34. মিনি স্টিল প্লান্ট সম্বন্ধে ধারণা দাও।
উত্তর – ধারণা : যেসব লোহা ও ইস্পাত কারখানার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা 10 লক্ষ টনের কম এবং বৈদ্যুতিক চুল্লি (electric arc furnace)-র সাহায্যে স্পঞ্জ আয়রন ও স্ক্র্যাপ আয়রন থেকে ইস্পাত উৎপাদন করা হয়, সেইসব কারখানাকে মিনি স্টিল প্লান্ট বলা হয়। বর্তমানে ভারতে প্রায় 650টি মিনি স্টিল প্লান্ট রয়েছে। ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিনি স্টিল প্লান্ট হল— (1) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার কাছে অবস্থিত ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি, (2) অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে অবস্থিত অন্ধ্ৰ স্টিল কর্পোরেশন লিমিটেড, (3) মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে অবস্থিত মুকুন্দ লিমিটেড প্রভৃতি।
35. ভারতের দুটি কৃষিভিত্তিক এবং দুটি খনিভিত্তিক শিল্পের নাম করো।
উত্তর – ভারতের কৃষিভিত্তিক শিল্প : ভারতের দুটি কৃষিভিত্তিক শিল্প হল— (1) চিনি শিল্প এবং (2) কার্পাস বয়ন শিল্প।
ভারতের খনিভিত্তিক শিল্প: ভারতের দুটি খনিভিত্তিক শিল্প হল- (1) লোহা ও ইস্পাত শিল্প এবং (2) সিমেন্ট শিল্প।
36. SAIL কী?
উত্তর – ধারণা : SAIL (Steel Authority of India Limited) হল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, যা ভারতে সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লোহা ও ইস্পাত কারখানাগুলি পরিচালনা করে। অধীনস্ত শিল্পকেন্দ্র : SAIL-এর অধীনে থাকা বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রগুলি হল—ভিলাই, দুর্গাপুর, বার্নপুর- কুলটি, রৌরকেলা ও বোকারো এবং সংকর ইস্পাত কেন্দ্রগুলি হল দুর্গাপুর, ভদ্রাবতী ও সালেম। SAIL-এর সদর দপ্তর দিল্লিতে অবস্থিত।
37. ভারতের তিনটি রাজ্যে অবস্থিত একটি করে মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতের তিনটি রাজ্যে অবস্থিত মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র : ভারতের তিনটি রাজ্যে অবস্থিত একটি করে মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্রের নাম হল— (1) হরিয়ানার গুরগাঁও (মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড), (2) তামিলনাড়ুর চেন্নাই (অশোক লেল্যান্ড লিমিটেড) এবং (3) মহারাষ্ট্রের মুম্বাই (প্রিমিয়ার অটোমোবিলস লিমিটেড)।
38. শিল্পাঞ্চল বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: অনুকূল প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে যখন কোনো স্থানে বিভিন্ন ধরনের শিল্পের সমাবেশ হয়, তখন সেই স্থান শিল্পাঞ্চল নামে পরিচিত। শিল্পাঞ্চলের মধ্যে চাষাবাদ হয় না বললেই চলে, শুধু চারদিকে কলকারখানা ইট, কাঠ পাথরে তৈরি বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ইত্যাদি থাকে। উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের হুগলি শিল্পাঞ্চল।
39. পেট্রোরসায়ন শিল্পকে কেন ‘সূর্যোদয়ের শিল্প’ বলে?
উত্তর – পেট্রোরসায়ন শিল্পকে সূর্যোদয়ের শিল্প বলার কারণ: অন্যান্য অনেক শিল্পের তুলনায় পেট্রোরাসায়ন শিল্প অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও শিল্পটি বহু ধরনের রাসায়নিক শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করে। শুধু তাই নয় বৈচিত্র্য, পরিমাণ, ব্যাবহারিক দিক প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেট্রোরসায়ন শিল্পের গুরুত্ব এতটাই বেড়ে চলেছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে এত ধরনের শিল্প গড়ে ওঠে যে, এই শিল্পকে সূর্যোদয়ের শিল্প বলে।
40. পূর্ত শিল্প কী ?
উত্তর – ধারণা : যে শিল্পে লোহা ও ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা প্রভৃতি ধাতব দ্রব্য এবং রবার, প্লাস্টিক প্রভৃতি অধাতব দ্রব্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে নানা ইস্পাত দ্রব্য তৈরি করা হয়, সেইসব শিল্পকে পূর্ত শিল্প বলে। পূর্ত শিল্পের আর- ধরনের হালকা, ভারী ও সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি, কলকবজা, যন্ত্রাংশ এবং সংযোজিত এক নাম ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প।
41. আমেদাবাদকে ‘ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার’ বলে কেন?
উত্তর – আমেদাবাদকে ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার বলার কারণ: একসময় গ্রেট ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টার কার্পাস বয়ন শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করে। তখন গ্রেট ব্রিটেনের কার্পাস বয়ন শিল্প ম্যাঞ্চেস্টারকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। একইভাবে ভারতে গুজরাতের আমেদাবাদ শহরে বহু কার্পাস বয়ন কল বিকাশ লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে, গুজরাত তথা ভারতের প্রধান কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র হিসেবেই আমেদাবাদ বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এইভাবে খুব বেশি সংখ্যায় কার্পাস বয়ন শিল্পের সমাবেশের জন্যই ম্যাস্টোরের সঙ্গে তুলনা করে আমেদাবাদকে ভারতের ম্যাস্টোর নামে অভিহিত করা হয়।
42. আউটসোর্সিং বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: যেসব শিল্পে কাঁচামাল পরিবেশ বা বাজারের তুলনায় শ্রমিকের দক্ষতার গুরুত্ব বেশি, সেই শিল্পগুলিতে ব্যয় হ্রাস এবং উন্নতমান বজায় রাখার জন্য শিল্পের অনেক কাজই বাইরের সংস্থার মাধ্যমে করিয়ে নেওয়ার যে ব্যবস্থা করা হয়, তাকে বলে আউটসোর্সিং। আউটসোর্সিঙের মাধ্যমে যেসব কাজ করানো হয়, তার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রেতা পরিসেবা, কলসেন্টার সার্ভিস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
43. অস্থানু শিল্প বা শিকড় আলগা শিল্প বা Foot Loose শিল্প কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: শিল্পে দুই ধরনের কাঁচামাল ব্যবহৃত হয় – বিশুদ্ধ কাঁচামাল এবং অবিশুদ্ধ কাঁচামাল। এর মধ্যে বিশুদ্ধ কাঁচামাল ব্যবহারকারী শিল্পগুলির অবস্থানের ক্ষেত্রে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য পরিবহণ ব্যয়ের গুরুত্ব কম হওয়ায় শিল্পগুলি কাঁচামাল উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা অন্য যে-কোনো স্থানে গড়ে উঠতে পারে। তাই বিশুদ্ধ কাঁচামাল ব্যবহারকারী শিল্পকে অস্থানু শিল্প বা শিকড় আলগা শিল্প বা Foot Loose শিল্প বলে। উদাহরণ: কার্পাস বয়ন শিল্প।

বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. দক্ষিণ ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার—
(a) মাদুরাই
(b) কানপুর
(c) কোয়েম্বাটোর
(d) মুম্বাই
উত্তর – (c) কোয়েম্বাটোর
2. উত্তরপ্রদেশে ডিজেল রেলইঞ্জিন নির্মাণের কারখানা আছে—
(a) কানপুরে
(b) এলাহাবাদে
(c) বারাণসীতে
(d) লখনউতে
উত্তর – (c) বারাণসীতে
3. একটি সংকর ধাতুর নাম—
(a) লোহা
(b) টিন
(c) ইস্পাত
(d) অ্যালুমিনিয়াম
উত্তর – (c) ইস্পাত
4. উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল—
(a) বঙ্গাইগাঁও
(b) ডিগবয়
(c) নাহারকাটিয়া
(d) হলদিয়া
উত্তর – (a) বঙ্গাইগাঁও
5. একটি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা আছে—
(a) রাঁচিতে
(b) ভিলাইয়ে
(c) মুম্বাইয়ে
(d) মহীশূরে
উত্তর – (b) ভিলাইয়ে
6. কার্পাস বয়ন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হল—
(a) জামশেদপুর
(b) বিশাখাপত্তনম
(c) আমেদাবাদ
(d) কলকাতা
উত্তর – (c) আমেদাবাদ
7. পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে উঠেছে—
(a) তারাপুরে
(b) নাগপুরে
(c) ট্রম্বেতে
(d) কানপুরে
উত্তর – (c) ট্রম্বেতে
৪. পেট্রোরসায়ন শিল্পের জন্য বিখ্যাত—
(a) কলকাতা
(b) হলদিয়া
(c) দুর্গাপুর
(d) শিলিগুড়ি
উত্তর – (b) হলদিয়া
9. লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হল—
(a) আকরিক লৌহ
(b) কয়লা
(c) ম্যাঙ্গানিজ
(d) সবগুলিই প্রযোজ্য
উত্তর – (d) সবগুলিই প্রযোজ্য
10. প্রদত্ত কোন্‌ ইস্পাত কারখানাটি ভারত স্বাধীন হওয়ার পর স্থাপিত হয়? –
(a) দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা
(b) জামশেদপুর ইস্পাত কারখানা
(c) ভদ্রাবতী ইস্পাত কারখানা
(d) বার্নপুর ইস্পাত কারখানা
উত্তর – (a) দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা
11. ভারতের প্রথম সুতাকল স্থাপিত হয়—
(a) মহারাষ্ট্রে
(b) পশ্চিমবঙ্গে
(c) গুজরাতে
(d) তামিলনাড়ুতে
উত্তর – (b) পশ্চিমবঙ্গে
12. রৌরকেলা লোহা-ইস্পাত কেন্দ্র অবস্থিত—
(a) ব্রাহ্মণী নদীর তীরে
(b) বৈতরনী নদীর তীরে
(c) মহানদী নদীর তীরে
(d) সুবর্ণরেখা নদীর তীরে
উত্তর – (a) ব্রাহ্মণী নদীর তীরে
13. সরকারি উদ্যোগে নির্মিত স্পঞ্জ আয়রন কারখানা কোথায় অবস্থিত?—
(a) তেলেঙ্গানার কোঠাগুডেমে
(b) পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে
(c) ঝাড়খণ্ডের বোকারোতে
(d) ওডিশার দৈতারিতে
উত্তর – (a) তেলেঙ্গানার কোঠাগুডেমে
14. টাটা স্টিল লিমিটেডের ইস্পাত কারখানাটি অবস্থিত—
(a) ভিলাইয়ে
(b) রৌরকেলাতে
(c) বার্নপুরে
(d) জামশেদপুরে
উত্তর – (d) জামশেদপুরে
15. কয়লাখনির কাছে গড়ে উঠেছে এমন একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল –
(a) রৌরকেলা
(b) ভিলাই
(c) দুর্গাপুর
(d) ভদ্রাবতী
উত্তর – (c) দুর্গাপুর
16. বোকারো ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রে আকরিক লোহা আসে—
(a) নেভেলি থেকে
(b) কিরিবর থেকে
(c) বায়লাডিলা থেকে
(d) হসপেট থেকে
উত্তর – (b) কিরিবর থেকে
17. ভারতের বৃহত্তম সরকারি লোহা-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র—
(a) জামশেদপুর
(b) ভিলাই
(c) রৌরকেলা
(d) সালেম
উত্তর – (b) ভিলাই
18. ভারতে রেলের বগি তৈরি হয়—
(a) বারাণসীতে
(b) বার্নপুরে
(c) পেরাম্বুরে
(d) বেঙ্গালুরুতে
উত্তর – (c) পেরাম্বুরে
19. পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কাপড়ের কল গড়ে ওঠে —
(a) শ্রীরামপুরে
(b) দমদমে
(c) ঘুসুড়িতে
(d) বর্ধমানে
উত্তর – (c) ঘুসুড়িতে
20. ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র সবচেয়ে বেশি রয়েছে—
(a) উত্তরাঞ্চলে
(b) দক্ষিণাঞ্চলে
(c) পূর্বাঞ্চলে
(d) পশ্চিমাঞ্চলে
উত্তর – (d) পশ্চিমাঞ্চলে
21. ভারতের ম্যাস্টোর হল –
(a) মুম্বাই
(b) ভাবনগর
(c) আমেদাবাদ
(d) পুণে
উত্তর – (c) আমেদাবাদ
22. ভারতের রুর বলা হয়—
(a) দুর্গাপুরকে
(b) জামশেদপুরকে
(c) রানিগঞ্জকে
(d) বোকারোকে
উত্তর – (a) দুর্গাপুরকে
23. SAIL হল একটি—
(a) কয়লা উত্তোলক সংস্থা
(b) খনিজ তেল উত্তোলক সংস্থা
(c) লোহা ও ইস্পাত সংস্থা
(d) প্রাকৃতিক গ্যাস সংস্থা
উত্তর – (c) লোহা ও ইস্পাত সংস্থা
24. ভারতের বৃহত্তম মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে—
(a) গুরগাঁওতে
(b) জামশেদপুরে
(c) মুম্বাইতে
(d) পুণেতে
উত্তর – (a) গুরগাঁওতে
25. যে শিল্পকে উদীয়মান শিল্প বলা হয়, সেটি হল—
(a) তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে
(b) পেট্রোরসায়ন শিল্পকে
(c) পাট শিল্পকে
(d) লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে
উত্তর – (b) পেট্রোরসায়ন শিল্পকে
26. আধুনিক শিল্পদানব বলা হয় যে শিল্পকে, সেটি হল—
(a) তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে
(b) বস্ত্র বয়ন শিল্পকে
(c) লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে
(d) পেট্রোরসায়ন শিল্পকে
উত্তর – (d) পেট্রোরসায়ন শিল্পকে
27. ভারতের প্রথম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে—
(a) কয়ালিতে
(b) ভাদোদরায়
(c) ট্রম্বেতে
(d) হলদিয়াতে
উত্তর – (c) ট্রম্বেতে
28. পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র জাহাজ নির্মাণ কারখানাটি হল—
(a) হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ড
(b) কলকাতা শিপইয়ার্ড
(c) গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স
(d) হিন্দুস্থান শিপবিল্ডার্স
উত্তর – (c) গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স
29. ভারতের খনিজ ভাণ্ডার বলা হয় –
(a) ছোটোনাগপুর মালভূমিকে
(b) মালনাদ মালভূমিকে
(c) তেলেঙ্গানা মালভূমিকে
(d) মালব মালভূমিকে
উত্তর – (a) ছোটোনাগপুর মালভূমিকে
30. জার্মানির ক্রুপস ও ডেমাগ কোম্পানির সহায়তায় ভারতের যে লোহা-ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে, সেটি হল –
(a) সালেম
(b) ভদ্রাবতী
(c) রৌরকেলা
(d) বিশাখাপত্তনম
উত্তর – (c) রৌরকেলা
31. ব্রিটিশ সহযোগিতায় নির্মিত একটি লোহা-ইস্পাত কেন্দ্র হল—
(a) ভদ্রাবতী
(b) জামশেদপুর
(c) দুর্গাপুর
(d) ভিলাই
উত্তর – (c) দুর্গাপুর
32. ভারতের বৃহত্তম মোটরগাড়ি নির্মাণ কারখানা হল—
(a) চেন্নাইয়ের অশোক লেল্যান্ড
(b) গুরগাঁওয়ের মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড
(c) মুম্বাইয়ের মাহীন্দ্রা অ্যান্ড মাহীন্দ্রা
(d) জামশেদপুরের টাটা মৌটরস লিমিটেড
উত্তর – (b) গুরগাঁওয়ের মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড
33. তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মূল কাঁচামাল হল –
(a) লোহা ও ইস্পাত
(b) কয়লা
(c) মানুষের মেধা
(d) বিদ্যুৎ
উত্তর – (c) মানুষের মেধা
34. ভারতের সিলিকন ভ্যালি বলা হয়—
(a) চেন্নাইকে
(b) বেঙ্গালুরুকে
(c) কলকাতাকে
(d) দিল্লিকে
উত্তর – (b) বেঙ্গালুরুকে
35. ভারতের একমাত্র উপকূলীয় লোহা ও ইস্পাত কেন্দ্রটি অবস্থিত—
(a) পারাদীপে
(b) বিশাখাপত্তনমে
(c) চেন্নাইয়ে
(d) কোচিতে
উত্তর – (b) বিশাখাপত্তনমে
36. ভারতের ডেট্রয়েট বলা হয় –
(a) জামশেদপুরকে
(b) চেন্নাইকে
(c) মুম্বাইকে
(d) গুরগাঁওকে
উত্তর – (b) চেন্নাইকে
37. ভারতের বৃহত্তম সংকর ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে—
(a) সালেমে
(b) জামশেদপুরে
(c) দুর্গাপুরে
(d) ভিলাইয়ে
উত্তর – (a) সালেমে
38. শিকড় আলগা শিল্প বলা হয় –
(a) লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে
(b) কার্পাস বয়ন শিল্পকে
(c) পেট্রোরসায়ন শিল্পকে
(d) ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে
উত্তর – (b) কার্পাস বয়ন শিল্পকে
39. IISCO (Indian Iron and Steel Company) শিল্পকেন্দ্রটি যেখানে অবস্থিত, তা হল—
(a) দুর্গাপুর
(b) জামশেদপুর
(c) বার্নপুর-কুলটি
(d) রৌরকেলা
উত্তর – (c) বার্নপুর-কুলটি

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. …………… শিল্পকে সংযোজনভিত্তিক শিল্প বলে।
উত্তর – অটোমোবাইল
2. তামিলনাড়ুর ……….. -এ একটি সংকর ইস্পাত উৎপাদনের কারখানা আছে।
উত্তর – সালেম
3. পূর্ব ভারতের বৃহত্তম পেট্রোরসায়ন কারখানাটি ……… অবস্থিত।
উত্তর – হলদিয়ায়
4. ………. শহরকে দক্ষিণ ভারতের ম্যাস্টোর বলা হয়।
উত্তর – কোয়েম্বাটোর
5. কার্পাস বয়ন শিল্পে ভারতের অন্যতম অগ্রগণ্য রাজ্যটি হল …………।
উত্তর – গুজরাত
6. উত্তর ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার ……….. শহরকে বলে।
উত্তর – কানপুর
7. ভারতের তথ্যপ্রযুক্তির রাজধানী হল …………।
উত্তর – বেঙ্গালুরু
৪. পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল …………।
উত্তর – ন্যাপথা
9. ওডিশার ………… -য় ইস্পাত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
উত্তর – রৌরকেলা
10. ইস্পাত দৃঢ় করার জন্য ব্যবহৃত হয় …………।
উত্তর – ম্যাঙ্গানিজ
11. টাটা স্টিল লিমিটেড অবস্থিত ………… শহরে।
উত্তর – জামশেদপুর
12. বার্নপুর-কুলটির লোহা ও ইস্পাত কারখানায় ডলোমাইট আসে ………. থেকে।
উত্তর – গাংপুর
13. ভারতের প্রধান জাহাজ নির্মাণ কারখানাটি ………. অবস্থিত।
উত্তর – বিশাখাপত্তনমে
14. জামশেদপুরের লোহা ও ইস্পাত কারখানাটি সুবর্ণরেখা ও ……….. নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত।
উত্তর – খরকাই
15. ভারী যন্ত্রপাতি উৎপাদনের জন্য ঝাড়খণ্ডের ………. বিখ্যাত।
উত্তর – রাঁচি
16. রৌরকেলা ইস্পাত কারখানাটি ………… নদীর তীরে অবস্থিত।
উত্তর – ব্রাহ্মণী
17. পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় তৈরি একটি লোহা ও ইস্পাত কেন্দ্র হল …………।
উত্তর – বোকারো
18. ………. হল ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার।
উত্তর – আমেদাবাদ
19. সকল শিল্পের মেরুদণ্ড হল ……….. শিল্প।
উত্তর – লোহা ও ইস্পাত
20. একটি বিশুদ্ধ কাঁচামালের উদাহরণ হল …………।
উত্তর – কার্পাস

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *