wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions History Chapter 1 ইতিহাসের ধারণা

WBBSE 10th Class Social Science Solutions History Chapter 1 ইতিহাসের ধারণা

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions History Chapter 1 ইতিহাসের ধারণা

West Bengal Board 10th History Solutions

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. বর্তমানকালে ইতিহাসবিদগণ বহু নতুন বিষয়কে ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—নতুন সামাজিক ইতিহাস, খেলার ইতিহাস, খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস, পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস, শিল্পচর্চার (সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র) ইতিহাস, স্থাপত্যের ইতিহাস, দৃশ্যশিল্পের (ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি) ইতিহাস, যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস, স্থানীয় ইতিহাস, শহরের ইতিহাস, সামরিক ইতিহাস, পরিবেশের ইতিহাস, নারী ইতিহাস প্রভৃতি।
  2. সাম্প্রতিককালে সমাজের বৃহত্তর নিম্নবর্গের দরিদ্র, প্রান্তিক, পিছিয়ে-পড়া মানুষ সামাজিক ইতিহাসের আলোচনায় গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে আলোচনা করা এই ইতিহাস ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ নামে পরিচিত। সাম্প্রতিককালে ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস নিয়ে যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। এ বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল মার্কস-এর ‘দাস ক্যাপিটাল’, এঙ্গেলস-এর ‘দ্য কনডিশন অব দ্য ওয়ার্কিং ক্লাস ইন ইংল্যান্ড’, জা জরেস-এর ‘আ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব দ্য ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশন’ প্রভৃতি। এইসব গ্রন্থের মাধ্যমে মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা শুরু হয়। ভারতে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ প্রকাশের মাধ্যমে রজনীপাম দত্ত মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা শুরু করেন।
  3. রণজিৎ গুহ ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘অন সাম অ্যাসপেক্টস অব দ্য হিস্টোরিওগ্রাফি অব কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনার মধ্য দিয়ে এদেশে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা শুরু করেন। পরে এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান পার্থ চ্যাটার্জি, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র, সুদীপ্ত কবিরাজ প্রমুখ।
  4. বিংশ শতক থেকে খেলাধুলো সর্বস্তরের মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন গবেষক এসব বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিককালে ইতিহাসচর্চা করছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রিচার্ড হোল্ট-এর ‘স্পোর্টস অ্যান্ড দ্য ব্রিটিশ: আ মডার্ন হিস্ট্রি’, রামচন্দ্র গুহ-র ‘আ করনার অব আ ফরেন ফিল্ড: দ্য ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি অব আ ব্রিটিশ স্পোর্টস’, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খেলা যখন ইতিহাস’, বোরিয়া মজুমদারের ‘ক্রিকেট ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি।
  5. বর্তমানকালে বিভিন্ন গবেষক খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেছেন। এবিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল হরিপদ ভৌমিকের ‘রসগোল্লা: বাংলার জগত্খাতানো আবিষ্কার’, কে টি আচয়-এর ইন্ডিয়ান ফুড: আ হিস্টোরিক্যাল কমপ্যানিয়ন’, রিয়াই টান্নাহিল-এর ‘ফুড ইন হিস্ট্রি’, প্যাট চ্যাপম্যানের ইন্ডিয়া ফুড অ্যান্ড কুকিং’ প্রভৃতি।
  6. পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস নিয়ে আজকাল বিভিন্ন গবেষক চর্চা করছেন। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল মলয় রায়-এর ‘বাঙালির বেশবাস: বিবর্তনের রূপরেখা’, কার্ল কোহলার-এর ‘পোশাকের ইতিহাস’, মাইকেল ডেভিস-এর ‘আর্ট অব ড্রেস ডিজাইনিং’, এম্মা টারলো-র ‘ক্লোথিং ম্যাটার্স: ড্রেস আ আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি।
  7. বর্তমানে সংগীত, নৃত্য, নাটক চলচ্চিত্র প্রভৃতি শিল্পকলার ইতিহাসেরও যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। এ বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল— [i] সংগীতে উমেশ জোশীর ‘ভারতীয় সংগীত কা ইতিহাস’, সুকুমার রায়ের ‘বাংলা সংগীতের রূপ’, করুণাময় গোস্বামীর ‘বাংলা গানের বিবর্তন’, সুধীর চক্রবর্তীর ‘বাংলা গানের সন্ধানে’, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীর ‘বাংলা গানের ধারা’ প্রভৃতি। [ii] নৃত্যে ক্যারল ওয়েলস-এর ‘ডান্স-আ ভেরি সোশ্যাল হিস্ট্রি’, রাগিনী দেবীর ‘ডান্স ডায়ালেক্ট অব ‘ইন্ডিয়া’, শোভনা গুপ্তার ‘ডান্স অব ইন্ডিয়া’, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের নৃত্যকলা’ প্রভৃতি। [iii] নাটকে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়ের ‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’, আশুতোষ ভট্টাচার্যর ‘বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস’ প্রভৃতি। [iv] চলচ্চিত্রে ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’, সত্যজিৎ রায়ের ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’, তপন সিংহর ‘চলচ্চিত্র আজীবন’, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ‘দেখার রকমফের: ঋত্বিক ও সত্যজিৎ’ প্রভৃতি।
  8. স্থাপত্যের ইতিহাস নিয়েও আধুনিককালে যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল জে ফার্গুসন-এর ‘হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইস্টার্ন আর্কিটেকচার’, জর্জ মিশেল-এর ‘ব্রিক টেম্পল অব বেঙ্গল’, পার্সি ব্রাউন-এর ইন্ডিয়ান আর্কিটেকচার’, অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পশ্চিমবঙ্গের পুরাসম্পদ’ (সম্পা.), তারাপদ সাঁতরার ‘কলকাতার মন্দির-মসজিদ স্থাপত্য’, হিতেশরঞ্জন সান্যালের ‘বাংলার মন্দির’ প্রভৃতি।
  9. দৃশ্যশিল্পের ইতিহাস নিয়েও আজকাল যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘বাগেশ্বরী প্রবন্ধমালা’, অশোক মিত্র রচিত ‘ভারতের চিত্রকলা’, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় রচিত ‘চিত্রকথা’, গীতা কাপুর রচিত ‘কনটেমপোরারি ইন্ডিয়ান আর্টিস্টস’, জন ওয়েড রচিত ‘এ শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য ক্যামেরা’ প্রভৃতি।
  10. যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস নিয়ে আজকাল চর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল জন আর্মস্ট্রং-এর ‘ট্রান্সপোর্ট হিস্ট্রি’, গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ‘ইউরোপ অ্যান্ড দ্য হুগলি’, আর আর ভান্ডারির ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ: গ্লোরিয়াস ১৫০ ইয়ার্স’ প্রভৃতি।
  11. আধুনিককালে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা শুরু করেছেন। এর ফলে জাতীয় ইতিহাসের চর্চা আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল কালীকমল সার্বভৌম রচিত ‘সে ইতিহাস বগুড়ার বৃত্তান্ত’, কুমুদনাথ মল্লিক রচিত ‘নদিয়া কাহিনি’, নিখিলনাথ রায় রচিত মুরশিদাবাদ কাহিনি’, সতীশচন্দ্র মিত্র রচিত ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’, রাধারমণ সাহা রচিত ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’, কালীনাথ চৌধুরী রচিত ‘রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’, ভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কোচবিহারের ইতিহাস’, সুধীরকুমার মিত্র-র ‘হুগলি জেলার ইতিহাস’ প্রভৃতি।
  12. বিভিন্ন শহরের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে আজকাল বিভিন্ন গবেষক গবেষণার কাজ করছেন। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল পুর্ণেন্দু পত্রীর ‘কলকাতা সংক্রান্ত’, নিখিল সরকারের (শ্রীপান্থ) ‘কলকাতা’, রাধারমণ মিত্রর ‘কলিকাতা দর্পণ’, সৌমিত্র শ্রীমানীর ‘কলিকাতা কলকাতা’ (সম্পা.), বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহর বহরমপুর’, মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকা: স্মৃতি-বিস্মৃতির নগরী’, নারায়ণী গুপ্তর ‘দ্য দিল্লি অমনিবাস’ প্রভৃতি।
  13. সামরিক ইতিহাস বর্তমানকালে চর্চার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল—বার্নেট-এর ‘ব্রিটেন অ্যান্ড হার আর্মি’, রজার স্পিলার-এর ‘আমেরিকান মিলিটারি লিডার্স’, জন হোয়াইট ক্লে-র ‘আমেরিকান মিলিটারি হিস্ট্রি’, যদুনাথ সরকারের ‘মিলিটারি হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’, সুরেন্দ্রনাথ সেনের ‘মিলিটারি সিস্টেম অব দ্য মারাঠাস’, সুবোধ ঘোষের ‘ভারতীয় ফৌজের ইতিহাস’, জি এস সাঁধুর ‘মিলিটারি হিস্ট্রি অব মেডিয়াভাল ইন্ডিয়া’, কৌশিক রায়ের ‘দ্য আর্মি ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি।
  14. পরিবেশের পরিবর্তন, ইতিহাসে পরিবেশের প্রভাব প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আজকাল যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল র‍্যাচেল কারসন-এর ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’, আলফ্রেড ক্রসবি-র ‘ইকোলজিকাল ইম্পিরিয়ালিজম’, রিচার্ড গ্রোভ-এর ‘গ্রিন ইম্পিরিয়ালিজম’, ইরফান হাবিবের ‘মানুষ ও পরিবেশ’, মাধব গ্যাডগিল ও রামচন্দ্র গুহর ‘ইকোলজি আ ইকুইটি’ প্রভৃতি।
  15. সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ব্যক্তি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিবর্তন নিয়ে ইতিহাসচর্চা করছেন। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল টমাস কুহন-এর ‘দ্য স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভোলিউশনস’, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘আ হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’, জে ডি বার্নাল-এর ‘হিস্ট্রি অব সায়েন্স’, দীপক কুমারের ‘সায়েন্স অ্যান্ড দ্য রাজ’ প্রভৃতি।
  16. সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ব্যক্তি চিকিৎসাবিদ্যার বিবর্তন নিয়ে ইতিহাসচর্চা করছেন। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল – দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’, পার্থসারথি চক্রবর্তীর ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের আজব কথা’, তপন চক্রবর্তীর ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস’ প্রভৃতি।
  17. ইতিহাসের অগ্রগতিতে নারীদেরও অসামান্য অবদান রয়েছে সেসব বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিককালে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল জোয়ান স্কট-এর ‘জেন্ডার অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অব হিস্ট্রি’, নীরা দেশাইয়ের ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, জেরান্ডিন ফোর্বস-এর ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, এম এন শ্রীনিবাসের ‘দ্য চেঞ্জিং পজিশন অব ইন্ডিয়ান উইমেন’, কমলা ভাসিনের ‘হোয়াট ইজ প্যাট্রিয়ার্কি’ প্রভৃতি।
  18. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলি হল— [i] সরকারি নথিপত্র, [ii] আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, [iii] চিঠিপত্র, [iv] সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র প্রভৃতি।
  19. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল [i] সরকারি কমিটি ও কমিশনের প্রতিবেদন, [ii] পুলিশ-গোয়েন্দা-সরকারি আধিকারিকদের রিপোর্ট, [iii] পদস্থ সরকারি আধিকারিক বা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিবরণ, [iv] সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন চিঠিপত্র প্রভৃতি।
  20. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক উপাদান হল বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’, সরলাদেবী চৌধুরানির ‘জীবনের ঝরাপাতা’ প্রভৃতি ছাড়াও মহাত্মা গান্ধি, সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, মুজাফফর আহমেদ, মণিকুন্তলা সেন প্রমুখের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা।
  21. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে চিঠিপত্রের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল কন্যা ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা পিতা জওহরলাল নেহরুর চিঠিগুলি। এ ছাড়াও টিপু সুলতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু, প্রমথ চৌধুরি প্রমুখের লেখা চিঠিপত্র প্রভৃতিও খুব মূল্যবান।
  22. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে উল্লেখযোগ্য সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র হল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ এবং দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’। এ ছাড়া রয়েছে ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘সন্ধ্যা’, ‘সঞ্জীবনী’, ‘বন্দেমাতরম’ প্রভৃতি।
  23. আজকাল ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেটের বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তবে এই তথ্য সংগ্রহের সুবিধা ও অসুবিধা উভয়ই রয়েছে।

TOPIC – A আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্য

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. * সাম্প্রতিককালে ইতিহাসের আলোচনার বিষয়বস্তু নানা শাখায় প্রসারিত হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করো। অথবা,আধুনিককালে ইতিহাসচর্চার নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ দিকগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – সাম্প্রতিককালে ইতিহাসের আলোচনার বিষয়বস্তু
ভূমিকা: একদা ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে মূলত রাজা-মহারাজদের কাহিনি, রাজবংশের উত্থান-পতন, সেনাপতি বা দিগ্‌বিজয়ী বীরদের সাফল্য-ব্যর্থতার কাহিনি, সমাজের উচ্চবর্গের জীবনচর্চা প্রভৃতি আলোচনাই গুরুত্ব পেত। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বহু নতুন বিষয় ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইতিহাসচর্চা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেমন—
  1. রাজাদের কার্যকলাপ : বিগত শতাব্দীর মতো বর্তমানকালেও যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্যজয়, শান্তিপ্রতিষ্ঠা, সন্ধি, রাজবংশের উত্থান-পতন প্রভৃতি বিষয়ের ইতিহাসচর্চা অব্যাহত আছে।
  2. উচ্চবর্গের আলোচনা: বিগত শতকের মতো সাম্প্রতিককালেও অভিজাত, ভূস্বামী, জমিদার, সামন্তপ্রভু প্রভৃতি সমাজের উচ্চবর্গের আলোচনা ইতিহাসচর্চার অন্যতম বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
  3. সাধারণ মানুষের আলোচনা: বিগত শতক পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা, পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ের ইতিহাসচর্চা অনেকটা উপেক্ষিত থাকলেও সাম্প্রতিককালে এসব বিষয়ের চর্চা ও গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
  4. স্থানীয় ইতিহাস : সাম্প্রতিককালে আঞ্চলিক ও স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে চর্চাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মহাদেশ থেকে দেশ, দেশ থেকে স্থানীয় অঞ্চলের শহর ও গ্রাম, শহর ও গ্রাম থেকে ব্যক্তি, মানুষ প্রভৃতি সবকিছুই ইতিহাসের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে।
  5. বিজ্ঞানের ইতিহাস: প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার যে ধারাবাহিক অগ্রগতি ঘটেছে সে বিষয়ের ইতিহাসচর্চাও সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পেয়েছে।
  6. নারী ইতিহাস: একদা ইতিহাসচর্চায় নারীরা যথেষ্ট উপেক্ষিত থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন ইতিহাসবিদ নারী ইতিহাসচর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন।

উপসংহার: সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে ইতিহাসচর্চার ধারারও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন বিষয়। ফলে আধুনিক কালের ইতিহাসচর্চা আরও বেশি বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

2. ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ কী? কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা করা হয়?
উত্তর – নতুন সামাজিক ইতিহাস
ইতিহাসের আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সামাজিক ইতিহাস। আগে সামাজিক ইতিহাস শুধু রাজা-মহারাজা, অভিজাতবর্গ ও উচ্চবর্গের আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানকালে এই আলোচনার যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে এবং সমাজের সাধারণ, নিম্নবর্গ ও প্রান্তিক মানুষের আলোচনাও এতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে সামাজিক ইতিহাস ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’-রূপে পরিচিত হয়েছে।
নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার দৃষ্টিভঙ্গি
গত শতাব্দীর ৬ ও ৭-এর দশকে নতুন সামাজিক ইতিহাসের আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। এই সময় থেকে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেসব মানুষের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়।
  1. নীচ থেকে ওপর দিকে দৃষ্টিপাত: নতুন সামাজিক ইতিহাসের আলোচনায় ওপর থেকে নীচের দিকে দেখার পরিবর্তে নীচে থেকে ওপরের দিকে দেখার চেষ্টা করা হয়। অর্থাৎ সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চবর্গের মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে সাধারণ ও নিম্নবর্গের মানুষের ভূমিকার ভিত্তিতে সমাজকে দেখার চেষ্টা করা হয়।
  2. বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য: নতুন সামাজিক ইতিহাসে মুষ্টিমেয় উচ্চবর্গকে নয়, বৃহত্তর সাধারণ, নিম্নবর্গের ও প্রান্তিক মানুষকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। সমাজ-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অবদান নতুন সামাজিক ইতিহাসে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।

উপসংহার: আধুনিক কালে নতুন সামাজিক ইতিহাসের ধারণা এক অভিনব ইতিহাসচর্চার জন্ম দিয়েছে। এর দ্বারা উপরতলার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বদলে বৃহত্তর ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের ভূমিকার ভিত্তিতে ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে, যা ইতিহাসচর্চার নতুন উৎসমুখ খুলে দিয়েছে।

3. ‘‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’-এ কাদের আলোচনা প্রাধান্য পায় ? আধুনিককালে কারা নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন?
উত্তর – নতুন সামাজিক ইতিহাসে প্রাধান্য
বিংশ শতকের নতুন সামাজিক ইতিহাসে সমাজের নিম্নবর্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আলোচনা প্রাধান্য পায়।
নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা
বিগত শতকে ১৯৬০-৭০-এর দশকে নতুন সামাজিক ইতিহাসের আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। এই সময় থেকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নতুন সামাজিক ইতিহাসকে জনপ্রিয় করে তোলেন। যেমন—
  1. অ্যানাল গোষ্ঠীর ভূমিকা: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর ‘অ্যানাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে পত্রিকার
    প্রকাশ করেন। ফ্রান্সের এই অ্যানাল পত্রিকাগোষ্ঠী নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই গোষ্ঠীর ফার্নান্দ ব্রদেল, লাদুরি প্রমুখ সাধারণ মানুষের পরিসংখ্যান, পরিবার, মনস্তত্ত্ব, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রভৃতি ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন।
  2. মার্কিন ঐতিহাসিকদের ভূমিকা: ইউজিন জেনোভিস, হারবার্ট গুটম্যান প্রমুখ মার্কিন ঐতিহাসিক সমাজের সাধারণ শ্রমিকদের জীবনযাত্রা, ক্রীতদাসপ্রথা, দাস সমাজ প্রভৃতি নিয়ে ইতিহাসচর্চা করেছেন। ‘পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট’ পত্রিকায়ও এই ধারার ইতিহাসচর্চার নানা প্রমাণ পাওয়া যায়।
  3. ভারতের ঐতিহাসিকদের ভূমিকা: ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ১৯৮০-র দশক থেকে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা (সাবলটার্ন স্টাডিজ) ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ ঐতিহাসিক জাতিধর্মনির্বিশেষে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের ইতিহাসচর্চা করে নিম্নবর্গের ইতিহাসকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

উপসংহার: নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় ইতিহাসের বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। মার্ক ব্লখ, লুসিয়েন ফেবর প্রমুখ এই কাজে যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা আজকের দিনে আরও যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

4. নতুন সামাজিক ইতিহাসের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর –
ভূমিকা: মোটামুটিভাবে বিংশ শতাব্দীর ৬-৭-এর দশকে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটে। এর কিছুকালের মধ্যেই এই ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন—
  1. আলোচনার ব্যাপকতা : নতুন সামাজিক ইতিহাসে আলোচনার পরিধি যথেষ্ট ব্যাপক এবং বহুমুখী। পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস, খেলাধুলা, শিল্পচর্চা, পরিবেশ, জাতীয়তাবাদ, নারীবাদ-সহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ই এই ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত।
  2. সমাজের সর্বস্তরের আলোচনা : নতুন, সামাজিক ইতিহাস শুধু রাজা-মহারাজা বা অভিজাতবর্গের আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়। এই চর্চার সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্ত্যজদের জীবনযাত্রার আলোচনাও সমানভাবে গুরুত্ব পায়।
  3. আলোচনায় নিম্নবর্গীয়দের প্রাধান্য : গত শতাব্দীর ৯-এর দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার সাবলটার্ন বা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে এই ইতিহাসচর্চা এগিয়ে চলেছে।
  4. আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা : নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় বৃহত্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাসের বাইরেও স্থানীয় ও আঞ্চলিক ইতিহাসকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  5. উপাদানের নতুনত্ব : নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ঐতিহাসিক উপাদানের নতুনত্ব। এই চর্চায় শুধু সরকারি ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নথিপত্রই শুধু নয়, বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাগজপত্রও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্ব পায়।

উপসংহার: বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্থে যে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সূচনা হয় তা ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করে। এর ফলে ইতিহাসচর্চার নতুন নতুন উৎসমুখ খুলে যায়, যা প্রকৃত ইতিহাসচর্চাকে সার্থক করে তোলে।

5. স্থানীয় ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – স্থানীয় ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: জাতি, দেশ বা মহাদেশের অতীত ঘটনাবলির আলোচনা ও বিশ্লেষণ বিগত শতকেও ইতিহাসচর্চার প্রচলিত ও স্বীকৃত প্রথা ছিল। দেশ বা জাতির অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থানীয় অঞ্চলের ইতিহাসচর্চা তখন বিশেষ গুরুত্ব পেত না।
  1. স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্ব: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন স্থান, অঞ্চল বা সম্প্রদায়ের ইতিহাস একত্রিত হয়ে কোনো দেশের জাতীয় ইতিহাস গড়ে ওঠে। তাই বিংশ শতকে স্থানীয় ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
  2. স্থানীয় ইতিহাসের বিষয়: বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা হয়ে থাকে। স্থানীয় অঞ্চলের আর্থসামাজিক বিবর্তন, শিল্প-স্থাপত্য, লোকসংস্কৃতি, স্থানীয় শাসকের ইতিবৃত্ত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থানীয় ইতিহাসের আলোচনায় উঠে আসে।
  3. যাচাইকরণ: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে অন্যতম হল মৌখিক উপাদান। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌখিক উপাদানে বহু কল্পনা ও অতিকথার প্রবেশ ঘটে। তাই যথেষ্ট সাবধানতার সঙ্গে মৌখিক উপাদানগুলি যাচাই করে তারপর সেগুলি ইতিহাসের তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা দরকার।
  4. জেলাস্তরের ইতিহাসচর্চা: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার একটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল জেলাস্তরের ইতিহাসচর্চা। বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গবেষক এই বিষয়ে চর্চা করছেন। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম কালীকমল সার্বভৌম রচিত ‘সে ইতিহাস বগুড়ার বৃত্তান্ত’, কুমুদনাথ মল্লিক রচিত ‘নদীয়া কাহিনি’, নিখিলনাথ রায় রচিত ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি’, সতীশচন্দ্র মিত্র রচিত ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’, এ কে এম গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ রচিত ‘নোয়াখালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য’, কালীনাথ চৌধুরী রচিত ‘রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’, শ্রীকেদারনাথ মজুমদার রচিত ‘ময়মনসিংহের ইতিহাস ও ময়মনসিংহের বিবরণ’ প্রভৃতি।
  5. ক্ষুদ্র অঞ্চলের ইতিহাসচর্চা: জেলাস্তর থেকে ক্ষুদ্রস্তর নিয়েও আজকাল ইতিহাসচর্চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এরূপ ইতিহাসচর্চার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হল ড. রতনলাল চক্রবর্তী রচিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রন্থিত ইতিহাস’, ড. খগেন্দ্রনাথ বসু রচিত ‘দৌলতপুরের বিবরণ’, বিপুলরঞ্জন সরকার রচিত ‘চাকদহ রামলাল একাডেমি: পট ও পটভূমিকা’ প্রভৃতি।

উপসংহারঃ বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে কোনো দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। তাই স্থানীয় ইতিহাসচর্চা ছাড়া জাতীয় ইতিহাসের চর্চা করা খুবই কঠিন।

6 .*সাম্প্রতিককালে খেলাধুলা ও খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে?
উত্তর – সাম্প্রতিককালে খেলাধুলা ও খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: খেলাধুলার ইতিহাস খুবই প্রাচীন। মানুষের জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রোমান কবি জুভেনাল বলেছেন, “মানুষ দুটো জিনিসের জন্য আকুল হতে পারে –রুটি ও খেলাধুলা।”
  1. খেলাধুলার জনপ্রিয়তা : বিগত শতক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলাধুলা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক হবসবম উল্লেখ করেছেন যে, বিংশ শতকে ইউরোপীয় জীবনধারার অন্যতম প্রধান সামাজিক অভ্যাস হল খেলাধুলা।
  2. খেলাধুলার গুরুত্ব : কোনো সমাজের খেলাধুলা সেই সমাজের স্বরূপ প্রকাশ করে থাকে। কোনো সমাজের মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ সেই সমাজের নারী স্বাধীনতার প্রমাণ দেয়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের হারিয়ে বাংলার মোহনবাগান দল আই এফ এ শিল্ড জিতে যে আনন্দে মেতে ওঠে, তা ছিল প্রকৃতপক্ষে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের বাংলা ভাগের জবাব।
  3. জাতীয় আবেগের প্রকাশ: খেলাধুলা বর্তমানে জাতীয় আবেগে পরিণত হয়েছে। খেলাধুলা জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সমাজবিবর্তন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রভৃতিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে চলেছে।
  4. পাশ্চাত্যে খেলার ইতিহাসের চর্চা : সাম্প্রতিককালে পাশ্চাত্যে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে। জে এ ম্যাসান, রিচার্ড হোল্ড প্রমুখ গবেষক এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠেছে ‘ব্রিটিশ সোসাইটি অব স্পোর্টস হিস্ট্রি’।
  5. ভারতে খেলার ইতিহাসচর্চা : সাম্প্রতিককালে বাংলা তথা ভারতে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় যাঁরা বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বোরিয়া মজুমদার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপক সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য প্রমুখ।

উপসংহার: খেলাধুলা শারীরিক সক্ষমতা প্রদান করার পাশাপাশি বিনোদনেরও একটি বড়ো উৎস। তাই বর্তমান মানুষের কাছে খেলাধুলার গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি খেলাধুলার ইতিহাসচর্চার প্রসার ঘটেছে।

7. *খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিককালের খ্যাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ধারাবাহিক বিবর্তন ও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এই বিবর্তন ও পরিবর্তনে কোনো বিশেষ সভ্যতা বা সংস্কৃতির বিশেষ প্রভাব থাকে।
  1. সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা: কোনো মানবসমাজ ও সভ্যতার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সেই সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের পরিচায়ক। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন থেকে সেই সমাজ সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
  2. প্রাচীন বাংলার দৃষ্টান্ত: প্রাচীনকালে বিভিন্ন সময়ে বাংলায় আমিষ আহার বিশেষ জনপ্রিয় হলেও পালযুগে বৌদ্ধধর্ম এবং সেনযুগে ব্রাক্ষ্মণ্যধর্মের প্রভাবে বাংলায় ভাত ও নিরামিষ খাবারের প্রচলন বাড়ে। খাদ্যাভ্যাসের এই পরিবর্তন থেকে সেযুগে ধর্মীয় প্রাধান্যের আভাস পাওয়া যায়।
  3. সুলতানি আমলে বাংলার দৃষ্টান্ত: সুলতানি আমলে বাংলায় ইসলামি সংস্কৃতির প্রসার এখানকার খাদ্যাভাসে প্রভাব ফেলে। অধ্যাপক শরিফউদ্দিন আহমেদ দেখিয়েছেন যে, একসময় ঢাকা প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের রাজধানী হলে এখানকার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। তখন থেকে ঢাকার রন্ধনপ্রণালীতে পারসিক খাদ্যরীতির প্রবেশ ঘটে এবং ‘ঢাকাই খাবার’-এর উদ্ভব হয়।
  4. ঔপনিবেশিক আমল: ঔপনিবেশিক শাসনও এদেশের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ প্রভাব ফেলে। পোর্তুগিজদের প্রভাবে হুগলি জেলায় মিষ্টি তৈরিতে ছানার ব্যবহার শুরু হয়। এভাবে খাদ্যাভ্যাস কোনো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনকেও প্রভাবিত করে।
  5. উল্লেখযোগ্য গবেষকগণ : সম্প্রতি খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষকরা হলেন ড. কে টি আচয়, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথন রাইট, রিয়াই টান্নাহিল, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমুখ।

উপসংহার: খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে মানুষের সংস্কৃতি, রুচি, এমনকি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিচয় মেলে। তাই সাম্প্রতিককালে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার প্রসারের মধ্য দিয়ে মানবসংস্কৃতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়গুলি জানা সম্ভব হচ্ছে।

8. *সাম্প্রতিককালের পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – সাম্প্রতিককালের পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবহার প্রতিটি সভ্য মানবসমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি জাতির পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে সেই জাতির ইতিহাসের নানা দিক জানা যায় ৷
  1. পোশাক-পরিচ্ছদের বিবর্তন: সুপ্রাচীনকাল থেকে মানবজাতির পোশাক-পরিচ্ছদের ধারাবাহিক পরিবর্তন ও বিবর্তন লক্ষ করা যায়।
  2. পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা: বর্তমানে পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন গবেষক চর্চা করে ইতিহাসের নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছেন।
  3. চর্চার সূচনা: বিংশ শতকের সূচনালগ্নে বিভিন্ন পণ্ডিত পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা শুরু করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই ইতিহাসচর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটে।
  4. ইউরোপে চর্চা: সাম্প্রতিককালে ইউরোপে বিভিন্ন গবেষক পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক চর্চা করেছেন। এসব গবেষণা কাজের মধ্যে কার্ল কোহলার, জে ফর্বস ওয়াটসন, ও মাইকেল ডেভিস-এর অবদান উল্লেখযোগ্য।
  5. ভারতে চর্চা: সাম্প্রতিককালে ভারতেও পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস নিয়ে চর্চা চলছে। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ত্রৈলোক্যনাথ বসুর ‘তাঁত ও রঙ’, মলয় রায়ের বাঙালির বেশবাস : বিবর্তনের রূপরেখা’, নিরুপমা পুণ্ডির ‘ফ্যাশন টেকনোলজি : টুডে অ্যান্ড টুমরো’ প্রভৃতি।

উপসংহার: বর্তমানে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মানবসংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতির মানসিকতা, নারীস্বাধীনতা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা সম্ভব হচ্ছে।

9. *সাম্প্রতিককালে শিল্পচর্চার কোন্ শাখাগুলি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে? শিল্পের ইতিহাসচর্চায় সংগীত কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
উত্তর – শিল্পচর্চার বিভিন্ন শাখা
কোনো মানবগোষ্ঠীর শিল্পচর্চার ইতিহাস থেকে তার সাংস্কৃতিক অগ্রগতির আভাস পাওয়া যায়। এই শিল্পচর্চার প্রধান ধারাগুলি হল সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র।
শিল্পের ইতিহাসচর্চায় সংগীত
মানব-ইতিহাসে শিল্পচর্চা সুপ্রাচীন। এই শিল্পচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল সংগীতের চর্চা। সাম্প্রতিককালে সংগীতের ইতিহাসচর্চা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
  1. উচ্চবর্গের সংগীতচর্চা: প্রাচীনকালে রাজদরবার বা মন্দিরে যে সংগীতের চর্চা হত তা মূলত সমাজের উচ্চবর্গের মানুষের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে এর বিশেষ সংযোগ ছিল না। ‘প্রাচীন সমাজে শ্রেণি বা বর্ণ বৈষম্যের বিষয়ে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায় সেই সমাজের সংগীতচর্চা থেকে।
  2. প্রভাব: কোনো জাতি বা সমাজের সংগীত অন্য কোনো জাতি বা সমাজের সংগীতের দ্বারা প্রভাবিত কি না বা কতটা প্রভাবিত, তা সংগীতের ইতিহাসচর্চা থেকে জানা সম্ভব। কোনো জাতি বা সমাজের সংস্কৃতি কতটা সমৃদ্ধ তার আভাস পাওয়া যায় অন্য জাতি বা সমাজের ওপর পূর্বোক্ত জাতির সংগীতের প্রভাব বিচার করে।
  3. বিবর্তন: ভারতীয় সমাজে একসময় ধর্মীয় সংগীতের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক বিবর্তনের ফলে বিংশ শতকে ভারতীয় সংগীতের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। বাংলা সংগীতের বিবর্তনের ধারায় বিংশ শতকে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, রজনীকান্তের গান প্রভৃতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
  4. বৈচিত্র্য: ধারাবাহিক বিবর্তন ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সংগীতের ভাণ্ডারে বিভিন্ন ধরনের সংগীত জায়গা করে নেয়। বর্তমানকালে যেমন ধর্মীয় সংগীতের পাশাপাশি পল্লিগীতি, লোকগীতি, বাউল গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের গান, ব্যান্ডের গান প্রভৃতির সমন্বয়ে বাংলা সংগীতের ভাণ্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
  5. গবেষকগণ : সাম্প্রতিককালে দেশবিদেশের বিভিন্ন গবেষক ও পণ্ডিত সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন। ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসচর্চায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন উমেশ জোশী, রাজ কুমার, করুণাময় গোস্বামী, সুধীর চক্রবর্তী, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী এবং জয়শ্রী ব্যানার্জী প্রমুখ।

উপসংহার: সংগীতের মধ্য দিয়ে মানুষের নানান উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই শিল্পচর্চার ইতিহাসে মানুষের রুচি, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রভাব জানার পাশাপাশি মানবসভ্যতার অগ্রগতি বোঝার ক্ষেত্রেও সংগীতের ইতিহাসচর্চা ক্রমশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

10. * সাম্প্রতিককালে দৃশ্যশিল্পের শাখা হিসেবে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – দৃশ্যশিল্পের শাখা হিসেবে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: মানবসমাজে শিল্পচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল নৃত্যকলা। সুপ্রাচীনকাল থেকে নৃত্যকলা বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হিসেবে চলে আসছে।
  1. ধর্মীয় ক্ষেত্রে নৃত্যকলা: প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নৃত্যকলার প্রচলন থাকলেও এই নৃত্যকলার সঙ্গে একমাত্র সমাজের উচ্চবর্গের যোগ ছিল, সাধারণ মানুষের কোনো যোগ ছিল না। বিভিন্ন মন্দিরে দেবদাসীদের নৃত্য ব্রাক্ষ্মণ ও উচ্চবর্গীয় মানুষের উপভোগের বিষয় ছিল। প্রচার করা হত, এই রীতি ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপেরই অঙ্গ। নৃত্যকলা থেকে সে যুগের সামাজিক বৈষম্যের পরিচয়ও পাওয়া যায়।
  2. বিবর্তন: যুগে যুগে নৃত্যকলার বিবর্তন ঘটেছে। প্রাচীনকালের ধর্মীয় বন্ধন থেকে নৃত্যকলা মুক্তিলাভ করে পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পদ হয়ে উঠেছে। উচ্চবর্গের নৃত্যের পাশাপাশি আদিবাসী-সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের নৃত্যও সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
  3. বৈচিত্র্য: আধুনিককালে প্রতিটি সমাজের নৃত্যকলাতেই নানা বৈচিত্র্য এসেছে। কত্থক, ভরতনাট্যম, ছৌ, কুচিপুরী, কথাকলি, গৌড়ীয় নৃত্য প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের নৃত্যের সমন্বয়ে ভারতের নৃত্যকলার ভাণ্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর, রুক্মিনী দেবী, মল্লিকা সারাভাই, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, অনিতা রত্নম-সহ বিভিন্ন নৃত্যশিল্পী এই বৈচিত্র্য বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন।
  4. গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ : বিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল সম্পাদিত ‘ড্যান্স হিস্ট্রি : অ্যান ইনট্রোডাকশন’, ওয়াং কেফেনের ‘দ্য হিস্ট্রি অব চাইনিজ ড্যান্স’, রাগিনী দেবীর ‘ড্যান্স ডায়ালেক্ট অব ইন্ডিয়া’, আকৃতি সিনহার ‘লেট’স নো ড্যান্সেস অব ইন্ডিয়া’, শোভনা গুপ্তার ‘ড্যান্স অব ইন্ডিয়া’, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের নৃত্যকলা’ প্রভৃতি।

উপসংহার: মানব-ইতিহাসে সংস্কৃতির বিবর্তন ও বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার কাজে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা আজ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর দ্বারা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি জানা সম্ভব হচ্ছে।

11. সাম্প্রতিককালে দৃশ্যশিল্পের ইতিহাসে নাটকের ইতিহাসচর্চা কীভাবে কীরূপ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
উত্তর – 
ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সভ্যতায় নাট্যশিল্প অর্থাৎ নাটকের প্রচলন ছিল। সুপ্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় প্রচলিত বিখ্যাত নাটকগুলি আজও বিভিন্ন দেশে মঞ্চস্থ হলে তা দর্শকদের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।
  1. ইউরোপে নাট্যচর্চা: প্রাচীনকালে ইউরোপে নাট্যচর্চার প্রচলন থাকলেও ইউরোপে আধুনিক নাট্যচর্চা শুরু হয় ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে এবং বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে। ইউরোপে শেকসপিয়ার, ক্রিস্টোফার মার্লো, বেন জনসন, জন গলসোর্দি, জর্জ বার্নার্ড শ প্রমুখের লেখা বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হলে সেগুলি প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
  2. বাংলায় নাট্যচর্চা: অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে ভারতে বিশেষ করে বাংলায় আধুনিক নাট্যচর্চার প্রসার ঘটে। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে বাংলা নাট্যচর্চার সূচনা হয় এবং ঊনবিংশ শতকে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শিশির ভাদুড়ী, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত প্রমুখ বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রাখেন।
  3. মানুষের প্রতিচ্ছবি: বিভিন্ন দেশ বা সমাজে প্রচলিত নাটকগুলিতে সেখানকার সমকালীন ঘটনাবলি, শোষণ, অত্যাচার, বৈষম্য, সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি কাহিনি উঠে আসে। ফলে নাটক সেই সমাজের যথাযথ প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে। আবার অনেক সময়ই নাটক লোকশিক্ষা ও জনমত গঠনে সহায়ক হয়ে ওঠে।
  4. গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ : সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন গবেষক যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নাটকের ইতিহাসচর্চা করছেন। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়ের ‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’, আশুতোষ ভট্টাচার্যের ‘বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস’, সেলিম আল দীনের লেখা ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’, সাইমন জাকারিয়ার লেখা ‘বাংলাদেশের লোকনাটক: বিষয় ও আঙ্গিক-বৈচিত্র্য’, বালদুন ধিংরার ‘ন্যাশনাল থিয়েটার ফর ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

উপসংহার: সাম্প্রতিককালে নাটকের ইতিহাসচর্চা নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলি তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে।

12. সাম্প্রতিককালে শিল্পের ইতিহাসচর্চার চলচ্চিত্র কীরূপ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
উত্তর – শিল্পের ইতিহাসচর্চায় চলচ্চিত্র
ভূমিকা: আধুনিক যুগে সিনেমা বা চলচ্চিত্রকে অনেকেই বিনোদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলে মনে করে থাকেন। অগাস্ট লুমিয়ের ও লুই লুমিয়ের নামে দুই ভাই ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে (২৮ ডিসেম্বর) প্যারিসে প্রথম বায়োস্কোপের সফল বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করেন।
  1. চলচ্চিত্র নির্মাণের কেন্দ্র: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে আমেরিকার হলিউড এবং ভারতের বোম্বাই, চলচ্চিত্র নির্মাণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। দাদাসাহেব ফালকের পরিচালনায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নির্বাক ছবি ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ মুক্তি পায়। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে কলকাতা (টালিগঞ্জ)।
  2. কাহিনির বৈচিত্র্য: চলচ্চিত্রের কাহিনির বিষয়বস্তু বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ঐতিহাসিক ঘটনা, সমকালীন সমাজের ঘটনাবলি ও পরিস্থিতি, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ঔপনিবেশিক শাসন, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ফলে চলচ্চিত্র থেকে সমকালীন সমাজের ঐতিহাসিক তথ্য জানা যায়। উদাহরণ হিসেবে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণরেখা’ প্রভৃতি সিনেমার কথা বলা যায়। যেগুলিতে দেশভাগের বলি হয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জীবন-যন্ত্রণা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
  3. ইউরোপের চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা: চলচ্চিত্রের দীর্ঘ যাত্রাপথের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে আজকাল যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি গ্রন্থ হল পাম কুক-এর ‘দি সিনেমা বুক’, ফ্রান্সেসকো ক্যাসেটি-র ‘থিওরিস অব সিনেমা’, জিওফ্রে নাওয়েল স্মিথ-এর ‘দ্য অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ওয়ার্ল্ড সিনেমা’ প্রভৃতি।
  4. বাংলায় চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা: চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চায় বাংলাও পিছিয়ে নেই। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা গ্রন্থ হল— ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’, সত্যজিৎ রায়ের ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’, তপন সিংহের ‘চলচ্চিত্র আজীবন’, অপূর্ব কুমার কুন্ডুর ‘ইউরোপের চলচ্চিত্র’, ‘ভিনদেশী চলচ্চিত্র’, নির্মাল্য আচার্যর ‘শতবর্ষে চলচ্চিত্র’, জাকির হোসেন রাজুর ‘চলচ্চিত্রের চালচিত্র’, ফারহানা মিলির ‘সিনেমা এলো কেমন করে’, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ‘দেখার রকমফের : ঋত্বিক ও সত্যজিৎ’ প্রভৃতি।

উপসংহার: চলচ্চিত্র সবযুগেই সমাজের আয়না হিসেবে কাজ করে চলেছেন। সাম্প্রতিককালে চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা সামাজিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

13. *আধুনিককালে স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চার পরিচয় দাও।
উত্তর – স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: প্রাচীন গুহামানব যেদিন ঘরবাড়ি তৈরি করতে শিখেছে, সেদিন থেকেই স্থাপত্যশিল্পের সূত্রপাত ঘটেছে। স্থাপত্যশিল্প ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।
  1. স্থাপত্য নির্মাণ : অতীতে একসময় মূলত রাজা-মহারাজা ও ধনী ব্যক্তিরাই স্থাপত্য নির্মাণে আগ্রহ দেখাতেন। বর্তমান যুগে শাসকগোষ্ঠী ছাড়া অন্যান্য মানুষজনও স্থাপত্য নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত।
  2. স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা: স্থাপত্য নির্মাণের প্রেক্ষাপট, শিল্পরীতি, পৃষ্ঠপোষকতা প্রভৃতি বিষয়গুলি আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইউরোপ, ভারত তথা বাংলার বিভিন্ন যুগের স্থাপত্যগুলি সাম্প্রতিককালে ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে।
  3. ভারতে চর্চার সূচনা: ভারতে ঊনবিংশ-বিংশ শতকে স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটে। এক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন আলেকজান্ডার কানিংহাম, পার্সি ব্রাউন, জে ফার্গুসন, ক্যাথরিন অ্যাশার প্রমুখ।
  4. বাংলার স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চা: বাংলার বিভিন্ন যুগের স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন গবেষক চর্চা করেছেন এবং করে চলেছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জর্জ মিশেল, বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শামসুন্নাহার লাভলী, ড. নাজিমুদ্দিন আহমেদ, রবিউল হুসাইন প্রমুখ।

উপসংহার: সামগ্রিক ইতিহাসের অংশরূপে স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চা আজ শুধু সংস্কৃতির ইতিহাসকেই তুলে ধরে না, অর্থনৈতিক ইতিহাসের নানা দিকও উদ্ঘাটিত করে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিকল্পনারও আভাস মেলে স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চায়।

14. * আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফির গুরুত্ব কী?
উত্তর – আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির ব্যবহার
ভূমিকা: ক্যামেরার সাহায্যে কোনো ঘটনা বা বিষয়ের ছবি তোলার প্রক্রিয়া সাধারণভাবে ফোটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র নামে পরিচিত। আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় বা ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। যেমন—
  1. তথ্য প্রদান: ক্যামেরায় তোলা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ছবি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। যেমন—জন মুরে, ফেলিক্স বিয়াতো, লাল দীনদয়াল প্রমুখ ফোটোগ্রাফারের তোলা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের বিভিন্ন ছবিগুলি মহাবিদ্রোহের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতীয় কংগ্রেসের নানা অধিবেশনের ছবিগুলি সেকালের রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিলরূপে বিবেচিত হয়।
  2. তথ্যকে সমর্থন: ফোটোগ্রাফ বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যকে আরও জোরালো করে তোলে। যেমন—১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় যে ভয়াবহ দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া যায় তাকে আরও জোরালো করে তোলে সেই দাঙ্গার বিভিন্ন ছবিগুলি।
  3. তথ্যের যথার্থতা নির্ণয়: কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে বহু গুজব বা ভ্রান্ত তথ্য ঘুরে বেড়ালেও সেই ঘটনার বিষয়ে ক্যামেরায় তোলা ছবি থেকে সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। যেমন—দেশভাগ (১৯৪৭ খ্রি.) এবং তারপরে উদ্বাস্তুদের জীবন-যন্ত্রণার ভয়াবহতা কোনো কোনো রাজনীতিক খাটো করে দেখাতে চাইলেও সমকালীন ফোটোগ্রাফগুলি সেই ভয়াবহতার প্রমাণ দেয়।
  4. সাবধানতা অবলম্বন : ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফ ব্যবহারের সময় যথেষ্ট সচেতন থাকা উচিত। কেননা, ফোটোগ্রাফার অনেকসময় নিজের দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ রাখার উদ্দেশ্যে বা প্রকৃত ঘটনা থেকে পৃথক ছবি তুলে নতুন কিছু দেখানোর উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ কিছু ছবি তুলতে পারেন। সেই ছবিতে ইতিহাসের প্রকৃত তথ্য না-ও দিতে পারে। যেমন—১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগ পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ে তোলা ছবিতে জিন্না ও গান্ধিজির আন্তরিক সুসম্পর্ক ধরা পড়ে। কিন্তু এই ‘সুসম্পর্ক’ কতটা বাস্তব ছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

উপসংহার: আধুনিক কালের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ফোটোগ্রাফি। . ফোটোগ্রাফির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। তবে সাবধানে ফোটোগ্রাফিকে ইতিহাস রচনার কাজে ব্যবহার করলে তা ইতিহাসের যথার্থ উপাদান হয়ে উঠতে পারে।

15. *দৃশ্যশিল্পের ক্ষেত্রে চিত্রকলা ও ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – দৃশ্যশিল্পের ক্ষেত্রে চিত্রকলা ও ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: দৃশ্যশিল্পের অন্তর্গত চিত্রশিল্পের দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল চিত্রকলা বা ছবি আঁকা এবং ফোটোগ্রাফি। শিল্পীরা রং-তুলির সহায়তায় কোনো দৃশ্য বা বিষয়ের ছবি আঁকেন, আর ফোটোগ্রাফার তাঁর ক্যামেরার সাহায্যে কোনো দৃশ্যের ছবি তোলেন।
  1. ছবি আঁকা: মানবসমাজে প্রাগৈতিহাসিক যুগেই ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে। চিত্রকররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমকালীন কোনো বিষয়ের ছবি এঁকে থাকেন। তবে সেই ছবিতে শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়লেও ছবির বিষয়বস্তু যে তথ্যনিষ্ঠ হয়ে থাকে, তা পণ্ডিতরা স্বীকার করেন। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত এরূপ অসংখ্য ছবি সমকালীন ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
  2. চিত্রকলার ইতিহাসচর্চা: বর্তমানে বিভিন্ন পণ্ডিত চিত্রকলার ইতিহাসচর্চা করে চলেছেন। এই চর্চার ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকার্য হল অশোক মিত্র রচিত ‘ভারতের চিত্রকলা’, ড. নীলিমা আফরিন রচিত ‘বাংলাদেশের শিল্পকলার উৎস সন্ধান’, সৈয়দ লুৎফল হক রচিত ‘চিত্রকলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ প্রভৃতি।
  3. গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হিসেবে ফোটোগ্রাফি: ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ওয়ালকট ক্যামেরা আবিষ্কারের পর থেকে ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তোলা অর্থাৎ ফোটোগ্রাফি চর্চার বিষয়টি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। সাধারণ ক্যামেরায় সাদা-কালো ও রঙিন ছবির যুগ পেরিয়ে বর্তমানে ডিজিট্যাল ক্যামেরায় উন্নতমানের ছবি তোলা সম্ভব হচ্ছে। ফোটোগ্রাফাররা ক্যামেরার সাহায্যে কোনো ঘটনা বা বিষয়ের যথার্থ ছবি তোলেন, যা পরবর্তীকালে ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজে লাগে।
  4. গবেষণ: বর্তমানকালে বিভিন্ন গবেষক ফোটোগ্রাফি নিয়ে ইতিহাসচর্চা করছেন। এই বিষয়ে এ কে এম মহসীন, মহম্মদ হুমায়ূন কবীর, জন ওয়েড, আর ডগলাস নিকেল প্রমুখ গবেষণা করেছেন।

উপসংহার: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আঁকা ছবি ও ফোটোগ্রাফ—দুটিই ইতিহাসচর্চার কাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফ অনেকটাই জীবন্ত, এবং আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এর প্রাসঙ্গিকতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

16. *যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রাচীনকাল থেকেই সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আসছে। প্রাচীনকালে ঢাকার আবিষ্কার থেকে শুরু করে হাল আমলের ইনটারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এক নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এই ব্যবস্থা বিভিন্ন দেশের ইতিহাসকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।
  1. ইউরোপে প্রভাব: আধুনিক যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইউরোপের ইতিহাসকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। জাতীয় ঐক্য বৃদ্ধি, শিল্পবিপ্লব প্রভৃতি ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
  2. ভারতে প্রভাব : আধুনিক যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে ভারতের রেল, সড়ক, ডাক প্রভৃতি ব্যবস্থা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও ঐক্য বৃদ্ধি করে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছে। এর দ্বারাই ব্রিটিশ শক্তি নির্বিচারে ভারতীয় অর্থসম্পদ লুণ্ঠন করেছে। আবার রেলপথ ব্যবহার করে ভারতে বিপ্লবী কার্যকলাপ, বিপ্লবীদের পলায়ন ইত্যাদিও সম্ভব হয়েছে।
  3. অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা: সাম্প্রতিককালে ইনটারনেট ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বে নিমেষে যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে আজ সমগ্র বিশ্ব যেন ঘরের দোরগোড়ায় চলে এসেছে। এখন যে কোনো তথ্য বা খবর নিমেষে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় এর দ্বারা বিশ্ব ইতিহাস যথেষ্ট প্রভাবিত হচ্ছে।
  4. যানবাহন যোগাযোগ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক গবেষণা: বিংশ শতকে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ে জন আর্মস্ট্রং, ইয়ান কের, সুনীল কুমার মুন্সি, গৌতম চট্টোপাধ্যায়, আর আর ভাণ্ডারী প্রমুখ গবেষণা করেছেন।
  5. ইনটারনেট সংক্রান্ত ঐতিহাসিক গবেষণা : সম্প্রতি ইনটারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে নানা গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন প্রকাশ চক্রবর্তী, ফ্রেডরিখ কিটলার, নারায়ণ চন্দ্র বসাক, প্রশান্ত রায় প্রমুখ।

উপসংহার: সামগ্রিক বিচারে দেখা যায়, যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিহাসের গতিকে প্রভাবিত করেছে। যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইতিহাসের অনেক দিককে তুলে ধরেছে।

17. *শহরের ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – শহরের ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: কোনো ক্ষুদ্র ও জনবিরল গ্রাম সময়ের ধারা বেয়ে কোনো একসময়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়ে ওঠে। তাই গ্রাম থেকে শহরের উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তনের একটি ইতিহাস থাকে।
  1. শহরের ইতিহাসের গুরুত্ব: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার মতো শহরের ইতিহাসচর্চাও অনেকটাই ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু শহরগুলি কোনো বৃহৎ ভূখণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয় ওঠায় দেশ বা জাতির ইতিহাসে শহরের ইতিহাসচর্চার বিশেষ গুরুত্ব থাকে। যেমন বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসচর্চায় কলকাতা শহরের উদ্ভব ও বিকাশের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
  2. শহরের ইতিহাসের বিষয়: শহরের ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল শহরের আর্থসামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক চর্চা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্থাপত্য-ভাস্কর্যের উন্নতি, শিল্প-সংস্কৃতির ধারা, ধর্মের প্রভাব, নগরায়ণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি।
  3. ইউরোপে শহরের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে শহরের ইতিহাসচর্চার প্রচলন থাকলেও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চায় গতি আসে ১৯৭০-এর দশকে। এই সময়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন থার্নস্টর্মের নেতৃত্বে শহরের ইতিহাসচর্চার ধারাটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে এডুইন বরোজ, মাইক ওয়ালেস, এস জি বেকল্যান্ড, রোনাল্ড টেলর প্রমুখ এই ধারাকে সমৃদ্ধ করেন।
  4. ভারতে শহরের ইতিহাসচর্চা : ভারতীয় গবেষকদের মধ্যে নারায়ণী গুপ্তা দিল্লি নিয়ে, রীনা ওল্ডেনবার্গ লখনউ দিয়ে, ক্রিস্টিন ডবিন মুম্বই নিয়ে, যতীন্দ্রমোহন রায় ঢাকা নিয়ে, রাধারমণ মিত্র কলকাতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন। শহরের ইতিহাসচর্চা নিয়ে বাংলায় যাঁরা গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে রাধারমণ মিত্র, ড. সৌমিত্র শ্রীমানী, বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনতাসীর মামুন, যতীন্দ্রমোহন রায় ও শামসুদ্দোহা চৌধুরী উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার: শহরের ইতিহাসচর্চা আজ সামগ্রিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূলত শহরের প্রকৃতি আলোচনাই এই ইতিহাসচর্চার মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

18. *সামরিক ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – সামরিক ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চ
ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সভ্যতা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক উপাদান ছিল সামরিক শক্তি। যুদ্ধের জন্য সামরিক শক্তি অপরিহার্য ছিল |
  1. ধারাবাহিক পরিবর্তন প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সভ্যতায় সামরিক কাঠামো, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতির ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটেছে। সামরিকবাহিনীতে পদাতিক, রথ বা হস্তিবাহিনীর পরিবর্তে বর্তমানে ট্যাংক বা সাঁজোয়াবাহিনী, বিমানবাহিনী প্রভৃতি এবং তিরধনুক, তরবারি প্রভৃতির পরিবর্তে কামান, বন্দুক, বোমা, বিষাক্ত গ্যাস প্রভৃতির প্রচলন ঘটেছে।
  2. সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার: ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত যুদ্ধ-সংক্রান্ত আলোচনা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানকালে এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সজ্জা, রণকৌশল, সামরিক পোশাক প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ও ইতিহাসচর্চার মধ্যে প্রবেশ করেছে।
  3. ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চা: বিংশ শতকে ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার ঘটে। বার্নেট, কোরেলি, শেলফোর্ড বিডওয়েল, জন টেরাইন প্রমুখ প্রাচীন ও আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার তুলনামূলক গবেষণা করেছেন। রজার স্পিলার, জন হোয়াইট ক্লে প্রমুখ যুদ্ধ ও যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নানা কিংবদন্তিদের নিয়ে গবেষণা করেছেন।
  4. ভারতে সামরিক ইতিহাসচর্চা: ভারতে বিগত শতকে সামরিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন। এ ছাড়া রবার্ট আর্ম, সুবোধ ঘোষ, দীপ্তনীল রায়, নিখিলেশ ভট্টাচার্য প্রমুখ এবিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিককালের সামরিক ইতিহাসচর্চায় কৌশিক রায় একটি অগ্রগণ্য নাম।

উপসংহার: রাষ্ট্র তার সামরিক শক্তির দ্বারা যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্রাজ্যবিস্তার প্রভৃতির মাধ্যমে ইতিহাসের ঘটনাবলিকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাসচর্চা আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

19. *সাম্প্রতিককালে পরিবেশের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – পরিবেশের ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত পরিবেশ নিয়ে মানুষের ভাবনাচিন্তা ছিল যথেষ্ট কম। কিন্তু মানুষ যেভাবে পরিবেশের ধারাবাহিক ক্ষতি করে চলেছে তাতে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে পড়েছে।
  1. পরিবেশের ধ্বংসসাধন: আধুনিককালে যুদ্ধে বিভিন্ন ভয়ানক মারণাস্ত্রের ব্যবহার, কৃষি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার, গাছপালা কেটে আধুনিক নগর ও শিল্পসভ্যতার প্রসার প্রভৃতির ফলে আমাদের চারিদিকের পরিবেশ ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
  2. দূষণ: জল, বায়ু, খাদ্য, শব্দ প্রভৃতি দূষণ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, দূষণের মাত্রা এই রকম হারে বাড়তে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষ তথা জীবকূলের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ লুপ্ত হতে পারে।
  3. আন্দোলন: পরিবেশের ধ্বংসসাধন ও দূষণের সম্পর্কে মানুষ ক্রমাগত সচেতন হয়ে উঠেছে। শুরু হয়েছে পরিবেশবাদী নানা আন্দোলন। ভারতে চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, তেহরি-গাড়োয়াল আন্দোলন প্রভৃতি পরিবেশবাদী আন্দোলন যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
  4. ইউরোপে পরিবেশের ইতিহাসচর্চা: সাম্প্রতিককালে ইউরোপে পরিবেশের ইতিহাসচর্চার যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে। এই বিষয়ে ইউরোপের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম হল র‍্যাচেল কারসন রচিত ‘সাইলেন্ট স্প্রিং, আলফ্রেড ক্রসবি রচিত ইকোলজিক্যাল ইম্পিরিয়ালিজম’, রিচার্ড গ্রোভ রচিত “গ্রিন ইম্পিরিয়ালিজম প্রভৃতি।
  5. ভারতে ও বাংলায় পরিবেশের ইতিহাসচর্চা: পরিবেশের ইতিহাস নিয়ে সাম্প্রতিককালে ভারতে এবং বাংলায়ও যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। ইরফান হাবিব, ড. মণীষ প্রধান, সুধাংশু পাত্র, অশোক কুমার বসু, তরুণ সরকার, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শমিত কর, সাহিদা বেগ এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন।

উপসংহার: মানবসভ্যতার সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিবেশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই পরিবেশ ইতিহাসচর্চার বিকাশ ও অগ্রগতি বর্তমানে বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

20. *সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ও তার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: আদিম মানুষ যখন চাকার আবিষ্কার করেছে বা পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখেছে তখন থেকেই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পথচলা শুরু হয়েছে বলে ধরা যায়। সেই সময় থেকে বিবর্তনের পথ বেয়ে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গিয়েছে।
  1. প্রাচীন যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি : প্রাচীনকালে মিশর, ব্যাবিলন, গ্রিস, ভারত প্রভৃতি দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি খুব ধীরগতিতে হয়েছিল। তবে মধ্যযুগে এসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে কৃষি, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে।
  2. আধুনিক যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি: আধুনিককালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, কৃষি, শিল্প, যুদ্ধসহ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় চূড়ান্ত বিকাশ লক্ষ করা যায়।
  3. ভৌগোলিক আবিষ্কার ও শিল্পবিপ্লব: পঞ্চদশ শতকে স্পেন, পোর্তুগাল, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের জাহাজ নির্মাণশিল্পে অগ্রগতিও পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড-সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে সংঘটিত শিল্পবিপ্লব আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সারা বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে।
  4. গবেষণা গ্রন্থ : বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম হল জে ডি বার্নাল রচিত ইতিহাসে বিজ্ঞান’, টমাস কুহ রচিত ‘দ্য স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভোলিউশনস্’, ডেভিড আরনল্ড রচিত ‘সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রচিত ‘এ হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান ও সমাজ’ এবং ‘প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’, দীপক কুমার রচিত ‘সায়েন্স অ্যান্ড দ্য রাজ’, তপন চক্রবর্তী রচিত ‘শতবর্ষে বাঙালির বিজ্ঞানসাধনা’ প্রভৃতি।

উপসংহার: সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান মানুষের জীবনের নিত্যসঙ্গী। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির হাত ধরেই মানবসভ্যতা ক্রমশ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। তাই মানবসভ্যতার ইতিহাস রচনায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

21. *সাম্প্রতিককালে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার পরিচয় দাও।
উত্তর – সাম্প্রতিককালে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: প্রাচীনকালেই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পাশাপাশি চিকিৎসাবিদ্যার সূত্রপাত ঘটেছে। প্রাচীন ও মধ্য যুগ পেরিয়ে চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
  1. বিবর্তন : প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন যুগে চিকিৎসাবিদ্যার নানা পরিবর্তন, উন্নতি ও বিবর্তন ঘটেছে। ফলে আয়ুর্বেদিক, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি, আকুপাংচার প্রভৃতি চিকিৎসাবিদ্যার নানা শাখার উদ্ভব ঘটেছে।
  2. ভারতে অগ্রগতি: ভারতে প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল বলে জানা যায়। কুষাণ যুগ, গুপ্ত যুগ এবং তার পরবর্তীকালে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ভারতীয় চিকিৎসকদের নাম জানা যায়। তবে মধ্যযুগে এসে ভারতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি থমকে যায়।
  3. প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে চিকিৎসাবিদ্যা: আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতি প্রথম ইউরোপে শুরু হয়। ইউরোপের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তির মাধ্যমে তা প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে মধ্যযুগীয় পিছিয়ে-পড়া চিকিৎসাবিদ্যা ঔপনিবেশিক আমলে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার প্রচলন ঘটে।
  4. গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ : সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’, পার্থসারথি চক্রবর্তী রচিত ‘চিকিৎসা-বিজ্ঞানের আজব কথা’, তপন চক্রবর্তী রচিত ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস’ প্রভৃতি।

উপসংহার: প্রাচীনকাল থেকে ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চিকিৎসাবিদ্যা আজ বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। চিকিৎসাবিদ্যার এই বিবর্তনের কথা চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়েই জানা যায়।

22. নারী ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন ধারাগুলি আলোচনা করো।
অথবা, নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখো।
উত্তর – নারী ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন ধারা
ভূমিকা: ইতিহাসের বিষয়বস্তু সমগ্র মানবজাতি, যার অর্ধেক অংশ হল নারী। অথচ বিগত শতাব্দীতেও ইতিহাসচর্চায় নারীজাতিকে পুরুষের সমান গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হত না। ইতিহাসে নারী কী ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে বর্তমানকালে চর্চা শুরু হয়েছে। এই চর্চাই হল নারী ইতিহাস।
  1. ইতিহাসে নারীর ভূমিকা : যুগে যুগে ইতিহাসে নারীর আসামান্য অবদান রয়েছে। নেফারতিতি, ক্লিওপেট্রা, রাজিয়া, নূরজাহান, দুর্গাবতী প্রমুখ নারী নিজের যোগ্যতার দ্বারা প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজনৈতিক ক্ষমতার অসীম আধারে পরিণত হয়েছিলেন। বিংশ-একবিংশ শতকেও বিভিন্ন দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির ওপর বিশ্বের বিভিন্ন নারী প্রাধান্য বিস্তার করেছেন।
  2. ইতিহাসে নারীর বঞ্চনা: ইতিহাসের আলোচনায় পুরুষের আন্দোলন, যুদ্ধ, রাজনীতি, কূটনীতি প্রভৃতি গুরুত্ব পেলেও নারীদের নেতৃত্ব, অধিকার, দাবিদাওয়া, আন্দোলন, মর্যাদা, শিক্ষাসংস্কৃতি প্রভৃতির যথেষ্ট আলোচনা ইতিহাসে করা হত না।
  3. নারী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত: ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আধুনিককালে গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটছে এবং পুরুষের সঙ্গে নারী ইতিহাসের চর্চাও গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। ১৯৭০-এর দশক থেকে নারী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটেছে।
  4. পাশ্চাত্যে নারী ইতিহাসচর্চা : সম্প্রতি পাশ্চাত্যে নারীবাদী ইতিহাসচর্চাবিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলি লিখেছেন জোয়ান কেলি, গের্ডা লার্নার, বেটি ফ্রিডান, কেটলিন মোরান, জেসিকা ভ্যালেন্টি, জুডিথ বাটলার প্রমুখ গবেষক।
  5. ভারতে নারী ইতিহাসচর্চা: ভারতে নারী ইতিহাসচর্চা করেছেন নীরা দেশাই, জেরান্ডিন ফোর্বস, বি আর নন্দ, কমলা ভাসিন প্রমুখ ইতিহাসবিদ এবং বাংলায় দীনেশচন্দ্র সেন, রামেন্দ্র চৌধুরী, শ্রীমন্মথনাথ সরকার, রাজশ্রী বসু, চিত্রা দেব, মালেকা বেগম, মাহমুদ শামসুল হক প্রমুখ এই ব্যাপারে চর্চা করেছেন।

উপসংহার: নারীদের ভূমিকাকে বাদ দিয়ে ইতিহাসচর্চা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই বর্তমান যুগের ইতিহাসচর্চায় নারী ইতিহাসচর্চা অবশ্যই অপরিহার্য।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. *ইতিহাস কী?
উত্তর –  সাধারণভাবে ইতিহাস’ হল অতীতের কথা। মানব প্রজাতির আবির্ভাবের সময় থেকে শুরু করে বর্তমানে মানবসভ্যতার চরম উৎকর্ষ লাভের সময় পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনাবলি আলোচিত হয় যে শাস্ত্রে, তা-ই ইতিহাস। অন্যভাবে বলতে গেলে, ইতিহাস হল মানবসভ্যতার ধারাবাহিক বিবর্তনের কাহিনি।
2. বর্তমানকালে ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের কোন স্তরের মানুষ স্থান পায় ?
উত্তর – বর্তমানকালে ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত সমস্ত মানুষ অর্থাৎ রাজা, শাসক, অভিজাত, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক, নারী প্রমুখ সকলেই স্থান পায়।
3. *‘আধুনিক ইতিহাসচর্চার নানা বৈচিত্র্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বহু নতুন বিষয়ের আলোচনা যুক্ত হওয়ার ফলে তা যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিহাসের এসব নতুন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হল নতুন সমাজবিন্যাস, খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পচর্চা, পোশাক-পরিচ্ছদ, যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থা, দৃশ্যশিল্প, স্থাপত্য, স্থানীয় অঞ্চল, শহর, যুদ্ধবিগ্রহ, পরিবেশ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা, নারী প্রভৃতির ইতিহাসচর্চা।
4. *‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ কী? অথবা, সামাজিক ইতিহাস কী?
উত্তর –  রাজা-মহারাজা বা অভিজাত সমাজের মানুষের আলোচনা ছাড়াও বর্তমানকালে ইতিহাসে সমাজের নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ, যেমন—কৃষক, শ্রমিক, মজুর, নারী প্রমুখ সকলের আলোচনা করা হয়। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া এই ধরনের ইতিহাসচর্চা ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ নামে পরিচিত।
5. ‘অ্যানাল স্কুল’ কী?
উত্তর – ‘অ্যানাল স্কুল’ হল ফ্রান্সের একটি পত্রিকাগোষ্ঠী। মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর-এর উদ্যোগে ‘অ্যনাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চায় সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষ, পরিবার, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে।
6. *নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলি কী?
উত্তর – নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলি হল জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক ঘটনাবলির বিবরণের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের স্থানীয় পৌর ও সামাজিক জীবন, সংস্কৃতি, জনস্বাস্থ্য, জাতিগত পরিচয়, দারিদ্র্য, গণমাধ্যম প্রভৃতি।
7. *নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল-রণজিৎ গুহ-র ‘সিলেক্টেড সাবলটার্ন স্টাডিজ’, ‘এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্ট অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার : ১৯৮৬-১৯৯৫’, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ’, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডের ‘এ হিস্ট্রি অব প্রেজুডিস’, শাহিদ আমিন-এর ইভেন্ট, মেটাফোর, মেমোরি : চৌরিচৌরা ১৯২২-৯২’, গৌতম ভদ্র ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘নিম্নবর্গের ইতিহাস’, গৌতম ভদ্রর ‘ইমান ও নিশান’ প্রভৃতি।
৪. *নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ১৯৮০-র দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশের গবেষকের উদ্যোগে জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম প্রভৃতি নির্বিশেষে নিম্নবর্গের মানুষদের নিয়ে ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বা সাবলটার্ন স্টাডিজ নামে পরিচিত।
9. নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর – নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিক হলেন— রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ।
10. *রণজিৎ গুহ রচিত নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর –  রণজিৎ গুহ রচিত নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল— [1] সিলেক্টেড সাবলটার্ন স্টাডিজ, [2] এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্ট অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া, [3] সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার : ১৯৮৬- ১৯৯৫।
11. বর্তমানকালে কোনো দেশ বা জাতির জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব কী?
উত্তর –  বর্তমানকালে কোনো দেশ বা জাতির জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব হল— [1] কোনো দেশ বা জাতির জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িক অবস্থান, নানান সামাজিক দিক খেলাধুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। [2] বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খেলাধুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
12. *সাম্প্রতিককালে কারা খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন?
উত্তর – সাম্প্রতিককালে জে এ ম্যাসান, রিচার্ড হোল্ট, গৌতম ভট্টাচার্য, রূপক সাহা, বোরিয়া মজুমদার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।
13. *খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর –  খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল বোরিয়া মজুমদারের ‘ক্রিকেট ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, বোরিয়া মজুমদার ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ফুটবল : স্ট্রাইভিং টু স্কোর, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘খেলা’ যখন ইতিহাস’, গৌতম ভট্টাচার্যর ‘কাপমহলা’, রূপক সাহার ‘বিদ্রোহী মারাদোনা’, উৎপল শুভ্র-র ‘বিশ্ব যখন ফুটবলময়’ প্রভৃতি।
14. মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে?
উত্তর – মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার যে ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে সেগুলি হল – [1] কোনো সমাজের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা, [2] সেই সমাজের খাদ্যাভ্যাস কতখানি অন্য সমাজের দ্বারা প্রভাবিত, [3] স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা প্রভৃতি।
15. *‘ঢাকাই খাবার’ কী?
উত্তর – ঢাকা যখন প্রাদেশিক রাজধানী ছিল তখন এখানকার রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে পারসিক খাদ্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে যে খাবার প্রস্তুত হয় তা ‘ঢাকাই খাবার’ নামে পরিচিত। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল খিচুড়ি, হালিম, চালের গুঁড়োর পিঠে প্রভৃতি।
16. *খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন খ্যাতনামা গবেষক হলেন কে টি আচয়, প্যাট চ্যাপম্যান, শরীফউদ্দিন আহমেদ, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথান রাইট, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমুখ।
17. *হরিপদ ভৌমিক ইতিহাসে বিখ্যাত কেন?
উত্তর – গবেষক হরিপদ ভৌমিক তাঁর ‘রসগোল্লা : বাংলার জগত্মাতানো আবিষ্কার গ্রন্থে দাবি করেছেন, বাংলার নদিয়া জেলার ফুলিয়ায় হারাধন ময়রা আদি রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা। এই কারণে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
18. *নবীনচন্দ্র দাস কে ছিলেন?
উত্তর –  নবীনচন্দ্র দাস ছিলেন কলকাতার বাগবাজারের একজন ময়রা। নদিয়ার ফুলিয়ার হারাধন ময়রার তৈরি করা রসগোল্লা কিছুটা পরিবর্তন করে নবীনচন্দ্র ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন।
19. মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে?
উত্তর – মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার যে ধরনের উপাদান বা তথ্য পাওয়া যেতে পারে সেগুলি হল – [1] মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা, [2] সামাজিক রুচিবোধ, [3] সামাজিক উদারতার মাত্রা, [4] লিঙ্গবৈষম্য প্রভৃতি।
20. ব্রাত্মিকা পদ্ধতি কী? 
উত্তর – ব্রাষ্মিকা পদ্ধতি হল বাঙালি মেয়েদের এক ধরনের শাড়ি পড়ার পদ্ধতি, যা মূলত অবাঙালিদের ‘কুচি পদ্ধতি’-তে শাড়ি পড়ার বিবর্তিত রূপ। এই পদ্ধতিতে শাড়ির কুচির অংশটি অনেক বড়ো হয় এবং কোমর, বুক, পিঠ সর্বত্র হয়ে ওঠে টান টান। বর্তমানে বাঙালি মেয়েরা এই পদ্ধতিতেই শাড়ি পড়েন। উনিশ শতকের জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের মেয়েরা প্রথম শাড়ি পরার এই পদ্ধতিটি চালু করেছিলেন।
21. *কবে কোথায় ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর –  ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস চর্চা করা।
22. *পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন কার্ল কোহলার, এম্মা টারলো, মলয় রায়, নিরুপমা পুণ্ডির, ত্রৈলোক্যনাথ বসু প্রমুখ।
23. *পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল মলয় রায়- এর ‘বাঙালির বেশবাস : বিবর্তনের রূপরেখা’, কার্ল কোহলার-এর ‘পোশাকের ইতিহাস’, জে ফর্বস ওয়াটসন-এর ‘দ্য টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড দ্য কস্টিউম অব দ্য পিপল অব ইন্ডিয়া’, মাইকেল ডেভিস-এর ‘আর্ট অব ড্রেস ডিজাইনিং, এম্মা টারলো-র ‘ক্লোদিং ম্যাটারস: ড্রেস অ্যান্ড আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া’প্রভৃতি।
24. *সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন এমন কয়েকজন গবেষক হলেন উমেশ জোশী, রাজকুমার, প্যাট্রিক মৌতাল, চার্লস রাসেল ডে, সুকুমার রায়, সুধীর চক্রবর্তী, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী প্রমুখ।
25. *সংগীতের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – সংগীতের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল উমেশ জোশী-র ‘ভারতীয় সংগীত কা ইতিহাস, রাজকুমার-এর ‘এসেজ অন ইন্ডিয়ান মিউজিক’, প্যাট্রিক মৌতাল-এর ‘কমপ্যারেটিভ স্টাডি অব হিন্দুস্তানি রাগাস, সুকুমার রায়-এর ‘বাংলা সংগীতের রূপ, করুণাময় গোস্বামীর ‘বাংলা গানের বিবর্তন, সুধীর চক্রবর্তীর ‘বাংলা গানের সন্ধানে, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীর ‘বাংলা গানের ধারা প্রভৃতি।
26. আধুনিক ভারতের কয়েকজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পীর নাম লেখো।
উত্তর – আধুনিক ভারতের কয়েকজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী হলেন উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর, রুক্মিনী দেবী, মল্লিকা সারাভাই, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, অনিতা রত্নম প্রমুখ।
27. *’নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন ক্যারল ওয়েলস, জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল, ওয়াং কেফেন, রাগিনী দেবী, আকৃতি সিন্হা, শোভনা গুপ্তা, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
28. *নৃত্যের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – নৃত্যের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল—ক্যারল ওয়েলস-এর ‘ডান্স—এ ভেরি সোশ্যাল হিস্ট্রি’, জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল সম্পাদিত ‘ড্যান্স হিস্ট্রি : অ্যান ইনট্রোডাকশন, ওয়াং কেফেন-এর ‘দ্য হিস্ট্রি অব চাইনিজ ড্যান্স, রাগিনী দেবী-র ‘ড্যান্স ডায়ালেক্ট অব ইন্ডিয়া’, আকৃতি সিন্হা-র ‘লেট’স নো ড্যান্সেস অব ইন্ডিয়া, শোভনা গুপ্তা-র ‘ড্যান্স অব ইন্ডিয়া, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের  ত্যকলা প্রভৃতি।
29. * ইতিহাসচৰ্চায় নাটকের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর – ইতিহাসচর্চায় নাটকের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নাটকের ইতিহাসচর্চা থেকে–[1] কোনো সমাজের সমকালীন বিনোদন সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। [2] বহু নাটক সমকালীন সমাজজীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। তাই সেগুলি থেকে সমকালীন সমাজের বহু ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। [3] কোনো নাটক কীভাবে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিবাদী করে তুলেছে তা জানা যায়। [4] নাটক কীভাবে লোকশিক্ষা দেয় তা জানা যায়।
30. আধুনিক বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির নাম লেখো।
উত্তর – আধুনিক বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি হলেন মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শিশির ভাদুড়ী, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত প্রমুখ।
31. * নাটকের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – নাটকের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়, আশুতোষ ভট্টাচাৰ্য, বাবুল ভট্টাচাৰ্য, সেলিম আল দীন, সাইমন জাকারিয়া, বালদুন ধিংরা প্রমুখ।
32. *নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল— ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়ের ‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’, আশুতোষ ভট্টাচার্যের ‘বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস’, সেলিম আল দীনের ‘মধ্যযুগের বাংলা নাটক, সাইমন জাকারিয়ার বাংলাদেশের লোকনাটক : বিষয় ও আঙ্গিক বৈচিত্র্য’, বালদুন ধিংরার ‘এ ন্যাশনাল থিয়েটার ফর ইন্ডিয়া’, প্রভৃতি।
33. *স্থাপত্যশিল্প নিয়ে ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – স্থাপত্যশিল্প নিয়ে ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষক হলেন জে ফার্গুসন, জর্জ মিশেল, পার্সি ব্রাউন, প্যাট্রিক নাটগেল, অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাপদ সাঁতরা, প্রণব রায়, হিতেশরঞ্জন সান্যাল, রবিউল হুসাইন, জাকারিয়া প্রমুখ।
34. *স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল জে ফার্গুসন-এর ‘হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইস্টার্ন আর্কিটেকচার, জর্জ মিশেল-এর ‘ব্রিক টেম্পল অব বেঙ্গল’, পার্সি ব্রাউন-এর ‘ইন্ডিয়ান আর্কিটেকচার’, প্যাট্রিক নাটগেন্সের ‘দ্য স্টোরি অব আর্কিটেকচার’, অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পশ্চিমবঙ্গের পুরাসম্পদ’ (সম্পা), তারাপদ সাঁতরার ‘কলকাতার মন্দির মসজিদ স্থাপত্য’, হিতেশরঞ্জন সান্যালের ‘বাংলার মন্দির’, রবিউল হুসাইনের ‘বাংলাদেশের স্থাপত্য সংস্কৃতি’, জাকারিয়ার ‘বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তি’ প্রভৃতি।
35. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন? 
উত্তর – স্থানীয় ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব হল, স্থানীয় ইতিহাসচর্চার দ্বারা— [1] স্থানীয় অঞ্চলের সমাজ, অর্থনীতি, শিল্পকলা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। [2] জাতীয় ইতিহাসচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। আঞ্চলিক ইতিহাসের মাধ্যমেই জাতীয় ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ রূপ নিতে পারে।
36. *স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন— কালীকমল সার্বভৌম, কুমুদনাথ মল্লিক, নিখিলনাথ রায়, সতীশচন্দ্র মিত্র, রাধারমণ সাহা, কালীনাথ চৌধুরী, মনোরঞ্জন চন্দ্র, শ্রীকেদারনাথ মজুমদার, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুধীরকুমার মিত্র, ড. রতনলাল চক্রবর্তী প্রমুখ।
37. *স্থানীয় ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – স্থানীয় ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল— কালীকমল সার্বভৌম রচিত ‘সেতিহাস বগুড়ার বৃত্তান্ত’, কুমুদনাথ মল্লিক রচিত ‘নদীয়া কাহিনি, নিখিলনাথ রায় রচিত ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি, সতীশচন্দ্র মিত্র রচিত ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস, রাধারমণ সাহা রচিত ‘পাবনা জেলার ইতিহাস, কালীনাথ চৌধুরী রচিত ‘রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, মনোরঞ্জন চন্দ্র রচিত ‘মল্লভূম বিয়ুপুরের ইতিহাস, ভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কোচবিহারের ইতিহাস, সুধীরকুমার মিত্র রচিত ‘হুগলি জেলার ইতিহাস প্রভৃতি।
38 *পরিবেশের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – পরিবেশের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল র‍্যাচেল কারসন-এর ‘সাইলেন্ট স্প্রিং, আলফ্রেড ক্রসবি-এর ‘ইকোলজিকাল ইম্পিরিয়ালিজম’, রিচার্ড গ্রোভ-এর ‘গ্রিন ইম্পিরিয়ালিজম’, ইরফান হাবিবের ‘মানুষ ও পরিবেশ’, মাধব গ্যাডগিল ও রামচন্দ্র গুহর ‘ইকোলজি অ্যান্ড ইকুইটি’, মহেশ রঙ্গরাজনের ‘এনভায়রনমেন্টাল হিস্ট্রি’, বসন্ত সবেরওয়াল-এর ‘প্যাস্টোরাল পলিটিক্স’ প্রভৃতি।
39 বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী ?
উত্তর – বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার প্রধান গুরুত্বগুলি হল, এর দ্বারা—[1] বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার বিবর্তনের ধারাটি অনুধাবন করা যায়। [2] সমকালীন আর্থসামাজিক ও অন্যান্য দিক প্রভাবিত হওয়ার মাত্রা বিচার করা যায়।
40. *বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন টমাস কুহন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জে ডি বার্নাল প্রমুখ।
41. * বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল টমাস কুহন-এর ‘দ্য স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভোলিউশনস’, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘আ হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’, জে ডি বার্নাল-এর ‘হিস্ট্রি অব সায়েন্স’, দীপক কুমারের ‘সায়েন্স অ্যান্ড দি রাজ’ প্রভৃতি।
42. চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, ডেভিড আরনল্ড, পার্থসারথি চক্রবর্তী, তপন চক্রবর্তী প্রমুখ।
43. *চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’, ডেভিড আরনল্ড-এর ‘সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, পার্থসারথি চক্রবর্তীর ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের আজব কথা’, তপন চক্রবর্তীর ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস’ প্রভৃতি।
44. *নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী ?
উত্তর – নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব হল, এর দ্বারা—[1] ইতিহাসে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়। [2] ইতিহাসে নারীর যথার্থ ভূমিকা ও অবদানকে মর্যাদা দেওয়া হয়।
45. * আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।
উত্তর – আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন জোয়ান কেলি, গের্ডা লার্নার, জোয়ান স্কট, নীরা দেশাই, জেরাল্ডিন ফোর্বস, বি আর নন্দ, এম এন শ্রীনিবাস, কমলা ভাসিন প্রমুখ।
46 *নারীর ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – নারীর ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল জোয়ান কেলি-র ‘ডিড উইমেন হ্যাভ আ রেনেসাঁ?’, গের্ডা লার্নার-এর ‘দি ক্রিয়েশন অব প্যাট্রিয়ার্কি’, জোয়ান স্কট-এর ‘জেন্ডার অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অব হিস্ট্রি’, নীরা দেশাই-এর ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, জেরাল্ডিন ফোর্বস-এর ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, বি আর নন্দ-এর ‘দি ইন্ডিয়ান উইমেন : ফ্রম পর্দা টু মডার্নিটি’, এম এন শ্রীনিবাসের ‘দি চেঞ্জিং পজিশন অব ইন্ডিয়ান উইমেন’, কমলা ভাসিনের ‘হোয়াট ইজ প্যাট্রিয়ার্কি’, চিত্রা ঘোষের ‘বাংলা রাজনীতি ও নারী আন্দোলন’, মালবিকা কারলেকর-এর ‘ভয়েসেস ফ্রম উইদিন’ প্রভৃতি।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. নতুন ইতিহাসের প্রধান বিষয়বস্তু কী?
উত্তর – নতুন ইতিহাসের প্রধান বিষয়বস্তু হল সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের ইতিহাস।
2. ভারতে কে নিম্নবর্গের ইতিহাস রচনা করেন?
উত্তর – ভারতে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে রণজিৎ গুহ প্রথম নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে, গৌতম ভদ্র প্রমুখ এই চর্চাকে আরও প্রসারিত করেন।
3. নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার জনক কে?
উত্তর – নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার জনক হলেন রণজিৎ গুহ।
4. প্রথম কোন্ ইতিহাসবিদ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের ইতিহাস রচনার কথা বলেন?
উত্তর – ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় প্রথম সমাজের সকলশ্রেণির মানুষের ইতিহাস রচনার কথা বলেন।
5. কোন্ ইতিহাসে নীচে থেকে ওপরের দিকে দেখার রীতি প্রচলিত?
উত্তর – নতুন সামাজিক ইতিহাসে নীচ থেকে ওপরের দিকে দেখার রীতি প্রচলিত।
6. অ্যানাল গোষ্ঠীর কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর – অ্যানাল গোষ্ঠীর কয়েকজন ঐতিহাসিক ছিলেন মার্ক ব্লখ, লুসিয়েন ফেবর, ফার্নান্দ ব্রদেল, লাদুরি প্রমুখ।
7. নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত দুজন মার্কিন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
উত্তর – নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত দুজন মার্কিন ঐতিহাসিক হলেন ইউজিন জেনোভিস ও হারবার্ট গুটম্যান।
৪. ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার : ১৯৮৬-১৯৯৫’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার : ১৯৮৬-১৯৯৫’ গ্রন্থটি রচনা করেন রণজিৎ গুহ।
9. ভারতীয় খেলার ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কী?
উত্তর – ভারতীয় খেলার ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল—এই বছর ব্রিটিশ দলকে হারিয়ে ভারতের মোহনবাগান দল আই এফ এ শিল্ড জয়লাভ করে।
10. গৌতম ভট্টাচার্যের লেখা খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – গৌতম ভট্টাচার্যের লেখা খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল—‘বাপি বাড়ি যা’, ‘পঙ্কজ’, ‘কাপমহলা’ ও ‘সচ্’।
11. ফ্রাঙ্ক ওরেল কে ছিলেন?
উত্তর – ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক ছিলেন ফ্রাঙ্ক ওরেল।
12. ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ফুটবল : স্ট্রাইভিং টু স্কোর’ গ্রন্থটি কে বা কারা রচনা করেন ?
উত্তর – ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ফুটবল : স্ট্রাইভিং টু স্কোর’ গ্রন্থটি রচনা করেন বোরিয়া মজুমদার ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
13. সচিন তেন্ডুলকরের আত্মজীবনীর নাম কী ?
উত্তর – সচিন তেন্ডুলকরের আত্মজীবনীর নাম ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’।
14. ‘দ্য তাও অব ক্রিকেট: অন গেম্স অফ ডেসটিনি অ্যান্ড দ্য ডেসটিনি অব গেম্স’ গ্রন্থটি কে লেখেন?
উত্তর – ‘দ্য তাও অব ক্রিকেট: অন গেম্‌স অফ ডেসটিনি অ্যান্ড দ্য ডেসটিনি অব গেম্স’ গ্রন্থটি লিখেছেন আশিষ নন্দী।
15. ‘ইন্ডিয়া ফুড অ্যান্ড কুকিং’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ইন্ডিয়া ফুড অ্যান্ড কুকিং’ গ্রন্থটি রচনা করেন প্যাট চ্যাপম্যান।
16. ‘টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তর – ‘টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ গ্রন্থটির লেখক হলেন ক্রীড়া ইতিহাসবিদ বোরিয়া মজুমদার।
17. পাল ও সেনযুগে বাংলায় কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস চালু ছিল?
উত্তর – পাল ও সেনযুগে বাংলায় ভাত ও নিরামিষ ভোজনের খাদ্যাভ্যাস চালু ছিল।
18. প্রথম কে, কবে স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন?
উত্তর – কলকাতার বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাস ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন।
19. ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইটিং ইন মডার্ন আমেরিকা’ বইটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইটিং ইন মডার্ন আমেরিকা’ বইটি রচনা করেন হারভে লেভেনস্টেইন।
20. ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’ গ্রন্থটি রচনা করেন মলয় রায়।
21. ‘ক্লোদিং ম্যাটারস : ড্রেস অ্যান্ড আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া’ বইটি কে রচনা করেন ? 
উত্তর – ‘ক্লোদিং ম্যাটারস: ড্রেস অ্যান্ড আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া’ বইটি রচনা করেন এম্মা টারলো।
22. মান্না দে-র লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির নাম কী?
উত্তর – মান্না দে-র লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির নাম ‘জীবনের জলসাঘরে’।
23. ‘দ্য একজোটিক ইন ওয়েস্টার্ন মিউজিক’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘দ্য একজোটিক ইন ওয়েস্টার্ন মিউজিক’ গ্রন্থটি রচনা করেন জোনাথান বেলম্যান।
24. ‘দ্য ডন অব ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন দ্য ওয়েস্ট’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘দ্য ডন অব ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন দ্য ওয়েস্ট’ গ্রন্থটি রচনা করেন পিটার লাভেজোলি।
25. ‘ডান্স অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘ডান্স অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন শোভনা গুপ্ত।
26. ভারতের মন্দিরগুলিতে দেবদাসীদের নৃত্য কারা উপভোগ করত?
উত্তর – ভারতের মন্দিরগুলিতে দেবদাসীদের নৃত্য ব্রাহ্মণ ও সমাজের উচ্চবর্গের মানুষ উপভোগ করত।
27. উদয়শঙ্কর কী ধরনের নৃত্য পরিবেশন করতেন?
উত্তর – উদয়শঙ্কর প্রাচ্যের বিষয়কে কেন্দ্র করে পাশ্চাত্য রীতিতে নৃত্য পরিবেশন করতেন।
28. ‘বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর – ‘বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থটি আশুতোষ ভট্টাচার্যের লেখা।
29. ‘শিল্প-ইতিহাসবিদ’ বা ‘Art Historian’ কাদের বলা হয়?
উত্তর – যেসব ইতিহাসবিদ শিল্পচর্চা করেন, তাঁদের বলা হয় ‘শিল্প ইতিহাসবিদ’ বা ‘Art Historian’ |
30. ‘ভারতের নৃত্যকলা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘ভারতের নৃত্যকলা’ গ্রন্থটি রচনা করেন গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়।
31. ‘বাংলার মন্দির’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর – ‘বাংলার মন্দির’ গ্রন্থটি হিতেশরঞ্জন সান্যালের লেখা।
32. ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ গ্রন্থ দুটি কার লেখা?
উত্তর – ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ গ্রন্থ দুটি সত্যজিৎ রায়ের
33. প্রথম সবাক বাংলা চলচিত্রের নাম কী?
উত্তর – প্রথম সবাক বাংলা চলচিত্রের নাম ‘দেনাপাওনা’ (১৯৩১ খ্রি.)।
34. ভারতের চিত্রকলা’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর –  ‘ভারতের চিত্রকলা’ গ্রন্থটি অশোক মিত্রের লেখা।
35. ‘চিত্রকথা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘চিত্রকথা’ গ্রন্থটি বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় রচনা করেন।
36. ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
37. কারা, কবে প্রথম চলচ্চিত্রের বায়োস্কোপের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করেন?
উত্তর – অগাস্ট লুমিয়ের ও লুই লুমিয়ের ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে প্রথম বায়োস্কোপের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করেন।
38. বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণকেন্দ্রের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণকেন্দ্র হল আমেরিকার হলিউড এবং ভারতের মুম্বাই।
39. বাংলার প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের নাম কী?
উত্তর – ‘জামাই ষষ্ঠী’ (১৯৩১ খ্রি.) হল বাংলার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্যের সবাক চলচ্চিত্র এবং ‘দেনাপাওনা’ (১৯৩১ খ্রি.) হল প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের সবাক চলচ্চিত্র।
40. বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন পরিচালকের নাম লেখো।
উত্তর – বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন পরিচালক হলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, তপন সিংহ প্রমুখ।
41. ‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’ গ্রন্থটি রচনা করেন ঋত্বিক কুমার ঘটক।
42. কে, কবে ক্যামেরা আবিষ্কার করেন?
উত্তর – আলেকজান্ডার ওয়ালকট ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ক্যামেরা আবিষ্কার করেন।
43. ভারতে কবে ক্যামেরা বা ফোটো তোলার যন্ত্র আসে ?
উত্তর – ভারতে ১৮৫০-এর দশকের প্রথমদিকে ক্যামেরা বা ফোটো তোলার যন্ত্র আসে।
44. ‘কুন্তলীন তেল’ খ্যাত বাঙালি ফোটোগ্রাফারের নাম কী?
উত্তর – ‘কুন্তলীন তেল’ খ্যাত বাঙালি ফোটোগ্রাফারের নাম এইচ বোস বা হেমেন্দ্রনাথ বোস।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. সাধারণভাবে ইতিহাস’ হল ……….. কথা।
উত্তর – অতীতের
2. ………. প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল খাদ্যসংগ্রাহক।
উত্তর – প্রাচীন
3. ………. কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকার নাম হল ‘অ্যানাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’।
উত্তর – অ্যানাল গোষ্ঠী
4. ভারতে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা শুরু হয় বিগত শতকের ……… -এর দশকে।
উত্তর – ৮০
5. ‘একাদশে সূর্যোদয়’ ও ‘বিদ্রোহী মারাদোনা’ গ্রন্থ দুটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – রূপক সাহা
6. ঢাকার খাদ্যরীতির সঙ্গে ………. খাদ্যরীতির সংমিশ্রণে ‘ঢাকাই খাবার’ তৈরি হয়।
উত্তর – পারসিক
7. হুগলির বাঙালিরা ………. সংস্পর্শে এলে দুধ-কাটা ছানা ও চিনি মিশিয়ে মিষ্টি তৈরি করতে শুরু করে।
উত্তর – পোর্তুগিজদের
৪. রেশম প্রস্তুতে চিনাদের অভিজ্ঞ হওয়ার কথা জানা যায় তাদের ……….. থেকে।
উত্তর – পোশাক-পরিচ্ছদ
9. বর্তমান ………. মেয়েরা ব্রাষ্মিকা পদ্ধতিতে শাড়ি পরেন।
উত্তর – বাঙালি
10. অগসবার্গ শহরের ………. প্রথম পোশাকের ছবি সংবলিত একটি বই প্রকাশ করেন।
উত্তর – ম্যাথেউস সোয়ার্জ
11. ‘দ্য হিস্ট্রি অব চাইনিজ ডান্স’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – ওয়াং কেফেন
12. ‘এ ন্যাশনাল থিয়েটার ফর ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – বালদুন ধিংড়া
13. ‘এ শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য ক্যামেরা’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – জন ওয়েড
14. ‘বাংলাদেশের শিল্পকলার উৎস সন্ধান’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – ড. নীলিমা আফরিন
15. ‘ইন্ডিয়ান আর্কিটেকচার’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – পার্সি ব্রাউন
16. ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ : গ্লোরিয়াস ১৫০ ইয়ার্স’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – আর আর ভাণ্ডারী
17. ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন ……….।
উত্তর – দাদাসাহেব ফালকে
18. ‘দ্য সিনেমা বুক’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – পাম কুক
19. ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – রাধারমণ সাহা
20. ‘রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – কালীনাথ চৌধুরী
21. ‘ঢাকা : স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – মুনতাসীর মামুন
22. ‘মিলিটারি হিস্ট্রি অব মেডিয়াভাল ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – জি এস সাঁধু
23. ‘দ্য আর্মি ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – কৌশিক রায়
24. বসন্ত সবেরওয়ালের লেখা বইটি হল ……….।
উত্তর – প্যাস্টোরাল পলিটিক্স
25. ‘এনভায়রনমেন্টাল হিস্ট্রি’ বইটির লেখক হলেন ……….।
উত্তর – মহেশ রঙ্গরাজন
26. ‘হিস্ট্রি অব সায়েন্স’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – জে ডি বার্নাল
27. ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন ……….।
উত্তর – দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
28. ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটির লেখক হলেন ……….।
উত্তর – জেরাল্ডিন ফোর্বস
29. ‘হোয়াট ইজ প্যাট্রিয়ার্কি’ গ্রন্থটির লেখক হলেন ……….।
উত্তর – কমলা ভাসিন
30. ‘দ্য চেঞ্জিং পজিশন অব ইন্ডিয়ান উইমেন’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – এম এন শ্রীনিবাস
31. ‘দ্য ইন্ডিয়ান উইমেন : ফ্রম পর্দা টু মডার্নিটি’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – বি আর নন্দ

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা MCQ

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

1. ইতিহাস কোন্ শতকে সমাজবিজ্ঞান থেকে একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে?
(a) সপ্তদশ শতকে
(b) অষ্টাদশ শতকে
(c) ঊনবিংশ শতকে
(d) বিংশ শতকে
উত্তর – (c) ঊনবিংশ শতকে
2. ইতিহাস হল অতীতের—
(a) কর্তব্যনিষ্ঠ বিবরণ
(b) বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ
(c) কর্মনিষ্ঠ বিবরণ
(d) অর্থনিষ্ঠ বিবরণ
উত্তর – (d) অর্থনিষ্ঠ বিবরণ
3. ‘History from below’-প্রবন্ধটির রচয়িতা-
(a) লয়েড জর্জ
(b) মার্ক ফেরো
(c) ই পি থমসন
(d) মার্শাল ফচ
উত্তর – (c) ই পি থমসন
4. অ্যানাল গোষ্ঠীর পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়-
(a) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (a) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে
5. ‘অ্যানাল স্কুল’ কর্তৃক যে ধরনের ইতিহাসচর্চা করা হয় তা হল –
(a) সাবলটার্ন
(b) টোটাল হিস্ট্রি
(c) হিস্ট্রি ফ্রম বিলো
(d) নারী ইতিহাস
উত্তর – (b) টোটাল হিস্ট্রি
6. অ্যানাল পত্রিকা গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চার মূল বিষয় ছিল—
(a) আঞ্চলিক ইতিহাস
(b) সামাজিক ইতিহাস
(c) সামরিক ইতিহাস
(d) লোকসংস্কৃতি
উত্তর – (b) সামাজিক ইতিহাস
7. নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার শুরু হয়—
(a) ১৮৬০-এর দশকে
(b) ১৮৮০-এর দশকে
(c) ১৯৩০-এর দশকে
(d) ১৯৬০-এর দশকে
উত্তর – (d) ১৯৬০-এর দশকে
৪. নতুন সামাজিক ইতিহাসে কাদের কথা বলা হয়েছে?
(a) রাজা-মহারাজা
(b) সাধারণ মানুষ
(c) রাজনৈতিক নেতা
(d) সামন্তপ্রভু
উত্তর – (b) সাধারণ মানুষ
9. সাবলটার্ন গোষ্ঠীর একজন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক হলেন—
(a) মার্ক ব্লখ
(b) ফার্নান্দ ব্রদেল
(c) রণজিৎ গুহ
(d) রমেশচন্দ্র মজুমদার
উত্তর – (c) রণজিৎ গুহ
10. সাবলটার্ন স্টাডিজের প্রকাশক কে?
(a) পার্থ চট্টোপাধ্যায়
(b) রণজিৎ গুহ
(c) জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে
(d) তপন রায়চৌধুরি
উত্তর – (b) রণজিৎ গুহ
11. ‘এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্ট অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) গৌতম ভদ্র
(b) রণজিৎ গুহ
(c) সুমিত সরকার
(d) পার্থ চট্টোপাধ্যায়
উত্তর – (b) রণজিৎ গুহ
12. দ্য সোশ্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে—
(a) ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (c) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে
13. ‘খেলা যখন ইতিহাস গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়
(b) বোরিয়া মজুমদার
(c) রূপক সাহা
(d) গৌতম ভট্টাচার্য
উত্তর – (a) কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়
14. ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়—
(a) ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (b) ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে
15. ভারতে ফুটবল খেলা প্রবর্তন করেন—
(a) ইংরেজরা
(b) ওলন্দাজরা
(c) ফরাসিরা
(d) পোর্তুগিজরা
উত্তর – (a) ইংরেজরা
16. ‘ভারতীয় ফুটবলের জনক’ বলে যাকে অভিহিত করা হয়, তিনি হলেন—
(a) গোষ্ঠ পাল
(b) চুনী গোস্বামী
(c) নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী
(d) পি কে ব্যানার্জি
উত্তর – (c) নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী
17. মোহনবাগান ক্লাব আইএফএ শিল্ড জয় করেছিলেন—
(a) ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (c) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
18. ভারতের কোন্ অঞ্চলে দেবদেবীর পুজোয় ছানার তৈরি মিষ্টি ব্যবহার করা হয়?
(a) উত্তরপ্রদেশের
(b) গুজরাটের
(c) বাংলার
(d) কেরালার
উত্তর – (c) বাংলার
19. ‘আ হিস্টোরিক্যাল ডিকশনারি অব ইন্ডিয়ান ফুড’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) প্যাট চ্যাপম্যান
(b) কে টি আচয়
(c) হরিপদ ভৌমিক
(d) বেলা দে
উত্তর – (b) কে টি আচয়
20. ‘ফুড ইন হিস্ট্রি’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) হরিপদ ভৌমিক
(b) বিজয় চৌধুরী
(c) বরুণ চক্রবর্তী
(d) রিয়াই টান্নাহিল
উত্তর – (d) রিয়াই টান্নাহিল
21. রবীন্দ্রনাথ মণিপুরি নৃত্যকে কোথায় শেখানোর ব্যবস্থা করেন?
(a) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে
(b) রবীন্দ্রভারতীতে
(c) শান্তিনিকেতনে
(d) শিলাইদহে
উত্তর – (c) শান্তিনিকেতনে
22. পাঞ্জাবের উট চালকদের গানকে বলা হয়-
(a) টপ্পা
(b) গজল
(c) ঠুংরি
(d) বন্দিয়াল
উত্তর – (a) টপ্পা
23. ‘ভারতীয় সংগীত কা ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) রাজেশ্বর মিত্র
(b) উমেশ জোশী
(c) প্যাট্রিক মৌতাল
(d) চার্লস রাসেল ডে
উত্তর – (b) উমেশ জোশী
24. ‘ডান্স ডায়ালেক্ট অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) আকৃতি সিন্হা
(b) ওয়াং কেফেন
(c) ল্যান্সডেল
(d) রাগিনী দেবী
উত্তর – (d) রাগিনী দেবী
25. ‘কনটেমপোরারি ইন্ডিয়ান আর্টিস্টস’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
(a) গীতা কাপুর
(b) কবিতা সিং
(c) জন ওয়েড
(d) অশোক মিত্র
উত্তর – (a) গীতা কাপুর
26. ‘ব্রিক টেম্পল অব বেঙ্গল’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) প্যাট্রিক নাটগেন্স
(b) পার্সি ব্রাউন
(c) জে ফার্গুসন
(d) জর্জ মিশেল
উত্তর – (d) জর্জ মিশেল
27. ‘মল্লভূম বিষ্ণুপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) কুমুদনাথ মল্লিক
(b) সুধীরকুমার মিত্র
(c) কেদারনাথ মজুমদার
(d) মনোরঞ্জন চন্দ্ৰ
উত্তর – (d) মনোরঞ্জন চন্দ্ৰ
28. ‘বাগেশ্বরী শিল্পপ্রবন্ধাবলী’ লেখেন—
(a) অশোক মিত্র
(b) গীতা কাপুর
(c) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(d) জাহিদ চৌধুরী
উত্তর – (c) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
29. ‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়
(b) ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(c) বালদুন ধিংড়া
(d) আশুতোষ ভট্টাচার্য
উত্তর – (a) সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়
30. ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হল—
(a) জামাই ষষ্ঠী
(b) বিল্বমঙ্গল
(c) রাজা হরিশ্চন্দ্র
(d) বালিকা বধূ
উত্তর – (c) রাজা হরিশ্চন্দ্র
31. ‘একেই বলে শুটিং’ গ্রন্থটি লিখেছিলেন—
(a) ঋত্বিক কুমার ঘটক
(b) তপন সিংহ
(c) সত্যজিৎ রায়
(d) মৃণাল সেন
উত্তর – (c) সত্যজিৎ রায়
32. ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ চলচ্চিত্রের পরিচালক হলেন—
(a) মৃণাল সেন
(b) বিজন ভট্টাচার্য
(c) সত্যজিৎ রায়
(d) ঋত্বিক ঘটক
উত্তর – (c) সত্যজিৎ রায়
33. দাদাসাহেব ফালকে যুক্ত ছিলেন—
(a) চলচ্চিত্রের সঙ্গে
(b) ক্রীড়া জগতের সঙ্গে
(c) স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে
(d) পরিবেশের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে
উত্তর – (a) চলচ্চিত্রের সঙ্গে
34. ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয় বম্বে থেকে—
(a) কলকাতা
(b) দিল্লি
(c) থানে
(d) গোয়া
উত্তর – (c) থানে
35. ‘দেখার রকমফের : ঋত্বিক ও সত্যজিৎ’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) সত্যজিৎ রায়
(b) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
(c) মৃণাল সেন
(d) অপূর্ব কুণ্ডু
উত্তর – (b) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

TOPIC – B আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান ব্যবহারের পদ্ধতি

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. *আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানগুলি কী কী ?
উত্তর – আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের বিশেষ অভাব নেই। এই উপাদানগুলিকে চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-
  1. সরকারি নথিপত্র: ব্রিটিশ শাসনকালে সরকারি নথিপত্রগুলি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হত। এসব নথিপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—[i] বিভিন্ন সরকারি চিঠিপত্র, [ii] পুলিশ, গোয়েন্দা ও সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন, [iii] সরকারি ব্যক্তিদের বিবরণ প্রভৃতি। এসব নথিপত্র ঘেঁটে কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায় এবং ইতিহাস রচনার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
  2. আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা: বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা প্রভৃতিতে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার বহু মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। এরূপ কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’, মহাত্মা গান্ধির ‘দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ দ্য ট্রুথ’, সুভাষচন্দ্র বসুর অ্যান ইন্ডিয়ান পিলগ্রিম’ (অসমাপ্ত), জওহরলাল নেহরুর অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ প্রভৃতি।
  3. চিঠিপত্র: বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা চিঠিপত্র আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার গুরত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। এরূপ কিছু উল্লেখযোগ্য চিঠিপত্র হল টিপু সুলতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু প্রমুখের লেখা চিঠিপত্র।
  4. সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র : সমকালীন বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র আধুনিক ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃত হয়। ‘বেঙ্গল গেজেট’, ‘দিগদর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’, ‘সংবাদ কৌমুদি’, ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘এনকোয়ারার’, ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’, ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘সংবাদ প্রভাকর’, ‘বঙ্গদর্শন’, ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’, ‘কেশরী, ‘মারাঠী’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকা আধুনিক ভারতের ইতিহাসের নানা তথ্য সরবরাহ করে থাকে।

উপসংহার: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানের প্রায় সবগুলিই লিখিত উপাদান। সংখ্যায় এবং বৈচিত্র্যে এগুলির অধিক সংখ্যায় প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার কাজকে অনেক সহজ করে তুলেছে।

2. আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব কী?
উত্তর – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র, যেমন—সরকারি প্রতিবেদন, পুলিশ, গোয়েন্দা, সরকারি আধিকারিক প্রমুখের প্রতিবেদন, বিভিন্ন বিবরণ, চিঠিপত্র প্রভৃতি উপাদানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। যেমন—
  1. বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড : ব্রিটিশ সরকার যে বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের প্রতি গোপনে নজরদারি চালাত, সে বিষয়ে সমকালীন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র থেকে বর্তমানে সম্ভব হয়েছে।
  2. কমিশনের রিপোর্ট: সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট থেকে সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যাদি পাওয়া যায়। যেমন—নীল কমিশনের (১৮৬০ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে বাংলা চাষিদের ওপর নীলকরদের অত্যাচার, হান্টার কমিশনের (১৮৮২ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
  3. আন্দোলন দমনের নীতি: ব্রিটিশ সরকার কীভাবে ভারতীয়দের রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি দুর্বল বা দমন করার চেষ্টা চালাত সে বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র, বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন আধিকারিকদের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়। যেমন—সরকার গোপনে কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছিল, বাঙালির রাজনৈতিক ঐক্য ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কার্জন বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন প্রভৃতি তথ্যাদি সরকারি চিঠিপত্র থেকে জানা যায়।
  4. ভারতীয়দের সংস্কার : সমকালীন ভারতীয়দের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যাবলির প্রতি সরকারের মনোভাব মোটেই ভালো ছিল না—তা জানার জন্য সরকারি নথিপত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ পাশ্চাত্যকে মুগ্ধ করলেও তৎকালীন ব্রিটিশ- ভারতের সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, বিবেকানন্দের রামকৃয় মঠ ও মিশনকে সরকার সুনজরে দেখেনি।
  5. একমাত্র নির্ভরযোগ্যতা: কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি নথিপত্র ভারত-ইতিহাসের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যেমন—বর্তমান তথ্যাদির সহায়তায় নেতাজি সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করা সম্ভব না হওয়ায় অনেকে একমাত্র সরকারি নথিপত্র প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

উপসংহার: সরকারি নথিপত্র হল এমন একটি উপাদান, যা ইতিহাসের অনেক লুকোনো দিক খুঁজে বের করে এনে দিতে পারে। শাসকের কার্যকলাপ জানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হল এই সরকারি নথিপত্র।

3. *আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিভিন্ন আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক রচনা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল বিভিন্ন আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক রচনা।
  1. প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ : বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁদের প্রত্যক্ষ করা বিভিন্ন ঘটনাবলি প্রসঙ্গক্রমে তাঁদের লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক রচনায় উল্লেখ করে থাকেন। সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ নেই এমন বহু ঘটনার উল্লেখ এসব রচনায় পাওয়া যায়। এসব তথ্য আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনা করতে বিশেষ সহায়তা করে।
  2. রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রচনা: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বিভিন্ন জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় ব্রিটিশ শাসনকালের নানা ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা হল বিপিনচন্দ্রের পালের ‘সত্তর বৎসর’, মহাত্মা গান্ধির ‘দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ’, সুভাষচন্দ্র বসুর ‘অ্যান ইন্ডিয়ান পিলগ্রিম’ (অসমাপ্ত), জওহরলাল নেহরুর ‘অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদের ‘আত্মকথা’, মুজাফ্ফর আহমেদের ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (১৯২০-২৯ খ্রি.)’, মণিকুন্তলা সেনের ‘সেদিনের কথা’, জ্যোতি বসুর ‘যতদূর মনে পড়ে’ প্রভৃতি।
  3. অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রচনা: বিভিন্ন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায়ও আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। এরূপ রচনাগুলির মধ্যে অন্যতম হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’, সরলা দেবী চৌধুরানির ‘জীবনের ঝরাপাতা’, নিরোদ সি চৌধুরীর ‘অটোবায়োগ্রাফি অব অ্যান আননোন ইন্ডিয়া’, দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ প্রভৃতি।

উপসংহার: উত্তম পুরুষে লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলি ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী। বিশেষ বিশেষ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানার ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

4. *আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব কী?
অথবা, আধুনিক ইতিহাসচর্চার উপাদান হিসেবে ‘সত্তর বৎসর’ সম্পর্কে আলোচনা করো। 
উত্তর – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘সত্তর বৎসর’
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যতম উপাদান হল বিভিন্ন ব্যক্তির  আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সমাজসংস্কারক বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।
  1. ইতিহাসের উপাদান: বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ আধুনিক বাংলার নানা ঐতিহাসিক তথ্যে সমৃদ্ধ। গ্রন্থটি সম্পর্কে বিপিনচন্দ্র নিজেই লিখেছেন, “….আমার সত্তর বৎসরের জীবনকথা বাস্তবিক এই বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাসের কথা।”
  2. প্রথম জীবনের তথ্য: ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থের শুরুতে বিপিনচন্দ্রের প্রথম জীবনের বিভিন্ন তথ্য, যেমন—শ্রীহট্ট জেলার পৈল গ্রামে তাঁর জন্ম, তাঁর বংশ ও গ্রামের পরিচয়, শৈশবে শ্রীহট্ট জেলার নানা ঘটনা, স্কুলের পড়াশোনার পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করতে আসা প্রভৃতি বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
  3. রাজনৈতিক জীবনের সূচনা: ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থে বিপিনচন্দ্ৰ পালের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম পর্বের বিভিন্ন তথ্যেরও উল্লেখ আছে। কলকাতায় এসে জাতীয় নেতা আনন্দমোহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, ব্রাহ্বসমাজে যোগদান, শিবনাথ শাস্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ, স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রভৃতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিপিনচন্দ্র তাঁর এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
  4. পরিণত জীবনের তথ্য: বিপিনচন্দ্র পাল পরিণত বয়সে যখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে উঠে আসেন সেসময়ের বিভিন্ন তথ্যাদি তাঁর আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে। পুরোনো কলকাতার কথা, ব্রাহ্বসমাজের ইতিহাস, ধর্মভীরু বাঙালির জাতীয়তাবাদী মানসিকতা, স্বদেশি, বয়কট ও পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে আন্দোলন প্রভৃতির নানা দিকের আলোচনা তাঁর গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

উপসংহার: বিপিনচন্দ্র পাল তাঁর ‘সত্তর বৎসর’ নামক আত্মজীবনীতে যে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন তার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে এক ব্যক্তিনিরপেক্ষ সমাজদর্শন। সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রকটভাবে ধরা পড়েছে তাঁর এই গ্রন্থটিতে।

5. * আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’-এর গুরুত্ব কী?
অথবা, টীকা লেখো: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’।
উত্তর – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘জীবনস্মৃতি’
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।
  1. বাঙালির স্বাদেশিকতা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে ঔপনিবেশিক বাংলার, বিশেষ করে কলকাতার ধনী পরিবারগুলির জীবনযাত্রার আভাস দিয়েছেন। এ যুগে অভিজাত বাঙালি পরিবারের বিভিন্ন বিদেশি প্রথার প্রচলন শুর হলেও স্বদেশের প্রতি অনুরাগও জাগ্রত ছিল। তাঁরা সন্তানদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা এবং পাশ্চাত্যশিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিলেও বাংলা ভাষা ও শিক্ষার প্রতি অনুরাগও লক্ষ করা যায়।
  2. ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল: ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে বৃহৎ পরিবার, শিশুদের বাল্যকাল, নারীদের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিভিন্ন ঘটনার ছবি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলি থেকে সমকালীন বাংলার সামাজিক ইতিহাসের নানা তথ্য পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, “আমাদের বাড়িতে দাদারা চিরকাল মাতৃভাষায় চর্চা করিয়া আসিয়াছিলেন। আমার পিতাকে তাঁহার কোনো নূতন আত্মীয় ইংরেজিতে পত্র লিখিয়াছিলেন, সে পত্র লেখকের নিকটে তখনই ফিরিয়া আসিয়াছিল।”
  3. রাজনৈতিক ঘটনাবলি: ‘জীবনস্মৃতি’-তে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে এবং রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বাদেশিকতার সভা, দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উদ্যোগে ধুতি ও পায়জামার সমন্বয়ে ভারতের একটি সর্বজনীন পরিচ্ছদ প্রচলনের চেষ্টা, স্বদেশি দেশলাই কারখানা বা কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠায় যুবকদের উদ্যোগ প্রভৃতির উল্লেখ করেছেন।
  4. হিন্দুমেলা : ‘জীবনস্মৃতি’-তে নবগোপাল মিত্রের ‘হিন্দুমেলা’ সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়। ‘হিন্দুমেলা’র স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন যে, “ভারতবর্ষকে স্বদেশ বলিয়া ভক্তির সহিত উপলব্ধির চেষ্টা সেই প্রথম হয়। মেজদাদা (সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর) সেই সময়ে বিখ্যাত জাতীয় সংগীত ‘মিলে সবে ভারতসন্তান’ রচনা করেছিলেন।”

উপসংহার: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ মূলত তাঁর নিজের আত্মজীবনী হলেও এই গ্রন্থে তাঁর সমকালীন বাংলা তথা ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য আলোচিত হয়েছে যেগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান।

6. *আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরলা দেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’-এর গুরুত্ব কী?
অথবা, ‘জীবনের ঝরাপাতা থেকে সমকালীন ইতিহাসের কোন্ দিকগুলি ফুটে উঠেছে? 
উত্তর – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘জীবনের ঝরাপাতা’
ভূমিকা: সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগনি সরলা দেবী চৌধুরানির লেখা ‘জীবনের ঝরাপাতা’ বাংলা সাহিত্যের একটি মূল্যবান ও সুখপাঠ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা। এটি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় বিভিন্নভাবে তথ্য সরবরাহ করে।
  1. বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড : সরলা দেবী চৌধুরানি ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। তিনি সহিংস বিপ্লবের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জনেরও স্বপ্ন দেখতেন। জীবনের ঝরাপাতা’র ছত্রে ছত্রে ভারতের সশস্ত্র বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নানা তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তিনি নিজেও যে এই ধরনের সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তা ‘জীবনের ঝরাপাতা’ থেকে জানা যায়।
  2. অর্থনৈতিক শোষণ: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে অর্থনৈতিক শোষণের নানা ছবি ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে। নীলচাষি, চা বাগানের কুলি ও শ্রমিক, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কীভাবে ব্রিটিশ এবং তাদের সহযোগীদের অত্যাচার ও শোষণের শিকার হয়েছিল তা সরলা দেবী চৌধুরানি তাঁর গ্রন্থে স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন।
  3. ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল: ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের বিভিন্ন ঘটনা। যেমন— ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক চর্চা, ঈশ্বরভাবনা, বিভিন্ন সামাজিক বিধান পালন, শিশুদের একসঙ্গে বাড়তে থাকা প্রভৃতি নানা ঘটনার খণ্ডচিত্র ‘জীবনের ঝরাপাতা’-য় উঠে এসেছে। এগুলি আধুনিক বাংলার সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
  4. স্বদেশি আন্দোলন : ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের স্বদেশি আন্দোলন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ‘জীবনের ঝরাপাতা’য় পাওয়া যায়। স্বদেশি আন্দোলনের যুগে স্বদেশি পণ্যের উৎপাদন ও প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন।
  5. রবীন্দ্রনাথ ও স্বামী বিবেকানন্দ : সরলা দেবী চৌধুরানি সে যুগের দুই মনীষী রবীন্দ্রনাথ ও স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যে যোগসূত্র ছিলেন। এই দুই মনীষীর প্রতি সরলা দেবীর কেমন দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন ছিল তা বই থেকে জানা যায়।

উপসংহার: সরলা দেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ আধুনিক ভারত ইতিহাসের এক সংগ্রামী অধ্যায়কে তুলে ধরে। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে নানান আলোড়ন জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর এই গ্রন্থে।

7. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে চিঠিপত্রের গুরুত্ব কী ?
উত্তর – ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে চিঠিপত্রের গুরুত্ব
ভূমিকা: সরকারি চিঠিপত্রের মতো বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা ব্যক্তিগত চিঠিপত্রও আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিগত চিঠিপত্র থেকে সমকালীন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান তথ্যাদি পাওয়া যায়।
  1. গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র: ব্রিটিশ শাসনকালে লেখা আধুনিক ভারতের ঐতিহাসিক তথ্যে সমৃদ্ধ এরূপ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র হল টিপু সুলতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধি, সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু প্রমুখের লেখা চিঠিপত্র। এ ছাড়া রয়েছে সাধারণ মানুষের লেখা বিপুল সংখ্যক চিঠিপত্র।
  2. রাজনৈতিক তথ্য: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের লেখা চিঠিপত্রগুলি থেকে সমকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা সম্পর্কে যথার্থ তথ্য পাওয়া যায়। যেমন—ব্রিটিশ সরকারকে লেখা গান্ধিজির বিভিন্ন চিঠিপত্র থেকে ভারতের সমকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা এবং সেগুলির প্রতি ভারতের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও ব্রিটিশ সরকারের মনোভাব সম্পর্কে জানা যায়।
  3. সামাজিক তথ্য: বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের চিঠিপত্রে সমকালীন সমাজ- সংস্কৃতি নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। এসব চিঠিপত্র থেকে সমকালীন ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাদি জানা যায়।
  4. শিক্ষা : ব্যক্তিগত চিঠিপত্রগুলিতে অনেক সময় শিক্ষামূলক ঐতিহাসিক তথ্যও যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। যেমন—ছোট্ট ইন্দিরা গান্ধিকে তাঁর পিতা জওহরলাল নেহরুর লেখা চিঠিপত্রগুলিতে বিশ্ব-ইতিহাসের নানা ঘটনা স্থান পেয়েছে।
  5. সাধারণ মানুষের মতামত: যুদ্ধ, বিদ্রোহ বা বড়ো কোনো রাজনৈতিক ঘটনার মানুষ যে প্রচুর চিঠিপত্র লিখে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে তা থেকে সেই বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায় । যেমন—দেশভাগের প্রেক্ষাপটে ভারতের সাধারণ মানুষ এই বিষয়টিকে কী চোখে দেখেছে তা সমকালীন বিভিন্ন সাধারণ মানুষের লেখা চিঠিপত্র থেকে জানা যায়।

উপসংহার: বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা চিঠিপত্রগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাসের নানান তথ্য তুলে ধরেছে। তাই চিঠিপত্র হয়ে উঠেছে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।

8. *ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কন্যা ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা পিতা জওহরলাল নেহরুর চিঠিগুলির গুরুত্ব কী ?
উত্তর – ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠি
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যক্তিগত চিঠিপত্রকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এরূপ ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল ‘লেটার্স ফ্রম আ ফাদার টু হিজ ডটার’।
  1. পিতার উপদেশ : পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ জেল থেকে মহীশূরে তাঁর ১০ বছর বয়সি কন্যা ইন্দিরা গান্ধিকে অসংখ্য চিঠি লিখেছিলেন। এরূপ ৩০টি চিঠির একটি সংকলন পরবর্তীকালে ‘Letters from a Father to His Daughter’ শিরোনামে এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই চিঠির সংকলন হল কন্যার প্রতি একজন স্নেহময় পিতার অমূল্য তত্ত্বাবধান ও উপদেশ।
  2. উদ্দেশ্য : জওহরলাল নেহরু তাঁর কন্যা ইন্দিরাকে আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন বিস্ময়, প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং সভ্যতার গল্প শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এসব চিঠি লিখেছিলেন।
  3. সভ্যতার প্রতিষ্ঠা: বুদ্ধি কীভাবে মানুষকে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে চতুর ও শক্তিশালী করে তুলল, কীভাবে ধর্মবিশ্বাসের প্রচলন হল, অর্থবহ শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে কীভাবে ভাষার উদ্ভব হল, প্রাচীনকালে কীভাবে সমাজ, সভ্যতা, রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হল প্রভৃতি বিষয়ে সহজ ভাষায় সুন্দর গল্প লিখে জওহরলাল তাঁর কন্যা ইন্দিরাকে পাঠাতেন।
  4. সভ্যতার অগ্রগতি: প্রাচীন ভারতে সভ্যতার অগ্রগতি, আর্যদের আগমন, রামায়ণ ও মহাভারতের আদর্শ, শক্তিশালী রাজবংশ, দরিদ্রশ্রেণির দুরবস্থা প্রভৃতির আলোচনাও জওহরলাল নেহরুর চিঠিপত্রে স্থান পেয়েছে।

উপসংহার: পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তাঁর কন্যা ছোট্ট ইন্দিরাকে বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে যে সকল বিষয়ের অবতারণা করেছেন তাতে ভারতের ইতিহাসের বহু দিকের প্রতিফলন ঘটেছে। চিঠির মধ্যে সুন্দর গল্পগুলো হয়ে উঠেছে ভারতের ইতিহাসের এক অনন্য উপাদান।

9. *আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী?
উত্তর – আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র
ভূমিকা: ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে ভারতে সংবাদপত্রের প্রকাশ শুরু হয়। আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সমসাময়িক বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র।
  1. বিভিন্ন সংবাদপত্র: যেসব সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র রূপে স্বীকৃত ঐতিহাসিক উপাদান যেমন ‘বেঙ্গল গেজেট’, ‘দিগদর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’, ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ‘সম্বাদ প্রভাকর’, ‘বঙ্গদর্শন’, ‘সোমপ্রকাশ’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘সঞ্জীবনী’, ‘সন্ধ্যা’, ‘কেশরী’, ‘মারাঠী’ প্রভৃতি।
  2. রাজনীতি: ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত সাময়িকপত্র সংবাদপত্রগুলিতে সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলি, যেমন— ব্রিটিশদের শাসননীতি, ভারতীয়দের মনোভাব প্রভৃতি বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব তথ্য আধুনিক ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সময় যথেষ্ট সহায়তা করতে পারে।
  3. সমাজ: সমকালীন ভারতীয় সংবাদপত্রগুলিতে উচ্চবিত্ত থেকে সাধারণ মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ক বিভিন্ন ঘটনার খবরাখবর নিয়মিত ছাপা হত। এসব তথ্যাদি থেকে ব্রিটিশ-ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে নানা ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়।
  4. শোষণ : আধুনিক ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ শোষণ ও অত্যাচারের নানা ঘটনাবলি সমসাময়িক সংবাদপত্রগুলিতে নিয়মিত ছাপা হত। এসব তথ্যাদি শোষণ ও অত্যাচারের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
  5. অসন্তোষ : ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের শোষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা বিভিন্ন বিদ্রোহ-আন্দোলন শুরু করে। এসব খবর নিয়মিত সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হত। এসব খবরের তথ্যাদি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় খুবই সাহায্য করে।
  6. জনমতের প্রতিফলন: বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা সমকালীন সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হয়। ফলে সংবাদপত্রগুলিতে সমকালীন সাধারণ মানুষের মতামতেরও প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়।

উপসংহার: সার্বিক ও সাম্প্রতিক তথ্যে সমৃদ্ধ সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রগুলি সমকালীন সময়ের প্রতিদিনকার তথ্য সরবরাহ করে থাকে। তাই আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

10. সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর – সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য
ভূমিকা: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র আধুনিককালের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র উভয়ই সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। তবে উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্যও আছে। যেমন—
  1. আত্মপ্রকাশের কাল: সাময়িকপত্রের আবির্ভাব অষ্টাদশ শতকে। কিন্তু রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকেই, অর্থাৎ জিশুখ্রিস্টের জন্মের পূর্বেই সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে বলে মনে করা হয়।
  2. আকৃতি: আকৃতি এবং দৃশ্যমানতার ক্ষেত্রেও সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য চোখে পড়ে। সাময়িকপত্রগুলির পৃষ্ঠা আকারে ছোটো হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা থাকে। আর সংবাদপত্রগুলির পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং তার পৃষ্ঠাগুলি খোলা থাকে।
  3. প্রকাশের সময়কাল: সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রকাশিত হয়। সেই ব্যবধান এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ বা এক মাসও হতে পারে। কিন্তু সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় প্রতিদিন, এমনকি দিনে দুইবারও কোনো কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
  4. প্রকাশনার পার্থক্য: সাময়িকপত্রে সমকালীন খবরাখবরগুলি ছাড়াও কোনো মৌলিক রচনা বা গবেষণাকর্ম যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সংবাদপত্রে গবেষণামূলক প্রবন্ধের পরিবর্তে সাম্প্রতিক খবর পরিবেশনই বেশি গুরুত্ব পায়।
  5. প্রকাশনার বিষয়: সাময়িকপত্র কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিকও হতে পারে। যেমন—শুধু ইতিহাসচর্চার ওপর ভিত্তি করে এবং ইতিহাসের খবরাখবর ও গবেষণা নিয়ে নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো সাময়িকপত্র প্রকাশিত হতে পারে। কিন্তু সংবাদপত্রগুলির অধিকাংশই হয় সার্বিক। অর্থাৎ সাম্প্রতিক সমস্ত বিষয়ের খবরাখবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়।

উপসংহার: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সমকালীন ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের কাজে উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার কাজে এই দুটি উপাদান আজ ভীষণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

11. আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার গুরুত্ব কী? অথবা, ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় সহায়তা করতে পারে?
উত্তর – আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সমসাময়িক যেসব সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘’বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা।
  1. পত্রিকার প্রকাশ : ‘বঙ্গদর্শন’ ছিল ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত একটি বিখ্যাত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি প্রকাশের প্রথম থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন এর সম্পাদক, লেখক ও প্রধান পরিচালক।
  2. শিক্ষিত সমাজের মুখপত্র: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা আত্মপ্রকাশের পর থেকেই তৎকালীন শিক্ষিত বাঙালি সমাজের প্রধান মুখপত্র হয়ে ওঠে। এই পত্রিকাতেই বাঙালি জাতির আধুনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটত। বঙ্কিমচন্দ্র ছাড়াও গঙ্গাচরণ, রামদাস সেন, অক্ষয় সরকার, চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ প্রতিভাবান লেখক এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।
  3. সমকালীন তথ্য: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় সমাজ, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ ও বিভিন্ন উপন্যাস প্রকাশিত হত। এসব রচনা থেকে সেসময় বাংলায় ইংরেজ সরকার ও জমিদারের শোষণ ও অত্যাচার, সামাজিক পরিস্থিতি, সাধারণ মানুষের অবস্থা, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়।
  4. প্রভাব : [i] ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার দ্বারা সমকালীন ভারতীয় জাতীয়তাবাদ যথেষ্ট প্রভাবিত হয়। [ii] বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি প্রথম ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। ‘বন্দেমাতরম’ পরবর্তীকালে ভারতীয় বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল মন্ত্রে পরিণত হয়। [iii] ‘বঙ্গদর্শন’-এ প্রকাশিত ‘সাম্য’সহ বিভিন্ন প্রবন্ধ বাঙালি সমাজে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রসারে যথেষ্ট সহায়তা করে।

উপসংহার: বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি সমকালের ঘটনাবলিকে যেভাবে তুলে ধরত তা আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার আবার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভারতের জাতীয়তাবাদী ভাবধারার উদ্‌দ্গাতা এই পত্রিকা সমাজে স্বদেশপ্রেমের মন্ত্র প্রচার করেছিল।

12. আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার গুরুত্ব কী? অথবা, ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় সহায়তা করতে পারে?
উত্তর – আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা
ভূমিকা: ঊনবিংশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার পাতায় পাতায় আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার নানা উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে। মহেন্দ্রনাথ বিদ্যানিধি তাঁর ‘বাঙালা সংবাদপত্রের ইতিহাস’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, “যাহার আবির্ভাবে ও প্রভাবে সংবাদপত্র মহলে হুলুস্থূল পড়ে, তাহাই ‘সোমপ্রকাশ’।”
  1. পত্রিকার প্রথম প্রকাশ ও অস্তিত্বকাল: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রেরণায় কলকাতা সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ (১৮১৯-১৮৮৬ খ্রি.) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ করেন। তিনিই ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
     
    সোমপ্রকাশ পত্রিকায় ব্রিটিশ শাসনের প্রায় ৩০ বছরের বিভিন্ন সংবাদ, তৎকালীন বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে নানা তথ্য পরিবেশিত হয়েছে।
  2. দরিদ্র চাষিদের সমর্থন: ‘সোমপ্রকাশ’ দরিদ্র চাষিদের সমর্থনে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করে। এই পত্রিকা কৃষকদের দিয়ে জোর করে নীল ও চা-চাষের প্রতিবাদ করে। এর ফলে শিক্ষিত বাঙালি অত্যাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।
  3. রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা: বাংলায় ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকাতেই প্রথম রাজনৈতিক খবরাখবর পরিবেশন শুরু হয়। পত্রিকায় নিয়মিত ব্রিটিশ সরকার ও জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার, সামাজিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনা প্রভৃতি ঘটনাগুলি তুলে ধরে পাঠকদের সচেতন করে তোলা হয়।
  4. সামাজিক সচেতনতাবৃদ্ধিতে ভূমিকা : বাল্যবিবাহ, বহু বিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, মদ্যপান প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং ইলবার্ট বিল, নারীশিক্ষা, বিধবাবিবাহ প্রভৃতির পক্ষে নিয়মিত রচনা প্রকাশ করে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা এসব বিষয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  5. সংবাদপত্র আইনের প্রতিবাদ: ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড লিটন ‘দেশীয় সংবাদপত্র আইন’ পাস করে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলির ওপর হস্তক্ষেপ করলে ‘সোমপ্রকাশ” এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। আইনের দ্বারা পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও কিছুদিন পর তা আবার চালু হয়।

উপসংহার: ব্রিটিশ কুশাসনের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা। এই পত্রিকাটি সমকালীন ভারতীয় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলির বর্ণনা প্রদান করে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠেছে।

13. *ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেটের সুবিধা কী?
উত্তর – ইতিহাসের তথ্যসংগ্রন্থে ইনটারনেট ব্যবহারের সুবিধা
ভূমিকা: ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। যেমন—
  1. তথ্যের সহজলভ্যতা : ইনটারনেটের সহায়তায় অতি সহজে এবং ঘরে বসে ইতিহাস-সহ দুনিয়ার যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যায়। অন্য কোনো মাধ্যম থেকে এরূপ সহজে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
  2. স্বল্প অর্থব্যয়: বিভিন্ন বইপত্র কিনে, গ্রন্থাগার বা গবেষণাগারে নিয়মিত যাতায়াত করে ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে যে বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয় করতে হয়, তা ইনটারনেটের ক্ষেত্রে করতে হয় না। খুব সামান্য অর্থব্যয় করে ইনটারনেটের মাধ্যমে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
  3. সময় সাশ্রয় : বইপত্র বা অন্য কোনো সূত্র থেকে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। কিন্তু ইনটারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না। এমনকি, ইনটারনেট থেকে প্রাপ্ত কোনো সুবিশাল বইয়ের কোথায় প্রয়োজনীয় তথ্য বা শব্দগুলি আছে তাও সার্চ করে নিমেষেই বের করা যায়।
  4. দুর্লভ তথ্যপ্রাপ্তি : ইনটারনেটের মাধ্যমে নানা ধরনের অনলাইন লাইব্রেরি থেকে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বইয়ের কপি, অনলাইন আর্কাইভ থেকে আসল রিপোর্টের কপি প্রভৃতি পাওয়া সম্ভব।
  5. সহজে প্রশ্নের উত্তর লাভ : তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে অনেকসময় ইনটারনেটে সেই প্রশ্ন লিখেও সরাসরি উত্তর পাওয়া যায়।

উপসংহার: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেটের নানান সুবিধা থাকা সত্ত্বেও একে অতিমাত্রায় নির্ভরযোগ্য ভাবা ভুল হবে। তাই ইনটারনেটে ইতিহাসের কোনো তথ্যসংগ্রহের জন্য একটু সতর্ক থাকতেই হবে।

14. *ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি কী ?
উত্তর – ইতিহাসের তথ্যসংগ্রন্থে ইনটারনেট ব্যবহারের অসুবিধা
ভূমিকা: বর্তমানকাল ‘তথ্য বিস্ফোরণের যুগ’ নামে পরিচিত। এই তথ্য বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে সম্প্রতি ইনটারনেট ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার। এটি ব্যবহার করে খুব সহজে এবং নিমেষে বিভিন্ন বিষয়ের মতো ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্যাদিও সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেট ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন—
  1. নির্ভরযোগ্যতার অভাব: ইনটারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলি কতটা যথার্থ বা নির্ভরযোগ্য তা যাচাই করা খুব কঠিন। একই বিষয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পৃথক পৃথক তথ্য থাকায় পাঠক বা গবেষকরা বিভ্রান্ত হন।
  2. মনগড়া তথ্য: ইনটারনেটে আজকাল যে-কেউ নিজের মনগড়া ভুল তথ্য আপলোড করছে। ফলে তা গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অসুবিধার সৃষ্টি করছে।
  3. গবেষণার মান হ্রাস: ইনটারনেট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অসত্য বা অর্ধসত্য তথ্য ব্যবহার করতে গিয়ে পাঠক ও গবেষকগণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং গবেষণার গুণগত মান কমে যাচ্ছে।
  4. তথ্যের অসম্পূর্ণতা : বহু ক্ষেত্রে ইনটারনেটে বই বা গবেষণার অংশবিশেষ পাওয়া যায়। এর পূর্ণাঙ্গ কাজটি পাওয়া না যাওয়ায় পাঠক ও গবেষকগণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হন।

উপসংহার: উক্ত অসুবিধাগুলি সত্ত্বেও আজকের এই ‘তথ্য বিস্ফোরণের যুগে’ ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেটকে অস্বীকার করার উপায় নেই। ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে সময়ের অপচয় রোধ, অফুরন্ত তথ্যের জোগান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইনটারনেটের জুড়ি মেলা ভার।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. *আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার প্রধান উপাদানগুলি কী?
উত্তর – আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার প্রধান উপাদানগুলি হল— [1] সরকারি নথিপত্র, [2] আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, [3] ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, [4] সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র।
2. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রগুলি মূলত কী কী?
উত্তর – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রগুলি হল মূলত পুলিশ ও গোয়েন্দাদের রিপোর্ট, সরকারি আধিকারিক ও দপ্তরগুলির প্রদত্ত বিভিন্ন বিবরণ, প্রতিবেদন, চিঠিপত্র প্রভৃতি।
3. *সরকারি নথিপত্র থেকে ঐতিহাসিক সত্য উদ্ঘাটন করা যায় এমন একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – সরকারি নথিপত্র থেকে ঐতিহাসিক সত্য উদ্ঘাটন করা যায় এমন একটি উদাহরণ হল—স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃয় মঠ ও মিশনের উদ্যোগকে ব্রিটিশ সরকার যে সুনজরে দেখত না তা সমকালীন সরকারি নথিপত্র থেকে জানা গেছে।
4. *ব্রিটিশ আমলের পুলিশ, গোয়েন্দা প্রমুখের বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে কী ধরনের ঐতিহাসিক তথ্যাদি জানা যায় ?
উত্তর – ব্রিটিশ আমলের পুলিশ, গোয়েন্দা প্রমুখের বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে বিভিন্ন ব্রিটিশ-বিরোধী গণ আন্দোলন, বিদ্রোহ, বিপ্লবী আন্দোলন, গুপ্ত সমিতির কার্যকলাপ প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যাদি জানা যায়।
5. সরকারি নথিপত্র বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর – বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী, সেনাপতি, সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সমকালীন বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ঘটনা সম্পর্কে যে তথ্যাদি লিখে গিয়েছেন সেসব সরকারি নথিপত্রের বিবরণ নামে পরিচিত।
6. *ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ? 
উত্তর – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ—[1] সরকারি নথিপত্র পাঠ, পুনর্পাঠ ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সমসাময়িক নানা ঘটনার পিছনে সরকারের ভূমিকা ও মনোভাব স্পষ্টভাবে জানা যায়। [2] আধুনিক ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনায় ঔপনিবেশিক শাসকের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার চর্চা সম্ভব হয়।
7. *সরকারি নথিপত্রের বিবরণ থেকে প্রাপ্ত একটি ঐতিহাসিক তথ্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর – সরকারি নথিপত্রের বিবরণ থেকে প্রাপ্ত একটি ঐতিহাসিক তথ্যের উদাহরণ হল সিপাহি বিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রি.) প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ফরেস্ট তাঁর ‘হিস্ট্রি অব দি ইন্ডিয়ান মিউটিনি’ গ্রন্থটি লিখেছেন যা থেকে সিপাহি বিদ্রোহের নানা তথ্য পাওয়া যায়।
8. *ঐতিহাসিক বিবরণ বা তথ্যসমৃদ্ধ কয়েকটি সরকারি নথিপত্রের উদাহরণ দাও।
উত্তর – ঐতিহাসিক বিবরণ বা তথ্যসমৃদ্ধ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরকারি নথিপত্র হল—[1] ফরেস্ট রচিত ‘হিস্ট্রি অব দ্য ইন্ডিয়ান মিউটিনি’, [2] স্যার সৈয়দ আহমদ খান রচিত ‘দি কজেস অব ইন্ডিয়ান রিভোল্ট’, [3] কার্জনের স্বরাষ্ট্রসচিব রিজলে রচিত ‘ব্যক্তিগত দিনলিপি’, [4] কে লেপেল গ্রিফিন রচিত বিবরণ প্রভৃতি।
9. মহাফেজখানা থেকে কীভাবে ইতিহাস জানা যায় ?
উত্তর – মহাফেজখানাগুলিতে সমকালীন বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদন, চিঠিপত্র, পুলিশ ও গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। এগুলিতে সমকালীন বিভিন্ন ঘটনার সঠিক তথ্যসমূহ পাওয়া সম্ভব। এইসব তথ্য পড়ে সমকালীন ইতিহাস জানা যায়।
10. আত্মজীবনী কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে?
অথবা, স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে—[1] আত্মজীবনী থেকে অনেক সময় সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাবলির কথা জানা যায়। [2] আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। [3] আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন আর্থসামাজিক ঘটনাবলিও ইতিহাস রচনায় ব্যবহৃত হতে পারে। [4] আত্মজীবনীতে উল্লিখিত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলি ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
11. আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কী ?
উত্তর – নিজের জীবন ও সেই সংক্রান্ত ঘটনাগুলো যখন কোনো ব্যক্তি নিজে লিপিবদ্ধ করেন, তখন সেই লিপিবদ্ধ কাহিনিকে আত্মজীবনী বলা হয়। যখন কোনো ব্যক্তি অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা দীর্ঘদিন পর স্মৃতি থেকে মনে করে লিপিবদ্ধ করেন তখন তা হয়ে ওঠে স্মৃতিকথা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সব আত্মজীবনীই স্মৃতিকথা; কিন্তু সব স্মৃতিকথাই আত্মজীবনী নয়।
12. *আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানসমৃদ্ধ কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার উদাহরণ দাও।
উত্তর – আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানসমৃদ্ধ কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার উদাহরণ হল – [1] বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, [2] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’, [3] সরলাদেবী চৌধুরানীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’, [4] মহাত্মা গান্ধির ‘দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ’, [5] সুভাষচন্দ্র বসুর ‘অ্যান ইন্ডিয়ান পিলগ্রিম’ (অসমাপ্ত), [6] জওহরলাল নেহরুর ‘অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ প্রভৃতি।
13. ইন্দিরাকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠিগুলির নাম কী? এই চিঠিগুলির হিন্দি অনুবাদ কে করেন?
উত্তর – ইন্দিরাকে লেখা জওহরলাল নেহরুর লেখা চিঠিগুলির নাম হল—“লেটার্স ফ্রম আ ফাদার টু হিজ ডটার”।
বিখ্যাত হিন্দি ঔপন্যাসিক মুন্সি প্রেমচাঁদ ‘পিতা কে পত্র পুত্রী কে নাম’ শিরোনামে এই চিঠিগুলির হিন্দি অনুবাদ করেন।
14. বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনীর নাম কী? এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাস রচনার জন্য কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ?
বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনীর নাম ‘সত্তর বৎসর’।
উত্তর – ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থটি থেকে বিপিনচন্দ্র পালের সঙ্গে আনন্দমোহন বসু,
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ জাতীয় নেতার ঘনিষ্ঠতা, তাঁর ব্রাহ্মসমাজে যোগদান, স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর ঝাঁপিয়ে পড়া, স্বদেশি, বয়কট, পূর্ণ স্বরাজ প্রভৃতি আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ প্রভৃতি তথ্য পাওয়া যায় যেগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
15. *রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনীর নাম কী? এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাস রচনার জন্য কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ?
উত্তর – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনীর নাম হল ‘জীবনস্মৃতি।
‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থটি থেকে ঠাকুরবাড়ির নানা তথ্য, তৎকালীন ইংরেজি, ভাষা ও বিদেশি প্রথা সম্পর্কে বাঙালি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, হিন্দুমেলা সম্পর্কে নানা তথ্য, স্বদেশিয়ানার প্রতি বাঙালিদের আগ্রহ ও উদ্যোগ প্রভৃতি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়, যেগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
16. * সরলাদেবী চৌধুরানীর লেখা আত্মজীবনীর নাম কী? এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাস রচনার জন্য কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ?
উত্তর – সরলাদেবী চৌধুরানীর লেখা আত্মজীবনীর নাম হল ‘জীবনের ঝরাপাতা’।
‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থটি থেকে ভারতের কৃষক ও শ্রমিকদের ওপর ব্রিটিশ ও তাদের সহযোগীদের শোষণ-অত্যাচার, ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক চর্চা প্রভৃতি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়, যেগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
17. আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য যেসব সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র তথ্য সরবরাহ করে তার কয়েকটির নাম লেখো।
উত্তর – ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত বিভিন্ন ভারতীয় সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এসব পত্রপত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হিকি-র ‘বেঙ্গল গেজেট’, মার্শম্যানের ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পণ’, রামমোহন রায় সম্পাদিত ‘সংবাদ কৌমুদি’, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ঈশ্বর গুপ্ত সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকর’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ প্রভৃতি।
18. ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী?
উত্তর – ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের প্রধান গুরুত্বগুলি হল— [1] সংবাদপত্রগুলিতে উল্লিখিত সমসাময়িক রাজনৈতিক খবরাখবর থেকে সমকালীন রাজনৈতিক ইতিহাস জানা যায়। [2] সংবাদপত্রগুলিতে মুদ্রিত সমসাময়িক সমাজ ও সংস্কৃতির খবরাখবর থেকে সেই সময়ের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়। [3] সংবাদপত্রে মুদ্রিত সমকালীন সরকার ও রাষ্ট্রপরিচালনার বিভিন্ন খবর থেকে সেই সময়ের রাষ্ট্রীয় ইতিহাস জানা সম্ভব। [4] জনগণের অসন্তোষ, ক্ষোভ, বিদ্রোহ প্রভৃতি বিষয়েও সংবাদপত্র থেকে জানা যায়। [5] কোনো ঘটনা সম্পর্কে জনমত কোন্ দিকে তাও সংবাদপত্র থেকে জানা যায়।
19. সংবাদপত্র এবং সাময়িকপত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর – সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল – [1] সাধারণত সংবাদপত্র প্রতিদিন প্রকাশিত হয়। কিন্তু সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশিত হয়। [2] সংবাদপত্রের মুদ্রণে রোজকার খবরাখবর গুরুত্ব পায়। সাময়িকপত্রে রোজকার খবরের পরিবর্তে সমকালীন বাছাই করা বিষয় গুরুত্ব পায়। [3] সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং সেগুলো বাঁধানো থাকে না। অন্যদিকে, সাময়িকপত্রের পৃষ্ঠাগুলো অপেক্ষাকৃত ছোটো হয় এবং সাধারণত তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা হয়।
20. * ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার কী ধরনের তথ্যাদি পাওয়া যায়?
উত্তর – ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি থেকে তৎকালীন ভারতীয় আর্থসামাজিক অবস্থা, ব্রিটিশ সরকার ও তার সহযোগীদের শোষণ- অত্যাচার, এর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিদ্রোহ ও আন্দোলন প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাদি পাওয়া যায়।
21. বেঙ্গল গেজেট কে, কবে প্রকাশ করেন?
উত্তর – বেঙ্গল গেজেট নামে সাপ্তাহিক ইংরেজি সংবাদপত্রটি জেমস অগাস্টাস হিকি ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন।
22. *‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা থেকে সমকালীন ভারতের ইতিহাস রচনার কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায় ?
উত্তর – ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা থেকে সমকালীন ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য বাংলায় ব্রিটিশদের শাসন ও শোষণ, জমিদারদের শোষণ-অত্যাচার, তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি, সাধারণ মানুষের অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
23. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় নারীদের সম্পর্কে কী ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হত?
উত্তর – ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় বাল্যবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং নারীশিক্ষা, বিধবাবিবাহ প্রভৃতির পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করা হত। এভাবে নারীসমাজের উন্নতির পক্ষে জনমত গঠনে সোমপ্রকাশ পত্রিকা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
24. ব্রিটিশ সরকার কেন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘সোমপ্রকাশ’ সাময়িকপত্রের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়? 
উত্তর – বড়োলাট লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশীয় সংবাদপত্র আইন’ পাস করে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলির ওপর হস্তক্ষেপ করে ব্রিটিশ-বিরোধিতার পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়। তখন এই আইনের দ্বারা ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকাটিও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
25. *ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইনটারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি কী ?
উত্তর – ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইনটারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল— [1] ইনটারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনেকসময় অসম্পূর্ণ থাকে। [2] তথ্যগুলি অনেকসময় মনগড়া হয়। [3] গবেষণার কাজে এই তথ্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভরসা পাওয়া যায় না। [4] অনেকক্ষেত্রে ইনটারনেটের অসত্য বা অর্ধসত্য তথ্য গবেষণার গুণগত মান কমিয়ে দেয়।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. সরকারি নথিপত্র কোথায় সংরক্ষণ করা হয়?
উত্তর – সরকারি নথিপত্র মহাফেজখানায় সংরক্ষণ করা হয়।
2. বাংলার নীলচাষিদের ওপর অত্যাচারের তথ্যাদি কোন সরকারি নথি থেকে পাওয়া যায়?
উত্তর – বাংলার নীলচাষিদের ওপর অত্যাচারের তথ্যাদি পাওয়া যায় নীল কমিশনের রিপোর্ট (১৮৬০ খ্রি.) থেকে।
3. ঐতিহাসিক বিবরণ সমৃদ্ধ সরকারি নথিপত্রের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – ঐতিহাসিক বিবরণ সমৃদ্ধ সরকারি নথিপত্রের একটি উদাহরণ হল স্যার সৈয়দ আহমদ খান রচিত ‘দি কজেস অব ইন্ডিয়ান রিভোল্ট।
4. কয়েকটি সরকারি চিঠিপত্রের উদাহরণ দাও যেগুলি ইতিহাস রচনায় সহায়তা করে।
উত্তর – ইতিহাস রচনায় সহায়তা করে এমন কয়েকটি সরকারি চিঠিপত্র হল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, লর্ড মেকলে, লর্ড ডাফরিন, গান্ধিজি প্রমুখের লেখা বিভিন্ন চিঠিপত্র।
5. এমন কিছু সরকারি নথিপত্রের নাম করো যেগুলি থেকে ব্রিটিশ আমলের বহু ঐতিহাসিক তথ্য জানা যায়।
উত্তর – ব্রিটিশ আমলের বহু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় এমন কয়েকটি সরকারি নথিপত্র হল নীল কমিশন (১৮৬০ খ্রি.), হান্টার কমিশন (১৮৮২ খ্রি.), সিডিশন কমিশন (১৯১৮ খ্রি.) প্রভৃতির রিপোর্ট।
6. জওহরলাল নেহরু কী উদ্দেশ্যে তাঁর কন্যা ইন্দিরাকে চিঠিগুলি লিখেছিলেন?
উত্তর – কন্যা ইন্দিরাকে বিশ্ব-ইতিহাস বিষয়ে জ্ঞান দান করার উদ্দেশ্যে পিতা জওহরলাল নেহরু চিঠিগুলি লিখেছিলেন।
7. কন্যা ইন্দিরাকে লেখা পিতা জওহরলালের চিঠিগুলি হিন্দি ভাষায় কে, কী নামে প্রকাশ করেছেন?
উত্তর – কন্যা ইন্দিরাকে লেখা পিতা জওহরলালের চিঠিগুলি হিন্দি ভাষায় সাহিত্যিক মুন্সি প্রেমচাঁদ ‘পিতা কে পত্র পুত্রী কে নাম’ শিরোনামে প্রকাশ করেছেন।
৪. কন্যা ইন্দিরাকে লেখা পিতা জওহরলালের চিঠিগুলি বাংলা ভাষায় কী শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর – কন্যা ইন্দিরাকে লেখা পিতা জওহরলালের চিঠিগুলি বাংলা ভাষায় ‘কল্যাণীয়াসু ইন্দু’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
9. ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠিটির নাম কী?
উত্তর – ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠিটির নাম হল ‘লেটার্স ফ্রম আ ফাদার টু হিজ ডটার’।
10. ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর – ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
11. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন? 
উত্তর – ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।
12. সরলাদেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর – সরলাদেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম ‘জীবনের ঝরাপাতা।
13. ‘বঙ্গদর্শন’ সাময়িকপত্র কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর – ‘বঙ্গদর্শন’ সাময়িকপত্র বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবর্তন করেন।
14. প্রথম বাংলা সংবাদপত্র / মাসিক পত্রিকা কোনটি?
উত্তর – প্রথম বাংলা সংবাদপত্র / মাসিক পত্রিকা ‘দিগদর্শন’।
15. ‘দিগদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর – ‘দিগদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মার্শম্যান।
16. প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা কোন্‌টি?
উত্তর – প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা সমাচার দর্পণ।
17. কে, কবে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন?
উত্তর – দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
18. ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটি রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
19. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের ছবি তুলেছেন এমন কয়েকজন ফোটোগ্রাফারের নাম লেখো।
উত্তর – ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের ছবি তুলেছেন এমন কয়েকজন ফোটোগ্রাফার হলেন—ড. জন মুরে, ফেলিক্স বিয়াতো, টাইটলার দম্পতি প্রমুখ।
20. প্রথম যুগের দুজন ভারতীয় ফোটোগ্রাফারের নাম লেখো।
উত্তর – প্রথম যুগের উল্লেখযোগ্য দুজন ভারতীয় ফোটোগ্রাফার ছিলেন আহমেদ আলি খান ও লাল দীনদয়াল।

ঠিক বা ভুল নির্ধারণ করো

1. ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র দিল্লির জাতীয় মহাফেজখানায় সংরক্ষিত আছে।
উত্তর – ঠিক
2. কার্জনের আমলের কিছু চিঠিপত্র থেকে জানা যায় যে, ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাগ করেছিল।
উত্তর – ঠিক
3. ফরেস্ট রচিত ‘হিস্ট্রি অব দ্য ইন্ডিয়ান মিউটিনি’ হল একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট। 
উত্তর – ভুল
4. সোমপ্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।
উত্তর – ঠিক

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. …………. মৃত্যুরহস্য উন্মোচনের উদ্দেশ্যে ইতিহাস গবেষকগণ সরকারি নথিপত্র প্রকাশের দাবি করছে।
উত্তর – সুভাষচন্দ্র বসুর
2. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান তাঁর অভিজ্ঞতা ………. গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
উত্তর – দ্য কজেস অব ইন্ডিয়ান রিভোল্ট
3. ‘হিন্দুমেলা’ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় ……… গ্রন্থে।
উত্তর – জীবনস্মৃতি
4. ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি প্রথম ………. পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
উত্তর – বঙ্গদর্শন

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা MCQ

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

1. বিপিনচন্দ্র পাল লিখেছেন—
(a) সত্তর বৎসর
(b) জীবনস্মৃতি
(c) এ নেশন ইন মেকিং
(d) আনন্দমঠ
উত্তর – (d) আনন্দমঠ
2. ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) বিপিনচন্দ্র পাল
(b) সরলাদেবী চৌধুরানি
(c) সুভাষচন্দ্র বসু
(d) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তর – (d) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
3. ‘জীবনস্মৃতি’ প্রথম প্রকাশিত হয়—
(a) বঙ্গদর্শন পত্রিকায়
(b) প্রবাসী পত্রিকায়
(c) সোমপ্রকাশ পত্রিকায়
(d) বিশ্বভারতী পত্রিকায়
উত্তর – (b) প্রবাসী পত্রিকায়
4. ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থটি হল একটি—
(a) উপন্যাস
(b) কাব্যগ্রন্থ
(c) জীবনী গ্রন্থ
(d) আত্মজীবনী
উত্তর – (d) আত্মজীবনী
5. ‘জীবনের ঝরাপাতা’ কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল?
(a) প্রবাসী
(b) দেশ
(c) সন্ধ্যা
(d) বামাবোধিনী
উত্তর – (b) দেশ
6. “The Story of My Experiments with Truth’ একটি—
(a) আত্মজীবনী
(b) উপন্যাস
(c) প্রবন্ধ
(d) ভ্রমণ বৃত্তান্ত
উত্তর – (a) আত্মজীবনী
7. নীলকরদের অত্যাচারের তথ্য পাওয়া যায়—
(a) বঙ্গদর্শন পত্রিকায়
(b) তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়
(c) সঞ্জীবনী পত্রিকায়
(d) সোমপ্রকাশ পত্রিকায়
উত্তর – (d) সোমপ্রকাশ পত্রিকায়
৪. বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয়—
(a) ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (b) ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে
9. বাংলা ভাষায় বাঙালি পরিচালিত প্রথম সংবাদপত্র হল—
(a) বেঙ্গল গেজে
(b) বাঙ্গাল গেজেটি
(c) বামাবোধিনী
(d) সোমপ্রকাশ
উত্তর – (b) বাঙ্গাল গেজেটি
10. হিকির বেঙ্গল গেজেট ছিল—
(a) দৈনিক পত্রিকা
(b) সাপ্তাহিক পত্রিকা
(c) মাসিক পত্রিকা
(d) পাক্ষিক পত্রিকা
উত্তর – (b) সাপ্তাহিক পত্রিকা
11. বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশ করেন—
(a) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(b) অরবিন্দ ঘোষ
(c) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
(d) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ
উত্তর – (a) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
12. ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন—
(a) উমেশচন্দ্র দত্ত
(b) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(c) অক্ষয়কুমার দত্ত
(d) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ
উত্তর – (b) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
13. ‘বঙ্গদর্শন’ প্রথম প্রকাশিত হয়—
(a) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (c) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে
14. সোমপ্রকাশ ছিল একটি—
(a) দৈনিক পত্রিকা
(b) সাপ্তাহিক পত্রিকা
(c) পাক্ষিক পত্রিকা
(d) মাসিক পত্রিকা
উত্তর – (b) সাপ্তাহিক পত্রিকা
15. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়—
(a) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (a) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
16. দিগদর্শন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন—
(a) হরচন্দ্র রায়
(b) মার্শম্যান
(c) ঈশ্বর গুপ্ত
(d) উইলিয়ম কেরি
উত্তর – (b) মার্শম্যান

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *