wb 10th Bengali

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 1 জ্ঞানচক্ষু

WBBSE 10th Class Bengali Solutions Chapter 1 জ্ঞানচক্ষু

West Bengal Board 10th Class Bengali Solutions Chapter 1 জ্ঞানচক্ষু

West Bengal Board 10th Bengali Solutions

লেখক পরিচিতি

জন্ম এবং শৈশব: ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার এক রক্ষণশীল পরিবারে আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম হয়। তাঁর আদি বাড়ি ছিল হুগলির বেগমপুরে। কোনো স্কুলকলেজে আশাপূর্ণা দেবীর পড়ার সুযোগ হয়নি। মাত্র পনেরো বছর বয়সে কালিদাস গুপ্তের সঙ্গে আশাপূর্ণা দেবীর বিয়ে হয়। দীর্ঘজীবনে একজন গৃহবধূ ও মায়ের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তিনি বহু অনবদ্য সাহিত্যও সৃষ্টি করেছেন।
কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন: তেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম লেখা শিশুসাথী পত্রিকায় ছাপা হয়। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছোট ঠাকুরদার কাশীযাত্রা (১৯৩৮)। তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৪৪)। তাঁর লেখায় মধ্যবিত্ত পুরুষ ও নারী চরিত্র নানা মহিমায় প্রকাশ পেয়েছে। আশাপূর্ণা দেবী আধুনিক মেয়েদের কথা বলেছেন, কিন্তু আধুনিকতার বিলাসীদের প্রশ্রয় দেননি। তাঁর লেখা একদিকে যেমন বাঙালি নারীদের উজ্জীবিত করেছে, অন্যদিকে তেমনই পুরুষদের মানসিকতার দিকটিও তুলে ধরেছে। তিনি বিরামহীনভাবে সত্তর বছরেরও বেশি বয়স পর্যন্ত লিখে গিয়েছেন। সহজ কথাটা সহজে বলার মতো কঠিন কাজটাই আশাপূর্ণা দেবী আজীবন ধরে করে গেছেন। লেখা দেওয়ার ব্যাপারে কাউকে তিনি কখনও বিমুখ করতে পারতেন না। তাঁর এই বিশেষ স্বভাবটির জন্য কাগজের লোকেরা সবসময়ই তাঁর শরণাপন্ন হতেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ১৭৬টি উপন্যাস, ৩০টি ছোটোগল্প সংকলন, ৪৭টি ছোটোদের বই, ২৫টি অন্যান্য সংকলন। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় তাঁর ৬৩টি গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে। তাঁর রচিত ট্রিলজি প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা, বকুলকথায় তিনি নারীসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দুঃখবেদনার কথা বলেছেন।
পুরস্কার: প্রথম প্রতিশ্রুতি গ্রন্থের জন্য ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ‘জ্ঞানপীঠ’ পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও সাহিত্যকৃতির জন্য তিনি পেয়েছেন ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, ‘সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার’, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট ডিগ্রি ও সরকারি খেতাব। মৃত্যু: ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই তাঁর দেহাবসান হয়।

উৎস

আশাপূর্ণা দেবী রচিত কুমকুম গল্পসংকলন থেকে ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি গৃহীত হয়েছে।

বিষয়সংক্ষেপ

আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে আমরা তপন নামের একজন ছোটো ছেলের কথা পাই, যার কাছে লেখকমাত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরের কোনো মানুষ। তাঁরা যে আর পাঁচজন মানুষের মতোই সাধারণভাবে জীবন যাপন করেন, সেটা তপনের ধারণাতেই ছিল না। কিন্তু তপনের এই ধারণা ভেঙে যায় যখন সে শোনে তার সদ্যবিবাহিতা ছোটোমাসির স্বামী, অর্থাৎ তার নতুন মেসোমশাই একজন ‘সত্যিকার লেখক’। সে এই দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় যে, লেখক হওয়া সত্ত্বেও তিনি তপনের বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতো সিগারেট খান, দাড়ি কামান, ঘুমোন কিংবা স্নান করেন।
ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামাবাড়িতে এসেছে তপন। তার অধ্যাপক ছোটোমেসোমশাইয়েরও কলেজ ছুটি থাকায় তিনিও শ্বশুরবাড়িতে রয়ে গিয়েছিলেন কিছুদিন। এই সময়ই তপন তার প্রথম গল্পটি লিখে ফেলে। তপনের গল্প লেখার কথা জানতে পেরে তার ছোটোমাসি গল্পখানি একরকম জোর করেই তুলে দেয় ছোটোমেসোর হাতে। তিনি গল্পটির প্রশংসা করেন এবং সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তা ছাপানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বাড়ির লোকজনের ঠাট্টা ও ইয়ার্কির মধ্যেই তপন তার লেখা গল্পটি ছাপার অক্ষরে দেখতে পাওয়ার আশায় দিন গুনতে থাকে। এরমধ্যে তপন আরও দু-তিনটি নতুন গল্প লিখে ফেলে।
এদিকে দিন চলে যায়, তপনের লেখা গল্পটি প্রকাশিত হয় না। এ বিষয়ে সে যখন হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছে তখনই একদিন তার বাড়িতে ছোটোমাসি ও মেসোর আগমন হয় সন্ধ্যাতারা পত্রিকা হাতে নিয়ে। সেখানে সে নিজের চোখে দেখে, লেখকসূচিতে তার নাম প্রকাশিত হয়েছে—‘প্রথম দিন’ (গল্প), শ্রীতপন কুমার রায়। মেসোমশাই অবশ্য জানিয়ে দেন যে কাঁচা হাতের লেখা হওয়ার জন্য তপনের লেখাটিতে তাঁকে কিছু সংশোধন করতে হয়েছে। একসময় দেখা যায়, তপনের কৃতিত্বের পুরোটাই যেন চাপা পড়ে গেছে তার মেসোর কৃতিত্বের আড়ালে।
তপনের দুঃখ পাওয়ার অবশ্য এখানেই শেষ নয়। গল্পটি পড়তে গিয়ে সে দেখে ‘কারেকশানের’ নামে তার লেখক মেসো গল্পটি আগাগোড়াই পালটে ফেলেছেন। গল্পের প্রতিটি বাক্যই তপনের কাছে ঠেকেছে নতুনের মতো। সে কিছুতেই গোটা গল্পটির সঙ্গে নিজেকে লেখক হিসেবে মেলাতে পারে না। গভীর দুঃখ ও হতাশায় তপন সংকল্প করে, এরপর যদি কখনও পত্রিকায় লেখা ছাপতে দিতে হয়, তাহলে সে নিজেই গিয়ে সেটা দেবে। কখনোই সে আর অন্যের কৃতিত্বের ভাগীদার হবে না। আর এভাবেই সাহিত্যিক বা লেখক এবং সাহিত্যসৃষ্টি সম্পর্কে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়।

নামকরণ

যে-কোনো সাহিত্যকর্মের নামকরণ করা হয় বিষয়বস্তু, চরিত্র বা ভাব অনুযায়ী, আবার কখনও তা হয় ব্যঞ্জনাধর্মী। যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণটি মূলত ব্যঞ্জনাধর্মী। ‘জ্ঞানচক্ষু’ কথাটির অর্থ হল অন্তর্দৃষ্টি বা জ্ঞানরূপ দৃষ্টি। এই গল্পের একেবারে শেষ পর্যায়ে দেখা যায় তপন চরিত্রটির প্রকৃত জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন হয়েছে।
এই গল্পে প্রাথমিকভাবে তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মোচন ঘটেছে যখন প্রথমবার সে তার লেখক ছোটোমেসোকে দেখেছে। লেখকরা যে অন্য জগতের বাসিন্দা নন, বাস্তবের চেনা মানুষদের মতোই তাঁদের জীবনযাপন—এই সত্য উপলব্ধি করেছে তপন। তপনের লেখা প্রথম গল্পটি নতুন মেসোমশাই অর্থাৎ ছোটোমেসো কিছু সংশোধন করে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখাটি সকলের সামনে পড়তে গিয়ে তপন মনে খুব আঘাত পায়। কারণ সে বুঝতে পারে, মেসোমশাই সংশোধনের নামে পুরো লেখাটাই বদলে দিয়েছেন। সেটাকে আর নিজের বলে চিনতেই পারে না তপন। লজ্জায়, অপমানে, দুঃখে সে যেন মাটিতে মিশে যায়।
নিজের গল্প পড়তে বসে, অন্যের লেখা লাইন পড়তে গিয়ে তপনের ভিতরে গ্লানিবোধ জেগে ওঠে। সে সংকল্প করে, লেখা যদি ছাপতেই হয় তাহলে পত্রিকা দফতরে নিজে গিয়ে তা দিয়ে আসবে। নিজের সেই লেখাটি না ছাপলেও দুঃখ থাকবে না তার। সেখানে তপনেরই নিজস্বতা থাকবে, অন্য কেউ সেই কৃতিত্বের ভাগীদার হবে না। এভাবেই আত্মমর্যাদা ও নিজের লেখার প্রতি অধিকারবোধ তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ঘটিয়েছে। তাই বলা যায়, গল্পের ‘জ্ঞানচক্ষু’ নামকরণটি যথাযথ হয়েছে।

আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

নির্দেশ ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. কাকে দেখে তপনের চোখ মার্বেলের মতন হয়ে গেল?
(ক) দিদিকে
(খ) নতুন মেসোমশাইকে
(গ) বাবাকে
(ঘ) নতুন পিসেমশাইকে
২. নতুন মেসোমশাই ছিলেন একজন-
(ক) লেখক
(খ) গায়ক
(গ) বই প্রকাশক
(ঘ) চিকিৎসক
৩. “ছোটোমাসি সেই দিকে ধাবিত হয়।”— ছোটোমাসি ধাবিত হয় —
(ক) ছোটোমেসোর দিকে
(খ) রান্নাঘরের দিকে
(গ)  তপনের দিকে
(ঘ) ছাদের দিকে
৪. তপনের লেখা গল্প তার মেসোমশাইকে কে দিয়েছিল?
(ক) মা
(খ) বড়োমাসি
(গ) ছোটোমাসি
(ঘ) বাবা
৫. “তপন অবশ্য মাসির এই হইচইতে মনে মনে”
(ক) আনন্দ পায়
(খ) উল্লসিত হয়
(গ) খুশি হয়
(ঘ) পুলকিত হয়
৬. “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।”—এখানে ‘জহুরি’ বলা হয়েছে
(ক) তপনের মাসিকে
(খ) তপনের বাবাকে
(গ) তপনের মাকে
(ঘ) তপনের নতুন মেসোকে 
৭. “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা”—‘উপযুক্ত কাজ’টা হল-
(ক) তপনের গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়া
(খ) তপনের গল্পটা কারেকশান করে দেওয়া
(গ) তপনকে লেখায় উৎসাহ দেওয়া
(ঘ) তপনকে গল্প লেখার নিয়মকানুন শিখিয়ে দেওয়া
৮. তপনের মেসোমশাই কোন্ পত্রিকার সম্পাদককে চিনতেন?
(ক) শুকতারা
(খ) আনন্দমেলা
(গ) সন্ধ্যাতারা
(ঘ) দেশ
৯. যে পত্রিকায় তপনের গল্প ছাপিয়ে দেওয়ার কথা হয়েছিল
(ক) শুকতারা
(খ) সন্ধ্যাতারা
(গ) একতারা
(ঘ) সাহিত্যধারা
১০. ছোটোমেসোমশাই তপনের গল্প হাতে পেয়ে কী বলেছিলেন?
(ক) আর-একটা গল্প লেখার কথা
(খ) আরও দুটো গল্প লেখার কথা
(গ) এই গল্পটাই একটু কারেকশান করার কথা
(ঘ) কোনোটাই নয়

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর 

১. কখন তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল?
উত্তর – তপন যখন শুনল তার নতুন মেসোমশাই একজন লেখক তখনই তার চোখ মার্বেল হয়ে গেল।
২. “…বিয়ে হয়ে গেল দেদার ঘটাপটা করে।”—কার ঘটাপটা করে বিয়ে হয়েছিল?
উত্তর – আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের ছোটোমাসির ঘটাপটা করে বিয়ে হয়েছিল।
৩. “এবিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের”—কোন্ বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল? 
উত্তর – একজন লেখকও যে সাধারণ মানুষের মতো হতে পারে, তাদের আচরণও যে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই হয়ে থাকে, সেই বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল।
৪. কাকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল?
উত্তর – আশাপূর্ণা দেবী রচিত জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে ছোটোমেসোমশাইকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল।
৫. “অনেক বই ছাপা হয়েছে”—কার অনেক বই ছাপা হয়েছে?
উত্তর – আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের লেখক ছোটোমেসোর অনেক বই ছাপা হয়েছে।
৬. “তবে তপনেরই বা লেখক হতে বাধা কী?” – তপনের লেখক হতে বাধা ছিল কেন?
উত্তর – তপন মনে করত লেখকরা তার মতো সাধারণ মানুষ নন, তাঁরা হয়তো অন্য গ্রহের জীব। তাই তার নিজের লেখক হতে বাধা ছিল।
৭. তপনের লেখক হতে বাধা নেই কেন?
উত্তর – নতুন মেসোকে দেখে তপন বুঝতে পারল তিনি আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ মানুষ, আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নন। তাই তার নিজেরও লেখক হতে কোনো বাধা নেই।
৮. তপনের নতুন মেসো কোন্ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উত্তর – আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের নতুন মেসো পেশায় অধ্যাপক ছিলেন।
৯. তপনের লেখা গল্প দেখে তার ছোটোমেসো কী বলেছিলেন?
উত্তর – তপনের লেখা গল্প দেখে তার ছোটোমেসো বলেছিলেন যে, গল্পটা ভালোই হয়েছে। শুধু একটু সংশোধন করে দেওয়া দরকার। তাহলেই তার লেখা ছাপতে দেওয়া যাবে।
১০. কী কারণে মেসোমশাই তপনের লেখা ভালো বলেছিলেন?
উত্তর – ছোটোমেসোমশাইয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে, তাই শ্বশুরবাড়ির একটি বাচ্চাছেলেকে খুশি করতেই মূলত তপনের মেসোমশাই লেখা ভালো হয়েছে বলেছিলেন।
১১. “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা”—কোন্ কাজকে ‘মেসোর উপযুক্ত কাজ’ বলে ছোটোমাসি মনে করেন?
উত্তর – তপন একটা গল্প লিখেছিল। তার লেখক মেসোমশাই যদি সেই গল্পটিকে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, তবেই সেটা মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে ছোটোমাসি মনে করে।
১২. “নতুন মেসোই বুঝবে।”—নতুন মেসো কী বুঝবে?
উত্তর – জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নতুন মেসো তপনের লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝবে।
১৩. “লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝলে নতুন মেসোই বুঝবে।”—লেখার প্রকৃত মূল্য কেবল নতুন মেসোই বুঝবেন কেন?
উত্তর – তপনের নতুন মেসো একজন নামকরা লেখক। তাই লেখক মানুষ হিসেবে তিনিই তপনের লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝবেন।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল”—কোন্ কথা শুনে কেন তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট বক্তব্য: ছোটোমেসোমশাই একজন লেখক—এ কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল।
তপনের চোখ মার্বেল হয়ে যাওয়ার কারণ: তপনের ধারণা ছিল লেখকরা বোধ হয় অন্য জগতের মানুষ। তাই একজন লেখককে সামনে থেকে দেখা তার কাছে এক স্বপ্নপূরণের মতো ছিল। সেকারণেই ছোটোমেসো বই লেখেন আর সেই বই ছাপা হয় শুনে তপনের চোখ মার্বেলের মতো হয়ে গিয়েছিল। একজন ‘সত্যিকার লেখক’-কে যে এভাবে সামনে থেকে দেখা সম্ভব সেটাই তপনের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল।
২. “নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের”—তপন কোথায় নতুন মেসোকে দেখেছিল? কীভাবে তপনের নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল?
উত্তর – নতুন মেসোর সঙ্গে সাক্ষাৎ : ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামার বাড়িতে গিয়ে তপন নতুন মেসোকে দেখেছিল।
তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যাওয়া: তপনের ভাবনায় লেখকরা ছিল এক অন্য জগতের মানুষ। কিন্তু লেখক ছোটোমেসোমশাইকে দেখে তার ধারণা সম্পূর্ণ পালটে যায়। তপন দেখল, নিছক সাধারণ মানুষের মতোই তাঁর সমস্ত আচার-আচরণ। তার বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতোই তিনিও সিগারেট খান, দাড়ি কামান, বেশি খাবার দিলে বারণ করেন, তর্কে মেতে ওঠেন, দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করে সিনেমা দেখতে কিংবা বেড়াতে চলে যান। এসব দেখেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল।
৩. “আর সেই সুযোগেই দেখতে পাচ্ছে তপন।”—কোন্ সুযোগে তপন কী দেখতে পাচ্ছে?
উত্তর – তপনের সামনে সুযোগ: ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামার বাড়িতে তপনের আসা এবং গরমের ছুটি থাকায় থেকে যাওয়াকেই সুযোগ বলা হয়েছে।
তপনের দেখার অভিজ্ঞতা: গরমের ছুটি থাকায় বিয়ের পর-পরই ছোটোমেসোমশাইও নতুন শ্বশুরবাড়িতে কয়েকদিন কাটাচ্ছিলেন। তিনি একজন লেখক। এর আগে কোনো লেখককে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি তপনের। লেখকরা যে আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নয়, নিতান্তই সাধারণ মানুষ, তা এভাবেই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয় তপনের।
8. “তপন অবশ্য মাসির এই হইচইতে মনে মনে পুলকিত হয়।” মাসি কেন হইচই করছিলেন এবং তাতে তপনের পুলকিত হওয়ার কারণ কী? 
উত্তর – মাসির হইচই করার কারণ: তপনের লেখা গল্পটা হাতে পেয়ে ছোটোমাসি তপনকে উৎসাহিত করার জন্য হইচই শুরু করে দিয়েছিল।
তপনের পুলকিত হওয়ার কারণ: তপনের ছোটোমাসি গল্পটা কিছুটা পড়ে তপনের নতুন মেসোর হাতে দেয়। নতুন মেসো একইসঙ্গে কলেজের অধ্যাপক এবং লেখক। প্রথমে আপত্তি করলেও লেখক ছোটোমেসো অবশ্যই তার গল্পটার ভালোমন্দ বিচার করতে পারবেন—এই ভাবনাতেই তপন রোমাঞ্চে পুলকিত হয়ে ওঠে।
৫. “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই”— এখানে জহুরি’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে? কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 
উত্তর – ‘জুহুরি’-র পরিচয়: ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের অন্তর্গত আলোচ্য অংশটিতে ‘জহুরি’ বলতে তপনের লেখক ছোটোমেসোর কথা বলা হয়েছে।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ: তপন জীবনে প্রথমবার গল্প লিখে তার ছোটোমাসিকে দেখায়। ছোটোমাসি লেখাটি হাতে পাওয়ামাত্র তাঁর স্বামীকে দেখাতে যায়। তপনের ছোটোমেসো লেখক ছিলেন। জহুরি যেমন কোন্‌টা আসল রত্ন আর কোন্‌টা নকল তা বলতে পারেন, তেমনই একজন লেখকই বলতে পারেন কোন্ লেখাটা ভালো আর কোন্ লেখাটা খারাপ। তাই তপন ভেবেছিল এই লেখার আসল মূল্য শুধু তার মেসোমশাই-ই বুঝবেন।
৬. ‘মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা।”—কোন্‌টি, কেন মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে বক্তা মনে করেছে? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট কাজ: তপনের লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করে দিলে সেটা ছোটোমেসোর উপযুক্ত কাজ হবে।
মেসোর উপযুক্ত কাজ মনে হওয়ার কারণ: তপন একটা গল্প লিখেছিল। ছোটোমাসি সেই গল্পটি ছাপাবার উদ্দেশ্যে তপনের ছোটোমেসোর হাতে দেয়। মেসো গল্পটি পড়েন এবং বলেন যে, একটু কারেকশান করে দিয়ে সেটি ছাপতে দেওয়া চলে। তপনের উদ্যোগকে উৎসাহ দিতে ছোটোমাসি তার স্বামীকে গল্পটি ছাপিয়ে দিতে অনুরোধ করে। সে মনে করে সেটাই হবে তার স্বামী অর্থাৎ তপনের ছোটোমেসোর উপযুক্ত কাজ।
৭. “…সবাই তপনের গল্প শুনে হাসে।”—কখন? সবাই তপনের গল্প শুনে হাসলেও, তপনের ছোটোমেসো তাকে কী বলেছিলেন? 
উত্তর – হাসির মুহূর্ত: বিকেলে চায়ের টেবিলে সকলে তপনের গল্প শুনে হেসেছিল।
ছোটোমেসোর বক্তব্য: ছোটোমেসো প্রশংসা করে বলেছিলেন যে, তপনের বয়সি সমস্ত ছেলে রাজারানির গল্প কিংবা খুন জখম, অ্যাকসিডেন্ট নিয়ে গল্প লেখে। কিন্তু তপন এত অল্পবয়সেই চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়েছে। রাজারানির গল্প, খুন-জখম-অ্যাকসিডেন্টের গল্প, না খেতে পেয়ে মরে যাওয়ার গল্প বাদ দিয়ে সে নিজের স্কুলে ভরতি হওয়ার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা এবং নিজের অনুভূতির বিষয়ে গল্প লিখেছে, যা প্রশংসার যোগ্য।
৮ “ তপন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়।”—কখন তপনকে এভাবে দেখা যায় এবং তপনের বিহ্বলতার কারণ কী?
উত্তর – উদ্দিষ্ট সময়: যখন তপনের গল্পটি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা চলছিল এবং ছোটোমেসো তার লেখার প্রশংসা করছিলেন তখনই তপন বিহ্বল হয়ে গিয়েছিল।
তপনের বিহ্বলতার কারণ: আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে যে গল্পটি সে লিখেছিল, সেটি ছিল তার সৃষ্টিশীলতার প্রথম প্রকাশ। সেটি পত্রিকায় ছাপা হবে—এই আশা তপনকে পুলকিত করেছিল। তা ছাড়া তার নতুন মেসো তপনের লেখাটার এবং বিষয় নির্বাচনের প্রশংসা করেছিলেন। ‘ওর হবে।’— একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মুখে নিজের এই প্রশংসা শুনে তপন আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১ “কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের।”— কী কারণে এ কথা বলা হয়েছে? সত্যিই তার জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল কি না আলোচনা করো।
উত্তর – কথাটি বলার কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে মামার বাড়িতে গিয়ে তপন তার নতুন মেসোমশাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়। তিনি একজন লেখক। লেখকরা কতটা সাধারণ মানুষদের মতো, তা নিয়ে বেজায় সন্দেহ ছিল তপনের। কিন্তু ছোটোমেসোকে দেখার পরে তার ভুল ভাঙে। তিনি ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতোই দাড়ি কামান, সিগারেট খান, থালা থেকে খাবার তুলতে বলেন, স্নানের সময়ে স্নান করেন, ঘুমানোর সময়ে ঘুমান, খবরের কাগজের সংবাদ নিয়ে তর্কে মাতেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করে সিনেমা দেখতে চলে যান। তিনি বেড়াতেও বেরোন সেজেগুজে। অর্থাৎ আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো পার্থক্যই নেই। এই সত্য উপলব্ধি করেই তপন মনে করেছিল যে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছে।
জ্ঞানচক্ষু উন্মেষের যথার্থতা বিচার: তপনের সত্যিকারের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় গল্পের শেষে। তার লেখা গল্পটি ছোটোমাসি জোর করেই ছাপানোর জন্য মেসোকে দিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যায়, লেখাটি সম্পূর্ণ পালটে গেছে। তার প্রত্যেকটি লাইন তপনের অপরিচিত। গভীর দুঃখ ও মনোকষ্টে তপন সংকল্প করে, এরপরে যদি লেখা ছাপাতে দিতে হয় তাহলে তা সে নিজের হাতেই দেবে। এভাবেই তার জ্ঞানচক্ষুর যথার্থ প্রকাশ ঘটে।
২. “লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝলে নতুন মেসোই বুঝবে”— এ কথা কার, কখন, কেন মনে হয়েছিল তা আলোচনা করো। 
উত্তর – বক্তা: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে এ কথা তপনের মনে হয়েছিল।
প্রসঙ্গ: তপন এক দুপুরবেলায় বসে একটা গোটা গল্প লিখে ফেলে। আস্ত একটা গল্প লিখে ফেলার পর প্রথমে সে নিজেই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু সে-ই গোটা গল্পটা লিখেছে ভেবে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। গল্পটার কথা সে প্রথমে জানায় ছোটোমাসিকে, কারণ ছোটোমাসি ছিল তার ‘চিরকালের বন্ধু’। ছোটোমাসি তার লেখাটা নিয়ে সেটা ছোটোমেসোকে দেখায়। তপন এতে কিছুটা লজ্জিত হলেও মনে মনে খুশি হয়। আসলে এটাই চেয়েছিল সে। এইসময়েই তপনের মনে প্রশ্নে উল্লিখিত ভাবের প্রকাশ ঘটে।
এ কথা মনে হওয়ার কারণ: তপন ভেবেছিল, লেখার প্রকৃত মূল্য একমাত্র তার ছোটোমেসোমশাই-ই বুঝবেন। কেননা তপনের এই নতুন মেসোমশাই ছিলেন একজন লেখক। তিনি অনেক বই লিখেছেন আর সেইসব বই ছেপেও বেরিয়েছে। তাই লেখার মূল্য অন্য সকলের থেকে তিনি বেশি বুঝবেন বলেই তপনের ধারণা ছিল। একজন লেখকই আর একজন লেখকের লেখার মূল্য বুঝতে পারেন। ‘রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।’ সাহিত্যবোধহীন একজন মানুষের পক্ষে তার লেখার যথার্থ মূল্য বোঝা সম্ভব নয় বলে তপন মনে করে। তাই ছোটোমেসোর হাতে তার লেখাটি যাওয়ায় সে পুলকিত হয়।

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. তপনের লেখা গল্পটি নিয়ে কে চলে গিয়েছিলেন?—
(ক) তপনের মেসোমশাই
(খ) তপনের ছোটোমাসি
(গ) তপনের মা
(ঘ) তপনের বাবা
২. তপন বিয়েবাড়িতে কী নিয়ে এসেছিল?-
(ক) ব্যাট ও বল
(খ) গল্পের বই
(গ) গানের খাতা
(ঘ) হোমটাস্কের খাতা
৩. তপন তার গল্পটা লিখেছিল-
(ক) দুপুরবেলা
(খ) সন্ধেবেলা
(গ) বিকেলবেলা
(ঘ) গভীর রাতে
৪. তপনের চিরকালের বন্ধু ছিল-
(ক) ছোটোমেসো
(খ) তপনের মা
(গ) ছোটোমামা
(ঘ) ছোটোমাসি 
৫. তপনের ছোটোমাসি তার থেকে কত বছরের বড়ো ছিলেন?-
(ক) আট
(খ) ছয়
(গ) সাত
(ঘ) দশ
৬. “ছুটি ফুরিয়ে এসেছে।”—ছুটিটি ছিল-
(ক) পুজোর
(খ) গরমের
(গ) বড়োদিনের
(ঘ) পরীক্ষা প্রস্তুতির
৭. বাড়িতে তপনের নাম হয়েছিল-
(ক) গল্পকার, লেখক
(খ) কবি, লেখক
(গ) কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী
(ঘ) কথাশিল্পী, গল্পকার
৮. তপন তার লেখা গল্পটা প্রথম শুনিয়েছিল-
(ক) বন্ধুদের
(খ) তার মাকে
(গ) ছোটোমেসোকে
(ঘ) ছোটোমাসিকে
৯. মামার বাড়িতে থেকে তপন প্রথম গল্পটি লিখেছিল—
(ক) দুপুরবেলা
(খ) সকালবেলা
(গ) বিকেলবেলা
(ঘ) রাত্রিবেলা
১০. তপন গল্প লেখার জন্য কী নিয়ে দুপুরবেলা তিনতলার সিঁড়িতে উঠে গেল?—
(ক) খাতা ও গল্পের বই
(খ) একটা খাতা ও পেন
(গ) একটা খাতা
(ঘ) পেন ও গল্পের বই

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “তপন কৃতার্থ হয়ে বসে বসে দিন গোনে।”— তপন কেন কৃতার্থ হয়েছিল?
উত্তর – ছোটোমেসো সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তপনের গল্পটি নিয়ে গিয়েছিলেন বলে তপন কৃতার্থ হয়েছিল।
২. “সেটা জানতে তো বাকি নেই।”—কী জানতে বাকি নেই?
উত্তর – গল্প জিনিসটা কী তা জানতে তপনের বাকি নেই।
৩. “হঠাৎ ভয়ানক একটা উত্তেজনা অনুভব করে তপন।”—তপন কেন উত্তেজনা অনুভব করেছিল?
উত্তর – একটি সত্যিকারের গল্প লিখে ফেলেছিল বলে তপন উত্তেজনা অনুভব করেছিল।
৪. গল্প লেখার পর তপনের কী মনে হয়েছিল? 
উত্তর – একটা গোটা গল্প সে লিখে ফেলেছে—এটা ভেবেই তপনের সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল, তার মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হয়ে উঠল। সে ভাবল এখন তাকেও লেখক বলা যায়।
৫. তপন তার গল্প লেখার কথা প্রথম কাকে বলেছিল?
উত্তর – তপন তার গল্প লেখার কথা প্রথম তার ছোটোমাসিকে বলেছিল।
৬. তপনের লেখা গল্প পড়ে ছোটোমাসি কী বলেছিল?
উত্তর – তপনের লেখা গল্প পড়ে ছোটোমাসি ‘বেশ লিখেছিস তো’ বলে বাহবা জানিয়ে প্রশংসা করলেও লেখাটি কোনো জায়গা থেকে টুকলিফাই করা কি না তা জানতে চেয়েছিল।
৭. “আর তোমরা বিশ্বাস করবে কিনা জানি না… –কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – একজায়গায় বসে তপনের একটা গোটা গল্প লিখে ফেলার প্রসঙ্গে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।
৮. “যেন নেশায় পেয়েছে।”—কীসের কথা বলা হয়েছে? 
উত্তর – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটিতে তপনের গল্প লেখার অক্লান্ত চেষ্টার কথা বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের”—তপনের গায়ে কখন এবং কেন কাঁটা দিয়ে উঠল? 
উত্তর – শিহরনের মুহূর্ত: জীবনের প্রথম গল্পটি লিখে ফেলার পর তপন নিজে যখন সেটা পড়েছিল তখনই তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল।
শিহরনের কারণ: একদিন দুপুরে যখন চারিদিক নিস্তব্ধ, সে একটা খাতা আর কলম নিয়ে মামাবাড়ির তিনতলার সিঁড়িতে বসে সারাদুপুর ধরে একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলে। গল্প লেখার পর সে নিজেই গোটা গল্পটা লিখেছে ভেবে অবাক হয়ে যায়। গল্প শেষ করার পর আনন্দে, উত্তেজনায় তপনের সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
২. “তপনকে এখন ‘লেখক’ বলা চলে”- এ কথা মনে হওয়ার কারণ কী? তপনের গল্পের নাম কী ছিল? 
উত্তর – মনে হওয়ার কারণ: তপন ছোটোবেলা থেকে অনেক বই পড়ে গল্পে আগ্রহী হয়ে ওঠে। একদিন দুপুরে তপন তার বিদ্যালয়ে ভরতির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা গোটা গল্প লিখে ফেলে। একটা গোটা গল্প নিজে লিখে ফেলেছে, এ কথা ভেবে সে অবাক হয়ে যায়। তাই তখন তপনের মনে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, তাকেও এখন লেখক বলা যেতে পারে।
তপনের লেখা গল্পের নাম: তপনের লেখা গল্পের নাম ছিল ‘প্রথম দিন’।
৩. “হঠাৎ ভয়ানক একটা উত্তেজনা অনুভব করে তপন।”— তপনের উত্তেজনার কারণ বর্ণনা করো। উত্তেজিত হয়ে তপন কী করেছিল?
উত্তর – উত্তেজনার কারণ: এক নির্জন দুপুরে মামার বাড়ির তিনতলার সিঁড়িতে বসে তপন হোমটাস্কের খাতায় একটি গল্প লিখে ফেলে। একাসনে বসে লেখা গল্পটি পড়ে সে নিজেই অবাক হয়। নিজের সামর্থ্যের প্রতি তার বিশ্বাস জন্মায়। সে সত্যিই একজন লেখক হতে চলেছে—এই ভাবনাই তাকে উত্তেজিত করে।
তপনের প্রতিক্রিয়া: উত্তেজিত তপন দ্রুত নীচে নেমে আসে এবং তার ‘চিরকালের বন্ধু’ ছোটোমাসিকে গল্প লেখার খবরটা দেয়।
8. “আঃ ছোটোমাসি, ভালো হবে না বলছি।”—কার উক্তি? এরুপ বলার কারণ কী?
উত্তর – বক্তা: প্রশ্নোধৃত বাক্যটি তপনের উক্তি।
বলার কারণ: তপন এক নিস্তব্ধ দুপুরে তার জীবনের প্রথম গল্পটি লিখে ফেলার পরে তার ‘চিরকালের বন্ধু’ ছোটোমাসিকে সেই খবর দিতে যায়। বছর আটেকের বড়ো ছোটোমাসি তার গল্পটা সবটা না পড়েই একটু চোখ বুলিয়ে লেখাটির প্রশংসা করে এবং জানতে চায় যে সেটি কোনো জায়গা থেকে তপন নকল করেছে কি না। এ কথার জবাব দিতে গিয়েই কিছুটা অভিমানের সুরে তপন প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি করে।
৫. “এদিকে বাড়িতে তপনের নাম হয়ে গেছে…”—বাড়িতে তপনের কী কী নাম কেন প্রচলিত হয়েছিল?
উত্তর – তপনের বিভিন্ন নাম: তপনের বাড়িতে নাম হয়েছিল ‘কবি’, ‘সাহিত্যিক’, ‘কথাশিল্পী’।
তপনের বিভিন্ন নাম প্রচলিত হওয়ার কারণ: তপন তার লেখক ছোটোমেসোমশাইয়ের থেকে বাহবা লাভের পর গল্প লেখার ব্যাপারে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে। মেসোমশাই পত্রিকায় প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার গল্পটি নিয়ে গিয়েছিলেন। তারজন্যও তপনের কাতর অপেক্ষা চলতে থাকে। এদিকে তার লেখা গল্পটি বাড়িতে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। বাড়ির সদস্যরা খানিক মশকরা ও ঠাট্টা মিশিয়েই তপনের নামের সঙ্গে ‘কবি’, ‘সাহিত্যিক’, ‘কথাশিল্পী’ | অভিধাগুলি জুড়ে দেন।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. ‘লেখার পর যখন পড়ল, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের।”কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে? সেই লেখা পড়ে তপনের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তর – উদ্দিষ্ট লেখা: তপন গরমের ছুটিতে মামার বাড়িতে এসে এক নির্জন দুপুরে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে গিয়ে একাসনে বসে একটি গল্প লিখে ফেলে। এখানে ওই গল্পটির কথাই বলা হয়েছে।
তপনের শিহরনের কারণ: নতুন মেসোকে দেখে তপনের গল্প লেখার উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল। আগে তার ধারণা ছিল, লেখকরা তাদের মতো সাধারণ মানুষ নন, অন্য কোনো অলৌকিক জগতের মানুষ। কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে তার সেই ধারণা বদলে যায়। ““লেখক’ মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয়, তপনদের মতোই মানুষ”—এই ভাবনা থেকেই তার লেখক হতে চাওয়ায় কোনো বাধা থাকে না। উৎসাহভরে হোমটাস্কের খাতা নিয়ে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে যায়। তারপর একাসনে বসে লিখে ফেলে গোটা একটি গল্প। তপন নিজের সৃষ্টিতে আনন্দিত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সেটি আগাগোড়া পড়ার পর তার শরীরে একটা শিহরন খেলে যায়। তপন ভাবতেই পারেনি এত সুন্দর একটা গল্প সে নিজেই লিখতে পারবে। নিজস্ব ভাব ও ভাবনার এই প্রকাশ দেখে তার গায়ে তখন কাঁটা দিয়ে ওঠে।

বহুৰিকল্পীয় প্রশ্ন [MCQ] ও উত্তর

ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।

১. কোন্ পত্রিকায় তপনের লেখা ছাপা হয়েছিল? —
(ক) ধ্রুবতারা
(খ) ভারতী
(গ) সাহিত্যচর্চা
(ঘ) সন্ধ্যাতারা
২. তপনের লেখা গল্পটার নাম কী ছিল?
(ক) ছুটি
(খ) অবসর
(গ) প্রথম দিন
(ঘ) কোনোটাই নয়
৩. তপনের লেখা গল্প সংশোধন করে দিয়েছিল-
(ক) তপনের ছোটোমেসো
(খ) তপনের ছোটোমাসি
(গ) তপনের মা
(ঘ) তপনের এক বন্ধু
৪. ছোটোমেসো কী নিয়ে তপনদের বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন? –
(ক) গল্পের বই
(খ) সন্ধ্যাতারা পত্রিকা
(গ) নতুন জামা
(ঘ) ভারতী পত্রিকা
৫. “বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের।”—তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে—
(ক) নতুন মেসোকে দেখে
(খ) তার গল্পটা ছাপা হয়েছে দেখে
(গ) মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকা দেখে
(ঘ) নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখে
৬. সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সূচিপত্রে তপনের কী নাম লেখা ছিল?-
(ক) শ্রীতপন কুমার রায়
(খ) তপন রায়
(গ) তপন
(ঘ) কোনোটাই নয়
৭. তপনকে তার ছাপার আকারে লেখা গল্পটা পড়ে শোনাতে বলেছিলেন—
(ক) তপনের মা
(খ) তপনের বাবা
(গ) তপনের দিদা
(ঘ) তপনের ছোটোমাসি

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. ”… এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা।”—কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে? 
উত্তর – ছোটোমাসি আর মেসোমশাইয়ের সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়িতে আসার কথা বলা হয়েছে।
২. “বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের।”- –কেন তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে? 
উত্তর – তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ছোটোমাসি আর মেসোমশাইয়ের কাছে সন্ধ্যাতারা পত্রিকাটি দেখে তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে, কারণ তাতেই তার গল্প প্রকাশের কথা ছিল।
৩. “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?”—কোন্ ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে? 
উত্তর – ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত তপনের গল্প হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে, এই ঘটনাকেই অলৌকিক বলা হয়েছে।
৪. “তা ঘটেছে, সত্যিই ঘটেছে।”—কী ঘটেছে? 
উত্তর – তপনের নিজের লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে—এই ঘটনাই ঘটেছে।
৫. তপনের লেখা গল্পটির নাম কী?
উত্তর – তপনের লেখা গল্পটির নাম ‘প্রথম দিন।
৬. “সূচিপত্রেও নাম রয়েছে।”—সেখানে কী লেখা ছিল?
উত্তর – আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সূচিপত্রে লেখা ছিল — ‘প্রথম দিন’ (গল্প) শ্রীতপন কুমার রায়।
৭. “সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়”—এই শোরগোলের কারণ কী ছিল? 
উত্তর – সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল কারণ সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের গল্প ছাপা হয়েছিল।
৮. “ক্রমশ ও কথাটাও ছড়িয়ে পড়ে।”—কোন্ কথাটা?
উত্তর – তপনের গল্প কাঁচা লেখা হওয়ায় তাতে একটু-আধটু কারেকশান করতে হয়েছে—তপনের মেসোমশাইয়ের এই কথাটা সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে।
৯. “আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম।”—কোন্ চেষ্টার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – তপনের মেজোকাকু বলেছিলেন যে তপনের মেসোমশাইয়ের মতো কেউ থাকলে তাঁরাও গল্প লেখার চেষ্টা করতেন।

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

১. “বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের।”—কখন, কেন তপনের এই অবস্থা হয়েছিল? 
উত্তর – সময়কাল: মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকা দেখে তপনের এরূপ অবস্থা হয়েছিল।
তপনের এই অবস্থা হওয়ার কারণ: তপনের লেখা গল্পটি তার নতুন মেসো সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেবেন বলে নিয়ে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন তপন সেই অপেক্ষায় বসেছিল। তারপর একসময় সে ভুলেই গিয়েছিল গল্পটির কথা। এরপর হঠাৎই তার ছোটোমাসি আর মেসো তাদের বাড়ি বেড়াতে এলেন। তপন মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকা দেখতে পেল। তার গল্প ছাপা হয়েছে—এই প্রত্যাশাতেই তার বুকের রক্ত যেন ছলকে উঠল।
২. “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?”—অলৌকিক ঘটনাটি কী? তাকে অলৌকিক বলার কারণ ব্যাখ্যা করো। 
উত্তর – অলৌকিক ঘটনার পরিচয়: অলৌকিক ঘটনাটি ছিল সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের লেখা প্রথম গল্পটির প্রকাশ।
অলৌকিক বলার কারণ: ‘অলৌকিক’ কথাটির অর্থ যা বাস্তবে সম্ভব নয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তপন যেদিন দেখল যে, সত্যিই ছোটোমেসোর প্রতিশ্রুতিমতো তার গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সেটা তার কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। কারণ ছাপার অক্ষরে তার লেখা গল্প হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে এ ঘটনাকে তপনের এতটাই অসম্ভব বলে মনে হয় যে, সে সেটিকে ‘অলৌকিক’ বলে মনে করে।
৩. “সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়”—’শোরগোল’ কথার অর্থ কী? কোন্ ঘটনায় এই শোরগোল পড়ে যায় ? 
উত্তর – ‘শোরগোল’ শব্দের অর্থ: ‘শোরগোল’ কথাটির অর্থ হইচই।
শোরগোল পড়ে যাওয়া: নিজের লেখা প্রথম গল্পটি ছোটোমেসোর প্রতিশ্রুতিমতো পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ে তপন। এই সময়েই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে ছোটোমাসি এবং মেসোর আগমন ঘটে তাদের বাড়িতে। ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা, সূচিপত্রে নিজের নাম দেখে তপন যখন শিহরিত, তখনই বাড়িতেও শোরগোল পড়ে যায়। তপনের লেখা গল্পটি সকলের মধ্যেই আলোড়ন তোলে।
৪. “আজ আর অন্য কথা নেই”—কোন্‌ দিনের কথা বলা হয়েছে? সেদিন অন্য কোনো কথা নেই কেন?
উত্তর – উদ্দিষ্ট দিন: সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে যেদিন তপনের ছোটোমাসি এবং ছোটোমেসো তপনের বাড়িতে আসেন এখানে সেই দিনের কথা বলা হয়েছে।
অন্য কোনো কথা না-থাকার কারণ: সন্ধ্যাতারা পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছিল তপনের লেখা প্রথম গল্প ‘প্রথম দিন’। এ ঘটনায় বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। মেসোর কারেকশানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তপনের বাবা, তার মেজোকাকু-সহ গোটা বাড়ি তপনের গল্প আর তা প্রকাশে মেসোর ভূমিকা নিয়েই শুধু আলোচনা করে। তাই সেদিন সেখানে অন্য কোনো কথা ছিল না।
৫. “তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এইসব কথার মধ্যে।” ‘এইসব কথা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ কী? 
উত্তর – ‘এইসব কথা’-র অর্থ: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের গল্প প্রকাশের পরে মেসো সুকৌশলে প্রকাশ করে দেন তাঁর ‘কারেকশান’-এর কথা। সে কথাটাই এরপর ছড়িয়ে পড়ে সারা বাড়িতে। তপনের বাবা যাবতীয় কৃতিত্ব মেসোমশাইকেই দেন। তার মেজোকাকু বলেন যে, ওরকম মেসো থাকলে তাঁরাও গল্প লেখার চেষ্টা করতেন। এমনকি তিনি না থাকলে তপনের গল্প সম্পাদক যে ছুঁয়েও দেখতেন না, সে-কথাও বলা হয়। ‘এইসব কথা তপনকে প্রভাবিত করে।
তপনের ছারিয়ে যাওয়ার কারণ: তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ এইসব কথা তার সব আনন্দকে অদৃশ্য করে দেয়।
৬. “…সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।” কার কথা বলা হয়েছে? সেই আহ্লাদ না হওয়ার কারণ কী ছিল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: প্রশ্নোদৃত অংশে তপনের কথা বলা হয়েছে।
আহ্লাদ না হওয়ার কারণ: তপনের ছোটোমেসোর সহায়তায় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তার গল্প প্রকাশিত হলে চারিদিকে সবাই মেসোর মহত্বের কথাই বলতে থাকে। মেসো না থাকলে কোনোদিনই সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদক তপনের লেখা ছুঁয়েও দেখত না––এরকম কথাও অনেকে বলে। এইসব কথার মাঝখানে আসল যে লেখক, সে-ই যেন কোথাও হারিয়ে যায়। তপনের যেন কোনো কৃতিত্বই নেই। এইসব দেখে লেখা ছেপে আসার পর যে আহ্লাদ হওয়া উচিত ছিল তা হয় না তপনের।
৭. “এতক্ষণে বইটা নিজের হাতে পায় তপন।”—কোন বইটার কথা বলা হয়েছে? সেটি হাতে পেয়ে তপন কী দেখতে পেয়েছিল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট বই: সন্ধ্যাতারা নামক পত্রিকায় তপনের গল্প ছাপা হয়েছিল। বই বলতে এখানে ওই পত্রিকাকেই বোঝানো হয়েছে।
তপনের অি তীব্র উত্তেজনা আর কৌতূহল নিয়ে তপন পত্রিকাটির পাতা ওলটায়। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের গল্প পড়তে গিয়ে সে চমকে ওঠে। গল্পের প্রতিটি লাইন তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন মনে হয়। তার লেখার সঙ্গে ছাপার অক্ষরের কোনো মিল নেই। নিজের লেখা গল্পের মধ্যে সে আর নিজেকেই খুঁজে পায় না।
৮. “তপন লজ্জা ভেঙে পড়তে যায়।”— তপন তার লজ্জা কাটিয়ে কী পড়তে যায় এবং পড়তে গিয়ে সে কী দেখে?
উত্তর – তপন তার লজ্জা কাটিয়ে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত নিজের গল্পটি পড়তে থাকে। বিদ্যালয়ে ভরতি হওয়ার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি নিয়ে তপন গল্পটি লিখেছিল। গল্পের নাম দিয়েছিল ‘প্রথম দিন’। এরপর তপনের মেসোমশাই গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। পত্রিকাটি হাতে পেয়ে তপনের মা তাকে লেখাটি পড়ে শোনাতে বলেন। পড়তে গিয়ে সে দেখে তার লেখাটা আগাগোড়াই ছোটোমেসো সংশোধন করেছেন। তার প্রত্যেকটা লাইন তপনের অপরিচিত, সেখানে সে নিজেকেই খুঁজে পায় না।
৯. “সবাই শুনতে চাইছে তবু পড়ছিস না?”—কী শুনতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে? তা না পড়ার কারণ কী? 
উত্তর – শুনতে চাওয়া বিষয়: উদ্ধৃত অংশটিতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হওয়া তপনের গল্পটি শুনতে চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
না পড়তে পারার কারণ: তপনের মা তপনকে সন্ধ্যাতারায় প্রকাশিত গল্পটা পড়ে শোনাতে বলেন। কিন্তু গল্পটি কিছুটা পড়ে তপন অবাক হয়ে যায়। গল্পটা এমনভাবে কারেকশান করা হয়েছে যে, তপন তার মধ্যে নিজের লেখা খুঁজে পাচ্ছিল না। সম্পূর্ণ নতুন একটা গল্প বলেই তার মনে হয়েছে সেটাকে। গভীর হতাশা আর দুঃখ তপনকে যেন নির্বাক করে দিয়েছিল। তাই সে গল্পটা আর পড়তে চায়নি।
১০. “তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন”।’আজ’ বলতে কোন্ দিনকে বোঝানো হয়েছে? তপনের এরকম মনে হওয়ার কী কারণ ছিল ?
উত্তর – উদ্দিষ্ট দিন: সন্ধ্যাতারা পত্রিকাটি যেদিন তপনের বাড়িতে আসে এবং মায়ের কথায় সে সেখানে তার প্রকাশিত গল্পটি পড়তে যায়, সেদিনের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
তপনের মনে হওয়ার কারণ: গল্প পড়তে গিয়ে তপন দেখে সংশোধনের নামে ছোটোমেসো সেই লেখার আগাগোড়াই বদলে দিয়েছেন। তার নিজের লেখার সঙ্গে ছেপে আসা লেখার কোনো মিল নেই। লজ্জায়, অপমানে তপন ভেঙে পড়ে। তার চোখে জল চলে আসে। যে দিনটি সবচেয়ে আনন্দের দিন হতে পারত, সেটিকেই তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন বলে মনে হয়।
১১. “শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন”কোন্ দুঃখের মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে? তপন গভীরভাবে কী সংকল্প করেছিল?
উত্তর – দুঃখের মুহূর্ত: নিজের লেখা হিসেবে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপন যখন অন্যের লেখা পড়েছিল সেটাই ছিল তার চরম দুঃখের মুহূর্ত।
তপনের গভীর সংকল্প: নিজের লেখা পড়তে গিয়ে তপন দেখে, মেসোমশাই আগাগোড়াই লেখাটা সংশোধন করে নিজের পাকা হাতে গল্পটি লিখে দিয়েছেন। অপমানে, লজ্জায় তপন প্রতিজ্ঞা করে যদি আর কোনোদিন লেখা ছাপানোর হয়, সে নিজে গিয়ে তা ছাপতে দেবে। না ছাপলেও ক্ষতি নেই, অন্তত নিজের নামে অন্য কারও লেখা তাকে পড়তে হবে না।
১২. “যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা, সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।”—আহ্লাদ’ হবার কথা ছিল কেন? আহ্লাদ খুঁজে’ না পাওয়ার কারণ কী ? 
উত্তর – আহ্লাদ হবার কারণ: তপনের লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার নাম ছাপা হবে—এ কথা ভেবেই তপনের আহ্লাদ হওয়ার কথা ছিল।
আহ্লাদ খুঁজে না পাওয়ার কারণ: তপনের ছোটোমেসোর সহায়তায় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তার গল্প প্রকাশিত হলে চারিদিকে সবাই মেসোর মহত্ত্বের কথাই বলতে থাকে। মেসো না থাকলে কোনোদিনই সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদক তপনের লেখা ছুঁয়েও দেখত না—এরকম কথাও অনেকে বলে। এইসব কথার মাঝখানে আসল যে লেখক, সে-ই যেন কোথাও হারিয়ে যায়। তপনের প্রত্যাশামতো কেউ লেখকের প্রশংসা করে না। তপনের যেন কোনো কৃতিত্বই নেই। এইসব দেখে লেখা ছেপে আসার পর যে আহ্লাদ হওয়ার উচিত ছিল তা তপনের হয় না।
১৩. “তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই, তার থেকে অপমানের!” —কার সম্পর্কে এ মন্তব্য? ‘তার চেয়ে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট জন: ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন সম্পর্কে এ মন্তব্য।
‘তার চেয়ে’ কথার অর্থ মা-র কথামতো সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত নিজের গল্পটি পড়তে গিয়ে তপন দেখে গল্পের প্রতিটি লাইন তপনের অপরিচিত। সংশোধনের নামে ছোটোমেসো গল্পটি নতুন করে লিখে দিয়েছেন। সেই গল্পের মধ্যে তার লেখার কোনো ছোঁয়াই ছিল না। নিজের লেখা পড়তে বসে অন্যের লেখা পড়ার থেকে দুঃখের কিছু আছে বলে তপনের মনে হয় না। ‘তার চেয়ে’ কথাটিতে এই অপমানজনক বিষয়টির কথাই বোঝানো হয়েছে।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. “সত্যিই তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এল আজ?” —কোন্ দিনটির কথা এখানে বলা হয়েছে? দিনটি সম্পর্কে এই উচ্ছ্বাসের কারণ লেখো। 
উত্তর – উদ্দিষ্ট দিন: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের তপন তার নতুন মেসোর মাধ্যমে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় একটি গল্প পাঠিয়েছিল। গল্পটি ছাপার অক্ষরে দেখার আশায় তপন দিন গুনতে থাকে। তারপর একদিন ছোটোমাসি আর মেসো তাদের বাড়ি বেড়াতে আসেন। মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা দেখে চমকে ওঠে তপন। এখানে মেসোর আসার এই বিশেষ দিনটির কথাই বলা হয়েছে।
উচ্ছ্বাসের কারণ: লেখক ছোটোমেসোমশাই তপনের গল্পটিকে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও আর কোনো খবর না পেয়ে সে একপ্রকার নিশ্চিত হয়েছিল যে, গল্পটি আর ছাপা হবে না। তাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা হাতে নিয়ে ছোটোমাসি আর মেসোকে আসতে দেখে তার বুকের রক্ত ছলকে ওঠে। স্বপ্নপূরণের আশা আর নিরাশার মাঝে দুলতে থাকে তার মন। জীবনের প্রথম লেখা, সর্বোপরি কাঁচা হাতের লেখা সত্যিই ছাপা হয়েছে কি না, তা নিয়ে তার মনে সংশয় দেখা দেয়। যদি সত্যিই ছাপা হয় তাহলে দিনটি তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন হবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেকদিনের ইচ্ছা হয়তো এবার পূরণ হতে চলেছে—এই ভেবেই কিছু সংশয় থাকলেও তপনের মন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।
২. “তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এইসব কথার মধ্যে।”— কোন্ সব কথার মধ্যে? তপন কেন হারিয়ে যায়?
উত্তর – উদ্দিষ্ট বক্তব্য: ‘জ্ঞানচক্ষু’গল্পে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের লেখা গল্প প্রকাশের পরে বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। মেসো অবশ্য সুকৌশলে তাঁর দ্বারা ‘কারেকশান’-এর কথা জানিয়ে দেন। ক্রমশ তপনের লেখা অপেক্ষা মেসোর কারেকশানের কথাই সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তপনের বাবাও লেখাটি প্রকাশের কৃতিত্ব মেসোকেই দেন। মেজোকাকু বুঝিয়ে দেন, মেসো না থাকলে তপনের লেখা প্রকাশিত হত না। এভাবে সেদিন সারা বাড়িতে তপনের নতুন মেসোর মহত্ত্বের কথাই আলোচিত হয়। তপন এইসব কথার মধ্যেই যেন হারিয়ে যায়।
তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ: এসব কথায় তপনের লেখকপ্রতিভার কোনো স্বীকৃতি না থাকায় তপন এইসব কথার মধ্যে হারিয়ে যায়। এমনও কথা তপন শুনেছিল যে মেসোমশাই যদি নিজে গিয়ে না লেখাটি দিতেন তাহলে সন্ধ্যাতারার সম্পাদক তপনের গল্প ‘কড়ে আঙুল’ দিয়ে ছুঁয়েও দেখত না। এইসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম গল্প প্রকাশে যে প্রবল আনন্দ হওয়ার কথা ছিল, তপন তা খুঁজে পায় না।
৩. “গল্প ছাপা হলে যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা, সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।” –কার, কোন গল্প, কোথায় ছাপা হয়েছিল? গল্প ছাপা হলেও সে আহ্লাদ খুঁজে পায়নি কেন? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি-গল্প-স্থান: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপন একটি গল্প লিখেছিল। সেই গল্পটি তপনের নতুন মেসোর সহায়তায় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
আহ্লান্দ খুঁজে না পাওয়ার কারণ: তপন বয়সে কিশোর। তার নবীন আবেগের প্রকাশ ঘটে তার লেখা ‘প্রথম দিন’ নামক জীবনের প্রথম গল্পটিতে। গল্পটি সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। মেসোর হাতে পত্রিকাটি দেখে বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তার। পত্রিকার সূচিপত্রে গল্পের ও নিজের নাম দেখেই তপনের মন নতুন আশায় জেগে ওঠে। বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। তপনের মেসোমশাই অবশ্য মৃদু হেসে জানিয়ে দেন যে, ‘নেহাত কাঁচা’ লেখা হওয়ায় লেখাটি তাঁকে সংশোধন করতে হয়েছে। এরপরেই তপনের বাবা-সহ বাড়ির প্রায় সকলে ছোটোমেসোকেই কৃতিত্ব দিতে থাকেন। তপনের মেজোকাকু মন্তব্য করেন—“তা ওরকম একটি লেখক মেসো থাকা মন্দ নয়। আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম।” বাড়ির কর্তাস্থানীয় ব্যক্তিদের এইসব কথার মধ্যে একটা ঔদাসীন্য ও উপেক্ষা লুকোনো ছিল । এই কারণেই নিজের লেখা ছাপা হওয়ায় যেরকম আহ্লাদ হওয়ার কথা তপন তা খুঁজে পায়নি।
8. “এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা, তপনের অপরিচিত।”— ‘এর’ বলতে কীসের কথা বলা হয়েছে? বিষয়টি পরিস্ফুট করো।
উত্তর – ‘এর’ কথার অর্থ: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ‘এর’ বলতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত তপনের গল্পটির কথা বলা হয়েছে।
বিষয়টির বিশ্লেষণ: তপনের ছোটোমেসোমশাইয়ের উদ্যোগে তপনের লেখা তার জীবনের প্রথম গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল সন্ধ্যাতারা পত্রিকায়। যদিও গল্পটি প্রকাশের পরেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ‘নেহাত কাঁচা’ লেখা হওয়ায় গল্পটিতে তাঁকে কিছু কারেকশান করতে হয়েছে। সে-কথা সারা বাড়িতে প্রচারিতও হয়ে গিয়েছিল। এরপরে তপনের মা তপনকে তার ‘নিজের মুখে’ গল্পটি পড়ে শোনাতে বলেন। তপন তার প্রাথমিক লজ্জা কাটিয়ে গল্পটি পড়তে যায়। কিন্তু পড়তে গিয়ে অবাক হয়ে যায় তপন। কারেকশানের নামে মেসোমশাই গল্পটিকে আগাগোড়া সংশোধন করে দিয়েছেন।—“নতুন করে লিখেছেন, নিজের পাকা হাতে কলমে!” তাই গল্পের প্রত্যেকটি লাইনকে তার আনকোরা এবং অপরিচিত মনে হয়। সেই গল্পের মধ্যে সে কোথাও নেই। এক প্রচণ্ড কষ্টের অনুভূতি হয় তপনের। সে বোবার মতো বসে থাকে। এই ঘটনায় লেখকসত্তার অপমানকেই সে উপলব্ধি করে। বিষয়টি মেনে নেওয়া তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে ওঠে।
৫. “এর মধ্যে তপন কোথা?”—‘এর মধ্যে’ বলতে কীসের মধ্যে? এর মধ্যে তপন নেই বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 
উত্তর – ‘এর মধ্যে’ কথার অর্থ: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ‘এর মধ্যে’ বলতে তপনের লেখা প্রথম গল্প ‘প্রথম দিন’-এর কথা বলা হয়েছে।
তপন নেই–বলার অর্থ: তপনের ছোটোমেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের লেখা জীবনের প্রথম গল্পটি প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু গল্প প্রকাশের পরে তিনি জানিয়ে দেন যে ‘নেহাত কাঁচা’ হওয়ায় লেখাটিতে কিছু কারেকশান করতে হয়েছে। কথাটি চারদিকে প্রচারিত হয়ে যায় এবং তপনের লেখার গুণকে ছাপিয়ে ওঠে মেসোর মহত্ত্বের কথা। পরে তপন যখন তার মায়ের কথায় গল্পটি নিজে পাঠ করতে শুরু করে তখন সে অবাক হয়ে যায়। সংশোধন করতে গিয়ে ছোটোমেসো প্রায় গোটা গল্পটাই পালটে দিয়েছেন। সে তার লেখা গল্পের সঙ্গে এই গল্পের কোনো মিলই খুঁজে পায় না। “এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা, …।” সংশোধন করতে গিয়ে গোটা গল্পটাকেই নিজের পাকা হাতের কলমে নতুন করে লিখে দিয়েছেন ছোটো মেসোমশাই। তপন গল্পটি আর পড়তে পারে না। নিজের ভাবনা কিংবা লেখকসত্তাকে গল্পের মধ্যে একেবারেই খুঁজে পায় না তপন।
৬. “তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে।”— তপনের এরকম অবস্থার কারণ বর্ণনা করো। 
উত্তর – আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের লেখা গল্প তার ছোটোমেসোমশায়ের উদ্যোগে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি গল্পটিকে প্রকাশযোগ্য করে তোলার জন্য যে সংশোধন করেছেন সেকথা সুকৌশলে প্রচার করে দেন। তপনের লেখার থেকে মেসোমশায়ের সংশোধনের কথাটাই বেশি আলোচিত হতে থাকে। আর এর মধ্য থেকে গল্প ছাপার আনন্দটা তপন যেন আর খুঁজে পায় না। কিন্তু এর থেকেও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তার হয়, যখন তার মা তপনকে নিজের মুখে গল্পটা পড়তে বলেন। লজ্জা ভেঙে তপন যখন গল্পটা পড়তে যায় দেখে তার প্রত্যেকটি লাইন “নতুন আনকোরা, তপনের অপরিচিত।” সে গল্পের মধ্যে তপনের নিজের লেখা কোথাও নেই। সংশোধনের নামে ছোটোমেসো তপনের গল্পটিকে নতুন করে লিখেছেন, “তাঁর নিজের পাকা হাতের কলমে।” নিজের গল্পের এই পরিণতিই তপনকে বাক্রুদ্ধ করে দেয়। সে আর পড়তে পারে না, বোবার মতো স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে।
৭. “তপন বইটা ফেলে রেখে চলে যায়,”—তপন বইটা ফেলে রেখে চলে যায় কেন? এরপর সে কী করেছিল? 
উত্তর – তপনের চলে যাওয়ার কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে ছোটোমেসোমশাইয়ের উদ্যোগে তপনের গল্প প্রকাশিত হয় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায়। তবে মেসো সবাইকে জানিয়ে দেন যে লেখাটি ‘নেহাত কাঁচা’ হওয়ায় তাঁকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হয়েছে। ক্রমে তপনের প্রতিভাকে ছাপিয়ে ছোটোমেসোর মহত্ত্বের কথাই প্রচারিত হয়ে যায়। এরপরে তপন যখন মায়ের নির্দেশে গল্পটি নিজে পাঠ করতে যায়, দেখে গল্পের প্রত্যেকটি লাইন তপনের অপরিচিত। সে হতবাক হয়ে যায়, তার পড়া থেমে যায়। মেসোমশাই সংশোধনের নামে গোটা গল্পটাই যে নতুনভাবে লিখে দিয়েছেন! আর সেই গল্পের ভিতর থেকে তপনের লেখা একেবারে হারিয়ে গিয়েছে। মা-র ধমকে সে আবার পড়তে শুরু করে, কিন্তু গল্পটি মাথায় ঢোকে না তার। অনেক প্রশংসা হয়, লেখক মেসোর ভূমিকার কথাও বলে অনেকে। কিন্তু তপন তখন এসব শুনতে পায় না। হতাশায় বইটা ফেলে রেখে সে উঠে চলে যায়।
পরবর্তী ঘটনা: বইটা ফেলে রেখে তপন ছাদে চলে যায়, শার্টের তলা দিয়ে চোখ মোছে। সে সংকল্প করে যে এরপর যদি কখনও লেখা ছাপতে হয়, তা সে নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবে। নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন সে আর কোনোভাবেই পড়বে না।
৮. “তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।”—তপনের এই মনে হওয়ার কারণ গল্পের কাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো।
অথবা, ‘আজ’ বলতে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ কী? 
উত্তর – উদ্দিষ্ট দিন: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে যেদিন তপনের ছোটোমাসি আর মেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তাদের বাড়িতে এসেছিলেন এবং যেখানে তার প্রথম গল্প ছাপা হয়েছিল— সেদিনের কথা বলা হয়েছিল।
তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তার নতুন মেসোমশাইকে দেখে লেখকদের সম্পর্কে তপনের কাল্পনিক ধারণা সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। সে অবাক হয়েছিল এই দেখে যে, লেখকরাও একেবারেই সাধারণ মানুষ। তখন তপনের মনেও লেখক হওয়ার সাধ জেগে ওঠে এবং সে লিখে ফেলে তার জীবনের প্রথম গল্পটি। মৌলিক বিষয়ভাবনা: কৌশলে ছোটোমাসির হাত ঘুরে সে গল্প পৌঁছেও যায় মেসোমশাইয়ের কাছে। কিছু কারেকশানের কথা বললেও তপনের বিষয়ভাবনার মৌলিকতার কথা বলে সেটিকে ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেসোমশাই। অপেক্ষারত তপন: শুরু হয় তপনের দিন গোনা। একসময় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেই লেখা—‘প্রথম দিন’। কিন্তু যা হতে পারত তপনের জীবনের ‘সবচেয়ে সুখের দিন’, তা-ই হয়ে যায় তার ‘সবচেয়ে দুঃখের দিন’। অলৌকিক ঘটনা: ছাপার অক্ষরে নিজের যে লেখা প্রকাশকে তার ‘অলৌকিক’ ঘটনা বলে মনে হয়েছিল, তাই তাকে প্রায় বাক্যহীন করে দেয়। চারপাশে তপনের গল্পের প্রশংসার থেকেও মেসোর মহত্ত্বই সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। স্বপ্নভঙ্গ: তপনের অপমান তীব্র হয় লেখাটি পড়তে গিয়ে। সে দেখে, রচনার একটি লাইনও তার চেনা নয়— মেসোমশাই গল্পটিকে আগাগোড়াই কারেকশান করে দিয়েছেন। লেখক তপন হারিয়ে গিয়েছে সেই গল্প থেকে। চোখ জলে ভিজে যায় তপনের।
৯. “শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন,”— তপনের দুঃখের কারণ কী? সে কী ধরনের সংকল্প গ্রহণ করেছিল?
উত্তর – তপনের দুঃখের কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন ভাবত লেখকরা বোধ হয় অন্য জগতের বাসিন্দা। ইতিমধ্যে তার ছোটোমাসির বিয়ে হয় একজন লেখকের সঙ্গে। তপন দেখতে পায়, মেসোও তার বাবা| কাকুর মতোই একজন স্বাভাবিক মানুষ। তখন থেকেই লেখক হওয়ার জেদ তার মাথায় চেপে বসে। সে লিখেও ফেলে একটি গল্প। লেখক মেসো সেই গল্পটি সন্ধ্যাতারা নামক একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। ছাপানো লেখা হাতে পেয়ে তপন হতভম্ব হয়ে যায়। সে দেখতে পায়, পুরো লেখাটাই তার নতুন মেসো সংশোধন করে দিয়েছেন। তপন এই লেখার মধ্যে নিজেকেই আর খুঁজে পায় না। এতে তপন অপমানিত বোধ করে। নিজের সৃষ্টির এই আগাগোড়া পরিবর্তনই তপনের দুঃখের কারণ।
গৃহীত সংকল্প: নিজের গল্পের এই আমূল পরিবর্তন দেখে লজ্জিত ও দুঃখিত তপন এক দৃঢ় সংকল্প করে। সে বুঝতে পারে, নিজের লেখা কাঁচা হলেও অন্যের দ্বারা সংশোধন করানো উচিত নয়। তাই তপন প্রতিজ্ঞা করে, এবার থেকে সে নিজে গিয়ে পত্রিকা সম্পাদকের হাতে লেখা দিয়ে আসবে। নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন যেন তাকে আর কখনোই পড়তে না হয়।
১০. “তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই, তার থেকে অপমানের!” — দুঃখ আর অপমানের কারণ কী? এই দুঃখ আর অপমান দূর করতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী সংকল্প গ্রহণ করেছিল?
অথবা, দুঃখ আর অপমানের কারণ কী ? এই দুঃখ আর অপমান থেকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী শিক্ষা লাভ করেছিল? 
উত্তর – দুঃখ আর অপমানের কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের ধারণা ছিল লেখকরা কোনো সাধারণ মানুষ নন, আকাশ থেকে পড়া অতিমানবিক কোনো প্রতিভা। তপনের এই ধারণা দূর হয় তার নতুন মেসোকে দেখে। লেখক হওয়ার প্রবল ইচ্ছা তার মনেও জেগে ওঠে। মামার বাড়িতে বসেই তপন লিখে ফেলে একটা গল্প। মেসো প্রতিশ্রুতি দেন সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তিনি সেটা ছাপিয়ে দেবেন। কিন্তু ছাপানো গল্পটা পড়ে তপন হতবাক হয়ে যায়। গল্পের প্রতিটি লাইন নতুন, আনকোরা। ছোটোমেসো সংশোধনের নামে গল্পটি নতুন করে লিখে দিয়েছেন। তার মধ্যে তপন নিজেকে একেবারেই খুঁজে পায় না। তার মনে হয় লেখাটা তার নয়। নিজের লেখার আমূল পরিবর্তন দেখে তপন দুঃখ পায় ও অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে।
গৃহীত সংকল্প: দুঃখ আর অপমান থেকে তপন নতুন এক অভিজ্ঞতা লাভ করে। তপন সংকল্প করে, ভবিষ্যতে সে যদি কখনও লেখা ছাপতে দেয়, তাহলে সে নিজেই পত্রিকা সম্পাদকের কাছে দিয়ে আসবে। তাতে ছাপা হোক বা না হোক তার দুঃখ নেই। কেউ তো আর বলতে পারবে না, “অমুক তপনের লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে।” আত্মমর্যাদাসম্পন্ন তপন আরও বুঝেছিল, অপরের সাহায্য নিয়ে কখনোই লেখক হওয়া যায় না।

সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

১. “তপন কৃতার্থ হয়ে বসে বসে দিন গোনে।”—কী কারণে তপন দিন গুনছিল? তার দিন গোনার ফল কী হয়েছিল? 
উত্তর – তপনের দিন গোনার কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের লেখা গল্পটি পড়েন তার লেখক ছোটোমেসোমশাই। সবার সামনে তিনি তপনের লেখার বিষয় নির্বাচনের প্রশাংসা করেন। সব শেষে তিনি লেখাটি ছাপানোর আশ্বাস দিয়ে সেটি নিয়ে চলে গেলে তপনের আহ্লাদের অন্ত থাকে না। মেসোর ক্ষমতার প্রতি অগাধ আস্থাবান তপন পত্রিকায় নিজের লেখা দেখার আশায় অধীর হয়ে দিন গুনতে থাকে।
দিন গোনার ফল: একসময় তপনের প্রতীক্ষার অবসান হয়। সে সন্ধ্যাতারা পত্রিকাটি হাতে পায়। লেখকসূচিতে নিজের নাম এবং গল্পের শিরোনাম দেখে তপন শিহরিত হয়। কিন্তু মায়ের কথায় গল্পটি পড়ে শোনাতে গিয়ে দেখে, তার মেসোমশাই একটু-আধটু কারেকশান করার নামে লেখাটার আদ্যোপান্তই বদলে ফেলেছেন। গোটা গল্পের একটি বাক্যও সে নিজের লেখা বলে চিনতে পারে না এবং ক্রমশ উপলব্ধি করে মেসোমশাই শুধু গল্পটি প্রকাশের ব্যবস্থাই করেননি, শেষপর্যন্ত গোটা গল্পটিই তাঁর লেখা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কৃতিত্বের কোনো অংশই তপনের নিজের প্রাপ্য নয়। গভীর দুঃখে ভেঙে পড়লেও তপন সেই মুহূর্তেই প্রতিজ্ঞা করে যে, এরপর নিজের লেখা সে নিজে গিয়েই প্রকাশকের দফতরে ছাপতে দিয়ে আসবে। তাতে ছাপা হয় হবে, না হয় না হবে।
২. নিথর দুপুরবেলায় তপন কী করেছিল আর তারপর কী ঘটনা ঘটেছিল সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – নিথর দুপুরবেলায় তপনের কৃতকাজ: গল্প লেখা: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন এক নির্জন দুপুরবেলায় তার হোমটাস্কের খাতায় একটা গোটা গল্প লিখে ফেলে। রোমাঙ্কিত হওয়া: গল্প লেখার পর আনন্দে আর রোমাঞ্চে তার সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সে তার গল্প লেখার কথা প্রথম বলে তার ছোটোমাসিকে। ছোটোমাসি তার গল্পটা পড়ে একপ্রকার জোর করেই ছোটোমেসোর হাতে সেটি দিয়ে দেয় এবং গল্পটি প্রকাশের অনুরোধও জানায়। ছোটোমেসোর বক্তব্য: ছোটোমেসো গল্পটা পড়ে কিছু সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি তপনকে কথা দেন যে তার লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থাও করে দেবেন।
পরবর্তী ঘটনা: মেসোমশাই তাঁর কথা রাখেন। তিনি সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় লেখাটি ছাপান এবং সেটা তপনকে দেখানোর জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু তপন সেই লেখা সবাইকে পড়ে শোনাতে গিয়ে দেখে, তার হাতে লেখা গল্পের সঙ্গে ছাপার অক্ষরে লেখার কোনো মিল নেই। তা পুরোপুরি মেসোমশাইয়ের পাকা হাতের লেখা। নিজের নামে অন্যের লেখা পড়তে গিয়ে লজ্জায়, অপমানে সে ভেঙে পড়ে। সে দৃঢ় সংকল্প করে, যদি কখনও নিজের লেখা ছাপতেই হয়। তাহলে নিজে গিয়ে সেটা ছাপতে দেবে, অন্যের দয়া গ্রহণ করবে না।
৩. ‘ জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন কীভাবে হয়েছে তা বর্ণনা করো।
উত্তর – লেখক সম্পর্কে ধারণা: তপনের নিজস্ব ভাবনায় লেখকরা ছিল অন্য জগতের মানুষ। কিন্তু তার লেখক ছোটোমেসোকে দেখে এবং তাঁর আচার-ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে তপন বোঝে, লেখকরা সাধারণ মানুষের মতোই। সেই মুহূর্তে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। যদিও তপনের জ্ঞানচক্ষু প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক পরে খুলেছিল। ছোটোমাসির ভূমিকা: তপনের সারাদুপুর ধরে লেখা গল্পটা তার ছোটোমাসি একরকম জোর করেই তার মেসোকে দেখায়। ছোটোমেসো সেই লেখার প্রশংসাও করেন। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও বলেন যে, গল্পটার একটু সংশোধনের দরকার। ছোটোমেসোর বক্তব্য: ছোটোমেসো সেই লেখা ছাপানোর ব্যবস্থাও করে দেবেন বলে কথা দেন। তপন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখবে বলে।
গল্পপ্রকাশ: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় সত্যিই তার লেখা একসময় প্রকাশিত হয়। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে তপন এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করে। নিজস্বতা খুঁজে না-পাওয়া: কিন্তু সবাইকে লেখাটা পড়ে শোনাতে গিয়ে সে ছাপার অক্ষরে লেখার সঙ্গে নিজের লেখাটির কোনো মিল খুঁজে পায় না। পুরো লেখাটা আগাগোড়াই তার মেসোমশাইয়ের সংশোধন করা। গভীর দুঃখ ও জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন: দুঃখে, লজ্জায়, অপমানে তপন ভেঙে পড়ে। এবার যেন প্রকৃতই তার অন্তর্দৃষ্টি জেগে ওঠে। নিজের সৃষ্টির প্রতি অধিকারবোধ জন্মায় তপনের মনে। সে দৃঢ় সংকল্প করে, নিজের লেখা সে নিজেই ছাপতে দেবে, অন্যের দয়া গ্রহণ করবে না।
৪. তপনের লেখক হওয়ার পিছনে তার ছোটোমাসির ভূমিকা কতখানি ছিল আলোচনা করো।
উত্তর – সূচনাপর্বে ভূমিকা: ছোটোমাসির বিয়ে হওয়ার পর নতুন মেসোমশাইকে দেখে লেখক সম্পর্কে তপনের ধারণা সম্পূর্ণ পালটে যায়। কেন না নতুন মেসো একজন লেখক এবং তিনিও আর পাঁচজন মানুষের মতোই। এবার তপন নিশ্চিত হয়, তার পক্ষে লেখক হওয়ার পথে আর কোনো বাধা নেই। সুতরাং তপনের লেখক হওয়ার সূচনাপর্বটি তৈরি করে দিয়েছে তার মাসি। তপনের লেখা নিয়ে তার মাসিই তাকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন।
গল্প লেখা ও গল্পপ্রকাশে ভূমিকা: দুপুরবেলা হোমটাস্কের খাতায় তপন একটি গল্প লিখে প্রথমে তার ছোটোমাসিকেই দেখায়। এরপর তপনের লেখা গল্পটা তার মাসিই নতুন মেসোকে পড়তে দিয়ে বলেছেন—“তা হলে বাপু তুমি ওর গল্পটা ছাপিয়ে দিও।”
মূল্যায়ন: ছোটোমাসিই তপনের চিরকালের বন্ধু—“বয়সে বছর আষ্টেকের বড়ো হলেও সমবয়সি, কাজেই মামার বাড়ি এলে সব কিছুই ছোটোমাসির কাছে।” সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় মেসোর উদ্যোগে গল্প ছাপা হলে ছোটোমাসির মধ্যে আত্মতুষ্টির আনন্দ লক্ষ করা যায়। তাই বলা যায়, তপনের লেখক হওয়ার পিছনে তার ছোটোমাসির উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা ছিল অপরিসীম।
৫. জ্ঞানচক্ষু গল্প অবলম্বনে তপন চরিত্রটির পরিচয় দাও।
উত্তর – কথামুখ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপন। তার চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি গল্পে দেখতে পাওয়া যায়, তা হল—
কল্পনাপ্রবণতা: লেখক সম্পর্কে তপনের মনে এক বিস্ময় বাসা বেঁধেছিল। সে ভাবত, লেখকরা অন্য জগতের বাসিন্দা, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনো মিলই নেই।
সৃজনশীলতা: ছোটোমাসির বিয়ের পর তপনের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যায়। কারণ তার নতুন মেসো ছিলেন একজন লেখক, যাঁর অনেক বই ছাপা হয়েছে। একজন লেখককে খুব কাছ থেকে দেখে লেখক হওয়ার প্রেরণায় তপন লিখে ফেলে সম্পূর্ণ একটা গল্প। নতুন মেসো সেই গল্পের প্রশংসা করায় তপন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
আবেগপ্রবণতা ও সংবেদনশীলতা: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের গল্পটা ছেপে বেরোলে সে অবাক হয়ে যায়। এর কারণ, মেসো সংশোধন করতে গিয়ে তার লেখা গল্পটা আগাগোড়া পালটে দিয়েছেন। তপন সেই গল্পের মধ্যে নিজেকেই খুঁজে পায় না। তাই সে হতাশ হয়ে পড়ে।
আত্মাভিমান: মেসোর সংশোধনের ফলে তার নিজের লেখার পালটে যাওয়া তপন মেনে নিতে পারে না। তাই সে সংকল্প করে, ছাপা হোক বা না হোক, এবার থেকে নিজের লেখা নিজেই পত্রিকা সম্পাদকের কাছে জমা দেবে। এই আত্মসম্মানবোধই তপনকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ করেছে।
৬. ছোটোগল্প হিসেবে ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটির সার্থকতা আলোচনা করো।
উত্তর – আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটির সূচনা হয়েছে ছোটোগল্পের প্রত্যাশিত আকস্মিকতা দিয়ে—“কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল!” তপন নামের একটি কিশোর চরিত্রকে গল্পের কেন্দ্রে রেখে লেখিকা তার স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের কাহিনি রচনা করেছেন। তপনের লেখক মেসোমশাই তার লেখাকে আপাদমস্তক পালটে দিয়ে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনায় তপনের লেখকসত্তা প্রবল আঘাত পায়। ছাপার অক্ষরে শুধুই নিজের নামের প্রকাশ নয়, নিজের সৃজনশীলতার প্রতি স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষা এবং তা না হওয়ার যন্ত্রণা তপন চরিত্রটিকে অন্য মাত্রা দেয়। কাহিনির পরিণতি যতই গুরুগম্ভীর হোক, তাকে অসামান্য ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন লেখিকা। গল্পে তপনের লেখক মেসোমশাইয়ের চরিত্রটি বর্ণনার গুণে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে – “ঠিক ছোটো মামাদের মতোই খবরের কাগজের সব কথা নিয়ে প্রবলভাবে গল্প করেন, তর্ক করেন, আর শেষ পর্যন্ত ‘এ দেশের কিছু হবে না’ বলে সিনেমা দেখতে চলে যান…।”—এই অনবদ্য রচনাশৈলী কাহিনিকে গতিশীল করেছে। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি সার্থকতা পেয়েছে তার পরিণতিতে। মৌলিকতায় বিশ্বাসী এক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কিশোর লেখকের যন্ত্রণা শুধু চরিত্রটিকে নয়, গল্পটিকেও অসামান্যতা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *