WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 2 জীবনের প্রবহমানতা (TOPIC 1 কোশ বিভাজন ও কোশচক্র)
West Bengal Board 10th Class Science Solutions Biology Chapter 2 জীবনের প্রবহমানতা (TOPIC 1 কোশ বিভাজন ও কোশচক্র)
West Bengal Board 10th Biology Solutions
TOPIC 1 কোশ বিভাজন ও কোশচক্র
SUB-TOPIC 1.1 ক্রোমোজোম
বিষয়সংক্ষেপ
- জীবনের প্রবহমানতার কারণ হল কোশ বিভাজন ও জনন। কোশের মধ্যে থাকে নিউক্লিয়াস, এবং নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম। ক্রোমোজোমের DNA-তে জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে।
- দ্বিতন্ত্রী DNA-তে সরলরৈখিক সজ্জায় জিন অবস্থান করে। প্রতিটি জিন এক বা একাধিক জীবন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
- ক্রোমোজোম দুই প্রকারের হয়, লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমকে বলে সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম। পক্ষান্তরে, দেহজ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে অটোজোম। মানুষের প্রতিটি দেহকোশে দুইটি সেক্স ক্রোমোজোম (X ও Y ) ও 44টি অটোজোম থাকে।
- ক্রোমোজোমের গঠনে ক্রোমাটিড, সেন্ট্রোমিয়ার, গৌণ খাঁজ, টেলোমিয়ার অংশ দেখা যায়। এর রাসায়নিক গঠন উপাদান হল DNA এবং হিস্টোন-অহিস্টোন প্রোটিন।
- DNA নিউক্লিওটাইড অণুর সমন্বয় বিশেষ। প্রতিটি নিউক্লিওটাইড নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষার, পেন্টোজ শর্করা ও ফসফেট দিয়ে তৈরি। DNA গঠনকারী নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষারগুলি হল—পিউরিন (অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন) এবং পিরিমিডিন (থাইমিন ও সাইটোসিন)। DNA-এর গঠন দ্বিতন্ত্রী।
- DNA থেকে RNA তৈরি হয়। RNA -তেও DNA -এর মতোই নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারগুলি উপস্থিত থাকে। শুধুমাত্র থাইমিনের পরিবর্তে ইউরাসিল থাকে। এগুলি একতন্ত্রী হয়।
- বিশ্রামরত কোশে ক্রোমোজোমের গঠন দেখা যায় না, ক্রোমাটিন জালিকা নামক সরু সুতোর মতো কম ঘনত্বের গঠন দেখা যায়। রঞ্জক গ্রহণ তথা কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী ক্রোমাটিন দুইপ্রকার—ইউক্রোমাটিন ও হেটেরোক্রোমাটিন।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. ক্রোমোজোম কাকে বলে?
ক্রোমোজোম, DNA ও জিনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ক্রোমোজোম: ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত DNA অণু ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত সূত্রাকার বা দণ্ডাকার আত্মপ্রজননশীল যে সজীব সংগঠন জীবের যাবতীয় বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক ও নিয়ন্ত্রকরূপে কাজ করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।
ক্রোমোজোম, DNA 3 জিনের আন্তঃসম্পর্ক: কোশের নিউক্লিয়াসের কতকগুলি সূক্ষ্ম সুতোর মতো জালকাকার গঠন দেখা যায়। এগুলি হল প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো দ্বিতন্ত্রী গঠন যারা পরস্পরকে জড়িয়ে থাকে। এই গঠনগুলি হল DNA যা একটি বৃহৎ জৈব অণু। নিউক্লিয়াসে তারা সম্পূর্ণ কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে। কোশ যখন বিভাজিত হয় না, তখন আংশিক উন্মুক্ত অবস্থায় বিন্যস্ত DNA -কে নিউক্লীয় জালিকা বা ক্রোমাটিন জালিকা বলে। কোশ বিভাজনের সময় DNA কুণ্ডলিত হয়। DNA তন্ত্রী বিভিন্ন প্রোটিনকে দৃঢ়ভাবে পাকিয়ে লুপ তৈরি করে ঘন কুণ্ডলী গঠন করে। এই কুণ্ডীলকৃত গঠনকে ক্রোমোজোম বল। অর্থাৎ, ক্রোমাটিন জালিকা ও ক্রোমোজোম হল একই DNA-এর যথাক্রমে স্বল্প ও অধিক কুণ্ডলীকৃত অবস্থা।
আবার, ক্রোমোজোমে যে DNA থাকে, তার নির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে। DNA-এর এই এক-একটি অংশই হল জিন, যা জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বহন করে।
প্রশ্ন – 2. আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক বা ভৌত গঠন আলোচনা করো।
অথবা, ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমের বহির্গঠন উল্লেখ করো।
উত্তর – ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন: কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের বিভিন্ন অংশ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এই দশায় ক্রোমোজোমের যেসব অংশ দেখা যায়, সেগুলি হল—
- ক্রোমাটিড: কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমে লম্বালম্বিভাবে (অনুদৈর্ঘ্যভাবে) যে দুটি সমান (সমতুল) অংশ দেখা যায়, তাদের প্রতিটিকে ক্রোমাটিড বলে। মেটাফেজ ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটিকে বলে সিস্টারক্রোমাটিড। সিস্টার ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর সেন্ট্রোমিয়ার অংশে যুক্ত থাকে।
- ক্রোমোনিমা: প্রতিটি ক্রোমাটিড যে সূক্ষ্ম তন্তু দ্বারা গঠিত, তাদের ক্রোমোনিমা বলে ৷
- ক্রোমোমিয়ার: প্রতিটি ক্রোমাটিড এক বা একাধিক ক্রোমোনিমাটা দ্বারা গঠিত (একবচনে ক্রোমোনিমাটা, বহুবচনে ক্রোমোনিমা)। ক্রোমোনিমা সূত্রে পুঁতির মতো সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত গোলাকার সংগঠনকে ক্রোমোমিয়ার বলে।
- মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার: প্রত্যেক ক্রোমোজোমে একটি নির্দিষ্ট রঞ্জিত সংকোচন স্থান থাকে, তাকে মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ বলে। ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজ অংশে অবস্থিত যে গঠন সিস্টার ক্রোমাটিড দুটিকে পরস্পর সংলগ্ন করে রাখে ও কোশ বিভাজনকালে ক্রোমোজোমকে বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত করে, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। সেন্ট্রোমিয়ারের চাকতির মতো গঠন যা বেম সংলগ্ন হয়, তাদের কাইনেটোকোর বলে। সেন্ট্রোমিয়ারের দুই পাশে ক্রোমাটিডের দুটি অংশকে ক্রোমোজোমের বাহু (arm) বলে। এর ছোটো বাহুটিকে p বাহু ও বড়ো বাহুটিকে q বাহু বলে।
- গৌণ খাঁজ: অনেক সময় প্রাথমিক খাঁজ ছাড়াও ক্রোমোজোমে অপর এক বা একাধিক খাঁজ দেখা যায়। একে গৌণ খাঁজ বলে। এই অংশে নিউক্লিওলাস যুক্ত থাকে। এই অংশটি কোশ বিভাজনের টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাসের পুনর্গঠনে সাহায্য করে বলে একে নিউক্লিওলাস সংগঠক অঞ্চল বা নিউক্লিওলার অর্গানাইজার রিজিওন (NOR) বলে।
- স্যাটেলাইট: গৌণ খাঁজ পরবর্তী ক্রোমোজোমীয় অংশকে স্যাটেলাইট বা SAT বডি বলে। স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম বলে।
- টেলোমিয়ার: ক্রোমোজোমের প্রান্ত দুটিকে টেলোমিয়ার বলে। এটি ক্রোমোজোমের নিষ্ক্রিয় অংশ। কোশের অবিভাজন দশায় DNA প্রতিলিপি গঠনে টেলোমিয়ার সাহায্য করে। এ ছাড়া নিকটবর্তী দুটি ক্রোমোজোমের প্রান্ত জুড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং প্রয়োজনমতো কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যু ঘটায়।
প্রশ্ন – 3. একটি আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অংশগুলির নাম লেখো। সেন্ট্রোমিয়ার ও টেলোমিয়ারের কাজ কী কী ?
উত্তর – আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অংশ: একটি আদর্শ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানে প্রাপ্ত অংশগুলি হল—
- ক্রোমাটিড,
- মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার
- গৌণ খাঁজ,
- স্যাটেলাইট এবং
- টেলোমিয়ার।
সেন্ট্রোমিয়ার ও টেলোমিয়ারের কাজ: এই অংশের জন্য ‘রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর’-এর 2 নং প্রশ্নের উত্তরের ‘মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার’ এবং ‘টেলোমিয়ার’ অংশ দ্রষ্টব্য।
প্রশ্ন – 4. সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ করো ও বিভিন্ন প্রকারের বর্ণনা দাও।
উত্তর – ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ ও তার বর্ণনা: সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোম চারপ্রকার, যথা—
- টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের একেবারে প্রান্তে অবস্থান করে তাকে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ক্রোমোজোম দেখতে ‘I’ আকৃতি মতো হয়।
- অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মধ্যবিন্দু থেকে দূরে কিন্তু কোনো একটি প্রান্তের কাছাকাছি থাকে তাদের অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর ফলে ক্রোমোজোমের একটি বাহু বেশ বড়ো এবং অন্য বাহুটি বেশ ছোটো হয়। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ধরনের ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘J’ আকৃতির মতো হয়।
- সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মধ্যবিন্দু থেকে সামান্য দূরে অবস্থান করে এবং এর ফলে ক্রোমোজোমের বাহুদুটি পরস্পর অসমান হয়, তাকে সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ধরনের ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘L’ আকৃতির হয়।
- মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের প্রায় মাঝখানে অবস্থান করে এবং এর ফলে ক্রোমোজোমের বাহুদুটি পরস্পর প্রায় সমান হয়, তাকে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই প্রকার ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘V’ আকৃতির মতো হয়।
প্রশ্ন – 5. ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন একটি ছকের
সাহায্যে দেখাও।
উত্তর – ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন: ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম রাসায়নিকভাবে নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA ও RNA), প্রোটিন (ক্ষারীয় এবং আম্লিক) এবং ধাতব আয়ন থাকে। সমস্ত ইউক্যারিওটিক কোশে ক্রোমোজোমের 90% হল DNA ও ক্ষারীয় (হিস্টোন) প্রোটিন, বাকি 10% হল RNA ও আম্লিক প্রোটিন (নন্-হিস্টোন) থাকে।

- ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA): ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা, ফসফেট ও নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষার নির্মিত স্বপ্রজননক্ষম যে দ্বিতন্ত্রী নিউক্লিক অ্যাসিড অণু কোশীয় কাজের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগতি বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক, তাকে DNA বলে। দ্বিতন্ত্রী DNA অণু লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো বা হেলিক্সের আকৃতির হয়। এই সিঁড়ির হাতল শর্করা দ্বারা নির্মিত ও ধাপগুলি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষার দ্বারা গঠিত। এই ক্ষার আবার দুই প্রকার, যথা [i] পিউরিন—অ্যাডেনিন (A) ও গুয়ানিন (G) এবং [ii] পিরিমিডিন—থাইমিন (T) ও সাইটোসিন (C)। অ্যাডেনিন, থাইমিনের সাথে ও গুয়ানিন, সাইটোসিনের সাথে যথাক্রমে দুটি ও তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।
- রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA): DNA থেকে সংশ্লেষিত রাইবোজ শর্করা, ফসফেট ও নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষার নিয়ে গঠিত একতন্ত্রী গঠনকে RNA বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বলে। RNA-এর ক্ষারগুলি DNA-এর মতোই, কেবল RNA-তে থাইমিনের (T) পরিবর্তে ইউরাসিল (U) নামক পিরিমিডিন থাকে।
- হিস্টোন প্রোটিন: ক্রোমোজোমে অবস্থিত ক্ষারীয় প্রোটিনগুলিকে হিস্টোন বলে। ক্ষারীয় প্রকৃতির হওয়ায় এরা সহজেই আম্লিক DNA-এর সাথে যুক্ত হতে পারে। এগুলি পাঁচ প্রকার, যথা—H1, H2A, H2B, H3 এবং H4।
-
নন্-হিস্টোন প্রোটিন: ক্রোমোজোমে কিছু আম্লিক প্রোটিন থাকে যাদের নন-হিস্টোন প্রোটিন বলে।
6 পার্থক্য লেখো—সেন্ট্রোমিয়ার ও সেন্ট্রোজোম।
উত্তর » সেন্ট্রোমিয়ার ও সেন্ট্রোজোম-এর পার্থক্য
প্রশ্ন – 6. পার্থক্য লেখো—সেন্ট্রোমিয়ার ও সেন্ট্রোজোম।
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার ও সেন্ট্রোজোম-এর পার্থক্য
প্রশ্ন – 7. একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করে চিহ্নিত করো—ক্রোমাটিড, সেন্ট্রোমিয়ার, গৌণ খাঁজ, টেলোমিয়ার।
ক্রোমাটিড, সেন্ট্রোমিয়ার, NOR, টেলোমিয়ার।
উত্তর – একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. ক্রোমোজোম ও DNA-এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক কী?
উত্তর – অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কোশকে পর্যবেক্ষণ করলে নিউক্লিয়াসের ভিতর সূক্ষ্ম জালকাকার গঠন দেখা যায়। লক্ষ করলে বোঝা যায় যে, এগুলি প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো দ্বিতন্ত্রী গঠন—এগুলিই হল DNA। এরা বৃহৎ অণু, তাই নিউক্লিয়াসে কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে। বিভাজনের সময়ে DNA আরও কুণ্ডলীকৃত হয় বিভিন্ন প্রোটিনকে দৃঢ়ভাবে পেঁচিয়ে লুপ তৈরি করে। কুণ্ডলীকৃত এই গঠনকে ক্রোমোজোম বলা হয়। অর্থাৎ, প্রোটিন সমন্বিত কুণ্ডলীকৃত DNA-এই হল ক্রোমোজোম।
প্রশ্ন – 2. ক্রোমোজোম ও জিনের সম্পর্ক কী?
উত্তর – (1) ক্রোমোজোমে অবস্থিত DNA-তে সরলরৈখিক সজ্জাক্রমে জিন পরপর সজ্জিত থাকে। (2) একটি ক্রোমোজোমে নির্দিষ্ট সংখ্যক জিন থাকে। (3) ক্রোমোজোমে জিনগুলির প্রকৃতিও নির্দিষ্ট থাকে। (4) ক্রোমোজোমীয় অংশ বিলুপ্ত হলে ওই অংশের জিনও বিলুপ্ত হয়। ফলে নানা মিউটেশন-জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশ্ন – 3. ক্রোমাটিন জালিকা কাকে বলে? এর কাজ কী?
উত্তর – ক্রোমাটিন জালিকা: কোশের নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, ক্ষারীয় রঞ্জকে রঞ্জিত, প্যাঁচানো সূত্রাকার অংশকে ক্রোমাটিন জালিকা বলে।
কাজ : ক্রোমাটিন জালিকা জিন ধারণ করে। তাই ক্রোমাটিন জ়ালিকা জীব-কোশের বংশগত বস্তু বা জেনেটিক পদার্থের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন – 4. ক্রোমাটিন জালিকা ও ক্রোমোজোমের সম্পর্ক কী?
উত্তর – DNA ও প্রোটিন সংগঠনের দুটি রূপ হল ক্রোমাটিন জালিকা এবং ক্রোমোজোম। কোশের ইনটারফেজ দশায় লম্বা সুতোর মতো কম ঘনত্বের গঠনকে বলে ক্রোমাটিন জালিকা। পক্ষান্তরে, কোশ বিভাজন দশায় দণ্ডাকার, বেশি ঘনত্বের পাকানো (coiled) গঠনকে বলে ক্রোমোজোম। অর্থাৎ, একই উপাদানের দুটি ভিন্ন দশা হল ক্রোমাটিন জালিকা ও ক্রোমোজোম।
প্রশ্ন – 5. ক্রোমোজোম কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তর – কাজের ভিত্তিতে ক্রোমোজোম প্রধানত দুই প্রকার—অটোজোম বা দেহ ক্রোমোজোম এবং সেক্স ক্রোমোজোম বা যৌন ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম ।
প্রশ্ন – 6. অটোজোম বলতে কী বোঝ? মানুষের কয়টি অটোজোম আছে?
উত্তর – অটোজোম: নিউক্লিয়াসে অবস্থিত দেহজ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ক্রোমোজোমগুলিকে অটোজোম বলে।
মানুষের অটোজোম: মানুষের দেহকোশের 23 জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে 22 জোড়া হল অটোজোম।
প্রশ্ন – 7. অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম বলতে কী বোঝ? মানুষের অ্যালোজোম কোন্গুলি ?
উত্তর – অ্যালোজোম: যেসব ক্রোমোজোম প্রাণীদেহের লিঙ্গ নির্ধারণ করে তাদের সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলে।
মানুষের অ্যালোজোম: মানুষের দেহকোশে একজোড়া অ্যালোজোম বর্তমান। মানুষের অ্যালোজোম দুই প্রকার, যেমন—X এবং Y।
প্রশ্ন – 8. হ্যাপ্লয়েড কোশ কী?
উত্তর – যে সকল জীবকোশে ডিপ্লয়েড সংখ্যার অর্ধেক ক্রোমোজোম থাকে, তাদের হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে। উদাহরণ—মানুষের শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়, এদেরকে হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে, অর্থাৎ জননকোশ হল হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমযুক্ত কোশ।
প্রশ্ন – 9. ডিপ্লয়েড কোশ কী?
উত্তর – যে সকল জীবকোশে বিভিন্ন রকমের ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে, তাদের ডিপ্লয়েড (2n) কোশ বা ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমযুক্ত কোশ বলে।
প্রশ্ন – 10. 44XY এবং 44XX ক্রোমোজোম বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – মানুষের ক্ষেত্রে 46টি ক্রোমোজোম থাকে। এর মধ্যে পুরুষের দেহে 44টি অটোজোম এবং XY নামে দুটি যৌন ক্রোমোজোম এবং মহিলার দেহে 44টি অটোজোম এবং XX নামে দুটি যৌন ক্রোমোজোম থাকে। সুতরাং, 44A + XY বলতে পুরুষ ও 44A + XX বলতে মহিলাকে বোঝায়।
প্রশ্ন – 11. তোমার দেহত্বকে ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = 46 হলে তোমার স্নায়ুকোশ ও জননকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
উত্তর – (1) স্নায়ুকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = 46 হবে।
(2) জননকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা n = 23 হবে।
প্রশ্ন – 12. ক্রোমাটিড কাকে বলে?
উত্তর – কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমে দুটি অনুদৈর্ঘ্য প্রতিসম অর্ধাংশ পাওয়া যায়। এরা ক্রোমোজোমের মাঝে অবস্থিত বিশেষ খাঁজ তথা সেন্ট্রোমিয়ার নামক অংশে পরস্পর যুক্ত থাকে। এদের প্রতিটিকে ক্রোমাটিড বলে।
প্রশ্ন – 13. ক্রোমোমিয়ার কাকে বলে?
উত্তর – ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমে বিন্যস্ত নিষ্ক্রিয় কুণ্ডলীত DNA ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত দানাদার গঠনকে ক্রোমোমিয়ার বা ইডিওমিয়ার (idiomere) বলে ৷ এগুলি মিয়োসিস ও মাইটোসিসের প্রোফেজ দশায় দেখতে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন – 14. প্ৰাথমিক খাঁজ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার-যুক্ত, ক্রোমোজোমের অরঞ্জিত সংকুচিত স্থান, যেখানে ক্রোমোজোম বাহু ভাঁজ হয়, তাকে প্রাথমিক খাঁজ বা মুখ্য সংকোচন বলে।
প্রশ্ন – 15. সেন্ট্রোমিয়ার কী? এর কাজ লেখো।
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার: ক্রোমোজোমের প্রাথমিক খাঁজ অংশে অবস্থিত চারটি কাইনেটোকোর নিয়ে গঠিত যে অংশে বেমতন্তু যুক্ত হয়, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে।
কাজ: (1) এটিতে বেম সংলগ্ন হয় বলে অ্যানাফেজ চলন সম্ভব হয়।
(2) এটি ক্রোমোজোমের দুটি বাহুকে যুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন – 16. কাইনেটোকোর কাকে বলে?
এর কাজ কী?
উত্তর – কাইনেটোকোর: সেন্ট্রোমিয়ারে অবস্থিত চাকতির মতো যে চারটি গঠন কোশ বিভাজনের সময় স্পিন্ডিল তন্তুতে সংলগ্ন হয়, তাদের কাইনেটোকোর বলে।
কাজ : কোশ বিভাজনের সময় কাইনেটোকোর ক্রোমোজোমের সঠিক বিভাজনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন – 17. গৌণ খাঁজ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ক্রোমোজোমে মুখ্য খাঁজ ছাড়াও এক বা একাধিক অরঞ্জিত অংশ থাকলে তাকে গৌণ খাঁজ বলা হয়। এই স্থানে নিউক্লিওলাস যুক্ত থাকে এবং স্থানটি নিউক্লিওলাসের গঠনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন – 18. টেলেমিয়ার কী? এর কাজ লেখো।
উত্তর – টেলোমিয়ার: ক্রোমোজোমের দুটি প্রান্তীয় অংশকে টেলোমিয়ার বলে।
কাজ: (1) টেলোমিয়ার দুটি ক্রোমোজোমের প্রান্তকে জুড়ে যেতে বাধা দেয়। (2) টেলোমিয়ার কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 19. NOR-এর কাজ লেখো।
অথবা, NOR-এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – (1) NOR গৌণ খাঁজের অন্তর্গত ক্রোমোজোমীয় অংশ যা রাইবোজোমাল RNA তৈরির জিন বহন করে। (2) এই অংশ থেকে টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস গঠিত হয়।
প্রশ্ন – 20. নিউক্লিওজোম কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী?
উত্তর – নিউক্লিওজোম: ক্রোমাটিনে র গঠনগত যে গোলাকার অংশগুলি আটটি হিস্টোন প্রোটিন (H2A, H2B, H3, H4 প্রতিটি জোড়রূপে) অক্টামার ও তাকে ঘিরে DNA প্যাঁচ নিয়ে গঠিত হয় তাকে নিউক্লিওজোম বলে।
গুরুত্ব: ইউক্যারিওটিক ক্রোমাটিনকে স্বল্পস্থানে প্যাকিং করতে নিউক্লিওজোম গঠনগুলি সাহায্য করে।
প্রশ্ন – 21. স্যাটেলাইট কাকে বলে?
উত্তর – গৌণ খাঁজের পরবর্তী ক্ষুদ্র ক্রোমোজোমীয় খণ্ডকটিকে স্যাটেলাইট বলে। মানুষের 13, 14, 15 প্রভৃতি ক্রোমোজোমে গৌণ খাঁজ থাকে বলে ওইগুলিতে প্রান্তীয় স্যাটেলাইট দেখা যায়।
প্রশ্ন – 22. স্যাট ক্রোমোজোম কাকে বলে?
উত্তর – যেসব ক্রোমোজোমে গৌণ খাঁজ দ্বারা পৃথকীকৃত প্রান্তীয় খণ্ডক অংশ দেখা যায় তাকে স্যাটেলাইট ক্রোমোজোম বা স্যাট ক্রোমোজোম বলে। NOR পরবর্তী অংশটিই হল স্যাটেলাইট।
প্রশ্ন – 23. ক্রোমোজোমের টেলোমিয়ারের দুইটি তাৎপর্য লেখো।
উত্তর – (1) ক্রোমোজোমের প্রান্তকে অন্য কোনো ক্রোমোজোমে সংলগ্ন হওয়া থেকে রক্ষা করে। (2) টেলোমিয়ার কোশের জরা ও বয়ঃবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
প্রশ্ন – 24. DNA-র পুরো নাম কী? এটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর – DNA-র সম্পূর্ণ নাম: ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
অবস্থান : DNA প্রধানত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমে অবস্থিত। এ ছাড়া মাইটোকনড্রিয়া ও প্লাসটিডেও DNA উপস্থিত।
প্রশ্ন – 25. DNA-র উপাদান কী?
উত্তর – DNA-এর উপাদানগুলি হল— (1) নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক—অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন এবং সাইটোসিন, (2) ফসফেট এবং (3) শর্করা (ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা)।
প্রশ্ন – 26. DNA-তে উপস্থিত ক্ষাবের নাম লেখো।
অথবা, একটি চার্ট দ্বারা DNA-এর ক্ষারগুলির প্রকারভেদ লেখো।
উত্তর – DNA-তে উপস্থিত ক্ষারগুলি হল-
প্রশ্ন – 27. নিউক্লিওটাইড কী?
উত্তর – DNA অণুতে একটি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক, একটি ফসফেট ও একটি পেন্টোজ শর্করা (রাইবোজ বা ডিঅক্সিরাইবোজ) দ্বারা গঠিত নিউক্লিক অ্যাসিডের গঠনগত একককে নিউক্লিওটাইড বলে।
অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড = নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক + ফসফেট + রাইবোজ /ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা।
প্রশ্ন – 28. নিউক্লিওসাইড কী?
উত্তর – DNA অণুতে একটি নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষারক ও একটি পেন্টোজ শর্করা (রাইবোজ বা ডি-অক্সিরাইবোজ) দ্বারা গঠিত অংশকে নিউক্লিওসাইড বলে।
অর্থাৎ, নিউক্লিওসাইড = নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক + রাইবোজ /ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা।
প্রশ্ন – 29. RNA-র পুরো নাম কী? এটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর – RNA-র সম্পূর্ণ নাম : রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
অবস্থান : RNA প্রধানত নিউক্লিয়াস ও রাইবোজোমে অবস্থিত।
প্রশ্ন – 30 RNA-র রাসায়নিক উপাদান কী?
উত্তর – RNA-র উপাদানগুলি হল— (1) নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক—অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল এবং সাইটোসিন, (2) ফসফেট এবং (3) শর্করা (রাইবোজ শর্করা)।
প্রশ্ন – 31. RNA-র নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারগুলির নাম লেখো।
উত্তর – RNA-তে উপস্থিত ক্ষারগুলি হল—
প্রশ্ন – 32. RNA কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর – RNA প্রধানত তিনপ্রকার, যথা— মেসেঞ্জার RNA (mRNA), রাইবোজোমাল RNA (rRNA) এবং ট্রান্সফার RNA (tRNA)।
প্রশ্ন – 33. হিস্টোন প্রোটিন কী?
উত্তর – DNA অণুর সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রধান গঠনমূলক ক্ষারকীয় প্রোটিন হল হিস্টোন প্রোটিন। পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ হিস্টোন প্রোটিনের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে। এগুলি হল – H1, H2A, H2B, H3 এবং H4।
প্রশ্ন – 34. DNA-র হিস্টোন প্রোটিনগুলির গঠনগত অ্যামিনো অ্যাসিডের নাম লেখো।
উত্তর – DNA-র হিস্টোন প্রোটিনগুলি ক্ষারীয় প্রকৃতির। ক্ষারীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, যেমন—আরজিনিন ও লাইসিন এগুলিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন – 35. নন্-হিস্টোন প্রোটিন কী?
উত্তর – DNA অণুর সঙ্গে যুক্ত থাকা আম্লিক প্রোটিন হল নন্-হিস্টোন প্রোটিন। এই প্রোটিনের কাজ হল জিনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
প্রশ্ন – 36. ইউক্রোমাটিন কাকে বলে?
উত্তর – ক্রোমাটিন তন্তুর যে অংশগুলি সক্রিয় জিনসম্পন্ন, কম কুণ্ডলীকৃত ও ক্ষারীয় রঞ্জকে হালকাভাবে রঞ্জিত হয়, তাদের ইউক্রোমাটিন বলে। এই অংশ জিনগতভাবে সক্রিয় এবং RNA উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন – 37. ইউক্রোমাটিনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – (1) ক্রোমাটিন জালিকার ইউক্রোমাটিন অংশে DNA ও প্রোটিন আলগাভাবে আবদ্ধ থাকে। (2) এই অংশে সক্রিয় জিন থাকে যা থেকে RNA উৎপাদন ও শেষে প্রোটিন উৎপাদন ঘটে।
প্রশ্ন – 38. হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে?
উত্তর – ক্রোমাটিন তন্তুর যে অংশগুলি স্বল্প জিনসমন্বিত, অধিক কুণ্ডলীকৃত এবং ক্ষারীয় রঞ্জকে গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়, তাদের হেটেরোক্রোমাটিন বলে। মূলত জিনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা ও ক্রোমোজোমের অখণ্ডতা বজায় রাখা এর কাজ।
প্রশ্ন – 39. হেটেরোক্রোমাটিনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – (1) ক্রোমাটিন জালিকার অধিক কুন্ডলীত অংশ। (2) এই অংশে সক্রিয় জিন কম থাকে। এই অংশে DNA থেকে RNA উৎপাদন তথা প্রোটিন সৃষ্টি কম হয়।
প্রশ্ন – 40. স্থায়ী বা কন্ন্স্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে, ও তা কোথায় দেখা যায় ? এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – কস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন: যে হেটেরোক্রোমাটিন সব কোশের নিউক্লিয়াসে সর্বদাই উপস্থিত থাকে, তাকে স্থায়ী বা কন্স্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন বলে। এই হেটেরোক্রোমাটিন সেন্ট্রোমিয়ার, টেলোমিয়ার, নিউক্লিওলার অরগানাইজার অংশে দেখা যায়।
গুরুত্ব; এই ধরনের হেটেরোক্রোমাটিন স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে।
প্রশ্ন – 41. অস্থায়ী বা ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে ও এটি কোথায় দেখা যায় ? এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন: যে হেটেরোক্রোমাটিন বিশেষ কয়েকটি কোশে বা কোনো নির্দিষ্ট জীবদেহকোশে অল্প সময়ের জন্য উৎপন্ন হয়, তাকে অস্থায়ী বা ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন বলে। যেমন—মানুষের ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহকোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত বারবডি।
গুরুত্ব : এই প্রকার হেটেরোক্রোমাটিন অনেক সময় আলগা হয়ে সক্রিয় হয়। ফলে ওই অংশের DNA থেকে RNA, তথা প্রোটিন উৎপন্ন হতে পারে।
প্রশ্ন – 42. অটোজোম এবং অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম-এর পার্থক্য লেখো।
অথবা, নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানুষের অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে পার্থক্য লেখো-প্রকৃতি, সংখ্যা।
উত্তর – অটোজোম এবং অ্যালোজোম-এর পার্থক্যগুলি হল-
| বিষয় |
অটোজোম |
অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম |
| 1. কাজ |
জীবের দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। |
মূলত লিঙ্গ নির্ধারণ ও জননগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। |
| 2. সংখ্যা |
এর সংখ্যা অধিক, মানবদেহে 22 জোড়া। |
এর সংখ্যা কম, মানবদেহে 1 জোড়া। |
| 3. প্ৰকৃতি |
এগুলি হোমোলোগাস জোড়ারূপে দেহকোশে বিন্যস্ত থাকে। |
এগুলি হোমোলোগাস জোড়া (XX) অথবা নন-হোমোলোগাস (XY) জোড়া রূপে দেহকোশে বিন্যস্ত থাকে ৷ |
প্রশ্ন – 43. ক্রোমোজোম ও ক্রোমাটিডের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর – ক্রোমোজোমও ক্রোমাটিডের পার্থক্যগুলি হল—
| বিষয় |
ক্রোমোজোম |
ক্রোমাটিড |
| 1. গঠন প্রকৃতি |
নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত সূত্রাকার বা দণ্ডাকার গঠন, যা বিভাজনের সময়ে দৃশ্যমান হয়। |
ক্রোমোজোমে অবস্থিত দণ্ডাকার অংশ। |
| 2. সংখ্যাগত উপস্থিতি |
কোশের মধ্যে দুই বা ততোধিক ক্রোমোজোম থাকতে পারে। |
একটি ক্রোমোজোমে ক্রোমাটিডের সংখ্যা দুইয়ের বেশি নয়। |
| 3. প্রধান সংগঠক |
ক্রোমোজোম প্রধানত ক্রোমাটিড ও সেন্ট্রোমিয়ার সহযোগে গঠিত। |
ক্রোমাটিড প্রধানত ক্রোমোনিমাটা ও ক্রোমোমিয়ার সহযোগে গঠিত। |
| 4. অ্যালিলগত সাদৃশ্য |
হোমোলোগাস ক্রোমোজোমে ভিন্ন অ্যালিল থাকতে পারে। |
সিস্টার ক্রোমাটিড হুবহু এক অ্যালিল বহন করে। |
প্রশ্ন – 44. প্ৰাথমিক খাঁজ ও গৌণ খাঁজের পার্থক্য লেখো।
উত্তর – প্রাথমিক খাঁজ ও গৌণ খাঁজের পার্থক্যগুলি হল—
| বিষয় |
প্রাথমিক খাঁজ |
গৌণ খাঁজ |
| 1. খাঁজের ধরন |
ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংলগ্ন খাঁজ। |
প্রাথমিক খাঁজ ছাড়া ক্রোমোজোমের অন্য খাঁজ। |
| 2. বেমের সঙ্গে সম্পর্ক |
কোশ বিভাজনের সময়ে বেমতন্তুর সঙ্গে এটি আবদ্ধ হয়। |
বেমতন্তুর সঙ্গে সংযুক্ত হয় না। |
| 3. কাজ |
সেন্ট্রোমিয়ার ধারণ করে। |
নিউক্লিওলাস গঠন করে। |
প্রশ্ন – 45. সেন্ট্রোমিয়ার এবং ক্রোমোমিয়ার বা ইডিওমিয়ার-এর পার্থক্য লেখো।
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার এবং ক্রোমোমিয়ার-এর পার্থক্যগুলি হল—
| বিষয় |
সেন্ট্রোমিয়ার |
ক্রোমোমিয়ার/ইডিওমিয়ার |
| 1. অবস্থান |
ক্রোমোজোমের দুটি বাহুর মধ্যবর্তী প্রাথমিক খাঁজ অংশ। |
ক্রোমোজোমের ক্রোমোনিমাটা তন্তুতে বিন্যস্ত পুঁতির মতো দানা সদৃশ গঠন। |
| 2. সংখ্যা |
একটি ক্রোমোজোমে একটি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে। |
একটি ক্রোমোজোমে অসংখ্য ক্রোমোমিয়ার থাকে। |
| 3. কাজ |
ক্রোমাটিডকে সংযুক্ত রাখা, কোশ বিভাজনের সময় বেমতন্তুর সঙ্গে ক্রোমোজোমকে আবদ্ধ রাখা। |
নিষ্ক্রিয় DNA যুক্ত গঠন, প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে না। |
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. ক্রোমোজোম শব্দটি প্রথম প্রবর্তন করেন—
(a) ফ্লেমিং
(b) ওয়াটসন ও ক্লিক
(c) ওয়ালডেয়ার
(d) ল্যামার্ক
উত্তর – (c) ওয়ালডেয়ার
2. বংশগতির ধারক ও বাহক হল-
(a) মেসোজোম
(b) পলিজোম
(c) ক্রোমোজোম
(d) রাইবোজোম
উত্তর – (c) ক্রোমোজোম
3. 1909 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ‘জিন’ শব্দটির প্রচলন করেন বিজ্ঞানী—
(a) রিম্যাক
(b) ফারমার
(c) জোহানসেন
(d) পাস্তুর
উত্তর – (c) জোহানসেন
4. DNA-তে অবস্থিত প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহনকারী উপাদান হল—
(a) ক্রোমোজোম
(b) লোকাস
(c) জিন
(d) অ্যালোজোম
উত্তর – (c) জিন
5. মানব দেহকোশে ক্রোমোজোম থাকে –
(a) 4n
(b) 3n
(c) 2n
(d) n
উত্তর – (c) 2n
6. স্ত্রীলোকের দেহকোশে অটোজোম ও X ক্রোমোজোমের অনুপাত —
(a) 44:1
(b) 44:2
(c) 23:1
(d) 23:0
উত্তর – (b) 44:2
7. স্ত্রীলোকের দেহকোশে অটোজোম ও Y ক্রোমোজোমের অনুপাত-
(a) 44:0
(b) 44:1
(c) 44:2
(d) 23:1
উত্তর – (a) 44:0
৪. পুরুষের দেহকোশে অটোজোম ও X ক্রোমোজোমের অনুপাত—
(a) 44:0
(b) 44:1
(c) 44:2
(d) 23:1
উত্তর – (b) 44:1
9. মানুষের দেহকোশে অটোজোমের সংখ্যা –
(a) 44
(a) 46
(c) 23
(d) 22
উত্তর – (a) 44
10. মানুষের জননকোশে অটোজোম সংখ্যা –
(a) 44
(b) 23
(c) 22
(d) 46
উত্তর – (c) 22
11. মানুষের জননকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা –
(a) 46
(b) 50
(c) 23
(d) 10
উত্তর – (c) 23
12. মানুষের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে কোন্টি একজন স্বাভাবিক পুরুষের পক্ষে প্রযোজ্য?
(a) 44A + XX
(b) 44A + XY
(c) 44A + XXY
(d) 44A + XYY
উত্তর – (b) 44A + XY
13. মানুষের জননক্রোমোজোম হল –
(a) XX-XO
(b) XX-YY
(c) XX-XY
(d) XO-XY
উত্তর – (c) XX-XY
14. ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থিত তন্তু দুটির প্রত্যেকটিকে বলে—
(a) ক্রোমাটিড
(b) ক্রোমোজোম
(c) ক্রোমোনিমা
(d) ক্রোমোমিয়ার
উত্তর – (a) ক্রোমাটিড
15. প্রতিটি ক্রোমোজোমে ক্রোমাটিডের সংখ্যা –
(a) 4
(b) 2
(c) 6
(d) 8
উত্তর – (b) 2
16. প্রতিটি ক্রোমাটিড লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত যে সূক্ষ্ম তন্তু দ্বারা গঠিত, তাকে বলে—
(a) ক্রোমাটিড
(b) ক্রোমোজোম
(c) ক্রোমোমিয়ার
(d) ক্রোমোনিমা
উত্তর – (c) ক্রোমোমিয়ার
17. সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের যে অংশে থাকে তা হল –
(a) মুখ্য খাঁজে
(b) গৌণ খাঁজে
(c) টেলোমিয়ারে
(d) স্যাটেলাইটে
উত্তর – (a) মুখ্য খাঁজে
18. ক্রোমোজোমের অধিক ঘনত্বযুক্ত, পুঁতির মতো অংশগুলিকে বলে—
(a) ক্রোমোনিমা
(b) ক্রোমোমিয়ার
(c) ক্রোমাটিড
(d) সেন্ট্রোমিয়ার
উত্তর – (b) ক্রোমোমিয়ার
19. স্যাটেলাইট থাকে ক্রোমোজোমের–
(a) ক্রোমাটিডে
(b) গৌণ খাঁজে
(c) সেন্ট্রোমিয়ারে
(d) মুখ্য খাঁজে
উত্তর – (d) মুখ্য খাঁজে
20. কোশ বিভাজনের সময়ে ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজস্থিত যে অংশের সঙ্গে বেমতন্তু যুক্ত হয়, তা হল—
(a) ক্রোমোমিয়ার
(b) সেন্ট্রোমিয়ার
(c) ক্রোমাটিড
(d) সেন্ট্রোজোম
উত্তর – (b) সেন্ট্রোমিয়ার
21. যে ক্রোমোজোমের মাঝখানে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থিত সেটি হল—
(a) টেলোসেন্ট্রিক
(b) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
(c) মেটাসেন্ট্রিক
(d) সাবমেটাসেন্ট্রিক
উত্তর – (c) মেটাসেন্ট্রিক
22. ইংরেজি ‘V’ আকৃতির ক্রোমোজোমকে বলে—
(a) মেটাসেন্ট্রিক
(b) টেলোসেন্ট্রিক
(c) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
(d) সাবমেটাসেন্ট্রিক
উত্তর – (a) মেটাসেন্ট্রিক
23. ‘J’ আকৃতির ক্রোমোজোমকে বলা হয়—
(a) টেলোসেন্ট্রিক
(b) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
(c) সাবমেটাসেন্ট্রিক
(d) মেটাসেন্ট্রিক
উত্তর – (b) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
24. যে ক্রোমোজোমের শেষপ্রান্তে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে, তাকে বলে—
(a) মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
(a) সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
(c) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
(d) টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
উত্তর – (d) টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
25. যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না, তাকে বলে—
(a) মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
(b) সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
(c) আসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
(d) টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
উত্তর – (c) আসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
26. সেন্ট্রোমিয়ারের উপস্থিতি অনুসারে ক্রোমোজোমের বিভিন্ন গঠন দেখা যায় যে দশায়, তা হল —
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) টেলোফেজ
(d) অ্যানাফেজ
উত্তর – (b) মেটাফেজ
27. সেন্ট্রোমিয়ারযুক্ত মুখ্য খাঁজ ছাড়া ক্রোমোজোমে অন্য যে-কোনো খাঁজ থাকলে তাকে বলে—
(a) গৌণ খাঁজ
(b) প্রথম খাঁজ
(c) প্রাথমিক খাঁজ
(d) দ্বিতীয় খাঁজ
উত্তর – (a) গৌণ খাঁজ
28. গৌণ খাঁজ বা NOR পরবর্তী ক্রোমোজোমীয় অংশকে বলে—
(a) স্টেম বডি
(b) সেন্ট্রোমিয়ার
(c) SAT-বড়ি
(d) সেন্ট্রোজোম
উত্তর – (c) SAT-বড়ি
29. NOR ক্রোমোজোমের যে অংশে বিন্যস্ত থাকে—
(a) প্রাথমিক খাঁজ
(b) গৌণ খাঁজ
(c) নিউক্লিওলাস
(d) নিউক্লিওপ্লাজম
উত্তর – (b) গৌণ খাঁজ
30. কাইনেটোকোর যা দিয়ে গঠিত তা হল —
(a) ফ্যাট
(b) শর্করা
(c) ফসফরাস
(d) প্রোটিন
উত্তর – (d) প্রোটিন
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. ক্রোমোজোম নামকরণ কে করেন?
উত্তর – ভন ওয়ালডেয়ার এবং হার্জ।
2. ক্রোমোজোম কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর – শ্লেইডেন, ভিরচো ও বাট্সলি বিজ্ঞানীগণ ক্রোমোজোম অবিষ্কার করেন।
3. মানুষের সবগুলি ক্রোমোজোমে মোট কত জিন আছে?
উত্তর – মানুষের ক্রোমোজোমে সবগুলি প্রায় 21,000 জিন আছে।
4. জিন কাকে বলে?
উত্তর – জিন হল ক্রোমোজোমে অবস্থিত DNA-র একটি অনুক্রম যা কার্যকরী প্রোটিন সংশ্লেষ দ্বারা বংশগত বৈশিষ্ট্য ও কোশীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
5. কোশের কোন্ অংশে জিন অবস্থিত?
উত্তর – কোশের মধ্যে ক্রোমোজোমে জিন অবস্থিত।
6. ক্যারিওটাইপ কাকে বলে?
উত্তর – কোনো জীবের ক্রোমোজোমগুলির একত্রিত ছবিকে তার ক্যারিওটাইপ বলে।
7. মানুষের দেহকোশে কী কী প্রকারের যৌন ক্রোমোজোম দেখা যায় ?
উত্তর – মানুষের দেহকোশে দুই প্রকারের যৌন ক্রোমোজোম দেখা যায়, এগুলিহল X এবং Y।
৪. একটি হ্যাপ্লয়েড কোশের উদাহরণ দাও।
উত্তর – একটি হ্যাপ্লয়েড কোশের উদাহরণ হল জননকোশ অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু (n)।
9. মানুষের দেহকোশে ক্রোমোজোমের সংখ্যা কত?
উত্তর – 46
10. মানুষের শুক্রাণুতে অবস্থিত অটোজোমের সংখ্যা কত?
উত্তর – 22
11. একটি ডিপ্লয়েড কোশের উদাহরণ দাও।
উত্তর – জাইগোট বা ভ্রূণাণু (2n)।
12. একটি ট্রিপ্লয়েড কোশের উদাহরণ দাও।
উত্তর – একটি ট্রিপ্লয়েড কোশের উদাহরণ হল গুপ্তবীজী উদ্ভিদের সস্য নিউক্লিয়াস (3n)।
13. ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থিত দুটি তন্তুর প্রত্যেকটিকে কী বলে?
অথবা, সেন্ট্রোমিয়ারের দুইপাশের ক্রোমোজোমীয় অংশদ্বয়কে কী বলে?
উত্তর – ক্রোমাটিড।
14. প্রতিটি ক্রোমাটিড, লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত যে সূক্ষ্ম তন্তু দ্বারা গঠিত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর – ক্রোমোনিমা।
15. কীসের সাহায্যে ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম বেমতন্তু বা স্পিন্ডল ফাইবার-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে?
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার বা কাইনেটোকোরের সাহায্যে ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম বেমতন্তু বা স্পিন্ডল ফাইবার-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে।
16. সেন্ট্রোমিয়ার কোথায় থাকে?
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের প্রাথমিক খাঁজ অংশে থাকে।
17. NOR কোথায় থাকে?
উত্তর – মানুষের 13, 14, 15, 21 ও 22 নং ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার ও টেলোমিয়ারের মধ্যবর্তী স্থানে NOR অবস্থান করে।
18. ক্রোমোজেমের কোন্ অংশ বার্ধক্য ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করে?
উত্তর – টেলোমিয়ার।
19. নিউক্লিক অ্যাসিডের গঠনগত একক কোনটি?
উত্তর – নিউক্লিওটাইড।
20. DNA-তে দুটি নিউক্লিওটাইডের মধ্যে দূরত্ব কত?
উত্তর – 3.4 Å
21. RNA-এর সম্পূর্ণ নাম লেখো।
উত্তর – RNA-এর সম্পূর্ণ নাম হল রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
22. কোন্ উপাদানটি নিউক্লিওটাইডে থাকলেও নিউক্লিওসাইডে থাকে না?
উত্তর – ফসফেট-মূলক।
23. ক্রোমোজোমে কী কী প্রোটিন থাকে?
উত্তর – ক্রোমোজোমে প্রধানত দুই ধরনের প্রোটিন থাকে—হিস্টোন প্রোটিন (যেমন— H1, H2A, H2B, H3 ও H4) এবং নন-হিস্টোন প্রোটিন (যেমন—প্রোটামিন)।
24. ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমে উপস্থিত ক্ষারীয় প্রোটিন হিস্টোনে উপস্থিত দুটি অ্যামিনো অ্যাসিডের নাম লেখো।
উত্তর – লাইসিন, আরজিনিন।
25. ক্রোমাটিন কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর – ক্রোমাটিন দু-প্রকার, যথা— (1) ইউক্রোমাটিন এবং (2) হেটেরোক্রোমাটিন।
26. ক্রোমোজোমের জিনগতভাবে নিষ্ক্রিয় গাঢ় রঞ্জিত অংশকে কী বলে?
উত্তর – হেটেরোক্রোমাটিন।
27. ইউক্রোমাটিনের কাজ কী?
উত্তর – ইউক্রোমাটিন অংশে বেশি পরিমাণ DNA থাকায়, এটি প্রজননিক পদার্থ বা জিন ধারণ করে।
28. হেটেরোক্রোমাটিনের কাজ কী?
উত্তর – হেটেরোক্রোমাটিনে কম পরিমাণে DNA থাকায় এটি জিনের সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ছেদ অংশ হিসেবে কাজ করে, এ ছাড়া এই অংশ রাইবোজোম সংশ্লেষে অংশ নেয়।
29. ক্রোমোজোমের গঠনগত একক কী?
উত্তর – নিউক্লিওজোম।
30. মানুষের ক্রোমোজোম সেটে তুমি কীভাবে ক্রোমোজাম চিনবে?
উত্তর – (1) ক্রোমোজোমের আকার ও আকৃতি দেখে। (2) গৌণ খাঁজের সংখ্যা ও অবস্থান দেখে।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. জীবদেহ গঠিত হয় একটি মাত্র ………. থেকেই।
উত্তর – কোশ
2. জীবদেহের বংশগত বৈশিষ্ট্য একটি জনু থেকে পরবর্তী জনুতে বহন করে ………. |
3. DNA একটি বৃহৎ ………… অণু।
4. DNA-র কার্যকারী অংশ হল ……….. |
উত্তর – জিন
5. …………. অণুর ঘন কুণ্ডলীতে গঠনই হল ক্রোমোজোম।
উত্তর – DNA
6. ক্রোমোজোমের যে নির্দিষ্ট বিন্দুতে জিন থাকে, তাকে ……… বলে।
উত্তর – লোকাস
7. মানুষের প্রতিটি দেহকোশে সেক্স ক্রোমোজোম থাকে ………. টি।
উত্তর – 2
8. Y ক্রোমোজোমে ………. জিন থাকে।
উত্তর – হোলানড্রিক
9. লিঙ্গ নির্ধারণকারী সেক্স ক্রোমোজোমকে ……….. বলে।
উত্তর – অ্যালোজোম
10. জননকোশ ……….. প্রকৃতির হয়।
উত্তর – হ্যাপ্লয়েড
11. দেহকোশ ………… প্রকৃতির হয়।
উত্তর – ডিপ্লয়েড
12. দুটি ক্রোমাটিডের সংযোগস্থলে ……….. অবস্থিত।
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার
13. স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে ……… বলে।
উত্তর – স্যাট ক্রোমোজোম
14. ক্রোমোজোমের প্রান্তদ্বয়কে ………. বলে।
উত্তর – টেলোমিয়ার
15. RNA-তে থাইমিনের পরিবর্তে ………. থাকে।
অথবা, শুধুমাত্র RNA-তে উপস্থিত নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারকটি হল ………. |
উত্তর – ইউরাসিল
16. DNA থেকে DNA-র সংশ্লেষকে ……… বলে।
উত্তর – রেপ্লিকেশন
17. ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের উপাদানগুলি হল DNA, RNA এবং ……… |
উত্তর – হিস্টোন ও নন্-হিস্টোন প্রোটিন
18. অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন বেসকে একত্রে ………. ক্ষার বলে।
উত্তর – পিউরিন
19. নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষার + ফসফেট + পেন্টোজ শর্করা = …………
উত্তর – নিউক্লিওটাইড
20. নিউক্লিওটাইড = নিউক্লিওসাইড + ………… |
উত্তর – ফসফেট
21. পিরিমিডিন জাতীয় নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারকের উদাহরণ হল ………. |
উত্তর – ইউরাসিল/সাইটোসিন
22. RNA-তে পেন্টোজ শর্করার ………… প্রকৃতির।
উত্তর – রাইবোজ
23. নিউক্লিওসাইড ও ফসফোরিক অ্যাসিড একত্রে ………… গঠন করে।
উত্তর – নিউক্লিওটাইড
24. জিন ………… দ্বারা গঠিত।
উত্তর – নিউক্লিওটাইড
25. DNA তন্ত্রীর একটি প্রান্ত …………. (5 প্রাইম) হলে ওপর প্রান্তটি হবে ……..|
উত্তর – 3′
26. DNA-র দুটি শৃঙ্খলের দূরত্ব ……….. |
উত্তর – 10Å
27. নিউক্লিওপ্রোটিন = ………… + ……….. |
উত্তর – হিস্টোন, নন্-হিস্টোন
28. নন্-হিস্টোন প্রোটিনে ………….. অ্যামিনো অ্যাসিড বেশি থাকে।
উত্তর – আম্লিক
29. মানুষের জিনোমে ইউক্রোমাটিনের পরিমাণ প্রায় ……….. |
উত্তর – 92%
নীচে সম্পর্কযুক্ত শব্দজোড় দেওয়া আছে। প্রথম জোড়টির সম্পর্ক দেখে দ্বিতীয়টির শূন্যস্থানে উপযুক্ত শব্দ বসাও।
1. ক্রোমোজোম : DNA :: DNA : ………..
উত্তর – জিন।
2. মানুষের অটোজোম : 22 জোড়া :: মানুষের সেক্স ক্রোমোজোম : …………..
উত্তর – একজোড়া।
3. মানুষের দেহকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা : 46টি :: মানুষের জননকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা : ………..
উত্তর – 23টি।
4. 44 : অটোজোম :: 2: …………..
উত্তর – অ্যালোজোম।
5. 23 জোড়া ক্রোমোজোম : দেহকোশ :: 23টি ক্রোমোজোম : ……….
উত্তর – জননকোশ।
6. XY : পুরুষ সেক্স ক্রোমোজোম :: XX : ……………
উত্তর – মহিলা সেক্স ক্রোমোজোম।
7. টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম : I আকৃতি :: সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম : …………
উত্তর – L আকৃতি।
8. DNA : ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড :: RNA : ………..
উত্তর – রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
9. অ্যাডেনিন : পিউরিন :: থাইমিন : …………
উত্তর – পিরিমিডিন।
10. হিস্টোন : ক্ষারীয় :: নন্-হিস্টোন : ………..
উত্তর – আম্লিক।
11. হেটেরোক্রোমাটিন : নিষ্ক্রিয় ক্রোমোজোম অংশ :: ইউক্রোমাটিন : …………..
উত্তর – সক্রিয় ক্রোমোজোম অংশ।
SUB-TOPIC 1.2 কোশ বিভাজন—সাহায্যকারী অঙ্গাণু, তাৎপর্য, প্রকারভেদ ও কোশচক্র
বিষয়সংক্ষেপ
- কোশ বিভাজনে কোশীয় অঙ্গাণুগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে নিউক্লিয়াস ক্রোমোজোম ধারণ ও বিভাজন, সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল বেম তন্তু গঠনে, রাইবোজোম প্রোটিন সংশ্লেষে ও মাইটোকনড্রিয়া শক্তি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে।
- দেহের বৃদ্ধি, প্রজনন, ক্ষয়পূরণে কোশ বিভাজনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
- জীবদেহে তিনপ্রকার কোশ বিভাজন দেখা যায়। যেমন—অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন। এর মধ্যে অ্যামাইটোসিস ক্ষুদ্র নিম্নশ্রেণির জীবে দেখা যায়। উচ্চশ্রেণির প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহকোশে মাইটোসিস ঘটে এবং তাদের জননমাতৃকোশে মিয়োসিস কোশ বিভাজন হয়ে থাকে।
- কোশ বিভাজনের ধারাবাহিক পর্যায়গুলিকে একত্রে কোশচক্র বলে। এর ইনটারফেজ (I) বা বিশ্রাম দশার তিনটি ভাগ, যেমন—G1, S এবং G2 উপদশা। কোশ বিভাজন দশা বা মাইটোটিক দশার (M) চারটি প্রধান উপদশা আছে, যেমন—প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ। কোশচক্র সঠিকভাবে না ঘটলে, কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে টিউমার সৃষ্টি হতে পারে।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী কোশীয় অঙ্গাণুগুলির নাম ও তাদের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – কোশ অঙ্গাণুগুলির নাম ও প্রধান ভূমিকা
- নিউক্লিয়াস: এটি ক্রোমোজোম ধারণ করে যার বিভাজনের দ্বারা বংশগতির বৈশিষ্ট্যগুলি জনিতৃকোশ থেকে অপত্য কোশে সঞ্চারিত হয়।
- সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল: সেন্ট্রোজোম কোশ বিভাজনকালে কোশের দুই মেরুতে বিন্যস্ত হয় ও মাইক্রোটিউবিউলের সহায়তায়, বেমতন্তু গঠনের মাধ্যমে বেম বা স্পিন্ডল গঠন করে। উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকায় সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল বেমতন্তু গঠন করে এবং ক্রোমোজোমীয় চলনে সাহায্য করে।
- রাইবোজোম: রাইবোজোম কোশের প্রোটিন সংশ্লেষ করে। এই প্রোটিনগুলি ক্রোমোজোম, কোশীয় অঙ্গাণু ও সাইটোপ্লাজম গঠন করে এবং এইভাবে কোশ বিভাজনে সাহায্য করে।
- মাইটোকনড্রিয়া: মাইটোকনড্রিয়া কোশীয় শ্বসনের দ্বারা শক্তি উৎপাদন করে ও কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে। এ ছাড়া মাইটোকনড্রিয়া কোশচক্রেরও নিয়ন্ত্রক বলে বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রশ্ন – 2. কোশচক্র বলতে কী বোঝ ? কোশচক্রের বিভিন্ন দশা বর্ণনা করো।
উত্তর – কোশচক্র: কোশ বিভাজনে নতুন কোশ সৃষ্টি থেকে পরবর্তী কোশ বিভাজন পর্যন্ত কোশে সংঘটিত ধারাবাহিক, ছন্দোবদ্ধ ও চক্রাকার ঘটনাক্রমকে কোশচক্র বলে।
কোশচক্রের বিভিন্ন দশা: কোশচক্রের প্রধান দুটি দশা বর্তমান, যথা—
(1) ইনটারফেজ বা অবিভাজন দশা এবং (2) মাইটোটিক বা বিভাজন দশা।

- ইনটারফেজ: কোশচক্রের অন্তর্গত যে দীর্ঘস্থায়ী দশায় DNA, প্রোটিন, RNA প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয় এবং কোশ বিভাজনে উপযোগী হয়ে ওঠে, তাকে ইনটারফেজ বলে। এটি তিনটি উপদশায় বিভক্ত, যথা— G1 দশা, S দশা এবং G2 দশা। [i] G1 দশা (প্রারম্ভিক দশা বা প্রাক্সংশ্লেষ দশা): পূর্ববর্তী কোশ বিভাজনের শেষ ও S উপদশার মধ্যবর্তী এই উপদশায় rRNA, mRNA এবং tRNA, রাইবোজোম, DNA সংশ্লেষের উপাদান প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণু দ্বিগুণিত হয়। একে প্রথম বৃদ্ধি দশা-ও বলে। [ii] Sদশা (সংশ্লেষ দশা): G1 ও G2 দশার মধ্যবর্তী এই দশায় DNA-র প্রতিলিপিকরণ ও হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষ ঘটে। এই দশায় DNA-এর মাত্রা দ্বিগুণিত হয়ে 2C থেকে 4C হয়। [iii] G2 দশা (সংশ্লেষ পরবর্তী দশা): S উপদশা ও মাইটোটিক দশার মধ্যবর্তী এই উপদশায় কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। একে দ্বিতীয় বৃদ্ধি দশাও বলে। এই তিনটি দশা ছাড়াও G0 দশায় কোশ বিভাজন বন্ধ থাকায়, G0 -কে নিষ্ক্রিয় দশা বা বিশ্রাম দশা বলে।
- মাইটোটিক দশা: ইনটারফেজের পরবর্তী অপেক্ষাকৃত স্বল্পস্থায়ী কোশ বিভাজন দশাকে মাইটোটিক বা M দশা বলে। এই দশায় কোশ বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশ গঠন করে। এর দুটি উপদশা।
ক্যারিওকাইনেসিস: এই দশায় প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ-এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়।
সাইটোকাইনেসিস: এই দশায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গেই সাইটোপ্লাজমের বিভাজন শুরু হয়ে যায়।
মানবদেহের নির্দিষ্ট কোশ বিভাজনের জন্য মোট প্রায় 20-24 ঘণ্টা সময় লাগলে তার প্রায় 19-23 ঘণ্টা শুধুমাত্র ইনটারফেজ দশা সম্পন্ন করতে ও বাকি 1 ঘণ্টা সময় কোশ বিভাজনের জন্য ব্যয়িত হয়।
প্রশ্ন – 3. কোশচক্রের দুটি গুরুত্ব লেখো।
কোশ বিভাজনের তাৎপর্য লেখো।
উত্তর – কোশচক্রের গুরুত্ব
- কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ: কোশচক্রের কতকগুলি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রিত হয়। কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ বিন্দুগুলি বিনষ্ট হলে কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন দ্বারা টিউমার সৃষ্টি হয়। টিউমার দুইপ্রকার হয়। যেমন—বিনাইন টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। বিনাইন টিউমারগুলি দেহের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কোশগুলি পার্শ্ববর্তী কোশের সঙ্গে সংলগ্ন না থেকে রক্ত বা লসিকা দ্বারা বাহিত হয় ও অপর স্থানে গিয়ে পুনরায় টিউমার তৈরি করে। এই ঘটনাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে। মেটাস্ট্যাসিস প্রকৃতপক্ষে ক্যানসারের কোশের বৈশিষ্ট্যবিশেষ।
- স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ: স্বাভাবিক কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ দ্বারা কোশের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য কোশচক্র গুরুত্বপূর্ণ।
কোশ বিভাজনের তাৎপর্য
- বৃদ্ধি: কোশ বিভাজনের ফলে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। উৎপন্ন কোশগুলি আবার আকারে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কোশ বিভাজনের ওপরেই নির্ভর করে।
- প্রজনন: মাইটোসিস, অ্যামাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন বিভিন্ন প্রকার জননে সহায়তা করে। যেমন—মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে গ্যামেট (শুক্রাণু, ডিম্বাণু) এবং রেণু উৎপন্ন হয় যা, যথাক্রমে যৌন ও অযৌন জননের একক। মাইটোসিস, অযৌন জনন ও অঙ্গজ জননের মাধ্যমে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যামিবা অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে প্রজনন সম্পন্ন করে।
- ক্ষয়পূরণ: জীবের ক্ষতস্থান নিরাময়, অঙ্গের পুনরুৎপত্তি মূলত মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ফলেই ঘটে থাকে।
- বংশগত বৈশিষ্ট্যের সঞ্চারণ: কোশ বিভাজনের ফলে মাতৃকোশের বৈশিষ্ট্য অপত্যকোশে সঞ্চারিত হয় এবং নতুন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অপত্যকোশ গঠিত হয়, যা অভিযোজন ও অভিব্যক্তিতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন – 4. একটি কোশচক্রের ইনটারফেজের বিভিন্ন দশায় কী কী ধরণের রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয়? একটি কোশচক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে কী ঘটতে পারে?
উত্তর – ইনটারফেজে উৎপন্ন পদার্থ : ইনটারফেজের নানা দশায় উৎপন্ন পদার্থগুলি হল—
- G1 দশা বা গ্যাপ 1 দশা: প্রোটিন, mRNA, tRNA কোশীয় অঙ্গাণুর . উৎপাদন হয়।
- S দশা বা সংশ্লেষণ দশা: DNA সংশ্লেষণ ও দ্বিত্বকরণ হয়।
- G2 দশা বা গ্যাপ 2 দশা: মাইটোকনড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্ট, টিউবিউলিন প্রোটিন, DNA-এর গঠনগত ত্রুটি নিবারণকারী প্রোটিন ইত্যাদির সংশ্লেষ হয়।
স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে সৃষ্ট অবস্থা: কোশচক্রের বিভিন্ন চেকপয়েন্টগুলিতে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে কোশ বিভাজন তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। DNA এবং স্পিন্ডিল-এর গঠনগত ত্রুটি থাকলেও যদি তখন কোশ বিভাজন ঘটে তাহলে ত্রুটিসম্পন্ন অপত্য কোশ তৈরি হয়। এ ছাড়া বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হলে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে টিউমার সৃষ্টি হবে। অনেক ক্ষেত্রে কোশে ক্যানসার দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন – 5. পার্থক্য লেখো—মাইটোসিস ও অ্যামাইটোসিস।
উত্তর – মাইটোসিস ও অ্যামাইটোসিস পার্থক্যগুলি হল—
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. কোশ বিভাজন কাকে বলে?
উত্তর – যে পদ্ধতিতে একটি মাতৃকোশ বা জনিতৃ কোশ বিভাজিত হয়ে দুই বা ততোধিক নতুন অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে কোশ বিভাজন বলে।
2. কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী পাঁচটি কোশীয় অঙ্গাণুর নাম লেখো।
উত্তর – কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী পাঁচটি কোশীয় অঙ্গাণু হল নিউক্লিয়াস, সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল, গলগি বডি, রাইবোজোম এবং মাইটোকনড্রিয়া৷
3. সেন্ট্রোজোমের দুটি কাজ লেখো।
উত্তর – সেন্ট্রোজোমের কাজ হল—(1) বেমতন্তু গঠন দ্বারা কোশ বিভাজনে অপত্য কোশে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম বিন্যাসে সাহায্য করা। এটি কোশের সাইটোকাইনেসিসেও সাহায্য করে। (2) সেন্ট্রোজোম কোশে মাইক্রোটিউবিউল উৎপাদন, কোশে সিলিয়া সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
4. কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াস ও গলগি বড়ির ভূমিকা কী ?
উত্তর – নিউক্লিয়াসের ভূমিকা: কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াসের গুরুত্ব অপরিসীম। নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোজোম হল বংশগতি বৈশিষ্ট্যের বাহক। কোশ বিভাজনের সময়ে তা বিভাজিত হয়ে অপত্য নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে।
গলগি বড়ির ভূমিকা : উদ্ভিদকোশে কোশপ্রাচীর সৃষ্টিতে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠনের জন্য গলগি বড়ির ক্ষরণ সহায়তা করে থাকে।
5. কোশ বিভাজনে সেন্ট্রোজোম এবং মাইক্রোটিউবিউলের ভূমিকা কী?
উত্তর – সেন্ট্রোজোমের ভূমিকা: প্রাণীকোশের বিভাজনকালে বেম গঠনে সেন্ট্রোজোম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বেমতন্তু, ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংলগ্ন হয়ে সংকোচন দ্বারা ক্রোমোজোমের আনাফেজ দশায় মেরু চলনে সাহায্য করে। এর ফলে অপত্য কোশে ক্রোমোজোম বিন্যাস নির্দিষ্ট থাকে।
মাইক্রোটিউবিউলের ভূমিকা: এগুলি কোশীয় সাইটো-স্কেলিটনের অংশবিশেষ যা উদ্ভিদকোশে বেম গঠন করে। মাইক্রোটিবিউল-নির্মিত কেম ক্রোমোজোমকে দুই মেরুতে নিয়ে যায়। ফলে কোশ বিভাজনে উৎপন্ন অপত্য কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও DNA পরিমাণ মাতৃকোশের সমান থাকে।
6. কোশ বিভাজনে রাইবোজোমের ভূমিকা কী ?
উত্তর – (1) রাইবোজোম কোশ বিভাজনের জন্য কোশের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে (ক্রোমোজোমের গঠনগত হিস্টোন ও নন্-হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে)। (2) প্রোটিন সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে।
7. কোশ বিভাজনে মাইটোকনড্রিয়ার ভূমিকা কী ?
উত্তর – (1) মাইটোকনড্রিয়া হল কোশের শক্তিঘর। এটি কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। (2) কোশচক্র নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে।
8. কোশ বিভাজনের মূল তিনটি তাৎপর্য কী কী?
উত্তর – কোশ বিভাজনের প্রধান তিনটি তাৎপর্য হল— (1) কোশের সংখ্যাবৃদ্ধি, (2) প্রজননের জন্য জননকোশ গঠন এবং (3) আঘাত ও ক্ষতস্থান নিরাময়।
9. জীবদেহে কোশ বিভাজনের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর – জীবদেহে কোশ বিভাজনের উদ্দেশ্য হল নতুন কোশ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিস্ফুরণ ও প্রয়োজনে রূপান্তরের অবকাশ সৃষ্টি করে জীবদেহের দৈর্ঘ্য ও আয়তন বৃদ্ধি করা, ক্ষয়পূরণ করা এবং জননের আগে জননকোশ বা গ্যামেটের সৃষ্টি করা।
10. কোশ বিভাজনের সঙ্গে বৃদ্ধির সম্পর্ক লেখো।
অথবা, ‘মাইটোসিস হল কারণ, বৃদ্ধি তার ফল’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – মাইটোসিস কোশ বিভাজনে সৃষ্টি হওয়া অপত্য কোশগুলি পরিণত হলে ওই কোশগুলির পুনরায় মাইটোসিস বিভাজন ঘটে। সেইজন্য একদিকে যেমন বহুকোশী জীবের দেহে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে কোশগুলি পুষ্টি সংগ্রহ করে আকারে ও আয়তনে বড়ো হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে জীবদেহেরই বৃদ্ধি হয়। সেইজন্য বলা হয় মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা জীবদেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, মাইটোসিস বিভাজন হল কারণ এবং বৃদ্ধি হল তার ফল।
11. কোশ বিভাজন কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর – কোশ বিভাজন তিন প্রকার, যথা—অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস ও মিয়োসিস। একটি মাতৃকোশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভাজিত হতে পারে।
12. প্রত্যেক প্রকার কোশ বিভাজনের উদাহরণ দাও।
উত্তর – অ্যামাইটোসিস : ঈস্ট, অ্যামিবা ইত্যাদিতে সম্পন্ন হয়।
মাইটোসিস : উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকোশে সম্পন্ন হয়।
মিয়োসিস : উদ্ভিদ ও প্রাণীর জননমাতৃকোশে সম্পন্ন হয়।
13. অ্যামাইটোসিস কাকে বলে?
উত্তর – বেম গঠন ছাড়াই মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের সরাসরি বিভাজনের দ্বারা দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টির অনুন্নত পদ্ধতিকে অ্যামাইটোসিস বলে।
14. অ্যামাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর – (1) অ্যামাইটোসিসে নিউক্লীয় পর্দার বিলুপ্তি ঘটে না এরং বেমতন্তু গঠিত হয় না। (2) এই বিভাজনের সময়ে কোশের নিউক্লিয়াসটি মাকু বা ডামবেলের আকার ধারণ করে এবং মাঝবরাবর স্থানে সংকুচিত হয় ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য কোশে পরিণত হয়।
15. পরোক্ষ কোশ বিভাজন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – পরোক্ষ কোশ বিভাজন: যে কোশ বিভাজনে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসটি ক্রোমোজোম গঠন, বেম গঠন, ক্রোমোজোম বিভাজন ও বিন্যাস এবং সাইটোপ্লাজম বিভাজনের জটিল পর্যায়গুলির মধ্যে দিয়ে সমতাপূর্ণ অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে পরোক্ষ কোশ বিভাজন বলে।
উদাহরণ: মাইটোসিস ও মিয়োসিস।
16. মাইটোসিস কোশ বিভাজন কাকে বলে?
উত্তর – যে কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে দেহকোশ বেমতত্ত্ব গঠন দ্বারা একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে সমসংখ্যক ও সমগুণসম্পন্ন ক্রোমোজোম-বিশিষ্ট একই বৈশিষ্ট্যের ও একই আকৃতির দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে মাইটোসিস কোশ বিভাজন বলে।
17. মাইটোসিসকে সমবিভাজন বা ইক্যুয়েশনাল বিভাজন বলে কেন?
অথবা, মাইটোসিসকে সদৃশ বিভাজন বলে কেন?
উত্তর – (1) মাইটোসিসে একটি মাতৃকোশ বিভাজিত হয়ে দুটি সমআকৃতির অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। অপত্য কোশ দুটিতে মাতৃকোশের সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম সমবণ্টিত হয়। (2) সাইটোকাইনেসিসের ফলে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজমও উভয় অপত্য কোশে সমভাবে বণ্টিত হয়। এই কারণে মাইটোসিসকে সমবিভাজন বা সদৃশ বিভাজন বলা হয়।
18. মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন কোথায় হয়?
উত্তর – (1) উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গে এবং প্রাণীদের দেহকোশে মাইটোসিস হয়। (2) দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধির সময়ে কাণ্ড ও মূলে মাইটোসিস হয়। (3) বিভিন্ন নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীর অঙ্গজ ও অযৌন জননের সময়ে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে। (4) উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভ্রূণের পরিস্ফুটনের সময়ে মাইটোসিস ঘটে।
19. একটি কাঁকড়ার পদ বা তারামাছের বাহু কেটে দেওয়া হলে কী হবে?
উত্তর – কবচী শ্রেণির প্রাণী কাঁকড়া (এ ছাড়াও চিংড়ি) ও তারামাছ জাতীয় একাইনোডার্মদের বাহু কেটে দিলে তার পুনরুৎপাদন হয়। মাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহকোশ সংখ্যা বৃদ্ধি দ্বারা তা ঘটে থাকে।
20. কোনো বহুকোশী জীবের দেহে মাইটোসিস বিভাজন বন্ধ হলে কী অসুবিধা ঘটবে?
উত্তর – কোনো বহুকোশী জীবের দেহে মাইটোসিস বিভাজন বন্ধ হলে—(1) দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ ঘটবে না। (2) অঙ্গজ জননে অসুবিধা হবে। (3) জীব-দেহের ক্ষয়প্রাপ্ত ও মৃতকোশ পুনরায় নতুন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না।
21. মিয়োসিস কোশ বিভাজন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – যে কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় জীবের জননমাতৃকোশের নিউক্লিয়াসের পরপর দু-বার বিভাজন ঘটার ফলে জননমাতৃকোশের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট ও জিনের পুনর্বিন্যাসযুক্ত চারটি পৃথক অপত্য জননকোশ বা গ্যামেটের সৃষ্টি হয়, তাকে মিয়োসিস কোশ বিভাজন বলে।
22. মিয়োসিস কোশ বিভাজনকে হ্রাস বিভাজন বলা হয় কেন?
উত্তর – মিয়োসিসে সৃষ্ট অপত্য কোশগুলি মাতৃকোশের তুলনায় অর্ধ-সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট হয় বলে মিয়োসিসকে হ্রাস বিভাজন বলে।
23. মিয়োসিস কোশ বিভাজনের দুটি তাৎপর্য উল্লেখ করো।
উত্তর – (1) মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে। (2) মিয়োসিসে জিনের পুনর্বিন্যাসের ফলে সৃষ্ট অপত্য কোশের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, একে প্রকরণ বলে। এই প্রকরণ জীবের বিবর্তনের সহায়ক।
24. একটি উদ্ভিদের দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা যদি 18 হয় তবে ওই উদ্ভিদের (1) মূলের কোশের, (2) সস্য নিউক্লিয়াসের এবং (3) নির্ণীত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
উত্তর – উদ্ভিদটির দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা 18 হলে (1) মূলের কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = 18; (2) সস্য নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা 3n = 27; (3) নির্ণীত বা ডেফিনিটিভ নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = 18 হবে।
25. কোশচক্রের দশাগুলি একটি সারণি বা পর্যায়চিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর – কোশচক্রের প্রধানত দুটি দশা, ইনটারফেজ বা অবিভাজন দশা ও মাইটোটিক বা বিভাজন দশা। ইনটারফেজ দশা আবার G1, S ও G2 নামক উপদশায় বিভক্ত। মাইটোটিক দশার দুটি পর্যায়, যথা—ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস। ক্যারিওকাইনেসিসের চারটি দশা হল—প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ।
26. ইনটারফেজ দশা কী? এর প্রধান উপদশাগুলি কী কী?
উত্তর – ইনটারফেজ দশা: কোশচক্রে একটি কোশ বিভাজনের শেষ এবং পরবর্তী কোশ বিভাজনের শুরুর অন্তবর্তী দীর্ঘস্থায়ী যে দশায় মাতৃকোশের মধ্যে পরবর্তী কোশ বিভাজনের প্রস্তুতি পর্ব চলে, তাকে ইনটারফেজ বা অন্তর্বর্তী দশা বলে।
উপদশা : ইনটারফেজ-এর উপদশাগুলি হল- G1 , S ও G2
27. কোশ বিভাজনের পূর্বে ইনটারফেজ কেন প্রয়োজন ?
উত্তর – ইনটারফেজ দশায় কোশ পরবর্তী বিভাজনের জন্য প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে। যেসব কারণের জন্য কোশ বিভাজনের পূর্বে ইনটারফেজ দশা প্রয়োজন হয়, তা হল – (1) এই দশায় DNA, প্রোটিন ও বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণু দ্বিগুণিত হয়, যাতে বিভাজনের পরে সমরূপ কোশ পাওয়া যায়। (2) এই দশায় কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সংশ্লেষিত ও সঞ্চিত হয়।
28. G0 দশা কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী ?
উত্তর – G0 দশা: কোশচক্রের যে নিষ্ক্রিয় দশায় প্রবেশ করলে কোশের বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়, তাকে G0 দশা বলে। সাধারণত G1 দশার মধ্যবর্তী কোনো এক নির্দিষ্ট বিন্দুতে কোশ G0 দশায় প্রবেশ করতে পারে।
গুরুত্ব : এই দশায় কোশ বিভাজন ঘটে না এবং কোশটি সঞ্চয় কোশের ভূমিকা পালন করে। উপযুক্ত অবস্থা এলে এরা আবার কোশচক্রে প্রবেশ করে ও বিভাজিত হয় এবং তা না ঘটলে কোশটি পরিণতি ও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।
29. কোশচক্রের চেকপয়েন্ট কাকে বলে?
উত্তর – কোশ বিভাজনের বিভিন্ন ত্রুটি এড়াবার জন্য কোশচক্রের বিভিন্ন স্থানে কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্তই হল কোশচক্রের চেকপয়েন্ট বা নিয়ন্ত্রণ বিন্দু। প্রধান তিনটি চেকপয়েন্ট হল – G1 /S, G2 /M এবং M।
30. টিউমার কাকে বলে?
অথবা, টিউমার কেন সৃষ্টি হয়?
উত্তর – কোনো কারণে কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিঘ্নিত হলে কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে। ফলে অসংখ্য কোশ উৎপাদন দ্বারা যে কোশগুচ্ছ তৈরি হয় তাকে টিউমার বলে।
31. বিনাইন টিউমার কী? এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – বিনাইন টিউমার : কোশচক্রের নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজনের ফলে স্থানীয়ভাবে যে অক্ষতিকর টিউমার তৈরি হয় তাকে বিনাইন টিউমার বলে।
গুরুত্ব দেহের নানা স্থানে তৈরি হলেও এগুলি ছড়িয়ে পড়ে না। ফলে দেহে ক্ষতি ঘটার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে কম থাকে।
32. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী?
উত্তর – ম্যালিগন্যান্ট টিউমার: টিউমার কোশগুলি যদি প্রাণীদেহে রক্তবাহের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং টিউমার সৃষ্টি করে, তখন তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে।
গুরুত্ব: ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কোশগুলি রক্ত বা অন্য দেহতরল দ্বারা অন্যান্য দেহাংশে ছড়িয়ে পড়ে ও নতুন স্থানে টিউমার সৃষ্টি করে। একে বলে মেটাস্ট্যাটিস। মেটাস্ট্যাসিস ঘটলে তা প্রাণীর পক্ষে মারণ ক্যানসার-রূপে পরিগণিত হয়।
33. ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – কোশের বিভাজন জিনগত বা পরিবেশগত কারসিনোজেনের প্রভাবে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লে অসংখ্য অবাঞ্ছিত কোশ সৃষ্টি হয়। ওই কোশগুলি একত্রে টিউমার সৃষ্টি করে। কিছু টিউমার স্থানীয় যাদের বিনাইন টিউমার বলে। পক্ষান্তরে, টিউমার কোশ যদি রক্ত বা অন্য দেহতরল বাহিত হয়ে দেহের অন্যস্থানে নতুন টিউমার তৈরি করে ক্ষতিসাধন করে (বা মৃত্যুও ঘটায়), তখন সেই টিউমারকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে।
34. বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের পার্থক্য কী?
উত্তর – বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার উভয়ক্ষেত্রেই কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয় ও টিউমার সৃষ্টি হয়। বিনাইন টিউমার শল্যচিকিৎসা দ্বারা দূর করা সম্ভব, কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শল্যচিকিৎসা দ্বারা দূর করা কঠিন। কারণ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কোশ বা ক্যানসার কোশ সহজেই দেহের অন্যত্র গিয়ে (মেটাস্ট্যাসিস) নতুন ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি করে।
35. অঙ্কোজিন কাকে বলে?
উত্তর – স্বাভাবিক কোশকে ম্যালিগন্যান্ট কোশে পরিবর্তনের জন্য দায়ী জিন অর্থাৎ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী জিনাটি হল অঙ্কোজিন। অঙ্কোজিন কোনো কারসিনোজেনের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে (মিউটেশন) গেলে তা কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে ও ক্যানসার সৃষ্টি করে।
36. ক্যানসার সৃষ্টির প্রধান দুটি পর্যায় কী কী ?
উত্তর – (1) ক্যানসার সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিক কোশের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে কোশে দ্রুত অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় এবং সেখান থেকে টিউমার সৃষ্টি হয়। (2) দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যালিগ্যান্ট টিউমারের কোশগুলির আন্তরকোশীয় সংযোগ বিনষ্ট হওয়ায় তা রক্ত বা লসিকায় বাহিত হয়ে অন্য স্থানে পৌঁছায় (মেটাস্ট্যাসিস) ও অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন শুরু করে গৌণ টিউমার তৈরি করে রোগটি দেহে ছড়িয়ে দেয়।
37. মেটাস্ট্যাসিস কী? এর সঙ্গে কোশচক্রের সম্পর্ক কী?
উত্তর – মেটাস্ট্যাসিস: ক্যানসারের শেষ পর্যায়ে (স্টেজ IV)-ক্যানসারযুক্ত কোশগুলি রক্ত বা লসিকা দ্বারা সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। ওই কোশ অন্য কোনো অঙ্গে তখন ক্যানসার তৈরি করে। ক্যানসারের এই দশাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে।
কোশচক্রের সঙ্গে সম্পর্ক: কোশচক্রের চেক পয়েন্টগুলি বিঘ্নিত হলে অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন ঘটে। এর ফলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি হয় যা পরে মেটাস্ট্যাসিস ঘটাতে পারে।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. কোশ বিভাজনের সময়ে ক্রোমোজোমীয় চলনে সাহায্য করে—
(a) বেমতন্তু
(b) সাইটোপ্লাজম
(c) রাইবোজোম
(d) মাইটোকনড্রিয়া
উত্তর – (a) বেমতন্তু
2. কোশ বিভাজনকালে ATP শক্তির জোগান দেয়—
(a) সেন্টোজোম
(b) সাইটোপ্লাজম
(c) মাইটোকনড্রিয়া
(d) মাইক্রোটিবিউল
উত্তর – (c) মাইটোকনড্রিয়া
3. বেমতত্ত্ব গঠিত হয়, যার দ্বারা তা হল—
(a) হিউমিউলিন
(b) ইনটারমিডিয়েট ফিলামেন্ট
(c) ফ্ল্যাজেলিন
(d) টিউবিউলিন
উত্তর – (d) টিউবিউলিন
4. একটি প্রোক্যারিওটিক কোশের চিত্র আঁকার সময়ে তুমি তাতে নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে কোন্টির উপস্থিতি দেখাবে না?
(a) মাইটোকনড্রিয়া
(b) ক্রোমাটোফোর
(c) মেসোজোম
(d) নিউক্লিওয়েড
উত্তর – (a) মাইটোকনড্রিয়া
5. অ্যামাইটোসিস শব্দটি যে বিজ্ঞানী প্রচলন করেন তাঁর নাম-
(a) ওয়াল্টার ফ্লেমিং
(b) স্ট্রাসবার্জার
(c) ফারমার
(d) রবার্ট রিম্যাক
উত্তর – (a) ওয়াল্টার ফ্লেমিং
6. ক্রোমোজোমীয় চলন, নিউক্লীয় পর্দার অবলুপ্তি, কিছুই ঘটে না যে কোশ বিভাজনে, তা হল—
(a) মাইটোসিস
(b) মিয়োসিস
(c) অ্যামাইটোসিস
(d) (a) ও (b) উভয়েই
উত্তর – (c) অ্যামাইটোসিস
7. ব্যাকটেরিয়ার কোশ বিভাজন পদ্ধতিটি হল—
(a) মাইটোসিস
(b) অ্যামাইটোসিস
(c) মিয়োসিস
(d) এন্ডোমাইটোসিস
উত্তর – (b) অ্যামাইটোসিস
৪. প্রত্যক্ষ বিভাজন পদ্ধতি হল —
(a) মাইটোসিস
(b) মিয়োসিস
(c) অ্যামাইটোসিস
(d) এন্ডোমাইটোসিস
উত্তর – (c) অ্যামাইটোসিস
9. যে জীবে অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন দেখা যায়, তা হল—
(a) মানুষ
(b) মটর উদ্ভিদ
(c) অ্যামিবা
(d) ব্যাং
উত্তর – (c) অ্যামিবা
10. তুমি একটি কোশ বিভাজনের সময় কোনো বেমতন্তু তৈরি হতে দেখলে না। এই ধরনের কোশ ভাজনকে বলা হয়—
(a) অ্যামাইটোসিস
(b) প্রথম মিয়োটিক বিভাজন
(c) দ্বিতীয় মিয়োটিক বিভাজন
(d) মাইটোসিস
উত্তর – (a) অ্যামাইটোসিস
11. মেটাফেজ ঘটে না যে কোশ বিভাজনে—
(a) মাইটোসিস
(b) অ্যামাইটোসিস
(c) মিয়োসিস
(d) অঙ্গজ জনন
উত্তর – (b) অ্যামাইটোসিস
12. অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজনের সঠিক বৈশিষ্ট্যটি শনাক্ত করো—
(a) যৌন জননকারী জীবের জননমাতৃকোশে ঘটে
(b) এটিকে পরোক্ষ বিভাজন বলা হয়
(c) ক্রোমোজোম ও বেমতন্তু গঠিত হয়
(d) ক্রোমোজোম ও বেমতত্ত্ব গঠিত হয় না
উত্তর – (d) ক্রোমোজোম ও বেমতত্ত্ব গঠিত হয় না
13. দেহকোশ সাধারণত যে প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়, তা হল—
(a) মাইটোসিস বিভাজন
(b) মিয়োসিস বিভাজন
(c) অ্যামাইটোসিস বিভাজন
(a) খণ্ডীভবন
উত্তর – (a) মাইটোসিস বিভাজন
14. একটি কোশ থেকে 256 টি কোশ তৈরি হতে যতবার মাইটোসিস বিভাজনের প্রয়োজন হয়, তা হল —
(a) 5 বার
(b) 6 বার
(c) 7 বার
(d) ৪ বার
উত্তর – (d) ৪ বার
15. ‘জননকোশ গঠনকালে দু-প্রকার বিভাজন হয়’ কোন্ বিজ্ঞানী বলেন?
(a) ওপারিন
(b) হ্যালডেন
(c) ফ্লেমিং
(d) ওয়াইসম্যান
উত্তর – (d) ওয়াইসম্যান
16. প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে যে কোশ বিভাজনের মাধ্যমে, তা হল—
(a) অ্যামাইটোসিস
(b) মাইটোসিস
(c) মিয়োসিস
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) মিয়োসিস
17. মিয়োসিস কোশ বিভাজন হল –
(a) সমবিভাজন
(b) বহুবিভাজন
(c) অসম বিভাজন
(d) হ্রাস বিভাজন
উত্তর – (d) হ্রাস বিভাজন
18. মিয়োসিসের তাৎপর্য সংক্রান্ত নীচের কোন্ বক্তব্যটি সঠিক তা সঠিকভাবে নিরূপণ করো—
(a) দেহের সার্বিক বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ ঘটায়
(b) জীবের জনন অঙ্গের ও ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটায়
(c) বংশগত প্রকরণবাহী হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপাদন করে
(d) কোনো কোনো প্রাণীর দেহে অঙ্গহানি ঘটলে সেটি পুনরুৎপাদন করে
উত্তর – (c) বংশগত প্রকরণবাহী হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপাদন করে
19. শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদিত হয় —
(a) মাইটোসিস পদ্ধতিতে
(b) মিয়োসিস পদ্ধতিতে
(c) অ্যামাইটেসিস পদ্ধতিতে
(d) কোরকোদগম পদ্ধতিতে
উত্তর – (b) মিয়োসিস পদ্ধতিতে
20. রেণুমাতৃকোশ থেকে রেণু উৎপাদনের সময় কোন প্রকার কোেশ বিভাজন ঘটে?
(a) অ্যামাইটোসিস
(b) মাইটোসিস
(c) মিয়োসিস
(d) সবকটি
উত্তর – (c) মিয়োসিস
21. নীচের কোন্টি মিয়োসিসের বৈশিষ্ট্য নয়?
(a) জননমাতৃকোশে ঘটে
(b) ক্রোমোজোমের হ্রাস বিভাজন ঘটে
(c) উৎপন্ন কোশের সংখ্যা 2
(d) উৎপন্ন কোশের সংখ্যা 4
উত্তর – (c) উৎপন্ন কোশের সংখ্যা 2
22. একবার কোশ বিভাজন শেষ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী কোশ বিভাজন পর্যন্ত কোশের মধ্যে যেসব ঘটনা পর্যায়ক্রমে চক্রাকারে সম্পন্ন হয়, সেই দশা হল—
(a) অরনিথিন চক্র
(b) কোরি চক্র
(c) কোশচক্র
(d) ক্রেবস্ চক্র
উত্তর – (c) কোশচক্র
23. সাধারণত ইনটারফেজ দেখা যায় যে দুটি দশার মধ্যে তা, হল—
(a) প্রোফেজ ও মেটাফেজ
(b) মেটাফেজ ও অ্যানাফেজ
(c) টেলোফেজ ও প্রোফেজ
(d) অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ
উত্তর – (c) টেলোফেজ ও প্রোফেজ
24. ইনটারফেজের বৈশিষ্ট্য নয়—
(a) কোশের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়া
(b) নিউক্লীয় আবরণী অবলুপ্ত হওয়া
(c) বিভাজনের প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চিত হওয়া
(d) DNA, RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষিত হওয়া
উত্তর – (b) নিউক্লীয় আবরণী অবলুপ্ত হওয়া
25. কোন্ দশায় অবস্থানকালে কোশ বিভাজিত হতে পারে না?
(a) G1 দশা
(b) G2 দশা
(c) S দশা
(d) G0 দশা
উত্তর – (d) G0 দশা
26. DNA সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচকের সংশ্লেষ ঘটে—
(a) G1 দশায়
(b) G2 দশায়
(c) G0 দশায়
(d) S দশায়
উত্তর – (a) G1 দশায়
27. DNA-এর প্রতিলিপিকরণ বা দ্বিত্বকরণ যে ইনটারফেজ দশায় ঘটে, তা হল—
(a) G1 দশা
(b) S দশা
(c) G2 দশা
(d) M দশা
উত্তর – (b) S দশা
28. DNA সংশ্লেষ ও প্রোফেজ শুরুর মধ্যবর্তী দশা হল—
(a) G0 দশা
(b) G1 দশা
(c) M দশা
(d) G2 দশা
উত্তর – (d) G2 দশা
29. কোশচক্রে মাইটোটিক দশা ঘটে—
(a) G1 দশার শেষে
(b) S দশার শেষে
(c) G2 দশার আগে
(d) G2 দশার শেষে
উত্তর – (d) G2 দশার শেষে
30. কোশ বিভাজনের কোন্ সময়ে ক্রোমোজোম একতন্ত্রী থেকে দ্বিতন্ত্রী হয়?
(a) প্রোফেজ
(b) ইনটারফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) মেটাফেজ
উত্তর – (b) ইনটারফেজ
31. কোনো A প্রজাতির DNA মাত্রা B প্রজাতির তুলনায় বেশি হলে তার কোশচক্রের কোন্ উপদশাটির সময়কাল বেশি হবে?
(a) G1
(b) S
(c) G2
(d) সবকটি
উত্তর – (b) S
32. উপদশার সময়কাল কম থেকে বেশি কোন্ সজ্জাক্রমটি প্রকাশ করে?
(a) G1→S→G2
(b) S→G2→G1
(c) G2→S→G1
(d) S→G1 →G2
উত্তর – (c) G2→S→G1
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. যে পদ্ধতিতে একটি কোশ থেকে দুটি বা তার বেশি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর – কোশ বিভাজন।
2. উদ্ভিদকোশের বেমতন্তু গঠনে সাহায্য করে কোন্ কোশ অঙ্গাণু?
উত্তর – অণুনালিকা বা মাইক্রোটিউবিউল।
3. প্রাণীকোশ বিভাজনে সেন্ট্রোজোমের ভূমিকা কী?
উত্তর – সেন্ট্রোজোম প্রাণীকোশ বিভাজনে বেমতন্তু গঠনে সহায়তা করে।
4. একটি প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলে বিভাজনের ক্ষেত্রে কী ঘটবে?
উত্তর – একটি প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলে বেমতন্তু গঠিত হবে না ও প্রাণীকোশটি বিভাজিত হতে পারবে না।
5. স্নায়ুকোশ বিভাজিত হয় না কেন?
উত্তর – স্নায়ুকোশের সেন্ট্রোজোম নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির বলে স্নায়ুকোশ বিভাজিত হয় না।
6. প্রাণীকোশ বিভাজনে মাকুর মেরু সৃষ্টিতে কোন্ কোশ অঙ্গাণু অংশগ্রহণ করে?
উত্তর – সেন্ট্রোজোম।
7. কোশের বিভাজনে পর্দা গঠনে ফসফোলিপিডের জোগান দেয় কোন অঙ্গাণু?
উত্তর – মসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা।
৪. কোশ বিভাজন প্রতিরোধী দুটি বস্তুর নাম লেখো।
উত্তর – কোশ বিভাজন প্রতিরোধী দুটি বস্তু হল—সায়ানাইড, অ্যাজাইড।
9. কোশ বিভাজনে সাহায্যকারী একটি উপাদানের নাম লেখো।
উত্তর – কোশ বিভাজনে সাহায্যকারী উপাদান হল উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বিভিন্ন গ্রোথ হরমোন।
10. কোন প্রকার কোশে কোশ বিভাজন দেখা যায় না?
উত্তর – লোহিত রক্তকণিকা (RBC), স্নায়ুকোশ বা নিউরোন ও পেশিকোশে কোশ বিভাজন দেখা যায় না।
11. এককোশী জীবের বংশবিস্তারের উপায় কী?
উত্তর – কোশ বিভাজন।
12. অ্যামিবা-র দ্বিবিভাজন কী জাতীয় কোশ বিভাজন?
উত্তর – অ্যামাইটোসিস।
13. অ্যামাইটোসিসের অপর নাম কী ?
উত্তর – ক্যারিওস্টেনোসিস।
14. অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর – ঈস্ট, ব্যাকটেরিয়া, প্যারামেসিয়াম-এর মেগানিউক্লিয়াস ইত্যাদিতে অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন দেখা যায়।
15. কোন প্রকার কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের সরাসরি বিভাজন ঘটে ?
উত্তর – অ্যামাইটোসিস।
16. জনিতৃ জনুর জিন এলোমেলোভাবে অপত্যে বিন্যস্ত হয় কোন্ কোশ বিভাজন দ্বারা ?
উত্তর – অ্যামাইটোসিস।
17. কোন্ কোশ বিভাজনে ক্রোমোজোম দেখা যায় না?
উত্তর – অ্যামাইটোসিস।
18. একটি মেরুদণ্ডী প্রাণীকোশের নাম লেখো যাতে অ্যামাইটোসিস দেখা যায়।
উত্তর – মুরগির ভ্রূণের RBC কোশে অ্যামাইটোসিস দেখা যায়।
19. অপ্রত্যক্ষ কোশ বিভাজন কোন্গুলি ?
উত্তর – মাইটোসিস ও মিয়োসিস।
20. কোন প্রকার কোশ বিভাজনের দ্বারা ক্ষয়পূরণ হয়?
উত্তর – মাইটোসিস।
21. সদৃশ বিভাজন কোথায় হয়?
উত্তর – সদৃশ বিভাজন দেহকোশে হয়।
22. কোন্ প্রকার কোশ বিভাজনে দেহকোশের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে ?
উত্তর – মাইটোসিস।
23. নীচের চিত্রটি দেখে শূন্যস্থান পূরণ করো।
এটি পরোক্ষ কোশ বিভাজন বা ……….|
উত্তর – মাইটোসিস।
24. যে কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে কোশ সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কোশ গঠন করে, তাকে কী বলে?
উত্তর – মাইটোসিস।
25. ত্বকের ক্ষয়পূরণ ঘটে কোন ধরনের কোশ বিভাজন দ্বারা ?
অথবা, তোমার হাত কেটে গেলে সেই অংশের ক্ষয়পূরণ কীভাবে ঘটে?
উত্তর – মাইটোসিস কোশ বিভাজন।
26. একটি প্রাণীকোশ পরপর পাঁচবার মাইটোসিস বিভাজনে বিভাজিত হলে কয়টি অপত্য কোশ উৎপন্ন করবে?
উত্তর – 32 টি।
27. ভ্রূণ বা জাইগোট সৃষ্টির কোশ কোন্ কোশ বিভাজন দ্বারা তৈরি হয়?
উত্তর – মিয়োসিস (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সৃষ্টির পদ্ধতি)।
28. মিয়োসিস কোশ বিভাজন কোথায় ঘটে?
উত্তর – জীবের জননমাতৃকোশে (প্রাণীদের শুক্রাশয়ে ও ডিম্বাশয়ে এবং উদ্ভিদের পরাগধানীতে ও ডিম্বাশয়ে) মিয়োসিস ঘটে।
29. অনুন্নত উদ্ভিদের কোন অংশে মিয়োসিস ঘটে ?
উত্তর – অনুন্নত উদ্ভিদের জাইগোট ও রেণুমাতৃকোশে মিয়োসিস হয়।
30. কোনো মহিলার ডিম্বাণু মাতৃকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা 46 হলে তার ডিম্বাণুতে কয়টি ক্রোমোজোম থাকবে?
উত্তর – 23টি।
31. কোনো জীবের দেহকোশে 32টি ক্রোমোজোম থাকলে তার শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
উত্তর – 16টি।
32. নীচের চিত্রটি দেখে শূন্যস্থান পূরণ করো।
এটি হল ………. নামক কোশ বিভাজন।
উত্তর – মিয়োসিস।
33. মাইটোটিক মিয়োসিস কাকে বলে?
উত্তর – মিয়োসিসের দ্বিতীয় কোশ বিভাজন পর্যায়টি মাইটোসিসের মতোই সদৃশ বিভাজন হয় বলে একে মাইটোটিক মিয়োসিস বলে।
34. কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে কী বলে?
উত্তর – কোশচক্র।
35. ইনটারফেজের সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী দশা কোনটি?
উত্তর – ইনটারফেজের সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী দশা হল G2 এবং সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী দশা হল G1 |
36. ইনটারফেজ-এর কোন্ উপদশাটি কোশচক্রে দীর্ঘতম সময় ধরে চলে?
উত্তর – G1 উপদশা, এই উপদশায় কোশ তার বিভাজনের পর প্রথম বৃদ্ধির সুযোগ পায়।
37. G1 দশার একটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – G1 দশায় কোশীয় অঙ্গাণুর দ্বিত্বকরণ ঘটে ও DNA সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও উৎসেচক উৎপন্ন হয়।
38. কোশচক্রের ‘Quiscent stage’ বা নিষ্ক্রিয় দশা কোন্টি?
উত্তর – G0 দশা।
39. স্থায়ীভাবে G0 অবস্থায় অবস্থানকারী দুটি প্রাণীকোশের নাম লেখো।
উত্তর – G0 অবস্থায় স্থায়ীভাবে অবস্থানকারী দুটি প্রাণীকোশ হল স্নায়ুকোশ ও হৃদ্পেশিকোশ।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. সাইটোপ্লাজমে প্রোটিন সংশ্লেষকারী পর্দাবিহীন দানাদার অঙ্গাণু হল ……… |
উত্তর – রাইবোজোম
2. প্রাণীকোশের বেমতন্তু গঠনে অংশ নেয় ……….. |
উত্তর – সেন্ট্রোজোম
3. জীবদেহে ………. প্রকার কোশ বিভাজন দেখা যায়।
উত্তর – তিন
4. সমবিভাজন বলা হয় ……….. -কে।
উত্তর – মাইটোসিস
5. মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ভ্রূণের পরিস্ফুরণ ও বৃদ্ধির সময় ………. কোশ বিভাজন ঘটে।
উত্তর – মাইটোসিস
6. মিয়োসিস II হল একটি ……….. বিভাজন।
উত্তর – সম
7. মাইটোটিক মিয়োসিস বলতে ……….. কোশ বিভাজনকে বোঝায়।
উত্তর – মিয়োসিস II
৪. দুটি কোশ বিভাজনের মধ্যবর্তী দশা হল ……….. |
উত্তর – ইনটারফেজ
9. কোশীয় অঙ্গাণু দ্বিগুণিত হয় ………. উপদশায়।
উত্তর – G1
10. DNA মাত্রা 2C থাকে ইনটারফেজের ……….. উপদশায়।
উত্তর – G1
11. DNA মাত্রা 4C থাকে ইনটারফেজের ………… উপদশায়।
উত্তর – S/G2
12. কোশচক্রের S-দশায় ………. সংশ্লেষিত হয়।
উত্তর – DNA
13. ………. দশাকে ‘বন্দীদশা’ অথবা ‘সুপ্তদশা’ বলে।
উত্তর – G0
14. কোশচক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন ঘটার ফলে পরবর্তীকালে ……… গঠন করে।
উত্তর – টিউমার
SUB-TOPIC 1.3 মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন
বিষয়সংক্ষেপ
- মাইটোসিস কোশ বিভাজনের সময় কোশে নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস এবং কোশের সাইটোপ্লাজমের বিভাজনকে বলে সাইটোকাইনেসিস।
- ক্যারিওকাইনেসিসের প্রোফেজ দশায় ক্রোমোজোম ও বেম গঠিত হয়। মেটাফেজে ক্রোমোজোমগুলি বেম সংলগ্ন হয়ে কোশের বিষুব তলে সজ্জিত হয়। অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিড পৃথক হয় এবং টেলোফেজ দশায় কোশের দুই মেরুতে দুটি নতুন অপত্য নিউক্লিয়াস তৈরি হয়।
- প্রাণীকোশে ‘ফারোয়িং’ পদ্ধতিতে ও উদ্ভিদকোশে ফ্রাগমোপ্লাস্ট ও কোশপাত গঠন দ্বারা সাইটোকাইনেসিস ঘটে। উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে মাইটোসিসের নানা পার্থক্য দেখা যায়।
- মাইটোসিসে কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে (2n)। কিন্তু মিয়োসিসে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (n) হয়ে যায়।
- মিয়োসিস কোশ বিভাজনে দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডে ক্রসিং ওভার ঘটে, ফলে অপত্য জননকোশগুলিতে প্রকরণ তৈরি হয়।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. মাইটোসিসের বিভিন্ন দশার নাম লেখো। প্রত্যেক দশার মুখ্য ঘটনাক্রম উল্লেখ করো।
অংশ প্রশ্ন, মাইটোসিসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশার বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – মাইটোসিসের বিভিন্ন দশা: মাইটোসিস কোশ বিভাজন প্রক্রিয়াটির প্রধান দুটি পর্যায় হল—ক্যারিওকাইনেসিস অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন এবং সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। ক্যারিওকাইনেসিস প্রক্রিয়াটি আবার চারটি দশায় বিভক্ত। এই দশাগুলি হল—প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ নামক ।
মাইটোসিসের বিভিন্ন দশার মুখ্য ঘটনাক্রম: নীচে মাইটোসিসের বিভিন্ন দশার মুখ্য ঘটনাক্রম সারণির মাধ্যমে উল্লেখ করা হল—
| মাইটোটিক দশার নাম |
মুখ্য ঘটনাক্রম |
| প্রোফেজ (প্রথম দশা) |
[1] ক্রোমাটিন তন্তুগুলি ঘনীভূত ও স্থূল হয় এবং ক্রোমোজোম গঠন রূপে আবির্ভূত হয়।
[2] ক্রোমোজোমগুলি একতন্ত্রী থেকে দ্বিতন্ত্রী অবস্থাপ্রাপ্ত হয়।
[3] এই দশার শেষের দিকে নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে।
|
| মেটাফেজ (দ্বিতীয় দশা) |
[1] এই দশায় বেম ও বেমতন্তু গঠিত হয়। ক্রোমোজোমগুলি ছোটো, স্ফীত ও সর্বাধিক স্পষ্ট হয়।
[2] এই দশায় বেমের বিষুব অঞ্চলে ক্রোমোজোমগুলি পরপর আড়াআড়িভাবে সজ্জিত হয়ে মেটাফেজ প্লেট বা ইকুয়েটোরিয়াল প্লেট গঠন করে।
[3] প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারে অবস্থিত কাইনেটোকোর নামক বিশেষ গঠন বেমতন্তুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এই বেমতন্তু-গুলিকে ক্রোমোজোমাল বেমতন্তু বলে।
|
| অ্যানাফেজ (তৃতীয় দশা) |
[1] এই দশায় সেন্ট্রোমিয়ার সম্পূর্ণভাবে দ্বি-বিভাজিত হয়।
[2] এক-একটি ক্রোমাটিড একতন্ত্রী অপত্য ক্রোমোজোমে রূপান্তরিত হয়।
[3] অপত্য ক্রোমোজোমদ্বয় বিপরীত মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে। একে অ্যানাফেজীয় চলন বা ক্রোমোজোমীয় চলন বলা হয় ।
|
| টেলোফেজ (চতুর্থ তথা শেষ দশা) |
[1] এই দশায় অপত্য ক্রোমোজোমগুলির ঘনীভবন দূর হয় এবং পাক খুলে গিয়ে পুনরায় নিউক্লীয় জালিকা গঠন করে।
[2] এই দশায় নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
[3] এই দশায় নিউক্লীয় পর্দার আবির্ভাব ও অপত্য ক্রোমোজোমকে বেষ্টন করে দুটি পূর্ণাঙ্গ নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
|
| সাইটোকাইনেসিস |
[1] এই দশায় সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়।
[2] দুটি নিউক্লিয়াসযুক্ত মাতৃকোশ থেকে একটি করে অপত্য নিউক্লিয়াসযুক্ত দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়।
[3] উদ্ভিদকোশে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠনের মাধ্যমে ও প্রাণীকোশে খাঁজ সৃষ্টি বা ক্লিভেজ বা ফারোয়িং-এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
|
2. প্রোফেজ বলতে কী বোঝ? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার বর্ণনা দাও।
উত্তর – প্রোফেজ দশা: ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে এবং ক্রোমাটিন বস্তু কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমোজোম রূপে আবির্ভূত হয়, তাকে প্রোফেজ বলে।
প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য: নীচে উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল—
(1) উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: [i] নিউক্লিয়াসটি আকারে ও আয়তনে বৃদ্ধি পায়। [ii] জল বিয়োজনের ফলে নিউক্লিয়াসের নিউক্লীয় জালক বা ক্রোমাটিন থেকে সূত্রাকার ক্রোমোজোম গঠিত হয়।
[iii] প্রত্যেক ক্রোমোজোম লম্বালম্বি ভাগ হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে এবং ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। [iv] ক্রোমাটিড দুটি পরস্পরের সঙ্গে স্প্রিং-এর মতো প্যাঁচানো থাকে, একে স্পাইরালাইজেশন বলে। এর ফলে ক্রোমোজোমগুলি ধীরে ধীরে ঘনীভূত ও স্থূল হতে থাকে। [v] এইসময় নিউক্লিওলাসটি ক্রমশ ছোটো হতে থাকে এবং প্রোফেজের শেষ পর্যায়ে নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়। [vi] উদ্ভিদকোশের সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল থেকে বেমতন্তুর আবির্ভাব ঘটে যা পরবর্তীকালে বেম গঠনে সাহায্য করে। এদের অ্যানাস্ট্রাল বেমতন্তু বলে।
(2) প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: ওপরে উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বর্ণিত ঘটনাগুলি প্রাণীকোশের মাইটোসিস বিভাজনেও ঘটে। এ ছাড়াও [i] প্রাণীকোশে দুটি সেন্ট্রিওল প্রতিলিপি গঠনের মাধ্যমে দুটি অপত্য সেন্ট্রিওলের সৃষ্টি করে। [ii] দুটি করে সেন্ট্রিওলবিশিষ্ট একজোড়া সেন্ট্রোজোম পরস্পরের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যায় এবং নিউক্লিয়াসের দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছোয়। [iii] সেন্ট্রোজোম দুটির চারদিক থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মির মতো অ্যাস্ট্রাল রশ্মির আবির্ভাব ঘটে যা থেকে পরবর্তীকালে বেমতত্ত্ব গঠিত হয়।
3. মেটাফেজ দশা কাকে বলে? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার বর্ণনা দাও।
উত্তর – মেটাফেজ দশা: ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় ক্রোমোজোমগুলি বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিষুব অঞ্চলে সজ্জিত হয়, তাকে মেটাফেজ বলে। প্রোফেজের তুলনায় এই দশা স্বল্পস্থায়ী।
মেটাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য:নীচে উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল-
(1) উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: [i] নিউক্লীয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়। [ii] উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রোজোম না। থাকলেও বেম গঠিত হয়। এক্ষেত্রে সাইটোপ্লাজনের মাইক্রোটিউবিউলগুলি একত্রিত হয়ে বেনতন্ত্র গঠিত হয়। পরে তন্তুগুলি মেরুপ্রান্তে একত্রিত হয়ে মাকু আকৃতির কেম বা স্পিন্ডল গঠন করে। সেন্ট্রোজোমের সাহায্য ছাড়া গঠিত এইরূপ কেমকে অ্যানাস্টাল বেন বলা হয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মাকুর সুচালো প্রান্ত দুটিকে মেরু বলে। [iii] এইসময়ে প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিভম্বয় বেমের বিষুব অঞ্চলে, অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চলে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। ক্রোমোজোমের এই বিন্যাসযুক্ত অবস্থাকে নিরক্ষীয় প্লেট বা মেটাফেজ প্লেট বলে। [iv] মেটাকেজের শেষ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অনুদৈর্ঘ্যভাবে দ্বিখণ্ডিত হতে শুরু করে।
(2) প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: ওপরের ঘটনা ছাড়া প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে মাইক্রোটিউবিউলের পরিবর্তে নিউক্লিয়াসের উভয় মেরুতে অবস্থিত দুটি সেন্ট্রিওলের অ্যাস্টাল রশ্মি বিস্তৃত হয়ে বেমতত্ত্ব গঠন করে। বেমতন্তুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাকু-আকৃতির বেম বা স্পিল গঠন করে।
4. অ্যানাফেজ দশা বলতে কী বোঝ? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার বর্ণনা দাও।
উত্তর – অ্যানাফেজ দশা: ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় ক্রোমাটিডগুলি বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে চালিত হয়, তাকে অ্যানাফেজ বলে। মাইটোসিসের এই দশা সর্বাপেক্ষা স্বল্পস্থায়ী।
অ্যানাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য: উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে অ্যানাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য নীচে আলোচনা করা হল।

- উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: [i] এই দশার শুরুতেই ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারগুলি সমান দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। [ii] এর ফলে সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয় এক-একটি সেন্ট্রোমিয়ার-এর অংশসহ পৃথক হয়ে যায় এবং দুটি অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে। [iii] অপত্য ক্রোমোজোম দুটির মধ্যে বিকর্ষণ শুরু হয়। ফলে অপত্য ক্রোমোজোমগুলির অর্ধেক বিষুব অঞ্চল থেকে বেমের দুটি বিপরীত মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে। ক্রোমোজোমের এইরূপ চলনকে ক্রোমোজোমীয় চলন বা অ্যানাফেজীয় চলন বলে। এটি অ্যানাফেজের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। [iv] অপত্য ক্রোমোজোমগুলি পৃথক হওয়ায় ক্রোমোজোমের মাঝের তত্ত্বগুলিকে ইনটারজোনাল তন্তু বলে। [v] এই দশার শেষে অপত্য ক্রোমোজোমগুলিকে ইংরেজি ‘V’, ‘L’, ‘J’, ‘I’ অক্ষরের মতো দেখায়। এদের যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক, সাব-মেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ও টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
- প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে অ্যানাফেজ দশায় উদ্ভিদকোশের অ্যানাফেজ দশার মতো একই ঘটনা ঘটে। তবে, এক্ষেত্রে বেতন্তুগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে স্টেমবডি গঠন করে যা অ্যানাফেজীয় চলনে সাহায্য করে।
5. টেলোফেজ কাকে বলে? উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের টেলোফেজ দশার বর্ণনা দাও।
উত্তর – টেলোফেজ দশা: ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্ট হয়, তাকে টেলোফেজ বলে।
টেলোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য: উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে টেলোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য নীচে আলোচনা করা হল-
- উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: [i] টেলোফেজ দশার শুরুতে বেমের উভয় মেরুপ্রান্তে সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। [ii] ক্রোমো-জোমগুলির পাক খুলে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায় এবং জালকের আকারে বিন্যস্ত হয়ে নিউক্লীয় জালক গঠন করে। [iii] ক্রোমোজোমগুলিকে বেষ্টন করে পুনরায় নিউক্লীয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে। [iv] নিউক্লিয়াসের মধ্যে নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে। [v] এরপর, ক্রোমোজোমগুলির ক্রমিক জলশোষণ, প্রসারণ প্রভৃতির ফলে দুই মেরুতে সমসংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট সমগুণসম্পন্ন এবং সমআকৃতি- বিশিষ্ট দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়।
- প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য: প্রাণী-কোশের টেলোফেজ দশায় উদ্ভিদ-কোশের টেলোফেজ দশার মতো একই ঘটনা ঘটে।
6. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের গুরুত্ব লেখো।
অথবা, জীবের বৃদ্ধি, কোশ প্রতিস্থাপন ও ক্ষয়পূরণ, পুনরুৎপাদন এবং প্রজননে মাইটোসিস কীভাবে সাহায্য করে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – মাইটোসিস কোশ বিভাজনের গুরুত্ব: উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ-কোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের গুরুত্বগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
- জীবদেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি: মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকোশের ক্রমাগত বিভাজনের ফলে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জীবদেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়। এককোশী জাইগোট মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়ে বহুকোশী জীবের সৃষ্টি করে।
- কোশ প্রতিস্থাপন এবং ক্ষয়পূরণ; দেহের ক্ষয়প্রাপ্ত ও মৃতকোশ মাইটোসিস পদ্ধতিতে সৃষ্ট নতুন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে সেই অংশের ক্ষয়পূরণ ঘটে। যেমন—আমাদের কোনো স্থান কেটে গেলে মাইটোসিস দ্বারা উৎপন্ন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপন ও ক্ষয়পূরণ ঘটে থাকে।
- পুনরুৎপাদন: বিভিন্ন প্রাণীর দেহাংশ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা তা পুনরুৎপাদিত হয়। যেমন—কবচী প্রাণীদের (কাঁকড়া) পদ, তারামাছের বাহু আঘাত বা অন্য কোনো কারণে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে, মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা পুনরুৎপাদিত হয়।
- প্রজনন: অ্যামিবা, প্যারামেসিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি এককোশী জীবের অযৌন জনন মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে হয়। আবার বিভিন্ন উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন মাইটোসিস পদ্ধতি দ্বারাই ঘটে থাকে। যেমন—কচুরিপানা, মিষ্টি আলু, পাথরকুচির অঙ্গজ জনন প্রভৃতি।
- সমবিভাজন : মাইটোসিস পদ্ধতিতে সৃষ্ট দুটি অপত্য কোশ গুণগত ও পরিমাণগত বিচারে অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যা ও অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ এবং ক্রোমোজোমের সজ্জাগত বিচারে মাতৃকোশের সমান হয়।
7. সাইটোকাইনেসিস কাকে বলে? উদ্ভিদকোশের এবং প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতি বর্ণনা করো।
উত্তর – সাইটোকাইনেসিস: যে প্রক্রিয়ায় কোশের সাইটোপ্লাজম সমান দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে। প্রকৃতপক্ষে টেলোফেজ দশাতেই সাইটোকাইনেসিস শুরু হয় এবং এই দশাতেই তা সম্পূর্ণ হয়।
উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস: উদ্ভিদকোশের ও প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতি নীচে বর্ণনা করা হল।
(1) উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস: [i] টেলোফেজের শেষ পর্যায়ে কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর মাইক্রোটিউবিউল সঞ্চিত হয়ে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট নামক গঠন সৃষ্টি করে। এই স্থানে গলগি বস্তুগুলি জমা হয় এবং পরস্পর মিলিত হয়ে দুটি কোশপর্দা গঠন করে। [ii] এইসময় ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট পরিবর্তিত হয়ে কোশপাত বা সেলপ্লেট গঠন করে। এই সেলপ্লেট পরে মধ্যচ্ছদা বা মিড্ল্ ল্যামেলাতে পরিবর্তিত হয়। এটি প্রধানত ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট দ্বারা গঠিত। [iii] মধ্যচ্ছদার উভয়পার্শ্বে সেলুলোজ, ক্যালোজ, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি উপাদান সঞ্চিত হয়ে প্রাথমিক কোশপ্রাচীর তৈরি করে। [iv] এইভাবে সৃষ্ট কোশপর্দাসহ কোশপ্রাচীর কোশের মাঝবরাবর বিস্তৃত হয় ও শেষপর্যন্ত সাইটোপ্লাজমসহ দুটি অপত্য কোশকে সম্পূর্ণ পৃথক করে।

(2) প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস: [i] প্রাণীকোশে টেলোফেজ দশার শুরুতেই সাইটোকাইনেসিস শুরু হয়। কোশের মাঝ বরাবর অঞ্চলে দু-পাশ থেকে কোশপর্দা সংকুচিত হয়ে খাঁজ বা কারো গঠন করে। অ্যাকটিন ও মায়োসিন প্রোটিন নির্মিত অণুনালিকা কোশপর্দার নীচে সজ্জিত হয়ে মিডবডি গঠন করে। এদের আন্তঃক্রিয়ার ফলে সংকোচন বলের সৃষ্টি হয়, যার ফলে কোশপর্দায় খাঁজ সৃষ্টি হয়। [ii] এই খাঁজ বা ফারো ভিতরের দিকে ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে পরস্পরকে স্পর্শ করলে সাইটোপ্লাজম দুটি সমান অংশে বিভক্ত হয়। [iii] এর ফলে সমগুণসম্পন্ন, সমান আকারের দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি হয়। প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতিকে ক্লিভেজ বা ফারোয়িং বলে।
8. বেমতত্তুর গঠন ও সাইটোকাইনেসিসের প্রভেদ উল্লেখ করে উদ্ভিদকোশের মাইটোসিস ও প্রাণীকোশের মাইটোসিসের পার্থক্য লেখো।
উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীরের উপাদানগুলি কী কী?
উত্তর – উদ্ভিদ মাইটোসিস ও প্রাণী মাইটোসিসের পার্থক্য
উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীরের উপাদান: উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীর, মধ্যচ্ছদার উভয়পাশে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি জমা হয়ে গঠিত হয়।
9. উদ্ভিদকোশ ও প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিসের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো। উদ্ভিদদেহে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে এমন তিনটি দেহাংশের নাম লেখো।
উত্তর – উদ্ভিদকোশে সাইটোকাইনেসিস ও প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস-এর পার্থক্যগুলি হল—
উদ্ভিদদেহে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের সংঘটনস্থল: উদ্ভিদদেহে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে এমন তিনটি দেহাংশ হল—
(1) কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগ, (2) বর্ধনশীল পাতা, (3) ভ্ৰূণমূল ও ভ্ৰূণমুকুল।
10. মিয়োসিস I এবং মিয়োসিস II-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য মাইটোসিসের পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – মিয়োসিস I-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য
- মিয়োসিস I-এ ক্রোমোজোমের পৃথক্করণ: [i] মিয়োসিস I-এর, প্রোফেজ ‘I দশায় সমসংস্থ ক্রোমোেজামের অংশ বিনিময় বা ক্রসিং ওভার ঘটে। [ii] এরপর মিয়োসিস I-এর মেটাফেজ I দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি নিরক্ষীয়তলে সজ্জিত হয়। [iii] এরপর অ্যানাফেজ I দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি অ্যানাফেজীয় চলন দ্বারা দুটি বিপরীত মেরুতে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ, দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের পৃথক্করণ ঘটে। উল্লেখ্য যে, মাইটোসিসে অ্যানাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটির পৃথক্করণ ঘটে থাকে।
- ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস: মিয়োসিস I-এ সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি পৃথক হয়ে অপত্য কোশগুলিতে সমানভাবে বিন্যস্ত হয়। এর ফলে অপত্য কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা কমে দেহকোশের অর্ধেক হয়ে যায়।
- ক্রসিং ওভার: মিয়োসিস I-এর প্রোফেজ দশায় যে পদ্ধতিতে সমসংস্থ ক্রোমোজোমের দুটি নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের সমতুল্য অংশের বিনিময় ঘটে এবং নতুন জিনগত বিন্যাস সৃষ্টি হয়, তাকে ক্রসিং ওভার বলে। এই প্রক্রিয়াটির সময় ‘X’ -এর মতো গঠন বা কায়াজমা গঠিত হয়।
মিয়োসিস II-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য
- মিয়োসিস II-এ ক্রোমোজোমের পৃথককরণ: মিয়োসিস II-এর সঙ্গে মাইটোসিসের খুব সাদৃশ্য আছে। তবে মিয়োসিস II-তে হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম অংশগ্রহণ করে এবং মাইটোসিসে সাধারণত ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজাম অংশ নেয়। এক্ষেত্রে মাইটোসিসের মতো সমবিভাজন ঘটে, অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায় না। মাইটোসিসের মতো মিয়োসিস II-এর অ্যানাফেজ II দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিড পৃথক হয়ে কোশের বিপরীত দুই মেরুতে গিয়ে অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে।
- সমবিভাজন: মিয়োসিস II কোশ বিভাজন ও মাইটোসিসে যথেষ্ট মিল দেখা যায়, শুধু প্রথমক্ষেত্রে n সংখ্যক ক্রোমোজোম ও দ্বিতীয়ক্ষেত্রে (মাইটোসিসে) 2n সংখ্যক ক্রোমোজোম অংশ নেয়। উভয়ক্ষেত্রে কোশ বিভাজন শেষে সমবিভাজন ঘটে অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যার কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
11. মিয়োসিসের প্রধান বৈশিষ্ট্য—ক্রোমোজোমের সংখ্যার হ্রাস-করণ পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো এবং তার গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসকরণ পদ্ধতি: মিয়োসিস I-এর অ্যানাফেজ I-এ সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি পৃথক হয়ে বিপরীত মেরুতে চলে যায় ও দুটি ভিন্ন নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে। এর ফলে মিয়োসিস I-এর শেষে উৎপন্ন অপত্য নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (2n থেকে n) হয়ে যায়।
ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসকরণের গুরুত্ব: এইভাবে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায় বলে জননকোশে, অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক (n) হয়। শুক্রাণু (n) ও ডিম্বাণু (n)-এর নিষেকের ফলে জাইগোটে ক্রোমোজোম সংখ্যা পুনরায় 2n বা ডিপ্লয়েড হয়ে যায়। অর্থাৎ মিয়োসিসে ক্রোমোজোম হ্রাসকরণ বা হ্যাপ্লয়েড হয়ে যাওয়ার জন্য জীবের জীবনচক্রে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ধ্রুবক থাকে।
12. মিয়োসিসের তাৎপর্য উল্লেখ করো। সম্পাদনের স্থান, ক্রোমোজোমের বিভাজনের প্রকৃতি এবং উৎপন্ন কোশের সংখ্যা অনুযায়ী মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য লেখো।
অংশ প্রশ্ন, “মিয়োসিস বৈশিষ্ট্যগতভাবে মাইটোসিস থেকে পৃথক”—তুমি কীভাবে বক্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করবে?
উত্তর – মিয়োসিসের তাৎপর্য: উদ্ভিদ ও প্রাণীর জনন-মাতৃকোশে মিয়োসিস কোশ বিভাজন ঘটে। এর তাৎপর্যগুলি নিম্নরূপ।
- প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখা : মিয়োসিসের ফলে মাতৃকোশের তুলনায় অপত্য কোশে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়। দুটি হ্যাপ্লয়েড কোশ মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড ভ্রুণাণু বা জাইগোট গঠিত হয়। যা বিভাজিত হয় ও বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ ডিপ্লয়েড জীব গঠন করে। অর্থাৎ জীবদেহে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে। যদি মিয়োসিস বিভাজন না হত, তাহলে নিষেকের পরে প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা গুণিতক হারে বৃদ্ধি পেত ও প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটত।
- জিনগত প্রকরণ সৃষ্টি; এই প্রক্রিয়ায় ক্রসিং ওভারের সময়ে ক্রোমোজোমের খন্ড বিনিময় ঘটে, ফলে তাদের চারিত্রিক গুণাবলির মিশ্রণ ঘটে, একে জিনের রিকমবিনেশন বলে। এর ফলে সৃষ্ট অপত্য জীব ক্রমবিবর্তনের সহায়ক নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। একে প্রকরণ বলে।
- জননকোশ বা গ্যামেট তৈরি: মিয়োসিসের ফলে জননকোশ বা গ্যামেট (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) তৈরি হয়, যা জীবের যৌন জননের জন্য একান্ত আবশ্যক।
- জনুক্রম বজায় রাখা: এইপ্রকার কোশ বিভাজনের ফলে হ্যাপ্লয়েড (n) ও ডিপ্লয়েড (2n) দশার পরিবর্তন চক্রাকারে ঘটতে থাকে, অর্থাৎ জনুক্রম বজায় থাকে।
মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য
13. ক্রসিং ওভার কাকে বলে? এর গুরুত্ব লেখো।
অংশ প্রশ্ন, ক্রসিং ওভার পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ক্রসিং ওভার
সংজ্ঞা: মিয়োসিস I-এর প্রোফেজ I দশায় যে পদ্ধতিতে সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে সমতুল্য অংশের বিনিময় ঘটে ও ক্রোমোজোমে নতুন অ্যালিল সমন্বয়ের সৃষ্টি হয়, তাকে ক্রসিং ওভার বলে।
পদ্ধতি: প্রোফেজ I-এ প্রতিজোড়া সমসংস্থ ক্রোমোজোম পাশাপাশি জোড় বাঁধে, যাকে সাইন্যাপসিস বলে। জোড় বাঁধা একক ক্রোমাটিডযুক্ত সমসংস্থ শে ক্রোমোজোম দুটিকে বাইভ্যালেন্ট, বলে। পরে প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড সৃষ্টি করে, অর্থাৎ সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়ায় চারটি ক্রোমাটিড দেখা যায়। এই অবস্থাকে টেট্রাড বলে। ক্রসিং ওভারে দুটি নন্-সিস্টার ক্রোমাটিড একে অপরের সঙ্গে ইংরাজি ‘X’ আকারের গঠনে আবদ্ধ হয়। এই গঠনকে কায়াজমা বলে। পরবর্তী পর্যায়ে নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের কায়াজমা বিন্দুর নীচের অংশের পারস্পরিক বিনিময় ঘটে। এর ফলে ক্রোমোজোমে নতুন অ্যালিল সমন্বয় দেখা দেয়।

ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব: (1) ক্রসিং ওভারের ফলে নতুন জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটে। এর ফলে প্রকরণ সৃষ্টি হয়। (2) ক্রসিং ওভার প্রমাণ করে যে, ক্রোমোজোমে জিন (তথা অ্যালিল)-গুলি সরলরৈখিকভাবে অবস্থান করে।
14. একটি উদ্ভিদকোশ বা একটি প্রাণীকোশের মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করো এবং নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো। (1) ক্রোমোজোম, (2) বেমতন্তু, (3) মেরু অঞ্চল, (4) সেন্ট্রোমিয়ার।
উত্তর – উদ্ভিদকোশ ও প্রাণীকোশের মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার চিহ্নিত চিত্র
15. উদ্ভিদকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র আঁকো।
উত্তর – উদ্ভিদকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র
16. প্রাণীকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র আঁকো।
অনুরূপ প্রশ্ন, প্রাণীকোশের মাইটোসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করে নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো— (1) মেরু অঞ্চল, (2) বেমতন্তু, (3) ক্রোমাটিড, (4) সেন্ট্রোমিয়ার।
উত্তর – প্রাণীকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের চিহ্নিত চিত্র
17. উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিসের চিহ্নিত চিত্র আঁকো।
উত্তর – উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিসের চিহ্নিত চিত্র
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের বিভিন্ন দশাগুলি কী কী?
উত্তর – মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দুটি প্রধান পর্যায় হল-
(1) ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াস বিভাজন ও (2) সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। ক্যারিওকাইনেসিসের বিভিন্ন দশাগুলি হল- প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ।
2. বেমতত্ত্ব কাকে বলে? এটি কত প্রকারের?
উত্তর – বেতন্তু: কোশ বিভাজনকালে বেম বা মাকুসংগঠক যে তন্তুগুলি ক্রোমোজোমীয় সংযুক্তি ও চলনে সহায়তা করে তাদের বেমতত্ত্ব বলে।
প্রকার; বেমতন্তু তিন প্রকারের, যথা-ক্রোমোজোমাল তন্তু, অবিচ্ছিন্ন তত্ত্ব এবং ইনটারজোনাল তত্ত্ব।
3. অবিচ্ছিন্ন ও ক্রোমোজোমীয় বেমতত্ত্ব বলতে কী বোঝ?
উত্তর – এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত তন্তুগুলিকে অবিচ্ছিন্ন বেমতত্ত্ব এবং এক মেরু থেকে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের সঙ্গে যুক্ত বাকি তন্তুগুলিকে ক্রোমোজোমীয় বেমতত্ত্ব বলে।
4. মেটাফেজ প্লেট কাকে বলে?
উত্তর – মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলি পরপর নিরক্ষীয় অঞ্চলে বিস্তৃত থেকে একটি পাত বা প্লেট-এর মতো অংশ সৃষ্টি করে। ক্রোমোজোমের এই গঠন বিন্যাসকে মেটাফেজ প্লেট বলে।
5. মাইটোটিক অ্যাপারেটাস বা স্পিন্ডল অ্যাপারেটাস কাকে বলে?
উত্তর – সেন্ট্রিওল ও বেমতত্ত্ব নিয়ে গঠিত মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় সৃষ্ট বেম গঠনকে মাইটোটিক অ্যাপারেটাস বা স্পিন্ডল অ্যাপারেটাস বা মাইটোটিক স্পিন্ডল বলে।
6. অ্যাস্ট্রাল ও অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিসের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর – অ্যাস্টাল মাইটোসিস: যে প্রকার মাইটোসিসে বেমতন্তু সেন্ট্রিওলের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি থেকে তৈরি হয় তাকে অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস বলে। প্রাণীকোশে তা দেখা যায়।
অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস: উদ্ভিদকোশে বেমতন্তু সাইটোপ্লাজমের মাইক্রোটিবিউল থেকে তৈরি হয়। সেন্ট্রিওল না থাকায় এক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রল রশ্মি থেকে বেম গঠন হয় না। তাই উদ্ভিদকোশের মাইটোসিসকে অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস বলে।
7. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের কোন দশায় ক্রোমোজোমগুলি দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত (দ্বিতন্ত্রী বিশিষ্ট) হয় এবং কোন দশায় ওইগুলি আবার একটি ক্রোমোজোমে (একতন্ত্রী বিশিষ্ট) পরিণত হয়ে থাকে?
উত্তর – কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার শেষে ক্রোমোজোমগুলি দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত (দ্বিতন্ত্রীবিশিষ্ট) হয় এবং অ্যানাফেজ দশায় এরা আবার একটি ক্রোমাটিডযুক্ত (একতন্ত্রীবিশিষ্ট) হয়।
৪ সাইটোকাইনেসিস কাকে বলে?
উত্তর – যে প্রক্রিয়ায় কোশের সাইটোপ্লাজম সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে। এটি ক্যারিওকাইনেসিসের ঠিক পরেই ঘটে।
9. সাইটোকাইনেসিস না হলে কী হবে?
উত্তর – কোনো কোশে সাইটোকাইনেসিস না হলে অপত্য কোশের সাইটোপ্লাজম আলাদা হবে না। ফলে বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশ তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি সাধারণ ঘটনা, যেমন মানুষের হাড়ের অস্টিওক্লাস্ট কোশে বহু নিউক্লিয়াস থাকে। তবে অনেক সময় এটি অনিয়ন্ত্রিত কোশচক্রের জন্যও ঘটে থাকে।
10. ফ্র্যাগমোজোম কী ? এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ফ্র্যাগমোজোম: উদ্ভিদকোশে মাইটোসিসের সময় কোশের মাঝ বরাবর যে সাইটোপ্লাজমের পাতলা পটি থাকে তাকে ফ্র্যাগমোজোম বলে।
গুরুত্ব: উদ্ভিদকোশে সাইটোকাইনেসিসের সময় ওই ফ্র্যাগমোজোম অংশের উপাদান ব্যবহার করে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠিত হয়।
11. ‘স্টেমবডি’ কাকে বলে?
উত্তর – কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার শেষে যখন দুই সেট ক্রোমোজোম বিপরীত মেরুতে পৌঁছোয়, তখন দুটি মেরুর মধ্যবর্তী ইনটারজোনাল তন্তুকে স্টেমবডি বলে।
12. এন্ডোমাইটোসিস কী?
উত্তর – কোনো কোশে DNA দ্বিগুণিত হলেও কোশটি বিভাজিত না হলে তাকে এন্ডোমাইটোসিস বলে। যেমন—মানুষের যকৃৎ কোশ। এইরকম অধিক ক্রোমোজোম সেট-যুক্ত কোশকে পলিপ্লয়েডি বলে।
13. সিস্টার ক্রোমাটিড ও নন্-সিস্টার ক্রোমাটিড বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – কোশ বিভাজনের ইনটারফেজ দশায় DNA প্রতিলিপিকরণের জন্য প্রতিটি ক্রোমোজোেম দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে, যারা সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে পরস্পর যুক্ত থাকে। এদের সিস্টার ক্রোমাটিড বলে। অপরপক্ষে একটি ক্রোমোজোমের প্রতিজোড়া ক্রোমাটিডকে তার সমসংস্থ ক্রোমোজোমের প্রতিজোড়া ক্রোমাটিডের সাপেক্ষে নন্-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে।
14. সমসংস্থ বা হোমোলোগাস ক্রোমোজোম কাকে বলে?
উত্তর – ডিপ্লয়েড (2n) কোশে বিন্যস্ত সম-আকৃতি, সমদৈর্ঘ্য ও সম জিনসজ্জা-বিশিষ্ট, পিতা ও মাতা প্রত্যেকের থেকে একটি করে পাওয়া, মোট একজোড়া ক্রোমোজোমকে বলে সমসংস্থ বা হোমোলোগাস ক্রোমোজোম।
15. ডায়াড কাকে বলে? মোনাড বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ডায়াড : একটি ক্রোমোজোমে DNA রেপ্লিকেশন বা দ্বিত্বকরণের পর দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড-যুক্ত যে গঠন দেখা যায় তাকে ডায়াড বলে। এটি প্রোফেজ ও মেটাফেজ দশায় দেখা যায়।
মোনাড: ক্রোমোজোমের একক ক্রোমাটিড গঠনকে বলে মোনাড। এটি অ্যানাফেজ দশায় দেখা যায়।
16. বাইভ্যালেন্ট কাকে বলে? টেট্রাড কাকে বলে?
উত্তর – বাইভ্যালেন্ট: মিয়োসিস I কোশ বিভাজনের প্রোফেজ I-এ জোড়বদ্ধ সমসংস্থ ক্রোমোজোমকে বাইভ্যালেন্ট বলে।
টেট্রাড: মিয়োসিস I কোশ বিভাজনের প্রোফেজ I-এ সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়া বা বাইভ্যালেন্টের প্রতিটি ক্রোমোজোম বিভক্ত হয়ে দুটি করে ক্রোমাটিড গঠন করলে চারটি ক্রোমাটিডসহ বাইভ্যালেন্টকে টেট্রাড বলে।
17. সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স কী ? এর গুরুত্ব কী?
উত্তর – সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স: মিয়োসিসের সময় দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের জোট বাঁধার জন্য তাদের মাঝে যে প্রোটিনযুক্ত তন্তুময় গঠন তৈরি হয়, তাকে সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স বলে।
গুরুত্ব: দুটি ক্রোমোজোমের ক্রসিং ওভারের জন্য জোড় বাঁধতে এটি সাহায্য করে।
18. সাইন্যাপসিস বা সিনডেসিস কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী?
উত্তর – সাইন্যাপসিস: মিয়োসিসের প্রোফেজ I দশায় হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের জোড় বাঁধাকে সাইন্যাপসিস বলে। সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স এই জোড় বাঁধায় সাহায্য করে।
গুরুত্ব: সাইন্যাপসিস-এর মাধ্যমে ‘X’ আকৃতির কায়াজমা গঠন সৃষ্টি হয় ও ক্রসিং ওভার ঘটে।
19. ক্রসিং ওভার কাকে বলে?
উত্তর – মিয়োসিসের প্রথম প্রোফেজে বাইভ্যালেন্টের নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয়ের মধ্যে ক্রোমোজোমীয় অংশের পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন জিনগত বিন্যাস সৃষ্টি হয়। এইভাবে ক্রোমোজোমীয় অংশের বিনিময় ঘটে নতুন জিন বিন্যাস সৃষ্টির ঘটনাকে ক্রসিং ওভার বলে। এই পুনর্বিন্যাস জীবের মধ্যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব হয় যা জীবের বিবর্তনে সাহায্য করে।
20. ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – ক্রসিং ওভারে ক্রোমাটিড অংশের খণ্ড বিনিময় ঘটে। ফলে জননকোশে ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টি হয়। এই কারণে জীবকে অভিযোজনে সাহায্য করে এবং জীবের অভিব্যক্তি ঘটায়।
21 মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস ও ক্রোমাটিডের মধ্যে খণ্ড বিনিময় ঘটে—এই ঘটনা দুটির তাৎপর্য কী কী তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর – ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসের তাৎপর্য: মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমোজেম সংখ্যা হ্রাস পায় বলে জননকোশে, অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক n হয়। শুক্রাণু (n) ও ডিম্বাণু (n) – এর নিষেকের ফলে জাইগোটে ক্রোমোজোম সংখ্যা পুনরায় 2n বা ডিপ্লয়েড হয়ে যায়। অর্থাৎ মিয়োসিসে ক্রোমোজোম হ্রাসকরণ বা হ্যাপ্লয়েড হয়ে যাওয়ার জন্য জীবের জীবনচক্রে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ধ্রুবক থাকে।
ক্রোমাটিডের মধ্যে খণ্ড বিনিময়ের তাৎপর্য: ক্রসিং ওভারের ফলে নতুন জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটে। এর ফলে প্রকরণ সৃষ্টি হয়। ক্রসিং ওভার প্রমাণ করে যে, ক্রোমোজোমে জিন (তথা অ্যালিল)-গুলি সরলরৈখিকভাবে অবস্থান করে।
22 নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিসের দশাগুলি শনাক্ত করো।
(1) ক্রোমোজোমগুলির কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জা, (2) বেমতন্তুর বিলুপ্তি, (3) নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি, (4) অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমন।
উত্তর – মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দশাগুলি হল—
| বৈশিষ্ট্য |
ক্যারিওকাইনেসিসের দশা |
| 1. ক্রোমোজোমগুলির কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জা |
মেটাফেজ দশা |
| 2. বেমতন্তুর বিলুপ্তি |
টোলোফেজ দশা |
| 3. নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি |
প্রোফেজ দশা |
| অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমন |
অ্যানাফেজ দশা |
23. কায়াজমা কী?
উত্তর – ক্রসিং ওভারের সময়ে বাইভ্যালেন্ট ক্রোমোজোম জোড়ার দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের একটি অপরটির ওপর দিয়ে যাবার সময়ে ক্রসিংওভার বিন্দুগুলিতে X আকৃতিবিশিষ্ট যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাদের কায়াজমা বলে (একবচনে কায়াজমাটা)। এদের গ্রিক বর্ণ কাই-এর মতো দেখায় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়।
24. ডিসজাংশন কাকে বলে ? এটি কখন ঘটে?
উত্তর – ডিসজাংশন: কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিডের বেমতন্তুর সংকোচনে সেন্ট্রোমিয়ার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে বলে ডিসজাংশন।
সংঘটনকাল : এটি মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার শুরুতে ঘটে থাকে।
25. মাইটোটিক মিয়োসিস কাকে বলে?
উত্তর – মিয়োসিসের দ্বিতীয় বিভাজন (মিয়োসিস II) দ্বারা প্রথম বিভাজনে (মিয়োসিস I) উৎপন্ন হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোশগুলি সমবিভাজিত হয়। এই কারণে মিয়োসিসের দ্বিতীয় বিভাজনকে মাইটোটিক মিয়োসিস বলা হয় ৷
26. মিয়োসিস I-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – মিয়োসিস I-এ ক্রোমোজোমের ক্রসিং ওভার ঘটে ও তারা পৃথক হয়ে বিপরীত মেরুতে গমন করে এবং n সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত দুটি নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে। ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসপ্রাপ্তি (2n → n) হল মিয়োসিস-I-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
27. মিয়োসিস II-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – মিয়োসিস II প্রকৃতপক্ষে মাইটোসিসের অনুরূপ। এক্ষেত্রে n সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট দুটি কোশ থেকে দুটি করে মোট চারটি অপত্য কোশ (n) উৎপন্ন হয়। এর অন্তর্গত অ্যানাফেজ II-তে ক্রোমাটিডের পৃথক্করণ ঘটে থাকে।
28. মিয়োসিস কোশ বিভাজনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো যা মাইটোসিস কোশ বিভাজনে অনুপস্থিত।
উত্তর – (1) মিয়োসিস কোশ বিভাজনে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায়, মাইটোসিসে তা সমান থাকে। (2) মিয়োসিস কোশ বিভাজনে ক্রসিং ওভার ঘটে যা জীবে প্রকরণ সৃষ্টি করে, মাইটোসিসে তা ঘটে না।
29. ইনটারকাইনেসিস কাকে বলে ?
উত্তর – মিয়োসিস I এবং মিয়োসিস II-এর অন্তর্বর্তী ক্ষণস্থায়ী দশাকে ইনটারকাইনেসিস বলে। তবে এই দশায় ইনটারফেজের মতো DNA সংশ্লেষ ঘটে না।
30. একটি কোশের নিউক্লিয়াসে 24টি ক্রোমোজোম আছে। অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে- (1) মাইটোসিস কোশ বিভাজনের পরে, (2) প্রথম মিয়োসিস বিভাজনের পরে, (3) দ্বিতীয় মিয়োসিস বিভাজনের পরে ?
উত্তর – কোশের নিউক্লিয়াসে 24টি ক্রোমোজোম আছে। অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা— (1) মাইটোসিস কোশ বিভাজনের পরে 24টিই থাকবে। (2) প্রথম মিয়োসিস বিভাজনের পরে 12টি হবে। (3) দ্বিতীয় মিয়োসিস বিভাজনের পরে 12টি হবে।
31. প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষায় মিয়োসিসের ভূমিকা লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, মিয়োসিস কীভাবে প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখে?
উত্তর – মিয়োসিস কোশ বিভাজনে জনন কোশ তৈরি হয়। নিষেকের পর তা নতুন বংশধর তৈরি করে। এই অপত্য বৃদ্ধি পেয়ে পরিণত হলে পুনরায় মিয়োসিস দ্বারা জনন কোশ সৃষ্টি করে, যা পুনরায় নিষেক দ্বারা নতুন বংশধর তৈরি করে। অর্থাৎ জীবের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে মিয়োসিসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
32 ‘কোশীয় অঙ্গাণুর বংশানুসরণ মাতৃকোশীয়’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – ডিম্বাণু সৃষ্টির সময় মিয়োসিসে কোশীয় অঙ্গাণুর দ্বিত্বকরণ ঘটে ও তা অপত্য ডিম্বাণু কোশে প্রবেশ করে। শুক্রাণুর কেবলমাত্র নিউক্লিয়াসের অন্তর্গত ক্রোমোজোম নিষেকের সময় ডিম্বাণুতে প্রবেশ করে। অর্থাৎ নিষেকে সৃষ্ট ভ্ৰূণাণু বা জাইগোটে কোশীয় অঙ্গাণু সরবরাহ করে ডিম্বাণু, শুক্রাণু নয়। তাই কোশীয় অঙ্গাণু আমরা মায়ের (ডিম্বাণু) থেকেই পেয়ে থাকি।
প্রশ্ন 33 মাইটোসিস ও মিয়োসিস I-এর অ্যানাফেজ দশার পার্থক্য লেখো।
উত্তর – মাইটোসিসের অ্যানাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড বিপরীত মেরুতে গমন করে। কিন্তু মিয়োসিস I -এর অ্যানাফেজ দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোম দুটি বিপরীত মেরুতে গমন করে।
34 “প্রোফেজ ও টেলোফেজের ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী পরিবর্তন ঘটে।”—এরূপ দুটি বিপরীতধর্মী পরিবর্তন লেখো।
উত্তর – (1) প্রোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস ও নিউক্লীয় পর্দা বিলুপ্ত হয়। টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস ও নিউক্লীয় পর্দা পুনরায় আবির্ভূত হয়। (2) প্রোফেজ দশায় ক্রোমাটিন জালিকা কুণ্ডলীকৃত ও ঘনীভূত হয়ে ক্রোমোজোম আবির্ভূত হয়। টেলোফেজ দশায় তা থেকে পুনরায় নিউক্লীয় জালিকা সৃষ্টি হয় ।
35 পার্থক্য লেখো—ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস।
উত্তর – ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস-এর পার্থক্যগুলি হল—
| বিষয় |
ক্যারিওকাইনেসিস |
সাইটোকাইনেসিস |
| 1. বিভাজন স্থান |
নিউক্লিয়াসের বিভাজন। |
সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। |
| 2. উপদশার উপস্থিতি |
নিউক্লিয়াস চারটি উপদশার মাধ্যমে বিভাজিত হয়। |
কোনো উপদশা থাকে না, সরাসরি বিভাজিত হয়। |
| 3. সময় ও জটিলতা |
বেশি সময় লাগে ও প্রক্রিয়াটি জটিল। |
কম সময় লাগে ও প্রক্রিয়াটি কম জটিল। |
| 4. ফলাফল |
দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়। |
দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। |
36 পার্থক্য লেখো—সাইন্যাপস ও সাইন্যাপসিস।
উত্তর – সাইন্যাপস ও সাইন্যাপসিস-এর পার্থক্যগুলি হল—
| বিষয় |
সাইন্যাপস |
সাইন্যাপসিস |
| 1. অবস্থান |
দুটি স্নায়ুর প্রবর্ধকের মধ্যে সৃষ্টি হয়। |
দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের মধ্যে মিয়োসিসের সময় সৃষ্টি হয়। |
| 2. সংস্পর্শ |
স্নায়ু দুটির মধ্যে সংস্পর্শ থাকে না। |
সাইন্যাপসিসে ক্রোমোজোম দুটি সংস্পর্শে আসে ও সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স দ্বারা সংযুক্ত থাকে। |
| 3. ক্ষরণ বস্তু |
সাইন্যাপসে নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরিত হয়। |
সাইন্যাপসিসে ক্ষরণগত উপাদান নেই। |
| 4. কাজ |
স্নায়ু উদ্দীপনা প্রেরণে সাহায্য করে। |
ক্রসিং ওভার হতে সাহায্য করে। |
37 মিয়োসিস I ও মিয়োসিস II-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর – মিয়োসিস I ও মিয়োসিস II এর পার্থক্যগুলি হল—
| বিষয় |
মিয়োসিস I |
মিয়োসিস II |
| 1. ক্রোমোজোম সংখ্যা |
সমসংস্থ ক্রোমোজোমের পৃথক্করণ ঘটে। ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (n) হয়ে যায়। |
n সংখ্যক ক্রোমোজোমের প্রতিটির ক্রোমাটিডের পৃথক্করণ ঘটে, যা পুনরায় ক্রোমোজোম তৈরি করে, ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান থাকে। |
| 2. ক্রসিং ওভার |
সম্পন্ন হয়। |
সম্পন্ন হয় না। |
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে বলে –
(a) সাইটোকাইনেসিস
(b) মাইটোসিস
(c) ক্যারিওকাইনেসিস
(d) মিয়োসিস
উত্তর – (c) ক্যারিওকাইনেসিস
2. ক্যারিওকাইনেসিস শব্দটি প্রণয়ন করেন বিজ্ঞানী—
(a) ল্যামার্ক
(b) স্নেইডার
(c) ডারউইন
(d) জোহানসেন
উত্তর – (b) স্নেইডার
3. মাইটোসিস শব্দটি প্রণয়ন করেন—
(a) ডারউইন
(b) ফ্লেমিং
(c) স্নেইডার
(d) ল্যামার্ক
উত্তর – (b) ফ্লেমিং
4. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসকে অবলুপ্ত হতে দেখা যায়?
(a) অ্যানাফেজ
(b) প্রোফেজ
(c) মেটাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (b) প্রোফেজ
5. কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় স্পিন্ডল গঠন শুরু হয় ?
(a) G1 দশা
(b) S দশা
(c) G2 দশা
(d) M দশা
উত্তর – (d) M দশা
6. প্রাণীকোশ ও উদ্ভিদকোশের যে দশায় বেম গঠিত হয় তা হল—
(a) প্রাথমিক প্রোফেজ
(b) অন্তিম প্রোফেজ
(c) মেটাফেজ
(d) অ্যানাফেজ
উত্তর – (b) অন্তিম প্রোফেজ
7. অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস লক্ষ করা যায়—
(a) উদ্ভিদকোশে
(b) প্রাণীকোশে
(c) ব্যাকটেরিয়া কোশে
(d) আদ্যপ্রাণীর
উত্তর – (b) প্রাণীকোশে
৪. অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস দেখা যায়—
(a) সকল সজীব বস্তুতে
(b) উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে
(c) উচ্চশ্রেণির প্রাণীতে
(d) নিম্নশ্রেণির প্রাণীতে
উত্তর – (b) উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে
9. অ্যানাস্ট্রাল বেম দেখা যায় —
(a) মূলে
(b) পেশিকোশে
(c) যকৃৎ কোশে
(d) অ্যামিবা-তে
উত্তর – (a) মূলে
10. ক্রোমোজোমগুলি যে দশায় বেমের বিষুব অঞ্চলে অবস্থান করে, তা হল –
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (b) মেটাফেজ
11. ক্ষুদ্র ও স্পষ্ট ক্রোমোজোম দেখা যায় যে দশায়, তা হল –
(a) প্রোফেজ
(b) অ্যানাফেজ
(c) টেলোফেজ
(d) মেটাফেজ
উত্তর – (d) মেটাফেজ
12. কোশ বিভাজনের যে দশায় ক্রোমোজোম সংখ্যা গণনা করা যায় তার নাম—
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (b) মেটাফেজ
13. যে মাইটোসিস বিভাজনে সেন্ট্রিওল থেকে স্পিন্ডল গঠিত হয় না, তা হল—
(a) সমবিভাজন
(b) অসমবিভাজন
(c) অ্যাস্ট্রাল
(d) অ্যানাস্ট্রাল
উত্তর – (d) অ্যানাস্ট্রাল
14. ক্যারিওকাইনেসিসের ক্ষুদ্রতম দশা হল—
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (c) অ্যানাফেজ
15. ক্যারিওকাইনেসিসের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী দশা হল –
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (c) অ্যানাফেজ
16. কোশ বিভাজনের যে দশায় ক্রোমাটিডদ্বয় বিচ্ছিন্ন হয়ে বেমের বিপরীত মেরুর দিকে সরে যায়, সেটি হল—
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (c) অ্যানাফেজ
17. তুমি মাইটোসিস কোশ বিভাজনের একটি দশায় সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয়কে আলাদা হতে দেখলে। দশাটি হল –
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (c) অ্যানাফেজ
18. মাইটোসিসের কোন্ দশায় ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডগুলি পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে?
(a) প্রোফেজ
(b) টেলোফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) মেটাফেজ
উত্তর – (c) অ্যানাফেজ
19. অ্যানাফেজীয় চলনকালে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের আকৃতি-
(a) I অক্ষরের মতো
(b) J অক্ষরের মতো
(c) V অক্ষরের মতো
(d) L অক্ষরের মতো
উত্তর – (c) V অক্ষরের মতো
20. মাইটোসিস কোশ বিভাজন চলাকালীন যে দশায় নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে, তা হল –
(a) প্রোফেজ
(b) মেটাফেজ
(c) অ্যানাফেজ
(d) টেলোফেজ
উত্তর – (d) টেলোফেজ
21. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় নিউক্লীয় পর্দার পুনরাবির্ভাব ঘটে?
(a) টেলোফেজ দশায়
(b) মেটাফেজ দশায়
(c) অ্যানাফেজ দশায়
(d) প্রোফেজ দশায়
উত্তর – (a) টেলোফেজ দশায়
22. মাইটোসিসের সময় নীচের কোন ঘটনাটি ঘটে না?
(a) ক্রোমাটিন বস্তুর ঘনীভবন ও ক্রোমোজোম গঠন
(b) বেমের সংশ্লেষ
(c) ক্রসিং ওভার
(d) বেমের বিপরীত মেরুতে সেন্ট্রিওলের গমন
উত্তর – (c) ক্রসিং ওভার
23. একটি কোশ থেকে 128 টি কোশ তৈরি হতে যতবার মাইটোসিস বিভাজনের প্রয়োজন হয়, তা হল –
(a) 7 বার
(b) 14 বার
(c) 16 বার
(d) 32 বার
উত্তর – (a) 7 বার
24. কোশ বিভাজনকালে প্রাণীকোশের সেন্ট্রোজোমটি দুইভাবে বিভক্ত হয়ে নিউক্লিয়াসের দুই মেরুতে …….. কোণে অবস্থান করে।
(a) 45°
(b) 180°
(c) 185°
(d) 108°
উত্তর – (b) 180°
25. নীচের কোন্ সজ্জাক্রমটি সঠিক?
(a) অ্যানাফেজ→প্রোফেজ→ মেটাফেজ→ টেলোফেজ
(b) প্রোফেজ→অ্যানাফেজ →মেটাফেজ→ টেলোফেজ
(c) টেলোফেজ→প্রোফেজ→ মেটাফেজ→অ্যানাফেজ
(d) প্রোফেজ→ মেটাফেজ→অ্যানাফেজ→ টেলোফেজ
উত্তর – (d) প্রোফেজ→ মেটাফেজ→অ্যানাফেজ→ টেলোফেজ
26. সাইটোপ্লাজমের বিভাজনকে বলে—
(a) সাইটোকাইনেসিস
(b) মাইটোসিস
(c) ক্যারিওকাইনেসিস
(d) মিয়োসিস
উত্তর – (a) সাইটোকাইনেসিস
27. নীচের কোনটি সঠিক?
(a) প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস-ফারোয়িং
(b) উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস—ক্লিভেজ
(c) প্রোফেজ—মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম
(d) অ্যানাফেজ — ক্রসিং ওভার
উত্তর – (a) প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস-ফারোয়িং
28. উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিসের বৈশিষ্ট্য হল—
(a) সেলপ্লেট গঠন
(b) ক্রোমোজোম গঠন
(c) মেসোজোম গঠন
(d) পলিজোম গঠন
উত্তর – (a) সেলপ্লেট গঠন
29. উদ্ভিদের কোশপ্রাচীরের প্রধান উপাদান হল –
(a) কাইটিন
(b) প্রোটিন
(c) লিপিড
(d) সেলুলোজ
উত্তর – (d) সেলুলোজ
30. কোশপাত গঠিত হয় –
(a) ক্যারিওকাইনেসিসের সময়
(b) ইনটারফেজে
(c) সাইটোকাইনেসিসের সময়
(d) বেম গঠনের সময়
উত্তর – (c) সাইটোকাইনেসিসের সময়
31. কোশপাত গঠনের কাজে সাহায্য করে—
(a) গলগি বডি
(b)রাইবোজোম
(c) মাইটোকনড্রিয়া
(d) লাইসোজোম
উত্তর – (a) গলগি বডি
32. প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস যে পদ্ধতিতে সংঘটিত হয়, তা হল–
(a) কোশপর্দা
(b) কোশপাত
(c) ফারোয়িং বা ক্লিভেজ
(d) অ্যানাফেজ চলন
উত্তর – (c) ফারোয়িং বা ক্লিভেজ
33. প্রদত্ত কোন্ সজ্জাক্রমটি সঠিক?
(a) ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট→কোশপ্রাচীর→কোশপাত
(b) ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট→কোশপাত→কোশপ্রাচীর
(c) কোশপ্রাচীর→ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট→কোশপাত
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) কোশপ্রাচীর→ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট→কোশপাত
34. যে প্রকার কোশ বিভাজন জটিল ও দীর্ঘ তা হল—
(a) অ্যামাইটোসিস
(b) মিয়োসিস I
(c) মিয়োসিস II
(d) মাইটোসিস
উত্তর – (b) মিয়োসিস I
35. ক্রোমোজোমের অংশের বিনিময়কে বলে—
(a) সাইন্যাসিস
(b) বাইভ্যালেন্ট
(c) ক্রসিং ওভার
(d) কায়াজমা
উত্তর – (c) ক্রসিং ওভার
36. ক্রসিং ওভার কোন্ ক্ষেত্রে তুমি লক্ষ করবে?
(a) অ্যামাইটোসিসে
(b) মাইটোসিসে
(c) মিয়োসিসে
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) মিয়োসিসে
37. প্রকরণ সৃষ্টির জন্য দায়ী—
(a) সাইন্যাপসিস
(b) কায়াজমা
(c) ক্রসিং ওভার
(d) সাইটোকাইনেসিস
উত্তর – (c) ক্রসিং ওভার
38. ক্রসিং ওভারের একক হল –
(a) ক্লোরোপ্লাস্ট
(b) রাইবোজোম
(c) ক্রোমাটিড
(d) লাইসোজোম
উত্তর – (c) ক্রোমাটিড
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. ক্যারিওকাইনেসিস কী?
উত্তর – ক্যারিওকাইনেসিস হল নিউক্লিয়াসের বিভাজন।
2. তারামাছের বাহু ও কাঁকড়ার পদ বিনষ্ট হলে পুনরুৎপত্তি ঘটে কোন্ কোশ বিভাজনে?
উত্তর – মাইটোসিস।
3. উদ্ভিদের কলম সৃষ্টিতে কোন্ কোশ বিভাজন সাহায্য করে?
উত্তর – মাইটোসিস।
4. বেম গঠন শুরু হয়ে কোন্ দশায় ?
উত্তর – প্রোফেজ দশায়।
5. কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় সেন্ট্রোমিয়ারটি সমান দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়?
উত্তর – প্রোফেজ।
6. বেম গঠন সম্পূর্ণ হয় কোন্ দশায় ?
উত্তর – মেটাফেজ দশায়।
7. ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজন ঘটে কোন্ দশায় ?
উত্তর – অ্যানাফেজ দশায়।
৪. কোন্ দশায় ক্রোমোজোমগুলি বেমের দুটি বিপরীত মেরুর দিকে গমন করে?
অথবা, মাইটোসিসের কোন্ দশায় ক্রোমোজোমীয় চলন ঘটে?
উত্তর – অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলি বেমের দুটি বিপরীত মেরুর দিকে গমন করে।
9. কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় ডিসজাংশন ঘটে ?
উত্তর – অ্যানাফেজ দশায়।
10. কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় ‘V’, ‘L’ ও ‘J’ আকৃতির ক্রোমোজোম দেখা যায়?
উত্তর – অ্যানাফেজ দশায়।
11. ক্রোমোজোমের পৃথক্করণ কোন্ স্থানে ঘটে?
উত্তর – সেন্ট্রোমিয়ার বা প্রাথমিক খাঁজ বরাবর ক্রোমোজোমের পৃথক্করণ ঘটে।
12. যে মাইটোসিস বিভাজনে সেন্ট্রিওল থেকে স্পিন্ডল গঠিত হয় না, তাকে কী বলে?
উত্তর – অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস।
13. স্পিন্ডল তন্তুর গঠনগত প্রোটিনের নাম লেখো।
উত্তর – টিউবিউলিন।
14. প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলে কোশ বিভাজনে তার কী প্রভাব দেখা যাবে?
উত্তর – প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলে বেম গঠিত হবে না, ফলে ক্রোমোজোমের মেরুকরণ না ঘটার ফলে কোশটি বিভাজিত হতে পারবে না।
15. উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস কোন বিশেষ গঠন দ্বারা সংঘটিত হয়?
উত্তর – উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠন দ্বারা সংঘটিত হয় যা পরবর্তীকালে কোশপাত গঠন করে।
16. ফ্রাগমোপ্লাস্ট গঠনে কোন্ কোন্ অঙ্গাণু সাহায্য করে ?
উত্তর – মাইক্রোটিউবিউল, মাইক্রোফিলামেন্ট ও এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠনে সাহায্য করে।
17. প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস কীভাবে ঘটে?
উত্তর – প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস ক্লিভেজ বা ফারোয়িং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে।
18. কোশের পরিধি থেকে কেন্দ্রের দিকে সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে কোন জীবকোশে?
উত্তর – প্রাণীকোশে।
19. মিয়োসিস কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর – জার্মান জীববিদ অসকার হার্টউইগ (1876) সি-আর্টিন ডিম্বাণুতে মিয়োসিস আবিষ্কার করেন।
20. সাইন্যাপসিসের অপর নাম কী ?
উত্তর – সিনডেসিস (syndesis ) ।
21. সাইন্যাপস গঠনে সাহায্যকারী উপাদানের নাম কী ?
উত্তর – সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স।
22. কায়াজমা কোন্ দশায় গঠিত হয়?
উত্তর – মিয়োসিসের প্রোফেজ I-এ কায়াজমা গঠিত হয়।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. ক্যারিওকাইনেসিসের প্রথম দশাকে …….. বলে।
উত্তর – প্রোফেজ
2. ক্যারিওকাইনেসিসের তৃতীয় দশা হল ………. |
উত্তর – অ্যানাফেজ
3. ক্রোমোজোমগুলি নিরক্ষীয়তলে অবস্থান করে …….. দশায়।
উত্তর – মেটাফেজ
4. সেন্ট্রোজোম ও ………. বেমতন্তু গঠনে সাহায্য করে।
উত্তর – মাইক্রোটিউবিউল
5. ক্রোমোজোমীয় চলন দেখা যায় …….. দশায়।
উত্তর – অ্যানাফেজ
6. ইনটারজোনাল তন্তুর আবির্ভাব ঘটে ……… দশায়।
উত্তর – অ্যানাফেজ
7. উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস ……… গঠনের মাধ্যমে হয়।
উত্তর – কোশপাত
৪. প্রাণীকোশে ……….. পদ্ধতিতে সাইটোকাইনেসিস সম্পন্ন হয়।
উত্তর – ফারোয়িং/ক্লিভেজ
9. উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিস ……….. কণিকার দ্বারা সংঘটিত হয়।
উত্তর – ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট
10. ………. ও ……….. একত্রে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠন করে।
উত্তর – মাইক্রোফিলামেন্ট ও মাইক্রোটিউবিউল
11. গ্যামেট উৎপাদন হয় ……….. বিভাজনের মাধ্যমে।
উত্তর – মিয়োসিস
12. মিয়োসিস I ও মিয়োসিস II-এর মধ্যবর্তী দশাকে ……….. বলে।
উত্তর – ইনটারকাইনেসিস
13. প্রোফেজ I-এ জোড় বাঁধা সমসংস্থ ক্রোমোজোম দুটিকে ………. বলে।
উত্তর – বাইভ্যালেন্ট
14. প্রোফেজ I-এ পাশাপাশি বিন্যস্ত সমসংস্থ ক্রোমোজোম দুটির জোড় বাঁধাকে ……… বলে।
উত্তর – সাইন্যাপসিস
15. সমসংস্থ ক্রোমোজোমের প্রতি বাইভ্যালেন্টে চারটি ক্রোমাটিড থাকে, এই গঠনকে ……… বলে।
উত্তর – টেট্রাড
16. ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায় মিয়োসিস I-এর ………. দশায়।
উত্তর – অ্যানাফেজ
17. ক্রসিং ওভারের অপর নাম ……….. ।
উত্তর – রিকম্বিনেশন
18. ক্রসিং ওভার স্থানে নন্-সিস্টার ক্রোমাটিড দুটির মধ্যে ‘X’ আকৃতির গঠন দেখা যায় তা হল ……… ।
উত্তর – কায়াজমা