wb 10th science

WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter 1 পরিবেশের জন্য ভাবনা

WBBSE 10th Class Science Solutions Physics Chapter 1 পরিবেশের জন্য ভাবনা

West Bengal Board 10th Class Science Solutions Physics Chapter 1 পরিবেশের জন্য ভাবনা

West Bengal Board 10th Physics Solutions

TOPIC – A বায়ুমণ্ডলের গঠন

বিষয়সংক্ষেপ

বায়ুমণ্ডল: ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 1600 km উচ্চতা পর্যন্ত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ বলয়াকারে বিস্তৃত থেকে পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলা হয়।
  • উচ্চতা ও উয়তার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে, যথা— (i) ট্রোপোস্ফিয়ার (ভূপৃষ্ঠ থেকে 12 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত, উয়তা : 15°C থেকে –60°C) (ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (12-45km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত, উয়তা : –60°C থেকে 0°C) (iii) মেসোস্ফিয়ার (45-85km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত, উন্নতা : 0°C থেকে – 100°C) (iv) থার্মোস্ফিয়ার (85-500km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত, উয়তা : -100°C থেকে 1200°C) (v) এক্সোস্ফিয়ার (500-1000km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত, উন্নতা : > 1200 °C) ।
  • রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (i) হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল (ট্রোপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার-এর অন্তর্গত) এবং (ii) হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল (থার্মোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিয়ার-এর অন্তর্গত)।
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
  • ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরের বায়ুতে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, মেঘ প্রভৃতি উপস্থিত থাকে। ফলে এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে। তাই একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয়। এই স্তর পৃথিবীপৃষ্ঠের উয়তা ও জলচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
  • স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জলকণা, ধূলিকণা ইত্যাদি থাকে না। ফলে এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে না। তাই একে শান্তমণ্ডল বলা হয়। এখানকার আবহাওয়া শান্ত হওয়ায় জেট বিমানগুলি এই স্তরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে।
  • মেসোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল। মহাকাশ থেকে আসা জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডগুলি এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
  • থার্মোস্ফিয়ারের একটি অংশে গ্যাসের অণুগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে যার নাম আয়নোস্ফিয়ার। মেরুজ্যোতি এই স্তরেই দেখা যায় এবং রেডিয়োতরঙ্গ এই অঞ্চলে প্রতিফলিত হয়।
  • এক্সোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের উন্নতম স্তর। এই অঞ্চলে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস থাকে এবং কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশ স্টেশনগুলি এখানে অবস্থান করে।

পরিচলন স্রোত: তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ উত্তপ্ত হলে তার আয়তন প্রসারণের জন্য ঘনত্ব হ্রাস পায়। ফলে উত্তপ্ত তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ হালকা হয়ে ওপরে ওঠে ও ওপরের শীতল ভারী অংশ নীচে নেমে আসে। ফলস্বরূপ যে উল্লম্ব চক্রাকার স্রোতের সৃষ্টি হয় তাকে পরিচলন স্রোত বলে।

বায়ুপ্রবাহ: উয়তার পার্থক্যের জন্য সংলগ্ন অঞ্চলে বায়ুচাপের তারতম্য ঘটে এবং তার ফলে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ু অনুভূমিকভাবে প্রবাহিত হয়। এই ঘটনাকে বায়ুপ্রবাহ বলা হয়।

বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

TOPIC – A বায়ুমণ্ডলের গঠন

সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

1. বায়ুমণ্ডল কাকে বলে? এর মূল উপাদান কী কী?
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 1600 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ বলয়াকারে বিস্তৃত থেকে পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে এই আবরণ ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে থাকে।

বায়ুমণ্ডলের মূল উপাদানগুলি হল নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, আর্গন, ওজোন, হাইড্রোজেন, জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা।

2. উন্নতা ও উচ্চতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে কয়টি স্তরে ভাগ করা হয় এবং কী কী?
উত্তর – উন্নতা ও উচ্চতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে মূলত পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়। এগুলি হল—ট্রোপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার এবং এক্সোস্ফিয়ার।

3. রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে কটি ভাগে ভাগ করা যায়? এদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অনুরূপ প্রশ্ন, বায়ুমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার ও হেটেরোস্ফিয়ার অঞ্চল বলতে কী বোঝ?
উত্তর – রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল এবং হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল [চিত্র 1]।

হোমোস্ফিয়ার: বায়ুমণ্ডলের নীচের অংশে (ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 85 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত) উপাদান গ্যাসগুলির (N2, O2, Ar, CO2, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি) অনুপাত সর্বত্র প্রায় সমান থাকে। তাই এই অংশটিকে হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল বলে। বায়ুমণ্ডলের ট্রোপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ার স্তরগুলি এর অন্তর্গত।

হেটেরোস্ফিয়ার: হোমোস্ফিয়ারের ওপরের অংশে যেখানে বায়ুমণ্ডলের উপাদান গ্যাসীয় পদার্থগুলির অনুপাত স্থির নয়, তাকে হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল বলে। এটি ভূপৃষ্ঠের ওপর 85 কিমি উচ্চতা থেকে প্রায় 1000 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলের থার্মোস্ফিয়ার ও এক্সোস্ফিয়ার স্তর দুটি এর অন্তর্গত।

4. ট্রোপোস্ফিয়ার কাকে বলে? একে ‘ক্ষুব্ধমণ্ডল’ বলার কারণ কী?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরের নাম ট্রোপোস্ফিয়ার। এই স্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে 12 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

এই স্তরে বায়ুর মধ্যে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, মেঘ প্রভৃতি থাকে। ফলে এই স্তরের মধ্যেই ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে। তাই ট্রোপোস্ফিয়ারকে ‘ক্ষুব্ধমণ্ডল’ বলা হয়।

5. ট্রোপোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. এই স্তরের বায়ুতে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, মেঘ ইত্যাদির উপস্থিতির জন্য ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে। তাই একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে।
  2. ট্রোপোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠের উন্নতা ও জলচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
  3. এই অঞ্চলের বায়ু সর্বদা গতিশীল এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতে উন্নতা ও চাপ উভয়ই হ্রাস পায়। 4. অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি এই অঞ্চলে থাকে।
6. ট্রোপোস্ফিয়ারকে ‘ক্রমহ্রাসমান উন্নতা স্তর’ বলে কেন?
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে ট্রোপোস্ফিয়ারের যত ঊর্ধ্বে যাওয়া যায় বায়ুমণ্ডলের উয়তা ক্রমশ কমতে থাকে। ট্রোপোস্ফিয়ারে প্রতি 1 কিমি উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রায় 6.5°C হারে বায়ুর উয়তা কমে। তাই এই স্তরকে ‘ক্রমহ্রাসমান উন্নতা স্তর’ বলা হয়।
7. পর্বতারোহীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার সাথে নিয়ে যান কেন?
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই বায়ুস্তরের ঘনত্ব কমতে থাকে ও অক্সিজেনের পরিমাণও কমতে থাকে। এর ফলে পর্বতারোহীদের শ্বাসকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উচ্চ উন্নতায় পাওয়া যায় না। তাই স্বাভাবিক শ্বাসকার্য চালাতেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়। এই কারণে পর্বতারোহীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার সাথে নিয়ে যান।
8. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার কাকে বলে? একে ‘শান্তমণ্ডল’ বলা হয় কেন?
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরে উপস্থিত এবং ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 12 কিমি থেকে 45 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরটি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।

এই অঞ্চলে বায়ুর পরিমাণ খুবই কম এবং ধূলিকণা, জলকণা না থাকায় মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে না। তাই এই অঞ্চলের নাম ‘শান্তমণ্ডল’।

9. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. এই স্তরে বায়ুর পরিমাণ খুবই কম এবং ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প অনুপস্থিত। ফলে এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। তাই এই স্তরের নাম শান্তমণ্ডল।
  2. দ্রুতগতি-সম্পন্ন জেট প্লেনগুলি এই স্তরের মধ্য দিয়েই চলাচল করে।
  3. উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই স্তরের উন্নতা বাড়লেও চাপ হ্রাস পায়। 4. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন গ্যাসের স্তর (ওজোনোস্ফিয়ার) সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষা করে।
10. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে উন্নতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় কেন?
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত অক্সিজেন গ্যাসের অণু (O2) সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে অক্সিজেন পরমাণুতে (O) বিয়োজিত হয়। এই পারমাণবিক অক্সিজেন আণবিক অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে ওজোন অণু (O3) সৃষ্টি করে। এই রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তাপের উদ্ভব হয়। এর ফলে দেখা যায় ট্রোপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে অবস্থিত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অংশে (12-45 কিমি) বায়ুর উন্নতা কমার বদলে বৃদ্ধি পায়। 45 কিমি উচ্চতায় উন্নতা সর্বোচ্চ (0°C বা 32°F) হয়।
11. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উন্নতা ভূপৃষ্ঠের উয়তার তুলনায় কম হয় কেন?
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উন্নতা ভূপৃষ্ঠের উন্নতার তুলনায় কম হয় কারণ—
  1. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা না থাকায় এর তাপ শোষণ করার ক্ষমতা কম।
  2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বায়ুর ঘনত্ব খুবই কম হওয়ায় এই স্তরটি সূর্য থেকে আসা যে সামান্য পরিমাণ তাপ শোষণ করে, তা সহজেই বিকিরণ করে দেয়।
12. ট্রোপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দুটি পার্থক্য হল—

13. (i) মেসোস্ফিয়ার কাকে বলে? (ii) মেসোপজ কাকে বলে?
উত্তর – (i) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত এবং ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 45-85 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলীয় স্তরটি মেসোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
(ii) মেসোস্ফিয়ার স্তরের শেষ সীমায় যে অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও উন্নতা অপরিবর্তিত থাকে (−92°C), তাকে মেসোপজ বলে।
14. মেসোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – মেসোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই স্তরের উন্নতা ও চাপ উভয়ই হ্রাস পায়।
  2. এই স্তরের সর্বনিম্ন উন্নতা –92°C হওয়ায় এটি বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল।
  3. মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা উল্কাগুলি এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
15. মহাশূন্য থেকে আসা জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডগুলি মেসোস্ফিয়ারে প্রবেশ করেই ভস্মীভূত হয় কেন?
উত্তর – মেসোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল। এর উপরের অংশের উন্নতা প্রায় – 92°C হয়। মহাশূন্য থেকে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসা জ্বলন্ত ও উত্তপ্ত উল্কাপিণ্ড মেসোস্ফিয়ারের এই নিম্ন উন্নতাযুক্ত অঞ্চলে প্রবেশ করলে উয়তার তারতম্যের জন্য তার বাইরের ও ভিতরের অংশের সংকোচন-প্রসারণ বিভিন্ন মাত্রায় ঘটে। ফলে উল্কাপিণ্ড ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়।
16. থার্মোস্ফিয়ার কাকে বলে? এরূপ নামকরণের কারণ কী?
উত্তর – মেসোস্ফিয়ারের উপরে উপস্থিত এবং ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 85 কিমি থেকে 500 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলীয় স্তরের নাম থার্মোস্ফিয়ার।

বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই স্তরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। প্রায় 120 কিমি উচ্চতায় এই তাপমাত্রা হয় প্রায় 500°C, 200 কিমিতে প্রায় 700°C এবং 480 থেকে 500 কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে প্রায় 1200°C হয়। উন্নতা খুব বেশি থাকে বলেই এই স্তরকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়।

17. থার্মোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – থার্মোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
  1. কসমিক রশ্মি ও অন্যান্য রশ্মির প্রভাবে থার্মোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উন্নতা বৃদ্ধি পেয়ে 1200°C পর্যন্ত হয়।
  2. এই স্তরে বাতাস প্রায় নেই, তাই আকাশ কালো দেখায়।
  3. এই স্তরের অন্তর্গত আয়নোস্ফিয়ার অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অণুগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে। এই অংশ বেতারতরঙ্গ প্রতিফলিত করে এবং মেরুজ্যোতি এই অংশে দেখা যায়।
18. আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে? এরূপ নামকরণের কারণ কী?
উত্তর – থার্মোস্ফিয়ারের অন্তর্গত যে অঞ্চলটিতে বিভিন্ন গ্যাসের অণুগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে, সেই অঞ্চলটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।

সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত উচ্চ শক্তিসম্পন্ন গামা রশ্মি, X -রশ্মি ও মহাজাগতিক বিকিরণের (cosmic radiation) প্রভাবে এই অংশের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের অণুগুলি ভেঙে গিয়ে অসংখ্য আয়ন বা তড়িগ্রস্ত কণার সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রনও উৎপন্ন হয়। এর ফলে এই অংশের বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকে এবং এই কারণে এটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।

19. মেরুজ্যোতি কাকে বলে?
অনুরূপ প্রশ্ন, মেরুজ্যোতি (aurora) কীভাবে সৃষ্টি হয়?
‘সুমেরু প্রভা’ ও ‘কুমেরু প্রভা’ কাকে বলে ?
উত্তর – থার্মোস্ফিয়ারের অন্তর্গত আয়নোস্ফিয়ারে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের অণুগুলি সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত উচ্চ শক্তিসম্পন্ন গামা রশ্মি এবং X রশ্মির প্রভাবে আয়নিত হয়। এর ফলে বিভিন্ন আধানযুক্ত কণা এবং সেই  সঙ্গে অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রনও উৎপন্ন হয়। এই আধানযুক্ত কণাগুলির সঙ্গে ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় মেরু অঞ্চলের আকাশে যে উজ্জ্বল আলোকপ্রভা বা ছটা সৃষ্টি হয় তাকে মেরুজ্যোতি বলে। উত্তর মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যাতিকে সুমেরু প্রভা এবং দক্ষিণ মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যোতিকে কুমেরু প্রভা বলে।
20. বায়ুমণ্ডলের এক্সোস্ফিয়ার স্তরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে 500 km অপেক্ষা বেশি উচ্চতায় এক্সোস্ফিয়ার স্তরটি উপস্থিত। এটি মোটামুটি 1000 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বলে মনে করা হয়। এই স্তরে H2 ও He গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এদের ঘনত্ব খুব কম থাকে। এই অঞ্চলের উন্নতা 1200°C অপেক্ষা বেশি হয়। কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশ স্টেশনগুলিকে এই স্তরেই স্থাপন করা হয়।
21. জীবকুলের অস্তিত্ব রক্ষা ও জীবনধারণের ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব উল্লেখ করো।
উত্তর – পৃথিবীতে জীবকুলের অস্তিত্ব রক্ষা ও জীবনধারণের ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডল তথা বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যথা—
  1. সমস্ত জীবের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান অক্সিজেন এবং উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত অন্যতম উপাদান কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎস হল বায়ুমণ্ডল।
  2. ভূপৃষ্ঠের উয়তা ও জলচক্র নিয়ন্ত্রিত হয় বায়ুমণ্ডলের (ট্রোপোস্ফিয়ার স্তর) দ্বারা।
  3. সূর্য থেকে আগত অত্যন্ত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে আসতে দেয় না বায়ুমণ্ডলের ওজোনোস্ফিয়ার স্তর।
  4. বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তর দ্বারা বেতারতরঙ্গ প্রতিফলিত হয়।
22. উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে বায়ুমণ্ডলের চাপ কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, উচ্চতাভেদে বায়ুর চাপের তারতম্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিভিন্ন স্তরের উচ্চতাভেদে বায়ুর চাপের যে পরিবর্তন ঘটে, তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর – সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুস্তরের ঘনত্ব তত কমতে থাকে। তাই উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের চাপও ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণত 110 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুচাপ 1 সেমি করে হ্রাস পায়। তবে বায়ুচাপ মূলত mb (মিলিবার) এককে প্রকাশ করা হয় (1 মিলিবার 0.02953 ইঞ্চি পারদস্তম্ভের চাপের সমান)। এই হিসেবে 100 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে 12.60 mb বায়ুচাপের হ্রাস ঘটে। তবে উপরের দিকের বায়ুস্তরের সব অংশে এই হারে বায়ুচাপ হ্রাস পায় না।

23. পরিচলন কাকে বলে ? পরিচলন স্রোত কী?
উত্তর – পরিচলন: যে প্রক্রিয়ায় তরল বা গ্যাসের উত্তপ্ত কণাগুলি নিজেরাই উন্নতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে স্থানান্তরিত হয়ে তাপ সঞ্চালন করে, তাকে পরিচলন বলে।

পরিচলন স্রোত: তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ উত্তপ্ত হলে তার আয়তন প্রসারণের জন্য ঘনত্ব কমে যায়। সুতরাং, উত্তপ্ত তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ হালকা হয়ে ওপরে ওঠে ও ওপরের শীতল ভারী অংশ নীচে নেমে আসে। এর ফলে যে উল্লম্ব চক্রাকার স্রোতের সৃষ্টি হয় তাকে পরিচলন স্রোত বলে।

24. বায়ুতে পরিচলন স্রোত কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তর – কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে ওই বায়ুর আয়তন বৃদ্ধি পায় ও ঘনত্ব কমে যায়। এই অবস্থায় উত্তপ্ত বায়ু হালকা হয়ে ওপরে ওঠে। এর ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করতে আশেপাশের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও ভারী বায়ু ওই জায়গায় ছুটে আসে। এভাবে বায়ুতে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়।
25. ঝড় কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর – বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন কোনো অঞ্চলের বায়ু অধিক উত্তপ্ত হলে ওই অঞ্চলের বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। ফলে ওই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন আশেপাশের উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু ওই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। বায়ুচাপের পার্থক্য যত বেশি হয়, বায়ুচাপ সমান করার জন্য আশেপাশের উচচ্চাপ অঞ্চল থেকে বায়ু তত বেশি গতিবেগে ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। এভাবে ঝড়ের সৃষ্টি হয়।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. কোন্ স্তরটিকে ‘শান্তমণ্ডল’ বলা হয়?
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(c) মেসোস্ফিয়ার
(d) থার্মোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ উয়তা প্রায় –
(a) 50°C
(b) – 50°C
(c) 0°C
(d) – 30°C
উত্তর – (c) 0°C
3. বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল হল –
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্যাটোস্ফিয়ার
(c) মেসোস্ফিয়ার
(d) থার্মোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) মেসোস্ফিয়ার
4. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরটির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি সেটি হল –
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্যাটোস্ফিয়ার
(c) মেসোস্ফিয়ার
(d) থার্মোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) ট্রোপোস্ফিয়ার
5. বায়ুমণ্ডলের কোন্ কোন্ স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উন্নতা বৃদ্ধি পায়?
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার এবং থার্মোস্ফিয়ার
(b) মেসোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(c) থার্মোস্ফিয়ার এবং মেসোস্ফিয়ার
(d) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এবং থার্মোস্ফিয়ার
উত্তর – (d) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এবং থার্মোস্ফিয়ার
6. বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরগুলির ক্ষেত্রে চাপের সঠিক অধঃক্রম হল—
(a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার > মেসোস্ফিয়ার > ট্রোপোস্ফিয়ার > থার্মোস্ফিয়ার
(b) মেসোস্ফিয়ার > থার্মোস্ফিয়ার > স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার > ট্রোপোস্ফিয়ার
(c) ট্রোপোস্ফিয়ার > স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার > মেসোস্ফিয়ার > থার্মোস্ফিয়ার
(d) থার্মোস্ফিয়ার > মেসোস্ফিয়ার > স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার > ট্রোপোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) ট্রোপোস্ফিয়ার > স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার > মেসোস্ফিয়ার > থার্মোস্ফিয়ার
7. বায়ুতে যে গ্যাসটির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি তা হল –
(a) অক্সিজেন
(b) নাইট্রোজেন
(c) ওজোন
(d) হাইড্রোজেন
উত্তর – (b) নাইট্রোজেন
৪. ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে দেখা যায় সেটি হল —
(a) থার্মোস্ফিয়ার
(b) ট্রোপোস্ফিয়ার
(c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) ট্রোপোস্ফিয়ার
9. রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের বিভাগ হল —
(a) 5টি
(b) 4টি
(c) 3টি
(d) 2টি
উত্তর – (d) 2টি
10. ভূপৃষ্ঠ থেকে 12km উচ্চতার মধ্যে বায়ুমণ্ডলের যত শতাংশ ভর থাকে তা হল –
(a) 70
(b) 80
(c) 90
(d) 75
উত্তর – (d) 75
11. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরটির আর এক নাম কেমোস্ফিয়ার?
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) ওজোনোস্ফিয়ার
(c) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
(d) এক্সোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) ওজোনোস্ফিয়ার
12. বায়ুমণ্ডলের ওজনের মধ্যে ট্রোপোস্ফিয়ারের অন্তর্গত অংশ হল –
(a) 25 ভাগ
(b) 55 ভাগ
(c) 75 ভাগ
(d) 65 ভাগ
উত্তর – (c) 75 ভাগ
13. ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর হোমোস্ফিয়ারের অন্তর্গত তা হল—
(a) 100 km
(b) 85 km
(c) 70 km
(d) 30 km
উত্তর – (b) 85 km
14. ভূপৃষ্ঠ থেকে 32 km উচ্চতায় বায়ুর চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুচাপের তুলনায় কত কম হয়?
(a) 10%
(b) 20%
(c) 30%
(d) 1%
উত্তর – (d) 1%
15. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরকে ‘প্রাকৃতিক সৌরপর্দা’ বলা যায় তা হল —
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) ওজোনোস্ফিয়ার
(c) থার্মোস্ফিয়ার
(d) এক্সোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) ওজোনোস্ফিয়ার
16. বায়ুমণ্ডলের উন্নতম স্তরটি হল—
(a) এক্সোস্ফিয়ার
(b) ওজোনোস্ফিয়ার
(c) আয়নোস্ফিয়ার
(d) থার্মোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) এক্সোস্ফিয়ার
17. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরগুলিতে বিভিন্ন আয়ন উপস্থিত থাকে—
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(b) ট্রোপোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার
(c) মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার
(d) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার
18. ওজোনমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমাকে কী বলে?
(a) ট্রোপোপজ
(b) মেসোপজ
(c) স্ট্র্যাটোপজ
(d) ম্যাগনেটোপজ
উত্তর – (c) স্ট্র্যাটোপজ
19. বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটি হল –
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(c) থার্মোস্ফিয়ার
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) ট্রোপোস্ফিয়ার
20. মেরুজ্যোতি (aurora) উৎপন্ন হয় বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে সেটি হল —
(a) ওজোনোস্ফিয়ার
(b) আয়নোস্ফিয়ার
(c) ট্রোপোপজ
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) আয়নোস্ফিয়ার
21. ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরের গড় উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে –
(a) 10 km
(b) 15 km
(c) 12 km
(d) 20 km
উত্তর – (c) 12 km
22. বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন উয়তার মান —
(a) 10°C
(b) 0°C
(c) – 50°C
(d) – 95°C
উত্তর – (d) – 95°C
23. বেতার তরঙ্গকে প্রতিফলিত করে বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তর?
(a) স্ট্যাটোপজ
(b) ওজোনোস্ফিয়ার
(c) আয়নোস্ফিয়ার
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) আয়নোস্ফিয়ার
24. প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ট্রোপোস্ফিয়ারের উয়তা কমে—
(a) 5.6°C
(b) 6.5°C
(c) 3.5°C
(d) 4.6°C
উত্তর – (b) 6.5°C
25. বায়ুমণ্ডলের কোন্ অঞ্চলে কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশ স্টেশন থাকে?
(a) এক্সোস্ফিয়ার
(b) থার্মোস্ফিয়ার
(c) মেসোস্ফিয়ার
(d) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) এক্সোস্ফিয়ার
26. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে—
(a) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(b) থার্মোস্ফিয়ার
(c) ট্রোপোস্ফিয়ার
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) ট্রোপোস্ফিয়ার
27. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে সূর্য থেকে আগত এক্স রশ্মি শোষিত হয়?
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) মেসোস্ফিয়ার
(c) আয়নোস্ফিয়ার
(d) এক্সোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) আয়নোস্ফিয়ার
28. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক?
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্যাটোস্ফিয়ার
(c) থার্মোস্ফিয়ার
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (a) ট্রোপোস্ফিয়ার
29. বায়ুমণ্ডলে ভ্যান-অ্যালেন বিকিরণ বলয় থাকে—
(a) ট্রোপোস্ফিয়ারে
(b) ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে
(c) স্ট্যাটোস্ফিয়ারে
(d) মেসোস্ফিয়ারে
উত্তর – (b) ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে
30. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে ওজোন গ্যাস পাওয়া যায়?
(a) মেসোস্ফিয়ার
(b) এক্সোস্ফিয়ার
(c) স্ট্যাটোস্ফিয়ার
(d) থার্মোস্ফিয়ার
উত্তর – (c) স্ট্যাটোস্ফিয়ার

একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও 

1. বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় পদার্থের মোট ভর কত?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় পদার্থের মোট ভর প্রায় 5.5 × 1015 ton |
2. বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটির নাম কী?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটি হল ট্রোপোস্ফিয়ার।
3. ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে ট্রোপোস্ফিয়ারের অবস্থান লেখো।
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে 12 km উচ্চতা পর্যন্ত ট্রোপোস্ফিয়ার বিস্তৃত।
4. ট্রোপোস্ফিয়ারে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানগুলি কী কী?
উত্তর – N2, O2 , CO2, H2O (জলীয় বাষ্প)।
5. নিরক্ষীয় অঞ্চল ও মেরু অঞ্চলে ট্রোপোস্ফিয়ারের বিস্তার কতখানি?
অনুরূপ প্রশ্ন, নিরক্ষরেখার ওপর ট্রোপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত?
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরটি মেরু অঞ্চলে প্রায় 8-9 কিমি পর্যন্ত এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় 16-18 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
6. ট্রোপোস্ফিয়ারের সর্বনিম্ন অঞ্চলে বায়ুর চাপ কত?
উত্তর – 76 cm পারদস্তম্ভের চাপের সমান।
7. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে ঝড় ও বৃষ্টি দেখা যায়?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরে ঝড় ও বৃষ্টি দেখা যায়।
8. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরের অপর নাম ক্ষুব্ধমণ্ডল?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের ট্রোপোস্ফিয়ারের অপর নাম ক্ষুদ্ধমণ্ডল।
9. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরটি আবহমণ্ডল বলে পরিচিত?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরটি আবহমণ্ডল বলে পরিচিত।
10. ট্রোপোস্ফিয়ারে উচ্চতাভেদে, উন্নতার সাধারণত কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর – উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরের উয়তা ক্রমশ হ্রাস পায় ও এর উপরের দিকের উন্নতা হয় প্রায় –56°C।
11. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরকে ‘ক্রমহ্রাসমান উন্নতা স্তর’ বলা হয়?
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরটিকে ‘ক্রমহ্রাসমান উন্নতা স্তর’ বলা হয়।
12. ট্রোপোস্ফিয়ারের সর্বনিম্ন উন্নতা কোন্ অংশে দেখা যায় ?
উত্তর – নিরক্ষরেখার ঊর্ধ্বে ট্রোপোপজ অংশে।
13. ট্রোপোপজ কী?
অনুরূপ প্রশ্ন, ট্রোপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংযোগস্থলকে কী বলে?
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে 12 km উচ্চতার আশেপাশে যে অঞ্চলে ট্রোপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংযোগ ঘটে এবং উচ্চতার পরিবর্তনেও উন্নতা অপরিবর্তিত থাকে তাকে ট্রোপোপজ বলে।
14. ট্রোপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় উন্নতা কত থাকে?
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় উন্নতা থাকে প্রায় –56°C ৷
15. বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানগুলি কোন্ স্তরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়?
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
16. ভূপৃষ্ঠের জীবজগৎ বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে?
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে।
17. ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই লক্ষ করা যায় যে একটি নির্দিষ্ট হারে উয়তা হ্রাস পেতে থাকে, এই ঘটনাকে কী বলা হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, ল্যাপ্স্ রেট কী?
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে ওঠার সময় নির্দিষ্ট হারে উয়তা হ্রাসের ঘটনাকে বলে সাধারণ তাপ হ্রাস বা নর্ম্যাল ল্যাপ্স্ রেট।
18. জেট স্ট্রিম নামক প্রবল গতিপূর্ণ বায়ুস্রোত বায়ুমণ্ডলের কোন্ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়?
উত্তর – জেট স্ট্রিম ট্রোপোপজ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়।
19. ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরিভাগ থেকে কত উচ্চতা পর্যন্ত স্ট্যাটোস্ফিয়ার বিস্তৃত?
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরিভাগ থেকে প্রায় 45 km উচ্চতা পর্যন্ত।
20, স্ট্র্যাটোপজ কী?
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের সংযোগস্থলে যে অঞ্চলে উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে।
21. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরের মধ্য দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে?
অনুরূপ প্রশ্ন, প্লেন চালানো বা বেলুন ওড়ানোর জন্য বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরটি ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্য দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে।
22. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বাড়লে বায়ুর উয়তার কী পরিবর্তন হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উয়তা বাড়ে না কমে?
উত্তর – বায়ুর উয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
23. ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে ওজোনোস্ফিয়ারের অবস্থান লেখো।
উত্তর – ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 16 km থেকে 30 km উচ্চতা পর্যন্ত ওজোনোস্ফিয়ার বিস্তৃত।
24. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের কয়েকটি গ্যাসীয় উপাদান-এর নাম লেখো।
উত্তর – N2, O2, O3 |
25. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরটি শীতলতম ?
উত্তর – মেসোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর।
26. ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে মেসোস্ফিয়ারের অবস্থান লেখো।
উত্তর – মেসোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 45 km থেকে 85 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
27. মেসোপজ অংশের উন্নতা কত?
উত্তর – মেসোপজ অংশের উয়তা –92°C |
28. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ দেখতে পাওয়া যায় ?
অনুরূপ প্রশ্ন, বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায় ?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের থার্মোস্ফিয়ারের অন্তর্গত আয়োনোস্ফিয়ার স্তরে।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ ………..।
উত্তর – কমে
2. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুস্তরের ………. তত কম হয়।
উত্তর – ঘনত্ব
3. ট্রোপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও ………. স্তর সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ারের অন্তর্গত।
উত্তর – মেসোস্ফিয়ার
4. ‘ঘনমণ্ডল’ বলা হয় বায়ুমণ্ডলের ………… স্তরকে।
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার
5. ‘ট্রোপোস্ফিয়ার’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী ………..।
উত্তর – Teisserenc de Bort
6. ‘ট্রোপোস্ফিয়ার’ শব্দের অর্থ হল ………..।
উত্তর – অশান্ত অঞ্চল
7. ‘মিশ্রিত অঞ্চল’ বলা হয় বায়ুমণ্ডলের ……….. স্তরকে।
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার
8. বায়ুমণ্ডলের সমস্ত জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা ………. স্তরেই সীমাবদ্ধ।
উত্তর – ট্রোপোস্ফিয়ার
9. ট্রোপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে উন্নতা ………..।
উত্তর – কমে
10. ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরের বায়ু স্তরকে ……… বলে।
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
11. ট্রোপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সীমানা নির্দেশক অঞ্চলটিকে বলা হয় ………..।
উত্তর – ট্রোপোপজ
12. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে উয়তা ………..।
উত্তর – বাড়ে
13. পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা উল্কাপিণ্ড ……….. স্তরে প্রবেশ করে বায়ুর সঙ্গে সংঘর্ষে জ্বলে ওঠে।
উত্তর – মেসোস্ফিয়ার
14. বায়ুমণ্ডলের ……….. স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়।
উত্তর – থার্মোস্ফিয়ার
15. বায়ুমণ্ডলের ……….. স্তরের নীচের অংশ আয়নমণ্ডল নামে পরিচিত।
উত্তর – থার্মোস্ফিয়ার
16. বায়ুমণ্ডলের আয়ন স্তরে তড়িদাহিত অণুর প্রভাবে সৃষ্টি হয় ………..।
উত্তর – মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা
17. অশান্তমণ্ডলে ঝড় যদি কার্য হয়, তবে তার কারণ হল বায়ুর ……… স্রোত।
উত্তর – পরিচলন
18. বায়ু সর্বদা ………. চাপ অঞ্চল থেকে ……… চাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে গিয়ে ঝড় সৃষ্টি করে।
উত্তর – উচ্চ, নিম্ন
19. বায়ুর পরিচলন স্রোতের ফল হল ……….. ও ………..।
উত্তর – সমুদ্রবায়ু, স্থলবায়ু
20. বায়ুমণ্ডলে ……….. সৃষ্টির ফলে ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
উত্তর – নিম্নচাপ

TOPIC – B ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস প্রভাব ও বিশ্বউন্নায়ন

সংক্ষিপ্ত | দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

1. [i] ওজোনোস্ফিয়ার কাকে বলে? [ii] এই স্তরটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অনুরূপ প্রশ্ন, বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর থাকার ফলে আমাদের কী সুবিধা হয় ?
অনুরূপ প্রশ্ন, বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের গুরুত্ব কী?
উত্তর – (i) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ওজোন গ্যাসের একটি স্তর আছে যেটি ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 16 km থেকে 30 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত মোট ওজোন গ্যাসের 90 শতাংশ এই স্তরে থাকে। এই স্তরটিকে ওজোনোস্ফিয়ার বলে।
(ii) সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি জীবজগতের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। ওজোনোস্ফিয়ার স্তরটি এই ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে পৃথিবীর জীবকুলকে এই রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এজন্য এই স্তরটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
2. ওজোন স্তরকে ‘ওজোন ছত্র’ বা ‘প্রাকৃতিক সৌরপর্দা’ বলা হয় কেন?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন স্তরকে ওজোন ছত্র বা প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বলে। সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির বেশিরভাগ অংশই ওজোন স্তরে শোষিত হয়ে যায়। ওজোন স্তর না থাকলে এই ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ত। অর্থাৎ হাতা বা পর্দা যেমন সূর্যালোকের সরাসরি সংস্পর্শ থেকে আমাদের রক্ষা করে, ওজোন স্তর তেমন সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির পৃথিবীতে আগমনকে প্রতিরোধ করে। তাই ওজোন স্তরকে ‘ওজোন ছত্র’ বা ‘প্রাকৃতিক সৌরপর্দা’ বলা হয়।
3. সংজ্ঞাসহ ওজোন স্তরের ঘনত্বের একক কী উল্লেখ করো।
উত্তর – ওজোন স্তরের ঘনত্বের একক হল ‘ডবসন’। 0°C উন্নতা ও 760mm Hg চাপে 0.01 mm পুরু ওজোন স্তরের ঘনত্বকে 1 ডবসন একক (1DU) বলে।
4. ওজোন স্তরের সৃষ্টি এবং ধ্বংস কীভাবে হয়? (প্রয়োজনীয় বিক্রিয়া দিতে হবে) 
অনুরূপ প্রশ্ন, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ স্থির থাকে কীভাবে?
উত্তর – ওজোন স্তরের সৃষ্টি: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত অক্সিজেন অণু অতিবেগুনি রশ্মি (UV-রশ্মি) শোষণ করে অক্সিজেন পরমাণুতে বিয়োজিত হয়। O2 + অতিবেগুনি রশ্মি → O + O; এই পারমাণবিক অক্সিজেন আণবিক অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন অণু গঠন করে।
O2 + O → O3
ওজোন স্তরের ধ্বংস: উৎপন্ন ওজোন অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে অক্সিজেন অণুতে বিয়োজিত হয়।
O3 + অতিবেগুনি রশ্মি → O2 +O; O3 + O → 2O2
ওজোন অণুর উৎপাদন ও ওজোন অণুর বিয়োজন—ওজোন স্তরে এই দুটি বিপরীত প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে এবং একটি সাম্যাবস্থার সৃষ্টি করে। এই সাম্যাবস্থার জন্যই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ স্থির থাকে।
5. (i) ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহ্বর কী?
(ii) মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি রাসায়নিক পদার্থের নাম করো যেগুলি ওজোন গহ্বর সৃষ্টির জন্য দায়ী।
উত্তর – (i) মানুষের কিছু ক্রিয়াকলাপের ফলে প্রাকৃতিকভাবে ওজোন তৈরির হার অপেক্ষা বিয়োজনের হার অত্যধিক বেড়ে যাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন স্তরটি প্রায় সর্বত্র এইভাবে কম-বেশি পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ওজোন স্তরের এই পাতলা হওয়ার ঘটনাকে ওজোন স্তরের ক্ষয় বা ওজোন ছিদ্র অথবা ওজোন গহ্বর (ozone hole) বলে।
(ii) মানুষের নানাবিধ ক্রিয়াকলাপের ফলে পরিবেশে মুক্ত হওয়া ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) বা ফ্রেয়ন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থসমূহ, নাইট্রিক অক্সাইড (NO), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) ইত্যাদি গ্যাসগুলি ওজোন গহ্বর সৃষ্টির জন্য দায়ী।
6. পরিবেশে CFC কী কী ভাবে মিশতে পারে?
উত্তর – রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারে হিমায়করূপে, অ্যারোসল স্প্রে-তে চালকরূপে, প্লাস্টিক উৎপাদনে ফোমিং এজেন্টরূপে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রের পরিষ্কারকরূপে ইত্যাদি ক্ষেত্রে CFC ব্যবহৃত। এইসব দ্রব্যের প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে CFC পরিবেশে মেশে।
7. জেটপ্লেনগুলি ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য কীভাবে দায়ী ?
অনুরূপ প্রশ্ন, ওজোন স্তর ধ্বংসে নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলির ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর – স্ট্যাটোস্ফিয়ারে বায়ুর ঘনত্ব কম। এ কারণে জেটপ্লেনগুলি স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্য দিয়ে প্রায় বিনা বাধায় চলাচল করে। জেট বিমানগুলি প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) গ্যাস নির্গত করে। এই নির্গত NO-এর সাথে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন গ্যাসের বিক্রিয়ায় NO2 (নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড) ও O2 উৎপন্ন হয়। আবার স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে O3 ও O2 -এর বিয়োজন ঘটে সর্বদা অক্সিজেন পরমাণু সৃষ্টি হয়। এই অক্সিজেন পরমাণুর সাথে উৎপন্ন NO2 অণু বিক্রিয়া করে পুনরায় NO -তে রূপান্তরিত হয়।
NO + O3 → NO2 + O2, NO2 + O → NO + O2
এভাবে জেট বিমানগুলি থেকে নির্গত নাইট্রোজেনের অক্সাইড দ্বারা ওজোন স্তরের ক্ষয় ঘটে।
8. মন্ট্রিল প্রোটোকল কী? মন্ট্রিল প্রোটোকলের অঙ্গীকারগুলি লেখো।
উত্তর – মন্ট্রিল প্রোটোকল: ওজোন স্তরের ক্ষয় হ্রাসের জন্য 1987 সালে কানাডার মন্ট্রিলে একটি বহুদেশীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি মন্ট্রিল প্রোটোকল নামে পরিচিত।
মন্ট্রিল প্রোটোকলের অঙ্গীকারসমূহ: (1) 1995 সালের মধ্যে CFC-এর ব্যবহার 50% কমানো হবে। (2) 2000 সাল নাগাদ CFC-এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে। (3) ক্লোরিন-জাতীয় গ্যাসের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমানো হবে ও 2000 সাল নাগাদ তা সম্পূর্ণ বন্ধ হবে।
9. ওজোন স্তর না থাকলে কী কী হত?
অনুরূপ প্রশ্ন, মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর ওজোন স্তর ক্ষয়ের দুটি ক্ষতিকারক প্রভাব লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে প্রাণীজগতের ওপর দুটি ক্ষতিকারক প্রভাব লেখো।
উত্তর – ওজোন স্তর সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। ওজোন স্তর না থাকলে অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ত, যার ফলে পৃথিবীর জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হত। বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে ওজোন স্তর ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর জীবজগৎ তথা সমগ্র পরিবেশ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন—
  1. জীবকুলের ওপর প্রভাব: অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে বীজের অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে, শস্যের উৎপাদন হ্রাস পাবে, জলাশয়ে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের সালোকসংশ্লেষ ব্যাহত হবে, জলজ প্রাণীদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
  2. রোগের প্রাদুর্ভাব: অতিবেগুনি রশ্মি বিনা বাধায় পৃথিবীতে এসে পড়লে তার প্রভাবে ত্বকের ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ হবে, চোখে অসময়ে ছানি পড়বে। এ ছাড়া প্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যাবে।
  3. পরিবেশের ওপর প্রভাব: সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি ওজোন স্তরে শোষিত না হলে তা ভূপৃষ্ঠে আপতিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের উয়তা বৃদ্ধি করবে। ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে ও সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হবে। এ ছাড়াও পৃথিবীর জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
10. গ্রিনহাউস প্রভাব কী? 
উত্তর – সূর্যরশ্মিতে উপস্থিত ইনফ্রারেড (অবলোহিত) রশ্মিই প্রধানত তাপের অনুভূতি সৃষ্টি করে। সূর্য থেকে আগত ইনফ্রারেড রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হওয়ায় বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাসীয় অণুরা একে শোষণ করতে পারে না। ফলে এই রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে আপতিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত ইনফ্রারেড রশ্মি দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট হওয়ায় বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ (CO2, CH4, N2O, জলীয় বাষ্প, CFC ইত্যাদি) এই রশ্মির কিছু অংশকে শোষণ করে এবং বাকি অংশকে পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত করে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে। একেই গ্রিনহাউস প্রভাব (গ্রিনহাউস এফেক্ট) বলে।
11. গ্রিনহাউস গ্যাস কাদের বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কিছু গ্যাসীয় পদার্থ ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত ইনফ্রারেড রশ্মির (দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট) কিছু অংশকে শোষণ করে ও বাকি অংশকে ভূপৃষ্ঠে প্রতিফলিত করে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে কিছুটা তাপ আটকে পড়ে যার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে ও সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল একটি নির্দিষ্ট উয়তা সীমার মধ্যে উত্তপ্ত থাকে। এই গ্যাসীয় পদার্থগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়।
কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC), ওজোন (O3), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), জলীয় বাষ্প (H2O) ইত্যাদি।
12. একটি জৈব ও একটি অজৈব গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎস ও বিশ্বউয়ায়নে এদের শতকরা ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর – একটি জৈব গ্রিনহাউস গ্যাস হল মিথেন (CH4) ও একটি অজৈব গ্রিনহাউস গ্যাস হল কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)। বিশ্বউয়ায়নে মিথেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভূমিকা হল যথাক্রমে 19% ও 50% ।
13. O2 ও N2 গ্যাস গ্রিনহাউস গ্যাস নয় কেন?
উত্তর – যেসব গ্যাস পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (IR ray) শোষণ করতে পারে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। O2 ও N2 গ্যাস দুটি এই বিকিরিত অবলোহিত রশ্মি (দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট) শোষণ করতে পারে না বলে এরা গ্রিনহাউস প্রভাব দেখায় না। এ কারণে এরা গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।
14. গ্রিনহাউস প্রভাবের উপযোগিতা উল্লেখ করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO2, CH4, NO2, CFC, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে অবলোহিত রশ্মিরূপে (দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট) বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে বিলীন হতে দেয় না। এর ফলে ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল এমন এক উন্নতা সীমার মধ্যে (গড় মান প্রায় (15°C) উত্তপ্ত থাকে, যা মানুষসহ সমগ্র জীবজগতের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি না থাকলে গ্রিনহাউস প্রভাব ঘটত না। এর ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠ ও সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের গড় উন্নতা খুবই কম হত (প্রায় 30°C)। এই উন্নতায় পৃথিবীপৃষ্ঠে জীবকুলের বেঁচে থাকা অসম্ভব হত। এইভাবে জীবকুলের অস্তিত্ব রক্ষায় গ্রিনহাউস প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
15. গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে?
অথবা, বিশ্বউয়ায়ন কাকে বলে? 
উত্তর – বিজ্ঞাননির্ভর আধুনিক জীবনযাত্রায় মানুষের নানাবিধ ক্রিয়াকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এর প্রভাবে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমশ গরম হয়ে উঠছে। সমগ্র বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত উন্নতা বৃদ্ধির এই ঘটনাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং (global warming) বা বিশ্বউন্নায়ন বলে।
16. গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের উন্নতা কীভাবে বৃদ্ধি করে?
অনুরূপ প্রশ্ন, বিশ্বউন্নায়ন ও গ্রিনহাউস প্রভাব কীভাবে সম্পর্কিত?
উত্তর – সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট অবলোহিত রশ্মি পৃথিবীর চারপাশের গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির আচ্ছাদন ভেদ করে পৃথিবীপৃষ্ঠে আসতে পারে। ভূপৃষ্ঠ অবলোহিত রশ্মির কিছুটা শক্তি শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিকিরিত দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মির কিছু অংশ শোষণ করে উত্তপ্ত হয় এবং বাকি অংশ পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত করে। মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বভাবতই ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট অবলোহিত রশ্মির আরও বেশি অংশ বায়ুমণ্ডলে আবদ্ধ হচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর গড় উন্নতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এইভাবেই গ্রিনহাউস প্রভাব বিশ্বউয়ায়নকে ত্বরান্বিত করছে অর্থাৎ বিশ্ব উয়ায়নে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ভূমিকা অপরিসীম।
17. বিশ্বউন্নায়নে বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ভূমিকা উল্লেখ করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, বিশ্বউয়ায়নে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও মিথেন গ্যাসের ভূমিকা লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, বিশ্বউয়ায়নে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ও নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের ভূমিকা বিবৃত করো।
উত্তর – নানাবিধ প্রাকৃতিক কারণে এবং মূলত মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। অর্থাৎ গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে বায়ুমণ্ডল নিয়ন্ত্রিত সীমার বাইরে উত্তপ্ত হচ্ছে। এই হিসেবে বলা যায় যে, পরিবেশে এই গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির বৃদ্ধি বা গ্রিনহাউস প্রভাবই বিশ্বউয়ায়নের অন্যতম কারণ। বিশ্বউয়ায়নে বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ভূমিকা নিম্নরূপ-

কার্বন ডাইঅক্সাইড: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ 0.039% হলেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মধ্যে এর উপস্থিতিই সবথেকে বেশি। তাই পৃথিবীপৃষ্ঠ দ্বারা বিকিরিত তাপকে আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রে CO2 সর্বপ্রধান ভূমিকা পালন করে এবং গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান প্রায় 50 শতাংশ।

মিথেন: পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধিতে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী অপর একটি গ্যাস হল মিথেন। ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা, প্রতি অণু CO2 -এর তুলনায় প্রতি অণু মিথেনের প্রায় 25 গুণ বেশি। কিন্তু বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ CO2 এর তুলনায় অনেক কম। এ কারণে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে মিথেন গ্যাসের অবদান CO2 এর তুলনায় কম (প্রায় 19 শতাংশ)।

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন: ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা CO2 অণুর তুলনায় ক্লোরোফ্লুরোকার্বন অণুর 15,000-20,000 গুণ বেশি। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন অত্যন্ত স্থায়ী ও বায়ুতে দীর্ঘকাল অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়। গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান প্রায় 16 শতাংশ। তাপ শোষণের পাশাপাশি ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ওজোন গহ্বর সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে আসতে পারে যা বিশ্বউয়ায়নকে পরোক্ষভাবে ত্বরান্বিত করে।

নাইট্রাস অক্সাইড: বায়ুমণ্ডলে নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পৃথিবীর গড় উন্নতা বৃদ্ধির আরও একটি কারণ। ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা প্রতি অণু CO2 -এর তুলনায় প্রতি অণু নাইট্রাস অক্সাইডের প্রায় 200 গুণ বেশি। কিন্তু বায়ুতে এর পরিমাণ CO2 এর তুলনায় কম। তাই গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর CO2 অপেক্ষা কম (প্রায় 5%)।

18. গ্রিনহাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বউয়ায়ন কমানোর সম্ভাব্য উপায়গুলি আলোচনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে কী কী উপায় অবলম্বন করা উচিত?
উত্তর – সমগ্র বিশ্ব জুড়ে উন্নতা বৃদ্ধির হার প্রশমিত করার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা জরুরি। এর ফলে একদিকে যেমন গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন হ্রাস পাবে তথা গ্রিনহাউস প্রভাবের মাত্রা কমবে তেমনি অন্যদিকে পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধির মাত্রাও (বিশ্বউয়ায়ন) নিয়ন্ত্রিত হবে। এই উপায়গুলি নিম্নরূপ —
  1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস: কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে বায়ুমণ্ডলে CO2 এর অতিরিক্ত জোগান কমাতে হবে।
  2. বনসৃজনে উৎসাহদান: চোরাই কাঠ কাটা বন্ধ করতে হবে, বনভূমিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং বনসৃজন করতে হবে। এর ফলে পরিবেশে CO2 এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হবে।
  3. অপ্রচলিত শক্তি-উৎসের ব্যবহার বৃদ্ধি: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি ইত্যাদি অপ্রচলিত শক্তি উৎসের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি কম পরিমাণে মিশবে।
  4. ফ্রেয়ন উৎপাদন ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা: ফ্রেয়ন বা ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) -এর উৎপাদন ও ব্যবহার ধাপে ধাপে বন্ধ করতে হবে।
  5. জৈব আবর্জনার প্রক্রিয়াকরণ: জৈব আবর্জনার পচনে মিথেন গ্যাস মুক্ত হয়। তাই এই আবর্জনার সঠিক প্রক্রিয়াকরণ করা দরকার যাতে পরিবেশে মিথেন গ্যাস অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় না মেশে।
  6. নাইট্রোজেন-ঘটিত সারের ব্যবহার কমানো: কৃষিজমিতে নাইট্রোজেন-ঘটিত সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এর ফলে বায়ুতে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডগুলি কম মাত্রায় মিশবে।
  7. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন কমানোর উদ্দেশ্যে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। এর ফলে বিশ্বউন্নায়নের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হবে।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. যে স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে সেটি হল—
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) ওজোনোস্ফিয়ার
(c) থার্মোস্ফিয়ার
(d) মেসোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) ওজোনোস্ফিয়ার
2. সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে—
(a) পরিবহণ পদ্ধতিতে
(b) পরিচলন পদ্ধতিতে
(c) বিকিরণ পদ্ধতিতে
(d) সবকটিই ঠিক
উত্তর – (c) বিকিরণ পদ্ধতিতে
3. আন্টার্কটিকা অঞ্চলে ওজোন স্তরের সর্বাধিক ক্ষয় হয় কোন্ মাসে?
(a) মার্চ-আগস্ট
(b) এপ্রিল-জুন
(c) সেপ্টেম্বর-নভেম্বর
(d) জানুয়ারি-মার্চ
উত্তর – (c) সেপ্টেম্বর-নভেম্বর
4.যে রাসায়নিক পদার্থটি ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী সেটি হল –
(a) ক্লোরোফর্ম
(b) আয়োডোফর্ম
(c) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন
(d) অ্যাসিটিলিন
উত্তর – (c) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন
5. নিম্নলিখিত কোন্ রশ্মিটি তাপীয় রশ্মি?
(a) অতিবেগুনি রশ্মি
(b) অবলোহিত রশ্মি
(c) কসমিক রশ্মি
(d) গামা রশ্মি
উত্তর – (b) অবলোহিত রশ্মি
6. সুপারসনিক এরোপ্লেন থেকে নির্গত নাইট্রোজেনের যে অক্সাইডটি ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি করে সেটি হল –
(a) NO2
(b) N2O
(c) NO
(d) N2O4
উত্তর – (c) NO
7. অতিবেগুনি রশ্মির ক্রিয়ায় CFC থেকে উৎপন্ন হয় —
(a) সক্রিয় কার্বন পরমাণু
(b) সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু
(c) সক্রিয় ফ্লুরিন পরমাণু
(d) সক্রিয় হাইড্রোজেন পরমাণু
উত্তর – (b) সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু
৪. ওজোন স্তর ক্ষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব কোন্‌টি?
(a) ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি
(b) শস্যের উৎপাদন হ্রাস
(c) ত্বকের ক্যানসার
(d) সবকটিই
উত্তর – (d) সবকটিই
9. কোন্‌টি গ্রিনহাউস গ্যাস ?
(a) O2
(b) N
(c) O3
(d) H2
উত্তর – (c) O3
10. নীচের কোন্‌টি গ্রিনহাউস গ্যাস নয়?
(a) মিথেন
(b) জলীয় বাষ্প
(c) কার্বন ডাইঅক্সাইড
(d) অক্সিজেন
উত্তর – (d) অক্সিজেন
11. গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের অবদানের সঠিক ক্রম হল—
(a) CO2 > H2O > CH4 > CFC
(b) CO2 > CH4 > CFC > H2O
(c) CO2 > H2O > CFC > CH4
(d) CO2 > CFC > H2O > CH4
উত্তর – (b) CO2 > CH4 > CFC > H2O
12. ওজোনোস্ফিয়ারে ওজোনের গাঢ়ত্ব মোটামুটিভাবে —
(a) 30 ppm
(b) 10 ppm
(c) 40 ppm
(d) 20 ppm
উত্তর – (b) 10 ppm
13. CFC-এর উৎস হল —
(a) রেফ্রিজারেটর
(b) যানবাহন
(c) কৃষিজমি
(d) জলাভূমি
উত্তর – (a) রেফ্রিজারেটর
14. গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে CO2 গ্যাসের অবদান প্রায় —
(a) 30%
(b) 20%
(c) 50%
(d) 60%
উত্তর – (c) 50%
15. গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধির জন্য নীচের কোন্ গ্যাসটির অবদান সবচেয়ে বেশি?
(a) N2O
(b) CH4
(c) CO2
(d) H2O বাষ্প
উত্তর – (c) CO2
16. গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে কোন্‌টি ঘটবে না?
(a) ঋতুচক্রের পরিবর্তন
(b) মহাসাগরীয় স্রোতের পরিবর্তন
(c) পোলার আইস ক্যাপের পরিমাণ হ্রাস
(d) দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন
উত্তর – (d) দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন
17. যে স্তরে পৌঁছে হ্যালোন (halon)-জাতীয় যৌগগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে তা হল –
(a) ট্রোপোস্ফিয়ার
(b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
(c) আয়োনোস্ফিয়ার
(d) এক্সোস্ফিয়ার
উত্তর – (b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
18. ওজোন স্তরের ক্ষয় ঘটায় —
(a) SO2
(b) CO2
(c) CxYx
(d) হ্যালনসমূহ
উত্তর – (d) হ্যালনসমূহ
19. ওজোন গহ্বর শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী—
(a) জে. ফোরম্যান
(b) এ. ফ্লেমিং
(c) ক্যাভেন্ডিস
(d) এইচ. ডেভি
উত্তর – (a) জে. ফোরম্যান

একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. ওজোন গ্যাসের সর্বাধিক সঞ্চয় কোন্ স্তরে দেখা যায় ?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে।
2. বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত মোট ওজোন গ্যাসের শতকরা কত ভাগ ওজোনোস্ফিয়ারে বিদ্যমান?
উত্তর – মোট ওজোন গ্যাসের শতকরা 90 ভাগ।
3. প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন বা সৌরপর্দা বা পৃথিবীর ছাতা কাকে বলে?
অনুরূপ প্রশ্ন, বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরকে ‘পৃথিবীকে নিরাপত্তা প্রদানকারী স্তর’ বলে?
উত্তর – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোনোস্ফিয়ারকে ‘প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন’ বা ‘সৌরপর্দা’ বা ‘পৃথিবীর ছাতা’ বা ‘পৃথিবীকে নিরাপত্তা প্রদানকারী স্তর’ বলে।
4. ওজোন স্তর সূর্য থেকে আগত কোন্ রশ্মির ভূপৃষ্ঠে আপতনকে প্রতিহত করে?
উত্তর – ওজোন স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির (UV-রশ্মি) ভূপৃষ্ঠে আপতনকে প্রতিহত করে।
5. বায়ুমণ্ডলে ওজোনের পরিমাণ মাপার যন্ত্রটির নাম কী?
উত্তর – ডবসন স্পেকট্রোমিটার।
6. সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কোন্ স্তরে শোষিত হয়?
উত্তর – সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ওজোন স্তরে শোষিত হয়।
7. ‘Chapman Cycle’ কী?
উত্তর – স্ট্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত ওজোনের সৃষ্টি এবং ধ্বংস যে চক্রাকার পথে সংঘটিত হয় তাকে ‘Chapman Cycle’ বলে।
8. ODS-এর পূর্ণরূপটি লেখো।
উত্তর – ODS-এর পূর্ণরূপটি হল Ozone Depleting Substances (অর্থাৎ, ওজোন বিনষ্টকারী পদার্থসমূহ)।
9. ODP-এর পূর্ণরূপটি কী?
উত্তর – ODP-এর পূর্ণরূপটি হল Ozone Depletion Potential (অর্থাৎ, ওজোন বিনষ্ট করার ক্ষমতা)।
10. ওজোন গ্যাসের অণুগুলি অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে কোন্ অণুতে পরিণত হয়?
উত্তর – অক্সিজেন অণুতে পরিণত হয়।
11. বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ধ্বংসে কোন্ গ্যাস অনুঘটকের কাজ করে?
উত্তর – ক্লোরোফ্লুরোকার্বনসমূহ (CFC) অনুঘটকের কাজ করে।
12. CFC-এর কোন্ পরমাণুটি ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী?
উত্তর – CFC-এর ক্লোরিন পরমাণুটি ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী।
13. CFC ওজোন গ্যাসের বিয়োজন ঘটিয়ে বায়ুমণ্ডলে কোন্ গ্যাস মুক্ত করে?
উত্তর – অক্সিজেন গ্যাস মুক্ত করে।
14. UV রশ্মির প্রভাবে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন থেকে নির্গত কোন্ পরমাণুটি ওজোন গ্যাসকে অক্সিজেনে বিয়োজিত করে দেয়?
উত্তর – UV রশ্মির প্রভাবে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন থেকে নির্গত ক্লোরিন পরমাণু (Cl) ওজোন গ্যাসকে অক্সিজেনে বিয়োজিত করে দেয়।
15. একটি সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু ক-টি ওজোন অণুর বিয়োজন ঘটাতে পারে?
উত্তর – লক্ষাধিক ওজোন অণুর বিয়োজন ঘটাতে পারে।
16. CFC-গুলি ব্যাবহারিক ক্ষেত্র থেকে মুক্ত হয়ে অবিকৃত অবস্থায় কেন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছোয় ?
উত্তর – CFC-গুলি ট্রোপোস্ফিয়ার অঞ্চলে নিষ্ক্রিয় ও অদাহ্য হওয়ায় ব্যাবহারিক ক্ষেত্র থেকে মুক্ত হয়ে এরা অবিকৃত অবস্থায় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছোয়।
17. বিদ্যুৎক্ষরণের সময় কোন্ গ্যাস O3 স্তরকে ভাঙে?
উত্তর – বিদ্যুৎক্ষরণের সময় উৎপন্ন নাইট্রিক অক্সাইড (NO) গ্যাস ওজোন স্তরকে ভাঙে।
18. নাইট্রোজেন ঘটিত একটি যৌগের নাম লেখো যা O3 স্তর ধ্বংসে সহায়তা করে।
উত্তর – নাইট্রিক অক্সাইড (NO)।
19. ওজোন স্তরে ওজোনের বিয়োজনে NO-এর ভূমিকা কী?
উত্তর – NO, O3 এর সাথে বিক্রিয়া করে NO2 ও O2 গঠনের মাধ্যমে O3 -কে বিয়োজিত করে, ফলে ওজোন স্তরের ক্ষয় ঘটে।
20. মন্ট্রিল প্রোটোকল সাক্ষরিত হয় কোন্ সালে?
উত্তর – 1987 সালে মন্ট্রিল প্রোটোকল সাক্ষরিত হয়।
21. অতিবেগুনি রশ্মি চোখের কী ক্ষতি করে?
উত্তর – অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অসময়ে ছানি পড়ে।
22. একটি জৈব গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখো। 
উত্তর – একটি জৈব গ্রিনহাউস গ্যাস হল মিথেন।
23. প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস কোনটি?
উত্তর – প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস হল কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)।
24. বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত এমন দুটি গ্যাসের নাম লেখো যারা গ্রিনহাউস প্রভাব দেখায় না।
উত্তর – নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্রিনহাউস প্রভাব দেখায় না।
25. যদি বায়ুমণ্ডলে CO2, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি না থাকত তবে বায়ুমণ্ডলের গড় উয়তা কত হত?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের গড় উন্নতা হত প্রায় –30°C
26. বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির উপস্থিতির একটি সুবিধা উল্লেখ করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির উপস্থিতির জন্য পৃথিবীতে জীবনধারণের উপযুক্ত উন্নতার সৃষ্টি হয়েছে।
27. গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের গড় উয়তা কত থাকে?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের গড় উয়তা থাকে প্রায় 15°C।
28. GWP-এর পূর্ণরূপটি লেখো।
উত্তর – GWP-এর পূর্ণরূপটি হল Global Warming Potential |
29. ভূ-উয়তা বৃদ্ধির একটি ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখ করো।
উত্তর – ভূ-উয়তা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফের স্তূপ গলে যাবে এবং উপকূলবর্তী এলাকা জল দ্বারা প্লাবিত হবে।
30. গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে কোন্ কোন্ ব্যাধির প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে?
উত্তর – ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, এনকেফেলাইটিস প্রভৃতি।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. ওজোন ………. বর্ণের, ……….. গন্ধযুক্ত একটি গ্যাস।
উত্তর – নীল, আঁশটে
2. ওজোন হল ………. গ্যাসের রূপভেদ।
উত্তর – অক্সিজেন
3. পৃথিবীর ছাতা ও প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন নামে পরিচিত বায়ুমণ্ডলের …….. স্তর।
উত্তর – ওজোন
4. ওজোন গহ্বর সর্বপ্রথম লক্ষ করেন ……….. ।
উত্তর – জো ফোরম্যান
5. বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের ঘনত্বকে …………. এককে প্রকাশ করা হয়।
উত্তর – ডবসন (DU)
6. অবলোহিত রশ্মি (Infrared Ray)-এর শক্তি হ্রাস পেলে তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ………. পায়।
উত্তর – বৃদ্ধি
7. CFC-এর সম্পূর্ণ কথাটি হল ……….. ।
উত্তর – ক্লোরোফ্লুরোকার্বন
৪. সুপারসনিক বিমান নির্গত যে গ্যাস ওজোন স্তরকে ভেঙে দেয় সেই গ্যাসটি হল ……….. ।
উত্তর – নাইট্রিক অক্সাইড
9. মন্ট্রিল প্রোটোকল ……… সালে স্বাক্ষরিত হয়।
উত্তর – 1987
10. ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলে চামড়ায় ……….. রোগ হতে পারে।
উত্তর – ক্যানসার
11. একটি অজৈব গ্রিনহাউস গ্যাস হল ……….. ।
উত্তর – কার্বন ডাইঅক্সাইড
12. বডি স্প্রে-তে থাকা ……….. গ্যাস হল গ্রিনহাউস গ্যাস।
উত্তর – ক্লোরোফ্লুরোকার্বন
13. প্রতিবছর বায়ুমণ্ডলে CFC গ্যাসগুলির বৃদ্ধির হার প্রায় ……….. ।
উত্তর – 5%
14. CFC অণুর ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা CO2 অণুর তুলনায় প্রায় ………. গুণ বেশি।
উত্তর – 15,000-20,000
15. প্রতি অণু N2O এর তাপ আটকে রাখার ক্ষমতা প্রতি অণু CO2 -এর তুলনায় প্রায় ………. গুণ বেশি।
উত্তর – 200
16. প্রতি অণু মিথেনের তাপ আটকে রাখার ক্ষমতা প্রতি অণু CO2 এর তুলনায় প্রায় ………. গুণ বেশি।
উত্তর – 25
17. গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে N2O ও জলীয় বাষ্পের অবদান যথাক্রমে …….. ও ……….. ।
উত্তর – 5%, 2%
18. গ্রিনহাউস এফেক্টের ফলে ……….. ঘটছে।
উত্তর – বিশ্বউয়ায়ন

TOPIC – C শক্তির যথাযথ ব্যবহার ও স্থিতিশীল উন্নয়ন

সংক্ষিপ্ত/ দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

1. জ্বালানি ও জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে কী বোঝ ?
অনুরূপ প্রশ্ন, জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – জ্বালানি: যেসব পদার্থের দহন বা জারণের ফলে প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় এবং উৎপন্ন তাপশক্তিকে গৃহস্থালির নানা কাজে ও শিল্পক্ষেত্রে অর্থকরীভাবে ব্যবহার করা হয়, তাদের জ্বালানি বলে। যেমন—কয়লা, কাঠ, পেট্রোল ইত্যাদি।
জীবাশ্ম জ্বালানি: লক্ষাধিক বছর ধরে পাললিক শিলার বিভিন্ন স্তরে চাপা পড়ে থাকা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ ভূগর্ভস্থ তাপ, চাপ ও ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় এবং নানাবিধ ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব জ্বালানিতে পরিণত হয়, তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি বলে। যেমন—কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল প্রভৃতি।
2. (i) জ্বালানির জ্বলনাঙ্ক বা জ্বলন বিন্দু কাকে বলে?
(ii) ভালো জ্বালানির কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত?
উত্তর – (i) যে নির্দিষ্ট উন্নতায় কোনো জ্বালানি জ্বলতে শুরু করে, সেই উয়তাকে উক্ত জ্বালানির জ্বলনাঙ্ক বা জ্বলন বিন্দু (ignition point) বলে।
(ii) যেসব জ্বালানির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি আছে তাদের ভালো বা উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে গণ্য করা যায় — (1) এদের দহনের ফলে যেন ক্ষতিকারক গ্যাস, ধোঁয়া, কঠিন অবশেষ ইত্যাদি উৎপন্ন না হয়। (2) এদের তাপনমূল্য বা ক্যালোরি মূল্য উচ্চ হতে হবে। (3) এদের নিরাপদে এবং সহজে বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা সম্ভব। (4) এদের দহন যেন নিয়ন্ত্রণযোগ্য হয়। (5) এদের জ্বলনাঙ্ক যেন মাঝারি মানের হয়। (6) সর্বোপরি এসব জ্বালানিকে সস্তা ও সহজলভ্য হতে হবে।
3. কোনো জ্বালানির তাপনমূল্য বলতে কী বোঝায়? কয়লা ও ডিজেলের মধ্যে কোন্‌টির তাপনমূল্য বেশি?
উত্তর – 1kg ভরের কোনো কঠিন বা তরল জ্বালানির অথবা STP-তে 1m3 আয়তনবিশিষ্ট কোনো গ্যাসীয় জ্বালানির সম্পূর্ণ দহনে যে পরিমাণ তাপশক্তি পাওয়া যায় সেটি হল ওই জ্বালানির তাপনমূল্য (calorificvalue)।
কয়লা ও ডিজেলের মধ্যে ডিজেলের তাপনমূল্য বেশি।
4. জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করা বিশেষ প্রয়োজন। এর কারণ— (1) ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ভাণ্ডার নিঃশেষিত হয়ে আসছে। এবং এভাবে চলতে থাকলে এই ভাণ্ডার একদিন ফুরিয়ে যাবে। (2) জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরি হতে লক্ষাধিক বছর সময় লেগেছে। তাই এর ভাণ্ডার একবার ফুরিয়ে গেলে তা আর পুনরুদ্ধার করা যাবে না, অর্থাৎ এই জ্বালানি পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়। (3) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করা হলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মাত্রা কমবে, যার ফলস্বরূপ বিশ্বউস্নায়নের মাত্রাও নিয়ন্ত্রিত হবে। (4) ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছুটা জীবাশ্ম জ্বালানি বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে এর সংরক্ষণ করা আবশ্যিক।
5. শক্তি সংকট কী? এর একটি সম্ভাব্য সমাধান লেখো।
উত্তর – বর্তমান সভ্যতায় শক্তির বিপুল চাহিদা পূরণের জন্য প্রচলিত শক্তি উৎসগুলি যেমন— কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়ে চলেছে। তাই এইসব শক্তি উৎসগুলি দ্রুত নিঃশেষিত হচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জীবাশ্ম জ্বালানির অপ্রাপ্যতার কারণে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তাকেই শক্তি সংকট বলা হয়।
এর একটি সম্ভাব্য সমাধান হল বিভিন্ন বিকল্প শক্তির উৎস যেমন—সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটা শক্তি, ভূতাপ শক্তি, বায়োমাস শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।
6. স্থিতিশীল উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়?
অনুরূপ প্রশ্ন, স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণাটি কী?
উত্তর – যে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ও যথাযথ ব্যবহার, বর্তমান জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষিত করে মানবজাতির সার্বিক মঙ্গলসাধন করা যায়, তাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন (sustainable development) বলে।
7. স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর – স্থিতিশীল উন্নয়ন হল এমন একটি পদ্ধতি বা কর্মসূচি যার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত না করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মানবসম্পদের সার্বিক উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করা যায়। এই ধারণার মূল ভিত্তি হল প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রকৃতিজাত শক্তির ভাণ্ডারকে সুরক্ষিত রেখে বৃহত্তর সমাজের উন্নতিসাধন। অর্থাৎ প্রকৃতিসম্পদ ও মানবসম্পদের পারস্পরিক সম্পর্ককে অটুট রেখে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে উপযুক্ত করে রাখার মাধ্যমেই এই ধারণার বাস্তব রূপদান সম্ভব।
৪. বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থিতিশীল উন্নয়নকে একান্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে—এর সপক্ষে যুক্তি দাও।
অনুরূপ প্রশ্ন, স্থিতিশীল উন্নয়নের উদ্দেশ্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, স্থিতিশীল উন্নয়নের মূল লক্ষ্যগুলি কী কী?
উত্তর – স্থিতিশীল উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ—
  1. প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা: প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকৃতি এবং পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষিত করা।
  2. শক্তির ভাণ্ডারের সংরক্ষণ: জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শক্তির ভাণ্ডার সুরক্ষিত করা।
  3. বাস্তুতান্ত্রিক ক্রমোন্নয়: পরিবেশের সজীব ও জড় উপাদানগুলির পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করার মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক উন্নতিসাধন।
  4. সার্বিক মানব উন্নয়ন: পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের চাহিদা পূরণ এবং মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক উন্নয়ন।
স্থিতিশীল উন্নয়নের উদ্দেশ্যগুলি থেকে একথা পরিষ্কার যে প্রকৃতির ভারসাম্যকে বিঘ্নিত না করে এই উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ তথা সমগ্র পরিবেশের সামগ্রিক উন্নতিসাধন সম্ভব। এই হিসেবে বলা যায় যে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন একান্ত জরুরি।
9. পরিবেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে শক্তির উৎস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ কী কী উপায় (অন্তত দুটি) অবলম্বন করতে পারে?
উত্তর – ছাত্র সমাজ প্রদত্ত উপায়গুলি অবলম্বন করতে পারে—
  1. জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে সাইকেলের মতো পরিবেশবান্ধব যান বেশি ব্যবহার করা।
  2. বিদ্যুতের অপচয় রোধ করার জন্য বাড়িতে কিংবা স্কুলে যাতে বিনা কারণে বৈদ্যুতিক আলো, পাখা প্রভৃতি না চালানো হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা এবং অন্যদেরকেও এই ব্যাপারে সতর্ক করা।
  3. যেসব ক্ষেত্রে বিকল্পশক্তির উৎসগুলি ব্যবহার করা সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে এইসব শক্তি-চালিত যন্ত্র (যেমন—সোলার কুকার, সোলার ক্যালকুলেটর) ব্যবহার করা এবং বাকিদেরও এই ব্যাপারে সচেতন করা।
10. চিরাচরিত শক্তির উৎস বা অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – যেসব শক্তির উৎসগুলিকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করার ফলে তাদের ভান্ডার বর্তমানে নিঃশেষিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং যেগুলি একবার নিঃশেষিত হলে পুনরায় ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই তাদের চিরাচরিত বা অনবীকরণযোগ্য (non-renewable) শক্তির উৎস বলে।
কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানিগুলি হল চিরাচরিত বা অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস।
11. বিকল্প জ্বালানি বা বিকল্প শক্তির উৎস বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির পরিমাণ খুব সীমিত হওয়ায়, এদের সঞ্চয় ও সংরক্ষণের জন্য বিকল্প হিসেবে যেসব শক্তির উৎসকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাদের বিকল্প জ্বালানি বা বিকল্প শক্তির উৎস বলে।
কয়েকটি বিকল্প শক্তির উৎস হল— সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, ভূতাপ শক্তি প্রভৃতি।
12. পুনর্নবীকরণযোগ্য বা অচিরাচরিত শক্তির উৎস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – যেসব শক্তির উৎসগুলির ব্যবহার সাম্প্রতিককালে শুরু হয়েছে এবং যেগুলিকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে চললেও এদের ভান্ডার ফুরিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাদেরকেই পুনর্নবীকরণযোগ্য (renewable) বা অচিরাচরিত শক্তির উৎস বলে।
সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি, ভূতাপ শক্তি প্রভৃতি।
13. সৌরশক্তিকে কী কী কাজে ব্যবহার করা যায়?
উত্তর – সূর্য থেকে আগত আলো ও উত্তাপ থেকে আহরণ করা শক্তিই হল সৌরশক্তি। এটি হল দূষণমুক্ত, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস। সৌরশক্তিকে নিম্নলিখিতভাবে ব্যবহার করা যায় – (1) সোলার কুকার-এর সাহায্যে রান্না করার কাজে, (2) সৌরকোশ দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতিকে আলোকিত করতে, (3) সোলার হিটারে জল গরম করতে, (4) সোলার হাউসে ঘরকে গরম করতে।
14. সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – সুবিধা: (1) সৌরশক্তি অফুরন্ত ও পুনর্নবীকরণযোগ্য, অর্থাৎ বারবার ব্যবহারের ফলেও এই শক্তির ভাণ্ডার কখনও ফুরিয়ে যায় না। (2) সৌরশক্তির ব্যবহারের ফলে পরিবেশ কোনোভাবে দূষিত হয় না।
অসুবিধা: (1) সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তির অভাবে অনুন্নত দেশগুলিতে এই শক্তি খুবই কম পরিমাণে উৎপাদিত হয়। (2) সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য সৌরকোশ বসানোর প্রাথমিক খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। এই কারণে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই শক্তির উৎপাদন খুবই কম হয়।
15. সৌরকোশ কী এবং এই কোশ কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর – যে ব্যবস্থার মাধ্যমে সৌরশক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, তাকে সৌরকোশ বা ফোটো-ভোল্টায়িক কোশ বলে। সৌরকোশ সিলিকন (অর্ধপরিবাহী পদার্থ) দিয়ে তৈরি হয়। সূর্যালোকের ফোটন কণা এই অর্ধপরিবাহীতে আপতিত হলে ওর মধ্যেকার ইলেকট্রনগুলি উত্তেজিত ও বিচ্যুত হয়ে তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে। এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই সৌরকোশ গঠন করা হয়। আবার অনেকগুলি সৌরকোশকে পরপর সাজিয়ে সোলার প্যানেল গঠন করা যায়।
16. সৌরকোশ বা সৌরবিদ্যুৎ কোশের ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর – সৌরকোশ বা সৌরবিদ্যুৎ কোশে সৌরশক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় এবং উৎপন্ন বিদ্যুৎ-কে ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখা যায় বা সরাসরি ব্যবহার করা যায়। এই বিদ্যুৎ-কে কাজে লাগিয়ে – (1) পাম্পের সাহায্যে জল তোলা যায়, (2) সোলার প্যানেল বসিয়ে মোটরগাড়ি চালানো যায়, (3) কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশযান, স্পেস স্টেশনগুলিতে শক্তির জোগান দেওয়া হয়, (4) রেডিয়ো স্টেশন ও TV রিলে স্টেশনে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করা যায়, (5) ট্রাফিক সিগনাল, সোলার ক্যালকুলেটর চালানো হয়।
17. সোলার কুকার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – (1) সোলার কুকার হল রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি সস্তা, শক্তি-সংরক্ষক দূষণমুক্ত সরঞ্জাম। (2) এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ধাতুর তৈরি বাক্স যার চারদিকে তাপ-নিরোধক আবরণ থাকে। (3) কালো রং তাপের খুব ভালো শোষক হওয়ায় এর ভেতরের তলগুলিতে কালো রং করা থাকে। (4) উচ্চ উয়তা সৃষ্টির জন্য একটি প্রতিফলকের সাহায্যে সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে বাক্সের মধ্যে ফেলা হয়। (5) কুকারের ভেতরের উয়তা বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে এর উপরিভাগ একটি কাচের প্লেট দ্বারা ঢাকা থাকে।
18. সোলার ওয়াটার হিটার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর – (1) সোলার ওয়াটার হিটারের সাহায্যে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জল গরম করা হয়। (2) এটির ভিতরে একটি কালো রং করা ধাতব বাক্স থাকে এবং এটির মধ্যে একটি কালো রং করা তামার কুণ্ডলী প্রবেশ করানো থাকে। (3) উচ্চ উয়তা সৃষ্টির জন্য সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলকের সাহায্যে প্রতিফলিত করে বাক্সের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়, এর ফলে অভ্যন্তরস্থ তামার কুণ্ডলীও উত্তপ্ত হয়। (4) উত্তপ্ত তামার কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলও এইভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
19. সৌরশক্তিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ভাবা হচ্ছে কেন?
উত্তর – সূর্য এক বিপুল শক্তির আধার। প্রতি ঘণ্টায় সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ সূর্যরশ্মি পৌঁছায়, তাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে যে তাপশক্তি পাওয়া যাবে তা 21 × 1012 টন কয়লার দহনে উৎপন্ন তাপশক্তির সমান। এই শক্তির ভাণ্ডার অফুরন্ত অর্থাৎ বারবার ব্যবহার করলেও কোনোদিন নিঃশেষ হবে না। সূর্যের অসীম শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করার কারিগরি জ্ঞান মানুষ যেদিন আয়ত্ত করতে পারবে সেদিন পৃথিবীতে জ্বালানির আর কোনো সমস্যাই থাকবে না। তাই সৌরশক্তিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ভাবা যায়।
20. বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়?
উত্তর – প্রকৃতপক্ষে প্রবাহিত বায়ুর গতিশক্তিই হল বায়ুশক্তি। বায়ুকলের সাহায্যে এই বায়ুশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। বায়ুকলের বায়ুচক্রের কেন্দ্রীয় অক্ষদণ্ডের সঙ্গে জেনারেটরের টারবাইনকে যুক্ত করে টারবাইনে প্রবল ঘূর্ণনের সৃষ্টি করা হয়, যা বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
21. বায়ুশক্তির কয়েকটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর – বায়ুশক্তির কয়েকটি ব্যবহার হল— (1) বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বায়ুকলের টারবাইনের ঘূর্ণন ঘটিয়ে তড়িৎশক্তি উৎপাদন করা হয়। (2) বায়ুকলের সাহায্যে গম পেষাই, জল তোলা প্রভৃতি কাজও করা যায়।
22. (i) বায়ুশক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
(ii) বায়ুশক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি লেখো। 
উত্তর – (i) সুবিধা: (1) বায়ুশক্তি পুনর্নবীকরণযোগ্য, অর্থাৎ ক্রমাগত ব্যবহারের ফলেও এর ভাণ্ডার ফুরোবে না। (2) বায়ুশক্তি উৎপাদনের প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি হলেও নিয়মিত ব্যবহারের খরচ অত্যন্ত কম। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় ছাড়া বায়ুকল চালানোর জন্য অন্য কোনো ব্যয় হয় না। (3) বায়ুশক্তি বিকল্পরূপে এই শক্তি উৎপাদনের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হয় না। (4) বায়ুশক্তি উৎপাদনের মুখ্য উপাদান বায়ুকে বিনা খরচেই আহরণ করা যায়।
(ii) অসুবিধা: (1) বায়ুশক্তি উৎপাদনের প্রাথমিক ব্যয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় অপেক্ষা অধিক। (2) তাপবিদ্যুৎ বা জলবিদ্যুতের তুলনায় বায়ুশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। (3) পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে সারাবছর ধরে প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হয়, শুধুমাত্র সেইসব অঞ্চলেই বায়ুশক্তি উৎপাদন করা সম্ভব, অন্য কোথাও নয়।
23. বায়ুশক্তিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর – বাতাসের প্রবহমান শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সারাবছর এত জোরে বাতাস প্রবাহিত হয় যে, বায়ুর শক্তিকে সহজেই মানুষ কাজে লাগাতে পারে। এ ছাড়া বায়ুশক্তি হল একটি অফুরন্ত সম্পদ। কয়লা বা খনিজ তেলের মতো বায়ুশক্তির নিঃশেষিত হওয়ার আশঙ্কা নেই এবং বায়ুশক্তি হল দূষণমুক্ত শক্তি। তাই বায়ুশক্তিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ব্যবহার করা যায়।
24. জোয়ার-ভাটার শক্তি থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় ?
উত্তর – চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণের প্রভাবে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের নদী ও সমুদ্রে প্রতিদিন দুবার করে জোয়ার-ভাটা হবেই। জোয়ার-ভাটার ফলে সমুদ্রে বা নদীতে জলস্রোতের সৃষ্টি হয়। এই জলস্রোতের গতিশক্তির সাহায্যে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
25. জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি কী কী ?
উত্তর – জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল – (1) জলসম্পদ অফুরন্ত ও অক্ষয়িষ্ব, তাই একে বারবার ব্যবহার করলেও নিঃশেষিত হয় না। (2) এই শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশের দূষণ তেমন ঘটে না। (3) এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন একবার শুরু হয়ে গেলে পরবর্তীতে খরচ অনেক কম হয়।
26. জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর – জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের মূল অসুবিধাগুলি হল— (1) জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদনের জন্য বিশালায়তন কাঠামো ও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। এজন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের তুলনায় জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করার ব্যয় অনেক বেশি। (2) কোনো স্থানে দিনে দুবার জোয়ার ও দুবার ভাটা হয়। তাই উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলিতে তাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র 40% পর্যন্ত জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদন করা যায়।
27. জোয়ার-ভাটার শক্তি চিরাচরিত শক্তির বিকল্প কি না ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – জোয়ার-ভাটার শক্তির সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। পৃথিবীতে চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ যতদিন বজায় থাকবে, ততদিন প্রাকৃতিক নিয়মে জোয়ার-ভাটা হবে। কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জ্বালানি সম্পদের মতো জোয়ার-ভাটার শক্তি নিঃশেষিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বর্তমানে ভারতসহ কয়েকটি দেশে চিরাচরিত শক্তির
28. ভূতাপ শক্তি বলতে কী বোঝ ? ভূতাপ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় ?
উত্তর – লাভা উদ্‌গিরণের সময় ভূগর্ভ থেকে নির্গত ম্যাগমার বেশিরভাগ অংশই ভূপৃষ্ঠের 5-20 কিমি গভীরে বিভিন্ন শিলাস্তরের ফাঁকে আটকে যায়। এই অবস্থায় তরল ম্যাগমা কঠিনে পরিণত হতে শুরু করে এবং প্রচুর পরিমাণে তাপ ছেড়ে দেয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা এই তাপশক্তিই হল ভূতাপ শক্তি। » ভূতাপ শক্তির কারণে ভূগর্ভস্থ শিলাস্তর প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর এই অতিতপ্ত শিলাস্তরের কাছাকাছি আসলে প্রচণ্ড তাপে তা বাষ্পে পরিণত হয়। এই উত্তপ্ত বাষ্প ভূগর্ভে যেখানে আটকা পড়ে, সেখানে নল ঢুকিয়ে ওই বাষ্পকে তুলে আনা হয় এবং এর সাহয্যে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
যদি কোনোভাবে তা সম্ভব না হয়, তাহলে একটি নল দিয়ে ঠান্ডা জল মাটির গভীরে ঢুকিয়ে অন্য একটি নল দিয়ে গরম করে বাইরে আনা হয়। এই গরম জল থেকে পাওয়া বাষ্প দিয়ে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জল গরম করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয় ভূগর্ভস্থ তাপ।
29. (i) ভূতাপ শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
(ii) ভূতাপ শক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – (i) সুবিধা: (1) ভূতাপ শক্তির জোগান অফুরন্ত, অর্থাৎ বারংবার ব্যবহার করা সত্ত্বেও এর ভাণ্ডার কোনোদিন ফুরোবে না। (2) এই শক্তি ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষিত হয় না।
(ii) অসুবিধা: (1) ভূতাপ শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। (2) উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে প্রচলিত শক্তিগুলির তুলনায় এই শক্তি উৎপাদনের ইউনিট প্রতি খরচ বেশি। (3) এই শক্তি উৎপাদনের সময় ভূগর্ভস্থ খনিজ পদার্থগুলির দ্বারা ভৌম জলস্তরের দূষণ ঘটতে পারে।
30. ভূতাপ শক্তিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ভাবা যায় কি ?
উত্তর – ভূগর্ভস্থ তাপকে কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। এই শক্তি একদিকে যেমন দূষণমুক্ত তেমনি অন্যদিকে কয়লা, খনিজ তেলের মতো এই শক্তি নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা নেই। বৈজ্ঞানিক হিসেব অনুযায়ী, ভূ-অভ্যন্তরের 10 কিমি গভীরতা পর্যন্ত প্রাপ্ত ভূতাপ শক্তির মোট পরিমাণ বছরে 12 হাজার কিলোওয়াট-ঘণ্টা। কয়েকটি দেশে, যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, জাপান, ইটালি, আইসল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে ভূতাপ শক্তি ব্যাপকভাবে আহরণ করা হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে এর বহুল ব্যবহার সম্ভব বলে মনে করা হয়।
31. বায়োমাস শক্তি কী? বায়োমাস ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – কৃষিজাত বর্জ্য, পচা গাছপালা, আখের ছিবড়ে, ধানের তুষ, রান্নাঘরের অব্যবহৃত জৈব অবশেষ, প্রাণীর মলমূত্র, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ প্রভৃতি বিভিন্ন কার্বনঘটিত পদার্থ তথা বায়োমাসের মধ্যে যে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চিত থাকে, তাকে বায়োমাস শক্তি বলে।
বায়োমাস ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল— (1) বায়োমাস একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস। (2) বায়োমাস থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর যে জৈব আবর্জনা পড়ে থাকে তা নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় উত্তম সাররূপে ব্যবহৃত হয়। (3) বায়োমাস থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশ অনেকক্ষেত্রে আবর্জনামুক্ত হয়।
32. (i) মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে উদাহরণসহ লেখো।
(ii) বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা লেখো।
উত্তর – (i) যেসব ব্যাকটেরিয়া বায়ুর অনুপস্থিতিতে বায়োমাসের বিয়োজন ঘটিয়ে প্রকৃতিতে মিথেন গ্যাস মুক্ত করে তাদের মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন—মিথানোকক্কাস, মিথানোব্যাকটেরিয়াম ইত্যাদি।
(ii) মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার মূল কাজই হল বায়ুতে মিথেন গ্যাস মুক্ত করা। ধানখেত, জলাভূমি ও বর্ষা-অরণ্যের (rain forest) মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া নানাবিধ উদ্ভিজ্জ বর্জ্য পদার্থের বিয়োজন ঘটিয়ে প্রকৃতিতে মিথেন গ্যাস মুক্ত করে। এ ছাড়াও উইপোকাদের অস্ত্র ও গবাদি পশুর পাকস্থলীর রুমেন প্রকোষ্ঠে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে যারা মিথেন তৈরি করে বায়ুতে মুক্ত করে। এভাবে মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
33. বায়োগ্যাস (biogas) বা জৈব গ্যাস কাকে বলে? বায়োগ্যাসের উপাদানগুলি লেখো।
উত্তর – বায়ুর অনুপস্থিতিতে মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা জটিল জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বারোমাসের বিয়োজনের ফলে যে গ্যাসীয় মিশ্রণ উৎপন্ন হয়, তাকে বায়োগ্যাস বা জৈব গ্যাস বলে।
জৈব গ্যাসের সর্বাপেক্ষা প্রধান উপাদান হল মিথেন (CH4)। এ ছাড়া জৈব গ্যাসের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) এবং সামান্য পরিমাণে H2, N2, O2, H2S ও জলীয় বাষ্প থাকে।
34. বায়োগ্যাসের দুটি ব্যবহার লেখো।
উত্তর – (1) বায়োগ্যাস থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ আলো জ্বালাতে, জল গরম করতে, ছোটো পাম্প চালাতে এবং কুটির শিল্পের বিভিন্ন ছোটো যন্ত্র চালাতে ব্যবহার করা হয়। (2) বায়োগ্যাসকে জ্বালানিরূপে রান্নার কাজে ও গৃহস্থালির অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
35. বায়োগ্যাস ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – বায়োগ্যাস ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল— (1) বায়োগ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমাদের পারিপার্শ্বিক বর্জ্য পদার্থ থেকেই পাওয়া যায়। (2) বায়োগ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত উপজাত পদার্থগুলি উৎকৃষ্ট সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (3) উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ ছাড়াই বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়। তাই এর উৎপাদন প্রক্রিয়া খরচ সাপেক্ষ নয়।
36. বায়োমাস থেকে উৎপন্ন বায়োগ্যাস ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – বায়োমাস থেকে উৎপন্ন বায়োগ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অসুবিধাগুলি দেখা যায় – (1) বায়োগ্যাসের দহনের ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস (যেমন— CO2, CO) বায়ুতে মেশে যা বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে। (2) বায়োগ্যাস উৎপাদন কেন্দ্রের আশেপাশে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। (3) বায়োগ্যাসের সাহায্যে বিপুল পরিমাণে শক্তির জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।
37. গৃহস্থালির বর্জ্য পদার্থ থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় ?
উত্তর – বর্জ্য পদার্থ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষিজ আবর্জনা, গৃহস্থালির বর্জ্য ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উক্ত বর্জ্য পদার্থগুলিকে জ্বলন্ত চুল্লিতে দহন করা হয় এবং এদের দহনে উৎপন্ন তাপশক্তির সাহায্যে বয়লারে রাখা জলকে উত্তপ্ত করে স্টিমে পরিণত করা হয়। এই স্টিমের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয়।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

1. পেট্রোল, কেরোসিন, ডিজেল ও LPG-এর মধ্যে কোন্‌টির তাপনমূল্য (calorific value) সবচেয়ে বেশি?
(a) পেট্রোল
(b) কেরোসিন
(c) ডিজেল
(d) LPG
উত্তর – (d) LPG
2. প্রদত্ত জ্বালানিগুলির তাপনমূল্য-সংক্রান্ত সঠিক ক্রমটি হল—
(a) কয়লা < ডিজেল < হাইড্রোজেন <LPG
(b) কয়লা < হাইড্রোজেন < ডিজেল < LPG
(c) কয়লা < ডিজেল < LPG < হাইড্রোজেন
(d)  কয়লা < LPG < ডিজেল < হাইড্রোজেন
উত্তর – (c) কয়লা < ডিজেল < LPG < হাইড্রোজেন
3. জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, কারণ—
(a) এগুলি খুব দামি
(b) এগুলি সহজে পাওয়া যায় না
(c) এগুলি অনবীকরণযোগ্য
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) এগুলি অনবীকরণযোগ্য
4. প্রদত্ত কোন্‌টি জীবাশ্ম জ্বালানি নয়?
(a) কয়লা
(b) ডিজেল
(c) সৌরশক্তি
(d) পেট্রোল
উত্তর – (c) সৌরশক্তি
5. ‘স্থিতিশীল উন্নয়ন’ বলতে বোঝায়—
(a) বর্তমানের উন্নতি
(b) ভবিষ্যতের উন্নতি
(c) ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রেখে বর্তমানের উন্নতি
(d) বর্তমানের উন্নতি রুদ্ধ করে ভবিষ্যতের উন্নতি
উত্তর – (c) ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রেখে বর্তমানের উন্নতি
6. কোন্ জাতীয় কয়লার তাপনমূল্য সবথেকে বেশি?
(a) পিট
(b) লিগনাইট
(c) অ্যানথ্রাসাইট
(d) বিটুমিনাস
উত্তর – (c) অ্যানথ্রাসাইট
7. কোন্ শক্তির ব্যবহারে অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে?
(a) জীবাশ্ম জ্বালানি
(b) সৌরশক্তি
(c) জোয়ার-ভাটা থেকে প্রাপ্ত শক্তি
(d) বায়ুশক্তি
উত্তর – (a) জীবাশ্ম জ্বালানি
8. বায়োফুয়েলের মূল উপাদান হল –
(a) কার্বন ডাইঅক্সাইড
(b) ইথানল
(c) মিথানল
(d) ইথার
উত্তর – (b) ইথানল
9. বর্তমান শক্তি চাহিদার বেশিরভাগটাই আসে—
(a) সৌরশক্তি থেকে
(b) বায়ুশক্তি থেকে
(c) জোয়ার-ভাটার শক্তি থেকে
(d) জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে
উত্তর – (d) জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে
10. সৌরশক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় —
(a) ফোটো-ভোল্টায়িক কোশে
(b) সোলার কুকারে
(c) প্রেসার কুকারে
(d) ইলেকট্রিক মোটরে
উত্তর – (a) ফোটো-ভোল্টায়িক কোশে
11. জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম দূষণ ঘটায়—
(a) ডিজেল
(b) কয়লা
(c) কেরোসিন
(d) প্রাকৃতিক গ্যাস
উত্তর – (d) প্রাকৃতিক গ্যাস
12. প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান হল—
(a) বিউটেন
(b) মিথেন
(c) ইথেন
(d) অক্সিজেন
উত্তর – (b) মিথেন
13. যে শক্তি কয়লা, খনিজ তেলে পরিবর্তিতরূপে আবদ্ধ থাকে সেটি হল —
(a) বায়ুশক্তি
(b) সৌরশক্তি
(c) তাপশক্তি
(d) পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
উত্তর – (b) সৌরশক্তি
14. মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার উদাহরণ হল –
(a) মিথানোকক্কাস
(b) মিথানোব্যাকটেরিয়াম
(c) A ও B উভয়ই
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) A ও B উভয়ই
15. জোয়ার-ভাটার শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় জলস্রোতের —
(a) গতিশক্তিকে
(b) স্থিতিশক্তিকে
(c) অভ্যন্তরীণ তাপশক্তিকে
(d) A ও B উভয়ই
উত্তর – (a) গতিশক্তিকে
16. সৌরকোশ তৈরি হয় —
(a) পরিবাহী দিয়ে
(b) অন্তরক দিয়ে
(c) অর্ধপরিবাহী দিয়ে
(d) অতিপরিবাহী দিয়ে
উত্তর – (c) অর্ধপরিবাহী দিয়ে
17. নীচের কোন্‌টিতে গ্রিনহাউস প্রভাবের নীতি প্রয়োগ করা হয়?
(a) সোলার কুকার
(b) সৌরকোশ
(c) বায়ুকল
(d) বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট
উত্তর – (a) সোলার কুকার
18. নীচের কোন্‌গুলি পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি? (1) কয়লা (2) কেরোসিন (3) প্রাকৃতিক গ্যাস (4) বায়োগ্যাস
(a) 1 এবং 4
(b) 3 এবং 4
(c) 1 এবং 2
(d) 1 এবং 3
উত্তর – (b) 3 এবং 4
19. বায়ুকলের সাহায্যে বায়ুশক্তিকে রূপান্তরিত করা হয় —
(a) রাসায়নিক শক্তিতে
(b) তাপশক্তিতে
(c) যান্ত্রিক শক্তিতে
(d) আলোকশক্তিতে
উত্তর – (c) যান্ত্রিক শক্তিতে
20. সৌরশক্তির উৎস হচ্ছে—
(a) নিউক্লিয় বিভাজন
(b) কয়লা
(c) নিউক্লিয় সংযোজন
(d) পেট্রোলিয়াম
উত্তর – (c) নিউক্লিয় সংযোজন
21. জ্বালানির তাপনমূল্যের SI একক হল —
(a) J/kg
(b) cal
(c) kcal/g
(d) J
উত্তর – (a) J/kg
22. সোলার কুকারের ঢাকনা তৈরি হয় —
(a) প্লাস্টিক দিয়ে
(b) অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে
(c) কাচ দিয়ে
(d) কাগজ দিয়ে
উত্তর – (c) কাচ দিয়ে
23. কোন্ শক্তির ব্যবহারে অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা হ্রাস করা যায়?
(a) সৌরশক্তি
(b) বায়ুশক্তি
(c) জোয়ার-ভাটার শক্তি
(d) সবকটিই
উত্তর – (d) সবকটিই
24. কোন্‌টি নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস নয়?
(a) সৌরশক্তি
(b) বায়ুশক্তি
(c) নিউক্লিয় শক্তি
(d) জোয়ার-ভাটার শক্তি
উত্তর – (c) নিউক্লিয় শক্তি
25. নীচের কোন্‌টি উত্তম জ্বালানির বৈশিষ্ট্য?
(a) উচ্চ তাপনমূল্য ও উচ্চ জ্বলন বিন্দু
(b) নিম্ন তাপনমূল্য ও উচ্চ জ্বলন বিন্দু |
(c) উচ্চ তাপনমূল্য ও মাঝারি জ্বলন বিন্দু
(d) নিম্ন তাপনমূল্য ও মাঝারি জ্বলন বিন্দু
উত্তর – (c) উচ্চ তাপনমূল্য ও মাঝারি জ্বলন বিন্দু
26. মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার বিপাক ক্রিয়ার ফলে যে গ্যাস উৎপন্ন হয়, তা হল —
(a) CO2
(b) CH4
(c) O2
(d) C2H6
উত্তর – (b) CH4

একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. জ্বালানির তাপনমূল্যের একক লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, তাপনমূল্যের প্রচলিত এককটি কী?
উত্তর – জ্বালানির তাপনমূল্যের SI একক হল জুল/কেজি (J/kg) এবং CGS একক হল ক্যালোরি/গ্রাম (cal/g)।
2. তাপনমূল্য বা ক্যালোরি মূল্য ব্যবহারের কারণ কী?
উত্তর – ভিন্ন ভিন্ন জ্বালানির দহনের ফলে কী পরিমাণে তাপ উৎপন্ন হয় তা তুলনা করার জন্য তাপনমূল্য বা ক্যালোরি মূল্য রাশিটি ব্যবহার করা হয়।
3. LPG -এর তাপনমূল্য 50kJ.g-1 -এর অর্থ কী?
উত্তর – LPG-এর তাপনমূল্য 50kJ. g-1 বলতে বোঝায় 1g LPG -এর দহনে 50kJ তাপ উৎপন্ন হয়।
4. কেরোসিন, কাঠ, কয়লা, হাইড্রোজেন, LPG, ডিজেল— এদের তাপনমূল্যের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী সাজাও।
উত্তর – কাঠ < কয়লা < ডিজেল < কেরোসিন < LPG < হাইড্রোজেন।
5. একটি জ্বালানির জ্বলন বিন্দু 110°C বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – কোনো জ্বালানির জ্বলন বিন্দু 110°C বলতে বোঝায় ওই জ্বালানিটি 110°C উন্নতায় জ্বলতে শুরু করে।
6. জীবাশ্ম জ্বালানিকে অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস বলে কেন?
উত্তর – জীবাশ্ম জ্বালানিকে অনবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস বলে কারণ এদের সৃষ্টি হতে লক্ষাধিক বছর সময় লেগেছে এবং এদের ভাণ্ডার একবার ফুরিয়ে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
7. একটি জীবাশ্ম জ্বালানির নাম লেখো।
উত্তর – কয়লা
৪. রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারে কোন্ গ্যাস ভরা থাকে?
উত্তর – তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (LPG)
9. LPG-এর মূল উপাদান কী?
উত্তর – LPG -এর মূল উপাদান হল বিউটেন।
10. CNG-এর মূল উপাদান কী?
উত্তর – CNG-এর মূল উপাদান হল মিথেন।
11. কাঠকয়লা, পেট্রোল ও ইথানলের মধ্যে কোনটি জীবাশ্ম জ্বালানি?
উত্তর – পেট্রোল হল জীবাশ্ম জ্বালানি।
12. জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে কোন গ্যাস উৎপন্ন হয়?
উত্তর – কার্বন ডাইঅক্সাইড
13. ব্রান্টল্যান্ড কমিশন বা বিশ্ব পরিবেশ ও উন্নয়ন কমিশনের মতে স্থিতিশীল উন্নয়নের সংজ্ঞা কী?
উত্তর – ব্রান্টল্যান্ড কমিশন বা বিশ্ব পরিবেশ ও উন্নয়ন কমিশনের মতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন অক্ষুণ্ণ রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা বা কার্যক্রমকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে।
14. শক্তির উৎসের দুটি প্রধান শ্রেণি উল্লেখ করো।
উত্তর – চিরাচরিত শক্তির উৎস এবং অচিরাচরিত শক্তির উৎস।
15. একটি চিরাচরিত, পুনর্নবীকরণযোগ্য দূষণমুক্ত শক্তির উৎসের নাম করো।
উত্তর – বায়ুশক্তি
16. একটি চিরাচরিত অ-পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসের নাম লেখো।
উত্তর – কয়লা (জীবাশ্ম জ্বালানি)
17. দুটি অচিরাচরিত এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসের নাম লেখো।
উত্তর – সৌরশক্তি ও জোয়ার-ভাটার শক্তি
18. একটি অচিরাচরিত অ-পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসের নাম লেখো।
উত্তর – পারমাণবিক শক্তি
19. DNES-এর পুরো কথাটি কী?
উত্তর – Department of Non-Conventional Energy Sources (অর্থাৎ, অপ্রচলিত শক্তির উৎস দপ্তর)।
20. একটি পরিবেশবান্ধব অপ্রচলিত শক্তির উৎসের নাম লেখো।
উত্তর – একটি পরিবেশবান্ধব অপ্রচলিত শক্তির উৎস হল ভূতাপ শক্তি।
21. একটি বিকল্প শক্তি উৎসের নাম লেখো। 
উত্তর – সৌরশক্তি
22. সৌরবিদ্যুৎ কোশে কোন্ অর্ধপরিবাহী ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – সৌরবিদ্যুৎ কোশে অর্ধপরিবাহী হিসেবে সিলিকন ব্যবহৃত হয়।
23. সৌর-উত্তাপক যন্ত্রের ভেতরের তলে কালো রং করা থাকে কেন?
উত্তর – কালো রঙের তল সূর্যালোক থেকে বেশি তাপ শোষণ করে।
24. সোলার সেল ব্যবহৃত হয় এমন একটি যন্ত্রের নাম লেখো।
উত্তর – সোলার ক্যালকুলেটর
25. ভবিষ্যতে পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তির উৎস কী? 
উত্তর – সূর্য
26. সোলার ওয়াটার হিটার কোথায় ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – সাধারণত বড়ো বড়ো বাড়ি, হাসপাতাল প্রভৃতিতে গরম জল সরবরাহের জন্য সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহার করা হয়।
27. বায়ুশক্তি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – প্রবাহিত বায়ুর গতিশক্তিই বায়ুশক্তি নামে পরিচিত।
28. উইন্ডমিলে বায়ুশক্তি থেকে কী উৎপন্ন হয়?
উত্তর – তড়িৎশক্তি
29. বায়ুকল আছে পশ্চিমবঙ্গের এমন একটি জায়গার নাম লেখো।
উত্তর – ফ্রেজারগঞ্জ
30. জোয়ার-ভাটার শক্তি কাকে বলে?
উত্তর – চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত প্রভাবে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের নদী ও সমুদ্রে জোয়ার-ভাটার সময় যে জলস্রোত সৃষ্টি হয় তার গতিশক্তিই হল জোয়ার-ভাটার শক্তি।
31. ভূতাপ শক্তির প্রধান উৎস কী?
উত্তর – ভূতাপ শক্তির প্রধান উৎস হল ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত ম্যাগমা।
32. এমন একটি শক্তি উৎসের নাম করো, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই সূর্য থেকে আসে না।
উত্তর – ভূতাপ শক্তি
33. বায়োমাস কী?
উত্তর – কৃষিজাত বর্জ্য, গাছপালার পচা অংশ, আখের ছিবড়ে, ভুসি, শাকসবজি ও ফলমূলের খোসা, রান্নাঘরের অব্যবহৃত জৈব অবশেষ, কচুরিপানা, জীবজন্তুর মলমূত্র, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ ইত্যাদি কার্বনযুক্ত পদার্থগুলিকে একসাথে বায়োমাস বলে।
34. কাঠের নিয়ন্ত্রিত দহনে অবশিষ্ট হিসেবে কী পাওয়া যায়?
উত্তর – কাঠকয়লা
35. বায়োগ্যাস উৎপাদনে কোন্ কাঁচামালটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়?
উত্তর – গোবর
36. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে কোন্ পদ্ধতিতে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করা হয়?
উত্তর – বায়ুর অনুপস্থিতিতে মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বায়োমাসের বিয়োজন ঘটিয়ে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করা হয়।
37. মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া কোন্ বস্তুকে বিয়োজিত করে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে?
উত্তর – মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বায়োমাসকে বিয়োজিত করে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
38. বায়োগ্যাসের মূল উপাদান কী?
অনুরূপ প্রশ্ন, বায়োগ্যাসের প্রধান উপাদান কোন্ যৌগ?
উত্তর – বায়োগ্যাসের মূল উপাদান হল মিথেন।
39. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের বিভিন্ন অংশগুলির নাম লেখো।
উত্তর – বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের বিভিন্ন অংশগুলির নাম হল – মিশ্রণ আধার, ডাইজেস্টার, গ্যাস আধার ও নিষ্ক্রিয় বর্জ্য আধার।
40. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে যেসব ব্যাকটেরিয়া বায়োমাসকে মিথেন গ্যাসে বিয়োজিত করে তাদেরকে কী বলা হয়? 
উত্তর – মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. জ্বালানির তাপনমূল্য যত বেশি হয় প্রয়োজনীয় জ্বালানির পরিমাণ তত …….. হয়।
উত্তর – কম
2. প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপনমূল্য ……..। 
উত্তর – 33000-50000 kJ/kg
3. রান্নার গ্যাসের তাপনমূল্য পেট্রোল অপেক্ষা ……..। 
উত্তর – বেশি
4. কাঠ ও মিথেনের মধ্যে তাপনমূল্য বেশি ………. -এর।
উত্তর – মিথেন
5. চারকোলের তাপনমূল্য ……..। 
উত্তর – 33000 kJ/kg
6. বর্তমানে পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি জ্বালানির বিকল্প হিসেবে গাড়িতে ……… ব্যবহৃত হচ্ছে।
উত্তর – CNG
7. স্থিতিশীল উন্নয়নের সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ………. কমিশনের রিপোর্টে।
উত্তর – ব্রান্টল্যান্ড
৪. যে পদার্থ সৌরকোশ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় সেটি হল ……..। 
উত্তর – সিলিকন
9. কৃত্রিম উপগ্রহে ব্যবহৃত শক্তির প্রধান উৎস হল ……….. থেকে উৎপন্ন শক্তি।
উত্তর – সৌরকোশ
10. সৌরকোশে ………. শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যায়।
উত্তর – সৌর
11. সৌরকোশগুলিকে ……….. সমবায়ে যুক্ত করে সোলার প্যানেল তৈরি করা হয়।
উত্তর – শ্রেণি
12. উইন্ডমিলে বায়ুশক্তি থেকে ………. উৎপন্ন হয়।
উত্তর – যান্ত্রিক শক্তি
13. একটি বৃহত্তর অঞ্চলে অনেকগুলি ………. বসিয়ে উইন্ড এনার্জি ফার্ম তৈরি করা হয়।
উত্তর – বায়ুকল
14. পশ্চিমবঙ্গের ………. ভূতাপীয় শক্তিতে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল।
উত্তর – বক্রেশ্বর
15. সমুদ্রের তাপীয় শক্তিকে কাজে লাগানোর পদ্ধতিকে সংক্ষেপে বলা হয় ……..। 
উত্তর – OTEC
16. ………… শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উৎস সূর্য নয়।
উত্তর – ভূতাপ
17. বায়োমাস ………. -ঘটিত পদার্থ।
উত্তর – কার্বন

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *