WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 2 উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়—হরমোন)
WBBSE 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 2 উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়—হরমোন)
West Bengal Board 10th Class Science Solutions Biology Chapter 1 জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (TOPIC 2 উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান)
West Bengal Board 10th Biology Solutions
TOPIC 2 উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়—হরমোন
বিষয়সংক্ষেপ
- উদ্ভিদদেহে নানা কাজের নিয়ন্ত্রণ ও তাদের মধ্যে সমন্বয় ঘটায় উদ্ভিদ হরমোন। অর্থাৎ, উদ্ভিদে সাড়াপ্রদানে সাহায্য করে হরমোন।
- উদ্ভিদের মূল ও কাণ্ডের দৈর্ঘ্য (অগ্রবৃদ্ধি) ও প্রস্থ (পার্শ্বীয় বৃদ্ধি) বৃদ্ধি, ফুল ফোটা, মুকুল তৈরি হওয়া, বীজের অঙ্কুরোদ্গম প্রভৃতিতে হরমোন সাহায্য করে। অর্থাৎ, উদ্ভিদের নানা ধরনের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণে হরমোন সাহায্য করে।
- প্রধান উদ্ভিদ হরমোন তিনটি হল–অক্সিন, জিব্বেরেলিন এবং সাইটোকাইনিন।
- অক্সিন ইনডোল গ্রুপযুক্ত, নাইট্রোজেনযুক্ত, জৈব অ্যাসিড। এটি উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি (অগ্রস্থ প্রকটতা), কোশ বিভাজন, মূল সৃষ্টি ও তার বৃদ্ধি এবং ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।
- জিব্বেরেলিন হরমোনটি টারপিনয়েড গোত্রভুক্ত এবং নাইট্রোজেন-বিহীন জৈব অ্যাসিড বিশেষ। উদ্ভিদের মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করা, পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, ফলের বৃদ্ধি প্রভৃতি কাজে এটি সাহায্য করে।
- সাইটোকাইনিন হল পিউরিন-জাতীয় নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারীয় জৈব উপাদান। এটি কোশ বিভাজন ঘটানো, পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি (অক্সিনের বিপরীত কাজ) ঘটানো প্রভৃতি কাজ করে থাকে।
- সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. উদ্ভিদদেহে হরমোনের সাধারণ কাজগুলি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – উদ্ভিদদেহে হরমোনের কাজ: হরমোন উদ্ভিদদেহে শারীরবৃত্তীয় কার্য নিয়ন্ত্রকরূপে বিশেষত বৃদ্ধি সহায়করূপে যেসব ভূমিকা পালন করে তা নীচে আলোচিত হল।
- অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি: উদ্ভিদের প্রাথমিক বৃদ্ধি বলতে প্রধানত কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগের বৃদ্ধিকেই বোঝানো হয়। অগ্রসস্থ ভাজক কলার কোশের বিভাজনের দ্বারাই এই বৃদ্ধি ঘটে থাকে। একে অগ্রস্থ বৃদ্ধিও বলা হয়। এ ছাড়া, পার্শ্বীয় ভাজক কলার বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদ প্রস্থে বৃদ্ধি পায়, যা পার্শ্বীয় বৃদ্ধি নামে পরিচিত। এইভাবে ভাজক কলার বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধি হরমোনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—অক্সিনের প্রভাবে উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ঘটে।
- ফুলের প্রস্ফুটন: উদ্ভিদের জননাঙ্গ হল ফুল। পুষ্পমুকুলের পরিস্ফুটনের মাধ্যমে ফুল ফোটে। উদ্ভিদদেহে পুষ্পমুকুলের সৃষ্টি ও তার থেকে ফুল ফোটার ক্ষেত্রে উদ্ভিদ হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন—জিব্বেরেলিন হরমোনটি ক্যামেলিয়া, জেরানিয়াম প্রভৃতি ফুল ফুটতে সাহায্য করে। চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া প্রভৃতি ফুল ফুটতে অ্যাবসিসিক অ্যাসিড সাহায্য করে।
- মুকুলোদ্গম: কিছু উদ্ভিদ হরমোনের প্রভাবে কাণ্ড ও পাতার শীর্ষে থাকা অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি হয় ও গাছটি লম্বায় বাড়ে। যেমন—অক্সিন। আবার অগ্রমুকুলের অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদ হরমোন পাতার কক্ষে উপস্থিত কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও নতুন শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি করে।
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম: বীজের সৃষ্টির পর কিছুদিন তা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। উপযুক্ত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ শর্তের উপস্থিতিতে এই সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ হয় অর্থাৎ, অঙ্কুরোদ্গম ঘটে। যেমন—জিব্বেরেলিন।
- ট্রপিক চলন: উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার ট্রপিক চলন, প্রধানত ফোটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে হরমোন প্রধান ভূমিকা পালন করে। যেমন—অক্সিন ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন – 2. উদ্ভিদ হরমোনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর – উদ্ভিদ হরমোনের বৈশিষ্ট্য: উদ্ভিদ হরমোনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ।
- উৎস: উদ্ভিদের কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগে উপস্থিত ভাজক কলার কোশগুলি উদ্ভিদ হরমোনের অন্যতম প্রধান উৎসস্থল। এ ছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত কচি পাতা, ভ্ৰূণমূল, ভ্ৰূণমুকুল, বর্ধনশীল পাতার কোশ থেকেও হরমোন ক্ষরিত হয়।
- পরিবহণের ধরন: উদ্ভিদ হরমোনগুলি উৎপত্তি স্থানের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী স্থান উভয় অঞ্চলেই কার্যকরী হয়। উদ্ভিদ হরমোন উৎসস্থল থেকে প্রধানত ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সংবহন কলার মাধ্যমে কার্যস্থলে পরিবাহিত হয়।
- কাজ: অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি, ফুলের পরিস্ফুটন, বীজের অঙ্কুরোদ্গম, মুকুলোদ্গম, সংবেদনশীলতা, জরারোধ প্রভৃতিতে হরমোন সাহায্য করে।
- পরিণতি: কাজের পর উদ্ভিদ হরমোনগুলি বিনষ্ট হয়। বিভিন্ন হরমোন বিভিন্ন উৎসেচক বা অন্য কোনো শর্তের প্রভাবে বিনষ্ট হয়। যেমন, অক্সিন হরমোনটি আলোর প্রভাবে বা ইনডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড অক্সিডেজ নামক উৎসেচকের ক্রিয়ায় বিনষ্ট হয়। জিব্বেরেলিন, জিব্বেরেলিন অক্সিডেজের ক্রিয়ায় ও সাইটোকাইনিন, সাইটোকাইনিন অক্সিডেজের ক্রিয়ায় বিনষ্ট হয়।
প্রশ্ন – 3. অক্সিনের সংজ্ঞা লেখো। অক্সিনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী?
উত্তর – অক্সিন: উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাজক কলা থেকে উৎপন্ন নাইট্রোজেনযুক্ত (ইনডোল বর্গযুক্ত) অম্লধর্মী বৃদ্ধি সহায়ক যে উদ্ভিদ হরমোন, মূলত নিম্নাভিমুখে পরিবাহিত হয় এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, তাকে অক্সিন বলে।
অক্সিনের বৈশিষ্ট্য: অক্সিন হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
- অক্সিন উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী একপ্রকার হরমোন।
- এটি প্রধানত কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন নিয়ে গঠিত একপ্রকার জৈব অ্যাসিড।
- ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে অক্সিন সংশ্লেষিত হয়।
- এটি উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গ, প্রধানত ভ্ৰূণমুকুলাবরণী, কাণ্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা থেকে উৎপন্ন হয়ে ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে সাধারণত নিম্নাভিমুখে পরিবাহিত হয়। তবে মূলের অগ্রভাগে উৎপন্ন অক্সিন নীচ থেকে কিছুটা ওপরের দিকে পরিবাহিত হয়।
- এই হরমোনের সংশ্লেষ সাধারণত আলোক উৎসের বিপরীতে হয়।
- এর ক্রিয়া প্রধানত মেরুবর্তী এবং এটি ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
- এটি জলে দ্রবণীয় হওয়ার ফলে ব্যাপন ক্রিয়ার মাধ্যমে সহজেই পরিবাহিত হয়।
- আলোকের উৎসের বিপরীতে অর্থাৎ অন্ধকারে অক্সিনের ক্রিয়া সর্বাধিক।
- মূলের ক্ষেত্রে স্বল্প ঘনত্বে এবং কাণ্ডের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অধিক ঘনত্বে অক্সিন কাজ করে।
প্রশ্ন – 4. উদ্ভিদদেহে অক্সিনের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – অক্সিনের ভূমিকা: উদ্ভিদদেহে অক্সিন নিম্নলিখিত ভূমিকাগুলি পালন করে।
- অগ্রস্থ প্রকটতা ও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি হ্রাস: অক্সিনের প্রভাবে উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রমুকুল বৃদ্ধি পায় ও পার্শ্বীয় বা কাক্ষিক মুকুলগুলির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পার্শ্বীয় মুকুলের ওপর অগ্রমুকুলের এই প্রাধান্যকে অগ্রসস্থ প্রকটতা বলে। এর ফলে কাণ্ড দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, যদি অগ্রমুকুল কেটে ফেলা হয় সেক্ষেত্রে কাক্ষিক মুকুল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে গাছটিকে ঝোপের আকৃতি দেয়।

- কোশ বিভাজন ও কোশের আকার বৃদ্ধি : অক্সিন কোশে DNA-র পরিমাণ বৃদ্ধি করে কোশের বিভাজনে সাহায্য করে এবং কোশ বিভাজনের দ্বারা কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অক্সিন কোশপ্রাচীরকে নমনীয় করে কোশের আকার ও আয়তন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই হরমোনের প্রভাবে পরিণত কোশে কোশ গহ্বরের সৃষ্টি হয় যার ফলে কোশ আয়তনে বৃদ্ধি পায় ৷
- ফলের বৃদ্ধি: নিষেকের পর ডিম্বাশয়ে অক্সিনের পরিমাণ বাড়ে। এর প্রভাবে ডিম্বক বীজে এবং ডিম্বাশয় ফলে পরিণত হয়। অনেকসময় নিষেকের পূর্বেই ডিম্বাশয়ে অক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তখন ডিম্বাশয় নিষেক ছাড়াই ফলে পরিণত হয়। কিন্তু নিষেক না হওয়ায় ডিম্বক বীজে পরিণত হয় না, ফলে বীজবিহীন ফল উৎপন্ন হয়। এইভাবে নিষেক ছাড়া ফল উৎপাদনকে পার্থেনোকাপি বলা হয়। পার্থেনোকার্পিক ফল উৎপাদনে অক্সিনের ভূমিকা আছে।
- মূলের বৃদ্ধি: অক্সিন উদ্ভিদের মূলের সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। উদ্ভিদের মূল স্বল্প পরিমাণ অক্সিনে অধিক সংবেদনশীল, অর্থাৎ অক্সিনের স্বল্প ঘনত্বে মূলের বৃদ্ধি অধিক হয়। বেশি ঘনত্বে অক্সিন মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। যে ঘনত্বের অক্সিনে মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, সেই ঘনত্বের অক্সিনে কাণ্ডের পর্ব ও গোড়া থেকে অস্থানিক মূল সৃষ্টি হয়।
- ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ: উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন এবং জিওট্রপিক চলন অক্সিনের অসম বণ্টনের ফলে সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন – 5. উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন এবং জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিনের ভূমিকা চিত্রসহ আলোচনা করো।
অথবা, উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন হরমোনের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – ফোটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিনের ভূমিকা: উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন এবং জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রধানত আলোক ও অভিকর্ষের প্রভাবে অক্সিনের অসম বণ্টনের দ্বারাই ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রিত হয়। বিজ্ঞানী ওয়েন্ট ও কোলোড্নি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেছেন, আলোর প্রভাবে অক্সিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ অক্সিন আলোক-সংবেদনশীল। এই কারণে সর্বদা আলোর উৎসের বিপরীতে বা অন্ধকারের দিকে অক্সিনের ঘনত্ব বেশি হয়। কাণ্ডের ক্ষেত্রে বেশি ঘনত্বের অক্সিনে, আলোর বিপরীত দিকে বৃদ্ধি অর্থাৎ অন্ধকারের দিকে কোশের বিভাজন বেশি হয়। ফলে কাণ্ড আলোর দিকে এবং অভিকর্ষের বিপরীতে বেঁকে যায়। অর্থাৎ কাণ্ডে আলোক-অনুকূলবর্তী ও অভিকর্ষ-প্রতিকূলবর্তী চলন ঘটে। মূল অক্সিনের স্বল্প ঘনত্বে অধিক সংবেদনশীল। ফলে মূলের ক্ষেত্রে অক্সিনের কম ঘনত্বের দিকে, অর্থাৎ আলোর দিকে কোশ বিভাজন হার বেশি হয়। তাই মূল আলোর বিপরীত দিকে তথা অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ মূলে আলোক-প্রতিকূলবর্তী ও অভিকর্ষ-অনুকূলবর্তী চলন দেখা যায়। এইভাবে অক্সিনের অসম বণ্টনের দ্বারা উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক বা আলোকবৃত্তি চলন এবং জিওট্রপিক বা অভিকর্ষবৃত্তি চলন নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রশ্ন – 6. জিব্বেরেলিনের সংজ্ঞা ও উৎস লেখো। এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি কী?
উত্তর – জিব্বেরেলিনের সংজ্ঞা ও উৎস
1.সংজ্ঞা: বীজের পরিণত বীজপত্র থেকে উৎপন্ন টারপিনয়েড গোষ্ঠীভুক্ত, নাইট্রোজেনবিহীন, অম্লধর্মী উদ্ভিদ হরমোন যা বীজের সুপ্ত দশা ভঙ্গ করতে ও অঙ্কুরোদ্গমে সাহায্য করে তাকে জিব্বেরেলিন বলে।
2. উৎস: অঙ্কুরিত বীজ, পরিণত বীজপত্র, মুকুল, পাতার বর্ধিয়ু অঞ্চল প্রভৃতি থেকে জিব্বেরেলিন উৎপন্ন হয়।
জিবেরেলিনের বৈশিষ্ট্য: জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি এখানে সংক্ষেপে আলোচিত হল—
1. এটি কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত একপ্রকার নাইট্রোজেনবিহীন উদ্ভিদ হরমোন।
2. এটি টারপিনয়েড গোষ্ঠীভুক্ত আম্লিক প্রকৃতির জৈবরাসায়নিক পদার্থ।
3. এটি জাইলেম ও ফ্লোয়েম—উভয় কলার মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে। এই কারণে জিব্বেরেলিনের প্রবাহ উভমুখী।
4. এটি জলে দ্রবণীয়। তাই অতি সহজেই ব্যাপন ক্রিয়ার দ্বারা পরিবাহিত হয়।
5. বীজপত্রে জিব্বেরেলিন সঞ্চয়ের হার সবথেকে বেশি।
প্রশ্ন – 7. জিব্বেরেলিনের কয়েকটি প্রকারভেদের নাম লেখো। উদ্ভিদদেহে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর – জিবেরেলিনের প্রকারভেদ: জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড। বিভিন্নপ্রকার উদ্ভিদ থেকে প্রায় 40 প্রকার জিব্বেরেলিন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল GA3, GA7, GA1] |
জিব্বেরেলিনের ভূমিকা: উদ্ভিদদেহে জিব্বেরেলিনের ভূমিকাগুলি নিম্নরূপ।
- মুকুল ও বীজের সূপ্তাবস্থা ভঙ্গ: প্রতিটি বীজের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। বীজের এই দশাকে সুপ্তাবস্থা বলে। জিব্বেরেলিন মুকুলের এই সুপ্তাবস্থা দূর করে। বীজের সুপ্তাবস্থায় এর মধ্যে জিব্বেরেলিনের পরিমাণ কম থাকে। অঙ্কুরোদ্গমের আগে বীজে এই হরমোনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে বীজ মধ্যস্থ α – অ্যামাইলেজ, প্রোটিয়েজ প্রভৃতি উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, যা বীজের সুপ্তাবস্থা দূর করে এবং অঙ্কুরোদ্গম ঘটায়।
- পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি: জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের কাণ্ডের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সঠিকভাবে কাণ্ডের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটায়। এই হরমোন উদ্ভিদের নিবেশিত ভাজক কলাকোশের বিভাজন ঘটায়। ফলে পর্বমধ্য অংশের বৃদ্ধি ঘটে ও উদ্ভিদের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটে।
- ফলের বৃদ্ধি: জিব্বেরেলিন অধিক সংখ্যক ফল উৎপাদনে এবং ফলের আকার বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করে। আপেল, নাসপাতি, আঙুর প্রভৃতির ফুলের গর্ভাশয়ের কোশ বিভাজন ঘটিয়ে বীজবিহীন বা পার্থেনোকাপিক ফল তৈরিতেও জিব্বেরেলিনের প্রয়োগ করা হয়।
- পাতা ও ফুলের আয়তন বৃদ্ধি: গাছের পাতা ও ফুলের আয়তন বৃদ্ধিতেওজিব্বেরেলিন সাহায্য করে।
প্রশ্ন – 8. সাইটোকাইনিনের সংজ্ঞা লেখো। এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – সাইটোকাইনিন: উদ্ভিদের ফল ও সস্যে উৎপন্ন নাইট্রোজেনযুক্ত পিউরিন বর্গভুক্ত ক্ষারীয় যে জৈব যৌগ মূলত উদ্ভিদের কোশ বিভাজনকে উদ্দীপিত করে, তাকে সাইটোকাইনিন বলে।
সাইটোকাইনিনের বৈশিষ্ট্য: সাইটোকাইনিন হরমোনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করা হল—
- সাইটোকাইনিন প্রধানত নাইট্রোজেনধর্মী ক্ষারীয় প্রকৃতির জৈব যৌগ।
- এটি পিউরিন বর্গভুক্ত রাসায়নিক উপাদান।
- অক্সিনের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে কাজ করে থাকে।
- এটির পরিবহণ সবদিকে হয়। তবে উৎপত্তিস্থলে কাজ করতেও সাইটোকাইনিন সক্ষম।
- এই হরমোনটি জলে দ্রবণীয়। তাই ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজে পরিবাহিত হতে পারে।
- হরমোনটি উদ্ভিদকোশের সাইটোকাইনেসিসে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই কারণে এর নাম সাইটোকাইনিন।
প্রশ্ন – 9. সাইটোকাইনিনের উৎসগুলি লেখো। উদ্ভিদদেহে সাইটোকাইনিনের ভূমিকা লেখো।
উত্তর – সাইটোকাইনিনের উৎস: সাইটোকাইনিনের উৎসগুলি হল প্রধানত উদ্ভিদের সস্য (যেমন—ডাবের জল) ও ফল। এ ছাড়া কিছু উদ্ভিদের ফল ও ফুলের নির্যাসেও সাইটোকাইনিন পাওয়া যায় (যেমন—টম্যাটো, পিচ)।
সাইটোকাইনিনের ভূমিকা: উদ্ভিদদেহে সাইটোকাইনিনের ভূমিকা-গুলি নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
- কোশ বিভাজন ঘটানো: সাইটোকাইনিনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল উদ্ভিদকোশের সাইটোপ্লাজমের বিভাজনে বা সাইটোকাইনেসিসে সাহায্য করা। এই হরমোন অক্সিনের সহায়তায় কোশচক্রের ১ দশায় DNA সংশ্লেষের মাধ্যমে মাইটোসিস কোশ বিভাজনে সাহায্য করে। নবজাত কোশের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতেও এর বিশেষ ভূমিকা আছে।
- পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটানো: সাইটোকাইনিনের অপর একটি কাজ হল পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। এই হরমোন পার্শ্বীয় মুকুল বা কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণে সাহায্য করে এবং অসংখ্য শাখাপ্রশাখা সৃষ্টির মাধ্যমে উদ্ভিদটিকে ঝোপের মতো আকৃতি দান করে।
- পত্রমোচন বিলম্বিত করা: পাতার পত্রমূলের গোড়ার কোশগুলির কোশপ্রাচীরের ক্ষয়ের কারণে পত্রমোচন হয়। সাইটোকাইনিন এই কোশগুলির কোশপ্রাচীরকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে, ফলে পত্রমোচন বিলম্বিত হয়।
- জরা বিলম্বিতকরণ: সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের বার্ধক্য বা জরা বিলম্বিত করে। মূলত নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের বিনাশ বিলম্বিত করে এবং নতুন প্রোটিন উৎপাদনের দ্বারা পরিপোষণে সহায়তার মাধ্যমে হরমোনটি এই কাজ করে থাকে। এই কারণে ফুলদানিতে রাখা ফুল বা পাতাবাহার গাছের শাখায় সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করা হলে তা অনেকদিন সতেজ থাকে।
- অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি রোধ করা: সাইটোকাইনিন, অগ্রমুকুলের অবাধ বৃদ্ধি রোধ করে এবং উদ্ভিদের দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি বিলম্বিত করে উদ্ভিদকে ঝোপে পরিণত করে।
প্রশ্ন – 10. সংশ্লেষিত হরমোনের ভূমিকাগুলি উল্লেখ করো।
অথবা, কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম হরমোনের ব্যবহার লেখো।
উত্তর – কৃত্রিম বা সংশ্লেষিত হরমোনের ভূমিকা: কৃত্রিম উদ্ভিদ হরমোনগুলি কৃষিবিদ্যা, উদ্যানপালনবিদ্যা, ফলচাষ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই হরমোনগুলির কয়েকটি ভূমিকা নীচে আলোচিত হল।
- শাখাকলম থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি: গোলাপ, জবা, বেল প্রভৃতি যেসব উদ্ভিদে বীজ তৈরি হয় না, তাদের ক্ষেত্রে শাখাকলম নামক অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে উদ্ভিদাংশ ব্যবহার করে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়। সংশ্লেষিত কৃত্রিম অক্সিন, যেমন—ইনডোল বিউটাইরিক অ্যাসিড (IBA) ও ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড (NAA) সহজেই মূল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় বলে সজীব উদ্ভিদের কাণ্ডের টুকরো কৃত্রিম অক্সিনে ডুবিয়ে রাখা হয়। পরে সেটিকে মাটিতে রোপণ করা হলে ওই কাটা অংশ থেকে অস্থানিক মূল সৃষ্টি হয়। এইভাবে IBA ও NAA প্রয়োগ করে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়।
- অপরিণত ফলের মোচন রোধ: আম, কলা, আঙুর ইত্যাদি ফলচাষের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল ফলের ঝরে যাওয়া বা মোচন। ফলের বৃত্তের কলাকোশে মোচনস্তর সৃষ্টি হয় বলে প্রায় 50-70% ফল পাকবার আগে ঝরে যায়। কৃত্রিম অক্সিন যেমন – 2, 4-ডাইক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড বা 2, 4-D, কৃত্রিম জিব্বেরেলিন ও কৃত্রিম সাইটোকাইনিন হরমোনগুলি ফলের বৃন্তে স্প্রে করলে মোচন ব্যাহত হয়।
- আগাছা বিনাশ: কৃষিজমিতে আগাছা সৃষ্টি হলে তা জমি থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে জমির উর্বরতা হ্রাস করে। এ ছাড়া ফসলের বহু রোগ সংক্রমণের কারণ হল আগাছা। এই জন্য বর্তমানে কৃষিজমিতে কৃত্রিম অক্সিন 2, 4-D ব্যবহৃত হয়, যা ফসলকে সুরক্ষিত রেখে কেবলমাত্র আগাছাগুলিকেই বিনষ্ট করে। এই হরমোনকে উইডিসাইড হরমোন বলে।
- বীজহীন ফল উৎপাদন: আপেল, আঙুর, টম্যাটো, পেঁপে ইত্যাদি উদ্ভিদে নিষেক না হয়ে ফল সৃষ্টি হলে তাতে বীজ তৈরি হয় না। এইরকম বীজবিহীন ফল উৎপাদনকে পার্থেনোকাপি বলে। কৃত্রিম অক্সিন (যেমন – IBA), কৃত্রিম জিব্বেরেলিন এবং কৃত্রিম সাইটোকাইনিন ব্যবহারে বীজবিহীন ফল সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া এইসব কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগে ফল বড়ো হয় এবং ফলের মিষ্টত্ব বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন – 11. অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিনের তুলনা করো।
উত্তর – অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিনের তুলনা
| বিষয় | অক্সিন | জিবেরেলিন | সইটোকাইনিন |
| 1. রাসায়নিক প্রকৃতি | ইনডোল বর্গযুক্ত। | টারপিনয়েড গোষ্ঠীভুক্ত। | পিউরিন গোষ্ঠীভুক্ত। |
| 2. N2 এর উপস্থিতি | উপস্থিত। | অনুপস্থিত। | উপস্থিত। |
| 3. প্রবাহ অভিমুখ | নিম্নমুখী। | ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী। | সৰ্বমুখী। |
| 4. উৎস | কাণ্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা। | অঙ্কুরিত চারা ও বীজপত্র। | প্রধানত বীজের সস্য। |
| 5. কোশ বিভাজন | কোশ বিভাজনে প্রভাব আছে। | কোশ বিভাজনে প্রভাব নেই। | কোশ বিভাজনে প্রভাব আছে। |
| 6. ট্রপিক চলন | ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। | কোনো প্রভাব নেই। | কোনো প্রভাব নেই। |
| 7. মুকুলের বৃদ্ধি | অগ্র মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়, পার্শ্বীয় বা কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি রোধ করে। | কাক্ষিক বা পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়, অগ্র মুকুলের বৃদ্ধি হ্রাস করে। | কাক্ষিক বা পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়, অগ্র মুকুলের বৃদ্ধি রোধ করে। |
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – 1. হরমোন কাকে বলে?
উত্তর – যে জৈবরাসায়নিক পদার্থ কোনো বিশেষ কোশসমষ্টি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে বিশেষ উপায়ে পরিবাহিত হয়ে জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে এবং ক্রিয়ার শেষে বিনষ্ট হয়ে যায়, তাকে হরমোন বলে। যেমন—অক্সিন নামক উদ্ভিদ হরমোন।
প্রশ্ন – 2. উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর – বৃদ্ধির সাথে সাথে উদ্ভিদদেহে জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলস্বরূপ দেহের বিভিন্ন কলাকোশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পায়। এই সমন্বয়সাধনের জন্যই উদ্ভিদদেহে হরমোনের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াসমূহকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই হরমোন এই সমন্বয়সাধনের কাজ করে থাকে।
প্রশ্ন – 3. হরমোনকে ‘রাসায়নিক দূত’ বা রাসায়নিক বার্তাবাহক বলে কেন?
উত্তর – হরমোন একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা তার ক্ষরণস্থল থেকে দূরবর্তী কোশগুলির রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে হরমোনকে ‘রাসায়নিক দূত’ বলে। তবে কিছু হরমোন, ক্ষরণকারী কোশের নিকটবর্তী স্থানেও কাজ করে থাকে।
প্রশ্ন – 4. হরমোনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – হরমোনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল—
1. উৎস: হরমোন নির্দিষ্ট কলাকোশ থেকে উৎপন্ন হয়।
2. কাজ: হরমোন দূরবর্তী স্থান বাহিত হয় ও কাজ করে থাকে।
3. মাত্রা: খুব স্বল্প মাত্রায় এগুলি কার্যকরী হয় ও ক্রিয়াশেষে তারা বিনষ্ট হয়।
প্রশ্ন – 5. হরমোনকে উদ্ভিদের বৃদ্ধি-নিয়ন্ত্রক বলার কারণ কী?
উত্তর – হরমোন উদ্ভিদদেহের বিভিন্নপ্রকার বৃদ্ধি ও বৃদ্ধি-সম্পর্কিত চলনকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন—অগ্র ও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি, ফলের বৃদ্ধি, ট্রপিক চলন প্রভৃতি। এই কারণে হরমোনকে উদ্ভিদের বৃদ্ধি-নিয়ন্ত্রক বলা হয়।
প্রশ্ন – 6. উদ্ভিদের তিনটি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – উদ্ভিদের বৃদ্ধি যে সমস্ত বিশেষ জৈবরাসায়নিক পদার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাদের উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক পদার্থ বলে। উদ্ভিদের 3টি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন হল – 1. অক্সিন, 2. জিব্বেরেলিন, 3. সাইটোকাইনিন।
প্রশ্ন – 7. অক্সিনের রাসায়নিক নাম এবং প্রকৃতি লেখো।
উত্তর – অক্সিনের রাসায়নিক নাম ইনডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড (IAA)। অক্সিন হল কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনযুক্ত জৈব অ্যাসিড।
প্রশ্ন – 8. অক্সিনের প্রধান দুটি কাজ লেখো।
উত্তর – অক্সিনের প্রধান দুটি কাজ হল – 1. এটি উদ্ভিদের বিভিন্ন ধরনের ট্রপিক চলন বিশেষত ফোটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। 2. এই হরমোনটির প্রভাবে উদ্ভিদে অগ্রস্থ প্রকটতা দেখা যায় অর্থাৎ অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ঘটে এবং পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
প্রশ্ন – 9. অক্সিনের ক্ষরণস্থল ও ক্রিয়াস্থল উল্লেখ করো।
উত্তর – অক্সিন উদ্ভিদের বিভিন্ন অগ্রসস্থ ভাজক কলা, বিশেষত উদ্ভিদের মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ, ঘৃণমুকুলাবরণী, কচি পাতা, বর্ধনশীল পাতার কোশ ইত্যাদি স্থান থেকে ক্ষরিত হয়। অক্সিন উৎসস্থল থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দেহের বিভিন্ন বর্ধনশীল অঞ্চলে পৌঁছোয় এবং ওই অঞ্চলের কোশ বিভাজন ঘটায়। কোশ বিভাজনের মাধ্যমে অক্সিন উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রশ্ন – 10. মূল আলোর উৎসের বিপরীতে বেঁকে যায় কেন?
উত্তর – উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয় প্রধানত অক্সিন হরমোনের অসম বণ্টনের দ্বারা। অক্সিন আলোক উৎসের বিপরীত দিকে বেশি পরিমাণে সঞ্চিত হয়। মূল স্বল্প পরিমাণ বা লঘু ঘনত্বের অক্সিনে বেশি সংবেদনশীল। মূলের ক্ষেত্রে আলোর উৎসের দিকের কোশগুলিতে অক্সিনের পরিমাণ কম থাকে। এই কারণে, ওইদিকের কোশগুলি বেশি বিভাজিত হয় ও মূল আলোর উৎসের বিপরীতে বেঁকে যায়।
প্রশ্ন – 11. অক্সিন ও কাইনিনের একটি বিপরীত ক্রিয়া লেখো।
উত্তর – অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রস্থ প্রকটতা, অর্থাৎ অগ্রমুকুলের বিকাশ ঘটায়, কাইনিন তা প্রতিরোধ করে। পক্ষান্তরে, কাইনিন কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়, অক্সিন তা প্রতিরোধ করে।
প্রশ্ন – 12. পার্থেনোকাৰ্পি কাকে বলে? এই প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী একটি হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – পার্থেনোকাপি : নিষেক অথবা পরাগযোগ ছাড়াই ডিম্বাশয় থেকে বীজবিহীন ফল উৎপাদনের পদ্ধতিকে পার্থেনোকাৰ্পি বলে।
পার্থেনোকাপিতে সাহায্যকারী হরমোন : এই প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী একটি হরমোন হল অক্সিন। পার্থেনোকার্পির দ্বারা লেবু, তরমুজ প্রভৃতি বীজবিহীন ফল উৎপাদন করা হয়।

প্রশ্ন – 13. ‘পেস্তা বা কাজুবাদামের ক্ষেত্রে পার্থেনোকাপির গুরুত্ব নেই’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – পার্থেনোকার্পির মাধ্যমে নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয় থেকে বীজহীন ফল উৎপাদন করা হয়। কিন্তু পেস্তা বা কাজুবাদামের ক্ষেত্রে বীজটিই খাদ্যযোগ্য, তাই বীজবিহীন ফল তৈরি করার প্রয়োজন হয় না।
প্রশ্ন – 14. পার্থেনোকাপি কেন হরটিকালচারে করা হয়ে থাকে?
অথবা, বীজবিহীন ফল তৈরি কেন দরকারি?
উত্তর – 1. পার্থেনোকাপির মাধ্যমে পরাগসংযোগ ছাড়াই ফল তৈরি সম্ভব হয়। 2. বীজবিহীন ফল দেখতে ভালো ও খেতে সুবিধাজনক। 3. তরমুজ বা বেগুনের ক্ষেত্রে বীজ ফলের শাঁসকে দ্রুত বিনষ্ট করবার মতো উপাদান তৈরি করে। পার্থেনোকার্পি পদ্ধতিতে সৃষ্ট ফলে বীজ না থাকার কারণে ফল বা সবজি অনেকদিন সতেজ থাকে।
প্রশ্ন – 15. উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগ কেটে দিলে প্রচুর শাখাপ্রশাখা বের হয় কেন?
উত্তর – উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগ কেটে দিলে সেইস্থানে অক্সিন হ্রাস পায় ও সাইটোকাইনিন মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও ঝোপ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন – 16. জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস ও দুটি কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – জিব্বেরেলিনের দুটি উৎস হল – 1. পরিণত বীজ ও
2. বীজপত্র।
জিব্বেরেলিনের কাজ হল –1. বীজ ও মুকুলের সুপ্তাবস্থাকে ভঙ্গ করা।
2. কাণ্ডের পর্বমধ্যের বৃদ্ধিতে সাহায্য করা।
প্রশ্ন – 17. উদ্ভিদের বীজ ও পর্বমধ্যের ওপর জিব্বেরেলিন হরমোন কী কী প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর –
বীজ ও পর্বমধ্যের ওপর জিব্বেরেলিনের প্রভাবগুলি হল—
1. বীজের ওপর: জিব্বেরেলিন বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে এবং অঙ্কুরোদ্গম ঘটায়।
2. পর্বমধ্যের ওপর: জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের কাণ্ডের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। এর ফলে কাণ্ড লম্বায় বাড়ে।
প্রশ্ন – 18. বীজের সুপ্তাবস্থা কী? এই দশা ভাঙতে কোন্ হরমোন সাহায্য করে?
উত্তর – বীজের সুপ্তাবস্থা: উপযুক্ত পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বীজের বিলম্বিত অঙ্কুরোদ্গম, অর্থাৎ বীজের বৃদ্ধি ও বিপাক না হয়ে অস্থায়ীভাবে বিশ্রাম দশায় থাকাকে বীজের সুপ্তাবস্থা বলে।
বীজের সুপ্তাবস্থা ভাঙনে সাহায্যকারী হরমোন: বীজের সুপ্তাবস্থা ভাঙনে সাহায্যকারী হরমোনটি হল জিব্বেরেলিন।
প্রশ্ন – 19. একজন আপেল বাগানের মালিক তার বাগানের ফলকে বড়ো ও ভালো করতে চাইলে এবং দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করে আপেল বিক্রি করতে চাইলে তিনি কোন্ প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটর (PGR) ব্যবহার করবেন?
উত্তর – ওই আপেল বাগানের মালিক তার বাগানের ফলকে বড়ো ও ভালো করতে চাইলে জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন ব্যবহার করবেন। কারণ জিব্বেরেলিন যেমন ফলের আকৃতি বাড়াতে সাহায্য করে, তেমনি সাইটোকাইনিন বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এর ফলে বাজারদর মতো ফল বিক্রি করার জন্য তিনি অপেক্ষা করতে পারবেন।
প্রশ্ন – 20. ঘরে তোমার টেবিলে রাখা পাতাবাহারের দৈর্ঘ্য স্তিমিত করে ঘন ঝোপ সৃষ্টি করে তুমি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চাইছ। এক্ষেত্রে তুমি কোন্ ফাইটোহরমোনের সাহায্য নেবে?
উত্তর – এক্ষেত্রে সাইটোকাইনিন নামক ফাইটোহরমোনটির সাহায্য নেওয়া যায়। এটি অগ্রস্থ প্রকটতা রোধ করে পার্শ্বীয় প্রকটতা বাড়ায়। ফলে পাতাবাহার উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বাড়ে না কিন্তু ঘন ঝোপ তৈরি হতে পারে।
প্রশ্ন – 21. কাইনিন বা সাইটোকাইনিনের উৎস ও কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর – সাইটোকাইনিনের দুটি উৎস হল — 1. ভুট্টার সস্য ও
2. ডাবের জল।
সাইটোকাইনিনের কাজ হল — 1. কোশ বিভাজনে সহায়তা করা,
2 উদ্ভিদের পত্রমোচন বিলম্বিত করা।
প্রশ্ন – 22. সাইটোকাইনিনের রাসায়নিক নাম ও রাসায়নিক প্রকৃতি উল্লেখ করো।
উত্তর – সাইটোকাইনিনের রাসায়নিক নাম হল 6-ফুরফুরাইল অ্যামিনোপিউরিন।
সাইটোকাইনিন কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারীয় জৈব যৌগ।
প্রশ্ন – 23. রিচমন্ড-ল্যাং প্রভাব কাকে বলে?
উত্তর – সাইটোকাইনিন হরমোনটি ক্লোরোফিল, প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ধ্বংস প্রতিরোধ করে উদ্ভিদের পর্ণমোচন রোধ করে ও নানা অঙ্গের জরাপ্রাপ্তিও বিলম্বিত হয়। একে রিচমন্ড-ল্যাং প্রভাব বলে।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. ‘হরমোন’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন—
(a) বেলিস ও স্টারলিং
(b) কুরোসাওয়া
(c) ওয়েন্ট
(d) জগদীশ চন্দ্র বসু
উত্তর – (a) বেলিস ও স্টারলিং
2. হরমোন হল একটি –
(a) উৎসেচক
(b) গ্রাহক
(c) ভৌত সমন্বয়কারী
(d) রাসায়নিক সমন্বয়কারী
উত্তর – (d) রাসায়নিক সমন্বয়কারী
3. অক্সিন হল একটি—
(a) উৎসেচক
(b) প্রাণী হরমোন
(c) রেচন পদার্থ
(d) উদ্ভিদ হরমোন
উত্তর – (d) উদ্ভিদ হরমোন
4. অক্সিন আবিষ্কার করেন –
(a) ওয়েন্ট
(b) জগদীশ চন্দ্র বসু
(c) প্যাভলভ
(d) সোয়ান
উত্তর – (a) ওয়েন্ট
5. অক্সিন সম্বন্ধে প্রথম যে উদ্ভিদে পরীক্ষা হয়, সেটি হল –
(a) মটর
(b) গম
(c) ধান
(d) যই
উত্তর – (d) যই
6. উদ্ভিদের অগ্রস্থ প্রকটতার জন্য দায়ী উপাদান হল –
(a) জিব্বেরেলিন
(b) সাইটোকাইনিন
(c) অক্সিন
(d) উৎসেচক
উত্তর – (c) অক্সিন
7. উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে –
(a) সাইটোকাইনিন
(b) ফ্লোরিজেন
(c) অক্সিন
(d) ইথিলিন
উত্তর – (c) অক্সিন
৪. অক্সিনের প্রবাহ –
(a) ঊর্ধ্বমুখী
(b) নিম্নমুখী
(c) পার্শ্বমুখী
(d) সর্বত্র
উত্তর – (b) নিম্নমুখী
9. সাইটোকাইনিন যে হরমোনটির উপস্থিতিতে ভালো কাজ করে, সেটি হল—
(a) জিব্বেরেলিন
(b) ইথিলিন
(c) অক্সিন
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) অক্সিন
10. ভ্রূণমুকুলাবরণীতে পাওয়া যায় —
(a) জিব্বেরেলিন
(b) অক্সিন
(c) সাইটোকাইনিন
(d) ফ্লোরিজেন
উত্তর – (b) অক্সিন
11. জিব্বেরেলিন প্রথম পৃথক্করণ এবং নামকরণ করেন—
(a) এইচি কুরোসাওয়া
(b) তেইজিরো ইয়াবুটা
(c) কাওয়াসাকি
(d) বেলিস ও স্টারলিং
উত্তর – (b) তেইজিরো ইয়াবুটা
12. মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভাঙতে সাহায্য করে যে হরমোন, সেটি হল –
(a) অক্সিন
(b) জিব্বেরেলিন
(c) সাইটোকাইনিন
(d) ইথিলিন
উত্তর – (b) জিব্বেরেলিন
13. বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটায় কোন্ হরমোন?
(a) ফ্লোরিজেন
(b) ইথিলিন
(c) অ্যাবসিসিক অ্যাসিড
(d) জিব্বেরেলিন
উত্তর – (d) জিব্বেরেলিন
14. আলফা অ্যামাইলেজ উৎসেচকটির সংশ্লেষে সাহায্য করে—
(a) সাইটোকাইনিন
(b) অক্সিন
(c) জিব্বেরেলিন
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) জিব্বেরেলিন
15. উদ্ভিদের বংশগত খর্বতা দূর করে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী হরমোনটি হল—
(a) অক্সিন
(b) জিব্বেরেলিন
(c) সাইটোকাইনিন
(d) ফ্লোরিজেন
উত্তর – (b) জিব্বেরেলিন
16. জিব্বেরেলিনের প্রবাহ —
(a) ঊর্ধ্বমুখী
(b) নিম্নমুখী
(c) ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয়মুখী
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (c) ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয়মুখী
17. জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক উপাদান হল—
অথবা, উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিকারী হরমোনটির রাসায়নিক উপাদান হল—
(a) কার্বন-অক্সিজেন-হাইড্রোজেন-না ইট্রোজেন
(b) কার্বন-হাইড্রোজেন-অক্সিজেন
(c) কার্বন-হাইড্রোজেন-নাইট্রোজেন সালফার
(d) কার্বন-সালফার-ফসফরাস
উত্তর – (b) কার্বন-হাইড্রোজেন-অক্সিজেন
18. জিব্বেরেলিন হল—
(a) পিউরিন গোষ্ঠীভুক্ত
(b) ইনডোল গোষ্ঠীভুক্ত
(c) পিরিমিডিন গোষ্ঠীভুক্ত
(d) টারপিনয়েড গোষ্ঠীভুক্ত
উত্তর – (d) টারপিনয়েড গোষ্ঠীভুক্ত
19. নীচের কোন্ ফাইটোহরমোনে নাইট্রোজেন থাকে না?
(a) জিব্বেরেলিন
(b) অক্সিন
(c) সাইটোকাইনিন
(d) ভারনালিন
উত্তর – (a) জিব্বেরেলিন
20. আখের থেকে চিনি উৎপাদন বৃদ্ধিতে যে হরমোন স্প্রে করা হয়—
(a) IAA
(b) সাইটোকাইনিন
(c) জিব্বেরেলিন
(d)ইথিলিন
উত্তর – (c) জিব্বেরেলিন
21. নাইট্রোজেনযুক্ত জৈব-ক্ষার প্রকৃতির হরমোন হল—
(a) অক্সিন
(b) সাইটোকাইনিন
(c) ভ্যাসোপ্রেসিন
(d) থাইরক্সিন
উত্তর – (b) সাইটোকাইনিন
22. প্রধান সাইটোকাইনিন হল—
(a) জিয়াটিন ও কাইনেটিন
(b) 2, 4-D
(c) GA3 ও GA7
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) জিয়াটিন ও কাইনেটিন
23. অগ্রন্থ প্রকটতায় বাধা দেয় যে হরমোন—
(a) জিব্বেরেলিন
(b) অক্সিন
(c) সাইটোকাইনিন
(d) ইথিলিন
উত্তর – (c) সাইটোকাইনিন
24. গাছ থেকে পাতা বিচ্ছিন্ন করার বহুদিন পর পর্যন্ত পাতাটিকে সবুজ রাখতে কার্যকরী উপাদানটি হল—
অথবা, ফুলদানীতে রাখা ফুল বা কাটা পাতাবাহার শাখাকে সতেজ রাখতে তুমি কোন উপাদানটি স্প্রে করবে?
(a) অক্সিন
(b) GA
(c) সাইটোকাইনিন
(d) IPA
উত্তর – (c) সাইটোকাইনিন
25. উদ্ভিদের কোশ বিভাজনে সাহায্যকারী হরমোন হল—
(a) ফ্লোরিজেন
(b) অক্সিটোসিন
(c) ইথিলিন
(d) সাইটোকাইনিন
উত্তর – (d) সাইটোকাইনিন
26. ডাবের জল, ভুট্টা, গমের সস্যে যে ফাইটোহরমোনটি পাওয়া যায়, সেটি হল –
(a) অক্সিন
(b) জিব্বেরেলিন
(c) সাইটোকাইনিন
(d) IBA
উত্তর – (c) সাইটোকাইনিন
27. ‘রিচমন্ড ল্যাং এফেক্ট’ পরীক্ষাটিতে যে হরমোনের প্রভাব ধরা পড়ে তা হল –
(a) GA
(b) অক্সিন
(c) সাইটোকাইনিন
(d) IPA
উত্তর – (c) সাইটোকাইনিন
28. উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে—
(a) সাইটোকাইনিন
(b) ইথিলিন
(c) অক্সিন
(d) জিব্বেরেলিন
উত্তর – (a) সাইটোকাইনিন
29. উদ্ভিদের জরা রোধ করে—
(a) সাইটোকাইনিন
(b) ইথিলিন
(c) অক্সিন
(d) জিব্বেরেলিন
উত্তর – (a) সাইটোকাইনিন
30. সাইটোকাইনিনের একটি অ্যান্টি-অক্সিন বৈশিষ্ট্য হল –
(a) অগ্রস্থ প্রকটতা বৃদ্ধি করা
(b) অগ্রস্থ প্রকটতা হ্রাস করা
(c) পার্শ্বীয় প্রকটতা হ্রাস করা
(d) ট্রপিক চলনে সাহায্য করা
উত্তর – (b) অগ্রস্থ প্রকটতা হ্রাস করা
31. ল্যাবরেটোরিতে তৈরি করা হয় নীচের কোন্ হরমোনটি?
(a) IAA
(b) NAA
(c) GA
(d) সাইটোকাইনিন
উত্তর – (b) NAA
32. একটি গ্যাসীয় হরমোন হল —
(a) অক্সিন
(b) IPA
(c) ডরমিন
(d) ইথিলিন
উত্তর – (d) ইথিলিন
দু-একটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও
1. উদ্ভিদদেহে সংবেদনশীলতা ও সাড়াপ্রদানে সহায়ক উপাদানের নাম কী?
উত্তর – হরমোন।
2. প্রথম আবিষ্কৃত হরমোন কোন্টি?
উত্তর – সিক্রেটিন (বেলিস ও স্টারলিং, 1902 )।
3. ‘হরমোন’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ কী?
উত্তর – ‘হরমোন’ (গ্রিক ‘হরমাও’ শব্দজাত) কথাটির আক্ষরিক অর্থ—উত্তেজিত করা বা জাগ্রত করা।
4. হরমোনের রাসায়নিক প্রকৃতি কীরূপ?
উত্তর – হরমোন প্রোটিন-ধর্মী, স্টেরয়েড-ধর্মী, অ্যামিনো-ধর্মী, জৈব-অম্লধর্মী—বিভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে।
5. হরমোনের পরিণতি কী ?
উত্তর – কাজের শেষে হরমোন নির্দিষ্ট উৎসেচকের ক্রিয়ায় বিনষ্ট হয়। যেমন—সাইটোকাইনিন অক্সিডেজ উৎসেচকটি সাইটোকাইনিনকে কার্য সম্পাদনের পর বিনষ্ট করে।
6. একটি প্রাকৃতিক হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – অক্সিন।
7. উদ্ভিদের ট্রপিক চলনে সহায়ক হরমোনটির রাসায়নিক নাম কী?
উত্তর – ইনডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড (IAA)।
৪. অক্সিনের রাসায়নিক সংকেত কী?
উত্তর – C10H9O2N
9. ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে কোন্ উদ্ভিদ হরমোন সংশ্লেষ করা যায় ?
উত্তর – অক্সিন।
10. উদ্ভিদের অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কোন্ হরমোন ?
উত্তর – অক্সিন হরমোন।
11. কোন্ হরমোন উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ঘটায়?
উত্তর – অক্সিন হরমোন।
12. অক্সিনের কীরূপ ঘনত্বে অভিকর্ষজ চলন ভালো হয়?
উত্তর – মূলে আলোর বিপরীত দিকে অক্সিনের ঘনত্ব বেশি হয়। ফলে মূল আলোর বিপরীত দিকে, অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
13. পাতা বা ফল ঝড়ে যাওয়া রোধ করে কোন্ ফাইটোহরমোন?
উত্তর – অক্সিন।
14. প্রধান জিব্বেরেলিনটির রাসায়নিক সংকেত কী?
উত্তর – প্রধান জিব্বেরেলিনটির (GA3) রাসায়নিক সংকেত C19H22O6
15. টারপিনয়েড গোষ্ঠীভুক্ত একটি অম্লধর্মী উদ্ভিদ হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – জিব্বেরেলিন।
16. জিব্বেরেলিন কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর – জাপানি বিজ্ঞানী এইচি কুরোসাওয়া।
17. জিব্বেরেলিনের প্রাথমিক উৎস কী?
উত্তর – পরিণত বীজ।
18. জিব্বেরেলিন প্রথম কোথা থেকে আবিষ্কৃত হয়?
উত্তর – জিব্বেরেলিন হরমোনটি জিব্বেরেলা ফুজিকুরোই (Gibberella fujikuroi) নামক ছত্রাক থেকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়।
19. ধানগাছের ‘ব্যাকানে’ রোগের কারণ কী?
উত্তর – জিব্বেরেলা ফুজিকুরোই নামক ছত্রাকের সংক্রমণ ও জিব্বেরেলিন হরমোনের অধিক উৎপাদনের প্রভাবে ধানের ‘ব্যাকানে’ রোগ দেখা দেয়।
20. জিব্বেরেলিন কোন্ উদ্ভিদ কলা দিয়ে পরিবাহিত হয় ?
উত্তর – জিব্বেরেলিন জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক জটিল স্থায়ী কলার মাধ্যমে যথাক্রমে ঊর্ধ্ব ও নিম্ন উভয় দিকেই পরিবাহিত হয়।
21. বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গকারী প্রধান হরমোনটির নাম কী?
উত্তর – জিব্বেরেলিন বা জিব্বেরেলিক অ্যাসিড (GA)।
22, পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কোন্ হরমোন?
উত্তর – জিব্বেরেলিন হরমোন।
23. ফলের আকার ও সংখ্যা বৃদ্ধি করে কোন্ হরমোনটি?
উত্তর – জিব্বেরেলিন নামক হরমোন।
24. একটি ক্ষারধর্মী উদ্ভিদ হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – সাইটোকাইনিন বা কাইনিন।
25. সাইটোকাইনিনের রাসায়নিক নাম কী?
উত্তর – 6-ফুরফুরাইল অ্যামিনোপিউরিন।
26. উদ্ভিদে পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটিয়ে ঝোপের সৃষ্টিতে সাহায্য করে কোন্ হরমোন?
উত্তর – সাইটোকাইনিন।
27. সাইটোকাইনিনের রাসায়নিক সংশ্লেষ কী থেকে হয় ?
উত্তর – সাইটোকাইনিন পিউরিন গোত্রভুক্ত নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক
অ্যাডেনিন থেকে উদ্ভূত হয়।
28. একটি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারীয় প্রকৃতির উদ্ভিদ হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – সাইটোকাইনিন।
29. সাইটোকাইনিন বা কাইনিনের রাসায়নিক সংকেত লেখো।
উত্তর – C10H9N5O
30. একটি প্রাকৃতিক সাইটোকাইনিনের নাম বলো।
উত্তর – কাইনেটিন।
31. কোন্ উদ্ভিদ হরমোন উদ্ভিদের বার্ধক্যপ্রাপ্তিকে বিলম্বিত করে?
উত্তর – সাইটোকাইনিন।
32. ডাবের জলে কোন্ উদ্ভিদ হরমোন পাওয়া যায়?
অথবা, নারকেলের তরল সস্যে কোন্ হরমোন পাওয়া যায়?
উত্তর – সাইটোকাইনিন।
33. বৃদ্ধিরোধক একটি উদ্ভিদ হরমোনের নাম লেখো।
উত্তর – অ্যাবসিসিক অ্যাসিড (ABA)।
34. অ্যান্টিজিব্বেরেলিন কাকে বলে?
উত্তর – অ্যাবসিসিক অ্যাসিডের ক্রিয়া জিব্বেরেলিনের বিপরীতধর্মী হওয়ার কারণে একে অ্যান্টিজিব্বেরেলিন বলা হয়।
35. গোলাপ, জবা প্রভৃতির শাখাকলম তৈরিতে কোন্ সংশ্লেষিত হরমোন ব্যবহার করা হয়?
উত্তর – কৃত্রিম অক্সিন।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. উদ্ভিদের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক ও সহায়ক পদার্থ হল …………..।
উত্তর – হরমোন
2. উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্রধান রাসায়নিক সমন্বয়কারী হল ………….।
উত্তর – হরমোন
3. প্রথম আবিষ্কৃত উদ্ভিদ হরমোনটি হল …………..।
উত্তর – অক্সিন
4. ……….. হল একটি নাইট্রোজেনঘটিত হরমোন।
উত্তর – অক্সিন
5. ………… হল উদ্ভিদের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন।
উত্তর – অক্সিন
6. অক্সিনের স্বল্প ঘনত্বে ………… বেশি বৃদ্ধি পায়।
উত্তর – মূল
7. ফুলের ডিম্বাশয়ে ……….. হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা ফলে পরিণত হয়।
উত্তর – অক্সিন
৪. অক্সিন ………. কলা গঠনের মাধ্যমে উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধি ঘটায়।
উত্তর – ক্যামবিয়াম
9. ……….. প্রয়োগে কচি আম ঝরে পড়ে না।
উত্তর – IAA
10. পরাগযোগ ও নিষেকের পর ডিম্বাশয়ে ……….. হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
উত্তর – অক্সিন
11. উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের কোশগুলির বিভাজনে ………. হরমোন সহায়তা করে।
উত্তর – অক্সিন
12. বৃদ্ধিরোধক একটি হরমোন হল ………।
উত্তর – অ্যাবসিসিক অ্যাসিড
13. ফ্লোরিজেন হল একটি ……….. হরমোন।
উত্তর – প্রকল্পিত
14. অক্সিন হরমোনের রাসায়নিক নাম হয় ………।
উত্তর – ইনডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড
15. উইডিসাইড হরমোন বলা হয় কৃত্রিম …….. -কে ।
উত্তর – অক্সিন
16. বীজের সুপ্তাবস্থা দূরীকরণ দ্বারা অঙ্কুরোদ্গমে সাহায্য করে ……… ।
উত্তর – জিব্বেরেলিন
17. জিব্বেরেলিন ……….. ভাজক কলাকোশের বিভাজন ঘটিয়ে কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে।
উত্তর – নিবেশিত
18. ……… হরমোনের প্রভাবে বংশগতভাবে খর্ব উদ্ভিদের কাণ্ডের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়।
উত্তর – জিব্বেরেলিন
19. বীজপত্র ও ভ্রূণে প্রাপ্ত হরমোনটি হল ………।
উত্তর – জিব্বেরেলিন
20. ভুট্টার সস্যে প্রাপ্ত হরমোনটি হল ……….।
উত্তর – সাইটোকাইনিন
21. অক্সিনের বিপরীত ক্রিয়া করে ……… নামক হরমোনটি।
উত্তর – সাইটোকাইনিন
22. কোশ বিভাজনের সাইটোকাইনেসিস দশা ……… হরমোনের প্রভাবে দ্রুত সংঘটিত হয়।
উত্তর – সাইটোকাইনিন
23. সাইটোকাইনিন ……… জাতীয় নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারীয় জৈব পদার্থ।
উত্তর – পিউরিন
24. উদ্ভিদদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো সজীব পদার্থে সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে পাতাটির ক্লোরোফিল দেরিতে বিনষ্ট হয়। একে ……… প্রভাব বলে।
উত্তর – রিচমন্ড ল্যাং
25. ……….. হরমোন উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
উত্তর – ফ্লোরিজেন
26. ……….. নামক গ্যাসীয় হরমোন ফল পাকাতে সাহায্য করে।
উত্তর – ইথিলিন
