wb 10th Sst

WBBSE 10th Class Social Science Solutions History Chapter 8 উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭-১৯৬৪ খ্রি.)

WBBSE 10th Class Social Science Solutions History Chapter 8 উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭-১৯৬৪ খ্রি.)

West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions History Chapter 8 উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭-১৯৬৪ খ্রি.)

West Bengal Board 10th History Solutions

একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি

  1. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ভারতের অন্তত ৪০ শতাংশ ভূখণ্ডে কিছু স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। দেশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত এই রাজ্যগুলি ‘দেশীয় রাজ্য’ নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৬০০-রও বেশি। এর মধ্যে আয়তনে বড়ো ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি রাজ্য ছিল হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, বরোদা এবং জম্মু-কাশ্মীর।
  2. দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ গঠন করে। এর দায়িত্ব পান সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
  3. প্যাটেলের দৃঢ় মনোভাব এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেননের কূটকৌশলে স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে জুনাগড়, কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদ ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে। শেষপর্যন্ত জুনাগড় গণভোটের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
  4. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশীয় রাজ্য কাশ্মীরের হিন্দু রাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষায় আগ্রহী হলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর পাক-মদতপুষ্ট হানাদার বাহিনী ও সেনাদল কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে। এই অবস্থায় হরি সিং ২৬ অক্টোবর ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করে।
  5. হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে ভারতীয় বাহিনী পাক হানাদারদের বিতাড়িত করে কাশ্মীরের ভূখণ্ডের ২/৩ অংশ ভূখণ্ড দখল করে। সেখানকার ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’ দলের নেতা শেখ আবদুল্লা ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা দখল করেন।
  6. পাকিস্তান তাদের দখলে থাকা কাশ্মীরের অংশটিকে ‘আজাদ কাশ্মীর’ নাম দিয়ে সেখানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করে। জাতিপুঞ্জ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ‘যুদ্ধবিরতি সীমারেখা’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’-তে পরিদর্শক নিয়োগ করে।
  7. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের ৮৭ শতাংশ জনগণ হিন্দু হলেও সেখানকার শাসক ওসমান আলি খান ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। সেখানকার সাম্প্রদায়িক নেতা কাশিম রেজভির নেতৃত্বে হিন্দুদের ওপর প্রবল নির্যাতন শুরু হয়। এই অবস্থায় জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে অভিযান (১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খ্রি.) চালায়। এই অভিযান ‘অপারেশন পোলো’ নামে পরিচিত। ভারতীয় বাহিনীর কাছে পর্যুদস্ত হয়ে হায়দ্রাবাদের বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাধ্য হয়ে ওসমান আলি খান ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে হায়দ্রাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  8. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের আবির্ভাব ঘটে।
  9. ভারত বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্জাব এবং বাংলা প্রদেশও দ্বিখণ্ডিত হয়ে পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের এবং পূর্ব পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  10. দেশভাগের পর থেকে পশ্চিম পাঞ্জাবের অগণিত সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখ এবং পূর্ববঙ্গের (পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল) অগণিত সংখ্যালঘু হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা ‘দিল্লি চুক্তি’ (১৯৫০) খ্রি.) স্বাক্ষরিত হলেও সমস্যার তীব্রতা মোটেই হ্রাস পায়নি।
  11. উদ্বাস্তু সমস্যার কথা রয়েছে, এমন উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল— [i] প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর ‘দ্য মার্জিনাল মেন’, [ii] শ্রীহিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উদ্বাস্তু’, [iii] রণজিত রায়ের ‘ধ্বংসের পথে পশ্চিমবঙ্গ’, [iv] শঙ্খ ঘোষের ‘সুপুরিবনের সারি’, [v] সেলিনা হোসেনের ‘যাপিত জীবন’, [vi] মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতার ‘স্বাদ’, [vii] আবু ইসহাক-এর ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’, [vili] জ্যোতির্ময়ী দেবীর ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’, [ix] দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’, [x] অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’, [xi] প্রফুল্ল রায়ের ‘কেয়া পাতার নৌকা’, [xii] সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ প্রভৃতি।
  12. ভারতের গণপরিষদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বিচারপতি এস কে দর-এর নেতৃত্বে ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’ গঠন করে। এই কমিশন ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে আপত্তি জানালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
  13. স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের নীতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে কংগ্রেস ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জে ভি পি কমিটি গঠন করে। এর সদস্য ছিলেন জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পটভি সীতারামাইয়া। এই কমিটিও ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিপক্ষে মত দেয়।
  14. তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পত্তি শ্রীরামুলু ৫৮ দিন অনশনের পর মারা যান। এই ঘটনায় তেলুগু অঞ্চলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়লে কেন্দ্রীয় সরকার মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চলগুলিকে একত্রিত করে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ (১৯৫৩ খ্রি.) রাজ্য গঠন করে। অন্যদিকে তামিল ভাষীদের নিয়ে তৈরি হয় তামিলনাড়ু রাজ্য।
  15. স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণের নীতি তৈরির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ফজল আলি এবং অপর দুজন সদস্য ছিলেন কে এম পানিকার ও হৃদয়নাথ
  16. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করলে কেন্দ্রীয় আইনসভা ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ (১৯৫৬ খ্রি.) পাস করে। সেই অনুসারে ভারত সরকার ভাষাভিত্তিক ১৪টি নতুন রাজ্য ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করে।
  17. ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় সংবিধানে দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হিন্দি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘সরকারি ভাষা কমিশন’ গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘সরকারি ভাষা আইন’ পাস করে।

TOPIC – A দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. * ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ ভারতে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছিল?
উত্তর – দেশভাগের ফলে সৃষ্ট সমস্যা
ভূমিকা: ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৯৪৭ খ্রি.) অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নাম দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। নবগঠিত ভারত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন হয়।
  1. দেশত্যাগ: দেশভাগের পর মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পৃথক পাকিস্তানের সৃষ্টি হলে সেখানে হিন্দু, শিখ প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, ধর্ম ও সম্পত্তি নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়। ফলে পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও শিখ দেশত্যাগ করে ভারতে চলে আসে।
  2. উদ্বাস্তু সমস্যা: পূর্ব পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা ভারত সরকারের সামনে কঠিন সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, পাঞ্জাব প্রভৃতি রাজ্যে উদ্বাস্তু সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
  3. সম্পদ হ্রাস: দেশভাগের ফলে ভারতের অর্থ, সম্পদ, সামরিক শক্তি প্রভৃতির একটি বড়ো অংশ পাকিস্তানে চলে যায়। ফলে ভারতের অর্থ ও সম্পদ যথেষ্ট হ্রাস পায় এবং দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।
  4. কৃষি উৎপাদন ব্যাহত: দেশভাগের ফলে ভারতের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পাকিস্তানের ভাগে পড়ে যায়। ফলে স্বাধীনতার পর ভারতের কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয় এবং দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়।
  5. শিল্পের কাঁচামালের অভাব: ভারতের পাট, তুলো প্রভৃতি কাঁচামাল উৎপাদক অঞ্চলের একটি বড়ো অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে ভারতে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব দেখা যায়। ফলে শিল্প উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয়।

উপসংহার: দেশভাগের ফলে যে তীব্র সংকটের সৃষ্টি হবে তা এদেশের হিন্দু ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের কল্পনার বাইরে ছিল না। তা সত্ত্বেও দেশভাগের বিষয়ে তাঁরা দ্রুত সম্মতি দেন। এর ফলে অনেকে অভিযোগ করেন যে, ক্ষমতালিপ্সাই দ্রুত দেশভাগের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কারণ। ঐতিহাসিক সুচেতা মহাজন তাঁদের ‘ইন্ডিয়াজ স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম’ গ্রন্থে বলেছেন যে, “তাড়াতাড়ি ও সহজে ক্ষমতা পাওয়ার লালসা থেকেই নেহরু ও প্যাটেল দেশভাগ মেনে নিয়েছিলেন।

2. *ভারতে যোগদানের আগে দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল ?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনাঞ্চল ছাড়াও ছোটোবড়ো মিলিয়ে অন্তত ৬০০টি দেশীয় রাজ্য অবস্থিত ছিল। রাজ্যগুলির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি।
  1. মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব: ‘মন্ত্রী মিশন’ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে (১৬ মে) ঘোষণা করে যে, [i] ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির ওপর ব্রিটিশ আধিপত্যের অবসান ঘটবে। [ii] স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি ‘ভারতীয় ইউনিয়ন’ গঠন করা হবে। [iii] বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়গুলি ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দেশীয় রাজ্যগুলিতে নিজ নিজ শাসকদের অধিকার বজায় থাকবে।
  2. ভারতের স্বাধীনতা আইন: ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’ (৪ জুলাই, ১৯৪৭ খ্রি.)-এ দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজ নিজ স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অথবা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো একটি রাষ্ট্রে ইচ্ছানুসারে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়।
  3. কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি: জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন ঘোষণা করে যে, স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করবে না। জুলাই মাসে কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দায়িত্বে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ খোলা হয়। এই দপ্তরের মাধ্যমে ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়।

উপসংহার: ভারতীয় নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার পূর্বেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভারতের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্য পাকিস্তানে যোগ দিলে বা স্বাধীন থাকলে তা স্বাধীন ভারতে সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক হবে। তাই বলা যায়, এই রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ভারতের ‘রক্ত ও লৌহ’ নীতি একান্তই অপরিহার্য ছিল।

3. * ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলির বৈশিষ্ট্য
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনাল ছাড়াও ছোটোবড়ো মিলিয়ে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল—
  1. সংখ্যাধিক্য: স্বাধীনতা লাভের সময়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে অন্তত ৬০০টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থিত ছিল।
  2. আয়তন: দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকাংশই ছিল আয়তনে ক্ষুদ্র। কোনো কোনো রাজ্যকে শুধু জমিদারের শাসন এলাকা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। আবার কয়েকটি দেশীয় রাজ্যের আয়তন যথেষ্টই বড়ো ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হায়দ্রাবাদ, জম্মু ও কাশ্মীর, মহীশূর ও বরোদা।
  3. স্বৈরশাসন: দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকরা ছিলেন রাজ্যের চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। আইনের ঊর্ধ্বে থাকা এই শাসকরা নিজ নিজ রাজ্যে স্বৈরশাসন চালাতেন। একমাত্র ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্যকেই তাঁরা প্রাধান্য দিতেন।
  4. প্রজাদের দুর্দশা: দেশীয় রাজ্যগুলির প্রজাদের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। তাদের ওপর করের বিপুল বোঝা চেপে বসেছিল।
  5. পশ্চাদগামিতা: বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্যই ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক, শিক্ষাগত প্রভৃতি দিক থেকে পিছিয়ে-পড়া অঞ্চল। দারিদ্র্য আর অশিক্ষা এইসব রাজ্যকে গ্রাস করে রেখেছিল।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’-এ দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অথবা ভারত বা পাকিস্তানের যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়। সেই অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পরবর্তীকালে দেশীয় রাজ্যগুলি পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করে।

4. * স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে ভারত কীরূপ নীতি বা উদ্যোগ গ্রহণ করে?
উত্তর – দেশীয় রাজ্য সম্পর্কে ভারতের উদ্যোগ
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্‌-মুহূর্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় শাসকদের শাসনাধীনে অন্তত ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এ ছাড়া পোর্তুগাল, ফ্রান্স প্রভৃতি কয়েকটি রাষ্ট্রের উপনিবেশও ভারতে ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর স্বাধীন সরকার এসব স্থান ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে।
  1. কংগ্রেসের ঘোষণা: স্বাধীনতা লাভের আগেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন। তাঁরা ১৫ জুন (১৯৪৭ খ্রি.) ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব কংগ্রেস স্বীকার করবে না। ফ্রান্স এবং পোর্তুগালের ভারতীয় উপনিবেশগুলির বিষয়েও কংগ্রেস একই নীতি গ্রহণ করে।
  2. বল্লভভাই প্যাটেলের সক্রিয়তা: স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভগ্গলা পঙ্গুন্নি মেনন (ভি পি মেনন) দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। প্যাটেল ভারতভুক্তির বিনিময়ে দেশীয় রাজ্যের শাসকদের বিপুল ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুবিধা দানের প্রলোভন দেখান।
  3. ভারতভুক্তি: বল্লভভাই প্যাটেলের কূটনৈতিক চাপ ও হুমকির ফলে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথমদিকে, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর ভারতে যোগদানে অস্বীকার করলেও শেষপর্যন্ত ভারতের চাপে তারা যোগদানে বাধ্য হয়। বেশ কিছু বছর পরে সিকিমও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেয়।
  4. অন্যান্য উপনিবেশ: ভারতের চাপে চন্দননগর, মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ এবং গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশও ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

উপসংহার: স্বাধীন ভারতের সার্বভৌমত্বের কথা ভেবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা, কূটনৈতিক চাপ, রক্ত ও লৌহ নীতি, সামরিক অভিযান প্রভৃতি নানান ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

5. ভারতের স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের কী মনোভাব ছিল?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাৱ
ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় থাকবে, না তারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেবে সে বিষয়ে স্বাধীনতা লাভের আগেই বিতর্ক দেখা দেয়। জাতীয় কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করে।
  1. হরিপুরা কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত: জাতীয় কংগ্রেস ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে জানায় যে, দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
  2. গান্ধিজির নীতি: কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধি মনে করতেন যে, ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কোনো দেশীয় রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তা হবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য।
  3. নেহরুর নীতি: কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু বলেন যে, ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করা হবে না।
  4. কংগ্রেসের ঘোষণা: জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব ভারত স্বীকার করবে না।

উপসংহার: স্বাধীনতা লাভের পূর্বে জাতীয় কংগ্রেস অখন্ড ভারতের কথা ঘোষণা করেছিল। সেই অনুসারে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ভারতীয় ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করে। স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির চেষ্টা চালায়।

6. * দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কী ভূমিকা ছিল ?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকা
ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু এবং মহাত্মা গান্ধি ইঙ্গিত দেন যে, স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব ভারত সরকার মেনে নেবে না। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
  1. কঠোর মনোভাব: ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতে যোগদানে বাধ্য করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কঠোর ও অনমনীয় মনোভাব গ্রহণ করেন।
  2. কূটনৈতিক চাপ: প্যাটেল বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে নানা কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি তাঁর সচিব ভি পি মেননকে বলেন যে, আমরা দ্রুততার সঙ্গে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা দেশীয় রাজ্যগুলির দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
  3. সামরিক হুমকি: সর্দার প্যাটেল কোনো কোনো দেশীয় রাজ্যকে সামরিক অভিযানের কথা বলে ভারতে যোগদানে বাধ্য করেন।
  4. অভিযান: সর্দার প্যাটেল শেষপর্যন্ত কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, জুনাগড় প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্যগুলির ওপর সামরিক অভিযান চালিয়ে রাজ্যগুলি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন।

উপসংহার: দেশীয় রাজ্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যে স্বাধীন ভারত গড়ে ওঠে তাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অনমনীয় মনোভাব, প্রখর কূটনৈতিক বুদ্ধি, সামরিক অভিযান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর কঠোর ‘রক্ত ও লৌহ’ নীতির চাপেই বহু রাজ্য ভারতভুক্তির দলিলে সই করতে বাধ্য হয়।

7. * দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভারতের উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল? অথবা, ভারত কী কারণে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য
ভূমিকা: স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অন্তত ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এসব রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল। যেমন-
  1. জাতীয়তাবাদ: ব্রিটিশ শাসনকালে ব্রিটিশ-ভারত এবং দেশীয় রাজ্যগুলির জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ব্রিটিশ বিরোধিতায় শামিল হয়। অর্থাৎ তারা ভারতবর্ষের মূল জাতীয়তাবাদী স্রোতের সঙ্গেই ছিলেন। অন্যদিকে ভারতের অখন্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জাতীয় নেতৃবৃন্দও দেশীয় রাজ্যগুলির জনগণের এই স্বাধীনতার স্পৃহাকে সম্মান করতেন। তাঁরা বিচ্ছিন্ন স্বাধীন ভারতের কথা কল্পনা করতেন না। তাই তাঁরা চেয়েছিলেন দেশীয় রাজ্যগুলি মূল ভারত ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত
  2. ঐতিহ্যের সংকট: ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত ব্রিটিশ- ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলি দীর্ঘদিন ধরে একই ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তাই জাতীয় নেতৃবৃন্দ ভেবেছিলেন, দেশীয় রাজ্যগুলি স্বাধীন হলে তা ইতিহাস ও ঐতিহ্য-বিরোধী হবে।
  3. প্রজা আন্দোলন: বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দাবিতে শক্তিশালী প্রজা আন্দোলন শুরু হয়। ফলে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।
  4. পশ্চাদ্‌গামিতা: দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকাংশই ছিল পশ্চাদগামি ও কুসংস্কারাচ্ছান্ন। স্বৈরাচারী শাসন ও মধ্যযুগীয় ভাবধারায় আচ্ছন্ন এসব রাজ্যের মানুষ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পশ্চাদ্‌গামিতা থেকে মুক্তি চাইছিল।

উপসংহার: অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ফলে একদিকে যেমন ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি ভারতীয়দের মনে ‘ভারতবোধ’-এর চেতনা জেগে উঠেছে।

8. * ভারতের সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিকরণের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়?
উত্তর – ভারতের সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিকরণের পদ্ধতি
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার সক্রিয় উদ্যোগ নেয়। এই সংযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত কয়েকটি পদ্ধতি গ্রহণ করে।
  1. প্রদেশগুলির সঙ্গে সংযুক্তি : কিছু কিছু দেশীয় রাজ্যকে তাদের সন্নিহিত ভারতীয় প্রদেশগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেমন—মাদ্রাজের রাজ্যগুলিকে মাদ্রাজ প্রদেশের সঙ্গে, পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে উড়িষ্যা ও মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে, দাক্ষিণাত্য ও গুজরাটের রাজ্যগুলিকে বোম্বাই প্রদেশের সঙ্গে, গাড়োয়াল, রামপুর ও বেনারসকে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে, কোচবিহারকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে, খাসি পার্বত্য অঞ্চলকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এইভাবে ২১৬টি দেশীয় রাজ্য পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়।
  2. যুক্তরাজ্য গঠন: ২৭৮টি দেশীয় রাজ্যকে নিয়ে ৮টি প্রদেশ গঠন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জম্মু-কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ ও মহীশূর। অবশিষ্ট ২৭৫টি দেশীয় রাজ্যকে অন্যান্য ৫টি প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহৎ রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এই ৫টি প্রদেশ হল রাজস্থান, মধ্যভারত, সৌরাষ্ট্র, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন ও পেপসু’।
  3. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল : হিমাচল প্রদেশ, বিলাসপুর, ভূপাল, কচ্ছ, ত্রিপুরা, মণিপুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করে সেগুলি কেন্দ্রীয় শাসনাধীনে রাখা হয়। এরূপ ৬১টি দেশীয় রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।

উপসংহার: দেশীয় রাজ্যগুলিকে স্বাধীন ভারতে সংযুক্তিকরণের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। একাজে তাঁকে যোগ্য সহায়তা প্রদান করেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেনন।

9. * ভারত কবে স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়? এই সময় ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়?
উত্তর – স্বাধীন ভারত ও তার অঙ্গরাজ্য
ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের নিজস্ব সংবিধান চালু হয়। এই সময় থেকে ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই সময় ভারতের রাজ্যগুলিকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যথা—
  1. ‘ক’ শ্রেণি : গভর্নরশাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে মোট ৯টি রাজ্য ছিল। যথা—[i] পশ্চিমবঙ্গ, [ii] আসাম, [iii] বিহার, [iv] উড়িষ্যা, [v] উত্তরপ্রদেশ, [vi] মধ্যপ্রদেশ, [vii] বোম্বাই, [viii] মাদ্রাজ ও [ix] পাঞ্জাব।
  2. ‘খ’ শ্রেণি : রাজা বা ওই ধরনের শাসক দ্বারা শাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে মোট ৮টি রাজ্য ছিল। যথা—[i] হায়দ্রাবাদ, [ii] মধ্যভারত, [iii] মহীশূর [iv] পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন (PEPSU), [v] জম্মু ও কাশ্মীর, [vi] রাজস্থান, [vii] সৌরাষ্ট্র, [viii] ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন।
  3. ‘গ’ শ্রেণি : কমিশনারশাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে মোট ১০টি রাজ্য ছিল। যথা—[i] আজমীর, [ii] ভূপাল, [iii] বিলাসপুর, [iv] হিমাচল প্রদেশ, [v] কচ্ছ, [vi] কুর্গ, [vii] দিল্লি, [viii] মণিপুর, [ix] ত্রিপুরা ও [x] বিন্ধ্য প্রদেশ।
  4. ‘ঘ’ শ্ৰেণি: কেন্দ্রশাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে ছিল দুটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য। যথা—[i] আন্দামান ও [ii] নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

উপসংহার: ভারত স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর এদেশে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনকাঠামো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগের অঙ্গরাজ্যগুলি স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার পায়।

10. *স্বাধীন ভারত সরকার দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির পদক্ষেপ
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনের বাইরে অন্তত ৫৬৫টি রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি দেশীয় রাজ্য নামে পরিচিত।
‘ভারতের স্বাধীনতা আইন'(১৯৪৭ খ্রি.) অনুসারে এই রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকার অথবা ভারত ও পাকিস্তানের যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার অধিকার পায়।
  1. ভারতের উদ্যোগ : ভারতের অখণ্ডতা, জাতীয় সংহতি, নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রভৃতির প্রয়োজনে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারত নিজের অন্তর্ভুক্ত করার বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করে। ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’-এর দায়িত্বে থাকা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এই বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।
  2. সাফল্য ও সমস্যা : ভারতের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগ দেয়। তবে জুনাগড়, কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদ ভারতে যোগদানে অনাগ্রহ দেখালে ভারতের অখণ্ডতা ও ঐক্য সমস্যার সম্মুখীন হয়।
  3. জুনাগড়ের অন্তর্ভুক্তি : হিন্দু-অধ্যুষিত দেশীয় রাজ্য জুনাগড় পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে প্রজাবিদ্রোহের চাপে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশ করে এবং সেখানকার মানুষের গণভোটের সম্মতির দ্বারা জুনাগড় ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
  4. কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি : মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীরের হিন্দু মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষায় তৎপর হলে পাক সেনা ও হানাদারবাহিনী কাশ্মীরে ঢুকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  5. হায়দ্রাবাদের অন্তর্ভুক্তি : হায়দ্রাবাদ নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি করে এবং রাজ্যের অভ্যন্তরে ও সীমান্ত এলাকায় হিন্দুদের ওপর তীব্র নির্যাতন শুরু করে। ফলে হায়দ্রাবাদে ভারতীয় সেনার অভিযান শুরু হয়। হায়দ্রাবাদ আত্মসমর্পণে বাধ্য হলে রাজ্যটি ভারতের দখলে আসে।

উপসংহার: স্বাধীনতা লাভের পর অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ভারত রাষ্ট্রের ভৌগোলিক আয়তন, জনবল, প্রাকৃতিক সম্পদ প্রভৃতি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এসবের ওপর ভর করে ভারত শীঘ্রই এশিয়ার অন্যতম শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

11. ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়নে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল? 
উত্তর – দেশীয় রাজ্য সম্পর্কে ভারতের উদ্যোগ
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্-মুহূর্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় শাসকদের শাসনাধীনে ৫০০-রও বেশি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এ ছাড়া পোর্তুগাল, ফ্রান্স প্রভৃতি কয়েকটি রাষ্ট্রের উপনিবেশও ভারতে ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর এসব স্থানকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
  1. কংগ্রেসের ঘোষণা : স্বাধীনতা লাভের আগেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। তারা ১৫ জুন (১৯৪৭ খ্রি.) ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব কংগ্রেস স্বীকার করবে না। ফ্রান্স এবং পোর্তুগালের ভারতীয় উপনিবেশগুলি সম্পর্কেও কংগ্রেস একই নীতি গ্রহণ করে।
  2. বল্লভভাই প্যাটেলের সক্রিয়তা : স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেনন দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। প্যাটেল ভারতভুক্তির বিনিময়ে দেশীয় রাজ্যের শাসকদের বিপুল ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুবিধা দানের প্রলোভন দেখান।
  3. ভারতভুক্তি: বল্লভভাই প্যাটেলের কূটনৈতিক চাপ ও হুমকির ফলে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ৩ সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথমদিকে, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর ভারতে যোগদানে অস্বীকার করলেও শেষপর্যন্ত ভারতের চাপে তারা যোগদানে বাধ্য হয়। সিকিমও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যোগ দেয়।
  4. অন্যান্য উপনিবেশ: ভারতের চাপে চন্দননগর, মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ এবং গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
12. দেশীয় রাজ্য জুনাগড় কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়?
উত্তর – জুনাগড়ের ভারতভুক্তি
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদান করলেও কয়েকটি রাজ্য ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে অবস্থিত জুনাগড়।
  1. সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি: দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু সেখানকার মুসলিম নবাব জুনাগড়কে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেন। জুনাগড়ের দেওয়ান শাহনওয়াজ ভুট্টো-ও ছিলেন মুসলিম লিগের উগ্র সমর্থক।
  2. প্ৰজাবিদ্ৰোছ: জুনাগড়ের নবাব রাজ্যটিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইলে সেখানকার অ-মুসলিম প্রজাদের মধ্যে প্রবল গণবিক্ষোভ ও ব্যাপক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।
  3. সেনা অভিযান : জুনাগড়ে তীব্র প্রজাবিদ্রোহের ফলে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সেনাবাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে।
  4. গণভোট: জুনাগড়ের বাসিন্দারা ভারত, না পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহী তা জানার জন্য সেখানে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণভোট নেওয়া হয়। গণভোটে সেখানকার মানুষ ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দেয়।
  5. ভারতে যোগদান : গণভোটের পর জুনাগড় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে (জানুয়ারি) ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উপসংহার: জুনাগড়ের ভারতে অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশীয় রাজ্য দখলে এনে পাকিস্তানের শক্তিবৃদ্ধির প্রয়াস ধাক্কা খায়। এতে ভারতের সুবিধা হয়।

13. * কাশ্মীর সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, কাশ্মীর কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়? অথবা, কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়?
উত্তর – কাশ্মীর সমস্যা/কাশ্মীরের ভারতভুক্তি
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতীয় ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য দেশীয় রাজ্য ছিল কাশ্মীর। ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে উদ্যোগী হন।
  1. জটিলতা: কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং হিন্দু হলেও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। এই অবস্থায় মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করলে পাকিস্তান ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে, ফলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  2. পাক হানা : পাক মদতপুষ্ট হানাদারবাহিনী ও পাক সেনাদল কাশ্মীরে প্রবেশ করে (২২ অক্টোবর, ১৯৪৭ খ্রি.) সেখানে ব্যাপক হত্যালীলা, লুণ্ঠন ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে মহারাজা হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সামরিক সহায়তা প্রার্থনা করে।
  3. ভারতভুক্তির দলিল স্বাক্ষর: কাশ্মীরের সামরিক সহায়তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার জানিয়ে দেয় যে, মহারাজা ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে তবেই তারা কাশ্মীরে সেনা পাঠাবে। এদিকে পাকবাহিনী কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থান দ্রুত দখল করতে থাকলে মহারাজা হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করেন।
  4. ভারতের অভিযান: হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করার পরের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে দ্রুত কাশ্মীরের ২/৩ অংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়। এই বাহিনীর সহায়তায় ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা দখল করেন।

উপসংহার: পাকিস্তান মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীরকে নিজেদের দখলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতের ‘রক্ত ও লৌহ’ নীতি ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং-এর উদ্যোগের ফলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু কাশ্মীর না পাওয়ার হতাশা থেকে পাকিস্তান আজও ভারতে বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

14. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদ রাজ্যের পরিচয় দাও।
উত্তর – হায়দ্রাবাদ রাজ্যের পরিচয়
ভূমিকা: দিল্লির মুঘল দরবারের তুরানি গোষ্ঠীর নেতা মির করমউদ্দিন চিন কিলিচ খাঁ ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় হায়দ্রাবাদের প্রধান কয়েকটি পরিচয় নীচে উল্লেখ করা হল—
  1. সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য : হায়দ্রাবাদ ছিল ভারতীয় ভূখণ্ডের সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য। এর আয়তন ছিল ২১২ হাজার বর্গকিলোমিটার।
  2. জনসংখ্যা: স্বাধীনতার প্রাক্কালে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১.৭ কোটি। এর মধ্যে অন্তত ৮৭ শতাংশই ছিল হিন্দু অথচ এখানকার শাসক অর্থাৎ নিজাম ওসমান আলি খান ছিলেন মুসলিম।
  3. স্বাধীনতা রক্ষার প্রচেষ্টা : নিজাম ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে এক ঘোষণার দ্বারা জানান যে, ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পর স্বাধীন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। সেই অনুসারে, ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর হায়দ্রাবাদের নিজাম এবং অভিজাত মুসলিমরা ভারত বা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রে যোগ দিতে অস্বীকার করে।

উপসংহার: হায়দ্রাবাদের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই ছিল যে হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে না এলে ভারতের সার্বভৌমত্ব, যোগাযোগ প্রভৃতি ব্যাহত হত। তাই হায়দ্রাবাদ পাকিস্তানে যোগদানের চেষ্টা করলে ভারত সামরিক অভিযান চালিয়ে রাজ্যটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে।

15. * ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদ সম্পর্কে ভারত সরকার ও হায়দ্রাবাদের নিজামের মধ্যে কী ধরনের নীতিগত সম্পর্ক দেখা যায় ?
উত্তর – হায়দ্রাবাদ সম্পর্কে নীতি
ভূমিকা: ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করার সময় ভারতীয় ভূখণ্ডে যে অসংখ্য দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল সেগুলির মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ ছিল হায়দ্রাবাদ। এখানকার শাসক মুসলিম হলেও জনসংখ্যার অন্তত ৮৭ শতাংশই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদ সম্পর্কে ভারত সরকার ও হায়দ্রাবাদের নিজামের নীতি পরস্পর থেকে পৃথক ছিল।
  1. হায়দ্রাবাদের নীতি : ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদের নিজাম এবং সেখানকার অভিজাত মুসলিম সম্প্রদায় হায়দ্রাবাদকে ভারত বা পাকিস্তান—কোনো রাষ্ট্রেরই অন্তর্ভুক্ত না করে হায়দ্রাবাদকে একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। নিজাম ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর হায়দ্রাবাদ একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
  2. ভারতের নীতি : ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের পৃথক ও স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। কেননা, [i] হায়দ্রাবাদ ছিল ভারতের মধ্যভাগে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। [ii] হায়দ্রাবাদের মধ্য দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ও সড়কপথ ছিল। [iii] হায়দ্রাবাদের মানুষ ও ইতিহাস রাজ্যটির ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দেয়। এসব কারণে হায়দ্রাবাদ রাজ্যটির স্বাধীন অস্তিত্বের বিরোধিতা করে ভারত সরকার রাজ্যটিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়।

উপসংহার: হায়দ্রাবাদের নিজাম মুসলিম হলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজা ছিল হিন্দু। তাই নিজাম হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চাইলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজারা চেয়েছিল হায়দ্রাবাদ ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হোক। সামরিক অভিযান চালিয়ে ভারতে হায়দ্রাবাদের প্রজাদের ইচ্ছাকেই পূর্ণতা দিয়েছিল।

16. *ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি উল্লেখ করো।
উত্তর – হায়দ্রাবাদ রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি
ভূমিকা: ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’-এর দ্বারা ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের ইচ্ছানুসারে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের অথবা নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অধিকার পায়। এই অবস্থায় ভারতের সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই ভারত ও হায়দ্রাবাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে।
  1. তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ: হায়দ্রাবাদ রাজ্যের তেলেঙ্গানা অঞ্চলের কৃষকরা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ শুরু করলে কাশিম রিজভি-র নেতৃত্বে মুসলিম রাজাকার বাহিনী তেলেঙ্গানার গ্রামে গ্রামে চরম অত্যাচার চালাতে থাকে।
  2. রাজনৈতিক দলের ভূমিকা: ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের হায়দ্রাবাদ শাখা হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। অবশ্য কমিউনিস্ট দলগুলি প্রথমদিকে কংগ্রেসের পক্ষে থাকলেও হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির বিষয়ে তারা কংগ্রেসের বিরোধিতা করে।
  3. স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা : হায়দ্রাবাদ নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে রাজ্যের ভেতরে এবং ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে হিন্দুদের ওপর ক্রমাগত অত্যাচার চালাতে থাকে। নিজাম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি করে এবং ভারতের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জে অভিযোগ জানিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলেন।
  4. পারস্পরিক অভিযোগ : অবশেষে ভারত ও হায়দ্রাবাদের মধ্যে স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু হায়দ্রাবাদ বারংবার এই চুক্তি লঙ্ঘন করে বলে ভারত অভিযোগ জানায়। অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধে হায়দ্রাবাদও অর্থনৈতিক অবরোধের অভিযোগ তোলে।
  5. ভারতের অভিযান : ভারত ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে (১৩ সেপ্টেম্বর) হায়দ্রাবাদে অভিযান শুরু করে। পরাজিত হায়দ্রাবাদ ভারতে যোগদানে বাধ্য হয়।

উপসংহার: স্বাধীনতার প্রাকমুহূর্তে হায়দ্রাবাদের কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ, হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির দাবিতে কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ আন্দোলন, নিজামের উদ্যোগে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা প্রভৃতি বহুমুখী ধারা হায়দ্রাবাদের পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছিল। ভারত সামরিক অভিযান চালিয়ে হায়দ্রাবাদকে ভারতভুক্ত করলে সেই জটিলতার নিরসন হয়।

17. * হায়দ্রাবাদ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?
উত্তর – হায়দ্রাবাদ সমস্যা/হায়দ্রাবাদের অন্তর্ভুক্তি
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ ছিল সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য। হায়দ্রাবাদের প্রধান শাসক নিজাম নামে পরিচিত ছিলেন।
  1. জনবিন্যাস : ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন ওসমান আলি খান। তবে শাসক মুসলিম হলেও রাজ্যের অন্তত ৮-৭ শতাংশ জনগণই ছিল হিন্দু।
  2. ভারত-বিদ্বেষ : ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর হায়দ্রাবাদের ভারত- বিদ্বেষী নিজাম ভারত বা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে নিজ রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করেন। সাম্প্রদায়িক নেতা কাশিম রিজভি-র নেতৃত্বে ‘রাজাকার’ নামে হায়দ্রাবাদের দাঙ্গাবাহিনী সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখণ্ডের হিন্দুদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করতে থাকে। তখন তারা ভারতের ত্রাণশিবিরগুলিতে আশ্রয় নেয়।
  3. জটিলতা বৃদ্ধি: হায়দ্রাবাদের নিজাম সেখানকার মুসলিমদের ভারতের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণার আহ্বান জানান । হায়দ্রাবাদ পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র এনে এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে।
  4. অপারেশন পোলো: এইরকম জটিল পরিস্থিতিতে ভারত হায়দ্রাবাদকে একটি চরমপত্র পাঠালে নিজাম তা উপেক্ষা করেন। এই পরিস্থিতিতে জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে অভিযান শুরু করে (১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে) যা ‘অপারেশন পোলো’ নামে পরিচিত।
  5. আত্মসমর্পণ: ভারতীয় আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে হায়দ্রাবাদের বাহিনী শীঘ্রই পরাজিত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে (১৮ সেপ্টেম্বর)। ফলে হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে আসে।

উপসংহার: ভারতের সামরিক অভিযানে হায়দ্রাবাদের প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। নিজাম ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। হায়দ্রাবাদ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

18. ভারতীয় ফরাসি ও পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলির ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করো।
উত্তর – ফরাসি ও পোর্তুগিজ উপনিবেশের ভারতভূক্তি
ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পরে দেশীয় রাজ্যগুলি ছাড়াও ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত চন্দননগর, মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ ও গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। এগুলি ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিশেষ প্রয়োজন ছিল।
  1. ফরাসি উপনিবেশগুলির সংযুক্তি: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে বলা হয় যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে কি না তা গণভোটের মাধ্যমে স্থির হবে। [i] চুক্তি অনুসারে গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চন্দননগর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। [ii] ভারতভুক্তির পক্ষে ইয়ানাম ও মাহের আন্দোলনকারীরা ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এক রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেখানকার ক্ষমতা দখল করলে তা কার্যত ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। [iii] ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে পন্ডিচেরী ও কারিকল গণভোটের মাধ্যমে ভারতে যোগ দেয়।
  2. পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলির সংযুক্তি : [i] ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে গোমন্তক দল বিদ্রোহের মাধ্যমে পোর্তুগিজ উপনিবেশ দাদরা ও নগর হাভেলির ক্ষমতা দখল করে। ভারত ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে এই স্থানকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে। [ii] গোয়ার ভারতভুক্তির দাবিতে আন্দোলন পোর্তুগাল কঠোর হস্তে দমন করে। জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাদল ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে গোয়া আক্রমণ করলে পরাজিত গোয়ার পোর্তুগিজ শাসকরা ভারতভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। [iii] ওই বছর দমন ও দিউ-ও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উপসংহার: স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সহজেই এদেশের ফরাসি উপনিবেশগুলি ফিরে পায়। কিন্তু পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলি সংযুক্ত করতে ভারত সরকারকে বেগ পেতে হয়। অনেক লড়াইয়ের পর পোর্তুগিজ উপনিবেশে গোয়া ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

19. ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলি কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?
উত্তর – পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলির ভারতভুক্তি
ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরও পোর্তুগাল ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশের অস্তিত্ব ছিল। পোর্তুগাল তাদের উপনিবেশগুলির ওপর নিজেদের অধিকার বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত তাদের উপনিবেশগুলিকে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে নিজেদের রাজ্যে পরিণত করে।
  1. দাদরা ও নগর হাভেলি দখল : দাদরা ও নগর হাভেলির গোমন্তক দল পোর্তুগিজ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ করে সেখানকার ক্ষমতা দখল করে নেয়। পোর্তুগাল সরকার স্থানটি পুনরায় দখল করার চেষ্টা করলে ভারত তাতে বাধা দেয়। ভারত এই স্থানটিকে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে।
  2. গোয়ায় আন্দোলন : ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ১৫ আগস্ট ৫ হাজার শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহী গোয়ায় পোর্তুগিজ শাসনের অবসানের দাবিতে মিছিল করলে পোর্তুগিজ সেনার গুলিতে ২২ জনের মৃত্যু হয়। পোর্তুগিজ সরকার বিদ্রোহী নেতৃবৃন্দকে হত্যা বা কারারুদ্ধ করে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে।
  3. ভারতের উদ্যোগ : গোয়ায় পোর্তুগালের দমননীতির প্রতিবাদে ভারত সরকার গোয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ ছাড়া ভারতের হাতে গোয়াকে হস্তান্তরের জন্য ভারত বেশ কয়েকবার পোর্তুগালের কাছে আবেদন জানায় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিষয়টি উত্থাপন করে।
  4. গোয়ার ভারতভুক্তি : ভারতের সেনাপ্রধান জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে (ডিসেম্বর) গোয়ায় সামরিক অভিযান শুরু হয়। গোয়ার পোর্তুগিজবাহিনী শীঘ্রই পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ফলে গোয়া ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উপসংহার: পোর্তুগিজরা ভারতীয় উপনিবেশগুলি ত্যাগ করতে অস্বীকার করলে, ভারত সরকার উপনিবেশগুলিতে গণ-আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সেগুলি দখল করে। ১৯৬১ সালের মধ্যে ভারতের সবগুলি পোর্তুগিজ উপনিবেশ ভারতের দখলে আসে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. * ভারতের স্বাধীনতা আইন’-এর দ্বারা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?
উত্তর – ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৯৪৭ খ্রি.) এর দ্বারা – [1] ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। [2] ঐক্যবদ্ধ ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। [3] অবশিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় ভারত।
2. ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ কী?
উত্তর – ভারতের বড়োলাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ভারত বিভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ নামে পরিচিত।
3. ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ কবে, কোথায় পাস হয় ?
উত্তর – ভারতের স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হয়। ১৮ জুলাই তা রাজকীয় সম্মতি লাভ করে।
4 *‘দেশীয় রাজ্য’ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনের বাইরে ছোটোবড়ো মিলিয়ে প্রায় ৫৬৫টি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি ‘দেশীয় রাজ্য’ নামে পরিচিত ছিল।
5. * ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৯৪৭ খ্রি.)-এ দেশীয় রাজ্যগুলি কী অধিকার পায় ?
উত্তর – ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৯৪৭ খ্রি.) এ বলা হয় – [1] দেশীয় রাজ্যগুলি ইচ্ছা করলে তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে। অথবা, [2] ভারত ও পাকিস্তান—যেকোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দিতে পারবে।
6. *‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’-এ দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে কী বলা হয় ?
উত্তর – ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ (১৮ জুলাই, ১৯৪৭ খ্রি.)-এ বলা হয় যে, [1] দেশীয় রাজ্যগুলি ইচ্ছা করলে নিজ নিজ রাষ্ট্রের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে। অথবা, [2] তারা ভারত ও পাকিস্তান যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দিতে পারবে।
7. “ব্রিটিশ ভারতের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – ব্রিটিশ ভারতের সর্বাধিক বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্য ছিল—[1] হায়দ্রাবাদ, [2] মহীশূর, [3] বরোদা ও [4] জম্মু-কাশ্মীর।
8. * দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোন্ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সর্বাধিক ভূমিকা ছিল?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের (১৮৭৫-১৯৫০ খ্রি.) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই বিষয়ে তাঁর কঠোর নীতির জন্য তিনি ‘লৌহমানব’ নামে পরিচিত হন।
9. জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে চলে যান কেন?
উত্তর – দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর সেখানকার মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হয়। এদিকে ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
10. *জুনাগড় কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ?
উত্তর – হিন্দু-অধ্যুষিত জুনাগড়ের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে তীব্র প্রজাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশ করে। গণভোটের (১৯৪৮ খ্রি.) মাধ্যমে জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত (১৯৪৯ খ্রি.) হয়।
11. * ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের কোন্ কোন্ স্থানে ফ্রান্স ও পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল?
উত্তর – ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরও চন্দননগর, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি স্থানে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল এবং গোয়ায় পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল।
12. *কোন্ কোন্ ফরাসি উপনিবেশ কবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?
উত্তর – ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। তা ছাড়া ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ ভারতের সঙ্গে এক চুক্তির দ্বারা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
13. * ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ (LOC) কী ?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশের পর কাশ্মীরের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে জাতিপুঞ্জ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে (৩১ ডিসেম্বর) কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। জাতিপুঞ্জ নির্ধারিত যুদ্ধবিরতি সীমারেখা ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’ বা ‘Line of Control’ (LOC) নামে পরিচিত।
14. *ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না কেন?
উত্তর – ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, হায়দ্রাবাদের মধ্য দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সংযোগকারী রেল ও সড়ক যোগাযোগ, হায়দ্রাবাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মনোভাব প্রভৃতি কারণে ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
15. *ভারত হায়দ্রাবাদ দখলের পরবর্তীকালে এই ভূখণ্ড কোন্ কোন্ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়?
উত্তর – ভারত হায়দ্রাবাদ দখলের পর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদকে তিনটি অংশে বিভক্ত করে সেগুলিকে অন্ধ্রপ্রদেশ, বোম্বাই ও মহীশূরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
16. *কে, কবে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ স্থাপন করেন? এর সেক্রেটারি কে ছিলেন?
উত্তর – ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (জুলাই) ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করেন।
দেশীয় রাজ্য দপ্তরের সেক্রেটারি ছিলেন ভি পি মেনন।
17. * ভারতভুক্তির দলিল’ বা ‘ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’ কী?
উত্তর – ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারতে যোগদান করে তা ‘ভারতভুক্তির দলিল’ বা ‘ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’ নামে পরিচিত।
18. কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন?
উত্তর – কাশ্মীর রাজ্য ভারতভুক্তির দলিলে নানা কারণে স্বাক্ষর করে [1] কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। [2] পাক-মদতপুষ্ট হানাদাররা কাশ্মীর আক্রমণ করলে হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার সামরিক সাহায্য করলে হরি সিং ভারতের সঙ্গে যোগ দেন এবং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।
19. * ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ কবে পাস হয় ? এই আইনের দুটি ধারা উল্লেখ করো।
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’ পাস হয় এবং ১৮ জুলাই আইনটি রাজকীয় সম্মতি লাভ করে।
এই আইনের দ্বারা—[1] ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে ‘ভারত’ ও ‘পাকিস্তান’ নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। [2] ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের ইচ্ছানুসারে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের অথবা নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অধিকার পায়।
20. *ভারতীয় ভূখণ্ডের ফরাসি উপনিবেশগুলির ভবিষ্যত কীভাবে নির্ধারিত হয়?
উত্তর – ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে বলা হয় যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলি গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারবে।
21. *ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলির ওপর ফ্রান্সের অধিকার কবে এবং কীভাবে বিলুপ্ত হয়?
উত্তর – ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলির ওপর তাদের অধিকার ত্যাগ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে এই উপনিবেশগুলির ওপর ফ্রান্সের অধিকার বিলুপ্ত হয়।
22. *চন্দননগর কবে, কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?
উত্তর – ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সেখানকার অধিবাসীরা ভারতের সঙ্গে চন্দননগরের সংযুক্তির পক্ষে ভোট দেয়। এরই ফলস্বরূপ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২ মে ভারতে চন্দননগরের নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় তবে কার্যকরী ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে কতগুলি দেশীয় রাজ্য ছিল?
উত্তর – স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৬০১টি।
2. গোয়া কাদের উপনিবেশ ছিল?
উত্তর – গোয়া পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল।
3. গোয়া করে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?
উত্তর – ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে গোয়া ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
4. মেহেরচাঁদ মহাজন কে ছিলেন?
উত্তর – মেহেরচাঁদ মহাজন ছিলেন দেশীয় রাজ্য কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী।
5. হায়দ্রাবাদ অভিযানে কে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন?
উত্তর – হায়দ্রাবাদ অভিযানে জেনারেল জে এন চৌধুরী ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।
6. কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর – কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শেখ আবদুল্লাহ।
7. কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্ধারিত সীমারেখার নাম কী?
উত্তর – কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্ধারিত সীমারেখার নাম লাইন অব কন্ট্রোল (LOC) বা নিয়ন্ত্রণ রেখা।
৪. কবে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়?
উত্তর – ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।
9. দিল্লির মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে চিন কিলিচ খাঁ কী উপাধি লাভ করেন?
উত্তর – চিন কিলিচ খাঁ দিল্লির মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে ‘আসফ ঝা’ উপাধি
10. দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের রাজাকার দলের নাম কী ছিল ?
উত্তর – দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের রাজাকার দলের নাম ছিল ইত্তেহাদ-উল- মুসলিমিন’।
11. কে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর – মির করমউদ্দিন চিন কিলিচ খাঁ হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
12. মুসলিম লিগ কবে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে প্রস্তাব গ্রহণ করে?
উত্তর – মুসলিম লিগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে ‘লাহোর প্রস্তাব’ বা ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ গ্রহণ করে।
13. ভারতবর্ষ কবে স্বাধীনতা লাভ করে?
উত্তর – ভারতবর্ষ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে।
14. স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর – স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
15. ভারতীয় ভূখণ্ডের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – ভারতীয় ভূখণ্ডের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্য ছিল হায়দ্রাবাদ, মহীশ্বর, বরোদা ও কাশ্মীর।
16. দেশীয় রাজ্যগুলি কোন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলি ‘ভারতভুক্তির দলিল’ (ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন) নামক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
17. ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ডোমিনিয়নে যোগদানকারী দুটি রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – জুনাগড় ও হায়দ্রাবাদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ডোমিনিয়নে যোগদান করে।
18. ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?
উত্তর – ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
19. কবে, কার দায়িত্বে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ গঠিত হয়?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দায়িত্বে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ গঠিত হয়।
20. কোন স্থান ‘পাক-অধিকৃত কাশ্মীর’ নামে পরিচিত?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মীরের ভূখণ্ড ‘পাক-অধিকৃত কাশ্মীর’ নামে পরিচিত।
21. ভারত কবে হায়দ্রাবাদে সেনা অভিযান শুরু করে ?
উত্তর – ভারত জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সেপ্টেম্বর (১৯৪৮ খ্রি.) হায়দ্রাবাদে সেনা অভিযান শুরু করে।
22. ‘অপারেশন পোলো’ কী?
উত্তর – ভারত ১৩ সেপ্টেম্বর (১৯৪৮ খ্রি.) হায়দ্রাবাদে সেনা অভিযান শুরু করে। এই অভিযান ‘অপারেশন পোলো’ নামে পরিচিত।
23. কাকে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়?
উত্তর – সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
24. কোন্ স্বরাষ্ট্রসচিব দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন?
উত্তর – স্বরাষ্ট্রসচিব ভি পি মেনন দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
25. ভারতের হায়দ্রাবাদ অভিযানের সময় কে হায়দ্রাবাদের বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ?
উত্তর – ভারতের হায়দ্রাবাদ অভিযানের সময় হায়দ্রাবাদের বাহিনীর নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল সৈয়দ আহমেদ এল এদুস।

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন ……….।
উত্তর – বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ
2. স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ……….।
উত্তর – জওহরলাল নেহরু
3. স্বাধীনতা লাভের পূর্বে অন্তত ………. শতাংশ ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল।
উত্তর – ৪০
4. ভারতের কয়েকটি প্রদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় ………. দেশীয় রাজ্য।
উত্তর – ২১৬টি
5. হায়দ্রাবাদ ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্গত হয় ……… খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর – ১৯৪৮
6. ……… দেশীয় রাজ্য সংযুক্ত করে গড়ে তোলা হয় ৫টি প্রদেশ।
উত্তর – ২৭৫টি
7. স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ………… দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
উত্তর – ভি পি মেনন
8. শেখ আবদুল্লাহ ছিলেন ……….. দলের প্রধান নেতা।
উত্তর – ন্যাশনাল কনফারেন্স
9. ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে ও কারিকল ছিল ………. উপনিবেশ।
উত্তর – ফরাসি
10. হরি সিং ছিলেন ……….. -এর রাজা।
উত্তর – কাশ্মীর
11. ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট গোয়ার পোর্তুগিজ বাহিনীর গুলিতে ………… জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়।
উত্তর – ২২
12. পোর্তুগিজ উপনিবেশ ………… ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
উত্তর – গোয়া
13. দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি ……….. উপনিবেশ ছিল।
উত্তর – পোর্তুগালের
14. মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী ও ইয়ানাম ……….. উপনিবেশ ছিল।
উত্তর – ফ্রান্সের

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা MCQ

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

1. স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল ছিলেন—
(a) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
(b) জওহরলাল নেহরু
(c) বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ
(d) চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী
উত্তর – (a) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
2. স্বাধীন ভারতের প্রথম ভারতীয় গভর্নর-জেনারেল ছিলেন—
(a) বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ
(b) জওহরলাল নেহরু
(c) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
(d) চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী
উত্তর – (d) চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী
3. দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন—
(a) জওহরলাল নেহরু
(b) সুভাষচন্দ্র বসু
(c) চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী
(d) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল
উত্তর – (d) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল
4. ভারতের সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্যটি ছিল—
(a) কাশ্মীর
(b) হায়দ্রাবাদ
(c) জুনাগড়
(d) বরোদা
উত্তর – (b) হায়দ্রাবাদ
5. গণভোটের মাধ্যমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়—
(a) কাশ্মীর
(b) হায়দ্রাবাদ
(c) জুনাগড়
(d) গোয়ালিয়র
উত্তর – (c) জুনাগড়
6. সিকিম কবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?
(a) ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (d) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে
7. কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন—
(a) হরি সিং
(b) মেহেরচাঁদ
(c) ওমর আবদুল্লাহ
(d) শেখ আবদুল্লাহ
উত্তর – (a) হরি সিং
৪. আজাদ কাশ্মীর কাদের দখলে রয়েছে?
(a) ভারতের
(b) পাকিস্তানের
(c) চিনের
(d) জাতিপুঞ্জের
উত্তর – (b) পাকিস্তানের
9. হায়দ্রাবাদের নিজামকে চরমপত্র পাঠায়—
(a) জুনাগড়
(b) কাশ্মীর
(c) ভারত
(d) পাকিস্তান
উত্তর – (c) ভারত
10. যে দেশীয় রাজ্যটি গণভোটের মাধ্যমে ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়—
(a) কাশ্মীর
(b) হায়দ্রাবাদ
(c) জুনাগড়
(d) জয়পুর
উত্তর – (c) জুনাগড়
11. জুনাগড় রাজ্য ভারতভুক্ত হয়-
(a) ১৯৪৭ খ্রি.
(b) ১৯৪৮ খ্রি.
(c) ১৯৪৯ খ্রি.
(d) ১৯৫০ খ্রি.
উত্তর – (c) ১৯৪৯ খ্রি.
12. হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের—
(a) ১ জানুয়ারি
(b) ১২ জানুয়ারি
(c) ২৩ জানুয়ারি
(d) ২৬ জানুয়ারি
উত্তর – (d) ২৬ জানুয়ারি
13. গোয়া ভারতভূক্ত হয়–
(a) ১৯৪৭ খ্রি.
(b) ১৯৫৬ খ্রি.
(c) ১৯৬১ খ্রি.
(d) ১৯৭১ খ্রি.
উত্তর – (c) ১৯৬১ খ্রি.
14. তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়—
(a) হায়দ্রাবাদে
(b) জুনাগড়ে
(c) কাশ্মীরে
(d) বরোদায়
উত্তর – (a) হায়দ্রাবাদে
15. এদের মধ্যে কোন্‌টি দেশীয় রাজ্য ছিল না—
(a) বোম্বে
(b) ভোপাল
(c) হায়দ্রাবাদ
(d) জয়পুর
উত্তর – (a) বোম্বে
16. স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিল—
(a) ৫৬৫টি
(b) ৫৭৫টি
(c) ৫৯৫টি
(d) ৬০৫টি
উত্তর – (a) ৫৬৫টি
17. ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় চন্দননগর কাদের উপনিবেশ ছিল?
(a) ব্রিটিশ
(b) ফরাসি
(c) পোর্তুগিজ
(d) স্পেনীয়
উত্তর – (b) ফরাসি

TOPIC – B ১৯৪৭-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. *১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – দেশভাগের প্রভাব
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের ওপর দেশভাগের গভীর প্রভাব পড়ে।
  1. বহু মানুষের দেশত্যাগ: দেশভাগের ফলে মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে এবং ভারতের বিপুল সংখ্যক মুসলিম পাকিস্তানে চলে যায়। দেশত্যাগের ফলে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
  2. নির্মম হত্যালীলা: দেশভাগের পর পাকিস্তান এবং ভারতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানে এবং পাকিস্তান ত্যাগের সময় প্রচুর হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ দাঙ্গায় নিহত হন। একইভাবে ভারতে এবং ভারত ত্যাগের সময় বহু মুসলিম দাঙ্গায় নিহত হন। এ ছাড়া লুণ্ঠন, বাড়িতে আগুন লাগানো, মাঠের ফসল নষ্ট প্রভৃতি চলে।
  3. যথেচ্ছ নারীনির্যাতন: দেশভাগের ফলে উভয় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু নারী নির্যাতনের শিকার হয়। ধর্ষণ, অপহরণ প্রভৃতি ঘটনা অবাধে চলে। প্রায় ১ লক্ষ নারী ধর্ষিতা হন। এর ফলে অন্তত ৫০ হাজার অবৈধ শিশু জন্মগ্রহণ করে।
  4. তীব্র উদ্বাস্তু সমস্যা: দেশভাগের ফলে ভারত এবং পাকিস্তান— উভয় রাষ্ট্রে ভয়ানক উদ্বাস্তু সমস্যা দেখা দেয়। পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, পাঞ্জাব-সহ বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয়। তাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক সংকট যথেষ্ট বেড়ে যায়।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের প্রভাবে বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশের সংখ্যালঘুরা সীমাহীন নির্যাতন ও দুর্দশার শিকার হয়। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশে ভ্রাতৃঘাতী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নারী নির্যাতন, উদ্বাস্তু সমস্যা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।

2. * ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পরবর্তীকালে ভারতে উদ্বাস্তু আগমন সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – দেশভাগের পর উদ্বাস্তু আগমন
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভ ও দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন ও ধর্ম গভীর সংকটের মুখে পড়ে।
  1. তীব্র উদ্বাস্তু সমস্যা : মুসলিম-অধ্যুষিত পাকিস্তানে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, গৃহে অগ্নিসংযোগ, জীবনের নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতির শিকার হয়ে হিন্দু, শিখ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের বহু মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে চলে আসে। এরাই ভারতে ‘উদ্বাস্তু’ বা ‘বাস্তুহারা’ বা ‘রিফিউজি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
  2. আশ্রয়স্থল: দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের অগণিত হিন্দু ও শিখ নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে পূর্ব পাঞ্জাব-সহ পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। একইভাবে পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ববঙ্গের) অগণিত হিন্দু, বৌদ্ধ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম-সহ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেন।
  3. বৃহত্তম অভিপ্রয়াণ (Largest Exodus): দেশভাগের পরবর্তীকালে মাতৃভূমি (পাকিস্তান) ছেড়ে যে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় নেয় তার দৃষ্টান্ত বিশ্ব-ইতিহাসে বিরল। দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১ কোটি মানুষকে দেশত্যাগ করে উদ্বাস্তু বা বাস্তুহারা হতে হয়। পরবর্তীকালে আরও বহু মানুষ দেশত্যাগ করে। পায়ে হেঁটে, নদীপথে, গোরুর গাড়িতে বা ট্রেনে দেশত্যাগ করার সময় পথেই মারা যায় কয়েক লক্ষ মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর দেশত্যাগের ঘটনা বিশ্ব-ইতিহাসের ‘বৃহত্তম অভিপ্রয়াণ’ নামে চিহ্নিত।

উপসংহার: দেশভাগের পর হিন্দু, শিখ-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে পরিমাণ মানুষ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতে উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসে, তা এক কথায় অকল্পনীয়। এত বিপুল পরিমাণ মানুষের দেশত্যাগের দৃষ্টান্ত বিশ্ব ইতিহাসে আর নেই।

3. * ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পরবর্তীকালে ভারতে উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, সংক্ষেপে টীকা লেখো: দেশবিভাগ (১৯৪৭) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা।
উত্তর – উদ্বাস্তু সমস্যা
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ হিন্দু, শিখ প্রভৃতি ধর্মের মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।
  1. ভারতের তীব্র সংকট : পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব গ্রহণ করা সদ্যস্বাধীন ভারতের পক্ষে খুবই কঠিন সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। ফলে উদ্বাস্তু সমস্যা ভারতে এক গভীর সংকটের সৃষ্টি করে।
  2. সংকটের কেন্দ্রবিন্দু: ভারতে উদ্বাস্তু সমস্যা সবচেয়ে গভীর আকার নেয় পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। কেননা, এই দুই রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উদ্বাস্তু আশ্রয় নেয়।
  3. পাঞ্জাবের পরিস্থিতি: দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্জাবে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু আশ্রয় নেয়। ভারত সরকারও পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে পাঞ্জাবের উদ্বাস্তু সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়।
  4. পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ববঙ্গের বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেন। তবে পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের মতো ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সুন্দর ব্যবস্থা বাঙালি উদ্বাস্তুরা পায়নি। ফলে অধিকাংশ উদ্বাস্তুকে বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবির, ফুটপাত, রেলস্টেশন প্রভৃতি স্থানে আশ্রয় নিয়ে দিন কাটাতে হয়। বহু উদ্বাস্তুকে বহু দূরে দণ্ডকারণ্য, আন্দামান প্রভৃতি স্থানে পুনর্বাসনে পাঠানো হয়।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাব প্রদেশে সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু আশ্রয় নেয়। তাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সেই দুর্দশার কবল থেকে নিঃস্ব, রিক্ত উদ্বাস্তুরা অনেকটা মুক্তি পায়।

4. * ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সঙ্গে বাংলার বিভাজনে পশ্চিমবঙ্গে কীরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল ?
উত্তর – দেশভাগের ফলে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিক্রিয়া
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলার এই বিভাজনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
  1. উদ্বাস্তু সমস্যা : পূর্ববঙ্গের লক্ষ লক্ষ হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। তাদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
  2. শিল্প-কাঁচামালের সংকট: বাংলা বিভাজনের ফলে বাংলার অধিকাংশ শিল্পকারখানা পশ্চিমবঙ্গের ভাগে পড়লেও শিল্পের প্রয়োজনীয় পাট ও অন্যান্য কাঁচামাল উৎপাদক কৃষিজমিগুলি পূর্ববঙ্গের ভাগে পড়ে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পকারখানাগুলি কাঁচামালের অভাবে ধুঁকতে থাকে।
  3. বেকারত্ব: একদিকে কাঁচামালের অভাবে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পকারখানাগুলি বন্ধ হয়, অন্যদিকে উদ্বাস্তু আগমনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রাজ্যে বেকারত্ব যথেষ্ট বেড়ে যায়।
  4. বুদ্ধিজীবীদের দেশত্যাগ : বাংলা বিভাজনের ফলে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন সংস্কৃতিবান হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে চলে এলে তাঁদের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পসংস্কৃতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। আবার পশ্চিমবঙ্গের বহু প্রতিভাবান মুসলিম পূর্ববঙ্গে চলে গিয়ে সেখানকার সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটাতে সক্ষম হন।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বিভক্ত হয়ে হিন্দু অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টি হলেও পূর্ববঙ্গে বিপুল সংখ্যক হিন্দু থেকে যায়। পরবর্তী প্রায় তিন দশক ধরে তারা স্রোতের মতো পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিলে এই রাজ্যে জনবিস্ফোরণ ঘটে যায়।

5. স্বাধীন ভারত সরকার উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানের কী ধরনের উদ্যোগ নেয়?
উত্তর – উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ববঙ্গ) থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয়। স্বাধীন ভারত সরকারকে বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে নানা উদ্যোগ নিতে হয়।
  1. উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দান; ভারতে আগত নিঃস্ব, রিক্ত উদ্বাস্তুরা অনেকেই প্রথমে বিভিন্ন রেলস্টেশন, ফুটপাত, পরিত্যক্ত ঘরবাড়িতে বা খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নেয়। সরকার বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তু শিবির প্রতিষ্ঠা করে আপাতত সেখানে উদ্বাস্তুদের বসবাসের ব্যবস্থা করে।
  2. ত্রাণশিবিরের ব্যবস্থা: শিবিরগুলিতে বসবাসের সময় সরকার উদ্বাস্তুদের খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, পানীয় জল, আলো, কিছু নগদ অর্থ, ওষুধপত্র প্রভৃতি সরবরাহ করে। উদ্বাস্তু পরিবারগুলির বালক-বালিকাদের জন্য শিক্ষাদানেরও ব্যবস্থা করা হয়।
  3. পুনর্বাসনের ব্যবস্থা: শিবির থেকে উদ্বাস্তু পরিবারগুলিকে বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। সেময় উদ্বাস্তুদের বাড়ি তৈরি, জীবিকানির্বাহ প্রভৃতির জন্য আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।
  4. পাঞ্জাবে গৃহীত ত্রাণব্যবস্থা: পাঞ্জাবে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়। বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন উপনগরী গড়ে তুলে সেখানে তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়।
  5. পশ্চিমবঙ্গে গৃহীত ত্রাণব্যবস্থা: পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সহযোগিতা পায়নি বলে অনেকে সমালোচনা করেন। তা ছাড়া বহু বাঙালি উদ্বাস্তুকে মধপ্রদেশ-উড়িষ্যা সংলগ্ন দণ্ডকারণ্য, আন্দামান প্রভৃতি দূরবর্তী স্থানে পুনর্বাসনে পাঠালে তারা বাংলার পরিবেশ ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাব প্রদেশে সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু আশ্রয় নেয়। অভিযোগ ওঠে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে যতটা যত্নবান ছিলেন, ততটা যত্নবান বাঙালি উদ্বাস্তুদের বিষয়ে ছিলেন না।

6. *উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে স্বাধীন ভারত সরকার যে উদ্যোগ নেয় তাতে কেন বিতর্কের সৃষ্টি হয়?
উত্তর – উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ সম্পর্কে বিতর্ক
ভূমিকা: দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে আসা অবিরাম উদ্বাস্তূ স্রোত স্বাধীন ভারতের কাছে একটি বড়ো সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধানে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবে এক্ষেত্রে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এগুলি নীচে আলোচিত হল-
  1. ভারতের অভিযোগ : দেশভাগের পর বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করতে থাকলে ভারত সরকার অভিযোগ করে যে, পাকিস্তান সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে।
  2. নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি : উদ্বাস্তু স্রোত প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খাঁ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা ‘নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’ বা ‘দিল্লি চুক্তি’ নাম পরিচিত। কিন্তু এই চুক্তির পরও ভারতে উদ্বাস্তু স্রোত বন্ধ হয়নি।
  3. সম্পত্তি বিনিময় : কেন্দ্রীয় সরকার পাঞ্জাব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দেশত্যাগীদের মধ্যে সম্পত্তি ও জনবিনিময়ের সুযোগ দেওয়ায় পাঞ্জাব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দ্রুত উদ্বাস্তু বিনিময় ঘটে যায়। কিন্তু সরকার বাংলার উদ্বাস্তুদের এই বিনিময়ের সুযোগ না দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তুদের নানা সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে।
  4. ত্রাণ পুনর্বাসন : পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার বিমাতৃসুলভ আচরণ করে বলে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন। যেখানে পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়, সেক্ষেত্রে বাংলার উদ্বাস্তুদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহায়তা ছিল খুবই সামান্য।
  5. দূরে পুনর্বাসন : বাংলার বহু দলিত উদ্বাস্তু পরিবারকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহু দূরে দণ্ডকারণ্য, আন্দামান প্রভৃতি স্থানে পুনর্বাসনে পাঠানো হয়। ফলে তারা বাংলার পরিবেশ, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের এরূপ পুনর্বাসন নীতির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী দলগুলি তখন তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।

উপসংহার: বাঙালি উদ্বাস্তুরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনেকটা বিমাতৃসুলভ আচরণ পেলেও দীর্ঘ জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। আজকের পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতিতে বাঙালি উদ্বাস্তুদের অবদান অসীম।

7. * ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত ‘নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’ বা ‘দিল্লি চুক্তি’-তে কী বলা হয় ? অথবা, ‘নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’র শর্তগুলি কী ছিল?
উত্তর – নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির শর্তাবলি
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত বিপুল পরিমাণ সংখ্যালঘু উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় নিলে সদ্য স্বাধীন ভারত নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খাঁ-র মধ্যে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে (৮ এপ্রিল) এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ‘নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’ বা ‘দিল্লি চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি নীচে উল্লেখ করা হল—
  1. অনুসন্ধান কমিটি; ভারত ও পাকিস্তান উদ্বাস্তুদের দেশত্যাগের কারণ অনুসন্ধানের জন্য কমিটি এবং সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করবে।
  2. সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা: ভারত ও পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে দেশত্যাগ করতে বাধ্য না হন সেই উদ্দেশ্যে উভয় দেশের সরকার নিজ নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।
  3. স্থাবর সম্পত্তি ফেরত: কোনো একজন দেশত্যাগী ব্যক্তি আবার নিজের দেশে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চের মধ্যে ফিরে এলে তিনি তাঁর স্থাবর সম্পত্তি ফিরে পাবেন।
  4. মন্ত্রীর দায়িত্ব: উদ্বাস্তুরা যাতে আবার নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে সেই অবস্থা তৈরি করার উদ্দেশ্যে দুই দেশের দুজন মন্ত্রী সেই এলাকায় থাকবেন।
  5. সংখ্যালঘু প্রতিনিধি: পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি থাকবে।

উপসংহার: প্রধানমন্ত্রী নেহরু ‘দিল্লি চুক্তি’র মাধ্যমে উভয় দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে উদ্বাস্তু আগমন বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁর উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি।

৪. পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের আগমন ও আশ্রয়গ্রহণের মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য ছিল ?
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের মধ্যে পার্থক্য
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ববঙ্গ) থেকে অগণিত উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অগণিত উদ্বাস্তু পাঞ্জাবে চলে আসে। পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবে আগত ও আভায়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। যেমন-

উপসংহার: নেহরু সরকার পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের জন্য যতটা ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে, ততটা পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তুদের জন্য না করায় নেহরু সরকার নানাভাবে সমালোচিত হয়। পরবর্তীকালে জওহরলাল নেহরুর এই বিমাতৃসূলভ আচরণের বিষয়টি রণজিৎ রায়ের ‘ধ্বংসের পথে পশ্চিমবঙ্গ’ নামক গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

9. *আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উত্তর – আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ সম্পর্কিত তথ্য
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ আধুনিক ভারতের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দেশভাগের এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বিষয় স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে।
  1. দাঙ্গার উল্লেখ: দেশভাগের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কীভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন প্রভৃতির শিকার হয়েছে এবং দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে তা বিভিন্ন লেখকের আলোচনায় উঠে এসেছে।
  2. দেশত্যাগের স্মৃতি: দেশত্যাগের সময় অতীতের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ, অনেক বেদনা নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু প্রভৃতি বিষয়গুলি বিভিন্ন লেখক তাদের লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
  3. সম্পর্কের বিচ্ছেদ: দেশভাগ কীভাবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পরিবার পরিজনের বিভিন্ন সদস্যের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে, কীভাবে বহু প্রিয়জন একে অপরের থেকে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছে তা বিভিন্ন আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় আলোচিত হয়েছে।
  4. মাতৃভূমির প্রতি টান: নিজের মাতৃভূমির ভিটেমাটি ছেড়ে উদ্বাস্তু হলেও সেই ভিটেমাটি, পরিবেশ-পরিজনের প্রতি গভীর মমত্ববোধ এবং আকুল মনের টান বিভিন্ন লেখায় বার বার উঠে এসেছে।
  5. কয়েকজন লেখক: দেশভাগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে যাঁরা বাংলা ভাষায় বিভিন্ন আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, উপন্যাস, গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রভৃতি লিখেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, প্রফুল্ল চক্রবর্তী, দেবজ্যোতি রায় প্রমুখ, হিন্দি ভাষায় সাদাত হাসান মান্টো, কৃষণ চন্দর, যশপাল, রাঙ্গেয় রাঘো, ভীষ্ম সাহানী প্রমুখ, ইংরেজি ভাষায় খুশবন্ত সিং, আর কে নারায়ণ, উর্দু ভাষায় মুনশি প্রেমচাঁদ, খাজা, আহমদ আব্বাস, পাঞ্জাবি ভাষায় ভীষ্ম সাহানী, কুলবন্ত সিং প্রমুখ।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ সম্পর্কে রচিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলি মানুষের সাত পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে উদ্বাস্তু হওয়ার যে মর্মন্তুদ কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছে তা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সমকালীন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রেও এগুলির মূল্য অসীম।

10. * একটি বাংলা উপন্যাস/আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা থেকে দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরো।
উত্তর – একটি বাংলা উপন্যাসে/আত্মজীবনী/স্মৃতিকথায় দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণার চিত্র
ভূমিকা: দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের করুণ কাহিনি বিভিন্ন বাংলা উপন্যাস, আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা প্রভৃতিতে ফুটে উঠেছে। এরূপ একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল আবু ইসহাক-এর লেখা ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’। এই উপন্যাসের প্রধান আলোচ্য বিষয়টি নীচে তুলে ধরা হল—
  1. দুর্ভিক্ষ-পীড়িতের স্বপ্ন: ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসটি শুরু হয়েছে পঞ্চাশের মন্বন্তর দিয়ে (১৯৪৩ খ্রি.)। জয়গুনের মতো দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ স্বপ্ন দেখে, কিছুদিন পর দেশ স্বাধীন হবে, দেশ স্বাধীন হলে চালের দাম কমবে এবং সুদিন আসবে। তারা সুখে থাকতে পারবে।
  2. স্বপ্নের পাকিস্তান : মুসলিমরা যখন তাদের পাকিস্তান সৃষ্টির অপেক্ষায় স্বপ্নে বিভোর তখন আবু ইসহাক তাঁর উপন্যাসে ট্রেনের দুই যাত্রীর কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে দেখিয়েছেন, যে পাকিস্তান সৃষ্টি হতে চলেছে তা অনেকের কাছে স্বপ্নের বদলে বরং দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে। ট্রেনের মুসলিম যাত্রীটি বলেছেন যে, “পাকিস্তান যখন হচ্ছেই তখন জিনিসপত্রের হিন্দুয়ানি নাম বদলানো দরকার।”
  3. স্বপ্নভঙ্গ: একদিন দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তাই জয়গুনদের বাঁচার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এই স্বপ্নভঙ্গ লেখক সুন্দর উপমা দিয়ে উল্লেখ করেছেন—পাকিস্তান সৃষ্টির পর ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ, কয়েদে আজম জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে উৎফুল্ল জনতার ট্রাক এগিয়ে চলে সামনের দিকে। সেখানে রাস্তার জলকাদায় ট্রাকটি দ্রুতগতিতে গিয়ে এক পথচারীর জামাকাপড় জলকাদায় মাখিয়ে দেয়। অসহায় লোকটির অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তানের পরের দিনগুলি কেমন হতে চলেছে।
  4. জয়গুনের আক্ষেপ : স্বাধীনতা লাভের পর সুদিন না আসায় পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুরা সকলে হতাশ হয়ে পড়ে। তাই স্বপ্নবিলাসী জয়গুন একসময় আক্ষেপের সুরে নিজের মাতৃভাষায় বলে ওঠে—“কত আশা-ভরসা আছিল। স্বাদীন অইলে ভাত-কাপড় সাইয্য আইব। খাজনা মকুব অনব। কিন্তু কই?”

উপসংহার: বিভিন্ন উপন্যাস, আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় উল্লিখিত দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের ঘটনাবলি হৃদয় স্পর্শ করে যায়। তাই স্বাধীনতার ৭০ বছর পেরিয়েও এ বিষয়ে লেখার গুরুত্ব ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

11. এপার বাংলার চলচ্চিত্রে কীভাবে দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে?
উত্তর – এপার বাংলার চলচ্চিত্রে দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণা
ভূমিকা: দেশভাগের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে দেশভাগ, দাঙ্গা, দেশত্যাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের নানা কাহিনি ফুটে উঠেছে। দেশভাগ ও উদ্বাস্তুদের দেশত্যাগ সম্পর্কিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্র হল ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘নাগরিক’, নিমাই ঘোষের ‘ছিন্নমূল’, সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ প্রভৃতি। সম্প্রতি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘রাজকাহিনি’-তেও উঠে এসেছে সেই দেশভাগ, দাঙ্গা প্রভৃতির কাহিনি। এসব চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু নিম্নরূপ:
  1. কলোনি প্রতিষ্ঠা : দেশভাগ, পূর্ববঙ্গের বিপুল সংখ্যক মানুষের দেশত্যাগ, এপার বাংলায় এসে জীবনধারণের জন্য সীমাহীন লড়াই ও পরিশ্রম করে নতুন নতুন উদ্বাস্তু কলোনি প্রতিষ্ঠা করা প্রভৃতি ঋত্বিক ঘটকের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে।
  2. বিচ্ছেদের বেদনা : বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে দেশভাগের ফলে সৃষ্ট তীব্র জীবনযন্ত্রণা। উদ্‌দ্বাস্তু হয়ে দেশত্যাগের সময় সীমাহীন দুর্ভোগ, মাকে হারিয়ে দিশাহারা বালক, বহুকাল পর সেই বালক যখন যুবকে পরিণত তখন তার বৃদ্ধা মাকে খুঁজে পাওয়া, প্রভৃতির মতো অসংখ্য টুকরো টুকরো উদ্বাস্তু জীবনের ঘটনা বিভিন্ন চলচ্চিত্রে স্থান পেয়েছে।
  3. দণ্ডকারণ্য যাত্রা : বাংলার উদ্বাস্তুদের দণ্ডকারণ্যে পাঠানোর মর্মান্তিক কাহিনিও স্থান পেয়েছে চলচ্চিত্রে। ঋত্বিক ঘটক তাঁর চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন উদবাস্তুদের জন্য দণ্ডকারণ্যগামী স্পেশাল ট্রেন ধলভূমগড় স্টেশনে দাঁড় করিয়ে ট্রেন থেকে জনৈক বৃদ্ধার মৃতদেহ নামিয়ে দেওয়ার দৃশ্য।

উপসংহারঃ এপার বাংলায় যে পরিমাণ উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে তার দৃষ্টান্ত বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এই ব্যাপকতাকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবন যতটা ব্যাপকতায় ফুটিয়ে তোলা দরকার ছিল, ততটা হয়নি বলে অনেকে সমালোচনা করেন।

12. * বাংলা সাহিত্যে দেশভাগ ও বিপন্ন মানুষের দেশত্যাগ কীভাবে উঠে এসেছে তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরো।
উত্তর – বাংলা সাহিত্যে দেশভাগ ও বিপন্ন মানুষের দেশত্যাগ
ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাও বিভাজিত হয়। পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘু হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে এবং পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিমরা পূর্ববঙ্গে উদ্বাস্তু হয়ে চলে যায়। দেশভাগ ও দেশত্যাগের এই কাহিনি বিভিন্ন বাংলা সাহিত্যে ফুটে উঠেছে।
  1. পারিবারিক জীবনে ভাঙন : রাজিয়া খানের ‘বটতলার উপন্যাস’-এ দেশভাগের প্রেক্ষাপটে স্বপ্ন, প্রেম ও পারিবারিক জীবনে ভাঙনের কাহিনি উঠে আসে। দেশভাগ সুমিতা ও মঈনের প্রেমের সম্পর্ক চিরতরে ভেঙে দেয়।
  2. ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা : দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে শহীদুল্লা কায়সার তাঁর ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসে সেকান্দর মাস্টারের মুখে সংলাপ বসিয়েছেন—“ভুল করছ জাহেদ। ভুল করছ। প্রথমে মানুষ, তারপর ধর্ম। মানুষের জন্যই তো ধর্ম। ধর্মের জন্য মানুষ নয়।”
  3. স্বপ্নভঙ্গ : দরিদ্র মানুষজন স্বপ্ন দেখেছিল যে, দেশ স্বাধীন হলে চালের দাম কমবে, তাদের দুর্দশা ঘুচবে। কিন্তু আবু ইসহাক তাঁর ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসে এই স্বপ্নভঙ্গের কাহিনি তুলে ধরে জয়গুনের মুখে সংলাপ বসিয়েছেন—“কত আশা-ভরসা আছিল। স্বাদীন অইলে ভাত-কাপড় সাইয্য আইব। খাজনা মকুব অনব। কিন্তু কই?”
  4. স্মৃতি রোমন্থন: বিভিন্ন উপন্যাসে দেশভাগ, দেশত্যাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতি রোমন্থন লক্ষ করা যায়। এসব উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘কেয়াপাতার নৌকো’, ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ প্রভৃতি।
  5. উদ্বাস্তুদের জীবন : বিভিন্ন বাংলা উপন্যাস, নাটক, কবিতা প্রভৃতিতে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তুদের করুণ জীবনের কাহিনি ফুটে উঠেছে। মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় তাঁর শুকনো মুখ উস্কোখুস্কো চুল কবিতায় লিখেছেন, “রোজই রাস্তায় দেখি ফুটপাথের হাঁড়িকুড়ি ছড়ানো সংসারে / শুকনো মুখ উস্কোখুস্কো চুল / শিয়ালদার প্ল্যাটফর্মে আছড়ে-পড়া উদ্বাস্তু সংসারে / বিষাদপ্রতিমা….।”

উপসংহার: দেশভাগ ও পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে বাংলায় যে মাত্রার সাহিত্য রচিত হওয়া প্রয়োজন ছিল তা হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। বরং সেই তুলনায় পাঞ্জাবের উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য রচিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. সদ্য স্বাধীন ভারতের প্রধান সমস্যাগুলি কী ছিল ?
উত্তর – সদ্য স্বাধীন ভারতের প্রধান সমস্যাগুলি ছিল— দেশভাগের পরবর্তী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশীয় রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তিতে সমস্যা, পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিয়ে সমস্যা, খাদ্যসংকট, অর্থনৈতিক সংকট, জাতীয় সংহতির সমস্যা প্রভৃতি।
2. উদ্বাস্তু সমস্যা কী?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ ও ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের অসংখ্য সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখ নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে নিঃস্ব অবস্থায় ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান, খাদ্যসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সরকারও আগত উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হিমসিম খায়। এর ফলে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তা উদ্বাস্তু সমস্যা নামে পরিচিত।
3. *উদ্বাস্তু সমস্যা ভারতের অর্থনীতিতে কীরূপ সংকটের সৃষ্টি করে?
উত্তর – স্বাধীনতা-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সদ্যস্বাধীন ভারতের ওপর যথেষ্ট অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। যেমন—[1] পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত বিপুলসংখ্যকউদ্বাস্তুরত্রাণেরজন্যসরকারের প্রচুরঅর্থব্যয়হয়।[2]উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্যও সরকারকে প্রচুর অর্থব্যয় করতে হয়। [3] উদ্বাস্তু আগমনের ফলে দেশে জনসংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলে বেকারত্বও বৃদ্ধি পায়।
4. * ১৯৫০ সালে কেন নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল?
উত্তর – ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, উভয় দেশের উদ্বাস্তুদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া, ফিরে যাওয়া উদ্বাস্তুদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া, অপহৃতা উদ্বাস্তু নারীদের ফিরিয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
5. *কবে এবং কী উদ্দেশ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি ‘দিল্লি চুক্তি’ নামেও পরিচিত। নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্য ছিল ভারত এবং পাকিস্তানের সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের স্বার্থরক্ষা করা।
6. বাংলার উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে বিধানচন্দ্র রায়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদক্ষেপ তুলে ধরো।
উত্তর – বাংলার উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদক্ষেপ ছিল—[1] তিনি বিভিন্ন শিবিরে বসবাসকারী উদ্বাস্তুদের নানান জায়গায় জমি বিলি করে উদ্বাস্তুদের বসবাসের ব্যবস্থা করেন। [2] পুনর্বাসনের পর উদ্বাস্তুরা যাতে নিজেদের জীবন-জীবিকা চালাতে পারে তার জন্য তিনি উদ্বাস্তু পরিবারগুলিকে নগদ অর্থ প্রদান করেন। [3] নতুন শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।
7. *উদ্বাস্তু শিবিরের উদ্বাস্তুরা মূলত কী কী সরকারি সহায়তা পেত?
উত্তর – উদ্বাস্তু শিবিরের উদ্বাস্তুরা বাসস্থান, খাদ্য, পোশাক, ঔষধপত্র, পানীয়
জল, আলো প্রভৃতি ত্রাণ হিসেবে পেত। এ ছাড়া শিবিরের বহু উদ্বাস্তুকে
আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন দেওয়া হত।
8. *কোন্ সময়কে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়?
অথবা, ‘পুনর্বাসনের যুগ’ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার প্রথম পাঁচ বছর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এজন্য ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
9. * ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের প্রসঙ্গে আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন এমন দুজন বাঙালি লেখকের নাম লেখো।
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের প্রসঙ্গে আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন এমন উল্লেখযোগ্য বাঙালি লেখক হলেন—সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রফুল্ল রায়।
10. * দেশভাগের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে এমন দুটি বাংলা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার নাম উল্লেখ করো।
উত্তর – দেশভাগের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে এমন দুটি উল্লেখযোগ্য বাংলা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা হল—সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ এবং প্রফুল্ল রায়ের ‘কেয়াপাতার নৌকো’।
11. *আত্মজীবনীতে দেশভাগের সমস্যা কীভাবে উঠে এসেছে তার একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ নামে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসে দেশভাগের সমস্যা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এই গ্রন্থে লেখক দেশভাগ সম্পর্কে লিখেছেন, “দেশ স্বাধীন হল, আমরা দেশ হারালাম…। সেই প্রসঙ্গ উঠলে এখনও ক্রোধবহ্নি জ্বলে ওঠে। সেই দুষ্কর্মের হোতাদের ক্ষমা করতে পারি না।”
12. * দেশভাগের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে এমন দুটি বাংলা চলচ্চিত্রের নাম লেখো।
উত্তর – দেশভাগের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে এমন দুটি বাংলা চলচ্চিত্র হল—ঋত্বিককুমার ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’।
13. * দেশভাগের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্বাস্তু আগমনের আলোচনা পাওয়া যায় এমন দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – দেশভাগের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্বাস্তু আগমনের আলোচনা পাওয়া যায় এমন উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর ‘প্রান্তিক মানব’ এবং তথাগত রায়ের ‘মাই পিপল আপটেড’।
14. * দেশভাগের প্রসঙ্গ রয়েছে হিন্দি ও উর্দু ভাষায় লেখা এমন দুটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – দেশভাগের প্রসঙ্গ রয়েছে এমন দুটি উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ হল হিন্দি ভাষায় যশপাল রাঘোর ‘ঝুটা সাচ’ এবং উর্দু ভাষায় কৃষণ চন্দর-এর ‘এক গাধে কি সাগুদাস্ত।
15. * দেশভাগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে ইংরেজি ভাষায় লেখা এমন দুটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – দেশভাগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে ইংরেজি ভাষায় লেখা এমন উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ হল খুশবন্ত সিং-এর ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ এবং সলমন রুশদির ‘মিডনাই’স চিলড্রেন’।
16. * স্মৃতিকথা কীভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়?
উত্তর – দেশভাগের পর বিভিন্ন উদ্বাস্তুর লেখা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থগুলি থেকে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। দেশভাগের প্রেক্ষাপট, দেশভাগের মুহূর্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক টানাপোড়েন, মাতৃভূমি ছেড়ে দেশত্যাগের পরিস্থিতি, উদ্বাস্তু জীবনে জীবন-জীবিকার সমস্যা, উদ্বাস্তু আন্দোলন প্রভৃতি নানা বিষয় এসব স্মৃতিকথায় উঠে আসে যা উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
17. * দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক বাংলা গ্রন্থগুলিতে দেশভাগের সঙ্গে যুক্ত কোন্ কোন্ বিষয় আলোচিত হয়েছে?
উত্তর – দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক বাংলা গ্রন্থগুলিতে দেশভাগের সঙ্গে যুক্ত দাঙ্গা, পারিবারিক জীবনে ভাঙন, দেশত্যাগ করে উদ্বাস্তু হওয়া, মাতৃভূমির জন্য স্মৃতি রোমন্থন প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সাধারণত কোন্ সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে ?
উত্তর – পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সাধারণত হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে।
2. পূর্ব পাকিস্তান থেকে সাধারণত কোন্ সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে?
উত্তর – পূর্ব পাকিস্তান থেকে সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে।
3. ভারতের কোন্ দুটি রাজ্যে উদ্বাস্তু সমস্যা সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করে ?
উত্তর – ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবে উদ্বাস্তু সমস্যা সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করে।
4. উদ্বাস্তু স্রোত বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন্ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – উদ্বাস্তু স্রোত বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
5. কে, কবে মহাত্মা গান্ধিকে হত্যা করেন?
উত্তর – নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধিকে হত্যা করে।
6. ‘স্বাধীনতার স্বাদ’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘স্বাধীনতার স্বাদ’ গ্রন্থটি রচনা করেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
7. ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর – ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ গ্রন্থটি আবু ইসহাক-এর লেখা ।
৪. দেশভাগের পরিণাম সম্পর্কে কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা গ্রন্থটির নাম কী?
উত্তর – দেশভাগের পরিণাম সম্পর্কে কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা গ্রন্থটির নাম ‘শিকড়ের সন্ধানে’।
9. দেশভাগের প্রেক্ষাপটে প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ীর লেখা আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থটির নাম কী?
উত্তর – দেশভাগের প্রেক্ষাপটে প্রভাসচন্দ্ৰ লাহিড়ীর লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির নাম ‘পাক-ভারতের রূপরেখা’।
10. ‘দ্য শ্যাডো লাইন্‌স’ গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তর – ‘দ্য শ্যাডো লাইন্‌স’ গ্রন্থটির লেখক অমিতাভ ঘোষ।
11. ‘পদচিহ্ন’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর – ‘পদচিহ্ন’ গ্রন্থটি সত্যেন সেনের লেখা।
12. ‘পেশোয়ার এক্সপ্রেস’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর – ‘পেশোয়ার এক্সপ্রেস’ গ্রন্থটি কৃষণ চন্দর-এর লেখা।
13. ‘মিডনাইট্স চিলড্রেন’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর – ‘মিডনাইট্স চিলড্রেন’ গ্রন্থটি সলমন রুশদি-র লেখা।
14. ‘পাকিস্তান অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘পাকিস্তান অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন ড. ভীমরাও আম্বেদকর।
15. পশ্চিমবঙ্গে আগত নিঃস্ব উদ্বাস্তুরা সর্বাধিক কোন্ রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিল ?
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গে আগত নিঃস্ব উদ্বাস্তুরা সর্বাধিক শিয়ালদহ রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিল।
16. পশ্চিমবঙ্গের কিছু উদ্বাস্তুকে দূরে কোথায় পুনর্বাসন দিয়ে পাঠানো হয়েছে?
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গের কিছু উদ্বাস্তুকে দণ্ডকারণ্য ও আন্দামানে পুনর্বাসন দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
17. পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি উদ্বাস্তুরা সাধারণত ভারতের কোন্ রাজ্যগুলিতে আশ্রয় নেন?
উত্তর – পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি উদ্বাস্তুরা সাধারণত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে আশ্রয় নেন।
18. বিশ্ব-ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দেশত্যাগের ঘটনা কোন্‌টি?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু মানুষ ভারত থেকে পাকিস্তানে এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়। সংখ্যার বিচারে এটিই বিশ্ব-ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দেশত্যাগের ঘটনা।
19. দণ্ডকারণ্য ও আন্দামানে মূলত কোন্ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়?
উত্তর – দণ্ডকারণ্য ও আন্দামানে মূলত পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে আগত দলিত হিন্দু উদবাস্তুদের পুনর্বাসনে পাঠানো হয়।
20. নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি কবে কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর – নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে (৮ এপ্রিল) ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খাঁ-র মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
21. দেশভাগ ও বাংলার উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর – দেশভাগ ও বাংলার উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক গ্রন্থ হল প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী রচিত ‘প্রান্তিক মানব’ (ইংরেজি অনুবাদ : ‘দ্য মার্জিনাল মেন’)।
22. ‘কেন উদ্বাস্তু হতে হল’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর – ‘কেন উদ্বাস্তু হতে হল’ গ্রন্থটি রচনা করেন দেবজ্যোতি রায়।
23. কয়েকজন পাঞ্জাবি লেখকের নাম উল্লেখ করো যাঁরা দেশভাগের প্রেক্ষাপটে আত্মজীবনী বা সাহিত্য রচনা করেছেন।
উত্তর – দেশভাগের প্রেক্ষাপটে আত্মজীবনী বা সাহিত্য রচনা করেছেন এমন কয়েকজন পাঞ্জাবি লেখক হলেন ভীষ্ম সাহানী, কুলবন্ত সিং বিক প্রমুখ।
24. কয়েকজন উর্দু লেখকের নাম উল্লেখ করো যাঁরা দেশভাগের প্রেক্ষাপটে আত্মজীবনী বা সাহিত্য রচনা করেছেন।
উত্তর – দেশভাগের প্রেক্ষাপটে আত্মজীবনী বা সাহিত্য রচনা করেছেন এমন কয়েকজন উর্দু লেখক হলেন কৃষণ চন্দর, মুনশি প্রেমচাঁদ, সাদাত হাসান মান্টো প্রমুখ।
25. পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এমন দুটি উদ্বাস্তু শিবিরের নাম লেখো।
উত্তর – পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বাস্তু শিবির ছিল নদীয়া জেলার [1] ধুবুলিয়ার উদ্বাস্তু শিবির এবং [2] রানাঘাটের কুপার্স উদ্বাস্তু শিবির।

ঠিক বা ভুল নির্ধারণ করো

1. দেশভাগের পর গঠিত পাকিস্তানের মূলত দুটি অংশ ছিল—পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান।
উত্তর – ঠিক
2. যেসব উদ্বাস্তু মহিলার স্বামী বা প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র সন্তান ছিল না তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হত।
উত্তর – ভুল
3. নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি সম্পাদনের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তুদের আগমন বন্ধ হয়েছিল।
উত্তর – ভুল
4. দক্ষিণারঞ্জন বসুর লেখা ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’হল একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ।
উত্তর – ভুল
5. ‘রিমেম্বারিং পার্টিশন’ গ্রন্থটি রচনা করেছেন সাদাত হাসান মান্টো।
উত্তর – ভুল
6. ‘গড় শ্রীখণ্ড’ গ্রন্থটি অমিয়ভূষণ মজুমদার এবং ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ গ্রন্থটি দক্ষিণারঞ্জন বসু রচনা করেন।
উত্তর – ঠিক
7. ‘সেদিনের কথা’ ও ‘যতদূর মনে পড়ে’ গ্রন্থ দুটি রচনা করেন যথাক্রমে জ্যোতি বসু ও মণিকুন্তলা সেন।
উত্তর – ভুল
৪. দেশভাগ নিয়ে বাংলা ভাষায় ঋত্বিক ঘটকের লেখা একটি গল্প হল ‘স্ফটিক পাত্র’।
উত্তর – ঠিক

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. সরকারি শিবিরে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুরা যে সরকারি সহায়তা পেত তা ………… নামে পরিচিত।
উত্তর – ডোল
2. ‘নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’ ……… চুক্তি নামেও পরিচিত।
উত্তর – দিল্লি
3. ………. উদ্বাস্তুরা সম্পত্তি ও জনবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছিল।
উত্তর – পাঞ্জাবের
4. ………. ক্যাম্প থেকে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে পাঠানো হত।
উত্তর – ট্রানজিট
5. ‘অর্ধেক জীবন’ ও ‘পূর্ব-পশ্চিম’ গ্রন্থ দুটি রচনা করেন— ………..।
উত্তর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
6. দেশভাগের প্রেক্ষাপটের ভীষ্ম সাহানীর লেখা একটি উপন্যাস হল ………….।
উত্তর – তমস
7. দেশভাগের প্রেক্ষাপটে ল্যারি কলিন্স-এর লেখা একটি গ্রন্থ হল ………….।
উত্তর – ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট
8. দেশভাগের প্রেক্ষাপটে ‘কালো বরফ’ গ্রন্থটি রচনা করেন ……….।
উত্তর – মাহমুদুল হক
9. দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের প্রেক্ষাপটে হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা গ্রন্থটি হল ………।
উত্তর – উদ্বাস্তু
10. ‘স্বাধীনতার পূর্বাভাস’ গ্রন্থটি …………. রচনা করেন।
উত্তর – অন্নদাশঙ্কর রায়
11. ‘সংশপ্তক’ গ্রন্থটি ………….. রচনা করেন।
উত্তর – শহীদুল্লা কায়সার
12. সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দেশভাগ বিষয়ক একটি গ্রন্থ হল ………।
উত্তর – দেশভাগ : দেশত্যাগ

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা MCQ

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

1. দেশভাগের পর কোন্ অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল?
(a) পূর্ববঙ্গ
(b) পশ্চিমবঙ্গ
(c) পাঞ্জাব
(d) ত্রিপুরা
উত্তর – (a) পূর্ববঙ্গ
2. নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়—
(a) ১৯৪৭ খ্রি.
(b) ১৯৪৮ খ্রি.
(c) ১৯৪৯ খ্রি.
(d) ১৯৫০ খ্রি.
উত্তর – (d) ১৯৫০ খ্রি.
3. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম উদ্বাস্তু কমিশনার ছিলেন—
(a) বিধানচন্দ্র রায়
(b) হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
(c) রেণু গুহ
(d) শ্যামাপ্রসাদ মুখোপ্যাধ্যায়
উত্তর – (b) হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
4. ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু হয়—
(a) ১৯৪৯ খ্রি.
(b) ১৯৫০ খ্রি.
(c) ১৯৫১ খ্রি.
(d) ১৯৫২ খ্রি.
উত্তর – (d) ১৯৫২ খ্রি.
5. ভারত সরকার পাকিস্তান থেকে আগত কিছু উদ্বাস্তুকে স্থায়ীভাবে রাখে—
(a) পি এল ক্যাম্পে
(b) ট্র্যানজিট ক্যাম্পে
(c) ধুবুলিয়া ক্যাম্পে
(d) দণ্ডকারণ্য ক্যাম্পে
উত্তর – (a) পি এল ক্যাম্পে
6. ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পাসপোর্ট প্রথা কবে চালু হয়?
(a) ১৯৫০ খ্রি.
(b) ১৯৫১ খ্রি.
(c) ১৯৫২ খ্রি.
(d) ১৯৫৩ খ্রি.
উত্তর – (c) ১৯৫২ খ্রি.
7. ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ গ্রন্থটি রচনা করেন-
(a) মহাশ্বেতা দেবী
(b) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
(c) প্রফুল্ল রায়
(d) অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তর – (d) অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
৪. ‘কেয়াপাতার নৌকো’ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(a) প্রফুল্ল রায়
(b) মহাশ্বেতা দেবী
(c) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
(d) অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তর – (a) প্রফুল্ল রায়
9. ‘নতুন ইহুদী’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
(a) দেবজ্যোতি রায়
(b) সলিল সেন
(c) তথাগত রায়
(d) মহাশ্বেতা দেবী
উত্তর – (b) সলিল সেন
10. সম্প্রতি দেশভাগের প্রেক্ষাপটে হাসান আজিজুল হকের লেখা গ্রন্থটি হল—
(a) কালো বরফ
(b) কেয়াপাতার নৌকো
(c) আগুন পাখি
(d) প্রসঙ্গ অনুপ্রবেশ
উত্তর – (c) আগুন পাখি
11. নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা গ্রন্থটি হল—
(a) আমি বীরাঙ্গনা বলছি
(b) কালো বরফ
(c) নতুন ইহুদী
(d) সূর্য-দীঘল বাড়ী
উত্তর – (a) আমি বীরাঙ্গনা বলছি
12. ‘দয়াময়ীর কথা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
(a) সেলিনা হোসেন
(b) সুনন্দা সিকদার
(c) শওকত আলি
(d) আয়েশা খাতুন
উত্তর – (b) সুনন্দা সিকদার
13. ‘বসত’ গ্রন্থটি কার লেখা?
(a) প্রফুল্ল রায়ের
(b) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের
(c) শওকত আলির
(d) সমরেশ বসুর
উত্তর – (c) শওকত আলির
14. ‘টোবা টেক সিং’ গল্পটি কে রচনা করেন?
(a) সাদাত হাসান মান্টো
(b) মুনশি প্রেমচাঁদ
(c) খুশবন্ত সিং
(d) কুলবন্ত সিং
উত্তর – (a) সাদাত হাসান মান্টো
15. ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ লিখেছেন—
(a) জওহরলাল নেহরু
(b) ভি পি মেনন
(c) খুশবন্ত সিং
(d) সলমান রুশদি
উত্তর – (c) খুশবন্ত সিং

TOPIC – C ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. * স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনে কী ধরনের বিতর্ক বা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ?
উত্তর – ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনে বিতর্ক ও সমস্যা
ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে রাজ্য পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে ভাষাগত বিষয়টিকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। ফলে স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন নিয়ে নানা বিতর্ক ও সমস্যা দেখা দেয়।
  1. বিতর্কের সূত্রপাত: স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সীমানা কোন্ নীতি বা পদ্ধতির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক শুরু হয়। এর সমাধান করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট সমস্যার মুখে পড়ে।
  2. দেশীয় রাজ্যের সংযুক্তি: স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য ভারত রাষ্ট্রে যোগদান করলে এই রাজ্যগুলির সীমানা কী হবে, তাদের নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠন করা হবে, নাকি প্রতিবেশী অন্য কোনো রাজ্যের সঙ্গে দেশীয় রাজ্যের ভূখণ্ড যুক্ত করা হবে তা নিয়েও নানা সমস্যা শুরু হয়।
  3. ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন গঠন: ভারতীয় গণপরিষদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বিচারক এস কে দর-এর নেতৃত্বে ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’ গঠন করে। এই কমিশন ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আপত্তি জানায়। কমিশন বলে যে, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠিত হলে ভারতের জাতীয় ঐক্য ও প্রশাসনিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
  4. আন্দোলনের ব্যাপকতা: এই সময় ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দক্ষিণ ভারতে এই আন্দোলন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আন্দোলন প্রশমনের উদ্দেশ্যে সরকার একটি কমিটি নিয়োগ করলে এই কমিটিও ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের বিপক্ষে মত দেয়।
  5. শ্রীরামুলুর অনশন: মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষা-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামী পত্তি শ্রীরামুলু ৫৮ দিন অনশনের পর মৃত্যুবরণ (১৯৫২ খ্রি.) করলে সেখানে দাঙ্গাহাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়ে।
  6. ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন: কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠন করে। আর তামিলভাষীদের নিয়ে তামিলনাড়ু রাজ্য গঠিত হয়। এভাবে ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
উপসংহার: স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন নিয়ে দীর্ঘ সমস্যা ও বিতর্ক চলার পর শেষপর্যন্ত ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হলে ওই বছর ভাষাভিত্তিক ১৪টি রাজ্য এবং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
2. * স্বাধীন ভারতে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল ?
উত্তর – ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন
ভূমিকা: মানুষের মুখের ভাষা মানবসংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। অথচ ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে রাজ্য পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে ভাষাগত বিষয়টিকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি।
  1. দাবি: স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ দেশবাসীর দাবি ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন করতে হবে। এই প্রেক্ষিতে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদের উদ্যোগে গঠিত ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তার রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে গঠিত জে ভি পি কমিটি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
  2. আন্দোলনের তীব্রতা: কিছুদিনের মধ্যেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে পত্তি শ্রীরামুলু অনশনে প্রাণত্যাগ (১৯৫২ খ্রি.) করলে সেখানে চরম নৈরাজ্য শুরু হয়। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তেলুগু ভাষা-অঞ্চল নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিল ভাষা-অঞ্চল নিয়ে তামিলনাড়ু রাজ্য গঠন করে।
  3. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন: এই পরিস্থিতিতে অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণের নীতি উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ (১৯৫৩ খ্রি.) গঠন করে।
  4. রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হয়। এর দ্বারা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ভারত সরকার ভাষার ভিত্তিতে ১৪টি রাজ্য ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করে। এভাবে ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

উপসংহার: স্বাধীনতা পরবর্তী রাজ্য পুনর্গঠনের নীতি নির্ধারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু প্রথমে ভাষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু কিছুকালের মধ্যেই প্রমাণ হয় যে, নেহরুর নীতি ভুল ছিল। পরে মূলত ভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যগুলি পুনর্গঠিত হয়।

3. * রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩ খ্রি.) সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন
ভূমিকা: স্বাধীন ভারতে কোন্ নীতি অনুসারে অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা চিহ্নিত করা উচিত সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ (SRC) গঠন করেন।
  1. সদস্যবৃন্দ: তিনজন সদস্য নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের সভাপতি ছিলেন বিচারপতি ফজল আলি। কমিশনের অপর দুজন সদস্য ছিলেন কে এম পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জরু।
  2. কমিশনের সুপারিশ: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তার প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা হয়।
  3. রাজ্য পুনর্গঠন আইন প্রয়োগ: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতীয় আইনসভায় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হয়। এই আইন অনুসারে ওই বছর ১ নভেম্বর ভাষাভিত্তিক ১৪টি রাজ্য এবং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
  4. বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ১৪টি ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠিত হয়। সেগুলি হল অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, বিহার বোম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, মহীশূর, মাদ্রাজ ও রাজস্থান এবং যে ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয় সেগুলি হল ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দিল্লি, লাক্ষাদ্বীপ, মণিপুর ও হিমাচল প্রদেশ।

উপসংহার: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশে কেন্দ্রীয় সরকার ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন শুরু করলে দক্ষিণ ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনগুলি থেমে যায়। ফলে ভারতের ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় হয়।

4. * ভারতে সরকারি ভাষা নির্ধারণ-বিষয়ক বিতর্ক সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – সরকারি ভাষা নির্ধারণ-বিষয়ক বিতর্ক
ভূমিকা: ভারতবর্ষ একটি বহু ভাষাভাষী রাষ্ট্র। বিভিন্ন ধরনের উপভাষা মিলিয়ে ভারতে প্রায় ১৬০০ ভাষা প্রচলিত রয়েছে।
  1. সরকারি ভাষা নিয়ে বিতর্ক: স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে বহু ভাষাভাষী ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার কোন ভাষার মাধ্যমে তার কাজকর্ম পরিচালনা ও অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে, সে বিষয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইংরেজি ও হিন্দি ভাষা। ভারতীয় সংবিধান ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হিন্দি ভাষাকে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
  2. সরকারি ভাষা কমিশন গঠন : কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সরকারি ভাষা কমিশন গঠন করে। এর অন্যতম দুজন সদস্য ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর পি সুব্বারোয়ান।
  3. কমিশনের প্রতিবেদন: সরকারি ভাষা কমিশন ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তার প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনে বলা হয় যে –[i] দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হিন্দি হবে ভারতের সরকারি ভাষা। [ii] ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কাজে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার চলবে। [iii] হিন্দি হবে ভারতের একমাত্র সরকারি ভাষা। [iv] রাজ্য বিধানসভাগুলি নিজ নিজ রাজ্যের সরকারি ভাষা ঠিক করবে।
  4. সরকারি ভাষা আইন ঘোষণার প্রতিক্রিয়া : সরকারি ভাষা কমিশন হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে দক্ষিণ ভারতে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় আইনসভায় সরকারি ভাষা আইন (১৯৬৩ খ্রি.) পাস হয়। এই আইনে হিন্দির সঙ্গে অনির্দিষ্টকাল ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের কথা বলা হয়।

উপসংহার: ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি ও ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাশাপাশি হিন্দির প্রসারের চেষ্টা চলছে। রাজ্য পর্যায়ে আরও বেশ কয়েকটি ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

5. * ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের সরকারি ভাষা আইন সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – সরকারি ভাষা আইন (১৯৬৩ খ্রি.)
ভূমিকা: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে গঠিত সরকারি ভাষা কমিশন তার প্রতিবেদনে (১৯৫৬ খ্রি.) দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে।
  1. নতুন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন: সরকারি ভাষা কমিশন হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। দক্ষিণ ভারতে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। এই অবস্থায় ভারতীয় পার্লামেন্টে সরকারি ভাষা আইন (১৯৬৩ খ্রি.) পাস হয়।
  2. নতুন আইনের বক্তব্য : সরকারি ভাষা আইন অনুসারে—[i] ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের পরও সরকারি কাজকর্মে হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার ব্যবহারও চালু থাকে। [ii] রাজ্য বিধানসভাগুলি নিজ নিজ রাজ্যের জন্য সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করার অধিকার পায়।
  3. অষ্টম তফসিলের ভাষা : সরকারি ভাষা আইনের ধারা অনুসারে বিভিন্ন রাজ্য বিধানসভা তাদের সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করলে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে সরকারি ভাষা হিসেবে ১৪টি ভাষা স্থান পায়। এই ভাষাগুলি হল—অসমিয়া, বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, মালয়ালম্, মারাঠি, উড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, তামিল, তেলুগু এবং উর্দু।

উপসংহার: হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয় তা দূর করার উদ্দেশ্যে ‘সরকারি ভাষা আইন’ (১৯৬৩ খ্রি.) পাস হয়। এই আইনের ধারা অনুসারে হিন্দি-সহ ১৪টি ভাষা সংবিধানে ‘সরকারি ভাষা’র স্বীকৃতি পায়।

6. * ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীন ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর – স্বাধীন ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন
ভূমিকা: স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ দেশবাসী ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি জানালেও ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন ও ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জে ভি পি কমিটি ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনে আপত্তি জানায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুনর্গঠনের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে।
  1. অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্য গঠন: মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে গান্ধিবাদী নেতা পত্তি শ্রীরামুলু দীর্ঘ অনশনের ফলে প্রাণত্যাগ (১৯৫২ খ্রি.) করলে সেখানে
    ব্যাপক দাঙ্গাহাঙ্গামা ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠন করে আর তামিল ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে সৃষ্টি হয় মাদ্রাজ রাজ্য, যা ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তামিলনাড়ু নাম গ্রহণ করে।
  2. রাজ্য পুনর্গঠন আইন (১৯৫৬ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা : প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উদ্যোগে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতীয় আইনসভায় রাজ্য পুনর্গঠন আইন (১৯৫৬ খ্রি.) পাস হয়। এই আইনের দ্বারা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ভাষাভিত্তিক ১৪টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়। রাজ্যগুলি হল— অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, বিহার, বোম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, মহীশূর, মাদ্রাজ ও রাজস্থান এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি হল—ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দিল্লি, লাক্ষাদ্বীপ, মণিপুর ও হিমাচল প্রদেশ।
  3. মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠন : রাজ্য পুনর্গঠন আইনের দ্বারা বোম্বাই প্রদেশের বসবাসকারী মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাভাষীদের জন্য পৃথক রাজ্য গঠিত না হওয়ায় সেখানকার মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাভাষীরা আন্দোলন শুরু করে। সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি মারাঠি অঞ্চলে এবং মহাগুজরাট জনতা পরিষদ গুজরাটি অঞ্চলে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনকে প্রবল করে তোলে। পুলিশের গুলিতে ৮০ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই প্রদেশ ভেঙে পৃথক মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। মহারাষ্ট্রের রাজধানী হয় বোম্বাই এবং গুজরাটের রাজধানী হয় আমেদাবাদ।

উপসংহার: ভারতের জাতীয় নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের বিষয়টি দেশের সংহতি রক্ষায় যথেষ্ট সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে। এর দ্বারা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1. স্বাধীনতা লাভের আগে ভাষার ভিত্তিতে ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় কী সমস্যা দেখা দিয়েছিল ?
উত্তর – স্বাধীনতা লাভের আগে ভাষার ভিত্তিতে ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় একই ভাষাভুক্ত মানবগোষ্ঠী বিভিন্ন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনৈক্যের শিকার হয়েছিল।
2. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল?
উত্তর – ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ফজল আলির নেতৃত্বে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল—[1] রাজ্য পুনর্গঠন করা হবে কি না বা হলেও এর ভিত্তি কী হবে তা ঠিক করা। [2] রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন এবং ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা।
3. * স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের সূচনায় কী ধরনের বিতর্ক দেখা দেয় ?
উত্তর – স্বাধীন ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের সূচনায়—[1] ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন করা হবে কি না, [2] ভারতে যোগদানকারী দেশীয় রাজ্যগুলি নিয়ে পৃথক অঙ্গরাজ্য গঠন করা হবে, না কি তাদের অন্য কোনো অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হবে প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়।
4. * ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন কার নেতৃত্বে কবে গঠিত হয়? এই কমিশনের মূল বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর – বিচারপতি এস কে দর-এর নেতৃত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’ গঠিত হয়।
ভাষাভিত্তিক কমিশন ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনে আপত্তি জানিয়ে বলে যে, ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠিত হলে ভারতের জাতীয় ঐক্য ও প্রশাসনিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হবে।
5. দার কমিশন (১৯৪৮) কেন গঠিত হয়েছিল ?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন ভারতীয় অঙ্গরাজ্য এবং ভারতে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যগুলির সীমানা জাতি না ভাষার ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এই প্রশ্নের মীমাংসার উদ্দেশ্যে দার কমিশন (১৯৪৮) গঠিত হয়।
6. *কবে, কোন প্রেক্ষাপটে ‘জে ভি পি কমিটি’ গঠিত হয়?
উত্তর – ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে দক্ষিণ ভারতে আন্দোলন সক্রিয় হয়ে উঠলে তা প্রশমনের উদ্দেশ্যে ওই বছর ‘জে ভি পি কমিটি’ গঠিত হয়। জে ভি পি কমিটির সদস্যগণ ছিলেন জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়া।
7. *পত্তি শ্রীরামুলু কে ছিলেন?
উত্তর – পত্তি শ্রীরামুলু ছিলেন দক্ষিণ ভারতের একজন গান্ধিবাদী নেতা। মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে তিনি ৫৮দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ (১৯৫২ খ্রি.) করেন।
8. *কবে, কোন্ প্রেক্ষাপটে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠিত হয় ?
উত্তর – ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠিত হয়। মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে অনশন করে পত্তি শ্রীরামুলু মৃত্যুবরণ করার পর কেন্দ্রীয় সরকার ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠন করে।
9. *১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’-এর দ্বারা কোন্ কোন্ প্রদেশ গঠিত হয়?
উত্তর – ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’-এর দ্বারা ভাষাভিত্তিক ১৪টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়। ১৪টি রাজ্য হল—অন্ধ্ৰপ্ৰদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, বিহার, বোম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, মহীশূর, মাদ্রাজ ও রাজস্থান এবং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল—ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দিল্লি, লাক্ষাদ্বীপ, মণিপুর ও হিমাচল প্রদেশ।
10. * ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর সদস্য কারা ছিলেন?
উত্তর – ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর তিনজন সদস্য ছিলেন—ফজল আলি, কে এম পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জরু। ফজল আলি ছিলেন কমিশনের সভাপতি।
11. * দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি দলিল বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজনের পর বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য ভারত সরকারের একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই চুক্তিপত্র দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দলিল নামে পরিচিত। কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর এই দলিলে স্বাক্ষর করলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
12. * ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ কবে তার প্রতিবেদন পেশ করে? প্রতিবেদনে কী সুপারিশ করা হয়?
উত্তর – ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তার প্রতিবেদন পেশ করে। ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর প্রতিবেদনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা হয়।
13. কবে, কীভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্য গঠিত হয়?
উত্তর – ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়। আর তামিল ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে অবশিষ্ট মাদ্রাজ প্রদেশ থাকে যা ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তামিলনাড়ু নাম গ্রহণ করে।
14. * মারাঠি ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলন কী রূপ নেয়?
উত্তর – মারাঠি ভাষা-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে বোম্বাই প্রদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে ৮০ জনের মৃত্যু হয়। এই অবস্থায় বোম্বাই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সি ডি দেশমুখ পদত্যাগ করেন।
15. * স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে সরকারি ভাষা নির্ধারণে কেন বিতর্ক দেখা দেয়?
উত্তর – স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম পরিচালনা এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগ কোন্ ভাষায় রক্ষা করা হবে সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে বিতর্ক দেখা দেয়।
16. * ‘সরকারি ভাষা কমিশন’-এর প্রতিবেদনে (১৯৫৬ খ্রি.) কী বলা হয়?
উত্তর – ‘সরকারি ভাষা কমিশন’-এর প্রতিবেদনে বলা হয় যে—[1] দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হিন্দি হবে ভারতের সরকারি ভাষা। [2] ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কাজে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার চলবে। [3] হিন্দি হবে ভারতের একমাত্র সরকারি ভাষা। [4] রাজ্য বিধানসভাগুলি নিজ নিজ রাজ্যের সরকারি ভাষা ঠিক করবে।
17. * কোন্ পরিস্থিতিতে কবে ‘সরকারি ভাষা আইন’ পাস হয়?
উত্তর – ‘সরকারি ভাষা কমিশন’ হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে দক্ষিণ ভারতে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় আইনসভায় ‘সরকারি ভাষা আইন’ (১৯৬৩ খ্রি.) পাস হয়।
18. * ‘সরকারি ভাষা আইন’-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা উল্লেখ করো।
উত্তর – ‘সরকারি ভাষা আইন’-এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা ছিল– [1] ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের পরও সরকারি কাজকর্মে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার চালু থাকবে। [2] রাজ্য বিধানসভাগুলি নিজ নিজ রাজ্যের জন্য সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করার অধিকার পাবে।
19. * ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে কোন্ কোন্ ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্থান লাভ করে?
উত্তর – ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে মোট ১৪টি ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্থান লাভ করে। এই ভাষাগুলি হল—অসমিয়া, বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, মালয়ালম্, মারাঠি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, তামিল, তেলুগু এবং উর্দু। এর বাইরেও ইংরেজি ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
20. * বাংলা কোন্ কোন্ রাজ্যের সরকারি ভাষা?
উত্তর – বাংলা ভাষা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা এবং আসাম, ঝাড়খণ্ড ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য সরকারি ভাষা।
21. *প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষা চালু রয়েছে এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর – প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষা চালু রয়েছে এমন রাজ্য হল বিহার এবং ছত্তিশগড়।
22. * কোন্ কোন্ রাজ্য বিধানসভা ইংরেজিকে তাদের রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে?
উত্তর – অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি রাজ্য বিধানসভা ইংরেজিকে তাদের রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
23. * কে, কবে ‘দ্বি-ভাষা নীতি’ গ্রহণ করেন?
উত্তর – ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের সরকারি ভাষা আইনের সংশোধন করে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের জন্য ‘দ্বি-ভাষা নীতি’ গ্রহণ করেন। এই দুটি ভাষা হল হিন্দি ও ইংরেজি।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

একটি বাক্যে উত্তর দাও

1. তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে রাজ্য গঠনের দাবিতে অনশন করে কে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর – তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে রাজ্য গঠনের দাবিতে অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন পত্তি শ্রীরামুল।
2. ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর – ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর সভাপতি ছিলেন বিচারপতি ফজল আলি।
3. ‘সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি’ কোন্ ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে?
উত্তর – ‘সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি’ মারাঠি ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
4. ‘মহাগুজরাট জনতা’ কোন্ ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে?
উত্তর – ‘মহাগুজরাট জনতা’ গুজরাটি ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
5. সংবিধানে কবে, কোন ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়?
উত্তর – সংবিধানে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে হিন্দি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
6. বর্তমানে ভারতীয় সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত সরকারি ভাষার সংখ্যা কত?
উত্তর – বর্তমানে ভারতীয় সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত সরকারি ভাষার সংখ্যা ২২।
7. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরার ‘সরকারি ভাষা’ কী ছিল?
উত্তর – ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরার ‘সরকারি ভাষা’ ছিল বাংলা।
৪. পত্তি শ্রীরামুলু কোন্ রাজ্য গঠনের দাবিতে অনশন আন্দোলন করেন ?
উত্তর – মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে পত্তি শ্রীরামুলু অনশন আন্দোলন করেন।
9. কী উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠিত হয়?
উত্তর – কোন্ নীতি বা পদ্ধতি অনুসারে স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণ করা উচিত সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠিত হয়।
10. ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’এর দ্বারা কবে, কয়টি ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠিত হয়?
উত্তর – ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’-এর দ্বারা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ১৪টি ভাষাভিত্তিক রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
11. কার সুপারিশের ভিত্তিতে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হয়?
উত্তর – ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর সুপারিশের ভিত্তিতে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হয়।
12. ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ মহারাষ্ট্র ও পাত্মাব সম্পর্কে কী সিদ্ধান্ত নেয়?
উত্তর – ‘‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাবকে অখণ্ড রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
13. কবে, কোন্ অঞ্চল নিয়ে পৃথক মহারাষ্ট্র রাজ্য গঠিত হয় ?
উত্তর – ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই প্রদেশের মারাঠি ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক মহারাষ্ট্র রাজ্য গঠিত হয়।
14. কবে, কোন্ অঞ্চল নিয়ে পৃথক গুজরাট রাজ্য গঠিত হয়?
উত্তর – ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই প্রদেশের গুজরাটি ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক গুজরাট রাজ্য গঠিত হয়।
15. সরকারি ভাষা কমিশনের দুজন সদস্যের নাম লেখো।
উত্তর – সরকারি ভাষা কমিশনের অন্যতম দুজন সদস্য ছিলেন সুনীতিকুমার চট্টেপাধ্যায় এবং পি সুব্বারোয়ান।
16. সরকারি ভাষা আইনের মূল সিদ্ধান্ত কী ছিল?
উত্তর – সরকারি ভাষা আইনের মূল সিদ্ধান্ত ছিল যে, সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজি ভাষা অনির্দিষ্টকাল চলবে।
17. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের ‘সরকারি ভাষা’ কী ছিল?
উত্তর – ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের ‘সরকারি ভাষা’ ছিল যথাক্রমে বাংলা ও অসমিয়া।

ঠিক বা ভুল নির্ধারণ করো

1. ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় আয়তনে সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য ছিল হায়দ্রাবাদ।
উত্তর – ঠিক
2. ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের পক্ষে অভিমত দেয়।
উত্তর – ভুল
3. জে ভি পি কমিটি ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের পক্ষে অভিমত দেয়।
উত্তর – ভুল
4. সরকারি ভাষা কমিশন দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
উত্তর – ঠিক
5. সরকারি ভাষা কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কাজে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার চলবে।
উত্তর – ঠিক
6. ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ‘সরকারি ভাষা আইন’ অনুসারে রাজ্য বিধানসভাগুলি নিজ নিজ রাজ্যের জন্য সরকারি ভাষা নির্ধারণ করার অধিকার পায়।
উত্তর – ঠিক
7. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিলে সরকারি ভাষা হিসেবে ১৮টি ভাষা স্থান পায়।
উত্তর – ভুল

শূন্যস্থান পূরণ করো

1. ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’-এর সভাপতি ছিলেন ………..।
উত্তর – এস কে দর
2. পত্তি শ্রীরামুলু ………… দিন অনশনের পর মারা যান।
উত্তর – ৫৮
3. অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয় ……….. খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর – ১৯৫৩
4. ………… ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়।
উত্তর – তেলুগু
5. ………… ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’-এর সভাপতি ছিলেন।
উত্তর – ফজল আলি
6. কে এম পানিক্কর ছিলেন ………… -এর সদস্য।
উত্তর – রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন
7. ……….  খ্রিস্টাব্দে ‘সরকারি ভাষা কমিশন’ তার প্রতিবেদন পেশ করে।
উত্তর – ১৯৫৬
৪. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ‘সরকারি ভাষা’-র সংখ্যা ছিল ………..।
উত্তর – ১৪
9. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় সংবিধানের ……….. তফসিলে ‘সরকারি ভাষা’ হিসেবে ১৪টি ভাষা স্থান লাভ করেছে।
উত্তর – অষ্টম

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা MCQ

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

1. ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’ কবে গঠিত হয়?
(a) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (b) ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে
2. ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ তৈরি করা হয়েছিল—
(a) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (c) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে
3. স্বতন্ত্র ভাষাভিত্তিক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয়—
(a) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (c) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে
4. রাজ্য পুনর্গঠন আইন কার্যকর হয়—
(a) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (b) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে
5. ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ কবে তার প্রতিবেদন জমা দেয়?
(a) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – (c) ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে
6. কোন্ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠিত হয়?
(a) রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন
(b) ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন
(c) জে ভি পি কমিটি
(d) দেশীয় রাজ্য কমিটি
উত্তর – (a) রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন
7. ভারতে ভাষার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া প্রথম রাজ্য—
(a) তামিলনাড়ু
(b) অন্ধ্ৰপ্ৰদেশ
(c) মহারাষ্ট্র
(d) গুজরাট
উত্তর – (b) অন্ধ্ৰপ্ৰদেশ
৪. ভাষাভিত্তিক গুজরাট রাজ্যটি গঠিত হয়—
(a) ১৯৫৩ খ্রি.
(b) ১৯৫৬ খ্রি.
(c) ১৯৬০ খ্রি.
(d) ১৯৬৫ খ্রি.
উত্তর – (c) ১৯৬০ খ্রি.
9. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় কোন্ কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(a) জে ভি পি কমিটি
(b) সরকারি ভাষা কমিশন
(c) রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন
(d) দেশীয় রাজ্য কমিটি
উত্তর – (b) সরকারি ভাষা কমিশন
10. ‘সরকারি ভাষা আইন’ পাস হয়—
(a) ১৯৫৩ খ্রি.
(b) ১৯৫৬ খ্রি.
(c) ১৯৬০ খ্রি.
(d) ১৯৬৩ খ্রি.
উত্তর – (d) ১৯৬৩ খ্রি.
11. উর্দু কোথাকার অন্যতম সরকারি ভাষা?
(a) তামিলনাড়ু
(b) উত্তরাখণ্ড
(c) বিহার
(d) জম্মু ও কাশ্মীর
উত্তর – (d) জম্মু ও কাশ্মীর
12. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রের ‘সরকারি ভাষা’ ছিল—
(a) বাংলা
(b) হিন্দি
(c) মারাঠি
(d) গুজরাটি
উত্তর – (c) মারাঠি
13. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে অন্ধ্রপ্রদেশের ‘সরকারি ভাষা’ ছিল—
(a) তেলুগু
(b) তামিল
(c) মালয়ালম্
(d) গুজরাটি
উত্তর – (a) তেলুগু
14. সিকিম রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা হল—
(a) বাংলা
(b) নেপালি
(c) গোরখা
(d) হিন্দি
উত্তর – (b) নেপালি
15. ভারতের ‘লৌহমানব’ বলা হয়—
(a) মহাত্মা গান্ধি
(b) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল
(c) মহম্মদ আলি জিন্না
(d) রাজেন্দ্রপ্রসাদ
উত্তর – (b) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল

TOPIC – D বিবিধ

অনুসন্ধিৎসু শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নোত্তর

1. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজনের দিকে যাত্রার কয়েকটি পদক্ষেপ উল্লেখ করো।
উত্তর – ভারত বিভাজনের দিকে যাত্রা
ভূমিকা: জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিমদের জন্য পৃথক পাকিস্তান দাবি করে প্রস্তাব গ্রহণ করে যা ‘লাহোর প্রস্তাব’ বা ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে পরিচিত। এরপর থেকে ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার প্রাক্-মুহূর্তে (১৯৪৭ খ্রি.) এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার ফলে ভারতবর্ষ ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পরিস্থিতি জন্মায়।
  1. মুসলিম লিগের ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’: ভারতের বড়োলাট লর্ড ওয়াভেল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ আগস্ট কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানান। এতে উত্তেজিত হয়ে লিগ সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’-এর ডাক দিলে ১৬ আগস্ট থেকে ৩ দিন ধরে কলকাতায় ভয়ানক দাঙ্গা, খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
  2. মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব: পরবর্তী বড়োলাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ভারত বিভাগের পরিকল্পনা করেন। এই ঘোষণা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ নামে পরিচিত। এই ঘোষণায় ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়।
  3. ভারতের স্বাধীনতা আইন: ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই ‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ পাস হয়। এই আইনের দ্বারা ভারত ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু, বেলুচিস্তান, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ববঙ্গ এবং আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান এবং অবশিষ্ট অংশ নিয়ে ভারত গঠিত হয়।
2. দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর – দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভূক্তির বিষয়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভূমিকা
ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই তৎকালীন বড়োলাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  1. দেশীয় শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা: ভারতের ব্রিটিশ শাসক মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে বহু দেশীয় রাজার বন্ধুত্ব এবং ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল। এই ঘনিষ্ঠতাকে মাউন্টব্যাটেন দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে কাজে লাগান।
  2. ব্রিটিশ সরকারের নীতি: মাউন্টব্যাটেন দেশীয় রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দেন যে, ব্রিটিশ সরকার কোনো দেশীয় রাজ্যকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেবে না বা ব্রিটিশ কমনওয়েলথ-এর অন্তর্ভুক্ত করবে না। এর অর্থ হল—কোনো দেশীয় রাজ্য ভারত বা পাকিস্তানে যোগ না দিলে সেই রাজ্যের সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন থাকবে।
  3. অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্বন্ধীয় বক্তব্য: মাউন্টব্যাটেন বলেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশ ইতিপূর্বে একটি অখণ্ড অর্থনৈতিক অঞ্চল ছিল। দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতে যোগ না দিলে এই অখণ্ড সম্পর্ক ভেঙে যাবে এবং এতে দেশীয় রাজ্যগুলি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
  4. সম্ভাব্য সমস্যা সম্পর্কে সতর্কবাণী: মাউন্টব্যাটেন দেশীয় রাজ্যগুলিকে জানান যে, তারা নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করার চেষ্টা করলে সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগবে এবং সাম্যবাদী আন্দোলনের প্রসার ঘটবে।
  5. প্রতিশ্রুতি: মাউন্টব্যাটেন দেশীয় রাজ্যের শাসকদের প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি ভারতে যোগদানকারী দেশীয় রাজ্যগুলির নেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি রক্ষা করবেন, কেননা তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে কর্মরত থাকবেন।
3. দেশীয় রাজ্য যোধপুর ও জয়সলমীরের ভারতভুক্তি সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – যোধপুর ও জয়সলমীরের ভারতভুক্তি
ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে ভারতীয় ভৌগোলিক সীমার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্য ছিল সীমান্তবর্তী যোধপুর ও জয়সলমীর। শেষপর্যন্ত অমুসলিম-অধ্যুষিত যোধপুর ও জয়সলমীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  1. হানওয়াত সিংহের মনোভাব: যোধপুরের শাসক হানওয়াত সিংহ ছিলেন কংগ্রেসের তীব্র বিরোধী। তিনি মনে করতেন যে, ভারতে যোগ দিলে ভবিষ্যতে তাঁর বিশেষ লাভ হবে না। তাই তিনি জয়সলমীরের রাজার সঙ্গে মিলিতভাবে জিন্নার সঙ্গে সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
  2. জিন্নার ব্যর্থ উদ্যোগ : জিন্না যোধপুর ও জয়সলমীরকে যে-কোনো শর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেন। জয়সলমীর এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। পরে জয়সলমীর ভারতে যোগ দেয়।
  3. মাউন্টব্যাটেনের উদ্যোগ : যোধপুরের শাসক হানওয়াত সিংহ জিন্নার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরে প্রায় রাজি হয়ে গেলে মাউন্টব্যাটেন তাঁকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পৃথক পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছে। তাই হিন্দু রাজ্য যোধপুরের পক্ষে পাকিস্তানে যোগদানের বিষয়টি দ্বি-জাতিতত্ত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ভবিষ্যতে তা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
  4. হানওয়াত সিংহের বোধোদয়: মাউন্টব্যাটেনের পরামর্শে হানওয়াত সিংহ প্রভাবিত হন ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও অবশেষে ভারতে যোগদান করেন।
4. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩ খ্রি.) বোম্বাই প্রদেশের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেয় ?
উত্তর – বোম্বাই প্রদেশের সীমানা নির্ধারণে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সিদ্ধান্ত
ভূমিকা: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন-এর সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন আইন (১৯৫৬ খ্রি.) পাস হয়। এই আইন অনুসারে ভাষাভিত্তিক ১৪টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
  1. বোম্বাই সম্পর্কে নীতি: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সাধারণভাবে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের সুপারিশ করলেও বোম্বাই প্রদেশ সম্পর্কে কমিশন পৃথক নীতি গ্রহণ করে। সুপারিশে বোম্বাই প্রদেশকে অখণ্ড রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  2. বোম্বাইয়ে আন্দোলন: মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাভাষীদের নিয়ে গঠিত হয় বোম্বাই প্রদেশ। সেই প্রদেশ সম্পর্কে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীঘ্রই শক্তিশালী আন্দোলন শুরু হয়। মারাঠি অঞ্চলে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি এবং গুজরাটি অঞ্চলে মহাগুজরাট জনতা পরিষদ পৃথক রাজ্যের দাবিতে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলে।
  3. আন্দোলনে রাধা: বোম্বাইয়ে আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে ৮০ জনের মৃত্যু হলে আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে বোম্বাই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সি ডি দেশমুখ পদত্যাগ করেন।
  4. মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠন: বোম্বাই প্রদেশে মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাভাষীদের তীব্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই প্রদেশ ভেঙে পৃথক মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। মহারাষ্ট্রের রাজধানী হয় বোম্বাই এবং গুজরাটের রাজধানী হয় আমেদাবাদ।

The Complete Educational Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *