WBBSE 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 2 বায়ুমণ্ডল TOPIC – C & D
West Bengal Board 10th Class Social Science Solutions Geography Chapter 2 বায়ুমণ্ডল TOPIC – C & D
West Bengal Board 10th Geography Solutions
TOPIC – C বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- বায়ুর চাপ: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অন্যান্য পদার্থের মতো বায়ুকেও নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে বলে অন্যান্য পদার্থের মতো বায়ুরও ওজন আছে এবং তাই বায়ু চাপ দেয়। বায়ুর এই ওজনজনিত চাপকেই বলা হয় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বা বায়ুর চাপ।
- বায়ুচাপ পরিমাপক যন্ত্র : বায়ুচাপ পরিমাপ করা হয় বায়ুচাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটারের সাহায্যে। বিভিন্ন প্রকার বায়ুচাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটারের মধ্যে টরিসেলির ব্যারোমিটার, ফোর্টিনের ব্যারোমিটার, অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটার, ব্যারোগ্রাফ, MEMS ব্যারোমিটার প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
- বায়ুচাপের তারতম্যের কারণ : ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি হল— (1) উয়তার প্রভাব, (2) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, (3) উচ্চতার প্রভাব, (4) পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাব এবং (5) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন।
- সমচাপরেখা বা সমপ্রেষরেখা: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর সমান বায়ুচাপবিশিষ্ট জায়গাগুলিকে (উচ্চস্থানের বায়ুর চাপকে সমুদ্রপৃষ্ঠের চাপে রূপান্তরিত করে) মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে যুক্ত করা হয়, তাকে সমচাপরেখা বা সমপ্রেষরেখা বলা হয়।
- বায়ুচাপ ঢাল: উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে, সমচাপরেখার সঙ্গে সমকোণ করে, প্রতি একক দূরত্বে (যেমন প্রতি কিলোমিটারে বা মাইলে) বায়ু চাপের হ্রাসের হারকে বায়ুচাপ ঢাল বলে।
- বায়ুচাপ বলয় : ভূপৃষ্ঠে মোট সাতটি বায়ুচাপ বলয় আছে। এগুলি হল– (1) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, (2) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়, (3) মকরীয় উচ্চচাপ বলয়, (4) সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (5) কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (6) সুমেরু উচ্চচাপ বলয় এবং (7) কুমেরু উচ্চচাপ বলয়।
- চাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তন: চাপ বলয়গুলি সূর্যের উত্তরায়ণের সময় 5°-10° উত্তর অক্ষরেখা এবং দক্ষিণায়নের সময় 5°-10° দক্ষিণ অক্ষরেখা পর্যন্ত সরে যায়। চাপ বলয়গুলির এই অবস্থান পরিবর্তনের প্রভাব জলবায়ুর ওপর পড়ে।
- বায়ুপ্রবাহ: বিভিন্ন স্থানের মধ্যে বায়ুচাপের সমতা রক্ষার জন্য ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিকভাবে যখন বায়ু চলাচল করে, তখন তাকে বলে বায়ুপ্রবাহ। বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
- বায়ুপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ: ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে যেসব বর প্রবাহিত হয়, সেগুলিকে চারটি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয় – (1) নিয়ত বায়ু, (2) সাময়িক বায়ু, (3) স্থানীয় বায়ু এবং (4) আকস্মিক ব অনিয়মিত বায়ু।
- নিয়ত বায়ুর প্রকারভেদ: নিয়ত বায়ু প্রধানত তিনপ্রকার— (1) আয়ন বায়ু, (2) পশ্চিমা বায়ু এবং (3) মেরু বায়ু।
- সাময়িক বায়ুর প্রকারভেদ: সাময়িক বায়ু প্রধানত চারপ্রকার— (1) স্থলবায়ু, (2) সমুদ্রবায়ু, (3) মৌসুমি বায়ু এবং (4) পার্বত্য ও উপত্যকা বায়ু।
- স্থানীয় বায়ুর প্রকারভেদ: স্থানীয় বায়ু দুইপ্রকার— (1) উন্ন বায়ু (2) শীতল বায়ু ৷
- আকস্মিক বায়ুর প্রকারভেদ: আকস্মিক বায়ু দুইপ্রকার— (1) ঘূর্ণবাত এবং (2) প্রতীপ ঘূর্ণবাত। ঘূর্ণবাতকে আবার ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত এবং নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত এই দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- জেট বায়ু: ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বভাগে ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে 9-12 কিমি উচ্চতার মধ্যে সর্পিল পথে প্রবাহিত অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন একপ্রকার অতিশীতল বায়ুপ্রবাহের নাম জেট বায়ু।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. চিত্র সহযোগে পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।
অথবা, ভূপৃষ্ঠে কয়টি চাপ বলয় আছে? এগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সৃষ্টির কারণ আলোচনা করো।
পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়
উত্তর – পৃথিবীতে মোট সাতটি বায়ুচাপ বলয় আছে। এদের মধ্যে 3টি নিম্নচাপ বলয় ও 4টি উচ্চচাপ বলয়। এই বায়ুচাপ বলয়গুলি হল—
এই সাতটি বায়ুচাপ বলয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল—
1. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
অবস্থান: নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।
অপর নাম: নিরক্ষীয় শান্তবলয়
সৃষ্টির কারণ: [i] সূর্যরশ্মির লম্বকিরণ: এই অঞ্চলে সারাবছর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে বায়ু সারাবছরই উয় ও হালকা হয়। [ii] বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি: এখানে জলভাগের পরিমাণ বেশি বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে বায়ু হালকা হয়। [iii] পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ: পৃথিবীর আবর্তন গতিবেগ নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বাধিক হয় বলে বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে বিক্ষিপ্ত হয়, অর্থাৎ বায়ুর ঘনত্ব কমে যায়।
এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।
2. – 3. কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং মকরীয় উচ্চচাপ বলয়
অবস্থান: নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের উভয়দিকে প্রায় 25° থেকে 35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।
অপর নাম: উপক্রান্তীয় শান্তবলয়
সৃষ্টির কারণ: [i] নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ু: নিরক্ষীয় অঞ্চলের উম্ন ও আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় উচ্চতার প্রভাবে ধীরে ধীরে শীতল ও সংকুচিত হয়ে 25° থেকে 35° অক্ষরেখা বরাবর নীচের দিকে নেমে আসে বলে এই অংশে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। [ii] মেরু অঞ্চলের বায়ু: পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য দুই মেরু অঞ্চল থেকে যে ঠান্ডা ও ভারী বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, তারও কিছু অংশ এই অঞ্চলে নেমে এসে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
4. – 5. সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় এবং কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
অবস্থান: দুই মেরুপ্রদেশের নিকটবর্তী অঞ্চলে অর্থাৎ 60° থেকে 90° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।
সৃষ্টির কারণ: [i] পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ: পৃথিবীর আবর্তন বেগ দুই মেরুর তুলনায় মেরুবৃত্ত প্রদেশে অপেক্ষাকৃত বেশি। এজন্য এই অঞ্চলের বায়ু বেশি পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয়। ফলে বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায়। [ii] বায়ুর উন্নতা বৃদ্ধি: দুই মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল ও ভারী বায়ু মেরুবৃত্ত অঞ্চলে পৌঁছালে উয়তা বৃদ্ধির কারণে আয়তনে বেড়ে যায়। এজন্য দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ কম হয়।
6. – 7. সুমেরু উচ্চচাপ বলয় এবং কুমেরু উচ্চচাপ বলয় :
অবস্থান: উত্তরমেরু ও দক্ষিণমেরু সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।
সৃষ্টির কারণ: [i] প্রবল ঠান্ডা: প্রচণ্ড ঠান্ডার জন্য এই অঞ্চলের বায়ু শীতল ও ভারী হয়। [ii] বায়ুতে জলীয় বাষ্পের অভাব: বাষ্পীভবন খুব কম হয় বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে। [iii] বায়ুর ঘনত্ব ও চাপের বৃদ্ধি: পার্শ্ববর্তী মেরুবৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় থেকে ঊর্ধ্বগামী বায়ুর কিছু অংশ শীতল হয়ে এই অংশে নেমে আসে বলে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ বৃদ্ধি পায়।
2. বায়ুমণ্ডলে বায়ুর চাপের তারতম্যের কারণগুলি কী কী?
বায়ুমণ্ডলে বায়ুর চাপের তারতম্যের কারণসমূহ
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে বায়ুর চাপের তারতম্য যে কারণগুলির জন্য ঘটে, সেগুলি হল—
- উন্নতার প্রভাব : (1) উন্নতা বৃদ্ধি ও বায়ুর চাপ: বায়ু উম্ন হলে প্রসারিত হয়। ফলে তার ঘনত্ব কমে যায় অর্থাৎ চাপ হ্রাস পায়। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম হয়। (2) উন্নতা হ্রাস ও বায়ুর চাপ: উন্নতা কমলে বায়ু সংকুচিত হয়, ফলে তার ঘনত্ব বাড়ে। সুতরাং, চাপও বৃদ্ধি পায়। উভয় মেরু অঞ্চলে অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য বায়ুর চাপ বেশি হয়।
- বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শুষ্ক বায়ুর তুলনায় হালকা হয় বলে এর চাপও কম হয়। এজন্য যেসব অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে সেখানে বায়ুর চাপ কম হয়।
- উচ্চতার প্রভাব: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে উঠলে, বায়ুস্তরের গভীরতা বা বায়ুমণ্ডলীয় ভর ক্রমশ কমে যায় এবং এর ফলে বায়ুর চাপও হ্রাস পায়। এজন্য দুটি ভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত স্থানের মধ্যে যেটির উচ্চতা বেশি সেখানে বায়ুর চাপও অপেক্ষাকৃত কম হয়। যেমন–অসমের শিবসাগর ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও বেশি উচ্চতার জন্য দার্জিলিঙে বায়ুর চাপ শিবসাগরের তুলনায় অনেক কম থাকে।
- পৃথিবীর আবর্তন গভির প্রভাব: পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যও বায়ুচাপের তারতম্য হয়। যেমন—পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ দুই মেরুর তুলনায় মেরুবৃত্তপ্রদেশে বেশি বলে মেরুবৃত্তপ্রদেশের বায়ু বেশি পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয়। এর ফলে বায়ুর ঘনত্ব কমে গিয়ে মেরুবৃত্তপ্রদেশে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।
- ভাগ ও জলভাগের বণ্টন : স্থলভাগ ও জলভাগের বিপরীতধর্মী চরিত্রের প্রভাবেও বায়ুর চাপের তারতম্য হয়। দিনের বেলা জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। আবার রাতেরবেলায় স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে এবং উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। এইভাবে স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টনের জন্য চাপের তারতম্য ঘটে।
3. বায়ুর উন্নতা ও বায়ুর চাপের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
বায়ুর উন্নতা ও বায়ুর চাপের সম্পর্ক
উত্তর – বায়ুর উন্নতা ও বায়ুর চাপ উভয়ই আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান হলেওউভয়ের মধ্যে এক বিপরীত সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। সেগুলি হল—
- বায়ুর উন্নতা বৃদ্ধির ফল : বায়ু যখন উম্ন হয় তখন তার আয়তন বাড়ে বা প্রসারিত হয়। বায়ু যখন প্রসারিত হয় তখন তার ঘনত্ব হ্রাস পায়, ফলে চাপও কমে। সুতরাং, বায়ু উম্ন হলে তার চাপ কমে। যেমন—নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছরই সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে অঞ্চলটিতে সর্বদাই বায়ুর উয়তা বেশি থাকে। এজন্য এখানকার বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে স্থায়ীভাবে নিম্নচাপ বিরাজ করে, যাকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় বলা হয়।
- বায়ুর উন্নতা হ্রাসের ফল : বায়ুর উন্নতা কমলে বায়ু সংকুচিত হয়। বায়ু যতই সংকুচিত হয়, ততই তার ঘনত্ব বাড়ে, ফলে চাপও বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং, বায়ুর উন্নতা কমলে বায়ুর চাপ বাড়ে। যেমন- সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে বলে এখানে বায়ু অত্যন্ত শীতল ও সংকুচিত অবস্থায় থাকে। ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ খুবই বেশি হয় এবং এই অঞ্চল দুটিতে স্থায়ী উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বলা হয়।
- বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা ও তার ফল: বায়ু উগ্ন হলে তার জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শুষ্ক বায়ুর তুলনায় হালকা বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে বায়ুর চাপ কমে যায়। যেমন-বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে বলে বর্ষাকালে বায়ুর চাপও কম হয়। অর্থাৎ বায়ুর উন্নতা ও বায়ুর চাপের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক।
4. মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ুর সম্পর্ক কীরূপ?
অথবা, মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক আলোচনা করো।
মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ূর সম্পর্ক
উত্তর – আবহবিদেরা মনে করেন মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ুর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য ভারতের মৌসুমি জলবায়ুর ওপর ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু এবং উপক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর প্রভাব খুব ভালোভাবেই পড়ে।
- বর্ষাকাল : ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু: [i] বায়ুর প্রবাহপথ: ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু জুন মাসে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই সময় এই বায়ুস্রোত চিনের দক্ষিণ উপকূল থেকে আরম্ভ করে (12° থেকে 15° উত্তর অক্ষাংশ বরাবর) থাইল্যান্ড ও ভারতীয় উপদ্বীপ পেরিয়ে আফ্রিকার পূর্ব দিকে সুদান হয়ে প্রায় সাহারায় গিয়ে শেষ হয়। [ii] বায়ুর গতিবেগ: পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে পশ্চিমে ভারত পর্যন্ত ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর গতিবেগ খুব বেশি (ঘণ্টায় 100-200 কিমি) থাকে এবং পশ্চিমে তা ক্রমশ হ্রাস পায়। [iv] মৌসুমি বায়ুর ওপর প্রভাব: প্রকৃতপক্ষে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সঠিক সময়ে আগমন ও সক্রিয়তা বহুলাংশে এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। যদি এই ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বেশি উত্তরে সরে যায়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে ছেদ (Break of Monsoon) ঘটে। অর্থাৎ ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে বৃষ্টিহীন ও খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, বর্ষাকালে ভারতের ওপর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি এবং সেগুলির তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধি, এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
- শীতকাল : ( উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট বায়ু: উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট বায়ু অক্টোবর নভেম্বর মাস নাগাদ অর্থাৎ, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি
বায়ু ফিরে যাবার সময় থেকেই ভারতের ওপর আবির্ভূত হয় এবং প্রায় মে মাস পর্যন্ত এই দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়। এই বায়ুস্রোতটি শীতকালে যতই দক্ষিণে সরে আসে, ভারতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা তথা শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে। ফেব্রুয়ারি মাসে এটি সর্বাধিক দক্ষিণে আসে এবং তারপর ধীরে ধীরে উত্তরে সরে গিয়ে মে মাসে অন্তর্হিত হয়। শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই বায়ুস্রোতটি হিমালয়ে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়। উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর দুই শাখা: একটি শাখা হিমালয়ের উত্তর এবং অপরটি দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে আরও পূর্বে গিয়ে মিলিত হয়। হিমালয়ের দক্ষিণের শাখাটি যত শক্তিশালী হয়, ততই উত্তর ভারতে শীত তীব্র হয়, শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়।
প্রকৃতপক্ষে, মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ুর ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকার জন্যই ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে জেট বায়ুর প্রভাব সীমাহীন। ভারতে মৌসুমি বায়ুর স্থায়িত্ব ও তীব্রতা, বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত, ঋতুপরিবর্তন প্রভৃতি এই জেট বায়ুর অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।
5. চিত্র-সহ ভূপৃষ্ঠের নিয়ত বায়ুগুলির পরিচয় দাও।
অথবা, পৃথিবীর নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলির উৎপত্তি ও গতিপথ চিত্র-সহ ব্যাখ্যা করো।
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ
উত্তর – পৃথিবীতে 3টি স্থায়ী নিম্নচাপ ও 4টি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থাকার জন্য কতকগুলি বায়ু সারাবছর ধরে ওই উচ্চচাপ বলয়গুলি থেকে নিম্নচাপ বলয়গুলির দিকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয়। এদের বলে নিয়ত বায়ু।
নিয়ত বায়ু প্রধানত তিনপ্রকার—
- আয়ন বায়ু: উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের যথাক্রমে কর্কটীয় ও মকরীয় বা উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে দুটি বায়ু সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, তাদের বলা হয় আয়ন বায়ু। শ্রেণিবিভাগ: আয়ন বায়ু দুপ্রকার—[i] উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু: উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। একে বলা হয় উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু। [ii] দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আয়ন বায়ু নিয়মিতভাবে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসারে বাম দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুর নাম দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু। বৈশিষ্ট্য: [i] বায়ুর গতিবেগ: উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি বলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ একটু কম, ঘণ্টায় 15-25 কিলোমিটার। দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ঘণ্টায় 25-35 কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়। [ii] প্রবাহ অঞ্চল: আয়ন বায়ু সাধারণত নিরক্ষরেখার দু-দিকে 5° থেকে 25° অক্ষরেখার মধ্যে সারাবছর প্রবাহিত হয়। [iii] প্রভাব: আয়ন বায়ুর প্রবাহপথে মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পৃথিবীর বড়ো বড়ো মরুভূমিগুলি (যেমন—সাহারা, খর, কালাহারি, আটাকামা প্রভৃতি) সৃষ্টি হয়েছে।
- পশ্চিমা বায়ু: উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু দুই মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় ও কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয়)-এর দিকে সারাবছর নির্দিষ্ট পথে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়, তাদের বলা হয় পশ্চিমা বায়ু। শ্রেণিবিভাগ: পশ্চিমা বায়ু দু-প্রকার—[i] দক্ষিণ-পশ্চিমা বায়ু: উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুকে বলা হয় দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু। [ii] উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু ফেরেলের সূত্রানুসারে বাম দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুকে বলা হয় উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু। বৈশিষ্ট্য: [i] নামকরণ: পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত। [ii] নিম্নচাপ বলয় অভিমুখী প্রবাহ: উত্তর ও দক্ষিণ উভয় গোলার্ধে 35°-60° অক্ষাংশের মধ্যে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অভিমুখে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। [iii] বৃষ্টিপাতের আধিক্য: পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিম অংশে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। [iv] নাতিশীতোয় তৃণভূমির অবস্থান: পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্বাংশে বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ নাতিশীতোয় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে। [v] গতিবেগ: এই বায়ুর গতিবেগ উত্তর গোলার্ধের থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে (জলভাগের বণ্টন বেশি থাকার কারণে) বেশি।
- মেরু বায়ু: সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু নিয়মিতভাবে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, তাদের মেরু বায়ু বলে। শ্রেণিবিভাগ: মেরু বায়ু দু-প্রকার—[i] উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু: উত্তর গোলার্ধের মেরু বায়ু সুমেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে ফেরেলের সূত্রানুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এর নাম উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু। [ii] দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের মেরু বায়ু কুমেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে বাম দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু নামে প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য: [i] শুষ্ক প্রকৃতি: মেরু বায়ু অতিশীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির। [ii] শীতকালীন প্রাধান্য: এই বায়ুর প্রভাব বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে বেশি পরিলক্ষিত হয়। [iii] তুষারপাত ও বৃষ্টিপাত: মেরু বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্ব অংশে তুষারপাত ও সামান্য বৃষ্টিপাত হয় এবং দুই মেরুবৃত্তে ভয়াবহ তুষারঝড়ের সৃষ্টি হয়।
6. বিভিন্ন প্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও।
বিভিন্ন প্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহ
উত্তর – সাময়িক বায়ু প্রধানত চারপ্রকার—
- সমুদ্রবায়ু: জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উয় ও শীতল হয় বলে দিনেরবেলা সমুদ্র অপেক্ষা সংলগ্ন স্থলভাগ বেশি উম্ন হয়। এজন্য স্থলভাগের বায়ু দ্রুত হালকা ও প্রসারিত হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। এর ফলে স্থলভাগের ওপর বায়ুচাপ হ্রাস পায় এবং সমুদ্রের ওপর বায়ুচাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ স্থলভাগের ওপর সৃষ্টি হয় নিম্নচাপ এবং সমুদ্রের ওপর উচ্চচাপ। এর ফলে সমুদ্রের ওপর থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল যে বায়ু স্থলভাগের ওই নিম্নচাপ পূরণ করার জন্য স্থলভাগের দিকে ছুটে আসে, তাকে বলা হয় সমুদ্রবায়ু।
বৈশিষ্ট্য: সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে দিনেরবেলায় এই ধরনের বায়ু প্রবাহিত হয়।
- স্থলবায়ু: রাতে স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হলেও জলভাগ তখনও উয় থাকে। তাই স্থলভাগের ওপর তখন উচ্চচাপ এবং সমুদ্রের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। ওই নিম্নচাপ পূরণ করার জন্য স্থলভাগ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল যে বায়ু সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়, তাকে বলা হয় স্থলবায়ু।
বৈশিষ্ট্য: এই বায়ু সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাঝরাতের পর বিশেষ করে শেষরাতের দিকে বা ভোরবেলা প্রবলভাবে প্রবাহিত হয় ।
- মৌসুমি বা ঋতুভিত্তিক বায়ু: গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুতে জলভাগ ও স্থলভাগের মধ্যে বায়ুর উয়তা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য যথাক্রমে জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে এবং স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় সেই বায়ুকে বলা হয় ঋতুভিত্তিক বায়ু। মৌসুমি বায়ু হল এই ধরনের সাময়িক বায়ু বা ঋতুভিত্তিক বায়ু। প্রকৃতপক্ষে এই বায়ু সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর বৃহৎ সংস্করণ। বৈশিষ্ট্য: ভারতে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বা শীতকালীন মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।
- পার্বত্য ও উপত্যকা বায়ু: পার্বত্য অঞ্চলে রাতের বেলা পার্বত্য বায়ু এবং দিনের বেলা উপত্যকা বায়ু প্রবাহিত হয়। পার্বত্য বায়ু: শান্ত মেঘমুক্ত রাত্রিতে পর্বতের ওপর অংশের বায়ু দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল ও ভারী হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পর্বতের ঢাল বরাবর নীচে নেমে উপত্যকার মধ্যভাগে সঞ্চিত হয়। একে বলে পার্বত্য বায়ু। ঢাল বরাবর নিম্নগামী এই পার্বত্য বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু (Katabatic Wind, গ্রিক শব্দ Kata=down বা নীচের দিকে)-ও বলা হয় ।
বৈশিষ্ট্য: [i] গতিবেগ : সাধারণত রাতের বেলা এই বায়ু প্রবাহিত হলেও ভোরবেলা এর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি হয়। [ii] বৈপরীত্য উত্তাপ: এই নিম্নগামী শীতল বায়ুর প্রভাবে উপত্যকার উপরিভাগের তুলনায় নিম্ন অংশে শীতের তীব্রতা বাড়ে, ফলে সেখানে বৈপরীত্য উত্তাপ সৃষ্টি হয়। উপত্যকা বায়ু: দিনের বেলা সূর্যতাপে উত্তপ্ত উপত্যকার দু-দিকের ঢালের ওপরের বায়ু যে পরিমাণ উত্তপ্ত হয়, উপত্যকার মধ্যভাগের বায়ু ততটা উত্তপ্ত হয় না। এই বায়ু শীতল থাকে এবং তার ফলে উচ্চচাপের সৃষ্টি করে ও ভারী হয়ে নীচের দিকে নামে। এই নিম্নগামী বায়ুর চাপে তখন উপত্যকার দু-দিকের ঢালের বায়ু ওপরের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ঊর্ধ্বঢাল প্রবাহী বায়ুকে বলে উপত্যকা বায়ু। এর আর এক নাম অ্যানাবেটিক বায়ু (Anabatic Wind, গ্রিক শব্দ Ana = up বা ওপরের দিকে)।
বৈশিষ্ট্য: [i] বিপরীতমুখী: উপত্যকা বায়ু হল পার্বত্য বায়ুর ঠিক বিপরীত। [ii] উচ্চ অংশে জনবসতি: ইউরোপের অনেক জায়গায় উপত্যকা বায়ুর প্রভাবে লোকবসতি ও কৃষিকাজ উপত্যকার নীচের দিকে না হয়ে পর্বতের ওপরের ঢালে গড়ে ওঠে।
7. আকস্মিক বা অনিয়মিত বায়ু সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কী? এগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
আকস্মিক বা অনিয়মিত বায়ু
উত্তর – কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে যদি খুব অল্প সময়ের মধ্যে বা হঠাৎই বায়ুর চাপ অত্যধিক কমে যায় বা বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেখানে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে যেসব বায়ুপ্রবাহ হঠাৎই সেখানে আবির্ভূত হয়ে প্রবল বেগে বইতে শুরু করে; সেই সকল বায়ুপ্রবাহ কিছু সময় অবস্থানের পর হঠাৎই অন্তর্হিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহকে আকস্মিক বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ বলে।
শ্রেণিবিভাগ
এই বায়ু প্রধানত দু-ধরনের—ঘূর্ণবাত এবং প্রতীপ ঘূর্ণবাত।
- ঘূর্ণবাত : কোনো স্থান হঠাৎ বেশি উত্তপ্ত হলে সেখানে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন চারিদিক (উচ্চচাপযুক্ত স্থান) থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু প্রবল বেগে ওই নিম্নচাপযুক্ত কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায় এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে কেন্দ্রে পৌঁছানোর আগেই ওই বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়। এই প্রবল গতিবেগ সম্পন্ন কেন্দ্রমুখী ঘূর্ণায়মান ঊর্ধ্বগামী বায়ুপ্রবাহকে বলে ঘূর্ণবাত।
বৈশিষ্ট্য: [i] বায়ুপ্রবাহের দিক: ঘূর্ণবাতের বায়ু উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীতে বা বামাবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে বা দক্ষিণাবর্তে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়। [ii] উপবিভাগ: গঠন ও উৎসস্থানের পার্থক্য অনুসারে ঘূর্ণবাতকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—[a] ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাত: উভয় গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে, বিশেষত 10° অক্ষাংশ থেকে 30° অক্ষাংশের মধ্যে সাগর-মহাসাগরীয় জলভাগের ওপর উন্নতা খুব বেশি বেড়ে গেলে মাঝে মাঝে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে তখন চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু ওই নিম্নচাপের দিকে প্রবল বেগে ছুটে যায় এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে নিম্নচাপের কেন্দ্রভাগ উয় বলে আগত ওই বায়ুও ক্রমশ উয় হয়ে ওপরে উঠে যায়। এই প্রবল গতিবেগসম্পন্ন (নিম্নচাপের) কেন্দ্রমুখী ঘূর্ণায়মান ঊর্ধ্বগামী বায়ুপ্রবাহকে বলা হয় ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত। এই প্রকার ঘূর্ণবাত বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন, দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরে টাইফুন, ক্যারিবিয়ান সাগরে হারিকেন নামে পরিচিত। [b] নাতিশীতোয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাত: নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 35° থেকে 65° অক্ষাংশের মধ্যে যখন দুটি বিপরীতধর্মী বায়ু অর্থাৎ একটি উয় বায়ু এবং অপরটি শীতল বায়ু দু-দিক থেকে ছুটে আসে, তখন দুই বায়ুর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ যখন তীব্র হয়, সংঘর্ষস্থান বা সীমান্ত ক্রমশই সংকুচিত হতে হতে শেষে, শীতল বায়ু ভারী বলে নীচের দিকে নেমে উম্ন বায়ুর স্থান দখল করে নেয়। এর ফলে তখন উয় বায়ু বক্রাকারে শীতল বায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে এবং প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে যায়। একে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত বলা হয়।
- প্রতীপ ঘূর্ণবাত: অনেকসময় নাতিশীতোয়মণ্ডল ও হিমমণ্ডলের কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে তীব্র শৈত্যের জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। যেহেতু ওই উচ্চচাপের বাইরের দিকে থাকে নিম্নচাপ, তাই ওই উচ্চচাপযুক্ত কেন্দ্র থেকে শীতল ও শুষ্ক বায়ু বাইরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবল বেগে কুণ্ডলীর আকারে প্রবাহিত হয়। উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে বাইরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে এইভাবে প্রবাহিত বায়ুর নাম প্রতীপ ঘূর্ণবাত। বায়ুপ্রবাহের দিক; এই বায়ুপ্রবাহের গতি থাকে ঘূর্ণবাতের বিপরীত দিকে অর্থাৎ বহির্মুখী ও অধঃগামী এবং উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে আর দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে।
8. নিয়ত বায়ু বলতে কী বোঝ ? যে-কোনো একটি নিয়ত বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও।
উত্তর – নিয়ত বায়ু
ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে কতকগুলি স্থায়ী উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলয় থাকার জন্য কতকগুলি বায়ুও সারাবছর ধরে ওই উচ্চচাপ বলয়গুলি থেকে নিম্নচাপ বলয়গুলির দিকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্টপথে প্রবাহিত হয়। এদের বলে নিয়ত বায়ু। ভূপৃষ্ঠে তিন প্রকার নিয়ত বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। এগুলি হল— (1) আয়ন বায়ু, (2) পশ্চিমা বায়ু এবং (3) মেরু বায়ু।
আয়ন বায়ু
উভয় গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে দুটি বায়ু সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, সেই বায়ু দুটিকে বলা হয় আয়ন বায়ু।
অন্য নাম
‘আয়ন’ কথাটির অর্থ ‘পথ’। আগেকার দিনে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথ ধরে এই বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে পালতোলা জাহাজে বাণিজ্য করার সুবিধা হত বলে এই বায়ুপ্রবাহকে আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু বলা হয়।
শ্রেণিবিভাগ
আয়ন বায়ু দু-প্রকার-
- উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু: উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় বা কর্কটীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ফেরেল-এর সূত্রানুসারে একটু ডানদিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। একে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু বলা হয়।
- দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় বা মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ফেরেল-এর সূত্রানুসারে একটু বামদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে একে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য
- উত্তর গোলার্ধে প্রবাহের গতিবেগ: উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি থাকায় (বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে) উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ একটু কম, ঘণ্টায় 15-25 কিলোমিটার।
- দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবাহের গতিবেগ: দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় (কম বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে) দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ একটু বেশি, ঘণ্টায় 25-35 কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়।
- প্রবাহ অঞ্চল : আয়ন বায়ু সাধারণত নিরক্ষরেখার দু-দিকে 5° থেকে 25° অক্ষাংশের মধ্যে (অর্থাৎ দুটি গোলার্ধ মিলে 50° থেকে 60° অক্ষরেখা জুড়ে) সারাবছর প্রবাহিত হয়।
- উন্নতা ও জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা: ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে অর্থাৎ কম উম্ন অঞ্চল থেকে বেশি উম্ন অঞ্চলে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ুর উয়তা ও জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ুতে প্রভাব
- স্থলভাগের উপর প্রবাহের জন্য উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু বৃষ্টিপাত ঘটায় না।
- অপেক্ষাকৃত শীতল অঞ্চল থেকে উয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় বলে আয়ন বায়ু ক্রমশ উয় হয়। তাই আয়ন বায়ুর গতিপথে মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগে বৃষ্টিপাত হয় না, বড়ো বড়ো মরুভূমি (সাহারা, কালাহারি, আটাকামা, আরবীয় মরুভূমি প্রভৃতি) সৃষ্টি হয়েছে।
- দক্ষিণ গোলার্ধের যেসব অংশে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসে, সেখানে বৃষ্টিপাত হয়।
9. স্থানীয় বায়ু কাকে বলে? কয়েকটি স্থানীয় বায়ুর পরিচয় দাও।
উত্তর – স্থানীয় বায়ু
ভূপৃষ্ঠের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যখন ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, শিলার প্রকৃতি, উদ্ভিদের আচ্ছাদন, বায়ুর উয়তা প্রভৃতির তারতম্যে স্থানীয়ভাবে বায়ুচাপের তারতম্য হয়, তখন সেখানকার উচ্চচাপ এলাকা থেকে নিম্নচাপ এলাকার দিকে এক ধরনের বায়ু প্রবাহিত হয়। স্থানীয় কারণে উৎপত্তি হয় বলে এদের স্থানীয় বায়ু বলা হয়। বায়ুর প্রকৃতি অনুসারে স্থানীয় বায়ুকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়—উঘ্ন বায়ু এবং শীতল বায়ু।
কয়েকটি স্থানীয় বায়ু
কয়েকটি স্থানীয় বায়ু হল—
- লু: গ্রীষ্মকালে দিনেরবেলা উত্তর-পশ্চিম ভারতের ভূভাগ যখন প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়, তখন ওই উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুও প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে প্রবল বেগে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। এইরূপ প্রচণ্ড উয় ও শুষ্ক বাতাসকে বলা হয় লু। সাধারণত এই বায়ুর উয়তা থাকে 43°সে-48°সে। গ্রীষ্মের দুপুরে বা অপরাহ্নে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে এই ‘লু’ তাপপ্রবাহ রূপে বয়ে যায়। সন্ধ্যার পর এই বায়ুর তীব্রতা অনেক কমে যায়। তবে প্রচণ্ড উত্তপ্ত এই বায়ুর প্রভাবে মানুষ-সহ বহু গবাদিপশু মারা যায়।
- ফন : ইউরোপের আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর (অনুবাত) ঢাল বেয়ে যে উম্ন ও শুষ্ক বায়ু নীচের দিকে নেমে রাইন নদী উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকেই বলে ফন বায়ু। এর ফলে কোনো কোনো সময়ে উপত্যকার উয়তা 24 ঘণ্টার মধ্যে প্রায় 15°সে-20° সে পর্যন্ত বেড়ে যায়। এই উগ্ন বায়ুর সংস্পর্শে পর্বতের বরফ গলে যায় এবং ওই বরফগলা জলে পার্বত্য উপত্যকায় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়।
- চিনুক : উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলের পূর্ব ঢাল থেকে যে উম্ন ও শুষ্ক বায়ু প্রেইরি সমভূমিতে নেমে আসে তার নাম চিনুক। ইংরেজি ‘chinook’ শব্দের অর্থ ‘snow eater’ বা ‘তুষার ভক্ষক’। শীতকালে এই বায়ুর প্রভাবে রকি পর্বতের পাদদেশ-সহ সমগ্র অঞ্চলের তুষার গলে যায় বলে প্রেইরি অঞ্চলে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি সষ্টি হয়েছে।
- সিরোক্কো : গ্রীষ্মকালে আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তরাংশ থেকে একপ্রকার অতি উয়, শুষ্ক ও ধুলোপূর্ণ বায়ু উৎপন্ন হয়ে উত্তরে ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হয় এবং তারপর ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করে ইউরোপের দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছে যায়। ইটালির সিসিলিতে এই বায়ুকে বলে সিরোক্কো। আফ্রিকার উত্তর উপকূল পর্যন্ত এই বায়ু উম্ন ও শুষ্ক থাকলেও ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার পর যথেষ্ট আর্দ্র ও মনোরম হয়ে যায় (ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার আগে মিশরে এই বায়ুটিকেই বলে খামসিন।)
- মিস্টাল : শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণে ফ্রান্সের রোন নদী উপত্যকার দিকে যে শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে বলে মিস্ট্রাল। এটি অত্যন্ত শীতল ও শুষ্ক বায়ু। তাই এই বায়ুর প্রভাবে রোন উপত্যকার তাপমাত্রা যথেষ্ট কমে যায় এবং কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন তখন বিপর্যস্ত হয়।
- বোরা: শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বতের দক্ষিণ ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নেমে যে শীতল ও শুষ্ক বায়ু দক্ষিণ ইটালির অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে বলে বোরা। এই শীতল ও শুষ্ক বায়ুটির প্রভাবে অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলে তীব্র শৈত্য প্রবাহের সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে স্বাভাবিক জনজীবন বিঘ্নিত হয়।
- অন্যান্য স্থানীয় বায়ু : (1) দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশে আন্দিজ পর্বতের পূর্ব ঢাল থেকে যে শীতল ও শুষ্ক বায়ু পম্পাস তৃণভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে বলে পাম্পেরো। (2) আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে যে উম্ন, শুষ্ক ও ধূলিপূর্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে হারমাট্টান বলে ৷
10. নিয়ত বায়ু বলতে কী বোঝ? পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও।
উত্তর – নিয়ত বায়ু
ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে কতকগুলি স্থায়ী উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলয় থাকার জন্য কতকগুলি বায়ুও সারাবছর ধরে ওই উচ্চচাপ বলয়গুলি থেকে নিম্নচাপ বলয়গুলির দিকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্টপথে প্রবাহিত হয়। এদের বলে নিয়ত বায়ু।
ভূপৃষ্ঠে তিনপ্রকার নিয়ত বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। এগুলি হল – (1) আয়ন বায়ু, (2) পশ্চিমা বায়ু এবং (3) মেরু বায়ু।
পশ্চিমা বায়ু
উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের দুই উপক্রান্তীয় (কর্কটীয় ও মকরীয়) উচ্চচাপ বলয় থেকে দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর নির্দিষ্ট পথে নিয়মিতভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে বলে পশ্চিমা বায়ু।
শ্রেণিভিাগ: পশ্চিমা বায়ু দু-প্রকার, যথা—
- দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু: উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় (কর্কটীয়) উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ফেরেল-এর সূত্রানুসারে সামান্য ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত।
- উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় (মকরীয়) উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ফেরেল-এর সূত্রানুসারে সামান্য বাঁদিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য : পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- নামকরণ: পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত।
- প্রবাহ অঞ্চল: উভয় গোলার্ধে 35°-60° অক্ষাংশের মধ্যে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অভিমুখে অর্থাৎ দুটি গোলার্ধে মিলে প্রায় 50° অক্ষরেখা জুড়ে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়।
- বায়ুর গতিবেগ ও তাদের নাম: উত্তর গোলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে বাধা কম (জলভাগ বেশি) বলে পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগও বেশি। এজন্য দক্ষিণ গোলার্ধে সারাবছরই পশ্চিমা বায়ু প্রবল গতিতে প্রবাহিত হয় । একে বলে প্রবল বা সাহসী পশ্চিমা বায়ু ৷ উন্মুক্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ার সময় দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন অক্ষরেখায় পশ্চিমা বায়ুর বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আওয়াজ শোনা যায়। এই ভিত্তিতে চল্লিশের অক্ষরেখাকে গর্জনশীল চল্লিশা, পঞ্চাশের অক্ষরেখাকে ভয়ংকর পঞ্চাশ বা পঞ্ঝাশিয়া এবং ষাটের অক্ষরেখাকে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট নামে অভিহিত করা হয়।
জলবায়ুতে প্রভাব : জলবায়ুর ওপর পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবগুলি হল—
- ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি: পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলে বেশি ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
- ঝড়ঝঞ্ঝার প্রভাব: সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসে বলে পশ্চিমা বায়ু গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে বেশি শক্তিশালী থাকে। এই কারণে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর শীতকালে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ঝড়ঝঞ্ঝাসংকুল অঞ্চলরূপে পরিচিত।
- বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি: সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসে বলে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত হয়।
- তৃণভূমির সৃষ্টি: পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্বাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ নাতিশীতোয় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
11. উদাহরণ-সহ বায়ুপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ ছকের সাহায্যে দেখাও।
বায়ুপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগের ছকবিন্যাস
উত্তর – ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে যেসব বায়ু প্রবাহিত হয় সেগুলিকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যেমন—
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. বায়ুচাপের ধারণা দাও। বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – বায়ুচাপের ধারণা: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অন্যান্য পদার্থের মতো বায়ুকেও নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে বলে অন্যান্য পদার্থের মতো বায়ুরও ওজন আছে এবং তাই বায়ু চাপ দেয়। বায়ুর এই ওজনজনিত চাপকেই বলা হয় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বা বায়ুর চাপ।
বৈশিষ্ট্য : বায়ুর চাপ বেশি হবে না কম হবে তা নির্ভর করে বায়ুতে কী পরিমাণ বায়ুকণা আছে তার ওপর।
বায়ুচাপের মাপকাঠি: বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সাধারণত ব্যারোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়। যদি ব্যারোমিটারে বায়ুচাপের মাত্রা 1013 মিলিবার বা তার বেশি হয়, তবে সেই অবস্থা বায়ুর উচ্চচাপ এবং 986 মিলিবার বা তার কম হয় তাহলে সেই অবস্থা বায়ুর নিম্নচাপ বোঝায়।
বায়ুর উচ্চচাপ : একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত ভর বেশি হলে (বেশি সংখ্যক বায়ুকণা থাকলে) ওই বায়ুর ওজন ও চাপ বেশি হবে, অর্থাৎ বায়ুর উচ্চচাপ হবে। ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুর চাপ খুব বেশি হয়। কারণ নীচের এই বায়ুস্তরের ওপর থাকে ওপরের বায়ুস্তরের চাপ।
বায়ুর নিম্নচাপ : নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত ভর কম হলে (কম সংখ্যক বায়ুকণা থাকলে) ওই বায়ুর ওজন ও চাপ কম হবে, অর্থাৎ বায়ুর নিম্নচাপ হবে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে বায়ুর চাপ কমে।
2. ‘অশ্ব অক্ষাংশ’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – অবস্থান : উভয় গোলার্ধে উপক্রান্তীয় বা কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়ে (25°-35° উত্তর ও দক্ষিণ) শীতল ও ভারী বায়ুর গতি নিম্নমুখী হয় ও ভূপৃষ্ঠের সমান্তরাল বায়ুপ্রবাহ বিশেষ অনুভূত হয় না। ফলে এখানকার বায়ুমণ্ডলে সারাবছর শান্তভাব বিরাজ করে। একে বলা হয় উপক্রান্তীয় শান্তবলয় বা অশ্ব অংক্ষাংশ।
নামকরণ: কথিত আছে প্রাচীনকালে অশ্ববোঝাই পালতোলা জাহাজসমূহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার সময় উপক্রান্তীয় শান্তবলয়ে (উত্তর গোলার্ধের) এসে প্রায়শই গতিহীন হয়ে পড়ত। তখন খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবহার কমাতে এবং জাহাজকে কিছুটা হালকা করার জন্য নাবিকেরা অনেক ঘোড়া বা অশ্বকে জলে ফেলে দিত। এজন্য 25° থেকে 35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ অর্থাৎ উপক্রান্তীয় শান্তবলয়কে অশ্ব অক্ষাংশও বলা হয়।
3. বায়ুচাপ বলয় বলতে কী বোঝ? বায়ুমণ্ডলে কী কী বায়ুচাপ বলয় আছে?
উত্তর – বায়ুচাপ বলয়ের ধারণা : ভূপৃষ্ঠের কতকগুলি নির্দিষ্ট স্থানে প্রায় সারাবছর ধরে বায়ুর উচ্চচাপ বা নিম্নচাপ লক্ষ করা যায়। বায়ুর এই উচ্চচাপ বা নিম্নচাপ এক-একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল ধরে পৃথিবীকে যেন বলয়ের মতো ঘিরে আছে। এগুলিকেই বলা হয় বায়ুচাপ বলয়।
বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয় : ভূপৃষ্ঠে মোট সাতটি বায়ুচাপ বলয় আছে। এগুলি হল– (1) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, (2) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়, (3) মকরীয় উচ্চচাপ বলয়, (4) সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (5) কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (6) সুমেরু উচ্চচাপ বলয় এবং (7) কুমেরু উচ্চচাপ বলয়।
Topic-C-র দীর্ঘ উত্তরধর্মী 1 নং প্রশ্নের উত্তরের চিত্রটি দ্যাখো।
4. ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলে উগ্ন মরুভূমি সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর – ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলে উগ্ন মরুভূমি সৃষ্টির কারণ : আফ্রিকার সাহারা ও কালাহারি, দক্ষিণ আমেরিকার আটাকামা, ভারত-পাকিস্তানের থর, উত্তর আমেরিকার সোনোরান, এশিয়ার আরবের মরুভূমি প্রভৃতি পৃথিবীবিখ্যাত উন্ন মরুভূমিগুলি ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে। এই মরুভূমিগুলি সৃষ্টির কারণ হল—
- বায়ুর উচ্চচাপ: ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চল কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়ের অন্তর্গত। এই ক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু ক্রমশ নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে উন্নতা ও জলীয় বাষ্প ত্যাগ করার পরিবর্তে বায়ুর জলীয় বাষ্প গ্রহণ ও ধারণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
- বৃষ্টিপাতের অভাব: ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলে উচ্চচাপ থাকায় জলীয় বাষ্পপূর্ণ হালকা বায়ু প্রবেশ করতে পারে না। এজন্য এইসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বিশেষ হয় না। বৃষ্টিহীন অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এইসব অঞ্চলে বিস্তৃত উম্ন মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
5. বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ কী?
উত্তর – বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ : উভয় গোলার্ধের ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে মোট 7টি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় আছে। এগুলি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় হলেও বছরের বিভিন্ন সময়ে এদের সীমা কিছুটা উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়-
- সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ: পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির জন্য আকাশে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন ঘটে বলে সর্বোচ্চ উন্নতারেখা বা তাপ বিষুবরেখা (heat equator) বা তাপীয় বিষুবরেখা (thermal equator) কিছুটা উত্তরে ও দক্ষিণে সরে যায়। যেমন—উত্তরায়ণের সময় বা উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালে, অর্থাৎ মে-জুলাই মাসে এই রেখাটি নিরক্ষরেখার কিছুটা উত্তরে সরে আসে এবং দক্ষিণায়নের সময় বা দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকালে, অর্থাৎ নভেম্বর-জানুয়ারি মাসে রেখাটি নিরক্ষরেখার কিছুটা দক্ষিণে সরে যায়।
- স্থান পরিবর্তনের সীমা: সাধারণত 12° উত্তর অক্ষাংশ থেকে 6° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত তাপ বিষুবরেখাটির স্থান পরিবর্তন হয়। এর ফলে স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলিও সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে 5° থেকে 10° উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়। তবে, সাধারণত উচ্চ অক্ষাংশের তুলনায় নিম্ন অক্ষাংশে বায়ুচাপ বলয়গুলির সীমা পরিবর্তন বেশি ঘটে।
6. পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা পরিবর্তনের প্রভাব কী?
উত্তর – পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা পরিবর্তনের প্রভাব : সূর্যের উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়নের সাথে বায়ুচাপ বলয়গুলির সীমাও 5°-10° উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়। এই ঘটনাকে বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা পরিবর্তন বলে। এর ফলে ঘটিত নানা ঘটনাগুলি হল—
- উৎসস্থল ও প্রবাহপথের পরিবর্তন: বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা পরিবর্তিত হলে নিয়ত বায়ুপ্রবাহেরও উৎসস্থল এবং প্রবাহপথের কিছুটা পরিবর্তন ঘটে।
- মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি: সূর্যের উত্তরায়ণের সময় নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় 5°-8° উত্তর অক্ষরেখায় সরে যায় বলে তার আকর্ষণে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে। এর ফলে একটি নতুন বায়ু সৃষ্টি হয়, যার নাম দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। আর এই বায়ুটির প্রভাবেই ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষাকালের আবির্ভাব ঘটে।
- বৃষ্টি বলয়ের স্থানান্তর: বায়ুচাপ বলয়ের সাথে বৃষ্টি বলয়গুলিও স্থান পরিবর্তন করে। যেমন—সূর্যের উত্তরায়ণের সময় আয়ন বায়ু উত্তরে সরে গেলে সাভানা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়।
- শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে পরিবর্তন: স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলির স্থান পরিবর্তনের জন্যে উভয় গোলার্ধে 30°-40° অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থানসমূহ শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু এবং গ্রীষ্মকালে শুষ্ক আয়ন বায়ুর প্রভাবে আসে । যেমন শীতকাল আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়, কিন্তু গ্রীষ্মকাল শুষ্ক থাকে।
সুতরাং চাপবলয়গুলির ঋতুকালীন সীমানা পরিবর্তনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে আবহাওয়া ও জলবায়ুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়।
7. বায়ুপ্রবাহের সাথে বায়ুচাপের সম্পর্ক কী?
উত্তর – বায়ুপ্রবাহ ও বায়ুচাপের সম্পর্ক : বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বায়ুচাপের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় — (1) বায়ুচাপের পার্থক্য: ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে প্রধানত বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। কারণ বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে যায়। যেমন কোনো স্থানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। ভূপৃষ্ঠে বায়ুচাপের সমতা আনার জন্য তখন চারিদিকের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু ওই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে যায় অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। (2) বায়ুপ্রবাহের তীব্রতা: বায়ুপ্রবাহের তীব্রতা নির্ভর করে দুটি স্থানের বায়ুচাপের পার্থক্যের মাত্রার ওপর। বায়ুচাপের পার্থক্য বেশি হলে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ বেড়ে যায় এবং পার্থক্য কমে গেলে বায়ু ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। এছাড়া, (3) বায়ুপ্রবাহের দিক: বায়ুপ্রবাহের দিকও নির্ভর করে বায়ুচাপের ওপর। যেদিকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়, চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু সেইদিকে প্রবাহিত হয়।
8. সাময়িক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ করে যে-কোনো একটি বায়ুর সম্পর্কে চিত্র-সহ আলোচনা করো।
উত্তর – সাময়িক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ : কিছু কিছু বায়ুপ্রবাহ আছে যেগুলি সারা বছর প্রবাহিত না হয়ে দিনের বা বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে প্রবাহিত হয়। এদের বলে সাময়িক বায়ুপ্রবাহ। সাময়িক বায়ু প্রধানত চার প্রকার— (1) সমুদ্রবায়ু, (2) স্থলবায়ু, (3) মৌসুমি বায়ু এবং (4) পার্বত্য বায়ু ও উপত্যকা বায়ু।
সমুদ্রবায়ু: দিনেরবেলা সমুদ্র থেকে যে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্রবায়ু বলে।
- সমুদ্রবায়ু প্রবাহের কারণ: [i] জলের তাপগ্রহণ ক্ষমতা: জলের আপেক্ষিক তাপগ্রাহীতা স্থলভাগের তুলনায় বেশি হওয়ায়, দিনেরবেলা একই পরিমাণ সূর্যালোক সম আয়তনের জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগকে বেশি উত্তপ্ত করে। সেকারণে স্থলভাগের বাতাস দ্রুত উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে গেলে সেখানে বায়ুর চাপ হ্রাস পায়। [ii] বায়ুচাপের পার্থক্য: জলভাগ অপেক্ষাকৃত শীতল থাকায় সেখানে বায়ুর চাপ স্থলভাগের তুলনায় বেশি থাকে। ফলে স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে বায়ুচাপের পার্থক্য তৈরি হয়। এ কারণে শীতল বাতাস সমুদ্র থেকে থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
- বায়ুপ্রবাহের সময়কাল: সমুদ্রবায়ু সাধারণত সকালবেলা থেকে প্রবাহিত হতে শুরু করলেও দুপুর থেকে বিকেলবেলার মধ্যে এই বায়ুর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি হয়।
- বায়ুপ্রবাহের প্রভাব: সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই বায়ুপ্রবাহের আবহাওয়া সমভাবাপন্ন ও আরামদায়ক হয়।
Topic-C-র দীর্ঘ উত্তরধর্মী 7নং প্রশ্নের উত্তরের ‘সমুদ্রবায়ু’-এর চিত্রটি দ্যাখো।
9. পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশের পশ্চিম দিকে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর – পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশের পশ্চিম দিকে শীতকালে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণ: উভয় গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়, তাকে বলে পশ্চিমা বায়ু। এই বায়ুটির প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। এর কারণগুলি হল—
- আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু: প্রতিটি মহাদেশেরই পশ্চিমে আছে সুবিস্তৃত মহাসাগর। তাই এই বায়ুটি পশ্চিম দিক থেকে আসার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে মহাদেশগুলিতে প্রবেশ করে।
- জলীয় বাষ্পসমৃদ্ধ পশ্চিমা বায়ু: মহাদেশগুলির পশ্চিমভাগে জলীয় বাষ্পসমৃদ্ধ পশ্চিমা বায়ু আগে এসে পৌঁছায় বলে সেখানে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং তারপর ওই বায়ু যতই পূর্ব দিকে যেতে থাকে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায় বলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমতে থাকে।
- শীতল স্থলভাগের প্রভাব : শীতকালে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি শীতল থাকে। এর ফলে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু শীতল স্থলভাগের ওপর এসে দ্রুত ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এ ছাড়া শীতল মেরু বায়ুর সংস্পর্শে এসেও দ্রুত ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তন: সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়গুলির সীমা পরিবর্তিত হয় বলে গ্রীষ্মকালে মহাদেশগুলির পশ্চিমভাগের যেসব স্থান শুষ্ক আয়ন বায়ুর অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই স্থানগুলিতেই শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। যেমন—ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল।
10. বায়ু প্রবাহিত হয় কেন?
উত্তর – বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণ : নানা কারণে বায়ু প্রবাহিত হয়ে থাকে—
- বায়ুচাপের পার্থক্য : বায়ুচাপের তারতম্যের কারণেই মূলত বায়ু প্রবাহিত হয়। চাপের সমতাবিধানের উদ্দেশ্যে বায়ু সবসময় উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অভিমুখে প্রবাহিত হয়।
- উয়তার পার্থক্য : বায়ু উম্ন হলে হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে ওঠে, ফলে সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়—তখন পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ঠান্ডা বায়ু সেদিকে ছুটে গিয়ে বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করে।
- জলীয় বাষ্পের পরিমাণ : বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকলে সেই বায়ুর চাপ কম হয় এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তাই সেখানে পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু ছুটে আসে।
11. ব্যারোমিটারের সাহায্যে কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যায় ?
উত্তর – ব্যারোমিটারের সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস : ব্যারোমিটারের সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার উপায়গুলি হল—
- পারদস্তম্ভের উচ্চতা হ্রাস: ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভের উচ্চতা যদি হঠাৎ নেমে যায়, তবে বুঝতে হবে ওই অঞ্চলের বায়ুর চাপ খুব কমে গেছে। অর্থাৎ সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে ঝড়ঝঞ্ঝা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- পারদস্তম্ভের উচ্চতার মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস: পারদস্তম্ভের উচ্চতা যদি আরও কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে সেখানে বায়ুতে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই ধরনের গভীর নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চলে পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু ছুটে এসে ঝড়বৃষ্টি ঘটাতে পারে।
- পারদস্তম্ভের উচ্চতা বৃদ্ধি: পারদস্তম্ভের উচ্চতা বেড়ে গেলে বুঝতে হবে সেখানে বায়ুর চাপ বেশি। অর্থাৎ আবহাওয়া হবে ঝড়ঝঞ্ঝামুক্ত ও আকাশ পরিষ্কার থাকবে।
12. প্রতীপ ঘূর্ণবাত সম্পর্কে কী জান?
উত্তর – প্রতীপ ঘূর্ণবাত: নাতিশীতোয়মণ্ডল ও হিমমণ্ডলের কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে তীব্র ঠান্ডার জন্য উচ্চচাপ সৃষ্টি হলে সেই উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে বাতাস বাইরের নিম্নচাপের দিকে যদি প্রবলবেগে কুণ্ডলীর আকারে প্রবাহিত হয় তবে তাকে বলে প্রতীপ ঘূর্ণবাত।
বৈশিষ্ট্য : প্রতীপ ঘূর্ণবাত বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- উচ্চচাপযুক্ত কেন্দ্ৰ: প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে উচ্চচাপ থাকে।
- কেন্দ্ৰবহির্মুখী প্রবাহ: এই বায়ু সর্বদা কেন্দ্ৰবহির্মুখে প্রবাহিত হয়।
- বায়ুর প্রকৃতি: প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বায়ু শুষ্ক, শীতল ও নিম্নগামী।
- বায়ুপ্রবাহের দিক: প্রতীপ ঘূর্ণবাত উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীতে বায়ু প্রবাহিত হয়।
- আবহাওয়া : প্রতীপ ঘূর্ণবাতে আবহাওয়া ঝড়ঝঞ্ঝামুক্ত ও আকাশ মেঘমুক্ত থাকে।
Topic-C-র দীর্ঘ উত্তরধর্মী 8নং প্রশ্নের উত্তরের ‘প্রতীপ ঘূর্ণবাত’ চিত্রটি দ্যাখো।
13. জেট বায়ু কী ? এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – জেট বায়ু : ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে প্রবাহিত অত্যন্ত শীতল, দ্রুতগতিসম্পন্ন, সংকীর্ণ, সর্পিলাকার বায়ুপ্রবাহকে জেট বায়ু বলে।
জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য : জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- জিওস্ট্রফিক বায়ু: ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে জেট বায়ুপ্রবাহ সমচাপরেখার সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। তাই এটি জিওস্ট্রফিক বায়ু নামে পরিচিত।
- বায়ুর গতিবেগ: এটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দ্রুতগামী বায়ু। এই বায়ু ঘণ্টায় 100-500 কিমি বেগে প্রবাহিত হয়।
- জেট স্ট্রিম: সংকীর্ণ ঝরনা বা নদীর মতো প্রবাহিত হয় বলে একে জেট স্ট্রিম বা জেট প্রবাহ বলে।
- জেট বায়ুপ্রবাহের দিক ও স্থান: এই বায়ু দুটি গোলার্ধেই 30°-60° অক্ষাংশের মধ্যে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। তবে সূর্যের উত্তরায়ণ বা দক্ষিণায়নের সাথে জেট বায়ুপ্রবাহের কিছুটা স্থান পরিবর্তন হয়।
- বায়ুর প্রকারভেদ: জেট বায়ু তিনপ্রকারের হয়—মেরুদেশীয় জেট বায়ু, উপক্রান্তীয় জেট বায়ু ও ক্রান্তীয় জেট বায়ু।
14. জেট বায়ু কত রকমের হয়?
উত্তর – জেট বায়ুর প্রকারভেদ : জেট বায়ু তিন রকমের হয়, এগুলি হল—
- মেরুদেশীয় জেট বায়ু: উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ থেকে আসা পশ্চিমা বায়ু ও মেরু অঞ্চল থেকে আসা উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ুপ্রবাহের মিলন অঞ্চলের ওপর ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে 30°-60° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে পশ্চিম থেকে পূর্বে যে জেট বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে মেরুদেশীয় জেট বায়ু বলে।
- উপক্রান্তীয় জেট বায়ু: উপক্রান্তীয় অঞ্চলে 25° থেকে 30° অক্ষরেখা বরাবর ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে যে জেট বায়ু প্রবাহিত হয় সেটি হল উপক্রান্তীয় জেট বায়ু। মেরুদেশীয় জেট বায়ুর তুলনায় এই জেট বায়ু দুর্বল।
- ক্রান্তীয় জেট বায়ু: উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ক্রান্তীয় জেট বায়ু বা পুবালি জেট বায়ু প্রবাহিত হয়। এটি দুর্বল এবং প্রধানত গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত হয়।
15. জেট বায়ু বা জেট স্ট্রিমের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর – জেট বায়ু বা জেট স্ট্রিমের গুরুত্ব: জেট স্ট্রিম ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ার দিয়ে প্রবাহিত হলেও বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে এর প্রভাব যথেষ্ট। জেট স্ট্রিমের গুরুত্বগুলি হল—
- ঘূর্ণাবাতের সৃষ্টি: জেট বায়ুর প্রভাবে নাতিশীতোয় অঞ্চলে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
- মৌসুমি বায়ুর আগমন: ভারত-সহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তন জেট বায়ুর ওপর নির্ভরশীল।
- বিমান চলাচল: জেট বায়ুপ্রবাহের ওপর নির্ভর করে বিমানগুলি সময় ও জ্বালানি বাঁচায়।
- বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের নিয়ন্ত্রণ: পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জেট বায়ু দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
- তাপের সমতাবিধান: জেটবায়ু পরোক্ষভাবে বিশ্বব্যাপী তাপের সমতা বিধান করে।
16. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর – ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য : ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- ঘূর্ণবাতের চক্ষু: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে যেখানে বায়ুর চাপ সবচেয়ে কম থাকে, সেই অংশটিকে বলে ঘূর্ণবাতের চক্ষু।
- আবহাওয়া: ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে প্রধানত পরিষ্কার আকাশ থাকে এবং শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে। কিন্তু কেন্দ্রের চারপাশে তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
- মেঘের উপস্থিতি: ঘূর্ণবাত কেন্দ্রের চারপাশে সাধারণত ঘন কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থাকে।
- ঊর্ধ্বমুখী বায়ু: চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বায়ু নিম্নচাপের দিকে প্রবলবেগে ছুটে যায় এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপের কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই ওই বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়।
- বায়ুপ্রবাহের দিক: নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে বায়ু ছুটে আসার সময় উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে বা বামাবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে বা দক্ষিণাবর্তে বেঁকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
17. কালবৈশাখী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
অথবা, কালবৈশাখীকে ‘নরওয়েস্টার’ বলা হয় কেন?
উত্তর – কালবৈশাখীর অবস্থান ও সময়কাল : গ্রীষ্মকালের অপরাহ্ণে পূর্ব-ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত স্থানীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টিপাত ও কোনো কোনো সময় শিলাবৃষ্টিও হয়। একে বলা হয় কালবৈশাখী। এটি একটি আকস্মিক বায়ু।
সৃষ্টির কারণ : গ্রীষ্মকালে সকাল থেকে প্রখর সূর্যতাপে ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের পাথুরে ভূমি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে অপরাহ্ণের দিকে ওই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তারই প্রভাবে এই স্থানীয় ঘূর্ণিঝড় বা বজ্রঝড়ের উৎপত্তি হয়। সাধারণত এই বজ্রঝড় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ছুটে আসে বলে একে ইংরেজিতে Norwester (নরওয়েস্টার) বলা হয়।
আবহাওয়াতে প্রভাব: কালবৈশাখীর মাধ্যমে বৃষ্টিপাত কম হলেও গ্রীষ্মের উত্তাপ কিছুটা হ্রাস পায় এবং এই বায়ু গ্রীষ্মকালীন ধান, পাট, সবজি, ফল প্রভৃতি চাষের পক্ষে বিশেষ সহায়ক হয়।
18. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর – নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টির কারণ : ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে কতকগুলি স্থায়ী নিম্নচাপ ও উচ্চচাপ বলয় আছে বলে কতকগুলি বায়ুও সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। এদের নিয়ত বায়ু বলে। যেমন— (1) আয়ন বায়ু, (2) পশ্চিমা বায়ু, এবং (3) মেরু বায়ু। এই বায়ুগুলি সৃষ্টির কারণ হল—
- আয়ন বায়ুর উৎপত্তি: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারাবছর প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার জন্যে বায়ু প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যায়। প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ হালকা এই বায়ু ভূপৃষ্ঠ থেকে 12-15 কিমি উচ্চতায় পৌঁছে ঠান্ডা ও ভারী হয়। এরপর পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের ওপরের ওই শীতল বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে ছিটকে যায় এবং ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে 25° থেকে 35° অক্ষরেখা বরাবর নীচের দিকে নেমে এসে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে আয়ন বায়ুরূপে আবার নিরক্ষীয়প্রদেশে পৌঁছোয়। এভাবে আয়ন বায়ুর উৎপত্তি ঘটে।
- পশ্চিমা বায়ুর উৎপত্তি: উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বায়ু মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অভিমুখে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। এভাবে পশ্চিমা বায়ুর উৎপত্তি ঘটে।
- মেরু বায়ুর উৎপত্তি: দুই মেরুপ্রদেশে কোরিওলিস বলের প্রভাব সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়। এই কোরিওলিস বলের প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু থেকে বায়ু ছিটকে মেরুবৃত্তপ্রদেশের দিকে পৌঁছোয়। এভাবে মেরু বায়ুর উৎপত্তি হয়।
19. স্থানীয় বায়ু বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – স্থানীয় বায়ু : যেসব বায়ু স্থানীয় ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে প্রবাহিত হয়, তাদের স্থানীয় বায়ু বলে। উদাহরণ— (1) লু, (2) ফন, (3) চিনুক প্রভৃতি। এইসব বায়ু পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে স্থানীয়ভাবে প্রবাহিত হয় ।
উদাহরণ: (1) লু: গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতের উত্তপ্ত স্থলভাগের ওপর দিয়ে যে উন্ন ও শুষ্ক বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়, তা লু নামে পরিচিত। (2) ফন: ইউরোপের আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর ঢালে রাইন নদী উপত্যকায় শীতকালে যে উয় ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে বলা হয় ফন। (3) চিনুক : ইংরেজিতে চিনুক শব্দের অর্থ snow eater (তুষার ভক্ষক বা তুষার খাদক)। উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলের পূর্ব ঢাল থেকে এক ধরনের উস্ন ও শুষ্ক বায়ু প্রেইরি সমভূমিতে নেমে আসার ফলে ওখানকার তুষার গলে যায়। তাই ওই বায়ু চিনুক নামে পরিচিত।
20. বায়ুচাপের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর – বায়ুচাপের বৈশিষ্ট্যসমূহ: বায়ুচাপের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- বায়ুচাপের বণ্টন: ভূপৃষ্ঠের সব জায়গায় বায়ুর চাপ সমান নয়, কোথাও বেশি অর্থাৎ উচ্চচাপ, কোথাও কম অর্থাৎ নিম্নচাপ।
- উচ্চতা ও বায়ুর চাপ: ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুর ঘনত্ব বেশি বলে বায়ুর চাপও বেশি এবং ক্রমশ ওপরের দিকে বায়ুর চাপ কম হয়।
- উন্নতা ও বায়ুর চাপ: বায়ু উয় হলে তার চাপ কমে,শীতল হলে চাপ বাড়ে।
- বায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান: উচ্চতা, উন্নতা, বায়ুপ্রবাহ, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি বায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ: সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে প্রায় এক কিলোগ্রাম।
21. সমচাপরেখা বা সমপ্রেষরেখা কাকে বলে ও এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – সমচাপরেখা বা সমপ্রেষরেখা: বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের সমচাপযুক্ত স্থানগুলিকে (উচ্চস্থানের বায়ুর চাপকে সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর চাপে পরিবর্তিত করে) মানচিত্রে যে রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমচাপরেখা বা সমপ্রেষরেখা বলে।
বৈশিষ্ট্য: (1) উয়তার সঙ্গে বায়ুচাপের সম্পর্ক গভীর বলে বহুক্ষেত্রে সমচাপরেখাগুলি অক্ষরেখার সমান্তরালে বিস্তৃত হয়। (2) সমচাপরেখাগুলি যদি দূরে দূরে অবস্থান করে তাহলে আবহাওয়ার শান্ত অবস্থা বোঝায় এবং রেখাগুলি যদি কাছাকাছি চক্রাকারে অবস্থান করে তাহলে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (3) যদি সমচাপরেখাগুলি চক্রাকারে অবস্থান করে, তবে তাকে বায়ুচাপের কোশ বা বায়ুচাপ কক্ষ বলে। (4) জানুয়ারি ও জুলাই যথাক্রমে শীতলতম ও উন্নতম মাস বলে মানচিত্রে সাধারণত এই দুই মাসের সমচাপরেখা অঙ্কন করা হয়।
22. বায়ুচাপ ঢালের ধারণা দাও।
উত্তর – বায়ুচাপ ঢাল : সমচাপরেখা থেকে জানা যায়, ওই রেখা বরাবর বায়ুর চাপ একই রয়েছে। সমচাপরেখার সাথে সমকোণে উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রতি একক দূরত্বে (প্রতি কিলোমিটার বা মাইলে) বায়ুচাপের যে পার্থক্য তৈরি হয়, তাকে বায়ুচাপ ঢাল বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ভূপৃষ্ঠে একই অনুভূমিক তলে অবস্থিত দুটি স্থানের মধ্যে বায়ুচাপের পরিবর্তনের হারকে সাধারণভাবে বায়ুচাপ ঢাল বলে। স্থানদুটির বায়ুচাপের পার্থক্যকে স্থানদুটির দূরত্ব দিয়ে ভাগ করলে এই বায়ুচাপ ঢাল পাওয়া যায়।
বৈশিষ্ট্য: (1) সমচাপরেখার কাছাকাছি অবস্থান : সাধারণত বায়ুচাপ মানচিত্রে সমচাপরেখাগুলি যত কাছাকাছি থাকে সেখানকার বায়ুচাপ ঢাল তত বেশি হবে। (2) সমচাপরেখার দূরে অবস্থান: যেখানে সমচাপরেখাগুলি দূরে দূরে অবস্থান করে সেখানে বায়ুচাপের ঢাল কমে যায়। (3) বায়ুচাপের পার্থক্য ও বায়ুচাপ ঢালের সম্পর্ক: ভূপৃষ্ঠের দুটি স্থানের মধ্যে বায়ুচাপের পার্থক্য যত বেশি হবে বায়ুচাপ ঢালও তত বেশি খাড়াভাবে অবস্থান করবে। (4) বায়ুচাপ ঢাল ও বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক: বায়ুচাপের ঢাল বাড়লে বায়ুপ্রবাহের গতি বেড়ে যায়।
23. বায়ুচাপ কক্ষ কাকে বলে?
উত্তর – বায়ুচাপ কক্ষ : জলভাগ ও স্থলভাগের মধ্যে বায়ুর উন্নতা ও চাপের পার্থক্য হয় বলে তাপ ও চাপ বলয়গুলি অনেক জায়গায় বলয় হিসেবে বিস্তৃত না থেকে ছোটো ছোটো ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান করে। বায়ুচাপের এই ছোটো ছোটো বিভাগগুলিকে বলা হয় বায়ুচাপ কক্ষ।
বৈশিষ্ট্য: মহাদেশ ও মহাসাগরগুলির অবস্থানগত বৈশিষ্ট্যের জন্য উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ গোলার্ধ অপেক্ষা বায়ুচাপ কক্ষ বেশি সৃষ্টি হয়।
24. হিমালয় পর্বতে আরোহণকারীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেন কেন?
উত্তর – হিমালয় পর্বতে আরোহণকারীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণ: সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ বেশি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে মাধ্যকর্ষণ শক্তির টান কমে যায় বলে বায়ুস্তরও ক্রমশ হালকা বা পাতলা হতে থাকে। অর্থাৎ, ক্রমশ ওপরের দিকে বায়ুর ঘনত্ব এবং ওজন তথা বায়ুচাপ কম। বায়ুর চাপ কমে গেলে বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায়, ফলে ওপরের বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে আমাদের শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়।
হিসাব করে দেখা গেছে, কোনো স্থানের সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ পড়ে, তার থেকে 6 কিমি উচ্চতায় বায়ুর চাপ অর্ধেক কমে 50% হয়। 18 কিমি উচ্চতায় চাপ 90 ভাগ কমে 10% হয় এবং 32 কিমি উচ্চতায় 99 ভাগ কমে মাত্র 1% হয়। অর্থাৎ বায়ুর 99% ভর ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র 32 কিমি উচ্চতার মধ্যেই থাকে। সুতরাং সুউচ্চ হিমালয় পর্বতে (যার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা 8848 মি) বায়ুর চাপ ভূপৃষ্ঠের তুলনায় কম, তাই হিমালয় পর্বতে আরোহণকারীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেন।
25. আয়ন বায়ুর গতিপথে মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগে পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমিগুলির সৃষ্টি হয়েছে কেন?
উত্তর – আয়ন বায়ুর গতিপথে মহাদেশের পশ্চিমে পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমি সৃষ্টির কারণ
- উয়-শুষ্ক আয়ন বায়ু: আয়ন বায়ু অপেক্ষাকৃত শীতল উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে উয় নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় অভিমুখে প্রবাহিত হয় বলে ক্রমশ উন্ন হয় এবং বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে যায়। এজন্য এই বায়ু সহজে সম্পৃক্ত হতে পারে না বলে আয়ন বায়ুর গতিপথে সাধারণত বৃষ্টি হয় না।
- বায়ুপ্রবাহের দিক:মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগের ওপর দিয়ে যে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়, তা বয়ে আসে পূর্ব দিকের স্থলভাগের ওপর দিয়ে। এই বায়ু থেকে মহাদেশসমূহের পূর্ব দিকে কিছুটা বৃষ্টি হলেও পশ্চিম দিকে এসে বায়ু শুষ্ক হয় এবং এজন্য তা থেকে বৃষ্টিপাত হয় না। সে কারণে মহাদেশগুলির পশ্চিমে আয়ন বায়ুর গতিপথে আফ্রিকায় সাহারা ও কালাহারি, দক্ষিণ আমেরিকায় আটাকামা এবং এশিয়ায় আরব মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
26. বায়ুর চাপ থাকা সত্ত্বেও আমরা তা অনুভব করতে পারি না কেন?
উত্তর – বায়ুর চাপ থাকা সত্ত্বেও আমরা তা অনুভব না করার কারণ : সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ 76 সেমি উচ্চতার পারদস্তম্ভের চাপের সমান, যা প্রতি বর্গসেমিতে প্রায় 1013250 ডাইনের সমান। যদি আমাদের দেহের ক্ষেত্রফল প্রায় 14000 বর্গসেমি হয়, তাহলে আমাদের দেহের ওপর বায়ুর চাপ পড়বে প্রায় 15500 kg ভরের সমান বা 15 টনের সামান্য বেশি। আমরা বায়ুর এই প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে পারি, কারণ আমাদের দেহের ভেতরেও থাকে প্রায় সমপরিমাণ চাপ। শুধু মানুষই নয়, যে-কোনো প্রাণীই এরকম বায়ুর চাপ সহ্য করতে পারে। তবে যদি হঠাৎ বাইরের বায়ুর চাপ চলে যায়, ভেতরের প্রচণ্ড চাপে শিরাগুলি ফেটে যাবে। যেমন সাইকেলের টায়ারের ভেতরে পাম্প করে ফোলালেও সেটা ফাটে না, কারণ বাইরের প্রচণ্ড বায়ুচাপ ভেতরের বায়ুচাপকে প্রতিহত করে। অবশ্য আমাদের দেহ যথেষ্ট নমনীয় হওয়ায় দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপ সমান না হলেও আমরা সেই চাপের তারতম্য সহজেই মানিয়ে নিতে সক্ষম।
27. ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুর চাপ ক্রমশ কমে কেন?
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে বায়ুর চাপ কম হওয়ার কারণ : ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুর চাপ ক্রমশ কমে। এর কারণগুলি হল—
- উচ্চতা ও বায়ুমণ্ডলীয় ভরের সম্পর্ক: উচ্চতা যত বাড়ে ততই বায়ুমণ্ডলীয় ভর ক্রমশ কমে। বায়ুমণ্ডলীয় ভর কমলে বায়ুর ঘনত্ব ও ওজন উভয়ই কমে আর ওজন কমলে বায়ুর চাপও কমে যায়।
- উচ্চতা ও বায়ুর গভীরতা: ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে উঠলে বায়ু প্রসারিত হয় ও গভীরতা কমে যায়। এর ফলে প্রতি একক আয়তনের বায়ুতে বায়বীয় কণার সংখ্যা কমে যাওয়ায়, বায়ুচাপ কম হয়। প্রতি 110 মিটার উচ্চতা বাড়লে বায়ুর চাপ 1 সেমি হারে কমে যায়। যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর চাপকে 100% ধরা যায় তবে ভূপৃষ্ঠ থেকে 18 কিমি উচ্চতায় বায়ুচাপ হয় 10% এবং 32 কিমি উচ্চতায় 1%।
28. বায়ুচাপ পরিমাপের একক সম্পর্কে লেখো।
উত্তর – বায়ুচাপ পরিমাপের একক : বর্তমানে পৃথিবীতে ইঞ্চির পরিবর্তে মিলিবারে বায়ুর চাপ মাপা হয়। মিলিবার হল বায়ুর চাপ মাপার এমন একটি একক যা প্রতি বর্গসেমিতে 1000 ডাইন বলের সমান। আবার ডাইন যেহেতু বলের একক তাই প্রমাণ করা যায় যে, 1 মিলিবার = প্রতি বর্গসেমিতে 1 গ্রাম বায়ুর ওজনের সমান। এই মিলিবারের হিসাবে সমুদ্রপৃষ্ঠে প্রতি বর্গসেমিতে বায়ুর চাপ প্রায় 1013 মিলিবার। বায়ুচাপ মাপার যন্ত্রের নাম ব্যারোমিটার। ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভের উচ্চতা দেখে কোনো স্থানের বায়ুর চাপ কত তা সহজেই জানা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের 1013 মিলিবার বায়ুচাপ ব্যারোমিটারের পারদস্তম্ভে 29.92″ (ইঙি) বা 30″ (76 সেমি) উচ্চতার সমান।
সংক্ষিপ্ত উত্তৱধর্মী প্রশ্নাবলি
1. বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর – বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ নির্ণয় : বায়ুর চাপের পরিমাপ ব্যারোমিটার যন্ত্রে 986 মিলিবার থেকে 1013 মিলিবার হলে তাকে সাধারণ বায়ুচাপ ধরা হয়। 986 মিলিবারের কম চাপযুক্ত বায়ু হল নিম্নচাপ এবং 1013 মিলিবারের বেশি চাপযুক্ত বায়ু উচ্চচাপ নির্দেশ করে।
2. অ্যানিমোমিটার কাকে বলে এবং তাতে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নির্ণয় করা হয় কীভাবে?
উত্তর – ধারণা : বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ পরিমাপ করার জন্য যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়, তার নাম অ্যানিমোমিটার। বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নির্ণয়ের পদ্ধতি: এই যন্ত্রে একটি লম্বা দণ্ডের মাথায় চারটি বাটি লাগানো থাকে। আর দণ্ডের নীচের দিকে ঘড়ির মতো একটি যন্ত্র থাকে। বায়ুর বেগে দণ্ডটি-সহ যখন বাটিগুলি ঘোরে, তখন নীচের ওই যন্ত্রে বায়ুর গতিবেগ সূচিত হয়।
3. বায়ুচাপ মাপার যন্ত্রগুলির নাম লেখো।
উত্তর – বায়ুচাপ মাপার যন্ত্রগুলির নাম: ব্যারোমিটারের সাহায্যে বায়ুর চাপ মাপা হয়। এ ছাড়া ফটিন-এর ব্যারোমিটার, অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটার, ব্যারোগ্রাফ ও অন্যান্য অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুচাপ মাপা হয়।
4. ডোলড্রাম বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর বেশি উন্নতা থাকে বলে বায়ু অনবরত উস্ন ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এজন্য এখানে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুর প্রবাহ বা গতি বোঝা যায় না। ফলে সর্বদা ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে শান্তভাব বিরাজ করে। তাই নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের অপর নাম নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম।
5. কোরিওলিস বল কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীতে একটি কেন্দ্রাতিগ বা কেন্দ্ৰবহির্মুখী শক্তি সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে পৃথিবীর সব প্রবহমান পদার্থেরই দিগ্বিক্ষেপ ঘটে। 1835 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি গণিতবিদ গাসপার্ড গুস্তাভ কোরিওলিস পৃথিবীর আবর্তনঘটিত এই শক্তি বা বলের তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন বলে একে কোরিওলিস বল নামে অভিহিত করা হয়। প্রভাব: এই বলের প্রভাবে পৃথিবীর সব পদার্থই পৃথিবী থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে চায়। তবে তার মধ্যে বেশিরভাগ পদার্থই এই বলকে এড়িয়ে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠে আটকে থাকলেও বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি প্রবহমান বস্তুসমূহের দিগ্বিক্ষেপ ঘটে। কোরিওলিস বলের জন্যই এরকমটি হয়।
6. সমচাপরেখা কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর সমান বায়ুচাপবিশিষ্ট জায়গাগুলিকে মানচিত্রে যে রেখার সাহায্যে যুক্ত করা হয়, তাকে সমচাপরেখা বলে। মানচিত্রে সমচাপরেখা টানার সময় উচ্চস্থানের বায়ুর চাপকে সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর চাপে রূপান্তরিত করে নেওয়া হয়।
7. জেট বায়ু কী ?
উত্তর – সংজ্ঞা: ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন, সংকীর্ণ, সর্পিলাকার বায়ুকে জেট বায়ু বলে। বৈশিষ্ট্য : এর গতিবেগ 100-500 কিমি/ঘণ্টা। প্রকারভেদ: জেট বায়ু তিন প্রকারের— (1) মেরুদেশীয় জেট বায়ু, (2) উপক্রান্তীয় জেট বায়ু এবং (3) ক্রান্তীয় জেট বায়ু।
8. আয়ন বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – অর্থ : ‘আয়ন’ কথাটির অর্থ ‘পথ’। ধারণা: উভয় গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, সেই বায়ুকে বলা হয় আয়ন বায়ু। অন্য নাম: আগেকার দিনে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত এই বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে পালতোলা জাহাজ দ্বারা বাণিজ্য করার সুবিধা হত বলে এই বায়ুপ্রবাহের অপর নাম হয় বাণিজ্য বায়ু।
9. প্রত্যয়ন বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : প্রধানত পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে দুই মেরুবৃত্তপ্রদেশে দুটি নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বায়ুর চাপের সমতা রক্ষার জন্য উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বায়ু সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে ওই দুই মেরুবৃত্তপ্রদেশের দিকে ছুটে যায়। এভাবে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয়। যেহেতু আয়ন বায়ুর গতিপথের ঠিক বিপরীত দিকে এই পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়, তাই এই পশ্চিমা বায়ুকেই প্রত্যয়ন বায়ু বলে।
10. প্রবল পশ্চিমা বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : উভয় গোলার্ধে প্রধানত 35° থেকে 60° অক্ষরেখার মধ্যে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উত্তর গোলার্ধে এই অক্ষরেখার মাঝে স্থলভাগ বেশি আছে বলে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হওয়ার সময় বেশি বাধা পায়। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে পশ্চিমা বায়ুর গতিপথে জলভাগের পরিমাণ বেশি থাকায় এই বায়ু সশব্দে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। তাই দক্ষিণ গোলার্ধের পশ্চিমা বায়ুকে প্রবল পশ্চিমা বায়ু বলে।
11. গর্জনশীল চল্লিশা কী?
উত্তর – সংজ্ঞা: উন্মুক্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ার সময় দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন অক্ষরেখায় পশ্চিমা বায়ুর যে বিভিন্ন প্রকার আওয়াজ শোনা যায়, তার ভিত্তিতে চল্লিশের অক্ষরেখাকে গর্জনশীল চল্লিশা নামে অভিহিত করা হয়। সৃষ্টির কারণ : দক্ষিণ গোলার্ধে 40° অক্ষাংশের পর স্থলভাগ বিশেষ না থাকায় পশ্চিমা বায়ুর গতির ওপর ঘর্ষণজনিত বাধা কম পড়ে। এজন্য দক্ষিণ গোলার্ধে 40° থেকে 50° অক্ষাংশের মধ্যে বিস্তৃত জলরাশির ওপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু সারাবছরই, সশব্দে প্রবলবেগে এবং অপ্রতিহতভাবে প্রবাহিত হয়।
12. নিয়ত বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: সারাবছর নির্দিষ্ট দিকে, নির্দিষ্ট গতিতে, নিয়মিতভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে নিয়ত বায়ু বলে। বৈশিষ্ট্য : পৃথিবীতে স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলি থেকে নিয়ত বায়ু উৎপন্ন হয়। প্রকারভেদ : নিয়ত বায়ু তিন ধরনের— (1) আয়ন বায়ু, (2) পশ্চিমা বায়ু ও (3) মেরু বায়ু।
13. মৌসুমি বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে কেন?
উত্তর – মৌসুমি বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলার কারণ : ‘মৌসিম’ কথার অর্থ ঋতু। ভারতে গ্রীষ্মকালে আর্দ্র ও উয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে শুষ্ক ও শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ভারতের ওপর দিয়ে এই দুই বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ু দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ঋতুতে প্রবাহিত হয় বলে এদের ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে।
14. ঘূর্ণবাতের চক্ষু কী ?
উত্তর – সংজ্ঞা: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রকে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে।
বৈশিষ্ট্য: (1) ঘূর্ণবাতের বাতাস: চক্ষুকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণবাতের বাতাস ঘুরতে থাকে। (2) ব্যাস: চক্ষুর ব্যাস সাধারণত 30-65 কিমি পর্যন্ত হলেও ক্ষুদ্রাকৃতি চক্ষুর ব্যাস 20 কিমি হয়। (3) আবহাওয়া: ঘূর্ণবাতের সর্বত্র ঝড়-বৃষ্টিপাত হলেও চক্ষু স্থানটি শান্ত ও মেঘহীন হয়।
15. চিনুক কী ?
উত্তর – অর্থ : ইংরেজি ‘chinook’ শব্দের অর্থ তুষার ভক্ষক বা তুষার খাদক।
উৎপত্তিস্থল ও প্রবাহপথ: চিনুক একপ্রকার উম্ন স্থানীয় বায়ু। উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলের পূর্ব ঢাল বেয়ে যে উষ্ম ও শুষ্ক বায়ু প্রেইরি সমভূমিতে নেমে আসে, তার নাম চিনুক। প্রভাব: (1) চিনুক বায়ুর প্রভাবে রকি পর্বতের পাদদেশ-সহ সমগ্র প্রেইরি অঞ্চলের তুষার গলে যায়। এজন্য এই বায়ুর নাম চিনুক। (2) এই তুষারগলা জলে ভূমি সিক্ত হয় বলে প্রেইরি অঞ্চলে পশুচারণের উপযোগী বিস্তীর্ণ তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে এবং ওখানে গম চাষ করা হয় ।
16.ফন কী ?
উত্তর – উৎপত্তিস্থল ও প্রবাহপথ : ফন একধরনের উম্ন স্থানীয় বায়ু। ইউরোপের আল্পস পর্বতের অনুবাত ঢাল বেয়ে রাইন নদী উপত্যকার দিকে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব : (1) ঊধ্বগামী বায়ু: উয়-আর্দ্র বায়ু আল্পস পর্বতগাত্র অবলম্বন করে ক্রমশ ওপরে ওঠার সময় শীতল ও ঘনীভূত হয়, এর ফলে পর্বতের প্রতিবাত ঢাল অঞ্চলে বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়। (2) নিম্নগামী বায়ু: ওই বায়ু আল্পস পর্বত অতিক্রম করে যখন অনুবাত ঢাল বেয়ে ফন নামে নীচের সংকীর্ণ রাইন নদী উপত্যকায় নামতে থাকে, তখন সংকোচনের জন্য বায়ুর চাপ বেড়ে যায় বলে বায়ু ক্রমশ উম্ন এবং শুষ্ক হতে থাকে। (3) উপত্যকার উন্নতা বৃদ্ধি: ফন বায়ুর আগমনের ফলে সেখানে উপত্যকার উন্নতা কয়েক মিনিটের মধ্যে 14°সে পর্যন্ত বেড়ে যায়। এর ফলে তুষার ও বরফ গলে যায় এবং অরণ্যে কখনো কখনো দাবানলের সৃষ্টি হয়।
17. সিরোক্কো বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – উৎপত্তিস্থল ও প্রবাহপথ : সিরোক্কো একটি স্থানীয় বায়ু। আফ্রিকার লিবিয়া দেশটির অন্তর্গত সাহারা মরুভূমি থেকে যে উয়, শুষ্ক ও ধূলিপূর্ণ বায়ু উৎপন্ন হয়ে ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করে দক্ষিণ ইউরোপে পৌঁছে যায়, তাকে সিরোক্কো বলে। প্রভাব: (1) আফ্রিকার আবহাওয়া: সিরোক্কো বায়ুর প্রভাবে উত্তর আফ্রিকার উপকূলভাগের আবহাওয়া শুষ্ক ও ধূলিপূর্ণ হয়ে ওঠে। (2) ইউরোপের আবহাওয়া : ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করে ওই বায়ু যখন দক্ষিণ ইউরোপে পৌঁছায়, সেখানে আর্দ্র ও শীতল আবহাওয়া সৃষ্টি করে। (3) বৃষ্টিপাত: ইউরোপের দক্ষিণ প্রান্তের কোনো কোনো অংশে (লাল বা হলুদ ধূলিপূর্ণ বায়ুর জন্য) লাল বা হলুদ বৃষ্টিপাত হয়। (4) চাষে প্রভাব: ইটালির জলপাই চাষে যথেষ্ট ক্ষতি হয়।
18. লু বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: উত্তর-পশ্চিম ভারতের একপ্রকার স্থানীয় বায়ুর নাম ‘লু’।
বায়ুপ্রবাহের দিক ও সময়: গ্রীষ্মকালে মে-জুন মাসে দিনেরবেলা উত্তর-পশ্চিম ভারতের স্থলভাগ প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়। ওই উয় ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের বায়ুও প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয় এবং দুপুর ও অপরাহের দিকে তাপপ্রবাহ রূপে প্রবল বেগে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য: (1) এই বাতাসের উন্নতা থাকে গড়ে 45 °সে-এরও বেশি। (2) এটি উন্ন, শুষ্ক ও ঝোড়ো প্রকৃতির। ভারতে প্রভাবিত অঞ্চল: উত্তর ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ‘লু’ বায়ু প্রবাহিত হয়।
19. হারিকেন বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: অত্যন্ত শক্তিশালী এক বিশেষ ধরণের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে হারিকেন বলে । প্রকৃতপক্ষে, মধ্য আটলান্টিকের পশ্চিমভাগে সৃষ্ট এবং পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ক্যারিবিয়ান সাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত হারিকেন নামে পরিচিত। বৈশিষ্ট্য : ঘণ্টায় 140 কিলোমিটারের বেশি গতিবেগসম্পন্ন এই ঘূর্ণবাতের ব্যাস প্রায় 650 কিলোমিটার এবং এর কেন্দ্রে থাকে একটি ‘চোখ’ বা গভীর নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চল।
20. টর্নেডো বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : ক্রান্তীয় অঞ্চলের স্থলভাগে গ্রীষ্মকালে এক ধরনের ফানেল বা হাতির শুঁড়ের আকৃতির মেঘ থেকে সৃষ্ট স্বল্পস্থায়ী, স্বল্পবিস্তৃত কিন্তু অতিবিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়কে বলে টর্নেডো। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণভাগ পৃথিবীর সর্বাধিক টর্নেডো প্রবণ অঞ্চল। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি উপত্যকায় টুইস্টার বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: (1) গতিবেগ: এই প্রকার ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় 500 কিমি বা তার বেশি হয়। (2) ব্যাস: টর্নেডোর কেন্দ্রালের ব্যাস 100-500 মিটার পর্যন্ত হয়। (3) ক্ষয়ক্ষতি: টর্নেডো যে যে স্থানের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেখানে ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
21. মিস্ট্রাল বায়ু কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর – মিস্টাল বায়ুপ্রবাহের অঞ্চল: মিস্টাল বায়ু শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে ফ্রান্সের রোন নদীর উপত্যকা দিয়ে ভূমধ্যসাগরের অভিমুখে প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য: এটি একধরনের শীতল, শুষ্ক ও তীব্র গতিবেগসম্পন্ন বায়ু।
22. বোরা বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : শীতকালে আল্পস পর্বতের দক্ষিণ ঢাল বেয়ে নেমে যে শীতল বায়ু উত্তর ইটালি এবং অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তার নাম বোরা। বৈশিষ্ট্য: (1) গতিবেগ: এই বায়ু ঘণ্টায় 100 কিমিরও বেশি গতিবেগে প্রবাহিত হয়। (2) আবহাওয়া : বোরা বায়ু মেঘমুক্ত এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।
23. আবহাওয়া ও জলবায়ু বলতে কী বোঝায়?
উত্তর – আবহাওয়া: কোনো নির্দিষ্ট স্থানের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উয়তা, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আর্দ্রতা, আকাশে মেঘের অবস্থা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি উপাদানের অবস্থাকে আবহাওয়া বলা হয়। অর্থাৎ আবহাওয়া হল বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা, যা বায়ুমণ্ডলের কতকগুলি উপাদানের ওপর নির্ভরশীল।
জলবায়ু : কোনো বিস্তৃত অঞ্চলের কমপক্ষে 35 বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলা হয়। সুতরাং, জলবায়ু হল আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যসমূহের দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা।
24. আয়ন বায়ুর অপর নাম বাণিজ্যিক বায়ু কেন?
উত্তর – আয়ন বায়ুর অপর নাম বাণিজ্যিক বায়ু হওয়ার কারণ : ‘আয়ন’ কথাটির অর্থ পথ। আগেকার দিনে পালতোলা বাণিজ্যিক জাহাজসমূহ এই আয়ন বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে পথ অনুসরণ নির্দিষ্ট পথে চলাচল করে বাণিজ্য করত বলে এই বায়ুর অপর নাম বাণিজ্য বায়ু।
25. জেট বায়ুর দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর – জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্যসমূহ: জেট বায়ুর দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) জেট বায়ু ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে প্রায় 9 থেকে 12 কিমি উচ্চতায় এক সংকীর্ণ ও আঁকাবাঁকা সর্পিল পথে এবং প্রবল গতিতে, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় 500 কিমি বেগে প্রবাহিত হয়। (2) জেট বায়ুর দৈর্ঘ্য গড়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার, গভীরতা বা উল্লম্ব বিস্তার 5 কিলোমিটারের কম এবং অনুভূমিক বিস্তার বা প্রস্থ গড়ে কয়েকশো কিলোমিটার।
26. বাইস ব্যালট সূত্র বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – উদ্ভাবন : ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাইস ব্যালট (Buys Ballot) নামে একজন ওলন্দাজ বিজ্ঞানী বায়ুচাপের তারতম্য ও বায়ুপ্রবাহের মধ্যে এক সম্পর্ক নির্ধারণ করে একটি সূত্র প্রদান করেন। সূত্র: এই সূত্রানুযায়ী উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পিছন করে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকে বায়ুর চাপ কম অনুভূত হয় এবং দক্ষিণ গোল ঠিক এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত এই বৈশিষ্ট্য বা নিয়ম-নীতিই বাইস ব্যালট সূত্র (Buys Ballot’s law) নামে পরিচিত।
27. জলস্তম্ভ ও বালিস্তম্ভ কী ?
উত্তর – জলস্তম্ভ : ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বা টর্নেডো যখন সমুদ্রের ওপর দিয়ে অগ্রসর হয়, তখন অনেকসময় ওই ঘূর্ণবাত সমুদ্রের জলরাশিকে এমনভাবে আকর্ষণ করে যে, জলরাশি স্তম্ভের মতো উঁচুতে উঠে পড়ে। একে বলা হয় জলস্তম্ভ।
বালিস্তপ্ত মরুভূমির ওপর দিয়ে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত অগ্রসর হলে, সেই জায়গার বালিকণাকে আকর্ষণ করে ওপরের দিকে তুলে ফেলে। একে বলা হয় বালিস্তম্ভ।
28. সাময়িক বায়ু বলতে কী বোঝ ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – ধারণা : দিনের বিভিন্ন সময়ে বা বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বায়ুমণ্ডলের উন্নতা এবং চাপের পার্থক্যের জন্য সাময়িকভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সাময়িক বায়ু বলা হয়। উদাহরণ : সাময়িক বায়ুর কয়েকটি উদাহরণ হল— (1) সমুদ্রবায়ু, (2) স্থলবায়ু, (3) মৌসুমি বায়ু এবং (4) পার্বত্য ও উপত্যকা বায়ু।
29. জিওস্ট্রফিক বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে গড়ে প্রায় 10-12 কিলোমিটারের মধ্যে সমচাপরেখার সাথে সমান্তরালে প্রবাহিত বায়ুকে জিওস্ট্রফিক বায়ু বলে। সাধারণত বায়ুচাপের ঢালের বল ও কোরিওলিস বলের মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য হলে জিওস্ট্রফিক বায়ুর সৃষ্টি হয়। উদাহরণ: জেট বায়ু একটি জিওস্ট্রফিক বায়ু। ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ুর ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণজনিত বাধা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই অবাধে দ্রুত গতিতে বইতে পারে।
30. আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান কাকে বলে?
উত্তর – আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান : যেসব উপাদানের গড় অবস্থা বিচার করে কোনো স্থানের আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্ধারণ করা হয়, সেগুলিকেই বলা হয় আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান। এই উপাদানগুলি হল— (1) বায়ুর উন্নতা, (2) বায়ুর চাপ, (3) বায়ুপ্রবাহ, (4) বায়ুর আর্দ্রতা, (5) মেঘ, (6) বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতি। কোনো জায়গার আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা করতে হলে এইসব উপাদান পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
31. আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন অঞ্চল (ITCZ) কাকে বলে?
উত্তর – আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন অঞ্চল: উত্তর গোলার্ধের উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে (5° উ. থেকে 5° দ.) মিলিত হয়। এজন্য দুই ক্রান্তীয় বায়ুর ওই মিলনস্থলকে অর্থাৎ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়কে আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন অঞ্চল বা Inter Tropical Convergence Zone সংক্ষেপে ITCZ বলে ।
বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ-
(a) 1013.2 মিলিবার
(b) 1013.5 মিলিবার
(c) 1013.8 মিলিবার
(d) 1013.9 মিলিবার
উত্তর – (a) 1013.2 মিলিবার
2. ভূপৃষ্ঠে কয়টি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় রয়েছে?—
(a) তিনটি
(b) চারটি
(c) পাঁচটি
(d) সাতটি
উত্তর – (d) সাতটি
3. অশ্ব অক্ষাংশ অঞ্চলটি দেখা যায় —
(a) 20°-30° উ. অক্ষাংশে
(b) 25°-35° উ. ও দ. অক্ষাংশে
(c) 35°-45° দ. অক্ষাংশে
(d) 40° 50°দ. অক্ষাংশে
উত্তর – (b) 25°-35° উ. ও দ. অক্ষাংশে
4. মেরুবৃত্ত প্রদেশে বিরাজ করে-
(a) উচ্চচাপ
(b) নিম্নচাপ
(c) চাপহীন অবস্থা
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) নিম্নচাপ
5. জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ুর চাপ শুষ্ক বায়ুর তুলনায়—
(a) কম হয়
(b) বেশি হয়
(c) একই হয়
(d) মাঝারি হয়
উত্তর – (a) কম হয়
6. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় টর্নেডোকে এই নামেও ডাকা হয় —
(a) সাইক্লোন
(b) টুইস্টার
(c) টাইফুন
(d) হারিকেন
উত্তর – (b) টুইস্টার
7. বিমানে যে বায়ুচাপ মাপক যন্ত্র থাকে, তার নাম—
(a) অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটার
(b) ফর্টিন-এর ব্যারোমিটার
(c) ব্যারোগ্রাফ
(d) সাধারণ ব্যারোমিটার
উত্তর – (a) অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটার
৪. নিরক্ষরেখা বরাবর বিরাজ করে—
(a) নিম্নচাপ
(b) উচ্চচাপ
(c) সমচাপ
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) নিম্নচাপ
9. ডোলড্রাম সৃষ্টি হয়—
(a) নিরক্ষীয় মণ্ডলে
(b) কর্কটীয় মণ্ডলে
(c) সুমেরুবৃত্তীয় মণ্ডলে
(d) মকরীয় মণ্ডলে
উত্তর – (a) নিরক্ষীয় মণ্ডলে
10. নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের প্রধান কারণ—
(a) পৃথিবীর আবর্তন
(b) অধিক আর্দ্রতা
(c) অধিক উয়তা
(d) পৃথিবীর বৃহত্তম পরিধি
উত্তর – (c) অধিক উয়তা
11. কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়টি বিস্তৃত—
(a) 25°-35° উ. অক্ষাংশে
(b) 25°-35° দ. অক্ষাংশে
(c) 60°-65° উ. অক্ষাংশে
(d) 60°-65°দ. অক্ষাংশে
উত্তর – (a) 25°-35° উ. অক্ষাংশে
12. বায়ুচাপের একক হল—
(a) মিলিবার
(b) মিলিমিটার
(c) মিলিগ্রাম
(d) মিটার
উত্তর – (a) মিলিবার
13. ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুচাপ—
(a) বাড়ে
(b) কমে
(c) একই থাকে
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) কমে
14. উচ্চচাপ বলয়টি বিস্তৃত—
(a) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
(b) সুমেরুবৃত্ত অঞ্চলে
(c) কর্কটীয় অঞ্চলে
(d) কুমেরুবৃত্ত অঞ্চলে
উত্তর – (c) কর্কটীয় অঞ্চলে
15. চিনসাগরে বিধ্বংসী ঝড়কে বলে—
(a) হ্যারিকেন
(b) সাইক্লোন
(c) টাইফুন
(d) উইলি উইলি
উত্তর – (c) টাইফুন
16. বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা পরিবর্তন হওয়ার কারণ—
(a) পৃথিবীর আবর্তন
(b) সূর্যের আপাতগতির পরিবর্তন
(c) বায়ুপ্রবাহের তারতম্য
(d) অনুসূর অপসূর
উত্তর – (b) সূর্যের আপাতগতির পরিবর্তন
17. কোরিওলিস বল সবথেকে বেশি অনুভূত হয় –
(a) নিরক্ষরেখায়
(b) মধ্য অক্ষাংশে
(c) ক্রান্তীয়রেখায়
(d) মেরুতে
উত্তর – (d) মেরুতে
18. বায়ুর শক্তিমাত্রা নির্ণায়ক স্কেল হল—
(a) বিউফোর্ট স্কেল
(b) রিখটার স্কেল
(c) ভার্নিয়ার স্কেল
(d) মার্কালি স্কেল
উত্তর – (a) বিউফোর্ট স্কেল
19. বায়ুচাপ মানচিত্রে সমচাপ রেখাগুলি যত কাছাকাছি বায়ুচাপ ঢাল—
(a) তত কমে
(b) তত বাড়ে
(c) একই থাকে
(d) মৃদু হয়
উত্তর – (b) তত বাড়ে
20. পৃথিবীর বড়ো বড়ো মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে—
(a) আয়ন বায়ুর গতিপথের পশ্চিমে
(b) মেরু বায়ুর প্রবাহপথে
(c) পশ্চিমা বায়ুর পথে
(d) লু-এর পথে
উত্তর – (a) আয়ন বায়ুর গতিপথের পশ্চিমে
21. ITCZ বলা হয়—
(a) ক্রান্তীয় অঞ্চলকে
(b) উপক্রান্তীয় অঞ্চলকে
(c) নিরক্ষীয় অঞ্চলকে
(d) মেরু অঞ্চলকে
উত্তর – (c) নিরক্ষীয় অঞ্চলকে
22. সমচাপরেখার পার্থক্যকে বলে—
(a) বায়ুচাপ কক্ষ
(b) বায়ুচাপ
(c) সমচাপ অঞ্চল
(d) বায়ুচাপের ঢাল
উত্তর – (d) বায়ুচাপের ঢাল
23. গর্জনশীল চল্লিশা হল –
(a) 40° উত্তর অক্ষাংশ
(b) 40° দক্ষিণ অক্ষাংশ
(c) 40° পূর্ব দ্রাঘিমা
(d) 40° পশ্চিম দ্রাঘিমা
উত্তর – (b) 40° দক্ষিণ অক্ষাংশ
24. একটি সাময়িক বায়ু হল—
(a) মৌসুমি বায়ু
(b) লু বায়ু
(c) আয়ন বায়ু
(d) পশ্চিমা বায়ু
উত্তর – (a) মৌসুমি বায়ু
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. কর্কটীয় শান্তবলয়কে ……….. অক্ষাংশ বলে।
উত্তর – অশ্ব
2. সমচাপরেখাগুলি চক্রাকারে খুব কাছাকাছি অবস্থান করলে ………. -এর সম্ভাবনা থাকে।
উত্তর – ঝড়
3. উয়তা কমে গেলে বায়ুর চাপ ……….।
উত্তর – বাড়ে
4. বায়ুচাপের ঢাল বাড়লে বায়ুর গতিবেগ ……….।
উত্তর – বাড়ে
5. ………. বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলে।
উত্তর – আয়ন
6. নিরক্ষরেখায় কোরিওলিস বলের মান ……….।
উত্তর – শূন্য
7. ITCZ দেখা যায় ……… বরাবর।
উত্তর – নিরক্ষরেখা
8. ……….. সঙ্গে কোরিওলিস বল সমকোণে কাজ করে।
উত্তর – বায়ুপ্রবাহের
9. ঊর্ধ্বমুখী উপত্যকা বায়ুকে ……….. বায়ু বলে।
উত্তর – অ্যানাবেটিক
10. টাইফুনের উৎপত্তি ………. সাগরে।
উত্তর – দক্ষিণ চিন
11. মেরু অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্প কম থাকে তাই বায়ুর চাপ ………. হয়।
উত্তর – বেশি
12. যে শীতল বাতাস পর্বতের ঢাল বেয়ে উপত্যকায় নেমে আসে, তাকে ……….. বলে।
উত্তর – ক্যাটাবেটিক বায়ু
13. উচ্চতা অনুসারে বায়ুর চাপ ……….. পায়।
উত্তর – হ্রাস
14. ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রকে ………. নামে অভিহিত করা হয়।
উত্তর – চক্ষু
15. টেবিল ঘড়ির মতো দেখতে বায়ুচাপ মাপার যন্ত্রটির নাম ……….. ব্যারোমিটার।
উত্তর – অ্যানিরয়েড
16. বায়ুপ্রবাহের দিক্নির্ণয় করা হয় ………. সাহায্যে।
উত্তর – বাতপতাকার
17. প্রথম বায়ুচাপ মাপার যে যন্ত্রটি আবিষ্কার হয়, তার নাম ………… ব্যারোমিটার।
উত্তর – টরিসেলির
18. ফর্টিনের ব্যারোমিটারের সাথে ………… স্কেল যুক্ত থাকে।
উত্তর – ভার্নিয়ার
19. ব্যারোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর ………. মাপা হয়।
উত্তর – চাপ
20. পর্বতের উঁচু অংশে বায়ুচাপ মাপা হয় যে যন্ত্রের সাহায্যে, সেটির নাম ……….।
উত্তর – প্রেশার অল্টিমিটার
21. ………. বেলায় সমুদ্রবায়ু প্রবাহিত হয়।
উত্তর – দিনের
TOPIC – D আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ
একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপঞ্জি
- জলচক্র: কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার মাধ্যমে বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও শিলামণ্ডলের মধ্যে জলের যে বিরামহীন আবর্তন ঘটে চলেছে, তাকেই বলে জলচক্র। মৃত্তিকা গঠন, উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনা, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বাস্তুতন্ত্রকে সচল রাখা অর্থাৎ এককথায় পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জলের গুরুত্ব অপরিসীম।
- বাষ্পীভবন: যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জল তরল অথবা কঠিন অবস্থা থেকে উত্তাপের প্রভাবে বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়, সেই প্রক্রিয়ার নাম বাষ্পীভবন। এই বাষ্পীভবনের জন্য জল যে তাপশক্তি গ্রহণ করে, তার নাম বাষ্পীভবনের লীনতাপ।
- বায়ুর আর্দ্রতা: কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যতটা পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, সেই পরিমাণ জলীয় বাষ্পকে বায়ুর আর্দ্রতা বলা হয়। বায়ুতে আর্দ্রতার পরিমাণ তিনভাবে প্রকাশ করা হয়— (1) নিরপেক্ষ বা চরম আর্দ্রতা, (2) বিশেষ আর্দ্রতা এবং (3) আপেক্ষিক আর্দ্রতা।
- সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বায়ু: যে-কোনো বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। যখন কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ওই বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ বা শেষসীমায় পৌঁছোয়, তখন ওই বায়ুকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে। আর সর্বোচ্চ সীমার থেকে জলীয় বাষ্প কম থাকলে তাকে অসম্পৃক্ত বা অপরিপৃক্ত বায়ু বলে।
- শিশিরাঙ্ক: যে তাপমাত্রায় বায়ু সম্পৃক্ত হয়, সেই তাপমাত্রাকে শিশিরাঙ্ক বলে।
- আর্দ্রতা পরিমাপক যন্ত্রসমূহ: বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করার জন্য হাইগ্রোমিটার বা আর্দ্রতামাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন প্রকার আর্দ্রতামাপক যন্ত্রের মধ্যে শুষ্ককুণ্ড ও আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটার বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
- জলকণা ও তুষারকণার উৎপত্তি সম্পৃক্ত বায়ুর উন্নতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প থেকে জলকণা বা বরফকণার সৃষ্টি হয়, তাকে ঘনীভবন বলে। বায়ুর উন্নতা শিশিরাঙ্কের নীচে নামলে ঘনীভবন শুরু হয়। ঘনীভবনের মাধ্যমে উৎপন্ন জলকণা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে, যেমন— (1)কুয়াশা, (2) শিশির, (3) ধোঁয়াশা, (4) মেঘ প্রভৃতি।
- অধঃক্ষেপণ: মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা জলকণাগুলি যখন পরস্পর মিলিত হয়ে আয়তনে আরও বেড়ে যায়, তখন তা আর ভেসে থাকতে পারে না, মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে পড়ে। একেই বলে অধঃক্ষেপণ। বিভিন্ন প্রকার অধঃক্ষেপণ হল—বৃষ্টিপাত, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, তুষারপাত, স্লিট বা শিলাকুচি, শিলাবৃষ্টি বা হেল প্রভৃতি। তবে কুয়াশা, শিশির, তুহিন প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয়, কারণ এগুলি ঊর্ধ্বগামীবায়ু থেকে গঠিত হয় না এবং ভূপৃষ্ঠেও পড়ে না বা অধঃক্ষিপ্ত হয় না।
- বৃষ্টিপাত : মেঘের মধ্যে থাকা ভাসমান জলকণাসমূহ যখন মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে তরল আকারে ভূপৃষ্ঠে পড়ে, তখন তাকে বলে বৃষ্টিপাত।
- বৃষ্টিপাতের প্রকারভেদ : সৃষ্টির প্রক্রিয়া অনুসারে বৃষ্টিপাতকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় — (1) পরিচলন বৃষ্টিপাত, (2) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এবং (3) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত।
- বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্র: বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাপার জন্য বৃষ্টিমাপক যন্ত্র বা রেনগজ ব্যবহৃত হয়।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. বৃষ্টিপাত কীভাবে হয়?
বৃষ্টিপাত সৃষ্টির প্রক্রিয়া
উত্তর – বৃষ্টিপাত সৃষ্টির প্রক্রিয়াগুলি হল—
- জলীয় বাষ্পের উৎপত্তি: সূর্যের তাপে সাগর, নদী, খাল, বিল ও অন্যান্য জলাশয় থেকে সর্বদাই জল বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মেশে।
- জলীয় বাষ্পের ঊর্ধ্বগমন: জলীয় বাষ্প উম্ন ও হালকা হওয়ায় জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ওপরের দিকে উঠতে থাকে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যত ওপরে ওঠে, তার চাপ কমে, আয়তন বাড়ে এবং উন্নতা হ্রাস পায়।
- মেঘের উৎপত্তি: ঊর্ধ্বাকাশে ওই বায়ু পরিপৃক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা বা মেঘ সৃষ্টি করে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পরিপৃক্ত হলে মেঘ সৃষ্টি হয়, কারণ—যে-কোনো বায়ুরই জলীয় বাষ্প ধারণ করার একটি নির্দিষ্ট সীমা বা ক্ষমতা আছে। উয় বায়ু অধিক জলীয় বাষ্প ধারণ করে এবং উন্নতা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতাও কমে যায়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট উন্নতায় বায়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে।
যখন কোনো জায়গায় বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ তার ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছোয়, তখন একে বায়ুর পরিপৃক্ত অবস্থা বলা হয়। পরিপৃক্ত বায়ুর উন্নতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা, লবণের কণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে মেঘরূপে ভেসে বেড়ায়।
- মেঘ থেকে জলকণার উৎপত্তি ও বৃষ্টিপাত: মেঘের মধ্যে ভাসমান জলকণাসমূহ ছোটো-বড়ো নানা আকারের হয়। ভাসমান অবস্থায় বড়ো কণার সঙ্গে ছোটো কণার ধাক্কা লাগলে বড়ো কণা ছোটো কণাকে গ্রাস করে। এর ফলে বড়ো কণাগুলি আরও বড়ো ও ভারী হয়ে যায় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে নীচের দিকে পড়তে থাকে ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
2. অধঃক্ষেপণের শ্রেণিবিভাগ করো।
অথবা, অধঃক্ষেপণের বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো।
অধঃক্ষেপনের শ্রেণিবিভাগ
উত্তর – জলীয় বাষ্প হালকা বলে সহজেই ওপরে উঠে যায়। ওপরে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং ধূলিকণা, কয়লার কণা প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে মেঘরূপে ভেসে বেড়ায়। মেঘের মধ্যে ভাসমান অনেকগুলি জলকণা ও তুষারকণা যখন পরস্পর যুক্ত হয়ে আয়তনে বাড়ে ও ভারী হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে নীচের দিকে নেমে আসে, তখন তাকে অধঃক্ষেপণ বলে। অধঃক্ষেপণ দুইভাবে হয় — (1) তরলরূপে এবং (2) কঠিনরূপে।
- তরলরূপে : তরলরূপে অধঃক্ষেপণ বলতে বৃষ্টিপাতকে বোঝায়। বৃষ্টিপাত দুই ধরনের, যথা— (1) সাধারণ বৃষ্টি এবং (2) গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি।
- সাধারণ বৃষ্টি: মেঘের মধ্যে ভাসমান জলকণাগুলি যখন পরস্পর যুক্ত হয়ে আয়তনে বৃদ্ধি পায় ও ভারী হয় এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে, তখন এই বৃষ্টিপাত সাধারণ বৃষ্টিপাত (Rain) নামে পরিচিত। এই বৃষ্টিপাত তিনপ্রকার—[i] পরিচলন বৃষ্টিপাত, [ii] শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ও [iii] ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত।
- গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি : অনেকসময় সমান আয়তনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা (ব্যাস 0.5 মিলিমিটারের কম) বিরামহীনভাবে মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে পড়ে। দেখলে মনে হয় যেন জলকণাগুলি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। একে বলে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি (Drizzle)।
- কঠিনরূপে: কঠিনরূপী অধঃক্ষেপণ তিনপ্রকার — (1) তুষারপাত, (2) স্লিট এবং (3) শিলাবৃষ্টি।
- তুষারপাত : ঊর্ধ্বাকাশে বায়ুর উয়তা যদি হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায় তাহলে জলকণাসমূহ তুষারে পরিণত হয়। উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বা শীতপ্রধান অঞ্চলের বায়ু খুব শীতল বলে ওই তুষার সূক্ষ্ম সাদা ময়দা গুঁড়োর মতো নীচে পড়ে। একে বলে তুষারপাত (Snowfall)।
- স্লিট : যখন বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত একসঙ্গে হয় অথবা বৃষ্টির ফোঁটাগুলি ঊর্ধ্বাকাশের শীতল বায়ুস্তরের মধ্য দিয়ে আসার সময়, জমাট বেঁধে বরফকণায় পরিণত হয়ে ভূপৃষ্ঠে পড়ে, তাকে বলে স্লিট (Sleet)।
- শিলাবৃষ্টি: ঊর্ধ্বাকাশে প্রবল ঊর্ধ্বগতিসম্পন্ন বায়ুর মাধ্যমে যখন মেঘ ও বৃষ্টির জলকণাসমূহ অনেক উঁচুতে খুব শীতল স্থানে চলে যায়, তখন প্রচণ্ড শৈত্যে ওই জলকণাসমূহ জমাট বেঁধে ছোটো ছোটো বরফে পরিণত হয়। পরে বৃষ্টির সঙ্গে বিভিন্ন আয়তনের ওই বরফের টুকরোগুলি মাটিতে পড়ে। একেই বলে শিলাবৃষ্টি (Hail Storm)।
3. উদাহরণ সহ বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, বিভিন্ন ধরনের বৃষ্টিপাতের প্রক্রিয়া বর্ণনা করো।
বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত
উত্তর – উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্যগত তারতম্যের ভিত্তিতে বৃষ্টিপাতকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
- পরিচলন বৃষ্টিপাত: ধারণা : ভূপৃষ্ঠ উয় হলে পরিচলন পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু প্রবলবেগে ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত পরিচলন বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। পদ্ধতি: ভূপৃষ্ঠের যে সমস্ত স্থানে জলভাগ বেশি সেখানে দিনের বেলায় প্রখর সূর্যকিরণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে দ্রুত অনেক ওপরে উঠে গিয়ে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘের সৃষ্টি করে। পরে ওই মেঘে উপস্থিত জলকণাগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে ক্রমশ বড়ো হয় ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পরিচলন বৃষ্টিরূপে নেমে আসে। উদাহরণ: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর ধরে বিকেলের দিকে এই বৃষ্টি হয়।
- শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত: ধারণা: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতের গায়ে প্রতিহত হয়ে পর্বতের গা বেয়ে ওপরে উঠে গিয়ে ক্রমশ শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। পদ্ধতি: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পর্বতে বাধা পেলে পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে ওঠে এবং ওপরে উঠে প্রসারিত ও শীতল হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরপর পর্বত অতিক্রম করে ওই বায়ু বিপরীত দিকের অনুবাত ঢাল বেয়ে ওপর থেকে নীচে নামে বলে উয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতাও বেড়ে যায়। এজন্য পর্বতের অনুবাত ঢালে ও এর সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত খুব কম হয় এবং বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল তৈরি হয়। উদাহরণ: [i] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢালে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়। তবে এই পর্বতমালার পূর্ব ঢাল এবং সন্নিহিত এলাকাসমূহে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে। [ii] মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি, মৌসিনরামে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি হলেও খাসি পাহাড়ের উত্তর দিকে অর্থাৎ অনুবাত ঢালে অবস্থিত শিলং বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
- ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত: ধারণা : বাতাসের ঘূর্ণন গতির জন্যে জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই বৃষ্টিপাত ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত।
পদ্ধতি : [i] ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত: ক্রান্তীয় অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নচাপের কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশ করার আগেই ওই বায়ু কুণ্ডলাকারে ঘুরতে ঘুরতে প্রবলবেগে ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে এই প্রকার বৃষ্টিপাত ঘটায়। উদাহরণ : সমুদ্রসংলগ্ন ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়।
[ii] নাতিশীতোয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত: নাতিশীতোয় অঞ্চলে শীতল ও উম্ন বায়ু পরস্পরের অভিমুখে প্রবাহিত হলে উয় বায়ু হালকা হওয়ায় শীতল বায়ুর ওপর উঠে যায় এবং দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুর মাঝে সীমান্ত (Front) তৈরি হয়। উয় বায়ু ক্রমাগত ওপরে উঠতে থাকায় বায়ুর মধ্যে থাকা জলীয় বাষ্প শীতল ও ঘনীভূত হয় এবং সীমান্ত বরাবর ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত ঘটায়। উদাহরণ: উয়নাতিশীতোয় অঞ্চলে এই প্রকার বৃষ্টিপাত হয়।
4. কীভাবে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়?
অথবা, সীমান্ত বৃষ্টি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
নাতিশীতোর ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি বা সীমান্ত বৃষ্টি সৃষ্টির পদ্ধতি
উত্তর – নাতিশীতোয় অঞ্চলে যখন দুটি বিপরীতমুখী ও ভিন্নধর্মী বায়ু মিলিত হয়, সেখানে ওই দুই বায়ুর উন্নতা ও আর্দ্রতার পার্থক্য হয় বলে উভয়ের মিলনস্থলের বা সংঘর্ষস্থলের বায়ুমণ্ডলে গোলযোগ সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে সেখানে যে ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে, তাকেই নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত বলে। যেমন—উত্তর গোলার্ধের নাতিশীতোয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে শীতল ও শুষ্ক মেরু বায়ু এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উষ্ম ও আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু যখন পরস্পর মুখোমুখি এগিয়ে এসে মিলিত হয়, কখন উভয়ের মিলনস্থলে বা সংঘর্ষস্থলে দুটি আলাদা সীমান্তের উৎপত্তি হয়। উম্ন বায়ু যেখানে শীতল বায়ুর মধ্যে বক্রাকারে প্রবেশ করে, সেই সীমানাকে উয় সীমান্ত বলে। উয় বায়ুর পিছনে যেখানে শীতল বায়ু এসে ধাক্কা দেয়, সেই সীমানাকে শীতল সীমান্ত বলে।
- উয় সীমান্তে বৃষ্টিপাত: উয় সীমান্ত অঞ্চলে উয় বায়ু শীতল মেরু বায়ুর ওপরে উঠে যায় এবং শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- শীতল সীমান্তে বৃষ্টিপাত: শীতল সীমান্তে শীতল বায়ু উয় বায়ুকে পিছন থেকে ঠেলে দেয়। ফলে উয় বায়ু ওপরে উঠে শীতল হয়ে মেঘ তৈরি করে ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টিপাত ঘটায়। উদাহরণ: ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত সৃষ্টি হয়।
5. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত কীভাবে সংঘটিত হয়?
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের পদ্ধতি
উত্তর – উভয় গোলার্ধের 5°-20° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যবর্তী বিস্তৃত অঞ্চলে যে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়, সেই বৃষ্টিপাত ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। ক্রান্তীয় অঞ্চলের সাগর-মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশে বেশি সূর্যতাপের কারণে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ওই নিম্নচাপের দিকে চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী বায়ু ছুটে আসে। কেন্দ্রে বায়ুচাপ খুব কম থাকায় বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ না করে ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে যায়। এইরকম ঊর্ধ্বগামী বায়ু যতই ওপরে ওঠে ততই প্রসারিত ও শীতল হয় এবং শেষে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিম্নচাপ যত গভীর হয় ততই বায়ুর গতি বাড়তে থাকে অর্থাৎ ঝড় সৃষ্টি হয়।। এই ঝড়ের কেন্দ্র বা চক্ষু একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলজুড়ে অবস্থান করে। এই অঞ্চলটি শান্ত থাকে, কিন্তু এর চারিদিকে বায়ু তীব্র গতিতে প্রবাহিত হয়ে ঝড়ের সৃষ্টি করে এবং মুশলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
আবার বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনে দুর্বল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়। উয়-আৰ্দ্ৰ মৌসুমি বায়ু শুষ্ক স্থলবায়ুর সংস্পর্শে এলে এই ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এই ধরনের দুর্বল ঘূর্ণবাত থেকে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
উদাহরণ: 2009 সালের আয়লা, 2013 সালের ফাইলিন, 2019 সালের ফণী প্রভৃতি ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
6. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান এবং জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান
উত্তর – ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান আলোচনা করা হল—
অক্ষাংশগত অবস্থান : ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 30°-40° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগে পরিলক্ষিত হয়।
মহাদেশগত অবস্থান: এই জলবায়ুর অন্তর্গত দেশ বা অঞ্চলগুলি হল— (1) ইউরোপ: পোর্তুগাল, স্পেন, ইটালি, গ্রিস প্রভৃতি দেশের ভূমধ্যসাগরসংলগ্ন অঞ্চলসমূহ। (2) এশিয়া: পশ্চিম তুরস্ক, লেবানন, ইজরায়েল, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ। (3) আফ্রিকা: মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, আলজিরিয়া প্রভৃতি দেশের ভূমধ্যসাগরসংলগ্ন অঞ্চলসমূহ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ উপকূল। (4) উত্তর আমেরিকা: দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া। (5) দক্ষিণ আমেরিকা: মধ্য চিলি। (6) ওশিয়ানিয়া : অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এবং নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপ।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল— 1. জলবায়ু : সারাবছর মাঝারি উয়তা এবং সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে। 2. উন্নতা : গ্রীষ্মকালে এখানে 20° সেলসিয়াস থেকে 27°সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। শীতকালে এই অঞ্চলে উয়তা থাকে 5° সেলসিয়াস থেকে 10° সেলসিয়াস। 3. বার্ষিক উন্নতার প্রসর : এখানে বার্ষিক উন্নতার প্রসর হয় 15°সেলসিয়াস থেকে 17° সেলসিয়াস। 4. আকাশের অবস্থা : গ্রীষ্মকাল এখানে শুষ্ক এবং এইসময় এখানকার আকাশ পরিষ্কার থাকে। 5. বৃষ্টিপাত: শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে এখানে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 35 থেকে 65 সেমি। 6. তুষারপাত : শীতকালে কোনো কোনো স্থানে তুষারপাত হয়।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. নিরপেক্ষ বা চরম বা বিশুদ্ধ আর্দ্রতা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা সাপেক্ষ আর্দ্রতা কাকে বলে?
উত্তর – নিরপেক্ষ বা চরম বা বিশুদ্ধ আর্দ্রতা : একটি নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের মোট পরিমাণকে বলা হয় নিরপেক্ষ বা চরম বা বিশৃদ্ধ আর্দ্রতা।
একক: নিরপেক্ষ আর্দ্রতা গ্রাম/ঘনমিটার এককে প্রকাশ করা হয়।
আপেক্ষিক আর্দ্রতা: কোনো নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং ওই একই উয়তায় ওই একই আয়তনের বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা—এই দুয়ের অনুপাতকেই বলা হয় আপেক্ষিক বা সাপেক্ষ আর্দ্রতা। আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা (%) হিসাবে এবং কাছাকাছি পূর্ণমানে প্রকাশ করা হয়।
সুতরাং—
একক: আপেক্ষিক আর্দ্রতা একটি আনুপাতিক প্রকাশ হওয়ায় এর কোনো একক হয় না।
2. নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর – নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণ : ভূপৃষ্ঠ অত্যধিক উন্ন হলে পরিচলন পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দ্রুত ওপরে উঠে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলা হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন বিকেলে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতকে 4 o’clock rain বলে। এর প্রধান কারণগুলি হল-
- জলভাগের প্রাধান্য: নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলভাগ বেশি বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পও বেশি থাকে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা হালকা, তাই দিনের বেলা জলভাগ থেকে সূর্যতাপে উৎপন্ন জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু সোজা ওপরে উঠে শীতল হয় ও ঘনীভূত হয়ে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- সূর্যরশ্মির লম্বভাবে পতন: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারাবছর লম্বভাবে পরার ফলে জল অধিক পরিমাণে বাষ্পীভূত হয়ে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়।
3. নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল – (1) বাষিক গড় উদ্বৃতা: সারাবছর প্রায় একই রকম উন্নতা থাকে। বার্ষিক গড় উন্নতা প্রায় 27°সে। (2) বার্ষিক উন্নতার পার্থক্য: উয়তার প্রসর খুব কম। বার্ষিক উন্নতার পার্থক্য 2° সেলসিয়াস থেকে 3°সেলসিয়াস। (3) ঋতু পরিবর্তন: নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে ঋতুপরিবর্তন হয় না। (4) 4 0’clock Rain: বিকেলের দিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে ও প্রতিদিন বিকালের দিকে 4টে নাগাদ পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতকে 4 o’clock Rain বলে। (5) ক্রান্তীয় শীতকাল: অপরাহে বৃষ্টিপাত হয় বলে রাতে বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করে। এজন্য এখানকার রাত ক্রান্তীয় শীতকাল নামে পরিচিত। (6) বৃষ্টিপাত: এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 250 সেমি। (7) শান্তাবস্থা: বিপরীতধর্মী বায়ুর প্রাধান্য না থাকায় এখানে তেমন কোনো ঝড় হয় না। ফলে এখানে শান্তাবস্থা বিরাজ করে। (৪) আর্দ্রতা: এই অঞ্চলে সারাবছরই বায়ুর আর্দ্রতা খুব বেশি (80%-90%) থাকে।
4. পৃথিবীর কোথায় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল পরিলক্ষিত হয়?
উত্তর – মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান : অক্ষাংশগত অবস্থান: অক্ষাংশগতভাবে মৌসুমি জলবায়ু নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 10° থেকে 25° বা 30° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের পূর্বভাগে পরিলক্ষিত হয়। মহাদেশগত অবস্থান। এই জলবায়ুর অন্তর্গত দেশ বা অঞ্চলগুলি হল— [i] এশিয়া : ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশ। [i] আফ্রিকা: মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, লাইবেরিয়া ও মাদাগাস্কারের পশ্চিমাংশ। [ii] অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশ। [iv] উত্তর আমেরিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাংশ।
5. মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য: মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) বিভিন্ন ঋতু: এই জলবায়ুতে প্রধান চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়, যথা—গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ এবং শীত। (2) উন্নতা: গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়, গড়ে 27° সেলসিয়াস থেকে 32° সেলসিয়াস। (3) বার্ষিক উন্নতার প্রসর: বার্ষিক উন্নতার প্রসর প্রায় 2° সেলসিয়াস থেকে 11° সেলসিয়াস। (4) খামখেয়ালি বায়ু: আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অনিয়মিত এবং অনিশ্চিত। এর ফলে এখানে প্রায়ই খরা ও বন্যার সৃষ্টি হয়। এজন্য এই বায়ুকে খামখেয়ালি বায়ু বলে। (5) বৃষ্টিপাত: এই জলবায়ু অঞ্চলের সর্বত্র বৃষ্টিপাত সমান নয়। কোথাও খুব বেশি, কোথাও কম। বৃষ্টিপাত প্রধানত গ্রীষ্মকালে হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 150-200 সেমি। (6) শুষ্ক শীতকাল: শীতকালে বৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ শীতকাল শুষ্ক। (7) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি:শরৎকালে উপকূলসংলগ্ন অঞ্চলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি হয় ।
6. পৃথিবীর কোথায় কোথায় উষু মরু জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়?
উত্তর – উগ্ন মরু জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান : অক্ষাংশগত অবস্থান: উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 15°-35° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত। মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগে উয় মরু জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়। মহাদেশগত অবস্থান: এই জলবায়ু পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে বিরাজ করে, সেগুলি হল—[i] আফ্রিকা: সাহারা, কালাহারি ও নামিব মরুভূমি। [ii] এশিয়া : সৌদি আরব, ইরান, ইরাক প্রভৃতি দেশজুড়ে অবস্থিত আরবের মরুভূমি এবং ভারত ও পাকিস্তানের থর মরুভূমি। [iii] ওশিয়ানিয়া : পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি। [iv] উত্তর আমেরিকা: অ্যারিজোনা মরুভূমি। [v] দক্ষিণ আমেরিকা: আটাকামা মরুভূমি।
7. স্তেপ জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর – স্তেপ জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান
- অক্ষাংশগত অবস্থান: উভয় গোলার্ধে 30°-50° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের অভ্যন্তরভাগে এই জলবায়ু বিরাজ করে।
- মহাদেশগত অবস্থান: [i] উত্তর আমেরিকার প্রেইরি, [ii] দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস, [iii] ইউরেশিয়ার স্তেপ, [iv] দক্ষিণ আফ্রিকার ভেল্ড, [v] অস্ট্রেলিয়ার ডাউনস প্রভৃতি তৃণভূমি অঞ্চলে এই জলবায়ু বিরাজ করে।
ল্ডেপ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: স্তেপ জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) প্রকৃতি: মহাদেশসমূহের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত বলে এখানে গ্রীষ্মকালে উন্নতা যেমন বাড়ে তেমন শীতকালে শীতের তীব্রতাও খুব বেশি হয়, অর্থাৎ এখানকার জলবায়ু অত্যন্ত চরম প্রকৃতির। তবে সামুদ্রিক প্রভাবের জন্য দক্ষিণ গোলার্ধের স্তেপ জলবায়ু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে জলবায়ুর চরমভাব কম পরিলক্ষিত হয়। (2) উন্নতা: গ্রীষ্মকালে এখানকার উন্নতা থাকে গড়ে 21° সেলসিয়াস এবং শীতকালে উন্নতা হিমাঙ্কের অনেক নীচে –30° বা –40° সে পর্যন্ত নেমে যায়, অর্থাৎ এখানে বার্ষিক উন্নতার প্রসর খুব বেশি। (3) বৃষ্টিপাত : এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 25 থেকে 50 সেমি। তবে শীতকালে মাঝে মাঝেই তুষারপাত হয়।
8. পশ্চিম উপকূলীয় সামুদ্রিক জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – পশ্চিম উপকূলীয় সামুদ্রিক জলবায়ুর অবস্থান
- অক্ষাংশগত অবস্থান: উভয় গোলার্ধে 40°-60° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের পশ্চিমভাগে এই জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
- মহাদেশগত অবস্থান: উত্তর গোলার্ধে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং সংলগ্ন ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমাংশ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম উপকূল, কানাডার পশ্চিম উপকূল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে চিলির দক্ষিণাংশ, অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপ প্রভৃতি স্থানে এই জলবায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
পশ্চিম উপকূলীয় সামুদ্রিক জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) প্রকৃতি: এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল আর্দ্র মৃদু শীতল নাতিশীতোয় প্রকৃতির জলবায়ু। (2) তাপমাত্রা: গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা থাকে গড়ে 15° সে এবং শীতকালে 2°সে – 5°সে। (3) বৃষ্টিপাত: সমুদ্রের ওপর দিয়ে আসা পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে প্রায় সারাবছর বৃষ্টিপাত হয়, তবে তার পরিমাণ কম, বার্ষিক প্রায় 75 থেকে 100 সেমি। (4) তুষারপাত: শীতকালে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়।
9. চিনদেশীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর – চিনদেশীয় জলবায়ুর অবস্থান
- অক্ষাংশগত অবস্থান: উভয় গোলার্ধে 24°-38° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের পূর্বভাগে এই জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
- মহাদেশগতঅবস্থান: [i] মধ্য চিন, [ii] দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাংশ, [iii] দক্ষিণ জাপান, [iv] আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, [v] ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগ, [vi] অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল প্রভৃতি অঞ্চল চিনদেশীয় জলবায়ুর অন্তর্গত।
চিনদেশীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য : চিনদেশীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) প্রকৃতি: কিছুটা ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর মতো চিনদেশীয় জলবায়ুতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুষ্ক হলেও এখানে উয়তার আধিক্য কম। (2) উন্নতা: এখানে গ্রীষ্মকালে উন্নতা থাকে গড়ে 27°সে এবং শীতকালে 4° সে থেকে 12° সে। (3) বৃষ্টিপাত: সামুদ্রিক প্রভাবে এখানে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 100 থেকে 150 সেমি। (4) তুষারপাত: শীতকালে মাঝে মাঝে উন্নতা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায় এবং তখন তুষারপাত হয়।
10. পৃথিবীর কোথায় মহাদেশীয় জলবায়ু বিরাজ করে এবং এই জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি কী?
উত্তর – মহাদেশীয় জলবায়ুর অবস্থান:
(1) অক্ষাংশগত অবস্থান: উত্তর গোলার্ধে 50° বা 55° থেকে 65° বা 70° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের অভ্যন্তরভাগে ও উত্তরাংশে এই জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
(2) মহাদেশগত অবস্থান : রাশিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার উত্তরাংশ মহাদেশীয় জলবায়ুর অন্তর্গত।
মহাদেশীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: মহাদেশীয় জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) প্রকৃতি: প্রধানত মহাদেশসমূহের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত বলে এখানকার জলবায়ু কিছুটা চরম প্রকৃতির। (2) তাপমাত্রা: গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা হয় গড়ে 10° সে এবং শীতকালে হিমাঙ্কের নীচে নেমে গিয়ে হয় প্রায় −10°সে। (3) তুষারপাত : গ্রীষ্মকালে এখানে অল্প (10 থেকে 50 সেমি) বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকালে হয় ব্যাপক তুষারপাত। (4) তাপমাত্রার পার্থক্য: শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি হয়।
11. আৰ্দ্ৰ নাতিশীতোয় জলবায়ু পৃথিবীর কোথায় পরিলক্ষিত হয় এবং এই জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি কী?
উত্তর – আৰ্দ্ৰ নাতিশীতোয় জলবায়ুর অবস্থান: (1) অক্ষাংশগত অবস্থান : উভয় গোলার্ধের 39° থেকে 50° বা 60° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশসমূহের পূর্বভাগে এই জলবায়ু বিরাজ করে। (2) মহাদেশগত অবস্থান: উত্তর আমেরিকার সেন্ট লরেন্স নদীর অববাহিকা, জার্মানির পূর্বাংশ, রাশিয়ার মধ্যভাগ প্রভৃতি অঞ্চল এই জলবায়ুর অন্তর্গত।
আর্দ্র নাতিশীতোয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: আর্দ্র নাতিশীতোয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) প্রকৃতি: এখানকার জলবায়ু আর্দ্র শীতল ও নাতিশীতোয় প্রকৃতির। (2) তাপমাত্রা: গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা হয় প্রায় 15°সে থেকে 20°সে এবং শীতকালে প্রায় 2°সে থেকে হিমাঙ্কের নীচে -5°সে। (3) বৃষ্টিপাত: এখানে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয় এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 50 থেকে 100 সেমি। (4) তুষারপাত: শীতকালে এখানে যথেষ্ট তুষারপাত হয়। উত্তর আমেরিকার সেন্ট লরেন্স নদীর অববাহিকায় এই জলবায়ুর প্রভাব সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয় বলে এর আর-এক নাম লরেন্সীয় জলবায়ু। একে বোরিয়াল জলবায়ুও বলা হয়।
12. জলচক্র কাকে বলে?
কীভাবে জলচক্রে জল আবর্তিত হয়?
উত্তর – সংজ্ঞা: সূর্যতাপে বিভিন্ন জলাশয় থেকে জল ক্রমাগত বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে মেঘরূপে ভেসে বেড়ায় এবং তারপর মেঘের মধ্যে ভাসমান জলকণাসমূহ ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি বা তুষাররূপে পৃথিবীতে নেমে আসে। শেষে ওই বৃষ্টি বা তুষারগলা জলের বেশিরভাগ অংশ নদনদীর মাধ্যমে সমুদ্রে ফিরে যায় এবং সেখান থেকে সূর্যতাপে বাষ্পীভূত হয়ে আবার ওপরে উঠে যায়। এইভাবে জল কখনও বাষ্প, কখনও মেঘ, কখনও অধঃক্ষেপণরূপে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে অবিরামভাবে আবর্তিত হয়ে যে চক্র সৃষ্টি করে, তাকেই বলে জলচক্র। এর মধ্যে নদী হল ভূপৃষ্ঠে এই জলচক্রের অনুভূমিক অংশ এবং বাষ্পীভবন (নীচ থেকে ওপরে ওঠে) ও অধঃক্ষেপণ (ওপর থেকে নীচে নামে) হল জলচক্রের উল্লম্ব অংশ।
জলচক্রে জলের আবর্তন: জলচক্রে জলের আবর্তন হয় যেসব পদ্ধতির মাধ্যমে, সেগুলি হল—
- বাষ্পীভবন: সমুদ্র, নদী, খাল, বিল, জলাশয় থেকে জল সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়। আবার মাটি এবং গাছপালা থেকেও জল বাষ্পীভূত হয়।
- ঘনীভবন: জলীয় বাষ্প ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ঘনীভূত হয় ও প্রথমে মেঘ তৈরি করে এবং পরে ওই মেঘ জলকণায় পরিণত হয়।
- অধঃক্ষেপণ: ওই সব জলকণা ভারী হয়ে বৃষ্টি বা তুষার রূপে ভূপৃষ্ঠে অধঃক্ষিপ্ত হয়। যে পরিমাণ জল বাষ্পীভূত হয় ওই একই পরিমাণ জল বৃষ্টি বা অধঃক্ষেপণ রূপে ঝরে পড়ে। এইজল নদীপ্রবাহ হিসেবে ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রে চলে যায়। আর কিছু পরিমাণ জল ভূগর্ভের মধ্য দিয়ে সমুদ্রে পৌঁছায়। সমুদ্র থেকে ওই জল বাষ্পীভূত হয়। এভাবেই জলচক্রে জলের আবর্তন ঘটে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জলচক্রের ভূমিকা অপরিসীম।
13. ধোঁয়াশা কী? ধোঁয়াশা কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তর – সংজ্ঞা: শীতকালের সন্ধ্যাবেলায় বা ভোরবেলায় বায়ুমণ্ডলের ধোঁয়ার সঙ্গে কুয়াশা মিশে এক বিষবাষ্প সৃষ্টি হয়, যা ভূপৃষ্ঠের ওপরে অনেকটা উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক স্বচ্ছতাকে নষ্ট করে দেয়। এরই নাম ধোঁয়াশা (ধোঁয়া + কুয়াশা = ধোঁয়াশা, Smoke + Fog = Smog)।
ধোঁয়াশা সৃষ্টির পদ্ধতি: সাধারণত বড়ো বড়ো শহর ও শিল্পাঞ্চলের বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে কলকারখানা ও যানবাহন নির্গত ধোঁয়া, ধূলিকণা, কার্বনকণা প্রভৃতি থাকে। শীতকালের সন্ধ্যায় বা ভোরে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে দ্রুত শীতল হলে, ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুস্তরও শীতল হয়ে শিশিরাঙ্কে পৌঁছায়। তখন বায়ুতে ভাসমান ওইসব ধোঁয়ার কণা, কার্বনকণা, ধূলিকণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে এই ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। ধোঁয়াশা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। উদাহরণ: দিল্লি, সাংহাই, বেজিং প্রভৃতি শহরে ধোঁয়াশার প্রকোপ খুব বেশি।
14. বৃষ্টিপাত পরিমাপ কীভাবে করা হয়?
উত্তর – বৃষ্টিপাত পরিমাপের পদ্ধতি: বৃষ্টিপাত যে যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়, তার নাম বৃষ্টিমাপক যন্ত্র বা রেনগজ। এই যন্ত্রটিতে 5 ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত একটি বোতল থাকে। এই বোতলের মধ্যে একটি 5 ইঞ্চি ব্যাসের কুপি বা ফানেল এমনভাবে বসানো থাকে যাতে কুপির মধ্যে পড়া বৃষ্টির জল একটুও নষ্ট না হয়ে ভিতরের বোতলে গিয়ে জমা হয়। বাইরের জলের ছিটে যাতে ভিতরে না পড়ে, তাই যন্ত্রটি ভূমি থেকে প্রায় 1 ফুট ওপরে রাখা হয়। 24 ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পরে বোতলে যে পরিমাণ বৃষ্টির জল জমে, তা একটি নির্দিষ্ট দাগযুক্ত পরিমাপক চোঙের মধ্যে ঢেলে বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয়। পরিমাপের একক: মিলিমিটার, সেন্টিমিটার ও ইঞ্চি এককে বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয়।
15. কুয়াশা এবং শিশির অধঃক্ষেপণ নয় কেন?
উত্তর – কুয়াশা এবং শিশির অধঃক্ষেপণ না হওয়ার কারণ: অধঃক্ষেপণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ ঊর্ধ্বগামী বায়ু অতিরিক্ত শীতলতার কারণে ঘনীভূত হয়ে জলকণা বা তুষারকণায় পরিণত হয়ে ভারী হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে জল বা তুষার বিন্দুরূপে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। কিন্তু, শিশির কোনোপ্রকার ঊর্ধ্বগামী বায়ু থেকে সৃষ্টি হয় না। সারারাত ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ঘাসের ওপর, গাছের পাতায় জলবিন্দুর আকারে জমা হয়। তাই এটি অধঃক্ষেপণ নয়। আর, শীতকালের রাতে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হলে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুও ঠান্ডা হয়। তখন ওই বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কে পৌঁছোলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভূমিসংলগ্ন অংশে ভেসে বেড়ায়। সুতরাং কুয়াশা ওপর থেকে অধঃক্ষিপ্ত হয় না বলে এটিও অধঃক্ষেপণ নয়।
16. বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয় কেন?
উত্তর – বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণের বিভিন্নতার কারণ : বায়ুর জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন—
- জলভাগের অবস্থান : যেসব অঞ্চলে জলভাগ বেশি এবং সেখানে যদি জল বাষ্পীভূত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত উত্তাপ থাকে, তবে সেখানে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকবে। যেমন— নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।
- সূর্যরশ্মির পতনকোণের পার্থক্য : সূর্যরশ্মি যেসব অঞ্চলে বেশি তির্যকভাবে পতিত হয় সেইসব অঞ্চলে উত্তাপও কম হয়। ফলে জলভাগের ওপর এই তির্যক সূর্যরশ্মি পড়লে জল বিশেষ বাষ্পীভূত হয় না এবং সেজন্য বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও খুব কম হয়। যেমন— মেরু অঞ্চলে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ায় সেখানকার বায়ুতে জলীয় বাষ্প কম থাকে।
- অরণ্যের পরিমাণ : যেসব অঞ্চলে উদ্ভিদের পরিমাণ বেশি সেখানে গাছ প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প নির্গমন করে। যেমন—নিরক্ষীয় অরণ্য অঞ্চলে অত্যধিক জলীয় বাষ্পের জন্য সবসময় আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া বিরাজ করে। অন্যদিকে, অরণ্যহীন মরু অঞ্চলের বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকায় রুক্ষ ও শুষ্ক আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়।
17. সব মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয় না কেন?
উত্তর – সব মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণ : জলীয় বাষ্প ওপরে উঠে বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা, লবণকণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা বা তুষারকণায় পরিণত হয়, যাদের গড় ব্যাস মাত্র 0.01 মিলিমিটার। এই ভাসমান জলকণা বা তুষারকণার সমষ্টি হল মেঘ। মেঘের মধ্যে ভাসমান এই অতি ক্ষুদ্র কণাগুলি যখন পরস্পর সংযুক্ত হয়ে গড়ে 0.2 থেকে 6 মিলিমিটার ব্যাসের হয়, তখন এগুলি আর ভেসে থাকতে পারে না, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। কিন্তু সব মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হয় না। এর কারণগুলি হল—
- মেঘের জলকণার ব্যাসের তারতম্য: মেঘের জলকণার ব্যাস 0.2 মিলিমিটারের বেশি না হলে জলকণাগুলি বৃষ্টিরূপে ঝরে পড়তে পারে না।
- জলকণাসমূহের সংযুক্তিকরণ: মেঘের মধ্যে ভাসমান জলকণাগুলি যতক্ষণ সংযুক্ত না হবে ততক্ষণ বৃষ্টি সৃষ্টি হতে পারবে না।
- বায়ুমণ্ডলের আপেক্ষিক আর্দ্রতা: বায়ুমণ্ডলের আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100% না হলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হবে না, ফলে বৃষ্টিপাতও হবে না।
18. পরিচলন বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর – পরিচলন বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য : পরিচলন বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- অঞ্চল : নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 0° থেকে 5° বা 10° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে এইজাতীয় বৃষ্টি বেশি হয়। এ ছাড়া ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় অঞ্চলেও মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিপাত হয়।
- সময়কাল: গ্রীষ্মের শুরুতে ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় অঞ্চলে এবং সারাবছর ধরে নিরক্ষীয় অঞ্চলে এইপ্রকার বৃষ্টিপাত ঘটে।
- পরিমাণ: নিরক্ষীয় অঞ্চলে বছরে প্রায় 200-300 সেমি পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।
- নামকরণ: প্রায় প্রতিদিন বিকেলে 4টে নাগাদ পরিচলন বৃষ্টিপাত বেশি হয় বলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে একে 4 o’clock rain বলে ।
- মেঘ: সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে এই ধরনের বৃষ্টি হয়।
- বজ্রপাত: এই ধরনের বৃষ্টিতে বজ্রপাত ঘটে, যেমন—জাভা দ্বীপের বোগের-এ বছরে 322 দিন বজ্রপাতের রেকর্ড আছে।
- বৃষ্টির প্রকৃতি: বৃষ্টি স্বল্পস্থায়ী হলেও পরিমাণে অনেক বেশি হয়। বৃষ্টির পর আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে যায়।
19. কুয়াশার কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কী সমস্যার সৃষ্টি হয় ?
উত্তর – কুয়াশার কারণে দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা: কুয়াশার কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়, যেমন—
- দৃশ্যমানতা হ্রাস : কুয়াশার কারণে সকালে দৃশ্যমানতা কমে যায়। এতে রেল ও সড়ক পথে যান চলাচলে অসুবিধা তৈরি হয়।
- ধোঁয়াশার সৃষ্টি: শহরে কুয়াশার সাথে ধোঁয়া মিশে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে। এটি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
- ফসলের ওপর প্রভাব: কুয়াশা অনেক ফসলের ক্ষতি করে। যেমন—অতিরিক্ত কুয়াশা চা চাষের ক্ষতি করে।
- জনজীবনের ওপর প্রভাব: অতিরিক্ত কুয়াশা এবং তার থেকে ধোঁয়াশার উৎপত্তি স্বাভাবিক জনজীবনকে ব্যাহত করে। পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রেও ধোঁয়াশার প্রভাব অনেক বেশি।
20. প্রদত্ত উয়তা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্র থেকে জলবায়ু ও গোলার্ধশনাক্ত করো।
উত্তর – উন্নতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রের ভিত্তিতে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্তকরণ: পর্যবেক্ষণ : লেখচিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে—[i] উয়তা রেখাটি খুব বক্র নয়। উয়তার প্রসরও খুব কম। সারাবছর উন্নতা রেখাটি প্রায় একই রকম। এই উন্নতা রেখাটি 26-28°সে-এর মধ্যে থাকে। [ii] সারাবছর ধরেই বৃষ্টিপাত বেশি। সিদ্ধান্ত : সারাবছর বেশি উয়তা ও বৃষ্টিপাত হয় বলে এটি আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ুর লেখচিত্র। সারাবছর এখানে উয়তা প্রায় একই রকম। এই স্থানটি দুই গোলার্ধের মিলনস্থলে অবস্থিত বলে দুটি গোলার্ধের জলবায়ু প্রায় একই ধরনের। তাই গোলার্ধ নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে এপ্রিল-মে মাসের উয়তা বেশি দেখে মনে হয় এটি উত্তর গোলার্ধের।
21. প্রদত্ত উয়তা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রটি কোন্ গোলার্ধের কোন্ জলবায়ু অঞ্চলকে নির্দেশ করছে?
উত্তর – উন্নতা বৃষ্টিপাত লেখচিত্রের ভিত্তিতে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্তকরণ : পর্যবেক্ষণ: এই লেখচিত্রটি দেখে বোঝা যাচ্ছে—[i] মে মাসের উষ্ণতা সবচেয়ে বেশি এবং ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের উয়তা কম। [ii] বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে হয়েছে এবং শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। সিদ্ধান্ত: উয়তারেখা এবং বৃষ্টিপাতস্তম্ভ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে এখানে গ্রীষ্মকালে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকাল শুষ্ক প্রায় ৷ তাই এটি ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের লেখচিত্র। যেহেতু উন্নতারেখাটি উত্তল এবং মে-জুন মাসে গ্রীষ্মকাল ও ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে উন্নতা কম। তাই এটি অবশ্যই উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানের জলবায়ু অঞ্চলের লেখচিত্র।
22. প্রদত্ত লেখচিত্রটি থেকে কীভাবে বুঝবে জলবায়ুটি কোন্ জলবায়ু অঞ্চলকে ও কোন্ গোলার্ধকে নির্দেশ করছে?
উত্তর – উন্নতা বৃষ্টিপাত লেখচিত্রের ভিত্তিতে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্তকরণ: পর্যবেক্ষণ : এই লেখচিত্রটি থেকে বোঝা যাচ্ছে— [i] স্থানটির উন্নতা 4 মাস (জুন-সেপ্টেম্বর) হিমাঙ্কের সামান্য ওপরে ও বাকি মাসগুলির উন্নতা হিমাঙ্কের নীচে রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় অঞ্চলটির জলবায়ু খুব শীতল প্রকৃতির। [ii] এখানে জানুয়ারি মাসের তাপমাত্রা -23 °সে-এর কাছে। [iii] উন্নতা রেখাটি উত্তল, অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থান দেখানো হয়েছে। [iv] বৃষ্টিপাতস্তম্ভের উচ্চতা দেখে বোঝা যাচ্ছে এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম (সম্ভবত তুষারপাত বেশি)। সিদ্ধান্ত প্রবল ঠান্ডা, অল্প বৃষ্টিপাত ও উত্তল উয়তারেখা হওয়ার জন্য এটি অবশ্যই উত্তর গোলার্ধের তুন্দ্রা জলবায়ুর লেখচিত্র।
23. প্রদত্ত লেখচিত্রটি থেকে কীভাবে বুঝবে জলবায়ুটি কোন্ জলবায়ু অঞ্চলকে ও কোন গোলার্ধকে নির্দেশ করছে?
উত্তর – লেখচিত্র থেকে জলবায়ু অঞ্চল ও গোলার্ধ নির্ণয় : পর্যবেক্ষণ: এই লেখচিত্রটি থেকে বোঝা যাচ্ছে–[i] উয়তারেখাটি অবতল। তাই এটি অবশ্যই দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের উয়তার লেখচিত্র। [ii] বছরের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিপাতস্তম্ভের উচ্চতা থেকে বোঝা যাচ্ছে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর উয়তার রেখাটি থেকে বোঝা যাচ্ছে জুলাই-আগস্ট মাসে উন্নতা সবচেয়ে কম, অর্থাৎ ওই সময় শীতকাল এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে উয়তা সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ওই সময় গ্রীষ্মকাল। সুতরাং শীতকাল বৃষ্টিবহুল এবং বৃষ্টিপাতের মোট পরিমাণ ৪০ সেমি-এর কাছাকাছি। সিদ্ধান্ত: বৃষ্টিবহুল শীতকাল, বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০ সেমি, সর্বাধিক উয়তা 23 °সে ও সর্বনিম্ন উয়তা 13°সে-এর কম। এই বৈশিষ্ট্যগুলি নির্দেশ করছে এটি দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের লেখচিত্র।
24. উন্নতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু চিহ্নিত করার তিনটি যুক্তি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর – উন্নতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু চিহ্নিত করার যুক্তি: উয়তা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রে যদি দেখা যায়—
(1) গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন উয়তা: গ্রীষ্মকালে উয়তা খুব বেশি বাড়ে না (গড়ে 15° সে থেকে 25° সে হয়) এবং শীতকালে উয়তা খুব কমে না (গড়ে 4° সে থেকে 14° সে হয়); (2) উয়তার প্রসর: উয়তার বার্ষিক প্রসর কম (গড়ে 6° সে থেকে 16°সে) অর্থাৎ উয়তার চরমভাব নেই; এবং (3) আর্দ্র শীতকাল, শুষ্ক গ্রীষ্মকাল: বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত হয় শীতকালে এবং গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত কম, শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে অর্থাৎ শীতকাল আর্দ্র ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক; এরকম হলে নিশ্চিতভাবে লেখচিত্রটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের বলে চিহ্নিত করা যায়।
25. প্রদত্ত উয়তা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রটি দেখে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।
উত্তর – উন্নতা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্র থেকে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্তকরণ: পর্যবেক্ষণ: লেখচিত্রটি থেকে বোঝা যাচ্ছে— [i] উয়তারেখাটি উত্তল এবং জুলাই-আগস্ট মাসে তাপমাত্রা 33°সে-এর বেশি। [ii] বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণও খুব সামান্য। সারাবছরে 10 সেমির কম বৃষ্টি হয়েছে। সিদ্ধান্ত: উয়তারেখাটি উত্তল বলে অবশ্যই এটি উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানের উন্নতা বৃষ্টিপাতের লেখচিত্র। বৃষ্টিপাত অতি সামান্য এবং উন্নতা খুব বেশি বলে স্থানটি অবশ্যই উয় মরু জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত।
26. পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি ঘটে কেন?
উত্তর – পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি হওয়ার কারণ: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সরাসরি পর্বতে বাধা পেলে পর্বতের গা বেয়ে ওপরে ওঠে এবং প্রসারিত ও শীতল হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে বলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত। আরব সাগরের ওপর দিয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সরাসরি ভারতে প্রবেশ করে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়। এর ফলে পশ্চিমঘাটের পশ্চিম ঢালে প্রচুর পরিমাণে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
1. সম্পৃক্ত বায়ু বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে। যখন কোনো নির্দিষ্ট উয়তার বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছোয়, তখন সেই বায়ুকে সম্পৃক্ত বা পরিপূক্ত বায়ু বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: (1) উন্নতা হ্রাস ও জলীয় বাষ্প ধারণা ক্ষমতা: পরিপৃক্ত বায়ুর উন্নতা কমে গেলে ওই বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তখন অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত ঘটে। (2) উন্নতা বৃদ্ধি ও জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা: সম্পৃক্ত অবস্থায় বায়ুর উন্নতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
2. শিশিরাঙ্ক কী?
উত্তর – ধারণা: যে উন্নতায় আর্দ্র বায়ুর জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হয়, উন্নতাকে শিশিরাঙ্ক বলে। অর্থাৎ যে বিশেষ উয়তায় বায়ু সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছোয় বা বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা হয় 100% সেই উন্নতাকে বলা হয় শিশিরাঙ্ক। বৈশিষ্ট্য: (1) সম্পৃক্ততা : এই উন্নতায় জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু সম্পৃক্ত হয়। (2) শিশিরের উৎপত্তি: বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কে পৌঁছোলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয়।
3. আপেক্ষিক আর্দ্রতার গুরুত্ব কী?
উত্তর – আপেক্ষিক আর্দ্রতার গুরুত্ব : বায়ুতে আপেক্ষিক আর্দ্রতার বিশেষ গুরুত্ব আছে, যেমন— (1) অধঃক্ষেপণ বুঝতে : তুষারপাত, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির সম্ভাবনা বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা থেকে বোঝা যায়। (2) তাপ বিকিরণের হার জানতে : ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণের হারও আপেক্ষিক আর্দ্রতা থেকে জানা সম্ভব। আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি হলে তাপ বিকিরণ হ্রাস পায়। (3) বাষ্পীভবনের হার নির্ণয়ে: বাষ্পীভবনের হারও আপেক্ষিক আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে।
4. অধঃক্ষেপণ কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ওপরে উঠে ধীরে ধীরে শীতল হয় এবং ঘনীভবনের মাধ্যমে জলকণা বা কেলাসিত তুষারকণায় পরিণত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা জলকণা বা কেলাসিত তুষার- কণাসমূহ যখন পরস্পর মিলে আয়তনে আরও বেড়ে যায় তখন তা আর ভেসে থাকতে পারে না, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। একেই বলা হয় । অধঃক্ষেপণ। উদাহরণ: (1) বৃষ্টিপাত, (2) গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, (3) তুষারপাত, (40 শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি।
5. বায়ুর আর্দ্রতা বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা : জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসকে বলে আর্দ্র বায়ু। আর্দ্র বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ হলে, তাকে সম্পৃক্ত বায়ু এবং অসম্পূর্ণ থাকলে, তাকে অসম্পৃক্ত বায়ু বলা হয়। বায়ুর এই আর্দ্রতা তিনভাবে প্রকাশ করা হয় – (1) চরম আর্দ্রতা, (2) আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং (3) বিশেষ আর্দ্রতা।
6. বিশেষ আর্দ্রতা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা : নির্দিষ্ট ভরের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের প্রকৃত উপস্থিতির ভরকে বিশেষ আর্দ্রতা বা আর্দ্রতার গুণাঙ্ক বলে। বৈশিষ্ট্য : (1) বিশেষ আর্দ্রতার মাধ্যমে জলীয় বাষ্পের ভর (গ্রাম) ও বায়ুর ভরের (কিলোগ্রাম) সম্পর্ককে প্রকাশ করা হয়। (2) প্রতি কিলোগ্রাম বায়ুতে যত গ্রাম জলীয় বাষ্প থাকে তার ওজনের দ্বারা বিশেষ আর্দ্রতা প্রকাশ করা হয়। যেমন—দিনের কোনো এক বিশেষ সময়ে 000 গ্রাম বা 1 কিলোগ্রাম বায়ুতে বিদ্যমান জলীয় বাষ্পের ওজন 15 গ্রাম হলে, সেই সময়ের ওই বায়ুর বিশেষ আর্দ্রতা হল কিলোপ্রতি 15 গ্রাম।
7. অপরিপৃক্ত বা অসম্পৃক্ত বায়ু বলতে কী বোঝ ?
উত্তর – ধারণা: কোনো নির্দিষ্ট উন্নতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে তার ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কম জলীয় বাষ্প থাকলে, সেই বায়ুকে অপরিপূক্ত বা অসম্পৃক্ত বায়ু বলা হয়। পরিপৃক্ত বা সম্পৃক্ত বায়ুর উন্নতা হঠাৎ বেড়ে গেলে তার জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে যায়, ফলে ওই বায়ু তখন অপরিপূক্ত বা অসম্পৃক্ত হয়ে যায়।
8. মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তর – মেঘ সৃষ্টির পদ্ধতি : জলীয় বাষ্প হালকা বলে সহজেই ওপরে উঠে যায়। ওপরে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং ধূলিকণা, কয়লার কণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে বায়ুতে ভেসে বেড়ায়। বায়ুতে ভাসমান এই জলকণা ও তুষারকণার সমষ্টির নাম মেঘ। মেঘ সৃষ্টিকারী এইসব জলকণা বা তুষারকণা অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়, যাদের গড় ব্যাস মাত্র 1/100 মিলিমিটার বা 0.01 মিলিমিটার। তাই এগুলি অতি সহজেই মেঘ হিসেবে ভেসে বেড়ায়।
9. তুষারপাত বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: ঊর্ধ্বাকাশে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হওয়ার সময় যদি বায়ুর উন্নতা হিমাঙ্কের (0 °সে) নীচে নেমে যায়, তাহলে জলকণাসমূহ তুষারে পরিণত হয়। মাধ্যাকর্ষণের টানে এই তুষার ভূপৃষ্ঠে নেমে এলে তুষারপাত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তুষার নীচে পড়ার সময় উগ্ন বায়ুর সংস্পর্শে আসে বলে গলে যায় এবং বৃষ্টি হিসেবেই মাটিতে পড়ে। তবে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বা শীতপ্রধান অঞ্চলের বায়ু খুব শীতল বলে ওপরের তুষার পেঁজাতুলোর মতো ঝিরঝির করে পড়ে।
10 শিলাবৃষ্টি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: ঊর্ধ্বাকাশে প্রবল ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর মাধ্যমে মেঘ বা বৃষ্টির জলকণাসমূহ অনেক উঁচুতে খুব শীতল স্থানে উঠে যায়। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ওই জলকণাসমূহ জমাট বেঁধে ছোটো ছোটো বরফের টুকরোয় পরিণত হয়। বরফের টুকরোগুলি আয়তনে বেশ বড়ো হলে বা বায়ুর বেগ কমলে ওই বরফের টুকরোগুলি আরও জলকণা সংগ্রহ করে আয়তনে বেড়ে যায় এবং বৃষ্টির সঙ্গে মাটিতে ঝরে পড়ে। একেই বলা হয় শিলাবৃষ্টি।
11. গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংজ্ঞা: অনেকসময় সমান আয়তনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা (ব্যাস 0.5 মিলিমিটারেরও কম) বিরামহীনভাবে নিম্বোস্ট্র্যাটাস ও স্ট্র্যাটোকিউমুলাস মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে ঝরে পড়ে। দেখলে যেন মনে হয় জলকণাগুলি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। একেই বলা হয় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। বৈশিষ্ট্য : (1) বর্ষাকালে মাঝে মাঝে এই ধরনের বৃষ্টি হয়। (2) জলকণাগুলি ময়দাকণার মতো বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
12. অতিপৃক্ত বায়ু কাকে বলে?
উত্তর – ধারণা: কোনো নির্দিষ্ট উন্নতায় সম্পৃক্ত বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকা প্রয়োজন, কোনো বিশেষ অবস্থায় যদি ওই বায়ুতে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তাহলে সেই বায়ুকে অতিপৃক্ত বায়ু বলে।
13. বৃষ্টিপাত কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তর – বৃষ্টিপাতের প্রকারভেদ : আকাশের মেঘ ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি অনুযায়ী একে তিনভাগে ভাগ করা যায় – (1) পরিচলন বৃষ্টিপাত, (2) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এবং (3) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত।
14. সমবর্ষণরেখা কী?
উত্তর – ধারণা : পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একইরকম, মানচিত্রে সেইসব স্থানগুলিকে একটি কাল্পনিক রেখা দিয়ে যোগ করলে যে রেখা পাওয়া যাবে, সেই কাল্পনিক রেখাকে বলা হয় সমবর্ষণরেখা। এই রেখার সাহায্যে পৃথিবীতে বৃষ্টিপাতের বণ্টন বোঝা যায়।
15. উয় এবং শীতল সীমান্ত কাকে বলে?
উত্তর – সংজ্ঞা : নাতিশীতোয়মণ্ডলে দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জ যখন পরস্পরের দিকে মুখোমুখি এগিয়ে আসে, তখন উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং সংঘর্ষ সীমান্তে উস্ন বায়ু যেখানে শীতল বায়ুর মধ্যে বেঁকে প্রবেশ করে সেই সীমান্তকে উন্ন সীমান্ত বলে। আর উয় বায়ুপুঞ্জের পিছনে যেখানে শীতল বায়ু এসে উয় বায়ুকে আঘাত করে সেই সীমান্তকে শীতল সীমান্ত বলে।
16. অঙ্কুসান বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: নাতিশীতোয় অঞ্চলে ঘূর্ণবাতের এমন একটি পর্যায় যখন শীতল সীমান্ত, উয় সীমান্তের চেয়ে বেশি দ্রুত এগোতে থাকে এবং শীতল সীমান্ত খুব তাড়াতাড়ি উয় সীমান্তকে ধরে ফেলে। এই সময় মধ্যবর্তী উম্ন বায়ু ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠে যায়। এই অবস্থাকে অঙ্কুসান বলে।
17. দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উম্ন মরুভূমির নাম বলো।
উত্তর – দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উগ্ন মরুভূমি: দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উগ্ন মরুভূমি হল—পেরু-চিলির আটাকামা মরুভূমি ও অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম অস্ট্রেলীয় মরুভূমি।
18. আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও উয়তার সম্পর্ক কী?
উত্তর – আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও উয়তার সম্পর্ক: আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও উন্নতার সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ যদি বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ স্থির থাকে তাহলে, বায়ুর উয়তা বাড়লে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়ে। তাই আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায়। আবার বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ স্থির থেকে বায়ুর উন্নতা কমে গেলে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে। ফলে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়ে। যেমন—ভোরবেলায় যখন বায়ুর উন্নতা সবথেকে কম হয় তখন ঘ আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়। অন্যদিকে, দিনের মধ্যভাগে ও বিকালবেলা যখন উয়তা সর্বোচ্চ হয় তখন আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বনিম্ন হয়।
19. মেঘাচ্ছন্নতা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ধারণা: মেঘাচ্ছন্নতা বলতে আকাশে মেঘের আবরণের পরিমাণকে বোঝায়। একক: মেঘাচ্ছন্নতা হিসাব করা হয় অক্টাস (oktas) নামক এককে। বিভিন্ন প্রতীকচিহ্নের সাহায্যে আকাশে মেঘাচ্ছন্নতার পরিমাণ প্রকাশ করা হয়।
20. লেখচিত্র দেখে কীভাবে গোলার্ধ শনাক্ত করা যায় ?
উত্তর – লেখচিত্র দেখে গোলার্ধ শনাক্ত করার পদ্ধতি: লেখচিত্রে যদি দেখা যায় উয়তা নির্দেশক বক্ররেখাটি উত্তল তবে স্থানটি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এবং উয়তা নির্দেশক বক্ররেখাটি যদি অবতল হয় তবে সেটি দক্ষিণ গোলার্ধকে বোঝায়।
21. তুন্দ্রা জলবায়ুকে কীভাবে উন্নতা ও বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রের সাহায্যে শনাক্ত করা যাবে?
উত্তর – উন্নতা ও বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রের সাহায্যে তুন্দ্রা জলবায়ু শনাক্তকরণ: লেখচিত্র অনুসারে যদি উন্নতা 8-9 মাস হিমাঙ্কের নীচে থাকে এবং উন্নতার প্রসর বেশি হয় তাহলে বলা যায় যে লেখচিত্রটিতে তুন্দ্রা জলবায়ু দেখানো হয়েছে।
22. উয়তা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্র থেকে কীভাবে উয়-মরু জলবায়ুকে চিহ্নিত করা যায় ?
উত্তর – উন্নতা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রের দ্বারা উন্ন-মরু জলবায়ু শনাক্তকরণ: উয়তা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রটিতে যদি দেখা যায় শীত ও গ্রীষ্মের উন্নতার ব্যবধান খুব বেশি এবং সারাবছরই বৃষ্টিপাত খুবই কম ও অনিয়মিত তাহলে সেটি উম্ন-মরু জলবায়ুকে নির্দেশ করছে।
23. শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলে প্রায়ই কুয়াশা দেখা যায় কেন?
উত্তর – শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলে প্রায়ই কুয়াশা দেখা যাওয়ার কারণ : শহরাঞ্চল এবং শিল্পাঞ্চলের বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা, কার্বন কণা প্রভৃতি ভেসে বেড়ায়। এইসব পদার্থের ওপর ভোরবেলা জলীয় বাষ্প জমে কুয়াশা সৃষ্টি করে। সেজন্য শীতকালে ভোরবেলা শহর ও শিল্পাঞ্চলে কুয়াশা এবং ধোঁয়াশা দেখা যায়। যেমন—চিনের সাংহাই, ভারতের দিল্লি, কলকাতা এবং ইউরোপের শিল্পাঞ্চলগুলিতে এরকম কুয়াশা দেখা যায়।
বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
1. যে প্রক্রিয়ায় জল মাটির নীচে প্রবেশ করে, তাকে বলে—
(a) অনুস্রবণ
(b) ঘনীভবন
(c) সঞ্চয়ন
(d) বাষ্পীভবন
উত্তর – (a) অনুস্রবণ
2. জলচক্র না থাকলে পৃথিবীতে কী ঘটত না?-
(a) জলের আবর্তন
(b) জলের সঞ্চয়
(c) জলের বাষ্পীভবন
(d) জলীয় বাষ্পের ঘনীভবন
উত্তর – (a) জলের আবর্তন
3. শীতকালে আমাদের ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়, কারণ বায়ুতে—
(a) জলীয় বাষ্প খুব বেশি থাকে
(b) জলীয় বাষ্প খুব কম থাকে
(c) বায়ুর উন্নতা হ্রাস পায় বলে
(d) এগুলির কোনোটিই নয়
উত্তর – (b) জলীয় বাষ্প খুব কম থাকে
4. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের অধঃগমনকে বলে—
(a) ঘনীভবন
(b) বাষ্পীভবন
(c) অধঃক্ষেপণ
(d) বিকিরণ
উত্তর – (c) অধঃক্ষেপণ
5. বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে বাষ্পীভবনের হার—
(a) বেশি হয়
(b) কমে যায়
(c) একই থাকে
(d) কোনো প্রভাব ফেলে না
উত্তর – (b) কমে যায়
6. বায়ুর উন্নতা বেড়ে গেলে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা —
(a) বেড়ে যায়
(b) কমে যায়
(c) একই থাকে
(d) মাঝারি হয়
উত্তর – (a) বেড়ে যায়
7. পরিপৃক্ত বায়ুর উন্নতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে শুরু হয় –
(a) বাষ্পীভবন
(b) অধঃক্ষেপণ
(c) ঘনীভবন
(d) বৃষ্টিপাত
উত্তর – (c) ঘনীভবন
৪. বৃষ্টিপাতের সময় আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকে –
(a) 9%
(b) 50%
(c) 100%
(d) 200%
উত্তর – (c) 100%
9. সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ-
(a) 70%
(b) 80%
(c) 90%
(d) 100%
উত্তর – (d) 100%
10. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাপার যন্ত্রটি হল—
(a) অ্যানিমোমিটার
(b) ব্যারোমিটার
(c) বৃষ্টিমাপক যন্ত্র বা রেনগজ
(d) বাতপতাকা
উত্তর – (c) বৃষ্টিমাপক যন্ত্র বা রেনগজ
11. নিরক্ষীয় অঞ্চলে যে ধরনের বৃষ্টিপাত হয়, তা হল –
(a) পরিচলন বৃষ্টিপাত
(b) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত
(c) ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত
(d) কোনোটিই নয়
উত্তর – (a) পরিচলন বৃষ্টিপাত
12. চেরাপুঞ্জিতে কোন ধরনের বৃষ্টিপাত হয়? –
(a) পরিচলন বৃষ্টিপাত
(b) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত
(c) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত
(d) শিলাবৃষ্টি
উত্তর – (b) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত
13. মানচিত্রে দমান বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানগুলিকে যে রেখার সাহায্যে দেখানো হয়, তাকে বলা হয় –
(a) সমোয়রেখা
(b) সমবর্ষণরেখা
(c) সমপ্রেষরেখা
(d) সমোচ্চরেখা
উত্তর – (b) সমবর্ষণরেখা
14. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রকৃতি হল—
(a) উয় নাতিশীতোয়
(b) শীতল নাতিশীতোয়
(c) আৰ্দ্ৰ নাতিশীতোয়
(d) উয় মরু প্রকৃতির
উত্তর – (a) উয় নাতিশীতোয়
15. পশ্চিমি ঝঞ্ঝায় যে বৃষ্টিপাত হয়, তা হল একধরনের –
(a) পরিচলন বৃষ্টিপাত
(b) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত
(c) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত
(d) নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত
উত্তর – (b) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত
16. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল—
(a) দেরাদুন
(b) গোয়া
(c) মৌসিনরাম
(d) শিলং
উত্তর – (d) শিলং
17. যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় –
(a) হাইগ্রোমিটার
(b) ব্যারোমিটার
(c) থার্মোমিটার
(d) অ্যানিমোমিটার
উত্তর – (a) হাইগ্রোমিটার
18. মেঘাচ্ছন্নতার হিসাব করা হয় যে এককের সাহায্যে—
(a) নিম্বো
(b) সিরো
(c) অক্টাস
(d) অল্টো
উত্তর – (c) অক্টাস
19. যে অঞ্চলটিতে উন্ন-আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ু বিরাজ করে সেটি হল —
(a) ভারত
(b) বাংলাদেশ
(c) সৌদি আরব
(d) ইন্দোনেশিয়া
উত্তর – (d) ইন্দোনেশিয়া
20. আপেক্ষিক আর্দ্রতা সর্বাধিক হয়—
(a) ভোরবেলায়
(b) সকালবেলায়
(c) সন্ধ্যাবেলায়
(d) বিকেলবেলায়
উত্তর – (a) ভোরবেলায়
21. ঋতুপরিবর্তন দেখা যায় না—
(a) ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুতে
(b) নিরক্ষীয় জলবায়ুতে
(c) উন্ন-মরু জলবায়ুতে
(d) চিনদেশীয় জলবায়ুতে
উত্তর – (b) নিরক্ষীয় জলবায়ুতে
22. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে যে সময় বৃষ্টিপাত হয়, সেটি হল —
(a) গ্রীষ্মকালে
(b) বর্ষাকালে
(c) শীতকালে
(d) বসন্তকালে
উত্তর – (c) শীতকালে
23. চিনদেশীয় জলবায়ু বিরাজ করে প্রদত্ত যে স্থানে—
(a) মরক্কোতে
(b) অস্ট্রেলিয়ার পার্থে
(c) অস্ট্রেলিয়ার পূর্বভাগে
(d) ভারতে
উত্তর – (c) অস্ট্রেলিয়ার পূর্বভাগে
24. যে লেখচিত্রের উন্নতার নির্দেশক রেখাটি উত্তল, সেটি অবশ্যই যে গোলার্ধের হবে, তা হল—
(a) উত্তর গোলার্ধ
(b) দক্ষিণ গোলার্ধ
(c) পূর্ব গোলার্ধ
(d) পশ্চিম গোলার্ধ
উত্তর – (a) উত্তর গোলার্ধ
25. সারাবছর উন্নতা বেশি এবং সামান্য বৃষ্টিপাতের লেখচিত্র থেকে বোঝা যায় সেটি যে জলবায়ু অঞ্চলের লেখচিত্র, তা হল—
(a) নিরক্ষীয় জলবায়ু
(b) মরু জলবায়ু
(c) মৌসুমি জলবায়ু
(d) তুন্দ্রা জলবায়ু
উত্তর – (b) মরু জলবায়ু
26. সারাবছর রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকে যে জলবায়ু অঞ্চলে—
(a) নিরক্ষীয়
(b) উন্ন-মরু
(c) ভূমধ্যসাগরীয়
(d) মৌসুমি
উত্তর – (c) ভূমধ্যসাগরীয়
27. উন্নতার সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্পর্ক—
(a) ব্যস্তানুপাতিক
(b) সমানুপাতিক
(c) ধনাত্মক
(d) সম্পর্কযুক্ত নয়
উত্তর – (a) ব্যস্তানুপাতিক
28. বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্টি হয় –
(a) মেঘ
(b) কুয়াশা
(c) ধোঁয়াশা
(d) শিশির
উত্তর – (c) ধোঁয়াশা
29. মৌসুমি জলবায়ু পরিলক্ষিত হয় —
(a) 5°-10° অক্ষাংশে
(b) 10°-30° অক্ষাংশে
(c) 30°-45° অক্ষাংশে
(d) 40°-60° অক্ষাংশে
উত্তর – (b) 10°-30° অক্ষাংশে
30. জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ করেন যে বিজ্ঞানী—
(a) পিঁচো
(b) চেম্বারলিন
(c) কোপেন
(d) চাপম্যান
উত্তর – (c) কোপেন
31. বার্ষিক উন্নতার প্রসর সবচেয়ে কম থাকে—
(a) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে
(b) মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে
(c) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে
(d) স্তেপ জলবায়ু অঞ্চলে
উত্তর – (a) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তাকে ………. বলে।
উত্তর – চরম আর্দ্রতা
2. বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100% হলে সেই বায়ুকে ………. বায়ু বলে।
উত্তর – সম্পৃক্ত
3. বৃষ্টির সাথে সাথে বিভিন্ন আয়তনের বরফের টুকরো পড়াকে বলে ………. বলে।
উত্তর – শিলাবৃষ্টি
4. আকাশে মেঘাচ্ছন্নতার হিসাব ………. প্রকাশ করা হয়।
উত্তর – অক্টাস
5. ভারতে ………. ঋতুতে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সবচেয়ে কম।
উত্তর – শীত
6. শিশির জমে বরফে পরিণত হলে, তাকে ………. বলে।
উত্তর – তুহিন
7. শিশিরাঙ্কের উন্নতা হিমাঙ্কের উন্নতার থেকে ……….. হয়।
উত্তর – বেশি
৪. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল পর্বতের ………. ঢালে দেখা যায়।
উত্তর – অনুবাত
9. কোনো স্থানের উন্নতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রে উন্নতা রেখাটি বৎসরের মধ্যভাগে নিম্নমুখী হলে স্থানটি ………. গোলার্ধে অবস্থিত।
উত্তর – দক্ষিণ
10. যে পদ্ধতিতে জল বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে ………. বলে।
উত্তর – বাষ্পীভবন
11. গ্রাম/ঘনসেমি হল ……….. আর্দ্রতার একক।
উত্তর – নিরপেক্ষ বা চরম
12. আমাদের দেশে শীতকালে বায়ু ………… থাকে।
উত্তর – শুষ্ক
13. সব ধরনের ঘনীভবন এবং অধঃক্ষেপণের উৎস …………।
উত্তর – জলীয় বাষ্প